শুক্রবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৫
২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

টিলার পাদদেশে ঝুঁকিতে বসবাস

সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলায় টিলার পাদদেশে ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে অনেক পরিবার। ছবি: দৈনিক বাংলা
দেবাশীষ দেবু, সিলেট
প্রকাশিত
দেবাশীষ দেবু, সিলেট
প্রকাশিত : ৯ অক্টোবর, ২০২৩ ১০:৩২

ছোট-বড় অসংখ্য টিলা নিয়ে সিলেট। এসব টিলার পাদদেশে ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে প্রায় ১০ হাজার পরিবার। মৃত্যুঝুঁকি নিয়েই টিলার নিচে ঘর নির্মাণ করে বসবাস করছেন তারা। টানা বৃষ্টির কারণে সিলেটের পাহাড়টিলা ধসের শঙ্কা দেখা দিয়েছে। ফলে প্রাণহানির শঙ্কাও বেড়েছে। গত শনিবারই সিলেটের অন্তত ৪টি স্থানে টিলাধসের ঘটনা ঘটে। এতে নিহত হয়েছে এক শিশু। আহত হয়েছেন অন্তত ১০ জন। এ ছাড়া টিলা ধসে অন্তত ৪টি ঘর ভেঙে গেছে।

শনিবার সিলেট সদর উপজেলার খাদিম চা বাগান এলাকায় টিলা ধসে এক শিশু মারা যায়। এ ছাড়া নবীগঞ্জে টিলা ধসে আহত হয়েছেন দশজন। আর জৈন্তাপুর উপজেলায় টিলা ধসে তিনটি বাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। এ ছাড়া টিলা ধসের ঘটনা ঘটেছে নগরের আখালিয়ায়ও। পাঁচ দিন ধরে টানা বৃষ্টি হচ্ছে সিলেটে। বৃষ্টি হয়েছে রোববারও। ফলে বেড়েছে টিলা ধসের শঙ্কাও।

সিলেটে কী পরিমাণ মানুষ টিলার পাদদেশে বসবাস করেন সরকারিভাবে এর কোনো তালিকা নেই, তবে বেসরকারি হিসেবে প্রায় ১০ হাজার পরিবার টিলার পাদদেশে বসবাস করছে। মূলত কম ভাড়ায় কিংবা বিনা ভাড়ায় থাকতে পারার কারণেই দরিদ্র শ্রেণির লোকেরাই টিলার পাদদেশে ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করেন। আবার কিছু গোষ্ঠী টিলা কাটা বা দখলে রাখার জন্য টিলার পদদেশে ঘর বানিয়ে ভূমিহীনদের কম ভাড়ায় বরাদ্দ দেয়।

যদিও ২০১২ সালে সিলেটের পাহাড়-টিলা সংরক্ষণে উচ্চ আদালতের এক রায়ে টিলার ওপর ও পাদদেশে ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করা দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে পুনর্বাসনের নির্দেশনা দেয়া হয়।

সিলেট নগরের হাওলাদারপাড়া এলাকার একটি টিলার নাম জাগো টিলা। উঁচু এই টিলার একেবারে কিনারা ঘেঁষে সারিবদ্ধভাবে কয়েকটি ঘর। ওপরের ঘরগুলোর ঠিক নিচে, টিলার পাদদেশেও ঘর রয়েছে কয়েকটি। টিলার ওপরে ও ঢালে বসবাস করা সব পরিবারের বাসিন্দাই রয়েছেন ঝুঁকিতে। প্রাণের শঙ্কা নিয়েই বছরের পর বছর ধরে তারা বসবাস করে আসছেন এখানে।

জাগোটিলার ওপর ঘর বানিয়ে বাস করা শামসুল ইসলাম বলেন, ‘এটি সরকারি টিলা। ভাড়া দিতে হয় না। তাই আমরা এখানে ঘর বানিয়ে থাকি।’

ঝুঁকি সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘ভয় তো আছেই। বৃষ্টি দিলে ভয় আরও বেড়ে যায়। কিন্তু আমরা গরিব মানুষ। জায়গা কেনার সামর্থ্য নেই। ঘর ভাড়া করাও অনেক খরচের। তাই ঝুঁকি নিয়েই এখানে থাকি।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, টিলার ওপরে ও পাদদেশে বসবাসকারী বেশিরভাগ লোকজনই এ রকম দরিদ্র। স্থানীয় প্রভাবশালীরা টিলা কাটা ও দখলের জন্য দরিদ্রশ্রেণির লোকজনদের বসিয়েছেন। আবার কম টাকায় পেয়ে টিলার পাদদেশে জমি কিনেও ঘর বানিয়েছেন অনেকে।

বাংলাদেশ পরিবশে আইনবিদ সমিতির (বেলা) হিসাব মতে, সিলেট নগর, সদর, গোলাপগঞ্জ, বিয়ানীবাজার, ফেঞ্চুগঞ্জ, জৈন্তাপুর ও গোয়াইনঘাট উপজেলায় প্রায় ৪০০ পাহাড়-টিলা রয়েছে। এসব টিলার ওপর ও পাদদেশে অনেক পরিবার ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করে।

পরিবেশবাদী সংগঠন সেভ দ্য হেরিটেজ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টের প্রধান সমন্বয়ক আবদুল হাই বলেন, আমরা বছর তিনেক আগে একটা জরিপ চালিয়ে দেখেছিলাম জেলায় টিলার পাদদেশে প্রায় ১০ হাজার পরিবার ঝুঁকিপূর্ণভাবে বাস করছেন। এখন এ সংখ্যা আরও অনেক বাড়বে।

তিনি বলেন, বসবাসের জন্য এসব টিলার অনেকাংশ কেটে ফেলায় টিলাগুলোও দুর্বল হয়ে পড়েছে। ফলে বর্ষা মৌসুমে এগুলো ধসে পড়ে প্রাণহাণির ঘটনা ঘটে।

অপরিকল্পিতভাবে টিলা কাটা, বৃক্ষ উজাড় ও টিলার পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসের ফলে বৃষ্টি হলেই টিলা ধসে পড়ছে বলে মত এই পরিবেশকর্মীর।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নগরের হাওলাদারপাড়া, আখালিয়া, পীরমহল্লা ব্রাহ্মণশাসন জাহাঙ্গীরনগর, তারাপুর চা বাগান এবং নগরের উপকণ্ঠের বালুচর, বিমানবন্দর সড়ক, খাদিমপাড়া, খাদিমনগর, জোনাকী, ইসলামপুর মেজরটিলা, মংলিরপাড় এলাকায় বিভিন্ন টিলার পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করছে কয়েকশ পরিবার। এ ছাড়া জৈন্তাপুর, গোলাপগঞ্জ, বিয়ানীবাজার, গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় টিলা ও পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে সহস্রাধিক পরিবার।

কী পরিমাণ লোক টিলার ওপর ও পাদদেশে বসবাস করেন এমন তথ্য নেই জানিয়ে জৈন্তাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল বশিরুল ইসলাম বলেন, আমাদের উপজেলায় কয়েকটি ইউনিয়নে এ রকম টিলার পাদদেশে লোকজন বসবাস করেন। আমরা তাদের নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার জন্য মাইকিং করাচ্ছি। ইউনিয়ন পরিষদেও চেয়ারম্যানদের দিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছি।

ইউএনও বলেন, প্রতিবছরই বর্ষা মৌসুমে তাদের সরানোর চেষ্টা করা হয়। কিন্তু যারা টিলার পাদদেশে বসবাস করেন তারা সরতে চান না। কাউকে জোর করে সারালেও কিছুদিন পর তারা আবার ফিরে আসেন।

তবে টিলার পাদদেশে ঝুঁকি নিয়ে বসবাস ও প্রাণহানির জন্য প্রশাসনের গাফিলতিকে দায়ী করে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) সিলেটের সমন্বয়ক শাহ শাহেদা আক্তার বলেন, ২০১২ সালে আমাদের করা একটি রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে উচ্চ আদালত সিলেটে পাহাড়-টিলা কাটায় নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। একই সঙ্গে পাহাড়-টিলা সংরক্ষণ ও তার পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারী দরিদ্র মানুষজনকে পুনর্বাসনের নির্দেশনা দেন। কিন্তু ওই রায়ের ১১ বছর পেরিয়ে গেলেও আজ পর্যন্ত এ নির্দেশনা বাস্তবায়ন করা হয়নি।

শাহ শাহেদা আক্তার বলেন, কী পরিমাণ লোক ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করেন তারও কোনো হিসেব নেই জেলা প্রশাসনের কাছে। তাদের পুনর্বাসন বা টিলা সংরক্ষণে সরকারি কোনো উদ্যোগ বা প্রকল্প নেই। বরং টিলা ধ্বংস করে অনেক প্রকল্প আছে। সরকারের এই নিষ্ক্রিয়তার কারণেই বারবার এ দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটছে।

টিলার পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাকারীদের সরানো যায় না দাবি সিলেটের জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসানেরও। তিনি বলেন, ‘টিলার ওপরে ও পাদদেশে যারা বসবাস করেনম চেষ্টা করেও তাদের অন্যত্র সরানো যায় না। এ বছরও আমরা সব ইউএনওর মাধ্যমে মাইকিং করিয়ে টিলার পাদদেশে বসবাসকারীদের নিরাপদে সরে যেতে বলেছি। কিন্তু কেউ কথা শোনেনি।’

তিনি বলেন, এটা একটা বড় সমস্যা। তাদের কীভাবে সরানো যায় ও পুনর্বাসন করা যায়, এ নিয়ে ভাবছি। তাদের মধ্যে যদি কেউ ভূমিহীন থেকে থাকেন, তাহলে প্রশাসন বা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে তাদের সরকারের আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় নিয়ে আসার চেষ্টা করা হবে।

বিষয়:

এখন থেকে দাবি নিয়ে রাস্তায় নামলে কঠোর ব্যবস্থা : প্রেস সচিব

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর দাবি-দাওয়া নিয়ে রাস্তায় নামলে তাদের কঠোর হস্তে দমন করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। তিনি বলেছেন, অনেক গ্রুপ অপেক্ষা করতে চাচ্ছে না। অপ্রয়োজনীয় বিষয় নিয়েও আন্দোলনের চেষ্টা করছে। যারা বেআইনিভাবে আন্দোলন করবে তাদের কঠোর হস্তে দমন করা হবে। বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) বিকেলে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা বলেন।

প্রেস সচিব বলেন, ‘আমরা একটি ভালো নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খুবই ভালো আছে। আশা করছি, ভালো থাকবে। নির্বাচনকে সামনে রেখে আমাদের প্রস্তুতি আছে। ট্রেনিং চলছে, ওসি, এসপি, ডসি পদায়ন হয়ে গেছে।’

প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, ‘জাতিকে একটা ফ্রি ফেয়ার এবং উৎসবমুখর নির্বাচন উপহার দিতে পারবে। তফসিল ঘোষণার প্রেক্ষাপটে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। অনলাইন সাইবার জালিয়াতি রোধে কড়া বার্তা দিয়েছে। এগুলো রোধে সর্বোচ্চ উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।’

এদিন প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে তার সভাপতিত্বে উপদেষ্টা পরিষদের সভায় মেট্রোরেলের ভ্যাট প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’ পরে ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান প্রেস সচিব।

তিনি জানান, যেহেতু মেট্রোরেল ঢাকা শহরের মানুষের যাতায়াতের যুগান্তকারী ভূমিকা পালন করছে, সে কারণে এই ভ্যাট বা মূল্যসংযোজন কর প্রত্যাহার করা হয়েছে।

প্রেস সচিব জানান, ফেব্রুয়ারিতে রোজা সামনে রেখে রোজাদারদের সুবিধার কথা বিবেচনা করে খেজুরের উপর ট্যাক্স ৫২.২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৪০.৭ শতাংশ করা হয়েছে। এখানে মূলত খেজুরের কাস্টমস ডিউটি ১৫ শতাংশ কমানো হয়েছে।

শফিকুল আলম জানান, উপদেষ্টা পরিষদের সভায় তিনটি নতুন আইন উঠেছে। এর মধ্যে বাণিজ্যিক আদালত অধ্যাদেশ এবং রেজিস্ট্রেশন অর্ডিন্যান্স, এমেন্ডমেন্ট ২০২৫ নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে আর আইনগত সহায়তা প্রদান (দ্বিতীয় সংশোধন) অধ্যাদেশের খসড়ার নীতিগত চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।


সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে কঠোর অবস্থানে বিআরটিএ

৬০ ঘণ্টা বাধ্যতামূলক প্রশিক্ষণ
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

নতুন করে ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে হলে এখন থেকে ৬০ ঘণ্টার বাধ্যতামূলক প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করতেই হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) চেয়ারম্যান আবু মমতাজ সাদ উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেছেন, আইন যতই হালনাগাদ করা হোক, বাস্তবায়ন না হলে সড়কে শৃঙ্খলা ফিরবে না। মালিক–শ্রমিক থেকে শুরু করে সাধারণ নাগরিক পর্যন্ত সবাইকে এই পরিবর্তন গ্রহণ করতে হবে। এসময় সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে কুইক রেসপন্স সিস্টেম গড়ার ঘোষণাও বিআরটিএ চেয়ারম্যান।

সম্প্রতি রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে জাতীয় হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ আয়োজিত ‘টেকসই উন্নয়নে সড়ক নিরাপত্তা আইন: বাংলাদেশ পরিপ্রেক্ষিত ও করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ তথ্য জানান।

এসময় বিআরটিএ চেয়ারম্যান নিজের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথাও তুলে ধরেন। তিনি জানান, ২৩ সেপ্টেম্বর তার নিজের মেয়ের জামাই একটি দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হন। দুই দফা অপারেশন করা হয়েছে, এখনো হাঁটতে পারেন না। চেয়ারম্যানের ভাষ্য, ‘যিনি বেঁচে যান, তার কষ্ট অনেক বেশি। এই জায়গা বোঝার পরই উপলব্ধি করেছি— দুর্ঘটনার পরপর দ্রুত সাড়া দেওয়ার ব্যবস্থা না থাকলে ক্ষতির গভীরতা কয়েকগুণ বেড়ে যায়।’

এ কারণেই তিনি অবিলম্বে একটি কুইক রেসপন্স সিস্টেম চালুর প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন। দুর্ঘটনার পর প্রথম ৩০–৬০ মিনিটকে ‘হিস্টরি-চেঞ্জিং টাইম’ হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, দ্রুত উদ্ধার ও চিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে; নইলে মৃত্যু ও অক্ষমতা দুটোই বেড়ে যায়।

বিআরটিএ চেয়ারম্যান বলেন, দেশে মোটর ভেহিকেল অর্ডিন্যান্স থাকলেও ১০০ শতাংশ বাস্তবায়ন সম্ভব হয় না। আইন অনুযায়ী একজন চালক সর্বোচ্চ আট ঘণ্টা গাড়ি চালাতে পারেন, কিন্তু বাস্তবে চালকরা ১৪ ঘণ্টা পর্যন্ত স্টিয়ারিং ধরে থাকেন। এতে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বহুগুণ বাড়ে।

তিনি স্বীকার করেন, পুলিশের সক্ষমতা সীমিত; তবে শুধু পুলিশ নয়, সমন্বিত ব্যবস্থা ছাড়া কিছুই বদলানো যাবে না। মালিক, শ্রমিক, স্থানীয় প্রশাসন, সড়ক খাতের সব সংস্থা এবং জনগণ— সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।

চেয়ারম্যান জানান, সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত বা গুরুতর আহত ব্যক্তিদের পরিবারকে সরকার ট্রাস্টি বোর্ডের মাধ্যমে আর্থিক সহায়তা দেয়— মৃত্যু হলে ৫ লাখ টাকা, স্থায়ী পঙ্গুত্ব হলে ৩ লাখ টাকা এবং গুরুতর আহত হলে ১ লাখ টাকা।

তবে এই অর্থ পেতে হলে দুর্ঘটনার পরপরই নিকটস্থ বিআরটিএ অফিসারকে জানাতে হবে অথবা নির্ধারিত ফর্ম জমা দিতে হবে। অনেক সংস্থা ছয় মাস সময় নেয়— এটি অগ্রহণযোগ্য বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

বিআরটিএ একটি মাস্টার ট্রেইনার পুল তৈরি করছে, যারা সারাদেশের ড্রাইভিং ইনস্টিটিউটে গিয়ে নতুন ৬০ ঘণ্টার কারিকুলাম অনুযায়ী প্রশিক্ষণ দেবেন।

চেয়ারম্যান বলেন, শুধু লাইসেন্স না; সড়কে নামার আগে চালকের ভেতরে ন্যূনতম দক্ষতা এবং আচরণগত পরিবর্তন আনতেই হবে।

তিনি মনে করেন, দেশের ৫–২৯ বছর বয়সী জনসংখ্যা (৩২%) আগামী অর্থনীতির মূল শক্তি। সড়কে প্রতিদিন তাদের জীবন ঝুঁকিতে পড়লে অর্থনৈতিক টেকঅফ অসম্ভব। তাই সড়ক নিরাপত্তাকে তিনি জাতীয় অর্থনৈতিক অগ্রাধিকারের জায়গায় দেখতে চান।


বিদায়ী দুই উপদেষ্টার সম্মানে প্রধান উপদেষ্টার মধ্যাহ্নভোজ

বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে বিদায়ী দুই উপদেষ্টা মো. মাহফুজ আলম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার সম্মানে মধ্যাহ্নভোজ শেষে ফটোসেশন। ছবি: প্রেস উইং
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) রাজধানীর তেজগাঁওয়ে তার কার্যালয়ে উপদেষ্টা পরিষদের সভা শেষে বিদায়ী দুই উপদেষ্টা মো. মাহফুজ আলম এবং আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার সম্মানে এক মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন করেন।

প্রধান উপদেষ্টা সভা শেষে তাদের সঙ্গে স্মৃতিচারণমূলক একটি ছবিও তোলেন বলে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানায়।

বুধবার (১০ ডিসেম্বর) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. মাহফুজ আলম এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া প্রধান উপদেষ্টার কাছে তাদের পদত্যাগপত্র জমা দেন।

বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরই তাদের পদত্যাগ কার্যকর হয়।


দেশব্যাপী ‘আনসার-ভিডিপি’―এর জেলা ও উপজেলার প্রশাসনিক পর্যায়ে ব্যাপক রদবদল

আপডেটেড ১১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ২২:২১
নিজস্ব প্রতিবেদক

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর অভ্যন্তরীণ প্রশাসনিক কাঠামোয় ব্যাপক পুনর্বিন্যাস কার্যকর করা হয়েছে। গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী বাস্তবতায় একটি আধুনিক, দক্ষ ও জনমুখী নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ৪৭ জেলা কমান্ডেন্ট ও ১৬২ উপজেলা কর্মকর্তাদের বদলি এই উদ্যোগের মূল অংশ।

একইসঙ্গে নির্বাচনী নিরাপত্তা দায়িত্ব পালনে মাঠ পর্যায়ের সদস্যদের যাচাইকরণ তালিকা হালনাগাদ, এভিএমআইএস সফটওয়্যারে তথ্য সংযোজন, নির্বাচনী মহড়া এবং প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ কার্যক্রম ইতোমধ্যে চলমান রয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর উপপরিচালক ও গণসংযোগ কর্মকর্তা মো: আশিকউজ্জামান স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নির্বাচনকে শান্তিপূর্ণ, স্বচ্ছ ও অংশগ্রহণমূলক রাখতে নিরাপত্তা বাহিনীর পেশাগত দক্ষতা ও নিরপেক্ষতা অপরিহার্য। এ লক্ষ্যকে সামনে রেখে আনসার-ভিডিপি সদস্যদের আচরণগত উন্নয়ন, দায়িত্ব পালনের সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং ভোটকেন্দ্রসহ দায়িত্বপ্রাপ্ত স্থানে পেশাদারিত্ব বজায় রাখার জন্য নিবিড় প্রশিক্ষণ কর্মসূচি পরিচালিত হচ্ছে। সরকারের মূল উদ্দেশ্য—নির্বাচনকালীন দায়িত্বে নিযুক্ত প্রতিটি সদস্য যেন সর্বোচ্চ সততা, শৃঙ্খলা ও নিরপেক্ষতা প্রদর্শন করেন।

এই প্রস্তুতির অংশ হিসেবে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রশাসনিক কাঠামো পুনর্বিন্যাস ও সকল মোতায়েন কার্যক্রমে ডিজিটালাইজড করা হয়েছে। আনসার সদর দপ্তর সূত্রে জানা যায়, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা নতুন কর্মস্থলে যোগদানের পর নির্বাচনী দায়িত্ব পালনে বাহিনী প্রধান কর্তৃক ইতিমধ্যে ইস্যুকৃত দিকনির্দেশনা ও কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য সর্বোচ্চ উদ্যোগে প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হবে।

বাহিনীর দায়িত্বশীল সূত্র আরও জানায়, নির্বাচন চলাকালে প্রত্যেক সদস্যকে শতভাগ নিরপেক্ষতা, সততা ও পেশাগত আচরণ বজায় রেখে দায়িত্ব পালনের জন্য কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হবে। মানবসম্পদের নেতৃত্বদানকারীদের এই পুনর্বিন্যাস নির্বাচনী সময়ে বিভিন্ন জেলার নিরাপত্তা চাহিদা অনুযায়ী দায়িত্ব বণ্টনকে আরও কার্যকর করবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।

আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে আনসার-ভিডিপির এই ব্যাপক প্রশাসনিক সংস্কার নির্বাচন-সংক্রান্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করবে এবং একটি স্থিতিশীল, শান্তিপূর্ণ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের সহায়ক ভূমিকা রাখবে। গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রা ও রাষ্ট্র পরিচালনায় জনগণের আস্থা পুনঃস্থাপনে এ উদ্যোগকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করা হচ্ছে।


পিরোজপুরে খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় পৌর বিএনপির দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
পিরোজপুর প্রতিনিধি

পিরোজপুরে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির চেয়ারপার্সন ও তিন বারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১১ ই ডিসেম্বর) আছর নামাজ বাদ দি গোপালকৃষ্ণ টাউন ক্লাব টেনিস গ্রাউন্ডে পৌর বিএনপির আয়োজনে এ দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।

অনুষ্ঠানে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী উপস্থিত হয়ে বেগম খালেদা জিয়ার দ্রুত আরোগ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করে দোয়া করেন।

দোয়া মাহফিলে পৌর বি এন পির সভাপতি শেখ শহিদুল্লাহ শহিদ এর সভাপতিত্ত্বে ও সাধারন সম্পাদক মোঃ সরোয়ার হোসেন হাওলাদার এর সঞ্চালনায়, বক্তব্য রাখেন, জেলা বিএনপির সদস্য সচিব সাইদুল ইসলাম কিসমত,জেলা বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব গাজী ওয়াহিদুজ্জামান লাভলু,

বীর মুক্তিযোদ্ধা সাবেক পৌর কাউন্সিলর জেলা শ্রমিকদলের সভাপতি আব্দুস সালাম বাতেন,সাধারন সম্পাদক আফজাল হোসেন টিপু

জেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি মিজানুর রহমান শাহিন, জেলা যুবদলের সদস্য সচিব এমদাদুল হক মাসুদ, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি সালাউদ্দিন তালুকদার কুমার, সাধারন সম্পাদক মাহামুদ হাসান শাহীন, জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) মোঃ খায়রুল ইসলাম বাবু প্রমুখ।

এসময় ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল,শ্রমিকদল সহ বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

বক্তারা বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রামে প্রতীক। গণতন্ত্র ও মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে বেগম জিয়া আজও অটল। দেশবাসীর দোয়া ও ভালবাসায় তিনি খুব দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবেন এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

আপনারা সবাই দেশের তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতার জন্য আন্তরিকভাবে দোয়া করুন। তাঁকে সুস্থ দেখতে পুরো দেশবাসী অপেক্ষা করছে।

শেষে বেগম জিয়ার দ্রুত সুস্থতা ও কল্যাণ কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।


রাজশাহীতে গভীর নলকূপের পাইপে পড়ে যাওয়া শিশু সাজিদকে জীবিত উদ্ধার

গভীর নলকূপের পাইপে পড়ে যাওয়া শিশু সাজিদকে জীবিত উদ্ধার।
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
প্রতিবেদক, দৈনিক বাংলা

রাজশাহীর তানোরে পরিত্যক্ত একটি গভীর নলকূপের পাইপে পড়ে যাওয়া দুই বছরের শিশু সাজিদকে উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে ফায়ার সার্ভিস। শিশুটি জীবিত আছে। তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) রাত ৮টা ৫০ মিনিটে শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়। এর আগে বুধবার (১০ ডিসেম্বর) দুপুরে গভীর নলকূপের ওই পাইপে পড়ে যায় শিশুটি।

তানোর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাঈমা খান শিশুটিকে জীবিত উদ্ধারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

স্থানীয়রা জানান, কোয়েলহাট গ্রামের মাঠের পাশ দিয়ে মায়ের সঙ্গে হাঁটার সময় অসাবধানবশত পরিত্যক্ত নলকূপের গর্তে পড়ে যায় সাজিদ। মায়ের আর্তচিৎকারে স্থানীয়রা ছুটে এসে প্রথমে উদ্ধার চেষ্টা চালালেও ব্যর্থ হলে ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেওয়া হয়। রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে তিনটি ইউনিট এসে তাৎক্ষণিক উদ্ধার অভিযান শুরু করে।

ফায়ার সার্ভিস প্রথম পর্যায়ে চার্জ ভিশন ক্যামেরা দিয়ে প্রায় ৩৫ ফুট পর্যন্ত অনুসন্ধান চালায়। তবে শিশুর অবস্থান শনাক্ত করতে ব্যর্থ হয়। এরপর পাশেই এস্কেভেটর দিয়ে রাতভর প্রায় ৩৫ ফুট গভীর বড় একটি গর্ত খনন করা হয়। সকালে সেই গর্ত থেকে নলকূপের দিকে সুড়ঙ্গ খোঁড়ার চেষ্টা করা হলেও সেখানেও শিশুর অবস্থান শনাক্ত করা যায়নি। এরপর আবারও পরিত্যক্ত নলকূপে ক্যামেরা নামানো হলে সেটিতে মাটি ছাড়া আর কিছু দেখা যায়নি। এরপর নতুন করে আবারও খননের সিদ্ধান্ত নেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বছরখানেক আগে জমিতে সেচ দেওয়ার জন্য ওই নলকূপ খোঁড়া হয়েছিল। পানি না ওঠায় মালিক সেটি মাটি দিয়ে ঢেকে রাখেন। সম্প্রতি বৃষ্টির কারণে মাটি ধসে পড়ে নলকূপের মুখ আবারও উন্মুক্ত হয়ে যায়। সেই গর্তেই দুর্ঘটনাবশত পড়ে যায় শিশু সাজিদ।

শিশুটির মা রুনা খাতুন জানান, বুধবার দুপুর ১টার দিকে মেজো ছেলে সাজিদের হাত ধরে তিনি বাড়ির পাশের মাঠে যাচ্ছিলেন। এসময় তার ছোট একটি সন্তান কোলে ছিল। হাঁটার সময় হঠাৎ সাজিদ ‘মা’ বলে ডেকে ওঠে। পেছনে তাকিয়ে দেখেন, ছেলে নেই, গর্তের ভেতর থেকে ‘মা, মা’ বলে ডাকছে।

গর্তটির ওপরে খড় বিছানো ছিল। ওখানে যে গর্ত ছিল, সেটা বুঝতে পারেননি তিনি নিজে কিংবা শিশু সাজিদ। ওই জায়গায় পা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শিশুটি গর্তের ভেতর পড়ে যায়। লোকজন ডাকাডাকি করতে করতেই গর্তের তলায় চলে যায়।


অসহায় বৃদ্ধার টানে গভীর রাতে ছুটে এলেন মানবিক ইউএনও

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
পাথরঘাটা (বরগুনা) প্রতিনিধি

দেশের অন্যান্য উপজেলার মতো দেশের সর্ব দক্ষিণের উপজেলা পাথরঘাটায় ডিসেম্বরের কনকনে শীত। রাত প্রায় ৮টা। হঠাৎ রাস্তার পাশে অজানা এক কান্নার শব্দ থমকে দিল দৈনিক বাংলার পাথরঘাটা প্রতিনিধি সাংবাদিক আরিফ তৌহীদের পথচলা। কাছে গিয়ে দেখা গেল- বস্তুহীন, ক্ষীণদেহ, পরিত্যক্ত এক বৃদ্ধা নারী নিঃশব্দে শুয়ে আছেন রাস্তার ধারে। শরীরজুড়ে হাড়গোড়ের অসহায় চিহ্ন, চোখেমুখে অভিমান আর দীর্ঘদিনের কষ্টের ছাপ। যেন অজানা পথের দিকে তাকিয়ে কুয়াশাচ্ছন্ন আকাশের নিচে জীবন-মরণের স্রষ্টাকে ডাকছেন তিনি।

পরিবারের পরিচয় জানতে চাইলে খুলে বললেন তার গল্প। নাম তহমিনা। বয়স আনুমানিক আশির কোটায়। বাড়ি নলছিটি উপজেলার মালিপুর ইউনিয়নের নাঙ্গলী-বৈচুঙ্গী গ্রামে। স্বামী নূর ইসলাম খাঁ- যিনি প্রথম স্ত্রী থাকার পরও আরও দুটি বিয়ে করেছেন। চার ছেলে ও দুই মেয়ের জননী এই নারী একসময় ছিলেন সংসারের কেন্দ্রবিন্দু। কিন্তু সময়ের নিষ্ঠুরতায় আজ তিনি পরিত্যক্ত, অযত্নে ছড়িয়ে পড়েছেন অজানা পথে। অনাহার আর অবহেলায় ক্ষয়ে গেছে দেহ, নষ্ট হয়েছে চলার শক্তি।

সাংবাদিক আরিফ তৌহীদের চোখ এ দৃশ্য দেখে স্থির থাকতে পারেননি। বিভিন্ন জায়গায় যোগাযোগ করেও যখন কোনো সহায়তার ব্যবস্থা করা সম্ভব হলো না, তখনই তিনি ফোন দিলেন সদ্য যোগদান করা পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইশরাত জাহানের কাছে।

ফোনে বিষয়টি শোনামাত্রই ইউএনও ইশরাত জাহান গুরুত্বের সাথে ঘটনাস্থলে যাওয়ার নির্দেশ দেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই টিএইচও এবং অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে সেখানে পৌঁছে যান তিনি নিজেই। মানবিক সহায়তার হাত বাড়িয়ে, স্বশরীরে উপস্থিত থেকে বৃদ্ধা তহমিনাকে হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন।

সেদিন রাতেই চিকিৎসা দেওয়া হয় তাকে। স্থানীয় সমাজকর্মী মেহেদী শিকদার, সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম খোকন, শিক্ষক আজমী হাসানসহ আরও অনেকে ছিলেন সেই মানবিক মুহূর্তের সাক্ষী। কিন্তু মানবিক প্রয়াসের মাঝেই ভোরে এলো হৃদয়বিদারক খবর। ১০ ডিসেম্বর সকাল ৬টার দিকে মৃত্যুবরণ করেন তহমিনা।

খবর পেয়ে ইউএনও ইশরাত জাহান আবারও এগিয়ে আসেন। বৃদ্ধার দেওয়া নাম-পরিচয় ধরে খোঁজ নিয়ে তার পরিবারের ঠিকানা শনাক্ত করেন এবং প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে মরদেহটি তার স্বজনদের কাছে পৌঁছে দেন। পরিত্যক্ত জীবনের অন্তিম পরিণতিটুকু যেন হয় স্বসম্মানের-এটুকুর নিশ্চয়তা দেন তিনি।

ইউএনও ইশরাত জাহান বলেন, ‘মানুষ মানুষের জন্য। তাকে ওই অবস্থায় দেখে মন মানছিল না। তাই রাতেই ঘটনাস্থলে ছুটে যাই। সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি, কিন্তু তাকে বাঁচাতে পারলাম না। তবে কমপক্ষে তার মরদেহ পরিবারে পৌঁছে দিতে পেরেছি, এতেই স্বস্তি।’

এমন মানবিকতা, দায়িত্ববোধ আর দ্রুত উদ্যোগে ইতোমধ্যেই সর্বমহলে প্রশংসায় ভাসছেন তিনি। উপজেলার সাধারণ মানুষ তাকে আখ্যায়িত করছেন‘মানবিক ইউএনও ইশরাত জাহান’তাদের ভাষ্য, ‘একজন ইউএনও কেবল প্রশাসনিক কর্মকর্তা নন, তিনি পুরো উপজেলার মানুষের অভিভাবক। মানবিকতার এমন দৃষ্টান্ত সকল কর্মকর্তার জন্য অনুকরণীয়।’

এক অসহায় বৃদ্ধার পাশে দাঁড়ানো, রাতের অন্ধকারে মানবিকতার আলো জ্বালানো ইশরাত জাহান যেন সেই আলোকবর্তিকা, যিনি দেখিয়ে দিলেন প্রশাসনের আসল শক্তি কাগজ-কলম নয়, মানুষের প্রতি মানবিক দায়িত্ববোধ।


বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর নবীন বিমানসেনাদের প্রশিক্ষণ সমাপনী

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি

বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর ৫৩তম নব বিমানসেনা দলের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ১০ ঘটিকায় মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার বাংলাদেশ বিমান বাহিনী স্টেশন শমশেরনগরে অবস্থিত রিক্রুটস ট্রেনিং স্কুল (আরটিএস)-এ অনুষ্ঠিত হয়েছে। বাংলাদেশ বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন, বিবিপি, ওএসপি, জিইউপি, এনএসডব্লিউসি, এফএডব্লিউসি, পিএসসি প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে মনোজ্ঞ কুচকাওয়াজ পরিদর্শন এবং আকর্ষণীয় মার্চ পাস্ট এর অভিবাদন গ্রহণ করেন। এরপর তিনি কৃতি রিক্রুটদের মাঝে ট্রফি বিতরণ করেন।

বিমানবাহিনী প্রধান তার সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে রিক্রুটদেরকে সততা, একাগ্রতা ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করে বিমান বাহিনীর যোগ্য বিমানসেনা হিসেবে নিজেদেরকে গড়ে তোলার আহ্বান জানান। তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, তারা অকৃত্রিম দেশপ্রেমের প্রেরণায় উজ্জীবিত হয়ে বাংলার আকাশ মুক্ত রাখার দৃঢ় অঙ্গীকার বাস্তবায়নে সক্রিয় অবদান রাখবে।

এ কুচকাওয়াজের মধ্য দিয়ে মোট ৪৪১ জন রিক্রুট বাংলাদেশ বিমান বাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত হলো। এসি-২ মো. ওমর ইবনে নোমান এবং এসি-২ রেদোয়ান আহম্মেদ যথাক্রমে শিক্ষা ও জেনারেল সার্ভিস ট্রেনিং-এ সেরা রিক্রুট বিবেচিত হন। এসি-২ মো. ওমর ইবনে নোমান, সার্বিক বিষয়ে কৃতিত্বের জন্য শ্রেষ্ঠ রিক্রুট বিবেচিত হওয়ার গৌরব অর্জন করেন।

এর আগে বিমান বাহিনী প্রধান প্যারেড গ্রাউন্ডে এসে পৌঁছলে বিমান বাহিনী ঘাঁটি বীর উত্তম এ কে খন্দকার-এর এয়ার অধিনায়ক এয়ার ভাইস মার্শাল মোহাম্মদ খায়ের উল আফসার, জিইউপি, এনডিসি, পিএসসি এবং রিক্রুটস্ ট্রেনিং স্কুলের অধিনায়ক গ্রুপ ক্যাপ্টেন মো. খায়রুল বাসার, পিএসসি তাকে স্বাগত জানান।

অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মাঝে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা, মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক তৌহিদুজ্জামান পাভেল, পুলিশ সুপার মো. বিল্লাল হোসেন এবং স্থানীয় সামরিক ও অসামরিক গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গসহ প্রশিক্ষণ সমাপ্তকারী রিক্রুটদের অভিভাবকরাও উপস্থিত ছিলেন।


নীলফামারীতে বুড়ি তিস্তা নদীর দখলমুক্ত করে খননের দাবি

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নীলফামারী প্রতিনিধি

নীলফামারীতে সেচ সংকট নিরসনে বুড়ি তিস্তা নদী ও জলাশয় দখল মুক্ত করে খননের দাবিতে মানববন্ধন করেছে সেচ সুবিধাবঞ্চিত কৃষকেরা। বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) বিকেলে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন তারা। ওই কর্মসূচির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ও তিস্তা নদী রক্ষা কমিটির সদস্যরা মানববন্ধনে অংশগ্রহণ করেন।

এতে বক্তব্য রাখেন বাপা এর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফরিদুল ইসলাম ফরিদ, তিস্তা নদী রক্ষা কমিটির সাধারণ সম্পাদক কনক রহমান, বুড়ি তিস্তা নদী ও জলাশয় পুনরুদ্ধার কমিটির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, সেচ সুবিধাবঞ্চিত কৃষক শফিক হোসেন, দুলাল হোসেন, জয়নাল আলী সহ আরও অনেক।

বক্তারা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে বুড়িতিস্তা নদী ও জলাশয় অবৈধ দখলে থাকায় সেচকাজ ব্যাহত হচ্ছে। প্রকল্প এলাকার কৃষকেরা সেচ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, ফসল উৎপাদন কমে যাচ্ছে।

তারা অভিযোগ করেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড বুড়িতিস্তা খননের উদ্যোগ নিলেও প্রশাসন দখলদারদের উচ্ছেদে কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না। অল্পসংখ্যক দখলদারের সামনে প্রশাসন কেন অসহায়, সে বিষয়ে প্রশ্ন তুলেন বক্তারা।

মানববন্ধন কর্মসূচি শেষে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেন তারা।


নেত্রকোনায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের মতবিনিময় কর্মশালা অনুষ্ঠিত

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নেত্রকোনা প্রতিনিধি

নেত্রকোনার প্রধান নদীগুলির সমন্বিত পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনার সম্ভাব্যতা সমীক্ষা শীর্ষক সমীক্ষা প্রকল্পের ওপর কারিগরি সামাজিক ও পরিবেশগত মতবিনিময় কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) স্থানীয় পাবলিক হলে আই ডব্লিউ আর এম এই মতবিনিময় কর্মশালার আয়োজন করে।

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী (পুর) মো. রুহুল আমিনের সভাপতিত্বে মতবিনিময় কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা, নকশা ও গবেষণা) মো. রাফিউস সাজ্জাদ। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, নেত্রকোনার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মুনমুন জাহান লিজা, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী (পরিকল্পনা) ড. শ্যামল চন্দ্র দাস, অতিরিক্ত মহাপরিচালক মো. মাহবুবর রহমান।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন প্রকল্প পরিচালক ও তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোহাম্মদ শহীদুজ্জামান সরকার। বক্তব্য রাখেন নেত্রকোনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাখাওয়াত হোসেন। মতবিনিময় কর্মশালায় আই ডব্লিউ আর এম কর্তৃক মাঠ পর্যায়ে পরিচালিত সম্ভাব্যতা সমীক্ষার সার্বিক চিত্র তুলে ধরা হয়।

সেখানে আরও কিছু যোগ করা যায় কি না সে ব্যাপারে সকলের মতামত চাওয়া হয়। এই সমীক্ষার প্রেক্ষিতে রোডম্যাপ তৈরি করে দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সরকারের নীতিনির্ধারক মহলের কাছে সুপারিশমালা পেশ করা হবে বলে কর্মশালায় জানানো হয়।


মিয়ানমারে পাচারের সময় ১১ পাচারকারী আটক

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
টেকনাফ (কক্সবাজার) প্রতিনিধি

মিয়ানমারে অবৈধভাবে সিমেন্ট পাচারের সময় ১১ জন পাচারকারীকে আটক করেছে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড। বুধবার (১০ ডিসেম্বর) রাতে সেন্টমার্টিনের ছেড়াদ্বীপের দক্ষিণ-পশ্চিম সংলগ্ন সমুদ্র এলাকায় থেকে তাদের আটক করা হয়।

বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) বিকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কোস্ট গার্ডের মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার সিয়াম-উল-হক।

তিনি জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ‘অপারেশন সমুদ্র প্রহরা’-এ নিয়োজিত বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের জাহাজ সৈয়দ নজরুল বুধবার (১০ ডিসেম্বর) রাতে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে। এ সময় সন্দেহজনক একটি ফিশিং বোটে তল্লাশি চালিয়ে শুল্ক-কর ফাঁকি দিয়ে মিয়ানমারে পাচারের উদ্দেশে বহন করা প্রায় ৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা মূল্যের ৬০০ বস্তা সিমেন্ট জব্দ করা হয়। একই সঙ্গে পাচার কাজে ব্যবহৃত বোটসহ ১১ জন পাচারকারীকে আটক করা হয়।

জব্দকৃত মালামাল, বোট ও আটক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে বলে জানান কোস্ট গার্ডের এ কর্মকর্তা। তিনি আরও বলেন, পাচার ও চোরাচালান রোধে কোস্ট গার্ডের অভিযান অব্যাহত থাকবে।


তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের প্রস্তাবিত সংশোধনী পাসের দাবি ডরপের

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের প্রস্তাবিত সংশোধনী দ্রুত পাসের দাবি জানিয়েছে ডব়্প যুব ফোরাম। বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর মিরপুর-১০ এলাকায় ডব়্প যুব ফোরাম আয়োজিত জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের প্রস্তাবিত সংশোধনী দ্রুত পাসের দাবিতে মানববন্ধন শীর্ষক অনুষ্ঠানে এ দাবি জানানো হয়।

প্রধান উপদেষ্টাকে সময়ক্ষেপণ না করে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের খসড়া সংশোধনী দ্রুত পাসের বিষয়টিকে গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করার আহ্বান জানিয়ে তামাক বিরোধী যুব প্রতিনিধিরা বলেন, টোব্যাকো এটলাস ২০২৫’র তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে প্রতিবছর তামাকজনিত রোগে প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার মানুষ (প্রতিদিন গড়ে ৩৫৭ জন) মারা যায় এবং লাখ লাখ মানুষ অসুস্থ হয়। তামাকের কারণে অসংক্রামক রোগ যেমন- হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, দীর্ঘমেয়াদি শ্বাসরোগ, ক্যানসার, এবং কিডনি রোগ ক্রমেই বাড়ছে।

যুব প্রতিনিধিরা আরও বলেন, সম্প্রতি তামাক নিয়ন্ত্রণে সরকারের কিছু পদক্ষেপ নেয়া সত্ত্বেও এখনো বাংলাদেশে তামাক ব্যবহারের হার দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি। উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির এ বিলম্বের মূল্য আমাদের জীবন দিয়ে দিতে হচ্ছে। প্রতিদিন মানুষ অসুস্থ হচ্ছে, মারা যাচ্ছে— এটাই নিষ্ক্রিয় থাকার অপূরণীয় ক্ষতি। এছাড়াও তামাক ব্যবহারজনিত কারণে প্রতিবছর অর্থনৈতিক ক্ষতি হয় প্রায় ৩৯.২ হাজার কোটি টাকা। তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের প্রস্তাবিত সংশোধনীটি পাশ হলে একই সঙ্গে দেশে তামাকের ব্যবহার হ্রাস পাবে এবং এর মারাত্মক স্বাস্থ্য ও অর্থনৈতিক ক্ষতি কমানো সম্ভব হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আদিব বলেন, বাংলাদেশ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোল- এফসিটিসিতে স্বাক্ষরকারী প্রথম দেশ। তামাকের মহামারি সম্পর্কিত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ধূমপানমুক্ত পরিবেশ এবং তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন ও প্রণোদনা নিষিদ্ধ করার ক্ষেত্রে এখনো সর্বোত্তম মান অর্জন করতে পারেনি। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রণীত প্রস্তাবিত সংশোধনীটি পাশ হলে বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের দুর্বলতাগুলো দূর হবে এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এফসিটিসির সুপারিশসমূহের কার্যকর বাস্তবায়ন এবং বৈশ্বিক সর্বোৎকৃষ্ট অনুশীলনের আলোকে বাংলাদেশের তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনটি বৈশ্বিক মানদণ্ডে উপনীত হবে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সৈকত বলেন, তামাক কোম্পানিগুলোর প্রধান টার্গেট আমাদের মতো তরুণরা। কারণ তারা জানে যে, তরুণদের একবার আকৃষ্ট করতে পারলে তারা দীর্ঘমেয়াদি ভোক্তা পাবে। এ লক্ষ্যে তারা প্রতিনিয়ত নতুন নতুন কৌশল অবলম্বন করে। সিগারেট, ই-সিগারেটের পর এখন তাদের নতুন কৌশল হলো নিকোটিন পাউচ। প্রতিনিয়ত বিভিন্ন প্রলোভন ও ভুল তথ্য দিয়ে তারা তরুণদের আকৃষ্ট করার চেষ্টা করছে। সম্প্রতি দেখা গেছে ফিলিপ মরিসের মত তামাক উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানকে নিকোটিন পাউচ উৎপাদনের কারখানা স্থাপনের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এই কূটকৌশল রুখে দিতে হবে এখনই। আর তার জন্য প্রয়োজন তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের প্রস্তাবিত সংশোধনী দ্রুত পাস করা।

মানববন্ধনে যুব প্রতিনিধিরা বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের ৬টি প্রস্তাবনা তুলে ধরেন। সেগুলো হলো—অধূমপায়ীদের সুরক্ষার জন্য সকল প্রকার পাবলিক প্লেস এবং পাবলিক পরিবহনে ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান বিলুপ্ত করা, তামাক পণ্যের প্রচার বন্ধ করার জন্য বিক্রয়কেন্দ্রে তামাকপণ্যের প্রদর্শন নিষিদ্ধ করা, তামাক কোম্পানির সামাজিক দায়বদ্ধতা কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা, ই-সিগারেট এর ক্ষতিকর প্রভাব থেকে শিশু-কিশোর ও তরুণদের রক্ষা করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ, তামাকপণ্যের সকল প্রকার খুচরা ও খোলা বিক্রয় বন্ধ করা ও সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তার আকার ৫০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৯০ শতাংশ করা। মানববন্ধন শেষে ইয়ুথরা ইউসেপ বাংলাদেশে ডব়্প’র আয়োজনে এক কর্মশালায় অংশগ্রহণ করে।


১১ ডিসেম্বর: নান্দাইল মুক্ত দিবস

আপডেটেড ১১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১৭:৩৩
মোঃ তারিকুল আলম নান্দাইল উপজেলা প্রতিনিধি

ময়মনসিংহের নান্দাইলের মানুষের জন্য ১১ ডিসেম্বর এক অবিস্মরণীয় দিন। ১৯৭১ সালের এই দিনে নয় মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের ধারাবাহিকতায় পাকবাহিনীর দখলমুক্ত হয় নান্দাইল। রাত দুইটার দিকে বিজয়ী মুক্তিযোদ্ধারা প্রথমবারের মতো উত্তোলন করেন স্বাধীন বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকা। এরপর থেকেই দিনটি নান্দাইলবাসীর কাছে “নান্দাইল মুক্ত দিবস” হিসেবে বিশেষ মর্যাদা পেয়ে আসছে।

মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর এপ্রিল মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহেই পাকিস্তানি বাহিনীকে প্রতিহত করার লক্ষ্যে নান্দাইলের মুশুল্লী উচ্চ বিদ্যালয়ে গোপন বৈঠকে বসেন মেজর খালেদ মোশাররফ ও এটিএম হায়দার। স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতায় পরিকল্পনা অনুযায়ী কয়েক দিনের মধ্যেই ডিনামাইট দিয়ে ধ্বংস করা হয় শুভখিলা রেলব্রিজ। এতে কিশোরগঞ্জ দিক থেকে ভারী অস্ত্রসহ পাকবাহিনীর অগ্রযাত্রা বাধাগ্রস্ত হয়। তবে পরে পাকিস্তানি সেনারা নদীপথে হালকা অস্ত্রসহ নান্দাইলে প্রবেশ করে।

১৮ এপ্রিল নান্দাইল শহরের প্রবেশমুখে কিশোরগঞ্জ সড়কে ট্রেঞ্চ কেটে সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা হলেও স্থানীয় দালালদের সহায়তায় খবর পেয়ে পাকবাহিনী এ উদ্যোগ ব্যর্থ করে দেয় এবং এ ঘটনায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ সভাপতি শাহনেওয়াজ ভূঁইয়াসহ সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়।

২১ এপ্রিল মেজর আশফাকের নেতৃত্বে পাকিস্তানি বাহিনী নান্দাইলে ঘাঁটি স্থাপন করে এবং ওই দিনই রাজগাঁতী, শুভখিলা ও কালীগঞ্জ এলাকায় নির্বিচারে ১৮ জন নিরীহ গ্রামবাসীকে হত্যা ও কয়েকশ ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেয়।

বারুইগ্রাম মাদ্রাসায় পাকবাহিনীর ক্যাম্প স্থাপনের পর এলাকাজুড়ে শুরু হয় ত্রাসের রাজত্ব। সংখ্যালঘু পরিবারগুলো আশ্রয় নিতে বাধ্য হয় আমুদাবাদে এবং দালালদের সাথে সমঝোতায় সীমাবদ্ধ জীবনে কাটাতে হয় যুদ্ধকালীন সময়।

পাকিস্তানি বাহিনী ও স্থানীয় রাজাকার–আলবদর সদস্যরা শুভখিলা রেলব্রিজের দুই পাশে পাহারা বসায়। প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্যমতে, সন্ধ্যার পর রিজার্ভ ট্রেনে করে গৌরীপুর ও ভৈরব থেকে ধরে আনা হত শত শত মুক্তিযোদ্ধা-সমর্থক ও নিরীহ গ্রামবাসী। পরে তাদের রেলব্রিজের নিচে দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করা হতো।

এ ছাড়া বারুইগ্রাম ক্যাম্পের পাশে ডাংরীবন্দ গ্রাম ও একটি পরিত্যক্ত ইটাখোলায় কমপক্ষে ২৫–৩০ জনকে হত্যা করে দখলদার বাহিনী।

তারপর মুক্তিযোদ্ধারা কৌশলগত আক্রমণের পরিকল্পনা করেন ১০ নভেম্বর, যার বাস্তবায়ন নির্ধারিত হয় ১৭ নভেম্বর। সেদিন মুক্তিযোদ্ধারা চারদিক থেকে নান্দাইল থানা ঘিরে ফেললেও পাকিস্তানি বাহিনী আগেই পরিকল্পনার খবর পেয়ে নিজেদের অবস্থান সুসংহত করে নেয়। সাড়ে চার ঘণ্টার সম্মুখ যুদ্ধে শাহনেওয়াজ ভূঁইয়া, ইলিয়াস উদ্দিন ভূঁইয়া, শামসুল হক, জিল্লুল বাকি সহ ২৪ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে পাকবাহিনী ও রাজাকাররা এলাকায় ব্যাপক লুটপাট, অগ্নিসংযোগ এবং গ্রামবাসীদের ওপর নির্মম অত্যাচার চালায়।

ডিসেম্বরের প্রথম থেকেই দেশের বিভিন্ন রণাঙ্গনে পাকিস্তানি বাহিনীর মনোবল ভেঙে পড়তে শুরু করলে মুক্তিযোদ্ধারা নতুন কৌশলে আক্রমণের প্রস্তুতি নেন। ১০ ডিসেম্বর রাতে নান্দাইল শহরকে ঘিরে থাকা নরসুন্দা নদীকে কাজে লাগিয়ে কমান্ডার ফারুকের নেতৃত্বে মুজিব বাহিনী তিনদিক থেকে থানা ঘেরাও করে পাকবাহিনীকে আত্মসমর্পণে বাধ্য করে। ১১ ডিসেম্বর রাত দুইটার দিকে উত্তোলিত হয় স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা—ঘোষণা পাওয়া যায় নান্দাইল মুক্ত হওয়ার।`

আজকের ১১ ডিসেম্বর শুধু একটি তারিখ নয়—এটি নান্দাইলবাসীর আত্মমর্যাদা, ত্যাগ ও বীরত্বের প্রতীক। প্রতি বছরই দিনটি উপলক্ষে নানা কর্মসূচি, আলোচনাসভা, শহীদ স্মরণ ও শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়।


banner close