বুধবার, ২৯ অক্টোবর ২০২৫
১৪ কার্তিক ১৪৩২

দাবি আদায়ে শিক্ষাবোর্ড কর্মকর্তাদের কর্মবিরতি, ভোগান্তিতে সেবাপ্রার্থীরা

ছবি: দৈনিক বাংলা
আপডেটেড
১০ অক্টোবর, ২০২৩ ১৩:৫৫
কুমিল্লা প্রতিনিধি
প্রকাশিত
কুমিল্লা প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ১০ অক্টোবর, ২০২৩ ১৩:৫০

সবার সঙ্গে কাগজপত্র। কেউ এসেছেন নাম সংশোধনের জন্য। আবার কেউবা এসেছেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কাজ নিয়ে। ফাইলপত্র নিয়ে এদিক-ওদিক ছুটছেন তারা। তবে কোনো সেবাই পাচ্ছেন না কেউ। মঙ্গলবার সকালে কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ডে চত্বরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

এদিন সকাল থেকে সব ধরনের কাজ বন্ধ করে শিক্ষাবোর্ডের কর্মকর্তরা কর্মবিরতি পালন শুরু করেন। ফলে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ফাইলপত্র নিয়ে এসে ভোগান্তিতে পড়েছেন সেবাপ্রার্থীরা। দাবি আদায় না হলে এ কর্মসূচি আরও দুইদিন চলবে বলে হুঁশিয়ারি দেয়া হয়েছে।

চাঁদপুর থেকে কুমিল্লায় এসেছেন আলী হোসেন। তিনি সার্টিফিকেটে নাম সংশোধন প্রয়োজন। তবে কর্মবিরতি চলায় শিক্ষাবোর্ডে সব ধরনের কাজ বন্ধ রয়েছে।

আলী হোসেন বলেন, আমার চাকরির মৌখিক সাক্ষাৎকার আছে। জাতীয়পরিচয় পত্রের নামের মিল না থাকলে চাকরিটা হবে না। এখানে এসে দেখি কর্মবিরতি চলছে। চাইলেই চাঁদপুর থেকে প্রতিদিন কুমিল্লায় আসা সম্ভব না। এখন আমি কী করবো বুঝতে পারছি না।

কয়েকজন শিক্ষককে দেখা গেল চিন্তিত। তারা এসেছেন কলেজের ম্যানেজিং কমিটির দ্বন্দ্ব নিরসনে বোর্ড কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলতে। তবে কর্মবিরতি চলায় তাদের কাজও সম্পন্ন হচ্ছে না।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন, সুপার নিউমারারি পদে পদোন্নতি, অধ্যাপক পদ তৃতীয় গ্রেডে উন্নীতকরণ, অর্জিত ছুটি প্রদান এবং ক্যাডার কম্পোজিশনের সুরক্ষা, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ও মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা নিয়োগবিধি বাতিল, শিক্ষা ক্যাডারের তফসিলভুক্ত পদ থেকে শিক্ষা ক্যাডার বহির্ভূতদের প্রত্যাহার, জেলা উপজেলায় শিক্ষা ক্যাডার নিয়ন্ত্রিত শিক্ষা প্রশাসন সৃষ্টি ও প্রয়োজনীয় পদসৃজন, পদসৃজনে জটিলতা কাটানোসহ বিভিন্ন দাবিতে ১০, ১১ ও ১২ অক্টোবর সারা দেশে একযোগে বিসিএস শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তারা কর্মবিরতির ডাক দেন। এরই অংশ হিসেবে মঙ্গলবার সকাল থেকে কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ডে কর্মবিরতি শুরু হয়।

কর্মসূচির ধারাবিকতায় বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির আহ্বানে কুমিল্লা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড ইউনিটের উদ্যোগে মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে শুরু হয় এ কর্মবিরতি।

কর্মবিরতিতে অংশ নিয়েছেন কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মো. জামাল নাছের, সচিব প্রফেসর নূর মোহাম্মদ, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ড. মো. আসাদুজ্জামান, কলেজ পরিদর্শক প্রফেসর মো. জহিরুল ইসলাম পাটোয়ারি, বিদ্যালয় পরিদর্শক প্রফেসর মো. আজহারুল ইসলাম, উপ-বিদ্যালয় পরিদর্শক মোহাম্মদ কামরুজ্জামানন, উপ-কলেজ পরিদর্শক বিজন কুমার চক্রবর্তী, উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (সনদ) ড. মো. শফিকুল ইসলাম, উপ-সচিব (প্রশাসন) এ কে এম সাহাব উদ্দিন, উপ-বিদ্যালয় পরিদর্শক মোহাম্মদ জাহিদুল হক উপ-সচিব (একাডেমিক) মোহাম্মদ সাফায়েত মিয়া, উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (উচ্চমাধ্যমিক) মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান, উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (মাধ্যমিক) মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম প্রমুখ।

কর্মকর্তারা বলছেন, পদোন্নতিতে সবচেয়ে নাজুক অবস্থায় রয়েছে শিক্ষা ক্যাডার। যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও সময়মতো পদোন্নতি না হওয়ায় অনেকে ১০ বছর যাবত এক পদেই রয়েছেন, এ মুহূর্তে এমন পদোন্নতির অপেক্ষায় আছেন ৭ হাজার কর্মকর্তা। সময়মতো পদোন্নতি না হওয়ায় অনেকে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবেই অবসরে যাচ্ছেন। গত ২৭ সেপ্টেম্বর সহযোগী অধ্যাপক পদে ৬৯০ জনের পদোন্নতি হয়েছে, অথচ এই পদে ৩ হাজারের মতো কর্মকর্তা পদোন্নতি পাওয়ার যোগ্য। দাবিগুলো পূরণে দৃশ্যমান অগ্রগতি না হলে আগামী ১১ ও ১২ অক্টোবরও সর্বাত্মক কর্মবিরতি চলবে।

বিষয়:

সারিয়াকান্দিতে ১০ মাস ধরে মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নেই, ব্যাহত শিক্ষা কার্যক্রম

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
সারিয়াকান্দি (বগুড়া) প্রতিনিধি

বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলায় দীর্ঘ ১০ মাস ধরে মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও একাডেমিক সুপারভাইজারের পদ শূন্য রয়েছে। এতে ব্যাহত হচ্ছে উপজেলার শিক্ষা কার্যক্রম ও প্রশাসনিক কার্যক্রম।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত সারিয়াকান্দি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার দায়িত্বে ছিলেন সরোয়ার ইউসুফ জামান এবং একাডেমিক সুপারভাইজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন মিলন হোসেন। শিক্ষা কর্মকর্তা অবসরে যান এবং একাডেমিক সুপারভাইজার বদলি হয়ে অন্যত্র যোগদান করেন। এরপর থেকে এ দুই পদে কেউ নিয়োগ না হওয়ায় শিক্ষা কার্যক্রমে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে।

বর্তমানে গাবতলী উপজেলার মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে সারিয়াকান্দির কার্যক্রম দেখছেন। তবে একাধারে দুই উপজেলার দায়িত্ব পালন করায় সারিয়াকান্দিতে প্রয়োজনীয় নজরদারি ও তদারকি হচ্ছে না বলে অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের।

এ অবস্থায় বিদ্যালয়গুলোতে নানা প্রশাসনিক ও একাডেমিক সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। প্রধান শিক্ষকদের কাজের সমন্বয়, সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়ন, শিক্ষক প্রশিক্ষণ কার্যক্রম, বিদ্যালয় পরিদর্শন এবং শিক্ষকদের পেশাগত উন্নয়ন কাজ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এছাড়া বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কার্যক্রম বাস্তবায়নে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে।

সারিয়াকান্দি পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও উপজেলা শিক্ষক সমিতির সভাপতি সাকী মো. জাকিউল আলম বলেন, “দীর্ঘদিন শিক্ষা কর্মকর্তা না থাকায় শিক্ষা কার্যক্রমে শৃঙ্খলা নষ্ট হচ্ছে। ফাইলপত্র জমা, প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও দিকনির্দেশনা না পাওয়ায় শিক্ষকরা ভোগান্তিতে পড়েছেন।”

মথুরপাড়া কাজী বছির উদ্দীন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও শিক্ষক কর্মচারী ঐক্যজোটের সভাপতি মো. তোফায়েল আহম্মেদ বলেন, “নিয়মিত শিক্ষা কর্মকর্তা না থাকায় শিক্ষার মান উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। শিক্ষকদের সমস্যা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে বিলম্ব হচ্ছে।”

এ বিষয়ে সারিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো. আতিকুর রহমান বলেন, “বিষয়টি শিক্ষা বিভাগের হলেও আমি ইতোমধ্যে জানার পর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানিয়েছি। দ্রুত পদায়নের উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে আশা করছি।”

বগুড়া জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রমজান আলী আকন্দ বলেন, “সারিয়াকান্দির শূন্য পদে নিয়োগের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। আপাতত গাবতলীর শিক্ষা কর্মকর্তা অতিরিক্ত দায়িত্বে কাজ করছেন। দ্রুত পদ পূরণের চেষ্টা চলছে।”

স্থানীয় শিক্ষাবন্ধুরা মনে করছেন, দ্রুত মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও একাডেমিক সুপারভাইজার নিয়োগ না হলে উপজেলার শিক্ষার মান আরও পিছিয়ে পড়বে।


৪০ বছরেও পাকা হয়নি কমলনগরের হাওলাদারপাড়া–বারঘর সড়ক

চরম দুর্ভোগে ২০ হাজার মানুষ
আপডেটেড ২৯ অক্টোবর, ২০২৫ ১৩:৫১
রামগতি-কমলনগর (লক্ষ্মীপুর) প্রতিনিধি

লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার চরকাদিরা ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের চরপাগলা গ্রামের হাওলাদারপাড়া থেকে বারঘর হয়ে কিল্লার রোড পর্যন্ত প্রায় ২ কিলোমিটার সড়ক ৪০ বছরেও পাকা হয়নি। কাঁচা এই সড়কটি বর্ষা মৌসুমে কাদা ও জলাবদ্ধতায় দুঃসহ হয়ে ওঠে। বছরের পর বছর ধরে অবহেলিত রাস্তাটি স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) নজরবিহীনই থেকে গেছে বলে অভিযোগ করেছে এলাকাবাসী।

গ্রামের প্রায় ২০ হাজার মানুষের যাতায়াতের একমাত্র ভরসা এই সড়কটি। কিন্তু দীর্ঘদিন সংস্কার বা পাকা করণের উদ্যোগ না থাকায় শিক্ষার্থী, কৃষক, রোগী ও শ্রমজীবী মানুষকে পড়তে হচ্ছে চরম ভোগান্তিতে।

স্থানীয় বাসিন্দা আকবর হোসেন আরজু হাওলাদার বলেন, “এই সড়কটি ৪০ বছর ধরে কাঁচা রয়ে গেছে। বর্ষায় বাজারে যাওয়া বা রোগী নিয়ে হাসপাতালে যাওয়া কষ্টকর হয়ে পড়ে। বহুবার দাবি জানিয়েছি, কিন্তু কোনো উন্নয়ন হয়নি।”

আরেক বাসিন্দা মাওলানা ওসমান গনি বলেন, “সড়কটি দিয়ে প্রতিদিন হাজারো মানুষ যাতায়াত করে। বর্ষায় হাঁটা প্রায় অসম্ভব হয়ে যায়। স্কুল-কলেজ ও মাদরাসার শিক্ষার্থীরাও বিপাকে পড়ে। অবিলম্বে এ রাস্তা পাকা করা প্রয়োজন।”

স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. নিজাম উদ্দিন জানান, “সড়কটি পাকা নির্মাণের জন্য সাবেক সংসদ সদস্যের কাছে বহুবার অনুরোধ জানানো হলেও কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এলাকার মানুষের দুর্ভোগ দূর করতে দ্রুত রাস্তাটি পাকা নির্মাণের ব্যবস্থা করতে হবে।”

চরকাদিরা ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মো. হারুন বলেন, “এটি ইউনিয়নের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোর একটি। ৪০ বছরে কোনো উন্নয়ন হয়নি, বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক।”

এ বিষয়ে কমলনগর উপজেলা এলজিইডির প্রকৌশলী আব্দুল কাদের মোজাহিদ বলেন,“সরেজমিন পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাহাত-উজ-জামান জানান, “স্থানীয়দের ভোগান্তির বিষয়টি জানা হয়েছে। দ্রুত উদ্যোগ নিতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে জানানো হবে।”


জয়পুরহাটে চার লেন সড়ক চালুর পর শহরে কমেছে যানজট, জনমনে স্বস্তি

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
রাব্বিউল হাসান, জয়পুরহাট

দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর জয়পুরহাট শহরের হাড়াইল থেকে রেলগেট পর্যন্ত আড়াই কিলোমিটার চার লেন সড়কের কাজ শেষ হয়েছে। এতে শহরে প্রধান সড়কের একাংশে যানজট কমেছে। এতে শহরবাসী ফিরে পেয়েছে স্বস্তি। তবে সুষ্ঠু পরিকল্পনার অভাবে নতুন সড়কেই এখন গাড়ি পার্কিং করতে হচ্ছে, যা আবারও শৃঙ্খলা নষ্টের আশঙ্কা তৈরি করেছে।

সচেতন শহরবাসীর প্রত্যাশা, পরিকল্পিত পার্কিং ও কঠোর ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা গেলে জয়পুরহাট শহরের চার লেন সড়ক প্রকল্প সত্যিকারের সফল হবে।

সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ সূত্রে জানা যায়, জয়পুরহাট শহরের হাড়াইল থেকে রেলগেট পর্যন্ত আড়াই কিলোমিটার সড়ক চার লেনে উন্নীত করার পরিকল্পনা হয়। ভূমি অধিগ্রহণ, পানি, বিদ্যুৎ ও টেলিফোন লাইন স্থানান্তর ও রেলগেট উন্নয়ন বাবদ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষে সর্বমোট ১০৪ কোটি ২২ লাখ ১৮ হাজার ৫৮৯ টাকা পরিশোধ করা হয়। এরমধ্যে ভূমি অধিগ্রহণেই ব্যয় হয়েছে ৯০ কোটি ২০ লাখ ৮৫ হাজার ৯৮০ টাকা।

এছাড়া সড়কের দুই পাশে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার নালা নির্মাণে ৩০ কোটি ও সড়ক প্রশস্তকরণে ২৮ কোটি টাকা ব্যয় বরাদ্দ দেওয়া হয়। নকশা অনুযায়ী সড়কটির হবে ৬০ ফুট প্রশস্ত। এক পাশে ২৪ ফুট, আরেক পাশে ২৪ ফুট প্রশস্ত। মাঝখানে থাকবে ৪ ফুট প্রশস্ত ডিভাইডার । পুরো সড়কের দুই পাশে থাকবে ড্রেনসহ ৫ থেকে ৯ ফুট প্রশস্ত ফুটপাত।

আরও জানা যায়, ২০১৮ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর চার লেন সড়ক প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান দুই দফায় কাজের মেয়াদ বাড়িয়ে চুক্তি অনুযায়ী কাজ করেনি। একারণে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সাড়ে ৩ কোটি টাকা জরিমানা করে সড়ক বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ। এরপর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নাভানা কনস্ট্রাকশনের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে। সড়কের দুই পাশে মোট প্রায় পাঁচ কিলোমিটার নালা নির্মাণ ও আড়াই কিলোমিটার চার লেন সড়ক নির্মাণের জন্য পুনরায় পৃথক দরপত্রের আহ্বান করে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। সড়কের দুই পাশে নালা নির্মাণের কাজটি পায় নওগাঁর ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান আমিনুল হক লিমিটেড ও চার লেন সড়কের কাজ পায় জয়েন ভেঞ্চার রিলায়েন্স বিল্ডার্স লিমিটেড ও হাসান টেকনো। ২০২২ সালের ২০ জুলাই নালা ও সড়ক নির্মাণের জন্য কার্যাদেশ দেওয়া হয়। ২০২৪ সালে শুধু দুই পাশে নালা নির্মাণের কাজ শেষ করা হয়। চলতি বছরের শুরুতেই চার লেন সড়কের নির্মাণকাজ শুরু করা হয়। নকশা জটিলতাসহ নানান কারণে চার লেন সড়কের কাজ কিছুদিন বন্ধ ছিল। পরে আবার কাজ শুরু করা হয়। এখন সড়কের কাজ শেষ হয়েছে।

শহরের আড়াই কিলোমিটার চার লেন সড়ক ঘুরে দেখা যায়, পাঁচুর মোড় থেকে আমতলী পর্যন্ত যানজট প্রবণ এলাকায় সড়কের দুই পাশে নিবিঘ্নে যানবাহন চলাচল করছে। এই এলাকায় সড়কের দুই পাশে যত্রতত্র গাড়ি পাকিং করা হয়েছে। এতে সড়কে কিছুটা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে। আবার সড়ক ডিভাইডারে লোকজন যে যার ইচ্ছামতো গাছ লাগিয়েছেন। ডিভাইডারে একজন শ্রমিক ঘাস নিড়ানি দিচ্ছেন। রেলেগেটের পশ্চিম অংশে আগের মতো যানজট রয়েছে। সড়কের এই অংশ চার লেন করা হয়নি।

ব্যাটারীচালিত ইজিবাইক চালক আপেল মাহমুদ শান্ত বলেন, আগে এই রাস্তায় যানজট লেগেই থাকতো। এখন সড়কের এক পাশে যানবাহন আসে, অন্য পাশে দিয়ে যায়। এখন আর এতটা যানজট লাগে না। তবে পার্কিংয়ের জায়গা না থাকায় অনেকে সড়কের ধারে গাড়ি রাখছে।

শহরের ব্যবসায়ী মো. আল-আমিন বলেন, শহরের প্রধান সড়কটা এখন অনেক সুন্দর হয়েছে। তবে দোকানপাটের সামনে গাড়ি রাখার কারণে আবারও যানজটের আশঙ্কা দেখা দিচ্ছে। পৌরসভা যদি নির্দিষ্ট পার্কিং ব্যবস্থা করে দেয়, তাহলে এ সমস্যা থাকবে না।

নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) জেলা শাখার সাধারণ ইসমাইল হোসেন বলেন, শহরের রেলগেট থেকে হাড়াইল পর্যন্ত চার লেন সড়ক করা হয়েছে। কিন্তু সড়কের ওপর যত্রতত্র গাড়ি পাকিং আবার যাত্রী ওঠা-নামা করানো হচ্ছে। গাড়ি পাকিং ও যাত্রী ওঠা-নামা বন্ধ করা গেলে আড়াই কিলোমিটার চার লেন সড়কে কোন যানজটই থাকবে না। তবে রেলগেটে পশ্চিম অংশের সড়ক চার লেন করা হয়নি। সেই অংশে আগের মতো যানজট হচ্ছে। শহরের প্রধান সড়কের বাকি অংশ দ্রুত চার লেন করার দাবি জানাচ্ছি।

জয়পুরহাট সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপ-বিভিগীয় প্রকৌশলী মেহেদী খান বলেন, আমরা সড়ক ডিডাইডারে কোন গাছ রোপন করিনি। লোকজন যে যার মতো ডিভাইডারে গাছ লাগিয়েছেন।

জয়পুরহাট সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাজস খান বলেন, চার লেন সড়ক চালুর পর শহরে যানজট অনেকটাই কমে গেছে। এছাড়া শহরে গাড়ি পার্কিং সমস্যা সমাধানে চেষ্টা করা হচ্ছে।


বাকৃবি ছাত্রীর বিরুদ্ধে সহপাঠীর অপ্রীতিকর ছবি বন্ধুকে পাঠানোর অভিযোগ

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
বাকৃবি প্রতিনিধি

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) গোপনে নারী শিক্ষার্থীদের অপ্রস্তুত অবস্থার ছবি তুলে এক সিনিয়র ছাত্রের কাছে পাঠানোর অভিযোগ উঠেছে কৃষি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদের ফুড ইঞ্জিনিয়ারিংটি অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগের এক নারী শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে।

অভিযোগ অনুযায়ী, ওই শিক্ষার্থী নিয়মিতভাবে মেয়েদের ঘুমন্ত বা ব্যক্তিগত মুহূর্তের ছবি তুলে তার এক সিনিয়র সহপাঠীর কাছে পাঠাতেন। বিষয়টি প্রকাশ পেলে সোমবার ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং বিভাগীয় শিক্ষক ও কৃষি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদের ডিনের কাছে অভিযোগ করেন।

ঘটনাটি তদন্ত ও সমাধানের জন্য ডিন অধ্যাপক ড. মো. আবদুল মজিদ ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের কয়েকজন শিক্ষককে মৌখিকভাবে দায়িত্ব দেন। পরে মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে শিক্ষার্থীরা ডিনের সঙ্গে বৈঠক করেন।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, অভিযুক্ত নারী শিক্ষার্থী দেবশ্রী দত্ত রাত্রী সদ্য ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন। যিনি ছবিগুলো গ্রহণ করতেন, তিনিও একই বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী এবং বর্তমানে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে লেকচারার হিসেবে কর্মরত আছেন।

অভিযুক্ত নারী শিক্ষার্থী অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করেছেন বলে জানিয়েছেন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. আবদুল মজিদ। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরা অভিযোগ নিয়ে আমার কাছে আসে। আমরা অভিযুক্ত শিক্ষার্থীর মোবাইল ফোন পরীক্ষা করে ছবির আদান-প্রদানের প্রমাণ পাই। জিজ্ঞাসাবাদের সময় তিনি স্বীকার করেন যে, তিনি মেয়েদের বিভিন্ন ছবি তুলতেন এবং তা এক সিনিয়র ভাইয়ের কাছে পাঠাতেন।

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে ওই মোবাইলটি সিলগালা অবস্থায় ডিন অফিসে সংরক্ষিত রয়েছে। বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নিপীড়ন প্রতিরোধ ও নিরোধ কমিটির কাছে হস্তান্তর করা হবে।

অভিযুক্ত সিনিয়র শিক্ষার্থী ও ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির লেকচারার। স্বীকারোক্তিমূলক প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, আমি মেয়েটির সঙ্গে দীর্ঘদিন কথা বলেছি। সে যেসব ছবি পাঠিয়েছে, আমি তা সংরক্ষণ করিনি। আমার কোনো খারাপ উদ্দেশ্য ছিল না, তবে আমি আমার কাজের জন্য অনুতপ্ত। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যা সিদ্ধান্ত নেবে, আমি তা মেনে নেব।

অভিযুক্ত শিক্ষার্থীর সহপাঠীরা জানান, ইন্টার্নশিপ চলাকালে ওই শিক্ষার্থীর সন্দেহজনক আচরণ লক্ষ্য করে তারা নজরদারিতে রাখেন। পরে নিশ্চিত হন যে, তিনি মেয়েদের ঘুমন্ত বা অপ্রস্তুত অবস্থার ছবি তুলতেন। বিষয়টি প্রমাণ হওয়ার পর তারা বিভাগীয় শিক্ষকদের অবহিত করেন এবং কঠোর প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।


দেশের শেষ ভরসাস্থল সেনাবাহিনীকে বিতর্কে টানবেন না

মীর আব্দুল আলীম
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
সম্পাদকীয়

বাংলাদেশের সেনাবাহিনী কেবল এক সশস্ত্র বাহিনী নয়; এটি জাতির অস্তিত্ব রক্ষার শেষ প্রাচীর, জনগণের সংকটমুহূর্তের নির্ভরতার প্রতীক।

স্বাধীনতার পর থেকে আজ পর্যন্ত প্রতিটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ, প্রতিটি সংকটে সেনাবাহিনীই ছিল জনগণের পাশে। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রাজনীতির কলুষতা এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে যেখানে এই বাহিনীকেও টেনে আনার চেষ্টা হয়েছে দলীয় স্বার্থের পরিখায়। কোনো সরকার বা গোষ্ঠী যদি সেনাবাহিনীকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করতে চায়, তবে সেটি কেবল বাহিনীর মর্যাদাকেই আঘাত করে না, বরং রাষ্ট্রের মেরুদণ্ডকেও ভেঙে দেয়। সেনাবাহিনীর মর্যাদা রাষ্ট্রের মর্যাদার সমার্থক। ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের আন্দোলন প্রমাণ করেছে- যখন সেনাবাহিনী জনগণের পাশে দাঁড়ায়, তখন ইতিহাসের গতিপথ পাল্টে যায়। আর যখন রাজনৈতিক স্বার্থে সেনাবাহিনীকে ব্যবহার করা হয়, তখন ইতিহাস রক্তাক্ত হয়। তাই আজ, নতুন বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় দায়িত্ব হলো—সেনাবাহিনীকে বিতর্কের ঊর্ধ্বে রাখা।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনী রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্যের শপথ নেয়, কোনো রাজনৈতিক দলের প্রতি নয়। তারা দেশের সার্বভৌমত্ব ও ভৌগোলিক অখণ্ডতা রক্ষার জন্য গঠিত—দলীয় কর্তৃত্বের জন্য নয়। কিন্তু গত দুই দশকে দেখা গেছে, ক্ষমতার নেশায় কিছু সরকার এই বাহিনীকে নিজেদের রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে চেয়েছে। পদোন্নতি, নিয়োগ, বাজেট বরাদ্দ সবক্ষেত্রে দলীয় বিবেচনার ছায়া ফেলেছে রাজনীতি। এতে করে বাহিনীর ভেতরে নৈতিক চাপ সৃষ্টি হয়েছে, যা দীর্ঘমেয়াদে বিপজ্জনক। সেনাবাহিনীকে নিরপেক্ষ রাখা মানে রাষ্ট্রকে স্থিতিশীল রাখা। কারণ এই বাহিনী যদি দলীয় হয়ে পড়ে, তাহলে তার ওপর জনগণের আস্থা ভেঙে যায়। তখন রাষ্ট্রের ভেতরে যে ভারসাম্য থাকা উচিত—তা হারিয়ে যায়। তাই রাষ্ট্রনায়কত্বের আসনে যারা আছেন, তাদের মনে রাখা উচিত সেনাবাহিনীর প্রতি শ্রদ্ধা মানে রাষ্ট্রের অস্তিত্বের প্রতি শ্রদ্ধা।

জুলাই আন্দোলন ও সেনাবাহিনীর ভূমিকা এবং এক নীরব বিপ্লব- ২০২৪ সালের জুলাই মাসে যখন জনতার আন্দোলন শুরু হয়, তখন গোটা রাষ্ট্রযন্ত্র ছিল বিপর্যস্ত। সরকার সেনাবাহিনীকে মাঠে নামায়, কিন্তু উদ্দেশ্য ছিল ভিন্ন—গণপ্রতিরোধ দমন করা। কিন্তু সেনাবাহিনী সে ফাঁদে পা দেয়নি। তারা বুঝেছিল, এটি কেবল ক্ষমতার লড়াই নয়, এটি ছিল জনগণের ন্যায়ের দাবি। অভ্যন্তরীণ বৈঠক, সাবেক সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে পরামর্শ, এবং ইতিহাসের দায়িত্ববোধ—সব মিলে সেনাবাহিনী এক যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নেয়: ‘জনগণের মুখোমুখি হবে না।’ এই সিদ্ধান্তই ছিল গণআন্দোলনের মোড় ঘোরানোর মুহূর্ত। যদি সেনারা তখন সরকারের নির্দেশে গুলি চালাত, তবে দেশ আজ গৃহযুদ্ধের আগুনে জ্বলত। সেনাবাহিনী সে আগুন নেভায় নীরব থেকে, দায়িত্বশীল থেকে। তাই একে কেবল সামরিক নীতি নয়, নৈতিক বিপ্লব বলা যায়। এই নীরবতা জাতিকে রক্ষা করেছে, আর প্রমাণ করেছে একটি পেশাদার সেনাবাহিনী কখনোই জনগণের শত্রু নয়। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ভোরবেলা থেকেই ঢাকার রাস্তায় অজস্র মানুষ। শাসকগোষ্ঠীর পতনের দাবিতে ছাত্র, শ্রমিক, সাধারণ মানুষ তখন একযোগে অগ্রসর হচ্ছিল। সেই সময় সেনাবাহিনীর সদর দপ্তর থেকে এক ঐতিহাসিক নির্দেশ আসে ‘জনগণের ওপর গুলি নয়।’ এটি কেবল একটি কৌশলগত সিদ্ধান্ত নয়, বরং এক গভীর নৈতিক অবস্থান। সেনাবাহিনী জানত, রক্তপাত মানে রাষ্ট্রের মৃত্যু। তাই তারা জনগণের পাশে দাঁড়ায়, অস্ত্র নয় বিবেক দিয়ে। এই সিদ্ধান্তের পরপরই জনতার আত্মবিশ্বাস চূড়ায় পৌঁছে যায়; আন্দোলন জয়লাভ করে। বিশ্ব মিডিয়াও স্বীকার করে বাংলাদেশের সেনাবাহিনী ইতিহাসের সঠিক পাশে দাঁড়িয়েছে। সেই দিনটি তাই কেবল সরকারের পতনের দিন নয়; এটি সেনাবাহিনীর নৈতিক উত্থানের দিনও।

সেনাবাহিনী কেবল রাষ্ট্রের শক্তি নয়, জাতির মনোবলও। যখন কেউ সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করে, তখন সে পুরো জাতির আত্মবিশ্বাসে আঘাত হানে। কারণ জনগণ জানে বন্যা, মহামারি, সন্ত্রাস বা সীমান্ত সংকটে যে বাহিনী প্রথম এগিয়ে আসে, তা হলো সেনাবাহিনী। রাজনৈতিক স্বার্থে এই বাহিনীর চরিত্র নিয়ে সন্দেহ তৈরি করা মানে জনগণকে বিভ্রান্ত করা। সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তি আঘাতপ্রাপ্ত হলে জনগণের আস্থা হারিয়ে যায়; প্রশাসনিক কাঠামো ভেঙে পড়ে। তাই সেনাবাহিনীকে নিয়ে দলীয় বিতর্ক সৃষ্টি করা কেবল একটি রাজনৈতিক অপরাধ নয় এটি রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডও বটে। প্রত্যেক রাষ্ট্রেই সেনাবাহিনীর প্রতি একধরনের নৈতিক ভয় থাকে যেটি আসলে শ্রদ্ধারই অন্য রূপ। এটি শৃঙ্খলা ও দায়িত্ববোধের ভিত্তি তৈরি করে। কিন্তু যখন রাজনৈতিক বিতর্কে সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়, তখন সেই ভয় বা শ্রদ্ধাবোধ বিলুপ্ত হয়। ফলাফল ভয়াবহ রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ব নড়বড়ে হয়ে যায়, প্রশাসনিক নির্দেশ অকার্যকর হয়ে পড়ে, এবং রাষ্ট্রের শৃঙ্খলা ভেঙে পড়ে। সেনাবাহিনীকে যদি বিতর্কে জড়ানো হয়, তবে জনগণের মনে ‘শেষ আশ্রয়স্থল’-এর ধারণা হারিয়ে যায়। তাই এই নৈতিক ভয় বা শ্রদ্ধা রক্ষা করা জাতির স্থিতিশীলতার জন্য অপরিহার্য।

বিশ্বজুড়ে যেখানে সেনাবাহিনী প্রায়শই দমনযন্ত্রের প্রতীক, সেখানে বাংলাদেশ প্রমাণ করেছে—একটি বাহিনী নীতিতে অটল থাকলে সেটিই জনগণের আশ্রয় হয়ে ওঠে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, সন্ত্রাস দমন, মহামারি মোকাবিলা যে সংকটই আসুক, সেনাবাহিনী সর্বদা সামনে থেকেছে। বন্যায় ত্রাণ বিতরণ, ভূমিকম্পে উদ্ধার, করোনাকালে হাসপাতাল নির্মাণ সবক্ষেত্রেই তারা প্রমাণ করেছে, তারা কেবল সৈনিক নয়, জাতির মানবিক হাত। এই বাহিনীকে বিতর্কে টেনে নামানো মানে দুর্যোগে জনগণের আশ্রয় দুর্বল করা। তাই সেনাবাহিনীকে রাজনৈতিক দলে ভাগ করার চেষ্টা মানে দেশের দুর্দিনে কান্ডারীর হাত কেটে ফেলা।

সকলের দায়িত্ব হলো সেনাবাহিনীকে সম্পূর্ণভাবে দলীয় রাজনীতির বাইরে রাখা। সরকারের বদল হবে, মতাদর্শ পাল্টাবে, কিন্তু সেনাবাহিনীর অবস্থান অপরিবর্তনীয় থাকতে হবে—রাষ্ট্রের পক্ষে, জনগণের পক্ষে, ন্যায়ের পক্ষে। যে দেশ সেনাবাহিনীকে রাজনীতির অংশ করে, সে দেশ নিজের অস্তিত্ব হারায়। তাই সেনাবাহিনীর পেশাদারিত্ব রক্ষা করা আজ সবচেয়ে বড় জাতীয় দায়িত্ব। এটি কেবল বাহিনীর জন্য নয়, রাষ্ট্রের ভবিষ্যতের জন্যও অপরিহার্য। রাষ্ট্র যখন দুর্নীতি, দমননীতি ও অবিচারের ভারে নুয়ে পড়ে, তখন সেনাবাহিনী মানুষের মধ্যে এক ধরনের আস্থার প্রতীক হয়ে দাঁড়ায়। এই নৈতিক অবস্থান বজায় রাখা সেনাবাহিনীর সবচেয়ে বড় শক্তি। কোনো রাজনৈতিক দলের প্রতি পক্ষপাত দেখানো, অথবা ক্ষমতার খাতিরে প্রশাসনিক খেলায় অংশ নেওয়া এই নৈতিক শক্তিকে ধ্বংস করে দিতে পারে। সেনাবাহিনীকে শক্তিশালী হতে হলে অস্ত্রের চেয়ে অনেক বেশি প্রয়োজন নীতির দৃঢ়তা। জনগণের বিশ্বাস হারালে একটি দেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কতটা দুর্বল হয়ে পড়ে, ইতিহাসে তার উদাহরণ অজস্র। তাই সেনাবাহিনীকে দেশের শেষ নৈতিক দুর্গ হিসেবেই রক্ষা করা প্রয়োজন।

সেনাবাহিনীকে রাজনৈতিক খেলায় টেনে নামানো জাতীয় আত্মঘাত। বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি ভয়ঙ্কর প্রবণতা দেখা যায় দলের সংকটে পড়লে সেনাবাহিনীর নামে হুমকি, অথবা ‘সেনাবাহিনী আমাদের সঙ্গে’ ধরনের প্রচার। এই মানসিকতা বিপজ্জনক। সেনাবাহিনী কোনো দলের নয়, রাষ্ট্রের। রাজনৈতিক লাভের জন্য এই প্রতিষ্ঠানকে ব্যবহার করার চেষ্টা করা মানেই জাতীয় আত্মঘাত। বিশ্বের অনেক দেশেই দেখা গেছে—রাজনীতি যদি সেনাবাহিনীতে ঢুকে পড়ে, তখন সেনাবাহিনী রাজনীতিতে ঢুকে যায়। একবার এই সীমারেখা ভেঙে গেলে পুনরুদ্ধার অসম্ভব হয়ে পড়ে। তাই রাজনীতিবিদদের এখনই এই অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে। সেনাবাহিনীকে ব্যবহার নয়, সম্মান দিতে হবে। তাহলেই রাষ্ট্র টিকে থাকবে দৃঢ় ভিত্তিতে। জনগণের সঙ্গে সম্পর্কই সেনাবাহিনীর স্থায়ী শক্তি। যে সেনাবাহিনী জনগণের ভালোবাসা পায়, সেই সেনাবাহিনী কখনো পরাজিত হয় না। বাংলাদেশের সেনারা ১৯৭১ সালে যেমন জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছিল, তেমনি ২০২৪ সালের আগস্টেও তারা জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। সেনাবাহিনীর প্রতিটি সদস্য যদি উপলব্ধি করেন যে তাদের অস্তিত্ব জনগণের নিরাপত্তা ও সম্মানের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত, তবে কোনো বাহ্যিক ষড়যন্ত্রই তাদের টলাতে পারবে না। জনগণের হৃদয়ে সেনাবাহিনীর যে আস্থা আজও অটুট, সেটাই দেশের প্রকৃত প্রতিরক্ষা ঢাল। এই আস্থা রক্ষা করাই এখন সবচেয়ে বড় দায়িত্ব।

আজকের পৃথিবীতে একটি দেশের সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তি শুধু দেশের ভেতর নয়, আন্তর্জাতিক পরিসরেও মূল্যায়ন করা হয়। জাতিসংঘে শান্তিরক্ষী মিশনে বাংলাদেশের সেনারা বহু বছর ধরে যে সুনাম অর্জন করেছে, তা রাষ্ট্রের মর্যাদা বহুগুণে বৃদ্ধি করেছে। কিন্তু যদি অভ্যন্তরীণ রাজনীতির সংঘাতে সেনাবাহিনীকে বিতর্কিত করে তোলা হয়, তাহলে সেই আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তিও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন কিংবা আঞ্চলিক শক্তিগুলো সবসময় লক্ষ্য করে একটি দেশের সামরিক প্রতিষ্ঠান কতটা নিরপেক্ষ ও পেশাদার। সেই পেশাদারিত্বই বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর মূল সম্পদ। এই ভাবমূর্তিকে রাজনীতির অস্থিরতার আগুনে পোড়ানো চলবে না। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে সেনাবাহিনীর চিত্র যেন উজ্জ্বল থাকে। রাষ্ট্রের আগামী প্রজন্ম যদি সেনাবাহিনীকে বিতর্কিত, বিভক্ত বা ভীতিকর হিসেবে দেখতে শুরু করে, তবে জাতীয় মনস্তত্ত্বে তার বিরূপ প্রভাব পড়বে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের চোখে সেনাবাহিনীকে থাকতে হবে নায়ক, রক্ষক ও নৈতিক সাহসের প্রতীক হিসেবে। এজন্য স্কুল থেকে শুরু করে মিডিয়া পর্যন্ত রাষ্ট্রকে ইতিবাচক বার্তা ছড়াতে হবে। সেনাবাহিনীকে ঘিরে ভয় নয়, আস্থা তৈরি করতে হবে। কারণ যখন এক জাতি তার সেনাবাহিনীর প্রতি বিশ্বাস হারায়, তখন সে জাতি তার নিরাপত্তার ভিত্তি হারায়। ভবিষ্যতের বাংলাদেশ যেন সেই পথে না যায়, সেটিই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।

উপসংহার: রাষ্ট্র বাঁচাতে সেনাবাহিনীর মর্যাদা রক্ষা করো জরুরি। সেনাবাহিনীকে বিতর্কিত করার অর্থ রাষ্ট্রকে দুর্বল করা। তারা দেশের শেষ আশ্রয়, শেষ প্রাচীর, শেষ বিবেক। রাজনৈতিক দল আসবে-যাবে, কিন্তু সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তি অটুট থাকলেই রাষ্ট্র টিকে থাকবে। জুলাই-আগস্টের অভিজ্ঞতা আমাদের শিক্ষা দিয়েছে যে সেনাবাহিনী জনগণের ওপর গুলি চালায় না, সেই সেনাবাহিনীই ইতিহাসের গর্ব। তাই আজ আমাদের আহ্বান সেনাবাহিনীকে দলীয় নয়, জাতীয় রাখো; বিতর্ক নয়, শ্রদ্ধা দাও।

লেখক: সাংবাদিক, সমাজ গবেষক, মহাসচিব-কলামিস্ট ফোরাম অব বাংলাদেশ।


মাগুরায় অ্যাম্বুলেন্স মালিক কল্যাণ সমিতির মানববন্ধন

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
মাগুরা প্রতিনিধি

দেশব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসেবে বাংলাদেশ অ্যাম্বুলেন্স মালিক কল্যাণ সমিতি, মাগুরা জেলা শাখা মঙ্গলবার সকাল ১১টায় মাগুরা সদর হাসপাতালের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে।

মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন মাগুরা জেলা অ্যাম্বুলেন্স মালিক কল্যাণ সমিতির সভাপতি মো. ফুরকানুল হামিদ ফুরকান। এ সময় বক্তব্য রাখেন সাধারণ সম্পাদক মো. তারেক হোসেন তারেক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. জিহাদুর রহমান জিহাদ, সহ সাধারণ সম্পাদক মো. মাহবুবুর রহমান মুকুলসহ সংগঠনের ৪২ জন সদস্য।

বক্তারা বলেন, আমাদের ন্যায্য দাবিগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন না হলে নীরব থাকবো না- ন্যায়ের তরে রাস্তায় নামব। তাদের প্রধান দাবিসমূহ হলো: ১. সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ এর পঞ্চম অধ্যায়ের ধারা ৩১(১) অনুযায়ী রুট পারমিট ছাড়াই অ্যাম্বুলেন্সকে বাণিজ্যিক নিবন্ধন দিতে হবে। ২. অ্যাম্বুলেন্সের বিরুদ্ধে ট্রাফিক আইন মামলা প্রদান কার্যক্রম অবিলম্বে স্থগিত করতে হবে। ৩. অ্যাম্বুলেন্সের ক্ষেত্রে মাইক্রোবাসের ট্যাক্স ও AIT নেওয়া বন্ধ করতে হবে।

৪. ‘ভাড়া চালিত নয়’ মর্মে নিবন্ধিত অ্যাম্বুলেন্সকে অবৈধ ঘোষণা করা যাবে না। মানববন্ধন শেষে মাগুরা জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টার বরাবর একটি স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।

স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়, ‘অ্যাম্বুলেন্স জনগণের জীবনরক্ষার বাহন। এটি বাণিজ্যিক যান নয়, তাই এর ওপর মাইক্রোবাসের মতো ট্যাক্স বা ট্রাফিক মামলা আরোপ অযৌক্তিক। সরকারের উচিত এই সেবাখাতকে টিকিয়ে রাখতে সহায়ক নীতি গ্রহণ করা।’

অনুলিপি প্রদান করা হয় মাগুরা জেলার পুলিশ সুপার ও সহকারী পরিচালক (বিআরটিএ)-এর নিকট। অ্যাম্বুলেন্স মালিক কল্যাণ সমিতির নেতারা জানান, সরকারের কাছে তারা শান্তিপূর্ণভাবে তাদের দাবি উপস্থাপন করেছেন। তবে দাবি পূরণ না হলে তারা বৃহত্তর কর্মসূচির ডাক দেবেন।


স্বেচ্ছায় নিখোঁজের কথা আদালতে স্বীকার করলেন মুফতি মোহেববুল্লাহ

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
গাজীপুর প্রতিনিধি

পঞ্চগড়ে উদ্ধার গাজীপুরের একটি মসজিদের খতিব মুফতি মোহাম্মদ মোহেববুল্লাহ মিয়াজী (৬০) স্বেচ্ছায় নিখোঁজ হওয়ার কথা আদালতে স্বীকার করেছেন। মঙ্গলবার দুপুরে গাজীপুর মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৪-এর বিচারক যুবায়ের রশীদের কাছে তিনি জবানবন্দি দেন। পরে বিচারক তাকে পুলিশের মাধ্যমে পরিবারের জিম্মায় দেওয়ার নির্দেশ দেন। মোহেববুল্লাহ গাজীপুরের টঙ্গীর টিঅ্যান্ডটি কলোনি জামে মসজিদের খতিব।

টঙ্গী পূর্ব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ওয়াহেদুজ্জামান গণমাধ্যমকে বলেন, মোহেববুল্লাহ আদালতের কাছে প্রকৃত ঘটনা উল্লেখ করে স্বেচ্ছায় নিখোঁজ হওয়ার কথা স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন। পরে তাকে তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

এর আগে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ সংবাদ সম্মেলন করে জানায়, মুফতি মোহেববুল্লাহ পায়ে শিকল লাগিয়ে নিজেই অপহরণের নাটক সাজিয়েছিলেন। নিজেদের সদর দপ্তরে সংবাদ সম্মেলন করে এ তথ্য জানান গাজীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) মোহাম্মদ তাহেরুল হক চৌহান।

মোহাম্মদ তাহেরুল হক চৌহান বলেন, মোহেববুল্লাহ অপহরণের যে বর্ণনা দিয়েছেন এবং যে সময় ও স্থান থেকে তাকে তুলে নেওয়ার কথা বলেছেন, সেই সময়ের ওই সব এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে পুলিশ অপহরণের কোনো প্রমাণ পায়নি। তিনি নিজেই নিজের পায়ে শিকল লাগিয়ে শুয়ে ছিলেন। তাকে উদ্ধারের পর মামলায় যা বলেছেন, তার পুরোটাই সাজানো গল্প।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, মুফতি মোহেববুল্লাহ তাকে অপহরণ করা হয়েছিল—এমন অভিযোগে ২৪ অক্টোবর টঙ্গী পূর্ব থানায় একটি মামলা করেন।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, মামলার তদন্তকারী দল বাদীর বাসা থেকে ঘটনাস্থল পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ ও তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তা নেয়। তদন্তকালে দেখা যায়, এজাহারে চার থেকে পাঁচজন বাদীকে জোর করে অ্যাম্বুলেন্স তোলার কথা বলা হলেও তিন ঘণ্টার মধ্যে যেখানে কোনো অ্যাম্বুলেন্সের চলাচলের দৃশ্য সিসি ক্যামেরায় দেখা যায়নি। আর যেসব স্থানের কথা বাদী উল্লেখ করেছেন, সেগুলোও যাচাই-বাছাই করা হয়।

মামলার এজাহারের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, গত ২২ অক্টোবর সকালে টঙ্গীর টিঅ্যান্ডটি কলোনি এলাকা থেকে হাঁটতে বেরিয়ে খতিব মোহেববুল্লাহ (৬০) অপহৃত হন বলে অভিযোগ করা হয়। এজাহারে বলা হয়, একটি অ্যাম্বুলেন্সে ৪-৫ জন লোক তাকে জোর করে তুলে নিয়ে যায়। এরপর প্রায় একদিন ও একরাত নির্যাতনের পর তার দাড়ি কেটে দেওয়া হয় এবং কাঁচের বোতল দিয়ে শরীরে আঘাত করা হয়। শেষে পঞ্চগড়ে একটি গাছের সঙ্গে শিকল দিয়ে পা বেঁধে তাকে বিবস্ত্র অবস্থায় ফেলে রেখে যাওয়া হয়। তার মোবাইল ফোন ও সিম কার্ডও ছিনিয়ে নেওয়া হয় বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়। পরে স্থানীয়রা ‘৯৯৯’-এ ফোন দিলে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে।

গত ২৪ অক্টোবর মুফতি মোহেববুল্লাহ নিজেই টঙ্গী পূর্ব থানায় এই এজাহার দায়ের করেন।

তবে মামলাটির তদন্তে নেমে পুলিশ সিসিটিভি ফুটেজ ও তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্লেষণ করে সম্পূর্ণ ভিন্ন তথ্য পাওয়ার কথা জানিয়েছে পুলিশ। জিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার তাহেরুল হক চৌহান জানান, তদন্তে দেখা যায়, ভুক্তভোগী তার বাসা থেকে একা হেঁটে বের হন এবং কোথাও কোনো অ্যাম্বুলেন্সের চলাচল দেখা যায়নি। বাদী তার এজাহারে ৪-৫ জন ব্যক্তি তাকে অ্যাম্বুলেন্স তুলে নিয়ে যাওয়ার কথা উল্লেখ করলেও ওই সময়ের তিন ঘণ্টার মধ্যে সেখানে সিসি ক্যামেরায় কোনো অ্যাম্বুলেন্স চলাচল করতে দেখা যায়নি। প্রযুক্তির সহায়তায় ২২ অক্টোবর সকাল ১১টা ৩৬ মিনিটে তার অবস্থান ঢাকার সোবহানবাগ এলাকায় শনাক্ত করা হয়।

পুলিশ জানায়, মোহেববুল্লাহ মিয়াজী এরপর গাবতলী বাস টার্মিনাল থেকে শ্যামলী পরিবহনের একটি বাসের টিকিট কেটে দুপুর ২টায় পঞ্চগড়ের উদ্দেশে রওনা হন। যাত্রাপথে বগুড়ার শেরপুরে পেন্টাগন হোটেলে বাস বিরতি দিলে তিনি নেমে নামাজ পড়ে আবার বাসে ওঠেন, যার সিসিটিভি ফুটেজ পুলিশের হাতে এসেছে।

পুলিশের ভাষ্যমতে, সিসিটিভি ফুটেজ ও অন্যান্য তথ্যপ্রমাণ মোহেববুল্লাহর সামনে উপস্থাপন করা হলে তিনি জানান, ঘটনার দিন সকালে বাসা থেকে বেরিয়ে হাঁটার সময় তার আরও সামনে এগিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা হয়। এরপর তিনি অটোরিকশা ও সিএনজি পরিবর্তন করে ঢাকার গাবতলীতে পৌঁছান এবং সেখান থেকে পঞ্চগড় যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, পঞ্চগড়ে বাস থেকে নেমে গভীর রাতে অন্ধকারে প্রস্রাব করার সময় ‘প্রস্টেট গ্রন্থির রোগের কারণে’ তার পায়জামা ও পাঞ্জাবি ভিজে যায়, ফলে তিনি সেগুলো খুলে ফেলেন। এরপর ঠাণ্ডা ও ক্লান্তির কারণে তিনি আর পোশাক পরতে পারেননি। এ সময় রাস্তায় পড়ে থাকা একটি ছোট তালাসহ শিকল তিনি নিজের পায়ে জড়িয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। ঘুম থেকে উঠে নিজেকে তিনি পঞ্চগড় সদর হাসপাতালে দেখতে পান।

তার ভাষ্য, ‘আশেপাশের উলামায়ে কেরামগণ তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে অবচেতন মনে তিনি বিভিন্ন ধরনের কথাবার্তা বলেন।’

এই ঘটনায় অন্য কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর সম্পৃক্ততা আছে কি না, কিংবা কী উদ্দেশে বা কার প্ররোচনায় তিনি এমন কাজ করেছেন, তা এখনো স্পষ্ট নয় বলে জানিয়েছে পুলিশ। বিষয়টি আরও গভীরভাবে তদন্ত করে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে টঙ্গী পূর্ব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ ওয়াহিদুজ্জামান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, মোহেববুল্লাহর স্বীকারোক্তির কোনো ভিডিও ভাইরালের বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না। আজ জিএমপির প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে যা বলা হয়েছে, সেটাই আনুষ্ঠানিক বক্তব্য।


সোনাইমুড়ীতে মসজিদের জায়গা উদ্ধারের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নোয়াখালী উত্তর প্রতিনিধি

নোয়াখালী সোনাইমুড়ী স্টেশন জামে মসজিদের জায়গা উদ্ধার ও ভুয়া দলিল বাতিলের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে মসজিদ কমিটি ও মুসল্লিগণ। মঙ্গলবার মসজিদ প্রাঙ্গণে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, সোনাইমুড়ী পৌরসভার সাবেক মেয়র মোতাহের হোসেন মানিক, উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও সোনাইমুড়ী বাজার বণিক সমিতির সভাপতি সাহাব উদ্দিন, মসজিদ কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শামসুল আরেফিন জাফর, সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান, সহ-সভাপতি লাতু ভূঁইয়াসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ ও মুসল্লিগন।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান জানান, সোনাইমুড়ীর নাওতোলা মৌজার ২৮৮ নং দাগে ৬১ শতাংশ ও একই দাগে ৩০ শতাংশ সম্পত্তি মসজিদের। ১৯৫৬ সনে স্থানীয় দানবীর মাওলানা মোখলেসুর রহমান এ সম্পত্তি মসজিদের নামে দান করেন। স্থানীয় ভূমি খেকো একটি চক্র মসজিদের সম্পত্তির উপর কুদৃষ্টি পড়ে। বিভিন্ন নামে বেনামে দলিল সৃজন করে মসজিদের ৩০ শতাংশ সম্পত্তি দখল করে রেখেছে। মসজিদটি দীর্ঘ বছর ধরে জরাজীর্ণ হওয়ায় সংস্কার করা যাচ্ছে না। মুসল্লিদের ওজু খানা ও পুকুরের ঘাটলা বন্ধ করে দেয় দখলদাররা। সম্প্রতি মসজিদের পুকুর থেকে এই চক্রটি জোরপূর্বক ৭০ হাজার টাকার মাছ লুটে নেয়। এ সময় বাধা দিলে মসজিদের কয়েকজন কমিটির সদস্যকে মারধর করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে মসজিদের দখলকৃত জায়গা উদ্ধারের দাবি জানান কমিটি ও মুসল্লিগণ।


কুষ্টিয়া পৌরসভায় ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেন্টারের উদ্ভোধন

কুষ্টিয়া পৌরসভায় ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেন্টার চালু। ছবি: দৈনিক বাংলা
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নাব্বির আল নাফিজ, কুষ্টিয়া

বাংলাদেশ সরকার ও সুইজারল্যান্ডের যৌথ অর্থায়নে বাস্তবায়িত প্রবৃদ্ধি প্রকল্পের সহায়তায় স্থানীয় অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে কুষ্টিয়া পৌরসভায় ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেন্টার চালু করা হয়েছে। মঙ্গলবার কুষ্টিয়া পৌরসভার প্রশাসক মো. মিজানুর রহমান পৌরসভা কার্যালয়ে এই ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেন্টারের কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। নির্ধারিত সময়সীমা অনুযায়ী সকল পৌরসেবা এক জায়গা থেকে প্রদানের লক্ষ্যে চালুকৃত এই ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেন্টার স্থাপনে কারিগরি সহায়তা প্রদান করেছে সুইজারল্যান্ড ভিত্তিক আইটি সংস্থা সেলিস ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মস।

স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে পৌরসেবা সমূহের ডিজিটাইজেশনের মাধ্যমে সুশাসন ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে নাগরিকদের কাছে এক জায়গা থেকে সহজে সেবা পৌঁছে দেওয়াই এই ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেন্টারের মূল উদ্দেশ্য। দ্রুত ও সহজে সেবা প্রাপ্তির ফলে ব্যবসা-বানিজ্যের পরিবেশ উন্নয়ন ও নাগরিক জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধিকরণের মাধ্যমে অন্তর্ভুক্তিমূলক স্থানীয় আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে। স্থানীয় সরকার বিভাগ (এলজিডি) ও সুইসকন্টাক্ট-এর যৌথ উদ্যোগে বাস্তবায়নাধীন প্রবৃদ্ধি প্রকল্পটি কুষ্টিয়াসহ বর্তমানে দেশের একাধিক পৌরসভার সাথে স্থানীয় অর্থনৈতিক উন্নয়ন বিষয়ে কাজ করছে।

কুষ্টিয়া পৌরসভার প্রশাসক মো. মিজানুর রহমান বলেন, ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেন্টারের উদ্বোধন কুষ্টিয়া পৌরসভায় অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন প্রক্রিয়া এবং নাগরিক সেবা-কেন্দ্রিক শাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। সমন্বিতভাবে সুবিন্যন্ত প্রক্রিয়ায় পৌরসেবা প্রদানের মাধ্যমে নাগরিকদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন করে সার্বিক অর্থনৈতিক সম্বৃদ্ধি অর্জন করাই এখন আমাদের মূল প্রচেষ্টা।

প্রবৃদ্ধি প্রকল্পের কর্মকর্তারা বলেন, ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেন্টার প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে অত্যাবশ্যকীয় পৌরসেবা সমূহের কেন্দ্রীকরণ ও ডিজিটাইজেশন করার ফলে স্থানীয় অর্থনৈতিক উন্নয়ন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করার পাশাপাশি স্থানীয় নাগরিকদেরও ক্ষমতায়ন করা হয়েছে। বাংলাদেশ ও সুইজারল্যান্ড সরকার, স্থানীয় সরকার বিভাগ ও সুইসকন্টাক্ট-এর এই যৌথ সহযোগিতামূলক প্রচেষ্টা, ডিজিটাইজেশন ও নতুন নতুন উদ্ভাবনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সকলে মিলে তৃণমূল পর্যায়ে টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়ন অর্জন করতে পারবো বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন, নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ওয়াহিদুর রহমান, পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মেহেদি হাসান, সমাজ উন্নয়ন কর্মকর্তা এ কে এম মঞ্জুরুল ইসলাম, সহকারী প্রকৌশলী (পূর্ত) এ কে সামসুজ্জামান সহ প্রবৃদ্ধি প্রকল্পের কর্মকর্তাবৃন্দ, এবং পৌরসভার অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ।


চান্দপুর গ্রাম যেন আলোর মালায় গাঁথা এক অপূর্ব সৌন্দর্যে রূপ

যুব সমাজের উদ্যোগে একটি গ্রামের আমূল পরিবর্তন
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দেবিদ্বার (কুমিল্লা) প্রতিনিধি

কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার ৬নং ফতেহাবাদ ইউনিয়নের এক প্রত্যন্ত জনপদ চান্দপুর। গ্রামটির দক্ষিণ দিক ঘেঁষে বয়ে চলেছে স্রোতস্বিনী গোমতী নদী, তার ঠিক পাশেই সমান্তরালভাবে চলে গেছে গোমতী বেড়িবাঁধ। বাঁধের দুই পাশে সবুজ গাছের সারি, অধিকাংশই কাঁঠালগাছ, যেন সবুজ রেখা এঁকে বেঁকে চলে গেছে দূর অজানায়। বাঁধের উত্তরে বিস্তৃত এলাকা জুড়ে গড়ে উঠেছে এই শান্ত, ছায়া-সুনিবিড় চান্দপুর গ্রাম। কৃষি এখানকার মানুষের প্রধান পেশা। তবে, কেউ বিদেশে কর্মরত, আবার কেউ সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবী। গ্রামের ছেলে-মেয়েরা শিক্ষা নিচ্ছে চান্দপুর মডেল টেকনিক্যাল স্কুল, গঙ্গামণ্ডল মডেল কলেজ, দুটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি কিন্ডারগার্টেন স্কুল ও একটি এবতেদায়ী মাদ্রাসায়। ছায়া-সুনিবিড় গ্রামটিতে প্রবেশ করলে অন্য ১০টি গ্রাম থেকে এটিকে আলাদা মনে হয়। একটি অজগ্রাম অথচ, প্রধান সড়কে জ্বলে সড়কবাতি, শহুরে ধাঁচে বাড়ি, সড়ক, প্রতিষ্ঠানের জন্য নির্দেশক সাইনবোর্ড- যেন কোনো পৌর এলাকা।

স্থানীয়রা জানান, একসময় এই গ্রামটিতে সন্ধ্যা নামলেই ডুবে যেত অন্ধকারে। গৃহস্থ বাড়ির কেরোসিন বাতির ক্ষীণ আলো, জোনাকির ঝিকিমিকি কিছুটা আলো ছড়াত। নব্বইয়ের দশকে ঘরবাড়িতে বিদ্যুতের আলো এলেও গ্রামের রাস্তা, বাঁধ আর প্রান্তর রয়ে গিয়েছিল নিকষ কালো অন্ধকারে। নারীরা সন্ধ্যার পর বাইরে বের হতে ভয় পেতেন, শিশুরা উঠানে পা ফেলত না। রাতের নিস্তব্ধতায় চুরি-চামারির ঘটনাও ঘটত মাঝেমধ্যে।

কথা হয় চান্দপুর আদর্শ সমাজসেবা সংগঠনের হান্নান সরকার, দুনিয়া ও আখেরাত কল্যাণ ফাউন্ডেশনের সাদেকুর রহমান এবং চান্দপুর মানবকল্যাণ সংগঠনের মোজাম্মেল হোসেনের সঙ্গে। তারা জানান, এই অন্ধকার দূর করতে এগিয়ে আসে গ্রামের যুব সমাজ। আমরা ঠিক করি নিজেদের গ্রাম নিজেদেরই আলোকিত করব। একাধিক বৈঠকে আলোচনা করি কীভাবে গ্রামের পথঘাটে আলো পৌঁছানো যায়। এরপর গ্রামের প্রবীণ ও গণ্যমান্যদের সঙ্গে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত হয় সৌরবিদ্যুৎচালিত সড়কবাতি বসানো হবে গ্রামের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে। সেই সঙ্গে উন্নত দেশের আদলে প্রতিটি রাস্তা, পাড়া ও বাড়ির নামফলক লাগানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়। গ্রামের সৌন্দর্য বাড়াতে লাগানো হয় সারি সারি সুপারি গাছ।

গ্রামের ক্রিয়াশীল সামাজিক সংগঠনগুলোর নেতৃত্বে শুরু হয় আলোর অভিযাত্রা। প্রবাসী, চাকরিজীবী ও সাধারণ মানুষ সবাই যার যার সামর্থ্য অনুযায়ী সহযোগিতার হাত বাড়ান। প্রথমে গ্রামের প্রবেশমুখ থেকে শুরু করে গোমতী বাঁধের প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকায় সৌরবাতি স্থাপন করা হয়। পরে গ্রামজুড়ে সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৫০-এ। গ্রামের প্রতিটি বাড়ি, সড়ক ও প্রতিষ্ঠানের নামে বসানো হয় নির্দেশক বোর্ড। সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য কলেজের সড়কের দুপাশে লাগানো হয় সুপারি ও ফুলগাছ।

এখন সন্ধ্যা নামলেই পুরো চান্দপুর জ্বলে ওঠে আলোয়। বাঁধের পথ, স্কুলের সামনে, প্রতিটি মোড় ও পাড়ায় জ্বলে ওঠে উজ্জ্বল সড়কবাতি। গ্রাম যেন আলোর মালায় গাঁথা এক অপূর্ব সৌন্দর্যে রূপ নেয়। রাতের আঁধারে এখন আর ভয় নেই; নিশ্চিন্তে চলাচল করেন নারী-পুরুষ, খেলাধুলা করে শিশুরা, বসে গল্পে মাতে বৃদ্ধরা।

গ্রামের বিশিষ্টজন অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য মো. জামাল হোসেন তরুণদের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, ‘সোলার লাইট বসিয়ে গ্রামের আনাচে-কানাচে আলো ছড়িয়েছে যুব সমাজ। রাতে গ্রামের পথে বের হলেই মনটা অন্যরকম ভালো হয়ে যায়। এখন গ্রামে চোর-ডাকাতের ভয় নেই, পথ চলা যায় নির্বিঘ্নে। যুব সমাজ চাইলে যে একটা গ্রাম বদলে দিতে পারে, তার উদাহরণ হচ্ছে চান্দপুর।’

চান্দপুর মানবকল্যাণ সংগঠনের সভাপতি মোজাম্মেল হোসেন বলেন, এসব কাজ মূলত গ্রামের সকলের অংশগ্রহণেই হচ্ছে। আমি ও আমার সংগঠন তাদের সঙ্গে থেকে সহযোগিতার চেষ্টা করছি। আগামীতে গ্রামে সিসি ক্যামেরা লাগানোসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ হাতে নেওয়ার চেষ্টা করবে বলে জানান চান্দপুর আদর্শ সমাজসেবা সংগঠনের সভাপতি হান্নান সরকার।

স্থানীয় গঙ্গামণ্ডল মডেল কলেজের শিক্ষক আব্দুল কাদের জিলানী বলেন, “সৌরশক্তি ব্যবহার করে গ্রামকে আলোকিত করার এই উদ্যোগ কেবল প্রযুক্তির নয়, এটি সামাজিক জাগরণের প্রতীক। অংশগ্রহণমূলক উন্নয়নের এমন দৃষ্টান্ত বাংলাদেশে বিরল। চাইলে এই মডেল অন্য জেলাতেও ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব।

দেবিদ্বার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রাকিবুল ইসলাম বলেন, “চান্দপুর গ্রামের তরুণরা নিজেদের উদ্যোগে সৌরশক্তি ব্যবহার করে গ্রামকে যেভাবে আলোকিত করেছে, তা সত্যিই প্রশংসনীয় ও অনুকরণীয়। সরকারি কোনো সহায়তা ছাড়াই তারা গ্রামীণ উন্নয়নের যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে, তা অন্যদের জন্য প্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে। তরুণ প্রজন্মের এই ইতিবাচক চিন্তা ও ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টাই টেকসই উন্নয়নের ভিত্তি তৈরি করতে পারে। উপজেলা প্রশাসন সব সময় এমন উদ্যোগের পাশে থাকবে।

দেবিদ্বার থানার ওসি সামসুদ্দিন মোহাম্মদ ইলিয়াস জানান, ‘আলো থাকায় গ্রামের নিরাপত্তা বেড়েছে, অপরাধ কমেছে। এ উদ্যোগ অন্য গ্রামেও ছড়িয়ে দেওয়া উচিত।’


বান্দরবানের ঘুমধুম সীমান্তে অভিযান চালিয়ে ৪ লাখ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট জব্দ করেছে বিজিবি

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের কক্সবাজার ব্যাটালিয়ন (৩৪ বিজিবি) দায়িত্বপূর্ণ বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম সীমান্তে অভিযান পরিচালনা করে ৪ লাখ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট জব্দ করতে সক্ষম হয়েছে।

আজ কক্সবাজার ব্যাটালিয়ন (৩৪ বিজিবি) এর অধীনস্থ ঘুমধুম বিওপি’র একটি বিশেষ টহলদল বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম সীমান্তবর্তী পশ্চিম দরগাহ বিল কবরস্থান এলাকায় বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে আসামীবিহীন ৪,০০,০০০ পিস বার্মিজ ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করতে সক্ষম হয়। এটি সাম্প্রতিক সময়ে কক্সবাজার ব্যাটালিয়নের অন্যতম বৃহৎ ইয়াবা উদ্ধার অভিযান।

উল্লেখ্য, কক্সবাজার ব্যাটালিয়ন (৩৪ বিজিবি) গত ৬ মাসে ১৩,৪১,১৩৫ পিস ইয়াবা ট্যাবলেটসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য জব্দ করেছে, যার বাজারমূল্য প্রায় ৪০ কোটি ২৪ লক্ষ টাকা। এছাড়াও অন্যান্য চোরাচালানী মালামালসহ সর্বমোট ৫০ কোটি ৭৯ লক্ষ টাকার পণ্য জব্দ এবং মাদক পাচার ও চোরাচালানের সাথে জড়িত ৯৫ জনকে আটক করেছে।

এছাড়াও কক্সবাজার ব্যাটালিয়ন সীমান্তে জনসচেতনতা বৃদ্ধি, অবৈধ পারাপার ও মাইন বিস্ফোরণ প্রতিরোধে ব্যাটালিয়ন নিয়মিত জনসচেতনতামূলক সভা ও প্রচার কার্যক্রম পরিচালনা করছে। পাশাপাশি স্থানীয় স্কুল-মাদ্রাসার মেধাবী শিক্ষার্থীদের আর্থিক সহায়তা, খেলাধুলার সামগ্রী, দুঃস্থ নারীদের সেলাই মেশিন এবং বৌদ্ধ বিহারে অনুদান প্রদানসহ বিভিন্ন সামাজিক কার্যক্রমও পরিচালিত হচ্ছে।

কক্সবাজার ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেঃ কর্নেল এস এম খায়রুল আলম বলেন—“বিজিবি শুধু সীমান্ত পাহারায় নয়, বরং মাদক ও চোরাচালান প্রতিরোধেও সমানভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ভবিষ্যতেও এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে।”


ফরিদপুরে যুবদলের ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
মাহবুব পিয়াল, ফরিদপুর

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী যুবদলের ৪৭ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ফরিদপুর জেলা ও মহানগর যুবদলের যৌথ উদ্যোগে বর্ণাঢ্য র্যালি ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত সোমবার বিকেলে ফরিদপুর জেলা ও মহানগর যুবদলের দুটি বিশাল র্যালি শহরের ঝিলটুলি অম্বিকা ময়দান থেকে বের হয়। র্যালি দুটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে আলিপুর নওয়াব আলী টাওয়ারের সামনে গিয়ে সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়। সমাবেশে মহানগর যুবদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এম এম ইউসুফ এর সভাপতিত্বে এবং জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেনের পরিচালনায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন ফরিদপুর জেলা যুবদলের সভাপতি রাজিব হোসেন রাজিব।

এ সময় ফরিদপুর সদর উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান বেনজির আহমেদ তাবরীজ, মহানগর যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আলী রেজওয়ান বিশ্বাস তরুণ, জেলা যুবদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি কে এম জাফর, সহ-সভাপতি দিদারুল মাহমুদ খান টিটু, সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক শামীম তালুকদার, সহ-সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম জিহাদ, অম্বিকাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো: নুরুল আলম, মহানগর যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম নাহিদ, যুবদল নেতা মো. কামাল, মো. আশফাক মিয়াসহ নেতৃবৃন্দরা উপস্থিত ছিলেন।

সভায় বক্তারা জাতীয়তাবাদী যুবদলের সুদীর্ঘ ইতিহাস তুলে ধরে আলোচনা করেন। তারা বলেন, ফরিদপুরে জাতীয়তাবাদী যুবদল বিএনপি'র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধভাবে গড়ে তোলা হবে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ধানের শীষের বিজয় নিশ্চিত করতে সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। কোন অবস্থাতেই ঐক্য নষ্ট হতে দেয়া হবে না। বক্তারা বলেন, স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে আমরা গত ১৭ বছর লড়াই সংগ্রাম করেছি। ষড়যন্ত্রকারীরা এখনো বিদেশে বসে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। তারা দেশের বিরুদ্ধে যেন কোন ষড়যন্ত্র করতে না পারে সে বিষয়ে সবাইকে সচেতন থেকে সকল ষড়যন্ত্রকে রুখে দিতে হবে।

এর আগে বিভিন্ন স্থান থেকে যুবদলের নেতাকর্মীরা ব্যানার ফেস্টুন বাদ্যযন্ত্রসহ মিছিলে যোগ দেন।


ভৈরবে জেলার দাবিতে এবার নৌপথ অবরোধ কর্মসূচি পালন

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
ভৈরব (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি

ভৈরবে জেলার দাবিতে এবার নৌপথ অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন ছাত্র জনতা। এসময় মেঘনা নদীর ঘাটে ১ ঘন্টা নৌচলাচল বন্ধ থাকে। এরপর আগামী বৃহস্পতিবার সড়ক, রেল, নৌপথ অবরোধের ঘোষণা দেন আন্দোলনকারীরা। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টায় থেকে শুরু বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত ভৈরব বাজার লঞ্চঘাট ও কার্গোঘাটে এই কর্মসূচি পালন করা হয়েছে।

এসময় আন্দোলনকারীরা তাদের বক্তব্যের বলেন, সোমবার শান্তিপূর্ণ রেল অবরোধের সময় কর্মসূচির শেষের দিকে হঠাৎ ট্রেন চালক জোরে ট্রেনের হুইশাল বাজানোর কারণে রেললাইনে অবস্থান থাকা ছাত্র জনতা এসময় নিজেদের সেভ করতে কয়েকটি পাথর নিক্ষেপ করে। তবে এই ঘটনার সম্পূর্ণ দায়ী স্টেশন মাস্টার ও রেলওয়ে থানার ওসি। আমরা ভৈরবকে জেলা ঘোষণার দাবিতে পূর্বেও ছিলাম ভবিষ্যতেও থাকবো। আমাদের মামলা হামলা দিয়ে দমিয়ে রাখা যাবে না।

এসময় বক্তব্য রাখেন, জেলা আন্দোলনের অন্যতম মাওলানা সাইফুল ইসলাম শাহারিয়া, গণঅধিকার পরিষদ নেতা ইমতিয়াজ আহমেদ কাজল, ছাত্র নেতা জুনাইদ প্রমুখ।

ভৈরব বাজার লঞ্চঘাটে নৌপথ অবরোধ চলাকালীন সময়ে যেন কোন অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সেজন্যই ভৈরব উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) এএইচএম আজিমুল হক, ভৈরব নৌপুলিশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রাশেদুজ্জামানসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।

এ বিষয়ে ভৈরব নৌপুলিশ থানার ওসি রাশেদুজ্জামান জানান, ভৈরবকে জেলার দাবিতে নৌপথ অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছে। তারা আগামী বৃহস্পতিবার সড়ক, রেল, নৌপথ এক যোগে অবরোধের ঘোষণা দিয়ে শেষ করেন আজকের কর্মসূচি।


banner close