৮৫ হাজার বস্তা ধারণক্ষমতা জয়পুরহাটের কালাই পৌর শহরের নরওয়েস্ট কোল্ড স্টোরেজ লিমিটেডের। গত রোববার বিকেলে জেলার বিভিন্ন হিমাগারে আলু বেচাকেনা হলেও বন্ধ ছিল কালাই পৌর শহরের নরওয়েস্ট হিমাগার। শুধু তাই নয়, ফাঁকা ছিল শেড। হিমাগারের মূল ফটকে ঝুলছিল তালা। অথচ এখনো ওই হিমাগারে মজুত আছে ৩৬ হাজার ৭০০ বস্তা আলু।
সরকারের বেঁধে দেয়া দরে হিমাগারগুলোতে আলু বিক্রি হচ্ছে কি না, তা তদারকি করছে জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরসহ প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তর। নরওয়েস্ট হিমাগারে এমন দৃশ্য দেখে হতবাক বাজার তদারকির দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা।
তবে হিমাগারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ব্যবসায়ীরা যদি তাদের আলু বিক্রি না করে, তাহলে হিমাগার কর্তৃপক্ষের কিছু করার নেই। তারা সর্বোচ্চ ব্যবসায়ীদের তালিকা দিতে পারেন।
আর ভোক্তা অধিকারের নির্দেশ, আগামী ২-১ দিনের বেঁধে দেয়া দরে আলু বিক্রি শুরু করতে হবে। তা না হলে হিমাগার সিলগালা করে সরকারের বেঁধে দেয়া দরে আলু বিক্রি করে ব্যবসায়ীদের কাছে টাকা পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত কয়েক দিনে ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে হিমাগার গেটে পাইকারি ৪০ থেকে ৪২ টাকা কেজি দরে আলু বেচাকেনা হচ্ছে। সেই আলু খুচরা বাজারে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এ অবস্থায় সরকার হিমাগার গেটে আলু পাইকারি সর্বোচ্চ ২৭ টাকা কেজি বিক্রির জন্য দর বেঁধে দেয়। কিন্তু সরকারের বেঁধে দেয়া দর মানছেন না ব্যবসায়ীরা। উল্টো প্রশাসনের বাজার তদারকি জোরদার হওয়ায় হিমাগারগুলোতে আলু বেচাকেনা বন্ধ রয়েছে।
এ ব্যাপারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যবসায়ী বলেন, ‘বিগত বছরের লোকসানের ভার থেকে আজও মুক্ত হতে পারেননি তারা। ব্যাংকের ঋণ আজও জট বেঁধে আছে। তা ছাড়া হিমাগারে আলু সংরক্ষণের সময়ও আছে। এ অবস্থায় প্রশাসন এভাবে চাপাচাপি করলে ব্যবসায়ীরা আলু বিক্রি বন্ধ রাখবেন।’
বেচাকেনা বন্ধ এবং শেড ফাঁকা কেন- জানতে চাইলে নরওয়েস্ট কোল্ড স্টোরেজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপক মুক্তার হোসেন বলেন, ‘যেদিন থেকে আলুর দর বেঁধে দেয়া হয়েছে, সেদিন থেকেই এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ব্যবসায়ীরা আলু বিক্রি না করলে আমাদের করার কী আছে। আলু বিক্রি বন্ধ থাকায় শেড ফাঁকা পড়ে আছে। তা ছাড়া আলু সংরক্ষণের মেয়াদও আগামী ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত আছে। সে কারণে আমরা ব্যবসায়ীদের চাপও দিতে পারছি না। এই হিমাগারে রোববার বিকেল পর্যন্ত ৩৬ হাজার ৭০০ বস্তা আলু ছিল।’
বগুড়া জেলা ও জয়পুরহাট জেলার অতিরিক্ত দায়িত্বে জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক ইফতেখারুল আলম রিজভী বলেন, ‘ব্যবসায়ীদের কারসাজির কারণেই মূলত আলুর দাম এত বেশি। হিমাগারগুলোতে পর্যাপ্ত পরিমাণ আলু সংরক্ষিত আছে, এমন তথ্য আমাদের কাছে আছে। সরকার নির্ধারিত ২৭ টাকা কেজির বিপরীতে বেশি দরে আলু বিক্রি করছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা। প্রথম পর্যায়ে জরিমানাসহ তাদের সতর্ক করা, এরপর তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বিকেএসপির আঞ্চলিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র জেলা সদরে স্থাপনের দাবিতে রাঙামাটিতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার রাঙামাটি ক্লাব অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে ও আয়োজনে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
রাঙামাটি ক্লাব অ্যাসোসিশনের আহ্বায়ক মাহাবুবুল বাসেত অপুর সভাপতিত্বে ও রফিক স্মৃতি ক্লাবের সভাপতি বেলাল হোসেন সাকুর সঞ্চালনায় মানববন্ধনে রাঙামাটি জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাবেক সাধারণ সম্পাদক দীপেন তালুকদার দিপু, প্রতিভাষ ক্লাবের সাধারণ সাইফুল ইসলাম শাকিল, ছদক ক্লাবের সভাপতি প্রীতিময় চাকমা, ব্রাদাস ক্লাবের আহ্বায়ক সদানন্দ চাকমাসহ অন্যান্য নেতারা বক্তব্য রাখেন।
ফুটবলে মারি চৌধুরী, আনুচিং মগিনি, বরুণ বিকাশ দেওয়ান, মনিকা চাকমা, ঋতুপর্ণা চাকমা, রূপনা চাকমা এবং বক্সিংয়ে সুর কৃষ্ণ চাকমাসহ অনেকের সাফল্য প্রমাণ করে এই অঞ্চল সুপ্ত প্রতিভার ভাণ্ডার। তবে দুঃখজনকভাবে পর্যাপ্ত অবকাঠামো ও পেশাদার প্রশিক্ষণের অভাবে অসংখ্য প্রতিভা বিকশিত হওয়ার আগেই হারিয়ে যাচ্ছে। রাঙামাটি সদরে বিকেএসপির আঞ্চলিক কেন্দ্র হলে তা জেলার ক্রীড়া ঐতিহ্যকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাবে।
বক্তারা আরও বলেন, সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামে বিকেএসপির আঞ্চলিক কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার যে মহৎ উদ্যোগ নিয়েছে, একটি কুচক্রী মহল তা বানচাল করার ষড়যন্ত্র করছে। রাঙামাটি সদরের পরিবর্তে ব্যক্তিস্বার্থে কোনো উপজেলায় এটি স্থাপন করা হলে এর মূল উদ্দেশ্য ব্যাহত হবে। তাই মানববন্ধনে বক্তারা বিকেএসপির আঞ্চলিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র জেলা সদরে স্থাপনের জোড় দাবি জানান।
মানববন্ধন শেষে একই দাবিতে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ও বিকেএসপি মহাপরিচালক বরাবর স্মারকলিপি পাঠানো হয়।
বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটিগুলোর কার্যক্রম, সক্ষমতা ও সমন্বয় প্রক্রিয়া অনুধাবন শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে কুড়িগ্রামে। বুধবার দিনব্যাপী জেলা প্রশাসকের স্বপ্নকুড়ি সম্মেলন কক্ষে বেসরকারি সংস্থা ইএসডিও এবং হেলভেটাসের যৌথ উদ্যোগে গবেষণা ফলাফল উপস্থাপন ও যাচাইয়ের জন্য আয়োজন করা হয়।
প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আসাদুজ্জামান। জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আব্দুল মতিনের সভাপতিত্বে জেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক তানভীর আহমেদ সরকার, জেলা তথ্য কর্মকর্তা শাহজাহান আলী, জেলা সমবায় কর্মকর্তা আতিউর রহমান, হেলভেটাসের মাহমুদুল হাসান ও আয়াতুল্লাহ আল মামুন এবং ইএসডিওর মশিউর রহমান ও আবু জাফর।
দিনব্যাপী সেমিনারে কুড়িগ্রাম জেলায় ঘন ঘন ও তীব্র দুর্যোগ বিশেষ করে বন্যা ও নদীভাঙনের- মুখোমুখি হয়ে জীবিকা হারাচ্ছে, ব্যাপক বাস্তুচ্যুতি ও গুরুতর সামাজিক-অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে। স্থানীয় পর্যায়ে ওয়ার্ড, ইউনিয়ন ও উপজেলা পর্যায়ে গঠিত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটিগুলো দুর্যোগ প্রস্তুতি, প্রতিক্রিয়া ও পুনরুদ্ধারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এ পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৪ সালে হেলভেটাস বাংলাদেশের সহায়তায় একটি গবেষণা পরিচালিত হয়। যার লক্ষ্য ছিল ডিএমসিগুলোর কার্যকারিতা মূল্যায়ন ও সক্ষমতা বৃদ্ধির কৌশল নির্ধারণ করা।
সেমিনারে উপস্থাপিত গবেষণা ফলাফলে কমিটিগুলোর বিদ্যমান শক্তি ও সীমাবদ্ধতা উভয়ই তুলে ধরা হয়।
এছাড়া বিদ্যমান জাতীয় দুর্যোগ তহবিল ও বরাদ্দ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি, অঞ্চলভিত্তিকভাবে জরুরি তহবিল ব্যবহার করে সম্পদ সরবরাহ, ঘন ঘন ঘটিত দুর্যোগ মোকাবিলায় দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ যা জীবিকায়নের অগ্রগতিকে বারবার বাধাগ্রস্ত করে- এবং সরকার ও এনজিওগুলোর মধ্যে কার্যকর সমন্বয়ের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। সেমিনারে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি, জনপ্রতিনিধিসহ মিডিয়াকর্মীরা অংশ গ্রহণ করেন।
পটুয়াখালীর দুমকীতে জুলাই আন্দোলনে শহীদ বাবার কবর জিয়ারত করে ফেরার পথে কলেজশিক্ষার্থীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের মামলায় তিন কিশোরকে পৃথক আইনে সাজা দিয়েছেন আদালত। এদের মধ্যে দুই কিশোরকে ১৩ বছর করে, অন্যজনকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
বুধবার বেলা ১১টার দিকে পটুয়াখালী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক নীলুফার শিরিন এ রায় দেন।
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) আবদুল্লাহ আল নোমান রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, আদালত রায়ে উল্লেখ করেছেন, আসামিরা প্রাপ্তবয়স্ক না হওয়া পর্যন্ত শিশু সংশোধনাগারে থাকবে। এরপর প্রচলিত আইনে তারা অন্য আসামিদের মতো কারাগারে সাজা ভোগ করবে।
ঘটনার প্রায় সাত মাসের মধ্যে এ রায় দিয়েছেন আদালত। গত ২৮ মে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। এ মামলায় মোট ১৬ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়।
আদালত সূত্রে জানা যায়, মামলায় এজাহারভুক্ত দুই আসামিকে ধর্ষণের অভিযোগে ১০ বছর করে সাজা দেওয়া হয়। এছাড়া উভয়কে পর্নোগ্রাফি আইনে আরও তিন বছর করে সাজা দেন আদালত। অন্যদিকে পুলিশের অভিযোগপত্রে অন্তর্ভুক্ত হওয়া আরেক কিশোর আসামিকে ধর্ষণের অভিযোগে ১০ বছরের সাজা দেওয়া হয়েছে।
মামলার সংক্ষিপ্ত বর্ণনা সূত্রে জানা গেছে, ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর বাবা আন্দোলনের সময় গত বছরের ১৯ জুলাই রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায় গুলিবিদ্ধ হন। ১০ দিন পর ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। তাকে দুমকী উপজেলার গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হয়। গত ১৮ মার্চ সন্ধ্যায় বাবার কবর জিয়ারত করে নানাবাড়িতে ফেরার পথে দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হন ওই কলেজশিক্ষার্থী। ধর্ষণের সময় এজাহারভুক্ত আসামিরা তার নগ্ন ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে মুখ বন্ধ রাখতে বলেন। এরপর ভুক্তভোগী তার মা ও পরিবারের সঙ্গে আলোচনা করে ২০ মার্চ দুপুরে থানায় গিয়ে অভিযোগ করেন। এরপর পর্যায়ক্রমে অভিযুক্ত তিন কিশোরকে গ্রেপ্তার করা হয়। তবে ২৬ এপ্রিল রাতে রাজধানীর শেখেরটেক এলাকার ভাড়া বাসা থেকে ওই ছাত্রীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরদিন ২৭ এপ্রিল বাবার কবরের পাশে তাকে দাফন করা হয়।
পটুয়াখালী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, সাত মাস পাঁচ দিনের মাথায় রাষ্ট্র ও আসামি পক্ষের আইনজীবীর যুক্তিতর্ক শেষে আদালত রায় দিয়েছেন। রাষ্ট্রপক্ষ আদালতের রায়ে সন্তুষ্ট। আসামিরা যেহেতু কিশোর বয়সের। তাই প্রাপ্তবয়স্ক না হওয়া পর্যন্ত তাদের শিশু সংশোধনাগারে রাখার নির্দেশনা দিয়েছেন আদালত।
বরিশাল শহরকে বলা হয় রূপসী বাংলার কবি জীবনানন্দ দাশের স্বপ্নের শহর। এই আধা গ্রামীণ, আধা শহুরে পরিবেশে কবির শৈশব, কৈশোর ও যৌবনের অনেকটা সময় কেটেছে। ১৯৪৬ সালে কলকাতা যাওয়ার আগে বরিশালে তার স্থায়ী ঠিকানা ছিল বগুড়া রোডের সর্বানন্দ ভবন, যা তার স্বপ্নের বাড়ি হিসেবে পরিচিত।
বগুড়া সড়ক ধরে শীতলাখোলা পেরিয়ে ব্রজমোহন কলেজ পর্যন্ত যে পথ, সেই সড়ক ধরেই ছিল জীবনানন্দের পৈতৃক নিবাস। বাড়ির নাম এসেছে তার ঠাকুরদা সর্বানন্দ দাশের নামানুসারে। সর্বানন্দ দাশ বরিশাল কালেক্টরেটের কর্মচারী ছিলেন। বর্তমানে সেই বগুড়া সড়ক কাগজে জীবনানন্দ সড়ক নামে পরিচিত।
জীবনানন্দ দাশের স্বপ্নের বাড়ি ছিল গাছগাছালিতে ঢাকা, ফলদ বৃক্ষের সমাহারে ঘেরা। বাড়ির পেছনে ছিল মাঝারি পুকুর এবং নারকেল, সুপারি, আম, কাঁঠাল, জাম ও আনারসের বাগান। তবে বর্তমানে সর্বানন্দ ভবন তিন ভাগে বিভক্ত। বাম পাশে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের গভীর নলকূপ, ডান দিকে দপ্তরের গুদাম ও কলোনি, আর মাঝখানে একটি আবাসিক ভবন। মূল বাড়ির স্থানে দাঁড়িয়ে আছে ধানসিড়ি’নামের একটি বাড়ি। জীবনানন্দের ছোট্ট সমাধিক্ষেত্রও ছিল এই বাড়ির একাংশে, যেখানে একসময় ফুলের বাগান ও স্মৃতির মাঠ ছিল। কবি জীবদ্দশায় এই বাড়িতেই কাটাতেন নিভৃত সময়ে, তার ঘরে ছিল শোয়ার ঘর, গোসলখানা এবং বারান্দা। বড় বারান্দায় কবির হাঁটাচলা ও ভাবনার সময় যাপন হতো।
১৯৪৬ সালের জুলাইয়ে বিএম কলেজ থেকে ছুটি নিয়ে জীবনানন্দ কলকাতায় যান এবং এরপর আর দেশে ফেরেননি। দেশভাগের পর তার পরিবারও কলকাতায় চলে যায়। ১৯৫৫ সালে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দলিলের মাধ্যমে মূল বাড়ি বিক্রি হয়। পরবর্তীতে এখানে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল দপ্তরের কলোনি, গুদাম ও পানির পাম্প বসানো হয়।
বরিশালের সাহিত্যিক ও সংস্কৃতিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন ধরে কবির বসতবাড়ি সংরক্ষণের জন্য উদ্যোগ নিয়ে চলেছেন। আন্দোলন, মানববন্ধন ও সভা-সমাবেশের পর কিছুটা উদ্যোগে কবির নামে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। জীবনানন্দ দাশ পাঠাগার ও মিলনায়তন। তবে পাঠাগার ও মিলনায়তন বর্তমানে তালাবদ্ধ এবং ধুলো জমে আছে। কবি জীবনানন্দ দাশ বরিশাল ব্রজমোহন স্কুল থেকে ম্যাট্রিক, বিএম কলেজ থেকে আইএ, এবং কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ইংরেজিতে অনার্সসহ বিএ ও এমএ পাস করেছেন। আইন কলেজে ভর্তি হলেও শেষ পর্যন্ত পরীক্ষা দেননি। ১৯৫৪ সালে কলকাতায় এক ট্রাম দুর্ঘটনায় আহত হওয়ার পর ২২ অক্টোবর তিনি প্রয়াণ বরণ করেন। জীবনানন্দ দাশের উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে- ঝরাপালক, ধূসর পাণ্ডুলিপি, বনলতা সেন, জীবনানন্দ দাশের শ্রেষ্ঠ কবিতা, রূপসী বাংলা। তার অধিকাংশ কবিতার প্রেক্ষাপট বরিশাল।
বুধবার ছিল রূপসী বাংলার কবি জীবনানন্দ দাশের ৭১তম মৃত্যুবার্ষিকী। এই উপলক্ষে বরিশালে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় কবিকে স্মরণ করছেন। বরিশালের জীবনানন্দ দাশ স্মৃতি মিলনায়তনে কবির ম্যুরালে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন কবিপ্রেমীরা। সকাল সাড়ে ৯টায় কবির পৈত্রিক ভিটায় নির্মিত স্মৃতি মিলনায়তনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। এরপর বরিশাল কবিতা পরিষদ ও প্রগতী লেখক সংঘের উদ্যোগে কবি আড্ডা ও সংগীতানুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। আগুনমুখা প্রকাশনীর আয়োজনে দিনব্যাপী কবি আড্ডা ও ভ্রমণের আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়া উত্তরণ, সংস্কৃতি পরিষদসহ বিভিন্ন সংগঠন দিনভর নানা কর্মসূচি পরিচালনা করেছে।
আয়োজকদের মতে, কবি জীবনানন্দ দাশের চিন্তা ও চেতনা নতুন প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যেই এ আয়োজন করা হয়েছে।
কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার শ্রীপুর ইউনিয়নের গোপালনগর গ্রামে এক যুবদল নেতার পরকীয়ার বিচার করতে গিয়ে নারীকে নির্যাতন করেন ইউপি সদস্য। গত ১৬ অক্টোবরের ঘটনা হলেও গত মঙ্গলবার রাতে ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
পরকীয়া করতে গিয়ে জনতার হাতে আটক ওই যুবদল নেতা কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার শ্রীপুর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের সভাপতি বিল্লাল হোসেন। আর নারীকে নির্যাতন করা ওই ইউপি মেম্বার শ্রীপুর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ড গোপালনগর গ্রামের ইউপি সদস্য মো. বজলুর রহমান।
ভাইরাল হওয়ার ২ মিনিট ৫৫ সেকেন্ডের ভিডিওটিতে দেখা যায়, ইউপি মেম্বার বজলুর রহমান ওই নারীকে হাতে থাকা লাঠি দিয়ে বেধড়ক মারধর করছেন। এ সময় ওই নারী বাচারা আকুতি করছেন। পাশেই বসে আছেন পরকীয়া করতে এসে আটক হওয়া যুবদল নেতা বিল্লাল হোসেন।
এই ঘটনার পর ইউপি সদস্যের নম্বরে ফোন দিলে ভুল নম্বর বলে কল কেটে দেন তিনি।
এ ঘটনার ছড়িয়ে পড়ার পর রাতেই ওই ইউপি সদস্যের বাড়িতে যায় পুলিশ। এ কথা জানিয়ে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ হিলাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, ঘটনাটি গত বৃহস্পতর বা তার আগের। তবে মঙ্গলবার রাতেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়ে। এরপর আমরা বিষয়টি জানতে পেরে ওই ইউপি সদস্যের বাড়িতে পুলিশ পাঠাই। কিন্তু ততক্ষণে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যান ওই ইউপি সদস্য। আমরা জানতে পেরেছি ঘটনার পরেই পরকীয়া প্রেমিকের সঙ্গে ওই নারীর বিয়ের ব্যবস্থা করে তাদের পরিবার। পুলিশ ও ইউপি সদস্যের বাড়িতে আছে। বিষয়টি সম্পর্কে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করছি। এ বিষয়ে কেউ কোনো অভিযোগ দেয়নি।
কুমিল্লাতে এক স্বর্ণ ব্যবসায়িকে নকল স্বর্ণ দিয়ে প্রতারণার অভিযোগে এক নারীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, কুমিল্লাতে ব্যবসায়ীরা পুরোনো স্বর্ণ ক্রয় করে প্রতারণার শিকার হচ্ছে বারবার।
জানা যায়, গত ১৫ দিনে মুরাদনগর উপজেলার কোম্পানিগঞ্জের বাজারে স্বর্ণের দোকানে ইমিটেশন গোল্ড, সিটিগোল্ডকে পুরোনো স্বর্ণ বলে চালিয়ে দিতে এসে আটক হয়েছে নারী ও পুরুষ প্রতারক চক্রের একাধিক সদস্য। আটককৃতদের প্রাথমিকভাবে উত্তম মাধ্যম দিয়ে পুলিশে দেওয়ার পর কিছুদিন জেল খেটে বেরিয়ে এসেও একই কায়দায় তারা প্রতারণা চালিয়ে যাচ্ছে।
এই চক্র মাস না যেতেই প্রতারক আবারও যুক্ত হয় এ পেশায়। এরই ধারাবাহিকতায় গত মঙ্গলবার দুপুরে বাঙ্গরা বাজার থানাধীন বলিবাড়ীর প্রবাসীর স্ত্রী ফাতেমা (৩৫) নামে এক নারী কোম্পানিগঞ্জ বাজারে সিটিগোল্ডকে স্বর্ণ বলে পরিবর্তন করতে আসে বৃষ্টি শিল্পালয়ে নামক একটি প্রতিষ্ঠানে। ওই নারীর কথাবার্তায় দোকান মালিকের সন্দেহ হলে তাকে আটক করে।
পরে বণিক সমিতি সভাপতি চন্দন বণিক ও সাধারণ সম্পাদক আ. হান্নানকে অবহিত করা হলে বণিক সমিতি পক্ষ থেকে মুরাদনগর থানায় বিষয় জানানো হয়। এ সময় পুলিশ এসে নারীকে আটক করে নিয়ে যায়। এ বিষয়ে বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আ. হান্নান জানান, সবাই সতর্ক থেকে ব্যবসা করতে হবে, কারণ এই মাসেই কোম্পানিগঞ্জে দুটি ঘটনা ঘটে গেছে।
এ বিষয়ে মুরাদনগর থানা ইনচার্জ জানান, বিষয় শুনেছি এসআই মামুন প্রতারক নারীকে আটক করেছে।
এছাড়াও আরও ব্যবসায়ীরা জানান, কোম্পানীগঞ্জ বাজার স্বর্ণের দোকান হাজী স্বর্ণ শিল্পালয়ের থেকে গত ৮ অক্টোবর তিনজন মহিলা প্রতারক এসে দোকানদার থেকে সিটিগোল্ডের একটি চেইন এবং দুই জোড়া কানের রিং দিয়ে স্বর্ণের চেইন আংটি দুলসহ নিয়ে পালিয়ে যায়। যা সিসি ফুটেজে ধরা পড়ে।
টঙ্গীর শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালের কর্তৃপক্ষের কাছে ড্রাগ ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের আর্থিক সহযোগিতায় ২টি ইসিজি মেশিন ও ৩টি অক্সিজেন পালস মেশিন হস্তান্তর করেছে জিএমপি ভারপ্রাপ্ত কমিশনার। বুধবার হাসপাতালের অডিটোরিয়ামে এ উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (ভারপ্রাপ্ত) কমিশনার অতিরিক্ত ডিআইজি জাহিদুল হাসান।
প্রধান অতিথি বক্তব্যে জিএমপি (ভারপ্রাপ্ত) কমিশনার জাহিদুল হাসান বলেন, ভালো কাজের কোনো প্যারামিটার হয় না। সমাজের সামর্থবান মানুষ দায়িত্বশীল আচরণ করলে দেশ পরিবর্তন সম্ভব। পুলিশ শুধু আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ নয় পাশাপাশি সামাজিক ও মানবিক কর্মকাণ্ডেও সমানভাবে অংশগ্রহণ করবে। ভবিষ্যতে হাসপাতালের চিকিৎসক ও রোগীদের সুবিধার্তে প্রয়োজনীয় আরও কিছু করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তিনি।
হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. খাইরুল কবির রাজিবের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আফজালুর রহমান, গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ অপরাধ দক্ষিণ বিভাগের উপকমিশনার মহিউদ্দিন আহমেদ, ড্রাগ ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের সিনিয়র জোনাল ম্যানেজার মনসুর হেলাল, হাসপাতালে সহকারী পরিচালক ডা. ফারহানা আহমেদ, টঙ্গী পূর্ব থানার ওসি মো. ওয়াহিদুজ্জামান, ছাত্র প্রতিনিধি ও জাতীয় যুবশক্তি গাজীপুর মহানগর শাখার মুখ্য সংগঠক আকাশ ঘোষ, যুগ্ম সদস্য সচিব সাইফুল ইসলাম আকাশ, এনসিপি নেতা আসাদুজ্জামান দিপুসহ হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।
ঢাকা শহরের অতি সন্নিকটে রূপগঞ্জ, অথচ রূপগঞ্জ থেকে ঢাকা শহরে যাতায়াতের নাই কোনো গণপরিবহন। এমনকি জেলা সদরে যেতেও সিএনজি আর অটোই ভরসা। ঢাকা শহরে যাতায়াত করতে অনেকে নৌকা বা ট্রলার ব্যবহার করে থাকেন। মামলা-সংক্রান্ত কাজে আদালতে যেতে হয়, যা নারায়ণগঞ্জ জেলা সদরে অবস্থিত। সরাসরি গণপরিবহন না থাকায় রূপগঞ্জের মানুষ অটো বা সিএনজিতে যাতায়াত করতে হয়। রূপগঞ্জ থেকে ঢাকা শহরে অনেকেই চাকরি ব্যবসা-বাণিজ্য করেন। কিন্তু পরিবহন সংকটের কারণে প্রায় সঠিক সময় গন্তব্যে পৌঁছাতে পারেন না।
শিল্পাঞ্চল খ্যাত রূপগঞ্জ। কয়েক হাজার শিল্পকারখানা, পূর্বাচল উপশহরসহ বিভিন্ন আবাসন প্রকল্পের কারণে রূপগঞ্জ হয়ে উঠেছে নারায়ণগঞ্জ জেলার অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা। তবে জেলার সঙ্গে এই উপজেলায় যোগাযোগের সরাসরি কোনো গণপরিবহন ব্যবস্থা নেই। ফলে দুর্ভোগ নিয়েই প্রতিনিয়ত চলাচল করতে হচ্ছে এই অঞ্চলের বাসিন্দাদের।
নারায়ণগঞ্জ আদালতে কর্মরত নারায়ণ সরকার বলেন, ‘প্রতিদিনই আমাকে ভেঙে ভেঙে বিভিন্ন গাড়ি পরিবর্তন করে আসা-যাওয়া করতে হয়। যদি রূপগঞ্জ থেকে সরাসরি একটি বাস সার্ভিস নারায়ণগঞ্জে চলাচল করত তাহলে আমাদের জন্য ভালো হতো। এখন সময় যেমন বেশি লাগে, তেমনি অতিরিক্ত খরচও হয়।’
ব্যবসায়ী মিজান মিয়া জানান, ‘রূপগঞ্জের মানুষকে শহরে যেতে হলে একাধিক গাড়ি বদল করে যেতে হয়। যে কারণে কর্মজীবী যাত্রী সাধারণকে ভেঙে ভেঙে অথবা অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে যানবাহন রিজার্ভ নিয়ে কর্মস্থলে যোগ দিতে হয়। সরাসরি গণপরিবহন চালু না হওয়াটা খুবই দুঃখজনক।’
তারাব পৌর এলাকার বাসিন্দা রাহুল পরাজী আমাদের প্রতিনিধিকে বলেন, ‘জমি-জমা নিয়ে বিরোধের জেরে নারায়ণগঞ্জ জেলা আদালতে তার একটি মামলা চলমান রয়েছে। এ কারণে মাসে একাধিকবার তাকে জেলা সদরে যেতে হয়।’
তিনি বলেন, ‘গণপরিবহনের ব্যবস্থা করা হলে সাধারণ মানুষ নির্বিঘ্নে নারায়ণগঞ্জের অফিস আদালতের কাজ করতে পারবে।’
অ্যাডভোকেট আবুল বাশার রুবেল জানান, ‘তিনি নারায়ণগঞ্জ জেলা আদালতে আইনজীবী হিসেবে কাজ করছেন। প্রতিদিনই তাকে সিএনজি রিজার্ভ করে আর না হয় বিভিন্ন গাড়ি বদল করে যাতায়াত করতে হয়। বৃষ্টির দিনে ঝামেলা পোহাতে হয় অনেক বেশি। এ বিরম্বনা থেকে মুক্তি পেতে নারায়ণগঞ্জেই বাসা ভাড়া করে থাকেন এখন।’
রূপগঞ্জ থেকে নারায়ণগঞ্জ জেলা সদরের সরাসরি পরিবহন সেবা চালু হওয়া জরুরি বলে মনে করেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
পরিবহন ব্যবসায়ী ও শুভসংঘ বাস সার্ভিসের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মকবুল হোসেন বলেন, ‘রূপগঞ্জের মানুষের সরকারি সব নাগরিক সুযোগ-সুবিধা, ব্যবসা-বাণিজ্য ও নানা কাজে, প্রতিনিয়তই নারায়ণগঞ্জ শহরে যাতায়াত করতে হয়। কিন্তু রূপগঞ্জ থেকে নারায়ণগঞ্জ শহরে সরাসরি কোনো গণপরিবহন চালু না থাকায় এ জনপদের বাসিন্দাদের ভোগান্তি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘শুভসংঘ বাস সার্ভিস থেকে ভৈরব রোডে আমাদের বেশ কিছু গাড়ি চলাচল করছে। শুভসংঘ বাস সার্ভিসের পক্ষ থেকে ভুলতা গাউছিয়া থেকে নারায়ণগঞ্জ শহরে সরাসরি বাস সার্ভিস চালু করার বিষয়ে কাজ চলছে।’
রূপগঞ্জের বর্তমান অভিভাবক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম জয় বলেন, ‘এই উপজেলায় যাত্রীবাহী বাস চালু করতে হলে স্থানীয় উদ্যোক্তাদেরই উদ্যোগ নিতে হবে। আমাদের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে।’
বিমানবন্দরে আগুন লাগার ঘটনাকে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার নাশকতার অংশ হিসেবে মন্তব্য করে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমান বলেছেন, পার্শ্ববর্তী দেশে বসে শেখ হাসিনা এখনো বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র করছেন। আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের মাধ্যমে দেশ ও জনগণের ক্ষতি করা হচ্ছে। সুতরাং, বিমানবন্দরের আগুনের ঘটনাটি স্বাভাবিক নয়।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে ডেমোক্রেটিক লীগের (ডিএল) সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও ৯০-র গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম সংগঠক সাইফুদ্দিন আহমেদ মনির দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত স্মরণসভায় তিনি এসব কথা বলেন।
আমান বলেন, তার (হাসিনার) প্রেতাত্মা এখনো সক্রিয়। তাই সরকারের প্রতি অনুরোধ থাকবে- এই ঘটনাসহ সব ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে।
তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন- নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতে হবে। আমরা বিশ্বাস করি, ওই সময়ই নির্বাচন হবে। তবে নির্বাচন নিয়েও নানা ষড়যন্ত্র চলছে। যারা নির্বাচনের পথে বাধা দিতে চাইবে, জনগণ তাদের প্রতিহত করবে।
স্মরণসভায় আমান সাইফুদ্দিন আহমেদ মনিকে স্মরণ করে বলেন, নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র ঐক্যের অন্যতম নেতা ছিলেন মনি ভাই। তিনি আদর্শ রাজনৈতিক নেতা ছিলেন, সাধারণ জীবনযাপন করতেন এবং রাজনীতির বাইরে কোনো চিন্তা করেননি।
স্মরণসভায় সভাপতিত্ব করেন সাইফুদ্দিন আহমেদ মনি স্মৃতি সংসদের আহ্বায়ক মো. ফরিদ উদ্দিন। সঞ্চালনা করেন সংগঠনের সদস্য সচিব খোকন চন্দ্র দাস। অনুষ্ঠানে ‘৯০-এর ছাত্র গণঅভ্যুত্থানের’ সাবেক ছাত্রনেতারা, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট ও ১২-দলীয় জোটের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের জানকিছড়া এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় সিরাজ মিয়া (৬৫) কমিউনিটি পেট্রোলিং বন টহল দলের সদস্য (সিপিজি) নিহত হয়েছেন। নিহত সিরাজ মিয়া শ্রীমঙ্গল সদর ইউনিয়নের ডলুছড়া গ্রামের বাসিন্দা।
বুধবার (২২ অক্টোবর) ভোরে লাউয়াছড়া বন বিটের আওতাধীন জানকিছড়া ক্যাম্পের রাতের ডিউটি শেষ করে বাড়ি ফেরার সময় দ্রুতগামী গাড়ির চাপায় তার মৃত্যু হয়।
জানা যায়,কমলগঞ্জ লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান এলাকার ডলুছড়া বন টহল দলের (সিপিজি) একজন সদস্য হিসেবে দীর্ঘ সময় থেকে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।
স্থানীয় ও বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, প্রতিদিনের মত রাতের ডিউটির দায়িত্ব পালন শেষে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের জানকিছড়া এলাকায় শ্রীমঙ্গল ভানুগাছ সড়কে পায়ে হেটে মো. সিরাজ মিয়া বাড়ি ফিরছিলেন। এ সময় একটি দ্রুতগামী গাড়ি তাকে পেছন থেকে চাপা দিয়ে দ্রুত পালিয়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। পরে খবর পেয়ে বন বিভাগ, কমলগঞ্জ থানা পুলিশ ও স্থানীয় লোকজন ঘটনাস্থলে ছুটে যান এবং নিহতের মরদেহ উদ্ধার করেন।
এবিষয়ে জানতে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান সহ ব্যাবস্থাপনা নির্বাহী কমিটির কোষাধ্যক্ষ জনক দেববর্মা বলেন, দূর্ঘটনার খবর পেয়ে বনবিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা সহ ঘটনাস্থলে ছুটে যায়। আমরা লাউয়াছড়া সহ-ব্যাবস্থাপনা নির্বাহী কমিটির সকল সদস্য ও বনবিভাগ নিহত সিরাজ মিয়ার পরিবারের পাশে আছি। এসময় তাৎক্ষণিক ভাবে সিরাজ মিয়ার পরিবারকে আর্থিক সহযোগীতা করা হয়।
বিষয়ে কমলগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবু জাফর মো মাহফুজুল কবির বলেন, নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় কোন অভিযোগ দেয়া হবে না বলে জানানো হয়েছে। পরে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে মরদেহ নিহতের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
কিশোরগঞ্জের ভৈরবে ট্রাকের ধাক্কায় প্রাণ হারালো পুলিশ সদস্য নাজমুল (২৮)।
সে কিশোরগঞ্জ জেলার পাকুন্দিয়া থানার চরমান্দার কান্দি এলাকার রাজু মিয়ার ছেলে।
টাঙ্গাইল জেলার গোড়াই থানা হাইওয়ে থেকে ২০২৪ সালের ৪ অক্টোবর ভৈরব থানায় যোগ দেন। ব্যক্তি জীবনে তিনি বিবাহিত। তার স্ত্রী ও এক ছেলে সন্তান রয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার দিবাগত রাত সাড়ে ৩টার দিকে ভৈরব-কিশোরগঞ্জ আঞ্চলিক সড়কের কালিকাপ্রসাদ এলাকায় এই দুর্ঘটনায় এই ঘটনাটি ঘটেছে।
জানা যায়, গতকাল মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৩টার দিকে ভৈরব হাইওয়ে থানার এএসআই বিল্লাল হোসেন, নাজমুল, আনিসুর রহমান, শাহ আহসান হাবিবসহ রাত্রীকালীন জরুরী ডিউটি চলাকালীন ভৈরব থানাধীন কালিকা প্রসাদ বাজারের দক্ষিণ পাশে কিশোরগঞ্জ ভৈরব আঞ্চলিক মহাসড়কের ভৈরব গামী লেনের পাশে দাঁড়িয়ে ঢাকা মেট্রো ড-১২-৫৮১৫ ট্রাকের চালকের সাথে কথা বলার সময় ভৈরবগামী দ্রুত বেপরোয়া গতিতে অজ্ঞাতনামা একটি ট্রাক এসে পুলিশ পিকআপ ভ্যানের ডানপাশে সজরে ধাক্কা দিলে পিকআপ ভ্যানটি বাম পাশে নিচে পড়ে যায়। এসময় গাড়ির সাথে ধাক্কা খেয়ে পুলিশ সদস্য নাজমুল মাথায় গুরুতর আঘাত পায়। পরে তাকে উদ্ধার করে দ্রুত ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালে চিকিৎসা জন্য নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এবিষয়ে ভৈরব হাইওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জানান, গতকাল রাতে কিশোরগঞ্জ আঞ্চলিক সড়কে জরুরি ডিউটি চলাকালীন সময়ে বেপরোয়া একটি অজ্ঞাতনামা একটি ট্রাকের ধাক্কায় পুলিশ সদস্য নাজমুল গুরুতর আহত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। তার মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য কিশোরগঞ্জ মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে বলে তিনি জানান।
রংপুরের তারাগঞ্জে উল্টো পথে আসা একটি বাসের চাপায় মোতালেব হোসেন (৩৫) নামে এক ইজিবাইক চালক নিহত হয়েছেন।
বুধবার (২২ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ৫টার দিকে দিনাজপুর-রংপুর মহাসড়কের ইকরচালী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত মোতালেব নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা। এ ঘটনায় গুরুতর আহত একজনকে স্থানীয়রা উদ্ধার করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ময়মনসিংহ থেকে ছেড়ে আসা সৈয়দপুরগামী ভাই ভাই মুরাদ ক্লাসিক পরিবহন নামের একটি যাত্রীবাহী বাস ইকরচালী বাসস্ট্যান্ডে এসে হঠাৎ উল্টো পথে ঢুকে পড়ে। এ সময় মহাসড়কের বিপরীত দিক থেকে আসা ইজিবাইকটিকে চাপা দিয়ে সড়কের পাশে থাকা দোকানের সামনে থাকা পিলারে আটকে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই চালক মোতালেব হোসেন মারা যান।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বাসটি বাম দিকে যাওয়ার কথা থাকলেও ডান দিকে সড়কের ধারে রাখা পিলারে আটকে আছে। উৎসুক লোকজন, স্কুল শিক্ষার্থীরা বাসটি ঘিরে রেখেছেন। এতে সড়কের একাংশ সংকুচিত হওয়ায় আবারও দুর্ঘটনা শঙ্কা রয়েছে। সকাল সাড়ে ৯টা পর্যন্ত সেখানে কোনো পুলিশ সদস্য দেখা যায়নি।
প্রত্যক্ষদর্শী ভাতের দোকানদার আতিয়ার রহমান বলেন, আমার দোকানের সামনেই ঘটনা। সকালে দোকান খোলার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম, হঠাৎ দেখি বাসটা বাম থেকে ডান দিকের লেনে হাই স্পিডে ঢুকে যায়। এ সময় ডান দিক থেকে আসা অটো গাড়ির নিচে চাপা পড়ে যায়। ঘটনাস্থলে একজন মারা যায়।
পাশের আরেক দোকান মালিক জিয়াউর প্রামনিক বলেন, প্রায়ই দেখি উল্টো পাশ দিয়ে গাড়ি এই স্ট্যান্ডে ওভারটেক করে। এর আগেও এমন দুর্ঘটনায় প্রাণ গেছে অনেক মানুষের। কিন্তু এগুলো বন্ধ করার উপায় নাই।
তারাগঞ্জ হাইওয়ে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, দুর্ঘটনার খবর পেয়ে আমরা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে অটোরিকশা চালক মোতালেব হোসেনের মরদেহ উদ্ধার করেছি। দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়া অটোরিকশা ও মুরাদ পরিবহনের বাসটি জব্দ করা হয়েছে। বাসটি সড়ক থেকে সরিয়ে নিতে হবে। বাসচালক পালিয়ে গেছে।
বরিশালের হিজলার মেঘনা নদীতে নৌপুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের বিশেষ আভিযানিক টিম কর্তৃক ব্যাপক অভিযান চালিয়েছে।
গত সোমবার দিনব্যাপী নৌপুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের বিশেষ টিম ও নৌপুলিশ বরিশাল অঞ্চল যৌথভাবে হিজলার মেঘনা নদীতে বিভিন্ন পয়েন্টে ব্যাপক অভিযান পরিচালনা করে। নৌপুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি কুসুম দেওয়ানের সার্বিক নির্দেশনায় ও নৌপুলিশের ডিআইজি মো. মিজানুর রহমান পিপিএম (বার) এর নেতৃত্বে সরকার ঘোষিত মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান-২০২৫ উপলক্ষে এই বিশেষ অভিযান পরিচালিত হয়।
অভিযানে ৮ লাখ ২৫ হাজার মিটার অবৈধ জাল ও ১৮০ কেজি ইলিশ মাছ জব্দ এবং ৭টি নৌকা উদ্ধার করা হয়। তাছাড়া ২৩টি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করাসহ ৩ জন অপরাধীকে গ্রেপ্তার করে নিয়মিত মামলা রুজু করে প্রয়োজনীয় পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। অভিযানে জব্দকৃত জাল ধ্বংস করা হয় এবং মাছ স্থানীয় গরিব, অসহায় ও এতিমখানায় বিতরণ করা হয়।
ওই অভিযানে নৌপুলিশ হেডকোয়ার্টার্স, ঢাকার পুলিশ সুপার (অ্যাডমিন অ্যান্ড ফাইনান্স) মাসুমা আক্তার, নৌপুলিশ বরিশাল অঞ্চলের পুলিশ সুপার এসএম নাজমুল হক বিপিএম (বার), পিপিএম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোস্তফা কামাল পিপিএম (বার), মো. ইমরান হোসেন মোল্লা পিপিএম, সহকারী পুলিশ সুপার (বরিশাল/ পটুয়াখালী জোন) ও সোহেল মিয়া, সহকারী পুলিশ সুপার (প্রকিউরমেন্ট)-সহ নৌপুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে কর্মরত অফিসার ও ফোর্স অংশগ্রহণ করেন। বিশেষ আভিযানিক টিমের পাশাপাশি ওইদিন নৌপুলিশের বরিশাল অঞ্চলের হিজলা নৌপুলিশ ফাঁড়ি, কালীগঞ্জ নৌপুলিশ ফাঁড়ি ও অস্থায়ী ক্যাম্পসমূহ তাদের চলমান অভিযান জোরদারভাবে অব্যাহত রাখে। অপারেশনাল কার্যক্রমের অংশ হিসেবে সরকারি আদেশ অমান্য করে অবৈধ কারেন্ট জালসহ বিভিন্ন জাল দিয়ে মা ইলিশ ধরা জেলেদের কার্যক্রম সনাক্ত করার জন্য হিজলা এলাকাধীন মেঘনা নদীর বিভিন্ন স্থানে ড্রোন প্রযুক্তির মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করা হয়।
সরকার ঘোষিত নিষেধাজ্ঞা চলাকালে করণীয়-বর্জনীয় সম্পর্কে লিফলেট বিতরণ ও জনসচেতনামূলক প্রচারণা কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। ২২ দিনের মা ইলিশ রক্ষা অভিযান সফল করার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ নৌপুলিশ। এ লক্ষ্যে নৌপুলিশের বিভিন্ন ইউনিট অন্যান্য স্টেকহোল্ডারদের সাথে দিনে-রাতে সার্বক্ষণিক কাজ করছে। উল্লেখ্য গত ৪ অক্টোবর থেকে এই অভিযান শুরু হয়েছে এবং আজ ২২ অক্টোবর (বুধবার) পর্যন্ত অভিযান অব্যাহত থাকবে।