রোববার, ২ নভেম্বর ২০২৫
১৮ কার্তিক ১৪৩২

চার ঘণ্টায় ভোট পড়েছে ১৭.৩১ শতাংশ: ইসি সচিব

নির্বাচন ভবনে বুধবার সংবাদ সম্মেলন করেন নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব শফিউল। ছবি: সংগৃহীত
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত : ৫ জুন, ২০২৪ ১৪:৪১

ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের চতুর্থ ও শেষ ধাপে সকাল ৮টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত ৬০ উপজেলায় ১৭ দশমিক ৩১ শতাংশ পড়েছে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব শফিউল।

আজ বুধবার নির্বাচন ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।

সচিব বলেন, ২৬ জেলায় ৬০ উপজেলায় সকাল থেকে শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ চলছে। সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ১৭ দশমিক ৩১ শতাংশ ভোট পড়েছে। এ পর্যন্ত কোথাও বড় ধরনের কোনো অনিয়ম, গোলযোগের তথ্য পায়নি ইসির কেন্দ্রীয় মনিটরিং সেল।

ভোটের সময় অনিয়মের চেষ্টা করায় ৪ জনকে আটক করা হয়েছে জানিয়ে ইসি সচিব বলেন, ৩ জনকে জরিমানাও করা হয়েছে।

এদিকে, একযোগে শুরু হওয়া ভোটগ্রহণ চলবে বিকাল ৪টা পর্যন্ত। এছাড়া ঘূর্ণিঝড় রেমালের কারণে স্থগিত হওয়া আগের ধাপের ২০ উপজেলার ভোট অনুষ্ঠিত হবে আগামী ৯ জুন।

নির্বাচন ঘিরে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা, ভোট কেন্দ্রের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং শৃঙ্খলা বজায় রাখতে ৬৭ হাজার ৭০৭ জন সদস্য মোতায়েন করেছে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী। তাদের পাশাপাশি নির্বাচনী এলাকায় শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার্থে মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে কাজ করছে ১৬৬ প্লাটুন বিজিবি।

বিষয়:

যুদ্ধবিরতি পরও গাজায় ত্রাণ ঢুকতে দিচ্ছে না ইসরায়েল

আপডেটেড ২ নভেম্বর, ২০২৫ ১৩:৫৩
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলেও ফিলিস্তিনের গাজায় প্রতিশ্রুত ত্রাণ ঢুকতে বাধা দিচ্ছে ইসরায়েল। এদিকে যুদ্ধবিরতির শর্ত ভেঙে ইসরায়েলি বাহিনীর অব্যাহত হামলায় গাজায় বাড়ছে হতাহতের সংখ্যা ও মানবিক সংকট।

রোববার (২ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।

গাজা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পরও ইসরায়েল গাজায় প্রতিশ্রুত ত্রাণসামগ্রীর খুব সামান্য অংশই প্রবেশ করতে দিচ্ছে।

শনিবার এক বিবৃতিতে গাজার সরকারি গণমাধ্যম দপ্তর জানায়, ১০ থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত ৩ হাজার ২০৩টি বাণিজ্যিক ও ত্রাণবাহী ট্রাক গাজায় প্রবেশ করেছে। অর্থাৎ প্রতিদিন গড়ে মাত্র ১৪৫টি ট্রাক প্রবেশের অনুমতি পেয়েছে। যা যুদ্ধবিরতির অংশ হিসেবে নির্ধারিত দৈনিক ৬০০ ট্রাকের মাত্র ২৪ শতাংশ।

বিবৃতিতে বলা হয়, “ইসরায়েলি দখলদার বাহিনী ইচ্ছাকৃতভাবে ত্রাণ ও বাণিজ্যিক পণ্যবাহী ট্রাকগুলোকে বাধা দিচ্ছে। এর ফলে ২৪ লাখেরও বেশি মানুষের মানবিক সংকট ভয়াবহভাবে বেড়েছে। আর এর দায় সম্পূর্ণ ইসরায়েলের।”

এমন অবস্থায় “কোনও শর্ত বা বিধিনিষেধ ছাড়াই” ত্রাণ প্রবেশের অনুমতি দিতে ইসরায়েলের ওপর চাপ প্রয়োগ করার জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পসহ যুদ্ধবিরতি চুক্তির মধ্যস্থতাকারীদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।

মূলত যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর থেকে ত্রাণ প্রবাহ কিছুটা বাড়লেও ইসরায়েলি বিধিনিষেধের কারণে গাজার অধিকাংশ মানুষ এখনো খাবার, পানি, ওষুধসহ মৌলিক প্রয়োজনীয় জিনিসের তীব্র সংকটে রয়েছেন।

এছাড়া দুই বছরের লাগাতার ইসরায়েলি হামলায় বহু পরিবার এখনো আশ্রয়হীন। ঘরবাড়ি ও পুরো এলাকা ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় অনেকেই এখন খোলা আকাশের নিচে দিন কাটাচ্ছেন।

জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের মুখপাত্র ফারহান হক গত বৃহস্পতিবার বলেন, ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের নির্দেশে রুট পরিবর্তনের কারণে ত্রাণ কার্যক্রম সীমিত হয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, “এখন কনভয়গুলোকে মিসরের সীমান্তঘেঁষা ফিলাডেলফি করিডর হয়ে উপকূলীয় সংকীর্ণ ও ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা দিয়ে যেতে হচ্ছে, যা মারাত্মকভাবে যানজটে আক্রান্ত।”

তিনি আরো জানান, ত্রাণ কার্যক্রম জোরদারে অতিরিক্ত সীমান্তপথ ও অভ্যন্তরীণ রুট চালুর প্রয়োজন রয়েছে।

এদিকে যুদ্ধবিরতির শর্ত ভঙ্গ করে ইসরায়েলি বাহিনী শনিবারও গাজা উপত্যকার বিভিন্ন স্থানে হামলা চালিয়েছে। দক্ষিণাঞ্চলীয় খান ইউনিস এলাকায় বিমান, কামান ও ট্যাংকের গোলায় ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়।

উত্তর গাজার জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরের পূর্বদিকে কয়েকটি আবাসিক ভবনও গুঁড়িয়ে দিয়েছে ইসরায়েলি সেনারা।

আল জাজিরার প্রতিবেদক তারেক আবু আজজুম জানিয়েছেন, খান ইউনিসে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, “ইসরায়েলি ড্রোন আর ভারী গোলাবর্ষণে ঘরবাড়ি ও কৃষিজমি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, আকাশে ড্রোনের অব্যাহত উপস্থিতি ও বোমাবর্ষণের কারণে গাজার সিভিল ডিফেন্স সংস্থা অনেক ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় পৌঁছাতে পারছে না।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর থেকে ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ২২২ ফিলিস্তিনি নিহত ও ৫৯৪ জন আহত হয়েছেন।


পদ্মার দুর্গম চরে সক্রিয় চরম পন্থীবাহিনী

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৌলতপুর কুষ্টিয়া প্রতিনিধি

কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার পদ্মা নদীর দুর্গম চরাঞ্চল এবং ভারত সীমান্তঘেঁষা অঞ্চল দীর্ঘদিন ধরে অপরাধীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। সম্প্রতি পদ্মার চরে জমি দখলকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের সংঘর্ষ এবং ঘণ্টাব্যাপী গোলাগুলিতে তিনজন নিহতের ঘটনায় নড়েচড়ে বসলেও প্রশাসন কোন করতে পারেনি। খোঁজ নিয়ে জানা যাচ্ছে, শুধু কাকন কিংবা মণ্ডল বাহিনী নয়; সাইদ, রাখি, কাইগি, রাজ্জাক ও বাহান্ন বাহিনীও সক্রিয় এই চরাঞ্চলে।

রাজনৈতিক আশ্রয়-প্রশ্রয়ে এসব বাহিনী জমি দখল, ফসল কেটে নেওয়া, চাঁদাবাজি, বালু উত্তোলন, মাদক, অস্ত্র পাচারসহ নানা অপরাধে জড়িত। স্থানীয়দের অভিযোগ, এসব বাহিনী পদ্মার এমন দুর্গম চরে ‘সাম্রাজ্য’ গড়ে তুলেছে, যেখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রবেশ একেবারে সীমিত। কুষ্টিয়া, রাজশাহী, নাটোর ও পাবনা জেলার দুর্গম চরাঞ্চলজুড়ে তাদের বিস্তার।

সম্প্রতি কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার পদ্মা নদীর দুর্গম চরে কাকন বাহিনী ও মণ্ডল গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষে উভয় পক্ষের তিনজন নিহত হন। এরপর নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন। এ ঘটনায় করা মামলায় ‘কাকন বাহিনীর’ প্রধান কাকনকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। এরপর গত বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত জেলা পুলিশের একাধিক ইউনিট শতাধিক সদস্য নিয়ে পদ্মার চরে সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করেছে। তবে প্রথম দিনের অভিযানে কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। প্রশাসন জানিয়েছে, অভিযান অব্যাহত থাকবে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দৌলতপুরের পদ্মা চরাঞ্চলে দীর্ঘদিন ধরে ডজনখানেক সন্ত্রাসী গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। তবে ২০ বছর আগে দুটি সন্ত্রাসী বাহিনীর উত্থান ঘটেছিল বিস্তৃত পদ্মার দুর্গম এই চরাঞ্চলে। তাদের ভাগ না দিয়ে কেউ চরের ফসল ঘরে তুলতে পারত না। এ নিয়ে দ্বন্দ্বে তাদের হাতে ওই সময় ৪১ জন খুন হয় বলে সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়। তখন চরের মাটিতে পা দিতে গা ছমছম করত। দুই বাহিনীর নাম ছিল ‘পান্না বাহিনী’ ও ‘লালচাঁদ বাহিনী’। পান্নার ওস্তাদ ছিলেন এই কাকন।

সূত্র জানায়, এ বছরের জুন থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ‘কাকন বাহিনী’র বিরুদ্ধে ঈশ্বরদী, বাঘা, লালপুর ও দৌলতপুর থানায় মোট ছয়টি মামলা হয়েছে। বাহিনীর প্রধান কাকন পাবনার ঈশ্বরদী কলেজ রোডের বাসিন্দা হলেও তাঁর পৈতৃক নিবাস কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের মরিচা ইউনিয়নের মাজদিয়াড় গ্রামে।

১৯৯৪ সালে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে বিএসসি ডিগ্রি অর্জনের পর তিনি চাকরি করলেও ২০০৫ সালে পান্না নিহত হওয়ার পর ২০০৭ সালে সৌদি আরব থেকে ফিরে এসে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতাদের ছত্রচ্ছায়ায় বালুমহাল দখল ও নিয়ন্ত্রণ শুরু করেন। এর পর থেকে তিনি নিজস্ব সন্ত্রাসী বাহিনী গঠন করেন। বর্তমানে তাঁর বাহিনীতে প্রায় ৪০ জন সদস্য রয়েছেন বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।

গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর উপজেলার ফিলিপনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নইম উদ্দিন সেন্টুকে নিজ কার্যালয়ে গুলি করে হত্যার ঘটনায় আলোচনায় আসে টুকু বাহিনী। বাহিনীর প্রধান তরিকুল ইসলাম ওরফে টুকু ফিলিপনগর গ্রামের বাসিন্দা। তাঁর দলের সদস্য ২০ জনের বেশি। হত্যাকাণ্ডের পর টুকুসহ বেশ কয়েকজন সহযোগীর নামে মামলা হয়, যদিও আটকের পরে তাঁরা জামিনে মুক্তি পান।

চলতি বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি রাতে মরিচা ইউনিয়নের বৈরাগীরচর মণ্ডলপাড়া এলাকায় রাজু আহমেদ (১৮) নামের এক যুবককে গুলি চালিয়ে হত্যা করে সাইদ বাহিনী। বাহিনীর প্রধান আবু সাঈদ মণ্ডল (৩৫) মরিচা ইউনিয়নের বৈরাগীরচর দক্ষিণ ভাঙ্গাপাড়া এলাকার ভাদু মণ্ডলের ছেলে। তাঁর বিরুদ্ধে দৌলতপুর থানায় ৯টির বেশি মামলা রয়েছে।

দৌলতপুর থানায় আলোচনায় থাকা আরেক বাহিনী ‘রাখি বাহিনী’র প্রধান রাকিবুল ইসলাম রাখি। তাঁর বিরুদ্ধে সাতটি মামলা রয়েছে। তাঁর বাড়ি ফিলিপনগর ইউনিয়নের দারোগার মোড়ে। এ ছাড়া রয়েছে কাইগি বাহিনী, রাজ্জাক বাহিনী ও বাহান্ন বাহিনী।

একাধিক গোয়েন্দা সূত্র বলছে, ৫ আগস্টের পর দৌলতপুর সীমান্ত দিয়ে বিপুল অস্ত্র দেশে ঢোকার তথ্য রয়েছে। জানা গেছে, তিন চালানে মোট প্রায় ২ হাজার আগ্নেয়াস্ত্র এসেছে দেশে।

দুর্গম চরে অভিযান

বৃহস্পতিবার কুষ্টিয়া জেলা পুলিশ ১২০ জন সদস্য নিয়ে সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ৭টা পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। তবে পুলিশ এই অভিযানে চরবাসী খুবই খুশি। এতে জনমনে স্বস্তি ফিরবে বলে তাঁরা আশা করছেন সেখানকার বাসিন্দারা।

এবিষয়ে কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) ফয়সাল মাহমুদ বলেন, ‘এই অভিযান রাতেও চলবে। অভিযান শেষ হবে না। এটা যে শুধু আসামি ধরা, তা নয়। মানুষকে আশ্বস্ত করা হচ্ছে, সন্ত্রাসীদের আশ্রয় এই চরগুলোতে আর হবে না।’


জয়পুরহাটে অসময়ের বৃষ্টিতে ফসলের ব্যাপক ক্ষতির শঙ্কায় কৃষক

জয়পুরহাটে অসময়ের বৃষ্টিতে বিস্তীর্ণ মাঠ জুড়ে আধা-পাকা ধান হেলে পড়েছে, ধানের গাছ মাটিতে নুয়ে পড়ে গড়াগড়ি খাচ্ছে পানিতে। ছবি: দৈনিক বাংলা 
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
রাব্বিউল হাসান, জয়পুরহাট 

আলু উৎপাদন দেশের দ্বিতীয় জেলা জয়পুরহাট। গত বছর আলু চাষ করে এখনো জেলার হিমাগারে পড়ে রয়েছে লাখ লাখ বস্তা আলু। জেলার ২১টি হিমাগারে পড়ে রয়েছে লাখ লাখ বস্তা আলু। এতে ব্যাপক লোকসানে মুখে পড়েছেন জয়পুরহাটের কৃষকরা। সেই লোকসান পুষিয়ে নিতে আগাম আলু চাষ শুরু করেন তারা।

কিন্তু বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে জেলার পাঁচ উপজেলায় গত বৃহস্পতিবার থেকে লাগাতার বৃষ্টিতে ফসলি জমিতে পানি জমে। যেসব জমিতে আগাম আলু রোপণ করা হয়েছে, সেসব জমিতে পানি জমায় আলুর বীজ পচে বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। যে কারণে আলু চাষিদের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। এছাড়াও রোপা আমন ধান ও আগাম শীতকালীন শাক-সবজি ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। আর কয়েকদিনের মধ্যে পাকা ধান কাটা শুরু হবে। এ অসময়ে বৃষ্টি হয়ে এখন কৃষকদের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, জেলায় আমন ধান চাষ হয়েছে ৭০ হাজার ৯৫ হেক্টর জমিতে। আগাম শীতকালীন সবজি চাষ করা হয়েছে ১ হাজার ৯৯৫ হেক্টর জমিতে। আলু চাষের লক্ষ্য মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৯ হাজার হেক্টর জমিতে। ইতিমধ্যে আগাম জাতের আলু ৭৭৭ হেক্টর জমিতে আলু রোপণ করা হয়েছে। আজ রোববার পর্যন্ত জেলার ২১টি হিমাগারে আলু মজুত রয়েছে ৮৪ হাজার ১৬৯ মেট্রিক টন।

বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, আলু আবাদের জন্য কোথাও কোথাও প্রস্তুত করা হয়েছিল জমি, কোথায় সদ্য রোপণ করা হয়েছে বীজ। বৃষ্টিতে জমিতেই জমেছে পানি। ফসল বাঁচাতে পানি সরানোর চেষ্টা করছেন কৃষকরা। শুধু আলু ক্ষেত নয়, আগাম জাতের শীতকালীন ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো, মরিচ, বেগুন, মুলা, চিচিঙ্গাসহ বিভিন্ন শাক-সবজির গাছও মাটিতে লুটিয়ে পড়েছে। যেসব ক্ষেতের সবজি এখনো ভালো রয়েছে, তা রক্ষায় চেষ্টা চালাচ্ছেন কৃষকরা। এছাড়াও মাঠের আধা-পাকা ধান হেলে পড়েছে, গড়াগড়ি খাচ্ছে পানিতে।

কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গেল বছর আলুর ভালো দাম না পাওযায় এবছর লাভের আশায় আগাম আলু চাষ শুরু করেন তারা। তবে কয়েক দিনের বৃষ্টি হওযায় আলুর জমিতে পানি জমে। ফলে বৃষ্টির পানিতে একদিকে রোপণকৃত বীজ পচে গেলে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বেন তারা। অনাবাদি জমি থেকে পানি নিষ্কাশনের পর বীজ রোপণ কবে করা যাবে তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। এতে আরও একমাস আলু রোপণে দেরি হবে।

অন্যদিকে অসময়ের বৃষ্টিতে জমিতে আমন ধানের গাছ মাটিতে নুয়ে পড়েছে। পানিতে ভাসছে ধানের গাছ। আবার শীতকালীন শাক-সবজির জমিতেও দেখা lদিয়েছে শিকড় পচে যাওয়ার আশঙ্কা। পানি দ্রুত না সরলে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বেন কৃষকরা।

সদর উপজেলার ধারকী গ্রামের কৃষক গোলাপ হোসেন বলেন, গতবছর আলু চাষ করে অনেক লোকসান হয়েছে। এবার আগাম আলু লাগালে ভালো দাম পাওয়া যাবে। সেই আশায় দেড় বিঘা জমিতে আলু বীজ রোপণ করে এক সপ্তাহ হয়নি। এর মধ্যে কয়েকদিন থেকে থেমে থেমে লাগাতার বৃষ্টি। এখন বৃষ্টির পানি জমিতে জমে থাকায় গাছ ঠিক মতো উঠতে পারে নাও পারে। কী করবো ভেবে পাচ্ছি না।

সদর উপজেলার সোটাহার ধারকী গ্রামের কৃষক আব্দুল রশিদ বলেন, সবেমাত্র এক সপ্তাহ আগে এক বিঘা জমিতে আলুর বীজ রোপণ করেছি। এরই মধ্যে কয়েকদিন থেকে বৃষ্টি। এখনও মেঘে ঢেকে আছে। ঝিরঝির করে থেমে থেমে বৃষ্টিও পড়ছে। মাটির নিচে রোপণ করা আলুর বীজ একটু পানি পেলে পচে নষ্ট হয়ে যায়। ফলে ক্ষেতের অধিকাংশ আলু পচে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। ফসলের এই ক্ষতিতে এখন দিশেহারা হয়ে পড়েছি।

ক্ষেতলাল উপজেলার কুসুমশহর গ্রামের আব্দুর রহিম বলেন, আগাম আলু চাষে কিছুটা ঝুঁকি থাকে। এলাকার কয়েকজন আলু লাগাইতাছে দেখে আমিও দুই বিঘা জমিতে কয়েক দিন আগে লাগালাম। কয়েক দিনের থেমে থেমে বৃষ্টি হওয়ায় আলুর জমিতে পানি জমে গেছে। এতে করে রোপণকৃত বীজ পঁচে যাওয়ার আশঙ্কা আছে।

কালাই উপজেলার পুনট এলাকার কৃষক আজিজার রহমান বলেন, ধান পাকতে শুরু করেছে। কয়েকদিন পরেই ধান কাটা শুরু হবে। কিন্তু অসময়ের বৃষ্টি ও দমকা হাওয়ায় আমার আড়াই বিঘা জমির আধা-পাকা ধান হেলে পড়েছে, ধানের গাছ মাটিতে নুয়ে পড়ে গড়াগড়ি খাচ্ছে পানিতে। এই ধান আর ঘরে আসবে না। এমনিতেই গত বছর আলু চাষ করে ব্যাপক লোকসান হয়েছে।

কালাই উপজেলার ধাপ গ্রামের কৃষক শফিকুল ইসলাম বলেন, সার সিন্ডিকেটের কারণে সার পায় না। আবার বস্তাপ্রতি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা বেশি দিয়ে সার কিনে যদিও বা ফসল রোপন করি। কিছুদিন পরেই পড়ে সেচ সিন্ডিকেটের পাল্লায়। ঋণ করে সমস্ত টাকা দিয়ে ফসল ফলায় কিন্তু ফসলের ন্যায্য দাম পাই না। আবার এরকম প্রাকৃতিক দুর্যোগ তো লেগেই থাকে। এদিকে সরকারি কর্মকর্তাদের বেতন স্কেল বাড়ে আর ট্যাক্স বাড়ে এই দুর্ভাগা কৃষকের ওপর। কারণ কৃষকরা আন্দোলন করতে পারে না।

ক্ষেতলাল উপজেলার তেলাল গ্রামের খায়রুল ইসলাম ও আব্দুল আজিজ বলেন, কয়েক দিন ধরে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। এতে কাঁচা মরিচ, টমেটো বেগুন, করলা, চিচিঙ্গাসহ বিভিন্ন সবজির গাছের গোড়ায় পচন দেখা দিয়েছে ও ফুল ফল ঝরে গিয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। অসময়ের বৃষ্টিতে কৃষকরা খরচের টাকাও তুলতে পারবে কিনা, তা নিয়ে সংশয় আছে।

জয়পুরহাট জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ এ কে এম সাদিকুল ইসলাম বলেন, জেলায় বিভিন্ন উপজেলার প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে শাকসবজি ২৭ হেক্টর জমিতে, আমন ধান ৩৩৭ হেক্টর জমিতে ও আগাম জাতের আলু ৮৫ হেক্টর জমিতে কয়েকদিনের অসময়ের বৃষ্টির পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। এখনো ক্ষতির

হিসাব নিরূপণ করা যায়নি। ঝড় বৃষ্টি হলেও ভারী বর্ষণ হয়নি। সবেমাত্র আলু রোপণ শুরু হয়েছে। এছাড়া শীতকালীন সবজি ও আমন ধানের খুব বেশি ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা নেই।


দু’পা হারিয়েও থামেননি ঠান্ডু মিয়া

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
মেহেরপুর জেলা প্রতিনিধি

কারোর কাছে হাত পেতে নয়, নিজের পরিশ্রমেই জীবন যাপন। দু’পা হারিয়েও হার মানেননি মেহেরপুরের গাংনীর ঠান্ডু মিয়া। জীবনের সঙ্গে এক অনন্য সংগ্রামের নাম—ঠান্ডু মিয়া।
গাংনী উপজেলার জুগিরগোফা স্কুলপাড়া এলাকার মৃত ইসমাইলের ছেলে ঠান্ডু মিয়া। ২০০০ সালে এক ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় হারান তার ডান পা। তারপরও থামেননি, জীবন চলেছে কোনোভাবে।
এক বছর তার চিকিৎসা চলছিল। তারপর আসে করোনা। চিকিৎসার অভাবে আক্রান্ত হয় অন্য পাটিও। অবশেষে ২০২৪ সালে সেটিও কেটে ফেলতে হয়। এরপর একজন পরিশ্রমী কৃষক, হঠাৎই হয়ে পড়েন কর্মহীন ও অসহায়। নিজ হাতে তৈরি করেছেন বিশেষ ভ্যান। এই ভ্যানই এখন তার জীবনযাত্রার একমাত্র ভরসা।
প্রতিদিন সকালে বের হন বাদাম নিয়ে— গাংনী, বামন্দী, আলমডাঙ্গা কিংবা হাটবোয়ালিয়া— যেখানেই যান, সঙ্গে থাকে জীবনের আশ্চর্য এক উদ্যম। প্রতিদিন বাদাম বিক্রি করে সাত আট শ টাকা বিক্রি করে আড়াই থেকে তিন শত টাকার মতো লাভ হয়। সেই টাকায় চলে পরিবারের নিত্যপ্রয়োজন।
ঠান্ডু মিয়া বলেন, “দুই পা নাই... কিন্তু আমি কারো কাছে হাত পাততে চাই না। আমি বাদাম বিক্রি করি। আল্লাহ যা দেন তাই খাই।”
ঠান্ডু মিয়ার স্ত্রী শাহানারা খাতুন বলেন, আমাদের এক সময় ভাল অবস্থা ছিল। চাষাবাদ ও মুনিশপাট খাইটি ভালই চলতো। এক্সিডেন্টে আমার স্বামীর পা হারিয়ে অসহায় হয়ে পড়েছি। তারপরেও থেমে নেই আমাদের জীবন। বাদাম বিক্রি করে যে টাকা আয় হয় তাই দিয়েই সংসার চলে। “আমি প্রতিদিন বাদাম ভেজে রেডি করে দিই। যা আয় হয় তাই দিয়ে সংসার চলে।”
স্কুল শিক্ষক আব্দুস সালাম বলেন, “মানুষটার মনটা অনেক বড়। ও কারো কাছে চায় না, নিজের পরিশ্রমে খায়। আমরা চেষ্টা করি বাদাম কিনে একটু সাহায্য করতে।” দু’পা নেই—তবুও তিনি থেমে যাননি। মানুষের অঙ্গ হারালেও, হারায় না মনোবল। ঠান্ডু মিয়া যেন প্রমাণ।


কুলাউড়ায় পাহাড়ি পুঞ্জিতে শান্তির বার্তা দিলেন ওসি

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
কুলাউড়া প্রতিনিধি

মৌলভীবাজারের কুলাউড়া থানার উদ্যোগে উপজেলার বিভিন্ন পাহাড়ি টিলায় বসবাসরত ২৮টি পুঞ্জির ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর প্রতিনিধিদের নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক গঠনমূলক মতবিনিময়সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার (১ নভেম্বর) বিকেলে লক্ষ্মীপুর মিশন স্কুলে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কুলাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ওমর ফারুক। এ সময় তিনি জেলা পুলিশ সুপার এমকেএইচ জাহাঙ্গীর হোসেনের নির্দেশনায় জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে পাহাড়ি এলাকায় অপরাধ প্রতিরোধ, নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতে সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়ার আশ্বাস দিয়ে বলেন, কুলাউড়া থানা পুলিশ সবসময় আপনাদের পাশে আছে। বৈষম্যহীন, নিরাপদ ও শান্তিপূর্ণ সমাজ গঠনে পুলিশ ও জনগণের যৌথ সহযোগিতাই সবচেয়ে বড় শক্তি।

সভায় পুঞ্জিতে বসবাসরত উপজাতি প্রতিনিধিরা সম্প্রদায়ের চলমান সমস্যা, চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাব্য সমাধান বিষয়ে মতামত তুলে ধরেন। পাশাপাশি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ও পার্শ্ববর্তী বাঙালি জনগোষ্ঠীর মধ্যে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান, পারস্পরিক সহযোগিতা ও সুসম্পর্ক বজায় রাখার গুরুত্বও আলোচনা হয়।

এ সময় থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) শামীম আকঞ্জি, এসআই মুস্তাফিজসহ ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।


গাইবান্ধায় গরু চোর সন্দেহে গণপিটুনিতে ৩ জনের মৃত্যু

আপডেটেড ২ নভেম্বর, ২০২৫ ১০:১৩
গাইবান্ধা প্রতিনিধি

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায় গরু চুরির অভিযোগে চোর সন্দেহে গণপিটুনিতে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। শনিবার (১ নভেম্বর) গভীর রাতে উপজেলার কাটাবাড়ি ইউনিয়নের নাসিরাবাদ গ্রামে এ ঘটনাটি ঘটে।

বিষয়টি নিশ্চিত করেন গোবিন্দগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বুলবুল ইসলাম। তিনি বলেন, রাত আনুমানিক আড়াইটার দিকে নাসিরাবাদ গ্রামের এক ব্যক্তির গোয়ালঘর থেকে তিনটি গরু চুরি করে নিয়ে যাচ্ছিল তিনজন। বিষয়টি টের পেয়ে এলাকাবাসী ধাওয়া করলে তারা প্রাণ বাঁচাতে রাস্তার পাশের একটি পুকুরে লাফ দেয়। পরে স্থানীয়রা তাদের ধরে বেধড়ক মারধর করে। এতে ঘটনাস্থলেই দুইজন মারা যান।

খবর পেয়ে সকালে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে গুরুতর আহত অবস্থায় আরেকজনকে উদ্ধার করে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠায়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।

স্থানীয়দের দাবি, নিহতরা সবাই পার্শ্ববর্তী বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার একটি সংঘবদ্ধ গরুচোর চক্রের সদস্য।

ওসি আরও বলেন, মরদেহ বর্তমানে গোবিন্দগঞ্জ থানায় রাখা হয়েছে। তাদের নাম পরিচয় পাওয়া যায়নি। তাদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর ময়নাতদন্তের জন্য গাইবান্ধা সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হবে। ঘটনাটি সঠিকভাবে তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া নেয়া হবে।


দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় বিজিবি সৈনিক আকতার হোসেনের অনন্য আত্মত্যাগ; সামরিক মর্যাদায় দাফন সম্পন্ন

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এর অকুতোভয় বীর সৈনিক নায়েক আকতার হোসেন দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার সুমহান দায়িত্ব পালনের সময় মায়ানমার সীমান্তে পুঁতে রাখা মাইন বিস্ফোরণে গুরুতর আহত হয়ে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচ)-এ চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল দুপুরে শাহাদতবরণ করেছেন।

আজ সকালে ঢাকার সিএমএইচ থেকে বিজিবির হেলিকপ্টারযোগে নির্ভীক সৈনিক নায়েক আকতার হোসেনের মরদেহ ভোলার দৌলতখান উপজেলার সৈয়দপুর গ্রামে তাঁর নিজ বাড়িতে নেওয়া হয়। সেখানে নামাজে জানাজা শেষে যথাযোগ্য ও সামরিক মর্যাদায় তাঁকে দাফন করা হয়।

বিজিবির এই অকুতোভয় বীর নম্বর-৬২১১৬ নায়েক আক্তার হোসেন গত ১২ অক্টোবর ২০২৫ তারিখ সকালে বাংলাদেশ-মায়ানমার সীমান্তের রেজুআমতলী এলাকার পেয়ারাবুনিয়া অঞ্চলে দায়িত্ব পালনকালে মায়ানমারের সশস্ত্র সংগঠন আরাকান আর্মি (AA) কর্তৃক সীমান্তে পুঁতে রাখা মাইন বিস্ফোরণে মারাত্মকভাবে আহত হন। তাৎক্ষণিকভাবে তাঁকে রামু সেনানিবাসের সিএমএইচে এনে চিকিৎসা প্রদান করা হয়। পরবর্তীতে ১৩ অক্টোবর ২০২৫ তারিখে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে ঢাকা সিএমএইচে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বিজিবির এই নির্ভীক বীর গতকাল (৩১ অক্টোবর ২০২৫) দুপুরে শাহাদতবরণ করেন।


বিজিবির অকুতোভয় এই বীর সৈনিক বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার সুমহান দায়িত্ব পালনের সময় জীবন উৎসর্গ করে যে বীরত্ব ও ত্যাগের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, তা চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। বিজিবি পরিবার তাঁর মত একজন সৎ, সাহসী ও নিবেদিতপ্রাণ সদস্যকে হারিয়ে গভীরভাবে শোকাহত ও মর্মাহত। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ এই বীর শহীদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করছে এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করছে।

বাংলাদেশের সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরীদের অমর গৌরবগাঁথা-অকুতোভয় বীর নায়েক আকতার হোসেনের আত্মত্যাগ জাতি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে।


গাংনীতে শিশু জন্মের পরেই জন্ম সনদ দিল ডিসি

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
মেহেরপুর প্রতিনিধি

গাংনীতে সদ্য জন্ম নেওয়া একটি শিশু জন্মের পরপরই পেলো তার পরিচয়ের প্রথম কাগজ, জন্ম সনদ।

জেলা প্রশাসকের এমন ব্যতিক্রমী উদ্যোগে আনন্দে ভাসছে নবজাতকের পরিবার, প্রশংসায় মুখর স্থানীয় প্রশাসন ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। গত শুক্রবার রাতে গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জন্ম নেয় নবজাতক শামীম আহমেদ। জন্মের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই শিশুটির হাতে তুলে দেওয়া হয় জন্ম সনদ ও নানা উপহার সামগ্রী।

মেহেরপুর জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ আবদুল ছালাম নিজেই উপস্থিত হয়ে নবজাতকের পিতা-মাতার হাতে তুলে দেন জন্মসনদ। এ সময় শিশুর পরিবারে আনন্দের বন্যা বয়ে যায়। জেলা প্রশাসকের এমন মানবিক ও অনন্য উদ্যোগ প্রশংসা কুড়িয়েছে সবার কাছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আব্দুল আজিজ এবং কর্তব্যরত নার্সরা এই অনন্য মুহূর্তে উপস্থিত ছিলেন।

এমন উদ্যোগ প্রশাসনের মানবিক সেবাকে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিলো বলে মত এলাকাবাসীর।

নবজাতকের পিতা তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত বাজেট রেখেছিলাম। কিন্তু নরমাল বাচ্চা প্রশাব করাই আমরা খুশি। ভাবতেই পারিনি এত দ্রুত ছেলে জন্মের পরই জন্মসনদ পাব। জেলা প্রশাসক নিজে এসে হাতে তুলে দেবেন, এটা আমাদের জীবনের সবচেয়ে আনন্দের মুহূর্ত।’

মা শারমীন আক্তার বলেন, ‘নরমাল ডেলিভারি করলে মা সুস্থ থাকেন। কিন্তু সিজার করলে একজন মা সারাজীবনের জন্য পঙ্গু হয়ে যায়। জেলা প্রশাসকের হাত থেকে ছেলের জন্ম সনদ ও উপহার সামগ্রী পাওয়ায় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি।’

গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সিনিয়র সেবিকা আমেনা খাতুন বলেন, ‘মায়েদের সচেতন হতে হবে এবং নরমাল ডেলিভারিতে চেষ্টা করা উচিত। হাসপাতালে অভিজ্ঞ নার্স ও চিকিৎসক রয়েছে। তিনি আরও বলেন, নরমাল ডেলিভারিতে একজন মা সারাজীবন সুস্থ থাকতে পারেন।

গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তা ডাক্তার আব্দুল আজিজ বলেন, ‘আগে হাসপাতালে নরমাল ডেলিভারি করা হতনা। এখন সেটা চালু করা হয়েছে। তিনি বলেন, কিছুদিন আগেও এক শ্রেণির দালালরা বিভিন্ন ক্লিনিকে সিজারিয়ান ডেলিভারির জন্য নারীদের উদ্বুদ্ধ করত।

মেহেরপুর ড. মোহাম্মদ আবদুল ছালাম বলেছেন, ‘প্রত্যেক শিশুর জন্মের সঙ্গে সঙ্গে যেন তার রাষ্ট্রীয় পরিচয় নিশ্চিত হয়- এটাই আমাদের উদ্দেশ্য। জন্মের মুহূর্ত থেকেই নাগরিক সুবিধার অংশ হিসেবে আমরা এই উদ্যোগ নিয়েছি।


জামালপুরে ঝিনাই নদীতে ডুবে ৪ শিশুর মৃত্যু, নিখোঁজ-১

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
জামালপুর প্রতিনিধি

জামালপুরের মাদারগঞ্জে ঝিনাই নদীতে গোসল করতে গিয়ে পানিতে ডুবে নিখোঁজের পরদিন কুলসুম (১১) নামে আরও এক শিশুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। শনিবার সকালে উপজেলার সিধুলী ইউনিয়নের চর ভাটিয়ানী এলাকার ঝিনাই নদী থেকে ওই শিশুর মরদেহ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরীরা। এ নিয়ে নদীতে ডুবে নিহত ৪ জন শিশুর মৃতদেহ উদ্ধার করা হলো। এ ঘটনায় এখনো নিখোঁজ রয়েছে বৈশাখী নামে আরও এক শিশু।

নিহতরা হলো- মাদারগঞ্জ উপজেলার চর ভাটিয়ানী এলাকার দুদু মিয়ার সন্তান সহোদর ভাই-বোন আবু হাসান (৮) ও মরিয়ম (১২), কাজিয়াবাড়ী এলাকার আজাদের মেয়ে কুলসুম এবং সরিষাবাড়ি উপজেলার বাউশী এলাকার নুর ইসলামের মেয়ে সাইরা আক্তার (৮)।

জামালপুর ফায়ার সার্ভিসের টিম লিডার রফিকুল ইসলাম জানান, মাদারগঞ্জ উপজেলার চর ভাটিয়ানী এলাকায় ঝিনাই নদী থেকে কুলসুম নামে ওই শিশুর মরদেহ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরী দল। নিহত কুলসুম একই উপজেলার কাজিয়াবাড়ী গ্রামের আজাদের মেয়ে। এ পর্যন্ত এই দুর্ঘটনায় ৪ জন শিশু নিহত হয়েছে। গত শুক্রবার বিকেলে ঝিনাই নদীতে গোসল করার সময় পানিতে ডুবে যায় ৫ জন শিশু। পরে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরীরা সন্ধ্যায় সহোদর ভাই-বোনসহ তিনজনের মরদেহ উদ্ধার করলেও নিখোঁজ থাকে কুলসুম ও বেশাখী নামে দুই শিশু। রাতে উদ্ধার অভিযান বন্ধ ঘোষণার পর শনিবার সকাল থেকে আবারও উদ্ধার অভিযান শুরু হয়। কুলসুমের মরদেহ উদ্ধার করা হলেও এখনো নিখোঁজ আরেক শিশু বৈশাখীকে উদ্ধারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

উল্লেখ্য, গত শুক্রবার বিকেলে ঝিনাই নদীতে গোসল করতে যায় ৬ জন শিশু। এ সময় ইয়াসীন নামে এক শিশু সাঁতরে তীরে উঠে এলেও বাকী ৫ জন পানিতে ডুবে যায়। এ ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমেছে।


স্বপদে ফিরতে মরিয়া স্বাস্থ্যের সুজন

তদন্তে বেড়িয়ে এলো একসঙ্গে সরকারি দুই চাকরির তথ্য 
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
জামালুদ্দিন হাওলাদার, চট্টগ্রাম

স্বপদে ফিরতে মরিয়া হয়ে ওঠেছেন চট্টগ্রামের সাবেক জেলা স্বাস্থ্য তত্ত্বাবধায়ক সুজন বড়ুয়া। যিনি বদলিকৃত কর্মস্থলে যোগদান না করে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে। সংশ্লিষ্টরা জানান, জাল-জালিয়াতিতে পৃথক জেলায় সরকারি দুই চাকরি নেওয়া সুজন বড়ুয়ার নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে ২০২৪ এর ৫ আগস্টের পর থেকে আন্দোলন শুরু করেন চট্টগ্রামের জেলা-উপজেলার স্বাস্থ্য সহকারীরা। তাদের এই আন্দোলনের মুখে চলতি বছরের ৭ মে সুজন বড়ুয়াকে লালমনিরহাট সিভিল সার্জন কার্যালয়ে বদলি করে। তবে সেখানে যোগদান না করে উচ্চ আদালতের এক রিটের অনুকুলে বদলি আদেশটি থামিয়ে দেন তিনি। পরে স্বপদে বহলার করার জন্য আবেদন করেছেন চট্টগ্রামের সিভিল সার্জনের দপ্তরে।

এদিকে সুজন বড়ুয়ার (১০ গ্রেডে) জেলা স্যানিটারি ইন্সপেক্টর পদে নেওয়া পদোন্নতি অবৈধ ও ফৌরজাদরী অপরাধ বলে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জনকে পত্র দিয়ে দিয়েছেন বান্দরবান জেলা একাউন্টস এন্ড ফিন্যান্স অফিসার মোহাম্মদ এমরান বাহাদুর। ওই পত্রে জেলা স্যানিটারি ইন্সপেক্টর পদ তথা ১০ গ্রেডের পদোন্নতি বাতিল এবং ২০১৫ সাল হতে অদ্যবদি অবৈধভাবে উচ্চতর পদে ভোগকৃত অতিরিক্ত সকল বেতন-ভাতার অর্থ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে ফেরত দিতে বলা হয়েছে। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানিয়ে গত ৩১ আগস্ট এই পত্র পাঠান বান্দরবান জেলা একাউন্টস এন্ড ফিন্যান্স অফিসার। একইভাবে বিষয়টি অবহিত ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, চট্টগ্রাম বিভাগীয় হিসাব নিয়ন্ত্রক ও বান্দরবান জেলার সিভিল সার্জনকে পত্র দিয়েছেন বলে বান্দরবান জেলা একাউন্টস এন্ড ফিন্যান্স অফিসার মোহাম্মদ এমরান বাহাদুর দৈনিক বাংলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

অপরদিকে কথিত ৩২ তদন্তে নিষ্পাপ সুজন বড়ুয়ার এক সঙ্গে সরকারি দুই চাকরির তথ্য বেড়িয়ে এসেছে বাংলাদেশ পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এর তদন্তে। সম্প্রতি চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট-১ এর আদালতে সুজন বড়ুয়ারই দায়েরকৃত এক মামলার তদন্ত শেষে প্রতিবেদন দায়ের করেছে সরকারের এই সংস্থাটি। আর এতে উঠে এসেছে পৃথক জেলায় দুইটি জাতীয় পরিচয়পত্র, দুইটি জন্মনিবন্ধন ও দুইটি জাতীয় সনদ, পার্বত্য চট্টগ্রামের স্থানীয় নাগরিকত্ব হিসেবে বান্দরবান বোমাং চীফ সার্কেলের জাল সনদ বানিয়ে ভিন্ন দুইটি জেলায় তথ্যগোপন করে সুজন বড়ুয়া সরকারি দুই চাকরি নেওয়ার চিত্র। পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রো অঞ্চলের এসআই শরীফ উদ্দিন মামলার তদন্ত শেষে গত ১৩ অক্টোবর এই প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন। আর এতে সুজন বড়ুয়া নিজে বাদি হয়ে দুই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলায় ফেঁসে গেলেন নিজেই।

পিবিআই সূত্র জানায়, সুজন বড়ুয়া মানহানির অভিযোগ এনে গত বছরের ৬ নভেম্বর চট্টগ্রামের এক জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকসহ দুইজনের বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট-১ এর আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। আদালত মামলাটি তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য পিবিআইকে নির্দেশ দেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (এসআই) শরীফ উদ্দিন কক্সাবাজার সিভিল সার্জন কার্যালয়ে সুজন বড়ুয়া স্বাস্থ্য সহকারি পদে যোগদানকালিন সময়ে জমা দেওয়া কাগজপত্র সংগ্রহ করে পর্যালোচনা করেন। এতে দেখা যায়, ২০০৪ সালে স্বাস্থ্য সহকারী পদে উখিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যোগদান করেন সুজন বড়ুয়া। এই পদে তিনি আট বছর চাকরি করেন।

আদালতের প্রতিবেদনে বলা হয়, সুজন বড়ুয়ার জন্মনিবন্ধন নম্বর-১৯৮৩২২১৯৪১৫৫০৪৬৬৬ অনুযায়ী তার জন্মস্থান মরিচ্যা পালং, পিতা- বিমল চন্দ্র বড়ুয়া, মাতা- প্রীতি রানী বড়ুয়া, স্থায়ী ঠিকানা-মরিচ্যা পালং, হলদিয়া পালং ইউনিয়ন, থানা-উখিয়া, জেলা-কক্সবাজার। তবে জন্মনিবন্ধন অনলাইনে যাচাইকালে সঠিক পাওয়া যায়নি বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। একইভাবে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ে সুজন বড়ুয়া স্যানিটারি ইন্সপেক্টর পদে যোগদানকালিন সময়ের কাগজপত্রাদি সংগ্রহ করে পর্যালোচনা করেন মামলার এই তদন্ত কর্মকর্তা। সেখানে জমাকৃত জন্মনিবন্ধন নং-১৯৮৩০৩১৭৩৫৭১০০৯৯৪ অনুযায়ী তার জন্মস্থান উত্তর ঘুমধুম, বড়ুয়া পাড়া, ঘুমধুম, নাইক্ষ্যংছড়ি, বান্দরবান। পিতা-বিমল চন্দ্র বড়ুয়া, মাতা-প্রিতি রাণী বড়ুয়া, স্থায়ী ঠিকানা- উত্তর ঘুমধুম, বড়ুয়া পাড়া, ঘুমধুম, নাইক্ষ্যংছড়ি, বান্দরবান। এই জন্মনিবন্ধন অনলাইনে যাচাইকালে সঠিক পাওয়া যায় বলে উল্লেখ করেন তিনি।

তাছাড়া সরকারের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়োগ বিধি ও পার্বত্য জেলা পরিষদ আইন অনুযায়ী সমতলের কাউকে পার্বত্য চট্টগ্রামে নিয়ে পদায়ন বা পদোন্নতি দেয়ার কোনো বিধান নেই বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক ডা. সেখ ফজলে রাব্বি জানিয়েছেন।

বাংলাদেশ হেলথ্ এসিস্ট্যান্ট এসোসিয়েশন চট্টগ্রাম বিভাগের সভাপতি ফজলুল হক চৌধুরী জানান, সুজন বড়ুয়া জালজালিয়াতি ও তথ্যগোপন করে সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগে দুই চাকরি নিয়ে রাষ্ট্রীয় অর্থ আত্মসাৎ করছেন। শুধুতাই নয়, নারী কেলেংকারিতে বরখাস্ত থাকাবস্থায় নিয়েছেন দুইটি বিভাগীয় পদোন্নতি।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, যেহেতু সুজন বড়ুয়া এখন এখানে (চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়ে) নেই, তার বিষয়ে এখানে কিছু করার সুযোগ নেই। আশা করছি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এই বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।


বিশেষ প্রতিনিধি হিসেবে দৈনিক যায়যায়দিনে যোগ দিলেন উমর ফারুক

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

শফিক রেহমান সম্পাদিত দৈনিক যায়াযায়দিনে যোগ দিলেন উমর ফারুক। ‘বিশেষ প্রতিনিধি’ হিসেবে রাজনৈতিক বিট (বিএনপি) কাজ করবেন তিনি। এর আগে দৈনিক স্বদেশ প্রতিদিনের বিশেষ প্রতিনিধি ছিলেন।

উমর ফারুক ২০০৩ সালে ঢাকায় এসে জাতীয় দৈনিক যুগান্তরে লেখালেখি শুরু করেন। এরপর দৈনিক আমাদের সময়, দৈনিক সংবাদ, দৈনিক মানবকণ্ঠ, দৈনিক আজকের পত্রিকা, দৈনিক জনতা, দৈনিক আজকালের খবর, দৈনিক বর্তমান, দৈনিক নতুন সংবাদ, দৈনিক আমাদের অর্থনীতি, দৈনিক আমাদের নতুন সময় ও সংবাদ সারাবেলায় কাজ করেছেন। সবগুলো দৈনিকে তিনি রাজনৈতিক বিট (বিএনপি) দায়িত্ব পালন করেছেন ।

মফস্বল সাংবাদিকতায় তার হাতেখড়ি। লেখালেখির নেশা থেকে ১৯৯৮ সালে সাংবাদিকতা করেন কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারীতে। রংপুর থেকে প্রকাশিত দৈনিক বিজলী, স্থানীয় সাপ্তাহিক দুধকুমর ও পাক্ষিক দ্বীপদেশ পত্রিকায় নিয়মিত লিখতেন। এরই ধারাবাহিকতায় চিলমারী থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক জনপ্রাণ পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা বার্তা সম্পাদক পদে, পরে পদোন্নতি পেয়ে নির্বাহী সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।

তিনি জাতীয় প্রেসক্লাব ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে) বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন( বিএফইউজে) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ)র স্থায়ী সদস্য। রংপুর বিভাগ সাংবাদিক সমিতি ঢাকা (আরডিজেএ)র প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। ঢাকাস্থ কুড়িগ্রাম সমিতির আজীবন সদস্য। চিলমারী সাংবাদিক ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা।

উমর ফারুক একাধারে কবি, কথাসাহিত্যিক, সাংবাদিক,কলামিষ্ট ও গীতিকার। তার প্রকাশিত গ্রন্থ ১৬টি। কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুর উপজেলার তবকপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ সাদুল্যা তেলীপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বর্তমানে তিনি চিলমারী উপজেলার নাগরিক। তিনি মো. গোলাম হোসেন সরকার ও আনোয়ারা বেগমের ৪ সন্তানের মধ্যে সবার বড়।


ফরিদপুরে শ্রবণ শক্তি ফিরে পাচ্ছেন ৬ বধির শিশু

সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে কক্লিয়ার ইমপ্ল্যান্ট চিকিৎসা
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
মাহবুব পিয়াল, ফরিদপুর

এক দশক আগেও দেশে বধিরতায় ভোগা মানুষের জন্য ‘কক্লিয়ার ইমপ্ল্যান্ট’ চিকিৎসা প্রচলিত ছিল না। অনেকে তখন বিদেশে ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকায় এ চিকিৎসা করাতেন। এখন অবশ্য দেশেই ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকায় তা সম্ভব। ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে নামমাত্র টাকায় এ চিকিৎসা করা যাচ্ছে।

সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে কক্লিয়ার ইমপ্ল্যান্ট চিকিৎসা করা হয় ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এর ফলে সম্পূর্ণ শ্রবণপ্রতিবন্ধী বা জন্মগত মূক ও বধির শিশুরা এখন কানেও শুনবে, কথাও বলতে পারবে। গত অক্টোবরের ২৬ ,২৭ ও ২৯ তারিখে ভোলা জেলার ৩ বছর ১০ মাসের ছোট শিশু ওমর ফারুক, বরিশাল জেলার ৩ বছর ৮ মাস বয়সের শিশু হাফিজা, কুষ্টিয়া জেলার ৩ বছর ১০ মাস বয়সের আদিবা, বরিশাল জেলার ৪ বছর ৮ মাস বয়সের শিশু আলিফ খান, নওগাঁ জেলার ৪ বছর ৭ মাস বয়সী শিশু রিয়াজ হাসান ও মুন্সিগঞ্জ জেলার ৩ বছর ১০ মাস বয়সের শাহেল ইসলাম এই ৬ জন জন্মগতভাবে বধির শিশুদের কানে ইমপ্ল্যান্ট অস্ত্রোপচার করা হয়।

হাসপাতালের নাক, কান ও গলা বিভাগের প্রধান ও হেড-নেক সার্জারি বিভাগের প্রকল্প পরিচালক (কক্লিয়ার ইমপ্ল্যাট) অধ্যাপক ডা. নৃপেন্দ্রনাথ বিশ্বাস বলেন, কক্লিয়ার ইমপ্ল্যান্ট হচ্ছে একটি আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন চিকিৎসাপদ্ধতি। দক্ষ ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে শিশুর কানে ইলেকট্রনিক ডিভাইস লাগিয়ে এ চিকিৎসা করে থাকেন।

জাতিসংঘের পরিসংখ্যান অনুযায়ী বাংলাদেশে প্রতিবছর গড়ে ২ হাজার ৬০০ শিশু বধির হয়ে জন্ম নেয় উল্লেখ করে চিকিৎসক ডা. নৃপেন্দ্র নাথ বিশ্বাস বলেন, ফরিদপুরে এই চিকিৎসাব্যবস্থা চালু হওয়ায় জন্ম থেকে কানে না শোনা এবং কথা বলতে না পারা শিশুদের চিকিৎসায় একটা নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে।

চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কক্লিয়ার ইমপ্ল্যান্ট একটি ইলেকট্রনিক ডিভাইস, যা মারাত্মক বা সম্পূর্ণ শ্রবণপ্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে শব্দ শুনতে সহায়তা করে। এটা বায়োনিক কান নামেও পরিচিত। এটি অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে অন্তঃকর্ণের কক্লিয়ায় স্থাপন করা হয়। এর দুটি অংশ। বাইরের অংশে মাইক্রোফোন, স্পিস প্রসেসর ও ট্রান্সমিটার কয়েল থা। ভেতরের অংশে রিসিভার স্টিমুলেটর ও ইলেকট্রেড থাকে।

ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (কক্লিয়ার ইমপ্ল্যান্ট) বিশেষজ্ঞ লেফটেন্যান্ট কর্নেল ডা. ইফতেখারুল আলম, নাক-কান-গলার বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. নৃপেন্দ্র নাথ বিশ্বাস, সহকারী অধ্যাপক ডা. এস এম ফয়সাল সিজন, জুনিয়র কনসালটেন্ট ডা. এটিএম সুমাইয়েফ-উর রহমান (সৈকত) সহ বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টের চিকিৎসকরা উপস্থিত থেকে এই চিকিৎসা সম্পন্ন করেন।


পদ্মায় নাব্য সংকটে প্রতিদিন আটকে যাচ্ছে জাহাজ

দুটি ঘাট থেকে দিনে যাতায়াত করে ১০টি ট্রলার
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
হরিরামপুর (মানিকগঞ্জ) প্রতিনিধি

‎‎চলতি বর্ষা মৌসুমের বর্ষার পানি চলে যেত না যেতেই মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার পদ্মানদীর বিভিন্ন পয়েন্টে নাব্য সংকট দেখা দিয়েছে। এর ফলে গত আট দিন ধরে উপজেলার আন্ধারমানিক ঘাট থেকে প্রায় ২ কিলোমিটার দূরে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ছেড় আসা সার বোঝাই এমভি আম্বু হালিমা-৪ নামের একটি জাহাজ আটকে আছে। এছাড়াও প্রতিদিন পদ্মায় চলাচলকৃত জাহাজ, বালুবাহী বাল্কহেডসহ ছোট বড় নৌকা চলাচলে ব্যাহত হচ্ছে নিয়মিত।‎

‎স্থানীয়দের সাথে কথা জানা যায়, বর্ষার পানি কমতেই উপজেলার ধুলশুরা, হারুকান্দি থেকে গোপীনাথপুর, কাঞ্চনপুরের আংশিক পর্যন্ত নদীর এ পার থেকে প্রায় ২ কিলোমিটার দূরে নদীর মাঝ দিয়ে প্রায় ৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য ডুবোচর জেগে উঠে। প্রায় তিন বছর আগে প্রথম এ চরটি দেখা গেলেও ভরা বর্ষা মৌসুমে তা ডুবে যায়। বর্ষার পানি কমা শুরু হতেই আবার জেগে উঠে। এতে করে উপজেলা সদরের সাথে দুর্গম চরাঞ্চলের জনগণের যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম ইঞ্জিনচালিত ট্রলার চলাচলেও ব্যাহত হচ্ছে বলে জানান ট্রলার মাঝিরা।

‎‎স্থানীয়রা আরও জানান, উপজেলার আন্ধারমানিক ও বাহাদুরপুর ঘাট থেকে প্রতিদিন ১০টি ট্রলার যাতায়াত করে দুর্গম চরাঞ্চল হরিণাঘাট ও সেলিমপুর। প্রতিদিন প্রায় পাঁচ শতাধিক মানুষ উপজেলা সদরে যাতায়াত করে দুর্গম চরাঞ্চলের মানুষ। এছাড়াও ট্রলারে চরাঞ্চলে বিভিন্ন ধরনের কৃষিপণ্যসহ সার ও অন্যান্য মালামাল আনা নেয়া করে থাকে। নদীর নাব্য সংকটে এসব মালামাল আনা নেয়া দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বলে দাবি করেন চরাঞ্চলের কৃষক ও ব্যবসায়ীরা।

‎‎গত কয়েক দিন ধরে সরেজমিনে দেখা যায়, নদীর এ পাড় থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে লম্বা ধূ-ধূ বালুচর। বালুচরের পাশেই দেখা যায় আটকে আছে একটি জাহাজ। নদীর পাড়ে চায়ের দোকান থেকে এগিয়ে আসে জাহাজের মাস্টার মো. বাচ্চু মিয়া। তিনি জানান, গত বৃহস্পতিবার বেলা তিনটার সময় ডুবোচরে আমাদের জাহাজটি আটকে যায়। গত আট দিন ধরে আমরা বসে আছি। আমরা চট্টগ্রাম থেকে টিএসপি সার নিয়ে নগরবাড়ি যাব। সময় মতো সার পৌছে দিতে না পারলে তো কৃষকের অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে। অনেক চেষ্টা করেও এখনো আমরা জাহাজ নামাতে পারছি না। প্রতি বছর এই অঞ্চলে আমাদের সমস্যায় পরতে হয়। তাই সংশ্লিষ্টদের কাছে আমাদের অনুরোধ নৌরুট সচল রাখতে এসব ডবোচর ড্রেজিং করে নদীর গতিপথ প্রসারিত করার ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।

‎আন্ধারমানিক ঘাটের ট্রলারের মাঝি ফরহাদ জানান, আমাদের এখান থেকে প্রতিদিন ৬টি ট্রলারে চরাঞ্চলের মানুষজন যাতায়াত করে। এখান থেকে নদীর ওপরের দূরত্ব প্রায় ১০ কিলোমিটার। কিন্তু নদীর মাঝ দিয়ে লম্বা ডুবোচর জেগে উঠায় প্রায় ৩ কিলোমিটার পথ ঘুরে আমাগো যাইতে হচ্ছে। এতে যেমন সময়ও বেশি লাগে। তেমনি আমাগো তেলের খরচও বেশি হয়। কিন্তু যাত্রীরা তো আর আমাগো ভাড়া বাড়াই দেয় না। এই ডুবোচরে আমাগো ট্রলারসহ মালবাহী জাহাজ চলাচলেও সমস্যা হয়। তাই ড্রেজিং এর মাধ্যমে ডুবোচর কেটে না ফেললে নৌযান চলাচল করতে পারবে না।‎

‎অন্য আরেকটি ট্রলারের মাঝি শাহীন জানান, আমাগো এই জায়গা ২/৩ বছর যাবত নদীর মাঝ দিয়ে লম্বা ডুবোচর পরা শুরু হয়েছে। বর্ষার পানি টান দিলেই এই ডুবোচর দেখা যায়। এতে করে এখানে প্রতি বছর অসংখ্য মালবাহী বড় বড় জাহাজ দিনের পর দিন আটকে থাকে। এবার আটদিন ধরে সার বোঝাই একটা আটকা পরে আছে। আমরা ট্রলার চালাই। এখান থেকে প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে বিকেলে ৫টা পর্যন্ত চরাঞ্চলের মানুষ এই ট্রলারে যাতায়াত করে। এই পয়েন্টে ডুবোচরের কারণে আমরাও ট্রলার চালাইতে পারি না। প্রায় ৪কিলোমিটার ঘুরে আমাগো চরে যাইতে হয়।‎

‎এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএর আরিচা অঞ্চলের ড্রেজিং ইউনিটের নির্বাহী প্রকৌশলী হাসান আহমেদ জানান, ডুবোচর ড্রেজিং আমাদের অধীনে না। আমরা সাধারণ নৌরুটে ক্লিয়ার রাখতে নৌযান চলাচল এলাকা মার্কিং থাকে। এই সব এলাকায় যদি নাব্য সংকট দেখা দেয় তাহলেই আমরা ড্রেজিং করে থাকি। এছাড়াও প্রতিটি জাহাজে নৌরুট শনাক্তের জন্য পাইলট থাকে। তারা যদি কোনো এলাকা ড্রেজিং প্রয়োজন মনে করে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে রিকোয়ারমেন্ট দেয় যে, এই এলাকা ড্রেজিং প্রয়োজন তবেই ড্রেজিং করা হয়। প্রতিটি পাইলটই রুট শনাক্ত করে জাহাজ পরিচালনা করেন।

যে জাহাজটি আটকে আছে ওই জাহাজে সম্ভবত পাইলট ছিলেন না। পাইলট থাকলে হয়তো এমনটি হতো না। কারণ পাইলটেরা পানির রঙ দেখলেই বুঝতে পারেন কোথায় পানি কম বেশি আছে। কোন জায়গা দিয়ে জাহাজটি সচরাচর যেতে পারবে।


banner close