চট্টগ্রাম-১০ আসনের উপনির্বাচনে বেসরকারিভাবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মহিউদ্দিন বাচ্চু। নৌকা প্রতীকে মোট ৫২ হাজার ৯২৩ ভোট পেয়েছেন তিনি। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় পার্টির (জাপা) লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী মো. শামসুল আলম পেয়েছেন এক হাজার ৫৭২ ভোট।
রোববার রাত সাড়ে ৮টার দিকে বেসরকারিভাবে এই ফলাফল ঘোষণা করেন আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. হাসানুজ্জামান।
ঘোষিত ফলাফল অনুযায়ী, এই আসনে মোট ভোট পড়েছে ১১ দশমিক ৭০ শতাংশ।
চট্টগ্রাম মহানগরীর আটটি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত আসনটিতে মহিউদ্দিন বাচ্চু ও শামসুল আলম ছাড়া অন্যদের মধ্যে তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী দীপক কুমার পালিত (সোনালী আঁশ) পেয়েছেন এক হাজার ৩০ ভোট, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের প্রার্থী রশীদ মিয়া (ছড়ি প্রতীক) পেয়েছেন ৫৭৯ ভোট, স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আরমান আলী (বেলুন প্রতীক) পেয়েছেন ৪৮০ ভোট ও মনজুরুল ইসলাম ভূঁইয়া (রকেট প্রতীক) পেয়েছেন ৩৬৯ ভোট।
এই আসনে মোট ভোটার সংখ্যা চার লাখ ৮৮ হাজার ৬৩৮ জন। এর মধ্যে দুই লাখ ৪৮ হাজার ৯৩৮ জন পুরুষ এবং দুই লাখ ৩৯ হাজার ৬৭৭ জন নারী। উপনির্বাচনে মোট ভোটগ্রহণ হয়েছে ৫৭ হাজার ১৫৩টি, যা মোট ভোটারের ১১ দশমিক ৭০ শতাংশ।
সকাল ৮টা থেকে এই আসনে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। শুরুতে কয়েকটি কেন্দ্রে মোটামুটি ভোটার উপস্থিতি দেখা গেলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভোটারশূন্য হয়ে পড়ে কেন্দ্রগুলো। নগরীর বাদুরতলা এলাকার কেন্দ্রগুলোতেও কম ছিল ভোটার সংখ্যা। তাই ওই এলাকার ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার অনুরোধ জানিয়ে স্থানীয় মসজিদের মাইকে দুই দফা মাইকিংও করা হয়।
এদিকে, ভোটগ্রহণকালে মারধরের অভিযোগ তুলে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ আরমান আলী। তার অভিযোগ, ১০টি কেন্দ্রে এজেন্ট দিলেও তার এজেন্টদের কেন্দ্রে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। তাছাড়া নগরীর প্রাণহরি বিদ্যালয় কেন্দ্র পরিদর্শনে গেলে তার ওপর হামলা চালান আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। সেখান থেকে বেঁচে ফিরলেও ডা. ফজলুল হাজারা ডিগ্রি কলেজ কেন্দ্রে ফের তার ওপর হামলা চালানো হয়। পরে পুলিশ তাকে বাড়িতে পৌঁছে দেয়।
যদিও এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ডবলমুরিং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোস্তাফিজুর রহমান।
নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় আট জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এবং দুই জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে দিনভর মাঠে ছিল পুলিশ, আনসার সদস্য, র্যাবের চারটি টিম ও ৪ প্লাটুন বিজিবি। এর মধ্যে পুলিশ ও আনসার সদস্য মিলে প্রতি কেন্দ্রে ১৬ থেকে ১৭ জন, গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে ১৭ থেকে ১৮ জন দায়িত্ব পালন করেছিলেন। এছাড়া পুলিশ ও এপিবিএনের সমন্বয়ে আট ওয়ার্ডে আটটি মোবাইল ফোর্স ও চারটি স্ট্রাইকিং ফোর্স নিয়োজিত ছিল।
গত ২ জুন রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান এই আসনের সংসদ সদস্য আফছারুল আমীন। দীর্ঘদিন ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করছিলেন তিনি। তার মৃত্যুর পর আসনটি শূন্য ঘোষণা করে ভোটের আয়োজন করে নির্বাচন কমিশন।
ঢাকাবাসীকে অনুরোধ জানিয়ে ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী বলেছেন, অপরিচিত কাউকে আশ্রয় দেবেন না। নিজের মোটরসাইকেল ও যানবাহন ভাড়া দেওয়ার আগে যাচাই করুন। কোন দুর্বৃত্তের হাতে চলে যাচ্ছে কি না তা খেয়াল রাখবেন। গতকাল মঙ্গলবার বিকালে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত ‘ঢাকা মহানগরীর চলমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সংক্রান্ত’ সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন তিনি।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, অন্যের মোটরসাইকেল ও যানবাহন ভাড়া নিয়ে কোনো দুর্বৃত্ত যেন নাশকতা না করতে পারে, সেজন্য যানবাহন ভাড়া দেওয়ার আগে যাচাই করে নেবেন। সন্দেহজনক কাউকে দেখলে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ কল করে জানাবেন।
শেখ মো. সাজ্জাদ আলী বলেন, কার্যক্রম নিষিদ্ধ একটি দল ১-১১ নভেম্বর রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ১৭টি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে। এছাড়া গত দুই দিনে রাজধানীতে ৯টি গাড়িতে আগুন লাগানো হয়েছে। এসব ঘটনায় গত দুই দিনে ৫০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এসব ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৭টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। গত অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত কার্যক্রম নিষিদ্ধ দুটি দল ও তাদের অঙ্গ-সংগঠন অস্তিত্ব জানান দেওয়ার জন্য ১৪টি ঝটিকা মিছিল করেছে। ঢাকার বাইরে থেকে লোকজন ঢাকায় এসে টাকার বিনিময়ে মিছিল করে আবার ঢাকার বাইরে চলে যায়। এসব ঘটনায় অক্টোবর থেকে ৫৫২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আমরা সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে দেখেছি, হেলমেট ও মাস্ক পরে ভোর বেলায় কিংবা ব্যস্ত সময়ে ককটেল বিস্ফোরণ করা হচ্ছে। ককটেল বিস্ফোরণ করানোর জন্য অপ্রাপ্তবয়স্ক ছেলেদের ব্যবহার করা হচ্ছে।
আগামী ১৩ নভেম্বর ‘লকডাউন’ কর্মসূচি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে ডিএমপি কমিশনার বলেন, কোনো আশঙ্কা নেই ও চিন্তার কোনো কারণ নেই। ঢাকাবাসী তৎপরতা রুখে দেবে। ওইদিন বিপুলসংখ্যক পুলিশ সদস্যসহ অন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ঢাকায় মোতায়েন থাকবেন।
বাঁশিতে সুরের মূর্ছনা। সুরে সবার হৃদয় ছুঁয়ে যায়। সবুজ ছায়ায় ঘেরা চা বাগানে বাঁশিতে সুর তোলেন কৃষ্ণ দাস। ৪৫ বছর বয়সী এ তরুণ একজন বাঁশিপ্রেমিক। শখের বসে শিখেছেন বাঁশি বাজানো। সুরের জাদুতে তাকে ঘিরে ভিড়। কারও প্রিয় গানের সুর তোলার আবদার। বাঁশির সুরেই জীবন চলে কৃষ্ণ দাসের। মন মাতানো শ্রুতিমধুর সুর-ছন্দে বাজানো বাঁশের বাঁশি প্রাচীন একটি ঐতিহ্যবাহী বাদ্য যন্ত্র। যা রাজদরবার থেকে শুরু করে সর্বজনীন বিনোদনপ্রেমী বাঙালির সুস্থ বিনোদন ধারার একটি অন্যতম অনুষঙ্গ। এ বাঁশি দিয়ে মরমি সুরের দোলায় গানের বাণীকে ফুটিয়ে তোলা যায়।
বাঁশিপ্রেমিক কৃষ্ণ দাস এর বাড়ি মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর ইউনিয়নের শ্রী গোবীন্ধপুর। পরিবারের আর্থিক অসংগতিতে অভাব মাথায় নিয়েই যেন জন্ম নিয়েছেন কৃষ্ণ দাস। দারিদ্র্যের কারণে লেখাপড়ার সুযোগ হয়নি তাঁর। পরিবারের আর্থিক সচ্ছলতার জন্য কৈশোর থেকেই বিভিন্ন কাজে নিজেকে সম্পৃক্ত করেন। কিন্তু পরিবারের দারিদ্র্য ঘোচেনি। ছোট থেকেই বাঁশির প্রতি দুর্বলতা কৃষ্ণ দাসের।
উপজেলার মাধবপুর লেকের দেখা যায়, বাঁশি দিয়ে মুখে তুলছেন নানা সুর। বাঁশির সুরেলা সুর লেকে আসা পর্যটকদের বিমোহিত করে তুলে। এ সময় সুরপাগল নানা বয়সি মানুষ হুমড়ি খেয়ে বাঁশির সুর শুনেন।
স্থানীয়রা জানান, শখের বসে শেখা বাঁশি ঘিরেই এখন তাঁর জীবন। পাড়ার আড্ডায়, চায়ের দোকানে, বিয়ে বাড়ি, লেকের পারে বা যেকোনো অনুষ্ঠানে বাঁশি বাজান কৃষ্ণ দাস। এতে খুশি হয়ে অনেকেই তাঁকে আর্থিক সহযোগিতা করেন। বিশেষ করে পর্যটন এলাকাতে চোখে পড়ে তাঁকে। গভীর রাতে যখন সে বাঁশি বাজায় তখন হৃদয় ছুঁয়ে যায়। জীবন সংগ্রামে হৃদয় অন্যদের উদারহণ। তাকে নিয়ে গর্ব করাই যায়।’
ঢাকা থেকে ঘুরতে আসা মহিমা পাল জানান, ‘অন্য পেশায় জীবিকা নির্বাহ করতে গেলে বংশীবাদক হিসেবে কদর থাকে না। এ জন্য বাঁশিকেই বেছে নেন জীবিকা হিসেবে। বাঁশিতে সুরের মূর্ছনা। বাঁশির সুর যেন সবার হৃদয় ছুঁয়ে যায়। পর্যটন এলাকা ছাড়াও বিভিন্ন জায়গায় শুনা যায় হৃদয় কাঁপানো সুরের মূর্ছনার। শখের বসে শিখেছিলেন বাঁশি বাজানো, আর বর্তমানে সেই বাঁশির সুরেই তার জীবন চলে।’
এ বিষয়ে কৃষ্ণ দাস জানান, ‘আমার জন্ম ভারতের কলকাতায়। সেখানেই বাঁশি বাজানো শেখা। মা বাবা মারা যাওয়ার পর সেই ছোটকালে বাংলাদেশে চলে আসি। বর্তমানে কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর ইউনিয়নের শ্রীগোবিন্দপুর চা বাগানে বসবাস করছি। ছেলে ও মেয়ে নিয়ে ভালোই চললে এখন আর চলতে পারিনা। আগে বাশিঁর সুর শোনে মানুষ টাকা দিত, এখন সুর শুনলেও টাকা দেয়না। তারপরও বাঁশি বাজানো আমার বন্ধ হবে না। আত্মার সঙ্গে এই সুর মিশে গেছে, তবে এই বাঁশির সুরে এখন আর জীবন যেন চলছে না।’
তিনি বলেন, মানুষ বাশের বাঁশির সুর শুনতে চায়। তারা মন দিয়ে শোনে এটাই আমার তৃপ্তি। যাওয়ার বেলায় ১০-২০ টাকা দেয়,সেই টাকা দিয়ে আমার সংসার চলে।’
এ বিষয়ে কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাখন চন্দ্র সূত্রধর বলেন, ‘বাঁশির সুর উপমহাদেশের সংগীতে একটি অনন্য সংযোজন। এক সময়ের জনজীবনে বেশ চর্চা থাকলেও আধুনিক সভ্যতার যুগে বাঁশির সুর হারিয়ে যাচ্ছে। আমার মনে হয় বাঙালি সংঙ্কৃতির অনুসঙ্গ সুরের মোহনা ছড়ানো এই বাঁশি শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে সবার আরও আন্তরিক হওয়া উচিৎ। বংশীবাদক কৃষ্ণদাসকে উপজেলা প্রশাসন থেকে সহযোগিতা করা হবে।’
শুল্কমুক্ত সুবিধায় বিদেশ থেকে আমদানি করা বিলুপ্ত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ সদস্যদের (এমপি) ৩১টি বিলাসবহুল গাড়ি নিলামে বিক্রি না হওয়ায় সেগুলো জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অধীন সরকারি যানবাহন অধিদপ্তরে হস্তান্তরের নির্দেশ দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
এই বিষয়ে নির্দেশনা দিয়ে বুধবার (১২ নভেম্বর) এনবিআর একটি বিশেষ আদেশ জারি করেছে।
এনবিআর বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, সাবেক সংসদ সদস্যদের বিশেষ শুল্কমুক্ত সুবিধায় আমদানি করা গাড়িগুলোর ক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত সুবিধা প্রযোজ্য হবে কি না, জানতে চেয়ে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস নির্দেশনা চেয়েছিল।
শুল্কমুক্ত সুবিধায় আমদানি করা ৩১টি গাড়ির মোট প্রদেয় শুল্ক-করের পরিমাণ ২৬৯ কোটি ৬১ লাখ ৮৯ হাজার ৬০০ টাকা। উচ্চমূল্যের এসব গাড়ির এককপ্রতি প্রদেয় শুল্ক-করের সর্বোচ্চ পরিমাণ ৯ কোটি ৪৪ লাখ ৮৩ হাজার ৩০০ টাকা এবং এককপ্রতি প্রদেয় সর্বনিম্ন শুল্ক-করের পরিমাণ ৮ কোটি ৬২ লাখ ৬৭ হাজার ৪০০ টাকা।
এনবিআরের নির্দেশনা অনুযায়ী, সমুদয় শুল্ক-কর পরিশোধপূর্বক আমদানি করা ৩১টি গাড়ি আমদানিকারকরা খালাস করেননি বিধায় কাস্টমস আইন, ২০২৩-এর ধারা ৯৪(৩) অনুযায়ী গাড়িগুলো নিলামে তোলা হয়। কোনো নিলামকারী গাড়িগুলোর যৌক্তিক মূল্য বিড না করায় গাড়িগুলো নিলামে বিক্রি না করে জনস্বার্থে যথাযথ ব্যবহারের বিষয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় গৃহীত সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে অতি মূল্যবান গাড়িগুলো জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে হস্তান্তরের জন্য বিশেষ আদেশ জারি করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট গাড়ির আমদানিকারক ভবিষ্যতে প্রযোজ্য সমুদয় শুল্ক ও কর পরিশোধ করে গাড়িগুলো আইনি পদ্ধতিতে খালাস করতে চাইলে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস থেকে শুল্কায়নযোগ্য মূল্য নির্ধারণ এবং শুল্কায়ন সংক্রান্ত আইন, বিধি ও আদেশ মেনে খালাস করতে পারবেন।
যদি প্রযোজ্য শুল্ক-কর আদায়পূর্বক গাড়িগুলো ভবিষ্যতে আমদানিকারকের অনুকূলে খালাস করা হয়, তবে সরকারি যানবাহন অধিদপ্তর সেই গাড়িগুলো কাস্টমস কর্তৃপক্ষের কাছে ফেরত দেবে।
অক্টোবর মাসে দেশে ৪৬৯ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৪৬৯ জন। এ সময়ে আহত হয়েছেন ১ হাজার ২৮০ জন। বুধবার বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
সংগঠনটির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অক্টোবরে রেলপথে ৫২টি দুর্ঘটনায় ৪৭ জন নিহত ও ৩০ জন আহতের তথ্য গণমাধ্যমে উঠে এসেছে। তথ্যমতে, নৌপথে ১১টি দুর্ঘটনায় নিহত ১২ জন ও ১ জন নিখোঁজ রয়েছেন।
সড়ক, রেল ও নৌপথে সর্বমোট ৫৩২টি দুর্ঘটনায় ৫২৮ জন নিহত এবং ১ হাজার ৩১০ জন আহত হয়েছেন। এই সময়ে ১৭০টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১৭৬ জন নিহত ও ১৩৭ জন আহত হয়েছেন, যা মোট দুর্ঘটনার ৩৬.২৪ শতাংশ, নিহতের ৩৭.৫২ শতাংশ ও আহতের ১০.৭০ শতাংশ।
এই মাসে সবচেয়ে বেশি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ঢাকা বিভাগে। এই বিভাগে ১২৬টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১৩০ জন নিহত ও ৩৪৩ জন আহত হয়েছেন। সবচেয়ে কম সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ময়মনসিংহ বিভাগে ২০টি, এতে ২৭ জন নিহত ও ৩৭ জন আহত হয়েছেন।
বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, সড়কে দুর্ঘটনায় আক্রান্তদের মধ্যে ৫০ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, ১৩৯ জন চালক, ১১৯ জন পথচারী, ২৭ জন পরিবহন শ্রমিক, ৩৮ জন শিক্ষার্থী, ১৪ জন শিক্ষক, ৯৭ জন নারী, ৪০ জন শিশু, ১ জন আইনজীবী, ২ জন সাংবাদিক, প্রকোশলী ৩ জন এবং ১৮ জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীর পরিচয় মিলেছে। এদের মধ্যে ৪ জন পুলিশ সদস্য, ১ জন র্যাব সদস্য, ১ জন বিজিবি সদস্য, ১ জন আইনজীবী, ৩ জন প্রকোশলী, ১৩৩ জন বিভিন্ন পরিবহনের চালক, ৯৯ জন পথচারী, ৫৮ জন নারী, ৩৫ জন শিশু, ৩৫ জন শিক্ষার্থী, ১৪ জন পরিবহন শ্রমিক, ১৩ জন শিক্ষক ও ১৪ জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী নিহত হয়েছেন।
এ সময় সড়ক দুর্ঘটনা কবলিত ৭৭২টি যানবাহনের পরিচয় মিলেছে। এতে দেখা যায়, ২৫.৯০ শতাংশ মোটরসাইকেল, ২১.২৪ শতাংশ ট্রাক-পিকআপ-কাভার্ডভ্যান ও লরি, ১৬.০৬ শতাংশ বাস, ১২.৮০ শতাংশ ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক, ৪.২৭ শতাংশ সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ৮.৪১ শতাংশ নছিমন-করিমন-মাহিন্দ্রা-ট্রাক্টর ও লেগুনা, ৪.৭৯ শতাংশ কার-জিপ-মাইক্রোবাস সড়কে দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে।
মোট দুর্ঘটনার ৪৯.৮৯ শতাংশ গাড়ি চাপা দেওয়ার ঘটনা, ২৫.১৫ শতাংশ মুখোমুখি সংঘর্ষ, ১৯.৬১ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে, ৪.৬৯ শতাংশ বিবিধ কারণে এবং ০.৬৩ শতাংশ ট্রেন-যানবাহনের সংঘর্ষ ঘটে।
দুর্ঘটনার ধরন বিশ্লেষণে দেখা যায়, অক্টোবরে সংঘঠিত মোট দুর্ঘটনার ৪২.৪৩ শতাংশ জাতীয় মহাসড়কে, ২৩.৬৬ শতাংশ আঞ্চলিক মহাসড়কে, ২৭.২৯ শতাংশ ফিডার রোডে সংঘটিত হয়েছে। এছাড়াও সারা দেশে সংঘটিত মোট দুর্ঘটনার ৪.৬৯ শতাংশ ঢাকা মহানগরীতে, ১.২৭ শতাংশ চট্টগ্রাম মহানগরীতে ও ০.৬৩ শতাংশ রেলক্রসিংয়ে সংগঠিত হয়েছে।
সাঁথিয়া সরকারি কলেজে আন্তঃবিভাগ গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট আজ মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর,২০২৫ খ্রি.) থেকে শুরু হয়েছে।
খেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পাবনা সরকারি মহিলা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ আহসান হাবিব এবং সভাপতিত্ব করেন আয়োজক কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. একেএম শওকত আলী খান। পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত ও জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শুরু হয়।
উদ্বোধনী খেলায় রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ ১–০ গোলে মানবিক একাদশ শ্রেণি দলকে পরাজিত করে। দ্বিতীয় ম্যাচে মানবিক দ্বাদশ শ্রেণি ২–১ গোলে সমাজকর্ম বিভাগকে হারিয়ে জয় অর্জন করে। উৎসবমুখর পরিবেশে ফুটবলপ্রেমি শিক্ষার্থীদের উচ্ছ্বাসে মুখরিত ছিল গোটা কলেজ প্রাঙ্গণ।
খিরা চাষ ও উৎপাদনে কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলা দেশের অন্যতম উৎসস্থল। এ এলাকায় প্রতিবছর প্রায় ৪শত হেক্টর জমিতে খিরার আবাদ হয়। উপজেলার উত্তর এলাকায় খিরার জন্য বেশ সমৃদ্ধ। এছাড়াও অন্যান্য ইউনিয়নে কম বেশি খিরার আবাদ হয়ে থাকে। এখানকার উৎপাদিত খিরা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের পাইকাররা কিনে নিয়ে যায়। মূলত ঢাকা,চট্রগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে জনপ্রিয় এখানকার খিরা। উপজেলা কৃষি অফিস জানায়,অকাল বৃষ্টির কারণে অনেক নিচু জমি প্লাবিত হওয়ায় খিরার ফলন এ বছর কিছুটা কম হবে।
খিরা চাষে তিন মাসের মধ্যে ফলন পাওয়া যায়। স্বপ্ল সময়ে অধিক ফলনে আর্থিকভাবে কৃষক হয় লাভবান। তবে বর্তমানে খিরা উৎপাদন সামগ্রীর দাম বাড়ায় দুশ্চিন্তা আছে কৃষকদের মাঝে। তবে দিনদিন বাড়ছে খিরার আবাদ। উপজেলার অন্যতম পাইকারী খিরার বাজার দাউদকান্দি সদরের পুরাতন ফেরীঘাটে অবস্থিত। খিরার মৌসুমে বাজারটি সন্ধ্যার পর জমজমাট হয়ে ওঠে। কৃষক, আড়তদার আর পাইকারদের পদচারণায় বাজারটি হয়ে উঠে সরগরম।
সরেজমিনে দেখা যায়, জমিতে কৃষকরা পার করছেন ব্যস্ত সময় । কেউ মাটি নরম করছেন কেউ মনোযোগী গাছের পরিচর্যায় । কৃষক মো. সোলায়মান কয়েক বছর ধরে সফলভাবে খিরা চাষ করছেন। এবছরও তিনি সাত কানি জমিতে খিরা চাষ করেছেন। তিনি বলেন, গত বছরের মতো এবারও ভালো ফলনের আশা করছি। আগের বছরের চেয়ে এবার বেশি খিরা তুলতে পারবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
উপজেলার উত্তর ইউনিয়েনের শাহাবুদ্দিন মিয়া বলেন, প্রতিনিয়ত বাড়ছে কীটনাশক, সার,বীজ ও শ্রমিকের মূল্য। এতে বাড়ছে উৎপাদন খরচ। ফলে কমছে লাভের হার। যদিও নানা সমস্যা আছে তবু তিনি মনে করেন সঠিক পরিচর্যা করলে খিরা চাষ করলে ভালভাবে লাভবান হওয়া সম্ভব। আগামী ১৫ থেকে ২০ দিন পর ফসল উঠা শুরু হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
দাউদকান্দি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নিগার সুলতানা যায়যায়দিনকে বলেন, প্রতিবছর দাউদকান্দির বিভিন্ন অঞ্চলে প্রায় ৪০০ হেক্টর জমিতে খিরা চাষ হয়ে থাকে। তবে অনাকাঙ্ক্ষিত বৃষ্টির কারণে দাউদকান্দির উত্তরাঞ্চলের অনেক জমি এখনো পানির নিচে রয়েছে। ফলে এবার কিছুটা কম চাষাবাদ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তিনি আরও বলেন, কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে মাঠপর্যায়ে কৃষকদের নিয়মিত পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। রোগবালাই দমন ও ফলন বৃদ্ধির উপযুক্ত দিকনির্দেশনা প্রদান করা হচ্ছে, যাতে কৃষকরা সহজেই লাভজনক ফলন পেতে পারেন।
কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার মথুরাপুর ইউনিয়নের হোসেনাবাদ ছমিলপাড়া এলাকায় প্রখ্যাত বাউল শিল্পী ফকির শফি মণ্ডলের ৩য় খেলাফত দিবস উপলক্ষে অনুষ্ঠিত হয়েছে একদিনব্যাপী সাধুসঙ্গ ও গ্রামীণ মেলা।
গতকাল সন্ধায় ' ভক্তি সংগীত ও প্রার্থনার মধ্য দিয়ে ২৪ ঘণ্টাব্যাপী এই সাধুসঙ্গের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়। সারারাত চলবে বাউল সাধক লালন সাঁইয়ের গান, বাণী ও দর্শনের আসর। বুধবার সকালে বাল্যসেবা এবং দুপুরে পূর্ণসেবার মধ্য দিয়ে সমাপ্ত হবে একদিনের এ আয়োজন।
খেলাফত দিবসকে ঘিরে হোসেনাবাদ হিসনা নদীর তীরে অবস্থিত ফকির শফি মণ্ডলের ‘সুধাসিন্ধু ভাব আশ্রম’ প্রাঙ্গণে বসেছে গ্রামীণ মেলা। মেলায় স্থানীয় কৃষিপণ্য, হস্তশিল্প, গ্রামীণ খেলনা ও নানা লোকজ পণ্যের পাশা পাশি নানা ধরনের খাবারের দোকানের পসরা সাজিয়ে বসেছে দোকানিরা।
সাধুসঙ্গে যোগ দিতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আগত অসংখ্য বাউল, ফকির ও ভক্তজন আশ্রমে সমবেত হন। অনুষ্ঠানস্থলজুড়ে সৃষ্টি হয় এক আধ্যাত্মিক ও উৎসবমুখর পরিবেশ।
মেলা প্রাঙ্গণে কথা হয় ঢাকা থেকে আগত ভক্ত সাব্বির হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, “গুরুর প্রতিটি খেলাফত দিবসে আমি আসি। মূলত এখানে গুরু শির্ষের ভাব বিনিময়ের একটি আসর বসে। সবার সাথে দেখা হয়, ভালো লাগে।”
এদিকে, বাইরে মেলার দোকানিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা দুই দিন আগেই দোকান বসিয়েছেন। প্রতি বছর এই আয়োজনকে কেন্দ্র করে প্রায় ২০ হাজার মানুষের সমাগম হয়। ব্যবসায়ীরাও জানান, বেচাকেনা ভালো হচ্ছে এবং উৎসবের আমেজে তারা আনন্দিত।
এ বিষয়ে সাধুসঙ্গের আয়োজক কমিটির সদস্য ও ফকির শফি মণ্ডলের জামাতা মুকুল হোসেন বলেন, “২৪ ঘণ্টাব্যাপী এই সাধুসঙ্গে দূর-দূরান্ত থেকে ভক্তবৃন্দ এসেছেন। অনেকে রাতেই পৌঁছাবেন। সন্ধ্যার ভক্তির মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়েছে, আর বুধবার দুপুরে পূর্ণসেবার মধ্য দিয়ে এর সমাপ্তি হবে।”
এদিকে, সাধুসঙ্গ ও ‘সুধাসিন্ধু ভাব আশ্রম’ প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত গ্রামীণ মেলার নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে দৌলতপুর থানা পুলিশ।
দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোলাইমান শেখ বলেন, “মেলা এলাকা ও আশেপাশে আমাদের পুলিশ সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন। এখানে দূর-দূরান্ত থেকে বহু মানুষ আসছেন, তাই যেন কোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি না হয়— সে বিষয়ে পুলিশ সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।”
শফি মণ্ডল বাংলাদেশের খ্যাতনামা বাউল ও সুফি সংগীতশিল্পী। তিনি ১৯৫২ সালের ১৩ ডিসেম্বর কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার ফিলিপনগর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা আহাদ আলী মণ্ডল ছিলেন ইমাম। ছোটবেলা থেকেই সংগীতে আগ্রহী শফি মণ্ডল ১৯৭৯ সালে ভারতের সাধন মুখার্জির কাছে উচ্চাঙ্গ সংগীতে তালিম নেন এবং পরে ফকির সুলতান শাহের দীক্ষায় লালন সাঁইয়ের পথ অনুসরণ করেন।
১৯৯৫ সালে তার প্রথম অ্যালবাম প্রকাশিত হয় এবং ১৯৯৮ সালে “লালনের দেশে” তাকে ব্যাপক পরিচিতি এনে দেয়। বর্তমানে তিনি তরুণদের বাউল সংগীত শিক্ষা দিচ্ছেন এবং লালন দর্শন প্রচারে নিবেদিত। ২০২২ সালের ১১ নভেম্বর তিনি খিলাফত গ্রহণ করেন।
নেত্রকোনায় নিরাপদ খাদ্য বিরোধী কার্যক্রম প্রতিরোধে জেলা নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের অভিযান পরিচালিত হয়েছে। মঙ্গলবার সকালে শহরের পৌর জয়ের বাজার ও মেছুয়া বাজারে এই অভিযান পরিচালনা করেন জেলা নিরাপদ খাদ্য কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান। অভিযানে মনিটরিং সেলের সদস্যরা বিভিন্ন খাদ্য দোকান, মসলার মিল, মিষ্টির দোকানসহ খাদ্য উৎপাদন ও বিক্রয়কেন্দ্রগুলোতে পরিদর্শন করেন। এ সময় ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের মধ্যে নিরাপদ খাদ্য সচেতনতা বৃদ্ধি করতে প্রচারপত্র ও লিফলেট বিতরণ করা হয়। অভিযানের সময় কোর্টের সামনে অবস্থিত ‘জয় গুরু দই ঘরসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে খাদ্যপণ্যের মান যাচাইয়ের জন্য নমুনা সংগ্রহ করা হয়। কিছু পণ্যে অনুমোদিত রঙ, লেবেলবিহীন মোড়ক এবং মেয়াদোত্তীর্ণ খাদ্যপণ্য শনাক্ত করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেন কর্মকর্তারা। জেলা নিরাপদ খাদ্য কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান বলেন, খাদ্য ভেজালে কোন প্রকার ছাড় দেওয়া হবে না। জনগণের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের অভিযান অব্যাহত থাকবে। তিনি সকল স্তরের মানুষকে ভেজাল খাদ্য বর্জন ও সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য আহ্বান জানান। অভিযানে দৈনিক বাংলার জেলা প্রতিনিধি সাংবাদিক এ বি চৌধুরী নাদিম, কবি ও সাংবাদিক সৈয়দ সময় উপস্থিত থেকে কার্যক্রমটি পর্যবেক্ষণ করেন। নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে কর্তৃপক্ষের এই নিয়মিত অভিযানকে স্থানীয়রা স্বাগত জানিয়েছেন। তাদের মতে, এমন উদ্যোগ বাজারে ভেজাল ও নিম্নমানের খাদ্যপণ্যের প্রবণতা কমাতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।
জমি অধিগ্রহণ জটিলতায় নওগাঁ-বদলগাছী আঞ্চলিক মহাসড়কের প্রায় ২ কিলোমিটার কাজ বন্ধ রয়েছে। এতে সড়কের পীচ ও ইটের খোয়া উঠে ছোট-বড় খানাখন্দে পরিণত হয়েছে। এতে বাড়ছে দুর্ঘটনা ও জনদুর্ভোগ। আগামী এক বছরেও রাস্তার কাজ হবে কিনা তা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছে সংশ্লিষ্টরা। তবে দ্রুত সমস্যা সমাধনে করে সড়ক উন্নয়নের কাজ করার দাবি স্থানীয়দের।
নওগাঁ সড়ক ও জনপথ বিভাগের তথ্যমতে, নওগাঁ সড়ক বিভাগাধীন ৩টি আঞ্চলিক ও ৩টি জেলা মহাসড়ক যথাযথ মান ও প্রশস্থতায় উন্নীতকরণ (১ম সংশোধিত) প্রকল্পের আওতায় ২০২৩ সালের ৩১ জানুয়ারিতে ৭ কিলোমিটার সড়কের কাজ শুরু হয়। কাজের মেয়াদ ছিল চলতি বছরের ৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। যেখানে ব্যায় ধরা হয়েছে ৫৮ কোটি ৩৮ লাখ ৫১ হাজার টাকা। কাজটি করছেন ‘জামিল ইকবাল- মাহফুজ খান লিমিটেড জয়েন ভেঞ্চার’ নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
নওগাঁ-বদলগাছী আঞ্চলিক মহাসড়কের কাজের সময় শেষ হয়েছে আরো প্রায় দুই মাস আগে। যেখানে ৭ কিলোমিটারের মধ্যে প্রায় ২ কিলোমিটার সড়কের কাজ এখনো বাঁকী। সদর উপজেলার ঠ্যাংভাঙ্গা মোড়, পাহাড়পুর বাজার ও র্কীত্তিপুর বাজার সড়কের দৈর্ঘ্য প্রায় ২ কিলোমিটার। এ তিনটি জায়গায় সড়কের পিচ ও ইটের খোয়া উঠে ছোট-বড় খানাখন্দে পরিনত হয়েছে। সময়ের মধ্যে কাজ শেষ না হওয়ায় ভাঙা সড়কে ছোট-বড় যানবাহন চলছে হেলেদুলে। এতে মাঝেমধ্যে ঘটছে দূর্ঘটনা। বর্ষায় খান্দাখন্দে বৃষ্টির জমে থাকা পানি, আর শুষ্ক মৌসুমে ধুলাবালি। এতে বেড়েছে জনদুর্ভোগ। ভাঙা সড়কে চলাচলে প্রায় ভ্যান ও বাসের যন্ত্রাংশ নষ্ট হচ্ছে। এতে আয়ের একটি অংশ চলে যাচ্ছে যন্ত্রাংশ মেরামতে।
পালশা গ্রামের ভ্যানচালক রফিকুল ইসলাম বলেন, সড়কে খানাখন্দের কারণে নিয়মিত ভ্যানের যন্ত্রাংশ বিশেষ করে বিয়ারিং নষ্ট এবং টায়ার কেটে যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটে। এতে সপ্তাহে অন্তত ২০০-২৫০ টাকা ভ্যান মেরামতে খরচ হয়। যেখানে আয়ের একটি অংশ চলে যাচ্ছে।
মাহাবুব আলম নামে এক মোটরসাইকেল চালক বলেন- মোটরসাইকেলের সামনে মেয়েকে বসিয়ে নিয়ে নওগাঁ শহরের দিকে আসছিলাম। কীর্ত্তিপুর বাজারে মোটরসাইকেলের সামনের চাকা গর্তে নেমে যাওয়ায় উল্টে পড়ে যায়। এতে মেয়ের পায়ে বাম পায়ের হাঁটুতে ব্যাথা হয়। আর আমার ডান পায়ের হাটু জখম হয়। বাজারে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে ১০০ টাকার মতো খরচ হয়।
কীর্ত্তীপুর বাজারে সড়কের পাশে দোকানী হাসান আলী বলেন, সড়কের এমন বেহাল দশা যে সামান্য বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়। বর্ষার সময় সড়কে জলাবদ্ধতার কারণে পথচারীরা বুঝতে না পারায় যানবাহন নামিয়ে দিয়ে উল্টে পড়ে যায়। আবার শুষ্ক মৌসুমে প্রচুর ধুলাবালি হয়। এতে শ্বাসকষ্ট ও সর্দি-কাশিতে ভুগতে হচ্ছে। আমরা দ্রুত এ সড়ক সংস্কার করে চলাচলের উপযোগী করার দাবি জানাই।
প্রজেক্ট ম্যানেজার রিফাত হাসান বলেন- জমি অধিগ্রহণ জটিলতায় সড়ক উন্নয়ন কাজ যেমন ব্যাহত হচ্ছে, তেমনি সড়ক সংস্কার ও পানি ছিটানোয় বাড়তি টাকা খরচ হচ্ছে। এতে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের লোকসান হচ্ছে বলে দাবি করেন তিনি।
নওগাঁ সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাশেদুল হক বলেন, জমি অধিগ্রহণ জটিলতায় বন্ধ আছে সড়ক উন্নয়ন কাজ। জমি অধিগ্রহনের জন্য ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। জেলা প্রশাসন বিষয়টি দেখছেন। তবে অধিগ্রহণ কাজ শেষ হলেই সড়কের কাজ শুরু হবে।
নওগাঁর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) সোহেল রানা বলেন, জমি অধিগ্রহণে ঠ্যাংভাঙ্গা মোড়ে ৮৫০ টি আবেদনের মধ্যে এ পর্যন্ত ১৫০টির শুনানি হয়েছে। ইতোমধ্যে ৪টি চেক বিতরণ করা হয়েছে। আরো ১২টি চেক প্রকিয়াধীন রয়েছে। এছাড়া পাহাড়পুর বাজার ও কীর্ত্তীপুর বাজারে জমি অধিগ্রহণের আবেদন নেয়ার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। তবে দ্রুত মামলা নিষ্পত্তির কাজ করা হচ্ছে। তবে আগামী এক বছরের কাজ শেষ হতে পারে বলে জানান তিনি।
সকাল-সন্ধ্যার হালকা ঠান্ডা হাওয়ায় শীতের আগমনী বার্তা। শীত এখনো জেঁকে না বসলেও খেজুর রস সংগ্রহ করতে প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছেন গাছিরা। এখন তারা ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন খেজুর গাছ পরিষ্কার ও ছাঁটাইয়ের কাজে। শীতের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে খেজুর রসের।
গাছি মিজানুর বলেন, ‘লাভ প্রায় নেই বললেই চলে। আগে ছুরি পাওয়া যেত ৩০০ থেকে ৪০০ টাকায়, এখন দাম হাজার থেকে পনেরশ টাকা। হাঁড়ি ৩০/৪০ টাকায় কিনতাম। এখন কিনতে হয় ১০০/১৫০ টাকায়।
উপজেলার বরুনা, হরিনা, বাঘবেড়, টিনর, কেড়াব, মাসাব, কুশাব, কান্দাপাড়া, মুশরী, টান মুশরী, বিরাব, দক্ষিণবাঘ এলাকায় খেজুরের রস আহরণ শুরু করেছেন গাছিরা এবং তারা নিয়মিতভাবে গাছ পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, বিভিন্ন রাস্তার দুপাশে সারিবদ্ধ খেজুরগাছ। গাছিরা প্রথমে গাছের মাথা থেকে ডালপালা কেটে পরিষ্কার করেন। পরে নির্দিষ্ট স্থান হালকা করে কেটে পরিষ্কার করেন তারা। এর কিছুদিন বিরতির পর আবার কয়েক দফায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে ছেঁটে ফেলা হয় গাছের ছাল। গাছ কাটার এ কাজে গাছিরা ছ্যান (স্থানীয় ভাষায়) নামে ধারালো অস্ত্র ব্যবহার করেন। গাছ কাটার সময় খেজুর গাছের সঙ্গে নিজেদের শক্তভাবে দড়ি দিয়ে বেঁধে নেন তারা। তাদের সঙ্গে থাকে বাঁশের তৈরি পাত্র। যার ভেতর থাকে গাছ পরিষ্কার করার বিভিন্ন সরঞ্জামাদি। গাছ তৈরির প্রস্তুতি সম্পন্ন করার পর থেকেই মূলত রস নামানোর পর্বটা শুরু হয়।
এরপর গাছের মাথার নির্দিষ্ট স্থানে বাঁশের বানানো দুটি চোখা খুঁটি পোতা হয়। সঙ্গে দড়ি বা সুতা বেঁধে মাটির পাত্র ঝুলে দেয়া হয়। পাত্রের ভেতর রস পড়ার জন্য বাঁশের তৈরি নালার মতো ভিন্ন একটি খুঁটি পুঁতে দেওয়া হয় সেই গাছের সঙ্গে। এভাবেই গাছির নিপুণ হাতের ছোঁয়ায় ফোঁটায় ফোঁটায় ঝরে খেজুর রস।
উপজেলার গাছি রফিক, রশিদ, মাসুদ জানান, শীতে গ্রামে গ্রামে চলে খেজুর রসের পায়েস, পিঠা-পুলি তৈরির ধুম। মেয়ে জামাই ও স্বজনদের নিমন্ত্রণ করে বাড়ি বাড়ি চলে শীতের বাহারি পিঠা উৎসব।
গাছিরা জানান, একটি সময় এখানে বিপুল সংখ্যক খেজুর গাছ ছিল। মানুষ সিংহভাগ খেজুর গাছ কেটে ফেলেছেন।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় প্রায় ২৪ হাজারের মতো খেজুর গাছ রয়েছে। তবে কালের আবর্তে খেজুর গাছের সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আফরোজা সুলতানা জানান, সরকারি প্রকল্পের আওতায় গাছিদের মাঝে হাঁড়ি-ছুরি বিতরণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা যদি তাদের আধুনিক চুলা, গাছে ওঠার সরঞ্জাম ও উন্নত প্রশিক্ষণ দিতে পারি, তাহলে ওই ঐতিহ্য আরও সমৃদ্ধ হবে।’
আজ ভয়াল ১২ নভেম্বর। ভোলাসহ উপকূলবাসীর বিভীষিকাময় এক দুঃস্বপ্নের দিন। ১৯৭০ সালের এই দিনে মহা প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস ভোলাসহ উপকূলীয় অঞ্চলে অকল্পনীয় ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। উপকূলীয় এলাকাগুলো মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়। সে সময় দেড় লক্ষাধিক মানুষ প্রলয়কারী এই ঘূর্ণিঝড়ে প্রাণ হারায়। একই সাথে নিখোঁজ হয় সহস্রাধিক মানুষও।
সেই ভয়াবহ স্মৃতি নিয়ে আজো বেঁচে আছেন অনেকে। ৫৫ বছর পেরিয়ে গেলেও সেই বিভীষিকাময় দিনটি মনে পড়তেই আঁতকে উঠছেন স্বজনহারা মানুষরা।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, ১৯৭০ সালের ১১ নভেম্বর বুধবার সকাল থেকেই গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি হতে থাকে। পরদিন ১২ নভেম্বর বৃহস্পতিবার আবহাওয়া আরও খারাপ হতে শুরু করে। মধ্যরাত থেকেই ফুঁসে উঠে সমুদ্র। তীব্র বেগে উপকূলীয় এলাকার দিকে ধেয়ে আসে পর্বতসম উঁচু ঢেউ। সেই ঢেউ আছড়ে পড়ে লোকালয়ের ওপর। আর মুহূর্তেই ভাসিয়ে নিয়ে যায় মানুষ, গবাদিপশু, -ঘরবাড়ি, খেতের সোনালি ফসলসহ বহু কিছু। পথে-প্রান্তরে খোলা আকাশের নিচে পড়েছিল কেবল লাশ আর লাশ। মৃত্যুপুরীতে রূপ নেয় ভোলাসহ গোটা অঞ্চল। এই বন্যাতে ভোলাতেই দেড় লক্ষাধিক মানুষের প্রাণহানি ঘটে। উত্তাল মেঘনা নদীসহ খাল-বিলগুলো রূপান্তরিত হয়েছিল লাশের স্তূপে। নদীতে এত মরদেহ ছিল যে, প্রশাসন মাছ ধরায় পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা জারি করে।
ভয়াবহ দিনটির বর্ণনা দিয়ে নীলকমল ইউনিনের বাসিন্দা মো. রতন বলেন, ‘তখন ছিল পবিত্র রমজান মাস। এবং প্রচুর শীত ছিল। বৃহস্পতিবার রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ি। মধ্যরাতে হঠাৎ মানুষের আত্মচিৎকার শোনে সবাই জেগে উঠি। তখন দক্ষিণ থেকে পানি আসতেছে এমন শব্দ শোনতে পাই। বাইরে প্রচুর বাতাস। মুহূর্তেই জোয়ারের পানিতে মানুষের বসতঘর ডুবে যায়। তখন কেউ চনের চালায়, কেউ টিনের চালায়, কেউ গাছের মগডালে, কেউ হাতের কাছে যা পেয়েছে তাই ধরে বেঁচে থাকার শেষ চেষ্টা করেছে। এতেও শেষ রক্ষা হয়নি অনেকের।’
দিনটির বর্ণনা দিয়ে বাসেদ সেকান্দার বলেন, ‘১২ তারিখে রাতে প্রচণ্ডভাবে আঘাত হানে। তখন কোনো ধরনের সিগন্যাল বা আবহাওয়ার কোনো খবর, কোনো কিছুই ছিল না। সকালে দেখলাম সদর রোডসহ বিভিন্ন এলাকায় এক মাজা পরিমাণ পানি, সবকিছু ডুবে গেছে। সব দিকে ঘুরে দেখলাম, সকল ঘরবাড়ি, গাছ-পালা একদম ভেঙে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে। সব জায়গায় লাশ আর লাশ। মানুষের গবাদিপশুসহ সকল কিছু নষ্ট হয়ে গেছে। যারা বেঁচে ছিল তাদেরও ছিল না বেঁচে থাকার মতো কোনো সম্বল। ছিল না কোনো খাবার বা পরনে কোনো পোশাক। সেই দিনের সেই ভয়াবহ স্মৃতির কথা মনে পড়লে এখনো প্রাণ আঁতকে ওঠে।’
বিভিন্ন তথ্যসূত্রে জানা যায়, পৃথিবীর সর্বকালের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ প্রাণঘাতী ঝড়ের তালিকা করেছে জাতিসংঘের বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা (ডব্লিউএমও)। তালিকার প্রথমেই পৃথিবীর প্রাণঘাতী ঝড় হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে বাংলাদেশের উপকূলে সংঘঠিত ঝড় ‘সাইক্লোন ভোলা’। ১৯৭০ সালের ১২ নভেম্বর ঝড়টি বাংলাদেশের দক্ষিণ উপকূলীয় কয়েক জেলায় আঘাত হেনে ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞ চালায়।
সাইক্লোন ভোলার বাতাসের গতি ও জলোচ্ছ্বাসের তথ্য প্রকাশ করে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর। ১৯৬০ থেকে ২০১৭ সালের মে পর্যন্ত বাংলাদেশের সীমানায় আঘাত হানা ঝড়ের সেই তালিকায় সাইক্লোন ভোলার বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ২২৪ কিলোমিটার এবং এর প্রভাবে ১০-৩৩ ফুট জলোচ্ছ্বাস হয়েছিল বলে উল্লেখ করা হয়।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের এই তালিকা থেকে আরও জানা যায়, ঝড় আঘাত করেছিল তখনকার পূর্ব পাকিস্তান বর্তমান বাংলাদেশের ভোলা, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, পটুয়াখালী, বরগুনা এবং চট্টগ্রাম জেলায়। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ও প্রাণহানি হয় ভোলা জেলায়।
ভোলার ধনিয়া গ্রামের মো. আলমগীর গোলদার বলেন, ‘ঝড়ের পরের দিন দেখলাম নৌকাগুলো সব গাছের মাথায় আটকে আছে। গাছে গাছে মানুষের লাশ এবং সাপ একত্রে পেঁচিয়ে আছে। কত মানুষ যে মারা গেছে সেই হিসেব করার মতো কোনো অবস্থা ছিল না। নদীতে কচুরিপানার মতো মানুষের লাশ ভাসতে ছিল। মানুষকে গণকবর দেওয়া হয়েছে। এক কবরে কতজন করে দেওয়া হয়েছে সেই হিসাব করা সম্ভব হয়নি। সেই কথা মনে উঠলে এখনো গা শিউরে ওঠে। এখনো বাতাস-বৃষ্টি দেখলে বা কোনো সিগন্যালের কথা শোনলে ভয়ে ঘর থেকে বের হয়ে বাইরে বসে থাকি।’
চরফ্যাশন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাসনা শারমিন মিথি বলেন, ‘তখনকার সময়ে মানুষের কাছে আবহাওয়ার খবর পৌঁছানোর জন্য বর্তমানের মতো কোনো প্রযুক্তি ছিল না। আধুনিক যুগে কোনো দুর্যোগ সৃষ্টি হলে সাধারণ মানুষ তার আগাম খবর পেয়ে যায়। এছাড়া জরুরি দুর্যোগ মুহূর্তে উপকূলের মানুষদের নিরাপদ আশ্রয়ে রাখার জন্য এই উপজেলাতে পর্যাপ্ত আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে। এছাড়া দুর্যোগ মৌসুমে উপজেলা প্রশাসন সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়ে থাকে।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর মাগুরা জেলা কার্যালয়ের উদ্যোগে মহম্মদপুর উপজেলার যশোবন্তপুর এলাকায় মঙ্গলবার অভিযান পরিচালনা করা হয়।
এ সময় উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের স্কুল ও মাদ্রাসার আশেপাশের দোকানে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের কাছে নিম্নমানের ও অননুমোদিত খাবার বিক্রি করার জন্য নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দোকান তদারকি করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে মোট ৩১ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
অভিযানে বড়রিয়া এলাকার ‘মেসার্স বিসমিল্লাহ ট্রেডার্স’-এর গাড়ি তল্লাশি করে বিপুল পরিমাণ নিম্নমানের ও নকল শিশুখাদ্য জব্দ করা হয়। শিশুদের জন্য ক্ষতিকর এসব খাদ্য সরবরাহের অপরাধে প্রতিষ্ঠানটির মালিক রফিকুল ইসলামকে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০০৯-এর ৪১ ধারা অনুযায়ী ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
এছাড়া বিনোদপুর এলাকার ‘মেসার্স রাজ ট্রেডার্স’-এর গাড়িতেও একই ধরনের অননুমোদিত খাদ্য জব্দ করা হয় এবং প্রতিষ্ঠানটিকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
অন্যদিকে মেসার্স জাফর স্টোর নামের একটি দোকানকে নিম্নমানের শিশুখাদ্য বিক্রয়ের অপরাধে ১ হাজার টাকা জরিমানা করা হয় এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের কার্যকলাপ থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়।
পরবর্তীতে অন্যান্য দোকানেও তদারকি চালানো হয় এবং বিক্রেতাদের ন্যায্যমূল্যে পণ্য বিক্রয়, মূল্যতালিকা প্রদর্শন ও ক্রয়-বিক্রয় ভাউচার সংরক্ষণের বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়।
অভিযান পরিচালনা করেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, মাগুরা জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক সজল আহম্মেদ।
সার্বিক সহযোগিতায় ছিলেন মাগুরা জেলা কৃষি বিপণন কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলমগীর হোসেন এবং মাগুরা জেলা পুলিশের একটি টিম।
জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জে দুই পক্ষের জমি নিয়ে বিরোধের জেরে ৯ মাস ধরে বন্ধ কাঠারবিল-সানন্দবাড়ি সড়কের লংকারচর সকাল বাজার অংশের ৭০ মিটার সড়ক সংস্কারকাজ। সড়কটি কাঠারবিল থেকে সানন্দবাড়ি হয়ে রাজীবপুর রৌমারী যাতায়াতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিন এ সড়কে যাতায়াত করে শত শত যানবাহন। সংস্কার না হওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছেন পথচারী, যাত্রী ও যানবাহনচালক এবং বাজারে আসা লোকজন। তারা দ্রুত সড়কটির ওই স্থানে সংস্কার চায়।
জানা গেছে, কাঠারবিল-সানন্দবাড়ি সড়কের সংস্কার কাজের দায়িত্ব পায় ‘মেসার্স দূর্গা এন্টারপ্রাইজ’ নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের আওতাধীন সড়কটির সংস্কারকাজ শুরু হয় ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসে। সড়কটির সকাল বাজারের অংশে কিছুটা বাঁকা রয়েছে। যা এলজিইডির ম্যাপে দেখানো হয়েছে। সড়কটির বাঁকা অংশের পাশে কিছুটা জমি নিয়ে স্থানীয় হাসান মাহমুদ গ্রুপ ও আমানত গ্রুপের মধ্যে বিবাদ চলে আসছে। সে কারণে সড়কটির পূর্বের ম্যাপ অনুযায়ী ওই স্থানে কাজ করতে গেলে হাসান মাহমুদের লোকজন বাধা দেয়। ফলে বন্ধ হয়ে যায় সড়কটির সকাল বাজারের ওই অংশের সংস্কারকাজ।
হাসান মাহমুদ গ্রুপের দাবি, সড়কটি পূর্বে থেকে যেদিক দিয়ে বয়ে গেছে সেই গতি পথ পাল্টিয়ে সোজা করতে। যা এলজিইডির নকশায় নেই এবং নকশার বিকল্প গতিপথ খোঁজা সম্পূর্ণ বেআইনি। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আমানত গ্রুপ। আমানত গ্রুপের দাবি, সড়ক সরকারি। পূর্বে যেদিক দিয়ে সড়কটি ছিল এলজিইডি নকশা অনুযায়ী সেদিক দিয়ে সড়কটি যাবে এবং মেরামত হবে। এতে স্থানীয় কোনো পক্ষ বাধা দিলে তা সম্পূর্ণ বেআইনি হবে।
সরেজমিনে দেখা যায়, সকাল বাজারের আগের কিছুটা বাঁকানো সড়কের ওপর ঘর তোলা হয়েছে। পরিবর্তে জোরপূর্বক অন্যের জমি দিয়ে করা হয়েছে সড়ক। সে সড়কে চলাচল করছে মানুষ ও যানবাহন। গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে সড়কটি কাদায় ভরে আছে। চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে প্রায়। তাতে ভোগান্তি নিয়ে পথচারী ও যানবাহন চলাচল করছে। সড়কটি বাজারের ভেতরে হওয়ায় সকাল-বিকাল লোক-সমাগম ঘটে। কাদাজলে একাকার সড়কে ভোগান্তি বেড়েছে তাদের।
স্থানীয় হায়দার আলী বলেন, ‘লংকারচর সকাল বাজারের জমির মালিকানা নিয়ে হাসান গ্রুপ ও আমানত গ্রুপের মধ্যে দ্বন্দ্ব দীর্ঘদিনের। হাসান মাহমুদ গ্রুপের দাবি সড়কটির গতিপথ পাল্টিয়ে ব্যক্তি মালিকানা জমির ওপর দিয়ে নেওয়া। আমানত গ্রুপের দাবি সড়কটি পূর্বের ম্যাপ অনুযায়ী রেখে সংস্কার করা। হঠাৎ ম্যাপ পালিয়ে সড়কটি সোজা করা সম্পূর্ণ বেআইনি বলে মনে করছেন আমানত গ্রুপ। এটি বিধি লংঘনের মতো অপরাধও।’
লংকারচরের হযরত আলীর ভাষ্য, সকাল বাজারের ওই অংশের সংস্কারকাজ নিয়ে ইতোমধ্যে দুগ্রুপের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়েছে কয়েকবার। মীমাংসার জন্য স্থানীয় পর্যায়ে কয়েকবার শালিস-বৈঠক হয়েছে। এমনকি প্রশাসনের মধ্যস্থতায়ও বিরোধের মীমাংসা হয়নি। বিরোধের বিষয়টি দ্রুত মীমাংসা না হলে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার শঙ্কা রয়েছে বলে তিনি মনে করছেন। অন্যদিকে সড়কটির ওই স্থান চলাচলের খুব অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে।
আমানত আলী বলেন, ‘সকাল বাজারের বাঁকানো রাস্তাটি বহু পুরোনো। হাসান মাহমুদের পক্ষ পেশিশক্তি দেখিয়ে ওই রাস্তার কাজ বন্ধ করে দিয়েছে। আগের রাস্তায় ঘর তুলে সংস্কারে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছে। তারা নতুন করে যে সোজা রাস্তা করতে বলছে, সেটা কবরস্থানের ওপর দিয়ে যাবে। এ ব্যাপারে আদালতে মামলা করা হয়েছিল। ইতোমধ্যে আদালত আগের রাস্তায় অবৈধ স্থাপনা অপসারণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আদেশ দিয়েছেন। এলাকাবাসীদের দাবি, দ্রুত সড়কটি আগের স্থানে হোক।’
হাসান মাহমুদ বলেন, ‘আগের বাঁকানো রাস্তাটি সোজা করা হলে কয়েকটি পরিবারের দ্বন্দ্ব নিরসন হয়। দুই সীমানার মাঝ বরাবর রাস্তা সোজা করলে আর কোনো বিরোধ থাকবে না। আমরা চাই সড়কটির গতিপথ সোজা করে সংস্কার করা হোক।’
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি মো. মঞ্জু হোসেন জানান, ‘এলজিইডির নির্দেশেই রাস্তার কাজটি শুরু করা হয়েছিল। সৃষ্ট দ্বন্দ্বে দীর্ঘদিন ধরে সড়কের সংস্কারকাজ স্থগিত থাকায় আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি।
এলজিইডির দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী মো. জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘দুই পক্ষ দুই রকম দাবি করছে। তাদের দাবি মেনে কাজ করা সম্ভব নয়। মূলত ম্যাপ অনুযায়ী সড়ক সংস্কারকাজ করতে হবে। সে অনুযায়ী বাজেট করা হয়েছে। বিষয়টি মীমাংসার জন্য দীর্ঘদিন ধরে প্রচেষ্টা চলছে।’