মাদকের কারখানা সন্দেহে রাজধানীর তুরাগ থানা এলাকার এক বাসায় অভিযান চালিয়েছিল পুলিশের একটি দল। সেখানে দুই ধরনের ২৭ লিটার তরল রাসায়নিক পাওয়া যায়। একটি ড্রামের গায়ে লেখা ছিল হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড এবং আরেকটিতে এসিটোন। এই দুই রাসায়নিক দিয়ে তৈরি করা যায় শক্তিশালী বিস্ফোরক দ্রব্য টিএটিপি।
বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞদের তথ্যমতে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জঙ্গি ও সন্ত্রাসীরা যেসব আইইডি (ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস) হামলা করেছে, সেসব আইইডিতে টিএটিপি ছিল। বাংলাদেশেও এক দশক ধরে বিভিন্ন জঙ্গি আস্তানায় বা জঙ্গিদের হামলায় বিস্ফোরিত আইইডিতে টিএটিপি ছিল।
এ ধরনের পরিস্থিতি জানার পরও পরীক্ষার অজুহাতে তুরাগে উদ্ধার করা রাসায়নিকসহ আটক ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা না করে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়। বিষয়টি জানার পর বিস্ময় প্রকাশ করেছে খোদ ঢাকা মহানগর পুলিশের বিস্ফোরক বিষয়ে অভিজ্ঞ একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সূত্র জানায়, গত ২৪ সেপ্টেম্বর তুরাগ থানার আহালিয়া খেলার মাঠের দক্ষিণ পার্শ্বে একটি বাসার চতুর্থ তলায় অভিযান চালায় তুরাগ থানার একটি দল। ওই দলের কাছে তথ্য ছিল বাসাটিতে মাদকের কারখানা আছে। ভবনের চতুর্থ তলার উত্তর দিকের ফ্ল্যাটে তল্লাশি চালিয়ে একটি নীল রঙের প্লাস্টিকের ড্রামের ভেতর হালকা হলুদ রঙের ২২ লিটার তরল পাওয়া যায়। আরেকটি সাদা রঙের প্লাস্টিকের গ্যালনের মধ্যে ৫ লিটার হালকা হলুদ তরল রাসায়নিক পাওয়া যায়। অভিযানকারীরা ড্রাম ও গ্যালনের মুখ খোলার পর সাদা ধোঁয়া বেরোতে থাকে। ওই বাসায় থাকা রবিউল ইসলাম নামের এক ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করার সময় তিনি বিভ্রান্তিমূলক তথ্য দেন।
সূত্র জানায়, জিজ্ঞাসাবাদে রবিউল জানায়, এসব রাসায়নিক উপাদান সাইদুল ইসলাম ওরফে সোহেল নামে তার এক বড় ভাইয়ের। রবিউলকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।
ডিএমপির বোমা ডিসপোজাল ইউনিটের কর্মকর্তারা বলছেন, ওই বাসা থেকে উদ্ধার হওয়া রাসায়নিকগুলো খুবই বিপজ্জনক। হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড ও এসিটোনের সঙ্গে নাইট্রিক এসিড অথবা সালফিউরিক এসিডের যে কোনো একটি মেশালেই তা শক্তিশালী বিস্ফোরক টিএটিপিতে (ট্রাইএসিটোন ট্রাইপারঅক্সাইড) রূপান্তরিত হয়।
তারা বলছেন, এত ভয়ানক রাসায়নিক উপাদান পেয়েও সে বিষয়ে নিয়মিত মামলা না দেয়া, গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিকে রিমান্ডে নিয়ে এসব রাসায়নিকের উৎস ও সংগ্রহের কারণ সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ না করাটা অস্বাভাবিক। এমনকি ঘটনার তিন সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও এসব রাসায়নিক উপাদানের আসল মালিককেও গ্রেপ্তার করা হয়নি।
তুরাগ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) নাফিজ মেহেদী দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘রবিউলকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। রাসায়নিক উপাদানগুলো পরীক্ষার জন্য আদালতের অনুমতির জন্য আবেদন করা হয়েছে। রাসায়নিক পরীক্ষার পর প্রয়োজনে নিয়মিত মামলা করা হবে।’
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঢাকাসহ সারা দেশে কেমিক্যাল বেচনাকেনায় নজরদারির অভাবে নিরাপত্তা ঝুঁকি বেড়েই চলছে। সাম্প্রতিক সময়ে নতুন করে জঙ্গিবাদের উত্থান ও আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নাশকতার আশঙ্কা নিরাপত্তা ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। যথাযথ নজরদারি না থাকায় সহজেই জঙ্গি-সন্ত্রাসীদের কাছে চলে যাচ্ছে এসব ঝুঁকিপূর্ণ রাসায়নিক দ্রব্য। শিল্পকারখানায় ব্যবহারের জন্য আমদানি করা কেমিক্যালও নিয়ম না মেনে বিক্রি হচ্ছে খোলাবাজারে। যে কোনো একটি কারখানা বা স্কুল-কলেজের ল্যাবরেটরির প্যাডে আবেদন নিয়ে গেলেই খোলাবাজার থেকে কেমিক্যাল সংগ্রহ করা যাচ্ছে। আর দাম বাড়িয়ে দিয়ে কাগজপত্র ছাড়াও কেমিক্যাল সংগ্রহ করা যায়।
কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট-সিটিটিসির একজন কর্মকর্তা জানান, কয়েক বছর আগে তারা ঝিনাইদহের একটি জঙ্গি আস্তানা থেকে প্রায় ২৭ ড্রাম হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড ও এসিটোন উদ্ধার করেন। পরে অনুসন্ধান করে দেখা যায়, এসব কেমিক্যাল আমদানি করেছিল নরসিংদীর তাহসিন কেমিক্যাল নামে একটি প্রতিষ্ঠান। তাহসিন কেমিক্যালের কাছ থেকে সেসব রাসায়নিক উপাদান এনে খোলাবাজারে জঙ্গিদের কাছে বিক্রি করেছিলেন পুরান ঢাকার এক ব্যবসায়ী।
সিটিটিসির ওই কর্মকর্তা জানান, পুরান ঢাকার ৯০ বছর বয়সী ওই ব্যবসায়ী কোনো যাচাই-বাছাই না করেই এসব কেমিক্যাল বিক্রি করেছিলেন জঙ্গিদের কাছে। একটি কারখানার নকল কাগজপত্র দিয়ে ওইসব কেমিক্যাল কেনা হয়েছিল।
সম্প্রতি পশ্চিমা প্রভাবশালী একটি দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা কেমিক্যাল সিকিউরিটির বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিতে এসে নিজেরাই খোলাবাজার থেকে কেমিক্যাল সংগ্রহ করে নিরাপত্তা ঝুঁকির বিষয়টি চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে গেছেন দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের বিভিন্ন শিল্প-কারখানায় ব্যবহারের জন্য বেশির ভাগ কেমিক্যালই আমদানি করা হয়। নতুন নতুন কল-কারখানা স্থাপিত হওয়ার কারণে কেমিক্যাল আমদানিও বাড়ছে। এ কারণে কেমিক্যাল সিকিউরিটি নিয়ে উদ্বেগও বাড়ছে। কারণ এসব কেমিক্যালের বেশির ভাগই ইতিবাচক ও নেতিবাচক দুই ধরনের কাজেই ব্যবহার করা যায়। তদারকির অভাবে এসব কেমিক্যাল জঙ্গি-সন্ত্রাসীদের হাতে চলে যাওয়ায় ভয়াবহ নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমন অনেক কেমিক্যাল আছে, যাতে এক বা একাধিক মিশ্রণের মাধ্যমে শক্তিশালী বিস্ফোরক বা বোমা তৈরি করা যায়। আর এখন ইন্টারনেটে বিস্ফোরক বা বোমা তৈরির ম্যানুয়ালও সহজলভ্য।
বিশেষজ্ঞদের ভাষ্য, বাংলাদেশের রাজনৈতিক সহিংসতায় ককটেল বা হাতে তৈরি বোমার ব্যবহার অনেক পুরোনো। বিশেষ করে নির্বাচনকেন্দ্রিক সময়ে হরতাল বা নাশকতার জন্যও ককটেল ব্যবহার হয়। ককটেল তৈরি করা হয় পটাশিয়াম নাইট্রেট ও সালফার দিয়ে। কিন্তু এই পটাশিয়াম নাইট্রেট ও সালফার আমদানি করে মূলত দিয়াশলাই কারখানার মালিকেরা। কারখানার মালিকদের আমদানিকৃত এসব রাসায়নিক উপাদান যথাযথভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে কি না তা তদারক করা হয় না বললেই চলে। ফলে কারখানার অসাধু মালিক বা ব্যবসায়ীদের কেউ কেউ উচ্চ দামে এসব রাসায়নিক উপাদান খোলাবাজারে বিক্রি করে দেন।
বাংলাদেশে অনুমোদিত ৫৪ ধরনের কেমিক্যাল আমদানি, সংরক্ষণ ও পরিবহনের বিষয়টি দেখভাল করে থাকে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন বিস্ফোরক অধিদপ্তর। এ ছাড়া কিছু কেমিক্যাল আমদানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ জাতীয় কর্তৃপক্ষ, রাসায়নিক অস্ত্র কনভেনশনের অনুমতি নিতে হয়।
বিস্ফোরক অধিদপ্তরের উপপ্রধান পরিদর্শক ড. মো. আব্দুল হান্নান দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘বিস্ফোরক অধিদপ্তর ফ্লেমেবল বা প্রজ্জ্বলিত শিডিউলভুক্ত কেমিক্যাল, যা শিল্প কারখানার জন্য আমদানি করা হয়, তার জন্য অনুমতি বা লাইসেন্স দেয়া, গুদামজাতকরণ ও পরিবহনের বিষয়টি দেখভাল করে। অন্যান্য কেমিক্যাল বেচাকেনার তদারকি করার দায়-দায়িত্ব আমাদের না।’
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীন বাংলাদেশ জাতীয় কর্তৃপক্ষ, রাসায়নিক অস্ত্র কনভেনশনের সর্বশেষ ভার্চুয়াল সভায়ও কেমিক্যালের চাহিদা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ঘটনা ও দুর্ঘটনার ঝুঁকি বেড়ে যাওয়ার বিষয়ে শঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।
বিস্ফোরক অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, লোকবল সংকটের কারণে শিডিউলভুক্ত কেমিক্যাল আমদানির পর যথাযথ তদারকি করতে পারেন না তারা। মাত্র ২৬ জন বিস্ফোরক পরিদর্শক ও সহকারী বিস্ফোরক পরিদর্শক দিয়ে তাদের পক্ষে সারা দেশের কেমিক্যাল বেচাকেনার সার্বক্ষণিক তদারকি সম্ভব নয়।
অধিদপ্তরের পরিদর্শক পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা জানান, বিভাগীয় কার্যালয়গুলোতে মাত্র দুই-একজন করে কর্মকর্তা আছেন। এই স্বল্প লোকবল দিয়ে আমদানির পর কারাখানাপর্যায়ে কেমিক্যালের যথাযথ ব্যবহারের বিষয়টি তদারকি করা প্রায় অসম্ভব। তারা শুধুমাত্র লাইসেন্স দেয়ার সময় গুদামজাত করার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা রয়েছে কি না তা যাচাই-বাছাই করে থাকেন। খোলাবাজারের বিক্রেতা বা ডিলার হিসেবে কেউ কেমিক্যাল ব্যবসা করতে চাইলে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকের কার্যালয় বা সিটি করপোরেশন থেকে অনাপত্তিপত্র নিয়ে এলে তারা লাইসেন্স দেন। আইন অনুযায়ী অবৈধভাবে কেমিক্যাল বেচাকেনার বিষয়টি দেখভাল করার কথা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর।
সবচেয়ে বেশি কেমিক্যাল বেচাকেনা হয় রাজধানীর পুরান ঢাকার খোলাবাজারে। রাজধানীর বাইরে বেশি কেমিক্যাল বেচাকেনা হয় গাজীপুর ও চট্টগ্রামে।
চট্টগ্রামের পুলিশ কমিশনার কৃষ্ণপদ রায় দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘যে কোনো অবৈধ কারবারের তদারকিই পুলিশ করে থাকে। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে যারা লাইসেন্স প্রদান করে তাদেরই যথাযথ তদারকি করা উচিত। কারণ কাদের লাইসেন্স দেয়া হয়েছে তা পুলিশকে জানানো হয় না। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সুনির্দিষ্ট বিষয়ে যদি আমাদের সহযোগিতা চায়, তাহলে আমরা কেবল সহযোগিতা করতে পারি।’
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলাম দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘গাজীপুরে যারা কেমিক্যাল আমদানি বা বেচাকেনা করেন তাদের একটি তালিকা তৈরি করার জন্য সংশ্লিষ্ট থানাকে নির্দেশনা দেয়া আছে। বিষয়টি নজরদারির মধ্যে রাখার চেষ্টা চলছে। কারা এসব কেমিক্যাল কিনছে এবং কী উদ্দেশ্যে কিনছে, আমরা সেটা নজরদারির চেষ্টা করছি।’
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, কেমিক্যাল সিকিউরিটির বিষয়টি নিয়ে আগে তেমন কার্যক্রম না থাকলেও ডিএমপির বোমা ডিসপোজাল ইউনিটকে মৌখিকভাবে সিবিআরএন (কেমিক্যাল, বায়োলজিক্যাল, রেডিওলজিক্যাল ও নিউক্লিয়ার) টিম গঠন করতে বলা হয়েছে। ইতিমধ্যে এই টিমের জন্য কয়েক কোটি টাকার যন্ত্রপাতিও কেনা হয়েছে। কারণ কেমিক্যাল-সংক্রান্ত মামলার তদন্তও করতে হয় পুলিশকে। এজন্য পুলিশ কর্মকর্তাদের দক্ষও করে তোলা হচ্ছে।
পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, যথাযথ জ্ঞান ছাড়া কেউ কেমিকেল সিকিউরিটির বিষয়ে তদন্ত দূরের কথা অভিযানও চালাতে পারবে না। অবৈধভাবে কেমিক্যাল বেচাকেনার বিষয়ে অভিযান চালাতে হলেও নানারকম নিরাপত্তা প্রস্তুতি রাখতে হয়। আর সংশ্লিষ্ট বিষয়ে জ্ঞান না থাকলে সাদা চোখে ক্ষতিকর বা ডুয়াল ব্যবহারের কেমিক্যাল শনাক্ত করাও সম্ভব নয়।
সিটিটিসির বোমা ডিসপোজাল ইউনিটের কর্মকর্তারা অবশ্য বলছেন, তারা অনেক দিন ধরেই কেমিক্যাল ব্যবসায়ীদের নিয়ে একাধিক বৈঠক করে তাদের সচেতন করার চেষ্টা করছেন। একই সঙ্গে ব্যবসায়ীদের জন্য একটি অ্যাপস তৈরি করা হচ্ছে। যেখানে কেওয়াইসি (নো ইয়োর কাস্টোমার) নামে একটি বিভাগে ক্রেতার নাম, এনআইডি নম্বর, ছবি ও ফোন নম্বর সংরক্ষিত থাকবে। এটি সিবিআরএন টিম মনিটরিং করবে। সন্দেহভাজন ক্রেতার বিষয় নজরে এলে সংশ্লিষ্ট ক্রেতাকে অনুসরণ করা হবে।
আগামী ২৫ থেকে ২৭ অক্টোবর আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের আয়োজনে মরক্কোতে ‘গ্লোবাল কংগ্রেস অন কেমিক্যাল সিকিউরিটি অ্যান্ড ইমার্জিং থ্রেট’ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এই কংগ্রেসে সিটিটিসির বোমা ডিসপোজাল ইউনিটের অতিরিক্ত উপকমিশনার রহমত উল্যাহ চৌধুরীর নেতৃত্বে দুই সদস্যের একটি দল যোগ দেয়ার কথা আছে।
রহমত উল্যাহ চৌধুরী দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘আমরা কেমিক্যাল সিকিউরিটি এবং এর নিরাপত্তা ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছি। পুলিশের একটা ডেডিকেটেড টিম তৈরি হচ্ছে। এই টিমের সদস্যদের কেমিক্যাল সিকিউরিটি বিষয়ে প্রশিক্ষণও দেয়া হয়েছে।’
কেমিক্যাল সিকিউরিটি বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়-বুয়েটের সহযোগী অধ্যাপক ড. ইয়াসির আরাফাত খান দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘আমাদের দেশে কেমিক্যাল সেফটির বিষয়টিই এখনো নিশ্চিত করতে পারিনি, সিকিউরিটির বিষয় তো আরও অনেক দুর্বল। আমাদের এখানে কেমিক্যাল আমদানি থেকে বেচাকেনা বা ব্যবহারের কোনো গাইডলাইনও নেই। অনেক কেমিক্যাল আছে যেগুলো দ্বৈত কাজে ব্যবহার করা যায়। অর্থাৎ চাইলে ইন্ডাস্ট্রিয়াল কাজে ব্যবহারের পাশাপাশি ক্ষতিকর কাজেও ব্যবহার করা যাবে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বিষয়টি অনেক ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।’
বুয়েটের এই বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘একজন আমদানিকারক কেমিক্যাল আমদানির পর তার কতটা যথাযথ ব্যবহার করছে তা জানার মেকানিজমও আমাদের নেই। অর্থাৎ কেমিক্যাল ট্র্যাকিং হয় না বললেই চলে। অথচ চাইলে এটি করা সম্ভব। তা না হলে সবসময় মারাত্মক ঝুঁকি থেকেই যাবে।’
নারায়ণগঞ্জের বন্দরে নদী আক্তার নীলা(২৫) নামে এক গৃহবধূ কে কুপিয়ে হত্যার পর থানায় আত্মসমর্পণ করেছে ভাসুর রবিউল হাসান আবির (৩৫)।
রবিবার সকালে উপজেলার কুশিয়ারা এলাকার একটি নির্জন বিলে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত গৃহবধূ নদী আক্তার নীলা ময়মনসিংহ জেলার নান্দাইল থানার কানুরামপুর এলাকার শাহজাহান দেওয়ানের মেয়ে ও কুশিয়ারা এলাকার প্রবাসী রাসেল মিয়ার স্ত্রী।
আত্মসমর্পণকারি রবিউল হাসান আবির উপজেলার কুশিয়ারা এলাকার মৃত আবুল হোসেন মিয়ার ছেলে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নিহত গৃহবধূ নদী আক্তার নীলা পূর্বে ৩টি বিয়ে হয়ে ছিল। কুশিয়ারা এলাকার প্রবাসী রাসেল ছিল তার ৪ নাম্বার স্বামী। এদিকে ঘাতক রবিউল হাসান ওরফে আবিরের মা বেশ কিছু দিন পূর্বে ব্যবসার জন্য ব্রাক ব্যাংক থেকে ৪ লাখ টাকা উত্তেলন করে তার ছোট ছেলে রাসেল ও তার স্ত্রী নীলার হাতে তুলে দেন। রাসেল ঋণ পরিশোধ না করে প্রবাসে পাড়ি জমায়। এ ঘটনায় ব্রাক ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জিম্মাদার ভাসুর রবিউল হাসান আবিরকে টাকা পরিশোধের জন্য চাপ সৃষ্টি করে। এ নিয়ে ছোট ভাইয়ের স্ত্রী নীলার সাথে ভাসুর রবিউল হাসান আবির সাথে বিরোধ সৃষ্টি হয়। এ ঘটনার জের ধরে রোববার সকালে ভাসুর রবিউল হাসান আবির তার ছোট ভাইয়ের স্ত্রী নদী আক্তার নীলাকে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে কুশিয়ারা এলাকার একটি নির্জন বিলে নিয়ে এলোপাতাড়ি ভাবে কুপিয়ে হত্যা করে পালিয়ে যায়। হত্যকান্ডের ২ ঘন্টা পর সকাল ৯টায় ভাসুর রবিউল হত্যাকান্ডের ব্যবহৃত ধারালো অস্ত্র নিয়ে বন্দর থানায় এসে আত্মসমর্পণ করে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) লিয়াকত আলী বলেন, পারিবারিক কলহের জের ধরে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। হত্যার পর নিহতের ভাসুর থানায় এসে আত্মসমর্পণ করেছে। লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় হত্যা মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
শহিদ সবুজের স্ত্রী বলেছেন, আমরা শহিদ পরিবার ও আহত পরিবারের পক্ষ থেকে অনুরোধ থাকবে আপনারা আমাদেরকে সুনজরে দেখবেন। আমার স্বামীর হত্যায় মামলা করেছি এবং ১৩ জন আসামী গ্রেফতার হয়েছে কিন্তু তাদের এখনো বিচার করা হয়নি। আমার স্বামীর হত্যার বিচার চাই, স্বৈরাচারের বিচার চাই। আ.লীগ ফ্যাসিস্টদের বিচার চাই। তাদের ফাঁসি ঝুলাতে চাই।
রবিবার (৩ আগস্ট) বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান মিলনায়তনে ছাত্র-শিক্ষক সংহতি দিবস উপলক্ষে শহিদ পরিবারের সাথে মতবিনিময় ও স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠানে শহিদ সবুজের স্ত্রী এসব কথা বলেন।
শহিদ সবুজের স্ত্রী বলেন, আমার পরিবারের উপার্জন কর্তা একজনই ছিল তিনি আমার স্বামী। তিনি যখন আন্দোলনে গিয়েছিলেন তখন আমার ১ মাসের বাচ্চা ছিল। তিনি আমাদের পরিবারে ও বাচ্চার কথা চিন্তা না করে আন্দোলনে যোগদান করেছিল। আমার স্বামী দেশের জন্য লড়েছেন, জাতির জন্য লড়েছেন। ৫ আগস্টে বিজয় মিছিলের পর বাসায় অনেকে ফিরেছিল তখন আমার স্বামী ফিরে নাই। তিনি শহিদ হয়েছিলেন কিন্তু আমি দেখতে পারিনি। এই না দেখার বেদনা আমি বলে বুঝাতে পারবো না।
শহিদ রাকিবের পিতা বলেন, আমি অনুরোধ করছি শহিদদের স্মরণের জন্য এমন ব্যবস্থা যদি রাখা হয় তাহলে আমাদের সন্তানদের স্মরণ করতে পারবো সন্তুষ্ট হবো এবং কৃতজ্ঞ থাকবো আপনাদের কাছে।
শহিদ ইউসুফের মা বলেন, আমার বাবা গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছে। আমি হাসপাতালে ছুটে যাই। তিনটা লাশ ছিল। আমার বাবার পা দেখে সনাক্ত করি। কিন্তু ওই যন্ত্রনা সহ্য করতে পারি নাই। এরপরও ছাত্র ভাইদের ডাকে সাড়া দিয়ে সর্বাত্মক সহযোগিতা করি আন্দোলনে।
শহিদ পরিবারের আরেক সদস্য বলেন, আছরের নামাজের পর হঠাৎ শুনতে পাই আমার ভাই গুলিবিদ্ধ হয়ে শহিদ হয়েছেন। আমি বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। আমার মা অস্বাভাবিক ভাবে কাঁদতে থাকেন। এই বেদনা নিয়ে বলতে চাই, ফ্যাস্টিটের অত্যাচার দেখে যাচ্ছি, থামছে না। এগুলো প্রথমত থামাতে হবে। থামানোর জন্য পদ্ধতি বের করতে হবে। কেউ অন্যায় করলে সেটা বিচার পাই না। ফেজবুকে ছেড়ে দেই, বিচার চাই, ফাসি চাই স্লোগানে সীমাবদ্ধ থাকি। আমরা এগুলো চাই না। আমরা কঠোর বিচার চাই, বিচার বিভাগীয় সংস্কার চাই।
উল্লেখ্য, জুলাই বিপ্লব প্রথম বর্ষপূর্তি উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক ও প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. শাহিনুজ্জামানের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ ও বিশেষ অতিথি হিসেবে অধ্যাপক ড. এম এয়াকুব আলী ও কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর আলম উপস্থিত ছিলেন।
নেত্রকোনায় ৩ আগষ্ট ২০২৫ তারিখ রবিবার সকালে জেলা সদর উপজেলার হলরুমে সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা ও জেলা শিক্ষা অফিসের আয়োজনে পারফরমেন্স বেইজড গ্রান্টস ফর সেকেন্ডারী ইন্সটিটিউশনস স্কিল -এসইডিপি'র পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে । সারা দেশে শিক্ষার মান উন্নয়নে ও শিক্ষার্থীদের আলোকিত মানুষ রূপে গড়ার লক্ষ্যে সচেতনতামূলক এই পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় । নেত্রকোনা সদর উপজেলার নির্বাহী অফিসার আসমা বিনতে রফিক এর সভাপতিত্বে ও একাডেমিক সুপারভাইজার মো: আব্দুল আউয়ালের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নেত্রকোনার জেলা প্রশাসক বনানী বিশ্বাস ,বিশেষ অতিথির মধ্যে ছিলেন, নেত্রকোনার অতিথির জেলা প্রশাসক ( শিক্ষা ও আইসিটি) শামীমা ইয়াসমিন , নেত্রকোনা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও ভারপ্রাপ্ত জেলা শিক্ষা অফিসার স্বপ্না রাণী সরকার । শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের আওতাধীন পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে কৃতি শিক্ষার্থী , অভিভাবক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তিন ক্যাটাগরিতে ৩০ জন পুরস্কার প্রদান করা হয় । এসইডিপি'র পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন , জেলা প্রশাসক বনানী বিশ্বাস, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ( শিক্ষা ও আইসিটি) শামীমা ইয়াসমিন , সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আসমা বিনতে রফিক,নেত্রকোনা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও ভারপ্রাপ্ত জেলা শিক্ষা অফিসার স্বপ্না রানী সরকার , রাজুর বাজার কলেজিয়েট স্কুলের প্রধান শিক্ষক, লোক গবেষক গোলাম মোস্তফা , আবু আব্বাস কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুর রশিদ, মৌজে বালী দাখিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ এমদাদুল হক ,আব্বাসিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি লতিফ হায়দার টিটু আব্বাস , অভিভাবক শিক্ষক হারুন অর রশিদ, দত্ত উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী অর্পিতা হক ঐশী , এন আকন্দ আলিয়া মাদ্রাসার সাবেক শিক্ষার্থী আশরাফুজ্জামান প্রমূখ । প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক বনানী বিশ্বাস বলেন , শুধু সার্টিফিকেট অর্জন করলেই হবে না, আমাদের কে মানুষের মত মানুষ হতে হবে । একজন ভালো মানুষ হয়ে পরিবার ,সমাজ , রাষ্ট্র ও গণমানুষের জন্য কাজ করতে হবে। প্রচুর পড়াশোনা করতে হবে । তিনি সকল কে সকল প্রকার মাদকাসক্ত থেকে বেরিয়ে এসে দেশের উন্নয়ন ও মানুষের সেবায় নিয়োজিত থাকার আহ্বান জানান । বিশেষ অতিথির মধ্যে ছিলেন, নেত্রকোনার অতিথির জেলা প্রশাসক ( শিক্ষা ও আইসিটি) শামীমা ইয়াসমিন , নেত্রকোনা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও ভারপ্রাপ্ত জেলা শিক্ষা অফিসার স্বপ্না রাণী সরকার।
নেত্রকোনা সদর উপজেলার বাংলা ইউনিয়নের সহিলপুর থেকে নয়াপাড়া বাংলা এলাকায় বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) বৈদ্যুতিক লাইনের বেহাল দশা জনমনে চরম আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। এলাকাবাসী দ্রুত এই ঝুঁকিপূর্ণ লাইন সংস্কারের জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন।নয়াপাড়া বাংলা এলাকার এই বিদ্যুৎ লাইনে কোনো বৈদ্যুতিক খুঁটি নেই, বরং নিম্নমানের বাঁশের খুঁটি ব্যবহার করা হয়েছে। এই লাইনটি বাঁশঝাড় ও লোকজনের চলাচলের রাস্তার পাশ দিয়ে গেছে। বিশেষ করে, বীণাপাণি বিদ্যাপীঠ স্কুলের ছোট ছোট শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন এই ঝুঁকিপূর্ণ লাইনের পাশ দিয়ে স্কুলে যাতায়াত করে। বীণাপাণি বিদ্যাপীঠের অধ্যক্ষ অজিত কুমার সিংহ বলেন, "এই নিম্নমানের বৈদ্যুতিক খুঁটি দ্রুত সংস্কার করে নতুন বৈদ্যুতিক খুঁটি স্থাপন করা অত্যন্ত জরুরি। এটি এলাকাবাসীকে চরম বিপদের হাত থেকে রক্ষা করবে।"
এলাকাবাসীর আশঙ্কা, যেকোনো সময় একটি বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে, বিশেষ করে ঝড়-তুফানের এই মৌসুমে আতঙ্ক আরও বেড়েছে। বাংলা নয়াপাড়া এলাকায় অবস্থিত রায়বাড়ী ও ঐতিহ্যবাহী বীণাপাণি বিদ্যাপীঠের প্রতিষ্ঠাতা জনাব অসীম কুমার রায়ও এই সমস্যার দ্রুত সমাধানে গুরুত্বারোপ করেছেন। জানমালের নিরাপত্তার কথা ভেবে এবং যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা এড়াতে এলাকাবাসী ও ভুক্তভোগী পরিবারগুলো সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে অবিলম্বে জরাজীর্ণ ও চিকন বাঁশের খুঁটি দিয়ে নির্মিত এই লাইনের বেহাল দশা থেকে উত্তরণের মাধ্যমে সকল দুর্ঘটনা থেকে জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জোর দাবি জানিয়েছেন। নেত্রকোনা পিডিবি কর্তৃপক্ষ যাতে দ্রুত বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখে বৈদ্যুতিক লাইন সংস্কার করে নতুন খুঁটির ব্যবস্থা নেয়, সে বিষয়ে এলাকাবাসী সকলের সহযোগিতা কামনা করেছেন।
নড়াইল সদর উপজেলার চরশালিখা গ্রামে ৮৫ বছরের বৃদ্ধা ছিয়ারন নেসার জমি লিখে নিয়ে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয়ার অভিযোগে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। গ্রামবাসীর আয়োজনে শনিবার (২ আগস্ট) দুপুরে চরশালিখা গ্রামীণ রাস্তার তিনমাথায় মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধনে বক্তব্য দেন-বাঁশগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য সাখা কাজী, ভুক্তভোগী ছিয়ারন নেসা ও তার ছেলে বাবু মোল্যা, মশিয়ার রহমান, নবীর হোসেন, লিটন শেখ, আব্দুর রহমান, মুরাদ হোসেনসহ অনেকে।
বক্তারা জানান, নাতনি কমলা বেগম চরশালিখা গ্রামে প্রায় ৪২ শতক বসতভিটার জমি লিখে নিয়ে নানী ছিয়ারন নেসাকে বাড়ি থেকে প্রায় এক সপ্তাহ আগে তাড়িয়ে দিয়েছেন। এ ঘটনায় ক্ষুদ্ধ হয়েছেন ছিয়ারন নেসার একমাত্র ছেলে বাবু মোল্যাসহ গ্রামবাসী।
প্রতিবেশিরা জানান, আড়াই মাসের সন্তান কমলাকে রেখে তার মা আনজিরা বেগম মারা যান। এরপর নানী ছিয়ারন নাতনি কমলাকে নিজের বুকের দুধ খাইয়ে বড় করেন। আদরের নাতনি কমলাকে নিজ গ্রাম চরশালিখায় বিয়ে দেন। এরপর নাতজামাইকে প্রায় সাত শতক জমি বিক্রি করে আট বছর আগে বিদেশ পাঠান। নাতনি কমলা বেগমের আবদারে বসতভিটার পাঁচ শতক জমি লিখে দিতে রাজি হন নানী ছিয়ারন। কিন্তু কমলা বেগম অপকৌশলে নানীর কাছ থেকে ৪২ শতক জমি লিখে নেন। প্রায় এক সপ্তাহ আগে বৃদ্ধা ছিয়ারন বেগমকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়ে উল্টো নানিসহ প্রতিবেশিদের নামে সংবাদ সম্মেলন করে থানায় অভিযোগ দিয়েছেন কমলা বেগম। কমলা দাবি করে জানান, তিনি নানীর কাছ থেকে ফাঁকি দিয়ে জমি লিখে নেননি।
তবে গ্রামবাসী বলেন, ছিয়ারন নেসার অনেক জমিজমা থাকতেও আদরের নাতিকে সব জমি লিখে দিয়ে আজ পথে পথে ঘুরছেন। বাড়িতে উঠতে পারছেন না। নিজের ঘরে মাথা গোঁজার ঠাঁই না পেয়ে গ্রামে এ-বাড়ি, ও-বাড়ি খেতে হচ্ছে ছিয়ারন নেসাকে। অনেক কষ্টে বিভিন্ন জায়গায় থাকতে হচ্ছে। ছিয়ারন নেসা ছেলে বাবুকেও মাথা গোঁজার মতো একটু জমি দিতে পারেননি। সব জমি তার নাতনি লিখে নিয়েছেন। এ পরিস্থিতিতে ছিয়ারন নেসার ছেলে বাবুর সংসার চালাতে কষ্ট হচ্ছে। আমরা এ ঘটনার সঠিক বিচার চাই। ঘটনাটি নড়াইল সদর থানা পুলিশ তদন্ত করছে। বৃদ্ধা ছিয়ারন নেসা যেন ন্যায়বিচার পান এই প্রত্যাশা করছেন গ্রামবাসী।
এদিকে সদর থানার এসআই সুকান্ত ও এএসআই জাবেদ বলেন, শুক্রবার বিকেলে আমরা সরেজমিন তদন্ত করেছি। ভুক্তভোগীসহ গ্রামবাসীর সঙ্গে কথা বলেছি। বিষয়টি তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত ঘটনা বেরিয়ে আসবে।
আবহমান গ্রাম বাংলার মাটি ও মানুষের কবি পল্লীকবি জসীম উদদীন স্মরণে ফরিদপুর সাহিত্য পরিষদের আয়োজনে "শতবর্ষে কবর" গ্রন্থের প্রকাশনা উৎসব শনিবার বিকেলে রাজধানীর বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
ফরিদপুরের সাবেক ডিসি ও ফরিদপুর ফাউন্ডেশনের সভাপতি জালাল আহমদ এর সভাপতিত্বে- ফরিদপুর সাহিত্য পরিষদের সাধারন সম্পাদক মফিজ ইমাম মিলনের সঞ্চালনায় অনুষ্টানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় শিক্ষা উপদেষ্টা ড. সি. আর আবরার।
এসময় পল্লীকবি জসীম উদদীন এর কবর কবিতা ও তার সাহিত্যকর্ম নিয়ে অলোচনায় অংশ নেন কথা সাহিত্যিক ও গবেষক আন্দালিব রাশদী, বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা পাখি বিশেষজ্ঞ, ইনাম আল হক, ভ্রমণ লেখক ও কথা সাহিত্যিক ফারুক মঈনুদ্দীন, নয়নজুলি প্রকাশনীর স্বত্ত্বাধিকারী ড. মোহাম্মদ আলী খান, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক মুহাম্মদ আবদুস সামাদ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. কাকলী মুখোপাধ্যায়, ডেইলী স্টারের সাহিত্য সম্পাদক ইমরান মাহফুজ, ফরিদপুর সাহিত্য পরিষদের সভাপতি প্রফেসর আলতাফ হোসেন, জুলাই যোদ্ধা ইমরান মাহফুজ সহ লেখক,সাংবাদিক, কবি, সাহিত্যিকগণ।
অনুষ্ঠানে শিক্ষা উপদেষ্টাসহ অতিথিদেরকে ফুলেল শুভেচছা জানান ফরিদপুর মুসলিম মিশন প্রাক্তন ছাত্র কল্যাণ সমিতির সভাপতি আবদুল্লাহ আল মামুন ও সদস্য মোঃ কামাল উদ্দিন মিয়াসহ অন্যান্যরা।
কুমিল্লার গোমতী নদীর দুই তীরে গড়ে ওঠা সব ধরনের অবৈধ স্থাপনা ছয় (০৬) মাসের মধ্যে উচ্ছেদের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। রবিবার (০৩ আগষ্ট) দুপুরে বিচারপতি মজিবুর রহমান ও বিচারপতি বশির উল্লাহ সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ প্রদান করেন।
আদালত আদেশে বলেছেন, গোমতী নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ রক্ষায় যেকোনো ধরনের দখলদারিত্ব কঠোরভাবে দমন করতে হবে। আদালত আরও বলেন, এই নদীর তীরে গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনা পরিবেশ, জীববৈচিত্র্য এবং জনস্বার্থের জন্য মারাত্মক হুমকি তৈরি করছে।
এই রিটের আবেদনকারী ছিলেন নদী রক্ষা ও পরিবেশ আন্দোলনের কর্মী আইনজীবী একলাছ উদ্দিন ভূইয়া। রিটকারীর পক্ষে শুনানী করেন, সিনিয়র আইনজীবী মনজিল মোর্শেদ।
তিনি বলেন, "গোমতী নদী এখন দখলদারদের দখলে চলে গেছে। নদী চিহ্নিত করে সীমানা নির্ধারণ সত্ত্বেও সেখানে গড়ে ওঠেছে অবৈধ দোকানপাট, স্থাপনা ও বাড়িঘর।
তিনি আরও বলেন, "আদালতের এই রায় শুধু গোমতী নয়, দেশের সব নদী রক্ষায় একটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। আমরা আশা করছি প্রশাসন এখন আর দখলদারদের সঙ্গে আপস না করে কঠোরভাবে আইন প্রয়োগ করবে।"
আদালতের নির্দেশে, সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসন, পানি উন্নয়ন বোর্ড, অন্যান্য সরকারি দপ্তরগুলোকে এই ছয় মাসের মধ্যে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলা হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী খান মোহাম্মদ ওয়ালিউজ্জামান বলেন, আমি এখনো নির্দেশনা হাতে পাইনি। তবে আমরা নিয়মিত ভাবে ই গোমতীর দুই পাড়ে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ কার্যক্রম চালিয়ে থাকি।
কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মোঃ আমিরুল কায়সার বলেন, আমি রিটকারী আইনজীবীর সাথে কথা বলেছি এবং মহামান্য আদালতকে জানিয়েছি নদীর দুই তীরে সাড়ে পাঁচশোর বেশি অবৈধ স্থাপনা রয়েছে। এগুলো উচ্ছেদের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ব্যয় বাজেট পাঠানো হয়েছে। আমরা অর্থ বরাদ্দ পেলে কাজ শুরু করব।
জেলা প্রশাসক আরো বলেন, আমরা ইতিমধ্যে সদর উপজেলার গোমতী নদীর দুই তীরের বিভিন্ন অবৈধ স্থাপনার বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছি।
কুষ্টিয়ায় পৃথক অভিযানে ১৫ লক্ষ টাকার জাল ও মাদক উদ্ধার করেছে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি)। এসময় মালিকবিহীন অবস্থায় ভারতীয় ৩০০ কেজি অবৈধ চায়না দুয়ারী জাল, ১০০ গ্রাম হেরোইন এবং ৩০০ পিস সিলডিনাফিল ট্যাবলেট আটক করা হয় । রবিবার (৩ আগস্ট) দুপুর ২টার দিকে কুষ্টিয়া ৪৭ বিজিবির পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।
বিজিবি সূত্র জানান, সুনির্দিষ্ট গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে মিরপুর উপজেলার কাতলামারী এলাকায় ভোর ৫টার দিকে ব্যাটালিয়ন সদরের বিশেষ টহল দল অভিযান চালিয়ে মালিকবিহীন অবস্থায় ৩০০ কেজি অবৈধ চায়না দুয়ারী জাল উদ্ধার করে, যার আনুমানিক মূল্য ১২,০০,০০০ টাকা।
এর আগে গত ২ আগস্ট রাত সাড়ে ১১টার দিকে দৌলতপুর উপজেলার জামালপুর এলাকায় মাদক চোরাচালান বিরোধী অভিযান চালিয়ে মালিকবিহীন অবস্থায় ভারতীয় ১০০ গ্রাম হেরোইন এবং ৩০০ পিস সিলডিনাফিল ট্যাবলেট আটক করেন বিজিবি। যার আনুমানিক মূল্য- ২,৯০,০০০ টাকা। আটককৃত মাদক ও জালের সর্বমোট মূল্য- ১৪,৯০,০০০ টাকা।
আটককৃত এসকল অবৈধ জাল এবং মাদকদ্রব্য ধ্বংসের জন্য ব্যাটালিয়ন মাদক স্টোরে জমা করার কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানান বিজিবি সূত্র।
কুষ্টিয়া ব্যাটালিয়ন (৪৭ বিজিবি’র) অধিনায়ক লেঃ কর্নেল মোঃ মাহবুব মুর্শেদ রহমান পিএসসি বলেন, সীমান্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং মাদক পাচারসহ সব ধরনের অবৈধ কার্যক্রম প্রতিরোধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে ৪৭ বিজিবি। ভবিষ্যতেও এমন অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানান তিনি।
পরমাণু বিজ্ঞানী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক এবং উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ড. এম শমশের আলীর মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মোঃ মাহফুজ আলম।
এক শোকবার্তায় তিনি মরহুমের বিদেহ আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশের শিক্ষাক্ষেত্রে পরমাণু বিজ্ঞানী শমশের আলীর অসামান্য অবদান রয়েছে। তিনি বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী ছিলেন। তাঁর মৃত্যু দেশের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি।
উল্লেখ্য, পরমাণু বিজ্ঞানী শমশের আলী শনিবার (২রা আগস্ট) দিবাগত রাত সাড়ে ৩ টার দিকে ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৭ বছর।
বর্ষার ভরা মৌসুমে মিলছেনা ইলিশের দেখা। শুন্য হাতে ফিরছে জেলে নৌকা গুলো। ফলে মানবেতর জীবন কাটাতে হচ্ছে নোয়াখালীর উপকূলীয় উপজেলা হাতিয়ার লক্ষাধিক জেলে পরিবারকে। চোখে মূখে হতাশা ও চিন্তার ছাপ। জেলে, শ্রমিক, ব্যাপারী ও আড়ৎদার সবার একই অবস্থা।
হাতিয়া উপজেলায় নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত মিলিয়ে প্রায় ১ লাখ ২০ হাজারের মতো জেলে রয়েছে। যাদের জীবিকা সরাসরি জড়িত মেঘনা নদী ও বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরা ও বিক্রির সাথে। এই জেলেদের মধ্যে প্রায় ৮০% ভাগ নির্ভর করে শুধুমাত্র ইলিশের মৌসুমের উপর। অথচ চলতি মৌসুমে জেলেরা বলছেন, মাছ ধরতে গিয়ে প্রতিদিন লোকসান গুনতে হচ্ছে।
এপ্রিল থেকে আগষ্ট পর্যন্ত ইলিশের ভরা মৌসুম। এসময় জেলেরা পুরোপুরি ভাবে ব্যাস্ত সময় পার করে ইলিশ শিকারে। প্রতি বছরের ন্যায় এই বছরও দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার জেলেরা নদীতে মাছ শিকারে ব্যাস্ত সময় পার করছে। নিঝুমদ্বীপ, বন্দরটিলা, সুইজের ঘাট, মোক্তারিয়া, দানারদোল, সূর্যমূখী, কাজিরবাজার বাংলাবাজার ও চেয়ারম্যানঘাট সহ দ্বীপের বড় ২০ টি ঘাটের ছোট বড় প্রায় ১০ হাজার জেলে নৌকা নদীতে বিচরণ করছে। কিন্তু হতাশার বিষয় হলো জেলেদের জালে মিলছে না কাংখিত ইলিশ। প্রতিদিনই শুন্য হাতে ঘাটে ফিরতে হচ্ছে তাদের। মৌসুমের বেশিরভাগ সময় ফেরিয়ে গেলেও এখনো লাভের মুখ দেখেনি তারা। অন্যদিকে নদীতে যেতে প্রতিদিনই যে ব্যয় হচ্ছে তাতে আর্থিক দেনার পরিমান দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। অনেকে পরিবারের দৈনন্দিন ব্যয় মিটাতে হিমশিম খাচ্ছেন। ঘাট গুলোতে হাঁকডাক নেই, দেখা দিয়েছে নিরব নিস্তব্দতা ও হতাশা।
সরেজমিনে উপজেলার সূর্যমূখী ঘাটে গিয়ে দেখাযায়, দক্ষিন পাশে খাল পাড়ে বসে আছেন করিম মাঝি (৫৮) নামে এক জেলে। কুশল বিনিময়ের এক পর্যায়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন তিনি।মূখের দাড়ি বেয়ে পড়তে থাকে চোখের পানি। করিম মাঝি বলেন, সিজনের শুরুতে ধার দেনা করে নদীতে নামি। যা মাছ পাই তা বিক্রি করে তেল খরচও মিটাতে পারিনা। এজন্য গত চারদিন নদীতে না গিয়ে ঘাটে বেকার বসে আছি। প্রতি সপ্তাহে এনজিও থেকে কিস্তির জন্য লোকজন আসেন। পরিবারের খরচ চলেনা। সমুদ্রে মাছ নেই চুলায় আগুন নেই।
করিম মাঝির মত অনেকে খাল পাড়ে দাড়িয়ে থেকে বসে সময় কাটাচ্ছেন। সবার মূখে হতাশার চাপ। কথা হয় সূর্যমূখী ঘাটের আব্দুর রব মাঝির সাথে । তিনি জানান, তার ইঞ্জিন চালিত নৌকায় ৮জন লোক কাজ করেন। গত দুই মাসে একটাকাও ভাগে পায়নি কেউ। একদিকে নৌকার খরচ অন্যদিকে সংসারের ব্যয় । সবমিলে দু মাসে একলাখ ৫০ হাজার টাকা দেনার মধ্যে পড়ে আছেন। এর মধ্যে দুজন লোক কাউকে না বলে গোপনে চট্রগ্রাম চলে গেছেন। এখন নৌকাটি ঘাটে পড়ে আছে। লোকের অভাবে নদীতে যেতে পারছেন না। তিনি আরো জানান, এই ঘাটে স্থানীয় ও বাহিরের মিলে ৫ শতাধিক ট্রলার রয়েছে। সব মিলে ৩০-৪০ টি ট্রলার নদীতে যায়। অন্যরা সবাই ঘাটে বেকার সময় পার করছে। মাছ না থাকায় কেউ এখন নদীতে যায়না।
সূযমূখী মাছ ঘাটের শ্রমিক সর্দার নুর ইসলাম জানান, তার অধিনে এই ঘাটে ৮৫ জন শ্রমিক কাজ করে। খালে কোন নৌকা বা ট্রলার এলে তারা টুরকিতে করে সেই মাছ ডাকের বাক্সে এনে দেয়। প্রতিদিন যে টাকা পায় তা ভাগ করে নেয়। এই বছর প্রথম থেকে মাছ নেই নদীতে। প্রতিদিন কাজ শেষে ভাগে ৩০-৪০ টাকা করে পায় শ্রমিকরা। এতে নিজেদের চা নাস্তাও হয় না। সংসার চালাতে হয় দেনা করে।
সূর্যমূখী ঘাটের মাছ ব্যবসায়ী সমিতির সাধারন সম্পাদক মো: ফয়েজুর রহমান নান্টু বলেন, ৯৩ সাল থেকে মাছ ব্যবসার সাথে জড়িত। এই বছরের মতো এতো কঠিন অবস্থা আর কখনো দেখিনি। মৌসুমের প্রথম থেকে মাছ নেই। অনেকে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে অন্যত্র চলে গেছে। ঘাটে পড়ে থাকা অসংখ্য জেলে নৌকার জেলেরা পালিয়ে গেছে। ঘাটে সবার মূখে হতাশা। একধরনের নিরব হাহাকার চলেছে জেলে পল্লী ও মাছ ঘাটে। তিনি আরো বলেন, শুধু সূর্যমূখী ঘাটে নয় একই অবস্থা হাতিয়ার ২০টি ঘাটে। মাছ ব্যবসার সাথে জড়িত সবাই অনেকটা দেউলিয়া হয়ে পড়েছে।
এছাড়াও জেলেদের অভিযোগ , বরাদ্দকৃত প্রণোদনা ও চাল বিতরণ কার্যক্রমে অনিয়ম রয়েছে। প্রকৃত জেলেরা বঞ্চিত হচ্ছেন সহায়তা থেকে।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফাহাদ হাসান দৈনিক বাংলাকে বলেন, 'এখনতো আমাবস্যা চলতেছে,এখন আগের তুলনায় মাছ পাওয়া যাচ্ছে। জেলেরা যদি বলে মাছ পায়না এটা ঠিক না। আমিতো এখানে একবছর যাবৎ চাকুরী করি, জেলেরা সবসময় বলে মাছ পায়না। অনেকের লাভ লোকসানের বিষয় থাকতেই পারে। এটাতো নদীর মাছ চাষের না, এখানেতো আর পুরোপুরি হাত নাই।'
তিনি ভরা মৌসুমে ইলিশ না পাওয়ার কারন হিসাবে জাটকা নিধন, মা ইলিশ ধরা ছাড়াও ডুবো চর, জলবায়ুর পরিবর্তন। এছাড়াও উপকূলীয় এলাকায় কলকারখানার বর্জ্য নদীতে আসাতে মাছের বিচরণ অনিরাপদ হয়ে উঠছে বলে উল্লেখ করেন ।
নোয়াখালী জেলা মৎস কর্মকর্তা মো. ইকবাল হোসেন দৈনিক বাংলাকে বলেন, ' আমি গত পরশু চেয়ারম্যানঘাট, নিঝুম দ্বীপ ও সূর্যমুখী ঘাটে গিয়েছি। জেলেরা ইলিশ পাচ্ছে তবে তাদের আশানুরূপ পাচ্ছেনা। ইলিশ পরিপূর্ণভাবে আসে আগষ্টের মাঝামাঝি থেকে সেপ্টেম্বরে। আশাকরি সামনের এসময়ে তারা পর্যাপ্ত ইলিশ ধরতে পারবে।'
চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে সালিশি বৈঠকে ফখরুল ইসলাম (৫৮) নামের এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যা করার অভিযোগ উঠেছে । এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানা পুলিশ নুর আলম (৪২) ও মো.মুসলিম (৪৫) নামে দুই ব্যক্তিকে আটক করেছে।
শুক্রবার দিবাগত রাতে হাটহাজারী থানাধীন ১নং চসিকস্থ সন্দীপ কলোনির আমতলী এলাকা থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়। নিহত ফখরুল ইসলাম উল্লেখিত এলাকার ফয়জল মাওলার পুত্র।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত মাসের ২৭ জুলাই স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে উল্লেখিত এলাকার জান্নাতুল মায়মুনা রুমিকে ওই এলাকার রিফাত ও তার সহযোগী জাহিদ,বাদল,রিপন,আব্দুর রহমান জোরপূর্বক তুলে নিয়ে নোয়াখালীর সুবর্ণচরে নিয়ে যায়। পরে সেখানে রিফাত জোরপূর্বক তাকে বিয়ের রেজিস্টারে স্বাক্ষর করিয়ে নেয়। এদিকে ভিক্টিমের পরিবার জান্নাতুল মাইমুনা রুমিকে খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে ঘটনারদিন রাতেই হাটহাজারী মডেল থানায় জিডি করেন। এরপর হাটহাজারী মডেল থানা পুলিশ নোয়াখালীর সুবর্ণচর থেকে সেখানকার থানা পুলিশের সহযোগিতায় জান্নাতুল মাইমুনা রুমিকে উদ্ধার করে হাটহাজারী এনে তার পরিবারের নিকট হস্তান্তর করা হয়। পরে শুক্রবার রাতে ছেলে মেয়ে উভয় পক্ষ একটি সমাধানের জন্য সন্দীপ কলোনীর আমতলী এলাকায় সালিশে বৈঠকে বসে। সেখানে এলাকার সমাজ প্রতিনিধি মেয়ের কাছ থেকে ঘটনা সম্পর্কে জানার সময় ছেলে পক্ষ এবং মেয়ে পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি ও সংঘর্ষ লেগে যায়। সংঘর্ষের এক পর্যায়ে মেয়ের বাবা ফখরুল ইসলামের উপর হামলা চালালে তিনি অজ্ঞান হয়ে যায়। পরে স্বজনরা তাকে উদ্ধার করে দ্রুত স্থানীয় একটি প্রাইভেট হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে দায়িত্বরত চিকিৎসক পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষে তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হাটহাজারী মডেল থানার উপ-পরিদর্শক ইমরান জানান, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশের সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত করে লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে।
নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার বৈকুন্ঠপুর গ্রামে শাবনাজ আক্তার (৩২) নামের এক নারীকে কুপিয়ে জখম করার অভিযোগ উঠেছে বাবা-ছেলের বিরুদ্ধে।
গত ৩০ জুলাই সকালে নিজ বাড়ির সামনে এ ঘটনা ঘটে। বর্তমানে আহত শাবনাজ নওগাঁ সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। অভিযুক্তরা হলেন একই গ্রামের মৃত আবুলের ছেলে মো. সোহাগ (৩৬) এবং তার ছেলে মো. শুভ (১৯)।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এর আগেও গত ৯ জুলাই দুপুরে বিরোধপূর্ণ জমি নিয়ে পূর্ব শত্রুতার জেরে সোহাগ, গোলাপ, শুভ, রিনা ও সাবিনা ইয়াসমিন দলবদ্ধ হয়ে শাবনাজের বাড়িতে হামলা চালায়। তারা বাড়ির বাগানে থাকা পেয়ারা, বাদাম ও আম গাছসহ বিভিন্ন ফলগাছ কেটে ফেলে। এ সময় শাবনাজ ও তার মা রশিদা বেগমকে বাঁশ ও লোহার রড দিয়ে মারধর করা হয়, যার ফলে শরীরের বিভিন্ন স্থানে ফোলা ও জখম হয়। অভিযুক্তরা ঘরের আলমারি ভেঙে আট আনার একটি স্বর্ণের চেইন (মূল্য আনুমানিক ৮০ হাজার টাকা) ও বিদেশযাত্রার জন্য জমাকৃত নগদ ১ লাখ ২০ হাজার টাকা লুট করে নিয়ে যায়। বাধা দিলে শাবনাজ ও তার মায়ের পোশাক ছিঁড়ে শ্লীলতাহানির অভিযোগও রয়েছে।
এ ঘটনায় শাবনাজের মা রশিদা বেগম বাদী হয়ে বদলগাছী থানায় মামলা দায়ের করেন। পুলিশ ১ জনকে গ্রেপ্তার করলেও পরে জামিনে মুক্ত হয়ে গোলাপ বিদেশে চলে যায়। মামলার জেরে গত ২৯ জুলাই অভিযুক্তরা আরো ক্ষিপ্ত হয়ে শাবনাজের বাড়িতে গিয়ে হত্যার হুমকি দেয়।
গত ৩০ জুলাই পাশের বিরোধপূর্ণ জমিতে মরিচ গাছ কাটতে গেলে শাবনাজ নিষেধ করলে ক্ষিপ্ত হয়ে সোহাগ ও তার ছেলে শুভ ধারালো হাসুয়া নিয়ে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে। এতে শাবনাজের হাত ও মুখে গুরুতর জখম হয়। পরে তার তার ভাই ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার করে নওগাঁ সদর হাসপাতালে ভর্তি করান।
ভুক্তভোগী শাবনাজ কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “আমাকে এর আগেও একাধিকবার হামলা করেছে। কোথায় যাবো, কী করবো বুঝতে পারছি না। এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গেলেই সোহাগ, শুভ, গোলাপসহ কয়েকজন আমাকে হত্যার হুমকি দেয়। আমার বিদেশ যাওয়ার জন্য জমাকৃত সব টাকা ও স্বর্ণ লুট করে নিয়ে গেছে। সেদিন আমাদের জমির মরিচ গাছ কেটে ফেলছিল, আমি বাধা দিতেই ক্ষিপ্ত হয়ে ছুরি ও হাসুয়া নিয়ে আমাকে কোপাতে থাকে সোহাগ,শুভ আরো ২-৩ জন। চিৎকার করতে করতে মাটিতে লুটিয়ে পড়ি, তবুও তারা থামেনি। আমি ও আমার পরিবারের উপর একাধিক হামলার সঠিক বিচার চাই।”
শাবনাজের মা রশিদা বেগম (৬৫) বলেন, “বর্তমানে সোহাগ ও তার ছেলে শুভ এলাকায় সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালাচ্ছে। কথায় কথায় বাড়ি থেকে ধারালো অস্ত্র বের করে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। আমরা ভয়ে থানায় অভিযোগ করতেও পারি না। মামলা করায় আবারও মেয়ের উপর হামলা করে গুরুতর জখম করেছে। আমরা গরিব মানুষ, দয়া করে আমাদের বাঁচান।”
এ বিষয়ে বদলগাছী থানার অফিসার ইনচার্জ আনিছুর রহমান বলেন, “জমিজমা সংক্রান্ত বিষয়ে নারীর ওপর হামলার খবর পেয়েছি। তারা অভিযোগ দিলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার একমাত্র আন্তঃজেলা সংযোগ সড়ক মারিশ্যা–দিঘিনালা সড়কে পাহাড় ধসের কারণে রবিবার (৩ আগস্ট) সকালে যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে।
টানা ভারী বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে সকাল সাড়ে ৬টার দিকে বাঘাইছড়ি - খাগড়াছড়ির দীঘিনালা সড়কের ৯, ১০ ও ১৪ কিলোমিটার এলাকায় পাহাড় ধসে পড়েড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে পড়ে । এতে চট্টগ্রামগামী শান্তি পরিবহনের একটি বাসসহ বেশ কয়েকটি ছোট-বড় যানবাহন আটকে পড়ে এবং ভোগান্তিতে পড়েন শতাধিক যাত্রী।
বাঘাইছড়ি পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও শান্তি পরিবহনের লাইনম্যান গিয়াসউদ্দিন নাছির বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন,
এখন পর্যন্ত তিনটি স্থানে পাহাড় ধসের খবর পাওয়া গেছে। সব যানবাহন সড়কে আটকে আছে, এখনও মাটি সরানোর কাজ শুরু হয়নি।”
শান্তি পরিবহনের এক যাত্রী মো. আরমান বলেন, “সকাল থেকে গাড়িতে আটকে আছি, চারপাশে প্রচণ্ড বৃষ্টি হচ্ছে, বড় ধসের শঙ্কা থেকে যাচ্ছে।”
এদিকে, খাগড়াছড়ি সড়ক ও জনপদ বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী প্রিয়দর্শী চাকমা জানান, “পাহাড় ধসের খবর পেয়ে দ্রুত কর্মী পাঠানো হয়েছে। ধসের মাটি সরাতে কিছুটা সময় লাগছে।”
পরে বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিরিন আক্তার জানান, “সকাল থেকে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ থাকলেও এখন সড়ক যোগাযোগ সচল হয়েছে। পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে বলা হয়েছে।”
টানা বৃষ্টিতে বাঘাইছড়ির নিচু এলাকাগুলো প্লাবিত হয়েছে এবং বেশ কয়েকটি অভ্যন্তরীণ সড়ক পানির নিচে তলিয়ে গেছে বলে জানা গেছে।