২০১১ সালে দেশে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সন্তান (সিজারিয়ান) প্রসবের হার ছিল ১৮ শতাংশ। মাত্র ১১ বছরের ব্যবধানে ২০২২ সালে এ হার বৃদ্ধি পেয়ে পৌঁছেছে ৪৫ শতাংশে। অর্থাৎ দেশের প্রায় অর্ধেক শিশুর জন্ম হচ্ছে সিজারিয়ান প্রসবে। এর মধ্যে খুলনা বিভাগে সিজারিয়ানের মাধ্যমে প্রসবের হার অনেক বেশি। সেখানে ৬৬ শতাংশ শিশুর জন্ম হয় সিজারিয়ানের মাধ্যমে। অর্থাৎ খুলনা বিভাগে প্রতি তিনজন অন্তঃসত্ত্বা মায়েদের মধ্যে দুজনের সন্তান জন্ম নিচ্ছে সিজারিয়ানের মাধ্যমে। তবে সিজারিয়ানের মাধ্যমে সন্তান প্রসবের হার সিলেট বিভাগে সবচেয়ে কম। সেখানে মাত্র ২৬ শতাংশ শিশুর জন্ম হয় সিজারিয়ানের মাধ্যমে। অর্থাৎ সিলেট বিভাগে প্রতি চারজনের মধ্যে একজনের জন্ম হচ্ছে সিজারিয়ানের মাধ্যমে।
বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক অ্যান্ড হেলথ সার্ভের ২০২২ সালের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। বাংলাদেশ সরকার ও যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার (ইউএসএআইডি) আর্থিক সহায়তায় জাতীয় জনসংখ্যা গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (নিপোর্ট), আইসিডিডিআর,বি এবং আইসিএফ যৌথভাবে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনটি তৈরি করতে ২০২২ সালের ২৭ জুন থেকে ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত সারা দেশের ৩০ হাজার ১৮ জনের সাক্ষাৎকার নেয়া হয়েছে। চলতি মাসে খুলনায় স্বাস্থ্যবিষয়ক এক সেমিনারে এ প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২২ সালে দেশে মোট শিশু জন্ম নিয়েছে ৩৬ লাখ ২ হাজার ৫০৬ জন। এর মধ্যে সিজারিয়ানের মাধ্যমে জন্ম নিয়েছে ১৬ লাখ শিশু। যার মধ্যে সরকারি হাসপাতালে সিজারিয়ানের মাধ্যমে জন্ম হয়েছে ২ লাখ ৩৩ হাজার ৭৮ শিশুর, বেসরকারি হাসপাতালে সিজারিয়ানের মাধ্যমে জন্ম হয়েছে ১৩ লাখ ৫৩ হাজার ৯৪২ ও এনজিওর হাসপাতালে সিজারিয়ানের মাধ্যমে জন্ম হয়েছে ২২ হাজার ১৩৬ শিশুর। অর্থাৎ সিজারিয়ানের মাধ্যমে জন্ম নেয়া শিশুর ৮৪ শতাংশই হচ্ছে বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে। সরকারি হাসপাতালে সিজারিয়ানের মাধ্যমে জন্ম হয়েছে মাত্র ১৪ শতাংশ শিশুর।
এদিকে দেশে প্রতিবছরই সিজারিয়ানের হার বাড়ছে। প্রতিবেদনে বিগত কয়েক বছর পূর্বের তথ্যের সঙ্গে বর্তমান তথ্যের পার্থক্য নির্ণয় করা হয়েছে। দেখা গেছে, ২০১১ সালের সিজারিয়ানের হার ছিল ১৮ শতাংশ, ২০১৪ সালে ২৪ শতাংশ, ২০১৭ সালে ৩৪ শতাংশ ও ২০২২ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৫ শতাংশে।
প্রতিবেদনের মতে, গর্ভকালীন অবস্থায় প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সেবাপ্রদানকারীর কাছ থেকে সেবা পেয়েছেন ৮৮ শতাংশ নারী। তবে মাত্র ২১ শতাংশ নারী জানিয়েছেন তারা মানসম্মত সেবা পেয়েছেন, বাকিরা সেবায় সন্তুষ্ট নন। দেশে স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলো থেকে দরিদ্রদের প্রসবসেবা নেয়ার হারও বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১১ সালে ছয়জন ধনী নারীর বিপরীতে মাত্র একজন দরিদ্র নারী হাসপাতালে গিয়ে প্রসবসেবা নিতেন। তবে বর্তমানে প্রতি দুই ধনী নারীর বিপরীতে একজন দরিদ্র নারী হাসপাতালে গিয়ে প্রসবসেবা নিচ্ছেন।
গর্ভকালীন নারীরা চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়ার একপর্যায়ে প্রতাণার শিকার হয়ে সিজারিয়ানে বাধ্য হচ্ছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন এই গবেষণা দলে থাকা বিশেষজ্ঞরা।
আইসিডিডিআর,বির মা ও শিশু স্বাস্থ্য গবেষক আহমেদ এহসানুর রহমান বলেন, ‘অপ্রয়োজনীয় সিজার করা বড় একটি অপরাধ। এর মাধ্যমে মায়েদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বেড়ে যায়। একই সঙ্গে অনেক মা পরবর্তী সময়ে আর ভারী কাজ করতে পারেন না।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রথমবার কোনো মায়ের সিজারিয়ান করানো হলে দ্বিতীয়বারও সন্তান প্রসবের সময়ে তাকে অস্ত্রোপচারই করাতে হয়। স্বাভাবিক প্রসবের থেকে সিজারিয়ানে বেশি টাকা খরচ করতে হয়। বেসরকারি হাসপাতালগুলো নিজেদের আর্থিক সুবিধার জন্য এসব অপ্রয়োজনীয় সিজার করছে।’
অপুষ্টি নিয়ে বড় হচ্ছে চারজনে একজন
প্রতিবেদনের শিশুর পুষ্টি ও খাদ্যাভ্যাসে বলা হয়েছে, ডব্লিউএইচও গ্রোথ স্ট্যান্ডার্ড-২০০৬-এর ভিত্তিতে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের ২৪ শতাংশের বয়সের তুলনায় উচ্চতা কম হচ্ছে। এর জন্য দায়ী হচ্ছে অপুষ্টির শিকার হওয়া। এ ছাড়া বয়সের তুলনায় ওজন কম নিয়ে বড় হচ্ছে ২২ শতাংশ ও উচ্চতার তুলনায় ওজন কম নিয়ে বড় হচ্ছে ১১ শতাংশ শিশু। ছয় মাস থেকে ২৩ মাস বয়সী প্রতি ১০ জন শিশুর মধ্যে মাত্র তিনজন শিশুকে সঠিক খাদ্যাভ্যাসের অনুশীলন করানো হচ্ছে। এ ছাড়া মায়েদের মধ্যে শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানোর প্রবণতাও কমে গেছে। ২০১৭ সালে ৬৫ শতাংশ নারী ছয় মাসের কম বয়সী শিশুদের বুকের দুধ খাওয়াতেন। তবে ২০২২ সালে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৫৫ শতাংশে।
হাজারে ৩১ জন শিশু মারা যাচ্ছে
বর্তমানে দেশে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের মধ্যে প্রতি এক হাজারে ৩১ জন মারা যাচ্ছে। তবে এই মৃত্যুর হার দিন দিন উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পাচ্ছে। ২০১১ সালে প্রতি হাজারে মারা যেত ৪৮ শিশু, ২০১৪ সালে ৪৭, ২০১৭ সালে হাজারে ৪৩ শিশুর মৃত্যু হতো। পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের মৃত্যুর সাত কারণ শনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছে ২৪ শতাংশ, অপরিণত অবস্থায় জন্মের কারণে ২২ শতাংশ, জন্মগত শ্বাসকষ্টে ১৮ শতাংশ, জন্মগত অস্বাভাবিকতায় ৭ শতাংশ, পানিতে ডুবে ৬ শতাংশ, গুরুতর সংক্রমণে ৪ শতাংশ ও ডায়রিয়ায় ৪ শতাংশ শিশুর মৃত্যু হয়।
তবে বয়সভেদে শিশুমৃত্যুর ভিন্নতা রয়েছে। নবজাতকরা প্রতি এক হাজারে মারা যাচ্ছে ২০ জন। যার মধ্যে অপরিণত ও কম ওজন নিয়ে জন্মের কারণে মৃত্যু হচ্ছে ৩২ শতাংশের, জন্মগত শ্বাসকষ্টে ২৭ শতাংশ, নিউমোনিয়া সংক্রমণে ২৬ শতাংশ ও অন্যান্য রোগে ১৫ শতাংশ শিশু মারা যাচ্ছে।
তবে ১ থেকে ১১ মাস বয়সী প্রতি এক হাজার শিশুর মধ্যে মারা যাচ্ছে পাঁচজন। এর মধ্যে নিউমোনিয়ায় মারা যাচ্ছে ৪১ শতাংশ, ডায়রিয়ায় ১১ শতাংশ, গুরুতর সংক্রমণে ৫ শতাংশ ও অন্যান্য রোগে ৪৪ শতাংশ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। আর ১২ থেকে ৫৯ মাস বয়সী প্রতি এক হাজার শিশুর মধ্যে মারা যাচ্ছে ছয়জন। যার মধ্যে পানিতে ডুবে মারা যাচ্ছে ৪৬ শতাংশ, নিউমোনিয়ায় ১২ শতাংশ, জন্মগত অস্বাভাবিকতায় ৬ শতাংশ ও অন্যান্য রোগে মারা যাচ্ছে ৩৭ শতাংশ শিশু।
খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক মো. মনজুরুল মুরশিদ বলেন, ‘মায়ের গর্ভকালীন থেকে শুরু করে সন্তানের বেড়ে ওঠা নিয়ে অভিভাবকদের আরও সচেতন হতে হবে। তাহলে শিশুদের মৃত্যুর হার আরও কমিয়ে আনা যাবে। আমাদের টার্গেট রয়েছে ২০২৩ সালের মধ্যে প্রতি এক হাজার জীবিত জন্ম নেয়া শিশুর মধ্যে ২৫ জনের কম মৃত্যুর লক্ষ্যমাত্র অর্জন করার। সেই লক্ষ্যে স্বাস্থ্য বিভাগ কাজ করে যাচ্ছে।’
রাজনীতি থেকে দূরে থাকলেও হৃদয়ে দলীয় ভালোবাসা গেঁথে রেখেছেন কৃষক সোহাগ মৃধা। সেই ভালোবাসা থেকেই তিনি বছর ছয়েক ধরে বড় করে তুলেছেন একটি ষাঁড়—যার নাম ‘কালো মানিক’। এবার সেই ষাঁড়টিকে উপহার দিতে ঢাকায় রওনা হয়েছেন তিনি। প্রাপক? বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলার উত্তর ঝাটিবুনিয়ার বাসিন্দা সোহাগ নিজেই জানালেন, এটি কোনো ভাইরাল স্টান্ট নয়—এটি তাঁর হৃদয়ের কথা। ষাঁড়টিকে তিনি সন্তানের মতো লালন করেছেন। এখন সেই সন্তানসম প্রাণিটিকে দিতে চান তাঁর রাজনৈতিক প্রেরণার উৎসকে। আমি নেত্রীর কাছে যাবো।
যাত্রা জমকালো—তিনটি ট্রাক, ৫০ জন কর্মী, ব্যান্ড পার্টি, ব্যানার, গেঞ্জি, প্রচার মাইক—সব প্রস্তুত।
গ্রাম থেকে ট্রাক ছাড়ার সময় যেন মেলা বসেছে। উৎসুক জনতা ছুটে এসেছে কালো মানিককে একবার দেখতে, ছবি তুলতে, ভিডিও করতে।
কালো মানিক একটি ফ্রিজিয়ান জাতের ষাঁড়। ওজন প্রায় ১ হাজার ৪০০ কেজি, উচ্চতা ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি। কালো চকচকে গায়ের রঙের জন্য স্থানীয়দের কাছে পরিচিতি পেয়েছে ‘কালো মানিক’ নামে।
সোহাগ জানান, ২০১৮ সালে একটি গাভি কেনেন তিনি। সেই গাভির বাছুর থেকেই শুরু হয় মানিকের পথচলা। অভাবের সংসারে শত কষ্টেও তিনি ছাড়েননি যত্ন। আজ গুলশান যাবো তাকে উপহার দিতে।
ঢাকার পথের সাথী রফিকুল ইসলাম বলেন, “প্রথমে আমরা বিশ্বাস করিনি। এখন দেখি, পুরো প্রস্তুতি নিয়ে রওনা দিয়েছি। আমরা অনেক আনন্দ সহকারে ব্যান্ড পার্টি নিয়ে যাচ্ছি ঢাকায়। সোহাগের বিশ্বাস, নেত্রী হয়তো উপহারটি গ্রহণ করবেন
কোরবানির ঈদের আগ মুহূর্তে চট্টগ্রাম নগরীতে জমে উঠেছে পশুর হাট। এবার চাহিদা বেশি ছোট ও মাঝারি আকারের গরুর।
টানা ছয়দিন বৃষ্টির পর বুধবার সকাল থেকে তা কিছুটা কমায় হাটমুখো হয়েছেন ক্রেতারা। তবে এর মাঝেও থেমে থেমে চলা গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি ভোগাচ্ছে ক্রেতা-বিক্রেতাদের।
কাদা আর গরুর হাটের আবর্জনা মাড়িয়ে হাটগুলোতে চলছে দরদাম। জমে উঠেছে বেচাকেনাও। ৮০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকার মধ্যে ছোট ও মাঝারি আকারের গরুর চাহিদা এবার সবচেয়ে বেশি।
বুধবার বিকালে নগরীর বিবিরহাট গরুর বাজারে ঘুরে দেখা গেছে, এই হাটে বেশিরভাগ গরু এসেছে উত্তরের বিভিন্ন জেলা থেকে। পাশাপাশি চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলা থেকেও গরু নিয়ে হাটে এসেছেন ব্যাপারিরা।
জামালপুর থেকে তিনদিন আগে এই হাটে আসা বিক্রেতা সালাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “২২টা গরু নিয়ে আসছি। এখন পর্যন্ত চাইরটা বেচছি। লোকজন দাম বলে কম।
“দুই লাখ ২০ হাজার টাকা একটা গরুর দাম চাইলাম। কাস্টমাররা ১ লাখ ৪০ হাজার পর্যন্ত বলছে। এই দামে গরু বেচা সম্ভব না। আরেকটু বাড়তি পেলে বিক্রি করতাম।”
তবে পাল্টা অভিযোগ ক্রেতাদের; বলছেন- বিক্রেতারা দাম ছাড়ছে না; ঈদের আগের দুই দিনের বাজার পরিস্থিতি দেখার অপেক্ষায় বিক্রেতারা।
এই হাট থেকে দেড় লাখ টাকায় একটি গরু কিনে ফেরার পথে নগরীর কাপাসগোলা এলাকার বাসিন্দা তরিকুল ইসলাম বুধবার বলেন, “গরুর দাম গতবারের তুলনায় কিছুটা বেড়েছে। তবে খুব বেশি না।
“বাজারে অনেক গরু আছে। আজকে একটা কিনলাম। কালকে বাজার দেখে আরেকটা কিনব।”
বুধবার নগরীর আতুরার ডিপো থেকে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বিবিরহাটে গরু কিনতে আসা আকবর হোসেন বলেন, “একটার সময় হাটে আসছি। ৩ ঘণ্টা ঘুরে বেশ কয়েকটা গরু দেখলাম। বাজারে গরু আছে পর্যাপ্ত। কিন্তু ব্যাপারিরা দাম ছাড়ছে না।
“তারা মনে করছে কাল-পরশু দুইদিন সময় হাতে আছে। আমরাও অপেক্ষা করব। কালকে দেখেশুনে কিনব।”
বুধবার দুপুরে গিয়ে নগরীর সবচেয়ে বড় কোরবানি পশুর হাট সাগরিকা গরুর বাজারেও প্রায় একই চিত্র দেখা গেছে। সেখানে কুষ্টিয়া, ফরিদপুর, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে বড় আকারের গরু নিয়ে এসেছে ব্যাপারিরা।
সাগরিকা গরুর বাজারে কুষ্টিয়া থেকে ৪৫টি গরু নিয়ে আসা সিরাজুল আলম বলেন, “চারদিন হলো আসছি। আমাদের বেশিরভাগই বড় গরু। বৃষ্টি বেশি থাকায় এতদিন হাটে লোকজন আসেনি।
“কালকে আর আজকে মিলে মাঝারি সাইজের ৫টা গরু বেচছি। বড় গরুর পার্টি আজকে কেবল আসা শুরু করছে। তারা দর দেখতেছে। কালকে থেকে হয়ত কিনবে।”
সাগরিকা গরু বাজারের হাসিল গ্রহণকারী সাজ্জাদ হোসেন বলেন, “হাটে প্রচুর গরু আছে। এতদিন আবহাওয়া খারাপ থাকায় লোকজন খুব একটা আসেনি। আজকে আসতেছে। বেচাকেনাও হচ্ছে। শহরের লোকজন কোরবানের ২-৩ দিন আগেই গরু কেনে।
“আমাদের হাটে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা আছে। গরুর স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য মেডিকেল টিমও আছে। এখন পর্যন্ত সব ভালোভাবে চলছে।”
বিবিরহাট গরু বাজারের নিরাপত্তা নিশ্চিতে বুধবার বিকালে একটি দলকে টহল দিতে দেখা গেছে। তারা ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে আলাপ করেন। হাটের বাইরেও সেনা সদস্যদের উপস্থিতি দেখা যায়।
এ হাটে গরুর চিকিৎসা দিতে চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও অ্যানিমেল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থীর একটি দল কাজ করছে।
এই দলের সদস্য সুব্রমনিয়ম বড়ুয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, দূর-দূরান্ত থেকে গরুগুলো দীর্ঘ সময় ধরে গাড়িতে করে এখানে আনা হয়। পাশাপাশি গত কয়েকদিন টানা বৃষ্টি পড়েছে।
“একারণে কিছু কিছু গরুর শরীরে তাপমাত্রা বৃদ্ধি ও ঠান্ডাজনিত সমস্যা দেখা যাচ্ছে। এরকম গরু চিহ্নিত হলে জ্বরের ওষুধ ও অ্যান্টি হিস্টামিন ইনজেকশন দেওয়া হচ্ছে।”
চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ২০টি গরু নিয়ে গত ২৯ মে বিবিরহাটে এসেছেন আবদুস সামাদ ও তার সঙ্গীরা। সেখানে গরুগুলোর পাশেই খালি জায়গায় নিজেদের জন্য খাবার রান্নার কাজও চলছিল।
আবদুস সামাদ বলেন, “এতদিন বৃষ্টিতে খুব কষ্ট পাইছি। কালকে থেকে বিক্রি শুরু হইছে। আজ পর্যন্ত ১১টা গরু বিক্রি করছি। বাকি গরু আশা করি, কালকের মধ্যে বিক্রি হয়ে যাবে।”
হাটের বাইরে গরু সাজানোর গলার মালা বিক্রি বাড়ায় খুশি বিক্রেতা মো. শফিও খুশি বেচাকেনা জমে ওঠায়। দেড়শ থেকে তিনশ টাকার মধ্যে মালা বিক্রি করছেন তিনি।
গরুর সাজসজ্জা সামগ্রী বিক্রেতা মো. শফি বলেন, “গতকাল প্রায় ১০ হাজার টাকার মাল বেচেছি। আজকেও বিক্রি ভালো। বৃষ্টির কারণে সমস্যা হচ্ছে। বৃষ্টি বাড়লে মানুষ হাটে কম আসে।”
বিবিরহাট বাজার লাগোয়া বাইরের গলিতে বিক্রি হচ্ছে ছাগল। সাড়ে ১৯ হাজার টাকায় একটি ছাগল কেনা হাটহাজারী উপজেলার বাসিন্দা মো. কামাল বলেন, “বাড়ি যাবার পথে ছাগল কিনে নিলাম। গরু কিনব গ্রামে খামারির বাড়ি থেকে।”
জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, চট্টগ্রাম জেলায় এবার কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা পশুর সংখ্যা মোট ৮ লাখ ৬০ হাজার ৮৬২টি। জেলায় এবার কোরবানির পশুর সম্ভাব্য চাহিদা ৮ লাখ ৯৬ হাজার ২৬৯টি। সে হিসাবে জেলায় এবার ৩৫ হাজার পশুর ঘাটতি আছে।
জানতে চাইলে চট্টগ্রামের জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আলমগীর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “নগরীর হাটগুলোতে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ৪০ হাজারের বেশি গরু এসেছে আজকে পর্যন্ত। আরো আসতে পারে। কাজেই এবার গরুর স্বল্পতা হবে না।
“গত বছরের তুলনায় এবার গরুর দাম সামান্য বেড়েছে। এটা সহনীয় পর্যায়ে আছে। হাটগুলোতে বিক্রিও শুরু হয়েছে। হাটে আসা গরু-মহিষে তেমন কোনো রোগের প্রার্দুভাব দেখা যায়নি।”
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের হিসাবে, ২০২৪ সালে জেলায় কোরবানি হয়েছিল ৮ লাখ ১৮ হাজার ৪৬৮টি পশু।
একদিন পরেই পবিত্র ঈদুল আজহা। ঈদের আনন্দ পরিবারের সঙ্গে ভাগাভাগি করে নিতে নাড়ির টানে বাড়ি ফিরছে মানুষ। অনেকেই বাসের ছাদসহ ট্রাক ও পিকআপভ্যানে ঝুঁকি নিয়ে বাড়ি ফিরছেন।
ঈদযাত্রায় ঢাকা-টাঙ্গাইল-যমুনা সেতু মহাসড়কে অতিরিক্ত যানবাহনের চাপে অন্তত ২৫ কিলোমিটার সড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রী ও চালকরা। শত শত যানবাহন আটকা পড়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ১টার দিকে ঢাকা-টাঙ্গাইল-যমুনা সেতু মহাসড়কে এমন চিত্র দেখা গেছে।
ঢাকা-টাঙ্গাইল-যমুনা সেতু মহাসড়কের এলেঙ্গা বাস স্টেশন, রাবনা বাইপাস, আশেকপুর বাইপাস ঘুরে দেখা যায়, ঈদে ঘরমুখো যাত্রীরা ভোগান্তির মধ্যে আছেন। যাত্রীবাহী বাস, ট্রাক, পিকআপ, বিভিন্ন সড়কের লোকাল বাস, লেগুনায় যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে। মহাসড়কে বাসের চেয়ে প্রাইভেট কার ও মোটরসাইকেল বেশি দেখা গেছে। এছাড়াও বাড়তি ভাড়া দিতে হচ্ছে যাত্রীদের। যাত্রী পরিবহন করছে ভাড়ায়চালিত মোটরসাইকেল, মাইক্রোবাস ও প্রাইভেট কার। গণপরিবহন সংকট ও অতিরিক্ত ভাড়ার কারণে অনেকেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে খোলা ট্রাক-পিকআপ ও বাসের ছাদে গন্তব্যে যাচ্ছেন।
চালক ও যাত্রীরা জানান, ভোররাত থেকে উত্তরবঙ্গগামী লেনের পাকুল্যা থেকে টাঙ্গাইলগামী সড়কে এই যানজট সৃষ্টি হয়। পরে ঢাকা-টাঙ্গাইল যমুনা সেতু মহাসড়কের আশেকপুর বাইপাস থেকে সেতু পর্যন্ত ২৫ কিলোমিটার এলাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে যাত্রী ও চালকদের। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্করা ভোগান্তিতে পড়েছেন। অনেক যাত্রী ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন।
গাজীপুর থেকে আসা পোশাক শ্রমিক জাহানারা বেগম বলেন, গাজীপুর থেকে রাবনা বাইপাস আসলাম ৫ ঘণ্টায়। সড়কে যানবাহনের খুব চাপ। এক জায়গায় থেমে থাকলে ৩০ থেকে ৪০ মিনিট লাগে। ভাড়াও দ্বিগুণ গুনতে হচ্ছে। আমি সিরাজগঞ্জ যাব।
বাইপাইল থেকে আসা যাত্রী আলমগীর বলেন, আমি ট্রাকে করে ৫০০ টাকা দিয়ে বগুড়া যাচ্ছি। তাও আবার দ্বিগুণ ভাড়া দিয়ে। বাইপাইল থেকে চার ঘণ্টা হয়েছে এখন আশেকপুর বাইপাস আসলাম। যাত্রীদের খুব ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
এলেঙ্গা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শরীফ বলেন, সকাল থেকেই এলেঙ্গা থেকে যমুনা সেতু পর্যন্ত যানজটের সৃষ্টি হয়। টোল প্লাজা থেকে এই যানজটের সৃষ্টি হয়। অতিরিক্ত যানবাহনের চাপের জন্য এই যানজট হয়। সেনাবাহিনী-পুলিশ যৌথভাবে যানজট নিরসনে কাজ করছে।
চট্টগ্রামে পবিত্র ঈদুল আজহার প্রধান জামাত সকাল সাড়ে ৭টায় জমিয়তুল ফালাহ জাতীয় মসজিদ প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হবে। একই স্থানে দ্বিতীয় জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল সাড়ে ৮টায়।
বুধবার সংবাদ মাধ্যমকে এ তথ্য জানিয়েছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) শিক্ষা বিভাগ।
প্রধান জামাতে ইমামতি করবেন জমিয়তুল ফালাহ মসজিদের খতিব সৈয়দ আলাউদ্দিন আবু তালেব মোহাম্মদ আলাউদ্দিন আল কাদেরী। দ্বিতীয় জামাতে ইমামতি করবেন মসজিদটির পেশ ইমাম মাওলানা মোহাম্মদ আহমদুল হক।
চসিকের শিক্ষা বিভাগের সমাজকল্যাণ ও সংস্কৃতি কর্মকর্তা মামুনুর রশীদ জানান, সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে নগরের বিভিন্ন প্রান্তে আরো ৯টি ঈদ জামাতের আয়োজন করা হয়েছে। ঈদের দিন সকাল সাড়ে ৭টায় এসব মসজিদে ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হবে।
ঈদুল আজহার অন্যান্য জামাতগুলো হলো- লালদীঘির পাড় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন শাহী জামে মসজিদ, হযরত শেখ ফরিদ (র.) চশমা ঈদগাহ মসজিদ, সুগন্ধা আবাসিক এলাকা জামে মসজিদ, চকবাজার সিটি করপোরেশন জামে মসজিদ, জহুর হকার্স মার্কেট জামে মসজিদ, দক্ষিণ খুলশী (ভিআইপি) আবাসিক এলাকা জামে মসজিদ, আরেফীন নগর কেন্দ্রীয় কবরস্থান জামে মসজিদ, সাগরিকা গরুবাজার জামে মসজিদ এবং সাগরিকা এলাকার মা আয়েশা সিদ্দিকী চসিক জামে মসজিদ।
এছাড়া নগরীর বিভিন্ন এলাকায় স্থানীয় মসজিদ ও ঈদগাহে স্থানীয়রা ঈদের জামাত আয়োজন করবেন।
সিলেটে বৃষ্টি কমলেও নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সুরমা-কুশিয়ারাসহ সিলেটের প্রধান কয়েকটি নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। উজান থেকে ঢল নামা অব্যাহত থাকায় নদীগুলোর পানি বাড়ছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। সিলেটে গত সোমবার সকাল থেকে গতকাল মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত ২৬ দশমিক ৬ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এরপর দিনে আর তেমন বৃষ্টি হয়নি।
নদীর পানি বাড়লেও গতকাল মঙ্গলবার নতুন করে কোনো এলাকা প্লাবিত হয়নি। তবে জকিগঞ্জ উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলের অনেক গ্রাম ও রাস্তা এখনো পানির নিচে তলিয়ে আছে। তবে জকিগঞ্জ বাজার থেকে পানি নেমে গেছে। এর আগে গত সোমবার কুশিয়ারা নদীর ডাইক ভেঙে জকিগঞ্জ বাজার প্লাবিত হয়েছিল।
সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তথ্যানুযায়ী, গতকাল মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত সিলেটের সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে এবং কুশিয়ারা নদীর অমলশিদ, শেওলা ও ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ওপরে প্রবাহিত হচ্ছে। কানাইঘাট পয়েন্টে পানি ১৩ দশমিক ৬৯ মিটারে অবস্থান করছিল, যা বিপৎসীমার শূন্য দশমিক ৯৪ মিটার ওপরে। অমলশিদ পয়েন্টে ১৭ দশমিক ৩৬ মিটারে অবস্থান করছিল, যা বিপৎসীমার ১ দশমিক ৯৬ মিটারের ওপরে। শেওলা পয়েন্টে ১৩ দশমিক ৫২ মিটারে অবস্থান করছিল, যা বিপৎসীমার শূন্য দশমিক ৪৭ মিটার ওপরে। ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে ৯ দশমিক ৯৮ মিটারে অবস্থান করছিল, যা বিপৎসীমার শূন্য দশমিক ৫৩ মিটার ওপরে। এ চারটি পয়েন্টেই আগের দিনের চেয়ে পানি বেড়েছে।
সুরমা ও কুশিয়ারা নদী ছাড়াও জেলার ধলাই, লোভা, সারি ও ডাউকি নদ-নদীর পানি বেড়েছে। শুধু সারি-গোয়াইন নদীর পানি কিছুটা কমেছে।
স্থানীয় প্রশাসন ও এলাকার বাসিন্দাদের সূত্রে জানা গেছে, জেলার গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, ফেঞ্চুগঞ্জ, কানাইঘাট, জৈন্তাপুর ও ওসমানীনগর উপজেলার নদ-নদীর পানি বাড়ছেই। জকিগঞ্জ উপজেলায় কুশিয়ারা নদীর একাধিক স্থানে বাঁধ ভেঙে বিভিন্ন গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। অনেক ঘরবাড়িতে পানি ঢুকেছে। এছাড়া বেশ কিছু গ্রামীণ রাস্তা তলিয়ে গেছে। এ অবস্থায় অনেকেই পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। এতে বন্যাকবলিত মানুষজন দুর্ভোগে পড়েছেন।
জকিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহবুবুর রহমান বল্বন, উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ওই এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে দুটি আশ্রয়কেন্দ্রে দুটি পরিবারের মোট ৯ জন ঠাঁই নিয়েছেন। পরিস্থিতি মোকাবিলায় সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
পাউবো সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ বলেন, সিলেটে বৃষ্টি ধীরে ধীরে কমে এলেও ভারত থেকে সীমান্তবর্তী নদ-নদী দিয়ে পাহাড়ি ঢল আসা অব্যাহত আছে। এতে বৃষ্টি কমলেও পানি বাড়ছে।
তিনি আরও বলেন, ভারতেও বৃষ্টি কমে আসছে। এছাড়া ভাটিতেও পানি দ্রুত গতিতে চলে যাচ্ছে। তাই নতুন করে বৃষ্টি না হলে দু-এক দিনের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে বলে আমরা ধারণা করছি।
কুষ্টিয়া দৌলতপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারী হাসপাতালে উন্নত জাতের ঘাস চাষ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় খামারীকে সরকারি বরাদ্দকৃত অর্থের কম দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।
তথ্যমতে, ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে প্রাণিপুষ্টির উন্নয়নে উন্নত জাতের ঘাস চাষ সম্প্রসারণ ও লাগসই প্রযুক্তি হস্তান্তর ‘‘শীর্ষক” প্রকল্পেরে আওতায় দৌলতপুর উপজেলার ১৪ টি ইউনিয়ন থেকে প্রতি ইউনিয়নে ২জন করে নির্বাচিত ২৮ জন খামারীকে উচ্চ উৎপাদনশীল জাতের ঘাস চাষ প্রর্দশনী প্লট স্থাপন বাবদ জনপ্রতি ৫ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। কিন্তু সরকারি এ বরাদ্দকৃত অর্থ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা খামারীদের প্রদান করেন জনপ্রতি ৪৪০০ টাকা। এতে খামারিদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
রামকৃঞ্চপুর ইউনিয়নের সোনাতলা গ্রামের খামারী ময়না খাতুনের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, কত টাকা বরাদ্দ সেটা ঠিক জানিনা, তবে গত বছর ও এবছর ৪৪০০ টাকা করে মোট ৮৮০০ টাকা আমাকে দিয়েছে।
মরিচা ইউনিয়নের মাজদিয়াড় গ্রামের খামারী জোয়াদুর রহমানসহ একাধিক খামারীর সাথে কথা হলে তারা বলেন, আমাদের বরাদ্দ ৫০০০ টাকা থাকলেও বিভিন্ন খাত দেখিয়ে গত বছর ও এবছর ৪৪০০ টাকা করে ৮৮০০ টাকা সকলকে দিয়েছে। কেন কম দিলো সেটা আমরা জানিনা।
এবিষয়ে উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কমিউনিটি এক্সট্রেনশন এজেন্ট শাহারুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি কিছু জানিনা স্যার যা বলেছে আমি তাই করেছি, আপনি স্যারের সাথে কথা বলেন।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসার ডাঃ মোঃ মাহমুদুল ইসলাম খামারীদের প্রাপ্য অর্থ কম দেয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, অডিট ও মাঠ পর্যায়ে যাতায়াতের জন্য টাকা কম দেয়া হয়েছে। এসকল খরচ তো আমি পকেট থেকে দেবনা। তাই খামারীদের ৬০০ টাকা করে কম দেয়া হয়েছে। আপনি অফিসে আসেন কথা বলি।
সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিরাসার এলাকায় একটি সিলিন্ডারবাহী ট্রাক খাদে পড়ে উল্টে গেলে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এতে আশপাশের দোকান ও স্থাপনায় আগুন ছড়িয়ে পড়ে, তবে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
বুধবার (৪ জুন) ভোর ৪টার দিকে বিরাসার এলাকার বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডের প্রধান কার্যালয়ের সামনে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
স্থানীয়রা জানান, আশুগঞ্জ-আখাউড়া চার লেন সড়কের নির্মাণ কাজের জন্য বিরাসার এলাকার সড়কের অবস্থা বেহাল। সকালে সিলিন্ডারবাহী ট্রাকটি খানাখন্দে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়কের পাশে উল্টে যায়। পরে বিকট শব্দে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়, তার পরপরই ট্রাকটিতে আগুন ধরে যায়।
তারা আরও জানান, সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়ে ঘটনাস্থলের পাশের ৩/৪টি দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিস্ফোরণের প্রচণ্ড শব্দে কয়েকটি ভবনের জানালার কাঁচও ফেটে যায়। এ সময় পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
ঘটনার খবর পেয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও সরাইল থেকে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে প্রায় ২ ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় মহাসড়কের দুপাশে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক নিউটন দাস জানান, ট্রাকটিতে বিপুলসংখ্যক গ্যাস সিলিন্ডার থাকায় খাদে পড়ে গেলে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটে। তবে কেউ হতাহত হননি। কতসংখ্যক সিলিন্ডার বহন করা হচ্ছিল, তা নির্ধারণের চেষ্টা চলছে।
মৃত্যুর ১০ মাস পর চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলার আওয়ামী লীগের নেতা মো. মোস্তফা কামাল মজুমদারের লাশ উত্তোলন করা হয়েছে। তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সূচীপাড়া উত্তর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছিলেন।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে উপজেলার ওই ইউনিয়নের শোরসাক মজুমদার বাড়ির পারিবারিক কবরস্থান থেকে তাঁর লাশ তোলা হয়। আদালতের নির্দেশে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিরুপম মজুমদার থানা-পুলিশের সহযোগিতায় এ লাশ উত্তোলন করেন।
জানা গেছে, গত বছরের ৫ আগস্ট গভীর রাতে বাড়ির পার্শ্ববর্তী ডোবায় ডুবে মোস্তফা কামালের রহস্যজনক মৃত্যু হয়। পরদিন ৬ আগস্ট বাড়ির পার্শ্ববর্তী ডোবা থেকে তাঁর লাশ উদ্ধার করে দাফন করা হয়। মৃত্যুর ছয় মাস পর ৪ ফেব্রুয়ারি মোস্তফা কামালের স্ত্রী ফাতেমা কামাল বাদী হয়ে শাহরাস্তি মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। মামলার বাদী ফাতেমা কামালের দাবি, তাঁর স্বামীকে অজ্ঞাতনামা দুষ্কৃতকারীরা সংঘবদ্ধভাবে বাড়িতে হামলা করে হত্যা করেছে। দেশের তৎকালীন পরিস্থিতি ও শারীরিক অসুস্থতার কারণে তিনি তাঁর স্বামীর হত্যার বিচার দাবিতে দেরিতে আইনি পদক্ষেপ নিয়েছেন।
মোস্তফা কামালের ভাই হুমায়ূন কবির মজুমদার বলেন, ‘আমার ভাইয়ের মৃত্যুর সঠিক কারণ জানতে চাই।’ নিরপরাধ কেউ যেন এ ঘটনায় হয়রানির শিকার না হয়, প্রকৃত দোষীদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন তিনি।
থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আবুল বাসার গণমাধ্যমকে জানান, মোস্তফা কামালের স্ত্রীর করা মামলা ও আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালতের নির্দেশে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে লাশ উত্তোলন করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিরুপম মজুমদার বলেন, আদালতের নির্দেশে সূচীপাড়া উত্তর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল মজুমদারের লাশ উত্তোলন করে ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুরে প্রায় ৫ কোটি ৩৬ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা মূল্যের শুল্ক কর ফাঁকি দিয়ে আসা ভারতীয় পণ্য কোস্ট গার্ড ও কাস্টমস-এর যৌথ অভিযানে জব্দ করা হয়েছে।
গতকাল সোমবার রাতে কোস্ট গার্ড মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার হারুন-অর-রশীদ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গত ১ জুন শনিবার মধ্যরাত ৩ টা হতে ভোর ৫ টা পর্যন্ত কোস্ট গার্ড স্টেশন পাগলা ও কাস্টমস্ এর সমন্বয়ে নারায়নগঞ্জের সোনারগাঁও থানাধীন কাঁচপুর ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায় একটি যৌথ অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযান চলাকালীন উক্ত এলাকায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া হতে ঢাকা গামী সন্দেহজনক একটি কালো মাইক্রোবাস তল্লাশি করে শুল্ক কর ফাঁকি দিয়ে আসা প্রায় ৫ কোটি ৩৬ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা মূল্যের ভারতীয় বিভিন্ন ধরনের ৯ হাজার ৭ শত ১৮ পিস মোবাইলের ডিসপ্লে জব্দ করা হয়। পাচারকারীরা কোস্ট গার্ডের উপস্থিতি টের পেয়ে পালিয়ে যাওয়ায় কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি।
পরবর্তীতে জব্দকৃত মালামাল ও মাইক্রোবাসের আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড ২৪ ঘন্টা টহল জারি রেখেছে। যার মাধ্যমে কোস্ট গার্ডের আওতাধীন এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অনেকাংশে উন্নত হয়েছে। কোস্ট গার্ড ভবিষ্যতেও এ ধরনের অভিযান অব্যাহত রাখবে।
বিশ্বের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল সুন্দরবনকে গেল কয়েক বছর ধরে নানামুখী প্রতিকূলতা মোকাবেলা করতে হচ্ছে। তীরবর্তী অংশে বসবাসরত জনগোষ্ঠীর ব্যাপক নির্ভরশীলতার পাশাপাশি রয়েছে মাত্রাতিরিক্ত লবণাক্ততা বৃদ্ধির মতো ক্ষতিকর প্রভাব। এছাড়া সুন্দরবনকে আবর্তিত করে ঘূর্ণিঝড় আর জলোচ্ছ্বাস এখন নিত্যকার বিষয়ে পরিণত হয়েছে।
তবে এতসব শত্রুর মোকাবিলা করে টিকে থাকা এ বনাঞ্চলের উপর মনুষ্যসৃষ্ট নতুন প্লাস্টিক-পলিথিন ব্যবহার যোগ হয়েছে
বিশেষজ্ঞদের মতে, অপচনশীল বস্তু হিসেবে প্লাস্টিক-পলিথিন সুন্দরবনের প্রাণীকুল ও প্রকৃতির মারাত্মক ক্ষতি করে চলেছে। যা পরোক্ষভাবে মানবদেহের জন্যও মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয়ে উঠতে যাচ্ছে। এছাড়া নতুন নতুন গাছ-গাছালি বিস্তারের ক্ষেত্রেও তা খুবই নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এলাকার অসচেতন লোকজনের কারণে সুন্দরবনের বৈচিত্র্যকে মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে ঠেলে দিচ্ছে।
সমীক্ষায় প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, সুন্দরবনে প্রতি লিটার পানিতে অন্তত দু’টি এবং প্রতি কেজি মাটিতে প্রায় সাড়ে সাত শতাধিক মাইক্রোপ্লাস্টিক রয়েছে। এছাড়া সুন্দরবন ও তৎসংলগ্ন নদ-নদী এবং খাল হতে শিকারকৃত প্রতি কেজি মাছ গড়ে ১০–১৫ মিলিগ্রাম মাইক্রোপ্লাস্টিক বহন করছে। ক্যান্সারের মতো মরণব্যাধির ঝুঁকি থাকার পাশাপাশি কিডনি ও লিভারের কার্যক্ষমতা নষ্ট করতে সক্ষম উক্ত মাইক্রোপ্লাস্টিক সুন্দরবনের প্রকৃতি ও পরিবেশসহ উদ্ভিদ এবং প্রাণীকুলেরও মারাত্মক ক্ষতি করছে।
পশ্চিম সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জের আওতাধীন কদমতলা, হরিনগর, নীলডুমুর ও কৈখালী এলাকা ঘুরে দেখা যায়, পাশের নদীসমূহে বিভিন্ন ধরনের প্লাস্টিক-পলিথিন ভেসে বেড়াচ্ছে। খাবারের কাজে ব্যবহৃত প্লেটের (একবার ব্যবহারযোগ্য) পাশাপাশি ভাসমান সেসব প্লাস্টিকের মধ্যে রয়েছে কোমল পানীয়সহ খাবার পানির বোতল। এছাড়া চানাচুর, চিপস, বিস্কুটসহ নানা প্রকার খাদ্যসামগ্রীর প্যাকেট ছাড়াও উপকরণাদি বহনের কাজে ব্যবহৃত পলিথিন।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সাম্প্রতিক সময়ে উপকূলবর্তী এলাকায় বসবাসকারীদের মধ্যে প্লাস্টিকের একবার ব্যবহারযোগ্য প্লেট ও গ্লাস ব্যবহারের জনপ্রিয়তা আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। পারিবারিক সকল অনুষ্ঠানের পাশাপাশি স্থানীয় বাজারসমূহে ব্যাপকভাবে ব্যবহার হচ্ছে প্লাস্টিক-পলিথিন। ব্যবহারের পর পরিত্যক্ত সেসব প্লাস্টিক-পলিথিন ধ্বংস না করে বরং নানাভাবে তা পাশের নদী ও খালে ফেলা হচ্ছে।
পরক্ষণে জোয়ার-ভাটার সুযোগে সেসব পরিত্যক্ত বস্তুসমূহ সুন্দরবনসহ আশপাশের নদ-নদীতে ছড়িয়ে পড়ছে। তাতে সুন্দরবন ও তৎসংলগ্ন নদ-নদী মারাত্মকভাবে দূষণের শিকার হওয়ায় ঝুঁকিতে পড়ছে স্থানীয় জীব ও প্রাণবৈচিত্র্য। শিকার করা মাছের পেটে প্লাস্টিক-পলিথিনের অস্তিত্ব পাওয়ার দাবি করে স্থানীয়রা জানান, পলিথিনে আটকে মাছ ও কচ্ছপের মৃত্যুর ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী তারা। এছাড়া অপচনশীল এসব বর্জ্যের আধিক্যে সুন্দরবনের চর ও ফাঁকা জায়গায় গাছের বিস্তৃতি ভয়ংকরভাবে হ্রাস পেয়েছে।
প্লাস্টিক-পলিথিনের মারাত্মক উপস্থিতি সেখানকার প্রাণীকুলের জন্য নানাভাবে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে। তিনি জানান, আরও বেশি ক্ষতি হওয়ার আগেই সুন্দরবনের নদ-নদীসমূহকে প্লাস্টিক-পলিথিনের দূষণমুক্ত করা দরকার। সেজন্য সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে জনসচেতনতা সৃষ্টিসহ আইনের কঠোর প্রয়োগ খুবই জরুরি। গাবুরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বিএনপির নেতা মাসুদুল আলম বলেন, প্লাস্টিক-পলিথিনে সুন্দরবন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। উপকূলীয় এলাকার জনগোষ্ঠীর মধ্যে একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকসহ পলিথিনের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার সুন্দরবনের অস্থিত্বকে রীতিমতো ‘চ্যালেঞ্জ’ জানাচ্ছে। উপকূলের সুরক্ষা ও জলবায়ু নিয়ে কাজ করা এ তরুণের দাবি, সুন্দরবনের নদ-নদীতে থাকা প্লাস্টিক-পলিথিনের কারণে মাছসহ উদ্ভিদের বংশবিস্তার বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। মাছ মারা যাওয়ার ঘটনা যেমন ঘটছে, তেমনি বৈচিত্র্যে ভরা সুন্দরবন তার অনুকূল পরিবেশ হারাচ্ছে
ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ায় ব্যাংক থেকে এক প্রবাসীর স্ত্রীকে জাল নোট দিয়ে ৫০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এক প্রতারক। চাঞ্চল্যকর এ প্রতারণার ঘটনা ঘটে ফুলবাড়িয়া সোনালী ব্যাংক পিএলসি শাখায়। তবে এ ঘটনায় জড়িত প্রতারকের সিসিটিভি ফুটেজ থাকলেও তার পরিচয় সনাক্ত করতে পারেনি ব্যংক কর্তৃপক্ষ।
জানাগেছে, গত সোমবার ফুলবাড়িয়া সোনালী ব্যাংক পিএলসি শাখায় টাকা তুলে গণনা ও ছেড়া ফাটা নোট চেক করার সময়ে প্রতারকের খপ্পড়ে পড়েন মোছা.আছমা আক্তার নামের প্রবাসীর স্ত্রী। তিনি উপজেলার পলাশতলী গ্রামের সৌদি আরব প্রবাসী বাবুল মিয়ার স্ত্রী।
ভুক্তভোগী মোছা.আছমা আক্তার জানান, ঈদ উপলক্ষে পারিবারিক প্রয়োজনে তার স্বামী প্রবাস থেকে ফুলবাড়িয়া সোনালী ব্যাংকে ৯০ হাজার টাকা রেমিট্যান্স পাঠান। পাঠানো টাকা উত্তোলন করে ব্যংকেই টাকাগুলোর ছেড়া ফাটা দেখছিলেন । এমন সময় ওই নারী কে তার কাছে থাকা খুচরা টাকাগুলোর বিনিময়ে ১ হাজার টাকার নোট দেওয়ার প্রস্তাব দেন ব্যাংকের ভিতরে অবস্থান করা এক প্রতারক। সরল বিশ্বাসে ভুক্তভোগী নারী প্রতারককে ৫০হাজার টাকা দিযে ৫০ টি ১ হাজার টাকার নোট বুজে নিযে বাড়ি চলে যান। পরে গতকাল ফুলবাড়িয়া কমিউনিটি পুলিশ ব্যাংকে সঞ্চয়ের টাকা জমা দিতে গিয়ে তিনি জানতে পারেন প্রতারকের কাছ থেকে নেওয়া ৫০ টি ১ হাজার নোটই জাল টাকা। সেখানের ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ওই টাকাগুলো জাল সনাক্ত করে ছিদ্র করে দেন। পরে ভুক্তভোগী নারী গতকাল বিকেলে ফুলবাড়িয়া থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
এ বিষয়ে ফুলবাড়িয়া সোনালী ব্যাংক পিএলসি শাখার ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপক আবুল কালাম আজাদ বলেন, জাল টাকার বিষয়ে আজ জানতে পেরেছি, ওই প্রতারকের সিসিটিভি ফুটেজ আমাদের কাছে রয়েছে। প্রশাসন ফুটেজ চাইলে তাদেরকে সার্বিক সহায়তা করা হবে। এ ঘটনার পর থেকে তাদের নজরদারি ও সচেতনতা বৃদ্ধি করা হয়েছে বলেও তিনি জানান।
ফুলবাড়িয়া থানার ওসি মোহাম্মদ রুকনুজ্জামান বলেন, এ ঘটনায় অভিযোগ পেয়েছি, তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কুষ্টিয়ায় ২১ টি বালুমহাল থেকে বছরে লোপাট হয়েছে দুই’শ কোটি টাকা, এ থেকে সরকার রাজস্ব পেয়েছে মাত্র আড়াই কোটি। জেলার দুইটি নদী পদ্মা ও গড়াই থেকে প্রকাশ্যে চলছে অবৈধ বালু উত্তোলন ও কেনাবেচা। বালুমহাল গুলোতে পাহারায় থাকে অস্ত্রধারী বাহিনী। রাতে পাহারা হয় আরও জোরদার। কোন রকম নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করেই দেদারসে চলছে বালু উত্তলন। এর ফলে হুমকিতে রয়েছে শতবর্ষী হার্ডিঞ্জ ব্রিজ ও লালন শাহ সেতু।
২১টি বালুমহালের মধ্যে বালু তোলা যায় চারটি স্পট থেকে। এর মধ্যে ইজারা আছে দুইটির। নাব্য পরিস্থিতি, পরিবেশ, তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে ও আইনী জটিলতায় বাকি ১৭টি থেকে উত্তোলন নিষেধ। অথচ দুই নদীর পাড় ঘেষে প্রকাশ্যে চলছে বালু উত্তলনের মহোৎসব। মূলত রানৈতিক নেতারাই এ বালু স¤্রাজ্য পরিচালক বলে অভিযোগ আছে।
জেলার দুই নদীর তীরেই রয়েছে বালুর সা¤্রাজ্য। এখানকার বালুর চাহিদা পুরো বিভাগজুড়ে। নদী থেকে তোলা বালু বিক্রি হয় ঘাটেই, সেখান থেকেই প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ টাকার বালু ড্রাম্প ট্রাকে করে চলে যায় দেশের বিভিন্ন স্থানে। সরেজমিনে গিয়ে দেখে বোঝার উপায় নেই যে, এখান থেকে বছরে কয়েক’শ কোটি টাকার অবৈধভাবে বালু তোলা হচ্ছে।
এ বিষয়ে কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাশেদুর রহমান এর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, হার্ডিঞ্জ ব্রিজ ও লালন শাহ সেতু একটা নির্দিষ্ট লেভেলে ফাউন্ডেশন করা। ওখান থেকে বালু তুললে গর্তের সৃষ্টি হয়। এতে আশপাশের পিলারে ক্ষতিগ্রস্থ হবে।
স্থানীয়রা জানান, সবাই ভালো বালু চায়। তাই যতদূরের লোকই হোক না কেনো, এদের প্রধান টার্গেট থাকে এই দুই নদী। আরেকজন জানান, এখানে গ্রুপ তো অনেক। ঘাট নিয়ন্ত্রণ, বালু তোলা ও ইজারা নিয়ে সমস্যা হতে পারে। এজন্য কেউ ঝামেলায় না গিয়ে যে যার মতো কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
স্থানীয় সূত্রগুলো বলছে, বালুমহাল দখল নিয়ে এখানে বিভিন্ন সময় হামলার ঘটনা ঘটেছে। সশস্ত্র পাহারা থাকে প্রতিদিন, রাতে পাহারা হয় আরও জোরদার।
রাতের বেলা পরিচয় গোপন রেখে কয়েকজন সংবাদকর্মীরা যায় স্পটে। দেখা যায়, গভীর রাত, অথচ অবৈধভাবে বালু তোলায় কোনো বিরতি নেই। যেখানে সাধারণের প্রবেশও নিষেধ। শুধু একটি স্পট থেকে বালুবোঝাই করে বেরিয়ে যায় সাতটি ট্রাক।
এগুলোর নিয়ন্ত্রণ কাদের হাতে, অনুসন্ধান চলে সে বিষয়েও। যে কয়েকজনের নাম পাওয়া গেলো, তারা কেউ বালুমহালে আসেন না সাধারণত। তবে স্থানীয় রাজনীতিতে তারা বেশ প্রভাবশালী। শেষ পর্যন্ত ক্রেতা সেজে যোগাযোগ করা হয় তেমন কয়েকজনের সঙ্গে।
কুমারখালী উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক মিলন প্রামাণিক ফোনে বলেন, ওই ঘাট পাড়ে আমাদের পৌর বিএনপির আহ্বায়ক মনোয়ার হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করলে বালু পাবেন। আমার কথা বললে কম দামে দেবে।
মনোয়ার হোসেনের সঙ্গেও যোগযোগ করা হয়। তিনি বলেন, দাম ১৮ হাজার টাকার মতো, আপনার কাছে হয়তো একটু কম নেয়া যাবে, সাড়ে ১৭ হাজারের মতো। পরে কথা হয়, চাঁদগ্রাম ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান জানবার হোসেনের সঙ্গেও।
বালুমহালে রাজনৈতিক এই প্রভাবের বিষয় নিয়ে কথা হয় কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির নেতাদের সঙ্গে। বিএনপির সদ্য সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাজল মাজমাদার বলেন, বর্তমানে যারা বিএনপির নেতৃত্বে রয়েছেন, তাদের সঙ্গে নিশ্চয়ই যোগসূত্র আছে। অবশ্য তিনি দাবি করেন, বালু উত্তোলনে তার নিজের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।
জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কুতুব উদ্দীন বলেন, আমরা অনেক কিছু অনুভব করি, কিন্তু বলাটা কঠিন। যারা অবৈধ উত্তোলনের অভিযোগ করছে, তারাই একসময় এটা করতো। আমরা বাধা দেয়ার পর তারা আর এসব অপকর্ম করতে পারছে না। তাই উল্টাপাল্টা অভিযোগ দিচ্ছে বলে দাবি তার।
তবে এসব বালুমহাল আগাগোড়াই প্রভাবশালীদের নিয়ন্ত্রণে। অদৃশ্য ভয় দেখিয়ে আড়ালেই থেকে যায় তারা। এই বালু যেনো স্থানীয়দের কাছে সোনার খনি। রহস্যময় সেই খনির সঙ্গে মিলিয়ে এটিকে তারা বলেন এল ডোরাডো।
কুষ্টিয়ার সচেতন নাগরিক কমিটির সদস্য মিজানুর রহমান লাকী বলেন, এখানকার বালু মানে স্বর্ণ। তাহলে এই দামি জিনিস কীভাবে অপব্যবহার হয় প্রশ্ন রাখেন তিনি। যেই দল ক্ষমতায় আসুক না কেন, সেই দলের ছত্রছায়ায় বালুমহাল নিয়ন্ত্রণ থাকে বলে জানান।
তিনি আরও বলেন, এখানে যারা ডিসি হিসেবে আসেন, তারা আর বদলি হতে চায় না। আরও থাকার চেষ্টা করে। কেনো করে? ঘুষের কোনো প্রমাণ পাবেন না। কিন্তু আমরা জানি এখানে অনেক লেনদেন হয়।
এই একটি ঘাট থেকে তিন ধরনের বালুতে প্রতিদিন লেনদেন কমপক্ষে সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা। শুষ্ক মৌসুম তো আছেই, বালু তোলা হয় এমনকি ভরা বর্ষাতেও। একুশটি ঘাট থেকে বছরে গড়ে লেনদেন দুইশ কোটি টাকা। আর গত বছর সরকার পেয়েছে মাত্র দুই কোটি ৮৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা। এতো ফারাকের কী কারণ? জানতে চাওয়া হয় জেলার রাজস্ব শাখায়।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, এখানে সরকারের বঞ্চিত হওয়ার শেষ নেই। যেখানে বালু লোড-আনলোড করে, পুলিশ সঙ্গে থাকে। তবে ওখানকার অবস্থা আরও ভয়ঙ্কর। ফায়ারিংয়ের প্রস্ততি নিয়ে যেতে হয়। এমন অভিজ্ঞতাও রয়েছে। এর আগে সাংবাদিকদেরও ডুবিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছিল।
ইজারা দেয়নি জেলা প্রশাসন, তারপরেও কীভাবে হচ্ছে প্রকাশ্যে এ চুরি? এমন প্রশ্নের উত্তরে জেলা প্রশাসক তৌফিকুর রহমান বলেন, কেউ চুরি করলে সেটা তো চুরি। প্রকাশ্যে হচ্ছে বালু তোলার কাজ এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমরা আমাদের পক্ষ থেকে করাচ্ছি, বিষয়টি এমনও না।
প্রভাবশালীদের ভয়ে অভিযোগ করে না কেউই। এ ধরণের ঘটনায় মামলাও নেই। অজ্ঞাত কারণে নিশ্চুপ থাকে প্রশাসন। যদিও অবৈধ বালু উত্তোলনে একদিকে হুমকির মুখে পরিবেশ-প্রকৃতি, অন্যদিকে মোটা অংকের রাজস্ব ক্ষতি। এছাড়াও বালুবোঝাই ডাম্প ট্রাকে সড়কে বেড়েছে মৃত্যু।
যশোরের একটি রেলস্টেশনে এক নারী সন্তান প্রসব করলে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে ফোনকলে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার (৩ জুন) ভোর পৌনে চারটায় যশোরের কোতোয়ালী থানার রূপদিয়া রেলস্টেশনে এমন ঘটনা ঘটেছে।
এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ৯৯৯ নম্বরের গণমাধ্যম ও জনসংযোগ কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক আনোয়ার সাত্তার এমন তথ্য জানিয়েছেন।
এতে বলা হয়, স্টেশন মাস্টার বাবুল আক্তার ‘জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯’ নম্বরে ফোন করে জানান, স্টেশনের প্লাটফর্মে একজন নারী সন্তান প্রসব করেছেন, তখন সেখানে মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে। মা এবং সন্তানের জীবন বাঁচাতে দ্রুত একটি অ্যাম্বুলেন্স পাঠানোর জন্য ৯৯৯ এর কাছে অনুরোধ জানান তিনি।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কলটি রিসিভ করেছিলেন ৯৯৯ কলটেকার কনস্টেবল দ্বীন ইসলাম। কনস্টেবল দ্বীন তাৎক্ষণিকভাবে যশোর কোতোয়ালী থানায় এবং ফায়ার সার্ভিস স্টেশনে বিষয়টি দ্রুত উদ্ধারের ব্যবস্থা নেয়ার জন্য জানায়।
৯৯৯ থেকে সংবাদ পেয়ে কোতোয়ালি থানা পুলিশের একটি দল এবং ফায়ার সার্ভিসের অ্যাম্বুল্যান্স রেলস্টেশন হাজির হয়। প্রসূতি ও নবজাতক ছেলে সন্তানকে উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিসের অ্যাম্বুল্যান্সযোগে যশোর জেলা হাসপাতালের লেবার ওয়ার্ড-২ এ ভর্তি করিয়ে দেওয়া হয়।
জানা যায়, প্রসূতির বয়স আনুমানিক ২৫ এবং তিনি মানসিকভাবে অসুস্থ। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত জানা যায়, মা এবং নবজাতক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।