বিমানের নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হয়েছিল খোদ প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. যাহিদ হোসেনের কক্ষ থেকে। তিনি প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক প্রশাসন হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন। নিয়োগ পরীক্ষার আগে ওই কক্ষেই প্রশ্নগুলো ফটোকপি করা হয়। ফটোকপির দায়িত্বে ছিলেন এমডির দপ্তরের কর্মী জাহিদ হাসান। ফটোকপির ফাঁকে তিনি মোবাইল ফোনে প্রশ্নপত্রের একটি ছবি তুলে নেন। পরবর্তী সময়ে পরিকল্পনা অনুযায়ী সেই প্রশ্ন ফাঁস করা হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
তবে বিমানের এমডি মো. যাহিদ হোসেন দৈনিক বাংলার কাছে দাবি করেছেন, তার কক্ষ থেকে প্রশ্ন ফাঁস হওয়ার কথা ঠিক না।
মামলার তদন্ত ও আদালত সূত্র বলছে, বিমানের প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় যে ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয় তাদের মধ্যে ৯ জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে নিজেদের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করে তারা ঊর্ধ্বতন একাধিক কর্মকর্তার নাম বলেছেন।
তবে বিষয়টি স্পর্শকাতর হওয়ার কারণে এ নিয়ে কেউ সরাসরি মন্তব্য করেননি।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান ও অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘আমরা ঘটনাটি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছি। যারা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত, তাদের আইনের আওতায় আনার প্রক্রিয়া চলছে। আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) তদন্তের অগ্রগতির বিষয়ে ব্রিফিং করা হবে।’
সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, প্রশ্ন ফাঁস চক্রের সঙ্গে জড়িত একাধিক ব্যক্তির মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়। পরে তা বিশ্লেষণ করে ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্র একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে পাঠানোর প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত সংস্থা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। মামলার এজাহারেও বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, সেই প্রশ্নগুলো বিমানের মহাব্যবস্থাপক (নিরাপত্তা) তাইজ ইবনে আনোয়ারের ব্যক্তিগত ও দাপ্তরিক নম্বরের হোয়াটসঅ্যাপে ও এমএলএসএস জাকিরের কাছে পাঠানোর প্রমাণ পাওয়া গেছে। এ ছাড়া জাফি ও মাহাবুব আলী নামে দুই ব্যক্তির হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরেও ওই প্রশ্নপত্র পাঠানো হয়। মাহাবুব আলী এমডির গাড়িচালক হিসেবে কাজ করেন। বক্তব্য জানতে এমএলএসএস জাকির ও গাড়িচালক মাহাবুবের মোবাইল নম্বরে ফোন করলে দুজনের নম্বরই বন্ধ পাওয়া যায়। গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ঘটনার পর থেকেই তারা পলাতক। তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান চালানো হচ্ছে।
দাপ্তরিক ও ব্যক্তিগত দুই হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে ফাঁস হওয়া প্রশ্ন যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বিমানের মহাব্যবস্থাপক (নিরাপত্তা) তাইজ ইবনে আনোয়ার দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘আমার মোবাইলে এমন কোনো প্রশ্ন আসেনি। প্রশ্নপত্র ফটোকপি করার সময় আমি ওই কক্ষে ছিলামও না।’
প্রশ্নপত্র প্রস্তুতে ছিল না পর্যাপ্ত নিরাপত্তা
বিমানের একটি সূত্র বলছে, বিমানের নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র তৈরি, ফটোকপি ও বিতরণের কোনো অংশেই পর্যাপ্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা নেয়া হয়নি। বিমানের এমডি নিজ কক্ষে নিয়মিত বসলেও প্রশাসন বিভাগের পরিচালকের অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনের কারণে প্রশাসন পরিচালকের কক্ষেও তিনি মাঝে মাঝে বসতেন। ওই কক্ষেই নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফটোকপি করা হয়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সেখানেও নিরাপত্তাব্যবস্থায় ঘাটতি ছিল।
বিমানের নিয়োগ পরীক্ষার জন্য পাঁচ সদস্যের যে কমিটি করা হয় তার প্রধান ছিলেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. যাহিদ হোসেন। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) মুহাম্মদ নিজাম উদ্দীন আহাম্মেদ, বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ট্রেনিং সেন্টারের (বিএটিসি) অধ্যক্ষ এ বি এম নাজমুল হুদা, মহাব্যবস্থাপক (জিএসই) তাইজ ইবনে আনোয়ার, মহাব্যবস্থাপক আইটি (ভারপ্রাপ্ত) মো. আনোয়ারুল হক।
জানা গেছে, প্রশ্নপত্র তৈরির পর পরীক্ষায় ব্যবহারের জন্য ফটোকপি করার সময় কমিটির দুই সদস্য সেখানে ছিলেন না। তাদের পরিবর্তে অন্য দুজন কর্মকর্তাকে সেই কক্ষে প্রবেশ এবং অবস্থানের অনুমতি দেয়া হয়। এ ছাড়া কমিটির সদস্যসহ কর্মচারীদের কাউকেই দেহ তল্লাশি বা মোবাইল ফোন সঙ্গে নিয়ে সেখানে আছেন কি না তাও যাচাই করা হয়নি।
নিয়োগ কমিটির অন্যতম সদস্য মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) মুহাম্মদ নিজাম উদ্দীন আহাম্মেদ দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘আমাদের এখানে মুঠোফোন সঙ্গে নিয়ে আসা নিষেধ ছিল। এ কারণে নতুন করে চেক করা হয়নি। ফটোকপির সময় আমরা উপস্থিত ছিলাম। কিন্তু এর ফাঁকেই ফটোকপির দায়িত্বে থাকা জাহিদ হয়তো ছবি তুলতে পারে।’
কমিটির সদস্যদের উপস্থিতিতেই কীভাবে প্রশ্ন ফাঁস হলো জানতে চাইলে মুহাম্মদ নিজাম উদ্দীন আহাম্মেদ বলেন, ‘আমরাও বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করছি। তদন্তের পর বিস্তারিত বলা যাবে।’
কমিটির আরেক সদস্য এ বি এম নাজমুল হুদা এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। সদস্য মো. আনোয়ারুল হক দাবি করেন, তিনি কমিটির সদস্যই ছিলেন না।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. যাহিদ হোসেন দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘আমি পরিচালক প্রশাসনের অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করলেও কক্ষটিতে নিয়মিত বসি না। মাঝেমধ্যে দাপ্তরিক কাজে যেতে হয়। ফলে সরাসরি আমার কক্ষ থেকেই প্রশ্নটি ফাঁস হয়েছে তা ঠিক না।’
প্রশ্নপত্র প্রণয়নে যথাযথ নিরাপত্তাব্যবস্থার অভাব প্রসঙ্গে অতিরিক্ত সচিব পদমর্যাদার বিমানের এই শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, ‘সেখানে মহাব্যবস্থাপক (নিরাপত্তা) উপস্থিত ছিলেন। নিরাপত্তার বিষয়টি তার দেখার কথা।’ প্রশ্নপত্র ফটোকপি করার সময় মহাব্যবস্থাপক (নিরাপত্তা) উপস্থিত ছিলেন না জানালে এমডি বলেন, ‘তার তো থাকার কথা। এ বিষয়ে আমরাও একটি ইনকোয়ারি করছি। ইনকোয়ারির পর এ বিষয়ে বিস্তারিত বলা যাবে।’
তবে গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছে, প্রশ্ন ফাঁসে যারা সরাসরি জড়িত, তাদের পাশাপাশি তদারকির দায়িত্বে যারা ছিলেন তাদের দায়ও পর্যালোচনা করা হবে। এ ক্ষেত্রে কেউ দায় এড়াতে পারবেন না।
তদন্তে অসহযোগিতা বিমানের
এদিকে নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার ঘটনা তদন্তে অসহযোগিতা করার অভিযোগ উঠেছে খোদ বিমানের বিরুদ্ধে। তদন্তসংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলছেন, তারা একাধিকবার তদন্তের বিষয়ে কথা বলার জন্য বিমানের এমডির সঙ্গে যোগাযোগ করলেও তিনি তাতে সাড়া দেননি। উল্টো তিনি পুলিশি তদন্ত বাধাগ্রস্ত করতে নানা জায়গায় তদবির করেছেন।
গোয়েন্দা পুলিশের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা তাকে পুরো প্রক্রিয়াটি জানানো এবং জানার জন্য গোয়েন্দা কার্যালয়ে আসার অনুরোধ করেছিলাম। কিন্তু তিনি কোনোভাবেই গোয়েন্দা কার্যালয়ে আসতে রাজি হননি।’
তবে বিমানের এমডি অসহযোগিতার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমরা নিয়মিত তদন্তসংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলছি। যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, সঙ্গে সঙ্গেই তাদের চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।’
তদন্তসংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, আগেও একবার তারা নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস করেছিল বলে জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন। তার পরও ‘সুনাম ক্ষুণ্ন হবে’ মনে করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। ফাঁস হওয়া প্রশ্নে পরীক্ষা দিয়ে বর্তমানে অনেকেই বিমানের বিভিন্ন পদে চাকরি করছেন।
গত ২১ অক্টোবর বেলা ৩টায় বিমানের ১০ পদের বিপরীতে নিয়োগ পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল। পরীক্ষার আগেই প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগে প্রথমে দক্ষিণখান এলাকা থেকে বিমানের অফিস সহায়ক হারুনুর রশিদকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে এমটি অপারেটর মোহাম্মদ মাহফুজুল আলম ও এনামুল হককে গ্রেপ্তার করা হয়। একই দিন পৃথক অভিযানে দক্ষিণখানের মধুবাগ এলাকা থেকে এমটি অপারেটর জাহাঙ্গীর আলমকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর বিমানের প্রধান কার্যালয়ের সামনে থেকে গ্রেপ্তার করা হয় অফিস সহায়ক আওলাদ হোসেনকে।
গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, প্রথমে গ্রেপ্তার হওয়া পাঁচজনকে ৫৪ ধারায় আদালতে সোপর্দ করে ছয় দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়। তাদের তথ্যের ভিত্তিতে দুই দিন পর প্রশ্ন ফাঁসের মূল হোতা জাহিদ হাসান ও সামজু ওরফে সোবহানকে গ্রেপ্তার করেন গোয়েন্দারা। ২৪ অক্টোবর ফরিদপুর থেকে গ্রেপ্তার করা হয় মাসুদকে। তাদেরও প্রথমে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তিন দিনের রিমান্ডে নেয় গোয়েন্দা পুলিশ। পরবর্তী সময়ে জাভেদসহ আরও দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার ১০ জনের মধ্যে ৯ জনই আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
বিমান ও গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছে, জাহিদ ও আওলাদ এমডির দপ্তরের অফিস সহায়ক হিসেবে কাজ করতেন। সোবহান ও জাভেদ পরিচালক প্রশাসনের দপ্তরের অফিস সহায়ক। বাকিরা এমটি অপারেটর (গাড়িচালক) হিসেবে কাজ করতেন। গ্রেপ্তার মাসুদ বিমানের মহাব্যবস্থাপক (নিরাপত্তা) তাইজ ইবনে আনোয়ারের গাড়ি চালান। জাহাঙ্গীর আলম আগে তাইজ ইবনে আনোয়ারের গাড়ি চালাতেন।
গোয়েন্দা সূত্র বলছে, বিমানের এমডির বর্তমান গাড়িচালক মাহবুব আলী এই চক্রের অন্যতম একজন হোতা। ঘটনার পর থেকেই তিনি আত্মগোপনে আছেন। তাকে গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান চালানো হচ্ছে।
সিলেটের জাফলংয়ে দুই উপদেষ্টার গাড়িবহরে গতিরোধ ও বিক্ষোভের ঘটনায় সদ্য বহিষ্কৃত যুবদল নেতা জাহিদ খানকে প্রধান আসামি করে ১৫৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশ। এদের মধ্যে ৯ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে, বাকিদের অজ্ঞাতনামা হিসেবে মামলায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
রবিবার (১৫ জুন) রাতে গোয়াইনঘাট থানার উপপরিদর্শক ওবায়দুল্লাহ বাদি হয়ে মামলাটি করেছেন বলে জানানো হয়েছে।
এ বিষয়ে সিলেটের পুলিশ সুপার মাহবুবুর রহমান বলেন, ঘটনার পর বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারিত ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে অভিযুক্তদের শনাক্তে কিছুটা সময় লেগেছে। ইতোমধ্যে পুলিশ অভিযানে নেমেছে বলেও জানান তিনি।
এ ছাড়া, গোয়াইনঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সরকার তোফায়েল আহমেদ জানান, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বেআইনিভাবে সংঘবদ্ধ হয়ে সরকারি কাজে বাধা দেওয়া ও অবরোধ সৃষ্টি করার অভিযোগ আনা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ‘সদ্য বহিষ্কৃত যুবদল নেতা জাহিদ খানকে মামলার প্রধান আসামি করা হয়েছে, দ্বিতীয় আসামি হিসেবে রয়েছেন ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি ও আজির উদ্দিন। এ ছাড়াও মামলায় আরও সাতজনের নাম উল্লেখ রয়েছে।’
গত শনিবার (১৪ জুন) জাহিদ খান ও আজিরের নেতৃত্বে জাফলংয়ে বিক্ষোভের ঘটনা ঘটে। এতে বন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানের গাড়িবহরের গতিরোধ করা হয়। ঘটনার প্রায় ৩০ ঘণ্টা পর এ মামলা দায়ের করে পুলিশ।
সাতক্ষীরার আ.লীগের সংরক্ষিত আসেনের সাবেক এমপি রিফাত আমিনের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে মাদক ও অস্ত্র উদ্ধার করেছে যৌথবাহিনী। এসময় তার ছেলে সাফায়েত সরোয়ার রুমনকে আটক করা হয়েছে।
রবিবার (১৫ জুন) দুপুরে শহরের আব্দুর রাজ্জাক পার্কস্থ বিলাশবহুল বাড়িতে ২ ঘণ্টাব্যাপী অভিযানে নেতৃত্ব দেন সেনাবাহিনীর সাতক্ষীরা ক্যাম্পের মেজর ইফতেখার আহমেদ।
সাফায়াত সরোয়ার রুমন আশাশুনির কাদাকাটি গ্রামের মৃত রুহুল আমিনের ছেলে এবং তার মা রিফাত আমিন সাতক্ষীরা জেলা মহিলা আ.লীগের সাবেক সভানেত্রী ও আ.লীগের সংরক্ষিত নারী আসনের সাবেক এমপি ছিলেন।
যৌথবাহিনীর অভিযানের শুরুতেই দুইতলা হতে রুমন লাফিয়ে নিজতলা দিয়ে পালানোর চেষ্টা করে। তখন যৌথবাহিনী রুমনকে আটক করে বাড়িতে তল্লাশি করে মাদক ও অস্ত্র উদ্ধার করে।
সেনাবাহিনীর মেজর ইফতেখার আহম্মেদ অভিযান শেষে সাংবাদিকদের বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রিফাত আমিনের বাড়িতে অভিযান পরিচালনা করে ৩ শতাধিক ইয়াবা বড়ি ও একটি রাইফেল, একটি তলোয়ার এবং মদ ও খালি মদের বোতল উদ্ধার করা হয়েছে এবং সাবেক এমপির ছেলে সাফায়াত সরোয়ার রুমনকে আটক করা হয়েছে। এ ব্যাপারে পরবর্তীতে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার গারো পাহাড় ঘেরা গজনী পর্যটন কেন্দ্র। এখন পর্যটন কেন্দ্রটি চরম পরিবেশ সংকটে রয়েছে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি গারো পাহাড় ও পার্শ্ববর্তী নদী-নালা, খাল-বিল, ঝরনা থেকে দিনের পর দিন পাথর ও বালু লুটপাট করা হচ্ছে। এতে একদিকে যেমন প্রাকৃতিক পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, অন্যদিকে হুমকির মুখে পড়েছে পর্যটন শিল্প।
স্থানীয় সূত্র জানায়, ১৯৯৩ সালে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে গারো পাহাড়ের কোলে গড়ে তোলা হয় ‘গজনী অবকাশ বিনোদন কেন্দ্র’। গজনী মৌজার নামানুসারে এ নামকরণ করা হয়। প্রতিবছর দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লক্ষাধিক ভ্রমণপিপাসু এ পর্যটন কেন্দ্রে ভিড় করেন। সরকারও এখান থেকে রাজস্ব আয় করে থাকে।
তবে সম্প্রতি এই পর্যটন কেন্দ্রের আশেপাশের পাহাড়, নদী ও ঝর্ণা এলাকা অবৈধভাবে দখল করে চলছে পাথর ও বালু উত্তোলন। স্থানীয় প্রভাবশালী চক্র—যাদের বলা হচ্ছে ‘বালুদস্যু’—তারা দিনের আলো ও রাতের অন্ধকারে ট্রাক, মাহিন্দ্রা ও ট্রলিগাড়ি ব্যবহার করে লাখ লাখ টাকার পাথর ও বালু পাচার করছে দেশের বিভিন্ন এলাকায়।
উপজেলার কাংশা ইউনিয়নের কালঘেষা নদীর হালচাটি, মালিটিলা, গান্ধীগাঁও, বাঁকাকুড়া, দরবেশতলা, মঙ্গল ঝুড়া, পশ্চিম বাঁকাকুড়া, ছোটগজনী, গজনীসহ আশপাশের এলাকা থেকে বালু ও পাথর উত্তোলন অব্যাহত রয়েছে। স্থানীয়রা বলছেন, এ অবৈধ কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস পায় না কেউ। প্রতিবাদ করলেই হুমকি, গালিগালাজ এমনকি হামলারও শিকার হতে হচ্ছে সাধারণ মানুষ ও সাংবাদিকদের।
সম্প্রতি ঈদের আগে এক সপ্তাহে বনবিভাগ পাঁচটি মাহিন্দ্রা গাড়ি আটক করে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে বালুদস্যুরা রাংটিয়া ফরেস্ট রেঞ্জ কার্যালয়ে হামলা চালায় ও কর্মকর্তাদের অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে। গত ৪ জুন রাতে উপজেলা সদরের বাজারে বালু ভর্তি মাহিন্দ্রা গাড়ির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করলে এক সাংবাদিককে প্রাণনাশের হুমকিও দেয় বালুদস্যুরা।
এমনকি, এর আগেও ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে বালু শ্রমিকদের শাস্তি দেয়ায় বালুদস্যুরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) বিরুদ্ধেও আন্দোলনে নামে। যদিও মাঝে মাঝে অভিযান চালানো হয়, কিন্তু তাতে বন্ধ হচ্ছে না এই অবৈধ কার্যকলাপ।
গজনী ফরেস্ট বিট কর্মকর্তা সালেহীন নেওয়াজ বলেন, ‘লোকবলের অভাব ও নিরাপত্তা জণিত কারণে আমরা রাতে অভিযান চালাতে পারি না। এই কারণে বালুদস্যুরা রাতের অন্ধকারে সুযোগ নিচ্ছে।’ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশরাফুল আলম রাসেল বলেন, ‘পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিয়মিত অভিযান চালানো হচ্ছে। প্রয়োজনে সেনাবাহিনীর সহায়তা নেওয়া হবে।’
এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পরিবেশবাদী বলেন, ‘গারো পাহাড় শুধু একটি ভূখণ্ড নয়, এটি আমাদের প্রাকৃতিক নিরাপত্তার দেয়াল। এখানকার জীববৈচিত্র্য, জলবায়ু এবং পর্যটন—সবই আজ হুমকির মুখে। এই লুটপাট যদি এখনই বন্ধ না হয়, তাহলে ভবিষ্যতে পুরো এলাকা মরুভূমিতে রূপ নিতে পারে।’
স্থানীয় সচেতন মহল অবিলম্বে এই অবৈধ বালু-পাথর উত্তোলন বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে।
কোরবানি ঈদ উপলক্ষে টানা ১০ দিন বন্ধ থাকার পর আজ রবিবার (১৫ জুন) সকাল থেকে পঞ্চগড়ের চতুর্দেশীয় বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে পুনরায় আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
তবে এ সময়েও ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দিয়ে বৈধ পাসপোর্টধারী যাত্রীদের পারাপার ছিল স্বাভাবিক। ঈদের ছুটিতেও যাত্রী চলাচলে কোনো বিঘ্ন ঘটেনি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর আমদানি-রপ্তানিকারক গ্রুপের আহ্বায়ক রেজাউল করিম শাহীন জানান, কোরবানির ঈদ উপলক্ষে গত ৫ জুন (বৃহস্পতিবার) থেকে ১৪ জুন (শনিবার) পর্যন্ত স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধ ছিল।% আজ রবিবার থেকে আবারও স্বাভাবিক নিয়মে বাণিজ্য কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এতে বন্দরে ফের প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে।
তিনি আরও জানান, বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও ভুটানের সংশ্লিষ্ট কাস্টমস ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়ার্ডিং এজেন্টদের আগেই এ বিষয়ে চিঠির মাধ্যমে অবহিত করা হয়েছিল।
বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর লিমিটেডের ব্যবস্থাপক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ব্যবসায়ীদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঈদের ছুটিতে ১০ দিন স্থলবন্দরের কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছিল। আজ থেকে চার দেশের মধ্যে পুনরায় আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম চালু হয়েছে।
ইমিগ্রেশন পুলিশের অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ফিরোজ কবীর জানান, বাণিজ্য কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও ঈদের ছুটিতে পাসপোর্টধারী যাত্রীদের যাতায়াত স্বাভাবিক ছিল। এতে কোনো ধরনের সমস্যা হয়নি।
কক্সবাজারের চকরিয়া-লামা-আলীকদম সড়কের চকরিয়া অংশে গাছ ফেলে পর্যটকের লাশ আনতে যাওয়া স্বজনবোঝাই অ্যাম্বুলেন্সে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় ডাকাতদলের এক সদস্যকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
এ সময় অ্যাম্বুলেন্সের ভেতরে থাকা যাত্রীদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে নগদ টাকা, কয়েকটি মোবাইল ছিনিয়ে নেয় ডাকাতেরা। তবে পুলিশ দাবি করছে- এটি নিছক ছিনতাইয়ের ঘটনা ছিল।
শনিবার আনুমানিক ভোর সাড়ে ৪টার দিকে চকরিয়া থেকে আলীকদম গিয়ে পর্যটকের লাশ আনতে যাওয়ার পথে আলোচিত করইল্যারশিয়া এলাকায় অ্যাম্বুলেন্সটি ডাকাতের কবলে পড়ে।
তবে ডাকাত দলে থাকা আরাফাত নামের এক ডাকাত ঘটনার সময় লুট করে নেওয়া একটি মোবাইল সরিয়ে জঙ্গলের ভেতর লুকিয়ে রাখে। ওই মোবাইল খুঁজতে সকালে ফের ঘটনাস্থলে যায় আরাফাত। এ সময় স্থানীয় জনগণের সন্দেহ হলে তাকে আটক করে গাছের সঙ্গে বেঁধে পিটুনি দিতে থাকে। এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
এ সময় অ্যাম্বুলেন্সে ডাকাতির ঘটনার সঙ্গে আরাফাত নিজেসহ বেশ কয়েকজন অংশ নেয় বলে স্বীকার করে এবং তাদের নাম-ঠিকানা প্রকাশ করে।
আরাফাতের দেওয়া তথ্যানুযায়ী অ্যাম্বুলেন্স ডাকাতিতে আরও যারা অংশ নেয় তারা হলেন- ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের ছড়ারকূলের ছাদেক, উচিতার বিলের ফারুক, আরিফ, সাগর ছাড়াও বেশ কয়েকজন।
গ্রেফতার আরাফাত (২৮) চকরিয়া পৌরসভার সাত নাম্বার ওয়ার্ডের মোহাম্মদীয়াপাড়ার আবুল কালামের ছেলে।
চকরিয়া থানার ওসি মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, চকরিয়া-লামা-আলীকদম সড়কের চকরিয়া অংশে অ্যাম্বুলেন্সে ডাকাতি নয়, ছিনতাই হয়েছিল। সেই ঘটনায় স্থানীয় জনতার সহায়তায় আটককৃত একজনকে গ্রেফতার দেখিয়ে মামলা রুজু করা হয়েছে। উদ্ধার করা হয়েছে দুটি মোবাইল। এ ঘটনায় আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণসহ ঘটনায় জড়িত অন্যদের ধরতে পুলিশ মাঠে কাজ করছে।
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলায় ছয় যানবাহনের সংঘর্ষে এক পুলিশ সদস্যসহ দুইজন নিহত হয়েছেন। এতে আহত হয়েছেন অন্তত ২৫ জন।
শনিবার (১৪ জুন) দিবাগত রাতে আড়াইটার দিকে সদর উপজেলার ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের গোপীনাথপুর এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন— ভাটিয়াপাড়া হাইওয়ে পুলিশের সহকারী ট্রাফিক সাব-ইন্সপেক্টর রফিকুজ্জামান এবং খুলনার সোনাডাঙ্গা থানার দেবেনবাবু রোডের বাসিন্দা আব্দুল হামিদ ব্যাপারীর ছেলে ও আরমান পরিবহনের হেলপার সেলিম হোসেন ব্যাপারী।
গোপালগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর মো. সাজেদুর রহমান জানান, রাত আড়াইটার দিকে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা খুলনাগামী আরমান পরিবহনের একটি বাস ঘটনাস্থলে পৌঁছে একটি ট্রাককে পেছন থেকে ধাক্কা দেয়। এতে বাসটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ সময় যাত্রীদের উদ্ধারকালে দ্রুতগতিতে আসা আরও তিনটি বাস ও একটি প্রাইভেটকারের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।
রাত আড়াইটা থেকে সাড়ে তিনটা পর্যন্ত চলা এই সিরিজ সংঘর্ষে ঘটনাস্থলেই এটিএসআই রফিকুজ্জামান ও হেলপার সেলিম হোসেন ব্যাপারী প্রাণ হারান।
তিনি আরও জানান, খবর পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশ, সেনাবাহিনী ও ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা করে। আহতদের গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
পরে দুর্ঘটনা কবলিত যানবাহনগুলো সরিয়ে নিলে প্রায় দুই ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ায় ‘ভূমিহীনদের বন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত হলেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সিনিয়র যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদ।
শনিবার উপজেলার ভূমিহীন পরিবার আয়োজিত এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তাকে এ উপাধি দেওয়া হয়।
হাতিয়া দ্বীপ সরকারি কলেজ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত ‘ভূমিহীন পরিবারের নতুন ভোর ও একটি স্বপ্নের যাত্রা’ শীর্ষক সভায় সভাপতিত্ব করেন ওই কলেজের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক মো. মফিজ উদ্দিন।
অধ্যাপক মফিজ উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, “স্বাধীনতার পর এই প্রথম আবদুল হান্নান মাসুদ দ্বীপের অবহেলিত ভূমিহীন পরিবারের জীবনে নতুন ভোর এনে দিয়েছেন। এই স্বপ্নযাত্রার সম্মাননা ও স্বীকৃতি হিসেবে তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘ভূমিহীনদের বন্ধু’ উপাধি দেওয়া হয়েছে।”
সংবর্ধনার জবাবে আবদুল হান্নান মাসউদ বলেন, ‘হাতিয়ার ইতিহাস বহু পুরোনো। কিন্তু স্বাধীনতার এত বছর পরও দ্বীপে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। গত ১৭ বছরে এখনাে শুধু লুটপাট হয়েছে। আমি সবাইকে নিয়ে দ্বীপের উন্নয়নে কাজ করতে চাই। তবে এখনো পতিত স্বৈরাচারদের প্রেতাত্মারা সক্রিয়। জনগণের কল্যাণে কাজ করতে গেলেই তারা পদে পদে বাধার সৃষ্টি করে।’
তিনি বলেন, ‘হাতিয়ার উন্নয়নের কথা বললেই ওই সিন্ডিকেটের গায়ে জ্বালাপোড়ার সৃষ্টি হয়। যেমন, ফেরির ব্যবস্থা করতে চাইলে স্পিডবোট-ট্রলার মালিকরা, ভূমিহীনদের ভূমি বুঝিয়ে দিতে চাইলে ভূমিদস্যুরা, রাস্তাঘাটের উন্নয়ন করতে চাইলে অপরাজনীতির হোতারা বাধার কারণ হয়ে আসছে।’
হান্নান মাসউদ বলেন, ‘এই এলাকার ভূমিহীনদের মুলা ঝুলিয়ে রাজনৈতিক নেতারা যুগ যুগ ধরে লাঠিয়াল হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। তাদের কষ্টের কথা মিডিয়ায় আসে না, সুশীল সমাজের চোখে পড়ে না, প্রশাসনের দৃষ্টিতে আসে না। অসহায় এসব মানুষের কী অবস্থা সেটি দেখার মতো কোনো লোক পাওয়া যায় না।’
তিনি আরও বলেন, ‘হাতিয়ায় নদীভাঙন রোধে গত ৫০ বছরে কেউ একটি জিও ব্যাগও ফেলতে পারেনি। আমি গত ১০ মাসে প্রশাসনের ঊর্ধ্বতনদের সঙ্গে সমন্বয় করে প্রায় সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার এলাকায় জিও ব্যাগ ফেলার ব্যবস্থা করেছি। এখন হাতিয়ার জনগণ চাইলে স্থায়ী ব্লক বাঁধের ব্যবস্থাও করা হবে।’
স্থানীয় ভূমিহীন পরিবারের সদস্য মো. শরিফ উদ্দিনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন হাতিয়া প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফিরোজ উদ্দিন, জাতীয় নাগরিক পার্টির সংগঠক মো. ইউসুফ, হাতিয়া নিউ মার্কেটের সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদের প্রমুখ।
চট্টগ্রামে নতুন করে আরো একজনের শরীরে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে গত ছয় দিনে মোট ৯ জনের শরীরে এ ভাইরাসের জীবাণু শনাক্ত হয়েছে। শনিবার (১৪ জুন) সকালে সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্যমতে, গত ২৪ ঘণ্টায় (শুক্রবার সকাল আটটা থেকে শনিবার সকাল আটটা) ২৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে একজনের করোনা পজিটিভ পাওয়া যায়। ৪০ বছর বয়সী আক্রান্ত ওই ব্যক্তি চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার ফতেহাবাদ এলাকার বাসিন্দা। তিনি শুক্রবার নগরের এভারকেয়ার হাসপাতালে করোনার পরীক্ষা করান। সেখানেই তার শরীরে করোনার জীবাণু শনাক্ত হয়।
এদিকে সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, আক্রান্ত নয়জনের মধ্যে পুরুষ ৫ জন এবং নারী ৪ জন। এদের মধ্যে ৭ জন নগরের এবং ২ জন উপজেলার বাসিন্দা।
অন্যদিকে, চট্টগ্রামে এখন পর্যন্ত বেসরকারি পর্যায়ে করোনা শনাক্তকরণের পরীক্ষা চালু আছে। তবে শিগগিরই চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেসে (বিআইটিআইডি) আরটি–পিসিআর পরীক্ষা শুরু করা যাবে বলে আশা করছেন জেলা সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম।
কুমিল্লার দাউদকান্দি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। দূর্ঘটনায় বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটেনি। তবে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় রোগীদের মধ্যে আতংক ছড়িয়ে পড়ে। আগুন নেভাতে গিয়ে হাসপাতালের তিনজন কর্মী আহত হয়েছেন। খবর পেয়ে স্থানীয় ফায়ারসার্ভিস কর্মীরা ছুটে আসে এবং স্বল্প সময়ের মধ্যে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। আহতরা হলেন ইয়াসিন, মেহেদি ও মুছা। আহতদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ণ ইউনিটে পাঠানো হয়েছে।
শনিবার (১৪জুন) বেলা ১১টায় দাউদকান্দি উপজেলা গৌরীপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ৩য় তলায় ষ্টোর রুমে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে হাসাপাতালের ওয়ার্ডে ভর্তি রোগীদের এবং বহিঃবিভাগে চিকিৎসা সেবা প্রায় দুই ঘন্টা বন্ধ থাকে৷ খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে স্থানীয় এবং হাসপাতালে কর্মরত স্টাফদের সহযোগিতায় অল্প সময়ের মধ্যেই আগুন নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বেলা ১১ টার দিকে হাসপাতালের তিনতলার ষ্টোর রুমে আগুনের ধোয়া দেখা যায়। ধোয়া দেখে পাশের ওয়ার্ডের রোগীর স্বজন ও নার্সরা আগুন আগুন বলে চিৎকার শুরু করে। এ সময় হাসপাতালে থাকা রোগী ও তাদের স্বজনরা দৌঁড়াদৌড়ি শুরু করেন। পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পল্লী বিদ্যু ও ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেয়। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে গিয়ে হাসপাতালের আউটসোর্সিংয়ে কর্মরত ইয়াসিন, মেহেদি ও মুছা নামে তিন কর্মচারী আহত হয়েছেন। আহতদের ঢাকা মেডিকেলের বার্ণ ইউনিটে পাঠানো হয়েছে।
এ বিষয়ে দাউদকান্দি ফায়ার সার্ভিস স্টেশন অফিসার মোঃ ইদ্রিস বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসার পর স্থানীয় এবং হাসপাতালে কর্মরত স্টাফদের সহযোগিতায় অল্প সময়ের মধ্যেই আগুন নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। প্রাথমিক ধারনা বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে আগুনে সূত্রপাত, পরবর্তীতে তদন্ত সাপেক্ষে মূল কারণ জানা যাবে।
এ ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. হাবিবুর রহমান বলেন, হাসপাতালের ৩য় তলায় ডেঙ্গু রোগীদের ওয়ার্ডের পাশের কক্ষে ষ্টোর রুমে ঔষধসহ রোগীদের সেবার কাজে ব্যবহৃত সব ধরনের মালামালের সাথে কিছু দামী সরঞ্জামও ছিল। ওই কক্ষে আগুনে অধিকাংশ মালামালই পুড়ে নষ্ট হয়ে গেছে। কিছু মালামাল বের করতে পারলেও তা ভালো আছে কিনা পরবর্তীতে যাচাই করে বলেতে পারবো । আগুনে ক্ষতির পরিমান এখন নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না। আর আগুন নিয়ন্ত্রণ এবং মালামাল বিশেষ করে অক্সিজেন সিলিন্ডার বের করতে গিয়ে আমাদের আউটসোর্সিংয়ে কাজ করা তিনজন আহত হয়েছেন। তাদেরকে ঢাকা মেডিকেলের বার্ণ ইউনিটে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে হাসপাতালে অগ্নিকান্ডের খবর পেয়ে দাউদকান্দি উপজেলা সহকারী কমিশনার(ভূমি) রেদওয়ান ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন৷
ঢাকা-টাঙ্গাইল-যমুনা মহাসড়কে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজটে ভোগান্তিতে পড়েছেন ঈদফেরত যাত্রীরা।
শনিবার (১৪ জুন) সকাল থেকে এ যানজটের সৃষ্টি হয়।
যমুনা সেতুর পশ্চিম প্রান্তের গোলচত্বর থেকে কড্ডা পর্যন্ত প্রায় ৫ কিলোমিটার এবং সেতুর পূর্ব প্রান্ত থেকে এলেঙ্গা পর্যন্ত প্রায় ৩০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে এই যানজট সৃষ্টি হয়েছে বলে জানান যমুনা সেতু পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসাদুজ্জামান।
তিনি বলেন, যমুনা সেতুর ওপর একটি পিকআপ ও ট্রাকের সংঘর্ষ এবং মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে আরও তিনটি যানবাহন বিকলের কারণে এই দীর্ঘ যানজট তৈরি হয়।
ঈদ শেষে ঢাকামুখী মানুষের চাপের কারণে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে পড়েছে।
এদিকে, শনিবার সকালে কামারখন্দ উপজেলার বাগবাড়ি এলাকায় এনডিপি অফিসের কাছে যমুনা সেতুর পশ্চিম সংযোগ সড়কে দুইটি ট্রাকের সংঘর্ষের ফলে ওই স্থানে গাড়ির চলাচল সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে যায়, যা যানজটকে আরও দীর্ঘতর করে তোলে।
তবে ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গগামী লেনে যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে, যদিও গাড়ির চাপ অনেক বেশি বলে জানান ওসি।
সকাল থেকেই আমাদের পুলিশ সদস্যরা মহাসড়কে যানজট নিয়ন্ত্রণে কাজ করে যাচ্ছেন। আমরা আশা করছি শিগগিরই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে বলে জানান তিনি।
এলেঙ্গা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ শরীফ বলেন, ভোর থেকে যমুনা সেতু থেকে এলেঙ্গা পর্যন্ত ঢাকা-মুখী লেনে গাড়ির চাপ থাকলেও ঢাকা থেকে সেতু-মুখী লেনে কোনো যানজট নেই।
তিনি আরও জানান, হাইওয়ে পুলিশ ও ট্রাফিক পুলিশ যৌথভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে। শিগগিরই যানজট নিরসন হবে বলে আশা প্রকাশ করেন পুলিশের এই কর্মকর্তা।
সিলেটে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানের গাড়ি আটকে বিক্ষোভ করেছেন পাথর শ্রমিকরা।
শনিবার দুপুরে সিলেটের জাফলং পর্যটন এলাকা পরিদর্শন করেন অন্তর্বতী সরকারের এই দুই উপদেষ্টা। পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে দুই উপদেষ্টাই জানান, সিলেটের পাথর কোয়ারিগুলো আর খুলে দেয়া হবে না। তাদের এই বক্তব্যের পরপরই পাথর শ্রমিকরা জড়ো হয়ে তাদের গাড়ি আটকিয়ে বিক্ষোভ করেন। এসময় উপদেষ্টাদের গাড়ি প্রায় ১০ মিনিট আটকে রাখেন শ্রমিকরা। এসময় পুলিশের সাথে হাতাহাতি হয় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের। কিছুক্ষণ পর পুলিশের সহায়তায় ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন দুই উপদেষ্টা।
বিক্ষোভ প্রসঙ্গে জাফলংয়ের পাথর শ্রমিক আশরাফ হোসেন বলেন, পাথর উত্তোলন বন্ধ থাকায় লাখো শ্রমিক বেকার হয়ে আছে। ফলে তাদের সবাই মনেই ক্ষোচ বিরাজ করছে। আজকে এই ক্ষোভের প্রকাশ ঘটেছে।
তিনি বলেন, জাফলংয়ে পাথর উত্তোলন বন্ধ থাকলেও লুটপাট বন্ধ নেই। লুটপাটকারীদের সুযোগ করে দিতেই বৈধভাবে পাথর উত্তোলন বন্ধ রেখেছে সরকার।
গোয়াইনঘাট থানার ওসি সরকার মোহাম্মদ তোফায়েল আহমেদ বলেন, আকস্মিকভাবে কিছু লোক উপদেষ্টাদের গাড়ি আটকে মিছিল করার চেষ্টা করে। পরে পুলিশ দ্রুত তাদের সরিয়ে দিয়ে রাস্তা পরিষ্কার করে।
গোয়াইনঘাট উপজেলার ইউএনও রতন কুমার অধিকারী বলেন, উপাদেষ্টাদের গাড়ি নিরাপাদে জাফলং ছেড়ে চলে গেছে। তারা এখন হরিপুর গেস্ট হাউসে আছেন।
এর আগে জাফলং পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন করে জাফলং ও এর আশেপাশের এলাকার পরিবেশ ধ্বংস করা হচ্ছে। জাফলং এর অবৈধ পাথর ক্রাশারের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হবে।
আর পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, সিলেটের আর কোন পাথর কোয়ারি খুলে দিবে না সরকার।
তিনি বলেন, জাফলং পর্যটন কেন্দ্রকে ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এমটটি হলে এ অঞ্চলের পাথর শ্রমিকদের বিকল্প কর্মসংস্থান তৈরি হবে।
সৈয়দা রিজওয়ানা বলেন, জাফলং ইসিএ এলাকা থেকে অবৈধভাবে বালু ও পাথর উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে এরকম অবৈধ কার্যক্রমের সাথে কেউ জড়ালে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মেঘনা নদীর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জের প্রান্তে সৈয়দ নজরুল ইসলাম সড়ক সেতুর পিলারে ধাক্কা লেগে নদীর স্রোতে তলিয়ে গেছে বালু বোঝাই একটি বাল্কহেড।
শনিবার (১৪ জুন) ভোর সাড়ে ৫টার দিকে মেঘনা নদীর আশুগঞ্জ প্রান্তে এই দুর্ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, সীমান্ত এলাকা সুনামগঞ্জ থেকে বালু বোঝাই করে ঢাকায় যাওয়ার পথে মেঘনা নদীর আশুগঞ্জ প্রান্তে সৈয়দ নজরুল ইসলাম সড়ক সেতুর পিলারে ধাক্কা লেগে বাল্কহেডটি মুহূর্তের মধ্যে তলিয়ে যায়। এসময় বাল্কহেডে থাকা সুকানিসহ ৬ জন সাঁতরিয়ে পাড়ে উঠে জীবন রক্ষা করেন। পরবর্তীতে খবর পেয়ে ভৈরব নৌ পুলিশ ফাঁড়ির পুলিশ সদস্য ও বিআইডব্লিউটিএর একটি টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে।
প্রত্যক্ষ্যদর্শী এমভি মেমোরি ৩৪ জাহাজের মাস্টার ইয়াকুব আলী বলেন, সকাল পৌনে ছয়টার দিকে ঘুম থেকে উঠে দেখি একটি বাল্কহেড ব্রিজের পিলারের সঙ্গে ধাক্কা লেগে মাঝখানে ফেটে তলিয়ে গেছে। এসময় বাল্কহেডে থাকা ৩ জন ব্রিজের পিলারে ওঠেন, বাকি ৩ জন সাঁতরিয়ে নদীর পাড়ে উঠে প্রাণ রক্ষা করেন।
আরেক প্রত্যক্ষদর্শী এমভি মেঘনা জাহাজের সুকানি নুর নবী বলেন, বিকট শব্দ শুনে ঘুম থেকে উঠে দেখি একটি বাল্কহেড সেতুর পিলারের কাছে ডুবে যাচ্ছে। পরে প্রবল স্রোতে পানিতে তলিয়ে যায় বাল্কহেডটি।
এ বিষয়ে ভৈরব নৌ পুলিশ ফাঁড়ির এসআই মো. মোবারক বলেন, সকালে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে বাল্কহেড ডুবে যাওয়ার সত্যতা জানতে পারি। তবে পানিতে পুরো বাল্কহেডটি তলিয়ে যাওয়ায় কোনো চিহ্ন দেখা যাচ্ছে না। ডুবে যাওয়া বাল্কহেডের কোনো লোকজন পাওয়া যায়নি। এটি উদ্ধারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে তিনি জানান।
সাতক্ষীরা, সুন্দরবন, খোলপেটুয়া, কপোতাক্ষ, গাবুরা, হরিনগর, কৈখালী নদীতে অবাধে নিষিদ্ধ জাল দিয়ে নদী থেকে আহরণ করা হচ্ছে চিংড়ির রেণু পোনা। এতে মারা যাচ্ছে শত প্রজাতির মাছের পোনাসহ জলজ প্রাণী। নদী থেকে আহরণ নিষিদ্ধ এসব রেণু পোনা রাতের আঁধারে নেয়া হচ্ছে খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা। বিষয়টি ওপেন সিক্রেট হলেও কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে বলে অভিযোগ মৎস্য বিভাগ ও সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে। তবে মৎস্য বিভাগ জানায়, রেণু পোনা আহরণ বন্ধে অভিযান চালালেও শতভাগ সফল নন তারা।
সরজমিন ঘুরে দেখা যায়, প্রকাশ্যে খোলপেটুয়া, কপোতাক্ষ, হরিনগর, নদীতে রেণু পোনা আহরণ করছেন হাজার হাজার স্থানীয় অধিবাসীরা। নিষিদ্ধ জাল দিয়ে আহরণ করা এসব রেণু পোনা তীরে বসে আরেক দল পোনা এবং জলজ প্রাণী গুনে আলাদা করছে। এতে মারা যাচ্ছে শত প্রজাতির মাছ ও জলজ প্রাণী।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাতের আঁধারে এসব পোনা বিক্রির জন্য নিয়ে যাওয়া হয় খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরার মৎস্য হ্যাচারিতে। স্থানীয়রা জানায়, অবৈধভাবে রেণু পোনা আহরণ বন্ধ না করা হলে নদীর জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের। পাশাপাশি কমবে মাছের উৎপাদন।
খোলপেটুয়া নদীতে রেণু পোনা আহরণ কারী একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতিদিন শুধু মাত্র গাবুরা ইউনিয়ন, বুড়িগোয়ালীনি এলাকা ও আটুলিয়া ইউনিয়নের খোলপেটুয়া নদীর তীরবর্তী এলাকা থেকে কয়েক কোটি পোনা আহরণ করা হয়। বাকি গাবুরা ও কপোতাক্ষ নদীতেও এমনভাবেই রেনু পোনা আহরণ করা হয়। যা স্থানীয় পাইকারের কাছে এক একটি রেণু পোনা এক টাকা মূল্যে বিক্রি করেন তারা। পরে খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা নিয়ে পাইকাররা তা বিভিন্ন মূল্যে বিক্রি করা হয়। আর এজন্য পাইকাররা বিভিন্ন স্থানে মাসোয়ারা দেন বলেও জানা যায়।
জানা যায়, খোলপেটুয়া ও কপোতাক্ষ নদীর রেণু পোনার সবচেয়ে বড় পাইকার বুড়িগোয়ালীনি। এখানে বসেই কয়েকজন মিলে নিয়ন্ত্রণ করে এ অঞ্চলের রেণু পোনা। এদের ছত্র ছায়ায় গাবুরা নদী, খোলপেটুয়া, হরিনগর, কালমেঘা, কাকচিড়া এলাকায় বেশ কিছু পাইকার রয়েছে। এসব পাইকারদের মধ্যে অধিকাংশ পাইকার সোনারমোড় পাইকারদের থেকে দাদন নিয়ে রেণু সংগ্রহ করে আসছে। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে এই রেণু পোনা নিয়ন্ত্রণ করত সাবেক এমপি জগলুল হায়দার একান্ত সহচর ভবতোশ কালামসহ কয়েকজন আ. লীগের নেতারা। বর্তমানে তা স্থানীয় বিএনপির একটি অংশ নিয়ন্ত্রণ করে বলেও জানা যায়।
গাবুরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বিএনপির নেতা মাসুদুল আলম জানান, রেণু পোনা শিকারে কারনে নদীতে মাছের পরিমাণ কমে গেছে। খোলপেটুয়া নদীর তীরবর্তী সোনারমোড় মৎস্য ঘাটে তেমন মাছের দেখা মিলে না। এখানে আগে টনকে টন মাছ কেনাবেচা হতো।
বুড়িগোয়ালীনি মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি আব্দুল হালিম জানান, অবৈধ জাল দিয়ে মৎস্য শিকার কিছুতেই থামছে না। এর মধ্যে খোলপেটুয়া নদীগুলোতে যেন রেণু পোনা আহরণের মহোৎসব চলছে। এগুলো এখনি বন্ধ না করলে জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের পাশাপাশি মাছের উৎপাদন ধংস হয়ে যাবে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।
সাতক্ষীরা স্টেশন কোস্ট গার্ড কপোতাক্ষ স্টেশন সুত্রে জানা যায়, গত মাসে অভিযান চালিয়ে তার প্রায় ২০ লাখ চিংড়ি রেণু পোনা ও ১৫ লাখ মিটার অবৈধ নেট জাল জব্দ করেছে। যার বাজার মূল্য প্রায় ৫ কোটি টাকা । কিন্তু এ বিষয়ে কাউকে আটক করতে পারেনি তারা।
সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ মহসিন বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, নদী থেকে নিষিদ্ধ রেণু পোনা আহরণ করায় ভীষণ হুমকিতে পড়েছে মৎস্য সম্পদ। রেণু আহরণ বন্ধে নিয়মিত অভিযান চললেও শতভাগ সফল নন তারা। কেননা অপ্রাপ্ত বয়স্ক কিশোর কিশোরী ও অধিকাংশ নারীরা ঝুঁকি নিয়ে পোনা আহরণ করছে। কম জনবল নিয়ে একদিক থেকে অভিযান চালালে অপর দিক থেকে অভিযান বুঝতে পেরে পালিয়ে যায় তারা।