মিয়ানমারের চরমপন্থি সশস্ত্র সংগঠন আরসার আগের নাম ছিল আল ইয়াকিন বা ইসলামি সংগঠন। রোহিঙ্গা মুসলমানদের নিয়ে কাজ করাই ছিল তাদের উদ্দেশ্য। ২০১৩ সালের দিকে সংগঠনের নাম পাল্টে রাখা হয় আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি বা আরসা, যদিও দলের একাংশ এখনো আল ইয়াকিন নামেই পুরোনো সংগঠনকে আকড়ে ধরে আছে। আতাউল্লাহ আবু আম্মার জুনুনি সেসময়ে হন স্যালভেশন আর্মির (আরসা) কমান্ডার ইন চিফ। এই আতাউল্লাহর জন্ম সৌদি আরবে, তার বাবা-মা আরাকান থেকে গিয়ে সৌদি আরবে স্থায়ী হন। কিন্তু জন্ম সৌদি আরবে হলেও আতাউল্লাহ পরে পাকিস্তানের করাচিতে এসে বসবাস করতেন।
রোহিঙ্গাদের অধিকার আদায় করতে ঠিক কবে মিয়ানমারে তিনি ফিরে আসেন, তা জানা যায় না। তবে তা ২০১৩ সালের আগেই অর্থাৎ আল ইয়াকিন থেকে আরসার যাত্রা শুরুর আগেই হয়েছে, তা নিশ্চিত। সংগঠনটি সশস্ত্র হয়ে উঠেছে, তা প্রথম বোঝা যায় ২০১৫-১৬ সালের দিকে। লক্ষ্য ছিল, মিয়ানমারের মুসলিম অধ্যুষিত আরাকান প্রদেশ দখল। ২০১৭ সালের মাঝামাঝি মিয়ানমারের থানায় হামলা, পুলিশের অস্ত্র লুটের ঘটনার পর সংগঠনটির বিরুদ্ধে প্রথম মনোযোগ দেয় মিয়ানমার সেনাবাহিনী। তবে ওই বছরেই আগস্টে তার নির্দেশে রাখাইনে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর তল্লাশি চৌকিতে আরকান দখল ও অস্ত্র লুট করার জন্য আবার হামলা চালায় আরসা। এ ঘটনায় ভীষণ ক্ষুব্ধ সেনাবাহিনী আরসা নির্মূলের উদ্দেশে আরকান প্রদেশে হামলা শুরু করে। তখন উত্তপ্ত হয়ে পড়ে মিয়ানমারে মুসলমানদের গ্রামগুলোর পরিস্থিতি। ওই দেশের সেনাবাহিনী ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রাখাইনে চড়াও হয়ে অভিযান ও রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন, হামলা ও গণধর্ষণের ঘটনা শুরুর পর নিজ দেশ ছেড়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা। সম্পূর্ণ মানবিক কারণে তাদের তখন আশ্রয় দেয় বাংলাদেশ সরকার। আর বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে আরসার সদস্যদের সম্পর্কে তথ্য না থাকার সুযোগে এসব রোহিঙ্গার সঙ্গে আশ্রয়প্রার্থী হিসেবে বাংলাদেশে চলে আসে আরসার কিছু সদস্য আর সমর্থকও।
উদ্দেশ্য তাদের মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সঙ্গে লড়াই করা হলেও অস্ত্র তৈরি ও সংগ্রহ, বাহিনীর জন্য সদস্য সংগ্রহ, সদস্যদের অস্ত্র প্রশিক্ষণ দেওয়া ইত্যাদি কাজে তারা তখন থেকেই গোপনে বাংলাদেশের পাহাড়ি নির্জন এলাকাগুলো ব্যবহার শুরু করে। একই সঙ্গে রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরগুলোতে নিজেদের প্রভাব বাড়াতে তারা সেগুলোতে আধিপত্য বিস্তার শুরু করে। রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবির সর্দার বা মাঝিদের করায়ত্ত করা বা ভয় দেখানো দিয়েই এর শুরু। একই সঙ্গে নিজেদের অর্থভাণ্ডার ঠিক রাখতে মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের অরক্ষিত সীমান্ত অঞ্চলকে রুট হিসেবে ব্যবহার করে এদেশে মাদক চোরাচালান আরও বাড়িয়ে দেয়।
শুরুতে আরসা সম্পর্কে অন্ধকারে থাকলেও দিনের পর দিন রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরগুলোতে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে পরস্পরের মধ্যে হামলা, গুলি, হত্যার ঘটনা বাড়তে থাকায় এবং বিপুল পরিমাণ মাদকসহ রোহিঙ্গা ও তাদের প্ররোচনায় স্থানীয়দের আটক বা গ্রেপ্তাদের মধ্য দিয়ে এই চরমপন্থি সংগঠন সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পেতে শুরু করে বাংলাদেশের বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। র্যাব, এপিবিএন আরসা দমনে কঠোর অভিযান চালাচ্ছে মাঝেমধ্যেই। তার পরও তাদের গোপন তথ্য প্রকাশ হয়ে পড়া এবং বেশির ভাগ রোহিঙ্গা সশস্ত্র যুদ্ধে জড়িত হতে না চাওয়ায় আরসার নেতাসহ সদস্যরা বরাবরই আছে উৎকণ্ঠায়। রোহিঙ্গাদের মধ্যে আরসা ছাড়াও আছে আরও কিছু সশস্ত্র গ্রুপ। তবে তারা পরস্পর যেন পরস্পরের শত্রু। আরাকানে যে বিদ্রোহী সশস্ত্র গ্রুপ আরাকানের স্বাধীনতার জন্য সশস্ত্র লড়াই করে যাচ্ছে, আরাকান আর্মি, ওদের সঙ্গেও এসব গ্রুপের শত্রুতা রয়েছে। আরাকান আর্মি সাধারণভাবে সব আরাকানির জন্যে স্বাধীন আরাকান চায়, কিন্তু আরসাকে ওরা চিহ্নিত করে মুসলিম সন্ত্রাসী গ্রুপ হিসেবে। সব মিলিয়ে অস্থির হয়ে উঠছে রোহিঙ্গা শিবির।
আরসার শীর্ষ নেতা অলি আকিজ দীর্ঘদিন মিয়ানমারে আত্মগোপনে থাকলেও গত ১৯ মে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ফিরেছেন। আরসার শীর্ষ কমান্ডার আতাউল্লাহ আবু আম্মার জুনুনি এবং সেকেন্ড-ইন-কমান্ড ওস্তাদ খালেদের নির্দেশে ক্যাম্পে আধিপত্য বিস্তারের নতুন পরিকল্পনা নিয়ে অপতৎপরতা চালাচ্ছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সূত্রে জানা যায়, রোহিঙ্গাদের সশস্ত্র গ্রুপ আরসার প্রশিক্ষণ। অস্ত্র তৈরি, আত্মগোপন, মিটিংসহ নানা কর্মকাণ্ড সেখানে সংগঠিত হতো। গত রোববার মধ্যরাতে অভিযান চালিয়ে ক্যাম্প-৪-এ গোপন বৈঠক থেকে আকিজসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, একটি দেশীয় তৈরি এলজি, একটি ওয়ানশুটার গান, ১০ রাউন্ড কার্তুজ, দুই কেজি বিস্ফোরকদ্রব্য, তিনটি মোবাইল এবং নগদ ২ হাজার ৫০০ টাকা জব্দ করা হয়।
র্যাব-১৫-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল এইচ এম সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘আমরা এ পর্যন্ত ১১২ জনের ওপরে আরসার ভিন্ন পদবিধারী নেতা গ্রেপ্তার করেছি। গত রোববারের আরসার শীর্ষ নেতা আকিজসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করি। তাদের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে।
২০১৭ সালে সীমান্ত পার হয়ে ভারত হয়ে বাংলাদেশে এসে ক্যাম্প-৫-এ সপরিবারে বসবাস শুরু করেন মৌলভী আকিজ। পরে আরসার হয়ে কাজ শুরু করেন তিনি। এরপর ক্যাম্প-৫-এ আরসার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পান। নেটওয়ার্ক গ্রুপে কাজ করতেন। ক্যাম্পের বিভিন্ন তথ্য আরসা কমান্ডারদের কাছে পৌঁছে দিতেন। এভাবে শীর্ষ নেতৃত্বে পৌঁছান। রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের পক্ষে কাজ করায় ওস্তাদ খালেদের নির্দেশে রোহিঙ্গা নেতা মাস্টার মহিবুল্লাহকে হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন আকিজ। তা ছাড়া মতাদর্শিক দ্বন্দ্বে ক্যাম্পে সেভেন মার্ডারে সরাসরি অংশ নেন। তাদের নেতা-কর্মী আটক হলে কিছুটা দুর্বল হয়ে যায় কিন্তু আবার সক্রিয় হয়ে ওঠে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিশাল এই জনগোষ্ঠীতে আরসা, আল-ইয়াকিনসহ অন্তত ১৫টি বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন সক্রিয়। ২০১৭ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ছয় বছরে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সংঘর্ষের ঘটনায় প্রায় ৩০০ জন নিহত হয়েছে। মামলা হয়েছে পাঁচ হাজারের অধিক। এসব মামলার বেশির ভাগই হয়েছে মাদক ও আগ্নেয়াস্ত্র রাখার অভিযোগে।
রোহিঙ্গা নেতা ড. জোবায়ের বলেন, আরসা রোহিঙ্গা ক্যাম্প দখল করে রাজত্ব কায়েম করার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এ পর্যন্ত তাদের দুই শতাধিক নেতা-কর্মী আটক হয়েছেন। আটক করলেও তারা আরও শক্তিশালী হয়ে উঠবে, তার কারণ তাদের রোহিঙ্গা সরকার মদদ দিয়ে যাচ্ছে। প্রত্যাবাসন বন্ধ রাখার জন্য মিয়ানমার সরকার তাদের ব্যবহার করে যাচ্ছে, যে কারণে তারা এতটা শক্তিশালী।
গত রোববার রাতে উখিয়ার মধুরছড়া ৪ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে আরসার শীর্ষ নেতাদের গ্রেপ্তার করে। সে জায়গায় ভোরে ৪০-৪৫ জন আরসা সন্ত্রাসী পাহাড় থেকে সীমানার কাঁটাতারের বেড়া অতিক্রম করে ৪ নম্বর ক্যাম্পে আসে। ঘটনাস্থলে এসে ক্যাম্পে পাহারারত রোহিঙ্গা ইলিয়াছকে তারা গুলি করে ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে হাতে, পায়ে ও তলপেটে কুপিয়ে মারাত্মক জখম করে। এতে ইলিয়াস ঘটনাস্থলেই মারা যান।
১৪ এপিবিএনের অধিনায়ক মোহাম্মদ ইকবাল বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গেলে এপিবিএন সদস্যদেরও লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ করে সন্ত্রাসীরা।
তিনি আরও বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নতুন করে সংগঠিত এবং নাশকতা করার চেষ্টা করছে আরসা। মূলত আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সংঘবদ্ধ হয়ে হামলা চালায় আরসা সন্ত্রাসীরা। এতে তারা গুলি এবং কুপিয়ে তিন রোহিঙ্গাকে হত্যা করে। আর গুরুতর আহত হয় সাতজন। হতাহতরা আরএসও সদস্য বলে জানা গেছে।
রোহিঙ্গা গবেষক অধ্যাপক ড. রাহমান নাসির উদ্দিন দৈনিক বাংলাকে বলেছেন, রোহিঙ্গাদের অধিকার আদায় করতে আরসা ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের দিকে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর তল্লাশি চৌকিতে হামলা চালায়। কিন্তু এটার কারণে নির্যাতনের তীব্রতায় নিজ দেশ ছেড়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে প্রায় ৮ লাখ রোহিঙ্গা। সে কারণে আরসা রোহিঙ্গাদের প্রতিনিধিত্ব হয়ে উঠতে পারে নাই। বিভিন্ন সময় রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারি, রোহিঙ্গাদের এ দুর্দশার জন্য আরসা দায়ী। রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আরসার একটা বড় গ্রুপ বাংলাদেশে এসেছে। বাংলাদেশে ৩৪টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে তাদের অবস্থান ধরে রাখার জন্য তারা বিভিন্ন ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে এবং যখন কেউ তাদের বিরুদ্ধে কথা বলার চেষ্টা করেছে তখন তারা তাদের দমন করেছে। এর মধ্যে একজন ছিলেন মুহিব উল্লাহ। মুহিব উল্লাহ যখন রোহিঙ্গাদের নেতা হয়ে ওঠে বিশ্বের কাছে পরিচিত হন এবং আন্তর্জাতিকভাবে রোহিঙ্গাদের জন্য আন্দোলন করেন তখন তাকে নেতা হিসেবে গ্রহণ করে রোহিঙ্গারা। বাংলাদেশ যখন প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করে তখন রোহিঙ্গাদের রাজি করানোর জন্য মুহিব উল্লাহ সোর্স ছিল। ধীরে ধীরে মুহিব উল্লাহ প্রধান পাঁচ রোহিঙ্গা নেতার একজন হয়ে ওঠেন। ২০১৯ সালের ২৫ আগস্ট ৩ থেকে ৫ লাখ রোহিঙ্গার মহাসমাবেশ করে তাক লাগিয়ে দেন এবং আনন্দে আত্মহারা করে দেন রোহিঙ্গা ইস্যুতে লেগে থাকা বিদেশি এনজিওগুলোকে। এসব কারণে আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস ভেঙে দেওয়ার জন্য মুহিব উল্লাহকে হত্যা করা হয়। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর শত্রু হচ্ছে আরাকান আর্মি। আরাকান আর্মির শত্রু হচ্ছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। আবার মিয়ানমারের শত্রুও আরসা। মিয়ানমার নৌবাহিনী ঘোষণা দিয়ে বলছে আরকান আর্মি ও আরসা মিলে বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। যেহেতু মিয়ানমার আরাকানে আরকান আর্মি শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। সে কারণে আরসা ও শক্তিশালী হয়ে উঠেছে।
দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলোকে সতর্ক করে দিয়ে ড. রাহমান নাসির বলেন, দুই শতাধিক আরসার নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার করাতেই আরসা দুর্বল হয়ে পড়েছে এমন যুক্তি হয়তো সঠিক নয়। এই চরমপন্থি দলে আরও অনেক সদস্য ও সমর্থক রয়েছে।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রফিকুল ইসলাম দৈনিক বাংলাকে বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বিভিন্ন সন্ত্রাসী গ্রুপ তাদের আধিপত্য বিস্তার করার জন্য এসব সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে থাকে। আগুন নাশকতা এসব মাঝেমধ্যে বিভিন্ন কারণে হয়ে থাকে। তবে কিছু কিছু ঘটনা আমরা সন্দেহ করি এগুলো নাশকতা। আমরা আরসা বলে কিছু পাইনি। তবে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সন্ত্রাসী গ্রুপ আছে। যারা উগ্রবাদী কর্মকাণ্ডে জড়াবে তাদের বিরুদ্ধে আমাদের সমন্বিত অভিযান অব্যাহত থাকবে।
রোহিঙ্গা ইয়ুথ অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা খিন মং বলেন, রোহিঙ্গাদের অধিকারের জন্য লড়াই করার দাবি করেছিল আরসা। তখন তাদের বিশ্বাস করেছিল রোহিঙ্গারা। কিন্তু এখন সাধারণ রোহিঙ্গারাও মনে করে আরসা মিয়ানমারের এজেন্ট হিসেবে কাজ করছে। যারা প্রত্যাবাসনের কথা বলছেন তাদের হত্যা করা হচ্ছে। তাই আরসার ওপর তাদের আর বিশ্বাস নেই।
কক্সবাজারের টেকনাফে ৫০ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করেছে টেকনাফ মডেল থানা পুলিশ। এ সময় মাদক পরিবহনে ব্যবহৃত একটি মোটরসাইকেল ও লাগেজসহ এক মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কক্সবাজার জেলা পুলিশের মিডিয়া ফোকাল পয়েন্ট অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অলক বিশ্বাস।
বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) সকালে ৮ টার দিকে হোয়াইক্যং ইউনিয়নের বালুখালী এলাকায় থানা পুলিশের একটি আভিযানিক দল এ অভিযান পরিচালনা করে।
গ্রেপ্তার ব্যক্তির নাম শেখ শহীদুল ইসলাম সবুজ (২৭)। তিনি
হোয়াইক্যং ইউনিয়নের বালুখালী এলাকায় মৃত আবুল কাসেমের ছেলে।
পুলিশ জানায়, অভিযানে ৫০ হাজার ইয়াবা ট্যাবলেট, একটি লাগেজ এবং Yamaha FZ V3 মোটরসাইকেল জব্দ করা হয়েছে।
কক্সবাজার জেলা পুলিশের মিডিয়া ফোকাল পয়েন্ট অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অলক বিশ্বাস জানান, আটক আসামির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার নলচর এলাকায় শুক্রবার ভোরে ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় সেনা সদস্যসহ দুইজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও তিনজন।
নিহত সেনা সদস্য হলেন ঢাকার ধামরাইয়ের বাসিন্দা মোঃ শাকিল হোসেন। তিনি কক্সবাজারের রামু সেনানিবাসে কর্মরত ছিলেন। অপর নিহত যাত্রী মাসিকুল আলম, কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার মহালক্ষ্মীপাড়া এলাকার আবুল হাসেমের ছেলে।
আহতরা হলেন সেনা সদস্য হাবিবুর রহমান, মোঃ সজল মিয়া ও বাসযাত্রী মোস্তাফিজুর রহমান।
ময়নামতির হাইওয়ে ক্রসিং থানার ওসি ইকবাল বাহার জানান, কক্সবাজার থেকে ছেড়ে আসা রয়েল কোচের একটি বাস ভোরে নলচর এলাকায় দাঁড়িয়ে থাকা একটি কাভার্ডভ্যানকে পেছন থেকে ধাক্কা দেয়। এতে বাসের সামনের অংশ দুমড়ে যায়। দুর্ঘটনার পর চালকসহ কয়েকজন যাত্রী বাস থেকে নেমে সড়কের পাশে দাঁড়ান। ঠিক সেই সময় পেছন দিক থেকে আরও একটি কাভার্ডভ্যান এসে দাঁড়িয়ে থাকা বাসটিকে সজোরে ধাক্কা দিলে দুইজন ঘটনাস্থলেই নিহত হন এবং তিনজন আহত হন।
ঘটনার পর কাভার্ডভ্যানটি আটক করা হলেও চালক ও হেলপার পলাতক রয়েছে।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর দাবি-দাওয়া নিয়ে রাস্তায় নামলে তাদের কঠোর হস্তে দমন করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। তিনি বলেছেন, অনেক গ্রুপ অপেক্ষা করতে চাচ্ছে না। অপ্রয়োজনীয় বিষয় নিয়েও আন্দোলনের চেষ্টা করছে। যারা বেআইনিভাবে আন্দোলন করবে তাদের কঠোর হস্তে দমন করা হবে। বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) বিকেলে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা বলেন।
প্রেস সচিব বলেন, ‘আমরা একটি ভালো নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খুবই ভালো আছে। আশা করছি, ভালো থাকবে। নির্বাচনকে সামনে রেখে আমাদের প্রস্তুতি আছে। ট্রেনিং চলছে, ওসি, এসপি, ডসি পদায়ন হয়ে গেছে।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, ‘জাতিকে একটা ফ্রি ফেয়ার এবং উৎসবমুখর নির্বাচন উপহার দিতে পারবে। তফসিল ঘোষণার প্রেক্ষাপটে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। অনলাইন সাইবার জালিয়াতি রোধে কড়া বার্তা দিয়েছে। এগুলো রোধে সর্বোচ্চ উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।’
এদিন প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে তার সভাপতিত্বে উপদেষ্টা পরিষদের সভায় মেট্রোরেলের ভ্যাট প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’ পরে ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান প্রেস সচিব।
তিনি জানান, যেহেতু মেট্রোরেল ঢাকা শহরের মানুষের যাতায়াতের যুগান্তকারী ভূমিকা পালন করছে, সে কারণে এই ভ্যাট বা মূল্যসংযোজন কর প্রত্যাহার করা হয়েছে।
প্রেস সচিব জানান, ফেব্রুয়ারিতে রোজা সামনে রেখে রোজাদারদের সুবিধার কথা বিবেচনা করে খেজুরের উপর ট্যাক্স ৫২.২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৪০.৭ শতাংশ করা হয়েছে। এখানে মূলত খেজুরের কাস্টমস ডিউটি ১৫ শতাংশ কমানো হয়েছে।
শফিকুল আলম জানান, উপদেষ্টা পরিষদের সভায় তিনটি নতুন আইন উঠেছে। এর মধ্যে বাণিজ্যিক আদালত অধ্যাদেশ এবং রেজিস্ট্রেশন অর্ডিন্যান্স, এমেন্ডমেন্ট ২০২৫ নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে আর আইনগত সহায়তা প্রদান (দ্বিতীয় সংশোধন) অধ্যাদেশের খসড়ার নীতিগত চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
নতুন করে ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে হলে এখন থেকে ৬০ ঘণ্টার বাধ্যতামূলক প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করতেই হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) চেয়ারম্যান আবু মমতাজ সাদ উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেছেন, আইন যতই হালনাগাদ করা হোক, বাস্তবায়ন না হলে সড়কে শৃঙ্খলা ফিরবে না। মালিক–শ্রমিক থেকে শুরু করে সাধারণ নাগরিক পর্যন্ত সবাইকে এই পরিবর্তন গ্রহণ করতে হবে। এসময় সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে কুইক রেসপন্স সিস্টেম গড়ার ঘোষণাও বিআরটিএ চেয়ারম্যান।
সম্প্রতি রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে জাতীয় হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ আয়োজিত ‘টেকসই উন্নয়নে সড়ক নিরাপত্তা আইন: বাংলাদেশ পরিপ্রেক্ষিত ও করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ তথ্য জানান।
এসময় বিআরটিএ চেয়ারম্যান নিজের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথাও তুলে ধরেন। তিনি জানান, ২৩ সেপ্টেম্বর তার নিজের মেয়ের জামাই একটি দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হন। দুই দফা অপারেশন করা হয়েছে, এখনো হাঁটতে পারেন না। চেয়ারম্যানের ভাষ্য, ‘যিনি বেঁচে যান, তার কষ্ট অনেক বেশি। এই জায়গা বোঝার পরই উপলব্ধি করেছি— দুর্ঘটনার পরপর দ্রুত সাড়া দেওয়ার ব্যবস্থা না থাকলে ক্ষতির গভীরতা কয়েকগুণ বেড়ে যায়।’
এ কারণেই তিনি অবিলম্বে একটি কুইক রেসপন্স সিস্টেম চালুর প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন। দুর্ঘটনার পর প্রথম ৩০–৬০ মিনিটকে ‘হিস্টরি-চেঞ্জিং টাইম’ হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, দ্রুত উদ্ধার ও চিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে; নইলে মৃত্যু ও অক্ষমতা দুটোই বেড়ে যায়।
বিআরটিএ চেয়ারম্যান বলেন, দেশে মোটর ভেহিকেল অর্ডিন্যান্স থাকলেও ১০০ শতাংশ বাস্তবায়ন সম্ভব হয় না। আইন অনুযায়ী একজন চালক সর্বোচ্চ আট ঘণ্টা গাড়ি চালাতে পারেন, কিন্তু বাস্তবে চালকরা ১৪ ঘণ্টা পর্যন্ত স্টিয়ারিং ধরে থাকেন। এতে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বহুগুণ বাড়ে।
তিনি স্বীকার করেন, পুলিশের সক্ষমতা সীমিত; তবে শুধু পুলিশ নয়, সমন্বিত ব্যবস্থা ছাড়া কিছুই বদলানো যাবে না। মালিক, শ্রমিক, স্থানীয় প্রশাসন, সড়ক খাতের সব সংস্থা এবং জনগণ— সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।
চেয়ারম্যান জানান, সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত বা গুরুতর আহত ব্যক্তিদের পরিবারকে সরকার ট্রাস্টি বোর্ডের মাধ্যমে আর্থিক সহায়তা দেয়— মৃত্যু হলে ৫ লাখ টাকা, স্থায়ী পঙ্গুত্ব হলে ৩ লাখ টাকা এবং গুরুতর আহত হলে ১ লাখ টাকা।
তবে এই অর্থ পেতে হলে দুর্ঘটনার পরপরই নিকটস্থ বিআরটিএ অফিসারকে জানাতে হবে অথবা নির্ধারিত ফর্ম জমা দিতে হবে। অনেক সংস্থা ছয় মাস সময় নেয়— এটি অগ্রহণযোগ্য বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
বিআরটিএ একটি মাস্টার ট্রেইনার পুল তৈরি করছে, যারা সারাদেশের ড্রাইভিং ইনস্টিটিউটে গিয়ে নতুন ৬০ ঘণ্টার কারিকুলাম অনুযায়ী প্রশিক্ষণ দেবেন।
চেয়ারম্যান বলেন, শুধু লাইসেন্স না; সড়কে নামার আগে চালকের ভেতরে ন্যূনতম দক্ষতা এবং আচরণগত পরিবর্তন আনতেই হবে।
তিনি মনে করেন, দেশের ৫–২৯ বছর বয়সী জনসংখ্যা (৩২%) আগামী অর্থনীতির মূল শক্তি। সড়কে প্রতিদিন তাদের জীবন ঝুঁকিতে পড়লে অর্থনৈতিক টেকঅফ অসম্ভব। তাই সড়ক নিরাপত্তাকে তিনি জাতীয় অর্থনৈতিক অগ্রাধিকারের জায়গায় দেখতে চান।
প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) রাজধানীর তেজগাঁওয়ে তার কার্যালয়ে উপদেষ্টা পরিষদের সভা শেষে বিদায়ী দুই উপদেষ্টা মো. মাহফুজ আলম এবং আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার সম্মানে এক মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন করেন।
প্রধান উপদেষ্টা সভা শেষে তাদের সঙ্গে স্মৃতিচারণমূলক একটি ছবিও তোলেন বলে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানায়।
বুধবার (১০ ডিসেম্বর) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. মাহফুজ আলম এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া প্রধান উপদেষ্টার কাছে তাদের পদত্যাগপত্র জমা দেন।
বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরই তাদের পদত্যাগ কার্যকর হয়।
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর অভ্যন্তরীণ প্রশাসনিক কাঠামোয় ব্যাপক পুনর্বিন্যাস কার্যকর করা হয়েছে। গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী বাস্তবতায় একটি আধুনিক, দক্ষ ও জনমুখী নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ৪৭ জেলা কমান্ডেন্ট ও ১৬২ উপজেলা কর্মকর্তাদের বদলি এই উদ্যোগের মূল অংশ।
একইসঙ্গে নির্বাচনী নিরাপত্তা দায়িত্ব পালনে মাঠ পর্যায়ের সদস্যদের যাচাইকরণ তালিকা হালনাগাদ, এভিএমআইএস সফটওয়্যারে তথ্য সংযোজন, নির্বাচনী মহড়া এবং প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ কার্যক্রম ইতোমধ্যে চলমান রয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর উপপরিচালক ও গণসংযোগ কর্মকর্তা মো: আশিকউজ্জামান স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নির্বাচনকে শান্তিপূর্ণ, স্বচ্ছ ও অংশগ্রহণমূলক রাখতে নিরাপত্তা বাহিনীর পেশাগত দক্ষতা ও নিরপেক্ষতা অপরিহার্য। এ লক্ষ্যকে সামনে রেখে আনসার-ভিডিপি সদস্যদের আচরণগত উন্নয়ন, দায়িত্ব পালনের সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং ভোটকেন্দ্রসহ দায়িত্বপ্রাপ্ত স্থানে পেশাদারিত্ব বজায় রাখার জন্য নিবিড় প্রশিক্ষণ কর্মসূচি পরিচালিত হচ্ছে। সরকারের মূল উদ্দেশ্য—নির্বাচনকালীন দায়িত্বে নিযুক্ত প্রতিটি সদস্য যেন সর্বোচ্চ সততা, শৃঙ্খলা ও নিরপেক্ষতা প্রদর্শন করেন।
এই প্রস্তুতির অংশ হিসেবে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রশাসনিক কাঠামো পুনর্বিন্যাস ও সকল মোতায়েন কার্যক্রমে ডিজিটালাইজড করা হয়েছে। আনসার সদর দপ্তর সূত্রে জানা যায়, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা নতুন কর্মস্থলে যোগদানের পর নির্বাচনী দায়িত্ব পালনে বাহিনী প্রধান কর্তৃক ইতিমধ্যে ইস্যুকৃত দিকনির্দেশনা ও কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য সর্বোচ্চ উদ্যোগে প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হবে।
বাহিনীর দায়িত্বশীল সূত্র আরও জানায়, নির্বাচন চলাকালে প্রত্যেক সদস্যকে শতভাগ নিরপেক্ষতা, সততা ও পেশাগত আচরণ বজায় রেখে দায়িত্ব পালনের জন্য কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হবে। মানবসম্পদের নেতৃত্বদানকারীদের এই পুনর্বিন্যাস নির্বাচনী সময়ে বিভিন্ন জেলার নিরাপত্তা চাহিদা অনুযায়ী দায়িত্ব বণ্টনকে আরও কার্যকর করবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।
আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে আনসার-ভিডিপির এই ব্যাপক প্রশাসনিক সংস্কার নির্বাচন-সংক্রান্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করবে এবং একটি স্থিতিশীল, শান্তিপূর্ণ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের সহায়ক ভূমিকা রাখবে। গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রা ও রাষ্ট্র পরিচালনায় জনগণের আস্থা পুনঃস্থাপনে এ উদ্যোগকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করা হচ্ছে।
পিরোজপুরে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির চেয়ারপার্সন ও তিন বারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১১ ই ডিসেম্বর) আছর নামাজ বাদ দি গোপালকৃষ্ণ টাউন ক্লাব টেনিস গ্রাউন্ডে পৌর বিএনপির আয়োজনে এ দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী উপস্থিত হয়ে বেগম খালেদা জিয়ার দ্রুত আরোগ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করে দোয়া করেন।
দোয়া মাহফিলে পৌর বি এন পির সভাপতি শেখ শহিদুল্লাহ শহিদ এর সভাপতিত্ত্বে ও সাধারন সম্পাদক মোঃ সরোয়ার হোসেন হাওলাদার এর সঞ্চালনায়, বক্তব্য রাখেন, জেলা বিএনপির সদস্য সচিব সাইদুল ইসলাম কিসমত,জেলা বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব গাজী ওয়াহিদুজ্জামান লাভলু,
বীর মুক্তিযোদ্ধা সাবেক পৌর কাউন্সিলর জেলা শ্রমিকদলের সভাপতি আব্দুস সালাম বাতেন,সাধারন সম্পাদক আফজাল হোসেন টিপু
জেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি মিজানুর রহমান শাহিন, জেলা যুবদলের সদস্য সচিব এমদাদুল হক মাসুদ, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি সালাউদ্দিন তালুকদার কুমার, সাধারন সম্পাদক মাহামুদ হাসান শাহীন, জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) মোঃ খায়রুল ইসলাম বাবু প্রমুখ।
এসময় ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল,শ্রমিকদল সহ বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
বক্তারা বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রামে প্রতীক। গণতন্ত্র ও মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে বেগম জিয়া আজও অটল। দেশবাসীর দোয়া ও ভালবাসায় তিনি খুব দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবেন এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
আপনারা সবাই দেশের তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতার জন্য আন্তরিকভাবে দোয়া করুন। তাঁকে সুস্থ দেখতে পুরো দেশবাসী অপেক্ষা করছে।
শেষে বেগম জিয়ার দ্রুত সুস্থতা ও কল্যাণ কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।
রাজশাহীর তানোরে পরিত্যক্ত একটি গভীর নলকূপের পাইপে পড়ে যাওয়া দুই বছরের শিশু সাজিদকে উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে ফায়ার সার্ভিস। শিশুটি জীবিত আছে। তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) রাত ৮টা ৫০ মিনিটে শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়। এর আগে বুধবার (১০ ডিসেম্বর) দুপুরে গভীর নলকূপের ওই পাইপে পড়ে যায় শিশুটি।
তানোর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাঈমা খান শিশুটিকে জীবিত উদ্ধারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
স্থানীয়রা জানান, কোয়েলহাট গ্রামের মাঠের পাশ দিয়ে মায়ের সঙ্গে হাঁটার সময় অসাবধানবশত পরিত্যক্ত নলকূপের গর্তে পড়ে যায় সাজিদ। মায়ের আর্তচিৎকারে স্থানীয়রা ছুটে এসে প্রথমে উদ্ধার চেষ্টা চালালেও ব্যর্থ হলে ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেওয়া হয়। রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে তিনটি ইউনিট এসে তাৎক্ষণিক উদ্ধার অভিযান শুরু করে।
ফায়ার সার্ভিস প্রথম পর্যায়ে চার্জ ভিশন ক্যামেরা দিয়ে প্রায় ৩৫ ফুট পর্যন্ত অনুসন্ধান চালায়। তবে শিশুর অবস্থান শনাক্ত করতে ব্যর্থ হয়। এরপর পাশেই এস্কেভেটর দিয়ে রাতভর প্রায় ৩৫ ফুট গভীর বড় একটি গর্ত খনন করা হয়। সকালে সেই গর্ত থেকে নলকূপের দিকে সুড়ঙ্গ খোঁড়ার চেষ্টা করা হলেও সেখানেও শিশুর অবস্থান শনাক্ত করা যায়নি। এরপর আবারও পরিত্যক্ত নলকূপে ক্যামেরা নামানো হলে সেটিতে মাটি ছাড়া আর কিছু দেখা যায়নি। এরপর নতুন করে আবারও খননের সিদ্ধান্ত নেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বছরখানেক আগে জমিতে সেচ দেওয়ার জন্য ওই নলকূপ খোঁড়া হয়েছিল। পানি না ওঠায় মালিক সেটি মাটি দিয়ে ঢেকে রাখেন। সম্প্রতি বৃষ্টির কারণে মাটি ধসে পড়ে নলকূপের মুখ আবারও উন্মুক্ত হয়ে যায়। সেই গর্তেই দুর্ঘটনাবশত পড়ে যায় শিশু সাজিদ।
শিশুটির মা রুনা খাতুন জানান, বুধবার দুপুর ১টার দিকে মেজো ছেলে সাজিদের হাত ধরে তিনি বাড়ির পাশের মাঠে যাচ্ছিলেন। এসময় তার ছোট একটি সন্তান কোলে ছিল। হাঁটার সময় হঠাৎ সাজিদ ‘মা’ বলে ডেকে ওঠে। পেছনে তাকিয়ে দেখেন, ছেলে নেই, গর্তের ভেতর থেকে ‘মা, মা’ বলে ডাকছে।
গর্তটির ওপরে খড় বিছানো ছিল। ওখানে যে গর্ত ছিল, সেটা বুঝতে পারেননি তিনি নিজে কিংবা শিশু সাজিদ। ওই জায়গায় পা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শিশুটি গর্তের ভেতর পড়ে যায়। লোকজন ডাকাডাকি করতে করতেই গর্তের তলায় চলে যায়।
দেশের অন্যান্য উপজেলার মতো দেশের সর্ব দক্ষিণের উপজেলা পাথরঘাটায় ডিসেম্বরের কনকনে শীত। রাত প্রায় ৮টা। হঠাৎ রাস্তার পাশে অজানা এক কান্নার শব্দ থমকে দিল দৈনিক বাংলার পাথরঘাটা প্রতিনিধি সাংবাদিক আরিফ তৌহীদের পথচলা। কাছে গিয়ে দেখা গেল- বস্তুহীন, ক্ষীণদেহ, পরিত্যক্ত এক বৃদ্ধা নারী নিঃশব্দে শুয়ে আছেন রাস্তার ধারে। শরীরজুড়ে হাড়গোড়ের অসহায় চিহ্ন, চোখেমুখে অভিমান আর দীর্ঘদিনের কষ্টের ছাপ। যেন অজানা পথের দিকে তাকিয়ে কুয়াশাচ্ছন্ন আকাশের নিচে জীবন-মরণের স্রষ্টাকে ডাকছেন তিনি।
পরিবারের পরিচয় জানতে চাইলে খুলে বললেন তার গল্প। নাম তহমিনা। বয়স আনুমানিক আশির কোটায়। বাড়ি নলছিটি উপজেলার মালিপুর ইউনিয়নের নাঙ্গলী-বৈচুঙ্গী গ্রামে। স্বামী নূর ইসলাম খাঁ- যিনি প্রথম স্ত্রী থাকার পরও আরও দুটি বিয়ে করেছেন। চার ছেলে ও দুই মেয়ের জননী এই নারী একসময় ছিলেন সংসারের কেন্দ্রবিন্দু। কিন্তু সময়ের নিষ্ঠুরতায় আজ তিনি পরিত্যক্ত, অযত্নে ছড়িয়ে পড়েছেন অজানা পথে। অনাহার আর অবহেলায় ক্ষয়ে গেছে দেহ, নষ্ট হয়েছে চলার শক্তি।
সাংবাদিক আরিফ তৌহীদের চোখ এ দৃশ্য দেখে স্থির থাকতে পারেননি। বিভিন্ন জায়গায় যোগাযোগ করেও যখন কোনো সহায়তার ব্যবস্থা করা সম্ভব হলো না, তখনই তিনি ফোন দিলেন সদ্য যোগদান করা পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইশরাত জাহানের কাছে।
ফোনে বিষয়টি শোনামাত্রই ইউএনও ইশরাত জাহান গুরুত্বের সাথে ঘটনাস্থলে যাওয়ার নির্দেশ দেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই টিএইচও এবং অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে সেখানে পৌঁছে যান তিনি নিজেই। মানবিক সহায়তার হাত বাড়িয়ে, স্বশরীরে উপস্থিত থেকে বৃদ্ধা তহমিনাকে হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন।
সেদিন রাতেই চিকিৎসা দেওয়া হয় তাকে। স্থানীয় সমাজকর্মী মেহেদী শিকদার, সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম খোকন, শিক্ষক আজমী হাসানসহ আরও অনেকে ছিলেন সেই মানবিক মুহূর্তের সাক্ষী। কিন্তু মানবিক প্রয়াসের মাঝেই ভোরে এলো হৃদয়বিদারক খবর। ১০ ডিসেম্বর সকাল ৬টার দিকে মৃত্যুবরণ করেন তহমিনা।
খবর পেয়ে ইউএনও ইশরাত জাহান আবারও এগিয়ে আসেন। বৃদ্ধার দেওয়া নাম-পরিচয় ধরে খোঁজ নিয়ে তার পরিবারের ঠিকানা শনাক্ত করেন এবং প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে মরদেহটি তার স্বজনদের কাছে পৌঁছে দেন। পরিত্যক্ত জীবনের অন্তিম পরিণতিটুকু যেন হয় স্বসম্মানের-এটুকুর নিশ্চয়তা দেন তিনি।
ইউএনও ইশরাত জাহান বলেন, ‘মানুষ মানুষের জন্য। তাকে ওই অবস্থায় দেখে মন মানছিল না। তাই রাতেই ঘটনাস্থলে ছুটে যাই। সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি, কিন্তু তাকে বাঁচাতে পারলাম না। তবে কমপক্ষে তার মরদেহ পরিবারে পৌঁছে দিতে পেরেছি, এতেই স্বস্তি।’
এমন মানবিকতা, দায়িত্ববোধ আর দ্রুত উদ্যোগে ইতোমধ্যেই সর্বমহলে প্রশংসায় ভাসছেন তিনি। উপজেলার সাধারণ মানুষ তাকে আখ্যায়িত করছেন‘মানবিক ইউএনও ইশরাত জাহান’তাদের ভাষ্য, ‘একজন ইউএনও কেবল প্রশাসনিক কর্মকর্তা নন, তিনি পুরো উপজেলার মানুষের অভিভাবক। মানবিকতার এমন দৃষ্টান্ত সকল কর্মকর্তার জন্য অনুকরণীয়।’
এক অসহায় বৃদ্ধার পাশে দাঁড়ানো, রাতের অন্ধকারে মানবিকতার আলো জ্বালানো ইশরাত জাহান যেন সেই আলোকবর্তিকা, যিনি দেখিয়ে দিলেন প্রশাসনের আসল শক্তি কাগজ-কলম নয়, মানুষের প্রতি মানবিক দায়িত্ববোধ।
বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর ৫৩তম নব বিমানসেনা দলের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ১০ ঘটিকায় মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার বাংলাদেশ বিমান বাহিনী স্টেশন শমশেরনগরে অবস্থিত রিক্রুটস ট্রেনিং স্কুল (আরটিএস)-এ অনুষ্ঠিত হয়েছে। বাংলাদেশ বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন, বিবিপি, ওএসপি, জিইউপি, এনএসডব্লিউসি, এফএডব্লিউসি, পিএসসি প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে মনোজ্ঞ কুচকাওয়াজ পরিদর্শন এবং আকর্ষণীয় মার্চ পাস্ট এর অভিবাদন গ্রহণ করেন। এরপর তিনি কৃতি রিক্রুটদের মাঝে ট্রফি বিতরণ করেন।
বিমানবাহিনী প্রধান তার সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে রিক্রুটদেরকে সততা, একাগ্রতা ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করে বিমান বাহিনীর যোগ্য বিমানসেনা হিসেবে নিজেদেরকে গড়ে তোলার আহ্বান জানান। তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, তারা অকৃত্রিম দেশপ্রেমের প্রেরণায় উজ্জীবিত হয়ে বাংলার আকাশ মুক্ত রাখার দৃঢ় অঙ্গীকার বাস্তবায়নে সক্রিয় অবদান রাখবে।
এ কুচকাওয়াজের মধ্য দিয়ে মোট ৪৪১ জন রিক্রুট বাংলাদেশ বিমান বাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত হলো। এসি-২ মো. ওমর ইবনে নোমান এবং এসি-২ রেদোয়ান আহম্মেদ যথাক্রমে শিক্ষা ও জেনারেল সার্ভিস ট্রেনিং-এ সেরা রিক্রুট বিবেচিত হন। এসি-২ মো. ওমর ইবনে নোমান, সার্বিক বিষয়ে কৃতিত্বের জন্য শ্রেষ্ঠ রিক্রুট বিবেচিত হওয়ার গৌরব অর্জন করেন।
এর আগে বিমান বাহিনী প্রধান প্যারেড গ্রাউন্ডে এসে পৌঁছলে বিমান বাহিনী ঘাঁটি বীর উত্তম এ কে খন্দকার-এর এয়ার অধিনায়ক এয়ার ভাইস মার্শাল মোহাম্মদ খায়ের উল আফসার, জিইউপি, এনডিসি, পিএসসি এবং রিক্রুটস্ ট্রেনিং স্কুলের অধিনায়ক গ্রুপ ক্যাপ্টেন মো. খায়রুল বাসার, পিএসসি তাকে স্বাগত জানান।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মাঝে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা, মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক তৌহিদুজ্জামান পাভেল, পুলিশ সুপার মো. বিল্লাল হোসেন এবং স্থানীয় সামরিক ও অসামরিক গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গসহ প্রশিক্ষণ সমাপ্তকারী রিক্রুটদের অভিভাবকরাও উপস্থিত ছিলেন।
নীলফামারীতে সেচ সংকট নিরসনে বুড়ি তিস্তা নদী ও জলাশয় দখল মুক্ত করে খননের দাবিতে মানববন্ধন করেছে সেচ সুবিধাবঞ্চিত কৃষকেরা। বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) বিকেলে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন তারা। ওই কর্মসূচির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ও তিস্তা নদী রক্ষা কমিটির সদস্যরা মানববন্ধনে অংশগ্রহণ করেন।
এতে বক্তব্য রাখেন বাপা এর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফরিদুল ইসলাম ফরিদ, তিস্তা নদী রক্ষা কমিটির সাধারণ সম্পাদক কনক রহমান, বুড়ি তিস্তা নদী ও জলাশয় পুনরুদ্ধার কমিটির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, সেচ সুবিধাবঞ্চিত কৃষক শফিক হোসেন, দুলাল হোসেন, জয়নাল আলী সহ আরও অনেক।
বক্তারা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে বুড়িতিস্তা নদী ও জলাশয় অবৈধ দখলে থাকায় সেচকাজ ব্যাহত হচ্ছে। প্রকল্প এলাকার কৃষকেরা সেচ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, ফসল উৎপাদন কমে যাচ্ছে।
তারা অভিযোগ করেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড বুড়িতিস্তা খননের উদ্যোগ নিলেও প্রশাসন দখলদারদের উচ্ছেদে কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না। অল্পসংখ্যক দখলদারের সামনে প্রশাসন কেন অসহায়, সে বিষয়ে প্রশ্ন তুলেন বক্তারা।
মানববন্ধন কর্মসূচি শেষে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেন তারা।
নেত্রকোনার প্রধান নদীগুলির সমন্বিত পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনার সম্ভাব্যতা সমীক্ষা শীর্ষক সমীক্ষা প্রকল্পের ওপর কারিগরি সামাজিক ও পরিবেশগত মতবিনিময় কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) স্থানীয় পাবলিক হলে আই ডব্লিউ আর এম এই মতবিনিময় কর্মশালার আয়োজন করে।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী (পুর) মো. রুহুল আমিনের সভাপতিত্বে মতবিনিময় কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা, নকশা ও গবেষণা) মো. রাফিউস সাজ্জাদ। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, নেত্রকোনার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মুনমুন জাহান লিজা, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী (পরিকল্পনা) ড. শ্যামল চন্দ্র দাস, অতিরিক্ত মহাপরিচালক মো. মাহবুবর রহমান।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন প্রকল্প পরিচালক ও তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোহাম্মদ শহীদুজ্জামান সরকার। বক্তব্য রাখেন নেত্রকোনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাখাওয়াত হোসেন। মতবিনিময় কর্মশালায় আই ডব্লিউ আর এম কর্তৃক মাঠ পর্যায়ে পরিচালিত সম্ভাব্যতা সমীক্ষার সার্বিক চিত্র তুলে ধরা হয়।
সেখানে আরও কিছু যোগ করা যায় কি না সে ব্যাপারে সকলের মতামত চাওয়া হয়। এই সমীক্ষার প্রেক্ষিতে রোডম্যাপ তৈরি করে দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সরকারের নীতিনির্ধারক মহলের কাছে সুপারিশমালা পেশ করা হবে বলে কর্মশালায় জানানো হয়।
মিয়ানমারে অবৈধভাবে সিমেন্ট পাচারের সময় ১১ জন পাচারকারীকে আটক করেছে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড। বুধবার (১০ ডিসেম্বর) রাতে সেন্টমার্টিনের ছেড়াদ্বীপের দক্ষিণ-পশ্চিম সংলগ্ন সমুদ্র এলাকায় থেকে তাদের আটক করা হয়।
বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) বিকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কোস্ট গার্ডের মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার সিয়াম-উল-হক।
তিনি জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ‘অপারেশন সমুদ্র প্রহরা’-এ নিয়োজিত বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের জাহাজ সৈয়দ নজরুল বুধবার (১০ ডিসেম্বর) রাতে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে। এ সময় সন্দেহজনক একটি ফিশিং বোটে তল্লাশি চালিয়ে শুল্ক-কর ফাঁকি দিয়ে মিয়ানমারে পাচারের উদ্দেশে বহন করা প্রায় ৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা মূল্যের ৬০০ বস্তা সিমেন্ট জব্দ করা হয়। একই সঙ্গে পাচার কাজে ব্যবহৃত বোটসহ ১১ জন পাচারকারীকে আটক করা হয়।
জব্দকৃত মালামাল, বোট ও আটক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে বলে জানান কোস্ট গার্ডের এ কর্মকর্তা। তিনি আরও বলেন, পাচার ও চোরাচালান রোধে কোস্ট গার্ডের অভিযান অব্যাহত থাকবে।