৮৫ হাজার বস্তা ধারণক্ষমতা জয়পুরহাটের কালাই পৌর শহরের নরওয়েস্ট কোল্ড স্টোরেজ লিমিটেডের। গত রোববার বিকেলে জেলার বিভিন্ন হিমাগারে আলু বেচাকেনা হলেও বন্ধ ছিল কালাই পৌর শহরের নরওয়েস্ট হিমাগার। শুধু তাই নয়, ফাঁকা ছিল শেড। হিমাগারের মূল ফটকে ঝুলছিল তালা। অথচ এখনো ওই হিমাগারে মজুত আছে ৩৬ হাজার ৭০০ বস্তা আলু।
সরকারের বেঁধে দেয়া দরে হিমাগারগুলোতে আলু বিক্রি হচ্ছে কি না, তা তদারকি করছে জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরসহ প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তর। নরওয়েস্ট হিমাগারে এমন দৃশ্য দেখে হতবাক বাজার তদারকির দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা।
তবে হিমাগারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ব্যবসায়ীরা যদি তাদের আলু বিক্রি না করে, তাহলে হিমাগার কর্তৃপক্ষের কিছু করার নেই। তারা সর্বোচ্চ ব্যবসায়ীদের তালিকা দিতে পারেন।
আর ভোক্তা অধিকারের নির্দেশ, আগামী ২-১ দিনের বেঁধে দেয়া দরে আলু বিক্রি শুরু করতে হবে। তা না হলে হিমাগার সিলগালা করে সরকারের বেঁধে দেয়া দরে আলু বিক্রি করে ব্যবসায়ীদের কাছে টাকা পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত কয়েক দিনে ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে হিমাগার গেটে পাইকারি ৪০ থেকে ৪২ টাকা কেজি দরে আলু বেচাকেনা হচ্ছে। সেই আলু খুচরা বাজারে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এ অবস্থায় সরকার হিমাগার গেটে আলু পাইকারি সর্বোচ্চ ২৭ টাকা কেজি বিক্রির জন্য দর বেঁধে দেয়। কিন্তু সরকারের বেঁধে দেয়া দর মানছেন না ব্যবসায়ীরা। উল্টো প্রশাসনের বাজার তদারকি জোরদার হওয়ায় হিমাগারগুলোতে আলু বেচাকেনা বন্ধ রয়েছে।
এ ব্যাপারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যবসায়ী বলেন, ‘বিগত বছরের লোকসানের ভার থেকে আজও মুক্ত হতে পারেননি তারা। ব্যাংকের ঋণ আজও জট বেঁধে আছে। তা ছাড়া হিমাগারে আলু সংরক্ষণের সময়ও আছে। এ অবস্থায় প্রশাসন এভাবে চাপাচাপি করলে ব্যবসায়ীরা আলু বিক্রি বন্ধ রাখবেন।’
বেচাকেনা বন্ধ এবং শেড ফাঁকা কেন- জানতে চাইলে নরওয়েস্ট কোল্ড স্টোরেজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপক মুক্তার হোসেন বলেন, ‘যেদিন থেকে আলুর দর বেঁধে দেয়া হয়েছে, সেদিন থেকেই এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ব্যবসায়ীরা আলু বিক্রি না করলে আমাদের করার কী আছে। আলু বিক্রি বন্ধ থাকায় শেড ফাঁকা পড়ে আছে। তা ছাড়া আলু সংরক্ষণের মেয়াদও আগামী ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত আছে। সে কারণে আমরা ব্যবসায়ীদের চাপও দিতে পারছি না। এই হিমাগারে রোববার বিকেল পর্যন্ত ৩৬ হাজার ৭০০ বস্তা আলু ছিল।’
বগুড়া জেলা ও জয়পুরহাট জেলার অতিরিক্ত দায়িত্বে জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক ইফতেখারুল আলম রিজভী বলেন, ‘ব্যবসায়ীদের কারসাজির কারণেই মূলত আলুর দাম এত বেশি। হিমাগারগুলোতে পর্যাপ্ত পরিমাণ আলু সংরক্ষিত আছে, এমন তথ্য আমাদের কাছে আছে। সরকার নির্ধারিত ২৭ টাকা কেজির বিপরীতে বেশি দরে আলু বিক্রি করছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা। প্রথম পর্যায়ে জরিমানাসহ তাদের সতর্ক করা, এরপর তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেছেন, ‘দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে হত্যার ষড়যন্ত্র করছে এই সরকার। নেত্রীকে এই মৃত্যুর হাত থেকে যদি বাঁচাতে হয় তাহলে ঘরে সময় কম দিতে হবে। রাস্তায় দাঁড়াতে হবে। রাস্তায় নামা ছাড়া নেত্রীর মুক্তির অন্য কোনো পথ নেই।’
রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) শনিবার ডাকসুর সাবেক ভিপি আমান উল্লাহ আমানের নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। ৯০-এর ডাকসু ও সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য এবং সাবেক ছাত্রদল নেতাদের উদ্যোগে এই আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে এই সরকারের পদত্যাগ করাতে হবে। সরকারের পদত্যাগ ছাড়া খালেদা জিয়া মুক্ত হবেন না। রাস্তায় নামা ছাড়া আমান উল্লাহ আমানের মুক্তি হবে না।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আর ক্ষমতায় থাকছেন না উল্লেখ করে শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ‘কে কখন জেলে যায়, ঠিক নেই। কার কখন বিচার হয় সাজা হয় এটারও ঠিক নেই। তবে একটা বিষয় ঠিক আছে, শেখ হাসিনা আর ক্ষমতায় থাকছেন না। চারদিকের অবস্থা ভালো না। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গতকাল বলেছেন, শেখ হাসিনাকে বাদ দিয়ে নির্বাচন হবে না। এতদিন বললেন শেখ হাসিনাকে ছাড়া নির্বাচন হবে না। এখন বাদ দেয়ার প্রশ্ন চলে এসেছে। সবকিছু আল্লাহই ভালো জানেন। তবে এই জীবনে কম তো দেখলাম না। এরশাদকে দেখেছি, তার আগেও অনেক কিছু দেখেছি।’
শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ‘বিএনপি যদি আবার এই দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে না পারে তাহলে এই দেশের অস্তিত্ব থাকবে কি না সন্দেহ আছে। আমরা আগে ছিলাম এখনো আছি, ইনশাল্লাহ সামনে থাকবো। তবে তরুণদের দায়িত্ব নিতে হবে। গণতন্ত্রের প্রথম বিজয় আমরা ৯০-তে করেছি। দ্বিতীয় বিজয় আমরা দেখতে চাই এবং সেটি অক্টোবরের মধ্যেই হবে, হবেই হবেই।’
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকনের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিবসহ অন্যরা।
ময়মনসিংহের গৌরীপুরে র্যাবের অভিযানে মাদকারবারিদের হামলায় আটক ব্যক্তি হাতকড়াসহ পালিয়ে গেছে। এ সময় র্যাবের দুই সদস্য আহত হয়েছেন। গত শুক্রবার রাতে সহনাটি ইউনিয়নের দৌলতাবাদ গ্রাম এ ঘটনা ঘটে।
পালিয়ে যাওয়া মাদক কারবারির নাম মিজানুর রহমান মিঠু (২৮)। এ ঘটনায় র্যাবের উপপরিদর্শক (এসআই) আনিছুর রহমান বাদী হয়ে গৌরীপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন।
মামলার এজাহার থেকে জানা গেছে, র্যাব-১৪ কিশোরগঞ্জ কোম্পানি-২ একটি দল ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার দৌলতাবাদ গ্রামের জিকু মিয়ার বাড়িতে অভিযান চালায়। মাদক ব্যবসায়ীরা র্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে দুইটি পলিথিনের ব্যাগ ইয়াবা নিয়ে পালানোর সময় মিজানুর রহমান মিঠুকে আটক করে। এ সময় মিঠুর চিৎকারে তার সহযোগী দৌলতাবাদ গ্রামের স্বপন মিয়ার ছেলে জিকু মিয়া (৩০), মো. রফিকুল ইসলাম ওরফে টুকু (২৫), স্বপন মিয়ার স্ত্রী ফরিদা বেগম (৪৫), মৃত গোলাম মোস্তফার স্ত্রী জুলেখা বেগমসহ (৫০) ৪/৫ জন লাঠি সোটা, বল্লম ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে র্যাব সদস্যদের ওপর হামলা চালায়।
এই সুযোগে আটক মিঠু হাতকড়াসহ পালিয়ে যায়। তাদের হামলায় র্যাব সদস্য কনস্টেবল সীমান্ত দে ও সৈনিক ওয়ালীদ হাসান আহত হয়। পরে তাদের গৌরীপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়।
বৈরী আবহাওয়ার কারণে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌপথে জাহাজ চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছে উপজেলা প্রশাসন। ফলে শনিবার সকালে সেন্টমার্টিনের উদ্দেশে কোনো জাহাজ ছেড়ে না যাওয়ায় প্রায় দেড় শতাধিক পর্যটক দ্বীপে আটকা পড়েছেন।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী বলেন, ‘সাগর উত্তাল রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে নৌপথে যাতায়াতে ঝুঁকি রয়েছে। তাই টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌপথে সব ধরনের জলযান চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে নির্দেশনা অনুযায়ী পুনরায় এই রুটে জাহাজ চলাচল শুরু হবে।’
সেন্টমার্টিন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমানের বরাতে তিনি বলেন, ‘জাহাজ চলাচল বন্ধ ঘোষণার আগে সেন্টমার্টিনে অবস্থান করা পর্যটকদের উদ্দেশ্যে দ্বীপ ছাড়ার জন্য মাইকিং করা হয়েছিল। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত কোনো ধরনের জলযান চলাচল করবে না, তাও বলা হয়েছে। এরপরও দেড় শতাধিক পর্যটক দ্বীপে থেকে গেছেন।’
তাদের ফিরিয়ে আনার বিষয়ে জানতে চাইলে ইউএনও বলেন, ‘যেহেতু তারা নির্দেশনা না মেনে দ্বীপে থেকে গেছেন। তাই পরিস্থিতি ভালো না হওয়া পর্যন্ত সেখানেই থাকতে হবে। তাদের আনতে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি এখন নেই।’
সেন্টমার্টিন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলেন, ‘মাইকিং করার পরেও পর্যটকরা তাদের ইচ্ছায় থেকে গেছেন। তবে এখানে ভয় নেই। স্থানীয়রা যেভাবে থাকছি, পর্যটকদেরও সেভাবে নিরাপদে রাখা হবে।’
ফেনীর ছাগলনাইয়া পৌর এলাকায় সেপটিক ট্যাংক থেকে দুই নির্মাণ শ্রমিকের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। শনিবার সকালে পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের থানাপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন, খাগড়াছড়ি জেলার রামগড় থানার রামগড় করইয়া বাগান এলাকার ছেরাজুল হকের ছেলে মাইন উদ্দিন ও বাগেরহাট জেলার কচুয়া থানার সাংদিয়া গ্রামের রবীন্দ্র দাসের ছেলে বিকাশ চন্দ্র দাস।
স্থানীয়রা জানান, শুক্রবার বিকেল থেকে তাদের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। আজ সকালে নির্মাণাধীন ভবনের আশপাশে খোঁজ করতে এলে দেখতে পাওয়া যায় তাদের মরদেহ সেপটিক ট্যাংকের ভেতরে পড়ে আছে। পরে পুলিশকে খবর দিলে তারা ঘটনাস্থলে এসে ট্যাংক ভেঙে মরদেহ দুটি উদ্ধার করে।
ছাগলনাইয়া, ফুলগাজী, পরশুরামের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সার্কেল) মো. ওয়ালী উল্লাহ বলেন, ‘সেপটিক ট্যাংক ভেঙে মরদেহ দুটি উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে আমরা ধারণা করছি। একজন শ্রমিক সেন্টারিং খোলার জন্য নিচে নামলে সেখানে গ্যাসে আক্রান্ত হয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়েন। পরে আরেকজন শ্রমিক তাকে উদ্ধার করার জন্য নেমে তিনিও গ্যাসে আক্রান্ত হয়ে অজ্ঞান হয়ে সেখানে থাকা পানিতে ডুবে মৃত্যুবরণ করে। তারপরেও আমরা পুরো বিষয়টিকে তদন্ত করছি। পাশাপাশি ময়নাতদন্তের মাধ্যমে আসল ঘটনাটি উদঘাটন করা হবে।’
কুমিল্লার দৌলতপুরে ছায়া বিতান এলাকা থেকে একটি বিদেশি পিস্তল দুই রাউন্ড গুলি এবং একটি ম্যাগজিনসহ এক নারীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
গ্রেপ্তার নারীর নাম সেতারা আক্তার (২৪)। তিনি দৌলতপুর ছায়াবিতান এলাকার বাসিন্দা। এ সময় মো. দাউদ (৩০) নামে একজন পালিয়ে যায়। সম্পর্কে তিনি সেতারা আক্তারের ভাই।
শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নাজমুল হাসান।
তিনি বলেন, ‘গোপন সংবাদের ভিত্তিতে শুক্রবার দিবাগত গভীর রাতে কোতয়ালী মডেল থানার একটি টিম অভিযান পরিচালনা করে। এ সময় ছায়া বিতান এলাকার একটি ভাড়া ঘরের ভেতর তল্লাশি চালিয়ে পিস্তল, গুলি ও ম্যাগজিন উদ্ধার করা হয়। এসময় একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তবে পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে আরেকজন পালিয়ে যায়।’
এ বিষয়ে কোতয়ালী মডেল থানায় অস্ত্র আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
বিয়ের গায়ে হলুদ অনুষ্ঠানে বাঁশ দিয়ে ডেকোরেশনের কাজ শুরু করে জনপ্রিয় হয়েছে সিরাজ কুঠিরশিল্প। মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে কাঠ ও বেতের ফার্নিচারের পাশাপাশি বাঁশের ফার্নিচার এগিয়ে যাচ্ছে।
বাজারে বিভিন্ন নকশা ও কারুকার্যসম্পন্ন কাঠের ফার্নিচার বহু আগে থেকেই পাওয়া গেলেও এখন বাঁশের ফার্নিচারগুলো পাওয়া যায়। স্থানীয় পাহাড় টিলা থেকে সংগৃহীত বাঁশ দিয়ে তৈরি এসব ফার্নিচারের চাহিদা বাড়ছে দেশি-বিদেশি পর্যটক ও স্থানীয়দের কাছে।
কমলগঞ্জ উপজেলার শমশেরনগরের আমির হোসেন সিরাজ নামে এক যুবক ২০০৩ সালে ২০ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে মাত্র একজন শ্রমিক দিয়ে বাঁশের ফার্নিচারের কারখানা শুরু করেন। এখন সেখানে কাজ করেন ১০ থেকে ১৫ জন শ্রমিক।
সরেজমিন উপজেলার শমশেরনগর ইউনিয়নের শমশেরনগর-কমলগঞ্জ সড়কের পাশে বড়চেগ গ্রামের আমির হোসেন সিরাজের বাঁশের ফার্নিচারের কারখানায় দেখা যায়, তিনি নিজ গ্রামে গড়ে তুলেছেন বাঁশ ও বেতের আধুনিক ফার্নিচারের কারখানা। বড় বড় স্থানীয় ফার্নিচারের দোকানের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাঁশের ব্র্যান্ডের ফার্নিচার তৈরি করছেন। গ্রাম থেকেই তিনি সারা দেশসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে বিক্রি করছেন বাঁশের ফার্নিচার। নিজ বাড়িতে বাঁশ দিয়ে দুতলা একটি বাড়িও বানিয়েছেন।
বিশেষ করে এখানে আধুনিক ডিজাইনের সোফাসেট, খাট, ডাইনিং টেবিল, চেয়ার, আলনা, ড্রেসিং টেবিল, দরজা, জানালা, ফুলের টব, রিডিং টেবিল, টেবিল ল্যাম্প, পেনস্ট্যান্ড বাঁশ দিয়ে তৈরি করা হয়। এ ছাড়া রিসোর্ট ও কটেজের ফার্নিচার, হোটেল-রেস্টুরেন্ট ও অফিসের ফার্নিচারসহ বিভিন্ন ধরনের চাহিদাসম্পন্ন আসবাবপত্র তৈরি করে দেয়া হয়।
স্থানীয়রা জানান, সিরাজ তার একান্ত প্রচেষ্টায় এই শিল্প গড়ে তুলেছেন। তুলনামূলক বাঁশের ফার্নিচারের দাম কম। বিশেষ করে পর্যটন এলাকা হওয়ায় অনেক মানুষ এখানে ঘুরতে আসেন এবং এ পথ দিয়ে শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ হয়ে পর্যটকরা বড়লেখায় মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত দেখতে যান। পর্যটকদের কাছে চাহিদা বাড়ায় এ কুঠিরশিল্প ভালোই চলছে। এখানে স্থানীয় এলাকার অনেক যুবকের কর্মসংস্থান হয়েছে।
সিরাজ কুটিরশিল্পে যারা কাজ করেন তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ফার্নিচার তৈরির জন্য প্রথমে বাঁশ ভালোভাবে শুকিয়ে নিতে হয়। এরপর বাঁশের আকার অনুযায়ী আলাদা আলাদা রাখতে হয়। শুকনোর পর পোকায় না ধরার জন্য ওষুধ দিয়ে আবার শুকাতে হয়। একটি বড় ফার্নিচার তৈরি করতে ৩ থেকে ৪ সপ্তাহ লেগে যায়। ছোট আইটেমগুলো সবচেয়ে বেশি চলে। বেশির ভাগ মানুষ শখের বসে এগুলো কিনে নিয়ে যায়। যতদিন যাচ্ছে মানুষ বাঁশের ফার্নিচারের প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছেন।
সিরাজ কুটিরশিল্পের স্বত্বাধিকারী আমির হোসেন সিরাজ বলেন, ‘এখন থেকে ২০ বছর আগে শুরু করেছিলাম বাঁশের ফার্নিচারের কারখানা। শুরুতে প্রতিবেশীদের বিয়ের গায়ে হলুদ অনুষ্ঠানে বাঁশের ডেকোরেশন দিয়ে শুরু হয় কাজ। এরপর বাণিজ্যিক ভাবনায় বাঁশের ফার্নিচার তৈরি শুরু করি। প্রথম দিকে সাড়া কম পেলেও গত এক দশক ধরে খুব ভালোই চলছে। শৌখিন মানুষজনের কাছে বাঁশের ফার্নিচারের কদর বেড়েছে।’
তিনি বলেন, ‘পর্যটন এলাকা থাকায় এখানে দেশি ক্রেতার পাশাপাশি অনেক বিদেশি ক্রেতা আসেন। অনলাইনে অর্ডার নিয়ে বিক্রি করে কুরিয়ার সার্ভিসে ফার্নিচার পাঠান। কেউ কেউ আবার বিদেশেও পাঠান। বিদেশে এর প্রচুর চাহিদাও আছে। সবকিছু মিলে বছরে প্রায় ৩৫ থেকে ৪০ লাখ টাকার ফার্নিচার বিক্রি হয়।’
মৌলভীবাজার বিসিকের উপব্যবস্থাপক বিল্লাল হোসেন ভূঁইয়া সিরাজ কুঠিরের বাঁশের ফার্নিচারের বিষয়ে বলেন, ‘পূর্ণাঙ্গ শিল্পের জন্য ব্যাংক ছাড়া আমরা বড় ঋণ দিতে পারি না। তবে ছোট ছোট ঋণের জন্য আমাদের কাছে এলে তাদের সহযোগিতা করতে পারি। এ ক্ষেত্রে সিরাজ কুঠিরশিল্প সহযোগিতা চাইলে তাকে সহযোগিতা দেয়া হবে।
চট্টগ্রাম আউটার স্টেডিয়ামটি দীর্ঘদিন ধরে নানা ধরনের মেলা ও অনুষ্ঠানের দখলে ছিল। ফলে হারিয়ে গিয়েছিল এর সৌন্দর্য। মাঠের চারপাশে ছিল অবৈধ সব স্থাপনা, যা সৌন্দর্যহানি করে পুরো এলাকার।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান দায়িত্ব নিয়েই সেসব স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেন। দখলমুক্ত করার পর এবার নতুন করে মাঠ সাজানোর কাজ শুরু হয়েছে।
চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার উদ্যোগে শুরু হচ্ছে নবরূপে আউটার স্টেডিয়াম সাজানোর কাজ। পুরো মাঠ ও আশপাশে নতুনভাবে সাজাতে চায় সংশ্লিষ্টরা।
জানা গেছে, আউটার স্টেডিয়ামের বর্তমান আয়তন ১১ হাজার বর্গফুট। এর মধ্যে ৮ হাজার বর্গফুটে হবে ফুটবল খেলার মাঠ।
মাঠের চারপাশে ক্রিকেট নেট প্র্যাকটিস, ভলিবলসহ নানা খেলাধুলার জন্য ব্লক থাকবে। সুইমিং পুলের দেয়ালের দিকে হবে নেট প্র্যাকটিস ব্লক। স্টেডিয়ামের গ্যালারির দিকে ১৫০ থেকে ২০০ লোকের বসার গ্যালারি এবং সার্কিট হাউস প্রান্ত ও নূর আহমদ চৌধুরীর প্রান্তে হবে ওয়াকওয়ে। এ ছাড়া বাকি জায়গায় টয়লেট সুবিধা, ড্রেসিংরুম এবং বসার জায়গা থাকবে।
গতকাল শুক্রবার আউটার স্টেডিয়ামের উন্নয়ন কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ও সিজেকেএস সভাপতি আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান ও সিজেকেএস সাধারণ সম্পাদক সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন।
এ সময় জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, ‘আমরা আউটার স্টেডিয়ামকে ফুটবল মাঠ হিসেবে ব্যবহার করতে চাই। এখানে যাতে ফুটবলের পাশাপাশি অন্য খেলার প্র্যাকটিস হয় সেসব ব্যবস্থা রাখতে চাই। একই সঙ্গে ওয়াকওয়ে হবে। এক থেকে দুই মাসের মধ্যে মাঠে ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজন করতে চাই। এ জন্য শিগগিরই মাটি ভরাট ও ঘাস লাগানোর কাজ শুরু হবে। জেলা ক্রীড়া সংস্থার নিজস্ব অর্থায়নে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। আজ আমরা এ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আউটার স্টেডিয়াম থেকে আকরাম, নান্নু, আশিষ ভদ্র, তামিম, আফতাবদের মতো অনেকেই উঠে এসেছে। আবার আউটার স্টেডিয়ামের হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনা হবে।’
এ সময় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) রাকিব হাসান, সিজেকেএস সহসভাপতি লায়ন দিদারুল আলম চৌধুরী, এ কে এম এহসানুল হায়দার চৌধুরী বাবুল, মোহাম্মদ হাফিজুর রহমান, সিজেকেএস যুগ্ম সম্পাদক আমিনুল ইসলাম ও মশিউর রহমান চৌধুরী, কোষাধ্যক্ষ শাহাবুদ্দিন মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর, নির্বাহী সদস্য সৈয়দ আবুল বশর প্রমুখ।
বাগেরহাটের রামপালে ১৪ বছর বয়সী এক কিশোরীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগে রাকিব হোসেন সজল (২৫) ও রাসেল শেখ (২৬) নামে দুই যুবককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে উপজেলার বড় দূর্গাপুর পুটিমারি গ্রামে একটি ঘেরের টংঘরে ওই ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। পুলিশ রাতেই অভিযান চালিয়ে অভিযুক্ত তিনজনের মধ্যে দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে।
গ্রেপ্তার রাসেল উপজেলার পাড়গোবিন্দপুর গ্রামের ফরহাদ শেখের ছেলে এবং সজল কালেখার গ্রামের আজমল হোসেনের ছেলে।
এ ঘটনায় আরেক অভিযুক্ত রহমত (২৬) পলাতক রয়েছেন। বিস্তারিত পরিচয় জানাতে পারেনি পুলিশ।
বাগেরহাট জেলা পুলিশের মিডিয়া সেলের প্রধান সমন্বয়ক ইন্সপেক্টর বাবুল আক্তার শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি জানান, ওই কিশোরী তার মামা বাড়িতে যাওয়ার পথে খুলনা-মোংলা মহাসড়কের রনসেন মোড়ে পৌঁছালে বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে রহমত ও রাসেল নামে দুজন তাকে একটি মোটরসাইকেলে তুলে নিয়ে বড় দুর্গাপুর পুটিমারি গ্রামের পলাশ নামে একজনের ঘেরের টংঘরে নিয়ে যায়। সেখানে আগে থেকে অবস্থান করছিল রাকিব হোসেন সজল। পরে ৩ যুবক সংঘবদ্ধভাবে ওই কিশোরীর ওপর নির্যাতন চালায় করে। পরে রাত ৭টার দিকে মাহেন্দ্রযোগে ভুক্তভোগীকে তার নিজ বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়।
এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলেও জানান এ কর্মকর্তা।
লক্ষ্মীপুর-৩ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য, সাবেক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রী এবং জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা একেএম শাহজাহান কামাল মারা গেছেন।
শনিবার ভোর ৩টা ১৯ মিনিটে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয় (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৮ বছর।
মৃত্যুর বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন শাহজাহান কামালের ছোট ভাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ উপাচার্য ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল।
তিনি বলেন, ‘বার্ধক্যজনিত রোগে আমার বড় ভাই শাহজাহান কামাল মারা গেছেন। বেলা ১১টায় জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় প্রথম ও লক্ষ্মীপুর আদর্শ সামাদ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।’
শাহজাহান কামাল লক্ষ্মীপুর পৌরসভার আটিয়াতলি এলাকার ফরিদ আহমেদ ও মাছুমা খাতুন দম্পতির বড় ছেলে। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, এক ছেলে ও ৩ মেয়েসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
তিনি ১৯৭৩ সালে প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নোয়াখালী-১১ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১৪ ও ১৮ সালের তিনি লক্ষ্মীপুর-৩ (সদর) আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরমধ্যে ২০১৮ সালে প্রায় এক বছর তিনি বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।
শাহজাহান কামাল ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে লক্ষ্মীপুর জেলায় গণআন্দোলনে নেতৃত্ব দেন। পরবর্তী সময়ে তিনি নবগঠিত লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন এবং ১৯৮৫ সালে লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। ২০১১ সালে তিনি লক্ষ্মীপুর জেলা পরিষদের প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
নাটোরের নলডাঙ্গায় হালতি বিলে ঘুরতে এসে নৌকা ডুবে দুই ভাইয়ের মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার সন্ধ্যায় বিলের খোলাবাড়িয়া এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
মৃতরা হলো জেলার লালপুর উপজেলার আড়বাব এলাকার আরিফুল ইসামের ছেলে সাদমান আব্দুল্লাহ (১১) এবং আব্দুর রহমান (৯)।
পুলিশ জানায়, হালতি বিলে পরিবার নিয়ে ঘুরতে আসেন আরিফুল ইসলাম। নৌকায় চড়ে বিলের মধ্যে বেড়ানোর সময় খোলা বাড়িয়া এলাকায় পল্লী বিদ্যুতের তারে বেধে ১৭ যাত্রী নিয়ে নৌকাটি উল্টে যায়। এসময় নৌকার অন্য যাত্রীরা সাঁতার কেটে পাড়ে উঠতে পারলেও দুই ভাই সাদমান আব্দুল্লাহ ও আব্দুর রহমান নিখোঁজ ছিল।
নলডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম জানান, এ ঘটনায় স্থানীয়রা পুলিশে খবর দিলে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে নাটোর ফায়ার সার্ভিসে খবর দেয়। পরে ফায়ার সার্ভিস সদস্যরা তাদের দুই ভাইকে উদ্ধার করলে সদর হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানকার চিকিৎসক ওই দুজনকে মৃত ঘোষণা করেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) উকিল আব্দুস সাত্তার ভূঞা মারা গেছেন।
শনিবার ভোর ৩টার দিকে রাজধানীর একটি বেসরকারী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান (ইন্না লিল্লাহি... রাজিউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৪ বছর।
মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে আব্দুস সাত্তারের একমাত্র ছেলে মাইনুল হাসান তুষার বলেন, ‘শনিবার ভোর ৩টায় ঢাকায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তিনি ৭ মাসেরও বেশি সময় ধরে কিডনির সমস্যায় ভুগছিলেন। শারিরীক অবস্থা খারাপ হলে এক সপ্তাহ আগে এভার কেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেই চিকিৎসা চলছিল।’
আব্দুল সাত্তার ভূঞা ১৯৩৯ সালের ১৬ জানুয়ারি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার অরুয়াইল ইউনিয়নের পরমানন্দপুর গ্রামের আব্দুল হামিদ ভূঞা ও রহিমা খাতুনের সংসারে জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া আদালতে আইনজীবী পেশায় নিয়োজিত ছিলেন। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপির সভাপতি পদে ছিলেন দীর্ঘদিন।
গত ১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত উপ-নির্বাচনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে জয় পান আব্দুস সাত্তার ভূঞা।
এর আগে আব্দুস সাত্তার ভূঞা ১৯৭৯ সালে তৎকালীন কুমিল্লা-১ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ও জুনের নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০১ সালের নির্বাচনে তৎকালীন ৪ দলীয় জোট সরকার থেকে টেকনোক্র্যাট মন্ত্রী হিসেবে আবদুস সাত্তার আইন, মৎস্য ও ভূমি মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আবারও ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে বিএনপি মনোনীত সংসদ সদস্য হিসেবে জয়লাভ করেন। ২০২৩ সালের ২ জানুয়ারি তাকে বিএনপি থেকে বহিষ্কার করা হয়।
মেহেরপুর সদর উপজেলার চকশ্যামনগর গ্রামের কপিচাষি রফিকুল। তিনি নিজের ও বর্গা নেয়া ১১ বিঘা জমিতে আগাম জাতের বাঁধাকপি চাষ করেছেন। প্রতি বিঘা জমিতে কপি চাষাবাদে গড়ে অন্তত ৩৫ হাজার টাকা করে খরচ হয়েছে। স্বপ্ন ছিল আগাম জাতের কপি চাষ করে ভালো দাম পেয়ে লাভবান হওয়ার পাশাপাশি মুক্ত হবেন ঋণের বোঝা থেকে। কিন্তু কপিখেতে চারা গজিয়ে গাছ বাড়লেও অদ্যাবদি কোনো পাতা বাঁধেনি। ফলে তিনি অনেকটাই নিশ্চিত হয়েছেন যে, এ কপিতে আর পাতা বাঁধবে না এবং বাজারজাতও করা যাবে না।
জেবিটি সিডসের রাজাসান কপির বীজ কিনে বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তিনি এবং তার মতো আরও ৩ শতাধিক কপিচাষি। আজ সেই কপি চাষ করে অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে সড়কে এসে মানববন্ধন কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন তিনিসহ তার মতো শতাধিক কপিচাষি। উদ্দেশ্য একটাই যদি প্রশাসনের হস্তক্ষেপে ক্ষতিপূরণ হিসেবে মূলধনটি ফেরত পান।
সবজি চাষে দেশব্যাপী বেশ খ্যাতি রয়েছে কৃষিনির্ভর মেহেরপুর। অনেক চাষির কপিখেতে কপি বড় হলেও পাতা বাঁধেনি। অথচ এ সময় কপি বাজারজাত করে লাভবান হওয়ার কথা চাষিদের। অথচ গত বৃহস্পতিবার সকাল ৮টার দিকে সদর উপজেলার বন্দরনগরের সড়কে শতাধিক কৃষক অসাধু বীজ ব্যবসায়ীর লাইসেন্স বাতিলসহ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও তাদের ক্ষতিপূরণের দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন।
কৃষকদের অভিযোগ মানহীন নিম্নমানের বীজ চাষিদের কাছে প্রতারণা করে বিক্রয় করায় তাদের এমন ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়েছে। তাদের দাবি জেলার গাংনী ও মুজিবনগর উপজেলার প্রায় সাড়ে তিন শ চাষি এই ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। তাই বাধ্য হয়ে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করছেন তারা।
আর অভিযোগ ওঠা বীজ ব্যবসায়ীরা বলছেন, তারা কোনো নিম্নমানের বীজ কৃষকদের কাছে সরবরাহ করেননি। তবে কৃষি অফিস বলছে, ঘটনাটি তদন্ত করে দোষী ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জেলা কৃষি অফিসের তথ্যানুযায়ী, মেহেরপুরের গাংনী ও মুজিবনগর মাঠে সব ধরনের সবজি চাষ করা হয়। শীতের আগাম সবজি হিসেবে এ অঞ্চলে সাড়ে ৭৫০ হেক্টর জমিতে ফুলকপি ও বাঁধাকপির চাষ করা হয়েছে। এখন মাঠে রয়েছে আগাম বাঁধাকপি। তবে এখন বাঁধাকপির ফলন বিপর্যয় ঘটেছে।
বীজ কোম্পানির লোকজন নিম্নমানের বীজ সরবরাহ করায় কপির পাতা বাঁধেনি। নিয়ম অনুযায়ী ৬০ থেকে ৬৫ দিনের মধ্যে পাতা বাঁধার কথা। অথচ চলতি মৌসুমে এ অঞ্চলে জেবিটি সিডসের রাজাসান কপির বীজ কিনে চাষিরা বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
জানা গেছে, আগাম বাঁধাকপি চাষে প্রতিবছর কৃষকরা লাভবান হলেও এবার ফলন বিপর্যয় ঘটেছে বাঁধাকপিতে। বীজ ব্যবসায়ীরা নিম্নমানের বীজ সরবরাহ করায় গাংনী ও মুজিবনগর এলাকায় অন্তত ৩০০ হেক্টর জমির কপির পাতা বাঁধেনি। এতে অন্তত কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেছেন কৃষকরা।
চাষিরা জানান, স্থানীয় বাজার থেকে জেবিটি সিডসের সরবরাহ করা রাজাসান বীজ ব্যবহার করা হয়। বীজ থেকে গাছ জন্মালেও এখন পাতা বাঁধছে না। অন্যান্য কোম্পানির দেয়া বীজ রোপণ করে তারা বাঁধাকপি বাজারে তুলেছেন অথচ জেবিটি কোম্পানির রাজাসান কপি আজও পাতা বাঁধেনি। একেকটি গাছের ৩-৪টি ডগা গজিয়েছে। আবার অনেকটা পাতা কোঁকড়ানো। সার দিয়েও কোনো লাভ হচ্ছে না। বিঘাপ্রতি ১৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে এ কপি চাষে। অন্তত সাড়ে তিন শ চাষি এ প্রতারণার শিকার।
সরেজমিনে দেখা যায়, গাংনীর সাহারবাটি নওপাড়া ও মুজিবনগরে রাজাসান বীজ ব্যবহারকারীদের কপিখেতে কপির পাতা বাঁধেনি। কপির পাতা পচে যাচ্ছে।
অন্যরা জেবিটি ছাড়া বিভিন্ন কোম্পানির দেয়া বীজ রোপণ করে তারা বাঁধাকপি বাজারে তুলেছেন অথচ জেবিটি কোম্পানির রাজাসান কপি আজও পাতা বাঁধেনি।
তারা জানান, একেকটি গাছের ৩-৪টি ডগা গজিয়েছে। আবার অনেকটা পাতা কোঁকড়ানো। পাতা পচে যাচ্ছে। সার ও বিষ দিয়েও কোনো লাভ হচ্ছে না। বিঘাপ্রতি ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে এ কপি চাষে। অনেকেই বাধ্য হয়ে জমিতে চাষ দিয়ে অন্য ফসল আবাদের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক বন্দরনগরের সোহেল ও মজিদ বলেন, ‘সদর উপজেলার বীজ ডিলার আনারুলের কাছে রাজাসান জাতের বীজ কিনে এক বিঘা জমিতে কপি রোপণ করি। এতে আমার ১২ হাজার টাকা খরচ হয়ে গেছে। অন্যরা কপি বিক্রি করলেও আমার কপির এখনো পাতা বাড়ছে না। তা ছাড়া আর ফসল বাড়ার সময় না থাকায় উপায় না পেয়ে সব চারা ভেঙে জমি চাষ দিয়েছি।’
বীজ সরবরাহকারী আনারুল ইসলাম জানান, তিনি মূলত সার ও বিষের ব্যবসা করেন। মেহেরপুর বড় বাজারের সুমনা বীজ ভাণ্ডার থেকে বীজ এনে চাষিদের দেয়া হয়েছে। কপির পাতা বাঁধেনি বিষয়টি আমার মহাজন সুমনকে বলেছি, তার দাবি তিনি কোনো নিম্নমানের বীজ তার কাছে সরবরাহ করেননি।
সুমনা বীজ ভাণ্ডারের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ সুমনের কাছে বীজ বিক্রির বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ ধরনের বীজ আমি কোনো ব্যবসায়ী কিংবা চাষিদের কাছে সরবরাহ করিনি।’
গাংনী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এমরান হোসেন ও মুজিবনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন জানান, চাষিদের কাছ থেকে বিষয়টি শুনেছি। চাষিদের লিখিত অভিযোগ দিতে বলা হয়েছে। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
পশ্চিম বাঁশখালীর মানুষের প্রাণের দাবি একটি টেকসই বেড়িবাঁধের স্বপ্ন বাস্তবায়ন হচ্ছে না কোনোভাবেই। ২৯৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত বেড়িবাঁধটি সাগরের বুকে হারিয়ে যাচ্ছে খড়কুটোর মতোই। চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার খানখানাবাদ ইউনিয়নের কদমরসুল ও প্রেমাশিয়া এলাকায় সাগরবক্ষে মিলিয়ে যাচ্ছে বেড়িবাঁধটি।
স্থানীয়দের অভিযোগ, নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী দিয়ে ব্লক তৈরি এবং লুটপাট ও ব্যাপক দুর্নীতির কারণে বাজেট যা ছিল, তা কেবল ছোট থেকে ছোট হয়ে এসেছে। এসব ঢাকতে অপরিকল্পিত নকশা প্রণয়ন ও যেনতেনভাবে বেড়িবাঁধ নির্মাণের কারণেই মাত্র এক বছরের মাথায় হারিয়ে যাচ্ছে সাগরবক্ষে। অনেকের মতে, সম্প্রতি সাঙ্গু নদীর মোহনায় জেগে ওঠা চর স্রোতের গতিপথ পরিবর্তন করে দেয়ায় তা সরাসরি আঘাত হানছে বেড়িবাঁধের ওপর। ফলে বাঁধের কিনারেই তৈরি হচ্ছে ৬০ ফুট গভীর খাড়ি (কূপ), যা ক্রমশ বেড়িবাঁধের ভিতকে নড়বড়ে করে দিয়ে ভাঙন ত্বরান্বিত করছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, বাঁশখালী উপকূলে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণে সাড়ে ৭ বছর আগে ২৫১ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নিয়েছিল বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। ২০১৫ সালের ১৯ মে প্রকল্পটি একনেকে পাস হওয়ার পর বঙ্গোপসাগর ও সাঙ্গু নদীর পাড়ে ১৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই বাঁধ নির্মাণে কয়েক দফা সময় ও ব্যয় বেড়ে হয়েছিল ২৯৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা। প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয় ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত। প্রকল্পের আওতায় এতে ৬ দশমিক ২ কিলোমিটার বাঁধের ঢাল সংরক্ষণ, ভাঙন রোধ ও পুনরাকৃতিকরণ, ৩ দশমিক ৮ কিলোমিটার নদীর তীর সংরক্ষণ এবং ৫ দশমিক ৬ কিলোমিটার বাঁধ পুনরাকৃতিকরণ করার কথা রয়েছে। ২০২২ সালে প্রকল্পের প্রায় ৯০ শতাংশ কাজ শেষ হয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, খানখানাবাদ ইউনিয়নের কদমরসুল ও প্রেমাশিয়া এলাকার মধ্যবর্তী দুটি স্থানে ধসে গিয়ে বেড়িবাঁধের বেশিরভাগ অংশ সাগরে মিলিয়ে যায়। সিসি ব্লকবেষ্টিত বাঁধের যেটুকু ঠিকে আছে, তাতে বিশালাকার ফাটল সৃষ্টি হয়ে নিচের দিকে ক্রমশ দেবে যাচ্ছে। ভারী কোনো জোয়ার এলেই পুরোপুরি মিশে যাবে বেড়িবাঁধের এই অংশটুকু। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখালেখি হলে তড়িঘড়ি করে জিও ব্যাগ দিয়ে সামাল দেয়ার চেষ্টা করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। অধিকন্তু জিও ব্যাগ ভর্তি করা হচ্ছে বাঁধের খুব কাছ থেকে বালি সংগ্রহ করে। আবার কোথাও ২০০ মিটার দূরত্বে ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে জিও ব্যাগ পূর্ণ করার জন্য। সম্প্রতি সাতকানিয়া-লোহাগাড়ায় যে বন্যা হয়েছে, সে পানি সাঙ্গু হয়ে নেমে এসেছে বঙ্গোপসাগরে। বলতে গেলে এর পর থেকে এই বাঁধের ভাঙনের তীব্রতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এই জিও ব্যাগ ভাঙনকে কতটা ঠেকাতে পারে, তা নিয়ে সন্দিহান এলাকার সচেতন মহল।
পশ্চিম বাঁশখালী উপকূলীয় কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি কফিল উদ্দিন কফিল দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘ভেবেছিলাম বেড়িবাঁধ হলে আমাদের দুঃখ ঘুচবে। কিন্তু বছর না যেতেই বেড়িবাঁধের এই হাল কেন? আমি কারও দিকে অভিযোগের আঙুল তুলতে চাই না। যেটা চাই তা হলো এটির যথাযথ সংস্কারের মাধ্যমে স্থায়ী একটা সমাধান।’
স্থানীয় বাসিন্দা অ্যাডভোকেট মাইনুল হোসেন সোহেল বলেন, খানখানাবাদ ইউনিয়নের কদমরসুল ও প্রেমাশিয়া এলাকার বেড়িবাঁধের অবস্থা ভয়াবহ। বড় জোয়ার এলেই প্লাবিত হবে গোটা ইউনিয়ন। এলাকার মানুষের মধ্যে প্রচণ্ড ভীতি কাজ করছে।
খানখানাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জসিম হায়দার বলেন, ‘পানি উন্নয়ন বোর্ড আপৎকালীন বাঁধের অবশিষ্ট অংশ ঠেকাতে কাজ করছে। সাঙ্গু নদীর মোহনায় যে চর জেগে উঠেছে তা অপসারণ করা না হলে এই বাঁধের ভাঙন রোধ করা যাবে না।’
চট্টগ্রাম ১৬ (বাঁশখালী) আসনের সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘সাঙ্গু নদীর মোহনায় জেগে ওঠা চর ড্রেজিংয়ের ব্যাপারে বিআইডব্লিউটিএ ও নৌ পরিবহনমন্ত্রীকে জানানো হয়েছে। বিআইডব্লিউটিএ পরিদর্শক দল খুব তাড়াতাড়ি পরিদর্শনে আসবেন বলে আশ্বাস পাওয়া গেছে। এরপর ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে স্রোতের গতিপথ পরিবর্তন হয়ে গেলে বেড়িবাঁধের ভাঙন রোধ হবে।’
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (চট্টগ্রাম) নির্বাহী প্রকৌশলীর বক্তব্য জানার জন্য বারবার মুঠোফোনে কল ও খুদে বার্তা পাঠানো হয়েছে। তবে কোনো প্রতিউত্তর পাওয়া যায়নি। তবে ওই দপ্তরের একজন কর্মকর্তা (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) দৈনিক বাংলাকে বলেন, বেড়িবাঁধ তলিয়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ সাঙ্গু নদীর মোহনায় জেগে ওঠা চর। এটা ড্রজিং না করা হলে এই ভাঙন রোধ করা সম্ভব নয়। এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন দায়িত্বশীলরাই ভালো বলতে পারবেন।