কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলায় রোহিঙ্গাদের আশ্রয় শিবির থেকে দেশি-বিদেশি অস্ত্র ও গুলিসহ পাঁচজন রোহিঙ্গাকে আটক করেছে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন)। রোববার ভোর রাতের দিকে উপজেলার কুতুপালং ২-ওয়েস্ট নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ডি-৯ ব্লকে অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয় বলে জানিয়েছেন এপিবিএনের অধিনায়ক অতিরিক্ত উপ-মহাপরিদর্শক (এডিআইজি) মোহাম্মদ ইকবাল।
আটকরা হলেন- ক্যাম্পের ডি-৯ ব্লকের মোহাম্মদ জোবায়ের (২২)। একই ক্যাম্পের সি-২ ব্লকের দিল মোহাম্মদ (৩৫)। সি-৭ ব্লকের মোহাম্মদ খলিল (৩৪)। সি-২ ব্লকের মোহাম্মদ ইদ্রিছ (২৮) ও এ-৬ ব্লকের মোহাম্মদুল্লাহ (২৫)।
আটকরা সকলে রোহিঙ্গা ক্যাম্প ভিত্তিক একটি সশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠনের সক্রিয় সদস্য বলে জানিয়েছে এপিবিএন পুলিশ।
এডিআইজি ইকবাল বলেন, ‘রোববার ভোর রাতে উখিয়া উপজেলার কুতুপালং ২-ওয়েস্ট নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ডি-৯ ব্লকের একটি ঘরে কতিপয় লোকজন অপরাধ সংঘটনের উদ্দেশে সশস্ত্র অবস্থায় অবস্থান করছিল। খবরে এপিবিএন পুলিশের একটি দল অভিযানে নামে। পরে ঘরটি ঘিরে ফেললে ১০ থেকে ১২ জন লোক পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে পালানোর চেষ্টা করে। এসময় তাদের পিছেু নিয়ে ৫ জনকে আটক করা সম্ভব হলেও অন্যরা পালায়। পরে আটকদের দেহ এবং ওই ঘরটি তল্লাশি করে পাওয়া যায় বিদেশি ৫টি পিস্তল, দেশিয় তৈরি ২টি বন্দুক ও ১৮টি গুলি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আটকরা রোহিঙ্গা ক্যাম্প ভিত্তিক একটি সশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠনের সক্রিয় সদস্য। তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে নানা অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।’
আটকদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট আইনে উখিয়া থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছে বলেও জানান তিনি।
ঢাকার কেরানীগঞ্জের খোলামোড়া-কামরাঙ্গীরচর ঘাট। প্রতিদিন ভোর থেকে রাত অবধি হাজারো মানুষ এখানে ভিড় করেন নদী পারাপারের জন্য। বুড়িগঙ্গার মতো বিশাল নদীতে আশপাশের ১০/১৫ কিলোমিটার এলাকায় নেই কোনো ব্রিজ। এই এলাকায় চলাচলে একমাত্র ভরসা নৌকা। প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পার হন শিক্ষার্থী, চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী, শ্রমিকসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ। মাঝেমধ্যেই বালুবাহী বালহেটের সঙ্গে নৌকার সংঘর্ষে ঘটে প্রাণহানির ঘটনাও। অথচ দীর্ঘ ৫৪ বছরেও এখানে স্থায়ী ব্রিজ হয়নি।
দুই পাড়ের অনেকে কম বেতনে চাকরি করতে। স্কুল-কলেজে পড়তে যায় এলাকার ছেলে-মেয়েরা। কিন্তু গরীব মানুষের অর্ধেক টাকাই খরচ হয়ে যায় নদী পারাপারেই। শুধু তাই নয়, প্রতিদিনই ইজারাদারদের সঙ্গে যাত্রীদের ঝগড়াঝাটি লেগেই থাকে। যাত্রীরা অভিযোগ করেছেন, ইজারাদাররা ভাড়া নিয়ে টানাহেঁচড়া করে, বাজে ব্যবহার করে, এমনকি অনেক সময় হয়রানির শিকারও হতে হয়।অথচ তারা নামমাত্র মূল্যে ঘাটের ইজারা নেয়।
খোলামোড়ার তরুণ আরিফ বলেন, ব্রিজ হবে শুনে বড় হয়েছি, কিন্তু পাইনি। প্রতিদিন নদী পার হয়ে স্কুল-কলেজে যেতে যে কষ্ট, তা ভাষায় বোঝানো যায় না। তাছাড়া ইজারাদারদের ব্যবহার খুবই খারাপ। ৫/ ৭ বছরের বাচ্চাদেরও ইজারার টাকা ছাড়া বের হতে দেয়না। ব্রিজটা খুবই জরুরি।
গৃহবধূ সাদিয়া অফরিন বলেন, এক পাশে বাবার অন্য পাশে শ্বশুরবাড়ী, যাতায়াতের সময় তিন বাচ্চাকে নিয়ে নৌকায় উঠতে বুক কাঁপে। কখন যে দুর্ঘটনা ঘটে বলা যায় না। তার ওপর ইজারাদারদের খামখেয়ালি আচরণে ভোগান্তি আরও বেড়ে যায়।
স্থানীয় ব্যবসায়ী বাদশা মিয়া ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, নৌকায় মালামাল আনা-নেওয়া করতে গিয়ে কত ক্ষতি হয়েছে। দুর্ঘটনায় মানুষ মরেছে, মালামাল নষ্ট হয়েছে। ব্রিজ হলে শুধু যোগাযোগই নয়, ব্যবসা-বাণিজ্যও এগিয়ে যাবে। কিন্তু এত বছরেও হয়নি।
কেরানীগঞ্জের সাবেক এমপি আমান উল্লাহ আমান জানান, বাবুবাজার ব্রিজ, বসিলা ব্রিজ আমরাই করেছি, এটাও আমরাই করব। বিএনপি ক্ষমতায় এলে সবার আগে খোলামোড়া-কামরাঙ্গীরচর ব্রিজ হবে।
স্থানীয়রা মনে করেন, পোস্তগোলা, বাবুবাজার ও বসিলা ব্রিজ কেরানীগঞ্জের প্রায় ৪০ লাখ মানুষ এবং নবাবগঞ্জ, দোহার, মুন্সীগঞ্জসহ দক্ষিণবঙ্গের ১০/১২টি জেলার রাজধানীতে প্রবেশের জন্য যথেষ্ট নয়। তাই নতুন একটি স্থায়ী ব্রিজ সময়ের দাবি।
খোলামোড়া ও কামরাঙ্গীরচরের দুই পাড়ের কয়েক লাখ মানুষের একটাই প্রশ্ন—আসলেই কি হবে এই ব্রিজ? আর না হলে বাধাটা কোথায়? প্রতিশ্রুতি নয়, তারা এখন দেখতে চান বাস্তবায়ন।
কৃষি নির্ভর মেহেরপুর জেলার প্রান কেন্দ্র বাণিজ্যিক এলাকা বামন্দী ইউনিয়নে একত্রিশ বছর পূর্বে স্থাপন করা হয় গাংনী উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের উপকেন্দ্র পশু হাসপাতাল।
এই এলাটিতেই অবস্থিত খুলনা বিভাগের ঐতিহ্যবাহী বামন্দী পশুহাট। যেখানে বিভাগের কয়েকটি জেলার হাজার পশুপালনকারি খামারি ও ব্যবসায়ীদের আনাগোনা এই বামন্দীতে।
এসব দিক বিবেচনা করেই ১৯৯১-১৯৯২ সালের দিকে নির্মাণ করা এই গাংনী উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের উপকেন্দ্র পশু হাসপাতাল। এটি নির্মাণের ঠিক তিন থেকে চার বছর পরই বন্ধ হয়ে যায় উপকেন্দ্রটি।
এরপর থেকে তিন দশক ধরে এভাবেই পড়ে রয়েছে হাসপাতালটি। এর মধ্যে দেখা মেলেনি কোনো প্রাণিসম্পদ অফিসের কর্মকর্তার। উপায় না পেয়ে পশুর চিকিৎসা দেওয়ার জন্য যেতে হয় উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসে। এতে একদিকে যেমন বেড়ে যায় ব্যয়, তেমনি বাড়ে কষ্ট।
আর বতর্মান চিত্র আরো ভয়াবহ, হাসপাতালটির প্রবেশ পথের সামনে রাখা হয়েছে বালুর স্তূপ। এখানে সারাদিন ধরে বালির ব্যবসা, আর রাতে পরিনত হয় মাদকসেবীদের আকড়া।
স্থানীয় খামারিদের দাবি, দ্রুত এই পশু হাসপাতালটি চালু করা হোক, কর্তৃপক্ষের কাছে এটিই চাওয়া।
বামন্দী পশুহাট মালিকদের দাবি, জেলার সবচেয়ে বেশি ভ্যাট দিয়ে থাকে বামন্দী পশুহাট কর্তৃপক্ষ। তাই এই পশু হাসপাতালটি চালু করা খুব দরকার।
এদিকে গাংনী উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস থেকে বলা হয়েছে, অতিদ্রুতই-এর কাগজপত্র প্রস্তুত করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে।
স্থানীয় জনি আহমেদ বলেন, আমার বয়স পঁচিশ বছরের মতো হবে। আমি জন্মের পর থেকেই দেখে আসছি হাসপাতালটি বন্ধ হয়ে আছে। এত দিন ধরে পড়ে থাকার কারণে পশু হাসপাতালটি একেবারেই নষ্ট হয়ে গেছে। শুধু দাঁড়িয়ে আছে ঘরটি। হারিয়ে গেছে পশু চিকিৎসার সরঞ্জাম ও দরজা-জানালা।
মানুষ এখন এটির সামনে বালি রেখে ব্যবসা করে এটিকে বালির ঘাট বানিয়ে ফেলেছে। তবে দ্রুত এ ঘরটি সংস্কার করে নতুনভাবে চালু করা হোক।
বামন্দী ব্যবসায়ীক সমিতির সভাপতি ও ঐতিহ্যবাহী বামন্দী পশুহাট ইজারাদার মো. আব্দুল আউয়াল বলেন, ‘হাসপাতালটি দীর্ঘদিন পড়ে থাকার কারণে একেবারে পরিত্যক্ত হয়ে গেছে। তাই আমাদের জোর দাবি, এই পশু হাসপাতালটি চালু করা হোক।
আমরা এই হাটটি থেকে বছরে জেলার সর্বোচ্চ ভ্যাট প্রদান করে থাকি। আমাদের শুক্র ও সোমবার এই দুদিন হাটে ৮ থেকে ১০ হাজার পিস গরু ছাগল আমদানি হয়ে থাকে। এই পশু যেকোনো সময় অসুস্থ হতে পারে। পশু হাসপাতালটি চালু হলে খামারি ও ব্যবসায়ীরা অনেক উপকৃত হবে। কেননা খামারিদের পশু অসুস্থ হলে চিকিৎসা নেওয়ার জন্য উপজেলায় যেতে হয়। এটা অত্যন্ত কষ্টকর।
খামারি আ. জাব্বার বলেন, আমরা খামারে গরু পালন করি আর পশু অসুস্থ হলে দশ কিলোমিটার দূরে উপজেলা প্রাণিসম্পদে গিয়ে চিকিৎসা নিতে হয়। আর আমাদের বামন্দী পশু হাসপাতালের ডাক্তার ডেকে আনতে গেলে টাকা দিয়ে নিয়ে আসা লাগে। তাই এই হাসপাতালটি চালু হলে আমরা গরু চাষিরা অনেক উপকৃত হবো।
স্থানীয় পশু চিকিৎসক ইউসুফ আলী বলেন স্থানীয় গবাদিপশু পালনকারিদের কথা ভেবে, আমিসহ আরও কিছু লোক টাকাপয়সা তুলে এই জমি ক্রয় করেছিলাম। পরে উপজেলা পরিষদের টাকা দিয়ে ঘর নির্মাণ করা হয়েছিল। আমিও চাই পশু হাসপাতালটি আবার চালু করা হোক।
গাংনী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. মোত্তালেব আলী বলেন, বামন্দীর উপকেন্দ্র পশু হাসপাতালটি ১৯৯০ অথবা ১৯৯১ সালের দিকে নির্মাণ করা হয়। দীর্ঘ ৩১ বছর পড়ে থাকায় নানা সমস্যায় জর্জরিত উপজেলার প্রাণিসম্পদ অফিসের উপকেন্দ্রটি। এটি বামন্দী ইউনিয়নে অবস্থিত। দীর্ঘদিন ব্যবহার না হওয়ায় এটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। পশু হাসপাতালটি নিয়ে ইতোমধ্যে আমরা কাজ শুরু করে দিয়েছি। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রস্তুত করে দ্রুত ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে।
মোত্তালেব আলী আরও বলেন, বিষয়টি জানার পরই আমরা সরেজমিনে পরিদর্শনও করেছি। সেখানে তিনটি রুম বিশিষ্ট ঘর ছাড়া আর অবশিষ্ট কিছুই নেই। কোনো জানালা, দরজা বা চিকিৎসার সরঞ্জাম দেখতে পাইনি। এটা নিয়ে আমরা কাজ করছি। বিভিন্ন দপ্তরে যেতে হচ্ছে।
মায়ানমার থেকে পণ্যের বিনিময়ে মাদক পাচারের সময় বিপুল পরিমাণ পণ্যসামগ্রীসহ তিনজন পাচারকারীকে আটক করেছে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড।
রবিবার (২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫) দুপুরে কোস্ট গার্ড মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার সিয়াম-উল-হক এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গত শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১টায় কোস্ট গার্ড আউটপোস্ট শাহপরী কর্তৃক মায়ানমারের নাইক্ষ্যনদিয়া সংলগ্ন সমুদ্র এলাকায় একটি বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হয়। এ সময় একটি সন্দেহজনক কাঠের বোটে তল্লাশি চালিয়ে অবৈধভাবে শুল্ক-কর ফাঁকি দিয়ে মায়ানমারে পাচারের সময় প্রায় ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা মূল্যের পণ্যসামগ্রী জব্দ করা হয়।
জব্দকৃত পণ্যসামগ্রীর মধ্যে রয়েছে— ৮৩ বস্তা সিমেন্ট, ৮৫ বস্তা সার ও ৩৪০ লিটার সয়াবিন তেল। এ সময় পাচার কাজে ব্যবহৃত কাঠের বোটসহ তিনজন পাচারকারীকে আটক করা হয়।
কোস্ট গার্ড জানায়, জব্দকৃত মালামাল, আটককৃত পাচারকারী ও বোটের বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
লেফটেন্যান্ট কমান্ডার সিয়াম-উল-হক আরও বলেন, “চোরাচালান রোধকল্পে কোস্ট গার্ড ভবিষ্যতেও এ ধরনের অভিযান অব্যাহত রাখবে।”
জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে মন্দিরে প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। রবিবার ২১ সেপ্টেম্বর গভীর রাতে পৌরসভার তাড়িয়াপাড়া এলাকার একটি মন্দিরে এ ঘটনা ঘটে।
মন্দির কমিটি জানায়, আসন্ন দুর্গাপূজার জন্য সাতটি প্রতিমা নির্মাণ করা হয়েছিল। পূজার সব আয়োজন শেষ করে প্রতিমা শিল্পীদের বিদায় দেওয়া হয় শনিবার রাতে। কিন্তু রাতের অন্ধকারে দুর্বৃত্তরা মন্দিরে ঢুকে প্রতিমা গুলোর মাথা সহ বিভিন্ন অংশ ভেঙে ফেলে পালিয়ে যায়।
আজ রবিবার সকালে মন্দির কমিটির সদস্যরা এসে প্রতিমাগুলো ভাঙা অবস্থায় দেখতে পান। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এবং সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে অভিযুক্ত হাবিবুর রহমান (৩৫) নামে এক ব্যক্তিকে আটক করেন। তিনি পৌরসভার শিমলা পল্লী গ্রামের সোহরাব মিস্ত্রির ছেলে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইয়াহিয়া আল মামুন জানান, দুর্গাপূজা শান্তিপূর্ণভাবে উদযাপন নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে।
ঘটনাটি এলাকায় ব্যাপক ক্ষোভ ও আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। স্থানীয়রা দ্রুত দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জে শোভাযাত্রা, আলোচনাসভা ও তথ্যচিত্র উপস্থাপনের মধ্য দিয়ে উদযাপন করা হয়েছে আন্তর্জাতিক শান্তি দিবস। রবিবার সকালে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে থেকে বের হয় শোভাযাত্রা। এতে নেতৃত্ব দেন জেলা প্রশাসক ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা স্কাউটস এর সভাপতি মো. আব্দুস সামাদ।
শোভাযাত্রায়, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা স্কাউটস এর কমিশনার ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো: নকিব হাসান তরফদার, জেলা স্কাউটসের সহকারী কমিশনার আসরাফুল আম্বিয়া সাগর, যুগ্ন সম্পাদক মারুফুল হক, জেলা স্কাউটস লিডার খসরু পারভেজ, সহকারী লিডার ট্রেনার কে এ এম মাহফুজুর রহমান, জেলা কাব লিডার রাকিব উদ্দিন আহমেদসহ বিভিন্ন ইউনিট লিডাররা স্কাউট ও গার্ল ইন স্কাউট সদস্যদের সাথে অংশ নেন।
শোভাযাত্রা শেষে জেলা স্কাউটস ভবনে দিবসটির উপর তথ্যচিত্র উপস্থাপন করা হয়। পরে আলোচনা সভার মধ্য দিয়ে শেষ হয় আয়োজন।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনে যোগ দিতে আজ দিবাগত রাতে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করবেন।
সফর সূচি অনুযায়ী, তিনি ২২ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে পৌঁছবেন এবং ২৬ সেপ্টেম্বর সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ভাষণ দেবেন। প্রধান উপদেষ্টা ২ অক্টোবর দেশে ফেরার কথা রয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার সিনিয়র সহকারী প্রেস সচিব ফয়েজ আহম্মদ বাসসকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
সফরে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে চারজন রাজনৈতিক নেতা থাকছে—বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেন এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা হুমায়ুন কবির।
এর আগে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, প্রধান উপদেষ্টা বিগত এক বছরে দেশে সংঘটিত সংস্কার এবং আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে একটি সত্যিকারের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার বিশ্ব নেতাদের সামনে তুলে ধরবেন।
এ ছাড়া তিনি আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সভাপতির সভাপতিত্বে ‘হাই লেভেল কনফারেন্স অন দ্য সিচুয়েশন অব রোহিঙ্গা মুসলিমস অ্যান্ড আদার মাইনোরিটিস ইন মিয়ানমার’ শীর্ষক এক উচ্চপর্যায়ের সভায়ও অংশ নেবেন।
চট্টগ্রামে সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের সম্পত্তির নথিপত্রের সন্ধানে তার স্ত্রী রুকমিলা জামানের ব্যক্তিগত গাড়িচালক ইলিয়াস তালুকদারের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে প্রায় ২৩ বস্তা নথিপত্র উদ্ধার করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
শনিবার রাত সাড়ে তিনটা থেকে রোববার ভোর পাঁচটা পর্যন্ত চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার শিকলবাহা ইউনিয়নে এই অভিযান পরিচালনা করেন দুদকের প্রধান কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. মশিউর রহমান।
উপ-পরিচালক মশিউর রহমান বলেন, সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের স্ত্রীর ব্যক্তিগত গাড়িচালকের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে প্রায় ২৩ বস্তা কাগজপত্র সহ বিভিন্ন নথিপত্র উদ্ধার করা হয়েছে।
দুদকের এই কর্মকর্তা আরো জানান, সাবেক ভূমিমন্ত্রীর মালিকানাধীন আরামিট গ্রুপসহ তার বিভিন্ন সম্পত্তি সংক্রান্ত মোট ২৩ বস্তা ডকুমেন্টস গত ১৬ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম নগরীর কালুরঘাট আরামিট গ্রুপের শিল্প প্রতিষ্ঠান থেকে রুকমিলা জামানের ব্যক্তিগত গাড়িচালক ইলিয়াস তালুকদারের বাড়িতে এনে রাখা হয়েছিল।
দুদক কর্মকর্তারা জানান, অর্থ পাঁচার, অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং ঘুষ লেনদেনের অভিযোগে সাইফুজ্জামান চৌধুরী ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। এর মধ্যে ১২৪ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ছয়টি মামলা দায়ের করেছে।
মামলার সূত্র ধরে গত বুধবার রাতে চট্টগ্রাম নগরের ডবলমুরিং এলাকায় অভিযান চালিয়ে সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের দুই সহযোগী মো. আব্দুল আজিজ ও উৎপল পালকে আটকের পর রিমান্ডে নিলে জিজ্ঞাসাবাদে দুদক জানতে পারে সাইফুজ্জামানের স্ত্রী রুকমিলা জামানের ব্যক্তিগত গাড়িচালক ইলিয়াস তালুকদারের বাড়িতে অসংখ্যা নথিপত্র লুকিয়ে রাখা হয়েছে। নথিপত্র উদ্ধারে প্রথম দফায় গত শুক্রবার সন্ধ্যায় বাড়িতে অভিযান চালিয়েছিল দুদক। তবে অভিযানের পূর্বেই নথিপত্র সরিয়ে নেওয়ায় শূন্য হাতে ফিরতে হয়েছিল দুদককে। ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ উদ্ধার করে দেখা যায়, নথিপত্র সরিয়ে ফেলতে। পরবর্তীতে রোববার রাত সাড়ে তিনটায় ফের অভিযানে নেমে ২৩ বস্তা নথিপত্র উদ্ধার করা হয়।
দুদকের উপপরিচালক মো. মশিউর রহমান বলেন, ঘটনাস্থল থেকে কাউকে আটক করা যায়নি। ড্রাইভার ইলিয়াস পলাতক রয়েছেন। এছাড়া ওসমান নামে যে প্রতিবেশীর ঘরে নথিগুলো সরানো হয়েছিল তিনিও পলাতক। সাবেক ভূমিমন্ত্রীর বিরুদ্ধে চলমান তদন্তের অংশ হিসেবে এই অভিযান। উদ্ধার হওয়া নথিপত্র বিশ্লেষণ করে এবিষয়ে বিস্তারিতপরে জানানো হবে।
এদিকে, সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ এবং তার স্ত্রী রুকমিলা জামানের বিরুদ্ধে গত বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামের জ্যেষ্ঠ মহানগর বিশেষ জজ মো. আবদুর রহমানের আদালতে ইন্টারপোলের রেড নোটিশ জারি করতে আবেদন করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এই বিষয়ে রোববার আদালত আদেশ দেওয়ার কথা রয়েছে। গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরপর গোপনে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান তৎকালীন আওয়ামী সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ।
মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার বামন্দী ইউনিয়নে ১৯৯১-৯২ সালে নির্মিত উপকেন্দ্র পশু হাসপাতালটি দীর্ঘ ৩১ বছর ধরে বন্ধ পড়ে আছে। খুলনা বিভাগের ঐতিহ্যবাহী বামন্দী পশুহাটের পাশে অবস্থিত এই হাসপাতাল একসময় খামারি ও ব্যবসায়ীদের বড় ভরসা হলেও নির্মাণের কয়েক বছর পরই তা বন্ধ হয়ে যায়।
এখন হাসপাতাল চত্বর পরিণত হয়েছে বালুর ঘাট ও মাদকসেবীদের আড্ডাখানায়। খামারিদের দাবি, জেলার সর্বোচ্চ ভ্যাট প্রদানকারী বামন্দী পশুহাটের স্বার্থেই পশু হাসপাতালটি দ্রুত চালু করা জরুরি।
স্থানীয় ব্যবসায়ী নেতা ও পশুপালনকারীরা জানিয়েছেন, হাটে প্রতি সপ্তাহে ৮ থেকে ১০ হাজার গরু-ছাগল কেনাবেচা হয়। কিন্তু পশু অসুস্থ হলে চিকিৎসার জন্য খামারিদের ১০ কিলোমিটার দূরে উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসে যেতে হয়, যা কষ্টসাধ্য ও ব্যয়বহুল।
গাংনী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. মোত্তালেব আলী বলেন, “দীর্ঘদিন অব্যবহৃত থাকার কারণে হাসপাতালটি এখন পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। তবে আমরা ইতিমধ্যে কাগজপত্র প্রস্তুত করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েছি।”
স্থানীয়দের একটাই দাবি— দ্রুত সংস্কার করে বামন্দী পশু হাসপাতাল চালু করা হোক, যাতে খামারি ও ব্যবসায়ীরা উপকৃত হয়।
পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে দুই দেশের সিমান্তরক্ষী বাহিনীর যৌথ সম্মতিতে বিভিন্ন সময়ে অবৈধ পথে ভারতে গিয়ে কারাভোগ শেষে ১৮ জন বাংলাদেশি নাগরিককে ফেরত দিয়েছে বিএসএফ। গত শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার কাজিপুর সিমান্তের ১৪৭ নম্বর আন্তর্জাতিক মেইন পিলার কাছে বিজিবি সদস্যদের হাতে তাদের হস্তান্তর করা হয়। সকলেই বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলার বাসিন্দা।
কুষ্টিয়া বিজিবি ৪৭ ব্যাটালিয়নের অধিন কাজিপুর বিওপির কোম্পানি কমান্ডার সুবেদার শাহাব উদ্দিন জানান, দেশের বিভিন্ন সিমান্ত দিয়ে বাংলাদশি নাগরিকরা অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশের সময় ভারতীয় সিমান্তরক্ষী বাহিনীর হাতে ধরা পড়ে।
পরে তাদের বিভিন্ন মেয়াদে দেওয়া সাজা ভোগ শেষে গত শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে বিএসএফ সদস্যরা বিজিবিকে হস্তান্তর করে।
ফেরত আসা ১৮ জনের তথ্য যাচাই-বাছাই শেষে গাংনী থানায় সৌপর্দ করা হবে।
ভারতের গান্দিনা বিএসএফ ১১ ব্যাটালিয়ন ক্যাম্পের এসি সুনিল কুমার যাদবসহ অন্যান্য সদস্যরা উপস্থিত ছিল।
ভারত থেকে কারাভোগ শেষে বাংলাদেশে ফেরত আসারা হলো, পটুয়াাখালী জেলার মেহেদী, চুয়াডাঙ্গার নুরজাহান, নড়াইলের ফরিদ শেখ, ঝিনাইদহের জিসান মণ্ডল, সাইদুল ইসলাম, চাঁদপুরের খোকন বেপারী, সাতক্ষীরার মাজেদা ঢালী, শামিম হোসেন, মিঠুন ঘোষ, খালিদা সরদার, মিলন কুমার, রাজশাহীর আব্দুল কুদ্দুস, যশোরের আহমেদ আলী, মৌলভীবাজারের লিটন দেব, চট্টগ্রামের শুভ মজুমদার, ঢাকার স্বাধীন রাজবংশী, মাদারিপুরের মহিউদ্দিন ফকির, নাসিমা শেখ কুষ্টিয়া।
ঝিনাইদহে রোপা আমন মৌসুমের শুরুতেই ধানের জমিতে দেখা দিয়েছে মাজরা পোকার আক্রমণ। সদ্য রোপণ করা চারাগুলো নষ্ট হয়ে যাওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। নানা কীটনাশক ব্যবহার করেও নিয়ন্ত্রণে আসছে না এ পোকা। এতে উৎপাদন খরচ যেমন বেড়ে যাচ্ছে, তেমনি ফলন নিয়ে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা। কৃষকদের আশঙ্কা, এভাবে চলতে থাকলে তারা মারাত্মক লোকসানের মুখে পড়বেন।
জানা গেছে, জেলার শৈলকুপা, সদর, কালীগঞ্জ, হরিণাকুন্ডু, মহেশপুর ও কোটচাঁদপুরসহ সব উপজেলাতেই একই পরিস্থিতি। ধান গাছের গোড়ায় আক্রমণ করছে মাজরা পোকা। এতে অনেক গাছ শুকিয়ে সাদা হয়ে যাচ্ছে। ফলে ব্যাহত হচ্ছে ধানের স্বাভাবিক বৃদ্ধি। কৃষকরা বলছেন, বারবার কীটনাশক স্প্রে করেও কোনো কার্যকর ফল পাওয়া যাচ্ছে না।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে ঝিনাইদহ জেলার ৬ উপজেলায় ১ লাখ ৪ হাজার হেক্টর জমিতে আমন ধানের আবাদ হয়েছে। নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৬৪ হাজার ১৩৯ মেট্রিক টন। তবে মৌসুমের শুরুতেই পোকার এমন আক্রমণ কৃষি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রাকে ঝুঁকির মুখে ফেলেছে।
কালীগঞ্জ উপজেলার কৃষক রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের কৃষির প্রধান ভরসা হচ্ছে আমন ধান। কিন্তু মৌসুমের শুরুতেই যদি পোকা আক্রমণ করে, তাহলে আমরা কীভাবে বাঁচব? সরকারি দিকনির্দেশনা আর সহযোগিতা ছাড়া আমাদের সামনে অন্ধকার ছাড়া কিছু নেই।’
শৈলকুপা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আরিফুজ্জামান বলেন, ‘এখনো আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। কৃষকরা যদি আমাদের নির্দেশনা মেনে চলেন, তাহলে পোকার আক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে। উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তারা ইতোমধ্যে মাঠ পর্যায়ে কাজ করছেন। আমরা কৃষকদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছি।’
শ্যামনগরে অবৈধভাবে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে ভারত থেকে আসা ১ কোটি ২০ লাখ টাকা মূল্যের ওষুধ জব্দ করেছে বাংলাদেশ কোস্ট কার্ড কৈখালী। কোস্ট গার্ড পশ্চিম জোনের মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মুনতাসীর ইবনে মহসিন বলেন, একটি অসাধু চক্র ভারত থেকে বিপুল পরিমাণ ওষুধ বাংলাদেশে নিয়ে আসবে এমন প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে গত শুক্রবার দুপুরে কোস্ট গার্ড স্টেশন কৈখালী কর্তৃক সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর থানাধীন মীরগ্যাং ও তৎসংলগ্ন এলাকায় একটি বিশেষ অভিযানে শুল্ক কর ফাঁকি দিয়ে আসা প্রায় ১ কোটি ২০ লাক টাকা মূল্যের বিপুল পরিমাণ ভারতীয় ওষুধ জব্দ করা হয়।
চুয়াডাঙ্গায় একটি আবাসিক হোটেল থেকে মামুনুর রহমান মাসুম (৩৫) নামে এক প্রকৌশলীর মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। শনিবার দুপুরে মামুনের কোনো সাড়া শব্দ না পেয়ে বিষয়টি পুলিশকে জানানো হয়। পরে ঘটনাস্থলে এসে নিহতের মরদেহ দেখতে পায় পুলিশ। নিহত মামুনুর রহমান মাসুম চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার কেদারগঞ্জ সবুজপাড়ার মুজিবর রহমানের ছেলে। তিনি পেশায় একজন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন। অতিরিক্ত নেশা করার কারণে তার মৃত্যু হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে পুলিশ।
পুলিশ জানায়, মামুনুর রহমান পরিবারের সঙ্গে ঢাকায় বসবাস করতেন। গত বৃহস্পতিবার মামুন তিন বন্ধুর সঙ্গে চুয়াডাঙ্গায় ঘুরতে এসে আবাসিক হোটেলে ওঠেন। তারা তিনজনই নেশাগ্রস্ত অবস্থায় ছিলেন। পরে মামুনের দুই বন্ধু চলে গেলেও তিনি হোটেলেই থেকে যান।
হোটেলের ম্যানেজার সাগর আলী জানান, সকালে হোটেলে এসে মামুনের মুখ দিয়ে ফেনা বের হতে দেখেন স্বজনরা। তখন জরুরি সেবা ৯৯৯-এ কল করে পুলিশকে খবর দেন তারা।
চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ওসি খালেদুর রহমান জানান, প্রাথমিক তদন্তে মরদেহে কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। বিষয়টি সিআইডি ও পিআইবির টিম তদন্ত করবে।
চীনে উৎপাদনকারী মার্কিন প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে দুটি জাহাজ কিনছে সরকার। আজ রোববার নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের (বিএসসি) সঙ্গে জাহাজ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান হেলেনিক ড্রাই বাল্ক ভেঞ্চারস এলএলসির চুক্তি স্বাক্ষর হবে। দেশের ইতিহাসে এবারই প্রথম বিএসসির নিজস্ব অর্থায়নে জাহাজ কেনা হচ্ছে। গত ১৭ আগস্ট দুটি বাল্ক ক্যারিয়ার জাহাজ ক্রয় সম্পর্কিত সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির সুপারিশ অনুমোদন করে। গত ৩ জুন এক হাজার ১৬২ কোটি ৯৬ লাখ টাকায় জাহাজ কেনার উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) অনুমোদন হয়। পরদিন অর্থাৎ ৪ জুন আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করে বিএসসি। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের এই প্রকল্পটি ২০২৭ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়নের কথা ছিল। সব কিছু ঠিক থাকলে চলতি বছরেই বাংলাদেশের বন্দরে ভিড়বে।
চাইলে বিএসসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কমডোর মাহমুদুল মালেক বলেন, আগামী ৫ বছরে আমাদের মোট ২২টি জাহাজ সংগ্রহের লক্ষ্য রয়েছে। দুটি জাহাজ সংগ্রহের মধ্যদিয়ে এই কাজে গতি বাড়ছে। এরই মধ্যে অনেকেই আগ্রহ দেখাচ্ছে। নতুন দুই জাহাজ বিএসসিতে যুক্ত হলে বছরে ১৫০ কোটি টাকা ফরেন কারেন্সি (বৈদেশিক মুদ্রা) আয় বাড়বে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আমরা দক্ষ শিপিং সেবা দিতে পারব। একই বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশ পরিবেশবান্ধব গ্রিন শিপিংয়ের সম্মান অর্জন করবে।
বিএসসি সূত্র বলছে, প্রস্তাবে আসা জাহাজগুলোর বিভিন্ন কারিগরি বিষয়াদি যাচাই-বাছাই করা হয়েছে। সেই সঙ্গে মূল্যায়ন কমিটি সরেজমিনে জাহাজের নির্মাণ অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে। জাহাজের স্পেসিফিকেশন প্রস্তুত এবং জাহাজের কারিগরি মূল্যায়নে বিশেষজ্ঞ সেবা গ্রহণ করা হয়। তারপর কারিগরি ও আর্থিক মূল্যায়ন পরবর্তীতে হেলেনিক ড্রাই বাল্ক ভেঞ্চারসের প্রস্তাবিত দুটি জাহাজের মোট দাম ৭৬.৭০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার নির্ধারণ করা হয়েছে। এটি দাপ্তরিক প্রাক্কলিত মূল্য ৮০.৪০ মিলিয়নের চেয়ে ৪.৬০ শতাংশ কম।
বিএসসির বহরে যুক্ত হতে যাওয়া জাহাজগুলোতে- জ্বালানি খরচ হ্রাস ও পরিচালন দক্ষতা বেশি; বাতাসের বাধা কমিয়ে গতি ও জ্বালানি সাশ্রয় নিশ্চিত করে; হাইড্রোডাইনামিক ড্র্যাগ কমিয়ে জাহাজের গতি বৃদ্ধি ও জ্বালানি সাশ্রয় করে; প্রধান ইঞ্জিন থেকে নাইট্রোজেন অক্সাইড নির্গমন কার্যকরভাবে নিয়ন্ত্রণ করে, যা পরিবেশ দূষণ উল্লেখযোগ্যভাবে কমায়; নকশা ও প্রযুক্তিগত সমাধানগুলো জ্বালানি সাশ্রয়ী, পরিবেশবান্ধব এবং আন্তর্জাতিক পরিবেশগত মানদণ্ডসম্মত এবং আন্তর্জাতিক মেরিটাইম সংস্থার নির্ধারিত সর্বশেষ পরিবেশগত মানদণ্ড পূরণ করে। জাহাজে উচ্চমানের ইউরোপীয় ও জাপানি যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হয়েছে। জার্মান লাইসেন্সে জাহাজগুলো চীনে উৎপাদন করা হয়েছে। স্পেনের পাম্প ও নরওয়ের কম্প্রেসার ব্যবহার করা হয়েছে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, চুক্তি স্বাক্ষরের পর আগামী অক্টোবরে প্রথম জাহাজ এবং আগামী ডিসেম্বরে দ্বিতীয় জাহাজ বিএসসিকে হস্তান্তর করা হবে। আধুনিক কারিগরি বৈশিষ্ট্য ও পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি সমৃদ্ধ এই দুটি জাহাজ বহরে যুক্ত হলে বিএসসির নিজস্ব পরিবহন সক্ষমতা প্রায় এক লাখ ২০ হাজার ডিডব্লিউটি বৃদ্ধি পাবে, যা দেশের সমুদ্র বাণিজ্যে একটি উল্লেখযোগ্য সংযোজন হবে।
৫৩ বছর আগে যাত্রা করা বিএসসির বহরে শুরুর দিকে মাত্র দুটি জাহাজ ছিল। এরপর বিভিন্ন সময়ে ৪৪টি যুক্ত হয়। তবে আয়ুষ্কাল ফুরিয়ে যাওয়ায় নব্বইয়ের দশকের শেষে ৩৬টিকেই পাঠানো হয় অবসরে। কমতে কমতে জাহাজের সংখ্যা আবারও দুটিতে নেমে আসে। ২০১৮ সালে চীনের কাছ থেকে কেনা ছয়টি যুক্ত হলে বিএসসির বহরে জাহাজের সংখ্যা দাঁড়ায় আটটিতে।
তবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের সময় ইউক্রেনে ‘বাংলার সমৃদ্ধি’ জাহাজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। গত বছরের সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে অগ্নিকাণ্ডের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ‘এমটি বাংলার জ্যোতি’ ও ‘এমটি বাংলার সৌরভ’। পরে এ দুটি জাহাজ স্ক্র্যাপ হিসেবে বিক্রি করে দেওয়া হয়। ফলে বর্তমানে বিএসসির বহরে জাহাজের সংখ্যা কমে পাঁচটিতে নেমে এসেছে, যা সংস্থাটির নতুন জাহাজ সংগ্রহের প্রয়োজনীয়তা আরও বাড়িয়ে তুলে। চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে বিএসসির জন্য আরেও তিনটি জাহাজ কেনার বিষয় প্রক্রিয়াধীন। সব মিলিয়ে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে বিএসসির জন্য পাঁচটি জাহাজ কেনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তা ছাড়া দক্ষিণ কোরিয়ার কাছ থেকে আরও ছয়টি জাহাজ কেনার বিষয়েও প্রাথমিক অনুমোদন দিয়েছে বিএসসির পর্ষদ।