বঙ্গোবসাগরে থাকা গভীর নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেওয়ায় তা ‘রেমালে’ পরিণত হয়েছে। আজ রোববার মধ্যরাতে এটি আঘাত হানার আশঙ্কা করছেন আবহাওয়াবিদরা। এ জন্য দেশের ছয় জেলাকে ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলার জন্য বিশেষভাবে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. মহিববুর রহমান। এ ঘূর্ণিঝড় নিয়ে এ পর্যন্ত প্রাপ্ত পূর্বাভাস ও ভূমি অতিক্রমের সম্ভাব্য এলাকার ভিত্তিতে এ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জেলাগুলো হলো সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, খুলনা, বরগুনা, পটুয়াখালী ও ভোলা।
গতকাল ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় প্রস্তুতি সভায় প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘গত ১৫ বছরে ঘূর্ণিঝড়সহ সব দুর্যোগে তার নিবিড় পর্যবেক্ষণ ও নির্দেশনায় আমরা যথাসময়ে প্রস্তুতি নিয়ে মানুষের দুর্দশা লাঘব এবং জীবন ও সম্পদের ক্ষতি কমাতে সক্ষম হয়েছি। এ ঘূর্ণিঝড়টিও যাতে একই ধারাবাহিকতায় সফলভাবে মোকাবিলা করতে পারি তার জন্য আমরা প্রস্তুত রয়েছি।’
প্রতিমন্ত্রী মুহিববুর রহমান বলেন, ‘আমরা ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোর জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের সঙ্গে কথা বলে স্থানীয় প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য নির্দেশনা দিয়েছি। উপকূলবর্তী সব জেলাকে ঘূর্ণিঝড়ের জন্য প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে। এ পর্যন্ত প্রাপ্ত পূর্বাভাস ও সম্ভাব্য ভূমি অতিক্রম এলাকার ভিত্তিতে সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, খুলনা, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা জেলাসমূহকে অধিকতর প্রস্তুত থাকার জন্য বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘এক সপ্তাহ ধরে এই ঝড়টির বিষয়ে আমরা খোঁজখবর রাখছি। বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করে নিয়মিতভাবে পূর্বাভাস দিচ্ছে এবং আগাম কার্যাবলি (অ্যান্টিসিপেটরি অ্যাকশন) ও সাড়া প্রদানে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত দিয়ে সহযোগিতা করছে। আমরা ভারতে অবস্থিত আঞ্চলিক বিশেষায়িত আবহওয়া কেন্দ্রের সঙ্গেও নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি। এর পাশাপাশি বিভিন্ন নির্ভরযোগ্য আন্তর্জাতিক পূর্বাভাস মডেল নিয়মিত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সময়োপযোগী কার্যক্রম গ্রহণ করছি।’
সভায় প্রতিমন্ত্রী বলেন, এই ঘূর্ণিঝড়টি মোকাবিলায় সার্বক্ষণিক তথ্য বিনিময়ের লক্ষ্যে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের এনডিআরসিসি ২৪ ঘণ্টা খোলা রয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর মানবিক সহায়তা ও ত্রাণ কার্যক্রম প্রেরণ শুরু করেছে। ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির (সিপিপি) ৭৮ হাজার স্বেচ্ছাসেবক কয়েক দিন যাবৎ মাঠে আগাম সতর্কবার্তা প্রচারসহ আশ্রয়কেন্দ্র পরিদর্শন ও প্রস্তুতের কাজ করছে। মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে অ্যান্টিসিপেটরি অ্যাকশন টেকনিক্যাল ওয়ার্কিং গ্রুপ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ, বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ ও সাইক্লোন আর্লি অ্যাকশন প্রটোকল অনুসরণ করে প্রতিষ্ঠানভিত্তিক আগাম কার্যক্রম শুরু করেছে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের গতি-প্রকৃতি এবং আবহাওয়া অধিদপ্তর কর্তৃক বিপদ সংকেত জারি করা মাত্র মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে আনা হবে। দুর্যোগবিষয়ক স্থায়ী আদেশাবলি অনুযায়ী স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহ এবং বিভিন্ন পর্যায়ের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটিগুলো কার্যকর হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতির অংশ হিসেবে সভায় কয়েকটি বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেগুলো হলো আগাম সতর্কতার বিজ্ঞপ্তি প্রচার ও জনগণকে সচেতন করা, আগাম মানবিক কার্যাবলি গ্রহণ করা, মাঠ প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় ও বিভিন্ন পর্যায়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটিসমূহের সভা অনুষ্ঠান, সব পর্যায়ে নিয়ন্ত্রণকক্ষ খোলা, আশ্রয়কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত করা, আশ্রয়কেন্দ্রে শুকনা খাবার, শিশু খাদ্য এবং গো-খাদ্যের ব্যবস্থা করা, জনগণকে আশ্রয়কেন্দ্রে আনার বিষয়ে প্রস্তুতি গ্রহণ। দুর্যোগ তথ্য পাওয়ার জন্য টোল ফ্রি ১০৯০ ব্যবহারের কথা বলা হয় সভায়। দৈনিক বাংলার বিভিন্ন জেলা প্রতিনিধিদের পাঠানোর সংবাদের ভিত্তিতে ‘রেমাল’ নিয়ে বিভিন্ন জেলার প্রস্তুতির সম্পর্কে জানা গেছে নানা তথ্য।
পিরোজপুর: বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হতে যাওয়া ঘূর্ণিঝড় ‘রেমাল’ এর জন্য পিরোজপুরে প্রস্তুত করা হয়েছে ৫৬১ টি ঘূর্ণিঝড়ের আশ্রয়কেন্দ্র। যার মধ্যে ২৯৫ টি সাইক্লোন শেল্টার এবং ২৬৬ টি বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং এই আশ্রয়কেন্দ্রে ২ লাখ ৮০ হাজার ৫০০ জন মানুষ আশ্রয় নিতে পারবে।
শনিবার বিকেলে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের শহীদ আব্দুর রাজ্জাক সাইফ-মিজান সভাকক্ষে জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহেদুর রহমান এ তথ্য দেন।
সভায় জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহেদুর রহমান আরও জানান, ঘূর্নিঝড় রেমাল মোকাবিলায় একটি জেলা প্রশাসন থেকে একটি কন্টোলরুমসহ প্রতিটি উপজেলায় একটি টিম করা হয়েছে, ৬৫ টি মেডিকেল টিম প্রস্তুত রয়েছে, ২ লাখ ৬৩ হাজার পানি বিশুদ্ধ করণ ট্যাবলেজ মজুত রাখা হয়েছে, ঝড়ের ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য প্রাথমিক পর্যায়ে ১৩৫০ হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার, ৬১১ মে. ট. চাল ও নগদ ৬ লক্ষ ১০ হাজার টাকা প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এছাড়াও দুর্যোগ পরিবর্তিতে ক্ষতিগ্রস্তদের ঘর মেরামতের জন্য ৯৭ বান্ডিল টিন রয়েছে। এ ছাড়া ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় রেডক্রিসেন্টের ২৫০ জন স্বেচ্ছাসেবক ও সিপিপি ২৪২০ জন সদস্য প্রস্তুত রয়েছে। রেমালের প্রভাবে পিরোজপুরের নদীসমূহে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে বেশি পানি দেখা গেছে এবং জেলার কয়েক স্থানে হালাকা বৃষ্টি পড়েছে।
বরগুনা: বরগুনায় ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে গোমট আবহাওয়া বিরাজসহ নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন নদী তীরের বাসিন্দারা। শনিবার জেলার পায়রা, বলেশ্বর ও বিষখালী নদীর পানি স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় অন্তত তিন ফুট বেড়েছে বলে জানান নদী তীরের বাসিন্দারা। বরগুনা সদর উপজেলার বড়ইতলা এলাকায় গেলে দেখা যায়, পানিতে এখানকার বেড়িবাঁধের বাহিরের নিম্নাঞ্চল তলিয়ে গেছে। এখানে আশ্রয়কেন্দ্রের স্বল্পতা রয়েছে। তাই যা আছে তাতে সকলের স্থান সংকুলান হয় না। বরগুনার জেলা প্রশাসক মোহা. রফিকুল ইসলাম বলেন, দুপুরে জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা হয়েছে। সভার মাধ্যমে আমরা ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। এদিকে বরগুনার পানি উন্নয়ন বোর্ড জেলার বিভিন্ন স্থানে এক কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে বলে জানিয়েছেন এবং এসব বাঁধ ভেঙ্গে গেলে তা তাৎক্ষণিকভাবে মেরামতের জন্য ৮০০ জিও ব্যাগ প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলে জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় জানানো হয়েছে। জেলায় ঘূর্ণিঝড় ‘রেমাল’ মোকাবিলায় বরগুনায় ৬৭৩টি আশ্রয়কেন্দ্রসহ প্রায় ১০ হাজার স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও জেলা মোহা. রফিকুল ইসলাম। শনিবার দুপুরে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির জরুরি প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত হয়। দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় জেলা প্রশাসনসহ সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসক মোহা. রফিকুল ইসলাম জানান, ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। বরগুনায় ৩টি মুজিব কেল্লা, ৬৭৩টি আশ্রয়কেন্দ্রসহ প্রায় ১০ হাজার স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রাখা হয়েছে। যারা ঘূর্ণিঝড় পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সময়ে উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করবেন। এ ছাড়া ৪২২ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য, ৩৭ লাখ নগদ অর্থ প্রস্তুত রয়েছে। তিনি আরও জানান, ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকার জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১০ টি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে ৪২ টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। দুর্যোগ প্রস্তুতি সভায় জেলা এনজিও ফোরামের সভাপতি মোতালেব মৃধা, প্রেসক্লাবের সভাপতি অ্যাডভোকেট মোস্তফা কাদের, রেডক্রিসেন্ট, দুর্যোগ প্রস্তুতি কর্মসূচি (সিপিপি), বিভিন্ন সরকারি, বেসরকারি সংস্থা ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত থেকে তাদের প্রস্তুতির বিষয় তুলে ধরেন।
মোংলা: ‘রেমাল’ প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়ে রোববার সন্ধ্যায় সুন্দরবন উপকূলে আঘাত হানবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। মোংলা আবাহওয়া অফিসের ইনচার্জ মো. হারুন অর রশিদ জানান, এটি বর্তমান যেই অবস্থান দেখাচ্ছে তাতে ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রটি বাংলাদেশের ওপর দিয়েই অতিক্রম করার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে সুন্দরবন এলাকা এবং বরিশালের পটুয়াখালী, বরগুনা, ও ভোলা জেলায় রেমাল এর আঘাত হানার সম্ভাবনা বেশি রয়েছে।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে সাগর উত্তাল থাকায় এরই মধ্যে মোংলা সমুদ্র বন্দরকে ৭ নম্বর সতর্ক সংকেত জারি করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে সব রকম সতর্কমূলক প্রস্তুতি নিয়েছে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ। কোস্ট গার্ড, নৌ বাহিনী ও উপজেলা প্রশাসনের সমন্বয়ে শনিবার দুপুরে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের সভাকক্ষে জরুরি বৈঠক করা হয়েছে।
বন্দর কর্তৃপক্ষের হারবার মাস্টার কমান্ডার সাইফুর রহমান বলেন, মোংলা বন্দরে এই মুহূর্তে সিমেন্টের কাঁচামাল ক্লিংকার, সার, পাথর ও গ্যাসবাহী ছয়টি জাহাজ অবস্থান করেছে। সেগুলোকে নিরাপদে নোঙ্গর করতে বলা হয়েছে। এদিকে ঘূর্ণিঝড় ‘রেমাল’ মোকাবিলায় সব রকম প্রস্ততি নিয়েছে উপজেলা প্রশাসনও। উপজেলা নির্বাহী অফিসার নিশাত তামান্না বলেন, ১০৩ টি আশ্রয়কেন্দ্রসহ ১৩২০জন স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রাখা হয়েছে। আবহাওয়া অফিস থেকে ঘূর্ণিঝড়ের সংকেত বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গেই আমাদের কার্যক্রমের গতি বাড়ানো হবে। কন্ট্রোল রুমও খোলা হয়েছে।
এদিকে মোংলা উপকূলে সচেতনতামূলক মাইকিং করেছে কোস্ট গার্ডের সদস্যরা। শনিবার সকাল থেকে ঘণ্টাব্যাপী মোংলার পশুর বিভিন্ন স্থানে এ প্রচার মাইকিং করা হয়।
মোংলা কোস্ট গার্ড পশ্চিম জোনের মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট মো. মুনতাসীর ইবনে মহসীন জানান, সকাল থেকে সুন্দরবন লাঘোয়া মোংলা উপকূলের ঝুঁকিপূর্ণ বিভিন্ন এলাকায় প্রচার মাইকিং করেন কোস্ট গার্ড সদস্যরা।
বাগেরহাট: ঘূর্ণিঝড় রেমাল ধেয়ে আসার খবরে উপকূলীয় জেলা বাগেরহাটের নদী তীরবর্তী এলাকায় বসবাস করা মানুষের মাঝে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। এরই মধ্যে শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে শুরু হয়েছে বৃষ্টিপাত। তবে সকাল থেকে আকাশ কখনো রোদ আবার কখনো মেঘাচ্ছন্ন হচ্ছে। নদীতে থাকা মাছ ধরা ট্রলার গুলো উপকূলের ছোট ছোট খালে আশ্রয় নিয়েছে। কোস্টগার্ডের পক্ষ থেকে চালানো হচ্ছে জনসচেতনামূলক প্রচার-প্রচারণা। এরই মধ্যে রেমাল মোকাবেলায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সকল ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।
বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মো. খালিদ হোসেন বলেন, ঘূর্ণিঝড় রেমাল মোকাবেলায় বাগেরহাটে ৩৫৯টি আশ্রয় কেন্দ্রে ও ৩ হাজার ৫শ ৫ জন স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এ ছাড়া ৬৪৩ মেট্রিকটন চাল ও ৫লক্ষ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। জেলার ৯টি উপজেলার সকল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের সতর্ক থাকতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের সকল কর্মকর্তাদের ছুটি বাতিলের পাশাপাশি উপকূলের ঝুঁকিপূর্ণ বেরিবাধ এলাকায় গুলো নজরদারিতে রাখা হয়েছে।
পটুয়াখালী: জেলায় রেমাল মোকাবেলায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির প্রস্তুতি মূলক জরুরী সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় জেলা প্রশাসকের দরবার হলে অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক নুর কুতুবুল আলম। সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক যাদব সরকার। জেলা সিভিল সার্জন ডা. এসএম কবির হাসান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার যোবায়ের আহাম্মেদ।
গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হারুন অর রশিদ, কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. নজরুল ইসলাম, পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুর রহমান, পটুয়াখালী প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া রিদয়, সিপিপি, রেড ক্রিসেন্টসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
জেলা প্রশাসক জানান দুর্যোগ মোকাবিলায় জেলায় ৭০৩ টি সাইক্লোন শেল্টার ৩৫টি মুজিব কিল্লা, ৭৩০ মেট্রিক টন চাল, ১০ লক্ষ টাকার শিশু খাদ্য, ১০ লাখ টাকার গোখাদ্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এ ছাড় শুকনা খাবার রয়েছে ১৫০০ প্যাকেট। নগদ টাকা রয়েছে ২৪ লাখ ৭ হাজার টাকা ৫০০ টাকা।
এ সময় মানুষকে সচেতন ও দুর্যোগে উদ্ধার কাজ পরিচালনার জন্য রেডক্রিসেন্ট ও সিপিপির ৯ হাজার স্বেচ্ছাসেবককে প্রস্তুত থাকাসহ বিদ্যুৎ বিভাগ সড়ক বিভাগ ফায়ার সার্ভিসকে দিকনির্দেশনা প্রদান করেন জেলা প্রশাসক।
জেলায় মোট ৭৬টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণ স্যালাইন, ঔষধ ও পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট সংরক্ষিত রয়েছে। জেলায় ১৩০০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের মধ্যে ১০ কিলোমিটার ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। দুর্যোগের সময় কোথাও ভাঙন দেখা দিলে তা মেরামতের জন্য ১৬ হাজার জিও ব্যাগ রয়েছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
এদিকে জেলায় ৮৭ হাজার হেক্টর জমিতে রয়েছে মুগ ডাল এবং ২০ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধান রয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিউদ্দিন মোহাম্মদ যোবায়ের বলেন গুজোব মোকাবেলার জন্যে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে।
এদিকে কলাপাড়া উপকূলীয় অঞ্চলের জনগন, মৎস্যজীবি ও নৌযান সমূহকে ক্ষয়ক্ষতি থেকে রক্ষার জন্য জনসচেতনতা মূলক কার্যক্রম শুরু করেছে নিজামপুর কোষ্টগার্ড। শনিবার সকাল নয়টায় মৎস্য বন্দর আলীপুর- মহিপুরে মাইকিং ও লিফলেট বিতরন করে কোস্ট গার্ডের সদস্যরা। এসময় তারা খাপড়াভাঙ্গা নদীতে অবস্থানরত ট্রলার সমূহে থাকা জেলেদের ঘূর্নিঝড়ের সময় করনীয় সম্পর্কে দিক নির্দেশনা দেন।
ঝালকাঠি: জেলায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার বেলা ১১টায় জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক ফারাহ্ গুল নিঝুম। এ সভায় পুলিশ সুপার, স্বাস্থ্য, কৃষি, খাদ্য, শিক্ষা, দপ্তরের প্রধানগন এবং বিদ্যুৎ, ফায়ার সার্ভিস, পানি উন্নয়ন বোর্ড, সড়ক বিভাগ, রেডক্রিসেন্টসহ জেলা পর্যায়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা যোগ দেন।
সভায় জেলা প্রশাসক ফারাহ্ গুল নিঝুম বলেন, ঘূর্ণিঝড় ‘রেমাল’ মোকাবিলায় সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেওয়া শুরু হয়েছে। এই কয় দিন সংশ্লিষ্ট সব পর্যায়ের কর্মকর্তাদের স্টেশন ত্যাগ না করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ঘূর্ণিঝড় ‘রেমাল’ মোকাবিলায় নির্ধারিত সাইক্লোন শেল্টারসহ আশ্রয়কেন্দ্রের জন্য সহ জেলার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ব্যবহার উপযোগী করা হয়েছে।
ভারি বৃষ্টিতে সিলেট নগরে ভয়াবহ জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। পানিতে তলিয়ে গেছে নগরের বেশিরভাগ এলাকা। ঈদের দিন সকালে এমন পরিস্থিতির কারনে দুর্ভোগে পড়েছেন নগরবাসী। জলাবদ্ধতার কারনে নগরের অনেক এলাকায় ঈদগায়ের ঈদের জামাত পেছানো হয়। বাসা বাড়ি ও সড়ক পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় কোরবানি দেয়া নিয়েও দুশ্চিন্তায় নগরবাসী।
এদিকে পাহাড়ি ঢলে নগরের বাইরে উপজেলাগুলোতে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। বিশেষত সুনামগঞ্জ শহরে ঢুকে পড়েছে বন্যার পানি।
জানা গেছে, গতকাল রোববার রাত থেকেই সিলেটে ভারি বৃষ্টি হচ্ছে। যা আজ সোমবার সকাল পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। এতে সিলেট নগরের অর্ধেকের বেশি এলাকা জলমগ্ন হয়ে গেছে। কোথায়ও হাটু সমান, কোথাও কোমর সমান পানিতে ডুবে আছে নগর।
আজ সোমবার (১৭ জুন) ঈদুল আজহার ভোরে নগরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ও বিভিন্ন এলাকার মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করে এমনটা জানা গেছে। পানিতে নিমজ্জিত হয়ে আছে অনেক এলাকার মসজিদ ও ঈদগাহ।
সিলেট আবহাওয়া অফিসের সহকারি আবহাওয়াবিদ শাহ মো সজিব জানান, রোববার সকাল ৬টা থেকে সোমবার সকাল ৬ টা পর্যন্ত সিলেটে ১৭৩.৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। আরও দুদিন এমন বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে বলে জানান তিনি।
সিলেট সিটি করপোরেশনের ১৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সান্তনু দত্ত সন্তু জানান, রোববার রাতেই আমার ওয়ার্ডের তালতলা, মাছুদিঘীর পাড়, জামতলা, মনিপুরী রাজবাড়ী, রামের দিঘীরপাড়, খুলিয়া পাড়া, তোপখানাসহ প্রায় সকল এলাকা জলমগ্ন হয়ে যায়। মানুষের বাসা-বাড়িতে পানি ঢুকে পড়ায় ঈদ উদযাপনে ভাটা পড়েছে।
নগরের বনকলা পাড়া এলাকার আব্বাসী জামে মসজিদে পানি ঢুকে পড়েছে। এই মসজিদে সকালে ঈদের জামাত হওয়ার কথা ছিল। সকাল থেকে স্থানীয়রা মসজিদ থেকে পানি সেচে বের করার চেষ্টা করেছেন।
এদিকে সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থতির অবনতি হয়েছে। সুরমা নদীর পানি সুনামগঞ্জ পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানিতে তলিয়ে গেছে সুনামগঞ্জ পৌর শহরের বেশ কয়েকটি এলাকার। এসব এলাকার বাসা বাড়িতে পানি প্রবেশ করেছে।
এছাড়া জেলার ছাতক, দোয়ারাবাজার, সুনামগঞ্জ সদর ও তাহিরপুর উপজেলার অন্তত ৩০ গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে আছে। জেলার অন্তত শতাধিক অভ্যন্তরীণ সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন বাসিন্দারা।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া অংশে চারটি গাড়ির সংঘর্ষে একজন নিহত ও চারজন আহত হয়েছেন।
আজ রোববার দুপুরে ভিটিকান্দি বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ওই পথচারীকে বাঁচাতে গিয়ে গাড়ি চারটির সংঘর্ষ হয়। গুরুতর আহত চারজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে পাঠান চিকিৎসক। তবে প্রাণ হারানো ব্যক্তির পরিচয় পাওয়া যায়নি। তার বয়স আনুমানিক ৫৮ বছর হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
আহতরা হলেন, বাইকের চালক শাহাদাত হোসেন (৩৪), বাসের যাত্রী বেলাল হোসেন (৪০), শাকিল দেওয়ান (৩৮) ও শিল্পী আক্তার (৩৫)।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রোববার দুপুর ১২টার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের গজারিয়া অংশের ভিটিকান্দি বাসস্ট্যান্ড এলাকায় দিয়ে রাস্তা পার হচ্ছিলেন এক পথচারী। এ সময় ঢাকা থেকে কুমিল্লাগামী দ্রুত গতির একটি মোটরসাইকেল ওই পথচারীকে বাঁচাতে গিয়ে ব্রেক করে তার উপরে উঠে যায়। তখন বাইকের পেছনে থাকা একটি প্রাইভেট কার বাইকটিকে ধাক্কা দেয়। এমন সময় প্রাইভেট কারটির সামনে ও পেছনে যাত্রীবাহী দুটি চলন্ত বাস এসে ধাক্কা দেয়। সংঘর্ষের ঘটনায় প্রাইভেট কারটি দুমড়েমুচড়ে যায় এবং যাত্রীবাহী বাস দুটিরও ক্ষয়ক্ষতি হয়।
এ ঘটনায় পথচারী, বাইকের চালক ও বাসের তিনজন যাত্রী আহত হন। হতাহতদের উদ্ধার করে গজারিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠায় স্থানীয়রা।
গজারিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. কামরুন নাহার বলেন, সড়ক দুর্ঘটনায় আহতদের পাঁচজনকে আমাদের হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। তার মধ্যে হাসপাতালে আনার পরপরই একজনের মৃত্যু হয়। আহত অপর চারজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
গজারিয়া ভবেরচর হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ি ইনচার্জ হুমায়ুন কবির জানান, মরদেহ গজারিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রয়েছে। দুর্ঘটনা কবলিত গাড়িগুলো মহাসড়ক থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে।
ঈদের ছুটিতে গ্রামে ছুটছে মানুষ। কর্মজীবনের ক্লান্তি কাটিয়ে দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে বাড়ি যাওয়ার একটাই উদ্দেশ্য শান্তিময় আনন্দে পরিবার-পরিজনের সঙ্গে ঈদ উদযাপন। তবে ঈদের দিনটাও অনেকের জন্যই হতে পারে উদ্বেগের। কারণ দেশের উত্তরবঙ্গ ও সিলেট বিভাগের নিম্নাঞ্চলগুলোতে বাড়ছে ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানি। ফলে তিস্তা, সুরমা, যমুনা অববাহিকায় বন্যার আশঙ্কা করছেন এলাকার মানুষ। এ অঞ্চলের প্রতিটি নদীতে বেড়েছে পানি সমতলের উচ্চতা। বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে তিস্তা নদীর পানি। প্লাবিত করেছে বিস্তীর্ণ অঞ্চল। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর:
সুনামগঞ্জে পাহাড়ি ঢলে বেড়েছে ২৬ নদীর পানি: সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জের সুরমা, যাদুকাটা, কুশিয়ারাসহ ২৬ নদনদীর পানি বেড়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সুরমা নদীর পানি ২৮ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ১৯ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানা গেছে।
গতকাল শনিবার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার। তিনি বলেন, ‘ভারতের চেরাপুঞ্জিতে প্রচুর বৃষ্টিপাত হওয়ায় উজান থেকে পাহাড়ি ঢল নামছে। আর সেই ঢলের পানিতে সুনামগঞ্জের সব নদনদীর পানি দ্রুত বাড়ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এভাবে পাহাড়ি ঢল নামা অব্যাহত থাকলে আজকেই নদ নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হবে। এতে সুনামগঞ্জে স্বল্পমেয়াদি বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।’
এ দিকে দ্রুত নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় বন্যা আতঙ্কে দিন পার করছেন জেলার ২০ লাখ বাসিন্দা। তাদের শঙ্কা, যেভাবে নদীর পানি বাড়ছে তাতে ঈদের আগে বন্যা হয়ে যেতে পারে। আর বন্যা হলে তাদের ঈদ আনন্দ শেষ হয়ে যাবে।
তিস্তার পানি বিপৎসীমা ছুঁই ছুঁই, বন্যার পূর্বাভাস: লালমনিরহাট প্রতিনিধি জানান, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য সিকিমে ভারী বৃষ্টির প্রভাবে বাড়ছে তিস্তা নদীর পানি। ইতোমধ্যে তিস্তা ব্যারেজের ৪৪টি গেট খুলে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এতে লালমনিরহাট জেলার বিভিন্ন এলাকার নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল এবং চরাঞ্চলে পানি উঠতে শুরু করেছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে মানুষ, তলিয়ে যাচ্ছে ফসলি জমি।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তথ্য বলছে, গতকাল শনিবার সকাল ৬টায় কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি ছিল বিপৎসীমার মাত্র তিন সেন্টিমিটার নিচে। ডালিয়া পয়েন্টেও মাত্র তিন সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে নদীর পানি প্রায় ৮০ সেন্টিমিটার বেড়েছে। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টায় ডালিয়া ব্যারেজ পয়েন্টে নদীর পানি বিপৎসীমার ৬১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও কাউনিয়া পয়েন্টে মাত্র ৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। একই দিন সকাল ৬টায় ডালিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ৪০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে ও কাউনিয়া পয়েন্টে ৩৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে এবং দুপুর ১২টায় ডালিয়া পয়েন্টে ৬৯ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে ও কাউনিয়া পয়েন্টে ২০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
এদিকে তিস্তার পানি বাড়ায় লালমনিরহাট সদর উপজেলার কালমাটি, খুনিয়াগাছ, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা, গোবর্ধন, সর্দারপাড়া, কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী, কাকিনা, হাতীবান্ধা উপজেলার সানিয়াজান, গড্ডিমারী, পাটিকাপাড়া, সিংগীমারী এবং সিন্দুর্না ইউনিয়ন এলাকার শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
কাউনিয়া উপজেলার বালাপাড়া ইউনিয়নবাসী জানান, শুক্রবার সকাল থেকে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। বন্যা হলে নদীর তীরে বসবাসকারী মানুষ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে, এতে চিনাবাদাম ও বিভিন্ন শাকসবজিসহ ফসলেরও ক্ষতি হবে। আর কাউনিয়ার চরগনাই গ্রামের বাসিন্দারা জানান, শুক্রবার ভোর থেকে পানি বাড়ছে এবং আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে। আমরা আতঙ্কে আছি। ঈদের আগে যদি আমাদের ঘরবাড়ি প্লাবিত হয়, তাহলে আমরা পানিবন্দি হয়ে পড়ব। বড় কষ্ট হবে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের বরাত দিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড লালমনিরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী শুনীল কুমার জানান, আগামী ৫ দিনে দেশের উত্তরাঞ্চল এবং তৎসংলগ্ন উজানে মাঝারি থেকে ভারী এবং কিছু স্থানে অতি ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে। ফলে এ সময়ে দেশের উত্তরাঞ্চলের তিস্তা, ধরলা, দুধকুমার ইত্যাদি নদ-নদীর পানি দ্রুত বৃদ্ধি পেতে পারে এবং তিস্তা নদীর কিছু পয়েন্টে স্বল্প মেয়াদে বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে।
উজানে ভারী বৃষ্টি, কুড়িগ্রামে বন্যার শঙ্কা: কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি জানান, উজানে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে কুড়িগ্রামের নদ-নদীগুলোতে পানি বাড়তে শুরু করেছে। এভাবে বৃষ্টি ঝরতে থাকলে ধরলা, তিস্তা ও দুধকুমার নদ অববাহিকার নিম্নাঞ্চলে স্বল্পমেয়াদি বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের বরাতে এমন আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন পাউবো কুড়িগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান। পাউবো নিয়ন্ত্রণকক্ষের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, আজ শনিবার ভোর ৬টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ধরলা, তিস্তা, দুধকুমার ও ব্রহ্মপুত্র নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। দেশের অভ্যন্তর ছাড়াও এসব নদ-নদীর উজানে ভারতের বিভিন্ন অংশে ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে।
গত ২৪ ঘণ্টায় ধরলার পানি কুড়িগ্রাম শহর (ধরলা সেতু) পয়েন্টে ৮৩ সেন্টিমিটার বেড়েছে। একই সময়ে দুধকুমার নদের পানি পাটেশ্বরী পয়েন্টে ৮০ সেন্টিমিটার, তিস্তার পানি কাউনিয়া পয়েন্টে ২০ সেন্টিমিটার এবং ব্রহ্মপুত্র নদের পানি নুনখাওয়া পয়েন্টে ২৭ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
গত ২৪ ঘণ্টায় ধরলা অববাহিকায় ১০২ দশমিক ২ মিলিমিটার এবং তিস্তা অববাহিকায় ৮০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আগামী ৪৮ ঘণ্টা দুধকুমার, ধরলা ও তিস্তা নদীর পানি কিছু সময় দ্রুত বৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছে পাউবো। আগামী কয়েক দিন পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থেকে বিপৎসীমার কাছ দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে।
এদিকে ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে কুড়িগ্রাম সদরসহ বিভিন্ন উপজেলার নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় নদ-নদীতে জেগে ওঠা চরগুলো নিমজ্জিত হতে শুরু করেছে। সদরের হলোখানা ইউনিয়নের ধরলাতীরবর্তী বাসিন্দা আহমেদ বলেন, ‘গতকাল থেকে পানি খুব বাড়তি। দুই ফুটের বেশি বেড়েছে। কিছু চর ডুবতে শুরু করেছে। তবে সেগুলোতে জনবসতি নেই।’
রাজারহাট উপজেলার বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের বাসিন্দা মিলন বলেন, ‘শুক্রবার সারা দিন পানি খুব বেড়েছে। কিন্তু রাতে কমেছে। তবে আবার ভারী বৃষ্টি হয়েছে।’
পাউবো কুড়িগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান বলেন, ‘পূর্বাভাস অনুযায়ী আগামী কয়েক দিন উজানে ভারী বৃষ্টিপাত রয়েছে। এ সময় জেলার নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাবে। পানি বিপৎসীমার কাছ দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে।’
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ বলেন, ‘সম্ভাব্য বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় উপজেলাগুলোতে ত্রাণ সহায়তা প্রস্তুত রাখা হয়েছে। দুর্যোগ পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে লোকজনকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট উপজেলার দায়িত্বশীলদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সার্বিক পরিস্থিতির ওপর আমরা সার্বক্ষণিক নজর রাখছি।’
তীব্র হচ্ছে যমুনার ভাঙন: টাঙ্গাইল প্রতিনিধি জানান, টাঙ্গাইলে যমুনা নদীর ভাঙন তীব্র হয়েছে। গত কয়েকদিনে নিঃস্ব হয়েছে ৩৫ পরিবার। বাড়িঘর হারিয়ে তাদের কেউ কেউ খোলা আকাশের নিচে আছেন। কেউ আশ্রয় নিয়েছেন অন্যের জমিতে। এসব পরিবারের দাবি, সাহায্য নয়- ভাঙন রোধে এলাকায় বাঁধ নির্মাণ প্রয়োজন।
টাঙ্গাইল সদরের কাকুয়া ইউনিয়নের চরপৌলি গ্রামের মুক্তার মণ্ডল। একসময় জমিজমা বাড়িঘর থাকলেও এখন তিনি নিঃস্ব। যমুনায় হারিয়ে গেছে তার আবাদি জমি ও বাড়িঘর। শুধু মুক্তারই নন, যমুনার ভাঙনে এই এলাকায় প্রতিবছর ভিটেমাটি হারান বহু মানুষ। তবে এবারের ভাঙন শুরু হয়েছে বর্ষার আগেই।
এলাকাবাসীর দাবি, টাঙ্গাইল সদরের কাকুয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় ভাঙনের দুর্যোগ রয়েছে ৩০ বছর ধরে। যমুনার পূর্বপাড় গোয়ালিয়াবাড়ী এলাকায় স্থায়ী বাঁধ হয়েছে। কিন্তু এ পাড়ে বাঁধ না হওয়ায় তারাই বার বার ক্ষতির মুখে পড়ছেন। কাকুয়া ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি সদস্য নজরুল ইসলাম বলেন, আমরা সবার কাছেই বলছি। কিন্তু কেউ কিছুই করছেন না।
টাঙ্গাইলের পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সাজ্জাদ হোসেন জানান, সদরের চরপৌলী, কালিহাতী উপজেলার ভৈরববাড়ী ও আলীপুর এলাকার বাকি এক হাজার ৬২৫ মিটার বাঁধের কাজের জন্য নতুন প্রকল্পের অনুমোদন হয়েছে। সাময়িকভাবে আমরা নতুন ভাঙন রোধেরও চেষ্টা করছি। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় আপাতত জিও ব্যাগ ফেলে যমুনার তীর রক্ষার চেষ্টা চলছে।
ঈদুল আজহার ছুটিতে গ্রামের বাড়িতে ছুটছে মানুষ। তাদের বহনকারী ব্যক্তিগত পরিবহন ও গণপরিবহনে মহাসড়কগুলোতে দেখা দিয়েছে ঠাসা ভিড়। এ ছাড়া পণ্যবাহী ট্রাকগুলো বিধিনিষেধের কারণে চলাচল কম করলেও মফস্বল থেকে ঢাকার পথে আসছে গরুবাহী ট্রাক। ফলে দুই পাড়ের দুই বড় নদী পদ্মা ও যমুনার ওপরে নির্মিত দুই সেতুর টোলপ্লাজায় টোল আদায়ও বেশ জমজমাট। এবারের ঈদের তিন দিন ছুটির সঙ্গে সাপ্তাহিক ছুটি শুক্র ও শনিবার মিলে যাওয়ায় টানা ৫ দিনের ছুটি পেয়েছেন কর্মজীবীরা। গতকাল শুক্রবার ছিল ছুটির প্রথম দিন। শুক্রবারের ২৪ ঘণ্টায় পদ্মা সেতুর টোলপ্লাজায় আদায় হয়েছে ৪ কোটি ৮২ লাখ ১৭ হাজার ৪০০ টাকা, পারাপার হয়েছে ৪৪ হাজার ৩৩টি যানবাহন। অন্যদিকে টোল আদায়ের রেকর্ড করে ফেলেছে বঙ্গবন্ধু সেতুর টোলপ্লাজায়। এদিন ২৪ ঘণ্টায় বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে যানবাহন পারাপার হয়েছে ৫৩ হাজার ৪০৭টি যানবাহন, টোল আদায় হয়েছে ৩ কোটি ৮০ লাখ ৬৩ হাজার ৪০০ টাকা। বঙ্গবন্ধু সেতু কর্তৃপক্ষ বলছে, এই সেতু চালু হওয়ার পর থেকে গত ২৬ বছরে এটি নতুন রেকর্ড। আজ শনিবার উভয় সেতুর কর্তৃপক্ষ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
এবারের ঈদুল আজহার সরকারি ছুটির প্রথম দিনে শুক্রবার (১৪ জুন) পদ্মা সেতু পারাপার হয়েছে ৪৪ হাজার ৩৩টি যানবাহন, যা থেকে টোল আদায় হয়েছে ৪ কোটি ৮২ লাখ টাকা।
পদ্মা সেতুর ব্যবস্থাপক (টোল) মো. আহমেদ আলী জানান, ‘১৪ জুন ২৪ ঘণ্টায় পদ্মা সেতুতে পারাপার হয়েছে ৪৪ হাজার ৩৩টি যানবাহন, যা থেকে সর্বমোট আয় হয়েছে ৪ কোটি ৮২ লাখ ১৭ হাজার ৪০০ টাকা। এর মধ্যে মাওয়া প্রান্ত দিয়ে পদ্মা সেতু পার হয় ২৮ হাজার ৮৯৬টি যানবাহন, যা থেকে নগদ টোল আদায় হয়েছে ২ কোটি ৭২ লাখ ৬৪ হাজার ৫৫০ টাকা। এ ছাড়া বাকিতে সরকারি প্রতিষ্ঠানের যান পারাপারে টোল রয়েছে ১ লাখ ২০ হাজার ৩৫০ টাকা। আর চলন্ত অবস্থায় ইটিসিএস পদ্ধতিতে টোল জমা হয়েছে ১ হাজার ২০০ টাকা। অন্যদিকে জাজিরা প্রান্ত থেকে সেতু পার হয়েছে ১৫ হাজার ১৩৭টি যানবাহন। সরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে ৫৩ হাজার ৭৫০ টাকা বকেয়াসহ মোট আয় হয়েছে ২ কোটি ৮ লাখ ১৯ হাজার ৩০০ টাকা।’
অন্যদিকে বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব সাইট অফিস সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) রাত ১২টা থেকে শুক্রবার (১৪ জুন) রাত ১২টা পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় অর্থাৎ এক দিনে ৩ কোটি ৮০ লাখ ৬৩ হাজার ৪০০ টাকা আদায় করা হয়েছে এবং এর বিপরীত সেতুর উভয় টোল দিয়ে ৫৩ হাজার ৪০৭টি যানবাহন পারাপার হয়েছে। গতকাল শনিবার বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব সাইট অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসানুল কবীর পাভেল এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, ১৯৯৮ সালে সেতুটি উদ্বোধনের পর এর চেয়ে বেশি টোল আদায় আর কখনো হয়নি।
বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব সাইট অফিস সূত্র আরও জানায়, শুক্রবার ২৪ ঘণ্টায় বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব অংশের ঢাকা ও ময়মনসিংহের দিকে ৩৩ হাজার ২৫টি যানবাহন পারাপার হয়। এ থেকে টোল আদায় হয় ২ কোটি ৬৪ লাখ টাকা এবং সিরাজগঞ্জ সেতু পশ্চিম অংশে উত্তরবঙ্গের দিকে ২০ হাজার ৬৮৩টি যানবাহন পারাপার হয়। এ থেকে টোল আদায় হয়েছে ১ কোটি ৭৪ লাখ ২৩ হাজার ৪০০ টাকা।
এর মধ্যে সেতুর টাঙ্গাইলের পূর্ব প্রান্তে ও সিরাজগঞ্জের পশ্চিম প্রান্তে ১০ হাজার ১০৫টি মোটরসাইকেল পারাপার হয়েছে। হালকা ছোট যানবাহনের সংখ্যা ১৯ হাজার ৯৭২টি, বাস পারাপারের সংখ্যা ১২ হাজার ৮৭১টি এবং ট্রাক পারাপার হয়েছে ১০ হাজার ৭৬০টি। এদিকেও যানবাহন পারাপারে বেশি রয়েছে।
২০২৩ সালের ২৮ জুন ২৪ ঘণ্টায় অর্থাৎ এক দিনে ২৪ ঘণ্টায় সেতুর ওপর দিয়ে ৫৫ হাজার ৪৮৮টি যানবাহন পারাপার হয়েছিল। এসব যানবাহন থেকে টোল আদায় হয় ৩ কোটি ৫৮ লাখ ৪০ হাজার ২০০ টাকা। এটিই ছিল সর্বশেষ এ বঙ্গবন্ধু সেতুর টোল আদায়ের রেকর্ড, যা গত বছরের তুলনায় বেশি।
প্রসঙ্গত, ১৯৯৮ সালের ২৩ জুন বঙ্গবন্ধু সেতু উদ্বোধন করা হয়। আর ২০২২ সালের ২৫ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বহু প্রতীক্ষিত পদ্মা সেতু উদ্বোধন করেন।
রাঙামাটির লংগদু উপজেলায় পৃথক স্থানে বজ্রাঘাতে এক নারীসহ চারজনের মৃত্যু হয়েছে। আজ শনিবার বিকেলে এসব ঘটনা ঘটেছে বলে জানা যায়।
লংগদু থানা পুলিশের ওসি হারুনুর রশিদ গণমাধ্যমকে বজ্রাঘাতে চার জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, লংগদু উপজেলার আটারকছড়া ইউনিয়নের করল্যাছড়ি চেয়ারম্যান টিলার মো. ইব্রাহিমের স্ত্রী রিনা বেগম (৩৬) নিজ বাড়িতে বজ্রপাতে মারা যান। এ ছাড়া কাপ্তাই হ্রদে বোট চলমান অবস্থায় বজ্রপাতে আরও তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের পরিচয় পাওয়া যায়নি।
অন্য আরেকটি সূত্র থেকে জানা যায়, উপজেলার আটারকছড়া ইউনিয়নের একজন ও কাপ্তাই হ্রদে চলমান বোটে বজ্রপাতে তিনজন নিহত হন।
আটরকছড়া ইউনিয়ন পরিষদের সচিব আল আমিন বলেন, ‘আটারকছড়া ইউনিয়নের করল্যাছড়ি চেয়ারম্যান টিলার ইব্রাহিম ভাইয়ের স্ত্রী রিনা বেগম (৩৬) বজ্রপাত নিহত হয়েছেন।’
ভাসান্যদম ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান হযরত আলী বলেন, ‘মাইনীমুখ থেকে মিনা বাজার যাওয়ার পথে বজ্রপাতে তিনজন নিহত হন এবং একজন পানিতে ডুবে নিখোঁজ রয়েছেন।’
রাঙামাটির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (লংগদু সার্কেল) মো. আবদুল আউয়াল জানান, লংগদু উপজেলার দুই স্থানে বজ্রপাতে মোট চারজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। পুলিশ ঘটনাস্থলে গেছেন।
কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া মাঠে দেশের বৃহত্তম ঈদ জামাতের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। ঈদুল আজহার জামাত নির্বিঘ্নে করতে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। জামাত শুরু হবে ঈদের দিন সকাল ৯টায়।
জেলা ও পুলিশ প্রশাসন, ঈদগাহ কমিটির কর্মকর্তাদের তৎপরতা ও দিন-রাতের পরিশ্রমে নামাজের উপযোগী হয়ে উঠছে শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দান। এ মাঠে একসঙ্গে এক লাখের বেশি মুসল্লি জামাতে নামাজ আদায় করেন। রেওয়াজ অনুযায়ী জামাত শুরুর আগে বন্দুকের গুলির শব্দে নামাজের প্রস্তুতি নেওয়ার সংকেত দেওয়া হয়।
এরই মধ্যে মাঠে দাগ কাটা, বালু ফেলা, দেয়ালে রং করাসহ শোলাকিয়া ময়দানকে জামাতের উপযোগী করার কাজ শেষ হয়েছে। সংস্কার করা হয়েছে ওজুখানা ও টয়লেট। চলছে শোভাবর্ধনের কাজও।
তাছাড়া মুসল্লিদের জন্য সুপেয় পানি, মেডিক্যাল টিম, দূর-দূরান্তের মুসল্লিদের জন্য থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থাসহ নানা আয়োজন সম্পন্ন হয়েছে এরই মধ্যে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে বহুসংখ্যক স্বেচ্ছাসেবক ও কয়েকটি মেডিক্যাল টিম।
দূর-দূরান্তের মুসল্লিদের যাতায়াতের জন্য শোলাকিয়া স্পেশাল নামে দুটি বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থাও করেছে রেল কর্তৃপক্ষ। ট্রেন দুটি মুসল্লি নিয়ে ময়মনসিংহ ও ভৈরব থেকে এসে নামাজের শেষে আবার ফিরে যাবে।
শোলাকিয়া ঈদগাহ পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ জানান, সুষ্ঠুভাবে জামাত অনুষ্ঠানের সব প্রস্তুতি এরই মধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। জামাতের মুসল্লিদের জন্য দুটি বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এবার কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে জামাত অনুষ্ঠিত হবে। যেন মুসল্লিরা নিরাপদে জামাতে এসে নির্বিঘ্নে ফিরে যেতে পারেন। জামাতে শুধু টুপি, মাস্ক ও জায়নামাজ ছাড়া কিছুই বহন করা যাবে না।
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ জানান, ২০১৬ সালে শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলার কথা মাথায় রেখে এবারও অন্যান্য বারের চেয়ে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। মাঠসহ আশপাশের এলাকায় সর্বোচ্চ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
তিনি জানান, নামাজের সময় ২ প্লাটুন বিজিবি, বিপুল সংখ্যক পুলিশ, র্যাব. আনসার সদস্যের সমন্বয়ে নিরাপত্তা বলয়ের পাশাপাশি মাঠে সাদা পোশাকে নজরদারি করবে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন। এছাড়াও মাঠসহ প্রবেশ পথগুলোতে থাকছে সিসি ক্যামেরা ও ওয়াচ টাওয়ার। আর আকাশে উড়বে পুলিশের ড্রোন ক্যামেরা। এর ফলে নিরাপদে, নির্বিঘ্নে ও নিশ্চিন্তে মুসল্লিরা নামাজ আদায় করতে পারবেন।
মসনদ-ই-আলা ঈশা খাঁর ষষ্ঠ বংশধর দেওয়ান হয়বত খান বাহাদুর কিশোরগঞ্জের জমিদারি প্রতিষ্ঠার পর ইংরেজি ১৮২৮ সালে কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের পূর্ব প্রান্তে নরসুন্দা নদীর তীরে প্রায় ৭ একর জমির উপর এ ঈদগাহ প্রতিষ্ঠা করেন। সে বছর শোলাকিয়ায় অনুষ্ঠিত প্রথম জামাতে সোয়া লাখ মুসল্লি অংশ নেন বলে মাঠের নাম হয় “সোয়া লাখি মাঠ”। সেখান থেকে উচ্চারণের বিবর্তনে পরিণত হয়ে নাম হয়েছে আজকের শোলাকিয়া মাঠে। মাঠে একসঙ্গে দুই লাখেরও বেশি মুসল্লি জামাতে নামাজ আদায় করেন। প্রায় সাত একর আয়তনের মাঠটিতে নামাজের ২৬৫টি কাতার রয়েছে। এবার এ মাঠে ১৯৭তম ঈদের জামাত হবে।
নেত্রকোনায় চাহিদা মতো ঘুষ না দেওয়ায় বিভাগীয় হিসাবরক্ষক গণপূর্ত বিভাগের তালিকাভুক্ত বেশ কয়েকজন ঠিকাদারের বিল আটকে রেখেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনার প্রতিবাদে সম্প্রতি ভুক্তভোগী ঠিকাদাররা নেত্রকোনা গণপূর্ত কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করেন। এ সময় ওই হিসাব রক্ষকের একটি এলিয়ন ব্যান্ডের সাদা রঙের ব্যক্তিগত গাড়ি আটক করে বিক্ষুব্ধ ঠিকাদাররা। পরে আবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুপারিশে হিসাব রক্ষক নাছিমা আক্তার রেখার চালকের কাছে গাড়ীর কাগজপত্রসহ গাড়ী ফেরত দেন ঠিকাদাররা। সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত নেত্রকোনা গণপূর্ত অফিসের সামনে ঠিকাদাররা গণপূর্ত অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে এই হিসাব রক্ষককে প্রত্যাহারের দাবি জানান ।
ঠিকাদারদের অভিযোগ, যোগদানের পর থেকেই নাছিমা আক্তার রেখা টাকা ছাড়া কোনো বিল-নথিতে হাত দেন না। যারা তাকে টাকা দেন তিনি তাদের বিল ছেড়ে দেন। এ ছাড়া তার চাহিদা মতো টাকা আগে না দিলে তিনি বিভিন্ন অজুহাতে বিল আটকে রাখেন। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নাদিরা কনস্টাকশনের স্বত্ত্বাধিকারী জিল্লুর রহমান বলেন, ‘গত দুই বছর আগে আমি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ২ লাখ ৬১ হাজার টাকার সংস্কার কাজ করি। যথাসময়ে কাজ শেষ করে বিল জমা দেই। নিয়ম মাফিক অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারী বিলে স্বাক্ষর করলেও হিসাবরক্ষক নাছিমা আক্তার রেখা বিলটি টাকার জন্য আটকে রাখেন। গত জুন মাসে আমার কাছে ৩০ হাজার টাকা ঘুষ চাইলে ওই সময় নগদ ৮ হাজার টাকা দেই। কিন্তু তার চাহিদা পূরণ না হওয়ায় তিনি বিভিন্ন অজুহাতে আমার বিলটি আটকে রাখেন।’
চৌধুরী এন্টারপ্রাইজ নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি সুজন ভূঁইয়া বলেন, ‘নেত্রকোনা মেডিকেল কলেজের অস্থায়ী ক্যাম্পাসে সংস্কার কাজ শেষে ২০২২ সালের জুলাইয়ে ১৫ লাখ টাকার বিল জমা দেই। কিন্তু হিসাব রক্ষক ওই কার্যালয়ে যোগদান করেই আমার কাছে ৭৫ হাজার ঘুষ চান। টাকা না দেওয়ায় তিনি আমার বিলের পুরো ফাইলটি গায়েব করে দিয়ে এখন বলছেন আমি নাকি কোনো বিল জমা দেইনি। পরে আমি ফটোকপি দেখালে তিনি বলেন এক লাখ টাকা নিয়ে আসেন। এমনকি ঠিকাদারদের কাছ থেকে ঘুষ নিয়েও কাজ করছেন না। তিনি দামি গাড়িতে করে অফিস করেন।’
ঠিকাদার এনামুল হক রুমেল বলেন, হিসাব রক্ষককে টাকা না দেওয়ায় তার ১ লাখ ২০ হাজার টাকার বিল আটকে রেখেছেন দেড় বছর ধরে। আমার মতো এ রকম সূচি কনস্টাকশন, নাহিদ এন্টারপ্রাইজ, সরকার এন্টারপ্রাইজ, সাদ এন্টারপ্রাইজ, চৌধুরী এন্টারপ্রাইজ, ইমন এন্টারপ্রাইজ, নাদিরা কনস্ট্রাকশন, সরকার ট্রেডার্স, রহিমা এন্টারপ্রাইজ, জয়শ্রী এন্টারপ্রাইজ, এস. এ এন্টারপ্রাইজ সহ ২০ জন ঠিকাদারের বিল আটকে রেখেছেন।
জানতে চাইলে হিসাব রক্ষক নাছিমা বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমি কোনো কথা বলবো না। আমি কারো কাছ থেকে টাকা নেইনি। আর টাকা চাইলেই সহজেই কি কেউ দিয়ে দেয়?’ গাড়িটির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ঠিকাদাররা এভাবে আমার গাড়ির আটকে রেখে কাগজপত্র নিতে পারে না। তবে গাড়িটি আমার না। এটা আমার বোন জমাইয়ের।’ নেত্রকোনা গণপূর্তের নির্বাহী প্রকৌশলী হাসিনুর রহমান বলেন, ‘হিসাব রক্ষকের বিষয়ে অভিযোগ শুনেছি। বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নিব।’
ঈদে পঞ্চগড়ের বিনোদনের স্থানগুলো থেকে অবৈধ স্থাপনাসমূহ সরিয়ে নিয়ে পর্যটকদের ভ্রমণ স্বাচ্ছন্দময় করতে জেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে সমাজের সচেতন মহল।
পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে দেশের নানা প্রান্ত থেকে মানুষজন ছুটে এসেছেন বাড়িতে। উৎসবের এই আয়োজনকে ঘরে ছুটিকালীন পরিবার-পরিজন নিয়ে জেলার দর্শনীয় স্থানগুলোতে ভ্রমণ করেন সবাই। কিন্তু একটি সুবিধাভোগী মহল জেলার এসব পর্যটন কেন্দ্রে বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করেছে। তারা পর্যটকদের জিন্মি করে প্রতারণাসহ নানা প্রতিবন্ধকতায় ফেলে। এলোমেলো পার্কিং, রাস্তা দখল করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা, স্থানীয় ক্লাব সংগঠন, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের নামে চাঁদাবাজি করে সাধারণ মানুষকে করা হয় হয়রানি। বিশেষ করে সদর উপজেলার অমরখানা ইউনিয়নের মহারাজার দিঘি, চাওয়াই অববাহিকা, তেঁতুলিয়া ডাকবাংলো শহরের তুলারডাঙ্গা হিমালয় পার্ক, বোদার টাঙ্গন ব্যারেজ এলাকায় ঘটে নানা অপ্রীতিকর ঘটনা। ফলে এসব পর্যটন কেন্দ্রে আসতে আগ্রহ হারাচ্ছেন পর্যটকরা।
জেলা নাগরিক কিমিটির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এরশাদ হোসেন সরকার বলেন, ‘দেশের সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়। প্রকৃতির অপরূপ সাজে সজ্জিত এই সীমান্ত নগরী। অসংখ্য নদনদী, সমতলের চা, মাল্টা, আমের বাগান, মহানন্দর তীরে বসে ভারতীয় সার্চ লাইটের তীর্যক আলোকরশ্মি, বাংলাবান্ধা সীমান্তে বিজিবি-বিএসএফের যৌথ প্যারেড, রওশনপুরে কাজী অ্যান্ড কাজীর আনন্দধারাসহ মহানন্দা থেকে নীল নুড়ি পাথর সংগ্রহের অপরুপ সৌন্দর্য দেখার জন্যে ছুটে আসে মানুষ। জেলা সদর থেকে সোজা উত্তরে ১৫ কিলোমিটার দূরে পঞ্চগড় বাংলাবান্ধা জাতীয় মহাসড়ক ঘেঁষে চাওয়াই নদীর পাড়ে ‘৭১ এর মুক্তাঞ্চল’। প্রশাসনের উচিত এসব পর্যটনস্থল পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার পাশাপাশি পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।’
মুক্তিযুদ্ধের সময় চাওয়াই নদীর ওপর সেতুটি বিধ্বস্ত করে দেয় মুক্তিবাহিনী। ফলে পাক বাহিনী প্রবেশ করতে পারেনি এ এলাকায়। যুদ্ধের পুরোটা সময় তাই মুক্ত ছিল এ অঞ্চ। স্বাধীনতার পর চাওয়াই এর ওপর নির্মিত হয়েছে নতুন সেতু। চাওয়াই এর অববাহিকায় কংক্রিটের সুন্দর স্থাপনায় তৈরি হয়েছে মনোমুগ্ধকর পরিবেশ। উপজেলা প্রশাসন সরকারি ব্যবস্থাপনায় এখানে গড়ে তুলেছে শিশুদের জন্যে পার্ক, ভ্রমণকারীদের জন্য নদীর তীর ঘেঁষে বসার ব্যবস্থা, সীমান্ত জেলার নামকরণ ফলক। বিকাল থেকে রাত পর্যন্ত পর্যটকদের পদচারণায় প্রাণবন্ত হয়ে উঠে এ এলাকা। শীত মৌসুমে এখানে দাঁড়িয়ে সোজা উত্তরে তাকালে চোখে পড়ে সুনীল আকাশ আর হিমালয় দাঁড়িয়ে আছে পাশাপাশি। প্রতি বছর শীত মৌসুমে দেশের নানা স্থান থেকে তেঁতুলিয়ায় ছুটে আসে অসংখ্য পর্যটক। এই অববাহিকায় সড়ক বিভাগের পরিত্যক্ত সড়কের বিশাল অংশে পর্যটকদের জন্য খোলা স্থানে পার্কিংসহ শিশুদের জন্যে খাবার দোকান, খেলনার দোকানসহ নানা স্থাপনা গড়ে উঠেছে। পর্যটকরা স্বচ্ছন্দেই সেই জায়গাটি ব্যবহার করে আসছে। হঠাৎ করেই স্থানীয় কিছু ব্যবসায়ী সেটি দখল করে পুরো জায়গাটিতে স্তূপ করে রেখেছে বালি পাথর। ফলে বিড়ম্বনায় পড়েছে সাধারণ পর্যটকরা।
জেলা সদর থেকে বেড়াতে আসা পুলিশ কর্মকর্তা কাইয়ুম আলী বলেন, ‘শহরের কোলাহল থেকে মুক্তি পেতে মানুষ অবসরে পরিবার-পরিজন নিয়ে চাওয়াই নদীর মুক্ত বাতসে ছুটে আসে। সড়ক বিভাগের পরিত্যাক্ত সড়কের ওপর পার্কিং করে এলাকা ভ্রমণ করে। হঠাৎ করেই কিছু বালি ব্যবসায়ী জায়গাটি দখলে নিয়ে বালি পাথরের স্তূপ করেছে। এতে সমস্যায় পড়েছে সকলে।’
জেলা শহরের ব্যবসায়ী হাজী আকতারুল ইসলাম বলেন, শহরে শিশুদের বিনোদনের কোন জায়গা নেই। চাওয়াই অববাহিকায় মানুষজন পরিবার পরিজন নিয়ে ছুটে আসে। সুন্দর নান্দনিক এই পরিবেশটি এখন অবৈধ বালি ব্যবসায়ীদের দখলে। এ বিষয়ে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। স্থানীয় অমরখানা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. নুরুজ্জামান বলেন, ‘মহানন্দা, করতোয়া, চাওয়াই, ডাহুক, গবরা, তিরনইসহ অসংখ্য ছোট নদ নদীর পানিপ্রবাহ, সমতলের চা বাগান, শুভ্র কাঞ্চনজঙ্ঘা, রুপ লাবণ্যে ভরা টিউলিপ, সীমান্ত নদীর নীল নুড়ি পাথর পর্যটকদের নানা ভাবে বিমোহিত করে আসছে। সামনে ঈদে এখানে প্রচুর পর্যটকের সমাগম ঘটবে। পরিষদের পক্ষ থেকে এলাকাটি দখলমুক্ত করতে শিগগিরই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ সীমানায় এক সময়ের পরিবেশবান্ধব ও পরিষ্কার পানির ভাণ্ডার শীতলক্ষ্যা নদী এখন মৃত প্রায়। অসংখ্য শিল্প কারখানার অপরিশোধিত বিষাক্ত বর্জ্য ও ডিএনডি এলাকার ময়লা অবাধে নদীতে মিশে পরিবেশ আজ বিপন্ন। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বারবার আশ্বাস দিচ্ছে। তবে দূষণের এই পাগলা ঘোড়ার লাগাম টেনে ধরতে পারছে কেউই। এতে নদীটি এখন জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
শিল্পবর্জ্যের ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে এক সময়ের নজরকাড়া শীতলক্ষ্যা। নদীর পানিতে তরল নির্গমনকারী প্রতিষ্ঠানের বিষাক্ত বর্জ্য পড়তে পড়েতে ভিন্ন রং ধারণ করেছে। দুর্গন্ধযুক্ত পানি নদী-তীরবর্তী এলাকার পরিবেশে বিপর্যয় ডেকে আনছে। পানি দূষিত হওয়ায় নদীর জলজ প্রাণী মরে যাচ্ছে। হারিয়ে যাচ্ছে নদীর সৌন্দর্য।
স্থানীয়দের মতে একসময় শীতলক্ষ্যা নদীর পানি আয়নার মতো পরিষ্কার থাকলেও কালের পরিবর্তনে আর অসাধু শিল্প কারখানা মালিকদের প্রয়োজন মিটাতে গিয়ে শীতলক্ষ্যা কালো পানির নদীতে পরিণত হয়েছে। এ ব্যাপারে নারায়ণগঞ্জ পরিবেশ অধিদপ্তরের নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ মামুন জানান, নদীর পাড়ে যেসব প্রতিষ্ঠান পানি শোধনাগার ইটিপি প্ল্যান না করেই নদীতে বর্জ্য ফেলছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে সক্রিয় রয়েছে নারায়ণগঞ্জ পরিবেশ অধিদপ্তর।
আব্দুল করিম নামে শিমড়াইল এলাকার বাসিন্দা দৈনিক বাংলাকে বলেন, এক সময়ে এই নদী ছিল আয়নার মতো। পানি টলমল করত তার। এই পানি খেয়ে পিপাসা মিটাত সবাই। আজ তা এখন সুদূর অতীত। নদীটি এখন মরা খালে রূপ নিয়েছে।
তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘আবার যদি ফিরে পেতাম সেই নদীটি। তাহলে কতই না শান্তি পেতাম।’ আমেনা আক্তার নামে সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, ‘নদীর পাড়ে বসবাসকারীরা এখন নদীর পানির দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ। এ ছাড়া নদীর কালো পানি গায়ে লাগলে নানাবিধ অসুখ-বিসুখে আক্রান্ত হয়ে পড়ি আমরা।’
নারায়ণগঞ্জ পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মুহাম্মদ হাফিজুর রহমান দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘শীতলক্ষ্যার দূষণ রোধে নদী-তীরবর্তী এলাকার সব তরল নির্গমনকারী প্রতিষ্ঠানকে অভিযান পরিচালনা করে জরিমানা ও সাবধান করা হচ্ছে। নদীটি রক্ষায় আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করছি।’
নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাহমুদুল হক বলেন, শীতলক্ষ্যা নদী আমাদের ঐতিহ্য। তাকে ফিরিয়ে আনতে কাজ করছে জেলা প্রশাসন।
চাল, ডাল, পেঁয়াজ, তেলসহ নানা ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ও মালামাল নিয়ে সেন্টমার্টিনের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছে এমভি ‘বারো আউলিয়া’ নামে একটি জাহাজ।
আজ শুক্রবার (১৪ জুন) দুপুর ২টা ১৫মিনিটের দিকে কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়া বিআইডব্লিউটিএ ঘাট থেকে জাহাজটি সেন্টমার্টিনের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়।
জানা যায়, জাহাজটিতে দেড় শতাধিক লোকজন ও সরকারি সহায়তায় খাদ্যপণ্য এবং পাঁচটি কোরবানির গরু রয়েছে।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. ইয়ামিন হোসেন জানান, দ্বীপের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সমন্বয় করে জাহাজটি পাঠানো হয়েছে। এটি বঙ্গোপসাগর দিয়ে টেকনাফ পৌঁছে ঘোলারচর হয়ে সেন্টমার্টিন পৌঁছাবে। পণ্য সামগ্রীর পাশাপাশি কক্সবাজারে আটকে পড়া সেন্টমার্টিনের অনেক বাসিন্দাও এই জাহাজে করে সেন্টমার্টিন যাবেন।
শুক্রবার সকাল ১০টায় বিআইডব্লিউটিএ ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, ‘এমভি বারো আউলিয়া’ জাহাজে তোলা হয় চাল, ডাল, পেঁয়াজসহ নানা ধরনের ভোজ্যপণ্য। একই সঙ্গে কক্সবাজারের বিভিন্ন জায়গায় আটকে পড়া সেন্টমার্টিনের বাসিন্দারাও জড়ো হন নিজ এলাকায় ফেরার জন্য।
এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) বিকালে বিজিবি ও কোস্টগার্ডের নিরাপত্তায় সেন্টমার্টিন থেকে তিনটি ট্রলারে করে দুই শতাধিক মানুষ টেকনাফ পৌঁছান। এ সময় টেকনাফ থেকে চারটি ট্রলারে করে তিন শতাধিক লোক সেন্টমার্টিনের উদ্দেশে রওনা হন।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী জানান, বৃহস্পতিবার দুপুরে চারটি ট্রলার লোকজন নিয়ে সেন্টমার্টিন দ্বীপে যায়। সেখান থেকে অন্তত দুই শতাধিক মানুষ টেকনাফে ফিরে আসেন। এসময় বিজিবি ও কোস্টগার্ড সদস্যরা নিরাপত্তা জোরদার করেছিলেন।
প্রসঙ্গত, মিয়ানমারে সংঘাতের জেরে টেকনাফ সেন্টমার্টিন নৌরুটের নাফ নদীর নাইক্ষ্যংদিয়া পয়েন্টে বাংলাদেশি ট্রলারকে লক্ষ করে মিয়ানমার থেকে বার বার গুলি ছোঁড়া হয়। এ ঘটনায় গত এক সপ্তাহ ধরে ট্রলার চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দ্বীপটিতে খাদ্য সংকট দেখা দেয়। এ অবস্থায় বৃহস্পতিবার থেকে কক্সবাজার থেকে বিকল্প পথে জাহাজ চলাচল শুরু করা হয়।
টাঙ্গাইলে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাইভেটকারের চালকসহ চারজন নিহত হয়েছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও অন্তত চারজন।
আজ শুক্রবার (১৪ জুন) ভোরে কালিহাতী উপজেলার বাগুটিয়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
জানা যায়, কালিহাতী উপজেলার বাগুটিয়া এলাকায় বঙ্গবন্ধু টেক্সটাইলের কলেজের সামনে ভোরে ট্রাক ও প্রাইভেটকারের সংঘর্ষে প্রাইভেট কারের চালকসহ তিনজন নিহত ও চারজন আহত হন।
নিহত ব্যক্তিদের এখনো কোনো পরিচয় পাওয়া যায়নি। তবে এক ব্যক্তি প্রাইভেটকারের চালক ছিলেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
এ বিষয়ে অ্যালেঙ্গা হাইওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মীর মো. সাজেদুর রহমান বলেন, ‘মাঝ রাতের কোনো এক সময় কালিহাতী উপজেলার বাগুটিয়া এলাকায় একটি গরু বোঝাই ট্রাকের সঙ্গে একটি প্রাইভেটকারের সংঘর্ষ ঘটে। পরে ঘটনাস্থল থেকে গুরুতর অবস্থায় টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে ৭ জনকে নেওয়া হয়।’
এ সময় জরুরি বিভাগে কর্মরত চিকিৎসক ছয় জনের মধ্যে তিনজনকে মৃত ঘোষণা করেন। এখনো নিহত দুইজনের পরিচয় পাওয়া যায়নি বলেও জানান তিনি।
ঢাকা-টাঙ্গাইল বঙ্গবন্ধুসেতু মহাসড়কে কালিহাতী উপজেলার পৌলী নামক স্থানে সকাল ৮টার দিকে সিমেন্ট ভর্তি ট্রাকের সঙ্গে যাত্রীবাহী বাসের সংঘর্ষে একজন মারা যান।
এ ছাড়াও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে আইল্যান্ডের সঙ্গে ধাক্কা লেগে এক মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হয়েছেন।
ঈদুল আজহার বাকি আর মাত্র কয়েকদিন। ঈদের আনন্দ পরিবারের সঙ্গে ভাগাভাগি করে নিতে গুড়ি-গুড়ি বৃষ্টি উপেক্ষা করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কেউ ট্রাক-পিকআপ কেউ বা মোটরসাইকেলযোগে ছুটছেন। বাড়ি ফিরছেন কর্মস্থল থেকে ঘরমুখো মানুষ।
আজ শুক্রবার (১৪ জুন) সকাল থেকে বেলা ১১ টা পর্যন্ত ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কের অ্যালেঙ্গা ও বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়।
এদিকে, ঈদযাত্রায় মহাসড়কে স্বাভাবিকের তুলনায় দুই থেকে প্রায় আড়াইগুণ যানবাহন চলাচলের চাপ বেড়েছে। ফলে ঈদে ছুটির প্রথম দিনই মহাসড়কে উত্তরবঙ্গগামী লেনে যানবাহনের দীর্ঘদিন লাইন সৃষ্টি হয়েছে।
ঈদের ছুটি পেয়ে বৃষ্টি মাথায় নিয়ে বাড়ি ফিরছেন গাইবান্ধার হাসান আলী ও তার পরিবার।
তিনি বলেন, ভোরে সাভার থেকে বাসে উঠেছি। এলেঙ্গা এসে যানজটে না পড়লেও গাড়ি চলাচলে ধীরগতি।
পোশাককর্মী জাহানারা সুলতানা বলেন, তার বাড়ি বগুড়ার সান্তাতার। চন্দ্রা থেকে টাঙ্গাইলের রাবনা বাইপাস পর্যন্ত কোনো ভোগান্তিতে পড়তে হয়নি তার। কিন্তু সেখান থেকে সেতু পূর্ব আসতে সময় লেগে দুই ঘণ্টার মতো।
অপরদিকে, উত্তরবঙ্গগামী লেনের পুংলী হতে আশেকপুর বাইপাস পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটার এলাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে মালামালসহ ট্রাক সরিয়ে নেওয়ার পর পরিবহনগুলো ধীরগতি চলাচল করছে।
অ্যালেঙ্গা হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মীর মো. সাজেদুর রহমান জানান, ভোরে সিমেন্টবোঝাই একটি ট্রাক পুংলী এলাকায় উল্টে ট্রাকে থাকা বস্তাগুলো সড়কে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে। এতে কিছু সময় পরিবহন চলাচল বন্ধ ছিল উত্তরবঙ্গগামী লেনে।
তিনি আরও জানান, সার্ভিস লেন চালু রাখা হয়েছিল। পরে ক্ষতিগ্রস্ত ট্রাকটি সরিয়ে নেওয়ার পর উত্তরবঙ্গ লেন খুলে দেয়া হলে তখন থেকেই উত্তরবঙ্গগামী লেনে যানবাহনগুলো ধীরগতিতে চলাচল করছে এবং মহাসড়কে যানবাহনের অতিরিক্ত চাপ রয়েছে।
ঈদের ছুটির প্রথম দিন সূর্য ওঠার আগেই যানবাহনের ঢল নামে দক্ষিণবঙ্গের প্রবেশদ্বার পদ্মা সেতুতে। দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি।
আজ শুক্রবার (১৪ জুন) ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে পদ্মা সেতুর উত্তর টোল প্লাজামুখী যানবাহনের ধীরগতি লক্ষ্য করা যায়। বঙ্গবন্ধু মহাসড়কের শ্রীনগর উপজেলার ছনবাড়ি এই অবস্থা দেখতে পাওয়া যায়।
মাওয়া ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক জিয়াউল ইসলাম বলেন, ‘রাতে পদ্মা সেতু সংলগ্ন ওয়েট স্কেলে পণ্যবাহী ট্রাক আটকে রাখায় শুক্রবার ভোরে মহাসড়কে যানবাহনের জটলা দেখা দেয়। এতে প্রায় ছয় কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যানবাহনের ধীর গতি ছিল।’
তিনি বলেন, ‘পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেলের জন্য আলাদা বুথসহ সাতটি বুথে নিরবচ্ছিন্ন টোল আদায় করা হচ্ছে। রাতের অপেক্ষমাণ পণ্যবাহী ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যানও এখন চলাচল শুরু করেছে। ফলে টোল আদায়ে হিমশিম খাচ্ছে কর্তৃপক্ষ।’
সেতু কর্তৃপক্ষ বলছে, স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে যানবাহনের চাপ বেড়ে যাওয়ায় পদ্মা সেতুর টোল প্লাজায় যানবাহনগুলোকে টোল দিতে অপেক্ষা করতে হচ্ছে কিছু সময়। সেতু এলাকায় যানবাহন এগুচ্ছে ধীরগতিতে।
মাগুড়াগামী বাসযাত্রী সোহেল রানা বলেন, ‘আমি ঢাকার একটি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে কাজ করি। প্রতিবছরের মত ঈদ ছুটির প্রথম দিনে বাড়ি যাচ্ছি। মহাসড়কে আসতে কোন অসুবিধা না হলেও পদ্মা সেতুর টোল প্লাজায় যানজটে পড়েছি।’
পদ্মা সেতু টোল প্লাজায় অপেক্ষমাণ যাত্রী পিরোজপুর জেলার বাসিন্দা আলী আহসান বলেন, ‘দেশে গিয়ে কোরবানির পশু কিনবো। বাড়িতে সবাই আমার অপেক্ষায় আছেন। তাই ঈদ ছুটির প্রথম দিনই বাড়ির দিকে রওনা হয়েছি। সেতু এলাকায় ৪০ মিনিট ধরে অপেক্ষা করছি।’
মোটরসাইকেল চালক ফয়সাল শাহপরাণ বলেন, ‘ভোরে মোটরসাইকেল নিয়ে ঢাকার মোহাম্মদপুর থেকে রওনা হয়েছি বাড়ির উদ্দেশ্যে। ভেবেছিলাম ভোরে সেতুর টোল প্লাজা ফাঁকা থাকবে। কিন্তু এখানে এসে কিছুটা ধীরগতিতে পড়েছি। তারপরও তেমন কষ্ট হচ্ছে না। সেতু পার হতে পারলেই আর বেশি সময় লাগবে না বাড়ি পৌঁছতে। এটা ভেবেই ভালো লাগছে।’