টানা বর্ষণ ও ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলায় ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে। ঢলের পানিতে নদ-নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় জুড়ী শহরসহ উপজেলার বিভিন্ন নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে ইতোমধ্যে ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়েছেন।
ঢলের পানিতে প্লাবিত হয়েছে বেশ কিছু এলাকার সড়ক। সেই সঙ্গে তলিয়ে গেছে বিভিন্ন এলাকার ঘরবাড়ি ও দোকানপাট। বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে উপজেলার জায়ফরনগর ও পশ্চিমজুড়ী ইউনিয়ন।
ঢলের পানি উপজেলার বিভিন্ন নিম্নাঞ্চলে প্রবেশ করায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন ওই অঞ্চলের মানুষজন। অনেকেই তাদের বাড়ি ঘর ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্র কিংবা উঁচু এলাকায় আত্মীয় স্বজনদের বাসায় ছুটছেন। নিম্নাঞ্চলের মানুষদের অনেকেই জানিয়েছেন, ঢলের পানিতে তাদের ঘরবাড়ি তলিয়ে গেছে। এখন নিরুপায় হয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে যাচ্ছেন।
জুড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লুসিকান্ত হাজং জানান, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সকল ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে সাবেক পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়কমন্ত্রী ও স্থানীয় সংসদ সদস্য মো. শাহাব উদ্দিন (এমপি) জায়ফরনগর ও পশ্চিমজুড়ী ইউনিয়নের বন্যা কবলিত বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেন। এসময় তিনি জুড়ী মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্র ও মক্তদীর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়া পরিবারের খোঁজখবর নেন। তাদের মধ্যে খাবার ও ত্রাণ বিতরণ করেন।
এ সময় তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন জুড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লুসিকান্ত হাজং, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম মাইন উদ্দিন, জেলা পরিষদ সদস্য বদরুল ইসলাম, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান জুয়েল আহমদ, সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান রিংকু রঞ্জন দাস, বড়লেখা উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক একেএম হেলাল উদ্দিন, জায়ফরনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাসুম রেজা।
গতকাল মঙ্গলবার রাতে জুড়ী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কিশোর রায় চৌধুরী মনির উদ্যোগে বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে বন্যাদুর্গত মানুষের মধ্যে শুকনা খাবার বিতরণ করা হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন পশ্চিম জুড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনফর আলী, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা জাহাঙ্গীর আলম সহ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের একাংশ।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান আজ বুধবার সকালে জানান, ‘বন্যায় ইতিমধ্যে উপজেলার ৬৫ টি গ্রাম প্লাবিত হয়ে প্রায় ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়েছে। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় জুড়ীতে ১৪টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে এখন পর্যন্ত ৬০টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে।’
উপজেলা চেয়ারম্যান কিশোর রায় চৌধুরী মনি মুঠোফোনে বলেন, ‘আমি এখন আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছি। ১৬টি আশ্রয়কেন্দ্রে ১৬০ টি পরিবারের প্রায় ৫০০ জন মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। এই সংখ্যা সময়ের সঙ্গে সেঙ্গ বাড়ছে। আমরা শুকনো খাবার বিতরণ করছি। গতরাতে জায়ফরনগর ইউনিয়নের পক্ষ থেকে রান্না করা খাবার ও পশ্চিম জুড়ী ইউনিয়নের পক্ষ থেকে শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে ত্রাণ ও সহায়তা কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।’
ভারতীয় সীমান্ত রক্ষি বাহিনী বিএসএফ সদস্যরা ২ শিশুসহ ১০ বাংলাদেশীকে সীমান্ত এলাকা দিয়ে বাংলাদেশে পুশইন করেছে। শনিবার রাত ৩টার দিকে তাদেরকে বেনাপোল সীমান্ত এলাকা দিয়ে বাংলাদেশে পুশইন করে বলে জানা গেছে। পুশইন হয়ে বাংলাদেশে আসা ইসমাইল হোসেন জানান, গত পাঁচ থেকে সাত বছর আগে তারা পরিবার নিয়ে ভারতে যায় ভালো কাজের আশায়। কলকাতা রাজারহাট নিউটাউন এলাকায় তারা বসবাস করত। তারা জানতে পারে যে সমস্ত বাংলাদেশীরা ভারতে বসবাস করছে তারা আগামী চার মাসের ভিতরে বাংলাদেশ যেতে চাইলে তাদেরকে পাঠিয়ে দেয়া হবে অন্যথায় আটক করে জেলখানায় ভরে দিবে। এ ঘটনায় তারা নিজেরাই সীমন্ত এলাকায় এসে বাংলাদেশে আসার জন্য বিএসএফের কাছে কাগজপত্র জমা দেয় গত সাত দিন আগে। গত রাত আড়াইটা থেকে তিনটার দিকে বিএসএফ সদস্যরা আমাদের ১০ জনকে সীমান্ত এলাকায় এনে আমাদেরকে বলে সামনে বাংলাদেশের বেনাপোল চলে যাও। সেভাবেই আমরা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছি। তবে আমরা যখন প্রবেশ করেছি তখন সীমান্ত এলাকায় কাউকে দেখতে পাইনি এবং সিমান্তের নাম কি সেটাও আমরা জানিনা। ফিরে আসা হলো ইসমাইল হোসেন, আব্দুল হালিম গাজী, রহিমা খাতুন, হাসিনা বেগম, নাজিম উদ্দিন, শিশু নাইমা ও নাজিমসহ আরো তিন জনের বাড়ি খুলনার কয়রা এলাকায়।
সীমান্তে বসবাসরতরা জানান, আমাদের পাশে রয়েছে রঘুনাথপুর এবং সীমান্ত। ফিরে আসারা সম্ভবত কিবা সীমান্ত দিয়েই বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এ ব্যাপারে যশোর ৪৯ বিজিবি ব্যাটেলিয়ানের কমান্ডার লে: করনেল সাইফুল্লাহ সিদ্দিকীর কাছে পুশইনের বিষয়ে মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বেনাপোলে কোন সীমান্ত এলাকা দিয়ে পুশইন হয়েছে এটা আমার জানা নাই বা সে ধরনের কোন তথ্য আমাকে কেউ দেয়নি। খোঁজ নিয়ে জানাতে হবে।
টাঙ্গাইলের ধনবাড়ীতে তরুণ প্রজন্মকে মাদকসহ অপরাধ কর্মকাণ্ড থেকে দূরে রাখতে অনুষ্ঠিত হলো ১৫ কিলোমিটার হাফ ম্যারাথন প্রতিযোগিতা। এতে অংশ নিয়েছে দেশের বিভিন্ন জেলার সাড়ে তিন শতাধিক প্রতিযোগী। শনিবার সকালে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন স্পোর্টস লাভারস অ্যাসোসিয়েশনের তৃতীয় প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত ম্যারাথনের উদ্বোধন করেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ফকির মাহবুব আনাম স্বপন। ধনবাড়ী নওয়াব এস্টেটের মোতাওয়াল্লী আফিফ উদ্দিন আহমাদ স্মারক উন্মোচন করেন। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল এডভোকেট মাহফুজ বিন ইউসুফ সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
অংশগ্রহণকারীরা বলছে, প্রতিটি মানুষের শরীর সুস্থ রাখতে অধ্যাবসায়ের বিকল্প নেই। তরুণ প্রজন্মকে মুঠোফোন, অবাধ ইন্টারনেট ব্যবহার, মাদকসহ অপরাধ কর্মকাণ্ড থেকে দূরে রাখতে এমন আয়োজন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
প্রতিযোগিতায় প্রথম হওয়া আশরাফুল আলম কাশেম বলেন, প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে সিলেট এসেছি। প্রথম হয়ে খুব ভালো লাগছে। নিজেকে সুস্থ রাখতে সুশৃঙ্খল সমাজ গড়তে ম্যারাথনসহ খেলাধূলার বিকল্প নেই।
প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় হওয়া পাবনার ইমরান হোসেন বলেন, বর্তমানে সমাজে মাদক, সন্ত্রাস ও অপরাধ বেড়েই চলেছে। মাদক ও সন্ত্রাসমুক্ত সমাজ গড়তে ও সুস্বাস্থ্যের জন্য ম্যারাথনে অংশ নেই। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে রানারদের যে পরিমাণ প্রাইজমানি দেয়া হয়, তা যতেষ্ঠ নয়। এটি আরো বাড়ানো প্রয়োজন।
স্পোর্টস লাভারস অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা সোলায়মান হোসেন বলেন, সমাজ থেকে মাদক সন্ত্রাস দূর করতে প্রতি বছরই এ সব অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে শিশুদের খেলাধুলা, কাবাডি, রশি টানাটানিসহ নানা খেলার আয়োজন হয়। এছাড়াও সন্ধ্যায় মনোঙ্গ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
আগামী বুধবার চট্টগ্রাম বন্দরের সব প্রবেশমুখে অবরোধের ডাক দিয়েছে শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ (স্কপ)। চট্টগ্রাম বন্দরের বিভিন্ন স্থাপনা বিদেশিদের ইজারা দেওয়ার সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে এ কর্মসূচির ডাক দেন স্কপ নেতারা।
সরকারের বন্দর নিয়ে কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কর্মসূচির ধারাবাহিকতায় শনিবার দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের ‘জুলাই বিপ্লব স্মৃতি হলে’ আয়োজিত দিনব্যাপী কনভেনশনের আয়োজন করা হয়। এছাড়া কনভেনশন থেকে বন্দর রক্ষা ও শ্রমিক অধিকার আদায়ে স্কপের ৯ দফা বাস্তবায়নের দাবিতে থেকে জেলায় জেলায় বিক্ষোভের কর্মসূচি ঘোষণা করেন স্কপ নেতারা। কনভেশনে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের জাতীয় ও স্থানীয় নেতারা বক্তব্য রাখেন।
কনভেনশনে বিভাগীয় শ্রমিকদলের সাধারণ সম্পাদক ও বন্দর সিবিএর সাবেক সাধারণ সম্পাদক কাজী শেখ নুরুল্লাহ বাহার বলেন, ‘হাইকোর্টের মাননীয় বিচারপতিরা স্পষ্ট বলে দিয়েছেন, নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনালের (এনসিটি) বিষয় নিয়ে আর অগ্রসর হওয়া যাবে না। তারা (সরকার) কিন্তু হাইকোর্টের কথাও মানছে না। আমরা শুনেছি, আগামী ২৫, ২৬, ২৭ নভেম্বর ঢাকায় বৈঠক ডাকা হয়েছে নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল নিয়ে ডিপি ওয়ার্ল্ডের সঙ্গে চুক্তি করার জন্য। ২৬ তারিখ ভেটিং করবে, ২৭ তারিখ চুক্তি করবে- এরকম কথা শোনা যাচ্ছে।
তিনি বলেন, আমরা চট্টগ্রামের নেতারা বসেছিলাম। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আগামী বুধবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত চট্টগ্রাম বন্দরের এন্ট্রি পয়েন্ট যেগুলো আছে- আগ্রাবাদ, বড়পোল এবং মাইলের মাথা, এ তিনটি জায়গায় সর্বাত্মক অবরোধ হবে। আমি সমস্ত শ্রমিক-কর্মচারী ভাইদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাজপথে নেমে সর্বাত্মক অবরোধ কর্মসূচি পালন করে বন্দর বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়ার এ চক্রান্ত প্রতিহত করার আহ্বান জানাচ্ছি।
কনভেনশনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শ্রম সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহাম্মদ বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ে এই আন্দোলনে ব্যবসায়ীদেরও এগিয়ে আসতে হবে। বন্দর রক্ষা করার দায়িত্ব ব্যবসায়ীদেরও আছে। যখন রাস্তায় আন্দোলনের প্রশ্ন আসে তখন শ্রমিকদের দায়িত্ব আর যখন আন্দোলন শেষ হয়ে যাবে তখন ব্যবসা করা ব্যবসায়ীদের দায়িত্ব- এটা হতে পারে না।
তিনি আরও বলেন, ‘আমি আহ্বান জানাই, ২৬ তারিখের অবরোধ কমর্সূচির পর আসেন আমরা একবার সবাই মিলে ঢাকায় বসি। স্কপ যে উদ্যোগটা নিয়েছে আমি সাধুবাদ জানাই। শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের সকল ইস্যুতে সবাইকে একমত থাকতে হবে এবং দীর্ঘমেয়াদী লড়াই চালিয়ে যেতে হবে।’
চট্টগ্রাম বিভাগীয় শ্রমিকদলের সাধারণ সম্পাদক ও বন্দর সিবিএ’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক কাজী শেখ নুরুল্লাহ বাহারের সভাপতিত্বে কনভেনশনে আরও বক্তব্য রাখেন স্কপের যুগ্ম সমন্বয়ক ও বাংলাদেশের জাতীয় শ্রমিক জোটের সভাপতি আব্দুল কাদের হাওলাদার, জাতীয় শ্রমিক জোটের সাধারণ সম্পাদক মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ, জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসেন, জাতীয় শ্রমিক জোট-বাংলাদেশের সভাপতি সাইফুজ্জামান বাদশা, শ্রম সংস্কার কমিশনের সদস্য ও বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রর সহসভাপতি তপন দত্ত, স্কপের যুগ্ম সমন্বয়ক ও সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবিব বুলবুল প্রমুখ।
উল্লেখ্য, গত ১৭ নভেম্বর চট্টগ্রাম বন্দরের লালদিয়া চরে টার্মিনাল নির্মাণ ও পরিচালনার জন্য ডেনমার্কের এপিএম টার্মিনালস নামে একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ৩৩ বছরের চুক্তি করেছে সরকার। এই মেয়াদ আরও ১৫ বছর বাড়ানোর সুযোগ আছে চুক্তিতে।
চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলায় স্কুলের মাঠ ভরাট করার নাম দিয়ে কাটা হচ্ছে পাহাড়। শীতকাল শুরু হতে না হতেই উপজেলার নয়টি ইউনিয়নের মধ্যে কম বেশি সব ইউনিয়নেই চলছে জমির টপসয়েল এবং পাহাড় কাটার হিড়িক।
প্রায় আট একর এলাকাজুড়ে অবস্থান পাহাড়টির। উচ্চতা ৩০ ফুটের মতো। ‘বাক্করগিয়া কাটা’ নামের এ পাহাড়ের অবস্থান চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার চরম্বা ইউনিয়নের কালুয়ার পাড়া এলাকায়।
সরেজমিনে দেখা যায়, পাহাড়ের দক্ষিণ পাশে খননযন্ত্র দিয়ে মাটি কাটার ছাপ স্পষ্ট। পাহাড়ের কিছু মাটি কেটে স্তূপ করে রাখা হয়েছে একটি স্থানে। কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা হয়। তারা জানান, পাহাড়টি ব্যক্তিমালিকানাধীন। এর মালিকানা সাতজনের। পাঁচ বছর আগে পাহাড়টি কেটে বসতঘর নির্মাণ শুরু হয়। এরপর একটি একটি করে বসতঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। গত পাঁচ বছরের মধ্যে পাহাড়ের পূর্ব অংশে আটটি বসতঘর নির্মাণ করা হয়েছে। পাহাড়টির দক্ষিণ অংশে প্রায় ১৫ শতক এরই মধ্যে কেটে ফেলা হয়েছে বসতঘর নির্মাণের জন্য।
পাহাড়ে রোপণকৃত গাছগাছালি কাটায় প্রাকৃতিক পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতির পাশাপাশি ধ্বংস হচ্ছে জীববৈচিত্র্য। এতে পাহাড়ের স্বাভাবিক গঠন নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি বেড়ে যাচ্ছে ভূমিধ্বসের ঝুঁকি।
স্থানীয়রা জানান, বিগত এক সপ্তাহ ধরে রাতের আঁধারে পাহাড় কেটে এসব মাটি পার্শ্ববর্তী চরম্বা উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠ ভরাটসহ বিভিন্ন এলাকায় পাচার করা হয়েছে।
বর্তমানে পাহাড়টির দক্ষিণের যে অংশ কাটা হচ্ছে, সেটির মালিকানা মো. শফি নামের স্থানীয় এক বাসিন্দার। পাহাড় কেটে তিনি একটি পাকা বাড়ি নির্মাণের কাজ শুরু করেছেন এক বছর আগে। সেটির নির্মাণকাজ এখনো সম্পন্ন হয়নি। মো. শফির তিন ছেলের মধ্যে দুজন প্রবাসী। তাদের জন্য আরও দুটি পাকা বাড়ি নির্মাণ করতে চান তিনি। ছয় দিন ধরে নতুন করে পাহাড় কাটা চলছে।
সরেজমিনে মো. শফির সঙ্গে কথা বললে তিনি বসতঘর নির্মাণের জন্য পাহাড় কাটার বিষয়টি স্বীকার করেন। শফি বলেন, ‘পাহাড় কাটলে প্রশাসন সমস্যা করে, সেটি জানি তবে চ্যায়ারম্যান বলেছেন স্কুলের মাঠের জন্য মাটি কাটলে কোনো সমস্যা হবে না। তাই চেয়ারম্যানের কথায় মাটি কাটতে দিয়েছি। ইতোমধ্যে বেশ কিছু মাটি স্কুলের মাঠ ভরাটের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তারা বলেছে, আরও ১০০ ট্রাক মাটি লাগবে।
জানতে চাইলে চরম্বা ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান সৈয়দ হোসেন বলেন, আমি পাহাড় কাটার কথা কাউকে বলিনি। মো. শফি নামে কাউকে চিনিও না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় এক ব্যক্তি জানান, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান (ছৈয়দ মেম্বার) বিগত সরকারের আমলেও দীর্ঘদিন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসহাব উদ্দিনের সাথে সিন্ডিকেট করে মাটি বালু কাটার সাথে জড়িত ছিল। জুলাই আন্দোলনের সময় ছাত্র জনতার মিছিলে সরাসরি বাঁধা প্রদান ও বিরোধীতা করায় ৫ আগস্টের পরে তার বিরুদ্ধে থানায় একাধিক বিস্ফোরক আইনে মামলাও হয়েছে। সেই মামলায় তিনি বর্তমানে ওয়ারেন্টভুক্ত আসামী। তারপরও তিনি প্রশাসনের নাকের ডগায় কিভাবে (ভারপ্রাপ্ত) চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করতেছে এমন প্রশ্ন স্থানীয় ছাত্র জনতার। এছাড়াও তিনি (ভারপ্রাপ্ত) চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পাওয়ার পর বালু মাটি সিন্ডিকেট করে বেপরোয়া হয়ে গেছে বলেও জানান স্থানীয়রা।
প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ হোছাইন বলেন, স্কুলের মাঠ ভরাটের জন্য মাটি গুলো ছৈয়দ চ্যায়ারম্যান দিয়েছেন, স্কুল উন্নয়নের জন্য দিয়েছেন উনি তবে এটার জন্য কোনো টাকা দেওয়া হয়নি।
ইউপি মেম্বার মোহাম্মদ মিয়া বলেন, ছৈয়দ চ্যায়ারম্যানের নেতৃত্বে পাহাড় কাটা হচ্ছে জানতে পেরেছি। তবে এ বিষয়ে উপজেলা বা পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে কোনো অনুমতি নেওয়া হয়নি।
পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫-এর ৬(খ) ধারা অনুযায়ী, পাহাড় ও টিলা কাটা যায় না। তবে জাতীয় স্বার্থের প্রয়োজনে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নিয়ে পাহাড় বা টিলা কাটা যেতে পারে।
লোহাগাড়া উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মং এছেন বলেন, কোনোভাবেই পাহাড় কাটা যাবে না। আমরা দ্রুত অভিযান চালিয়ে এ কাজে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেব।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বলেন, পাহাড় কাটা সম্পূর্ণ নিষেধ। কোনভাবেই পাহাড় অথবা টপসয়েল কাটা যাবেনা । এ ব্যাপারে সরজমিন পরিদর্শন করে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ায় পুলিশ ও স্থানীয়দের সহযোগীতায় মাদক ব্যবসা ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরেছেন আবু তাহের (৪০) নামের এক মাদক কারবারী। তিনি উপজেলার আন্ধারিয়াপাড়া গ্রামের হুকুম চাদা এলাকার হাতেম আলীর পুত্র।
স্থানীয়রা জানান, আবু তাহের মাদকের সাথে এমনভাবে জড়িয়েছিল মাদকই যেনো ছিল তার নেশা, পেশা ও ভরসা। মাদকের কারণে তার ফেরারি জীবন যাপন ছিল নিত্য দিনের সঙ্গী। মাদক কারবারী হিসেবে গ্রামের লোকজন তাকেসহ পরিবারের লোকজনদেরকেও ঘৃণার চোখে দেখতেন। প্রতিনিয়ত সমাজের বঞ্চনাও তাকে স্বাভাবিক জীবনে ফেরাতে পারেনি।
অবশেষে গতকাল শুক্রবার (২১ নভেম্বর) রাতে ফুলবাড়িয়া থানার ওসি মোহাম্মদ রুকনুজ্জামান ও স্থানীয় গণ্যমান্য লোকজনের সহায়তায় স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসেন তিনি ।
স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসা নিয়ে আবু তাহের জানান, মাদকের কারণে মানুষ আমাকে খারাপ দৃষ্টিতে দেখতো। আমিসহ পরিবারের লোকজনদেরকেও কটু কথা শুনতে হতো। পরে পুলিশ ও এলাকার লোকজনের কথায় মাদক ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেই।
এ প্রসঙ্গে ফুলবাড়িয়া থানার ওসি মোহাম্মদ রুকনুজ্জামান বলেন, আবু তাহের এলাকায় চিহ্নিত মাদকসেবী ও ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। স্থানীয় যুব সমাজকে অনুপ্রাণিত করে মাদক ছাড়ার অনুরোধ জানানো হয়। পুলিশ ও স্থানীয়দের কথায় আবু তাহের মাদক ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চাইলে তার কথা বিশেষ বিবেচনা করা হয়। মাদক ছেড়ে দেওয়ার ঘোষণার পর পুলিশ ও স্থানীয়রা তার পাশে দাঁড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে। মাদকের সাথে জড়িত সবাইকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার আহবান জানান ওসি।
এছাড়াও কেউ যদি স্বেচ্ছায় মাদক ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চায় সেক্ষেত্রে তাদরকেও স্বাগতম জানানোর পাশাপাশি এলাকার লোকজনের সহায়তায় পাশে দাঁড়ানোর ব্যবস্থা করা হবে।
শীতের আমেজ এলেও সবজির বাজারে নেই স্বস্তি; বরং বেশিরভাগ পণ্যের দাম আগের তুলনায় ১৫ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। আলুর বস্তা প্রতি ৪০০ টাকা বাড়ায় খুচরায় আলু এখন ৩০ টাকা কেজি। পেঁয়াজের বাজারে অস্বস্তির মধ্যেই ঢেঁড়স, শিম, টমেটো, চায়না গাজর ৮০ থেকে ১৫০ টাকার কমে মিলছে না। ক্রেতাদের অভিযোগ, শীতেও বাজারে স্বস্তি নেই, বিক্রেতাদের দাবি সরবরাহে ঘাটতি থাকায় দাম কমতে সময় লাগবে। গতকাল শুক্রবার সকালে রাজধানীর ধানমন্ডি রায়ের বাজার, মোহাম্মদপুর টাউন হল মার্কেট ঘুরে এমন তথ্য মিলেছে।
দেখা গেছে, সবজির বাজারে স্বস্তি এখনও অধরা। আগের তুলনায় ১৫ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। ঢেঁড়স, শিম, টমেটো, চায়না গাজর, করলা.এসব এখন ৮০ থেকে ১৫০ টাকার ঘরে বিক্রি হচ্ছে। বেগুনেও ২০ থেকে ৩০ টাকার বৃদ্ধি দেখা গেছে। গোল বেগুন ১৩০ থেকে ১৪০ আর লম্বা ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ফুলকপি-বাঁধাকপিও পিস প্রতি ৫০ টাকার নিচে নামেনি।
ক্রেতাদের অভিযোগ, শীত এলেও সবজির দাম কমছে না, উল্টো বাজার করতে কষ্ট বাড়ছে। আর বিক্রেতাদের দাবি, নতুন মৌসুমের সবজি পুরোপুরি না ওঠা ও পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধির কারণে এ দাম বাড়তি।
বাজারে মানভেদে ফুলকপি প্রতিপিচ ৫০ থেকে ৬০ টাকা, বাঁধাকপি ৪০ থেকে ৫০ টাকা, প্রতি কেজি বেগুন ৭০ থেকে ৮০ টাকা, করলা ৮০ থেকে ৯০ টাকা, ঢ্যাঁড়শ ৬০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকা, মুলা ৫০ টাকা, লতি ৮০ টাকা, ধুন্দুল ৫০ থেকে ৬০ টাকা ও পটোল ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে আর প্রতি কেজি পেঁপে ২০ টাকা থেকে ৩০ টাকা, গাজর ৮০ টাকা, কচুরমুখী ৬০ টাকা, শিম ১০০ থেকে ১২০ টাকা, শালগম ৭০ টাকা থেকে ৮০ টাকা ও শসা বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়। একই সঙ্গে প্রতি কেজি কাঁচামরিচের দাম ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা গুণতে হচ্ছে ক্রেতাদের।
লালশাকের আঁটি ১০ টাকা, পুঁইশাক ২০-৩০ টাকা, মুলাশাক ১০ টাকা, ডাঁটাশাক ১০, কলমি শাক ১০ টাকা ও পালংশাক বিক্রি হচ্ছে ১০ টাকায়। এ ছাড়া প্রতিপিচ লাউ ৫০ থেকে ৬০ টাকা, লেবু ৬০ টাকা ডজন, আলু ২০ থোকে ২৫ টাকা কেজি, ধনে পাতা ১০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
সবজি বিক্রেতা আনিসুল হক বলেন, সবজীর দাম কিছুটা কমেছে। এখনো ১০০ টাকার নিচে কম সবজি পাওয়া যায়। কেজি ৮০ থেকে ১০০ টাকা প্রতিটি সবজির দাম। ফুলকপি, বাঁধাকপি বাজারে আসার কারণে কিছুটা সবজির দাম কমেছে। বিভিন্ন শাকের দামও কম আছে। আগে ২০ থেকে ৩০ টাকা প্রতি আঁটি বিক্রি হলেও, এখন ১০ থেকে ১৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
প্রতিটি বাজারে পেঁয়াজ ১১০ থেকে ১২০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। ৯০ থেকে ১০০ টাকা পাইকারি দামে পেঁয়াজ কিনতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা। তারা বলছেন, বাজারে পর্যাপ্ত পেঁয়াজ থাকার পরও পাইকারি দাম কমছে না। আমাদের বেশি দামে কিনতে হয়, তাই বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।
প্রোটিন বাজারেও পরিবর্তন এসেছে। ব্রয়লার মুরগির দাম গত সপ্তাহের ১৯০ টাকা থেকে ৩০ টাকা কমে এখন ১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সোনালি মুরগি ২৭০ থেকে ২৮০ টাকার ঘরে, ডিমের ডজনও ১০ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায়। তবে মাছের দাম গড়ে ৩০ থেকে ৪০ টাকা বেড়েছে। রুই, কাতলা, পাঙ্গাস বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৬০০ টাকায়। মাছের রাজা ইলিশের দাম এখনও হাঁকানো হচ্ছে দুই হাজার ৪০০ থেকে দুই হাজার ৬০০ টাকা।
বিক্রেতা একজন বলেন, ‘টাটকা মাছ খুব কম পাওয়া যায়। যা পাইছি এগুলো ফ্রিজিং মাছ।’
গতকাল শুক্রবার ঢাকাসহ সারাদেশে অনুভূত ভূমিকম্পটি ‘বড় ভূমিম্পের আগাম বার্তা’ বলে মনে করেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পূরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ও ভূমিকম্প গবেষক মেহেদি আহমেদ আনসারী। বিবিসি বাংলার সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ অভিমত দেন।
মেহেদি আহমেদ আনসারী বলেন, সাধারণত একশ থেকে দেড়শ বছর পরপর একটি অঞ্চলে বড় মাত্রার ভূমিকম্প হওয়ার শঙ্কা থাকে। বাংলাদেশ ও এর আশপাশের কাছাকাছি এলাকায় গত দেড়শ বছরে একটি বড় ও প্রায় পাঁচটি মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছে।
বাংলাদেশের আশপাশে সবশেষ বড় ভূমিকম্প সংগঠিত হয়েছিল প্রায় একশ বছর আগে। তাই আরেকটি বড় ভূমিকম্প কাছাকাছি সময়ে হতে পারে এমন শঙ্কা রয়েছে বলে মন্তব্য এই গবেষকের।
বুয়েটের এই অধ্যাপক বলেন, বিল্ডিং কোড না মেনে ভবন তৈরি করলে ক্ষয়ক্ষতি বেশি হবে এটিই স্বাভাবিক। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।
তিনি আশঙ্কার কথা জানিয়ে বলেন, ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বড় শহরগুলোতে অপরিকল্পিতভাবে যে ভবনগুলো গড়ে তোলা হচ্ছে তাতে ক্ষয়ক্ষতির শঙ্কা বেড়েই চলেছে।
গতকাল শুক্রবার সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ভূমিকম্প অনুভূত হয়। আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ ও গবেষণা কেন্দ্রের রেডিও মেকানিক ইকবাল আহমেদ জানান, ঢাকার আগারগাঁওয়ের আবহাওয়া অফিস থেকে ১৩ কিলোমিটার পূর্বে নরসিংদীর মাধবদীতে ভূকম্পনটির উৎপত্তি। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৫ দশমিক ৭।
ভূমিকম্পে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদীতে ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে দুইজন শিশু। আহত হয়েছেন দেড় শতাধিক। নিহতদের মধ্যে পুরান ঢাকার আরমানিটোলায় তিনজন, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে একজন এবং নরসিংদী সদরে দুজন মারা গেছেন।
ভূমিকম্পে হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতির ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সেই সঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে থাকবে বিএনপি।
গতকাল শুক্রবার এক শোক বিবৃতিতে তিনি এ কথা বলেন। এতে স্বাক্ষর করেন বিএনপির সহ-দপ্তর সম্পাদক মুহম্মদ মুনির হোসেন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘প্রাকৃতিক দুর্যোগের এক ভয়াবহ রূপ হলো ভূমিকম্প। আজ সকালে বাংলাদেশে সংঘটিত বিধ্বংসী ভূমিকম্পে কমপক্ষে ছয়জনের প্রাণহানি ও দুই শতাধিক মানুষ আহত এবং ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতিতে দেশবাসীর মতো আমিও গভীরভাবে শোকার্ত। এই ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগে জীবনহানিসহ জানমালের মারাত্মক ক্ষতি হয়।’
মির্জা ফখরুল ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর প্রতি শোক ও সহমর্মিতা জানান। এ বিপদের সময় তারা যেন ধৈর্যের সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে পারেন সেজন্য তিনি মহান আল্লাহর কাছে মোনাজাত করেন। পাশাপাশি এ দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে বিএনপি থাকবে বলেও জানান তিনি।
শোক বিবৃতিতে মির্জা ফখরুল নিহতদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত এবং তাদের শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা ও আহতদের আশু সুস্থতা কামনা করেন।
গতকাল শুক্রবার সকাল ১০.৩৮ মিনিটে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আঘাত হানা শক্তিশালী ভূমিকম্পে অন্তত ১০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন কয়েকশ মানুষ। রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পটির মাত্রা ছিল ৫.৭।
রাজধানীর শনির আখড়া এলাকা থেকে ১০ লাখ ৮০ হাজার টাকা মূল্যের ৩৬ কেজি গাঁজাসহ দুই মাদক কারবারিকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-১০, সিপিসি-১ যাত্রাবাড়ী ক্যাম্প। গ্রেপ্তারকৃত আসামিরা হলেন–মো. মাসুদ ও মো. রবিউল আলম।
শনিবার বেলা সাড়ে ১১টায় অভিযানটি পরিচালনা করা হয় বলে জানিয়েছেন র্যাব-১০, সিপিসি-১, যাত্রাবাড়ী ক্যাম্পের ভারপ্রাপ্ত কোম্পানি কমান্ডার এসএম হাসান সিদ্দিকী সুমন।
তিনি জানান, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে এদিন যাত্রাবাড়ী থানাধীন শনির আখড়া এলাকায় অভিযান পরিচালনা করা হয়। এতে আনুমানিক ৩৬ কেজি গাঁজাসহ ২ জন মাদক কারবারিকে গ্রেপ্তার করা হয়।
র্যাব জানায়, গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিদ্বয় পেশাদার মাদক কারবারি। তারা বেশ কিছুদিন যাবৎ দেশের সীমান্তবর্তী এলাকা হতে অবৈধভাবে গাঁজাসহ অন্যান্য মাদকদ্রব্য সংগ্রহ করে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করে আসছিল।
উদ্ধারকৃত মাদকসহ গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে যাত্রাবাড়ী থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা রুজুর করতে থানায় হস্তান্তর কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।
রংপুরের কালেক্টরেট স্কুল অ্যান্ড কলেজের বহুল আলোচিত শিক্ষক আলিউল করিম প্রামানিকের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও অসদাচরণের কারণে প্রতিষ্ঠানজুড়ে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।
প্রথমবারের মতো প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন পদমর্যাদার ৫৩ শিক্ষক একযোগে তার বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করেছেন। যা রংপুরের শিক্ষা অঙ্গনে নজিরবিহীন ঘটনা।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, ক্ষমতার অপব্যবহার, নারী শিক্ষকদের সঙ্গে অশোভন আচরণ, বোরকা পরা শিক্ষিকাকে সালীনতাবিরোধী মন্তব্য, কর্মীদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির অপচেষ্টা, সহকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ, প্রশাসনিক কাজে বাধা এবং প্রতিষ্ঠানে ভুয়া বিল-ভাউচার তৈরি করে অর্থ আত্মসাৎসহ একাধিক গুরুতর দুর্নীতির অভিযোগ।
অভিযোগ রয়েছে, হাইকোর্টের রায়ে পরাজিত এক বরখাস্ত শিক্ষককে অবৈধভাবে পুনর্বহাল করতেও সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন তিনি।
নিজের ছেলে সেনাবাহিনীর উচ্চপদে কর্মরত থাকার সুবাদে সহকর্মীদের ওপর ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছে বলেও অভিযোগে উল্লেখ করেছেন শিক্ষকরা।
তারা বলেন, যে অপরাধে শাস্তি হওয়ার কথা, সেখানে উল্টো তিনি হঠাৎ ছুটিতে গিয়ে দায় এড়ানোর চেষ্টা করছেন।
একাধিকবার তাকে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে বলেও অভিযোগ তুলেছেন।
এছাড়াও বরখাস্ত শিক্ষক আলতাপ হোসেন, যিনি শিক্ষাগত ঘাটতি ও জালিয়াতির অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও প্রশাসনের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় পুনরায় কলেজে ফিরে এসেছেন। হাইকোর্টের রায়ের তোয়াক্কা না করে ৩৬ লাখ ৭৩ হাজার টাকা বকেয়া দেখিয়ে সে অর্থ ভাগবাটোয়ারার অভিযোগটিও নিয়ে নানান প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে আটজন সিনিয়র শিক্ষককে অতিক্রম করে নাসিরুল হক মিলনকে সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার বিষয়টি ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি করেছে। আর মিলন দাবি করেছেন সিনিয়রদের সম্মতি নিয়েই তিনি দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন।
৫৩ শিক্ষক জানান, দীর্ঘ দুই বছর ধরে চলা এ অনিয়ম ও ক্ষমতার অপব্যবহার প্রতিষ্ঠানটির শান্ত পরিবেশকে ক্ষত-বিক্ষত করেছে।
শিক্ষকদের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি, ভয় ও চাপের পরিবেশ, রেষারেষি এবং প্রশাসনিক বিশৃঙ্খলা-সব মিলিয়ে প্রতিষ্ঠানটি এখন ১০০ বছরের ঐতিহ্যের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ এক দুরবস্থায় পৌঁছেছে।
আলিউল করিমের ২০০৯ সালে সাময়িক বরখাস্ত হওয়া, ২০১০ সালে কঠোর শর্তে বরখাস্ত প্রত্যাহারের কথাও অভিযোগে বলা হয়।
গত বছরের আগস্ট মাসে অধ্যক্ষের ওপর চাপ সৃষ্টি করে জোরপূর্বক পদত্যাগপত্র আদায়, এরপর নিজেই অধ্যক্ষের ক্ষমতা দখল ও জেলা প্রশাসনের সহায়তায় প্রশাসনিক কো-অর্ডিনেটর ও পরিচালনা পর্ষদ সদস্য পদ দখল করার ঘটনাগুলোও ছিল আলোচিত।
এদিকে, শিক্ষকরা পাঁচ দফা দাবি তুলে ধরেছেন। দাবিগুলো হচ্ছে; ১। আলিউল করিমকে অবিলম্বে সব প্রশাসনিক ও আর্থিক দায়িত্ব থেকে অপসারণ, ২। তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে নিরপেক্ষ তদন্ত, ৩। অভিযোগ সত্য হলে কঠোর শাস্তি, ৪। প্রতিষ্ঠানে স্বাভাবিক পরিবেশ পুনরুদ্ধার, এবং ৫। ভবিষ্যতে অনিয়মকারী যেন আর কোনোভাবে দায়িত্বে আসতে না পারে।
স্থানীয় সুধীমহলের মতে, পূর্ববর্তী জেলা প্রশাসকসহ প্রশাসনের কিছু কর্মকর্তার প্রশ্রয়ে এক সময়ের সুনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি দুর্নীতি ও বিশৃঙ্খলার কবলে পড়েছে।
প্রতিষ্ঠানটিকে দুর্নীতিমুক্ত ও সুশাসনভিত্তিক পরিবেশে ফিরিয়ে আনতে দ্রুত কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন সচেতন মহল।
চলছে অগ্রহায়ণ মাস, আমন ধান ঘরে তুলার সঠিক সময়। প্রতি বছর যখন এই মাসটি আসে তখন সারাদেশের ন্যায় মৌলভীবাজারে রোপা-আমন ধান কাটার ধুম পড়ে যায়। এবার তার ব্যতিক্রম হয়নি। জেলার বিস্তীর্ণ এলাকার আমন মাঠ এখন সোনালী রঙ ধারণ করেছে। তাইতো কৃষকেরা ধান কাটা ও মাড়াইয়ের মহোৎসব করছেন। কৃষিতে আধুনিক যন্ত্র ব্যবহারের ফলে কৃষকেরা মাঠেই ধান মাড়াইয়ের কাজ সারছেন। আবার গ্রামাঞ্চলের জমি থেকে পাকা ও আধা পাকা ধান চুরি হয়ে যাওয়ায় কৃষকরা রাত জেগে ধানক্ষেত পাহারা দিচ্ছেন। শুক্রবার সকালে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার আমন ফসলের মাঠ ঘুরে দেখা যায়, দিগন্ত বিস্তৃত ফসলের মাঠে সোনালী ধানের সমারোহ। বাতাসে দোল খাচ্ছে কৃষকের স্বপ্ন। চারিদিকে সোনালী রঙের নতুন আমন ধানের মৌ মৌ ঘ্রাণ। মাঠে মাঠে চলছে ধান কাটা ও মাড়াইয়ের ধুম। নবান্নের আনন্দে আমন ধান কাটা-মাড়াইয়ের ধুম চলছে জেলা জুড়ে। এখন মাঠের সোনালী ধান ঘরে তুলতে ব্যস্ত কৃষকরা। কয়েকমাস আগে যে স্বপ্ন বুনেছিল ধান ঘরে আসার সাথে সাথে সে স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। নানা ব্যস্ততায় বাড়ির উঠান ও কৃষি জমিতে ধান রেখে চলছে ধান মাড়াইয়ের মহোৎসব।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সুত্রে জানা যায়, জেলার সাত উপজেলায় ৯৮ হাজার ২০ হেক্টর জমিতে রোপা আমন আবাদ হয়েছে। সার্বিকভাবে বলা যায়, মৌলভীবাজারের আমন মৌসুম এবার কৃষকদের মাঝে নতুন আশা ও সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে বলে জানান জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরিচালক মো. জালাল উদ্দিন।
কৃষকরা জানান, ইরি মৌসুমে জমি থেকে ফসল কেটে সরাসরি বাড়ি নিয়ে এলেও আমন ধান কেটে সরাসরি বাড়ি নিয়ে আসেন না তারা। শুকানোর জন্য কাটা আমন ধান চার-পাঁচ দিন জমিতেই রেখে দেন। তারপর বাড়িতে নিয়ে আসেন। এ সুযোগে কৃষকদের জমিতে কেটে রাখা ধান এমনকি আধা পাকা ধানও কেটে নিয়ে যাচ্ছে চোরেরা।
ভূজবল এলাকার কৃষক কাইয়ুম আবেদীন জানান, ৯ বছর ধরে তিনি নিয়মিত খেত করছেন। এবার প্রায় ৪৫ কিয়ার জমিতে আমনের চাষ করেছেন। তিনি বলেন, প্রতি কিয়ারে ১৭ থেকে ১৮ মণ ধান আশা করছি। পোকা কিছুটা ছিল, ওষুধ দিয়েছি। তবে এবার ইঁদুরের উপদ্রব বেশি। তবে ঘূর্ণিঝড়ের কারণে কিছুটা ক্ষতি হয়েছে।
অন্যদিকে, সদর উপজেলার গয়ঘর গ্রামের আকরম মিয়া জানান, এ বছর তিনি শহরের নিখস্ত কাঞ্জা হাওরে ৫ কিয়ার জমি বর্গা নিয়েছিলেন। আকস্মিক ঘূর্ণিঝড়ে তার ৩ কিয়ারের ধান নষ্ট হয়ে গেছে। বাকি জমিতেও আশানুরূপ ফলন হয়নি। ঋণ করে চাষ করেছিলাম, এখন সেই টাকা ফেরত নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি, বলেন তিনি।
কমলগঞ্জের কৃষক সোলাইমান হোসেন বলেন, ‘প্রায় দুই একর জমিতে আমন ধান চাষ করেছি। ১৫০ মনের মতো ধান পেয়েছি। সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গেই ধানক্ষেত পাহারায় চলে যেতে হচ্ছে। পাঁচ-ছয় দিন ধরে জমিতে পাহারা দিচ্ছি। তিনি বলেন, এখানে ধান মাড়াইর পর খলা তৈরি করে ধান সিদ্ধ করে শুকাই। শুকানোর পর সেই ধানগুলো বাড়িতে নিয়ে যাই।’
মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরিচালক মো. জালাল উদ্দিন জানান, চলতি মৌসুমে ব্রি হাইব্রিড-৪, ব্রি হাইব্রিড-৬, তেজ গোল্ড, বিআর ১১, বিআর ২২, বিআর ২৩সহ বিভিন্ন উফশী জাতের ধান প্রত্যাশার চেয়েও বেশি ফলন দিয়েছে। জেলার সাত উপজেলায় মোট ৯৮ হাজার ২০ হেক্টর জমিতে রোপা আমন আবাদ হয়েছে।
১৫ হেক্টর জমিতে আমন চাষ হয়নি। চলতি মৌসুমে পরিমিত বৃষ্টি হওয়ায় ধানি জমিতে পানি থাকায় ধানের খাদ্যে ঘাটতি দেখা দেয়নি। এতে ফলন ভালো হয়েছে। ধানে চিটা হবে না। ফলন ভালো হওয়ায় ধান উৎপাদনের মাত্রা ঠিক থাকবে।
সার্বিকভাবে বলা যায়, মৌলভীবাজারের আমন মৌসুম এবার কৃষকদের মাঝে নতুন আশা ও সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে।। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে সব ধান কাটা শেষ হয়ে যাবে।’
কৃষি বিভাগ আশা করছে, এই উৎপাদন জেলার ধান সংরক্ষণ ও বাজারে সরবরাহে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
নান্দাইল মডেল থানা সংলগ্ন এলাকায় পৌরসভার উদ্যোগে নতুন করে একটি গার্বেজ ফেলার স্থান (Garbage Dumping Zone) নির্মাণ কাজ চলছে। কিন্তু এই স্থানের মাত্র ১০০ মিটার পূর্ব দিকে চন্ডীপাশা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় এবং ১০০ মিটার পশ্চিম দিকে নান্দাইল পাইলট উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় অবস্থিত হওয়ায় শিক্ষার্থী, অভিভাবকসহ স্থানীয়দের মধ্যে চরম উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া উল্লেখিত স্থানের ঠিক ১০ মিটার দক্ষিণ পাশে নান্দাইল মডেল থানা এবং উত্তর পাশেই রয়েছে ময়মনসিংহ–কিশোরগঞ্জ মহাসড়ক, যেখানে প্রতিদিন হাজারো পথচারী চলাচল করেন।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান— একদিকে দুইটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, অন্যদিকে ব্যস্ত মহাসড়ক। এমন সংবেদনশীল স্থানে গার্বেজ পয়েন্ট তৈরি হলে দূষণ, দুর্গন্ধ, ছড়ানো বর্জ্য, ধোঁয়া, পোকামাকড়সহ নানান স্বাস্থ্যঝুঁকির সৃষ্টি হবে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে শিক্ষার্থীরা।
একজন অভিভাবকের ভাষায়—
“শিশুদের প্রতিদিন এই সড়ক দিয়ে যাতায়াত করতে হয়। বর্জ্য ফেললে বাতাসে রোগজীবাণু ছড়াবে। এ সিদ্ধান্ত আগেই পুনর্বিবেচনা করা উচিত ছিল।”
“বিদ্যালয়ের খুব কাছে এমন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কেন্দ্র কোনোভাবেই শিক্ষার পরিবেশের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন দুর্গন্ধের মধ্যে ক্লাস করবে—এটা গ্রহণযোগ্য নয়।”
নান্দাইল পাইলট উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক বলেন—
“নারী শিক্ষার্থীরা প্রতিদিনই স্বাস্থ্যের ঝুঁকিতে পড়বে। এখানে বিকল্প জায়গা থাকা সত্ত্বেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশে বর্জ্য ফেলাকে আমরা অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত মনে করি।”
স্থানীয় স্বাস্থ্যসেবা কর্মীরা জানান—
গার্বেজ পয়েন্ট বিদ্যালয়ে ও থানার নিকটে হলে মশা, মাছি, জীবাণু ও দুর্গন্ধের কারণে ডেঙ্গু, শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়া, চর্মরোগসহ নানা অসুস্থতার ঝুঁকি থাকে। দীর্ঘমেয়াদে শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপরও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
পথচারী ও ব্যবসায়ীদের উদ্বেগ- কিশোরগঞ্জ, ময়মনসিংহ মহাসড়কের এই এলাকায় প্রতিদিন প্রচুর যাত্রী ও ব্যবসায়ী চলাচল করেন। একজন ব্যবসায়ী জানান— মহাসড়কের লাগুয়া এলাকায় বর্জ্যের স্তূপ থাকলে দুর্গন্ধ এবং নোংরা পরিবেশ তৈরি হবে। এতে ব্যবসায়ীক পরিবেশও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
বিশেষ ভাবে উল্লেখ্য যে, গত ১৮ সেপ্টেম্বর সদ্য বিদায়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার সারমিনা ছাত্তার উক্ত স্থানে আধুনিক পৌর পার্ক নির্মাণের জন্য আনুষ্ঠানিক ভাবে ভিত্তি প্রস্তুর স্থাপন করেন। কিন্তু কিছু দিনের ব্যাবধানে সেখানে তৈরি হচ্ছে ময়লার ভাগাড়, সংগত কারণেই জনমনে দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ব্যস্ত সড়ক ও ঘনবসতিপূর্ণ এলাকার পাশে গার্বেজ ফেলার স্থান নির্মাণ জনস্বাস্থ্য ও শিক্ষার পরিবেশের জন্য গুরুতর ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। তাই পৌর প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তকে পূনঃ বিবেচনার জন্য মতামত দিচ্ছেন স্থানীয়রা। সেইসাথে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ না হলে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সচেতন মহল।
সকাল ১০:৩৮ মিনিটে নরসিংদী সদর ও পলাশ উপজেলার মধ্যবর্তী অঞ্চলে ভূমিকম্প অনুভূত হয়। এতে জেলার বিভিন্ন স্থানে আতঙ্কিত হয়ে দৌড়াদৌড়ির সময় বহু মানুষ আহত হন এবং সর্বশেষ তথ্যানুসারে ৪ জন নিহত হয়েছেন। আহতের সংখ্যা শতাধিক। রিপোর্ট সময়: সন্ধ্যা ৬:১৫ মিনিট।
নিহত ও আহতদের বিস্তারিত:
১. সদর উপজেলার চিনিশপুর ইউনিয়ন (গাবতলি এলাকা)
নির্মাণাধীন ভবনের মালামাল নিচে পড়ে ৪ জন আহত হন। মাথায় মারাত্মকভাবে আহত ২ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানকার চিকিৎসক হাফেজ ওমর (০৮) নামে এক শিশুকে মৃত ঘোষণা করেন। তার বাবা দেলোয়ার হোসেন উজ্জ্বল আশঙ্কাজনক অবস্থায় চিকিৎসাধীন।
২. পলাশ উপজেলার চরসিন্দুর ইউনিয়ন (মালিতা পশ্চিমপাড়া)
কাজেম আলী ভূইয়া (৭৫) মাটির ঘরের নিচে চাপা পড়ে আহত হন। জেলা হাসপাতালে নেওয়ার পথে তিনি মারা যান।
৩. পলাশ উপজেলার ডাংগা ইউনিয়ন (ইসলামপাড়া, নয়াপাড়া গ্রাম)
নাসিরউদ্দিন (৬০) ভূমিকম্পের সময় মাঠ থেকে দৌড়ে আসার পথে রাস্তা থেকে নিচে লাফ দিয়ে পড়ে মারা যান বলে স্থানীয়রা জানান। তিনি ঘটনাস্থলেই মারা যান। নিকটাত্মীয়রা লাশ হাসপাতালে নেননি।
৪. শিবপুর উপজেলার জয়নগর ইউনিয়ন (গাজকিতলা, পূর্বপাড়া)
ফোরকান (৪০) ভূমিকম্পের কম্পনে গাছ থেকে পড়ে গুরুতর আহত হন। নরসিংদী জেলা হাসপাতালে নেওয়ার পর তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। ঢাকায় নেওয়ার পথে তিনি মারা যান।
ক্ষয়ক্ষতি:
১) ঘোড়াশাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র:
সাবস্টেশনে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়; ফায়ার সার্ভিস দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনে।
ভূমিকম্পের কারণে বিপুল পরিমাণ প্রোডাকশন ট্রান্সফরমার (PT) ভেঙে পড়ে।
২) ঘোড়াশাল পলাশ ফার্টিলাইজার কারখানা:
ভূমিকম্পের কারণে ইউরিয়া উৎপাদন সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যায়।
যন্ত্রপাতি অতিরিক্ত ভাইব্রেশনের কারণে বন্ধ হয়ে গেছে; বর্তমানে মেশিনারিজ চেকিং অপারেশন চলছে।
৩) সরকারি ভবনের ক্ষতি:
জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, সার্কিট হাউসসহ জেলার শতাধিক ভবনে ফাটল দেখা দিয়েছে।
জেলা প্রশাসনের উদ্যোগ:
ভূমিকম্পজনিত ক্ষয়ক্ষতি ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার তথ্য সংগ্রহের জন্য জেলা প্রশাসন কন্ট্রোল রুম চালু করেছে এবং সার্বিক পরিস্থিতি নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করছে।