নাজমুল হাসান, নাটোর
দ্রুত বেড়ে ওঠাসহ মাছ উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ইন পন্ড রেসওয়ে সিস্টেম (আইপিআরএস) প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে নাটোরের একটি মৎস্য খামারে। অত্যাধুনিক এই প্রযুক্তির ব্যবহার নাটোরে মাছ উৎপাদনে নতুন সম্ভাবনা দেখাচ্ছে। এই পদ্ধতিতে একটি পুকুরে একাধিক চেম্বার করে মাছ চাষ করা যায়। এতে উৎপাদন খরচে সাশ্রয়সহ অল্প জায়গার পুকুর থেকে বেশি মাছ উৎপাদন করা সম্ভব।
আইপিআরএস প্রযুক্তি ব্যবহার করে দেশে প্রথম কোনো মাছের খামার স্থাপন করা হয় চাঁপাইনবাবগঞ্জে। এরপরই নাটোর শহরতলির জাঠিয়ান ভবানীপুর এলাকায় হোসেন অ্যান্ড অ্যাগ্রোর প্রায় ১৪ বিঘা আয়তনের একটি পুকুরে এই পদ্ধতির প্রয়োগ শুরু হয়েছে। আমেরিকার আইওয়া সয়াবিন নামের একটি প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায় এই খামারে উৎপাদিত মাছ বিদেশে রপ্তানির প্রক্রিয়াও চলছে। অল্প জায়গায় বেশি মাছ উৎপাদন সম্ভব বলে আইপিআরএস পদ্ধতিতে মাছ চাষে আগ্রহও বাড়ছে চাষিদের মধ্যে।
আইপিআরএস পদ্ধতির মাৎস্য চাষি হোসেন অ্যান্ড অ্যাগ্রোর স্বত্বাধিকারী সারোয়ার হোসেন ইমন জানান, এই প্রযুক্তিতে খাবার সরবরাহ ও সুষ্ঠুভাবে পরিচর্যা হওয়ায় মাছ দ্রুত বেড়ে ওঠে। রোগ-বালাইও তেমন হয় না। সব ধরনের মাছ চাষ করা গেলেও তিনি আপাতত রুই ও গ্লাসকার্প মাছ চাষ করছেন তার পুকুরে। ১৪ বিঘা জমি প্রস্তুত ও যন্ত্রপাতি বসানোর কাজে তার এ পর্যন্ত খরচ হয়েছে ৭০ লাখ টাকা। এক বছরের মধ্যেই এই টাকা তিনি আয় করতে পারবেন বলে আশা করছেন।
ইমন বলেন, ‘কয়েক দফা চীন গিয়ে আইপিআরএস প্রযুক্তি দেখে উদ্বুদ্ধ হই। এরপর নিজেই মৎস্য খামার তৈরি করে এই প্রযুক্তি প্রয়োগ করেছি। গত বছরের শেষের দিকে চীন থেকে আইপিআরএস প্রযুক্তি নিয়ে এসেছি আমি। চীনের প্রযুক্তিবিদ ও প্রকৌশলীরা সব যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম স্থাপন করে দিয়ে গেছেন আমার খামারে।’
ইমন বলছেন, আইপিআরএস প্রযুক্তিতে মাছ চাষ করার ফলে কম জায়গাতেই বেশি মাছ চাষ করতে পারছেন। এই পদ্ধতিতে মাছ চাষ করতে ফসলি জমি নষ্ট করে হাজার হাজার পুকুর তৈরির প্রয়োজন হয় না। তা ছাড়া এ প্রযুক্তিতে উৎপাদিত মাছের স্বাদ নদীর মাছের মতোই। মাছ চাষে তাই এই প্রযুক্তি প্রয়োগ করে বিপ্লব ঘটাতে চান ইমন।
মাছের খামারের মার্কেটিং কর্মকতা আবু সাদাত সালাউদ্দিন বলেন, খামার এলাকায় সিসি ক্যামেরা স্থাপন করায় বাড়িতে বসে মাছ চাষ পর্যবেক্ষণ করা যায়। প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে চাষিরা এই খামার দেখতে আসছেন। অনেকেই উদ্বুদ্ধ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন।
আইপিআরএস পদ্ধতির ব্যাখ্যা দিয়ে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্য বিজ্ঞান অনুষদের অধ্যাপক মাহফুজুল হক বলেন, আইপিআরএস পদ্ধতিতে একটি পুকুরে একাধিক চেম্বার তৈরি করে নদীর মতো কৃত্রিম স্রোত করা হয়। প্রতিটি চেম্বারে মাছের ঘনত্ব বেশি থাকে এবং স্রোতের কারণে মাছ দ্রুত বেড়ে ওঠে। এ ছাড়া পাম্পের মাধ্যমে বর্জ্য উঠিয়ে ফেলা হয়। ফলে সাধারণ পদ্ধতিতে যে পরিমাণ মাছ উৎপাদন হয়, এই পদ্ধতিতে তার চেয়ে ১০ থেকে ১২ গুণ বেশি মাছ উৎপাদন করা সম্ভব হয়। এতে উৎপাদন খরচও কমে যায়। তিন থেকে চার মাসের মধ্যে একেকটি চেম্বারে ২২ থেকে ৩২ টন মাছ উৎপাদিত হয়।
মাছবিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ওয়ার্ল্ডফিশের গবেষক কানিজ ফাতেমা জানান, নিরাপদ মাছ উৎপাদনে আইপিআরএস পদ্ধতির মাছ চাষ জনপ্রিয় হয়ে উঠবে বলে আশা করা যায়। এই পদ্ধতিতে একটি মাছের ওজন প্রতিদিন প্রায় আড়াই শ গ্রাম বৃদ্ধি পায়। খাদ্য গ্রহণের পর নির্গত মাছের বিষ্ঠা ফুল ও ফল গাছে জৈবসার হিসেবে ব্যবহার করা যায়। পানি দূষিত কম হয়। পাঁচ বছরেও পুকুরের পানি পরিবর্তন করতে হয় না।
প্রায় প্রতিদিনই নতুন আইপিআরএস প্রযুক্তি মাছ চাষের প্রক্রিয়া সম্পর্কে ধারণা নিতে দূর-দূরান্ত থেকে নাটোরে আসছেন চাষিরা। ময়মনসিংহ থেকে আসা মাছ চাষি মাহবুব পলাশ জানান, তিনি এই পদ্ধতিতে মাছ চাষ দেখে খুবই অনুপ্রাণিত হয়েছেন। তিনি এভাবে মাছ চাষ করতে চান।
নাটোরের জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ বলেন, দেশের মাছ চাষিদের মাঝে এই আধুনিক ও উন্নত প্রযুক্তি ছড়িয়ে দিতে পারলে অল্প খরচে গুণগতমানসম্পন্ন বেশি পরিমাণ মাছ উৎপাদন হবে। এর মাধ্যমে দেশের চাহিদা মিটিয়ে মাছ বিদেশেও রপ্তানি করা সম্ভব হবে।
আইপিআরএস পদ্ধতিতে মাছ চাষে ইমনের প্রকল্পটি দেখতে এসেছিলেন রাজশাহী-২ আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা। তিনি বলেন, ‘আমি খুবই আপ্লুত হয়েছি আইপিআরএস পদ্ধতি দেখে। তবে এই পদ্ধতিতে মাছ চাষে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সংযোগ থাকতে হয়। তাই কৃষি খাতের মতো এই খাতেও বিদ্যুৎ খরচ কমানো দরকার। বিষয়টি আমি সংসদে উপস্থাপন করব।’
কৃষকের অন্যতম জনপ্রিয় খেলা হচ্ছে ষাড়ের মই দৌড় প্রতিযোগিতা। কিন্তু নানা কারণে এ খেলাটি দিন দিন হারিয়ে যেতে বসেছে। তবে শুকনো মৌসুমে শেরপুর জেলার বিভিন্ন স্থানে আয়োজন করা হয়ে থাকে এ খেলা। শেরপুর সদরের চরশেরপুর নাগপাড়ায় মই দৌড় খেলার আনন্দে মেতে উঠে কৃষক সহ সাধারণ মানুষ।
শেরপুর জেলার কৃষকদের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা হচ্ছে ষাড়ের মই দৌড় খেলা। শুকনো মৌসুমে মাঝে মাঝেই জেলার বিভিন্ন স্থানে আয়োজন করা হয় ষাড়ের মই দৌড় প্রতিযোগিতা। যেখানেই আয়োজন করা হয় এ মই দৌড় খেলা, সেখানেই হাজির হয় হাজার হাজার বয়স্ক, যুবক শিশু-কিশোরসহ সর্বস্তরের মানুষ।
গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী এ খেলাকে অনেকেই এখনো দেখেই নি। নতুন করে এ খেলা দেখে তারা খুব আনন্দ পেয়ে থাকে। যে এলাকায়ই ষাড়ের মই দৌড় খেলা অনুষ্ঠিত হয় সেখানেই উৎসবের আমেজ বয়ে যায়। ১৯ জানুয়ারি এমনই এক খেলার আয়োজন করে উৎসবে মেতে উঠে শেরপুর সদরের চরশেরপুর নাগপাড়া এলাকার মানুষ।
একটি মইয়ে ৪টি ষাড় গরু থাকে। আর এরকম দুটি করে মই দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। অনেক সময় নির্ধারিত দাগের বাইরে চলে যায় ষাড়ের মই। এতে আউট ধরা হয় ওই মইকে। এখানে থাকে দুজন মইয়াল। আরো থাকে ৩ জন ধরাল। রেফারীরর বাশিঁ ফুকানোর সঙ্গে সঙ্গেই মইগুলোর ষাড়েরা দৌড়ানো শুরু করে। যে মই বিজয়ী হয় তখন তারা মেতে ওঠে আনন্দে। আর চারদিকে দাঁড়িয়ে থাকা হাজার হাজার নারী, পুরুষ, শিশুর উল্লাস ধ্বনিতে মূখরিত হয়ে ওঠে পুরো এলাকা। এ খেলা দেখাতে পেরে ময়ালরাও অনেক খুশি।
গ্রামবাংলার ষাড়ের দৌড় খেলা হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে এবং নতুন প্রজন্মকে জানান দিতে নাগপাড়ায় প্রথমবারের মতে এ খেলার আয়োজন করা হয়। স্থানীয়দের আগ্রহের কারণে পরবর্তীতেও আয়োজন করা হবে ঐতিহ্যবাহী ষাড়ের মই দৌড় প্রতিযোগিতা। এমনটাই জানালেন আয়োজকরা।
বিভিন্ন স্থান থেকে ৮টি মই দৌড় দল এ খেলায় অংশ গ্রহণ করে। এতে জামালপুর জেলা ইসলামপুরের চন্দনপুরের হাবু বেপারি চ্যাম্পিয়ন হয়।
খেলাশেষে বিজয়ী ও বিজিতদের মাঝে পুরষ্কার বিতরণ করবে ইউনিয়ন জামায়াতে ইসলামীর সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী। সফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ অনুষ্ঠানে জেলা বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য সচিব সোহানুর রহমান সাইম, শিক্ষক আসমত আলীসহ আরো অনেকে।
আয়োজক আসমত আলী বলেন, ‘এ খেলার প্রতি কৃষক শ্রমিক মেহনতি মানুষের আগ্রহ আছে, তাই আমরা প্রতিবছর এ খেলার আয়োজন করব।’
প্রযুক্তির অপব্যবহারে শ্যামনগরের যুবসমাজ আজ অনলাইন জুয়ার ভয়াল ফাঁদে বন্দি। ঘরে বসেই মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সহজেই জড়িয়ে পড়ছে এই নিষিদ্ধ খেলায়। দিন দিন বেড়েই চলেছে আসক্তির মাত্রা। নষ্ট হচ্ছে সময়, টাকা আর সম্পর্ক।
জানা গেছে, অনলাইন জুয়া এখন শুধুই তাস বা ক্যাসিনো নয়। পরিবর্তনশীল গেমের ধরনে যুক্ত হয়েছে ক্রিকেট, ফুটবল বেটিং, তিন পাত্তি, রামি, রঙের খেলা, এভিয়েটর গেম এমনকি জনপ্রিয় লুডুও। এসব গেমে প্রতিদিন বাজি ধরছে হাজার হাজার টাকা। জেতার আনন্দে শুরু হলেও এক সময় তা ভয়াবহ আসক্তিতে পরিণত হয়, যার শেষ পরিণতি প্রায়শই ঋণ, মানসিক বিপর্যয় ও সামাজিক ভাঙন।
স্থানীয়ভাবে জানা গেছে, ‘এসব জুয়ার আসর বসছে গ্রামের চায়ের দোকান, চালের দোকান বা সুতার দোকানে। দিনের বেলায় সাধারণ ব্যবসার আড়ালে, আর রাতে দোকান বন্ধের পর শুরু হয় মোবাইলের স্ক্রিনে টাকার লড়াই। আড্ডার ছলে একে একে হাজির হয় নির্দিষ্ট গেমাররা, চোখ থাকে মোবাইলের পর্দায়—আর বাজি চলতে থাকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে বছরের পর বছর চলছে এই নিষিদ্ধ কর্মকাণ্ড।
অনলাইন জুয়ায় আসক্ত একজন যুবক (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) বলেন,
‘প্রথমে বন্ধুদের দেখে খেলতে শুরু করি। লুডু দিয়ে শুরু, পরে দিনে দিনে হাজার টাকার বাজি লাগত। এখন প্রায় ৫০ হাজার টাকার ঋণে জর্জরিত, ঘুম পর্যন্ত হারাম হয়ে গেছে।’
সবচেয়ে বিপর্যয়ে পড়ছে পরিবারগুলো। ঘরে অশান্তি, বাবা-মায়ের সঙ্গে সন্তানের দূরত্ব, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সন্দেহ, ভাইয়ের সঙ্গে ভাইয়ের সম্পর্ক ছিন্ন—এ যেন সম্পর্ক নষ্ট হওয়ার চক্র।
সন্তানরা পড়ালেখার পরিবর্তে দিনভর মোবাইলেই মুখ গুঁজে থাকে। যুবকরা হারাচ্ছে কাজের আগ্রহ, মুছে যাচ্ছে ভবিষ্যতের স্বপ্ন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ‘অনলাইন জুয়ার এই ভয়াবহ বিস্তার রোধে এখনই কঠোর আইন প্রণয়ন ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি, না হলে অচিরেই ধ্বংসের মুখে পড়বে দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম।
মোরা (আমরা) গরিব মানু (মানুষ)। মোগো(আমাদের ) কপালে ইলিশ নেই। ওগুলো খাইবে টাহা (টাকা) ওয়ালা বড় লোক মানুষ (মানুষ)। আক্ষেপ করে এ কথা বলেছেন আমতলী উপজেলার চাওড়া ইউনিয়নের কাউনিয়া গ্রামের অটো চালক মনিরুল ইসলাম। ইলিশের মৌসুম হলেও বাজারে ইলিশের দাম চড়া গরিব ও মধ্যবিত্ত পরিবারের ইলিশ মাছ কেনার সক্ষমতা নেই।
জানা গেছে, এক সময় রুপালী ইলিশে ভরপুর ছিল বঙ্গোপসাগর ও সাগর মোহনার পায়রা, বলেশ্বর ও বিষখালী নদী। কিন্তু কালের বিবর্তনে বঙ্গোপসাগর ও সাগর মোহনা পায়রা, বলেশ্বর ও বিষখালী নদীতে তেমন ইলিশ জেলেদের জালে ধরা পরছে না। ইলিশে শিকারের মৌসুম জুন মাস থেকে শুরু হয়ে নভেম্বর পর্যন্ত। এর মধ্যে ভরা মৌসুম জুলাই মাসের শেষ থেকে শুরু হয়ে পুরো নভেম্বর মাস। এ সময়ে ইলিশ বঙ্গোপসাগর ও মোহনা নদীতে জেলেদের জালে ধরা পড়ে। আমতলী-তালতলী উপজেলায় ১৫ হাজার ৭৯৯ জন জেলে রয়েছে। এর মধ্যে অধিকাংশ জেলেই ইলিশ শিকার করে। ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে গত ১১ জুন জেলেরা সাগর ও নদীতে পুরোদমে ইলিশ শিকার শুরু করেছে। সাগর ও নদীতে জেলেদের জালে মোটামুটি ইলিশ ধরা পড়ছে। কিন্তু ইলিশ শিকার যাই হোক কিন্তু দামে আকাশ ছোয়া। গরিব ও মধ্যবিত্ত মানুষের নাগালেই বাইরে ইলিশের দাম।
তালতলী মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে সূত্রে জানা গেছে, চার ক্যাটাগরিতে ইলিশ মাছ বিক্রি হয়। ২০০-৩০০ গ্রাম, ৪০০-৬০০ গ্রাম, ৭০০-৯০০ গ্রাম ও ১০০০ গ্রামের উপরে। এ চার ক্যাটাগরির ইলিশের দাম প্রথম ক্যাটাগরির ইলিশের মণ ৩৫ হাজার টাকা, দ্বিতীয় ক্যাটাগরির ইলিশের মণ ৬০ হাজার টাকা, তৃতীয় ক্যাটাগরির ইলিশের মণ ৮০ হাজার টাকা ও চতুর্থ ক্যাটাগরির ইলিশের মণ ১ লাখ ২০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। তাতে ছোট ইলিশ তথা প্রথম ক্যাটাগরির ইলিশের কেজি ৮৫০ টাকা, দ্বিতীয় ক্যাটাগরির ইলিশের কেজি ১ হাজার ৫০০ টাকা, তৃতীয় ক্যাটাগরির ইলিশের কেজি ২ হাজার টাকা এবং চতুর্থ ক্যাটাগরির ইলিশের কেজি ৩ হাজার টাকা। এত দামে ইলিশ ক্রয় করা গরিব ও মধ্যবিত্ত পরিবারের ক্ষমতার বাইরে। দুই উপজেলা আমতলী-তালতলীতে অধিকাংশ গরিব ও মধ্যবিত্ত পরিবার গত দুই বছরে ইলিশ মুখে তুলতে পারেনি এমন দাবি দেলোয়ার হাওলাদারের। এর মধ্যে সাগর ও পায়রা নদীর জেলেদের জালে শিকার হওয়া ইলিশ স্থানীয় বাজারে বিক্রি হয় না বলে দাবী করেন ব্যবসায়ী মজিবুর রহমান ফরাজী। ওই মাছ ঢাকা, যশোর, খুলনা, সাতক্ষিরা, পাবনা, গাজীপুর, মাদারীপুর, কালকিনি, শরীয়তপুর, নরিয়া ও পাটচর এলাকায় রপ্তানি হয়। এর মধ্যে বড় সাইজের ইলিশ মাদারীপুর জেলায় বেশি রপ্তানি হয়। ওই জেলায় বড় সাইজের ইলিশের চাহিদা বেশি বলে জানান ব্যবসায়ী টুকু সিকদার। ওই জেলার প্রবাসীরা এ ইলিশ ক্রয় করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষক বলেন, গত দুই বছরে কোনো ধরনের ইলিশ কিনে খেতে পারিনি। ইলিশের যে দাম তাতে আমাদের মতো আয়ের মানুষের ইলিশ কিনে খাওয়া সম্ভব নয়। এই দামে ইলিশ কিনে খায় তা নেহায়েত বিলাসিতা।
তালতলী ফকিরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পাইকারী ব্যবসায়ী মো. টুকু সিকদার বলেন, এ অবতরণ কেন্দ্রের কোন মাছ স্থানীয় বাজারে বিক্রি হয় না। সমুদয় মাছ বাসে অথবা ট্রাকে করে উত্তরাঞ্চলে রপ্তানি হয়। বিশেষ করে মাদারীপুর জেলায় এখানের বেশিরভাগ ইলিশ রপ্তানি হয়। ওই জেলার মানুষের ইলিশের চাহিদা বেশি। তিনি আরো বলেন, ইলিশের যে পরিমাণ দাম, এতো টাকা দিয়ে স্থানীয় মানুষের ইলিশ কিনে খাওয়ার সক্ষমতা নেই।
তালতলী উপজেলার ফকিরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ইনচার্জ মো. জুয়েল বলেন, বাজারে ইলিশ মাছের দাম অনেক চরা। চার ক্যাটাগরিতে ইলিশ মাছ বিক্রি হয়। এতে ছোট ইলিশের মণ ৩৫ হাজার টাকাএবং বড় ইলিশের মণ ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। তিনি আরো বলেন, দাম নির্ধারিত হয় পাইকারদের চাহিদার ওপর ভিত্তি করে। তারা ইলিশ মাছ ডেকে দরদাম করে ক্রয় করেন।
আমতলী উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা তন্ময় কুমার দাশ বলেন, ইলিশ দাম নির্ধারণে আমার কোন নির্দেশনা নেই। ইলিশ উৎপাদন বৃদ্ধি ও সংরক্ষণের বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা রয়েছে। তিনি আরো বলেন, ইলিশের দাম নাগালের মধ্যে থাকলে সাধারণ মানুষ ক্রয় করতে পারত।
বরগুনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. মহসিন মিয়া বলেন, ইলিশ মাছের দাম অনেক কিন্তু মূল্য নির্ধারণে আমার দফতর কাজ করে না। তিনি আরো বলেন, ইলিশের দাম নির্ধারণে জেলায় একটি কমিটি আছে, ওই কমিটির মিটিংয়ে এ বিষয়ে আলোচনা করা হবে।
শনিবার সরকারি ছুটি থাকলেও বাজেট কার্যক্রম চলমান থাকায় কাস্টমস ও ভ্যাট এবং আয়করসহ রাজস্ব আদায়ের সাথে সম্পৃক্ত অন্যান্য সকল দপ্তর খোলা রাখার নির্দেশনা দিয়েছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ড।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নির্দেশনা অনুযায়ী বেনাপোল কাস্টমস হাউস শনিবার সরকারি ছুটির দিনেও খোলা থাকার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন, বেনাপোল কাস্টম হাউজের অতিরিক্ত কমিশনার এইচ এম শরিফুল ইসলাম। বেনাপোল বন্দর দিয়ে আমদানি রপ্তানি বাণিজ্য অন্যান্য দিনের মতো স্বাভাবিক থাকবে বলে জানান এ কর্মকর্তা। ১৮ জুন উম্মে আয়মান কাশমী (দ্বিতীয় সচিব বোর্ড প্রশাসন-১) স্বাক্ষরিত একপত্রের মাধ্যমে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে জানানো হয়েছে যে, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে ২০২৫-২৬ অর্থ বছরে বাজেট কার্যক্রম চলমান থাকায় আগামী ২১/০৬/২০২৫ ও ২৮/০৬/২০২৫ তারিখ শনিবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এবং এর অধীনস্থ কাস্টমস ও ভ্যাট এবং আয়করসহ রাজস্ব আদায়ের সাথে সম্পৃক্ত অন্যান্য সকল দপ্তর খোলা রাখার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘ফ্যাসিবাদী দল পলাতক আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করতে ভারতীয় নীতিনির্ধারকরা নানাভাবে ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। শেখ হাসিনার পতনকে তারা সহ্য করতে পারছে না। লন্ডনে ড. ইউনুস-তারেক রহমানের বৈঠকের পর টার্গেট করে পার্শ্ববর্তী দেশে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে।’
আজ শুক্রবার দুপুরে তারেক রহমানের নির্দেশনায় ‘আমরা বিএনপি পরিবারের’ উদ্যোগে পাবনার চাটমোহরের প্রবীণ বিএনপি নেতা আবু তাহের ওরফে তাহের ঠাকুরকে দেখতে গিয়ে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় তার চিকিৎসার জন্য তাহের ঠাকুরের হাতে আর্থিক অনুদান ও তারেক রহমানের শুভেচ্ছা পৌঁছে দেন তিনি।
রিজভী বলেন, ‘ফ্যাসিবাদের ১৬ বছরে তৃণমূল থেকে জাতীয় পর্যায়ে অনেকে এখনো গুম আছে। নেতা-কর্মীরা মামলা ও গ্রেপ্তার থেকে রক্ষা পায়নি। ফ্যাসিবাদের দিনগুলো ছিল ভয়ঙ্কর। তবে এখন আমরা গণতন্ত্রের পথে হাঁটছি। আজকে নির্ভয়ে কথা বলতে পারছি। যখন ড. ইউনুস ও তারেক রহমানের বৈঠক হয়েছে তখন থেকেই পার্শ্ববর্তী দেশ ষড়যন্ত্র শুরু করেছে।’
তিনি বলেন, ‘১৬ বছর ধরে নিপীড়ন করেছে; লুট করে দুবাই, কানাডা ও মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে বেহেশতের মতো সুখে আছে। গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ করে অপপ্রচার চালিয়ে গেছে শেখ হাসিনা।… নির্যাতনের শিকার হয়েছি, তবুও শেখ হাসিনার কাছে আত্মসমর্পণ করিনি।’
আগামী জাতীয় নির্বাচনের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আগামী নির্বাচন অবাধ-সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হবে; যৌক্তিক সময়েই হবে। আরও অনেক দল যে দাবি করেছে, সেই আলোকেই নির্বাচন হবে। আমরা যৌক্তিক সময়ের মধ্যে নির্বাচন চেয়েছি। এবারের নির্বাচনে জনগণের দাবির প্রতিফলন হবে।’
তাহের ঠাকুরকে উদ্দেশ্য করে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘লোহা পুড়িয়ে সংসার চালিয়েও তিনি দলের জন্য অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছেন। জেলা বিএনপিকে সর্বক্ষণ তার খোঁজখবর রাখতে বলেছি।’
‘আপনার পাশে সবাই দাঁড়াবে। আজ আমরা তারেক রহমানের উপহার নিয়ে এসেছি।’
এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন পাবনা জেলা বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট মাসুদ খন্দকার, যুগ্ম আহ্বায়ক আনিছুল হক বাবু, তাহের ঠাকুরের ছেলে চাটমোহর ডিগ্রি কলেজ শাখা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি বরিউল করিম গোলাম, এডওয়ার্ড কলেজ ছাত্রদল নেতা আশরাফুল ইসলাম প্রমুখ।
তিন যুগেরও বেশি বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক ক্যারিয়ার রয়েছে আবু তাহের প্রামাণিক ওরফে তাহের ঠাকুরের। তিনি চাটমোহর উপজেলা শ্রমিদলের সাবেক সভাপতি। ত্যাগী এই বিএনপি নেতার অসুস্থতা নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন সম্পর্কে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নজরে আসে বিষয়টি। এরপর তিনি আর্থিক সহযোগিতা ও খোঁজখবর নিতে দলের নেতা-কর্মীদের নির্দেশনা দেন।
সীমান্তের ওপারে ভারতের ভেতরে সিলেটের এক যুবকের ঝুলন্ত লাশ পাওয়া গেছে।
বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) দুপুরে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার উৎমাছড়া সীমান্তের ওপারে জাকারিয়া আহমদ (২৩) নামের ওই যুবকের লাশ ঝুলন্ত অবস্থায় রয়েছে বলে খবর পান পরিবারের সদস্যরা। বিষয়টি বিজিবি ও পুলিশকে জানিয়েছে পরিবার।
নিহত জাকারিয়া (২৩) কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার লামারগ্রাম কামালবস্তির আলাউদ্দিন আলাইয়ের ছেলে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার ভোরে জাকারিয়া বাড়ি থেকে বের হন। এরপর থেকে তার আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। পরে স্থানীয়দের মাধ্যমে পরিবারের সদস্যরা জানতে পারেন, ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের ১২৫৭ নম্বর মেইন পিলারের ২০ নম্বর ছাফ পিলারের নিকটবর্তী ভারতের অভ্যন্তরে একটি গাছের ডালে দড়িতে ঝুলন্ত একটি মরদেহ দেখা গেছে। পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর নিহত ব্যক্তির পরিবার মরদেহটি জাকারিয়ার বলে শনাক্ত করে।
তার পরিবারের সদস্যরা জানান, গত সোমবার একই ইউনিয়নের কাকরাইল গ্রামের এক তরুণীর সঙ্গে জাকারিয়ার বিয়ে হয়েছিল।
সিলেট কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) উজায়ের আল মাহমুদ জানান, ‘সীমান্তের পিলারের ওপারে এক যুবক আত্মহত্যা করেছেন। লাশ উদ্ধারের জন্য বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)র উৎমাছড়া ক্যাম্পের কমান্ডারের সাথে আলাপ হয়েছে। নিহতের পরিবার থেকে সাধারণ ডায়েরি করা হলে পরবর্তীতে বিজিবি ও পুলিশের সদস্যরা গিয়ে লাশ উদ্ধার করতে পারবে। যেহেতু সীমান্তের ওপারে তাই কিছু আইনি জটিলতার জন্য লাশ উদ্ধারে বিলম্ব হচ্ছে।’
এদিকে , বিজিবি সূত্রে জানা গেছে, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) উৎমা বিওপি ও ভারতীয় সীমান্তরক্ষা বাহিনী (বিএসএফ) সমন্বয়ে মরদেহ হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। তবে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত কোনো এ বিষয়ে কোনো অগ্রগতির খবর পাওয়া যায়নি।
কয়েকদিনের ভারী বৃষ্টিপাত ও ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পানিতে ফেনীর ফুলগাজীতে মুহুরী নদীর একটি স্থানে বাঁধ ভেঙে লোকালয় পানি ঢুকেছে । এতে চার গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ২০২৪ এর স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার বছর না পেরোতেই আবারও বাঁধ ভাঙনের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) দায়সারা কাজকে দুষছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। জনগণ বলছেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও ঠিকাদারের দায়সারা সংস্কার ও মেরামতের কারণে এখানকার জনজীবনে দুর্ভোগ নেমে এসেছে।
বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) দিবাগত রাত ১০টার দিকে এ ভাঙ্গনের সৃষ্টি হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রাত ১০টার দিকে ফুলগাজী উপজেলার সদর ইউনিয়নের উত্তর বরইয়া বণিকপাড়া সহদেব বৈদ্যের বাড়ি-সংলগ্ন মুহুরী নদীর বাঁধের একটি স্থানে ভাঙ্গনের সৃষ্টি হয়। স্থানীয় জনগণ প্রাণপণ চেষ্টা করেও এ ভাঙ্গন ঠেকাতে পারেনি।
এতে উত্তর বরইয়া, দক্ষিণ বরইয়া, বণিকপাড়া, বসন্তপুর এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। এ ছাড়া গতকাল সন্ধ্যা থেকে ফুলগাজী তরকারি বাজার-সংলগ্ন স্থানে মুহুরী নদীর পানি প্রবেশ করে বাজারের একটি অংশ প্লাবিত হয়েছে। আজ শুক্রবার বৃষ্টি না
হাওয়ায় ফুলগাজী বাজার থেকে পানি নেমে গেছে।
প্রতি বছর দায়সারা বাঁধ মেরামত ও নদী সংস্কার না করার কারনে স্থানীয় এলাকাবাসী পানি উন্নয়ন বোর্ডেকে এজন্য দায়ী করছেন। এখানকার জনগণ প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে পানিতে প্লাবিত হওয়ার কারণে কোন ত্রাণ নয়, তারা চায় টেকসই বাঁধ নির্মাণ ও মেরামত।
ফেনী জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম গতকাল বৃহস্পতিবার ফেনীর ফুলগাজী বাজার ও ভাঙ্গন স্থান পরিদর্শন করেছেন। তিনি স্থানীয় জনগণকে আতঙ্কিত না হয় সজাগ থাকার পরামর্শ দিয়েছেন।
ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: আক্তার হোসেন মজুমদার বলেন, উজানে ভারী বৃষ্টি হওয়ায় ফেনীতে নদীর পানি বাড়ছে। তবে মুহুরী নদীর পানি এখনো বিপৎসীমার নিচে রয়েছে। বাঁধের ভাঙ্গন স্থল রক্ষায় স্থানীয় বাসিন্দাদের নিয়ে অনেক চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছি। ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধের নিরাপত্তায় আমাদের কাজ অব্যাহত রয়েছে।
ফেনীর ছাগলনাইয়ার যশপুর সীমান্তের মটুয়া এলাকা দিয়ে ১১ জনকে পুশইন করেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত দুইটার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
বিজিবি জানায়, গভীর রাতে ফেনী ব্যাটালিয়নের টহলদল ছাগলনাইয়া উপজেলার যশপুরের মটুয়া এলাকায় টহল দেওয়ার সময় শিশুসহ ১১ জন বাংলাদেশী নাগরিককে আটক করে। তাদের মধ্যে একজন পুরুষ, সাতজন মহিলা ও তিনজন শিশু আছে। বিজিবি আরো জানায়, বিএসএফ রাতের অন্ধকার ও বৈরী আবহাওয়ার সুযোগ নিয়ে তাদেরকে সীমান্ত এলাকায় নিয়ে আসে এবং সুকৌশলে বাংলাদেশে পুশইন করে। আটককৃতরা জানায়, তারা বাসা বাড়ির কাজ ও বিভিন্ন কাজের উদ্দেশে চোরাইপথে বিভিন্ন সময় দালালের মাধ্যমে বেনাপোল দিয়ে ভারতে প্রবেশ করে।
আটককৃতদের থেকে প্রাপ্ত জন্ম নিবন্ধন ও এনআইডি সূত্রে জানা যায়, তারা সকলে বাংলাদেশের নাগরিক, তাদের বাড়ি ঝিনাইদহ, যশোর, সাতক্ষীরায়। বিজিবি প্রাথমিকভাবে বাংলাদেশী নাগরিক নিশ্চিত হয়ে আটককৃতদের ছাগলনাইয়া থানায় হস্তান্তরের করেছে।
আটককৃতরা হলেন: নড়াইল জেলার কালিয়া থানার যাদবপুর গ্রামের মৃত হাসান শেখের পুত্র মো. রাসেল হাসান শেখ (৩৩), একই গ্রামের মৃত আবু বক্কর এর মেয়ে শ্যামলী খাতুন (৩৫), একই জেলার নড়াইল থানার পলি ডাঙ্গা গ্রামের আজিজুল ফকিরের মেয়ে সোনালী খাতুন (৩২), যশোর থানার পেরুলিয়া গ্রামের রবিউল হকের স্ত্রী হোসনেয়ারা (৪০), একই জেলার নোয়াপাড়া থানার নওলী মোল্লা বাড়ি গ্রামের মৃত রৌশন মোল্লার মেয়ে সালমা (৪৫), এই গ্রামের মৃত রৌশন মোল্লার মেয়ে মিনা (৪২), সাতক্ষীরা কলারোয়া থানার কাতপুর গ্রামের মৃত আকবর আলী মন্ডলের স্ত্রী হোসনে আরা বেগম (৬০), একই গ্রামের প্রীত আনোয়ারুল হকের স্ত্রী সেলিনা বেগম (৪৫), পুত্র জিয়ারুল (১১), পুত্র তৌহিদুল (০৯), পুত্র ইসমাইল (০৭)।
বিজিবি আরো জানায়, এ ঘটনায় ৪ বিজিবি কোম্পানী কমান্ডার কর্তৃক প্রতিপক্ষ বিএসএফ কোম্পানী কমান্ডারকে মৌখিক প্রতিবাদ জানানো হয়েছে এবং ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক কর্তৃক প্রতিবাদলিপি প্রেরণ করা হয়েছে। পুশইন প্রতিরোধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে বিজিবি।
ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার পোস্ট অফিস রোডের সরকারি বড়পুকুর পাড় ঘেঁষেই ছিল ফুলবাড়িয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়। ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী সরকারের পতন হলে ওই দলীয় কার্যালয়ে বসে পানের হাট। বিভিন্ন সময়ে সাংগঠনিক অনুষ্ঠান ছাড়াও একসময় আওয়ামী লীগের এই কার্যালয়টিতে প্রতিনিয়ত দেখা যেতো দলীয় নেতাকর্মীদের পদচারণা। ছাত্র জনতার আন্দোলনের সময়ে কার্যালয়টি ভাঙচুর করে স্থানীয় বিক্ষুব্ধ জনতা।
এ অফিসটিতে দলীয় কার্যক্রমে একসময় জৌলসময় থাকলেও দেশের পট পরিবর্তন পরবর্তী এখন আর কোন কিছুই নেই। বর্তমানে উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে বসানো হয়েছে পানের হাট।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের পান চাষিরা পানের হাটে পান বিক্রি করতে এসেছেন। পাশাপাশি পান ক্রয় করতে হাজির হয়েছেন স্থানীয় পাইকারও। আড়তদার ও পাইকাররা দর দাম নিয়ে হাঁক-ডাক ও করছেন। উপস্থিত লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানাগেছে, সকালে শুরু হওয়া এই হাটে প্রায় দুই ঘণ্টা বিকিকিনি হয়। বিক্রি শেষে আড়তদারকে শতকরা ১০ টাকা হারে টাকা দিতে হয় কৃষকদের।
পাটুলি এলাকার কাদের মিয়া বলেন, আগে এটি আওয়ামী লীগের অফিস ছিল, হাসিনা পালানোর পর থেকে এটি পরিত্যক্ত। তাই এখানে পানের হাট বসানো হয়েছে। সবাই এখানে পান নিয়ে আসে তাই আমরাও পান বিক্রি করতে নিয়ে আসছি। আলমগির ও সুজাৎ বলেন, এই পানের হাটে প্রতিদিন উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে শতাধিক পান চাষি ও পাইকাররা উপস্থিত হন। এই হাটে মুটামুটি বেশ ভালোই বেচাকেনা হচ্ছে। পান নিয়ে আসা কৃষক ও পাইকাররা জানান, এ পানের বাজারে আড়ৎদারির মাধ্যমে পান বিক্রি হয়। আর এ আড়তদারের দায়িত্বে রয়েছেন আবুল হোসেন নামের এক ব্যক্তি।
গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার সরকারি ভবনের ছাদের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রায়ই খসে পড়ছে পলেস্তারা। দেয়ালের পলেস্তারে দেখা দিয়েছে ছোট-বড় অংসখ্য ফাটলের দাগ। ফলে সামান্য বৃষ্টি হলেই ছাদ চুইয়ে পানি পড়ে থাকে। আর যেকোনো সময় মাথার ওপর ছাদ ধ্বসে পড়ার ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন ৮ দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারিরা। তবে বড় কোন দুর্ঘটনা ঘটার আগেই দ্রুত নতুন ভবন নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
এলাকাবাসী, সেবা প্রার্থী ও উপজেলা পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, কালিয়াকৈর উপজেলার একটি ৩ তলা ভবনে উপজেলা হিসাব রক্ষক, মৎস্য, সমাজসেবা, মহিলা বিষয়ক, যুব উন্নয়ন, সমবায়, মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস ও খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিস এই ৮টি দপ্তরের কার্যক্রম চলে আসছে। কিন্তু দীর্ঘ দিনের পুরাতন ভবনটি দিন দিন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। ওই ভবনের ছাদের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রায় প্রায় ছোট-বড় পলেস্তার খসে পড়ছে। ফলে ছাদের রড ও ইটের সুরকি দেখা যাচ্ছে।
বিকল্প কোনো ভবন না থাকায় নিরুপায় হয়ে ওই ঝুঁকিপূর্ণ ভবনেই সরকারি সেবা দিচ্ছেন বলে জানান অনেকে।
এদিকে, গত বুধবার বিকেলে এ ভবনের দ্বিতীয় তলায় উপজেলা যুব উন্নয়ন দপ্তরের একটি অফিস কক্ষে হঠাৎ ছাদের বড় পলেস্তার খসে পড়ে সহকারী উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা জাহানারা খাতুনের টেবিল ও যন্ত্রপাতি ওপর। এতে টেবিলসহ কিছু আসবাবপত্রের বেশ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ওই খসে পড়া পলেস্তারের কিছু অংশ ছিটকে অফিস সহকারী তমিজুর রহমানের হাতে পড়ে। এ সময় তিনি ভবন ধ্বসে পড়ার আতঙ্কে দৌড়ে অফিস থেকে নিচে নেমে আসে। শুধু ওই অফিস সহকারী নয়, ওই ভবনের অন্যান্য দপ্তরের উপস্থিত কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও দৌড়ে নিচে নেমে যায়। এর আগেও ঈদুল আজহার ছুটি শেষে ২য় দিনে তৃতীয় তলায় ছাদের পলেস্তার খসে সিড়ির ওপর পড়ে। এ ঝুঁকিপূর্ণ ভবন নিয়ে ওই ৮ দপ্তরের ৪৬ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত সরকারী সেবা দিচ্ছেন ও নিচ্ছেন। এছাড়াও পাশেই উপজেলা পরিষদের পরিত্যক্ত পুরাতন দ্বিতীয় তলা ভবন রয়েছে। ওই পুরাতন ভবনের কিছু অংশ কেটে গোডাউন হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। ওই ভবনের এক তলার ছাদ ও বিম খসে খসে পড়ছে। সে জরাজীর্ণ ভবনটিও যেকোনো সময় ধ্বসে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। প্রতিদিন প্রায় শত শত মানুষ উপজেলার ১৭টি দপ্তরে যাতায়াত করে থাকেন। চলাচলরত সেবা গ্রহীতাসহ অন্যান্য লোকজন যেকোনো মুহূর্তে দুর্ঘটনার শিকার হতে পারেন।
ওই উপজেলা যুব উন্নয়ন অফিস সহকারী বিএম তমিজুর রহমান বলেন, ‘ওইদিন হঠাৎ করেই আমাদের অফিসের ছাদের পলেস্তার একটি বড় অংশ খসে পড়ে। এর কিছু অংশ আমার হাতের ওপর পড়ে। অল্পর জন্য প্রাণে বেঁচে গেছি। পরে আমিসহ অন্যান্য দপ্তরের স্যাররাও আতঙ্কে তাড়াহুড়ো করে নিচে নেমে যাই।
সমাজসেবা অফিসের ইউনিয়ন সমাজকর্মী মুনসের আলী বলেন, ‘আমাদের অফিসের ভবনটি এখন জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে গেছে। হঠাৎ করেই ওই ভবনের ছাদ ও ভীমের বড় পলেস্তার খসে খসে পড়তে দেখা যায়।
সহকারী উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা জাহানারা খাতুন বলেন, ‘ওইদিন বিকেলে অফিস থেকে বের হয়ে যাওয়ার পর আমার টেবিলের ওপর ছাদের বড় প্লাস্টারের অংশ খসে পড়ে। এখনো আমার মাথার ওপর ছাদ ও দেওয়ালে আরো ফাটল আছে। আতঙ্কে আমার টেবিলে বসতে পারছি না। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আমরা কিভাবে অফিস করবো? মানুষের জানমালের নিরাপত্তার স্বার্থে শিগগিরই জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ভেঙ্গে নতুন একটি ভবন নির্মাণ করা উচিত।
এবিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলী ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল বাছেদ জানান, আজকেই এখানে যোগদান করেছি। তবে খুব দ্রুতই খোঁজ-খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাউছার আহামেদ জানান, ছাদের পলেস্তার খসে পড়ার বিষয়টি শুনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কার্যক্রমের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে। তবে ওই ভবনে কর্মরত সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জীবনের নিরাপত্তার স্বার্থে সরকারের পক্ষ থেকে যাতে দ্রুত নতুন ভবন নির্মাণের ব্যবস্থা করেণ তার জন্য প্রয়োজনে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বরগুনার আমতলী উপজেলার আমড়াগাছিয়া নামক স্থানে সোয়া ৬ কোটি টাকা ব্যয়ে গুলিশাখালী খালের ওপরে নির্মিত সেতুটি কোনো কাজে আসছে না। মই বেয়ে ওঠতে হয় সেতুতে। যা রীতিমতো ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এলজিইডি সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩ সালে আমতলী উপজেলার গুলিশাখালী, কুকুয়া ও চাওড়া এই তিন ইউনিয়নের সংযোগস্থল আমড়াগাছিয়া বাজারের পশ্চিমপাশে গুলিশাখালী খালের ওপর ৬৬ মিটার দৈর্ঘ্য ৬.৭৭ মিটার প্রস্থের এই গার্ডার সেতু ৬ কোটি ২২ লাখ ৫৮ হাজার ৩২৩ টাকা ব্যয়ে সেতুটি নির্মাণের চুক্তি করে বরগুনা এলজিইডি। কাজটি পায় বরিশালের মেসার্স কহিনুর এন্টার প্রাইজ অ্যান্ড ত্রিপুরা জেভি নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ২০২৩ সালের ১৯ মে কার্যাদেশ পেয়ে কাজ শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি ২০২৪ সালের জুনে নির্ধারিত সময়ের আগেই মূল সেতুর নির্মাণকাজ সম্পন্ন করেন। কিন্ত বিপত্তি দেখা দেয় সংযোগ সড়ক নির্মাণ নিয়ে। সেতুর পশ্চিম পাশের সেতুর ঢালের ৫ ফুটের মাথায় রয়েছে পূর্ব খেকুয়ানি গ্রামের চলাচলের জন্য সড়ক। সেতুর ডিজাইন এবং উচ্চতা অনুযায়ী সংযোগ সড়ক নির্মাণ করলে এই সড়কটি বন্ধ হয়ে যাবে এ নিয়ে দেখা দেয় বিপত্তি।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, সেতু নির্মাণের ১১ মাস ধরে সংযোগ সড়ক ছাড়া এভাবে পরে আছে। এতে তিন ইউনিয়নের ২০ গ্রামের প্রায় ৪০ হাজার মানুষ পড়েছে ভোগান্তিতে। যাতায়াতের জন্য স্থানীয়রা সেতুর পশ্চিম পারে কাঠ ও বাঁশের মই বানিয়ে কোনো রকমে যাতায়াতের উপযোগী করে চলাচল করছে। এই মই বেয়ে বয়স্ক ও শিশুরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। কোনো ধরনের যানবাহন সেতুতে ওঠতে না পারায় পণ্য পরিবহনে নানা প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হচ্ছে। পণ্য পরিবহন করতে দশ কি. মি. ঘুরে মহিষকাটা সেতু পাড় হয়ে যেতে হচ্ছে তাদের। গুনতে হচ্ছে অতিরিক্ত ভাড়া। এতে ব্যবসায়ী সাধারণ মানুষসহ স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা বিপাকে পড়েছে। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সেতুটি গুলিশাখালী, চাওড়া ও কুকুয়া এই তিন ইউনিয়নের সংযোগস্থল । এই সেতু পার হয়ে গুলিশাখালী ইউনিয়নের পূর্ব খেকুয়ানী, গুলিশাখালী, ডালাচারা, বাইবুনিয়া, কলাগাছিয়া গ্রামের শত শত মানুষ আমতলী সদর, বরিশাল, ঢাকাসহ সারা দেশে চলাচল করে। চাওড়া ও কুকুয়া ইউনিয়নের মানুষও এই সেতু পার হয়ে গুলিশাখালী ইউনিয়নে যাতায়াত করেন। দীর্ঘদিন ধরে সেতুটির সংযোগ সড়ক নির্মাণ না করায় আমাদের চলাচলে অনেক কষ্ট হচ্ছে। বিশেষ করে পণ্য পরিবহন, রোগী আনা-নেওয়ায় অনেক সমস্যা হচ্ছে। মরদেহ আনা-নেওয়ায়ও সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। দ্রুতই সেতুটির সংযোগ সড়ক নির্মাণ করে যাতায়াতের সুব্যবস্থার দাবি করছেন এলাকাবাসী । ঠিকাদার মো. কাওছার মিয়া বলেন, নির্ধারিত সময়ের আগেই মূল সেতুর নির্মাণকাজ শেষ করেছি। সংযোগ সড়কের জন্য আলাদা দরপত্র হবে। যেসব প্রতিষ্ঠান কাজ পাবে তারাই কাজ করবে। এ বিষয়ে আমতলী উপজেলা এলজিইডির প্রকৌশলী মো. ইদ্রিস মিয়া বলেন, সেতুর উচ্চতা অনুযায়ী সংযোগ সড়ক তৈরি করতে গেলে পাশের একটি সড়ক বন্ধ হয়ে যায়। সে কারণে বিকল্প হিসেবে সেখানে আন্ডারপাস নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে যাতে মূল সড়কটি ঠিক থাকে। এতে ব্যয় কিছুটা বাড়বে। এ লক্ষ্যে নতুন করে নকশা ও বাজেট তৈরি করে প্রকল্প পরিচালকের কাছে পাঠানো হয়েছে। প্রকল্প অনুমোদন পেলেই দরপত্র আহ্বান করে দ্রুত কাজ শুরু করা হবে।
রাঙ্গামাটি জেলার দুর্গম পাহাড়ে বিরল প্রজাতির গোলাপি রঙের নতুন হাতির বাচ্চা দেখা গেছে। দেশে প্রথমবারের মতো রাঙ্গামাটির পাহাড়ে দেখতে পাওয়া বিরল এই গোলাপি হাতির বাচ্চাটির বয়স দুই সপ্তাহের একটু বেশি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
জেলার বরকল উপজেলার সুভলংয়ের বরুনাছড়ি ইউনিয়নের ফরেস্টের এলিফ্যান্ট রেসপন্স টিম (ইআরটি) এর প্রধান সমন্বয়কারী মো. জাহাঙ্গীর আলম গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে এর আগে গোলাপি রঙের হাতির দেখা পাওয়া যায়নি। এটা বাংলাদেশের প্রাণিজগতে হাতির প্রথম বিস্ময়কর ঘটনা হতে পারে। রাঙ্গামাটি শহর থেকে এক থেকে দেড় ঘণ্টায় স্পিডবোটে করে ঘটনাস্থলে যাওয়া যায়। সাধারণ বোটে হলে সময় আরো একটু বেশি লাগতে পারে।
জেলার বরকল উপজেলার বরুনাছড়ি ইউনিয়নে দুর্গম পাহাড়ে হাতির অবস্থান সম্পর্কে মো. জাহাঙ্গীর আলম জানান, তিনিই প্রথম দেখতে পান একটি হাতির পাল গোলাপি রঙের হাতি শাবকসহ বরুনাছড়ি এলাকায় কাপ্তাই হ্রদ পার হতে । পরে জাহাঙ্গীর আলম সঙ্গে সঙ্গে সেই দৃশ্যটির ভিডিও ধারণ করে পার্বত্য চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের সাবেক বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিমকে পাঠান। তিনি সেই ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করলে বিষয়টি জানাজানি হয়ে যায়।
তিনি জানান, বর্তমানে বরুনাছড়িতে হাতির নতুন গোলাপি বাচ্চাসহ দুটি হাতির শাবক এবং আরো ৬টি হাতিসহ সর্বমোট ৮টি হাতি রয়েছে। এর মধ্যে নতুন গোলাপি বাচ্চাসহ ৫টি একটি দলে, ২টি হাতি একসাথে এবং আরো একটি বড় হাতি সেখানে অবস্থান করছে। সরজমিনে দেখা যায়, সদ্য জন্ম নেয়া হাতির ছোট শাবকটি গোলাপি রঙের। সাধারণত বাচ্চা হাতির সারা গায়ের লোম কালো হলেও নতুন বাচ্চার গায়ের রং অনেকটাই গোলাপি এবং কিছুটা ব্যতিক্রম এই গোলাপি শাবক।
এ বিষয়ে রাঙ্গামাটি সার্কেলের বন সংরক্ষক মোহাম্মদ আবদুল আউয়াল সরকার বলেন, পাহাড়ে হাতি সংরক্ষণের জন্য বন বিভাগ ছাড়াও ফরেস্ট বিভাগের দায়িত্বরত ব্যক্তির পাশাপাশি আরো একটি ইআরটি রয়েছে। তারা সব সময় পাহাড়ে থাকা হাতির সমস্যাসহ নানা বিষয় তদারক করে। আমরা এই টিমের মাধ্যমেই গত ১৩ জুন গোলাপি রঙের হাতির নতুন শাবকের কথা জানতে পারি। খবর পেয়ে আমরা বন বিভাগের পক্ষ থেকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি।
তিনি বলেন, ‘নতুন এই বিস্ময়কর গোলাপি রঙের হাতির দিকে বন বিভাগ নজর রাখছে।’
হাতির বাচ্চাটির গায়ের রং গোলাপি হওয়ার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে বন সংরক্ষক মোহাম্মদ আবদুল আউয়াল সরকার বলেন, নিউট্রিশনজনিত কারণেও হাতির বাচ্চার রং এরকম পরিবর্তন হতে পারে। এটি একটি গবেষণার বিষয় এবং এটা নিশ্চিত করতে একটু সময় লাগবে।
বরুণাছড়ির ঘটনাস্থলেই দেখা হয় জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ও অধ্যাপক এম মনিরুল এইচ খানের সঙ্গে। তিনি হাতির বাচ্চার গোলাপি রঙের বিষয়ে বলেন, সাধারণত হাতির গায়ের রং কালচে ধরনের হয়ে থাকে।
হাতির চামড়ায় যে রঞ্জক পদার্থ তৈরি হয় তা যদি কোন অস্বাভাবিকতার কারণে তৈরি হতে না পারে সেটি কিছুটা ফ্যাকাসে বা গোলাপি রং ধারণ করে। এই নতুন হাতি শাবকটির ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। এটি অত্যন্ত বিরল ঘটনা এবং স্বাভাবিক অবস্থায় এটি হয় না।
তিনি বলেন, ‘হাতির জিনগত কোন অস্বাভাবিকতার কারণে অনেক সময় হাতির গায়ের রঙের ভিন্নতা আসে এবং এই ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে।’
অধ্যাপক এম মনিরুল এইচ খান বলেন, ভারতীয় উপমহাদেশ, মায়ানমার, থাইল্যান্ডসহ পুরো অঞ্চলে এশীয় হাতির রং এরকম গোলাপি হওয়ার ঘটনা অত্যন্ত বিরল। রাজাদের শাসনামলে এ ধরনের বিরল সাদাটে বা গোলাপি হাতিগুলো রাজাদের কাছে খুবই কদরের ছিল। রাজারা তাদের হাতিশালায় এসব হাতি শখ করে পুষতেন এবং হাতিগুলোকে তাদের বিভিন্ন ধর্মীয় ও রাষ্ট্রীয় কাজে ব্যবহার করতেন। তিনি এরকম বিরল হাতি সংরক্ষণে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগকে যথাযথ ভূমিকা পালনের সুপারিশ করেন।
তিনি বলেন, পুরো পার্বত্য চট্টগ্রামের যে সব অঞ্চলে বন্য হাতি আছে সে সব অঞ্চলের প্রায় বনাঞ্চলই দখল হয়ে বসতি, বাজারসহ বিভিন্ন অবকাঠামো গড়ে উঠছে। ক্রমেই ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে হাতির আবাসস্থলসহ পাহাড়ের বনাঞ্চল। এ কারণে এক সময় হাতির নিরাপদ আবাসভূমি এখন তাদের জন্য বিপদসংকুল হয়ে উঠেছে। বর্তমানে পাহাড়ে হাতি আর মানুষ অনেকটা একসঙ্গেই বসবাস করছে। যার কারণে হাতি আর মানুষের দ্বন্দ্ব অনেকটাই বেড়ে চলেছে এবং যার অনেক আলামত আমরা চারপাশেই দেখতে পাচ্ছি।
তিনি বিরল প্রাণীর অভয়ারণ্য তৈরির জন্য সরকারি বনভূমি সংরক্ষণ করে সেখানে প্রাকৃতিকভাবে স্থানীয় উদ্ভিদ বেড়ে ওঠার পরিবেশ তৈরি করতে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তিনি বলেন, প্রয়োজন হলে এনরিচমেন্ট প্ল্যান্টেশন বা স্থানীয় যে সব উদ্ভিদ প্রজাতি ও বৃক্ষ প্রজাতি আছে সেগুলো বন বিভাগের মাধ্যমে রোপণ ও সংরক্ষণে স্থানীয় জনগণকে সচেতন করতে হবে।
পাহাড়ের প্রত্যন্ত দুর্গম এলাকাতে গোলাপি হাতিটি দেখতে এখন প্রায় প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসছে গবেষকসহ উৎসুক জনগণ। হাতির বাচ্চাটি ছোট থাকায় মা হাতিসহ অন্য হাতিরা তাকে হাতির শুড়ের ওপর করেও কাপ্তাই লেক পাড় হতে দেখেছে স্থানীয় বাসিন্দারা। বর্তমানে যে টিলাতে হাতিগুলো অবস্থান করছে হাতির গোলাপি শাবকটি বড় না হওয়া পর্যন্ত এই বুনো হাতির দল সেখানেই অবস্থান করতে পারে বলে ধারণা করছেন ইআরটির সদস্যরা।
তবে পাহাড়ে বিরল প্রজাতির এই গোলাপি হাতির বাচ্চাসহ পুরো হাতির দলকে নিরাপদে রাখতে সেখানে মানুষের অবাধ বিচরণকে নিয়ন্ত্রণে আনার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা। তা না হলে যেকোনো সময় অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাসহ হাতির আক্রমণের শিকার হতে পারে মানুষ। তাই পুরো এলাকাটি সরকারিভাবে সংরক্ষণ করাটা অনেক জরুরি।
সূত্র: বাসস
বরগুনা জেলায় ডেঙ্গু জ্বরের প্রাদুর্ভাব ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত জেলায় ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ১৯ শতাধিক ছাড়িয়ে গেছে। জেলায় এখন পর্যন্ত মৃত্যুর সংখ্যা ১৯ শতাধিকের বেশি।
জানা গেছে, প্রতিদিনই নতুন নতুন রোগী শনাক্ত হওয়ায় সাধারণ মানুষের মাঝে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বেড়েই চলছে।
বিশেষ করে বরগুনা সদর, আমতলী, পাথরঘাটা, বেতাগী, তালতলী ও বামনা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ডেঙ্গু আক্রান্তের হার বেশি। বরগুনা সদর হাসপাতাল, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও বেসরকারি ক্লিনিকগুলোতে রোগীদেরও চাপ বেড়ে গেছে। অনেক হাসপাতালে রোগীর বেড ও জায়গা সংকট দেখা দিয়েছে।
বরগুনা জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্যমতে, চলতি জুন মাসের প্রথম দুসপ্তাহেই প্রায় ৫০০ জন নতুন ডেঙ্গুরোগী শনাক্ত করা হয়েছে। এরমধ্যে বেশিরভাগই শহর এলাকার বাসিন্দা হলেও গ্রামীণ অঞ্চলেও আক্রান্তের হার বেড়ে যাচ্ছে। আক্রান্তদের মধ্যে শিশু ও বয়স্কদের সংখ্যাই বেশি।
বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. তাজকিয়া সিদ্দিকা বলেন, ‘চিকিৎসা দিতে আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করছি। তবে প্রতিদিন যে হারে রোগী আসছে, তা সামলানো কঠিন হয়ে পড়ছে। হাসপাতালের বেড সংকট, স্যালাইন ও ওষুধের ঘাটতি এবং প্রয়োজনীয় জনবলের অভাব পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে।’
তিনি আরও জানান, অনেক ক্ষেত্রে রোগীদের মশার কামড়ে পুনরায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকায় হাসপাতাল চত্বরেও মশা নিয়ন্ত্রণে উদ্যোগ নিয়েছি। এবং হাসপাতালে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি বরগুনা ইউনিটের সেচ্ছাসেবকরা জনসচেতনা মূলক মাইকিং ও শৃঙ্খলা রক্ষায় কাজ করছেন।
জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ আবুল ফাত্তাহ বলেন, আমরা ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবিলায় জরুরি টাস্কফোর্স গঠন করেছি। জেলার প্রতিটি উপজেলায় মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। পাশাপাশি জনসচেতনতা বাড়াতে লিফলেট বিতরণ, মাইকিং ও স্থানীয় গণমাধ্যমে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। তবে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, শুধুমাত্র চিকিৎসা নয়, ডেঙ্গু প্রতিরোধে সম্মিলিত সামাজিক উদ্যোগ জরুরি। সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি, নিয়মিত মশা নিধন কার্যক্রম ও পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে না পারলে পরিস্থিতি আরও অবনতির দিকে যাবে বলে আশঙ্কার কথা বলেন তিনি।
বরগুনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, ‘ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবিলায় জেলা প্রশাসন প্রয়োজনীয় সব ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে। পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদগুলোকেও মশক নিধনে আরও সক্রিয় হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকেও নিয়মিত পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার আহ্বান জানানো হয়েছে।’
তবে বরগুনা পৌরসভার অনেক নাগরিক অভিযোগ করছেন, পৌরসভার মশক নিধন কার্যক্রম যথেষ্ট নয়। অনেক এলাকায় এখনো মশার প্রজননস্থল পরিষ্কার করা হয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধে ব্যক্তি ও পারিবারিক সচেতনতাই সবচেয়ে বেশি কার্যকর। প্রতিদিন ঘরের আশপাশের জমে থাকা পানি ফেলে দেওয়া, ফুলের টব, ড্রাম, কনটেইনার, এসি ট্রে ইত্যাদি নিয়মিত পরিষ্কার করা জরুরি। এছাড়া দিনে ও রাতে মশার কামড় থেকে বাঁচতে মশারি ব্যবহার ও মশা নিধনের স্প্রে ব্যবহার করার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা।