কক্সবাজারের কুতুবদিয়া এলাকা দিয়ে ঘূর্ণিঝড় ‘হামুন’-এর অগ্রভাগ বাংলাদেশ উপকূল অতিক্রম শুরু করেছে। এটি আরও উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে কুতুবদিয়ার কাছ দিয়ে পরবর্তী ৮ থেকে ১০ ঘণ্টার মধ্যে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার উপকূল অতিক্রম সম্পন্ন করতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে উপকূল অতিক্রম শুরু করে হামুন। আবহাওয়াবিদ মো. মনোয়ার হোসেন স্বাক্ষরিত আবহাওয়ার ১৩ নম্বর বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
আবহাওয়ার ১৩ নম্বর বিশেষ বিজ্ঞপ্তির বরাত দিয়ে চট্টগ্রাম আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তা মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়ার আকারে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড়কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায়
সাগর খুবই উত্তাল রয়েছে। চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ৭ নম্বর বিপৎসংকেত এবং মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৫ নম্বর বিপৎসংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।’
তিনি জানান, উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ৭ নম্বর বিপৎসংকেতের আওতায় থাকবে। প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোর নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৩-৫ ফুট অধিক উচ্চতার বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।
প্রবল ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাবে খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে। ভারী বর্ষণের প্রভাবে কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলের কোথাও কোথাও ভূমিধস হতে পারে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
এদিকে, ঘূর্ণিঝড়টি দুর্বল হয়ে স্থলভাগে উঠে আসতে থাকায় কক্সবাজার, চট্টগ্রাম ও এর আশপাশের জেলাগুলোতে তুমুল বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে। তবে গতকাল রাত ১০টা পর্যন্ত রাজধানীতে এর প্রভাব তেমন দেখা যায়নি।
ঘূর্ণিঝড়ের গতিবেগ বিশ্লেষণ করে আবহাওয়া অফিস জানায়, হামুনের প্রভাবে উপকূলের ১৫টি জেলায় স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েক ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হতে পারে। এসব জেলায় সরকারি ছুটি বাতিল করা হয়েছে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান মঙ্গলবার মন্ত্রণালয়ে জরুরি বৈঠক করেন। এ সময় বরগুনা, ভোলা, সন্দ্বীপ, বরিশাল, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুরসহ ১০টি জেলাকে ঝুঁকিপূর্ণ উল্লেখ করে এসব দুর্গত এলাকার ১৫ লাখ মানুষকে মঙ্গলবার রাত ৮টার মধ্যে আশ্রয়কেন্দ্রে নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
ঘূর্ণিঝড় হামুনের প্রভাবে অতি ভারী বৃষ্টিতে ১৫ জেলায় জলোচ্ছ্বাস, ৫ জেলায় ভূমিধসের শঙ্কা রয়েছে। এ সময় কমপক্ষে ৫ ফুটের বেশি উচ্চতায় জলোচ্ছ্বাস হতে পারে বলে জানায় আবহাওয়া অফিস।
সেই সঙ্গে সারা দেশে বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। সাগর বিক্ষুব্ধ থাকায় গতকালই পায়রা ও চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরে চার নম্বর নামিয়ে ৭ নম্বর এবং কক্সবাজারে ৬ ও মোংলায় ৫ নম্বর বিপৎসংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি বেড়েছে নদীবন্দরের সংকেতও।
এদিকে উপকূলীয় জেলা পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরগুনা, চট্টগ্রাম, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, ভোলা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোও ৭ নম্বর বিপৎসংকেতের আওতায় থাকবে।
ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রবর্তী অংশের প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ ভারী (৪৪ থেকে ৮৮ মিলিমিটার) থেকে অতি ভারী (৮৯ মিলিমিটার বা তারও বেশি) বর্ষণ অব্যাহত থাকতে পারে।
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে ভারী (৪৪-৮৮ মি.মি.) থেকে অতি ভারী (১৮৯ মি.মি.) বর্ষণ হতে পারে। এদিকে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
ফায়ার সার্ভিসের প্রস্তুতি
ঘূর্ণিঝড় হামুন মোকাবিলায় সার্বিকভাবে প্রস্তুতি নিয়েছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর। খোলা হয়েছে মরিটরিং সেল। দুর্যোগপ্রবণ এলাকার জনসাধারণকে সচেতন, সতর্ক করছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপকূলবর্তী ফায়ার স্টেশনগুলো। এ ছাড়াও ঝড় চলাকালে ও পরবর্তী সময়ে যেকোনো জরুরি প্রয়োজনে ফায়ার সার্ভিসের নিকটবর্তী ফায়ার স্টেশন ছাড়াও কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষের হটলাইন ও কেন্দ্রীয় মনিটরিং সেলের মোবাইল নম্বরে ফোন করেও জরুরি সেবা গ্রহণ করা যাবে।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ফায়ার সার্ভিসের গণমাধ্যম শাখা থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ফায়ার সার্ভিসের কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষের হটলাইন নম্বর হচ্ছে ১৬১৬৩ ও কেন্দ্রীয় মনিটরিং সেলের মোবাইল নম্বর হচ্ছে ০১৭৩০৩৩৬৬৯৯।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, মঙ্গলবার সকাল থেকে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগের উপকূলবর্তী জেলাগুলোর সব ফায়ার স্টেশন থেকে গণসংযোগ ও মাইকিংয়ের মাধ্যমে এই প্রচারণার কাজ চালানো হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড়-পূর্ব, ঘূর্ণিঝড় সময়কালীন এবং ঘূর্ণিঝড়-পরবর্তী সব কাজ সমন্বয় করার জন্য কেন্দ্রীয়ভাবে সদর দপ্তর ঢাকায় খোলা হয়েছে মনিটরিং সেল। মনিটরিং সেল থেকে উপকূলবর্তী এলাকার সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় সার্বিকভাবে প্রস্তুত রয়েছে ফায়ার সার্ভিস।
আরও জানানো হয়, দুর্যোগপ্রবণ এলাকার সব ফায়ার স্টেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করে স্ট্যান্ডবাই ডিউটিতে রাখা হয়েছে। দুর্যোগপ্রবণ এলাকার জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলায় স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় রেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। প্রতিটি ফায়ার স্টেশনে সার্চ অ্যান্ড রেসকিউ টিম, প্রাথমিক চিকিৎসাকারী দল এবং একটি করে ওয়াটার রেসকিউ টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এসব এলাকায় ফায়ার সার্ভিসের প্রশিক্ষিত ভলান্টিয়ারদেরও প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। প্রয়োজনীয় সংখ্যক অগ্নিনির্বাপণ ও উদ্ধার সরঞ্জামসহ অ্যাম্বুলেন্স, চেইন স, হ্যান্ড স, রোটারি রেসকিউ স, স্প্রেডার, মেগাফোন, র্যামজ্যাক বা এয়ার লিফটিং ব্যাগ, ফাস্ট এইড বক্সসহ যাবতীয় সরঞ্জাম প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
ফায়ার সার্ভিস জানায়, ঘূর্ণিঝড়-পরবর্তী অনুসন্ধান ও উদ্ধারকাজসহ রাস্তাঘাট যান চলাচল উপযোগী করার কাজে ফায়ার সার্ভিস নিয়োজিত থাকবে। এসব এলাকায় জীবন ও মালামাল সুরক্ষা সংক্রান্ত যেকোনো কাজে দিবা-রাত্রি ২৪ ঘণ্টা ফায়ার সার্ভিসের সেবা গ্রহণ করা যাবে। সব আশ্রয়কেন্দ্রের পাশাপাশি প্রয়োজনে উপকূলবর্তী ফায়ার স্টেশনগুলোতেও জনগণ আশ্রয় নিতে পারবেন। ফায়ার সার্ভিসের কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষসহ চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ সারাক্ষণ সংবাদ সংগ্রহে নিয়োজিত থাকবে।
চট্টগ্রামে ১১৪ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আশ্রয়কেন্দ্র
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে (চসিক) দুর্যোগপূর্ণ এলাকাগুলোতে ১১৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ ছাড়াও ঘূর্ণিঝড়ে নগরবাসীকে তথ্য সরবরাহ ও জরুরি সেবা দিতে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ চালু করেছে চসিক।
মঙ্গলবার নগরীর দামপাড়া এলাকার বিদ্যুৎ উপবিভাগের কার্যালয়ে এক জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
এ সময় প্রবল ঘূর্ণিঝড় হামুনের বিপদ এড়াতে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় থাকা জনগণকে দ্রুত নিকটস্থ আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী।
চসিকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আজিজ আহমেদ জানান, দুর্যোগপূর্ণ এলাকায় সিটি করপোরেশনের ৮১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ মোট ১১৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে আশ্রয়কেন্দ্রে হিসেবে ব্যবহারের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘দুপুর থেকে মেয়র মহোদয়ের নির্দেশে রেডক্রিসেন্টের সহযোগিতায় চসিকের কর্মীরা উপকূলীয় ওয়ার্ডগুলোতে মাইকিং করেছে। দুর্গত ব্যক্তিদের জন্য ত্রাণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ ছাড়াও ম্যাজিস্ট্রেট রেজাউল করিমের নেতৃত্বে কাজ করছে রেসকিউ টিম।’
দুর্যোগ না কাটা পর্যন্ত কন্ট্রেল রুমে ২৪ ঘণ্টা ০২৩৩৩৩৫৩৬৪৯ নম্বরে যোগাযোগ করলে সেবা দেয়া হবে হবে বলে জানান তিনি।
সভায় চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলামসহ চসিকের বিভাগীয় সভাপতিরা উপস্থিত ছিলেন।
চট্টগ্রামের উপকূলীয় এলাকার লোকজনকে নিরাপদে সরিয়ে নিতে মাইকিং করেছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। পাশাপাশি প্রস্তুত রাখা হয়েছে আশ্রয়কেন্দ্র।
চট্টগ্রাম জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. ছাইফুল্লাহ মজুমদার বলেন, দুর্যোগ মোকাবিলায় উপকূলবর্তী এলাকার মানুষকে সচেতন করতে মাইকিং কার্যক্রম চলমান রাখা হয়েছে। ইতোমধ্যে জেলায় ৩৭৬টি আশ্রয়কেন্দ্র চালু আছে। আরও আশ্রয়কেন্দ্র চালু করা হচ্ছে।
পটুয়াখালীতে ৭০৩টি আশ্রয়কেন্দ্র
পটুয়াখালী প্রতিনিধি জানান, ঘূর্ণিঝড় হামুনের প্রভাবে গতকাল সারা দিনই পটুয়াখালীসহ উপকূলজুড়ে মেঘাচ্ছন্ন আকাশ, গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি, থেমে থেমে দমকা হওয়া বইছিল। এদিকে ৭নং বিপৎসংকেত থাকায় সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেয় বিআইডব্লিউটিএ। পায়রা সমুদ্রবন্দর কর্তৃপক্ষ তাদের সব কার্যক্রম বন্ধ রেখে কার্গো জাহাজসহ সব সরঞ্জাম নিরাপদে সরিয়ে নেয়ার নির্দেশনা দেয়। দুর্যোগ মোকাবিলায় সভা করে চারটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসক জানান, দুর্যোগ মোকাবিলায় ৭০৩টি সাইক্লোন শেল্টার, ৩৫টি মুজিব কিল্লা, ৬০০ টন চাল ও ১০ লাখ নগদ টাকা প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
স্বাস্থ্য বিভাগ জানায়, জেলায় মোট ৭৬টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণ স্যালাইন, ওষুধ ও পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট তাদের কাছে সংরক্ষিত রয়েছে।
এদিকে, পরিস্থিতি ক্রমশ খারাপ হওয়ায় কুয়াকাটায় আসা পর্যটকরা কুয়াকাটা ছাড়তে শুরু করেছেন।
আবাসিক হোটেল সি গোল্ড রিসোর্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আল-আমিন মুসল্লি বলেন, ঘূর্ণিঝড় হামুনের প্রভাবে পর্যটকরা কুয়াকাটা ছাড়তে শুরু করেছেন। আবহাওয়া এমন থাকলে এ সপ্তাহে পর্যটকদের আনাগোনা থাকবে না।
কুয়াকাটা ট্যুরিস্ট পুলিশ জোনের পরিদর্শক হাসনাইন পারভেজ বলেন, ‘আমরা সবসময় আগত পর্যটকদের নিরাপত্তায় কাজ করছি। গতকাল থেকেই আমরা মাইকিং করছি এবং তাদের নিরাপদে থাকতে অনুরোধ করছি।’
কক্সবাজারে মাছ ধরার ট্রলারগুলো নিরাপদ আশ্রয়ে
কক্সবাজার প্রতিনিধি জানান, ঘূর্ণিঝড় হামুনের প্রভাবে উত্তাল ছিল কক্সবাজারে সমুদ্র। বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার রিজিয়নের সহকারী পুলিশ সুপার মিজানুজ্জামান বলেন, ‘বিপৎসংকেতের ব্যাপারে পর্যটকদের সচেতন করা হচ্ছে। পাশাপাশি মাইকিং ও টহল জোরদার রয়েছে। আমাদের একাধিক টিম মাঠে রয়েছে।’
মোংলায় সকালে প্রভাব পড়েনি, বিকেলে সাগর উত্তাল
মোংলা প্রতিনিধি জানান, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় হামুনের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা বাগেরহাটে মঙ্গলবার সকাল থেকে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। সকাল থেকেই আকাশ মেঘাচ্ছন্ন রয়েছে। মোংলা বন্দরে ৫ নম্বর সংকেত চললেও বন্দরে থাকা ১১টি দেশি-বিদেশি জাহাজের পণ্য ওঠানামার কাজ স্বাভাবিক ছিল। তবে সাগর উত্তাল থাকায় সব মাছ ধরার ট্রলারকে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়।
নোয়াখালীর সাথে সারা দেশের নৌ যোগাযোগ বন্ধ
নোয়াখালী প্রতিনিধি জানান, ঘূর্ণিঝড় হামুনের প্রভাবে সাগর উত্তাল থাকায় নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার সঙ্গে জেলা সদরসহ সারা দেশের নৌ-যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।
সোমবার দুপুর থেকে উপজেলা প্রশাসনের নির্দেশে হাতিয়া-ঢাকা লঞ্চ চলাচল, হাতিয়া-চট্টগ্রাম স্টিমার চলাচল ও হাতিয়া-বয়ারচর-চেয়ারম্যান ঘাটে নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে।
হাতিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুরাইয়া আক্তার লাকী বলেন, ঘূর্ণিঝড় হামুনের কারণে উপকূলীয় এলাকায় ৭ নম্বর সংকেত চলছে। বৈরী আবহাওয়ার কারণে সাগর ও নদী উত্তাল থাকায় গতকাল মঙ্গলবার দুপুর থেকে হাতিয়ার সঙ্গে সারা দেশের সব ধরনের নৌযান চলাচল ও যাত্রীবাহী ট্রলার চলাচল বন্ধ রয়েছে। এ ছাড়া মাছ ধরার নৌকাগুলোকে সতর্কতার সঙ্গে তীরবর্তী এলাকায় থাকতে বলা হয়েছে।
লক্ষ্মীপুরে নৌ চলাচলে নিষেধাজ্ঞা
লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি জানান, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় হামুনের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা লক্ষ্মীপুরকে ৭ নম্বর বিপৎসংকেতের আওতায় এনেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এতে লক্ষ্মীপুর-ভোলা-বরিশাল নৌরুটে লঞ্চ চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে।
পাশাপাশি লক্ষ্মীপুর-ভোলা রুটের ফেরি চলাচলও বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত লঞ্চ ও ফেরি চলাচল বন্ধ থাকবে। এ ছাড়া লক্ষ্মীপুরের মজুচৌধুরীরহাট ঘাট থেকে স্পিডবোটসহ অন্যান্য নৌযান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে জেলা প্রশাসন।
বরগুনায় ৬৪২টি আশ্রয়কেন্দ্র
বরগুনা প্রতিনিধি জানান, বরগুনায় ঘূর্ণিঝড় ‘হামুন’ মোকাবিলায় জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ সময় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক রফিকুল ইসলাম ঘূর্ণিঝড় ‘হামুন’ মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানান। তিনি আরও জানান, জেলায় ৬৪২টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে। প্রায় তিন লাখ মানুষ এতে আশ্রয় নিতে পারবেন।
খুলনার পাইকগাছা উপজেলার লতা ইউনিয়নের শামুকপোতা ও পুটিমারী এলাকার সংযোগ সেতু নদীতে ধসে পড়ায় সেখানে কাঠের সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।
স্থায়ী সেতু নির্মাণ ব্যয়বহুল ও সময় সাপেক্ষ হওয়ায়, দ্রুততম সময়ের মধ্যে কাঠের সেতু নির্মাণ করে জনভোগান্তি দূর করতেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন, স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
গত বুধবার রাতে পাইকগাছা উপজেলার লতা ইউনিয়নের শামুকপোতা ও পুটিমারী গ্রামের মধ্যবর্তী উলুবুনিয়া নদীর সংযোগ সেতুটি আকস্মিকভাবে ধসে পড়ে। এই পথে যাতায়াতের একমাত্র সেতুটি ধসে পড়ায় দুই গ্রামের মধ্যে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ভোগান্তিতে পড়েছে তিনটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কয়েকশ’ শিক্ষার্থীসহ দুই গ্রামের কয়েক হাজার বাসিন্দা।
স্থানীয়রা জানান, উপজেলার লতা ইউনিয়নের শামুকপোতা মাধ্যমিক ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে উলুবুনিয়া নদীর উপর ২০০০ সালে সেতুটি নির্মাণ করা হয়। সেতুটি নির্মাণের ফলে পুটিমারী ও লতা ইউনিয়নবাসীর দুর্ভোগের অবসান ঘটে। দুই পাড়ের তিনটি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, তিনটি বাজার এবং এলাকাবাসীসহ সর্বসাধারণের একমাত্র যোগাযোগের মাধ্যম এ সেতু।
ব্রিজটি ধসে পড়ার খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহেরা নাজনীন ও উপজেলা প্রকৌশলী সাফিন সোহেব ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
উপজেলা প্রকৌশলী সাফিন সোহেব বলেন, ‘এখানে নতুন করে পাকা সেতু নির্মাণ করা সময় সাপেক্ষ যার জন্য পরিকল্পনা, অনুমোদন ও অর্থের প্রয়োজন এ কারণে আপাতত কাঠের সেতু নির্মাণ করে জনভোগান্তি দূর করার পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহেরা নাজনীন বলেন, ‘জনভোগান্তি লাঘবে দ্রুততম সময়ের মধ্যে এখানে একটি কাঠের সেতু নির্মাণ করার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এটি সম্পন্ন হলে আপাতত সমস্যার সমাধান হবে। পরবর্তীতে স্থায়ী সেতু নির্মাণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানানো হবে।
পাহাড়-নদী, ঝিরি, ঝরনা আর সবুজ বনবনানীর অনিন্দ্য সৌন্দর্যের লীলাভূমি দেশের অন্যতম পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ি। একদিকে প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যের মহাসমারোহ, অন্যদিকে পাহাড়ি জনপদের ঐতিহ্যবাহী জীবনধারা এই জেলাকে সবার কাছে ভিন্ন এক মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করেছে। পর্যটনের অপার সম্ভাবনাময় সবুজ এই অরণ্য দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কাছে এক আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র।
ছোট-বড় দৃষ্টিনন্দন ঝরনা ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে কেন্দ্র করে খাগড়াছড়ির পর্যটন অর্থনীতিতে অপার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। অবকাঠামো ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটাতে পারলে এই অঞ্চলে পর্যটক আকর্ষণ যেমন বাড়বে। পাশাপাশি দুর্গম এলাকার পর্যটন কেন্দ্রগুলোর উন্নয়ন করা হলে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানও সৃষ্টি হবে। খাগড়াছড়িতে রিছাং ঝরনা, সিজক, তৈদুছড়া, শিলাছড়ি, তুয়ারি মাইরাংসহ ছোট-বড় ১০টি ঝরনা আছে। এক একটি ঝরনার উচ্চতা ৮০ থেকে ১৫০ ফুট। বর্ষা কিংবা শীতে সবসময়ই এসব ঝরনার রূপ দেখে মুগ্ধ হন পর্যটকরা।
খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকার বলেন, এই জেলার অর্থনৈতিক উন্নয়নে পর্যটন শিল্পের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। খাগড়াছড়িতে নতুন নতুন পর্যটন স্পট সংযুক্তি ও পর্যটন সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন স্থাপনার উন্নয়নের পাশাপাশি ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। জেলায় সাত-আট লাখ বাসিন্দার মধ্যে পর্যটন খাতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় এক লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে।
ইফতেখারুল ইসলাম বলেন, পর্যটন শিল্পের বিকাশের সঙ্গে এই অঞ্চলে পরিবেশ ও প্রকৃতির ভারসাম্য বজায় রেখে টেকসই পর্যটন নীতি গ্রহণ করা জরুরি। টেকসই পর্যটন নীতি গ্রহণ করা হলে স্থানীয় ঐতিহ্য, পরিবেশগত ভারসাম্য ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অক্ষুণ্ন রেখে খাগড়াছড়িকে ভারতের দার্জিলিং বা নেপালের পোখারার মতো একটি আন্তর্জাতিক মানের পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত করা সম্ভব।
খাগড়াছড়িতে বেড়াতে আসা পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ ‘রিছাং ঝরনা’। রিছাং ঝরনার শীতল পানিতে গা ভাসাতে প্রতিবছর বিভিন্ন উৎসব-পার্বণে বিপুলসংখ্যক পর্যটকের আগমন ঘটে। রিছাং ঝরনার অবস্থান খাগড়াছড়ি জেলা সদর থেকে ১১ কিলোমিটার। আর খাগড়াছড়ি-ঢাকা আঞ্চলিক সড়ক ছেড়ে প্রায় এক কিলোমিটার দক্ষিণে রিছাং ঝরনা।
২০০৩ সালে ভ্রমণ পিপাসুদের নজরে আসো রিছাং ঝরনাটি। সময়ের ব্যবধানে খাগড়াছড়ির অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে নিজের জায়গা তৈরি করে নিয়েছে রিছাং ঝরনা। এক সময় এই ঝরনায় যাওয়ার রাস্তা না থাকলেও, জেলা প্রশাসন ও জেলা পরিষদের উদ্যোগে রাস্তা হওয়ায় পর্যটকরা সহজে এ ঝরনায় যেতে পারছেন। পর্যটকদের আকর্ষণ করতে জেলায় উন্মোচিত হচ্ছে নতুন নতুন পর্যটন স্পট। রিছাং ঝরনা, তৈদুছড়া ঝরনাসহ অসংখ্য ঝরনার পর খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গার দুর্গম জনপদ কাতালমনি পাড়ায় সন্ধান মিলেছে প্রায় ৫০ ফুট উচ্চতার ‘তৈলাফাং ঝরনা’। অ্যাডভেঞ্চারের স্বাদ নিতে ‘তৈলাফাং ঝরনা’ দেখতে দুর্গম পথ পাড়ি দিচ্ছেন স্থানীয় ভ্রমণ পিপাসুরা।
তৈলাফাং ঝরনায় ঘুরতে আসা পানছড়ির উল্টাছড়ি উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. রফিকুল ইসলাম বাবুল বলেন, তৈলাফাং ঝরনায় পৌঁছানো অত্যন্ত ভয়ংকর হলেও অ্যাডভেঞ্চার প্রেমীদের কাছে এটি হতে পারে অত্যন্ত আকর্ষণীয়। যাদের পাহাড় ঝরনা ভালো লাগে তারা নিঃসন্দেহে তৈলাফাং ঝরনা উপভোগ করবেন।
পরিবারের সদস্যদের নিয়ে তৈলাফাং ঝরনা ঘুরে আসা রাঙামাটির উপসহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা অরুনাঙ্কর চাকমা বাসসকে বলেন, তৈলাফাং ঝরনার যোগাযোগ ব্যবস্থা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। সরকারের পক্ষ থেকে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নসহ পরিকল্পিত অবকাঠামো গড়ে তোলা হলে এ ঝরনা পাহাড়ের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পথকে সুগম করবে। স্থানীয়দের জীবনযাত্রার মানও উন্নত হবে।
খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক এবিএম ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকার বলেন, ইতোমধ্যে পর্যটকদের কথা চিন্তা করে মাটিরাঙ্গার রিছাং ঝরনায় ব্যাপক উন্নয়ন করা হয়েছে। স্থানীয় পর্যটন খাতকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে সরেজমিনে পরিদর্শন করে সম্ভাব্যতা যাচাই করে তৈলাফাং ঝরনায় যাতায়াতের জন্য সড়ক অবকাঠামো উন্নয়নের কার্যক্রম শিগগিরই হাতে নেওয়া হবে। তবে ঝরনাকেন্দ্রিক পর্যটন শিল্প বিকাশের জন্য প্রাকৃতিক পরিবেশকে অক্ষুণ্ন রেখেই অবকাঠামো নির্মাণ করতে হবে।
জেলা পুলিশ সুপার মো. আরিফিন জুয়েল বাসসকে বলেন, পর্যটন শিল্পের বিকাশে পর্যটকদের নিরাপত্তার বিষয়টিও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ জেলার পর্যটন এলাকার নিরাপত্তায় জেলা পুলিশ সর্বদা নিয়োজিত আছে। নতুন নতুন পর্যটন কেন্দ্র গড়ে উঠলে সেখানেও পুলিশি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। তবেই দেশি বিদেশি পর্যটকরা এখানে আসতে আগ্রহী হবেন।
জেলায় নতুন নতুন পর্যটন স্পট উন্মোচিত হওয়ায় খাগড়াছড়ির অর্থনীতিতেও তার প্রভাব পড়েছে। পর্যটকদের আসা-যাওয়া, থাকা-খাওয়া, কেনাকাটা ইত্যাদিকে ঘিরে এলাকায় গড়ে উঠেছে পর্যটকবান্ধব নানা সেবা। এতে একদিকে যেমন পাহাড়ের মানুষের কঠোর পরিশ্রম কিছুটা লাঘব হচ্ছে, তেমনি তাদের সহজ কর্মসংস্থানের পথও তৈরি হচ্ছে।
খাগড়াছড়ি পর্যটন মোটেল এর ব্যবস্থাপক উত্তম কুমার মজুমদার গণমাধ্যমকে বলেন, এই জেলায় প্রায় অর্ধশতাধিক পর্যটন স্পট আছে। দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আকর্ষণ করতে প্রায় প্রতিটি উপজেলায় মনোরম স্থানগুলোকে আকর্ষণীয়ভাবে সাজানো হয়েছে। জেলা প্রশাসনের পাশাপাশি ব্যক্তিগত উদ্যোগেও গড়ে উঠেছে বিভিন্ন পর্যটন স্পট। এসব স্থানকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে ১৭০টি সরকারি-বেসরকারি হোটেল-মোটেল, গেস্টহাউস ও অতিথিশালা। এছাড়া চালু হয়েছে প্রায় ৩০০ ছোট-বড় রেস্তোরাঁ।
তিনি বলেন, নতুন নতুন ঝরনা আবিষ্কার হওয়াতে পর্যটকদের সমাগম বেড়েছে। ঝরনাকেন্দ্রিক পর্যটন গড়ে উঠলে জেলার পর্যটন অর্থনীতি আরও বিকশিত হবে। এতে ট্যুরিস্ট গাইডসহ স্থানীয়দের কর্মসংস্থান হবে। তিনি বলেন, খাগড়াছড়িতে প্রতিদিন প্রায় ৫ হাজার পর্যটকের সমাগম হয়। এতে পর্যটন সংশ্লিষ্ট খাতে মাসে ২৫ কোটি টাকার লেনদেন হয়।
খাগড়াছড়ি পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি আসলাম কালু বলেন, পর্যটকদের যাতায়াতের জন্য রয়েছে ব্যক্তিগত ও সমিতিভিত্তিক ট্যুরিস্ট বাস, মিনিবাস, মাইক্রোবাস, কার, সিএনজি, চাঁদের গাড়ি ও মোটরসাইকেল। জেলার নয়টি উপজেলায় পর্যটকদের সেবা দিতে দুই শতাধিক গাড়ি সব সময় প্রস্তুত থাকে।
এছাড়া ‘পর্যটনকে কেন্দ্র করে ছোট-বড় প্রচুর গাড়ি নামানো হয়েছে। ফলে পরিবহন খাতে হাজার হাজার লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় পর্যটন স্পট বাড়ানো সম্ভব হলে আরও বেশি লোকজনের কর্মসংস্থান হবে। পর্যটন শিল্পের বিকাশে সবসময় উন্নত সেবা থাকা চাই। তবেই এটি দেশি-বিদেশি পর্যটকদের দৃষ্টি কাড়বে।’
খাগড়াছড়ি মিনি সুপার মার্কেটের সাধারণ সম্পাদক নজির আহমেদ বাসসকে বলেন, ‘পর্যটকদের সুবাদে খাগড়াছড়িতে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটছে। তারা স্থানীয়ভাবে তৈরি কাপড় কেনেন। মেয়েদের মধ্যে পাহাড়ি নারীদের বানানো থামী, পিনন, ব্লাউজ এবং কাঠের তৈরি বিভিন্ন শো-পিসের ব্যাপক চাহিদা।’
বেসরকারি হোটেল গাইরিংয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও হোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অনন্ত বিকাশ ত্রিপুরা জানান, খাগড়াছড়িতে প্রচুর পর্যটক আসে। বেশিরভাগ হোটেল সবসময় বুকিং থাকে। পর্যটকদের জন্য তাদের হোটেলে স্থানীয় বিভিন্ন সুস্বাদু খাবার রাখা হয়। এছাড়া কেউ চাইলে নির্ধারিত ফি দিয়ে স্থানীয় শিল্পীদের ঐতিহ্যবাহী নাচ-গান উপভোগ করতে পারেন।
খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ হর্টিকালচার পার্কের হোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ছোটো মনি চাকমা বলেন, জেলায় পর্যটনকে ঘিরে প্রচুর কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। ফলে পর্যটন খাতে অনেকে যুক্ত হচ্ছেন। এখন পর্যটন স্পট বৃদ্ধি ও নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।
তিনি বলেন, গত পাঁচ বছরে জেলার বাসিন্দাদের জীবনমান ইতিবাচকভাবে বদলেছে। পর্যটনের মাধ্যমে কম করে হলেও একলাখ লোক প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কর্মসংস্থানের সুযোগ পেয়েছে। স্বাচ্ছন্দ্যে পরিবার চালানোর পাশাপাশি তারা ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া করাচ্ছেন এবং সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করছেন।
জানা যায়, খাগড়াছড়িতে আগে অনেক কৃষিজ পণ্য, ফল-ফলাদি পচে যেতো। কিন্তু এখন কৃষকদের উৎপাদিত পণ্য আর নষ্ট হয় না। কারণ পর্যটকরা এসব কৃষিজ পণ্য ব্যবহার করায় কৃষকেরা ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন ও স্বাবলম্বী হচ্ছেন।
বেসরকারি রেস্তোরাঁ স্বপ্ন চূড়ার মালিক ও নারী উদ্যোক্তা নেইম্রা মারমা জানান, তার হোটেলে এখন গড়ে দুই-তিনশ’ স্থানীয় ও বাইরের অতিথি আসে। তিনি বলেন, ‘পর্যটন শিল্পের বিকাশে শত শত খাবারের হোটেল ও রেস্তোরাঁ গড়ে উঠেছে এবং হাজার হাজার লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। সরকারিভাবে পৃষ্ঠপোষকতা পেলে পর্যটন শিল্পের যেমন: বিকাশ হবে, তেমনই স্থানীয়দের কর্মসংস্থানের পাশাপাশি আর্থ-সামাজিক অবস্থার ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটবে।’
খাগড়াছড়ি চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালক সুদর্শন দত্ত বলেন, এই জেলাকে পর্যটন নগরী হিসেবে গড়তে সরকারের পাশাপাশি সব পর্যায়ের জনপ্রতিনিধি ও শীর্ষ ব্যবসায়ীরা কাজ করছেন। তিনি উল্লেখ করেন, জেলার প্রতিটি উপজেলায় অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধাসহ নতুন নতুন পর্যটন স্পট গড়ে তোলা হচ্ছে। সবার সম্মিলিত চেষ্টা থাকলে খাগড়াছড়িকে একটি আন্তর্জাতিক মানের পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব।
খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শেফালিকা ত্রিপুরা বলেন, ‘পর্যটকদের থাকা ও ব্যবহারের জন্য অবকাঠামোগুলো অত্যাধুনিক মানের করার পাশাপাশি মোবাইল নেটওয়ার্কসহ সব ধরনের ডিজিটাল সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। ভ্রমণপিপাসুদের রাতে স্বাচ্ছন্দ্যে থাকার জন্য নিরাপদ হোটেল এবং দিনের বেলা কাছাকাছি জেলায় যাতায়াতের জন্য আধুনিক ট্যুরিস্ট বাসসেবা চালু করা জরুরি।’
চট্টগ্রাম নগরীর জামাল খান ডা. খাস্তগীর স্কুলের সামনে থেকে চেরাগি পাহাড় মোড় পর্যন্ত জনভোগান্তি সৃষ্টি করায় অভিযান চালিয়ে ৬০টি অবৈধ ভ্রাম্যমাণ দোকান অপসারণ এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে ১৯ হাজার টাকা জরিমানা করেছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেমনের স্পেশাল ম্যাজিস্ট্রেট মো. সোয়েব উদ্দিন খান শুক্রবার এই অভিযান পরিচালনা করেন।
ভ্রাম্যমাণ আদালত সূত্রে জানা যায়, নগরীর অন্যতম ব্যস্ততম সড়ক নগরীর জামাল খান ডা. খাস্তগীর বালিকা স্কুল থেকে চেরাগি পাহাড় মোড় পর্যন্ত অবৈধভাবে ভ্রাম্যমাণ দোকান পরিচালনা করায় জনগণের চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছিল। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে দোকানগুলো অপসারণ করে চলাচলের পথ উন্মুক্ত করা হয়। এছাড়া যেসব স্থায়ী দোকানের মালিক অবৈধভাবে নিজ সীমার বাহিরে সম্প্রসারিত করে রাস্তা-ফুটপাত দখল করেছেন, সেগুলোর মালিকদের বর্ধিত অংশ অপসারণের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ সময় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে ১৯ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।
নগরী জুড়ে এ ধরনের অভিযান চলমান থাকবে বলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট মো. সোয়েব উদ্দিন খান জানান। অভিযানে চসিকের পরিচ্ছন্ন বিভাগ সার্বিক সহায়তা করে।
নাটোরের লালপুরে আজ নর্থ বেঙ্গল চিনিকলে আখ মাড়াই কার্যক্রম উদ্বোধন করেন শিল্প সচিব মো. ওবায়দুর রহমান। ছবি: দৈনিক বাংলা
নাটোরের লালপুর উপজেলায় দুই লাখ টন আখ মাড়াই করে ১৩ হাজার টন চিনি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে নর্থ বেঙ্গল চিনিকলে চলতি মৌসুমের আখ মাড়াই কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
শুক্রবার বিকালে আখ মাড়াই কার্যক্রম উদ্বোধন করেন শিল্প সচিব মো. ওবায়দুর রহমান। পরে কেইন কেরিয়ার প্রাঙ্গনে আলোচনা ও মিলাদ-দোয়া মাহফিল হয়।
বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান রশিদুল হাসানের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) মো. নুরুজ্জামান, নাটোরের জেলা প্রশাসক আসমা শাহীন, পুলিশ সুপার মো. তারিকুল ইসলাম এবং নর্থ বেঙ্গল চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ ফরিদ হোসেন ভূঁইয়া প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, চিনি শিল্পকে লাভজনক পর্যায়ে নিয়ে যেতে সরকার কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। কৃষক পর্যায়ে আখের মূল্য বৃদ্ধি করা হয়েছে, কৃষক পর্যায়ে উন্নত জাতের আখের বীজ সরবরাহ করা হচ্ছে। কৃষকদের উচিত গুণগতমানের আখ চিনিকলে সরবরাহ করে চিনিকলের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে সহযোগিতা করা।
কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের ইনসাফনগর গ্রামে আড়াই বছরের শিশু কন্যা লামিয়া খাতুনকে গলায় ফাঁস দিয়ে হত্যার পর নিজেও আত্মহত্যা করেছেন তার মা রেশমা খাতুন (২৫)।
বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) সন্ধ্যা সাতটার দিকে এ মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রেশমা খাতুন ওই গ্রামের প্রবাসী রহিদুল ইসলামের স্ত্রী। বছর দুয়েক আগে রহিদুল বিদেশে পাড়ি জমান। তবে প্রবাসে যাওয়ার পর থেকে তিনি নিয়মিতভাবে সংসারের জন্য টাকা পাঠাতে পারছিলেন না। এতে সংসারে অভাব-অনটন দেখা দেয়। পাশাপাশি অসুস্থ হয়ে পড়েন রেশমা খাতুন। চিকিৎসার খরচ জোগাড় করতে না পেরে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন তিনি। এক পর্যায়ে রাগ ও ক্ষোভে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় প্রথমে মেয়েকে গলায় ফাঁস দিয়ে হত্যা করেন এবং পরে নিজেও ঘরের আড়ের সাথে রশি বেঁধে আত্মহত্যা করেন।
দীর্ঘ সময় ঘরের দরজা বন্ধ দেখে প্রতিবেশীরা সন্দেহ করে দরজা ধাক্কা দেন। ভিতর থেকে কোনো সাড়া না পেয়ে দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে দুজনের ঝুলন্ত মরদেহ দেখ দ্রুত পুলিশকে খবর দেন।
খবর পেয়ে দৌলতপুর থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহ দুটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোলাইমান শেখ বলেন, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। মা ও শিশুর মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্তে রিপোর্ট আসার পর বিস্তারিত জানা যাবে।
সড়কের দুধারে অবৈধভাবে রাখা বালু-পাথরের স্তূপ অপসারণে অভিযান শুরু করেছে তেঁতুলিয়া উপজেলা প্রশাসন। শুক্রবার সকালে তেঁতুলিয়া বাংলাবান্ধা মহাসড়কে অভিযান পরিচালনা করা হয়। এতে নেতৃত্ব দিয়ে এ অভিযান পরিচালনা করছেন তেঁতুলিয়া বিজ্ঞ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার আফরোজ শাহীন খসরু।
স্থানীয় জানান, ডাকবাংলো পিকনিক কর্ণার-সংলগ্ন এলাকা থেকে বাংলাবান্ধা পর্যন্ত মহাসড়কের দুপাশে অবৈধ স্তূপকৃত বালু, পাথরসহ অন্যান্য নির্মাণ সামগ্রী অপসারণের লক্ষ্যে এ অভিযানটি করা হয়েছে।
তেঁতুলিয়ার পর্যটনস্পট ডাকবাংলোর পিকনিক কর্ণার থেকে বাংলাবান্ধা জিরোপয়েন্ট এ কর্মসূচির আওতায় সরদারপাড়া এলাকায় ডাকবাংলো পিকনিক কর্ণার থেকে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর পর্যন্ত মহাসড়কে এই অভিযান পরিচালনাকালে ভেকু মেশিন দিয়ে অবৈধভাবে রাখা বালু ও পাথরের স্তূপ সরিয়ে দেন।
সড়কে চলাচলে দুর্ঘটনা প্রতিরোধে ও পর্যটকদের নিরাপদে চলাচলের লক্ষ্যে এ অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে বলে জানান, তেঁতুলিয়া উপজেলা প্রশাসন। সড়কের দুধারে অবৈধভাবে রাখা পাথর-বালি ও ইটের খোয়া সড়ক থেকে সরাতে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের মৌখিকভাবে নির্দেশ দেওয়া হলেও এ নির্দেশ মানা হয়নি। অভিযানের প্রাথমিকভাবে উপজেলা প্রশাসন সড়ক ও জনপথ বিভাগ, পরিবেশ অধিদপ্তর ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কর্মীদের নিয়ে এ অভিযান চালানো হচ্ছে। এতেও সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা আইন অমান্য করলে সড়ক আইন অনুযায়ী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করে জরিমানা করা হতে পারে বলে সতর্কতা প্রদান করা হয়।
এ সময় জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক ইউসুফ আলী, হাইওয়ে পুলিশের এসআই শাহিন, জাতীয় পরিবেশ পদক প্রাপ্ত পরিবেশকর্মী মাহমুদুল ইসলাম মামুন, সদর ইউপি চেয়ারম্যান মাসুদ করিম সিদ্দিকীসহ ট্যুরিজম ডেভেলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েশন পঞ্চগড়, হেল্প সোসাইটি, শাপলা ব্লাড ফাউন্ডেশন, তেঁতুলিয়া রক্তযোদ্ধা ও রক্তদান, তারুণ্য, ঐক্য, সীমান্ত ব্লাড সোসাইটি, উৎস, জাগ্রত তেঁতুলিয়া ও তেঁতুলিয়া ব্লাড সোসাইটি নামের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যরা এ কর্মসূচিতে অংশ নেন।
জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক ইউসুফ আলী বলেন, উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সড়ক ও জনপথ বিভাগ, পরিবেশ অধিদপ্তর, হাইওয়ে পুলিশ এবং স্বেচ্ছাসেবীদের নিয়ে সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন আয়োজন করেছি। আমরা প্রাথমিকভাবে উপজেলা প্রশাসনের নেতৃত্বে আমরা সবাইকে সচেতন করব তারা যেন নির্মাণ সামগ্রী নিয়ম অনুযায়ী সংরক্ষণ করে। যদি তারা নিয়মের ব্যত্যয় ঘটায় তাহলে পরবর্তীতে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার আফরোজ শাহিন বলেন, আজকে আমরা উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সড়ক ও জনপথ বিভাগ, পরিবেশ অধিদপ্তর, হাইওয়ে পুলিশ এবং স্বেচ্ছাসেবী ফোরামকে নিয়ে রাস্তার পাশে রাখা বালু সরাতে অভিযান শুরু করেছি। নির্মাণ সামগ্রী সৃষ্ট বায়ুদূষণ ও দুর্ঘটনা প্রতিরোধে এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে। আজ শনিবার বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর এলাকায় আবারও অভিযান পরিচালনা করা হবে।
ঝিনাইদহ জেলায় মালচিং পদ্ধতিতে তরমুজ চাষে নতুন সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। পরীক্ষামূলক তরমুজের আবাদ করে সাফল্য পেয়েছেন কৃষক আব্দুর রহিম বাদশা। রসে টইটম্বুর তরমুজ দেখতে খেতে ভিড় করছেন অনেকেই। ফলের ফলন ও স্বাদে খুশি কৃষকসহ কৃষি বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারাও।
কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, জেলার সদর উপজেলার হলিধানী ব্লকে ঝিনাইদহ-চুয়াডাঙ্গা সড়কের পাশের মাঠে তরমুজ চাষ করেন কৃষক আব্দুর রহিম বাদশা। নিজ উদ্যোগে বীজ সংগ্রহ করে ৫২ শতাংশ জমিতে রোপণ করেন গ্রীষ্মকালীন তরমুজ। গত সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে এ ফলের বীজ রোপণ করা হয়। তরমুজ গাছের গোড়ার আর্দ্রতা বজায় রাখতে ব্যবহার করা হয় মালচিং পদ্ধতি। পোকামাকড়ের আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে তৈরি করা হয়েছে মাচা। তাতেই ঝুলছে তরতাজা তরমুজ।
কৃষক আব্দুর রহিম বাদশা বলেন, ৫২ শতাংশ জমিতে ১১টি মাচা বা শেডে তরমুজ চাষ করা হয়েছে। আধুনিক মালচিং পদ্ধতিতে এ আবাদ করেছি। খেতে সব মিলিয়ে দুই হাজারের বেশি ফল ধরেছে। ফলের আকার, রং, স্বাদ ও মান অত্যন্ত ভালো।
রহিম বাদশা আরও বলেন, একেকটি তরমুজের ওজন ৩ থেকে ৫ কেজি হতে পারে। পরিপক্ব হলে এই তরমুজ অনেক সুস্বাদু হবে। দুই মাসের পরিচর্যায় ফল ধরেছে। আর এক সপ্তাহ পরে ফল সংগ্রহ করা যাবে। ৫২ শতাংশ জমিতে সব মিলিয়ে খরচ হয়েছে ৪০ হাজার টাকা। এরই মধ্যে ১ লাখ ২৫ হাজার টাকায় বাগানের সব ফল বিক্রি করে দিয়েছি। গড়ে আড়াই মাসে গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষ করে ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা লাভ করা যায়।
এদিকে ব্যতিক্রমী তরমুজ খেত পরিদর্শন করেছেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের বিশেষ টিম। গত বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৪টায় পরিদর্শন টিম তরমুজ খেতে আসেন।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন ‘কৃষি উন্নয়নের মাধ্যমে পুষ্টি ও খাদ্য নিরাপত্তা জোরদারকরণ’ এবং কৃষি বিপণন অধিদপ্তর (ডিএএম) কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন’ কৃষি বিপণন অধিদপ্তর জোরদারকরণ’ শীর্ষক প্রকল্প ডিপিপির সংস্থান অনুযায়ী চলমান কার্যক্রম পরিদর্শনের (মধ্যবর্তী মূল্যায়ন) লক্ষ্যে এ পরিদর্শন টিম তরমুজ খেত পরিদর্শন করেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রণালয়ের ফসল উইং, কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের যুগ্ম প্রধান ফেরদৌসী আখতার। আরও উপস্থিত ছিলেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের ফসল অনুবিভাগ, কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের উপপ্রধান রত্না শারমীন ঝরা, সিনিয়র সহকারী প্রধান প্রিয়াংকা দেবী পাল।
এ সময় পরিদর্শন টিমের সদস্যরা গ্রীষ্মকালীন তরমুজের বাম্পার ফলন দেখে সন্তোষ প্রকাশ করেন।
পরিদর্শন টিমে আরও উপস্থিত ছিলেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জেলা কার্যালয়ের অতিরিক্ত উপপরিচালক (উদ্যান) কৃষিবিদ মো. সেলিম রেজা, সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. নূর এ নবী, সদর উপজেলার হলিধানী ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মফিজ উদ্দিন।
সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. নূর এ নবী বলেন, ব্যতিক্রমী গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষে জেলায় নতুন সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। আমরা নিয়মিত কৃষকের নানা ধরনের লাভজনক চাষে উদ্বুদ্ধ করছি।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের ফসল উইং, কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের যুগ্ম প্রধান ফেরদৌসী আখতার বলেন, স্বল্পমেয়াদি ফসল হওয়ায় কৃষক গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষে আরও বেশি আগ্রহী হবে বলে আমরা মনে করি। এ ধরনের চাষে কৃষককে সার্বিক সহযোগিতা দিতে সরকারি সব সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা আমাদের লক্ষ্য।
চায়ের কচি সবুজ পাতায় ছেয়ে গেছে পঞ্চগড়ের দিগন্তজোড়া চা বাগানগুলো। এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বাগানগুলোতে পর্যাপ্ত পরিমাণ কাঁচা চা পাতা পাচ্ছেন স্থানীয় চা চাষিরা। এতে সবুজ হাসির ঝিলিক পড়ছে চাষিদের চোখে-মুখে,তারা খুশি ন্যায্য দামেও।
স্থানীয় চাষিরা বলছেন, মৌসুমের শুরু থেকেই চা প্রক্রিয়াকরণ কারখানা কর্তৃপক্ষ চাষিদের কাছ থেকে প্রতি কেজি কাঁচা চা পাতা ২৯ থেকে ৩৪ টাকা কেজি দরে কিনছে। অথচ গত মৌসুমে এই চিত্র ছিল একেবারেই ভিন্ন।
অভিযোগ রয়েছে স্থানীয় চা প্রক্রিয়াকরণ কারখানা মালিকদের অনৈতিক সিন্ডিকেটের কারণে প্রতি কেজি কাঁচা চা পাতা ৭ টাকা থেকে ১০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছিল। শুধু তাই নয়, প্রতি একশ কেজি কাঁচা চা পাতার বিপরীতে চা চাষিদের ৭০ কেজি পাতার দাম পরিশোধ করেছিল কারখানাগুলো। এ নিয়ে মিছিল- মিটিং, সভা- সমাবেশ করেও কাঁচা চা পাতার ন্যায্য দাম পেতে ব্যর্থ হওয়ায় হতাশ চা চাষিরা তাদের চায়ের বাগান তুলে ফেলে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এবার চাষিরা পাচ্ছেন কাঙ্ক্ষিত দাম।
স্থানীয় চা চাষি আমিনার রহমান ও মোতাহার হোসেন জানিয়েছেন. আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় চলতি মৌসুমে তাদের বাগানে কাঁচা চা পাতার উৎপাদন ও মান দুটোই ভালো হয়েছে। একই কারণে চা প্রক্রিয়াকরণ কারখানাগুলো প্রতিযোগিতামূলকভাবে কাঁচা চা পাতা কিনছে। তাছাড়া এবার সিন্ডিকেট না থাকায় গত মৌসুমের তুলনায় এবার কাঁচা পাতার দাম প্রায় চারগুণ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।
চা চাষি মতিয়ার রহমান জানান, গত মৌসুমে প্রতি কেজি কাঁচা চা পাতা ৭ টাকা থেকে ১০ টাকা কেজি দরে চা পাতা বিক্রি হলেও অতিরিক্ত ২০ থেকে ৩০ শতাংশ অতিরিক্ত পাতা নিত। যেটার দাম পরিশোধ করত না কারখানা কর্তৃপক্ষ। কিন্তু এবার সেই অনৈতিক নিয়ম না থাকায় ও দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় চাষিরা লাভবান হচ্ছেন। একই কারণে অসংখ্য বেকার শ্রমজীবী মানুষ খুঁজে পেয়ে কাজের ঠিকানা।
তবে অনৈতিক সিন্ডিকেটের অভিযোগ অস্বীকার করে নর্থ বেঙ্গল চা কারখানার ম্যানেজার সোহাগ জানান, গত মৌসুমে উৎপাদিত কাঁচা চা পাতার মান ভালো না থাকায় চায়ের মান খারাপ ছিল। একই কারণে অকশন মার্কেটে দর পতন ঘটে। যেকারণে কাঁচা চা পাতার দরও কম ছিল। এবার চা পাতার মান ভালো হয়েছে। চায়ের মান ভালো হচ্ছে। অকশন মার্কেটে প্রতিযোগিতামূলক বাজার তৈরি হওয়ায় কাঁচা চা পাতার দামও বেড়েছে।
পঞ্চগড় আঞ্চলিক চা বোর্ডের উন্নয়ন কর্মকর্তা আরিফ খান জানান, গত মৌসুমে জেলায় চায়ের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হলেও চলতি মৌসুমে চা বাগানগুলোতে কাঁচা চা পাতার উৎপাদন বৃদ্ধি পাওয়ায় লক্ষ্যমাত্রা পেরিয়ে যাবে।
চলতি মৌসুমে জেলায় ৩ হাজার ৯শ ৪০ হেক্টর সমতল জমিতে চায়ের চাষ হয়েছে। এ থেকে ১ কোটি ৫২ লাখ কেজি উন্নতমানের চা উৎপাদনের আশা করছেন চাষিরা।
র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) সাবেক মহাপরিচালক ও অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক ব্যারিস্টার মো. হারুন-অর রশীদ, তার স্ত্রী ফাতেহা পারভীন লুনা, মেয়ে ফাহমিদা ফারাহ ফাবিয়া ও নুসরাত যারীনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার আদেশ দিয়েছেন ঢাকার একটি আদালত।
গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো. সাব্বির ফয়েজ দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ আদেশ দেন বলে গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের বেঞ্চ সহকারী মো. রিয়াজ হোসেন।
তিনি আরও জানান, দুদকের পক্ষে আবেদনটি করেন সংস্থাটির উপসহকারী পরিচালক ইমরান আকন।
আবেদনে বলা হয়েছে, ব্যারিস্টার মো. হারুন-অর রশীদের বিরুদ্ধে এক হাজার কোটি টাকা অবৈধ সম্পদ অর্জন ও পাচারের অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে দুদকের
অনুসন্ধানকালে জানা গেছে যে হারুন এবং তার পরিবারের সদস্যরা দেশের ভেতর আত্মগোপনে রয়েছেন এবং যেকোন সময় দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে পারেন।
তারা বিদেশে পালিয়ে গেলে অনুসন্ধান কাজ ব্যাহত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বিধায় অভিযোগের সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে তাদের বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা একান্ত প্রয়োজন বলে আবেদনটি দাখিল করেছে দুদক।
জেমকন গ্রুপের পরিচালক আনিসেরও দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
এদিকে দুর্নীতি মামলা চলমান থাকায় জেমকন গ্রুপের পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী আনিসের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার আদেশ দিয়েছেন ঢাকার একটি আদালত। সেইসঙ্গে, তার ২০টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ ও বিভিন্ন স্থাবর সম্পত্তি জব্দের আদেশ ও স্থাবর সম্পত্তিগুলো পরিচালনার জন্য রিসিভার নিয়োগের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
উল্লেখ্য, জব্দ হওয়া সম্পত্তিগুলোর মধ্যে ঢাকা ও পঞ্চগড়ে অবস্থিত জমি ও ফ্ল্যাটবাবদ ৭ কোটি ২০ লাখ টাকার স্থাবর সম্পত্তি রয়েছে। আরও আছে বিভিন্ন কোম্পানিতে বিনিয়োগ করা ৮৪ কোটি ৮৯ লাখ টাকা।
গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো. সাব্বির ফয়েজ দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ আদেশ দেন বলে গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের বেঞ্চ সহকারী মো. রিয়াজ হোসেন।
সন্ত্রাসবিরোধী আইনে করা মামলায় সাবেক মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী ও সাংবাদিক মঞ্জুরুল আলমকে অন্তবর্তীকালীন জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট।
জামিন চেয়ে এই দুজনের করা পৃথক আবেদনের শুনানি নিয়ে বিচারপতি এ এস এম আবদুল মোবিন ও বিচারপতি মো. সগীর হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ বৃহস্পতিবার রুলসহ এ আদেশ দেন।
আদালতে লতিফ সিদ্দিকীর পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না ও ফজলুর রহমান এবং আইনজীবী এম আবদুল্লাহ আল হারুন ভূঁইয়া শুনানিতে ছিলেন।
মঞ্জুরুল আলমের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সারা হোসেন ও রমজান আলী শিকদার এবং আইনজীবী প্রিয়া আহসান চৌধুরী।
রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সুলতানা আক্তার রুবী।
হাইকোর্ট মঞ্জুরুল আলমকে অন্তবর্তীকালীন জামিন দিয়েছেন জানিয়ে আইনজীবী রমজান আলী শিকদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘ফলে তাঁর কারামুক্তিতে আপাতত বাধা নেই।’
লতিফ সিদ্দিকীর আইনজীবী এম আবদুল্লাহ আল হারুন ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, হাইকোর্ট রুল দিয়ে তার মক্কেলকে (লতিফ সিদ্দিকী) অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দিয়েছেন। এর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ কোনো উদ্যোগ না নিলে তার কারামুক্তিতে আইনগত কোনো বাধা নেই।
আটকের ১২ ঘণ্টার বেশি সময় পর গত ২৮ আগস্ট রাত পৌনে একটার দিকে আবদুল লতিফ সিদ্দিকী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন, সাংবাদিক মঞ্জুরুল আলমসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা করা হয়। রাজধানীর শাহবাগ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আমিরুল ইসলাম বাদী হয়ে মামলাটি করেন।
প্রসঙ্গত, গত ২৮ আগস্ট সকালে আবদুল লতিফ সিদ্দিকী, শেখ হাফিজুর রহমানসহ অন্যরা ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) গোলটেবিল আলোচনায় অংশ নিতে যান। ‘আমাদের মহান স্বাধীনতাযুদ্ধ এবং বাংলাদেশের সংবিধান’ শীর্ষক এই গোলটেবিল আলোচনার আয়োজক ছিল ‘মঞ্চ ৭১’ নামের একটি প্ল্যাটফর্ম।
আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বাংলাদেশের সংবিধানের অন্যতম প্রণেতা ও গণফোরামের ইমেরিটাস সভাপতি ড. কামাল হোসেনের নাম ছিল। তবে তিনি সেখানে ছিলেন না। সেদিন সকাল ১০টায় গোলটেবিল আলোচনা শুরুর কথা ছিল। তবে তা শুরু হয় বেলা ১১টায়।
আলোচনা সভায় প্রথমে বক্তব্য দেন শেখ হাফিজুর রহমান। শেখ হাফিজুর রহমানের বক্তব্য শেষ হওয়ার পরই মিছিল নিয়ে একদল ব্যক্তি ডিআরইউ মিলনায়তনে ঢোকেন। এ সময় তারা ‘জুলাইয়ের হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার’, ‘লীগ ধর, জেলে ভর’, ‘জুলাইয়ের যোদ্ধারা, এক হও লড়াই করো’ প্রভৃতি স্লোগান দেন।
একপর্যায়ে তারা গোলটেবিল আলোচনার ব্যানার ছিঁড়ে আলোচনায় অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের অবরুদ্ধ করে রাখেন। দুপুর সোয়া ১২টার দিকে পুলিশের (ডিএমপি) একটি দল এলে তাঁরা পুলিশের কাছে লতিফ সিদ্দিকী, শেখ হাফিজুর রহমান, সাংবাদিক মঞ্জুরুল আলমসহ অন্তত ১৬ জনকে তুলে দেন।
জিজ্ঞাসাবাদের নামে মারধর-নির্যাতনসহ হত্যাচেষ্টার অভিযোগে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তাসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে ঢাকার আদালতে মামলা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. হাসিবুজ্জামানের আদালতে নালিশি মামলার আবেদন করেন মো. জাহাঙ্গীর নামের এক ব্যক্তি। তিনি নিজেকে ‘জুলাই যোদ্ধা’ দাবি করেছেন।
আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে রাজধানীর শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) অভিযোগ তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেন আদালত। বাদীপক্ষের আইনজীবী ইলতুৎমিশ সওদাগর গণমাধ্যমকে এই তথ্য নিশ্চিত করেন।
মামলায় আসামি হিসেবে যাদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে, তাঁরা হলেন- সাইদুর রহমান শাহিদ (জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন), সাগর (জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন), ফাউন্ডেশনের সিনিয়র ভেরিফিকেশন অফিসার ইফতেখার হোসেন, কর্মকর্তা আফজালু রহমান সায়েম, এক্সিকিউটিভ মেম্বার সাবরিনা আফরোজ শ্রাবন্তী, সোনিয়া আক্তার লুবনা (নারায়ণগঞ্জ), ফাতেমা আফরিন পায়েল (জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন), ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তা আলিফ, মেহেদী হাসান প্রিন্স ও জাহিদ।
মামলার অভিযোগে বাদী বলেন, তিনি একজন ‘জুলাই যোদ্ধা’। চলতি বছরের ২৭ মে অনুদান চেয়ে দালিলিক প্রমাণ দাখিলের জন্য তিনি ফাউন্ডেশনের কার্যালয়ে যান। ফাউন্ডেশনে কর্মরত সাইদুরসহ অন্য আসামিরা তাকে আলোবিহীন রুমে নিয়ে যান। তাঁর আহত হওয়ায় ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। তিনি আওয়ামী লীগ ও পুলিশের গুলিতে গুলিবিদ্ধ হওয়ার কথা জানান। এ সময় তাকে মারধর করা হয়। আসামি সাইদুর পাইপ দিয়ে তাকে মারেন। একপর্যায়ে বাদী জ্ঞান হারান। পরবর্তী সময়ে জ্ঞান ফিরে এলে আসামিরা আবার তাকে মারধর শুরু করেন। বাদী ভুয়া জুলাই যোদ্ধা—এই কথা বলার জন্য চাপ দিতে থাকেন আসামিরা। আসামিরা জোর করে বাদীর হাত থেকে মোবাইল কেড়ে নেন। বিএনপি নেতার সঙ্গে ছবি দেখে তাকে আবার মারধর করতে থাকেন আসামিরা। এরপর জোর করে ডান হাতে একটি ইনজেকশন পুশ করে রাস্তায় অচেতন অবস্থা ফেলে দেন। পরবর্তী সময়ে মামলার বাদী অসুস্থ অবস্থায় উন্নত চিকিৎসা গ্রহণ করেন। এরপর আদালতে মামলা করলেন।
ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জে অভিযান চালিয়ে দুর্ধর্ষ ছিনতাইকারী রাজু হাওলাদারকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ভোর ৬ টার সময় নিজ বাড়ি হতে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তার কাছ থেকে ছিনতাইকৃত একটি মোটরসাইকেল, আইফোন, নগদ টাকা ও মালামাল উদ্ধার করা হয়।
জানা যায়, গত ৫ নভেম্বর ভোরে রাজু হাওলাদার তার সহযোগীদের নিয়ে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার কেরানীগঞ্জ চুনকুটিয়া এলাকায় এক পথচারীকে লক্ষ্য করে রামদা দিয়ে আঘাত করে মোটরসাইকেল, মোবাইল ও নগদ টাকা ছিনিয়ে নেয়। পরে আহত অবস্থায় ভুক্তভোগী থানায় অভিযোগ দিলে পুলিশ তৎপরতা শুরু করে।
ঢাকা জেলা পুলিশের পুলিশ সুপার আনিসুজ্জামান মমিনের নির্দেশনায় দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ওসি মো. সৈয়দ আক্তার হোসেনের সার্বিক তত্ত্বাবধানে অভিযান পরিচালনা করেন এসআই জাহাঙ্গীর আলম ও এএসআই একরামুল। অভিযানে সকালে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার খেজুরবাগ এলাকায় অবস্থানরত রাজুকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং তার কাছ থেকে ছিনতাইকৃত মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়।
গ্রেপ্তার রাজু হাওলাদার (২৬) মঠবাড়িয়া উপজেলার পিরোজপুর জেলার চর খেয়ারবাগ গ্রামের ফিরোজ হাওলাদারের ছেলে। বর্তমানে সে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের খেজুরবাগ এলাকায় বসবাস করছিল।
পুলিশ জানায়, রাজু একজন চিহ্নিত ছিনতাইকারী। তার বিরুদ্ধে পূর্বেও একাধিক মামলা রয়েছে। নতুন ঘটনায়ও দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের হয়েছে।
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ওসি সৈয়দ আক্তার হোসেন জানান, গ্রেপ্তার রাজু দীর্ঘদিন ধরে, চুনকুটিয়া, খেজুরবাগ, ঝিলমিল আবাসন প্রকল্প, ঢাকা-মাওয়া মহাসড়ক ও এর আসপাশের এলাকায় ছিনতাই করে আসছিল। তাকে জিজ্ঞাসাবাদে আরও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। তার সহযোগীদেরও শনাক্তের চেষ্টা চলছে।
টাঙ্গাইলের মধুপুরে গরীব ও দুস্থদের বিনামূল্যে সেনাবাহিনীর চক্ষু চিকিৎসাসেবা ক্যাম্প অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে এলাকার হত দরিদ্র্য দুস্থ নারী পুরুষ চক্ষু রোগীরা বিনামূল্যে তাদের চক্ষু চিকিৎসা পেয়েছে। বৃহস্পতিবার মধুপুর উপজেলার কাকরাইদ বিএডিসি কৃষি বীজ উৎপাদন খামারের প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১৯ পদাতিক ডিভিশনের উদ্যোগে স্থানীয় রোগীদের বিনামূল্যে এ দিনব্যাপী চক্ষু চিকিৎসাসেবা মেডিকেল ক্যাম্পেইনের আয়োজন করে।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১৯ পদাতিক ডিভিশনের অধিনস্থ ৯৮ সংমিশ্রিত ব্রিগেডের তত্ত্ববাবধানে ৩৭ এডি রেজিমেন্ট এর সার্বিক ব্যবস্থাপনায় মধুপুর বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) এলাকায় চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দ্বারা বিনামূল্যে মেডিকেল ক্যাম্পেইন পরিচালনা করে। এই মেডিকেল ক্যাম্পেইনে মোট দেড় শতাধিক গরীব ও দুস্থ জনসাধারণকে বিনামূল্যে চক্ষু চিকিৎসাসেবা ও ওষুধ প্রদান করে। পাশাপাশি বিভিন্ন রোগীকে তাদের প্রয়োজন মতো চশমাও প্রদান করা হয়।
সেবা গ্রহণ করতে আসা রোগী রওশন আরা বেগম (৫০) জানান, আমি এর আগে ময়মনসিংহে আমার একটি চোখ দেখিয়েছিলাম, আজ এখানে আর্মির ডাক্তার দেখালাম। আমার মনে হয় তাদের চেয়ে এখানকার চিকিৎসা ভাল লাগছে।
কাকরাইদ গ্রামের শান্তি বেগম (৫০) জানান, তিনি সকালে এসেছে চিকিৎসাসেবা নিতে। সে দূরে দেখে কিন্তু কাছে কম দেখে। চুলকায় চোখে পানি পড়ে এ জন্য তিনি এসেছে।
আলী আজগর ৪২ জানান, তার বাড়ি কাকরাইদ গ্রামে। চোখে কম দেখেন। চোখে পানি আসে। ডাক্তার দেখাতে পেরে সে খুব খুশি।
এ ধরনের বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা প্রদানের মাধ্যমে ১৯ পদাতিক ডিভিশন এ অঞ্চলের গরিব ও দুস্থ জনসাধারণের পাশে দাঁড়ানোসহ জনগণের সার্বিক কল্যাণে সক্রিয় ভূমিকা রাখছে বলে মনে করছে স্থানীয়রা। এরূপ ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পেইন অব্যাহত থাকবে বলে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে আশ্বস্ত করা হয়।
দিনব্যাপী এ ক্যাম্পে মধুপুরের বিভিন্ন গ্রামের প্রায় দেড় শতাধিক চোখের রোগী সেবা নেন।