বান্দরবানের রুমা উপজেলায় সোনালী ব্যাংক লুটের পর ব্যাংকটির থানচি উপজেলা ও সেখানকার কৃষি ব্যাংকের শাখায় ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে।
আজ বুধবার দুপুর ১টার দিকে থানচি বাজার ঘেরাও করে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা।
থানচি সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অং প্রু ম্রো গণমাধ্যমকে বলেন, বেলা একটার দিকে থানচি সদরের শাহজাহানপুরের দিক থেকে তিনটি চাঁদের গাড়িতে করে সন্ত্রাসীরা গুলি করতে করতে বাজার এলাকায় প্রবেশ করে। এরপর থানচি উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন সোনালী ব্যাংক ও বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের ভেতরে ঢুকে নগদ টাকা যা পেয়েছে তা নিয়ে চলে যায়। এরপর তারা আবার ওই তিন গাড়িতে করে শাহজাহানপুরের দিকে চলে।
সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আফজাল করিম গণমাধ্যমকে বলেন, সোনালী ব্যাংকের থানচি শাখায় হামলার খবর পেয়েছি। পুলিশ, র্যাব ও সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে গেছে। তারা কাজ করছে।
গতকাল মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে ৭০-৮০ জন সশস্ত্র সন্ত্রাসী রুমা উপজেলা পরিষদ এলাকা ঘেরাও করে। তারা সোনালী ব্যাংকে গিয়ে পাহারারত পুলিশ ও আনসার সদস্যদের কাছ থেকে অস্ত্র ছিনিয়ে নেয় এবং মারধর করতে থাকে। ব্যাংকে ঢুকে ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়। সেই সঙ্গে ব্যাংকের ম্যানেজারকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। মঙ্গলবার ব্যাংকের এ শাখার ভল্টে ১ কোটি ৫৯ লাখ টাকা ছিল। তবে সেই টাকা লুট হয়েছে কি না, এখনো জানা যায়নি।
বান্দরবানের পুলিশ সুপার সৈকত শাহীন জানান, স্থানীয়দের ধারণা এ ঘটনা নব্য বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন কুকিচিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) ঘটিয়ে থাকতে পারে।
ভুক্তভোগীদের সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার রাত নয়টার দিকে রুমা উপজেলার বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। ওই সময় ৭০/৮০ জনের আধুনিক অস্ত্র সশস্ত্র সজ্জিত সশস্ত্র সদস্যরা রুমা সদরে উপজেলা পরিষদ এলাকায় অবস্থিত সোনালী ব্যাংকের গ্রীল ভেঙ্গে প্রবেশ করে। তারপর ব্যাংক ব্যবস্থাপক নেজাম উদ্দিনকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে নগদ টাকা নিয়ে যায় সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা। তবে আনুমানিক দেড় থেকে দুই কোটি টাকা অনুমান করা হলেও কি পরিমাণ টাকা লুট হয়ে গেছে, তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
ডাকাতির সময় ব্যাংকের নিরাপত্তায় নিয়োজিত পুলিশ সদস্যদের কাছ থেকে দশটি অস্ত্র ও ৩৮০ রাউন্ড গুলি ছিনিয়ে নেয়া হয়। ব্যাংকের অদূরে থাকা আনসার ব্যারেক থেকে চারটি অস্ত্র ও ৩৫টি গুলি ছিনিয়ে নেয়-সশস্ত্র এ সন্ত্রাসীরা। ওই সময় পুলিশ ও আনসারকে মারধর করে। ওই সময় ব্যাংকের লাগুয়া থাকা অফিসার কোয়ার্টারে অবস্থান করা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ও বেশ কয়েকজন কর্মামচারী মারধরের শিকার হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী ও ভুক্তভোগীরা জানায়, এসময় উপজেলা মসজিদ ঘেরাও করে মসুল্লিদের মোবাইল ফোন ছিনতাই করে। সশস্ত্র সদস্য একটি অংশ উপজেলা পরিষদ এলাকায় ব্যাংক থেকে প্রায় একশ গজ দুরে আলমগীর চা দোকানের সামনে রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়ে প্রহরা দেয় সশস্ত্র সদস্যরা। তখন রুমা বাজার দিক থেকে আসা সাধারণ যাত্রী ও মোটরবাইকসহ যাত্রীদের আটকিয়ে নগদ টাকা ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিয়ে লোকজন বেধরক পিটিয়েছে।
একইভাবে উপজেলা পরিষদের পশ্চিম দিকে সেগুন বাগান নিচে ছোট্ট কালভাটের পাশে রাস্তা গতিরোধ করে মোটরবাইক ও যাত্রীদের আটকিয়ে নগদ টাকা, মোবাইল ফোনসহ মূল্যবান জিনিস যা থাকে সব ছিনিয়ে নিয়ে সবাইকে মারধর করে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা। এঘটনার ভুক্তভোগীরা জানায় সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের হাতে আধুনিক অস্ত্র ও মুখে কাপড় ঢাকা ছিল। তাই তাদের চেনা না গেলেও বাংলা ভাষা ব্যবহারের পাশাপাশি তাদের মধ্যে ফিশফিশে বম ভাষায় কথোপকথনের ভাষার সুর শুনতে পেরেছেন- অনেক ভুক্তভোগী ও মারধরের শিকার হওয়া লোকজন।
আর এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠেছে - কুকি চীন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) এর বিরুদ্ধে । তবে তাৎক্ষণিক কেএনএফ এর দায়িত্বশীল কারো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এদিকে এই ঘটনার পর সেনাবাহিনীর সদস্য ও পুলিশ ঘটনাস্থল ঘিরে রেখেছে, এলাকায় আতংক বিরাজ করায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
অন্যদিকে একটি সূত্র জানায় ব্যাংকে টাকা সংরক্ষণ করা লোহার বাক্সের তালা খুলতে পারেনি। মূলত এ কারণে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা ব্যাংকের ব্যবস্থাপক মোঃ নেজাম উদ্দিনকে নিয়ে গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তার কোনো খোঁজ এখনো পাওয়া যায়নি।
বুধবার সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান বান্দরবান জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন। এ সময় তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন জেলা পুলিশ সুপার সৈকত শাহীন, পুলিশের চট্টগ্রাম বিভাগের অতিরিক্ত ডিআইজি মাহফুজুর রহমান, সোনালী ব্যাংক চট্টগ্রাম বিভাগের জিএম ও মুসা খান।
ঘটনার সঙ্গে পাহাড়ি বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের জড়িতের বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে জেলা প্রশাসক বলেন, নানা ইঙ্গিতে নামগুলো উঠে আসছে। তবে তদন্ত সাপেক্ষে বিষয়টি জানানো হবে।
ঘটনার পর থেকে ভেঙে পড়েছেন অপহৃত ব্যাংক ম্যানেজারের স্ত্রী বান্দরবান ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজের সহকারী অধ্যাপক ইশফাত। ব্যাংক ম্যানেজার নিজাম উদ্দিনের বড় ভাই চট্টগ্রাম কর্ণফুলী থানা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) মিজান উদ্দিন বলেন, আমি এখন রুমায় আছি। ভাইয়ের এখনও কোনো খবর পাইনি। পরিবার থেকে এখন আলাদাভাবে আইনগত কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।