জেসমিন পাপড়ি
মালয়েশিয়া সরকার গত চার মাসে ১ লাখ কর্মীর চাহিদা দিলেও এর বিপরীতে মাত্র ৩ হাজার ৮২২ জন পাঠাতে পেরেছে বাংলাদেশ। অথচ গত ৪ মাসে মালয়েশিয়ায় প্রায় ৮০ হাজার কর্মী পাঠিয়েছে নেপাল, যারা বাংলাদেশের কর্মীদের তুলনায় অর্ধেক খরচে গেছে।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমেদ দৈনিক বাংলাকে জানান, মালয়েশিয়া যেতে অভিবাসন ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৯ হাজার টাকা। সেখানে কর্মীদের ন্যূনতম মাসিক বেতন হবে ১ হাজার ৫০০ মালয়েশিয়ান রিঙ্গিত। তবে বাস্তবে মালয়েশিয়া যেতে শ্রমিকদের প্রায় সাড়ে ৩ লাখ থেকে ৪ লাখ টাকা খরচ করতে হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পর বাংলাদেশের জনশক্তি খাতের ব্যবসায়ীরা ব্যস্ত ছিলেন সিন্ডিকেট নিয়ে। ফলে খরচ বেড়ে গেছে। ওদিকে একে অন্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলার পাশাপাশি মালয়েশিয়ায় নানা তদবিরে ব্যস্ত ছিলেন তারা। এই ফাঁকে জনশক্তি পাঠানোর গতি হয়ে গেছে শ্লথ। ফলে এই বাজারে অন্য দেশের কর্মীরা ঢুকে পড়ছেন।
মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশন সূত্রে জানা গেছে, মালয়েশিয়ার চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে এখন পর্যন্ত প্রায় ৪০ হাজার কর্মীর চাহিদাপত্র সত্যায়ন করেছে বাংলাদেশের মিশনটি। বিপরীতে মাত্র সাড়ে তিন হাজারের কিছু বেশি কর্মী গেছে।
দূতাবাসের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম না প্রকাশের শর্তে দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘দীর্ঘদিনের প্রচেষ্টায় মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারটি বাংলাদেশের জন্য উন্মুক্ত হয়েছিল। কিন্তু সেই চমৎকার সুযোগটি আমরা নিতে পারলাম না শুধু দুর্বৃত্তায়নের কারণে। আমরা কর্মী পাঠাতে ব্যর্থ হচ্ছি। আমাদের কূটনৈতিক সাফল্য এখন ব্যর্থ হওয়ার পথে।’
কর্মী না পাঠাতে পারার অন্যতম কারণ সিন্ডিকেট ও অতিরিক্ত অভিবাসন ব্যয়ের কথা উল্লেখ করে এই কর্মকর্তা বলেন, এই মুহূর্তে মালয়েশিয়ায় অন্তত ১৫ লাখ কর্মীর প্রয়োজন। বাংলাদেশ কর্মী পাঠাতে পারছে না বলে তো কোম্পানিগুলো বসে থাকবে না। তারা বিভিন্ন সোর্স থেকে কর্মী সংগ্রহ করছে।
বাংলাদেশ দূতাবাসের ওই কর্মকর্তা বলেন, নেপাল মাত্র ৭ থেকে ৮ হাজার রিঙ্গিতে (১ লাখ ৭৫ হাজার থেকে ২ লাখ টাকা) মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠাচ্ছে। অথচ বাংলাদেশি কর্মীদের আসতে খরচ হচ্ছে এর দ্বিগুণ। এর জন্য রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো পুরোপুরি দায়ী। তাদের উচ্চ মুনাফার মানসিকতার জন্যই মালয়েশিয়ার বাজার হারানোর আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএমইটির মহাপরিচালক মো. শহীদুল আলম দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘নিয়োগের অনুমতি পাওয়ার পরও কর্মী যেতে কিছুটা সময় লেগে যায়। আশা করছি খুব শিগগির মালয়েশিয়ায় কর্মী যাওয়ার সংখ্যা বাড়বে।’
দীর্ঘ চার বছর বন্ধ থাকার পর ২০২১ সালের ডিসেম্বরে কর্মী পাঠানোর বিষয়ে মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশের মধ্যে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হয়। এমওইউ অনুযায়ী, বৃক্ষরোপণ, কৃষি, উৎপাদন, পরিষেবা, খনি, নির্মাণ এবং গৃহস্থালি পরিষেবাসহ সব খাতে ৫ বছরে ৫ লাখ কর্মী নেবে মালয়েশিয়া।
সমঝোতার পর মালয়েশিয়া সরকাররের মানবসম্পদমন্ত্রী ঢাকায় প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রীকে দেওয়া চিঠিতে মাত্র ২৫ টি এজেন্সি ও এর সঙ্গে সহযোগী (সাব-এজেন্ট) হিসেবে ১০টি করে এজেন্সি রাখার সিদ্ধান্ত জানায়। কিন্তু তাতে রাজি হননি প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমদ। তবে মালয়েশিয়ার অনড় অবস্থানের কারণে শেষ অব্দি বায়রার সাবেক মহাসচিব রুহুল আমিন স্বপনের এজেন্সিসহ ২৫টির তালিকা চূড়ান্ত করা হয়। তালিকাভুক্ত এসব এজেন্সির বাইরে কেউ মালয়েশিয়াতে কর্মী পাঠাতে পারবে না বলে অনড় ছিল মালয়েশিয়া।
এই সিন্ডিকেট নিয়ে শুরু হয় তুমুল সমালোচনা। আন্দোলনে মাঠে নামে রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর একটি বড় অংশ। এর প্রভাবে বায়রা নির্বাচনে বিজয়ী হয় সিন্ডিকেটবিরোধীরা। তবে এরপর শুরু হয় নতুন মেরুকরণ। ২৫ টি এজেন্সির বাইরে সিন্ডিকেটবিরোধীদের ২৫ থেকে ৭৫ টি এজেন্সি যুক্ত হওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করে।
প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, বিদ্যমান ২৫টি রিক্রুটিং এজেন্সির সঙ্গে আরও ২৫ থেকে ৫০ টিটি এজেন্সির কর্মী পাঠানোর অনুমতি লাভের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এই সংখ্যা ১০০ পর্যন্ত হতে পারে। তবে এখনো সেটি চুড়ান্ত না হওয়ায় পূর্ব নির্ধারিত ২৫ এজেন্সির মাধ্যমেই কর্মীরা মালয়েশিয়া যাচ্ছে।
গত ৮ আগস্ট বাংলাদেশ থেকে প্রথম দফায় ৫৩ জন কর্মী মালয়েশিয়ায় প্রবেশ করে। এরপর নিয়মিত ফ্লাইট না হয়ে হঠাৎ হঠাৎ কিছু কর্মী যাচ্ছে। দূতাবাস থেকে প্রায় ৪০ হাজার কর্মীর চাহিদাপত্র সত্যায়ন করলেও কর্মী যাচ্ছে হাতে গোনা।
কারা কত কর্মী পাঠালো
সিন্ডিকেটভুক্ত এজেন্সিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি কর্মী মালয়েশিয়াতে পাঠিয়েছে বিএম ট্রাভেলস, ৭৬৯ জন কর্মী। ৪১৬ জন কর্মী পাঠিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ফেনী-২ আসনের সরকারদলীয় সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারীর প্রতিষ্ঠান স্নিগ্ধা ওভারসিজ লিমিটেড। ৩২৭ জন কর্মী মালয়েশিয়া পাঠাতে পেরেছে ফাইভ এম ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড। এটি ফেনী-৩ আসনের সংসদ সদস্য ও জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রেসিডিয়াম সদস্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরীর প্রতিষ্ঠান।
এরপরই আছে আল ইসলাম ওভারসিজের মালিক জয়নাল আবেদিন জাফরের ছেলে রাশাদ আবেদিনের মালিকানাধীন এসওএস ইন্টারন্যাশনাল সার্ভিস, যারা কর্মী পাঠাতে পেরেছে মাত্র ৩১৬ জন।
সিন্ডিকেটবিরোধী ব্যবসায়ীরা যাকে এই সিন্ডিকেটের মূল নিয়ন্ত্রক বলে অভিযোগ করে আসছেন তিনি রুহুল আমিন স্বপন। জনশক্তি ব্যবসায়ীদের সংগঠন বায়রার সাবেক এই মহাসচিবের রিক্রুটিং এজেন্সি ক্যাথারসিস ইন্টারন্যাশনাল এখন পর্যন্ত মাত্র ২০৯ জন কর্মী মালয়েশিয়া পাঠাতে পেরেছে।
এ ছাড়া অরবিটাল ইন্টারন্যাশনাল পাঠিয়েছে মাত্র ১৯৬ জন কর্মী। সবচেয়ে কম, মাত্র সাতজন কর্মী পাঠিয়েছে ঐচি ইন্টারন্যাশনাল। এ ছাড়া গ্রিনল্যান্ড ওভারসিজ ১৪০ জন কর্মী পাঠিয়েছে।
অথচ এ বছরের ১৭ আগস্ট থেকে ১৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে নেপাল ৩৩ হাজার ২০ জন কর্মী মালয়েশিয়ায় পাঠায়। এর আগের মাসে (১৭ জুলাই-১৬ আগস্ট) যায় ২২ হাজার ৩৭৫ জন কর্মী।
বিকল্প পথে মালয়েশিয়া
মালয়েশিয়ায় কর্মীর অভাবে বহু প্রতিষ্ঠান অচল। জানা গেছে, মালয়েশিয়া নেপাল বা অন্যান্য দেশ থেকে কর্মী নিলেও সেখানকার কোম্পানিগুলোর কাছে বাংলাদেশি কর্মীদের চাহিদা ব্যাপক। তাই আপাতত বিকল্প পথে ১০ হাজার বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগের নতুন প্রক্রিয়াও শুরু করেছে মালয়েশিয়া।
বাংলাদেশ ওভারসিজ এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড সার্ভিসেস লিমিটেডের (বোয়েসল) মাধ্যমে জরুরি ভিত্তিতে এসব কর্মী নেয়া হবে। মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রণালয় গভর্নমেন্ট টু গভর্নমেন্ট (জি-টু-জি) সহযোগিতার মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে অভিবাসী কর্মী নিয়োগের জন্য এই এককালীন একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে বলে গত শুক্রবার এক চিঠিতে জানায় মালয়েশিয়ান এমপ্লয়ার্স ফেডারেশন (এমইএফ)।
কুয়ালালামপুরের বাংলাদেশ হাইকমিশনের কর্মকর্তারা জানান, এক মাসের মধ্যে এই ১০ হাজার কর্মী নেয়া হবে। এ জন্য কর্মীদের কোনো টাকা দিতে হবে না। বলা যায় শূন্য অভিবাসন খরচে এসব কর্মী নেয়া হবে। প্রথমবার নেয়ার পর যদি এই পদ্ধতি কাজে দেয় তা হলে এভাবে আরও কর্মী নিতে পারে দেশটি।
বোয়েসলের মহাব্যবস্থাপক (বৈদেশিক কর্মসংস্থান) বনানী বিশ্বাস জানান, ইতিমধ্যে মালয়েশিয়া কর্মী নিয়োগের জন্য আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। চাহিদা জানানোর পরপরই শ্রমিক পাঠানো শুরু হবে।
এর আগে ১০ এজেন্সির সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বেশি খরচে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর অভিযোগে ২০১৮ সালে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের শ্রমবাজার বন্ধ হয়ে যায়। এরপর শ্রমিক শোষণসহ নানা অভিযোগে ইউরোপ ও আমেরিকার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান মালয়েশিয়ার কিছু কোম্পানি থেকে পণ্য আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়। তাই এসব কোম্পানি এখন আর সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কর্মী নিয়োগ দিতে চায় না। বরং আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) মানদণ্ড মেনে কর্মী নিতে চায় তারা।
২০১৮ সালে বন্ধের আগে সে বছর প্রায় পৌনে ২ লাখ কর্মী দেশটিতে যায়। ১৯৯২ সাল থেকে ২০১৮ পর্যন্ত বৈধভাবে মালয়েশিয়া গেছেন সাড়ে ১০ লাখ বাংলাদেশি কর্মী।
জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর কর্মকর্তারা বলছেন, যাচাই-বাছাইয়ের কিছু জটিলতার কারণেই কর্মী পাঠানোর গতি তুলনামূলক কম। তাছাড়া এখনো নতুন চাহিদার কর্মীরা যাওয়া শুরু করেনি। যারা গেছেন তারা অনেক পুরোনো চাহিদা কর্মী।
জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) মহাপরিচালক মো. শহিদুল আলম বলেন, ‘সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী, বোয়েসলের মাধ্যমে নির্ধারিত বেসরকারি সংস্থাগুলোর বাইরে গিয়ে লোক পাঠাতে কোনো সমস্যা নেই। এর পাশাপাশি রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমেও মালয়েশিয়ায় কর্মী যাওয়ার সংখ্যা বাড়বে।’
মায়ানমার থেকে পণ্যের বিনিময়ে মাদক পাচারের সময় বিপুল পরিমাণ পণ্যসামগ্রীসহ তিনজন পাচারকারীকে আটক করেছে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড।
রবিবার (২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫) দুপুরে কোস্ট গার্ড মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার সিয়াম-উল-হক এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গত শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১টায় কোস্ট গার্ড আউটপোস্ট শাহপরী কর্তৃক মায়ানমারের নাইক্ষ্যনদিয়া সংলগ্ন সমুদ্র এলাকায় একটি বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হয়। এ সময় একটি সন্দেহজনক কাঠের বোটে তল্লাশি চালিয়ে অবৈধভাবে শুল্ক-কর ফাঁকি দিয়ে মায়ানমারে পাচারের সময় প্রায় ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা মূল্যের পণ্যসামগ্রী জব্দ করা হয়।
জব্দকৃত পণ্যসামগ্রীর মধ্যে রয়েছে— ৮৩ বস্তা সিমেন্ট, ৮৫ বস্তা সার ও ৩৪০ লিটার সয়াবিন তেল। এ সময় পাচার কাজে ব্যবহৃত কাঠের বোটসহ তিনজন পাচারকারীকে আটক করা হয়।
কোস্ট গার্ড জানায়, জব্দকৃত মালামাল, আটককৃত পাচারকারী ও বোটের বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
লেফটেন্যান্ট কমান্ডার সিয়াম-উল-হক আরও বলেন, “চোরাচালান রোধকল্পে কোস্ট গার্ড ভবিষ্যতেও এ ধরনের অভিযান অব্যাহত রাখবে।”
জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে মন্দিরে প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। রবিবার ২১ সেপ্টেম্বর গভীর রাতে পৌরসভার তাড়িয়াপাড়া এলাকার একটি মন্দিরে এ ঘটনা ঘটে।
মন্দির কমিটি জানায়, আসন্ন দুর্গাপূজার জন্য সাতটি প্রতিমা নির্মাণ করা হয়েছিল। পূজার সব আয়োজন শেষ করে প্রতিমা শিল্পীদের বিদায় দেওয়া হয় শনিবার রাতে। কিন্তু রাতের অন্ধকারে দুর্বৃত্তরা মন্দিরে ঢুকে প্রতিমা গুলোর মাথা সহ বিভিন্ন অংশ ভেঙে ফেলে পালিয়ে যায়।
আজ রবিবার সকালে মন্দির কমিটির সদস্যরা এসে প্রতিমাগুলো ভাঙা অবস্থায় দেখতে পান। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এবং সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে অভিযুক্ত হাবিবুর রহমান (৩৫) নামে এক ব্যক্তিকে আটক করেন। তিনি পৌরসভার শিমলা পল্লী গ্রামের সোহরাব মিস্ত্রির ছেলে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইয়াহিয়া আল মামুন জানান, দুর্গাপূজা শান্তিপূর্ণভাবে উদযাপন নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে।
ঘটনাটি এলাকায় ব্যাপক ক্ষোভ ও আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। স্থানীয়রা দ্রুত দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জে শোভাযাত্রা, আলোচনাসভা ও তথ্যচিত্র উপস্থাপনের মধ্য দিয়ে উদযাপন করা হয়েছে আন্তর্জাতিক শান্তি দিবস। রবিবার সকালে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে থেকে বের হয় শোভাযাত্রা। এতে নেতৃত্ব দেন জেলা প্রশাসক ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা স্কাউটস এর সভাপতি মো. আব্দুস সামাদ।
শোভাযাত্রায়, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা স্কাউটস এর কমিশনার ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো: নকিব হাসান তরফদার, জেলা স্কাউটসের সহকারী কমিশনার আসরাফুল আম্বিয়া সাগর, যুগ্ন সম্পাদক মারুফুল হক, জেলা স্কাউটস লিডার খসরু পারভেজ, সহকারী লিডার ট্রেনার কে এ এম মাহফুজুর রহমান, জেলা কাব লিডার রাকিব উদ্দিন আহমেদসহ বিভিন্ন ইউনিট লিডাররা স্কাউট ও গার্ল ইন স্কাউট সদস্যদের সাথে অংশ নেন।
শোভাযাত্রা শেষে জেলা স্কাউটস ভবনে দিবসটির উপর তথ্যচিত্র উপস্থাপন করা হয়। পরে আলোচনা সভার মধ্য দিয়ে শেষ হয় আয়োজন।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনে যোগ দিতে আজ দিবাগত রাতে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করবেন।
সফর সূচি অনুযায়ী, তিনি ২২ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে পৌঁছবেন এবং ২৬ সেপ্টেম্বর সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ভাষণ দেবেন। প্রধান উপদেষ্টা ২ অক্টোবর দেশে ফেরার কথা রয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার সিনিয়র সহকারী প্রেস সচিব ফয়েজ আহম্মদ বাসসকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
সফরে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে চারজন রাজনৈতিক নেতা থাকছে—বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেন এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা হুমায়ুন কবির।
এর আগে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, প্রধান উপদেষ্টা বিগত এক বছরে দেশে সংঘটিত সংস্কার এবং আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে একটি সত্যিকারের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার বিশ্ব নেতাদের সামনে তুলে ধরবেন।
এ ছাড়া তিনি আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সভাপতির সভাপতিত্বে ‘হাই লেভেল কনফারেন্স অন দ্য সিচুয়েশন অব রোহিঙ্গা মুসলিমস অ্যান্ড আদার মাইনোরিটিস ইন মিয়ানমার’ শীর্ষক এক উচ্চপর্যায়ের সভায়ও অংশ নেবেন।
চট্টগ্রামে সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের সম্পত্তির নথিপত্রের সন্ধানে তার স্ত্রী রুকমিলা জামানের ব্যক্তিগত গাড়িচালক ইলিয়াস তালুকদারের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে প্রায় ২৩ বস্তা নথিপত্র উদ্ধার করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
শনিবার রাত সাড়ে তিনটা থেকে রোববার ভোর পাঁচটা পর্যন্ত চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার শিকলবাহা ইউনিয়নে এই অভিযান পরিচালনা করেন দুদকের প্রধান কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. মশিউর রহমান।
উপ-পরিচালক মশিউর রহমান বলেন, সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের স্ত্রীর ব্যক্তিগত গাড়িচালকের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে প্রায় ২৩ বস্তা কাগজপত্র সহ বিভিন্ন নথিপত্র উদ্ধার করা হয়েছে।
দুদকের এই কর্মকর্তা আরো জানান, সাবেক ভূমিমন্ত্রীর মালিকানাধীন আরামিট গ্রুপসহ তার বিভিন্ন সম্পত্তি সংক্রান্ত মোট ২৩ বস্তা ডকুমেন্টস গত ১৬ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম নগরীর কালুরঘাট আরামিট গ্রুপের শিল্প প্রতিষ্ঠান থেকে রুকমিলা জামানের ব্যক্তিগত গাড়িচালক ইলিয়াস তালুকদারের বাড়িতে এনে রাখা হয়েছিল।
দুদক কর্মকর্তারা জানান, অর্থ পাঁচার, অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং ঘুষ লেনদেনের অভিযোগে সাইফুজ্জামান চৌধুরী ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। এর মধ্যে ১২৪ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ছয়টি মামলা দায়ের করেছে।
মামলার সূত্র ধরে গত বুধবার রাতে চট্টগ্রাম নগরের ডবলমুরিং এলাকায় অভিযান চালিয়ে সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের দুই সহযোগী মো. আব্দুল আজিজ ও উৎপল পালকে আটকের পর রিমান্ডে নিলে জিজ্ঞাসাবাদে দুদক জানতে পারে সাইফুজ্জামানের স্ত্রী রুকমিলা জামানের ব্যক্তিগত গাড়িচালক ইলিয়াস তালুকদারের বাড়িতে অসংখ্যা নথিপত্র লুকিয়ে রাখা হয়েছে। নথিপত্র উদ্ধারে প্রথম দফায় গত শুক্রবার সন্ধ্যায় বাড়িতে অভিযান চালিয়েছিল দুদক। তবে অভিযানের পূর্বেই নথিপত্র সরিয়ে নেওয়ায় শূন্য হাতে ফিরতে হয়েছিল দুদককে। ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ উদ্ধার করে দেখা যায়, নথিপত্র সরিয়ে ফেলতে। পরবর্তীতে রোববার রাত সাড়ে তিনটায় ফের অভিযানে নেমে ২৩ বস্তা নথিপত্র উদ্ধার করা হয়।
দুদকের উপপরিচালক মো. মশিউর রহমান বলেন, ঘটনাস্থল থেকে কাউকে আটক করা যায়নি। ড্রাইভার ইলিয়াস পলাতক রয়েছেন। এছাড়া ওসমান নামে যে প্রতিবেশীর ঘরে নথিগুলো সরানো হয়েছিল তিনিও পলাতক। সাবেক ভূমিমন্ত্রীর বিরুদ্ধে চলমান তদন্তের অংশ হিসেবে এই অভিযান। উদ্ধার হওয়া নথিপত্র বিশ্লেষণ করে এবিষয়ে বিস্তারিতপরে জানানো হবে।
এদিকে, সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ এবং তার স্ত্রী রুকমিলা জামানের বিরুদ্ধে গত বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামের জ্যেষ্ঠ মহানগর বিশেষ জজ মো. আবদুর রহমানের আদালতে ইন্টারপোলের রেড নোটিশ জারি করতে আবেদন করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এই বিষয়ে রোববার আদালত আদেশ দেওয়ার কথা রয়েছে। গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরপর গোপনে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান তৎকালীন আওয়ামী সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ।
মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার বামন্দী ইউনিয়নে ১৯৯১-৯২ সালে নির্মিত উপকেন্দ্র পশু হাসপাতালটি দীর্ঘ ৩১ বছর ধরে বন্ধ পড়ে আছে। খুলনা বিভাগের ঐতিহ্যবাহী বামন্দী পশুহাটের পাশে অবস্থিত এই হাসপাতাল একসময় খামারি ও ব্যবসায়ীদের বড় ভরসা হলেও নির্মাণের কয়েক বছর পরই তা বন্ধ হয়ে যায়।
এখন হাসপাতাল চত্বর পরিণত হয়েছে বালুর ঘাট ও মাদকসেবীদের আড্ডাখানায়। খামারিদের দাবি, জেলার সর্বোচ্চ ভ্যাট প্রদানকারী বামন্দী পশুহাটের স্বার্থেই পশু হাসপাতালটি দ্রুত চালু করা জরুরি।
স্থানীয় ব্যবসায়ী নেতা ও পশুপালনকারীরা জানিয়েছেন, হাটে প্রতি সপ্তাহে ৮ থেকে ১০ হাজার গরু-ছাগল কেনাবেচা হয়। কিন্তু পশু অসুস্থ হলে চিকিৎসার জন্য খামারিদের ১০ কিলোমিটার দূরে উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসে যেতে হয়, যা কষ্টসাধ্য ও ব্যয়বহুল।
গাংনী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. মোত্তালেব আলী বলেন, “দীর্ঘদিন অব্যবহৃত থাকার কারণে হাসপাতালটি এখন পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। তবে আমরা ইতিমধ্যে কাগজপত্র প্রস্তুত করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েছি।”
স্থানীয়দের একটাই দাবি— দ্রুত সংস্কার করে বামন্দী পশু হাসপাতাল চালু করা হোক, যাতে খামারি ও ব্যবসায়ীরা উপকৃত হয়।
পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে দুই দেশের সিমান্তরক্ষী বাহিনীর যৌথ সম্মতিতে বিভিন্ন সময়ে অবৈধ পথে ভারতে গিয়ে কারাভোগ শেষে ১৮ জন বাংলাদেশি নাগরিককে ফেরত দিয়েছে বিএসএফ। গত শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার কাজিপুর সিমান্তের ১৪৭ নম্বর আন্তর্জাতিক মেইন পিলার কাছে বিজিবি সদস্যদের হাতে তাদের হস্তান্তর করা হয়। সকলেই বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলার বাসিন্দা।
কুষ্টিয়া বিজিবি ৪৭ ব্যাটালিয়নের অধিন কাজিপুর বিওপির কোম্পানি কমান্ডার সুবেদার শাহাব উদ্দিন জানান, দেশের বিভিন্ন সিমান্ত দিয়ে বাংলাদশি নাগরিকরা অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশের সময় ভারতীয় সিমান্তরক্ষী বাহিনীর হাতে ধরা পড়ে।
পরে তাদের বিভিন্ন মেয়াদে দেওয়া সাজা ভোগ শেষে গত শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে বিএসএফ সদস্যরা বিজিবিকে হস্তান্তর করে।
ফেরত আসা ১৮ জনের তথ্য যাচাই-বাছাই শেষে গাংনী থানায় সৌপর্দ করা হবে।
ভারতের গান্দিনা বিএসএফ ১১ ব্যাটালিয়ন ক্যাম্পের এসি সুনিল কুমার যাদবসহ অন্যান্য সদস্যরা উপস্থিত ছিল।
ভারত থেকে কারাভোগ শেষে বাংলাদেশে ফেরত আসারা হলো, পটুয়াাখালী জেলার মেহেদী, চুয়াডাঙ্গার নুরজাহান, নড়াইলের ফরিদ শেখ, ঝিনাইদহের জিসান মণ্ডল, সাইদুল ইসলাম, চাঁদপুরের খোকন বেপারী, সাতক্ষীরার মাজেদা ঢালী, শামিম হোসেন, মিঠুন ঘোষ, খালিদা সরদার, মিলন কুমার, রাজশাহীর আব্দুল কুদ্দুস, যশোরের আহমেদ আলী, মৌলভীবাজারের লিটন দেব, চট্টগ্রামের শুভ মজুমদার, ঢাকার স্বাধীন রাজবংশী, মাদারিপুরের মহিউদ্দিন ফকির, নাসিমা শেখ কুষ্টিয়া।
ঝিনাইদহে রোপা আমন মৌসুমের শুরুতেই ধানের জমিতে দেখা দিয়েছে মাজরা পোকার আক্রমণ। সদ্য রোপণ করা চারাগুলো নষ্ট হয়ে যাওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। নানা কীটনাশক ব্যবহার করেও নিয়ন্ত্রণে আসছে না এ পোকা। এতে উৎপাদন খরচ যেমন বেড়ে যাচ্ছে, তেমনি ফলন নিয়ে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা। কৃষকদের আশঙ্কা, এভাবে চলতে থাকলে তারা মারাত্মক লোকসানের মুখে পড়বেন।
জানা গেছে, জেলার শৈলকুপা, সদর, কালীগঞ্জ, হরিণাকুন্ডু, মহেশপুর ও কোটচাঁদপুরসহ সব উপজেলাতেই একই পরিস্থিতি। ধান গাছের গোড়ায় আক্রমণ করছে মাজরা পোকা। এতে অনেক গাছ শুকিয়ে সাদা হয়ে যাচ্ছে। ফলে ব্যাহত হচ্ছে ধানের স্বাভাবিক বৃদ্ধি। কৃষকরা বলছেন, বারবার কীটনাশক স্প্রে করেও কোনো কার্যকর ফল পাওয়া যাচ্ছে না।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে ঝিনাইদহ জেলার ৬ উপজেলায় ১ লাখ ৪ হাজার হেক্টর জমিতে আমন ধানের আবাদ হয়েছে। নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৬৪ হাজার ১৩৯ মেট্রিক টন। তবে মৌসুমের শুরুতেই পোকার এমন আক্রমণ কৃষি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রাকে ঝুঁকির মুখে ফেলেছে।
কালীগঞ্জ উপজেলার কৃষক রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের কৃষির প্রধান ভরসা হচ্ছে আমন ধান। কিন্তু মৌসুমের শুরুতেই যদি পোকা আক্রমণ করে, তাহলে আমরা কীভাবে বাঁচব? সরকারি দিকনির্দেশনা আর সহযোগিতা ছাড়া আমাদের সামনে অন্ধকার ছাড়া কিছু নেই।’
শৈলকুপা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আরিফুজ্জামান বলেন, ‘এখনো আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। কৃষকরা যদি আমাদের নির্দেশনা মেনে চলেন, তাহলে পোকার আক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে। উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তারা ইতোমধ্যে মাঠ পর্যায়ে কাজ করছেন। আমরা কৃষকদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছি।’
শ্যামনগরে অবৈধভাবে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে ভারত থেকে আসা ১ কোটি ২০ লাখ টাকা মূল্যের ওষুধ জব্দ করেছে বাংলাদেশ কোস্ট কার্ড কৈখালী। কোস্ট গার্ড পশ্চিম জোনের মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মুনতাসীর ইবনে মহসিন বলেন, একটি অসাধু চক্র ভারত থেকে বিপুল পরিমাণ ওষুধ বাংলাদেশে নিয়ে আসবে এমন প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে গত শুক্রবার দুপুরে কোস্ট গার্ড স্টেশন কৈখালী কর্তৃক সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর থানাধীন মীরগ্যাং ও তৎসংলগ্ন এলাকায় একটি বিশেষ অভিযানে শুল্ক কর ফাঁকি দিয়ে আসা প্রায় ১ কোটি ২০ লাক টাকা মূল্যের বিপুল পরিমাণ ভারতীয় ওষুধ জব্দ করা হয়।
চুয়াডাঙ্গায় একটি আবাসিক হোটেল থেকে মামুনুর রহমান মাসুম (৩৫) নামে এক প্রকৌশলীর মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। শনিবার দুপুরে মামুনের কোনো সাড়া শব্দ না পেয়ে বিষয়টি পুলিশকে জানানো হয়। পরে ঘটনাস্থলে এসে নিহতের মরদেহ দেখতে পায় পুলিশ। নিহত মামুনুর রহমান মাসুম চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার কেদারগঞ্জ সবুজপাড়ার মুজিবর রহমানের ছেলে। তিনি পেশায় একজন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন। অতিরিক্ত নেশা করার কারণে তার মৃত্যু হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে পুলিশ।
পুলিশ জানায়, মামুনুর রহমান পরিবারের সঙ্গে ঢাকায় বসবাস করতেন। গত বৃহস্পতিবার মামুন তিন বন্ধুর সঙ্গে চুয়াডাঙ্গায় ঘুরতে এসে আবাসিক হোটেলে ওঠেন। তারা তিনজনই নেশাগ্রস্ত অবস্থায় ছিলেন। পরে মামুনের দুই বন্ধু চলে গেলেও তিনি হোটেলেই থেকে যান।
হোটেলের ম্যানেজার সাগর আলী জানান, সকালে হোটেলে এসে মামুনের মুখ দিয়ে ফেনা বের হতে দেখেন স্বজনরা। তখন জরুরি সেবা ৯৯৯-এ কল করে পুলিশকে খবর দেন তারা।
চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ওসি খালেদুর রহমান জানান, প্রাথমিক তদন্তে মরদেহে কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। বিষয়টি সিআইডি ও পিআইবির টিম তদন্ত করবে।
চীনে উৎপাদনকারী মার্কিন প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে দুটি জাহাজ কিনছে সরকার। আজ রোববার নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের (বিএসসি) সঙ্গে জাহাজ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান হেলেনিক ড্রাই বাল্ক ভেঞ্চারস এলএলসির চুক্তি স্বাক্ষর হবে। দেশের ইতিহাসে এবারই প্রথম বিএসসির নিজস্ব অর্থায়নে জাহাজ কেনা হচ্ছে। গত ১৭ আগস্ট দুটি বাল্ক ক্যারিয়ার জাহাজ ক্রয় সম্পর্কিত সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির সুপারিশ অনুমোদন করে। গত ৩ জুন এক হাজার ১৬২ কোটি ৯৬ লাখ টাকায় জাহাজ কেনার উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) অনুমোদন হয়। পরদিন অর্থাৎ ৪ জুন আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করে বিএসসি। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের এই প্রকল্পটি ২০২৭ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়নের কথা ছিল। সব কিছু ঠিক থাকলে চলতি বছরেই বাংলাদেশের বন্দরে ভিড়বে।
চাইলে বিএসসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কমডোর মাহমুদুল মালেক বলেন, আগামী ৫ বছরে আমাদের মোট ২২টি জাহাজ সংগ্রহের লক্ষ্য রয়েছে। দুটি জাহাজ সংগ্রহের মধ্যদিয়ে এই কাজে গতি বাড়ছে। এরই মধ্যে অনেকেই আগ্রহ দেখাচ্ছে। নতুন দুই জাহাজ বিএসসিতে যুক্ত হলে বছরে ১৫০ কোটি টাকা ফরেন কারেন্সি (বৈদেশিক মুদ্রা) আয় বাড়বে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আমরা দক্ষ শিপিং সেবা দিতে পারব। একই বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশ পরিবেশবান্ধব গ্রিন শিপিংয়ের সম্মান অর্জন করবে।
বিএসসি সূত্র বলছে, প্রস্তাবে আসা জাহাজগুলোর বিভিন্ন কারিগরি বিষয়াদি যাচাই-বাছাই করা হয়েছে। সেই সঙ্গে মূল্যায়ন কমিটি সরেজমিনে জাহাজের নির্মাণ অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে। জাহাজের স্পেসিফিকেশন প্রস্তুত এবং জাহাজের কারিগরি মূল্যায়নে বিশেষজ্ঞ সেবা গ্রহণ করা হয়। তারপর কারিগরি ও আর্থিক মূল্যায়ন পরবর্তীতে হেলেনিক ড্রাই বাল্ক ভেঞ্চারসের প্রস্তাবিত দুটি জাহাজের মোট দাম ৭৬.৭০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার নির্ধারণ করা হয়েছে। এটি দাপ্তরিক প্রাক্কলিত মূল্য ৮০.৪০ মিলিয়নের চেয়ে ৪.৬০ শতাংশ কম।
বিএসসির বহরে যুক্ত হতে যাওয়া জাহাজগুলোতে- জ্বালানি খরচ হ্রাস ও পরিচালন দক্ষতা বেশি; বাতাসের বাধা কমিয়ে গতি ও জ্বালানি সাশ্রয় নিশ্চিত করে; হাইড্রোডাইনামিক ড্র্যাগ কমিয়ে জাহাজের গতি বৃদ্ধি ও জ্বালানি সাশ্রয় করে; প্রধান ইঞ্জিন থেকে নাইট্রোজেন অক্সাইড নির্গমন কার্যকরভাবে নিয়ন্ত্রণ করে, যা পরিবেশ দূষণ উল্লেখযোগ্যভাবে কমায়; নকশা ও প্রযুক্তিগত সমাধানগুলো জ্বালানি সাশ্রয়ী, পরিবেশবান্ধব এবং আন্তর্জাতিক পরিবেশগত মানদণ্ডসম্মত এবং আন্তর্জাতিক মেরিটাইম সংস্থার নির্ধারিত সর্বশেষ পরিবেশগত মানদণ্ড পূরণ করে। জাহাজে উচ্চমানের ইউরোপীয় ও জাপানি যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হয়েছে। জার্মান লাইসেন্সে জাহাজগুলো চীনে উৎপাদন করা হয়েছে। স্পেনের পাম্প ও নরওয়ের কম্প্রেসার ব্যবহার করা হয়েছে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, চুক্তি স্বাক্ষরের পর আগামী অক্টোবরে প্রথম জাহাজ এবং আগামী ডিসেম্বরে দ্বিতীয় জাহাজ বিএসসিকে হস্তান্তর করা হবে। আধুনিক কারিগরি বৈশিষ্ট্য ও পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি সমৃদ্ধ এই দুটি জাহাজ বহরে যুক্ত হলে বিএসসির নিজস্ব পরিবহন সক্ষমতা প্রায় এক লাখ ২০ হাজার ডিডব্লিউটি বৃদ্ধি পাবে, যা দেশের সমুদ্র বাণিজ্যে একটি উল্লেখযোগ্য সংযোজন হবে।
৫৩ বছর আগে যাত্রা করা বিএসসির বহরে শুরুর দিকে মাত্র দুটি জাহাজ ছিল। এরপর বিভিন্ন সময়ে ৪৪টি যুক্ত হয়। তবে আয়ুষ্কাল ফুরিয়ে যাওয়ায় নব্বইয়ের দশকের শেষে ৩৬টিকেই পাঠানো হয় অবসরে। কমতে কমতে জাহাজের সংখ্যা আবারও দুটিতে নেমে আসে। ২০১৮ সালে চীনের কাছ থেকে কেনা ছয়টি যুক্ত হলে বিএসসির বহরে জাহাজের সংখ্যা দাঁড়ায় আটটিতে।
তবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের সময় ইউক্রেনে ‘বাংলার সমৃদ্ধি’ জাহাজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। গত বছরের সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে অগ্নিকাণ্ডের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ‘এমটি বাংলার জ্যোতি’ ও ‘এমটি বাংলার সৌরভ’। পরে এ দুটি জাহাজ স্ক্র্যাপ হিসেবে বিক্রি করে দেওয়া হয়। ফলে বর্তমানে বিএসসির বহরে জাহাজের সংখ্যা কমে পাঁচটিতে নেমে এসেছে, যা সংস্থাটির নতুন জাহাজ সংগ্রহের প্রয়োজনীয়তা আরও বাড়িয়ে তুলে। চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে বিএসসির জন্য আরেও তিনটি জাহাজ কেনার বিষয় প্রক্রিয়াধীন। সব মিলিয়ে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে বিএসসির জন্য পাঁচটি জাহাজ কেনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তা ছাড়া দক্ষিণ কোরিয়ার কাছ থেকে আরও ছয়টি জাহাজ কেনার বিষয়েও প্রাথমিক অনুমোদন দিয়েছে বিএসসির পর্ষদ।
ময়মনসিংহের ভালুকা পৌরসভার ২নং ওয়ার্ড ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক সংলগ্ন এলাকায় কয়েক বছর ধরে সামান্য বৃষ্টিতেই দেখা দিচ্ছে জলাবদ্ধতা। ঘর-বাড়িতে পানি ঢুকে পড়ায় এলাকাবাসী নানামুখী দুর্ভোগে পড়ছেন প্রতিনিয়তই ।
ভুক্তভোগীরা জানান, পৌর এলাকার ২ নং ওয়ার্ডের তাহমিনা হাসপাতাল থেকে বাংলালিংক টাওয়ার পর্যন্ত রাস্তাজুড়ে বৃষ্টির পানি জমে থাকে দীর্ঘ সময়। অনেক বাসার নিচতলায়ও পানি প্রবেশ করছে। জলাশয় ভরাট, পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকা এবং ড্রেনেজ সমস্যার কারণে এ দুর্ভোগ দিন দিন বাড়ছে। এ অবস্থায় স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে বলেও জানান তারা। অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক নুরুল ইসলাম বলেন, আগে এই এলাকায় এমন সমস্যা ছিল না। কিন্তু এখন চারপাশের জলাশয় ভরাট হয়ে গেছে, ড্রেন নেই, পানি বের হওয়ার রাস্তা নেই। সামান্য বৃষ্টিতেই রাস্তা ঘাট ডুবে যায়। ঘরে পর্যন্ত পানি উঠে যায়।
গৃহিণী সালমা আক্তার জানান, রান্নাঘরে পানি ঢুকে গেলে চুলা জ্বালানোই যায় না। কখনো কখনো আমাদের বাইরে থেকে খাবার কিনে খেতে হয়। খরচও বাড়ে, কষ্টও হয়।
স্কুল শিক্ষার্থী মরিয়ম আক্তার জানান, পানি জমলে রাস্তায় হাঁটা যায় না। স্কুলে যেতে জামা-জুতো ভিজে যায়। অনেকে তাই স্কুলেই যায় না।
ভালুকা পৌর প্রশাসক ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. ইকবাল হোসাইন জানান, এই সমস্যার সমাধানে আমরা কাজ করার পরিকল্পনা নিয়েছি। তবে কিছু জমি সংক্রান্ত জটিলতা থাকায় আগে পদক্ষেপ নেওয়া যায়নি। এডিপির বরাদ্দ এলে আগামী অর্থবছরে রাস্তা ও ড্রেন নির্মাণসহ জলাবদ্ধতা নিরসনে কাজ শুরু করা হবে।
আসন্ন শারদীয় দুর্গোৎসব উপলক্ষে কুমিল্লা মহানগরীর ১৩১টি পূজামণ্ডপে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে উপহার হিসেবে নগদ বিতরণ করা হয়েছে। শনিবার দুপুরে নগরীর ধর্মসাগর পাড়স্থ কুমিল্লা মহানগর বিএনপির কার্যালয়ে এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই উপহার প্রদান করা হয়। প্রধান অতিথি হিসেবে উপহার বিতরণ করেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাজী আমিন উর রশিদ ইয়াসিন।
অনুষ্ঠানে মহানগরীর বিভিন্ন পূজামণ্ডপের প্রতিনিধিরা উপস্থিত থেকে উপহার গ্রহণ করেন।
এসময় উপস্থিত ছিলেন কুমিল্লা মহানগর বিএনপির সভাপতি উদবাতুল বারি আবু, সাধারণ সম্পাদক ইউসুফ মোল্লা টিপু, সাংগঠনিক সম্পাদক রাজিউর রাজিব, যুগ্ম সম্পাদক আবদুল্লাহ আল মামুন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক শফিকুল ইসলাম শফিকসহ মহানগর ও ওয়ার্ড বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা।
বক্তারা বলেন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) সবসময় দেশের মানুষের পাশে থেকেছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। ধর্ম যার যার, উৎসব সবার—এই মন্ত্রে বিশ্বাস করে বিএনপি। শারদীয় দুর্গাপূজা হচ্ছে বাঙালি সংস্কৃতির একটি বড় অংশ। এখানে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে দলের পক্ষ থেকে প্রতিবারই বিভিন্ন ধরনের সহযোগিতা করা হয়ে থাকে।
হাজী আমিনুর রশিদ ইয়াসিন বলেন, “তারেক রহমান সব ধর্ম-বর্ণের মানুষের প্রতি সমান সহানুভূতি ও শ্রদ্ধা পোষণ করেন। কুমিল্লার ১৩১টি পূজামণ্ডপে আজকের এই উপহার প্রদান তারেক রহমানের আন্তরিক ভালোবাসারই বহিঃপ্রকাশ। বিএনপি বিশ্বাস করে—একটি সুস্থ ও সুন্দর বাংলাদেশ গড়তে হলে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা করতেই হবে।”
অনুষ্ঠান শেষে পূজামণ্ডপ প্রতিনিধিরা বিএনপি ও তারেক রহমানের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং বলেন, এ ধরনের উদ্যোগ উৎসবকে আরও আনন্দঘন করে তোলে।