জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধি সৌধে শ্রদ্ধা জানাতে শুক্রবার গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় যাচ্ছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
সরকারি বাসভবন বঙ্গভবন থেকে সড়কপথে রওনা হবেন তিনি। এবারই প্রথম তিনি পদ্মা সেতু পাড়ি দেবেন এই সফরের মাধ্যমে।
রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব মো. জয়নাল আবেদীন দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতার সমাধি সৌধে শ্রদ্ধা জানাতে রাষ্ট্রপতি পদ্মা সেতু পাড়ি দিয়ে গোপালগঞ্জে যাবেন। যাওয়ার পথে তিনি পদ্মা সেতু এবং সংলগ্ন বিভিন্ন স্থাপনা পরিদর্শন করবেন।’
গত ২৫ জুন ছয় কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই সেতুর মাধ্যমে দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানীর সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হয়েছে।
উদ্বোধনের পর এবারই প্রথম এই সেতুতে উঠতে যাচ্ছেন রাষ্ট্রপ্রধান আবদুল হামিদ।
বঙ্গভবন থেকে জানা গেছে, আগামী শুক্রবার দুপুরে রাস্ট্রপতি বঙ্গভবন থেকে উদ্দেশে রওনা দেবেন। বিকেলে জাতির পিতার সমাধি সৌধে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাবেন তিনি। পরে ফাতেহাপাঠ ও বিশেষ মোনাজাতে অংশ নিয়ে পরিদর্শন বইয়ে মন্তব্য লিখে সই করবেন।
টুঙ্গিপাড়ায় চা চক্রে অংশ নিয়ে কাশিয়ানী উপজেলার কালনা সেতু পরিদর্শন করবেন আবদুল হামিদ। সেখান থেকে সন্ধ্যায় রাষ্ট্রপতি মাদারীপুরের শিবচর উপজেলায় যাবেন। সেখানে তিনি সাবেক গণপরিষদ সদস্য ও সংসদ সদস্য প্রয়াত ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরীর কবর জিয়ারত করবেন।
সেখান থেকে রাষ্ট্রপতি সরাসরি বঙ্গভবনের উদ্দেশে রওনা দেবেন বলে জানিয়েছেন তার প্রেস সচিব।
এদিকে, দৈনিক বাংলার গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, রাষ্ট্রপতির সফর উপলক্ষে আগামী ৬ ও ৭ অক্টোবর টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতার সমাধি সৌধ কমপ্লেক্সে সাধারণ দর্শনার্থীদের জন্য বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছেন জেলা তথ্য কর্মকর্তা মঈনুল ইসলাম।
তিনি বলেন, ‘৭ অক্টোবর রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ জাতির পিতার সমাধি সৌধে শ্রদ্ধা জানাতে টুঙ্গিপাড়া আসছেন। তার আগমন উপলক্ষে সমাধি সৌধ কমপ্লেক্সের নিরাপত্তা ও ধোয়া-মোছাসহ বিভিন্ন সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ করতে হবে। এ কারণে সমাধি কমপ্লেক্স দুই দিন সাধারণ দর্শনার্থীদের জন্য বন্ধ থাকবে।’
জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে বিলে বিষ প্রয়োগ করে মাছ নিধনের ঘটনা ঘটেছে। সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) সকালে এমন দৃশ্য দেখা যায় উপজেলার ডোয়াইল ইউনিয়নের রামনন্দনপুর গ্রামে। বিষ প্রয়োগের ফলে ৩ থেকে ৪ লক্ষ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানা গেছে।
স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, উপজেলার ডোয়াইল ইউনিয়নের রামনন্দপুর গ্রামের স্থানীয় ১৬ জন সদস্য মিলে কামারকুড়া মৎস চাষ প্রকল্প সমিতি করে ১০ বিঘা জমিতে মাছ চাষ প্রকল্প শুরু করেন। এসময় ১৮৬ কেজি পাঙ্গাস, ২৭ মন সরপুঁটি, বাটাসহ দেশীয় সকল মাছ চাষ করেন।
সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) সকাল থেকে বিলের পানিতে মাছ ভাসতে দেখে স্থানীয়রা সমিতির সদস্যদের খবর দেয়। পরে সদস্যরা গিয়ে পুকুরে থাকা পাঙ্গাশসহ দেশীয় নানা প্রজাতির মাছ মরা অবস্থায় ভাসতে দেখে।
কামারকুড়া মৎস চাষ সমিতির সভাপতি শাহাদাত হোসেন, সাধারণ সম্পাদক খলিলুর রহমান মজনু,
মমিনুল ইসলাম সাবু বলেন, আমাদের পাশের পুকুরের মালিক সম্প্রতি তার পুকুরে নেট দিয়ে বেড়া দিয়েছে। তারপর থেকেই মাছ মরতেছে। তারা হয়তো নেট দিয়ে বেড়া দেয়ার সময় এমন কাজ করতে পারে। আমাদের মৎস চাষ প্রকল্পে বিষ দেয়ার কারনে আমাদের সকল মাছ মরে ভেসে উঠতেছে। এতে করে আমাদের ৩ থেকে ৪ লক্ষ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
গাজীপুরের টঙ্গীতে খাবারের হোটেলে অভিযান পরিচালনা করেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।
এসময় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাবার তৈরি ও পরিবেশনের অপরাধে হোটেলটিকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর গাজীপুর জেলা শাখার সহকারী পরিচালক আফসানা পারভীনের নেতৃত্বে এই অভিযান পরিচালিত হয়।
অভিযানে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের গাজীপুর জেলা শাখার কর্মকর্তা ও স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তাবৃন্দ।
এসময় তিনি বলেন, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের নিয়মিত অভিযানের অংশ হিসেবে টঙ্গী স্টেশন রোড এলাকায় পালকি হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্টে অভিযান পরিচালনা করা হয়। এসময় অবৈধ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ পদ্ধতিতে খাবার উৎপাদন ও প্রক্রিয়াকরণের অপরাধে হোটেলটিকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। জনস্বার্থে এই ধরনের অভিযান চলমান থাকবে।
ফুয়েল লোডিংয়ের প্রারম্ভে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের পক্ষে ব্যাপক সচেতনতা বৃদ্ধি ও জনগণের মধ্যে সঠিক তথ্য পৌঁছে দিতে মাসব্যাপী ব্যাপক প্রচারণামূলক কার্যক্রম শুরু করেছে।
এ কর্মসূচি আওতায় রোববার (১৪ ডিসেম্বর) বিকেলে ঈশ্বরদী শহরে অনুষ্ঠিত হয়েছে নিউক্লিয়ার বাস ট্যুর, উঠান বৈঠক ও কুইজ প্রতিযোগিতাসহ ব্যতিক্রম সব কর্মসূচি। আগামী ২০ ডিসেম্বর ’গম্ভীরা পরিবেশন, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও সচেতনতামূলক সরাসরি মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন ও রাশিয়ার রসাটম এ কার্যক্রমের আয়োজন করেছে।
রোববার (১৪ ডিসেম্বর) রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের ফোকাল পয়েন্ট (গণমাধ্যম) ও বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের উর্ধতন বৈজ্ঞানিক তথ্য কর্মকর্তা সৈকত আহমেদের পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানান।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং সাধারণ জনগণের মধ্যে সঠিক ও প্রয়োজনীয় তথ্য পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে ব্যাপক প্রচারণামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এ কর্মসূচির আওতায় নিউক্লিয়ার বাস ট্যুর, বিতর্ক প্রতিযোগিতা, সাংস্কৃতিক আয়োজন ’গম্ভীরা’ ও স্থানীয় জনগণের সঙ্গে সরাসরি মতবিনিময়মূলক কার্যক্রম এবং ’উঠান বৈঠক’বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
আরও জানানো হয়, দেশের সর্ববৃহৎ উন্নয়ন প্রকল্প রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র আজ সমগ্র জাতির জন্য গর্বের প্রতীক। বিশেষত পাবনাবাসীর জন্য এ প্রকল্পের গুরুত্ব আরও বেশি। স্থানীয় জনগণের মধ্যে এই প্রকল্পকে ঘিরে নানা প্রশ্ন, ভুল ধারণা, উদ্বেগ ও কৌতূহল নিরসনে প্রকল্প সম্পর্কে সহজ, স্পষ্ট ও নির্ভরযোগ্য তথ্য তুলে ধরার লক্ষ্যে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন এবং রোসাটম যৌথভাবে নিউক্লিয়ার বাস ট্যুর আয়োজন করেছে। এ বাস ট্যুরের মাধ্যমে জেলার সাধারণ মানুষ সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলার সুযোগ পাচ্ছেন, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নিরাপত্তা, পরিবেশ ও প্রযুক্তিগত এবং আর্থ-সামাজিক গুরুত্ব সম্পর্কে অবগত হচ্ছেন। পারমাণবিক তথ্যকেন্দ্র, ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ আয়োজনে পারমাণবিক প্রযুক্তি বিষয়ক বিতর্ক ও প্রশ্নোত্তর পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। বিতর্ক অনুষ্ঠানে ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন ও রোসাটমের কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও চলতি মাসে আরও দুটি উল্লেখযোগ্য প্রচারণামূলক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
এর মধ্যে রয়েছে সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় ’গম্ভীরা: স্বপ্ন পূরণে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং স্থানীয় জনগণের অংশগ্রহণে একাধিক উঠান বৈঠক। ’টেকসই, নিরাপদ, সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র’ মূলভাবের উপর নির্মিত এ গম্ভীরা স্থানীয় জনসাধারণকে বিনোদন ও যুক্তির মাধ্যমে রূপপুরের প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব তুলে ধরবে। ’উঠান বৈঠক’ স্থানীয় মানুষকে রূপপুর সম্পর্কে অবগত, সচেতন করা বা তাদের সঙ্গে সরাসরি আলোচনা বিভিন্ন প্রশ্নের সঠিক ও তথ্যভিত্তিক উত্তর প্রদান করে তাদের উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা দূর করার পাশাপাশি প্রকল্পের পক্ষে ইতিবাচক জনমত গড়ে তোলার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এতে আশা করা হয়, বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন এবং রাশিয়ার রোসাটম বিশ্বাস করে, ধারাবাহিক ও অংশগ্রহণমূলক জনসচেতনতা কার্যক্রমের মাধ্যমে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র সম্পর্কে জনগণের আস্থা আরও সুদৃঢ় হবে এবং দেশের টেকসই উন্নয়নে এ প্রকল্পের ভূমিকা সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা তৈরি হবে।
এ অবস্থায় ফুয়েল লোডিংয়ের মধ্য দিয়ে অতি শীঘ্রই রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হতে যাচ্ছে যা জাতীয় গ্রিডে ২৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ যুক্ত করবে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জে বিজিবির বিশেষ অভিযানে ৪ টি বিদেশী পিস্তল, ৯ টি ম্যাগাজিন ও ২৪ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়েছে। জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার শিবগঞ্জ উপজেলার মনাকষা ইউনিয়নের গোপালপুর এলাকায় সোমবার সকালে এ অভিযান চালানো হয়।
সোমবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে অভিযানের এ তথ্য জানায় চাঁপাইনবাবগঞ্জের ৫৩ বিজিবি অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল কাজী মুস্তাফিজুর রহমান ।
তিনি জানান, ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদীকে গুলির ঘটনার পর থেকেই বিজিবি সীমান্তে বিশেষ টহল, চেকপোষ্ট ও গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে। এরই ধারাবাহিকতায় সোমবার সকালে গোপালপুর এলাকায় বিশেষ অভিযান চলাকালে, দুজন মোটর সাইকেল আরোহীকে থামার সংকেত দিলে তারা দ্রুততার সাথে বাঁক পরিবর্তন করে পালিয়ে যায়। এ সময় মোটরসাইকেল থেকে একটি ব্যাগ পড়ে যায়, পরে পড়ে যাওয়া ব্যাগ থেকে ৪ টি বিদেশী পিস্তল, ৯ টি ম্যাগাজিন ও ২৪ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করে বিজিবি সদস্যরা।
তিনি জানান, দুস্কৃতিকারীরা বাংলাদেশের অভ্যান্তরে বড় ধরনের নাশকতার পরিস্থিতি সৃষ্টির লক্ষ্যে অবৈধ পথে অস্ত্র গোলাবারুদ আনার সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে এমন ধারনা থেকে সীমান্ত এলাকায় কঠোর নজরদারি ও টহল জোরদার করা হয়েছে।
পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠীর শোষন আর শৃঙ্খলা থেকে মুক্ত হয়ে সম্ভাবনার বাংলাদেশ একটি লাল সবুজের পতাকা অর্জনের মাধ্যমে স্বাধীনতা পেয়েছে ৫৪বছর আগে। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা আন্দোলনে অংশ নিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিকামী মানুষ অনেকে সম্মুখযুদ্ধে বাংলাদেশের জন্য আত্মাহুতি দেন হাজারো বীর সেনানী। তাদের মধ্যে কক্সবাজারের চকরিয়ায় ৭জন বীর মুক্তিযোদ্ধা অন্যতম।
জাতির এই সূর্য সন্তানরা যুদ্ধ করে মাতৃভুমির জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করে শহীদ হলেও স্বাধীনতার ৫৪বছর পরও সেই বীর সেনানীর সম্মানে দৃশ্যমান কোন স্মৃতি নেই আপন জম্মস্থানে। ফলে মহান মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা আন্দোলনে চকরিয়া উপজেলাবাসীর কি পরিমান অবদান ছিল সেই সম্পর্কে কিছুই জানেন না নতুন প্রজন্ম। এমনকি স্বাধীন বাংলাদেশ গড়তে চকরিয়া উপজেলার শহীদ ৭ বীরের বীরত্বগাঁথা অবদান সম্পর্কে ওয়াকিবহালও নন এই প্রজম্মের হাজার হাজার শিক্ষার্থীরা।
মহান মুক্তিযুদ্ধে চকরিয়ার যাদের আত্মত্যাগ:
তথ্য সুত্রে জানা গেছে, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ আনুষ্টানিক ভাবে পাকিস্তানী শাসক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বাঙ্গালী জাতির সশস্ত্র যুদ্ধ শুরু হলে কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার ৭ জন কৃতি সন্তান প্রত্যক্ষভাবে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। ওই সময় যুদ্ধকালীন সময়ে তারা দেশের জন্য জীবন দেন পাক হানাদার বাহিনীর হাতে।
যাদের রক্তের বিনিময়ে চকরিয়া আজ গৌরবোজ্জ্বল তারা হলেন, চকরিয়া উপজেলার বমুবিলছড়ি ইউনিয়নের শহীদ আবদুল হামিদ, চকরিয়া পৌরসভার বাটাখালী গ্রামের শহীদ হাবিলদার আবুল কালাম, তাঁর ভাই শহীদ আবুল হোছাইন,
উপজেলার কেয়ারবিল ইউনিয়নের শহীদ এনামূল হক, খিলছাদক গ্রামের শহীদ সিপাই আকতার হোসেন, চিরিংগা ইউনিয়নের পালাকাটা গ্রামের শহীদ গোলাম কাদের ও হারবাং ইউনিয়নের কালা সিকদার পাড়া গ্রামের শহীদ গোলাম সাত্তার।
জানা গেছে, শহীদ আবদুল হামিদ মুক্তিযুদ্ধের সময় চট্রগ্রাম সরকারী বাণিজ্য মহাবিদ্যালয়ে ছাত্র থাকা অবস্থায় দেশ মাতৃকার টানে লেখাপড়া গুটিয়ে ভারত থেকে গেরিলা প্রশিক্ষন নিয়ে দেশে এসে পার্বত্য লামা আলীকদম ও লোহাগাড়ার পুটিবিলা এলাকায় যুদ্ধে অংশ গ্রহন করেন। ১৯৭১ সালের ৪ নভেন্বর র্বামা সীমান্তে ফুরুইক্যা বাহিনী তাকে ধরে নিয়ে ককসবাজার অবস্থানরত পাক বাহিনীর ক্যাপ্টেন রিজভীর হাতে সোর্পদ্দ করে। সেখানে টান ১৫ দিন পাকবাহিনী তার উপর শারীরিক নির্যাতন চালিয়ে ১৯ নভেম্বর টেকনাফে নিয়ে গিয়ে তাকে গুলি করে হত্যা করে।
শহীদ হাবিলদার আবুল কালাম ছিলেন সেনাবাহিনীর একজন সৈনিক। তিনিও দেশ মাতৃকার টানে সেসময় মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন ১ নম্বর সেক্টরে। র্পাবত্য চট্রগ্রামের কেরানী পাড়ায় তিনি পাকবাহিনীর সাথে যুদ্ধে অংশ নিয়ে শহীদ হন।
শহীদ এনামূল হক ছিলেন সেনা বাহিনীর ৮ম ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সদস্য। তিনি সরকারী চাকুরী ছেড়ে দেশের টানে অংশ নেন মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে।
একাত্তর সালের ২৫ মার্চ পাকবাহিনী এনামুল হকসহ ১২ মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যার উদ্যেশে নিয়ে যাবার পথে তারা গাড়ী চালককে হত্যা করে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। পরবর্তীতে ৯ ডিসেম্বর র্পাবত্য চট্রগ্রামের কেরানী পাড়ায় পাকবাহিনীর সম্মুখ যুদ্ধে শহীদ হন এনামুল হক।
১৯৭১ সালের ২৪ মার্চ রাতে পাক বাহিনীর সদস্যরা আমেরিকা থেকে সমুদ্র পথে সোয়াথ জাহাজ যোগে মুক্তিকামী বাঙ্গালী নিধনের জন্য অস্ত্রের চালান তুলছিলেন চট্রগ্রাম বন্দরে। ওই সময় অস্ত্র নামানো পতিহত করতে চেষ্টাকালে গুলিতে শহীদ হন হারবাং ইউনিয়নের কালা সিকদারপাড়া গ্রামের সূর্য সন্তান গোলাম সাত্তার।
২৫ মার্চ যুদ্ধের প্রথম দিকে শহীদ হয়েছেন চকরিয়া উপজেলার চিরিঙ্গা ইউনিয়নের পালাকাটা গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম কাদের। একইভাবে সিপাই আকতার হোসেন পাক বাহিনীর নিমর্ম নারকীয়তায় শহীদ হন একইসময়ে। একইসময়ে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে চকরিয়া পৌরসভার ফুলতলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের ডাকবাংলোর সামনে পাকবাহিনীর সদস্যরা গুলি করে হত্যা করে শহীদ হাবিলদার আবুল কালামের ছোট ভাই শহীদ আবুল হোছাইনকে। তাঁর রক্তমাখা জামা এখনো পরিবারের কাছে সংরক্ষিত আছে।
মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদ উপজেলার জাতির সূর্য সন্তান ৭ বীরের অবদান অনস্বীকার্য বলে স্বরন করেছেন চকরিয়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার হাজী আবু মো.বশিরুল আলম। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশকে শোষনহীন ও সমৃদ্ধশালী হিসেবে প্রতিষ্টায় বীর শহীদদের আত্মত্যাগ বতর্মান প্রজম্মকে অবশ্যই জানানো উচিত। তবে এ ব্যাপারে সরকারের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়কে উদ্যোগ নিতে হবে।
সরকারের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্থানীয় প্রশাসন চাইলে এই ৬ বীর শহীদদের স্মৃতি প্রতিষ্টা করে তাদের অবদান ও আত্মত্যাগের প্রতিচ্ছবি দেশ ও জাতির কাছে তুলে ধরতে পারে। এতে করে বর্তমান প্রজম্মের তরুন, যবুক, শিক্ষার্থীরা চকরিয়া উপজেলার শহীদ ৭ বীর সেনানীর সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারবে।
শহীদের স্বরণে কিছুটা অবদান:
জানা গেছে, মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করেছে ৫৪ বছর আগে। কিন্তু চকরিয়া উপজেলা প্রশাসন কিংবা রাজনৈতিক দলের নীতিনির্ধারকরা চকরিয়ার শহীদ ৭ বীর সেনানীর মর্যাদা প্রতিষ্টায় কিছু করতে না পারলেও আওয়ামী লীগ দলীয় সাবেক এমপি জাফর আলম চকরিয়া পৌরসভার সাবেক মেয়র থাকাকালে অনুকম্পা দেখিয়েছেন এক বীর শহীদের স্মৃতির প্রতি।
২০০৯ সালে চকরিয়া পৌরশহরে নবনির্মিত পৌরবাস র্টামিনালকে শহীদ আবদুল হামিদ পৌরবাস র্টামিনাল নামে ঘোষানা করে একটি দায়বদ্ধতা পূরণ করেছেন সাবেক এমপি জাফর আলম।
একইভাবে চকরিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে জেলা আওয়ামী লীগ নেতা রেজাউল করিম বমুবিলছড়িতে শহীদ আবদুল হামিদের নামে একটি বিদ্যালয় প্রতিষ্টা করে দিয়েছেন। একইভাবে শহীদ হাবিলদার আবুল কালামের নামে একটি স্মৃতি পাঠাগার এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা এসকে সামসুল হুদার নামে একটি সড়কের নামকরন করে দিয়েছেন। বাস্তবতা হচ্ছে, এসব নামকরণ এখনো কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ রয়েছে। বাস্তবে কোনটার প্রতিফলন খুঁজে পাচ্ছে না চকরিয়া উপজেলাবাসি।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন, পানি সম্পদ এবং তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ পুলিশের সার্জেন্টসহ দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা সরাসরি ব্যবস্থা নিতে পারবেন, যা শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি।
তিনি বলেন, আইন থাকলেই যথেষ্ট নয়, তার কার্যকর প্রয়োগ নিশ্চিত না হলে কাঙ্ক্ষিত ফল পাওয়া যায় না। এ ক্ষেত্রে মাঠপর্যায়ে পুলিশের সক্রিয় ভূমিকা অত্যন্ত জরুরি।
রোববার (১৪ ডিসেম্বর) পরিবেশ অধিদপ্তরে আয়োজিত শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা, ২০২৫ অনুযায়ী বাংলাদেশ পুলিশকে আইনপ্রয়োগের ক্ষমতা প্রদানসহ বিভিন্ন অংশীজনকে সম্পৃক্ত করার লক্ষ্যে আয়োজিত নির্দেশনামূলক সভায় উপদেষ্টা এ কথা বলেন।
তিনি সংশ্লিষ্ট সব সংস্থাকে সমন্বিতভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, শুধু জরিমানা নয়, জনসচেতনতা তৈরি করাও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
শব্দদূষণ এখন আর ছোট সমস্যা নয়- এটি জনস্বাস্থ্য, শিশুদের মানসিক বিকাশ এবং নগরজীবনের স্বস্তিকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
তিনি আরো বলেন, এ জন্য পরিবহন, নির্মাণকাজ, মাইক ও বিভিন্ন ইলেকট্রনিক যন্ত্রের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে কঠোর নজরদারি প্রয়োজন।
সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খান, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. ফাহমিদা খানম, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. কামরুজ্জামান এবং ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মো. আনিসুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ২০২৪ সালের থার্টি-ফার্স্ট নাইটে আতশবাজি, পটকা ও ফানুস ব্যবহারে সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ, শিক্ষার্থীদের সচেতন করার অনুকরণযোগ্য দৃষ্টান্ত স্থাপনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খানকে ক্রেস্ট ও ধন্যবাদপত্র দেয়া হয়।
এছাড়া, এ সময় মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক সার্জেন্টদের জন্য ৫০টি সাউন্ড মিটার প্রদানের অংশ হিসেবে অতিরিক্ত কমিশনারের হাতে একটি সাউন্ড মিটার তুলে দেওয়া হয়।
পরে পরিবেশ উপদেষ্টা ব্র্যাক সিডিএম, রাজেন্দ্রপুরে আয়োজিত লেড রিমেডিয়েশন প্রশিক্ষণে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন।
তিনি বলেন, লিড দূষণের উৎস চিহ্নিত করে গণমাধ্যমের মাধ্যমে জনসচেতনতা তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় অর্থায়নের ব্যবস্থা রয়েছে। তিনি সতর্ক করে বলেন, যথাযথ নজরদারি ছাড়া কারখানা স্থানান্তর করলে সমস্যা এক স্থান থেকে অন্য স্থানে সরে যেতে পারে। জাতীয় পর্যায়ে একটি লেড অ্যাকশন প্ল্যান প্রণয়ন, উৎসভিত্তিক তালিকা, সময়বদ্ধ কর্মপরিকল্পনা, পরিবেশগত ছাড়পত্র প্রদানে কঠোর চেকলিস্ট এবং অংশীদারিত্বভিত্তিক উদ্যোগের মাধ্যমে লিডমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলার আহ্বান জানান তিনি।
সুদানে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে ড্রোন হামলায় নিহত ছয় বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীর পরিচয় প্রকাশ করেছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)। এরা হলেন করপোরাল মো. মাসুদ রানা (নাটোর), সৈনিক মো. মমিনুল ইসলাম (কুড়িগ্রাম), সৈনিক শামীম রেজা (রাজবাড়ী), সৈনিক শান্ত মন্ডল (কুড়িগ্রাম), মেস ওয়েটার মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম (কিশোরগঞ্জ) ও লন্ড্রি কর্মী মো. সবুজ মিয়া (গাইবান্ধা)।
এদের পরিবারে চলছে শোকের মাতম। কান্নায় ভেঙে পড়েছে পরিবারের সদস্যরা। কেউ সন্তান, কেউ বাবা, কেউ ভাই হারিয়ে পাগলপ্রায়।
আহত আটজন হলেন– লেফটেন্যান্ট কর্নেল খন্দকার খালেকুজজামান (কুষ্টিয়া), সার্জেন্ট মো. মোস্তাকিম হোসেন (দিনাজপুর), করপোরাল আফরোজা পারভীন ইতি (ঢাকা), ল্যান্স করপোরাল মহিবুল ইসলাম (বরগুনা), সৈনিক মো. মেজবাউল কবির (কুড়িগ্রাম), সৈনিক উম্মে হানী আক্তার (রংপুর), সৈনিক চুমকি আক্তার (মানিকগঞ্জ) ও সৈনিক মো. মানাজির আহসান (নোয়াখালী)। রোববার (১৪ ডিসেম্বর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আইএসপিআর হতাহত ব্যক্তিদের নাম-পরিচয় ও বিস্তারিত তথ্য জানায়।
আইএসপিআর জানায়, কাদুগলি লজিস্টিকস বেসে গত শনিবার স্থানীয় সময় বিকেল ৩টা ৪০ থেকে ৩টা ৫০ মিনিটের মধ্যে এই হামলা চালানো হয়। একটি বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র গোষ্ঠী এই ড্রোন হামলা চালায়। এ সময় শান্তিরক্ষীরা বেসে দায়িত্ব পালন করছিলেন।
আইএসপিআর আরও জানিয়েছে, আহত আটজনই চিকিৎসাধীন। তাদের মধ্যে সৈনিক মো. মেজবাউল কবিরের অবস্থা আশঙ্কাজনক ছিল, তবে সফল অস্ত্রোপচারের পর তিনি নিবিড় পর্যবেক্ষণে আছেন। বাকি সাতজনকে হেলিকপ্টারে করে উন্নত চিকিৎসার জন্য সরিয়ে নেওয়া হয়েছে এবং তারা শঙ্কামুক্ত।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এই বর্বরোচিত সন্ত্রাসী হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বিশ্বশান্তি রক্ষায় এই শান্তিরক্ষীদের আত্মত্যাগ বাংলাদেশের অঙ্গীকারের এক গর্বিত সাক্ষ্য হয়ে থাকবে। নিহতদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা এবং আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেছে সেনাবাহিনী।
এদিকে, সুদানে নিহতদের গ্রামের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম।
কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, সুদানে নিহত ছয় শান্তিরক্ষীর একজন জাহাঙ্গীর আলম (৩০)। তিনি কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার জাঙ্গালিয়া ইউনিয়নের তারাকান্দি গ্রামের আকন্দ বাড়ির হযরত আলীর ছেলে। তিনি সেনাবাহিনীর মেস ওয়েটার পদে কর্মরত ছিলেন। তার মৃত্যুতে তারাকান্দি গ্রামে চলছে শোকের মাতম। গত ৭ নভেম্বর শান্তিরক্ষা মিশনে অংশ নিতে সুদানে যান জাহাঙ্গীর।
পরিবার জানায়, স্ত্রী আর তিন বছরের একমাত্র ছেলে ইরফানকে রেখে দেশ ছেড়েছিলেন জাহাঙ্গীর। বাবার মৃত্যুর খবর শুনে বাড়ির উঠোনজুড়ে শুধু চলছে কান্না আর হাহাকার। বাবার আদর কী, তা বোঝার আগেই চিরতরে পিতৃহারা হলো ছোট্ট ইরফান।
জানা গেছে, তিন ভাইয়ের মধ্যে জাহাঙ্গীর আলম ছিলেন মেজ । তার বড় ভাই মো. মোস্তফা প্রবাসী এবং ছোট ভাই মো. শাহিন মিয়া বাড়িতে কৃষিকাজ করেন।
গাইবান্ধা প্রতিনিধি জানান, সুদানে নিহত শান্তিরক্ষীর একজন গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার মো. সবুজ মিয়া। তিনি ওই গ্রামের মৃত হাবিবুর রহমান ও ছকিনা বেগমের ছেলে। তার মৃত্যুর খবরে গ্রামে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। পরিবার, স্বজন ও গ্রামবাসীর কান্নায় ভারি হয়ে ওঠেছে পরিবেশ।
পরিবার জানায়, মাত্র দুই বছর বয়সে বাবাকে হারান সবুজ। দরিদ্র পরিবারের সন্তান সবুজ অভাব অনটনের মধ্যে বড় হন। গত ৭ নভেম্বর জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে যোগ দিতে সুদানে যান সবুজ। সেখানে তিনি অসামরিক লন্ড্রি কর্মচারী হিসেবে কাজ করছিলেন। সবুজের মৃত্যুর খবরে তার মা ছকিনা বেগম ও স্ত্রী নুপুর আক্তার বারবার জ্ঞান হারিয়ে ফেলছেন।
নুপুর আক্তার কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, সুদানে যাওয়ার পর শনিবার বিকালে কয়েক মিনিটের জন্য ওর (সবুজ) সঙ্গে কথা হয়েছিল। এরপর রাত ১২টার দিকে খবর পাই ও আর নেই।
ছেলে হারানোর খবরে বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন মা ছকিনা বেগম। বিলাপ করত করতে তিনি বলছিলেন, বাবা হামার একমাত্র বুকের ধন আছিল। গত মাসেই সুদান গেছে। ফোনে কথা কয়া খোঁজ নিত। এখন হামার খোঁজ নেবে কে? হামার বাবার লাশ বাড়িতে চাই। ওকে বাড়িতে আনলে হামার আত্মা শান্তি পাবে।
নাটোর প্রতিনিধি জানান, সুদানে নিহত সেনা সদস্য নাটোরের লালপুর উপজেলার দুর্গম বোয়ালিয়াপাড়া গ্রামে করপোরাল মাসুদ রানার পরিবারে চলছে শোকের মাতম। কান্না থামছে না স্ত্রী আসমাউল হুসনা আখি ও মা মর্জিনা বেগমের। মাসুদের ৮ বছরের একমাত্র কন্যা মাগফিরাতুল মাওয়া আমিনাও স্তব্ধ হয়ে আছে। প্রায় ১৮ বছর ধরে সেনাবাহিনীতে চাকরি করছেন মাসুদ। জাতিসংঘ শান্তরক্ষী মিশনে যোগ দিতে মাত্র এক মাস ৭ দিন আগে সুদানে গিয়েছিলেন তিনি।
কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি জানান, সুদানে নিহত সেনাবহিনীর সদস্য শান্ত মন্ডল ও মমিনুল ইসলাম নিহতের ঘটনায় তাদের পরিবারে চলছে শোকের মাতম। কান্নায় ভেঙে পড়েছে পরিবারের সদস্যরা।
রাজারহাট উপজেলার ছাট মাধাই গ্রামের মন্ডলপাড়ার সৈনিক পরিবারে বাসিন্দা মৃত সাবেক সেনা সদস্য নুর ইসলাম মন্ডল ও সাহেরা বেগমের ছোট ছেলে শান্ত মন্ডল। এছাড়াও তার বড় ভাই সোহাগ মন্ডল তিনিও সেনাবাহিনীর একজন সদস্য।
শান্ত ২০১৮ সালে সেনাবাহিনীতে সৈনিক পদে যোগ দেন। গত নভেম্বর শান্তি মিশনে সুদানে যান। সেখানে বিদ্রোহীদের বোমার আঘাতে প্রাণ হারান তিনি। ছেলের মরদেহ একনজর দেখতে আকুতি জানান তার মা ও প্রতিবেশীরা।
অপরদিকে বীর শহীদ সেনাসদস্য মমিনুল ইসলামের বাড়ি জেলার উলিপুর উপজেলার উত্তর পান্ডুল গ্রামে। সেখানেও চলছে শোকের মাতম।
কালুখালী (রাজবাড়ী) সংবাদদাতা জানান, সুদানে নিহত সৈনিক শামীম রেজার গ্রামের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। রোববার (১৪ ডিসেম্বর) দুপুরে মৃগী ইউনিয়নের হোগলাডাঙ্গি গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির সামনে বসে আহাজারি করছেন বাবা আলম ফকির। স্বজন ও প্রতিবেশীরা তাকে শান্ত করার চেষ্টা করছেন।
৩ ভাই এক বোনের মধ্যে শামীম সবার বড়। মেজ ভাই সোহেল ফকির সৌদি আরব প্রবাসী। সেজ ভাই সোহান বেকার, থাকেন বাড়িতে। একমাত্র বোন মরিয়ম খাতুন মাদ্রাসায় পড়েন।
শামীমের বাবা আলম ফকির জানান, তিনি কৃষিকাজ করে শামীমকে লেখাপড়া শিখিয়েছেন। ৮ বছর আগে সেনাবাহিনীতে যোগ দেন শামীম। গত ৭ নভেম্বর তিনি সুদানে যান।
তিনি বলেন, সর্বশেষ শুক্রবার আমার ছেলের সঙ্গে মোবাইল ফোনে ভিডিও কলে কথা হয়। ছেলে জানায়, সে সুস্থ আছে। বলল, আব্বু আমি ডিউটিতে যাবো দোয়া করো। কিন্তু ডিউটিতে গিয়ে আর ফিরলোনা ছেলেটা। গত শনিবার রাত ১২টার দিকে আমরা খবর পাই আমার ছেলের মৃত্যু হয়েছে।
ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদিকে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় সন্দেহভাজন ফয়সাল করিম মাসুদের স্ত্রীসহ আরও তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। রোববার (১৪ ডিসেম্বর) রাতে নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয় বলে এক বার্তায় জানিয়েছে পুলিশের বিশেষ এই ইউনিট। গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন ফয়সালের স্ত্রী সামিয়া, তার শ্যালক শিপু ও বান্ধবী মারিয়া।
র্যাবের মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক ইন্তেখাব চৌধুরী জানান, সামিয়া ও শিপুকে নারায়ণগঞ্জ থেকে এবং মারিয়াকে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি বলেন, গত শুক্রবার হাদিকে গুলির ঘটনার আগে ও পরে ফয়সালের সঙ্গে তাদের ফোনে ঘন ঘন যোগাযোগের তথ্য পাওয়া গেছে।
এ নিয়ে এ ঘটনায় র্যাব মোট চারজনকে গ্রেপ্তারের তথ্য জানিয়েছে। এর আগে গুলির সময় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের মালিক আব্দুল হান্নানকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে পুলিশ তিন দিনের রিমান্ডে নেয়।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরদিন গত শুক্রবার দুপুরে ঢাকার বিজয়নগর এলাকায় চলন্ত মোটরসাইকেল থেকে করা গুলিতে গুরুতর আহত হন রিকশায় থাকা ওসমান হাদি। তাকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে অস্ত্রোপচারের পর তাকে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। বর্তমানে তিনি এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। আজ তাকে সিংগাপুরে নেওয়া হবে।
যে বয়সে সহপাঠীদের সঙ্গে বিদ্যালয়ের পথে হাঁটার কথা, সেই বয়সেই হাসপাতালের বিছানায় অসহ্য যন্ত্রণায় দিন কাটছে কিশোরী মৌমিতা জুঁইয়ের। ডান পায়ের হাড়ের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে গত কয়েক দিন ধরে তীব্র ব্যথায় ছটফট করছে সে। যন্ত্রণার মাত্রা এতটাই বেড়েছে যে চিকিৎসকদের পরামর্শে গত ৩ দিন ধরে মরফিন দিয়ে তাকে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছে।
বরিশাল কালেক্টরেট স্কুল অ্যান্ড কলেজের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী জুঁই চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় সারকোমা (রাইট টিবিয়া) নামের জটিল ক্যান্সারে আক্রান্ত। বর্তমানে সে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, আগামী তিন থেকে চার দিনের মধ্যে তাকে জাতীয় ক্যান্সার ইনস্টিটিউটসহ কোনো বিশেষায়িত ক্যান্সার হাসপাতালে ভর্তি করানো জরুরি।
জুঁই বরিশালের প্রবীণ সাংবাদিক কে এম মনিরুল আলম ওরফে স্বপন খন্দকারের মেয়ে। তিনি একসময় দৈনিক যায়যায়দিন ও দৈনিক মানবজমিনের বরিশাল প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেছেন। বর্তমানে তিনি আজকের পরিবর্তন নামে একটি স্থানীয় দৈনিকে বিশেষ প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত।
চিকিৎসকদের মতে, জুঁইকে সুস্থ করে তুলতে প্রয়োজন জটিল অস্ত্রোপচার। অস্ত্রোপচার, পরবর্তী চিকিৎসা, নিয়মিত ফলোআপ ও আনুষঙ্গিক ব্যয় মিলিয়ে প্রাথমিকভাবে অন্তত ১০ লাখ টাকার বেশি অর্থ প্রয়োজন হতে পারে। এই বিপুল ব্যয় বহন করা পরিবারের পক্ষে একেবারেই সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন জুঁইয়ের বাবা মনিরুল আলম।
মেধাবী শিক্ষার্থী জুঁই পড়াশোনার পাশাপাশি আবৃত্তি ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডেও ছিল সক্রিয়। প্রাণবন্ত উপস্থাপনায় সে বরাবরই শিক্ষক ও সহপাঠীদের নজর কাড়ত। আগামী ২১ ডিসেম্বর তার জুনিয়র বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার কথা ছিল, কিন্তু হঠাৎ এই মরণব্যাধি তার সব স্বপ্নকে অনিশ্চয়তার মুখে ঠেলে দিয়েছে।
এ অবস্থায় জুঁইয়ের চিকিৎসার জন্য আর্থিক সহায়তার আহ্বান জানিয়েছেন সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের নেতারা। তারা বলেন, সমাজের সবাই এগিয়ে এলে এই মেধাবী কিশোরী নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখতে পারবে।
সাংস্কৃতিক সংগঠক সৈয়দ দুলাল বলেন,অত্যন্ত মেধাবী ও প্রাণবন্ত এই মেয়েটির চিকিৎসা ব্যয় পরিবারটির পক্ষে বহন করা সম্ভব নয়। সম্মিলিত সহায়তা ছাড়া তার সুস্থ হয়ে ওঠা কঠিন।
মানিকগঞ্জের ঘিওরে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সারবোঝাই একটি ট্রাক উল্টে ইছামতি নদীতে পড়ে গেছে। এতে প্রায় ছয় লক্ষাধিক টাকার সার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। রোববার (১৪ ডিসেম্বর) সকাল ৮টার দিকে উপজেলার ঘিওর বাজার সংলগ্ন কুস্তা বন্দর এলাকায় ইছামতি নদীতে এ দুর্ঘটনা ঘটে। ট্রাকটিতে প্রায় সাড়ে পাঁচ শতাধিক বস্তা বিভিন্ন প্রকারের (টিএসপি, ডিএপি) সার বোঝাই ছিল।
দুর্ঘটনায় ট্রাকের চালক ও হেলপার সামান্য আহত হলেও বড় ধরনের কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
ঘিওরের ক্ষতিগ্রস্ত সার ব্যবসায়ী ওয়াজেদ আলী অভিযোগ করে জানান, নারায়ণগঞ্জ থেকে ঘিওর ফুলহারা বাজারের ডিলারদের জন্য সার নিয়ে ট্রাকটি ঘিওর বাজারের উদ্দেশে আসছিল। তবে চালক মূল সড়ক ব্যবহার না করে ভুলবশত একটি ঝুঁকিপূর্ণ রাস্তা দিয়ে বাজারে প্রবেশের চেষ্টা করলে ট্রাকটির নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সরাসরি নদীতে পড়ে যায়। তিনি চালকের ‘খামখেয়ালি’ আচরণকেই দুর্ঘটনার জন্য দায়ী করেন।
স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শী আশিষ, আবুল হোসেন, জবেদ আলী জানান, ঘিওর কুস্তা বন্দর গরুহাট সংলগ্ন রাস্তাটি দীর্ঘদিন ধরেই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। সাধারণত এ পথে বড় যানবাহন চলাচল করে না। সকালে হঠাৎ করে সারবোঝাই ট্রাকটি ওই রাস্তায় ঢুকতেই দুর্ঘটনাটি ঘটে।
ঘিওর থানার ওসি মীর মাহাবুব ঘটনাস্থল পরিদর্শনের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, দুর্ঘটনায় কোন প্রাণহানি ঘটেনি। সার ব্যবসায়ীরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে নদীতে পড়ে যাওয়া সার উদ্ধারের চেষ্টা চালাচ্ছেন। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত থানায় কোন লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়নি।
এদিকে নদীর স্বল্প পানিতে সার মিশে যাওয়ায় পরিবেশ দূষণ, মাছের ক্ষতির আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
ঘিওর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তহমিনা খাতুন জানান, ট্রাক উদ্ধারের পাশাপাশি ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
নরম রসমালাই আর সূক্ষ্ম খাদির মতোই কুমিল্লার মানুষের হৃদয়ে লুকিয়ে আছে আরেকটি সোনালি ঐতিহ্য-বাটিকশিল্প। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে হাতে হাতে গড়ে ওঠা এই শিল্প কুমিল্লার ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির নীরব গর্ব। পর্যাপ্ত সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে এর জৌলুস কিছুটা ম্লান হলেও আজও টিকে আছে বাটিক ঐতিহ্য বাঁচিয়ে রাখার স্বপ্ন। ছোট ছোট উদ্যোক্তা ও শ্রমজীবী মানুষের নিরলস প্রচেষ্টায় বেঁচে আছে কুমিল্লার বিখ্যাত বাটিকশিল্প।
প্রতিদিন ভোরের প্রথম আলো ফুটতেই বাটিকপল্লীর কর্মশালাগুলো জেগে ওঠে। রঙের ঘ্রাণ, গরম পানির বাষ্প আর কারিগরের যত্নমাখা স্পর্শে মুখর হয়ে ওঠে চারপাশ।
প্রায় ৫০ বছর আগে কুমিল্লার সদর উপজেলার কমলপুর গ্রামে লাল মিয়া ও মোহন মিয়া নামে দুই ভাইয়ের হাত ধরে বাটিকশিল্পের যাত্রা শুরু হয়। ভারত থেকে বাটিকের কৌশল শিখে এসে তারা এই শিল্পের ভিত্তি গড়ে তোলেন। সময়ের পরিক্রমায় তাদের হাতে তৈরি বাটিক ছড়িয়ে পড়ে সারাদেশে। কমলপুর ও আশপাশের কয়েকটি গ্রামে বর্তমানে গড়ে উঠেছে প্রায় ২৫টি কারখানা। এসব কারখানায় দীর্ঘদিন ধরে নান্দনিক ডিজাইনের বাটিক শাড়ি, থ্রি-পিস, শার্ট, লুঙ্গি ও বেডশিট তৈরি হচ্ছে।
স্থানীয় চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি এসব বাটিকপণ্য ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হচ্ছে। এমনকি বিদেশেও রপ্তানি হয়ে সুনাম অর্জন করেছে কুমিল্লার বাটিক। ঐতিহ্যবাহী খাদির পর জনপ্রিয়তার দিক থেকে বাটিক এখন কুমিল্লার অন্যতম পরিচয়। কুমিল্লা নগরীর মনোহরপুর, কান্দিরপাড় ও রামঘাট এলাকার প্রায় দুই শতাধিক দোকানে কমলপুরের বিখ্যাত বাটিকপণ্য বিক্রি হচ্ছে।
কারখানার ভেতরে প্রতিদিন চলছে রং আর নকশার নিরবচ্ছিন্ন শ্রম। কেউ গরম পানিতে কাপড়ের অপ্রয়োজনীয় ‘মার’ তুলে ফেলছেন, কেউ রঙের কড়াইয়ে তৈরি করছেন নীল, হলুদ, লাল আর মাটির রঙের মায়াজাল। সেই রঙিন কাপড়ে মোমের নকশা, ফুলের ছাপ আর ঢেউয়ের রেখায় ফুটে ওঠে শিল্পীর কল্পনা।
দীর্ঘ এক যুগ ধরে বাটিক কারখানায় কাজ করছেন শ্রমিক হামিদ চৌধুরী। তিনি কাপড়ের বিহারি, ওয়াশ ও ডাইনের কাজ করেন। একাই সামলাচ্ছেন তিনটি দায়িত্ব। তিনি বলেন, ‘বিহারি শেষ করে মোম তুলে কাপড় ওয়াশ করা হয়, এতে কাপড় পরিষ্কার ও উজ্জ্বল হয়।’
আরেক শ্রমিক মুশফিকুর রহমান মোন্না জানান, তিনি থ্রি-পিসের কাজ করেন। সাদা কাপড়ে মোম দিয়ে ব্লক করার পর নারীরা তুলি দিয়ে রং করেন। প্রতিদিন তিনি ২০ থেকে ৩০টি থ্রি-পিসের মোম ব্লক সম্পন্ন করতে পারেন।
রং করা কাপড় মাঠে সারি সারি করে রোদে শুকানো হয়। কয়েকজন কর্মী সারাক্ষণ কাপড় উল্টে-পাল্টে ঠিক করে দিচ্ছেন। রোদের আলোয় প্রতিটি নকশা হয়ে উঠছে আরও প্রাণবন্ত।
রং শুকানোর পর শুরু হয় আরেক ধাপ। নারীদের কোমল হাতে তুলি ছোঁয়ায় কাপড়ে ফুটে ওঠে নতুন রঙের গল্প। সারিবেঁধে দাঁড়িয়ে তারা ধৈর্য ও মমতায় রং ঢেলে দেন কাপড়ে। কারখানার ভেতরে নারীদের এই ব্যস্ততা যেন শুধু কাজ নয়, এ যেন শিল্প আর জীবনের মিলনমেলা।
নারী কর্মীরা জানান, দলগতভাবে কাজ করায় নতুনরা সহজেই শিখে নিতে পারেন। প্রতিদিন একজন কর্মী ৩০ থেকে ৪০টি কাপড়ে তুলি দিতে পারেন।
কাপড় ভাঁজ করার কাজ করেন রিতু আক্তার। তিন মাস আগে তিনি এখানে যোগ দেন। তিনি বলেন, ‘যার কাজ যত বেশি দক্ষ, তার মজুরি তত বেশি। মালিকের ব্যবহার ও বেতন-ভাতায় আমরা সন্তুষ্ট।’
মহাজনদের নির্দেশনায় প্রতিদিন প্রায় পাঁচ শতাধিক বাটিক তৈরি হয়। এর মধ্যে কখনো শাড়ি, কখনো থ্রি-পিস, কখনো লুঙ্গি।
কুমিল্লা নিউ বাটিক ঘরের স্বত্বাধিকারী আবু সাইদ জানান, তার কারখানায় প্রতিদিন ১৫-২০ জন শ্রমিক কাজ করেন। এখানে সুতি কাপড়, থ্রি-পিস, সিল্ক শাড়ি ও লুঙ্গি তৈরি হয়। কাজের হিসাব সপ্তাহভিত্তিক করা হয়।
ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বাটিকের চাহিদাও ওঠানামা করে। গরমকালে চাহিদা বাড়লেও শীতকালে কমে যায় কাজ। পুঁজি সংকটে অনেক সময় উৎপাদন ব্যাহত হয়।
কুমিল্লা বাটিক সেন্টারের মহাজন রাশেদুল ইসলাম বলেন, ‘আমার বাবা ৩৫ বছর আগে এই কারখানা শুরু করেন। আমাদের ব্যবসা প্রকৃতিনির্ভর। রোদ না থাকলে কাজ বন্ধ থাকে। শীতকালে চাহিদা কমে গেলে কর্মীদের বেতন দেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। সরকার যদি স্বল্প সুদে বা সুদহীন ঋণের ব্যবস্থা করত, তাহলে এই শিল্প হারিয়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকত না।’
সব প্রতিকূলতার মধ্যেও থেমে নেই কমলপুরের বাটিক শিল্পীরা। সরকারি প্রণোদনা ও সহায়তা পেলে কুমিল্লার বাটিক আবারও বিশ্ববাজারে নতুন করে জায়গা করে নিতে পারবে- এমনটাই তাদের বিশ্বাস।
এ বিষয়ে কুমিল্লার জেলা প্রশাসক বলেন, ‘সরকার বাটিক শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে আগ্রহী এবং প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।’
পুরুষ-নারী, ছোট-বড় সবার সম্মিলিত পরিশ্রমে আজও বেঁচে আছে কুমিল্লার বাটিক শিল্প- রঙে রঙে, নকশায় নকশায় তুলে ধরছে বাঙালির সৃজনশীলতার চিরন্তন মহিমা।
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. নুরুন্নাহার চৌধুরী বলেছেন, বাংলাদেশের মেরিটাইম খাত এখন বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার মুখোমুখি। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন মেরিন অফিসার ও ইঞ্জিনিয়ার তৈরিতে সরকার প্রশিক্ষণের গুণগত মান উন্নয়ন, আধুনিক সরঞ্জাম সংযোজন এবং অবকাঠামো সম্প্রসারণে নিরলসভাবে কাজ করছে।
তিনি বলেন, ‘১৯৬২ সালে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ মেরিন একাডেমিকে আধুনিক ও আন্তর্জাতিক মানের প্রতিষ্ঠানে রূপ দিতে বর্তমানে ১১৫ কোটি টাকার সরকারি উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। ছয় দশকেরও বেশি সময় ধরে এই একাডেমি দেশের মেরিটাইম খাতের দক্ষ জনশক্তি তৈরির আঁতুড়ঘর হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।’
নারীর ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রেও একাডেমির অবদান উল্লেখযোগ্য উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘২০১২ সাল থেকে নারী ক্যাডেটদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালু হওয়ার পর আজ (রোববার) তারা আন্তর্জাতিক সমুদ্রে সাহসিকতা ও দক্ষতার সঙ্গে বাংলাদেশের পতাকা বহন করছেন।’ শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) চট্টগ্রামের আনোয়ারায় বাংলাদেশ মেরিন একাডেমি প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত ৫৯তম ব্যাচের শিক্ষা সমাপনী কুচকাওয়াজে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
দুই বছরের কঠোর শৃঙ্খলা, একাডেমিক পাঠ ও রেজিমেন্টাল প্রশিক্ষণের সফল সমাপ্তি ঘটে এই বর্ণাঢ্য গ্র্যাজুয়েশন প্যারেডের মধ্য দিয়ে। এ বছর প্রি-সি সনদ অর্জন করেন মোট ১৬০ জন ক্যাডেট। এর মধ্যে ১১ জন নারী ক্যাডেটসহ নটিক্যাল শাখায় ৮২ জন এবং মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং শাখায় ৭৮ জন রয়েছেন।
সাদা ইউনিফর্মে দৃঢ় পদচারণায় ক্যাডেটরা জানান দিলেন বিশ্বের যে কোনো সমুদ্র তাদের জন্য প্রস্তুত।
অনুষ্ঠানের অন্যতম আকর্ষণ ছিল শ্রেষ্ঠ ক্যাডেটদের পদক প্রদান। সকল ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ কৃতিত্বের জন্য ৫৯তম ব্যাচের ক্যাডেট নম্বর-৫৭৮৯ মিফতাহুল ইসলাম রাজ্য অর্জন করেন মহামান্য রাষ্ট্রপতির স্বর্ণপদক। এ মুহূর্তটি পুরো প্যারেড মাঠজুড়ে গর্বের আবহ তৈরি করে।
একাডেমি সূত্রে জানা গেছে, ২০২৫ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ মেরিন একাডেমি থেকে মোট ৫ হাজার ৮৬০ জন নটিক্যাল ও মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং ক্যাডেট প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করেছেন। তারা বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন সমুদ্রগামী জাহাজে দায়িত্ব পালন করে দেশের জন্য বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন।
বর্ণাঢ্য এই গ্র্যাজুয়েশন প্যারেডে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তা, সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা এবং ক্যাডেটদের অভিভাবকদের উপস্থিতিতে একাডেমি প্রাঙ্গণ পরিণত হয় গর্ব, আনন্দ ও প্রত্যাশার মিলনমেলায়।
বিএনপি-জামায়াত নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে গায়েবী মামলা, মাদক দিয়ে ফাঁসানো, মিথ্যা নাশকতা মামলা দিয়ে শত শত নেতা-কর্মীদের জেল খাটানো পুলিশ কর্মকর্তা জীবননগর থানার সাবেক ওসি এস এম জাবীদ এখন ঝিনাইদহ পিবিআইতে কর্মরত। রাজনৈতিক কর্মীদের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক মামলার অভিযোগে আলোচিত ওই পুলিশ কর্মকর্তাকে ঝিনাইদহ পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনে (পিবিআই) পদায়ন করায় রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে আলোচনা ও সমালোচনার ঝড় উঠেছে।
জানা গেছে, ২০২৩ সালের জুলাই মাসে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর থেকে জীবননগন থানায় বদলি করা হয় এস এম জাবীদ হাসানকে। এরপর থেকে বিএনপি ও জামায়াত নেতা-কর্মীদের ধর-পাকড় শুরু করেন তিনি। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের আস্থাভাজন থেকে নিরীহ বিএনপি নেতা-কর্মীদের মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার শুরু করেন।
সূত্র জানায়, জীবননগরে দায়িত্বকালীন সময়ে ওই কর্মকর্তা একাধিক রাজনৈতিক মামলার দায়িত্বে ছিলেন। সে সময়ে মামলার ভয় দেখিয়ে নিরীহ মানুষের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয়।
বিএনপির নেতা-কর্মীরা অভিযোগ করেন, নিরীহ ও সাধারণ কর্মীদের বিরুদ্ধেও রাজনৈতিক প্রভাবে মামলা দেওয়া হয়, যা ছিল একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক স্বার্থ বাস্তবায়নের অংশ। তাদের ভাষায়, ‘আইন নয়, নির্দেশই ছিল সবকিছুর ভিত্তি।’
২০২৩ সালের ৩ নভেম্বর বিশেষ অভিযানের নামে বাড়ি থেকে ধরে এনে নাশকতা মামলায় চালান দেওয়া হয় জীবননগর থানা বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি ও উথলী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবুল কালামকে। ৪ নভেম্বর বাড়ি থেকে ধরে এনে নাশকতা মামলায় চালান দেওয়া হয় জীবননগর পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ডাবলুকে। নাশকতার পরিকল্পনা করছিলেন এমন অভিযোগে মামলা দেয় ওসি এস এম জাবীদ হাসান। বিএনপি-জামায়াতের এমন শত শত নেতা-কর্মীদের মিথ্যা মামলায় দেওয়ায় ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে তাকে চুয়াডাঙ্গা জেলার শ্রেষ্ঠ ওসি হিসেবে নির্বাচিত করা হয়েছিল। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের পর জাবীদ হাসানকে ২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে বদলি করে দেওয়া হয়। বর্তমানে তিনি ঝিনাইদহ পিবিআইতে কর্মরত আছেন।
অভিযোগের বিষয়ে জীবননগর থানার সাবেক ওসি ও ঝিনাইদহ পিটিআইয়ের পরিদর্শক এস এম জাবীদ এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
এ ব্যাপারে ঝিনাইদহ পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার গাজী রবিউল ইসলাম বলেন, ‘তার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’