ছোট-বড় অসংখ্য টিলা নিয়ে সিলেট। এসব টিলার পাদদেশে ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে প্রায় ১০ হাজার পরিবার। মৃত্যুঝুঁকি নিয়েই টিলার নিচে ঘর নির্মাণ করে বসবাস করছেন তারা। টানা বৃষ্টির কারণে সিলেটের পাহাড়টিলা ধসের শঙ্কা দেখা দিয়েছে। ফলে প্রাণহানির শঙ্কাও বেড়েছে। গত শনিবারই সিলেটের অন্তত ৪টি স্থানে টিলাধসের ঘটনা ঘটে। এতে নিহত হয়েছে এক শিশু। আহত হয়েছেন অন্তত ১০ জন। এ ছাড়া টিলা ধসে অন্তত ৪টি ঘর ভেঙে গেছে।
শনিবার সিলেট সদর উপজেলার খাদিম চা বাগান এলাকায় টিলা ধসে এক শিশু মারা যায়। এ ছাড়া নবীগঞ্জে টিলা ধসে আহত হয়েছেন দশজন। আর জৈন্তাপুর উপজেলায় টিলা ধসে তিনটি বাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। এ ছাড়া টিলা ধসের ঘটনা ঘটেছে নগরের আখালিয়ায়ও। পাঁচ দিন ধরে টানা বৃষ্টি হচ্ছে সিলেটে। বৃষ্টি হয়েছে রোববারও। ফলে বেড়েছে টিলা ধসের শঙ্কাও।
সিলেটে কী পরিমাণ মানুষ টিলার পাদদেশে বসবাস করেন সরকারিভাবে এর কোনো তালিকা নেই, তবে বেসরকারি হিসেবে প্রায় ১০ হাজার পরিবার টিলার পাদদেশে বসবাস করছে। মূলত কম ভাড়ায় কিংবা বিনা ভাড়ায় থাকতে পারার কারণেই দরিদ্র শ্রেণির লোকেরাই টিলার পাদদেশে ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করেন। আবার কিছু গোষ্ঠী টিলা কাটা বা দখলে রাখার জন্য টিলার পদদেশে ঘর বানিয়ে ভূমিহীনদের কম ভাড়ায় বরাদ্দ দেয়।
যদিও ২০১২ সালে সিলেটের পাহাড়-টিলা সংরক্ষণে উচ্চ আদালতের এক রায়ে টিলার ওপর ও পাদদেশে ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করা দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে পুনর্বাসনের নির্দেশনা দেয়া হয়।
সিলেট নগরের হাওলাদারপাড়া এলাকার একটি টিলার নাম জাগো টিলা। উঁচু এই টিলার একেবারে কিনারা ঘেঁষে সারিবদ্ধভাবে কয়েকটি ঘর। ওপরের ঘরগুলোর ঠিক নিচে, টিলার পাদদেশেও ঘর রয়েছে কয়েকটি। টিলার ওপরে ও ঢালে বসবাস করা সব পরিবারের বাসিন্দাই রয়েছেন ঝুঁকিতে। প্রাণের শঙ্কা নিয়েই বছরের পর বছর ধরে তারা বসবাস করে আসছেন এখানে।
জাগোটিলার ওপর ঘর বানিয়ে বাস করা শামসুল ইসলাম বলেন, ‘এটি সরকারি টিলা। ভাড়া দিতে হয় না। তাই আমরা এখানে ঘর বানিয়ে থাকি।’
ঝুঁকি সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘ভয় তো আছেই। বৃষ্টি দিলে ভয় আরও বেড়ে যায়। কিন্তু আমরা গরিব মানুষ। জায়গা কেনার সামর্থ্য নেই। ঘর ভাড়া করাও অনেক খরচের। তাই ঝুঁকি নিয়েই এখানে থাকি।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, টিলার ওপরে ও পাদদেশে বসবাসকারী বেশিরভাগ লোকজনই এ রকম দরিদ্র। স্থানীয় প্রভাবশালীরা টিলা কাটা ও দখলের জন্য দরিদ্রশ্রেণির লোকজনদের বসিয়েছেন। আবার কম টাকায় পেয়ে টিলার পাদদেশে জমি কিনেও ঘর বানিয়েছেন অনেকে।
বাংলাদেশ পরিবশে আইনবিদ সমিতির (বেলা) হিসাব মতে, সিলেট নগর, সদর, গোলাপগঞ্জ, বিয়ানীবাজার, ফেঞ্চুগঞ্জ, জৈন্তাপুর ও গোয়াইনঘাট উপজেলায় প্রায় ৪০০ পাহাড়-টিলা রয়েছে। এসব টিলার ওপর ও পাদদেশে অনেক পরিবার ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করে।
পরিবেশবাদী সংগঠন সেভ দ্য হেরিটেজ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টের প্রধান সমন্বয়ক আবদুল হাই বলেন, আমরা বছর তিনেক আগে একটা জরিপ চালিয়ে দেখেছিলাম জেলায় টিলার পাদদেশে প্রায় ১০ হাজার পরিবার ঝুঁকিপূর্ণভাবে বাস করছেন। এখন এ সংখ্যা আরও অনেক বাড়বে।
তিনি বলেন, বসবাসের জন্য এসব টিলার অনেকাংশ কেটে ফেলায় টিলাগুলোও দুর্বল হয়ে পড়েছে। ফলে বর্ষা মৌসুমে এগুলো ধসে পড়ে প্রাণহাণির ঘটনা ঘটে।
অপরিকল্পিতভাবে টিলা কাটা, বৃক্ষ উজাড় ও টিলার পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসের ফলে বৃষ্টি হলেই টিলা ধসে পড়ছে বলে মত এই পরিবেশকর্মীর।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নগরের হাওলাদারপাড়া, আখালিয়া, পীরমহল্লা ব্রাহ্মণশাসন জাহাঙ্গীরনগর, তারাপুর চা বাগান এবং নগরের উপকণ্ঠের বালুচর, বিমানবন্দর সড়ক, খাদিমপাড়া, খাদিমনগর, জোনাকী, ইসলামপুর মেজরটিলা, মংলিরপাড় এলাকায় বিভিন্ন টিলার পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করছে কয়েকশ পরিবার। এ ছাড়া জৈন্তাপুর, গোলাপগঞ্জ, বিয়ানীবাজার, গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় টিলা ও পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে সহস্রাধিক পরিবার।
কী পরিমাণ লোক টিলার ওপর ও পাদদেশে বসবাস করেন এমন তথ্য নেই জানিয়ে জৈন্তাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল বশিরুল ইসলাম বলেন, আমাদের উপজেলায় কয়েকটি ইউনিয়নে এ রকম টিলার পাদদেশে লোকজন বসবাস করেন। আমরা তাদের নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার জন্য মাইকিং করাচ্ছি। ইউনিয়ন পরিষদেও চেয়ারম্যানদের দিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছি।
ইউএনও বলেন, প্রতিবছরই বর্ষা মৌসুমে তাদের সরানোর চেষ্টা করা হয়। কিন্তু যারা টিলার পাদদেশে বসবাস করেন তারা সরতে চান না। কাউকে জোর করে সারালেও কিছুদিন পর তারা আবার ফিরে আসেন।
তবে টিলার পাদদেশে ঝুঁকি নিয়ে বসবাস ও প্রাণহানির জন্য প্রশাসনের গাফিলতিকে দায়ী করে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) সিলেটের সমন্বয়ক শাহ শাহেদা আক্তার বলেন, ২০১২ সালে আমাদের করা একটি রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে উচ্চ আদালত সিলেটে পাহাড়-টিলা কাটায় নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। একই সঙ্গে পাহাড়-টিলা সংরক্ষণ ও তার পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারী দরিদ্র মানুষজনকে পুনর্বাসনের নির্দেশনা দেন। কিন্তু ওই রায়ের ১১ বছর পেরিয়ে গেলেও আজ পর্যন্ত এ নির্দেশনা বাস্তবায়ন করা হয়নি।
শাহ শাহেদা আক্তার বলেন, কী পরিমাণ লোক ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করেন তারও কোনো হিসেব নেই জেলা প্রশাসনের কাছে। তাদের পুনর্বাসন বা টিলা সংরক্ষণে সরকারি কোনো উদ্যোগ বা প্রকল্প নেই। বরং টিলা ধ্বংস করে অনেক প্রকল্প আছে। সরকারের এই নিষ্ক্রিয়তার কারণেই বারবার এ দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটছে।
টিলার পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাকারীদের সরানো যায় না দাবি সিলেটের জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসানেরও। তিনি বলেন, ‘টিলার ওপরে ও পাদদেশে যারা বসবাস করেনম চেষ্টা করেও তাদের অন্যত্র সরানো যায় না। এ বছরও আমরা সব ইউএনওর মাধ্যমে মাইকিং করিয়ে টিলার পাদদেশে বসবাসকারীদের নিরাপদে সরে যেতে বলেছি। কিন্তু কেউ কথা শোনেনি।’
তিনি বলেন, এটা একটা বড় সমস্যা। তাদের কীভাবে সরানো যায় ও পুনর্বাসন করা যায়, এ নিয়ে ভাবছি। তাদের মধ্যে যদি কেউ ভূমিহীন থেকে থাকেন, তাহলে প্রশাসন বা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে তাদের সরকারের আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় নিয়ে আসার চেষ্টা করা হবে।
নিজ জেলা ঝালকাঠিতে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শহীদ শরিফ ওসমান হাদির স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বিভিন্ন দেওয়ালে গ্রাফিতি অঙ্কন করা হয়েছে। এর মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে তার সাহসী সংগ্রাম, প্রতিবাদী চেতনা ও আত্মত্যাগের গল্প। গতকাল বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) দিনব্যাপী এই গ্রাফিতি কর্মসূচির আয়োজন করেন জেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা।
শহরের বিভিন্ন স্থানে আঁকা গ্রাফিতিগুলোতে উঠে আসে প্রতিবাদী স্লোগান ও মানবিক বার্তা। কোথাও লেখা ছিল—‘জান দেব, জুলাই দেব না’, ‘আবার কোথাও ‘আমি আমার শত্রুর সাথেও ন্যূনতম ইনসাফ করতে চাই’।
এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঝালকাঠি জেলা শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক ইয়াসিন ফেরদৌস ইফতি বলেন, ‘শহীদ ওসমান হাদির রেখে যাওয়া সংগঠন ইনকিলাব মঞ্চ থেকে ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবেই এই গ্রাফিতি কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। সামনে আরও এমন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ওসমান হাদি ছিলেন আগ্রাসন ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে আপসহীন কণ্ঠ। ভারতের আধিপত্যবাদী নীতির বিরুদ্ধেও তিনি সবসময় সোচ্চার ছিলেন। তার সেই প্রতিবাদী আদর্শ ও স্মৃতি নতুন প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দিতেই এই উদ্যোগ।’
রাজশাহীতে মাসব্যাপী ১৮তম বস্ত্র ও কুটিরশিল্প মেলা শুরু হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) নগরীর কেন্দ্রীয় বোটানিক্যাল গার্ডেন ও চিড়িয়াখানার উত্তর পাশের মাঠে ফিতা কেটে ও বেলুন উড়িয়ে মেলার উদ্বোধন করা হয়। উইমেন এন্টারপ্রিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ওয়েব)-এর ২২তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ওয়েব রাজশাহীর উদ্যোগে আয়োজিত এ মেলা চলবে আগামী ১৯ জানুয়ারি পর্যন্ত।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ওয়েব রাজশাহী শাখার সভাপতি মোসা. আঞ্জুমান আরা পারভীন লিপি। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন শিল্পপতি হাসেন আলী, জাতীয় দৈনিকের পত্রিকার সম্পাদক লিয়াকত আলী, জাতীয় দৈনিকের সম্পাদক আকবারুল হাসান মিল্লাত, রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সাবেক পরিচালক জিয়া উদ্দিন আহমেদ, রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জামাত খান এবং বাংলাদেশ উইমেন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি রাজশাহীর সভাপতি মরিয়ম বেগম।
এ ছাড়া ওয়েব রাজশাহী শাখার সাধারণ সম্পাদক ফাতেমা আক্তার, প্রচার সম্পাদক মৌসুমী খাতুন, প্রচার সম্পাদক শামীমা সুলতানা মায়া, সাংগঠনিক সম্পাদক সততা খাতুন, সদস্য বিপাশা দাসসহ সংগঠনের অন্যান্য সদস্যরা ও নারী উদ্যোক্তা অনুষ্ঠানে অংশ নেন।
আয়োজকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এবারের মেলায় নারী উদ্যোক্তাদের অংশগ্রহণে মোট ৪৫টি স্টল বসানো হয়েছে। মেলায় বেত ও বাঁশের তৈরি সামগ্রী, সিরাজগঞ্জের তাঁতবস্ত্র, গার্মেন্ট পণ্য, ক্রোকারিজ, বিভিন্ন ধরনের খাদ্যসামগ্রী, গিফট আইটেম ও ভ্যারাইটিস পণ্যসহ ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্পের নানা পণ্য স্থান পেয়েছে। দেশীয় ঐতিহ্যবাহী পণ্যের পাশাপাশি আধুনিক নকশার পণ্যও দর্শনার্থীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত মেলা সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, তাঁতবস্ত্র ও কুটিরশিল্প মেলা মধ্যস্বত্বভোগী ছাড়াই উদ্যোক্তাদের সরাসরি ক্রেতার কাছে পণ্য পৌঁছানোর সুযোগ তৈরি করে। এতে উদ্যোক্তারা ন্যায্যমূল্য পান এবং কারিগররাও উৎসাহিত হন। একই সঙ্গে দেশীয় পণ্যের প্রতি সাধারণ মানুষের আগ্রহ বাড়ে এবং বিদেশি পণ্যের ওপর নির্ভরতা কমে।
দর্শনার্থীরাও মেলাকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন। তাদের মতে, এক জায়গায় দেশীয় হস্তশিল্প ও তাঁত পণ্যের সমাহার থাকায় কেনাকাটা সহজ হচ্ছে। পাশাপাশি ঐতিহ্যবাহী পণ্যের সঙ্গে আধুনিক নকশার সমন্বয় নতুন প্রজন্মকেও আকৃষ্ট করছে। মাসব্যাপী এই তাঁতবস্ত্র ও কুটিরশিল্প মেলা রাজশাহী অঞ্চলের সামাজিক ও অর্থনৈতিক জীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
জমকালো নানা আয়োজনে নবীন-প্রবীণের মিলনমেলায় পালিত হচ্ছে ফরিদপুর জিলা স্কুলের ১৮৫ বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠান। যেখানে এক ডানায় মিলিত হয়েছে সাবেক ষাটোর্ধ্ব থেকে বর্তমান দশ বছরের নবীন-প্রবীণ শিক্ষার্থীরা, যেন সকলেই শৈশবের স্কুল জীবনে মেতে উঠেছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) সকাল ১০টায় বেলুন উড়িয়ে দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক মো. কামরুল হাসান মোল্যা ও পুলিশ সুপার মো. নজরুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে তীব্র শীত আর কুয়াশা উপেক্ষা করে ভোর থেকেই স্কুল প্রাঙ্গণে জড়ো হতে শুরু করেন সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা। সকলের অংশগ্রহণে সকাল সাড়ে ৯টা থেকে শুরু হয় কোরআন তেলাওয়াত, গীতাপাঠ, সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন, শপথপাঠ ও অ্যাসেম্বেলি।
বেলা ১১টায় প্রায় সাত সহস্রাধিক শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণে স্কুল প্রাঙ্গণ থেকে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের হয়। শোভাযাত্রাটি শহরের প্রধান সড়কে প্রেসক্লাব মোড়, জনতা ব্যাংকের মোড়, থানা রোড, কাঠপট্টি, সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ সড়ক ও কোর্ট চত্বর হয়ে স্কুলে গিয়ে শেষ হয়। এ ছাড়া প্রথমদিনের কর্মসূচি হিসেবে স্মৃতিচারণা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন কর্মসূচি চলবে।
ব্রিটিশ-ভারত সরকারি উদ্যোগে হাতে গোনা যে কয়টি বিদ্যালয় স্থাপন করা হয়েছে তার একটি ফরিদপুর জিলা স্কুল। আজ থেকে ১৮৫ বছর আগে ১৮৪০ সালে যাত্রা শুরু করে এ বিদ্যালয়টি। শুরু থেকেই এ অঞ্চলের শিক্ষা, সংস্কৃতি, কৃষ্টি, আন্দোলন ও সংগ্রামে এ স্কুলটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। কালের পরিক্রমায় মর্যাদা ও গৌরবে আজও এ বিদ্যালয়টি এ অঞ্চলের একটি সেরা বিদ্যালয় হিসেবে তার স্বকীয় ভাবমূর্তি বজায় রেখেছে।
অনুষ্ঠানকে সার্থক করতে গঠন করা হয়েছে গৌরবময় ১৮৫ বর্ষ উদযাপন ও পুনর্মিলনী উদযাপন কমিটি। ২১ সদস্যবিশিষ্ট এ উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক ফরিদপুরের বিশিষ্ট চিকিৎসক মোস্তাফিজুর রহমান শামীম ও সদস্য সচিব ওয়াহিদ মিয়া কুটি। এর পাশাপাশি কাজের সুবিধার জন্য বিভিন্ন কাজের জন্য গঠন করা হয়েছে ১৮টি উপকমিটি।
উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক মোস্তাফিজুর রহমান শামীম বলেন, ‘এ উৎসবের উদ্দেশ্য হচ্ছে আমাদের প্রাণের স্কুলের সমৃদ্ধ অতীত ও ঐতিহ্য সবার সামনে তুলে ধরা, পাশাপাশি নতুন প্রজন্মকে তাদের অতীত ও ঐতিহ্যর পরিচয় করিয়ে দেওয়া।
এছাড়া অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় দিনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে জনপ্রিয় নগর বাউল জেমস সংগীত পরিবেশন করবেন বলে আয়োজক কমিটি জানান।
খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের বড়দিনের ছুটিসহ সাপ্তাহিক ছুটিতে পাহাড় প্রিয়দের ভিড়ে মুখর হয়ে উঠেছে পর্যটন নগরী বান্দরবান। জেলার মেঘলা, নীলাচল, শৈলপ্রপাত, চিম্বুক, নীলগিরি, তমাতুঙ্গীসহ সবগুলো দর্শনীয় স্থানে এখন পর্যটকের ভিড়। পাহাড়, নদী, ঝরনা আর প্রকৃতির অপরূপ রূপ দেখে মুগ্ধ পর্যটকরা।
পর্যটকরা যান্ত্রিক জীবনের ব্যস্ততা ভুলে কোলাহল মুক্ত পরিবেশে পরিবার-পরিজন, বন্ধু-বান্ধবদের নিয়ে পর্যটকরা চাঁদের গাড়িতে করে ঘুরে বেড়াচ্ছে এক পাহাড় থেকে আরেক পাহাড়ে।
জেলার মেঘলা, নীলাচল, প্রান্তিক লেক, শৈলপ্রপাত, চিম্বুক, নীলগিরি, নীল দিগন্তসহ বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান এখন ভ্রমণ পিপাসুদের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে। বন্ধের দিন ছুটিতে বান্দরবানে ভ্রমণ করতে পেরে খুশি পর্যটকরা।
চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলা থেকে বান্দরবানের মেঘলা পর্যটনকেন্দ্রে আসা পর্যটক মো. রায়হান বলেন, বান্দরবানের সৌন্দর্য অতুলনীয়। পাহাড়, মেঘ আর প্রকৃতির এমন দৃশ্য সত্যি বিরল।
ঢাকা থেকে বান্দরবানের নীলাচল পর্যটনকেন্দ্রে ভ্রমণে আসা পর্যটক জেসমীন বলেন, ‘বড়দিনের তিন দিনের ছুটিকে ঘিরে বান্দরবান ঘুরতে আসলাম। বান্দরবান না আসলে বুঝতাম না এত সুন্দর এই জেলা। পাহাড়ের গঠন দেখে সত্যি মুগ্ধ হচ্ছি আর সেই সঙ্গে ঝরনা আর বিভিন্ন সম্প্রদায়ের সম্প্রীতির বসবাস দেখে নতুন শিক্ষা নিচ্ছি।’
এদিকে পর্যটকদের আগমনে জেলার বেশিরভাগ হোটেল-মোটেল আর রিসোর্টগুলো ইতোমধ্যে শতভাগ বুকিং হয়ে গেছে, দীর্ঘদিন পরে এমন ভরপুর পর্যটন মৌসুমে খুশি পর্যটন ব্যবসায়ীরা।
বান্দরবানের আবাসিক হোটেল হিলটনের ম্যানেজার তপন বড়ুয়া বলেন, ‘২৫ ডিসেম্বর উপলক্ষে আমাদের ৭০ শতাংশ রুম বুকিং রয়েছে শুক্র ও শনিবার প্রায় ১০০ শতাংশ বুকিং হবে আশা করছি।’
বান্দরবানের আবাসিক হোটেল আরণ্যর ম্যানেজার মো. জিয়া বলেন, ‘খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের বড়দিনের ছুটিসহ সাপ্তাহিক দুদিনের ছুটিতে বান্দরবানে পর্যটকদের উপচে পড়া ঢল পড়েছে আর আমাদের হোটেলে শতভাগ রুম বুকিং রয়েছে।’
বান্দরবান জেলা হোটেল-রিসোর্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. জসীম উদ্দিন বলেন, ‘বান্দরবানে তিন দিনের বন্ধকে ঘিরে প্রচুর পর্যটক আগমন হচ্ছে আর পর্যটকদের পর্যাপ্ত সেবা দিতে আমরা বান্দরবান জেলা হোটেল-রিসোর্ট অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা কাজ করে যাচ্ছি।’
এদিকে পার্বত্য জেলা বান্দরবান ভ্রমণে পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ করছে ট্যুরিস্ট পুলিশের সদস্যরা আর পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে বিভিন্ন পয়েন্টে কাজ করছে ট্যুরিস্ট পুলিশ।
ট্যুরিস্ট পুলিশ বান্দরবান জোনের ইনচার্জ মো. মাহাবুবুর রহমান বলেন, ‘বান্দরবানে সারাবছরই পর্যটকের আগমন ঘটে আর যেকোনো দিবস ও বন্ধে প্রচুর পর্যটক বান্দরবানের বিভিন্ন উপজেলার দর্শনীয় পয়েন্টগুলো ভ্রমণে ছুটে যায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিটি পর্যটন স্পটে ট্যুরিস্ট পুলিশের সদস্যরা মোতায়েন রয়েছে। এর পাশাপাশি সাদা পোশাকধারী পুলিশ সদস্যরা নিয়োজিত রয়েছে। আমাদের নম্বরগুলো বিভিন্ন জায়গায় দেওয়া আছে কোনো ট্যুরিস্ট কোথাও হয়রানির শিকার হলে সাথে সাথে আমরা ব্যবস্থা নেব। আশা করি পর্যটকরা নিরাপদে বান্দরবানে বেড়াতে পারবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘পর্যটকরা যাতে বান্দরবান ভ্রমণ করে আনন্দ উপভোগ করতে পারে, সে জন্য ট্যুরিস্ট পুলিশ বান্দরবান জোন সদস্যরা নিয়মিত দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে।’
এদিকে খাগড়াছড়ি শহরের আলুটিলা পর্যটনকেন্দ্রের ব্যবস্থাপক কোকোনাথ ত্রিপুরা বলেন, ‘তিন দিনের ছুটি এবং নতুন বছরকে উপলক্ষ করে আলুটিলা পর্যটনকেন্দ্র সাজানো হয়েছে। পর্যটকেরাও এসে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছেন।’
খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, জেলায় ছোট-বড় মিলিয়ে ৪৫টি হোটেল–মোটেল ও গেস্টহাউস রয়েছে। ছুটিকে সামনে রেখে অধিকাংশ হোটেল-মোটেল বুকিং হয়ে গেছে। সাধারণত পর্যটকরা জেলার আলুটিলা গুহা, রিছাং ঝরনা, দেবতার পুকুর, হর্টিকালচার পার্ক, তৈদুছড়া ঝরনা, বিডিআর স্মৃতিসৌধ, মায়াবিনী লেক, শান্তিপুর অরণ্য কুঠির ইত্যাদি জায়গা দেখার জন্য খাগড়াছড়িতে আসেন।
খাগড়াছড়ি মিলনপুর এলাকার হোটেল গাইরিংয়ের ব্যবস্থাপক প্রান্ত ত্রিপুরা বলেন, ‘তাদের সব কটি কক্ষ আগামী রোববার পর্যন্ত বুকিং রয়েছে।’ হোটেল অরণ্য বিলাসের ব্যবস্থাপক আহম্মদ রশিদ জানান, আগামীকাল শনিবার পর্যন্ত তাদের হোটেলেও কোনো কক্ষ খালি নেই।
পর্যটকদের ভিড়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন শহরের বিভিন্ন দোকানিরাও। জেলার স্বপ্নচূড়া রেস্তোরাঁর কর্ণধার নেইম্রা মারমা বলেন, ‘ছুটি উপলক্ষে স্থানীয় ও বাইরের ক্রেতা বাড়ছে। ভিড় সামলাতে তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।’
জানতে চাইলে খাগড়াছড়ি পুলিশ সুপার ছায়েম মির্জা আজম বলেন, ‘পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সতর্ক রয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্র ও মোড়ে নিরাপত্তার স্বার্থে ২৪ ঘণ্টা পুলিশ মোতায়েন রাখা হয়েছে।’
তিতাস গ্যাস টি. এন্ড ডি. পিএলসি―র ৫ম বিশেষ সাধারণ সভা (EGM) এবং ২০২৪-২৫ অর্থবছরের ৪৪তম বার্ষিক সাধারণ সভা বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) ডিজিটাল প্লাটফর্মে (হাইব্রিড সিস্টেম) অনুষ্ঠিত হয়। সভায় মোঃ সাইফুল্লাহ পান্না, সচিব, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় ও চেয়ারম্যান, তিতাস বোর্ড সভাপতিত্ব করেন। এতে কোম্পানির পরিচালকমন্ডলী, পেট্রোবাংলা ও তিতাস গ্যাসের উর্দ্ধতন কর্মকর্তাগণ এবং সম্মানিত শেয়ারহোল্ডারগণ অংশগ্রহণ করেন।
বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) তিতাস গ্যাস টি. এণ্ড ডি. পিএলসি―এর ব্যবস্থাপক (মিডিয়া ও জনসংযোগ) মো. আল আমিন স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়।
আলোচ্য ২০২৪-২৫ অর্থবছরে কোম্পানির ৪৪তম বার্ষিক সাধারণ সভায় ২% নগদ লভ্যাংশ এবং সরকারের Equity’র বিপরীতে Preference Share ইস্যুর সিদ্ধান্ত অনুমোদিত হয়।
নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে বর্তমানে চিকিৎসক সংকট রয়েছে। যার ফলে দূর-দূরান্ত থেকে চিকিৎসাসেবা নিতে আসা রোগীরা চিকিৎসা নিতে পারছেন না। এতে ভোগান্তিতে পড়ছেন তারা।
তথ্য বলছে, ১৯৬০ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকা-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়কের কোলঘেঁষে গড়ে ওঠে ৩১ শয্যাবিশিষ্ট এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি। ২০০৬ সালে কমপ্লেক্সটিকে ৫০ শয্যায় উন্নিত করা হয়। তবে, জনবল সংকটে উপজেলাবাসীকে চাহিদা অনুযায়ী স্বাস্থ্যসেবা দিতে পারছে না জনগুরুত্ব সম্পন্ন এ সরকারি প্রতিষ্ঠানটি। এটির অবকাঠামোগত উন্নয়ন হলেও সেবার মান বাড়েনি।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের তথ্য বলছে, হাসপাতালে জুনিয়র কনসালটেন্ট (গাইনি ও অবস) ডাক্তার সোহানা সিকদার বদলি হওয়ার পর ২ বছর ধরে এ পদটি শূন্য রয়েছে। জুনিয়র কনসালটেন্ট (ইএনটি), জুনিয়র কনসালটেন্ট (চক্ষুবিদ্যা) দীর্ঘ বছর ধরে নেই। জুনিয়র কনসালটেন্ট (অর্থোপেডিক্স) ডাক্তার ইমতিয়াজ অন্যত্র বদলি হওয়ার পর ৪ বছর ধরে পদটি শূন্য রয়েছে। জুনিয়র কনসেন্টেন্ড (কার্ডিওলজি) ডাক্তার ইকবাল দেড় বছর পূর্বে বদলি হওয়ার পর এ পদটি ও শূন্য রয়েছে। ১৭ জন মেডিকেল অফিসার পদের বিপরীতে দায়িত্ব পালন করছেন মাত্র ৫ জন। ২১ জন নার্সের দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে ৮ জনকে। ৪ জন মিডওয়াইফের কাজ করছেন মাত্র ১ জন। তিনটি নৈশপ্রহরী পদের মধ্যে রয়েছেন ১ জন। ৮ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মীর স্থলে রয়েছেন ৪ জন মাত্র। এভাবেই সব ক্ষেত্রেই জনবল সংকটসহ নানা সমস্যার আবর্তে জোড়াতালি দিয়ে চলছে এ সরকারি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্যসেবা।
হাসপাতালে সীমানা প্রাচীর নেই। ৩ জন নৈশপ্রহরীর স্থলে রয়েছেন ১ জন। বিভিন্ন সময় চুরি হয়ে যাচ্ছে রোগীদের মূল্যবান জিনিসপত্র। মূল ভবন ও আবাসিক কোয়ার্টারের দরজা, জানালা, গ্রিল চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে দুর্বৃত্তরা। এ ছাড়া সন্ধ্যার পরে মাদকসেবী ও বখাটেদের সীমাহীন উৎপাতে অনিরাপদ হয়ে ওঠে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এলাকা।
সেবাপ্রার্থী নাজমা বেগম বলেন,‘ তিনি গাইনি বিশেষজ্ঞের কাছে চিকিৎসার জন্য এসেছেন। কিন্তু কোনো ডাক্তার না থাকায় তাকে আবার ফিরে যেতে হচ্ছে।’ এভাবে মানুষ ভোগান্তিতে পড়ছে। শূন্য পদে দ্রুত জনবল নিয়োগের দাবি করেন তিনি।
কালিকাপুর গ্রামের সহিদ উল্লাহ বলেন, ‘তার স্ত্রী রজিনা আক্তারকে গাইনি বিশেষজ্ঞের দেখানোর উদ্দেশ্যে সোনাইমুড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসেন। কিন্তু ডাক্তার না থাকায় তারা প্রাইভেট হাসপাতালে যেতে হচ্ছে।’
সোনাইমুড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আরএমও ডাক্তার রিয়াজ উদ্দিন জানান, হাসপাতালে জুনিয়র কনসালটেন্ট পদ অনেকগুলো শূন্য রয়েছে। ১৭ জন মেডিকেল অফিসারের বিপরীতে ডাক্তার সাদিক, তাহামিনা, রাফাত, সৌরভ ও মাসুদ দায়িত্ব পালন করছেন। এতে করে রোগীদের চিকিৎসা দিতে গিয়ে আমাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।
সোনাইমুড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ইসরাত জাহান বলেন, ‘বিশেষজ্ঞ ডাক্তার, মেডিকেল অফিসার ও কর্মচারী নেই। গাইনি বিশেষজ্ঞ না থাকায় সিজার বিভাগ বন্ধ হয়ে গেছে। নিরাপত্তার অভাবে।’ আবাসিক কোয়ার্টারে বসবাসকারীরা বাসার বরাদ্দ বাতিল করেছেন। প্রায় সময় রোগীদের মোবাইলসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র চুরি হয়ে যাচ্ছে।
নোয়াখালী জেলা সিভিল সার্জন ডাক্তার মরিয়ম সিমি বলেন, ‘ডাক্তারসহ অন্যান্য কর্মচারী সংকট দীর্ঘদিনের। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে কয়েকবার চিঠি দিয়েছেন। লোকবল কম দিয়ে চিকিৎসাসেবা প্রদানে হিমশিম পোহাতে হচ্ছে।’
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ও নির্বাচনী আচরণবিধি রক্ষায় মাঠে নেমেছে প্রশাসন।
এরই অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) বিকেলে ৫টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত দৌলতপুর সদর ইউনিয়নের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে এই অভিযান চলে। এতে নেতৃত্ব দেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট প্রদীপ কুমার দাশ।
অভিযান চলাকালে ড্রাইভিং লাইসেন্স ও মোটরসাইকেলের রেজিস্ট্রেশন না থাকায় ৪টি মামলা করা হয়। এসব মামলায় মোট ৮ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করে ভ্রাম্যমাণ আদালত। একইসাথে জানানো হয়, এই জরিমানা দিতে ব্যর্থ হলে অভিযুক্তদের ৭ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট প্রদীপ কুমার দাশ জানান, নির্বাচনকে ঘিরে কেউ যেন আচরণবিধি লঙ্ঘন করতে না পারে, সেজন্য এই অভিযান নিয়মিত চলবে। তিনি সাধারণ মানুষকে আইন মেনে চলে প্রশাসনকে সহায়তা করার আহ্বান জানান।
ট্যারিফ বাড়ানো নিয়ে নানা জটিলতা সৃষ্টি, শুল্ক কর্মকর্তাদের কর্মবিরতি ও পরিবহন ধর্মঘটসহ নানা বাঁধা পেরিয়ে চলতি বছর কনটেইনার, কার্গো ও জাহাজ হ্যান্ডলিংয়ে আগের সব রেকর্ড ভেঙেছে চট্টগ্রাম বন্দর। তবে দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের স্বার্থে চট্টগ্রাম বন্দরের নৌচ্যানেলে নিয়মিত ড্রেজিং এবং জেটিতে আধুনিক যন্ত্রপাতি স্থাপনের তাগিদ বন্দর ব্যবহারকারীদের।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের ২০ ডিসেম্বর পর্যন্ত এ সময়ের মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরে হ্যান্ডলিং করা হয়েছে ৩৩ লাখের বেশি কনটেইনার এবং ১৩ লাখ ৩৯ হাজার মেট্রিক টন কার্গো পণ্য। একই সঙ্গে বন্দরে ভিড়েছে ৪ হাজার ৩০০টিরও বেশি জাহাজ, যা আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় সর্বোচ্চ।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (হারবার ও মেরিন) কমোডর আমিন আহমেদ আবদুল্লাহ দৈনিক বাংলাকে বলেন, চলতি বছর জাহাজ, কনটেইনার ও কার্গো হ্যান্ডলিং—সব ক্ষেত্রেই আগের বছরের তুলনায় উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি হয়েছে। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে চার হাজারের বেশি জাহাজ হ্যান্ডলিং করা হয়েছে। বাল্ক কার্গোর ক্ষেত্রে ১৩ কোটি ২৭ লাখ ৫ হাজার মেট্রিক টনের বেশি পণ্য এবং ৩৩ লাখের বেশি কনটেইনার হ্যান্ডলিং সম্পন্ন হয়েছে। অর্থবছর শেষে কনটেইনারের সংখ্যা ৩৪ লাখ ছাড়িয়ে যাবে।
তিনি আরও বলেন, কাস্টমসের সঙ্গে নিবিড়ভাবে সমন্বয় করে ইয়ার্ড ম্যানেজমেন্ট নতুনভাবে সাজানো হয়েছে। প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতা দূর করে উদ্ভাবনী উদ্যোগ নেয়ার ফলেই এই নতুন মাইলফলক স্পর্শ করা সম্ভব হয়েছে। ইতিমধ্যে বন্দরের গেট ও পিয়ারসাইড অপারেশন অটোমেশনের আওতায় আনা হয়েছে বলে জানান তিনি।
এদিকে চট্টগ্রাম বন্দরের পাশাপাশি দেশের ২১টি বেসরকারি অফডকও বছর শেষ হওয়ার আগেই কনটেইনার ও বাল্ক কার্গো হ্যান্ডলিংয়ে রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। এসব অফডকে বছর শেষে রফতানিতে প্রায় ৬ দশমিক ৪ শতাংশ এবং আমদানিতে প্রায় ১৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
বিকডার মহাসচিব রুহুল আমিন সিকদার বিপ্লব দৈনিক বাংলাকে বলেন, ২০২৪ সালের সঙ্গে তুলনা করলে ২০২৫ সালে চট্টগ্রাম বন্দর ও বেসরকারি অফডকগুলোকে নানা প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়তে হয়েছে। এর মধ্যে পরিবহন ধর্মঘট ও কাস্টমস কর্মকর্তাদের কর্মবিরতি উল্লেখযোগ্য। তবে এসব বাধা অতিক্রম করেই এগিয়ে চলছে আমদানি-রফতানি কার্যক্রম।
তিনি আরও বলেন, দেশের সার্বিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ও বাণিজ্যের ধারাবাহিকতার কারণে আমদানি ও রফতানি-উভয় ক্ষেত্রেই প্রবৃদ্ধি এসেছে। তবে রফতানির তুলনায় আমদানিতে প্রবৃদ্ধি বেশি হয়েছে, কারণ দেশের উন্নয়ন প্রকল্প ও অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণে আমদানির পরিমাণ বেড়েছে। স্টেকহোল্ডারদের নিরলস প্রচেষ্টা ও দায়িত্বশীলতার ফলেই এই অগ্রগতি সম্ভব হয়েছে।
অপরদিকে প্রায় ৩৯ বছর পর ২০২৫ সালে চট্টগ্রাম বন্দরের ট্যারিফ বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে গিয়ে নানা জটিলতার মুখে পড়তে হয়েছে। বন্দর ব্যবহারকারীরা বলছেন, প্রতিযোগী দেশগুলোর বন্দরের তুলনায় চট্টগ্রাম বন্দর ব্যয়বহুল হয়ে উঠছে। এ কারণে ট্যারিফ বাড়ানোর পাশাপাশি সেবার মান বাড়াতে হবে।
বিজিএমইএর প্রথম সহ-সভাপতি সেলিম রহমান বলেন, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, ভারত কিংবা ভিয়েতনামের তুলনায় চট্টগ্রাম বন্দরের খরচ বেশি। ব্যবহারকারীরা বেশি অর্থ পরিশোধ করলেও আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী সেবার উন্নতি প্রত্যাশিত হারে হচ্ছে না। মূল্য বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে সেবার মানে দৃশ্যমান উন্নয়ন প্রয়োজন।
দেশের আমদানি-রফতানি বাণিজ্যের প্রায় ৯৩ শতাংশই সম্পন্ন হয় চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। তাই বাণিজ্যের স্বার্থে চট্টগ্রাম বন্দরের নৌচ্যানেলে নিয়মিত ড্রেজিং এবং জেটিতে আধুনিক যন্ত্রপাতি স্থাপনের কোনো বিকল্প নেই। বিশেষ করে নাব্য সংকট কাটিয়ে অন্তত ১০ মিটার গভীরতার জাহাজ চলাচলের ব্যবস্থা করতে হবে। একই সঙ্গে জিসিবির মতো ইয়ার্ডে গ্যান্ট্রি ক্রেনসহ প্রয়োজনীয় আধুনিক সরঞ্জাম স্থাপন জরুরি বলে মনে করছেন বন্দর ব্যবহাকারীরা।
বছরে এর আর্থিক পরিমাণ দুই লাখ কোটি টাকারও বেশি। আন্তর্জাতিক শিপিং সাময়িকী লয়েড লিস্টের হিসাবে, বিশ্বের ব্যস্ততম একশটি বন্দরের তালিকায় চট্টগ্রাম বন্দরের অবস্থান ৬৮তম।
মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় হাইওয়ে ও থানা পুলিশের টহলরত দুটি গাড়িতে কাভার্ড ভ্যানের ধাক্কায় হাইওয়ে পুলিশের এক সার্জেন্টসহ দুই পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে। এ ঘটনায় ঘাতক কাভার্ড ভ্যানটির চালক ও হেলপারকে আটক করেছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) ভোর সাড়ে ৬টার দিকে ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কের গজারিয়া অংশের বালুয়াকান্দি বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ঢাকামুখী লেনে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
দুর্ঘটনায় আহতরা হলো, গজারিয়া ভবেরচর হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির সার্জেন্ট আহসান হাবিব ও কনস্টেবল নয়ন। তাদের উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন জানান, মহাসড়কে দায়িত্ব পালনকালে হাইওয়ে পুলিশ ও থানা পুলিশের দুটি টহল গাড়ি বালুয়াকান্দি বাস স্ট্যান্ড এলাকায় রাস্তার পাশে অবস্থান করছিল। এ সময় দ্রুতগতিতে আসা একটি কাভার্ড ভ্যান নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে টহলরত গাড়ি দুটিকে সজোরে ধাক্কা দেয়। এতে পুলিশের দুটি গাড়িই মহাসড়কের ওপর উল্টে যায় এবং হাইওয়ে পুলিশের সার্জেন্ট আহসান হাবিব, কনস্টেবল নয়ন আহত হয়। পরে পুলিশ ও স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে নিকটস্থ হাসপাতালে পাঠায়। ঘটনার পর ঘাতক কাভার্ড ভ্যানটির চালক ও হেলপারকে আটক করেছে পুলিশ। দুর্ঘটনার ফলে মহাসড়কের ঢাকামুখী লেনে কিছু সময়ের জন্য যানজটের সৃষ্টি হয়।
এ বিষয়ে গজারিয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) রুবেল সিকদার জানান, টহলরত দুটি গাড়ি মহাসড়কের পাশে অবস্থান করছিল। এ সময় একটি কাভার্ড ভ্যান সজোরে গাড়ি দুটিকে ধাক্কা দিলে থানা পুলিশ ও হাইওয়ে পুলিশের দুটি গাড়িই উল্টে যায়। এতে হাইওয়ে পুলিশের এক সার্জেন্ট ও এক পুলিশ সদস্য আহত হন।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে গজারিয়া ভবেরচর হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মোঃ শাহ কামাল আকন্দ বলেন, 'দুর্ঘটনার পর যানজট নিরসনে পুলিশ কাজ করছে। দুর্ঘটনার কারণ তদন্ত করে দেখা হচ্ছে এবং এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।'
গাজীপুরের টঙ্গীতে যৌথবাহিনীর অভিযানে ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি কথিত জুলাই যোদ্ধা তাহরিমা জান্নাত সুরভী (২১) গ্রেফতার হয়েছেন। বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে বারোটার দিকে টঙ্গী পূর্ব থানার মরকুন টেকপাড়া এলাকার নিজ বাসায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃত সুরভী ওই এলাকার সেলিম মিয়ার মেয়ে।
যৌথবাহিনীর কাছে গ্রেফতার হওয়া সুরভী বর্তমান সরকারের উপদেষ্টাদের ও সেনাবাহিনী প্রধানকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্যসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
পুলিশ জানায়, সুরভীর বিরুদ্ধে কালিয়াকৈর থানায় নাইমুর রহমান দুর্জয় নামের এক যুবকের দায়ের করা মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা ছিল। মামলায় চাঁদাবাজি, অপহরণ করে অর্থ আদায় ও ব্ল্যাকমেইলিং-এর মতো অভিযোগ আনা হয়েছে। এছাড়া তিনি সেনাবাহিনী প্রধানকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিয়মিত কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করতেন বলেও দাবি পুলিশের।
উল্লেখ্য, গ্রেফতার তাহরিমা জান্নাত সুরভী নিজেকে ২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থানের অংশগ্রহণকারী সমন্বয়ক হিসেবে পরিচয় দিতেন। অভিযান শেষে তাকে টঙ্গী পূর্ব থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। আইনি প্রক্রিয়ায় তাকে আদালতে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
দৃশ্যকলার বহুত্ব ও সৃজনশীলতাকে ধারণ করে নওগাঁয় প্রথমবারের মতো ‘দৃশ্যকলা’ নওগাঁর উদ্যোগে ৩দিন ব্যাপী ‘নওগাঁ আর্ট ক্যাম্প ২০২৫’ এর ছবি আঁকা প্রতিযোগীতার উদ্বোধন করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) সকাল ১১টায় মুক্তির মোড় জেলা পরিষদ পার্কে এর উদ্বোধন করেন নওগাঁর বর্ষীয়ান ও প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী মোঃ রেজাউল হক।
তিন দিনব্যাপী আর্ট ক্যাম্পে নওগাঁসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত চিত্রশিল্পীরা অংশগ্রহণ করে সরাসরি শিল্পকর্ম সৃজনের মাধ্যমে দর্শনার্থীদের সামনে উন্মুক্ত করেন শিল্পের নান্দনিক জগৎ। এতে প্রথম দিনে প্রায় ৪০জন বিভিন্ন বয়সী শিশু-কিশোর ছবি আকাঁ প্রতিযোগীতায় অংশগ্রহন করেন।
উদ্বোধনীতে উপস্থিত ছিলেন, নওগাঁর গুণীশিল্পী ও সংস্কৃতিজন কেডিয়ানের সভাপতি আনিছুর রহমান, মো: বদরুজ্জামান, সাবেক অধ্যাপক শরিফুল ইসলাম খান, সামাজিক সংগঠন একুশে পরিষদ নওগাঁর সভাপতি এ্যাডভোকেট ডিএম আব্দুল বারী, জহির রায়হান চলচিত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক রহমান রায়হান। এছাড়াও রাজা ফকির, রবু শেঠ, আব্দুর সাত্তারসহ আরো শিল্পীবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন।
আয়োজনটির উদ্যোক্তা দৃশ্যকলা নওগাঁর সভাপতি ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব রবিউল করিম বলেন- ষড়ঋতুর এই বাংলার প্রকৃতি যেমন বহুরূপী ও বৈচিত্র্যে ভরপুর, তেমনি আমাদের সংস্কৃতির নানান উপাদানও সমানভাবে সমৃদ্ধ। সেই সংস্কৃতির এক গুরুত্বপূর্ণ ও নান্দনিক অংশ জুড়ে রয়েছে দৃশ্যকলা, যেখানে রঙ, রেখা ও কল্পনার মেলবন্ধনে প্রকাশ পায় মানুষের অনুভব, ইতিহাস ও জীবনদর্শন।
“এই আর্ট ক্যাম্প শুধুমাত্র একটি আর্ট ক্যাম্প বা আনুষ্ঠানিক আয়োজন নয়। এটি মূলত শিল্পচর্চা বৃদ্ধির একটি চলমান প্রক্রিয়া।"
দৃশ্যকলা নওগাঁর সাধারণ সম্পাদক তাহমিদুর রহমান মনন বলেন- এই ধরনের শিল্পভিত্তিক আয়োজন নতুন প্রজন্মকে সৃজনশীলতার পথে উৎসাহিত করবে এবং বাংলার শিল্পচর্চাকে টিকিয়ে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। আমাদের লক্ষ্য-যেন তরুণ ও যুব সমাজ বাংলার নিজস্ব শিল্প, সংস্কৃতি ও দৃশ্যকলার ঐতিহ্যকে ধারণ করে এগিয়ে নিতে পারে। ভবিষ্যতেও নিয়মিতভাবে এমন আয়োজন অব্যাহত রাখার পরিকল্পনা রয়েছে।
‘নওগাঁ আর্ট ক্যাম্প’ নওগাঁর সাংস্কৃতিক অঙ্গনে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করবে এবং দৃশ্যকলার ধারাকে আরও সুদৃঢ় ও গতিশীল করে তুলবে এমনটাই প্রত্যাশা আয়োজকদের।
১৯৪৫ সালে এসএসসি পাস করেছেন আবদুল মালেক। ১৯৬৯ সালে পাস করেছেন জমির আলী। ১৯৮০সালে পাস করেন কোহিনূর আক্তার। কারও বয়স ৯৬ বছর, কেউ ৭৫ বছর বয়সের। কেউবা ৬০ বছরের। স্কুলের শতবর্ষ পূর্তি অনুষ্ঠানে এসে সহপাঠীদের পেয়ে এসব বৃদ্ধরাও হয়ে ওঠেন কিশোর-কিশোরী। বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) কুমিল্লা বুড়িচং উপজেলার ভরাসার বহুমূখী উচ্চবিদ্যালয়ের শতবর্ষ পূর্তি উদযাপন অনুষ্ঠানে এই দৃশ্য দেখা মিলে। বেলুন উড়িয়ে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন সাবেক ছাত্র অনুষ্ঠানের আহ্বায়ক এয়ার ভাইস মার্শাল মোহাম্মদ আবুল বাশার।
ইঞ্জি. শাহেদুজ্জামান ও ডা. রবিউল হাসানের সঞ্চালনায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন অনুষ্ঠানের সদস্য সচিব শামসুল হুদা ও প্রধান শিক্ষক মনিরুল ইসলাম।
স্মৃতিচারণ করেন ১৯৪৫ সনের প্রবীণ ছাত্র আবদুল মালেক আখন্দ, ইঞ্জি. আব্দুল মালেক, সাবেক সভাপতি কাজী আবদুল ওয়াদুদ, ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল মতিন, সালেহ আহমেদ, মো. আখতারুজ্জামান, আজীবন দাতা সাংবাদিক মোসলেহ উদ্দিন, শিল্পপতি মিজানুর রহমান ইকবাল মোর্শেদ, আবু মুসা ভূইয়া, বাসস কর্মকর্তা ফারুক আহমেদ ভূঁইয়া, মাসুদ পারভেজ, জাহাঙ্গীর আলম, অ্যাডভোকেট জালাল উদ্দীন, ডা. মীর হোসেন মিঠু, শাহানা আক্তার প্রমুখ।
কেক কাটার পর ‘সোনালি সোপান’ ম্যাগাজিনের মোড়ক উন্মোচন করেন আহবায়ক ও অতিথিরা।
উল্লেখ্য -১৯২৬ সালে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন ভরাসার গ্রামের বরম উদ্দিনের ছেলে দানবীর আফসার উদ্দিন।
নদীবেষ্টিত দক্ষিণাঞ্চলের জনপদ, একসময় পরিচিত ছিল নৌযোগাযোগের জন্য। তবে নিরাপদ, স্বল্প খরচ ও আরামদায়ক এ যাতায়াত ব্যবস্থা এখন বিলুপ্তির পথে। নদ-নদীতে ডুবোচর, নাব্য সংকট ও অপরিকল্পিত ড্রেজিংয়ের কারণে বরিশাল বিভাগের অভ্যন্তরীণ নৌপথগুলো একে একে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এরই মধ্যে অন্তত ১৫টি অভ্যন্তরীণ রুটে লঞ্চ চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। যেগুলো এখনো সচল রয়েছে যাত্রী সংকট ও অতিরিক্ত জ্বালানি ব্যয়ে সেসব রুট বন্ধ হওয়ার উপক্রম।
নৌপথে চলাচলকারীরা বলছেন, এক দশক আগেও বরিশাল থেকে বরগুনা, চরদোয়ানী, মহিপুর, পটুয়াখালী, কালাইয়া, লালমোহন, বাহেরচর, বোরহানউদ্দিন, ভাষানচর-হিজলা, মুলাদীসহ বিভিন্ন নৌপথে নিয়মিত চলাচল করত শতাধিক লঞ্চ। সেখানে বর্তমানে সচল রয়েছে মাত্র চারটি রুট। তাও পুরোপুরি ঝুঁকিমুক্ত নয়। বর্তমানে বরিশাল-ভোলা, মজুচৌধুরীর হাট ও লক্ষ্মীপুর রুটে মাত্র ছয়টি লঞ্চ চলাচল করছে। নাব্য সংকটের কারণে যেকোনো সময় এসব রুটও বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। শীত মৌসুম এলেই মেঘনা, কীর্তনখোলা ও তেঁতুলিয়া নদীতে সৃষ্টি হয় অসংখ্য ডুবোচর। চলতি মৌসুমে মেঘনার বিভিন্ন অংশে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে এসব ডুবোচর। বিশেষ করে কাটাখালি থেকে রহমতখালি পর্যন্ত নৌপথে নাব্য সংকট চরমে পৌঁছেছে। একাধিকবার লঞ্চ মাঝ নদীতে আটকে পড়ায় যাত্রীদের ভোগান্তি বেড়েছে কয়েকগুণ।
লঞ্চ শ্রমিকরা জানান, অনেক সময় ২ ঘণ্টা অতিরিক্ত ঘুরে বিকল্প পথ ব্যবহার করতে হয়। এতে একদিকে যাত্রীদের সময় নষ্ট হচ্ছে, অন্যদিকে অতিরিক্ত জ্বালানি খরচ গুণতে হচ্ছে প্রতিটি ট্রিপে। নাব্য সংকট, যাত্রীস্বল্পতা ও বাড়তি জ্বালানি ব্যয়ে লঞ্চগুলো এখন মালিকদের কাছে গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেকে লঞ্চ বিক্রি করে দিয়েছেন অথবা বন্ধ রেখেছেন। নদীপথ বন্ধ হওয়ায় যাত্রীরাও ধীরে ধীরে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন।
এদিকে নৌপথ সচল রাখতে নিয়মিত ড্রেজিংয়ের দাবি জানিয়ে আসছেন লঞ্চ মালিক ও যাত্রীরা। তবে অভিযোগ রয়েছে, যেসব ড্রেজিং কার্যক্রম হয়, তা অপরিকল্পিত ও খণ্ড খণ্ডভাবে করা হয়। ফলে কাঙ্ক্ষিত সুফল পাওয়া যায় না।
লঞ্চ মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌচলাচল সংস্থা বরিশালের ভাইস প্রেসিডেন্ট ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, ‘প্রতি বছর ড্রেজিং হয় ঠিকই, কিন্তু যেখানে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন, সেখানে কাজ হয় না। পলি জমে আবার নৌপথ বন্ধ হয়ে যায়। এভাবে চলতে থাকলে অভ্যন্তরীণ নৌযোগাযোগ পুরোপুরি বিলুপ্ত হয়ে যাবে।’
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) তথ্য বলছে, বরিশালের একতলা লঞ্চঘাট, বুখাইনগর নালা, নদীবন্দর ও হিজলার মৌলভীরহাট চ্যানেলে ড্রেজিং চলমান। এছাড়া মেহেন্দিগঞ্জের পাতারহাট পুরোনো স্টিমার ঘাট, মুলাদীর নয়াভাঙ্গলী নদী, ভোলার চরফ্যাশনের কচ্ছপিয়া খাল, বরিশাল নগরীর কীর্তনখোলার ত্রিশ গোডাউন এলাকায় ড্রেজিং শেষের পথে।
লঞ্চ মাস্টাররা জানান, নাব্য সংকটের কারণে এ বছর বাহেরচর ও ভাসানচর রুট বন্ধ হয়ে গেছে। একই কারণে কয়েক বছর আগে বরিশাল থেকে গলাচিপা, বরগুনা, পাথরঘাটা, কালাইয়া, চরকলমি, ঘোষেরহাট, কালীগঞ্জ, চরদুয়ানী ও তুষখালী রুটে লঞ্চ চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। বর্তমানে বরিশাল থেকে ভোলা, পাতারহাট, লাহারহাট, লক্ষ্মীপুর, মেহেন্দিগঞ্জসহ কয়েকটি রুটে ছোট লঞ্চ চলাচল করছে। তবে নাব্য সংকট তীব্র হলে বাকি রুটগুলোও বন্ধ হয়ে যাবে।
ড্রেজিং বিভাগ জানায়, বরিশাল বিভাগে নদ-নদী ড্রেজিংয়ের জন্য ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ২৮ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয় সরকার। তবে চলতি বছরে বরাদ্দের পরিমাণ জানাতে পারেননি বরিশাল অফিসের কর্মকর্তারা। বরাদ্দের পুরো অর্থই ড্রেজিংয়ে খরচ হয়েছে। তবে নদ-নদীতে অতিরিক্ত পলি জমার কারণে নাব্য রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
বরিশাল ড্রেজিং বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মামুন-উর-রশীদ বলেন, ‘নদীর পলির কারণে নাব্য সংকট দেখা দেয়। বরাদ্দ অনুযায়ী ড্রেজিং কার্যক্রম চলমান রয়েছে। ভবিষ্যতে বরাদ্দের সবটুকু ব্যবহার করে নদীপথ সচল রাখার চেষ্টা করা হবে।’