কক্সবাজারের কুতুবদিয়া এলাকা দিয়ে ঘূর্ণিঝড় ‘হামুন’-এর অগ্রভাগ বাংলাদেশ উপকূল অতিক্রম শুরু করেছে। এটি আরও উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে কুতুবদিয়ার কাছ দিয়ে পরবর্তী ৮ থেকে ১০ ঘণ্টার মধ্যে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার উপকূল অতিক্রম সম্পন্ন করতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে উপকূল অতিক্রম শুরু করে হামুন। আবহাওয়াবিদ মো. মনোয়ার হোসেন স্বাক্ষরিত আবহাওয়ার ১৩ নম্বর বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
আবহাওয়ার ১৩ নম্বর বিশেষ বিজ্ঞপ্তির বরাত দিয়ে চট্টগ্রাম আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তা মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়ার আকারে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড়কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায়
সাগর খুবই উত্তাল রয়েছে। চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ৭ নম্বর বিপৎসংকেত এবং মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৫ নম্বর বিপৎসংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।’
তিনি জানান, উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ৭ নম্বর বিপৎসংকেতের আওতায় থাকবে। প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোর নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৩-৫ ফুট অধিক উচ্চতার বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।
প্রবল ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাবে খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে। ভারী বর্ষণের প্রভাবে কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলের কোথাও কোথাও ভূমিধস হতে পারে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
এদিকে, ঘূর্ণিঝড়টি দুর্বল হয়ে স্থলভাগে উঠে আসতে থাকায় কক্সবাজার, চট্টগ্রাম ও এর আশপাশের জেলাগুলোতে তুমুল বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে। তবে গতকাল রাত ১০টা পর্যন্ত রাজধানীতে এর প্রভাব তেমন দেখা যায়নি।
ঘূর্ণিঝড়ের গতিবেগ বিশ্লেষণ করে আবহাওয়া অফিস জানায়, হামুনের প্রভাবে উপকূলের ১৫টি জেলায় স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েক ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হতে পারে। এসব জেলায় সরকারি ছুটি বাতিল করা হয়েছে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান মঙ্গলবার মন্ত্রণালয়ে জরুরি বৈঠক করেন। এ সময় বরগুনা, ভোলা, সন্দ্বীপ, বরিশাল, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুরসহ ১০টি জেলাকে ঝুঁকিপূর্ণ উল্লেখ করে এসব দুর্গত এলাকার ১৫ লাখ মানুষকে মঙ্গলবার রাত ৮টার মধ্যে আশ্রয়কেন্দ্রে নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
ঘূর্ণিঝড় হামুনের প্রভাবে অতি ভারী বৃষ্টিতে ১৫ জেলায় জলোচ্ছ্বাস, ৫ জেলায় ভূমিধসের শঙ্কা রয়েছে। এ সময় কমপক্ষে ৫ ফুটের বেশি উচ্চতায় জলোচ্ছ্বাস হতে পারে বলে জানায় আবহাওয়া অফিস।
সেই সঙ্গে সারা দেশে বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। সাগর বিক্ষুব্ধ থাকায় গতকালই পায়রা ও চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরে চার নম্বর নামিয়ে ৭ নম্বর এবং কক্সবাজারে ৬ ও মোংলায় ৫ নম্বর বিপৎসংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি বেড়েছে নদীবন্দরের সংকেতও।
এদিকে উপকূলীয় জেলা পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরগুনা, চট্টগ্রাম, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, ভোলা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোও ৭ নম্বর বিপৎসংকেতের আওতায় থাকবে।
ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রবর্তী অংশের প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ ভারী (৪৪ থেকে ৮৮ মিলিমিটার) থেকে অতি ভারী (৮৯ মিলিমিটার বা তারও বেশি) বর্ষণ অব্যাহত থাকতে পারে।
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে ভারী (৪৪-৮৮ মি.মি.) থেকে অতি ভারী (১৮৯ মি.মি.) বর্ষণ হতে পারে। এদিকে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
ফায়ার সার্ভিসের প্রস্তুতি
ঘূর্ণিঝড় হামুন মোকাবিলায় সার্বিকভাবে প্রস্তুতি নিয়েছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর। খোলা হয়েছে মরিটরিং সেল। দুর্যোগপ্রবণ এলাকার জনসাধারণকে সচেতন, সতর্ক করছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপকূলবর্তী ফায়ার স্টেশনগুলো। এ ছাড়াও ঝড় চলাকালে ও পরবর্তী সময়ে যেকোনো জরুরি প্রয়োজনে ফায়ার সার্ভিসের নিকটবর্তী ফায়ার স্টেশন ছাড়াও কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষের হটলাইন ও কেন্দ্রীয় মনিটরিং সেলের মোবাইল নম্বরে ফোন করেও জরুরি সেবা গ্রহণ করা যাবে।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ফায়ার সার্ভিসের গণমাধ্যম শাখা থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ফায়ার সার্ভিসের কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষের হটলাইন নম্বর হচ্ছে ১৬১৬৩ ও কেন্দ্রীয় মনিটরিং সেলের মোবাইল নম্বর হচ্ছে ০১৭৩০৩৩৬৬৯৯।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, মঙ্গলবার সকাল থেকে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগের উপকূলবর্তী জেলাগুলোর সব ফায়ার স্টেশন থেকে গণসংযোগ ও মাইকিংয়ের মাধ্যমে এই প্রচারণার কাজ চালানো হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড়-পূর্ব, ঘূর্ণিঝড় সময়কালীন এবং ঘূর্ণিঝড়-পরবর্তী সব কাজ সমন্বয় করার জন্য কেন্দ্রীয়ভাবে সদর দপ্তর ঢাকায় খোলা হয়েছে মনিটরিং সেল। মনিটরিং সেল থেকে উপকূলবর্তী এলাকার সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় সার্বিকভাবে প্রস্তুত রয়েছে ফায়ার সার্ভিস।
আরও জানানো হয়, দুর্যোগপ্রবণ এলাকার সব ফায়ার স্টেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করে স্ট্যান্ডবাই ডিউটিতে রাখা হয়েছে। দুর্যোগপ্রবণ এলাকার জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলায় স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় রেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। প্রতিটি ফায়ার স্টেশনে সার্চ অ্যান্ড রেসকিউ টিম, প্রাথমিক চিকিৎসাকারী দল এবং একটি করে ওয়াটার রেসকিউ টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এসব এলাকায় ফায়ার সার্ভিসের প্রশিক্ষিত ভলান্টিয়ারদেরও প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। প্রয়োজনীয় সংখ্যক অগ্নিনির্বাপণ ও উদ্ধার সরঞ্জামসহ অ্যাম্বুলেন্স, চেইন স, হ্যান্ড স, রোটারি রেসকিউ স, স্প্রেডার, মেগাফোন, র্যামজ্যাক বা এয়ার লিফটিং ব্যাগ, ফাস্ট এইড বক্সসহ যাবতীয় সরঞ্জাম প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
ফায়ার সার্ভিস জানায়, ঘূর্ণিঝড়-পরবর্তী অনুসন্ধান ও উদ্ধারকাজসহ রাস্তাঘাট যান চলাচল উপযোগী করার কাজে ফায়ার সার্ভিস নিয়োজিত থাকবে। এসব এলাকায় জীবন ও মালামাল সুরক্ষা সংক্রান্ত যেকোনো কাজে দিবা-রাত্রি ২৪ ঘণ্টা ফায়ার সার্ভিসের সেবা গ্রহণ করা যাবে। সব আশ্রয়কেন্দ্রের পাশাপাশি প্রয়োজনে উপকূলবর্তী ফায়ার স্টেশনগুলোতেও জনগণ আশ্রয় নিতে পারবেন। ফায়ার সার্ভিসের কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষসহ চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ সারাক্ষণ সংবাদ সংগ্রহে নিয়োজিত থাকবে।
চট্টগ্রামে ১১৪ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আশ্রয়কেন্দ্র
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে (চসিক) দুর্যোগপূর্ণ এলাকাগুলোতে ১১৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ ছাড়াও ঘূর্ণিঝড়ে নগরবাসীকে তথ্য সরবরাহ ও জরুরি সেবা দিতে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ চালু করেছে চসিক।
মঙ্গলবার নগরীর দামপাড়া এলাকার বিদ্যুৎ উপবিভাগের কার্যালয়ে এক জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
এ সময় প্রবল ঘূর্ণিঝড় হামুনের বিপদ এড়াতে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় থাকা জনগণকে দ্রুত নিকটস্থ আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী।
চসিকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আজিজ আহমেদ জানান, দুর্যোগপূর্ণ এলাকায় সিটি করপোরেশনের ৮১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ মোট ১১৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে আশ্রয়কেন্দ্রে হিসেবে ব্যবহারের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘দুপুর থেকে মেয়র মহোদয়ের নির্দেশে রেডক্রিসেন্টের সহযোগিতায় চসিকের কর্মীরা উপকূলীয় ওয়ার্ডগুলোতে মাইকিং করেছে। দুর্গত ব্যক্তিদের জন্য ত্রাণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ ছাড়াও ম্যাজিস্ট্রেট রেজাউল করিমের নেতৃত্বে কাজ করছে রেসকিউ টিম।’
দুর্যোগ না কাটা পর্যন্ত কন্ট্রেল রুমে ২৪ ঘণ্টা ০২৩৩৩৩৫৩৬৪৯ নম্বরে যোগাযোগ করলে সেবা দেয়া হবে হবে বলে জানান তিনি।
সভায় চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলামসহ চসিকের বিভাগীয় সভাপতিরা উপস্থিত ছিলেন।
চট্টগ্রামের উপকূলীয় এলাকার লোকজনকে নিরাপদে সরিয়ে নিতে মাইকিং করেছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। পাশাপাশি প্রস্তুত রাখা হয়েছে আশ্রয়কেন্দ্র।
চট্টগ্রাম জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. ছাইফুল্লাহ মজুমদার বলেন, দুর্যোগ মোকাবিলায় উপকূলবর্তী এলাকার মানুষকে সচেতন করতে মাইকিং কার্যক্রম চলমান রাখা হয়েছে। ইতোমধ্যে জেলায় ৩৭৬টি আশ্রয়কেন্দ্র চালু আছে। আরও আশ্রয়কেন্দ্র চালু করা হচ্ছে।
পটুয়াখালীতে ৭০৩টি আশ্রয়কেন্দ্র
পটুয়াখালী প্রতিনিধি জানান, ঘূর্ণিঝড় হামুনের প্রভাবে গতকাল সারা দিনই পটুয়াখালীসহ উপকূলজুড়ে মেঘাচ্ছন্ন আকাশ, গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি, থেমে থেমে দমকা হওয়া বইছিল। এদিকে ৭নং বিপৎসংকেত থাকায় সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেয় বিআইডব্লিউটিএ। পায়রা সমুদ্রবন্দর কর্তৃপক্ষ তাদের সব কার্যক্রম বন্ধ রেখে কার্গো জাহাজসহ সব সরঞ্জাম নিরাপদে সরিয়ে নেয়ার নির্দেশনা দেয়। দুর্যোগ মোকাবিলায় সভা করে চারটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসক জানান, দুর্যোগ মোকাবিলায় ৭০৩টি সাইক্লোন শেল্টার, ৩৫টি মুজিব কিল্লা, ৬০০ টন চাল ও ১০ লাখ নগদ টাকা প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
স্বাস্থ্য বিভাগ জানায়, জেলায় মোট ৭৬টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণ স্যালাইন, ওষুধ ও পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট তাদের কাছে সংরক্ষিত রয়েছে।
এদিকে, পরিস্থিতি ক্রমশ খারাপ হওয়ায় কুয়াকাটায় আসা পর্যটকরা কুয়াকাটা ছাড়তে শুরু করেছেন।
আবাসিক হোটেল সি গোল্ড রিসোর্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আল-আমিন মুসল্লি বলেন, ঘূর্ণিঝড় হামুনের প্রভাবে পর্যটকরা কুয়াকাটা ছাড়তে শুরু করেছেন। আবহাওয়া এমন থাকলে এ সপ্তাহে পর্যটকদের আনাগোনা থাকবে না।
কুয়াকাটা ট্যুরিস্ট পুলিশ জোনের পরিদর্শক হাসনাইন পারভেজ বলেন, ‘আমরা সবসময় আগত পর্যটকদের নিরাপত্তায় কাজ করছি। গতকাল থেকেই আমরা মাইকিং করছি এবং তাদের নিরাপদে থাকতে অনুরোধ করছি।’
কক্সবাজারে মাছ ধরার ট্রলারগুলো নিরাপদ আশ্রয়ে
কক্সবাজার প্রতিনিধি জানান, ঘূর্ণিঝড় হামুনের প্রভাবে উত্তাল ছিল কক্সবাজারে সমুদ্র। বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার রিজিয়নের সহকারী পুলিশ সুপার মিজানুজ্জামান বলেন, ‘বিপৎসংকেতের ব্যাপারে পর্যটকদের সচেতন করা হচ্ছে। পাশাপাশি মাইকিং ও টহল জোরদার রয়েছে। আমাদের একাধিক টিম মাঠে রয়েছে।’
মোংলায় সকালে প্রভাব পড়েনি, বিকেলে সাগর উত্তাল
মোংলা প্রতিনিধি জানান, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় হামুনের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা বাগেরহাটে মঙ্গলবার সকাল থেকে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। সকাল থেকেই আকাশ মেঘাচ্ছন্ন রয়েছে। মোংলা বন্দরে ৫ নম্বর সংকেত চললেও বন্দরে থাকা ১১টি দেশি-বিদেশি জাহাজের পণ্য ওঠানামার কাজ স্বাভাবিক ছিল। তবে সাগর উত্তাল থাকায় সব মাছ ধরার ট্রলারকে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়।
নোয়াখালীর সাথে সারা দেশের নৌ যোগাযোগ বন্ধ
নোয়াখালী প্রতিনিধি জানান, ঘূর্ণিঝড় হামুনের প্রভাবে সাগর উত্তাল থাকায় নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার সঙ্গে জেলা সদরসহ সারা দেশের নৌ-যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।
সোমবার দুপুর থেকে উপজেলা প্রশাসনের নির্দেশে হাতিয়া-ঢাকা লঞ্চ চলাচল, হাতিয়া-চট্টগ্রাম স্টিমার চলাচল ও হাতিয়া-বয়ারচর-চেয়ারম্যান ঘাটে নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে।
হাতিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুরাইয়া আক্তার লাকী বলেন, ঘূর্ণিঝড় হামুনের কারণে উপকূলীয় এলাকায় ৭ নম্বর সংকেত চলছে। বৈরী আবহাওয়ার কারণে সাগর ও নদী উত্তাল থাকায় গতকাল মঙ্গলবার দুপুর থেকে হাতিয়ার সঙ্গে সারা দেশের সব ধরনের নৌযান চলাচল ও যাত্রীবাহী ট্রলার চলাচল বন্ধ রয়েছে। এ ছাড়া মাছ ধরার নৌকাগুলোকে সতর্কতার সঙ্গে তীরবর্তী এলাকায় থাকতে বলা হয়েছে।
লক্ষ্মীপুরে নৌ চলাচলে নিষেধাজ্ঞা
লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি জানান, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় হামুনের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা লক্ষ্মীপুরকে ৭ নম্বর বিপৎসংকেতের আওতায় এনেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এতে লক্ষ্মীপুর-ভোলা-বরিশাল নৌরুটে লঞ্চ চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে।
পাশাপাশি লক্ষ্মীপুর-ভোলা রুটের ফেরি চলাচলও বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত লঞ্চ ও ফেরি চলাচল বন্ধ থাকবে। এ ছাড়া লক্ষ্মীপুরের মজুচৌধুরীরহাট ঘাট থেকে স্পিডবোটসহ অন্যান্য নৌযান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে জেলা প্রশাসন।
বরগুনায় ৬৪২টি আশ্রয়কেন্দ্র
বরগুনা প্রতিনিধি জানান, বরগুনায় ঘূর্ণিঝড় ‘হামুন’ মোকাবিলায় জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ সময় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক রফিকুল ইসলাম ঘূর্ণিঝড় ‘হামুন’ মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানান। তিনি আরও জানান, জেলায় ৬৪২টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে। প্রায় তিন লাখ মানুষ এতে আশ্রয় নিতে পারবেন।
মানিকগঞ্জে ইসলাম ধর্ম ও আল্লাহকে নিয়ে কটূক্তির মামলায় গ্রেপ্তারকৃত- বাউল শিল্পী আবুল সরকারের মুক্তি ও ফাঁসির দাবিকে কেন্দ্র করে তৌহিদী জনতা ও বাউল ভক্তদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয় পক্ষের কমপক্ষে ১০ জন আহত হয়েছে। রোববার বেলা মানিকগঞ্জ শহরের মানিকগঞ্জ সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয়ের খেলার মাঠের পাশে এই ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনার পর মানিকগঞ্জ শহরের বিভিন্ন এলাকায় থমথমে ও জনমনে আতঙ্ক বিরাজ করছে। যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ও অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
পুলিশ জানান, রোববার সকাল ৯টার দিকে পালাগানে ইসলাম ধর্ম ও আল্লাহকে নিয়ে কটূক্তির প্রতিবাদে ও বাউল শিল্পী আবুল সরকারের ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভের কর্মসূচি ডাকেন। অপর দিকে বেলা ১১টার দিকে বাউল শিল্পী আবুল সরকারের মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশের ডাক দেন বাউল শিল্পী ও ভক্তরা। এরপর সকাল ৯টার দিকে ইসলাম ধর্ম ও আল্লাহকে নিয়ে কটূক্তির প্রতিবাদে ও বাউল শিল্পী আবুল সরকারের ফাঁসির দাবিতে বিক্ষোভ শেষে মানববন্ধন নিয়ে মানিকগঞ্জ সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয়ের খেলার মাঠে আসলে, পাশের দক্ষিণ পাশে মানববন্ধন ও সমাবেশের জন্য অপেক্ষায় ছিলেন বাউল শিল্পী ও ভক্তরা। এ সময় বাউল শিল্পী ও ভক্তরা ক্ষিপ্ত হয়ে তৌহিদী জনতার উপরে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে এবং একপর্যায়ে মাঠের পাশে পড়ে থাকা বাঁশ-লাঠি দিয়ে বেশ কয়েকজন তৌহিদী জনতাকে আঘাত করে। এরপর তৌহিদী জনতা ও বাউল শিল্পীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা হয় এবং তাদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে পুলিশ স্থানীয়দের সহযোগিতায় আহতের উদ্ধার করে মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন।
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস জেলা শাখার সভাপতি আব্দুল্লাহ আল ফিরোজ বলেন, বাউল শিল্পী ও ভক্তরা ইচ্ছা করে তৌহিদী জনতার উপর আক্রমণ করে। তাদের হামলায় আমাদের ৫ জন আহত হয়েছে। আহতরা সদর হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে।
এ বিষয়ে মানিকগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, এ ঘটনায় অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এছাড়া যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ও অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
নীলফামারীর উত্তরা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে (ইপিজেড) অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকা সনিক বাংলাদেশ লিমিটেড কারখানা দ্রুত চালুর দাবিতে মানববন্ধন করেছেন শ্রমিকরা। রোববার বেলা ১১টার দিকে ইপিজেডের প্রধান ফটকের সামনে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। পরে তারা উত্তরা ইপিজেডের নির্বাহী পরিচালকের বরাবর স্মারকলিপি জমা দেন।
মানববন্ধনে বক্তব্য দেন শ্রমিক নাজমুল হোসেন, শরিফুল মণ্ডল, রাবেয়া বেগম, আসমা বেগম, ইয়াসমিন, রুবেল রানা, আব্দুর রহমান ও সুজন ইসলামসহ অনেকে। ‘আন্দোলন হটাও, ইপিজেড বাঁচা’- এ স্লোগানে কর্মসূচিতে অংশ নেন শ্রমিকরা।
শ্রমিকরা জানায়, ‘কারখানাটি শুধু কর্মস্থল নয়- এটি আমাদের জীবিকা, আমাদের পরিবারের ভবিষ্যতের ভরসা। শান্ত ও স্থিতিশীল কর্মপরিবেশ বজায় রাখা সবার দায়িত্ব। কিন্তু কিছু ব্যক্তি ব্যক্তিগত স্বার্থে বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করছে। নিজেদের ও পরিবারের স্বার্থে উসকানিতে পা না দেওয়ার আহ্বান জানান তারা।’
তারা আরও বলেন, ‘আমরা আর কোনো বিশৃঙ্খলা চাই না, কোনো আন্দোলন চাই না। আমরা শুধু আমাদের কর্মস্থল ফেরত চাই। ইপিজেড চললে শ্রমিক বাঁচবে, শ্রমিক বাঁচলে পরিবার বাঁচবে।’
প্রসঙ্গত, ২৬ দফা দাবি নিয়ে গত ১৬ নভেম্বর সনিক ফ্যাক্টরির শ্রমিকরা আন্দোলন শুরু করেন। ১৭ নভেম্বর মালিকপক্ষ দাবি মেনে নিলেও কিছু শ্রমিক এতে অসন্তুষ্ট হন। এরপর ১৮ নভেম্বর শতাধিক শ্রমিক জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে কর্মবিরতি পালন করেন। কাজে ফিরতে অস্বীকৃতি ও উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় একই দিন কারখানা কর্তৃপক্ষ অনির্দিষ্টকালের জন্য প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে।
গণতান্ত্রিক ধারায়, উন্নয়নের অগ্রযাত্রার স্লোগানে মাগুরা প্রেসক্লাবের ত্রি-বার্ষিক কার্যনির্বাহী পরিষদের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে আলোচনা সভা, কেক কাটা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত শনিবার সন্ধ্যায় মাগুরা প্রেসক্লাব মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় প্রেসক্লাবের সভাপতি সাইদুর রহমান সভাপতিত্ব করেন। সভায় বক্তব্য রাখেন অত্র ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম শফিক, শ্রীপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি ড. মুসাফির নজরুল, শালিখা প্রেসক্লাবের সভাপতি মো. আব্দুর রব, মহম্মদপুর প্রেক্লাবের সভাপতি আজিজুর রহমান টুটুল, মাগুরা প্রেসক্লাবের শরিফ তেহরান আলম টুটুল, শাহিন আলম তুহিন, শরিফ স্বাধীন, শরিফ আনোয়ারুল হাসান রবিন, খায়রুজ্জামান সবুজ, নাঈমুর রহমান প্রমুখ। বক্তারা বলেন, ঐতিহ্যবাহী মাগুরা প্রেসক্লাবের বর্তমান কমিটি এক বছরে ক্লাবের সার্বিক উন্নয়ন এবং সাংবাদিকতার মান উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য কর্মকাণ্ড বাস্তবায়ন করেছেন যা প্রশংসার দাবি রাখে।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন মাগুরা প্রেসক্লাবের সহ সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. মাসুম বিল্লাহ কলিন্স।
আলোচনা শেষে বর্ষপূর্তির কেক কেটে সকলে মিষ্টি মুখ করেন। পরে সাংবাদিকদের অংশগ্রহণে এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানের শতাধিক সাংবাদিক অংশগ্রহণ করেন।
৪৭তম বিসিএস লিখিত পরীক্ষায় সময় পেছানোর দাবিতে আন্দোলনরত বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) শিক্ষার্থীরা দ্বিতীয় দিনের মতো রেলপথ অবরোধ করেছেন। এতে ঢাকা-ময়মনসিংহ রুটে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বাকৃবির জব্বার মোড়ে অবস্থিত রেলপথ অবরোধ করলে এই রুটে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সকালে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের জব্বারের মোড় এলাকায় দেওয়ানগঞ্জগামী তিস্তা এক্সপ্রেস ট্রেন আটকে দিয়ে রেলপথ অবরোধ করে, পাশপাশি মহুয়া কমিউটার ও বলাকা কমিউটার ট্রেনও আটকে পড়ে।
এ সময় ৪৭ তম বিসিএস লিখিত পরীক্ষার সময়সূচিকে ‘অবাস্তব ও বৈষম্যমূলক’ উল্লেখ করে শিক্ষার্থীরা স্লোগান দিতে থাকেন।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে সম্মতি জানিয়ে এই রেল অবরোধ কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। পিএসসি যদি দাবি না মানে, তাহলে আমরা আরও কঠোর আন্দোলনে অগ্রসর হবো।’
এর আগে গত শনিবার রাত আটটার দিকে রেল অবরোধ করে ৪৭ তম বিসিএস পরীক্ষার প্রবেশপত্র পুড়িয়ে প্রতিবাদ জানান অবরোধে অংশ নেওয়া পরীক্ষার্থীরা। তার আগে বিকেল ৫টায় একই দাবিতে একই এলাকায় রেলপথ অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। এতে ঢাকা-ময়মনসিংহ রুটে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে রাত ৮টার দিকে বিসিএস পরীক্ষার প্রবেশপত্র পুড়িয়ে প্রতীকী প্রতিবাদ জানিয়ে অবরোধ তুলে নেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। এতে ঢাকা-ময়মনসিংহ রুটে ট্রেন চলাচল শুরু হয়। এরপর রাত ১১টার দিকে আবারও জব্বারের মোড়ে রেললাইনে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা জামালপুরের তারাকান্দিগামী যাত্রীবাহী যমুনা এক্সপ্রেস ট্রেনটি আটকে দেওয়া হয়। এতে ঢাকা-ময়মনসিংহ রুটের রেল চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এমতাবস্থায় জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হওয়ার বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় প্রশাসন শিক্ষার্থীদের বোঝানোর একপর্যায়ে এক ঘণ্টা পর রাত ১২টার দিকে বাকৃবির জব্বার মোড়ে অবস্থিত রেললাইন থেকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা সরে যায়। পরে ওই রুটে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়।
নরসিংদী জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আনোয়ার হোসাইন বলেছেন, ৩ দিন পরও ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল নরসিংদীতে ক্ষয়ক্ষতির সঠিক পরিমাণ নির্ধারণ করা যায়নি। আনুমানিক শতাধিক সরকারি-বেসরকারি স্থাপনার কমবেশি ক্ষয়ক্ষতি, ৫ জন নিহত ও শতাধিক মানুষ আহত হয়েছে। আগামী বুধবার ঢাকা থেকে বুয়েটের একটি বিশেষজ্ঞ প্রতিনিধি দল নরসিংদীতে ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনগুলো পরিদর্শন করার পর ক্ষয়ক্ষতির সঠিক পরিমাণ জানা যাবে বলে জানান তিনি। আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সকল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ সকল দপ্তর প্রধানকে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের তালিকা ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করার নির্দেশ দেন জেলা প্রশাসক।
ভূমিকম্প ও অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ এর বিষয়ে নরসিংদী জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির এক সভা শেষে রোববার দুপুরে এসব তথ্য জানান- জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আনোয়ার হোসাইন।
জেলা প্রশাসক বলেন, নরসিংদীতে ক্ষতিগ্রস্ত বহুতল ভবনগুলো বিল্ডিং কোড মেনে নির্মাণ হয়েছে কি না- সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। এছাড়া ভবিষ্যতে সবাই যেন বিল্ডিং নিয়ম কানুন মেনে ভবন তৈরি করেন সে বিষয়ে সবাই সচেতন থাকার অনুরোধ করেন। ভূমিকম্পের যেহেতু কোন পূর্বাভাস হয় না, সেহেতু কাউকে আতংঙ্কিত না হওয়ার জন্য অনুরোধ করেন তিনি।
এর আগে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় জেলা সিভিল সার্জন, জেলার ৬ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা ও পৌরসভার প্রশাসকরাসহ সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তারা অংশগ্রহণ করেন।
গত শুক্রবার সকালে প্রথম দফার পর শনিবার সকাল ও সন্ধ্যায় আরও দুদফা ভূমিকম্প অনুভূত হয়। এসব ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল নরসিংদী।
প্রথম দফার ভূ-কম্পনে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় (পুরাতন), পলাশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ৪টি আবাসিক ভবন, সার্কিট হাউজ, তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র, বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি ভবন ও প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ সময় শতাধিক মানুষ আহত ও ৫ জন নিহত হয়েছেন।
নারায়ণগঞ্জের বন্দরে বসুন্ধরা সিমেন্ট কারখানায় বয়লার বিস্ফোরণে ৬ জন দগ্ধ হয়েছেন। তাদেরকে উদ্ধার করে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট ভর্তি করা হয়েছে। গত শনিবার রাতের দিকে বন্দর থানা এলাকার মদনগঞ্জে ওই কারখানায় এ ঘটনা ঘটে।
দগ্ধরা হলেন- ফেনীর নাহিদ হাসান (২২), পাবনার কামাল হোসেন (৪৫), নোয়াখালীর তাইজুল ইসলাম (৩৫), জামালপুরের ফেরদৌস (৩৫), কুষ্টিয়ার তোরাব আলী (৫৫) ও নারায়ণগঞ্জের আতিকুর রহমান (৪২)।
দগ্ধদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া মো. রহিম জানান, রাত ৭ টার দিকে কারখানায় বয়লার থেকে বিস্ফোরণ হলে তারা ৬ জন দগ্ধ হন। সঙ্গে সঙ্গে তাদেরকে উদ্ধার করে হাসপাতালে আনা হয়েছে।
জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালে নেওয়া ৬ জনের শরীররই মারাত্মকভাবে দগ্ধ হয়েছে। তাদের শ্বাসনালী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে নাহিদ হাসান ৪০ শতাংশ, কামাল হোসেন ২৬ শতাংশ, তাইজুল ১২ শতাংশ, ফেরদৌস ১০ শতাংশ, তোরাব ১৬ শতাংশ এবং আতিকুর ২৭ শতাংশ শরীর দগ্ধ হয়েছেন।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের উপসহকারী পরিচালক আব্দুল্লাহ আল আরেফিন বলেন, সিমেন্ট কারখানার বয়লার রুমে চুল্লিতে কয়লা দেওয়ার সময় উত্তপ্ত কয়লা ছিটকে কয়েকজন শ্রমিকের গায়ে পড়ে। এতে ছয়জন শ্রমিক দগ্ধ হয়েছেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করে বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) লিয়াকত আলী বলেন, কয়লার আগুনে ছয় জন দগ্ধ হয়েছেন। তাদের উদ্ধার করে বার্ন ইনস্টিটিউটে পাঠানো হয়েছে।
মানিকগঞ্জের হরিরামপুরে বিতর্কিত বাউল শিল্পী আবুল সরকারের ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। রোববার বেলা ১১টার দিকে উপজেলা চত্বরের সামনে তাওহিদী জনতার আয়োজনে এ মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে উপজেলার দরিকান্দি সারওয়ার হোসেন হাফিজিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানার প্রধান শিক্ষক মাওলানা মুফতি রমজান আলী রাফিকীর সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন, লেছড়াগঞ্জ বাজার জামে মসজিদের পেশ ইমাম মসজ আলহাজ হাফেজ মাওলানা আলী আজম, উপজেলা তাবলিগ জামায়াতের আমীর মাওলানা নিজাম উদ্দিন, সাটি নওদা তালিমূল কোরআন মাদ্রাসার পরিচালক মাওলানা মুফতি নাসির উদ্দীন, পাটগ্রাম মসজিদের ইমাম হাফেজ আব্দুল আউয়াল প্রমুখ।
তাওহিদী জনতার সমন্বয়ক শামীম হোসেন টিটু সঞ্চালনায় বক্তৃতারা বলেন, মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহপাক রব্বুল আলামীনের নামে অশিক্ষিত গানের বয়াতি যে কটূক্তি করে কথা বলেছে এ জন্য তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত। আমরা এই আবুল সরকসরের ফাঁসির দাবি করছি। তিনি দীর্ঘদিন ধরেই দেশের বিভিন্ন স্থানে বরাবরই গানের মঞ্চে হাদিস কোরআনের অপব্যাখ্যা দিয়ে মানুষকে ভুলভাল বুঝিয়ে আসছে এবং ইসলামের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে। দেশের তাওহিদী জনগণ আর এসবকে প্রশ্রয় দেবে না। ইসলামকে অক্ষুণ্ণ রাখতে এদের দাঁতভাঙা জবাব দেওয়া হবে।
বক্তরা আরও বলেন, আমরা প্রধান উপদেষ্টার কাছে দাবি করছি, এই ভণ্ড আবুল সরকার যেন আইনের ফাঁক-ফোকর দিয়ে বের হতে না পরে। আমরা তার ফাঁসির দাবি জানাচ্ছি।
মানববন্ধন শেষে উপজেলা চত্বরে একটি মিছিল বের করা হয়। তাওহিদী জনতাসহ অন্যান্য শ্রেণি-পেশার জনগণও উপস্থিত ছিলেন।
কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্তে মাদক, মানব পাচার ও বিভিন্ন ধরণের চোরাচালান প্রতিরোধে নতুন করে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) নাফ ট্যুরিজম পার্কে একটি ‘অস্থায়ী পর্যবেক্ষণ পোস্ট’ স্থাপন করেছে। স্থাপিত (Temporary Observation Post) এই নতুন পোস্ট সীমান্ত নিরাপত্তা জোরদারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এর অংশ হিসেবে গত শনিবার ভোরে টেকনাফের কেরুনতরী সংলগ্ন নাফ নদীর মাঝসীমা ও জালিয়ারদ্বীপ ঘিরে টানা ১৬ ঘণ্টার রুদ্ধশ্বাস বিশেষ অভিযানে ৯৪ হাজার পিস ইয়াবাসহ ৩ জন মাদক পাচারকারীকে আটক করেছে বিজিবি। পরে বিকেলে টেকনাফ ব্যাটালিয়নে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন বিজিবি-২ ব্যাটালিয়ানের অধিনায়ক লে. কর্নেল আশিকুর রহমান। এ সময় মেজর মো. শাহাদাত হোসেন শুভ, অপারেশন লে. কমান্ডার মো. সাদিক রাফি উপস্থিত ছিলেন।
অধিনায়ক লে. কর্নেল আশিকুর রহমান বলেন, ‘গত ২১ নভেম্বর ভোরে অত্যাধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর নজরদারিতে মিয়ানমার দিক থেকে নদী পেরিয়ে আসা দুই পাচারকারীকে শনাক্ত করা হয়। নৌপেট্রোল টিম দ্রুত অভিযানে গিয়ে জালিয়ারদ্বীপ সংলগ্ন নাফ নদী থেকে ৪৪ হাজার ইয়াবাসহ মিয়ানমারের নাগরিক মো. ইব্রাহিমকে আটক করে। তবে আরেকজন কেওড়া জঙ্গলে পালিয়ে গেলে দ্বীপজুড়ে ফের চিরুনি অভিযান শুরু হয়। দীর্ঘ তল্লাশির পর একই দিন বেলা ও সন্ধ্যায় আরও দুই পাচারকারী (মিয়ানমারের নাগরিক) মো. জুনায়েদ এবং টেকনাফের আব্দুর রাজ্জাককে আটক করা হয়। পরে তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে কেওড়া বাগানের গর্ত থেকে লুকিয়ে রাখা আরও ৫০ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করে বিজিবি। এছাড়া মেরিন ড্রাইভের হাবিরছড়ায় মোটরসাইকেলে লুকানো ১২০ পিস ইয়াবাসহ মো. আরিফ নামে আরও একজনকে আটক করে বিজিবি।
বিজিবির এক কর্মকর্তা জানান, ‘টেকনাফের নাফ নদীসংলগ্ন এলাকাটি দীর্ঘদিন ধরে ইয়াবা পাচার, মানব পাচার, স্বর্ণ চোরাচালান ও অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের জন্য স্পর্শকাতর এলাকা হিসেবে পরিচিত। ফলে আপততে বিজিবি নাফে বুকে ‘নাফ ট্যুরিজম পার্ক’ নামে এলাকায় একটি অহস্থায়ী পর্যবেক্ষণ স্থপনা করেছে। এর মাধ্যমে সীমান্তজুড়ে ২৪ ঘণ্টা নজরদারি, নিয়মিত টহল, আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার এবং অনুপ্রবেশ রোধে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হবে। ইতোমধ্য আমরা সফলতাও পেয়েছি। নতুন পোস্ট স্থাপনের ফলে সীমান্তে নজরদারি আরও বাড়বে, টহল কার্যক্রম জোরদার হবে এবং অপরাধী চক্রের গতিবিধি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আসবে। স্থানীয় বাসিন্দারা এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন। তারা মনে করছেন, এই স্থাপনের ফলে এ অঞ্চলে দীর্ঘদিন ধরে চলমান অপরাধপ্রবণতা কমে আসবে।
বিজিবি জানিয়েছে, চলতি বছর জানুয়ারি থেকে ২২ নভেম্বর পর্যন্ত ১২৩ জন আসামি। এছাড়া রোহিঙ্গাসহ ২৮৫ জন মানব পাচারের শিকার ভুক্তভোগীকে উদ্ধার, ১৫ টি আগ্নেয়াস্ত্র, ৬৯টি হাক বোমা, ২.৯৪৬ কেজি ক্রিস্টাল মেথ আইস, ১৭৪ কোটি টাকার মাদক ও মালামাল জব্দ করা হয়েছে। এর মধ্য সাড়ে ৫১ লাখ পিস ইয়াবা ছিল।
এদিকে ২০২০ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারিতে অর্থনৈতিক অঞ্চল হিসেবে ‘নাফ ট্যুরিজম পার্কের’ মহাপরিকল্পনা অনুমোদন দেয় সরকার। সেখানে পর্যটকদের থাকার জন্য হোটেল ও ইকো কটেজ, যাওয়ার জন্য কেব্ল কার, ঝুলন্ত সেতু ও ভাসমান জেটি নির্মাণের কথা। দ্বীপটিতে শিশুপার্ক, পানির নিচের রেস্তোরাঁ, ভাসমান রেস্তোরাঁসহ বিভিন্ন পর্যটন স্থাপনা করার পরিকল্পনাও ছিল বেজার। কিন্তু ২০২৩ সালে জুনের দিকে এসে এটি নিয়ে মিয়ানমারের পক্ষ থেকে আপত্তি জানানোয় ভাটি ভরাট কাজ বন্ধ হয়। তখন সেটি পরিত্যক্ত ছিল। এ সুযোগে অস্ত্রধারীদের সেখানে আনাগোনা শুরু করে। এরপর বিজিবি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে সেখানে বর্তমানে একটি ‘অস্থায়ী পর্যবেক্ষণ পোস্ট’ নির্মাণ করে।
গহিরা মহাকবি নবীন সেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। শিশু থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদান হয় এ বিদ্যালয়ে। কিন্তু শিক্ষার্থীর সংখ্যা মাত্র ৩৮ জন। বিদ্যালয়টি পরিদর্শনে দেখা যায়, তৃতীয় শ্রেণির ক্লাসে একজন মাত্র শিক্ষার্থী উপস্থিত। তাকে একজন শিক্ষিকা টেবিলের সামনে দাঁড় করিয়ে পাঠ্যপাঠ করছেন। অন্য শ্রেণিকক্ষগুলো নিস্তব্ধ- শিক্ষার্থী নেই, তাই পাঠদানও বন্ধ। বিদ্যালয়ের অফিস কক্ষে আরও দুজন শিক্ষককে দেখা যায়। তারা জানান, পঞ্চম শ্রেণিতে শিক্ষার্থী মাত্র দুজন, আজকে দুজনই অনুপস্থিত। শিশু শ্রেণিতে ১০ জনের মধ্যে উপস্থিত ৬ জন, প্রথম শ্রেণিতে ১১ জনের মধ্যে ৫ জন, দ্বিতীয় শ্রেণিতে ২ জন, তৃতীয় শ্রেণিতে ৭ জনের মধ্যে উপস্থিত ১ জন এবং চতুর্থ শ্রেণিতে ৮ জনের মধ্যে ৫ জন উপস্থিত ছিলেন। ৬ জন শিক্ষকের পদ থাকলেও বর্তমানে রয়েছেন মাত্র ৩ জন সহকারী শিক্ষক।
ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বিবি জয়নাম বলেন, ‘শিক্ষার্থী সংকটে বিদ্যালয়টি বন্ধের প্রস্তাব উপজেলা শিক্ষা অফিসে পাঠানো হয়েছে।’ শিক্ষক, শ্রেণিকক্ষ ও প্রশাসনিক জনবল সংকটে বিপর্যস্ত রাউজান উপজেলার সরকারি প্রাথমিক শিক্ষা। ১৮১ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৮১টিতে প্রধান শিক্ষক নেই। সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য অর্ধশতাধিক। ফলে প্রায় অর্ধেক বিদ্যালয় ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের ওপর নির্ভর করে চলছে। এসব কারণে বিদ্যালয়ে দিন দিন কমছে শিক্ষার্থীর সংখ্যা। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, এখানে শিক্ষকের পাশাপাশি কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংকটও মারাত্মক। ৮টি সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার (এটিও) পদে রয়েছেন মাত্র ৩জন। ৫জন অফিস সহকারীর মধ্যে কর্মরত আছেন ২জন।
গত বছর আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর স্থানীয় রাজনৈতিক কারণে আটটি বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তনের প্রক্রিয়া শুরু হয়। এদের মধ্যে সাতটি বিদ্যালয় সাবেক সংসদ সদস্য ফজলে করিম চৌধুরী ও তার মা-বাবার নামে নামকরণ করা হয়েছিল। বাকি একটি বিদ্যালয়ের নাম স্থানীয় জনদাবির পরিপ্রেক্ষিতে পরিবর্তনের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ নরুন্নবী বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমোদন পেলে নাম পরিবর্তন কার্যকর হবে।’
বিদ্যালয়গুলো পরিদর্শনে শিক্ষার্থীরা বেঞ্চে গাদাগাদি করে বসে পাঠ নিচ্ছে এমন অন্তত ৩০টি বিদ্যালয়ে শ্রেণিকক্ষ সংকটের তীব্রতা পেয়েছে। অনেক বিদ্যালয়ে নতুন ভবনের নির্মাণকাজ অর্ধসমাপ্ত অবস্থায় বছরের পর বছর পড়ে আছে। এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক বিশ্বজিৎ চৌধুরী বলেন, ‘আমি ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছি। ৯০ জন শিক্ষার্থীর জন্য শিক্ষক রয়েছেন মাত্র চারজন।’ হলদিয়া সাজেদা করিব চৌধুরী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জানে আলম শরীফ জানান, বিদ্যালয়ে ৮০ শিক্ষার্থীর বিপরীতে শিক্ষক আছেন তিনজন। দুটি পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য। শিক্ষক সংকট: রাউজানে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অধিকাংশই নারী। তাদের প্রায় ৮০ শতাংশ বসবাস করেন চট্টগ্রাম নগরীতে। সকালে সংসারের কাজ গুছিয়ে বের হতে বিলম্ব হয়, আবার যানজটে পড়ে বিদ্যালয়ে পৌঁছাতে সময় লাগে। ফলে অনেক বিদ্যালয়ে শিক্ষক উপস্থিতি হয় সকাল ১০টার পর।
বিনাহালে সাদা সোনা খ্যাত রসুন আবাদে ঝুঁকেছে পাবনার চাটমোহর উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন এর কৃষকেরা। গত বছর আবাদকৃত রসুনের দাম তুলনামূলক কম পাওয়ার পরও কৃষকরা রসুন আবাদ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়নি। কৃষকের কথা দাম কম হলেও চাষাবাদ খরচ ও ঝামেলা কম হওয়ায়, অন্যান্য ফসলের চেয়ে লাভ অনেক বেশি বিনাহালে রসুন আবাদে। উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন বিনাহালে রসুন আবাদ হয়।
চলনবিলের রসুনের আবাদ এ অঞ্চলের কৃষকের অন্যতম অর্থকরী ফসলে পরিণত হয়েছে। প্রায় দুই দশকের অধিক সময় ধরে বিনাহালে রসুনের আবাদ হচ্ছে এ উপজেলাতে। রসুন রোপনে মুখ্য ভূমিকা পালন করেন নারীরা। বীজ বাছাই ও রোপণে কাজ করেন তারা। একজন মহিলা কৃষিশ্রমিক প্রতিদিন ৩ শত থেকে ৪ শত টাকা মজুরী পান আর পুরুষ কৃষিশ্রমিকেরা ৫ শত টাকা থেকে ৬ শত টাকা মজুরি পান।
কয়েকজন কৃষি শ্রমিকদের সাথে কথা বললে তারা বলেন আমনের আবাদ ঘরে তোলার পর আমাদের তেমন কোনো কাজ থাকে না এসময় আমাদের একটু অভাবের মাঝেই দিন অতিবাহিত হলেও, বিনাহালে রসুন চাষ পদ্ধতি চালু হওয়ায় গত কয়েক বছর আমাদের বসে থাকতে হয়না সেজন্য পারিবারিক চাহিদা মিটিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যে দিন কাটাতে পারি। আবার এ রসুন ঘরে তোলার সময়ও আমরা কাজ করি সব মিলিয়ে আমাদের এখন সবসময় কাজ থাকে।
নারী কৃষি শ্রমিকরা বলেন, আমরা গ্রামে থাকার কারনে এখানে তেমন কোন কর্মসংস্থান নেই যে আমরা বাড়ির কাজ করে কিছু টাকা উপার্জন করব, অনেক সময় পরিবারের সমস্যা বা কারো চিকিৎসা করাতেও হিমশম খেতে হত। কারন পরিবারের একজন এর আয় দিয়ে প্রয়োজন মেটানো কঠিন হয়। এখন আমরা এই সময়ের অপেক্ষায় থাকি কারণ বিনাহালে রসুন বপন করে আমরা প্রতিদিন ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা পাই তাতে করে বেশ কিছুদিন কাজ করলে বাড়তি আয় হয়। আবার রসুন জমি থেকে তোলার পর আমাদেরই বাছাই এর জন্য কাজ দেওয়া হয়। সেক্ষেত্রে এমন চাষ পদ্ধতি আমাদের ভালো একটা আয়ের উৎস।
চাটমোহর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৩,৮৫০ হেক্টর জমিতে আবাদ করে ৩৭,১৫০ মেট্রিক টন উৎপাদন হয়েছিল, গড় ফলন ছিল ৯.৬৫ মেট্রিক টন। আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরে ৪,৫৫০ হেক্টর আবাদ ও ৪৭,৯১৫ মেট্রিক টন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
পাবনা জেলার মধ্যে চাটমোহর উপজেলাতেই কেবল এই পদ্ধতিতে (বিনাহালে) রসুনের আবাদ হয়। পাশের জেলা নাটোরের
গুরুদাসপুর, সিংড়া, তাড়াশ উপজেলাতে এই পদ্ধতি চাষ হয় রসুনের।
উপজেলার ডিবিগ্রাম ইউনিয়নের বালুদিয়ার গ্রামের কৃষক আশরাফ শেখ জানান, ৫ বিঘা জমিতে তিনি বিনাহালে রসুন আবাদ করেছেন। আমন ধান কাটার পর জমি থেকে আগাছা পরিস্কার করে জমি ভেজা বা কাঁদা মাটি থাকতেই প্রতি এক বিঘা জমিতে ৩০ কেজি টিএসপি,২৫ কেটি পটাশ এবং ১৫ কেচি জীপসাম সার ছিটিয়ে পরের দিনই সারিবদ্ধভাবে বীজ রোপন রসুন করতে হয়। এক বিঘা জমিতে ২ মণ বীজ লাগে। বীজ রোপন করার পরই খড় বা বিচালি দিয়ে পুরো জমি ঢেকে দিতে হয়। এক মাস পর পানি সেচ দিয়ে ১০ কেজি ইউরিয়া সার দিতে হয় বিঘাপ্রতি। এক পদ্ধতিতে রোগ বালাই নেই বললেই চলে। একশত দিনের মধ্যে ফসল ঘরে ওঠে।বিঘাপ্রতি উৎপাদন ২৫ থেকে ৩০ মণ পর্যন্ত হয়।
উপজেলার বিলচলন ইউনিয়ন বোঁথর গ্রামের কৃষক রফিকুল ইসলাম জানান, এ বছর ৭ বিঘা জমিতে তিনি বিনাহালে রসুন আবাদ করেছেন। এক বিঘা জমিতে সব মিলিয়ে খরচ হয় ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা। তবে কৃষি শ্রমিকের মজুরি বেড়ে যাওয়ায় খরচও বেড়েছে। তারপরও দাম কম হলেও ৬০ হাজার টাকার রসুন বিক্রি করা হয়। দাম বেশি হলে লক্ষাধিক টাকার বেশি পাওয়া যায়।
পক্ষান্তরে আমনের আবাদ শেষে বেশ কিছুদিন মাটি কর্দমাক্ত থাকার কারনে কাঙ্ক্ষিত রবিশস্য চাষ করা সম্ভব হয়না। যার ফলে জমি পতিত পরে থাকে সেই সময়টাকেই কাজে লাগিয়ে আবাদ করা হচ্ছে তাতে করে এ চাষে বাড়তি আয়ের সম্ভাবনাও দেখছে কৃষক। এবং দেশের অর্থনীতিতে ব্যপক ভূমিকা রাখতে অগ্রণী ভূমিকা পালনে অংশীদার হচ্ছে।
চাটমোহর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ কুন্তলা ঘোষ জানান, বিনাহালে রসুন আবাদ সঠিক ব্যবস্থাপনা ও কৃষকদের সহযোগিতা পেলে এ লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হবে বলে জানান এ কর্মকর্তা।
দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর আগামী ১ ডিসেম্বর থেকে প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিনে জাহাজ চলাচল শুরু হতে যাচ্ছে। থাকছে রাতে থাকার সুযোগও। তবে দৈনিক দুই হাজারের বেশি পর্যটক সেন্ট মার্টিনে যেতে পারবেন না।
কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়া জেটিঘাট থেকে সকাল সাতটায় জাহাজ ছেড়ে যাবে। পরের দিন বিকাল তিনটায় সেন্ট মার্টিন থেকে সেই জাহাজ কক্সবাজারে ফিরে আসবে। আগামী ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত টানা দুই মাস পর্যটকদের ভ্রমণের জন্য সাতটি জাহাজ প্রস্তুত করা হয়েছে।
এদিকে সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী, ১ নভেম্বর থেকে পর্যটকদের ভ্রমণের জন্য সেন্ট মার্টিন উন্মুক্ত করা হয়। তবে রাতে থাকার ব্যবস্থা না থাকায় এখন পর্যন্ত একজন পর্যটকও দ্বীপ ভ্রমণে যাননি। জাহাজ চলাচল বন্ধ থাকায় আগামী আট দিনেও কোনো পর্যটকের দ্বীপ ভ্রমণের সুযোগ নেই।
পর্যটকবাহী জাহাজ মালিকদের সংগঠন ‘সি ক্রুজ অপারেটর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের’ সাধারণ সম্পাদক হোসাইন ইসলাম বলেন, রাতে থাকার সুযোগ না থাকায় নভেম্বর মাসে কোনো পর্যটক সেন্ট মার্টিন ভ্রমণে যেতে আগ্রহ দেখাননি। এ কারণে জাহাজ চলাচলও বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে ১ ডিসেম্বর থেকে টানা দুই মাস রাত্রিযাপনের ব্যবস্থা আছে। পর্যটকেরাও দ্বীপ ভ্রমণে যেতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন।
কক্সবাজার শহর থেকে সেন্ট মার্টিনের দূরত্ব ১২০ কিলোমিটার। যেতে সময় লাগে ৬ থেকে ৭ ঘণ্টা। জাহাজগুলো হলো—এমভি কর্ণফুলী এক্সপ্রেস, এমভি বারো আউলিয়া, এমভি বে ক্রুজ, এমভি কাজল, কেয়ারী সিন্দাবাদ, কেয়ারী ক্রুজ অ্যান্ড ডাইন ও আটলান্টিক ক্রুজ।
সেন্ট মার্টিন ভ্রমণের সরকারি প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়া সেন্ট মার্টিনে কোনো নৌযান চলাচল করতে পারবে না। পর্যটকদের অবশ্যই বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের স্বীকৃত ওয়েব পোর্টালের মাধ্যমে অনলাইনে টিকিট কিনতে হবে। প্রতিটি টিকিটে ট্রাভেল পাস ও কিউআর কোড সংযুক্ত থাকবে। কিউআর কোড ছাড়া টিকিট নকল হিসেবে গণ্য হবে।
পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের উপপরিচালক খন্দকার মাহবুব পাশা গণমাধ্যমকে বলেন, পর্যটক পারাপারের সময় জাহাজগুলোকে কঠোর নজরদারিতে রাখা হবে। দুই হাজারের বেশি পর্যটক যেতে দেওয়া হবে না। এ জন্য নুনিয়ারছড়ার বিআইডব্লিউটিএ জেটিঘাট ও সেন্ট মার্টিন জেটিঘাটে পৃথক তল্লাশির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
দেশে গত সাড়ে ৩১ ঘণ্টায় চারবার ভূমিকম্প হয়েছে। এর মধ্যে গতকাল শনিবার সকালে একবার ও সন্ধ্যায় পরপর দুবার ভূকম্পন অনুভূত হয়। এর আগে শুক্রবার সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে রাজধানীসহ আশপাশের এলাকা।
শুক্রবারের ভূমিকম্প সারা দেশেই অনুভূত হয়। ভূমিকম্পের সময় অনেকেই আতঙ্কে ঘরের বাইরে বেরিয়ে আসেন। আতঙ্কে অনেকেই ভবন থেকে লাফিয়েও পড়েন। এতে শিশুসহ ১০ জন নিহত ও ছয় শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন।
ভূমিকম্পের সময় কিছু করণীয় আছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় ভূমিকম্পের সময় করণীয় নিয়ে একগুচ্ছ পরামর্শ দিয়েছে। দেখে নেওয়া যাক পরামর্শগুলো কি কি।
কী করবেন, কী করবেন না
ভূকম্পন অনুভূত হলে আতঙ্কিত হবেন না। ভূকম্পনের সময় বিছানায় থাকলে বালিশ দিয়ে মাথা ঢেকে টেবিল, ডেস্ক বা শক্ত কোনো আসবাবের নিচে আশ্রয় নিন।
রান্নাঘরে থাকলে গ্যাসের চুলা বন্ধ করে দ্রুত বেরিয়ে আসুন। বিম, কলাম ও পিলার ঘেঁষে আশ্রয় নিন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অবস্থানকালে স্কুলব্যাগ মাথায় দিয়ে শক্ত বেঞ্চ অথবা শক্ত টেবিলের নিচে আশ্রয় নিন। ঘরের বাইরে থাকলে গাছ, উঁচু বাড়ি, বৈদ্যুতিক খুঁটি থেকে দূরে খোলাস্থানে আশ্রয় নিন।
গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি, হাসপাতাল, মার্কেট ও সিনেমা হলে থাকলে বের হওয়ার জন্য দরজার সামনে ভিড় কিংবা ধাক্কাধাক্কি না করে দুহাতে মাথা ঢেকে বসে পড়ুন।
ভাঙা দেয়ালের নিচে চাপা পড়লে বেশি নড়াচড়ার চেষ্টা করবেন না। কাপড় দিয়ে মুখ ঢেকে রাখুন, যাতে ধুলাবালু শ্বাসনালিতে না ঢোকে।
একবার কম্পন হওয়ার পর আবারও কম্পন হতে পারে। তাই সুযোগ বুঝে বের হয়ে খালি জায়গায় আশ্রয় নিন।
ওপর তলায় থাকলে কম্পন বা ঝাঁকুনি না থামা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে; তাড়াহুড়ো করে লাফ দিয়ে বা লিফট ব্যবহার করে নামা থেকে বিরত থাকুন।
কম্পন বা ঝাঁকুনি থামলে সিঁড়ি দিয়ে দ্রুত বেরিয়ে পড়ুন এবং খোলা আকাশের নিচে অবস্থান নিন।
গাড়িতে থাকলে পদচারী–সেতু, উড়ালসড়ক, গাছ ও বৈদ্যুতিক খুঁটি থেকে দূরে গাড়ি থামান। ভূকম্পন না থামা পর্যন্ত গাড়ির ভেতরে থাকুন। ব্যাটারিচালিত রেডিও, টর্চলাইট, পানি এবং প্রাথমিক চিকিৎসার সরঞ্জাম বাড়িতে রাখুন।
নতুন পে স্কেলের দাবিতে আগামী ডিসেম্বর মাসে মহাসমাবেশ করবেন কর্মচারীরা। কমিশনকে দেওয়া আলটিমেটামের আগেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কর্মচারী নেতারা।
নতুন বেতন কাঠামো বাস্তবায়নে কর্মসূচি ঠিক করতে গতকাল শনিবার বৈঠকে বসে কর্মচারীদের কয়েক ডজন সংগঠন। সরকারি কর্মচারী দাবি আদায় ঐক্য পরিষদের নেতৃত্বে এই বৈঠক থেকে আগামী ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে ঢাকায় মহাসমাবেশের কর্মসূচি ঠিক করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বৈঠকে অংশ নেওয়া একাধিক কর্মচারী নেতা।
এদিকে কমিশন গঠনের পর অর্থ উপদেষ্টা ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, এই সরকারই নতুন বেতন কাঠামো কার্যকর করবে। কিন্তু সম্প্রতি উপদেষ্টা জানিয়েছেন, নির্বাচিত সরকার নতুন কমিশনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। বিষয়টি নিয়ে কর্মচারীদের মধ্যে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়লে একজোট হয় বিভিন্ন কর্মচারী সংগঠন। সময় বেঁধে দিয়ে তারা বলেন, ৩০ নভেম্বরের মধ্যে পে কমিশন সুপারিশ জমা না দিলে কঠোর আন্দোলনের মাধ্যমে দাবি আদায় করা হবে।
পে কমিশন সূত্রে খবর, সুপারিশ প্রণয়নের কাজ এখনো অনেক বাকি। এই মুহূর্তে কমিশন সুপারিশের একটি খসড়া তৈরির কাজ করছে। ইতোমধ্যে সুপারিশ তৈরির ৫০ শতাংশের মতো কাজ শেষ করেছে কমিশন। এই সপ্তাহে সচিবদের মতামত গ্রহণের পর কমিশন রিপোর্ট চূড়ান্তকরণের দিকে এগোবে বলে জানা গেছে।
প্রসঙ্গত, গত জুলাইয়ের শেষ দিকে সাবেক অর্থসচিব জাকির আহমেদ খানকে সভাপতি করে ২৩ সদস্যের জাতীয় বেতন কমিশন-২০২৫ গঠন করে সরকার। প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ ছিল, কমিশনের প্রথম সভার তারিখ থেকে ছয় মাসের মধ্যে তাদের প্রতিবেদন সরকারের কাছে জমা দিতে হবে।