শুক্রবার, ৩০ মে ২০২৫
১৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

দশক পার হলেও চালু হয়নি ১২ স্থলবন্দর

আন্তর্দেশীয় যোগাযোগ
সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর। ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড
২০ অক্টোবর, ২০২২ ০৮:০৪
তৌফিকুল ইসলাম
প্রকাশিত
তৌফিকুল ইসলাম
প্রকাশিত : ২০ অক্টোবর, ২০২২ ০৮:০৪

তৌফিকুল ইসলাম

স্থলবন্দর ঘোষণার দীর্ঘদিন পেরিয়ে গেলেও দেশের ২৪টি স্থলবন্দরের মধ্যে ১২টিই এখনো চালু হয়নি। এর মধ্যে কয়েকটির ক্ষেত্রে সময় পেরিয়েছে দুই দশক, আবার কোনোটির এক দশক। তারপরও অনেকগুলোতে নেই গুদামঘর, কার্যালয়, সংযোগ সড়ক কিংবা সড়কসহ অন্যান্য অবকাঠামো। এর মধ্যে কয়েকটিতে অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ চলছে দীর্ঘদিন ধরেই। সরকারের চিন্তা, সবকিছু সমন্বয় করে ধীরে ধীরে চালু হবে এসব স্থলবন্দর।

দেশের ২৪টি স্থলবন্দরের মধ্যে ২৩টিই ভারতের সঙ্গে যুক্ত, একটি মিয়ানমারের সঙ্গে। এর মধ্যে চালু থাকা বন্দরগুলোর মাধ্যমে আন্তর্দেশীয় যোগাযোগ বেড়েছে, বেড়েছে আমদানি-রপ্তানি। বাংলাদেশ সরকারও বিষয়টি ‍গুরুত্ব দিয়ে বন্দর ব্যবস্থাপনাকে একটি কাঠামোর মধ্যে এনে কাজ করছে।

সীমান্ত দিয়ে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য সম্প্রসারণ ও সহজ করা এবং আন্তর্দেশীয় যোগাযোগ বাড়ানোর জন্য সীমান্ত অঞ্চলে স্থলবন্দর তৈরির উদ্যোগ নেয়া হয়। এই কার্যক্রমকে গতিশীল করে অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি ও বন্দর ব্যবস্থাপনার জন্য বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ (বাস্থবক) প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এই কর্তৃপক্ষের অধীনে গুরুত্বপূর্ণ ২৪টি শুল্ক স্টেশনকে সরকার স্থলবন্দর হিসেবে ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে ১২টি শুল্ক স্টেশন সচল আছে। আরও দুটি স্থলবন্দর নির্মাণের প্রস্তাব এসেছে সম্প্রতি।

বন্দর পরিচালনায় স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি ‘বিল্ড, অপারেট অ্যান্ড ওন’ পদ্ধতিতে অর্থাৎ বেসরকারি অপারেটররা অবকাঠামো তৈরি করে ৫টি স্থলবন্দর চালাচ্ছে এবং বিনিময়ে আয়ের একটি অংশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষকে দিচ্ছে। বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হচ্ছে ৭ স্থলবন্দর- বেনাপোল, বুড়িমারী, আখাউড়া, ভোমরা, নাকুগাঁও, তামাবিল এবং সোনাহাট। বেসরকারি অপারেটররা চালাচ্ছে বাংলাবান্ধা, সোনামসজিদ, হিলি, টেকনাফ ও বিবিরবাজার স্থলবন্দর।

জানতে চাইলে নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘স্থলবন্দরগুলো দুই দেশের সিদ্ধান্ত ও প্রক্রিয়ার ওপর নির্ভর করে। অনেকগুলো বন্দরের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এখানে কাস্টমসের একটি বিষয় রয়েছে। কিছু কিছু স্থলবন্দরের অবকাঠামো নির্মাণকাজ চলছে। আমরা আশা করছি, সবকিছু সমন্বয় করে ধীরে ধীরে সবগুলো স্থলবন্দরের কার্যক্রম চালু করতে পারব। ইতিমধ্যে রামগড়ের স্থলবন্দরের অবকাঠামোগত কাজ শেষ হয়েছে, উদ্বোধনের অপেক্ষায় আছে। দর্শনায় স্থলবন্দরের অবকাঠামো নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে।’

আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমের পাশাপাশি বর্তমানে চালু থাকা ১২টি স্থলবন্দরের মধ্যে সোনাহাট ছাড়া অন্য সব স্থলবন্দরে ইমিগ্রেশনের ব্যবস্থা রয়েছে। এসব বন্দর ব্যবহারের মাধ্যমে পাসপোর্টধারী যাত্রীরা ভারত ও মিয়ানমার যাতায়াত করে থাকেন।

এদিকে, যাত্রীসেবা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে বেনাপোল স্থলবন্দরে একটি আন্তর্জাতিক প্যাসেঞ্জার টার্মিনাল হয়েছে। বাস্থবকের অধীনে বেনাপোলসহ বুড়িমারী, নাকুগাঁও, বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে যাত্রীদের বসার ব্যবস্থা, বিশ্রামাগার, উন্নত টয়লেট ও বিনোদনের ব্যবস্থা আছে । তবে এসব সেবা প্রদানের বিনিময়ে যাত্রীদের নিকট থেকে নির্ধারিত ফি নেয় স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ।

যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে স্থলপথে যাত্রী পরিবহন এখনো আন্তর্জাতিক মানের হয়নি। বন্ধরব্যবস্থার আরও উন্নতি করা উচিত। যাত্রীদের বন্দরে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়। এসব বিষয়ে উভয় দেশের নজর দেয়া উচিত।’

বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, বন্ধ থাকা স্থলবন্দরগুলোতে উন্নয়নমূলক কাজ চলছে। ফলে দীর্ঘদিন ধরেই এসব বন্দর বন্ধ আছে। এসব বন্দরের কাজে কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। কমিটিতে উপস্থাপিত স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে, ‘বাংলাদেশ রিজিওনাল কানেক্টিভিটি প্রজেক্ট’ নামের প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলেও কাজের অগ্রগতি মাত্র ৩০ শতাংশ।

কোন স্থলবন্দরের কী অবস্থা

সিলেটের শেওলা, সাতক্ষীরার ভোমরা, খাগড়াছড়ির রামগড় ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর উন্নয়নে ৬৯৩ কোটি ১৩ হাজার টাকার প্রকল্পটি নেওয়া হয় ২০১৭ সালে। কাজ শেষ না হওয়ায় মেয়াদ বাড়ানো হয় আগামী জুন পর্যন্ত।

হবিগঞ্জের বাল্লা স্থলবন্দর উন্নয়ন প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয় গত জুনে। কাজ শেষ না হওয়ায় প্রকল্পের মেয়াদ এক বছর বাড়ানো হয়। ৪৮ কোটি ৯০ লাখ ৪৯ হাজার টাকা ব্যয়ে প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি মাত্র ৩৩ শতাংশ।

ময়মনসিংহের গোবরাকুড়া-কড়ইতলী স্থলবন্দর আধুনিকায়ন প্রকল্পের কাজ গত জুন মাসে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি। ২০১৮ সালের অক্টোবরে ৫৯ কোটি ৩০ লাখ টাকায় জামালপুরের ধানুয়া কামালপুর স্থলবন্দর উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন পায়। মেয়াদ শেষে প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে মাত্র ৪১ শতাংশ। বিলোনিয়া স্থলবন্দর উন্নয়ন প্রকল্পের মেয়াদও আগামী জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এই প্রকল্পের অগ্রগতি ৪৪ শতাংশ।

বিরল স্থলবন্দর

১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময় বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে যে আটটি রেলরুট বন্ধ হয়ে যায় তার মধ্যে একটি দিনাজপুরের বিরল থেকে ভারতের রাধিকাপুর রুট। এই রুটে রেল চলাচল শুরু হয়েছে। বিরল শুল্ক স্টেশনকে রেলরুট হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু বিরল স্থলবন্দর চালু করার জন্য রেলরুটের পাশাপাশি স্থলরুটও ঘোষণা করা প্রয়োজন। সূত্র বলছে, এ বিষয়ে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। ২০০২ সালে বিরল শুল্ক স্টেশনকে স্থলবন্দর ঘোষণা করা হয়।

দর্শনা স্থলবন্দর

দর্শনা শুল্ক স্টেশনকে রেলরুট হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। দর্শনা-গেদে রেল সংযোগ চালু হলেও এ স্থানে স্থলরুট চালু নেই। দর্শনা স্থলবন্দর চালু করার জন্য রেলরুটের পাশাপাশি স্থলরুটও ঘোষণা করা প্রয়োজন। এ বিষয়েও নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে অনুরোধ করা হয়েছে।

বিলোনিয়া স্থলবন্দর

ফেনীর পরশুরাম উপজেলার বিলোনিয়া সীমান্তে ২০০৮ সালে স্থলবন্দরের ঘোষণা দেয় সরকার। কিন্তু সীমানা জটিলতায় থেমে আছে স্থলবন্দরটির ভৌত অবকাঠামোগত উন্নয়নকাজ। সেখানে আমদানি-রপ্তানি মালামাল সংরক্ষণ ও পার্কিং সুবিধার উন্নয়নের জন্য ৩৮ কোটি ৬৪ লাখ টাকার অবকাঠামো উন্নয়নকাজ বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ। ২০১৯ সালে বন্দরের অবকাঠামো নির্মাণকাজ শুরু হয়। যে অংশ আন্তর্জাতিক সীমারেখায় অবস্থিত, সে অংশের কাজ বন্ধ করে দেয় বিএসএফ। প্রায় চার বছরেও কোনো সমাধান মেলেনি।

রামগড় স্থলবন্দর

বিশ্বব্যাংক ও সরকারের যৌথ অর্থায়নে বাংলাদেশ রিজিওনাল কানেক্টিভিটি প্রজেক্টের আওতায় রামগড় স্থলবন্দরের জন্য ১০ একর জমি অধিগ্রহণ শেষ হয়েছে। ভারতীয় অংশে পুরোপুরি কাজ শেষ হলেও বাংলাদেশ অংশে কাজ স্থবির। বাংলাদেশে একটি শুল্ক স্টেশন সাময়িকভাবে করা হলেও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা এখনো তৈরি হয়নি। আন্তর্জাতিক সীমান্তের ১৫০ মিটারের মধ্যে স্থাপনা নির্মাণ জটিলতায় কাজ থমকে আছে।

টেগামুখ স্থলবন্দর

রাঙ্গামাটির বরকল উপজেলায় টেগামুখ সীমান্ত অবস্থিত। এর বিপরীতে ভারতের মিজোরাম দেমাগ্রী/কাউয়াপুচিয়া সীমান্ত। রাঙামাটি জেলা সদর হতে টেগামুখ স্থলবন্দরের দূরত্ব প্রায় ১৫০ কি.মি. । এই স্থলবন্দরের উন্নয়নে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের সম্মতি না পাওয়ার কারণে স্থলবন্দর স্থাপনের কার্যক্রম আপাতত বন্ধ রয়েছে। এই পথে গবাদিপশু, মাছের পোনা, তাজা ফলমূল, গাছগাছড়া, বীজ, গম, পাথর, কয়লা, রাসায়নিক সার, চায়না ক্লে, কাঠ, টিম্বার, চুনাপাথর, পিঁয়াজ, মরিচ, রসুন, আদা, কোয়ার্টজ। আমদানি করা হবে ।

চিলাহাটি স্থলবন্দরদৌলতগঞ্জ স্থলবন্দর

চিলাহাটি শুল্ক স্টেশন এবং চুয়াডাঙ্গার দৌলতগঞ্জকে স্থলবন্দর ঘোষণা করা হলেও বাংলাদেশ-ভারত কোনো অংশেই শুল্ক স্টেশনের কার্যক্রম না থাকায় দুটি স্থলবন্দর চালু করা সম্ভব হয়নি।

ধানুয়া কামালপুর স্থলবন্দর

ঠিকাদার কাজ শুরু করতে গেলে স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিকরা জমির মূল্য কম নির্ধারণ করা হয়েছে বলে অভিযোগে করে কাজে বাধা প্রদান করে। ফলে বর্তমানে বন্দরের অবকাঠামো নির্মাণের কাজ শুরু করা সম্ভব হয়নি।

শেওলা স্থলবন্দর

বিশ্বব্যাংক ও সরকারের যৌথ অর্থায়নে বাংলাদেশ রিজিওনাল কানেক্টিভিটি প্রজেক্ট-১ এর আওতায় শেওলা স্থলবন্দরের উন্নয়নের লক্ষ্যে গত ২০২০ সালে নির্মাণ কাজের জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তিপত্র স্বাক্ষরিত হয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় শেওলা স্থলবন্দরের জন্য ২২ দশমিক ২ একর জমি অধিগ্রহণের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

বাল্লা স্থলবন্দর

হবিগঞ্জ জেলার চুনারুহাট উপজেলার কেদারাকোর্ট সীমান্তে অবস্থিত। এর বিপরীতে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের পাহাড়মুড়া মহাকুমার খোয়াই নদীর তীরবর্তী অবস্থিত স্থলবন্দরটি । এই স্থলবন্দরে অবকাঠামো নেই।

সিলেটের ভোলাগঞ্জ স্থলবন্দর

সিলেট জেলার কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জ গ্রামের কালাসাধক মৌজায় অবস্থিত। এর বিপরীতে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের পূর্ব খাসি পাহাড়ি জেলার চেরাপুঞ্জি মহকুমার ভোলাগঞ্জ সীমান্ত অবস্থিত। বন্দরের উন্নয়নের জন্য সাইট নির্বাচন ও জমি অধিগ্রহণের কার্যক্রম চলছে।

আরও দুটি স্থলবন্দরের প্রস্তাব

এর বাইরে আরও দুটি স্থলবন্দরের প্রস্তাব আছে। সেগুলো হলো, মেহেরপুরের মুজিবনগর স্থলবন্দর ও কুষ্টিয়ার প্রাগপুর স্থলবন্দর।

স্থলবন্দর নির্মাণ কাজের স্থবিরতা প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ওবায়দুল হক দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘প্রত্যেকটা বন্দরকে আলাদাভাবে বিবেচনা করতে হবে। বন্দরের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে সম্ভাব্যতা সমীক্ষায় শুধু এর অর্থনৈতিক উপযোগিতা নয়, নিরাপত্তা অভিঘাতও আলাদাভাবে দেখতে হবে। তা ছাড়া যেসব বন্দর চালু হয়ে গেছে সেগুলো থেকে ইতিমধ্যে কী উপকারিতা পাওয়া গেছে তারও মূল্যায়ন প্রয়োজন। এতে করে ভবিষ্যতে নতুন বন্দর স্থাপনে সিদ্ধান্ত নিতে আমাদের সুবিধা হবে। দিনশেষে কানেক্টিভিটি আমাদের অর্থনীতির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’


পঞ্চগড়ে স্বজনের মরদেহ দেখে ফেরার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৩

আপডেটেড ৩০ মে, ২০২৫ ১০:১৫
পঞ্চগড় প্রতিনিধি

পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলায় স্বজনের মরদেহ দেখে ফেরার পথে ইজিবাইকে ট্রাকের ধাক্কায় তিনজন নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এসময় আহত হয়েছেন অন্তত আরও চারজন। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকালে উপজেলার দেবীগঞ্জ পৌরসভার পাকুড়িতলায় দেবীগঞ্জ-বোদা মহাসড়কে এই দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহত হলেন- বোদা উপজেলার সাকোয়া ইউনিয়নের নয়াদিঘী এলাকার তাপস কুমার রায়ের স্ত্রী শ্যামলী রাণী (৩০), উপজেলার পামুলী ইউনিয়নের জোতভূবণপাড়া এলাকার অরুণ কুমার রায়ের স্ত্রী ভরসা রাণী (৩৫) ও দেবীগঞ্জ উপজেলার দণ্ডপাল ইউনিয়নের রাজারহাট কালিগঞ্জ এলাকার হরেন্দ্র নাথ রায়ের মেয়ে দেবশ্রী রাণী (৭)।

আহতরা হলেন, দেবীগঞ্জ উপজেলার দেবীডুবা ইউনিয়নের লক্ষীর হাট এলাকার অজয় কুমার রায় (৬০), উপজেলার পামুলী ইউনিয়নের জোতভূবণ পাড়া এলাকার খোকা বাবু (৫০), বিমলা (৫০) ও দণ্ডপাল ইউনিয়নের রাজার হাট কালিগঞ্জ এলাকার সৌরভ (১১)।

পুলিশ ও স্থানীয়দের সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার বিকেলে মৃত বেয়াইনকে সৎকার কাজ শেষে স্বজনদের নিয়ে দেবীগঞ্জ উপজেলার ভাউলাগঞ্জ এলাকা থেকে ইজিবাইকে ফিরছিলেন অজয় কুমার রায়। পরে তারা দেবীগঞ্জ পৌর এলাকার পাকুড়িতলায় পৌঁছালে একটি ট্রাক তাদের ইজিবাইকে সজোরে ধাক্কা দিলে চালকসহ ১০ জন যাত্রী মহাসড়কের পাশেই ছিটকে পড়েন।

এসময় ইজিবাইকের সাতজন যাত্রী গুরুতর আহত হন। পরে স্থানীয়দের সহযোগিতায় তাদের উদ্ধার করে দেবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক শ্যামলী রাণীকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে গুরুতর আহত অন্য ছয়জনের শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাদের রংপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল স্থানান্তরিত করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দেবশ্রী রাণী ও ভরসা রাণীর মৃত্যু হয়।

এদিকে, ঘটনার পরপরই ঘাতক ট্রাকটি নিয়ে চালক পালিয়ে যান। পুলিশ নিহতদের মরদের সুরতহাল করে আইনি প্রক্রিয়া শেষে পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করে।

দেবীগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) প্রবীর কুমার রায় বলেন, ঘটনার পরপরই পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা সেখানে ছুটে যান। এ ঘটনায় নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে এখনো কোনো অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ঘটনায় থানায় একটি ইউডি মামলা করা হয়েছে।


পিরোজপুরে ১২০ টাকায় পুলিশে চাকরি পেলেন ১৫ জন প্রার্থী

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
এস এম আবু জাফর (পিরোজপুর)

মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে পিরোজপুরে মাত্র ১২০ টাকায় পুলিশ কনস্টেবল পদে চাকরি পেয়েছেন ১৫ জন প্রার্থী।
বৃহস্পতিবার পিরোজপুর জেলা পুলিশ লাইনস ড্রিল সেডে জেলা পুলিশ সুপার ও টিআরসি নিয়োগ বোর্ডের সভাপতি খাঁন মুহাম্মদ আবু নাসের, পুলিশ কনস্টবল রিক্রুটমেন্ট-২০২৫ এর ফলাফল ঘোষণা করেন।

এতে পুলিশ কনস্টেবল পদে ১৫ জন চাকরির সুযোগ পেয়েছেন।
এ সময় ফলাফলে নিজেদের নাম শুনে আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন ঘোষিত ও ভবিষ্যৎ পুলিশ কনস্টেবল ও তাদের অভিভাবকরা। কোনো ধরনের ঘুষ, সুপারিশ ও হয়রানি ছাড়াই ১২০ টাকায় চাকরি পেয়ে জেলা পুলিশ সুপারসহ নিয়োগ কমিটির সদস্যদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন।
নিয়োগপ্রাপ্তদের ফুল দিয়ে ও মিষ্টিমুখ করিয়ে শুভেচ্ছা জানানো হয়। এ সময় টাকা-পয়সা ছাড়া যোগ্যতার ভিত্তিতে চাকরি হওয়ায় সবাইকে ধন্যবাদ জানানো হয়।



পিরোজপুর পৌর এলাকার ৮ নং ওয়ার্ডে বাসিন্দা ও কনস্টেবল এর নিয়োগপ্রাপ্ত মো: শিহাব উদ্দিন সিকদার বলেন, চাকরির আশায় প্রথমে অনলাইনে আবেদন করেছি। এরপর মাঠে এসে যাবতীয় পরীক্ষায় অংশ নিয়েছি। শারীরিক, লিখিত, মৌখিক সবগুলো পরীক্ষায় ভালোভাবে উত্তীর্ণ হয়েছি, চাকরিও হয়ে গেছে। কারও সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করিনি। আমার কাছে এ চাকরিটা এখনও স্বপ্নের মতো লাগছে।
মোঃ শিহাব উদ্দিনের আম্মা বলেন, মাত্র ১২০ টাকায় আবেদন করে আমার ছেলের চাকরি হয়েছে। কোনো ধরনের ঘুষ, সুপারিশ কিছুই লাগেনি। আমরা খুব খুশি হয়েছি।
পিরোজপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) খান মুহাম্মদ আবু নাসের বলেন, নিয়োগপ্রাপ্তরা শতভাগ স্বচ্ছতা, দুর্নীতিমুক্ত ও ঘুষমুক্ত পরিবেশে উত্তীর্ণ হয়েছেন। সব মিলিয়ে এ নিয়োগ প্রক্রিয়া স্বচ্ছতার সঙ্গে মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে হয়েছে। এখানে কোনো প্রকার অবৈধ লেনদেন বা স্বজনপ্রীতি হয়নি।

এ সময় টিআরসি নিয়োগ বোর্ডের সম্মানিত সদস্য হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, বরগুনা সদর সার্কেল মোঃ আবদুল হালিম,অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বরিশাল(গৌরনদী সার্কেল)মোসাঃ শারমিন সুলতানা রাখী সহ জেলা পুলিশের বিভিন্ন কর্মকর্তাবৃন্দ।


নিম্নচাপের প্রভাবে ভোলা থেকে সকল রুটের নৌযান চলাচল বন্ধ

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
ইউসুফ হোসেন অনিক, ভোলা

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে উপকূলীয় দ্বীপজেলা ভোলায় বুধবার মধ্যরাত থেকে বওয়া ঝোড়ো বাতাস ও বৃষ্টির প্রভাবে ভোলা থেকে ঢাকা সহ অভ্যন্তরীন রুটের সকল যাত্রীবাহী লঞ্চ ও ফেরী চলাচল বন্ধ ঘোষনা করেছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) ও বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন করপোরেশন বিআইডব্লিউটিসি।

ভোলা নদী বন্দর সূত্রে জানা যায়, সাগরে নিম্নচাপের কারণে সমুদ্রবন্দর এলাকায় ৩ নম্বর বিপদসংকেত দেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বৈরী আবহাওয়া বিরাজ করায় চরফ্যাশন বেতুয়া-ঢাকা, ভোলা-লক্ষ্মীপুর, ভোলা-আলেকজান্ডার, ভোলা-তজুমদ্দিন-মনপুরা, হাতিয়া মনপুরাসহ সকল রুটের নৌযান চলাচল পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে।

নিম্নচাপের প্রভাবে মেঘনা ও তেতুলিয়া নদী উত্তাল থাকায় বুধবার রাত থেকে ভোলার ইলিশা থেকে লক্ষ্মীপুরের মজুচৌধুরী ঘাট ও ভোলার ভেদুরিয়া থেকে বরিশালের লাহার হাট ঘাটে কোনো ফেরি চলাচল করেনি। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এ দুইটি রুটে ফেরি চলাচল বন্ধ থাকবে বলে জানা গেছে।

এদিকে ভোলার সব রুটে নৌযান ও ফেরি চলাচল বন্ধ থাকায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীরা। জরুরি প্রয়োজনে পারাপারের অপেক্ষায় ঘাটে গিয়ে বসে থাকতে দেখা গেছে অনেককে। এতে করে বেশি বিপাকে পড়েছে অসুস্থ রোগী ও তাদের স্বজনদের।

মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদী উত্তাল থাকায় মাছ ধরার কোনো নৌকা ও ট্রলার নিয়ে জেলেদের নদীতে যেতে দেখা যায়নি। জেলে ও নৌকার মাঝিদের মাছঘাটে বসে লুডু খেলে ও পরিবারের সাথে সময় কাটাতে দেখা গেছে।

এদিকে নিম্নচাপের প্রভাবে দূর্যোগপূর্ন আবহাওয়া বিরাজমান থাকায় ভোলায় সকাল থেকেই ঝড়ো হাওয়ার সাথে গুড়িগুড়ি বৃষ্টি আবার কখনো ভাড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। জোয়ারে স্বাভাবিক পানির চেয়ে নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। বোরহানউদ্দিন উপজেলার মেঘনা নদীর তীরবর্তী এলাকা ঘুরে দেখা গেছে আলিমুদ্দিন বাংলাবাজার, হাকিমুদ্দিন, খাঁসমহল, কাজীরহাট এলাকায় জোয়ারের পানিতে কিছু অংশ প্লাবিত হয়েছে।

ভোলা পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, ভোলার ২৫০ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ঝুঁকিমুক্ত রয়েছে। গতকাল বুধবার দুপুরের দিকে জোয়ারের পানিতে ভোলার তজুমদ্দিনের নির্মাণাধীন রিং বেড়িবাঁধ কিছুটা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়লে রাতে ব্লক ও জিও ব্যাগ দিয়ে সেটি সংস্কার করা হয়েছে। এখন মোটামুটি ঝুঁকিমুক্ত রয়েছে বলে জানা গেছে।


মোটরসাইকেলের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে প্রাণ গেল যুবকের

প্রতীকী ছবি।
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
আতিয়ার রহমান, দৌলতপুর (কুষ্টিয়া)

কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় আরিফ মন্ডল (৩৫) নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। নিহত যুবক দৌলতপুর উপজেলার প্রাগপুর ইউনিয়নের পাকুড়িয়া ভাঙ্গাপাড়া গ্রামের মুর্শিদ মন্ডলের ছেলে।

নিহতের পরিবার ও হাসপাতাল সূত্রে জানাগেছে, আরিফ মন্ডল আজ বৃহস্পতিবার ভোর ৫টার দিকে মোটরসাইকেল যোগে দ্রুতগতিতে কুষ্টিয়ার যাওয়ার পথে ডাংমড়কা এলাকায় মোটরসাইকেলের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাছের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে সে রাস্তায় ছিটকে পড়ে গুরুতর আহত হয়। পরে পথচারীরা তাকে উদ্ধার করে পরিবারের লোকজনকে খবর দেয়। খবর পেয়ে পরিবারের লোকজন গুরুতর আহত আরিফ মন্ডলকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. হোসেন ইমাম জানান, দূর্ঘটনায় আহত একজন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে।

সড়ক দূর্ঘটনায় নিহত হওয়ার বিষয়ে দৌলতপুর থানার ওসি মো. নাজমুল হুদা জানান, মোটরসাইকেলের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাছের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে একজন মোটরসাইকেল চালক গুরুতর আহত হলে তাকে উদ্ধার করে কুষ্টিয়া হাসপাতালে ভর্তি করার পর সে মারা যায়।


তিন ষাঁড় একসঙ্গে কিনলে ওমরাহ ফ্রি

রাঙ্গা দুদু, কালা পাহাড় এবং রাজা মানিক নামে তিনটি বিশাল ষাঁড় একসঙ্গে কিনলে ওমরাহ ফ্রি। ছবি: ইউএনবি
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
ইউএনবি

কোরবানির জন্য পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় প্রস্তুত করা হয়েছে রাঙ্গা দুদু, কালা পাহাড় এবং রাজা মানিক নামে তিনটি বিশাল ষাঁড়। কুয়াকাটা ডেইরি ফার্ম নামের একটি খামারে ষাঁড় তিনটি সবার নজর কেড়েছে।

ষাঁড় তিনটি একসঙ্গে কিনলে রয়েছে বিশেষ অফার। একসঙ্গে কিনলে ক্রেতাকে নিজ খরচে পবিত্র ওমরাহ করানোর ঘোষণা দিয়েছেন খামারটির স্বত্বাধিকারী মুফতি হাবিবুর রহমান মিছবাহ।

তিনি বলেন, ‘আমি দেশজুড়ে ইসলামের দাওয়াত দিয়ে বেড়াই। খামার এবং কৃষিকাজ করা আমার শখ ছিল, যা এখন পেশায় পরিণত হয়েছে। ৪-৫ বছরের কঠোর পরিশ্রমের পর আমরা শাহিওয়াল এবং ফ্রিজিয়ান জাতের তিনটি ষাঁড় প্রস্তুত করেছি।’

‘বড় জাতের এই পশু তৈরি করতে আমরা কোনো প্রকার মেডিসিন বা ক্ষতিকারক খাবার ব্যবহার করিনি, শুধু স্বাভাবিক খাবার খাওয়ানো হয়েছে। বড় ষাঁড় তিনটি একসঙ্গে কিনলে তাকে আমার পক্ষ থেকে ওমরাহ করানো হবে,’ যোগ করেন তিনি।

খামারের দায়িত্বে থাকা বাদল জানান, ‘আমরা দুজন লোক সার্বক্ষণিক গরুগুলোর পরিচর্যা করছি। নিজ হাতে বানানো সাইলেজ (বায়ুরোধক অবস্থায় সংরক্ষিত সবুজ ঘাস), ঘাস ও খড় খাওয়ানো হয়। এছাড়া, এই ষাঁড় তিনটিকে গোসল করানো হয় দিনে তিনবার।’

খামার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রথম দিকে শখের বশে শাহিওয়াল ও ফ্রিজিয়ান জাতের দুটি গাভি কিনে খামার শুরু করেন হাবিবুর। বর্তমানে তার খামারে রয়েছে অর্ধশতাধিক গরু। এর মধ্যে কিছু দেশীয় জাতের পশু থাকলেও বেশিরভাগই শাহিওয়াল ও ফ্রিজিয়ান জাতের ষাঁড়। তবে কোরবানি উপলক্ষে বিশেষভাবে তিনটি বিশাল ষাঁড় প্রস্তুত করেছেন তিনি।

২০ মণের রাঙ্গা দুদুর দাম হচ্ছে ১৬ লাখ টাকা। রাঙ্গা দুদুর চেয়েও বেশি ওজন নিয়ে প্রস্তুত কালা পাহাড়ের দাম ১৭ লাখ টাকা। তবে ওজন ও বয়সে কিছুটা কম হলেও রাজা মানিকের দাম ১২ লাখ টাকা।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডা. মারুফ বিল্লাহ খান বলেন, ‘চলতি বছরে উপজেলায় ২২ হাজারের বেশি গরু কোরবানির জন্য প্রস্তুতি করা হয়েছে। কেউ যাতে এসব পশুর শরীরে ক্ষতিকারক উপাদান ব্যবহার করতে না পারে, সেজন্য প্রাণিসম্পদ বিভাগ সবসময় নজরদারি করছে।’


বিপৎসীমার ওপর দক্ষিণের চার নদীর পানি, তলিয়ে যাচ্ছে লোকালয়

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
বরিশাল ব্যুরো

উত্তরপশ্চিম বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপের প্রভাবে বাড়তে শুরু করেছে বরিশাল বিভাগের নদ-নদীর পানি। এরই মধ্যে এ বিভাগের চারটি নদীর ৬টি পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বাকি কীর্তনখোলাসহ অন্য নদীর পানিও এখন বিপৎসীমা ছুঁই ছুঁই। ফলে উপকূলের লোকালয়ে ঢুকে পড়ছে পানি।

গতকাল বুধবার বিকালে বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) পানি অনুসন্ধান বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী তাজুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

তিনি জানান, বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ নদীগুলোর ১২টি পয়েন্টের মধ্যে ৬টি নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর মধ্যে বিষখালী নদীর পানি বরগুনা সদর উপজেলা পয়েন্টে ৩ সেন্টিমিটার, পাথরঘাটা উপজেলা পয়েন্টে ১৭ সেন্টিমিটার, বেতাগী উপজেলা পয়েন্টে ১ সেন্টিমিটার, ভোলা জেলায় মেঘনা নদীর তজুমদ্দিন উপজেলা পয়েন্টে ৬৭ সেন্টিমিটার, পিরোজপুর সদর উপজেলার বলেশ্বর নদীর পানি ১৩ সেন্টিমিটার, উমেদপুর পয়েন্টে কঁচা নদীর পানি ৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

এর বাইরে ভোলা খেয়াঘাট এলাকায় তেঁতুলীয়া নদী, বরিশালের কীর্তনখোলা, পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলা পয়েন্টে পায়রা এবং বরগুনার আমতলী উপজেলা পয়েন্টে বুড়িশ্বর নদীর পানিও বিপৎসীমা ছুঁই ছুঁই করছে।

তাজুল ইসলাম বলেন, বর্ষা মৌসুমে দক্ষিণাঞ্চলের নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পায়। আশা করা যাচ্ছে অল্প কদিনের মধ্যে পানি স্বাভাবিক স্তরে চলে আসবে। পানি বৃদ্ধিতে বেড়িবাঁধ, মাছের ঘের, ফসলের জমি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা আছে বলেও মনে করেন তিনি।

বরিশাল আবহাওয়া অধিদপ্তরের সিনিয়র পর্যবেক্ষক মো. মিলন হাওলাদার বলেন, গতকাল বুধবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে বরিশালসহ তার আশপাশ অঞ্চলে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। তা ছাড়া সন্ধ্যা থেকে বাতাসের গতিবেগ বেড়ে যাওয়ায় নদীর পানিও বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ জন্য পায়রা সমুদ্র বন্দরকে-৩ ও নদী বন্দরে-১ নম্বর সর্তক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।


শাবিপ্রবির হলে ঢুকে শিক্ষার্থীকে ‘হামলার চেষ্টা’, ছাত্রদলকর্মী বহিষ্কার

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
ইউএনবি

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) আবাসিক হলের কক্ষে ঢুকে হামলা চেষ্টার অভিযোগে শেখ ফাকাব্বির সিন নামে এক ছাত্রদলকর্মীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে।

বুধবার (২৮ মে) বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মোখলেসুর রহমান বহিষ্কারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

ফাকাব্বির সিন শাবিপ্রবির সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০২২–২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাঈম সরকারের সমর্থক হিসেবে ক্যাম্পাসে পরিচিত। বিশ্ববিদ্যালয়সংলগ্ন সুরমা আবাসিক এলাকার একটি মেসে থাকেন ফাকাব্বির।

প্রক্টর মোখলেসুর রহমান বলেন, ‘তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে শৃঙ্খলা কমিটিতে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ফাকাব্বিরের বিরুদ্ধে বহিষ্কারের সুপারিশ করা হয়। এরপর গত ১৭ মে সিন্ডিকেটের ২৩৬তম সভায় তাকে সাময়িক বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।’

এর আগে, গত ৫ জানুয়ারি রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহপরাণ হলের ৪৩৬ নম্বর কক্ষে প্রবেশ করে সেখানে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের গলায় ছুরি ধরার অভিযোগ ওঠে ছাত্রদলকর্মী ফাকাব্বিরের বিরুদ্ধে। পরে অভিযোগের তদন্ত করার লক্ষ্যে ৯ জানুয়ারি ছাত্র উপদেশ ও নির্দেশনা পরিচালক মো. এছাক মিয়াকে আহ্বায়ক করে চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে কর্তৃপক্ষ।


রাজশাহীতে জমতে শুরু করেছে কোরবানির পশুর হাট

অতিরিক্ত ১৭ লাখ পশু যাবে সারা দেশে
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
আমিনুল ইসলাম বনি

পবিত্র ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে রাজশাহীতে জমতে শুরু করেছে কোরবানির পশুর হাট। রাজশাহী বিভাগের ৮ জেলার ৩০২টি হাটে কোরবানির পশু কেনাবেচা হবে, যার মধ্যে ১৬১টি স্থায়ী ও ১৪১টি অস্থায়ী। তবে এখনও আশানুরূপ বিক্রি শুরু হয়নি বলে জানাচ্ছেন খামারিরা। আগামী দু-একদিনের মধ্যেই হাটগুলোতে জমজমাট বেচাকেনা শুরু হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন বিক্রেতারা।

রাজশাহী বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ দপ্তরের পরিচালক ডা. আনন্দ কুমার অধিকারী বলেন, রাজশাহী বিভাগ প্রাণী সম্পদে সমৃদ্ধি একটি বিভাগ। এ অঞ্চলের অর্থনীতি কৃষিনির্ভর। সারা দেশে ১ কোটি ২৬ লক্ষ পশু কোরবানির জন্য প্রস্তুত থাকলে রাজশাহী বিভাগেই এবার কোরবানির জন্য প্রস্তুত রয়েছে প্রায় ৪৩ লাখ পশু, যা সারাদেশের এক-তৃতীয়াংশ এবং দেশের আটটি বিভাগের মধ্যে সর্বোচ্চ।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এ বছর স্থানীয়ভাবে পশুর চাহিদা প্রায় ২৬ লাখ। ফলে প্রায় ১৭ লাখ পশু রাজধানী, চট্টগ্রাম ও সিলেটসহ দেশের অন্যান্য জেলায় পাঠানো হবে। শুধু রাজশাহী জেলাতেই চাহিদা ৩ লাখ ৮৪ হাজার ৪৩৭টি। তবে প্রস্তুত রয়েছে ৪ লাখ ৯৬ হাজার ৮৯৩টি পশু। চাহিদার তুলনায় ১ লাখ ১২ হাজার ৪৫৬টি অতিরিক্ত পশু অন্যান্য জেলায় সরবরাহ করা হবে।

বিভাগের আট জেলায় কোরবানির পশু উৎপাদন ও চাহিদার পরিসংখ্যান অনুযায়ী রাজশাহীতে চাহিদা ৩ লাখ ৮১ হাজার; উৎপাদন ৪ লাখ ৭৩ হাজার, নাটোরে চাহিদা ২ লাখ ৭৩ হাজার; উৎপাদন ৫ লাখ ১৪ হাজার, নওগাঁয় চাহিদা ৩ লাখ ৮৬ হাজার; উৎপাদন ৭ লাখ ৮৮, চাঁপাইনবাবগঞ্জে চাহিদা ১ লাখ ৩৪ হাজার; উৎপাদন ২ লাখ, পাবনায় চাহিদা ৩ লাখ ১২ হাজার; উৎপাদন ৬ লাখ ৪৮ হাজার, সিরাজগঞ্জে চাহিদা ২ লাখ ৫৯ হাজার; উৎপাদন ৬ লাখ ৫৫ হাজার, বগুড়ায় চাহিদা ৭ লাখ ৯ হাজার; উৎপাদন ৭ লাখ ৪৬ হাজার, জয়পুরহাটে চাহিদা ১ লাখ ৯৭ হাজার; উৎপাদন ৩ লাখ ১৬ হাজার।

খামারিরা বলছেন, গোখাদ্যের লাগামছাড়া দাম এবার পশুর বাজারে বড় প্রভাব ফেলবে।

পবা উপজেলার হজুরীপাড়া ইউনিয়নের খামারি ইসরাফিল ইসলাম সুমন বলেন, ‘তিনটি কোরবানিযোগ্য গরু খামারে আছে। সব খাবার কিনে দিতে হয়, খরচ বেড়েছে অনেক। প্রতিবছরই আমরা অন্তত ৮-১০টি গরু পালন করি। গোখাদ্যের মূল্যবৃদ্ধির কারণে পশুর লালনপালন খরচও বেড়েছে। এবারও ৩টি গরু কোরবানির জন্য প্রস্তুত করছি। তাই প্রত্যাশিত দাম না পাওয়া পর্যন্ত বিক্রি করছি না। ঈদ আসতে আরও বেশ কিছুদিন সময় আছে। এর মধ্যে কিছুটা লাভ পেলেই বিক্রি করে দেব।’

গরু ব্যবসায়ী হযরত আলী বলেন, ‘খামারের গরুর চেয়ে বাড়িতে লালনপালন করা গরুর চাহিদা বেশি। তাই পাড়া-মহল্লায় ঘুরে ঘুরে গরু দেখছি। তবে এবার দাম অনেক বেশি চাচ্ছেন খামারিরা। ফলে আগের বছরগুলোর চেয়ে এবার বেশি দামে পশু কিনতে হবে ক্রেতাদের।’

রাজশাহী জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আতোয়ার রহমান জানান, জেলায় এ বছর কোরবানির জন্য পশুর চাহিদা রয়েছে তিন লাখ ৮৪ হাজার ৪৩৭টি। এর বিপরীতে চার লাখ ৯৬ হাজার ৮৯৩টি পশু প্রস্তুত রয়েছে। অর্থাৎ চাহিদার তুলনায় এক লাখ ১২ হাজার ৪৫৬টি পশু বেশি রয়েছে। অতিরিক্ত এসব পশু বিক্রির জন্য নেওয়া হবে দেশের অন্যান্য জেলায়।

রাজশাহী বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ দপ্তরের পরিচালক ডা. আনন্দ কুমার অধিকারী বলেন, সীমান্ত দিয়ে পশু আমদানি বন্ধ থাকায় দেশি গরুর চাহিদা ও দাম বাড়ছে। পর্যাপ্ত গবাদিপশুর মজুদ আমাদের নিজেদেরই আছে। বাইরের গরু আসে না বলে দাম কিছুটা বাড়তে পারে। আবার চাহিদার তুলনায় মজুদ বেশি থাকায় দাম খুব বেশি বাড়বেও না। ফলে ধরে নেওয়া যায় যে বাজারে এমন দাম হবে যেটা ক্রেতা-বিক্রেতা সবার জন্যই ভালো হবে।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের রাজশাহী বিভাগীয় পরিচালক ডা. অনন্দ কুমার অধিকারী বলেন, গ্রামাঞ্চলে এখনও অনেক খামারি নিজ নিজ ঘরে এক থেকে দুটি করে দেশি জাতের পশু লালনপালন করছেন। পাশাপাশি বড় খামারগুলোতে শাহীওয়াল, সিন্ধি, রেট চিটাগাং, পাবনা ব্রিড এবং মীর কাদিম জাতের গরু কোরবানির জন্য মোটাতাজা করা হয়েছে। এখন বেশিরভাগ ক্রেতা হাটে না গিয়ে বিভিন্ন খামার ও বাসাবাড়িতে পালন করা স্বাস্থ্যসম্মত গরু কিনছেন। কয়েকদিনের মধ্যেই হাটগুলো জমে উঠবে। বিভাগের সবচেয়ে বড় পশুহাট রাজশাহীর সিটি হাট। এটা ইতোমধ্যেই জমে উঠতে শুরু করেছে।

হাটগুলোতে পশুর স্বাস্থ্য তত্ত্বাবধান ও রোগনির্ণয়ের জন্য ভেটেরিনারি মেডিক্যাল টিম কাজ করছে। এ ছাড়া, জাল টাকা শনাক্তকরণ ব্যবস্থা, ব্যাংকের বুথ ও ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরাও রাখা হয়েছে হাটগুলোতে।

রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ আবু সুফিয়ান বলেন, মহাসড়কের পাশে কোনও পশুর হাট বসানো যাবে না। প্রতিটি পশুরহাটে সিসি ক্যামেরা, জেনারেটর, নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবক রাখার জন্য ইজারাদার, ব্যবসায়ী প্রতিনিধি এবং বাজার কমিটি ও পরিবহন সংশ্লিষ্ট নেতাদের বলা হয়েছে। পশু রাখার জন্য শেড তৈরি করা, আগত ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের জন্য পানি ও পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা রাখার জন্যও বলা হয়েছে। হাটে হাসিল নিয়ে যেন দ্বন্দ্ব না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে বলা হয়েছে তাদের।

জাল টাকা শনাক্তকরণ ও লেনদেন-সংক্রান্ত বুথ স্থাপনে ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে আহ্বান জানানো হয়েছে উল্লেখ করে আবু সুফিয়ান বলেন, ‘হাটে চুরি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি প্রতিরোধে টহল বৃদ্ধির পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হবে। সার্বিক নিরাপত্তায় হাটকেন্দ্রিক পুলিশের কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হয়েছে। কোনো পশুবাহী গাড়ি জোরপূর্বক হাটে আনা যাবে না। কাঁচা চামড়া পাচার রোধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মহাসড়কে পশু লোডিং বা আনলোডিং করা যাবে না। যানজট রোধে ট্রাফিক ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হবে।’


লঘুচাপের প্রভাবে উপকূলে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি, বন্দরে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
ইউএনবি

উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর এবং তৎসংলগ্ন এলাকায় একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়েছে। এর প্রভাবে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের এলাকাগুলোতে গত দুই দিন ধরে থেমে থেমে মাঝারী বৃষ্টি হচ্ছে।

লঘুচাপটি আরও ঘনীভূত হতে পারে এবং উপকূলীয় এলাকা দিয়ে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এ কারণে দেশের চার সমুদ্র বন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

মঙ্গলবার (২৭ মে) আবহাওয়া অধিদপ্তরের সামুদ্রিক সতর্কবার্তায় এ খবর জানানো হয়েছে।

সতর্কবার্তায় বার্তায় বলা হয়েছে, লঘুচাপের কারণে উপকূলীয় এলাকা দিয়ে দমকা বা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এ কারণে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

এ ছাড়া, উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থিত মাছধরা ট্রলারকে উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।

এদিকে, লঘুচাপের কারণে আজ (বুধবার) ভোর থেকে পটুয়াখালিতে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন ইউএনবির পটুয়াখালীর প্রতিনিধি।

তিনি আরও জানান, পটুয়াখালীর আকাশ আজ ঘন মেঘাচ্ছন্ন রয়েছে। বাতাসের চাপ না বাড়লেও অমাবশ্যার জোয়ারের প্রভাবে নদ-নদীর পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়েছে। কুয়াকাটা সংলগ্ন বঙ্গোপসাগর ‍উত্তাল হয়েছে উঠেছে।

তাছাড়া, ঢাকাসহ দেশের সব বিভাগে অন্তত পাঁচ দিন বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

এ সম্পর্কিত একটি বিজ্ঞপ্তিতে রাষ্ট্রীয় সংস্থাটি জানায়, দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন এলাকায় একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়ে তা বর্তমানে সুস্পষ্ট লঘুচাপে পরিণত হয়েছে। এর প্রভাবে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু ঢাকা বিভাগের পূর্বাঞ্চলসহ বরিশাল, চট্টগ্রাম, সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগ পর্যন্ত অগ্রসর হয়েছে।

এর ফলে ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ বিদ্যুৎ চমকানো কিংবা হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।

সেই সঙ্গে খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে।

আজ (বুধবার) সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা ১–২ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। পাশাপাশি রাতের তাপমাত্রাও সামান্য কমার আভাস দেওয়া হয়েছে।

পরের তিন দিন একই ধরনের আবহাওয়ার পূর্বাভাস দিয়ে জানানো হয়েছে, রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ বিদ্যুৎ চমকানো কিংবা হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে সারা দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে।

দ্বিতীয় দিন, অর্থাৎ বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে পরের ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পেতে পারে, তবে পরের দুদিন প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে বলে পূর্বাভাসে বলা হয়েছে।

এছাড়াও পঞ্চম দিন রবিবারও বৃষ্টিপাতের পর এই প্রবণতা কমে ফের গরম বাড়ার সম্ভাবনার কথা জানিয়েছে রাষ্ট্রীয় সংস্থাটি।


লালপুরে বরেন্দ্র প্রকল্পে অনিয়ম

নদী ভাঙনের শঙ্কায় দুই শ পরিবার
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
সজিবুল ইসলাম, লালপুর (নাটোর)

নাটোরের লালপুর উপজেলার কেশবপুর গ্রামে খলশিডাঙ্গা নদীর পাড় ভাঙন রোধে কোটি টাকা ব্যয়ে গাইড ওয়াল নির্মাণ করেছিল বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ)। তবে নির্মাণ কাজে ব্যাপক অনিয়ম, নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার ও রড-সিমেন্ট কম দেওয়ায় ছয় মাসের মধ্যেই দেয়ালে ফাটল ও ধস দেখা দিয়েছে। এতে ওই এলাকার দুই শ পরিবার নদী ভাঙনের শঙ্কায় রয়েছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রকল্প বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীদের গাফিলতি ও যোগসাজশের কারণে এমন দুরবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। গাইড ওয়াল ও সড়কের মাঝে ফাঁকা জায়গা ভরাটের জন্য নদী থেকে অবৈধভাবে মাটি উত্তোলন করা হচ্ছে। স্থানীয়রা আশঙ্কা করছেন, বর্ষা শুরু হলে ক্ষতি আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করবে।

সরেজমিনে দেখা যায়, নদীতে অস্থায়ী বাঁধ দিয়ে পানি সেচের মাধ্যমে খননযন্ত্র (ভেকু) ব্যবহার করে অবৈধভাবে মাটি তোলা হচ্ছে এবং সেটি ওয়াল ও সড়কের ফাঁকা জায়গায় দেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে কেশবপুর গ্রামের আঞ্চলিক রাস্তা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে এবং বাড়িঘরও ভাঙনের শঙ্কায় রয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দা আকরাম আলী ও মাহফুজুর রহমান জানান, বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার আমলে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও বিএমডিএ প্রকৌশলীদের যোগসাজশে অনিয়ম করে এসব কাজ করা হয়। কাজের কিছুদিন পরই সেটি বন্ধ হয়ে যায়। এতে নদী ভাঙন বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি রাস্তা বিলীন হয়ে গেছে। তারা দ্রুত ভাঙন রোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।

সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার গোলাপ আলী জানান, এই প্রকল্পে কাজটি বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন ঠিকাদার দ্বারা সম্পন্ন করা হয়েছে। বাইরে থেকে মাটি কেনা সম্ভব না হওয়ায় প্রকৌশলীর নির্দেশনা অনুযায়ী নদী থেকে মাটি উত্তোলন করে ব্যবহার হচ্ছে।

বিএমডিএর বড়াইগ্রাম জোনের লালপুরের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-সহকারী প্রকৌশলী আবুল বাসার জানান, গত বর্ষায় সময় স্বল্পতার কারণে ওয়ালের ব্যাক সিলিংয়ে মাটি দেওয়া হয়নি, যা বর্তমানে দেওয়া হচ্ছে। সরকারি প্রকল্পের জন্য নদী থেকেই মাটি সংগ্রহ করা হচ্ছে। ওয়ালের কিছু মাটি সরার ফলে ফাটল দেখা দিয়েছে। তবে এসব প্রকল্পের বরাদ্দ কত সেটা জানা নেই।

এ বিষয়ে বিএমডিএর বড়াইগ্রাম জোনের সহকারী প্রকৌশলী তরিকুল ইসলাম বলেন, এ বিষয়গুলো সরাসরি উপ-সহকারী প্রকৌশলী দেখে থাকেন, তাই তিনিই এ বিষয়ে বিস্তারিত বলতে পারবেন। তবে অভিযোগ পাওয়া গেলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।


কুষ্টিয়ায় রাসেলস ভাইপারের কামড়ে দুইজনের মৃত্যু

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
ইউএনবি

কুষ্টিয়ার কুমারখালী ও দৌলতপুরে রাসেলস ভাইপারের কামড়ে দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। বুধবার (২৮ মে) সকালে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তারা মারা যান।

নিহতরা হলেন, দৌলতপুর ইউনিয়নের গরবপাড়া এলাকার মৃত নাহারুল ইসলামের ছেলে কালু হালসানা (৩৫) ও কুমারখালীর জগন্নাথপুর ইউনিয়নের কৃষক কামরুজ্জামান প্রমানিক (৫০)।

কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক (আরএমও) হোসেন ইমাম জানান, একজনের মৃত্যু রাসেল ভাইপার সাপের কামড়ে নিশ্চিত হলেও অপরজনের ক্ষেত্রে তা এখনো নিশ্চিত নয়।

তিনি আরও বলেন, ‘দেরি করে হাসপাতালে আনায় কাউকেই এন্টিভেনম দেওয়া সম্ভব হয়নি। তাদের লাশ মর্গে পাঠানো হয়েছে।’


চরাঞ্চল ও রোহিঙ্গা শিশুদের মাঝে ঈদ উপহার বিতরণ

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
গোপালপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি

আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থা হিউম্যান কনসার্ন ইন্টারন্যাশনালের অর্থায়নে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সুশীলনের বাস্তবায়নে টাঙ্গাইলের যমুনা নদীর দুর্গম শুশুয়া চরে এবং কক্সবাজারের উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্প-৪ সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের ঈদ উপলক্ষে পোশাক ও খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে।

শুশুয়া চরের ৮৯জন এবং উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্প-৪ এর ২৫৫ জন শিশুদের মাঝে এসব উপহার বিতরণ করা হয়।

২৮মে বুধবার ও ২৭মে মঙ্গলবার বেলা ১১টায় ক্যাম্প-৪ দরবার হলে এবং শুশুয়া ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশন সংলগ্ন মাঠে এই বিতরন অনুষ্ঠান চলে।

প্রত্যেকটি মেয়ে শিশুকে থ্রি পিস, জুতা , ফ্রক, স্যালোয়ার,স্কার্ফ এবং ছেলে শিশুদের শার্ট, প্যান্ট ও জুতা দেয়া হয়। এছাড়াও প্রত্যেকজনকে ১কেজি সেমাই,১কেজি চিনি, ১কেজি পাউডার দুধ, ২৫০গ্রাম কিসমিস, ৫০০গ্রাম বাদাম, গরম মসলা ৩০গ্রাম, শুকনা মরিচ ৫০০গ্রাম, আদা ৫০০গ্রাম , পেঁয়াজ ২কেজি, রসুন ১কেজি, লবণ ১কেজি, পোলাও চাল ২কেজি, নুডুলস ২প্যাকেট, শুকনো ছোলা ২কেজি এবং প্রতিদিনের স্ন্যাকস হিসাবে পাইনাপেল ক্রীম বিস্কুট ২১ প্যাকেট, ড্রাই কেক ২১ প্যাকেট ও এনার্জি বিস্কুট ২১ প্যাকেট করে দেওয়া । এছাড়াও ১২৫ জন কিশোরীকে স্যানিটারি ন্যাপকিন বিতরণ করা হয়।

এসময় উপস্থিত ছিলেন উখিয়ায় ক্যাম্প-৪ ইনচার্জ সুরাইয়া আক্তার সুইটি, হিউম্যান কনসার্ন ইন্টারন্যাশনালের প্রতিনিধি নাইমুল হাসান মিশু, সুশীলন এর প্রজেক্ট কো অর্ডিনেটর মোঃ আরিফুল ইসলাম, ফিল্ড ফ্যাসিলিটেটর আঁখি পারভিন, রুমা খাতুন, শুশুয়া ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশন সভাপতি মোমিনূর রহমান, সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন প্রকল্পের ফোকাল পার্সন মোস্তফা বকলুজ্জামান, মনিটরিং অফিসার কাজী ফয়সাল কবির এবং অ্যাকাউন্টস অফিসার মো: দেলোয়ার হোসেন।


এক ঘণ্টার বাজার মাসে বিক্রি ৩ কোটি টাকার দুধ

খেয়া নৌকায় নদী পাড়ি দিয়ে বাজারের দিকে যাচ্ছেন কৃষাণ-কৃষাণীরা। ছবি: দৈনিক বাংলা
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
মাহমুদুল হাসান, সাটুরিয়া (মানিকগঞ্জ)

মানিকগঞ্জের শান্ত, স্নিগ্ধ জনপদ সাটুরিয়া, যেখানে ধলেশ্বরী নদীর রূপালী ঢেউ আছড়ে পড়ে তীরের সবুজ প্রান্তরে। এই মনোরম প্রকৃতির বুকেই ঘটে গেছে এক নীরব অর্থনৈতিক বিপ্লব। উপজেলার বরাইদ ইউনিয়নের গোপালপুর নামের একটি বাজার, যা এখন দুগ্ধ অর্থনীতির এক প্রাণকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন প্রায় আট থেকে দশ লাখ টাকার তরল সম্পদ দুধ এখানে হাতবদল হয়। আর দুধের ব্যবসা এ অঞ্চলের কয়েক হাজার মানুষের জীবনযাত্রায় এনেছে পরিবর্তন।

উপজেলার রাজৈর, বরাইদ, ধুনট, কাকরাইদসহ বিভিন্ন গ্রামের কৃষকরা কৃষিকাজের পাশাপাশি গাভী পালন করেন। প্রতিটি পরিবারে গড়ে প্রতিদিন ২০ থেকে ৩৫ কেজি দুধ উৎপাদিত হয়। এই দুধই গোপালপুর বাজারে চলে আসে বিক্রির জন্য।

নদীর দুই কুলের প্রায় ১৫টি গ্রামের কৃষক-কৃষাণীর দৈনন্দিন জীবন আবর্তিত হয় দুধকে কেন্দ্র করে। সকাল হলেই কেউ মাথায় দুধের ভারী কলসি, কেউবা হাতে ছোট বালতি নিয়ে গোপালপুর বাজারের দিকে এগিয়ে চলেন। খেয়া নৌকার দোলানিতে নদী পার হয়ে, সবুজ মাঠের বুক চিরে তাদের গন্তব্য একটাই ধলেশ্বরীর পূর্বপাড়ের গোপালপুর বাজার।

এ বাজারে প্রতিদিন বিক্রি হয় ২৫০ থেকে ৩০০ মণ দুধ, যা এই অঞ্চলের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি হয়ে ওঠেছে। মাসে এই বাজারে প্রায় আড়াই থেকে তিন কোটি টাকার দুধের বেচাকেনা হয়।

এই দুধের প্রবাহ শুধু স্থানীয় অর্থনীতিকেই সচল রাখছে না, বরং তা ছড়িয়ে পড়ছে রাজধানী ঢাকা এবং তার পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন জেলায়, যেখানে গোপালপুরের খাঁটি দুধ পৌঁছে দিচ্ছে মিষ্টির স্বাদ আর পুষ্টির সম্ভার।

গোপালপুর বাজারের ইতিহাস

গোপালপুর বাজারটি গড়ে ওঠে ১৯৮৫ সালে। আশির দশকের শুরুতে গোপালপুর বাজারের আশে পাশে কোনো বাজার ছিল না। স্থানীয় পর্যায়ে উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করার জন্য উপজেলা সদর অথবা পার্শ্ববর্তী দরগ্রাম বাজারে যেতে হতো। এতে কৃষকদের বিড়ম্বনার শেষ ছিল না। ১৯৮৫ সালে গোপালপুর বাজারে বরাইদ ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান গাজী মোহাম্মদ আব্দুল হাই ব্যক্তিগত উদ্যোগে জমি কিনেন। একই বছরের ডিসেম্বর মাসে এখানে তিনি বাজার বসানোর ব্যবস্থা করেন। প্রথমে গ্রামীণ কৃষিপণ্য ও দুধের লেনদেন সীমিত থাকলেও নব্বই দশক থেকে দুধের ব্যবসা বড় পরিসরে শুরু হয়। আশে পাশের বিভিন্ন গ্রাম থেকে কৃষকরা দুধ আনতে শুরু করেন। ধীরে ধীরে এ বাজারে পরিধি বাড়তে শুরু করে। বর্তমানে বাজারটি দেশব্যাপী ‘দুধের বাজার’ নামে পরিচিত।

বরাইদ ইউপি চেয়ারম্যান গাজী মোহাম্মদ আবদুল হাই স্মৃতিচারণ করে বলেন, নিজের কষ্টার্জিত অর্থ দিয়ে জমি কিনে তিনি এই বাজার স্থাপন করেছিলেন এবং পরবর্তীতে তা জনগণের কল্যাণে দান করে দেন। আজ গোপাল পুরের দুধের বাজার শুধু মানিকগঞ্জ নয়, সারা দেশে এক বিশেষ পরিচিতি লাভ করেছে।

গাভী পালন: আয়ের উৎস

সাটুরিয়া উপজেলার রাজৈর, বরাইদ, ধুনট, কাকরাইদ, গালাসহ আশেপাশের গ্রামের বেশিরভাগ মানুষ কৃষি কাজের ওপর নির্ভরশীল। ধান, গম, ভূট্টাসহ বিভিন্ন ধরনের শাক-সবজির আবাদ করে তাদের জীবিকা নির্বাহ করে। তবে এই এলাকার মানুষের অন্যতম আয়ের উৎস হয়ে দাঁড়িয়েছে গবাদিপশু পালন। প্রায় প্রতিটি পরিবারে ২ থেকে ১০টি গাভী রয়েছে। বর্তমানে দুধ বিক্রি করে এই এলাকার বেশিরভাগ পরিবারের জীবিকা চলে। সকাল ৮টার মধ্যে দেশীয় পদ্ধতিতে দুধ সংগ্রহ করে গোপালপুর বাজারে নিয়ে যান তারা।

গোপালপুর বাজারে একদিন

সম্প্রতি সরেজমিনে গোপালপুর বাজারে সকাল সাড়ে ৭টায় গিয়ে দেখা যায় বিভিন্ন গ্রাম থেকে কৃষকরা দুধ বিক্রি করার জন্য আসতে শুরু করেছেন। তখনো বাজার ভরে ওঠেনি। ধলেশ্বরী নদীর পশ্চিম পাড়ে আসতে শুরু করেছেন কিষাণ- কিষাণিরা। অপেক্ষা করছেন খেয়া পার হয়ে গোপালপুর বাজারে আসার। খেয়া নৌকায় নদী পারাপার হওয়ার পর নদীর পাড় ঘেঁষা পথে ছুটতে থাকেন তারা। প্রায় ১০-১৫ মিনিট হাঁটার পর গোপালপুর বাজারে পৌছান।

সকাল ৮টার মধ্যে আশেপাশের গ্রামের শত শত কিষাণ-কিষাণির পদচারণায় ভরে ওঠে বাজার। দুধের পাইকারি ব্যবসায়ীরা দুধ পরখ করে দেখেন। দামদর মিলে গেলে দুধ কিনে নিচ্ছেন। কেনার পর দুধ বড় বড় গ্যালনে ভরে পিকআপ ভ্যানে করে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানের উদ্দেশ্যে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ঘণ্টা খানেকের মধ্যেই শেষ হয় এই বাজার। কৃষক দুধ বিক্রি করার পর গরুর জন্য কিনছেন খাবার। লাভের টাকা দিয়ে পরিবারের জন্য মাছ, বিভিন্ন সবজিসহ দৈনন্দিন বাজার।

কথা হয় গোপালপুর বাজারে দুধ বিক্রি করতে আসা বরাইদ গ্রামের কৃষক মো. আক্কাস আলীর সঙ্গে। তিনি জানান, তার চারটি গাভী থেকে প্রতিদিন ২৫ কেজি দুধ পান। প্রতি কেজি দুধ বিক্রি হয় ৬০ থেকে ৭০ টাকায়।

কাকরাইদ গ্রামের কৃষক মো. সিরাজ মিয়া বলেন, ‘আমার বাড়িতে মোট ৮টি গরু রয়েছে। এর মধ্যে ৬টি গাভী ও ২টি ষাঁড় গরু। আমি প্রতিদিন প্রায় ৩৫-৪০ কেজি দুধ পাই। সম্পূর্ণ দেশীয় খাবার গরুকে খাওয়ানো হয়। তাই দুধের মান ভালো থাকে। আমার মতো অনেকেই রয়েছে দুধ বিক্রি করে সংসার চালায়।’

সমস্যা: একটি সেতুর অভাব

ধলেশ্বরী নদীর দুই পাড়ের স্থানীয়রা নদীতে একটি সেতু নির্মাণের জন্য দীর্ঘদিন দাবি জানিয়ে আসছেন। সেতু না থাকায় নৌকায় নদী পার হতে হয়, যা সময়সাপেক্ষ ও ঝুঁকিপূর্ণ। আবার উৎপাদিত কৃষি পণ্য নিয়ে আসতে প্রতিনিয়ত বেশ বিড়ম্বনায় পড়তে হয়।

বরাইদ গ্রামের কৃষক রাসেল মিয়া বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে একটি ব্রিজের (সেতু) দাবি জানিয়ে আসছি। ব্রিজটি হলে দুধ নিয়ে বাজারে যেতে এত কষ্ট করতে হতো না।’

গোপালপুর বাজার বণিক সমিতির সভাপতি মো. আবুল হোসেন বলেন, প্রতিদিন গোপালপুর বাজারে ২৫০ থেকে ৩০০ মণ দুধ বিক্রি হয়, যার বাজারমূল্য আনুমানিক ৮ থেকে ১০ লাখ টাকার বেশি। পাইকাররা এই দুধ কিনে ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করেন। ধলেশ্বরী নদীর ওপর সেতু নির্মাণ করা হলে নদী পাড়ের মানুষের কষ্ট অনেকটাই লাঘব হবে এবং বাজারের কার্যক্রম আরও সহজ হবে।


banner close