নদীর চর এখন আর পরিত্যক্ত বা বিরান ভূমি হয়ে পড়ে নেই। চোখ মেললে দৃষ্টির সীমানা পর্যন্ত সবুজের সমারোহে দুলে উঠছে বাদামের গাছ। পরিবেশ উপযোগী, কম ঝুঁকিপূর্ণ ও উৎপাদন খরচ সীমিত হওয়ায় অধিক মুনাফা নিশ্চিত করতে পঞ্চগড়ের চাষিরা ঝুঁকে পড়েছেন উচ্চফলনশীল বাদাম চাষে। ভৌগোলিক অবস্থার কারণে অর্থকরী ফসল উৎপাদনে আগ্রহ হারালেও লাভজনক বিকল্প এই ফসল উৎপাদনে এগিয়ে যাচ্ছেন পঞ্চগড়ের প্রান্তিক চাষিরা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আধুনিক প্রযুক্তির প্রয়োগ নিশ্চিত করা গেলে পঞ্চগড় জেলায় বাদামের আবাদ আরও বাড়বে। পাশাপাশি ঋণসুবিধাসহ উৎপাদিত পণ্যের সুষ্ঠু বাজারজাত ও সংরক্ষণ নিশ্চিত করতে পারলে এ জেলার উৎপাদিত বাদাম গ্রামীণ এই জনপদের অর্থনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করবে।
হিমালয়ের কাছে অবস্থানের কারণে দেশের সর্ব উত্তরের এ জেলার মাটি ও আবহাওয়া দেশের অন্যান্য অঞ্চলের চেয়ে ভিন্ন। মাটিতে পাথর ও বালির পরিমাণ বেশি থাকায় অর্থকরী ফসল উৎপাদনে ঝুঁকি বেশি, লাভ সীমিত। এ কারণে চাষিরা লাভজনক উচ্চফলনশীল ফসল উৎপাদনের কৌশল খুঁজেছেন। এই তালিকায় শীত ও গ্রীষ্মকালীন সবজি, ভুট্টা ও কলার পাশাপাশি এখন বাদাম চাষে কৃষকরা ঝুঁকে পড়েছেন বেশি। উৎপাদনমুখী এই প্রতিযোগিতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এলাকার আর্থসামাজিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটেছে। পাশাপাশি সচ্ছলতাও ফিরেছে প্রান্তিক চাষিদের।
পঞ্চগড় জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে বছরের দুই মৌসুমে ব্যাপক আকারে চাষ হচ্ছে উচ্চফলনশীল বাদাম। বিশেষ করে জেলার দেবীগঞ্জ, বোদা ও সদর উপজেলায় এই বাদাম চাষ বর্তমানে কৃষিতে নতুন এক জোয়ার এনে দিয়েছে।
কৃষকরা বলছেন, বিঘাপ্রতি ছয় হাজার টাকা খরচ করে এক বিঘাতেই ১০ মণ বাদাম উৎপাদন সম্ভব। আকারে আকর্ষণীয় হওয়ার কারণে প্রতিমণ বাদামের পাইকারি মূল্য দুই হাজার পাঁচ শ টাকা। অল্প খরচে অধিক মুনাফার এই বাদম চাষিদের স্বাবলম্বী করে তুলছে। তবে সুষ্ঠু বাজারজাত, আর্থিক সহায়তা এবং সংরক্ষণ ব্যবস্থা না থাকায় কিছুটা হতাশ চাষিরা।
পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার বামনপাড়া গ্রামের বাদামচাষি আলাউদ্দিন বলেন, ‘এলাকায় মাটিতে বালি বেশি থাকায় বাদাম চাষ কৃষকদের জন্য উপযুক্ত। চাষিদের আর্থিক সহায়তা দিলে বাদাম চাষ এলাকার উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারে।’
শালডাঙ্গা ইউনিয়নের আরেক বাদামচাষি হরিপ্রসাদ বলেন, ‘সঠিক বীজের অভাবে ফলন কম হচ্ছে। চাষিদের সঠিক বীজসহ কৃষি সহায়তা দিলে আমাদের আগ্রহ বাড়বে।’
উৎপাদিত ফসলের সন্তোষজনক দাম এবং আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে চাষিদের সহায়তা করা গেলে পঞ্চগড়ের উৎপাদিত বাদাম এই অঞ্চলের কৃষি অর্থনীতিতে মাইলফলক হিসেবে কাজ করবে বলে মনে করছে কৃষি বিভাগ।
এদিকে, বিকল্প ফসল হিসেবে বাদাম চাষ করে চাষিরা যেমন সফলতা পাচ্ছেন, তেমনি এসব বাদাম প্রক্রিয়াজাত করতে এলাকায় গড়ে উঠেছে ২৫ থেকে ৩০টি বাদাম প্রক্রিয়াজাত কারখানা। ব্যক্তি মালিকানার এসব কারখানা থেকে প্রক্রিয়াজাতের পর সেই বাদাম চলে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন এলাকায়। আর এসব কারখানায় কাজের সুযোগ এলাকার নারী ও পুরুষদের বেকারত্বের অবসান ঘটাতে ভূমিকা রাখছে।
এমন একটি বাদাম কারখানায় কাজ করেন শরিফা খাতুন। তিনি জানান, সংসারের কাজ শেষ করে স্বামীর সঙ্গে বাদাম মিলে কাজ করেন। প্রতিদিন তিন শ টাকা আয় করেন। এই আয় তাদের সংসারের অভাব দূর করতে ভূমিকা রাখছে।
জেলার বাদাম কারখানার মালিকরা বলেছেন, সরকার স্বল্প সুদে ঋণের ব্যবস্থা করলে তারা আরও বড় পরিসরে কারখানার কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবেন। তাতে আরও বেশি শ্রমিকের কর্মসংস্থান তৈরি হবে।
দেবীগঞ্জের একটি বাদাম কারখানার মালিক আকতারুজ্জামান বলেন, ‘বাদাম কারখানার মালিকদের স্বল্প সুদে ঋণ দেয়ার বিষয়টি জেলার কৃষি সভায় একাধিকবার উত্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু কেউ এগিয়ে আসেননি। আর্থিক সহায়তা দিয়ে এই শিল্পকে এগিয়ে নিতে পারলে এ অঞ্চলের বাদাম চাষ জাতীয় অর্থনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করবে বলে আমরা আশাবাদী।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক মো. রিয়াজ উদ্দিন বলেন, ‘জেলায় এ বছর প্রায় ১৫ হাজার হেক্টর জমিতে বাদাম চাষ হয়েছে। বাদাম চাষে কৃষকরা আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। ফলে প্রতি বছরই চাষের পরিধি বাড়ছে।’
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রশাসনিক ভবনের চারতলার একটি ওয়ার্ডকে ডেঙ্গু ডেডিকেটেট ওয়ার্ড করা হয়েছে। সে ওয়ার্ডে শয্যা সংখ্যা ৪০টি। বর্তমানে সেখানে চিকিৎসাধীন আছে ৭৭ জন রোগী। যে কারনে ওয়ার্ডের বারান্দায় শয্যা পেতে আশ্রয় নিতে হয়েছে রোগীদের। শয্যার তুলনায় রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি থাকায় ভোগান্তিতে পড়ছে রোগীরা।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, এ বছরের জানুয়ারী থেকে গত আগস্ট মাস পর্যন্ত ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ছিল ১৫০ জন। আর পহেলা সেপ্টেম্বর থেকে রোববার পর্যন্ত ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ভর্তি হওয়া ডেঙ্গুরোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৫৬০ জন। অর্থাৎ দুই মাসে ডেঙ্গুরোগী ভর্তি হয়েছে ১৪১০ জন। আর সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী এ বছরে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ১২ জন। গত ২৪ ঘন্টায় ভর্তি হয়েছে ৪১ জন।
রোববার দুপুরে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডেঙ্গু ডেডিকেটেট ওয়ার্ডে দেখা যায়, শয্যার পাশাপাশি ওয়ার্ডের বারান্দাও রোগীতে ঠাসা। পাশাপাশি রোগীদের স্বজনারাও ভিড় করছেন হাসপাতালের ওয়ার্ড এবং বারান্দায়। একাধিক রোগীর স্বজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বেশি ভাগ রোগীই ঢাকা ও ঢাকার আশপাশের এলাকা থেকে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। আবারও ময়মনসিংহ নগরে বসবাস করা রোগীও আছে।
হাসপাতালের ডেঙ্গু ওয়ার্ডের পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, সম্প্রতি প্রতিদিনই বাড়ছে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। রোববার ডেঙ্গু ওয়ার্ডে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ছিল ৭৭ জন। এরমধ্যে পুরুষ রোগীর সংখ্যা ৬৪ জন। নারী রোগী ছিল ১৩ জন।
ডেঙ্গু ওয়ার্ডের সহকারী ফোকাল পারসন ও ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক ডা. মোস্তাফা ফয়সাল দৈনিক বাংলাকে বলেন, বিগত বছরগুলোতে কেবল ঢাকা ও ঢাকার আসপাশের এলাকা থেকে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীরা ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসত। ময়মনসিংহে বসবাসকারী রোগীর সংখ্যা ছিল খুবই কম। এ বছরই প্রথম ঢাকায় না গিয়ে ময়মনসিংহ থেকে চিকিৎসা নেওয়া ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। যে কারণে রোগীর চাপ বেশি। আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করছি চাপ সামলে রোগীদের যথাযথ চিকিৎসা দিতে।
ডা. মোস্তাফা ফয়সাল আরও জানান, এ বছর বৃষ্টি বেশি হওয়ায় ময়মনসিংহে মশা বেড়েছে। যে কারণে ময়মনসিংহে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা এখনো বাড়ছে। গত শনিবার এবং রোববারও ময়মনসিংহে বৃষ্টি হয়েছে। যে কারণে এখনো ডেঙ্গুরোগী বাড়ার শঙ্কা রয়েছে। এ অবস্থায় সচেতনতা খুবই জরুরি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ময়মনসিংহ নগরের বাউন্ডারী রোডে প্রথম ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সন্ধান মেলে। এরপর নগরের গুলকিবাড়ীসহ আরও কয়েকটি এলাকার বসবাসকারী মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। ময়মনসিংহে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সন্ধান পাওয়ার পর সিটি করাপোরেশনের পক্ষ থেকে কয়েকদিন মাইকিং করে নাগরিকদের সচেতন করা হয়। মাইকিংয়ের পাশাপাশি মশক নিধন কার্যক্রমের ওপর জোর দিচ্ছে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন।
ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের স্যানিটেশন কর্মকর্তা দীপক মজুমদার বলেন, সিটি করপোরেশন এলাকায় ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর বিষয়টি জানার পর ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন সচেতনতা কার্যক্রমের পাশাপাশি মশক নিধনের কাজ বাড়িয়ে দিয়েছে। পাশাপাশি নগরের বিভিন্ন এলাকায় নির্মাণাধীন ভবনে পানি জমে থাকার খবর পেয়ে বেশ কিছু এলাকায় অভিযান চালানো হয়েছে। নির্মাণাধীন বাড়িতে এডিস মশার লার্ভা পেয়ে জরিমানাও করা হয়েছে। তবে শেষ প্রায় এক সপ্তাহে কোথও এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যায়নি।
ময়মনসিংহের ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডা. ফয়সাল আহমেদ দৈনিক বাংলাকে জানান, ময়মনসিংহে অনেক ডেঙ্গুরোগী সনাক্ত হলেও পরিস্থিতি এখনো আমাদের নিয়ন্ত্রণে আছে। উপজেলাগুলোর তুলনায় ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন এলাকায় বেশি ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, চিকিৎসার পাশাপাশি সচেতনতা জরুরী। তবে সেপ্টেম্বর থেকে হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা একটু বেড়েছে।
রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান উপস্থাপিত ৩১ দফা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কুষ্টিয়া সদর-৩ আসনে লিফলেট বিতরণ, পথসভা ও র্যালি অনুষ্ঠিত হয়েছে। রবিবার বেলা সাড়ে ১১টায় কুষ্টিয়া পৌরসভা চত্বরে লিফলেট বিতরণ ও পথসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিএনপি’র জাতীয় নির্বাহী কমিটির স্থানীয় সরকার বিষয়ক সম্পাদক, কুষ্টিয়া-৩ (সদর) আসনের বারবার নির্বাচিত সাবেক সংসদ সদস্য,বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যক্ষ সোহরাব উদ্দিন।
পথসভায় বক্তব্য রাখেন, কুষ্টিয়া জেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি মিরাজুল ইসলাম রিন্টু, সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. আক্তারুজ্জামান কাজল মাজমাদার, সদর উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক মো. বশিউর আলম চাঁদ, জেলা যুবদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি মেজবাউর রহমান পিন্টু, সদর থানা বিএনপির সভাপতি মো. জাহিদুল ইসলাম বিপ্লব, পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কামাল উদ্দিন, পৌর বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন, কুষ্টিয়া চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক ফুহাদ রেজা ফাহিম ও জেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মোজাক্কির রহমান রাব্বি প্রমুখ।
লফিলটে বতিরণ ও র্যালী পূর্ব পথসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধ্যক্ষ সোহরাব উদ্দিন বলেন, জনগণের ভোটাধিকার, আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্যই বিএনপি ৩১ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। এই দফাগুলোর মূল লক্ষ্য হচ্ছে একটি গণতান্ত্রিক ও জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্র ব্যবস্থা গড়ে তোলা, যেখানে মানুষ নিরাপদে কথা বলতে পারবে, ন্যায়বিচার পাবে এবং তাদের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত হবে। তিনি আরও বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ঘোষিত রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের জন্য ৩১ দফা বাস্তবায়ন করতে পারলে বাংলাদেশ একটি সুখি সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে উঠবে। তাই এই ৩১ দফা দাবি জনগণের দোয়ারে দোয়ারে পৌঁছিয়ে দিতে হবে।
পথসভা শেষে কুষ্টিয়া পৌরসভা চত্বর থেকে একটি র্যালী বের হয়। র্যালীটি এন এস রোড় ঘুরে বড়বাজার রকশী গলির মোড়ে এসে শেষ হয়। র্যালিতে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের কয়েক হাজার নেতাকর্মী অংশ নেন।
বাংলাদেশে গ্রাম আদালত সক্রিয় করণ (৩য় পর্যায়) প্রকল্পের আওতায় নোয়াখালীতে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের ২দিন ব্যাপী ২য় ব্যাচে গ্রাম আদালত বিষয়ে প্রশিক্ষণ শুরু হয়েছে। গত শনিবার জেলা প্রশাসনের আয়োজনে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে এ প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত হয়।
প্রশিক্ষণে কোর্স ডিরেক্টর হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, জেলা প্রশাসক খন্দকার ইসতিয়াক আহমেদ এবং কোর্স কোর্ডিনেটর হিসেবে ছিলেন, উপপরিচালক (অ.দা.) মোহাম্মদ ইসমাইল।
এ সময় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের গ্রাম আদালতের উপর হাতে কলমে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। গ্রাম আদালত পরিচালনার উপর বড় পর্দায় নাটিকা প্রদর্শন করা হয়। প্রশিক্ষনে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানগণ গ্রাম আদালতের উপর একটি মক ট্রায়াল প্রদর্শন করেন।
প্রশিক্ষণ শেষে সমাপনী বক্তব্যে জেলা প্রশাসক ও কোর্স ডিরেক্টর খন্দকার ইসতিয়াক আহমেদ বলেন, গ্রামের বিরোধগুলো আপনারাই নিষ্পত্তি করে থাকেন। তবে সেই বিরোধগুলো যাতে গ্রাম আদালতের মাধ্যমেই নির্দিষ্ট নিয়ম অনুযায়ী সমাধা করা হয় সে দিকে লক্ষ রাখবেন। আপনাদের আন্তরিকতায় গ্রামের হতদরিদ্র মানুষগুলো অল্প সময়ে গ্রাম আদালতের সেবা নিতে পারবে। ছোটখোটো কোনো বিরোধ নিয়ে পক্ষরা যাতে থানা বা জেলা আদালতে না চলে যায় তার জন্য প্রত্যেক ইউনিয়ন পরিষদ থেকে গ্রাম আদালতের বিষয়ে প্রচার প্রচারণার ব্যবস্থাও করতে হবে। গ্রাম আদালতে গত ৬ মাসে মামলা গ্রহণে ১ম, ২য় এবং ৩য় স্থান অর্জনকারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের পুরস্কৃত করা হয়।
প্রশিক্ষণ পরিচালনায় সহযোগিতা করেন, ডিস্ট্রিক্ট ম্যানেজার মো. আহসান উল্লাহ চৌধুরী মামুন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন, বেগমগঞ্জ উপজেলা সমন্বয়কারী মো. নুরে আলম সিদ্দিক এবং চাটখিল উপজেলা সমন্বয়কারী রবিউল হাসান, প্রোগ্রাম এন্ড ফাইন্যান্স এসিস্ট্যান্ট ফয়েজ আহমেদ।
কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার পদ্মা নদীর দুর্গম চরাঞ্চল এবং ভারত সীমান্তঘেঁষা অঞ্চল দীর্ঘদিন ধরে অপরাধীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। সম্প্রতি পদ্মার চরে জমি দখলকে কেন্দ্র করে দুপক্ষের সংঘর্ষ এবং ঘণ্টাব্যাপী গোলাগুলিতে তিনজন নিহতের ঘটনায় নড়েচড়ে বসলেও প্রশাসন কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেনি। খোঁজ নিয়ে জানা যাচ্ছে, শুধু কাকন কিংবা মণ্ডল বাহিনী নয়; সাইদ, রাখি, কাইগি, রাজ্জাক ও বাহান্ন বাহিনীও সক্রিয় এই চরাঞ্চলে।
রাজনৈতিক আশ্রয়-প্রশ্রয়ে এসব বাহিনী জমি দখল, ফসল কেটে নেওয়া, চাঁদাবাজি, বালু উত্তোলন, মাদক, অস্ত্র পাচারসহ নানা অপরাধে জড়িত। স্থানীয়দের অভিযোগ, এসব বাহিনী পদ্মার এমন দুর্গম চরে ‘সাম্রাজ্য’ গড়ে তুলেছে, যেখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রবেশ একেবারে সীমিত। সম্প্রতি কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার পদ্মা নদীর দুর্গম চরে কাকন বাহিনী ও মণ্ডল গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষে উভয় পক্ষের তিনজন নিহত হন। এরপর নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন।
এ ঘটনার মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে প্রধান কাকনকে। এরপর গত বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত জেলা পুলিশের একাধিক ইউনিট শতাধিক সদস্য নিয়ে পদ্মার চরে সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করেছে। তবে প্রথম দিনের অভিযানে কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। প্রশাসন জানিয়েছে, অভিযান অব্যাহত থাকবে।
জানা গেছে, দৌলতপুরের পদ্মা চরাঞ্চলে দীর্ঘদিন ধরে ডজনখানেক সন্ত্রাসী গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। তবে ২০ বছর আগে দুটি সন্ত্রাসী বাহিনীর উত্থান ঘটেছিল বিস্তৃত পদ্মার দুর্গম এই চরাঞ্চলে। তাদের ভাগ না দিয়ে কেউ চরের ফসল ঘরে তুলতে পারত না। এ নিয়ে দ্বন্দ্বে তাদের হাতে ওই সময় ৪১ জন খুন হয় বলে সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়।
সূত্র জানায়, এ বছরের জুন থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ‘কাকন বাহিনী’র বিরুদ্ধে ঈশ্বরদী, বাঘা, লালপুর ও দৌলতপুর থানায় মোট ছয়টি মামলা হয়েছে। বাহিনীর প্রধান কাকন পাবনার ঈশ্বরদী কলেজ রোডের বাসিন্দা হলেও তার পৈতৃক নিবাস কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের মরিচা ইউনিয়নের মাজদিয়াড় গ্রামে।
১৯৯৪ সালে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে বিএসসি ডিগ্রি অর্জনের পর তিনি চাকরি করলেও ২০০৫ সালে পান্না নিহত হওয়ার পর ২০০৭ সালে সৌদি আরব থেকে ফিরে এসে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতাদের ছত্রচ্ছায়ায় বালুমহাল দখল ও নিয়ন্ত্রণ শুরু করেন।
গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর উপজেলার ফিলিপনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নইম উদ্দিন সেন্টুকে নিজ কার্যালয়ে গুলি করে হত্যার ঘটনায় আলোচনায় আসে টুকু বাহিনী। বাহিনীর প্রধান তরিকুল ইসলাম ওরফে টুকু ফিলিপনগর গ্রামের বাসিন্দা।
একাধিক গোয়েন্দা সূত্র বলছে, ৫ আগস্টের পর দৌলতপুর সীমান্ত দিয়ে বিপুল অস্ত্র দেশে ঢোকার তথ্য রয়েছে। জানা গেছে, তিন চালানে মোট প্রায় ২ হাজার আগ্নেয়াস্ত্র এসেছে দেশে।
গত বৃহস্পতিবার কুষ্টিয়া জেলা পুলিশ ১২০ জন সদস্য নিয়ে সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ৭টা পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। তবে পুলিশ এই অভিযানে চরবাসী খুবই খুশি। এতে জনমনে স্বস্তি ফিরবে বলে তারা আশা করছেন সেখানকার বাসিন্দারা।
এ বিষয়ে কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) ফয়সাল মাহমুদ বলেন, ‘এই অভিযান রাতেও চলবে। অভিযান শেষ হবে না। এটা যে শুধু আসামি ধরা, তা নয়। মানুষকে আশ্বস্ত করা হচ্ছে, সন্ত্রাসীদের আশ্রয় এই চরগুলোতে আর হবে না।’
কারোর কাছে হাত পেতে নয়, নিজের পরিশ্রমেই জীবন যাপন। দুপা হারিয়েও হার মানেননি মেহেরপুরের গাংনীর ঠান্ডু মিয়া। জীবনের সঙ্গে এক অনন্য সংগ্রামের নাম ‘ঠাণ্ডু মিয়া’। গাংনী উপজেলার জুগিরগোফা স্কুলপাড়া এলাকার মৃত ইসমাইলের ছেলে ঠাণ্ডু মিয়া। ২০০০ সালে এক ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় হারান তার ডান পা। তারপরও থামেননি, জীবন চলেছে কোনোভাবে।
এক বছর তার চিকিৎসা চলছিল। তারপর আসে করোনা। চিকিৎসার অভাবে আক্রান্ত হয় অন্য পাটিও। অবশেষে ২০২৪ সালে সেটিও কেটে ফেলতে হয়। এরপর একজন পরিশ্রমী কৃষক, হঠাৎই হয়ে পড়েন কর্মহীন ও অসহায়। নিজ হাতে তৈরি করেছেন বিশেষ ভ্যান। এই ভ্যানই এখন তার জীবনযাত্রার একমাত্র ভরসা।
প্রতিদিন সকালে বের হন বাদাম নিয়ে গাংনী, বামন্দী, আলমডাঙ্গা কিংবা হাটবোয়ালিয়া যেখানেই যান, সঙ্গে থাকে জীবনের আশ্চর্য এক উদ্যম। প্রতিদিন বাদাম বিক্রি করে সাত আট শ টাকা বিক্রি করে আড়াই থেকে তিন শত টাকার মতো লাভ হয়। সেই টাকায় চলে পরিবারের নিত্যপ্রয়োজন।
ঠাণ্ডু মিয়া বলেন, ‘দুই পা নাই... কিন্তু আমি কারো কাছে হাত পাততে চাই না। আমি বাদাম বিক্রি করি। আল্লাহ যা দেন তাই খাই।’
ঠাণ্ডুs মিয়ার স্ত্রী শাহানারা খাতুন বলেন, আমাদের এক সময় ভালো অবস্থা ছিল। চাষাবাদ ও মুনিশপাট খাইটি ভালই চলতো। এক্সিডেন্টে আমার স্বামীর পা হারিয়ে অসহায় হয়ে পড়েছি। তারপরেও থেমে নেই আমাদের জীবন। বাদাম বিক্রি করে যে টাকা আয় হয় তাই দিয়েই সংসার চলে। ‘আমি প্রতিদিন বাদাম ভেজে রেডি করে দিই। যা আয় হয় তাই দিয়ে সংসার চলে।’
স্কুল শিক্ষক আব্দুস সালাম বলেন, ‘মানুষটার মনটা অনেক বড়। ও কারো কাছে চায় না, নিজের পরিশ্রমে খায়। আমরা চেষ্টা করি বাদাম কিনে একটু সাহায্য করতে।’ দু’পা নেই—তবুও তিনি থেমে যাননি। মানুষের অঙ্গ হারালেও, হারায় না মনোবল। ঠাণ্ডু মিয়া যেন তার প্রমাণ।
যশোরের কেশবপুরে বাণিজ্যিকভাবে ড্রাগন ফল চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন কলেজপড়ুয়া শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান রাজু। এ পর্যন্ত প্রায় ১২ লাখ টাকার ড্রাগন ফল বিক্রনয় করেছেন তিনি। অন্যের কাছে থেকে সাড়ে ৩ বিঘা জমি হারি নিয়ে এ ড্রাগন ফলের চাষ করেছেন। কেশবপুর পৌর শহরের ভোগতী নরেন্দ্রপুরের আবদুল লতিফের ছোট ছেলে যশোর সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজের (এমএম কলেজ) রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে স্নাতক শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী ২৬ বছর বয়স্ক মেহেদী হাসান রাজু।
সরেজমিন গেলে মেহেদী হাসান রাজু বলেন, তিনি যশোরের কালিগঞ্জ থেকে ৪ হাজার ড্রাগন ফলের চারা এনে পরিবারের সহযোগিতায় ২০২২ সালের জানুয়ারি মাস থেকে সাড়ে ৩ জমিতে চারা রোপণ করা শুরু করেন। যশোর-চুকনগর সড়কের পাশে উপজেলার আলতাপোল (তেইশ মাইল) গ্রামে গড়ে তোলেন তার এই ড্রাগন বাগান। ১ হাজার সিমেন্টের তৈরি করা খুঁটির সঙ্গে টায়ার ও রড ব্যবহার করে তার চারপাশ দিয়ে লাগিয়েছেন প্রায় ৪ হাজার ড্রাগন ফলের গাছ। ২০২২ সালের জুন মাসে প্রাথমিকভাবে কিছু ফল পেলেও এবার বাণিজ্যিকভাবে তিনি ড্রাগন বিক্রি শুরু করছেন। এ বছরের এপ্রিল থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত কোনো কোনো খুঁটিতে লাগানো গাছ থেকে ২০ কেজি ফলও পেয়েছেন। চলতি মৌসুমে প্রায় ১৫ লাখ টাকার ফল বিক্রি করেছেন তিনি। কেশবপুর পৌর শহরে বর্তমানে অধিকাংশ ফলের দোকানে রাজুর বাগানের ড্রাগন ফল বিক্রি হচ্ছে।
স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে এই সব ড্রাগন ফল পৌছে যাচ্ছে যশোর, খুলনা, সাতক্ষীরা, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহরে চলতি মৌসুমে প্রায় ৩০ লাখ টাকার ড্রাগন ফল বিক্রির আশা রয়েছে রাজুর। নিজে উদ্যোক্তা হওয়ার পাশাপাশি তিনি সৃষ্টি করেছেন ৫/৬ জনের কর্মসংস্থান। পরিবারের আর্থিক সহায়তার মাধ্যমে জমি হারি (লিজ) নিয়ে পড়ালেখার ফাঁকে এ ড্রাগন ফলের বাগানটি করছে সে। এর পেছনে প্রায় ১০-১২ লাখ টাকার মতো খরচ হয়েছে। বাগানে ৩ থেকে ৪ ধরনের ড্রাগন ফলের জাত রয়েছে। এসব বাগানের গাছে গাছে শোভা পাচ্ছে হাজারো হলুদ ও লাল রঙের ফল। পড়াশোনার ফাঁকে নিজেকে একজন প্রতিষ্ঠিত কৃষি উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে তার এ পরিশ্রম। আকার ভেদে একটি ফলের ওজন পেয়েছেন ৩০০ গ্রাম থেকে ৬০০ গ্রাম। বর্তমানে প্রতি কেজি ড্রাগন পাইকারি ১০০ থেকে ১৫০ টাকা দরে বিক্রি করছেন হচ্ছে। মৌসুমের শুরুতে প্রতি কেজি ফল ১৫০ টাকা পর্যন্ত দাম পেয়েছিলেন। মাত্র তিন বছরের ব্যবধানে প্রথমবারেই ফল বিক্রি করে তার মূলধন উঠেছে অনেক। চলতি মৌসুমে প্রায় ৩০ লাখ টাকার ড্রাগন ফল বিক্রির আশা রয়েছে তার। খরচ বাদে ৫ থেকে ৬ লাখ টাকা লাভের আশা করছেন তিনি। মেহেদী হাসান রাজু বলেন, কোনো ধরনের ক্ষতিকারক উপাদান না দিয়ে বাগানের ড্রাগন ফল পাকানো হয়। সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক নিয়মেই ফল পাকলে গাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়। সড়কের পাশে বাগানটি হওয়ায় বিভিন্ন এলাকার মানুষ দেখতে আসেন। বাগানের পাশে কোনো দরিদ্র ও অসহায় মানুষ এলে তাদের বিনা মূল্যে ফল খাওয়ান তিনি।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করে রাজু বলেন, পড়াশোনা শেষে চাকরির পেছনে যেন ছুটতে না হয়। এ জন্য আগেভাগেই নিজেকে কৃষি উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলছেন। একজন সফল কৃষি উদ্যোক্তা হয়ে নিজে স্বাবলম্বী হওয়াই তার স্বপ্ন। রাজুর বাগানে নিয়মিত ৫-৬ জন শ্রমিক ড্রাগন বাগানে পরিচর্যার কাজ করে থাকেন। তাদের প্রতি মাসে ৯ হাজার টাকা করে মজুরি দেওয়া হয়।
বাগানে কাজ করার সময় আলতাপোল গ্রামের মোনতাজ সরদার (৬২) বলেন, ম্যানেজার হিসেবে ড্রাগন বাগান দেখভাল করেন তিনি। ভোরবেলায় বাগানে এসে ড্রাগন ফুলের পরাগায়ন ঘটাতে সাহায্য ও বাগান পরিচর্যা করা, ফল পাড়াসহ সেগুলো বাজারজাত করার কাজ করেন। শ্রমিক আবদুর রশিদ (৫৪) বলেন, প্রতিদিন ৪০০ টাকা মজুরিতে ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত এ বাগানে কাজ করেন। এই বাগানের ফলের ভেতর থাকলে তার মনটাও আনন্দে থাকে। পরিবার নিয়ে তিনি ভালোই রয়েছেন।
কেশবপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ড্রাগন বাগান আমি দেখেছি, সে আমাদের কাছে যে কোনো পরামর্শ চাইলে অবশ্য তাকে পরামর্শ দেওয়া হবে।
দুই উপজেলার ৭ গ্রামের প্রায় ২০ হাজার মানুষ প্রতিদিনের যাতায়াতে বিপাকে পড়েছেন একটি ঝুঁকিপূর্ণ সেতুর কারণে। সেতুটি দাউদকান্দি সদর উত্তর ইউনিয়নের গোলাপেরচর গ্রামে গোমতীর শাখা খালের উপর অবস্থিত। প্রায় ৩০ বছর আগে নির্মিত এই সেতুর মাঝের অংশ ডেবে গেছে, ওপরের পিলারগুলোতে ফাটল দেখা দিয়েছে। রেলিংয়ের পলেস্তারা খসে পড়ছে এবং মরিচা ধরা রড বের হয়ে আসছে।
স্থানীয়রা শতাধিক বাঁশের খুঁটি গেড়ে সেতুটি রক্ষার চেষ্টা করছেন। তবে এর ফলে অটোরিকশাসহ ভারী যানবাহন সেতুর ওপর দিয়ে চলাচল করতে পারছে না। ফলে যাত্রীদের নেমে অন্য পাড়ে অটোরিকশা বদলাতে হচ্ছে। প্রতিদিন গোলাপেরচর, চেঙ্গাকান্দি, গঙ্গাপ্রসাদ ও মেঘনার চরকাঠালিয়া, শেখেরগাও, লক্ষীপুর ও সাতঘরিয়াকান্দি গ্রামের প্রায় ১০-১৫ হাজার মানুষ এই সড়ক ব্যবহার করে।
নিত্যপণ্য এবং ভারী মালামাল সেতুর কারণে সরাসরি পরিবহন সম্ভব নয়। এক পাড়া থেকে অন্য পাড়ায় যেতে গিয়ে বারবার অটোরিকশা পরিবর্তন করতে হয়, যা সময় ও খরচ বাড়াচ্ছে। স্থানীয়রা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট নতুন সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন।
চেঙ্গাকান্দি গ্রামের গ্রামের শাহ আলম বলেন, আমরা সেতুটি রক্ষায় বাঁশের খুটি লাগিয়েছি। এই সেতুটি ভেঙে পড়লে আমাদের যাতায়াতের জন্য অনেক ক্ষতি হবে। সরকারি পর্যায়ে নতুন সেতু নির্মাণ করা হোক।
একই গ্রামের সবুজ সরকার বলেন, কৃষি প্রধান অঞ্চল হওয়ায় সেতুর জন্য কৃষি পণ্য পরিবহনে অনেক সমস্যা হচ্ছে। তিনি সংশ্লিষ্টদের যত দ্রুত সম্ভব সেতু মেরামত করে ঝুঁকি ছাড়া সেতু দিয়ে চলাচল উপযোগী করার আহ্বান জানান।
উপজেলা প্রকৌশলী জাহিদুল ইসলাম ঝুঁকিপূর্ণ সেতুটি সবাইকে ব্যবহার না করার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ৩০ বছর আগে এই সেতু নির্মাণ করে এলজিইডি। দৈর্ঘ্য ৪০ মিটার ও প্রস্থ ৩ মিটার হওয়া সত্ত্বেও বহু বছর আগে কর্তৃপক্ষ এটি ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করেছে। বিষয়টি উর্ধ্বতন মহলে অবহিত করা হয়েছে। বরাদ্দ পেলে কাজ শুরু করা হবে বলে জানান তিনি।
কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার প্রায় ২০০ বছরের প্রাচীন দক্ষিণ হ্নীলা (নীলা) বড় বৌদ্ধ বিহারটি দীর্ঘদিন দখলে থাকার পর অবশেষে উদ্ধার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। উপজেলা প্রশাসন ইতোমধ্যে কিছু অংশ উচ্ছেদ করে বিহার কর্তৃপক্ষের কাছে বুঝিয়ে দিয়েছে। রবিবার বিহারটি পরিদর্শন করেন ধর্ম মন্ত্রণালয়ের বৌদ্ধ কল্যাণ ট্রাস্টের ভাইস চেয়ারম্যান ভবেশ চাকমা, ট্রাস্টের সদস্য মংহ্লাচিং, আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক মংথেনহ্লা রাখাইন, হ্নীলা বৌদ্ধ বিহারের সভাপতি ক্যজঅংসহ স্থানীয় বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা।
পরিদর্শন শেষে বৌদ্ধ কল্যাণ ট্রাস্টের ভাইস চেয়ারম্যান ভবেশ চাকমা বলেন, ‘স্বাধীনতার পর এটি দেশের অন্যতম প্রাচীন বৌদ্ধ বিহার। রামু বৌদ্ধ মন্দিরে হামলার আগেই একটি গোষ্ঠী এই বিহার দখল করে নেয়। তারা বিহারের জমি দখল করে ঘর তৈরি করে ভাড়া দিত। দীর্ঘ আন্দোলন ও সংবাদমাধ্যমের সহযোগিতায় অবশেষে প্রশাসন কিছু অংশ উচ্ছেদ করেছে। আমরা চাই অবশিষ্ট অংশও দ্রুত উদ্ধার হোক, যাতে এখানকার বৌদ্ধরা আবারও স্বাধীনভাবে ধর্মীয় অনুশীলন করতে পারেন।
বিহার কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, দীর্ঘ ১২ বছরেরও বেশি সময় ধরে কক্সবাজার-৪ (উখিয়া-টেকনাফ) আসনের প্রয়াত সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা অধ্যাপক মোহাম্মদ আলীর পরিবার অবৈধভাবে জমি দখল করে রেখেছে। আদালতের রায় বিহারের পক্ষে থাকলেও এতদিন তা কার্যকর হয়নি। সংবাদমাধ্যমে একাধিক প্রতিবেদনের পর সম্প্রতি প্রশাসন আংশিক উচ্ছেদ অভিযান চালিয়েছে।
জানা যায়, প্রায় ১৫ বছর পর ঐতিহ্যবাহী এই বৌদ্ধ বিহারের জমি উদ্ধারের প্রথম ধাপ শুরু হয়েছে। একসময় হ্নীলা ইউনিয়নের ক্যাংপাড়ায় বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের প্রাণকেন্দ্র ছিল এই বড় ক্যাং বা বিহার। কিন্তু গত ১৪ বছরে দখলদারদের দৌরাত্ম্যে বিহার এলাকা প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। এ সময় বিহারের পাশের শ্মশান পাহাড় কেটে নিচু জায়গা ভরাট করে সেখানে মহিলা উদ্যোক্তা বাজার, আইওএম অফিস ও বাঁশের গুদাম নির্মাণ করা হয়। বিহারের ভিক্ষু ও উপাসকদের ওপর নির্যাতনের ঘটনাও ঘটে।
বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের নেতারা বলেন, উপজেলা প্রশাসন যদি আরও আন্তরিক হয়, তাহলে দ্রুতই সম্পূর্ণ বিহার এলাকা দখলমুক্ত করে পুনরায় ধর্মীয় কার্যক্রম চালু করা সম্ভব হবে।
টাঙ্গাইলের সখীপুর আবাসিক মহিলা কলেজে ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষের মেধাভিত্তিক ছাত্রী সংসদের পূর্ণাঙ্গ কমিটির নাম ঘোষণা করা হয়েছে।
রবিবার সকালে কলেজের অধ্যক্ষ এম এ রউফ তার কার্যালয়ে নির্বাচিত সদস্যদের নাম ঘোষণা করেন। পরে তিনি নবনির্বাচিত সদস্যদের হাতে গোলাপ ফুল তুলে দিয়ে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান।
ঘোষিত কমিটিতে ভিপি (সহসভাপতি) হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান তিথী, জিএস (সাধারণ সম্পাদক) জয়ন্তী মণ্ডল, এজিএস (সহকারী সাধারণ সম্পাদক) আয়েশা সিদ্দিকা ঐশী, ক্রীড়া সম্পাদক জান্নাতুল ফেরদৌস, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক মৌমিতা এবং মিলনায়তন সম্পাদক সোনিয়া। পদাধিকারবলে ছাত্রী সংসদের সভাপতি কলেজের অধ্যক্ষ এম এ রউফ।
কলেজ সূত্রে জানা যায়, গত ৩০ বছর ধরে সখীপুর আবাসিক মহিলা কলেজে চালু রয়েছে এই ব্যতিক্রমী মেধাভিত্তিক ছাত্রী সংসদ। রাজনীতি বা প্রভাব নয়, এখানে মেধাই নেতৃত্ব নির্ধারণ করে। সংসদের ৬টি পদে চার ধাপে নির্বাচন হয়। প্রথম ধাপে বার্ষিক ক্রীড়া, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার মাধ্যমে ৩টি পদে নির্বাচন হয়। বাকি তিন ধাপে ভিপি, জিএস ও এজিএস নির্বাচিত হন সংশ্লিষ্ট পরীক্ষায় সর্বোচ্চ নম্বর অর্জনের মাধ্যমে।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে সম্মান শ্রেণির প্রথম সেমিস্টার পরীক্ষায় সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে দ্বিতীয় বর্ষে উত্তীর্ণ হওয়ায় নুসরাত জাহান তিথী ভিপি নির্বাচিত হন। একইভাবে স্নাতক (পাস) প্রথম বর্ষ থেকে দ্বিতীয় বর্ষে উত্তীর্ণ সর্বোচ্চ নম্বর পাওয়ায় জয়ন্তী মণ্ডল জিএস এবং উচ্চমাধ্যমিক প্রথম বর্ষ থেকে দ্বিতীয় বর্ষে উত্তীর্ণ সর্বোচ্চ নম্বর পাওয়ায় আয়েশা সিদ্দিকা ঐশী এজিএস নির্বাচিত হন।
এছাড়া কলেজের বার্ষিক ক্রীড়া, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় ক্রীড়ার ক্ষেত্রে সেরা হওয়ায় জান্নাতুল ফেরদৌস ক্রীড়া সম্পাদক, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে সেরা হওয়ায় মৌমিতা সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক এবং আন্তঃক্রীড়া প্রতিযোগিতায় সেরা হওয়ায় সোনিয়া মিলনায়তন সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন।
নবনির্বাচিত ভিপি নুসরাত জাহান তিথী বলেন, পরীক্ষায় প্রথম হয়ে ভিপি হওয়ার আনন্দ অন্যরকম। আমরা সবাই মিলে কলেজের ভাবমূর্তি রক্ষা, বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ ও কলেজগামী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা সচেতনতায় কাজ করতে চাই।
কলেজের অধ্যক্ষ ও ছাত্রী সংসদের সভাপতি এম এ রউফ বলেন, সখীপুর আবাসিক মহিলা কলেজ সম্পূর্ণ রাজনীতিমুক্ত প্রতিষ্ঠান। এখানে কোনো রাজনৈতিক দলের প্রভাব বা বাহুবলের স্থান নেই। মেধার মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্বাচন আমাদের গর্বের বিষয়। এ ধরনের মেধাভিত্তিক ছাত্রী সংসদ দেশের অন্য কোনো কলেজে নেই বললেই চলে।
দীর্ঘ সাত মাস বন্ধ থাকার পর চট্টগ্রামের আনোয়ারায় অবস্থিত রাষ্ট্রায়ত্ত চট্টগ্রাম ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেডে (সিইউএফএল) আবারও ইউরিয়া সার উৎপাদন শুরু হয়েছে। গ্যাস সংকটের কারণে কারখানাটি বন্ধ থাকায় দৈনিক প্রায় ৩ কোটি টাকার সার উৎপাদন ব্যাহত হয়েছিল। রবিবার রাত সাড়ে ৩টা থেকে সিইউএফএলে ইউরিয়া উৎপাদন পুনরায় শুরু হয় বলে নিশ্চিত করেছেন কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মিজানুর রহমান।
সিইউএফএল সূত্র জানায়, গত ১১ এপ্রিল থেকে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (কেডিসিএল) কারখানাটিতে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। এতে কারখানার উৎপাদন পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। পরে গত ১৯ অক্টোবর থেকে গ্যাস সরবরাহ পুনরায় চালু হয়। যান্ত্রিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পর রবিবার রাত থেকে উৎপাদন শুরু হয়।
গ্যাসনির্ভর এই কারখানায় পূর্ণমাত্রায় উৎপাদনের জন্য দৈনিক ৪৮ থেকে ৫২ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের প্রয়োজন হয়। গ্যাস–সংকট ও যান্ত্রিক জটিলতার কারণে গত অর্থবছরে সিইউএফএল প্রায় আড়াই লাখ মেট্রিক টন ইউরিয়া সার উৎপাদন করতে সক্ষম হয়।
বাংলাদেশে বছরে প্রায় ২৬ লাখ মেট্রিক টন ইউরিয়া সারের চাহিদা রয়েছে। এর মধ্যে সিইউএফএলসহ বিসিআইসির অন্যান্য কারখানাগুলো মিলিয়ে প্রায় ১০ লাখ মেট্রিক টন ইউরিয়া উৎপাদন করা হয়। বাকি ১৬ লাখ মেট্রিক টন সার উচ্চমূল্যে আমদানি করতে হয় সরকারকে।
১৯৮৭ সালের ২৯ অক্টোবর জাপানের কারিগরি সহায়তায় কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ তীরে আনোয়ারা উপজেলার রাঙ্গাদিয়ায় এই সার কারখানাটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। কারখানার প্রাথমিক উৎপাদনক্ষমতা ছিল দৈনিক ১ হাজার ৭০০ মেট্রিক টন ইউরিয়া, যা বর্তমানে দৈনিক ১ হাজার ২০০ মেট্রিক টন। এছাড়া বার্ষিক প্রায় ৩ লাখ ১০ হাজার মেট্রিক টন অ্যামোনিয়া উৎপাদন করতে পারে সিইউএফএল।
সিইউএফএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিজানুর রহমান বলেন, গত ১৯ অক্টোবর থেকে গ্যাস সরবরাহ পাওয়া গেছে। এখন পূর্ণমাত্রায় উৎপাদন চলছে। গ্যাস সরবরাহ অব্যাহত থাকলে এবং যান্ত্রিক ত্রুটি না দেখা দিলে এ ধারা বজায় থাকবে।
পঞ্চগড়ের আটোয়ারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. আরিফুজ্জামানকে বিদায়ী সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে। উপজেলা অফিসার্স ক্লাবের আয়োজনে উপজেলা পরিষদ সম্মেলন কক্ষে এ বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত হয়। অফিসার্স ক্লাবের সহসভাপতি ও উপজেলা কৃষি অফিসার মোস্তাক আহমেদ এর সভাপতিত্বে এবং উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার লুৎফুল কবির মো. কামরুল হাসানের সঞ্চালনায় বিদায়ী ইউএনওর আটোয়ারীতে ৬ মাস কর্মকালের স্মৃতিচারণসহ নিজস্ব অনুভুতি ব্যক্ত করে বক্তব্য রাখেন, অফিসার্স ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা স্বাস্থ্য ও প. প. কর্মকর্তা ডা. মো. হুমায়ুন কবীর, আটোয়ারী থানার ওসি মো. রফিকুল ইসলাম সরকার (জুয়েল), অফিসার্স ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) মো. ফয়সাল, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. মাসুদ হাসান, উপজেলা সমবায় অফিসার মো. ফারুক হোসেন, উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা করুনা কান্ত রায়, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (অ.দা.) জিয়াউর রহমান, উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি মো. ইউসুফ আলী প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, ইউএনও মো. আরিফুজ্জামান একজন সৎ ও দক্ষ কর্মী, তিনি কাজের প্রতি খুবই আন্তরিক। তিনি শুধু জনপ্রতিনিধিদের সাথে নয় সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে আন্তরিকভাবে সুন্দর আচরণের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় সেবা দিচ্ছিলেন।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি বিদায়ী ইউএনও মো. আরিফুজ্জামান বলেন, উত্তরবঙ্গের মধ্যে আটোয়ারীর মানুষ অত্যান্ত সহজ সরল। এখানকার মানুষ খুবই আন্তরিক। ভালো থাকুক আটোয়ারী উপজেলার প্রতিটি মানুষ। আটোয়ারীতে আমার সংক্ষিপ্ত কর্মকালে সেরা ভালোবাসা পেয়েছি সবার কাছ থেকে। তিনি বলেন, দায়িত্ব পালনকালে সবাই যেভাবে সহযোগিতা করেছেন সে কারণে সকলের প্রতি কৃতজ্ঞ। তিনি সবার কাছে দোয়া কামনা করেন। পরে অফিসার্স ক্লাব ও ইউপি চেয়ারম্যানদের পক্ষ থেকে পৃথক পৃথকভাবে তাকে সম্মাননা ক্রেস্টসহ বিভিন্ন উপহার সামগ্রী প্রদান করা হয়। বিদায় অনুষ্ঠানে উপজেলা পরিষদ ও প্রশাসনের সকল দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী, জনপ্রতিনিধিসহ গণমাধ্যমকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
জামালপুরের সরিষাবাড়ীর ৩ নদীতে অবাধে চলছে নিষিদ্ধ ও অবৈধ চায়না দোয়ারি জাল দিয়ে মাছ নিধন। এ উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহমান যমুনা, ঝিনাই ও সুবর্ণখালী নদীগুলোতে অবাধে দিনে-রাত চলছে চায়না দোয়ারি জালের ব্যবহার। এছাড়াও নদীগুলোর বিভিন্ন স্থানে রাতের আঁধারে ইলেক্ট্রিক বা কারেন্ট শর্ক দিয়ে ধরা হচ্ছে ছোট-বড় মাছ। ফলে হুমকির মুখে হারাতে বসেছে নদীর ঐতিহ্য ও জীববৈচিত্র। দ্রুত নদীর মাছ ও জীববৈচিত্র রক্ষায় এসকল অবৈধ ফাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার দাবি সচেতন মহলের।
জানা যায়, এ উপজেলার মধ্য দিয়ে বহমান যমুনা, ঝিনাই ও সুবর্ণখালী নদীগুলোতে অবৈধ ও নিষিদ্ধ চায়না দোয়ারিসহ বিভিন্ন জালদিয়ে অবাদে চলছে মাছ নিধন। প্রকাশ্যে দিনের আলোয় এমন অবৈধ উপায়ে মাছ নিধন করলেও দেখার কেউ নেই। প্রশাসন ও মৎস্য অফিসের তদারকি ও সচেতনতার অভাবে একাধিক সংঘবদ্ধ চক্র প্রতিদিন হাজার হাজার চায়না বিভিন্ন জালের ফাঁদ পেতে ধরছে সকল প্রজাতির ছোট-বড় মাছ। এসব জালের প্রতিটির দৈর্ঘ্য প্রায় ৫০ থেকে ১০০ ফুট হয়ে থাকে। এদিকে নদীগুলোতে রাতের আঁধারে ইলেক্ট্রিক শর্ক দিয়ে ধরা হচ্ছে মাছ। নৌকায় করে বিশেষ পদ্ধতিতে বানানো ইলেক্ট্রিক শকদেয়া বড় বড় ব্যাটারি ও লোহার রড নিয়ে মাঝ নদীতে মাছ ধরতে চলে যায় অসাধু মাছ শিকারীরা। নদীর তীরগুলোতে গিয়ে দাঁড়ালেই চোখে পড়ে নদীর বুক জুড়ে হাজার হাজার বাঁশের খুঁটি। প্রতিটা খুঁটি যেন একেকটা চায়না জালের ফাঁদ। যার কবলে পড়ে নদী মাছশূন্য হয়ে পড়ছে। হারাতে বসেছে তার ঐতিহ্য ও জীববৈচিত্র। আবার এসব চায়না জালে মাছের পাশাপাশি কাঁকড়া, শামুক, উপকারী পোকাসহ অধিকাংশ জলজ প্রাণি আটকা পড়ছে। ফলে নদীতে মাছ শূন্যতার পাশাপাশি জলজ প্রাণিও শূন্য হচ্ছে। প্রতিদিন বিকেলে ও সকালে এসব চায়না জাল নদীর পানিতে খুটির সাথে বেঁধে রাখা হয়। পরদিন ভোরে এসব জাল তুলে মাছ নিয়ে আবার সেগুলো নদীর পাড়েই রোদে শুকাতে দেওয়া হয়।
একাধিক স্থানীয়রা জানান, নদীতে নতুন পানির আগমনের সাথে সাথেই পানিতে জন্ম নেয় মাছের রেণু। একটি চক্র নদী থেকে এসব রেনু নিধন করে তা বাজারে বিক্রি করছে। এমনকি মাছের ছোট ছোট বাচ্চা তুলেও বিভিন্ন হাট-বাজারে বিক্রি করছে এই চক্র। রাতদিন নদীতে নৌকা ও রেনু নিধনের জাল নিয়ে অবাধে চলাফেরা করছে।
স্থানীয়দের মতে, এই চায়না বিভিন্ন জাল নিধন না করা হলে ভবিষ্যতে নদীতে পানি ছাড়া আর কিছু থাকবে না। উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের মধ্যদিয়ে প্রবাহিত তিনটি নদীতে চায়না জালের ফাঁদ পেতে নিয়মবহির্ভূতভাবে অবাধে মাছ নিধন করা হচ্ছে।
সরিষাবাড়ী উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা দেবযানী ভৌমিক বলেন, চায়না জাল গুলো খুবই মারাত্মক একটি জাল। এটাতে ছোট বড় মাছ ও রেনু পর্যন্ত ধরা পড়ে। যা নদীগুলোর জন্য হুমকি। আমরা যথেষ্ট চেষ্টা করছি এইসব অবৈধ চায়না জাল বন্ধ করতে। ইতোমধ্যে আমরা নদীর একাধিক স্থানে ও জালের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অভিযান ও মোবাইল কোর্ডও পরিচালনা করেছি। অনেক জাল পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
ঝিনাইদহে এক দুর্নীতিগ্রস্ত ইউএনও পদায়ন ও সরকারি কর্মকর্তাদের দুর্নীতি-অনিয়মের বিরুদ্ধে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। রোববার সকালে ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে এ কর্মসূচির আয়োজন করে ফ্যাসিবাদ বিরোধী ছাত্র ঐক্য। এতে ব্যানার ফেস্টুন নিয়ে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক নেতৃবৃন্দ, ইসলামী ছাত্রশিবির, ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা অংশ নেয়।
ঘন্টাব্যাপী চলা এই কর্মসূচিতে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঝিনাইদহ জেলা শাখার সাবেক আহ্বায়ক আবু হুরাইরা, সদস্য সচিব সাইদুর রহমান, ইসলামী ছাত্রশিবির শহর শাখার সাধারণ সম্পাদক মাসুদ পারভেজ, ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের সহ-সভাপতি এম আব্দুর রহমান, কেসি কলেজ শিবিরের সভাপতি মাহবুবুর রহমানসহ অন্যান্যরা বক্তব্য রাখেন।
এ সময় বক্তারা বলেন, ছাত্র-জনতার বিপক্ষে অবস্থান নেওয়া, দুর্নীতি ও চাঁদাবাজির অভিযোগে অভিযুক্ত বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুদীপ্ত কুমার সিংককে ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ডুতে বদলি করা হয়েছে। এতে আপত্তি জানিয়ে বক্তারা বলেন, স্বৈরাচারের দোসর ও দুর্নীতিবাজ কোনো কর্মকর্তাকে ঝিনাইদহে যোগদান করতে দেওয়া হবে না। এছাড়াও সরকারি দপ্তরের বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতি বন্ধের দাবী জানানো হয় মানববন্ধন থেকে।