ফেনীতে পুলিশ ম্যাজিস্ট্রেসি কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়েছে। চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ আতাউল হকের সভাপতিত্বে আয়োজিত এ কনফারেন্সে প্রধান অতিথি ছিলেন ফেনীর জেলা ও দায়রা জজ এ.এস.এম. রুহুল ইমরান।
মঙ্গলবার বিকেলে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত কনফারেন্সে বিশেষ অতিথি হিসেবে পুলিশ সুপার (এসপি) জাকির হাসান, বিজিবি-৪ কমান্ডিং অফিসার লেফটেন্যান্ট কর্নেল রকিবুল হাসান, র্যাব-৭ এর ফেনী কমান্ডিং অফিসার মো. সাদেকুল ইসলাম, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রেজোয়ান সফিকুল আরমান সাকিল উপস্থিত ছিলেন।
জেলা চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের উদ্যোগে আয়োজিত কনফারেন্সে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা ও দায়রা জজ এ.এস.এম. রুহুল ইমরান ফৌজদারি মামলার বিভিন্ন বিষয়ে সার্বিক দিক নির্দেশনা প্রদান করেন।
সভাপতির বক্তব্যে চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ আতাউল হক বলেন, যে কোনো মামলার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তদন্ত। এর সিংহভাগ কাজই তদন্তকারী সংস্থা করে থাকে। এর মধ্যে ঘটনাস্থল পরিদর্শন, সাক্ষীদের সাক্ষ্য, মেডিকেল সনদ সংগ্রহ, আলামত জব্দকরণ, রাসায়নিক পরীক্ষার প্রতিবেদন সংগ্রহ, ডিএনএ টেস্ট, পোস্টমর্টেম রিপোর্ট, ভিসেরা রিপোর্ট, স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি, ভিকটিমের জবানবন্দি, বিশেষজ্ঞের মতামত, এজাহারকারী/নালিশকারীর বক্তব্য রেকর্ড ও সংগ্রহে বিচ্যুতি হলে মামলায় বিরূপ ফল হয়।
এজন্য সব তদন্তকারী সংস্থা ও এজেন্সিকে সতর্ক থাকতে এবং সেইসঙ্গে রিমান্ড শুনানিতে কেইস ডকেট ও সিডি উপস্থাপন, মামলার তদন্ত প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রতা পরিহার, দ্রুত মেডিকেল সনদ সরবরাহ, ফরেনসিক রিপোর্ট প্রাপ্তিতে কমিউনিকেশন জোরদার, পোস্ট মর্টেম রিপোর্ট দাখিলে আরও দায়িত্ববান হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও কনফারেন্সের ফোকাল পার্সন ফারহানা লোকমানের সঞ্চালনায় কনফারেন্সে ফেনীর চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিগত বছরগুলোর মামলার নিস্পত্তির বিবরণী পেশ করা হয়।
এসময় উপস্থিত সবাই মামলা নিষ্পত্তি ও বিচার কার্যক্রম নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ এবং পুলিশ সুপার ও সিভিল সার্জনের প্রতিনিধি তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করার দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
কনফারেন্সে আরও উপস্থিত ছিলেন জেলার বিভিন্ন সংস্থার পদস্থ কর্মকর্তাসহ জেলায় কর্মরত সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, সব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এবং তদন্তের সঙ্গে সম্পৃক্ত অন্যান্য ইউনিটের প্রতিনিধিরা।
                        তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বলেছেন, “আমরা যে অঙ্গীকার নিয়ে সরকারে এসেছিলাম, তা বাস্তবায়নের পথে। আগামী সপ্তাহে হাসিনার বিচারের রায় দেখতে পাবে জাতি। মঙ্গলবার (০৪ নভেম্বর) দুপুরে লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে জুলাই শহীদ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
উপদেষ্টা বলেন, শেখ হাসিনা ছাড়াও ট্রাইব্যুনালে আরও অনেকেরই বিচারকাজ চলছে। যারা ছাত্র জনতাকে হত্যা ও গুমের সঙ্গে জড়িত ছিলেন তাদের সবারই বিচার হবে। পরবর্তী সরকারে যারা আসবেন তারা এই বিচার কাজ এগিয়ে নেবেন।
তিনি বলেন, সংস্কার কাজে আমরা অনেক দূর অগ্রসর হয়েছি। রাজনৈতিক দলগুলো ঐকমত্য হয়ে জুলাই সনদে স্বাক্ষর করেছেন। দলগুলো বসে সরকার একটা দলিলে আসতে পারা বাংলাদেশের জন্য বড় একটি প্রাপ্তি। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ একটা নতুন পর্যায়ে গিয়েছে।
মাহফুজ আলম আরও বলেন, জুলাই সনদ ও সংস্কার কার্যক্রমের মাধ্যমে পরবর্তীতে যে নির্বাচিত সরকার আসবে তারা যদি এই অনুযায়ী কাজ করতে পারে তাহলে আমরা যে নতুন বাংলাদেশ চেয়েছিলাম, সেরকম একটা দেশ হবে। যেখানে সবার ক্ষমতার ভারসাম্য থাকবে। বিচারে আইনের শাসন থাকবে, সুবিচার থাকবে, গুম খুনের সংস্কৃতি আর ফিরে আসবে না।
                        হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জে ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় তিনজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্তত ২০ জন। মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার কদমতলী এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
শায়েস্তাগঞ্জ হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শুভ রঞ্জন চাকমা জানান, সিলেট থেকে ঢাকাগামী এনা পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাসের সঙ্গে কুমিল্লা থেকে সিলেটগামী রয়েল পরিবহনের আরেকটি বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই দুজন নিহত হন এবং হাসপাতালে নেওয়ার পর আরও একজনের মৃত্যু হয়।
তিনি বলেন, “দুর্ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস সদস্যরা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধারকাজ শুরু করে। গুরুতর আহতদের হবিগঞ্জ সদর হাসপাতাল ও মাধবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। আহতদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।”
ওসি আরও জানান, সংঘর্ষের তীব্রতায় বাস দুটির সামনের অংশ দুমড়ে-মুচড়ে যায়। আহতদের অনেকের হাত-পা শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
দুর্ঘটনার পর মহাসড়কে প্রায় এক ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ ছিল। পরে পুলিশ দুর্ঘটনাকবলিত বাস দুটি রাস্তা থেকে সরিয়ে ট্রাফিক স্বাভাবিক করে।
                        আমরা দেশ ও জাতির স্বার্থে একা নির্বাচন করবো না, তাই সব দিক বিবেচনা করেই চূড়ান্ত তালিকা ঘোষণা করা হবে, সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জামায়াত আমির ডা. শফিকুর রহমান একথা বলেন। তিনি আরো বলেন, আমরা প্রায় একবছর আগে প্রার্থীদের নাম স্থানীয়ভাবে জানিয়ে দিয়েছি। চূড়ান্ত তালিকা সময়মত কেন্দ্রের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হবে।
তিনি মঙ্গলবার ভোরে প্রায় দুই সপ্তাহ বিভিন্ন দেশ সফর শেষে দেশে ফিরে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জে প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন।
এ সময় সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের জবাবে জামায়াত আমির বলেন, আমি শুনেছি-বিএনপি ২৩৭টি আসনে প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করে বলেছে, এটি চূড়ান্ত নয়। এরমধ্যেও পরিবর্তন আসতে পারে। আমরা ও দেশবাসী সবাই ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন দেখতে চাই।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, গত ১৯ অক্টোবর পবিত্র ওমরাহ পালনে যাই। পরে ২২ তারিখে যুক্তরাষ্ট্রে। সেখানে সরকারি বেসরকারি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। পাশাপাশি নিউইয়র্ক, বাফেলো এবং ওয়াশিংটন ডিসিতে বাংলাদেশি প্রবাসীদের সঙ্গে মিলিত হয়ে তাদের কথা শুনেছি। এরপর যুক্তরাজ্য ও তুরস্ক সফর শেষে আজ (মঙ্গলবার) দেশে ফিরেছি।
তিনি বলেন, তুরস্কেও সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মিটিং হয়েছে। বাংলাদেশি ডায়াসপরাদের সঙ্গেও কথা বলেছি। যেখানেই গেছি, দেশ ও জনগণের স্বার্থকে সামনে রেখেই কথা বলার চেষ্টা করেছি। আমরা বলেছি-দুনিয়ার সবার সঙ্গে আমরা সম্মানজনক সম্পর্ক চাই। এই সম্পর্ক হবে পারস্পারিক শ্রদ্ধা ও সমতার ভিত্তিতে।
এ সময় জামায়াতের নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান ও শাহজাহান চৌধুরী, সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মাছুম, মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, মাওরানা আব্দুল হালিম, হামিদুর রহমান আযাদ ও অ্যাড. মোয়াযযম হোসাইন হেলাল, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মোবারক হোসাইন, সাইফুল আলম খান মিলন, নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা দক্ষিণের আমির আমির নূরুল ইসলাম বুলবুল, নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও উত্তরের আমির মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন, দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ সহ কেন্দ্রীয় ও মহানগর নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
জামায়াত আমির বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জে পৌঁছালে নেতাকর্মীরা তাকে শুভেচ্ছা জানান। ব্রিফিং শেষে নেতাকর্মীদের গাড়ীবহরসহ বসুন্ধরার বাসায় পৌঁছান তিনি। এ সময় নানা স্লোগান দেয়া হয়।
                        কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে পদ্মা নদীর দুর্গম চরে জমি দখল ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের সংঘর্ষে তিনজন নিহতের ঘটনায় নতুন করে আরও একটি মামলা হয়েছে। তবে এঘটনায় ঘটনার কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
গত রোববার রাতে কাকন গ্রুপের নিহত লিটন হোসেনের ভাই আলী হোসেন বাদী হয়ে দৌলতপুর থানায় মামলাটি দায়ের করেন। এতে ১৫ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ১০ থেকে ১২ জনকে আসামি করা হয়েছে।
এর আগে গত বুধবার (২৯ অক্টোবর) বিকেলে মণ্ডল গ্রুপের নিহত আমান মণ্ডলের বাবা মিনহাজ মণ্ডল বাদী হয়ে কাকন বাহিনীর প্রধান প্রকৌশলী কাকনসহ ২৩ জনের নাম উল্লেখ এবং আরও ২০ থেকে ৩০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেছিলেন।
উল্লেখ্য, গত সোমবার (২৭ অক্টোবর) দুপুরে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর, রাজশাহীর বাঘা ও নাটোরের লালপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী দৌলতপুরের মরিচা ইউনিয়নের চৌদ্দহাজার মৌজার নিচ খানপাড়া এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বাঘার মণ্ডল বাহিনী ও দৌলতপুরের কাকন বাহিনীর মধ্যে ভয়াবহ গোলাগুলির ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
সে সময় নিহত হন রাজশাহীর বাঘা উপজেলার নিচ খানপাড়া এলাকার মিনহাজ মণ্ডলের ছেলে আমান মণ্ডল (৩৬) এবং শুকুর মণ্ডলের ছেলে নাজমুল মণ্ডল (২৬)। নিহতরা মূলত কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার মরিচা ইউনিয়নের বাসিন্দা ছিলেন। নদীভাঙনে ভিটেমাটি হারিয়ে তাঁরা বাঘার নিচ খানপাড়ায় অস্থায়ীভাবে বসবাস করছিলেন।
অন্যদিকে পরদিন মঙ্গলবার সকালে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলার বাহাদুরপুর ইউনিয়নের রায়টা পদ্মা ঘাট থেকে কাকন বাহিনীর সদস্য ও কসমেটিকস ব্যবসায়ী লিটন হোসেনের (৩০) মরদেহ উদ্ধার করে পাবনা নৌ পুলিশ। তাঁর শরীরে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়। তিনি ঘোষপাড়া এলাকার মৃত জামিরুল ইসলামের ছেলে।
নতুন মামলা ও আসামি গ্রেপ্তার প্রসঙ্গে দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোলাইমান শেখ বলেন, “পদ্মার চরে নিহতের ঘটনায় আরও একটি মামলা হয়েছে। তবে এই দুই মামলার কোনো আসামি এখনো গ্রেপ্তার হয়নি। পুলিশ তদন্ত কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।”
                        জামালপুরে ৫ টি আসনে বিএনপি'র প্রার্থীদের নামের তালিকা ঘোষণা করায় নেতা কর্মীদের আনন্দ উচ্ছ্বাস ও দোয়া অনুষ্ঠিত হয়েছে।
গতকাল সোমবার ৩ নভেম্বর রাতে শহরের স্টেশন রোডে জেলা বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে এক সংক্ষিপ্ত আলোচনা ও দোয়ার আয়োজন করে জেলা ও শহর বিএনপি। এ সময় নেতা কর্মীরা বলেন, বিগত ১৭ বছর আন্দোলন সংগ্রামে যারা মাঠে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। দল থেকে তাদের মনোনয়ন দেওয়ায় তারা বেশ আনন্দিত। জামালপুরের পাঁচটি আসনে বিএনপি'র প্রার্থীরা বিপুল ভোটে জয়লাভ করবেন বলে প্রত্যাশা সবার।
জামালপুরে ৫ টি আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন যথাক্রমে জামালপুর-১ (দেওয়ানগঞ্জ-বকশীগঞ্জ) কেন্দ্রীয় বিএনপি'র কোষাধ্যক্ষ এম রশিদুজ্জামান মিল্লাত। জামালপুর-২ (ইসলামপুর) সুলতান মাহমুদ বাবু। জামালপুর-৩ (মেলান্দহ-মাদারগঞ্জ) কেন্দ্রীয় বিএনপি'র জলবায়ু বিষয়ক সহ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল। জামালপুর-৪ (সরিষাবাড়ি) জেলা বিএনপির সভাপতি ফরিদুল কবির তালুকদার শামীম। জামালপুর-৫ (সদর) জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শাহ মো: ওয়ারেছ আলী মামুন।
                        শেরপুরের ঝিনাইগাতীর জরাকুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থী সাবিহাকে পিটিয়ে বিদ্যালয় থেকে বের করে দিয়েছে ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা আঞ্জুমান আরা বেগম । পরে তাকে ঝিনাইগাতী উপজেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
সাবিহা জরাকুরা গ্রামের সফিকুল ইসলামের মেয়ে।
ঘটনাটি ঘটেছে ৩ নভেম্বর সোমবার বিকেলে একইদিন রাতে বিষয়টি গণমাধ্যম কর্মীদের নিশ্চিত করেন সাবিহার পরিবার।
বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক ও সাবিহা জানান, জরাকুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা আঞ্জুয়ারা বেগম শ্রেণি কক্ষে পাঠদান না করিয়ে মোবাইল দেখতেছিলো। বিষয়টি সাবিহা বলায় তাকে বেত দিয়ে পিটিয়ে আহত করে বিদ্যালয় থেকে বের করে দেয়। এ ঘটনায় আতঙ্কিত ও ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে ওই শিক্ষার্থী। পরে তাকে পরিবারের লোকজন ঝিনাইগাতী হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করে। ওইদিন রাতে হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, সাবিহার শরীরে একাধিক আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। তবে সে আশঙ্কামূক্ত রয়েছে।
এ ঘটনায় বিচার দাবী করে উপজেলা শিক্ষা অফিসারের বরাবর অভিযোগ দিয়েছেন নির্যাতিত শিক্ষার্থীর বাবা সফিকুল ইসলাম। তিনি এই শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্যও দাবি করেন। স্থানীয় অভিভাবকদের অভিযোগ শিক্ষক আঞ্জুয়ারার দূর্ব্যবহারের কারণে এই স্কুল থেকে অনেকেই শিক্ষার্থী অন্যত্র ভর্তি করেছেন।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এ ঘটনায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে সাংবাদিকদের জানান।
এব্যাপারে উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার আব্দুল মোতালেব বলেছেন এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
                        মানিকগঞ্জের দুইটি আসনে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। মানিকগঞ্জ-২ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছেন জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মঈনুল ইসলাম খান শান্ত, আর মানিকগঞ্জ-৩ আসনে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা ও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আফরোজা খানম রিতা।
সোমবার (৩ নভেম্বর) রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের স্থায়ী কমিটির দিনব্যাপী বৈঠক শেষে সন্ধ্যায় ২৩৭টি আসনের প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তবে মানিকগঞ্জ-১ আসনের প্রার্থী এখনো ঘোষণা করা হয়নি। এ বিষয়ে মির্জা ফখরুল সাংবাদিকদের বলেন, “মানিকগঞ্জ-১ আসনে প্রার্থী নির্ধারণ করা হয়নি, ওই আসনটি আপাতত স্থগিত রাখা হয়েছে। পরবর্তীতে উপযুক্ত প্রার্থী ঘোষণা করা হবে।”
দীর্ঘদিন ধরে জেলা বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় আফরোজা খানম রিতা এর আগে মানিকগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে তিনি দলীয় চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও জেলা আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। অন্যদিকে মঈনুল ইসলাম খান শান্তও বিএনপির তৃণমূল পর্যায়ে সুপরিচিত মুখ। তিনি অতীতে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন এবং দলীয় কর্মকাণ্ডে সক্রিয় ভূমিকা রাখছেন।
দলের কেন্দ্রীয় দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এবারের ঘোষিত প্রার্থী তালিকায় অভিজ্ঞ ও তরুণ নেতৃত্বের সমন্বয় করা হয়েছে। মাঠে সক্রিয়, পরীক্ষিত ও জনপ্রিয় নেতাদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে বলেও জানানো হয়।
এদিকে প্রার্থী ঘোষণা হওয়ার পরই মানিকগঞ্জ জুড়ে উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে। ফেসবুক, এক্স (টুইটার) ও হোয়াটসঅ্যাপে রিতা ও শান্তকে অভিনন্দন জানিয়ে পোস্ট দিচ্ছেন তাঁদের অনুসারী ও সমর্থকেরা। অনেকেই মন্তব্য করছেন, “দীর্ঘদিন মাঠে থাকা নেতাদের প্রতি দলের আস্থা রাখায় তৃণমূল নেতাদের মধ্যে নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়েছে।”
জেলা বিএনপির একাধিক নেতা জানান, শান্ত ও রিতার মনোনয়ন ঘোষণায় দলের কর্মীদের মধ্যে নতুন প্রাণচাঞ্চল্য দেখা দিয়েছে। তাঁরা আশা করছেন, আসন্ন নির্বাচনে বিএনপি মানিকগঞ্জের আসনগুলোতে শক্ত অবস্থান তৈরি করতে সক্ষম হবে।
                        চট্টগ্রাম মহানগরের পাঁচলাইশ থানাধীন হামজারবাগ এলাকায় স্ত্রীর সঙ্গে পরকিয়ার জেরে মো. হাসিব (২৬) নামে এক যুবককে গলা কেটে হত্যা করেছে এক প্রবাসী। পুলিশ জানিয়েছে, স্ত্রীর কাছ থেকে তালাকের নোটিশ পেয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে দেশে ফিরে এক প্রবাসী তার স্ত্রীর প্রেমিক ওই যুবককে খুন করেছেন।
সোমবার আনুমানিক দেড়টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। নিহত মো. হাসিব নগরীর পাঁচলাইশ থানার জাঙ্গালপাড়া এলাকার বাসিন্দা। তিনি আগে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করলেও গত দুমাস ধরে বেকার ছিলেন বলে পুলিশ জানায়।
পুলিশ জানায়, একই এলাকায় প্রতিবেশি এক প্রবাসীর স্ত্রীর সঙ্গে হাসিবের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। মাসখানেক আগে ওই নারী হাসিবের সঙ্গে পালিয়ে যান। তারা এলাকা ছেড়ে অন্য কোথাও বসবাস করতে শুরু করেন। এর মধ্যে ওই নারী তার স্বামীকে বিদেশে তালাকনামা পাঠান। সেটা পেয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে ওই প্রবাসী গত সপ্তাহে দেশে ফিরে আসেন। এর মধ্যে হাসিব ও তার সদ্য বিয়ে করা স্ত্রীও নিজেদের বাসায় ফিরে আসেন। কয়েকদিন ধরে বিভিন্নভাবে ওই প্রবাসী তার স্ত্রীকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। হাসিবকেও নানাভাবে বোঝানোর চেষ্টা করেন। সোমবার দুপুরে প্রবাসী ব্যক্তি হাসিবের বাসায় গিয়ে তাকে ডেকে স্থানীয় সঙ্গীত আবাসিক এলাকার ভেতরে নিয়ে যান। সেখানে তাকে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত ও গলা কেটে খুন করে পালিয়ে যায়।’
পাঁচলাইশ থানার ওসি মোহাম্মদ সোলাইমান বলেন, স্থানীয়দের কাছ থেকে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করেছে। ঘটনায় জড়িত প্রবাসী ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারে অভিযান শুরু হয়েছে। তদন্তের স্বার্থে প্রবাসী ব্যক্তির নাম-পরিচয় জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন ওসি সোলাইমান।
                        ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নেত্রকোনা-২, সদর-বারহাট্রা আসনে ধানের শীষ মনোনীত প্রার্থীকে বিজয়ী করার লক্ষে সোমবার জেলা শহরে লিফলেট বিতরণ ও গণসংযোগ কর্মসূচী অনুষ্ঠিত হয়েছে। কর্মসূচীতে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের হাজার হাজার নেতাকর্মী অংশগ্রহণ করেন। মিছিলটির নেতৃত্ব দেন কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-ধর্মবিষয়ক সম্পাদক এটিএম আব্দুল বারী ড্যানী। মিছিলটি জেলা শহরের কোর্ট স্টেশন প্রাঙ্গণ থেকে শুরু করে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে চকপাড়া ঈদগাহ মাঠে গিয়ে শেষ করে। পরে লিফলেট বিতরন কর্মসূচী উদ্ধোধনকালে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আশরাফ উদ্দিন খান, কেন্দ্রীয় জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ডক্টর আরিফা জেসমিন নাহীন। সাবেক সহসভাপতি আব্দুল মান্নান তালুকদার, জেলা বিএনপির নেতা আব্দুল্লাহ আল মামুন খান রনি, জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আশরাফ উদ্দিন খান বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে যাকেই মনোনয়ন দিবেন আমরা তাকেই ঐক্যবদ্ধভাবে বিজয়ী করব। নির্বাচনকে সামনে রেখে পলাতক ফ্যাসিস্টরা এখনো ষড়যন্ত্র করছে। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সকলকে ঐক্যের বিকল্প নেই বলে ইতোমধ্যে আহ্বান জানিয়েছেন। দল থেকে যাকেই ধানের শীষ মনোনয়ন দিবেন তার জন্য আমরা সকলকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করে যাব। আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে আমাদেরকে আরও সতর্ক থাকতে হবে। জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠায় ফেব্রুয়ারি মাসেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন হতে হবে। বিএনপির অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
                        ২০৩০ সালের মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরের বহুল প্রতীক্ষিত বে টার্মিনাল অপারেশনে যাবে জানিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এস. এম. মুনিরুজ্জামান বলেছেন, এই টার্মিনাল চালু হলে বাংলাদেশের অর্থনীতি, বাণিজ্য ও আমদানি-রপ্তানি খাতে এক নতুন যুগের সূচনা হবে।
তিনি বলেন, বে টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পের নকশা ও প্রস্তুতিমূলক কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। সরকার ও বন্দর কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যে দেশি-বিদেশি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে প্রাথমিক আলোচনা সম্পন্ন করেছে।
সোমবার সকালে বন্দর অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত ‘জেনারেল মার্কেট এনগেজমেন্ট কনফারেন্স ফর দ্য বে টার্মিনাল মেরিন ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এস. এম. মুনিরুজ্জামান বলেন, বে টার্মিনাল শুধু চট্টগ্রাম নয়, পুরো দক্ষিণ এশিয়ার বাণিজ্য মানচিত্রে বাংলাদেশের অবস্থান আরও শক্তিশালী করবে। এটি চালু হলে দেশের রপ্তানি সক্ষমতা ও জাহাজ আগমনের সময় নাটকীয়ভাবে কমে আসবে। দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতেও আসবে আমূল পরিবর্তন।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (প্রকৌশল) কমডোর কাওছার রশিদ বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের ক্রমবর্ধমান চাপ কমাতে বে টার্মিনাল প্রকল্পটি সময়ের দাবি। চট্টগ্রাম বন্দরের সব স্টেকহোল্ডার চান, বে টার্মিনাল দ্রুত বাস্তবায়িত হোক। প্রকল্পের আওতায় সাগরে ব্রেকওয়াটার ও নেভিগেশন চ্যানেল নির্মাণের পাশাপাশি টার্মিনাল এলাকায় রেল ও সড়ক সংযোগ, কনটেইনার ইয়ার্ড, জেটি এবং আধুনিক সেবা অবকাঠামো তৈরি করা হবে।
তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ২০২৫ সালের এপ্রিল থেকে ২০৩১ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদে ‘বে টার্মিনাল মেরিন ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট’ বাস্তবায়ন করবে। প্রকল্পটি নগরীর উত্তর হালিশহরের আনন্দবাজার এলাকায় গড়ে তোলা হবে। মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন বন্দর ব্যবহারকারী সংগঠনের নেতা, প্রকৌশলী ও পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা।
                        গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় মাছের খামারের কারণে ৫২ পরিবারে দেখা দিয়েছে চরম দুর্ভোগ। ভুক্তভোগী পরিবারগুলো বারবার প্রশাসনের কাছে গিয়েও কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না। খোঁদ উপজেলা প্রশাসনের নির্দেশনা বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে যাচ্ছে মাছের খামার কর্তৃপক্ষ।
উপজেলার মাদারবাড়ী মৌজার উত্তরপাড় ও জটিয়ারবাড়ি গ্রামে ২৪০ বিঘা কৃষি জমিতে স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি জহুর আলী মিয়া কয়েকজন ব্যক্তিদের নিয়ে বর্ষাকালীন ৬ থেকে ৮ মাসের জন্য মাদারবাড়ী-কুঞ্জবন ভাই ভাই মৎস্য খামার পরিচালনা শুরু করেন গত বছর থেকে। মাছের খামারের মাঝে বসবাস করা পরিবারগুলো এখন তাদের বসতবাড়ির অস্তিত্ব হারানোর শঙ্কায় ভুগছেন।
ভুক্তভোগীদের দাবি প্রভাবশালী এই চক্রের মুখে প্রশাসনও যেন অসহায় হয়ে পড়ছে। উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) মো. মাসুম বিল্লাহ ও সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা এস এম শাহজাহান সিরাজ উপস্থিত থেকে পানি অপসারনের জন্য স্লুইচ গেটের বাঁধ কেটে দিলেও রাতের আধাঁরে পুনরায় বাঁধ দেয় খামার কতৃপক্ষ। একই সাথে প্রশাসনের দেওয়া ৯ টি নির্দেশনা মানার জন্য মাছের খামার কতৃপক্ষকে ১৫ দিনের সময়সীমা বেঁধে দিলেও ১টি নির্দেশনাও মানেননি। খোঁদ প্রশাসনকে যেন বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে যাচ্ছে প্রভাবশালী এই চক্র।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, বর্ষা মৌসুমে পানি আটকিয়ে ৬ থেকে ৭ মাস এই মাছের খামারে মাছচাষ করা হয়। এলাকাবাসীর অভিযোগ গত বছর প্রথম এই মাছের চাষ করার সময় দুর্ভোগের বিষয়টি বুঝতে না পারলেও দুমাস যেতেই দুর্ভোগে পড়েন মাছের খামারের ভেতরে বসত করা ৫২ টি পরিবার। স্লুইস গেটগুলো বন্ধ থাকায় জমির পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় একদিকে পরিবারগুলো হয়ে পড়ে পানি বন্দি। অন্যদিকে মাছে বসত বাড়ি ও পুকুরের পাড়ের মাটি খেয়ে ফেলায় ভেঙে পড়ে পুকুর ও বসত বাড়ির পাড়।
ভুক্তভোগী খোকন শিকদার বলেন, মাছের ঘেরের মধ্যে ৫২টি পরিবারের বসতবাড়ির মাটি ধসে পড়ে বাড়ির আঙিনায় থাকা বনজ ও ফলজ গাছ ভেঙে পড়ছে। মাছে অতিরিক্ত সার, খৈল ও রাসায়নিক ব্যবহার করায় পানি পঁচে দুর্গন্ধ হচ্ছে। বর্ষাকালে এই পানি ব্যবহার করা যাচ্ছে না।
মাছের খামার পরিচালনা কমিটির সভাপতি জহুর আলী বলেন, আমরা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে সহায়তা দিয়ে থাকি। তবে সাম্প্রতিক সময়ের বিষয়গুলো আমার জানা নেই। আমি ওমরা হজে ছিলাম।
মৎস্য খামারের সাধারণ সম্পাদক লুৎফর রহমান বলেন, গত বছরে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে সহায়তা দেওয়া হয়েছে। এবারও দেওয়া হবে। প্রশাসনের নির্দেশনা মানা হবে। তবে সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। প্রশাসনের উদ্যোগে কেটে দেওয়া স্লুইস গেটের বাঁধ পুনরায় আটকে দেওয়াটা ঠিক করা হয়নি।
সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. মাসুম বিল্লাহ বলেন, আমরা জানতে পারছি ঘের কতৃপক্ষ প্রশাসনের কেটে দেওয়া বাঁধ আটকিয়ে দিয়েছে এবং একটি শর্তও তারা মানেননি। আমারা দ্রুত সময়ের মধ্যে সমস্যা সমাধানের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিব।
কোটালীপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাগুফতা হক বলেন, আমি মাতৃত্বজনিত কারনে ছুটিতে ছিলাম। বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে মাছের খামারের কারণে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকলে অতিদ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
                        কিছু মানুষ আছেন, যাদের জীবন যেন প্রদীপের শিখার মতো-নিজে জ্বলে অন্যকে আলো দেন। নিজেদের প্রচারের আলোকমালায় সাজান না। বরং নিভৃতচারী থেকে মানুষের পাশে দাঁড়ান। তাদের যেন অর্জন বা প্রাপ্তি কোনো লক্ষ্য নয়। লক্ষ্য কেবল মানুষের কল্যাণ। এমন এক মানুষ হলেন প্রকৌশলী সত্যজিৎ রায়।
নড়াইল সদর উপজেলার গোবরা এলাকার রামনগরচর গ্রামে জন্ম নেওয়া এই মানুষটির স্লোগান হলো ‘কথা না লাগিয়ে, গাছ লাগাও’।
এই স্লোগানকে সামনে রেখে তিনি বগুড়াসহ খুলনা বিভাগের ৩টি জেলার বিভিন্ন গ্রামীণ সড়কের দুইপাশে ও বাড়ির আঙ্গিনায় লাগিয়েছেন ৩ লাখ গাছ। এখনো লাগিয়ে চলেছেন।
বয়স এখন ৭৫ বছর। শরীর আগের মতো বলিষ্ঠ নেই। তবুও চোখেমুখে এখনো সেই দীপ্তি। সত্যজিৎ রায় আজও প্রমাণ করে যাচ্ছেন। তিনি মনে করেন, দেশ গড়ে ওঠে শুধু বক্তৃতায় নয়। গড়ে ওঠে মানুষের প্রতি ভালোবাসা, নিষ্ঠা আর কর্মের সেতুবন্ধনে। এই মানুষটি নিঃশব্দে যে আলোকবর্তিকা জ্বালিয়ে চলেছেন, তা একদিন আরও দূর পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়বে।
জীর্ণ ঘর থেকে এই ইঞ্জিনিয়ার-মায়ের আর্শীবাদ, এ যেন এক অলৌকিক জয়। টিনের ঘর, ভাঙা দরজা, উঠানে ছাগল-মুরগির খেলা—এই ছিল তার শৈশবের রাজ্য। বাবা শরৎ চন্দ্র বিশ্বাসের মৃত্যুর পর মা ললিতা রায় একাই লড়ে গেছেন জীবনের সাথে। কখনও কষ্ট লুকিয়ে, কখনো ক্ষুধা সহ্য করে। শুধু একটাই স্বপ্ন বুকে বেঁধে রেখেছিলেন ছেলেকে বড় মানুষ বানাবেন। কিন্তু মাও আর বেচে নেই। আজ মা-বাবা হারা সেই ছেলে সত্যজিৎ রায় একজন ইঞ্জিনিয়ার।
৪০ বছর বয়সে হারিয়েছেন বাবাকে, আর ৫৫ বছর বয়সে মারা গেছেন মা। অভাবী কৃষক পরিবারের ছেলে সত্যজিৎ রায়। মায়ের প্রচেষ্ঠায় পরের কৃষি জমিতে কামলা দিয়ে আর স্কুল শিক্ষকদের সহযোগিতায় এস.এস.সি পর্যন্ত নিজের লেখাপড়া চালিয়েছেন। কলেজ জীবনের লেখাপড়ার দায়িত্ব নেন সা-বাবার পাশাপাশি বড় ভাই নড়াইল ভিক্টোরিয়া কলেজের প্রয়াত অধ্যাপক রনজিৎ রায়।
প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুল শিক্ষকদের সার্বিক সহযোগিতায় এস,এস,সিতে ঈর্শ্বণীয় রেজাল্ট করে তাক লাগিয়ে দেন সবাইকে। কলেজ জীবনেও তাই। মেধাবী সেই মানুষটি এখন অবসরপ্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়ার। ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএসসি এগ্রিকালচারাল অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে ১৯৭৬ সালে বাংলাদেশ এগ্রিকালচারাল ডেভেলপমেন্ট করপোরেশন বিভাগে (বিএডিসি) চাকরি করেন। ২০০৮ সালে চাকরি থেকে অবসরে যান।
বাবার শেখানো ও বিদেশি এক পরিবেশবিদের বক্তব্য শুনে প্রথমে তালবীজ রোপণ শুরু করেন। বাবা মারা যাবার আগে তাকে বলেছিলেন ‘বজ্রনিরোধক’ তালবীজ রোপণ করার পদ্ধতি। সেই শিক্ষা এখন নিজের জেলা নড়াইল থেকে শুরু করে বগুড়া, যশোর, বেনাপোল, খুলনা জেলার বিভিন্ন গ্রামগঞ্জে ছড়িয়ে দিচ্ছেন। সত্যজিৎ রায় চাকরি থেকে অবসর নেবার পর গত ১২ বছরে তালগাছসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছের চারা রোপন করেছেন ৩ লাখ গাছ । এর মধ্যে ৫০ হাজার তালগাছ ছায়া দিচ্ছে ওই অঞ্চলে। ওই সমস্ত এলাকার মানুষ তাকে চেনেন গাছ প্রেমিক সত্যজিৎ রায় হিসেবে। বর্তমানে পরিবারসহ থাকেন তিনি চট্রগ্রামের পাশলাইশ আবাসিক এলাকায়।
১৯৮৪ সালে নড়াইল সদর উপজেলার মুশুড়িয়া গ্রামের সীতানাথ মল্লিকের কন্যা দেশ বরেণ্য ডা. দেবালা মল্লিকের সঙ্গে শুভ পরিণয়ে আবদ্দ হন। দাম্পত্যজীবনে তাদের ঘরে অপারজিতা রায় নামে এক কন্যা সন্তান রয়েছেন। তিনিও মায়ের মতো দেশ বরেণ্য একজন চিকিৎসক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।
গাছ প্রেমিক সত্যজিৎ রায় জানান, ভাদ্রমাসে তাল পাকে। ভাদ্র ও আশ্বিন এই দুই মাস তিনি তালবীজ রোপণে পুরোটা সময় দিয়ে থাকেন। নিজের জমানো টাকা দিয়ে বিভিন্ন অঞ্চলের ৩০টি গ্রাম থেকে তালবীজ কিনে আনেন। এছাড়া প্রতি বছর বর্ষা মওসুমে বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে বাড়ি এবং আবর্জনার স্তূপ ঘেটেও তালবীজ সংগ্রহ করেন। তিনি বলেন প্রতি বছর ভাদ্র-আশ্বিন দুইমাসে গড়ে প্রায় ২০ হাজার তাল বীজ রোপণ করেন। এ হিসেবে ২০০৮ সাল থেকে ১৭ বছরে দুই লাখ ৮০ হাজার তালবীজ ও ২০ হাজার ১৭৫টি অন্যান ফলজ, বনজ, অসুধি, সুগন্ধি ফুলের গাছ রোপণ করেছেন। এছাড়া নদী, খাল পাড়ে, বিদ্যালয় আঙ্গিনায় রোপণ করলেও তার হিসাব তিনি নিজে রাখতে পারেননি। কিছু গাছ মারা গেছে,সমাজের কিছু দুষ্টু চক্রের মানুষ তার রোপণ করা গাছও নষ্ট করেছেন।
যশোর জেলার বাঘারপাড়া উপজেলার বাকড়ী গ্রামের অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, সত্যজিৎ রায় চট্রগ্রাম থেকে এই এলাকায় আসার পর নিজের রোপন করা গাছ পরিচর্যা করতে সাইকেল চালিয়ে ছুটে যান বিভিন্ন গ্রামে। কোথাও কোন সমস্যা হলে তা এলাকার মানুষের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করে সমাধান করেন।
খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার ডুমুরিয়া গ্রামের কৃষক মোল্যা হোসেন আলী বলেন,নিজ তাগিদ থেকে সত্যজিৎ রায় রোপণ করেন তালবীজ। উপজেলার অনেক গ্রামে তিনি তালবীজ ছাড়াও ফলজ, বনজ, অসুধিসহ ফুল গাছ লাগিয়েছেন।
নড়াইল সদর উপজেলার মুলিয়া ইউনিয়নের সীতরামপুর গ্রামের বিশিষ্ট সমাজসেবক মনোরঞ্জন বিশ্বাস বলেন, প্রকৌশলী সত্যজিৎ রায় একজন খাটি দেশপ্রেমিক, সমাজ সংস্কারক। তিনি নড়াইলের গর্ব। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের (ড্রইং অ্যান্ড পেইন্টিং বিভাগের)অবসরপ্রাপ্ত বিভাগীয় প্রধান চিত্রশিল্পী অধ্যাপক বিমানেশ বিশ্বাস বলেন, সত্যজিৎ রায় নড়াইল ছাড়াও দেশের বিভিন্ন জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চরে তালবীজসহ বিভিন্ন প্রকারের গাছ লাগিয়ে চলেছেন। ওইসব অঞ্চলে তার লাগানো প্রচুর গাছ মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে সাক্ষী দিচ্ছে। তার এই উদ্যোগ সাড়া দেশে ছড়িয়ে দেওয়া দরকার।
                        দিনাজপুর পুলহাট থেকে খানপুর পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার সড়কের দুপাশের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান অব্যাহত রেখেছে। সড়ক ও জনপদ (সওজ) বিভাগ। সোমবার দ্বিতীয় দিনেও দিনব্যাপি অভিযানে অংশ নেয় জেলা প্রশাসন, পুলিশ, ও সওজ বিভাগের কর্মকর্তারা।
জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে পুলহাট থেকে খানপুর পর্যন্ত সড়কের দুপাশে শতাধিক দোকান ও ঘরবাড়ি গড়ে ওঠে। এতে সড়কটি সরু হয়ে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে আগেও কয়েক দফা সতর্ক করা হলেও দখলদাররা স্থান খালি করেননি। ফলে প্রশাসন এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের উদ্যোগ গ্রহণ করে।
অভিযান চলাকালীন সওজ ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানান, জনস্বার্থে এই উচ্ছেদ অভিযান অব্যাহত থাকবে। কর্মকর্তারা সবাইকে সরকারি জায়গা দখলমুক্ত রাখতে ও উন্নয়ন কার্যক্রমে সহযোগিতা করার আহ্বান জানান।
দিনাজপুরে এই উচ্ছেদ অভিযানে একদিকে যেমন সড়ক প্রশস্তকরণের উদ্যোগে সাধারণ মানুষ আশাবাদী, অন্যদিকে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা পুনর্বাসনের দাবি জানিয়ে মানবিক সহায়তার প্রত্যাশা করেছেন।
দিনাজপুর সওজ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, দিনাজপুর পুলহাট থেকে খানপুর পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার এলাকায় সড়কের ৮৫ ফিট প্রশস্ত অংশের ভেতরে থাকা সব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে। ১৯৪২ সালে অধিগ্রহণ করা সরকারি জায়গা দখলমুক্ত রাখতেই এই অভিযান।
তিনি আরও বলেন, দখলমুক্ত হওয়া জায়গায় সড়ক প্রশস্তকরণ, ড্রেনেজব্যবস্থা ও জনসাধারণের চলাচল নির্বিঘ্ন করতে উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেওয়া হবে।
অভিযানের সময় দেখা যায়, ভারী যন্ত্রপাতি দিয়ে দোকান, টিনের ঘর ও কাঠের স্থাপনা ভেঙে দেওয়া হয়েছে। তবে এই উচ্ছেদ অভিযানে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা পড়েছেন চরম আর্থিক বিপাকে। অনেকেই জানিয়েছেন, যথাযথ নোটিশ ও সময় না পাওয়ায় তারা দোকানের মালামাল সরিয়ে নিতে পারেননি।