সম্প্রতি চট্টগ্রামের রাউজানে এক কলেজছাত্রের মৃত্যুর ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে বিভিন্ন গুজব ছড়িয়ে পড়েছে, যার বেশিরভাগই ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষের প্রতি বিদ্বেষমূলক। এ বিষয়ে বানায়োট গল্প, ফটোকার্ড ও ভিডিওসহ নানা ধরনের কনটেন্ট ফেসবুক-টিকটকের মত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ছড়িয়ে পড়েছে। এসব কনটেন্টে ওই কলেজছাত্রকে খুনের পর অভিযুক্তরা তার ‘মাংস রান্না করে খেয়েছে’ দাবি করে পাহাড়ে বসবাসকারী জনগোষ্ঠীকে ‘মানুষখেকো’ হিসেবে গুজব ছড়ানো হচ্ছে। ওই জনগোষ্ঠীর বিষয়ে তৈরি করা হচ্ছে নানা সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ। ছড়িয়ে পড়া এসব গুজব ও বিদ্বেষমূলক বক্তব্যের কারণে নানা প্রয়োজনে দেশের বিভিন্ন এলাকায় বসবাসকারী ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সদস্যদের বিভিন্ন বিব্রতকর পরিস্থিতি ও সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। এতে নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন তারা।
শুধু তাই নয়, এই ধরনের গুজব ও পাহাড়ে বসবাসকারী গোষ্ঠীর প্রতি বিদ্বেষ ছড়ানোর ফলে এই অঞ্চলের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে বলে আশঙ্কা মানবাধিকারকর্মী ও সমাজ বিশেষজ্ঞদের। অবশ্য পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, এ ধরনের গুজব কারা কেন ছড়িয়েছে তা খুঁজে বের করতে সাইবার টিম মাঠে নেমেছে।
গুজবের কারণে নৃগোষ্ঠীর লোকদের হেনস্তার অভিযোগ
পার্বত্য অঞ্চলের সবচেয়ে বড় শহর চট্টগ্রামে বসবাসকারী ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সাতজন সদস্যের সঙ্গে কথা বলেছেন এই প্রতিবেদক। তাদের মধ্যে পাঁচজন অবাধে চলাচল করতে গিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ওই গুজবের ফলে কোনো না কোনো সমস্যার মুখোমুখী হওয়ার কথা জানিয়েছেন। তাদেরই একজন চট্টগ্রামের একটি আঞ্চলিক গণমাধ্যমে প্রতিবেদক হিসেবে কাজ করা নীলা চাকমা। তিনি জানিয়েছেন, কাজের সুবাদে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর চট্টগ্রামে থাকতে হয়। রাউজানের ওই কলেজছাত্র খুনের পর শহরে বসবাস করা তার জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে।
নীলা চাকমা বলেন, ‘নিজ এলাকার বাইরে ভাষাসহ নানা কারণে আমরা বুলিংয়ের শিকার হই। এখন মানুষের মাংস খাওয়ার আরেকটা ট্যাগ যুক্ত হলো। এই যে রিকশাওয়ালা মামা, সবজিওয়ালা, দোকানদাররা বলতেছে, আমি খুবই অনিরাপত্তায় ভুগী। যেমন কয়েকদিন আমি এক বান্ধবীর সঙ্গে অক্সিজেন এলাকার অনন্যা আবাসিকে গিয়েছিলাম, সেখান থেকে ফেরার পথে একজন আমাকে আপত্তিকরভাবে স্পর্শ করেছে। আমি প্রতিবাদ করায় উনি আমার সঙ্গে মানুষের মাংস খাওয়ার বিষয় নিয়ে আসছেন।’
“আর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তো থাকতে পারতেছি না। নিউজফিডে ২০টা নিউজ থাকলে তার মধ্যে ১০টা আমাদের প্রতি বিদ্বেষমূলক। মেসেঞ্জারে বন্ধুরা বন্ধুরা বলতেছে, ‘তোরা তো এই খাস, তোদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করা যাবে না।’ এমনকি গণমাধ্যম সংশ্লিষ্ট মানুষও আছেন এই তালিকায়।”
এমনই আরেকজন ভুক্তভোগীর নাম অভি চাকমা। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী তিনি। অভি চাকমা তার অভিজ্ঞতা জানাতে গিয়ে বলেন, ‘রাউজানের ওই ঘটনার পর যখন ফেসবুকে আমরা মানুষের মাংস খাই বলে গুজব ছড়িয়ে পড়ল, এর কয়েকদিন পর ক্লাস থেকে ফেরার পথে কেন্দ্রীয় খেলার মাঠের দিকে দুজন মেয়ের সঙ্গে দেখা। দেখে দুজনকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মনে হয়েছে। ওরা আমাদের দেখে এমনভাবে অভিব্যক্তি প্রকাশ করেছে, যেন আমরা বোধহয় জ্যান্ত মানুষ খেয়ে ফেলি। তারা আবার নিজেদের মধ্যে বলাবলি করছিল যে, রাউজানের ওই ঘটনার পর পাহাড়ি দেখলেই তাদের ভয় লাগে। তখন কথাটা আমি শুনে যাওয়ায় তাদের বলেছি, কয়েকজন অপরাধ করলেই তা পুরো জনগোষ্ঠীর দায় হতে পারে না। তাছাড়া মানুষের মাংস খাওয়ার বিষয়টাও গুজব।’
চট্টগ্রাম শহরে কর্মক্ষেত্রে হেনস্তার শিকার স্বপন চাকমা নামের আরও একজনের সঙ্গে কথা হয় দৈনিক বাংলার। শহরের বায়েজিদ বোস্তামি এলাকার কনডেন্স মিল্ক উৎপাদনকারী একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন তিনি। স্বপন বলেন, “ফ্যাক্টরিতে যাওয়ার সময় রাস্তাঘাটে মানুষজন আমাদের দেখলে বলে, ‘তোমাদের চাকমারা নাকি মানুষের মাংস খায়?’ এমনকি ফ্যাক্টরির ভেতর আমাদের সুপারভাইজারও বলে আমাদের চাকমারা নাকি মানুষের মাংস খায়। তখন স্বাভাবিকভাবেই মেজাজ খারাপ হয়ে যায়।”
যেভাবে ছড়াল মানুষের মাংস খাওয়ার গুজব
ঘটনার শুরু গেল ১১ সেপ্টেম্বর। ওইদিন রাঙামাটি জেলার কাউখালী ইউনিয়নের দুর্গম বালু পাহাড় এলাকা থেকে এক কলেজছাত্রের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তার নাম শিবলী সাদিক হৃদয়। তিনি রাউজানের কদলপুর ইউনিয়নের পঞ্চ পাড়ার মুহাম্মদ শফির ছেলে। কদলপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজে দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়াশোনার পাশাপাশি স্থানীয় একটি মুরগির খামারে ব্যবস্থাপক হিসেবে কাজ করতেন তিনি। মরদেহ উদ্ধারের ১৪ দিন আগে ওই খামার থেকে অপহরণ করা হয়েছিল তাকে।
পুলিশ জানায়, হৃদয়ের সঙ্গে শ্রমিক হিসেবে আরও ছয়জন কাজ করতেন। তারা সবাই পার্বত্য এলাকার ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সদস্য। ঘটনার মাসখানেক আগে তাদের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয় হৃদয়ের। খামার মালিক সেসময় ঘটনাটি মীমাংসা করে দিলেও ক্ষুব্ধ ছিলেন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর শ্রমিকরা। সেই ক্ষোভ থেকে ২৭ আগস্ট রাতে হৃদয়কে অপহরণ করে আট কিলোমিটার দূরের গহীন পাহাড়ে নিয়ে যান তারা। পরে স্বজনদের ফোন করে ১৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন। এক পর্যায়ে ১ সেপ্টেম্বর হৃদয়ের বাবা শফি বান্দরবানে গিয়ে অপহরণকারীদের কথা মত দুই ব্যক্তিকে দুই লাখ টাকা মুক্তিপণ দিয়ে আসেন। এর আগে ৩১ আগস্ট সর্বশেষ তাদের সঙ্গে হৃদয়ের কথা বলিয়ে দেন অপহরণকারীরা।
মুক্তিপণ দেওয়ার পর ‘হৃদয়কে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে, তিনি বাসায় চলে যাবেন’ বলে অপহরণকারীরা স্বজনদের জানালেও বাসায় ফেরেননি তিনি। এই ঘটনায় ৭ সেপ্টেম্বর রাউজান থানায় একটি মামলা দায়ের করেন স্বজনরা। সেই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে সুইচিংমং মারমা (২৪) ও অংথুইমং মারমা (২৫) নামের দুজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে উমংচিং মারমা (২৬) নামের আরেকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ১১ সেপ্টেম্বর রাঙামাটি জেলার কাউখালী ইউনিয়নের দুর্গম বালু পাহাড় এলাকা থেকে হৃদয়ের দেহাবশেষ উদ্ধার করে পুলিশ। মরদেহ নিয়ে ফেরার পথে উমংচিং মারমাকে পুলিশ হেফাজত থেকে ছিনিয়ে নিয়ে গণপিটুনি দিয়ে হত্যা করে উত্তেজিত জনতা।
এই ঘটনার পরপরই নিহত হৃদয়ের দেহাবশেষের ছবি এবং নিহত ও অভিযুক্তদের একটি যৌথ ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এসব ছবির ক্যাপশনে ‘হত্যাকারীরা হৃদয়কে হত্যার পর তার মাংস রান্না করে খেয়ে হাড় পাহাড়ে ফেলে দিয়েছে’ বলে দাবি করা হয়। ফেসবুক, টিকটক ও ইউটিউবের মত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে কনটেন্ট ক্রিয়টরদের অনেকেই এই গুজবের ওপর ভিত্তি করে ভিডিও তৈরি করে শেয়ার করতে থাকেন। কেউ কেউ ফটোকার্ড তৈরি করেও তা শেয়ার করেন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের মধ্যে শুধু ফেসবুক ও ইউটিউবে অধিকতর অনুসন্ধান পদ্ধতিতে (অ্যাডভান্স সার্স সিস্টেম) যাচাই করে এই গুজব ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের প্রতি বিদ্বেষ ছড়ানো সংক্রান্ত সহস্রাধিক পোস্টের সন্ধান পেয়েছেন এই প্রতিবেদক। এসব পোস্টের মধ্যে অধিকাংশের বক্তব্য আপত্তিকর হওয়ায় প্রতিবেদনে যুক্ত করা যায়নি।
বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সারা বিশ্বের প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষের হাতেও পৌঁছে গেছে। এতে গুজবটি এত দ্রুত ও কার্যকরভাবে ছড়িয়েছে যে দায়িত্বশীল অনেকেই বিশ্বাস করে তা নিয়ে কথা বলেছেন।
গুজবটি ‘সত্য’ দাবি করেছেন আওয়ামী লীগ নেতা
এই গুজবটি বাস্তব দাবি করে তা নিয়ে কথা বলেছেন রাঙামাটি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুসা মাতব্বর। তার বক্তব্যের একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে। ১ মিনিট ৪৩ সেকেন্ডের বক্তব্যের প্রথম অংশে তিনি সম্প্রতি চট্টগ্রামের রাউজানে খুনের শিকার এক কিশোরের মাংস রান্না করে খাওয়ার অভিযোগ করেন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে।
ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে প্রথম ৪৩ সেকেন্ডে তাকে বলতে শোনা যায়, ‘গত দুই-তিনদিন আগে রাউজানের একটি ছেলেকে অপহরণ রাঙামাটির কাউখালিতে এনে তার মাংস পর্যন্ত তারা কেটে কেটে রান্না করে খেয়েছে। এটা দুঃখ জনক রাঙামাটিবাসীর জন্য। এই ধরনের ঘটনা যেন পরবর্তী আর না হয়, আমরা আবেদন জানাব সরকারের কাছে। এই সমস্ত এগুলো, এই হত্যাকাণ্ডগুলো আসলে মানুষ কোনো অবস্থাতে, যে কোনো মুহূর্তে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লেগে যেতে পারে। সবাইকে বলব, এই ধরনের ঘৃণ্য অপরাধ- মানুষের মাংস রান্না করে খাওয়া, এটা কতবড় অপরাধ! আমি বলার, মুখের ভাষাই পাচ্ছি না, কী বলব আমি!’
পরের ১ মিনিটে পাহাড়ে অস্ত্রধারীদের কাছ থেকে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে কথা বলেন তিনি।
অবশ্য পরে যোগাযোগ করলে বক্তব্যের বিষয়টি অস্বীকার করেন তিনি। ব্যস্ততার অজুহাতে তা নিয়ে বিস্তারিত কথা বলতেও রাজি হননি মুসা মাতব্বর।
তবে অনুসন্ধানে জানা গেছে, ১ মিনিট ৪৩ সেকেন্ডের ওই ভিডিওটি প্রথম প্রকাশ করে ‘সম্প্রীতির রাঙামাটি’ নামের এক ফেসবুক পেজ। এই ফেসবুক পেজের মালিক ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি অবজারভারের রাঙামাটি প্রতিনিধি শেখ ইমতিয়াজ কামাল ইমন। ১৯ সেপ্টেম্বর বিকেলে তার সঙ্গে কথা বলে দৈনিক বাংলা। তিনি বলেন, ‘৪ থেকে ৫ দিন আগে নির্বাচন নিয়ে আমরা চার থেকে পাঁচটা গণমাধ্যমের প্রতিবেদক ওনার সাক্ষাৎকার নিয়েছি। আমাদের মধ্যে একজন ওনাকে আসন্ন নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন করলে উনি এই বক্তব্য দিয়েছিলেন। আমার কাছে র-ভিডিও (মূল ভিডিও) আছে।’
যা বললেন মরদেহ উদ্ধারকারী পুলিশ সদস্যরা
শিবলী সাদিক হৃদয় হত্যার ঘটনায় এখন পর্যন্ত পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ। তাদের মধ্যে হত্যার ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী দিয়েছেন তিনজন। জবানবন্দী দেয়া তিনজনই হত্যায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। তবে কেউই হৃদয়ের মাংস রান্না করে খাওয়ার বিষয়ে কিছু বলেনি বলে দাবি পুলিশের।
মরদেহ উদ্ধার ও আসামিদের গ্রেপ্তারের সময় অভিযানিক দলে ছিলেন রাউজান থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আজিজুল হক। এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তাও তিনি। এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘রান্না করে তার মাংস খাওয়ার বিষয়টা ভুয়া। এসবের ভিত্তি নেই। এই বিষয়ে আমরা নিজেরাই তো কিছু পাইনি। ব্লগাররা ভাইরাল হওয়ার জন্য এটা ছড়াচ্ছে। এটা নিয়ে আমাদের সাইবার টিম মাঠে নামছে। আমাদের স্যারও (ওসি) এটা নিয়ে কথা বলেছেন। যারা এসব ভুয়া নিউজ ছড়িয়ে দেশের মধ্যে অরাজকতা সৃষ্টির চেষ্টা করতেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘এই মামলায় সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা করছেন একজন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মেয়ে। তিনি আমাদের কনস্টেবল। যেহেতু ভাষার একটা সমস্যা আছে, আমরা ওনার সহযোগিতায় কাজগুলো করছি।’
প্রায় একই কথা বলেন রাউজান থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ছিদ্দিকুর রহমান। তিনি বলেন, ‘হত্যায় জড়িতরা নিহতের মাংস রান্না করে খেয়েছে- এরকম কোনো তথ্য আমরা এখন পর্যন্ত পাইনি। যারা এগুলো ছড়াচ্ছে, তাদের এই বিষয়ে জিজ্ঞেস করা যেতে পারে-তারা কোথায় পেলেন!’
‘অপহরণের ১৪ দিন পর আমরা দেহাবশেষ পেয়েছি। যে এলাকা থেকে দেহাবশেষ উদ্ধার করেছি, এর আশেপাশের ৮ থেকে ১০ কিলোমিটারের মধ্যে কোনো বাড়িঘর নেই। এটা হলো পাহাড়ি গভীর জঙ্গল। যেহেতু জনবসতি নেই, বিভিন্ন প্রাণি থাকতে পারে জঙ্গলে।’
‘সেসব প্রাণীও হয়ত এভাবে মরদেহ পেলে খেয়ে ফেলতে পারে। তাছাড়া আমরা তো জানি যে, মানুষ যখন মারা যায়, তিন দিনের মধ্যে লাশের পচন শুরু হয়। তো মরদেহটি পাওয়া গেছে খুনের ৮ থেকে ১০ তিন পর। তাই আমাদের ধারণা শেয়ালে বা কোনো প্রাণি খেয়ে ফেলছে, নয়তো পচে গেছে’ যোগ করেন তিনি।
তবে জবানবন্দী দেয়া তিনজনের একজন ওই এলাকায় একদিন রাতে মুরগিসহ ভাত রান্না করে খাওয়ার কথা জানিয়েছেন বলে জানান তিনি। বলেন, ‘যেহেতু তারা সেখানে ছিল, তাই স্বাভাবিকভাবে মুরগি-ভাত রান্না করে তারা এক রাতে খেয়েছে।’
ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ যা বললেন
পুলিশ ও হৃদয়ের স্বজনদের কাছে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, সর্বশেষ ৩১ আগস্ট পরিবারের সঙ্গে হৃদয়ের কথা বলিয়ে দেন অপহরণকারীরা। এর পরপরই তাকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে বলে ধারণা সংশ্লিষ্ট সবার। এরপর মরদেহ উদ্ধার করা হয় ১১ সেপ্টেম্বর। মাঝের ১১ থেকে ১২ দিন মরদেহটি গভীর পাহাড়ি জঙ্গলেই ছিল। সাধারণত মরদেহের পচন শুরু হয় পরিবেশ, তাপমাত্রা, ঋতু, মরদেহের ধরনসহ বিভিন্ন বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে। রাঙ্গামাটির ওই পাহাড়ি গভীর জঙ্গলে ১০ থেকে ১২ দিনে একটা মরদেহের কী অবস্থা হতে পারে তা জানতে চাওয়া হয় ফরেনসিক মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মো. কাশেমের কাছে। তিনি বলেন, ‘মরদেহের মাংস পচে যাবে। কিছু মাংসসহ হাড় অবশ্যই পাওয়া যাবে। কিছু মাংস শরীরে সংযুক্ত থাকতে পারে।’
তবে গভীর জঙ্গলে একটা মরদেহ পড়ে থাকলে বিভিন্ন প্রাণী তা খেয়ে ফেলতে পারে বলে ধারণা তার।
তিনি আরও বলেন, ‘বিভিন্ন প্রাণী মরদেহের বিভিন্ন অংশ খেয়ে ফেলতে পারে। তবে তা কোনো প্রাণী খেয়েছে নাকি কোনো অস্ত্র দিয়ে কাটা হয়েছে তা জানতে একজন ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ দিয়ে মরদেহটা পরীক্ষা করতে হবে। মোটামুটি পচে গেলেও তিনি এই বিষয়ে বলতে পারবেন।’
এই গুজবকে রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্র বলছেন মানবাধিকারকর্মীরা
বর্তমানে দেশে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সংখ্যা ১৬ লাখ প্রায়। তাদের অধিকাংশেরই বাস পার্বত্য চট্টগ্রামে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ‘মানুষের মাংস খাওয়া’ গুজবকে সাম্প্রদায়িক উসকানি ও রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্র বলে মনে করেন মানবাধিকারকর্মীরা।
মানবাধিকার সংগঠন বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের (বিএইচআরএফ) মহাসচিব অ্যাডভোকেট জিয়া হাবীব আহসান দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘এটা একটা সাম্প্রদায়িক উসকানি ও রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্র। এটা যারা করছে, তাদের খুঁজে বের করতে হবে, এতে নিরীহ লোকজন হয়রানির শিকার হচ্ছে। একটা সম্প্রদায়কে টার্গেট করে এভাবে করা- এটা একটা গভীর চক্রান্ত বলে মনে হচ্ছে। যা-ই করুক, অতীতেও এই অঞ্চলের শান্তি নষ্ট করার চেষ্টা করেছে, পারেনি। ভবিষ্যতেও পারবে না ইনশাআল্লাহ।’
মাঠে নামছে সাইবার পুলিশ
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই ধরনের গুজব যারা ছড়িয়েছে তাদের আইনের আওতায় আনার কথা জানিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) বিশেষ পুলিশ সুপার (সাইবার পুলিশ সেন্টার) খন্দকার তৌহিদ হাসান। তিনি দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘আইন-শৃঙ্খলার অবনতির আশঙ্কা হলে আমরা সাধারণত বিটিআরসির মাধ্যমে এই ধরনের গুজবের লিংকগুলো বন্ধ করে দেই। তাছাড়া এই ধরনের গুজব ছড়ানোর পেছনে যারা জড়িত তাদেরও শনাক্ত করা হবে। শনাক্তের পর আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।’
সন্ত্রাসবিরোধী আইনে করা মামলায় সাবেক মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী ও সাংবাদিক মঞ্জুরুল আলমকে অন্তবর্তীকালীন জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট।
জামিন চেয়ে এই দুজনের করা পৃথক আবেদনের শুনানি নিয়ে বিচারপতি এ এস এম আবদুল মোবিন ও বিচারপতি মো. সগীর হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ বৃহস্পতিবার রুলসহ এ আদেশ দেন।
আদালতে লতিফ সিদ্দিকীর পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না ও ফজলুর রহমান এবং আইনজীবী এম আবদুল্লাহ আল হারুন ভূঁইয়া শুনানিতে ছিলেন।
মঞ্জুরুল আলমের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সারা হোসেন ও রমজান আলী শিকদার এবং আইনজীবী প্রিয়া আহসান চৌধুরী।
রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সুলতানা আক্তার রুবী।
হাইকোর্ট মঞ্জুরুল আলমকে অন্তবর্তীকালীন জামিন দিয়েছেন জানিয়ে আইনজীবী রমজান আলী শিকদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘ফলে তাঁর কারামুক্তিতে আপাতত বাধা নেই।’
লতিফ সিদ্দিকীর আইনজীবী এম আবদুল্লাহ আল হারুন ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, হাইকোর্ট রুল দিয়ে তার মক্কেলকে (লতিফ সিদ্দিকী) অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দিয়েছেন। এর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ কোনো উদ্যোগ না নিলে তার কারামুক্তিতে আইনগত কোনো বাধা নেই।
আটকের ১২ ঘণ্টার বেশি সময় পর গত ২৮ আগস্ট রাত পৌনে একটার দিকে আবদুল লতিফ সিদ্দিকী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন, সাংবাদিক মঞ্জুরুল আলমসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা করা হয়। রাজধানীর শাহবাগ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আমিরুল ইসলাম বাদী হয়ে মামলাটি করেন।
প্রসঙ্গত, গত ২৮ আগস্ট সকালে আবদুল লতিফ সিদ্দিকী, শেখ হাফিজুর রহমানসহ অন্যরা ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) গোলটেবিল আলোচনায় অংশ নিতে যান। ‘আমাদের মহান স্বাধীনতাযুদ্ধ এবং বাংলাদেশের সংবিধান’ শীর্ষক এই গোলটেবিল আলোচনার আয়োজক ছিল ‘মঞ্চ ৭১’ নামের একটি প্ল্যাটফর্ম।
আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বাংলাদেশের সংবিধানের অন্যতম প্রণেতা ও গণফোরামের ইমেরিটাস সভাপতি ড. কামাল হোসেনের নাম ছিল। তবে তিনি সেখানে ছিলেন না। সেদিন সকাল ১০টায় গোলটেবিল আলোচনা শুরুর কথা ছিল। তবে তা শুরু হয় বেলা ১১টায়।
আলোচনা সভায় প্রথমে বক্তব্য দেন শেখ হাফিজুর রহমান। শেখ হাফিজুর রহমানের বক্তব্য শেষ হওয়ার পরই মিছিল নিয়ে একদল ব্যক্তি ডিআরইউ মিলনায়তনে ঢোকেন। এ সময় তারা ‘জুলাইয়ের হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার’, ‘লীগ ধর, জেলে ভর’, ‘জুলাইয়ের যোদ্ধারা, এক হও লড়াই করো’ প্রভৃতি স্লোগান দেন।
একপর্যায়ে তারা গোলটেবিল আলোচনার ব্যানার ছিঁড়ে আলোচনায় অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের অবরুদ্ধ করে রাখেন। দুপুর সোয়া ১২টার দিকে পুলিশের (ডিএমপি) একটি দল এলে তাঁরা পুলিশের কাছে লতিফ সিদ্দিকী, শেখ হাফিজুর রহমান, সাংবাদিক মঞ্জুরুল আলমসহ অন্তত ১৬ জনকে তুলে দেন।
জিজ্ঞাসাবাদের নামে মারধর-নির্যাতনসহ হত্যাচেষ্টার অভিযোগে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তাসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে ঢাকার আদালতে মামলা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. হাসিবুজ্জামানের আদালতে নালিশি মামলার আবেদন করেন মো. জাহাঙ্গীর নামের এক ব্যক্তি। তিনি নিজেকে ‘জুলাই যোদ্ধা’ দাবি করেছেন।
আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে রাজধানীর শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) অভিযোগ তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেন আদালত। বাদীপক্ষের আইনজীবী ইলতুৎমিশ সওদাগর গণমাধ্যমকে এই তথ্য নিশ্চিত করেন।
মামলায় আসামি হিসেবে যাদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে, তাঁরা হলেন- সাইদুর রহমান শাহিদ (জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন), সাগর (জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন), ফাউন্ডেশনের সিনিয়র ভেরিফিকেশন অফিসার ইফতেখার হোসেন, কর্মকর্তা আফজালু রহমান সায়েম, এক্সিকিউটিভ মেম্বার সাবরিনা আফরোজ শ্রাবন্তী, সোনিয়া আক্তার লুবনা (নারায়ণগঞ্জ), ফাতেমা আফরিন পায়েল (জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন), ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তা আলিফ, মেহেদী হাসান প্রিন্স ও জাহিদ।
মামলার অভিযোগে বাদী বলেন, তিনি একজন ‘জুলাই যোদ্ধা’। চলতি বছরের ২৭ মে অনুদান চেয়ে দালিলিক প্রমাণ দাখিলের জন্য তিনি ফাউন্ডেশনের কার্যালয়ে যান। ফাউন্ডেশনে কর্মরত সাইদুরসহ অন্য আসামিরা তাকে আলোবিহীন রুমে নিয়ে যান। তাঁর আহত হওয়ায় ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। তিনি আওয়ামী লীগ ও পুলিশের গুলিতে গুলিবিদ্ধ হওয়ার কথা জানান। এ সময় তাকে মারধর করা হয়। আসামি সাইদুর পাইপ দিয়ে তাকে মারেন। একপর্যায়ে বাদী জ্ঞান হারান। পরবর্তী সময়ে জ্ঞান ফিরে এলে আসামিরা আবার তাকে মারধর শুরু করেন। বাদী ভুয়া জুলাই যোদ্ধা—এই কথা বলার জন্য চাপ দিতে থাকেন আসামিরা। আসামিরা জোর করে বাদীর হাত থেকে মোবাইল কেড়ে নেন। বিএনপি নেতার সঙ্গে ছবি দেখে তাকে আবার মারধর করতে থাকেন আসামিরা। এরপর জোর করে ডান হাতে একটি ইনজেকশন পুশ করে রাস্তায় অচেতন অবস্থা ফেলে দেন। পরবর্তী সময়ে মামলার বাদী অসুস্থ অবস্থায় উন্নত চিকিৎসা গ্রহণ করেন। এরপর আদালতে মামলা করলেন।
ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জে অভিযান চালিয়ে দুর্ধর্ষ ছিনতাইকারী রাজু হাওলাদারকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ভোর ৬ টার সময় নিজ বাড়ি হতে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তার কাছ থেকে ছিনতাইকৃত একটি মোটরসাইকেল, আইফোন, নগদ টাকা ও মালামাল উদ্ধার করা হয়।
জানা যায়, গত ৫ নভেম্বর ভোরে রাজু হাওলাদার তার সহযোগীদের নিয়ে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার কেরানীগঞ্জ চুনকুটিয়া এলাকায় এক পথচারীকে লক্ষ্য করে রামদা দিয়ে আঘাত করে মোটরসাইকেল, মোবাইল ও নগদ টাকা ছিনিয়ে নেয়। পরে আহত অবস্থায় ভুক্তভোগী থানায় অভিযোগ দিলে পুলিশ তৎপরতা শুরু করে।
ঢাকা জেলা পুলিশের পুলিশ সুপার আনিসুজ্জামান মমিনের নির্দেশনায় দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ওসি মো. সৈয়দ আক্তার হোসেনের সার্বিক তত্ত্বাবধানে অভিযান পরিচালনা করেন এসআই জাহাঙ্গীর আলম ও এএসআই একরামুল। অভিযানে সকালে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার খেজুরবাগ এলাকায় অবস্থানরত রাজুকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং তার কাছ থেকে ছিনতাইকৃত মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়।
গ্রেপ্তার রাজু হাওলাদার (২৬) মঠবাড়িয়া উপজেলার পিরোজপুর জেলার চর খেয়ারবাগ গ্রামের ফিরোজ হাওলাদারের ছেলে। বর্তমানে সে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের খেজুরবাগ এলাকায় বসবাস করছিল।
পুলিশ জানায়, রাজু একজন চিহ্নিত ছিনতাইকারী। তার বিরুদ্ধে পূর্বেও একাধিক মামলা রয়েছে। নতুন ঘটনায়ও দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের হয়েছে।
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ওসি সৈয়দ আক্তার হোসেন জানান, গ্রেপ্তার রাজু দীর্ঘদিন ধরে, চুনকুটিয়া, খেজুরবাগ, ঝিলমিল আবাসন প্রকল্প, ঢাকা-মাওয়া মহাসড়ক ও এর আসপাশের এলাকায় ছিনতাই করে আসছিল। তাকে জিজ্ঞাসাবাদে আরও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। তার সহযোগীদেরও শনাক্তের চেষ্টা চলছে।
টাঙ্গাইলের মধুপুরে গরীব ও দুস্থদের বিনামূল্যে সেনাবাহিনীর চক্ষু চিকিৎসাসেবা ক্যাম্প অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে এলাকার হত দরিদ্র্য দুস্থ নারী পুরুষ চক্ষু রোগীরা বিনামূল্যে তাদের চক্ষু চিকিৎসা পেয়েছে। বৃহস্পতিবার মধুপুর উপজেলার কাকরাইদ বিএডিসি কৃষি বীজ উৎপাদন খামারের প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১৯ পদাতিক ডিভিশনের উদ্যোগে স্থানীয় রোগীদের বিনামূল্যে এ দিনব্যাপী চক্ষু চিকিৎসাসেবা মেডিকেল ক্যাম্পেইনের আয়োজন করে।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১৯ পদাতিক ডিভিশনের অধিনস্থ ৯৮ সংমিশ্রিত ব্রিগেডের তত্ত্ববাবধানে ৩৭ এডি রেজিমেন্ট এর সার্বিক ব্যবস্থাপনায় মধুপুর বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) এলাকায় চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দ্বারা বিনামূল্যে মেডিকেল ক্যাম্পেইন পরিচালনা করে। এই মেডিকেল ক্যাম্পেইনে মোট দেড় শতাধিক গরীব ও দুস্থ জনসাধারণকে বিনামূল্যে চক্ষু চিকিৎসাসেবা ও ওষুধ প্রদান করে। পাশাপাশি বিভিন্ন রোগীকে তাদের প্রয়োজন মতো চশমাও প্রদান করা হয়।
সেবা গ্রহণ করতে আসা রোগী রওশন আরা বেগম (৫০) জানান, আমি এর আগে ময়মনসিংহে আমার একটি চোখ দেখিয়েছিলাম, আজ এখানে আর্মির ডাক্তার দেখালাম। আমার মনে হয় তাদের চেয়ে এখানকার চিকিৎসা ভাল লাগছে।
কাকরাইদ গ্রামের শান্তি বেগম (৫০) জানান, তিনি সকালে এসেছে চিকিৎসাসেবা নিতে। সে দূরে দেখে কিন্তু কাছে কম দেখে। চুলকায় চোখে পানি পড়ে এ জন্য তিনি এসেছে।
আলী আজগর ৪২ জানান, তার বাড়ি কাকরাইদ গ্রামে। চোখে কম দেখেন। চোখে পানি আসে। ডাক্তার দেখাতে পেরে সে খুব খুশি।
এ ধরনের বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা প্রদানের মাধ্যমে ১৯ পদাতিক ডিভিশন এ অঞ্চলের গরিব ও দুস্থ জনসাধারণের পাশে দাঁড়ানোসহ জনগণের সার্বিক কল্যাণে সক্রিয় ভূমিকা রাখছে বলে মনে করছে স্থানীয়রা। এরূপ ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পেইন অব্যাহত থাকবে বলে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে আশ্বস্ত করা হয়।
দিনব্যাপী এ ক্যাম্পে মধুপুরের বিভিন্ন গ্রামের প্রায় দেড় শতাধিক চোখের রোগী সেবা নেন।
যশোরের কেশবপুরের আপারভদ্রা নদীর অবৈধ দখল-দূষণ ও নাব্যতা সংকটে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যানের নদী পরিদর্শন করেছেন। বৃহস্পতিবার জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান মকসুমুল হাকিম চৌধুরী যশোর সফরে, কেশবপুরের বিভিন্ন পয়েন্টে নদীর দখল, দূষণ ও খনন কার্যক্রম পর্যালোচনা করবেন। আরও উপস্থিত ছিলেন কেশবপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) শরীফ নেওয়াজ সহ অনেক কর্মকর্তারা। কেশবপুর ও মনিরামপুর উপজেলায় অবস্থিত আপারভদ্রা, মুক্তেশ্বরীসহ অন্যান্য নদীতে দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ দখল, বর্জ্য প্রবাহ ও নাব্যতা হ্রাসের কারণে পানি নিষ্কাশন ও সেচের সমস্যা ক্রমশ তীব্র হয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে ৫ নভেম্বর থেকে ৭ নভেম্বর পর্যন্ত জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান মকসুমুল হাকিম চৌধুরী জেলার বিভিন্ন পয়েন্ট সরেজমিন পরিদর্শনে আসছেন। কেশবপুর উপজেলার বিভিন্ন পয়েন্টে আপারভদ্রা নদীর অবৈধ দখল, দূষণ ও নাব্যতার বর্তমান অবস্থা পর্যালোচনা করা হবে। একই সাথে হরিহর, হরিতেলিগাতি, টেকা ও শ্রী নদীসহ ৬টি নদীর মোট ৮১.৫ কিলোমিটার পুনঃখনন কাজের উদ্বোধন করা হয়েছে। এই খননকার্যের উদ্দেশ্য হলো ভবদহ অঞ্চলের দীর্ঘমেয়াদি জলাবদ্ধতা ও নদীর নাব্যতা সংকট ঘুরিয়ে দাঁড়ানোর। মুক্তেশ্বরী নদীতে অনেক অংশ দখল হয়ে ধীরে ধীরে নাব্যতা হারাচ্ছে। এক সংবাদ অন্বেষণে দেখা গেছে এক অংশকে বিক্রির জন্য চিহ্নিত করেছে, নদীর মোহনাংশ ধীরে ধীরে মাটিতে পরিণত হচ্ছে। নদীর ভরাট, অবৈধ মাছচাষ, বর্জ্য নিষ্কাশন ব্যাহত হওয়ায় জলপ্রবাহ বাঁধাগ্রস্ত হচ্ছে। ভবদহ অঞ্চলে দীর্ঘদিন ধরে প্রায় ৫ লাখেরও বেশি মানুষ জলাবদ্ধতায় ভুগছেন। ২৪ অক্টোবর কেশবপুর ও মনিরামপুর উপজেলায় মোট ৬টি নদীর জন্য ১৪০ কোটি টাকার খনন কাজের উদ্ধোধন করা হয়। খননের পরিমাণ ৮১.৫ কিলোমিটার। সেনাবাহিনী- পানি উন্নয়ন বোর্ড যৌথভাবে এই কাজ করছে। স্থানীয় প্রশাসন আশা করছে, এই কাজের মাধ্যমে ভবদহ এলাকার স্থায়ী জলাবদ্ধতার শিকড় থেকে মুক্তি মিলবে। যশোর জেলা প্রশাসক মো. আজাহারুল ইসলাম জানিয়েছেন, ‘খুবই দ্রুতগতিতে কাজ এগোয়নি গেল কয়েক বছর; এখন কার্যক্রম ত্বরান্বিত করা হবে।’
পরিবেশ-উপদেষ্টা সৈয়দা রেজওয়ানা হাসান মোবাইল ভার্চুয়াল মাধ্যমে বলেন, ‘নদীর নাব্যতা, দখল ও দূষণ একসাথে বিবেচনায় নিয়ে সমন্বিত পরিকল্পনা প্রয়োজন।’
নদী পুনরুদ্ধারে শুধু খনন যথেষ্ট নয় নিচের বিষয়গুলোর দিকে বিশেষ নজর প্রয়োজন: নদীর সীমানা পুনরায় নির্ধারণ ও আইনানুগভাবে চিহ্নিত করা। অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ ও দখলকারীদের বিরুদ্ধে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া। নদীতে বর্জ্য প্রবাহ রোধ ও নিকাশীর সমন্বিত ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। স্থানীয় জনজীবন ও কৃষিতে নদীর ভূমিকা পুনরুদ্ধার করা-যেমন সেচ, মৎস্য ও পরিবেশীয় ভারসাম্য। কমিশন, পানি উন্নয়ন বোর্ড, সেনাবাহিনী ও স্থানীয় প্রশাসনের মধ্যে নিয়মিত সমন্বয় ও মনিটরিং সিস্টেম চালু রাখতে হবে।
তিতাস গ্যাস -এর পাইপলাইনের জরুরি রক্ষণাবেক্ষণ কাজের জন্য আগামী ০৭/১১/২০২৫ তারিখ (শুক্রবার) সকাল ০৯ টা হতে ০৮/১১/২০২৫ তারিখ (শনিবার) সকাল ০৭ টা পর্যন্ত মোট ২২ (বাইশ) ঘণ্টা কড্ডা, কোনাবাড়ী, জরুন, সুরাবাড়ী, কাশিমপুর, মৌচাক, সফিপুর, চন্দ্রা, কালিয়াকৈর, শ্রীপুর, নবীনগর, সাভার ক্যান্টনমেন্ট, আশুলিয়া, জিরাবো ও তৎসংলগ্ন এলাকার সকল শ্রেণীর গ্রাহকের গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকবে। সম্মানিত গ্রাহকবৃন্দের সাময়িক অসুবিধার জন্য আন্তরিকভাবে দুঃখিত ---- তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ।
‘এসো দেশ বদলাই, এসো পৃথিবী বদলাই’ এই অনুপ্রেরণামূলক স্লোগানকে সামনে রেখে তারুণ্যের উচ্ছ্বাসে জাঙ্গালীয়া ইউনিয়নে অনুষ্ঠিত হলো আন্তঃওয়ার্ড ফুটবল টুর্নামেন্ট-২০২৫। উপজেলা নির্বাহী অফিসার এ. টি. এম কামরুল ইসলামের তত্ত্বাবধানে আয়োজিত এই খেলাটি ছিল তরুণ প্রজন্মকে খেলাধুলায় সম্পৃক্ত করার এক প্রাণবন্ত আয়োজন। ফাইনাল খেলায় মুখোমুখি হয় জাঙ্গালীয়া ইউনিয়ন ১/২ নং ওয়ার্ড বনাম ৬ নং ওয়ার্ড। উত্তেজনাপূর্ণ এই খেলায় ১/২ নং ওয়ার্ড দল ৬ নং ওয়ার্ডকে ১-০ গোলে পরাজিত করে চ্যাম্পিয়নের গৌরব অর্জন করে। মাঠে ছিল দর্শকদের উচ্ছ্বাস আর তারুণ্যের প্রাণচাঞ্চল্য।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কালীগঞ্জ উপজেলার অভিভাবক, শিক্ষা ও ক্রীড়ানুরাগী, সর্বজনপ্রিয় উপজেলা নির্বাহী অফিসার এ. টি. এম কামরুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কালীগঞ্জ উপজেলার পি.আই.ও আবুল কালাম আজাদ।
অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন জাঙ্গালীয়া ইউনিয়নের প্রশাসক আবুল হোসাইন আকাশ। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন জাঙ্গালীয়া ইউনিয়ন বিএনপি ও সহযোগী অঙ্গ-সংগঠনের নেতারা, যাদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠানটি আরও প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে।
ফাইনাল ম্যাচ ও সমাপনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত অতিথিরা খেলোয়াড়দের মনোবল বাড়াতে মূল্যবান পরামর্শ ও উৎসাহ প্রদান করেন। বক্তারা বলেন, ‘খেলাধুলা তরুণদেরকে শৃঙ্খলাবদ্ধ, আত্মবিশ্বাসী ও দেশপ্রেমিক নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলে।’
অনুষ্ঠান সফলভাবে সম্পন্ন করতে জাঙ্গালীয়া গ্রামের যুব সমাজসহ সকল সহযোগীদের প্রতি জাঙ্গালীয়া ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানানো হয়।
তারুণ্যের উৎসব ২০২৫- খেলার মধ্য দিয়েই গড়ে উঠুক নতুন বাংলাদেশ, বদলে যাক পৃথিবী!
রাজবাড়ীর পাংশায় পুলিশের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় পুলিশের দুই সদস্যসহ এক স্থানীয় ব্যক্তি আহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টা ৩০ মিনিটের দিকে উপজেলার পাট্টা বিলপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ঘটনাস্থল থেকে আলম শেখ নামের একজনকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হন পুলিশ।
পুলিশ জানা যায়, পাংশা মডেল থানার এসআই (নি.) মো. নজরুল ইসলাম, এসআই (নি.) ওবায়দুর রহমান, এএসআই (নি.) পরিতোষ মজুমদার, কনস্টেবল হুমায়ুন কবির ও আতোয়ার রহমানসহ একটি দল চাঁদাবাজি ও হামলা মামলার আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযানে যান।
এ সময় পাট্টা বিলপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কাছে পৌঁছালে পূর্ব থেকে ওঁৎ পেতে থাকা আসামি সবুজ (৩০), সজিব (২৫), সেন্টু (২৬)সহ আরও ১০–১২ জন পুলিশকে লক্ষ্য করে আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে গুলি, ককটেল জাতীয় বিস্ফোরক ও ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। এতে স্থানীয় আকুল (৫৫) নামের একজন সন্ত্রাসীদের ছোড়া ছররা গুলিতে আহত হন।
স্থানীয়রা পুলিশের সহায়তায় সন্ত্রাসীদের প্রতিহত করার চেষ্টা করে। হামলার সময় এসআই নজরুল ইসলাম ও কনস্টেবল আতোয়ার রহমান ইটের আঘাতে আহত হন। পরে এসআই নজরুল ইসলামকে আসামি আলম শেখ কিল-ঘুষি মেরে আহত করে। তবে পুলিশি চেষ্টায় আলম শেখকে ঘটনাস্থল থেকে গ্রেপ্তার করা হয়, বাকি আসামিরা পালিয়ে যায়।
ঘটনার পর অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বর্তমানে এলাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে এবং পুলিশি টহল জোরদার করা হয়েছে।
পাংশা মডেল থানার ওসি মোহাম্মদ সালাউদ্দিন জানান, এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন।
নওগাঁর রাণীনগরের গলার কাঁটা রেলগেটের যানজট নিরসনের লক্ষ্যে আন্ডারপাস কিংবা ফ্লাইওভার নির্মাণের দাবিতে উপজেলার সর্বস্তরের আমজনতারা মানববন্ধন করেছে। বৃহস্পতিবার উপজেলার রেলগেটে উপজেলার সর্বস্তরের মানুষের ব্যানারে ঘণ্টাব্যাপী এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন রাণীনগর প্রেসক্লাবের সভপতি অধ্যক্ষ হারুনুর রশিদ, উপজেলা বিএনপির সম্পাদক মোসারব হোসেন, বাংলাদেশ জামায়েতে ইসলামী রাণীনগর শাখার আমীর ডা. আনজীর হোসেনসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার ব্যক্তিরা। মানববন্ধনে উপজেলার সুধীজন, রাজনৈতিক ব্যক্তি, শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ সর্বস্তরের মানুষরা অংশগ্রহণ করে। এছাড়া সর্বস্তরের শ্রেণিপেশার কয়েক হাজার সাধারণ মানুসরাও অংশগ্রহণ করে।
এ সময় বক্তারা বলেন, রাণীনগর রেলগেট অত্যন্ত জনগুরুত্বপূর্ণ একটি স্থান। রেললাইনের পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে নওগাঁ-নাটোর আঞ্চলিক মহাসড়ক। যে সড়ক দিয়ে উত্তরবঙ্গের কয়েকটি জেলার ভারী যানবাহন ঢাকাসহ অন্যান্য জেলার সঙ্গে চলাচল অব্যাহত রেখেছে। অপরদিকে নওগাঁ-রাণীনগর-আবাদপুকুর-কালীগঞ্জ সড়কে যেতে হলেও এই রেলগেট পার হতে হয়। দুটি আঞ্চলিক সড়কের মিলনস্থল এই রেলগেট। ঢাকার সঙ্গে উত্তরবঙ্গে চলাচলের জন্য দিন দিন ট্রেনের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও রেলগেটের কোনো উন্নয়ন হয়নি। যার কারণে প্রতিদিনই ট্রেন চলাচলের সময় রেলগেট পড়ার পর দুপাশে প্রায় দুই কিলোমিটার সড়কজুড়ে যানজটের সৃষ্টি হয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটের শিকার হতে হচ্ছে এই অঞ্চলের হাজার হাজার পথচারীদের। বছরের পর বছর কোনো সংস্কার না করা এবং বিকল্প কোনো সড়কের সৃষ্টি না করার কারণে এই রেলগেট বর্তমানে অত্র অঞ্চলের লাখ লাখ মানুষের গলার কাঁটায় পরিণত হয়েছে। এই বিষয়ে স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীরা বহুবার লেখালেখি করেও আজ পর্যন্ত কোনো দপ্তরের সুদৃষ্টি পড়েনি।
এই সড়ক দিয়ে চলাচলকারী হাজার হাজার পথচারীদের প্রতিদিনই যানজট নামক মরণফাঁদে পড়ে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। তাই দ্রুত এই রেলগেট বিকল্প পথ হিসেবে আন্ডারপাস কিংবা ফ্লাইওভার নির্মাণ করার আশ্বাস না দিলে আগামীতে রেলপথ অবরোধ করাসহ কঠোর কর্মসূচি গ্রহণ করতে উপজেলাবাসী বাধ্য হবেন বলে মানববন্ধনে হুশিয়ার প্রদান করেন বক্তারা।
পাখির খাদ্যের আড়ালে পাকিস্তান থেকে আসলো ২ কনটেইনার আমদানি নিষিদ্ধ পপি বীজ। প্রায় সাড়ে ছয় কোটি টাকার আমদানি নিষিদ্ধ পপি বীজ জব্দ করেছে চট্টগ্রাম কাস্টমস। চট্টগ্রাম কাস্টমসের অডিট, ইনভেস্টিগেশন অ্যান্ড রিসার্স (এআইআর) শাখা চালানটি আটক করে। বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃক গণমাধম্যে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে।
কাস্টমস জানায়, গত ৯ অক্টোবর বার্ড ফুড হিসেবে দুই কনটেইনারে ৩২ হাজার ১০ কেজি পণ্যের একটি চালান চট্টগ্রাম বন্দরে আসে। পরে সেটি খালাসের জন্য বেসরকারি অফডক ছাবের আহমেদ টিম্বার কোম্পানি লিমিটেডের ডিপোতে নেওয়া হয়। চালানটির আমদানিকারক চট্টগ্রাম নগরীর কোতোয়ালি থানার কোরবানিগঞ্জ এলাকার ‘মেসার্স আদিব ট্রেডিং’। চালানটি খালাসের জন্য খালাসের জন্য নগরীর হালিশহরের শান্তিরবাগ এলাকার এম এইচ ট্রেডিং কাস্টমস সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট লিমিটেড বার্ড ফুড ঘোষণা দিয়ে গত ১৪ অক্টোবর কাস্টমসের অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সিস্টেমে বিল অব এন্ট্রি দাখিল করে। পরে চালানটির উৎস, রপ্তানিকারক ও আমদানিকারকের ব্যবসার ধরণ পর্যালোচনা করে চালানটিতে মিথ্যা ঘোষণার পণ্য আছে সন্দেহে চালানটির খালাস স্থগিত করে অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সিস্টেমে লক করে দেওয়া হয়।
খবর পেয়ে কাস্টমস কর্মকর্তারা চালানটির খালাস স্থগিত করে পরীক্ষা করার উদ্যোগ নেন। পরে ২২ অক্টোবর কনটেইনার দুটি খোলা হয়। উদ্ধার পণ্যের নমুনা তিনটি পরীক্ষাগারে পাঠিয়ে কাস্টমস কর্মকর্তারা পপি বীজ সম্পর্কে নিশ্চিত হন। এতে সাত টন পাখির খাবার ও ২৫ টন পপি বীজ পাওয়া যায়। বিষয়টি গোপন রাখতে পাকিস্তানে পণ্য বোঝাই করার সময় কনটেইনার দরজার মুখে পাখির খাদ্যের বস্তা রাখা হয়। ভেতরের দিকে রাখা হয় পপি বীজ।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, পণ্যচালানটির ঘোষিত মূল্য ছিল ৩০ লাখ ২ হাজার ৪৮২ টাকা। কিন্তু কায়িক পরীক্ষণে প্রাপ্ত পণ্যের বাজার মূল্য প্রায় ৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এসব পণ্য আমদানিতে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে বলে কাস্টমসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
বাংলাদেশ মেডিকেল ইউনিভার্সিটি (বিএমইউ)-এর ক্লিনিক্যাল অনকোলজি বিভাগে ৩–৫ নভেম্বর ২০২৫ তারিখে অনুষ্ঠিত হলো “Evidence-Based Treatment Overview of Prostate Cancer and Head & Neck Cancer” শীর্ষক তিনদিনব্যাপী একাডেমিক সেশন। সেশনে মূল বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাজ্যের সাউথএন্ড ইউনিভার্সিটি হাসপাতালের কনসালট্যান্ট ক্লিনিক্যাল অনকোলজিস্ট ডা. ইমতিয়াজ আহমেদ, MRCP, FRCR। তিনি আন্তর্জাতিক গাইডলাইনভিত্তিক চিকিৎসা পদ্ধতি, ক্যান্সার রোগীর স্টেজিং ও রিস্ক স্ট্রাটিফিকেশন, রেডিওথেরাপির আধুনিক প্রযুক্তি এবং সিস্টেমিক থেরাপির সাম্প্রতিক অগ্রগতি সম্পর্কে বিশদ উপস্থাপনা করেন।
সেশনে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়— আন্তর্জাতিক গাইডলাইনভিত্তিক চিকিৎসা, আধুনিক রেডিওথেরাপি স্ট্রাটেজি, সিস্টেমিক থেরাপির আপডেট, রোগী ব্যবস্থাপনায় বেস্ট প্র্যাকটিস।
তিনদিনের এই প্রশিক্ষণ কর্মশালার সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএমইউ-এর প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ। তিনি ডা. ইমতিয়াজ আহমেদকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন,“এ ধরনের উচ্চমানের বৈজ্ঞানিক সেশন আমাদের রেসিডেন্টদের আপডেটেড চিকিৎসা শেখায় এবং হাতে-কলমে আধুনিক ক্যান্সার ব্যবস্থাপনা জানার সুযোগ তৈরি করে। আমরা চাই তিনি আবারও বাংলাদেশে এসে আমাদের সাথে কাজ করবেন।”তিনি আরও বলেন, “একজন অনকোলজিস্টের সবচেয়ে বেশি জ্ঞান থাকতে হবে আধুনিক প্রমাণভিত্তিক চিকিৎসা, আন্তর্জাতিক গাইডলাইন, রেডিওথেরাপি ও সিস্টেমিক থেরাপির সাম্প্রতিক উন্নয়নের ওপর। কারণ আপডেটেড জ্ঞানই রোগীর সঠিক চিকিৎসা নিশ্চিত করতে পারে।”
অনুষ্ঠানে বিএমইউ এর ক্লিনিক্যাল অনকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোঃ আকরাম হোসেনসহ উক্ত বিভাগের শিক্ষক, চিকিৎসক, এমডি এবং এফসিপিএস ক্লিনিক্যাল অনকোলজি রেসিডেন্টরা অংশগ্রহণ করেন। বিএমইউ-এর পক্ষ থেকে জানানো হয়, ভবিষ্যতেও এ ধরনের আন্তর্জাতিক একাডেমিক সহযোগিতা ও প্রশিক্ষণ অব্যাহত থাকবে, যা দেশের ক্যান্সার চিকিৎসা ব্যবস্থার মান উন্নয়নে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
ডাকাত আতঙ্কে গত কয়েকদিন ধরে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার মানুষ। সঙ্ঘবদ্ধ ডাকাত দলের হাত থেকে নিজেদের রক্ষায় বাধ্য হয়ে গ্রামে গ্রামে পাহারা বাসিয়েছে স্থানীয়রা।
খবর নিয়ে জানা যায়, গত এক সপ্তাহে গজারিয়া উপজেলায় দুটি সঙ্ঘবদ্ধ ডাকাতি ও বেশ কয়েকটি চুরির ঘটনা ঘটে। ডাকাতির ক্ষেত্রে ডাকাত দলের সদস্যরা প্রথমে জানলার গ্রিল কেটে ঘরে প্রবেশ করে তারপর অস্ত্রের মুখে বাসিন্দাদের জিম্মি করে নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার লুট করে নিয়ে যায়। দুটি ডাকাতির ঘটনায় প্রায় এক কোটি টাকার মালামাল লুট করা হয়েছে বলে জানা যায়। গত বুধবার রাতে উপজেলার বালুয়াকান্দি, ভবেরচর ও টেংগারচর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা যায় ব্যক্তি উদ্যোগে নিজেদের জানমাল রক্ষায় পাহারা বসিয়ে স্থানীয়রা। ডাকাত দলকে প্রতিরোধে পাহারা দিতে দেশীয় অস্ত্র, লাঠি, পাইপ ও টর্চ লাইট ব্যবহার করছে গ্রামবাসী।
রায়পাড়া গ্রামে পাহারা দলের নেতৃত্ব দেওয়া মাসুদ প্রধান ইপু বলেন, গত কয়েকদিনে গজারিয়া উপজেলায় বেশ কয়েকটি ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। সাধারণ মানুষ আতঙ্কে আছে। আমাদের জানমাল আমাদের রক্ষা করতে হবে। আমরা গ্রামবাসী একজোট হয়ে পাহারা দিচ্ছি।
ভবেরচর কলেজ রোড এলাকায় পাহারার দায়িত্বে থাকা ফাহিম সরকার বলেন, অন্যান্য এলাকার মত আমরাও নিজ এলাকার নিরাপত্তায় পাহারার ব্যবস্থা করেছি। এলাকার তরুণরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে এই পাহারা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করছে।
বৈদ্দ্যারগাঁও গ্রামের বাসিন্দা মীম আক্তার বলেন, গত কয়েকদিন ধরে ডাকাত আতঙ্কে রাতে ঘুমাতে পারিনা। প্রায় প্রতিদিন কোথাও না কোথাও ডাকাতি হচ্ছে। প্রশাসনের প্রতি আবেদন আপনারা ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।
এদিকে ডাকাতি বন্ধে বিএনপি নেতা কর্মীদের ভূমিকা রাখতে নেতাকর্মীদের সাথে বৈঠক করেছেন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সমাজ কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক কামরুজ্জামান রতন। বৈঠক শেষে তিনি বলেন, ‘ডাকাতি বন্ধে বিএনপি ও সহযোগী অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা মাঠে থাকবে। কোথাও কোনো অপতৎপরতার খবর পেলে সাথে সাথে বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানাতে এবং মসজিদের মাইকে ঘোষণা করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নেতাকর্মীদের পাহারা কার্যক্রম পরিচালনা করতে সামগ্রিক সহযোগিতা করব আমি। প্রাথমিকভাবে তাদের মধ্যে টর্চ লাইট এবং বাশি বিতরণ করা হয়েছে।’
গজারিয়া থানার ওসি আনোয়ার আলম আজাদ বলেন, ‘দুটি সংঘবদ্ধ ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। এরপর থেকে আমরা আমাদের তৎপরতা বাড়িয়েছি। এই ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তারে আমাদের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।’
গত রবিবার রাতে উপজেলার বালুয়াগান্দি ইউনিয়নের বালুয়াকান্দি দক্ষিণপাড়া এলাকার অবসরপ্রাপ্ত সেনার সদস্য ফজলুল হকের বাড়িতে দুর্ধর্ষ ডাকাতির ঘটনায় নগদ টাকা, স্বর্ণালংকারসহ ৫৪ লাখ টাকা মালামাল লুট হয়েছে। পরদিন সোমবার রাতে উপজেলার ভবেরচর ইউনিয়নের সাতকাহনিয়া গ্রামে গ্রামে বৃদ্ধ এক দম্পতির মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে সংঘবদ্ধ ডাকাত দল নগদ টাকা, স্বর্ণালংকারসহ প্রায় ৪৮ লাখ টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে যায়।
অতি সম্প্রতি একটি স্বার্থান্বেষী মহল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে “লালমনিরহাটে ভারতের ৬২ কিলোমিটার দখল?” শিরোনামে একটি সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, মনগড়া ও রাষ্ট্রবিরোধী গুজব প্রচার করছে। এ ধরনের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মিথ্যাচার প্রচারের মাধ্যমে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টির অপচেষ্টা এবং রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণের অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) উক্ত বিভ্রান্তিকর ও রাষ্ট্রবিরোধী প্রচারের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে।
বিজিবি দৃঢ়ভাবে জানাচ্ছে যে, সার্বভৌম বাংলাদেশ ভূখণ্ডের সীমান্তের প্রতিটি ইঞ্চি বিজিবির নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। সীমান্ত রক্ষায় বিজিবির প্রতিটি সদস্য দেশপ্রেম ও সর্বোচ্চ পেশাগত উৎকর্ষতায় উজ্জীবিত হয়ে দায়িত্ব পালনে সদা জাগ্রত রয়েছে। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ যেকোনো তথ্য/গুজব যাচাই-বাছাই না করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার বা মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকার পাশাপাশি অপপ্রচারকারীদের সম্পর্কে সতর্ক থাকতে জনগণকে আহ্বান জানাচ্ছে।