‘রাজাকার-আলবদর থাকে আজ রাজপ্রাসাদে, আমি শহীদুল ইসলাম বীরপ্রতীক থাকি একটা কুইড়াঘরে (কুঁড়েঘরে) তার কারণ কী?’ ক্ষোভে ২০০৩ সালে ধারণ করা এক ভিডিও সাক্ষাৎকারে এমনটাই বলেছিলেন দেশের সর্বকনিষ্ঠ বীরপ্রতীক খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা, টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার সূতী গ্রামের হেলাল উদ্দিনের ছেলে শহীদুল ইসলাম। অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারে জন্ম হলেও অনেক সাহসী ও বুদ্ধিমান ছিলেন। তাই তো দেশকে হানাদার মুক্ত করতে ১২ বছর বয়সে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়েছিলেন কাদেরিয়া বাহিনীর কমান্ডার আনোয়ার হোসেন পাহাড়ির অধীনে।
কিন্তু আশ্চর্যজনক হলেও সত্য, দেশের সর্বকনিষ্ঠ বীরপ্রতীক শহীদুল ইসলাম লালুর পরিবারের নেই স্থায়ী নিবাস, সন্তানদের জন্য নেই চাকরির ব্যবস্থা। তিনি কুলির কাজ ও খাবার হোটেলের কাজ করে অনেক কষ্টে কাটিয়েছেন জীবনের অধিকাংশ সময়।
দৈনিক বাংলার অনুসন্ধানে জানা যায়, বাংলাদেশের সর্বকনিষ্ঠ বীরপ্রতীকের পরিবার বসবাস করছেন ঢাকার মিরপুর মুক্তিযোদ্ধা পুনর্বাসন প্রকল্পের সরকারি জমিতে। প্রথম সন্তান মুক্তা বেগম (৩৫) পেশায় গৃহিণী, স্বামীর বাড়ি রাজশাহীর নাটোরে। দ্বিতীয় সন্তান আক্তার হোসেন (৩২) পেশায় গাড়িচালক, তৃতীয় সন্তান সোহাগ হোসেন (২৭) জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে সদ্য গ্র্যাজুয়েশন শেষ করেছেন। চতুর্থ সন্তান শিখা আক্তার (২০) ঢাকার একটি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেছেন।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ভারতে ট্রেনিং চলাকালে সর্বকনিষ্ঠ হওয়ায় সহযোদ্ধারা তাকে লালু তার চেয়ে বয়সে বড় শ্যামলকে ভুলু নামে ডাকতে শুরু করেন। দেশে ফিরলে তার বুদ্ধিমত্তায় একাধিকবার মুক্তিযোদ্ধারা প্রাণে বাঁচেন। কাদেরিয়া বাহিনীর কমান্ডারের নির্দেশে, চতুর শহীদুল ইসলাম ছদ্মবেশ ধারণ করেন। কৌশলে এক রাজাকারের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে গোপালপুর থানা কম্পাউন্ডের, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বাংকারে ঢুকে পড়েন। তার কৌশল ও দুঃসাহসিক গ্রেনেড হামলায় একাধিক বাংকার ধ্বংস করলে গোপালপুর থানা হানাদার মুক্ত হয়। স্বাধীন বাংলাদেশ সরকার তাকে বীরপ্রতীক উপাধি দেয়। রাইফেলের সমান উচ্চতা হওয়ায় ভারতে প্রশিক্ষণ চলাকালে তাকে স্টেনগান চালনা ও গ্রেনেড ছোড়ার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। কাদেরিয়া বাহিনী ১৯৭২ সালের ২৪ জানুয়ারি টাঙ্গাইলের বিন্দুবাসিনী বালক উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে অস্ত্র সমর্পণ করা হয়। স্টেনগান জমা দানকালে অত্যন্ত সাহসী ১২ বছরের কিশোর শহীদুলের বীরত্বের কথা শুনে, মুগ্ধ হয়ে তাকে কোলে তুলে নেন স্বয়ং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ছবিটি সামরিক ও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে। যখন সহযোদ্ধাদের কাছ থেকে লালুর বাংকার ধ্বংসের কথা শুনলেন তখন বঙ্গবন্ধু তাকে আদর করে কোলে তুলে নিয়ে বলেছিলেন, ‘বীর বিচ্ছু’।
শৈশবে শহীদুল ইসলামের বাবা-মা, মুক্তিযুদ্ধের সময় এক ভাই-এক বোনের মৃত্যু হয়। দরিদ্রতায় উপায়ান্তর না দেখে মুক্তিযুদ্ধের পর ২ ভাইকে রেখে জীবিকার তাগিদে বাড়ি ছাড়া হন তিনি। ঢাকার সোয়ারিঘাটে বালু টানা, ঠেলা গাড়ি চালানো, রাজমিস্ত্রীর হেলপারের কাজ, শেষে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে কুলির কাজ শুরু করেন। একপর্যায়ে কুলির কাজ শেষে হোটেলে কাজ শুরু করেন। যাযাবর অবস্থায় বিয়েও করেন, এক কন্যা ও এক পুত্র জন্ম নেওয়া সেই সংসার স্থায়ী হয়নি। পরবর্তীতে কুমিল্লায় হোটেলে কাজ করা অবস্থায় সহকর্মীকে জীবনের সব ঘটনা খুলে বলেন। ২ সন্তানকে নিয়ে ওই সহকর্মীর সঙ্গে মুন্সীগঞ্জের বিক্রমপুর চলে যান। ১৯৯৬ সালে সেই সহকর্মীর নিকটাত্মীয় মালা বেগমের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। এই দম্পতির পুত্রসন্তান সোহাগ হোসেনের জন্মের পর সংসারে অভাব-অনটন দেখা দেয়। ঢাকার পোস্তগোলায় এসে নিজের খাবার হোটেল চালু করার কিছুদিনের মধ্যেই, ১৯৯৮ সালে জটিল কিডনি রোগে আক্রান্তের কথা জানতে পারেন। কোনো উপায় না পেয়ে, কাদেরিয়া বাহিনীর প্রধান বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর ঢাকার বাসার ঠিকানা জোগাড় করে দেখা করেন। পরিচয় পাওয়ার পর আবেগাপ্লুত বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বুকে জড়িয়ে নেন। তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করান, উপস্থিত সহযোদ্ধাদের নির্দেশ দেন তার কাগজপত্র সংগ্রহ করতে। কাদেরিয়া বাহিনীর যোদ্ধা বীরপ্রতীক আবদুল্লাহকে নির্দেশ দেন, ঢাকার মিরপুর মুক্তিযোদ্ধা পুনর্বাসন প্রকল্পে শহীদুলের পরিবারের জন্য জায়গা দিতে। সে অনুযায়ী তার পরিবারের ঠাঁই হয় সেখানে। চিকিৎসা নিয়ে কিছুটা সুস্থ হন শহীদুল ইসলাম। কাগজপত্র সংগ্রহের পর জানতে পারেন তিনি বীরপ্রতীক খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা, তিনিই সর্বকনিষ্ঠ বীরপ্রতীক। ডাক পড়ে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে ৩০ হাজার টাকা অনুদান প্রদানের সংবাদ গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে অন্য দুই ভাই তাকে খুঁজে পায়। কিছুদিন পর জন্ম হয় আরেক কন্যা শিখার।
অসুস্থতার কারণে শেষ সময়ে কোনো কাজকর্ম করতে পারেননি, শুভাকাঙ্ক্ষীদের অর্থে চলেছে চিকিৎসা ও পরিবারের খরচ। ২০০৯ সালে ২৫ মে অসুস্থ অবস্থায় মৃত্যুবরণ করলে তাকে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে সমাহিত করা হয়।
বীরপ্রতীক শহীদুল ইসলামের স্ত্রী মালা বেগম দৈনিক বাংলাকে বলেন, আমার স্বামীর জীবদ্দশায় ভাতাপ্রাপ্ত ছিলেন না, তাই শুভাকাঙ্ক্ষীদের সহায়তায় চিকিৎসা করাতে হয়েছে। তার মৃত্যুর পর ৪ সন্তানকে অনেক কষ্টে লালন-পালন করি, এরপর মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর কাছে গেলে ২০১৪ সালে ২ হাজার টাকা ভাতা চালু হয়। মুক্তিযোদ্ধা পুনর্বাসন প্রকল্পের সরকারি জমিতে একাধিক রুম বানিয়ে ভাড়ার টাকায় সন্তানদের বড় করি। সন্তানদের শিক্ষিত করেছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আমার দাবি তিনি যেন সন্তানদের জন্য উপযুক্ত চাকরি ও আমাদের স্থায়ী নিবাসের ব্যবস্থা করে দেন।
তিনি আরও বলেন, ‘নিজ এলাকার মানুষের থেকে তার তেমন মূল্যায়ন পায়নি, এই ক্ষোভে তিনি মৃত্যুর আগে কখনো গোপালপুর যাননি। তবে সন্তানদের নিয়ে আমি একাধিকবার গোপালপুর গিয়েছিলাম।’
সর্বকনিষ্ঠ বীরপ্রতীকের সন্তান সোহাগ হোসেন বলেন, ‘মানুষের মৌলিক চাহিদার একটি বাসস্থান। আমরা বিশেষ পরিবারের সন্তান হলেও ঢাকার মিরপুরে সরকারি জমিতে বসবাস করছি। প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি স্থায়ী বাসস্থান ও আমাদের জন্য উপযুক্ত চাকরির ব্যবস্থা যেন উনি করেন।’ তবে নিয়মিত সরকারি রেশন ও ভাতা পাচ্ছেন বলেও জানান তারা।
গোপালপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সদ্য সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা সমরেন্দ্রনাথ সরকার বিমল বলেন, সূতী মীরপাড়ায় গোপালপুরের একমাত্র বীরপ্রতীক শহীদুল ইসলামের জন্ম হলেও, এখানে তার বাড়িঘর নেই। তার পরিবার এখানে এসে কিছু চাননি, তাই বীর নিবাসসহ অন্যান্য সুবিধাদি পাননি। তার পরিবার বীরপ্রতীক ভাতা পাচ্ছেন।
গোপালপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সৈয়দা ইয়াসমিন সুলতানা দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বীরনিবাস তৈরি করে দেওয়ার একটি প্রকল্প চলমান আছে। গোপালপুরে জীবিত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ৬২টি বীরনিবাস নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে এবং ৬টি নির্মাণাধীন রয়েছে। তাকে আবেদন করে রাখতে বলেন। পরের অর্থবছরে আবার যদি বরাদ্দ আসে তবে হয়তো এগুলো পাঠাতে পারব। আমার যতদূর জানা আছে বর্তমান যারা বীর মুক্তিযোদ্ধা জীবিত অবস্থায় আছেন প্রাথমিকভাবে তাদের এটা দিচ্ছে। এখন পর্যন্ত ওয়ারিশ হিসাবে যারা আছেন, তারা পেয়েছেন বলে আমার জানা নেই। তারপরও পর্যাপ্ত তথ্য পেলে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়কে বিষয়টি লিখতে পারব।’
গোলাকান্দাইলের হাটে এসেছেন শামীম মিয়া। তিনি বলেন, সারা বছর চাষের মাছ খেতে আর ভাল লাগে না। বর্ষাকালে আশেপাশের এলাকা থেকে প্রচুর দেশি মাছ রূপগঞ্জের হাট বাজারে পাওয়া যায়, তা কিনতেই হাটে আসা। আবুল হোসেন নামে আরেকজন বলেন, নতুন পানির টাটকা মাছ খাওয়ার মজাই আলাদা। তবে দাম একটু বেশি। এখন বর্ষাকাল। নতুন পানি এসেছে নদী-নালা, খাল-বিল, খেত, হাওর-বাঁওড়ে। মুক্ত জলাশয়ে এখন পাওয়া যাচ্ছে দারকিনা, পুঁটি, মলা, ঢেলা, চেলা, চান্দা, খলসে, গজার, বোয়াল, চিতল, বাগাড়, আইড়সহ নানা প্রজাতির মাছ। গ্রামগঞ্জ হয়ে এসব মাছ যাচ্ছে রাজধানীসহ বড় বড় শহরে।
কায়েতপাড়া বাজারে শনিবার দেখা যায়, নীলাস্বরের দোকানে পুঁটি, বোয়াল, ট্যাংরাসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। পুঁটিগুলো টাটকা, আকারে বেশ বড়। তিনি প্রতি কেজি পুঁটি এক হাজার টাকা দর হাঁকাচ্ছিলেন। তাঁর দোকান থেকে আধা কেজি পুঁটি দর-কষাকষি করে ৪০০ টাকায় কেনেন ব্যবসায়ী আলো মিয়া। ৬০০ টাকায় আধা কেজি ট্যাংরা, ১ হাজার টাকায় এক কেজি ওজনের একটি বোয়াল কেনেন তিনি।
বর্ষার এই মৌসুমে দেশি মাছের প্রতি মানুষের আগ্রহও বেশি। গাউছিয়ার তাতবাজার এলকার কাঁচাবাজার থেকে বড় আকারে এক কেজি বেলে মাছ ১ হাজার ৩০০ টাকায় কেনেন বেসরকারি চাকরিজীবী মিঠু। এ ছাড়া এক হাজার টাকা কেজির চিংড়ি মাছ এবং ২ হাজার ৩০০ টাকা দরের ইলিশও কিনেছেন তিনি। মিঠু বলেন, দেশি মাছের দাম অনেক বেশি। বাসার লোকজন বাইল্যা মাছ খেতে চাচ্ছিল, দাম বেশি সত্ত্বেও এক কেজি কিনলেন।
বাজারে নানা প্রজাতির ছোট মাছের পাশাপাশি বড় মাছও লক্ষণীয়। ভুলতা বাজারের বাচ্চু মিয়ার দোকানে অনেক মাছের মধ্যে একটি রুই মাছ পাওয়া গেল ১২ কেজি ওজনের। প্রতি কেজি ১ হাজার ৬০০ টাকা হিসেবে এই মাছটি ১৯ হাজার ২০০ টাকা হাঁকাচ্ছিলেন তিনি। তাঁর দোকানে চার কেজি ওজনের চিতলও ছিল। প্রতি কেজি এক হাজার টাকা করে চার হাজার টাকা দাম চান একটি চিতল মাছের। তাঁর কাছে ছয় কেজি ওজনের আইড় মাছও দেখা গেল। বাচ্চু মিয়া বলেন, নদীর মাছ এগুলো। সব সময় এমন মাছ পাওয়া যায় না। তাই দাম বেশি।
তাঁর পাশেই মাছ নিয়ে বসে ছিলেন মতিন। সাত কেজি ওজনের একটি বাগাড় মাছের দাম চাইছিলেন তিনি সাত হাজার টাকা। মতিনের মতে, যাদের বড় পরিবার তারা বড় আকারের মাছ কেনে। নদ-নদীর এসব বড় মাছ খুব সুস্বাদু।
মুক্ত জলাশয়ের মাছের দাম বেশ চড়া। বাজারভেদে ও আকারভেদে দেশীয় এসব দামের পার্থক্য হয়ে থাকে। বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি পুঁটি ৬০০ থেকে ১ হাজার টাকা, প্রতি কেজি ট্যাংরা ৬০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা, বেলে ৫০০ থেকে ১ হাজার ৩০০, বাইন ৮০০ থেকে ১ হাজার ২০০, চিংড়ি ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৪০০, মলা ৬০০ টাকা, পিয়ালি ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা, গুলশা ৭০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা, বাতাসি ১ হাজার ২০০, কাচকি ৮০০, শোল ১ হাজার টাকা, মাগুর ৫০০ থেকে ৬০০, শিং ৪০০ থেকে ৫০০, পাবদা ৪০০, বাগাড় ১ হাজার টাকা, আইড় ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ২০০, বোয়াল ৭০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা, চিতল ৭০০ থেকে ১ হাজার টাকা, বড় রুই ১ হাজার ৬০০ টাকা প্রতি কেজি।
মৎস্য কর্মকর্তারা বলছেন, দেশে উৎপাদিত মোট মাছের ৫৯ শতাংশ চাষের। নদী, খাল, বিল, হাওরের মতো মুক্ত জলাশয়ের মাছ মোট উৎপাদনের মাত্র ১৫-১৭ শতাংশের মতো। অর্থাৎ মুক্ত জলাশয়ের মাছের উৎপাদন কম। তা ছাড়া মুক্ত জলাশয়ের মাছের স্বাদ বেশি। সরবরাহ কম এবং চাহিদা বেশি থাকায় মুক্ত জলাশয়ের মাছের দাম বেশি।
বর্ষার নতুন পানি আসার সঙ্গে সঙ্গে খেতে, বিলে, হাওরে, নদীতে বিভিন্ন প্রজাতির মাছের দেখা মেলে। মৎস্য কর্মকর্তারা বলছেন, মিঠাপানির মাছ প্রায় ২৬১ প্রজাতির। এর মধ্যে বর্ষায় ৩০-৩৫ প্রজাতির ছোট মাছ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে দেখা যায়।
মুড়াপাড়া কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক খোরশেদ আলম বলেন, বর্ষা শুরু হওয়ার কয়েক সপ্তাহের মধ্যে দারকিনা, পুঁটি, মলা, ঢেলা, চেলা, টাকি, শোল, গজার, শিং, মাগুরহ অসংখ্য ছোট প্রজাতির মাছ দেখা যায়। শুষ্ক মৌসুমে অল্প পানিতে কিছু মাছ থাকে। অনেক মাছ বৃষ্টি আসার সঙ্গে সঙ্গে ডিম ছাড়ে। ডিম থেকে পোনা খুব দ্রুত বড় হয়। বৃষ্টির কারণে বিল, খাল ও নদীর সংযোগ হওয়ায় মাছ ছড়িয়ে পড়ার সুযোগ পায়। মাছের প্রাচুর্য বাড়ে।
মৎস্য অফিসার আলমগীর হোসেন বলেন, মুক্ত জলাশয়ের মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির বিষয়ে অধিদপ্তর কাজ করছে। রূপগঞ্জে মাছের অভয়াশ্রম নেই বললেই চলে। এর আওতায় নদী বা খাল-বিলের গভীর অংশে মাছ ধরা নিষেধ থাকে সারা বছর। সেখানে মাছ তৈরি হবে এবং বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে যায়। প্রকল্প নিয়ে এ ধরনের অভয়াশ্রমের সংখ্যা বাড়ানোর চিন্তা করা হচ্ছে।
চাঁদপুরে ‘রাসূল (সা.) বার্তা বাহক’ এমন বক্তব্যকে কেন্দ্র করে মসজিদের ভেতরে খতিবের ওপর হামলার ঘটনায় অভিযুক্ত আসামি বিল্লাল হোসেনকে জেলহাজতে পাঠিয়েছেন আদালত।
শনিবার (১২ জুলাই) তাকে জেলহাজতে পাঠানোর আদেশ দেন চাঁদপুরের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শাহাদাতুল হাসান আল মুরাদ।
আদালত সূত্রে জানা যায়, শনিবার বিকালে তাকে আদালতে হাজির করে চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশ। পরে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন আসামি। এরপর আদালত তাকে জেলহাজতে পাঠানোর আদেশ দেন।
এর আগে, শুক্রবার (১১ জুলাই) এই ঘটনায় আহত খতিব মাওলানা আ ন ম নুরুর রহমান মাদানীর ছেলে আফনান তাকি বাদী হয়ে থানায় মামলা করেন।
এসব তথ্য ইউএনবিকে নিশ্চিত করেছেন সরকার পক্ষের আইনজীবী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের এপিপি আব্দুল কাদের খান ও জেলা জজ আদালতের এপিপি ইয়াসিন আরাফাত ইকরাম।
চাঁদপুর কোর্ট পুলিশ পরিদর্শক শহীদুল্লাহ ইউএনবিকে জানান, শনিবার বিকাল ৩টার দিকে আসামিকে আদালতে আনা হয়। এরপর আসামি বিচারকের কাছে জবানবন্দী দেন। জবানবন্দী শেষে বিকালে তাকে জেলহাজতে পাঠানো হয়।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা হলেন— চাঁদপুর সদর মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) নাজমুল হোসেন।
এদিকে, শনিবার দুপুর থেকে একটি চক্র সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব ছড়ায়, খতিব নুরুর রহমান মাদানী মারা গেছেন।
তবে মামলার বাদী আহত খাতিবের ছেলে আফনান তাকী জানান, তারা বাবা প্রথমে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। এরপর উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজধানীর ঢাকা হলি কেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে তিনি চিকিৎসা নিচ্ছেন এবং শঙ্কামুক্ত আছেন।
গুরুতর আহত খতিব মাওলানা নূরুর রহমান মাদানী শহরের গুনরাজদী এলাকার বাসিন্দা। তিনি মোল্লাবাড়ি জামে মসজিদসহ বিভিন্ন মসজিদে প্রায় শুক্রবার খুতবা দেন।
অভিযুক্ত বিল্লাল হোসেন সদর উপজেলার বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের মনোহর খাদি গ্রামের মৃত আইয়ুব আলীর ছেলে। শহরের বকুলতলায় বসবাস করেন তিনি।
স্থানীয়রা জানান, শুক্রবার বাদ জুমা মোল্লাবাড়ি জামে মসজিদে হামলার শিকার হন মাওলানা নূরুর রহমান মাদানী। আগেই জুম্মার নামাজে আলোচনা ও খুতবা নিয়ে ক্ষিপ্ত ছিলেন ওই এলাকার ভ্রাম্যমাণ সবজি ব্যবসায়ী বিল্লাল হোসেন। ঘটনার দিন নামাজ শেষে তিনি মসজিদের ভেতরে পূর্বপরিকল্পিতভাবে দেশীয় অস্ত্র (চাপাতি) দিয়ে খতিবের ওপর হামলা চালান। এতে খতিবের কানে ও মাথায় মারাত্মক জখম হয়। পরবর্তীতে মুসল্লিরা তাকে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান।
এ সময় হামলাকারী বিল্লাল হোসেনকে আটক করে পুলিশ সোপর্দ করেন মুসল্লিরা।
এদিকে, এই ঘটনায় শহরে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য বিকাল ৩টায় পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সম্মেলনকক্ষে জেলা পর্যায়ের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও ধর্মীয় সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন পুলিশ সুপার (এসপি) মুহম্মদ আব্দুর রকিব।
এ ছাড়া, বিকাল ৫টায় শহরের রেলওয়ে বায়তুল আমিন জামে মসজিদ প্রাঙ্গণ থেকে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ মিছিল করে জামায়াতে ইসলামী চাঁদপুর শহর শাখা।
বর্ষা শুরু হতে না হতেই বন্যার আশঙ্কা উদয় হয় ফেনীবাসীর মনে। বন্যার ধ্বংসযজ্ঞ এই জেলায় যেন এক পরিচিত পুনরাবৃত্তি, বছর বছর ফিরে আসে একই দুর্যোগ, আর থেকে যায় দগদগে ক্ষত। প্রশ্ন ওঠে, টেকসই বাঁধ নির্মাণ কি হবে না? ফেনীবাসী কি রক্ষা পাবে না বন্যার ভয়াবহ থাবা থেকে?
শনিবার (১২ জুলাই) দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম ফেনীর বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শনে যান। সে সময় স্থানীয়রা টেকসই বাঁধ নির্মাণের জন্য তার কাছে দাবি জানান। জবাবে ফেনীতে বাঁধ নির্মাণের জন্য ৭ হাজার ৩৪০ কোটির প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
সম্প্রতি ভারতের উজান থেকে নেমে আসা বাঁধভাঙা পানি পরশুরাম ও ফুলগাজী থেকে গড়িয়ে ছাগলনাইয়া ও ফেনী সদর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে ঢুকে পড়ে। শুক্রবার পর্যন্ত বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ২৩টি স্থানে ভেঙে ১১২টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বন্যাকবলিত গ্রামগুলোর অন্তত ৩৪ হাজার ৬০০ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ফলে সীমান্তবর্তী ফুলগাজী, পরশুরাম, ছাগলনাইয়া ও ফেনী সদরের আংশিক নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে ভোগান্তিতে পড়েছেন হাজার হাজার মানুষ। বিভিন্ন সড়ক পানিতে তলিয়ে গিয়ে বন্ধ রয়েছে যান চলাচল। বন্যার্ত এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ ও নেটওয়ার্ক না থাকায় মানুষের বিপদ আরও বেড়েছে।
এখন ধীরে ধীরে বন্যার পানি নেমে যাচ্ছে, আর ভেসে উঠছে ক্ষয়ক্ষতির চিত্র। পরশুরামে অর্ধশতাধিক ঘরবাড়ি পানিতে ধসে পড়েছে। ফুলগাজীতে পানিতে ডুবে পচে গেছে রোপা আমন ধান। আবার কারো ধান বালুর স্তুপে ঢেকে গেছে। ফলে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন হাজারো কৃষক।
আক্ষেপ করে ফুলগাজীর উত্তর শ্রীপুর এলাকার বৃদ্ধা রেজিয়া বেগম জানান, বছর না ঘুরতেই আবারও পানিতে ডুবতে হয়েছে। সব জিনিসপত্র ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে। এ অঞ্চলে জুলাই-আগস্ট মাসে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে ভাঙন এখন নিয়মে পরিণত হয়েছে। সবমিলিয়ে মাঝেমধ্যে মনে হয়, এখানে জন্মগ্রহণ করে ভুল করেছি।
শুধু রেজিয়াই নন, বারবার একই পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়ে এমন দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে জেলার উত্তরের ফুলগাজী, পরশুরাম ও ছাগলনাইয়া উপজেলার লাখো মানুষকে। এবারও তিন দিনের ভারী বৃষ্টিপাত ও ভারতের উজানের পানিতে মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ২৩টি স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে।
ফুলগাজীর উত্তর শ্রীপুর এলাকার বাসিন্দা আলী আজ্জম বলেন, বাঁধের ভাঙন স্থানে তীব্র স্রোতে পানি ঢুকছে। সময়ের সঙ্গে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। গত বছরের বন্যার মতো এবারও বিদ্যুৎ ও মোবাইল নেটওয়ার্ক সমস্যা নিয়ে ভুগতে হচ্ছে। রাজনৈতিক দল বা ক্ষমতা পরিবর্তন হলেও আমাদের ভাগ্য কখনো পরিবর্তন হয় না।
গাইনবাড়ি এলাকার বাসিন্দা পুষ্পিতা রাণী বলেন, ঘরবাড়ি পানিতে ডুবে গেছে। পরিবারের শিশু ও বয়স্কদের নিয়ে অবর্ণনীয় কষ্ট করতে হচ্ছে। শুকনো খাবার ও নিরাপদ পানির সংকটে আরও বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কিছু কর্মকর্তার দায়সারা কাজের জন্য প্রতি বছর এ জনপদে ভাঙন নিয়মে পরিণত হয়েছে। এখন টেকসই বাঁধই আমাদের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য একমাত্র সমাধান।
বন্যায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পরশুরাম, ফুলগাজী উপজেলা। দুই উপজেলার ৮০ শতাংশের বেশি মানুষ বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অন্তত ৫০ শতাংশ বাড়িঘর। এ ছাড়া দুই উপজেলার পয়োনিষ্কাশনের ব্যবস্থা ও সুপেয় পানির সুবিধা একেবারে অচল হয়ে গেছে বলা চলে।
এখন পানি ধীরে ধীরে নামতে শুরু করলেও দুর্গতদের মধ্যে জীবিকা হারানো ও খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই দুই উপজেলার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর প্রতিদিন দুই বেলার বেশি খেতে পারছে না। পয়োনিষ্কাশনের ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় খোলা জায়গায় মলমুত্র ত্যাগ বাড়ছে, যা ডায়রিয়া ও কলেরার মতো পানিবাহিত রোগের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। অনেকেই এসব রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।
ফেনীর ফুলগাজী উপজেলার বন্যাদুর্গত হোসনে আরা (৪০) নিজের ভয়াবহ অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, ‘বন্যার সময় পরিবার নিয়ে আমরা বাড়ির ছাদে ছিলাম। আমাদের কাছে বিশুদ্ধ খাবার পানি বা খাবার কিছুই ছিল না। টয়লেটও ডুবে গিয়েছিল, এ ক্ষেত্রে মেয়েদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা নিশ্চিত সম্ভব হতো না। আমরা কেবল রাতের বেলা শাড়ি দিয়ে ঘিরে টয়লেটের কাজ সারতাম। এ ছাড়া কিছু করার ছিল না। এই বন্যা আমাদের সবকিছু শেষ করে দিয়েছে।’
ভয়াবহ বন্যায় ফেনীর পরশুরামের আবদুল আলি (৫২) ঘরবাড়ি হারিয়েছেন। তিনি বলেন, এখন বর্ষা এলেই ভয় লাগে, সামান্য বৃষ্টিতেই বাঁধ ভেঙে পানি এলাকায় চলে আসে। ভেবেছিলাম, গত বছরের থেকে কিছুটা উন্নতি হবে, কিন্তু তা হয়নি। এমন ভয়াবহ বন্যার পানি আগে দেখিনি।
গত ৮ জুলাই থেকে শুরু হওয়া এই বন্যায় ফেনীর ৪টি উপজেলার বিশাল অংশ পানির নিচে তলিয়ে যায়। এই বন্যায় প্রায় লাখো মানুষ সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অবকাঠামো, বাড়িঘর, কৃষি ও মৎস্য খাত। এসব ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে দুর্গত জনগোষ্ঠীর জরুরি ও ধারাবাহিক মানবিক সহায়তা প্রয়োাজন।
বন্যাদুর্গত মানুষের জন্য জরুরিভাবে বিশুদ্ধ খাওয়ার পানি, নগদ অর্থসহায়তা, খাদ্য ও স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রী প্রয়োজন। মধ্য মেয়াদে ঘরবাড়ি মেরামত, পানি ও পয়োনিষ্কাশনের ব্যবস্থা পুনরুদ্ধার এবং খাদ্য উৎপাদনে কৃষি উপকরণ সরবরাহ এবং দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের পুনর্বাসন নিশ্চিত করা ও আয়মূলক কার্যক্রম পরিচালনা করা জরুরি।
বন্যার শুরু থেকেই অবশ্য বন্যাকবলিত এলাকাগুলোতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জরুরি সহায়তা কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। দুর্গত এলাকায় বিশুদ্ধ খাওয়ার পানি, শুকনো খাবার, ওরস্যালাইন ও পানি দেওয়া হয়েছে। তবে এখন তারা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে ভেঙে পড়া ঘরবাড়ি পুনর্নির্মাণ, নিরাপদ পয়োনিষ্কাশনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা, স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রী প্রদান ও খাদ্য সরবরাহ করতে হবে। তাছাড়া বন্যার ক্ষয়ক্ষতির অবস্থার তুলনায় তাৎক্ষণিক ও দীর্ঘমেয়াদি প্রয়োজন মেটাতে আরও বেশি সহায়তার প্রয়োজন রয়েছে।
প্রতিবারই বন্যা আসে, ত্রাণ যায়, মানুষ কিছুদিনের জন্য টিকে থাকে। কিন্তু অনেকেই স্বপ্ন আর স্থায়ী জীবিকা হারায় চিরতরে।
চাঁদপুর পৌর শহরের লেক থেকে আল আমিন (১৭) নামে এক শিক্ষার্থীর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তার ৭ সহপাঠীকে আটক করেছে পুলিশ।
শনিবার (১২ জুলাই) রাত ৯টার দিকে লাশটি উদ্ধার করা হয়।
নিহত আল আমিনের বাড়ি সদর উপজেলার রাজরাজেশ্বর। সে এ বছর শহরের গণি মডেল হাই স্কুল থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল। রাজরাজেশ্বর ইউনিয়ন যুবদলের সাধারণ সম্পাদক রমজান আলী প্রধানিয়ার ছেলে সে। শহরের মমিনপাড়া রোডে বাস করতেন তারা।
স্থানীয়রা জানান, শনিবার বিকালে পৌর লেকে নির্মিত ‘স্বাধীনতার স্মারক অঙ্গীকারের’ পাশে কয়েকজন সহপাঠীর সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছিল। পরে রাত ৯টার দিকে লেকের পানিতে ভাসতে দেখে স্থানীয়রা তাকে উদ্বার করে দ্রত জেলা সদর হাসপাতালে নিলে জরুরি বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। আল আমিনের গায়ে বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন দেখা গেছে বলে জানিয়েছেন তার স্বজনরা।
স্বজন ও বন্ধুদের অভিযোগ, কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা তাকে মেরে পানিতে ফেলে দিয়েছে। এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করেছেন তারা।
খবর পেয়ে হাসপাতালে যান সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বাহার মিয়া ও সদর সার্কেলের সহকারি পুলিশ সুপার।
স্বজনদের কাছ থেকে সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে এরই মধ্যে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আল আমিনের সহপাঠী দিদার গাজী, মামুন, জাহেদ, দিদারুল ইসলাম, মইন ইসলাম ও শামীমসহ ৭ জনকে আটক করেছে পুলিশ।
এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের আশ্বাস দিয়েছেন ওসি বাহার মিয়া।
ভোলার চরফ্যাশন উপজেলায় ভয়াবহভাবে ছড়িয়ে পড়েছে লাম্পি স্কিন রোগ। উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে এ পর্যন্ত কয়েক হাজার গরু এই ভাইরাস জনিত রোগে আক্রান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস। আক্রান্ত গরুগুলোর মধ্যে অনেকটি শরীরে বড় বড় গুটি, ক্ষত ও জ্বর দেখা দিয়েছে। দুধ উৎপাদন কমে যাওয়ার পাশাপাশি কিছু গরুর মৃত্যু ও গর্ভপাতের ঘটনাও ঘটেছে। ফলে কৃষক ও খামারিরা পড়েছেন চরম দুশ্চিন্তায়। খামারিদের অভিযোগ, টিকার সরবরাহ নেই এবং অনেক ক্ষেত্রে মাঠপর্যায়ে সরকারি সেবা পৌছায় না।
জানা যায়, লাম্পি স্কিন এক ধরনের সংক্রামক ভাইরাসজনিত রোগ, যা গবাদিপশু বিশেষ করে গরুর জন্য মারাত্মক হুমকি। এটি মূলত ভাইরাস এবং মাছি, মশাসহ বিভিন্ন বাহকের মাধ্যমে পশুর শরীরে প্রবেশ করে। ভাইরাসটি এক পশু থেকে অন্য পশুতে দ্রুত ছড়ায়। গরুর শরীরে গুটি উঠা, জ্বর, দুর্বলতা, চোখ ও নাক দিয়ে পানি পড়া, খাওয়া বন্ধ হয়ে যাওয়া এই রোগের প্রধান লক্ষণ।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের তথ্যমতে, চরফ্যাশনে এ পর্যন্ত প্রায় ৪ হাজার ৩৭১ গরু লাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত হয়েছে। তবে প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে, কারণ অনেক গৃহস্থ এ বিষয়ে এখনো রিপোর্ট করেননি। এর মধ্যে ৩ হাজার ৪৪টি গরুকে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। উপজেলার চর কুকরীমুকরী, চর মানিকা, নজরুল নগর, আড়ালিয়া, ওসমানগঞ্জ, শশীভূষণসহ বেশ কয়েকটি ইউনিয়নে ব্যাপকহারে গরু আক্রান্ত হয়েছে।
নজরুল নগর ইউনিয়নের কৃষক মাহে আলম জানান, তার দুটি গরুতে প্রথমে জ্বর দেখা দেয়, এরপর গরুর শরীরে গুটি দেখা যায়। তিনি স্থানীয় ওষুধের দোকান থেকে ওষুধ কিনে খাওয়ালেও অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। অবশেষে প্রাণিসম্পদ অফিসে যোগাযোগ করে চিকিৎসা শুরু করেছেন। গরুগুলো এখন আর খাবার গ্রহণ করে না। কৃষক খোরশেদ আলম বলেন, ‘আমার খামারে ১০ টি গরু রয়েছে। এর মধ্যে ৩টি গরুর গায়ে গুটি দেখা দিয়েছে। স্থানীয় চিকিৎসকের কাছ থেকে ওষুধ নিয়েছি তবে কোন উন্নতি দেখিনি। পরে উপজেলা প্রাণিসম্পদ ও ভেটেনারী হাসপাতালে নিয়ে আসি। ডাক্তার বলছে এটা এক ধরনের ভাইরাস। এই ভাইরাসের কোন টিকা নেই। সরকারের কাছে অনুরোধ দ্রুত এই টিকার ব্যবস্থা না করলে গরু লালন-পালনকারীরা ক্ষতির মুখে পড়বে।’
চরফ্যাশন উপজেলায় প্রায় ১ লক্ষ ২৪ হাজার ৩৫০টি গরু রয়েছে। এদের একটি বড় অংশ কৃষক পরিবারগুলোর জীবিকা ও আয়ের প্রধান উৎস। এই অবস্থায় লাম্পি স্কিন রোগ বিস্তার রোধে জরুরি ভিত্তিতে ভ্যাকসিন সরবরাহ, ফিল্ড ভেটেরিনারি টিম গঠন, ওয়ার্ড পর্যায়ে মনিটরিং এবং ক্ষতিগ্রস্ত খামারিদের জন্য সহায়তা প্যাকেজ চালুর আহ্বান জানিয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।
উপজেলা ভেটেনারি সার্জন ডা. মো. রাজন আলী বলেন, ‘লাম্পি স্কিন ডিজিজ এই রোগের ভেকসিন এখনো বাজারে আসেনি। আমরা গরু লালন-পালনকারীদের বিভিন্ন পরামর্শ দিচ্ছি। ভেকসিন তৈরিতে সরকার চেষ্টা চালাচ্ছে। ভেকসিন তৈরি হলে অধিদপ্তর আমাদেরকে সরবরাহ করলে আমরা লাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত গরুকে ভেকসিন দিতে পারবো।’
দক্ষিণাঞ্চলের জেলা নড়াইল। পাট চাষের জন্য এ জেলার মাটি খুবই উপযোগী। খুলনা বিভাগের মধ্যে এখানেই সবচেয়ে উন্নতমানের পাট উৎপাদন হয়ে থাকে। বোরো ধান কাটার পর পরই হাসি মুখে কৃষকরা জমিতে পাট চাষ করেন। গত বছরের মত এবারো পাটের ভালো দাম পাবার আশায় বুক বেধে আছে কৃষকরা। কৃষি বিভাগের দাবি গত বছরের তুলনায় চলতি বছরে বেশি জমিতে পাট চাষ হয়েছে, পাটের ফলনও ভালো। কিন্তু কৃষকদের অভিমত অতিবৃষ্টির কারণে এ বছর পাটের ফলন ভালো না হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
নড়াইল সদর উপজেলার মুলিয়া ইউনিয়নের সীতারামপুর গ্রামের কৃষক পাগল বিশ্বাস গত বছর পাটে ভালো দাম পাওয়ায় বোরা ধান ওঠার সঙ্গে সঙ্গে ৫০ শতক জমিতে পাট চাষ করেন । জমিতে পাটের চারাগাছ এক হাতের মত লম্বা হওয়ার কিছু দিন পর হঠাৎ করে অতিবৃষ্টি শুরু হয়। বৃষ্টির পানি জমিতে জমে থাকার কারণে পাটগাছ আর বাড়তে পারেনি। যে কারণে পরিবারকে (স্ত্রীকে) সঙ্গে নিয়ে পাটগাছের চারা কেটে ফেলেন। এতে তার ১০/১৫ হাজার টাকার ক্ষতি হয়।
জেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গত (২০২৪-২০২৫) অর্থ বছরে জেলায় ২৩ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। আবাদ হয় ২৩ হাজার ৪৩০ হেক্টর জমি । পাট উৎপাদন হয় ৩ লাখ ১৬ হাজার ১৮২ বেল।
চলতি অর্থ বছরে (২০২৫-২০২৬) জেলায় পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ২৩ হাজার ৯০০ হেক্টর জমি। আবাদ হয়েছে ২৩ হাজার ৪৯৮ হেক্টর জমি। পাট উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ লাখ ২১ হাজার ৯২৩ বেল।
নড়াইল সদর উপজেলার সলুয়া গ্রামের পাটচাষি বাচ্চু মোল্যা বলেন, জুন মাস শুরু থেকেই অতিরিক্ত বৃষ্টি হচ্ছে । জমিতে পানি জমে থাকায় পাটের অনেক চারা মারা গেছে । অবশিষ্ট চারাগুলো স্বাভাবিকভাবে বাড়তে পারেনি । ফলে এ বছর উৎপাদন কম হতে পারে । তিনি বলেন, গত বছর বাজারে প্রথম দিকে দুই থেকে আড়াই হাজার টাকায় প্রতি মণ পাট বিক্রি হয়েছে। ভালো মানের পাট তিন হাজার টাকা দরেও বিক্রি হতে দেখা গেছে। গত বছরের মত এ বছরও পাটের দাম অব্যাহত থাকলে আগামীতে আরো বেশি জমিতে পাট চাষ হবে বলে আশা করেন।
লোহাগড়া উপজেলার লাহুড়িয়া ইউনিয়নের সরুশুনা গ্রামের মেহেদী শেখ বলেন, এক সময় পাট চাষ করে উৎপাদন খরচই উঠতো না । এখন সুদিন ফিরে এসেছে । গত বছর পাটের বেশ ভালো দাম পেয়েছি। তিনি মনে করেন সরকারিভাবে প্রতি মণ পাটের দাম তিন হাজার টাকা করে নির্ধারণ করে দিলে পাটের সোনালী দিন টিকে থাকবে। জানতে চাইলে তিনি বলেন, নড়াইলের মধ্যে সবচেয়ে ভালোমানের পাট উৎপাদিত হয় নলদী, নোয়াগ্রাম ইউনিয়ন ও আশপাশের উচু এলাকায়।
নলদী বাজারের পাট ব্যবসায়ী মো.শাহিনুজ্জামান বলেন, ‘নড়াইলের মধ্যে নলদী ও নোয়াগ্রাম ইউনিয়ন ও তার আশপাশের উচু এলাকায় উৎপাদিত পাটের মান অনেক ভালো। গত বছর এসব এলাকার পাট সর্বোচ্চ তিন হাজার টাকা পর্যন্ত দাম উঠেছে।’
ব্রাম্মণডাঙ্গা বাজারের পাট ব্যবসায়ী লাবলু মোল্যা বলেন, নড়াইলের পাটের চাহিদা সারাদেশে রয়েছে । বিগত বছরগুলোতে ২৫০০ থেকে ৩০০০ টাকা দাম উঠলেও এ বছরের হিসাব বলা যাচ্ছে না। তিনি বলেন, গত বারের মত পাটের দাম অব্যাহত থাকলে আগামিতে কৃষকরা আরো বেশি জমিতে পাট চাষ করবে।
নড়াইল জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা সৌমিত্র সরকার বলেন, গত অর্থ বছরে (২০২৪-২৫)জেলায় ২৩ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। আবাদ হয়েছিল ২৩ হাজার ৪৩০ হেক্টর জমি। পাট উৎপাদন হয়েছিল ৩ লাখ ১৬ হাজার ১৮২ বেল।
চলতি অর্থ বছরে (২০২৫-২০২৬) জেলায় পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৩ হাজার ৯০০ হেক্টর জমি। আবাদ হয়েছে ২৩ হাজার ৪৯৮ হেক্টর জমি। পাট উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ লাখ ২১ হাজার ৯২৩ বেল।
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, গত বছরের তুলনায় চলতি বছরে পাটের আবাদ বেশি হয়েছে । আশা করছি বাজার মূল্যও বিগত বছরের তুলনায় এবার বেশি হবে। তিনি মনে করেন সোনালী আশখ্যাত পাটের সুদিন ফিরে এসেছে । গত বারের মত বাজার দর অব্যাহত থাকলে আগামিতে কৃষকরা পাট চাষের প্রতি ঝুকে পড়বে।
মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে ভাঙারি পণ্যের ব্যবসায়ী লাল চাঁদ সোহাগকে নৃশংসভাবে হত্যার সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন ঢাকার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা।
শনিবার (১২ জুলাই) বেলা একটার দিকে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে বিক্ষোভে অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী অংশ নেন। ‘ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সচেতন শিক্ষার্থী সমাজ’ ব্যানারে এই বিক্ষোভ হয়। দুপুর ১২টার দিকে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (এনএসইউ) শিক্ষার্থীরাও বিক্ষোভ করেছেন। ইডেন কলেজ, ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও বিক্ষোভ করেন।
বিক্ষোভ চলাকালে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ‘কণ্ঠে আবার লাগা জোর, চাঁদাবাজের কবর খোঁড়, ‘চাঁদাবাজ চাঁদা তোলে, ইন্টেরিম কী করে?’, ‘চব্বিশের হাতিয়ার গর্জে উঠুক আরেকবার’, ‘কে দিল রে জানোয়ার মানুষ মারার অধিকার’ বলে স্লোগান দেন।
কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী সাইফুল্লাহ সাকিব বলেন, ‘বিপ্লব–পরবর্তী সময়ে সবাই মিলেমিশে কাজ করার যেই মানসিকতা তৈরি হয়েছিল, সেটা নষ্ট হয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোর সহিংসতা বেড়ে গেছে। একজন মানুষকে এভাবে নৃশংসভাবে হত্যার তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’
গত বুধবার রাজধানীর মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয় ভাঙারি পণ্যের ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগকে (৩৯)। হত্যার আগে ডেকে নিয়ে তাকে পিটিয়ে এবং ইট-পাথরের টুকরা দিয়ে আঘাত করে মাথা ও শরীরের বিভিন্ন অংশ থেঁতলে দেওয়া হয়। একপর্যায়ে তাকে বিবস্ত্র করা হয়। তার শরীরের ওপর উঠে লাফায় কেউ কেউ।
এ ঘটনায় এ পর্যন্ত ৫ জনকে গ্রেপ্তার করার কথা জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী ও আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল।
টানা চার দিনের মুষলধারে বৃষ্টিপাতের পর টানা দুদিন নোয়াখালীতে রোদ্রৌউজ্জ্বল আবহাওয়া বিরাজ করছে। এতে অধিকাংশ উপজেলায় জলাবদ্ধতা পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে বেগমগঞ্জ উপজেলার হাজীপুর, দুর্গাপুর ও লক্ষীনারায়ণপুর গ্রামসহ কয়েকটি গ্রামে পানি বেড়েছে। স্থানীয়দের ধারণা ফেনীর পানি ঢুকে বৃষ্টি না থাকলে এ অঞ্চলে পানি বেড়েছে।
শনিবার (১১ জুলাই) সকালে জেলার সদর, সুবর্ণচর, কোম্পানীগঞ্জ ও কবিরহাট উপজেলার বাসিন্দারা জানায় তাদের এলাকায় পানি নামছে ধীর গতিতে। এজন্য বেশিরভাগ এলাকায় এখনো বন্যার পানি জমে থাকায় জনদুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ভারী বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে জেলার ছয়টি উপজেলার ৫৭টি ইউনিয়ন বন্যাকবলিত হয়েছে। এতে ৪৬ হাজার ৭০টি পরিবারের প্রায় ১ লাখ ৯২ হাজার ৫০৩ মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। কবিরহাট ও সুবর্ণচর উপজেলায় আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৪৫টি বসতঘর। সুবর্ণচরে একটি বসতঘর সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়।
স্থানীয়দের অভিযোগ,পর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থার অভাব এবং পানি নিষ্কাশনের নালা ও জলাশয় গুলো ভরাট হয়ে যাওয়ায় শহরবাসীর এ দুর্ভোগ। কর্তৃপক্ষের উদাসীনতাকে দায়ী করছেন অনেকে। হালকা বৃষ্টিতেই নোয়াখালী পৌরসভা এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। এদিকে মাইজদীর লক্ষ্মীনারায়ণপুর, সেন্ট্রাল রোড, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, জেলা শিল্পকলা একাডেমিসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় এখনো রাস্তাঘাট পানিতে ডুবে রয়েছে। আশপাশের অনেক বাসাবাড়িতেও পানি জমে রয়েছে। টানা বৃষ্টির বিরতিতে মানুষ কিছুটা স্বস্তি পেলেও জলাবদ্ধতা ও বন্যা পরিস্থিতির তেমন কোনো উন্নতি হয়নি।
জেলা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় নোয়াখালীতে তেমন কোনো বৃষ্টিপাত হয়নি। আপাতত ভারী বৃষ্টিরও সম্ভাবনা নেই। তবে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হতে পারে।
জেলা ত্রাণ কর্মকর্তা মো. মাসুদুর রহমান বলেন, পাঁচটি উপজেলায় ৪৭টি আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে ১ হাজার ৮৫০ জন মানুষ এবং ১৭১টি গবাদি পশু। দুর্গতদের চিকিৎসায় ৫১টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে, যার মধ্যে ২৯টি কাজ শুরু করেছে। বন্যার ক্ষয়ক্ষতির প্রতিবেদন ইতোমধ্যে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
জেলা প্রশাসক খন্দকার ইসতিয়াক আহমেদ বলেন, পানি নিষ্কাশনে সর্বাত্মক চেষ্টা চালানো হচ্ছে। বৃষ্টি না হলে জলাবদ্ধতা পরিস্থিতির দ্রুত উন্নতি হবে।
ফেনীতে বন্যার পানি নামতে শুরু করেছে। এর সঙ্গে দেখা দিয়েছে নতুন এক আতঙ্ক। বন্যার কবল থেকে রক্ষা পেতে মানুষের বাড়িঘরে আশ্রয় নিয়েছিল নানা প্রজাতির সাপ। এখন ঘরে ফিরলেও সাপ আতঙ্ক বিরাজ করছে স্থানীয়দের মাঝে। এরই মধ্যে পরশুরামে বিষধর সাপের কামড়ে রোকেয়া আক্তার রিনা (৫০) নামে এক গৃহবধুর মৃত্যু হয়েছে।
শুক্রবার (১১ জুলাই) বিকাল ৫টার দিকে ফেনীর পরশুরামের পৌর এলাকার সলিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত রিনা পৌর এলাকার সলিয়া গ্রামের শফিকুল ইসলাম শহীদের স্ত্রী। তার এক ছেলে দুই মেয়ে রয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, বন্যার পানি শুকিয়ে গেলে রান্না করার জন্য রান্নাঘরে গেলে সেখানে একটি অজ্ঞাত বিষধর সাপ রিনাকে কামড় দেয়। তাকে উদ্ধার করে প্রথমে পরশুরাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। এরপর ফেনী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহতের স্বামী শফিকুল ইসলাম জানান, শুক্রবার বিকাল ৫টার দিকে রিনা রান্না ঘরে যায়। এ সময় রান্নাঘরের একটি গর্ত থেকে বিষধর একটি সাপ বের হয়ে তার পায়ে কামড় দেয়। তার চিৎকার শুনে তাকে উদ্ধার করে প্রথমে পরশুরাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্রেক্স নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তার কোনো চিকিৎসা না হওয়ায় ফেনী সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতালে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ফেনী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডাক্তার রেদোয়ান বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, হাসপাতালে আনার আগেই ওই গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছিল।
এ যেন মগের মুল্লুক। ইচ্ছে করলেই বিক্রি করা যায় চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) লে-আউটভুক্ত রাস্তা, গ্রীনজোন, ইদগাঁ, স্কুলের মাঠ এমনকি খোদ মসজিদের জায়গাও। দেশের প্রচলিত আইনানুযায়ী বিক্রিত জমি হস্তান্তরে সাব কবলা দলিল লাগলেও এ মগের মুল্লুকে সম্পাদক স্বাক্ষরিত পাওয়ারই মালিকানার প্রমাণ। এক দেশে দুই আইন, কল্পনার নবাবী সাম্রাজ্য। ফলে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও প্রবাসী পরিবারসহ অনেকেই এখন বাস্তুচ্যুত। আর এ সমিতির সকল অপকর্মের সহযোগী খোদ চট্টগ্রাম সমবায় অফিসের কতিপয় দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা। তারা টাকার বিনিময়ে বছর বছর অনিয়ম-দুর্নীতির ছাড়পত্র দিচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
এ মগের মুল্লুকের নাম চট্টগ্রাম নগরীর বায়েজিদ বেস্তামী থানার চৌধুরীনগর আবাসিক এলাকা। আর অপকর্মের হোতা চৌধুরীনগর বহুমুখী সমবায় সমিতি লি:, রেজিস্ট্রেশন নং ৭২৯৮।
তথ্য প্রমাণে জানা যায়, ১৯৯০ সালে সাব কবলা দলিলে জমির মালিক স্থানীয় অধিবাসীরা এলাকার উন্নয়নের স্বার্থে প্রতিষ্ঠা করেন এ সমিতি। পরবর্তীতে সমিতিও কিছু জায়গা ক্রয় করে ২৫ একর জায়গার উপর সিডিএ লে-আউট প্ল্যান পাশ করে। পরবর্তীতে সমিতির ক্রয়কৃত জায়গা দলিলমূলে নিজেদের দাবি করেন কতিপয় ব্যাক্তি ও প্রতিষ্ঠান। পাশাপাশি জাতীয় গ্রিডের বিদুৎ লাইন ও পাহাড় রক্ষায় সরকারও উদ্যেগ নেয়। ফলশ্রুতিতে ১৯৯৮ সালে হাইকোর্ট উক্ত জায়গা ক্রয়-বিক্রয় ও হস্তান্তরে স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জারি করে।
বার্ষিক অডিট রিপোর্টে জানা যায়, চৌধুরী নগর বহুমুখী সমবায় সমিতির সভাপতি ও সম্পাদক মামলা নিস্পত্তি সংক্রান্ত ব্যয়ের অজুহাতে ভুয়া ভাউচারে ৫০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন। আর সমিতির দখলে থাকা জায়গার নামজারি খতিয়ান তৈরির জন্য অজ্ঞাত ভূমি কর্মকর্তাকে ঘুষ দেয়ার নামে ৭০ লাখ টাকা এবং ওয়াসার পানির লাইন সংযোগে অজ্ঞাত ইঞ্জিনিয়ারকে ঘুষ বাবদ সাড়ে ৩ লাখ টাকা পারস্পরিক যোগসাজসে আত্মসাত করে। কিন্তু এখনো ওয়াসার পানির লাইনের সংযোগ ও জমির নামজারি হয়নি।
এদিকে সমিতির সভাপতি শামসুল হুদা নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের গডফাদার হিসাবে পরিচিত। গত ১৫ বছর স্থানীয় পর্যায়ে অবৈধ ভূমি দখল, পাহাড়কাটা, বালু বিক্রি, কিশোর গ্যাং, চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্মে লিপ্ত ছিলেন তিনি। তার স্ত্রী মাহমুদা হুদা মহিলা আওয়ামী লীগ, ছেলে নাজমুল হুদা যুবলীগ, পুত্রবধূ তানজিয়া সুলতানা যুব মহিলা লীগ, কনিষ্ঠ সন্তান মইনুল হুদা নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। অভিযোগ আছে, শামসুল হুদা দলীয় ক্যাডারদের দিয়ে আবাসিকের পাশ্ববর্তী পাহাড় পুলিশের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাহবুব ও পাইপ ফ্যাক্টরি সমিতির সদস্য মোহাম্মদ কালামের কাছ থেকে দখল করে নেন। ইতোমধ্যে তার বিরুদ্ধে পাহাড় কাটার মামলাও হয়েছে। অবৈধভাবে পাহাড় কাটার অপরাধে পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম শামসুল হুদাকে অর্থদণ্ড প্রদান করে। সমিতির অর্থ সম্পাদক মো. আবদুল হান্নান ছাত্র হত্যা মামলায় কারাগারে। আর সাবেক সম্পাদক হারুনুর রশিদ নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের নগরীর ২ নম্বর জালালাবাদ ওয়ার্ড নেতা। অভিযোগ রয়েছে, জুলাই গণআন্দোলনে নগর আওয়ামী লীগের এক শীর্ষ নেতার নির্দেশে বহদ্দারহাট ও নিউমার্কেটে ছাত্র-জনতার উপর হামলাকারীদের আর্থিকভাবে পৃষ্টপোষাকতা করেন এই হারুনুর রশীদ। ৫ আগস্ট হারুনুর রশীদ ও তার ছেলে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতা অনয় এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সমিতির সাধারণ সম্পাদক সাইফুদ্দিন চৌধুরী জানান, ‘সদস্যদের ওই টাকা সভাপতির সম্মতিতে ভাউচার দিয়ে নিয়েছি। এ টাকা সমিতির পক্ষ থেকে খরচ করা হয়েছে, এটা আমার একার কোনো বিষয় নয়।’
সমিতির সভাপতি শামসুল হুদার মোবাইল ফোনে কল দিলে সাংবাদিক পরিচয় পাওয়ার পর তিনি নিজের নাম মহসিন উল্লেখ করে কথা বলতে অস্বীকার করেন। এরপরও এ প্রতিবেদক অভিযোগসমূহ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যা ইচ্ছা লিখে যান। আমরা (আওয়ামী লীগ) আবার ক্ষমতায় আসলে কড়ায়-গন্ডায় উসুল করব।’
দৈনিক বাংলার অনুসন্ধানে জানা যায়, সমিতির সব অপকর্মে প্রশাসনিকভাবে সহায়তা করেছে পাঁচলাইশ থানা সমবায় অফিসার (বর্তমানে পটিয়া উপজেলা অফিসার) মো. শফিউল আলম ও জেলা সমবায় অফিসের কতিপয় কর্মকর্তা। ওই কর্মকর্তার সঙ্গে সমিতির সভাপতি আওয়ামী লীগ নেতা শামসুল হুদা ব্যক্তিগত সম্পর্ক সর্বজনবিদিত। সমিতির সকল অপকর্ম সহায়তার পুরস্কার হিসাবে সমিতির সভাপতি হুদা সমবায় অফিসার শফিউলকে কখনো ক্যাশ কখনো বিকাশে ঘুষের টাকা, পারিবারিক অনুষ্ঠানে ছাগল পাঠানো, ঈদ উপহার প্রদানসহ- নানান মুখরোচক গল্প স্থানীয় পর্যায়ে প্রচারিত আছে।
এছাড়া শফিউল আলম সমিতির সম্পাদকের জাল স্বাক্ষর সৃজন, ৯০ লাখ টাকার সম্পত্তি এবং ১২ লাখ টাকার অর্থ পাচার ও আত্মসাতের তথ্য গোপন, মামলা হতে সভাপতিকে দায়মুক্তির সুযোগ সৃষ্টি, পেশাগত অযোগ্যতা ও গুরুতর অসাধারচারণ, তদন্ত কার্যক্রমে অভিজ্ঞতা, সক্ষমতা ও প্রজ্ঞার অভাবের পরিচয় দিয়ে অপেশাদার ও অযোগ্য কর্মকর্তার পরিচয় দিয়েছেন। অনিয়মের মতো জাতীয় ইস্যু, অর্থপাচার ও আত্মসাতের মতো রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা এবং দুর্নীতির মতো বৈষয়িক সমস্যার সঙ্গে তিনি প্রবলভাবে সম্পৃক্ত। পেশাগত অক্ষমতার কারণে ৬ মাস পূর্বে দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত মো. শফিউল আলমকে ‘শো কজ’ করা হয়। পাশাপাশি দুর্নীতির তদন্তও চলছে।
বৈষম্যের শিকার বীর মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী সমিতির সদস্য উম্মে আয়মন দৈনিক বাংলাকে বলেন, আওয়ামী সন্ত্রাসীদের গডফাদার সমিতির সভাপতি শামসুল হুদা এতদিন দলীয় সন্ত্রাসীদের নিয়ে অত্র এলাকায় সন্ত্রাসের অভয়ারণ্য কায়েম করে। শত শত পাওয়ার অব এটর্নীর নামে বেআইনিভাবে জমি বিক্রি ও দখল করে। সিডিএ লে-আউট প্ল্যানভুক্ত রাস্তা, ইদগাঁ, গ্রিন জোন, স্কুল এমনকি মসজিদের জায়গাও এ ভুমিদস্যুদের হাত থেকে রেহাই পায়নি।
ভুক্তভোগী প্রবাসী পরিবারের সদস্য কানিজ ফাতেমা বলেন, ‘আমরা আশা করেছিলাম ৫ আগস্টের পর সকল অনিয়ম-দুর্নীতির অবসান ঘটবে, আমরা ন্যায় বিচার পাব। কিন্তু সমবায়ে অভিযোগ করার পরও আমরা ন্যায়বিচার হতে বঞ্চিত।’
অপর ভুক্তভোগী ইফতেখার উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, ‘আমার মা মরহুমা জাহানারা বেগম সমিতির সদস্য ছিলেন। মায়ের মৃত্যুর পর সমিতির সভাপতি আর্থিক সুবিধা নিয়ে ভুয়া নমিনির কাগজ সৃষ্টি করে তার নামে বরাদ্দকৃত জমি ৬ ওয়ারিশের মধ্যে আমমোক্তারনামা না করে একজনের নামে দিয়েছে। এ ব্যাপারে আমি বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দ্বায়িত্ব গ্রহণের পরপরই সমবায় দপ্তরে অভিযোগ দায়ের করি। কিন্ত তদন্তের নামে কালক্ষেপণ করা হচ্ছে।’
উল্লেখিত অভিযোগের বিষয়ে চট্টগ্রাম বিভাগীয় সমবায় দপ্তরের যুগ্ম নিবন্ধক (অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ মাহবুবুল হক হাজারী বলেন, চৌধুরীনগর সমিতির অনিয়ম-দুর্নীতির প্রাথমিক প্রমাণ পেয়ে ৪৯ ধারায় তদন্তে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। আমরা দ্রততম সময়ের মধ্যে এ ভুক্তভোগীর সমস্যা সমাধানের উদ্যেগ নিচ্ছি।
সারা দেশের বাজারে আবারও কাঁচামরিচের ঝাঁজে নাভিশ্বাস উঠেছে সাধারণ মানুষের। মাঠে ফলন কম, টানা বৃষ্টি আর সরবরাহের অপ্রতুলতায় এক সপ্তাহের ব্যবধানে কাঁচামরিচের দাম ৪-৫ গুণ বেড়ে গেছে মেহেরপুর ও মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া, নওগাঁসহ বিভিন্ন এলাকায়। দৈনিক বাংলার প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে বিস্তারিত;
জুলফিকার আলী কানন, মেহেরপুর থেকে জানান, মেহেরপুরের বাজারগুলোতে সপ্তাহের ব্যবধানে কাঁচা মরিচের দাম প্রতি কেজি ৩০ থেকে ৪০ টাকা থেকে বেড়ে ২০০ থেকে ২২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অথচ গত বছরের এই সময়ে কাঁচা মরিচ প্রতি কেজি ৫০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল বলে চাষি ও ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন।
খুচরা ব্যবসায়ীরা জানান, চাহিদার চেয়ে বাজারে কাঁচামরিচের সরবরাহ কম। কৃষকদের কাছ থেকেই বেশি দামে কাঁচামরিচ কিনতে হচ্ছে। এতে প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারেও।
আর মরিচ চাষিরা বলছেন, এবার বৃষ্টিতে গাছের পাতা কুঁকড়ে যাওয়ায় কাঁচামরিচের ফলন আশঙ্কাজনকহারে কমে গেছে। বেশি দামে কাঁচামরিচ বিক্রি করলেও ফলন কম হওয়ায় লোকসানে পড়েছেন তারা
শুক্রবার (১১ জুলাই) সকালে গাংনী উপজেলা কাঁচামাল আড়তের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাজারে মরিচের সরবরাহ কম। এ কারণে খুচরা বাজারেও কাঁচামরিচ কম। পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি কাঁচামরিচ ১৯০ থেকে ২২৫ টাকায় বিক্রি করা হয়। আর খুচরা বাজারে তা ২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মৌসুমে মরিচের এমন দামে অস্বস্তির মধ্যে পড়েছেন সাধারণ ক্রেতারা। এক সপ্তাহ আগেও প্রতি কেজি মরিচ ৩০ থেকে ৪০ টাকায় কিনেছেন তারা।
গাংনী উপজেলার ভাটপাড়া গ্রামের ব্যবসায়ী শাহাবুল ইসলাম শুক্রবার (১১ জুলাই) সকালে কাঁচামরিচ ১৯০ টাকা থেকে ২৪৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। গত বছর এই সময়ে মরিচ প্রতি কেজি ৫০ থেকে ৬০ টাকায় কিনছি।
গাংনী কাঁচাবাজারের আড়ত মালিক হাফিজুর রহমান ভিজা বলেন, এখন কাঁচামরিচের সরবরাহ কম, তাই দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। মাঠের অধিকাংশ মরিচ ক্ষেত শুকিয়ে গেছে। এখন যে দুয়েক জায়গায় মরিচ ক্ষেত অবশিষ্ট আছে সেগুলোর দাম বেশি।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক রবীআহ সামসুল আলম বলেন, অতিরিক্ত খরা ও ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণের কারণে মরিচগাছের পাতা কুঁকড়ে যেতে পারে। এ থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে জমিতে সেচের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এ ছাড়া ব্যাকটেরিয়ানাশক ওষুধ ছিটানোর মাধ্যমে মরিচগাছের এ রোগ দূর করা সম্ভব।
সাটুরিয়া (মানিকগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলায় গত এক সপ্তাহে কাঁচামরিচের দাম অস্বাভাবিকহারে বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ ক্রেতারা বিপাকে পড়েছেন। মাত্র সাত দিনের ব্যবধানে কাঁচামরিচের দাম প্রায় তিন গুণ বেড়ে গিয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে কাঁচা মরিচের সরবরাহ মারাত্মকভাবে কমে গেছে। এর প্রভাব পড়েছে অন্যান্য সবজির দামেও। এক সপ্তাহ আগে প্রতি কেজি কাঁচামরিচ ৫০-৬০ টাকায় বিক্রি হলেও বর্তমানে তা ২০০-২৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
সাটুরিয়ার ইউএনও মো. ইকবাল হোসেন বলেন, পণ্যের দাম অস্বাভাবিক এবং অতিরিক্ত মুনাফার আশায় বেশি দামে ব্যবসায়ীরা পণ্য বিক্রি বন্ধে আমরা নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছি।
নওগাঁ প্রতিনিধি জানান, নওগাঁয় হঠাৎ বেড়েছে কাঁচা মরিচের দাম। এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রায় ৫ থেকে ৬ গুন দাম বেড়েছে এই কাঁচা পণ্যটির। বর্তমানে খুচরা বাজারে ২৩০ থেকে ২৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে কাঁচামরিচ। শুক্রবার (১১ জুলাই) সকালে নওগাঁ পৌর খুচরা বাজার ও সিও অফিস ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
জানা গেছে, এক সপ্তাহ আগেও নওগাঁর বিভিন্ন হাটবাজারে কাঁচামরিচ পাইকারি বিক্রি হয়েছে ১০ থেকে ১৫ টাকা আর খুচরা বাজারে ৩০ থেকে ৪০টাকা কেজি দরে। বর্তমানে সেই কাঁচামরিচ পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা আর খুচরা বাজারে ২৩০ থেকে ২৪০ টাকা কেজি দরে। এদিকে কাঁচা মরিচের দাম হঠাৎ বৃদ্ধি পাওয়ায় অস্বস্থিতে পড়েছেন ক্রেতারা।
শহরের সিও অফিস বাজার করতে আসা রায়হান আলম বলেন, যে মরিচ এক সপ্তাহ আগে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা কেজি দরে কিনেছি, সেই মরিচ শুক্রবার (১১ জুলাই) ২৪০ টাকা কেজি দরে কিনেতে হচ্ছে। কালকেও ১২০টাকা কেজি নিয়ে গেছি অথচ আজকে দ্বিগুন দাম। বাজারের যে অবস্থা মনে হচ্ছে কাল পর্যন্ত ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা কেজি হবে।
নওগাঁ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, জেলায় এ বছর ৯৬৫ হেক্টর জমিতে কাঁচামরিচের চাষ হয়েছে।
দেশের বৃহত্তম রেলওয়ে কারখানা সৈয়দপুরের নামের সঙ্গে জড়িয়ে আছে বাংলাদেশের শ্রমিক আন্দোলনের গৌরবময় ইতিহাস। ব্রিটিশ আমলে প্রতিষ্ঠিত এই কারখানায় একসময় কাজ করতেন প্রায় ১৬ হাজার শ্রমিক-কর্মচারী। পাকিস্তান আমলেও এই কারখানা ছিল উত্তরের মানুষের অন্যতম কর্মসংস্থান, যেখানে তখনও ১০ হাজার ৫০০ জনের বেশি শ্রমিক-কর্মচারী-কর্মকর্তা কর্মরত ছিলেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, সেই সময় প্রতিদিন কাকডাকা ভোরে দূর-দূরান্ত থেকে শ্রমিকরা সৈয়দপুর কারখানায় আসতেন। পার্বতীপুরসহ আশপাশের এলাকা থেকে শ্রমিকদের জন্য চলতো বিশেষ ‘সাটল ট্রেন’। শ্রমিকদের বসবাসের জন্য সৈয়দপুরের পাশের সংগলশী ইউনিয়নে অধিগ্রহণ করা হয় কয়েকশ একর জমি, যেখানে বর্তমানে গড়ে উঠেছে উত্তরা ইপিজেড।
শুধু কর্মস্থলই নয়, এই কারখানা ছিলো শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের অন্যতম শক্ত ঘাঁটি। ব্রিটিশ খেদাও আন্দোলন থেকে শুরু করে পাকিস্তানি শাসক আইয়ুব বিরোধী আন্দোলন, এমনকি স্বাধীনতার পরও সরকার বিরোধী নানা আন্দোলনে সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার শ্রমিকরা রেখেছে অগ্রণী ভূমিকা। আর এসব আন্দোলন-সংগ্রামের কেন্দ্রবিন্দু ছিল রেলওয়ের ঐতিহাসিক বেলতলা।
সেই সময়ে রেলওয়ের প্রধান প্রবেশদ্বার সংলগ্ন বেলতলায় সকাল-বিকাল সমাবেশ হতো। হাজার হাজার শ্রমিক কর্মচারী যোগ দিতেন এসব জনসভায়। মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানীসহ জাতীয় ট্রেড ইউনিয়ন নেতাদের পদচারণায় মুখর ছিল এই চত্বর। একসময় প্রশাসনও শ্রমিক আন্দোলনের তাপে সৈয়দপুরেই বসাতে বাধ্য হতো কার্যালয়।
কিন্তু কালের বিবর্তনে সেই ঐতিহাসিক বেলতলা আজ আর আন্দোলনের চত্বরে নেই—পরিণত হয়েছে শুধুই স্মৃতিচারণের স্থানে। বেলতলায় আর নেই শ্রমিকদের ব্যানার, নেই হাজারো মানুষের গর্জন। সেখানে এখন শুধু ঘাস আর নিরবতা।
বর্তমানে সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানায় মঞ্জুরিকৃত পদের সংখ্যা প্রায় তিন হাজার হলেও কর্মরত আছেন মাত্র ৮০০ জনের মতো। বছরের পর বছর নতুন নিয়োগ না হওয়ায় শ্রমিক সংকট প্রকট হচ্ছে। এক সময়কার ২২টি উপকারখানার মধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে ৯টি। যেখানে একসময় টুলরুম ও মেশিন সপে সাত হাজারের বেশি যন্ত্রাংশ উৎপাদিত হতো, সেগুলো এখন লোকাল মার্কেট থেকে কিনে আনতে হচ্ছে—যার ফলে কর্মকর্তাদের আর ঠিকাদারদের পকেটই মোটা হচ্ছে বলে অভিযোগ শ্রমিকদের।
শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা বলছেন, একসময় সক্রিয় ট্রেড ইউনিয়ন থাকায় কর্মকর্তারা শ্রমিক স্বার্থের বিরোধিতা করতে সাহস পেতেন না। অথচ এখন কার্যকর আন্দোলন না থাকায় সবকিছুই হচ্ছে আমলাদের ইচ্ছেমতো।
বাংলাদেশ রেল শ্রমিক ইউনিয়ন কারখানা শাখার সভাপতি প্রবীণ শ্রমিক নেতা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে স্থানীয় রেলওয়ে শ্রমিক লীগের বাধায় আমরা বিরোধী ট্রেড ইউনিয়ন নেতারা বেলতলায় কোনো মিটিং-মিছিল করতে পারিনি।’
জাতীয়তাবাদী রেলওয়ে শ্রমিক কর্মচারী দল ওপেন লাইন শাখার যুগ্ম সম্পাদক মো. দুলাল প্রামানিক বলেন, ‘একনায়ক হাসিনার পদলেহনকারী রেল শ্রমিক লীগের বাধার কারণে শ্রমিকদের ন্যায্য দাবি আদায়ের সুযোগই মেলেনি। তবে এই অবস্থার পরিবর্তন ঘটতে চলেছে।’
জাতীয়তাবাদী রেল শ্রমিক ও কর্মচারী দল কারখানা শাখার সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মজিদ বলেন, ‘দীর্ঘ ১৬-১৭ বছর ধরে স্থানীয় শ্রমিক লীগের নেতারা বিরোধী শ্রমিক সংগঠনকে বেলতলায় দাঁড়াতে দেয়নি। সভার ব্যানার ছিঁড়ে, মাইক কেড়ে নিয়ে মারধরও করেছে। ফলে আন্দোলনের প্রাণকেন্দ্র বেলতলা এখন স্মৃতি চত্বরে পরিণত হয়েছে।’
তবে শ্রমিক নেতাদের প্রত্যাশা, অচিরেই এই ঐতিহাসিক চত্বরে আবারও স্লোগানে মুখর হবে রেলশ্রমিকদের অধিকার আদায়ের লড়াই।
রাজধানীর মিরপুর-১ এলাকার কাঁচাবাজার ও পাখির দোকানগুলোতে অভিযান চালিয়ে ৫০টি দেশীয় বন্যপ্রাণী জব্দ করেছে বন বিভাগের বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিট (ঢাকা) শুক্রবার (১১ জুলাই) সকালে এ অভিযান চালানো হয়।
উদ্ধারকৃত প্রাণীগুলোর মধ্যে রয়েছে- তিনটি পাহাড়ি ময়না, দু’টি ঝুঁটি শালিক, দু’টি টি গাঙ শালিক, দু’টি তিলা ঘুঘু, ১৪টি শালিক, দু’টি হিরামন তোতা, ২৩টি টিয়া, একটি বাজপাখি ও একটি কড়ি কাইট্টা।
বন্যপ্রাণী পরিদর্শক নার্গিস সুলতানার নেতৃত্বে ছয় সদস্যের একটি অভিজ্ঞ দল সকাল থেকে বাজারের একাধিক দোকান ও স্থানে অভিযান পরিচালনা করে।
অভিযানে সহযোগিতা করে পরিবেশ ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে নিবেদিত সংগঠন ‘সোয়ান’।
অভিযানে উদ্ধারকৃত অধিকাংশ বন্যপ্রাণীকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী পরে নিরাপদ ও উপযুক্ত প্রাকৃতিক পরিবেশে অবমুক্ত করা হয়েছে। তবে অসুস্থ বন্যপ্রাণীদের আপাতত অফিসে নিরাপদভাবে সংরক্ষণে রাখা হয়েছে এবং পরে তাদেরকেও মুক্ত প্রকৃতিতে ছেড়ে দেওয়া হবে।
বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন, ২০১২ অনুযায়ী, দেশীয় যেকোনো বন্যপ্রাণী সংগ্রহ, লালনপালন, ক্রয়-বিক্রয় ও পরিবহন আইনত নিষিদ্ধ এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে পাখিবাজারে এ ধরনের নিয়মিত অভিযান অব্যাহত রাখার জন্য অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিট।