শাহরিয়ার হাসান
চারপাশে র্যাব সদস্য। সামনে গণ্যমাধ্যমের ডজন খানেক ক্যামেরার লেন্স। জঙ্গিবাদে জড়াতে কেন ঘর ছেড়েছিলেন এমন সব তীর্যক প্রশ্ন। ভয়ার্ত কণ্ঠে জবাব দিচ্ছেন ভুল বুঝতে পেরে ফিরে আসা শারতাজ ইসলাম নিলয়। নিলয়ের পাশে তার সদ্য বিবাহিত স্ত্রী। মুষ্ঠিবদ্ধ করে ধরে রেখেছেন স্বামীর হাত।
প্রশ্ন করতেই স্ত্রী ফারিয়া বললেন, ওকে (নিলয়) আমি অনেক ভালবাসি। একবার হারিয়েছিলাম আর হারাতে চাই না।
নিলয়ও বললেন, স্ত্রীর ভালবাসার জোরেই জঙ্গিবাদ থেকে ফিরে এসেছেন। পরিবার ছেড়ে হিজরতের কথাটা যখন আসে তখন থেকে এটা আমি মেনে নিতে পারিনি।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব সেন্টারে নিলয়ের স্ত্রীর ফারিয়ার সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তার আগে নিলয়ও উপস্থিত সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন।
ফারিয়া বললেন, নিলয় সর্ম্পকে তার ফুফাতো ভাই। চলতি বছরে ১ জুলাই বিয়ে হয় তাদের। বিয়ের আগে বা পরে জঙ্গিবাদ বিষয়ে কিছুই বুঝতে পারেননি তিনি। তবে বাড়ি থেকে বের হওয়ার আগে তার মধ্যে অস্বাভাবিক পরিবর্তন আসে। সব সময় অস্থির হয়ে থাকতেন নিলয়। ফিরে এসে আমার (স্ত্রী) হাত ধরে বলেছিলেন, জঙ্গীবাদ ভুল পথ, এমন ভুল আর হবে না। তোমাদের খুব ভালবাসি।
র্যাবের বক্তব্য অনুযায়ী, জঙ্গিবাদে জড়িয়ে কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে বাড়ি ছেড়ে যাওয়া চারজনসহ গ্রেপ্তার সাতজনকে তারা গত বুধবার গ্রেপ্তার করে। গত ২৩ আগস্ট কুমিল্লা সদর এলাকা থেকে আট তরুণ নিখোঁজ হন। তাঁদের মধ্যে নিলয়ও ছিলেন। তিনি গত ১ সেপ্টেম্বর রাজধানীর কল্যাণপুরের বাড়িতে ফিরে আসেন। নিলয়কে তাঁর পরিবারের হেফাজতে রেখে বাকি নিখোঁজ সাতজনসহ অন্যদের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করে র্যাব। এভাবেই তারা গত বৃহস্পতিবার সাতজনকে গ্রেপ্তার করে।
নিলয়ের স্ত্রী ফারিয়া বলেন, নিলয়ের পুরো যাত্রায় তার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। বারবার তিনি বলেছেন, তুমি যেখানে গিয়েছো ফিরে আসো। আমার সবাই তোমার পথ চেয়ে অপেক্ষা করছি। নিলয়ের মা লাভলী ইয়ামিন দৈনিক বাংলাকে বলেন, তার এক ছেলে এক মেয়ে। নিলয় মেয়েটার চেয়ে বড়। তাদের বাবা জার্মানি থাকে। নিলয়ের মায়ের দাবি, নিলয় আসলে এই ধরনের ছেলে না। বন্ধুদের পাল্লায় পরে ঘর থেকে বের হয়েছি। যখন মা- বউয়ের কথা মনে পড়েছে ফিরে এসেছে। আমাদের ভালবাসার কাছে জঙ্গিবাদ হার মেনেছে। আজ ওকে বাসায় নিয়ে যাবো। যতদ্রুত সম্ভব ওর বাবার কাছে পাঠিয়ে দিবো।
র্যাবের সংবাদ সম্মেলনে সারাক্ষণই স্ত্রীর হাত ধরে ছিলেন নিলয়। ছবি: দৈনিক বাংলা
নিলয় সাংবাদিকদের বলেন, খালাতো ভাইয়ের মাধ্যমে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে অন্য তরুণদের সঙ্গে ঘর ছাড়েন। তাকে প্রচলিত ধ্যান-ধারণার বাইরে উদ্বুদ্ধ করা হয়। তবে পটুয়াখালিতে যাওয়ার পর তিনি বুঝতে পারেন জঙ্গিবাদ ভুল পথ। সুযোগ বুঝে পালিয়ে বাসায় ফিরে আসেন। তবে তার দাবি, সেই ২০২০ সাল থেকে তার খালাতো ভাই নেহাল আব্দুল্লাহ তাকে উষ্কে দিচ্ছে। নিয়মিত শুনতে শুনতে তার মনে হয়েছিল হিজরতই সঠিক পথ।
জঙ্গিদের সশস্ত্র হামলার বিষয়ে নিলয় বলেন, সশস্ত্র প্রস্তুতির কথা বারবার শুনেছি। কিন্তু আমি সেই স্টেজ পর্যন্ত যেতে পারিনি। তার আগেই ভুল বুঝতে পেরে ফিরে আসি।
যারা এখনো নিখোঁজ কিংবা উদ্বুদ্ধ হয়ে হিজরতের পথে রয়েছেন, তাদের উদ্দেশে কিছু বলার আছে কি না জানতে চাইলে নিলয় বলেন, আমি চার-পাঁচ দিন ছিলাম। এর মধ্যেই বুঝতে পারি এটি ভুল পথ। আসলেই এটি ভুল পথ। এই ভুল পথে পা বাড়ানোর আগে বুঝে-শুনে যাওয়া উচিত। না বুঝে যাওয়া উচিত নয়। এটি ভুল পথ, এই ভুল পথে আর যেন কেউ পা না বাড়ায়।
র্যাব বলছে, গত ২৩ আগস্ট সকাল ১০টায় নিলয়সহ পাঁচ তরুণ নিজ বাড়ি থেকে বের হয়ে কুমিল্লা টাউন হল এলাকায় আসেন। পরে সোহেলের নির্দেশনায় তারা দুই ভাগ হয়ে লাকসাম রেল ক্রসিংয়ের কাছে হাউজিং স্টেট এলাকার উদ্দেশে যাত্রা করেন। নিলয়, সামি ও নিহাল একত্রে যাত্রা করেন। তবে তারা ভুলবশত চাঁদপুর শহর এলাকায় চলে যায়।
তারা ভুল বুঝতে পেরে রাত্রিযাপনের উদ্দেশ্যে চাঁদপুরের একটি মসজিদে অবস্থান করলে কর্তব্যরত পুলিশ সন্দেহজনক আচরণের কারণে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে। পরে পুলিশ তাদের পাশের একটি হোটেলে রেখে যায় এবং পরদিন বাসায় চলে যেতে নির্দেশ দেয়।
তারা রাতে হোটেল থেকে কৌশলে পালিয়ে তাদের পূর্বনির্ধারিত স্থানে গেলে সোহেল ও অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তি তাদের লাকসামের একটি বাড়িতে নিয়ে যায়। ওই বাড়িতে আগে থেকেই অবশিষ্ট তিনজন অবস্থান করছিলেন।
পরে নিলয়, নিহাল, সামি ও শিথিলকে কুমিল্লা শহরের একটি মাদ্রাসার মালিক নিয়ামত উল্লাহর কাছে পৌঁছে দেন সোহেল। নিয়ামত উল্লাহর তত্ত্বাবধানে একদিন থাকার পর সোহেল চারজনকে নিয়ে ঢাকায় আসেন এবং নিহাল, সামি ও শিথিলকে অজ্ঞাত ব্যক্তির নিকট বুঝিয়ে দিয়ে নিলয়কে পটুয়াখালীর একটি লঞ্চের টিকিট কেটে পটুয়াখালীতে পাঠান।
গ্রেপ্তার বণি আমিন পটুয়াখালীতে নিলয়কে স্থানীয় এক মাদ্রাসায় নিয়ে যান এবং গ্রেপ্তার হুসাইন ও নেছার ওরফে উমায়েরের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। বণি আমিন নিলয়কে তিন দিন তার বাসায় রাখেন। তার বাসায় অতিথি আসায় পরে নিলয়কে হোসাইনের মাদ্রাসায় রেখে আসেন। নিলয় মাদ্রাসা থেকে পালিয়ে কল্যাণপুরে নিজ বাড়িতে ফিরে আসেন।
বাঙ্গালী জাতি সত্তা তথা আমাদের বাঙ্গালী জীবন সংগ্রামের সাথে অতি নিবির ভাবে জড়িয়ে আছে দেশীয় লোকজ সংস্কৃতি। মানুষ তার নিজস্ব সংস্কৃতি পরিমন্ডলের ভেতরেই প্রতিনিয়ত বেড়ে উঠার ফলে লোকজ সংস্কৃতিকে বলা হয় বাঙ্গালীর সংস্কৃতির এক অমুল্য সম্পদ।
আমাদের বাঙ্গালীপনা মনোভাব, স্বভাব চরিত্র, আচার আচরন, কৃষ্টি কালচারের মূল শেকর অনুসন্ধান করতে গেলে আমাদের জীবনে লোক সংস্কৃতির এক সুদূর প্রসারী প্রভাব লক্ষ করা যায়। সেই সংস্কৃতির বড় অংশ জুড়ে রয়েছে খেলাধুলা। যার মধ্যে গ্রামগঞ্জের অন্যতম কৌশলী ও জনপ্রিয় একটি খেলা হলো লাঠি খেলা।
যা ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকাগুলোর প্রায় দেড়’শ বছরের ঐতিহ্য।
কালের গর্বে প্রায় বিলিনের পথে পুরনো এই লাঠি খেলাকে উজ্জীবিত করার প্রয়াসে বৃহস্পতিবার (১২ জুন) বিকেলে ফুলবাড়িয়া উপজেলার রঘুনাথপুর গ্রামে আখালিয়ায় ও খিরু নদের পাড়ে স্থানীয় অনির্বাণ ছাত্র সংঘের একযুগ প‚র্তিতে লাঠি খেলার আয়োজন করেন। গ্রামীন জনপদের লোকজন চিত্ত বিনোদনের ধারক হিসেবে বেছে নিয়েছে এই লাঠি খেলা।
খেলায় সভাপতিত্ব করেন, বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষনা প্রতিষ্ঠানের উপ- পরিচালক ড. এ কে এম নজরুল ইসলাম। উদ্বোধন করেন, ইউপি সদস্য আমিনুল এহসান। খেলায় প্রধান অতিথি ছিলেন, বাংলাদেশ তার টেলিফোন বোর্ডের অবসরপ্রাপ্ত ডিভিশনাল ইঞ্জিনিয়ার জয়নাল আবদীন।
লাঠি খেলা জানা থাকলে জীবনে নানা বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। খেলার কৌশল জানা থাকলে শত্রু পক্ষের হাত থেকে বেচে আসা যায়।
এমনই এক লাঠিয়ালদের ওস্তাদের খোজ মিলে, উপজেলার রাঙামাটি ইউনিয়নের আনুহাদি গ্রামের বাড়িতে শামছুল হক সরকার (৬৫) যিনি ১৩ বছর বয়স থেকে লাঠি খেলা খেলে থাকেন। এর আগে তার বাপ দাদা এমনকি দাদার দাদারাও এ খেলা খেলেছে। দেখাযায় তাদের বংশ পরম্পরায় শেষ বংধর হিসেবে শামছুল এই বৃদ্ধ বয়সেও লাঠি খেলাটি ধরে রেখেছে। শামছুল হকের রয়েছে ৩০ সদস্যে একটি লাঠিয়াল দল। দলটির ওস্তাদ সে নিজেই।
এ খেলার নিয়ম সম্পর্কে জানতে চাইলে শামছুল ওস্তাদ জানায়,এখলায় ৩০ থেকে ৪০ সদস্য বিশিষ্ট দক্ষ লাঠিয়া খেলোয়ারের প্রয়োজন হয়। খেলা শুরুতে সংগীতের মাধ্যমে খেলাটির স‚চনা হয়। মুলত ৯ টি ধাপে খেলাটি ভাগ করা হয়ে থাকে বলে শামছুল জানায়। খেলার প্রথম ধাপ হলো, দু’জন খেলোয়ার ( এক গ্রুপ) আড়াই হাত লম্বা একটি করে লাঠি নিয়ে খেলে। দ্বিতীয় ধাপে দু’জন খেলোয়ার একই মাপের লাঠি প্রতি খেলোয়ার ৫টি করে লাঠি নিয়ে খেলা দেখায়। তৃতীয় ধাপে ৪জন (২গ্রুপ) একটি করে লাঠি হাতে নিয়ে খেলা দেখায়। ৪র্থ ধাপে চার থেকে সাড়ে ৪হাত লম্বা লাঠি একটি করে দুই গ্রুপের ৪ জনকে খেলতে হয়। ৫ম ধাপের খেলায় একই লাঠি প্রতি খেলোয়ার দু’হাতে দুটি করে লাঠি নিয়ে বিভিন্ন অংগ ভঙ্গিমায় ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে খেলা দেখায়। লাঠি খেলায় বিশেষ আকর্ষন থাকে ৬ষ্ট ধাপে। একজন খেলোয়ার দু’হাতে দুটি ধারালো রাম-দা নিয়ে নিজ শরীরের চারপাশে এলোপাথাড়ী ঘোরাতে থাকে। একই খেলোয়ারের আরো একটি খেলা দেখায় চরকা বানডি, যে খানে ৪টি ধারালো চাকু কাঠির সাহায্যে বেধে একই ভঙ্গিমায় ঘোরাতে থাকে। সর্বশেষ ধাপে সকল লাঠিয়ালরা একত্র হয়ে বাদ্যযন্ত্রের তালে তালে নৃত্যের মাধ্যমে যে যার মতো করে খেলা প্রদর্শন করে লাঠি খেলার সমাপ্ত ঘটায়। খেলা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বাজানো দুর্লভ বাদ্যযন্ত্রগুলোর মধ্যে রয়েছে, বোম, কাড়া, জয়ঢাক, কনেট ও পাতার বাশি।
খেলায় অংশ নেওয়া খেলোয়াড়দের দাবী সরকারী বা বেসরকারী ভাবে যদি এ লাঠি খেলা বেশি বেশি করে আয়োজন করে তবে এ খেলা ফুলবাড়িয়ার গুন্ডি পেরিয়ে পাশ্ববতী উপজেলা বা জেলা শহরে এ খেলার ব্যাপক বিস্তার লাভ করবে। যার মধ্যে দিয়ে বাংলার হারানো সেই গ্রমীন সংস্কৃতিক ঐতিহ্য পূনরায় টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে।
কক্সবাজারের চকরিয়ায় সুরাজপুর-মানিকপুর ইউনিয়নে পাহাড়ের মাটি বিক্রি এবং মাতামুহুরী নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের প্রতিবাদ করায় জুলাই যোদ্ধা মোহাম্মদ হাসান (২৩)-এর ওপর হামলা চালিয়েছে দূবৃত্তরা। পরে রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়।
গতকাল বুধবার সন্ধ্যার পর কাকারা ইউনিয়নের মাঝের ফাঁড়ি ব্রিজসংলগ্ন এলাকার অবৈধ বালুর পয়েন্টে এই হামলার ঘটনা ঘটে।
মোহাম্মদ হাসান গত বছরের ১৮ জুলাই চট্টগ্রামের নতুন ব্রিজ এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন।
তার মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের গেজেট নম্বর-৫৮। হামলায় আহত হাসান সুরাজপুর-মানিকপুর ইউনিয়নের মধ্যম সুরাজপুর গ্রামের নুরুল আলমের পুত্র।
এদিকে এই হামলার ঘটনায় জড়িত পাহাড় ও বালু খেকোচক্রের সবাইকে গ্রেপ্তার এবং পাহাড় কাটারোধ, মাতামুহুরী নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধের দাবিতে আজ বৃহস্পতিবার (১২ জুন) সন্ধ্যায় সংবাদ সম্মেলন করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। সংগঠনটির পক্ষ থেকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে হামলার ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা নেওয়াসহ পরিবেশবিধ্বংসী কর্মকাণ্ড বন্ধে প্রশাসনের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে আহত জুলাই যোদ্ধা মোহাম্মদ হাসান বলেন, সুরাজপুর-মানিকপুর এলাকায় বিএনপির নাম ভাঙিয়ে বনের গাছপালা উজাড়, পাহাড় সাবাড় করে মাটি বিক্রি এবং মাতামুহুরী নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছিলেন সানাউল্লাহ, মোহাম্মদ সাদু, মো. হুবাইব, মোহাম্মদ মোস্তফা, মোহাম্মদ জমিরসহ একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট। পরিবেশবিধ্বংসী এই কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে গেলে তাদের নেতৃত্বে আমার ওপর দলবদ্ধ হামলা করা হয়। এ সময় তাকে বিভিন্ন বস্তু দিয়ে বেধড়ক পিটিয়ে জখম করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চকরিয়া উপজেলার ছাত্র প্রতিনিধি মোবারক হোসেন জিহান, শামসুল আলম সাঈদী, সায়েদ হাসান।
তারা বলেন, সুরাজপুর-মানিকপুর ইউনিয়নে যারা পাহাড় সাবাড় করছে এবং মাতামুহুরী নদী থেকে অবৈধভাবে বালু তুলে পরিবেশ নষ্ট করছে তাদের বিরুদ্ধে আমাদের এই প্রতিবাদ অব্যাহত থাকবে।
চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি শফিকুল ইসলাম বলেন; এ ঘটনায় একটা অভিযোগ হাতে পেয়েছি তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বরগুনা জেলায় ডেঙ্গুর প্রকোপ ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। পরিস্থিতি দিন দিন ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে রোগী ভর্তির সংখ্যা প্রতিদিন বেড়েই চলছে।
বৃহস্পতিবার সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ৬৭ জন নতুন আক্রান্ত রোগী জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এর মধ্যে বরগুনা ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালেই ভর্তি হয়েছে ৫৮ জন রোগী। অন্যরা জেলার বিভিন্ন উপজেলা হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা নিচ্ছে। বর্তমানে জেলায় ডেঙ্গুরোগী ভর্তি রয়েছে ২৬১ জন।
এর আগে গত মঙ্গলবার সকাল থেকে বুধবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ২৮৮ রোগীর মধ্যে ২০২ জনই বরগুনা জেলায়। গত জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত জেলায় মোট ডেঙ্গুরোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৬০৮ জন।
এদিকে গত বুধবার এক দিনে বরগুনা হাসপাতালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে দুজন। মৃত ব্যক্তিরা হলেন- সদর উপজেলার এম বালিয়াতলী ইউনিয়নের চরপাড়া এলাকার বাসিন্দা চান মিয়া (৭৫) এবং বরগুনা পৌরসভার থানাপাড়া এলাকার বাসিন্দা গোসাই দাস (৭০)। এর আগে বিভিন্ন সময়ে মশাবাহিত এ রোগে আক্রান্ত হয়ে জেলায় আরও ১০ জনের মৃত্যু হয়।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক জানান, গত বুধবার দুপুরের দিকে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় চান মিয়া ও সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে গোসাই দাসের মৃত্যু হয়। এদিকে পাঁচ দিনের ব্যবধানে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর ঘটনায় মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
মৃত চান মিয়ার মেয়ে কুলসুম বলেন, ‘তিন দিন আগে বাবাকে বরগুনা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। হাসপাতালের চিকিৎসক তাকে স্যালাইন দেন। গত বুধবার সকালে রক্ত পরীক্ষা করা হয়। এতে তার প্লাটিলেট ছিল ৬৪ হাজার। দুপুরে তিনি হাসপাতালে মারা যান।’
অপরদিকে অসুস্থ অবস্থায় গোসাই দাসকে গত রোববার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে তার শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলে সকালে প্লাটিলেট পরীক্ষার জন্য হাসপাতাল থেকে একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে নিয়ে যান স্বজনরা। এরপর দুপুরের দিকে আবারও হাসপাতালে নিয়ে এলে হঠাৎ শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। পরে শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হলে সন্ধ্যার পরে তার মৃত্যু হয়।
গোসাই দাসের ছেলে সঞ্জয় চন্দ্র দাস বলেন, ‘দুপুর পর্যন্ত বাবার শারীরিক অবস্থা ভালো ছিল। ক্লিনিকে পরীক্ষার পর বাসায় গিয়ে খাবারও খেয়েছেন। পরে হাসপাতালে নিয়ে গেলে হঠাৎ করেই তার শ্বাসকষ্ট শুরু হলে অক্সিজেন দেওয়া হলেও তিনি মারা যান।’
বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. তাজকিয়া সিদ্দিকাহ বলেন, তিন দিন আগে হাসপাতালে ভর্তি হন চান মিয়া। গত বুধবার সকালে তার অবস্থা খারাপ হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। কিন্তু স্বজনরা তাকে বরিশাল নিয়ে না যাওয়ায় দুপুরের দিকে তিনি মারা যান। তিনি বলেন, গোসাই দাস সন্ধ্যা পর্যন্ত ভালো ছিল। হঠাৎ শ্বাসকষ্ট হয়ে সন্ধ্যার পরে মারা যান।
বিপর্যয় রোধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি।
সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান নূরুল ইসলাম মনি বলেন, সারাদেশে ২৮৮ জন ডেঙ্গুরোগীর মধ্যে ২০২ জনই বরগুনার, যা অত্যন্ত দুঃখজনক ও হতাশাব্যাঞ্জক।
সংশ্লিষ্ট দপ্তর ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে বলে অভিযোগ করে বিএনপির এই সিনিয়র নেতা সরকারের কাছে বরগুনাসহ বরিশাল বিভাগের সব হাসপাতালে জরুরি ভিত্তিতে ডেঙ্গু চিকিৎসা যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার আহবান জানান।
পাশাপাশি তিনি ডেঙ্গু প্রতিরোধের যাবতীয় উদ্যোগ নেওয়া ও জরুরি ভিত্তিতে ভ্যাকসিনের ব্যবস্থা করার তাগিদ দেন। নূরুল ইসলাম মনি বলেন, ‘এডিস মশার বিস্তার রোধে করণীয় নির্ধারণ, কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন ও করোনা প্রতিরোধকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য সরকারের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।’
একইসঙ্গে তিনি ডেঙ্গুর দ্রুত বিস্তার রোধে সবাইকে প্রয়োজনীয় দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করার অনুরোধ জানান।
গাজীপুরের কাপাসিয়ায় নিষিদ্ধ পলিথিন উৎপাদনকারী একটি অবৈধ কারখানা সিলগালা করে বন্ধ করে দিয়েছে জেলা প্রশাসন। একইসঙ্গে কারখানার মালিক আব্দুল আউয়াল (৪৪) কে পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ অনুযায়ী তিন মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকালে গাজীপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা ইশতিয়াক আহমেদ ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে এ দণ্ডাদেশ দেন।
জানা যায়, কাপাসিয়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের রাউৎকোনা মোড় এলাকায় আব্দুল আউয়াল দীর্ঘদিন ধরে একটি অবৈধ কারখানায় নিষিদ্ধ পলিথিন উৎপাদন করে আসছিলেন। অভিযোগের ভিত্তিতে সেখানে অভিযান পরিচালনা করা হয়।
অভিযানকালে দেখা যায়, কারখানায় প্লাস্টিকের দানা তৈরি করে তা থেকে নিষিদ্ধ পলিথিন উৎপাদন করা হচ্ছিল। স্থানটি থেকে পলিথিন, প্লাস্টিকের দানা ও উৎপাদনযন্ত্র জব্দ করা হয়।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইশতিয়াক আহমেদ বলেন, “এই কারখানায় নিষিদ্ধ পলিথিন উৎপাদন করে পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের মারাত্মক ক্ষতি করা হচ্ছিল। তাই আইন অনুযায়ী কারাদণ্ড এবং কারখানা সিলগালা করা হয়েছে।”
অভিযানে কাপাসিয়া থানা পুলিশ সহায়তা করে। পরে দণ্ডিত আব্দুল আউয়ালকে পুলিশের প্রহরায় গাজীপুর জেলা কারাগারে পাঠানো হয়।
গাজীপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সালমা আক্তার জানান, পরিবেশ রক্ষায় জেলা প্রশাসনের এমন অভিযান চলমান রয়েছে এবং ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে।
ঈদের ছুটিতে সিলেটে বেড়াতে এসে হেনস্তার শিকার হয়েছেন পর্যটকরা। একদিনের ব্যবধানে জাফলংয়ে পর্যটকদের উপর হামলা ও কোম্পানীগঞ্জে পর্যটনকেন্দ্র থেকে পর্যটকদের বের করে দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। দুটি ক্ষেত্রেই পর্যটকদের বিরুদ্ধে অশ্লীলতা ও পরিবেশ নষ্টের অভিযোগ তোলা হয়েছে। যদিও স্থানীয় একটি অংশের অভিযোগ, নির্বিঘ্নে চোরাচালান ও পাথর লুট করতেই পর্যটকদের বাধা দেয়া হচ্ছে। পর্যটক সমাগম বাড়লে লুটপাট ও চোরাকারবারে সমস্যা হয়। তাই পর্যটকদের আসতে বাধা দেয়া হচ্ছে বলে দাবি তাদের।
অশ্লীলতার অভিযোগ এনে সোমবার রাতে মৌলভীবাজারের রাজনগরে “রাজনগর রিসোর্ট এন্ড কফি হাউজে” তালা দিয়েছে স্থানীয় একদল লোক। এসময় স্থানীয় থানার পুলিশ সদস্যদেরও ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকতে দেখা গেছে। সিলেটে বেড়াতে আসা পর্যটকদের কাছে সবচেয়ে আকর্ষণীয় দুটি স্থান জাফলং ও কোম্পানীগঞ্জ। সবসময়ই এই দুই এলাকায় পর্যটকদের ভিড় থাকে। ঈদের মতো বড় ছুটিতে ভিড় কয়েকগুণ বেড়ে যায়। সীমান্তবর্তী এই দুই এলাকা দিয়েই ভারত থেকে দেদারছে চোরাই পণ্য আসে। এছাড়া এসব এলাকার পাথুরে নদী ও ছড়া থেকে পাথর লুটপাটও নিত্তকার ঘটনা। গত বছরের ৫ আগস্টের পর চোরাচালান ও পাথর লুট অনেকটা বেড়ে গেছে। প্রশাসনও লুটপাটকারী ও চোরাকারবারীদের ঠেকাতে পারছে না।
জানা যায়, ঈদের পরদিন রোববার কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার উত্তর রনিখাই ইউনিয়নের পাহাড় থেকে নেমে আসা পাথুরে ছড়া উৎমাছড়া পর্যটনকেন্দ্রে ভিড় করেন অনেক পর্যটক। বিকেলে সেখানে কিছু সংখ্যক মাদ্রাসা শিক্ষার্থী ও স্থানীয় কিছু লোক জড়ো হয়ে পর্যটকদের বের করে দেয়। এ রকম একটি ভিডিও সোমবার রাত থেকে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। জড়ো হওয়া যুবকরা পর্যটকদের বিরুদ্ধে অশ্লীলতা, মদ্যপান ও এলাকার পরিবেশ নষ্টের অভিযোগ করেন।
ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া পর্যটকদের বের করে দেয়ার একটি ভিডিওতে এক যুবককে বলতে শোনা যায়, 'এই এলাকা আলিমদের এলাকা, দ্বীনদার এলাকা। কিন্তু এইখানে অনেকে অনেক পরিবেশে থেকে আসে। এসে মদ খায়, আরও অনেককিছু করে, এতে এলাকার পরিবেশ নষ্ট হয়। তাই আমাদের আবেদন, আপনারা এখানে আর আসবেন না। তাছাড়া এটি পর্যটনভুক্ত এলাকাও নয়'।
ভিডিওতে আরও বলতে শোনা যায়, ‘এই এলাকার আলেম-ওলামা ও স্থানীয়রা সিদ্ধান্ত নিয়েছে উৎমাছড়াকে পর্যটন করা যাবে না। তাই আপনারা যারা এখানে এসেছেন দয়া করে এখান থেকে চলে যান। আপনারা এখানে থেকে এখানের পরিবেশ নষ্ট করবেন না। এই এলাকার পরিবেশ ঠিক রাখার জন্য আমরা এখানে পর্যটকদের আসতে নিরুৎসাহিত করছি আজকের পর আপনারা এখানে আর কোনদিন আসবেন না’।
পর্যটকদের বের করে দেয়ার এই ভিডিও যুক্ত করে পরিবেশবাদী সংগঠন ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা), সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম কিম ফেসবুকে লিখেন, ‘একদিকে চলবে পর্যটক সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা অন্যদিকে পর্যটনে বাঁধা! দেশের ভেতরে সরকার ঘোষিত সংরক্ষিত এলাকা ও ব্যক্তি বা গোষ্ঠী মালিকানাধীন জায়গা ব্যতীত কোথাও জনসাধারণের প্রবেশে বাঁধা দেয়া মানুষের মৌলিক অধিকারে হস্তক্ষেপ। মানুষের চলাচলে বাঁধা প্রদান ও হুমকি প্রদান দণ্ডনীয় অপরাধ। কিন্তু সিলেটে এই অপরাধ ইতিপূর্বেও ঘটেছে।
কিম লিখেন, 'বছর কয়েক পূর্বে গোয়াইনঘাট উপজেলায় এক ঈদে মায়াবন নামে পরিচিত যুগীরকান্দি জলারবনে পর্যটকদের উপর হামলা করা হয়েছিল। এরপর থেকে ওই বনে কোন পর্যটক আর পা রাখেনি। স্থানীয় মাদ্রাসা ওই জলার বনের মাছ ভোগ করে বলে এখানে পর্যটক আসুক তা চায় না। অশ্লীলতার দোহাই দিয়ে যুগীরকান্দি বন বা মায়াবন সবার দৃষ্টির আড়ালে নিয়ে যাওয়া হয়। উতমাছড়ার পাথর লুটে ওই মাদ্রাসার সম্পৃক্ততা রয়েছে কিনা তা জানা প্রয়োজন।'
কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) উজায়ের আল মাহমুদ বলেন, ‘উৎমাছড়ায় বেড়াতে যাওয়া জন্য নির্দিষ্ট কিংবা উপযুক্ত রাস্তা নেই। এ জন্য পর্যটকেরা স্থানীয় বাসিন্দাদের বাড়িঘর মাড়িয়ে যাতায়াত করেন। এতে তারা অসুবিধায় পড়েন। বৈঠকে এমন দাবি করা হয়েছে। এ ছাড়া ওই এলাকায় মাদক সেবন ও অশ্লীলতা হয়, এমনটিও দাবি করা হয়েছে’।
উৎমাছড়ায় পর্যটকদের বাধা দেওয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সিলেটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ বলেন, ‘এ অঞ্চলে এমন ঘটনা আগে কখনোই ঘটেনি। বিষয়টি ইউএনওকে তদন্ত করতে বলা হয়েছে। তিনি তদন্ত করে দেখছেন। ইউএনও জানার চেষ্টা করছেন, বিষয়টি কী?’
এদিকে, সিলেটের সবচেয়ে জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র গোয়াইনঘাট উপজেলার জাফলংয়ে পর্যটকদের উপর হামলা চালিয়েছে স্থানীয় কিছু লোক। হামলাকারীরা চোরাকারবারের সাথে সম্পৃক্ত বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে। সোমবার বিকেলে জাফলং বিজিবি ক্যাম্প সংলগ্ন এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
এ বিষয়ে গোয়াইনঘাট থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. কবির হোসেন বলেন, স্থানীয় বখাটেরা পর্যটকদের ওপর হামলা করেছে। পরে সাংবাদিক ও ইউপি সদস্য মিলে ঘটনাস্থলেই বিষয়টি মীমাংসা করে দিয়েছেন। এ ব্যাপারে গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রতন কুমার অধিকারী বলেন, ‘তুচ্ছ বিষয় নিয়ে পর্যটকদের সঙ্গে ভুল–বোঝাবুঝি হয়েছিল। বিষয়টি সঙ্গে সঙ্গেই সমাধান হয়ে গেছে। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় অনেকের ভুল ধারণা হয়েছে।’
টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ের সামরিক অস্ত্র ১১ টি অবিস্ফোরিত মর্টার শেল উদ্ধারের পর বিস্ফোরিত করানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১২ জুন) সকাল ১০ টা থেকে দুপুর ১ টা পর্যন্ত তিনঘণ্টা উপজেলার পার্শ্ববর্তী নলিন এলাকায় যমুনা নদীতে মর্টার শেলগুলো বিস্ফোরিত করে সেনাবাহিনীর একটি টিম।
এসময় উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. তারিকুল ইসলাম, ভূঞাপুর থানা অফিসরা ইনচার্জ (ওসি) একেএম রেজাউল করিম ও সেনাবাহিনীর সদস্যসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।
ওসি একেএম রেজাউল করিম জানান, বুধবার রাতে উপজেলার পাটিতাপাড়া এলাকার যমুনা নদীর তীর থেকে অবিস্ফোরিত ১১ টা মর্টার শেল উদ্ধার করে সেনাক্যাম্পে প্রেরণ করা হয়েছিল। পরে সেগুলো আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১০ টা থেকে বেলা ১ টা পর্যন্ত নলিন এলাকার যমুনা নদীতে বিস্ফোরিত করা হয়েছে।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. তারিকুল ইসলাম জানান, ১১ টি মর্টার শেল বিস্ফোরিত করা হয়েছে।
গত বুধবার ১১ জুন সন্ধ্যায় উপজেলার নিকরাইল ইউনিয়নের পাটিতাপাড়ার শাহাদত নামে এক ব্যক্তি যমুনা নদীতে পাড়ে মাছ ধরতে গিয়ে মর্টার শেলগুলো দেখতে পান। হঠাৎ এসব বস্তু দেখে তিনি আতঙ্কিত হয়ে পড়েন।
এরপর আশপাশের লোকজনকে বিষয়টি জানালে মর্টার শেলগুলো এক নজর দেখতে এলাকাবাসী ঘটনাস্থলে ভিড় জমায় এবং পুলিশকে খবর দেয়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে মর্টার শেলগুলো উদ্ধার করে।
এলাকাবাসীর ধারণা, ১৯৭১ সালে পাটিতাপাড়া ও মাটিকাটা যমুনা নদীর তীরে পাকস্তানি বাহিনীর একটি যুদ্ধ জাহাজ ধ্বংস হয়েছিল। উদ্ধারকৃত মর্টার শেলগুলো মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ের সামরিক অস্ত্র। যমুনা নদী পাড়ে মরিচা ধরা অবস্থায় মর্টার শেলগুলো একত্রে পড়ে ছিল। কিছু শেলের গায়ে জং ধরে গেছে।
নাফ নদীর ভাঙন যেন থামছেই না। টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের জালিয়া পাড়ায় প্রতিদিনই নদীর গর্ভে বিলীন হচ্ছে ঘরবাড়ি, ভেঙে যাচ্ছে স্বপ্ন। কিছুদিন আগেও যেখানে ছিল ঈদের প্রস্তুতি, হাসি-আনন্দে মুখর পরিবার—আজ সেখানে কান্না আর হাহাকার। প্রবল জোয়ার ও টানা বৃষ্টির তোড়ে শত শত পরিবার এখন আশ্রয়হীন, চরম মানবিক বিপর্যয়ের মুখে। বসতভিটা হারিয়ে কেউ খোলা আকাশের নিচে, কেউ গাছতলায় কিংবা নদীর পাড়েই মাথা গোঁজার ঠাঁই খুঁজছে।
‘নাফের পানি ও তুফানে আমার ঘরবাড়ি ভেসে গেছে। ঈদের দিনেও কোরবানি দিতে পারিনি, ছেলেমেয়েদের নতুন জামা কিনতে পারিনি। এর চেয়ে বড় কষ্ট কিছু হতে পারে না।’-বলেন ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দা আবুল আলী। আলোকিত শহরের ঈদ আনন্দের বিপরীতে এই দ্বীপে নেই রান্নার হাঁড়ি, নেই নতুন জামার ঝলক, শুধু অসহায়ত্ব আর কান্নার সুর।
ভাঙনের মধ্যে দাঁড়িয়ে এক বৃদ্ধের আহাজারি
বৃদ্ধ আবুল আলী, কাঁপা গলায় হাতের ইশারায় দেখালেন যে জায়গাটিতে দাঁড়িয়ে আছেন, সেখানেই ছিল তার ছোট্ট ঘর। নাফের পানি একরাতে সব ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। তিনি বলেন, ঘর, চুলা, শোবার জায়গা, কিছুই নাই আর। কতবার ঘর তুলুম? আমাদের দেখার কেউ নাই। বারবার আশার বাণী শুনিয়েছেন প্রশাসন। কেউ আজো কিছু দেয়নি। তবে কিছু করবে এমন আশায় আছি।’
ঈদের রান্নাও থেমে গেছে
বৃদ্ধা চলেমা খাতুন বলেন, ‘নাফের পানি চুলোতে ঢুকে ভেঙ্গে গেছে। এখনো রান্না করতে পারি না। ঈদের দিনেও ছেলে-মেয়েদের মুখে ভাত দিতে পারি নাই। নতুন কাপড় তো দূরের কথা। কোরবানিও করা সম্ভব হয় নাই। সাহায্য আসলেও তা আমরা পাই না।’
শুধু আবুল আলী বা চলেমা খাতুনই নন, এমন গল্প আজ জালিয়াপাড়ার শত শত পরিবারের। ঈদের সময় যখন দেশের অন্যপ্রান্তে আনন্দে মুখর প্রতিটি বাড়ি, তখন এই দ্বীপে ঈদ মানে কষ্ট, ভাঙা ঘর, খালি পেট, আর ভেজা চোখ।
আশ্বাস, প্রতিশ্রুতি—কিন্তু কার্যকর পদক্ষেপ নেই
ক্ষতিগ্রস্তরা জানান, বহুবার প্রশাসনের লোকজন এসেছেন, ছবি তুলেছেন, কথা দিয়েছেন। কিন্তু বাস্তবে কোনো সহায়তা তারা পাননি। ক্ষোভ প্রকাশ করে তারা বলেন,
‘কেবল ছবি তুললে আর রিপোর্ট করলেই কি ঘর ফিরে পাই? আমরা তো বাস্তব সাহায্য চাই।’ এক দশকের বেশি সময় ধরে চলছে নদীভাঙনের আতঙ্ক। শাহপরীর দ্বীপে নাফ নদীর ভাঙন নতুন নয়। ২০১২ সালের ভয়াবহ সামুদ্রিক জোয়ারে এই দ্বীপের চারটি পাড়ার অনেক ঘরবাড়ি, মসজিদ, দোকান সাগরে বিলীন হয়ে যায়। নোনা পানি নষ্ট করে দেয় কৃষিজমি, নিশ্চিহ্ন হয় গ্রাম, গৃহহীন হয়ে পড়ে হাজারো মানুষ। কিন্তু এত বড় অভিজ্ঞতার পরও দীর্ঘমেয়াদি কোনো প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
২০২৫ সালের এই ঈদুল আজহার সময়, ইতিহাস যেন আবার নিজের পুনরাবৃত্তি ঘটাচ্ছে—আর এই পুনরাবৃত্তি শুধু কষ্টের, শুধু কান্নার। ধ্বংসের চিত্র এখনো স্পষ্ট জালিয়াপাড়ার বিভিন্ন স্থানে এখনো পড়ে আছে ভাঙা কাঠামো, উপড়ে যাওয়া গাছের শিকড়, পানির নিচে তলিয়ে যাওয়া ঘরের চিহ্ন। পথচারীদের চোখে-মুখে শোক, মুখে একটাই প্রশ্ন—‘এই ভাঙন কি আর থামবে না?’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ এহসান উদ্দিন জানান, শাহপরীর দ্বীপের জালিয়া পাড়ায় যেসব বাংলাদেশি নাফ নদীর ভাঙনে বাস্তুচ্যুত হচ্ছে তাদের তালিকা করে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে।
নওগাঁর মহাদেবপুরে জমি-জমা সংক্রান্ত বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষের উপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় মামলা করায় বাদী ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় আতঙ্কে দিন কাটছে বাদী ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের।
মামলার এজাহারে ও ভুক্তভোগী পরিবার সূত্রে জানা যায়, উপজেলার বারবাকপুর গ্রামের বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক আব্দুল মান্নান ও তার ভাতিজা শাহজাহান আলীর সাথে একই গ্রামের আজাহার আলী, তার ভাই ওবায়দুল হক, ওয়াহেদ আলী ও শামসুল আলমের জমি নিয়ে বিরোধ রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আদালতে মামলা চলমান রয়েছে। পূর্ব শত্রুতার জেরে আলী ও তার ছেলে সোহেল রানা এবং তাদের লোকজন গত রোববার বারবাকপুর জামে মজসিদে আসরের নামাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে আব্দুল মান্নানের উপর হামলা চালায়। এ সময় তাকে বাঁচাতে এগিয়ে আসলে আব্দুল মান্নানের ভাতিজা শাহজাহান আলীসহ পরিবারের আরও চারজনকে লাঠি দিয়ে এলোপাতাড়ি মারপিট ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে জখম করে। এ ঘটনায় শাহজাহান আলী বাদী হয়ে পরদিন সোমবার থানায় মামলা করেন। এ ঘটনায় পুলিশ একজনকে গ্রেপ্তার করলেও অন্য আসামিদের গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। এদিকে আসামি ও তাদের লোকজন মামলা তুলে নিতে প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে বলে ভুক্তভোগী ও তার পরিবারের সদস্যদের দাবি।
মামলার বাদী শাহজাহান আলী বলেন, আজহার আলী তার ছেলে ও ভাই ভাতিজারা দীর্ঘদিন ধরে অন্যায়ভাবে আমাদের জমি দখলের চেষ্টা করে আসছে। বিষয়টি নিয়ে আগে একাধিকবার বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে আমাদের প্রতিপক্ষ তাদের স্বপক্ষে কোন কাগজপত্র দেখাতে না পারায় আমাদের পক্ষে আইনজীবীরা লিখিতভাবে তাদের মতামত জানান। যেসব জমি তারা দাবি করে আসছে সেগুলোর সিএস, আরএস জরিপে আমাদের নামে রেকর্ডভুক্ত। তারপরেও অন্যায়ভাবে তারা আমাদের জমি দখলের চেষ্টা করে আসছে। আমাদের একটি পুকুর লিজ দেওয়া আছে। গত ২৩ এপ্রিল প্রতিপক্ষের লোকজন ওই পুকুর থেকে জোরপূূর্বক মাছ লুট করে এবং পুকুরে থাকা জাল পুড়িয়ে দেয়। এ ঘটনায় আদালতে মামলা করেন মাছচাষী। মামলার পর তারা আরো ক্ষিপ্ত হয়ে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। এরই জেরে গত রোববার আবারো হামলা চালায় তারা। এ ঘটনায় মামলার পরেও আসামিরা ঘুরে বেড়াচ্ছে। এমনকি মামলা তুলে নিতে হুমকি দিচ্ছে। তিনি আরো বলেন, তারা প্রায় সবাই মাদকাসক্ত। তারা সন্ত্রাসী কায়দায় আমাকে, আমার স্ত্রী ও সন্তানকে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা করে। আরো বড় ধরনের ক্ষতি হতে পারে এমন আশঙ্কায় দিন কাটছে তাদের।
মামলায় অভিযুক্ত আজহার আলী বলেন, আমার বাবার ভাগের সম্পত্তি আমার চাচা ও ভাতিজারা জোর করে খাচ্ছে। এ বিষয়ে আদালতে একটি বাটোয়ারা মামলা চলছে। এছাড়া আমাদের ভোগদখলীয় সম্পত্তিও তারা বিভিন্ন সময় দখলের চেষ্টা করছে। তারা আমাদের উপর মিথ্যা মামলা দিয়েছে।
মহাদেবপুর থানার ওসি শাহীন রেজা বলেন, মারধরের ঘটনায় করা মামলার এক নম্বর আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্য আসামিরা পলাতক থাকলেও তাদেরকে ধরার চেষ্টা চলছে। মামলা তুলে নিতে হুমকির বিষয়ে তিনি বলেন, এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোন লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অভিযোগ পেলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পাবনার ঈশ্বরদীতে কাভার্ড ভ্যানের ধাক্কায় মোটরসাইকেল আরোহী মা মেয়েসহ তিনজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও একজন।
ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আহতদের ভর্তি করা হয়।
বুধবার (১১ জুন) সকাল ৭টায় ঈশ্বরদী উপজেলার ছলিমপুর ইউনিয়নের মুন্নার মোড় এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন নাটোর সদর উপজেলার অবসরপ্রাপ্ত বিজিবি সদস্য মফিজুল ইসলামের স্ত্রী সুর্বনা খাতুন, মেয়ে পূর্ণতা এবং ঈশ্বরদীর ছলিমপুর ইউনিয়নের মুন্নার মোড় এলাকার মৃত আবেদ আলী মন্ডলের ছেলে আনিছুর রহমান।
পাকশী হাইওয়ে থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোশফিকুর রহমান জানান, অবসরপ্রাপ্ত বিজিবি সদস্য মফিজুল ইসলাম পরিবারসহ কুষ্টিয়ায় শ্বশুরবাড়ি থেকে নিজ বাড়ি নাটোরে ফিরছিলেন। পথে ঈশ্বরদীর মুন্নার মোড়ে সড়কের পাশে লিচু কিনতে মোটরসাইকেল থামান। এসময় পিছন থেকে আসা একটি কাভার্ড ভ্যান মফিজুল ইসলাম, তার স্ত্রী, মেয়ে এবং এক লিচু বিক্রেতাকে ধাক্কা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই মা-মেয়ে ও আনিছুর রহমানের মৃত্যু হয়।
খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে গিয়ে আহত মফিজুল ইসলামকে উদ্ধার করে ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে।
তবে দুর্ঘটনার পর ঘাতক কাভার্ড ভ্যানটি পালিয়ে যাওয়ায় আটক করা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছেন হাইওয়ে পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোশফিকুর রহমান।
আন্তঃনগর ট্রেনের যাত্রাবিরতির দাবিতে রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার নন্দনগাছী রেলস্টেশনে তিন ঘণ্টা রেলপথ অবরোধ করেছিলেন স্থানীয়রা। বুধবার (১১ জুন) সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত এই অবরোধ করেন তারা। এতে রাজশাহী থেকে ছেড়ে যাওয়া বিভিন্ন স্থানের ট্রেন আটকা পড়ে। বুধবার সকাল ৬টা থেকে অবরোধ শুরু করে স্থানীয়রা। স্টেশনের দুই পাশে লাল নিশান দিয়ে ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেয়। এরপর তারা সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। আন্দোলনকারীরা স্টেশন সংস্কার ও আন্তঃনগর ট্রেন থামানোর দাবি-সম্পর্কিত বিভিন্ন ব্যানার ও ফেস্টুন তুলে ধরেন। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিলেও তিন ঘণ্টা পর তা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।
অবরোধের ফলে রাজশাহী থেকে সারাদেশের সঙ্গে তিন ঘণ্টা ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ঈদের ছুটি শেষে ঢাকাসহ বিভিন্ন গন্তব্যে ফেরা মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। ট্রেনগুলোর শিডিউল বিপর্যয় হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন কর্মকর্তারা।
এদিন সকালে রাজশাহী থেকে খুলনার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়া সাগরদাঁড়ি ট্রেন সবার প্রথমে আটকা পড়েন। এরপর ঢাকাগামী মধুমতি ও চিলাহাটিগামী তিতুমীর এক্সপ্রেস আরেকটি স্টেশনে রাখা হয়। বনলতা ও সিল্কসিটি এক্সপ্রেস রাজশাহী স্টেশনে থেকে যায়। আন্দোলন প্রত্যাহার করা হলে ট্রেনগুলো ছেড়ে যায়।
তাদের দাবি, নন্দনগাছি স্টেশনে সিল্কসিটি এক্সপ্রেস, সাগরদাঁড়ি এক্সপ্রেস, বরেন্দ্র এক্সপ্রেস ও ঢালারচর এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রাবিরতি দিতে হবে এবং স্টেশন সংস্কার করতে হবে। এই দাবি না মানা হলে আবারও ২০ তারিখ রেলপথ অবরোধের হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।
জানা যায়, ১৯২৯ সালে উপজেলার নন্দনগাছী স্টেশনটি স্থাপিত হয়। শতবর্ষী স্টেশনটির কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায় ২০১৫ সালের শেষের দিকে। বন্ধের আগে ১২ জন জনবল থাকলেও বর্তমানে শুধু পোর্টারম্যান পদে একজন কর্মরত আছেন। এখানে দুটি লোকাল ট্রেন থামে। প্রায় ২০ বছর ধরে বন্ধ এই স্টেশনের কোনো কার্যক্রম নেই। পুরো স্টেশনের প্লাটফর্মে ছাউনি আছে। স্টপেজ না থাকলেও অনেক সময় ক্রসিং এর জন্য দাঁড়ায় ট্রেন।
পশ্চিম রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক আহম্মদ হোসেন মাসুম বলেন, নন্দনগাছি রেলওয়ে স্টেশনে স্থানীয় দীর্ঘদিন থেকে আন্দোলন করছে। এর আগেও তারা অবরোধ করেছিলেন। তখন বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছিল। তারা ঈদের এই সময় অবরোধ করে যাত্রীদের ভোগান্তিতে ফেলে দিয়েছে।
তিনি বলেন, তাদের কাছে গিয়ে দাবি-দাওয়া শোনা হয়েছে। তারা তিন ঘণ্টা পর অবরোধ তুলে নেয়। এরপর ট্রেনগুলো চলতে শুরু করে। এতে ঢাকাগামী তিনটি ট্রেনই শিডিউল বিপর্যয় হওয়ার আশঙ্কা আছে।
এর আগে একই দাবিতে গেল ১ মে আন্তঃনগর ট্রেন থামিয়ে বিক্ষোভ করেছে হাজারো মানুষ। এ সময় রাজশাহী ও চিলাহাটির মধ্যে চলাচল করা বরেন্দ্র এক্সপ্রেস ও লোকাল মেল ট্রেন থামিয়ে বিক্ষোভ করা হয়।
নেত্রকোণা জেলার পূর্বধলা উপজেলার বিশকাকুনী ইউনিয়নের জালশুকা স্টেশন বাজারসংলগ্ন এলাকায় রবিদাস সম্প্রদায়ের পাঁচটি পরিবারের ওপর হামলা ও ঘরবাড়ি ভেঙে দেয়ার অভিযোগের ভিত্তিতে জেলা প্রশাসক ও বিজ্ঞ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বনানী বিশ্বাসের নির্দেশে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন নেত্রকোণা জেলার বিজ্ঞ অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সুখময় সরকার।
বুধবার সকালে ঘটনাস্থলে যান অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সুখময় সরকার।
এসময় তিনি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলেন এবং ঘটনার বিস্তারিত শুনেন। এছাড়াও সহকারী কমিশনার(ভূমি) নাজনীন আখতার, পূর্বধলা থানার অফিসার ইন চার্জ (তদন্ত) মিন্টু দে ও অন্যান্য গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সাথে মত বিনিময় করেন এবং ক্ষতিগ্রস্তদের সার্বিক সহায়তা ও সুষ্ঠু বিচারের ব্যাপারে আশ্বস্ত করেন।
স্থানীয় এলাকাবাসী ও প্রশাসনের সূত্রে জানা গেছে, নেত্রকোণার পূর্বধলায় পাঁচটি হরিজন পরিবারের ওপর হামলা ও ঘরবাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ প্রভাবশালী চক্রের বিরুদ্ধে। কয়েক দিন ধরে এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে মঙ্গলবার উপজেলা প্রশাসনের প্রতিনিধি, পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
জানা গেছে, নেত্রকোণার পূর্বধলা উপজেলার বিশকাকুনি ইউনিয়নের জালশুকা বাজার সংলগ্ন রেললাইনের পাশের একটি খাসজমিতে বংশপরম্পরায় বসবাস করছে কয়েকটি হরিজন পরিবার। কিছু দিন ধরে পূর্বধলা উপজেলার ধারা গ্রামের জানু মিয়ার ছেলে সিরাজ মিয়া জমিটি তাঁর ব্যক্তিমালিকানাধীন বলে দাবি করেন এবং পরিবারগুলোকে জমি ছেড়ে দেওয়ার জন্য বলেন। এ ঘটনায় হরিজন পল্লির বাসিন্দা সুনীল রবিদাস সম্প্রতি নেত্রকোণা জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। এতে সিরাজ ক্ষিপ্ত হয়ে প্রথমে শুক্রবার সুনীল রবিদাসের বাড়িতে হামলা ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের মারধর করেন। এরপর গত রোববার পুনরায় হামলা চালিয়ে তিনটি ঘর ভাঙচুর করেন। মঙ্গলবার দুপুরে ফের কিছু গ্রামবাসীকে সঙ্গে নিয়ে হামলা চালায় এবং অবশিষ্ট দুইটি ঘর ভাঙচুরসহ পরিবারগুলোর সদস্যদের মারধর করে বের করে দেওয়া হয়। ফলে পাঁচটি পরিবারের ২২ জন সদস্য আশ্রয়হীন হয়ে বসত ভিটায় খোলা আকাশের নিচে রাতদিন কাটায়।
অভিযুক্ত সিরাজ মিয়ার সঙ্গে চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি। পালিয়ে আত্মগোপনে আছেন।
পূর্বধলা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মিন্টু দে জানান, আজ বুধবার সকালের দিকে নেত্রকোণা জেলা অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সুখময় সরকার ও সহকারী কমিশনার ভূমি নাজনীন আখতার সহ স্থানীয় গণ্যমান্য লোকজনদের নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। ঘরবাড়িগুলো ভেঙে দেওয়ার অভিযোগ সত্যতা নিশ্চিত করেন। এ ব্যাপারে ভুক্তভোগী অনিল রবিদাস বাদী হয়ে থানায় মামলা করেছেন। আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
পূর্বধলা উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) নাজনীন আখতার জানান, খবরটি শুনতে পেয়ে বিশকাকুনি ইউনিয়নের তহশিলদারকে ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়েছিল। তিনি জানিয়েছেন, এই জমিটি ব্যক্তিমালিকানাধীন নয়, খাস খতিয়ানভুক্ত।
আজ বুধবার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সুখময় সরকারের সাথে সরেজমিনে পরিদর্শন করা হয়েছে।
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সুখময় সরকার জানান, জেলা প্রশাসক বনানী বিশ্বাস এর পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত ৫টি পরিবারের ২২জন সদস্যের মাঝে খাদ্য সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। এছাড়াও জেলা প্রশাসক ও বিজ্ঞ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বনানী বিশ্বাস অতিদ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত ৫টি পরিবারকে ১০বান্ডিল টিন এবং প্রতি পরিবারকে ১০হাজার টাকা করে অর্থসহায়তা প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
তিনি আরও আশ্বস্ত করেছেন দোষীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্ত মূলক বিচারের ব্যবস্থা করা হবে।
ঢাকা-রাজশাহী রুটে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে।
রেলপথ মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আজ জানানো হয়, রাজশাহীর চারঘাটের কাছে ‘নন্দনগাছি’ স্টেশনে আন্ত:নগর ট্রেনের যাত্রাবিরতির দাবিতে করা রেলপথ অবরোধ প্রত্যাহার করা হয়েছে। ফলে ঢাকা-রাজশাহী রুটে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে।
রাজবাড়ীর কালুখালী উপজেলার চন্দনা নদী থেকে মো. আসলাম প্রামানিক (৪২) নামে এক ইজিবাইক চালকের মরদেহ উদ্ধার করেছে কালুখালী থানা পুলিশ।
বুধবার (১১ জুন) সকাল ৭টার দিকে উপজেলার রতনদিয়া ইউনিয়নের চন্দনা ব্রিজের নিচ থেকে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়।
নিহত আসলাম শেখ পাংশা উপজেলার চরলক্ষ্মীপুর গ্রামের বাসিন্দা এবং পিয়ার আলী প্রামানিকের ছেলে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আসলাম শেখ গত মঙ্গলবার ইজিবাইক নিয়ে বাড়ি থেকে বের হন। রাত পর্যন্ত তিনি আর বাড়িতে ফেরেননি। বুধবার সকালে স্থানীয়রা চন্দনা ব্রিজের নিচে একটি মরদেহ দেখতে পান। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে। পরবর্তীতে মরদেহটি আসলাম শেখের বলে শনাক্ত করেন।
এ বিষয়ে রাজবাড়ীর সহকারী পুলিশ সুপার (পাংশা সার্কেল) দেবব্রত সরকার জানান, “প্রথমে অজ্ঞাতপরিচয় হিসেবে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। পরে পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। প্রাথমিকভাবে আমরা ধারণা করছি, ইজিবাইক ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে আসলাম শেখকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে। মরদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে।”
পুলিশ হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছে এবং প্রকৃত ঘটনা উদঘাটনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।