শনিবার, ২৪ মে ২০২৫
১০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
গ্রেনেড বাবু-নূর আজিম-আশিক গ্রুপ

ভারতে বসে খুলনা শহরের অপরাধ জগৎ নিয়ন্ত্রণ

আপডেটেড
২৭ জানুয়ারি, ২০২৪ ০৭:১৩
আওয়াল শেখ, খুলনা ব্যুরো
প্রকাশিত
আওয়াল শেখ, খুলনা ব্যুরো
প্রকাশিত : ২৭ জানুয়ারি, ২০২৪ ০৭:১৩

মাদক ব্যবসা, ভূমি দস্যুতা, চাঁদাবাজি, অস্ত্র বিক্রি ও ভাড়াটে খুনের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে খুলনা শহরের ত্রাস হিসেবে চিহ্নিত তিনটি অপরাধী দল। ওই তিন দলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে শহরে বারবার খুনের ঘটনা ঘটছে। উদ্ধার হচ্ছে একাধিক অস্ত্র ও গুলি। তাদের সরবরাহ করা মাদকসহ ব্যবসায়ীরা আটকও হচ্ছে। তবে অপরাধ জগতের নেতৃত্বে থাকা ব্যক্তিরা রয়েছে ধরাছোয়ার বাইরে। পুলিশ বলছে, বিভিন্ন মায়লায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে ওই সব দাগি অপরাধী ভারতে পালিয়ে গিয়ে সেখান থেকে বসে খুলনা কর্মকাণ্ড অব্যাহত রেখেছে। তাই তাদের আইনের আওতায় আনা যাচ্ছে না।

খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ (কেএমপি) সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে শহরের মধ্যে মাদকের আধিপত্য বিস্তার করতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে গ্রেনেড বাবুর গ্রুপ। মাদকের বিস্তারে আধিপত্য বিস্তারের জন্য গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নগরীর ময়লাপোতা মোড়ে বিহারি রানাকে হত্যা করা হয়েছে।

রানা নিজেই মাদক বিক্রির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। মাত্র কয়েকদিন আগে কারাগার থেকে বের হয়ে তিনি নতুন করে মাদক বিক্রি শুরু করে গ্রেনেড বাবুর সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন।

খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের ডেপুটি কমিশনার (দক্ষিণ) মো. তাজুল ইসলাম জানান, রানা আগে সন্ত্রাসী গ্রেনেড বাবু গ্রুপে ছিল। তার দলের সদস্য হয়ে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত ছিল। কিছুদিন আগে সে নূর আজিম গ্রুপে যোগ দেয়। দুই গ্রুপের মধ্যে বিরোধের জেরেই বিহারি রানাকে হত্যা করা হয়।

এর আগে গত অক্টোবরে খুলনার গোবরচাকার ভাজাওয়ালা গলির মোহাম্মদ খাঁর বাড়ির সামনে ইমন নামের এক যুবককে গুলি করে হত্যা করা হয়।

ইমনের বাবা সানোয়ার শেখ জানিয়েছিলেন, মাদক বিক্রির এক গ্রুপের সদস্যদের সঙ্গে তার ছেলে দ্বন্দ্ব হয়েছিল, যার জেরেই ইমনকে হত্যা করা হয়।

পুলিশের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ইমন নূর আজিমের গ্রুপের কাছ থেকে ইয়াবা কিনে গোবরচাকা এলাকায় বিক্রি করছিল। তবে ওই এলাকাটিতে আগে থেকে গ্রেনেড বাবুর লোকেরা মাদক বিক্রি করত। এই নিয়ে তাদের মধ্যে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়

গ্রেনেড বাবু কোথায় আছে তার সুস্পষ্ট তথ্য পুলিশের কাছে নেই। তবে পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তিনি ভারতে থেকে খুলনার শহরের অপরাধ জগতের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

কেএমপির বিশেষ শাখা সূত্র জানিয়েছে, গ্রেনেড বাবুর আসল নাম রনি চৌধুরী। তিনি নগরীর সামশুর রহমান রোডের মিন্টু চৌধুরীর ছেলে। বর্তমানে তার বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে ১৩টি। আর তার গ্রুপে অস্ত্রধারী সদস্য রয়েছেন ৬ জন। তাদের বিরুদ্ধে মোট মামলা রয়েছে ৩৩টি।

ওই গ্রুপের অন্যান্য অস্ত্রধারী সদস্যরা হলেন, মো. শাকিল, মো. সাব্বির শেখ, আসাদুজ্জামান রাজু ওরফে বিল রাজু ও বিকুল। তাদের বিরুদ্ধে তিনটি করে মামলা রয়েছে।

২০১০ সালে হত্যা মামলায় জড়িয়ে পড়ার পর থেকে গ্রেনেড বাবুর সন্ত্রাসী কার্যক্রম শুরু হয়। মাদক বিক্রির আধিপত্যে ধরে রাখার জন্য ওই বছরের ১০ জুন সন্ধ্যায় জাহাঙ্গীর‌ হো‌সেন ক‌চি নামে এক মাদক কারবারিকে তিনি হত্যা করেন। এ ব্যাপারে পরের দিন কচির বাবা ইলিয়াজ বাদী হয়ে গ্রেনেড বাবুর নাম উল্লেখ করে ৬ জনের নামে থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার পর একই বছরের ২ নভেম্বর গ্রেনেড বাবু পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়। পরে ওই হত্যাকাণ্ডে নিজের দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছিলেন।

চলতি বছরের ২৮ মার্চ ওই মামলায় গ্রেনেড বাবু‌কে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দি‌য়ে‌ছেন আদালত। আদালতের নথি থেকে পাওয়া গেছে, মাদকের টাকার ভাগাভাগিকে কেন্দ্র করে কচির সঙ্গে তার মতো বিরোধ দেখা দিয়েছিল, যার কারণে হত্যাকাণ্ডটি ঘটিয়েছিল।

যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ঘোষণার আগের থেকে গ্রেনেড বাবুর অবস্থানের কোনো তথ্য না পেলেও, বিভিন্ন সময়ে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হওয়া সন্ত্রাসী গ্রেনেড বাবুর সদস্য জানিয়েছে পুলিশ।

গ্রেনেড বাবুর মূল প্রতিদ্বন্দ্বী নূর আজিম গ্রুপ

গ্রেনেড বাবুর সঙ্গে বর্তমানে নতুন মাদক বিক্রির এলাকা দখল নিয়ে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে রয়েছেন নূর আজিমের গ্রুপ। তার দলে অস্ত্রধারী সদস্য সংখ্যা ১৪ জন। ওই দলের নেতৃত্ব দেন শেখ নূর আজিম নিজেই। তার বয়স মাত্র ২৬ বছর। সে নগরীর টুটপাড়া এলাকার শানু মহুরীর ছেলে। কিশোর গ্যাং সৃষ্টির মাধ্যেমে ২০১৬ সালের সে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে যুক্ত হয়। বর্তমানে তার বিরুদ্ধে মোট মামলা রয়েছে ১৩টি। এর মধ্যে খুলনা থানার একটি অস্ত্র মামলায় ৫ বছরের সাজাপ্রাপ্ত হয়ে আপিলে বের হরে পরে পুনরায় হত্যা মামলায় আসামি হন। বর্তমানে পলাতক রয়েছেন। তাদের দলের সদস্যদের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে ৫৮টি।

নূর আজিম পলাতক থাকায় ওই গ্রুপটির বর্তমান নেতৃত্বে রয়েছেন রাজু। সে নগরীর লবনচরা থানাধীন উকিলের কালভার্ট এলাকার জাহাঙ্গীরের ছেলে। তার বিরুদ্ধে মোট মামলা র‍য়েছে ৭টি।

এ ছাড়া ওই গ্রুপের চেগা সোহেলের বিরুদ্ধে ১টি, দাঁত ভাঙা মামুনের বিরুদ্ধে ১টি, মাসুদের বিরুদ্ধে ১টি, মেহেদী হসানের বিরুদ্ধে ৫টি, বিকুলের বিরুদ্ধে ৩টি, মিরাজ শিকদারের বিরুদ্ধে ১টি, কাটা রাশেদের বিরুদ্ধে ২টি, কালু সরদারের বিরুদ্ধে ৪টি, কালা লাভলুর বিরুদ্ধে ৩টি, সাদ্দাম মল্লিকের বিরুদ্ধে ৫টি, টগরের বিরুদ্ধে ২টি ও মো. রাশেদুল ইসলাম খোকনের বিরুদ্ধে ২টি মামলা রয়েছে।

২০২২ সালের ৬ অক্টোবর দুপুরে নগরীর চাঁনমারি খ্রিষ্টানপাড়া এলাকায় সন্ত্রাসীরা পলাশ নামে এক যুবককে কুপিয়ে হত্যা ও সৌরভ নামে আরেক যুবককে কুপিয়ে আহত করা হয়। ওই সময়ে পুলিশ জানিয়েছিল, স্থানীয় নূর আজিম গ্রুপ ও আশিক গ্রুপের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে দ্বন্দ্ব চলে আসছিল। পলাশ আশিকের গ্রুপের সদস্য ছিল।

এরই জেরে আজিম গ্রুপের ৮-১০ জন ওই হত্যাকাণ্ড ঘটায়। নূর আজিম সেই থেকে এখনো ধরা পড়েনি। তবে ওই বছরের ২৮ অক্টোবর পশ্চিম টুটপাড়া এলাকা থেকে পুলিশ দুটি পিস্তল ও একটি গুলির খোসাসহ নূর আজিমের সহযোগী নাহিদ হাসান সরদারকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ।

নূর আজিমের গ্রুপের সদস্য কাটা রাশেদ খুলনা সদর থানার একটি অস্ত্র মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে বর্তমানে কারাগারে আছেন। এ ছাড়া ওই গ্রুপের বাকি সব সদস্য বর্তমানে সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালাচ্ছেন।

নূর আজিমের সঙ্গে পুরোনো দ্বন্দ্ব আশিকের

কেএমপির বিশেষ শাখার তালিকায়, খুলনা শহরের বর্তমানে সব থেকে বেশি প্রভাব বিস্তার করেছে আশিক গ্রুপ। ওই বাহিনী প্রধান আশিক নিজ নামের দলটি গঠন করেছে। সে খুলনা মহানগরীর সদর থানাধীন চানমারী এলাকার মশিউর রহমানের ছেলে। ২০১৮ সালে ৬ সেপ্টেম্বর প্রথম হত্যা মামলায় জড়িয়ে সন্ত্রসী কার্যক্রমে যুক্ত হয়। এ পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় ৫টি মামলা দায়ের হয়েছে। বর্তমানে সে পলাতক আছে। তার দলে সদস্য রয়েছেন ২৩ জন। তাদের বিরুদ্ধে মোট মামলা রয়েছে ১১০টি।

আশিক গ্রুপের প্রধান সহকারী ফয়সাল। সে খুলনা সদর থানাধীন দক্ষিণ টুটপাড়া এলাকার আমিনুজ্জামান খান আমিনের ছেলে। ২০১৬ সালে সেও হত্যা মামলায় জড়িয়ে সন্ত্রাসী কার্যক্রমে যুক্ত হয়। পরে ২০১৮ সালে আশিকের গ্রুপের সঙ্গে কাজ শুরু করে। তার বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত বিভিন্ন থানায় ৮টি মামলা দায়ের হয়েছে।

এ ছাড়া ওই গ্রুপের সদস্য আব্দুল্লাহর বিরুদ্ধে ৯ টি, জাহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে ৩টি, বস মিজানের বিরুদ্ধে ৭টি, পালসার সোহেলের বিরুদ্ধে ৪টি, কাউট বাসারের বিরুদ্ধে ২টি, হেলালের বিরুদ্ধে ৮টি, পারভেজের বিরুদ্ধে ৬টি, দুলালের বিরুদ্ধে ৮টি, নাদিমের বিরুদ্ধে ২টি, ডালিমের বিরুদ্ধে ৩ টি, অপুর বিরুদ্ধে ৩টি, জিহাদ হোসেন জিয়ার বিরুদ্ধে ৫টি, মো. সাগর লেলিনের বিরুদ্ধে ৮টি, শেখ গোলাম মোস্তফা ওরফে ট্যারা মোস্তর বিরুদ্ধে ২৭টি, আরমানের বিরুদ্ধে ৭টি, সাইফুল ইসলাম পিটিলের বিরুদ্ধে ৩টি, মো. ইয়াছিনের বিরুদ্ধে ৫টি, মো. নিয়াজ মোর্শেদের বিরুদ্ধে ৮টি, স্পিকার মিরাজের বিরুদ্ধে ৩টি ও শেখ বাবুল শেখের বিরুদ্ধে ২টি মামলা রয়েছে।

এসব মামলাগুলি হত্যা, চাদাবাজি, মাদক ব্যবসা, অস্ত্র ব্যবসা ও নারী নির্যাতনের ঘটনায় দায়ের হয়েছে। এদের মধ্যে বস মিজান, পারভেজ, অপু, জিহাদ হোসেন জিয়া, মো. সাগর লেলিন বর্তমানে বিভিন্ন মামলায় কারাগারে রয়েছেন। অন্যদিকে ওয়ারেন্ট জারি থাকলেও আশিক, ফয়সাল, ইমন, দুলাল পলাতক রয়েছেন।

পুলিশ তথ্য মতে, আশিক গ্রুপের প্রধান, আশিকের বয়স মাত্র ২৭ বছর। ৭ বছর আগে এলাকার কিশোরদের নিয়ে সে গ্যং সৃষ্টি করে মহড়া দিয়ে বেড়াত। পরে কিশোর গ্যাংয়ের আধিপত্য বিস্তার করতে গিয়ে হত্যাকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে ওই এলাকায় মাদক ও পরবর্তীতে অস্ত্র বিক্রি শুরু করে। ধীরে ধীরে এলাকার জমি ব্যবসায়ীরা তাকে ভাড়ায় নিয়ে বিভিন্ন জনের জমি দখল শুরু করেন।

বর্তমানে শহরের শীর্ষ মাদক সরবরাহকারীও আশিক গ্রুপ। সর্বশেষ গত ১ আগস্ট খুলনার রূপসা সেতু টোল প্লাজা থেকে ৯ হাজার ৩৫০ পিস ইয়াবাসহ আশিকের আপন ভাই সজিবকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। ওই সময়ে র‌্যাব জানিয়েছিল, চট্টগ্রাম থেকে মাদকের বড় বড় চোরাচালান এনে খুলনা শহরে তা বিক্রি করে চক্রটি। ওই মামলায় কয়েকদিন আগে কারাগার থেকে জমিনে বের হয়েছেন সজিব। আশিক এখন পর্দার অন্তরালে থাকলেও, সজিব প্রকাশে বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করছেন।

কেএমপির ডেপুটি পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, এই তিনটি সন্ত্রাসী গ্রুপ মূলত অস্ত্র ও মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত রয়েছে। তবে পুলিশের ধারাবাহিক অভিযানের ফলে শহরের অভ্যন্তরে তারা সেই ভাবে অবস্থান করতে পারেছে না। ভারতে পালাতক আছে বলে বিভিন্ন সময়ে তথ্য পাওয়া যায়। তবে তাদের কিছু সদস্য এখনো বিপথে আছে।

কেএমপি কমিশনার মো. মোজাম্মেল হক বলেন, আগস্ট মাস থেকে বিভিন্ন মামলার আসামি গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান অব্যাহত আছে। মেট্রোপলিটন পুলিশ অপরাধ দমন, আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ এবং নগরবাসীর সেবায় সব সময় তৎপর রয়েছে।


ফ্রুট ব্যাগিং: আম চাষে ৪ হাজার কোটি টাকা বাণিজ্যের আশা

আপডেটেড ২৪ মে, ২০২৫ ১২:২১
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

বরেন্দ্র জেলা নওগাঁ। এ জেলা ধানের জন্য বিখ্যাত হলেও বর্তমানে এটি আমের বাণিজ্যিক রাজধানী হিসেবে বেশ পরিচিতি পেয়েছে। জেলায় ফ্রুট ব্যাগিং পদ্ধতিতে আম চাষ করে অধিক মুনাফা অর্জন করছেন চাষিরা। রোগ বালাইয়ের হাত থেকে রক্ষা পেতে এই পদ্ধতি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ফলে লাভবান হচ্ছেন জেলার শত শত চাষি।

জানা যায়, সাধারণত গৌরমতি, আমরুপালি, বারি-৪ ও ব্যানানা ম্যাংগোতে ফ্রুট ব্যাগিং করা হয়। এতে কীটনাশক ব্যবহারের দরকার পড়ে না। প্রাকৃতিক উপায়ে রোগমুক্ত এ আমের চাহিদাও তাই বেশি। এ বিশেষত্বের কারণে এখানকার আম বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। লাভবান হচ্ছেন প্রান্তিক আম চাষিরা।

নওগাঁর পোরশা উপজেলার বন্ধুপাড়া এলাকার আম বাগানে গিয়ে দেখা যায়, গাছে গাছে ঝুলছে ব্যাগ। আর তার মধ্যেই সুরক্ষিত পরিপুষ্ট আকর্ষণীয় গৌরমতি, আম রুপালি, বারি-৪ ও ব্যানানা ম্যাংগো জাতের আম। এই আমের চাহিদা রয়েছে দেশসহ বিদেশে। কীটনাশক না দিয়ে পরিবেশসম্মতভাবে আম চাষ করার এ পদ্ধতিকে বলা হয় ফ্রুট ব্যাগিং পদ্ধতি।

ফ্রুট ব্যাগিংয়ের পাশাপাশি আমের ব্র্যান্ডিং ও এখানে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে কাজ করে। এটি হলো কোনো পণ্যকে একটি নির্দিষ্ট পরিচয়, নাম এবং গুণগত বৈশিষ্ট্যসহ বাজারজাত করার কৌশল। এর মাধ্যমে পণ্যটি ভোক্তাদের কাছে একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলের বা গুণগত মানের প্রতীক হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। ঠিক তেমনিভাবে নওগাঁর আম ব্র্যান্ড বিশ্ব-দরবারে তুলে ধরা যেতে পারে।

নওগাঁর আম শুধু দেশে নয়, বিগত কয়েক বছর ধরে ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে। এ বছর আরও বড় পরিসরে রপ্তানির সম্ভাবনা রয়েছে। ইতোমধ্যে চীন সরকারিভাবে আম আমদানির ঘোষণা দিয়েছে। কিন্তু প্রযুক্তিনির্ভর প্যাকেজিং, উৎসভিত্তিক পরিচয় ও সনদিকরণের অভাবে এই আম বিদেশে গিয়ে হয়ে যায় বাংলাদেশি আম। নওগাঁ নামটি আড়ালে থেকে যায়। নওগাঁ নামটি স্বীকৃতি পায় না। ফলে এর স্থানীয় পরিচয় হারিয়ে যায়। এতে করে সঠিক মূল্যায়ন এবং স্থানীয় অর্থনীতিতে জেলার স্বতন্ত্র ভূমিকা প্রতিফলিত হয় না।

পোরশার সফল আম চাষি রায়হান আলী জানান, চলতি বছর ৬০ বিঘা জমিতে প্রায় ৩ লাখ আমে ফ্রুট ব্যাগিং করেছেন। এসব আম কীটনাশকমুক্ত। আবার পোকামাকড়ের ক্ষতিকর প্রভাব থেকেও রক্ষা পাবে। ফলন ভালো হবে। বেশিদিন গাছে আম সংরক্ষণ করা যাবে এবং আমের গায়ের রং ভালো ও ঝকঝকে পরিষ্কার থাকবে। এসব আম বিদেশে রপ্তানি করার আশায় তিনি ‘ফ্রুট ব্যাগিং’ করেছেন। আর এতে বেশ লাভবান হবেন বলে আশা করছেন।

রায়হান আলী বলেন, পোকামাকড় ও বিরূপ আবহাওয়ার ক্ষতিকর প্রভাব থেকে আম রক্ষা করতে এই পদ্ধতি খুবই কার্যকর। এছাড়াও ফ্রুট ব্যাগিং পদ্ধতি আম সংরক্ষণ করার একটি সহজ ও উপযুক্ত পন্থা। যা আমের গুণগত মান ও রং সতেজ রাখতে খুবই কার্যকর।

তার আমবাগানে কর্মরত শ্রমিক শরিফুল ইসলাম, কাদের ও সোলায়মান আলী জানান, লেখাপড়ার ফাঁকে ফাঁকে এই বাগানে কাজ করে যা উপার্জন হয় তা দিয়ে লেখাপড়ার খরচ ও সংসার চালানো হয়। সারা বছর ১৫-২০জন শ্রমিক এই আম বাগানে কাজ করেন। তারা সবাই এই উপার্জন দিয়েই সংসার চালান।

সাপাহারের আমচাষি সোহেল রানা বলেন, নিরাপদ আমে খরচ কিছুটা বেশি হলেও লাভজনক। ফ্রুট ব্যাগিং করা আম দেরিতে পরিপক্ব হওয়ায় বাজারে ভালো দাম পাওয়া যায়। প্রতি বছর সুপার শপে নিরাপদ আমের চাহিদা বেড়েই চলেছে। এ বছর তিনি ১ লাখ আমে ফ্রুট ব্যাগিং করেছেন বলে জানান।

পত্নীতলার আমচাষি মঞ্জুর এলাহী বলেন, আম রফতানির আগে কয়েকটি ধাপ অনুসরণ করতে হয়। আমে যাতে ব্যাকটেরিয়া আক্রমণ করতে না পারে, সেজন্য প্রথমে ফ্রুট ব্যাগিং এর কাগজ দিয়ে প্রতিটি আমের শরীর জড়িয়ে দেয়া হয়। বাগান থেকে আম রফতানির ১৫ দিন আগে থেকে গাছে কীটনাশক স্প্রে সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিতে হয়। এরপর আম পেড়ে বিশেষ প্রক্রিয়ায় মোড়কজাত করা হয়। এতে আম নিরাপদ হওয়ার পাশাপাশি আমের গায়ের রং সুন্দর ও আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে।

পোরশা উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সেলিম রেজা বলেন, আধুনিক ও পরিবেশসম্মত আম চাষে কৃষকদের সব ধরনের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। ফ্রুট ব্যাগিং মূলত ক্ষতিকর পোকার আক্রমণ থেকে আমকে রক্ষা করে। তাই এতে কীটনাশক ব্যবহারের প্রয়োজন হয় না। এতে আমের পচন রোধ হয়। ফলে কৃষক কীটনাশক মুক্ত আম বেশি দামে দেশে ও বিদেশে বিক্রি করে বেশি লাভবান হতে পারেন।

নওগাঁ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, মাটি ও জলবায়ুর বিশেষত্বের কারণে দেশের অন্য অঞ্চলের তুলনায় নওগাঁর আম বেশি সুস্বাদু। যেটাকে নিজেদের ভাগ্য বদলের চাবিকাঠি হিসেবে নিয়েছেন স্থানীয় চাষিরা। অন্য জেলাগুলোয় যখন আমের মৌসুম শেষের পথে তখনও এখানে প্রচুর আম রুপালি আম পাওয়া যায়। এজন্য প্রতি বছর জেলায় আমের বাগান উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে।

তিনি বলেন, স্বাদে সেরা হওয়ায় দেশীয় সুপার শপে নওগাঁর নিরাপদ আমের কদর বেশি। নিরাপদ আম উৎপাদনে চাষিদের আগ্রহ বাড়াতে রফতনিযোগ্য আম উৎপাদন প্রকল্পে চাষিদের ফ্রুট ব্যাগিংয়ের ব্যাগসহ বিভিন্ন প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। চলতি বছর নওগাঁ জেলায় ৫০ লাখ ফ্রুট ব্যাগিং করা হয়েছে। যা গত বছরের চেয়ে ৫ গুণ বেশি। চলতি বছর জেলায় কমপক্ষে ৪ হাজার কোটি টাকার আম কেনা-বেচা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সূত্র: বাসস


বৃষ্টিতেই দুধকুমার নদীর নির্মাণাধীন বাঁধে ধস

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারীতে নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার আগেই বৃষ্টির পানিতেই ধসে গেছে দুধকুমার নদীর ডানতীর রক্ষা বাঁধ। বন্যার আগেই বাঁধ ধসে যাওয়ায় স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।

জানা গেছে, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে কুড়িগ্রাম জেলার দুধকুমার নদী ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়ন শিরোনামে ২০২১ সালের ১০ আগস্ট জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়। এর ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৯২ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। যা বিভিন্ন প্যাকেজে বর্তমানে কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তত্ত্বাবধানে বাস্তবায়ন হচ্ছে।

সেই প্রকল্পের আওতায় ভূরুঙ্গামারী উপজেলার ইসলামপুর গ্রামের নদীভাঙন রোধে নদীর ডানতীর সংরক্ষণ প্রকল্প গ্রহণ করে কুড়িগ্রাম পাউবো। ৫০০ মিটার তীর রক্ষা বাঁধের ব্যয় ধরা হয় ১০ কোটি ৪২ লাখ ৫৫ হাজার ৭৩৩ টাকা। ঢাকার মগবাজারের (টি আই পিভিএল জেড) আই জেভি নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এই প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্বে আছে।

এটি ২০২২ সালের মাঝামাঝি শুরু হয়ে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে শেষ করার কথা থাকলেও কাজ এখনো চলমান। এর মধ্যেই প্রকল্পটির মেয়াদ দুই দফা বাড়ানো হয়েছে। কাজ শেষ হওয়ার আগেই গত কদিনের বৃষ্টিপাতে ইসলামপুর সামাদের ঘাট এলাকায় বাঁধের ১২ মিটার অংশ ধসে নদীতে বিলীন হয়ে গিয়েছে।

বন্যা মৌসুম শুরু না হতেই অল্প বৃষ্টিতে বাঁধ ধসে যাওয়ায় ভাঙনের আতঙ্কে স্থানীয়রা। স্থানীয়দের অভিযোগ, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি নদী থেকে বালু তুলে সেই বালু দিয়েই ব্লক তৈরি করেছেন। এটি যথাযথ প্রক্রিয়ায় মিশানো হয়নি। বালু তোলার কারণে বাঁধের নিচে মাটি না থাকায় অল্প বৃষ্টির পানিতেই বাঁধ ধসে গেছে। এছাড়া দুর্বল মনিটরিং ব্যবস্থার কারণে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানটি তাদের মনমতো কাজ করছে।

স্থানীয় বাসিন্দা লুৎফর রহমান জানান, নদী ভাঙন প্রতিরোধে বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু হলে আমরা আশায় বুক বেঁধেছিলাম; কিন্তু কাজ শেষ না হতেই অল্প বৃষ্টিতেই বন্যা আসার আগে বাঁধ ধসে পড়েছে। দ্রুত তীর সংরক্ষণ বাঁধ মেরামত না করলে বন্যায় নদী ভাঙন তীব্র হওয়ার আশঙ্কা করছেন লুৎফরসহ স্থানীয় বাসিন্দারা।

নদী থেকে বালু তোলা বিষয়টি স্বীকার করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রকল্প ব্যবস্থাপক আরিফুল ইসলাম জানান, তীর থেকে নিয়মানুযায়ী ২০০ মিটার দূর থেকে বালু তুলেছেন তারা। তবে স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী লোকজন তীরের কাছ থেকে বালু তোলায় বাঁধে ধস দেখা দিয়েছে। ধসে যাওয়া স্থান মেরামত করা হচ্ছে। তবে, কাজের অনিয়মের কথা অস্বীকার করেন তিনি।

কুড়িগ্রাম পাউবোর উপসহকারী প্রকৌশলী রাফিয়া আখতার জানান, বিষয়টি নিয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা হয়েছে। প্রকল্পের কাজ চলমান থাকায় ক্ষতিগ্রস্ত স্থানের মেরামতের দায়িত্ব ওই প্রতিষ্ঠানের। বাঁধের ধসে যাওয়া অংশের কাজ আবার করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।

সূত্র: ইউএনবি


মুন্সীগঞ্জে জোয়ারের পানিতে ভেসে গেল শতাধিক গরু, ৩৬ মৃত গরু উদ্ধার

আপডেটেড ২৪ মে, ২০২৫ ০৯:৩৩
ইউএনবি

মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার হোসেন্দী ইউনিয়নের ভাটি বলাকী গ্রাম সংলগ্ন খালে জোয়ারের পানির তোড়ে ভেসে গেছে প্রায় শতাধিক গরু। একের পর এক ভেসে উঠছে মরা গরু। বিশাল ক্ষতির মুখে পড়েছে স্থানীয় কৃষক। ভুক্তভোগীদের আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠেছে গ্রামের পরিবেশ।

শুক্রবার(২৩ মে) বিকাল ৪টার দিকে হোসেন্দী ইউনিয়নের ভাটি বলাকী গ্রাম সংলগ খালে এই ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় প্রায় ১ কোটি ২৫ লাখ টাকার মতো আর্থিক ক্ষতি হয়েছে বলে ভুক্তভোগী কৃষকদের সূত্রে জানা গেছে।

স্থানীয়দের তথ্য অনুযায়ী, কৃষক এমরানের ২টা, মহাসিনের ৪টা,ইয়ারুরের ৩টা, মাসুমের ১টা,ওয়াহিদুজ্জামানের ১টা, রনির ১টা, নাহিদের ৩টা, হেলানির ১টা, হানিফার ২টা, মনার ২টা, মো. শরীফের ৩টা, তরিকুলের ২টা, কবিরের খান ৩টা, আবুল হোসেনের ৩টা, জামালের ১টা, শাহাজালালের ৩টা, রসুল গাজীর ১টাসহ বহু কৃষকের শতাধিক গরু পানির তোড়ে ভেসে যায়।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় বাসিন্দা শ্যামল খান বলেন, ‘আজকের দিনটি আমাদের গ্রামবাসীর জন্য একটি দুঃখের দিন হয়ে থাকবে। আমাদের গ্রামের অধিকাংশ মানুষ কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে। সবারই গরু রয়েছে। ভাটি বলাকী গ্রাম সংলগ্ন চরে ঘাস খাইয়ে গরুগুলো লালন-পালন করে সবাই। গ্রাম এবং চরের মধ্যে ছোট একটি খাল রয়েছে। খাল পাড়ি দিয়ে চরে গিয়ে ঘাস খেয়ে প্রতিদিন বিকালে গরুগুলো আবার গোয়ালে ফিরে আসে। শুক্রবার বিকালে খাল পাড় হবার সময় হঠাৎ জোয়ারের পানির তোড়ে এবং কচুরিপানার চাপে শতাধিক গরু ভেসে যায়। এর মধ্যে বিকাল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত ৩৬টি মৃত গরু উদ্ধার করা হলেও এখনো প্রায় ৬৫টি গরু নিখোঁজ। লক্ষ লক্ষ টাকা ক্ষতির মুখে পড়ে কৃষকরা পাগল প্রায়'।

ভুক্তভোগী কৃষক মহসিন বলেন,‘এমন ঘটনা জীবনেও ঘটে নাই। এমন কিছু ঘটতে পারে তা আমরা চিন্তাও করি নাই। আমার ৪টি গরু পানির তোড়ে ভেসে গেছে। আমি একেবারে নিঃস্ব হয়ে গেছি, পথের ফকির হয়ে গেছি'।

কৃষক আবু তালেব সুজন খান বলেন, প্রতিদিনের মতো আজকেও সকালে গরু ঘাস খাওয়ার জন্য খাল পার হয়ে যায়। আসার পথে জোয়ারের পানির স্রোতে প্রায় ১০০ গরু ভেসে যায়। এর মধ্যে ৩৬টি মৃত গরু উদ্ধার হয়েছে। এখনও আনেক কৃষক তাদের গরু খোঁজাখুঁজি করছে।

বিষয়টি সম্পর্কে হোসেন্দী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনিরুল হক মিঠু বলেন, ‘এরকম একটি খবর আমিও পেয়েছি। স্থানীয় ইউপি সদস্যকে এ ব্যাপারে খোঁজখবর নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।’

গজারিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. ফয়সাল আরাফাত বিন ছিদ্দিক বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পাশে রয়েছি আমরা। আমাদের অবস্থান থেকে যতটুকু সম্ভব আমরা তাদের সাহায্য করব।’

গজারিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আশরাফুল আলম বলেন, এখন পর্যন্ত ৩৬টি মৃতগরু উদ্ধার করা হয়েছে, আরও খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে। কৃষকদের অনেক বড় ক্ষতি হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে যতটুকু সম্ভব সহযোগিতা করা হবে।’


ভোলায় সাংবাদিকের ওপর হামলার ঘটনায় গ্রেফতার -১

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
ইউসুফ হোসেন অনিক

ভোলার তজুমদ্দিন উপজেলায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধানে চলমান একটি জলকপাট নির্মাণ প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগের সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে হামলার স্বীকার দৈনিক ইত্তেফাকের তজুমদ্দিন উপজেলা প্রতিনিধি রফিক সাদী ও আজকের ভোলার প্রতিনিধি মো: ফারুকের ওপর হামলার ঘটনায় একজনকে গ্রেফতার করেছে তজুমদ্দিন থানা পুলিশ।

শুক্রবার সকালে তজুমদ্দিন উপজেলার স্লুইস গেট এলাকা থেকে অভিযান চালিয়ে এই মামলার এজাহারভূক্ত আসামি আজগর (৪০) কে গ্রেফতার করে পুলিশ। আজগর হাজারীগঞ্জ এলাকার মো: মোস্তফার পুত্র।

স্থানীয় সূত্রে জানাযায়, বৃহস্পতিবার বিকেলে জাতীয় দৈনিক ইত্তেফাক এর প্রতিনিধি রফিক সাদী ও আজকের ভোলা প্রতিনিধি মো: ফারুক নির্মাণস্থলে তথ্য সংগ্রহ করতে গেলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান গোলাম রাব্বানী কন্সট্রাকশন এর কয়েকজন কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা মিলে তাদের ওপর হামলা চালিয়ে তাদেরকে আহত করে তাদের সাথে থাকা ক্যামেরা ছিনিয়ে নেয়।

পরবর্তীতে হামলার শিকার ওই দুই সাংবাদিকদের মধ্যে মো: ফারুক তজুমদ্দিন থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করলে পুলিশ অভিযান চালিয়ে একজনকে গ্রেফতার করে। বাকিরা পলাতক রয়েছে।

তজুমদ্দিন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো: মোহাব্বত খাঁন জানান, সাংবাদিক নির্যাতনের অভিযোগে ১জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বাকী আসামীদের গ্রেফতারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।


তিন সীমান্তে ৫২ বাংলাদেশীকে পুশ ইন করেছে বিএসএফ

দেশের বিভিন্ন সীমান্তে ভারত থেকে পুশ ইনের ঘটনা ঘটছেই
ফেনীর ছাগলনাইয়া ও ফুলগাজী উপজেলার ভারতীয় সীমান্ত দিয়ে ২৪ জন এবং মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার কর্মধা ইউনিয়নের মুরইছড়া সীমান্ত দিয়ে শিশুসহ ৭ বাংলাদেশিকে ফের পুশইন করা হয়েছে। ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

দেশের বিভিন্ন সীমান্তে ভারত থেকে বাংলাদেশিদের পুশ ইনের ঘটনা অব্যাহত রয়েছে। এ অবস্থায় বিজিবি সতর্ক অবস্থানে রয়েছে বলা হলেও লাভ হচ্ছে না কিছুই। বৃহস্পতিবার ভোরেও পঞ্চগড়, কুলাউড়া, ফেনী সীমান্তে মোট ৫২ বাংলাদেশিকে পুশ ইনের ঘটনা ঘটে। বিস্তারিত প্রতিনিধিদের পাঠানো প্রতিবেদনে।

পঞ্চগড় প্রতিনিধি

বৃহস্পতিবার ভোররাতে জেলার সদর উপজেলার চাকলাহাট ইউনিয়নের জয়ধরভাঙ্গা বিওপি এলাকার সীমান্ত দিয়ে বিএসএফ ২১ বাংলাদেশিকে পুশইন করে। জয়ধরভাঙ্গা সীমান্তের পিলার ৭৫৭/১০-এস হতে আনুমানিক ২.৫ কিলোমিটার বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বড়বাড়ী নামক স্থান থেকে বিওপির বিশেষ টহল দল নারী, পুরুষ, শিশুসহ ২১ বাংলাদেশিকে করে বিজিবি।

পুশইন হওয়া আলেয়া জানান, ‘২০ বছর ধরে আমরা ভারতের গুজরাটে বসবাস করে আসছি। ভারতের পুলিশ আমাদের আটক করে বিএসএফের কাছে হস্তান্তর করে। বিএসএফ আমাদের বিমানে করে শিলিগুড়ি নিয়ে আসে। আমাদের পরিবারের অন্য সদস্যদের কোথায় রেখেছে, এটাও আমরা বলতে পারিনা।’

পঞ্চগড় সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুল্লা হিল জামান জানান, বিজিবি বৃহস্পতিবার বিকেলে আটক ব্যক্তিদের থানায় হস্তান্তর করেছে। আটক শিশুদের সমাজসেবার মাধ্যমে সেফ হোমে এবং অন্যান্যদের বিরুদ্ধে পাসপোর্ট আইনে নিয়মিত মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। বিজিবি কর্তৃপক্ষ বাদি হয়ে মামলা দায়ের করবেন।

নীলফামারীর ৫৬ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল শেখ মো. বদরুদ্দোজা বলেন, বিএসএফ পুশইন করায় আমরা পতাকা বৈঠকে কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছি।

কুলাউড়া প্রতিনিধি

মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার কর্মধা ইউনিয়নের মুরইছড়া সীমান্ত দিয়ে শিশুসহ ৭ বাংলাদেশিকে ফের পুশইন করেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। বৃহস্পতিবার সকাল ৮টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।

বিজিবি সূত্রে জানা গেছে, পুশইনের পর তুতবাড়ি সংলগ্ন এলাকায় স্থানীয় লোকজনের মাধ্যমে খবর পেয়ে বিজিবির সদস্যরা ওই সাতজনকে আটক করেন। আটকদের মধ্যে ২ জন পুরুষ, ২ জন নারী ও ৩ শিশু রয়েছে। তারা সবাই কুড়িগ্রাম জেলার বাসিন্দা।

এ বিষয়ে ৪৬ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এ এস এম জাকারিয়া বলেন, ‘আটক ব্যক্তিরা সবাই বাংলাদেশি নাগরিক। তাদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে। আমরা তাদের কুলাউড়া থানায় হস্তান্তর করবো।’

কুলাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. গোলাম আপছার বলেন, বিজিবি আটক ব্যক্তিদের থানায় হস্তান্তর করলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উল্লেখ্য, এর আগে গত ১৫ মে একই সীমান্ত এলাকা দিয়ে পুশইনের শিকার হয়ে ১৪ জন বাংলাদেশিকে আটক করা হয়েছিলো।

ফেনী জেলা প্রতিনিধি

ফেনীর ছাগলনাইয়া ও ফুলগাজী উপজেলার ভারতীয় সীমান্ত দিয়ে ২৪ জনকে পুশইন করেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। বৃহস্পতিবার ভোরে তাদের পুশইন করা হয়।

বিজিবি জানায়, ফেনীর ছাগলনাইয়া ও ফুলগাজী উপজেলার যশপুর ও খেজুরিয়া বিওপির দায়িত্বপূর্ণ সীমান্ত দিয়ে ৬টি পরিবারের ২৪ জনকে বাংলাদেশে প্রবেশ করায় বিএসএফ। স্থানীয়দের মাধ্যমে সংবাদ পেয়ে বিজিবি ও পুলিশ ঘটনাস্থলেই তাদের আটক করে।

আটকরা প্রত্যেকেই কুড়িগ্রামের বাসিন্দা বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। ২৪ জনের মধ্যে পুরুষ ৬ জন, নারী ৫ জন ও ১৩ জন শিশু রয়েছে। আটককৃতদের ছাগলনাইয়া ও ফুলগাজী থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।

জানা গেছে, এই ব্যক্তিদের ভারতের গুজরাট ও হরিয়ানা থেকে আগরতলা সীমান্তে আনা হয় বিমানযোগে। এই দলে ছিলো ১৪০ জন। এরমধ্যে ২৪ জনকে ফেনীর দুই সীমান্তে পুশ ইন করা হয়।

আটক ব্যক্তিদের সাথে কথা বলে জানা যায়, তাদের মধ্যে ১০ জন মুসলমান, বাকিরা হিন্দু। ১৫ বছরের বেশি সময় তারা ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে বসবাস করে আসছিলেন।

ফেনী ৪ বিজিবি অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসেন জানান, বৃহস্পতিবার ভোরে বিএসএফ কর্তৃক ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশের সময় তাদের আটক করা হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী তাদের থানায় সোপর্দ করা হয়েছে।

ছাগলনাইয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, আটককৃতরা থানা হেফাজতে রয়েছে।


লালপুরে ৩১৫ কোটি টাকার কোরবানির পশু বিক্রির আশা

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
সজিবুল ইসলাম, লালপুর (নাটোর)

আসন্ন ঈদুল আজহা সামনে রেখে নাটোরের লালপুরে কোরবানির জন্য প্রায় ৭৬ হাজার গবাদিপশু প্রস্তুত করা হয়েছে। স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে এসব পশু দেশের বিভিন্ন জেলার হাটে সরবরাহ করা হবে। এতে প্রায় ৩১৫ কোটি টাকার পশু বিক্রির প্রত্যাশা করছে উপজেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ।

খামারিরা বলছেন, একদিকে যেমন তারা প্রস্তুতি শেষ পর্যায়ে এনেছেন, অন্যদিকে পশু খাদ্যের মূল্যবৃদ্ধিতে তাদের খরচ বেড়েছে কয়েকগুণ। পশুর দাম কমে গেলে লোকসানের শঙ্কায় পড়বেন তারা।

উপজেলার বিভিন্ন খামার ঘুরে দেখা গেছে, খামারে গরু, ছাগল, মহিষ ও ভেড়াকে প্রাকৃতিক উপায়ে মোটাতাজা করা হচ্ছে। অনেক খামারে প্রচণ্ড তাপদাহ থেকে বাঁচাতে ও পরিছন্নতায় খামারিরা মোটরের পানি দিয়ে গোসল পশু গোসল করানো হচ্ছে।

এ সময় কথা হয় উপজেলার সন্তোষপুর গ্রামের খামারী মুর্শিদা খাতুনের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমার খামারে এবার ৮টি গরু প্রস্তুত করেছি। সবগুলোই প্রাকৃতিক খাদ্য ও পরিচর্যায় বড় করেছি। গরমে অনেক কষ্ট হচ্ছে, তবে পশুগুলোর পরিচর্যায় কোনো ত্রুটি রাখছি না। শুধু চাই, হাটে যেন মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য না থাকে।

কেশবপুর গ্রামের আরেক খামারী হেলাল হোসেন বলেন, ঘাস, খৈল, ভুসি, খড় সবকিছুর দাম বেড়েছে। আগে গরুর পেছনে যা খরচ হতো, এখন দ্বিগুণ লেগে যাচ্ছে। বাজারে দাম না থাকলে লোকসান ছাড়া কিছু থাকবে না। তবুও আশায় আছি সরকার যদি সঠিক নজরদারি রাখে, তাহলে আমাদের মতো খামারিরা লাভবান হবে।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের তথ্য মতে, এ বছর কোরবানির জন্য ৭৬ হাজার ১৭৬টি পশু প্রস্তুত করা হচ্ছে। এর মধ্যে ষাঁড় ১১ হাজার ৬৩৭, বলদ ৪ হাজার ৭৫৫, গাভী ১ হাজার ৯২২, মহিষ ৫ হাজার ৫৬০, ছাগল ৪৬ হাজার ও ভেড়া ৬ হাজার ২৬৪টি। এছাড়া স্থানীয় কোরবানির পশুর চাহিদা রয়েছে প্রায় ৪১ হাজার। উদ্বৃত্ত রয়েছে ৩৫ হাজার পশু যা দেশের বিভিন্ন জায়গার চাহিদা পূরণে ভূমিকা রাখবে।

এবিষয়ে লালপুর উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ বলেন, এবছর প্রায় ৪০০ কোটি টাকার পশু প্রস্তুত রয়েছে। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন হাটে প্রায় ২০/২৫ হাজার পশু বিক্রির লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই পশুগুলো বিক্রি করে প্রায় ৩১৫ কোটি টাকার বাণিজ্য হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, খামারিদের নিয়মিত পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। রাসায়নিক বা ইনজেকশন ব্যবহার প্রতিরোধে কঠোর নজরদারি চলছে। পশুর হাটগুলোতে ভেটেরিনারি মেডিকেল টিম, নিরাপত্তা ব্যবস্থা, ও মনিটরিং টিম কাজ করবে বলে জানান এই কর্মকর্তা।


মানিকগঞ্জ আদালতে মমতাজকে ডিম নিক্ষেপ

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
ইউএনবি

মানিকগঞ্জের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত প্রাঙ্গণে সাবেক সংসদ সদস্য ও আলোচিত সংগীতশিল্পী মমতাজ বেগমকে লক্ষ্য করে ডিম নিক্ষেপ হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২২ মে) শুনানি শেষে তাকে প্রিজনভ্যানে তোলার সময় এ ঘটনা ঘটে। এ সময় মমতাজের ফাঁসি চেয়ে স্লোগান দিতেও দেখা গেছে।

এর আগে, সকালে গাজীপুর জেলার কাশিমপুর কারাগার থেকে পুলিশের প্রিজনভ্যানে ক‌রে তাকে আদালতে হা‌জির করা হয়।

শুনানি শেষে সিংগাইর থানার হত্যা মামলায় মমতাজ বেগমের ৭ দিনের রিমান্ড চেয়ে করা আবেদনে ৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-১ এর বিচারক মুহম্মদ আব্দুন নূর।

এ ছাড়া, হরিরামপুর থানার মারামারির মামলায় সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৩ এ পাঁচদিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয়। শুনানি শেষে বিচারক আইভি আক্তার ২ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

আদালতের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল খায়ের জানান, ‘২০১৩ সালে সিঙ্গাইর উপজেলার গোবিন্দল এলাকায় হরতালের সমর্থনে মিছিলে পুলিশের গুলিতে চারজন নিহত হন। এ ঘটনায় মমতাজ বেগমকে প্রধান আসামি করে গত ২৫ অক্টোবর উপজেলার গোবিন্দল গ্রামের মজনু মোল্লা বাদী হয়ে সিঙ্গাইর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।’

এ ছাড়া, তার নির্বাচনী এলাকা হরিরামপুর থানায় হামলা, মারধর ও ভাঙচুরের অভিযোগে আরেকটি মামলা রয়েছে। গত ২৯ অক্টোবর হরিরামপুর উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন মামলাটি করেছি‌লেন ব‌লে জানান আবুল খায়ের।

ওসি আরও বলেন, ‘আদালত থেকে প্রিজনভ্যানে তোলার সময় মানুষ মমতাজ বেগমকে কিছু ডিম নিক্ষেপ করেছেন। আমি সারাক্ষণ তার পাশেই ছিলাম, আমারও ডিম লেগেছে।’

এর আগে, ঢাকায় বেশ কিছু থানায় হওয়া হত্যা মামলায় মমতাজ চার দিনের রিমান্ডে ছিলেন। রিমান্ড শেষে তা‌কে কাশিমপুর কারাগারে রাখা হয়েছিল।


রামগতির দুই ইউনিয়নে চলছে গণহারে চুরি-ডাকাতি

আইনশৃঙ্খলার অবনতি
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
কমলনগর (লক্ষ্মীপুর) প্রতিনিধি

লক্ষ্মীপুরের রামগতিতে আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতি হচ্ছে। বাড়ছে চুরি-ডাকাতি। প্রতিনিয়ত উপজেলার বিভিন্ন স্থানে চুরি -ডাকাতির খবর পাওয়া যাচ্ছে। গরু-চাগল থেকে শুরু করে মানুষের বসত বাড়ি ও দোকানপাটের মালামাল চুরি হচ্ছে। বসতবাড়ির পানির কল, মটর, শাড়ি কাপড় কোনো কিছুই বাদ যাচ্ছে না চোরের হাত থেকে। মানুষের জানমালের নিরাপত্তা নিয়ে দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন।

প্রতিদিন কোথাও না কোথাও চলছে সন্ত্রাসীদের মহড়া। উপজেলার দুর্গম চর এলাকা বড়খেরী ও চরগাজী ইউনিয়নের অলিগলিতে বেপরোয়া হয়ে উঠছে অপরাধ চক্র। এরা সংঘবদ্ধ হয়ে গভীর রাতে মানুষের গরু চুরি থেকে শুরু করে বসত বাড়িতে হানা দিচ্ছে। অন্যদিকে এ দুটি ইউনিয়নে নারী শিক্ষার্থীদের উত্যক্ত করা ও ধর্ষণ চেষ্টার সংখ্যাও বেড়ে গেছে ব্যাপক হারে। সব মিলিয়ে রামগতি উপজেলার ৮ টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার বাসিন্দারা রয়েছে চরম উদ্বেগ উৎকন্ঠায়। এসব চুরি ডাকাতি ও ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগ বা মামলা থানায় নিলেও পুলিশের ভূমিকা রহস্যজনক। তারা অপরাধী চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে ব্যর্থ হচ্ছেন। এতে আইনশৃংখলা পরিস্থতির অবনতি হচ্ছে। পুলিশের নীরবতায় মানুষ থানার উপর আস্থা রাখতে পারছেনা। উপজেলার সব চেয়ে বেশী চুরি ডাকাতি হওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে দুর্গম চরাঞ্চল হিসেবে পরিচিত চরগাজী ও বড়খেরী ইউনিয়নে।

সূত্রমতে, গত ১০ মাসে চরগাজী ইউনিয়নের চার নম্বর ওয়ার্ডের টুমচর গ্রামের মাইনউদ্দিন মিয়ার বাড়ি থেকে ৬টি গরু চুরি হয়, তিন নম্বর ওয়ার্ডের সামা গ্রামের জসিমের বাড়ি থেকে ৩ ভরি স্বর্ণ ও নগদ ৬০ হাজার টাকা, ছয় নম্বর ওয়ার্ডের নুর উদ্দিনের বাড়ি থেকে একটি অটোরিকশা ও নগদ ১২ হাজার টাকা,চার নম্বর ওয়ার্ডের হকসাহেব প্রকাশ ডুবাইওয়ালার বাড়ি থেকে নগদ ২ লাখ ৭০ হাজার টাকা ও দুই ভরি স্বর্ণ ডাকাতি হয়, ছয় নম্বর ওয়ার্ডের মীর বাড়ির হাসান বেপারীর ঘর থেকে নগদ দুই লাখ ৬০ হাজার টাকা ও আড়াই ভরি স্বর্ণ ডাকাতি হয়, ছয় নম্বর ওয়ার্ডের মীর বাড়ির নুর আলমের ঘর থেকে নগদ ৪ লাখ টাকা ও দেড় ভরি স্বর্ণ ডাকাতি হয়, তিন নম্বর ওয়ার্ডের জসিম বেপারীর বাড়ি থেকে নগদ তিন লাখ টাকা চুরি হয়, ছয় নম্বর ওয়ার্ডের হেলাল মেস্তরীর বাড়ি থেকে নগদ ২৬ হাজার টাকা ও একশেট কানপাশা,চার নম্বর ওয়ার্ডের মাইন উদ্দিনের বাড়ীতে ধর্ষণের ঘটনা ঘটে, তিন নম্বর ওয়ার্ডের হাসান ড্রাইভারের দোকান থেকে নগদ এক লাখ ৬০ হাজার টাকা, ছয় নম্বর ওয়ার্ডের সাইফুদ্দিনের দোকান থেকে নগদ ২৮ হাজার টাকা ও মালামাল, দুই নম্বর ওয়ার্ডের বেচুর দোকান থেকে নগদ ৬ হাজার টাকা ও মালামাল, ছয় নম্বর ওয়ার্ডের আহমদিয়া মার্কেটের নুর উদ্দিনের দোকান থেকে নগদ ১৭ হাজার টাকা ও মালামাল ও আট নম্বর ওয়ার্ডের নোমান সিদ্দিকীর বাড়ি থেকে দুইটি গরু চুরি হয়।

এছাড়া বড়খেরী ইউনিয়নের ছয় নম্বর ওয়ার্ডের আলিম উদ্দিনের বাড়ী থেকে এক ভরি স্বর্ণ ও নগদ ৩২ হাজার টাকা,বড়খেরী ইউনিয়ন রামগতি বাজারের হাজী জসিম উদ্দিন ট্রেডার্স থেকে প্রায় ৪ লাখ টাকা ডাকাতি হয়, পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডের রামগতি বাজারের মাইনউদ্দিনের দোকান থেকে নগদ এক লাখ ২০ হাজার টাকা, চার নম্বর ওয়ার্ডের তেলি বাড়ীর এরশাদের ঘর থেকে নগদ ২০ হাজার টাকা ও পাঁচ ভরি স্বর্ণ চুরি। চরগাজী ও বড়খেরী ইউনিয়ন ছাড়াও উপজেলার চররমিজ, চরপোড়াগাছা,চরবাদাম, আলেকজান্ডার, চরআলগী ইউনিয়ন ও রামগতি পৌরসভার বিভিন্ন স্থানে চুরির খবর পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়া বড়খেরী ও চরগাজী ইউনিয়নে কয়েকটি ধর্ষণ চেষ্টার ঘটনাও ঘটেছে। এসব ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা রহস্যজনক হওয়ায় মানুষ থানা পুলিশের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন।

চরগাজী ইউনিয়নের টুমচর গ্রামের মাইন উদ্দীন বলেন, ‘যেভাবে চুরি ডাকাতি বেড়ে গেছে, তাতে আমরা খুবই আতঙ্কে আছি। আমার ছয়টি গরু চুরি হলেও এখন পর্যন্ত কোন সন্ধান পাইনি।’

বড়খেরী ইউনিয়নের মোঃ এরশাদ বলেন, মানুষের নিরাপত্তা বলতে কিছুই নেই, চরগাজী ও বড়খেরী ইউনিয়নে গণহারে চুরি ডাকাতি হচ্ছে। থানা পুলিশকে জানিয়েও কোন লাভ হচ্ছেনা।

ব্যাপকহারে চুরি ডাকাতি বেড়ে যাওয়ার কথা স্বীকার করে চরগাজী ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মোঃ নাছির উদ্দিন বলেন, ‘কি করতাম? কোনভাবেই থামানো যাচ্ছেনা। পুলিশের টহল জোরদার করতে বলে আসছি। এতো বড় ইউনিয়নে একদিকে পাহারা দিলে অন্যদিকে ঢুকে পড়ে চোরের দল।’

বড়খেরী ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বলেন, আমরা গ্রাম পুলিশ দিয়ে নিয়মিত পাহারা দিচ্ছি। আইনশৃঙ্খলা সভায় বার বার বলছি। এরপরেও কোনভাবেই চুরি ডাকাতি বন্ধ করা যাচ্ছেনা। মানুষকেও একটু সতর্কভাবে চলা উচিত।

চুরি-ডাকাতির অভিযোগ মানতে নারাজ রামগতি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ কবির হোসেন। তিনি বলেন, টুকটাক কিছু চুরি-ডাকাতির খবর আমরাও পাচ্ছি। থানায় আসা অভিযোগগুলো গ্রহণ করছি। অপরাধী ধরতে পুলিশ কাজও করছে। তবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অনেক ভাল বলে দাবি তার।


কুষ্টিয়ায় শ্মশান থেকে নারী লাশের মাথার খুলি চুরি

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৌলতপুর (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি  

কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার একটি শ্মশান থেকে এক নারীর লাশের মাথা খুলি চুরির অভিযোগ উঠেছে। ঘটনাটি গতকাল মঙ্গলবার (২০ মে) দিবাগত রাতে উপজেলার পিয়ারপুর ইউনিয়নের কামালপুর গ্রামের শ্মশান ঘাটে এ ঘটনাটি ঘটে।

জানা গেছে, মৃত ওই নারীর নাম বাসু সরকার (৭০)। তিনি কামালপুর গ্রামের মৃত অধীর সরকারের স্ত্রী ছিলেন। এলাকাবাসী জানায়, গত বছরের ডিসেম্বর মাসে অসুস্থতার কারণে বাসু সরকারের মৃত্যু হলে তাকে কামালপুর শ্মশানে দাহ করা হয়।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আজ বুধবার সকালে স্থানীয়রা শ্মশান ঘাটে গিয়ে বাসু সরকারের সমাধিস্থলে একটি গর্ত দেখতে পান। পরে সুরঙ্গের মতো করে খোঁড়া অংশ দিয়ে ভেতরে তাকিয়ে দেখেন, লাশের মাথার খুলি ও হাতের কয়েকটি হাড় নেই। বিষয়টি পরিবারের সদস্যদের জানানো হলে মুহূর্তেই খবরটি আশেপাশে ছড়িয়ে পড়ে। এতে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। বিভিন্ন মহল্লা থেকে নারী-পুরুষ এসে সমাধিস্থল পরিদর্শন করেন এবং এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

এ বিষয়ে দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজমুল হুদা বলেন, ‘ঘটনার খবর পেয়ে আমরা পুলিশ পাঠিয়েছি। প্রাথমিকভাবে মাথার খুলি চুরির বিষয়টি নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। তদন্ত সাপেক্ষে বিস্তারিত জানা যাবে।’


ভারী বৃষ্টিতে সিলেট নগরে জলাবদ্ধতা

ঢলে জলমগ্ন জাফলং
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দেবাশীষ দেবু, সিলেট

মঙ্গলবার ভোর থেকেই ভারী বৃষ্টি শুরু হয় সিলেটে। ভারী বৃষ্টিতে নগরের অনেক এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। সকালের দিকেই তলিয়ে যায় নগরের প্রায় ২০টি এলাকা। এতে দুর্ভোগে পড়ে নগরবাসী। অন্যদিকে সকালে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ডুবে গেছে সিলেটের অন্যতম পর্যটন এলাকা গোয়াইনঘাট উপজেলার জাফলং।

গত কয়েকদিন ধরেই বৃষ্টি হচ্ছে সিলেটে। ফলে জলাবদ্ধতার আতঙ্ক ছিল নগরের নিম্নাঞ্চলগুলোর বাসিন্দাদের মধ্যে। মঙ্গলবার সকালের বৃষ্টিতে এই আতঙ্ক বাস্তবে রূপ নেয়। পানিতে তলিয়ে যায় অনেক এলাকার রাস্তা-ঘাট। ঘরবাড়িতেও ঢুকে পড়ে পানি।

সিলেট আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার ভোর ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ১৬৯ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যে ভোর ৬টা থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে ১০১ মিলিমিটার। বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকার কথা জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

এই বৃষ্টিতে নগরের উপশহর, তেররতন, সোবহানীঘাট, তালতলা, মাছুদিঘিরপাড়, ছড়ারপাড়, মণিপুরী রাজবাড়ী, শেখঘাট, ঘাসিটুলা, বাবনা, স্টেশন রোডসহ অনেক এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়ে। এসব এলাকার ঘরবাড়ি ও দোকানপাটেও পানি ঢুকে যায়।

জলাবদ্ধতা সিলেট নগরীর একটি পুরোনো সমস্যা। অনেক বছর ধরে এই সমস্যায় জর্জরিত নাগরিক জীবন। সমাধানের চেষ্টা হয়েছে অনেক। খরচ হয়েছে কোটি কোটি টাকা; কিন্তু কাঙ্ক্ষিত ফল মেলেনি।

নগরের তালতলা এলাকার বাসিন্দা কায়সার আহমদ বলেন, সকালের বৃষ্টিতে আমার ঘরে পানি ঢুকে যায়। অফিস, বাচ্চাদের স্কুল বাদ দিয়ে ঘরের পানি সেচে দিয়ে পরিষ্কার করতে হয়েছে।

তিনি বলেন, প্রতি বছরই এমন দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এবার এক সপ্তাহের ব্যবধানে দুইবার ঘরে পানি ঢুকল। অথচ এখনো বর্ষাকালই আসেনি।

সিলেট সিটি করপোরেশন সূত্র জানিয়েছে, ২০২২ সালের ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতির পর নগরবাসীর সুরক্ষায় বেশ কিছু পরিকল্পনা গ্রহণ করে সিসিক। তবে পরিকল্পনা বাস্তবায়নে এখনো কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেই।

সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান বলেন, দুবছর আগের বন্যার পর সিটি করপোরেশনের নিম্নাঞ্চলগুলোর নাগরিকদের সুরক্ষায় বেশ কিছু প্রকল্প গ্রহণের উদ্যোগ আমাদের ছিল। বিশেষ করে নদীর তীর সংরক্ষণ, সেচ প্রকল্প ইত্যাদি। তবে এগুলো এখনো আলোচনার পর্যায়েই আছে। তাই সেরকম ঢল নামলে বা অতিবৃষ্টি হলে আসলে তেমন কিছু করার নেই।

ঢলে পানির নিচে জাফলং

সিলেটের জাফলংয়ে হঠাৎ করে পাহাড়ি ঢল নেমেছে। ঢলে পিয়াইন নদীতে প্রবল স্রোতের সৃষ্টি হয়েছে। সোমবার সকাল ১০টার দিকে ভারতের মেঘালয় থেকে নেমে আসা ঢল পিয়াইন নদী হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। এতে জাফলংয়ের জিরো পয়েন্টসহ আশপাশের এলাকা দ্রুত প্লাবিত হয়।

নদীর পানি প্রবল বেগে প্রবাহিত হওয়ায় দেখা দিয়েছে ভাঙন। এতে আশপাশের বসতি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো হুমকির মুখে পড়েছে। স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই নদীর পানি বিপৎসীমার কাছাকাছি পৌঁছে গেছে।

অধিকাংশ পর্যটন এলাকা ঢলের পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় বন্ধ করে দেওয়া হয় সব ধরনের পর্যটন কার্যক্রম। নিরাপত্তার স্বার্থে স্থানীয় বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জাফলং ছাড়াও গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ এবং কানাইঘাট উপজেলার নদীর তীরবর্তী এলাকাগুলোতেও ঢল নেমেছে। এসব এলাকায় কিছু কাঁচা ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, সিলেট ও ভারতের মেঘালয় অঞ্চলে আগামী ২৪ ঘণ্টায় মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে নদীর পানি আরও বাড়তে পারে এবং বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে পারে।

পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগকে ‘ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা’ হিসেবে ঘোষণা করে আকস্মিক বন্যা সতর্কতা জারি করেছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর, সেনাবাহিনী ও রেড ক্রিসেন্টের স্বেচ্ছাসেবক দল প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এদিকে সুরমা, কুশিয়ারা ও সারি নদীতেও পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে।


রাসায়নিক ও কীটনাশকমুক্ত ধান উৎপাদনে সফলতা

আপডেটেড ২১ মে, ২০২৫ ১২:৪৮
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

দিনাজপুর হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) গবেষণায় রাসায়নিক ও কীটনাশকমুক্ত ধান উৎপাদনে ব্যাপক সাফল্য পাওয়া গেছে।

বায়োকেমিস্ট্রি ও মলিকিউলার বায়োলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. আজিজুল হকের নেতৃত্বাধীন গবেষক দল এই সাফল্য অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে, বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ বিভাগের পরিচালক মো. খাদেমুল ইসলাম।

অধ্যাপক ড. আজিজুল হক জানান, ব্রি-২৮, ব্রি-২৯, ব্রি-৯২, ব্রি-৩৪ ও জিরাশাইলসহ মোট ৬টি জাতের ধানের ওপর গবেষণা চালিয়ে এই সফলতা পেয়েছেন। প্লান্ট অ্যান্ডোফাইটিক ব্যাকটেরিয়া ব্যবহারে রাসায়নিক ও কীটনাশকের ব্যবহার কমিয়ে এনে দ্বিগুণ ফলনের লক্ষ্যে কাজ করছে তারা। ইতোমধ্যে কৃষিকাজে এই পদ্ধতির মাধ্যমে বেগুন ও টমেটো চাষেও সাফল্য পেয়েছে গবেষক দলটি।

কৃষক ও গবেষক সূত্র জানায়, প্রচলিত ব্রি-২৮ (বোরো) এবং ব্রি-৩৪ (আমন) জাতের ধান ব্লাস্টসহ অন্য রোগের প্রতি বেশি সংবেদনশীল হওয়ায় এসব ধানে প্রায় চার থেকে ছয়বার কীটনাশক প্রয়োগ করতে হয়। এমনকি ধান ঘরে তোলার ১৫ দিন আগেও ব্লাস্ট প্রতিরোধে উচ্চমাত্রায় বিষ প্রয়োগ করতে হয়। এতে ধান উৎপাদন প্রায় ২০ থেকে ৩০ ভাগ কমে যায় এবং চালের নিউট্রিয়েন্ট ফোর্টিফিকেশন ব্যাহত হয়।

এছাড়া প্রতি বছরই ইউরিয়া সার ব্যবহারে কৃষকের উৎপাদন খরচও কয়েকগুণ বাড়ছে। যা এই সার উৎপাদনের ক্ষেত্রে সরকারের ভর্তুকি ও গ্যাসের ব্যবহার বাড়িয়ে দেশের অর্থনীতিতেও প্রভাব ফেলছে। এই সমস্যার সমাধানে গবেষকরা ইউরিয়া ও রাসায়নিক কীটনাশকের ব্যবহার কমিয়ে বায়োফার্টিলাইজার ব্যবহার করে ধান চাষ শুরু করেন। গবেষকরা জানান, ধান গাছের বৃদ্ধি ত্বরান্বিতকারী অ্যান্ডোফাইটিক ব্যাকটেরিয়া গাছের শিকড়, কাণ্ড, শাখা ও প্রশাখা বৃদ্ধির মাধ্যমে নাইট্রোজেনের বাড়তি জোগান বায়ুমণ্ডল থেকে সংগ্রহ করে। ফলে ইউরিয়া সারের প্রয়োগ ৫০ থেকে ৭০ ভাগ পর্যন্ত কমানো সম্ভব।

গবেষকরা বলেন, এই গবেষণায় কিছু অ্যান্ডোফাইটিক ব্যাকটেরিয়ার মিশ্রণ তৈরি করা হয়েছে, যা অক্সিন হরমোন, এসিসি ডি-অ্যামিনেজ এনজাইম তৈরি করে। এছাড়া তারা বায়ুমণ্ডল থেকে নাইট্রোজেন স্থিতিশীল করতে (ফিক্সেশন) সক্ষম। ওই ব্যাকটেরিয়া প্রয়োগে ব্রি-২৮ ধানের উৎপাদন গড়ে প্রায় ৫০ থেকে ৫৫ ভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে। সে সঙ্গে ধানের খড়ে সেলুলোজ বৃদ্ধির ফলে খড়ের শক্তি দ্বিগুণ বেড়েছে এবং আরও সবল ও সুস্থ থাকছে।

গবেষক দল কৃষকের সঙ্গে ফিল্ড ট্রায়ালের মাধ্যমে ৫০ ভাগ ইউরিয়া সার কমিয়ে, ধান রোপণের প্রথম মাসে মাত্র একবার বিষ প্রয়োগ করে ধানের উৎপাদন ৫০ থেকে ৫৫ ভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানান।

প্রধান গবেষক ড. আজিজুল হক আরও জানান, ‘আমরা মূলত তিনটি লক্ষ্যকে সামনে রেখে কাজ করছি। এগুলো হলো, রাসায়নিক ও কীটনাশকের ওপর নির্ভরতা কমানো, অধিক ফলন এবং ধানের গুণগত মান বাড়ানো। ব্যাকটেরিয়া ব্যবহারের মাধ্যমে রাসায়নিক ও কীটনাশকের ব্যবহার কমানো হয়েছে, যা মানবস্বাস্থ্যের জন্য নিরাপদ।

এছাড়া আমরা ব্রি-৩৪ জাতের ধানের ফলন ২৫ থেকে ৩০ ভাগ পর্যন্ত বাড়াতে পেরেছি। গবেষণালব্ধ ধানের গুণগত মান অনেক ভালো হয়েছে। এতে ধানে চিটার পরিমাণ অনেক কমে আসে এবং ধানের শীষে পর্যাপ্ত পরিমাণ ধান পাওয়া যায়। ধান নির্ধারিত সময়ের আগেই কাটার উপযোগী হয়ে ওঠে, যা হাওড় অঞ্চলের মানুষের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ।’

শুধু যে ব্যাকটেরিয়া দিয়ে বায়োফার্টিলাইজার তৈরি হয়েছে তা নয়, গবেষক দলটি ওই ব্যাকটেরিয়া উৎপাদনের নতুন কৌশল ও প্রযুক্তিও উদ্ভাবন করেছে। ফলে এখন কৃষিজমিতে বৃহৎ পরিসরে ব্যাকটেরিয়া প্রয়োগের জটিলতা অনেকটাই কমে গেছে।

ড. আজিজুলের নেতৃত্বে এ গবেষণায় সম্পৃক্ত ছিলেন যন্ত্র প্রকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী তানভীর, শাহরিয়ার, মেহেদী ও রোকন। এতে খুব কম খরচে কৃষক নিজের বাড়িতে সহজভাবে ব্যাকটেরিয়া তৈরি করে নিজের জমিতে প্রয়োগ করতে পারবেন। ড. আজিজুল হকের এই গবেষণায় আর্থিক সহায়তা করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং (আইআরটি)।

সম্প্রতি গবেষক দলের সঙ্গে সরাসরি কৃষক পর্যায়ে গবেষণা মাঠ পরিদর্শন করেছেন আইআরটি পরিচালক প্রফেসর ড. এস. এম. হারুন উর-রশিদ, কৃষি অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. বিধান চন্দ্র হালদার, সহযোগী গবেষক ড. ইয়াসিন প্রধান এবং অধ্যাপক ড. শাহ মইনুর রহমান।

এ সময় আইআরটি পরিচালক প্রফেসর ড. এস. এম. হারুন উর-রশিদ বলেন, ‘আমরা সরাসরি মাঠ পরিদর্শন করে খুবই সন্তুষ্ট হয়েছি। আশেপাশের জমির সঙ্গে তুলনা করে দেখেছি, যেসব জমিতে কৃষক ব্যাকটেরিয়া প্রয়োগ করেছেন, সেগুলোর ফলন অন্য সাধারণ সার ও কীটনাশক ব্যবহৃত জমির তুলনায় অনেক বেশি। আমরা কৃষকদের কাছ থেকেও খুবই সন্তোষজনক সাড়া পেয়েছি। আগামী বছর আরও কৃষক এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে ধান চাষে আগ্রহী হবেন।’

সূত্র: বাসস


ফেনীতে নলকূপে পানি নেই 

চরম ভোগান্তিতে জনসাধারণ
আপডেটেড ২১ মে, ২০২৫ ১২:৪৩
মুহাম্মদ আবু তাহের ভূঁইয়া, ফেনী

দাবদাহ ও অনাবৃষ্টির কারণে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাওয়ায় নলকূপে পানি পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে খাওয়ার পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে ফেনীর কয়েকটি উপজেলায়। এসব এলাকার প্রায় ৮০ শতাংশ নলকূপে পানি নেই। এতে হুমকির মুখে পড়েছে জনস্বাস্থ্য।

ফেনীর ফুলগাজী উপজেলার জি.এম.হাট ইউনিয়নের শরীফপুর গ্রামের অধিকাংশ বাড়ির নলকূপে মিলছে না সুপেয় পানি। বেশিরভাগ গভীর নলকূপে পানি উঠছে না। একই চিত্র দেখা দিয়েছে পরশুরাম, ছাগলনাইয়া, দাগনভূঁঞা ও সদর উপজেলায়। ফলে পানি সংগ্রহে বেশ দূরে ছুটছেন ভুক্তভোগীরা। বাধ্য হয়ে পুকুর বা ডোবার জীবাণুযুক্ত পানি ফুটিয়ে পান করতে হচ্ছে অনেককে।

প্রায় এলাকায় পুকুর, খাল ও জলাশয়ের পানি শুকিয়ে গেছে। অনাবৃষ্টির পাশাপাশি গরমের তীব্রতা বাড়ায় ভূগর্ভের পানির স্তর নেমে গভীর নলকূপেও পাওয়া যাচ্ছে না পানি। জেলার লক্ষাধিক নলকূপে এমন সমস্যা দেখা দিয়েছে বলে জানায় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর।

‘গত দুই-তিন মাস ধরে গভীর নলকূপে পানি পাচ্ছি না। পানির জন্য এলাকার লোকজন হাহাকার করছে। বিশুদ্ধ পানি সরবরাহে নলকূপ দেওয়ার জন্য সরকারের নিকট জোর দাবি করছি,’ এসব কথা বলেন ফুলগাজী উপজেলার জি.এম.হাট ইউনিয়নের শরীফপুর গ্রামের বাসিন্দা সিরাজ উদ দৌলা।

ফেনী সদর উপজেলার শর্শদি ইউনিয়নের ফতেহপুর গ্রামের বাসিন্দা আছমত আরা শিরি বলেন, ‘নলকূপে পানি না উঠায় আমরা পানির জন্য কষ্ট করছি। অপরদিকে নলকূপের সঙ্গে থাকা মোটরেও পানি উঠছে না। অনেক দূর থেকে পানি এনে পান করছি। ওখানেও পানি উঠছে না, দুই ঘণ্টা চেষ্টা করে এক কলস পানি ভর্তি করতে হয়। নলকূপের পানির জন্য সরকার যেন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়।’

এলাকাবাসী জানান, ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাওয়ায় গত ৪-৫ মাস ধরে তারা কোনো গভীর নলকূপে পানি পাচ্ছেন না। পুকুরের পানি ফুটিয়ে পান করা হচ্ছে।

ফেনী জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শফিউল হক বলেন, ‘গত ছয় মাস বৃষ্টিপাত না হওয়ায় পানির লেয়ার নিচে নেমে গিয়ে ফেনীর অনেক এলাকায় গভীর নলকূপে প্রয়োজনীয় পানি পাওয়া যাচ্ছে না। পৃথিবীতে কোথাও এভাবে ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহার করে না। সাবমারসিবল পাম্প স্থাপন করে ভূগর্ভস্থ পানির লেয়ার নষ্ট করে ফেলছি। অপ্রয়োজনীয় পানি তোলা থেকে বিরত থাকতে হবে। নলকূপের নির্ভরশীলতা থেকে ফিরে আসতে হবে। ফেনীতে দেড় লাখ নলকূপ রয়েছে। এর মধ্যে অর্ধেকের বেশি নলকূপে পানি উঠছে না। বর্তমানে প্রতি ইউনিয়নে ৮টি করে নলকূপ বরাদ্দ রয়েছে। সামনে অতিরিক্ত বরাদ্দের জন্য চেষ্টা করছি।’


যমুনায় শুরু হয়েছে তীব্র ভাঙন আতঙ্কে নদীপাড়ের মানুষ

বন্যার আগেই কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি
টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে জিগাতলা এলাকায় যমুনা নদীতে তীব্র ভাঙন শুরু হয়েছে। ছবি: দৈনিক বাংলা
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
ফরমান শেখ, ভূঞাপুর (টাঙ্গাইল)

টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে যমুনা নদীতে পানি বাড়ছে। সেইসঙ্গে অসময়ে শুরু হয়েছে নদীর পাড় ভাঙন। গত বছর নদীভাঙনের পর যেটুক ভূমি ছিল, সেটুকুও এবার ভাঙনের আশঙ্কায় চরম হতাশার দিন পার করছেন নদীপাড়ের শত শত ভাঙন-কবলিত মানুষ।

সরেজমিনে উপজেলার জিগাতলা এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, জিগাতলা গ্রামের প্রায় ১ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ফসলিজমি নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার পথে। সেখানে এবার স্থানীয়রা ভুট্টা, তিল, বাদাম, বোরো ধান ও পাটসহ অন্যান্য ফসল চাষাবাদ করেছিল। এ ছাড়া রামপুর, গোপিনাথপুর, বাসুদেবকোল এলাকাতেও একই চিত্র দেখা যায়।

গত বছরের মতো এবারও উপজেলার চিতুলিয়াপাড়া, ভালকুটিয়া, কষ্টাপাড়া ও মাটিকাটা, পাটিতাপাড়া, কোনাবাড়ীসহ কয়েকটি এলাকায় ভাঙনের শঙ্কা রয়েছে। এতে দিশাহারা হয়ে পড়ছেন নদীপাড়ের মানুষ। স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড বারবার আশ্বাস দিলেও বাঁধের কাজ শুরু হচ্ছে না।

এদিকে প্রতিবছর বন্যায় ভাঙনরোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ফেলা বাঁধের জিওব্যাগ আনলোড ড্রেজারগুলোর কারণে মাটি ধসে যাচ্ছে। যার ফলে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত পাকা ও আধ পাকা সড়ক, গাইড বাঁধ, বসতবাড়ি, মসজিদ-মন্দির, ছোট-বড় বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ নানা স্থাপনা ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে।

জিগাতলা গ্রামের ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তরা জানান, এখান থেকে প্রতিবছর অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হতো। সেসময় কোনো ব্যক্তি প্রতিবাদ করতে পারত না, প্রতিবাদ করলে তাদের হুমকি দিত। সাবেক এমপি ছোট মনির খোকার মাধ্যমে ঘাটটি পরিচালনা করতেন। এখন তার খেসারত দিচ্ছে এলাকাবাসী।

ভুক্তভোগীরা আরও জানান, যমুনা নদীতে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে পানি বাড়ছে। পানি বৃদ্ধির ফলে ভাঙনও দেখা দিয়েছে। কিন্তু ভাঙনরোধে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না। তাদের দাবি যতদ্রুত সম্ভব ভাঙনরোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া। তা না হলে ফসলিজমির সঙ্গে তাদের ঘরবাড়িও নদীগর্ভে বিলীন হতে পারে। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবু আবদুল্লাহ খানকে একাধিবার মোবাইলে কল করলে তিনি রিসিভ করেননি।

টাঙ্গাইল জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী শামীম মিয়া জানান, ভূঞাপুরের ইউএনও এসিল্যান্ডের সঙ্গে তিনি ভাঙন-কবলিত জিগাতলা এলাকা পরিদর্শন করেছেন। নদীভাঙনের স্থান থেকে প্রায় ৫০০ থেকে ৬০০ মিটার নিকটে ঘরবাড়ি রয়েছে। সুতরাং এলাকাটি মনিটরিং করে পরবর্তী সময়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


banner close