দালালের মাধ্যমে বিভিন্ন সময় লিবিয়ায় গিয়ে আটকে পড়েছেন চট্টগ্রামের বাঁশখালীর নয়জন। তাদের দেশে ফিরিয়ে আনতে স্বজনরা গত রোববার বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে আবেদন করেছেন।
আটকে পড়া নয়জন হলেন গন্ডামারা ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড এলাকার শহীদ উল্লাহের ছেলে রুকনুল ইসলাম, নুরুল আমিনের ছেলে মো. মোরশেদুল আলম, আহমদ কবিরের ছেলে মোহাম্মদ কাউছার মিয়া, আবদুল মোনাফের ছেলে আজগর হোসেন, আবদুল মজিদের ছেলে গিয়াস উদ্দিন, মৃত অলি আহমদের ছেলে মোহাম্মদ আশেক ও তার ভাই ইব্রাহিম খলিল, বাঁশখালী পৌরসভার উত্তর জলদী ৫নং ওয়ার্ডের মৃত ওমর আলীর ছেলে আইয়ুব আলী ও কাথরিয়া ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ড বাগমারা এলাকার আবু আহমদের ছেলে মোহাম্মদ করিম।
আটকে পড়া নয়জনের পারিবারিক সূত্র জানায়, ভালো চাকরি ও কর্মসংস্থানের কথা বলে মানবপাচারকারী দালালেরা তাদের লিবিয়ায় নিয়ে গিয়ে সেখানকার সন্ত্রাসী চক্রের কাছে বিক্রি করে দেয়। লিবিয়ার সন্ত্রাসীরা তাদের সেখানে কোনো কাজকর্ম কিংবা কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেনি, উল্টো তাদের বিভিন্ন স্থানে আটকে রেখে নির্যাতন চালায় এবং দেশে স্বজনদের কাছে মোবাইলে মুক্তিপণ দাবি করে।
এদিকে বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশ থেকে দেশীয় দালালদের মাধ্যমে মুক্তিপণের টাকা পাঠানো হলেও ওই নয়জনকে দেশে ফেরানোর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ফলে দীর্ঘ দেড় বছর ধরে সেখানে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা। বর্তমানে তারা বেনগাজীর শেরা অ্যালবাম নামক এলাকার পাহাড়ে দিন পার করছেন।
সূত্র জানায়, গত ১৭ সেপ্টেম্বর ওই নয়জনকে দেশে ফিরিয়ে আনতে স্বজনরা প্রশাসনিক সহযোগিতা ও সরকারি হস্তক্ষেপ চেয়ে বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত আবেদন করেন।
এ বিষয়ে বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জেসমিন আক্তার বলেন, দালালের মাধ্যমে লিবিয়া গিয়ে নয়জন আটকে পড়ায় তাদের পরিবার প্রশাসনিক সহায়তা চেয়ে আবেদন করেছে। এ ব্যাপারে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের পরামর্শ নিয়ে কাজ করা হবে।
ময়মনসিংহে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাবার তৈরি এবং মান নিশ্চিত না করার অপরাধে এক হোটেল মালিককে ১৫ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
মঙ্গলবার দুপুরে নগরীর দুর্গাবাড়ী সড়ক এলাকায় ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের (মসিক) প্রধান ভান্ডার ও ক্রয় কর্মকর্তা এবং নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. বুলবুল আহম্মেদ তালুকদার অভিযান চালিয়ে এ জরিমানা করেন।
মসিকের নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ হিসেবে এই অভিযান চলাকালে সড়কের ফুটপাত এবং দুই পাশে অবৈধ ব্যবসা পরিচালনাকারীদের ভ্রাম্যমাণ দোকান সরিয়ে নেয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে ভবিষ্যতে এই ধরনের কর্মকাণ্ডে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
অভিযানকালে নগরীর শিল্পাচার্য জয়নুল উদ্যানে স্কুল সময়ে ইউনিফর্ম পরিহিত শিক্ষার্থীদের সর্তক করে উদ্যানের ভেতরে মোটরসাইকেল প্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।
এ সময় মসিকের স্যানিটারি ইন্সপেক্টর জাবেদ ইকবালসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বহিনীর সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
‘আমেরিকার ভিসা নিষেধাজ্ঞায় সরকারের কম্পন শুরু হয়েছে’ মন্তব্য করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, ‘এরপর বাংলাদেশের মানুষের যে ভিসানীতি আসবে সেটি আরও কঠিন হবে। এখানে কোনো মাফ পাওয়ার সুযোগ নেই।’
মঙ্গলবার দুপুরে বিএনপির ফরিদপুর বিভাগীয় রোডমার্চ উপলক্ষে জেলা শহরের রাজবাড়ী রাস্তার মোড়ে অনুষ্ঠিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
আমির খসরু বলেন, ‘জীবনের বিনিময়ে হলেও ভোট চুরি প্রতিরোধ করতে হবে। জীবন দিয়ে আমাদের জয়লাভ করতে হবে। এই যুদ্ধ বিএনপির নয়, বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষের।’
‘সরকারের পদত্যাগ ও সংসদ বিলুপ্ত করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন এবং বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির এক দফা দাবিতে সারাদেশে বিভাগীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে বেলা ১১টার দিকে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ থেকে এ রোডমার্চ শুরু হয়।
এ দিন গোয়ালন্দ মোড় এলাকায় অনুষ্ঠিত এক পথসভায় আমির খসরু বলেন, ‘নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে। আগামী জাতীয় নির্বাচনে রাতের আঁধারে নির্বাচন হতে দেয়া হবে না।’
তিনি বলেন, ‘আমরা এ দেশের মানুষের অধিকার যতদিন ফিরিয়ে দিতে না পারি ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে যতদিন নির্বাচন না হয় ততদিন আমরা রাজপথে থাকব।’
সভায় বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবেদীন ফারুকের সভাপতিত্বে আরও উপস্থিত ছিলেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টু প্রমুখ।
বিভিন্ন মেয়াদে কারাভোগ শেষে ২৯ বাংলাদেশিকে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) কাছে হস্তান্তর করেছে মিয়ানমার। মংডুতে মঙ্গলবার সকালে টেকনাফ ২ বিজিবি ও মিয়ানমার ১ নম্বর বর্ডার গার্ড পুলিশ ব্রাঞ্চের মধ্যে পতাকা বৈঠক শেষে তাদের হস্তান্তর করা হয়।
ফেরত আসা বাংলাদেশিরা দুই থেকে সাড়ে ছয় বছর মিয়ানমার কারাগারে খাওয়া দাওয়া এবং মানবেতর জীবনযাপন করেছেন বলে জানান। তাদের প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষে টেকনাফে মডেল থানায় পাঠানো হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে নাফনদী, সাগরে মাছ শিকার এবং সাগরপথে মালয়েশিয়া যাত্রাকালে সেদেশের আইশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যরা তাদের আটক করে।
বিজিবি জানায়, মংডুতে বেলা ১১টায় টেকনাফ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মহিউদ্দীন আহমেদ নেতৃত্বে ১৫ সদস্যের বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল ও মিয়ানমার মংডুর ১ নম্বর বর্ডার গার্ড পুলিশ ব্রাঞ্চের কমান্ডিং অফিসার লে. কর্নেল ইয়ে ওয়াই শো-এর নেতৃত্বে ১১ সদস্যের প্রতিনিধিদলের মধ্যে পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে সকালে বৈঠকে অংশ নিতে টেকনাফ বিজিবির বিওপির জেটি দিয়ে রওনা হয়েছিল বিজিবির প্রতিনিধি দল।
ফেরত আসা বাংলাদেশিদের মধ্যে টেকনাফ ৭, উখিয়া ৩, মহেষখালী ১২, রাঙ্গামাটি ৩ ও বান্দারবানের ৪ জন রয়েছেন।
মঙ্গলবার দুপুরে জেটিঘাটে বিজিবি ২ টেকনাফ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মহিউদ্দীন আহমেদ এক সংবাদ সম্মেলনে
জানান, বিভিন্ন মেয়াদে সাজা ভোগ করা ২৯ বাংলাদেশিকে ফেরত আনা হয়েছে। এসব ব্যক্তিরা মালয়েশিয়া ও সাগরে মাছ শিকারের সময় মিয়ানমারের হাতে আটক হয়েছিল। তাদের সাজাভোগ শেষে পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতি পাওয়ার পর দুই দেশের বৈঠকের মাধ্যমে ফেরত আনা হয়।
তিনি বলেন, সে দেশের কারাগারে যেসব বাংলাদেশি জেলে আটক রয়েছে। তাদেরও একই প্রক্রিয়ায় ফেরত আনার চেষ্টা চলছে। ২৯ জনকে টেকনাফ মডেল থানায় পুলিশের মাধ্যমে আইনি প্রক্রিয়া শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
এখান থেকে সাগরপথে কেউ যাতে অবৈধভাবে যাত্রা করতে না পারে সে ব্যাপারে আমরা খুবই সতর্ক অবস্থানে রয়েছি। তাদের বলেছি, যদি জলসীমানা থেকে কোনো বাংলাদেশিকে গ্রেপ্তার করা হয়, তাৎক্ষণিকভাবে আমাদের অবিহত করে সমাধান করা হয়। তাছাড়া এ বিষয়ে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত চুক্তিও রয়েছে। বিশেষ করে সে দেশের কারাগারে আরও বাংলাদেশি রয়েছে। তাদেরও একই প্রক্রিয়ায় ফেরত আনার চেষ্টা চলছে। এবং মিয়ানমার থেকে যে পরিমাণ ইয়াবা ঢুকছে, সে বিষয়ে তাদের পক্ষে থেকে কঠোর নজরদারি বাড়ানো হয়েছে বলে আমাদের জানানো হয়েছে।
সবচেয়ে বেশি সাজা ভোগ করে ফেরত আসা তৈয়ব ও আব্দুল আজিজ বলেন, আমাদের চারজন জেলেকে ২০১৭ সালের নভেম্বরে নাফ নদী থেকে মাছ শিকারের সময় ধরে নিয়ে যায় মিয়ানমার সীমান্ত রক্ষী পুলিশ। আমাদের অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে আটক করে নিয়ে যায়। আমাদের অমানবিক নির্যাতন করে। তখন আমরা বেহুশ হয়ে গেলে হাত পা বেঁধে মিয়ানমারে নিয়ে যায়। আমাদের সাজা ছিল ২৯ বছর। কিছু সাজা মওকুফ করে সাড়ে পাঁচ বছর করা হয়।
তারা আরও বলেন, সেদেশের কারাগারে টিকমতো খাবার দিতো না। কারাগারে আরও অনেক বাংলাদেশি কষ্টে দিন পার করছেন। তাদেরও ফেরত আনার উদ্যোগ নিতে সরকারের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি। অবশেষে সরকারের চেষ্টায় স্বদেশে ফেরত আসতে পেরেছি, এজন্য সরকারকে ধন্যবাদ জানাই।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আদনান চৌধুরী, টেকনাফ-২ বিজিবি উপঅধিনায়ক মেজর মাসুদ রানা, পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন) আব্দুর রাজ্জাক।
রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার অরক্ষিত লেভেল ক্রসিংয়ে দুর্ঘটনার ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে মানুষ। নিরাপদ ও আরামদায়ক যাত্রা হওয়ায় যাত্রীদের রেল যাতায়াতের চাহিদা বেশি। কিন্তু এই উপজেলার শহীদবাগ ইউনিয়নে সাধু চৌধুরী লেভেল ক্রসিং, সাব্দি মৌল টারি লেভেল ক্রসিং, জলিল চেয়ারম্যান লেভেল ক্রসিং ও বালাপাড়া ইউনিয়নের চাটরির বাজার লেভেল ক্রসিংয়ের কোনো গেটম্যান ও ব্যারিয়ার না থাকায় এখন মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা, ঝরছে প্রাণ। যেন দেখার কেউ নেই।
রেলওয়ে সূত্র থেকে জানা যায়, প্রতিদিন কাউনিয়া জংশন দিয়ে ১০টি আন্তনগর ট্রেনসহ মোট ২৮টি ট্রেন চলাচল করছে। ব্রিটিশ আমলে নির্মিত কাউনিয়া রেলওয়ে জংশন স্টেশনটি উত্তর জনপদের অন্যতম রেল যোগাযোগমাধ্যম। এর মাধ্যমে রেলপথ সীমান্তবর্তী জেলা কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাটসহ রংপুর বিভাগের প্রায় ৮ জেলার মানুষ ঢাকা ছাড়াও দেশের নানা প্রান্তে যাতায়াত করছেন।
গত শনিবার সরেজমিনে কাউনিয়া উপজেলার শহীদবাগ ইউনিয়ন ও বালাপাড়া ইউনিয়ন ঘুরে দেখা যায়, সেখানে প্রায় ৪০ হাজার মানুষ বসবাস করছেন। এই দুই ইউনিয়নে সাধু চৌধুরী, সাব্দি মৌল টারি, জলিল চেয়ারম্যান ও টাকরির বাজার লেভেল ক্রসিংগুলোতে গড়ে উঠেছে অবৈধ দোকানপাট ও স্থাপনা, যা দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়িয়ে দিয়েছে। লেভেল ক্রসিংগুলোর রাস্তা দিয়ে দিন ও রাতে বিভিন্ন যানবাহন, স্কুলের শিক্ষার্থী, সাধারণ মানুষ ও গবাদিপশু চলাচল করলেও নেই কোনো প্রতিবন্ধক গেট। এ কারণে সেখানে নেই গেটম্যানও। স্থানীয় বাসিন্দারা সব সময় দুর্ঘটনার ঝুঁকি নিয়ে লেভেল ক্রসিং পারাপার হলেও নেই রেল কর্তৃপক্ষের তৎপরতা।
কাউনিয়া উপজেলার শহীদবাগ ইউনিয়নের সাধু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা রওশন আরা বেগম বলেন, ‘লেভেল ক্রসিংয়ের গেটগুলো দিয়ে বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা যাতায়াত করে থাকে। কিন্তু লেভেল ক্রসিংগুলোতে গেটম্যান ও প্রতিবন্ধক গেট না থাকায় দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সব সময় শিশু শিক্ষার্থীদের নিয়ে আতঙ্কে থাকি। তাই দ্রুত সমাধান না হলে যেকোনো সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা।’
শহীদবাগ ইউনিয়নের আরেক বাসিন্দা তৌফিকুল ইসলাম রানা বলেন, ‘এক সপ্তাহের ব্যবধানে সাধু চৌধুরী লেভেল ক্রসিংয়ে দুটি দুর্ঘটনা ঘটে। রাতের অন্ধকারে একজন বৃদ্ধ লেভেল ক্রসিং পারাপারের সময় রেলের ধাক্কায় পড়ে নিহত হন এবং তার ২ দিন পর দুজন মোটরসাইকেল আরোহী লেভেল ক্রসিংয়ে পারাপারের সময় ট্রেনের ধাক্কায় মারা যান।’
তিনি আরও বলেন, ‘হরহামেশাই ঘটছে দুর্ঘটনা আর প্রাণহানি। আর কত দুর্ঘটনায় প্রাণ ঝরলে রেল কর্তৃপক্ষের টনক নড়বে। আমরা যেন রেল কর্তৃপক্ষের কাছে একেবারেই অসহায়।’
কাউনিয়া রেলওয়ে জংশনের স্টেশন মাস্টার হোসনি মোবারক বলেন, ‘কাউনিয়া স্টেশনে ৪১ জন জনবলের বিপরীতে চুক্তিভিত্তিকসহ ২৮ জন দায়িত্ব পালন করছেন। জনবলসংকট ও লেভেল ক্রসিংয়ে গেট ব্যারিয়ার বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে। একাধিকবার চাহিদা দিয়েও কোনো কাজ হয়নি।’
লালমনিরহাট রেল বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, ইতোমধ্যে ঢাকা থেকে গেটম্যান নিয়োগের জন্য সার্কুলার দেয়া হয়েছে। যত দ্রুত সম্ভব যেসব লেভেল ক্রসিংয়ে যেখানে গেটম্যান নেই সেখানে গেটম্যান নিয়োগ করা হবে।
অবৈধ উচ্ছেদের বিষয়ে জানতে চাইলে লালমনিরহাট বিভাগীয় ভূসম্পত্তি কর্মকর্তা পূর্ণেন্দু দেব জানান, রেলের উচ্ছেদ অভিযান একটি চলমান প্রক্রিয়া। লেভেল ক্রসিং ঘেঁষে অবৈধ দোকানপাটসহ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান চালানো হবে। যেসব লেভেল ক্রসিংয়ে গেট ব্যারিয়ার অকেজো হয়ে আছে, তা দ্রুত মেরামতের উদ্যোগ নেয়া হবে।
চার লাখ টাকা মুক্তিপণ না পেয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরে ফাতেহা নামের সাত বছরের এক শিশুকে হত্যা করেছে অপহরণকারীরা। এ ঘটনায় পুলিশ দুইজনকে গ্রেপ্তার করে মঙ্গলবার সকালে আদালতে পাঠিয়েছে।
এদিকে পুলিশ শিশুটির মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য জেলা মর্গে পাঠিয়েছে। এ ঘটনায় নিহত শিশুর মা রুমা আক্তার বাদী হয়ে বাঞ্ছারামপুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (নবীনগর সার্কেল) সিরাজুল ইসলাম ও বাঞ্ছারামপুরের ওসি নূরে আলম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সিরাজুল ইসলাম জানান, বাঞ্ছারামপুর উপজেলার দরিয়াদৌলত ইউনিয়নের শুটকীকান্দি গ্রামের প্রবাসফেরত বাছেদ মিয়ার শিশুকন্যা ফাতেহা গত ৩০ আগস্ট বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয়। পরে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করেও ফাতেহার কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। এ ঘটনার একদিন পর ১ অক্টোবর অপহরণকারীরা ফাতেহার বাবাকে ফোন করে তাকে অপহরণ করা হয়েছে বলে জানায়। পরে বাছেদ মিয়ার কাছে মুক্তিপণ হিসেবে চার লাখ টাকা দাবি করে। এরপর বাছেদ মিয়া পুরো বিষয়টি বাঞ্ছারামপুর থানার ওসি নূরে আলমকে অবগত করেন। পরে পুলিশ ওই ফোন নম্বর ধরে ঘটনাটি তদন্ত শুরু করে।
পুলিশ জানায়, এ ঘটনায় অভিযুক্ত দুই অপরহণকারী দরিয়াদৌলত গ্রামের রাজ্জাক মিয়ার ছেলে নাজিম (১৯) ও শুঁটকিকান্দি গ্রামের মমিন মিয়ার ছেলে আলাউদ্দিন (২১) নিহত শিশু ফাতেহান ফুফাতো ও চাচাতো ভাইকে গতকাল সোমবার আটক করে পুলিশ। পরে তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে পাশের ডোবায় কচুরিপানার নিচ থেকে ফাতেহার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
এ বিষয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার শাখওয়াত হোসেন বলেন, ফোন কলের রেশ ধরে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় পুলিশ দুই ঘাতককে আটক করা হয়। ঘাতকদের ফোনে শিশুটিকে অপহরণ ও মুক্তিপণ দাবি সংক্রান্ত চ্যাটিং (বার্তা আদান-প্রদান) পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। ইতোমধ্যে আইনগত ব্যবস্থাও নেয়া হচ্ছে।
গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চত্বরে অশোভন আচরণ এবং বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করায় আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের পাঁচ নেতাকর্মীকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
সোমবার স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এইচএম আবু বকর চৌধুরী।
বহিষ্কৃতরা হলেন- মোক্তারপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আব্দুল হেকিম, সদস্য মো. জাকির হোসেন, ওই ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সদস্য মো. আকরাম হোসেন, একই ইউনিয়ন যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. ফয়সাল ফকির এবং ওই ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. জাইদুল।
তবে ঘটনার মূল হোতা মোক্তারপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেন এখনো বহাল তবিয়তে আছেন। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কাউকেই গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
এর আগে গত শনিবার দুপুরে কালিগঞ্জ উপজেলা চত্বরে নিষেধ থাকার পরও গাড়ি পার্কিং করতে যান মোক্তারপুর ইউপি চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেন ও তার লোকজন। এ সময় নিরাপত্তাকর্মীরা বাধা দিলে শুরু হয় হট্টগোল। উত্তেজনার এক পর্যায়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আজিজুর রহমানকে লাঞ্ছিত করেন তারা। ইউএনও অফিস লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে হামলাকারীরা। এই ঘটনায় চার সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারী আহত হন। পরে মোক্তারপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেনকে প্রধান আসামি করে আর ২০-২৫ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে মামলা করেন আনসার সদস্য আকরাম হোসেন।
১৮৮৬ সালে স্থাপিত নড়াইল সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজে প্রতি বছর শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ছাত্র সংসদ ফি নেয়া হচ্ছে। কিন্তু ২৩ বছর ধরে ছাত্র সংসদের নির্বাচন হচ্ছে না। এ ছাড়াও বিভিন্ন খাতে আদায় করা অর্থ শিক্ষার্থীদের জন্য ব্যয় করা হয় না।
জানা গেছে, শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ছাত্র সংসদ ব্যবস্থাপনা ফি ২৫ টাকা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি ফি ১০ টাকা, খেলাধুলা ফি ২৫ টাকা, ম্যগাজিন ফি ১৫ টাকাসহ সেমিনার, হোস্টেল তহবিল, জামানত, যাতায়াত, নৈশপ্রহরী, অভ্যন্তরীণ পরীক্ষা, দরিদ্র তহবিলসহ বিভিন্ন খাতে জনপ্রতি ১ হাজার ৪৫৭ টাকা করে নেয়া হয়। কিন্তু কলেজের পাঠাগারে কোনো ম্যাগাজিন রাখা হয় না। শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের জন্য পরিবহন ব্যবস্থাও নেই। কলেজে বর্তমানে ৮ হাজার ১৪১ জন শিক্ষার্থী এসব খাতে টাকা দিয়ে যাচ্ছেন।
এই কলেজে ২০০১ সালের পর আর ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয়নি। সর্বশেষ নির্বাচনে ছাত্রলীগ নেতৃত্বাধীন পরিষদ বিজয়ী হয়েছিল। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, প্রতিবছর ছাত্র সংসদের পক্ষ থেকে একটি করে সাময়িকী প্রকাশের কথা থাকলেও কয়েক বছর ধরে তা ঠিকমতো হচ্ছে না।
কলেজের শেষ বর্ষের ছাত্র তরিকুল ইসলাম বলেন, কলেজে ভর্তির পর ছাত্র সংসদ কী, তা-ই দেখলাম না। অথচ প্রতি পর্বে ছাত্র সংসদ ফি দিয়ে যাচ্ছি।
ছাত্র সংসদের সর্বশেষ সহসভাপতি (ভিপি) মাসুদুল হাসান বলেন, ২০০১ সালে তিনি ম্নাতক পাস করে কলেজ থেকে বের হয়েছেন। বর্তমানে ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। ছাত্র না হয়েও সাংবিধানিকভাবে এখনো পর্যন্ত তিনি ওই কলেজের ভিপি। কিন্তু কোনো কিছুতেই তাকে ডাকা হয় না। কলেজের পরিবেশ বজায় রাখতে হলে দ্রুত ছাত্র সংসদ নির্বাচন হওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি।
ছাত্র সংসদের সাবেক জিএস এসএম পলাশ জানান, তিনি বর্তমানে নড়াইল সদর উপজেলার আউড়িয়া ইউনিয়নের নির্বাচিত চেয়ারম্যান। নিয়ম অনুযায়ী ছাত্র সংসদের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা বিভিন্ন খাতে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নেয়া অর্থ ব্যয় করবেন। কিন্তু একটি মহলের স্বার্থ হাসিলের জন্য কলেজে ছাত্র সংসদ নির্বাচন হচ্ছে না।
জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক খন্দকার মাহামুদুল হাসান বলেন, কলেজ ক্যাম্পাসে স্ব স্ব অবস্থানসহ সুন্দর পরিবেশ ও সব ছাত্র সংগঠনের অংশগ্রহণে ছাত্র সংসদ নির্বাচন হওয়া উচিত।
কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. ইয়ামিন হোসেন বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো নিশ্চিতকরণে অবশ্যই ছাত্র সংসদ নির্বাচন প্রয়োজন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘জামায়াত-শিবির বাদে ছাত্রদল যদি কলেজ ক্যাম্পাসে শান্তিপূর্ণ রাজনীতিচর্চা করতে চায়, তাহলে কোনো অসুবিধা থাকার কথা নয়।’
কলেজ শাখা ছাত্রমৈত্রী সভাপতি আরমান সিকদার বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে ছাত্র সংসদ নির্বাচন না হওয়ায় কলেজের শিক্ষার্থীরা ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।’
কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক রবিউল ইসলাম দৈনিক বাংলাকে বলেন, ১৯৯৭ সালের আগে কলেজটি ডিগ্রি কলেজ ছিল। তখন কলেজের গঠনতন্ত্র ছিল একরকম। কলেজে এখন অনার্স কোর্স চালু হয়েছে। ২০১৫ সালে গঠনতন্ত্র সংশোধন করে ওই সালেই ছাত্র সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। কিন্তু রাজনৈতিক ও পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতির কারণে নির্বাচন করা যায়নি। ছাত্র সংসদ নির্বাচনের ব্যাপারে কলেজ কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি রয়েছে। ছাত্রসংগঠনের পক্ষ থেকে প্রস্তাব এলে তারা এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন।
এক প্রশ্নের জবাবে অধ্যক্ষ বলেন, ছাত্র সংসদের বিভিন্ন বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকরাই ওই অর্থ প্রতিবছর ব্যয় করেন। এ খাতের সব টাকা কলেজের হিসাবে জমা পড়ে আছে।
গুনে গুনে ২০ বছর পার। দুটি স্প্যান ঠাঁয় দাঁড়িয়ে। পালন করা হয়েছে অবরোধ-মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি। তবুও যেন কোথায় আটকে আছে নিয়তি! সেতুটির ভাগ্যের শিঁকে ছিঁড়ছে না কিছুতেই। কতিপয় প্রভাবশালীর ক্ষমতার লাল ফিতায় বন্দি হয়ে আছে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সেতুটি। আর স্বপ্ন নিয়ে প্রহর গুনছে রাজধানী ঢাকার উপকণ্ঠ ও রূপগঞ্জের লাখো মানুষ।
এই সেতু নির্মাণ হলে এলাকার মানুষের ভাগ্যের চাকা ঘুরে যেত। খুলে যেত সম্ভাবনার দুয়ার। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে ঢাকার সেতুবন্ধন তৈরি হতো। কমে যেত রাজধানী ঢাকার যানজট। একটি মাত্র সেতুর জন্য রূপগঞ্জসহ আশপাশের লাখো মানুষকে ১২ কিলোমিটার পথ ঘুরে রাজধানী ঢাকায় যেতে হয়। অথচ এ সেতুটি হলে মাত্র ২০ মিনিটে এলাকার বাসিন্দারা ঢাকায় যেতে পারবে। স্বাধীনতার পর থেকে সেতুটির কথা এলাকাবাসী শুনে এলেও গত ৪৬ বছরে এর বাস্তবায়ন হয়নি। সেতুটি নিয়ে দু’দফায় টেন্ডারও হয়েছে। অথচ কাজের কাজ হয়নি কিছুই।
সরেজমিনে ঘুরে ও এলাকার প্রবীণদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাজধানী ঢাকার সঙ্গে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের যোগাযোগের জন্য স্বাধীনতার পরপরই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রামপুরা-কায়েতপাড়া সড়ক ও বালু নদে সেতু নির্মাণের স্বপ্ন দেখেছিলেন। ’৭৫-পরবর্তী বিভিন্ন সরকারের মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যরা এ সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলেন। গত ৪৬ বছরে ঢাকার সঙ্গে সহজে যোগাযোগের জন্য বালু নদের রূপগঞ্জ অংশের চনপাড়া, ইউসুফগঞ্জ ও ভোলানাথপুরে তিনটি সেতু নির্মাণ করা হলেও এ সেতুটির ভাগ্য বন্দি হয়ে আছে প্রভাবশালীদের ক্ষমতার লাল ফিতায়।
নারায়ণগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, প্রস্তাবিত রামপুরা-কায়েতপাড়া সড়কের বালু নদে সেতুর অনুমোদন হয় ২০০১ সালে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধীনে ৬ কোটি ১০ লাখ টাকা ব্যয়ে এ সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০০৩ সালে। সড়ক ও জনপথ বিভাগের তত্ত্বাবধানে এক বছরের মধ্যে সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ করার দায়িত্ব পান তৎকালীন ঠিকাদার জাহিদ হোসেন। গত ২০০৪-০৫ অর্থবছরে বরাদ্দ মেলে মাত্র ৫০ লাখ টাকা। এরপর আর কোনো বরাদ্দ দেয়া হয়নি। ফলে ২টি স্প্যান নির্মাণের পর সেতুর নির্মাণ কাজ থমকে যায়। সূত্রটি আরও জানায়, নির্মাণ ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় সেতুর অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করতে এখন অতিরিক্ত অর্থের প্রয়োজন। সেতুর জন্য নতুন করে সাড়ে ৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল। কিছুদিন কাজও হয়েছিল; কিন্তু বাকি কাজ কবে নাগাদ শুরু হবে তা জানে না কেউ।
স্থানীয়রা জানান, সেতু নির্মাণে প্রয়োজনীয় জমি হুকুম দখল করা হয়নি। জমি মালিকদের পরপর দুটি নোটিশ দেয়া হয়েছে। প্রস্তাবিত সেতুর দু’পাশের জমির মালিকরা ক্ষতিপূরণ না পাওয়ায় সেতু নির্মাণের বিরোধিতা করেছে। এ নিয়ে হাইকোর্টে মামলাও চলমান।
খামারপাড়া এলাকার অশীতিপর বৃদ্ধ আউয়াল আলী বলেন, ‘১৯৭১ সালের পর বাসাবো মাঠে এক জনসভায় শেখ মুজিবুর রহমান রামপুরা-কায়েতপাড়া রাস্তা আর বালু গাঙ্গে (নদে) বিরিজ (সেতু ) কইরা দিব কইছিল। কত সরকার আইলো-গেল আমাগো স্বপ্ন পূরণ অইল না। শেখ মুজিব বাইচ্যা থাকলে এ বিরিজ হগলতের আগে অইত।’
নয়ামাটি এলাকার রবি রায় বলেন, ‘সেতু নির্মাণের দাবিতে বিভিন্ন সময় বালু নদী অবরোধ-মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। স্থানীয় সংসদ সদস্য গাজী গোলাম দস্তগীর (বীরপ্রতীক) সেতু মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে দৌড়ঝাঁপ করছেন। তবে কতটুকু, কী করতে পারছেন জানি না।’
সেতুটি নির্মাণ হলে রূপগঞ্জসহ রাজধানী ঢাকার উপকণ্ঠের খিলগাঁও, সবুজবাগ, ডেমরা ও আশপাশের কয়েক লাখ মানুষের ভাগ্যের চাকা ঘুরে যাবে। তৈরি হবে নতুন নতুন শিল্প-কারখানা। সৃষ্টি হবে কর্মসংস্থানের। সেতুটি নির্মিত হলে কাঁচপুর ও সুলতানা কামাল সেতুর যানজট কমে যাবে। সিলেট, ভৈরব, কিশোরগঞ্জ, নরসিংদীসহ ১০ জেলার যানবাহন অতি সহজে ভুলতা দিয়ে কায়েতপাড়া হয়ে রাজধানীর রামপুরায় প্রবেশ করতে পারবে।
নারায়ণগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপবিভাগ-২ উপবিভাগীয় প্রকৌশলী সামিউল কাদের বলেন, ‘সেতুটির ভাগ্যে কী আছে আমরাও জানি না। বেশ কয়েকবার টেন্ডার ও মাপজোখ হয়েছে। কিন্তু পরে আর কিনারা পাওয়া যায় না।’
নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য গাজী গোলাম দস্তগীর (বীরপ্রতীক) বলেন, ‘বালু নদের সেতুটি হলে রূপগঞ্জের সঙ্গে ঢাকার যোগাযোগ খুব সহজ হবে। আর কায়েতপাড়া ইউনিয়নবাসীর জন্য এ সেতু স্বপ্ন। তাই লাখো মানুষের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে আমি চেষ্টা করে যাচ্ছি।’
বিজয় টিভির মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি ও দৈনিক সময়ের আলো পত্রিকার গজারিয়া উপজেলা প্রতিনিধি মো. আমিরুল ইসলাম নয়নের ওপর সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে। এ সময় সন্ত্রাসীরা তাকে মারধর করে এবং গুলি করে হত্যা করার হুমকি দেয়।
সোমবার রাত পৌনে ৮টার দিকে ভবেরচর বাস স্ট্যান্ড এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
হামলার শিকার সাংবাদিক আমিরুল ইসলাম নয়ন বলেন, ‘রিপোর্ট-সংক্রান্ত কাজ শেষ করে বাড়ি ফেরার পথে ভবেরচর বাস স্ট্যান্ড এলাকায় বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। এ সময় পাঁচজন যুবক আমাকে ঘিরে ধরে। তাদের মধ্যে একজন আমাকে কিল ঘুষি মারতে থাকে। এ সময় পাশ থেকে আরেকজন বলতে থাকে ‘পিস্তল বের করে শালাকে গুলি করে দে’। ব্যস্ততম জায়গায় আর আশপাশে অনেক লোকজন থাকায় হামলাকারীরা সুবিধা করতে করতে পারেনি। আমি কৌশলে দৌড়ে কোনো রকমে রক্ষা পাই। তারপর একটি ফার্মেসি থেকে চিকিৎসা নিয়ে বাসায় চলে এসেছি।’
তিনি বলেন, ‘হামলাকারীদের মধ্যে একজনকে আমি চিনতে পেরেছি। বাকিদেরও মুখ চিনি কিন্তু নাম বলতে পারব না। এদের সাথে কোনো বিষয় নিয়ে আমার কোনো বিরোধ ছিল না, কী কারণে তারা আমার ওপর হামলা করল তা জানা নেই। বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশ এবং স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের জানিয়েছি। মঙ্গলবার সকালে এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দায়ের করব।’
বিষয়টি সম্পর্কে গজারিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মোল্লা সোহেব আলী বলেন, ‘রাত সাড়ে ৮টার দিকে সাংবাদিক আমিরুল ইসলাম নয়ন মুঠোফোনে বিষয়টি আমাকে জানিয়েছেন। তাকে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করার পরামর্শ দিয়েছি। বিষয়টি খতিয়ে দেখছি।’
এদিকে সাংবাদিক আমিরুল ইসলাম নয়নের ওপর হামলা এবং হত্যার হুমকির ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছেন গজারিয়া প্রেসক্লাবের সভাপতি মোহাম্মদ আরফিন ও গজারিয়া উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন। এ ঘটনায় জড়িত সবাইকে গ্রেপ্তার এবং বিচারের দাবি করেন তারা।
খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গায় স্কুলছাত্রীকে যৌন হয়রানির অপরাধে এক বখাটে যুবককে ছয় মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
সোমবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে মাটিরাঙ্গা পৌরসভার বাবুপাড়া নামক এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ডেজি চক্রবর্তী।
জানা যায়, সাজাপ্রাপ্ত বখাটের নাম মো. নিজাম উদ্দিন (৩৬)। তার মাটিরাঙ্গা পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডের নবীনগর এলাকায়।
এলাকাবাসী জানায়, মাটিরাঙ্গা বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে স্কুলে যাওয়ার পথে ওই যুবক হাত ধরে টান দিলে মেয়েটি চিৎকার করে ওঠে। চিৎকার শুনে এলাকাবাসী এগিয়ে আসে এবং বখাটে যুবককে ধরে বৈদ্যুতিক খুঁটির সঙ্গে বেঁধে মারধর করেন। স্থানীয়রা প্রশাসনকে খবর দিলে মাটিরাঙ্গা থানার পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে এনে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন ইউএনও।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ডেজি চক্রবর্তী বলেন, স্কুলছাত্রীকে যৌন হয়রানির করার অপরাধে দণ্ডবিধি ১৮৬০-এর ৫০৯ ধারায় মো. নিজাম উদ্দিনকে ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। সেইসঙ্গে তাকে খাগড়াছড়ি সদর জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির (চরমোনাই পীর) সৈয়দ রেজাউল করীম বলেছেন, ‘দেশের ১২টা বেজে গেছে। এ সরকারের অধীনে আর কোন নির্বাচন নয়, ক্ষমতাপ্রেমীদের মসনদ ভেঙে এবার বঙ্গোপসাগরে ফেলা হবে।’
জাতীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন, নির্বাচনের কমিশনারের পদত্যাগ; বিদ্যুৎ, গ্যাস ও নিত্য পণ্য দ্রব্যমূল্যের দাম কমানোসহ বিভিন্ন দাবিতে সোমবার বিকেলে মুন্সিগঞ্জে আয়োজিত ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জেলা সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
সোমবার মুন্সিগঞ্জ শহরের কৃষিব্যাংক সংলগ্ন সড়কে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে অংশ নেন দলটির কয়েক হাজার নেতা-কর্মী।
রেজাউল করিম বলেন, ‘বর্তমান সরকার অবৈধ সরকার এ সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়নি। আমাদের ধোকা দিয়ে বোকা বানিয়ে আবারও সরকার ক্ষমতায় যাবে, এই স্বপ্ন বাংলার মাটিতে আর বাস্তবায়ন হবে না। তারা বলে থাকে আমরা দেশপ্রেমিক আমরা জনগণের প্রেমিক। এগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা। আমাদের দাবি আগামী নির্বাচন হবে সুষ্ঠু, নির্বাচন হবে স্বচ্ছ, নির্বাচন হবে প্রশ্নের ঊর্ধ্বে। বিভিন্ন দেশেও একই কথা বলছে। আমেরিকাও বলছে একটি সুন্দর নিরপেক্ষ নির্বাচন বাংলাদেশ হতে হবে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বলে, বিদেশিরা তাদের ওপর হস্তক্ষেপ করে আপনারা যদি একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিস্থিতি তৈরি করেন তাহলে তারা আর এসব কথা বলার সাহস পায় না।’
ভিসানীতি দেশের জন্য লজ্জাজনক উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বর্তমানে ভিসা স্যাংশনসহ বিভিন্ন কার্যক্রম চলছে ভিসা সংসদ বাংলা একটি দেশের জন্য লজ্জাজনক এভাবে একটি দেশ চলতে পারে না তাই এর পরিবর্তন দরকার। চোরের দিক থেকে, দুর্নীতিবাজের দিক থেকে এ দেশ পাঁচবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছে, এ অবস্থা আমরা আর দেখতে চাই না। তাই দেশ ও জাতির কল্যাণের জন্য এক নীতি আদর্শ দরকার যার নাম ইসলাম। ইসলামী নিতে আদর্শের মাধ্যমে সারা বিশ্বে শান্তি আসবেন। এ শান্তির পক্ষে আমরা সবাই একত্রিত হবো। যারা নাকি ক্ষমতা প্রেমিক রয়েছে আমরা দেশ প্রেমিকরা একত্রিত হয়ে এদের মসনদকে ভেঙে বঙ্গোপসাগরে নিক্ষেপ করা হবে।’
সমাবেশে ইসলামী আন্দোলন মুন্সীগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতিআতিকুর রহমানের সভাপতি তো ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি মুফতি শাহাদাত হোসেনের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় মহাসচিব মাওলানা ইউনুস আহমেদ সহ জেলা কমিটির নেতারা।
সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জে সুরমা নদীতে পাথর বোঝাই ট্রলার ডুবে এক মাঝি মারা গেছেন। সোমবার দুপুর ২টায় মাঝি শওকত (৩৫) মিয়ার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
নিহত শওকত মিয়া তাহিরপুর উপজেলার বালীজুরী ইউনিয়নের দক্ষিণকূল গ্রামের মৃত. শামসুদ্দিনের ছেলে।
জানা গেছে, গত রোববার রাতে জামালগঞ্জ সদর ইউনিয়নের লালপুর বাজার থেকে পাথর নৌকায় বোঝাই করে মাঝি শওকত আলী ও ইঞ্জিন চালক মোকারম হোসেন ঘুমিয়ে পড়েন। সকালে নৌকা চালু করতে গিয়ে দেখতে পায় নৌকার পিছনের অংশ আস্তে আস্তে পানিতে ডুবে যাচ্ছে। মোকারম চিৎকার দিয়ে শওকতকে বের হতে বলে নৌকা থেকে পানিতে লাফ দেন। তিনি নদীর পাড়ে আসতে পারলেও শওকত পাথর বোঝাই নৌকাসহ ডুবে যান। পরে সোমবার দুপুরে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
লালপুর নৌপুলিশ ফাঁড়ির অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. মিজানুর রহমান জানান, দুপুর ২টায় মাঝি শওকত মিয়ার মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় নিজ ঘর থেকে যুথি আক্তার (১৭) নামে এক কিশোরীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। সোমবার দুপুরে উপজেলার ইমামপুর ইউনিয়নের চর সাহেবানী গ্রাম থেকে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়।
যুথি ওই গ্রামের মালয়েশিয়া প্রবাসী জহিরুল ইসলামের মেয়ে। এ বছর সে স্থানীয় একটি মাদ্রাসা থেকে দাখিল পাস করে।
স্থানীয়রা জানান, প্রায় দুই বছর আগে তার মা মারা যান। পরে তার বাবা দ্বিতীয় বিবাহ করেন এবং কয়েক মাস পর বিদেশে যান। এরপর থেকেই সৎ মায়ের সঙ্গে যুথির বিবাদ লেগেই থাকত। সম্প্রতি সৎ মায়ের উপর অভিমান করে যুথির ছোট ভাই নানা বাড়ি চলে যায়। এ অবস্থার মধ্যে সোমবার দুপুর ১২টার দিকে যুথির শয়ন কক্ষের জানালা দিয়ে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে তার ঝুলন্ত লাশ দেখতে পায় এক প্রতিবেশী। পরে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে মরদেহটি উদ্ধার করে।
যুথির নানা রবিউল আউয়ালের অভিযোগ, ‘এই ঘটনার জন্য সৎ মা পান্না আক্তার দায়ী।’ তাকে খুন করা অথবা আত্মহত্যায় প্ররোচিত করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
রবিউল আউয়াল বলেন, ‘এ বিষয়ে সৎমা পান্নার বিরুদ্ধে তারা থানায় লিখিত অভিযোগ করা হবে।’
এ বিষয়ে গজারিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোল্লা সোহেব আলী বলেন, ‘পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করেছে। প্রাথমিকভাবে বিষয়টি আমাদের কাছে আত্মহত্যা বলে মনে হয়েছে। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।’