রাজিউল হাসান
খাঁচার ভেতর অনেক মুরগি জড়াজড়ি করে আছে। ক্রেতা মুরগি পছন্দ করতেই তা ওজনের পর জবাই করে রাখা হলো একটি বাক্সে। সেই বাক্সে আগে বিক্রি হওয়া আরও কয়েকটি মুরগি রাখা আছে। বাক্সের কাছেই মুরগির পালক-চামড়া ছাড়ানোয় ব্যস্ত এক বা দুজন। সেই পালক-চামড়া, নাড়িভুঁড়ি জড়ো করে ফেলা হচ্ছে আরেকটি ঝুড়িতে। দোকানের নিচ দিয়ে তরল বর্জ্য, মুরগির বিষ্ঠা চলে যাচ্ছে ড্রেনে।
রাজধানীসহ দেশের শহর-নগরগুলোয় মুরগির বাজারে যাতায়াত করা যে কারও কাছে এ দৃশ্য পরিচিত। দুই দশকেরও বেশ আগে দেশে পোলট্রি খাতের প্রসার শুরু। এখন এই খাত এতটাই বড় যে প্রায় প্রতিটা গ্রামে মুরগি কিংবা ডিম উৎপাদনকারী খামারের দেখা পাওয়া যায়। কর্মসংস্থান সৃষ্টি, প্রাণিজ আমিষকে সুলভ করাসহ নানা ভূমিকা রেখে পোলট্রি খাত দেশের অর্থনীতিকে করেছে আরও গতিশীল। কিন্তু সচেতনতার ঘাটতির কারণে এ খাতই এখন জনস্বাস্থ্যের জন্য বড় ঝুঁকির কারণ হয়ে উঠছে। কারওয়ান বাজারসহ রাজধানীর ৫টি বড় বাজারে বিক্রি হওয়া মুরগির পেটে মিলেছে ওষুধ প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়া।
দেশেই এক গবেষণায় এ তথ্য জানা গেছে। পরীক্ষায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে মুরগির পেটে থাকা তিন ধরনের ব্যাকটেরিয়া ওষুধ প্রতিরোধী হয়ে উঠেছে। এই ব্যাকটেরিয়াগুলো হলো এশ্চেরিচিয়া কোলাই (ই-কোলাই), স্যালমোনেলা ও স্ট্যাফাইলোকক্কাস অরিয়াস (এস অরিয়াস)।
সম্প্রতি বিজ্ঞানবিষয়ক সাময়িকী নেচার এ বিষয়ে একটি বৈজ্ঞানিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
গবেষণাটি করেছেন ময়মনসিংহের বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক। তারা রাজধানীর কারওয়ান বাজার, মহাখালী মুরগির বাজার, গুলিস্তানের কাপ্তান বাজার, মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট ও মিরপুর-১ মুরগির বাজারের নমুনা সংগ্রহ করেছেন। এই পাঁচ বাজার থেকেই রাজধানীর প্রায় সব মুরগির বাজার, সুপারশপে মুরগি যায়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অ্যান্টিবায়োটিকের যথেচ্ছ ব্যবহারে ব্যাকটেরিয়া ওষুধ প্রতিরোধী হয়ে ওঠে। ওষুধ প্রতিরোধী জীবাণুর সংক্রমণে গুরুতর সমস্যা হতে পারে। ফুসফুস, যকৃৎ, কিডনিসহ শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলো আক্রান্ত হয়ে জীবনের ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
জাতিসংঘ ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনেক দিন ধরেই অ্যান্টিবায়োটিকের যথেচ্ছ ব্যবহারে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অ্যান্টিমাইক্রোবায়াল রেজিস্ট্যান্সকে (এএমআর) বিশ্বের শীর্ষ ১০টি হুমকির একটি হিসেবে ঘোষণা করেছে। বিজ্ঞানবিষয়ক সাময়িকী ল্যানসেট-এ গত ১৯ জানুয়ারি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, ২০১৯ সালে ৪৯ লাখ ৫০ হাজারের মতো মানুষের মৃত্যুর পেছনে এএমআর ভূমিকা রেখেছে। এর মধ্যে ১২ লাখ ৭০ হাজার মানুষের মৃত্যুর সরাসরি কারণ এএমআর। এই সংখ্যা এইডস কিংবা ম্যালেরিয়ায় বার্ষিক মৃত্যুর সংখ্যার দ্বিগুণের কাছাকাছি।
এই স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতে বাংলাদেশ সরকারও জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সচেতনতা সৃষ্টিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে গিয়ে নিউইয়র্কে এএমআরবিষয়ক এক সভায় পদক্ষেপ নেয়ার জন্য বিশ্বনেতাদের আহ্বান জানিয়েছেন।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় দেখা গেছে, মুরগির মলদ্বার থেকে সংগৃহীত নমুনায় পাওয়া এশ্চেরিচিয়া কোলাই ব্যাকটেরিয়ার ৯৩ দশমিক ২ শতাংশই ওষুধ প্রতিরোধী। স্যালমোনেলা ব্যাকটেরিয়ার শতভাগ এবং স্ট্যাফাইলোকক্কাস অরিয়াস ব্যাকটেরিয়ার ৯৭ দশমিক ২ শতাংশ ওষুধ প্রতিরোধী। এর মধ্যে স্ট্যাফাইলোকক্কাস অরিয়াস ব্যাকটেরিয়ার ৮ দশমিক ৩ শতাংশ ব্যাপকভাবে ওষুধ প্রতিরোধী হয়ে উঠেছে, যার সংক্রমণ মোকাবিলায় প্রচলিত অ্যান্টিবায়োটিকগুলো অনেকাংশে এখন অকার্যকর। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় এই অবস্থাকে বলে মাল্টিড্রাগ রেজিস্ট্যান্স (এমডিআর)।
গবেষক দল ওই পাঁচ কাঁচাবাজারের চিকেন মার্কেটসংলগ্ন ড্রেন থেকেও নমুনা সংগ্রহ করেছিলেন। এসব নমুনা পরীক্ষায় দেখা গেছে, সংগৃহীত নমুনায় পাওয়া এশ্চেরিচিয়া কোলাই ব্যাকটেরিয়ার ৮০ শতাংশ এবং স্যালমোনেলার শতভাগ ওষুধ প্রতিরোধী। ড্রেন থেকে সংগৃহীত নমুনায় পাওয়া স্ট্যাফাইলোকক্কাস অরিয়াস ব্যাকটেরিয়াগুলোও ব্যাপকভাবে ওষুধ প্রতিরোধী।
এশ্চেরিচিয়া কোলাই ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে ডায়রিয়া, পেটব্যাথা, বমিভাব বা বমির মতো উপসর্গ দেখা দেয়। স্যালমোনেলার সংক্রমণে ওই তিন উপসর্গ ছাড়াও জ্বর, মাথাব্যথা, এমনকি মলের সঙ্গে রক্ত যাওয়ার মতো সমস্যাও হতে পারে। স্টেফাইলোকক্কাস অরিয়াসের সংক্রমণে ফোঁড়া বা এর মতো উপসর্গ হতে পারে। সঙ্গে জ্বরও থাকতে পারে। গবেষকরা বলছেন, এসব পানি ও খাদ্যবাহিত ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে যথাসময়ে চিকিৎসা না পেলে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। বিশেষ করে শিশু ও বয়োবৃদ্ধসহ যাদের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কম, তাদের জন্য ঝুঁকিটা বেশি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ওই তিন প্রজাতির ব্যাকটেরিয়া প্রাণীর অন্ত্রে থাকে বলে তা সরাসরি সংক্রমণ ঘটাতে পারে না। তবে স্বাস্থ্য সচেতনতার ঘাটতি হলেই এগুলো হয়ে উঠতে পারে উদ্বেগের কারণ, বাড়িয়ে দিতে পারে চিকিৎসাব্যয়। গবেষকরা বলছেন, মুরগির অন্ত্র সাধারণত খাওয়া হয় না বলে এগুলো সরাসরি মানুষের পেটে যাওয়ার ঝুঁকি দৃশ্যত নেই। কিন্তু মুরগির বাজারগুলোয় যেভাবে মুরগি প্রক্রিয়াজাত করা হয়, তার কারণে এই ব্যাকটেরিয়াগুলো খুব সহজেই মুরগির মাংসে মিশতে পারে। সেই মাংস যদি ঠিকভাবে পরিষ্কার করা না হয়, ১০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় পর্যাপ্ত সময় ধরে সেদ্ধ করা না হয়, তা হলে সংক্রমণ ঘটতে পারে।
আরেকটি উদ্বেগের বিষয় হলো, মুরগির বাজারগুলোর ড্রেনেজব্যবস্থায় সরাসরি পড়ছে ওই সব মুরগির তরল বর্জ্য। এসব বর্জ্য বুড়িগঙ্গাসহ ঢাকার আশপাশের নদীগুলোয় মিশছে, যা ওষুধ প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়াগুলো ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়তে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে।
গবেষণায় যা পাওয়া গেছে
গবেষক দলের প্রধান বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি সায়েন্স ফ্যাকাল্টির মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. তৌহিদুল ইসলাম দৈনিক বাংলাকে বলেন, গবেষণার সময় তারা মুরগির ৫টি বাজারের প্রতিটি থেকে মুরগির মলদ্বারের ১০০টি করে নমুনা সংগ্রহ করে। আর মুরগির বাজারসংলগ্ন ড্রেন থেকে নমুনা সংগ্রহ করেছে ৫টি করে। মলদ্বারের ৫০০ নমুনার মধ্যে বাজারপ্রতি ১০টি করে দৈবচয়নের ভিত্তিতে মোট ৫০টি নমুনা বাছাই করে। আর ড্রেন থেকে সংগৃহীত নমুনাগুলোর মধ্যে থেকে একইভাবে ৫টি নমুনা বাছাই করেছেন তারা। এরপর পিসিআরসহ প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন।
গবেষণা নিবন্ধে জানানো হয়, নমুনা পরীক্ষায় কারওয়ান বাজার ও মহাখালী মুরগির বাজারে ওষুধ প্রতিরোধী এশ্চেরিচিয়া কোলাই ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি সবচেয়ে বেশি পাওয়া গেছে। এই দুই বাজারের শতভাগ নমুনাতেই এই ব্যাকটেরিয়া ছিল। মিরপুর-১ মুরগির বাজারের ৬০ ভাগ নমুনায় ওষুধ প্রতিরোধী এশ্চেরিচিয়া কোলাই পাওয়া গেছে। কাপ্তান বাজারের নমুনার ৯০ শতাংশেই ওষুধ প্রতিরোধী স্যালমোনেলা ব্যাকটেরিয়া পাওয়া গেছে। মহাখালীর মুরগির বাজারে এই ব্যাকটেরিয়া পাওয়া গেছে ৬০ শতাংশ নমুনায়। এদিকে ৫টি মুরগির বাজারের সব কয়টিতেই স্ট্যাফাইলোকক্কাস অরিয়াসের উপস্থিতি বেশি (৭০-৮০ শতাংশ) পাওয়া গেছে। এই মুরগির বাজারগুলোর ৪টির ড্রেন থেকে সংগৃহীত নমুনায় ওই তিন ধরনের ব্যাকটেরিয়াই উল্লেখযোগ্য পরিমাণে পাওয়া গেছে। শুধু মহাখালী মুরগির বাজারের ড্রেন থেকে সংগৃহীত নমুনায় স্ট্যাফাইলোকক্কাস অরিয়াসের উপস্থিতি সেভাবে ধরা পড়েনি।
গবেষণায় দেখা গেছে, ওষুধ প্রতিরোধী ওই ৩ ধরনের ব্যাকটেরিয়া ৫ থেকে ১৫ ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী হয়ে উঠেছে। এর মধ্যে পেফ্লোক্সাসিন, অ্যাম্পিসিলিন, ট্রাইমেথোপ্রিম-সালফামেথোক্সাজোল, অ্যামোক্সিসিলিন-ক্লাভুলানিক অ্যাসিড, নালিডিক্সিক অ্যাসিড, অফলোক্সাসিন ও ডক্সিসাইক্লিন, কোলিস্টিন, সিপ্রোফ্লক্সাসিন, গ্যাটিফ্লোক্সাসিন ও সেফিক্সিম জাতীয় অ্যান্টিবায়োটিক অন্যতম। ওই তিন ব্যাকটেরিয়ায় এসব ওষুধ দিন দিন কার্যকরতা হারাচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা জানান, বৃহদান্ত্র, ত্বক, খাদ্যনালি, মূত্রনালির সংক্রমণ, অস্ত্রোপচারের পর সংক্রমণ, সেপসিস, মেনিনজাইটিস, গলা, সাইনাস, ফুসফুসসহ বিভিন্ন জায়গায় ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ চিকিৎসায় চিকিৎসকরা ওই অ্যান্টিবায়োটিকগুলো ব্যবহার করে থাকেন।
মুরগির পেটে ওষুধ প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়া কেন
অধ্যাপক ড. মো. তৌহিদুল ইসলাম দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘আমাদের দেশে পোলট্রি খাতের ব্যাপক প্রসার ঘটেছে। তবে তাদের, বিশেষ করে প্রত্যন্ত ও গ্রামীণ অঞ্চলের পোলট্রি খামারগুলোকে নজরদারির আওতায় আনার তেমন ব্যবস্থা এখনো গড়ে ওঠেনি। একসময় খামারিরা মুরগির দ্রুত বর্ধনের জন্য অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করতেন। তবে সরকারের প্রচার-প্রচারণায় এখন সচেতনতা বেড়েছে। কিন্তু তারা এখনো সংক্রমণ প্রতিরোধে আগেভাগেই মুরগিকে অ্যান্টিবায়োটিক খাইয়ে দিচ্ছেন। অর্থাৎ রোগের প্রাদুর্ভাবের আগেই ওষুধ সেবন করানো হচ্ছে। এতে মুরগির অন্ত্রে থাকা ব্যাকটেরিয়াগুলো ওষুধ প্রতিরোধ হয়ে উঠছে।’
গবেষণা নিবন্ধে বলা হয়, মুরগির বাজারগুলোয় একেক খাঁচায় জড়াজড়ি করে অনেক মুরগি রাখা হয়। সেখানে এক মুরগি থেকে আরেক মুরগিতে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে। আবার মুরগিগুলো প্রক্রিয়াজাত করার পর বর্জ্য ব্যবস্থাপনাও ঠিক নেই। ফলে পরিবেশে ব্যাকটেরিয়াগুলো ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকিও বাড়ছে।
পরিত্রাণের উপায় কী
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানুষ ও প্রাণীতে অ্যান্টিবায়োটিকের যথেচ্ছ ব্যবহার বন্ধে সবার আগে চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি বন্ধের ব্যবস্থা করতে হবে। না হলে ব্যাকটেরিয়ার ওষুধ প্রতিরোধী হয়ে ওঠা ঠেকানো সম্ভব না।
অধ্যাপক ড. মো. তৌহিদুল ইসলাম দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘সরকারের ঔষধ প্রশাসনের অধীনে ভেটেরিনারি মেডিসিন ইউনিট আছে। কিন্তু তাদের জনবল প্রয়োজনের তুলনায় নগণ্য। এ ক্ষেত্রে একটি সমাধান হতে পারে প্রাণিসম্পদের জন্য আলাদা ঔষধ প্রশাসন গঠন করা। তিনি বলেন, প্রত্যন্ত ও গ্রামীণ মুরগির খামারগুলোকে নজরদারির আওতায় আনতে হবে। এ ছাড়া মুরগির বাজারগুলোয় বর্জ্য ব্যবস্থাপনার যথাযথ ব্যবস্থা করতে হবে। তা হলে হয়তো এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব।’
জানতে চাইলে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘মুরগির পেটে ব্যাকটেরিয়া ওষুধ প্রতিরোধী হয়ে ওঠা অত্যন্ত উদ্বেগের। অ্যান্টিবায়োটিকের যথেচ্ছ ব্যবহার বন্ধে পদক্ষেপ নেয়ার পাশাপাশি বর্জ্য ব্যবস্থাপনায়ও নজর দিতে হবে। কারণ এই বর্জ্যগুলো অনেক ক্ষেত্রেই নদী-নালায় গিয়ে পড়ছে। এতে ব্যাকটেরিয়াগুলো ব্যাপক পরিসরে ছড়িয়ে পড়ার সুযোগ পাচ্ছে। এ সংকট মোকাবিলায় মানুষকে সম্পৃক্ত করতে হবে। মানুষ সম্পৃক্ত না হলে সরকারি কর্তৃপক্ষের পদক্ষেপে খুব বেশি ফল আসবে না।’
এ ব্যাপারে কথা বলতে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিমের সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার কল করে এবং খুদে বার্তা পাঠিয়েও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
তবে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. নাহিদ রশীদ দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘এটা হওয়া উচিত নয়। আমরা এ বিষয়ে চিন্তা করছি।’
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের গবেষণাটি তাদের হাতে নেই জানিয়ে সচিব বলেন, ‘গবেষণাটি পেলে আমরা এ বিষয়ে অবশ্যই পদক্ষেপ নেব। সবার সঙ্গে বসে সমাধানের পথ খোঁজা হবে। কারণ গবেষণায় যেসব তথ্য উঠে এসেছে, তা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই।’
গত মার্চের ১৯ তারিখে চাল না দেওয়া ও চাল সংগ্রহে চুক্তি না করায় রাজশাহী বিভাগে ৯১৩টি চালকলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করে খাদ্য বিভাগ। রাজশাহী আঞ্চলিক খাদ্য বিভাগ থেকে চাল সংগ্রহ মৌসুম শেষ হওয়ার পর সম্প্রতি খাদ্য মন্ত্রণালয়ে এই সুপারিশ পাঠানো হয়। সরকারের সঙ্গে চুক্তি করেও চাল সরবরাহ না দেওয়ায় রাজশাহী বিভাগের ৬১টি চালকলের লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে। চুক্তিবদ্ধ হয়েও কোনো চাল সরবরাহ করেনি এসব চালকল মালিকরা। এছাড়া চাল সংগ্রহ কার্যক্রমে অসহযোগিতাকারী ৯১৩টি চালকলকেও সাবধান করা হয়েছে।
খাদ্য বিভাগের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সরকারের সাথে চুক্তি করেও ঠিকভাবে চাল সরবরাহ দেয়নি এমন চালকলের সংখ্যা ১৬২টি। এর মধ্যে চুক্তির ৮০ ভাগ চাল দিয়েছে এমন চালকলের সংখ্যা ৩০টি। ৫০ ভাগ চাল দিয়েছে- এমন চালকলের সংখ্যা ৭১টি। আর চুক্তিবদ্ধ হয়েও কোনো চালই দেয়নি এমন চালকলের সংখ্যা ৬১টি। এছাড়া, ব্যবসা করলেও চাল সরবরাহের চুক্তি না করা চালকলগুলোরও লাইসেন্স বাতিল করেছে খাদ্য বিভাগ।
রাজশাহী খাদ্য অফিসের তথ্যমতে, রাজশাহী বিভাগে আমন সংগ্রহ ২০২৪-২০২৫ মৌসুমে ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ৫৬,৩৫৯ টন, সংগ্রহ হয়েছে মাত্র ৩৯৫ টন (লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ৭%), সিদ্ধ চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ১১ হাজার ২৬৩ মেট্রিক টন। এর মধ্যে সংগ্রহ হয়েছে ৯৪ হাজার ৭০৭ মেট্রিক টন। আর আতপ চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২১ হাজার ৮৯১ মেট্রিক টন। সংগ্রহ হয়েছে ১৯ হাজার ৫২৯ মেট্রিক টন।
৬১টি চালকলের মধ্যে যারা সিদ্ধচালের কোনো চালই প্রদান করেনি- এমন চালকল রাজশাহীর একটি, নওগাঁয় ৮টি, চাঁপাইনবাবগঞ্জ তিনটি, পাবনায় ১১টি, বগুড়ায় ৩৪টি ও জয়পুরহাটে তিনটি। আর আতব চাল দেয়নি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার একটি মিল। এর আগে এসব চালকল মালিকদের ব্যাখ্যা তলব করা হয়। ব্যাখ্যা সন্তোষজনক না হওয়ায় এসব চালকলের লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে।
রাজশাহী খাদ্য অধিদপ্তরের বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারি উপপরিচালক ওমর ফারুক বলেন, সরকারি যেকোনো কাজে চুক্তিবদ্ধ হলে তা বাস্তবায়ন না করতে পারলে অপরাধ বলে গণ্য হবে। যেসব মিল চুক্তি করেও ৫০ থেকে ৮০ শতাংশ চাল সরবরাহ করেছে, তাদের জামানত থেকে জরিমানা কেটে নেওয়ার আর যারা কোনো চাল সরবরাহ করেনি, তাদের লাইসেন্স বাতিলের সুপারিশ করেছিলাম। রাজশাহী বিভাগের যে সব মিল চাল দেয়নি বা চুক্তিযোগ্য ছিল কিন্তু চুক্তি করেনি- এমন মিল ৯১৩টি মিলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ মন্ত্রণালয়ে দিয়েছিলাম। এদের মধ্যে ৬১টি চালকলের লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে। বাকিদের শোকজ করা হয়েছে। পরে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। যারা চাল সরবরাহে ব্যর্থ হয়েছে, তাদের লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে।
নীলফামারীর জলঢাকায় ইজারাবিহীন খাসে যাওয়া মীরগঞ্জ হাট-বাজারে গরু-ছাগল ক্রেতা বিক্রেতাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টোল আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। গত শনিবার সরেজমিনে গিয়ে অতিরিক্ত টোল আদায়ের বিষয়ে সত্যতা পাওয়া যায়। সেখানে দেখা যায়, সরকারি খাস খতিয়ানে যাওয়া মীরগঞ্জ হাট-বাজারের পশুরহাটে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে গরু ক্রেতার কাছ থেকে রশীদ ফি ৬০০ টাকা ও বিক্রেতার কাছ থেকে অতিরিক্ত ২০০ টাকা চাঁদাসহ গরু প্রতি মোট ৮০০ টাকা আদায় করছেন হাট-বাজারের দায়িত্বে থাকা কর্তৃপক্ষ। এ হাট-বাজারে প্রশাসনের কাউকে দেখা না গেলেও সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে দুইজন ইউনিয়ন উপসহকারী ভূমি কর্মকর্তা তাৎক্ষণিক হাট বাজারের অফিসে উপস্থিত হতে দেখা যায়। তারা হলেন গোলনা ইউনিয়ন উপসহকারী ভূমি কর্মকর্তা জহুরুল ইসলাম ও কাঁঠালী ইউনিয়ন উপসহকারী ভূমি কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম। মীরগঞ্জ হাট-বাজারের টোল আদায়ের মুল দায়িত্বে ছিলেন ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা জহুরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আমরা সঠিক সময়ে হাটে এসেছি। তারা আমাদের চাপে ফেলে হাটের টোল আদায় করছেন। আমরা তাদেরকে সহযোগিতা করেছি।
তারা কারা- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওরা বিএনপি-জামায়াতের লোকজন। সংবাদকর্মীদের দেখে হাট-বাজারের থাকা ক্রেতা বিক্রেতা এগিয়ে এসে বলেন, গত ৩টা হাটে শুধু গরু ক্রেতার কাছে রশীদের ফি বাবদ ৬০০ টাকা নিয়েছেন। আর যারা গরু বিক্রেতা ছিলাম আমাদের কাছ তেকে কোন প্রকার চাঁদা নেয়নি। কিন্তু আজকের হাটে গরু ক্রেতার কাছে রশীদের মাধ্যমে ৬০০ টাকা এবং বিক্রেতার কাছে বিধি পরিপন্থি অতিরিক্ত ২০০ টাকা চাঁদা নেয়। হাটের লোকজন আমাদের কাছে জোরপূর্বক ভয়ভীতি দেখিয়ে অতিরিক্ত ২০০ টাকা চাঁদা নিচ্ছেন। একপর্যায়ে একদল লোক দৌড়ে এসে সংবাদকর্মীদের ওপর চড়াও হয় এবং আক্রোশমুলক গালমন্দ করতে থাকেন। এছাড়া বিভিন্ন হয়রানিমূলক মামলা এবং হত্যার হুমকি প্রদর্শন করেন।
লোকমুখে জানা যায়, তারা উপজেলা বিএনপির একাংশ একটি গ্রুপের বাহিনী। উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, চলতি অর্থ বছরের বাংলা ১৪৩২ সালে উপজেলার ২৬টি হাট ইজারা দেওয়ার দরপত্র আহ্বান করা হয়। এরমধ্যে ১৭টি হাটের দরপত্র জমা হলে বিধিমোতাবেক দরপত্র দর দাতাদের মধ্যে হাট-বাজার গুলো বুঝিয়ে দেওয়া হয়। এদিকে ৯টি হাটের কোন দরপত্র জমা না হওয়ায় হাট-বাজার গুলো খাস খতিয়ানে চলে যায়। খাস খতিয়ানে যাওয়া হাট-বাজার গুলো হলো, মীরগঞ্জ হাট-বাজার, পাঠানপাড়া হাট-বাজার, হলদিবাড়ী নালারপাড় হাট-বাজার, হলদিবাড়ী জয়বাংলা হাট-বাজার, নবাবগঞ্জ হাট-বাজার, ডিয়াবাড়ী হাট-বাজার, বালারপুকুর চৌধুরীর হাট-বাজার, হরিশ্চন্দ্রপাঠ হাট-বাজর, খুটামারা রহমানিয়া হাট-বাজার ইত্যাদি। এই হাটগুলো বর্তমানে উপজেলা প্রশাসন তাদের নিজেদের নিয়োগকৃত জনবল দিয়ে হাট-বাজারের টোল আদায় করছেন। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. জায়িদ ইমরুল মোজাক্কিন বলেন, লিখিতভাবে কাউকে হাট-বাজার দেওয়া হয়নি। কিন্তু খাস খতিয়ানের হাট-বাজারে কিছু লোকের সহযোগিতা নিয়ে টোল আদায় করা হচ্ছে। অতিরিক্ত ২০০ টাকা টোল আদায়ের কোন এখতিয়ার নেই। যদি এরকম কোনো প্রমাণ আপনারা দিতে পারেন তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
দুর্নীতির অভিযোগে, টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার সেনেরচর শাহসুফি সিনিয়র আলিম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মনিরুজ্জামানকে অবরুদ্ধ করেন শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও স্থানীয়রা। এরপর মাদ্রাসার প্যাডে ও স্ট্যাম্পে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করিলাম লিখে স্বাক্ষর দেন অধ্যক্ষ মনিরুজ্জামান।
রবিবার (৪মে) বেলা ১২টায়, মাদ্রাসা অফিস কক্ষে এ ঘটনা ঘটে। পদত্যাগ পত্রে তিনি উল্লেখ করেন, আজকের মধ্যে নগদ ২০লাখ টাকা বুঝিয়ে দিয়ে অফিস ত্যাগ করবেন। এর মধ্যেই গোপালপুর থানা থেকে পুলিশ এসে অধ্যক্ষকে উদ্ধার করে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে নিয়ে যান।
অত্র মাদরাসার ইবতেদায়ী সহকারী শিক্ষক মৌলভী আব্দুল খালেক বলেন, অধ্যক্ষের নামে অনেক দুর্নীতির অভিযোগ আছে। দুর্নীতির টাকায় বিভিন্ন স্থানে টাইলস করা বাড়ি বানিয়েছে। অধ্যক্ষ কাউকে কোন হিসাব দেয় না। হিসাব চাওয়ার কারনে সে সকল শিক্ষকদের নামে মামলা করেছে।
মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা দাবি করেন, প্রিন্সিপাল স্যার অনেক টাকা আত্মসাৎ করেছে, অন্য স্যারদের নামে মামলা করেছে এবং নিয়মিত প্রতিষ্ঠানে আসে না। আমরা আত্মসাৎকৃত টাকা ফেরৎ ও প্রিন্সিপালের পদত্যাগ চাই।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার জুলফিকার হায়দার বলেন, বিষয়টি আমিও শুনেছি, অধ্যক্ষকে ইউএনও অফিসে আনা হয়েছে। এখনো বসা হয়নি, কিছুক্ষণ পর বসা হবে তারপর বিস্তারিত বলতে পারবো।
অধ্যক্ষ মনিরুজ্জামান মুঠোফোনে বলেন, ঠিকমতো ক্লাস হচ্ছেনা বলে ছাত্ররা আমাকে মাদরাসায় ডেকে নিয়ে যায়, আজকে মাদরাসায় যাওয়ার পর পদত্যাগপত্র ও টাকা দিতে হবে। পদত্যাগপত্রে এসব লিখে নিয়েছে।
ইউএনও মো. তুহিন হোসেন মুঠোফোনে জানান, বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে, তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
গাজীপুরে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহর গাড়িতে হামলার ঘটনায় দুজনকে আটক করেছে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (জিএমপি)।
রবিবার (৪ মে) রাতে তাদের আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জিএমপির অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) রবিউল হাসান।
ডিসি রবিউল ইসলাম জানান, হামলার সঙ্গে জড়িত দুইজনকে আটক করা হয়েছে এবং অন্যান্য দোষীদের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।
তবে তিনি আটক হওয়া ওই দুই ব্যক্তির নাম প্রকাশ করেননি।
এছাড়া, জিএমপি কমিশনারের নির্দেশে হামলাকারীদের খুঁজে বের করতে সবাই একসঙ্গে কাজ করছেন বলেও জানান ডিসি রবিউল।
তিনি বলেন ‘হামলাকারী যেই হোন না কেন, আমরা তাদের খুঁজে বের করব এবং আইনের আওতায় নিয়ে আসব।’
তিনি জানান, হাসনাতের সঙ্গে কথা বলার জন্য ঘটনাস্থলে গিয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তারা। এ সময় তার শারীরিক অবস্থার খোঁজ নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে হাসনাত শারীরিকভাবে সুস্থ আছেন।
এছাড়া তার (হাসনাত) থেকে অভিযোগ পেলে এ ঘটনায় মামলা করা হবে বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।
এর আগে রবিবার সন্ধ্যার দিকে গাজীপুর থেকে ঢাকার দিকে ফেরার পথে চন্দনা চৌরাস্তা এলাকায় পৌঁছালে হাসনাতের গাড়িতে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করা হয়। নিজের ফেসবুক আইডিতে দেওয়া এক পোস্টে এ তথ্য জানান এনসিপির আরেক নেতা আব্দুল হান্নান মাসউদ।
হামলায় গাড়ির কাচ ভেঙে আঘাত পান হাসনাত, তবে গুরুতর আহত হননি বলে জানিয়েছে পুলিশ।
এই হামলার প্রতিবাদে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতাকর্মীরা গাজীপুরে মশাল মিছিল করেন। মিছিলে তারা আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে নানা স্লোগান দেন।
ইউনিসেফ-বাংলাদেশের স্টাফ এসোসিয়েশন সহযোগিতায় ও জেলা প্রশাসনের আয়োজনে বিগত বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ফেনীর একশত পরিবারের মাঝে ২০ লক্ষ টাকা অর্থ সহায়তা প্রদান করা হয়েছে।
রবিবার (৪ মে ) সকাল সাড়ে ১১টায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে এই উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক গোলাম মো. বাতেন, ইউনিসেফ চট্টগ্রামের রিজিওনাল হেড মাধুরী ব্যানার্জি।
ফেনী সদর উপজেলার ৪০টি, ছাগলনাইয়া উপজেলার ২৫টি, ফুলগাজী উপজেলার ২০টি ও পরশুরাম উপজেলার ১৫টি সর্বমোট ১০০টি পরিবারকে এই আর্থিক অনুদান প্রদান করা হয়। ১০০টি পরিবারের প্রত্যেকটি পরিবারকে ২০ হাজার টাকা মোট ২০ লক্ষ টাকা প্রদান করা হয়।
উপকারভোগী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে -যেসব পরিবারে গোল্ডেন সিটিজেন কার্ড (সুবর্ণ কার্ড) সহ প্রতিবন্ধী শিশু রয়েছে; যেসব পরিবারে এসএএম শিশু, চরম-দারিদ্রসীমার নিচে বসবাসকারী পরিবার, বন্যার কারণে বসত বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। যেসব পরিবারের মহিলা প্রধান এবং যারা ইতোপূর্বে সরকারি সহায়তা পাননি তাদেরকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।
রাজবাড়ীর জালদিয়া গ্রামের দুই ভাই সোহেল মোল্লা ও ইকবল মোল্লা দালালের মাধ্যমে এক বছর আগে ১০ লাখ টাকা খরচ করে সৌদি গিয়ে কাজ না পেয়ে উল্টো নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।
তিন মাস ধরে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ নেই বলে দাবি করেছে পরিবার। এ বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে আদালতে মামলা করেছেন ভুক্তভোগীদের পরিবার। মামলাটি তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ফরিদপুর কার্যালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
ভুক্তভোগীরা হলেন— উপজেলার সুলতানপুর ইউনিয়নের জালদিয়া গ্রামের কামাল মোল্লার ছেলে সোহেল মোল্লা ও মৃত ইয়াছিন মোল্লার ছেলে ইকবাল মোল্লা। তারা সম্পর্কে আপন চাচাতো ভাই।
কামাল মোল্লা বলেন, ‘গ্রামের প্রতিবেশী মনিরদ্দিন মোল্লা ও তার শ্যালক মামুন মোল্লা ভালো চাকরি দেওয়ার কথা বলে প্রথম দফায় গত বছরের ৫ মার্চ নগদ ছয় লাখ ও ২৬ মে ব্যাংকের মাধ্যমে আরও চার লাখসহ মোট ১০ লাখ টাকা নিয়ে ছেলে সোহেল ও ভাতিজা ইকবলকে সৌদি আরব পাঠান। সেখানে কাজ না পেয়ে উল্টো তারা দালাল চক্রের নির্যাতনের শিকার হন।’
‘কাজ দেওয়ার আশ্বাসে চলতি বছর ৭ ফেব্রুয়ারি মনিরদ্দিন ও মামুন তাদের কাছ থেকে আরও দুই লাখ টাকা নেন। এরপর থেকেই পরিবারের সঙ্গে সোহেল ও ইকবলের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তিন মাস ধরে তাদের খোঁজ না মেলায় উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় দিন কাটছে পরিবার দুটির।’
এমতাবস্থায় ২৭ এপ্রিল রাজবাড়ীর মানবপাচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালে দুই দালালের বিরুদ্ধে মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে মামলা করেন সোহেল মোল্লার স্ত্রী রিনা আক্তার।
রিনা আক্তার বলেন, ‘তিন মাস ধরে স্বামী ও দেবরের খোঁজ নেই। মনিরউদ্দিন ও মামুন আবার আমাদের কাছে আরও ১০ লাখ টাকা দাবি করছেন। টাকা দিলে স্বামী ও দেবরকে এনে দেবেন। আমরা তাদের মোট ১২ লাখ টাকা দিয়েছি। নতুন করে ১০ লাখ টাকা কোথায় পাব।’
ইকবাল মোল্লার স্ত্রী সেলিনা খাতুন বলেন, ‘আমার স্বামী ও ভাসুর বেঁচে আছে নাকি মারা গেছেন জানি না। তিন মাস ধরে যোগাযোগ নেই। আমার দুই মেয়ে ও ভাসুরের ছোট এক মেয়ে রয়েছে।’
‘বাচ্চারা সবসময় কান্নাকাটি করে, তাদের বাবাদের সঙ্গে কথা বলতে চায়। আমরা অনেক খুব কষ্টে দিন পার করছি। সরকারের কাছে দাবি, আমার স্বামী ও ভাসুরকে দেশে ফেরত এনে দিক।’
সোহেলের মা সুফিয়া বেগম বলেন, ‘আমরা ছেলে দুটিকে ফেরত চাই। আর দালালদের কঠিন শাস্তি চাই। যাতে দালালদের খপ্পড়ে পড়ে আমাদের মতো অন্য কোনো পরিবার সর্বশান্ত না হয়।’
অভিযুক্ত মামুন মোল্লা সাংবাদিকদের বলেন, ‘সোহেল ও ইকবলকে যে কোম্পানিতে কাজ দিয়েছিলাম তারা সেখানে কাজ না করে পাসপোর্ট ফেরত চায়। এজেন্সির মাধ্যমে কোম্পানির কাছ থেকে তাদের পাসপোর্ট ফেরত দিয়েছি। এখন আর তাদের বিষয়ে আমার কোনো দায়ভার নেই।’
মামলার ব্যাপারে পিবিআই ফরিদপুর কার্যালয়ের পুলিশ সুপার মো. রবিউল ইসলাম বলেন, ‘আদালত এ সংক্রান্ত মামলার তদন্তভার পিবিআইকে দিয়েছে বলে জানতে পেরেছি। তবে এখন পর্যন্ত কোনো কাগজ হাতে পায়নি। পাওয়া মাত্র অফিসার নিয়োগ দিয়ে তদন্ত কাজ শুরু করব।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সব সময় তদন্ত করে প্রকৃত সত্যকে সামনে আনা ও অপরাধীদের আইনের আওতায় আনার চেষ্টা করে থাকি। তবে কর্মসংস্থানের জন্য যারা বিদেশে যাবেন, তাদের দালালদের মাধ্যমে না গিয়ে জনশক্তি রপ্তানি ব্যুরো ও বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে প্রচলিত নিয়ম মেনে বিদেশে যাওয়ার পরামর্শ দেব।’
যশোরের শার্শা উপজেলায় ১০টি সোনার বারসহ শুভ ঘোষ (৩৫) নামে যুবককে আটক করেছে পুলিশ। রবিবার (৪ মে) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে উপজেলার বাগআচড়া ইউনিয়ন পরিষদ এলাকা থেকে তাকে আটক করা হয়।
আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শার্শা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রবিউল ইসলাম।
আটক শুভ ঘোষ মনিকগঞ্জের সুনীল ঘোষের ছেলে।
পুলিশ জানায়, পুলিশের একটি দল বাঁগআচড়া ইউনিয়ন পরিষদের সামনে থেকে শুভ ঘোষ নামে এক যুবককে আটক করে। পরে তার দেহ তল্লাশি করে প্যান্টের পকেট থেকে স্কচটেপ দিয়ে মোড়ানো অবস্থায় ১০টি স্বর্ণের বার পাওয়া যায়। স্বর্ণের বারগুলো সীমান্ত দিয়ে ভারতে পাচারের উদ্দেশ্যে শুভ ঘোষ মনিকগঞ্জ থেকে বাঁগআচড়ায় আসে।
এছাড়া জব্দ করা স্বর্ণের ওজন এক কেজি ১৯২ গ্রাম। যার আনুমানিক বাজারমূল্য প্রায় এক কোটি ২০ লাখ টাকা বলে জানায় পুলিশ।
শার্শা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রবিউল ইসলাম বলেন, ‘যুবকের বিরুদ্ধে মামলা প্রক্রিয়াধীন এবং আদালতে সোর্পদ করা হবে। স্বর্ণের বারগুলো ট্রেজারি শাখায় জমা দেওয়া হবে।’
বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস উপলক্ষ্যে বাংলাদেশি জার্নালিস্টস ইন ইন্টারন্যাশনাল মিডিয়া (বিজেআইএম) শনিবার (৩ মে) বিকেলে আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ দ্য ঢাকায় একটি সিম্পোজিয়ামের আয়োজন করেছে।
অনুষ্ঠানের প্রথমার্ধে মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম উপস্থিত দর্শকদের সাথে গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশে গণমাধ্যমের অবস্থা নিয়ে একটি প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশগ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সাংবাদিক শরীফ খিয়াম আহমেদ।
দ্বিতীয়ার্ধে দিবসটি উপলক্ষে ছয়জন বিশিষ্ট সাংবাদিক একটি প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন যেখানে উপস্থিত ছিলেন সাংবাদিক সেলিম সামাদ, সাংবাদিক আয়শা কবীর, সাংবাদিক এবং গবেষক এম আবুল কালাম আজাদ, সাংবাদিক ওমর ফারুক, সাংবাদিক মুক্তাদির রশীদ ও সাংবাদিক জায়মা ইসলাম। তাঁদের আলোচনায় উঠে আসে বাংলাদেশী সাংবাদিকতার জগতের পরিবর্তন এবং অভিযোজন সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য।
বিজেআইএমের আহ্বায়ক স্যাম জাহানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সূচনা বক্তব্য রাখেন সংগঠনটির সদস্য সচিব মুহাম্মদ আলী মাজেদ।
প্রশ্নোত্তর পর্ব শেষে শফিকুল আলম নবীন সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, “আপনারা মন খুলে লিখতে থাকেন। যত লিখবেন, সাংবাদিকতা তত শক্তিশালী হবে। সরকার তত ভুল থেকে শিক্ষা গ্রহণ করবে এবং গণতন্ত্র তত শক্তিশালী হবে।"
স্যাম জাহান তার বক্তব্যে বলেন, “সম্ভবত অনেক অনেক বছরের মধ্যে এবারই প্রথম কিংবা হয়তো একেবারেই প্রথমবারের মতন বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস যথেষ্ট ঘটা করে বাংলাদেশে উদযাপিত হচ্ছে। এবং এর উদযাপনের আয়োজক হতে পেরে আমরা অত্যন্ত আনন্দিত।”
অনুষ্ঠানে বিজেআইএম সদস্য তাসনীম খলিল ও তাঁর সংবাদমাধ্যম নেত্রনিউজের পাওয়া সাম্প্রতিক স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক প্রদত্ত শোরেনস্টাইন এওয়ার্ড করতালির সাথে উদযাপন করা হয়।
মুহাম্মদ আলী মাজেদ বলেন, “আজকের দিনে আমাদের লক্ষ্য হলো বিগত বছরগুলোতে আমরা এদেশে সাংবাদিকতায় কি সমস্যা মোকাবেলা করেছি সেগুলোর উপর আলোকপাত করা, সেই সাথে সাংবাদিক হিসেবে পেশাগত নীতি পালনে আমরা কোথায় কোথায় আরো ভালো মোকাবেলা করতে পারতাম। কারণ মুক্ত গণমাধ্যম বলতে শুধু বহিঃশক্তি থেকে প্রভাবমুক্ত থাকা না, একই সাথে নিজেদের ভেতরের পক্ষপাত থেকে মুক্ত থাকা।”
কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস (সিপিজে) এর এশিয়া বিষয়ক সমন্বয়ক বেহ লিহ য়ি বিজেআইএম এবং বাংলাদেশের সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, "গত বছর দেশের কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার সময় আপনাদের প্রতিবেদন বিশ্বকে অবহিত রেখেছিল… আমি আশা করি এই নতুন যুগ আপনার কাজ করার জন্য আরও স্বাধীনতা এবং সুযোগ নিয়ে আসবে এবং সিপিজে এই যাত্রায় আপনার পাশে থাকবে।"
সিম্পোজিয়ামে উপস্থিত ছিলেন প্রমুখ গণমাধ্যম ও অধিকারকর্মী, রাজনীতিবিদ, কলামিস্ট, ছাত্রছাত্রী এবং সাধারণ জনগণ। স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানটি সম্পন্ন হয়।
চট্টগ্রামের পতেঙ্গা সাগরতীরবর্তী খেজুরতলা বেড়িবাঁধ এলাকা থেকে নারী ও শিশুসহ ৩৫ রোহিঙ্গাকে আটক করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
আজ শনিবার দুপুরের দিকে অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়।
আটককৃতরা সবাই নোয়াখালীর ভাসানচর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা এবং অবৈধভাবে সেখান থেকে পালিয়ে চট্টগ্রামে আসে বলে জানিয়েছে র্যাব।
র্যাবের সিনিয়র সহকারী পরিচালক এ আর এম মুজাফফর হোসেন জানান, আটকদের মধ্যে ১৯ জন শিশু রয়েছে। তারা শুক্রবার রাতে দালালের সহায়তায় ক্যাম্প থেকে পালিয়ে চট্টগ্রাম শহরে প্রবেশ করে এবং পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত এলাকায় অবস্থান নেয়। পরে র্যাব তাদের পতেঙ্গা থানায় হস্তান্তর করে।
পালিয়ে আসা এক রোহিঙ্গা পুরুষ জানান, ভাসানচরের স্থানীয় দুই দালাল প্রত্যেকের কাছ থেকে দুই হাজার টাকা নিয়ে তাদের ক্যাম্প থেকে বের করে। এরপর রাত ১টার দিকে একটি নৌকায় করে চট্টগ্রামের উদ্দেশে রওনা দেয় তারা।
ভোরে পতেঙ্গায় পৌঁছানোর পর দালালরা তাদের ফেলে পালিয়ে যায়। তাদের পরিকল্পনা ছিল সড়কপথে কক্সবাজারের উখিয়ায় পৌঁছানো, তবে তার আগেই তারা ধরা পড়ে।
সিলেট থেকে সরাসরি হজ ফ্লাইট আগামী ১৪ মে থেকে শুরু হচ্ছে। এ দিন ৪১৯ জন যাত্রী নিয়ে ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সৌদি আরবের মদিনার উদ্দেশে উড়াল দিবে জাতীয় পতাকাবাহী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইট।
বাংলাদেশ বিমানের সিলেটের ম্যানেজার শাহনেওয়াজ তালুকদার এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, সিলেটের হজযাত্রীদের সুবিধার কথা চিন্তা করে এ বছর পাঁচটি ফ্লাইট সরাসরি সিলেট থেকে পরিচালনার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর মধ্যে প্রথম ফ্লাইট যাবে সরাসরি মদিনায়। বাকি চারটি ফ্লাইট ২৩, ২৫, ২৬ ও ২৯ মে সিলেট-জেদ্দা রুটে পরিচালিত হবে।
রোড টু মক্কা কর্মসূচির অধীনে হজ্জ যাত্রীদের জন্য দুই দেশের ইমিগ্রেশন ঢাকায় সম্পন্নের সুযোগ থাকলেও সিলেট থেকে পরিচালিত ফ্লাইটের যাত্রীদের সৌদি ইমিগ্রেশন সংশ্লিষ্ট বিমানবন্দরে করা হবে।
অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশের (আটাব) সিলেট জোনের সভাপতি মোহাম্মদ জিয়াউর রহমান খান রেজওয়ান জানান, সিলেট থেকে এ বছর ২৭ শ মুসল্লী হজে যাচ্ছেন। এর মধ্যে ২ হাজার ৯৫ জন সিলেট থেকে বিমানের ফ্লাইটে এবং অন্যরা যাবেন ঢাকা থেকে।
এ অঞ্চলের হজযাত্রীদের নিবন্ধনসহ যাবতীয় কার্যক্রম সিলেটের তিনটি শীর্ষ এজেন্সির মাধ্যমে সম্পন্ন হয়েছে বলে জানা গেছে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক আজ শনিবার (০৩ মে) খিঁলগাও উত্তর শাহজাহানপুর এলাকায় মশক নিধন ও বিশেষ পরিচ্ছন্নতা অভিযান পরিচালনা করা হয়। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মাননীয় প্রশাসক জনাব মো. শাহজাহান মিয়া এর উপস্থিতিতে বর্জ্য ব্যবস্থানা বিভাগ, স্বাস্থ্য বিভাগ এবং স্থানীয় সোসাইটির জনগন এই বিশেষ পরিচ্ছন্নতা অভিযানে অংশগ্রহণ করেন।
সকাল ০৬:০০ ঘটিকায় শুরু হওয়া এ পরিচ্ছন্নতা অভিযানে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের পরিচ্ছন্নতা কর্মী, স্বাস্থ্য বিভাগের মশক কর্মীদের দ্বারা উত্তর শাহজাহানপুর আবাসিক এলাকা, ঝিল ও সংলগ্ন এলাকা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও মশার ঔষধ প্রয়োগ করা হয়।
পরিচ্ছন্নতা প্রোগ্রাম চলাকালীন সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রশাসক জনাব মো. শাহজাহান মিয়া বলেন, বর্ষার মৌসুমকে মাথায় রেখে ডেঙ্গু প্রতিরোধে আমরা দুটি স্তরে কার্যক্রম শুরু করেছি, প্রথমটি হলো নিয়মিত মশক নিধন ও পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম। দ্বিতীয়টি হল বিশেষ মশক নিধন ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন কার্যক্রম এবং জনগনকে সম্পৃক্তকরণ জনসচেতনতামূলক র্যালি যা পর্যায়ক্রমে ডিএসসিসির দশটি অঞ্চলে পরিচালনা করা হবে। ইতোমধ্যে যাত্রাবাড়ী ও ধানমন্ডিতে বিশেষ অভিযান পরিচালিত হয়েছে।
প্রশাসক আরো বলেন, নগরবাসীকে সচেতনত হতে হবে এবং বাসার ভেতরে, ফুলের টব, চৌবাচ্চা ও বারান্দায় জমে থাকা পানি তিনদিনের ভেতরে নিজ উদ্যোগে ফেলে দিতে হবে। ডেঙ্গু প্রতিরোধে সিটি করপোরেশন এবং নগরবাসীকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।
এ ছাড়াও অভিযান কার্যক্রমের অংশ হিসেবে স্থানীয় বাসিন্দাদের অংশগ্রহণে জনসচেতনতামূলক একটি র্যালি হয়।
পরিচ্ছন্নতা অভিযানে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. মো: জিল্লুর রহমান, সচিব মোহাম্মদ বশিরুল হক ভূঁঞা সহ সকল বিভাগীয় প্রধান এবং স্থানীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
পার্বত্য বান্দরবানের দুর্গম সীমান্তবর্তী এলাকার শিক্ষাবঞ্চিত প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মাঝে শিক্ষার আলো পৌঁছে দিতে ব্যতিক্রমী উদ্যোগ গ্রহণ করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। মানবিক সহায়তার হাত বাড়িয়ে বান্দরবানের দুর্গম ত্রীমতিপাড়ায় প্রথম প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করেছে বিজিবি।
আজ শুক্রবার বিজিবির আলীকদম ব্যাটালিয়ন (৫৭ বিজিবি) অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আব্দুল্লাহ আল মেহেদী দৈনিক বাংলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, পার্বত্য বান্দরবানের দুর্গম সীমান্তবর্তী এলাকার শিক্ষাবঞ্চিত প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মাঝে শিক্ষার আলো পৌঁছে দিতে বিজিবির আলীকদম ব্যাটালিয়নের (৫৭ বিজিবি) ব্যবস্থাপনায় ওয়াংরাইপাড়া বিওপির উদ্যোগে থানচির রেমাক্রি ইউনিয়নের দুর্গম সীমান্তবর্তী ত্রীমতি কারবারী পাড়ায় প্রথম প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করা হয়েছে।
শুক্রবার তিনি (অধিনায়ক) বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে বিদ্যালয়টির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। এ সময় তিনি ২৫ জন শিক্ষার্থীর মাঝে প্রাথমিক পাঠ্যবই, শিক্ষা উপকরণ, বিস্কুট ও চকলেট বিতরণ করেন। অনুষ্ঠানে এলাকার হতদরিদ্র আরও ২০টি পরিবারকে মশারি বিতরণ করা হয় এবং আলীকদম উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীদের এককালীন আর্থিক অনুদান প্রদান করা হয়।
উল্লেখ্য, অত্যন্ত দুর্গম এই ওয়াংরাইপাড়ায় আগে কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান না থাকায় এলাকার ৫টি পাড়ার ৪২টি পরিবারের শিশুরা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত ছিল। বিজিবির তত্ত্বাবধান ও আর্থিক সহায়তায় স্থানীয় কারবারী ও জনগণের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় নির্মিত এই বিদ্যালয়টি গতকাল উদ্বোধন করা হলো। বিজিবির এ উদ্যোগকে আন্তরিকভাবে স্বাগত জানিয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন স্থানীয় কারবারী ও সাধারণ জনগণ।
এ বিষয়ে আলীকদম ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক আরও বলেন, দুর্গম পার্বত্য অঞ্চলে বিজিবি কেবল সীমান্ত রক্ষার দায়িত্বই পালন করছে না বরং মানবিক ও সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে বিজিবি সবসময়ই বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক ও উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে পাহাড়ী ও বাঙালিদের মধ্যে সম্প্রীতির বন্ধন সুদৃঢ়করণে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে চলেছে। এই ধারাবাহিকতায় দুর্গম এই সীমান্তবর্তী এলাকায় শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করলো বিজিবি।
জেলার বেদানা লিচু জিআই পণ্যের তালিকায় এবার যুক্ত করা হয়েছে। অপূর্ব স্বাদ, পাতলা খোসা, রসালো শাঁস ও ছোট বীজের জন্য খ্যাত এই লিচু এবার পেল সরকারি স্বীকৃতি।
আজ শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০ টায় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক নুরে আলম এই তথ্য সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকার বেইলি রোডে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে বিশ্ব মেধা সম্পদ দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে দিনাজপুর জেলার পক্ষে জেলা প্রশাসক মো. রফিকুল ইসলাম জিআই সনদ গ্রহণ করেছেন।
তিনি জানান,ঢাকায় আয়োজিত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, শিল্প সচিব ওবায়দুর রহমান এবং বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। সেখানে আরও জানানো হয়, এ পর্যন্ত বাংলাদেশে ৫৫টি পণ্য জিআই স্বীকৃতি পেয়েছে, যার মধ্যে এবার একসঙ্গে নতুন ২৪টি পণ্য যুক্ত করা হলো।
জিআই স্বীকৃতি পাওয়ায় জেলার কৃষকরা যেমন উচ্ছ্বসিত, তেমনি দেশের কৃষি ভিত্তিক অর্থনীতিতে এই বেদানা লিচু নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলবে বলে এই জেলার সংশ্লিষ্ট সকলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।
এবারে জিআই তালিকা ভুক্ত পণ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে, দিনাজপুরের বেদানা লিচু, সুন্দরবনের মধু, মাগুরার হাজরাপুরী লিচু, ভোলার মহিষের দুধের দই, সিলেটের মণিপুরি শাড়ি, সিরাজগঞ্জের গামছা, এবং আরও কয়েকটি পণ্য।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. জাফর ইকবাল বলেন,নতুন করে জেলায় বেদানা লিচুর উৎপাদন বাড়াতে লিচু চাষীদের উৎসাহ দিয়ে সহযোগিতা করবেন কৃষি বিভাগ। যে পরিমাণ বেদানা লিচু এই জেলায় উৎপাদন হয়, এখন বাইরের দেশে রপ্তানির জন্য তিন গুণ লিচু চাষের পরিকল্পনা নেওয়া হবে বলে তিনি ব্যক্ত করেন।