পাবনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বার্ষিক ক্রয়-বাস্তবায়ন পরিকল্পনার (অনুন্নয়ন রাজস্ব) টাকা হরিলুট করার অভিযোগ উঠেছে। সংস্কার কোটেশন বা আরএফকিউ/ডিএমপি নামে ২০২২-২৩ অর্থবছরের অ্যানুয়াল প্রকিউরমেন্ট প্ল্যানের (এপিপি) এসব টাকার বেশির ভাগই কাজ না করে উত্তোলন করা হয়েছে।
আর এসব আত্মসাৎ করা হয়েছে পাবনা পাউবোর শীর্ষ কর্মকর্তা, প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও ঠিকাদারদের যোগসাজশে। এভাবে প্রতি অর্থবছরেই কাজ না করে বিপুল পরিমাণ টাকা আত্মসাৎ করছেন তারা।
প্রাপ্ত তথ্য জানা গেছে, পাবনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) অ্যানুয়াল প্রকিউরমেন্ট প্ল্যান (এপিপি) অনুযায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছরে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ৭২টি প্রকল্পের কাজ হয়েছে। প্রকল্প প্রতি ব্যয় হয়েছে ৫০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ৮ লাখ টাকা পর্যন্ত। এর মধ্যে ই-জিপির মাধ্যমে কাজ করা হয়েছে ২৮টি, বাকিগুলো সম্পন্ন হয়েছে ম্যানুয়াল টেন্ডারের মাধ্যমে। ই-জিপি টেন্ডারের মাধ্যমে পাওয়া প্রকল্পগুলো কিছুটা বাস্তবায়ন হলেও ম্যানুয়াল টেন্ডারের প্রকল্পের ক্ষেত্রে হরিলুট হয়েছে। ম্যানুয়াল টেন্ডারের ৪৪টি প্রকল্পের অধিকাংশেরই নামে মাত্র কাজ হয়েছে। এর মধ্যে ১০-১৫টি প্রকল্পের কাজ কিছুই করা হয়নি। অথচ এসব প্রকল্পের ২০২২-২৩ অর্থবছরের বিল পরিশোধ হয়ে গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পাবনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আফসার উদ্দীন, উপবিভাগীয় প্রকৌশলী (এসডিই) খলিলুর রহমান, উপসহকারী প্রকৌশলী (এসএই) সুমিরা খাতুন এবং সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের যোগসাজশে এসব টাকা হরিলুট করা হয়েছে।
এ বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত উপবিভাগীয় প্রকৌশলী (এসডিই) খলিলুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘এসব বিষয়ে পাবনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। আমি ঢাকায় (বদলি) চলে আসছি। এসব কাজ না করেই টাকা উত্তোলন নিয়ে আমি কিছু জানি না।’ এরপর ফোন কেটে দেন, পরে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও ফোন রিসিভ করেননি।
পাবনা পাউবোর উপসহকারী প্রকৌশলী (এসএই) সুমিরা খাতুন বলেন, ‘এসব অভিযোগ মিথ্যা। এখন নদীর ক্যানেল ভেঙে যাচ্ছে, চলে যাচ্ছে এগুলোর কাজ না করে কীভাবে আমরা টাকা উত্তোলন করে খেয়ে নেব। এগুলোর বেড়ার পানি উন্নয়ন বোর্ডের হতে পারে, আমাদের (পাবনা) না, আমাদের সব প্রকল্পের কাজ ঠিকভাবেই হয়েছে। কাজ হয়নি এমন প্রকল্প নেই।’
দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আফসার উদ্দীন বলেন, ‘আমাদের সব প্রকল্পের কাজ সঠিকভাবে সম্পন্ন হয়েছে। কোনো অনিয়ম হয়নি। অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ মিথ্যা।’
চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার চৌকা সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া নিয়ে উত্তেজনার রেশ কাটতে না কাটতেই এবার ওই এলাকায় ভারত ও বাংলাদেশের নাগরিকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। বাংলাদেশিরা সীমান্তের শূন্যরেখায় জমিতে শনিবার দুপুরে লাগানো গম কাটতে গেলে ভারতীয়রা বাধা দিয়ে বচসা শুরু করে পরে বাংলাদেশের ভেতরে ঢুকে বেশ কিছু আম ও বরইগাছ কেটে ফেলে।
মূলত এই ঘটনায় দুপক্ষের সংঘর্ষের সময় ভারতীয়দের হাঁসুয়ার আঘাতে দুজন ও ঢিল লেগে আরেক বাংলাদেশি আহত হন। তাদের দুজনের আহত হওয়ার খবরে ওই সীমান্তের তিন কিলোমিটার এলাকাজুড়ে উভয় দেশে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। ঘটনাটি অবগত হয়ে বিজিবি সীমান্তে অবস্থান ও পতাকা বৈঠক করে উত্তেজিত বাংলাদেশিদের ঘরে ফেরায়।
জানা গেছে, ভারতীয়দের হাঁসুয়ার আঘাতে আহত হয়েছেন বিনোদপুর ইউনিয়নের কালীগঞ্জ নামোটোলা এলাকার যুবক মেসবাহুল হক ও মো. ফারুক । আহত অপরজন হচ্ছেন বিশ্বনাথপুর গ্রামের মো. রনি, তিনি ভারতীয়দের ছোড়া পাথরের আঘাতে আহত হয়েছেন। কালিগঞ্জ ঘুমটোলা গ্রামের রবু জানান, ফারুক মোটরসাইকেলে সীমান্ত এলাকার পরিস্থিতি দেখার জন্য অবস্থান করার সময় ভারতীয়দের ছোড়া পাথর মাথায় লেগে গুরুতর আহত হন।
মিঠুন জানান, রনি সীমান্তে বাঁশ নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকার সময় ভারতীয় ১০ জন বাংলাদেশ অনুপ্রবেশ করে রনির ওপর আক্রমণ করে, এতে রনি আহত হন। স্থানীয়দের অভিযোগ, চৌকা সীমান্ত এলাকায় অন্তত ৩০টি আমগাছ এবং শতাধিক বরই গাছ ভারতীয় জনগণ বাংলাদেশি ভূখণ্ডে প্রবেশ করে কেটে ফেলেছে।
সংঘর্ষ চলাকালে ভারতীয় উত্তেজিত জনগণ বাংলাদেশের জনগণকে লক্ষ্য করে বেশ কয়েকটি হাতবোমা নিক্ষেপ করে। এমনকি বিএসএফ প্রায় ১৫টি টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে।
অন্যদিকে বাংলাদেশের সীমান্তবাসীরা লাঠিসোটা, ইটপাটকেল এবং হাসুয়া নিয়ে সীমান্তে অবস্থান নিয়ে ভারতীয়দের সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।
৫৯ বিজিবি ব্যাটেলিয়ানের উপঅধিনায়ক ইমরুল কায়েস ঘটনাস্থলে অবস্থান করে অতিরিক্ত ফোর্সের সহায়তায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেন। বিএসএফও চেষ্টা করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি। পরে বিকেল ৪টার দিকে চৌকা সীমান্তের শূন্যরেখা বরাবর বিজিবি-বিএসএফ পতাকা বৈঠক করার পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
তবে সীমান্তের উভয়দিকেই সীমান্তবাসীর জটলা রয়েছে এবং পরিস্থিতি থমথমে রয়েছে।
উল্লেখ্য, এর আগে চৌকা সীমান্তের ওপারে ভারতের সুখদেবপুর সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ নিয়ে গত সপ্তাহেই কয়েক দিন ধরে উত্তেজনা বিরাজ করেছিল। তখন চৌকা সীমান্তে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও বিএসএফের মধ্যে ব্যাটালিয়ন কমান্ডার পর্যায়ে পতাকা বৈঠক হয়েছিল।
বান্দরবান জেলার আলীকদম উপজেলায় বালুবাহি ডাম্পার গাড়ির ধাক্কায় ৩ মোটর সাইকেল আরোহী নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
শনিবার দুপুরে লামা-আলীকদম সড়কের তারাবুনিয়া নামকস্থানে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন- উপজেলা সদর ইউনিয়নের নাছির চেয়ারম্যান পাড়ার বাসিন্দা মাশুক আহমদের ছেলে মো. বেলাল (৩০), বাজার পাড়ার বাসিন্দা মিন্টু মিয়ার ছেলে মিনহাজ (১৮) ও মনু মেস্ত্রীর কলোনীর বাসিন্দা সৈয়দ আমিন (৪৫)। ঘটনার পর চালক পালিয়ে যায় বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মিনহাজ, বেলাল ও সৈয়দ আমিন এক মোটরসাইকেল চৈক্ষ্যং ইউনিয়নের রেপারপাড়া বাজার থেকে উপজেলা সদরের দিকে যাচ্ছিলেন। এ সময় সড়কের তারাবুনিয়া নামক স্থানে পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আসা বেপরোয়া গতির বালুবাহি ডাম্পার গাড়িটি মোটর সাইকেলটিকে ধাক্কা দেয়। এতে মোটরসাইকেলে থাকা ৩ জন ছিটকে পড়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে আলীকদম থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক মো. শাহাদাৎ হোসেন বলেন, ‘নিহতদের প্রাথমিক সূরতহাল শেষে ময়নাতদন্তের জন্য বান্দরবান সদর মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় ঘাতক ডাম্পার গাড়িটি আটক করা হয়েছে। চালককে আটকের চেষ্টা চলছে।’ দুর্ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানান ওসি মীর্জা জহির উদ্দিন।
কক্সবাজারের চকরিয়ায় পারিবারিক কলহের জেরে স্বামীর ছুরিকাঘাতে নিহত হন স্ত্রী উম্মে হাফছা (১৮)। একঘন্টার ব্যবধানে উপজেলার সাহারবিলের কোরালখালী এলাকায় পূর্ব শত্রুতার জেরে মারামারিতে নিহত হন আলি হোসেন (৪২)। একইদিনে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের ডুলহাজারা ডুমখালী রাস্তার মাথায় যাত্রীবাহী বাস ও মোটরসাইকেল মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত হন হুমায়ুন কবির নোমান (২৫)।
স্বামীর ছুরিকাঘাতে নিহত স্ত্রী উম্মে হাফসার সঙ্গে স্বামী শওকত হাসান মেহেদীর বিয়ের বয়স ৮ মাস। গত মাস দুয়েক ধরে যৌতুককে কেন্দ্র করে নানাভাবে পারিবারিক কলহ লেগে আছে। আজ শুক্রবার এই কলহের জেরে স্বামী মেহেদী ক্ষিপ্ত হয়ে শশুর বাড়িতে গিয়ে স্ত্রীকে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করলে শাশুড়ী পারভীন আক্তার (৩৮) এগিয়ে আসে। এতে শাশুড়ীকেও ছুরিকাঘাত করে সে। পরবর্তীতে স্থানীয়রা দু'জনকে চকরিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক স্ত্রী হাফসাকে মৃত ঘোষণা করেন। গুরুতর আহত শাশুড়ী পারভীনকে চট্টগ্রাম মেডিকেলে প্রেরণ করা হয়।
নিহত স্ত্রী উম্মে হাফসা চকরিয়া পৌর এলাকার ভাঙ্গারমুখ ৯ নং ওয়ার্ড ব্যবসায়ী আব্দুল হামিদের কন্যা এবং আঘাতপ্রাপ্ত মহিলা ব্যবসায়ী আব্দুল হামিদের স্ত্রী।
নিহতের পিতা আব্দুল হামিদ জানান, আট মাস পূর্বে তাদের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে বিভিন্ন সময় যৌতুকের জন্য শারীরিক এবং মানসিকভাবে তার মেয়েকে নির্যাতন করে আসছিল। অত্যাচার নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে এক পর্যায়ে মেয়ে তার বাড়িতে চলে যায়। আজ বাড়ির সব পুরুষ জুমার নামাজ আদায় করতে মসজিদে যায়। এই সুযোগে ফাঁকা বাড়িতে এসে ঘাতক শওকত হাসান মেহেদী অতর্কিতভাবে হামলা চালিয়ে উপর্যুপরি ছরিকাঘাতে মেয়েকে হত্যা করা হয় এবং তার স্ত্রী পারভীন আক্তার (৩৮) গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত হোন। পরবর্তীতে মেহেদী ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের বিচার চান তিনি।
এদিকে, উপজেলার সাহারবিলে পূর্ব শত্রুতার জেরে মারামারিতে নিহত আলি হোসেন সোনা মিয়া (৪২) উপজেলার সাহারবিল ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ড কোরালখালী এলাকার গোলাম কাদেরের ছেলে।
তার পরিবারের অভিযোগ, স্থানীয় কলিম উল্লাহ ও তার ভাই বাবুর সঙ্গে পূর্ব শত্রুতা রয়েছে। তারই জের ধরে আজ কোরালখালী বাজারে মারামারির এক পর্যায়ে আলি হোসেন সোনা মিয়ার তলপেটে উপর্যুপরি লাথিতে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে যায় সে। পরবর্তীতে স্থানীয়রা তাকে মুমূর্ষু অবস্থায় চকরিয়া ইউনিক হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক আলি হোসেনকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ বিষয়ে চকরিয়া থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মন্জুর কাদের ভূঁইয়া বলেন, একই দিনে এক ঘন্টার ব্যবধানে এই ঘটনাগুলো খুবই জঘন্য। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এসব অপরাধীদের ধরতে খুবই তৎপর রয়েছে। সকলের সহযোগিতায় দ্রুত সময়ে অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।
অপরদিকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের ডুলহাজারা ডুমখালী রাস্তার মাথা এলাকায় যাত্রীবাহী বাস ও মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে হুমায়ুন কবির নোমান (২৫) নামে এক যুবক নিহত হয়।
শুক্রবার সকাল ৯টার দিকে এ দূর্ঘটনা ঘটে। নিহত হুমায়ুন কবির নোমান উপজেলার ডুলাহাজারা ইউনিয়নের বালুচর এলাকার বশির আহমদের ছেলে। সে চকরিয়া খ্রিষ্টান মেমোরিয়াল হসপিটালের নাইট গার্ড হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
জানা যায়, নিহত নোমানের আগামী ২০ জানুয়ারি বিয়ের দিন ঠিক করা ছিল। বিয়ের তিনদিন আগেই তিনি দুর্ঘটনায় এভাবে প্রাণ হারানোটা তাঁর পরিবার ও স্বজনরা কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না।
মালুমঘাট হাইওয়ে থানার ওসি মো. মেহেদি হাসান বলেন, সকালে কক্সবাজারগামী বাসের ধাক্কায় নোমান নিহত হন। নিহতের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। ঘাতক বাস শনাক্ত করে জব্দের চেষ্টা চলমান রয়েছে।
চকরিয়া সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার রকিবুর রেজা দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘একই দিনে তিনটা নিহতের ঘটনা খুবই দুঃখজনক। তন্মধ্যে দুইজন খুন ও একজন সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা রয়েছে। অপরাধ ও অপরাধী দমনে সকলের সহযোগিতা কামনা করছি।’
কুমিল্লা জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক কবিরুল ইসলাম শিকদারকে গ্রেপ্তার করেছে যৌথবাহিনী।
আজ শুক্রবার বিষয়টি নিশ্চিত করে কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মইনুল ইসলাম জানান, শুক্রবার ভোরে সেনাবাহিনীর সদস্যরা কবিরুল ইসলাম শিকদারকে থানায় হস্তান্তর করেছে।
এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে নগরীর ৫ নম্বর ওয়ার্ডের মোগলটুলী এলাকায় কবির শিকদারের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
যৌথবাহিনীর সূত্রে জানা গেছে, গত জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে কবিরের সক্রিয় ভূমিকা ছিল। সাম্প্রতিক গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী, তিনি আওয়ামী লীগ অনুসারীদের পুনরায় সংগঠিত করার চেষ্টা চালাচ্ছিলেন। এছাড়া আসন্ন ১৮ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের ঘোষিত হরতাল সফল করতে তিনি সক্রিয় ভূমিকা নিচ্ছিলেন। এছাড়া কবিরের বিরুদ্ধে ৪টি মামলা রয়েছে।
কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মইনুল ইসলাম বলেন, ‘শুক্রবার কবিরকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।’
নাস্তা করে বাড়ি ফেরার পথে দ্রুতগামী বাসচাপায় ৩ মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। আজ শুক্রবার ভোর ৪টার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সুফিয়া রোড এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন- মিরসরাইয়ের ১৩ নম্বর মায়ানী ইউনিয়নের মায়ানী বড়ুয়াপাড়ার বাসিন্দা সভ্যরঞ্জন বড়ুয়ার ছেলে ও মায়ানী ইউনিয়ন বিএনপির সদস্য রুবেল বড়ুয়া (৪০), একই গ্রামের বাসিন্দা মেঘল বড়ুয়ার ছেলে নিপ্পু বড়ুয়া (৪৩) ও সুরেশ বড়ুয়ার ছেলে সনি বড়ুয়া (৩৭)।
মায়ানী ইউনিয়ন বিএনপি নেতা আশরাফ উদ্দিন বলেন, ‘মায়ানী ইউনিয়নের বড়ুয়াপাড়ার ৩ জন মোটরসাইকেলযোগে সুফিয়া রোড় একটি হোটেলে নাস্তা করতে যায়।
নাস্তা করে বাড়ি ফেরার পথে দ্রতগামী বাসচাপায় ঘটনাস্থলে ৩ জন মারা যান। তাদের মধ্যে রুবেল বড়ুয়া ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্যের দায়িত্বে রয়েছেন। একসঙ্গে তিনজন এভাবে মারা যাওয়ায় খুব খারাপ লাগছে।’
মিরসরাই থানার ওসি আতিকুর রহমান মজুমদার বলেন, ‘আজ শুক্রবার ভোর রাতে সুফিয়া রোড় এলাকায় দুর্ঘটনায় ৩ মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হয়েছেন। ঘটনার পরপরই জোরারগঞ্জ হাইওয়ে পুলিশকে খবর দেওয়া হয়।’
মিরসরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতিকুর রহমান মজুমদার গণমাধ্যমকে বলেন, ‘মিরসরাইয়ে দুর্ঘটনায় ৩ মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হয়েছেন।’
কিশোরগঞ্জে শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় দুজন রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট নাসর্কে দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। ভুল চিকিৎসার বিষয়টি স্বীকার করে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
জানা গেছে, পেটে ব্যথাজনিত কারণে গত ১২ জানুয়ারি ভর্তি হয়েছিলেন নিকলী উপজেলার নোয়াপাড়া গ্রামের আব্দুল কাদিরের ছেলে জহিরুল (২২)।
আজ বুধবার সকালে দুজনেরই অপারেশন হওয়ার কথা ছিল।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় থাকা প্রত্যক্ষদর্শী রাব্বি আলম (৩০) জানান, সকালে নার্স এসে রোগী জহিরুল ইসলামকে একটি ইনজেকশন পুশ করেন। তখন কোন শব্দ না করে সঙ্গে সঙ্গেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন জহিরুল। এ সময় একই ইনজেকশন আরও দুই রোগীকে দেওয়া হয়েছে, তাদের অবস্থাও আশংকাজনক হওয়ায় অন্যত্র পাঠানো হয়েছে। রাব্বি আরও বলেন, কিছুক্ষণ পরে আরেকজন নার্স এসে পরীক্ষা করে জানান জহিরুল মারা গেছেন।
জহিরুল ইসলামের বড় ভাই মাসুক মিয়া বলেন, জহিরুল ইসলাম অত্যন্ত গরীর মানুষ, তার ঘরবাড়ি বলতে কিছুই নেই। দুটি সন্তান রয়েছে। স্ত্রী আবারও অন্তঃসত্ত্বা। এমন অবস্থায় ভুল চিকিৎসায় তার ভাইয়ের মৃত্যু কোনভাবেই মেনে নিতে পারছেন না তিনি৷ মাসুক বলেন, এ ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন তিনি।
অন্যদিকে হার্নিয়ার চিকিৎসার জন্য গত ৭ জানুয়ারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন কটিয়াদী উপজেলার ধুলদিয়া এলাকার ফালু মিয়ার ছেলে একটি কিন্ডারগার্টেন স্কুলের শিক্ষক মনিরুজ্জামান মল্লিক (৩২)।
মনিরুজ্জামান মল্লিকের চাচাতো ভাই মো. মোজাফফর জানান, মল্লিকের এপেন্ডিসাইটিসের ব্যাথা ছিল। অতীতে বিভিন্ন ক্লিনিকে চিকিৎসা করিয়েছে। তখন চিকিৎসক জানিয়েছেন অপারেশনর করতে হবে। তাই ভালো চিকিৎসা এবং খরচের চিন্তা করে সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজে এসেছিলেন। তিনি অভিযোগ করে বলেন, যে ইনজেকশন দেওয়ার কথা অপারেশন থিয়েটারে, সেখানে না দিয়ে দেওয়া হয়েছে রোগীর বেডে। ইনজেকশন দেওয়ার কয়েক মিনিট পরেও মল্লিক চিৎকার করে বলছিল সিস্টার আমাকে কী ইনজেকশন দিলেন, আমি তো শেষ! একথা বলেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন মল্লিক। এ ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন তিনি।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, অপারেশনের পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে সকাল সাড়ে ৭ টার দিকে সিনিয়র স্টাফ নার্স নাদিরা বেগম ওয়ার্ডের সীটেই দুজনকে ইনজেকশন পুশ করেন। ইনজেকশন পুশ করার ৫ থেকে ১০মিনিটের মধ্যেই দুজন কাতরাতে কাতরাতে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।
অভিযোগ রয়েছে, ‘নর কিউ’ নামক অ্যানেসথেশিয়ার ইনজেকশনটি অপারেশন থিয়েটারে পুশ করার কথা ছিল, সেটি আগেই ভুল করে ওয়ার্ডের সীটেই পুশ করেন নার্স। এতেই ঘটে বিপত্তি। মৃত্যু হয় দুজন তরতাজা যুবকের।
তাদের মৃত্যুর খবরে আত্মীয় স্বজনরা হাসপাতালে গিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। পরে বিক্ষোভও করেন। তারা সংশ্লিষ্ট নার্সের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ডা. হেলিশ রঞ্জন সরকার ভুল চিকিৎসায় দুজনের মৃত্যুর বিষয়টি স্বীকার করে জানান, ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট নার্সকে দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। এ ঘটনায় সার্জারি বিভাগের প্রধান ডা. অজয় সরকারকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট নার্সের সর্বোচ্চ শাস্তির বিষয়ে তিনি নিজেও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে সুপারিশ করবেন বলে আশ্বস্থ করেন।
সেন্টমার্টিন দ্বীপে অগ্নিকাণ্ডে তিনটি ইকো রিসোর্ট পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। তিনটি রিসোর্ট ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৬ কোটি টাকা। প্রাথমিকভাবে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন সেন্টমার্টিন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান।
ইকো রিসোর্টে মালিকদের বরাত দিয়ে চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলেন, গতকাল মঙ্গলবার মধ্যরাতে সেন্টমার্টিনে পশ্চিম সৈকতের গলাচিপায় অবস্থিত সাইরী ইকো রিসোর্টের (রিসিপশন) অভ্যর্থনা কক্ষ থেকে মাল্টিপ্লাগে শর্টসার্কিট হয়ে আগুনের সূত্রপাত ঘটে। এতে করে পাশে থাকা বীচ ভ্যালীর ১৮টি কক্ষ, কিংশুক ইকো রিসোর্টে ৭টি ও সাইরী ইকো রিসোর্টের (রিসিপশন) অভ্যর্থনা কক্ষ ১টিসহ সর্বমোট ২৬টি কক্ষ পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। তিনি আরও বলেন, রিসোর্ট মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি- প্রাথমিকভাবে প্রায় ৬ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
সেন্টমার্টিন পুলিশ ফাঁড়িরর ইনচার্জ এসআই অজিত কুমার দাস বলেন, সেন্টমার্টিনে সাইরী রিসোর্ট থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। এতে পাশের আরও দুটি রিসোর্ট আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এতে গলাচিপার বিচ ভ্যালি এবং কিংশুক রিসোর্টের অধিকাংশ পুড়ে গেছে। আমরা ঘটনাস্থল ঘুরে দেখেছি। এসব রিসোর্টগুলো খুব সুন্দর এবং উন্নতমানের ছিল। সাইরী রিসোর্ট থেকে প্রথমে আগুনের সূত্রপাত হওয়ার বিষয়টি জেনেছি। তবুও আমরা ঘটনাটি গুরুত্ব দিয়ে খতিয়ে দেখছি। এছাড়া পুড়ে যাওয়া রিসোর্টে থাকা পর্যটকদের অন্য হোটেলে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
পুড়ে যাওয়া কিংশুক রিসোর্টের সহকারী পরিচালক সাইফুদ্দিন বাবর বলেন, হঠাৎ করে রাতে আগুন দেখতে পাই। সঙ্গে সঙ্গে আমরা হোটেলে থাকা পর্যটকদের নিরাপদে সরিয়ে নেই। ততক্ষণে আমাদের রিসোর্টের ১৫টি কক্ষ পুড়ে ছাই হয়ে যায়। কাঠ-বাঁশ এবং ছাউনি দিয়ে তৈরি করা হয়েছিল আমাদের রিসোর্টটি। তাই দ্রুত আগুন ছড়িয়ে পড়ে। এতে দেড় কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে। তাছাড়া আমাদের ব্যবসা লোকসানে পড়েছে।
রিসোর্ট বিচ ভ্যালির মালিক মো. সরোয়ার কামাল বলেন, আগুন আমাদের নিঃস্ব করে দিয়েছে। পুরো রিসোর্টটি পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। কোনও মালামাল রক্ষা করতে পারিনি। আমাদের ৪ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এখন আমরা নিঃস্ব।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, আমাদের একটা টিম সেখানে পৌঁছেছে। আগুনের ঘটনাটি তদন্ত করে দেখা হবে। আর ক্ষতিগ্রস্তদের কীভাবে সহায়তায় করা যায়, সে বিষয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা চলছে।
ডানা ঝাপটিয়ে জলে এসে পড়ছে, জলকেলিতে আনন্দ উপভোগ করছে ঝাঁকে ঝাঁকে আসা অতিথি পাখি। শীত শুরু হলেই দলবেঁধে চলে আসে তারা। পাখির কলতানে মুখরিত হয়ে উঠেছে চারপাশ। যা দেখতে ভিড় করেন দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসা পাখিপ্রেমীরা।
বলছি ঠাকুরগাঁও জেলার রাণীশংকৈল উপজেলার রামরাই দীঘির কথা। যেখানে প্রতিবছর শীতে আসে একঝাঁক অতিথি পাখি। পুরো দীঘির জলাশয় সেজেছে এক নতুন সাজে। স্থানীয় প্রশাসন বলছে পাখিদের নিরাপত্তার বিষয়ে লক্ষ্য রাখছেন তারা।
ঠাকুরগাঁও সদর থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত রাণীশংকৈল উপজেলা। এই উপজেলায় অবস্থিত প্রাচীন রামরাই দীঘি। প্রতি বছরের মতো এবার শীতেও দীঘিটিতে ভিড় জমিয়েছে শীতপ্রধান দেশগুলো থেকে আসা বিভিন্ন প্রজাতির অতিথি পাখি।
তাই তো শীতের মৌসুম আসতেই প্রাচীন ও সর্ববৃহৎ রামরাই দীঘিটি যেন অতিথি পাখির কলতানে মুখরিত। ঝাঁকে ঝাঁকে অতিথি পাখির সমাগম হয়েছে সেখানে। যা দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসছেন পাখিপ্রেমীকরা।
পাখির কিচিরমিচির শব্দ আর ওড়াউড়ির দৃশ্যধারণের চেষ্টায় মেতেছেন দর্শনার্থীরা। কেউ কেউ আবার নৌকায় চড়ে পাখিদের দৃশ্য ক্যামেরায় ধারণের চেষ্টা চালাচ্ছেন। তুলছেন সেলফি। করছেন ভিডিও। রামরাই দীঘিতে অতিথি পাখির অবাদ বিচরণ এখন নজর কেড়েছে সবার।
অতিথি পাখি দেখে মুগ্ধ দর্শনার্থীরা। তবে পাখিগুলোর নিরাপত্তার বিষয়ে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন তারা।
ঠাকুরগাঁও শহর থেকে পাখি দেখতে এসেছেন আব্দুল্লাহ আল সুমন। তিনি বলেন, ‘এবারে প্রথম আসলাম পাখি দেখতে। এসে দেখি অনেক পাখি এসেছে। পাখিগুলো সুন্দর করে একসঙ্গে উড়ে যাচ্ছে আবার এসে পানিতে বসছে। এ এক মনোরম দৃশ্য। খুবই সুন্দর লাগছে।’
হরিপুর থেকে পাখি দেখতে এসেছেন ওমর ফারুকসহ তার বন্ধুরা। তারা বলেন, ‘পাখিগুলো প্রতিবারে শীতের সময় আসে। তবে অনেকে এগুলো শিকার করতে চায়। পাখিগুলো যাতে এখানে নিরাপদে থাকতে পারে সে জন্য প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।’
রাণীশংকৈল উপজেলা নির্বাহী অফিসার রকিবুল হাসান বলেন, ‘অতিথি পাখি কেউ যেন পাখি শিকার করতে না পারে, তাই নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই রামরাই দীঘি এলাকার একটি ঐতিহ্যবাহী দীঘি। আমরা উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব সময় নজরে রাখছি।’
উল্লেখ্য, প্রায় ৪২ একর জমিজুড়ে রামরাই দীঘিটি অবস্থিত। আর এখানে প্রতিদিন দর্শনার্থী আসেন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য।
মিয়ানমারের সামরিক জান্তা বাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির চলমান গৃহযুদ্ধে রাখাইন অঞ্চলের বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকাগুলো এখন যুদ্ধবিধ্বস্ত। সেসব অঞ্চল বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির দখলে। তখন থেকে নাফনদী পথে টেকনাফ স্থলবন্দরে সীমান্ত বাণিজ্য বন্ধ থাকলেও, ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদক আসা কমছেই না। ফলে এবার মাদক রোধে সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্টে টহল জোরদার করেছে বিজিবি।
এমন পরিস্থিতিতে চলতি বছরের (১-১২ জানুয়ারী পর্যন্ত) টেকনাফ সীমান্ত-নাফনদের বিভিন্ন পয়েন্টে অভিযানে মিয়ানমার থেকে পাচারকালে ১২ দিনে পৌনে পাচঁ লাখ পিস ইয়াবা উদ্ধার করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। এসময় পাচঁজন মাদক পাচারকারীকেও আটক করা হয়েছে।
এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন সদ্য যোগদানকারী টেকনাফ বিজিবি-২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. আশিকুর রহমান।
বিজিবি জানায়, সর্বশেষ আজ রোববার ভোরে টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের দমদমিয়া এলাকার ডাবল জোড়া নামক এলাকা দিয়ে মিয়ানমার থেকে মাদকের একটি চালান আসার খবরে বিজিবির সদস্যরা সেখানে টহল ও নজরদারী বৃদ্ধি করে। পরে মিয়ানমার জলসীমানা থেকে কর্কশিট দ্বারা উদ্ভাবিত উপায়ে তৈরি ভেলায় মাদক নিয়ে নাফ নদী সাঁতরে আসা দুই পাচারকারীকে দেখে অভিযান পরিচালনা করে। এসময় ঘন কুয়াশার আড়ালে নদী সাঁতরিয়ে শূন্য লাইন অতিক্রম করে বাংলাদেশ-মায়ানমার সীমান্তের অপর পার্শ্বে পালিয়ে যায় তারা। পরে তাদের ফেলে যাওয়া ভেলা তল্লাশি চালিয়ে ২ লাখ ৫০ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়।
এ বিষয়ে বিজিবি-২ অধিনায়ক আশিকুর রহমান বলেন, ‘রোববার ভোরে মাদকের একটি বড় চালান পাচারের গোপন তথ্যের ভিত্তিতে দমদমিয়াস্থল নাফনদে তীরে অভিযান চালানো হয়। অভিযানে ২৫টি প্লাস্টিকের ব্যাগে থাকা ২ লাখ ৫০ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে। আমাদের মাদকবিরোধী অভিযান চলমান রয়েছে। আমরা ১২ দিনে প্রায় পাচঁ লাখ পিস ইয়াবা উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘মাদকরোধসহ সীমান্তে যেকোন পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিজিবি খুব শক্ত অবস্থানে রয়েছে। বিশেষ করে রোহিঙ্গার পাশাপাশি কোন মাদক ঢুকতে না পারে সেজন্য বিজিবি রাত-দিন টহল অব্যাহত রেখেছে। এছাড়া সীমান্তে সম্পূর্ণরুপে অপরাধ রোধে স্থানীয়দের সহযোগিতা একান্ত প্রয়োজন।’
এদিকে বিজিবির তথ্য থেকে জানা যায়, চলতি বছরের জানুয়ারি ১ হাজার ৯৭০ পিস ইয়াবা, ৩ জানুয়ারি ৬ হাজার ইয়াবা, ৪ জানুয়ারি ২ লাখ ৩০ হাজার ইয়াবা, ৬ জানুয়ারি ৯৬৫ পিস ইয়াবা, ১০ জানুয়ারি ৭৭৫ পিস ইয়াবা, ১২ জানুয়ারি ২ লাখ ৫০ হাজার উদ্ধার করেছে বিজিবি। এসব অভিযানে আটক হয়েছে পাঁচজন।
খবর নিয়ে জানা গেছে, সীমান্ত দিয়ে নানা কৌশলে মিয়ানমার থেকে ইয়াবা ও ক্রিস্টাল মেথ আইস পাচার হয়ে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। এর পেছনে পৃষ্ঠপোষকতায় বারবার নাম আসে মিয়ানমার সরকারের জান্ত বাহিনী ও সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপির। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একাধিক তালিকায় বলা হয়েছে, মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বিজিপির অধীনেই ইয়াবাসহ অন্যান্য মাদক বেচা-বিক্রি হয়ে আসছে।
মাদক পাঠাচ্ছে আরাকান আর্মি
গত বছরের ১ ফেব্রুয়ারি থেকে মাসব্যাপী তুমুল লড়াইয়ের পর মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের বিজিপি ঘাঁটিগুলো এখন আরাকান আর্মির দখলে। ঘাঁটিগুলোতে শক্ত অবস্থানে রয়েছে আরাকান আর্মির সদস্যরা। বিশেষ করে গত ৮ ডিসেম্বর রাখাইনে মংডু টাউনশিপ আরাকান আর্মির দখল নেওয়ার পর বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত বাণিজ্যে বন্ধ থাকলেও দেশটি থেকে মাদক আসা বন্ধ হয়নি।
এমন পরিস্থিতিতে কক্সবাজার সিভিল সোসাইটির সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী খোকা অভিযোগ করে বলেন, ‘এখন আরাকান আর্মির সিন্ডিকেট করে সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে মাদক পাচার করছে। তা না হলে সীমান্ত দিয়ে মাদক পাচার বন্ধ হচ্ছে না কেন? বিষয়টি আমি জেলা আইনশৃঙ্খলা সভায় বলেছি। কেননা আরাকান আর্মি সম্প্রতি সময়ে রাখাইনে মংডু টাউশিপ দখলের পর থেকে মাদক পাচার বেড়ে গেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘মূলত তারা (আরাকান আর্মি) সেদেশ থেকে গবাদি পশু এবং মাদক পাঠাচ্ছে বাংলাদেশে। মাদককের টাকায় তার বিপরীতে বিভিন্ন কৌশলে সেদেশে (মিয়ানমার) চোরাচালালে পাচার হচ্ছে (যাচ্ছে) রসদসহ বিভিন্ন মালামাল। সরকারের উচিত এই মুহূর্তে এটি বন্ধের দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া। না হয় ভয়াবহ রূপ নেবে।’
সীমান্তের স্থানীয় ইউপি সদস্য আবদুস সালাম বলেন, ‘এখন মাদকের নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে। মিয়ানমারের সংঘাত পরিস্থিতিতে আরাকান আর্মির ভূমিকা পরিষ্কার না। এখন মাদকের চালান প্রবেশ অনেক বেশি চিন্তার। তবে বিজিবি সীমান্তে মাদক রোধে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। ’
সীমান্তে মাদক আসা প্রতিহত করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা একযোগে কাজ করছেন বলে জানিয়েছেন টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহসান উদ্দিন।
এদিকে মিয়ারমারের সংঘাতে মংডু টাউনশিপ আরাকান আর্মি দখলের পর গত ৮ ডিসেম্বরের পর থেকে মিয়ানমার থেকে টেকনাফ স্থলবন্দরে কোন ধরনের পণ্যেবাহি ট্রলার আসেনি। ফলে স্থলবন্দর অচল হয়ে পরে আছে। অভিযোগ রয়েছে, আরাকান আর্মির ‘প্রতিবন্ধকতার’ কারনে কোন ট্রলার না আসলে সীমান্তে মাদক পাচার বেড়েছে।
রাজশাহী নগরীর একটি ছাত্রাবাস থেকে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) এক শিক্ষার্থীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
গতকাল শুক্রবার দিবাগত রাত ১১টার দিকে নগরীর ফুদকিপাড়া এলাকার এবেলা ছাত্রাবাসের একটি কক্ষ থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়।
নিহত শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান রুয়েটের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা (ইউআরপি) বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।
বোয়ালিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেহেদী মাসুদ বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘নিহতের লাশ উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ধারণা করা হচ্ছে তিনি আত্মহত্যা করেছেন। তবে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে পেলে মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে।’
মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলাধীন মেঘনা নদীতে ইঞ্জিন চালিত ট্রলারের সঙ্গে স্পিডবোটের সংঘর্ষে ৪ জন নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় আহত অবস্থায় উদ্ধার হয়েছে ৬ জন। হতাহতরা সবাই কুখ্যাত ‘নৌডাকাত নয়ন বাহিনী’র সক্রিয় সদস্য বলে জানা গেছে।
নিহতরা হলেন- গজারিয়া উপজেলার গুয়াগাছিয়া ইউনিয়নের জামালপুর গ্রামের মোহাম্মদ আলী বেপারীর ছেলে ওদুদ বেপারী (৩৬), মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলা চরঝাপ্টা রমজানবেগ গ্রামের বাচ্চু সরকারের ছেলে বাবুল সরকার (৪৮), চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার সাকিব (২৬) ও একই এলাকার নয়াকান্দি বড়ইচর গ্রামের মোহন ভান্ডারের ছেলে নাঈম (২৫)।
গতকাল শুক্রবার রাত দশটার দিকে মেঘনা নদীর কালীপুরা ঘাট সংলগ্ন এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। হতাতরা অবৈধ বালুমহাল পরিচালনার কাজে নিয়োজিত ছিল। নিহতদের মধ্যে ওদুদ বেপারি নৌডাকাত নয়ন বাহিনীর সেকেন্ড ইন কামান্ড পিয়াসের বড় ভাই।
উদ্ধার ইউনিট প্রত্যয় নারায়ণগঞ্জের কমান্ডার ও বিআইডব্লিউটিএ'র উপ-পরিচালক মো. ওবায়দুল করিম খান বলেন, শুক্রবার রাতে আমরা শুনেছিলাম বাল্কহেডের সঙ্গে স্পিডবোটের সংঘর্ষ হয়েছে। তবে ঘটনাস্থলে আসার পরে আমরা নিশ্চিত হয়েছি স্পিডবোটের সঙ্গে একটি ইঞ্জিন চালিত ট্রলারের সংঘর্ষ হয়েছে। দুর্ঘটনায় ট্রলারটি তলিয়ে যায় এবং স্পিডবোটটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আমরা ধারণা যারা মারা গেছে তারা সবাই ট্রলারের যাত্রী ছিল। এ ঘটনায় একজন নিখোঁজ ছিল। উদ্ধার অভিযানের এক পর্যায়ে আজ শনিবার দুপুর ২ টার দিকে দুর্ঘটনাস্থলের অদূরে ঝোপ থেকে নিখোঁজ থাকা স্পিডবোট চালক নাঈমের লাশ উদ্ধার করা হয়।’
এদিকে খবর নিয়ে জানা যায়, গজারিয়া উপজেলার গুয়াগাছিয়া ইউনিয়নের জামালপুর গ্রাম সংলগ্ন মেঘনা নদীতে অবৈধ একটি বালুমহাল পরিচালনা করত কুখ্যাত নৌডাকাত নয়ন বাহিনীর লোকজন। দিনের আলোতে নদীর ওই অংশে বালুমহালের অস্তিত্ব না থাকলেও সন্ধ্যা হলেই সেখানে চালু করা হতো বালুমহাল। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অসংখ্য বার অভিযান পরিচালনা করেও অবৈধ এই বালুমহালটি বন্ধ করতে পারেনি। সন্ধ্যায় অবৈধ বালুমহাল চালুর পর আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ৩/৪টি স্পিডবোট ও ট্রলার নিয়ে নদীতে মহড়া দেয় নয়ন বাহিনীর লোকজন। এই বাহিনীর সঙ্গে বিগত কয়েক মাসে কয়েকবার আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রতিপক্ষের গোলাগুলির ঘটনা ঘটে।
স্থানীয়দের দাবি শুক্রবার রাতে অবৈধ বালুমহালের জন্য বাল্কহেড আটক করতে একটি স্পিডবোট ও ইঞ্জিন চালিত একটি ট্রলার নিয়ে যাচ্ছিল নয়ন বাহিনীর লোকজন। এসময় নৌযান দুটিতে ১০/১১ জন আরোহী ছিল।
রাতে ঘন কুয়াশার কারণে দ্রুতগতির স্পিডবোটটি দিকভুলে ট্রলারে ধাক্কা দিলে ট্রলারটি তলিয়ে যায় এবং স্পিডবোটটি দুমড়ে মুচড়ে যায়।
এ ঘটনায় শুক্রবার রাতে তিনজনের লাশ উদ্ধার হলেও নাঈম (২৫) নামে একজন নিখোঁজ ছিল। নিখোঁজের সন্ধানে উদ্ধার অভিযান শুরু করে ফায়ার সার্ভিস, কোস্টগার্ড ও বিআইডব্লিউটিএ। পরবর্তীতে শনিবার দুপুর দুইটার দিকে স্পিডবোট চালক নাঈমের লাশ উদ্ধার হয়।
এদিকে নিহত ওদুদ বেপারীর স্ত্রী ফেরদৌসীর দাবি অবৈধ বালুমহাল পরিচালনার সময় নয়, পার্শ্ববর্তী মতলব উত্তর উপজেলার একটি সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ শেষে ফেরার পথে দুর্ঘটনার শিকার হয় তারা।
গজারিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আনোয়ার আলম আজাদ বলেন, 'ঘন কুয়াশার কারণে নদীতে একটি ট্রলারের সঙ্গে দ্রুতগতির স্পিডবোটের সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনায় ৪ জন নিহত হয়েছেন। বিস্তারিত পরে বলতে পারব।’
ঈশ্বরদীতে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের গ্রিন সিটির নির্মাণাধীন আবাসন ভবন থেকে আরও এক রাশিয়ান নাগরিকের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। নিহত রাশিয়ান নাগরিক ইভান কাইটমাজোভ (৪০) প্রকল্পের স্কেম কোম্পানিতে ইলেকট্রিক সার্কিট ইনস্টলার পদে কর্মরত ছিলেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার দিকে গ্রিন সিটির ১৪ নম্বর ভবনের নবম তলার ৯৫নং ফ্ল্যাটের টয়লেট থেকে এই মরদেহ উদ্ধার হয়।
ঈশ্বরদী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মনিরুল ইসলাম জানান, নিহত রুশ নাগরিকের লাশ ওয়াশরুমে গলায় রশি লাগানো অবস্থায় পাওয়া গেছে। গ্রিন সিটির দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেছেন। তিনি আত্মহত্যা করতে পারেন বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। ময়নাতদন্তের পরে বিস্তারিত জানানো সম্ভব হবে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট ও অনুসন্ধান চালিয়ে মৃত্যুর রহস্য উদ্ঘাটন করা হবে।
এর আগে গত ৪ জানুয়ারি ঈশ্বরদীতে নির্মাণাধীন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের আবাসিক ভবন থেকে লাফ দিয়ে এক রুশ নারীর মৃত্যু হয়। নিহত রুশ নাগরিক পোশতারুক সেনিয়া (৪০) রূপপুর প্রকল্পে কর্মরত ছিলেন।
ইউরোপের দেশ মাল্টার নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করেছিলেন বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সামরিক উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিকের স্ত্রী শাহীন সিদ্দিক। ২০১৩ ও ২০১৫ সালে দুই দফায় তিনি এ আবেদন করেছিলেন। তবে অর্থ পাচার, দুর্নীতি, প্রতারণা ও ঘুষের অভিযোগ থাকায় তার দুটি আবেদনই প্রত্যাখ্যান করা হয়। তাদের মেয়ে বুশরা সিদ্দিকের নাগিকত্বের আবেদনও খারিজ করেছিল মাল্টা কর্তৃপক্ষ।
ফাঁস হওয়া নথিপত্রের খবর দিয়ে শুক্রবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরেছে যুক্তরাজ্যের প্রভাবশালী সংবাদপত্র দ্য ফিন্যান্সিয়াল টাইমস। শাহীন সিদ্দিক ও বুশরা সিদ্দিকের আরেকটি পরিচয় রয়েছে। শাহীন যুক্তরাজ্যের অর্থ মন্ত্রণালয়ের (ট্রেজারি) অর্থনীতিবিষয়ক মন্ত্রী (ইকোনমিক সেক্রেটারি) টিউলিপ সিদ্দিকের চাচি ও বুশরা চাচাতো বোন। টিউলিপ শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানার মেয়ে।
যুক্তরাজ্যে আওয়ামী লীগ-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন নেতার বাড়িতে টিউলিপের বসবাস করা নিয়ে সম্প্রতি বিতর্ক দেখা দিয়েছে। এর জেরে দেশটিতে তার ওপর মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগের চাপ বাড়ছে। বাংলাদেশেও টিউলিপ ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির তদন্ত করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন টিউলিপ সিদ্দিক।
ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদনে অনুযায়ী, ২০১৩ সালে শুধু শাহীন সিদ্দিক মাল্টার নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করেছিলেন। তবে ওই আবেদন নাকচ করে দেয় হেনলি অ্যান্ড পার্টনারস নামের একটি প্রতিষ্ঠান। ওই সময় মাল্টায় বিনিয়োগের মাধ্যমে বিদেশিদের নাগরিকত্ব দেওয়ার কর্মসূচি দেখভালের বিশেষ দায়িত্বে ছিল ওই প্রতিষ্ঠানটি।
ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের হাতে আসা নথিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরে রাজধানী ঢাকায় বিভিন্ন সরকারি জমি অবৈধভাবে দখলের অভিযোগ উঠেছিল একটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। ওই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে শাহীন সিদ্দিকের সংশ্লিষ্টতা থাকায় তার মাল্টার পাসপোর্টের আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হয়েছিল।
শাহীন সিদ্দিক-সংশ্লিষ্ট যে প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে জমি দখলের অভিযোগ উঠেছে, সেটির নাম প্রচ্ছায়া। শাহীন প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারপারসন ছিলেন। প্রচ্ছায়ায় নিজের পদের বিষয়টি ২০১৩ সালে মাল্টার নাগরিকত্বের আবেদনেও উল্লেখ করেছিলেন তিনি। এ ছাড়া ২০০৯ থেকে ২০২৪ সালে শেখ হাসিনার পতনের আগ পর্যন্ত তার সামরিক উপদেষ্টা ছিলেন তারিক সিদ্দিক।
শেখ হাসিনার সমালোচকেরা দাবি করেন, প্রচ্ছায়ার জন্য জমি দখল করতে বাংলাদেশের বিভিন্ন নিরাপত্তা বাহিনীকে কাজে লাগিয়েছিলেন তারিক। ২০১৬ সালে ওই জমি বিক্রি করে দেয় প্রচ্ছায়া। প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ঢাকা ও গাজীপুরে সরকারি ও ব্যক্তিমালিকাধীন জমি দখল ও ভূমিদস্যুতার অভিযোগ রয়েছে।
নথিপত্রে দেখা গেছে, ২০১৩-এর পর ২০১৫ সালের মার্চে মেয়ে বুশরা সিদ্দিকের সঙ্গে যৌথভাবে মাল্টার নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করেছিলেন শাহীন সিদ্দিক। সেবার নাগরিকত্বের জন্য শাহীনকে খরচ করতে হতো ৬ লাখ ৫০ হাজার ইউরো। আর বুশরার খরচ পড়ত ২৫ হাজার ইউরো। এ ছাড়া ফি বাবদ হেনলি অ্যান্ড পার্টনারসকে দিতে হতো ৭০ হাজার ইউরো।
২০১৫ সালে মাল্টার নাগরিকত্বের আবেদনের জন্য মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরের একটি ব্যাংক হিসাবের লেনদেনের তথ্য (স্টেটমেন্ট) দেখান শাহীন। তাতে ২৭ লাখ ৬০ হাজার ৪০৯ ডলার জমা দেখানো হয়। আগের দুই মাসে ১১টি লেনদের মাধ্যমে ওই অর্থ হিসাবটিতে জমা দেওয়া হয়েছিল। তবে সেই অর্থের কোনো উৎসের কথা নথিতে জানানো হয়নি।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশের মুদ্রানীতি অনুযায়ী, এক বছর সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে কেউ ১২ হাজার ডলারের বেশি দেশের বাইরে নিতে পারবেন না।
বুশরা যুক্তরাজ্যের লন্ডনে শিক্ষার্থী ভিসায় অবস্থানের সময় নিজের ঠিকানা দিয়েছিলেন মধ্য লন্ডনের সেন্ট প্যানক্রাস স্টেশনের কাছের একটি বাড়ির। ওই বাড়ি থেকে কয়েক মিনিটের হাঁটা দূরত্বে কিংস ক্রস এলাকায় টিউলিপ সিদ্দিকের ফ্ল্যাট রয়েছে। ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের সাম্প্রতিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ফ্ল্যাটটি ২০০৪ সালে তাকে বিনা মূল্যে দিয়েছিলেন আওয়ামী লীগ-সংশ্লিষ্ট একজন আবাসন ব্যবসায়ী।
২০১১ সালের নথি অনুযায়ী, ওই সময় বুশরা প্রচ্ছায়ার পরিচালক ছিলেন। তবে ২০১৫ সালে মাল্টার যৌথ নাগরিকত্ব আবেদনের সময় প্রচ্ছায়ার কথা উল্লেখ করেননি শাহীন সিদ্দিক। এর বদলে চট্টগ্রামের দ্য আর্ট প্রেস প্রাইভেট লিমিটেডকে নিজের প্রতিষ্ঠান হিসেবে তালিকাভুক্ত করেন তিনি।
২০১৫ সালের শেষের দিকের ফাঁস হওয়া নথিপত্রে দেখা গেছে, ‘আবেদন খারিজ এবং/অথবা বাতিল’ শিরোনামে একটি তালিকায় শাহীন সিদ্দিকের নাম রয়েছে। মাল্টার সরকারি প্রজ্ঞাপন থেকেও নিশ্চিত হওয়া গেছে যে, শাহীন সিদ্দিক বা বুশরা সিদ্দিক- কেউই দেশটির নাগরিকত্ব পাননি। তারা যে পাসপোর্ট পাননি, তা নিশ্চিত করেছে হেনলি অ্যান্ড পার্টনারসও।