জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিদায়ী জ্যেষ্ঠ সচিব কে এম আলী আজমকে সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) সদস্য পদে নিয়োগ দিয়েছে সরকার।
সাংবিধানিক ক্ষমতাবলে আলী আজমের অবসরোত্তর ছুটি ও এ সংক্রান্ত সুবিধা স্থগিতের শর্তে তাকে এ নিয়োগ দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি। আজ মঙ্গলবার এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
চাকরির মেয়াদ শেষ হওয়ায় আলী আজমকে আগামী বৃহস্পতিবার থেকে অবসরে পাঠিয়ে গতকাল সোমবার প্রজ্ঞাপন জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
দায়িত্ব নেয়ার দিন থেকে পাঁচ বছর মেয়াদে বা তার বয়স ৬৫ বছর পূর্ণ হওয়ার মধ্যে যেটি আগে ঘটে, সেই সময় আলী আজম পিএসসির সদস্যের দায়িত্বে থাকবেন।
অবসরপ্রাপ্ত জ্যেষ্ঠ সচিব মো. সোহরাব হোসাইন পিএসসির চেয়ারম্যানের দায়িত্বে আছেন। নতুন করে আলী আজমকে নিয়ে কমিশনের সদস্য সংখ্যা হবে ১৩ জন।
অবশেষে বিয়ের পিঁড়িতে বসছেন টাঙ্গাইলের গোপালপুরের সাজানপুর উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক রনি প্রতাপ পাল। কনে কালিহাতী উপজেলার মগড়া গ্রামের সত্যপালের মেয়ে স্বর্ণা পাল, তিনি অনার্স তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী। তবে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম এই বিয়ের বিষয়ে কিছুই জানে না বলে জানিয়েছেন।
জানা গেছে, গোপালপুর পালপাড়ার বাসিন্দা রতন লাল পালের ছেলে রনি প্রতাপ পাল গত শুক্রবার আশীর্বাদ অনুষ্ঠান সম্পন্ন করেন। আগামী ১৫ ডিসেম্বর তার বিয়ের বাকি কাজ সম্পন্ন হবে।
বিদ্যালয়ে সহশিক্ষা চালু থাকায়, গত জুলাই মাসে ৩০ কর্মদিবসের মধ্যে বিয়ে করতে রনি প্রতাপ পালকে নোটিশ ধরিয়ে দিয়েছিলেন প্রধান শিক্ষক। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।
রনি প্রতাপ পাল বলেন, ‘কোনো চাপে নয়, পরিবারের পছন্দেই বিয়ে করতে যাচ্ছি, সবার দোয়া চাই। এখন পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ছোটখাটো অনুষ্ঠান করায় কাউকে বলা হয়নি, বিয়ের অনুষ্ঠানে অবশ্যই প্রধান শিক্ষককে দাওয়াত দেয়া হবে।’
বিয়ের বিষয়ে অবগত না থাকায়, প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি।
নিয়মবহির্ভূত বিয়ের নোটিশ দেয়ায় ও আর্থিক অনিয়মের অভিযোগে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে একাধিক সরকারি তদন্ত চলমান রয়েছে। প্রধান শিক্ষকের বহিষ্কার চেয়ে ছাত্রছাত্রী, অভিভাবক, সাবেক শিক্ষকরা ও স্থানীয়রা মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে সহকারী শিক্ষক পদে ওই বিদ্যালয়ে যোগ দেন রনি প্রতাপ পাল। গত ২৬ জুলাই তাকে নোটিশ দিয়েছেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক।
নোটিশে বলা হয়, ‘বিদ্যালয়ে যোগদানের পর আপনাকে বারবার মৌখিকভাবে তাগিদ দিয়েছি বিবাহ করার জন্য। কিন্তু অতীব দুঃখের বিষয়, কয়েক বছর অতিবাহিত হওয়ার পরও আপনি বিবাহ করেননি। বিদ্যালয়টিতে সহশিক্ষা চালু রয়েছে। অভিভাবকরা অবিবাহিত শিক্ষক নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারেন। সুতরাং বিদ্যালয়ের বৃহত্তর স্বার্থে নোটিশপ্রাপ্তির ৩০ কর্মদিবসের মধ্যে বিবাহের কার্য সম্পন্ন করে কর্তৃপক্ষকে অবহিত করার জন্য আপনাকে বিশেষভাবে নির্দেশ দেয়া হলো।
নোটিশটি পাওয়ার দুই দিন পর সহকারী শিক্ষক রনি প্রতাপ প্রধান শিক্ষককে লিখিত জবাব দেন। জবাবে তিনি বলেন, ‘আমার অভিভাবকরা আমার বিয়ের চেষ্টা করছেন। কিন্তু বাংলাদেশের হিন্দুদের বিয়ের পাত্রপাত্রী বাছাইয়ে গোত্র বা বর্ণের বিষয় রয়েছে। এ ছাড়া হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা শ্রাবণ থেকে কার্তিক পর্যন্ত বিয়ে করাটা শুভ মনে করেন না। সুতরাং পারিবারিক ও ধর্মীয় রীতির কারণে আগামী অগ্রহায়ণ মাসে আমার অভিভাবকরা আমাকে বিবাহ করাবেন।
লালমনিরহাটে ট্রাকচাপায় প্রাণ হারানো সাংবাদিক নেতা ইউনুস আলীর পরিবারের হাতে ব্যক্তিগত তহবিল থেকে এক লাখ টাকা অনুদান দিয়েছেন সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ।
শনিবার বিকেলে লালমনিরহাট সার্কিট হাউজে এক অনুষ্ঠানে ইউনুস আলীর স্বজনদের হাতে এ আর্থিক সহায়তা তুলে দেয়া হয়।
এ সময় সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ বলেন, সাংবাদিকরা সমাজের দর্পণ, প্রকৃত ঘটনা উদঘাটন করে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ করেন। সাংবাদিকরা পত্রিকায় লেখালেখির মাধ্যমেই প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। রোদবৃষ্টি কোনো কিছু তাদের কাছে বাধা নয়।
মন্ত্রী আরও বলেন, শুধু এক লাখ টাকাই নয়, সাংবাদিক ইউনুস আলীর দুই ছেলের সব ধরনের খোঁজখবর আমি রাখব। তাদের যে কোনো সমস্যায় আমার এখানে এলে আমি তাদের পাশে দাঁড়াবো। আশা করছি, সন্তান দুটি মানুষের মত মানুষ হলে এই কষ্ট আর থাকবে না।
অর্থ বিতরণের সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন লালমনিরহাট জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আলমগীর হোসেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান মিজুসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরা।
গত ১৬ সেপ্টেম্বর জাতীয় পার্টির জেলা সম্মেলনের সংবাদ সংগ্রহ শেষে আদিতমারী পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের সামনে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন লালমনিরহাট রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি সাংবাদিক ইউনুস আলী (৪৫)।
ঝিনাইদহে চ্যানেল-২৪-এর জেলা প্রতিনিধি সাদ্দাম হোসেনের ওপর হামলার প্রতিবাদ ও বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। শনিবার সকালে শহরের পোস্ট অফিস মোড়ে এ কর্মসূচি পালিত হয়।
এতে ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে ঝিনাইদহ প্রেসক্লাব, ঝিনাইদহ টেলিভিশন সাংবাদিক ফোরাম, রিপোর্টার্স ইউনিটি, প্রেস ইউনিটি, বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের নেতারাসহ বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ার সাংবাদিকরা অংশ নেন।
এ সময় ঝিনাইদহ প্রেসক্লাবের সভাপতি এম রায়হান, সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ হাসান টিপু, সিনিয়র সাংবাদিক বিমল সাহা, নিজাম জোয়াদ্দার বাবলু, সাইফুল মাবুদ, দেলোয়ার কবির, আসিফ ইকবাল কাজল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
টেলিভিশন সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি শিপলু জামান, সাধারণ সম্পাদক রাজিব হাসান, মাইটিভির জেলা প্রতিনিধি মিঠু মালিথা, রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি এম এ কবির, প্রেস ইউনিটির সভাপতি শাহিদুল এনাম পল্লব, বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের সভাপতি স্বপন মাহমুদসহ অনেকে বক্তব্য রাখেন।
বক্তারা সাংবাদিক সাদ্দাম হোসেনের ওপর হামলাকারী বাকি আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানান। পরে সেখান থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়।
গত বৃহস্পতিবার রাতে শৈলকুপা উপজেলার গাড়াগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডে সাংবাদিক সাদ্দাম হোসেনের ওপর হামলার চালিয়ে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে স্থানীয় বখাটে বিপ্লব, ফিরোজসহ অন্যরা। এ ঘটনায় বিপ্লবকে আটক করা হলেও বাকি আসামিরা এখনো আটক হয়নি।
তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘বিএনপি বলেছে অক্টোবরে নাকি ফাইনাল খেলা হবে, আমরাও ফাইনাল খেলার জন্য বসে আছি। কিন্তু ফাইনাল খেলার আগে বিএনপি দেখতে পাবে, তাদের খেলার টিমে ১১ জন নেই। আগামী কয়েক সপ্তাহে দেখতে পাবেন বিএনপির খেলোয়াড়রা টিম ছেড়ে অন্যদলে পালিয়ে গেছে। যে পথে তাদের নেতা শমসের মবিন চৌধুরী ও তৈমুর আলম খন্দকার গেছেন, সেভাবে আরও অনেকেই পালানোর তালিকায় আছেন।’
তিনি বলেন, ‘আজকে দেশ যখন এগিয়ে যাচ্ছে দেশবিরোধী নানা ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। বিএনপি কয়দিন গণমিছিল, কয়দিন অবস্থান, আবার কয়দিন হাঁটা, কয়দিন দৌড় কর্মসূচি, কয়দিন বসা কর্মসূচি দেয়। এখন বিএনপির বাকি আছে হামাগুড়ি কর্মসূচি দেয়া। এখন দেখার বিষয় বিএনপি কখন হামাগুড়ি কর্মসূচি দেয়। তারা কর্মসূচি দিয়ে দিয়ে বলে, সরকারের পতন ঘটাবে। সরকারের পতন ঘটাতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে বিএনপি থেকে সবাই পালিয়ে যাচ্ছে।’
শনিবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলা যুবলীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তথ্যমন্ত্রী এসব কথা বলেন। উপজেলা যুবলীগের সভাপতি শামসুদ্দোহা সিকদার আরজুর সভাপতিত্বে সম্মেলনে বিশেষ অতিথি ছিলেন আওয়ামী যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল।
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘বিএনপি এখন পুরনো গাড়ির রূপ ধারণ করেছে। সেজন্য কর্মসূচি দিয়ে মূলত দলকে চাঙা রাখতে চায়। গাড়ি যখন পুরনো হয়ে যায়, তখন ঘন ঘন স্টার্ট দিয়ে চালু রাখতে হয়। নাহলে ব্যাটারি বসে যায়। মাঝেমধ্যে স্টার্ট না দিলে বিএনপির গাড়ি বসে যাচ্ছে, এজন্য মাঝেমধ্যে তারা হাঁটা, বসা, দৌড় কর্মসূচি দিয়ে দলকে চাঙা রাখার চেষ্টা করছে। আর ভবিষ্যতে হয়তো দেখতে পাব বিএনপি হামাগুড়ি কর্মসূচি দিয়েছে। এই সমস্ত কর্মসূচি দিয়ে বিএনপিকে রক্ষা করা যাবে না ‘
তিনি বলেন, ‘জনগণের ওপর বিএনপির কোনো ভরসা নেই, ধীরে ধীরে তাদের সমাবেশ ছোট হয়ে আসছে। এজন্য ঘনঘন বিদেশিদের কাছে ধর্ণা দেয়। যুক্তরাষ্ট্র যেই ভিসানীতি ঘোষণা করেছে তাতে বলা হয়েছে, যারা একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে প্রতিপক্ষ হবে, তারাই এই ভিসানীতির মধ্যে আসবে। এখন নির্বাচনে বাধা দেয়ার ঘোষণা দিচ্ছে বিএনপি। বিএনপি বলছে নির্বাচন প্রতিহত করবে। তাহলে কারা এই ভিসানীতির আওতায় আসবে?’
হাছান মাহমুদ আরও বলেন, ‘ভিসানীতিতে সরকার কিংবা আমাদের দল কোনো চাপ অনুভব করছে না। আমরা এটিকে স্বাগত জানাই। এটির পরিপ্রেক্ষিতে বরং বিএনপির ওপরই চাপ সৃষ্টি হয়েছে। তারা বিদেশিদের কাছে ধর্ণা দিয়েও কোনো লাভ হয়নি। একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সেই নির্বাচনে জনগণের অংশগ্রহণ থাকবে।’
মন্ত্রী বিদেশি বন্ধুদের উদ্দেশে বলেন, ‘এই দেশ আমাদের, এ দেশে নির্বাচন কীভাবে হবে সেটি আমরা ঠিক করবো, নির্বাচন কমিশন ঠিক করবে। আমাদের গণতন্ত্র কাউকে শেখাতে হবে না। আমরা গণতান্ত্রিক রীতি-নীতির চর্চা জানি। কীভাবে সুষ্ঠু অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন হয় সেটিও আমরা জানি। দেশে অবশ্যই আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে। সেই নির্বাচনে ধ্বসনামা বিজয়ের মাধ্যমে আবারও জননেত্রী শেখ হাসিনা পঞ্চমবারের মতো সরকারপ্রধান হিসেবে শপথগ্রহণ করবেন।’
যুবলীগকে আওয়ামী লীগের ভ্যানগার্ড শেখ হাসিনার অগ্রগামী বাহিনী উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বিএনপি রাঙ্গুনিয়ায় এখন গর্তের মধ্যে ঢুকে আছে। গর্তের ভেতর থেক মাথা তুলে উঁকি দেয়, গর্ত থেকে যাতে বের হতে না পারে সেজন্য যুবলীগকে সতর্ক পাহারায় থাকতে হবে। তারা করোনাসহ কোনো দুর্যোগ-দুর্বিপাকে রাঙ্গুনিয়ার কারও পাশে দাঁড়ায়নি। ভোটের সময় ভাঁজওয়ালা পাঞ্জাবি পরে মাঠে নামবে শীতের পাখির মতো। গতবার ধানের শীষ বর্গা দিয়েছিল বলে রাঙ্গুনিয়ায় বিএনপির মহিলা নেত্রীরা ঝাড়ু মিছিল করেছিল। এবার কাকে দেয়, সেটিই দেখার বিষয়।’
উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইউনুচের সঞ্চালনায় ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনের উদ্বোধন করেন চট্টগ্রাম উত্তর জেলা যুবলীগের সভাপতি এস এম রাশেদুল ইসলাম। প্রধান বক্তা ছিলেন উত্তর জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহজাহান, বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুর রহমান সোহাগ, সদস্য নিয়াজ মোর্শেদ এলিট প্রমুখ।
রামপাল তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য কয়লা নিয়ে মোংলা বন্দরে ভিড়েছে এমভি বসুন্ধরা ইমপ্রেস। ইন্দোনেশিয়া থেকে ৩১ হাজার ৩০০ মেট্টিক টন কয়লা নিয়ে শনিবার দুপুরে বন্দরের পশুর চ্যানেলের হারবাড়িয়ার-১২ নম্বর অ্যাংকোরেজে ভিড়েছে জাহাজটি।
জাহাজটির স্থানীয় শিপিং এজেন্ট মেসার্স টগি শিপিং অ্যান্ড লজিস্টিক লিমিটেডের খুলনার সহকারী ব্যবস্থাপক খন্দকার রিয়াজুল হক জানান, ইন্দোনেশিয়ার ‘মোয়ারা পান্তাই’ বন্দর থেকে ৪৯ হাজার ৭০০ টন কয়লা নিয়ে গত ৪ সেপ্টেম্বর এ দেশের (বাংলাদেশ) উদ্দেশে ছেড়ে আসে এমভি বসুন্ধরা ইমপ্রেস। এরপর জাহাজটি ১৭ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম বন্দরে ভিড়ে। সেখানে ১৮ হাজার ৪০০ টন কয়লা খালাস করে। সেখানে খালাসকৃত কয়লা লাইটারেজ করে আনা হচ্ছে রামপাল তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রে। জাহাজটি বাকি কয়লা নিয়ে চট্টগ্রাম থেকে মোংলা বন্দরে আসে শনিবার। দুপুরে কয়লাবাহী এ জাহাজটি মোংলা বন্দরের পশুর চ্যানেলের হাড়বাড়িয়ার-১২ নম্বর অ্যাংকোরেজে ভিড়ে।
তিনি আরও জানান, বিকেল থেকেই এ জাহাজটি হতে কয়লা খালাস করে লাইটারেজ করে রামপাল তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রে নেয়া শুরু হয়েছে।
বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়ায় বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা বিধিনিষেধ জারির বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, তারা কাকে ভিসা দেবে না দেবে, সেটা তাদের নিজস্ব এখতিয়ার। সেখানে আমাদের কিছু বলার নেই।
শনিবার দুপুরে সাতক্ষীরা পুলিশ লাইন্সে ইনডোর প্লে-গ্রাউন্ড উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘কোনো দল বা ব্যক্তিকে পক্ষ করে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি নয়। যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, আসন্ন নির্বাচনের অন্তরায় যারা হবে, নির্বাচনে যারা বাধাগ্রস্ত করবে এবং নির্বাচন পন্ড করার চেষ্টা করবে, তাদের জন্য এই ভিসানীতি প্রয়োগ করা হবে। আমরা মনে করি এটা তাদের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার, এ নিয়ে আমাদের কিছু বলার নেই।’
আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘ভিসানীতি যুক্তরাষ্ট্রের নিজস্ব ব্যাপার। তাদের দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। কাকে ভিসা দেবে, নাকি না দেবে, সেটা তাদের নিজস্ব এখতিয়ার। সেখানে আমাদের কিছু বলার নেই।’
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের নির্বাচন খুবই আসন্ন। এজন্য সব দল তাদের বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে আমাদের কাছে এসেছে। আমার মনে হয় কিছুদিন পর জনগণ আনন্দিত হয়ে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচনটি সম্পন্ন করবে।’
সরকারের উন্নয়ন তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আমেরিকান সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা আফ্রিকার কোন দেশে গিয়ে বলেছেন, তোমরা যদি ডেভেলপমেন্ট দেখতে চাও, দেশকে এগিয়ে নিতে চাও, তাহলে বাংলাদেশকে ফলো করো, শেখ হাসিনাকে ফলো করো।’
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পুলিশের খুলনা রেঞ্জ ডিআইজি মঈনুল হক, সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার (এসপি) কাজী মনিরুজ্জামান, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি একে ফজলুল হক, সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম, সহসভাপতি ও ভোরের পাতার সম্পাদক ড. কাজী এরতেজা হাসান প্রমুখ।
বকেয়া মজুরির দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন সিলেটের তারাপুর চা-বাগানের শ্রমিকরা। শনিবার দুপুরে প্রায় এক ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করেন তারা। পরে কর্তৃপক্ষের আশ্বাসে অবরোধ প্রত্যাহার করেন।
বিক্ষোভকালে চা-বাগানের জায়গায় দোকান নির্মাণেরও প্রতিবাদ জানান শ্রমিকরা।
জানা যায়, তারাপুর চা-বাগানের শ্রমিকরা প্রতি বৃহস্পতিবার তাদের সাপ্তাহিক মজুরি পান। কিন্তু গত বৃহস্পতিবার মজুরি দেয়নি বাগান কর্তৃপক্ষ। মজুরির দাবিতে গতকাল বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত শ্রমিকরা তারাপুর চা-বাগানের ভেতরের গোয়াবাড়ী রাস্তা অবরোধ করেন। পরে পঞ্চায়েত কমিটির নেতাদের সঙ্গে কথা বলে পুলিশ তাদের সরিয়ে দেয়।
দুপুর ১টার দিকে বাগান পঞ্চায়েত কমিটির নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন বাগানের ব্যবস্থাপক।
আন্দোলনরত চা-শ্রমিক সঞ্জীব রায় বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত বেতনের বকেয়া টাকার পুরোটা আমরা এখনো পাইনি। এ ছাড়া গত দুই সপ্তাহের রানিং বেতনও আটকা পড়েছে। আমরা বেতন প্রদানের দাবি জানালে বাগানের মালিকপক্ষ, বিশেষ করে ম্যানেজার আমাদের হুমকি-ধমকি দেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পাশে তারাপুর চা-বাগানের কিছু জায়গা অবৈধভাবে বিক্রি করে দিয়েছে মালিকপক্ষ। এই জায়গায় ৩টি দোকানকোটা নির্মাণ করা হচ্ছে। রাতের আঁধারে এসব কাজ হয়। আমরা এসব নির্মাণাধীন দোকানকোটা উচ্ছেদের দাবি জানাচ্ছি।’
এ ব্যাপারে চা-শ্রমিক ইউনিয়ন সিলেট ভ্যালির কার্যকরী পরিষদের সভাপতি রাজু গোয়ালা জানান, শ্রমিকরা গত বৃহস্পতিবার মজুরি পাননি। ফলে তারা রাস্তায় নামেন। এমনকি বাগান এলাকায় একটি দোকান নির্মাণ নিয়েও শ্রমিকরা ক্ষুব্ধ।
তারাপুর চা-বাগানের ব্যবস্থাপক রিংকু চক্রবর্তী জানান, শ্রমিকরা বাগান বন্ধ রেখেছেন। সে জন্য তাদের বেতন দেয়া হয়নি। বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা চলছে।
বাগানে দোকান নির্মাণ প্রসঙ্গে তিনি জানান, নতুন করে কোনো দোকান নির্মাণ হয়নি, আগে থেকে চালু একটি দোকান সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। বাগানের আয়ের জন্যই কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে তা করা হচ্ছে।
জালালাবাদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল আলম বলেন, ‘সড়ক অবরোধের খবর পেয়ে আমরা গিয়ে অবরোধ তুলে দেই। এখন পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। নিজেদের মধ্যে বৈঠক করে বিষয়টি সমাধান করবেন বলে জানিয়েছে বাগান কর্তৃপক্ষ।
প্রসঙ্গত, সিলেট নগরের পাঠানটুলা এলাকার ৪২৩ একরের তারাপুর চা-বাগান দেবোত্তর সম্পত্তি। প্রায় তিন হাজার কোটি টাকার এ সম্পত্তি ১৯৯০ সালে জালিয়াতি ও প্রতারণার মাধ্যমে দখল করে নেন শিল্পপতি রাগীব আলী। ২০১৬ সালে উচ্চ আদালতের এক রায়ের পর রাগীব আলীর দখল থেকে চা-বাগানের ভূমি উদ্ধার করা হয়। সে সময় আদালত নির্ধারিত সেবায়েত পঙ্কজ কুমার গুপ্তকে ওই বাগান বুঝিয়ে দেয়া হয়। তবে পরবর্তী সময়ে উচ্চ আদালতের এক রিভিউ রায়ে আলোচিত এ সম্পত্তি ব্যবস্থাপনার কর্তৃত্ব হারান পঙ্কজ গুপ্ত। বর্তমানে আদালতের নির্দেশনায় জেলা প্রশাসক গঠিত ব্যবস্থাপনা কমিটি দিয়ে পরিচালিত হচ্ছে এই চা-বাগান।
নওগাঁয় মাঠে কাজ করার সময় ও নদীতে মাছ ধরতে গিয়ে দুই নারীসহ বজ্রপাতে তিন জনের মৃত্যু হয়েছে। শনিবার বিকেলে মহাদেবপুর ও পোরশা উপজেলায় পৃথক বজ্রপাতে তাদের মৃত্যু হয়।
নিহতরা হলেন- মহাদেবপুর উপজেলার রাইগাঁ ইউনিয়নের সিলিমপুর গ্রামের নেপাল পাহানের স্ত্রী শ্রীমতি পাহান (২৭) ও একই গ্রামের মৃত সুবেন্দ্রনাথ পাহানের স্বামী সবানী পাহান (৬৫) এবং পোরশা উপজেলার চকবিষ্ণপুর গ্রামের মৃত আবুল হোসেনের ছেলে রফিকুল ইসলাম (৫০)।
স্থানীয়দের বরাত দিয়ে মহাদেবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোজাফফর হোসেন বলেন, নিহত শ্রীমতি পাহান ও সবানী পাহান বাড়ির পাশেই মাঠে কাজ করছিলেন। এসময় বৃষ্টি শুরু হওয়ার পর বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে হঠাৎ সেখানে বজ্রপাত ঘটে। এতে ঘটনাস্থলেই তারা দুজন মারা যান। নিহতের পরিবারের কোনো অভিযোগ নেই।
অন্যদিকে পোরশা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জহুরুল ইসলাম বলেন, নিহত রফিকুল ইসলাম দুপুরে বাড়ি থেকে বের হয়ে পুনর্ভবা নদীতে মাছ ধরতে যান। মাছ ধরার সময় বৃষ্টি শুরু হলে বিকেল ৪টার দিকে হঠাৎ সেখানে বজ্রপাত ঘটে। এতে ঘটনাস্থলেই রফিকুল ইসলাম মারা যান। পরে খবর পেয়ে নিহতের পরিবারের লোকজন ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহ বাড়িতে নিয়ে আসেন। নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ নেই। পারিবারিকভাবে মরদেহ দাফনের প্রস্ততি নিয়েছেন।
সম্প্রতি চট্টগ্রামের রাউজানে এক কলেজছাত্রের মৃত্যুর ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে বিভিন্ন গুজব ছড়িয়ে পড়েছে, যার বেশিরভাগই ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষের প্রতি বিদ্বেষমূলক। এ বিষয়ে বানায়োট গল্প, ফটোকার্ড ও ভিডিওসহ নানা ধরনের কনটেন্ট ফেসবুক-টিকটকের মত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ছড়িয়ে পড়েছে। এসব কনটেন্টে ওই কলেজছাত্রকে খুনের পর অভিযুক্তরা তার ‘মাংস রান্না করে খেয়েছে’ দাবি করে পাহাড়ে বসবাসকারী জনগোষ্ঠীকে ‘মানুষখেকো’ হিসেবে গুজব ছড়ানো হচ্ছে। ওই জনগোষ্ঠীর বিষয়ে তৈরি করা হচ্ছে নানা সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ। ছড়িয়ে পড়া এসব গুজব ও বিদ্বেষমূলক বক্তব্যের কারণে নানা প্রয়োজনে দেশের বিভিন্ন এলাকায় বসবাসকারী ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সদস্যদের বিভিন্ন বিব্রতকর পরিস্থিতি ও সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। এতে নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন তারা।
শুধু তাই নয়, এই ধরনের গুজব ও পাহাড়ে বসবাসকারী গোষ্ঠীর প্রতি বিদ্বেষ ছড়ানোর ফলে এই অঞ্চলের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে বলে আশঙ্কা মানবাধিকারকর্মী ও সমাজ বিশেষজ্ঞদের। অবশ্য পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, এ ধরনের গুজব কারা কেন ছড়িয়েছে তা খুঁজে বের করতে সাইবার টিম মাঠে নেমেছে।
গুজবের কারণে নৃগোষ্ঠীর লোকদের হেনস্তার অভিযোগ
পার্বত্য অঞ্চলের সবচেয়ে বড় শহর চট্টগ্রামে বসবাসকারী ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সাতজন সদস্যের সঙ্গে কথা বলেছেন এই প্রতিবেদক। তাদের মধ্যে পাঁচজন অবাধে চলাচল করতে গিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ওই গুজবের ফলে কোনো না কোনো সমস্যার মুখোমুখী হওয়ার কথা জানিয়েছেন। তাদেরই একজন চট্টগ্রামের একটি আঞ্চলিক গণমাধ্যমে প্রতিবেদক হিসেবে কাজ করা নীলা চাকমা। তিনি জানিয়েছেন, কাজের সুবাদে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর চট্টগ্রামে থাকতে হয়। রাউজানের ওই কলেজছাত্র খুনের পর শহরে বসবাস করা তার জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে।
নীলা চাকমা বলেন, ‘নিজ এলাকার বাইরে ভাষাসহ নানা কারণে আমরা বুলিংয়ের শিকার হই। এখন মানুষের মাংস খাওয়ার আরেকটা ট্যাগ যুক্ত হলো। এই যে রিকশাওয়ালা মামা, সবজিওয়ালা, দোকানদাররা বলতেছে, আমি খুবই অনিরাপত্তায় ভুগী। যেমন কয়েকদিন আমি এক বান্ধবীর সঙ্গে অক্সিজেন এলাকার অনন্যা আবাসিকে গিয়েছিলাম, সেখান থেকে ফেরার পথে একজন আমাকে আপত্তিকরভাবে স্পর্শ করেছে। আমি প্রতিবাদ করায় উনি আমার সঙ্গে মানুষের মাংস খাওয়ার বিষয় নিয়ে আসছেন।’
“আর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তো থাকতে পারতেছি না। নিউজফিডে ২০টা নিউজ থাকলে তার মধ্যে ১০টা আমাদের প্রতি বিদ্বেষমূলক। মেসেঞ্জারে বন্ধুরা বন্ধুরা বলতেছে, ‘তোরা তো এই খাস, তোদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করা যাবে না।’ এমনকি গণমাধ্যম সংশ্লিষ্ট মানুষও আছেন এই তালিকায়।”
এমনই আরেকজন ভুক্তভোগীর নাম অভি চাকমা। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী তিনি। অভি চাকমা তার অভিজ্ঞতা জানাতে গিয়ে বলেন, ‘রাউজানের ওই ঘটনার পর যখন ফেসবুকে আমরা মানুষের মাংস খাই বলে গুজব ছড়িয়ে পড়ল, এর কয়েকদিন পর ক্লাস থেকে ফেরার পথে কেন্দ্রীয় খেলার মাঠের দিকে দুজন মেয়ের সঙ্গে দেখা। দেখে দুজনকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মনে হয়েছে। ওরা আমাদের দেখে এমনভাবে অভিব্যক্তি প্রকাশ করেছে, যেন আমরা বোধহয় জ্যান্ত মানুষ খেয়ে ফেলি। তারা আবার নিজেদের মধ্যে বলাবলি করছিল যে, রাউজানের ওই ঘটনার পর পাহাড়ি দেখলেই তাদের ভয় লাগে। তখন কথাটা আমি শুনে যাওয়ায় তাদের বলেছি, কয়েকজন অপরাধ করলেই তা পুরো জনগোষ্ঠীর দায় হতে পারে না। তাছাড়া মানুষের মাংস খাওয়ার বিষয়টাও গুজব।’
চট্টগ্রাম শহরে কর্মক্ষেত্রে হেনস্তার শিকার স্বপন চাকমা নামের আরও একজনের সঙ্গে কথা হয় দৈনিক বাংলার। শহরের বায়েজিদ বোস্তামি এলাকার কনডেন্স মিল্ক উৎপাদনকারী একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন তিনি। স্বপন বলেন, “ফ্যাক্টরিতে যাওয়ার সময় রাস্তাঘাটে মানুষজন আমাদের দেখলে বলে, ‘তোমাদের চাকমারা নাকি মানুষের মাংস খায়?’ এমনকি ফ্যাক্টরির ভেতর আমাদের সুপারভাইজারও বলে আমাদের চাকমারা নাকি মানুষের মাংস খায়। তখন স্বাভাবিকভাবেই মেজাজ খারাপ হয়ে যায়।”
যেভাবে ছড়াল মানুষের মাংস খাওয়ার গুজব
ঘটনার শুরু গেল ১১ সেপ্টেম্বর। ওইদিন রাঙামাটি জেলার কাউখালী ইউনিয়নের দুর্গম বালু পাহাড় এলাকা থেকে এক কলেজছাত্রের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তার নাম শিবলী সাদিক হৃদয়। তিনি রাউজানের কদলপুর ইউনিয়নের পঞ্চ পাড়ার মুহাম্মদ শফির ছেলে। কদলপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজে দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়াশোনার পাশাপাশি স্থানীয় একটি মুরগির খামারে ব্যবস্থাপক হিসেবে কাজ করতেন তিনি। মরদেহ উদ্ধারের ১৪ দিন আগে ওই খামার থেকে অপহরণ করা হয়েছিল তাকে।
পুলিশ জানায়, হৃদয়ের সঙ্গে শ্রমিক হিসেবে আরও ছয়জন কাজ করতেন। তারা সবাই পার্বত্য এলাকার ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সদস্য। ঘটনার মাসখানেক আগে তাদের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয় হৃদয়ের। খামার মালিক সেসময় ঘটনাটি মীমাংসা করে দিলেও ক্ষুব্ধ ছিলেন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর শ্রমিকরা। সেই ক্ষোভ থেকে ২৭ আগস্ট রাতে হৃদয়কে অপহরণ করে আট কিলোমিটার দূরের গহীন পাহাড়ে নিয়ে যান তারা। পরে স্বজনদের ফোন করে ১৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন। এক পর্যায়ে ১ সেপ্টেম্বর হৃদয়ের বাবা শফি বান্দরবানে গিয়ে অপহরণকারীদের কথা মত দুই ব্যক্তিকে দুই লাখ টাকা মুক্তিপণ দিয়ে আসেন। এর আগে ৩১ আগস্ট সর্বশেষ তাদের সঙ্গে হৃদয়ের কথা বলিয়ে দেন অপহরণকারীরা।
মুক্তিপণ দেওয়ার পর ‘হৃদয়কে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে, তিনি বাসায় চলে যাবেন’ বলে অপহরণকারীরা স্বজনদের জানালেও বাসায় ফেরেননি তিনি। এই ঘটনায় ৭ সেপ্টেম্বর রাউজান থানায় একটি মামলা দায়ের করেন স্বজনরা। সেই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে সুইচিংমং মারমা (২৪) ও অংথুইমং মারমা (২৫) নামের দুজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে উমংচিং মারমা (২৬) নামের আরেকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ১১ সেপ্টেম্বর রাঙামাটি জেলার কাউখালী ইউনিয়নের দুর্গম বালু পাহাড় এলাকা থেকে হৃদয়ের দেহাবশেষ উদ্ধার করে পুলিশ। মরদেহ নিয়ে ফেরার পথে উমংচিং মারমাকে পুলিশ হেফাজত থেকে ছিনিয়ে নিয়ে গণপিটুনি দিয়ে হত্যা করে উত্তেজিত জনতা।
এই ঘটনার পরপরই নিহত হৃদয়ের দেহাবশেষের ছবি এবং নিহত ও অভিযুক্তদের একটি যৌথ ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এসব ছবির ক্যাপশনে ‘হত্যাকারীরা হৃদয়কে হত্যার পর তার মাংস রান্না করে খেয়ে হাড় পাহাড়ে ফেলে দিয়েছে’ বলে দাবি করা হয়। ফেসবুক, টিকটক ও ইউটিউবের মত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে কনটেন্ট ক্রিয়টরদের অনেকেই এই গুজবের ওপর ভিত্তি করে ভিডিও তৈরি করে শেয়ার করতে থাকেন। কেউ কেউ ফটোকার্ড তৈরি করেও তা শেয়ার করেন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের মধ্যে শুধু ফেসবুক ও ইউটিউবে অধিকতর অনুসন্ধান পদ্ধতিতে (অ্যাডভান্স সার্স সিস্টেম) যাচাই করে এই গুজব ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের প্রতি বিদ্বেষ ছড়ানো সংক্রান্ত সহস্রাধিক পোস্টের সন্ধান পেয়েছেন এই প্রতিবেদক। এসব পোস্টের মধ্যে অধিকাংশের বক্তব্য আপত্তিকর হওয়ায় প্রতিবেদনে যুক্ত করা যায়নি।
বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সারা বিশ্বের প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষের হাতেও পৌঁছে গেছে। এতে গুজবটি এত দ্রুত ও কার্যকরভাবে ছড়িয়েছে যে দায়িত্বশীল অনেকেই বিশ্বাস করে তা নিয়ে কথা বলেছেন।
গুজবটি ‘সত্য’ দাবি করেছেন আওয়ামী লীগ নেতা
এই গুজবটি বাস্তব দাবি করে তা নিয়ে কথা বলেছেন রাঙামাটি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুসা মাতব্বর। তার বক্তব্যের একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে। ১ মিনিট ৪৩ সেকেন্ডের বক্তব্যের প্রথম অংশে তিনি সম্প্রতি চট্টগ্রামের রাউজানে খুনের শিকার এক কিশোরের মাংস রান্না করে খাওয়ার অভিযোগ করেন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে।
ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে প্রথম ৪৩ সেকেন্ডে তাকে বলতে শোনা যায়, ‘গত দুই-তিনদিন আগে রাউজানের একটি ছেলেকে অপহরণ রাঙামাটির কাউখালিতে এনে তার মাংস পর্যন্ত তারা কেটে কেটে রান্না করে খেয়েছে। এটা দুঃখ জনক রাঙামাটিবাসীর জন্য। এই ধরনের ঘটনা যেন পরবর্তী আর না হয়, আমরা আবেদন জানাব সরকারের কাছে। এই সমস্ত এগুলো, এই হত্যাকাণ্ডগুলো আসলে মানুষ কোনো অবস্থাতে, যে কোনো মুহূর্তে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লেগে যেতে পারে। সবাইকে বলব, এই ধরনের ঘৃণ্য অপরাধ- মানুষের মাংস রান্না করে খাওয়া, এটা কতবড় অপরাধ! আমি বলার, মুখের ভাষাই পাচ্ছি না, কী বলব আমি!’
পরের ১ মিনিটে পাহাড়ে অস্ত্রধারীদের কাছ থেকে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে কথা বলেন তিনি।
অবশ্য পরে যোগাযোগ করলে বক্তব্যের বিষয়টি অস্বীকার করেন তিনি। ব্যস্ততার অজুহাতে তা নিয়ে বিস্তারিত কথা বলতেও রাজি হননি মুসা মাতব্বর।
তবে অনুসন্ধানে জানা গেছে, ১ মিনিট ৪৩ সেকেন্ডের ওই ভিডিওটি প্রথম প্রকাশ করে ‘সম্প্রীতির রাঙামাটি’ নামের এক ফেসবুক পেজ। এই ফেসবুক পেজের মালিক ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি অবজারভারের রাঙামাটি প্রতিনিধি শেখ ইমতিয়াজ কামাল ইমন। ১৯ সেপ্টেম্বর বিকেলে তার সঙ্গে কথা বলে দৈনিক বাংলা। তিনি বলেন, ‘৪ থেকে ৫ দিন আগে নির্বাচন নিয়ে আমরা চার থেকে পাঁচটা গণমাধ্যমের প্রতিবেদক ওনার সাক্ষাৎকার নিয়েছি। আমাদের মধ্যে একজন ওনাকে আসন্ন নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন করলে উনি এই বক্তব্য দিয়েছিলেন। আমার কাছে র-ভিডিও (মূল ভিডিও) আছে।’
যা বললেন মরদেহ উদ্ধারকারী পুলিশ সদস্যরা
শিবলী সাদিক হৃদয় হত্যার ঘটনায় এখন পর্যন্ত পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ। তাদের মধ্যে হত্যার ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী দিয়েছেন তিনজন। জবানবন্দী দেয়া তিনজনই হত্যায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। তবে কেউই হৃদয়ের মাংস রান্না করে খাওয়ার বিষয়ে কিছু বলেনি বলে দাবি পুলিশের।
মরদেহ উদ্ধার ও আসামিদের গ্রেপ্তারের সময় অভিযানিক দলে ছিলেন রাউজান থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আজিজুল হক। এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তাও তিনি। এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘রান্না করে তার মাংস খাওয়ার বিষয়টা ভুয়া। এসবের ভিত্তি নেই। এই বিষয়ে আমরা নিজেরাই তো কিছু পাইনি। ব্লগাররা ভাইরাল হওয়ার জন্য এটা ছড়াচ্ছে। এটা নিয়ে আমাদের সাইবার টিম মাঠে নামছে। আমাদের স্যারও (ওসি) এটা নিয়ে কথা বলেছেন। যারা এসব ভুয়া নিউজ ছড়িয়ে দেশের মধ্যে অরাজকতা সৃষ্টির চেষ্টা করতেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘এই মামলায় সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা করছেন একজন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মেয়ে। তিনি আমাদের কনস্টেবল। যেহেতু ভাষার একটা সমস্যা আছে, আমরা ওনার সহযোগিতায় কাজগুলো করছি।’
প্রায় একই কথা বলেন রাউজান থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ছিদ্দিকুর রহমান। তিনি বলেন, ‘হত্যায় জড়িতরা নিহতের মাংস রান্না করে খেয়েছে- এরকম কোনো তথ্য আমরা এখন পর্যন্ত পাইনি। যারা এগুলো ছড়াচ্ছে, তাদের এই বিষয়ে জিজ্ঞেস করা যেতে পারে-তারা কোথায় পেলেন!’
‘অপহরণের ১৪ দিন পর আমরা দেহাবশেষ পেয়েছি। যে এলাকা থেকে দেহাবশেষ উদ্ধার করেছি, এর আশেপাশের ৮ থেকে ১০ কিলোমিটারের মধ্যে কোনো বাড়িঘর নেই। এটা হলো পাহাড়ি গভীর জঙ্গল। যেহেতু জনবসতি নেই, বিভিন্ন প্রাণি থাকতে পারে জঙ্গলে।’
‘সেসব প্রাণীও হয়ত এভাবে মরদেহ পেলে খেয়ে ফেলতে পারে। তাছাড়া আমরা তো জানি যে, মানুষ যখন মারা যায়, তিন দিনের মধ্যে লাশের পচন শুরু হয়। তো মরদেহটি পাওয়া গেছে খুনের ৮ থেকে ১০ তিন পর। তাই আমাদের ধারণা শেয়ালে বা কোনো প্রাণি খেয়ে ফেলছে, নয়তো পচে গেছে’ যোগ করেন তিনি।
তবে জবানবন্দী দেয়া তিনজনের একজন ওই এলাকায় একদিন রাতে মুরগিসহ ভাত রান্না করে খাওয়ার কথা জানিয়েছেন বলে জানান তিনি। বলেন, ‘যেহেতু তারা সেখানে ছিল, তাই স্বাভাবিকভাবে মুরগি-ভাত রান্না করে তারা এক রাতে খেয়েছে।’
ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ যা বললেন
পুলিশ ও হৃদয়ের স্বজনদের কাছে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, সর্বশেষ ৩১ আগস্ট পরিবারের সঙ্গে হৃদয়ের কথা বলিয়ে দেন অপহরণকারীরা। এর পরপরই তাকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে বলে ধারণা সংশ্লিষ্ট সবার। এরপর মরদেহ উদ্ধার করা হয় ১১ সেপ্টেম্বর। মাঝের ১১ থেকে ১২ দিন মরদেহটি গভীর পাহাড়ি জঙ্গলেই ছিল। সাধারণত মরদেহের পচন শুরু হয় পরিবেশ, তাপমাত্রা, ঋতু, মরদেহের ধরনসহ বিভিন্ন বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে। রাঙ্গামাটির ওই পাহাড়ি গভীর জঙ্গলে ১০ থেকে ১২ দিনে একটা মরদেহের কী অবস্থা হতে পারে তা জানতে চাওয়া হয় ফরেনসিক মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মো. কাশেমের কাছে। তিনি বলেন, ‘মরদেহের মাংস পচে যাবে। কিছু মাংসসহ হাড় অবশ্যই পাওয়া যাবে। কিছু মাংস শরীরে সংযুক্ত থাকতে পারে।’
তবে গভীর জঙ্গলে একটা মরদেহ পড়ে থাকলে বিভিন্ন প্রাণী তা খেয়ে ফেলতে পারে বলে ধারণা তার।
তিনি আরও বলেন, ‘বিভিন্ন প্রাণী মরদেহের বিভিন্ন অংশ খেয়ে ফেলতে পারে। তবে তা কোনো প্রাণী খেয়েছে নাকি কোনো অস্ত্র দিয়ে কাটা হয়েছে তা জানতে একজন ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ দিয়ে মরদেহটা পরীক্ষা করতে হবে। মোটামুটি পচে গেলেও তিনি এই বিষয়ে বলতে পারবেন।’
এই গুজবকে রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্র বলছেন মানবাধিকারকর্মীরা
বর্তমানে দেশে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সংখ্যা ১৬ লাখ প্রায়। তাদের অধিকাংশেরই বাস পার্বত্য চট্টগ্রামে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ‘মানুষের মাংস খাওয়া’ গুজবকে সাম্প্রদায়িক উসকানি ও রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্র বলে মনে করেন মানবাধিকারকর্মীরা।
মানবাধিকার সংগঠন বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের (বিএইচআরএফ) মহাসচিব অ্যাডভোকেট জিয়া হাবীব আহসান দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘এটা একটা সাম্প্রদায়িক উসকানি ও রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্র। এটা যারা করছে, তাদের খুঁজে বের করতে হবে, এতে নিরীহ লোকজন হয়রানির শিকার হচ্ছে। একটা সম্প্রদায়কে টার্গেট করে এভাবে করা- এটা একটা গভীর চক্রান্ত বলে মনে হচ্ছে। যা-ই করুক, অতীতেও এই অঞ্চলের শান্তি নষ্ট করার চেষ্টা করেছে, পারেনি। ভবিষ্যতেও পারবে না ইনশাআল্লাহ।’
মাঠে নামছে সাইবার পুলিশ
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই ধরনের গুজব যারা ছড়িয়েছে তাদের আইনের আওতায় আনার কথা জানিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) বিশেষ পুলিশ সুপার (সাইবার পুলিশ সেন্টার) খন্দকার তৌহিদ হাসান। তিনি দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘আইন-শৃঙ্খলার অবনতির আশঙ্কা হলে আমরা সাধারণত বিটিআরসির মাধ্যমে এই ধরনের গুজবের লিংকগুলো বন্ধ করে দেই। তাছাড়া এই ধরনের গুজব ছড়ানোর পেছনে যারা জড়িত তাদেরও শনাক্ত করা হবে। শনাক্তের পর আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।’
চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পরিত্যাক্ত অবস্থায় অবৈধভাবে নিয়ে আসা প্রায় দুই কেজি স্বর্ণ উদ্ধার করেছে কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর।
শনিবার দুপুরে বিমানবন্দরে মালিকবিহীন দুটি লাগেজ স্ক্যানের মাধ্যমে এসব স্বর্ণ উদ্ধার করা হয়। উদ্ধার স্বর্ণের আনুমানিক বাজারমূল্য প্রায় দেড় কোটি টাকা।
কাস্টমস গোয়েন্দারা জানান, শুক্রবার রাতে মধ্যপ্রচ্যের দেশ ওমানের রাজধানী মাস্কট থেকে ওমান এয়ারের ডব্লিউওয়াই৩১৩ ফ্লাইটে মালিকবিহীন ব্যাগ দুটি চট্টগ্রামে আসে। কিন্তু শনিবার দুপুর পর্যন্ত কোনো যাত্রী এই ব্যাগগুলো নিতে না আসায় স্ক্যান করে কর্তৃপক্ষ।
চট্টগ্রামের কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক বশির আহমেদ বলেন, ‘ব্যাগগুলো স্ক্যান করার পর সেখানে অবৈধভাবে নিয়ে আসা পণ্যের সন্ধান পাওয়া যায়। পরবর্তীতে একটা লাগেজের ভেতর থাকা রাইচ কুকারে লুকানো অবস্থায় বিশেষভাবে লোহার আস্তরণ দিয়ে মোড়ানো তিনটি স্বর্ণের বার পাওয়া যায়। উদ্ধার এসব স্বর্ণের ওজন ১ কেজি ৮৫৬ গ্রাম। যার বাজারমূল্য ১ কোটি ৪৮ লাখ ১৮ হাজার ৫০০ টাকা।’
এই ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।
এর আগে শুক্রবার সকালে ১ কেজি ৭০০ গ্রাম ২৪ ক্যারেটের কাঁচা সোনা ও ২২ ক্যারেটের ১০০ গ্রাম স্বর্ণালংকারসহ মোহাম্মাদ আলী নামের এক ব্যক্তিকে আটক করে বিমানবন্দর কাস্টমসের কর্মকর্তারা।
নওগাঁর রানীনগরে একটি বাড়িতে ডাকাতির ঘটনায় ডাকাত চক্রের ৯ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ সময় ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র, নগদ টাকা ও লুণ্ঠিত মালামাল উদ্ধার করা হয়।
শনিবার দুপুরে পুলিশ সুপার কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানান পুলিশ সুপার মুহাম্মদ রাশিদুল হক।
এর আগে শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে উপজেলার বড়গাছা ইউনিয়নের গহেলাপুর (হিন্দুপাড়া) গ্রামের প্রণব সাহার বাড়িতে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ রাতভর অভিযান চালিয়ে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করে।
গ্রেপ্তাররা হলেন— উপজেলার গহেলাপুর (মধ্যপাড়া) গ্রামের মোজাম্মেলের ছেলে মমিন মন্ডল (২৬), গহেলাপুর কবিরাজপাড়া গ্রামের জলিলের ছেলে মাসুদ রানা (২৮), পশ্চিম গোবিন্দপুর গ্রামের জনাব আলীর ছেলে জাকির হোসেন জেমস (৩৫), বিষ্ণুপুর গ্রামের শামটানের ছেলে ইমদাদুল স্বপন (৩২), একই গ্রামের জামালের ছেলে মুনচুর মন্ডল (৩২), পশ্চিম চকবলরাম গ্রামের রাজ্জাকের ছেলে ইমদাদুল হক বুলেট (২৭), পূর্ব বালুভরা গ্রামের মিলনের ছেলে হাফিজুল হ্যাপি (২৬), গহেলাপুর নিশ্চিন্দাকুড়ি গ্রামের সিরাজুল ইসলামের ছেলে মাসুদ রানা (৩২) ও হিন্দুপাড়া গ্রামের সিরাজুলের ছেলে সরন আলী (২২)।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার বলেন, গ্রেপ্তার ডাকাত দলের সদস্য মাসুদ রানার নেতৃত্বে শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে উপজেলার গলোপুর (হিন্দুপাড়া) গ্রামের প্রণব সাহার বাড়িতে ডাকাতি হয়। ডাকাত সদস্যরা ঘরে ঢুকে তার স্ত্রীর হাত-পা বেঁধে দেশীয় অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে নগদ ২৬ হাজার টাকা, ৬ আনা স্বর্ণের গহনা, পিতলের তৈরি ছোট একটি মূর্তিসহ বাড়ির বিভিন্ন মালামাল লুট করে নিয়ে যায়।
তিনি বলেন, এ ঘটনায় বাড়ির মালিক প্রণব সাহা থাকায় একটি মামলা দায়ের করেন। পরে পুলিশ রাতভর অভিযান চালিয়ে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে আসামিদের গ্রেপ্তার করে। লুট হওয়া নগদ টাকাসহ মালামাল উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় আরও কেউ জড়িত আছে কিনা তা তদন্ত করা হচ্ছে বলেও জানান পুলিশের এ কর্মকর্তা।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গাজিউর রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) ফৌজিয়া হাবিব খান, রানীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম আজাদসহ পুলিশের অন্যান্য কর্মকর্তারা।
কুমিল্লায় অভিযান চালিয়ে ১০৮ বস্তা আলু জব্দ করে সরকার নির্ধারিত দামে বিক্রি করেছে ভোক্তা অধিদপ্তর। এ সময় অনিয়মের অভিযোগে দুটি প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হয়।
শনিবার দুপুরে শহরের চকবাজারে অভিযান পরিচালনা করেন ভোক্তা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. আছাদুল ইসলাম।
তিনি বলেন, কুমিল্লা জেলা কার্যালয়ের উদ্যোগে চকবাজারে পাইকারদের বেচাকেনা মনিটরিং কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। এ সময় তাদের মজুদ, বিক্রয় রশিদ যাচাই করা হয়। অভিযানে মেসার্স অরবিন্দ এন্টারপ্রাইজে বসে বগুড়া ও চাপাইনবাবগঞ্জ এলাকার রশিদ নকল করা হচ্ছে। সেখানে তারা নিজেদের মতো দর নির্ধারণ করছিলেন। এ সময় অভিযান দেখে একজন পালিয়ে যায়। পরে গোডাউন তল্লাশি করে ১০৮ বস্তা আলু জব্দ করা হয়। জব্দ করা আলু ৩৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হয়।
এদিকে অভিযানে মূল্য তালিকা প্রদর্শন না করা এবং ক্রয়ের ভাউচার সংরক্ষণ না করায় অন্য দুটি প্রতিষ্ঠানকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
অভিযানে স্যানিটারি ইন্সপেক্টর ইসরাইল হোসেন, চকবাজার ব্যবসায়ী সমিতি এবং জেলা পুলিশের একটি প্রতিনিধিদল উপস্থিত ছিল।
নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে একটি বাসায় লিকেজ থেকে গ্যাস জমে বিস্ফোরণে দগ্ধ হয়ে দুই নারীর মৃত্যু হয়েছে। এই ঘটনায় আরও দুইজন দগ্ধ হয়েছেন। তাদের রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়েছে।
গত শুক্রবার রাত সোয়া ১১টার দিকে আড়াইহাজার বাজার এলাকায় পাঁচতলা ভবনের চারতলার ওই বাসায় এ বিস্ফোরণ ঘটে।
ঘটনার পর চারজনকে প্রথমে স্থানীয় হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে নেওয়া হলে সেখানকার হাই ডিপেনডেন্সি ইউনিটে (এইচডিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার দুই নারীর মৃত্যু হয়। তারা হলেন—কানিজ খাদিজা নিপা (৩৯) ও সায়মা আক্তার (৪০)। এখনো চিকিৎসাধীন দুইজন হলেন- নিপার মা হাসিনা মমতাজ (৫৫) ও সায়মার স্বামী সোহান তালুকদার (৪৫)।
ইনস্টিটিউটের আবাসিক চিকিৎসক ডা. তরিকুল ইসলাম দৈনিক বাংলাকে জানান, মারা যাওয়া নিপা ও সায়মা উভয়ের শরীরের ৯০ শতাংশ দগ্ধ হয়। তাদের মধ্যে নিপা সকালে ও সায়মা দুপুরে মারা যান। আর চিকিৎসাধীন সোহানের শরীরের প্রায় ১০০ শতাংশ এবং হাসিনার ৫৫ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে।
সোহান-সায়মা দম্পতির সঙ্গে শেয়ারে ওই বাসায় ভাড়া থাকতেন নিপা। সোহান স্থানীয় ফকির গার্মেন্টসে চাকরি করেন। তার স্ত্রী সায়মা গৃহিণী ছিলেন। আর নিপার বাড়ি আড়াইহাজারের লক্ষীবরদীতে। তিনিও স্থানীয় একটি গার্মেন্টসে চাকরি করতেন। নিপার মা শুক্রবার সন্ধ্যায় তার বাসায় বেড়াতে আসেন।
দগ্ধ সোহানের ভাগ্নে ফাহিম মোল্লা দৈনিক বাংলাকে জানান, রাত ১২টার দিকে তিনি খবর পান, তার মামার বাসায় বিস্ফোরণে আগুন লেগেছে। তখন তিনি বাসা থেকে তাদের চারজনকে উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখান থেকে সকালে তাদের শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে নিয়ে যান।
নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের আড়াইহাজার ফায়ার স্টেশনের স্টেশন অফিসার শাহ্জাহান হোসেন দৈনিক বাংলাকে বলেন, ফ্ল্যাটের ভেতর তিনটি কক্ষ, মাঝখানে রান্নাঘর। ঘরে তিতাসের গ্যাসের লাইন ও গ্যাস সিলিন্ডার দুটোই ছিল। তবে সিলিন্ডারটি অক্ষত অবস্থায় পাওয়া গেছে। প্রাথমিকভাবে গ্যাস লাইনের লিকেজ থেকে ঘরের ভেতর জমা গ্যাসে এই বিস্ফোরণ হয়েছে বলে ধারণা করছি। তবে নিশ্চিত করে তদন্তের পরই বলা যাবে।