সম্প্রতি চট্টগ্রামের রাউজানে এক কলেজছাত্রের মৃত্যুর ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে বিভিন্ন গুজব ছড়িয়ে পড়েছে, যার বেশিরভাগই ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষের প্রতি বিদ্বেষমূলক। এ বিষয়ে বানায়োট গল্প, ফটোকার্ড ও ভিডিওসহ নানা ধরনের কনটেন্ট ফেসবুক-টিকটকের মত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ছড়িয়ে পড়েছে। এসব কনটেন্টে ওই কলেজছাত্রকে খুনের পর অভিযুক্তরা তার ‘মাংস রান্না করে খেয়েছে’ দাবি করে পাহাড়ে বসবাসকারী জনগোষ্ঠীকে ‘মানুষখেকো’ হিসেবে গুজব ছড়ানো হচ্ছে। ওই জনগোষ্ঠীর বিষয়ে তৈরি করা হচ্ছে নানা সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ। ছড়িয়ে পড়া এসব গুজব ও বিদ্বেষমূলক বক্তব্যের কারণে নানা প্রয়োজনে দেশের বিভিন্ন এলাকায় বসবাসকারী ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সদস্যদের বিভিন্ন বিব্রতকর পরিস্থিতি ও সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। এতে নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন তারা।
শুধু তাই নয়, এই ধরনের গুজব ও পাহাড়ে বসবাসকারী গোষ্ঠীর প্রতি বিদ্বেষ ছড়ানোর ফলে এই অঞ্চলের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে বলে আশঙ্কা মানবাধিকারকর্মী ও সমাজ বিশেষজ্ঞদের। অবশ্য পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, এ ধরনের গুজব কারা কেন ছড়িয়েছে তা খুঁজে বের করতে সাইবার টিম মাঠে নেমেছে।
গুজবের কারণে নৃগোষ্ঠীর লোকদের হেনস্তার অভিযোগ
পার্বত্য অঞ্চলের সবচেয়ে বড় শহর চট্টগ্রামে বসবাসকারী ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সাতজন সদস্যের সঙ্গে কথা বলেছেন এই প্রতিবেদক। তাদের মধ্যে পাঁচজন অবাধে চলাচল করতে গিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ওই গুজবের ফলে কোনো না কোনো সমস্যার মুখোমুখী হওয়ার কথা জানিয়েছেন। তাদেরই একজন চট্টগ্রামের একটি আঞ্চলিক গণমাধ্যমে প্রতিবেদক হিসেবে কাজ করা নীলা চাকমা। তিনি জানিয়েছেন, কাজের সুবাদে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর চট্টগ্রামে থাকতে হয়। রাউজানের ওই কলেজছাত্র খুনের পর শহরে বসবাস করা তার জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে।
নীলা চাকমা বলেন, ‘নিজ এলাকার বাইরে ভাষাসহ নানা কারণে আমরা বুলিংয়ের শিকার হই। এখন মানুষের মাংস খাওয়ার আরেকটা ট্যাগ যুক্ত হলো। এই যে রিকশাওয়ালা মামা, সবজিওয়ালা, দোকানদাররা বলতেছে, আমি খুবই অনিরাপত্তায় ভুগী। যেমন কয়েকদিন আমি এক বান্ধবীর সঙ্গে অক্সিজেন এলাকার অনন্যা আবাসিকে গিয়েছিলাম, সেখান থেকে ফেরার পথে একজন আমাকে আপত্তিকরভাবে স্পর্শ করেছে। আমি প্রতিবাদ করায় উনি আমার সঙ্গে মানুষের মাংস খাওয়ার বিষয় নিয়ে আসছেন।’
“আর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তো থাকতে পারতেছি না। নিউজফিডে ২০টা নিউজ থাকলে তার মধ্যে ১০টা আমাদের প্রতি বিদ্বেষমূলক। মেসেঞ্জারে বন্ধুরা বন্ধুরা বলতেছে, ‘তোরা তো এই খাস, তোদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করা যাবে না।’ এমনকি গণমাধ্যম সংশ্লিষ্ট মানুষও আছেন এই তালিকায়।”
এমনই আরেকজন ভুক্তভোগীর নাম অভি চাকমা। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী তিনি। অভি চাকমা তার অভিজ্ঞতা জানাতে গিয়ে বলেন, ‘রাউজানের ওই ঘটনার পর যখন ফেসবুকে আমরা মানুষের মাংস খাই বলে গুজব ছড়িয়ে পড়ল, এর কয়েকদিন পর ক্লাস থেকে ফেরার পথে কেন্দ্রীয় খেলার মাঠের দিকে দুজন মেয়ের সঙ্গে দেখা। দেখে দুজনকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মনে হয়েছে। ওরা আমাদের দেখে এমনভাবে অভিব্যক্তি প্রকাশ করেছে, যেন আমরা বোধহয় জ্যান্ত মানুষ খেয়ে ফেলি। তারা আবার নিজেদের মধ্যে বলাবলি করছিল যে, রাউজানের ওই ঘটনার পর পাহাড়ি দেখলেই তাদের ভয় লাগে। তখন কথাটা আমি শুনে যাওয়ায় তাদের বলেছি, কয়েকজন অপরাধ করলেই তা পুরো জনগোষ্ঠীর দায় হতে পারে না। তাছাড়া মানুষের মাংস খাওয়ার বিষয়টাও গুজব।’
চট্টগ্রাম শহরে কর্মক্ষেত্রে হেনস্তার শিকার স্বপন চাকমা নামের আরও একজনের সঙ্গে কথা হয় দৈনিক বাংলার। শহরের বায়েজিদ বোস্তামি এলাকার কনডেন্স মিল্ক উৎপাদনকারী একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন তিনি। স্বপন বলেন, “ফ্যাক্টরিতে যাওয়ার সময় রাস্তাঘাটে মানুষজন আমাদের দেখলে বলে, ‘তোমাদের চাকমারা নাকি মানুষের মাংস খায়?’ এমনকি ফ্যাক্টরির ভেতর আমাদের সুপারভাইজারও বলে আমাদের চাকমারা নাকি মানুষের মাংস খায়। তখন স্বাভাবিকভাবেই মেজাজ খারাপ হয়ে যায়।”
যেভাবে ছড়াল মানুষের মাংস খাওয়ার গুজব
ঘটনার শুরু গেল ১১ সেপ্টেম্বর। ওইদিন রাঙামাটি জেলার কাউখালী ইউনিয়নের দুর্গম বালু পাহাড় এলাকা থেকে এক কলেজছাত্রের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তার নাম শিবলী সাদিক হৃদয়। তিনি রাউজানের কদলপুর ইউনিয়নের পঞ্চ পাড়ার মুহাম্মদ শফির ছেলে। কদলপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজে দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়াশোনার পাশাপাশি স্থানীয় একটি মুরগির খামারে ব্যবস্থাপক হিসেবে কাজ করতেন তিনি। মরদেহ উদ্ধারের ১৪ দিন আগে ওই খামার থেকে অপহরণ করা হয়েছিল তাকে।
পুলিশ জানায়, হৃদয়ের সঙ্গে শ্রমিক হিসেবে আরও ছয়জন কাজ করতেন। তারা সবাই পার্বত্য এলাকার ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সদস্য। ঘটনার মাসখানেক আগে তাদের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয় হৃদয়ের। খামার মালিক সেসময় ঘটনাটি মীমাংসা করে দিলেও ক্ষুব্ধ ছিলেন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর শ্রমিকরা। সেই ক্ষোভ থেকে ২৭ আগস্ট রাতে হৃদয়কে অপহরণ করে আট কিলোমিটার দূরের গহীন পাহাড়ে নিয়ে যান তারা। পরে স্বজনদের ফোন করে ১৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন। এক পর্যায়ে ১ সেপ্টেম্বর হৃদয়ের বাবা শফি বান্দরবানে গিয়ে অপহরণকারীদের কথা মত দুই ব্যক্তিকে দুই লাখ টাকা মুক্তিপণ দিয়ে আসেন। এর আগে ৩১ আগস্ট সর্বশেষ তাদের সঙ্গে হৃদয়ের কথা বলিয়ে দেন অপহরণকারীরা।
মুক্তিপণ দেওয়ার পর ‘হৃদয়কে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে, তিনি বাসায় চলে যাবেন’ বলে অপহরণকারীরা স্বজনদের জানালেও বাসায় ফেরেননি তিনি। এই ঘটনায় ৭ সেপ্টেম্বর রাউজান থানায় একটি মামলা দায়ের করেন স্বজনরা। সেই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে সুইচিংমং মারমা (২৪) ও অংথুইমং মারমা (২৫) নামের দুজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে উমংচিং মারমা (২৬) নামের আরেকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ১১ সেপ্টেম্বর রাঙামাটি জেলার কাউখালী ইউনিয়নের দুর্গম বালু পাহাড় এলাকা থেকে হৃদয়ের দেহাবশেষ উদ্ধার করে পুলিশ। মরদেহ নিয়ে ফেরার পথে উমংচিং মারমাকে পুলিশ হেফাজত থেকে ছিনিয়ে নিয়ে গণপিটুনি দিয়ে হত্যা করে উত্তেজিত জনতা।
এই ঘটনার পরপরই নিহত হৃদয়ের দেহাবশেষের ছবি এবং নিহত ও অভিযুক্তদের একটি যৌথ ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এসব ছবির ক্যাপশনে ‘হত্যাকারীরা হৃদয়কে হত্যার পর তার মাংস রান্না করে খেয়ে হাড় পাহাড়ে ফেলে দিয়েছে’ বলে দাবি করা হয়। ফেসবুক, টিকটক ও ইউটিউবের মত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে কনটেন্ট ক্রিয়টরদের অনেকেই এই গুজবের ওপর ভিত্তি করে ভিডিও তৈরি করে শেয়ার করতে থাকেন। কেউ কেউ ফটোকার্ড তৈরি করেও তা শেয়ার করেন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের মধ্যে শুধু ফেসবুক ও ইউটিউবে অধিকতর অনুসন্ধান পদ্ধতিতে (অ্যাডভান্স সার্স সিস্টেম) যাচাই করে এই গুজব ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের প্রতি বিদ্বেষ ছড়ানো সংক্রান্ত সহস্রাধিক পোস্টের সন্ধান পেয়েছেন এই প্রতিবেদক। এসব পোস্টের মধ্যে অধিকাংশের বক্তব্য আপত্তিকর হওয়ায় প্রতিবেদনে যুক্ত করা যায়নি।
বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সারা বিশ্বের প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষের হাতেও পৌঁছে গেছে। এতে গুজবটি এত দ্রুত ও কার্যকরভাবে ছড়িয়েছে যে দায়িত্বশীল অনেকেই বিশ্বাস করে তা নিয়ে কথা বলেছেন।
গুজবটি ‘সত্য’ দাবি করেছেন আওয়ামী লীগ নেতা
এই গুজবটি বাস্তব দাবি করে তা নিয়ে কথা বলেছেন রাঙামাটি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুসা মাতব্বর। তার বক্তব্যের একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে। ১ মিনিট ৪৩ সেকেন্ডের বক্তব্যের প্রথম অংশে তিনি সম্প্রতি চট্টগ্রামের রাউজানে খুনের শিকার এক কিশোরের মাংস রান্না করে খাওয়ার অভিযোগ করেন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে।
ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে প্রথম ৪৩ সেকেন্ডে তাকে বলতে শোনা যায়, ‘গত দুই-তিনদিন আগে রাউজানের একটি ছেলেকে অপহরণ রাঙামাটির কাউখালিতে এনে তার মাংস পর্যন্ত তারা কেটে কেটে রান্না করে খেয়েছে। এটা দুঃখ জনক রাঙামাটিবাসীর জন্য। এই ধরনের ঘটনা যেন পরবর্তী আর না হয়, আমরা আবেদন জানাব সরকারের কাছে। এই সমস্ত এগুলো, এই হত্যাকাণ্ডগুলো আসলে মানুষ কোনো অবস্থাতে, যে কোনো মুহূর্তে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লেগে যেতে পারে। সবাইকে বলব, এই ধরনের ঘৃণ্য অপরাধ- মানুষের মাংস রান্না করে খাওয়া, এটা কতবড় অপরাধ! আমি বলার, মুখের ভাষাই পাচ্ছি না, কী বলব আমি!’
পরের ১ মিনিটে পাহাড়ে অস্ত্রধারীদের কাছ থেকে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে কথা বলেন তিনি।
অবশ্য পরে যোগাযোগ করলে বক্তব্যের বিষয়টি অস্বীকার করেন তিনি। ব্যস্ততার অজুহাতে তা নিয়ে বিস্তারিত কথা বলতেও রাজি হননি মুসা মাতব্বর।
তবে অনুসন্ধানে জানা গেছে, ১ মিনিট ৪৩ সেকেন্ডের ওই ভিডিওটি প্রথম প্রকাশ করে ‘সম্প্রীতির রাঙামাটি’ নামের এক ফেসবুক পেজ। এই ফেসবুক পেজের মালিক ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি অবজারভারের রাঙামাটি প্রতিনিধি শেখ ইমতিয়াজ কামাল ইমন। ১৯ সেপ্টেম্বর বিকেলে তার সঙ্গে কথা বলে দৈনিক বাংলা। তিনি বলেন, ‘৪ থেকে ৫ দিন আগে নির্বাচন নিয়ে আমরা চার থেকে পাঁচটা গণমাধ্যমের প্রতিবেদক ওনার সাক্ষাৎকার নিয়েছি। আমাদের মধ্যে একজন ওনাকে আসন্ন নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন করলে উনি এই বক্তব্য দিয়েছিলেন। আমার কাছে র-ভিডিও (মূল ভিডিও) আছে।’
যা বললেন মরদেহ উদ্ধারকারী পুলিশ সদস্যরা
শিবলী সাদিক হৃদয় হত্যার ঘটনায় এখন পর্যন্ত পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ। তাদের মধ্যে হত্যার ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী দিয়েছেন তিনজন। জবানবন্দী দেয়া তিনজনই হত্যায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। তবে কেউই হৃদয়ের মাংস রান্না করে খাওয়ার বিষয়ে কিছু বলেনি বলে দাবি পুলিশের।
মরদেহ উদ্ধার ও আসামিদের গ্রেপ্তারের সময় অভিযানিক দলে ছিলেন রাউজান থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আজিজুল হক। এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তাও তিনি। এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘রান্না করে তার মাংস খাওয়ার বিষয়টা ভুয়া। এসবের ভিত্তি নেই। এই বিষয়ে আমরা নিজেরাই তো কিছু পাইনি। ব্লগাররা ভাইরাল হওয়ার জন্য এটা ছড়াচ্ছে। এটা নিয়ে আমাদের সাইবার টিম মাঠে নামছে। আমাদের স্যারও (ওসি) এটা নিয়ে কথা বলেছেন। যারা এসব ভুয়া নিউজ ছড়িয়ে দেশের মধ্যে অরাজকতা সৃষ্টির চেষ্টা করতেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘এই মামলায় সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা করছেন একজন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মেয়ে। তিনি আমাদের কনস্টেবল। যেহেতু ভাষার একটা সমস্যা আছে, আমরা ওনার সহযোগিতায় কাজগুলো করছি।’
প্রায় একই কথা বলেন রাউজান থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ছিদ্দিকুর রহমান। তিনি বলেন, ‘হত্যায় জড়িতরা নিহতের মাংস রান্না করে খেয়েছে- এরকম কোনো তথ্য আমরা এখন পর্যন্ত পাইনি। যারা এগুলো ছড়াচ্ছে, তাদের এই বিষয়ে জিজ্ঞেস করা যেতে পারে-তারা কোথায় পেলেন!’
‘অপহরণের ১৪ দিন পর আমরা দেহাবশেষ পেয়েছি। যে এলাকা থেকে দেহাবশেষ উদ্ধার করেছি, এর আশেপাশের ৮ থেকে ১০ কিলোমিটারের মধ্যে কোনো বাড়িঘর নেই। এটা হলো পাহাড়ি গভীর জঙ্গল। যেহেতু জনবসতি নেই, বিভিন্ন প্রাণি থাকতে পারে জঙ্গলে।’
‘সেসব প্রাণীও হয়ত এভাবে মরদেহ পেলে খেয়ে ফেলতে পারে। তাছাড়া আমরা তো জানি যে, মানুষ যখন মারা যায়, তিন দিনের মধ্যে লাশের পচন শুরু হয়। তো মরদেহটি পাওয়া গেছে খুনের ৮ থেকে ১০ তিন পর। তাই আমাদের ধারণা শেয়ালে বা কোনো প্রাণি খেয়ে ফেলছে, নয়তো পচে গেছে’ যোগ করেন তিনি।
তবে জবানবন্দী দেয়া তিনজনের একজন ওই এলাকায় একদিন রাতে মুরগিসহ ভাত রান্না করে খাওয়ার কথা জানিয়েছেন বলে জানান তিনি। বলেন, ‘যেহেতু তারা সেখানে ছিল, তাই স্বাভাবিকভাবে মুরগি-ভাত রান্না করে তারা এক রাতে খেয়েছে।’
ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ যা বললেন
পুলিশ ও হৃদয়ের স্বজনদের কাছে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, সর্বশেষ ৩১ আগস্ট পরিবারের সঙ্গে হৃদয়ের কথা বলিয়ে দেন অপহরণকারীরা। এর পরপরই তাকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে বলে ধারণা সংশ্লিষ্ট সবার। এরপর মরদেহ উদ্ধার করা হয় ১১ সেপ্টেম্বর। মাঝের ১১ থেকে ১২ দিন মরদেহটি গভীর পাহাড়ি জঙ্গলেই ছিল। সাধারণত মরদেহের পচন শুরু হয় পরিবেশ, তাপমাত্রা, ঋতু, মরদেহের ধরনসহ বিভিন্ন বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে। রাঙ্গামাটির ওই পাহাড়ি গভীর জঙ্গলে ১০ থেকে ১২ দিনে একটা মরদেহের কী অবস্থা হতে পারে তা জানতে চাওয়া হয় ফরেনসিক মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মো. কাশেমের কাছে। তিনি বলেন, ‘মরদেহের মাংস পচে যাবে। কিছু মাংসসহ হাড় অবশ্যই পাওয়া যাবে। কিছু মাংস শরীরে সংযুক্ত থাকতে পারে।’
তবে গভীর জঙ্গলে একটা মরদেহ পড়ে থাকলে বিভিন্ন প্রাণী তা খেয়ে ফেলতে পারে বলে ধারণা তার।
তিনি আরও বলেন, ‘বিভিন্ন প্রাণী মরদেহের বিভিন্ন অংশ খেয়ে ফেলতে পারে। তবে তা কোনো প্রাণী খেয়েছে নাকি কোনো অস্ত্র দিয়ে কাটা হয়েছে তা জানতে একজন ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ দিয়ে মরদেহটা পরীক্ষা করতে হবে। মোটামুটি পচে গেলেও তিনি এই বিষয়ে বলতে পারবেন।’
এই গুজবকে রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্র বলছেন মানবাধিকারকর্মীরা
বর্তমানে দেশে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সংখ্যা ১৬ লাখ প্রায়। তাদের অধিকাংশেরই বাস পার্বত্য চট্টগ্রামে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ‘মানুষের মাংস খাওয়া’ গুজবকে সাম্প্রদায়িক উসকানি ও রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্র বলে মনে করেন মানবাধিকারকর্মীরা।
মানবাধিকার সংগঠন বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের (বিএইচআরএফ) মহাসচিব অ্যাডভোকেট জিয়া হাবীব আহসান দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘এটা একটা সাম্প্রদায়িক উসকানি ও রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্র। এটা যারা করছে, তাদের খুঁজে বের করতে হবে, এতে নিরীহ লোকজন হয়রানির শিকার হচ্ছে। একটা সম্প্রদায়কে টার্গেট করে এভাবে করা- এটা একটা গভীর চক্রান্ত বলে মনে হচ্ছে। যা-ই করুক, অতীতেও এই অঞ্চলের শান্তি নষ্ট করার চেষ্টা করেছে, পারেনি। ভবিষ্যতেও পারবে না ইনশাআল্লাহ।’
মাঠে নামছে সাইবার পুলিশ
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই ধরনের গুজব যারা ছড়িয়েছে তাদের আইনের আওতায় আনার কথা জানিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) বিশেষ পুলিশ সুপার (সাইবার পুলিশ সেন্টার) খন্দকার তৌহিদ হাসান। তিনি দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘আইন-শৃঙ্খলার অবনতির আশঙ্কা হলে আমরা সাধারণত বিটিআরসির মাধ্যমে এই ধরনের গুজবের লিংকগুলো বন্ধ করে দেই। তাছাড়া এই ধরনের গুজব ছড়ানোর পেছনে যারা জড়িত তাদেরও শনাক্ত করা হবে। শনাক্তের পর আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।’
কিশোরগঞ্জ-করিমগঞ্জ-চামটাঘাট সংযোগ সড়ক নির্মাণ প্রকল্পে অধিগ্রহণ করা জমির ক্ষতিপূরণ ছয় বছরেও না পাওয়ায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন প্রায় ৫০০ জমির মালিক। বসতভিটা ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ভেঙে দিলেও এখনো তাঁদের প্রাপ্য প্রায় ১২৩ কোটি টাকা পরিশোধ হয়নি।
রবিবার (২৮ ডিসেম্বর) দুপুরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে ক্ষতিপূরণের টাকা দ্রুত পরিশোধের দাবিতে মানববন্ধন করেন ভুক্তভোগী জমির মালিকরা। মানববন্ধন শেষে জেলা প্রশাসকের কাছে একটি স্মারকলিপিও দেন তাঁরা।
মানববন্ধনে বক্তব্য দেন করিমগঞ্জ উপজেলার সুতারপাড়া ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য মো. রেনু মিয়া, ভুক্তভোগী কবির উদ্দিন ভূইয়া, চামটাঘাট বণিক সমিতির সভাপতি আজহারুল ইসলাম আরজু, মো. নাজমুল মিয়া, মো. জুয়েল মিয়া ও হেলিম মিয়াসহ আরও অনেকে। মানববন্ধনে শত শত ভুক্তভোগী অংশ নেন।
ভুক্তভোগী মো. রেনু মিয়া বলেন, ‘আমার ছয় শতাংশ জমি আর ২০০ ফিটের একটা ঘর গেছে। ছয় বছর হয়ে গেল, এখনো এক টাকাও পাই নাই। রাস্তা ক্লিয়ার করে দিয়েছি। টাকা না দিয়েই রাস্তা করতে চায়।’
চামটাঘাট বণিক সমিতির সভাপতি আজহারুল ইসলাম আরজু বলেন, ‘টাকার আশায় আমরা ঘরবাড়ি ভেঙে দিয়েছি। ১৫ শতাংশ জমি গেছে আমার। ৭ ধারা নোটিশ দিয়েছে, কিন্তু টাকা দেয় না।’
আরেক ভুক্তভোগী কবির উদ্দিন ভূইয়া বলেন, ‘আমরা ঘরবাড়ি ভেঙে রাস্তা করে দিয়েছি। এখনো ক্ষতিপূরণের টাকা পাইনি। দ্রুত টাকা পরিশোধ আমাদের দাবি।’
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, কিশোরগঞ্জ-করিমগঞ্জ-চামটাঘাট সংযোগ সড়ক নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০২০ সালে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে কিশোরগঞ্জ সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ। এর আগে ২০১৯ সালে সাকুয়া বাজার থেকে চামটাঘাট পর্যন্ত প্রায় ৪ কিলোমিটার সড়কের দুই পাশের উত্তর গণেশপুর, বয়রা, সাকুয়া ও রৌহা মৌজার জমি অধিগ্রহণ করা হয়।
তবে এলএ কেস নম্বর ০৯/২০১৯-২০২০–এর আওতাধীন এসব মৌজার অধিগ্রহণ কার্যক্রম এখনো সম্পন্ন হয়নি। অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া ৭ ধারা নোটিশ পর্যন্ত এসে থমকে রয়েছে। ফলে ক্ষতিপূরণের টাকা না পেয়ে জমির মালিকরা অনিশ্চয়তায় দিন কাটাচ্ছেন।
এ অবস্থায় চামটাঘাট বন্দর এলাকার ব্যবসায়ীরা তাঁদের দোকানঘর সংস্কার বা মেরামত করতে পারছেন না। গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যকেন্দ্র ও বহু জেলার যোগাযোগের একমাত্র সড়ক হওয়ায় এখানে প্রতিদিন সৃষ্টি হচ্ছে তীব্র যানজট ও জনদুর্ভোগ। কোথাও রাস্তা সম্প্রসারিত হলেও কোথাও খানাখন্দ ও ভাঙাচোরা অবস্থা রয়ে গেছে। এতে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা।
এ বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ নাহিদ হাসান খান বলেন, অধিগ্রহণের একটি নির্ধারিত প্রক্রিয়া রয়েছে। প্রাক্কলন তৈরি করে গত মে মাসে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। তবে এখনো অর্থ ছাড় হয়নি। অর্থ পাওয়া গেলে দ্রুত ক্ষতিপূরণের টাকা পরিশোধ করা হবে।
কিশোরগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শাকিল মোহাম্মদ ফয়সাল বলেন, প্রকল্পের পাঁচটি এলএ মামলার মধ্যে চারটির ক্ষতিপূরণ ইতিমধ্যে দেওয়া হয়েছে। বাকি একটি মামলার প্রাক্কলিত মূল্য ১২৩ কোটি টাকা। বর্তমানে ডিপিপিতে প্রায় ৬০ কোটি টাকা ঘাটতি রয়েছে। অতিরিক্ত ৬৩ কোটি টাকার প্রয়োজন হওয়ায় সংশোধিত ডিপিপি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন ও অর্থ ছাড় পেলেই জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে ক্ষতিপূরণ পরিশোধ করা হবে।
মেঘনা নদীতে নিষিদ্ধ জাল ও চাই (ফাঁদ) ব্যবহার করে পাঙ্গাসের পোনা নির্বিচারে শিকার করা হচ্ছে, যা ভবিষ্যৎ মাছের উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত করছে। এই অবৈধ কর্মকাণ্ডে স্থানীয় প্রভাবশালী গোষ্ঠী জড়িত থাকলেও মৎস্য বিভাগ ও প্রশাসনের উদাসীনতা বা নীরবতা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে, যদিও মাঝে মাঝে অভিযান হলেও তা যথেষ্ট নয় এবং অসাধু জেলেরা প্রভাব খাটিয়ে আবার জাল ফেলছে। ডিসেম্বরের শেষদিকে ভোলার বোরহানউদ্দিন, তজুমদ্দিন, দৌলতখান, মনপুরাসহ মেঘনা নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে নিষিদ্ধ জাল ও ‘চাই’ ব্যবহার করে ব্যাপকহারে পাঙ্গাসের পোনা শিকারের খবর পাওয়া গেছে। অসাধু আড়তদাড়রা জেলেদের দিয়ে প্রতিদিন লাখলাখ পোনা নিধন করাচ্ছে, যা ভবিষ্যতে মৎস্য উৎপাদনের জন্য বড় হুমকি হিসেবে দেখা দিচ্ছে।
রবিবার সরেজমিন বোরহানউদ্দিন উপজেলার হাসাননগর ইউনিয়নের মির্জকালু ও হাকিমুদ্দিন মাছঘাট ঘুরে এমনি দৃশ্য দেখা যায়।২০২৫ সালের নভেম্বর মাসে মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীতে ইলিশের আকাল থাকলেও বড় আকারের পাঙ্গাস মাছ প্রচুর পরিমাণে ধরা পড়ার কথা থাকলেও নিষিদ্ধ চাই ব্যাবহার করে প্রতিদিন লাখলাখ পাঙ্গাসের পোনা শিকার করে অসাধু জেলেরা নিয়ে আসছে আড়ৎদারদের কাছে। আড়তদারদের কাছ থেকে কিনে খুচরা ব্যাবসায়ীরা অবাধে গ্রাম ও শহরের বাজারে বিক্রি করছে এসব পোনা।
পোনা নিধনের ফলে পাঙ্গাসসহ অন্যান্য মাছের বংশবিস্তার বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, যা জেলেদের জীবিকা ও সামগ্রিক মৎস্যসম্পদের জন্য হুমকিস্বরূপ।
মৎস্য আইন অনুযায়ী ১২ ইঞ্চির (৩০ সেন্টিমিটার) নিচে পাঙ্গাস ধরা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। সাধারণত ডিসেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত ভোলার উপকূলীয় এলাকায় পাঙ্গাসের পোনার আধিক্য বেশি দেখা যায়।
কালাম মাঝি নামে একজন জেলে জানান, স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা এই অবৈধ কাজে জড়িত ফলে সাধারণ জেলেরা প্রতিবাদ করতে সাহস পায় না। নদী থেকে অবৈধ চাই ও জাল ধ্বংস করতে পারলে ভবিষ্যতে নদীতে বড় পাঙ্গাস পাওয়া যেতো। জাল ও চাইয়ের ফাদ ব্যাবহার করে প্রতিদিন যে পরিমান পাঙ্গাসের পোনা শিকার করা হচ্ছে এতে ভবিষ্যতে পাঙ্গাস উৎপাদনে বড় বাধা হতে পারে। এতে বড় পাঙ্গাসের বাজার সংকটে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। কিছু বড় পাঙ্গাস পাওয়া গেলেও তা সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাহিরে থাকবে।
গনমাধ্যমকর্মী রিয়াজ ফরাজী জানান, মেঘনার বুক থেকে নিষিদ্ধ উপায়ে পাঙ্গাসের পোনা নিধনের উৎসব চললেও, প্রশাসন ও মৎস্য অফিসের নীরবতা এবং প্রভাবশালী চক্রের দাপটে তা বন্ধ হচ্ছে না, যা এই মূল্যবান মৎস্যসম্পদকে বিপন্ন করে তুলছে। পোনা নিধনের ফলে পাঙ্গাসসহ অন্যান্য মাছের বংশবিস্তার বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, যা জেলেদের জীবিকা ও সামগ্রিক মৎস্যসম্পদের জন্য হুমকিস্বরূপ। একদিকে যেমন পোনা ধরা পড়ছে, অন্যদিকে বড় মাছের অভাব দেখা দিচ্ছে, যা সাধারণ জেলে ও ভোক্তাদের বিপাকে ফেলছে।
এদিকে পোনা নিধন বন্ধে মৎস্য অফিসের কার্যকর পদক্ষেপের অভাব রয়েছে মৎস্য অফিসের বিরুদ্ধে নীরব থাকার বা দেখেও না দেখার ভান করার অভিযোগ উঠেছে। তবে মৎস্য বিভাগ দাবি করেছে যে, তারা পাঙ্গাসের পোনা রক্ষায় অভিযান পরিচালনা করছে। নভেম্বরে মেঘনা নদীতে পোনা শিকারের দায়ে একজন জেলেকে দণ্ডিত করা হয়েছে। এছাড়া গত ২৪ ডিসেম্বর দিবাগত রাতে তজুমদ্দিন উপজেলায় মৎস্য অফিস ও কোষ্টগার্ড যৌথ অভিযান পরিচালনা করে সোনারচর নামক এলাকা থেকে অবৈধ চাই ব্যাবহার করে পাঙ্গাসের পোনা শিকারের সময় ৮টি চাই, ২টি নৌকা এবং ১ হাজার কেজি পাঙ্গাসের পোনাসহ ১৩ জন জেলেকে হাতেনাতে আটক করে।
উপকূলীয় সচেতন মহলের দাবী, মাঝে মাঝে অভিযান চালিয়ে কিছু চাই ও জাল জব্দ ও ধ্বংস এবং কিছু পোনা নদী বা এতিমখানায় অবমুক্ত করে নয়, বড়ং অসাধু জেলে অসাধু ব্যাবসায়ী, এবং মৎস্য বিভাগের অসাধু কর্মকর্তা কর্মচারিদের চিহ্নিত করে কঠিন নজরদারি ও আইনের সঠিক প্রয়োগ করতে পারলে মেঘনার বুক থেকে এই পোনা শিকারের মহোৎসব বন্ধ করা সম্ভব।
ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের হাসনাবাদ এলাকায় একটি মাদ্রাসায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এতে নারী, শিশুসহ চারজন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
বিস্ফোরণে মাদ্রাসার একতলা ভবনের পশ্চিম পাশের দুটি কক্ষের দেয়াল উড়ে গেছে বলে জানা যায়। প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশের ভাষ্যমতে, ঘটনাস্থলে ককটেল, রাসায়নিক দ্রব্য ও বোমা তৈরির বিভিন্ন সরঞ্জাম পাওয়া গেছে। দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের হাসনাবাদ এলাকার উম্মাল কুরা ইন্টারন্যাশনাল মাদ্রাসার একতলা ভবনে এ বিস্ফোরণ ঘটে।
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল আলম গণমাধ্যমকে বলেন, শনিবারও (২৭ ডিসেম্বর) ঘটনাস্থলে বোমা নিষ্ক্রিয়কারী দল কাজ করেছে। এদিনও অভিযান চলে। ককটেল, দাহ্য পদার্থ ও বোমা তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, এ ঘটনায় থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে। পাশাপাশি ঘটনার প্রকৃত কারণ উদ্ঘাটনে ক্রাইম সিন দল ও বোমা নিষ্ক্রিয়কারী দল কাজ করছে।
জানা গেছে, মাদ্রাসাটিতে ৩০ থেকে ৩৫ শিক্ষার্থী পড়াশোনা করত। তবে শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) ছুটির দিন হওয়ায় মাদ্রাসা বন্ধ ছিল। এ কারণে বড় ধরনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি।
এ ঘটনায় মাদ্রাসার পরিচালক শেখ আল আমিন (৩২), তার স্ত্রী আছিয়া বেগম (২৮) এবং তাদের তিন সন্তানের মধ্যে দুই ছেলে উমায়েত (১০) ও আবদুল্লাহ (৭) আহত হন। এর মধ্যে আছিয়া ও তার দুই সন্তানকে প্রথমে স্থানীয় হাসপাতালে নেওয়া হয়। কর্তব্যরত চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান।
ভবনের এক পাশে তিনটি কক্ষে মাদ্রাসার কার্যক্রম পরিচালিত হতো। অপর পাশের একটি কক্ষে পরিচালক শেখ আল আমিন পরিবারসহ তিন বছর ধরে বসবাস করে আসছিলেন।
পাশের ভবনের বাসিন্দা হুমায়ুন কবির বলেন, ‘বিস্ফোরণে আমাদের ভবনের কিছু অংশ ফেটে গেছে। ঘরের ভেতরের আসবাবও ভেঙে পড়েছে।’
ভবনমালিক পারভীন বেগম বলেন, ‘তিন বছর ধরে আমার বাড়ি ভাড়া নিয়ে মুফতি হারুন মাদ্রাসা পরিচালনা করতেন। হারুন তার শ্যালক আলামিন ও শ্যালকের স্ত্রী আছিয়াকে মাদ্রাসা পরিচালনার দায়িত্ব দেন। তিনি মাঝেমধ্যে মাদ্রাসায় আসতেন। আমি নিয়মিত খোঁজখবর নিতাম। কিন্তু মাদ্রাসার আড়ালে কী কার্যক্রম চলছিল, তা বুঝতে পারিনি। এই ঘটনার পর পুলিশ ভবনের ভেতর থেকে কেমিক্যাল, ককটেল ও বোমা তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করেছে।’
শরীফ ওসমান হাদি হত্যার বিচারের দাবিতে দ্বিতীয় দিনের মতো উত্তাল হয়ে উঠেছে রাজধানীর শাহবাগ মোড়। সরকারের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো কার্যকর সাড়া না মেলায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে ইনকিলাব মঞ্চ।
শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) বিক্ষোভ কর্মসূচি থেকে সংগঠনটির সদস্য সচিব আব্দুল্লাহ আল জাবের হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, হাদির খুনের বিচার না করে কাউকেই ‘সেফ এক্সিট’ দেওয়া হবে না। পরিস্থিতি বিবেচনায় যেকোনো মুহূর্তে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনা ও সংসদ ভবন ঘেরাওয়ের কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হতে পারে।
শাহবাগের এই অবস্থান কর্মসূচি থেকে ছাত্র-জনতা হাদির খুনিদের গ্রেপ্তার এবং এর নেপথ্যের পরিকল্পনাকারীদের চিহ্নিত করার দাবিতে মুহুর্মুহু স্লোগান দিচ্ছেন। ইনকিলাব মঞ্চ স্পষ্ট করে জানিয়েছে, ন্যায়বিচার নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত তারা রাজপথ ছাড়বেন না। আন্দোলনকারীরা মনে করছেন, সরকার হাদি হত্যার বিচার প্রক্রিয়ায় স্থবিরতা দেখাচ্ছে, যা শহীদদের রক্তের সাথে বেইমানির শামিল।
বিক্ষোভ সমাবেশে আব্দুল্লাহ আল জাবের সরকারের উপদেষ্টাদের কঠোর সমালোচনা করে বলেন, যারা ভাবছেন কিছুদিন ক্ষমতায় থেকে বিদেশে পাড়ি জমাবেন, তাদের সেই স্বপ্ন সফল হবে না। রক্তের সাথে বেইমানি করলে এই জমিনেই আপনাদের বিচার করবে জনতা।
তিনি আরও বলেন, ১ হাজার ৪০০ শহিদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এলেও তারা খুনিদের বিচার নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে। জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে সরকারে আসার দাবি করা এই প্রশাসনের জন্য এটি চরম লজ্জার বিষয় বলে তিনি মন্তব্য করেন।
উপদেষ্টাদের উদ্দেশ্য করে জাবের প্রশ্ন তোলেন, হাদি হত্যার বিচারে কারা বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে? তিনি বলেন, কারা এই খুনের পেছনে রয়েছে তাদের নাম প্রকাশ করুন। আমরা আপনাদের পাহারা দেব, ভয়ের কিছু নেই। কিন্তু বিচার করতে ব্যর্থ হলে আপনাদের জবাবদিহি করতে হবে।
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করতে চাওয়া শরিফ ওসমান বিন হাদি হত্যা মামলায় একের পর এক নতুন তথ্য বেরিয়ে আসছে। তদন্তকারী সংস্থার ধারণা, ছয় মাসেরও বেশি সময় ধরে পরিকল্পনা করে প্রকাশ্যে গুলি করে এ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করা হয় এবং কিলিং মিশনটি সমন্বয় করেছে দেশ-বিদেশের কয়েকটি গ্রুপ।
তদন্ত সূত্র জানায়, হত্যাকাণ্ডের মূল সন্দেহভাজন শুটার ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ ২১ জুলাই সিঙ্গাপুরে গিয়ে কয়েকজন পলাতক আওয়ামী লীগ নেতার সঙ্গে বৈঠক করে। পাঁচ দিন পর ২৬ জুলাই দেশে ফেরার আগেই পরিকল্পনা চূড়ান্ত হয় বলে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্য থেকে ধারণা পাওয়া গেছে। সিঙ্গাপুর গিয়ে ফয়সাল নিজেকে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উদ্যোক্তা পরিচয়ে প্রবেশ করেন এবং মালয়েশিয়া সীমান্তে গিয়ে বৈঠক করেন বলে জানা গেছে।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ফয়সালের ভ্রমণ তথ্য পাওয়া গেছে, তদন্ত সে অনুযায়ী এগোচ্ছে। তদন্তের স্বার্থে বিস্তারিত এখনই বলা যাচ্ছে না।
তদন্তে উঠে এসেছে, দেশে ফেরার পর স্ত্রী সাহেদা পারভীনকে ফয়সাল ইঙ্গিত দেন সামনে এমন পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে, যখন দেশে থাকা কঠিন হবে। পরিবারের জন্য একটি ব্যাংক হিসাবে প্রায় ৩০ লাখ টাকা রাখা আছে বলেও স্ত্রীকে জানান তিনি। একই ধরনের তথ্য পাওয়া গেছে ফয়সালের প্রেমিকা মারিয়া আক্তারের জিজ্ঞাসাবাদেও। হত্যার আগের রাতেই সাভারের মধুমতি মডেল টাউনে ফয়সাল, মোটরসাইকেলচালক আলমগীর ও মারিয়া সময় কাটান। সেদিন রাতে ফয়সাল মারিয়াকে বলেন, ‘আগামীকাল এমন কিছু হবে, যা দেশ কাঁপিয়ে দেবে।’ তবে মারিয়া ঘটনার সম্পক্ততার অস্বীকার করে জানান, মূল ঘটনা সম্পর্কে ধারণা ছিলো না।
হত্যার পর ফয়সাল ও আলমগীরকে ভারতে পালিয়ে যেতে সহায়তা করে ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও মিরপুরের সাবেক কাউন্সিলর তাইজুল ইসলাম চৌধুরী (বাপ্পী)। তার ভগ্নিপতি আমিনুল ইসলামও সহযোগী হিসেবে কাজ করেন। দুইজনকেই শনাক্ত করেছে পুলিশ। দালাল ফিলিপ স্নাল সীমান্তপথে পালিয়ে যাওয়ার সহযোগিতা করে। এরপর তার মাধ্যমে হালুয়াঘাট সীমান্ত দিয়ে হত্যার রাতেই ফয়সাল-আলমগীর ভারতে প্রবেশ করে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত মোট ১১ জনকে ডিবি ও র্যাব গ্রেপ্তার করেছে।
হাদি হত্যার বিচার দাবিতে শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) জুমার পর শাহবাগ মোড়ে বিক্ষোভ করে ইনকিলাব মঞ্চ। সদস্য সচিব আবদুল্লাহ আল জাবের বলেন, শাহবাগকে ‘শহীদ ওসমান হাদি চত্বর’ ঘোষণা করা হলো; বিচারের আগ পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।
গত ১২ ডিসেম্বর রাজধানীর পুরানা পল্টনের বক্স-কালভার্ট রোডে মাথায় গুলি করে হাদিকে হত্যা করা হয়। প্রথমে ঢামেক, পরে এভারকেয়ারে চিকিৎসা দেওয়া হয়। অবস্থার অবনতিতে ১৫ ডিসেম্বর সিঙ্গাপুরে নেওয়ার পর ১৮ ডিসেম্বর তিনি মারা যান। পরে ওসমান হাদির মরদেহ দেশে এনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে দাফন করা হয়।
আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বগুড়ার সারিয়াকান্দির চরাঞ্চলের পতিত জমিতে এবছর মিষ্টি কুমড়ার বাম্পার ফলন হয়েছে। একজন কৃষক ১৫ বিঘা জমিতে ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা খরচ করে ৮ লাখ টাকার মিষ্টি কুমড়া বিক্রি করেছেন। বাজারে ভালো দাম থাকায় লাভবান হচ্ছেন কৃষক।
উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর এ উপজেলায় ১০০ হেক্টর জমিতে মিষ্টি কুমড়ার আবাদ হয়েছে। এ বছর লক্ষ্যমাত্রা পেড়িয়ে ১০৫ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। যা গত কয়েকদিন আগে থেকে উত্তোলন শুরু হয়েছে। প্রতি হেক্টর জমিতে এ বছর ২০ থেকে ২২ টন মিষ্টি কুমড়া উত্তোলন হচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, এ উপজেলার মধ্যে দিয়ে যমুনা এবং বাঙালি দুটি বড় নদী প্রবাহিত হয়েছে। এজন্য এ উপজেলার ৩ ভাগের ২ ভাগ এলাকায় চরাঞ্চল রয়েছে। এসব চরাঞ্চল আদিকাল থেকেই পতিত রয়েছে। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরেই এসব পতিত জমিতে পানিসেচের মাধ্যমে কৃষকেরা নানা ধরনের ফসল ফলাচ্ছেন। এগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি ফসল হচ্ছে মিষ্টি কুমড়া। যা পতিত জমিতে বপন করা যায় এবং বপনের ৯০ দিনের মধ্যেই ফসল সংগ্রহ করা যায়।
গত কয়েক বছরের মতোই এ বছরও কৃষকরা চরাঞ্চলের পতিত জমিতে মিষ্টি কুমড়ার আবাদ করেছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছর মিষ্টি কুমড়ার বাম্পার ফলন হয়েছে। কৃষকেরা এখন তাদের জমি থেকে মিষ্টি কুমড়া উত্তোলন শুরু করেছেন। প্রতিটি মিষ্টি কুমড়া ২ কেজি থেকে শুরু করে ৮ কেজি পর্যন্ত হয়েছে। যা বাজারে কৃষকরা ২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন।
এছাড়া পাইকারি ক্রেতারা জমি বিঘা চুক্তিতেও মিষ্টি কুমড়া ক্রয় করছেন। যা পঞ্চগড়, রংপুর, দিনাজপুর, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিক্রির জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
উপজেলার কাজলা ইউনিয়নের কুড়িপাড়া চরের কৃষক রঞ্জু মিয়া এ বছর ১৫ বিঘা জমিতে হাইব্রিড জাতের মিষ্টি কুমড়ার আবাদ করেছেন। ১৫ বিঘা জমিতে মিষ্টি কুমড়ার আবাদ করতে তার খরচ হয়েছে মাত্র ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা। তার ১৫ বিঘা জমির মিষ্টি কুমড়া পরিপক্ব হয়েছে। যা পাইকারি ক্রেতারা ৮ লাখ টাকা দাম করছেন। তাও এটা তার এ জমির ১ম কিস্তির কুমড়া। ১ম কিস্তির মিষ্টি কুমড়া বিক্রি করার পর তিনি আবারও ২য় কিস্তির কুমড়া বিক্রি করবেন।
একই এলাকার কৃষক শাইন মিয়া ৩ বিঘা জমিতে মিষ্টি কুমড়ার চাষ করেছেন। তার খরচ হয়েছে ৪০ হাজার টাকা। যা পাইকারি ক্রেতারা দাম হাকছেন ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। একই এলাকার কৃষক জিয়াউল ফকিরও ৩ বিঘা জমিতে মিষ্টি কুমড়ার আবাদ করেছেন। যা দেড় লাখ টাকায় বিক্রি করেছেন।
কৃষক রঞ্জু মিয়া বলেন, আগে চরাঞ্চলের জমিগুলো পতিত হয়েই থাকত। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরেই এসব পতিত জমিগুলোতে তারা মিষ্টি কুমড়ার আবাদ করে অল্প সময়ের মধ্যেই ভালো লাভবান হচ্ছেন। গত বছর ফলন কম হওয়ায় তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন। কিন্তু এ বছর ভালো ফলন হয়েছে। ইতোমধ্যেই তারা মিষ্টি কুমড়া জমি থেকে উত্তোলন শুরু করেছেন। তার ১৫ বিঘা জমির মিষ্টি কুমড়া পাইকাররা ৮ লাখ টাকা দাম করেছে। যা পরে সাড়ে ৮ লাখ টাকায় বিক্রি করেছেন।
সারিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ বলেন, কৃষি অফিসের পরামর্শে কৃষকেরা চরের পতিত জমিতে মিষ্টি কুমড়ার আবাদ করে বেশ লাভবান হচ্ছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছর মিষ্টি কুমড়ার বাম্পার ফলন হয়েছে এবং বাজারে ভালো দাম থাকায় কৃষকদের মুখে হাসি ফুটেছে।
চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে গভীর রাতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ২০০ বছরের পুরোনো জমিদার বাড়ির ১০ বসতঘর পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এতে প্রায় অর্ধকোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের। গত শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) গভীর রাতে উপজেলার সমিতিরহাট ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের আরবান আলী সওদাগর বাড়িতে এই ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, গত শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) রাত ১১টার দিকে হঠাৎ আগুনের সূত্রপাত হলে লেলিহান শিখা আশে পাশে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় আগুনের ভয়াবহতা দেখে সাধারণ মানুষের মাঝে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়।
স্থানীয়রা এগিয়ে এসে আগুন নেভানোর আপ্রাণ চেষ্টা চালালেও তীব্রতার কারণে কাছে যাওয়া সম্ভব হয়নি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, খবর পেয়ে ফটিকছড়ি ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে স্থানীয়দের সহায়তায় প্রায় ২ ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে।
ততক্ষণে বিশেষভাবে তৈরিকৃত দু০০ বছরের পুরোনো জমিদার বাড়ির বিপ্লব, বিটু, কপিল, কাজল, বাদল, রাসেদ, জাহেদ, হাসান, মিটু, টিটু, সোহেল চৌধুরী ও মঞ্জুর দ্বিতল বসতঘর সম্পূর্ণ ভস্মীভূত হয়ে যায়।
ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্য মুক্তিযুদ্ধা রাশেদ মুহাম্মদ জানান, আগুনের ভয়াবহতায় ঘর থেকে কোনো মালামাল বের করতে পারেননি। আসবাবপত্র, ধান-চাল, নগদ টাকা, স্বর্ণালংকার ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ সবকিছু পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
ফটিকছড়ি ফায়ার সার্ভিসের টিম লিডার আব্দুল কাইয়ুম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘আগুনের সূত্রপাত সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।’
তবে বাড়িগুলো কাঠের তৈরি হওয়ায় আগুনের ভয়াবহতা ছিল অনেক বেশি। প্রায় ২ ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।
চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার সাহার বাজারে এক ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ১৪ বছর বয়সী এক কিশোরের মৃত্যু হয়েছে। আজ শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে সংঘটিত এই অগ্নিকাণ্ডে বাজারের পাঁচটি দোকান সম্পূর্ণ পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। নিহতের নাম সাব্বির আহমেদ, সে উপজেলার সুবিদপুর পশ্চিম ইউনিয়নের তালতলা এলাকার আরিফ মিয়ার ছেলে।
ফরিদগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস স্টেশন এবং স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বাজারের ব্যবসায়ী জয়নাল আবেদীনের দোকান থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। ওই দোকানে মুদি মালের পাশাপাশি খোলা জ্বালানি তেল বিক্রি করা হতো, যার ফলে আগুনের তীব্রতা মুহূর্তের মধ্যে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে সৃষ্ট আগুন দ্রুত পার্শ্ববর্তী দোকানগুলোতে ছড়িয়ে পড়লে পুরো এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। এ সময় দোকানের ভেতরে কাজ করতে থাকা সাব্বির বের হওয়ার চেষ্টা করেও আগুনের লেলিহান শিখার কারণে আটকা পড়ে এবং সেখানেই দগ্ধ হয়ে প্রাণ হারায়।
খবর পেয়ে ফরিদগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের একটি দল দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে স্থানীয়দের সহায়তায় প্রায় এক ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। ততক্ষণে আগুনে পাঁচটি দোকান ও মালামাল পুড়ে কয়েক কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করছেন ব্যবসায়ীরা। ফরিদগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের ভারপ্রাপ্ত ইনচার্জ মো. কামরুল হাসান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, দাহ্য পদার্থ বা জ্বালানি তেল থাকায় আগুন দ্রুত ছড়িয়েছিল। মরদেহ উদ্ধার করে পরবর্তী আইনি প্রক্রিয়ার জন্য পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। মর্মান্তিক এই ঘটনায় নিহতের পরিবার ও স্থানীয় ব্যবসায়ীদের মাঝে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
শেখ হাসিনার শেষ মেয়াদে শুল্কমুক্ত সুবিধায় দ্বাদশ সংসদের এমপিদের আমদানি করা ৩০টি বিলাসবহুল গাড়ি শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অধীন যানবাহন অধিদপ্তরের পরিবহন পুলে হস্তান্তর করা হয়েছে। শুল্ক-কর ছাড়াই গাড়িগুলো দেওয়া হলেও ভবিষ্যৎ জটিলতা এড়াতে শর্ত যুক্ত করা হয়েছে।
নিলামে প্রত্যাশিত দর না ওঠায় গত সেপ্টেম্বরে দ্বাদশ সংসদের ৩১ জন সংসদ সদস্যের শুল্কমুক্ত সুবিধায় আমদানি করা ৩১টি বিলাসবহুল গাড়ি পরিবহন পুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। এর আগে সংসদ সদস্যদের আমদানি করা গাড়ি এভাবে সরকারের কাছে নেওয়ার কোনো নজির না থাকায় বিষয়টি নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়। পরে যানবাহন অধিদপ্তর, কাস্টমস ও বিআরটিএর সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়।
সবশেষ ১২ নভেম্বর প্রায় ২৭০ কোটি টাকা মূল্যের গাড়িগুলো শর্তসাপেক্ষে পরিবহন পুলে দেওয়ার বিশেষ আদেশ দেয় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড—এনবিআর। আদেশ অনুযায়ী, ভবিষ্যতে আমদানিকারক অর্থাৎ সাবেক এমপিরা চাইলে নির্ধারিত শুল্ক-কর পরিশোধ করে গাড়িগুলো ফেরত নিতে পারবেন।
এরইমধ্যে যানবাহন অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা চট্টগ্রাম বন্দরে সংরক্ষিত গাড়িগুলো পরিদর্শন করেছেন। সব প্রক্রিয়া শেষে ৩০টি গাড়ি হস্তান্তরের কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের সহকারী কমিশনার শরিফ আল আমিন বলেন, ‘এরইমধ্যে গাড়ি খালাসকরণের জন্য সব প্রক্রিয়া সুসম্পন্ন করা হয়েছে। জনপ্রশাসন ও পরিবহন পুলের কর্তাব্যক্তি যারা আছেন তারা এরইমধ্যে গাড়িগুলো বুঝে নেওয়ার জন্য এসেছেন।’
গাড়ি আমদানিকারকদের মতে, উচ্চ মূল্য ও প্রক্রিয়াগত জটিলতার কারণে এসব গাড়ি নিলামে বিক্রি করা কঠিন হতো। বন্দরের শেডে ফেলে রেখে নষ্ট হওয়ার ঝুঁকির চেয়ে পরিবহন পুলে দেওয়াই ছিল বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত। তবে সংসদ সদস্যদের শুল্কমুক্ত সুবিধায় বিলাসবহুল গাড়ি আমদানির আইন সংশোধনের দাবি জানিয়েছে বারভিডা।
বারভিডার সাবেক সহ-সভাপতি মো. হাবিবুর রহমান বলেন, আপনি এমপিদের জন্য গাড়িই দেন তাহলে ৩ হাজার সিসি পেট্রোল কেন করবেন আপনি? অন্তত সাড়ে ৩ হাজার সিসি পেট্রোল করতে হবে। একটা স্ল্যাট ভাগ করে দিতে হবে যাতে যেকোনো জায়গা থেকে গাড়ি নামতে পারে।
সংসদ সদস্যদের শুল্কমুক্ত সুবিধা চালু হয় এরশাদ সরকারের আমলে। দ্বাদশ সংসদের পর এ সুবিধায় ৫১টি গাড়ি আমদানি করা হলেও সংসদ বিলুপ্তির পর বেশিরভাগ গাড়ি খালাস হয়নি। এর অধিকাংশই টয়োটা ল্যান্ড ক্রুজার।
রাজবাড়ীর পাংশা থানাধীন এলাকায় গত বুধবার রাতে গণপিটুনিতে একজন নিহত হওয়ার ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও কিছু সংবাদমাধ্যমে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানোর বিষয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। সরকার বলছে, প্রাথমিক তদন্ত ও পুলিশের তথ্য অনুযায়ী ঘটনাটি কোনোভাবেই সাম্প্রদায়িক হামলা নয়।
অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে দেয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়, রাজবাড়ীর পাংশা থানাধীন এলাকায় বুধবার রাতে সংঘটিত একটি দুঃখজনক হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানোর বিষয়টি সরকারের নজরে এসেছে।
বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, পুলিশের তথ্য ও প্রাথমিক তদন্ত থেকে প্রতীয়মান হচ্ছে যে, ঘটনাটি মোটেই সাম্প্রদায়িক হামলা নয়। এটি চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড থেকে উদ্ভূত সহিংস পরিস্থিতির থেকে সৃষ্ট ঘটনা। নিহত ব্যক্তি শীর্ষ সন্ত্রাসী অমৃত মন্ডল ওরফে সম্রাট চাঁদা দাবির উদ্দেশে এলাকায় উপস্থিত হন এবং বিক্ষুব্ধ স্থানীয় জনতার সঙ্গে সংঘর্ষের এক পর্যায়ে প্রাণ হারান। তিনি ইতিপূর্বে ২০২৩ সালে রুজুকৃত হত্যা এবং চাঁদাবাজির মামলাসহ একাধিক গুরুতর মামলার আসামি ছিলেন। এসব মামলায় তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও রয়েছে।
পুলিশের বরাতে সরকার জানিয়েছে, পুলিশ ঘটনাস্থল হতে সম্রাটের সহযোগী সেলিমকে একটি বিদেশি পিস্তল ও একটি পাইপগানসহ আটক করে। এই ঘটনায় ইতোমধ্যে তিনটি মামলা দায়ের হয়েছে।
এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সরকার কঠোর নিন্দা জানিয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়, সরকার সুস্পষ্টভাবে জানাতে চায়, যে কোনো ধরনের আইনবহির্ভূত কর্মকাণ্ড, গণপিটুনি বা সহিংসতা সরকার কোনভাবেই সমর্থন করে না। এ ঘটনায় যারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত, তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তদন্ত কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
একইসঙ্গে সরকার গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছে যে, একটি মহল নিহত ব্যক্তির ধর্মীয় পরিচয়কে সামনে এনে ঘটনাটিকে সাম্প্রদায়িক হামলা হিসেবে উপস্থাপনের অপচেষ্টা চালাচ্ছে, যা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও অসদুদ্দেশ্য প্রণোদিত। এ ধরনের অপপ্রচার সামাজিক সম্প্রীতি বিনষ্ট করতে পারে এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে পারে।
সরকার সংশ্লিষ্ট সকলকে দায়িত্বশীল আচরণ করার আহ্বান জানিয়ে বিভ্রান্তিকর, উসকানিমূলক ও সাম্প্রদায়িক বক্তব্য প্রচার থেকে বিরত থাকার জন্য অনুরোধ জানিয়েছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় সরকার দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। বাংলাদেশ একটি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ—দেশের শান্তি ও স্থিতিশীলতা নষ্ট করার যেকোনো অপচেষ্টা কঠোর হাতে দমন করা হবে।
সূত্র : বাসস
রাজধানীর কাঁচাবাজারে সরবরাহ বাড়ায় কমতে শুরু করেছে শীতকালীন সবজির দাম। এছাড়া স্বস্তি মিলেছে পেঁয়াজের দামেও। মাত্র দুই-তিন সপ্তাহের ব্যবধানে নতুন পেঁয়াজের দাম প্রায় অর্ধেকে নেমে আসায় মধ্য ও নিম্নবিত্ত ক্রেতাদের মাঝে স্বস্তি ফিরেছে। তবে সবজি ও পেঁয়াজের দামে পতন ঘটলেও তেল, ডাল এবং মাছ, মাংস ও নিত্যপণ্যের বাজারে আগের মতোই অস্থিরতা দেখা গেছে।
শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর রায়সাহেব বাজারসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, শীতের সবজিতে বাজার এখন ভরপুর। নতুন আলু, শিম ও টমেটোর দাম গত সপ্তাহের তুলনায় উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে।
বাজার ঘুরে দেখা যায়, নতুন পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকায়। আর আমদানি করা পেঁয়াজের কেজিও এখন ৭০ থেকে ৭৫ টাকা। গত দু-তিন সপ্তাহ আগের চেয়ে পেঁয়াজের দাম প্রায় অর্ধেক কমেছে। এতে ক্রেতাদের মধ্যে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে। তবে বাজারে মুরগি, ডিম, মাছ ও অন্যান্য মুদিপণ্যের দাম আগের মতোই স্থিতিশীল।
পরিবর্তন নেই মাছ, মাংস, ডিম ও নিত্য প্রয়োজনীয় মসলার দামে। রুই-কাতলা ৪০০, পাঙাশ ২০০ টাকা কেজি, পোলট্রি মুরগি কেজিপ্রতি ১৭০ টাকা, ডিমের ডজন ১২০ টাকা, খাসি মাংস ১৩০০ টাকা, গরুর মাংস ৭৫০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। দোকানিরা জানান, দাম আগের মতোই আছে।
তবে প্রতিকেজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা কমেছে পাকিস্তানি মুরগির দাম। যা গত কয়েক সপ্তাহ আগে ছিল ৩০০ টাকার ওপরে, তা এখন ২৮০ টাকা। পাকিস্তানি মুরগি বিক্রেতা জব্বার জানান, মুরগি সরবরাহ বেশি আছে এখন। এ জন্য কিছুটা দাম কমেছে।
সবজির মধ্যে টমেটোর দাম কেজিপ্রতি কমেছে ২০ টাকা। আগে ছিল ১২০ টাকা কেজি। লাউয়ের পিস ৫০ টাকা, শিম ৪০ টাকা, আলু ৩০ টাকা, বেগুন ৫০ টাকা, ফুলকপি ৩০, বাঁধাকপি ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। রায়সাহেব বাজারের সবজি বিক্রেতা জয়নাল জানান, এসব সবজির দাম গত কয়েক সপ্তাহের তুলনায় ১০ থেকে ২০ টাকা কমেছে।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ঢাকায় বেশ শীত অনুভূত হওয়ায় বাজারগুলোতে ক্রেতা উপস্থিতি কিছুটা কম। বিক্রেতারা বলছেন, বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্রেতা সমাগম বাড়বে। সবজি বিক্রেতারা জানিয়েছেন, শীতকালীন সবজির সরবরাহ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দাম কমে গ্রাহকের নাগালে এসেছে। এতে ক্রেতাদের মধ্যে শীতের সবজি কেনায় স্বস্তি দেখা গেছে।
বাজারে দেখা গেছে, প্রতিটি দোকানে এখন থরে থরে সাজানো নতুন সবজি। দাম নাগালের মধ্যে থাকায় ক্রেতারাও প্রয়োজন মতো সবজি কিনতে পারছেন।
রায়সাহেব বাজারে ক্রেতা ছত্তার আলী বলেন, গত বছর প্রায় পুরো সময় সবজির দাম বেশি ছিল। ৬০ টাকা কেজির কম সবজি কেনা যায়নি। এখন ৩০-৪০ টাকা কেজি দরে অনেক সবজি কেনা যাচ্ছে। ১০০ টাকার সবজি কিনলে দু-চার দিনের জন্য যথেষ্ট।
বাজারে কমেছে শীতের সবজি শিমের দাম। এখন বিভিন্ন বাজারে অনেক ধরনের শিম পাওয়া যাচ্ছে। তার মধ্যে নতুন আসা বিচিওয়ালা শিম ৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। অন্যান্য জাতের শিম ৩০ থেকে ৪০ টাকার মধ্যে কেনা যাচ্ছে।
মাত্র দু-তিন সপ্তাহ আগেই প্রতিকেজি নতুন আলু ১০০ থেকে ১২০ টাকা দরে বিক্রি হলেও এখন তা কমে ২০-২৫ টাকায় নেমেছে। মুলার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকায়। গত সপ্তাহের তুলনায় কেজিপ্রতি ১০ টাকা কমে বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৬০ টাকায়।
পাকা টমেটোর দাম কমলেও এখনো ক্রেতার নাগালে আসেনি। প্রতি কেজি পাকা টমেটো বিক্রি হচ্ছে ৬০-৮০ টাকার মধ্যে। তবে শাকের দাম কমেছে। পালং শাক, লাল শাক ও মুলা শাকের আঁটি এখন বিক্রি হচ্ছে ১০-১৫ টাকার মধ্যে।
রায়সাহেব বাজারের নিয়মিত ক্রেতা কাদের বলেন, কয়েক দিন একটু দাম কম যাচ্ছে কাঁচাবাজারে। আজকে আমি মোটামুটি প্রয়োজনীয় সব কিছু এক হাজারের মধ্যে কিনলাম। যা অন্য সময় ১২০০ থেকে ১৩০০ লেগে যায়। তবে দাম আরও কমা উচিত বলে মনে করেন তিনি।
আরেক ক্রেতা সজীব বলেন, বাজার দর কমেছে না বেড়েছে বোঝা মুশকিল। শুধু কিছু পণ্যের দাম ওঠানামা করলেই বাজারে স্বস্তি ফিরেছে বলা যায় না। দাম কমছে না বিভিন্ন অরাজকতার কারণে। দাম কিছু জিনিসের কমেছে বলতে হবে, কিন্তু সরকার যদি আরও দাম কমাতে পারে তাহলে সব শ্রেণির মানুষের নাগালে আসবে।
কাঁচাবাজারের অধিকাংশ জিনিসের দাম কিছুটা কমলেও অপরিবর্তিত আছে নিত্যপ্রয়োজনীয় মুদিপণ্যের দাম।
বোতলজাত সয়াবিন তেল লিটার ১৯৮ টাকা, খোলা সয়াবিন তেল ১৯০ টাকা, কৌটাজাত ঘি ১৪৫০-১৫৫০ টাকা, খোলা ঘি ১২৫০ টাকা, প্যাকেটজাত চিনি ১১০ টাকা, খোলা চিনি ৯৫ টাকা, দুই কেজি প্যাকেট ময়দা ১৩০ টাকা, আটা দুই কেজির প্যাকেট ১২০ টাকা, খোলা সরিষার তেল প্রতি লিটার ২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া এলাচি ৪ হাজার ৭৫০ টাকা, দারুচিনি ৫০০ টাকা, লবঙ্গ ১ হাজার ২৮০ টাকা, সাদা গোল মরিচ ১ হাজার ৩৫০ টাকা ও কালো গোল মরিচ ১ হাজার ১৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া প্রতিকেজি প্যাকেট পোলাও চাল ১৫৫ টাকা, খোলা পোলাও চাল মানভেদে ৯০-১৩০ টাকা, ছোট মসুর ডাল ১৫৫ টাকা, মোটা মসুর ডাল ৯০ টাকা, বড় মুগ ডাল ১৪০ টাকা, ছোট মুগ ডাল ১৭০ টাকা, খেসারি ডাল ১০০ টাকা, বুটের ডাল ১১৫ টাকা, ছোলা ১১০ টাকা, মাষকলাই ডাল ১৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
কাঁচাবাজারে শীতের সবজির সরবরাহ বাড়ায় সাধারণ মানুষের নাগালে এসেছে অনেক পণ্য। বিশেষ করে পেঁয়াজ ও নতুন আলুর দাম দ্রুত কমে আসায় নিম্ন আয়ের মানুষের খরচ কিছুটা কমেছে। তবে ক্রেতাদের মতে, কেবল কয়েকটি পণ্যের দাম কমলেই বাজারে পূর্ণ স্বস্তি ফেরা সম্ভব নয়। তারা মনে করেন, বাজার মনিটরিং জোরদার করে চাল, ডাল, তেলসহ মুদিপণ্যের দাম কমাতে পারলে সব শ্রেণির মানুষের জন্য তা সুফল বয়ে আনবে।
ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সাইফুল সরদার (৪৫) নামে এক বিএনপি নেতাকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) ভোর চারটার দিকে সদর ইউনিয়নের ব্রাহ্মণ জাটিগ্রামে নিজ বাড়িতে হত্যার শিকার হন তিনি।
নিহত সাইফুল ব্রাহ্মণ জাটিগ্রামের হবি সরদারের ছেলে। তিনি সদর ইউনিয়ন বিএনপির সাহিত্য ও সাংস্কৃতিকবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন।
হামলায় একই দলের সমর্থক ইসমাইল মোল্যা (২৬) নামের এক যুবককে কুপিয়ে জখম করা হয়েছে। তাকে ঢাকা মেডিকেলে কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এ ঘটনায় এলাকায় থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে। উভয়পক্ষের অনন্ত ১০টি বাড়ি ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত শফিকুল মিয়া ও আইয়ুব মিয়াকে আটক করেছে পুলিশ। মরদেহ ফরিদপুর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আলফাডাঙ্গার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাসনাত খান।
নিহতের পরিবার, পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ব্রাহ্মণ জাটিগ্রামের বর্তমান ইউপি সদস্য শরিফুল ইসলাম ও বিদ্যাধর গ্রামের শাহাদৎ হোসেন খোকন মিয়ার ছেলে জুয়েল মিয়ার মধ্যে দীর্ঘদিনের বিরোধ চলে আসছিল। শুক্রবার ভোর রাতে জুয়েল মিয়া ও তার ছোট ভাই হাসিব মিয়ার নেতৃত্বে অনন্ত ৩০ থেকে ৩৫ জনের একটি দল দেশীয় অস্ত্র নিয়ে শরিফুল ইসলামের সমর্থক সাইফুল সরদারের বাড়িতে প্রবেশ করে। থানা থেকে পুলিশ এসেছে বলে দরজা খুলতে বলে। দরজা খুলতেই সাইফুলকে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে জখম করে। হাসপাতালে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।
এসময় হামলাকারীরা সাইফুলের বাড়িতে থাকা আসবাবপত্র ও ইলেকট্রিক মালামাল ভাঙচুর করে। এরপর ইসমাইল মোল্যার বাড়িতে ঢুকে তাকে কুপিয়ে জখম করে। পরিবারের লোকজন ও স্থানীয়রা কাশিয়ানী হাসপাতালে নিয়ে গেলে অবস্থার বেগতিক দেখে ঢাকা মেডিকেল কলেজে পাঠায়।
শরিফুল মেম্বারের সমর্থক দবীর শরীফের স্ত্রী আলেয়া বেগম জানান, স্থানীয় জুয়েল মিয়া, হাসিব মিয়া ও সবুজ মিয়াসহ অনেক লোকজন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা করে ঘরে থাকা ৫ লাখ টাকা, দুটি ইজিবাইক ভাঙচুর ও স্বর্ণালংকার লুটপাট করে নিয়ে যায়।
আলফাডাঙ্গা থানার ওসি আবুল হাসনাত খান বলেন, স্থানীয় দুই পক্ষের মধ্যে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দীর্ঘদিনের বিরোধ চলে আসছে। রাতে পুলিশ পরিচয়ে ঘরে ঢুকে অতর্কিতভাবে হামলা চালিয়ে সাইফুল নামের এক ব্যক্তিকে হত্যা করা হয়। অন্য একজনকে কুপিয়ে জখম করা হয়েছে। এ ঘটনায় দুজনকে আটক করা হয়েছে। আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দেখতে শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) সকাল থেকেই বাসার সামনে আসেন নেতা-কর্মীরা। সকালে গুলশান অ্যাভিনিউয়ের ১৯৬ নম্বর বাড়ির সামনে এমন চিত্র দেখা গেছে।
বাসার সামনে আসা নেতা-কর্মীদের অনেকে বলছেন, গণসংবর্ধনায় লাখ লাখ মানুষের মাঝে তারেক রহমানকে ভালোভাবে দেখতে পাননি। এ জন্যই সকালে গুলশানের বাসার সামনে এসেছেন তারা। দীর্ঘ ১৭ বছর পরে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশে ফিরেছেন। এতে দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে খুশির আমেজ বিরাজ করছে।
মো. ইসমাইল এসেছেন বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলা থেকে। তিনি বলেন, গত বৃহস্পতিবার গণসংবর্ধনায় এসেছিলাম। নেতাকে ভালোভাবে দেখতে পাইনি। এ জন্য বাসার সামনে এসেছি। নেতার প্রতি ভালোবাসা থেকেই এখানে এসেছি।
সকাল থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত বাসার সামনে অবস্থান করে দেখা যায়, চেয়ারপারসন সিকিউরিটি ফোর্সের (সিএসএফ) সদস্যদের পাশাপাশি পুলিশ, র্যাব, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা বাসাটির নিরাপত্তায় রয়েছেন। বাসার সামনেই রাখা হয়েছে তারেক রহমানকে বহনকারী লাল–সবুজ রঙের বাসটি। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা নেতা-কর্মীরা বাসার সামনে আসছেন। বাসার বিপরীত পাশের সড়কে অবস্থান করছেন তারা। কেউ কেউ মুঠোফোনে ছবি তুলছেন। গণমাধ্যমকর্মীরাও ভিড় করেছেন।
তারেক রহমানকে দেখতে সকালে বাসার সামনে আসেন ফেনী জেলা বিএনপির সদস্য মো. মাঈনুদ্দিন। তিনি বলেন, সংবর্ধনায় অংশ নিতে দুই দিন আগে ঢাকায় এসেছি। চেয়ারম্যান সাহেবের বাসার সামনে ভিড় না করার জন্য দলীয় নির্দেশনা আছে। তারপরও একনজর দেখার জন্য এসেছি।
তারেক রহমান শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) বাদ জুমা বেলা ২টার দিকে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবর জিয়ারত করেন। পরে তিনি সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
বিএনপির মিডিয়া সেলের ফেসবুক পেজে জানানো হয়েছে, রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়ার সুস্থতার জন্য এবং তারেক রহমানের সপরিবার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে বিএনপির উদ্যোগে ঢাকাসহ দেশের মসজিদে মসজিদে জুমার নামাজ শেষে দোয়া হয়।
দীর্ঘ ১৭ বছর পর গত বৃহস্পতিবার দুপুরে লন্ডন থেকে তারেক রহমান ঢাকায় আসেন। তার স্ত্রী জুবাইদা রহমান ও মেয়ে জাইমা রহমান সঙ্গে এসেছেন। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে তিনি সরাসরি জুলাই ৩৬ এক্সপ্রেসওয়েতে (৩০০ ফিট) গণসংবর্ধনাস্থলে চলে যান। পুরো পথে বিপুল নেতা-কর্মী তাকে স্বাগত জানান। গণসংবর্ধনায় বক্তব্য দেন তারেক রহমান। এরপর অসুস্থ মা খালেদা জিয়াকে দেখতে এভারকেয়ার হাসপাতালে যান। সন্ধ্যা ৭টা ৩০ মিনিটে এভারকেয়ার হাসপাতাল থেকে বের হয়ে গুলশান অ্যাভিনিউয়ের ১৯৬ নম্বর বাসায় আসেন। এখানেই সপরিবার থাকছেন তিনি।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের জন্য গুলশান অ্যাভিনিউর এই বাড়ি আগেই প্রস্তুত করা ছিল। ১৯৬ নম্বর বাড়িটি বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার দীর্ঘদিনের বাসভবন ‘ফিরোজা’র পাশে অবস্থিত।