শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫
২৯ ভাদ্র ১৪৩২

বিসিএস জটে পিএসসি

আপডেটেড
১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ১৬:১৮
হাসান মেহেদী
প্রকাশিত
হাসান মেহেদী
প্রকাশিত : ১৯ অক্টোবর, ২০২২ ০৯:৪০

হাসান মেহেদী

বিসিএস পরীক্ষা নিয়ে জটে পড়েছে পিএসসি। একসঙ্গে চারটি বিসিএস পরীক্ষা আটকে গেছে। ফলে মন্ত্রণালয়, দপ্তর ‍ও অধিদপ্তরে প্রথম শ্রেণির পদগুলোতে নিয়োগ দেওয়া যাচ্ছে না।

জনপ্রশাসন সূত্র বলছে ৪৩ হাজারের বেশি পদ শূন্য পড়ে আছে।

চাকরির মেয়াদ শেষে প্রতিদিনই কর্মকর্তারা অবসরে যাচ্ছেন, কিন্তু বিসিএসের মাধ্যমে প্রতিবছর সেসব পদ পূরণ করতে পারছে না সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। শূন্য পদগুলোতে আটকে থাকা ৪ বিসিএসের মাধ্যমে ক্যাডার ও নন-ক্যাডার পদে অন্তত ১৬ হাজার পদ পূরণ করা যাবে।

পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ৪ বছর পার হলেও ৪০তম বিসিএসের নিয়োগ শেষ করতে পারেনি পিএসসি। ৩ বছর ধরে আটকে আছে ৪১তম বিসিএসের নিয়োগ প্রক্রিয়া, যেটির লিখিত পরীক্ষা শেষ হয়েছে। আর দুই বছরে ৪৩তম বিসিএস পৌঁছেছে লিখিত পরীক্ষা পর্যন্ত। গত এক বছরে ৪৪তম বিসিএস সবেমাত্র পার করেছে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা।

এই ৪টি বিসিএসের বাইরে একমাত্র ব্যতিক্রম ৪২তম বিশেষ বিসিএস পরীক্ষা। যেটিতে প্রিলিমিনারি ও মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগ দেয়ার কারণেই তা এক বছরে শেষ করতে পেরেছে পিএসসি।

পিএসসির তথ্য মতে, গত ৫ বছরে ৫টি বিসিএসের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। এর মধ্যে এখন পর্যন্ত স্বাস্থ্য ক্যাডারে ৪২তম (বিশেষ) বিসিএস ছাড়া একটিরও নিয়োগ সম্পন্ন হয়নি। ফলে বিসিএসের মাধ্যমে নিয়োগের অপেক্ষায় থাকা লাখো চাকরিপ্রার্থীর মধ্যে অসন্তোষ বাড়ছে।

এই পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে এক বছরের মধ্যে একটি বিসিএসের নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। কর্মকর্তারা বলছেন, আগামী মাসে ৪৫তম বিসিএসের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে ১২ মাসের মধ্যে নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করতে চান তারা।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বলছে, প্রতি বছরই সরকারি চাকরি থেকে অবসর নিচ্ছেন বিসিএস কর্মকর্তারা। কিন্তু প্রতিবছর বিসিএস পরীক্ষা নিয়ে নতুনদের নিয়োগ না হওয়ায় বর্তমানে প্রথম শ্রেণির ৪৩ হাজার ৩৩৬টি পদ ফাঁকা রয়েছে। এর মধ্যে মন্ত্রণালয় ও বিভাগে ১ হাজার ২৪৮টি; দপ্তর ও অধিদপ্তরে ২০ হাজার ৩৫৫টি; বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, ইউএনও এবং এসিল্যান্ডের কার্যালয়ে ৬৭৪টি; স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও করপোরেশনে প্রথম শ্রেণির পদে ২১ হাজার ৫৯টি পদ ফাঁকা রয়েছে।

এই বিষয়ে ৪০তম বিসিএসে সুপারিশপ্রাপ্ত একজন প্রার্থী দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘স্নাতক সম্পন্ন করার পর চাকরির বাজারে আমার প্রথম সফলতা ছিল ৪০তম বিসিএস। এই একটি বিসিএসই চার বছর কেটে গেল। কিন্তু এখনো চূড়ান্ত নিয়োগপ্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়নি। গত ৩০ মার্চ ৪০তমের চূড়ান্ত ফল দেয়ার সাড়ে ৬ মাস গত হলেও এখনো প্রজ্ঞাপন পাচ্ছি না। এর মাঝেই ৪১তম ও ৪৩তম বিসিএসের লিখিত ফলসহ ৪৪তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষাও ঝুলে আছে। এদিকে নন-ক্যাডার সুপারিশ নিয়েও একটা ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এভাবে চলতে থাকলে এক বছরে বিসিএসের নিয়োগ সম্পন্ন করার যে লক্ষ্য পিএসসি হাতে নিচ্ছে, সেটির সফলতা নিয়েও আমাদের মতো চাকরিপ্রত্যাশীরা সন্দিহান।

বাড়ে আবেদনের সময়

বিসিএস আবেদনে বিজ্ঞপ্তি দেয়ার পর প্রথমপর্যায়েই একাধিকবার সময় বাড়ানো হয়। আবেদনকারীদের কোনো একটি পক্ষ থেকে দাবি জানালেই সময় বাড়িয়ে দেয় পিএসসি। ফলে শুরুতেই হোঁচট খায় নিয়োগ প্রক্রিয়া। গত ৫ বছরে প্রায় সবকয়টি বিসিএসেই আবেদনের সময় বাড়ানো হয়েছে। ৪৩তম বিসিএসে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সম্মান শেষবর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষা না হওয়ায় ৩ দফা ও ৪৪তম বিসিএসে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা আটকে যাওয়ায় এক মাস আবেদনের সময় বাড়ানো হয়। এখনো এসব বিসিএসের প্রক্রিয়া ঝুলে রয়েছে।

পিএসসি কর্মকর্তারা বলছেন, ‘করোনা মহামারির কারণে দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ থাকা, আবেদনের সময় বাড়ানো, শিক্ষকরা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে খাতা মূল্যায়ন না করার কারণে নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করতে সময় লেগে যাচ্ছে। পিএসসি সবসময় শিক্ষার্থীবান্ধব। তাই শিক্ষার্থীরা দাবি জানালে সেটাকে আমলে নিয়ে পরীক্ষার সুযোগ দিতে হয়। আবার পিএসসির আলাদা কোনো পরীক্ষক নেই। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের দিয়ে খাতা দেখাতে হয়। ফলে শিক্ষকরা নিজেদের কাজের ফাঁকে এই কাজগুলো করে থাকেন। সে কারণে পরীক্ষার কাজ দ্রুত শেষ করা যায় না। আবার অনেক সময় শিক্ষকরা সঠিকভাবে খাতা মূল্যায়ন না করেই জমা দেন। সে সব খাতা আবার কয়েক ধাপে যাচাই-বাছাই করে ফল প্রকাশ করতে হয়।’

এসব বিষয়ে নিয়ে সরকারি কর্ম কমিশনের চেয়ারম্যান সোহরাব হোসাইনের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি এ বিষয়ে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন।

জানতে চাইলে সরকারি কর্ম কমিশনের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (ক্যাডার) আনন্দ কুমার বিশ্বাস দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘কোনো কাজই আটকে নেই। দ্রুত সময়ের মধ্যে সব পরীক্ষার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে কাজ চলছে। করোনাসহ নানা জটিলতায় কিছুটা বেশি সময় লাগছে। কিন্তু কমিশন নতুন করে একটা পরিকল্পনা করেছে যেখানে আগামী এক বছরের মধ্যে একটা বিসিএস নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করা হবে। ৪৫তম বিসিএসকে মডেল হিসেবে ধরে আমরা এই সময়সীমা বাস্তবায়নের চেষ্টা করছি।’

পরীক্ষকদের ভুলের স্বীকার ৪১তম বিসিএস

৪১তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা শেষ হয়েছে গত বছরের ৭ ডিসেম্বর। লিখিত পরীক্ষার ৯ মাস পেরোলেও এখন পর্যন্ত ফল প্রকাশ করতে পারেনি পিএসসি। ৩১৮ পরীক্ষকের অবহেলার কারণে এই দেরি হচ্ছে বলে জানিয়েছে কমিশন।

নিয়ম অনুযায়ী, একজন পরীক্ষক খাতা মূল্যায়ন করার পর তার মূল্যায়ন সঠিক হয়েছে কি না, সেটি যাচাইয়ের জন্য ওই খাতা দ্বিতীয় ধাপে একজন নিরীক্ষক পুনরায় পরীক্ষা করেন। পুনর্নিরীক্ষণ করার সময় নিরীক্ষক দেখেন, যেখানে যেমন নম্বর দেয়ার কথা ছিল, তা দেয়া হয়েছে কি না আবার নম্বর যোগ করতে কোথাও ভুল হয়েছে কি না। এই প্রক্রিয়া শেষ হলে তবেই ফল চূড়ান্ত করা হয়।

পিএসসি বলছে, পরীক্ষকরা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে খাতা মূল্যায়ন শেষ করতে পারেনি। পুনর্নিরীক্ষণের সময় দেখা গেছে কোনো কোনো পরীক্ষক সব প্রশ্নের উত্তর মূল্যায়ন না করেই খাতা জমা দিয়েছেন। কেউ কেউ নম্বরের যোগফলে ভুল করেছেন। এসব কারণে ফের ওই সব খাতা তৃতীয় পরীক্ষকের কাছে পাঠিয়ে মূল্যায়ন করতে হচ্ছে। ত্রুটি রয়েছে এমন ৩১৮ শিক্ষককে পিএসসিতে ডেকে এনে ফল সংশোধন করতে হচ্ছে। এদের মধ্যে আবার কয়েকজন শিক্ষকের সঙ্গে ঠিকভাবে যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না। যে কারণে সময় বেশি লাগছে। তবে নির্ভুল পরীক্ষা ও ফল প্রকাশ করতে এই সময় নেয়া হচ্ছে।

এই বিষয়ে পরীক্ষানিয়ন্ত্রক (ক্যাডার) আনন্দ কুমার বিশ্বাস দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘আমরা আমাদের কাজ গুছিয়ে এনেছি। কমিশন বললেই সে অনুযায়ী আমরা বাস্তবায়ন করব।’

৪০তম নন-ক্যাডার নিয়োগে জটিলতা

৪০তম বিসিএসে উত্তীর্ণ কিন্তু পদ স্বল্পতার কারণে ক্যাডার পদে সুপারিশ পায়নি এমন ৮ হাজার ১৬৬ প্রার্থী পড়েছেন দুশ্চিন্তায়। নিয়মানুযায়ী, এতদিন একটি বিসিএসের ‍চূড়ান্ত ফল প্রকাশের পর নন-ক্যাডারের আবেদন নেয়া হতো। তা পরের বিসিএসের চূড়ান্ত ফল প্রকাশের আগে পর্যন্ত বিভিন্ন মন্ত্রণালয় থেকে যত চাহিদা আসত সেখান থেকে নিয়োগ দেয়া হতো। কিন্তু পিএসসি এখন ৪০তম বিসিএসের নন-ক্যাডার নিয়োগ শুরুর আগেই অন্যান্য বিসিএসের নন-ক্যাডারের পদ সংরক্ষণ করার কথা ভাবছে। এমন আশঙ্কায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন প্রার্থীরা। এ কারণে নন-ক্যাডারের নতুন নিয়ম বাতিল করে আগের নিয়মে নিয়োগের দাবি জানিয়েছেন চাকরিপ্রার্থীরা।

উল্লেখ্য, চাকরির মর্যাদা, সুযোগ-সুবিধা ও স্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়ার কারণে দিন দিন বিসিএসের প্রতি আগ্রহ বাড়ছে চাকরিপ্রার্থীদের। একেকটা বিসিএসে ৩ থেকে ৪ লাখেরও বেশি প্রার্থী আবেদন করছেন। যেই সংখ্যক প্রার্থী চূড়ান্ত পরীক্ষায়ে উত্তীর্ণ হচ্ছেন সীমিত পদের কারণে সেই সংখ্যক প্রার্থীকে ক্যাডার পদে নিয়োগ দেয়া যাচ্ছে না। ফলে নন-ক্যাডার পদেও বেড়েছে প্রতিযোগিতা।

২০১০ সাল থেকে উত্তীর্ণ হয়েও নিয়োগবঞ্চিত প্রার্থীদের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের নন-ক্যাডারে প্রথম শ্রেণির পদে নিয়োগ দেয়া শুরু করে পিএসসি। এর পরও সমস্যার সমাধান না হওয়ায় ২০১৪ সাল থেকে বিসিএসের মাধ্যমে দ্বিতীয় শ্রেণির পদে নিয়োগ শুরু হয়। এর প্রেক্ষিতে ৩০ মে এক বিজ্ঞপ্তিতে ৪০তম বিসিএসে উত্তীর্ণ প্রার্থীদের নন-ক্যাডার পদে ৯ম, ১০ম, ১১তম ও ১২তম গ্রেডে আবেদন চায় পিএসসি। কিন্তু নন-ক্যাডারে পিএসসি অন্য বিসিএসের জন্য পদ সংরক্ষণ করতে চাওয়ায় এই জটিলতা তৈরি হয়েছে।

এই বিষয়ে নন-ক্যাডারে নিয়োগের জন্য অপেক্ষমাণ প্রার্থী সানজিদ সৈকত দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘পিএসসি বিধির কথা বলে নন-ক্যাডারে নিয়োগ সংকুচিত করছে। এটা আসলে শুভংকরের ফাঁকি। কারণ বিধি আগেও ছিল। নতুন নিয়মের দোহাই দিয়ে নন-ক্যাডারে চাকরি বিষয়ে বিশৃঙ্খলা করার চেষ্টা করছে। আমরা চাই দ্রুত এই সমস্যার সমাধান করা হোক।’

ভেরিফিকেশনে আটকে যায় নিয়োগ

পিএসসি চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করার পর গেজেটের মাধ্যমে চাকরিতে নিয়োগ দেয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। জনপ্রশাসন গেজেট প্রকাশ না করা পর্যন্ত কোনো মন্ত্রণালয় নিয়োগ দিতে পারে না।

সুপারিশপ্রাপ্ত প্রার্থীদের সম্পর্কে পুলিশ ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে ভেরিফিকেশন করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। সবকয়টি সংস্থার তথ্য যাচাই-বাছাই শেষ না হওয়া পর্যন্ত চূড়ান্তভাবে নিয়োগ দেয়া হয় না। ফলে পিএসসি তাদের পরীক্ষাপর্ব শেষ করলেও ভেরিফিকেশনের প্রক্রিয়ার কারণেও নিয়োগে দেরি হচ্ছে। অনেক সময় বিসিএসে উত্তীর্ণ হয়েও মামলা, বিরোধী রাজনৈতিক সম্পৃক্ততাসহ নানা কারণে গোয়েন্দা সংস্থার ভেরিফিকেশনে বাদ পড়ে যাচ্ছেন প্রার্থীদের অনেকেই।

৩৩ থেকে ৩৮তম পর্যন্ত ৬টি বিসিএসে নিয়োগে পিএসসির সুপারিশ এবং তাদের গেজেটভুক্ত করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন বিশ্লেষণে দেখা যায়, এসব বিসিএসে ১৮ হাজার ৮৫৩ জনকে নিয়োগের সুপারিশ করে পিএসসি। কিন্তু তাদের মধ্যে ১৮ হাজার ২২২ জন নিয়োগ পান। ৬১৫ জন প্রার্থী নিয়োগ পাননি।

তবে গত দুই বছরে স্বাস্থ্য ক্যাডারে নিয়োগ দিতে ৩৯তম ও ৪২তম দুটি বিশেষ বিসিএস হয়েছে। এই বিসিএসে পিএসসির সুপারিশ ও জনপ্রশাসনের গেজেটে কাউকে বাদ দেয়া হয়নি।


দিনে কুকুর আর রাতে শিয়ালের উপদ্রবে অতিষ্ঠ রূপগঞ্জবাসী

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নজরুল ইসলাম লিখন, রূপগঞ্জ

“ফজরের নামাজের পর হাটতে বের হলে শিয়াল কুকুরের জ¦ালায় কোথাও যেতে পারি না। একটু নিরিবীলি জায়গা পেলেই দলবেধে ওরা এসে কামড়ে দেয়ার চেষ্ঠা করে। শুক্রবার ভোরে জলসিঁড়ির বালুতে হাটতে গেলে একদল শিয়াল আক্রমন করে বসে, কোন রকমে প্রাণপনে দৌড়ে রক্ষা পাই।” এমনি করে কথাগুলো বলেন কাজী আবুল হোসেন।
মহসিন মিয়া বলেন, রাতের আধারে আমার খামারে শিয়ালের দল ডুকে ৪ টা ছাগলকে কামড়ে মেরে ফেলেছে। এতে আমার লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি হয়ে গেছে। দিনে কুকুরে কামড়ায় আর রাতে শিয়ালে। এ থেকে আমাগো কেউ বাঁচান।
“কি আর কমু গো ভাই? নগর পাড়া ব্রিজ, কেওডালা ব্রিজ অদৃশ্য শক্তির ছোয়ায় আটকে আছে। ভয়ঙ্কর ঝুকিপূর্ন চনপাড়া সেতুর মেরামত হচ্ছে না একযুগ ধরে। আমরা রূপগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীর পশ্চিম তীরের বাসিন্দারা অনেক বিপদে আছি। আমাগো দেখার কেউ নেই। আমরা নিজ দেশে পরবাসীর মত। নদীতে পচা পানি। দুর্গন্ধে ঘরে থাকা যায় না। মশার জ¦ালার কথা আর কি কমু? দিনে দুপুরেই কামড়ায়। রাত হলে তো কথাই নাই। একটু বাতাস ছুটলে বালির জ¦ালায় ঘরে বাহিরে থাকা দায়। এরওপর নতুন আরো জ¦ালা, দিনে কুকুরের জ¦ালা আর রাতের বেলায় শিয়ালের খেলা/ উপদ্রব। আর ভাল লাগে না। আল্লাহ ছাড়া আমাগো দেখার আর কেউ নাই।” এমনি করে মনের দুঃখে কথাগুলো বলছিলেন উপজেলার আমজাদ হোসেন।
দিনে কুকুর আর রাতে শিয়ালের উপদ্রবে অতিষ্ঠ নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জবাসী। জলাতঙ্ক প্রতিরোধে কুকুরকে ভ্যাকসিন দেয়া হলেও কুকুরের কামড়ে আহত হওয়ার শঙ্কায় উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের মানুষ। বেশি আতঙ্ক ছোট শিশুদের নিয়ে। ছোট্ট শিশু নুশাইবা বলেন, কুকুরের ভয়ে দিনের বেলায় ঘর থেকে বের হতে পারি না। দলবেধে যেভাবে খা খা করে এগিয়ে আসে ভয়েই সামনে দিয়ে যাওয়া যায় না। আরেকজন হামিম বলেন, বেওয়ারিশ কুকুরের সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে। কি কারণে জানি না দলবদ্ধ কুকুর ভয়ঙ্কর আচরন করছে। বিগত ১ মাসে ২০ জনকে কামড়েছে এ কুকুর। উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের ১২ টি ছাগলকেও কামড়ে দিয়েছে ভয়ঙ্কর কুকুরদল।
এ তো গেল দিনের চিত্র, রাতের চিত্র ভিন্ন। উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামের নানী দাদীরা ছোট শিশুদের ঘুম পাড়াতে রাক্ষস-খোক্কস, দৈত্য-দানবের গল্প না বলে শেয়ালের গল্প বলছে। শুধু গল্প নয়, শঙ্কাও আছে। এখানে সন্ধ্যা নামলেই শিয়ালের উপদ্রব বেড়ে যায়। দল বেঁধে শেয়াল বাড়ি-ঘরের আনাচে কানাচে ঘোরাফেরা শুরু করে। এতে হাঁস, মুরগি, গরু, ছাগল এমনকি ছোট শিশুদের নিয়েও ভয়ে আছে বাসিন্দারা। সন্ধ্যার আগেই গবাদিপশু ও ছোট শিশুদের নিয়ে ঘরে চলে আসতে হয়।
শেয়াল-কুকুরের উপদ্রব নিয়ে সিয়াম মিয়া বলেন, কী আর করমু ভাই, দিনের বেলা কুত্তা আর রাইতে হিয়ালের (শিয়াল) তা-বে আমরা আছি বড়ই যন্ত্রণায়। এসবের কারণে পশু-পাখিসহ বাচ্চাদের নিয়ে সারা দিন দুশ্চিন্তায় থাকতে হয়।
উপজেলার তালাশকুট এলাকার সারমিন আক্তার নামের এক গৃহবধূ বলেন, ছোট বাচ্চাটাকে নিয়ে ভয়ে থাকি। যে পরিমাণ শেয়াল-কুকুর বেড়েছে এলাকায়, না জানি কখন কাকে কামড়ে দেয়! সন্ধ্যার পর শেয়াল বেড়ে যায়। বেশ কিছু দিন আগে উপজেলার খামারপাড়া এলাকার এক মাদ্রাসার ছাত্র শিয়ালের কামড়ে ভোগে অবশেষে মৃত্যুবরণ করে।
রূপগঞ্জ উপজেলার পৌর এলাকাগুলোতে কুকুর বেশি থাকলেও শেয়াল তেমন একটা নেই। তবে উপজেলার কায়েতপাড়া ইউনিয়নের খামারপাড়া , নগরপাড়া, কামসাইর, দেইলপাড়া, বাঘবাড়ী, পিরুলিয়া, ছনেরটেক, কায়েতপাড়া সহ বিভিন্ন গ্রামে শেয়াল-কুকুরের উপদ্রব বেশি।
উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সের ডাঃ আইভী ফেরদৌস বলেন, শিয়াল কুকুরের কামড়েরর রোগী আসে। আমাদের সাধ্যমত চিকিৎসা করি। ওষুধ সাপ্লাই স্বল্পতা রয়েছে। আর এ চিকিৎসা সংশ্লিষ্ট হাসপাতালে নেয়াই ভাল।
এ ব্যাপারে রূপগঞ্জ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সজল কুমার দাস বলেন, ভাদ্র মাসে কুকুরের উপদ্রব একটু বেড়ে যায়। মানুষকেও কামড়ে দেয়। শুনেছি শিয়ালের উপদ্রবও বেড়ে গেছে। তাই আমরা উপজেলার প্রতিটি এলাকায় কুকুরকে ভ্যাকসিন দিয়েছি। ভয়ের কিছু নেই। সচেতন থাকতে হবে।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম জয় বলেন, শেয়াল কুকুরের উপদ্রব বৃদ্ধি সত্যিই আতঙ্কের বিষয়। বিশেষ করে শিশুরা অনেক ভয়ে থাকে। প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তার সাথে আলাপ করে বিষয়টি সমাধানে কথা বলব। তবে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। সর্বক্ষেত্রেই সচেতনতার বিকল্প নেই।


গজারিয়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ১২

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
গজারিয়া (মুন্সীগঞ্জ) প্রতিনিধি

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া অংশের আনারপুরা বাস স্ট্যান্ড এলাকায় ইউটার্নে যাত্রীবাহী বাস ও রেডিমিক্সের গাড়ির মধ্যে সংঘর্ষ উভয় পরিবহনের ১২জন আহত হয়েছে বলে জানা গেছে।

শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে নয়টায় মহাসড়কের আনারপুরা বাস স্ট্যান্ড এলাকায় এই ঘটনা ঘটে।

আহতদের মধ্যে তাৎক্ষণিকভাবে ১০ জনের নাম জানা গেছে গেছে। তারা হলোঃ আয়াজ(৩৫), ইউনুস মুন্সী (৪৫), মাইন উদ্দিন (৪২), রাসেল(৪০), ওমর ফারুক (২৫), মারুফ(৪০), তারেক রহমান(৩০), হারুন-অর-রশিদ(৪০), হাবিবুর রহমান (৪৫) ও জেমস(২৮)।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, চট্টগ্রাম থেকে যাত্রী নিয়ে ঢাকার দিকে যাচ্ছিল শ্যামলী পরিবহনের একটি বাস। পথে সকাল সাড়ে নয়টার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের গজারিয়া অংশের আনারপুরা এলাকায় প্রিমিয়ার সিমেন্ট কোম্পানির একটি রেডিমেক্সের গাড়ি ইউটার্ন নেওয়ার সময় সেটিকে ধাক্কা দেয় বাসটি। এতে বাসের সামনের অংশ দুমড়ে মুচড়ে যায়। এ ঘটনায় রেডিমিক্সের গাড়ির চালক-হেলপার ও বাসের ১০জন যাত্রী আহত হয়। আহতদের উদ্ধার করে গজারিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠায় স্থানীয়রা।

গজারিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, সড়ক দুর্ঘটনায় আহতদের মধ্যে ১০ জন গজারিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা গ্রহণ করেছেন। গুরুতর অবস্থায় ইউনুস মুন্সী, মাইন উদ্দিন, মারুফ ও রাসেলকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। বাকিরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে চলে গেছে।

এ বিষয়ে গজারিয়া ভবেরচর হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. শওকত হোসেন বলেন,' সড়ক দুর্ঘটনায় কয়েকজন আহত হয়েছে। দুর্ঘটনা কবলিত গাড়িগুলো মহাসড়ক থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে'।


রাজবাড়ীতে র‌্যাবের অভিযানে ১৯ কেজি গাঁজাসহ দুই মাদক ব্যবসায়ী গ্রেপ্তার

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
এস,কে পাল সমীর, পাংশা (রাজবাড়ী) প্রতিনিধি

রাজবাড়ীর কালুখালীতে র‌্যাব-১০ এর অভিযানে ১৯ কেজি গাঁজাসহ দুই মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ সময় মাদক পরিবহনে ব্যবহৃত একটি মাইক্রোবাস জব্দ করা হয়। জব্দকৃত গাঁজার আনুমানিক বাজারমূল্য প্রায় পাঁচ লক্ষ সত্তর হাজার টাকা।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, মেহেরপুর সদর উপজেলার শোলমারী গ্রামের আব্দুল বারীর ছেলে মোঃ তোফাজ্জল (৪৫) এবং দিঘীরপাড় গ্রামের মোঃ রেজাউল ইসলামের ছেলে মোঃ রিজন (২১)।
শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) রাত আনুমানিক ২টা ১৫ মিনিটে র‌্যাব-১০, সিপিসি-৩ ফরিদপুর ক্যাম্পের একটি আভিযানিক দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে কালুখালীর বোয়ালিয়া ইউনিয়নের সোনাপুর মোড় সংলগ্ন ভাবীর হোটেলের সামনে চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি চালায়। এ সময় মেহেরপুর থেকে আসা একটি মাইক্রোবাসে তল্লাশি চালিয়ে গাঁজাসহ দুই মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করা হয়।
র‌্যাব-১০ এর সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার তাপস কর্মকার জানান, গ্রেপ্তারকৃতরা পেশাদার মাদক ব্যবসায়ী। তারা দীর্ঘদিন ধরে গাঁজাসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য সংগ্রহ করে রাজবাড়ীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করছিল।
তিনি আরও জানান, এ ঘটনায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং গ্রেপ্তারকৃতদের কালুখালী থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।


ভালুকায় দুই বাসের সংঘর্ষে নিহত ২

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
ময়মনসিংহ প্রতিনিধি  

ময়মনসিংহের ভালুকায় দুই বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে দুইজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত ১০ জন। শনিবার সকাল ৮টার দিকে উপজেলার ভরাডোবা তাসরিফ কটন মিলের সামনে ময়মনসিংহগামী রোডে এ দুর্ঘটনা ঘটে। তাৎক্ষণিকভাবে হতাহতদের পরিচয় জানা যায়নি।

ভালুকা মডেল থানার ওসি হুমায়ুন কবির এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, দুর্ঘটনার পর নিহতদের মরদেহ উদ্ধার করে থানায় রাখা হয়েছে। আহতদের মধ্যে বেশ কয়েকজনকে প্রথমে ভালুকা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরে গুরুতর আহতদের ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

ওসি আরো বলেন, দুর্ঘটনার পর পুলিশ বাস দুটি জব্দ করেছে। ঘটনার তদন্ত চলছে এবং নিহতদের পরিচয় শনাক্তের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।


কোটালীপাড়ায় অপহৃত শিশুকে নাটোরের লালপুর থেকে উদ্ধার

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
কোটালীপাড়া (গোপালগঞ্জ) প্রতিনিধি

গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া থেকে অপহরণকৃত শিশু আইয়ান (৩) কে অপহরণের ২৪ ঘন্টার মধ্যে নাটোরের লালপুর থেকে উদ্ধার ও অপহরণকারীকে গ্রেপ্তার করেছে কোটালীপাড়া থানা পুলিশ।

আইয়ান গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়া উপজেলার পূর্ণবতী গ্রামের মো. হাইয়ুল মিয়া ও পাকিজা দম্পত্তির একমাত্র সন্তান।

আত্মীয় পরিচয়ে বেড়াতে এসে গত বৃহস্পতিবার দোকান থেকে চিপস কিনে দেওয়ার কথা বলে আইয়ানকে অপহরণ করে ৩লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে আমিরুল হোসেন বাপ্পি নামের এক যুবক।

ওই ঘটনায় রাতে শিশু রাইয়ানের মা বাদী হয়ে কোটালীপাড়া থানায় অপহরণ মামলা দায়ের করেন।

মামলা দায়েরের পর শিশু আইয়ানকে উদ্ধারে রাতেই কোটালীপাড়া থানার এস আই সাদ্দাম হোসেন খানের নেতৃত্বে পুলিশের একটি টিম মাঠে নামে।

এসআই সাদ্দাম হোসেন খান বলেন, তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় টানা ১২ ঘন্টা অভিযান চালিয়ে শুক্রবার দুপুর ২ টার দিকে নাটোর জেলার লালপুর উপজেলার ধুপইল এলাকা থেকে অপহরণকারী আমিরুল হোসেন বাপ্পিকে গ্রেপ্তার করে শিশু আইয়ানকে উদ্ধার করি।

অপহরণকারী আমিরুল ইসলাম ধুপইল গ্রামের আবুল হোসেনের ছেলে।

এদিকে শিশু আইয়ানকে উদ্ধারের খবরে কোটালীপাড়া থানা পুলিশ ভাসছে প্রশংসার জোয়ারে।

শিশু আইয়ানের মা পাকিজা বেগম বলেন, আমিরুল ইসলাম আমার স্বামীর খালাতে ভাইয়ের বন্ধু। কিছুদিন আগে আমাদের বাড়িতে এসে ১দিন থেকে চলে যায়।

গত মঙ্গলবার রাতে সে আবার আমাদের বাড়িতে বেড়াতে আসে। গত বৃহস্পতিবার সকাল ৯ টার দিকে চিপস, চকলেট কিনে দেওয়ার নাম করে আইয়ানকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। সকাল ১১ টার দিকে আমার মোবাইলে ফোন দিয়ে ৩ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। টাকা দিলে ছেলেকে ফিরিয়ে দিবে বলে জানায় আমিরুল। থানা পুলিশকে জানাতে নিষেধ করে। পরে কোনো কূলকিনারা না পেয়ে কোটালীপাড়া থানায় মামলা করি।

কোটালীপাড়া থানার ওসি হাফিজুর রহমান খন্দকার বলেন, অপহরনের ঘটনায় মামলা হওয়ার পরই আমরা বিষয়টি গুরুত্ব দিতে অভিযানে নামি। তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় রাতেই ঢাকাসহ বিভিন্নস্থানে অভিযান চালানো হয়। পরবর্তীতে শুক্রবার দুপরে নাটোরের লালপুর থেকে শিশুকে উদ্ধার ও আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়।


‘আমরা আমরাইতো’ সংগঠনের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
ফেনী প্রতিনিধি

ফেনীর ‘আমরা আমরাইতো সমাজসেবা সংগঠন’ ও আমরা আমরাইতো ব্লাড ডোনেটিং ক্লাবের অষ্টম বর্ষপূর্তি উদযাপন ও নবম বর্ষে পদার্পণ উপলক্ষে মাদ্রাসার হেফজ বিভাগের শিক্ষার্থীদের মাঝে কোরআন প্রতিযোগিতা ও এক বেলা আহারের আয়োজন করা হয়েছে। শুক্রবার দিনব্যাপী ফেনীর শর্শদি ইউনিয়নের মোহাম্মদ আলী বাজার সংলগ্ন দত্তসার রহমানিয়া মাদ্রাসা হাফেজিয়া ও এতিমখানায় ওই আয়োজন করা হয়।

সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে মাদ্রাসার হেফজখানার ৬০জন ছাত্রের মধ্যে ২০জন কোরআন তেলাওয়াত প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন। এর মধ্যে প্রথম থেকে ১০ পর্যন্ত বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়।

মাওলানা কামরুল ইসলামের উপস্থাপনায় ওই সময় উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন দত্তসার রহমানিয়া মাদ্রাসা ও হাফিজিয়া এতিমখানা এর নায়েবে মুহতামিম মাওলানা মুফতি আজিজুর রহমান, সিনিয়র মুহাদ্দিস মাওলানা ইউনুস, ফেনী প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি মুহাম্মদ আবু তাহের ভূঁইয়া, ফেনীর ইতিহাস ঐতিহ্যভিত্তিক সংগঠন ‘নরননীয়া’ এর সাধারণ সম্পাদক, বিশিষ্ট সমাজসেবক ইমন উল হক।

সংগঠনের পক্ষে বক্তব্য রাখেন প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক কাজী আফতাবুল ইসলাম, সভাপতি আবদুল আহাদ, সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইমরান হৃদয় প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে সংগঠনটির সর্বোচ্চ দাতা সদস্য ইমাম মেটালের স্বত্বাধিকারী মো. ইমাম হোসেনকে সম্মাননা জানানো হয়।

শুক্রবার জুমার নামাজ শেষে মাদ্রাসা প্রাঙ্গনে মাদ্রাসার সকল শিক্ষক ও শিক্ষার্থী এবং এলাকাবাসীদের নিয়ে প্রায় ছয় শতাধিক মানুষকে ‘একবেলার আহার’ এ আপ্যায়ন করা হয়।


পিরোজপুর থেকে ঢাকা-খুলনায় বাস চলাচল বন্ধ, ভোগান্তি চরমে

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
পিরোজপুর ও বাগেরহাট প্রতিনিধি

বাগেরহাটে নতুন করে সংসদীয় আসন বিভাজনকে কেন্দ্র করে স্থানীয়দের মাঝে তীব্র ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। এর প্রতিবাদে আন্দোলনের কারণে পিরোজপুর থেকে ঢাকা এবং খুলনার মধ্যে সব রুটের বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। গত বুধবার সকাল থেকে ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ দেওয়া হয়। পরে তার সময়সীমা বাড়িয়ে শুক্রবার সকাল থেকে আবারও ৭২ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচি দেওয়া হয়। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ যাত্রীরা। বিশেষ করে বাগেরহাটের গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোতে বিক্ষোভকারীরা অবস্থান নেওয়ায় সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

সরেজমিনে দেখা গেছে, সাধারণ যাত্রীদের সঙ্গে ভোগান্তিতে পড়েন খুলনায় চিকিৎসা নিতে যাওয়া রোগীরা। খুলনা-সাতক্ষীরা- যশোরগামী যাত্রীদের দুর্ভোগ বেড়ে যায়। যাত্রীদের কেউ কেউ ব্যাটারিচালিত গাড়ি, সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও মোটরসাইকেলে করে গন্তব্যে রওয়ানা দিতে দেখা গেছে। ফলে অতিরিক্ত ভাড়া পরিশোধ করতে হয়েছে যাত্রীদের।

পরিবহন শ্রমিক আলিম সিকদার বলেন, ‘বাগেরহাটের সংসদীয় আসনকে কেন্দ্র করে সমস্যাটা সৃষ্টি হয়েছে। পিরোজপুর থেকে ঢাকা এবং খুলনাসহ বেশ কয়েকটি রুটে বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। যাত্রীরা অনেক ভোগান্তিতে পড়েছেন।’

রফিক শেখ নামের আরেক পরিবহন শ্রমিক বলেন, ‘বাগেরহাটে অবরোধের কারণে ঢাকার সঙ্গে পিরোজপুরের বাস চলাচল পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। এতে সাধারণ যাত্রীরা ভোগান্তিতে পড়েছেন। গাড়ি চলাচল না করায় আমাদের ইনকাম বন্ধ হয়ে গেছে। এভাবে চলতে থাকলে আমরা আরও বেশি সমস্যায় পড়বো। আমরা চাই এ সমস্যা অতিদ্রুত সমাধান হোক।’

অফিসের কাজে ঢাকায় যাবেন শাহরিয়ার আলম। তবে বাস চলাচল বন্ধ থাকায় তিনিও পড়েছেন ভোগান্তিতে। তিনি বলেন, ‘আমি অফিসের কাজে ঢাকায় যাবো কিন্তু এসে দেখি এখানে কোনো পরিবহন ঢাকায় যাচ্ছে না। সঠিক সময় ঢাকা না যেতে পারলে আমার অনেক ক্ষতি হবে। অতিদ্রুত এই সমস্যা সমাধান করে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি কমানো উচিত।’

পিরোজপুর জেলা বাস ও মিনিবাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক গাজী আসাদুজ্জামান বলেন, ‘বাগেরহাট সংসদীয় আসনকে কেন্দ্র করে এই সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। শুক্রবার সকাল থেকে আবারও ৭২ ঘণ্টার অবরোধ দিয়েছেন স্থানীয়রা। এ কারণে সাধারণ যাত্রীদের সঙ্গে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন সংশ্লিষ্ট পেশার কয়েক হাজার মানুষ। এই সমস্যার সমাধান না করলে বাস মালিকেরাও আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হবেন।’

এর আগে গত বুধবার বাগেরহাট জেলার চারটি সংসদীয় আসন বহালের দাবিতে শুরু হওয়া সর্বাত্মক ৪৮ ঘণ্টার হরতাল ও সড়ক-মহাসড়ক অবরোধে অচল হয়ে পড়ে দেশের দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক সমুদ্রবন্দর মোংলাসহ পুরো বাগেরহাট জেলা।

সেদিনের বিএনপি-জামায়াতসহ সর্বদলীয় সম্মিলিত কমিটির ডাকা এই কর্মসূচির কারণে জেলার জীবনযাত্রা কার্যত স্থবির হয়ে পড়েছিল। সেদিন সকাল থেকে বাগেরহাট হয়ে ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল, রাজশাহী, রংপুরসহ দেশের সব দূরপাল্লা ও আন্ত জেলা রুটে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। আর সেদিন শহরের দোকানপাট, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, ব্যাংক-বিমা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সরকারি দপ্তরের কার্যক্রম বন্ধ থাকে।

হরতালকারীরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ও নির্বাচন অফিসে তালা ঝুলিয়ে দেওয়ায় কর্মকর্তারাও অফিসে ঢুকতে পারেননি। জেলার মোরেলগঞ্জের পানগুছি ও মোংলা নদীতে ফেরি চলাচল বন্ধ ছিল।

সেদিন বুধবারে জেলার শতাধিক স্থানে টায়ার জ্বালিয়ে, গাছ ফেলে ও মাছ ধরার জাল টানিয়ে সড়ক-মহাসড়ক অবরোধ করে পালন করেন নেতাকর্মীরা। ফলে মোংলা বন্দরসহ বাগেরহাট সারা দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। তবে দুপুর পর্যন্ত কোনো বড় ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বিপুলসংখ্যক পুলিশ ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী মোতায়েন ছিল।

হরতালের কারণে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েন সাধারণ মানুষ। দীর্ঘ দূরপাল্লার যাত্রীদের অনেকেই বাস টার্মিনাল বা সড়কের পাশে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেও যানবাহন পাননি। জরুরি প্রয়োজনে বের হওয়া রোগীরা পড়েছিলেন বিপাকে।

গত ৩০ জুলাই ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচন কমিশনের বিশেষ কারিগরি কমিটি খসড়া প্রস্তাবে বাগেরহাটের চারটি আসনের মধ্যে একটি কমিয়ে তিনটি রাখার প্রস্তাব দেয়। বিরোধিতা সত্ত্বেও গত ৪ সেপ্টেম্বর ইসি চূড়ান্ত গেজেটে বাগেরহাটে একটি আসন কমানোর সিদ্ধান্ত জানায়। এতে জেলার রাজনৈতিক দল ও সাধারণ মানুষ তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে আন্দোলনে নামে।


নড়াইলে এক রাতেই নির্মিত হয় পুকুরসহ মসজিদ

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
কার্ত্তিক দাস, নড়াইল

৪০০ বছরের পুরানো নড়াইল সদর উপজেলার চন্ডিবরপুর ইউনিয়নের গোয়ালবাথান গ্রামের মসজিদ। মুন্সিবাড়ির মসজিদ নামেই এটি সমধিক পরিচিত। জনশ্রুতি আছে মোগল শাসনামলে এক রাতে নির্মাণ করা হয় ওই মসজিদ। মসজিদের সামনে রয়েছে একটি পুকুর। মুসল্লিদের নামাজ আদায়ে অজু করার জন্য আছে বাধানো ঘাট।

সরেজমিন দেখা গেছে, মসজিদের ছাদের চারপাশে রয়েছে ছোট ছোট চারটি মিনার এবং মাঝখানে একটি বড় গম্বুজ। ছোট সাইজের ইট আর চুন-সুড়কির গাথুনির মাধ্যমে নির্মাণ করা হয়েছে মসজিদটি। জনশ্রুতি আছে এটি জ্বীনদের দিয়ে নির্মাণ করা হয় মসজিদটি। এখানে ওই সব জ্বীনেরাও এক সময়ে নামাজ আদায় করতো।

গ্রামের সবচেয়ে প্রবীণ ব্যক্তি ইস্রাফিল মোল্লা যার বয়স বর্তমানে ১০৭ বছর। তিনি বলেন, আমি বাপ-দাদার মুখে শুনেছি এক রাতেই এখানে পুকুর এবং মসজিদ নির্মাণ করা হয়। আগে এই গ্রাম ঘণ বনজঙ্গলে ভরা ছিল। নানা ধরণের জীবজন্তুর আমদানী ছিল এই বাগানে । ছিল বাঘেরও পদচারণা। ভয়ে কেউই এখানে আসতো না। ঘণ বনজঙ্গলের কারণে দিনের বেলায় কিছুই দেখা যেত না।

তিনি বলেন হঠাৎ একদিন মুন্সি হৈবৎউল্লাহ নামে এক ব্যক্তির আগমণ ঘটে। এখানকার জীবজন্তুর সঙ্গে তিনি বটগাছের নিচে বাস করতে লাগলেন। কিছুদিন পর কাকতালিয়ভাবে এক রাতে মসজিদ এবং একটি পুকুর খনন করেন। মাঝে মধ্যে কাদের যেন তিনি ডাকতেন। অদৃশ্য সেই জীবগুলো তার কথা শুনতো। তিনি বলেন, এ সবই আমার দাদা ইবাদত মোল্লা মুখে শুনেছি। তিনিও তার দাদা রহমত মোল্লার কাছে শুনেছেন। ওই বাগানের কাছে যেও না। হিংস্র জীবজন্তুর পাশাপাশি জ্বীন পরীর ভয় আছে। তিনি বলেন, কালের পরিক্রমায় সবকিছু বদলাতে থাকে। এখন আর কেউই এ সব কথা বিশ্বাস করতে চায় না। আস্তে আস্তে মানুষের বসতি গড়ে ওঠে। নানা সম্প্রদায়ের মানুষ এখানে বসবাস করতে থাকেন। আশপাশের এলাকার মুসল্লি সম্প্রদায়ের মানুষ মসজিদে নিয়মিত নামাজ আদায় করতে আসেন।

তিনি দাবি করেন, ওই সময় অন্য কোন মসজিদ না থাকায় বিভিন্ন এলাকার মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ এখানে নামাজ আদায় করতে আসতেন। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় এটি নড়াইলের সর্বপ্রথম প্রাচীনতম মসজিদ। নামাজির সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় ২৫ বছর আগে মসজিদের সামনের অংশ বাড়ানো হয়েছে। মসজিদ প্রতিষ্ঠাতা মুন্সি হৈবতউল্লাহর বংশধরেরা আজও গোয়ালবাথান গ্রামে বসবাস করছেন। বিভিন্ন এলাকার মানুষ মসজিদটি দেখার জন্য এই গ্রামে এসে থাকেন।

চন্ডিবরপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো.আজিজুর রহমান ভূইয়া বলেন, এলাকায় মানুষের সংখ্যা বেড়ে গেছে। মসজিদে নামাজিদের ধারণ ক্ষমতা সংকুলাণ না হওয়ায় মসজিদ সংলগ্ন সম্প্রসারণ কাজ করা হয়েছে। তিনি দাবি করেন, নড়াইলে এই মসজিদই হচ্ছে সবচেয়ে পুরাতন মসজিদ।


সরিষাবাড়ীতে পুকুরে ডুবে শিশুর মৃত্যু

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
সরিষাবাড়ী (জামালপুর) সংবাদদাতা

জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে খেলনা গাড়ি দিয়ে খেলতে গিয়ে পুকুরের পানিতে পড়ে ওমর ফারুক (৫) নামে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে উপজেলার ভাটারা ইউনিয়নের প্যারিআটা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। শিশু ওমর ফারুক একই এলাকার মনির হোসেনের ছেলে বলে জানা গেছে।

শিশুর বাবা মনির হোসেন জানান, ওমর ফারুক তার ৩য় ছেলে। সে সকাল বেলা খেলনা গাড়ি (ছোট রিক্সা) নিয়ে বাড়ির উঠানে খেলা করছিলো। এসময় খেলতে গিয়ে গাড়ি চালিয়ে সবার অগোচরে বাড়ির পাশে পুকুরের পানিতে পড়ে যায়। পরে পরিবারের লোকেরা পাশ্ববর্তী বাড়ীতে খুজতে থাকে ফারুককে। এসময় প্রতিবেশীরা ওমর ফারুকের খেলনা গাড়ীটি পুকুরের পানিতে ভাসমান অবস্থায় দেখতে পায়। বিষয়টি পরিবারের লোকদের জানালে তারা পুকুরে নেমে শিশু ওমর ফারুকের দেহ উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

এদিকে পারিবারিক সমস্যার কারনে ওমর ফারুক তার দাদীর কাছেই সব সময় থাকতেন।


পর্যটন এলাকা পরিচ্ছন্ন রাখার দায়িত্ব নিল ৯০ স্বেচ্ছাসেবক

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
সাটুরিয়া (মানিকগঞ্জ) প্রতিনিধি

ঝাড়ু হাতে কয়েকজন তরুণ। কারও আবার কাঁধে বস্তা, কারও হাতে দা বা কোদাল। কেউ ময়লা কুড়োচ্ছে, কেউ আবার বস্তায় ভরছে। হাসি-আড্ডার মধ্যেই চলছে পরিচ্ছন্নতার কাজ। দেখে মনে হয়, যেন উৎসব চলছে পরিচ্ছন্নতার উৎসব। এরা সবাই স্থানীয় বালিয়াটি স্পোটিং ক্লাব ও সেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্য। ৯০ জন পাঁচ ভাগে ভাগ হয়ে পরিচ্ছন্নতার কাজ করছে। উদ্দেশ্য একটাই ঐতিহাসিক বালিয়াটি জমিদারবাড়ি ও চারপাশ এলাকা পরিচ্ছন্ন রাখা। নাম দিয়েছে এই কর্মসূচির ‘ক্লিন বালিয়াটি’।

বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ জমিদারবাড়ি মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ার বালিয়াটি জমিদারবাড়ি। প্রতিদিন শত শত দেশি-বিদেশি পর্যটক এখানে ভিড় জমান। জমিদারবাড়ির অনন্য স্থাপত্য সবাইকে মুগ্ধ করে। তবে চারপাশে জমে থাকা আবর্জনা তাদের বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়াত। সেই ভাবনা থেকেই তরুণরা উদ্যোগ নিয়েছেন পরিচ্ছন্নতার।

ক্লাবের সদস্যরা জানান, দেশের সর্ববৃহৎ জমিদারবাড়ি চারপাশের সৌন্দর্য রক্ষায় ‘ক্লিন বালিয়াটি’ উদ্যোগ নিয়েছেন। সপ্তাহে একদিন নিয়মিতভাবে জমিদারবাড়ি ও উপজেলা পরিষদ চত্বর পরিষ্কার রাখার পরিকল্পনাও করেছেন তারা।

বালিয়াটি স্পোর্টিং ক্লাবের সভাপতি মো. সোহেল রানা বলেন, জমিদারবাড়ির সৌন্দর্য ধরে রাখতে পরিচ্ছন্ন পরিবেশ জরুরি। আমরা চাই এখানে আসা পর্যটকরা যেন ইতিবাচক অভিজ্ঞতা নিয়ে যান। পরিচ্ছন্নতা বজায় থাকলে পর্যটন আরও বাড়বে এবং স্থানীয় পরিবেশও ভালো থাকবে।

সাটুরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইকবাল হোসেন বলেন, এটা সত্যিই প্রশংসনীয় উদ্যোগ। পরিচ্ছন্ন পরিবেশ থাকলে পর্যটকরা আরও বেশি আকৃষ্ট হবেন। এতে বালিয়াটি শুধু ঐতিহাসিক স্থাপনা হিসেবেই নয়, পরিচ্ছন্ন পর্যটন এলাকা হিসেবেও পরিচিতি পাবে।


সুন্দরবনের ডাকাত রাঙ্গা বাহিনীর দুই সহযোগী অস্ত্র ও গোলাবারুদসহ আটক

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
বাগেরহাট প্রতিনিধি

‎সুন্দরবনের দুর্ধর্ষ ডাকাত রাঙ্গা বাহিনীর ২ সহযোগী অস্ত্র ও গোলাবারুদসহ আটক ও জিম্মি থাকা ৯ জেলেকে উদ্ধার করেছে কোস্ট গার্ড পশ্চিম জোন। ‎শুক্রবার কোস্ট গার্ড মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার সিয়াম-উল-হক এ তথ্য জানান।‎‎ সুন্দরবনের কুখ্যাত ডাকাত রাঙ্গা বাহিনীর সদস্যরা সুন্দরবনের আদাছগি এলাকায় কিছু জেলেকে জিম্মি করে রেখেছে, এমন প্রাপ্ত গোপন তথ্যের ভিত্তিতে শুক্রবার ভোর ৫ টার দিকে কোস্ট গার্ড বেইস মোংলা কর্তৃক ওই এলাকায় একটি বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে। অভিযান চলাকালে কোস্ট গার্ডের উপস্থিতি টের পেয়ে ডাকাতরা পালানোর চেষ্টা করে। পরবর্তীতে আভিযানিক দলটি ধাওয়া করে ২ টি একনলা বন্দুক, ২ রাউন্ড তাজা কার্তুজ, ৮ রাউন্ড ফাঁকা কার্তুজ, ৩ টি দেশীয় আগ্নেয়াস্ত্র তৈরির সরঞ্জামাদি এবং ১ টি দেশীয় অস্ত্রসহ সুন্দরবনের দুর্ধর্ষ ডাকাত রাঙ্গা বাহিনীর ২ সহযোগীকে আটক করে। এসময় তাদের নিকট জিম্মি থাকা ৯ জেলেকে ও উদ্ধার করা হয়।‎

‎উদ্ধারকৃত জেলেরা জানান, গত ৩ সেপ্টেম্বর মাছ ও কাঁকড়া ধরার উদ্দেশ্যে সুন্দরবনে গেলে রাতে রাঙ্গা বাহিনী তাদের আটক করে এবং মুক্তিপণ দাবি করে। উদ্ধারকৃত জেলেরা সকলেই খুলনার দাকোপ থানার বাসিন্দা।

‎‎ আটককৃত ডাকাত সহযোগী নাসির মোল্লা এবং মিন্টু সরদার বাগেরহাট এবং খুলনা জেলার বাসিন্দা। তারা দীর্ঘদিন যাবৎ রাঙ্গা বাহিনীর সঙ্গে ডাকাতি এবং ডাকাত দলকে অস্ত্র, গোলাবারুদ ও রসদ সরবরাহের মাধ্যমে সহযোগিতা করে আসছিলো।

‎উদ্ধারকৃত জেলে, আটককৃত ডাকাত ও জব্দকৃত আলামতের পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

‎সুন্দরবনকে দস্যুমুক্ত করতে কোস্ট গার্ড ভবিষ্যতেও এধরনের অভিযান অব্যাহত রাখবে বলেও জানান তিনি।


নবীনগরে ডালি পদ্ধতিতে আগাম সবজি আবাদ

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নবীনগর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধ জমিতে ভাসমান কাঠামো বা ডালি পদ্ধতিতে সবজি আবাদ শুরু হয়েছে। এতে কৃষকদের জন্য নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হয়েছে।

স্থানীয় কৃষি অফিস জানায়, হাওর জনিত কারণে নবীনগরের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ জমি বর্ষাকালে পানিতে নিমজ্জিত থাকে। এ সময় শাক-সবজির প্রাপ্যতা কমে যায়, বাজারে দামও বেড়ে যায়। এসব জমিতে ভাসমান ডালি তৈরি করে সবজি আবাদে কৃষকরা আগ্রহী হয়ে উঠছেন।

ফ্রিপ প্রকল্পের অর্থায়নে উপজেলার ইব্রাহিমপুর, নাটঘর, রছুল্লাবাদ, সাতমোড়া, সলিমগঞ্জ এবং বড়িকান্দি ইউনিয়নে চলতি মৌসুমে ভাসমান ডালি পদ্ধতিতে সবজি আবাদ করা হচ্ছে। কৃষি বিভাগ এ জন্য কৃষকদের প্রশিক্ষণ, পরামর্শ ও কারিগরি সহায়তা দিয়ে আসছে।

ইব্রাহিমপুর গ্রামের কৃষক কাওছার মিয়া বলেন, "আগে বর্ষাকালে তিন-চার মাস জমি পতিত পড়ে থাকত। এবার উপজেলা কৃষি বিভাগের পরামর্শে ১০ শতাংশ জায়গায় ভাসমান পদ্ধতিতে লাউ আবাদ করেছি। ইতিমধ্যে প্রায় ২০০ লাউ বিক্রি করে ১৫ হাজার টাকা আয় করেছি। আগামীতে আরও জমিতে এ পদ্ধতিতে চাষ করব।"

নাটঘর ইউনিয়নের কুড়িঘর গ্রামের কৃষক সুমন মিয়া জানান, আমিই প্রথম এ ইউনিয়নে ডালি পদ্ধতিতে সবজি আবাদ শুরু করেছি। এ বছর ১৮ শতক জমিতে ময়না লাউ আবাদ করেছি। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ৪৫ থেকে ৫০ হাজার টাকার লাউ বিক্রি করতে পারব।

উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ জাহাঙ্গীর আলম লিটন বলেন, ফ্রিপ প্রকল্পের আওতায় দুই শতাধিক কৃষককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। ভাসমান ডালি কাঠামো তৈরি ও বীজ-সার সরবরাহ করে সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। এই প্রযুক্তি আগামী দিনে এ অঞ্চলের জন্য দারুণ সম্ভাবনাময়।

কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, ডালি পদ্ধতিতে আগাম ও অসময়ে সবজি উৎপাদন সম্ভব হওয়ায় খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি কৃষকদের বাড়তি আয়ের সুযোগও তৈরি হচ্ছে।


ডাকসু নির্বাচন আগামী দিনের রাজনীতির নির্বাচনী গ্রামার দিয়েছে: ফুয়াদ

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
বরিশাল ব্যুরো

আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি)-এর সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেছেন, ডাকসু নির্বাচন দেশের রাজনীতিতে নতুন দিকনির্দেশনা দিয়েছে। জনআকাঙ্ক্ষা ও সময়ের পরিবর্তন বুঝতে না পারলে, ৯১ অথবা ২০০১ সালের মানদণ্ড দিয়ে ২০২৫ সালের রাজনীতি পড়ার চেষ্টা করলে ভুল হবে। শুক্রবার সকালে বরিশাল প্রেসক্লাবে আয়োজিত উন্নয়ন ও সমসাময়িক বিষয় নিয়ে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ব্যারিস্টার ফুয়াদ। তিনি বলেন,ডাকসু নির্বাচন আগামী দিনের রাজনীতির একটি নির্বাচনী গ্রামার আমাদের হাতে তুলে দিয়েছে। কেউ যেন ৯১, ৯৬ বা ২০০১ সালের ম্যাট্রিক্স দিয়ে সেটি বিচার না করে। এটি নতুন মেট্রিক্স আগামী দিনের রাজনীতির জন্য।

ফুয়াদ আরও বলেন, ডাকসু নির্বাচনকে ইসলামপন্থীদের বিজয়, জামায়াত-শিবিরের উত্থান বা জঙ্গিবাদ হিসেবে দেখা ভুল হবে। গণ-অভ্যুত্থানকে আওয়ামী লীগ যেভাবে ভুল বুঝেছে, ডাকসু নির্বাচনের বার্তাকেও বিএনপি ও কিছু বামপন্থী বুদ্ধিজীবী ঠিকভাবে বোঝেননি। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বা জাতীয় পার্টি ছাড়া ইনক্লুসিভ হবে না এ ধরনের বক্তব্য ডাকসু নির্বাচনের মাধ্যমে ভুল প্রমাণিত হয়েছে।

তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, জগন্নাথ হলের ভোটের ফলাফল দেখলে বোঝা যায়, দেশের বিভিন্ন প্রার্থী ও দল জামায়াত-শিবিরকে সমর্থন দেয়নি। ভোটের পর দেখা গেছে, শিবিরের প্যানেলে ভোট জমা হয়নি এবং তাই শিবিরকে অতিরিক্ত গুরুত্ব দেওয়ার দরকার নেই।

ব্যারিস্টার ফুয়াদ বলেন, ডাকসু নির্বাচন ফেয়ার হয়েছে। এখানে কোনো ইসলামপন্থী, মৌলবাদী বা দক্ষিনপন্থী বিজয়ী হয়নি। ভোট প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ স্বচ্ছ ছিল। দেশের রাজনীতি এখনো শান্ত হয়নি, আমরা এখনও ভলকানের উপরে বসবাস করছি। কেউ যদি ফেব্রুয়ারির পর দেশকে ‘সুইজারল্যান্ড’ মনে করে, তা হবে না। যে কোনো সময় নেপাল, শ্রীলঙ্কা বা ইন্দোনেশিয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। সমস্ত রাজনৈতিক দলকে সতর্ক থাকতে হবে।

তিনি আরও বলেন, দুই নাম্বারি রাজনীতি, চেতনা ব্যবসা বা ঠিকাদারী রাজনীতি আর চলবে না। স্বচ্ছতা, সততা এবং ভদ্রতা ছাড়া আগামী দিনের রাজনীতি সুষ্ঠু হবে না। তরুণরা পলিটিক্যালি সচেতন, আর তাদের আকাঙ্ক্ষাকে অসম্মান করলে রাজনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া নিশ্চিত।

প্রেস ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন আমার বাংলাদেশ পার্টি বরিশাল জেলার সদস্য সচিব জি এম রাব্বি, যুগ্ম আহ্বায়ক সুজন তালুকদার, বরিশাল মহানগরের যুগ্ম সদস্য সচিব ডা: তানভীর আহমেদ, সদস্য হায়দার ভূইয়া, নাজমুল মুন্নাসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ এবং স্থানীয় ও জাতীয় মিডিয়ার সাংবাদিকরা।


banner close