কক্সবাজারের কুতুবদিয়া এলাকা দিয়ে ঘূর্ণিঝড় ‘হামুন’-এর অগ্রভাগ বাংলাদেশ উপকূল অতিক্রম শুরু করেছে। এটি আরও উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে কুতুবদিয়ার কাছ দিয়ে পরবর্তী ৮ থেকে ১০ ঘণ্টার মধ্যে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার উপকূল অতিক্রম সম্পন্ন করতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে উপকূল অতিক্রম শুরু করে হামুন। আবহাওয়াবিদ মো. মনোয়ার হোসেন স্বাক্ষরিত আবহাওয়ার ১৩ নম্বর বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
আবহাওয়ার ১৩ নম্বর বিশেষ বিজ্ঞপ্তির বরাত দিয়ে চট্টগ্রাম আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তা মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়ার আকারে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড়কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায়
সাগর খুবই উত্তাল রয়েছে। চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ৭ নম্বর বিপৎসংকেত এবং মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৫ নম্বর বিপৎসংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।’
তিনি জানান, উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ৭ নম্বর বিপৎসংকেতের আওতায় থাকবে। প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোর নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৩-৫ ফুট অধিক উচ্চতার বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।
প্রবল ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাবে খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে। ভারী বর্ষণের প্রভাবে কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলের কোথাও কোথাও ভূমিধস হতে পারে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
এদিকে, ঘূর্ণিঝড়টি দুর্বল হয়ে স্থলভাগে উঠে আসতে থাকায় কক্সবাজার, চট্টগ্রাম ও এর আশপাশের জেলাগুলোতে তুমুল বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে। তবে গতকাল রাত ১০টা পর্যন্ত রাজধানীতে এর প্রভাব তেমন দেখা যায়নি।
ঘূর্ণিঝড়ের গতিবেগ বিশ্লেষণ করে আবহাওয়া অফিস জানায়, হামুনের প্রভাবে উপকূলের ১৫টি জেলায় স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েক ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হতে পারে। এসব জেলায় সরকারি ছুটি বাতিল করা হয়েছে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান মঙ্গলবার মন্ত্রণালয়ে জরুরি বৈঠক করেন। এ সময় বরগুনা, ভোলা, সন্দ্বীপ, বরিশাল, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুরসহ ১০টি জেলাকে ঝুঁকিপূর্ণ উল্লেখ করে এসব দুর্গত এলাকার ১৫ লাখ মানুষকে মঙ্গলবার রাত ৮টার মধ্যে আশ্রয়কেন্দ্রে নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
ঘূর্ণিঝড় হামুনের প্রভাবে অতি ভারী বৃষ্টিতে ১৫ জেলায় জলোচ্ছ্বাস, ৫ জেলায় ভূমিধসের শঙ্কা রয়েছে। এ সময় কমপক্ষে ৫ ফুটের বেশি উচ্চতায় জলোচ্ছ্বাস হতে পারে বলে জানায় আবহাওয়া অফিস।
সেই সঙ্গে সারা দেশে বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। সাগর বিক্ষুব্ধ থাকায় গতকালই পায়রা ও চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরে চার নম্বর নামিয়ে ৭ নম্বর এবং কক্সবাজারে ৬ ও মোংলায় ৫ নম্বর বিপৎসংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি বেড়েছে নদীবন্দরের সংকেতও।
এদিকে উপকূলীয় জেলা পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরগুনা, চট্টগ্রাম, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, ভোলা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোও ৭ নম্বর বিপৎসংকেতের আওতায় থাকবে।
ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রবর্তী অংশের প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ ভারী (৪৪ থেকে ৮৮ মিলিমিটার) থেকে অতি ভারী (৮৯ মিলিমিটার বা তারও বেশি) বর্ষণ অব্যাহত থাকতে পারে।
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে ভারী (৪৪-৮৮ মি.মি.) থেকে অতি ভারী (১৮৯ মি.মি.) বর্ষণ হতে পারে। এদিকে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
ফায়ার সার্ভিসের প্রস্তুতি
ঘূর্ণিঝড় হামুন মোকাবিলায় সার্বিকভাবে প্রস্তুতি নিয়েছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর। খোলা হয়েছে মরিটরিং সেল। দুর্যোগপ্রবণ এলাকার জনসাধারণকে সচেতন, সতর্ক করছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপকূলবর্তী ফায়ার স্টেশনগুলো। এ ছাড়াও ঝড় চলাকালে ও পরবর্তী সময়ে যেকোনো জরুরি প্রয়োজনে ফায়ার সার্ভিসের নিকটবর্তী ফায়ার স্টেশন ছাড়াও কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষের হটলাইন ও কেন্দ্রীয় মনিটরিং সেলের মোবাইল নম্বরে ফোন করেও জরুরি সেবা গ্রহণ করা যাবে।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ফায়ার সার্ভিসের গণমাধ্যম শাখা থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ফায়ার সার্ভিসের কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষের হটলাইন নম্বর হচ্ছে ১৬১৬৩ ও কেন্দ্রীয় মনিটরিং সেলের মোবাইল নম্বর হচ্ছে ০১৭৩০৩৩৬৬৯৯।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, মঙ্গলবার সকাল থেকে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগের উপকূলবর্তী জেলাগুলোর সব ফায়ার স্টেশন থেকে গণসংযোগ ও মাইকিংয়ের মাধ্যমে এই প্রচারণার কাজ চালানো হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড়-পূর্ব, ঘূর্ণিঝড় সময়কালীন এবং ঘূর্ণিঝড়-পরবর্তী সব কাজ সমন্বয় করার জন্য কেন্দ্রীয়ভাবে সদর দপ্তর ঢাকায় খোলা হয়েছে মনিটরিং সেল। মনিটরিং সেল থেকে উপকূলবর্তী এলাকার সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় সার্বিকভাবে প্রস্তুত রয়েছে ফায়ার সার্ভিস।
আরও জানানো হয়, দুর্যোগপ্রবণ এলাকার সব ফায়ার স্টেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করে স্ট্যান্ডবাই ডিউটিতে রাখা হয়েছে। দুর্যোগপ্রবণ এলাকার জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলায় স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় রেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। প্রতিটি ফায়ার স্টেশনে সার্চ অ্যান্ড রেসকিউ টিম, প্রাথমিক চিকিৎসাকারী দল এবং একটি করে ওয়াটার রেসকিউ টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এসব এলাকায় ফায়ার সার্ভিসের প্রশিক্ষিত ভলান্টিয়ারদেরও প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। প্রয়োজনীয় সংখ্যক অগ্নিনির্বাপণ ও উদ্ধার সরঞ্জামসহ অ্যাম্বুলেন্স, চেইন স, হ্যান্ড স, রোটারি রেসকিউ স, স্প্রেডার, মেগাফোন, র্যামজ্যাক বা এয়ার লিফটিং ব্যাগ, ফাস্ট এইড বক্সসহ যাবতীয় সরঞ্জাম প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
ফায়ার সার্ভিস জানায়, ঘূর্ণিঝড়-পরবর্তী অনুসন্ধান ও উদ্ধারকাজসহ রাস্তাঘাট যান চলাচল উপযোগী করার কাজে ফায়ার সার্ভিস নিয়োজিত থাকবে। এসব এলাকায় জীবন ও মালামাল সুরক্ষা সংক্রান্ত যেকোনো কাজে দিবা-রাত্রি ২৪ ঘণ্টা ফায়ার সার্ভিসের সেবা গ্রহণ করা যাবে। সব আশ্রয়কেন্দ্রের পাশাপাশি প্রয়োজনে উপকূলবর্তী ফায়ার স্টেশনগুলোতেও জনগণ আশ্রয় নিতে পারবেন। ফায়ার সার্ভিসের কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষসহ চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ সারাক্ষণ সংবাদ সংগ্রহে নিয়োজিত থাকবে।
চট্টগ্রামে ১১৪ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আশ্রয়কেন্দ্র
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে (চসিক) দুর্যোগপূর্ণ এলাকাগুলোতে ১১৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ ছাড়াও ঘূর্ণিঝড়ে নগরবাসীকে তথ্য সরবরাহ ও জরুরি সেবা দিতে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ চালু করেছে চসিক।
মঙ্গলবার নগরীর দামপাড়া এলাকার বিদ্যুৎ উপবিভাগের কার্যালয়ে এক জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
এ সময় প্রবল ঘূর্ণিঝড় হামুনের বিপদ এড়াতে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় থাকা জনগণকে দ্রুত নিকটস্থ আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী।
চসিকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আজিজ আহমেদ জানান, দুর্যোগপূর্ণ এলাকায় সিটি করপোরেশনের ৮১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ মোট ১১৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে আশ্রয়কেন্দ্রে হিসেবে ব্যবহারের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘দুপুর থেকে মেয়র মহোদয়ের নির্দেশে রেডক্রিসেন্টের সহযোগিতায় চসিকের কর্মীরা উপকূলীয় ওয়ার্ডগুলোতে মাইকিং করেছে। দুর্গত ব্যক্তিদের জন্য ত্রাণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ ছাড়াও ম্যাজিস্ট্রেট রেজাউল করিমের নেতৃত্বে কাজ করছে রেসকিউ টিম।’
দুর্যোগ না কাটা পর্যন্ত কন্ট্রেল রুমে ২৪ ঘণ্টা ০২৩৩৩৩৫৩৬৪৯ নম্বরে যোগাযোগ করলে সেবা দেয়া হবে হবে বলে জানান তিনি।
সভায় চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলামসহ চসিকের বিভাগীয় সভাপতিরা উপস্থিত ছিলেন।
চট্টগ্রামের উপকূলীয় এলাকার লোকজনকে নিরাপদে সরিয়ে নিতে মাইকিং করেছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। পাশাপাশি প্রস্তুত রাখা হয়েছে আশ্রয়কেন্দ্র।
চট্টগ্রাম জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. ছাইফুল্লাহ মজুমদার বলেন, দুর্যোগ মোকাবিলায় উপকূলবর্তী এলাকার মানুষকে সচেতন করতে মাইকিং কার্যক্রম চলমান রাখা হয়েছে। ইতোমধ্যে জেলায় ৩৭৬টি আশ্রয়কেন্দ্র চালু আছে। আরও আশ্রয়কেন্দ্র চালু করা হচ্ছে।
পটুয়াখালীতে ৭০৩টি আশ্রয়কেন্দ্র
পটুয়াখালী প্রতিনিধি জানান, ঘূর্ণিঝড় হামুনের প্রভাবে গতকাল সারা দিনই পটুয়াখালীসহ উপকূলজুড়ে মেঘাচ্ছন্ন আকাশ, গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি, থেমে থেমে দমকা হওয়া বইছিল। এদিকে ৭নং বিপৎসংকেত থাকায় সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেয় বিআইডব্লিউটিএ। পায়রা সমুদ্রবন্দর কর্তৃপক্ষ তাদের সব কার্যক্রম বন্ধ রেখে কার্গো জাহাজসহ সব সরঞ্জাম নিরাপদে সরিয়ে নেয়ার নির্দেশনা দেয়। দুর্যোগ মোকাবিলায় সভা করে চারটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসক জানান, দুর্যোগ মোকাবিলায় ৭০৩টি সাইক্লোন শেল্টার, ৩৫টি মুজিব কিল্লা, ৬০০ টন চাল ও ১০ লাখ নগদ টাকা প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
স্বাস্থ্য বিভাগ জানায়, জেলায় মোট ৭৬টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণ স্যালাইন, ওষুধ ও পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট তাদের কাছে সংরক্ষিত রয়েছে।
এদিকে, পরিস্থিতি ক্রমশ খারাপ হওয়ায় কুয়াকাটায় আসা পর্যটকরা কুয়াকাটা ছাড়তে শুরু করেছেন।
আবাসিক হোটেল সি গোল্ড রিসোর্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আল-আমিন মুসল্লি বলেন, ঘূর্ণিঝড় হামুনের প্রভাবে পর্যটকরা কুয়াকাটা ছাড়তে শুরু করেছেন। আবহাওয়া এমন থাকলে এ সপ্তাহে পর্যটকদের আনাগোনা থাকবে না।
কুয়াকাটা ট্যুরিস্ট পুলিশ জোনের পরিদর্শক হাসনাইন পারভেজ বলেন, ‘আমরা সবসময় আগত পর্যটকদের নিরাপত্তায় কাজ করছি। গতকাল থেকেই আমরা মাইকিং করছি এবং তাদের নিরাপদে থাকতে অনুরোধ করছি।’
কক্সবাজারে মাছ ধরার ট্রলারগুলো নিরাপদ আশ্রয়ে
কক্সবাজার প্রতিনিধি জানান, ঘূর্ণিঝড় হামুনের প্রভাবে উত্তাল ছিল কক্সবাজারে সমুদ্র। বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার রিজিয়নের সহকারী পুলিশ সুপার মিজানুজ্জামান বলেন, ‘বিপৎসংকেতের ব্যাপারে পর্যটকদের সচেতন করা হচ্ছে। পাশাপাশি মাইকিং ও টহল জোরদার রয়েছে। আমাদের একাধিক টিম মাঠে রয়েছে।’
মোংলায় সকালে প্রভাব পড়েনি, বিকেলে সাগর উত্তাল
মোংলা প্রতিনিধি জানান, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় হামুনের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা বাগেরহাটে মঙ্গলবার সকাল থেকে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। সকাল থেকেই আকাশ মেঘাচ্ছন্ন রয়েছে। মোংলা বন্দরে ৫ নম্বর সংকেত চললেও বন্দরে থাকা ১১টি দেশি-বিদেশি জাহাজের পণ্য ওঠানামার কাজ স্বাভাবিক ছিল। তবে সাগর উত্তাল থাকায় সব মাছ ধরার ট্রলারকে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়।
নোয়াখালীর সাথে সারা দেশের নৌ যোগাযোগ বন্ধ
নোয়াখালী প্রতিনিধি জানান, ঘূর্ণিঝড় হামুনের প্রভাবে সাগর উত্তাল থাকায় নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার সঙ্গে জেলা সদরসহ সারা দেশের নৌ-যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।
সোমবার দুপুর থেকে উপজেলা প্রশাসনের নির্দেশে হাতিয়া-ঢাকা লঞ্চ চলাচল, হাতিয়া-চট্টগ্রাম স্টিমার চলাচল ও হাতিয়া-বয়ারচর-চেয়ারম্যান ঘাটে নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে।
হাতিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুরাইয়া আক্তার লাকী বলেন, ঘূর্ণিঝড় হামুনের কারণে উপকূলীয় এলাকায় ৭ নম্বর সংকেত চলছে। বৈরী আবহাওয়ার কারণে সাগর ও নদী উত্তাল থাকায় গতকাল মঙ্গলবার দুপুর থেকে হাতিয়ার সঙ্গে সারা দেশের সব ধরনের নৌযান চলাচল ও যাত্রীবাহী ট্রলার চলাচল বন্ধ রয়েছে। এ ছাড়া মাছ ধরার নৌকাগুলোকে সতর্কতার সঙ্গে তীরবর্তী এলাকায় থাকতে বলা হয়েছে।
লক্ষ্মীপুরে নৌ চলাচলে নিষেধাজ্ঞা
লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি জানান, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় হামুনের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা লক্ষ্মীপুরকে ৭ নম্বর বিপৎসংকেতের আওতায় এনেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এতে লক্ষ্মীপুর-ভোলা-বরিশাল নৌরুটে লঞ্চ চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে।
পাশাপাশি লক্ষ্মীপুর-ভোলা রুটের ফেরি চলাচলও বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত লঞ্চ ও ফেরি চলাচল বন্ধ থাকবে। এ ছাড়া লক্ষ্মীপুরের মজুচৌধুরীরহাট ঘাট থেকে স্পিডবোটসহ অন্যান্য নৌযান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে জেলা প্রশাসন।
বরগুনায় ৬৪২টি আশ্রয়কেন্দ্র
বরগুনা প্রতিনিধি জানান, বরগুনায় ঘূর্ণিঝড় ‘হামুন’ মোকাবিলায় জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ সময় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক রফিকুল ইসলাম ঘূর্ণিঝড় ‘হামুন’ মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানান। তিনি আরও জানান, জেলায় ৬৪২টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে। প্রায় তিন লাখ মানুষ এতে আশ্রয় নিতে পারবেন।
সুদানে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে ড্রোন হামলায় নিহত ছয় বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীর পরিচয় প্রকাশ করেছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)। এরা হলেন করপোরাল মো. মাসুদ রানা (নাটোর), সৈনিক মো. মমিনুল ইসলাম (কুড়িগ্রাম), সৈনিক শামীম রেজা (রাজবাড়ী), সৈনিক শান্ত মন্ডল (কুড়িগ্রাম), মেস ওয়েটার মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম (কিশোরগঞ্জ) ও লন্ড্রি কর্মী মো. সবুজ মিয়া (গাইবান্ধা)।
এদের পরিবারে চলছে শোকের মাতম। কান্নায় ভেঙে পড়েছে পরিবারের সদস্যরা। কেউ সন্তান, কেউ বাবা, কেউ ভাই হারিয়ে পাগলপ্রায়।
আহত আটজন হলেন– লেফটেন্যান্ট কর্নেল খন্দকার খালেকুজজামান (কুষ্টিয়া), সার্জেন্ট মো. মোস্তাকিম হোসেন (দিনাজপুর), করপোরাল আফরোজা পারভীন ইতি (ঢাকা), ল্যান্স করপোরাল মহিবুল ইসলাম (বরগুনা), সৈনিক মো. মেজবাউল কবির (কুড়িগ্রাম), সৈনিক উম্মে হানী আক্তার (রংপুর), সৈনিক চুমকি আক্তার (মানিকগঞ্জ) ও সৈনিক মো. মানাজির আহসান (নোয়াখালী)। রোববার (১৪ ডিসেম্বর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আইএসপিআর হতাহত ব্যক্তিদের নাম-পরিচয় ও বিস্তারিত তথ্য জানায়।
আইএসপিআর জানায়, কাদুগলি লজিস্টিকস বেসে গত শনিবার স্থানীয় সময় বিকেল ৩টা ৪০ থেকে ৩টা ৫০ মিনিটের মধ্যে এই হামলা চালানো হয়। একটি বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র গোষ্ঠী এই ড্রোন হামলা চালায়। এ সময় শান্তিরক্ষীরা বেসে দায়িত্ব পালন করছিলেন।
আইএসপিআর আরও জানিয়েছে, আহত আটজনই চিকিৎসাধীন। তাদের মধ্যে সৈনিক মো. মেজবাউল কবিরের অবস্থা আশঙ্কাজনক ছিল, তবে সফল অস্ত্রোপচারের পর তিনি নিবিড় পর্যবেক্ষণে আছেন। বাকি সাতজনকে হেলিকপ্টারে করে উন্নত চিকিৎসার জন্য সরিয়ে নেওয়া হয়েছে এবং তারা শঙ্কামুক্ত।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এই বর্বরোচিত সন্ত্রাসী হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বিশ্বশান্তি রক্ষায় এই শান্তিরক্ষীদের আত্মত্যাগ বাংলাদেশের অঙ্গীকারের এক গর্বিত সাক্ষ্য হয়ে থাকবে। নিহতদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা এবং আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেছে সেনাবাহিনী।
এদিকে, সুদানে নিহতদের গ্রামের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম।
কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, সুদানে নিহত ছয় শান্তিরক্ষীর একজন জাহাঙ্গীর আলম (৩০)। তিনি কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার জাঙ্গালিয়া ইউনিয়নের তারাকান্দি গ্রামের আকন্দ বাড়ির হযরত আলীর ছেলে। তিনি সেনাবাহিনীর মেস ওয়েটার পদে কর্মরত ছিলেন। তার মৃত্যুতে তারাকান্দি গ্রামে চলছে শোকের মাতম। গত ৭ নভেম্বর শান্তিরক্ষা মিশনে অংশ নিতে সুদানে যান জাহাঙ্গীর।
পরিবার জানায়, স্ত্রী আর তিন বছরের একমাত্র ছেলে ইরফানকে রেখে দেশ ছেড়েছিলেন জাহাঙ্গীর। বাবার মৃত্যুর খবর শুনে বাড়ির উঠোনজুড়ে শুধু চলছে কান্না আর হাহাকার। বাবার আদর কী, তা বোঝার আগেই চিরতরে পিতৃহারা হলো ছোট্ট ইরফান।
জানা গেছে, তিন ভাইয়ের মধ্যে জাহাঙ্গীর আলম ছিলেন মেজ । তার বড় ভাই মো. মোস্তফা প্রবাসী এবং ছোট ভাই মো. শাহিন মিয়া বাড়িতে কৃষিকাজ করেন।
গাইবান্ধা প্রতিনিধি জানান, সুদানে নিহত শান্তিরক্ষীর একজন গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার মো. সবুজ মিয়া। তিনি ওই গ্রামের মৃত হাবিবুর রহমান ও ছকিনা বেগমের ছেলে। তার মৃত্যুর খবরে গ্রামে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। পরিবার, স্বজন ও গ্রামবাসীর কান্নায় ভারি হয়ে ওঠেছে পরিবেশ।
পরিবার জানায়, মাত্র দুই বছর বয়সে বাবাকে হারান সবুজ। দরিদ্র পরিবারের সন্তান সবুজ অভাব অনটনের মধ্যে বড় হন। গত ৭ নভেম্বর জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে যোগ দিতে সুদানে যান সবুজ। সেখানে তিনি অসামরিক লন্ড্রি কর্মচারী হিসেবে কাজ করছিলেন। সবুজের মৃত্যুর খবরে তার মা ছকিনা বেগম ও স্ত্রী নুপুর আক্তার বারবার জ্ঞান হারিয়ে ফেলছেন।
নুপুর আক্তার কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, সুদানে যাওয়ার পর শনিবার বিকালে কয়েক মিনিটের জন্য ওর (সবুজ) সঙ্গে কথা হয়েছিল। এরপর রাত ১২টার দিকে খবর পাই ও আর নেই।
ছেলে হারানোর খবরে বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন মা ছকিনা বেগম। বিলাপ করত করতে তিনি বলছিলেন, বাবা হামার একমাত্র বুকের ধন আছিল। গত মাসেই সুদান গেছে। ফোনে কথা কয়া খোঁজ নিত। এখন হামার খোঁজ নেবে কে? হামার বাবার লাশ বাড়িতে চাই। ওকে বাড়িতে আনলে হামার আত্মা শান্তি পাবে।
নাটোর প্রতিনিধি জানান, সুদানে নিহত সেনা সদস্য নাটোরের লালপুর উপজেলার দুর্গম বোয়ালিয়াপাড়া গ্রামে করপোরাল মাসুদ রানার পরিবারে চলছে শোকের মাতম। কান্না থামছে না স্ত্রী আসমাউল হুসনা আখি ও মা মর্জিনা বেগমের। মাসুদের ৮ বছরের একমাত্র কন্যা মাগফিরাতুল মাওয়া আমিনাও স্তব্ধ হয়ে আছে। প্রায় ১৮ বছর ধরে সেনাবাহিনীতে চাকরি করছেন মাসুদ। জাতিসংঘ শান্তরক্ষী মিশনে যোগ দিতে মাত্র এক মাস ৭ দিন আগে সুদানে গিয়েছিলেন তিনি।
কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি জানান, সুদানে নিহত সেনাবহিনীর সদস্য শান্ত মন্ডল ও মমিনুল ইসলাম নিহতের ঘটনায় তাদের পরিবারে চলছে শোকের মাতম। কান্নায় ভেঙে পড়েছে পরিবারের সদস্যরা।
রাজারহাট উপজেলার ছাট মাধাই গ্রামের মন্ডলপাড়ার সৈনিক পরিবারে বাসিন্দা মৃত সাবেক সেনা সদস্য নুর ইসলাম মন্ডল ও সাহেরা বেগমের ছোট ছেলে শান্ত মন্ডল। এছাড়াও তার বড় ভাই সোহাগ মন্ডল তিনিও সেনাবাহিনীর একজন সদস্য।
শান্ত ২০১৮ সালে সেনাবাহিনীতে সৈনিক পদে যোগ দেন। গত নভেম্বর শান্তি মিশনে সুদানে যান। সেখানে বিদ্রোহীদের বোমার আঘাতে প্রাণ হারান তিনি। ছেলের মরদেহ একনজর দেখতে আকুতি জানান তার মা ও প্রতিবেশীরা।
অপরদিকে বীর শহীদ সেনাসদস্য মমিনুল ইসলামের বাড়ি জেলার উলিপুর উপজেলার উত্তর পান্ডুল গ্রামে। সেখানেও চলছে শোকের মাতম।
কালুখালী (রাজবাড়ী) সংবাদদাতা জানান, সুদানে নিহত সৈনিক শামীম রেজার গ্রামের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। রোববার (১৪ ডিসেম্বর) দুপুরে মৃগী ইউনিয়নের হোগলাডাঙ্গি গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির সামনে বসে আহাজারি করছেন বাবা আলম ফকির। স্বজন ও প্রতিবেশীরা তাকে শান্ত করার চেষ্টা করছেন।
৩ ভাই এক বোনের মধ্যে শামীম সবার বড়। মেজ ভাই সোহেল ফকির সৌদি আরব প্রবাসী। সেজ ভাই সোহান বেকার, থাকেন বাড়িতে। একমাত্র বোন মরিয়ম খাতুন মাদ্রাসায় পড়েন।
শামীমের বাবা আলম ফকির জানান, তিনি কৃষিকাজ করে শামীমকে লেখাপড়া শিখিয়েছেন। ৮ বছর আগে সেনাবাহিনীতে যোগ দেন শামীম। গত ৭ নভেম্বর তিনি সুদানে যান।
তিনি বলেন, সর্বশেষ শুক্রবার আমার ছেলের সঙ্গে মোবাইল ফোনে ভিডিও কলে কথা হয়। ছেলে জানায়, সে সুস্থ আছে। বলল, আব্বু আমি ডিউটিতে যাবো দোয়া করো। কিন্তু ডিউটিতে গিয়ে আর ফিরলোনা ছেলেটা। গত শনিবার রাত ১২টার দিকে আমরা খবর পাই আমার ছেলের মৃত্যু হয়েছে।
ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদিকে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় সন্দেহভাজন ফয়সাল করিম মাসুদের স্ত্রীসহ আরও তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। রোববার (১৪ ডিসেম্বর) রাতে নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয় বলে এক বার্তায় জানিয়েছে পুলিশের বিশেষ এই ইউনিট। গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন ফয়সালের স্ত্রী সামিয়া, তার শ্যালক শিপু ও বান্ধবী মারিয়া।
র্যাবের মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক ইন্তেখাব চৌধুরী জানান, সামিয়া ও শিপুকে নারায়ণগঞ্জ থেকে এবং মারিয়াকে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি বলেন, গত শুক্রবার হাদিকে গুলির ঘটনার আগে ও পরে ফয়সালের সঙ্গে তাদের ফোনে ঘন ঘন যোগাযোগের তথ্য পাওয়া গেছে।
এ নিয়ে এ ঘটনায় র্যাব মোট চারজনকে গ্রেপ্তারের তথ্য জানিয়েছে। এর আগে গুলির সময় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের মালিক আব্দুল হান্নানকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে পুলিশ তিন দিনের রিমান্ডে নেয়।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরদিন গত শুক্রবার দুপুরে ঢাকার বিজয়নগর এলাকায় চলন্ত মোটরসাইকেল থেকে করা গুলিতে গুরুতর আহত হন রিকশায় থাকা ওসমান হাদি। তাকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে অস্ত্রোপচারের পর তাকে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। বর্তমানে তিনি এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। আজ তাকে সিংগাপুরে নেওয়া হবে।
যে বয়সে সহপাঠীদের সঙ্গে বিদ্যালয়ের পথে হাঁটার কথা, সেই বয়সেই হাসপাতালের বিছানায় অসহ্য যন্ত্রণায় দিন কাটছে কিশোরী মৌমিতা জুঁইয়ের। ডান পায়ের হাড়ের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে গত কয়েক দিন ধরে তীব্র ব্যথায় ছটফট করছে সে। যন্ত্রণার মাত্রা এতটাই বেড়েছে যে চিকিৎসকদের পরামর্শে গত ৩ দিন ধরে মরফিন দিয়ে তাকে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছে।
বরিশাল কালেক্টরেট স্কুল অ্যান্ড কলেজের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী জুঁই চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় সারকোমা (রাইট টিবিয়া) নামের জটিল ক্যান্সারে আক্রান্ত। বর্তমানে সে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, আগামী তিন থেকে চার দিনের মধ্যে তাকে জাতীয় ক্যান্সার ইনস্টিটিউটসহ কোনো বিশেষায়িত ক্যান্সার হাসপাতালে ভর্তি করানো জরুরি।
জুঁই বরিশালের প্রবীণ সাংবাদিক কে এম মনিরুল আলম ওরফে স্বপন খন্দকারের মেয়ে। তিনি একসময় দৈনিক যায়যায়দিন ও দৈনিক মানবজমিনের বরিশাল প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেছেন। বর্তমানে তিনি আজকের পরিবর্তন নামে একটি স্থানীয় দৈনিকে বিশেষ প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত।
চিকিৎসকদের মতে, জুঁইকে সুস্থ করে তুলতে প্রয়োজন জটিল অস্ত্রোপচার। অস্ত্রোপচার, পরবর্তী চিকিৎসা, নিয়মিত ফলোআপ ও আনুষঙ্গিক ব্যয় মিলিয়ে প্রাথমিকভাবে অন্তত ১০ লাখ টাকার বেশি অর্থ প্রয়োজন হতে পারে। এই বিপুল ব্যয় বহন করা পরিবারের পক্ষে একেবারেই সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন জুঁইয়ের বাবা মনিরুল আলম।
মেধাবী শিক্ষার্থী জুঁই পড়াশোনার পাশাপাশি আবৃত্তি ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডেও ছিল সক্রিয়। প্রাণবন্ত উপস্থাপনায় সে বরাবরই শিক্ষক ও সহপাঠীদের নজর কাড়ত। আগামী ২১ ডিসেম্বর তার জুনিয়র বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার কথা ছিল, কিন্তু হঠাৎ এই মরণব্যাধি তার সব স্বপ্নকে অনিশ্চয়তার মুখে ঠেলে দিয়েছে।
এ অবস্থায় জুঁইয়ের চিকিৎসার জন্য আর্থিক সহায়তার আহ্বান জানিয়েছেন সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের নেতারা। তারা বলেন, সমাজের সবাই এগিয়ে এলে এই মেধাবী কিশোরী নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখতে পারবে।
সাংস্কৃতিক সংগঠক সৈয়দ দুলাল বলেন,অত্যন্ত মেধাবী ও প্রাণবন্ত এই মেয়েটির চিকিৎসা ব্যয় পরিবারটির পক্ষে বহন করা সম্ভব নয়। সম্মিলিত সহায়তা ছাড়া তার সুস্থ হয়ে ওঠা কঠিন।
মানিকগঞ্জের ঘিওরে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সারবোঝাই একটি ট্রাক উল্টে ইছামতি নদীতে পড়ে গেছে। এতে প্রায় ছয় লক্ষাধিক টাকার সার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। রোববার (১৪ ডিসেম্বর) সকাল ৮টার দিকে উপজেলার ঘিওর বাজার সংলগ্ন কুস্তা বন্দর এলাকায় ইছামতি নদীতে এ দুর্ঘটনা ঘটে। ট্রাকটিতে প্রায় সাড়ে পাঁচ শতাধিক বস্তা বিভিন্ন প্রকারের (টিএসপি, ডিএপি) সার বোঝাই ছিল।
দুর্ঘটনায় ট্রাকের চালক ও হেলপার সামান্য আহত হলেও বড় ধরনের কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
ঘিওরের ক্ষতিগ্রস্ত সার ব্যবসায়ী ওয়াজেদ আলী অভিযোগ করে জানান, নারায়ণগঞ্জ থেকে ঘিওর ফুলহারা বাজারের ডিলারদের জন্য সার নিয়ে ট্রাকটি ঘিওর বাজারের উদ্দেশে আসছিল। তবে চালক মূল সড়ক ব্যবহার না করে ভুলবশত একটি ঝুঁকিপূর্ণ রাস্তা দিয়ে বাজারে প্রবেশের চেষ্টা করলে ট্রাকটির নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সরাসরি নদীতে পড়ে যায়। তিনি চালকের ‘খামখেয়ালি’ আচরণকেই দুর্ঘটনার জন্য দায়ী করেন।
স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শী আশিষ, আবুল হোসেন, জবেদ আলী জানান, ঘিওর কুস্তা বন্দর গরুহাট সংলগ্ন রাস্তাটি দীর্ঘদিন ধরেই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। সাধারণত এ পথে বড় যানবাহন চলাচল করে না। সকালে হঠাৎ করে সারবোঝাই ট্রাকটি ওই রাস্তায় ঢুকতেই দুর্ঘটনাটি ঘটে।
ঘিওর থানার ওসি মীর মাহাবুব ঘটনাস্থল পরিদর্শনের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, দুর্ঘটনায় কোন প্রাণহানি ঘটেনি। সার ব্যবসায়ীরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে নদীতে পড়ে যাওয়া সার উদ্ধারের চেষ্টা চালাচ্ছেন। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত থানায় কোন লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়নি।
এদিকে নদীর স্বল্প পানিতে সার মিশে যাওয়ায় পরিবেশ দূষণ, মাছের ক্ষতির আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
ঘিওর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তহমিনা খাতুন জানান, ট্রাক উদ্ধারের পাশাপাশি ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
নরম রসমালাই আর সূক্ষ্ম খাদির মতোই কুমিল্লার মানুষের হৃদয়ে লুকিয়ে আছে আরেকটি সোনালি ঐতিহ্য-বাটিকশিল্প। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে হাতে হাতে গড়ে ওঠা এই শিল্প কুমিল্লার ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির নীরব গর্ব। পর্যাপ্ত সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে এর জৌলুস কিছুটা ম্লান হলেও আজও টিকে আছে বাটিক ঐতিহ্য বাঁচিয়ে রাখার স্বপ্ন। ছোট ছোট উদ্যোক্তা ও শ্রমজীবী মানুষের নিরলস প্রচেষ্টায় বেঁচে আছে কুমিল্লার বিখ্যাত বাটিকশিল্প।
প্রতিদিন ভোরের প্রথম আলো ফুটতেই বাটিকপল্লীর কর্মশালাগুলো জেগে ওঠে। রঙের ঘ্রাণ, গরম পানির বাষ্প আর কারিগরের যত্নমাখা স্পর্শে মুখর হয়ে ওঠে চারপাশ।
প্রায় ৫০ বছর আগে কুমিল্লার সদর উপজেলার কমলপুর গ্রামে লাল মিয়া ও মোহন মিয়া নামে দুই ভাইয়ের হাত ধরে বাটিকশিল্পের যাত্রা শুরু হয়। ভারত থেকে বাটিকের কৌশল শিখে এসে তারা এই শিল্পের ভিত্তি গড়ে তোলেন। সময়ের পরিক্রমায় তাদের হাতে তৈরি বাটিক ছড়িয়ে পড়ে সারাদেশে। কমলপুর ও আশপাশের কয়েকটি গ্রামে বর্তমানে গড়ে উঠেছে প্রায় ২৫টি কারখানা। এসব কারখানায় দীর্ঘদিন ধরে নান্দনিক ডিজাইনের বাটিক শাড়ি, থ্রি-পিস, শার্ট, লুঙ্গি ও বেডশিট তৈরি হচ্ছে।
স্থানীয় চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি এসব বাটিকপণ্য ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হচ্ছে। এমনকি বিদেশেও রপ্তানি হয়ে সুনাম অর্জন করেছে কুমিল্লার বাটিক। ঐতিহ্যবাহী খাদির পর জনপ্রিয়তার দিক থেকে বাটিক এখন কুমিল্লার অন্যতম পরিচয়। কুমিল্লা নগরীর মনোহরপুর, কান্দিরপাড় ও রামঘাট এলাকার প্রায় দুই শতাধিক দোকানে কমলপুরের বিখ্যাত বাটিকপণ্য বিক্রি হচ্ছে।
কারখানার ভেতরে প্রতিদিন চলছে রং আর নকশার নিরবচ্ছিন্ন শ্রম। কেউ গরম পানিতে কাপড়ের অপ্রয়োজনীয় ‘মার’ তুলে ফেলছেন, কেউ রঙের কড়াইয়ে তৈরি করছেন নীল, হলুদ, লাল আর মাটির রঙের মায়াজাল। সেই রঙিন কাপড়ে মোমের নকশা, ফুলের ছাপ আর ঢেউয়ের রেখায় ফুটে ওঠে শিল্পীর কল্পনা।
দীর্ঘ এক যুগ ধরে বাটিক কারখানায় কাজ করছেন শ্রমিক হামিদ চৌধুরী। তিনি কাপড়ের বিহারি, ওয়াশ ও ডাইনের কাজ করেন। একাই সামলাচ্ছেন তিনটি দায়িত্ব। তিনি বলেন, ‘বিহারি শেষ করে মোম তুলে কাপড় ওয়াশ করা হয়, এতে কাপড় পরিষ্কার ও উজ্জ্বল হয়।’
আরেক শ্রমিক মুশফিকুর রহমান মোন্না জানান, তিনি থ্রি-পিসের কাজ করেন। সাদা কাপড়ে মোম দিয়ে ব্লক করার পর নারীরা তুলি দিয়ে রং করেন। প্রতিদিন তিনি ২০ থেকে ৩০টি থ্রি-পিসের মোম ব্লক সম্পন্ন করতে পারেন।
রং করা কাপড় মাঠে সারি সারি করে রোদে শুকানো হয়। কয়েকজন কর্মী সারাক্ষণ কাপড় উল্টে-পাল্টে ঠিক করে দিচ্ছেন। রোদের আলোয় প্রতিটি নকশা হয়ে উঠছে আরও প্রাণবন্ত।
রং শুকানোর পর শুরু হয় আরেক ধাপ। নারীদের কোমল হাতে তুলি ছোঁয়ায় কাপড়ে ফুটে ওঠে নতুন রঙের গল্প। সারিবেঁধে দাঁড়িয়ে তারা ধৈর্য ও মমতায় রং ঢেলে দেন কাপড়ে। কারখানার ভেতরে নারীদের এই ব্যস্ততা যেন শুধু কাজ নয়, এ যেন শিল্প আর জীবনের মিলনমেলা।
নারী কর্মীরা জানান, দলগতভাবে কাজ করায় নতুনরা সহজেই শিখে নিতে পারেন। প্রতিদিন একজন কর্মী ৩০ থেকে ৪০টি কাপড়ে তুলি দিতে পারেন।
কাপড় ভাঁজ করার কাজ করেন রিতু আক্তার। তিন মাস আগে তিনি এখানে যোগ দেন। তিনি বলেন, ‘যার কাজ যত বেশি দক্ষ, তার মজুরি তত বেশি। মালিকের ব্যবহার ও বেতন-ভাতায় আমরা সন্তুষ্ট।’
মহাজনদের নির্দেশনায় প্রতিদিন প্রায় পাঁচ শতাধিক বাটিক তৈরি হয়। এর মধ্যে কখনো শাড়ি, কখনো থ্রি-পিস, কখনো লুঙ্গি।
কুমিল্লা নিউ বাটিক ঘরের স্বত্বাধিকারী আবু সাইদ জানান, তার কারখানায় প্রতিদিন ১৫-২০ জন শ্রমিক কাজ করেন। এখানে সুতি কাপড়, থ্রি-পিস, সিল্ক শাড়ি ও লুঙ্গি তৈরি হয়। কাজের হিসাব সপ্তাহভিত্তিক করা হয়।
ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বাটিকের চাহিদাও ওঠানামা করে। গরমকালে চাহিদা বাড়লেও শীতকালে কমে যায় কাজ। পুঁজি সংকটে অনেক সময় উৎপাদন ব্যাহত হয়।
কুমিল্লা বাটিক সেন্টারের মহাজন রাশেদুল ইসলাম বলেন, ‘আমার বাবা ৩৫ বছর আগে এই কারখানা শুরু করেন। আমাদের ব্যবসা প্রকৃতিনির্ভর। রোদ না থাকলে কাজ বন্ধ থাকে। শীতকালে চাহিদা কমে গেলে কর্মীদের বেতন দেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। সরকার যদি স্বল্প সুদে বা সুদহীন ঋণের ব্যবস্থা করত, তাহলে এই শিল্প হারিয়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকত না।’
সব প্রতিকূলতার মধ্যেও থেমে নেই কমলপুরের বাটিক শিল্পীরা। সরকারি প্রণোদনা ও সহায়তা পেলে কুমিল্লার বাটিক আবারও বিশ্ববাজারে নতুন করে জায়গা করে নিতে পারবে- এমনটাই তাদের বিশ্বাস।
এ বিষয়ে কুমিল্লার জেলা প্রশাসক বলেন, ‘সরকার বাটিক শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে আগ্রহী এবং প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।’
পুরুষ-নারী, ছোট-বড় সবার সম্মিলিত পরিশ্রমে আজও বেঁচে আছে কুমিল্লার বাটিক শিল্প- রঙে রঙে, নকশায় নকশায় তুলে ধরছে বাঙালির সৃজনশীলতার চিরন্তন মহিমা।
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. নুরুন্নাহার চৌধুরী বলেছেন, বাংলাদেশের মেরিটাইম খাত এখন বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার মুখোমুখি। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন মেরিন অফিসার ও ইঞ্জিনিয়ার তৈরিতে সরকার প্রশিক্ষণের গুণগত মান উন্নয়ন, আধুনিক সরঞ্জাম সংযোজন এবং অবকাঠামো সম্প্রসারণে নিরলসভাবে কাজ করছে।
তিনি বলেন, ‘১৯৬২ সালে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ মেরিন একাডেমিকে আধুনিক ও আন্তর্জাতিক মানের প্রতিষ্ঠানে রূপ দিতে বর্তমানে ১১৫ কোটি টাকার সরকারি উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। ছয় দশকেরও বেশি সময় ধরে এই একাডেমি দেশের মেরিটাইম খাতের দক্ষ জনশক্তি তৈরির আঁতুড়ঘর হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।’
নারীর ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রেও একাডেমির অবদান উল্লেখযোগ্য উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘২০১২ সাল থেকে নারী ক্যাডেটদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালু হওয়ার পর আজ (রোববার) তারা আন্তর্জাতিক সমুদ্রে সাহসিকতা ও দক্ষতার সঙ্গে বাংলাদেশের পতাকা বহন করছেন।’ শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) চট্টগ্রামের আনোয়ারায় বাংলাদেশ মেরিন একাডেমি প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত ৫৯তম ব্যাচের শিক্ষা সমাপনী কুচকাওয়াজে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
দুই বছরের কঠোর শৃঙ্খলা, একাডেমিক পাঠ ও রেজিমেন্টাল প্রশিক্ষণের সফল সমাপ্তি ঘটে এই বর্ণাঢ্য গ্র্যাজুয়েশন প্যারেডের মধ্য দিয়ে। এ বছর প্রি-সি সনদ অর্জন করেন মোট ১৬০ জন ক্যাডেট। এর মধ্যে ১১ জন নারী ক্যাডেটসহ নটিক্যাল শাখায় ৮২ জন এবং মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং শাখায় ৭৮ জন রয়েছেন।
সাদা ইউনিফর্মে দৃঢ় পদচারণায় ক্যাডেটরা জানান দিলেন বিশ্বের যে কোনো সমুদ্র তাদের জন্য প্রস্তুত।
অনুষ্ঠানের অন্যতম আকর্ষণ ছিল শ্রেষ্ঠ ক্যাডেটদের পদক প্রদান। সকল ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ কৃতিত্বের জন্য ৫৯তম ব্যাচের ক্যাডেট নম্বর-৫৭৮৯ মিফতাহুল ইসলাম রাজ্য অর্জন করেন মহামান্য রাষ্ট্রপতির স্বর্ণপদক। এ মুহূর্তটি পুরো প্যারেড মাঠজুড়ে গর্বের আবহ তৈরি করে।
একাডেমি সূত্রে জানা গেছে, ২০২৫ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ মেরিন একাডেমি থেকে মোট ৫ হাজার ৮৬০ জন নটিক্যাল ও মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং ক্যাডেট প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করেছেন। তারা বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন সমুদ্রগামী জাহাজে দায়িত্ব পালন করে দেশের জন্য বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন।
বর্ণাঢ্য এই গ্র্যাজুয়েশন প্যারেডে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তা, সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা এবং ক্যাডেটদের অভিভাবকদের উপস্থিতিতে একাডেমি প্রাঙ্গণ পরিণত হয় গর্ব, আনন্দ ও প্রত্যাশার মিলনমেলায়।
বিএনপি-জামায়াত নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে গায়েবী মামলা, মাদক দিয়ে ফাঁসানো, মিথ্যা নাশকতা মামলা দিয়ে শত শত নেতা-কর্মীদের জেল খাটানো পুলিশ কর্মকর্তা জীবননগর থানার সাবেক ওসি এস এম জাবীদ এখন ঝিনাইদহ পিবিআইতে কর্মরত। রাজনৈতিক কর্মীদের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক মামলার অভিযোগে আলোচিত ওই পুলিশ কর্মকর্তাকে ঝিনাইদহ পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনে (পিবিআই) পদায়ন করায় রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে আলোচনা ও সমালোচনার ঝড় উঠেছে।
জানা গেছে, ২০২৩ সালের জুলাই মাসে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর থেকে জীবননগন থানায় বদলি করা হয় এস এম জাবীদ হাসানকে। এরপর থেকে বিএনপি ও জামায়াত নেতা-কর্মীদের ধর-পাকড় শুরু করেন তিনি। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের আস্থাভাজন থেকে নিরীহ বিএনপি নেতা-কর্মীদের মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার শুরু করেন।
সূত্র জানায়, জীবননগরে দায়িত্বকালীন সময়ে ওই কর্মকর্তা একাধিক রাজনৈতিক মামলার দায়িত্বে ছিলেন। সে সময়ে মামলার ভয় দেখিয়ে নিরীহ মানুষের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয়।
বিএনপির নেতা-কর্মীরা অভিযোগ করেন, নিরীহ ও সাধারণ কর্মীদের বিরুদ্ধেও রাজনৈতিক প্রভাবে মামলা দেওয়া হয়, যা ছিল একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক স্বার্থ বাস্তবায়নের অংশ। তাদের ভাষায়, ‘আইন নয়, নির্দেশই ছিল সবকিছুর ভিত্তি।’
২০২৩ সালের ৩ নভেম্বর বিশেষ অভিযানের নামে বাড়ি থেকে ধরে এনে নাশকতা মামলায় চালান দেওয়া হয় জীবননগর থানা বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি ও উথলী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবুল কালামকে। ৪ নভেম্বর বাড়ি থেকে ধরে এনে নাশকতা মামলায় চালান দেওয়া হয় জীবননগর পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ডাবলুকে। নাশকতার পরিকল্পনা করছিলেন এমন অভিযোগে মামলা দেয় ওসি এস এম জাবীদ হাসান। বিএনপি-জামায়াতের এমন শত শত নেতা-কর্মীদের মিথ্যা মামলায় দেওয়ায় ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে তাকে চুয়াডাঙ্গা জেলার শ্রেষ্ঠ ওসি হিসেবে নির্বাচিত করা হয়েছিল। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের পর জাবীদ হাসানকে ২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে বদলি করে দেওয়া হয়। বর্তমানে তিনি ঝিনাইদহ পিবিআইতে কর্মরত আছেন।
অভিযোগের বিষয়ে জীবননগর থানার সাবেক ওসি ও ঝিনাইদহ পিটিআইয়ের পরিদর্শক এস এম জাবীদ এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
এ ব্যাপারে ঝিনাইদহ পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার গাজী রবিউল ইসলাম বলেন, ‘তার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
নারায়ণগঞ্জের বুড়িগঙ্গা নদীতে ‘বোগদাদীয়া-১৩’ নামের লঞ্চের ধাক্কায় একটি বালুবাহী বাল্কহেড ডুবে গেছে। তবে এ ঘটনায় কেউ হতাহত হয়নি। রোববার (১৪ ডিসেম্বর) সকাল সোয়া ১০টার দিকে ফতুল্লার লঞ্চঘাট এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। এই ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
ভিডিওতে দেখা যায়, লঞ্চটির সামনের অংশ বালুবাহী বাল্কহেডটির উপরে উঠে যায়। বাল্কহেডটি ডুবে যেতে দেখে শ্রমিকরা তখন প্রাণ বাঁচাতে নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়েন। পরে তারা সাঁতরে তীরে উঠে যায়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীর সদরঘাট থেকে ছেড়ে আসা ভোলামুখী ‘বোগদাদীয়া-১৩’ লঞ্চটির সঙ্গে মুন্সীগঞ্জ থেকে ছেড়ে আসা জান্নাতি নামের সদরঘাটমুখী বাল্কহেডের সংঘর্ষ হয়। এতে বাল্কহেডটি মুহূর্তের মধ্যে ডুবে যায়। এ সময় প্রাণ বাঁচাতে বাল্কহেডের শ্রমিকরা নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়ে।
ডুবে যাওয়া জান্নাতি বাল্কহেডের মালিক আলি আহেম্মদ বলেন, চাদপুর দশআনি থেকে সিলেকশন বালু নিয়ে ঢাকায় আসার পথে ফতুল্লা লঞ্চঘাট অতিক্রমকালে বিপরীত দিক থেকে আসা বোগদাদিয়া-১৩ নামের একটি যাত্রীবাহী লঞ্চ বাল্কহেড বরাবর আসতে দেখে তারা গতি পরিবর্তন করতে চাইলেও ব্যর্থ হয়। এতে এ দুর্ঘটনা ঘটে। তবে কেউ হতাহত হয়নি।
পাগলা নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘এ ঘটনার পর পর পাঁচজন শ্রমিক সাঁতরে তীরে উঠতে সক্ষম হয়েছেন। এতে কেউ হতাহত হয়নি। ডুবে যাওয়া বাল্কহেডটি উদ্ধারে কাজ শুরু হবে।’
গাজীপুরের কাপাসিয়ার প্রত্যন্ত অঞ্চলের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবার লক্ষ্যে ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পে চিকিৎসাপত্র এবং ওষুধ বিতরণ করা হয়েছে। রোববার (১৪ ডিসেম্বর) সকালে উপজেলার বারিষাব ইউনিয়নের চরদুর্লভ খান আ. হাই সরকার স্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রাঙ্গণে ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পেইনের উদ্বোধন করেন গাজীপুর-৪, কাপাসিয়া আসনে বিএনপি মনোনীত ধানের শীষ প্রতীকের পদপ্রার্থী শাহ রিয়াজুল হান্নান।
কাপাসিয়ার কৃতিসন্তান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য প্রয়াত নেতা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহ্ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে আয়োজিত মেডিকেল ক্যাম্পের আনুষ্ঠানিকতার সভাপতিত্ব করেন কাপাসিয়া উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ খন্দকার আজিজুর রহমান পেরা। স্থানীয় বিএনপি নেতা দেলোয়ার হোসেনের পরিচালনায় ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন বিএনপির সিনিয়র নেতা ফ ম মমতাজ উদ্দীন রেনু। এ সময় অন্যান্যের মাঝে উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক সদস্য ও কাপাসিয়া প্রেসক্লাবের সভাপতি এফ এম কামাল হোসেন, জেলা কৃষক দলের সদস্য সচিব ফকির ইস্কান্দার আলম জানু, বারিষাব ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মাওলানা কফিল উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম মাস্টার, বিএনপির প্রার্থী শাহ রিয়াজুল হান্নানের নির্বাচনী প্রচারণা কমিটির আহ্বায়ক বিএনপি নেতা ইকবাল হোসেন, কোষাধ্যক্ষ ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মো. জাহাঙ্গীর আলম, আবুল বাসার মাস্টার, সাইফুল ইসলাম জামাল, নজরুল ইসলাম, বেলায়েত হোসেন ডাক, ইউনিয়ন যুবদলের আহ্বায়ক বিল্লাল হোসেন বুলবুল, সদস্য মনির পালোয়ান, ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি সাইফুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক ইয়াহিয়া ফরাজি প্রমুখ। ঢাকা থেকে আগত মেডিকেল টিমে ছিলেন, কার্ডিয়াক সার্জন ডা. মো. সাজেদুল বারী, মেডিসিন বিভাগের ডা. নিশাত তাসনিম, ডা. ওয়ালিসা ইব্রাহিম, ডা. হুমাইরা বিনতে আহমেদ, ডা. আয়েশা সিদ্দিকা এশা, শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. মো. মাসুদুর রহমান, গাইনোকোলজিস্ট ডা. মেজর (অব.) শিরিন আক্তার।
গাজীপুরের টঙ্গীতে আরিফ (২৭) নামে এক বিকাশকর্মীকে গুলি করে ১৪ লাখ ৭৭ হাজার টাকা ছিনতাইয়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আজাদ নামের আরও এক বিকাশকর্মী। শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় টঙ্গী পূর্ব থানাধীন আনারকলি রোড এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে পুলিশ ও র্যাব।
আহত আজাদ জানান , টঙ্গী বিসিক ফকির মার্কেট এলাকার এজেন্টদের কাছ থেকে ১৪ লাখ ৭৭ হাজার টাকা সংগ্রহ করে টঙ্গী বাজার সেনা কল্যাণ ভবনের অফিসে ফিরছিলেন তারা। পথিমধ্যে আনারকলি রোডের ডা. নাজিম উদ্দীন মার্কেটের পাশের গলিতে পৌঁছালে কয়েকজন ছিনতাইকারী তাদের পথরোধ করে। এ সময় ছিনতাইকারী তাদের সাথে ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে অস্ত্র দিয়ে দুই রাউন্ড গুলি করে ছিনতাইকারীরা। এতে আরিফের বুকে ও পেটে গুলি লাগে। আজাদ বাধা দিতে গেলে ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাকে কুপিয়ে আহত করে ছিনতাইকারীরা।
পরে স্থানীয়দের সহযোগিতায় তাদের টঙ্গী শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক গুলিবিদ্ধ আরিফকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করে। অপর আহত আজাদকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়।
টঙ্গী শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালে সহকারী সার্জন ডা. নাহিদা সুলতানা বলেন, ‘আহত আরিফের ডান পাশে একটি গুলির ক্ষত রয়েছে। বামপাশার আরেকটি আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। গুলিবিদ্ধ আরিফকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।’
এ ঘটনায় টঙ্গী পূর্ব থানার অফিসার ইনচার্জ মেহেদী হাসান বলেন, ‘ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে একটি গুলির খোসা উদ্ধার করা হয়েছে।’
অ্যাসোসিয়েশন অব টেলিভিশন চ্যানেল ওনার্স (অ্যাটকো)-এর ৯ম বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার (১৩ ডিসেম্বর ২০২৫) রাজধানীর বনানীর হোটেল শেরাটনে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন অ্যাটকো সভাপতি ও মাছরাঙা টেলিভিশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অঞ্জন চৌধুরী।
সভায় গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও দায়িত্বশীলতা নিয়ে দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য রাখেন সভাপতি অঞ্জন চৌধুরী। তিনি বলেন, সংবাদমাধ্যমকে নিরপেক্ষভাবে তাদের আবেগ নয়, বরং বিবেককে প্রাধান্য দিয়ে কাজ করতে হবে। স্বাধীন চিন্তাভাবনা ও মত প্রকাশের অধিকার রক্ষায় সচেষ্ট থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি সকলকে সম্মিলিতভাবে দেশ গড়ার কাজে ভূমিকা রাখার অনুরোধ করেন।
এ সময় সভায় উপস্থিত ছিলেন এনটিভির চেয়ারম্যান আলহাজ মোহাম্মদ মোসাদ্দেক আলী, ইটিভির চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম, বাংলা ভিশন টিভির চেয়ারম্যান আব্দুল হক, আরটিভির ভাইস চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন, ডিবিসি নিউজের চেয়ারম্যান ইকবাল সোবহান চৌধুরী, দীপ্ত টিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী জাহেদুল হাসান এবং বৈশাখী টিভির উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক টিপু আলম মিলনসহ সংগঠনের অন্যান্য সম্মানিত সদস্য ও বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।
সভায় উপস্থিত সকল সদস্য সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম পরিচালনায় নিরপেক্ষতা বজায় রাখার বিষয়ে একমত পোষণ করেন। একটি সুন্দর ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণে নিজেদের অবস্থান থেকে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালনের প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তারা।
সকাল থেকেই গ্রামের বাতাস ভারী। মসজিদের মাইকে বারবার ভেসে আসছে সেই ঘোষণা- ‘কোয়েলহাট পূর্বপাড়া নিবাসি রাকিব উদ্দীনের দুই বছরের শিশু সন্তান সাজিদ মারা গেছে। শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টার নেককিড়ি কবরস্থানের সামনের ফাঁকা মাঠে জানাজা শেষে নেককিড়ি কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে।’
সবাই গ্রামের রাস্তা ধরে গায়ে পাঞ্জাবি জড়িয়ে মাথায় টুপি দিয়ে আসছেন সাজিদের বাড়ির দিকে। তারা একবার দেখতে চান সেই নিষ্পাপ মুখটা, যে মুখে প্রতিদিন হাসি ছিল, আজ সেখানে নিস্তব্ধতা।
জানাজার মাঠে মানুষের ঢল নামে সকালেই। গ্রামের বৃদ্ধ থেকে শুরু করে স্কুলপড়ুয়া ছেলেরা সবার চোখ ভেজা। কারও কণ্ঠে ফিসফিস, ‘আল্লাহ, এমন মৃত্যু যেন কেউ না পায়।’ সাজিদের ছোট্ট দেহটি যখন সাদা কাপড়ে মোড়ানো অবস্থায় আনা হলো, তখন কান্নার রোল পড়ে গেলো চারপাশে। তার মা-বারবার ছুটে আসতে চাইছিলেন; করছেন আহাজারি। লোকজন ধরে রেখেছিল তাকে, কিন্তু কান্না থামাতে পারেনি কেউ।
জানাজার নামাজের ইমাতি করেন কাজী মাওলানা মিজানুর রহমান। ইমাম সাহেব জানাজা শেষে যখন তাকবির দিলেন, মানুষ হাত তুললো দোয়ার ভঙ্গিতে। হাজারো কণ্ঠে দোয়া অনুষ্ঠিত হলো। সবাই মাগফিরাতের জন্য দোয়া করেন সাজিদের জন্য। একই সঙ্গে তার পরিবারকে আল্লাহ যেন ধৈর্য ধরার তৌফিক দান করেন– এমন দোয়াও সবাই করেছেন।
জানাজা শেষে সাজিদের ছোট্ট কফিনটা যখন কবরের দিকে নেওয়া হলো, তখন বাতাস যেন থেমে গেলো, শুধু শোনা যাচ্ছিল কান্নার শব্দ। কান্না করছেন স্বজনরা। একটি শিশুর জানাজায় অংশ নিয়েছে পুরো গ্রাম– এমন দৃশ্য কখনও দেখেননি গ্রামবাসী।
এর আগে গত বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে উপজেলার পাচন্দর ইউনিয়নের কোয়েলহাট পূর্বপাড়া গ্রামে সাজিদ গভীর নলকূপের গর্তে পড়ে নিখোঁজ হয়। ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা ৪০ ফুট মাটি খনন করে ৩২ ঘণ্টা পর শিশুটিকে উদ্ধার করেন। এরপর তাকে উদ্ধার করে তানোর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) ১৮৮০ সালের এইদিনে সিরাজগঞ্জের ধানগড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছেন মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী। দেশের নিপীড়িত ও নির্যাতিত মানুষের মুক্তি আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়া এই নেতার জীবনের বড় অংশই কেটেছে টাঙ্গাইলের সন্তোষে। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে তিনি ছিলেন কিংবদন্তী। কাগমারী সম্মেলন থেকে ফারাক্কা লং মার্চ- সবকিছুতেই তিনি রেখে গেছেন সুদূরপ্রসারী ছাপ। শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) ভাসানী ১৪৫তম জন্মদিন উপলক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক-সাংস্কৃতিক দল ও সংগঠন নানা কর্মসূচি পালন করছে।
এদিন সকাল ৯ টার দিকে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (মাভাবিপ্রবি) বিশ্ববিদ্যালয় পক্ষ থেকে টাঙ্গাইলের সন্তোষে ভাসানীর মাজারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করা হয়। পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে দোয়া ও মোনাজাত করা হয়।
এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মোহাম্মদ মতিউর রহমান, লাইফ সায়েন্স অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মো. আবু জুবাইর, প্রক্টর প্রফেসর ড. মো. ইমাম হোসেন, রেজিস্ট্রার (দায়িত্বপ্রাপ্ত) প্রফেসর ড. সাজ্জাদ ওয়াহিদসহ বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।