মঙ্গলবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫
৮ পৌষ ১৪৩২

১০ মাসেও মাইশা হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন হয়নি

আপডেটেড
২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ১২:৪১
নরসিংদী প্রতিনিধি
প্রকাশিত
নরসিংদী প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ১২:৪০

১০ মাসেও নরসিংদীর বহুল আলোচিত চাঞ্চল্যকর শিশু মাইশা (১০) হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন করতে পারেনি পিবিআই পুলিশ। নরসিংদী সদর উপজেলার মাধবদী থানার কুড়েরপাড় জামিয়া কওমিয়া মহিলা মাদ্রাসার দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী ও একই থানার ভগীরথপুর গ্রামের নেছার উদ্দিনের মেয়ে মাইশা। ২০২২ সালের ১ ডিসেম্বর বিকেলে মাদ্রাসার চতুর্থ তলার বাথরুমে পানির পাইপ লাইনের সঙ্গে ওড়না ও গামছা পেঁচানো অবস্থায় মাইশাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

চাঞ্চল্যকর এ ঘটনায় শিশু মাইশার বাবা মো. নেছার উদ্দিন ৩ ডিসেম্বর মাধবদী থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। এজাহারে উল্লেখ করা হয়, নিহত শিশু মাইশা মাধবদী থানাধীন কুড়েরপাড় জামিয়া কওমিয়া মহিলা মাদ্রাসায় দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী এবং মাদ্রাসার আবাসিক হলে থেকে লেখাপড়া করত। ঘটনার দিন সকাল ৭টায় তার বাবা মাদ্রাসায় গিয়ে মেয়ে মাইশাকে খাবার দিয়ে তার সঙ্গে কথা বলে বাসায় চলে আসেন। বিকেল সাড়ে ৪টায় মাদ্রাসার শিক্ষক মাইশার বাবাকে মোবাইল ফোনে জানায়, শিশু মাইশা গুরুতর অসুস্থ, দ্রুত নরসিংদী সদর হাসপাতালে আসার জন্য। সংবাদ পেয়ে দ্রুত মাইশার মা রুমা বেগমসহ নরসিংদী সদর হাসপাতালে এসে শিশু মাইশাকে মৃত অবস্থায় দেখতে পান। পরে মাধবদী থানার পুলিশকে সংবাদ দিলে পুলিশ নরসিংদী সদর হাসপাতালে এসে মাইশার মরদেহ সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করে এবং ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে।

পিবিআইয়ের তদন্তকারী দারোগা মো. সালাহ উদ্দিন সুরতহাল প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন, শিশু মাইশার কপালের উভয় পাশে আঘাত এবং মুখমণ্ডল, নিচের ঠোঁটে রক্ত জমাট, কানের পাশে ও গলার উভয় পাশে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।

চাঞ্চল্যকর এ ঘটনার পর স্থানীয় লোকজন শিশু মাইশা হত্যার বিচার দাবিতে নরসিংদীতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করে প্রতিবাদ জানান। পরে নরসিংদী জেলা প্রশাসক ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পৃথক স্মারকলিপি দেন। দীর্ঘ ১০ মাসেও পিবিআই পুলিশ এ হত্যার মূল রহস্য উদ্ঘাটন করতে পারেনি। এতে মাইশার পরিবারে হতাশা নেমে এসেছে। মাইশার পরিবার হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবিতে নরসিংদী প্রেসক্লাবে এসে সাংবাদিকদের দ্বারস্থ হয়। তারা জানায়, মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা, শিক্ষক, শিক্ষিকারা মাইশাকে গলায় শ্বাসরুদ্ধ করে নৃসংশভাবে হত্যা করেছেন। মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা ও শিক্ষক-শিক্ষিকারা মামলা তুলে নেয়ার জন্য বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি ও হুমকি প্রদর্শন করছেন। তাদের ভয়ভীতি ও হুমকির কারণে অসহায় দরিদ্র বাবা-মা ন্যায় বিচারের আশায় মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন।

তদন্তকারী দারোগা মো. সালাহ উদ্দিন প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন যে, মাদ্রাসার ভাইস প্রিন্সিপাল মুফতি আহসান উল্লাহ ও চার তলার আবাসিক দায়িত্বে থাকা সহকারী শিক্ষিকা ফারজানা ওরফে শান্তা উভয়ের মধ্যে অনৈতিক অবৈধ সম্পর্কের বিষয়টি মাদ্রাসার ছাত্রী শিশু মাইশা দেখে ফেলায় উক্ত হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হতে পারে বলে ধারণা করেন।

এ ব্যাপারে তদন্তকারী কর্মকর্তা মাদ্রাসার শিক্ষক মুফতি মো. আহসান উল্লাহ, কারিয়া হাফসা ও ফারজানা আক্তার শান্তাকে গ্রেপ্তার করেন। বিজ্ঞ জেলা ও দায়রা জজ আদালত হতে কারিয়া হাফসা ও ফারজানা আক্তার শান্তা জামিনে মুক্তি পেয়েছেন।

এলাকাবাসীর দাবি- কুড়েরপাড়ে জামিয়া কওমিয়া মহিলা মাদ্রাসায় বাইরের কোনো মানুষ মাদ্রাসায় প্রবেশ করতে পারে না। মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা ও অন্য সহকারী শিক্ষক-শিক্ষিকারা এ হত্যার ঘটনাকে আত্মহত্যা হিসেবে চালিয়ে দেয়ার পাঁয়তারা করছেন এবং পিবিআইয়ের অন্য কর্মকর্তাদের প্রভাবিত করার চেষ্টা করছেন।

বিষয়:

ঢাবিতে দুই দিনব্যাপী ‘ডিকলোনাইজেশন অ্যান্ড মওলানা ভাসানী’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সম্মেলন শুরু

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ডিকলোনাইজেশন অ্যান্ড মওলানা ভাসানী’ শীর্ষক দুই দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক সম্মেলন শুরু হয়েছে। সম্মেলনটির আয়োজন করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড রিসার্চ ইন আর্টস অ্যান্ড সোশ্যাল সায়েন্সেস (কারাস)।

মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবন মিলনায়তনে কারাসের পরিচালক অধ্যাপক ড. আশফাক হোসেনের স্বাগত বক্তব্যের মাধ্যমে উদ্বোধনী অধিবেশন শুরু হয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার (সি আর আবরার)। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কারাসের চেয়ারম্যান ও ইমিরিটাস অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইউনিভার্সিটি অব ব্রুনাই দারুসসালামের সহযোগী অধ্যাপক ড. ইফতেখার ইকবাল।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক সি আর আবরার বলেন, মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী কেবল একজন রাজনৈতিক নেতা নন; তিনি ছিলেন জনতার বিবেক, নৈতিকতার প্রতীক এবং সাম্রাজ্যবাদবিরোধী দূরদৃষ্টি রাষ্ট্রচিন্তক।

তিনি বলেন, ভাসানীর রাজনীতি কখনোই জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল না; দরিদ্র কৃষক, শ্রমজীবী ও নিপীড়িত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েই তিনি রাজনীতি করেছেন। ক্ষমতার রাজনীতির চেয়ে জনতার রাজনীতিকেই তিনি বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন।

শিক্ষা উপদেষ্টা আরও বলেন, ভাসানী রাজনৈতিক স্বাধীনতাকে অর্থনৈতিক নিরাপত্তা, সাংস্কৃতিক মর্যাদা ও মানবিক সম্মানের সঙ্গে অবিচ্ছেদ্যভাবে দেখতেন। এ কারণেই তিনি খুব আগেই পাকিস্তানি শাসনব্যবস্থার বৈষম্য শনাক্ত করতে পেরেছিলেন এবং ১৯৫৭ সালে তার ঐতিহাসিক ‘আসসালামু আলাইকুম’ উচ্চারণ করেন।

তিনি বলেন, ভাসানীর কাছে শিক্ষার মানে ছিল চেতনার জাগরণ ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর সাহস সৃষ্টি; বাস্তব জীবন থেকে বিচ্ছিন্ন শিক্ষা মুক্তির পথ হতে পারে না।

সভাপতির বক্তব্যে ইমিরিটাস অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, মওলানা ভাসানী ছিলেন এই দেশের মানুষের মুক্তির জন্য আজীবন সংগ্রামরত একজন সমাজবিপ্লবী ও দূরদর্শী রাষ্ট্রচিন্তক। তিনি নিজেকে প্রথমে বাঙালি হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন এবং নদী, কৃষক, শ্রমিক ও প্রান্তিক মানুষের প্রশ্নকে রাজনীতির কেন্দ্রে এনেছেন। ভাসানীর রাজনীতি ছিল ক্ষমতা বা নির্বাচনের জন্য নয়; বরং সাম্য, সামাজিক মালিকানা ও গণতান্ত্রিক সমাজতান্ত্রিক রূপান্তরের জন্য। আজকের বৈশ্বিক সংকটের প্রেক্ষাপটে মওলানা ভাসানীর পথই মানবমুক্তি ও প্রকৃত স্বাধীনতার দিশা বলে তিনি উল্লেখ করেন।

স্বাগত বক্তব্যে কারাসের পরিচালক অধ্যাপক ড. আশফাক হোসেন বলেন, মওলানা ভাসানী ছিলেন ঔপনিবেশিক শাসন, পুঁজিবাদ ও সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো এক বিরল সমাজবিপ্লবী নেতা। তিনি কলোনিয়াল বাংলা, আসাম, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের চারটি রাজনৈতিক পরিসরে সংগ্রামের অভিজ্ঞতা অর্জন করে উপমহাদেশের কৃষক আন্দোলনে অনন্য ভূমিকা রেখেছেন। বাংলাদেশ ও আসামের কৃষক বিদ্রোহের ইতিহাস পুনর্লিখনে মওলানা ভাসানীর ভূমিকা নতুন করে মূল্যায়ন করা জরুরি বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

উদ্বোধনী অধিবেশন শেষে মওলানা ভাসানীর জীবন ও সংগ্রামভিত্তিক একটি আলোকচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়।

আগামীকাল ২৪ ডিসেম্বর সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে মওলানা ভাসানীর বিশ্বদর্শন, রাজনৈতিক চিন্তা ও বি-উপনিবেশায়ন প্রক্রিয়ায় তাঁর ভূমিকা নিয়ে একটি প্যানেল আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে। এতে আলোচক হিসেবে অংশ নেবেন অধ্যাপক আহমেদ কামাল, অধ্যাপক ড. মাহবুব উল্লাহসহ বিশিষ্ট গবেষক ও শিক্ষাবিদগণ।

এছাড়া কারাস গবেষক দলের উদ্যোগে ‘ফিরে দেখা ফারাক্কা লংমার্চ’ শীর্ষক একটি বিশেষ পর্যালোচনা অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে ঐতিহাসিক ফারাক্কা লংমার্চের রাজনৈতিক ও সামাজিক তাৎপর্য বিশ্লেষণ করা হবে।


নির্বাচনী প্রস্তুতি, সক্ষমতা উন্নয়ন ও সহযোগিতা সম্প্রসারণে আনসার-ভিডিপি মহাপরিচালক ও ইইউ রাষ্ট্রদূতের বৈঠক

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট–২০২৬কে কেন্দ্র করে নিরাপত্তা প্রস্তুতি, সক্ষমতা উন্নয়ন এবং পারস্পরিক সহযোগিতা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের উচ্চপর্যায়ের মতবিনিময় অনুষ্ঠিত হয়েছে।

সোমবার (২২ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদর দপ্তরে বাহিনীর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবদুল মোতালেব সাজ্জাদ মাহমুদের সঙ্গে বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার (Michael Miller) এক সৌজন্য সাক্ষাতে মিলিত হন। সাক্ষাতে উপস্থিত ছিলেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের ডেপুটি হেড অব ডেলিগেশন ও রাজনৈতিক, প্রেস ও তথ্য বিভাগের প্রধান মিসেস বাইবা জারিন। সৌহার্দ্যপূর্ণ এ বৈঠকে উভয় পক্ষ পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে মতবিনিময় করেন।

সাক্ষাৎকালে মহাপরিচালক মহোদয় আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট–২০২৬ উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সার্বিক প্রস্তুতি সম্পর্কে বিস্তারিত অবহিত করেন। বাহিনীর প্রশিক্ষিত জনবল, বহুমাত্রিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা, সমন্বিত পরিকল্পনা ও মাঠপর্যায়ের প্রস্তুতির বিষয়সমূহ উপস্থাপনের পর ইইউ রাষ্ট্রদূত সন্তোষ প্রকাশ করেন।

আলোচনায় বাহিনীর সদস্যদের সক্ষমতা উন্নয়ন, পেশাদারিত্ব বৃদ্ধি এবং কল্যাণ নিশ্চিতকরণে গৃহীত বহুমাত্রিক উদ্যোগ তুলে ধরা হয়। এ প্রেক্ষাপটে দক্ষতা বৃদ্ধিমূলক কর্মসূচি, সময়োপযোগী ও আধুনিক প্রশিক্ষণ কাঠামো, টেকসই উন্নয়ন কার্যক্রম এবং বাহিনীর প্রান্তিক সদস্যদের আর্থসামাজিক উন্নয়নে গৃহীত “সঞ্জীবন প্রকল্প” বিশেষ গুরুত্ব পায়।

বাহিনীপ্রধান মাননীয় রাষ্ট্রদূতকে অবহিত করেন যে, আনসার ও ভিডিপি সদস্যদের দক্ষ, আত্মনির্ভরশীল এবং আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে তুলতে বাহিনী ব্যাপক প্রশিক্ষণ ও উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। এসব উদ্যোগের ফলে প্রশিক্ষিত সদস্যদের জন্য দেশে ও বিদেশে কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। পাশাপাশি বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যকার বিদ্যমান দ্বিপাক্ষিক সম্ভাবনাকে আরও ফলপ্রসূভাবে কাজে লাগানো এবং পারস্পরিক সহযোগিতা সম্প্রসারণের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনা হয়।

এসময় ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত বাহিনীর সামগ্রিক কার্যক্রম, পেশাদারিত্ব এবং উন্নয়নমুখী উদ্যোগের ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি ভবিষ্যতে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সঙ্গে সহযোগিতার ক্ষেত্র আরও সুদৃঢ় ও বিস্তৃত হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

সৌজন্য সাক্ষাত অনুষ্ঠানে বাহিনীর অতিরিক্ত মহাপরিচালকসহ, অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।


নোয়াখালীর হাতিয়ায় চরের দখল নিয়ে দুই পক্ষের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ: নিহত ৫

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলায় চরের দখলকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে ভয়াবহ সংঘর্ষ ও গোলাগুলিতে অন্তত পাঁচজন নিহত হয়েছেন। আজ মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) দিনভর উপজেলার সুখচর ইউনিয়নের দুর্গম জাগলার চরে এই রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। মেঘনার বুকে জেগে ওঠা নতুন এই চরের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে স্থানীয় মনির মেম্বার গ্রুপ এবং শান্ত গ্রুপের মধ্যে গত কয়েকদিন ধরে চলে আসা উত্তেজনার জেরে আজ এই সংঘাতের সূত্রপাত হয়।

হাতিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল আলম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, চরের অধিকার প্রতিষ্ঠা নিয়ে সকাল থেকেই দুই পক্ষের মধ্যে থেমে থেমে গোলাগুলি ও হামলা-পাল্টাহামলার ঘটনা ঘটে। এতে ঘটনাস্থলেই বেশ কয়েকজন হতাহত হন। পুলিশ খবর পেয়ে দুর্গম এই চরে গিয়ে এখন পর্যন্ত পাঁচজনের মরদেহ উদ্ধার করেছে। সংঘর্ষে উভয় পক্ষের আরও অনেক সদস্য আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।

বর্তমানে পুলিশের উপস্থিতিতে সংঘর্ষ থামলেও পুরো এলাকাটিতে চরম আতঙ্ক ও থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। পুলিশ মরদেহগুলো উদ্ধার করে পরবর্তী আইনি প্রক্রিয়ার কাজ শুরু করেছে। পরিস্থিতির অবনতি এড়াতে বর্তমানে ঘটনাস্থলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা অবস্থান করছেন এবং জড়িতদের চিহ্নিত করতে তদন্ত চালানো হচ্ছে। মূলত নদীবেষ্টিত এই চরাঞ্চলে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করেই এই মর্মান্তিক প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।


নওগাঁ সীমান্তে বিজিবির টহল ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নওগাঁ প্রতিনিধি

নওগাঁ জেলার সীমান্তবর্তী এলাকায় অবৈধ অনুপ্রবেশ ও দুষ্কৃতিকারীদের পার্শ্ববর্তী দেশে পালিয়ে যাওয়া রোধে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সীমান্তজুড়ে অস্থায়ী চেকপোস্ট স্থাপনসহ ব্যাপক তল্লাশি কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে।

মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) দুপুরে ১৪ বিজিবি পত্নীতলা ও ১৬ বিজিবি নওগাঁ থেকে পাঠানো পৃথক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।

জেলার সীমান্তবর্তী উপজেলা ধামইরহাট, সাপাহার ও পোরশা এলাকায় এই বিশেষ নিরাপত্তা কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দায়িত্বপূর্ণ সীমান্ত এলাকায় অবৈধ অনুপ্রবেশ প্রতিরোধ এবং দুষ্কৃতিকারীদের পালিয়ে যাওয়া ঠেকাতে ১৪ ও ১৬ বিজিবির আওতাধীন এলাকায় বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। একই সঙ্গে সীমান্ত সুরক্ষা নিশ্চিত করার পাশাপাশি মাদক চোরাচালান, অবৈধ পণ্য পাচার ও অন্যান্য আন্তঃসীমান্ত অপরাধ দমনে বিজিবি নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। প্রতিকূল আবহাওয়া ও পরিবেশ উপেক্ষা করে দিন-রাত দায়িত্ব পালন করছেন বিজিবির সদস্যরা।

গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে নওগাঁ ব্যাটালিয়ন (১৪ ও ১৬ বিজিবি)-এর অধীনস্থ বিভিন্ন বিওপির দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় গুরুত্বপূর্ণ স্থান ও চেকপয়েন্টে নিয়মিত টহলের পাশাপাশি অতিরিক্ত টহল কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। এর ফলে সীমান্তের গুরুত্বপূর্ণ সকল পয়েন্টে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে।

এছাড়া সীমান্তের যাতায়াত পথ গুলোতে একাধিক অস্থায়ী চেকপোস্ট স্থাপন করে তল্লাশি কার্যক্রম অব্যাহত রাখা হয়েছে। ব্যাটালিয়ন সদর থেকে পরিচালিত মোবাইল টহলের মাধ্যমে সীমান্তে প্রবেশের সম্ভাব্য পথগুলোতেও কঠোর নজরদারি ও তল্লাশি কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।

নওগাঁ ব্যাটালিয়ন (১৬ বিজিবি)-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম মাসুম এবং পত্নীতলা ব্যাটালিয়ন (১৪ বিজিবি)-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোঃ আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, দায়িত্বপূর্ণ সীমান্ত এলাকায় টহল জোরদার, নজরদারি বৃদ্ধি, বিশেষ চেকপোস্ট স্থাপনসহ আন্তঃসীমান্ত অপরাধ দমনে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। অবৈধ অনুপ্রবেশ রোধ ও দুষ্কৃতিকারীদের পালিয়ে যাওয়া ঠেকাতে বিজিবির এই তৎপরতা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে


টঙ্গীতে পোশাক কারখানায় অর্ধশতাধিক শ্রমিক অসুস্থ

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
টঙ্গী (গাজীপুর) প্রতিনিধি

গাজীপুরের টঙ্গীতে একটি পোষাক কারখানার অর্ধশতাধিক নারী শ্রমিক অসুস্থ হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এসময় অসুস্থ শ্রমিকদের পার্শ্ববর্তী একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে কারখানা কতৃপক্ষ।

মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) বেলা এগারোটার দিকে তিলারগাতি এলাকার মাসকো গ্রুপের প্রতিষ্ঠান কনসেপ্ট নিটিং লিমিটেড নামক কারখানায় এই ঘটনা ঘটে।

শ্রমিকরা জানায়, প্রতিদিনের মত সকালে কর্মস্থলে যোগ দিয়ে কাজ করছিলেন তারা। বেলা এগারোটার দিকে টিফিন খাওয়ার পর হঠাৎ করে কয়েকজন শ্রমিক অসুস্থ হয়ে পরেন। বিষয়টি জানাজানি হলে কারখানার বিভিন্ন ফ্লোরে শ্রমিকদের ভিতরে আতঙ্ক ছড়িয়ে পরে। এতে আতঙ্কিত হয়ে অর্ধ শতাধিক নারী শ্রমিক অসুস্থ হয়ে পরেন। পরে তাদের উদ্ধার করে ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কারখানা কর্মকর্তা বলেন, ঘটনার পরপরই অসুস্থ শ্রমিকদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। মূলত আতঙ্কিত হয়ে বেশিরভাগ নারী শ্রমিক অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবী, হাসপাতালে আসা বেশীর ভাগ শ্রমিক প্যানিক এ্যাটাক জনিত কারণে অসুস্থ হয়ে পরেছেন। তাদের মধ্যে কিছু শ্রমিক শ্বাসকষ্ট ও শারীরিক দুর্বলতা ভুগছেন। অসুস্থ শ্রমিকদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

এবিষয়ে শিল্প পুলিশের টঙ্গী জোনের পরিদর্শক আজাদ রহমান বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ প্রেরণ করা হয়েছে। কারখানা কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করছি।


সারিয়াকান্দিতে কৃষিজমির টপ সয়েল বিক্রির হিড়িক

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
সারিয়াকান্দি (বগুড়া) প্রতিনিধি

বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ফসলি জমির টপ সয়েল বিক্রির হিড়িক পড়েছে। পাশ্ববর্তী জমির কৃষক বাঁধা দিলেও জোরপূর্বকভাবে কাটা হচ্ছে মাটি। উপজেলা প্রশাসন দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।

সরেজমিনে দেখাগেছে, উপজেলার ফুলবাড়ি ইউনিয়নের মাঝবাড়ী গ্রামে ৩ ফসলি জমির টপ সয়েল কেটে বিক্রি করা হচ্ছে। যা ট্রাকের সাহায্যে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বিভিন্ন ইটভাটায়। গত কয়েকদিন ধরেই এ কর্মযজ্ঞ বিরাজমান রয়েছে। মাঝবাড়ী গ্রামের কৃষক মিজানুর রহমান পিন্টু, জিয়াউর রহমান মোল্লা এবং আবু বক্কর সিদ্দিক মাটিগুলো বিক্রি করেছেন। একই গ্রামের আব্দুল মোল্লা এবং আবু বক্কর সিদ্দিক বক্কা মাটিগুলো কেটে নিয়ে যাচ্ছে। বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন অনুযায়ী কৃষি জমির টপ সয়েল কাটা দণ্ডনীয় অপরাধ। এতে ২ বছরের কারাদণ্ডের বিধান থাকলেও তা মানছেন না ধৃত ভূমি দশ‍্যুরা।

স্থানীয়রা জানান, গত কয়েকদিনে প্রায় ৫০ শতাংশ জমির টপ সয়েল কাটা হয়েছে। এতে জমিগুলো ৩ থেকে ৪ ফিট করে নিচু হয়েছে। ট্রাক পরিবহনের ফলে বেশকিছু কৃষিজমির উপর দিয়ে জোরপূর্বক রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে। ফলে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে কৃষকের জমি। এছাড়া মাটি পরিবহনের ফলে উপজেলার ফুলবাড়ি গোহাটি থেকে রামচন্দ্রপুর গামী গ্রামীণ সড়কও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সড়কটির বিভিন্ন এলাকায় ছোটবড় বিশালাকার গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। যা খুবই অল্প সময়ের মধ্যেই সংস্কার করা হয়েছিল।

কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তারা কৃষিজমির মাটি কাটাতে বাধা প্রদান করেছিলেন। কিন্তু ইটভাটার লোকজন জোরপূর্বক মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে। এতে বর্ষাকালে তাদের জমি ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন। তাছাড়া কৃষিজমির উপরের টপ সয়েল বিক্রির ফলে জমির উর্বরতা শক্তিও কমে যাচ্ছে। তাছাড়া এতে একদিকে যেমন কৃষিজমি কমছে এবং অপরদিকে মাটির উর্বরতা শক্তিও কমে যাচ্ছে এবং খাদ্য ঘাটতি হওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে।

কৃষক শহিদুল ইসলাম মজনু বলেন, তার জমির চারপাশে গত কয়েকদিন ধরেই মাটি বিক্রির হিড়িক উঠেছে। মাটিগুলো কেটে ট্রাক দিয়ে বিভিন্ন ইটভাটায় বিক্রি করা হচ্ছে। এতে তার জমির পাশের জমি ৪ ফুট নিচু হয়েছে। মনে হচ্ছে বর্ষাকালে তার জমি ভেঙে যাবে। কৃষকরা দলবদ্ধ হয়ে এর প্রতিবাদ করেছিলেন। কিন্তু তারা জোরপূর্বক মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে। এতে তাদের গ্রামের পাকা রাস্তাও একেবারেই নষ্ট হয়ে গেছে। প্রশাসনের কাছে তারা এর প্রতিকার চাই।

সারিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুমাইয়া ফেরদৌস বলেন, এটি আইনত দন্ডনীয় অপরাধ। কৃষিজমির টপ সয়েল কাটার কোনও সুযোগ নেই। খুব শীঘ্র সেখানে অভিযান পরিচালনা করা হবে। কৃষিজমির টপ সয়েল কাটা বন্ধ করতে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।


ফরিদপুরে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’: আওয়ামী লীগের ৫৮ নেতাকর্মী গ্রেফতার

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

ফরিদপুর জেলাজুড়ে পরিচালিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিশেষ চিরুনি অভিযান ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেজ-২’-এ গত ৪৮ ঘণ্টায় আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের ৫৮ জন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সোমবার (২২ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) শামছুল আজম এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, নিয়মিত মামলা, ওয়ারেন্ট ও মাদকসহ বিভিন্ন সুনির্দিষ্ট অভিযোগে তাঁদের গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

এই অভিযানের অংশ হিসেবে গত রোববার দিবাগত রাতে বোয়ালমারী উপজেলার চতুল গ্রাম থেকে জেলা যুবলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মৃধা ওরফে লিটন মৃধাকে তাঁর নিজ বাসভবন থেকে আটক করা হয়। মনিরুজ্জামান মৃধা ২০১৯ ও ২০২৪ সালের উপজেলা নির্বাচনে এবং ২০২১ সালের পৌরসভা নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। বোয়ালমারী থানার ওসি আনোয়ার হোসেন জানিয়েছেন, গত ৪ সেপ্টেম্বর ওই থানায় সন্ত্রাস দমন আইনে দায়ের হওয়া একটি মামলায় তাঁকে গ্রেফতার দেখিয়ে সোমবার দুপুরে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।

তবে লিটন মৃধার স্ত্রী নাসরিন নবী গিনি এই গ্রেফতারের বিষয়ে বিস্ময় প্রকাশ করে জানিয়েছেন, তাঁর স্বামীর নামে যে আগে কোনো মামলা ছিল, তা তিনি জানতেন না। রোববার রাতে হঠাৎ পুলিশ এসে তাঁকে বাড়ি থেকে নিয়ে যায়। ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শামছুল আজম জানিয়েছেন, জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে পুরো জেলায় এই বিশেষ অভিযান অব্যাহত রয়েছে। মূলত সন্ত্রাস ও বিশৃঙ্খলা দমনে সরকার ঘোষিত দেশব্যাপী অভিযানের অংশ হিসেবেই ফরিদপুরে এই ধরপাকড় চালানো হচ্ছে।


গাজীপুরে তুলা ফ্যাক্টরিতে ভয়াবহ আগুন

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

গাজীপুর মহানগরের কোনাবাড়ী এলাকায় একটি তুলা ফ্যাক্টরিতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। সোমবার (২২ ডিসেম্বর) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে আমবাগ পূর্বপাড়া নাদের আলী উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন শরীফ উদ্দিনের মালিকানাধীন ফ্যাক্টরিটিতে এই আগুনের সূত্রপাত হয়। স্থানীয়দের ধারণা, বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে আগুনের সৃষ্টি হয়ে তা মুহূর্তের মধ্যে পুরো ফ্যাক্টরিতে ছড়িয়ে পড়ে। ফ্যাক্টরির ভেতরে দাহ্য পদার্থ হিসেবে তুলা থাকায় আগুন দ্রুত ভয়াবহ রূপ নেয় এবং কোনো মালামাল বের করা সম্ভব হয়নি।

খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের চারটি ইউনিট দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণের কাজ শুরু করে। কোনাবাড়ী মডার্ন ফায়ার সার্ভিসের দুটি এবং কাশিমপুর সারাবো মডার্ন ফায়ার সার্ভিসের আরও দুটি ইউনিট প্রায় এক ঘণ্টা ১৫ মিনিটের নিরলস চেষ্টায় সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। তবে ততক্ষণে ফ্যাক্টরির ভেতরে থাকা বিপুল পরিমাণ তুলা ও অন্যান্য সরঞ্জাম পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।

গাজীপুর ফায়ার সার্ভিসের উপপরিদর্শক মোহাম্মদ মামুন জানান, সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছান এবং সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আগুন নেভানো সম্ভব হয়। অগ্নিকাণ্ডের সুনির্দিষ্ট কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির প্রকৃত পরিমাণ এখনও নিরূপণ করা সম্ভব হয়নি। উল্লেখ্য, আমবাগ পূর্বপাড়া এলাকায় এর আগেও কয়েকবার বড় ধরনের আগুনের ঘটনা ঘটায় স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। বারবার অগ্নিকাণ্ডের পুনরাবৃত্তি রোধে এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এলাকাবাসী কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।


খুলনায় এনসিপি নেতা গুলিবিদ্ধ, যুবশক্তির নেত্রী আটক

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

খুলনায় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) শ্রমিক নেতা মোতালেব শিকদার গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনায় এক চাঞ্চল্যকর মোড় নিয়েছে। প্রথমে তিনি ঢাকার ওসমান হাদির মতো রাস্তায় সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়েছেন বলে দাবি করলেও পুলিশের তদন্তে বেরিয়ে এসেছে ভিন্ন চিত্র। প্রকৃতপক্ষে রাস্তায় নয়, বরং সোনাডাঙ্গা এলাকার একটি ফ্ল্যাটে অসামাজিক কার্যকলাপ এবং মাদক সেবনের সময় নিজেদের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে তিনি গুলিবিদ্ধ হন। এই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে তনিমা ওরফে তন্বী নামে এনসিপির সহযোগী সংগঠন যুবশক্তির এক নেত্রীকে আটক করেছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মোতালেব ও তন্বী স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে আল আকসা মসজিদ সরণির ‘মুক্তা হাউস’ নামের একটি ভবনের নিচতলার ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়েছিলেন। সোমবার সকালে গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর মোতালেব দাবি করেছিলেন, তাঁকে রাস্তায় সন্ত্রাসীরা গুলি করেছে। কিন্তু পুলিশ সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে দেখতে পায়, মোতালেব রক্তাক্ত অবস্থায় ওই ফ্ল্যাট থেকেই বের হয়ে আসছেন। পরবর্তীতে পুলিশ সেখানে তল্লাশি চালিয়ে বিদেশি মদ, ইয়াবা সেবনের সরঞ্জাম এবং একটি গুলির খোসা উদ্ধার করে। বাড়ির মালিকের ভাষ্য অনুযায়ী, তন্বী নিজেকে এনজিওকর্মী পরিচয় দিয়ে ফ্ল্যাটটি ভাড়া নিলেও সেখানে নিয়মিত অপরিচিত পুরুষদের যাতায়াত ও অসামাজিক কার্যকলাপ চলত, যার জন্য তাঁকে বাড়ি ছাড়ার নোটিশও দেওয়া হয়েছিল।

মোতালেব শিকদারের অতীত ইতিহাস পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, পেশায় ট্রাকচালক মোতালেব আগে যুবলীগের একজন সক্রিয় কর্মী ছিলেন। তিনি খুলনার প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক সিটি কাউন্সিলর জাকির হোসেন বিপ্লব এবং শেখ হাসিনার চাচাতো ভাই শেখ সোহেলের ঘনিষ্ঠ অনুসারী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। ৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর তিনি ভোল পাল্টে এনসিপিতে যোগ দেন এবং জাতীয় শ্রমিক শক্তির খুলনা বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব বাগিয়ে নেন। তবে এলাকায় তাঁর বিরুদ্ধে শীতবস্ত্র বিতরণের নামে কার্ড ছাপিয়ে ব্যাপক চাঁদাবাজির অভিযোগও রয়েছে।

খুলনা মহানগর পুলিশের উপকমিশনার মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম জানিয়েছেন, এটি মূলত তাঁদের নিজেদের মধ্যকার অভ্যন্তরীণ কোন্দল এবং মাদক ও অনৈতিক কর্মকাণ্ডের ফল। গুলিটি মোতালেবের কানের চামড়া ভেদ করে বেরিয়ে যাওয়ায় তিনি বর্তমানে শঙ্কামুক্ত এবং খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এদিকে এনসিপির স্থানীয় নেতৃবৃন্দ এই ঘটনার দায় নিতে অস্বীকার করেছেন। সংগঠনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এটি মোতালেবের একান্ত ব্যক্তিগত বিষয় এবং এর সঙ্গে দলের কোনো সাংগঠনিক সম্পর্ক নেই। পুলিশ বর্তমানে পলাতক তন্বীকে জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে এই ঘটনায় আর কারা জড়িত, তা নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করছে।


পুরান ঢাকার বাবুবাজারের হাজী টাওয়ারে আগুন, নিয়ন্ত্রণে ৯টি ইউনিট

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর পুরান ঢাকার বাবুবাজার এলাকায় একটি বহুতল ভবনে ভোররাতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) ভোরে আরমানিটোলার হাজী টাওয়ার নামের ১৪ তলা ভবনের ছয়তলায় এই আগুনের সূত্রপাত হয়। ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা গেছে, ভোর ৬টা ৪০ মিনিটে আগুন লাগার খবর পাওয়ার মাত্র ৫ মিনিটের মধ্যেই ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধারকাজ শুরু করেন দমকলকর্মীরা।

ভবনটি অত্যন্ত উঁচু এবং ঘিঞ্জি এলাকায় হওয়ায় দ্রুত ব্যবস্থা নিতে সদরঘাট ফায়ার স্টেশনের ২টি, সিদ্দিকবাজারের ৫টি এবং সূত্রাপুর ফায়ার স্টেশনের ২টিসহ মোট ৯টি ইউনিট একযোগে কাজ শুরু করে। দমকলকর্মীদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সকাল ৭টা ২০ মিনিটের দিকে আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসে। তবে আগুনের ধোঁয়ায় ভবনের ওপরের তলাগুলোতে থাকা বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে এবং অনেকেই দ্রুত নিচে নেমে আসেন।

তাৎক্ষণিকভাবে এই অগ্নিকাণ্ডের সুনির্দিষ্ট কারণ কিংবা ক্ষয়ক্ষতির সঠিক পরিমাণ সম্পর্কে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো হতাহতের খবরও নিশ্চিত করেনি ফায়ার সার্ভিস। পরিস্থিতি বর্তমানে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং আগুনের উৎস ও ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে ফায়ার সার্ভিসের সংশ্লিষ্ট বিভাগ কাজ করছে। ভবনটি বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহৃত হতো কি না এবং সেখানে পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ছিল কি না, তা খতিয়ে দেখছেন কর্মকর্তারা।


দায় সরকারের, হামলাকারীদের শনাক্তের চেষ্টা চলছে : পরিকল্পনা উপদেষ্টা

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা প্রতিহত করার ব্যর্থতার পুরো দায়দায়িত্ব সরকারের বলে মন্তব্য করেছেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। তিনি বলেছেন, ‘যা ঘটে গেল, এটার অনেক অজুহাত হয়তো দেওয়া যাবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এর পুরো দায়দায়িত্ব সরকারেরই।’

সোমবার (২২ ডিসেম্বর) রাজধানীর কারওয়ান বাজারে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগে পুড়ে যাওয়া প্রথম আলোর কার্যালয় পরিদর্শন করে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ এসব কথা বলেন।

পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, ‘যা হয়ে গেছে, তা তো আর শোধরানো যাবে না। কিন্তু আমরা চাচ্ছি যে যারা এগুলো ঘটিয়েছে, তাদের শনাক্ত করা এবং তাদের বিচারের অধীনে আনা, এই চেষ্টা চলছে। এবং এর ফলাফলটা আপনারা দেখবেন।’

বাংলাদেশের ইতিহাসে এমন কালো রাত সংবাদপত্রে আসেনি উল্লেখ করে এই উপদেষ্টা বলেন, দেশের শীর্ষস্থানীয় দুটি সংবাদপত্র প্রথম আলো এবং ডেইলি স্টারে অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর করা হয়েছে এবং এতে কিছু সংবাদকর্মীর মৃত্যুর আশঙ্কাও ছিল। এটা দেশের সংবাদপত্র মাধ্যমের জন্য একটা কালো রাত ছিল।’

উচ্ছৃঙ্খলতা এবং নৈরাজ্য সৃষ্টি করা গণতন্ত্রের ভাষা নয়, উল্লেখ করে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘দেশ একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের দিকে যেতে চায়। সেখানে সবাইকে শৃঙ্খলায় ফিরে আসতে হবে। যার যে মতবাদই থাকুক না কেন, সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য চর্চা এবং সংবাদপত্রের মুক্ত বাকস্বাধীনতা রক্ষা করাই গণতন্ত্রের আদর্শ। এই আদর্শ থেকে বিচ্যুত হলে যেই গণতন্ত্রের উত্তরণ চাচ্ছে দেশের মানুষ, সেটি সম্ভব হবে না।’


সাংবাদিকদের সুরক্ষা ও হামলাকারীদের বিচার দাবি ৬ সংগঠনের

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

দ্য ডেইলি স্টার ও প্রথম আলো কার্যালয়ে হামলা এবং ছায়ানটে ভাঙচুরের ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে দেশি ও আন্তর্জাতিক ছয়টি মানবাধিকার ও আইনি সহায়তা সংগঠন। সংগঠনগুলো বলেছে, জাতীয় নির্বাচনের আগে গণমাধ্যম ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের ওপর এসব হামলা আইনের শাসন এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতার জন্য অশনিসংকেত।

সোমবার (২২ ডিসেম্বর) এক যৌথ বিবৃতিতে সংগঠনগুলো এসব কথা বলে। তারা গণমাধ্যম ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং এসব হামলায় জড়িতদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনার দাবি জানায়।

বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারী সংগঠনগুলো হলো—হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ), এক্সেস নাও, বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট), ইন্টারন্যাশনাল ট্রুথ অ্যান্ড জাস্টিস প্রজেক্ট (আইটিজেপি), জার্নালিস্ট ফর ডেমোক্রেসি ইন শ্রীলঙ্কা (জেডিএস) ও টেক গ্লোবাল ইনস্টিটিউট।

বিবৃতিতে বলা হয়, ১৮ ডিসেম্বর দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম পুরোনো ও স্বনামধন্য দুটি গণমাধ্যম—প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টারের কার্যালয়ে হামলা এবং ছায়ানটে ভাঙচুর চালানো হয়েছে। এগুলো কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং স্বাধীন গণমাধ্যম, সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের ওপর পরিকল্পিত আঘাত। একই রাতে ময়মনসিংহে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে দীপু চন্দ্র দাসকে পিটিয়ে ও পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায়ও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সংগঠনগুলো।

বিবৃতিতে জুলাই অভ্যুত্থানের অন্যতম মুখ শরীফ ওসমান হাদীকে হত্যার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে সংগঠনগুলো বলছে, নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক সংবেদনশীল সময়ে এমন আক্রমণ গণতান্ত্রিক অংশগ্রহণের পথ সংকুচিত করবে।

হামলার সময় প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারের সাংবাদিক ও কর্মীদের প্রাণ সংকটে থাকার কথা উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, আগুনের মধ্যে সংবাদকর্মীরা আটকা পড়েছিলেন। তাদের জীবন চরম ঝুঁকিতে ছিল। রাষ্ট্রনাগরিকদের জীবন রক্ষার মৌলিক দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে তা গুরুতর উদ্বেগের বিষয়।

সাময়িকভাবে পত্রিকা দুটির প্রকাশনা বন্ধ থাকাকে নজিরবিহীন ঘটনা হিসেবে উল্লেখ করা হয় বিবৃতিতে।

বিবৃতিতে অন্তর্বর্তী সরকারের ভূমিকা নিয়েও কঠোর সমালোচনা করা হয়। এতে বলা হয়, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে তৎকালীন সরকার যেমন জাতীয় নিরাপত্তার দোহাই দিয়ে অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ ও দমন-পীড়ন চালিয়েছিল, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ঠিক বিপরীতভাবে সহিংসতা ও হুমকি মোকাবিলায় সিদ্ধান্তহীন বা অক্ষম বলে মনে হচ্ছে।

মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, সরকারের এই নিষ্ক্রিয়তা দায়মুক্তির সংস্কৃতিকে উসকে দিচ্ছে। রাষ্ট্র বা কোনো গোষ্ঠী—কারও মাধ্যমেই মানবাধিকার লঙ্ঘিত হলে রাষ্ট্রকে তা প্রতিকার করতে হবে। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে সরকার কার্যকর ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হচ্ছে।

হামলাগুলোর পেছনে অনলাইনভিত্তিক অপপ্রচার ও বিদ্বেষমূলক বক্তব্যের (হেট স্পিচ) ভূমিকা রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয় বিবৃতিতে। বলা হয়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বড় সংখ্যক অনুসারী (ফলোয়ার) থাকা কিছু ব্যক্তি সহিংসতায় উসকানি দিচ্ছেন। প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের মানবাধিকার নীতিমালা অনুযায়ী এসব নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছে। সরকার সাইবার আইন সংস্কারের কথা বললেও অনলাইনে সহিংসতা রোধে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না।

৬ দফা দাবি: বিবৃতিতে সংগঠনগুলো অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে ছয়টি সুনির্দিষ্ট দাবি জানিয়েছে। দাবিগুলো হলো: সারাদেশে সাংবাদিক, সংবাদমাধ্যম ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের ওপর হুমকি থাকলে অবিলম্বে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। প্রথম আলো, দ্য ডেইলি স্টার, ছায়ানট এবং অন্যান্য সাংবাদিক ও শিল্পীদের ওপর হামলার দ্রুত, স্বাধীন ও স্বচ্ছ তদন্ত করে দোষী ও পরিকল্পনাকারীদের বিচারের আওতায় আনা। প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে অনলাইনে বিদ্বেষমূলক বক্তব্য ও উসকানি রোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া এবং নির্বাচনের সময় ব্যবহারকারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের ওপর সহিংসতার বিরুদ্ধে সরকারকে প্রকাশ্যে ও দ্ব্যর্থহীনভাবে নিন্দা জানানো। ২০২৬ সালের নির্বাচনের আগে সাংবাদিকতা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের জন্য অনলাইন ও অফলাইনে নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করা। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও গণমাধ্যমের সুরক্ষা নিশ্চিতে জাতীয় আইন ও নীতিমালার সঙ্গে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের সামঞ্জস্য বিধান করা।

সংগঠনগুলো বিবৃতিতে বলেছে, তারা বাংলাদেশের সাংবাদিক, শিল্পী ও বিভিন্ন সম্প্রদায়ের পাশে আছে এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও নিরাপত্তার অধিকার রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।


অন্তর্বর্তী সরকার তার বৈধতা অনেক ক্ষেত্রেই হ্রাস করেছে : দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার তার বৈধতা অনেক ক্ষেত্রেই হ্রাস করে ফেলেছে বলে মন্তব্য করেছেন নাগরিক প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশের আহ্বায়ক ও সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।

প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারের কার্যালয়ে হামলা ও আগুন দেওয়া এবং সম্পাদক পরিষদের সভাপতি নিউ এজ সম্পাদক নূরুল কবীরকে হেনস্তা করার প্রতিবাদে সোমবার (২২ ডিসেম্বর) আয়োজিত এক প্রতিবাদ সভায় সংহতি জানাতে এসে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য এ মন্তব্য করেন।

গত বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) রাতে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও সংগঠিত সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয় দেশের শীর্ষ সংবাদমাধ্যম প্রথম আলো। প্রথম আলো কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। এতে প্রথম আলোর কার্যালয় ভস্মীভূত হয়ে যায়। একই রাতে ডেইলি স্টার কার্যালয়েও ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট করা হয়। ওই রাতে সংহতি জানাতে ডেইলি স্টার কার্যালয়ে গেলে সম্পাদক পরিষদের সভাপতি নূরুল কবীরকে হেনস্তা করা হয়। এ ঘটনাকে ‘গণমাধ্যমের জন্য কালো দিন’ আখ্যায়িত করে প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাচ্ছেন অনেকেই। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই হামলার ঘটনা স্বাধীন গণমাধ্যমের ওপর হামলার শামিল।

তারই ধারাবাহিকতায় প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে ‘মব ভায়োলেন্সে আক্রান্ত বাংলাদেশ’ শীর্ষক এই যৌথ প্রতিবাদ সভার আয়োজন করে সংবাদপত্রের সম্পাদকদের সংগঠন সম্পাদক পরিষদ ও মালিকদের সংগঠন নিউজ পেপার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন (নোয়াব)। এই প্রতিবাদ সভায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, পেশাজীবী সংগঠন, ব্যবসায়ী সংগঠন, সাংবাদিক সংগঠন ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, আইনজীবীসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ সংহতি জানাতে আসেন। প্রতিবাদ সভা শেষে প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁওয়ের পাশের রাস্তায় দাঁড়িয়ে মানববন্ধন করেন তারা।

সভায় বক্তব্যে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘এই সরকারের মনে রাখা উচিত তারা কোনো নির্বাচিত সরকার নয়, বৈধ সরকার হয়তো। একটি অনির্বাচিত সরকারের শাসন করার যোগ্যতা-ক্ষমতা থাকে ততক্ষণ, যতক্ষণ তার নৈতিক বৈধতা থাকে। এই ঘটনার ভেতর দিয়ে বর্তমান সরকারের বৈধতা অনেক ক্ষেত্রেই হ্রাস করে ফেলেছে। এটা যদি তারা পুনঃস্থাপন করতে না পারে তাহলে আগামী দিনে এই যে উত্তরণের প্রক্রিয়া, অভ্যুত্থানের আদর্শ তারা রক্ষা করতে পারবে কি না, সে ক্ষেত্রে সন্দেহ আছে।’

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘এ রকম একটি সভার প্রয়োজন পড়বে, এটা আমরা কেউ কল্পনাও করিনি। আমি গত দেড় মাসে বাংলাদেশের বিভিন্ন শহরে গিয়েছি। সেখানে তারা (জনগণ) একটি কথাই বড়ভাবে বলেছে, নিরাপত্তার অভাব, এই নিরাপত্তার অভাবকেও তারা বহুভাবে ব্যাখ্যা করেছেন। এটি নারীদের ক্ষেত্রে সত্য, ধর্মীয় সংখ্যালঘু, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী, দলিত, ভিন্ন মতাবলম্বীদের ক্ষেত্রে সত্য। একই রকমভাবে রাজনীতিবিদদের জন্যও সত্য, যারা নির্বাচন করতে চান। এটি শরিফ ওসমান হাদি শহীদ (ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র) হওয়ার আগের ঘটনা।’

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, সেখানে দ্বিতীয় কথায় যেটা এসেছে, সেটা হলো তারা (জনগণ) পরিষ্কারভাবে বর্তমান সরকারের ওপর আস্থার অভাবের কথা বলেছেন। বর্তমান সরকার, তার প্রশাসন, তার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দিয়ে নিরাপত্তা দিতে পারবে, এটাতে তাদের আস্থার অভাব। এগুলো যখন বলেছেন, তখনো কিন্তু এই ঘটনাগুলো ঘটেনি। সুতরাং এই ধরনের ঘটনা যে ঘটতে পারে, তার জন্য গণমানুষের পক্ষ থেকে কিন্তু ইঙ্গিত, সংকেত বিভিন্ন সময়ে দেওয়া হয়েছে।’


banner close