 
        				নির্বাচনে ভোট কম পড়ার পেছনে বড় একটি ফ্যাক্টর হলো বিএনপি। তবে এটিই একমাত্র ফ্যাক্টর নয়। বিশেষ করে আরেকটি বড় কারণ হলো স্থানীয় নির্বাচনে ভোটাররা চাকরিস্থল থেকে আসতে চান না। এখন ৬০ শতাংশের বেশি ভোটাররা আসতে চান না। এটা সারা পৃথিবীতেই এমন। ভারতেও সব দল অংশ নিলেও ৬০ শতাংশ ভোট পড়েনি।
আজ রোববার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন নির্বাচন কমিশনার (ইসি) মো. আলমগীর।
ইসি আলমগীর বলেন, ‘আমরা আশা করি, দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হবে। ছোটখাটো যেসব সমস্যা মাঠে আছে সেগুলো যাতে না হয়, সেজন্য আমরা প্রশাসন অত্যন্ত সতর্ক রয়েছি। দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচন প্রথম ধাপের নির্বাচনের চেয়েও সুষ্ঠু হবে।’
আলমগীর বলেন, ‘পুলিশ প্রশাসন ভোটের পরে ৪৮ ঘণ্টা থাকে। সে সময়ের মধ্যে তো কিছু হয়নি। ভোটাররা যাতে ভোট দিতে পারেন, তবে কত ভোট পড়বে তা বলা কঠিন। সেটা বলা যাবে না। যেহেতু সব দল অংশ নিচ্ছে না, তাই ভোটের হার নিয়ে এখনই কিছু বলা যাবে না।’
নির্বাচনী সহিংসতার জেরে গোপালগঞ্জে একজন মারা গেছে, সেখান থেকে কি শিক্ষা নিচ্ছে কমিশন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ভোটের কয়দিন পর এ ঘটনা ঘটেছে। তবে সেটা নির্বাচনের কারণে নাকি ব্যক্তিগত কারণে সেটাও দেখতে হবে। তদন্ত না হলে তো মূল কারণ বলা যায় না। এ ছাড়া নির্বাচন না থাকলে এ দেশে সহিংসতা হয় না, বিষয়টি তো এমন নয়। এখন পুলিশ যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছে কি না সেটা দেখতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ধান কাটার কারণে ভোট কম পড়েছে, বিষয়টা এমন নয়। আপনারা কেন বিষয়টা ওইদিকে নিয়ে আমাদের খোঁচা দেন। তাৎক্ষণিক কারণ ছিল সকালে বৃষ্টি। অন্যান্য কারণের মধ্যে ধান কাটাও একটা ছিল। তার বাইরে বড় একটি রাজনৈতিক দল অংশ নেয়নি, এসব কারণে ভোট কম পড়েছে। তারা নির্বাচনে ভোট দিতে ভোটারদের নিষেধ করেছে এটা তারা বলতে পারেন। তবে জোর করে কাউকে ভোট দিতে যেতে বাধা দিতে পারবেন না। ভোট বর্জনের কথা তারা বলতেই পারবেন।
 
                        ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার খাল-বিল ও জলমগ্ন কৃষিজমিতে সাধারণত সাদা শাপলাই চোখে পড়ে। তবে সম্প্রতি সৌন্দর্য বর্ধনের লক্ষ্যে উপজেলার শ্যামগ্রাম মোহিনী কিশোর স্কুল অ্যান্ড কলেজের পুকুরে প্রথমবারের মতো লাল শাপলার চাষ করা হয়েছে। বর্তমানে পুরো পুকুর জুড়ে ফুটে থাকা লাল শাপলা যেন এক লাল গালিচার দৃশ্য তৈরি করেছে, যা মুগ্ধ করছে দর্শনার্থীদের।
শাপলা বাংলাদেশের জাতীয় ফুল। এটি শুধু সৌন্দর্য নয়, পুষ্টিগুণেও ভরপুর- বিশেষ করে লাল শাপলায় রয়েছে প্রচুর আয়রন, যা শরীরের আয়রনের ঘাটতি পূরণে সহায়ক।
লাল শাপলার সাথে সাদা বকের আনাগোনা এ পুকুরের নান্দনিকতাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত শাপলাগুলোর পূর্ণরূপ দেখা যায়। এ সময় উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে প্রকৃতিপ্রেমীরা ছুটে আসেন শাপলার সৌন্দর্য উপভোগ করতে। কেউ ব্যস্ত হয়ে পড়েন ছবি তোলায়, আবার কেউ পরিবার-পরিজন বা বন্ধুদের সঙ্গে পুকুরপাড়ের এমফিথিয়েটারে বসে আড্ডায় মেতে ওঠেন।
পুকুরের চারপাশে বিভিন্ন প্রজাতির বিদেশি সৌন্দর্যবর্ধক গাছ, ফুলের বাগান ও বসার জায়গা তৈরি হওয়ায় পুরো পরিবেশটি যেন এক মনোমুগ্ধকর বিনোদন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।
শাপলার সৌন্দর্য দেখতে আসা রছুল্লাবাদের মনির হোসেন বলেন, ‘লাল শাপলার নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখতে আমি সুযোগ পেলেই এখানে আসি। সকাল ১০টা পর্যন্ত শাপলাগুলো পূর্ণ ফোটে থাকে। তখন লাল শাপলা আর সাদা বকের মেলবন্ধন সত্যিই মুগ্ধকর।’
শ্যামগ্রাম মোহিনী কিশোর স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মো. মোস্তাক আহাম্মদ বলেন, ‘প্রতিদিনই বিভিন্ন এলাকার মানুষ শাপলা ফুল দেখতে এখানে আসেন। এতে আমাদের ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য যেমন বেড়েছে, তেমনি এলাকায়ও সাড়া পড়েছে।’
শাপলা ফুলের সৌন্দর্য দেখতে আসা শাহারিয়ার করিম বলেন, লাল শাপলার নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখার জন্য আমি সুযোগ পেলেই এখানে চলে আসি, সকাল ৮টা পর্যন্ত শাপলাগুলো পূর্ণ ফুটন্ত অবস্থা থাকে। আর তখন শাপলার পাশাপাশি সাদা বকের আনাগোনা দেখে আমি মুগ্ধ হয়ে যাই।
উল্লেখ্য, প্রতিষ্ঠানটির গভর্নিং বডির সাবেক সভাপতি নিজ উদ্যোগে পুকুরটিতে লাল শাপলার বীজ রোপণ করেন।
 
                        ঢাকার কেরানীগঞ্জে কমফোর্ট ফোম কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। শুক্রবার দুপুর ১টার দিকে নতুন সোনাকান্দা আদর্শ পুলিশ ফাঁড়ির সামনে এ অগ্নিকাণ্ড ঘটে।
অগ্নিকাণ্ডে কারখানার তিনটি সেড, একটি প্রাইভেটকার, একটি পিকআপসহ কারখানার মূল্যবান মেশিন ও আসবাবপত্র পুড়ে যায়। এতে প্রায় ৩০ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন কোম্পানির ম্যানেজার মামুন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, নামাজের সময় কারখানার পাশে একই মালিকের আরেকটি সেড নির্মাণের কাজ চলছিল। এ সময় ওয়েলডিং মেশিনের আগুনের ঘোলা কারখানার পাশে পড়ে থাকা ফোমের ডাস্টবিনে গিয়ে পড়ে, সেখান থেকেই আগুনের সূত্রপাত হয়। প্রথমে শ্রমিক ও স্থানীয়রা মিলে আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালান; কিন্তু পাশে ফোমের গুদাম থাকায় মুহূর্তেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে। ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা পৌঁছানোর আগেই পুরো কারখানাটি পুড়ে যায়। তবে ফায়ার সার্ভিস সময়মতো আসায় পাশের একটি কেমিক্যাল কারখানা ও একটি মসজিদ আগুন থেকে রক্ষা পায়।
কারখানার মালিক আলী আজগর ও জমিদার আবুল কাশেমের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাদের পাওয়া যায়নি।
কেরানীগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন অফিসার আনোয়ার হোসেন জানান, কেরানীগঞ্জ মডেল থানা পুলিশের মাধ্যমে খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রায় ৩০ মিনিটের প্রচেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। মালিক পক্ষের দাবি অনুযায়ী প্রায় ৩০ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তবে তদন্ত শেষে সঠিক পরিমাণ জানা যাবে।
কেরানীগঞ্জ মডেল থানার ওসি মনিরুল হক ডাবলু ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের জানান, পুলিশের সহায়তায় ফায়ার সার্ভিস আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। তদন্ত শেষে অগ্নিকাণ্ডের প্রকৃত কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা যাবে।
 
                        অর্ধশত বছরের পুরোনো গ্রামীণ রাস্তায় বেড়া দিয়েছেন প্রভাবশালীরা। বাঁশ ও প্লাস্টিকের নেট দিয়ে রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা তৈরি করায় চলাচল ব্যাহত হওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছে কয়েক হাজার মানুষ। জনদুর্ভোগের এমন বেহাল চিত্র ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার আছিম ইউনিয়নের রামনগর সুপরপাড় এলাকায়।
এ ঘটনার প্রতিকার চেয়ে গ্রামবাসীর পক্ষে স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. মোস্তফা কামাল বাদী হয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবরে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
অভিযোগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সুপেরপাড় হুসেনিয়া উচ্চবিদ্যালয়-সংলগ্ন সড়কের মাথায় স্থানীয় প্রভাবশালী নমজ আলী গংরা বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে জমি নিয়ে বিরোধের জেরে রাস্তায় বাঁশের বেড়া দিয়ে পুরো রাস্তা আটকিয়ে দিয়েছেন। এনিয়ে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদে একাধিকবার সালিশে বেড়া খুলে দেওয়ার অনুরোধ করলেও প্রভাবশালীরা বেড়া খুলেননি। উল্টো নানা হুমকি দেন তারা।
গত বৃহস্পতিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে সুপেরপাড় মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পাকা রাস্তার পূর্ব মাথায় কাঁচা রাস্তায় বাঁশের বেড়া দেওয়া হয়েছে। পুরো রাস্তার মাটি কুপিয়ে গাছের চাড়া রোপণ করা হয়েছে। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও গ্রামের লোকজন রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করতে পারছেন না। খেতের আল দিয়ে চলতে হচ্ছে তাদের। এতে স্থানীয়দের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।
স্থানীয় আনিসুর রহমান জানান, গ্রামবাসীর চলাচলে একমাত্র রাস্তা এটি। কয়েক ধাপে ৪ কিলোমিটার রাস্তা সংস্কার করা হয়েছে। এ রাস্তার দেড় কিলোমিটার পাকা সমপূর্ণ হয়েছে ও বাকি রাস্তা টেন্ডারের আওতাভুক্ত রয়েছে। স্কুলের সঙ্গে বিরোধ হওয়ায় গত একমাস ধরে রাস্তা বন্ধ করে রেখেছেন।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মোস্তফা কামাল বলেন, রাস্তা দিয়ে পুরো এলাকার লোকজন চলাচল করেন তবুও তারা বেড়া দিয়েছে। এনিয়ে গণ্যমান্য ও ইউপি চেয়ারম্যান বসে একাধিকবার সুরাহার চেষ্টা করা হলেও কোনো লাভ হয়নি। এনিয়ে অভিযুক্ত নমজ আলীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
হুসেনিয়া বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জামালুদ্দিন বলেন, জমিদাতা পরিবার বিদ্যালয়কে বিবাদী করে মামলা করেছেন। শারদীয় দুর্গাপূজার বন্ধ চলাকালীন সময়ে তারা বেড়া দিয়ে রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছেন। এতে শিক্ষার্থী ও স্থানীয় লোকজন ব্যাপক ভোগান্তি পোহাচ্ছেন। বিষয়টি সুরাহা করতে ইউপি চেয়ারম্যান বারবার উদ্যোগ নিয়েও ব্যর্থ হয়েছেন। তারা কারো কোনো কথা শোনে না।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ইমরুল কায়েস বলেন, ওইখানে স্কুলের সাথে জমি নিয়ে মামলা চলছে। যা আদালতে বিচারাধীন। হঠাৎ তারা রাস্তা আটকিয়ে দিয়ে সকলকে ভোগান্তিতে ফেলেছে। জনদোর্ভোগ নিরসনের স্বার্থে তাদের সাথে অনেক কথা বলেছি, ইউনিয়ন ভূমি উপসহকারী (নায়েব) কথা বলেছে, তারা কোনো কথা শোনে না।
এ ব্যাপারে ফুলবাড়িয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আরিফুল ইসলাম বলেন, অভিযুক্তকে শুনানিতে ডেকে ছিলাম তিনি আসেননি। পরবর্তী সময়ে আবারও চেষ্টা করে এ বিষয়ে আইনগত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
 
                        ফাতেমা রাণীর তীর্থোৎসবের মোমের আলোয় আলোকিত হয়ে ওঠে গারো পাহাড়। অন্ধকার থেকে উজ্জ্বল হয় পাহাড়ি এলাকা। মা মারিয়ার ভক্তদের বিশ্বাস এ ভাবেই তাদের মনের অন্ধকারও দূর করে আলোকিত জীবন গড়ে দেবেন মা মারীয়া। ভক্তদের এমন বিশ্বাস আর প্রত্যাশার মধ্যেই ‘আশার তীর্থযাত্রী; ফাতেমা রাণী মা মারীয়া, বারোমারী’ এই মূলভাবে শেরপুরের নালিতাবাড়ীর সীমান্তবর্তী বারোমারী খ্রিষ্টান মিশনে দুই দিনব্যাপি ২৭তম বার্ষিক তীর্থোৎসব শেষ হয়েছে। একই সাথে দীর্ঘ ২৫ বছর পর উদযাপন করা হয় তীর্থের জুবিলী উৎসব।
গত বৃহস্পতিবার প্রধান পৌরহিত্যকারী ন্যুনসিওকে বরণ, মণ্ডলি ও বারোমারী তীর্থের জুবিলী উদযাপন করা হয়। পরে পুনর্মিলন সংস্কার, পবিত্র খ্রিষ্টযাগ, জপমালার প্রার্থনা; রাতে আলোক শোভাযাত্রা, সাক্রান্তের আরাধনা, নিরাময় অনুষ্ঠান, ব্যক্তিগত প্রার্থনা ও নিশি জাগরণের মধ্যে দিয়ে শেষ হয় প্রথমদিনের মূল উৎসব। আর শুক্রবার জীবন্ত ক্রশের পথ ও মহা খ্রিষ্টযাগের মাধ্যমে শেষ হয় এবারের তীর্থোৎসব।
এবার প্রায় ৩৫ হাজার তীর্থযাত্রী এসেছিলেন দেশ-বিদেশ থেকে। উৎসবে মূল আকর্ষণ ছিল আলোক শোভাযাত্রা। ভক্তরা দেড় কিলোমিটার পাহাড়ি ক্রশের পথ অতিক্রম শেষে ৪৮ ফুট উঁচু মা-মারিয়ার কাছে নিজেদের নানা সমস্যা সমাধানের জন্য মানত পূরণ করেন।
১৯৪২ সালে প্রায় ৪২ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত বারোমারী সাধু লিওরে ধর্মপল্লীটি। ১৯৯৮ সালে পর্তুগালের ফাতেমা নগরীর আদলে নির্মাণ হওয়ার পর থেকেই এটিকে বার্ষিক তীর্থ স্থান হিসেবে নেওয়া হয়েছে। প্রতি বছর অক্টোবর মাসের শেষ সপ্তাহের বৃহস্পতি ও শুক্রবার অনুষ্ঠিত হয় ক্যাথলিকদের এই তীর্থোৎসব।
এ বিষয়ে বারোমারির রুপন চেংচাম বলেন, ‘আমাদের বিশ্বাস মা মারীয়া আমাদের মনের আশা পূরণ করেন। এ জন্যই এ তীর্থোৎসব পালন করি আমরা।’
এ উৎসবের মাধ্যমে বিশ্ব মানবতার কল্যাণে প্রার্থনা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে; ময়মনসিংহ ধর্মপ্রদেশের পালপুরহিত বিশপ পনেন পল কুবি সিএসসি।
জেলা পুলিশ সুপার আমিনুল ইসলাম জানিয়েছে, কোনো অপ্রতিকর ঘটনা ছাড়াই শেষ হয়েছে এবারের তীর্থোৎসব। আর জেলা প্রশাসক তরফদার মাহমুদুর রহমান বলছে, এই উৎসবটি দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনন্য উদাহরণ।
 
                        ফরিদপুর শহরের অ্যাডুকেশন জোন খ্যাত বাইতুল আমান কলেজগেট স্টেশনে ট্রেন থামানোর দাবিতে মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার রাতে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. আফজাল হোসেন ফরিদপুর রেলওয়ে স্টেশন পরিদর্শনে আসলে তার কাছে বাইতুল আমান এলাকাবাসী ও আশেপাশে কলেজগুলোতে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা তাদের এই দীর্ঘদিনের দাবি তুলে ধরেন এবং স্মারকলিপি প্রদান করেন।
স্মারকলিপি প্রদানের সময় ফরিদপুর কলেজগেট স্টেশনে ট্রেন থামানো দাবি কমিটির সভাপতি ও সাবেক কাউন্সিলর সৈয়দ আলাওল হোসেন তনু, ফরিদপুর জেলা ছাত্রদলের সভাপতি সৈয়দ আদনান হোসেন অনু, সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ ছাত্রদলের সভাপতি মো. পারভেজ, সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাহিম, ফরিদপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের সভাপতি মো. পার্থ আহমেদ, মোহাম্মদ আতিয়ার রহমান,মোহাম্মদ রোমন চৌধুরী, মো. আব্দুস সালামসহ স্থানীয় এলাকাবাসী ও শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
জানা যায়, বাইতুল আমান কলেজগেটে বহু আগে থেকেই রেলের একটি স্টেশন রয়েছে, সেখানে আগে ট্রেন এসে থামত, অজ্ঞাত কারণে এখন আর এখানে ট্রেন থামে না। এলাকা ফরিদপুরের মধ্যে অ্যাডুকেশন জোন নামে খ্যাত। যেখানে রয়েছে ফরিদপুরের ঐতিহ্যবাহী সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ, ফরিদপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, ফরিদপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, সরকারি টেক্সটাইল ভোকেশনাল ইনস্টিটিউট, ফরিদপুর সরকারি কলেজ, ফরিদপুর সিটি কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
সবগুলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মিলে ৫০ হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী রয়েছে। এই শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশের একেক জেলার একেক প্রান্ত থেকে তারা শিক্ষা লাভের জন্য কেউ বাসে কেউ লঞ্চে করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এবং অধিক ভাড়া দিয়ে তারা ফরিদপুর থেকে যাতায়াত করেন। অথচ বায়তুল আমান কলেজগেট স্টেশন থেকে কলেজের কোনোটির দূরত্ব ৪০০ মিটার ৫০০ মিটার ৬০০ মিটার। বাইতুল আমান কলেজগেট স্টেশনে যদি ট্রেন থামানো হয় তাহলে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি দূর হবে তাদের সড়ক দুর্ঘটনার ঝুঁকি কমবে, দরিদ্র শিক্ষার্থীদের জন্য স্বল্প ভাড়ায় তারা বাড়িতে যাতায়াত করতে পারবে।
এলাকাবাসী ও শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি দূর করতে বাইতুল আমান রেলগেট স্টেশনে পূর্বের মতো ট্রেন থামানো নির্দেশনা একটি সুন্দর সিদ্ধান্ত নিতে রেলের মহাপরিচালকের কাছে আবেদন এলাকাবাসী ও প্রায় ৫০ হাজার শিক্ষার্থীর।
 
                        জলাবদ্ধতা নিরসন ও অনাবাদি জমি সেচের আওতায় আনাসহ বহুমুখী লক্ষ্য নিয়ে রাউজানে খাল খনন করা হচ্ছে। বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) প্রকল্পে দুঃখ ঘোচতে চলেছে এলাকাবাসীর। 
এ প্রকল্পে বেরুলিয়া, হাজিপাড়া, কাগতিয়া, বিনাজুরি, রাউজান সদর, বিনাজুরি, রাউজান, লেলাংগারাসহ বিভিন্ন গ্রামের চাষির মুখে হাসি ফুটছে। নতুন করে চাষে নামার স্বপ্ন দেখছেন অনেকে। জানা যায়, পাহাড়ি ঢল আর বানের পানিতে প্রতি বছর ডুবে রাউজান। হাজার হাজার কৃষকের সোনালি ধান, বীজতলা পচে পানির নিচে। কোটি টাকার মাছ ভেসে যায়। চট্টগ্রাম-রাঙামাটি মহাসড়কসহ স্থানীয় সড়কগুলোতে হয় কোমরপানি। আকস্মিক জলাবদ্ধতাই পরিচিতি পায় ‘রাউজানের দুঃখ’ হিসেবে। খাল পুনঃখননের ফলে এ থেকে মুক্তি পাবেন রাউজানের ওই অংশের মানুষ। হাজিপাড়ার চাষি রবিউল আলম বলেন, প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতার কারণে চাষিরা ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েন। তারপর রয়েছে পাহাড়ি ঢল আতঙ্ক। এ কারণে অনেকে ফসল ও মাছ চাষের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। অবশ্য চাষের খরচ, মাছের খাদ্যের দামও বাড়ছে। ফলে অনাবাদি জমি পড়ে থাকছে বিলের পর বিল। নতুন করে খাল পুনঃখনন করায় চাষিরা আগ্রহী হচ্ছেন। যত ভালো পরিকল্পনা ও টেকসই কাজ হবে ততই মানুষের স্বস্তি মিলবে। 
বিএডিসির উপসহকারী প্রকৌশলী মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলার ভূউপরিস্থ পানির মাধ্যমে সেচ উন্নয়ন প্রকল্প’ বাস্তবায়িত হচ্ছে ৬০২ কোটি টাকায়। এর আওতায় চট্টগ্রামের ১৬টি এবং কক্সবাজারের ৯টি উপজেলায় এ প্রকল্পের কাজ চলছে।
তিনি বলেন, এর মধ্যে রাউজানে মহেশখালী ও কাশখালী খাল পুনঃখনন, দেড় কিউসেক সোলার চালিত বারিড পাইপলাইন নির্মাণ এবং পাঁচ কিউসেক বিদ্যুৎচালিত বারিড পাইপ নির্মাণ করা হচ্ছে। এসব কাজ শেষ হলে বোরো মৌসুমে প্রায় ১ হাজার ৬০০ একর অনাবাদি জমি চাষের আওতায় আসবে এবং বর্ষায় এসব জমির ফসল রক্ষা পাবে। বর্ষাকালে রাউজান পৌরসভা, রাউজান ইউনিয়ন ও বিনাজুরি ইউনিয়নের বন্যাজনিত সমস্যার নিরসন হবে। 
প্রকল্পের আওতায় বিনাজুরিতে দেড় কিউসেকের ১,২০০ মিটার বারিড পাইপ এবং পৌরসভায় পাঁচ কিউসেকের ২,২০০ মিটার বারিড পাইপ বসানো হচ্ছে। এর ফলে স্থানীয়ভাবে অন্তত ৮০০ কানি অনাবাদি জমি চাষের আওতায় আসবে।
উপজেলা সিনিয়র কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মাসুম কবীর জানান, প্রতি বছর পাহাড়ি ঢল ও বানের পানিতে রাউজানে ব্যাপক ক্ষতি হয় কৃষি, মৎস্য, যোগাযোগ অবকাঠামো খাতে। জলাবদ্ধতা থেকে সুরক্ষা এবং ভূউপরিস্থ পানি ব্যবহারের মাধ্যমে অনাবাদি জমি চাষের আওতায় আনার লক্ষ্যে বিএডিসি একটি যুগান্তকারী প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে রাউজানে। 
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে বিভিন্ন ইউনিয়নভিত্তিক একাধিক খাল পুনঃখনন কাজ শুরু হয়েছে, ইতোমধ্যে অনেক খালের খনন কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এর ফলে খালের পানির ধারণক্ষমতা বাড়বে, জোয়ারের পানি খালের বিভিন্ন প্রান্তে ঢুকবে, শুষ্ক মৌসুমে চাষিরা সেচ দিতে পারবেন, আবার বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতার হাত থেকে ফসল রক্ষা পাবে। আশা করি প্রকল্পটির কাজ সুসম্পন্ন হলে চাষিদের মুখে হাসি ফুটবে।
 
                        স্বামী মারা যাওয়ার পর হতদরিদ্র খালেদা বেগম দুই সন্তান নিয়ে সংসারের হাল ধরতে পারি জমান ঢাকায়। পোশাককর্মী হিসেবে কাজ নেন একটি কারখানায়। হঠাৎ দৃষ্টিশক্তি কমে যায় তার। চোখে কম দেখায় খালেদা বেগম সেই চাকরিও হারান। একপর্যায়ে ঋণ করে ঢাকায় গিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর জানতে পারেন চোখে ছানি পড়েছে। আর তার চিকিৎসার খরচের কথা শোনে হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরে আসেন খালেদা বেগম। এরপর উপার্জন বন্ধ হয়ে ধারদেনা বাড়তে থাকে। এ কারণে অনেক সময় তাকে না খেয়েও দিন কাটাতে হয়েছে। এভাবে কেটেছে দীর্ঘ প্রায় দুই বছর। একপর্যায়ে গত ২০২১ সালের ২৯ নভেম্বর এক প্রতিবেশীর মাধ্যমে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলায় একটি চক্ষুশিবিরের খোঁজ পান খালেদা বেগম। আবারও চোখে আলো ফিরে পাওয়ার আশায় স্বামীকে সাথে নিয়ে উপস্থিত হন উপজেলার ডিএস আলিম মাদ্রাসা মাঠে। চিকিৎসক তার ডান চোখে ছানি শনাক্ত করেন। সেই চক্ষুশিবিরের আয়োজকদের মাধ্যমেই কয়েকদিন পরে ময়মনসিংহ বিএনএসবি চক্ষু হাসপাতালে ছানি অপারেশন হয় তার। সাথে ওষুধ, থাকা-খাওয়া সবই পেয়েছেন বিনামূল্যে। 
গত ৩০ অক্টোবর উপজেলার সরকারি আদর্শ ডিগ্রি কলেজ মাঠে হালুয়াঘাট উপজেলা বিএনপির আয়োজনে দিনব্যাপী চোখে ছানিপড়া রোগীদের চক্ষুশিবিরে আবারও চিকিৎসা নিতে এসে এসব কথা জানালেন খালেদা। 
তিনি এ সময় বলেন, ‘চার বছর আগে সালমান ওমর রুবেল (ওমর ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা) যদি চোখের চিকিৎসা না কইরা দিতেন, তাইলে অহন রাস্তায় রাস্তায় অন্ধ হিসেবে ভিক্ষা করুন লাগত। এছাড়া আর কোনো উপায় থাকত না। আল্লায় ওনার ভালো করুক।’ ফের বাম চোখে দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়ায় এসেছেন তিনি। চোখের দৃষ্টি শক্তি ফিরে পাওয়ার আনন্দ শুধু খালেদার বেগমের একার নয়, তার মতো হালুয়াঘাট উপজেলার ৬ হাজার ২০০ জন অসহায় দরিদ্র নারী-পুরুষের বিনামূল্যে চোখের চিকিৎসায় চোখের আলো ফেরাতে সহযোগিতা করেছেন ময়মনসিংহ উত্তর জেলা বিএনপির সদস্য ও হালুয়াঘাট উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক সালমান ওমর রুবেল। 
যেভাবে শুরু সালমান ওমরের বিনামূল্যে এই চক্ষু শিবিরের
হালুয়াঘাট উপজেলার নাসুল্লাহ গ্রামের মৃত হানিফ ওমরের ছোট ছেলে সালমান ওমর (৪৮)। তিনি জানান, ২০১০ সালেই অসহায় মানুষের জন্য কিছু করার উদ্দেশ্যে তিনি হালুয়াঘাট উপজেলায় ওমর ফাউন্ডেশন নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। এই সংগঠনের লক্ষ্যই ছিল গরিব, দুঃখী ও অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো। দুই বছর ওমর ফাউন্ডেশন উপজেলায় অসহায় মানুষের জন্য বিভিন্ন কাজ করে। ২০১২ সালের শুরুতেই সালমান ওমর নিজের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেন। তখন তিনি অসহায় মানুষের সবচেয়ে মূল্যবান অঙ্গ চোখের চিকিৎসা করানোর স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন। এ নিয়ে তিনি ময়মনসিংহ বিএনএসবি চক্ষু হাসপাতালের প্রধান কে জামানের সঙ্গে আলাপ করেন। তখন কে জামান এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দেন। কথা অনুযায়ী তিনজন চিকিৎসকসহ ১২ জনের একটি দল নিয়ে উপজেলার ঘাশীগাঁও দ্বিমুখী উচ্চবিদ্যালয় মাঠে বিনামূল্যে চক্ষুশিবিরের আয়োজন করা হয়। সেখান থেকে এই যাত্রা শুরু। এখন প্রতি বছরই এই শিবিরের আয়োজন করেন তিনি। তারই ধারাবাহিকতায় এ বছর তার সহযোগিতায় হালুয়াঘাট উপজেলা বিএনপির আয়োজনে দিনব্যাপী চক্ষু শিবিরের আয়োজন করা হয়। এখান থেকে নির্বাচিত ছানিপড়া রোগীদের পর্যায়ক্রমে ময়মনসিংহ বিএনএসবি চক্ষু হাসপাতালে ছানি অপারেশন করানো হবে। 
৬ হাজার মানুষের চোখের ছানি অপারেশন: গত ২০১২ সাল থেকে নিজের ব্যক্তিগত অর্থে পরিচালিত ওমর ফাউন্ডেশনের সঙ্গে ময়মনসিংহ বিএনএসবি চক্ষু হাসপাতালের বেশ কয়েকজন অভিজ্ঞ চক্ষুচিকিৎসক ও ১০-১২ জন সহকারী সদস্যের একটি টিম স্বেচ্ছায় নিজ খরচে বিনামূল্যে চোখের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে চিকিৎসাপত্র দিয়ে চলেছেন। এছাড়া চোখের অপারেশনের জন্য রোগী নির্ধারণের কাজটিও তারা করে থাকেন। রোগীদের রক্ত পরীক্ষা, প্রেশার মাপাসহ বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা চিকিৎসক ও সহকারীরা হাসিমুখে করে চলেছেন। চক্ষু ক্যাম্পে রোগীদের স্লিপ দেওয়া, নারী-পুরুষের দীর্ঘ লাইন করে দেওয়া, অনুষ্ঠানের আয়োজন করা, চিকিৎসকসহ অতিথিদের আপ্যায়ন করার দায়িত্ব পালন করে ওমর ফাউন্ডেশনের ১২-১৫ জনের স্বেচ্ছাসেবী দল। এ পর্যন্ত প্রায় ৬ হাজার মানুষের চোখের ছানি অপারেশন করিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটি। 
বিএনপি নেতা ও ওমর ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সালমান ওমর জানান, শুরুর দিকে মানুষের তেমন সাড়া না পেলেও এখন প্রতিটি চক্ষু ক্যাম্পে মানুষের উপচে পড়া ভিড় হয়। প্রতি বছররের ন্যায় এবারও দিনব্যাপী এ কার্যক্রম চলছে।
 
                        শীতের আগেই সিরাজগঞ্জের যমুনা নদী সহ চলনবিলের নদী-নালা, খাল-বিল, জলাশয় ও পুকুরে ঝাঁকে ঝাঁকে অতিথি পাখির আগমন ঘটছে। জলবায়ুর বৈশ্বিক পরিবর্তনের পাশাপাশি নিরাপদ আবাস ও খাদ্যের প্রাচুর্য থাকায় চলনবিলের বিভিন্ন এলাকায় আসতে শুরু করেছে বিভিন্ন প্রজাতির অতিথি পাখি। পাখির অভয়ারণ্য নিশ্চিত করতে কাজ করছেন প্রশাসন।
স্থানীয়রা জানায়, শীত আসলেই তাত শিল্পে সমৃদ্ধ বেলকুচি উপজেলা চত্বরে ও উত্তরাঞ্চলের মৎসভান্ডার খ্যাত চলনবিলের তাড়াশ উপজেলার বিভিন্ন প্রান্তরে অতিথি পাখির আগমন ঘটে। তবে এবার শীতের আগেই উপজেলার বস্তুল, উলিপুর, পঁওতা, সোলাপাড়া, দিঘীসগুনা, কুন্দইল, সগুনা, লালুয়া মাঝিরা, মালশিনসহ ২০ থেকে ২৫টি গ্রামে নানা ধরনের অতিথি পাখি আসতে শুরু করেছে। পাখির কিচিরমিচির শব্দে এলাকার পরিবেশ ধারণ করেছে অন্য রূপে। বিভিন্ন প্রজাতির পাখির মধ্যে রয়েছে বালিহাঁস, নীলশির, শামুকখোল ত্রিশূল বক, রাতচরা, কোড়া, লালশির, বড় সরালি, ছোট সরালিসহ অনেক পাখি। এলাকার গাছে গাছে বাসা বেঁধেছে পাখিগুলো। মাঠজুড়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ডাহুক, গাঙচিল, বক, ছোট পানকৌড়ি, বড় পানকৌড়ি, চখাচখি, কাদাখোঁচা, মাছরাঙাসহ নাম না জানা পাখি। এক সময় চলনবিলে পাখি শিকারির উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মত। বর্তমানে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি পাওয়ায় শিকারির সংখ্যা কমে আসায় দিন দিনই এ অঞ্চলে অতিথি পাখির উপস্থিতি বাড়ছে।
তাড়াশের উলিপুর গ্রামের স্কুল শিক্ষক আব্দুল মজিদ বলেন, গত কয়েক বছরের তুলনায় এবছর চলনবিলে বিভিন্ন প্রজাতির হাজার হাজার বৈচিত্র্যময় পাখির আনাগোনা বেড়ে গেছে। খাদ্যের সহজলভ্যতাসহ নানা কারণে শীত আসার আগেই চলনবিলে পাখির সংখ্যা বাড়ছে। যেটা কয়েক বছর আগে দেখা যায়নি। বিস্তীর্ণ চলনবিলের নদী, খালবিল, জলাশয়, ধানের ক্ষেত, পুকুর ও ডোবায় পাখির ঝাঁকের হাঁকডাক, ওড়াউড়ির দৃশ্যসহ কিচিরমিচির শব্দে এ অঞ্চলের মানুষের মনোরম পরিবেশ অন্য রূপ নিয়েছে।
চলনবিল রক্ষা আন্দোলন কমিটির তাড়াশ উপজেলা শাখার আহব্বায়ক আব্দুর রাজ্জাক রাজু বলেন, পাখি শিকার করা দণ্ডনীয় যে অপরাধ, তা নিয়ে শিকারি বা ক্রেতাদের মধ্যে বিন্দুমাত্র ভীতি নাই। চলনবিলের পাখি বাঁচাতে আইন প্রয়োগের পাশাপশি লোকজনের মধ্যে ব্যাপক হারে সচেতনতামূলক প্রচারণা চালাতে হবে। তাহলে এই অঞ্চল থেকে পাখি শিকার বন্ধ হবে ও জীববৈচিত্র্য রক্ষা পাবে।
তাড়াশ উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন, শীতের আমেজ শুরু হওয়ায় বিভিন্ন জাতের পাখি আসছে। এই পাখিগুলো রাতের আধারে অসাধু কিছু শিকারি বেশিরভাগ শিকার করছে। এই বিশাল চলনবিলের মধ্যে তাদের খুঁজে পাওয়া প্রায় অসম্ভব। তবে সচেতনতা বাড়াতে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। সেই সঙ্গে অসাধু পাখি শিকারিদের খোঁজ-খবর নেওয়ার চেষ্টা চলছে।
চলনবিলে পাখির আগমন বৃদ্ধির সম্পর্কে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. এম নজরুল ইসলাম জানান, এ বছর চলনবিলে স্বাভাবিক বন্যা হয়েছে। এ কারণে বিলের জলাশয়ে প্রচুর খাবার মিলছে। খাদ্যের প্রাচুর্য ও সহজলভ্যতাই বালিহাঁস, শামুকখোল এবং অন্য পরিযায়ী পাখির এই বিল অঞ্চলে আসতে উৎসাহিত করছে। তাই এখানে পাখির আনাগোনা অন্য কয়েক বছরের তুলনায় বেড়েছে।
তাড়াশ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুসরাত জাহান বলেন, মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি প্রশাসনের পক্ষ থেকে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলে সারাদেশেই অতিথি পাখির আগমন ঘটবে। একই সঙ্গে পাখি শিকারিদের অবস্থান জানা গেলে বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন, ২০১২ অনুযায়ী অভিযান পরিচালনা করা হবে। প্রয়োজনে যৌথভাবে অভিযান চালিয়ে পাখি শিকারিদের আইনের আওতায় আনা হবে।
 
                        চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের থাকা প্রায় ৬ হাজার কয়েদিকে খাওয়ানো হচ্ছে অপরিষ্কার পানি। এই দূষিত পানিই ব্যবহার হচ্ছে কায়েদিদের জন্য রান্না, গোসল ও পয়ঃনিষ্কাশণের কাজে। বিষয়টি জানার পরও পানি সংকটের অজুহাতে বছরের পর বছর কারা কর্তৃপক্ষ এসব পানি খাইয়ে চলেছে। 
সংশ্লিষ্টরা জানান, সম্প্রতি কারাগারের ১০টি পাম্পের পানির নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্যে ৫টি পাম্পের পানি খাওয়া ও ব্যবহার অনুপযোগী বলে স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে কারা কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছে। তবে কারা কর্তৃপক্ষ এত বিশালসংখ্যক কয়েদির জন্য বিকল্প কোনো পানির উৎস নেই অজুহাতে কলেরা, টাইফয়েড, অ্যামিবিক আমাশয়, হেপাটাইটিস এ ও শিগেলোসিসর’ জিবাণুবাহিত এই পানিই খাওয়াচ্ছে।
চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র কারা পরিদর্শক (জেল সুপার) মো. ইকবাল হোসেন বিষয়টি দৈনিক বাংলাকে স্বীকার করেন। তিনি বলেন, ব্যকটেরিয়া (কলেরা, টাইফয়েড, অ্যামিবিক আমাশয়, হেপাটাইটিস এ ও শিগেলোসিসর’ জিবাণুবাহিত) এই পানি গত ৪ বছর ধরে কয়েদিদের খাওয়া, গোসল ও পয়ঃনিষ্কাশণে ব্যবহার হচ্ছে। সম্প্রতি ইন্টারন্যাশনাল রেডক্রস কর্তৃক পরীক্ষা করা প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পরপরই সমস্যাটি সমাধানের জন্য সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে পত্র দেওয়া হয়েছে। আশা করছি দ্রুত সমাধান হবে। 
এক প্রশ্নের জবাবে ইকবাল হোসেন জানান, সর্বশেষ বৃহস্পতিবার বিকাল ৪টা পর্যন্ত ৫ হাজার ৭০০ বন্দি রয়েছে এই কারাগারে। তবে সময়ে সময়ে এই বন্দির সংখ্যা ১০-১২ হাজার পর্যন্ত পৌঁছে। তাদের খাওয়া, রান্না ও ব্যবহারের জন্য ১০টি পাম্প রয়েছে। ইন্টারন্যাশনাল রেড ক্রিসেন্টের প্রতিনিধিদল এসব পাম্প থেকে পানির নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করেছে। এর মধ্যে পাঁচটি পাম্পের পানিতে ব্যাকটেরিয়া পাওয়া গেছে বলে প্রতিবেদন দিয়েছে। তবে এসব পাম্পের পানি খাওয়া বা ব্যবহার বন্ধ করার কোনো পরামর্শ আমরা এখন পর্যন্ত পাইনি। 
চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আন্তর্জাতিক একটি সংস্থা কারাগারের ১০টি পাম্পের নমুনা পানি সংগ্রহ করে পরীক্ষা করেছে। তার মধ্যে ৯টি পাম্পের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে সংস্থাটি। প্রতিবেদন হাতে পাওয়া এই নয় পাম্পের মধ্যে পাঁচটি পাম্পের পানি খাওয়া ও ব্যবহার অনুপযোগী। কারণ এসব পানির মধ্যে কলেরা, টাইফয়েড, অ্যামিবিক আমাশয়, হেপাটাইটিস এ ও শিগেলোসিস জিবানু পাওয়া গেছে। ওই পাঁচটি পাম্পের পানি খাওয়া ও ব্যবহার থেকে বিরত থাকার জন্য আমরা কারা কর্তৃপক্ষকে এবং পাম্পগুলো সংস্কার করার ব্যবস্থা গ্রহণে চট্টগ্রাম জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরকে পত্র দিয়েছি।
ডা. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ওয়াসার পানির লাইন ও টয়লেটের স্যুয়ারেজ লাইন কোথাও লিক (ফুটো হয়ে) এক হয়ে গেছে। যার কারণে ওয়াসার লাইনে সরাসরি যুক্ত হয়ে যাওয়ায় খাওয়া ও ব্যবহারের পানিতে মল মিশে একাকার হয়ে গেছে। 
তিনি বলেন, মল মিশানো তথা এই অপরিষ্কার পানীয় বা খাবার খাওয়ার মাধ্যমে কলেরা, টাইফয়েড, অ্যামিবিক আমাশয়, হেপাটাইটিসে ও শিগেলোসিসসহ’ পানিবাহিত নানা রোগের উৎপত্তি হয়ে থাকে। ভয়ংকর এসব জীবাণুযুক্ত দূষিত পানি দীর্ঘসময় পান করলে মারাত্মক স্বাস্থ্য সমস্যা, যেমন- পানিশূন্যতা, অঙ্গহানি, এমনকি মৃত্যুও হতে পারে। কলেরা এবং টাইফয়েডের মতো ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগের কারণে মারাত্মক ডায়রিয়া এবং পানিশূন্যতা দেখা দেয়। দীর্ঘমেয়াদিভাবে এই জীবাণুযুক্ত পানি পান করলে তা আরও জটিল স্বাস্থ্য সমস্যা এমনকি কিডনি ও লিভার নষ্ট হয়ে যেতে পারে। 
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর, চট্টগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ চন্দ্র দাস বলেন, কারা কর্তৃপক্ষ, সিভিল সার্জন বা অন্য কোনো সংস্থা থেকে এ ধরনের কোনোপত্র আমি এখন পর্যন্ত পাইনি। লিখিত পত্র পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 
এই বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্যের চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক ডা. সেখ ফজলে রাব্বি দৈনিক বাংলাকে বলেন, সম্প্রতি বিষয়টি জানার পর পানি দূষণের কারণ ও উৎপত্তিস্থল উদঘাটনের কাজ শুরু করা হয়েছে। তিনি বলেন, যেহেতু কারাগারের ভেতরের স্বাস্থ্য নিরাপত্তার বিষয়টি জেলা সিভিল সার্জন এবং স্যানিটেশনেরবিষয় জেলা স্যানিটারি ইন্সপেক্টর তদারকের দায়িত্বে রয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বিষয়টি জানার পর এই বিষয়টি দ্রুত সমাধান করার জন্য তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
 
                        গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে পারিবারিক কলহের জেরে নিজের শরীরে পেট্রোল ঢেলে আগুন দেওয়া রায়হান মিয়া (২৭) নামের এক যুবক মারা গেছেন। বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। রায়হান উপজেলার ধোপাডাঙ্গা ইউনিয়নের উত্তর ধোপাডাঙ্গা গ্রামের মো. চান মিয়ার ছেলে।
সুন্দরগঞ্জ থানার ওসি মো. আবদুল হাকিম আজাদ জানান, গত মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে পারিবারিক কলহের জেরে ক্ষোভে নিজের শরীরে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন রায়হান। পরে গুরুতর দগ্ধ অবস্থায় স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। অবস্থার অবনতি হলে তাকে ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়।
প্রায় আট-নয় বছর আগে রায়হান বিয়ে করেন। তাদের সংসারে দুটি সন্তান রয়েছে। তবে রায়হান অনলাইন জুয়ায় আসক্ত ছিলেন এবং অন্য নারীর প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়েন। কয়েক মাস আগে এক নারীর সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কে জড়িত থাকার অভিযোগে এলাকাবাসীর হাতে ধরা পড়েন তিনি। পরে শাশুড়ির চাপে স্ত্রী আদুরী বেগম নিজের গহনা বিক্রি করে টাকা দিয়ে স্বামীকে ছাড়িয়ে আনেন।
এরপরও রায়হান আরও এক নারীকে বিয়ে করার প্রস্তাব দিলে দাম্পত্য কলহ চরমে ওঠে। এতে স্ত্রী আদুরী বেগম নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে সন্তানদের নিয়ে বাবার বাড়ি চলে যান।
এর মধ্যেই রায়হানের বাবার ১ লাখ টাকা হারিয়ে যায়। টাকা চুরির অভিযোগে বাবা চান মিয়া ছেলেকে দোষারোপ করলে আবারও পারিবারিক বিরোধ দেখা দেয়। একপর্যায়ে ক্ষোভে রায়হান নিজের শরীরে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন। শরীরের বেশিরভাগ অংশ পুড়ে গেলে তিনি পাশের পুকুরে ঝাঁপ দেন। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন।
দুই দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন রায়হান মিয়া।
 
                        চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে ভিক্ষুককে রিকশা ও ভ্যান প্রদান করা হয়েছে। উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের আয়োজনে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাদের অনুদানের চেক প্রদান এবং ভিক্ষুক পুনবার্সন ও বিকল্প কর্মসংস্থান শীর্ষক কর্মসূচি বাস্তবায়নে এই উপকরণ বিতরণ করা হয়েছে ।
বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলা হল রুমে অনুষ্ঠিত ওই অনুষ্ঠানে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে উপজেলার ৭টি রেজিস্ট্রেশনকৃত সমাজ উন্নয়ন সংস্থার মধ্যে এককালীন ২ লাখ ৭০ হাজার টাকার চেক বিতরণ এবং উপজেলা ভিক্ষুক পুনর্বাসন ও বিকল্প কর্মসংস্থানের আওতায় চারজন ভিক্ষুকের মধ্যে ভ্যান-গাড়ি বিতরণ করা হয়েছে ।
উপজেলা সমবায় অফিসার লুৎফর নেছা বেগমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ফখরুল ইসলাম।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ ড. মো. হাবিবুল্লাহ, সমবায় অফিসার মানজুমান আরা, বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. ফারুক, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী প্রণোদেশ মহাজন, সীতাকুণ্ড প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক কাইয়ূম চৌধুরী ও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার নেতারা সমাজসেবা কার্যালয়ের কর্মকর্তারা।
 
                        রাঙামাটির রাজবন বিহারে বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে দুই দিনব্যাপী ৪৯তম কঠিন চীবর দানোৎসব। বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজবন বিহারের বেইন ঘর উদ্বোধন ও পঞ্চশীল গ্রহণের মধ্য দিয়ে উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রাজবন বিহার অধ্যক্ষ শ্রীমৎ প্রজ্ঞালংকার মহাস্থবীর, বিহারের আবাসিক ভিক্ষু সংঘ ও উপাসক-উপাসিকারা।
বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম বৃহৎ ধর্মীয় আয়োজন হিসেবে পরিচিত এই কঠিন চীবর দানোৎসবে এবারও দেশ-বিদেশের লাখো পুণ্যার্থী অংশ নিচ্ছেন।
বৌদ্ধধর্মে দানের মধ্যে কঠিন চীবর দানকে শ্রেষ্ঠ দান হিসেবে বিবেচনা করা হয়। নির্ধারিত নিয়ম অনুযায়ী মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তুলা থেকে সুতা কাটা, রং করা, চীবর বোনা এবং সেলাই সম্পন্ন করে ভিক্ষু সংঘকে দান করা হয়। এই কঠোরতা ও সন্নিবিষ্ট শ্রমের কারণেই এর নাম ‘কঠিন চীবর দান’।
উদ্বোধনী দিনে রাজবন বিহার চত্বরে স্থাপিত প্রায় ২০০টি বেইন ঘরে চীবর প্রস্তুতের কাজ শুরু হয়েছে। প্রতিটি ঘরে ৪ জন করে মোট ৮ শতাধিক নারী-পুরুষ এ কাজে অংশ নিচ্ছেন। এ সময় বেগম রোকেয়া পদকপ্রাপ্ত পার্বত্যাঞ্চলের বিশিষ্ট নারী উদ্যোক্তা মঞ্জুলিকা চাকমা চরকা কেটে বেইন উদ্বোধন করেন।
রাজবন বিহার উপাসক-উপাসিকা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অমিয় খীসা জানান, ‘গত বছর পারিপাশ্বিক পরিস্থিতির কারণে কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠিত হয়নি। এ বছর নতুন উদ্যমে উৎসব আয়োজন করেছি। আমরা সকলেই ভগবান গৌতম বুদ্ধের বাণীর আলোকে বিশ্ব শান্তি কামনা করি।’
উৎসবকে ঘিরে লোকজ মেলা উৎসব উপলক্ষে রাজবন বিহার এলাকায় বসেছে গ্রামীণ মেলা। সারাদিন ধরে চলছে ভক্ত-দর্শনার্থীদের ভিড়, প্রার্থনা, পূজা, অর্ঘ্য নিবেদন ও দর্শন।
রাঙামাটির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাহেদুল ইসলাম জানান, ‘উৎসবকে ঘিরে তিন স্তরের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। পাশাপাশি গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরাও সার্বক্ষণিক নজরদারিতে আছেন, যাতে পুণ্যার্থীরা নির্বিঘ্নে ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা পালন করতে পারেন।’
 
                        পৌর শহরের পারলা এলাকায় অবস্থিত নেত্রকোনা আন্তজেলা বাস টার্মিনালটি সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে জেলা প্রশাসন। ফলে নেত্রকোনাবাসীর বহু দিনের প্রত্যাশাকে বাস্তবে রূপ নিচ্ছে। দীর্ঘদিনের অব্যবস্থাপনা ও ভগ্নদশার অবসান ঘটছে জানিয়ে আন্তজেলা বাস টার্মিনাল পরিদর্শনকালে নেত্রকোনা জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুল্লাহ্ আল মাহমুদ জামান বলেন, দ্রুত সময়ের মধ্যেই বাসস্ট্যান্ডের পূর্ণাঙ্গ সংস্কার কার্যক্রম শুরু হবে।
তিনি আরও বলেন, যাত্রীদের সুবিধার কথা বিবেচনা করে এখানে দুটি আধুনিক টয়লেট, ছাউনি প্ল্যাটফর্ম, অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ, বিদ্যুৎতায়নসহ নানা উন্নয়নমূলক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আমরা চাই মানুষ যেন স্বস্তিতে, নিরাপদে, আনন্দে সুশৃঙ্খলভাবে ভ্রমণ করতে পারে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন, স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক ও নেত্রকোনা পৌর প্রশাসক আরিফুল ইসলাম সরদার, নেত্রকোনা জেলা প্রেসক্লাব সম্পাদক মাহবুবুল কিবরিয়া চৌধুরী হেলিম, জেলা বিএনপি নেতা আব্দুল্লাহ্ আল মামুন খান রনি, এস.এম.শফিকুল কাদের সুজা, জেলা মোটরযান শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আব্দুল জলিল, সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলামসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক ও নেত্রকোনা পৌর প্রশাসক আরিফুল ইসলাম সরদার বলেন, সিআরডিপি প্রকল্পের আওতায় বাসস্ট্যান্ডটি একটি আধুনিক টার্মিনালে রূপান্তরের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ভঙ্গুর অবকাঠামো ও যানজটের কারণে যাত্রীদের দীর্ঘদিনের দুর্ভোগ এখন অতীত হতে চলেছে। সংস্কার শেষ হলে নেত্রকোনা পরিবহন ব্যবস্থার এক নতুন অধ্যায় সূচিত হবে। দীর্ঘদিনের অব্যবস্থাপনা, ভাঙা-চোরা রাস্তা ও নোংরা পরিবেশে অতিষ্ঠ ছিল সাধারণ যাত্রীরা। অবশেষে এই সংস্কার কার্যক্রমে নেত্রকোনাবাসীর মনে ফিরছে আশার আলো। তারা বিশ্বাস করেন, নতুন রূপে গড়ে উঠবে এক পরিচ্ছন্ন, সুশৃঙ্খল ও আধুনিক বাস টার্মিনাল। যা জেলা শহরের প্রাণকেন্দ্রে ভ্রমণযাত্রীদের জন্য হয়ে উঠবে স্বস্তির ঠিকানা।