আজ বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। এই দিবস ঘিরে সবচেয়ে বেশি চাহিদা গোলাপের। প্রিয়জনকে গোলাপ উপহার দিয়ে ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ করা হয়। এ জন্য ফুলের রানী গোলাপকে বলা হয় ভালোবাসার প্রতীক। আর ভালোবাসার সেই গোলাপ যখন চোখের সামনে দিগন্তজোড়া মাঠজুড়ে বিস্তৃত থাকে তখন অনুভূতিটাই অন্যরকম।
ফুলের রানী গোলাপ আর তার বসতি রাজধানীর সন্নিকটে তুরাগ নদীর ওপারের কাউন্দিয়া, বিরুলিয়াসহ আশপাশের মৌজার গ্রামগুলোতে। একসঙ্গে এসব গ্রামকে সবাই ডাকেন ‘গোলাপ গ্রাম’। গত দুবছর থেকে পহেলা ফাল্গুন আর বিশ্ব ভালোবাসা দিবস একই দিনে পড়েছে। তাই এ দুটি দিনে ভালোবাসার মানুষকে একটি গোলাপ উপহার দিতে পারা যেন আধুনিক শহুরে সংস্কৃতির নিয়মিত অনুষঙ্গ হয়ে গেছে। রাজধানীর বাইরের বিভিন্ন শহর থেকে এ উপলক্ষে হাজার হাজার গোলাপ আসে শহরে। তবে খেত থেকে তোলা টাটকা গোলাপ প্রিয়ার হাতে তুলে দেওয়া কিংবা খোঁপায় গুঁজে দেওয়ায় যে তৃপ্তি- তা মেটাতে অনেকেই ছুটে আসেন রাজধানীর মিরপুর বেড়িবাঁধ পার হয়ে বিরুলিয়া ব্রিজ দিয়ে কয়েক মাইল পার হয়ে এই গোলাপ গ্রামে। এখানে মন ভরে গোলাপ দেখা, টাটকা গোলাপের সুবাস নেওয়া ও ইচ্ছেমতো গোলাপ কেনার সব ইচ্ছা মেটানো যায়। এ কারণে বিশেষ দিবস কিংবা সাধারণ দিন- সব সময়ই গোলাপ গ্রামে ছুটে আসেন হাজার হাজার দর্শনার্থী ও ফুলপ্রেমী। তবে পহেলা ফাল্গুন ও ভালোবাসা দিবসের মতো বিশেষ দিনগুলোতে যেন দম ফেলার ফুরসত নেই ফুলচাষীদের। বাগানের ফুল তুলে তারা নিয়ে আসেন স্থানীয় ফুল বাজারে। সেখান থেকে পাইকারদের হাত হয়ে ফুল চলে আসে ঢাকার বাজারে। পরিবহন সহজ হওয়ায় ফুলচাষীদের অনেকে সরাসরি রাজধানীর বাজারে নিজেরাই বিক্রি করেন এসব ফুল।
সাভারের বিরুলিয়া ইউনিয়নের প্রায় অধিকাংশ গ্রামে চাষ হয় নানা প্রজাতির গোলাপ। এ কারণে এই অঞ্চলের খ্যাতি আছে গোলাপ গ্রাম নামে। মেঠো পথের মাঝে মাঝে যতদূর চোখ যায় শুধুই গোলাপের রাজ্য। চোখ জুড়ানো সৌন্দর্য্যে ভরপুর এই গ্রাম। মাঠজুড়ে সবুজ পাতার মাঝে অজস্র লাল বর্ণের গোলাপ যে কারও মন কাড়বে নিমেষেই।
গতকাল ঘুরতে আসা তেমনই এক শিক্ষার্থী শতাব্দী রায়ের সঙ্গে কথা হয় দৈনিক বাংলার। তিনি বলেন, শহুরে জীবনের বাইরে একটু নির্জন ও মনোরম পরিবেশ হিসেবে গোলাপ গ্রামের জুড়ি নেই। এখানে যত দূর চোখ যায় শুধু গোলাপ আর গোলাপ। অনেক ধরনের গোলাপ আছে এখানে। এখানকার পরিবেশ সত্যি মনোমুগ্ধকর। আমরা বাড্ডা থেকে সপরিবারে গোলাপ গ্রামে ঘুরতে এসেছি। দিনভর এখানে ছবি তুলেছি, ঘুরেছি। সবাই অনেক আনন্দ করেছি তারপর বিকেলে বাসায় ফিরেছি। ফেরার সময় বাজারের চেয়ে অনেক কম দামে বাগান থেকে গোলাপ কিনেছি। আসলে গোলাপ গ্রামে কাটানো সুন্দর মুহূর্তগুলো ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। সুযোগ পেলে আমরা আবার আসব গোলাপ গ্রামে।
সাব্বির আহমেদ নামে আরেক দর্শনার্থী বলেন, মাঠভর্তি গোলাপ দেখতে হেমায়েতপুর থেকে গোলাপ গ্রামে এসেছি। যতদূর চোখ যায় লাল রঙের গোলাপ দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়। হালকা শীতের শেষে প্রকৃতির এমন রূপ যে কাউকে পাগল করবে। আর সামনে ভালোবাসা দিবস ঘিরে এখানে প্রতিদিনই হাজারো দর্শনার্থী আসছেন। সবাই যার যার মতো ছবি আর ভিডিও করছেন। সুন্দর মুহূর্তগুলোকে ধরে রাখছেন নিজেদের ক্যামেরায়।
এদিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ও ভালোবাসা দিবস ঘিরে ফুলের বাজার ধরতে ব্যস্ত সময় পার করছেন শ্যামপুর, সাদুল্লাহপুর, বাগনিবাড়ী, কালিয়াকৈরসহ প্রায় ৮-১০টি গ্রামের কয়েক হাজার ফুলচাষী। বাড়তি দাম ও ভালো ফলনের আশায় দিনভর বাগানে সেচ, সার ও নিরানিসহ নানা পরিচর্যা করছেন তারা।
শ্যামপুর গ্রামের ফুলচাষী হেলাল উদ্দিন বলেন, সাধারণ সময়ে বাগান থেকে প্রতি পিচ গোলাপ পাইকারি ৫-৮ টাকায় বিক্রি করেছি। তবে ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে দাম বেড়েছে গোলাপের। প্রতি পিচ পাইকারিতে বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকায়। বাজারে এই ফুল বিক্রি হবে প্রতিটি ৫০ টাকায়।
তবে এখানকার অনেক কৃষকের বাগানে গোলাপের কলিতে এ বছর মড়ক দেখা দেওয়ার কথা জানান তিনি।
এদিকে, এ বছর ভালোবাসা দিবস ও পহেলা ফাল্গুনের সঙ্গে সরস্বতী পূজাও শুরু হওয়ায় ফুলের দাম আরও চড়েছে।
গতকাল রাজধানীর শাহবাগের বটতলা ফুলের মার্কেট ঘুরে দেখা যায়, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস, পহেলা ফাল্গুন ও সরস্বতী পূজা উপলক্ষে এরই মধ্যে জমে উঠেছে এখানকার ফুল দোকানগুলো। প্রতিটি দোকানই নানান রকম দেশি-বিদেশি ফুল দিয়ে ভর্তি। বিভিন্ন রং ও ধরনের গোলাপ, চন্দ্রমল্লিকা, গ্ল্যাডিওলাস, জারবেরা, রজনীগন্ধা, লিলি, গাঁদা, জিপসি, মাম, ক্যালেন্ডোলা ফুল সাজিয়ে রেখেছেন বিক্রেতারা। ফুল দিয়ে তৈরি মালা, মাথার রিং, গাজরাও পাওয়া যাচ্ছে সেসব দোকানে।
উৎসবগুলো উপলক্ষে গতকাল থেকেই ক্রেতাদের ভিড় নেমেছে শাহবাগের ফুল দোকানগুলোয়। সকাল থেকে তরুণ-তরুণীসহ বিভিন্ন বয়সী মানুষ সাজগোজ করে ভিড় জমাচ্ছেন ফুল কিনতে। কেউবা প্রিয়জনের জন্য ফুল কিনছেন, কেউবা কিনছেন নিজের জন্য, কেউবা পরিবার আবার কেউ কিনছেন পূজার জন্য। সাধারণ ক্রেতার পাশাপাশি বিভিন্ন জায়গা থেকে ব্যবসায়ীরাও আসছেন এই ফুল মার্কেটে ফুল কিনতে। সব মিলিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন বিক্রেতারা। প্রায় কারোরই বসে থাকার ফুরসত নেই। আজ বইমেলায় বইয়ের পাশাপাশি একই সঙ্গে দেখা যাবে নানা বয়সী নারীদের চুলে, খোঁপায়, মাথায় এবং হাতে নানা ধরনের ফুলের পসরা।