চট্টগ্রামের ‘একুশে পত্রিকা’র সম্পাদক আজাদ তালুকদার আর নেই (ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তার বয়স হয়েছিল ৪৫ বছর।
বুধবার ভোরে রাজধানীর বিআরবি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি ইন্তেকাল করেন । এই সাংবাদিক বেশ কিছুদিন যাবত মরণব্যাধি ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ নিজ এলাকার সন্তান সাংবাদিক আজাদ তালুকদারের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন।
মন্ত্রী মরহুমের আত্মার শান্তি কামনা করেন এবং একই সঙ্গে তার পরিবারের শোকাহত সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
তথ্যমন্ত্রী ক্যান্সারের সঙ্গে যুদ্ধরত আজাদ তালুকদারের চিকিৎসার নিয়মিত খোঁজখবর রাখতেন। কয়েকদিন আগেও হাসপাতালে তাকে দেখতে গেছেন।
বুধবার বাদ জোহর চট্টগ্রামের জমিয়তুল ফালাহ জাতীয় মসজিদ ময়দানে প্রথম, দুপুর আড়াইটায় চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে দ্বিতীয় ও রাঙ্গুনিয়া উপজেলার পদুয়া মদিনাতুল উলুম মাদ্রাসা মাঠে তৃতীয় জানাজার নামাজ শেষে পারিবারিক কবরস্থানে আজাদ তালুকদারের দাফন সম্পন্ন হবে।
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, এই কিশোরগঞ্জের মানুষ রাষ্ট্রপতি পেয়েছে, কিন্তু তার শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের অধিকার পায়নি। এই ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রপতি আপনাদের বাংলাদেশকে, আমাদের বাংলাদেশকে শেখ হাসিনার হাতে তুলে দিয়েছিলো। মানুষের মানবাধিকার, মানুষের গণতন্ত্র, বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে হত্যা করেছিলো। এই কিশোরগঞ্জ থেকেই আপনারা সেই ফ্যাসিস্টের বিরুদ্ধে গণঅভ্যুত্থান তৈরি করেছিলেন। শনিবার রাতে কিশোরগঞ্জে জুলাই পদযাত্রা সমাবেশে নাহিদ ইসলাম এসব কথা বলেন। জেলা শহরের পুরানথানা এলাকার স্বাধীনতা চত্বরে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। নাহিদ ইসলাম বলেন, আমরা জানি, কিশোরগঞ্জের সদর এলাকাতেও স্কুল আছে কিন্তু শিক্ষক নেই, হাসপাতাল আছে কিন্তু ডাক্তার নাই, যু্ব সমাজ আছে কিন্তু কর্মসংস্থান নাই। অনেক বাজেট আছে কিন্তু রাস্তা নাই। রাষ্ট্রপতি আছে কিন্তু মানুষের উন্নয়ন নাই। আমরা এই কিশোরগঞ্জের চেহারা পাল্টে দিতে চাই।
জুলাই পদযাত্রা কর্মসূচি প্রসঙ্গে নাহিদ ইসলাম বলেন, আমাদের আবারো রাজপথে নামতে হয়েছে। যখন আমরা দেখেছি, গণঅভ্যুত্থানের এক বছর পরেও মানুষের অধিকার আদায় হয়নি। আমরা যখন দেখতে পাচ্ছি, গণঅভ্যুত্থানের এক বছর পরেও সমাজে চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসের অভয়ারণ্য তৈরি হয়েছে। আমাদের আবারো নামতে হয়েছে, যখন আমরা দেখেছি, রাষ্ট্রযন্ত্র থেকে দুর্নীতিকে চিরতরে বিলুপ্ত করা যায়নি। আমরা বলেছিলাম, গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে যেই পুরনো ফ্যাসিস্ট ব্যবস্থা রয়েছে, শেখ হাসিনার সংবিধানসহ শেখ হাসিনার যে সরকার ব্যবস্থা ছিলো, এই সকল নিয়ম বাদ দিয়ে নতুন রাষ্ট্র, নতুন সরকার তৈরি করতে হবে। কিন্তু আফসোসের বিষয় আমরা নতুন সরকার পেলেও নতুন দেশ এখনো পাইনি। জাতীয় নাগরিক পার্টি আপনাদের কাছে ওয়াদাবদ্ধ, গণঅভ্যুত্থানের শহীদদের কাছে ওয়াদাবদ্ধ, নতুন দেশ গড়ার আগ পর্যন্ত আমাদের এই লড়াই চলমান থাকবে।
নাহিদ ইসলাম কিশোরগঞ্জ জেলার অধিবাসীদের উন্নয়ন বঞ্চনার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, কিশোরগঞ্জ হাওর বিধৌত এলাকা। হাওর এলাকার মানুষকে সংগ্রাম করে, কষ্ট করে জীবনযাপন করতে হয়। এই কিশোরগঞ্জে সুপেয় পানির সংকট তৈরি হয়েছে। এই কিশোরগঞ্জের কৃষকদেরকে সিণ্ডিকেটের মাধ্যমে সার সংকট তৈরি করা হয়েছে। কৃষকরা তাদের কৃষিকাজ ঠিকমতো করতে পারছে না। তাদের ফসলের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছে না। হাওর এলাকা থেকে একটা শিশু বিদ্যালয়ে যেতে পারে না, চিকিৎসার জন্য সুব্যবস্থা পায় না। আমরা এমন বাংলাদেশ চেয়েছিলাম, যেখানে প্রত্যেকটা মানুষের কাছে নাগরিক সুবিধা পৌঁছাবে। প্রত্যেকটা মানুষ নাগরিকের মর্যাদা পাবে।
জাতীয় নাগরিক পার্টিতে যোগদানের আহ্বান জানিয়ে নাহিদ ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ গণঅভ্যুত্থান হয়েছিলো তরুণদের নেতৃত্বে। এই তরুণদের উপর আস্থা রেখে বাংলাদেশের মানুষ নেমে এসেছিলো। আমরা আবারো বলছি, এই তরুণদের উপর আস্থা রেখে আপনারা জাতীয় নাগরিক পার্টিতে যোগদান করুন। জাতীয় নাগরিক পার্টি আপনাদেরকে নতুন বাংলাদেশ উপহার দেবে। জাতীয় নাগরিক পার্টি বাংলাদেশের ৫৪ বছরে যেই দুর্নীতিপরায়ণ রাষ্ট্র ব্যবস্থা, যেই মাফিয়াতান্ত্রিক লুটেরা রাষ্ট্রব্যবস্থা, সেই রাষ্ট্রের পরিবর্তন ঘটাবে। নাহিদ ইসলাম যোগ করেন, তরুণরা রাষ্ট্রের চালিকাশক্তি, দেশের চালিকাশক্তি।
এই তরুণদেরকে যদি গণঅভ্যুত্থানের পরেও কাজে লাগাতে না পারি, এই তারুণ্যের শক্তিকে যদি দেশ গঠনে কাজে লাগানো না যায়, বাংলাদেশকে আর কখনো গড়ে তোলা সম্ভব হবে না। আমরা তরুণরা তারুণ্যের সেই শক্তিতে বিশ্বাসী, আমরা কিশোরগঞ্জের শক্তিতে বিশ্বাসী। আমরা বিশ্বাস করি, কিশোরগঞ্জ জাতীয় নাগরিক পার্টির শক্তিশালী ঘাঁটিতে পরিণত হবে।
সমাবেশে অন্যদের মধ্যে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এর সদস্য সচিব আখতার হোসেন, দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ, যুগ্মআহ্বায়ক মনিরা শারমীন, যুগ্ম সদস্য সচিব আহনাফ সাঈদ খান, দক্ষিণাঞ্চল সংগঠক আকরাম হোসেন রাজ, উত্তরাঞ্চল সংগঠক খায়রুল কবির প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। সমাবেশে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এর মুখ্য সমন্বয়ক নাসির উদ্দিন পাটোয়ারী, যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারা, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন প্রমুখসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। এর আগে রাত ৮টার দিকে কিশোরগঞ্জ স্টেডিয়াম থেকে পদযাত্রা করে নেতৃবৃন্দ পুরানথানা এলাকার সমাবেশস্থলে যান। এনসিপি’র এই পদযাত্রা কর্মসূচি ঘিরে প্রশাসনের পক্ষে আগে থেকেই ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। সমাবেশ শুরুর কয়েক ঘন্টা আগে থেকে পুরানথানা এলাকার সড়ক বন্ধ করে দেওয়া হয়। বিভিন্ন স্থান থেকে মিছিল নিয়ে এনসিপি নেতাকর্মীরা সমাবেশে যোগ দেন।
জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত একটি গণতান্ত্রিক পদ্ধতিই সংস্কারের পূর্বশর্ত উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, দেশ ও বিদেশ থেকে ভাড়াটে লোক এনে দেশ পরিচালনা করা সম্ভব নয়।
তিনি বলেন, ‘দেশ-বিদেশ থেকে কিছু লোক ভাড়া করে কি একটা দেশ চালানো যায়? না, যায় না। এটিই সহজ সত্য, আমাদের তা বুঝতে হবে।’
শনিবার (২৬ জুলাই) রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘জুলাই অভ্যুত্থান: প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন তিনি। জিয়া পরিষদের আয়োজনে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। গত বছরের অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে কর্মসূচিটি পালন করা হয়, যা শেখ হাসিনার ‘ফ্যাসিবাদী শাসনের’ পতনের সূচনা বলে মন্তব্য করেন ফখরুল।
তিনি বলেন, ‘কেউ কেউ ভাবছেন, কয়েকটি বৈঠক করলেই সংস্কার হয়ে যাবে। এটা ঠিক নয়। সংস্কার একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া, তা একদিনে হয় না।’
সরকারের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘সরকার যদি মনে করে আগামীকাল থেকে পুলিশ ঘুষ খাওয়া বন্ধ করে দেবে, তাহলে তা হবে না। তাকে এমন একটি কাঠামো তৈরি করতে হবে, যেখানে ঘুষ খাওয়ার প্রবণতা নিরুৎসাহিত করা হবে।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘বর্তমান আমলাতন্ত্র দেশের উন্নয়নের পথে প্রধান প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটি নেতিবাচক একটি আমলাতন্ত্রে পরিণত হয়েছে। এটি পরিবর্তন করে ইতিবাচক আমলাতন্ত্রে রূপান্তর করতে হবে। আর তা করতে হলে জনগণকে এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত জনগণের কাছে ফেরা, তাদের চাহিদা জানা এবং সেই চাহিদার ভিত্তিতে দেশ পরিচালনা করা।’
নির্বাচন নিয়ে বিএনপির দাবিকে কেন্দ্র করে সমালোচনার জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা নির্বাচন নিয়ে কথা বলা শুরু করলেই বলা হচ্ছে বিএনপি শুধু ভোট চায়। কিন্তু কেউ কি ভেবে দেখেছে, আমরা কেন নির্বাচন চাই?’
তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের মাধ্যমেই প্রকৃত জন-প্রতিনিধি নির্বাচিত করা সম্ভব। আর যদি প্রতিনিধি না থাকে, তাহলে তারা সংসদে যাবে কীভাবে? আর যদি নির্বাচিত সংসদ না থাকে, তাহলে জনগণের শাসন কিভাবে প্রতিষ্ঠিত হবে?’
আংশিক প্রতিনিধিত্বমূলক (পিআর) নির্বাচনী পদ্ধতি নিয়ে কিছু রাজনৈতিক দলের বক্তব্যের প্রসঙ্গে ফখরুল বলেন, ‘এই পদ্ধতির সঙ্গে বাংলাদেশের কোনো সম্পর্ক নেই। তারা এই পদ্ধতির পক্ষে জোরালো সুরে কথা বলছে। কিন্তু পিআর নির্বাচন কী—সাধারণ মানুষ তা বোঝে না।’
তিনি বলেন, ‘দেশে এই পদ্ধতি নিয়ে একধরনের বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। সাধারণ মানুষ যে পদ্ধতিতে অভ্যস্ত, সেটি হলো—রাজনৈতিক দল প্রার্থী মনোনয়ন দেবে, প্রতীক হবে ধানের শীষ, পাল্লা, হাতপাখা ইত্যাদি; আর ভোটাররা গিয়ে ভোট দেবে। এখন হঠাৎ করে বলা হচ্ছে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন হবে।’
পিআর পদ্ধতির ব্যাখ্যায় মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই পদ্ধতিতে জনগণ ব্যক্তিকে নয়, দলকে ভোট দেয়। এরপর দল যাকে ইচ্ছা তাকে সংসদ সদস্য মনোনয়ন দেয়। ফলে জনগণের পছন্দের, নিজেদের এলাকার কোনো নেতাকে তারা আর সংসদে পাঠাতে পারবে না।’
এই কারণেই বিএনপি জাতীয় সংসদের নিম্নকক্ষে পিআর পদ্ধতির নির্বাচনকে সমর্থন করে না বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ এখন এক গভীর সংকটে রয়েছে। আমরা অপেক্ষা করছি, কখন গণতন্ত্রের পথে ফিরব। দেশ বর্তমানে রাজনৈতিক শূন্যতা এবং ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে রয়েছে। আমাদের এখান থেকে বেরিয়ে একটি রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে, যা জনগণের কল্যাণে কাজ করবে।’
আওয়ামী লীগকে ‘ফ্যাসিবাদী শক্তি’ হিসেবে আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, ‘তারা যে ক্ষতি করেছে তা পূরণ করা সহজ হবে না। তারা বিচার বিভাগ, প্রশাসন, স্বাস্থ্য খাত, বিশ্ববিদ্যালয় এমনকি রাজনৈতিক দলগুলোকেও ধ্বংস করেছে।’
বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে কিছু পত্রিকায় যেসব অপকর্মের খবর প্রকাশিত হচ্ছে, তা নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করে ফখরুল বলেন, ‘বিএনপি জিয়াউর রহমানের গড়া দল। এই দলের নেতৃত্ব ও কর্মীদের সততাই প্রধান ভিত্তি। সততা ছাড়া বিএনপি জনগণের সামনে দাঁড়াতে পারবে না।’
তিনি বলেন, ‘আজকাল পত্রপত্রিকায় যেসব খবর ছাপা হচ্ছে, সেগুলো বিএনপির আদর্শ বা জিয়াউর রহমানের মূল্যবোধের সঙ্গে মেলে না। তাই যারা বিএনপির রাজনীতি করছেন, তাদের জিয়াউর রহমানের আদর্শ অনুসরণ করতে হবে এবং অবশ্যই সৎ হতে হবে।’
শনিবার (২৬ জুলাই)এক সেমিনারে বক্তারা বলেছেন, গুমের সঙ্গে জড়িত শেখ হাসিনাসহ অন্যদের বিচার নিশ্চিত না হলে দেশে আবারও গুমের সংস্কৃতি ফিরে আসার আশঙ্কা রয়েছে।
বক্তারা বলেন, এর অন্যতম কারণ হচ্ছে গুমের আলামত নষ্ট এবং সাক্ষ্য প্রমাণ সংগ্রহ বিভিন্নভাবে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। এমনকি রয়েছে হুমকি ও নানা ধরনের অসহযোগিতাও।
আজ খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গবেষণাগার হলে ‘বলপূর্বক গুমের ঘটনা মোকাবেলা: কীভাবে এগিয়ে যাওয়া যায়’ শীর্ষক এক সেমিনারের তারা এ কথা বলেন।
গুমের শিকার ব্যক্তিদের পরিবার এবং গুম থেকে ফিরে আসা ভিকটিমসহ শিক্ষক, সাংবাদিক, আইনজীবী, মানবাধিকার কর্মী ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধিদের নিয়ে এ সেমিনারের আয়োজন করা হয়।
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক দপ্তরের সহযোগিতায় মানবাধিকার সংগঠন ‘অধিকার’-এর উদ্যোগে আয়োজিত সেমিনারে গুম সংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের সদস্য সাজ্জাদ হোসেন ও ড. নাবিলা ইদ্রিস উপস্থিত ছিলেন।
অধিকার’র পরিচালক এ এস এম নাসির উদ্দিন এলানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সেমিনারে আরও বক্তৃতা করেন জাতিসংঘের ঢাকাস্থ মানবাধিকার বিষয়ক কর্মকর্তা জাহিদ হোসেন।
বক্তারা আরও বলেন, বিচারের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, গুমের সঙ্গে জড়িত তৎকালীন বিভিন্ন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার শীর্ষ ব্যক্তিরা পালিয়ে যাচ্ছেন। এতে করে বিচার নিয়েও সংশয় তৈরি হচ্ছে।
তারা বলেন, তবে গুম সংক্রান্ত তদন্ত কমিশন নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেই গুমের ঘটনাগুলো অনুসন্ধানের মাধ্যমে এর সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে তাদের শাস্তি নিশ্চিত করার সব ধরণের তথ্যই সংগ্রহ করছে। যাতে করে অভিযুক্তদের বিচার নিশ্চিত করতে সহায়ক হয়।
সাজ্জাদ হোসেন বলেন, চারটি স্তরে সাধারণ মানুষকে গুম করা হতো। এগুলো হচ্ছে- একটি গ্রুপ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে নজরদারির মধ্যে রাখত। অপর গ্রুপ তাকে তুলে নিতো। এই গ্রুপটি গুমের শিকার ব্যক্তিকে হয় জঙ্গি বানিয়ে সন্ত্রাস ও অস্ত্র মামলা দিয়ে আদালতে চালান দিতো, অথবা মেরে ফেলত। সর্বশেষ গ্রুপটি ভারতে পাচার করে দিত অথবা আয়না ঘরে গুম করে রাখতো।
তিনি বলেন, গুম কমিশন চারভাবে অনুসন্ধান করছে। এগুলো হচ্ছে- সব আয়না ঘর বা বন্দিশালা পরিদর্শন, সংশ্লিষ্টদের তলব করে জিজ্ঞাসাবাদ, ভারতীয় কারাগারে বাংলাদেশীদের আটকের তথ্য চেয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে পত্র প্রেরণ এবং ভারতে পুশইনের তালিকা ধরে অনুসন্ধান করা। এভাবে গুম কমিশন অভিযুক্তদের বিচারের ব্যাপারে কাজ করছে।
সেমিনারে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন- খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. রেজাউল করিম, খুলনা জেলা আইন কর্মকর্তা (জিপি) অ্যাডভোকেট ড. মো. জাকির হোসেন, জেলা পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) তৌহিদুর রহমান চৌধূরী তুষার ও খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বিষয়ক পরিচালক ড. নাজমুস সাদাত শুভ।
এর আগে গতকাল শুক্রবার খুলনার ব্র্যাক লার্নিং সেন্টারে গুম থেকে ফেরত আসা ব্যক্তি ও গুমের শিকার ব্যক্তিদের পরিবারের সঙ্গে গুম সংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের খুলনা বিভাগীয় পরামর্শ সভায় গুম কমিশনের সদস্য ড. নাবিলা ইদ্রিস বলেন, কমিশনের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্টদের না জানিয়েই আয়না ঘর ও বিভিন্ন বন্দিশালা পরিদর্শন করা হচ্ছে। এর কারণ হচ্ছে জানিয়ে পরিদর্শনে গেলে সবকিছু গোছানো অবস্থায় পাওয়া যায়।
তিনি বলেন, কিন্তু না জানিয়ে যাওয়ার কারণে বিভিন্ন জায়গায় ভুক্তভোগীদের বর্ণনার সঙ্গে আলামতের মিল পাওয়া যাচ্ছে। এভাবে একটানা কাজ করে কমিশনের সদস্যরা তথ্য প্রমাণ ও সাক্ষ্য সংগ্রহ করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।
সেমিনারে গুমের শিকার ব্যক্তিদের পরিবার ও গুম থেকে ফেরত আসা ব্যক্তিরা গুম সংক্রান্ত কমিশনের কাছে তাদের দুর্বিষহ নিদারুণ নির্যাতন নিপীড়নের চিত্র তুলে ধরেন।
সুনামগঞ্জের তাহিরপুর সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে ভারত থেকে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের সময়ে ৬ বাংলাদেশীকে আটক করেছে বর্ডারগার্ড বিজিবি। আটককৃতরা হলেন, সুনামগঞ্জের প্রমোদ তালুকদারের ছেলে প্রভাত তালুকদার (৭৪), নেত্রকোনা জেলার কমলাকান্দা থানার বিনোদ সরকারের ছেলে বিধান সরকার (৫০), মধ্যনগর উপজেলার গবিন্দ সরকারের ছেলে রিপন সরকার (৩৫), একই উপজেলার মতি সরকারের ছেলে অপু সরকার (১৭), নেত্রকোনা জেলার মোহনগঞ্জ বরহাতুনী গ্রামের জীবন সরকারের ছেলে সৃজন সরকার (১৫), একই জেলার ডরিয়াকোনা গ্রামের বিধান সরকারের স্ত্রী রিক্তা সরকার (৪৫)।
জানা যায়, শনিবার (২৬ জুলাই) সন্ধ্যায় সুনামগঞ্জ-২৮ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধীনস্থ বিরেন্দ্রনগর বিওপির একটি বিশেষ টহল দল দায়িত্বপূর্ণ সীমান্ত পিলার ১১৯৪/এমপি হতে প্রায় ২০০ গজ বাংলাদেশের অভ্যন্তরে লামাঘাটা নামক স্থান থেকে তাদেরকে আটক করে বিজিবি।
সুনামগঞ্জ-২৮ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্ণেল একেএম জাকারিয়া কাদির বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, আটককৃতরা কাজের উদ্দেশ্যে প্রায় ৪ থেকে ৫ মাস পূর্বে অবৈধভাবে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থান দিয়ে ভারতে প্রবেশ করে কুচবিহারে অবস্থান নেয়। সেখানে সঠিক মজুরী না পাওয়াসহ বর্তমান পরিস্থিতিতে ভয়ে বাংলাদেশে আবার পালিয়ে আসার চেষ্টা করলে বিজিবি তাদের আটক করে। তাদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে তাহিরপুর থানায় হস্তান্তরের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।
গাজীপুরের কালীগঞ্জে ‘জুলাই পুনর্জাগরণ’ অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে শপথ গ্রহণ করেছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে দেশব্যাপী আয়োজিত ‘লাখো কণ্ঠে শপথ পাঠ’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে কালীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
শনিবার (২৬ জুলাই) সকালে উপজেলা পরিষদ সম্মেলন কক্ষে এক ভাবগম্ভীর পরিবেশে এই শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানের শুরুতে জুলাই মাসে নিহত শহীদদের স্মরণে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত করা হয়। মোনাজাতে শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা এবং দেশের অব্যাহত শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য প্রার্থনা করা হয়।
উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে অনুষ্ঠিত এই শপথ পাঠ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তনিমা আফ্রাদ। তিনি উপস্থিত সকলকে শপথ বাক্য পাঠ করান। দেশের সংবিধান ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত রাখা, দুর্নীতি ও সামাজিক অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো এবং দেশ গঠনে আত্মনিয়োগ করার অঙ্গীকার করেন অংশগ্রহণকারীরা।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ইউএনও তনিমা আফ্রাদ বলেন, "জুলাই পুনর্জাগরণ কেবল একটি আনুষ্ঠানিকতা নয়, এটি আমাদের চেতনার বাতিঘর। সেই শহীদদের আত্মত্যাগ থেকে শিক্ষা নিয়ে আমাদের নতুন প্রজন্মকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হতে হবে। আজকের এই সম্মিলিত শপথ হোক দেশ ও মানুষের কল্যাণে নিজেদের উৎসর্গ করার একটি নতুন অঙ্গীকার। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী থেকে শুরু করে সাধারণ নাগরিক পর্যন্ত সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টাই একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে পারে।"
অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) তাসনিম উর্মি, কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আলাউদ্দিন, উপজেলার বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা নেতৃবৃন্দ সহ উপজেলায় কর্মরত গণমাধ্যম কর্মীবৃন্দ।
বক্তারা জুলাইয়ের শহীদদের আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করে বলেন, তাদের দেখানো পথ অনুসরণ করে দেশের উন্নয়নে একযোগে কাজ করতে হবে। উপজেলা প্রশাসনের এই সফল আয়োজনে সর্বস্তরের মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ অনুষ্ঠানটিকে এক নতুন মাত্রা দেয়। এই শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানটি কালীগঞ্জের মানুষের মধ্যে দেশ ও সমাজের প্রতি দায়িত্ববোধ এবং নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি করবে বলে আশা প্রকাশ করেন আয়োজকরা।
কৃষি নির্ভর মেহেরপুরে জাতীয় রসালো ফল কাঠাল নিয়ে বিপাকে পড়েছেন চাষিরা। এবারে কাঠালের ফলন ভালো হলেও বাজারে দাম না থাকায় গাছেই পেকে নষ্ট হচ্ছে কাঠাল। ব্যাবহৃত হচ্ছে গবাদিপশুর খাদ্য হিসেবে।
কৃষি বিভাগ বলছে স্থানীয় ভাবে বাজার সৃষ্টি করা গেলে এই সমস্য থাকবে না।
জেলার গ্রাম অঞ্চলের সড়কের দুপাশসহ বিভিন্ন এলাকার কাঠাল বাগানের প্রতিটি গাছেই ঝুলে আছে বড় বড় কাঠাল। স্থানীয় ভাবে বাজার না থাকায় এসব কাঠাল বিক্রি করতে পারছে না চাষিরা। চাহিদা না থাকাকে পুজি করে ভ্রাম্যমান কাঠাল ব্যবসায়ীরা কম দামে চাষিদের কাছ থেকে কিনছে এসব ছোট বড় কাঠাল।
স্থানীয় বাজার ঘুরে দেখা যায়, একটি ১৫ থেকে ২০ কেজি ওজনের বড় আকারের প্রতিটি কাঠাল বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকায়। অনেকে দাম না পেয়ে কাঠাল কেটে গরু ছাগলের খাবার হিসেবে দিচ্ছে। ব্যবসায়ীরা বলছে, গত বছর যে কাঠাল ৮০ থেকে ৯০ টাকায় কিনেছি সেই কাঠাল এবারে কিনছি ৩০ থেকে ৪০ টাকায়। তাও বিক্রি করতে কষ্ট হচ্ছে।
কৃষি বিভাগের তথ্য মতে জেলায় ১৬৫ হেক্টর জমির কাঠাল বাগান থেকে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫ হাজার ৩শ মেট্রিকটন।
জামাল হোসেন বলেন, আমার বাড়ির উঠানে থাকা একটি কাঠাল গাছে প্রায় শতাধিক কাঠাল ধরে ছিলো।যার মধ্যে আমি সাতটা কাঠাল শুরুর দিকে বিক্রি করে ছিলাম ২"শ ৫০ টাকা করে। আর বতর্মানে প্রতি পিচ কাঠালের দাম দিতে চাইছে ১৫ টাকা করে। তাই বিক্রি না করে কাঠাল কেটে গরুর নাইন্দে খাদ্য হিসেবে দিচ্ছি। এই দামে কাঠাল বেচে পড়তা হয়।
আরেক বাগানি আমজাদ হোসেন বলেন,গাছে প্রচুর কাঠাল ধরেছে। গাছের কাছে ব্যাপারী গেলে ঘুরে আসছে। নেওয়ার লোক নাই ১৫ থেকে ২০ কেজি ওজনের কাঠাল দাম বলছে কম এখন গাছেই কাঠাল পেকে পোচে যাচ্ছে।
ইউপি সদস্য শাহিন আহমেদ বলেন,
এত বড় বড় কাঠাল গাছে পেকে পড়ে নষ্ট হচ্ছে গরুকে খাওয়াইছি। নেয়ার লোক নাই ২০ টাকা ৩০ টাকা দাম বলছে। এখন কি হবে নষ্ট হচ্ছে পচে। অথচ এই কাঠাল এমন একটি ফল যার পাতা থেকে শুরু করে সবকিছুর ব্যাবহার হয়। তাছাড়া একটি সময় ছিলো প্রতিটি বাড়িতেই কাঠাল গাছ ছিলো। বতর্মানে তেমনটির আর দেখা মিলছে না। বরং এখন কাঠাল বাগান কেটে ফেলা হচ্ছে।
বিধবা রওশনারা বলেন,বাগানে কাঠাল পড়ে আছে নেয়ার লোক নাই। গরু ছাগলে খাইছে মানুষ খাইছে না। পাকা কাঠাল পইড়ি নষ্ট হইছে।
কাঠাল বিক্রেতা রইচ উদ্দিন বলেন,গত বার যে কাঠাল ৮০ থেকে ৯০ টাকায় কিনেছি সেই কাঠাল এবারে কিনছি ২০ টাকা করে। আর আমাদের খরচ যোগ হচ্ছে ১০ টাকা। অথচ সেই কাঠাল হাটে বিক্রি করতে গেলে ২০ টাকাতেও বিক্রি হচ্ছে না। আবার কিছু বাগান মালিক আছে কম দামে কাঠাল বিক্রি না করে ঘাসের বিকল্প হিসেবে গরু ছাগলকে খেতে দিচ্ছে।
আমরা যে ১০ টাকা লাভ করবো তা করতে পারছিনি। বাগান থেকে ঘুরতে হচ্ছে ওখানে বেচতে পারছিনি।
মেহেরপুর কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোঃ সামসুল আলম বলেন, মেহেরপুর জেলায় ১৬৫ হেক্টর জমিতে কাঠাল বাগান আছে এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫ হাজার ৩শ মেট্রিকটন। যে পরিমান উৎপাদন হয়েছে সে পরিমান চাহিদা নেই। মেহেরপুরে বাজার না থাকার কারনে কাঠাল বিপনন করতে সমস্যা হচ্ছে। এই ব্যাপারে কৃষি বিপনন কেন্দ্রের সাথে যোগাযোগ করেছি এবং ডিসির সাথে কথা বলেছি এখানে স্থানীয় ভাবে বাজার করা যায় কি না। যদি করা যায় তাহলে সমস্যা থাকবে না। আমরা কৃষদের পরামর্শ দেব, দেশের যে এলাকায় কাঠালের চাহিদা আছে সেখানে বিক্রি করতে পারলে লাভবান হবে।
নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলায় আধুনিক খাদ্য সংরক্ষণাগার (সাইলো) নির্মাণের কাজটি অনিশ্চিত। গত বছরের ৫ আগস্টের পর মাটি ভরাটের কাজ অসম্পূর্ন রেখেই লাপাত্তা ঠিকাদার। সাইলোটি আলোর মুখ দেখবে কিনা না নিয়েও রয়েছে শঙ্কা। তবে অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প সাবেক খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারের অর্থ লোপাটের চেষ্টা বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। সাইলো নির্মাণ করা না হলে সেখানে অন্য যেকোনো উন্নয়ন কাজে জায়গাটি ব্যবহারের দাবি স্থানীয়দের। আর সাইলোটি নির্মিত হলে উত্তরাঞ্চলের শস্যভান্ডার খ্যাত জেলার ১১ টি উপজেলাসহ আশেপাশের জেলায় উৎপাদিত উদ্বৃত্ত খাদ্যশস্য সরকারিভাবে সংগ্রহ করা সহজ হবে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
খাদ্যশস্যে উদ্বৃত্ত উত্তরের বৃহৎজেলা নওগাঁ। জেলায় খাদ্য শস্য সংরক্ষণে ২০ টি খাদ্য গুদাম রয়েছে। যার ধারণক্ষমতা ৫৮ হাজার ৪৭৫ টন। এরমধ্যে অধিকাংশ খাদ্য গুদাম বছরের বেশিরভাগ সময় ফাঁকা থাকে। এরপরও ৪৮ হাজার টন ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন খাদ্য সংরক্ষণাগার (সাইলো) নির্মাণের প্রকল্প হাতে নেয় সরকার।
খাদ্য বিভাগের তথ্যমতে, সাইলোটি সম্পূর্ণ স্টিল দিয়ে নির্মাণ করা হবে। এতে সরকারের ব্যয় ধরা হয় ১০ কোটি ৫৬ লাখ ৭১ হাজার টাকা। এরমধ্যে শুধু মাটি ভরাটের বরাদ্দ ৫ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। প্রকল্পের ভূমি উন্নয়নের জন্য যৌথভাবে কার্যাদেশ পেয়েছে ঢাকার মেসার্স চন্দ্রদ্বীপ কনট্রাকশন, রাজশাহীর মেসার্স ডন এন্টারপ্রাইজ ও নওগাঁর মেসার্স ইথেন এন্টারপ্রাইজ। গত বছরের ৩ সেপ্টেম্বর ভূমি উন্নয়ন কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল।
২০২২ সালের শেষ দিকে নওগাঁ-রাজশাহী আঞ্চলিক মহাসড়কের পশ্চিম পাশে জেলার মহাদেবপুর উপজেলার ভীমপুর এলাকায় ১৫ একর (৪৫ বিঘা) জমি অধিগ্রহণ করা হয়। এরপর মাটি ভরাটের কাজ শুরু হয়। মাটি ভরাটের কাজ ৯৫ শতাংশ হলেও প্রায় ৩ বছর থেকে তা পড়ে রয়েছে। যেখানে স্থানীয়দের গো-চারণ ভূমিতে পরিণত হয়েছে। একই সাথে স্থানীয়দের ফুটবল খেলার কাজেও ব্যবহৃত হচ্ছে। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে গা ঢাকা দেয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানও। এরপর থেকে সাইলো নির্মাণের কাজটি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। সাইলোটি আলোর মুখ দেখবে কিনা না নিয়েও রয়েছে শঙ্কা।
উপজেলার নওহাটা এলাকার বাসীন্দা শাহজাহান বলেন- জেলায় পর্যাপ্ত খাদ্যগুদাম আছে এবং সংরক্ষণ করা যায়। তারপরও তৎকালিন সাবেক খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করতে সাইলোটি নির্মানের উদ্যোগ নেয়। এখানে সাইলো প্রকল্পটি দেখিয়ে অনেকের চোখে ধুলো দিয়ে তার নিজের প্রত্যন্ত এলাকায় নওগাঁ বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে যাওয়ার অপচেষ্টা করা হচ্ছিল। বর্তমানে সাইলো প্রকল্পটির কাজ বন্ধ রয়েছে। আদ্যো সাইলো হবে কিনা তা নিয়েও শঙ্কা রয়েছে। তবে সাইলো যদি না হয় সেখানে অন্য যেকোনো উন্নয়ন কাজে জায়গাটি ব্যবহার করা হোক।
ভীমপুর গ্রামের আরমান আলী অভিযোগ করে বলেন- তিন ফসলি জমিকে এক ফসলি দেখিয়ে জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। আবার ভরাটের সময় বালুর পরিবর্তে এঁটেল মাটি ব্যবহার করা হয়েছে। অনিয়ম ও দূর্নীতির সাথে জড়িতদের ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী জানাই।
একই গ্রামের আব্দুল মান্নান বলেন- সাইলো নির্মাণ হবে গত ৩ বছর থেকে এই কথা শুনে আসছি। এজন্য মাটিও ভরাট করা হয়েছে। এতে খাদ্য-শস্য সংরক্ষণ হবে এবং এলাকার উন্নয়ন হবে। কিন্তু দীর্ঘদিন থেকে কাজ বন্ধ রয়েছে। সেখানে গো-চারণ ভূমিতে পরিণত হয়েছে এবং ফুটবল খেলার মাঠ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। সাইলো হবে কিনা তা আমরা বুঝতেও পারছি না।
নওগাঁ চালকল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন চকদার বলেন- এ জেলায় প্রায় ২৭ লাখ টন ধান উৎপাদন হয়। সরকারি ভাবে খাদ্য-শস্য সংগ্রহের সময় জেলার খাদ্য গুদামগুলো খালি করে সংগ্রহ করতে হয়। পাশের বগুড়া জেলার আদমদীঘি উপজেলার আধুনিক খাদ্য সংরক্ষণাগার (সাইলো) ও কেন্দ্রীয় খাদ্য গুদাম (সিএসডি) সহ চারটি খাদ্য শস্য সংগ্রহ প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে স্থানান্তর করতে হয়। এতে ব্যয়বহুল ও সময় সাপেক্ষ। এ কারণে কৃষক ও ব্যবসায়িদের ধান-চালের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করতে সাইলো নির্মাণ প্রয়োজন।
নওগাঁ জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোঃ ফরহাদ খন্দকার বলেন- সাইলো নির্মাণে মাটি ভরাটের কাজ ইতোমধ্যে ৯৫ শতাংশ শেষ হয়েছে। কাজের এখনো ১০ শতাংশ টাকা জামানত হিসেবে রক্ষিত রয়েছে। তবে অজ্ঞাত কারণে ঠিকাদার কাজ বন্ধ রেখে লাপাত্তা। গত ৫ আগস্টের পর থেকে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানগুলোকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। বিষয়টি নিয়ে কি ধরণের পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে তা অধিদপ্তর ভাল বলতে পারবেন। তবে খালি জায়গায় ফলজ গাছের চারা রোপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তবে জেলায় সংরক্ষণ ব্যবস্থা পর্যাপ্ত রয়েছে।
রংপুর নগরীর জাহাজ কোম্পানি মোড় থেকে মাহীগঞ্জ সাতমাথা পর্যন্ত প্রায় ৫ কিলোমিটার সড়কের কার্পেটিং উঠে গেছে, খোয়া বের হয়েছে, স্থানে স্থানে বড় গর্ত; বৃষ্টি হলেই জমে কাদা। এই দুর্দশা থেকে মুক্তি পেতে আবারও প্রতীকী কর্মসূচি পালন করেছেন স্থানীয়রা।
শুক্রবার (২৫ জুলাই) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে সাতমাথা রেলগেটসংলগ্ন ভাঙা সড়কের ওপর ধানের চারা রোপণ ও রংপুর সিটি করপোরেশনকে ‘লাল কার্ড’ দেখানো হয়।
স্থানীয়রা বলেন, লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রামের সঙ্গে রংপুরের যোগাযোগের অন্যতম রুট সাতমাথা-জাহাজ কোম্পানি সড়ক। এ সড়কের ৫ কিলোমিটার দীর্ঘদিন ধরে খানাখন্দে ভরা। প্রতিদিনই মোটরসাইকেল, রিকশা, অটোরিকশা, সাইকেলসহ বিভিন্ন যানবাহন সেখানে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন।
চলতি বর্ষায় জলাবদ্ধতার কারণে সড়কের বিভিন্ন স্থানে বড় বড় গর্ত হয়েছে। ফলে লালমনিরহাট, কুড়িগ্রামসহ নগরীর বিভিন্ন এলাকার রোগী ও গর্ভবতী নারীদের রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালে যেতে অবর্ণনীয় কষ্ট সহ্য করতে হচ্ছে।
তারা আরও বলেন, সড়কটি সংস্কারের জন্য সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার বলা হলেও তারা কোনো উদ্যোগ নেয়নি। তাই এর আগে সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষের গায়েবানা জানাজার নামাজ পড়া হয়েছিল। শুক্রবার সড়কে প্রতীকী ধানের চারা রোপণসহ সিটি করপোরেশনকে লালকার্ড প্রদর্শন করা হয়েছে। দ্রুত সড়ক সংস্কারের উদ্যোগ না নিলে এ ধরনের কর্মসূচি অব্যহত থাকবে।
এলাকাবাসীর ভাষ্য, লাল কার্ড প্রদর্শনের মাধ্যমে তারা শেষবারের মতো হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যে দৃশ্যমান সংস্কারকাজ শুরু না হলে ব্যবসায়ীরা দোকান বন্ধ রেখে ধর্মঘট করবেন। এমনকি রংপুর-ঢাকা রেলপথও অবরোধ করা হবে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন সাতমাথার বাসিন্দা রাজিমুজ্জামান হৃদয়, আসিফ মাহমুদ, মো. প্রান্ত, ছিয়াম হোসেন সাকিব, হাসান আলী, হোসেন আলী, সুমন হোসেন বিজয়, আরাফাত হোসেন, সাগর হাসান, হীরা হক, সেলিম হোসেন, হীরা, মোস্তাফিজার রহমান প্রমুখ। তারা সিটি করপোরশনকে লালকার্ড প্রদর্শন করেন।
শুক্রবার (২৫ জুলাই) গভীর রাতে সীমান্তের বড় আঁচড়া বটতলা এলাকা থেকে এ ট্যাবলেটগুলো পরিত্যক্ত অবস্থায় জব্দ করে বিজিবির বেনাপোল ক্যাম্পের সদস্যরা।
বিজিবির উপস্থিতি টের পেয়ে চোরাচালানীরা পালিয়ে যায়। জব্দকৃত ট্যাবলেটগুলো ধ্বংস করার জন্য যশোর ব্যাটালিয়নে জমা করা হবে। ৪৯ বিজিবি ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক লে. কর্নেল সাইফুল্লাহ সিদ্দিকী বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানা যায় চোরাচালানীরা ভারত থেকে বিপুল পরিমাণ যৌন উত্তেজক ট্যাবলেট এনে বড় আঁচড়া বটতলা মোড়ে মজুদ করেছে। পরে বেনাপোল বিওপির হাবিলদার মো. মামুনুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি টহলদল সেখানে অভিযান চালিয়ে ২৯ লাখ ৪০ হাজার টাকা মূল্যের ৯ হাজার ৮০০ পিস ভারতীয় সুপার ভিডালিস্টা নামের যৌন উত্তেজক ট্যাবলেট জব্দ করে।
বিচার, সংস্কার ও নতুন বাংলাদেশ গঠনে ৩ আগস্ট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সবাইকে সমবেত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, জুলাই সনদ ও জুলাই ঘোষণাপত্র নিশ্চিত করা হবে।
তিনি বলেন, আগামীর নতুন বাংলাদেশে সিলেট এনসিপির অন্যতম দুর্গ হবে। সিলেটবাসী আজ তা দেখিয়ে দিয়েছেন।
শুক্রবার (২৫ জুলাই) বিকালে সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে এনসিপির জুলাই পদযাত্রা শেষে পথসভায় তিনি এসব কথা বলেন।
নাহিদ বলেন, যুগযুগ ধরে সিলেট বাংলাদেশের ইতিহাস ঐতিহ্যকে ধরে রেখেছে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে এবং বাংলাদশের স্বাধীনতার পক্ষে সিলেট বুক চিতিয়ে লড়াই করেছে। জনগণের মুক্তির লড়াইয়ে সিলেট ছিল অগ্রগামী। ৪৭ সালে সিলেটবাসী পূর্ববঙ্গের সঙ্গে থাকার রায় দিয়েছিলেন। কিন্তু সিলেটবাসীকে সেই ব্রিটিশ থেকে শুরু করে পাকিস্তান এবং আওয়ামী লীগ আমলেও ঠকানো হয়েছিল। গ্যাস, বালু পাথরসহ সিলেটের খনিজ সম্পদ থেকে সিলেটবাসীকেই বঞ্চিত করা হয়েছে।
তিনি জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সিলেটবাসীর মূল্যবান অবদানের কথা স্বীকার করে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, সাংবাদিক এটিএম তুরাবসহ এই সিলেট জেলার ১৭ জন মানুষ জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ হয়েছেন। আমরা সেইসব শহীদের রক্তের শপথ নিয়ে নতুন বাংলাদেশ গড়তে এসেছি এই সিলেটে।
তিনি বলেন, লন্ডনে বাঙ্গালিদের অধিকাংশই হচ্ছেন সিলেটী। আপনারা যেমন লন্ডনকে জয় করেছেন তেমনি জয় করেছেন এই সিলেটকে। আমাদের প্রবাসী ভাইদের ঘামে বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকা ঘুরে। আমরা তাদের ভোটাধিকারের জন্য কথা বলছি। আমরা বিশ্বাস করি প্রবাসীরা বাংলাদেশের নীতি নির্ধারণের অংশী হবেন।
বিচার, সংস্কার ও নতুন বাংলাদেশ গঠনে ৩ আগস্ট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সবাইকে সমবেত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)র আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। বলেন, সেখান থেকে জুলাই সনদ ও জুলাই ঘোষণাপত্র নিশ্চিত করা হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসিরুদ্দিন পাটোয়ারী বলেন, 'এনসিপি বিএনপিবিরোধী বলে যে প্রচার করা হচ্ছে —তা ঠিক নয়। তবে বাংলাদেশে চাঁদাবাজি ও সিন্ডিকেট চলতে দেওয়া হবে না।'
তিনি বলেন, 'সিলেটের চা বাগানের শ্রমিকরা মানবেতর জীবনযাপন করছে। তাদের ঠিকমতো মজুরি দেওয়া হয় না। চা বাগানের লাভ শুধু মালিক নয়, শ্রমিকদের দেওয়ার ব্যবস্থা করবে এনসিপি।'
হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, 'আমাদের দেশ কখনো প্রশাসনের, কখনো ব্যবসায়ীর, আবার কখনো সেনাবাহিনীর হয়েছে, জনতার হয়নি। আমরা জনতার বাংলাদেশ গঠন করতে চাই।'
আওয়ামী লীগের সুবিধা নিয়ে যারা লেখক হয়েছেন, যারা আওয়ামী লীগ আমলে মিডিয়া খুলেছে—তাদের দিকে বিশেষভাবে নজর রাখতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। বলেন, 'এনসিপি কোনো চাঁদাবাজ দল নয়। আওয়ামী লীগের চ্যাপ্টার ক্লোজ করে এনসিপি ওঠে এসেছে।'
এর আগে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিকাল ৫টায় সিলেট নগরীর চৌহাট্টা থেকে পদযাত্রা শুরু করে নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। গরমের কারণে নির্ধারিত পদযাত্রার পথ কিছুটা সংক্ষিপ্ত করে পুনরায় চৌহাট্টাস্থ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এসে তারা পথসভায় মিলিত হন।
উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলমের সঞ্চালনায় পথসভায় এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহর, যুগ্ম আহ্বায়ক অনিক রায়, যুগ্ম আহ্বায়ক এহতেশামুল হক, যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা, মুখ্য সমন্বয়ক নাসির উদ্দিন পাটোয়ারী, সিনিয়র মুখ্য সংগঠক সাদিয়া ফারজানা দিনা, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমীন, কেন্দ্রিয় সমন্বয়ক গোলাম মর্তুজা সেলিমসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।
মাগুরায় প্রতিবন্ধীদের মাঝে ৮০ টি হুইলচেয়ারসহ বিভিন্ন সহায়ক উপকরণ বিতরণ করা হয়েছে ।
মাগুরা প্রতিবন্ধী সেবা ও উন্নয়ন কেন্দ্রের সহায়তায় এবং জেলা প্রশাসনের আয়োজনে বৃহস্পতিবার জেলার বিভিন্ন উপজেলা ও পৌরসভার প্রতিবন্ধীদের মাঝে হুইলচেয়ারসহ বিভিন্ন সহায়ক উপকরণ বিতরণ করা হয়।
মাগুরা জেলা প্রশাসক মোঃ অহিদুল ইসলাম প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে এসব উপকরণ বিতরণ করেন। এ সময় সাথে ছিলেন জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ জাকির হোসেন।
মাগুরা সদর উপজেলায় ৩২টি হুইল চেয়ার, শ্রীপুরে ১০টি হুইল চেয়ার, মহম্মদপুরে ২০টি হুইল চেয়ার ও ১টি সাদাছড়ি, শালিখায় ১০টি হুইল চেয়ার এবং পৌরসভায় হুইল চেয়ার, ট্রাইসাইকেল, ওয়াকার, সাদাছড়ি, ক্র্যাস ও কর্ণার চেয়ারসহ বিভিন্ন উপকরণ দেয়া হয়।
মোট বিতরণকৃত উপকরণের মধ্যে ছিল ৮০টি হুইল চেয়ার, ১০টি ট্রাইসাইকেল, ৪টি অক্সালারি ক্র্যাস, ২টি স্মার্ট সাদাছড়ি, ১টি এলবোক্র্যাচ, ১টি কর্ণার চেয়ার ও ১টি ফোল্ডিং ওয়াকার।
এসময় জেলা প্রশাসক তার বক্তব্যে বলেন , প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে এবং এই সহায়তা তাদের জীবনযাপনকে স্বাভাবিক করতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।
রাজধানীর চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ জামায়াতের রুকন সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান।
জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, দেশের সংকটকালে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় জামায়াতের নেতারা বিদেশ থেকে দেশে এসে স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষায় আধিপাত্যবাদের দোসর ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রাম করেছেন।
তিনি বলেন, ‘জামায়াতের নেতাদের বেগম পাড়া কিংবা পিসি পাড়া নাই। জামায়াতের কোনো নেতা কখনোই দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায়নি —যাবেও না। যারা দেশ ও জনগণকে ভালোবাসে না তারাই বিদেশে নিজেদের দ্বিতীয় ঠিকানা গড়ে তুলেছেন। তারা নিজেদের স্বার্থে দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন।’
জামায়াতের এমন অবস্থঅনের কারণে শীর্ষ নেতাদের রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় বিচারিক হত্যা করা হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন জামায়াতপ্রধান।
শুক্রবার (২৫ জুলাই) চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে দলটির ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের রুকন সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমান বলেন, বিগত ৫৪ বছরে জামায়াতে ইসলামী, বাংলাদেশের একজন নাগরিকের প্রতিও অবিচার করেনি, জুলুম করেনি। জামায়াতের কোনো নেতাকর্মী চাঁদাবাজি কিংবা সন্ত্রাসী করেনি, করবেও না। জামায়াত দল নিয়ন্ত্রণ করেছে, দেশও নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে। যারা দলই নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না—তারা দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সার্বিক পরিস্থিতিও নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না।
ইসলামকে পৃথিবীর একমাত্র অসাম্প্রদায়িক ধর্ম উল্লেখ করে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হলে চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী, মাদক কারবারি, ধর্ষক, খুনি, লুটেরাদের ভয়ের কারণ আছে—এজন্য তারা অপপ্রচার চালাচ্ছে। যারা ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলন করে তাদের মা-বোন যদি প্রয়োজনে বাজারে যেতে পারে, হাসপাতালে যেতে পারে, প্রয়োজনীয় মৌলিক সব কাজ করতে পারে—তাহলে কেন ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হলে নারীদের চলাফেরায় বাঁধা সৃষ্টি হবে এমন প্রশ্নও রাখেন তিনি।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, সকল ধর্মের নারী-পুরুষ সকলেই রাষ্ট্রের কাছে সমান। রাষ্ট্র ধর্মের কিংবা লিঙ্গের বৈষম্য করতে পারে না। ইনসাফভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণে সকলের সহযোগিতা চেয়ে তিনি বলেন, ইসলাম ও দেশপ্রেমিক সকলকে সঙ্গে নিয়ে পথ চলতে চায় জামায়াতে ইসলামী। জামায়াতের রাজনীতি হবে কেবলই মানুষ ও মানবতার কল্যাণে।
কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমির মো. নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে বিশেষ অতিথি ছিলেন দলের সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, জেনারেল মাওলানা এটিএম মা'ছুম, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য এবং প্রচার ও মিডিয়া বিভাগীয় সম্পাদক অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ।
কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের পরিচালনায় সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমির আব্দুস সবুর ফকির, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমির অ্যাডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন, কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি দেলাওয়ার হোসেন, মোহাম্মদ কামাল হোসেন, ড. আব্দুল মান্নান ও মো. শামছুর রহমান।
পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলায় হঠাৎ করে ভাইরাল ফ্লো জ্বরের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। প্রতিদিনই উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন ও পৌর এলাকার শত শত মানুষ জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছেন। আক্রান্তদের মধ্যে শিশু ও বৃদ্ধদের সংখ্যা তুলনামূলক বেশি।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, গত এক সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে ২০০ থেকে ২৫০ রোগী শুধুমাত্র জ্বর, গলা ব্যথা, কাশি ও শরীর ব্যথার উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসা নিতে আসছেন। তাদের অনেকেই আবার কয়েকদিন ধরে উচ্চমাত্রার জ্বরে ভুগছেন। এদের মধ্যে কেউ কেউ স্থানীয় ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনে খাচ্ছেন, আবার কেউ কেউ সরাসরি ক্লিনিক বা হাসপাতালে যাচ্ছেন।
জানা যায়,উপজেলার কালাইয়া, ধুলিয়া, কেশবপুর, নাজিরপুর, ও কনকদিয়া ইউনিয়নসহ পৌর এলাকার বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। অনেক স্কুলে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিও কমে গেছে বলে জানা গেছে।স্থানীয় ফার্মেসিগুলোতেও সর্দি-কাশি ও জ্বরের ওষুধের চাহিদা বেড়ে গেছে।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসা ধুলিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা মো. জসিম উদ্দিন বলেন,আমার ৭ বছরের ছেলের দুই দিন ধরে জ্বর, কাশি আর গলা ব্যথা। ওষুধ খাওয়ালেও জ্বর কমছে না। চিন্তায় আছি, তাই হাসপাতালে নিয়ে এসেছি।
অন্যদিকে কালাইয়া ইউনিয়নের গৃহবধূ রাবেয়া বেগম বলেন, আমার স্বামী, শ্বশুর আর মেয়ে—তিনজনই জ্বরে ভুগছে। ফার্মেসি থেকে ওষুধ নিয়েছিলাম, কিন্তু তেমন কাজ না হওয়ায় আজ হাসপাতালে এসেছি। প্রতিদিনই কেউ না কেউ অসুস্থ হচ্ছে আশেপাশে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আব্দুর রউফ বলেন,“এটি সাধারণত মৌসুমি ভাইরাল জ্বর, তবে উপসর্গ তীব্র থাকায় অনেকেই আতঙ্কিত হচ্ছেন। আমরা রোগীদের বিশ্রাম, পানিসমৃদ্ধ খাবার ও প্রাথমিক চিকিৎসা নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছি। তবে যদি শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়া, বা দীর্ঘমেয়াদি জ্বর হয়, দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।