মাদকের কারখানা সন্দেহে রাজধানীর তুরাগ থানা এলাকার এক বাসায় অভিযান চালিয়েছিল পুলিশের একটি দল। সেখানে দুই ধরনের ২৭ লিটার তরল রাসায়নিক পাওয়া যায়। একটি ড্রামের গায়ে লেখা ছিল হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড এবং আরেকটিতে এসিটোন। এই দুই রাসায়নিক দিয়ে তৈরি করা যায় শক্তিশালী বিস্ফোরক দ্রব্য টিএটিপি।
বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞদের তথ্যমতে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জঙ্গি ও সন্ত্রাসীরা যেসব আইইডি (ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস) হামলা করেছে, সেসব আইইডিতে টিএটিপি ছিল। বাংলাদেশেও এক দশক ধরে বিভিন্ন জঙ্গি আস্তানায় বা জঙ্গিদের হামলায় বিস্ফোরিত আইইডিতে টিএটিপি ছিল।
এ ধরনের পরিস্থিতি জানার পরও পরীক্ষার অজুহাতে তুরাগে উদ্ধার করা রাসায়নিকসহ আটক ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা না করে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়। বিষয়টি জানার পর বিস্ময় প্রকাশ করেছে খোদ ঢাকা মহানগর পুলিশের বিস্ফোরক বিষয়ে অভিজ্ঞ একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সূত্র জানায়, গত ২৪ সেপ্টেম্বর তুরাগ থানার আহালিয়া খেলার মাঠের দক্ষিণ পার্শ্বে একটি বাসার চতুর্থ তলায় অভিযান চালায় তুরাগ থানার একটি দল। ওই দলের কাছে তথ্য ছিল বাসাটিতে মাদকের কারখানা আছে। ভবনের চতুর্থ তলার উত্তর দিকের ফ্ল্যাটে তল্লাশি চালিয়ে একটি নীল রঙের প্লাস্টিকের ড্রামের ভেতর হালকা হলুদ রঙের ২২ লিটার তরল পাওয়া যায়। আরেকটি সাদা রঙের প্লাস্টিকের গ্যালনের মধ্যে ৫ লিটার হালকা হলুদ তরল রাসায়নিক পাওয়া যায়। অভিযানকারীরা ড্রাম ও গ্যালনের মুখ খোলার পর সাদা ধোঁয়া বেরোতে থাকে। ওই বাসায় থাকা রবিউল ইসলাম নামের এক ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করার সময় তিনি বিভ্রান্তিমূলক তথ্য দেন।
সূত্র জানায়, জিজ্ঞাসাবাদে রবিউল জানায়, এসব রাসায়নিক উপাদান সাইদুল ইসলাম ওরফে সোহেল নামে তার এক বড় ভাইয়ের। রবিউলকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।
ডিএমপির বোমা ডিসপোজাল ইউনিটের কর্মকর্তারা বলছেন, ওই বাসা থেকে উদ্ধার হওয়া রাসায়নিকগুলো খুবই বিপজ্জনক। হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড ও এসিটোনের সঙ্গে নাইট্রিক এসিড অথবা সালফিউরিক এসিডের যে কোনো একটি মেশালেই তা শক্তিশালী বিস্ফোরক টিএটিপিতে (ট্রাইএসিটোন ট্রাইপারঅক্সাইড) রূপান্তরিত হয়।
তারা বলছেন, এত ভয়ানক রাসায়নিক উপাদান পেয়েও সে বিষয়ে নিয়মিত মামলা না দেয়া, গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিকে রিমান্ডে নিয়ে এসব রাসায়নিকের উৎস ও সংগ্রহের কারণ সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ না করাটা অস্বাভাবিক। এমনকি ঘটনার তিন সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও এসব রাসায়নিক উপাদানের আসল মালিককেও গ্রেপ্তার করা হয়নি।
তুরাগ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) নাফিজ মেহেদী দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘রবিউলকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। রাসায়নিক উপাদানগুলো পরীক্ষার জন্য আদালতের অনুমতির জন্য আবেদন করা হয়েছে। রাসায়নিক পরীক্ষার পর প্রয়োজনে নিয়মিত মামলা করা হবে।’
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঢাকাসহ সারা দেশে কেমিক্যাল বেচনাকেনায় নজরদারির অভাবে নিরাপত্তা ঝুঁকি বেড়েই চলছে। সাম্প্রতিক সময়ে নতুন করে জঙ্গিবাদের উত্থান ও আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নাশকতার আশঙ্কা নিরাপত্তা ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। যথাযথ নজরদারি না থাকায় সহজেই জঙ্গি-সন্ত্রাসীদের কাছে চলে যাচ্ছে এসব ঝুঁকিপূর্ণ রাসায়নিক দ্রব্য। শিল্পকারখানায় ব্যবহারের জন্য আমদানি করা কেমিক্যালও নিয়ম না মেনে বিক্রি হচ্ছে খোলাবাজারে। যে কোনো একটি কারখানা বা স্কুল-কলেজের ল্যাবরেটরির প্যাডে আবেদন নিয়ে গেলেই খোলাবাজার থেকে কেমিক্যাল সংগ্রহ করা যাচ্ছে। আর দাম বাড়িয়ে দিয়ে কাগজপত্র ছাড়াও কেমিক্যাল সংগ্রহ করা যায়।
কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট-সিটিটিসির একজন কর্মকর্তা জানান, কয়েক বছর আগে তারা ঝিনাইদহের একটি জঙ্গি আস্তানা থেকে প্রায় ২৭ ড্রাম হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড ও এসিটোন উদ্ধার করেন। পরে অনুসন্ধান করে দেখা যায়, এসব কেমিক্যাল আমদানি করেছিল নরসিংদীর তাহসিন কেমিক্যাল নামে একটি প্রতিষ্ঠান। তাহসিন কেমিক্যালের কাছ থেকে সেসব রাসায়নিক উপাদান এনে খোলাবাজারে জঙ্গিদের কাছে বিক্রি করেছিলেন পুরান ঢাকার এক ব্যবসায়ী।
সিটিটিসির ওই কর্মকর্তা জানান, পুরান ঢাকার ৯০ বছর বয়সী ওই ব্যবসায়ী কোনো যাচাই-বাছাই না করেই এসব কেমিক্যাল বিক্রি করেছিলেন জঙ্গিদের কাছে। একটি কারখানার নকল কাগজপত্র দিয়ে ওইসব কেমিক্যাল কেনা হয়েছিল।
সম্প্রতি পশ্চিমা প্রভাবশালী একটি দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা কেমিক্যাল সিকিউরিটির বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিতে এসে নিজেরাই খোলাবাজার থেকে কেমিক্যাল সংগ্রহ করে নিরাপত্তা ঝুঁকির বিষয়টি চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে গেছেন দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের বিভিন্ন শিল্প-কারখানায় ব্যবহারের জন্য বেশির ভাগ কেমিক্যালই আমদানি করা হয়। নতুন নতুন কল-কারখানা স্থাপিত হওয়ার কারণে কেমিক্যাল আমদানিও বাড়ছে। এ কারণে কেমিক্যাল সিকিউরিটি নিয়ে উদ্বেগও বাড়ছে। কারণ এসব কেমিক্যালের বেশির ভাগই ইতিবাচক ও নেতিবাচক দুই ধরনের কাজেই ব্যবহার করা যায়। তদারকির অভাবে এসব কেমিক্যাল জঙ্গি-সন্ত্রাসীদের হাতে চলে যাওয়ায় ভয়াবহ নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমন অনেক কেমিক্যাল আছে, যাতে এক বা একাধিক মিশ্রণের মাধ্যমে শক্তিশালী বিস্ফোরক বা বোমা তৈরি করা যায়। আর এখন ইন্টারনেটে বিস্ফোরক বা বোমা তৈরির ম্যানুয়ালও সহজলভ্য।
বিশেষজ্ঞদের ভাষ্য, বাংলাদেশের রাজনৈতিক সহিংসতায় ককটেল বা হাতে তৈরি বোমার ব্যবহার অনেক পুরোনো। বিশেষ করে নির্বাচনকেন্দ্রিক সময়ে হরতাল বা নাশকতার জন্যও ককটেল ব্যবহার হয়। ককটেল তৈরি করা হয় পটাশিয়াম নাইট্রেট ও সালফার দিয়ে। কিন্তু এই পটাশিয়াম নাইট্রেট ও সালফার আমদানি করে মূলত দিয়াশলাই কারখানার মালিকেরা। কারখানার মালিকদের আমদানিকৃত এসব রাসায়নিক উপাদান যথাযথভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে কি না তা তদারক করা হয় না বললেই চলে। ফলে কারখানার অসাধু মালিক বা ব্যবসায়ীদের কেউ কেউ উচ্চ দামে এসব রাসায়নিক উপাদান খোলাবাজারে বিক্রি করে দেন।
বাংলাদেশে অনুমোদিত ৫৪ ধরনের কেমিক্যাল আমদানি, সংরক্ষণ ও পরিবহনের বিষয়টি দেখভাল করে থাকে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন বিস্ফোরক অধিদপ্তর। এ ছাড়া কিছু কেমিক্যাল আমদানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ জাতীয় কর্তৃপক্ষ, রাসায়নিক অস্ত্র কনভেনশনের অনুমতি নিতে হয়।
বিস্ফোরক অধিদপ্তরের উপপ্রধান পরিদর্শক ড. মো. আব্দুল হান্নান দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘বিস্ফোরক অধিদপ্তর ফ্লেমেবল বা প্রজ্জ্বলিত শিডিউলভুক্ত কেমিক্যাল, যা শিল্প কারখানার জন্য আমদানি করা হয়, তার জন্য অনুমতি বা লাইসেন্স দেয়া, গুদামজাতকরণ ও পরিবহনের বিষয়টি দেখভাল করে। অন্যান্য কেমিক্যাল বেচাকেনার তদারকি করার দায়-দায়িত্ব আমাদের না।’
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীন বাংলাদেশ জাতীয় কর্তৃপক্ষ, রাসায়নিক অস্ত্র কনভেনশনের সর্বশেষ ভার্চুয়াল সভায়ও কেমিক্যালের চাহিদা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ঘটনা ও দুর্ঘটনার ঝুঁকি বেড়ে যাওয়ার বিষয়ে শঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।
বিস্ফোরক অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, লোকবল সংকটের কারণে শিডিউলভুক্ত কেমিক্যাল আমদানির পর যথাযথ তদারকি করতে পারেন না তারা। মাত্র ২৬ জন বিস্ফোরক পরিদর্শক ও সহকারী বিস্ফোরক পরিদর্শক দিয়ে তাদের পক্ষে সারা দেশের কেমিক্যাল বেচাকেনার সার্বক্ষণিক তদারকি সম্ভব নয়।
অধিদপ্তরের পরিদর্শক পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা জানান, বিভাগীয় কার্যালয়গুলোতে মাত্র দুই-একজন করে কর্মকর্তা আছেন। এই স্বল্প লোকবল দিয়ে আমদানির পর কারাখানাপর্যায়ে কেমিক্যালের যথাযথ ব্যবহারের বিষয়টি তদারকি করা প্রায় অসম্ভব। তারা শুধুমাত্র লাইসেন্স দেয়ার সময় গুদামজাত করার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা রয়েছে কি না তা যাচাই-বাছাই করে থাকেন। খোলাবাজারের বিক্রেতা বা ডিলার হিসেবে কেউ কেমিক্যাল ব্যবসা করতে চাইলে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকের কার্যালয় বা সিটি করপোরেশন থেকে অনাপত্তিপত্র নিয়ে এলে তারা লাইসেন্স দেন। আইন অনুযায়ী অবৈধভাবে কেমিক্যাল বেচাকেনার বিষয়টি দেখভাল করার কথা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর।
সবচেয়ে বেশি কেমিক্যাল বেচাকেনা হয় রাজধানীর পুরান ঢাকার খোলাবাজারে। রাজধানীর বাইরে বেশি কেমিক্যাল বেচাকেনা হয় গাজীপুর ও চট্টগ্রামে।
চট্টগ্রামের পুলিশ কমিশনার কৃষ্ণপদ রায় দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘যে কোনো অবৈধ কারবারের তদারকিই পুলিশ করে থাকে। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে যারা লাইসেন্স প্রদান করে তাদেরই যথাযথ তদারকি করা উচিত। কারণ কাদের লাইসেন্স দেয়া হয়েছে তা পুলিশকে জানানো হয় না। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সুনির্দিষ্ট বিষয়ে যদি আমাদের সহযোগিতা চায়, তাহলে আমরা কেবল সহযোগিতা করতে পারি।’
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলাম দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘গাজীপুরে যারা কেমিক্যাল আমদানি বা বেচাকেনা করেন তাদের একটি তালিকা তৈরি করার জন্য সংশ্লিষ্ট থানাকে নির্দেশনা দেয়া আছে। বিষয়টি নজরদারির মধ্যে রাখার চেষ্টা চলছে। কারা এসব কেমিক্যাল কিনছে এবং কী উদ্দেশ্যে কিনছে, আমরা সেটা নজরদারির চেষ্টা করছি।’
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, কেমিক্যাল সিকিউরিটির বিষয়টি নিয়ে আগে তেমন কার্যক্রম না থাকলেও ডিএমপির বোমা ডিসপোজাল ইউনিটকে মৌখিকভাবে সিবিআরএন (কেমিক্যাল, বায়োলজিক্যাল, রেডিওলজিক্যাল ও নিউক্লিয়ার) টিম গঠন করতে বলা হয়েছে। ইতিমধ্যে এই টিমের জন্য কয়েক কোটি টাকার যন্ত্রপাতিও কেনা হয়েছে। কারণ কেমিক্যাল-সংক্রান্ত মামলার তদন্তও করতে হয় পুলিশকে। এজন্য পুলিশ কর্মকর্তাদের দক্ষও করে তোলা হচ্ছে।
পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, যথাযথ জ্ঞান ছাড়া কেউ কেমিকেল সিকিউরিটির বিষয়ে তদন্ত দূরের কথা অভিযানও চালাতে পারবে না। অবৈধভাবে কেমিক্যাল বেচাকেনার বিষয়ে অভিযান চালাতে হলেও নানারকম নিরাপত্তা প্রস্তুতি রাখতে হয়। আর সংশ্লিষ্ট বিষয়ে জ্ঞান না থাকলে সাদা চোখে ক্ষতিকর বা ডুয়াল ব্যবহারের কেমিক্যাল শনাক্ত করাও সম্ভব নয়।
সিটিটিসির বোমা ডিসপোজাল ইউনিটের কর্মকর্তারা অবশ্য বলছেন, তারা অনেক দিন ধরেই কেমিক্যাল ব্যবসায়ীদের নিয়ে একাধিক বৈঠক করে তাদের সচেতন করার চেষ্টা করছেন। একই সঙ্গে ব্যবসায়ীদের জন্য একটি অ্যাপস তৈরি করা হচ্ছে। যেখানে কেওয়াইসি (নো ইয়োর কাস্টোমার) নামে একটি বিভাগে ক্রেতার নাম, এনআইডি নম্বর, ছবি ও ফোন নম্বর সংরক্ষিত থাকবে। এটি সিবিআরএন টিম মনিটরিং করবে। সন্দেহভাজন ক্রেতার বিষয় নজরে এলে সংশ্লিষ্ট ক্রেতাকে অনুসরণ করা হবে।
আগামী ২৫ থেকে ২৭ অক্টোবর আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের আয়োজনে মরক্কোতে ‘গ্লোবাল কংগ্রেস অন কেমিক্যাল সিকিউরিটি অ্যান্ড ইমার্জিং থ্রেট’ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এই কংগ্রেসে সিটিটিসির বোমা ডিসপোজাল ইউনিটের অতিরিক্ত উপকমিশনার রহমত উল্যাহ চৌধুরীর নেতৃত্বে দুই সদস্যের একটি দল যোগ দেয়ার কথা আছে।
রহমত উল্যাহ চৌধুরী দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘আমরা কেমিক্যাল সিকিউরিটি এবং এর নিরাপত্তা ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছি। পুলিশের একটা ডেডিকেটেড টিম তৈরি হচ্ছে। এই টিমের সদস্যদের কেমিক্যাল সিকিউরিটি বিষয়ে প্রশিক্ষণও দেয়া হয়েছে।’
কেমিক্যাল সিকিউরিটি বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়-বুয়েটের সহযোগী অধ্যাপক ড. ইয়াসির আরাফাত খান দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘আমাদের দেশে কেমিক্যাল সেফটির বিষয়টিই এখনো নিশ্চিত করতে পারিনি, সিকিউরিটির বিষয় তো আরও অনেক দুর্বল। আমাদের এখানে কেমিক্যাল আমদানি থেকে বেচাকেনা বা ব্যবহারের কোনো গাইডলাইনও নেই। অনেক কেমিক্যাল আছে যেগুলো দ্বৈত কাজে ব্যবহার করা যায়। অর্থাৎ চাইলে ইন্ডাস্ট্রিয়াল কাজে ব্যবহারের পাশাপাশি ক্ষতিকর কাজেও ব্যবহার করা যাবে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বিষয়টি অনেক ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।’
বুয়েটের এই বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘একজন আমদানিকারক কেমিক্যাল আমদানির পর তার কতটা যথাযথ ব্যবহার করছে তা জানার মেকানিজমও আমাদের নেই। অর্থাৎ কেমিক্যাল ট্র্যাকিং হয় না বললেই চলে। অথচ চাইলে এটি করা সম্ভব। তা না হলে সবসময় মারাত্মক ঝুঁকি থেকেই যাবে।’
দুর্ভোগের আরেক নাম সুন্দরবন সংলগ্ন সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার বুড়িগোয়ালিনী গাবুরা খেয়াঘাটটি। দীর্ঘদিন ধরে চরম দুর্ভোগের মধ্য দিয়ে প্রতিদিন শতশত মানুষ ঝুকি নিয়ে খোলপেটুয়া নদীটি পার হচ্ছে। সংস্কারের অভাবে শ্যামনগরের বুড়িগোয়ালিনী-গাবুরা খেয়াঘাটের বেহাল দশার সৃষ্টি হয়েছে। এতে স্থানীয়দের দুর্ভোগ দিনে দিনে চরম আকার ধারণ করছে। যে কোন সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটকে পারে, এমন টি জানিয়েছে ভুক্তভোগী মহল।
খোলপেটুয়া নদীর এই ঘাট দুটি বুড়িগোয়ালিনী ও গাবুরা ইউনিয়নে পারাপারের একমাত্র মাধ্যম।
স্থানীয়রা জানান, খেয়াঘাটের খুব খারাপ অবস্থা। প্রবীণ নারী-পুরুষ, গর্ভবতী নারী বা অসুস্থ রোগী ও শিক্ষার্থীদের পারাপারে খুব দুর্ভোগ পোহাতে হয়। অনেক সময় দুর্ঘটনার শিকার হতে হয়। বর্ষাকালে তাদের দুর্ঘটনার ঝুঁকি আরও বেড়ে যায়।
বোট মাঝি আলামিন বলেন, এই ঘাটে আমাদের বোট ধরতে (ঘাটে ভিড়াতে) বেশ সমস্যায় মধ্যে পড়তে হয়। ধরার জন্য ভালো কোন জায়গা নেই। বিশেষ করে ঝড় আর তুফানের সময় বেশ বেগ পেতে হয়। মোটরসাইকেল তোলা খুব কষ্টকর হয়ে যায়। ভুক্তভোগী আনোয়ারা বেগম বলেন, নারীদের নৌকায় উঠতে বেশ সমস্যা হয়। কারো সাহায্য ছাড়া ওঠা সম্ভব নয়।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মোঃ রবিউল ইসলাম বলেন, বুড়িগোয়ালিনী পাড়ের খেয়াঘাটটি সম্পুর্ন ভাবে চলাচলে অযোগ্য হয়ে পড়েছে। এঘাট দিয়ে ওঠা নামা করার সময় প্রায় সাধারন মানুষ দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। ওই এলাকার শতশত ভুক্তভোগী মহল বুড়িগোয়ালিনী-গাবুরা খেয়াঘাট সংস্কারে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।
কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে সেনাবাহিনী ও পুলিশের যৌথ অভিযানে পরিত্যক্ত অবস্থায় দেশীয় অস্ত্র ও আগ্নেয় অস্ত্রের বিচ্ছিন্ন অংশ উদ্ধার করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সোমবার (১৬ জুন) ভোর রাতে এই অভিযান চালানো হয়েছে বলে জানাগেছে। দৌলতপুর থানার ডিউটি অফিসার এস আই পলাশ প্রতিবেদককে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।
আস আই আরও বলেন, উপজেলার হোগলবাড়ীয়া ইউনিয়নের সোনাইকুন্ডি গ্রামে আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য আলহাজ্ব রেজাউল হক চৌধুরীর ছোট ভাই মিন্টু চৌধুরীর বাড়ির এরিয়ায় রবিবার দিবাগত ভোর ৪ টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত সেনাবাহিনী ও পুলিশ যৌথ অভিযান পরিচালনা করেন।
পরিচালিত এ অভিযানে পরিত্যক্ত অবস্থায় এক নলয়ালা বন্দুকের ১টি বাট ও ১টি পাইপ, ৪০টি গুলির ঠোশ, ৬টি ফালা (বল্লভ), ৬টি রামদা, ১টি চাকু ও ১টি বন্দুকের পাইপ পরিষ্কার করার ব্রাশ উদ্ধার করা হয়। পরিচালিত অভিযানে কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। উদ্ধারকৃত অবৈধ দেশীয় অস্ত্র ও আগ্নেয় অস্ত্রের বিচ্ছিন্ন অংশ দৌলতপুর থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
এ ঘটনায় দৌলতপুর থানার ডিউটি অফিসার এস আই পলাশ বলেন, পরিত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধারকৃত অবৈধ দেশীয় অস্ত্র ও আগ্নেয় অস্ত্রের বিচ্ছিন্ন অংশ দৌলতপুর থানায় জব্দ আছে এবং আইনি প্রক্রিয়ায় মামলার প্রস্তুতি চলছে। এ ধরনের অভিযান ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে।
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে রাতের আঁধারে সিসিটিভি ক্যামেরা বন্ধ করে গাড়ির যন্ত্রাংশ চুরির অভিযোগ ওঠেছে পৌরসভার এক কর্মচারীর বিরুদ্ধে। পৌরসভার খণ্ডকালীন কর্মচারী (গাড়ি চালক) শ্যামল মিয়ার বিরুদ্ধে এ অভিযোগ ওঠে। গত শুক্রবার রাতের আঁধারে নৈশ প্রহরী আবুল হোসেনকে ভয়ভীতি দেখিয়ে একটি ময়লা টানার গার্ডেজ পিকআপ ভ্যানের চাকা খুলে নিয়ে যায়। গাড়ির চাকা খুলে নেওয়ার বিষয়টি জানাজানি হলে এলাকায় তোলপাড় শুরু হয়। পরে গত শনিবার বিকালে খুলে নেওয়া চাকা ফেরত দিয়ে যায় গাড়িচালক শ্যামল মিয়া।
বিভিন্ন সময়ে পৌরসভার বিভিন্ন গাড়ির যন্ত্রাংশ উধাও হয়ে যায় বলে জানিয়েছেন পৌর কর্মচারীরা। এছাড়া পৌর এলাকার নয়টি ওয়ার্ডে ময়লা আর্বজনা ফেলার ৯টি লোহার তৈরি ডাস্টবিনের হদিস পাওয়া যাচ্ছে না। সেই ডাস্টবিনের রক্ষণাবেক্ষণ গাড়িচালক শ্যামল মিয়া করে থাকেন বলে পৌরসভার একাধিক কর্মচারী জানিয়েছেন। এ বিষয়ে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা মো.মাশরেকুল আলম।
জানা যায়, সোনারগাঁ পৌরসভার খাস নগর দিঘিরপাড় গ্রামের আবুল কাশেমের ছেলে মো. শ্যামল মিয়া দীর্ঘ ৮ বছর ধরে সোনারগাঁ পৌরসভার ময়লার গাড়ি, পানির গাড়ি, ভেকু, রোড রুলারসহ বিভিন্ন গাড়িচালক হিসেবে কর্মরত আছেন। সেই গাড়িগুলোর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব তিনিই করে যাচ্ছেন। বিভিন্ন সময়ে পৌরসভার গাড়িগুলোর যন্ত্রাংশ উধাও হয়ে যায়। গত শুক্রবার রাত পৌনে ১১টার দিকে পৌরসভার নৈশ প্রহরী আবুল হোসেনকে ভয়ভীতি দেখিয়ে ময়লার গাড়ি পিকআপ ভ্যানের একটি চাকা খুলে নিয়ে যায়। পরে বিষয়টি জানাজানি হলে পরদিন গত শনিবার বিকালে ফেরত দিয়ে যায়।
সোনারগাঁ পৌর এলাকার লাহাপাড়া গ্রামের আমির হোসেন বলেন, পৌরসভার কর্মকর্তাদের যোগসাজসে গাড়িগুলোর যন্ত্রাংশ চুরি হয়। দীর্ঘ সময় ধরে গাড়ির যন্ত্রাংশ চুরি হলেও এ বিষয়ে তারা কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। এছাড়া পৌর এলাকার ময়লা ফেলার ডাস্টবিনগুলো কোথায় গেল? কে নিয়ে গেল? কারও কোনো মাথাব্যথা নেই।
আদমপুর গ্রামের ইমরান খাঁন জানান , তার বাড়ির সামনে একটি লোহার ডাস্টবিন ছিল। সেখানে আশপাশের বাড়ির লোকজন ময়লা ফেলত। এখন সেই লোহার ডাস্টবিন নেই। ডাস্টবিন না থাকায় ময়লাগুলো মাটিতে ফেলে পরিবেশ দূষণ করছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পৌরসভার একাধিক কর্মচারী জানিয়েছেন, বিভিন্ন সময়ে গাড়ির যন্ত্রাংশগুলো চুরি হয়ে গেলেও কেউ এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়নি। সর্বশেষ গত শুক্রবার রাতে সিসিটিভি ক্যামেরা বন্ধ করে নৈশ প্রহরীর সামনে গাড়ির চাকা খুলে নিয়ে যায়। বিষয়টিও ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চলছে। ধারণা করা হচ্ছে লোহার ডাস্টবিনগুলো কারও যোগসাজসে সে চুরি করতে পারে। সোনারগাঁ পৌরসভার নৈশ প্রহরী আবুল হোসেন বলেন, রাত পৌনে ১১টার দিকে গাড়িচালক শ্যামল গাড়ির চাকা খুলে নিয়ে যায়। পরদিন শনিবার বিকালে এলাকার লোকজনের সামনে ফেরত দিয়েছে।
অভিযুক্ত গাড়িচালক শ্যামল মিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, গাড়ির চাকা ঠিক করার জন্য খুলে নেওয়া হয়েছে। তবে খারাপ কোনো উদ্দেশ্য ছিল না। সিসিটিভি বন্ধ করার বিষয়ে কোনো উত্তর দেননি তিনি।
সোনারগাঁ পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাশরেকুল আলম বলেন, অফিসে এসে চুরির বিয়য়টি জানতে পেরেছি। গাড়িচালকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
সিলেটের জাফলংয়ে দুই উপদেষ্টার গাড়িবহরে গতিরোধ ও বিক্ষোভের ঘটনায় সদ্য বহিষ্কৃত যুবদল নেতা জাহিদ খানকে প্রধান আসামি করে ১৫৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশ। এদের মধ্যে ৯ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে, বাকিদের অজ্ঞাতনামা হিসেবে মামলায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
রবিবার (১৫ জুন) রাতে গোয়াইনঘাট থানার উপপরিদর্শক ওবায়দুল্লাহ বাদি হয়ে মামলাটি করেছেন বলে জানানো হয়েছে।
এ বিষয়ে সিলেটের পুলিশ সুপার মাহবুবুর রহমান বলেন, ঘটনার পর বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারিত ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে অভিযুক্তদের শনাক্তে কিছুটা সময় লেগেছে। ইতোমধ্যে পুলিশ অভিযানে নেমেছে বলেও জানান তিনি।
এ ছাড়া, গোয়াইনঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সরকার তোফায়েল আহমেদ জানান, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বেআইনিভাবে সংঘবদ্ধ হয়ে সরকারি কাজে বাধা দেওয়া ও অবরোধ সৃষ্টি করার অভিযোগ আনা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ‘সদ্য বহিষ্কৃত যুবদল নেতা জাহিদ খানকে মামলার প্রধান আসামি করা হয়েছে, দ্বিতীয় আসামি হিসেবে রয়েছেন ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি ও আজির উদ্দিন। এ ছাড়াও মামলায় আরও সাতজনের নাম উল্লেখ রয়েছে।’
গত শনিবার (১৪ জুন) জাহিদ খান ও আজিরের নেতৃত্বে জাফলংয়ে বিক্ষোভের ঘটনা ঘটে। এতে বন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানের গাড়িবহরের গতিরোধ করা হয়। ঘটনার প্রায় ৩০ ঘণ্টা পর এ মামলা দায়ের করে পুলিশ।
সাতক্ষীরার আ.লীগের সংরক্ষিত আসেনের সাবেক এমপি রিফাত আমিনের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে মাদক ও অস্ত্র উদ্ধার করেছে যৌথবাহিনী। এসময় তার ছেলে সাফায়েত সরোয়ার রুমনকে আটক করা হয়েছে।
রবিবার (১৫ জুন) দুপুরে শহরের আব্দুর রাজ্জাক পার্কস্থ বিলাশবহুল বাড়িতে ২ ঘণ্টাব্যাপী অভিযানে নেতৃত্ব দেন সেনাবাহিনীর সাতক্ষীরা ক্যাম্পের মেজর ইফতেখার আহমেদ।
সাফায়াত সরোয়ার রুমন আশাশুনির কাদাকাটি গ্রামের মৃত রুহুল আমিনের ছেলে এবং তার মা রিফাত আমিন সাতক্ষীরা জেলা মহিলা আ.লীগের সাবেক সভানেত্রী ও আ.লীগের সংরক্ষিত নারী আসনের সাবেক এমপি ছিলেন।
যৌথবাহিনীর অভিযানের শুরুতেই দুইতলা হতে রুমন লাফিয়ে নিজতলা দিয়ে পালানোর চেষ্টা করে। তখন যৌথবাহিনী রুমনকে আটক করে বাড়িতে তল্লাশি করে মাদক ও অস্ত্র উদ্ধার করে।
সেনাবাহিনীর মেজর ইফতেখার আহম্মেদ অভিযান শেষে সাংবাদিকদের বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রিফাত আমিনের বাড়িতে অভিযান পরিচালনা করে ৩ শতাধিক ইয়াবা বড়ি ও একটি রাইফেল, একটি তলোয়ার এবং মদ ও খালি মদের বোতল উদ্ধার করা হয়েছে এবং সাবেক এমপির ছেলে সাফায়াত সরোয়ার রুমনকে আটক করা হয়েছে। এ ব্যাপারে পরবর্তীতে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার গারো পাহাড় ঘেরা গজনী পর্যটন কেন্দ্র। এখন পর্যটন কেন্দ্রটি চরম পরিবেশ সংকটে রয়েছে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি গারো পাহাড় ও পার্শ্ববর্তী নদী-নালা, খাল-বিল, ঝরনা থেকে দিনের পর দিন পাথর ও বালু লুটপাট করা হচ্ছে। এতে একদিকে যেমন প্রাকৃতিক পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, অন্যদিকে হুমকির মুখে পড়েছে পর্যটন শিল্প।
স্থানীয় সূত্র জানায়, ১৯৯৩ সালে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে গারো পাহাড়ের কোলে গড়ে তোলা হয় ‘গজনী অবকাশ বিনোদন কেন্দ্র’। গজনী মৌজার নামানুসারে এ নামকরণ করা হয়। প্রতিবছর দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লক্ষাধিক ভ্রমণপিপাসু এ পর্যটন কেন্দ্রে ভিড় করেন। সরকারও এখান থেকে রাজস্ব আয় করে থাকে।
তবে সম্প্রতি এই পর্যটন কেন্দ্রের আশেপাশের পাহাড়, নদী ও ঝর্ণা এলাকা অবৈধভাবে দখল করে চলছে পাথর ও বালু উত্তোলন। স্থানীয় প্রভাবশালী চক্র—যাদের বলা হচ্ছে ‘বালুদস্যু’—তারা দিনের আলো ও রাতের অন্ধকারে ট্রাক, মাহিন্দ্রা ও ট্রলিগাড়ি ব্যবহার করে লাখ লাখ টাকার পাথর ও বালু পাচার করছে দেশের বিভিন্ন এলাকায়।
উপজেলার কাংশা ইউনিয়নের কালঘেষা নদীর হালচাটি, মালিটিলা, গান্ধীগাঁও, বাঁকাকুড়া, দরবেশতলা, মঙ্গল ঝুড়া, পশ্চিম বাঁকাকুড়া, ছোটগজনী, গজনীসহ আশপাশের এলাকা থেকে বালু ও পাথর উত্তোলন অব্যাহত রয়েছে। স্থানীয়রা বলছেন, এ অবৈধ কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস পায় না কেউ। প্রতিবাদ করলেই হুমকি, গালিগালাজ এমনকি হামলারও শিকার হতে হচ্ছে সাধারণ মানুষ ও সাংবাদিকদের।
সম্প্রতি ঈদের আগে এক সপ্তাহে বনবিভাগ পাঁচটি মাহিন্দ্রা গাড়ি আটক করে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে বালুদস্যুরা রাংটিয়া ফরেস্ট রেঞ্জ কার্যালয়ে হামলা চালায় ও কর্মকর্তাদের অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে। গত ৪ জুন রাতে উপজেলা সদরের বাজারে বালু ভর্তি মাহিন্দ্রা গাড়ির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করলে এক সাংবাদিককে প্রাণনাশের হুমকিও দেয় বালুদস্যুরা।
এমনকি, এর আগেও ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে বালু শ্রমিকদের শাস্তি দেয়ায় বালুদস্যুরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) বিরুদ্ধেও আন্দোলনে নামে। যদিও মাঝে মাঝে অভিযান চালানো হয়, কিন্তু তাতে বন্ধ হচ্ছে না এই অবৈধ কার্যকলাপ।
গজনী ফরেস্ট বিট কর্মকর্তা সালেহীন নেওয়াজ বলেন, ‘লোকবলের অভাব ও নিরাপত্তা জণিত কারণে আমরা রাতে অভিযান চালাতে পারি না। এই কারণে বালুদস্যুরা রাতের অন্ধকারে সুযোগ নিচ্ছে।’ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশরাফুল আলম রাসেল বলেন, ‘পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিয়মিত অভিযান চালানো হচ্ছে। প্রয়োজনে সেনাবাহিনীর সহায়তা নেওয়া হবে।’
এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পরিবেশবাদী বলেন, ‘গারো পাহাড় শুধু একটি ভূখণ্ড নয়, এটি আমাদের প্রাকৃতিক নিরাপত্তার দেয়াল। এখানকার জীববৈচিত্র্য, জলবায়ু এবং পর্যটন—সবই আজ হুমকির মুখে। এই লুটপাট যদি এখনই বন্ধ না হয়, তাহলে ভবিষ্যতে পুরো এলাকা মরুভূমিতে রূপ নিতে পারে।’
স্থানীয় সচেতন মহল অবিলম্বে এই অবৈধ বালু-পাথর উত্তোলন বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে।
কোরবানি ঈদ উপলক্ষে টানা ১০ দিন বন্ধ থাকার পর আজ রবিবার (১৫ জুন) সকাল থেকে পঞ্চগড়ের চতুর্দেশীয় বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে পুনরায় আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
তবে এ সময়েও ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দিয়ে বৈধ পাসপোর্টধারী যাত্রীদের পারাপার ছিল স্বাভাবিক। ঈদের ছুটিতেও যাত্রী চলাচলে কোনো বিঘ্ন ঘটেনি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর আমদানি-রপ্তানিকারক গ্রুপের আহ্বায়ক রেজাউল করিম শাহীন জানান, কোরবানির ঈদ উপলক্ষে গত ৫ জুন (বৃহস্পতিবার) থেকে ১৪ জুন (শনিবার) পর্যন্ত স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধ ছিল।% আজ রবিবার থেকে আবারও স্বাভাবিক নিয়মে বাণিজ্য কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এতে বন্দরে ফের প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে।
তিনি আরও জানান, বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও ভুটানের সংশ্লিষ্ট কাস্টমস ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়ার্ডিং এজেন্টদের আগেই এ বিষয়ে চিঠির মাধ্যমে অবহিত করা হয়েছিল।
বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর লিমিটেডের ব্যবস্থাপক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ব্যবসায়ীদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঈদের ছুটিতে ১০ দিন স্থলবন্দরের কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছিল। আজ থেকে চার দেশের মধ্যে পুনরায় আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম চালু হয়েছে।
ইমিগ্রেশন পুলিশের অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ফিরোজ কবীর জানান, বাণিজ্য কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও ঈদের ছুটিতে পাসপোর্টধারী যাত্রীদের যাতায়াত স্বাভাবিক ছিল। এতে কোনো ধরনের সমস্যা হয়নি।
কক্সবাজারের চকরিয়া-লামা-আলীকদম সড়কের চকরিয়া অংশে গাছ ফেলে পর্যটকের লাশ আনতে যাওয়া স্বজনবোঝাই অ্যাম্বুলেন্সে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় ডাকাতদলের এক সদস্যকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
এ সময় অ্যাম্বুলেন্সের ভেতরে থাকা যাত্রীদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে নগদ টাকা, কয়েকটি মোবাইল ছিনিয়ে নেয় ডাকাতেরা। তবে পুলিশ দাবি করছে- এটি নিছক ছিনতাইয়ের ঘটনা ছিল।
শনিবার আনুমানিক ভোর সাড়ে ৪টার দিকে চকরিয়া থেকে আলীকদম গিয়ে পর্যটকের লাশ আনতে যাওয়ার পথে আলোচিত করইল্যারশিয়া এলাকায় অ্যাম্বুলেন্সটি ডাকাতের কবলে পড়ে।
তবে ডাকাত দলে থাকা আরাফাত নামের এক ডাকাত ঘটনার সময় লুট করে নেওয়া একটি মোবাইল সরিয়ে জঙ্গলের ভেতর লুকিয়ে রাখে। ওই মোবাইল খুঁজতে সকালে ফের ঘটনাস্থলে যায় আরাফাত। এ সময় স্থানীয় জনগণের সন্দেহ হলে তাকে আটক করে গাছের সঙ্গে বেঁধে পিটুনি দিতে থাকে। এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
এ সময় অ্যাম্বুলেন্সে ডাকাতির ঘটনার সঙ্গে আরাফাত নিজেসহ বেশ কয়েকজন অংশ নেয় বলে স্বীকার করে এবং তাদের নাম-ঠিকানা প্রকাশ করে।
আরাফাতের দেওয়া তথ্যানুযায়ী অ্যাম্বুলেন্স ডাকাতিতে আরও যারা অংশ নেয় তারা হলেন- ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের ছড়ারকূলের ছাদেক, উচিতার বিলের ফারুক, আরিফ, সাগর ছাড়াও বেশ কয়েকজন।
গ্রেফতার আরাফাত (২৮) চকরিয়া পৌরসভার সাত নাম্বার ওয়ার্ডের মোহাম্মদীয়াপাড়ার আবুল কালামের ছেলে।
চকরিয়া থানার ওসি মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, চকরিয়া-লামা-আলীকদম সড়কের চকরিয়া অংশে অ্যাম্বুলেন্সে ডাকাতি নয়, ছিনতাই হয়েছিল। সেই ঘটনায় স্থানীয় জনতার সহায়তায় আটককৃত একজনকে গ্রেফতার দেখিয়ে মামলা রুজু করা হয়েছে। উদ্ধার করা হয়েছে দুটি মোবাইল। এ ঘটনায় আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণসহ ঘটনায় জড়িত অন্যদের ধরতে পুলিশ মাঠে কাজ করছে।
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলায় ছয় যানবাহনের সংঘর্ষে এক পুলিশ সদস্যসহ দুইজন নিহত হয়েছেন। এতে আহত হয়েছেন অন্তত ২৫ জন।
শনিবার (১৪ জুন) দিবাগত রাতে আড়াইটার দিকে সদর উপজেলার ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের গোপীনাথপুর এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন— ভাটিয়াপাড়া হাইওয়ে পুলিশের সহকারী ট্রাফিক সাব-ইন্সপেক্টর রফিকুজ্জামান এবং খুলনার সোনাডাঙ্গা থানার দেবেনবাবু রোডের বাসিন্দা আব্দুল হামিদ ব্যাপারীর ছেলে ও আরমান পরিবহনের হেলপার সেলিম হোসেন ব্যাপারী।
গোপালগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর মো. সাজেদুর রহমান জানান, রাত আড়াইটার দিকে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা খুলনাগামী আরমান পরিবহনের একটি বাস ঘটনাস্থলে পৌঁছে একটি ট্রাককে পেছন থেকে ধাক্কা দেয়। এতে বাসটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ সময় যাত্রীদের উদ্ধারকালে দ্রুতগতিতে আসা আরও তিনটি বাস ও একটি প্রাইভেটকারের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।
রাত আড়াইটা থেকে সাড়ে তিনটা পর্যন্ত চলা এই সিরিজ সংঘর্ষে ঘটনাস্থলেই এটিএসআই রফিকুজ্জামান ও হেলপার সেলিম হোসেন ব্যাপারী প্রাণ হারান।
তিনি আরও জানান, খবর পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশ, সেনাবাহিনী ও ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা করে। আহতদের গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
পরে দুর্ঘটনা কবলিত যানবাহনগুলো সরিয়ে নিলে প্রায় দুই ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ায় ‘ভূমিহীনদের বন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত হলেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সিনিয়র যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদ।
শনিবার উপজেলার ভূমিহীন পরিবার আয়োজিত এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তাকে এ উপাধি দেওয়া হয়।
হাতিয়া দ্বীপ সরকারি কলেজ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত ‘ভূমিহীন পরিবারের নতুন ভোর ও একটি স্বপ্নের যাত্রা’ শীর্ষক সভায় সভাপতিত্ব করেন ওই কলেজের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক মো. মফিজ উদ্দিন।
অধ্যাপক মফিজ উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, “স্বাধীনতার পর এই প্রথম আবদুল হান্নান মাসুদ দ্বীপের অবহেলিত ভূমিহীন পরিবারের জীবনে নতুন ভোর এনে দিয়েছেন। এই স্বপ্নযাত্রার সম্মাননা ও স্বীকৃতি হিসেবে তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘ভূমিহীনদের বন্ধু’ উপাধি দেওয়া হয়েছে।”
সংবর্ধনার জবাবে আবদুল হান্নান মাসউদ বলেন, ‘হাতিয়ার ইতিহাস বহু পুরোনো। কিন্তু স্বাধীনতার এত বছর পরও দ্বীপে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। গত ১৭ বছরে এখনাে শুধু লুটপাট হয়েছে। আমি সবাইকে নিয়ে দ্বীপের উন্নয়নে কাজ করতে চাই। তবে এখনো পতিত স্বৈরাচারদের প্রেতাত্মারা সক্রিয়। জনগণের কল্যাণে কাজ করতে গেলেই তারা পদে পদে বাধার সৃষ্টি করে।’
তিনি বলেন, ‘হাতিয়ার উন্নয়নের কথা বললেই ওই সিন্ডিকেটের গায়ে জ্বালাপোড়ার সৃষ্টি হয়। যেমন, ফেরির ব্যবস্থা করতে চাইলে স্পিডবোট-ট্রলার মালিকরা, ভূমিহীনদের ভূমি বুঝিয়ে দিতে চাইলে ভূমিদস্যুরা, রাস্তাঘাটের উন্নয়ন করতে চাইলে অপরাজনীতির হোতারা বাধার কারণ হয়ে আসছে।’
হান্নান মাসউদ বলেন, ‘এই এলাকার ভূমিহীনদের মুলা ঝুলিয়ে রাজনৈতিক নেতারা যুগ যুগ ধরে লাঠিয়াল হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। তাদের কষ্টের কথা মিডিয়ায় আসে না, সুশীল সমাজের চোখে পড়ে না, প্রশাসনের দৃষ্টিতে আসে না। অসহায় এসব মানুষের কী অবস্থা সেটি দেখার মতো কোনো লোক পাওয়া যায় না।’
তিনি আরও বলেন, ‘হাতিয়ায় নদীভাঙন রোধে গত ৫০ বছরে কেউ একটি জিও ব্যাগও ফেলতে পারেনি। আমি গত ১০ মাসে প্রশাসনের ঊর্ধ্বতনদের সঙ্গে সমন্বয় করে প্রায় সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার এলাকায় জিও ব্যাগ ফেলার ব্যবস্থা করেছি। এখন হাতিয়ার জনগণ চাইলে স্থায়ী ব্লক বাঁধের ব্যবস্থাও করা হবে।’
স্থানীয় ভূমিহীন পরিবারের সদস্য মো. শরিফ উদ্দিনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন হাতিয়া প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফিরোজ উদ্দিন, জাতীয় নাগরিক পার্টির সংগঠক মো. ইউসুফ, হাতিয়া নিউ মার্কেটের সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদের প্রমুখ।
চট্টগ্রামে নতুন করে আরো একজনের শরীরে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে গত ছয় দিনে মোট ৯ জনের শরীরে এ ভাইরাসের জীবাণু শনাক্ত হয়েছে। শনিবার (১৪ জুন) সকালে সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্যমতে, গত ২৪ ঘণ্টায় (শুক্রবার সকাল আটটা থেকে শনিবার সকাল আটটা) ২৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে একজনের করোনা পজিটিভ পাওয়া যায়। ৪০ বছর বয়সী আক্রান্ত ওই ব্যক্তি চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার ফতেহাবাদ এলাকার বাসিন্দা। তিনি শুক্রবার নগরের এভারকেয়ার হাসপাতালে করোনার পরীক্ষা করান। সেখানেই তার শরীরে করোনার জীবাণু শনাক্ত হয়।
এদিকে সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, আক্রান্ত নয়জনের মধ্যে পুরুষ ৫ জন এবং নারী ৪ জন। এদের মধ্যে ৭ জন নগরের এবং ২ জন উপজেলার বাসিন্দা।
অন্যদিকে, চট্টগ্রামে এখন পর্যন্ত বেসরকারি পর্যায়ে করোনা শনাক্তকরণের পরীক্ষা চালু আছে। তবে শিগগিরই চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেসে (বিআইটিআইডি) আরটি–পিসিআর পরীক্ষা শুরু করা যাবে বলে আশা করছেন জেলা সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম।
কুমিল্লার দাউদকান্দি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। দূর্ঘটনায় বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটেনি। তবে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় রোগীদের মধ্যে আতংক ছড়িয়ে পড়ে। আগুন নেভাতে গিয়ে হাসপাতালের তিনজন কর্মী আহত হয়েছেন। খবর পেয়ে স্থানীয় ফায়ারসার্ভিস কর্মীরা ছুটে আসে এবং স্বল্প সময়ের মধ্যে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। আহতরা হলেন ইয়াসিন, মেহেদি ও মুছা। আহতদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ণ ইউনিটে পাঠানো হয়েছে।
শনিবার (১৪জুন) বেলা ১১টায় দাউদকান্দি উপজেলা গৌরীপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ৩য় তলায় ষ্টোর রুমে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে হাসাপাতালের ওয়ার্ডে ভর্তি রোগীদের এবং বহিঃবিভাগে চিকিৎসা সেবা প্রায় দুই ঘন্টা বন্ধ থাকে৷ খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে স্থানীয় এবং হাসপাতালে কর্মরত স্টাফদের সহযোগিতায় অল্প সময়ের মধ্যেই আগুন নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বেলা ১১ টার দিকে হাসপাতালের তিনতলার ষ্টোর রুমে আগুনের ধোয়া দেখা যায়। ধোয়া দেখে পাশের ওয়ার্ডের রোগীর স্বজন ও নার্সরা আগুন আগুন বলে চিৎকার শুরু করে। এ সময় হাসপাতালে থাকা রোগী ও তাদের স্বজনরা দৌঁড়াদৌড়ি শুরু করেন। পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পল্লী বিদ্যু ও ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেয়। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে গিয়ে হাসপাতালের আউটসোর্সিংয়ে কর্মরত ইয়াসিন, মেহেদি ও মুছা নামে তিন কর্মচারী আহত হয়েছেন। আহতদের ঢাকা মেডিকেলের বার্ণ ইউনিটে পাঠানো হয়েছে।
এ বিষয়ে দাউদকান্দি ফায়ার সার্ভিস স্টেশন অফিসার মোঃ ইদ্রিস বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসার পর স্থানীয় এবং হাসপাতালে কর্মরত স্টাফদের সহযোগিতায় অল্প সময়ের মধ্যেই আগুন নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। প্রাথমিক ধারনা বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে আগুনে সূত্রপাত, পরবর্তীতে তদন্ত সাপেক্ষে মূল কারণ জানা যাবে।
এ ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. হাবিবুর রহমান বলেন, হাসপাতালের ৩য় তলায় ডেঙ্গু রোগীদের ওয়ার্ডের পাশের কক্ষে ষ্টোর রুমে ঔষধসহ রোগীদের সেবার কাজে ব্যবহৃত সব ধরনের মালামালের সাথে কিছু দামী সরঞ্জামও ছিল। ওই কক্ষে আগুনে অধিকাংশ মালামালই পুড়ে নষ্ট হয়ে গেছে। কিছু মালামাল বের করতে পারলেও তা ভালো আছে কিনা পরবর্তীতে যাচাই করে বলেতে পারবো । আগুনে ক্ষতির পরিমান এখন নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না। আর আগুন নিয়ন্ত্রণ এবং মালামাল বিশেষ করে অক্সিজেন সিলিন্ডার বের করতে গিয়ে আমাদের আউটসোর্সিংয়ে কাজ করা তিনজন আহত হয়েছেন। তাদেরকে ঢাকা মেডিকেলের বার্ণ ইউনিটে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে হাসপাতালে অগ্নিকান্ডের খবর পেয়ে দাউদকান্দি উপজেলা সহকারী কমিশনার(ভূমি) রেদওয়ান ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন৷
ঢাকা-টাঙ্গাইল-যমুনা মহাসড়কে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজটে ভোগান্তিতে পড়েছেন ঈদফেরত যাত্রীরা।
শনিবার (১৪ জুন) সকাল থেকে এ যানজটের সৃষ্টি হয়।
যমুনা সেতুর পশ্চিম প্রান্তের গোলচত্বর থেকে কড্ডা পর্যন্ত প্রায় ৫ কিলোমিটার এবং সেতুর পূর্ব প্রান্ত থেকে এলেঙ্গা পর্যন্ত প্রায় ৩০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে এই যানজট সৃষ্টি হয়েছে বলে জানান যমুনা সেতু পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসাদুজ্জামান।
তিনি বলেন, যমুনা সেতুর ওপর একটি পিকআপ ও ট্রাকের সংঘর্ষ এবং মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে আরও তিনটি যানবাহন বিকলের কারণে এই দীর্ঘ যানজট তৈরি হয়।
ঈদ শেষে ঢাকামুখী মানুষের চাপের কারণে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে পড়েছে।
এদিকে, শনিবার সকালে কামারখন্দ উপজেলার বাগবাড়ি এলাকায় এনডিপি অফিসের কাছে যমুনা সেতুর পশ্চিম সংযোগ সড়কে দুইটি ট্রাকের সংঘর্ষের ফলে ওই স্থানে গাড়ির চলাচল সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে যায়, যা যানজটকে আরও দীর্ঘতর করে তোলে।
তবে ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গগামী লেনে যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে, যদিও গাড়ির চাপ অনেক বেশি বলে জানান ওসি।
সকাল থেকেই আমাদের পুলিশ সদস্যরা মহাসড়কে যানজট নিয়ন্ত্রণে কাজ করে যাচ্ছেন। আমরা আশা করছি শিগগিরই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে বলে জানান তিনি।
এলেঙ্গা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ শরীফ বলেন, ভোর থেকে যমুনা সেতু থেকে এলেঙ্গা পর্যন্ত ঢাকা-মুখী লেনে গাড়ির চাপ থাকলেও ঢাকা থেকে সেতু-মুখী লেনে কোনো যানজট নেই।
তিনি আরও জানান, হাইওয়ে পুলিশ ও ট্রাফিক পুলিশ যৌথভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে। শিগগিরই যানজট নিরসন হবে বলে আশা প্রকাশ করেন পুলিশের এই কর্মকর্তা।