রংপুর সিটি করপোরেশন ঘোষণার পরই জমিজমার দাম বেড়ে যায়। তখন থেকে ভূমিদস্যুদের তৎপরও শুরু হয়। এই ভূমিদস্যুর কবলে পড়ে দুটি পরিবার আজ হুমকির মুখে। এ বিষয়ে এখনো ব্যবস্থা নেয়নি প্রশাসন। সম্প্রতি সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী অন্যের জমি অবৈধভাবে দখল করলে ৭ বছরের জেলের বিধান রেখে ভূমি অপরাধ ও প্রতিকার আইন-২০২৩ পাস হলেও আইনটিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে জাল দলিল তৈরি করে জোর করে জমি দখল করার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া গেছে। সরেজমিনে দেখা যায়, রংপুর সিটি করপোরেশন এলাকার ১৭নং ওয়ার্ডের পীরজাবাদ নামক গ্রামে রিপন মিয়া ও রফিকুল ইসলামের সম্পত্তি নিয়ে ঘটনাটি ঘটে। ভূমিদস্যুরা প্রভাবশালী হওয়ার কারণে ভুক্তভোগীরা তাদের ভয়ে ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে দিনাতিপাত করছেন। অবশেষে জমির মূল কাগজপত্র ভুক্তভোগীর নামে থাকা সত্ত্বেও ভূমিদস্যুরা জাল দলিল বানিয়ে জমির প্রকৃত মালিকদের বিরুদ্ধে রংপুর আদালতে মামলা দায়ের করেন।
ভুক্তভোগীরা বর্তমানে বিভিন্নভাবে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। ভূমিদস্যুর মূলহোতা পঞ্চগড় জেলার দেবীগঞ্জ উপজেলার ভূমি অফিসের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী মনোয়ার হোসেন, আনারুল ইসলাম। তারা জোর করে ভুক্তভোগী রিপন মিয়া ও রফিকুল ইসলামের কাছ থেকে জমি দাবি করে সহকারী জজ আদালত, রংপুরে মামলা দায়ের করেন। মামলায় ভূমিদস্যুরা হেরে গিয়ে ভুক্তভোগীর বাসার নির্মাণকাজে বাধা দেয় এবং বিভিন্নভাবে রাজমিস্ত্রিসহ অন্য নির্মাণ শ্রমিকদের হুমকি দেয়, তারা যেন কাজ ছেড়ে চলে যায়। বর্তমানে ভুক্তভোগীরা অনেক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। ঘটনাস্থলে গিয়ে জানা যায়, ভূমিদস্যুরা তাদের ক্ষমতা ও পুলিশের ভয় দেখিয়ে নাজেহাল করছে ভুক্তভোগীদের।
এলাকাবাসী জানায়, ভুক্তভোগী রিপন মিয়া ও রফিকুল ইসলাম দীর্ঘদিন ধরে এ জমিতে বসবাস করে আসছে। আরও জানা যায়, ভুক্তভোগী রিপন মিয়া ও রফিকুল ইসলামের পূর্বপুরুষরা এ জমিতে ঘরবাড়ি তৈরি করে বসবাস করে আসছিলেন, যা আদি নিবাস বলে পরিচিত ছিল; কিন্তু জমির মূল মালিক মারা যাওয়ার পর থেকে ভূমিদস্যুরা জাল দলিল ও কাগজপত্র তৈরি করে রিপন মিয়া ও রফিকুল ইসলামকে নানাভাবে ভয়ভীতি ও প্রাণনাশের হুমকি দেখিয়ে ভুক্তভোগীদের ঘরবাড়ি ছাড়ার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে। এ ব্যাপারে রফিকুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এ জমিতে বসবাস করে থাকার পরও তারা এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালায়। তাই আমরা পরিবার-পরিজন নিয়ে প্রতি মুহূর্তে আতঙ্কে জীবনযাপন করছি। ভুক্তভোগী আরও বলেন, ‘আমাদের পরিবারের নিরাপত্তার স্বার্থে পুলিশ প্রশাসন থেকে শুরু করে উচ্চপর্যায়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তার কাছে আশু হস্তক্ষেপ কামনা করছি। এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে মনোয়ার হোসেনের মোবাইলে যোগাযোগ করা হয়। তবে তার কোনো বক্তব্য জানা যায়নি।
যশোরের কেশবপুরে নেটজ বাংলাদেশ-এর সহযোগিতায় রিসার্চ ইনিশিয়েটিভস্ বাংলাদেশ (রিইব) আয়োজিত ইউনিয়ন পর্যায়ে স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সাথে যৌথ পদক্ষেপ সংলাপ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার কেশবপুর সদর ইউনিয়ন পরিষদ হলরুমে অনুষ্ঠিত এ সংলাপে ইউনিয়নের গুরুত্বপূর্ণ জনপ্রতিনিধি, সিএসও সদস্য ও রিইবের প্রতিনিধিদের সক্রিয় অংশগ্রহণে স্থানীয় নানা সামাজিক সমস্যা ও সমাধান নিয়ে আলোচনা হয়। সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মো. আলাউদ্দিন আলা, চেয়ারম্যান, কেশবপুর সদর ইউনিয়ন পরিষদ। সভাপতিত্ব করেন মো. হারুনার রশীদ বুলবুল, সভাপতি, সিএসও কমিটি, কেশবপুর উপজেলা। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন মো. হুমায়ুন কবির, প্রশাসনিক কর্মকর্তা (ইপি.), মো. আসলাম মোল্লা, প্রকল্প সমন্বয়ক এবং মো. খালিদ হাসান, এলাকা সমন্বয়কারী, রিইব-হোপ প্রকল্প। এছাড়া গ্রাম আদালতের প্রতিনিধি সংকর পাল, সংরক্ষিত ইউপি সদস্য মোছা. রাশিদা বেগম, শাহানাজ পারভীন, নাজমা সুলতানা, ইউপি সদস্য মো. কামাল উদ্দীন (দোরমুটিয়া), মো. সিরাজুল ইসলাম (মূলগ্রাম), রাজ্জাক (মূলগ্রাম), এ কে এম রেজওয়ানুর রহমান (আলতাপোল), মো. রাশিদুল ইসলাম, সহ জনপ্রতিনিধি ও সিএসও সদস্যরা অংশ নেন।
এ সময় ইউনিয়নের বিভিন্ন দীর্ঘদিনের সামাজিক সমস্যা তুলে ধরে বক্তারা বলেন, এলাকায় মাদক সেবন ও ব্যবসার বৃদ্ধি রাস্তা ঘাটের বেহাল অবস্থা সমাজে বর্ণ বৈষম্য, বিশেষত দলিত সম্প্রদায়ের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ, অভাবের কারণে শিক্ষার্থীদের স্কুল থেকে ঝরে পড়া, মিতা মন্ডলের নিখোঁজ ঘটনা যার ডায়েরি দ্রুত থানায় অন্তর্ভুক্ত করার দাবি, সভায় অংশগ্রহণকারীরা সামাজিক সমস্যাগুলোর সমাধানে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা। মাদকসেবী ও মাদক ব্যবসায়ীদের চিহ্নিত করে স্থানীয়ভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে। চেয়ারম্যান আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নিয়মিতভাবে এ বিষয়ে অবহিত করবেন। ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলো দ্রুত সংস্কারের লক্ষ্যে ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভার মধ্যে সমন্বয় গড়ে তোলা হবে।
মাগুরা সদর উপজেলার রাঘবদাইড় ইউনিয়নের পালপাড়া গ্রামের গৃহবধূ সন্ধ্যা রানী, শতবর্ষ পার করলেও সংসারের হাল ছাড়েননি। পিঠার ছাঁচ, দইয়ের হাড়ি এবং বিভিন্ন ধরনের মাটির জিনিসপত্র তৈরি করে উপার্জন করছেন অর্থ। সংসার চালাতে ছেলেকে সাথে নিয়ে এ কাজ করেন তিনি।
স্বামী ব্রজগোপালের সাথে পুরনো ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে মৃৎশিল্পের কাজ করে সংসার চালাতেন। স্বামী গত হয়েছেন ১২ বছর আগে। তার মৃত্যুর পরেও একমাত্র ছেলে আরাধনকে (৪৫) সাথে নিয়ে মৃৎশিল্প তৈরি করে সংসার চালান তিনি। তিন কন্যা ও এক পুত্র সন্তানের জননী তার সারাটা জীবন উৎসর্গ করেছেন এই সংসারের পেছনে।
পাল বাড়িতে ৭ বছর বয়সে বউ হয়ে আসেন শতবর্ষী নারী সন্ধ্যা রানী। সেই থেকে শুরু হয় তার জীবন যুদ্ধ। একশত বছর পার করলেও এখনো সংসারের উপার্জনের জন্য তার হাতের নিপুন ছোঁয়ায় মাটির জিনিসপত্র তৈরি করে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
যে বয়সে তার পুতুল খেলার কথা ছিল সে বয়সে হাল ধরতে হয়েছে সংসারের। বয়সের ভারে মাজাটা নুয়ে পড়েছে তার। তবু সামনের দিকে মাথা ঝুঁকে একাই হাঁটা-চলাফেরা করেন তিনি। শীতের সময় পিঠার ছাঁচের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় এই বসা কাজগুলোই তিনি বেশি করে থাকেন। কাজের ফাঁকে সবার সাথে হাসিমুখে কথা বলেন তিনি। মানুষ দেখলে সেই কিশোরী বধূর মতো এখনো এক হাত ঘোমটা টানেন। নেই কোন ক্লান্তি নেই কোন বিরক্তি, বড্ড সাদাসিধে সহজ সরল মানুষ তিনি।
মাগুরা মহম্মদপুর উপজেলার খালিয়া গ্রামে কৃষক পরিবারে জন্ম তার। তিন বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে তিনিই একমাত্র জীবিত আছেন বাকি সবাই পরলোক গমন করেছেন অনেক আগেই। মাত্র দেড় বছর বয়সে মাকে হারিয়েছেন। কৃষক বাবা সাত বছর বয়সেই মেয়েকে বিয়ে দেন। শ্বশুর শাশুড়ি তাকে গড়ে পিঠে মানুষ করেন। শাশুড়ির হাত ধরেই সংসারের কাজ শেখা এমনকি মাটির জিনিসপত্র তৈরি করতে ও পারদর্শীতার পরিচয় দেন।
সন্ধ্যারানী বলেন, কোনদিন খেলার কথা চিন্তা করিনি আর মন বলে কিছু আছে তা বুঝতাম না। এই কাজ করতি আমার ভালো লাগে, সেই সকাল ছয়ডার সময় ঘুম থেকে উঠে সংসারের কাজের পাশাপাশি মাটির জিনিসপত্র বানাই।
তার ছেলে আরাধন বলেন, আমার মায়ের বয়স ১০০ পার হয়ে গেছে কিন্তু এখনো সে একাই চলাফেরা করতে পারে। এ বয়সেও তার চশমা লাগে না খালি চোখেই দেখতে পায়। এমনকি তার শরীরে কোনো রোগ নেই কোনো ওষুধপত্র লাগে না। আর সব সময় হাসি খুশি থাকে।
প্রতিবেশী পরিতোষ পাল বলেন, উনি সহজ সরল একজন ভালো মানুষ সবসময় হাসিখুশিতে থাকেন। এ বয়সেও সংসারের টুকিটাকি কাজ করতেও দেখি উনার শরীর এখনো সুস্থ। তার বয়সি মানুষ এখন আর তেমন দেখা যায় না। অনেকেই দূর-দূরান্ত থেকে ওনাকে দেখতে আসেন। আবার অনেকে ভিডিও করে নিয়ে যান।
নবান্ন উৎসব উপলক্ষে জয়পুরহাটের কালাই পৌর শহরের পাঁচশিরা বাজারে প্রতি বছরের ন্যায় এবারও বসেছে মাছের মেলা। থরে থরে সাজানো রুই, কাতলা, চিতল, সিলভার কার্প, বিগহেড কার্প, বোয়াল ও সামুদ্রিক মাছসহ নানা প্রজাতির দেশি মাছ।
মেলায় এবার প্রচুর মাছের আমদানি হলেও এবার মাছের দাম বেশি বলে জানিয়েছেন ক্রেতারা। মেলাকে ঘিরে সকাল থেকেই সৃষ্টি হয়েছে উৎসবমুখর পরিবেশ। দূর-দূরান্ত থেকে মানুষজন ভিড় করছেন মেলাপ্রাঙ্গণে। মেলার দিনে এই এলাকার সকলেই জামাইদের আমন্ত্রণ করেন। এ কারণে এই মেলাটি জামাই মেলা নামেও পরিচিত।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রঙিন কাপড়ের বিশাল প্যান্ডেল বেলুন দিয়ে সাজানো হয়েছে। সেই প্যান্ডেলের নিচে থরে-থরে দেশীয় প্রজাতির বড়-বড় মাছ সাজিয়ে রাখা হয়েছে। মাছের মেলায় ক্রেতা-বিক্রেতাদের প্রচুর ভিড়। মেলায় সারি সারি দোকানে চলছে হাঁকডাক, দরদাম। মিলছে তিন কেজি থেকে শুরু করে ৩৫ কেজি গ্রাস কার্প ওজনের মাছ। লোকজনও উৎসাহ নিয়ে দেখছেন। কেউ কেউ মাছ কিনে বাড়িতে ফিরছেন।
স্থানীয়রা জানান, ক্যালেন্ডার নয় পঞ্জিকা অনুসারে অগ্রহায়ণ মাসে প্রথম দিনে নবান্ন উৎসব উপলক্ষে প্রতি বছর এখানে মাছের মেলা বসে। মাছ ব্যবসায়ীরা মূলত এই মাছের মেলা বসিয়ে থাকেন। আর এই মাছের মেলাকে কেন্দ্র করে অংশ নেন কালাই পৌর শহরে মূলগ্রাম, দুরঞ্জ, আঁওড়া, সড়াইলসহ উপজেলার পুনট, মাদাই, পাঁচগ্রাম, মাদারপুর, বেগুনগ্রাম, হতিয়ার, ঝামুটপুর, হাতিয়র, মাত্রাইসহ আশপাশের ২৫-৩০ গ্রামের মানুষ। এ উৎসবকে কেন্দ্র করে প্রতি বাড়িতে জামাইসহ স্বজনদের আগে থেকে দাওয়াত করা হয়। এছাড়া দূর-দূরান্ত থেকেও লোক আসেন মেলায় মাছ কিনতে।
মেলায় এবার প্রচুর মাছের আমদানি হয়েছে। মাছের সারি সারি দোকানে আকৃতি অনুযায়ী বিক্রি করছে মাছ ব্যবসায়ীরা। সিলভার কার্প প্রতি কেজি ৩০০ থেকে ৯০০ টাকা, বিগহেড কার্প প্রতি কেজি ৪০০ থেকে ৮০০ টাকা, রুই মাছ প্রতি কেজি ৪০০ থেকে ১,২০০ টাকা ও কাতলা মাছ প্রতি কেজি ৪৫০ থেকে ১,৩০০ টাকা।
মেলায় বিশালাকৃতির একটি মাছ মাথায় তুলে ক্রেতা আকর্ষণের চেষ্টা করছিলেন কালাইয়ের মাছ বিক্রেতা আব্দুল লতিফ। সাড়ে ১৮ কেজি ওজনের রুই মাছটির দাম হাঁকেন ২৫ হাজার টাকা। সেই মাছ ক্ষেতলাল উপজেলার পাঠানপাড়া এলাকার মনোয়ার হোসেন ২২ হাজার ২০০ টাকায় কিনে নেন।
মেলায় মাছ কিনতে আসা কালাই পৌরশহরের মূলগ্রামের সুরেষ চন্দ্র বলেন, প্রতি বছর এ মেলায় আসি। আর মেলা থেকে পছন্দসই মাছ কিনে বাড়িতে ফিরি। এবার মেলায় মাছের দাম বেশি। ১৯ কেজি ওজনের কাতলা মাছ কিনলাম ২৪ হাজার ৭০০ টাকায়।
মেলায় উপজেলার আহম্মেদাবাদের হাতিয়র গ্রাম থেকে বেড়াতে এসেছেন নার্গিস বেগম। তিনি বলেন, স্বামীকে নিয়ে মাছের মেলায় ঘুরতে এসেছি। পাঁচশিরা বাজারে মাছের মেলার নাম আগে থেকেই জানি। কিন্তু কখনো আসা হয়নি। মেলায় এসে বড় বড় মাছ দেখছি। অনেক ভালো লাগছে।
মেলায় মাছ কিনতে আসা শফিকুল ইসলাম নামে এক জামাই বলেন, অন্য বছরের চেয়ে এবার মেলায় বড় মাছের আমদানি অনেক বেশি। মেলা থেকে ৬ কেজি ওজনের একটি কাতলা মাছ কিনলাম। এখন শ্বশুর বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছি।
স্থানীয় কালাই পৌর শহরের পূর্বপাড়ার তাইফুল ইসলাম বাবু বলেন, এই মাছের মেলাটি এক যুগ ধরে চলে আসছে। মাছের মেলাকে কেন্দ্র করে এই মেলায় বড় পুকুর, দিঘি ও নদী থেকে নানা জাতের বড় বড় মাছ সংগ্রহ করে নিয়ে আসেন মাছ ব্যবসায়ীরা।
মৎস্য খামারি মকবুল হোসেন বলেন, মেলা সামনে রেখে এক বছর ধরে পুকুরে বড় বড় মাছ বাছাই করে চাষ করেছেন। তাই এবার পাঁচশিরা বাজারের মাছের মেলায় বড় বড় মাছ বিক্রি করতে পারছেন। এবার সকাল থেকে ক্রেতারা আসছেন মাছ কিনতে। তারা তাদের পছন্দ মতো মাছ কিনে বাড়িতে ফিরছেন।
মাছ ব্যবসায়ী রেজাউল ইসলাম বলেন, মাছের মেলায় প্রচুর লোক সমাগম হলেও বিক্রি সেই তুলনায় কম। তারপরও যেটুকু হয়েছে, সব খরচ বাদে তাতে লাভ সামান্যই টিকবে। তবে এবার অন্য বছরের তুলনায় ক্রেতা বেশি। তাই মাছও বিক্রি হচ্ছে বেশি।
কালাই উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা তৌহিদা মোহতামিম বলেন, মেলায় ছোট-বড় বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ওঠেছে। এই মেলাকে কেন্দ্র করে স্থানীয় বড় মাছ ব্যবসায়ীরা ও মাছ চাষিরা বিভিন্ন এলাকা থেকে বড় বড় মাছ নিয়ে আসেন। বড় বড় মাছ দেখে এ এলাকার চাষিদের আগ্রহ বাড়ছে। মেলায় কমপক্ষে এক কোটি টাকার মাছ ক্রয়-বিক্রয় হবে। মৎস্য বিভাগ চাষিদের সবসময় মাছ চাষে পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া মেলায় যেন কেউ বিষযুক্ত মাছ বিক্রি করতে না পারেন, সেদিকে আমাদের কঠোর নজরদারি রয়েছে।
নওগাঁর রাণীনগরের গলার কাঁটা রেলগেটের উঁচু-নিচু রেলের রাস্তায় প্রতিনিয়তই ঘটছে নানা দুর্ঘটনা। এক বছর পার হলেও বরাদ্দ নেই এমন অজুহাতে সময় পার করছে রেল কর্তৃপক্ষ আর অন্যদিকে প্রতিদিনই দুর্ঘটনায় পড়ে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন পথচারীরা। দ্রুত রেলের মাঝের উঁচু-নিচু রাস্তাটি সমান করে দিতে কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন স্থানীয়সহ শত শত পথচারী।
স্থানীয় ভ্যানচালক মো. মেহেদী জানান, প্রায় এক বছর আগে রেল সংস্কার করার সময় সড়কের পাকা অংশ তুলে ফেলে সংশ্লিষ্টরা। এরপর থেকে যে উঁচু-নিচু অংশের তৈরি হয়েছে তাতে প্রতিনিয়তই ছোট ছোট যানবাহন যাত্রীসহ উল্টে যাচ্ছে। আবার অনেক রোগীরা এই রেলগেট পার হওয়ার সময় উঁচু-নিচু অংশের ঝাকুনি খেয়ে আরও অসুস্থ হয়ে পড়ছে। এছাড়া যানবাহনের সঙ্গে ধাক্কা লেগে যানবাহনের ক্ষতি হচ্ছেই। আবার অনেকে উল্টে পড়ে গিয়ে গুরুতর আহতও হচ্ছেন। দ্রুত এই উঁচু-নিচু অংশ সমান করে দিতে কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেছে এই চালক।
সিমবা গ্রামের অটোচার্জার ভ্যানচালক রুহুল আমীন বলেন, রেলগেটের উভয় পাশের সড়ক ভালো হলেও রেলগেটের রেলের অংশটি দীর্ঘদিন যাবত পাকা তুলে উঁচু-নিচু করে রাখা হয়েছে। এই সামান্য অংশটুকু পারাপার হওয়ার কারণে গাড়ির যানবাহনের যন্ত্রাংশ হঠাৎ করেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে দিনের বেলায় ২০টির বেশি ট্রেন চলাচলের সময় যখন যানজটের সৃষ্টি হয় তখন ভিড়ের মাঝে এই উঁচু-নিচু অংশ পার হতে যানবাহনের সঙ্গে পথচারীদের ধাক্কা লাগে। এতে করে মানুষের যেমন ক্ষতি হচ্ছে তেমনিভাবে যানবাহনেরও চরম ক্ষতি হচ্ছে। তাই দ্রুত এই সামান্য অংশ সমান করে দেওয়ার বিশেষ অনুরোধ জানান শ্রমজীবী এই মানুষটি।
আবাদপুকুর এলাকার বাসিন্দা পথচারী আলম হোসেন জানান, রাণীনগর রেলগেট অনুমোদিত একটি অত্যন্ত জনগুরুত্বপূর্ণ জায়গা। এই রেলগেট পার হয়ে উপজেলার পূর্বাঞ্চলের কয়েক লাখ মানুষ প্রতিদিনই উপজেলা সদর, নওগাঁ শহরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে চলাচল করে থাকেন। রেলগেটে নতুন ভোগান্তি হিসেবে যুক্ত হয়েছে উঁচু-নিচু রাস্তা। এই রেলগেট একবার পার হলে দুর্বল মানুষ আরও দুর্বল হয়ে পড়ছে। তাই দ্রুত রেলের উঁচু-নিচু রাস্তাটি সমান করার কোনো বিকল্প নেই।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রাকিবুল হাসান জানান, ট্রেন যাওয়ার পর ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটের সৃষ্টি হয় এই সরু রেলগেটে। তার উপর আবার সংস্কার কাজের সময় সড়কে রেলের অংশের পাকা তোলার কারণে যে উঁচু-নিচু অংশের সৃষ্টি হয়েছে সেই সামান্য অংশ চলাচলে পথচারীদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। এই বিষয়ে প্রতিদিনই বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষরা এসে অভিযোগ দিয়ে যাচ্ছে। ভোগান্তির বিষয়টি লিখিতভাবে রেল কর্তৃপক্ষকে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য একাধিকবার জানানো হয়েছে।
সান্তাহার রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন উপসহকারী প্রকৌশলী (কার্য.) মো. আব্দুর রহমান মুঠোফোনে জানান, রাণীনগরের রেলগেটের উঁচু-নিচু অংশের নতুন করে পাকাকরণের বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। অর্থ বরাদ্দ পেলেই উঁচু-নিচু অংশ সমান করে দেওয়া হবে।
নওগাঁ সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাশেদুল হক রাসেল জানান, সড়কটি সড়ক বিভাগের হলেও রেলগেট অংশটি রেল কর্তৃপক্ষের যার কারণে চাইলেই সড়ক বিভাগ ওই উঁচু-নিচু অংশ সমান করে দিতে পারে না। বিষয়টি রেল কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। যদি রেল অনুমতি প্রদান করে তাহলে পথচারীদের ভোগান্তি লাঘব করতে দ্রুতই সড়ক বিভাগ ওই সামান্য অংশটি নতুন করে পাকাকরণ করে দিতে প্রস্তুত রয়েছে।
গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় ককটেল বিস্ফোরণে ৩ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে। গত সোমবার রাত ৯টার দিকে কোটালীপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের নিচ তলায় সমাজসেবা অফিসের দেওয়ালে দুটি ও রাত সাড়ে ১০টার দিকে কোটালীপাড়া থানার নিচ তলার অফিস কক্ষে ১টি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটায় দুষ্কৃতিকারীরা।
কোটালীপাড়া থানায় বিস্ফোরিত ককটেলে কর্তব্যরত কনস্টেবল আইরিন নাহার (৩১), কনস্টেবল আরিফ হোসেন (৩৩) ও কনস্টেবল নজরুল ইসলাম (৫২) আহত হয়েছেন।
আহতরা রাতেই কোটালীপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। কোটালীপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. কুমার মৃদুল দাস বলেন, আহত পুলিশ সদস্যদের শরীরে স্পিন্টারের আঘাত ছিল। তবে সেগুলো মারাত্মক নয়। তাই তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
কোটালীপাড়া থানার ওসি খন্দকার হাফিজুর রহমান জানান, রাত সাড়ে ১০টার দিকে থানায় একটি ককটেল ছুড়ে মারার কথা সাংবাদিকদের কাছে স্বীকার করেছেন।
কোটালীপাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ খন্দোকার হাফিজুর রহমান জানান, রাত সাড়ে ১০টার দিকে থানার পেছন দিক থেকে থানা ভবনকে লক্ষ্য করে একটি ককটেল নিক্ষেপ করে দুষ্কৃতিকারীরা। এতে কর্তব্যরত ৩ পুলিশ সদস্য আহত হয়। তাদের কোটালীপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
কোটালীপাড়া থানার সেকেন্ড অফিসার এসআই মামুন বলেন, কোটালীপাড়া থানায় একটি ও উপজেলা পরিষদে দুটি ককটেল নিক্ষেপ করা হয়েছে। এ বিষয়ে তদন্ত কাজ শুরু হয়েছে বলে জানান ওই কর্মকর্তা।
কিশোরগঞ্জের মিঠামইনে সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর চালিয়েছে বিএনপির নেতা-কর্মীরা। গত সোমবার রাত ১০টা থেকে সাড়ে ১০ টার মধ্যে উপজেলার কামালপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের মৃত্যুদণ্ডাদেশে সন্তুষ্টি জানাতে উপজেলা বিএনপি আনন্দ মিছিল বের করে। প্রায় ৬০-৭০ জন নেতা-কর্মী অংশ নেন এ মিছিলে।
মিছিলটি মিঠামইন বাজার থেকে কামালপুর গ্রামের দিকে অগ্রসর হলে জেলা বিএনপির সাবেক সদস্য আলমগীর শিকদারের নেতৃত্বে ২০-২৫ জন কর্মী সাবেক রাষ্ট্রপতির বাড়িতে হঠাৎ হামলা চালায়। তারা বাড়ির দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে জানালা, আসবাবপত্রসহ বিভিন্ন মালামাল ভাঙচুর করে।
ঘটনার সময় বাড়িতে কেউ না থাকায় কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। একই সময়ে উপজেলা যুবলীগ নেতা কায়সার আহমেদ পাভেলের বাড়িতেও ঢিল ছোড়া হয়, তবে সেখানে কোনো ক্ষয়ক্ষতি বা হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
মিঠামইন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলমগীর কবীর হামলা ও ভাঙচুরের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, বর্তমানে এলাকায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। ঘটনাস্থলে পুলিশ ও সেনাবাহিনী সতর্ক অবস্থান নিয়েছে।
নবান্ন উৎসবের সঙ্গে মিশে আছে বাঙালির ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি। নতুন ধান কাটা আর সেই ধানের প্রথম অন্ন খাওয়াকে কেন্দ্র করে পালিত হয় নবান্ন উৎসব। নবান্ন উৎসবকে ঘিরে চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে নতুন ধানের মিষ্টি ঘ্রাণ। বাংলার চিরায়ত ঐতিহ্যের এই উৎসব ঘিরে সর্বত্র বিরাজ করছে আনন্দ, উচ্ছ্বাস এবং নতুন ধারার প্রাণচাঞ্চল্য।
আর এ নবান্ন উৎসবকে কেন্দ্র করে নওগাঁয় এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত সোমবার রাত সাড়ে ৭টায় নওগাঁর ঐতিহ্যবাহী প্যারিমোহন গ্রন্থাগার মিলনায়তনে স্থানীয় সামাজিক সংগঠন একুশে পরিষদের আয়োজন করে।
নবান্ন উৎসবে আমনের নতুন ধানের চালের তৈরি পায়েস, খাগড়াই ও বাতাসা এবং মুড়ি দিয়ে আপ্যায়ন করা হয় অতিথিদের। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে লালন, রবীন্দ্র, দেশাত্মবোধক ও আধুনিক গান পরিবেশিত হয়।
আয়োজকরা জানান- বাঙালির পুরোনো ঐতিহ্য সংস্কৃতি নতুন ধানের চালের পায়েস খাওয়ার প্রথা বিলিন হয়ে যাওয়ার পথে। যারা নতুন প্রজন্ম তাদের জানান দিতে, নবান্ন উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। নতুন চালের তৈরি পায়েশ-পোলাও, পিঠা-পুলিসহ রকমারি খাদ্য পাড়া-প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজন সবাইকে নিমন্ত্রণ করে খাওয়ানাটাও যেন আনন্দের। পাশাপাশি পালন করা হয় সামাজিকভাবে প্রচলিত প্রথা অনুযায়ী নানা আচার-অনুষ্ঠান।
শহরের বাসীন্দা শিক্ষার্থী মরিয়ম জান্নাত জানান, ‘শহরের বসবাস করার সুবাদে গ্রামের অনেক আচার-অনুষ্ঠানের বিষয়ে অবগত না। কখন ধান-কাটা মাড়ায় হয়ে থাকে জানতেই পারি না। এ অনুষ্ঠানে যোগদিতে এসে জানতে পারলাম নবান্ন মানে নতুন ধানের চাল থেকে ক্ষির-পায়েস সাথে বিভিন্ন মিষ্টান্ন। যা বাঙালির ঐতিহ্য।
সংগঠনের সহসভাপতি নাইচ পারভীন বলেন- নতুন চালের তৈরি পায়েশ-পোলাও, পিঠা-পুলিসহ রকমারি খাদ্য পাড়া-প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজন সবাইকে নিমন্ত্রণ করে খাওয়ানাটাও যেন আনন্দের। পাশাপাশি পালন করা হয় সামাজিকভাবে প্রচলিত প্রথা অনুযায়ী নানা আচার-অনুষ্ঠান। তবে এই ঐতিহ্য এখন হারানো পথে। সংস্কৃতি হারিয়ে যাওয়ায় সমাজে দ্বন্দ্ব ও হানাহানি বাড়ছে। আমাদের পুরোনো সংস্কৃতি ফিরিয়ে নিয়ে আসতে হবে।
মুসলিমা খাতুন (৩৫) গৃহিণী। এক সময় সংসারের আর্থিক সংকটে তাকে অন্যের বাড়িতে কাজ করতে হতো। তার স্বামী ছিলেন একজন প্রান্তিক জেলে ও সনাতনী পদ্ধতির ক্ষুদ্র মাছচাষি। নিয়মিত আয় না থাকায় পরিবার চালানো ছিল খুবই কঠিন। স্বামীর অনুপস্থিতিতে অনেক সময় মুসলিমাকেই ঘের দেখাশোনা করতে হতো। কিন্তু সঠিকপ্রযুক্তি ও পদ্ধতি না জানার কারণে উৎপাদন ও লাভ উভয়ই ছিল খুবই সামান্য। সে খুলনার কয়রা উপজেলার মহারাজপুর ইউনিয়নের মাদারবাড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা।
এই পরিস্থিতির পরিবর্তন হতে শুরু করে যখন তিনি সাতক্ষীরা উন্নয়ন সংস্থা (সাস) তালা কর্তৃক বাস্তবায়িত এবং পিকেএসএফ, ইফাদ ও ড্যানিডা-এর সহযোগিতায় আরএমটিপি প্রকল্পের ‘নিরাপদ মৎস্য ও মৎস্য পণ্য উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ’ ভ্যালু চেইন উপ-প্রকল্পের আওতায় অন্তর্ভুক্ত হন। এই প্রকল্পের মাধ্যমে তিনি হাতে-কলমে, আধা-নিবিড় পদ্ধতিতে মাছচাষ, ঘের ব্যবস্থাপনা, সঠিক খাদ্য প্রয়োগ, পানি-মাটি পরীক্ষা, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের প্রশিক্ষণ লাভ করেন।
প্রশিক্ষণ শেষে মুসলিমা খাতুন তার ৬৬ শতকের ঘেরে রুই, কাতলা, গলদা ও বাগদা চিংড়ি চাষ শুরু করেন। তিনি প্রকল্পের মৎস্যসেবা ও পরামর্শ কেন্দ্র থেকে এ্যারেটর স্থাপন, ব্লু নেট ব্যবহার, নিয়মিত চুন প্রয়োগ এবং ঘেরের পানি-মাটির পরীক্ষার সুবিধা নেন। এসব প্রযুক্তিগত উন্নয়ন ও নিয়মিত মনিটরিংয়ের ফলে তার ঘেরে রোগবালাই কমে যায় এবং উৎপাদন ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়।
মুসলিমা খাতুন বলেন, তার মোট খরচ হয়েছে ১,১৭,০০০ টাকা আর মোট হয়েছে প্রায় ৩,৮০,০০০ টাকা। প্রচলিত পদ্ধতির তুলনায় তার আয় ও লাভ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
মুসলিমা খাতুন বলেন, ‘আধুনিক প্রযুক্তি, ব্লু নেট ও এ্যারেটর ব্যবহারের ফলেই তার ঘেরের উৎপাদন বেড়েছে। এখন তিনি শুধু নিজেই স্বাবলম্বী হননি, বরং এলাকার অন্যান্য মাছচাষিরাও তার সাফল্য দেখে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। সামনে তিনি আরও বড় পরিসরে মাছচাষ সম্প্রসারণের পরিকল্পনা করছেন।’
স্বল্প শিক্ষিত একজন গৃহিণী থেকে আজ একজন সফল নারী উদ্যোক্তা মুসলিমা খাতুন এখন স্থানীয়ভাবে অনুকরণীয় এক দৃষ্টান্ত।
সাতক্ষীরা উন্নয়ন সংস্থা (সাস) নির্বাহী পরিচালক শেখ ইমান আলী বলেন, ‘মুসলিমা খাতুনের গল্পটা দেখলে পরিষ্কার বোঝা যায় সুযোগ, সঠিক দিকনির্দেশনা আর নিজের পরিশ্রম একসাথে কাজ করলে পরিবর্তন হবেই। তিনি শুরু করেছিলেন শূন্য থেকে।
আরএমটিপি প্রকল্পের প্রশিক্ষণ, ব্লু নেট, এ্যারেটর, পানি-মাটির পরীক্ষা- এসব জিনিস তিনি শুধু ব্যবহারই করেননি, নিজের বাস্তব অভিজ্ঞতার সঙ্গে মিলিয়ে প্রতিদিন আরও ভালো করার চেষ্টা করেছেন। এই মনোভাবটাই তাকে এগিয়ে দিয়েছে।
মহারাজপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বলেন, মুসলিমা খাতুনের সাফল্য আমাদের ইউনিয়নের জন্য সত্যিই গর্বের বিষয়। একসময় যিনি সংসারের টানাপোড়েন সামলাতে হিমশিম খেতেন, আজ তিনি আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ঘেরে নিয়মিত উৎপাদন বাড়াচ্ছেন এটা আমাদের উপকূলীয় এলাকার বাস্তব পরিবর্তনেরই উদাহরণ।’
সাতক্ষীরা উন্নয়ন সংস্থা (সাস) ও আরএমটিপি প্রকল্পের সহায়তা এখানে বড় ভূমিকা রেখেছে। প্রশিক্ষণ, প্রযুক্তি, নিয়মিত পরামর্শ এসব সুবিধা কাজে লাগিয়ে মুসলিমা নিজের ঘেরকে যেমন উন্নত করেছেন, তেমনই আশপাশের মানুষকেও নতুনভাবে ভাবতে শিখিয়েছেন।
বর্ষার পানি নামতে শুরু করেছে। এ অবস্থায় পাবনার বিভিন্ন খাল ও বিল থেকে নির্বিচারে শামুক শিকার বা নিধনের ধুম পড়েছে। শুধু হাঁস বা মাছের খামারের চাহিদা মেটানোর জন্য নয়, বাণিজ্যিক বা অতিরিক্ত অর্থ আয়ের উৎস হিসেবে নির্বিচারে নিধন করা হচ্ছে শামুক। এতে পরিবেশের জীববৈচিত্র্য বিপর্যয়ের শঙ্কা বাড়ছে বলছেন সংশ্লিষ্টরা।
হাঁস বা মাছের খামারে শামুকের চাহিদা ব্যাপক। ফলে বিল পাড়ের বাসিন্দারা নিজেদের হাঁস বা মাছের খামারে চাহিদা মেটানোর জন্য শুরুতে শামুক শিকার করলেও এখন সেটি ব্যবসা বা আয়ের উৎসে পরিণত হয়েছে। সংগ্রহকারীদের বড় অংশ জানেন না শামুক শিকার, বেচাকেনা বা বিপণন সংক্রান্ত কোনো আইন। অবাধে শামুক শিকার করে বেচাকেনা চলছে পুরোদমে।
জানা যায়, বর্ষা মৌসুমের মাঝামাঝি সময় থেকে পানি নেমে যাওয়া (পানি নিচু জায়গায় যাওয়া) পর্যন্ত শামুক শিকার হয়। পাবনার চাটমোহর উপজেলার চলনবিল, সাঁথিয়া উপজেলার মুক্তার বিল, সোনই বিল, বিল গাংভাঙ্গা, গজারিয়া, আড়িয়াদাহ বিল, বাসটিয়াখালি, বেড়া উপজেলার জোরদহ বিল, কাজলকুড়া, ধলাই, ট্যাংরাগাড়ি, বক্কারের বিলসহ অন্তত ১০-১৫টি খাল ও বিল থেকে হাজার হাজার মণ শামুক শিকার করেন শিকারিরা। পরে সেগুলো সরবরাহ করা হয় বিভিন্ন হাঁস ও মাছের খামারে। এমনকী পাইকারি ব্যবসায়ীরা এসব শামুক কিনে ট্রাকে করে খুলনাসহ বেশকিছু অঞ্চলে সরবরাহ করেন। এতে করে খাল-বিলে কমেছে শামুকের পরিমাণ। ফলে বিগত বছরের তুলনায় শামুক কম পাচ্ছেন শিকারিরা।
শামুক শিকারিরা জানান, বর্ষা মৌসুমে বিলপাড়ের অনেক বাসিন্দাদের হাতে কাজ কম থাকে। ফলে বাড়তি আয়ের জন্য তারা এ কাজ করেন। এ কাজে নিজেদের ব্যাপকভাবে নিয়োগ করেছেন নারীরাও। প্রতিদিন নৌকা নিয়ে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত মই জাল, হেসি জাল ও হাত দিয়ে শামুক সংগ্রহ করেন তারা। পরে এসব শামুক পাইকারদের কাছে ৫-৭ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হয়।
সাঁথিয়া উপজেলার করমজা ইউনিয়নের শামুকজানি গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন বিল থেকে নারী ও পুরুষরা শামুক সংগ্রহ করে এনে প্রতি কেজি ৫-৭ টাকা দরে বিক্রি করছেন। আর পাইকারি ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন হাঁস ও মাছের খামারিদের কাছে বিক্রি করছেন ৮-১০ টাকা কেজি দরে।
শামুকজানি গ্রামের আলতাফ হোসেন বলেন, ‘পানি কম থাকলে হাত দিয়ে শামুক ধরা যায়। বিভিন্ন জাল দিয়ে ধরতে হয়। প্রতিকেজি শামুক ৫-৭ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হয়।
সাঁথিয়ার আফড়া গ্রামের রশিদ ও নাহিদা বলেন, ‘আইন কানুন কী আছে জানি না। কেউ কখনো বলেও নাই। এই সময় কাজ-কাম কম থাকে। এ কারণে সংসারে টানাটানি থাকে। তাই নৌকা নিয়ে আবার কখনো নৌকা ছাড়াই শামুক ধরি। পরে সেগুলো বস্তায় ভরে পাইকারি ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করি। গড়ে ৪০০-৫০০ টাকা ইনকাম করা যায়।’
শামুক ব্যবসায়ী আজমত শেখ জানান, বর্ষাকালে এসব এলাকায় প্রচুর শামুক পাওয়া যায়। প্রতিদিন গড়ে ৩০০ বস্তা শামুক বেচাকেনা হয়। তবে সাঁথিয়ার অন্যান্য জায়গায় আরও বেশি বেচাকেনা হয়। বিলপাড়ের মানুষেরা বিভিন্ন আকারের শামুক শিকার করে আমাদের কাছে আনেন। আমরা এগুলো ক্রয় করে অল্প লাভে খুলনায় সরবরাহ করি। এগুলো বেচাকেনা অপরাধ। আইনে এসব নিষিদ্ধ কি-না কিছুই জানি না।’
এদিকে অপরিকল্পিতভাবে এসব খাল-বিলের জীববৈচিত্র্যের অন্যতম অনুষঙ্গ নিধনের ফলে প্রকৃতির ভারসাম্য হারানোর শঙ্কা দেখা দিয়েছে। পাবনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম প্রামাণিক বলেন, ‘শামুক মাটিতে অক্সিজেন সরবরাহ বাড়ায়। কৃষি উৎপাদন বাড়াতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নির্বিচারে অতিরিক্ত হারে শামুক নিধন উচিত নয়। এটি সরাসরি ফসলে প্রভাব না ফেললেও জীববৈচিত্র্যের ওপর একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলে।’
পাবনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা দীপক কুমার পাল বলেন, জীববৈচিত্র্যের প্রত্যেকটি বিভাগের সাথে অন্য বিভাগের সম্পর্ক রয়েছে। এক্ষেত্রে শামুকের সঙ্গে অন্যন্য জলজ প্রাণীর পাশাপাশি মৎস্য বা মাছেরও সম্পর্ক রয়েছে। শামুকের ছোট ডিম ও বাচ্চাগুলো খেয়ে কিছু মাছ বেঁচে থাকে। এছাড়া শামুক নিচের ময়লা খেয়ে পানি পরিষ্কার রাখে। এটি শুধু মাছ নয় অন্যান্য জলজ প্রাণীর জন্যও ইতিবাচক বিষয়।
রাজশাহী বিভাগীয় বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ, বন্যপ্রাণী পরিদর্শক মো. জাহাঙ্গীর কবীর জানান, শামুককে বলা হয় ‘প্রাকৃতিক জলশোধন ব্যবস্থা’ (ফিল্টার)। শামুক ময়লাযুক্ত পানি পান করে জীবনধারণ করে। ফলে পানি পরিষ্কার থাকে। পানিতে শামুক না থাকলে পানির প্রাকৃতিক শোধন ক্ষমতা হ্রাস পায়।
তিনি বলেন, সরকারের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন-২০১২ অনুযায়ী শামুক সংগ্রহ, ধ্বংস, ভক্ষণ, পরিবহন, ক্রয়-বিক্রয়, আমদানি-রপ্তানি করা দণ্ডনীয় অপরাধ। যার সর্বোচ্চ শাস্তি দুই বছর কারাদণ্ড এবং এক লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা। তবে এ বিষয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধি অতি জরুরি বলেও তিনি জানান।
মাগুরা মহম্মদপুর উপজেলা সদরের গ্রামীণ ব্যাংক শাখায় দুর্বৃত্তরা অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটিয়েছে।
মঙ্গলবার রাত তিনটার দিকে মহম্মদপুর সদরের আমিনুর রহমান ডিগ্রী কলেজের পাশে অবস্থিত গ্রামীণ ব্যাংক শাখার জানালা দিয়ে পেট্রোল দিয়ে কে বা কাহারা আগুন লাগিয়ে পালিয়েছে।
আগুনের সূত্রপাত দেখে প্রতিবেশীরা ফায়ার সার্ভিসে খবর দিলে দ্রুত তারা আগুন নিয়ন্ত্রণ করে। বেশ কিছু কাগজপত্র চেয়ার-টেবিল পুড়ে গেছে।
মহম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুর রহমান জানান, রাতের অন্ধকারে কোন দুর্বৃত্তরা গ্রামীণ ব্যাংকের জানালা দিয়ে পেট্রোল ফেলে আগুন লাগিয়ে পালিয়েছে। বিষয়টি তদন্ত চলছে।
মহম্মদপুর গ্রামীণ ব্যাংকের সেকেন্ড ম্যানেজার সিরাজুল ইসলাম জানান, রাত তিনটার দিকে দুর্বৃত্তরা জানালার লক ভেঙে ভিতর দিয়ে আগুন লাগিয়ে পালিয়েছে। কিছু কাগজপত্র চেয়ার টেবিল আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
নবান্ন উৎসব উপলক্ষে জয়পুরহাটের কালাই পৌরশহরের পাঁচশিরা বাজারে প্রতিবছরের ন্যায় এবারও বসেছে মাছের মেলা। থরে থরে সাজানো রুই, কাতলা, চিতল, সিলভার কার্প, বিগহেড কার্প, বোয়াল ও সামুদ্রিক মাছসহ নানা প্রজাতির দেশি মাছ।
মেলায় এবার প্রচুর মাছের আমদানি হলেও এবার মাছের দাম বেশি বলে জানিয়েছেন ক্রেতারা। মেলাকে ঘিরে সকাল থেকেই সৃষ্টি হয়েছে উৎসবমুখর পরিবেশ। দূর-দূরান্ত থেকে মানুষজন ভিড় করছেন মেলাপ্রাঙ্গণে। মেলার দিনে এই এলাকার সকলেই জামাইদের আমন্ত্রণ করেন। এ কারণে এই মেলাটি জামাই মেলা নামেও পরিচিত।
মাছের মেলায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রঙিন কাপড়ের বিশাল প্যান্ডেল বেলুন দিয়ে সাজানো হয়েছে। সেই প্যান্ডেলের নিচে থরে-থরে দেশীয় প্রজাতির বড়-বড় মাছ সাজিয়ে রাখা হয়েছে। মাছের মেলায় ক্রেতা-বিক্রেতাদের প্রচুর ভিড়। মেলায় সারি সারি দোকানে চলছে হাঁকডাক, দরদাম। মিলছে তিন কেজি থেকে শুরু করে ৩৫ কেজি গ্রাস কার্প ওজনের মাছ। লোকজনও উৎসাহ নিয়ে দেখছেন। কেউ কেউ মাছ কিনে বাড়িতে ফিরছেন।
স্থানীয়রা জানান, ক্যালেন্ডার নয় পঞ্জিকা অনুসারে অগ্রহায়ণ মাসে প্রথম দিনে নবান্ন উৎসব উপলক্ষে প্রতি বছর এখানে মাছের মেলা বসে। মাছ ব্যবসায়ীরা মূলত এই মাছের মেলা বসিয়ে থাকেন। আর এই মাছের মেলাকে কেন্দ্র করে অংশ নেন কালাই পৌর শহরে মূলগ্রাম, দুরঞ্জ, আঁওড়া, সড়াইলসহ উপজেলার পুনট, মাদাই, পাঁচগ্রাম, মাদারপুর, বেগুনগ্রাম, হতিয়ার, ঝামুটপুর, হাতিয়র, মাত্রাইসহ আশপাশের ২৫-৩০ গ্রামের মানুষ। এ উৎসবকে কেন্দ্র করে প্রতি বাড়িতে জামাইসহ স্বজনদের আগে থেকে দাওয়াত করা হয়। এছাড়া দূর-দূরান্ত থেকেও লোকজন আসেন মেলায় মাছ কিনতে।
মেলায় এবার প্রচুর মাছের আমদানি হয়েছে। মাছের সারি সারি দোকানে আকৃতি অনুযায়ী বিক্রি করছে মাছ ব্যবসায়ীরা। সিলভার কার্প প্রতি কেজি ৩০০ থেকে ৯০০ টাকা, বিগহেড কার্প প্রতি কেজি ৪০০ থেকে ৮০০ টাকা, রুই মাছ প্রতি কেজি ৪০০ থেকে ১২০০ টাকা ও কাতলা মাছ প্রতি কেজি ৪৫০ থেকে ১৩০০ টাকা।
মেলায় বিশালাকৃতির একটি মাছ মাথায় তুলে ক্রেতা আকর্ষণের চেষ্টা করছিলেন কালাইয়ের মাছ বিক্রেতা আব্দুল লতিফ। সাড়ে ১৮ কেজি ওজনের রুই মাছটির দাম হাঁকেন ২৫ হাজার টাকা। সেই মাছ ক্ষেতলাল উপজেলার পাঠানপাড়া এলাকার মনোয়ার হোসেন ২২ হাজার ২০০ টাকায় কিনে নেন।
মেলায় মাছ কিনতে এসেছেন কালাই পৌরশহরের মূলগ্রামের সুরেষ চন্দ্র। তিনি বলেন, প্রতি বছর এ মেলায় আসি। আর মেলা থেকে পছন্দসই মাছ কিনে বাড়িতে ফিরি। এবার মেলায় মাছের দাম বেশি। ১৯ কেজি ওজনের কাতলা মাছ কিনলাম ২৪ হাজার ৭০০ টাকায়।
মেলায় উপজেলার আহম্মেদাবাদের হাতিয়র গ্রাম থেকে বেড়াতে এসেছেন নার্গিস বেগম। তিনি বলেন, স্বামীকে নিয়ে মাছের মেলায় ঘুরতে এসেছি। পাঁচশিরা বাজারে মাছের মেলার নাম আগে থেকেই জানি। কিন্তু কখনো আসা হয়নি। মেলায় এসে বড় বড় মাছ দেখছি। অনেক ভালো লাগছে। ঘুরেফিরে মেলা থেকে স্বাদ ও সাধ্যের কথা মাথায় রেখে পছন্দের একটি বড় মাছ ৭ হাজার ৩০০ টাকায় কিনলাম।
মেলায় মাছ কিনতে আসা শফিকুল ইসলাম নামে এক জামাই বলেন, অন্য বছরের চেয়ে এবার মেলায় বড় মাছের আমদানি অনেক বেশি। মেলা থেকে ৬ কেজি ওজনের একটি কাতলা মাছ কিনলাম। এখন শ্বশুর বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছি।
স্থানীয় কালাই পৌর শহরের পূর্বপাড়ার তাইফুল ইসলাম বাবু বলেন, এই মাছের মেলাটি এক যুগ ধরে চলে আসছে। মাছের মেলাকে কেন্দ্র করে এই মেলায় বড় পুকুর, দিঘি ও নদী থেকে নানান জাতের বড় বড় মাছ সংগ্রহ করে নিয়ে আসেন মাছ ব্যবসায়ীরা।
মৎস্য খামারি মকবুল হোসেন বলেন, মেলা সামনে রেখে এক বছর ধরে পুকুরে বড় বড় মাছ বাছাই করে চাষ করেছেন। তাই এবার পাঁচশিরা বাজারের মাছের মেলায় বড় বড় মাছ বিক্রি করতে পারছেন। এবার সকাল থেকে ক্রেতারা আসছেন মাছ কিনতে। তারা তাদের পছন্দ মতো মাছ কিনে বাড়িতে ফিরছেন।
মাছ ব্যবসায়ী রেজাউল ইসলাম বলেন, মাছের মেলায় প্রচুর লোক সমাগম হলেও বিক্রি সেই তুলনায় কম। তারপরও যেটুকু হয়েছে, সব খরচ বাদে তাতে লাভ সামান্যই টিকবে। তবে এবার অন্য বছরের তুলনায় ক্রেতা বেশি। তাই মাছও বিক্রি হচ্ছে বেশি।
মেলার আরেক মাছ ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম বলেন, আমরা ব্যবসায়ীরা মিলে প্রতি বছর এ মাছের মেলা আয়োজন করে থাকি। এবার মেলায় ছোট-বড় মিলে ৫০টি মাছের দোকান বসেছে। মাছের মেলাতে বড় পুকুর, দিঘি ও নদী থেকে নানান জাতের বড় বড় মাছ সংগ্রহ করা হয়েছে। রুই, কাতলা, মৃগেল, কালবাউশ, বিগহেড কার্প, সিলভার কার্পসহ বড় আকারের মাছ প্রতি কেজি ৭০০ থেকে ১হাজার ১০০টাকায়। এছাড়া মাঝারি আকারের মাছ প্রতি কেজি ৪৫০ থেকে ৬৫০টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ছোট আকারের প্রতি কেজি ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
কালাই পৌর শহরের পাঁচশিরা বাজার ইজারাদার প্রতিনিধি উজ্জ্বল হোসেন বলেন, এ মেলার কোন আয়োজক নেই, মাছ ব্যবসায়ীরা নিজ উদ্যাগে প্রতি বছর এ মেলার আয়োজন করে থাকে। মাছ ব্যবসায়ীরা মেলার আগে এক সপ্তাহ ধরে এলাকায় মাইকে প্রচার প্রচারণা করে থাকেন। এই দিনে মেলায় যেমন প্রচুর মাছ আমদানি হয় তেমনি বিক্রিও হয়।
কালাই উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা তৌহিদা মোহতামিম বলেন, মেলায় ছোট বড় বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ওঠেছে। এই মেলাকে কেন্দ্র করে স্থানীয় বড় মাছ ব্যবসায়ীরা ও মাছ চাষিরা বিভিন্ন এলাকা থেকে বড় বড় মাছ নিয়ে আসেন। বড় বড় মাছ দেখে এ এলাকার চাষীদের আগ্রহ বাড়ছে। মেলায় কমপক্ষে এক কোটি টাকার মাছ ক্রয়-বিক্রয় হবে। মৎস্য বিভাগ চাষীদের সবসময় মাছ চাষে পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া মেলায় যেনো কেউ বিষযুক্ত মাছ বিক্রি করতে না পারেন, সেদিকে আমাদের কঠোর নজরদারি রয়েছে।
গাজীপুরের টঙ্গীতে বস্তার গুদামে ভয়াবহ আগুনের ঘটনা ঘটেছে। এতে ছয়টি বস্তার গুদাম পুড়ে গেছে।
মঙ্গলবার (১৮) নভেম্বর ভোরে টঙ্গী পূর্ব থানাধীন বউ বাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। ফায়ার সার্ভিস সদস্যদের আড়াই ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসে।
টঙ্গী ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্সের সিনিয়র স্টেশন অফিসার মোহাম্মদ শাহিন আলম বলেন, মঙ্গলবার ভোরে টঙ্গীর বউবাজার গরুর হাট এলাকায় একটি বস্তার গুদামে আগুনের সূত্রপাত হয়। ভোরবেলায় স্থানীয় বাসিন্দারা আগুন দেখে ফায়ার সার্ভিসের হট লাইনে কল করেন। খবর পেয়ে আমাদের চারটি ইউনিট ঘটনাস্থলে যায়। ততক্ষণে পাশে থাকা অন্যান্য গুদামেও আগুন ছড়িয়ে পড়ে। পরে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যদের চেষ্টায় সকাল পৌনে ৯টার দিকে আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসে।
তিনি আরও বলেন, তাৎক্ষণিক আগুনের সূত্রপাত জানা যায়নি। আগুনে ছয়টি গুদাম পুড়ে গেছে। এ ঘটনায় কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
পঞ্চগড়ের নতুন জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন কাজী সায়েমুজ্জামান। যোগদানের আগে সোমবার ফেসবুক স্ট্যাটাসে তিনি পঞ্চগড়বাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে দায়িত্ব পালনে নিজের অঙ্গীকার তুলে ধরেন।
৯ নভেম্বর পঞ্চগড়ে পদায়ন হওয়ার পর সামাজিক মাধ্যমে স্থানীয় মানুষের উচ্ছ্বাস, শুভেচ্ছা ও অভিনন্দনে তিনি অভিভূত হয়েছেন বলে জানান। তিনি লেখেন, অভিনন্দনের জোয়ারে যোগ দিতে গিয়ে অনেকটা প্রত্যাশার চাপ অনুভব করছি। কাজ দিয়ে এই চাপ কমানোর চেষ্টা করব।
দীর্ঘদিন সরকারি কর্মকর্তা প্রশিক্ষণদানে যুক্ত থাকা এই কর্মকর্তা বলেন, হয়রানিমুক্ত ও স্বল্প খরচে সরকারি সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়াই তার মূল লক্ষ্য। চাকরি জীবনের শুরু থেকেই দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে আছেন জানিয়ে তিনি বলেন, নিজে দুর্নীতি করি না, অন্যকে করতে দিই না। একটি লাগেজ আর আপনাদের ভালোবাসা নিয়েই ফিরব।
আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্ব পালন তার কাছে এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তিনি লেখেন, ভোটরক্ষা মানে দেশরক্ষা। ভোটরক্ষা আমার ওপর অর্পিত পবিত্র আমানত। রাগ–অনুরাগ বা লোভের বশবর্তী হয়ে আমি নীতির বাইরে যাব না।
নিজের ব্যক্তিজীবন সম্পর্কে ডিসি আরও লেখেন, জীবনে কারও কাছ থেকে ধার নেননি, নেই কোন ঋণ। হারাম আয় থেকে সর্বদা দূরে থেকেছেন। চাকরিতে কখনও বদলি বা পোস্টিংয়ের জন্য তদবিরও করেননি।
পঞ্চগড়ের বাসিন্দাদের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আগমনের আমন্ত্রণ জানিয়ে তিনি অনুরোধ করেন, কেউ যেন ফুল বা উপহার না আনেন। তিনি জানান, গিফট গ্রহণ না করার নীতি তিনি বহু বছর ধরে অনুসরণ করছেন। দোয়াই আমার জন্য যথেষ্ট। সবার সহযোগিতা ও দোয়া চাই।