ছোট-বড় অসংখ্য টিলা নিয়ে সিলেট। এসব টিলার পাদদেশে ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে প্রায় ১০ হাজার পরিবার। মৃত্যুঝুঁকি নিয়েই টিলার নিচে ঘর নির্মাণ করে বসবাস করছেন তারা। টানা বৃষ্টির কারণে সিলেটের পাহাড়টিলা ধসের শঙ্কা দেখা দিয়েছে। ফলে প্রাণহানির শঙ্কাও বেড়েছে। গত শনিবারই সিলেটের অন্তত ৪টি স্থানে টিলাধসের ঘটনা ঘটে। এতে নিহত হয়েছে এক শিশু। আহত হয়েছেন অন্তত ১০ জন। এ ছাড়া টিলা ধসে অন্তত ৪টি ঘর ভেঙে গেছে।
শনিবার সিলেট সদর উপজেলার খাদিম চা বাগান এলাকায় টিলা ধসে এক শিশু মারা যায়। এ ছাড়া নবীগঞ্জে টিলা ধসে আহত হয়েছেন দশজন। আর জৈন্তাপুর উপজেলায় টিলা ধসে তিনটি বাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। এ ছাড়া টিলা ধসের ঘটনা ঘটেছে নগরের আখালিয়ায়ও। পাঁচ দিন ধরে টানা বৃষ্টি হচ্ছে সিলেটে। বৃষ্টি হয়েছে রোববারও। ফলে বেড়েছে টিলা ধসের শঙ্কাও।
সিলেটে কী পরিমাণ মানুষ টিলার পাদদেশে বসবাস করেন সরকারিভাবে এর কোনো তালিকা নেই, তবে বেসরকারি হিসেবে প্রায় ১০ হাজার পরিবার টিলার পাদদেশে বসবাস করছে। মূলত কম ভাড়ায় কিংবা বিনা ভাড়ায় থাকতে পারার কারণেই দরিদ্র শ্রেণির লোকেরাই টিলার পাদদেশে ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করেন। আবার কিছু গোষ্ঠী টিলা কাটা বা দখলে রাখার জন্য টিলার পদদেশে ঘর বানিয়ে ভূমিহীনদের কম ভাড়ায় বরাদ্দ দেয়।
যদিও ২০১২ সালে সিলেটের পাহাড়-টিলা সংরক্ষণে উচ্চ আদালতের এক রায়ে টিলার ওপর ও পাদদেশে ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করা দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে পুনর্বাসনের নির্দেশনা দেয়া হয়।
সিলেট নগরের হাওলাদারপাড়া এলাকার একটি টিলার নাম জাগো টিলা। উঁচু এই টিলার একেবারে কিনারা ঘেঁষে সারিবদ্ধভাবে কয়েকটি ঘর। ওপরের ঘরগুলোর ঠিক নিচে, টিলার পাদদেশেও ঘর রয়েছে কয়েকটি। টিলার ওপরে ও ঢালে বসবাস করা সব পরিবারের বাসিন্দাই রয়েছেন ঝুঁকিতে। প্রাণের শঙ্কা নিয়েই বছরের পর বছর ধরে তারা বসবাস করে আসছেন এখানে।
জাগোটিলার ওপর ঘর বানিয়ে বাস করা শামসুল ইসলাম বলেন, ‘এটি সরকারি টিলা। ভাড়া দিতে হয় না। তাই আমরা এখানে ঘর বানিয়ে থাকি।’
ঝুঁকি সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘ভয় তো আছেই। বৃষ্টি দিলে ভয় আরও বেড়ে যায়। কিন্তু আমরা গরিব মানুষ। জায়গা কেনার সামর্থ্য নেই। ঘর ভাড়া করাও অনেক খরচের। তাই ঝুঁকি নিয়েই এখানে থাকি।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, টিলার ওপরে ও পাদদেশে বসবাসকারী বেশিরভাগ লোকজনই এ রকম দরিদ্র। স্থানীয় প্রভাবশালীরা টিলা কাটা ও দখলের জন্য দরিদ্রশ্রেণির লোকজনদের বসিয়েছেন। আবার কম টাকায় পেয়ে টিলার পাদদেশে জমি কিনেও ঘর বানিয়েছেন অনেকে।
বাংলাদেশ পরিবশে আইনবিদ সমিতির (বেলা) হিসাব মতে, সিলেট নগর, সদর, গোলাপগঞ্জ, বিয়ানীবাজার, ফেঞ্চুগঞ্জ, জৈন্তাপুর ও গোয়াইনঘাট উপজেলায় প্রায় ৪০০ পাহাড়-টিলা রয়েছে। এসব টিলার ওপর ও পাদদেশে অনেক পরিবার ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করে।
পরিবেশবাদী সংগঠন সেভ দ্য হেরিটেজ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টের প্রধান সমন্বয়ক আবদুল হাই বলেন, আমরা বছর তিনেক আগে একটা জরিপ চালিয়ে দেখেছিলাম জেলায় টিলার পাদদেশে প্রায় ১০ হাজার পরিবার ঝুঁকিপূর্ণভাবে বাস করছেন। এখন এ সংখ্যা আরও অনেক বাড়বে।
তিনি বলেন, বসবাসের জন্য এসব টিলার অনেকাংশ কেটে ফেলায় টিলাগুলোও দুর্বল হয়ে পড়েছে। ফলে বর্ষা মৌসুমে এগুলো ধসে পড়ে প্রাণহাণির ঘটনা ঘটে।
অপরিকল্পিতভাবে টিলা কাটা, বৃক্ষ উজাড় ও টিলার পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসের ফলে বৃষ্টি হলেই টিলা ধসে পড়ছে বলে মত এই পরিবেশকর্মীর।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নগরের হাওলাদারপাড়া, আখালিয়া, পীরমহল্লা ব্রাহ্মণশাসন জাহাঙ্গীরনগর, তারাপুর চা বাগান এবং নগরের উপকণ্ঠের বালুচর, বিমানবন্দর সড়ক, খাদিমপাড়া, খাদিমনগর, জোনাকী, ইসলামপুর মেজরটিলা, মংলিরপাড় এলাকায় বিভিন্ন টিলার পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করছে কয়েকশ পরিবার। এ ছাড়া জৈন্তাপুর, গোলাপগঞ্জ, বিয়ানীবাজার, গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় টিলা ও পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে সহস্রাধিক পরিবার।
কী পরিমাণ লোক টিলার ওপর ও পাদদেশে বসবাস করেন এমন তথ্য নেই জানিয়ে জৈন্তাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল বশিরুল ইসলাম বলেন, আমাদের উপজেলায় কয়েকটি ইউনিয়নে এ রকম টিলার পাদদেশে লোকজন বসবাস করেন। আমরা তাদের নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার জন্য মাইকিং করাচ্ছি। ইউনিয়ন পরিষদেও চেয়ারম্যানদের দিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছি।
ইউএনও বলেন, প্রতিবছরই বর্ষা মৌসুমে তাদের সরানোর চেষ্টা করা হয়। কিন্তু যারা টিলার পাদদেশে বসবাস করেন তারা সরতে চান না। কাউকে জোর করে সারালেও কিছুদিন পর তারা আবার ফিরে আসেন।
তবে টিলার পাদদেশে ঝুঁকি নিয়ে বসবাস ও প্রাণহানির জন্য প্রশাসনের গাফিলতিকে দায়ী করে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) সিলেটের সমন্বয়ক শাহ শাহেদা আক্তার বলেন, ২০১২ সালে আমাদের করা একটি রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে উচ্চ আদালত সিলেটে পাহাড়-টিলা কাটায় নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। একই সঙ্গে পাহাড়-টিলা সংরক্ষণ ও তার পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারী দরিদ্র মানুষজনকে পুনর্বাসনের নির্দেশনা দেন। কিন্তু ওই রায়ের ১১ বছর পেরিয়ে গেলেও আজ পর্যন্ত এ নির্দেশনা বাস্তবায়ন করা হয়নি।
শাহ শাহেদা আক্তার বলেন, কী পরিমাণ লোক ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করেন তারও কোনো হিসেব নেই জেলা প্রশাসনের কাছে। তাদের পুনর্বাসন বা টিলা সংরক্ষণে সরকারি কোনো উদ্যোগ বা প্রকল্প নেই। বরং টিলা ধ্বংস করে অনেক প্রকল্প আছে। সরকারের এই নিষ্ক্রিয়তার কারণেই বারবার এ দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটছে।
টিলার পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাকারীদের সরানো যায় না দাবি সিলেটের জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসানেরও। তিনি বলেন, ‘টিলার ওপরে ও পাদদেশে যারা বসবাস করেনম চেষ্টা করেও তাদের অন্যত্র সরানো যায় না। এ বছরও আমরা সব ইউএনওর মাধ্যমে মাইকিং করিয়ে টিলার পাদদেশে বসবাসকারীদের নিরাপদে সরে যেতে বলেছি। কিন্তু কেউ কথা শোনেনি।’
তিনি বলেন, এটা একটা বড় সমস্যা। তাদের কীভাবে সরানো যায় ও পুনর্বাসন করা যায়, এ নিয়ে ভাবছি। তাদের মধ্যে যদি কেউ ভূমিহীন থেকে থাকেন, তাহলে প্রশাসন বা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে তাদের সরকারের আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় নিয়ে আসার চেষ্টা করা হবে।
রাজধানীর উত্তরার জসিম উদ্দীন এভিনিউয়ের ‘প্যালেট গ্যালারী’-তে ঢাকা সেনানিবাসস্থ প্রয়াস স্কুলের আর্ট প্রশিক্ষক আফিফ আলভির একক চিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধন হয়েছে।
শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের নিয়ে কাজ করা এ নবীন শিল্পীর সৃজনশীল প্রদর্শনীতে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবদুল মোতালেব সাজ্জাদ মাহমুদ।
প্রদর্শনীতে স্থান পায় বৈচিত্র্যময় শিল্পকর্ম। এতে উঠে আসে মানবিকতা, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং সমকালীন জীবনের বহুরূপী অভিব্যক্তি। সাহসী রঙের ব্যবহার ও দৃঢ় ব্রাশস্ট্রোক এবং আবেগঘন উপস্থাপনা দর্শকদেরকে গভীরভাবে অনুপ্রাণিত করে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আনসার মহাপরিচালক বলেন—“বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুরা আমাদের দেশের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার অন্যতম ভিত্তি। সঠিক পরিচর্যা, মানসম্মত শিক্ষা এবং উপযুক্ত প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করতে পারলে তারাই দক্ষ মানবসম্পদে পরিণত হবে এবং জাতির অগ্রযাত্রায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। সমাজের প্রতিটি মানুষের সম্মিলিত সহযোগিতাই পারে তাদের অন্তর্নিহিত শক্তিকে জাগ্রত করতে।”
তিনি আরও বলেন, আনসার বাহিনীর বহুল প্রত্যাশিত ‘সঞ্জীবন প্রকল্প’—গ্রামীণ ও প্রান্তিক পর্যায়ের প্রতিভা বিকাশের একটি সুগঠিত প্ল্যাটফর্ম—আলভির মতো উদীয়মান শিল্পীদের দক্ষতা বিকাশে ইতিমধ্যে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করছে।
“সঞ্জীবন কার্যক্রম বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং তাদের সমাজে সমানভাবে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ নিশ্চিত করছে,” বলে—তিনি জানান।
চিত্র প্রদর্শনী উদ্বোধনের এই আয়োজনে শিল্পপ্রেমী এবং বিশিষ্ট অতিথিদের উপস্থিতিতে প্রদর্শনীটি আরও প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে। এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জনাব মাসরুর আরেফীন, ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও সিইও, দ্য সিটি ব্যাংক; কর্নেল মোঃ আলতাফ আলী, পিএসসি, নির্বাহী পরিচালক ও অধ্যক্ষ, প্রয়াস স্কুল, এবং মোঃ গোলাম রব্বানী, সভাপতি, বেক্সা।
যথাযোগ্য মর্যাদা ও নানান আয়োজনের মধ্যদিয়ে ‘আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবক দিবস-২০২৫’ উদযাপন করেছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স। শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) নারায়ণগঞ্জের পূর্বাচলে অবস্থিত ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স মাল্টিপারপাস ট্রেনিং গ্রাউন্ডে এই কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।
এতে প্রধান অতিথি ছিলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মোঃ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মোঃ খোদা বখস চৌধুরী, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহাম্মদ জাহেদ কামাল। এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন এনডিসি, এএফডব্লিউসি, পিএসসিসহ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও ফায়ার সার্ভিস অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
দেশের ৮ বিভাগ থেকে আগত স্বেচ্ছাসেবকদের নিবন্ধনের মাধ্যমে সকাল ৮ টায় দিনের কার্যক্রম শুরু হয়ে ৯টায় স্বেচ্ছাসেবক ও ফায়ার সার্ভিস সদস্যদের অংশগ্রহণে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর সকাল ১০টায় পবিত্র ধর্মগ্রন্থ পাঠের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের আলোচনা পর্ব শুরু হয়।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মোঃ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, ভলান্টিয়ারদের অংশগ্রহণে ভূমিকম্প পরবর্তী উদ্ধার কার্যক্রমের বাস্তব মহড়া উপভোগ শেষে প্রধান অতিথির ভাষণে সমবেত স্বেচ্ছাসেবকদের উদ্দেশে বলেন, ‘আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবক দিবস হলো স্বেচ্ছাসেবকদের সুসংগঠিত করার, তাদের অবদানকে স্বীকৃতি দেওয়ার, স্বেচ্ছাসেবার কাজকে প্রচার করার এবং স্বেচ্ছাসেবকদের প্রচেষ্টাকে সমর্থন ও উৎসাহিত করার একটি সুবর্ণ সুযোগ।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, আমি এই দিবস প্রতিপালন অনুষ্ঠানে প্রথমেই আমাদের দেশসহ বিশ্বের সকল দেশের ভলান্টিয়ারদের প্রতি আন্তরিক অভিনন্দন ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি। ’দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় স্বেচ্ছাসেবকদের ভূমিকার গুরুত্ব তুলে ধরে ভবিষ্যতে সকলকে আরও দক্ষতা ও আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানাই।
তিনি আরও বলেন, ‘আমি আশা করি, স্বেচ্ছাসেবক প্রশিক্ষণের পাশাপাশি নিয়মিতভাবে তাদের নিয়ে এ ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন ও বিভিন্ন দিবস উদযাপন, মহড়া এবং গণসংযোগ কার্যক্রমে তাদের অংশগ্রহণ ইত্যাদির মাধ্যমে স্বেচ্ছাসেবায় উদ্বুদ্ধ করা এবং প্রশিক্ষণ-লব্ধ জ্ঞানকে শাণিত করার চেষ্টা অব্যাহত রাখবে।’
অনুষ্ঠানে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহাম্মদ জাহেদ কামাল, এনডিসি, এএফডব্লিউসি, পিএসসিসহ সারা দেশ থেকে বাছাইকৃত ২২ জন ভলান্টিয়ারকে কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ ক্রেস্ট ও সনদপত্র প্রদান করেন।
মহাপরিচালক তাঁর প্রদত্ত ভাষণে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় স্বেচ্ছাসেবকদের নিরলস ও সাহসী অবদানের প্রশংসা করে দেশের সকল দুর্যোগে স্বেচ্ছাসেবকদের দেশপ্রেম, আন্তরিকতা ও নির্ভীক অংশগ্রহণ অব্যাহত থাকবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
আলোচনায় স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশিক্ষণ, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) লে. কর্নেল এম এ আজাদ আনোয়ার, পিএসসি।
উক্ত অনুষ্ঠানে দু্ই শতাধিক স্বেচ্ছাসেবক ছাড়াও ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক, উপপরিচালক, ট্রেনিং কমপ্লেক্সের অধ্যক্ষসহ বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী উপস্থিত ছিলেন। সবশেষে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবক দিবস-২০২৫ উদযাপন কার্যক্রম শেষ হয়।
মিথ্যা ঘোষণায় আনা পণ্য খালাসে বাধা দেওয়া ও রাজস্ব ফাঁকি ঠেকাতে নেওয়া উদ্যোগে রুষ্ট ‘একটি পক্ষ’ চট্টগ্রামে দুই কাস্টমস কর্মকর্তার ওপর হামলা করে থাকতে পারে বলে মনে করছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআর।
শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) সংস্থাটি এক বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, রাজস্ব ফাঁকি রোধে বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করায় নিষ্ঠাবান কর্মকর্তারা আক্রমণের শিকার হয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) সকাল ১০টার পরে চট্টগ্রামের সিডিএ আবাসিক এলাকায় চট্টগ্রাম কাস্টমসের দুই কর্মকর্তাকে বহনকারী প্রাইভেট কারে হামলা চালায় মোটরসাইকেলে করে আসা তিনজন। তারা চাপাতি দিয়ে গাড়ির জানালা ভাঙচুর করে এবং গুলি করার হুমকি দেয়।
চট্টগ্রাম কাস্টমসের এআইআর শাখার রাজস্ব কর্মকর্তা (এআরও) আসাদুজ্জামান খান এবং সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা (এআরও) বদরুল আরেফিন ভূইয়া সেই গাড়িতে করে কর্মস্থলে যাচ্ছিলেন।
আসাদুজ্জামান বলেন, তারা আমাদের উদ্দেশ্য করেই গাড়িতে হামলা করেছে বলে মনে করছি। বিভিন্ন সময়ে আমদানি নিষিদ্ধ পণ্য আটক করায় একটি পক্ষ ক্ষুব্ধ হয়ে মোবাইল ফোনে আমাকে হুমকিও দিয়েছে। এ ঘটনায় আমি গত ৫ অক্টোবর বন্দর থানায় জিডিও করেছি।
সম্প্রতি প্রায় ১০ কোটি টাকা মূল্যের আমদানি নিষিদ্ধ ঘনচিনি, পপি বীজ আর বিপুল বিদেশি সিগারেট জব্দ করে চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। গত মে মাসে ৩০ কোটি টাকার নিষিদ্ধ সিগারেটের পণ্য চালান আটক করা হয়। এতে ক্ষুব্ধ একটি পক্ষ বিভিন্ন সময়ে কাস্টমস কর্মকর্তারকে মোবাইল ফোনে ‘হুমকি দেয়’ বলে অভিযোগ রয়েছে।
এনবিআরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, চট্টগ্রাম বন্দরের বিভিন্ন শেডকেন্দ্রিক এক পণ্যের আড়ালে অন্য খালাস নেওয়ার জালিয়াতচক্র মিথ্যা ঘোষণার মাধ্যমে আনা বিভিন্ন কসমেটিক পণ্যের চালান আটক করায় গত ৫ অক্টোবর রাজস্ব কর্মকর্তা আসাদুজ্জামানকে হোয়াটসঅ্যাপে ফোন করে ভয়ভীতি দেখানোসহ প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়। ঘটনার পরদিন ৬ অক্টোবর তিনি বন্দর থানায় জিডি করেন।
চট্টগ্রাম কাস্টমসের উপকমিশনার তারেক মাহমুদ বলেন, বন্দরে শেডকেন্দ্রিক কিছু সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে, যারা মিথ্যা ঘোষণায় অথবা অবৈধভাবে অন্য পণ্য আমদানি করে খালাসের সঙ্গে যুক্ত। গত দুই মাসে এ ধরনের বেশকিছু চালান কাস্টমস কর্তৃপক্ষ আটকে দিয়েছে।
আক্রমণের শিকার দুই কাস্টমস কর্মকর্তা এসব প্রক্রিয়ার সঙ্গে ছিলেন জানিয়ে তিনি বলেন, অবৈধ কাজের সঙ্গে যুক্ত সিন্ডিকেট সদস্যরা এতে সুবিধা করতে পারছিল না। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে এ ঘটনা ঘটাতে পারে বলে আমাদের ধারণা।
তারেক মাহমুদ নিজেও বিভিন্ন সময়ে ফোনে হুমকি পেয়েছেন দাবি করে বলেন, কাস্টমসের এআইআর শাখার কর্মীরা চালান আটকের ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত। তারাও বিভিন্ন সময়ে হুমকি পেয়েছেন। কাস্টমস কর্মকর্তাদের ওপর হামলার ঘটনায় বৃহস্পতিবার রাতেই মামলা হয়েছে।
জুলাই আন্দোলনে দেশের অসংখ্য শিক্ষার্থী জনতাকে হত্যা করেছে বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার। আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে প্রমাণিত হয়েছে সরকারের গণহত্যার চিত্র। তাই জুলাই হত্যাকারীদের ফিরিয়ে আনাই আমাদের মূল লক্ষ্য।
শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) মাগুরায় আন্ত:কলেজ ফুটবল টুর্নামেন্ট এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এসব কথা বলেন।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে প্রেস সচিব বলেন, ১৫ ই ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচন হবে ইনশাআল্লাহ, এই নির্বাচন কে বানচাল করতে কোন কনোসপ্রেসি কাজ করবে না।
এ সময় তিনি আরোও বলেন, খালেদা জিয়া এখন শুধু বিএনপি নেত্রী নয় তিনি এখন ন্যাশনাল লিডার হিসেবে সর্বজন স্বীকৃত। তারেক রহমানের দেশে আসতে সরকারের কোন বাধা নেই, এটি তার এবং তাদের দলের ব্যাপার।
শফিকুল আলম আরো বলেন, আর ৭০ দিনের মতো আমরা আছি এর মধ্যে যদি ফিরিয়ে আনা সম্ভব না হয় তাহলে যারা ক্ষমতায় আসবে তারা ফিরিয়ে আনার কাজ টি অব্যাহত রাখবেন আশা করি।
এ সময় তিনি জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগের দোসর হিসেবে আখ্যা দেন। বাউল শিল্পীদের উপর হামলাসহ সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর প্রদান করেন।
যুব ও ক্রিড়া মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে মাগুরা মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ে মাঠে অনুষ্ঠিত আন্ত: কলেজ ফুটবল টুর্নামেন্টের উদ্বোধনীতে জেলা ক্রিড়া কর্মকর্তা বিএম এ সাজিন ইসরাত সভাপতিত্ব করেন।
এ খেলায় ৯ টি দল অংশ গ্রহণ করেছে। আগামী ১২ ডিসেম্বর ফাইনাল খেলার মধ্যে দিয়ে আন্ত: কলেজ ফুটবল টুর্নামেন্ট শেষ হবে।
বরিশাল বিসিক শিল্পনগরীর খানসন্স টেক্সটাইল মিলের সুতা তৈরির একটি কারখানায় হঠাৎ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে।
শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) দুপুরে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হয় বলে ধারণা করা হচ্ছে। মুহূর্তেই আগুন কারখানার বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পড়ায় আতঙ্কে দেড় শতাধিক শ্রমিক বাইরে বের হয়ে আসেন।
শ্রমিক আসমা জানান, কারখানার ভেতরে এসি মেরামতের সময় একটি তারে শর্ট সার্কিট হয়। এরপর দ্রুত আগুন ছড়িয়ে পড়ে। একই অভিযোগ করেন আরেক শ্রমিক নাদিম। তিনি বলেন, দুপুরের বিরতির আগে আগুন লাগে, কিন্তু অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র অচল থাকায় আগুন নেভাতে প্রথমদিকে চরম বেগ পেতে হয়।
খবর পেয়ে বরিশাল ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে প্রায় আধা ঘণ্টার প্রচেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক মো. ফারুক হোসেন জানান, বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকেই আগুনের সূত্রপাত হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। তবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণে সময় লাগবে।
কারখানার ম্যানেজার যতীন্দ্রনাথ মিস্ত্রি জানান, আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে শ্রমিকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। দ্রুত ফায়ার সার্ভিসে খবর দেওয়ায় বড় ধরনের ক্ষতি থেকে রক্ষা পাওয়া গেছে।
মাগুরা সদর উপজেলার কুল্লিয়া গ্রামে সামাজিক দলাদলি ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় অন্তত ৩৫ জন আহত হয়েছে।
শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) ভোর ৬টার দিকে এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে লাঠিসোঁটা ও ইটপাটকেল নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে উভয় পক্ষের লোকজন। আহতদের মধ্যে বেশ কয়েকজনকে গুরুতর অবস্থায় মাগুরা ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে, বাকিরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা মো. সোহেল রানা জানান, কুচিয়ামোড়া ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার আজহার আলী আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। সামাজিক আধিপত্যকে কেন্দ্র করেই দীর্ঘদিন ধরে দুটি পক্ষের বিরোধ চলছিল। সাম্প্রতিক কিছু ঘটনার জের ধরে সকালে বড় ধরনের সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়।
মাগুরা ২৫০ শয্যা হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসক ডা. মো. মামুন উর রশীদ বলেন, “গ্রাম্য সামাজিক দলাদলিকে কেন্দ্র করে সকালে প্রায় ৩৫ জন আহত রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসে। তবে কারো শরীরে গুরুতর জখমের চিহ্ন নেই। সবাই চিকিৎসা নিচ্ছেন ও আশঙ্কামুক্ত।”
সংঘর্ষের খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছালেও পরিস্থিতি তাৎক্ষণিকভাবে নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যর্থ হয়। পরে যৌথবাহিনী ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে।
মাগুরা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ আয়ুব আলী জানান, “ঘটনার খবর পেয়ে আমরা দ্রুত পুলিশ পাঠাই। বর্তমানে পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।”
তিনি আরও জানান, এ ঘটনায় এখনো কোনো মামলা দায়ের না হলেও তদন্ত চলছে।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (জিএমপি) আট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের (ওসি) রদবদল করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) জিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ জাহিদুল হাসান স্বাক্ষরিত অফিস আদেশে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
বদলিকৃত পুলিশ কর্মকর্তাদের মধ্যে জিএমপি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মেহেদী হাসানকে টঙ্গী পূর্ব থানায়, টঙ্গী পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. হারুন-অর-রশিদকে বাসন থানায়, কাশিমপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ মনিরুজ্জামানকে গাছা থানায়, পূবাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. খালিদ হাসানকে কাশিমপুর থানায়, বাসন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. শাহীন খানকে টঙ্গী পশ্চিম থানায়, গাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আমিনুল ইসলামকে সদর থানায়, ডিবি (উত্তর) বিভাগ মোহাম্মদ জালাল উদ্দীন মাহমুদকে কোনাবাড়ী থানায়, টঙ্গী পূর্ব থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আতিকুর রহমানকে পূবাইল থানায়, টঙ্গী পূর্ব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. ওহিদুজ্জামানকে ডিবি উত্তর এবং কোনাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. সালাহ উদ্দিনকে ডিবি দক্ষিণে বদলি করা হয়েছে।
শ্রমিকদের অধিকার ও কর্মস্থলের নিরাপত্তা জোরদার করতে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) তিনটি কনভেনশন অনুসমর্থন এক ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত বলে অভিহিত করেছেন শ্রম ও কর্মসংস্থান এবং নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন।
বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) তিনটি কনভেনশন একসঙ্গে অনুসমর্থন আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্যাপন করলো শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং আইএলও বাংলাদেশ।
শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং আইএলও বাংলাদেশের যৌথ আয়োজনে ঢাকার ফরেন সার্ভিস একাডেমি স্টেট গেস্ট হাউস ‘সুগন্ধা’ তে এই উদ্যাপন অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন শ্রম ও কর্মসংস্থান এবং নৌপরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন।
তিনি বলেন, ‘এ অর্জন কেবল একটি আইনি মাইলফলক নয়-এটি বিশ্বের কাছে একটি স্পষ্ট বার্তা যে আমাদের শ্রমিকদের মর্যাদা, নিরাপত্তা ও অধিকার রক্ষায় অন্তর্বর্তী সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ।’
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের এলডিসি উত্তরণের প্রস্তুতির সময়ে এই সিদ্ধান্তটি কৌশলগত ও দূরদর্শী, যা বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের নৈতিক ও টেকসই উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি প্রকাশ করে।
উপদেষ্টা জানান, তিনটি কনভেনশনের মধ্যে কনভেনশন নং ১৫৫ (পেশাগত নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য) ও কনভেনশন নং ১৮৭ (পেশাগত নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য সংক্রান্ত প্রচারমূলক কাঠামো) আইএলও’র মৌলিক কনভেনশন। এর সঙ্গে কনভেনশন নং ১৯০ (কর্মক্ষেত্রে সহিংসতা ও হয়রানি প্রতিরোধ) অনুসমর্থনের মাধ্যমে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র দেশ হিসেবে আইএলও’র ১০টি মৌলিক কনভেনশন অনুস্বাক্ষরকারী দেশে পরিণত হয়েছে।
শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. সানোয়ার জাহান ভূঁইয়া কনভেনশন বাস্তবায়নের ওপর জোর দেন।
তিনি বলেন, ‘কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের কার্যক্রম আরো জোরদার করা হবে, যাতে শ্রমিকদের পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়।’
ইউরোপীয় ইউনিয়নের অ্যাম্বাসেডর মাইকেল মিলার বলেন, বাংলাদেশের তিনটি আন্তর্জাতিক কনভেনশন অনুসমর্থন এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বৃহৎ বাজার তৈরির উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসনীয়। তিনি আশা প্রকাশ করেন, এলডিসি থেকে উত্তরণের পরবর্তী সময়েও বাংলাদেশ বৈশ্বিক বাজারে তার সুনাম অক্ষুণ্ন রাখতে সক্ষম হবে।
তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও সহযোগিতার ক্ষেত্রকে সুদৃঢ় করতে বাংলাদেশের সক্রিয় ভূমিকা ইউরোপীয় ইউনিয়ন অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে।
তিনি দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরো জোরদার করতে উভয় পক্ষের সম্মিলিত উদ্যোগ অব্যাহত রাখার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।
বাংলাদেশে আইএলও’র কান্ট্রি ডিরেক্টর মি. ম্যাক্স টুনোন এই অনুসমর্থনকে ‘একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত’ আখ্যায়িত করেন।
উল্লেখ্য, গত ২২ অক্টোবর যমুনা স্টেট গেস্ট হাউসে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের উপস্থিতিতে শ্রম উপদেষ্টা তিনটি কনভেনশনের অনুসমর্থনপত্রে স্বাক্ষর করেন।
পরবর্তীতে ২১ নভেম্বর আইএলও’র জেনেভাস্থ সদর দপ্তরে ৩৫৫তম গভর্নিং বডি অধিবেশনে আনুষ্ঠানিকভাবে আইএলও মহাপরিচালকের কাছে অনুস্বাক্ষরের এ দলিল হস্তান্তর করা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী, বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শ্রম বিষয়ক অ্যাটাসে লিনা খান, টিসিসির সদস্যবৃন্দ, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, সচিব ও অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
দেশে যখনই ন্যায়বিচার ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন অনিবার্য হয়ে দাঁড়িয়েছে, তখনই তরুণরা সামনের সারিতে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে তরুণদের বীরত্বপূর্ণ ভূমিকার প্রশংসা করে আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল এমন মন্তব্য করেছেন।
শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আয়োজিত ষষ্ঠ জেসাপ কর্মশালার উদ্বোধনকালে তিনি একথা বলেন।
এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মাঝে আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের আবাসিক আইন উপদেষ্টা সেরা সেথলিকাই, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ড. ডেভ ডাওল্যান্ড, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব ল-এর সহকারী অধ্যাপক মো. মোস্তফা হোসেন, আন্তর্জাতিক আইন ছাত্র সমিতির (আইএলএসএ) জাতীয় সমন্বয়কারী নূরান চৌধুরী, হার্থ বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক পরব নাসের সিদ্দিক এবং জেসাপ বাংলাদেশের জাতীয় প্রশাসক মাইমুনা সৈয়দ আহমেদ।
আইন উপদেষ্টা বলেন, মহান জুলাই অভ্যুত্থানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যে বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে তা গর্বের সঙ্গে স্মরণ করছি। তবে এটি নতুন নয়; আমাদের তরুণরা সবসময় দেশে ন্যায়বিচার ও গণতন্ত্রের আন্দোলনের অগ্রভাগে ছিল।
তিনি আরও বলেন, এখানে সমবেত হয়ে তারা প্রমাণ করেছে যে কেবল অধিকার রক্ষায় নয়, বরং আদালত কক্ষে এবং বিশ্ব মঞ্চে ন্যায়বিচারের পক্ষে ওকালতি করতেও সক্ষম।
ড. আসিফ বলেন, এ বছর ৫২টি বিশ্ববিদ্যালয় এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করছে। আন্তর্জাতিক আইন শেখা এবং বিতর্কের জন্য জাতীয় যে আবেগের প্রতিফলন এটি। জেসাপ বাংলাদেশ এখন বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম জেসাপ যোগ্যতা অর্জনকারী প্রতিযোগিতা। এই অর্জন আমাদের শিক্ষার্থী, কোচ, আয়োজক এবং প্রাণবন্ত মুট কোর্ট সমাজের নিষ্ঠার প্রতিফলন।
ড. আসিফ নজরুল বলেন, জেসাপ কেবল একটি প্রতিযোগিতা নয়। এটি কঠোর গবেষণা দক্ষতা, স্পষ্ট লেখা, প্ররোচনামূলক অ্যাডভোকেসি এবং কার্যকর দলবদ্ধতা তৈরি করে।
তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, কর্মশালা তরুণদের দক্ষতা আরও তীক্ষ্ণ করবে এবং ন্যায়বিচার ও আইনের শাসনের প্রতি তাদের অঙ্গীকারকে আরও শক্তিশালী করবে।
জেসাপ বাংলাদেশ এবং ইন্টারন্যাশনাল ল স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন (আইএলএসএ), মার্কিন বিচার বিভাগ, বিদেশি প্রসিকিউটরিয়াল ডেভেলপমেন্ট, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব ল এবং হার্থ বাংলাদেশের সহযোগিতায় ‘মে ইট প্লিজ দ্য কোর্ট: দ্য কেস কনসার্নিং দ্য ক্রাফট অফ জেসাপ অ্যাডভোকেসি’ শীর্ষক দুদিনব্যাপী ষষ্ঠ জেসাপ কর্মশালা আয়োজন করেছে।
কর্মশালাটি অ্যাডভোকেসি দক্ষতা বৃদ্ধি এবং ফিলিপ সি জেসাপ আন্তর্জাতিক আইন মুট কোর্ট প্রতিযোগিতার (জেসাপ) ১০ম বাংলাদেশ যোগ্যতা অর্জনের রাউন্ডে সফলভাবে অংশগ্রহণের জন্যশিক্ষার্থীদের প্রস্তুত করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। উল্লেখ্য, জেসাপ মুটিংকে আন্তর্জাতিক আইন মুট কোর্টের ‘বিশ্বকাপ’ হিসেবে পরিচিত।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে উপজেলার পিয়ারপুর ইউনিয়নের পচাভিটা এলাকার একটি চায়ের দোকানে চা খাওয়ার সময় রফিককে লক্ষ্য করে গুলি চালায় দুর্বৃত্তরা।
স্থানীয় ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুটি মোটরসাইকেলে আসা কয়েকজন অস্ত্রধারী রফিককে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। গুলি করার পর পালিয়ে যাওয়ার সময় চায়ের দোকানে থাকা লোকজন তাদের ধাওয়া করলে দুর্বৃত্তরা এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়ে। এতে আরও দুইজন গুলিবিদ্ধ হন। ঘটনাস্থলেই রফিক ইসলামের মৃত্যু হয়।
নিহত রফিক ইসলাম ওই গ্রামের মতআলী মন্ডলের ছেলে। আহতরা হলেন—একই গ্রামের রবজেল ফরাজি (৫২) ও ইউসুফ হোসেন (৫৫)।
এ বিষয়ে দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোলাইমান শেখ বলেন, “দুর্বৃত্তদের ছোড়া গুলিতে রফিক নামের একজন নিহত হয়েছেন এবং দুইজন আহত হয়েছেন। মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। বিস্তারিত তদন্ত শেষে জানানো হবে।”
কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলায় বাইশ, কুডি চিকুন, চৌত্রিশ, পাইজম ও আমন জাতের ধান কাটা শুরু হয়েছে। চলতি মৌসুমে এসব জাতের ধানের বাম্পার ফলনে মুখরিত হয়েছে গ্রামের মাঠ-ঘাট। সোনালি ধানে ভরে উঠেছে কৃষকের স্বপ্ন। মাঠ থেকে ধান কেটে ঘরে তোলার ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। ধান কাটার পর একই জমিতে শীতকালীন সবজি আবাদেও নেমে পড়েছেন তারা। কৃষিবিভাগ স্বল্পমেয়াদি ফসল চাষে কৃষকদের উৎসাহ ও পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে।
কৃষি অফিসারদের মাধ্যমে জানা গেছে, কুমিল্লা সদর উপজেলার পাচথুবী, আমড়াতলী, দুর্গাপুর উত্তর-দক্ষিণ, কালিরবাজার, জগন্নাতপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় রোপা আমন ধানের শোভায় রঙিন হয়ে উঠেছে বিস্তীর্ণ খেত। জেলার মাটি নানা ধরনের ফসল চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। বিশেষ করে স্বল্পমেয়াদি ফসল চাষ করে অতিরিক্ত লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা। দেবিদ্বার, চান্দিনা, দাউদকান্দি, বরুড়া, মুরাদনগর, বুড়িচং, মনোহরগঞ্জ, লাকসাম, মেঘনা, হোমনা, তিতাস, লাঙ্গলকোট, চৌদ্দগ্রাম, সদর দক্ষিণ ও লালমাই উপজেলার হাজার হাজার হেক্টর জমিতে এবার চোখে পড়ার মতো সোনালি ধান পাকার দৃশ্য দেখা যাচ্ছে। কৃষকদের মুখে হাসি ফুটেছে।
তবে কোথাও কোথাও কৃষকের মুখে উদ্বেগও রয়েছে। ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার শশিদলের কৃষক তাজু মেম্বার ও তার ছেলে মাসুদ রানা অপু জানান, ইঁদুরের আক্রমণে তাদের সোনার ফসলের প্রায় অর্ধেক নষ্ট হয়েছে।
স্থানীয় তাজু মেম্বারের জমিতে কাজ করা নেত্রকোনা ও ময়মনসিংহের শ্রমিক সম্রাট, হৃদয়, রাছেল ও তাজুল জানায়, ৩০০ শতকের মধ্যে ২৫০ শতকে বাম্পার ফলন হলেও ৫০ শতক জমির ধান ইঁদুর নষ্ট করে দিয়েছে। তবুও গড়ে লাভ থাকবে বলে তারা আশা করছেন।
প্রতি একরে ৬০-৭০ হাজার টাকা খরচ হলেও বাম্পার ফলন ও ভালো বিক্রয়মূল্য কৃষকদের মুখে হাসি এনেছে।
এই অঞ্চলে এবার রোপা আমন, বাইশ, চৌত্রিশ, কুডি চিকুন ও পাইজম জাতের ধানের চাষ খুব ভালো হয়েছে বলে কৃষকরা জানান।
জেলা কৃষিবিভাগ জানায়, চলতি মৌসুমে বন্যা বা বড় কোনো দুর্যোগ না থাকায় কৃষকরা আমনসহ অন্যান্য জাতের ধানে বাম্পার ফলনের আশায় উজ্জীবিত। ইতোমধ্যে ধানিগোল্ড, সেন্টু পাজাম, ব্রিধান-১০৩, রঞ্জিত, কুডি চিকুন, পাইজম, চৌত্রিশসহ আগাম জাতের ধান কাটা শুরু হয়েছে। কৃষকরা জানাচ্ছেন, প্রতি ৫ শতাংশ জমিতে ৩ মণের বেশি ধান মিলছে।
ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার শশিদল ইউনিয়নের কৃষক তাজু মেম্বার, তার ছেলে অপু, আশরাফ মিয়া, ঈসমাইল, আবুল কাশেম, খালেক ও মানরার রেজাউল জানায়, তারা এ বছর রোপা আমন, পাইজম, কুডি চিকুন ও চৌত্রিশ জাতের ধান চাষ করেছেন। এ জাতের ধান অন্যান্য জাতের তুলনায় ১৫-২০ দিন আগে কাটা যায় এবং ফলনও আশানুরূপ পাওয়া যাচ্ছে- প্রতি ৫ শতাংশে প্রায় ৩ মণ।
হরিমঙ্গল এলাকার কৃষকরাও জানান, আগাম ধান কাটার পরই তারা খেতে সরিষার বীজ বপন করেছেন।
জেলা কৃষি অধিদপ্তরের উপপরিচালক মিজানুর রহমান বলেন, ‘দেশের খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ ও উদ্বৃত্ত জেলাগুলোর মধ্যে কুমিল্লা অন্যতম। চলতি মৌসুমে জেলায় আমনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১,১৪,৮৩০ হেক্টর; আবাদ হয়েছে ১,১৪,৯৭৫ হেক্টরে।’
ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জানান, এ বছর উপজেলায় ৭ হাজার ৬৬০ হেক্টর জমিতে আমন চাষ হয়েছে। ২ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৭ হাজার হেক্টরের বেশি জমির ধান কাটা সম্পন্ন হয়েছে। রোগ-পোকামাকড়ের আক্রমণ কম থাকায় ফলন অত্যন্ত ভালো।
তিনি আরও বলেন, স্বল্পমেয়াদি ধানের আবাদ বেশি হওয়ায় ধান কাটার পর একই জমিতে সরিষা, আলু ও শাকসবজি চাষের সুযোগ পাচ্ছেন কৃষকরা। এতে কৃষকের বাড়তি লাভ যেমন নিশ্চিত হচ্ছে, তেমনি কৃষিতে আসছে বৈচিত্র্য।
বাম্পার ফলনে উচ্ছ্বসিত ব্রাহ্মণপাড়ার কৃষকরা নতুন ফসলের আশায় আবারও মাঠমুখী হয়ে উঠেছেন।
স্থানীয় কৃষকরা জানায়, এ বছর আবহাওয়া অনুকূল থাকা, সময়মতো বৃষ্টি এবং আধুনিক কৃষিপ্রযুক্তির ব্যবহার উল্লেখযোগ্যভাবে ফলন বাড়িয়েছে। অনেক কৃষক জানিয়েছেন, গত বছরের বর্ষার প্লাবনে জমিতে কোনো ধান ছিল না তাই এবার তাদের উৎপাদন তুলনা বৃদ্ধি পেয়েছে। এবারের উৎপাদন প্রায় দ্বিগুণ। এতে তাদের মনে নতুন আশার সঞ্চার হয়েছে।
আরেক কৃষক বলেন, এইবার আল্লাহর রহমতে ধানের ফলন বাম্পার হয়েছে। যদি সরকার সহযোগিতা করে আর আমরা ধানের প্রকৃত দাম পাই, তাহলে এই অঞ্চলে কৃষিতে এক নতুন বিপ্লব ঘটবে।
কৃষি বিভাগও মাঠ পর্যায়ে সুখবর নিশ্চিত করেছে। তারা বলছে, সার, বীজ ও পরামর্শ সরবরাহের ফলে কৃষকদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ছে এবং ফলনও তাৎপর্যপূর্ণভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
তবে কৃষকদের প্রধান দাবি উৎপাদনের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা। বাজারে সঠিক দাম না পেলে চাষাবাদের আগ্রহ কমে যাওয়া এবং ঋণের বোঝা বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
অন্যদিকে, স্থানীয় বিজয়পুর বাজারে নতুন ধান উঠতে শুরু করায় আমন মৌসুম ঘিরে সক্রিয় হয়ে উঠেছে ধান ব্যবসায়ী ও মিল মালিকরা। ক্রয়-বিক্রয়ের জমজমাট পরিবেশ অর্থনীতিতেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর কর্তৃক দুপুরে মাগুরা শ্রীপুর উপজেলার লাঙ্গলবাঁধ বাজার এলাকায় বিশেষ অভিযান পরিচালিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার এ অভিযানে তেল, চাউল, বিভিন্ন ভোগ্যপণ্য, সার-কীটনাশক এবং মুদি দোকানসহ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তদারকি করা হয়।
অভিযানকালে মেসার্স মা কালী স্টোর–এ মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য সংরক্ষণ ও বিক্রয়, সঠিকভাবে মূল্যতালিকা প্রদর্শন না করা, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাদ্যপণ্য রাখা, এবং মেয়াদ ও মূল্যবিহীন পণ্য বিক্রয়সহ বিভিন্ন অপরাধ প্রমাণিত হয়। এ কারণে দোকানটির মালিক অমল কুন্ডুকে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ এর ৩৭ ও ৪৩ ধারায় ৫,০০০ টাকা জরিমানা করা হয়।
একই ধরনের অপরাধে মেসার্স অনন্ত কুন্ডু অ্যান্ড সন্স–এর মালিক অসীম কুমার কুন্ডুকে আইনটির ৪৩ ও ৫১ ধারায় ৫,০০০ টাকা এবং মেসার্স অমিত স্টোর–এর মালিক অমিত কুন্ডুকে ৩৮ ও ৪৩ ধারায় ৫,০০০ টাকা জরিমানা করা হয়।
এতে মোট ৩টি প্রতিষ্ঠানকে ১৫,০০০ টাকা জরিমানা করা হয় এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের অনিয়ম না করার জন্য সবাইকে সতর্ক করা হয়।
পরবর্তীতে অন্যান্য দোকান ও প্রতিষ্ঠানের তদারকি করা হয়। এ সময় ব্যবসায়ীদের ন্যায্যমূল্যে পণ্য বিক্রয়, মূল্যতালিকা প্রদর্শন, স্বাস্থ্যসম্মতভাবে খাদ্যপণ্য সংরক্ষণ এবং ক্রয়-বিক্রয় ভাউচার সংরক্ষণ সম্পর্কে নির্দেশনা প্রদান করা হয়।
অভিযান পরিচালনা করেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, মাগুরা জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক সজল আহম্মেদ।
সার্বিক সহযোগিতা করেন মো. রবিউল ইসলাম, জেলা কৃষি বিপণন কর্মকর্তা, মাগুরা, এবং মাগুরা জেলা পুলিশের একটি টিম।
শেরপুরে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা দাবি আদায়ে শ্রেণিকক্ষের দরজায় তালা ঝুলিয়ে পরীক্ষাবর্জন করেন শিক্ষকরা। বাইরে তখন পরীক্ষার জন্য অপেক্ষা করছিল বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এমন পরিস্থিতিতে শ্রীবরদী উপজেলার মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে শ্রেণিকক্ষের তালা ভেঙে পরীক্ষার কার্যক্রম চালু করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মনীষা আহমেদ। বৃহস্পতিবার সকাল ১১টার দিকে শ্রেণিকক্ষের তালা ভেঙে পরীক্ষা শুরু করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. নূরন নবী অনেকেই।
জানা গেছে, শেরপুর জেলার ৭৪১টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা গত বুধবার থেকে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি পালন করছেন এবং বৃহস্পতিবারও তা অব্যাহত রেখেছে। তাদের দাবির মধ্যে রয়েছে সহকারী শিক্ষক পদকে বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) ক্যাডারে অন্তর্ভুক্ত করা, শূন্যপদে নিয়োগ, পদোন্নতি, পদায়ন কার্যকর করা, টাইম স্কেল–সিলেকশন গ্রেড বকেয়া পরিশোধ এবং আগের মতো সহকারী শিক্ষকদের অগ্রিম বেতন সুবিধা পুনর্বহাল। শিক্ষকদের এমন হঠাৎ কর্মবিরতি ও শ্রেণিকক্ষে তালা ঝুলিয়ে দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অভিভাবকরা।
অভিভাবক হালিম মিয়া বলেন, হুট-হাট করে শিক্ষকরা পরীক্ষা বন্ধ করবে এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়। বার্ষিক পরীক্ষা বন্ধ করে আন্দোলনে শিশুরা মানসিক চাপে পড়ে। শিক্ষকরা মানুষ তৈরির কারিগর বলা হলেও পরীক্ষাবর্জন করে আন্দোলন চলতেই পারে এবং এটা উচিতও না।
আরেক অভিভাবক ইসমাইল হোসেন বলেন, আমি বলবো এটা আন্দোলন না, এটা শিক্ষার্থীদের জিম্মি করা। সরকারকে কঠোর হতে হবে। কিছু হলেই আন্দোলন তা ঠিক না। এমন অবস্থা চলেতে থাকলে প্রয়োজন নতুন করে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া প্রয়োজন। পরীক্ষা বর্জন করে আন্দোলন করা এটা কেমন আন্দোলন আপনারাই বলেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মনীষা আহমেদ বলেন, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় জরুরি নির্দেশনা দিয়ে শিক্ষকদের অবিলম্বে পরীক্ষায় ফিরতে বলেছে। একইসাথে শাটডাউন বা কর্মবিরতি অব্যাহত থাকলে সরকারি চাকরি আইন, আচরণবিধি ও ফৌজদারি আইনে ব্যবস্থা নেওয়ার সতর্কবার্তাও দেওয়া হয়েছে।