চকরিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যানপদপ্রার্থী ফজলুল করিম সাঈদী যান চলাচল বন্ধ করে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে পথসভা করেছেন। গতকাল রোববার রাতে চকরিয়া পৌরশহরের কাজী মার্কেট চত্বরে মঞ্চ তৈরি করে এ পথসভা করা হয়। জনসমাগমে সড়ক ও মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকে প্রায় ৩ ঘণ্টা।
উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের আচরণবিধি অনুযায়ী, জনগণের চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি হয় এমন কোনো সড়কে জনসভা কিংবা পথসভা করা যাবে না। প্রার্থীদের পক্ষে কোনো ব্যক্তিও অনুরূপ জনসভা ও পথসভা করতে পারবেন না। কোনো পথসভা করতে হলে কমপক্ষে ২৪ ঘণ্টা আগে সভার জায়গা ও সময় সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্তৃপক্ষকে অবহিত করতে হবে, যাতে ওই স্থানে চলাচল ও আইনশৃঙ্খলার জন্য পুলিশ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারে। এটি উপজেলা নির্বাচন আচরণবিধির ৭ ধারায় সুস্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে; কিন্তু এ ক্ষেত্রে কোনো বিধান মানেনি উপজেলা চেয়ারম্যানপ্রার্থী ফজলুল করিম সাঈদি।
সড়কের দুই পাশে বাঁশ দিয়ে যান ও জনসাধারণের চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। সন্ধ্যা ৬টা থেকে কর্মী-সমর্থকরা মিছিল নিয়ে পথসভায় জড়ো হন। এ সময় মহাসড়কের একপাশে যানবাহন ও মানুষের চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। রাত ১০টার দিকে পথসভা শেষ হলে সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। বিকল্প রাস্তা না থাকায় লোকজন ধাক্কাধাক্কি করে কোনো রকমে চলাচল করে। এতে চুরি ছিনতাইয়ের মতো একাধিক ঘটনাও ঘটে।
চেয়ারম্যানপ্রার্থী ফজলুল করিম সাঈদির এ পথসভায় বক্তব্য দেন কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সালাহ উদ্দিন, চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন, চকরিয়া পৌরসভার মেয়র আলমগীর চৌধুরী, আওয়ামী লীগ নেতা সরওয়ার আলম, উপজেলা যুবলীগের সভাপতি শহীদুল ইসলাম ও পৌর যুবলীগের সভাপতি হাসানগীর হোছাইন।
চকরিয়া পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা জসিম উদ্দিনের সভাপতিত্বে এ পথসভা অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনী আচরণবিধি বিষয়ে জানতে তার সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘মহাসড়কে পথসভা হয়নি। মার্কেটের গাড়ি পার্কিং ও পাশের সড়কে হয়েছে। এর কারণে যানবাহন ও মানুষের চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি হয়েছে, তা ঠিক। তবে বিষয়টি সম্পূর্ণ চেয়ারম্যানপ্রার্থী সাঈদী দেখবেন।
কক্সবাজারগামী এক পর্যটক বলেন, ‘এ সড়কটি কক্সবাজারের সঙ্গে সারা দেশের যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম। কিন্তু নির্বাচনে প্রার্থীর লোকজন পথসভা করেছেন। এ সভার কারণে যানজটের কবলে পড়ে চকরিয়া পৌরশহর পার হতে প্রায় ৪০ মিনিট সময় লেগেছে।’ এ ব্যাপারে বক্তব্য নিতে চেয়ারম্যান প্রার্থী ফজলুল করিম সাঈদীর সঙ্গে ফোনে কথা বললে তিনি বলেন, ‘কাজী মার্কেট চত্বরের গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য নির্ধারিত স্থানে পথসভা করা হয়েছে। আমার জনপ্রিয়তা আছে, জনসমাগম হয়েছে। তবে মহাসড়কে পথসভা করিনি। তারপরও জনসাধারণের সুবিধার্থে আমরা সভা দীর্ঘ করিনি।
মহাসড়কে পথসভার বিষয়ে জানতে চাইলে চকরিয়া থানার ওসি শেখ মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘মহাসড়কে পথসভা করার খবর জানা নেই। এ বিষয়ে নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তাকে অবহিত করলে তিনি ব্যবস্থা নেবেন। মহাসড়কে পথসভা করে যানবাহন ও মানুষের চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি হয়।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘এ বিষয়ে আমার জানা নেই। খোঁজখবর নিয়ে সত্যতা পেলে আচরণ বিধিমালা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ আগামী ২১ মে চকরিয়া উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে চারজন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ছয়জন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে তিনজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বরগুনা-০২ আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ও বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান আলহাজ্ব নুরুল ইসলাম মণি বলেছেন, আসন্ন নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে বিএনপি রাষ্ট্র ক্ষমতায় গেলে এবং তারেক রহমান প্রধানমন্ত্রী হলে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ৫৪ বছরের বঞ্চনা ঘুচে যাবে। ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র সবার এ নীতি অর্থাৎ তাদের সাংবিধানিক অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে। তাদের জান-মালের নিরাপত্তাসহ সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। তিনি শুক্রবার (২৮ নভেম্বর) সন্ধ্যায় বরগুনার বেতাগী পৌরসভার জেলে পাড়ায় স্থানীয় বিএনপি কর্তৃক আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন।
তিনি বলেন, বিএনপি যতবার রাষ্ট্র ক্ষমতায় এসেছে, ততবার দেশে উন্নয়ন হয়েছে। বরগুনা-০২ আসনকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়েছে। ভবিষ্যতেও এ ধারা অব্যাহত থাকবে।
এদিকে, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান কর্তৃক ঘোষিত রাষ্ট্র কাঠামো সংষ্কারের ৩১ দফাকে সমর্থন জানিয়ে বরগুনার বেতাগী উপজেলার সাত শতাধিক হিন্দু ধর্মাবালম্বী বিএনপিতে যোগদান করেছেন। যোগদান অনুষ্ঠানে তারা এলাকার সার্বিক উন্নয়নের স্বার্থে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ধানের শীষে ভোট দিয়ে বিএনপিকে রাষ্ট্র ক্ষমতায় আনা এবং তারেক রহমানকে প্রধানমন্ত্রী করার প্রত্যায় ব্যক্ত করেছেন। আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বরগুনা-০২ আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ও বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান আলহাজ্ব নুরুল ইসলাম মণির হাতে ফুলের তোড়া দিয়ে তারা আনুষ্ঠানিকভাবে বিএনপিতে যোগদান করেন।
বেতাগী উপজেলা বিএনপির আহবায়ক মোঃ হুমায়ুন কবির মল্লিকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় অন্যান্যের মধ্যে বেতাগী উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি, সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও পৌর মেয়র মোঃ শাহজাহান কবির, বরগুনা জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক কে এম শফিকুজ্জামান মাহফুজ, জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক জাবেদুল ইসলাম জুয়েল, জেলা সেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব ফয়জুল মালেক সজীব, জেলা ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সানাউল্লাহ সানি প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
ফেনী শহরের শাহীন একাডেমিসংলগ্ন র্যাব ক্যাম্পের পিছনের এলাকার হাশেম ম্যানশন নামে একটি তিনতলা ভবনের ৬টি ফ্ল্যাট ২৭ জনের কাছে বন্ধক দিয়ে দেড় কোটি টাকা নিয়ে পালিয়ে গেছে ভবন মালিক আবুল হাসেমের স্ত্রী বিবি আয়েশা ও তার দুই ছেলে আবু ছাইদ মুন্না ও মেহেদী হাছান।
শুক্রবার বিকেলে হাশেম ম্যানশনের সামনে প্রতারণার শিকার ১৭ জন ভুক্তভোগী ও তাদের পরিবার প্রতারকদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন।
সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগী পরিবারের পক্ষে মো. আলমগীর বলেন, হাশেম ম্যানশনের মালিক একই পরিবারের বিবি আয়েশা ও তার দুই ছেলে প্রতারণার মাধ্যমে ৬টি ফ্ল্যাট মোট ২৭ জনের কাছে বন্ধক দিয়ে প্রায় দেড় কোটি টাকা নিয়ে পালিয়ে গেছে। তারা তাদের বাড়িটি কুটকৌশলে ধাপে ধাপে গোপনীয়ভাবে বিভিন্ন জনের কাছে বন্ধক দেয়। বন্ধকদারদের ভাড়ার টাকা নিয়মিত পরিশোধ করার আশ্বাস দেয়।
সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগীরা আরও বলেন, এভাবে প্রতারণার মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে গত ২০ অক্টোবর তারা পালিয়ে যায়। পরে খরব নিয়ে জানতে পারি তারা এভাবে করে ২৭ জনের কাছে ৬টি ফ্লাট বন্ধক দেয়। বর্তমানে তারা আমাদেরকে পাওনা টাকা দেব দিচ্ছি বলে তালবাহানা করছে। এই ব্যাপারে আমরা ফেনী মডেল থানায় ও র্যাবের কাছে বিষয়টি অবগত করেছি। তাদের বিরুদ্ধে আমরা ৮ জন বন্ধকদার মামলা করেছি। যাহার মধ্যে বর্তমানে ৪টি ওয়ারেন্ট ইস্যু করা হয়েছে।
ভুক্তভোগী লিপি আক্তার বলেন, আমরা আর্থিকভাবে বিপর্যস্ত, ক্ষতিগ্রস্ত অনেকে তার সারাজীবনের জমানো টাকা দিয়েছে, অনেকে তার চাকরির পেনশনের টাকা দিয়েছেন পরিবারগুলো এখন চরম অনিশ্চয়তায় রয়েছে। তিনি বলেন, যদি কেউ প্রতারকদের যে ধরিয়ে দিতে পারেন তাকে উপযুক্ত আর্থিক সম্মানী দেওয়া হবে এবং তার পরিচয় গোপন রাখা হবে। দয়া করে অসংখ্য ভুক্তভোগীদের সহায়তা করুন।
তারা এই পলাতক প্রতারকদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় দাবী জানান, যাতে তারা ন্যায়বিচার এবং কষ্টার্জিত অর্থ পুনরুদ্ধারে সহযোগিতা চান।
এ ব্যাপারে বিবি আয়েশা ও তার দুই ছেলে আবু ছাইদ মুন্না ও মেহেদী হাছাসের সাথে যোগাযোগের চেষ্ঠা করা হলেও তাদের ব্যবহত নাম্বার বদ্ধ পাওয়া যায়।
ফরিদপুরে নারীদের স্বাবলম্বী করে তুলতে প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের উদ্বোধন করেছেন ফরিদপুর-৩ আসনের বিএনপির মনোনীত প্রার্থী চৌধুরী নায়াব ইউসুফ। তার মায়ের নামে ‘শায়লা কামাল মহিলা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র’ এর মাধ্যমে বিনামূল্যে নারীদের সেলাই, এম্ব্রোডারি, বাটিক সহ বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দেয়া হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।
শুক্রবার বিকালে শহরতলীর বায়তুল আমান এলাকায় এই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের উদ্বোধন করা হয়। এসময় জিয়া মঞ্চ ফরিদপুর শাখার পক্ষ থেকে ৫টি সেলাই মেশিন প্রদান করা হয়। এদিন পাঁচজন নারীকে সেলাই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কেন্দ্রটির যাত্রা শুরু হয় এবং পর্যায়ক্রমে প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের সংখ্যা ও প্রশিক্ষণার্থীর সংখ্যা বাড়ানো হবে বলে উদ্বোধনকালে চৌধুরী নায়াব ইউসুফ উল্লেখ করেন। তার বাবা মরহুম চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন এবং বিএনপি সরকারের একাধিকবার মন্ত্রী ছিলেন।
উদ্বোধনকালে চৌধুরী নায়াব ইউসুফ বলেন- ফরিদপুর সদরের নারীদের স্বাবলম্বী করে গড়ে তুলতে এই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের উদ্বোধণ করা হয়েছে। এখানে সেলাই প্রশিক্ষণের পাশাপাশি বাটিক, হাতের কাজ এবং বিভিন্ন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে। কারণ, বিএনপি নারীদের ক্ষমতয়ান, স্বাবলম্বী ও শক্তিশালী করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা করেছে। তারই অংশ এই প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, পর্যায় কেন্দ্রের সংখ্যা বাড়ানো হবে।
এ অনুষ্ঠানে জিয়া মঞ্চ ফরিদপুর জেলা কমিটির আহবায়ক আব্দুল্লাহ আল মামুনের সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সদস্য সচিব এ বি সিদ্দিক অপু, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও চলতি দায়িত্ব দপ্তর মোঃ মাশরাফি আহমেদ, মহানগর জিয়া মঞ্চ এর আহবায়ক মো. কাইয়ুম মিয়া, সদস্য সচিব এনামুল করিম প্রমুখ।
ঢাকা সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ইন্টার্নশিপের সময় বারবার একই দৃশ্য দেখে ভীষণ কষ্ট হতো নার্স সিজানের। ডায়রিয়া ও লুজ মোশনে আক্রান্ত হয়ে ছোট ছোট শিশু ও কিশোররা বেশি আসত হাসপাতালে। প্রতিনিয়ত বাচ্চাদের এই কষ্ট দেখে তার ভীষণ খারাপ লাগতো। অসুস্থতার কারণ হিসেবে সিজান জানতে পারেন, খুব সাধারণ কিছু ভেজালযুক্ত খাবারই এর জন্য দায়ী। এখন শীতের সময় রাস্তার পাশে তৈরি হচ্ছে ভেজালযুক্ত গুড় দিয়ে পিঠা। আর বাচ্চারা বায়না ধরলে বাবা-মা বাধ্য হয়ে এগুলো কিনে খাওয়ান। আর রাসায়নিক যুক্ত এসব খাবার খেয়ে বাচ্চারা বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাই এর থেকে পরিত্রাণ পেতে অন্তত একটি খাবারকে ভেজাল মুক্ত করতে তিনি ছুটে আসেন নিজ জেলা মাগুরাতে।
যেখানে খাঁটি খেজুরের গুড়ের সুনাম বহুদিনের। তখনই তার মাথায় আসে এই মানবিক উদ্যোগের চিন্তা। বাংলাদেশের মানুষের হাতে পৌঁছে দিতে হবে খাঁটি রাসায়নিকমুক্ত বিশুদ্ধ খেজুর গুড়।
প্রকৃতির ছোঁয়ায় বিশুদ্ধ জীবনের প্রতিশ্রুতি নিয়ে মাগুরা সদর উপজেলার ছয় চার গ্রামের মো. খায়রুজ্জামান সবুজের ছেলে মো. শাহরিয়ার সিজান সদর উপজেলার পাটকেলবাড়ি বাল্য বাজারের পেছনে গড়ে তুলেছেন ‘অর্গানিক ফুড ভ্যালি’ নামে ভেজালমুক্ত পাটালি ও গুড় তৈরির প্রজেক্ট।
২০২৪ সালে সিজান তার বন্ধু রিজু বিশ্বাস, ডেন্টাল ডাক্তার শেখ সালাউদ্দিনসহ আরো দুইজন রেজিস্টার নার্সকে সাথে নিয়ে নিজের অর্থ ও শ্রম দিয়ে মাগুরায় তিন লক্ষ টাকা দিয়ে একটি খেজুর বাগান ক্রয় করেন। রাজশাহী থেকে অভিজ্ঞ গাছি এনে শুরু করেন সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপায়ে খাঁটি খেজুরের রস সংগ্রহ ও গুড় প্রস্তুত। গাছ থেকে রসের হাড়ি নামিয়ে বাগানেই জ্বাল করে তৈরি করা হয় এসব গুড় ও পাটালি। কোন পাতার জ্বাল দেয়া হয় না কারণ এতে ধোয়ার গন্ধ হয়ে যায়। কাঠের খড়ি ও প্রাকৃতিক উপায়ে সংগ্রহ করা খড়ি দিয়ে জ্বাল করে তৈরি করা হয়। এতে গুড় এবং পাটালির স্বাদ ভালো থাকে। প্রথম বছরেই মানুষের আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হন তিনি। ভেজালমুক্ত খাবারের সন্ধানে থাকা অসংখ্য পরিবার সিজানের এই গুড়কে বেছে নেন নিশ্চিন্তে।
সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, তার ক্রেতাদের বড় একটি অংশই সরকারি হাসপাতালের ডাক্তার ও নার্স। যারা প্রতিদিন অসংখ্য রোগীকে চিকিৎসা দেন এবং স্বাস্থ্য সচেতনতা সম্পর্কে সাধারণ মানুষের চেয়ে অনেক বেশি জানেন। তাদের আস্থা অর্জন করতে পেরে সিজানের আত্মবিশ্বাস আরো বেড়ে যায়। মাগুরার বিভিন্ন মিষ্টির দোকানগুলোতে বিক্রি করাসহ আশেপাশের জেলাগুলোতেও এই পাটালি বিক্রি করেন।
এ বছরও অভিজ্ঞ গাছি এনে খেজুর গাছ কেটে নতুন মৌসুমের কাজ শুরু করেছেন সিজান। তার এই ব্যক্তিগত উদ্যোগ আজ হাজারো পরিবারকে ভেজালমুক্ত নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে সাহায্য করছে। মাগুরার এই তরুণ নার্স প্রমাণ করেছেন, সামান্য ইচ্ছাশক্তি ও সৎ উদ্যোগও সমাজে বিশাল পরিবর্তন আনতে পারে।
এ ব্যাপারে সিজান বলেন, নার্সিং পেশার পাশাপাশি আমি এই কাজটিকে বেছে নিয়েছি শুধুমাত্র দেশের মানুষের কাছে অন্তত একটি ভেজালমুক্ত খাবার তুলে দেয়ার জন্য। এতে আমার কিছু আয় হবে আবার দেশে ছড়িয়ে দিতে পারব বিষমুক্ত একটি খাবার। গত বছর অল্প পরিসরে শুরু করেছিলাম। মাত্র তিন লক্ষ টাকার গাছ কিনেছিলাম তাতে সব খরচ বাদ দিয়ে দুই লাখ টাকা লাভ করেছি। তবে আশা করছি এ বছর ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা লাভ করতে পারব। প্রথম প্রথম অনেকেই আমার এই উদ্যোগ দেখে নানা রকম কটু কথা বলতো। এখন আমার সফলতা দেখে সবাই প্রশংসা করে। দুই বছর এই কাজ করে বেশ সাড়া পাচ্ছি।
তার বন্ধু রিজু বিশ্বাস বলেন, খাদ্যে ভেজাল যখন নিত্যনৈমিত্তিক সমস্যা তখন নার্স শাহরিয়ার সিজান হয়ে উঠেছেন এক অনুপ্রেরণার নাম। নিজের চোখে দেখা সমস্যার সমাধান নিজের হাতেই তৈরি করেছেন তিনি। রুগ্ন সমাজকে সুস্থ পথে ফেরাতে এমন উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার।
এলাকাবাসীরা জানান, বাজারে এখন ভেজালযুক্ত খাবারে পরিপূর্ণ। প্রতিনিয়ত সাধারণ মানুষ বিশেষ করে বাচ্চারা এসব ভেজাল যুক্ত খাবার খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাই আমরা চাই নার্স শাহরিয়ার সিজানের মতো আমাদের সমাজের সব তরুণরা যেন ভেজালমুক্ত অন্তত একটি খাবার উপহার দিতে পারে।
জেলা নিরাপদ খাদ্যের সহকারী পরিচালক সুমন অধিকারী জানান, স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত পণ্যের জন্য সাধারণত বিএসটিআইয়ের অনুমোদন লাগে না। তবে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদিত পণ্য বিক্রয়ের জন্য বিএসটিআইয়ের যশোর অফিসে আবেদন করলে অনুমোদন পাওয়া সম্ভব।
নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলায় ঘাগড়াপাড়া গ্রামের যুবক আনারুল ইসলাম (২৮) প্রায় এক মাস ধরে নিখোঁজ রয়েছেন। গত বুধবার তার শশুর বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা এলাকা থেকে নিজ বাড়ির উদ্দেশে রওনা হওয়ার পর থেকে তার আর কোনো খোঁজ মিলছে না।
পরিবার জানায়, নিখোঁজের সময় আনারুলের পরনে ছিল নেভি রঙের ফুলহাতা শার্ট ও লুঙ্গি। মানসিকভাবে তিনি কিছুটা অস্থির প্রকৃতির ছিলেন বলেও পরিবারের পক্ষ থেকে উল্লেখ করা হয়েছে। ঘটনার পর আনারুলের ছোট ভাই মো. নাজমুল ধর্মপাশা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। পরিবার ও স্বজনরা বিভিন্ন এলাকায় খোঁজাখুঁজি করলেও কোথাও আনারুলের সন্ধান পাওয়া যায়নি। পরিবার জানায়, আনারুল ২২ অক্টোবর স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলার রাজধরপুর গ্রামে শ্বশুর বাড়িতে বেড়াতে যান। গত বুধবার তার স্ত্রী পরিবারের সদস্যদের জানান যে তারা মোহনগঞ্জ স্টেশন থেকে ট্রেনে করে আনারুলকে বাড়িতে পৌঁছে দিচ্ছেন। কিন্তু দীর্ঘ অপেক্ষার পরও তিনি বাড়ি না ফেরায় পরিবারের সন্দেহ দেখা দেয়। পরে যোগাযোগ করা হলে স্ত্রী জানান, তারা নাকি আনারুলকে নেত্রকোনা রেলস্টেশনে নামিয়ে দিয়ে গেছেন। এরপর থেকে তার কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। এ অবস্থায় শুক্রবার দুপুর ১২টায় নেত্রকোনা জেলা প্রেসক্লাব মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে আনারুল ইসলামের পরিবার। সংবাদ সম্মেলনে তারা প্রভাবশালী মহল, স্থানীয় প্রশাসন, গণমাধ্যম কর্মী ও সাধারণ মানুষের সহযোগিতা কামনা করেন। পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, যদি কোনো হৃদয়বান ব্যক্তি আনারুল ইসলামের সন্ধান পান বা তার অবস্থান সম্পর্কে তথ্য জানেন, তাহলে অনুগ্রহ করে ০১৮৬৭-২২৮৩১৯ নম্বরে যোগাযোগ করার অনুরোধ করা হচ্ছে। নিখোঁজ যুবকের নিরাপদ ও দ্রুত ফিরে আসার জন্য পরিবার সকলের দোয়া ও আন্তরিক সহায়তা কামনা করেছে।
রাঙামাটি জেলার স্থানীয় সাংবাদিকদের অংশগ্রহণে তিন দিনব্যাপী ‘ডিজিটাল মিডিয়া বিষয়ক প্রশিক্ষণ’-এর সমাপনী অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়েছে। শুক্রবার বিকেলে রাঙামাটি প্রেসক্লাব মিলনায়তনে প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ (পিআইবি) এই সমাপনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
এবারের প্রশিক্ষণে জেলার বিভিন্ন প্রিন্ট, অনলাইন ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার মোট ৩৫ জন সাংবাদিক অংশ নেন। প্রশিক্ষণের মূল লক্ষ্য ছিল ডিজিটাল সংবাদ সংগ্রহ, তথ্য যাচাই (ফ্যাক্ট-চেকিং), মোবাইল জার্নালিজম, এআই ব্যবহারের কৌশল, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নৈতিকতা ও নিরাপত্তা-এসব বিষয়ে সাংবাদিকদের দক্ষতা বৃদ্ধি করা।
সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পিআইবির মহাপরিচালক ফারুক ওয়াসিফ। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন রাঙামাটি অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ইমরানুল হক ভূইয়া, পিআইবির সিনিয়র প্রশিক্ষক গোলাম মোর্শেদ, রাঙামাটি প্রেসক্লাবের সভাপতি আনোয়ার আল হক, সিনিয়র সহসভাপতি সাখাওয়াত হোসেন রুবেল, সম্পাদক মোহাম্মদ ইলিয়াস, সাবেক সভাপতি ও প্রবীণ সাংবাদিক সুনীল কান্তি দে সহ প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণকারী অন্যান্য সাংবাদিকরা।
সমপনী অনুষ্ঠানে অতিথিরা বলেন, ‘ডিজিটাল যুগে সাংবাদিকতাকে আরও গতিশীল ও দায়িত্বশীল করতে এ ধরণের প্রশিক্ষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ডিজিটাল টুল ব্যবহারে দক্ষতা বৃদ্ধি পেলে সংবাদ হবে আরও নির্ভুল, সময়োপযোগী ও আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন।’
অংশগ্রহণকারী সাংবাদিকরা জানান, ডিজিটাল নিরাপত্তা, কনটেন্ট তৈরি ও মোবাইল রিপোর্টিংয়ের হাতে–কলমে অনুশীলন তাদের পেশাগত কাজে নতুন মাত্রা যোগ করবে। শেষে অতিথিরা অংশগ্রহণকারীদের হাতে প্রশিক্ষণের সনদপত্র তুলে দেন।
কুষ্টিয়ায় গত ১ বছরে (অক্টোবর ২০২৪ থেকে অক্টোবর ২০২৫) পর্যন্ত সীমান্ত এলাকায় পরিচালিত বিভিন্ন অভিযানে ১০৮ কোটি টাকার মাদক ও চোরাচালানী পণ্য জব্দ করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। এ সময় ৬টি ভারতীয় অটোমেটিক পিস্তল উদ্ধারসহ ৮ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়।
অভিযানের সময় ৭৩ কোটি ৯৪ লাখ ৫৫ হাজার ২২ টাকা মূল্যের মাদকদ্রব্য এবং ৩৪ কোটি ৩৯ লাখ ৮ হাজার ৯১ টাকার চোরাচালানী পণ্যসহ মোট ১০৮ কোটি ৩৩ লাখ ৬৩ হাজার ১১৪ টাকার অবৈধ দ্রব্য জব্দ করা হয়।
কুষ্টিয়া ব্যাটালিয়ন (৪৭ বিজিবি)-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মাহবুব মুর্শেদ রহমান এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ২০২৪ সালের আগস্ট–অক্টোবর তিন মাসে ২১ কোটি ৭৩ লাখ ৮ হাজার ৭৫০ টাকার মাদকদ্রব্য ও ৬ কোটি ৯৯ লাখ ৭৮ হাজার ৫০৫ টাকার চোরাচালানী পণ্যসহ মোট ২৮ কোটি ৭২ লাখ ৮৭ হাজার ২৫৫ টাকার সিজার সম্পন্ন করে ২৩ জন আসামিকে আটক করা হয়েছিল।
অন্যদিকে, চলতি বছরের একই সময় (আগস্ট–অক্টোবর ২০২৫) ১২ কোটি ২ লাখ ১৩ হাজার ৫৩০ টাকার মাদক এবং ১৫ কোটি ৮৩ লাখ ২৪ হাজার ৭৯২ টাকার চোরাচালানী পণ্যসহ মোট ২৭ কোটি ৮৫ লাখ ৩৮ হাজার ৩২২ টাকার সিজার সম্পন্ন করে ৩৯ জন আসামিকে আটক করেছে কুষ্টিয়া ৪৭ বিজিবি।
চলতি বছরে পরিচালিত যৌথ টাস্কফোর্স অভিযানে বিপুল পরিমাণ মাদক ও চোরাচালানী দ্রব্য উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারকৃত দ্রব্যের মধ্যে রয়েছে, ফেন্সিডিল: ৭৯৯ বোতল, ইয়াবা: ২২,৭২৮ পিস, এলএসডি: ৪৫ বোতল, নকল বিড়ি/ সিগারেট: ১,৭৭,৫১৪ প্যাকেট, বেহুন্দী ও চায়না দোয়ারী জাল: ১,৮৪,৯৬২ কেজি। উদ্ধারকৃত এসব দ্রব্যের বাজারমূল্য প্রায় ৬২ কোটি ৯২ লাখ টাকা। এ সময় ৬টি ভারতীয় অটোমেটিক পিস্তল উদ্ধারসহ ৮ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়।
তিনি আরও বলেন, কোটা আন্দোলনে নিহত ও আহত ১০টি পরিবারকে মোট ৪ লাখ ২৫ হাজার টাকা সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। একজন দৃষ্টিহীন বৃদ্ধকে উন্নত চিকিৎসা ও আর্থিক সহায়তা প্রদান। ৪২টি হতদরিদ্র্য পরিবারকে খাদ্যসামগ্রী এবং একজন এতিম কিশোরকে গবাদি পশু প্রদান।
এই মানবিক উদ্যোগগুলো বিজিবি ও স্থানীয় জনগণের মধ্যে আস্থা, সহযোগিতা ও সম্পর্ককে আরও সুদৃঢ় করেছে বলে জানিয়েছেন ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক।
তিনি ভবিষ্যৎ অঙ্গীকার করে বলেন, কুষ্টিয়া ব্যাটালিয়ন (৪৭ বিজিবি) তাদের এই অব্যাহত প্রচেষ্টা প্রমাণ করে যে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ শুধু দেশের সীমান্তই নয়, মানুষের হৃদয়ের সীমান্তও রক্ষা করে। ভবিষ্যতেও সীমান্ত সুরক্ষার পাশাপাশি মানবিক কল্যাণে নিজেদের নিবেদিত রাখবে ৪৭ বিজিবি।
দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের জন্য নতুন সম্ভাবনাময় একটি ফসল রোজেল যা বাংলায় চুকোর বা টক গাছ নামে পরিচিত। বীজ বপনের ২২০ দিন পর গাছ প্রতি গড়ে ৫শ গ্রাম থেকে ১ কেজি পর্যন্ত কাঁচা ফল এবং ১৫০ থেকে ৪শ গ্রাম বৃতির ফলন পাওয়া যায়। এছাড়া হেক্টর প্রতি তিন থেকে সাত টন পর্যন্ত ফলন পাওয়া যায়। এই ফল এবং মাংসল বৃতি থেকে জ্যাম, জেলী, চা, আচার, চাটনী, জুসসহ বিভিন্ন পানীয় উৎপাদন করা যায় ও রান্নাতেও ব্যবহার করা যায়। শুক্রবার বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ফসল উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগে আয়োজিত রোজেল নিয়ে এক প্রদর্শনীতে এসব তথ্য জানান বিভাগটির অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ও ‘রোজেল উদ্ভিদের পাতা ও বৃতি উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ, সংরক্ষণ ও ব্যবহারের কলা-কৌশল’ প্রকল্পের প্রধান গবেষক ড. মো. ছোলায়মান আলী ফকির।
এসময় তিনি রোজেলের উৎপাদন, চাষ পদ্ধতি, খাদ্যে ব্যবহার, ঔষধি ব্যবহার, পশু খাদ্য হিসেবে ব্যবহার সম্পর্কে জানান।
অধ্যাপক বলেন, এই উদ্ভিদটি পতিত জমিতে চাষাবাদ করা যায়। এটি আমাদের দেশে অপ্রচলিত একটি উদ্ভিদ। আমার লক্ষ্য কোনো জমি যাতে পতিত না থাকে। এ কারণেই আমি পতিত জমিতে চাষাবাদ উপযোগী অপ্রচলিত কিন্তু ব্যাপক পুষ্টিগুণ সম্পন্ন উদ্ভিদ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে গবেষণা পরিচালনা করে আসছি।
তিনি বলেন, রোজেল খাদ্য হিসাবে স্বাদে ও ভেষজ গুনে অনন্য। বাড়ীর আশে-পাশে রৌদ্রময় বা আংশিক ছায়াযুক্ত উঁচু জায়গাতে চার থেকে পাঁচটি রোজেল উদ্ভিদ থাকলে একটি পরিবারের জন্য চা, জ্যাম, জুস, আচার ইত্যাদির পারিবারিক চাহিদা মেটানো সম্ভব। শুধু তাই নয় রোজেল ভিত্তিক খাদ্য ও পানীয় ছোট-মাঝারি আকারের শিল্পের যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে।
রোজেলের পুষ্টিগুণ নিয়ে তিনি বলেন, জাত অনুসারে লাল ও সবুজ রোজেল পাওয়া যায়। তবে লাল রোজেলে এ্যান্থোসায়ানিন, ফ্লাভনয়েড, ক্যারোটিনসহ অন্যান্য অ্যান্টিএক্সিডেন্ট ও আমিষ, চর্বি বিদ্যমান যা উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন রোগ উপসম করে বলে গবেষণায় জানা গিয়েছে। মৌলিক পুষ্টি উপাদান বিশ্লেষণে দেখা যায় পাতায় ও বৃতিতে প্রোটিন, চর্বি, ফাইবার ও মিনারেলস থাকে। রোজেল বৃতিতে ৩-৪ গ্রাম প্রতি লিটার টোটাল অরগ্যানিক এসিড থাকে। এই অর্গানিক এসিডের উপস্থিতিতে বৃতি ও পাতা টক স্বাদ হয়। এই উদ্ভিদের শুকনা পাতা ও বৃতিতে সহজে ছত্রাক বা জীবাণু আক্রমণ করে না ফলে এটা ছত্রাক-ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধকারী। রোজেল সেবনের নির্দিষ্ট কোনো মাত্রা নেই কারণ এর পুরোটাই প্রাকৃতিক খাদ্য উপাদান সম্পন্ন। তাই এর তেমন কোনো প্বার্শ প্রতিক্রিয়া নেই।
এছাড়া রোজেলের অন্যান্য ব্যবহারের মধ্যে আশ উৎপাদন, পশুখাদ্য ও বায়োমাস হিসেবে ব্যবহারের কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, রোজেলের কান্ড ও শাখা থেকে পাটের মত আঁশ উৎপাদন ও ব্যবহার করা যায়। এ গোত্রীয় মেস্তা পাট আঁশের জন্য উৎপাদন ও ব্যবহার হয়ে আসছে। পরিপক্ক রোজেল বীজে প্রায় ২০ শতাংশ আমিষ ও ২০ শতাংশ চর্বি আছে যা প্রক্রিয়াকরণের পর পশুখাদ্য হিসাবে ব্যবহারের প্রচলন আফ্রিকা মহাদেশ থেকে জানা যায়। ফসল ক্ষেতের বেড়া-উদ্ভিদ হিসাবে রোজেল খুবই কার্যকর। ফসল কর্তনের পর উদ্ভিজ্জ বায়োমাস খড়ি হিসাবে ব্যবহার করা যায়। সুদৃশ্য সবুজ বা লালচে উদ্ভিদ শোভা বর্ধনকারী হিসাবে সুপরিচিত।
রোজেলের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সম্ভাবনা উল্লেখ করে তিনি বলেন, লাল রোজেলের বৃতির রঙ জৈব খাদ্য রঙ হিসেবে ব্যবহার করা সম্ভব। বিদেশে এর ব্যাপক ব্যবহার রয়েছে। বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদ করলে জৈব খাদ্য রঙ বিদেশে রপ্তানি করার ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে।
অধ্যাপক আরও বলেন, রোজেল ক্যাফেইনমুক্ত। ১:৪, ১:৩ ও ১:২ বিভিন্ন অনুপাতে চায়ের সাথে রোজেল মিশানো হয়েছে। তবে সার্ভেতে অংশ নেয়া প্রায় ৬০ শতাংশ মানুষ চা দিয়ে মেশানো ছাড়া শুধু রোজেল পছন্দ করেছে।
তিনি আরো বলেন, আমার এই গবেষণায় আমার স্ত্রী রাকেয়া তৌফিকা নাজনীন রেসিপি প্রস্তুতি ও প্রক্রিয়াজাতকরণে সাহায্য করেছে। এছাড়া বিভাগটির অধ্যাপক ড. নেছার উদ্দীন, অধ্যাপক ড. আলমগীর হোসেন, অধ্যাপক ড. সবিবুল হক এবং উদ্ভিদ রোগতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. দেলোয়ার হোসেন যুক্ত ছিলেন।
শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার ভোগাই নদীর পশ্চিম পাড়ে দীর্ঘদিন ধরে জরাজীর্ণ ও পরিত্যক্ত ভবনে চলছে ৪নং নয়াবিল ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসনিক কার্যক্রম। বহু পুরোনো আধাপাকা এই টিনশেড ভবনে ইউপির কাজ পরিচালনা করতে গিয়ে ধীরে ধীরে স্থবির হয়ে পড়েছে সার্বিক কর্মকাণ্ড। ফলে ইউনিয়নের অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ নিয়মিত নাগরিক সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, আর ত্রাণসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কার্যক্রম পরিচালনায় চরম ভোগান্তিতে পড়ছেন জনপ্রতিনিধিরা।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ফেটে যাওয়া ইটের দেয়াল, মরিচা ধরা টিনের চালা ও পলেস্তরা খসে পড়া ঝুঁকিপূর্ণ এই ঘরেই চলছে ইউনিয়ন পরিষদের নানা কার্যক্রম। বৃষ্টির সময় ছাদ ও চালার অসংখ্য ছিদ্র দিয়ে পানি পড়ে গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র ভিজে যাওয়া এখন নিত্যদিনের ঘটনা। ভবনের ভেতরে ১০-১৫ জনের বেশি বসার জায়গা না থাকায় অনেককে রোদ-বৃষ্টিতে দাঁড়িয়ে সেবা নিতে হয়।
স্থানীয় বাসিন্দা সামিউল ইসলাম বলেন, “জোরে বাতাস উঠলেই আতঙ্কে থাকি। কখন টিন উড়ে যায় আর দেয়াল ভেঙে পড়ে, বলা মুশকিল। এমন ঝুঁকিপূর্ণ জায়গায় কিভাবে এত গুরুত্বপূর্ণ কাজ হয় বুঝি না।”
এমন দুরাবস্থার মধ্যেই চলছে গ্রাম আদালত, চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যদের বৈঠক, ইউপি সচিবের দাপ্তরিক কাজ এবং ডিজিটাল সেন্টারের সেবা। একটি কাজ করতে গিয়ে অন্যটি বন্ধ রাখতে হয়, ফলে গুরুতরভাবে ব্যাহত হচ্ছে সেবা প্রদান। ভবনের অভাবে সরকারি ত্রাণ, কম্পিউটার ও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ নথি যত্রতত্র রাখা হচ্ছে—যা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি চুরির ঝুঁকিতেও রয়েছে।
ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. শরীফ আল ফায়েদ জানান, “বৃষ্টি হলেই ভেতরে পানি ঢুকে কোনো কাগজপত্রই নিরাপদ থাকে না। একটি ইউনিয়নের সব কাজ এক ছাদের নিচে করতে গিয়ে আমরা বিপাকে পড়ছি।”
ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মিজান বলেন, “ত্রাণ বিতরণ থেকে শুরু করে দৈনন্দিন দাপ্তরিক কাজ—সবকিছুই এই জরাজীর্ণ ভবনে অত্যন্ত কষ্টে করতে হয়। বৈঠক বা গ্রাম আদালত পরিচালনার মতো পরিবেশও নেই।”
নালিতাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারজানা আক্তার ববি জানান, নয়াবিল ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান ভবনের অবস্থা সম্পর্কে তারা অবগত। নতুন ভবন নির্মাণের জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। সারাদেশে নতুন ইউনিয়ন পরিষদ ভবন নির্মাণ শুরু হলে নয়াবিল ইউনিয়ন পরিষদও নতুন কমপ্লেক্স পাবে।
উল্লেখ্য, মুক্তিযুদ্ধের আগেই নির্মিত এই ভবনটিতে ১৯৮৩ সাল থেকে নয়াবিল ইউনিয়ন পরিষদ কার্যক্রম চালাচ্ছে। এর আগে রামচন্দ্রকুড়া মন্ডলিয়াপাড়া ইউনিয়ন ও নয়াবিল ইউনিয়ন যৌথ পরিষদ হিসেবেও এখানে দাপ্তরিক কার্যক্রম পরিচালিত হতো।
নদী বাঁচাও, দেশ বাঁচাও, শীতলক্ষ্যা বাঁচাও, আমাদের বাঁচাও স্লোগানে সকাল সকাল মুখরিত রূপগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীর তীর।
শীতলক্ষ্যা নদী বাঁচাতে ছয় দফা প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে নারায়ণগঞ্জ- ১ (রূপগঞ্জ) আসনের জামায়াত মনোনীত প্রার্থী আনোয়ার হোসেন মোল্লার নেতৃত্বে ‘সেভ দ্যা শীতলক্ষ্যা’ নামে র্যালী কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। শুক্রবার সকালে উপজেলার মুড়াপাড়া কলেজ থেকে রান উইথ আনোয়ার হোসেন মোল্লা টু সেভ দ্যা শীতলক্ষ্যা ব্যানারে র্যালীটি শুরু হয়ে শীতলক্ষ্যা নদীর তীর দিয়ে ৩ কিলোমিটার সড়ক প্রদক্ষিণ করে হাটাব বাজারে গিয়ে শেষ হয়।
নারায়ণগঞ্জ -১ (রূপগঞ্জ) আসনের জামায়াত মনোনীত প্রার্থী আনোয়ার হোসেন মোল্লার নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত র্যালীতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও নারায়ণগঞ্জ জেলা সেক্রেটারি মুহাম্মদ হাফিজুর রহমান হাফিজ।
র্যালী শেষে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে হাফিজুর রহমান বলেন, এই শীতলক্ষা হচ্ছে রূপগঞ্জের প্রাণ। শীতলক্ষ্যা কে কেন্দ্র করে নারায়ণগঞ্জে শিল্প কারখানার প্রসার ঘটেছিল। এই শীতলক্ষ্যার স্বচ্ছ পানি ছিল নাব্যতা ছিল। এই শীতলক্ষ্যা ধ্বংস হয়েছে অসৎ দুর্নীতিবাজ চাঁদাবাজ নেতৃত্ব আর সুবিধাবাদী ব্যবসায়ীদের কারণে। আসুন আগামীতে শুধু শীতলক্ষ্যা নয় গোটা বাংলাদেশকে নতুন করে গড়ে তোলার জন্য আমরা শপথ গ্রহণ করি। সৎ নেতৃত্বের সুন্দর বাংলাদেশ গড়ে তুলি। সমাবেশে র্যালির মূল প্রতিপাদ্য তুলে ধরে বক্তব্য, রাখেন আনোয়ার হোসেন মোল্লা।
তার দেওয়া অঙ্গীকার গুলো হচ্ছে: ১। নদী দখলকারীদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি, ২। নদীর দুই পাড়ে সবুজ বেষ্টনী, ৩। নদীর পানি পরিষ্কার ও দূষণ নিয়ন্ত্রণ, ৪। আধুনিক ওয়াকওয়ে, লাইটিং, বিনোদন ক্ষেত্র, ৫। পরিবেশবান্ধব নদী পরিবহন ব্যবস্থা ও ৬। নদীভিত্তিক নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি।
এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন জেলা কর্ম পরিষদ সদস্য অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী খাঁন, জেলা আইন সম্পাদক অ্যাডভোকেট ইসরাফিল, জেলা শিবির সভাপতি আকরাম হোসেন, রূপগঞ্জ উত্তর ও পশ্চিম আমীর আবদুল মজিদ, ও মাওলানা ফারুক আহমাদ, দক্ষিণ, উত্তর ও পশ্চিম সেক্রেটারি, আনিসুর রহমান, খাইরুল ইসলাম, মোহাম্মদ হানিফ ভূঁঞা প্রমুখ।
‘নিয়মিত ব্যায়াম, পরিমিত আহার’ এই স্লোগানকে সামনে রেখে মাগুরার শরীরচর্চাবিষয়ক সংগঠন সুপ্রভাত বাংলাদেশ-এর একযুগ পূর্তি উপলক্ষে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা, স্মৃতিচারণ ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার সকালে মাগুরা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা শুরু হয়ে শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে পুনরায় বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে এসে শেষ হয়। শোভাযাত্রায় ব্যায়ামপ্রেমী এই সংগঠনের শতাধিক সদস্য অংশ নেন। পরে অনুষ্ঠিত হয় স্মৃতিচারণ ও আলোচনা সভা। সভায় সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আলমগীর হোসেনের সঞ্চালনায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন। বক্তারা সংগঠনের প্রতিষ্ঠার ইতিহাস, গত ১২ বছরের অর্জন ও অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। পাশাপাশি নিয়মিত ব্যায়াম, পরিচ্ছন্ন জীবনযাপন এবং স্বাস্থ্যসচেতনতা ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাও তুলে ধরা হয়। আয়োজকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, সুস্থ শরীর ও মানসিক সতেজতা ধরে রাখতে নিয়মিত ব্যায়াম, হাঁটাচলা ও স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপনের কোনো বিকল্প নেই। সমাজব্যাপী স্বাস্থ্যসচেতনতা বৃদ্ধি করতে এ ধরনের কার্যক্রম ভবিষ্যতেও অব্যাহত রাখার প্রত্যাশা ব্যক্ত করা হয়।
আলোচনা সভা শেষে কেক কাটার মধ্য দিয়ে সুপ্রভাত বাংলাদেশ, মাগুরার একযুগ পূর্তি অনুষ্ঠান শেষ হয়।
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ হাত্তরজুড়ে ফুটে থাকা লাল শাপলার অপূর্ব সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতিদিনই ছুটে আসছেন দেশের নানা প্রান্তের পর্যটকরা। ভোরের প্রথম আলোয় যখন হাজারো লাল শাপলা একসঙ্গে ফুটে ওঠে, তখন পুরো বিলজুড়ে সৃষ্টি হয় রঙিন ও মনোমুগ্ধকর এক আবহ। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিভিন্ন বয়সের মানুষের পদচারণায় মুখর থাকে শ্রীমঙ্গলের এই নব-পর্যটনকেন্দ্র ‘লাল শাপলা বিল’।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লাল শাপলার মনোরম দৃশ্য ভাইরাল হওয়ায় দর্শনার্থীর সংখ্যা দ্রুত বেড়ে গেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। শাপলা মূলত ভোরে ফোটে এবং সকালে সূর্যের আলোয় পুরোপুরি বিকশিত হয়—যা দেখতে সত্যিই মনোমুগ্ধকর। দুপুরে কিছুটা নিস্তেজ মনে হলেও বিকেলে আবারও সৌন্দর্য ছড়িয়ে দেয় চারদিকে।
ঘুরতে আসা কলেজছাত্রী দিবান্বিতা দাশগুপ্তা বলেন, ‘এত লাল শাপলা আমি আগে কখনও দেখিনি। বান্ধবীদের সঙ্গে এসেছি। হাজার হাজার শাপলা যেন পুরো প্রকৃতিকে নতুন সাজে সাজিয়েছে দেখতে সত্যিই দারুণ লাগছে।
দর্শনার্থী ফাহিম আহমদ বলেন, ‘আগে এখানে তেমন কেউ আসত না। এখন মানুষ দূরদূরান্ত থেকে শুধু লাল শাপলার সৌন্দর্য দেখতে আসছে। বিনোদনের জন্য সুন্দর একটি জায়গা তৈরি হয়েছে। এখানে এসে আমরা বিভিন্ন প্রজাতির পাখিও দেখেছি।
আরেক দর্শনার্থী আরোফিন হোসেন জানান, ‘বউকে নিয়ে এসেছি লাল শাপলা দেখতে। অনেক দিনের ইচ্ছে ছিল আজ সেই ইচ্ছে পূরণ হলো। ভোরের আলোয় শাপলার মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা সত্যিই মনকে প্রফুল্ল করে। পাখির কিচিরমিচির ডাকও অত্যন্ত ভালো লেগেছে।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইসলাম উদ্দিন দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘মির্জাপুরের লাল শাপলা এখন দেশ-বিদেশের মানুষের আকর্ষণ। প্রতিদিন এখানে পর্যটকদের ভিড় বাড়ছে। শ্রীমঙ্গলের মতো মির্জাপুরও ধীরে ধীরে পর্যটন এলাকা হিসেবে পরিচিতি পাচ্ছে। পর্যটকদের সুবিধার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হচ্ছে।
তরুণ উদ্যোক্তারা বিনিয়োগমুখি লাভজনক খাত হিসেবে বেছে নিচ্ছেন কৃষিকাজ। অল্পদিনেই গড়ছেন সাফল্যের নজির। মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার এক উদ্যমী উদ্যোক্তা মুঈদ আশিক চিশতী। পেশায় ব্যবসায়ী হলেও দেশের আর্থ সামাজিক উন্নয়নে গরুর খামার করে আয় করছেন লাখ লাখ টাকা। তার কাজে উৎসাহী হয়ে আত্মকর্মী হয়ে উঠছে আশপাশের অনেক তরুণ যুবক। তিনি এখন সফল খামারি হিসেবে দেশবিদেশে পরিচিত। মুঈদ আশিক চিশতী উপজেলার কমলগঞ্জ পৌর এলাকার ৫নং ওয়ার্ডের বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও মৌলভীবাজার-৪ (শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ) আসনের বিএনপি মনোনীত প্রার্থী আলহাজ্ব মুজিবুর রহমান চৌধুরী (হাজী মুজিব) এর একমাত্র ছেলে।
আজ সফল উদ্যোক্তা হিসেবে নিজের অবস্থান সুদৃঢ় করেছেন মুঈদ আশিক চিশতী, একজন উদ্যমী ও পরিশ্রমী মানুষ। নিজ এলাকার কৃষি ও পশুপালন খাতকে আরও সমৃদ্ধ করতে গড়ে তুলেছেন একটি খামার। তার খামারটি এখন শুধু তার নিজ পরিবারকেই নয়, পুরো এলাকার মানুষের জীবিকা ও অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। অল্পদিনের বাণিজ্যিক সম্ভাবনায় বেড়েছে বিনিয়োগ। বেড়েছে খামারের পরিধি।
নিজ গ্রামে ২০০৭ সালে চিশতি এই সাফল্যের শুরু হয় ছোট পরিসরে। নিজের বাড়ির পাশেই গরু ও মুরগি পালন শুরু করেন। প্রথম দিকে নানা সমস্যার মুখোমুখি হলেও তার অদম্য ইচ্ছাশক্তি ও ধৈর্য তাকে এগিয়ে নিতে থাকে। খামার পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনায় আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার, সঠিক পরিকল্পনা এবং স্থানীয় কৃষি ও পশুপালন বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে তিনি ধীরে ধীরে খামারকে বড় পরিসরে সম্প্রসারণ করেন। বর্তমানে তিনি মহিষ ও দুগ্ধ খামার গড়ে তুলেছেন। সাড়ে ৭ বিঘা জমিতে খামার ও ৫০ বিঘা জমিতে গবাদিপশুর খাদ্য সাইলেজ উৎপাদন করছেন এবং ৪০ বিঘা জমিতে ৮টি পুকুরে মৎস চাষ করছেন।
চিশতির খামারে দেশি গরুসহ বিভিন্ন জাতের গরু আছে যেমন- আরসিসি, মিরকাদিম, ফিজিয়ান ইত্যাদি। এখন প্রায় ১০০ টিরও বেশি গরু রয়েছে। এবং দেশি মহিষসহ বিদেশি জাতের যেমন: মুররা, এলবিনো, নিলিরাভি মহিষ রয়েছে। এখন ২৪টি মহিষ রয়েছে। এছাড়াও খামারের আশেপাশের জমিতে ফসল উৎপাদন করে তিনি একধরনের ‘মিশ্র কৃষি’ চালু করেছেন, যা তার খামারের আয়কে আরও বহুগুণ বৃদ্ধি করেছে। তার খামার থেকে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলার খামারিরা গবাদিপশুর খাদ্য সাইলেজ ক্রয় করে থাকেন।
স্থানীয়রা ছোট ছোট খামারিরা জানান, ‘কমলগঞ্জ উপজেলায় একজন সফল উদ্যোক্তা ও খামারি হিসেবে পরিচিত কমলগঞ্জের চিশতী। তিনি তার দৃঢ় মনোভাব, উদ্ভাবনী চিন্তা ও পরিশ্রমের মাধ্যমে শখের খামারকে একটি লাভজনক উদ্যোগে পরিণত করেছেন। তার সফলতার গল্প শুধু কৃষি খাতের জন্যই নয়, বরং সারাদেশের উদ্যোক্তাদের জন্যও এক মহান অনুপ্রেরণা।’
উদ্যোক্তা মুঈদ আশিক চিশতী বলেন, ‘প্রথমে অনেকে আমার পরিকল্পনাকে অবিশ্বাস করেছিল, তবে আমি বিশ্বাস করেছি আমার স্বপ্নের ওপর। আজ আমার খামার শুধু অর্থনৈতিকভাবে নয়, সামাজিকভাবেও একটি মডেল হিসেবে দাঁড়িয়েছে। চিশতীর এই খামার শুধু তার নিজের আয় বৃদ্ধি করেনি, বরং এলাকার অনেক বেকার যুবককে কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিয়েছে। খামারে কাজ করে তারাও স্বনির্ভর হওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। তার খামারে ২০ থেকে ২৫ জন শ্রমিক দৈনিক মুজুরি ও মাসিক বেতন হিসেবে কাজ করছেন।
চিশতী জানান, খামার চালাতে গিয়ে প্রাথমিক পর্যায়ে নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে। বিশেষ করে পশুপালনের জন্য প্রয়োজনীয় ভ্যাকসিন ও খাদ্য সরবরাহে সমস্যা ছিল। সরকারিভাবে কোন ধরনের সহযোগীতা পান না বললেই চলে। তবে এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেও তিনি আজ সফল। ভবিষ্যতে আরও বড় পরিসরে তার খামারকে সম্প্রসারণ করার পরিকল্পনা করছেন এবং স্থানীয়দের জন্য প্রশিক্ষণ কর্মসূচি চালু করারও ইচ্ছা রয়েছে।
তিনি ইতোমধ্যে ‘কৃষি উদ্যোক্তা হিসেবে atiah deponkor University of science & technology’ দিয়ে ‘কৃষি উদ্যোক্তা সম্মাননা ২০২২’ সম্মাননা পেয়েছেন। প্রাণী সম্পদ প্রদর্শনী ২০২৪ এ মৌলভীবাজার জেলাতে মহিষ উৎপাদনে প্রথম হয়েছেন।
এদিকে বুধবার কমলগঞ্জে জাতীয় প্রাণিসম্পদ সপ্তাহ ও প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত গরু ও মহিষ মোটাতাজাকরণ ২য়, ছাগল পালনে ৩য় ও দুগ্ধ ক্যাটাগরিতে ৩য় পুরস্কার ও সনদপত্র গ্রহণ করেন।
কমলগঞ্জ প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডা. রমা পদ দে, বলেন, ‘কঠোর পরিশ্রম ও ধৈর্য থাকলে জীবনে সফলতা আসে, মুঈদ আশিক চিশতীই তার অনন্য উদাহরণ।’
তিনি বলেন, মুঈদ আশিক চিশতী কমলগঞ্জের একজন সত্যিকার উদাহরণ, যিনি প্রতিকূলতার মধ্যেও সাফল্যের মুখ দেখেছেন। তার খামার আজ অনেকের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে দাঁড়িয়েছে, যা কমলগঞ্জের সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।