মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের উপদেষ্টা হিসেবে পরিচয় দিয়ে ঢাকায় বিএনপি কার্যালয়ে ব্রিফিং করা সেই ‘মিয়ান আরাফি’কে আটক করা হয়েছে। তার পুরো নাম মিয়া জাহিদুল ইসলাম আরাফি বলে জানা গেছে।
রোববার রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে তাকে আটক করা হয়।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ডিসি মিডিয়া মো. ফারুক হোসেন আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, জো বাইডেনের কথিত উপদেষ্টা মিয়া জাহিদুল ইসলাম আরাফিকে রোববার দুপুরে বিমানবন্দর থেকে আটক করা হয়।
শনিবার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের আশপাশের এলাকায় দিনভর ব্যাপক সহিংসতা ও সংঘাতের পর হঠাৎ করেই মিয়ান আরাফি বলে এক ব্যক্তি নিজেকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের উপদেষ্টা হিসেবে দাবি করেন। তবে এই ব্যক্তির বিএনপি কার্যালয়ে যাওয়া এবং বক্তব্য রাখার বিষয়ে কোনো দায় নেয়নি বিএনপি। এদিকে মার্কিন দূতাবাস জানিয়েছে, ‘এই ব্যক্তির সঙ্গে দূতাবাসের কোনো সম্পর্ক নেই।’
আবুধাবির জনপ্রিয় বিগ টিকিট লটারিতে ২০ মিলিয়ন দিরহাম (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৬৬ কোটি ২৮ লাখ টাকা) জিতেছেন শারজাহপ্রবাসী বাংলাদেশি হারুন সরদার নূর নবী সরদার। গত শুক্রবার লটারির ড্র অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে গত ১৪ সেপ্টেম্বর এই টিকিট কেনেন হারুন।
৪৪ বছর বয়সি ট্যাক্সিচালক হারুন ২০০৯ সাল থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতে বসবাস করছেন। শারজাহতে ট্যাক্সি চালান তিনি। গত ১৫ বছর ধরে আবুধাবিকেই নিজের ঘর মনে করেন হারুন। তার পরিবার বাংলাদেশে থাকে।
হারুন জানান, জয়ের স্বপ্ন নিয়ে প্রতি মাসেই নিয়মিতভাবে বিগ টিকিট কিনতেন তিনি। কখনো হাল ছাড়েননি।
শো সঞ্চালক রিচার্ড ও বুশরার সঙ্গে ‘গোল্ডেন ফোনে’ কথা বলার সময় লটারি জেতার কথা শুনে বিস্ময়ে অভিভূত হয়ে পড়েন হারুন। তিনি বলতে থাকেন, ‘ওকে, ওকে। আমি বাংলাদেশি। শারজাহতে আছি। আমি একজন প্রাইভেট ট্যাক্সি (ড্রাইভার)। ওকে, থ্যাঙ্ক ইউ। আমি এই পুরস্কার ১০ জনের সঙ্গে ভাগ করে নিচ্ছি।’
পুরস্কারের অর্থ নিয়ে কী করবেন, সে বিষয়ে এখনো নিশ্চিত না হলেও, তিনি টিকিট কেনা চালিয়ে যেতে এবং বিগ টিকিটের সঙ্গে যুক্ত থাকতে খুবই আগ্রহী বলে জানান। হারুন বলেন, ‘আমি অন্যদেরও স্বপ্ন না ছাড়তে উৎসাহিত করি, কারণ বিগ টিকিটে কোনো স্বপ্নই দূরে নয়।’
হারুনের লটারি জয়ের পাশাপাশি আরও চারজনের প্রত্যেকে ৫০ হাজার দিরহাম করে জিতেছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন ভারতে বসবাসকারী শিহাব উমাইর এবং দুবাইতে বসবাসকারী ভারতীয় প্রবাসী সিদ্দিক পাম্বলাথ। এছাড়াও ভাগ্য খুলেছে আরও দুই প্রবাসী আবুধাবিতে বসবাসকারী বাংলাদেশি আলী হুসেন আলী এবং দুবাই ও শারজাহতে বসবাসকারী পাকিস্তানি আদেল মোহাম্মদের।
অন্যদিকে, বিগ উইন কন্টেস্ট স্পিন দ্য হুইল-এ দেড় লাখ দিরহাম পুরস্কার জেতার জন্য ভাগ্য পরীক্ষা করতে নাম লিখিয়েছিলেন চার প্রবাসী।
কাতারপ্রবাসী রিয়াসকে প্রতিযোগিতায় (বিগ উইন কন্টেস্ট) তার ভাগ্য পরীক্ষার জন্য মনোনীত করা হয়েছিল। কিন্তু ব্যক্তিগত কারণে তিনি আবুধাবিতে যেতে না পারায় ‘স্পিন দ্য হুইল’ প্রতিযোগিতায় নিজের হয়ে অংশ নেওয়ার জন্য বন্ধু আশিক মোট্টামকে মনোনীত করেন। রিয়াস ও আশিক মিলে আরও ২০ জনের সঙ্গে টিকিট কিনেছিলেন। স্পিন শুরুর আগে রিয়াস এক বার্তায় বলেন, ‘আমি নিশ্চিত, সে ১ লাখ ৫০ হাজার দিরহাম জিতবে।’ অবশেষে বন্ধুর ইচ্ছা পূরণ হয়। আশিক জিতে যান।
ড্রতে একমাত্র নারী হিসেবে বিজয়ী ছিলেন ভারতের কেরালার নাগরিক সুসান রবার্ট। স্পিনের আগে তিনি জানান, জেতা অর্থ ছেলের পড়াশোনা এবং বিদেশ ভ্রমণে ব্যয় করতে চান, বিশেষ করে জাপানে যাওয়ার ইচ্ছা তার। স্পিন শেষে তিনি জিতে নেন ১ লাখ ১০ হাজার দিরহামের পুরস্কার। বিজয়ের পর তিনি সব নারী দর্শকদের অংশ নিতে আহ্বান জানান। সুসান বলেন, ‘বিগ টিকিটে অংশ নিন এবং আরও বেশি টিকিট কিনুন, নারীরা।’
বিগ টিকিটে আবুধাবি প্রবাসী আলিমউদ্দিন সোনজা জিতেছেন ৮৫ হাজার দিরহাম। তিনি এই অর্থ তার সঙ্গে টিকিট কেনা ১০ জনের সঙ্গে ভাগ করে নেবেন।
’স্পিন দ্য হুইল’ প্রতিযোগিতার চতুর্থ বিজয়ী হন আল আইনে বসবাসরত বাংলাদেশি প্রবাসী জাজরুল ইসলাম ফকির। তিনিও পুরস্কারের অর্থ ১০ জনের সঙ্গে ভাগ করে নেবেন।
এছাড়া শারজাহ প্রবাসী আরেক বাংলাদেশি মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম আহমেদ নবী জিতেছেন একটি রেঞ্জ রোভার ভেলার গাড়ি।
বিগ টিকিট সম্প্রতি ঘোষণা করেছে, অক্টোবর মাসের প্রমোশনে থাকছে ২ কোটি ৫০ লাখ দিরহামের গ্র্যান্ড প্রাইজ। আগামী ৩ নভেম্বরের লাইভ ড্রতে ভাগ্যবান বিজয়ীর হাতে তুলে দেওয়া হবে এই পুরস্কার।
এছাড়া, প্রতি সপ্তাহে পাঁচজন বিজয়ী ঘরে তুলতে পারবেন ২৪ ক্যারেট স্বর্ণের ২৫০ গ্রাম বার।
মোহাম্মদ আহমদ আনসারি সারা জীবন কাটিয়েছেন ভারতের উত্তর প্রদেশের বারানসির সরু আর ভিড়ভাট্টার অলিগলিতে। এ শহরকে অনেকেই ভারতের আধ্যাত্মিক রাজধানী বলে থাকেন। এখানকার পার্লামেন্টারি আসনও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির। ৫৫ বছর বয়সি আনসারি কয়েক দশক ধরে বুনছেন বেনারসি শাড়ি। তাঁতের শব্দ, মন্দিরের ঘণ্টাধ্বনি আর আজানের সুরে মিশে থাকা এ শহরে তিনি ভালোবাসেন নিজের কাজের পরিবেশ।
ধারণা করা হয়, ভারতবর্ষের প্রাচীনতম নগরী হলো বারানসি। খ্রিষ্টপূর্ব ১ হাজার ৮০০ সাল থেকেই এ নগরীর অস্তিত্ব আছে বলে মনে করা হয়। এখানকার বিশেষ বৈশিষ্ট্য হিন্দু-মুসলিম সংস্কৃতির মেলবন্ধন। তবে সাম্প্রতিক সময়ে শাড়ির বিক্রি কমেছে। নানা কারণে এ মন্দা দেখা দিলেও সর্বশেষ ধাক্কা এসেছে ভারত-বাংলাদেশের চলমান টানাপড়েন থেকে।
গত বছরের আগস্টে বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণঅভ্যুত্থানের মুখে দেশ ছেড়ে দিল্লিতে আশ্রয় নেন। এর পর থেকেই দুই দেশের সম্পর্ক তিক্ত হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশে এখন অনেকেই মনে করেন, তাদের সমস্যার পেছনে ভারতেরও ভূমিকা আছে। বিশেষ করে মোদির প্রকাশ্য সমর্থন ছিল হাসিনার প্রতি। তার পতনের পর বাংলাদেশে কিছু জায়গায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়, বিশেষ করে হিন্দুদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। কারণ, তাদের হাসিনার সমর্থক হিসেবে দেখা হতো।
একই সঙ্গে বাংলাদেশে ভারতীয় ব্যবসাও বয়কট হয়েছে। কোথাও কোথাও হামলার শিকারও হয়েছে ভারতীয় পণ্যের বিক্রেতারা। দেশটি এখন দিল্লির কাছে দাবি তুলেছে—হাসিনাকে ফেরত পাঠাতে হবে, যাতে তাঁকে দেশে আইনের মুখোমুখি করা যেতে পারে।
চলতি বছরের এপ্রিলে বাংলাদেশ ভারত থেকে কিছু পণ্য আমদানিতে বিধিনিষেধ দেয়। এর মধ্যে ছিল সুতা আর চাল। পরে ১৭ মে ভারত পাল্টা ব্যবস্থা নেয়। তারা স্থলসীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক ও প্রক্রিয়াজাত খাবার আমদানি বন্ধ করে দেয়। যদিও বাংলাদেশ থেকে এখনো শাড়ি ভারতে পাঠানো যায়, তবে সেটা কেবল সমুদ্রপথে, যা সময়সাপেক্ষ ও ব্যয়বহুল।
বিশ্বজুড়ে পরিচিত বেনারসি শাড়ি। সূক্ষ্ম কারুকাজ, বিলাসবহুল রেশম, ঝলমলে জরি আর সোনার-রুপার তারের কাজের জন্য এগুলো বিখ্যাত। একটি শাড়ি বুনতে কখনো কখনো ছয় মাস পর্যন্ত সময় লাগে। নকশা ও উপকরণের ওপর নির্ভর করে প্রতিটি শাড়ির দাম দাঁড়াতে পারে এক লাখ রুপি (প্রায় ১ হাজার ১৩০ ডলার) বা তারও বেশি।
আনসারি আল-জাজিরাকে বলেন, ‘বাংলাদেশে উৎসব আর বিয়েতে এসব শাড়ির অনেক চাহিদা থাকে। কিন্তু আমদানি বন্ধের কারণে ব্যবসা এখন অর্ধেকেরও বেশি কমে গেছে।’
ভারতের বারাণসীর কিছু ব্যবসায়ী এখনো বাংলাদেশি গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা পাওনা। ছবি: আল জাজিরা
ভারতের বারাণসীর কিছু ব্যবসায়ী এখনো বাংলাদেশি গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা পাওনা। ছবি: আল জাজিরা
বেনারসি শিল্প এর আগেও একের পর এক ধাক্কা খেয়েছে। নোটবন্দি (ভারতের ১০০০ রুপির নোট বাজার থেকে তুলে নেওয়া), বিদ্যুতের দাম বাড়া, করোনাভাইরাস মহামারি—এসব তো আছেই। পাশাপাশি আধুনিক পাওয়ার লুমে তৈরি সস্তা শাড়ির সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছে বেনারসি। বিশেষ করে গুজরাটের সুরতে তৈরি শাড়ির কারণে ব্যবসায়ীরা বিপাকে পড়েছেন।
এই ধারাবাহিক সংকটে অনেকে পেশা বদলাতে বাধ্য হয়েছেন। একসময় যেখানে প্রায় চার লাখ তাঁতি ছিলেন, এখন তা নেমে এসেছে অর্ধেকে—প্রায় দুই লাখে। অনেকেই শহর ছেড়ে চলে গেছেন অন্য কাজে। কেউ কেউ আবার রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন।
৬১ বছর বয়সী এক পাইকারি শাড়ি ব্যবসায়ী পবন যাদব আল-জাজিরাকে বলেন, ‘ঢাকায় সরকার পরিবর্তনের পর থেকে ব্যবসা একেবারেই বন্ধ হয়ে গেছে। আমরা প্রতি বছর বাংলাদেশে প্রায় ১০ হাজার শাড়ি পাঠাতাম। এখন সব থমকে আছে।’ তিনি জানান, প্রতিবেশী দেশের ক্রেতাদের কাছে তার এখনো ১৫ লাখ রুপি (প্রায় ১৭ হাজার ১৪০ ডলার) পাওনা আছে। কিন্তু রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে সে টাকা ফেরত পাওয়া অসম্ভব মনে হচ্ছে।
ভারতে শাড়ি পরার নথিভুক্ত ১০৮ রকম পদ্ধতি আছে। আর শাড়ি শুধু পোশাক নয়, বরং সূক্ষ্ম নকশা আর রঙের ছটায় একে ধরা হয় চিরন্তন সৌন্দর্য আর ঐতিহ্যের প্রতীক হিসেবে।
ভারতের টেক্সটাইল খাত এখন নানা সংকটে থাকলেও কৃষির পর সবচেয়ে বেশি মানুষ এই খাতে কাজ করেন। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, এখানে কাজ করেন সাড়ে ৩৫ লাখের বেশি মানুষ। এর মধ্যে শাড়ির বাজারের মূল্য প্রায় ৮০ হাজার কোটি রুপি বা ৯ দশমিক শূন্য ১ বিলিয়ন ডলার। শুধু রপ্তানি খাতেই আয় হয় প্রায় ৩০ কোটি ডলার।
বারানসির তাঁতি আর ব্যবসায়ীরা টানা তৃতীয়বারের মতো নরেন্দ্র মোদিকে ভোট দিয়ে সংসদে পাঠিয়েছেন। এখন তাঁরা অপেক্ষা করছেন, বাংলাদেশকে ঘিরে তৈরি হওয়া বাণিজ্যসংকটের একটা সমাধান যেন প্রধানমন্ত্রী করেন। ২০১৫ সালে মোদি সরকার ৭ আগস্টকে জাতীয় হ্যান্ডলুম দিবস ঘোষণা করে। তখন প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, দেশি তাঁতিদের জীবনে পরিবর্তন আনা হবে, দেশীয় পণ্যের প্রচার করা হবে। কিন্তু তাঁতি ও ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, এত দিনেও কোনো ফল পাওয়া যায়নি।
সেভ দ্য লুম—নামের সামাজিক প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা রমেশ মেনন ‘ভারতের তাত শিল্প অনন্য, এর সঙ্গে অন্য কোনো দেশের তুলনা হয় না। তবু নিয়মিত ব্যবসা বা টেকসই আয় না থাকায় অনেকে এই পেশা ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছেন। এখন নতুন তাঁতি খুঁজে পাওয়া দুষ্কর।’ তার মতে, এখন দরকার তাতের পণ্যকে দারিদ্র্যের প্রতীক না বানিয়ে বিলাসপণ্য হিসেবে উপস্থাপন করা।
পশ্চিমবঙ্গের ব্যবসায়ীদের স্বস্তি
অন্যদিকে বারানসি থেকে ৬১০ কিলোমিটার দূরে বাংলাদেশের সীমান্তঘেঁষা পশ্চিমবঙ্গে চিত্র ভিন্ন। বাংলাদেশ থেকে শাড়ি আমদানি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এখানকার সুতি শাড়ির ব্যবসায়ীরা নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ পেয়েছেন। শান্তিপুরের ব্যবসায়ী তারকনাথ দাস চার দশক ধরে সুতি শাড়ির ব্যবসা করছেন। স্থানীয় তাঁতিদের তৈরি শাড়ি তিনি দেশের নানা শো-রুমে সরবরাহ করেন। কয়েক বছর ধরে ক্ষতির মুখ দেখলেও দুর্গাপূজার আগে হঠাৎই বিক্রি বেড়ে যাওয়ায় তিনি খুশি।
আল-জাজিরাকে ৬৫ বছরের এই ব্যবসায়ী বলেন, ‘বাংলাদেশি শাড়ি আমাদের বাজারের অন্তত ৩০ শতাংশ দখল করে নিয়েছিল। এতে স্থানীয় শিল্প ভুগছিল। এখন আমরা ধীরে ধীরে আগের বাজার ফিরে পাচ্ছি। এবারের দুর্গাপূজায় বিক্রি গত বছরের চেয়ে অন্তত ২৫ শতাংশ বেশি হয়েছে।’
শান্তিপুরে এক লাখের বেশি তাঁতি ও ব্যবসায়ী রয়েছেন। পূর্ব ভারতের শাড়ির ব্যবসার অন্যতম বড় কেন্দ্র এই শহর। নদীয়া জেলার এই অঞ্চল সুতি শাড়ির জন্য বিখ্যাত। বিশেষ করে শান্তিপুর সুতি শাড়ি দেশজুড়ে জনপ্রিয়। পাশের হুগলি ও মুর্শিদাবাদ জেলা থেকেও সুতি শাড়ি উৎপাদন হয়। এগুলো শুধু দেশের বাজারেই নয়, গ্রিস, তুরস্কসহ নানা দেশে রপ্তানি হয়।
নদীয়া জেলার পাইকারি ব্যবসায়ী সঞ্জয় কর্মকারও খুশি এ পরিস্থিতিতে। তার ভাষায়, ‘বাংলাদেশি শাড়ি আমাদের চেয়ে একটু ভালো কাপড়ে তৈরি হয়। সঙ্গে থাকে আকর্ষণীয় প্যাকেজিং। তাই স্থানীয় নারীরা সেগুলো কিনতে পছন্দ করতেন।’ তিনি জানান, তরুণীরা আবার আধুনিক পোশাক—লেগিংস, টপস বা টিউনিকের দিকে ঝুঁকেছেন। তাতে শাড়ির বাজারে ধাক্কা লেগেছিল।
ফ্যাশন ডিজাইনার শান্তনু গুহঠাকুরতা মনে করেন, বাংলাদেশের শাড়ি আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা ভারতের তাঁতি ও ব্যবসায়ীদের জন্য বড় সুবিধা বয়ে এনেছে। এতে শুধু মূল বাজারই সুরক্ষিত হয়নি, নকল ডিজাইনের সস্তা শাড়িও কমে গেছে। ‘দুর্গাপূজার আগে এ সিদ্ধান্ত আসায় শিল্পকে আরও বেশি সহায়তা করেছে’—তিনি বলেন।
সারাদেশে ‘মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান-২০২৫’ শুরু হয়েছে। ২২ দিনব্যাপী এ অভিযান চলবে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত। এ সময় ইলিশ আহরণ, পরিবহন, মজুদ, ক্রয়-বিক্রয় ও বিনিময় সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ থাকবে। সরকারের ঘোষিত এ নির্দেশনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সমুদ্র, নদী ও উপকূলীয় এলাকায় মোতায়েন রয়েছে বাংলাদেশ নৌবাহিনী।
শনিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার’-এর আওতায় বাংলাদেশ নৌবাহিনীর জাহাজগুলো সমুদ্র ও উপকূলীয় এলাকায় এবং দেশের অভ্যন্তরীণ নদ-নদীতে ‘মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান-২০২৫’ পরিচালনা করছে। বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ১৭টি যুদ্ধ জাহাজ ৯টি জেলায় নিয়োজিত রয়েছে। এ অভিযানের অংশ হিসেবে চাঁদপুর এলাকায় বানৌজা ধানসিঁড়ি বা শহীদ ফরিদ ও বিএনডিবি গাংচিল; কক্সবাজার এলাকায় বানৌজা অতন্দ্র, শহীদ মহিবুল্লাহ, দুর্জয়, সাগর ও শহীদ দৌলত; খুলনা এলাকায় বানৌজা মেঘনা, চিত্রা বা তিতাস; বাগেরহাট এলাকায় বানৌজা করতোয়া, আবু বকর বা দুর্গম; পিরোজপুর ও বরগুনা এলাকায় বানৌজা সালাম ও কুশিয়ারা; বরিশাল এলাকায় বানৌজা পদ্মা, চিত্রা বা তিতাস এবং পটুয়াখালী এলাকায় এলসিভিপি-০১৩ বিশেষভাবে টহল দিচ্ছে।
এতে বলা হয়, গভীর সমুদ্রে দেশি-বিদেশি সব প্রকার সৎস্য শিকারীদের অবৈধ অনুপ্রবেশ বন্ধে নৌবাহিনীর যুদ্ধ জাহাজ এবং অত্যাধুনিক মেরিটাইম পেট্রোল এয়ার ক্রাফটের মাধ্যমে সার্বক্ষণিক নজরদারি করা হচ্ছে। বাংলাদেশ নৌবাহিনী ফ্লিটের জাহাজ, ক্রাফট এবং বোটগুলো ইলিশের প্রধান প্রজনন অঞ্চলে মোতায়েন রয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন, সশস্ত্র বাহিনী কোস্টগার্ড, নৌপুলিশ, ও মৎস্য কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সমন্বয়ের মাধ্যমে অবৈধ ইলিশ আহরণ ও বিদেশি মাছ ধরার ট্রলারের অনুপ্রবেশ প্রতিরোধ করবে। অভিযানকালে ইলিশ আহরণে নিয়োজিত অসাধু ব্যক্তি ও যান্ত্রিক মৎস্য নৌযানগুলোর ওপর কঠোর আইন প্রয়োগ এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রচার-প্রচারণা কার্যক্রম পরিচালিত হবে।
এতে আরও জানানো হয়, ইলিশ মাছের প্রজনন ক্ষেত্র সুরক্ষিত রাখা, অবাধ প্রজননের সুযোগ সৃষ্টি এবং জাতীয় অর্থনৈতিক সম্পদ হিসেবে মা ইলিশের সুষ্ঠু সংরক্ষণ নিশ্চিত করতে নৌ সদস্যরা সর্বদা নিবেদিত। বাংলাদেশ নৌবাহিনী দেশের সমুদ্রসীমায় ও অভ্যন্তরীণ নদ-নদীতে ইলিশের নিরাপদ প্রজননের পরিবেশ নিশ্চিত করার মাধ্যমে জাতীয় মাছ ইলিশের প্রাচুর্য বৃদ্ধি ও মৎস্য সম্পদের সমৃদ্ধিতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, অবরুদ্ধ এই উপত্যকায় ইসরায়েলি আগ্রাসনে নিহতের সংখ্যা ৬৭ হাজার ছাড়িয়েছে। শুধু গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৬৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছে দ্য টাইমস অব ইসরায়েল।
শনিবার মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত মোট প্রাণহানি দাঁড়িয়েছে ৬৭ হাজার ৭৪ জনে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী (আইডিএফ) গত এক দিনে তাদের হামলা বা অভিযানের বিষয়ে এখনো কোনো মন্তব্য করেনি।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আরও জানিয়েছে, খাদ্যাভাব ও পুষ্টিহীনতায় গত ২৪ ঘণ্টায় আরও দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে অনাহার ও অপুষ্টিজনিত মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৫৯ জনে। এর মধ্যে ১৫৪ জন শিশু।
সম্প্রতি জাতিসংঘের বৈশ্বিক সম্মেলনে ফিলিস্তিনকে স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে বেশ কয়েকটি পশ্চিমা দেশ। ফ্রান্স ও সৌদি আরবের আয়োজিত এ সম্মেলনে প্রথমে যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, পর্তুগাল, ফ্রান্স, বেলজিয়াম, লুক্সেমবার্গ, মাল্টা, আন্দোর্রা, মোনাকো। এরপরও থেমে নেই ইসরায়েলের নিষ্ঠুর হামলা। ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া উপত্যকায় দুর্ভিক্ষ চরম আকার ধারণ করেছে।
গত নভেম্বরে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) গাজায় যুদ্ধাপরাধ ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োযভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। এছাড়া ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গাজায় গণহত্যার অভিযোগে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতেও (আইসিজে) মামলা চলছে।
হার মানছে হামাস?
গাজার ভবিষ্যৎ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত পরিকল্পনার জবাব দিয়েছে হামাস। গাজার প্রশাসনিক কাঠামো নিয়ে দুই পক্ষের অবস্থান ভিন্ন।
ট্রাম্পের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, একটি আন্তর্জাতিক তত্ত্বাবধানে টেকনোক্র্যাট কমিটি গাজা পরিচালনা করবে এবং এ প্রক্রিয়ায় টনি ব্লেয়ারসহ আন্তর্জাতিক ব্যক্তিরা যুক্ত থাকবেন। হামাস বলেছে, গাজা পরিচালনা করবে একটি ফিলিস্তিনি স্বাধীন টেকনোক্র্যাট কমিটি, যা জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে গঠিত হবে এবং আরব ও ইসলামি সমর্থনে কার্যকর হবে।
গত শুক্রবার দেওয়া এক বিবৃতিতে হামাস পরিকল্পনার কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ মেনে নেওয়ার ইঙ্গিত দিলেও প্রশাসনিক কাঠামো ও নিজেদের ভবিষ্যৎ ভূমিকা নিয়ে মতভেদ প্রকাশ করেছে।
হামাস জানিয়েছে, তারা যুদ্ধবিরতি, ইসরায়েলি সেনাদের পূর্ণ প্রত্যাহার, জিম্মি ও বন্দিদের বিনিময় এবং গাজায় মানবিক সহায়তা ও পুনর্গঠনের বিষয়গুলোতে সম্মত।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ট্রাম্প প্রস্তাবিত সূত্র অনুযায়ী জীবিত ও মৃত ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তি দিতে তারা প্রস্তুত। তবে এ প্রক্রিয়ায় ‘ক্ষেত্রীয় শর্ত’ পূরণের কথা উল্লেখ করলেও বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেয়নি।
ট্রাম্পের পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, হামাসের জিম্মিদের ফেরত দেওয়ার ৭২ ঘণ্টার মধ্যেই ইসরায়েল ২৫০ আজীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ফিলিস্তিনি বন্দি এবং ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের পর আটক ১ হাজার ৭০০ গাজাবাসীকে মুক্তি দেবে। এর মধ্যে নারী ও শিশুরাও থাকবে। একইসঙ্গে প্রতি ইসরায়েলি জিম্মির মৃতদেহের বিনিময়ে ১৫ জন ফিলিস্তিনির মৃতদেহ ফেরত দেওয়া হবে।
সবচেয়ে বড় মতভেদ হামাসের ভবিষ্যৎ ভূমিকা নিয়ে। ট্রাম্পের পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, হামাস গাজার প্রশাসনে সরাসরি বা পরোক্ষভাবে কোনো ভূমিকা রাখবে না এবং ধাপে ধাপে গাজা নিরস্ত্রীকরণের পথে যাবে।
তবে হামাস নিজেদেরকে ফিলিস্তিনি জাতীয় কাঠামোর অংশ হিসেবে দাবি করেছে এবং নিরস্ত্রীকরণ প্রসঙ্গে কোনো মন্তব্য করেনি।
হামাস জানিয়েছে, গাজার প্রশাসন ও ভবিষ্যৎ কাঠামো নিয়ে আলোচনা একটি জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে এবং আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী হতে হবে। তবে আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষী বাহিনী বা হামাসের সদস্যদের নিরাপদে দেশত্যাগের মতো প্রস্তাবগুলো নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি সংগঠনটি।
‘যুদ্ধ থামাতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে হামাস’
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনা নিয়ে আশার সুর শোনা যাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্য বিশ্লেষকদের কণ্ঠে। তাদের মধ্যে অন্যতম তুরস্কের ইস্তাম্বুল জায়িম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলাম অ্যান্ড গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স সেন্টারের (সিআইজিএ) পরিচালক ও জননীতিবিষয়ক অধ্যাপক সামি আল-আরিয়ান।
তিনি বলেছেন, ট্রাম্পের পরিকল্পনা যুদ্ধের অবসান ঘটাতে কার্যকর হতে পারে। তবে সেটি নির্ভর করবে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর গাজা থেকে প্রত্যাহার ও বন্দিদের মুক্তির বিষয়ে ট্রাম্প কীভাবে পদক্ষেপ নেন তার ওপর।
আল-আরিয়ান বলেন, আমার বিশ্বাস হামাস ও অন্যান্যরা এই যুদ্ধের অবসান ঘটাতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে।
তিনি আরও যোগ করেন, যদি ট্রাম্প সত্যিই যুদ্ধ শেষ করতে আগ্রহী হন, তাহলে তার প্রস্তাবের মাধ্যমেই সে পথে অগ্রসর হওয়ার সুযোগ রয়েছে।
এদিকে গাজার সিভিল ডিফেন্স সংস্থা জানিয়েছে, হামাস যুদ্ধ বিরতির প্রস্তাবে সম্মত হওয়ার পরও ইসরায়েল গাজা নগরীতে বেশ কয়েকটি বিমান হামলা ও গোলাবর্ষণ চালিয়েছে। এতে শনিবার ভোর থেকে অন্তত সাতজন নিহত হয়েছেন।
সিভিল ডিফেন্সের মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল এএফপিকে বলেন, রাতটি ছিল অত্যন্ত সহিংস। ইসরায়েলি সেনারা গাজা নগরী ও উপত্যকার অন্যান্য এলাকায় বহু বিমান হামলা ও আর্টিলারি গোলাবর্ষণ চালিয়েছে, যদিও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বোমা হামলা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছিলেন।
ট্রাম্পের প্রস্তাবে হামাসের সম্মতি, স্বাগত জানাল জাতিসংঘ
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত ২০ দফা গাজা শান্তি পরিকল্পনার আলোকে জীবিত ও মৃত সকল ইসরায়েলি জিম্মি মুক্তি দিতে সম্মত হয়েছে হামাস। হামাসের এই প্রতিক্রিয়াকে স্বাগত জানিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস।
মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, মহাসচিব ‘হামাসের ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছেন এবং এতে উৎসাহিত হয়েছেন’।
ডুজারিক বলেন, ‘মহাসচিব সব পক্ষকে গাজায় চলমান সংঘাত শেষ করার সুযোগটি গ্রহণ করার আহ্বান জানান এবং কাতার ও মিসরকে মধ্যস্থতাকারী ভূমিকার জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন।’
সারা দেশে ‘মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান-২০২৫’ শুরু হয়েছে। ২২ দিনব্যাপী এ অভিযান চলবে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত। এ সময় ইলিশ আহরণ, পরিবহন, মজুদ, ক্রয়-বিক্রয় ও বিনিময় সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ থাকবে। এদিকে, ‘ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার’-এর আওতায় বাংলাদেশ নৌবাহিনীর জাহাজগুলো সমুদ্র ও উপকূলীয় এলাকায় এবং দেশের অভ্যন্তরীণ নদ-নদীতে ‘মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান-২০২৫’ পরিচালনা করছে। বাংলাদেশ নৌবাহিনীর যুদ্ধ জাহাজ অভিযানের অংশ হিসেবে চাঁদপুর এলাকায় বানৌজা ধানসিঁড়ি বা শহীদ ফরিদ ও বিএনডিবি গাংচিল; কক্সবাজার এলাকায় বানৌজা অতন্দ্র, শহীদ মহিবুল্লাহ, দুর্জয়, সাগর ও শহীদ দৌলত; খুলনা এলাকায় বানৌজা মেঘনা, চিত্রা বা তিতাস; বাগেরহাট এলাকায় বানৌজা করতোয়া, আবু বকর বা দুর্গম; পিরোজপুর ও বরগুনা এলাকায় বানৌজা সালাম ও কুশিয়ারা; বরিশাল এলাকায় বানৌজা পদ্মা, চিত্রা বা তিতাস এবং পটুয়াখালী এলাকায় এলসিভিপি-০১৩ বিশেষভাবে টহল দিচ্ছে।
সারা দেশে ‘মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযানের প্রথমদিনের খবর তুলে ধরা হলো;
ইউসুফ হোসেন অনিক, ভোলা: ভোলার বোরহানউদ্দিনে মা ইলিশ রক্ষা অভিযানের প্রথম দিনে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে প্রকাশ্যে বাজারে মা ইলিশ বিক্রির দায়ে অভিযান চালিয়ে ৮৫ কেজি ইলিশ মাছ সহ ৩ জনকে আটক করেছে বোরহানউদ্দিন উপজেলা প্রশাসন । শনিবার অপরাধ প্রতিরোধ ও জনস্বার্থে পরিচালিত অভিযানে উপজেলার কুঞ্জের হাট বাজারে অভিযান পরিচালনা করেন , উপজেলা নির্বাহি অফিসার রায়হান-উজ্জামান । পরে জব্দকৃত মাছ ৬ টি মাদ্রাসা ও এতিমখানায় বিতরণ করা হয় এবং বিক্রয়ের সাথে জড়িত ০৩ জনকে মৎস সুরক্ষা ও সংরক্ষণ আইন ১৯৫০ এর সংশ্লিষ্ট ধারায় ৫ হাজার টাকা করে সর্বমোট ১৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
এ সময় অভিযান পরিচালনা টিমের সদস্য, সিনিয়র উপজেলা মৎস কর্মকর্তা মনোজ কুমার সাহা, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা গোাবিন্দ চন্দ্র মন্ডল, ম্যারিন ফিশারিজ অফিসার, থানা পুলিশ, প্যানেল চেয়ারম্যান কাচিয়া ইউনিয়ন পরিষদ উপস্থিত ছিলেন।
বোরহানউদ্দিন উপজেলা নির্বাহি অফিসার মোঃ রায়হান-উজ্জামান জানান, জনস্বার্থে এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।
বরিশাল ব্যুরো: ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুমকে সামনে রেখে মা ইলিশ রক্ষায় সারা দেশের মতো বরিশালেও শুরু হয়েছে ২২ দিনের বিশেষ অভিযান। শনিবার সকালে নগরীর ডিসি ঘাট থেকে নৌ র্যালির মধ্য দিয়ে এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন বরিশাল জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ভারপ্রাপ্ত মীর মোহাম্মদ আসলাম, নৌ পুলিশ, কোস্টগার্ড, র্যাব ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। নৌ-র্যালীতে অংশ নেন প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা, মৎস্য ব্যবসায়ী এবং স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা।
জেলা প্রশাসক জানান, এ সময়ে ইলিশ ধরা, বিক্রি, পরিবহন ও মজুত সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকবে। কেউ আইন ভঙ্গ করলে সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাদণ্ড অথবা পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা করা হবে। মা ইলিশের প্রজনন নিশ্চিত করতে এবার নদীতে টহলের পাশাপাশি প্রথমবারের মতো আকাশে ড্রোন ব্যবহার করে নজরদারি চালানো হচ্ছে। এতে নদী তীরবর্তী এলাকায় অনিয়ম ঠেকানো সহজ হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
অভিযান চলবে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত। এই সময়ে নদীতে না নামতে জেলার প্রায় ৬৬ হাজার জেলে পরিবারকে ২৫ কেজি করে চাল দেওয়া হয়েছে। বরিশালসহ উপকূলীয় অঞ্চলের হাজারো জেলেকে এ সহায়তা পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন জেলা মৎস্য কর্মকর্তা। প্রতিবছরের মতো এবারও মা ইলিশ রক্ষা কার্যক্রম সফল হলে দেশে ইলিশ উৎপাদন আরও বাড়বে এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য ইলিশের স্থায়ী প্রজনন ক্ষেত্র নিশ্চিত হবে।
মইনুল হক মৃধা, রাজবাড়ী: মা ইলিশ রক্ষায় সরকার ঘোষিত নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার পদ্মা নদীতে সকালেই অভিযান পরিচালনা করেছে প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টরা। শনিবার সকাল ১০ টায় থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন সম্পর্কিত উপজেলা ট্রাস্কফোর্স গোয়ালন্দের আয়োজনে দৌলতদিয়া ৬ নম্বর ফেরিঘাট থেকে শুরু করে, চর কর্ণেশন, চর মজলিসপুর, ধোলাইয়ের চর, কলা বাগান চ্যানেলসহ পদ্মা নদীর বিভিন্ন স্থানে ইঞ্জিনচালিত ট্রলার নিয়ে অভিযান পরিচালনা করা হয়।
সরজমিনে অভিযানে থেকে দেখা যায়, নিষেধাজ্ঞার প্রথম দিনে পদ্মা নদীতে কোনো জেলে দেখা যায়নি। তবে নদী পাড়ে মাছ ধরার উদ্দেশ্যে অসাধু কিছু জেলে জাল রেখেছিল। প্রশাসনের ট্রলার দেখে তার নদীর সরু গলিতে তাদের মাছ ধরা ট্রলার নিয়ে চলে যায়। এরমধ্যেই একটি মাছ ধরা ট্রলার ফেলে ২-৩ জন জেলে দৌড়ে পালায়। পরে সেই ট্রলার, জাল জব্দ করেন গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মো. নাহিদুর রহমান। এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা আনোয়ারুল ইসলাম পাইলট, মা ইলিশ রক্ষায় কোস্ট গার্ডের দাড়িত্বে থাকা পেটি অফিসার শাহিন আলম, দৌলতদিয়া নৌ পুলিশ ফাঁড়ির এসআই মেহেদী হাসান অপূর্ব সহ পুলিশ ও কোস্ট গার্ডের দল।
এ বিষয়ে ইউএনও মোঃ নাহিদুর রহমান বলেন, মা ইলিশ রক্ষায় জেলা প্রশাসকের নির্দেশে কঠোর অবস্থানে থেকে অভিযান পরিচালনা চলছে এবং এ অভিযান প্রতিদিনই পরিচালনা করা হবে। এসময় নদীতে থাকা জেলেদের আটকসহ জাল ও অন্যান্য সামগ্রী জব্দ এবং আটকৃতদের মৎস্য আইন অনুযায়ী বিভিন্ন মেয়াদে সাজা প্রদান করা হবে। সরকার ঘোষিত নিষিদ্ধ সময় পর্যন্ত অভিযান অব্যাহত থাকবে।
তিনি আরও বলেন, আজ নদী থেকে আনুমানিক ৫০০ মিটার কারেন্ট জাল, মাছ শিকারে ব্যবহৃত একটি ট্রলার ও দেড় কেজি ইলিশ জব্দ করা হয়েছে। জব্দকৃত জাল ফেরিঘাটে এনে পুড়িয়ে ফেলা, মাছগুলো নদীর তীরবর্তী অসহায় মানুষের মধ্যে বিতরণ করা হয় এবং নৌকাটি নৌ পুলিশের হেফাজতে রাখা হয়।
আরও বলেন, গত বছরের তুলনায় এবারের অভিযান আরও জোরালো করা হবে। যাতে কেউ পদ্মা নদী থেকে নিষিদ্ধ সময়ে মা ইলিশ ধরতে না পারে। প্রশাসনের পাশাপাশি সচেতন নাগরিকদের সজাগ থাকার আহবান জানান তিনি।
জামাল হোসেন পান্না, নবীনগর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া): ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে “মা ইলিশকে ২২ দিন ডিম ছাড়ার সুযোগ দিন, ইলিশ সম্পদ বৃদ্ধিতে সহায়তা করুন” — এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে মেঘনা নদীতে মা ইলিশ সংরক্ষণে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে।
উপজেলা মৎস্য অফিস ও সলিমগঞ্জ নৌ পুলিশের যৌথ উদ্যোগে ধরাভাঙ্গা, বড়িকান্দি ও মানিকনগর এলাকায় এই অভিযান পরিচালিত হয়।
জানা যায়, সরকার ৪ অক্টোবর থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত ২২ দিন ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুমে ইলিশ আহরণ, বাজারজাতকরণ, ক্রয়-বিক্রয় ও পরিবহন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। এই নির্দেশনা বাস্তবায়নে নবীনগর উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা আক্কাস আলী এবং সলিমগঞ্জ নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক হায়দার তালুকদার নেতৃত্বে এ অভিযান পরিচালিত হয়।
অভিযানে সলিমগঞ্জ নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির এসআই আসাদুজ্জামানসহ অন্যান্য পুলিশ সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। এ সময় প্রায় দেড় লাখ টাকার অবৈধ জাল জব্দ করে নদীর পাড়ে প্রকাশ্যে পুড়িয়ে ধ্বংস করা হয়।
ঝালকাঠি প্রতিনিধি জানান : দেশজুড়ে শুরু হয়েছে মা ইলিশ রক্ষায় সরকারি অভিযান। প্রতি বছরের মতো এবারও মা ইলিশ সংরক্ষণে ২২ দিনব্যাপী নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সরকার। ঝালকাঠি জেলায় এ উপলক্ষে জেলা মৎস্য দপ্তরের তৎপরতা দেখা গেলেও বাস্তবে কতটা সফল হবে এ অভিযান তা নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে রয়েছে প্রশ্ন।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জয়দেব পাল জানান, ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে আগামী ২২দিন মা ইলিশ ধরা সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এজন্য নৌপুলিশ, কোস্ট গার্ড, র্যাব, সেনাবাহিনী ও স্থানীয় প্রশাসনের সমন্বয়ে নদীতে টহল জোরদার করা হবে। ঝালকাঠি জেলায় দিনে ও রাতে পৃথকভাবে ৮টি টহল টিম অভিযান পরিচালনা করবে। পাশাপাশি জেলেদের সচেতন করতে আগে থেকেই বিভিন্ন এলাকায় প্রচারণা চালানো হয়েছে।
তবে মাঠপর্যায়ে এসব কার্যক্রম কতটা কার্যকর হবে তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা। তাদের দাবি, প্রতি বছরই অভিযান চললেও অনেক জায়গায় গোপনে মা ইলিশ ধরা ও বিক্রি অব্যাহত থাকে। তাই শুধুমাত্র হাকডাক নয়, কঠোর নজরদারি ও বাস্তবায়নই পারে এই উদ্যোগকে সফল করতে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিষেধাজ্ঞার সঠিক বাস্তবায়ন হলে ইলিশের প্রজনন সুরক্ষিত হবে এবং আগামীতে আরও বেশি ইলিশ পাওয়া যাবে। এখন দেখার বিষয় কথায় নয়, বাস্তবে কতটা কার্যকর হয় এ অভিযান।
বাকেরগঞ্জ (বরিশাল) প্রতিনিধি : বরিশাল বাকেরগঞ্জে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী শনিবার থেকে মা ইলিশ রক্ষায় অভিযান শুরু হয়। ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুমে ৪ অক্টোবর থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত সরকার ঘোষিত। এই ২২ দিনে সারাদেশে ইলিশ মাছ আহরণ, পরিবহন, মজুদ, বাজারজাতকরণ এবং ক্রয় বিক্রয় সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ এবং দন্ডনীয় অপরাধ। সরকার ঘোষিত এই নির্দেশনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে জনস্বার্থে দিনভর মাঠে দেখা যায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুমানা আফরোজ কে।
বাকেরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুমানা আফরোজ সকাল আটটায় সরকার ঘোষিত কর্মসূচি মা ইলিশ রক্ষায় অভিযানে নামেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুমানা আফরোজ। এ সময় তার সাথে অভিযানে অংশ নেন বাকেরগঞ্জ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ সাইফুল ইসলাম।
উপজেলা মৎস্য দপ্তরের অন্যান্য কর্মকর্তা ও কর্মচারীগন । উপস্থিত ছিলেন বাকেরগঞ্জ থানা পুলিশের একটি দল এবং আনসার বাহিনীর সদস্যরা। সকাল আটটায় অভিযান শুরু করে তুলাতলি, পায়রা, কারখানা নদী সহ বিভিন্ন নদীতে অভিযান পরিচালনা করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুমানা আফরোজের নেতৃত্বাধীন দলটি। মা ইলিশ রক্ষায় অভিযানে প্রথম দিনেই বেশকিছু জাল জব্দ করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুমানা আফরোজ।
মৎস্য দপ্তরের আয়োজিত এই অভিযানে প্রতিটি এলাকায় হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুমানা আফরোজ বলেন উপজেলা প্রশাসনের এ অভিযান অব্যাহত থাকবে এবং আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে। তিনি জনস্বার্থে তথ্য দিয়ে উপজেলা প্রশাসনকে সহায়তা করতে আহ্বান জানান।
কর্ণফুলী (চট্টগ্রাম) সংবাদদাতা : চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলায় মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযানের উদ্যোগ নিয়েছেন কর্ণফুলী উপজেলা মৎস কর্মকর্তা মোহাম্মদ আব্দুল আলীম। শনিবার বিকাল ৩টায় উপজেলার কলেজ বাজার ও ব্রিজঘাট বাজারে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী মা ইলিশ সংরক্ষণে এ অভিযান পরিচালনা করা হয়।
এ সময় কর্ণফুলী উপজেলা মৎস কর্মকর্তা মোহাম্মদ আব্দুল আলীম বলেন, “৪ অক্টোবর থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান চলবে এবং নদীতে সকল প্রকার মাছ ধরা নিষিদ্ধ থাকবে। এটি সরকারি নির্দেশনা। সবাইকে তা মেনে চলার আহ্বান জানানো হচ্ছে।”
তিনি আরও জানান, ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ রক্ষায় ৪ থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত সারা দেশে ২২ দিনের বিশেষ অভিযান পরিচালিত হবে। এই সময় ইলিশ আহরণ, পরিবহন, বিপণন, মজুত, বাজারজাতকরণ, ক্রয়-বিক্রয় এবং বিনিময় নিষিদ্ধ ও দণ্ডনীয় অপরাধ।
আইন অমান্যকারীদের শাস্তি কমপক্ষে এক বছর থেকে সর্বোচ্চ দুই বছরের সশ্রম কারাদণ্ড, অথবা সর্বোচ্চ ৫,০০০ টাকা জরিমানা, অথবা উভয় দণ্ড হতে পারে বলে অবহিত করা হয়েছে।
কুমিল্লা নগরীর অন্তত ১৫টি পয়েন্টে প্রতিদিন বেচাকেনা হচ্ছে হাজার হাজার কেজি তরমুজ। ফলে মৌসুমের বাইরে তরমুজের স্বাদ মেলালেও কিছুটা ভোগান্তি বাড়ছে ফুটপাতে যাতায়াতে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এসব তরমুজ এসেছে রাজশাহীর কানসাট এলাকা থেকে। মাচা পদ্ধতিতে অসময়ে বাম্পার ফলন হওয়ায় স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করা হচ্ছে এবং বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। রাজশাহী থেকে কেজি প্রতি ৩০–৪০ টাকায় পাইকারি দরে বিক্রি হলেও কুমিল্লা শহরে তা ক্রেতাদের কিনতে হচ্ছে বেশি দামে।
প্রতিদিন প্রায় ৪০–৫০ জন খুচরা ব্যবসায়ী এসব তরমুজ বিক্রি করছেন। অপরদিকে নগরবাসীকে পড়তে হচ্ছে কিছুটা ভোগান্তিতে। রাস্তাজুড়ে বেনগাড়ি দখল করায় সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। ফলে সাধারণ মানুষের চলাচলে প্রতিবন্ধকতা দেখা দিচ্ছে।
তরমুজের উপকারিতা নিয়ে কৃষিবিদ হোসেন মিয়া বলেন, “তরমুজে ভিটামিন এ, সি, বি-৫, পটাশিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম রয়েছে। শরীর ঠান্ডা রাখা, হজমে সহায়তা ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে তরমুজ কার্যকর।”
তবে নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, এলোমেলোভাবে এসব বেনগাড়ি রাস্তায় বসানোর ফলে শহরের স্বাভাবিক চলাচল ব্যাহত হচ্ছে।
পরিবেশবিদ নাসির উদ্দীন বলেন, “ছোট শহরে এমন দখলদারিত্ব অচলাবস্থা তৈরি করছে। সিটি কর্পোরেশনের উচিত দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া এবং বিকল্প কর্মসংস্থানের পথ তৈরি করা।”
অন্যদিকে মৌসুম ছাড়া তরমুজের স্বাদ পেয়ে আনন্দিত কিছু ক্রেতা, তবে তারই পাশাপাশি যানজট ও হয়ে উঠেছে নতুন দুশ্চিন্তা।
বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিল কর্তৃক নিয়মবহির্ভূতভাবে ঝিনাইদহ জেলা কমান্ড অনুমোদনের বিরুদ্ধে নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন জেলার মুক্তিযোদ্ধারা। শনিবার ঝিনাইদহ আইনজীবী সমিতির ভবনে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন, ঝিনাইদহ শহীদ জিয়াউর রহমান ল কলেজের অধ্যক্ষ মুক্তিযোদ্ধা এস এম মশিয়ুর রহমান। এ সময় বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আব্দুল আলীম, গোলাম মোস্তফা লোটন, রেজাউল ইসলাম, ইসরাইল হোসেন, সিদ্দিকুর রহমান ও লিয়াকত আলীসহ অনেক মুক্তিযোদ্ধা উপিস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করা হয়, দেশের সরকার পরিবর্তন হলেও ‘দেশকে স্বাধীন করার জন্য জীবন বাজি রাখা মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে প্রতারণা করা হচ্ছে। ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধা সংসদকে প্রশ্নবিদ্ধ করার অপচেষ্টা আমরা কোনোভাবেই মেনে নেব না।
অভিযোগ করা হয়, গত ৫ জুলাই কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের সভায় স্পষ্ট সিদ্ধান্ত হয়, জেলা কমান্ড গঠন করতে হবে উচ্চতর ট্রেনিংপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে। যেখানে একাধিক কমিটি থাকবে, সেখানে সমঝোতা অথবা কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে মুক্তিযোদ্ধাদের মতামতের ভিত্তিতে কমিটি গঠনের কথা বলা হয়।
এছাড়া বিগত সরকারের ঘনিষ্ঠ সহযোগী কিংবা অবৈধ সুবিধাভোগীদের বাদ দেওয়ার নির্দেশনা ছিল। কিন্তু এসব নির্দেশনা উপেক্ষা করে ঝিনাইদহ জেলা কমান্ড গঠিত হয়েছে বলে অভিযোগ করেন মুক্তিযোদ্ধারা।
অভিযোগে দাবি করা হয়, অনুমোদিত কমিটির ১নং আহ্বায়ক, ২নং যুগ্ম আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব এই তিনজনের কেউই উচ্চতর ট্রেনিংপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা নন। বরং তারা বিগত সরকারের ঘনিষ্ঠ ছিলেন এবং অবৈধ সুযোগ-সুবিধা ভোগ করেছেন।
এছাড়া জেলার পক্ষ থেকে চারটি কমিটি জমা দেওয়া হলেও প্রস্তাবিত তিন কমিটির কাউকে না জানিয়ে গোপনে একটি প্যানেল থেকে কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয়। ঘোষিত কমিটির আহ্বায়কের ছেলে বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের নিয়ন্ত্রিত মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের সদস্য সচিব। উপরন্তু ঘোষিত কমিটির ১১ সদস্যের মধ্যে ছয়জনই পদত্যাগ করেছেন, ফলে গঠিত ওই কমিটির কোনো বৈধতাই নেই।
দারিদ্র্যবিমোচন ও মানব উন্নয়নের লক্ষ্যে জীবিকা উন্নয়ন কেন্দ্র পবা প্রকল্পের অধীনে দ্বিতীয় জাকাত তহবিল হস্তান্তর করা হয়েছে। নাবিল গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রির সহযোগিতায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করে সেন্টার ফর জাকাত ম্যানেজমেন্ট (সিজেডএম)। শনিবার পবার ভেড়াপাড়ায় নাবিল গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রির মসজিদে এই জাকাত তহবিল হস্তান্তর করা হয়।
সেন্টার ফর জাকাত ম্যানেজমেট (সিজেডএম) প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এ পর্যন্ত মোট ৭১টি জীবিকা উন্নয়ন প্রকল্প-জীবনমান উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের মাধ্যমে দারিদ্র্য জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে অবদান রেখে চলেছে। এরই ধারাবাহিকতায় জীবিকা উন্নয়ন কেন্দ্র পবা, রাজশাহী প্রকল্পের অধীনে দ্বিতীয় দফায় ৩৯৮টি মুস্তাহিক পরিবারের মাঝে মোট ৪৬ লাখ ৮৫ হাজার টাকার জাকাত তহবিল হস্তান্তর উপলক্ষে এক অনাড়ম্বর তহবিল হস্তান্তর অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেন মো. মিজানুর রহমান, সিজেডএমের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় এরিয়া ম্যানেজার। পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াতের মধ্যে দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। এ সময় স্বাগত বক্তব্য রাখেন জীবিকা পবা প্রকল্পের প্রোগ্রাম ম্যানেজার মো. আব্দুল ওয়াদুদ।
পরে প্রকল্পের চারজন সদস্য তাদের অভিজ্ঞতা ও অনুভূতি ব্যক্ত করেন। সদস্যদের অভিজ্ঞতা ও অনুভূতি শোনার পর জীবিকা পবা প্রকল্পের সামগ্রিক কার্যক্রম নিয়ে বক্তব্য রাখেন সিজেডএমের জীবিকা বিভাগের সহকারী মহাব্যবস্থাপক জনাব এনামুল হক।
এ সময় সিজেডএমের জীবিকা প্রকল্পের গুরুত্ব তুলে ধরেন এবং প্রতিষ্ঠানটি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেন সিজেডএমের সম্মানিত হেড অব করপোরেট অ্যাফেয়ার্স, কর্নেল (অব.) জাকারিয়া হোসেন।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কৃষিবিদ মো. আমিনুল ইসলাম, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, নাবিল গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন নাবিল গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজর চেয়ারম্যান জাহান বকস মণ্ডল। তিনি বলেন, আপনাদের জন্য আমরা কাজ করছি। শুধু জাকাত দিয়েই আমরা সহযোগিতা করি না। এর পাশাপাশি মসজিদের ইমাম, মাদ্রাসার ছাত্র, চিকিৎসা, দরিদ্র পরিবারের ছেলে-মেয়েদের বিবাহের ব্যবস্থাসহ নারীদের আত্মনির্ভরশীল করে তোলার জন্য কর্মসংস্থান তৈরিতে কাজ করছি আমরা।
সংস্কারের অভাবে উত্তর চট্টগ্রামের ৭নং রাউজান ইউনিয়নের গুরুত্বপূর্ণ মোহছেন আলী সড়কের বেহাল দশা দেখা দিয়েছে। সড়কের বিভিন্ন স্থানে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। সামান্য বৃষ্টিতেই হাঁটু পানিতে ডুবে যায় রাস্তা। পানি দিনের পর দিন জমে থাকায় তিনটি ইউনিয়নের হাজারও মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়ছে। রাউজান-নোয়াপাড়া সড়ক সেকশন ২-এর উত্তর গুজরা আদ্যপীট মন্দিরের উত্তর প্রাচীরঘেঁষে পূর্বদিকে মোহছেন আলী জামে মসজিদ ও ফোরকানিয়া মাদ্রাসা পর্যন্ত বিস্তৃত ব্যস্ততম এ সড়কটি রাউজান সদর ইউনিয়নের মঙ্গলখালী গ্রামের সঙ্গে সংযুক্ত। এটি পূর্বগুজরা, কদলপুর ও রাউজান সদর ইউনিয়নের মানুষের জন্য বিকল্প ও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সড়ক। স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসাপড়ুয়া শিক্ষার্থীসহ প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ প্রতিদিন যাতায়াত করে এ সড়ক দিয়ে। বিকল্প এ সড়ক ব্যবহার করে স্থানীয়রা রাউজান স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, রমজান আলী হাট, উত্তর গুজরা উচ্চবিদ্যালয়, আর্য্যমৈত্রীয় হাইস্কুল, আদ্যপীঠ মন্দিরসহ নানা স্থানে যাতায়াত করে। কিন্তু দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় মাসের মধ্যে রাস্তা আবার নষ্ট হয়ে যায়। এখন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
উত্তর গুজরা গ্রামের বাসিন্দা মোস্তফা কামাল ও বেলাল হোসেন বলেন, ‘বৃষ্টি আর বন্যার পানিতে পুরোনো ইট-সলিং ওঠে গিয়ে অসংখ্য গর্ত তৈরি হয়েছে। প্রায়ই ট্যাক্সি-মোটরসাইকেলের দুর্ঘটনা ঘটে। শিশুদের স্কুলে পাঠানো কঠিন হয়ে পড়েছে। রোগীদেরও ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
এলাকাবাসীর দাবি, সড়কটি কার্পেটিং করে সংস্কার করা হলে দুর্ভোগ লাঘব হবে। তারা উপজেলা কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।’
রাউজান উপজেলা প্রকৌশলী আবুল কালাম বলেন, ‘রাউজানে সে সমস্ত সড়ক অনুন্নত ও চলাচলের জনদুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে সেগুলোর তালিকা আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রেরণ করেছি, বরাদ্দ অনুমোদন হলে শীঘ্রই উন্নয়নের কাজ শুরু হবে।’
বড়াল ব্রিজ স্টেশনে যাত্রাবিরতি শেষে ট্রেন থেকে যাত্রীদের ওঠানামা শেষ হয়নি। নির্ধারিত যাত্রাবিরতির পূর্বেই ট্রেনপরিচালকের পতাকার সংকেতে ট্রেনটি তার গন্তব্যের অভিমুখে যাত্রা আরম্ভ করে।
এ সময় ট্রেন থেকে তাড়াহুড়ো করে নামতে গিয়ে সুফিয়া বেগম (৩০) নামে এক গৃহবধূ ট্রেনের নিচে পড়ে গিয়ে হাত কেটে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
ঘটনার বিলম্বে সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে ঈশ্বরদী-ঢাকা রেলপথে পাবনার ভাঙ্গুড়া পৌর সদরে অবস্থিত বড়াল ব্রিজ রেলস্টেশনে আন্তঃনগর ধুমকেতু এক্সপ্রেস ট্রেনে এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনাটি ঘটেছে। এই ঘটনায় যাত্রী সাধারণ চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছে।
হাত বিচ্ছিন্ন হওয়া ট্রেনযাত্রী সুফিয়া বেগম পার্শ্ববর্তী ফরিদপুর উপজেলার বেরহলিয়া গ্রামের সেনা সদস্য মাসুদ রানার স্ত্রী।
প্রত্যক্ষদর্শী ও ট্রেনযাত্রীদের অভিযোগ, প্রায় ৪০ মিনিট বিলম্বে ঢাকা-রাজশাহীগামী ৭৬৯নং আপ আন্তঃনগর ধুমকেতু এক্সপ্রেস ট্রেন বড়াল ব্রিজ স্টেশনে যাত্রাবিরতি দেয়। ট্রেনটি স্টেশনে ৩-৪ মিনিট যাত্রাবিরতি দেওয়ার কথা ছিল।
কিন্তু ঘটনার দিন ট্রেনটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত যাত্রাবিরতি না দিয়ে গন্তব্যের উদ্দেশে যাত্রা আরম্ভ করেছিল।এ কারণে ট্রেন থেকে যাত্রীরা তাড়াহুড়ো করে নামতে চেষ্টা করে।এ সময় চলন্ত ট্রেন থেকে নামতে গিয়ে সুফিয়া বেগম ট্রেনের নিচে পড়ে যায়।
তবে সৌভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও তার হাত কাটা পড়ে ট্রেনের চাকায়। ঘটনার পরপরই স্টেশনের যাত্রীসাধারণ দ্রুত ওই নারীকে উদ্ধার করে ভাঙ্গুড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। আশঙ্কাজনক অবস্থা দেখে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকরা তাকে অন্যত্র চিকিৎসার জন্য রেফার্ড করেন।
এ বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত স্টেশন মাস্টার আল মামুনকে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করলে তিনি ঊর্ধ্বতন দপ্তরে বিষয়টি অবহিত করেন।
ট্রেনটি নির্ধারিত যাত্রাবিরতির পূর্বেই গন্তব্যের উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়ার বিষয়ে স্টেশন মাস্টার আল মামুন বলেন, বড়াল ব্রিজ স্টেশনে সিগন্যাল নেই।
এখানে ট্রেন পরিচালক ও ট্টেনচালক নিজ দায়িত্বে যাত্রা বিরতির পর গন্তব্যের দিকে যাত্রা করে থাকে। ট্রেন ছেড়ে দেওয়ার পরে নামতে গিয়ে ওই যাত্রীর হাত কাটা পরেছে বলে তিনি স্বীকার করেছেন।
শাপলা বাংলাদেশের জাতীয় ফুল। একসময় গ্রামবাংলার খালে, বিলে-ঝিলে, পুকুরের পানিতে, নিচু জমিতে প্রাকৃতিকভাবেই জন্মাত শাপলা-শালুক ও ড্যাপ নামের ফুল। নিজেদের সৌন্দর্য মেলে ধরে ফুটে থাকত এ ফুল। কালের বিবর্তনে আর উপযুক্ত পরিচর্যার অভাবে যশোরের কেশবপুরে আজ নিজের অস্তিত্ব হারাতে বসেছে জাতীয় ফুল শাপলা। স্থানীয় সচেতন মহল বলছেন, ফসলি জমিতে অতিমাত্রায় কীটনাশক ব্যবহার, অপরিকল্পিতভাবে ঘরবাড়ি নির্মাণ, খাল দখল ও সংস্কারের অভাবে বর্ষাকালে ওই অঞ্চলে এখন আর তেমন পানি হয় না বলে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে জাতীয় ফুল শাপলা। ফুলটি পুরোপুরি বিলুপ্ত হওয়ার আগেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি স্থানীয় সচেতন মহলের।
জানা গেছে, শাপলা সপুষ্পক উদ্ভিদ পরিবারের এক প্রকার জলজ উদ্ভিদ। এ পরিবারভুক্ত সকল উদ্ভিদই শাপলা নামে পরিচিত। সাদা শাপলা ফুল বাংলাদেশের জাতীয় ফুল। এই ফুল সাধারণত ভারত উপমহাদেশে দেখা যায়। হাওর-বিল ও দীঘিতে এটি বেশি ফুটে। শাপলা ফুল রাতে পূর্ণাঙ্গভাবে ফুটে। এরা দিনের বেলায় কিছুটা সংকুচিত হয়। শাপলা আসলে প্রাকৃতিকভাবে জন্ম নেওয়া এক ধরনের ফুল যার কোনো রকম পরিচর্যা ছাড়াই বিলে-ঝিলে জন্ম নেয়। সাধারণত আবদ্ধ অগভীর জলাশয়, খাল-বিলে জন্মে থাকে ফুলটি। শাপলা ফুল কয়েক প্রকারের হয়ে থাকে। যার মধ্যে সাদা ফুলবিশিষ্ট শাপলাটি একসময় গ্রামবাংলায় অনেকেই সবজি হিসেবে ব্যবহার করতেন। বহু ঔষধি গুণও রয়েছে এই শাপলায়। হজমের সমস্যায় এই শাপলা ফুল ব্যবহার করা হয়। ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্য এই উদ্ভিদ উপকারী। অতিরিক্ত পিপাসা নিবারক ও আমাশা রোধে ব্যবহার করা হয় এই উদ্ভিদ। সাধারণত ওষুধের জন্য এই উদ্ভিদের ফুল ও বীজ ব্যবহার করা হয়। এই উদ্ভিদের বীজ ভেজে খাওয়া হয়। শাপলা ফুলের গোড়ায় পানির নিচে একপ্রকার আলুর মতো কন্দ থাকে, যা রান্না করে খাওয়া যায়। একসময় গ্রামবাংলায় এই ফুল বিভিন্ন জলাশয়ে বর্ষাকালে অহরহ দেখা যেত। আজ তা বিলুপ্তির পথে।
স্থানীয় বাসিন্দা হুমায়ুন কবির বলেন, ‘একসময় এই জনপদে বর্ষা মৌসুমে শুরুতে সকালে বিভিন্ন স্থানে শাপলার বাহারি রূপ দেখে চোখ জুড়িয়ে যেত। এসব দৃশ্য চোখে না দেখলে বোঝানো যাবে না। অনেকে আবার শাপলা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন।’
স্কুল শিক্ষক আব্দুল হালিম বলেন, ‘বর্তমান সভ্যতার ছোঁয়ায় ফসলি জমি ভরাট করে ঘরবাড়ি নির্মাণ, পুকুর খনন, জলাশয়ে কীটনাশক ব্যবহারের পরিমাণ বেড়ে গেছে। যার কারণে শাপলা দিন দিন বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। একসময় বর্ষাকালে এই অঞ্চলের ফসলি মাঠে পানি জমত, আর ওই জমা পানিতে জন্মাতো নানা প্রজাতির শাপলা। এখন আর তেমন চোখে পড়ে না এ দেশের জাতীয় ফুলটি। এ ফুলের সঙ্গে বাংলা ও বাঙালির ঐতিহ্য আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে আছে। ফসলি মাঠে, ডোবা, পুকুর ও জলাশয়ে অতিমাত্রায় কীটনাশক ব্যবহার ও গ্রামীণ খালের নাব্যতা হারানোর কারণে জাতীয় ফুল শাপলা দিন দিন বিলুপ্ত হতে চলেছে। এ ফুলের অস্তিত্ব ধরে রাখতে নিজ নিজ জায়গা থেকে কাজ করতে হবে। বিলুপ্ত প্রায় জাতীয় ফুলটি সম্মিলিতভাবে রক্ষা করার দায়িত্ব এই অঞ্চলের প্রত্যেকটি মানুষের।
বাঙালি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের শারদীয় দুর্গা পূজা উপলক্ষে যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে টানা পাঁচ দিন আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধ থাকার পর শনিবার সকাল থেকে দুদেশের মধ্যে আমদানি রপ্তানি বাণিজ্য পুনরায় শুরু হয়েছে। আমদানি রপ্তানি বাণিজ্য শুরু হওয়ায় দুবন্দরে কর্মচঞ্চল্যতা ফিরে এসেছে। আমদানি রপ্তানি বাণিজ্য চালু হওয়ার কথা নিশ্চিত করে জানিয়েছেন বেনাপোল কাস্টমস এর কার্গো সুপারিনটেনডেন্ট আবু তাহের ।
ভারতের পেট্রাপোল বন্দর ক্লিয়ারিং এজেন্ট স্টাফ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কার্ত্তিক চক্রবর্তী বলেন, ‘শারদীয় দুর্গাপূজায় ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে ২ অক্টোবর পর্যন্ত পেট্রাপোল - বেনাপোল বন্দর দিয়ে সব ধরনের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য বন্ধ ছিল। ছুটি শেষে আজ শনিবার সকাল থেকে দুই দেশে মধ্যে আমদানি রপ্তানি বাণিজ্য শুরু হয়েছে। কর্মচঞ্চলতা ফিরে এসেছে বান্দর এলাকায়।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাজেদুর রহমান বলেন, পূজার ছুটি শেষে আজ সকাল থেকে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে আমদানি রপ্তানি বাণিজ্য পুনরায় চালু হয়েছে। তবে পেট্রাপোল বন্দরে সিএন্ডএফ অফিসের স্টাফদের উপস্থিতি কম থাকায় আমদানী রপ্তানি বাণিজ্যের গতি অন্যান্য দিনের চেয়ে কম।
বেনাপোল স্থলবন্দরের পরিচালক (ট্রাফিক) মো. শামীম হোসেন বলেন, শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে ভারতে পাঁচ দিন সরকারি ছুটি ছিল । ৫ দিন সরকারি ছুটি থাকার কারণে এ পাঁচ দিন বেনাপোল পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে আমদানি রপ্তানি বাণিজ্য বন্ধ ছিল। ছুটি শেষে শনিবার সকাল থেকে দুদেশের মধ্যে আমদানি রপ্তানি বাণিজ্য পুনরায় চালু হয়েছে। আমদানি রপ্তানি বাণিজ্য চালু হওয়ায় কর্মচঞ্চলতা ফিরে এসেছে উভয় বন্দর এলাকায়। তবে বন্ধের এ কয়দিন বেনাপোল কাস্টমস হাউস ও বেনাপোল বন্দর সীমিত পরিসরে কার্যক্রম চালু রেখে শুল্কায়ন কার্যক্রম চালু সহ ও বন্দরে লোড আনলোডের কার্যক্রম সীমিত পরিসরে হয়েছে।
জুলাই আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক ও এনসিপি'র উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম মন্তব্য করেছেন অভ্যুত্থান পরবর্তী নতুন বাংলাদেশ গঠনে এবং সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার গুলোতে বিএনপি ‘নোট অব ডিসেন্ট’ (ভিন্নমত পোষণ) দিয়েছে। গত শুক্রবার রাতে ঠাকুরগাঁও জেলা মুক্তিযুদ্ধ কসপ্লেক্স ভবনে এনসিপির সাংগঠনিক সমন্বয়ক সভা শেষে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন।
উত্তরে সারজিস আলম বলেন, অনেকগুলো সংস্কার প্রস্তাব ছিলো। তার মধ্যে এই জায়গায় গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারগুলোতে বিএনপি ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিয়েছে। মনে করেন ৫০ টি সংস্কারের চেয়ে ৫ টি সংস্কার বেশি গুরুত্বপূর্ণ। বিএনপি সেখানে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিয়েছে।
তিনি বলেন, কিন্তু ‘নোট অব ডিসেন্ট’ মানে এমন না যে ঐক্যমত কমিশন সেগুলো বাদ দিয়ে দিবে। এখন পর্যন্ত আমরা ওগুলোকে পাচ্ছি, দেখছি। যেগুলো ঐক্যমত কমিশনে সিদ্ধান্ত হয়েছে যে এগুলো তারা জুলাই সনদে দেখতে চায় এবং জুলাই সনদের ড্রাফট(খসড়া) তৈরি হয়েছে। আমরা মনে করি ওইগুলো যদি আইনগত ভিত্তি দেয়া হয়।
নির্বাচনী প্রতীক শাপলার ব্যপারে সার্জিস আলম বলেন, নির্বাচন কমিশন কোন একটি রাজনীতিক দলের চাপে পড়েছে। শাপলা প্রতীক হিসেবে দিতে আইনগত কোন বাঁধা নেই। যদি আমাদের শাপলা না দেয়া হয় প্রয়োজনে রাজনীতিক ভাবে আমরা সেটি মোকাবিলা করবো।
জাতীয় পার্টি ইস্যুতে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগকে স্বৈরাচার প্রতিষ্ঠিত করতে সহযোগিতা করেছে জাতীয় পার্টি। এখন জাতীয় পার্টি সাধু সাজলে বাংলাদেশের মানুষ সেটি মেনে নেবে না। দলটির রাজনীতিকে বাংলাদেশে নিষিদ্ধ করতে হবে।
আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব বা পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন প্রসঙ্গে এনসিপির এ নেতা বলেন, আমরা মনে করি পিআর উচ্চকক্ষে প্রসঙ্গিক। কিন্তু এ মুহূর্তে বাংলাদেশে নিম্নকক্ষে পিআর হওয়ার মতো অবস্থা নেই।
এ সময় এনসিপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক গোলাম মুর্তজা সেলিমসহ দলটির অন্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।