সুনামগঞ্জ শহর ছিল দ্বীপের মতো। শহরের সাতটি খাল দিয়ে মানুষ নৌকা নিয়ে চলাচল করত। বৃষ্টির পানি এসব খাল দিয়ে চলে যেত হাওরে। তিন যুগ আগেও সুনামগঞ্জের মানুষ জানত না জলাবদ্ধতা কী। আর এখন বৃষ্টি হলেই জেলা শহরটির মানুষজনকে পানিতে আটকা পড়তে হয়।
সুনামগঞ্জ পৌরসভার যে সাতটি খালে একসময় স্রোত ছিল তার পাঁচটিরই এখন অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া দায়। এগুলো হলো বড়পাড়া খাল, তেঘরিয়া খাল, কামারখাল, বলাইখালী খাল, নলুয়াখালী খাল, ধোপাখালী খাল ও ঘাবরখালী খাল।
অবৈধ দখলদারদের কারসাজিতে এসব খালের ওপর এখন বাসাবাড়ি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ, মাদ্রাসা, কবরস্থান ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। মধ্য শহরের কামারখাল দখল করে রাখা ৮৪টি অবৈধ স্থাপনা চিহ্নিত হলেও উদ্ধারে কোনো অগ্রগতি নেই। ফলে পৌরসভার তৈরি করা ছোট ছোট ড্রেন পানি নিষ্কাশনের কাজে আসছে না। সামান্য বৃষ্টি হলেই তৈরি হচ্ছে জলাবদ্ধতা। নর্দমার পানি ঘরে ঢুকছে। অস্বাস্থ্যকর ও অসহনীয় পরিবেশে থাকতে হচ্ছে পৌরবাসীদের। গত এক সপ্তাহের বৃষ্টিতে সুনামগঞ্জ পৌরসভার বেশ কিছু এলাকা বসবাসের অযোগ্য হওয়ার মতো অবস্থা। বাইরে বৃষ্টি আর ঘরের ভেতর পানি এই পরিস্থিতিতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে তাদের।
এই খালগুলো পুনরুদ্ধারে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) উচ্চ আদালতে মামলা করেছে। আদালত সম্প্রতি সুনামগঞ্জ পৌর শহর ও আশপাশের এলাকার পাঁচটি খালের দখলদারদের পূর্ণ তালিকা করে তাদের উচ্ছেদের আদেশ দিয়েছেন। একই সঙ্গে খালগুলোর সীমানা নির্ধারণেরও নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
সুনামগঞ্জ শহরের খালগুলোর উদ্ধারকাজ বিলম্বিত হওয়ায় ক্ষোভ জানিয়েছেন সুনামগঞ্জবাসী। গত মঙ্গলবার সুনামগঞ্জ শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনে কামারখালসহ পাঁচ খাল উদ্ধারের দাবিতে মানববন্ধন হয়েছে।
কাদের দখলে খাল
মধ্য শহরের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত গুরুত্বপূর্ণ ‘কামারখাল’ অস্তিত্ব হারানো খালগুলোর মধ্যে অন্যতম। সুরমা নদীর পাড়ের উত্তর আরপিননগর থেকে শুরু হয়ে রায়পাড়া, পুরাতন বাসস্ট্যান্ড, কালীবাড়ী-বাঁধনপাড়া হয়ে বাঁধনপাড়া-ক্ষিতিশকর পয়েন্টমুখী সড়ক পার হয়ে কিছ দূর এগিয়ে শেষ হয়েছিল খালটি। এই কামারখালে এখন আছে মসজিদ, মাদ্রাসা, স্কুল, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, বহুতল বাড়িসহ ৮৪টি অবৈধ স্থাপনা। দখলদারদের তালিকা সম্প্রতি চূড়ান্ত করেছে সুনামগঞ্জ সদর ইউনিয়ন ভূমি অফিস। এগুলো হচ্ছে সুনামগঞ্জ পৌর শহরের উত্তর আরপিননগরের খুশবুল মিয়া, রশিদ বখত মুকুল, মইনুল মিয়া, রাসেল মিয়া, কামরুল ইসলাম, সেলিম মিয়া, মহিমা বেগম, অদুদ মিয়া, সিরাজুল ইসলাম, মধ্য আরপিননগরের আলী নুর, আপ্তাবুন নেছা, আব্দুল মনির রনি, আব্দুল হামিদ, মো. খসরু মিয়া, পপি বেগম, ফরহাদ মিয়া, গোলাম হোসেন, সুজন মিয়া, আবু হানিফা, লুৎফুর রহমান, মুজিবুর রহমান, সিরাজ মিয়া, খোরসেদ আলম, রুমি বেগম, মোর্শেদ আলী, খায়রুল ইসলাম, রুকম চৌধুরী, মানিক মিয়া, সনৎ কুমার সোম, কৃষ্ণ রায়, রায়পাড়ার চন্দন সাহা, মো. মইনুদ্দিন, আব্দুল মতিন, বড়পাড়ার আবু জাফর, হাজীপাড়ার রানু দাস, পুরাতন বাসস্ট্যান্ডের গোলাম জাকেরীন, গোলাম কিবরিয়া, গোলাম দবির, গোলাম কবির, আরপিননগরের সিরাজুল ইসলাম, স্টেশন রোডের আব্দুল হাসিম, আরপিননগরের মো. আলী, পুরাতন বাসস্ট্যান্ডের গোলাম সাবেরীন সাবু, কালীবাড়ীর স্বপন কুমার দাস, চন্দন কুমার সাহা, সুদীপ দেব, নানু দেব, জামাইপাড়ার আয়েশা আজাদ, দিগ্বীজয় চৌধুরী, শামীম তালুকদার, নুর মিয়া, আব্দুল হান্নান, দিল হক, এনামুল হক, মঙ্গল প্রাচী, সুরঞ্জন পাসী, আব্দুর রউফ (জনর), সুনু মিয়া, আজর আলী গেদা, বাঁধনপাড়ার সাকির আহমদ, মহিলা কলেজ রোডের তোফাজ্জল হোসেন, বাঁধনপাড়ার আকবর আলী, রাহেলা খাতুন, বাঁধনপাড়ার আকবর আলী, বিনয় পাল, হাসমত আলী, আরজ আলী, সত্তার মিয়া, খোকন মিয়া, মখদ্দছ আলী। এই তালিকার সবাই বহুতল ভবনসহ স্থায়ী স্থাপনা করে খাল অবৈধভাবে দখলে রেখেছেন।
তাদের তৈরি করা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আছে কমিউনিটি সেন্টার, উত্তর আরপিননগর পৌর প্রাথমিক বিদ্যালয়, সুনামগঞ্জ পৌরসভার গণশৌচাগার, কালীবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বুলচান্দ উচ্চবিদ্যালয়ের দেয়াল, সুনামগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজের দেয়াল ও গার্ডরুম, মধ্য আরপিননগরের লুৎফিয়া হুসাইনিয়া নূরজাহান বখত মাদ্রাসা, আরপিননগর মসজিদের ইমাম মুয়াজ্জিনের বাসস্থান এবং মধ্য আরপিননগর কবরস্থান।
এ ছাড়া তেঘরিয়া, বড়পাড়াখাল, বলাইখালী ও নলুয়াখালী খালও গত তিন যুগের মধ্যে দখল হয়েছে। কেবল ধোপাখালী ও ঘাবরখালী খাল এখনো দৃশ্যমান রয়েছে।
দখলদারের তালিকায় থাকা পুরাতন বাসস্ট্যান্ড এলাকার গোলাম সাবেরীন সাবু বলেন, ‘কামারখালের এই অংশ নিয়ে জেলা প্রশাসকের সঙ্গে আদালতে আমাদের মামলা চলছে। মামলায় ইতোমধ্যে আমাদের পক্ষে ডিক্রি হয়েছে। এরপর আর সরকারপক্ষে আপিল করা হয়নি।’
সুনামগঞ্জ পৌরসভার সাবেক ভারপ্রাপ্ত মেয়র নুরুল ইসলাম বজলু বললেন, ‘আমি যখন দায়িত্বে ছিলাম খাল চিহ্নিতের কিছু কাজ হয়েছিল। কামারখালের সুরমা নদীর লাগোয়া উত্তর আরপিননগরের মুখটি আশির দশকে প্রয়াত পৌর চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেনের সময় বন্ধ করা হয়েছিল। এরপর প্রয়াত পৌর চেয়ারম্যান মমিনুল মউজদীন ও আয়ুব বখ্ত জগলুলের সময়ও আরও দুটি স্থাপনা হয়েছে ওখানে। শহরবাসীর প্রয়োজনে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন বলে মনে করি আমি।’
সুনামগঞ্জ পৌরসভার মেয়র নাদের বখ্ত বলেন, ‘কয়েক বছর হয় বৃষ্টির মৌসুম এলেই প্রকৃতি আমাদের জানান দিয়ে যাচ্ছে। এই শহরে বাস করতে চাইলে পানি নিষ্কাশনের বড় আকারের ব্যবস্থা করা ছাড়া উপায় নেই। কয়েক বছর ধরে বৃষ্টি হলে আমি নিজেও জলাবদ্ধতায় পড়ি। এর কষ্ট আমি বুঝি। খালগুলো উদ্ধার করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। আধাআধি কাজ করলে এটি অর্থহীন হবে। এ জন্য সবার সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন। জনগণ, প্রশাসন ও পৌরসভার সমন্বিত উদ্যোগ আমি প্রত্যাশা করছি।’
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সালমা পারভিন বললেন, ‘আদালতে নির্দেশনা প্রতিপালনের চেষ্টা করছি আমরা। ইতোমধ্যে কামারখালের দখলদার চিহ্নিত করা হয়েছে। বড়পাড়া খাল চিহ্নিত করতে গত সোমবার প্রশাসনের সর্বোচ্চ জনবল নিয়ে কাজ করা হয়েছে। ওখানেও দখলদার চিহ্নিত হয়েছে। শিগগিরই লাল দাগ দেয়াও শুরু হবে। অন্য তিন খাল উদ্ধার নিয়েও প্রাথমিক কাজ শুরু হয়েছে।’
খালগুলো উদ্ধারে বেলার নোটিশ
গত ২০ জুন সুনামগঞ্জ পৌর শহরের পাঁচটি খাল উদ্ধারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ভূমি মন্ত্রণালয়, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের সচিব, জাতীয় নদীরক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, পরিবেশ অধিদপ্তরের সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, সুনামগঞ্জ পৌরসভার মেয়র, সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পওর বিভাগ-১) নির্বাহী প্রকৌশলী, সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি), বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড সুনামগঞ্জ কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী বরাবর আবার নোটিশ দিয়েছে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)। বেলার পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এস হাসানুল বান্না ডাকযোগে এই নোটিশ পাঠান। নোটিশে সুনামগঞ্জ শহরের তেঘরিয়া খাল, বড়পাড়া খাল, কামারখাল, বলাইখালী খাল ও নলুয়াখালী খালের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
নোটিশে বলা হয়, এসব খালের দখলদারদের চিহ্নিত করে তাদের উচ্ছেদে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বেলার পক্ষ থেকে হাইকোর্টে একটি মামলা করা হয়। আদালত চলতি বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি শুনানি শেষে এসব খালের দখলদারদের তালিকা করে তাদের উচ্ছেদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে আদেশ দেন। কিন্তু এই আদেশের পরও কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। উল্টো শহরের তেঘরিয়া ও বড়পাড়া খালের ওপর ড্রেন নির্মাণ করা হচ্ছে। যেটি আদালত অবমাননার শামিল।
বেলার সিলেট বিভাগের সমন্বয়ক আইনজীবী শাহ শাহেদা আক্তার বলেন, এসব খাল উদ্ধারে স্থানীয়ভাবে যেমন দাবি আছে, তেমনি আমরাও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে নানাভাবে যোগাযোগ করেছি। দাবি জানিয়েছি। কিন্তু কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। তাই নোটিশ দেয়া হয়েছে। এর পরও কোনো পদক্ষেপ না নেয়া হলে পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।
যশোর-বেনাপোল মহাসড়ক সুরক্ষায় অতিরিক্ত পণ্য পরিবহন বন্ধে বেনাপোল এক্সেল লোড কন্ট্রোল স্টেশনটি পরিচালনায় বছরে সরকারের ২ কোটি ২৩ লাখ টাকা খরচ হলেও কোনো সুফল নেই। সড়কে পণ্য পরিবহনকারী বাণিজ্যিক সংগঠনগুলোর সহযোগিতা না পাওয়ায় সেবা দিতে পারছে না। এদিকে ব্যবসায়ীদের অভিযোগ ভোমরা ও নওয়াপাড়া বন্দর সড়ক বাদ রেখে কেবল বেনাপোল সড়কে স্কেল চালু করলে এ রুটে বাণিজ্য কমার আশঙ্কায় স্কেল ব্যবহারে তাদের আপত্তি রয়েছে।
প্রতিবছর সড়ক উন্নয়নে সরকারি-বেসরকারি সংস্থা হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করছেন। তবে পণ্য পরিবহনকারী ট্রাকচালকরা সড়ক আইন না মানায় অল্প দিনেই সড়কগুলো ব্যবহারের অনুপোযোগী হয়ে পড়ছে। এতে সড়ক ব্যয় যেমন বাড়ছে তেমনি বাড়ছে দুর্ঘটনা। সড়ক পথে ভারতের সঙ্গে যে বাণিজ্য হয় যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় তার ৮০ শতাংশ হয় বেনাপোল স্থলবন্দর ব্যবহার করে। বাংলাদেশ-জাপান বন্ধুত্বের সম্পর্ক বাড়াতে জাপানি এনজিও সংস্থা জাইকার অর্থায়নে ১৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০২২ সালে যশোর-বেনাপোল মহাসড়ক সুরক্ষায় বেনাপোল পৌর গেট এলাকায় সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) ওয়িং স্কেল স্থাপন করে। পরবর্তীতে ২০২৪ সালের ১৫ আগস্ট ওয়িংস্কেল পরিচালনায় ৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা চুক্তিতে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ইউডিসিকে টেন্ডার দেয় সরকার। গত বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে কর্মকর্তা প্রকৌশলী ও কর্মচারীসহ স্কেল পরিচালনায় ৪২ জন কাজ করছেন। নিরাপত্তায় রয়েছে ৭ জন আনসার সদস্য। অতিরিক্ত পণ্য পরিবহনে প্রথম টনে ৫ হাজার ও দ্বিতীয় টনপ্রতি ১০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। তবে স্কেলে অতিরিক্ত পণ্য শনাক্ত হলেও জরিমানা আদায় বা ওভার লোড বন্ধে কোনো প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ নিতে পারছে না কর্তৃপক্ষ। এতে সরকারের বিপুল পরিমাণে অর্থ বিফলে যাচ্ছে এবং অতিরিক্ত পণ্য বহনে সড়ক নষ্ট হচ্ছে। পরিবহন ব্যবসায়ীরা বলেন, নওয়াপাড়া ও ভোমরা বন্দর সড়ক বাদ রেখে কেবল বেনাপোলে স্কেল চালু করলে এ রুটে ব্যবসা কমে আসবে। পার্শ্ববর্তী বন্দরগুলোতে স্কেল চালু হলে বেনাপোল এক্সেল লোড কন্ট্রোল স্টেশনটি ব্যবহার করবেন ব্যবসায়ীরা।
বেনাপোল ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি মালিক সমিতির সভাপতি আতিকুজ্জমান সনি বলেন, পদ্মা নদীর এপারে বেনাপোলসহ আরও চারটি বন্দর রয়েছে। ভোমরা বন্দর, নওয়াপাড়া বন্দর ও মোংলা বন্দর। ভোমরা বন্দর, নওয়াপাড়া বন্দর ও মোংলা বন্দরে ওজন নিয়ন্ত্রণ স্কেল স্থাপন না করে বেনাপোল বন্দরসংলগ্ন সড়কে ওজন নিয়ন্ত্রণ স্কেল স্থাপন করে আমাদের সঙ্গে বৈষম্যমূলক আচরণ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, সড়ক সুরক্ষায় বেনাপোল যশোর সড়কে ওজন স্কেল স্থাপনকে সাধুবাদ জানায়। তবে অন্য তিনটি বন্দরে ওজন স্কেল স্থাপন করে একত্রে চারটি বন্দর সংলগ্ন সড়কে ওজন স্কেল চালু করার দাবি জানায়। শুধু বেনাপোলে সড়কে ওজন স্কেল চালু করা করা হলে ব্যবসায়ীরা বেনাপোল বন্দর ছেড়ে অন্য বন্দরে চলে যাবে। ক্ষতিগ্রস্ত হবে বেনাপোল বন্দর। এ জন্য এ স্কেল ব্যবহার করা সম্ভব হচ্ছে না।
বেনাপোলের ব্যবসায়ী সাজেদুর রহমান জানান, বেনাপোল-যশোর সড়কের পৌর গেট এলাকায় ওজন নিয়ন্ত্রণ স্কেল স্থাপন করার ফলে ব্যবসায়ীদের মাঝে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিবেশী মোংলা, ভোমরা ও নওয়াপাড়া বন্দরে কোনো ওজন নিয়ন্ত্রণ স্কেল স্থাপন করা হয়নি। বেনাপোল সড়কের ওজন স্কেল চালু করা হলে এ বন্দর দিয়ে ব্যবসা করা সম্ভব নয়। অন্য বন্দর দিয়ে ট্রাকে মাল একটু কম বা বেশি হলেও কোনো সমস্যা হবে না। তাহলে কেন আমি এ বন্দর দিয়ে মাল এনে জরিমানা দিব? পার্শ্ববর্তী অন্য বন্দরগুলোয় ওজন নিয়ন্ত্রণ স্কেল চালু করা হলে আর কোনো সমস্যা থাকবে না।
নাভারন হাইওয়ে পুলিশের ওসি রোকনুজ্জামান জানান, বেনাপোল দেশের বৃহত্তম স্থলবন্দর। এ মহাসড়ক দিয়ে প্রতিদিন শত শত পণ্যবাহী ট্রাক যাতায়াত করে থাকে। এ বন্দরে আসা পণ্যবাহী ট্রাকগুলো বেনাপোল-যশোর সড়ক ব্যবহার করে থাকেন। ট্রাকগুলোতে অতিরিক্ত পণ্য বহন করলেও কোনো ওজন স্লিপ না থাকার কারণে আমরা তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারছি না। পণ্যবাহী ট্রাকের ওজন নিয়ন্ত্রণ করার জন্য বেনাপোল পৌর গেটে ওজন নিয়ন্ত্রণ স্কেল স্থাপন করা হয়েছে। তবে ব্যবসায়ীদের অসহযোগিতার কারণে কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ওজন নিয়ন্ত্রণ স্কেলটি চালু করা সম্ভব হচ্ছে না। এ স্কেলটি চালু করার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
কাজের উদ্দেশ্যে কক্সবাজার গিয়ে পাঁচদিন ধরে নিখোঁজ রয়েছেন সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলার একই গ্রামের পাঁচ তরুণসহ ছয়জন। তাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও কারও কোনো সন্ধান পাচ্ছেন না পরিবারের সদস্যরা।
নিখোঁজরা হলেন— জকিগঞ্জ উপজেলার ৪ নম্বর খলাছড়া ইউনিয়নের পশ্চিম লোহারমহল গ্রামের মৃত লুকুছ মিয়ার ছেলে রশিদ আহমদ (২০), ফারুক আহমদের ছেলে মারুফ আহমদ (১৮), আজির উদ্দিনের ছেলে শাহিন আহমদ (২১), মৃত দুরাই মিয়ার ছেলে এমাদ উদ্দিন (২২), সফর উদ্দিনের ছেলে খালেদ হাসান (১৯) ও মৃত সরবদির ছেলে আব্দুল জলিল (৫৫)।
তারা সবাই উপজেলার ৪ নম্বর খলাছড়া ইউনিয়নের পশ্চিম লোহার মহল গ্রামের বাসিন্দা।
নিখোঁজদের পরিবারের সদস্যরা জানায়, মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) বিকালে সিলেট থেকে কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন তারা। পরদিন ১৬ এপ্রিল (বুধবার) সকালে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে পৌঁছা পর্যন্ত পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও এরপর থেকে তাদের সকলের মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।
এদিকে পুলিশ বলছে, মোবাইলের লোকেশন ট্র্যাকিং করে ছয়জনের অবস্থান কক্সবাজার দেখাচ্ছে। পুলিশ এনিয়ে কাজ করছে।
নিখোঁজের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন খলাছড়া ইউনিয়ন পরিষদের ৪ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য সফর উদ্দিন।
নিখোঁজ এমাদ উদ্দিনের চাচাতো ভাই আব্দুল বাছিত দুলাল বলেন, ‘কক্সবাজার পৌঁছার পর জানিয়েছিল পৌঁছেছে। এরপর থেকে তাদের ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। পরিবারের লোকজন কক্সবাজারে যাচ্ছেন। সেখানে গিয়ে থানায় জিডি করবেন। জকিগঞ্জ থানায় অভিযোগ নিচ্ছে না।’
নিখোঁজ রশিদ আহমদের ভাই আব্দুল বাছিত বলেন, ‘৪ থেকে ৫ বছর ধরে রশিদ চট্টগ্রামে কাজ করে। বিভিন্ন সময়ে বাড়িতে আসা যাওয়া ছিল। কক্সবাজার এই প্রথম গিয়েছে। ওইখানে এক ঠিকাদারের অধীনে কাজ করতো। ওইদিনও ওই ঠিকাদারের কাছে তারা যায়। এরপর থেকেই তাদের মোবাইল ফোন বন্ধ। যদি তারা স্বেচ্ছায় আত্মগোপনে থাকতো বা কেউ জিম্মি করত, তাহলে তো টাকা পয়সা চাইতো, এরকম কিছুই না। আমাদের ধারণা তাদের ওইখানে যে লোক নিয়েছে, ওই লোকই কিছু করেছে।’
তবে ঠিকাদারের নাম ঠিকানা কোনো কিছু জানাতে পারেননি নিখোঁজ রশিদের ভাই বাছিত।
নিখোঁজ খালেদ হাসানের বাবা ও ইউপি সদস্য সফর উদ্দিন বলেন, ‘তারা প্রায় সময়ে কাজের জন্য চট্টগ্রাম ৫ থেকে ৬ মাস থাকে। ঈদে বা ওয়াজের সময় বাড়িতে আসে। আবার সেখানে গিয়ে কাজ করত। মঙ্গলবারের পর থেকে আর কোনো যোগাযোগ নেই। গতকাল সারারাত থানায় ছিলাম।
তিনি বলেন, ‘ঠিকাদারের মোবাইল বন্ধ। তবে ঠিকাদারের নাম রশিদ ও তার সঙ্গে একজনের নাম বাবুল বলে জানিয়েছেন থানার ওসি। যে জায়গা থেকে তারা নিখোঁজ হয়েছেন সেখানে অভিযোগ দেওয়ার জন্য পুলিশ জানিয়েছে। আমাদের এলাকার আরও লোকজন সেখানে রয়েছেন তারাও তাদের মতো করে খোঁজাখুঁজি করছেন।’
জকিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জহিরুল ইসলাম মুন্না বলেন, ‘নিখোঁজ ছয়জনই দীর্ঘদিন ধরে কক্সবাজার ও চট্টগ্রামে কাজ করেন। এখন হঠাৎ করে পরিবারের লোকজন যোগাযোগ করতে পারছেন না। আমরা গত ১৮ এপ্রিল বিষয়টি অবগত হয়েছি। এরপর থেকে কাজ করছি। মোবাইল ফোন ট্র্যাকিং করে তাদের অবস্থান কক্সবাজার দেখাচ্ছে। এখন পর্যন্ত কারও পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ দেওয়া হয়নি।’
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে মাহবুব আলম সুমন নামে মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয়ের এক পিয়নের বিরুদ্ধে প্রতারণার মাধ্যমে অর্ধ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। বিভিন্ন সরকারি অনুদানের কথা বলে ও প্রধান উপদেষ্টার নাম ভাঙিয়ে বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে তাদের কাছ থেকে এ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ করা হয়। গতকাল বুধবার দুপুরে ভুক্তভোগীরা প্রতিকার চেয়ে সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারজানা রহমানের কাছে পৃথক তিনটি অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগকারীরা হলেন- সনমান্দি ইউনিয়নের নয়াপাড়া গ্রামের নুরউদ্দিনের মেয়ে স্বর্ণা আক্তার, একই ইউনিয়নের গিরদান গ্রামের তোফাজ্জল হোসেনের মেয়ে তাসলিমা বেগম ও নাজিরপুর গ্রামের মুকবিল হোসেনের ছেলে জনি মিয়া।
অভিযোগ থেকে জানা যায়, সোনারগাঁ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মাহমুদা আক্তারের কার্যালয়ের পিয়ন মাহবুব আলম সুমন সনমান্দি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দাদের কাছ থেকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস দরিদ্র অসহায়দের নগদ দুই লাখ করে টাকা অর্থ সহায়তা দেবেন বলে প্রচার করেন। সেই অর্থ পেতে দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসংস্থান ব্যাংকে ৬ হাজার টাকা করে জমা দিতে হবে বলে জানান। পিওনের কথা বিশ্বাস করে ওই ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের শতাধিক মানুষ তাকে ৬ হাজার টাকা করে ব্যাংকে দেওয়ার জন্য দিয়েছেন। তবে ওই টাকা ব্যাংকে জমা দেওয়ার নাম করে তিনি আবেদনকারীদের মোবাইল ফোনে সান্ত্বনা এসএমএস দিয়েছেন। সেখানে লেখা রয়েছে আপনার অ্যাকাউন্টে পাঁচ হাজার টাকা জমা হয়েছে। তবে বিষয়টি আবেদনকারীদের সন্দেহ হলে দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসংস্থান ব্যাংকে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সেখানে তাদের নামে কোনো অ্যাকাউন্ট নেই। তাছাড়া সেখানে কোনো প্রকার টাকা-পয়সা জমা হয়নি।
অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, প্রধান উপদেষ্টার অনুদানের কথা বলে নগদ টাকা ছাড়াও সরকারি ঘর পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে প্রায় ৩২ জনের কাছ থেকে তিনি এক থেকে দেড় লাখ, গাভী দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে ২৬ জনের কাছ থেকে পঞ্চাশ হাজার টাকা করে হাতিয়ে নিয়েছেন। এ ছাড়া মাতৃত্বকালীন ভাতা, বিধবা ভাতা, বয়স্ক ভাতা, খাদ্য ভাতা পাইয়ে দেওয়ার জন্যও টাকা নিয়েছেন।
ভুক্তভোগী স্বর্ণা আক্তার জানান, তারা গরিব মানুষ। মাহবুব আলম সুমন মৎস্য কর্মকর্তার পরিচয়ে প্রধান উপদেষ্টার অনুদান দেওয়ার কথা বলে তাদের কাছ থেকে টাকা-পয়সা হাতিয়ে নিয়েছেন। তারা তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।
সনমান্দী ইউনিউনের আরেক ভুক্তভোগী তাছলিমা বেগম জানান, তাদের এলাকার অনেকের থেকেই বাড়ি ও গাভী দিবে বলে এক থেকে দেড় লাখ টাকা টাকা নিয়েছেন। অফিসে এসে জানতে পেরেছি তিনি আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করে টাকা নিয়েছেন।
অভিযুক্ত পিওন মাহবুব আলম সুমনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়। তাকে ক্ষুদে বার্তা দেওয়া হলেও কোনো উত্তর আসেনি।
সোনারগাঁ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মাহমুদা আক্তার বলেন, এ বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছি। তার বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে তদন্ত শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে তাকে শোকজ করা হয়েছে। তদন্তে সত্যতা পেলে বিচারের আওতায় নিয়ে আসা হবে।
সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারজানা রহমান বলেন, ‘আমার কাছে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ দিয়েছেন। তার বিরুদ্ধে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সরকারি বরাদ্দের প্রতিটি খাতেই অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। অফিসের কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী দিয়ে কৃষি অফিসকে দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত করছে কর্মকর্তা শাহিন রানা। কৃষকদের জন্য ধান, সয়াবিন, বাদাম ও ভুট্টা কাটার যন্ত্রপাতি বরাদ্দ এনে তা প্রকৃত কৃষকদের না দিয়ে তার পছন্দের লোক দিয়ে অন্যদের কাছে বিক্রি করার অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া ট্রেনিং, প্রশিক্ষণ ও প্রদর্শনীর নামে কৃষকদের এনে নামমাত্র নাস্তা ও সামান্য নগদ টাকা ধরিয়ে দিয়ে সাদা কাগজ স্বাক্ষর ও টিপসই নিয়ে বিদায় করা হয়। কৃষি অফিসটি এভাবে দুর্নীতি ও অনিয়মের আখড়ায় পরিণত করছেন এই কর্মকর্তা।
অভিযোগ উঠেছে, কৃষক প্রশিক্ষণ, মাঠ দিবস, প্রদর্শনী, কৃষি যন্ত্রপাতিতে ভর্তুকি ও দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের বরাদ্দসহ বিভিন্ন খাতের বরাদ্দের সিংহভাগ লুটপাট হচ্ছে। তারা কৃষকদের নিয়ে একটি ফসলের মাঠ দিবসের অনুষ্ঠান করে ব্যানার টাঙিয়ে ছবি তুলে রেখেই বরাদ্দের টাকা আত্মসাৎ করে চলেছেন। এছাড়া প্রতিটি বরাদ্দের কলাম ফাঁকা রেখেই স্টক-রেজিস্টারে নেওয়া হয় কৃষকদের স্বাক্ষর ও টিপসই।
এসব অভিযোগের সত্যতার খোঁজে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার প্রদর্শনীতে কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কৃষকদের জন্য বরাদ্দের চার ভাগের তিন ভাগই চলে যাচ্ছে কৃষি কর্মকর্তা শাহিন রানার পকেটে। সরকারি বরাদ্দের এক-চতুর্থাংশও কৃষকরা পাচ্ছেন না। অফিসের যন্ত্রপাতি (মেশিন) থেকে শুরু করে প্রতিটি খাত থেকে কৃষি কর্মকর্তার বাণিজ্য এখন ওপেন সিক্রেট। বিভিন্ন ট্রেনিংয়ে অংশ গ্রহণকারী কৃষকদের মানসম্মত নাস্তা ও খাবার দেওয়া হচ্ছে না বলেও জানান অন্তত ১৫ জন কৃষক।
বেশির ভাগ কৃষকই জানেন না, তাদের জন্য সরকার কি পরিমাণ বরাদ্দ দিচ্ছে এবং কৃষকরা পাচ্ছেন কতটুকু। তারা বলছেন, আমরা তো এত কিছু জানিও না, আর বুঝিও না। কৃষি অফিসে বরাদ্দের পরিমাণ জানতে চাইলে কিছুই জানায় না। উল্টো তার নাম কেটে দেওয়ার হুমকি ধমকিও দেন এ কর্মকর্তা। এতে কৃষকরা মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেন না।
কৃষি অফিস বলছে, বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে সরিষা, খেসারি, মসুর, চিনাবাদামসহ বিভিন্ন ফসলের প্রদর্শনী দেওয়া হয়েছে এবং কৃষকদের সব বরাদ্দ পূর্ণভাবে বণ্টন করা হয়েছে। কিন্তু নাম-পরিচয় গোপন রাখার শর্তে একটি সূত্র বলছে, উন্নত মানের ধান, গম, পাট ও ভুট্টার বীজ উৎপাদন, সংরক্ষণ ও বিতরণের নামে একটি প্রকল্পের মাধ্যমে ১৫ জন কৃষককে ৫ একরের একটি করে প্রদর্শনী প্লট দেওয়ার কথা। কোন গ্রুপে ১৫ হাজার আবার কোন গ্রুপে ১০ হাজার টাকা সম্মানী দেওয়ার কথা থাকলেও তা দেওয়া হয় না। হেক্টর-প্রতি কৃষকের জন্য যে পরিমাণ বীজ, সার, কীটনাশক,নগদ টাকাসহ যেসব উপকরণ দেওয়ার কথা তাও দেওয়া হয়েছে নামমাত্র।
এএসসিপি প্রকল্পের মাধ্যমে রয়েছে কৃষক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা। প্রতিটি প্রশিক্ষণে অংশ নেন ৩০ জন কৃষক। ওই প্রশিক্ষণে প্রত্যেক প্রশিক্ষণার্থী কৃষকের জন্য খাবার বাবদ বরাদ্দ ৪০০ টাকা এবং ব্যাগ বাবদ ৬৫০ টাকা বরাদ্দ থাকলেও কৃষকদের হাতে ধরিয়ে দেওয়া হয় ১০০ টাকা দামের ১ প্যাকেট বিরিয়ানি আর ১০০ থেকে ১৫০ টাকার একটি ব্যাগ। তাদের অভিযোগ বিভিন্ন ট্রেনিংয়ে অংশ গ্রহণকারী কৃষকদের মানসম্মত নাশতা ও খাবার দেওয়া হচ্ছে না।
অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কাছে কৃষক ও যন্ত্রপাতি বরাদ্দের তালিকা চাইলে তিনি আজ নয় কাল বলে তালবাহানা করে তালিকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। এ প্রতিবেদক কাগজপত্রের জন্য কৃষি অফিস অন্তত তিনবার গিয়ে তার কাছ থেকে এসব তথ্য নিতে পারেননি।
একটি বিশ্বস্ত সূত্র বলছে, গত বছর কমলনগর উপজেলায় ভুট্টা কাটার মেশিন ৮ টি,কম্বাইন হারভেস্টার ২ টি,রিপার ৪ টি,রাইস ট্রান্সপ্লান্টার ওয়াকিং টাইপ ২ টি ও পাওয়ার স্প্রয়ার ১ টি বরাদ্দ দেওয়া হয়। কমলনগর উপজেলায় ভুট্টা চাষ না হলেও এ কর্মকর্তা লুটপাটের উদ্দেশ্যে ধান কাটার মেশিন বাদ দিয়ে ভুট্টা কাটার মেশিনের চাহিদা পাঠান। এতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে ৮ টি মেইজ শেলার (ভুট্টা মাড়ার মেশিন) বরাদ্দ দেন। মেশিনগুলো প্রকৃত কৃষকদের না দিয়ে তার অনুগত লোকজনের নামে বরাদ্দ দেখিয়ে ফটোসেশান করে ওই মেশিন অন্যদের নিকট নামেমাত্র মূল্যে বিক্রি করে দেন। ৪ টি রিপার পেলেও ওইগুলো তার পছন্দের এক দালালের মাধ্যমে ভৈরব নিয়ে বিক্রি করার অভিযোগ উঠে।
উপজেলার চরকাদিরা ইউনিয়নের ফজুমিয়ারহাট এলাকার মোঃ আবুল কাশেমের ছেলে জাহাঙ্গীর আলম পেয়েছেন একটি মেইজ শেলার মেশিন। ১৫ দিনের মাথায় তিনি ওই মেশিনটি অন্য এক কৃষকের নিকট বিক্রি করে দেন।
চরলরেন্স এলাকার হাছন আলীর নামে একটি মেইজ শেলার মেশিন বরাদ্দ দেখানো হয়। তার ফোন নম্বরে কল করা হলে নাম্বারটি ঢাকার এক বাসিন্দা দাবী করে বলেন, তার বাড়ী ঢাকায়, তিনি এসব বিষয়ে কিছুই জানেননা। তার ফোন নাম্বার কৃষি অফিসের তালিকায় কেন থাকবে বলে প্রশ্ন রাখেন তিনি।
পুষ্টি বাগানের জন্য বিভিন্ন গ্রুপে ১৪৫ জন কৃষককে ৩ হাজার ৭০০ টাকা দেওয়ার কথা থাকলেও প্রতি কৃষককে ৫টি গাছের চারা,২৫০ টাকার বীজ, ও ৪৫০ টাকার সার দিয়ে বাকি টাকা সম্পূর্ণ তার পকেটে ঠুকান বলে অভিযোগ করেন ৫ জন কৃষক।
এসএসিপি প্রকল্পের আওতায় বাগান পরিচর্যার জন্য শতাধিক কৃষককে ট্রেনিং দেওয়া হয়। এতে প্রত্যেক কৃষকের জন্য ১০ হাজার ৫০০ টাকা ভাতা দেওয়ার কথা থাকলেও কৃষি কর্মকর্তা সাদা-কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে ২ হাজার ৫০০ টাকা করে দুইভাগ ৫ হাজার টাকা ধরিয়ে দেন। এ নিয়ে কৃষকদের সাথে কর্মকর্তার বাকবিতণ্ডাও হয়েছে বলে তিনজন কৃষক এ প্রতিবেদকে নিশ্চিত করেন।
এছাড়া এসএসিপি প্রকল্পের আওতায় কৃষক ট্রেনিংয়ের নামে ২০ টাকার নাস্তা,১২০ টাকার দুপুরের খাওয়া ও নগদে ২৫০ টাকা ধরিয়ে দেওয়া হয়। এ ভাবেই চলছে উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ এ দপ্তরটি।
এসএসিপি প্রকল্পে ট্রেনিং নেওয়া সাহেবের-হাট এলাকার কৃষক খুরশিদ আলম বলেন, একবার একটা ট্রেনিং করে তিনি ৮০০ টাকার ভাতা পেয়েছেন।
চরফলকন এলাকার কৃষক মো. ইউসুফ জানান, তার একটি পুষ্টি বাগান রয়েছে। কখনো ট্রেনিং করেননি। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে একটা আমের চারা, লেবুর চারা ও একটি সাইনবোর্ড ছাড়া তিনি কিছুই পাননি।
চরলরেন্স এলাকার কৃষক মোঃ ইউসুফ জানান, তার একটি টমেটো বাগান রয়েছে। উপজেলা কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে একটি প্রদর্শনীতে অংশ নিয়ে একবার ২ হাজার ৫০০, আবার ৩ হাজার টাকা ও কিছু বীজ পেয়েছেন তিনি।
বরাদ্দের বিষয়ে অফিসের এক সহকারী বলেন, ‘কৃষক ও কৃষি যন্ত্রপাতি বরাদ্দের কোনো কপি আমাদের দেওয়া হয় না। অফিস থেকে মৌখিকভাবে জানানো হয়, আমরা ডায়েরিতে নোট করে নিই।’
এ বিষয়ে অভিযুক্ত কমলনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহিন রানা বলেন, ভুলত্রুটি থাকতেই পারে। তবে তার আমলে কৃষকদের বরাদ্দ সঠিকভাবে দেওয়া হচ্ছে জানিয়ে বলেন, ‘আপনাদের পছন্দের কেউ থাকলে নাম দিতে পারেন। আমি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আপনাদের দেওয়া নামগুলোকে বরাদ্দের আওতায় নিয়ে আসব।’
দীর্ঘ ৪০০ কিলোমিটার নৌপথ সাঁতরে চাঁদপুরে পৌঁছেছেন সাহসী সাঁতারু রফিকুল ইসলাম। তার লক্ষ্য বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত যাওয়া। কুড়িগ্রামের সীমান্তবর্তী এলাকা ঝুনকারচর থেকে তিনি যাত্রা শুরু করেছেন। এই যাত্রায় চাঁদপুরে পৌঁছাতে তার সময় লেগেছে ১৯ দিন।
সিরাজগঞ্জের বেলকুচির বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম একজন সাহসী ও উদ্যমী সাঁতারু। তার আরেকটি বিশেষ পরিচয় হলো তিনি বাংলাদেশের প্রথম নারী এভারেস্ট বিজয়ী নিশাত মজুমদারের স্বামী। তিনিও তার সঙ্গে রয়েছেন।
চাঁদপুর শহরের বড় স্টেশন মোলহেডে শনিবার (২২ মার্চ ) বিকালে সাঁতারু রফিকুল ইসলাম সাঁতার কেটে মেঘনা পাড়ে পৌঁছালে তাকে স্বাগত জানান চাঁদপুরের চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মুনতাসির আহমেদ, বিশ্ব ভ্রমণকারী তানভীর অপুসহ চাঁদপুরবাসী।
সাঁতারু রফিকুল ইউএনবিকে জানান, অভিযাত্রী সংগঠনের পক্ষ থেকে কাজ করা হয় অ্যাডভেঞ্চার ও রোমাঞ্চকর বিষয়ে। এরই ধারাবাহিকতায় ‘শোক থেকে শক্তি’ স্বাধীনতা দিবসের এ অর্জনের শক্তি হিসেবে গত ২১ ফেব্রুয়ারি ভোরবেলা থেকে বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত প্রায় ৫৫০ কিলোমিটার নৌপথ সাঁতরিয়ে অতিক্রম করবেন বলে দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে তিনি নদীতে ঝাপ দেন, শুরু করেন সাঁতার।
তিনি আরও বলেন, শনিবার শরীয়তপুরের সুরেশ্বর চরআত্রা এলাকা থেকে সকাল ৭টায় রওনা করে বিকাল সাড়ে ৪টায় চাঁদপুর মোলহেডে এসে পৌঁছেন তিনি।
এ সময় তিনি ২২ কিলোমিটার নদী পথ সাঁতরে আসেন। দেখা গেলো তিনি বেশ চাঙা ও উদ্যমী। (মরালী বুস্ট আপ)
তিনি আরও বলেন, ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়া ২২ মার্চ শনিবার দিন পর্যন্ত তিনি প্রায় ৪০০ কিলোমিটার নদী পথ সাঁতার কেটেছেন।
এর মধ্যে— কুড়িগ্রামের চিলমারী, যমুনা সেতু , পদ্মা-মেঘনাসহ অনেক নদী পথ পাড়ি দিয়েছেন তিনি।
রফিকুল ইসলাম রবিবার ভোরে চাঁদপুর থেকে রওনা করবেন ১৫০ কিলোমিটার নৌ পথ পাড়ি দিয়ে বঙ্গোপসাগরের উদ্দেশে। তার সঙ্গে রয়েছেন সার্বক্ষণিক অনুপ্রেরণাদানকারী এভারেষ্ট বিজয়ী সহধর্মীনি নিশাত মজুমদার, সহযাত্রী ফারুকসহ গ্রেট ডেলটা (কুড়িগ্রাম থেকে শুরু হয়ে ব্রহ্মপুত্র নদ পাড়ি দিয়ে বঙ্গোপসাগর ) অভিযাত্রী সংগঠনের অন্যান্য সদস্যরা।
সাহসী এই সাঁতারু আরও বলেন, নদীমাতৃক আমাদের এই দেশ। এদেশে অনেক ছোট, বড় নদী রয়েছে। সাঁতার কাটতে কাটতে চেনা যায় নদীর পারের সহজ সরল মানুষদের। নিজের লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য সকলের দোয়াও কামনা করেন তিনি।
সীমান্তবর্তী নাফ নদীতে অভিযানে গিয়ে বিজিবির ৩৩ জন সদস্য নিখোঁজের বিষয়টি গুজবনির্ভর অপপ্রচার বলে জানিয়েছে বিজিবি ।
শনিবার রাতে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে পোস্ট দিয়ে এ কথা জানানো হয়।
বিজিবি জানিয়েছে, বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে যে, গত দুই দিন ৩৩ জন বিজিবি সদস্য নাফ নদীতে মিশনে গিয়ে নিখোঁজ হয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের গুজবনির্ভর এই অপপ্রচারে বিজিবির দৃষ্টি আকর্ষিত হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত এই তথ্যটি ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
প্রকৃত ঘটনা হচ্ছে ২২ মার্চ ভোররাতে টেকনাফের শাহপরীরদ্বীপের পশ্চিমপাড়া ঘাটের নিকট দিয়ে রোহিঙ্গাবোঝাই একটি নৌকা অবৈধ উপায়ে সাগরপথে বাংলাদেশে আসার সময় প্রবল স্রোতের কারণে নৌকাটি উল্টে যায়। খবর পেয়ে সৈকতের পার্শবর্তী স্থানে কর্তব্যরত বিজিবি সদস্যরা স্থানীয় জেলেদেরকে সঙ্গে নিয়ে রোহিঙ্গাদের উদ্ধারের জন্য ছুটে যায় এবং ২৪ জন রোহিঙ্গাকে জীবিত উদ্ধার করতে সক্ষম হয়। উদ্ধারকাজ চলাকালে সমুদ্র উত্তাল থাকায় এবং অন্ধকার রাতের কারণে একজন বিজিবি সদস্য সম্ভাব্য পা পিছলে পড়ে সমুদ্রে নিখোঁজ হয়।
পরবর্তীতে ডুবে যাওয়া নৌকাসহ ২৪ জন রোহিঙ্গাকে জীবিত উদ্ধার করেছে বিজিবি। সম্পূর্ণ দুর্ঘটনাটি অত্যন্ত হৃদয়বিদারক এবং বর্তমানে নিখোঁজ একজন বিজিবি সদস্যসহ অন্যান্য রোহিঙ্গাদেরকে উদ্ধার ও সার্চ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।
গাজীপুরের কাশিমপুরে নিজ বসত ঘর থেকে স্বামী- স্ত্রী ও এক সন্তানের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। রবিবার (২৩ মার্চ) লাশগুলো উদ্ধার করে পুলিশ।
লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে পুলিশ।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কাশিমপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান জানান, রবিবার সকালে কাশিমপুরের গোবিন্দবাড়ি এলাকার একটি বাসা থেকে নাজমুলের লাশ ঘরে ঝুলন্ত অবস্থায় এবং তার স্ত্রী খাদিজা ও শিশু কন্যা নাদিয়ার লাশ বিছানা থেকে উদ্ধার করা হয়।
ধারণা করা হচ্ছে, নাজমুল নিজে ফাঁসিতে ঝুলার আগে স্ত্রী ও সন্তানকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছেন। পারিবারিক ঝগড়া-বিবাদের জেড়ে এর আগে নাজমুল ব্লেড দিয়ে তার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় রক্তাক্ত করে। আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে আইয়ুব আলী দুলা (৫২) নামে এক অটোচালকের গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। পূর্বশত্রুতার জেরে ঘটনাটি ঘটে থাকতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা পুলিশের।
রোববার (১৪ এপ্রিল) দিনগত রাত ১টার টার দিকে উপজেলার সাপমারা ইউনিয়নের সিন্টাজুরি এলাকা হতে গোবিন্দগঞ্জ থানা পুলিশ ওই মরদেহ উদ্ধার করে।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন গাইবান্ধার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সি সার্কেল) উদয় কুমার সাহা।
তিনি বলেন, ‘সোমবার দিনগত রাত ১টার দিকে উপজেলার সাপমারা ইউনিয়নের সিন্টাজুরি এলাকায় এক অটোচালকের গলাকাটা মরদেহ দেখতে পেয়ে পুলিশে খবর দেয় স্থানীয়রা। পরে গোবিন্দগঞ্জ থানার পুলিশ ওই রাতেই মরদেহ উদ্ধার করে থানায় নেয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘ঘটনাটি রাত পৌনে ১২টা থেকে সোয়া ১২টার মধ্যে ঘটানো হয়েছে। মরদেহের পাশ থেকে অটোটিসহ চালকের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন এবং চালকের পরিহিত পোশাকের ভেতরে থাকা কিছু নগদ টাকাও পাওয়া গেছে। ঘটনার পারিপার্শ্বিকতা এবং প্রাথমিক পুলিশি তদন্তে মনে হচ্ছে ঘটনাটি পূর্বশত্রুতার জেরে ঘটানো হতে পারে, ছিনতাই নয়।’
এ পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা বিষয়টি অতি গুরুত্বের সাথে তদন্ত করছি। হত্যাকান্ডের প্রকৃত কারণ উদঘাটনসহ জড়িতদের শনাক্ত এবং তাদের গ্রেপ্তারে পুলিশ কাজ করছে।’
ঈদের আর মাত্র বাকি দুইদিন। ঈদের আনন্দ পরিবারের সাথে ভাগাভাগি করার জন্য নাড়ির টানে বাড়ি ফিরছে মানুষ। এর ফলে ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কে যানবাহনের চাপ বেড়েছে। মহাসড়কে যানজটেরও সৃষ্টি হয়েছে। মহাসড়কে যানবাহনের চাপ বৃদ্ধির ফলে বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে যানবাহন পারাপার ও টোল আদায় স্বাভাবিকের তুলনায় দ্বিগুণ বেড়েছে।
বঙ্গবন্ধু সেতু সাইট অফিস সূত্রে জানা যায়, সোমবার সকাল ৬ টা থেকে মঙ্গলবার ৬টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে ৪৩ হাজার ৪২৭টি যানবাহন পারাপার হয়েছে এবং যার মোট টোল আদায় হয়েছে তিন কোটি ৩৬ লাখ ৬ হাজার ৮৫০ টাকা।
এরমধ্যে টাঙ্গাইলের বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব অংশে ২৭ হাজার ২৩২টি যানবাহন পারাপার হয়। এতে টোল আদায় হয়েছে ১ কোটি ৭১ লাখ ৪ হাজার ৯৫০ টাকা এবং সিরাজগঞ্জের সেতু পশ্চিম অংশে ১৬ হাজার ১৯৫ টি যানবাহন পারাপার হয়। এতে টোল আদায় হয়েছে ১ কোটি ৩২ লাখ ৬১ হাজার ৯০০ টাকা।
বঙ্গবন্ধু সেতু সাইট অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসানুল কবীর পাভেল জানান, যানজট নিরসনে সেতুর উভয় অংশে ৯টি করে ১৮টি টোল বুথ স্থাপনসহ মোটরসাইকেলের জন্য চারটি বুথ স্থাপন করা হয়েছে। যানবাহনের চাপ বেড়েছে।
এলেঙ্গা হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (ওসি) মীর সাজেদুর রহমান জানান, মহাসড়কে পরিবহনের খুব চাপ রয়েছে। এতে পরিবহনগুলো খুবই ধীরগতিতে চলাচল করছে। এ ছাড়া সেতুর উপর একটি বাস নষ্ট হওয়ায় পাঁচ মিনিট বন্ধ ছিল পরিবহন চলাচল। পরিবহনগুলো রাস্তায় দাঁড়িয়ে যাত্রী তোলার কারণেও অন্য পরিবহনগুলোতে ধীরগতির সৃষ্টি হয়েছে। পরিবহন চলাচল স্বাভাবিক রাখতে পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন।
বাগেরহাটে হঠাৎ কালবৈশাখী ঝড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ঝড়ের সময় গরু আনতে গিয়ে বজ্রপাতে জেলার কচুয়া উপজেলা চরসোনাকুড় গ্রামে মো. আরিফুল ইসলাম (৩৫) নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া বাগেরহাট শহরের বাসস্টান্ড এলাকায় বিলবোর্ড ভেঙ্গে যাত্রীবাহী বাসের উপর পড়ে বাসের চালকসহ ৩ জন গুরুতর আহত হয়েছেন।
রোববার সকাল সাড়ে ৯টার এ ঘূর্ণিঝড়ে জেলার শরণখোলা, মোড়েলগঞ্জ, রামপাল, কচুয়া ও বাগেরহাট সদর উপজেলার কয়েক হাজার গাছ উপড়ে পড়েছে। সেই সাথে বিধ্বস্ত কয়েক শত কাঁচা ও আধা কাঁচা বাড়িঘর। ঝড়ে গাছ পড়ে ও বিদ্যুৎতের খুটি উপড়ে পড়ায় বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে বিদ্যুৎ সংযোগ।
বাগেরহাট জেলা প্রশাসক মো. খালিদ হোসেন বলেন, ‘কালবৈশাখী ঝড়ে জেলা সদরসহ অন্যান্য উপজেলাগুলোতে গাছপালা উপড়ে পড়ার পাশাপাশি কিছু বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। ঝড়ে গাছ পড়ে ও বিদ্যুৎতের খুটি উপড়ে পড়ায় বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে পুরো জেলার বিদ্যুৎ সংযোগ।’
তিনি বলেন, ‘জেলার প্রতিটি উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তাদের ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৮ লাখ টাকা ও ৬শ মেট্রিকটন চাল বরাদ্ধ করা হয়েছে।’
রংপুরের গঙ্গাচড়ায় মুজিববর্ষের ৪র্থ ধাপে ভূমি ও গৃহহীনদের জন্য ঘর নির্মাণ কাজ চলছে দ্রুত গতিতে। দেশের একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না- প্রধানমন্ত্রীর এমন অঙ্গীকার বাস্তবায়নে দেশের সব ভূমিহীন ও গৃহহীন মানুষের বাসস্থান নিশ্চিত করা হচ্ছে। সারা দেশের ন্যায় গঙ্গাচড়া উপজেলার মর্ণেয়া ইউনিয়নের ভাঙ্গাগড়া এলাকায় গৃহ নির্মাণের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। অত্যন্ত দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের নির্মাণ কাজ।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ইউএনও নাহিদ তামান্না মর্ণেয়া ইউনিয়নের ভাঙ্গাগড়া এলাকায় ২১০ টি ভূমি ও গৃহহীন পরিবারের জন্য মুজিব শতবর্ষের ঘর নির্মাণ কাজ তদারকি করছেন। প্রতিটি পরিবারের জন্য ২ শতাংশ জমির ওপর ২টি সেমি পাকা ঘর, ১টি রান্না ঘর ও ১টি টয়লেট নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রতিটি পরিবারের জন্য ঘর নির্মাণ কাজে ব্যয় ধরা হয়েছে ২ লাখ ৮৪ হাজার টাকা। এতে করে ২১০টি পরিবারের ঘর নির্মাণ করতে মোট ব্যয় হবে ৫ কোটি ৯৬ লাখ ৪০ হাজার টাকা। ঘরগুলোর প্রায় ৮০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করার আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন ইউএনও।
সরেজমিনে উপজেলার মর্ণেয়া ইউনিয়নের ভাঙ্গাগড়া গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, প্রবেশদ্বারে লাগানো রয়েছে প্রকল্পের তথ্য সম্বলিত সাইনবোর্ড। উঁচু জমিতে অত্যন্ত মনোরম পরিবেশে বাড়িগুলোর নির্মাণ কাজ চলছে। এরই মধ্যে প্রায় ৮০ শতাংশের বেশি কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
এলাকাবাসী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার প্রশংসা করে জানান, প্রকল্পের ঘরগুলো এখন মানসম্মতভাবে নির্মাণ করা হচ্ছে। ঘর তৈরিতে উপজেলা প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা সব সময় তদারকি করছেন, কাজের নির্মাণ সামগ্রী এবং নির্মাণ কাজ মানসম্মত। এক সাথে অনেকগুলো আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণ করায় প্রকল্পটির সৌন্দর্য ফুটে উঠেছে, যা দৃষ্টিনন্দন হয়েছে। ছোট ছোট ঘর নির্মাণে উন্নত সামগ্রী ব্যবহার করায় দীর্ঘস্থায়ী হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান। অসহায় মানুষগুলো তাদের দুঃখ কষ্ট ভুলে গিয়ে রঙিন এ ঘরে বসবাস করার যে স্বপ্ন দেখছিলেন তা বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে।
এ বিষয়ে উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) নয়ন কুমার সাহা বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন ছিল দেশের কোন মানুষ গৃহহীন বা না খেয়ে থাকবে না, তাই তার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নের ঘোষণা অনুযায়ী সারা দেশের ন্যায় গঙ্গাচড়া উপজেলায় ঘর নির্মাণ কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে।’
গঙ্গাচড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাহিদ তামান্না বলেন, ‘ঘর নির্মাণ কমিটি নির্মাণ কাজ বাস্তবায়নে নিয়জিত আছেন। আমি কাজগুলো সব সময় তদারকি করছি। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির মনিটরিং অফিসার এসে নির্মাণ কাজ পরিদর্শন করে গেছেন। প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া উপহারের ঘরগুলো খুবই কঠোরভাবে মনিটরিং করা হয় এবং সচিত্র প্রতিবেদন রাখা হয়। প্রকল্পের কাজ নিয়মানুযায়ী সুন্দরভাবে সম্পন্ন হবে।’
নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে নিখোঁজের এক দিন পর সাকিব সিকদার (১০) নামে এক শিশুর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তার মাথায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। পুলিশ ধারণা করছে, শিশুটিকে হত্যা করা হয়েছে।
শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে উপজেলার সাতগ্রাম ইউনিয়নের পাচঁরুখী গ্রামে নানা বাড়ির পাশ থেকে শিশুটির লাশ উদ্ধার করা হয়।
নিহত সাকিব রুপগঞ্জের গোলাকান্দাইল এলাকার জিকু সিকদারের ছেলে।
আড়াইহাজার থানার ওসি মোহাম্মদ আহসান উল্লাহ জানান, ১৭-১৮ দিন আগে শিশুটি তার মায়ের সঙ্গে উপজেলার পাঁচরুখী গ্রামে নানাবাড়িতে বেড়াতে আসে। এর মধ্যে বৃহস্পতিবার সকালে তার মা তাকে ব্লেড আনতে বাজারে পাঠান। এরপর থেকে সে আর বাড়ি ফিরেনি। এদিকে শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে তার নানাদের নতুন বাড়ির পাশে শিশুটির লাশ পড়ে থাকতে দেখে এলাকাবাসী পুলিশকে খবর দেয়। খবর পেয়ে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণ করে। সে সামান্য বাকপ্রতিবন্ধী ছিল।
তিনি আরও জানান, প্রাথমিকভাবে মনে হয়েছে তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে। এ ছাড়া তার মাথায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ময়নাতদন্তের পর বিস্তারিত জানা যাবে।
ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলার মুহুরীগঞ্জে আজ সকালে রেলপথ পারাপারের সময় বালুবোঝাই ট্রাকে ট্রেনের ধাক্কায় ২ জন নিহত হয়েছেন। সকাল সাড়ে ৮টার দিকে মুহুরীগঞ্জ ব্রিজ সংলগ্ন বালুমহাল এলাকায় চট্টগ্রামগামী মেইল ট্রেনের ধাক্কায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহতদের একজন বরিশালের উজিরপুর উপজেলার কাউয়ারাকা গ্রামের আবুল হাওলাদারের ছেলে ট্রাকচালক মো. মিজান (৩২)। অপর নিহত ট্রেনযাত্রীর নাম-পরিচয় এখনো পাওয়া যায়নি। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন পুলিশ সুপার জাকির হাসান।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ট্রেনের ধাক্কায় ট্রাকটি অন্তত ১০০ মিটার সামনে গিয়ে পড়ে। গেইটম্যান মো. সাইফুল ট্রেন অতিক্রম করার সময় সেখানে ছিলেন না।
ফেনী রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক শাহ আলম জানান, রেললাইনের উপর পড়ে থাকা দুর্ঘটনা কবলিত ট্রাক সরিয়ে নিয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। এরপর ছাগলনাইয়া থানা পুলিশ নিহতদের লাশ ময়না তদন্তের জন্য ফেনী জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছেন।
ছাগলনাইয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হাসান ইমাম ট্রেন দুর্ঘটনায় দুইজন নিহত হওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, লাশ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
পুলিশ সুপার মো. জাকির হাসান জানান, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে এবং তদন্তসাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।