মঙ্গলবার, ২ ডিসেম্বর ২০২৫
১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

সিলেটের বন্যা: লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দি, ঝুঁকিতে বিদ্যুৎকেন্দ্র

সিলেটের কোম্পানিগঞ্জে টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে শহরের অধিকাংশ এলাকা পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় বানভাসী মানুষের দুর্ভোগের শেষ নেই। গতকাল কোম্পানিগঞ্জ সদর থেকে তোলা। ছবি: ফোকাস বাংলা
আপডেটেড
২০ জুন, ২০২৪ ০০:৪৯
দৈনিক বাংলা ডেস্ক
প্রকাশিত
দৈনিক বাংলা ডেস্ক
প্রকাশিত : ২০ জুন, ২০২৪ ০০:৪৯

পবিত্র ঈদুল আজহার ছুটিতে সারাদেশে যখন আনন্দমুখর পরিবেশ তখন বিপরীত চিত্র সিলেট বিভাগের চার জেলায়। এখানে ঈদে কোরবানি পালন হয়েছে ঠিকই কিন্তু, ঈদের দুই তিন দিন থেকে পাহাড়ি ঢল আর অতিবর্ষণে নদ-নদীর পানি বাড়তে থাকায় প্লাবিত হয়ে পড়ে নিম্নাঞ্চল। সেই পানি বাড়তে বাড়তে এখন টইটম্বুর হয়ে বিপৎসীমার ওপরে চলে গেছে শহরের সবচেয়ে বড় প্রতিবেশী সুরমা নদী। পুরো জেলায় শুকনো মাঠ খুঁজে পাওয়া এখন দায়। নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার পর ঈদের দিন থেকেই সিলেট শহরে ঢুকে গেছে বন্যার পানি। গত ২০ দিনের মধ্যে সিলেটে এটি দ্বিতীয় দফায় প্লাবিত হওয়ার ঘটনা।

সিলেট ব্যুরো প্রধান দেবাশীষ দেবু জানান, এদিকে সৃষ্ট বন্যায় ঝুঁকিতে পড়েছে সিলেটের দক্ষিণ সুরমার বরইকান্দি এলাকার বিদ্যুতের সাবস্টেশন। সুরমা নদী ছাপিয়ে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রে পানি প্রবেশ করতে শুরু করেছে। এটি প্লাবিত হলে দক্ষিণ সুরমার প্রায় ৫০ হাজার গ্রাহক বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়তে পারেন।

গত মঙ্গলবার বিকেল থেকে এই বিদ্যুৎকেন্দ্র রক্ষায় কাজ শুরু করেছে সেনাবাহিনী। তাদের সহায়তা করছে সিলেট সিটি করপোরেশন ও বিদ্যুৎ বিভাগ। নদীর পাড়ে বালির বস্তা ফেলে পানি আটকানোর চেষ্টা করছে তারা।

এদিকে, পানি বেড়ে যাওয়ায় সিলেটের প্রায় সব পর্যটন কেন্দ্র বন্ধ ঘোষণা করেছে জেলা প্রশাসন। এসব পর্যটন কেন্দ্রে পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত পর্যটকদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।

ওইদিন বিকেলে সেনাবাহিনীর এক টিম নিয়ে সাব-স্টেশনটি পরিদর্শন করেছেন সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। এ সময় তিনি বলেন- এই সাব-স্টেশনে কোনো সমস্যা হলে চালু রাখতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালানো হবে। এ ছাড়া যাতে পানি না উঠে সে জন্যও কাজ করা হচ্ছে।

জানা গেছে, দক্ষিণ সুরমার বরইকান্দি উপ-কেন্দ্রটি সিলেটে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিউবো) বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ সিলেট-৩ এর অধীনস্থ। এই উপ-কেন্দ্রের মাধ্যমে সিলেট রেলওয়ে স্টেশন, বরইকান্দি, কামালবাজার, মাসুকগঞ্জ, বিসিক, লালাবাজার, শিববাড়ী ও কদমতলীর কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালসহ সংলগ্ন এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়।

বিউবো বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ সিলেট-৩ নির্বাহী প্রকৌশলী শ্যামল চন্দ্র সরকার বলেন, উপকেন্দ্রটি ঝুঁকিতে রয়েছে। পানি উঠার আশঙ্কা রয়েছে। তবে এখনো উঠেনি। আমাদের সার্বিক প্রস্তুতি রয়েছে। সেনাবাহিনীও সাহায্য করছে।

এর আগে ২০২২ সালের বন্যায়ও তলিয়ে গিয়েছিলো এ বিদ্যুৎকেন্দ্র।

উল্লেখ্য, ২০ দিনের মাথায় দ্বিতীয় দফা পানিতে ভাসছে সিলেট। সোমবার ঈদের দিন সকাল থেকে সিলেটের অধিকাংশ এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি দেখা দেয়।

সব পর্যটন কেন্দ্র বন্ধ

সিলেটের বেশির ভাগ পর্যটন কেন্দ্রের অবস্থান গোয়াইনঘাট উপজেলায়। এ উপজেলায় উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতি অবনতি ঘটায় জননিরাপত্তা বিবেচনায় জাফলং, জলারবন রাতারগুল, বিছনাকান্দি ও পান্থুমাই পর্যটন স্পট অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। পরবর্তী ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত এসব স্পটে পর্যটকরা আসতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন উপজেলা পর্যটন উন্নয়ন কমিটির আহবায়ক ও গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. তৌহিদুল ইসলাম।

এছাড়া কোম্পানীগঞ্জের সাদাপাথর পর্যটন কেন্দ্রেও পর্যটকদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।

সিসিকের ছুটি বাতিল

বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় সিটি কর্পোরেশনের (সিসিক) সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি বাতিল করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সিসিকের জনসংযোগ কর্মকর্তা সাজলু লস্কর।

তিনি জানান, গত মঙ্গলবার দুপুর ১টায় দক্ষিণ সুরমায় সিটি করপোরেশনের ২৮ ও ২৯ নং ওয়ার্ডের আশ্রয়কেন্দ্রে যান সিসিক মেয়র। এ সময় তিনি বন্যা দুর্গতদের জন্য সিসিকের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন।

এরপর দক্ষিণ সুরমায় সিসিকের ২৬নং ওয়ার্ডের টেকনিক্যাল কলেজ রোডসহ কয়েকটি বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেন মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী।

সিলেট জেলায় আক্রান্ত প্রায় চার লাখ

সিলেটের জেলা প্রশাসন থেকে প্রেরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত জেলায় প্রায় ৩ লাখ ৭১ হাজার মানুষ বন্যায় আক্রান্ত হয়েছেন। ইতোমধ্যে জেলার কোম্পানীগঞ্জ, কানাইঘাট, গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর ও জকিগঞ্জ উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা তলিয়ে গেছে। বন্যার্তদের জন্য জেলায় ৬১৯টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তত রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান।

মৌলভীবাজারে ডুবল ৩৩২ গ্রাম, দুই লাখ মানুষ পানিবন্দি:

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি জানান, গত কয়েকদিনে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ও ভারী বৃষ্টিপাতে সৃষ্ট বন্যায় মৌলভীবাজারের ছয় উপজেলার ৩৭ ইউনিয়নের ৩৩২টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে এক লাখ ৯৩ হাজার ৯৯০ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। ইতোমধ্যে বড়লেখা উপজেলার প্রশাসনের পক্ষ থেকে তালিমপুর ইউনিয়নের টেকাহালী উচ্চ বিদ্যালয় ও হাকালুকি উচ্চ বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা কয়েকটি পরিবারের মাঝে শুকনো খাবার ও স্যালাইন বিতরণ করা হয়েছে।

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত উপজেলাগুলোর মধ্যে বড়লেখার ১০টি, জুড়ীর ছয়টি, কুলাউড়ার ছয়টি, সদরের চারটি ও রাজনগর উপজেলার ছয়টি ইউনিয়ন, শ্রীমঙ্গল পাঁচটি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়।

মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক উর্মি বিনতে সালাম বুধবার (১৯ জুন) সকালে জানিয়েছেন, জেলার ৬টি উপজেলায় মোট ৯৮টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এর মধ্যে ৫৭১টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছেন। ৫৬টি মেডিক্যাল টিম প্রস্তুত রয়েছে।

গত ২৪ ঘণ্টায় পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় পানিবন্দি লোকদের উদ্ধারের লক্ষ্যে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ হতে প্রয়োজনীয় তৎপরতা চালানো হচ্ছে। বন্যার সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য জেলা প্রশাসকের কার্যালয় এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয়গুলোতে কন্ট্রোলরুম স্থাপন করা হয়েছে। প্রতিটি ইউনিয়নে ট্যাগ কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছে। বন্যার্তদের স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের জন্য ইউনিয়নভিত্তিক মেডিক্যাল টিম গঠন করা হয়েছে।

সরকারি ও বেসরকারিভাবে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। বন্যার্তদের সার্বিক সহযোগিতা প্রদান ও উদ্ধার কার্যক্রম চালানোর লক্ষ্যে স্বেচ্ছাসেবক টিম (স্কাউট, রোভার স্কাউট, রেড ক্রিসেন্ট, যুব রেড ক্রিসেন্ট, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স) প্রস্তুত রাখা হয়েছে। পুরো জেলায় বন্যা পরিস্থিতির ওপর সতর্ক দৃষ্টি রাখা হচ্ছে।

মৌলভীবাজার পওর বিভাগ, বাপাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী জাবেদ ইকবাল জানান, বুধবার সকাল ৯টায় ধলাই নদী (রেলওয়ে ব্রিজ) এলাকায় পানি বিপদসীমার ২৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আর মনু নদী (চাঁদনীঘাট) এলাকায় পানি বিপৎসীমার আট সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে ও জুড়ী নদীর পানি বিপদসীমার ১৯৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কুশিয়ারা নদীর (শেরপুর) পানি বিপৎসীমার ১২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

কুলাউড়া প্রতিনিধি জানান, টানা বৃষ্টি ও উজানের ঢলে মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি রয়েছেন। গতকাল বুধবার দুপুরে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

ঈদের দিন ভোররাত থেকে শুরু হওয়া ভারি বর্ষণ এখন পর্যন্ত অব্যাহত আছে। পাহাড়ি ঢল ও তিন দিনের টানা বৃষ্টিতে উপজেলার ১টি পৌরসভাসহ ৬টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়ে লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি রয়েছেন। অনেক রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় যান চলাচলও বন্ধ রয়েছে। তিন দিনের টানা বৃষ্টিতে উপজেলা পরিষদ এলাকা, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, পৌর শহরের মাগুরা, সাদেকপুর, বিহালা, সোনাপুর, কাদিপুর ইউনিয়নের ছকাপন, মৈন্তাম, ভাগমতপুর, গুপ্তগ্রাম, তিলকপুর, ভূকশিমইল ইউনিয়নের সাদিপুর, কোরবানপুর, মুক্তাজিপুর, জাবদা, কালেশার, কাইরচক, চিলারকান্দি, কানেহাত, জয়চণ্ডী ইউনিয়নের ঘাগটিয়া, মিরবক্সপুর, কামারকান্দি, কুটাগাঁও, কুলাউড়া সদর ইউনিয়নের দেখিয়ারপুর, কুলাউড়া গ্রাম, বনগাঁও, গাজীপুর আংশিকসহ অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও প্লাবিত হয়েছে।

প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যালয় জানিয়েছে, বুধবার পর্যন্ত কুলাউড়ার ৬০টি গ্রাম ও এলাকা প্লাবিত। এসব গ্রাম ও এলাকার লক্ষাধিক মানুষ বন্যা আক্রান্ত। এ ছাড়া ২২টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এতে ১৯৭টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। বন্যার্তদের স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের জন্য ১৪টি মেডিকেল টিম গঠন করে কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।

এদিকে মঙ্গলবার দিনব্যাপী বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে খাবার বিতরণ করেন মৌলভীবাজার-২ আসনের সংসদ সদস্য শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, কুলাউড়া পৌরসভার মেয়র অধ্যক্ষ সিপার উদ্দিন আহমদ ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অর্থ ও পরিকল্পনাবিষয়ক উপকমিটির সদস্য, স্কোয়াড্রন লিডার (অব.) সাদরুল আহমেদ খান।

মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জাবেদ ইকবাল বলেন, জেলার সবগুলো নদীর পানি বিপৎসীমার উপরে প্রবাহিত হচ্ছে। বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হবে।

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, সুনামগঞ্জ শহরে আশ্রয়কেন্দ্রে এসে খাবারের কষ্টে পড়েছেন সুনামগঞ্জের বন্যার্তরা। শিশুদের নিয়ে মায়েরাও রয়েছেন কষ্টে। ক্ষিদে সহ্য করতে না পেরে কান্নাকাটি করছে শিশুরা। বুধবার বেলা আড়াইটায় শহরের এইচএমপি উচ্চ বিদ্যালয়ের আশ্রয় কেন্দ্রে গিয়ে এই চিত্র দেখা গেছে।

সুনামগঞ্জ শহরের ময়নার পয়েন্টে ভাড়া বাসায় থাকেন আরিফুলন্নেছা। তিনি জানালেন, ঘরে কোমর সমান পানি। গত কয়েকদিন বন্যার জন্য তার গাড়ী চালক স্বামীর কোন রোজগার হয়নি। দুই দিন আগে এখানে এলেও তারা কোন সহায়তা পান নি। রান্না-বান্না করার সুযোগও নেই। কোন রকম দিন কাটছে তাদের। তিনি জানান, আজ সকালে একজন এসে পাউরুটি ও কলা দিয়েছে।

আরিফুলন্নেছার কথার সমর্থন জানালের পাশে থাকা তাসলিমা। এ সময় খাবারের জন্য ছোট্ট শিশু কান্না করায় শাসন করতে দেখা যায় তাসলিমাকে।

আশ্রয় কেন্দ্রে আসা মিনা লাল, রিতা লাল, সাম, রাবেয়া, সাজন বললেন, মঙ্গলবার থেকে আশ্রয় কেন্দ্রে আছি। কেউ আমাদের এখনও সাহায্য করেনি। হাতে টাকাও নেই, তাই কিছু কিনতেও পারছি না। বললেন, আপনারা দয়া করে কিছু করুন।

শান্তিবাগের বাসিন্দা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক (একজন নাইট ডিউটি করেন ও অন্যজন দিনমজুর) বললেন, ঘরে কোমর পানি। ঘরের জিনিসপত্র কিছু আসার সময় নিয়ে এসেছি, কিছু পাশের আরেক বাসায় রেখেছি। অন্যান্য সব কিছু পানির নীচে। বললেন, এখানে বাথরুম ও খাবার পানির সুবিধা থাকলেও খাবার কষ্টে আছি আমরা। সরকারি কোন ধরনের সহযোগিতা পাইনি। মঙ্গলবার রাতে আমরা আশ্রয় কেন্দ্রে এসেছি। আজ (বুধবার) সকালে এক বোতল পানি ও নাটি বিস্কুট দিয়ে গেছে একজন।

এদিকে তেঘরিয়ার বাসিন্দা পত্রিকা বিপণন কর্মী নুর হোসেন বললেন, তেঘরিয়া মসজিদে আশ্রয় নিয়েছি। আমাদের পাড়ার ২০ ঘর এখানে আশ্রয় নিয়েছে। এখন পর্যন্ত কেউ সহায়তা করেনি। তিনি বলেন, বন্যার পানির সঙ্গে ড্রেনের ময়লা-আবর্জনা ঘর-বাড়িতে গিয়ে ঢুকছে।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী বললেন, ৫৪১ টি আশ্রয়কেন্দ্রে ওঠেছেন ১৮ হাজার ৪২৯ জন বন্যার্ত মানুষ। যারা আশ্রয় কন্দ্রে এসেছেন সকলেই খাবার নিয়ে উঠেছেন। যারা খাবার নিয়ে উঠেননি তারা চাইলেই শুকনো খাবারসহ খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।


চার ডিগ্রিতে নামবে তাপমাত্রা, আসছে ৮ শৈত্যপ্রবাহ

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

এখনো সেভাবে জেঁকে বসেনি শীত। বাংলা অগ্রহায়ণ মাসের অর্ধেক পার হলেও প্রকৃতিতে এখনো হালকা শীত। সাধারণ ডিসেম্বর মাসে এমন শীতই থাকে। তবে কয়েকদিন পরই শীতের তীব্রতা বাড়ার ইঙ্গিত দিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
এবারের শীত মৌসুমে তাপমাত্রা নামতে পারে ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। মোট আটটি শৈত্যপ্রবাহ হবে, এর মধ্যে তীব্র হতে পারে তিনটি।
গতকাল সোমবার এমন পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
আবহাওয়াবিদ মো. নূরুল করিম তিন মাসের দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসে জানিয়েছেন, ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত সামগ্রিকভাবে দেশে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে। দিন ও রাতের তাপমাত্রা স্বাভাবিক অপেক্ষা বেশি থাকতে পারে। এ সময় ৩ থেকে ৮টি মৃদু (৮-১ ডিগ্রি সেলসিয়াস) থেকে মাঝারি (৬-৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস) ধরনের শৈত্য প্রবাহ বয়ে যেতে পারে। তবে এর মধ্যে ২-৩টি তীব্র শৈত্য প্রবাহে (৪-৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস) রূপ নিতে পারে।
এ সময়ের মধ্যে শেষরাত থেকে সকাল পর্যন্ত নদ-নদী অববাহিকাসহ দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে এবং অন্যত্র হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে। তবে কখনো কখনো কুয়াশা দুপুর পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। ঘন কুয়াশার কারণে দিন এবং রাতের তাপমাত্রার পার্থক্য কমে শীতের অনুভূতি বৃদ্ধি পেতে পারে।
এ ছাড়া ফেব্রুয়ারি মাসের শেষার্ধে দেশের কোথাও কোথাও ১-২ দিন শিলাবৃষ্টিসহ বজ্রঝড় হতে পারে বলেও জানান আবহাওয়াবিদ নূরুল করিম।
এদিকে ডিসেম্বরেই দুটি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে বঙ্গোপসাগরে, যার মধ্যে একটি রূপ নিতে পারে ঘূর্ণিঝড়ে।


সীতাকুণ্ডে সিকিউর সিটি শপিংয়ে মেলা শুরু

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
সীতাকুণ্ড (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি

সীতাকুণ্ডের সিকিউর সিটি শপিংয়ে দোকান বিক্রির উৎসব উপলক্ষে মাসব্যাপী মেলার উদ্বোধন হয়েছে। সোমবার সকালে সীতাকুণ্ডের প্রাণকেন্দ্রে অত্যাধুনিক শপিংমল সিকিউর সিটির মাসব্যাপী দোকান ভাড়া ও বিক্রয় উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্ভোধন হয়।

পৌরসভার সাবেক কমিশনার রায়হান উদ্দিনের সঞ্চালনায় এ সময় বেলুন ও ফিতা কেটে মেলার উদ্বোধন করেন সিকিউর সিটি প্রপার্টি ম্যানেজম্যান্ট লিমিটেডের চেয়ারম্যান মোরশেদুল হাসান, এতে আরও উপস্থিত ছিলেন, ভাইস-চেয়ারম্যান আখতার হোসাইন মামুন, পৌরসদর দোকান মালিক সমিতির সভাপতি নাছির উদ্দীন ভূইয়া, সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন রফিক, সীতাকুণ্ড কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ওসমান গণি, উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমীর মাওলানা তাওহীদুল হক চৌধুরী, জামায়াতের সেক্রেটারি মো. তাহের, পৌর বিএনপির সেক্রেটারি সালে আহমেদ সলু, সীতাকুণ্ড প্রেসক্লাব সভাপতি সৈয়দ ফোরকান আবু, সাধারণ সম্পাদক আব্দুলাহ আল কাইয়ুমসহ সিকিউর সিটি ব্যবসায়িক কমিটির নবনির্বাচিত সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম এবং অন্যান্য ব্যবসায়ীরা।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, সিকিউর সিটি দোকানগুলোর বিক্রি বৃদ্ধি, স্থানীয় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের উৎসাহিত করা এবং ক্রেতাদের জন্য একটি নিরাপদ কেনাকাটার পরিবেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যেই এই মেলার আয়োজন করা হয়েছে। তারা আরও বলেন, মেলার মাধ্যমে একদিকে যেমন ক্রেতারা প্রয়োজনীয় পণ্য স্বল্পমূল্যে ক্রয় করতে পারবে, অন্যদিকে উদ্যোক্তারা নিজেদের পণ্য ও সেবা আরও ভালোভাবে উপস্থাপন করতে পারবেন ।

মেলায় ইলেকট্রনিক্স, হোম সিকিউরিটি ডিভাইস, নজরদারি ক্যামেরা, গ্যাজেট, স্মার্ট লকসহ বিভিন্ন নিরাপত্তা সরঞ্জামের স্টল স্থান পেয়েছে। ছাড়, বিশেষ অফার, ডেমো প্রদর্শনী, এবং ক্রেতা-সেবা কাউন্টার মেলাকে আরও প্রাণবন্ত করেছে।

আয়োজক কমিটি জানায়, পুরো মাসজুড়ে প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত মেলা সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। সপ্তাহের বিভিন্ন দিনে থাকবে বিশেষ ছাড় ও লটারি ড্রসহ আকর্ষণীয় ইভেন্ট।

উদ্বোধনী দিনেই স্থানীয় ক্রেতা ও ব্যবসায়ীদের ব্যাপক উপস্থিতিতে মেলা প্রাঙ্গণ জমে ওঠেছে।


পার্বত্য চুক্তি বাতিলের দাবিতে নাগরিক পরিষদের সংবাদ সম্মেলন

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
রাঙামাটি প্রতিনিধি

সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক অভিযোগ তুলে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাতিলসহ চার দফা দাবি জানিয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ (পিসিএনপি)। সোমবার বেলা ১১টায় রাঙামাটির বনরূপায়ি স্থানীয় একটি রেস্টুরেন্ট আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি উত্থাপন করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে, পিসিএনপি কেন্দ্রীয় চেয়ারম্যান কাজী মো. মজিবর রহমান বলেন, চুক্তির ২৮ বছর অতিক্রম হলেও পার্বত্য অঞ্চলে প্রত্যাশিত শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠিত হয়নি। বরং চুক্তির বেশ কিছু ধারা বাংলাদেশের সংবিধানের মৌলিক কাঠামো, সার্বভৌমত্ব ও নাগরিক অধিকারের পরিপন্থি। তিনি অভিযোগ করেন, চুক্তির ফলে পার্বত্য চট্টগ্রামকে বিশেষ স্ট্যাটাস দেওয়া হয়েছে, আঞ্চলিক পরিষদের অনির্বাচিত নেতৃত্ব টিকে আছে, ভূমি ব্যবস্থাপনায় বৈষম্যমূলক বিধান কার্যকর রয়েছে এবং ভোটার তালিকা তৈরিতে অতিরিক্ত শর্তারোপ করা হয়েছে- যা সংবিধানের বিভিন্ন অনুচ্ছেদের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ।

সংগঠনটির দাবি, চুক্তির বেশ কিছু ধারায় জমি ক্রয়-বিক্রয়ে স্থানীয় পরিষদের একক সিদ্ধান্ত বাধ্যতামূলক করা হয়েছে, নতুন আইন প্রণয়নে পরিষদের মতামত বাধ্যতামূলক করা হয়েছে এবং ভোটার হতে ‘স্থায়ী বাসিন্দা সনদ’ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে- যা দেশব্যাপী প্রযোজ্য নাগরিক অধিকার কাঠামোর সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এছাড়া চুক্তিকে অভিযোগ করা হয় কেবল নির্দিষ্ট একটি জাতিগোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষায় প্রণীত, যেখানে সমতল বা পার্বত্য এলাকার বাঙালি জনগোষ্ঠীর দাবি-অধিকার উপেক্ষিত হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে পিসিএনপি নিম্নোক্ত চারদফা দাবি উত্থাপন করে: ১. সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাতিল করতে হবে।

২. পাহাড়ের সব নাগরিকের সমান রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও ভূমি অধিকার নিশ্চিত করা।

৩. সক্রিয় সশস্ত্রগোষ্ঠীগুলোর অস্ত্র উদ্ধার ও চাঁদাবাজি বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ।

৪. জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে প্রত্যাহারকৃত নিরাপত্তা ক্যাম্পগুলো পুনঃস্থাপন।

সংবাদ সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, সংগঠনের কেন্দ্রীয় মহাসচিব শাব্বির আহমেদ। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সিনিয়র সহসভাপতি প্রফেসর আবু তাহের, রাঙামাটি জেলা সভাপতি মো. সোলায়মান, সহসভাপতি মাওলানা আবু বক্কর, খাগড়াছড়ি জেলা সভাপতি মো. লোকমান হোসাইন, স্থায়ী কমিটির সদস্য এম. রুহুল আমিন, কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক মো. শাহজালাল, রাঙামাটি জেলা সাধারণ সম্পাদক ডা. মুহাম্মদ ইব্রাহিম, ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ সদস্য হাবীব আজম, যুব পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি নুর হোসেন প্রমুখ।


কালীগঞ্জ খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় দোয়া মাহফিল

আপডেটেড ১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ২১:০৫
কালীগঞ্জ (গাজীপুর) প্রতিনিধি

গাজীপুরের কালীগঞ্জে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি ও সুস্থতা কামনায় দোয়া মাহফিল হয়েছে। সোমবার বাদ মাগরিব কালীগঞ্জ কেন্দ্রীয় পার্টি অফিসে পৌরশাখা কৃষক দলের উদ্যোগে এ দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন, কালীগঞ্জ পৌর কৃষক দলের সভাপতি মো. হায়দার আলী শেখ। সঞ্চালনায় ছিলেন পৌর বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন আহমেদ। এতে উপস্থিত ছিলেন কালীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক সোলাইমান আলম, খায়রুল আহসান মিন্টু, পৌর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব ইব্রাহীম প্রধান, পৌর বিএনপির সদস্য মনির উদ্দিন পাঠান মিঠু, খুরসেদ আলম কাজল, গাজীপুর জেলা কৃষক দলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মাহবুবুর রহমান, পৌর কৃষক দলের সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক মোহাম্মদ আরিফুল ইসলামসহ বিএনপি, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের অন্য নেতারা। এছাড়া কৃষক সমাজের প্রতিনিধি ও স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

দোয়া মাহফিলে বক্তারা আবেগাপ্লুত হয়ে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার অবদান ও দেশের জন্য তার ত্যাগের কথা তুলে ধরেন। কাঁদো কাঁদো কণ্ঠে ও অশ্রুসিক্ত নয়নে তারা বলেন- তিনি শুধু একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিই নন, তিনি একজন জনমাতা, গণতন্ত্রের প্রতীক এবং বঞ্চিত মানুষের আশার বাতিঘর। দেশবাসীর কাছে তার রোগমুক্তি কামনায় আন্তরিকভাবে দোয়ার আহ্বান জানান তারা।

পরে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার দ্রুত রোগমুক্তি, দীর্ঘায়ু এবং সুস্বাস্থ্য কামনা করে বিশেষ মোনাজাত পরিচালনা করা হয়। মোনাজাতে দেশ ও জাতির শান্তি, সমৃদ্ধি ও গণতন্ত্রের পুনরুদ্ধারসহ সকল অসুস্থ নেতা-কর্মীর জন্য দোয়া করা হয়। দোয়া মাহফিল শেষে তবারক বিতরণের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটে।


শীতের আমেজ পড়তেই তলানিতে গোমতীর পানি

*অন্য বছর এ সময় টইটম্বুর পানি থাকলেও এবার নদীর বুকে খরা *বহু জমি অনাবাদি থেকে যাওয়ার শঙ্কা
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
তরিকুল ইসলাম তরুন, বুড়িচং (কুমিল্লা) 

শীত মৌসুম শুরু হওয়ার আগেই কুমিল্লার গোমতী নদীর পানি অস্বাভাবিকভাবে কমে গেছে। এতে বিপাকে পড়েছেন গোমতীর দুপাড় ও চরাঞ্চলের হাজারও কৃষক। হাজার হাজার একর আবাদি জমিতে নানা প্রকার শীতকালীন সবজি, ভুট্টা, আখ ও ধানের চাষ হলেও সেচ ব্যবস্থার ওপর ভরসা করা কৃষকদের সামনে দেখা দিয়েছে সংকট।

গোমতীর দুই পাড়ে বিশাল চরজমি এখন অনেক জায়গায় শুকনো বালুচরে পরিণত হয়েছে। যে জমিতে শীতকালীন সবজি চাষে কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে, সে জমিই এখন আতঙ্কের কারণ। কৃষকরা বলছেন, প্রতি বছর শীতের দিকে পানি কমলেও এবার অস্বাভাবিকভাবে আগেই পানি নেমে যাচ্ছে। এমনভাবে পানি শুকাতে থাকলে অচিরেই সেচযন্ত্র বসানোই অসম্ভব হয়ে পড়বে। এতে বহু জমি অনাবাদি থেকে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, চরাঞ্চলের জমিতে এ বছর ফলন ভালো হলেও নদীর পানির হঠাৎ সংকট যেন কৃষকদের দোরগোড়ায় নতুন দুর্ভাগ্যের বার্তা নিয়ে এসেছে। বিগত বছরগুলোতে এ সময় গোমতীতে টইটম্বুর পানি থাকলেও এখন নদীর বুকে দেখা দিচ্ছে খরা আর চরভূমির উত্থান।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারতের উজানে বাঁধ ও স্লুইচগেট বন্ধ রাখা, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব, অনিয়মিত বৃষ্টি এবং নদীর প্রবাহে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হওয়ায় এ সংকট তৈরি হয়েছে। নাব্যতা কমে যাওয়ায় নদী দীর্ঘসময় পানি ধারণ ক্ষমতা হারিয়ে ফেলছে। ফলে দক্ষিণাঞ্চলের কৃষি ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে।

গোমতীনির্ভর সেচব্যবস্থার ওপর পুরো কুমিল্লা অঞ্চলের কৃষি উৎপাদন টিকে আছে। পানি না থাকলে শাক-সবজির ফলন কমে যেতে পারে, ব্যাহত হতে পারে রবি মৌসুমের পুরো ফসল চক্র। প্রয়োজনে বিকল্প সেচের বিষয়ে পরামর্শ দেওয়া যেতে পারে- তবে এ সম্পর্কে স্থানীয় কৃষকরা চায় সরকারি দিকনির্দেশনা।

কৃষকদের সমস্যার কথা জানতে কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার আমতলী এলাকার কৃষক মো. শাহআলমের কাছে গেলে তিনি বলেন, দুইশত শতক জমিতে সবজি চাষ করেছি। এবার পানি আগেভাগেই অস্বাভাবিকভাবে কমে গেছে। শুধু আমতলী চরেই কয়েক একর সবজি চাষ হয়। নদীতে পানি না থাকলে এসব জমিতে চাষ করা সম্ভব না। সরকারের এখনই ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

বুড়িচং উপজেলার বাবুবাজার শিমাইশখাড়া গ্রামের কৃষক মফিজুল ইসলাম বলেন, চরে টমেটো আর ফুলকপি করছি। পানি না থাকলে এসব ফসল বাঁচানো যাবে না।

আদর্শ সদর উপজেলার সুবর্ণপুর এলাকার কৃষক আবু সাঈদ বলেন, গোমতীর পানি ছাড়া সবজি উৎপাদন অসম্ভব। নদীতে পানি রাখার ব্যবস্থা সরকার না করলে আমরা অনেক বিপদে পড়ে যাব। ভারতে বর্ষায় পানি ছাড়ে, শুকনো মৌসুমে আটকে রাখে- এটা কোনো নিয়ম হতে পারে না।

পাঁচথুবী ইউনিয়নের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা নাজমুল হাসান বলেন, এবার নদীতে পানি অনেক কম। গোমতীর পানি ছাড়া শীতকালীন ফসল উৎপাদন কঠিন হয়ে যাবে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. মিজানুর রহমান জানান, ৯৭ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে গোমতী নদী কুমিল্লার সাতটি উপজেলা দিয়ে প্রবাহিত হয়ে মেঘনায় মিশেছে। শীতে গোমতীর পানি কমে যাওয়া স্বাভাবিক, তবে এবার পরিস্থিতি বেশি খারাপ। বিকল্প হিসেবে টিউবওয়েল আছে, তবে ভারতের সঙ্গে পানি নিশ্চয়তার বিষয়ে আলোচনা জরুরি।

কুমিল্লা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ রাশেদ শাহরিয়ার বলেন, ভারতের ভেতরে ডাম্বুর বাঁধ বন্ধ করে দেওয়ায় পানি কমে গেছে। অনেকে নিজস্ব ব্যবস্থায় সেচ নিয়ে থাকেন; কৃষকদের বিকল্প পদ্ধতির বিষয়ে কৃষি অফিস পরামর্শ দেবে।

শীতের আগেই গোমতী নদীতে এমন পানি সংকট কুমিল্লার কৃষির ভবিষ্যৎ নিয়ে গভীর প্রশ্ন তৈরি করেছে। এখনই কার্যকর উদ্যোগ না নিলে সেচ সংকটের কারণে ফসল উৎপাদন কমে যাওয়ার শঙ্কা প্রকট আকার ধারণ করতে পারে- এমনটাই মনে করছেন পরিবেশ, কৃষি ও পানি বিশেষজ্ঞরা।


নওগাঁয় দাম কমে হতাশ কৃষক

আমন ধান কাটা-মাড়াই শুরু
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নওগাঁ প্রতিনিধি

নওগাঁয় আমন ধান কাটা-মাড়াইয়ে ব্যস্ত সময় পার করছে কৃষক। তবে পোকার উপদ্রব ও নভেম্বরের বৃষ্টিতে মাটিতে ধান শুয়ে পড়ায় ফলন কম হচ্ছে। এছাড়া শ্রমিক সংকটে বাড়তি মজুরি ও ধানের দাম কম হওয়ায় উৎপাদন খচর ওঠা নিয়ে শঙ্কায় কৃষক।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে- জেলায় ১ লাখ ৯৬ হাজার ১৪১ হেক্টর জমিতে আমন ধানের আবাদ করা হয়েছিল। যা থেকে ৯ লাখ ৮৫ হাজার ৭৩০ টন ধান উৎপাদনের আশা। তবে নভেম্বরের বৃষ্টিতে অন্তত ২ হাজার ৮৬১ হেক্টর আবাদ নষ্ট হয়। যা থেকে প্রায় ১০ হাজার টনের বেশি ধান উৎপাদন হতো।

চারিদিকে সোনালি রঙের নতুন আমন ধানের মৌ মৌ ঘ্রাণ। বাতাসে দোল খাচ্ছে কৃষকের স্বপ্ন। অবারিত প্রান্তরে শস্যের দোলা হাসি ফোটায় কৃষকের মুখে। উত্তরের জেলায় নওগাঁর মাঠে মাঠে আমন ধান কাটা ও মাড়াইয়ের ব্যস্ত সময় পার করছে কৃষক। কাস্তে হাতে ধান কাটছে কৃষক। আর পেছনে শালিক পাখি ঝাঁক বেঁধে খুঁজছে আহার। নতুন ফসল ঘরে তুলতে কৃষকদের আনন্দের বদলে মলিন মুখ।

কৃষকরা জানান- গত বছরের তুলনায় এ বছর ধানের আবাদে সার-কীটনাশক ও শ্রমিকের দাম বেড়ে যাওয়ায় বিঘাতে ২-৩ হাজার টাকা বাড়তি খরচ হয়েছে। ধানে মাজরা পোকার আক্রমণ ঠেকাতে বাড়তি কীটনাশক-স্প্রে করতে হয়েছে। এছাড়া বৃষ্টিতে ধান মাটিতে পড়ে যাওয়ায় ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে বিঘাতে ফলন কমেছে ৪-৫ মণ। এতে বিঘাতে খরচ পড়েছে অন্তত ১৫ হাজার টাকা।

সোমবার সকালে জেলার মহাদেবপু উপজেলার চকগৌরি সাপ্তাহিক হাটবার। সপ্তাহের ব্যবধানে এ হাটে মণে ৭০ টাকা পর্যন্ত কমেছে দাম। তবে দুই সপ্তাহের ব্যবধানে মণে অন্তত ১০০ টাকা কমেছে। এদিন হাটে আমন ব্রি-৭৫ ধান ১ হাজার ৫০ টাকা মণ, স্বর্ণা-৫ ধান ১ হাজার ১৩০ টাকা থেকে ১ হাজার ১৫০ টাকা, ব্রি-৪৯ ধান ১ হাজার ২০০ টাকা থেকে ১ হাজার ২৫০ টাকা এবং ব্রি-৯০ ধান ২ হাজার ২০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হয়। তবে বোরো মৌসুমের পুরোনো ধান সুবর্ণলতা ১ হাজার ৪০০ টাকা এবং কাটারিভোগ ও জিরাশাইল ধান ১ হাজার ৬৫০ টাকা মণ দরে বিক্রি হয়।

হাটে ধান বিক্রি করতে আসা সদর উপজেলার মল্লিকপুর গ্রামের কৃষক আলামিন বলেন, ‘১৪ বিঘা জমিতে স্বর্ণা-৫ ধানের আবাদ করা হয়। প্রতি বিঘায় গড় ফলন হয়েছে ২০ মণ। বিঘাতে খরচ পড়েছে প্রায় ১৫ হাজার টাকা। ২৩ মণ ধান ১ হাজার ১৪০ টাকা মণ দরে বিক্রি করা হয়েছে। এ দামে ধান বিক্রি করে বিঘায় ৬-৮ হাজার টাকা লাভ দিয়ে কোনো সুবিধা হবে না। অন্তত ১ হাজার ৪০০ টাকা মণ হলে খরচ বাদে কিছুটা লাভ থাকবে।’

জেলার মহাদেবপুর উপজেলার হোসেনপুর গ্রামের কৃষক ফেরদৌস আলম বলেন, ‘এ বছর ৩ বিঘা জমিতে স্বর্ণা-৫ ধানের আবাদ করা হয়। শুরুতে আবাদ ভালো হয়েছিল। তবে নভেম্বরের বৃষ্টিতে ১০ কাঠা জমির ধান পুরোটা নষ্ট হয়ে যায়। এতে অন্তত ১২ হাজার টাকার ক্ষতি হয়। অর্থনৈতিক দিক দিয়ে লোকসানে পড়তে হয়েছে।’

একই উপজেলার আখেড়া গ্রামের কৃষক প্রদীপ কুমার বলেন, ‘ধানে প্রচুর পোকার উপদ্রব হয়েছে। গত বছরের তুলনায় ৩-বার বাড়তি কীটনাশক-স্প্রে করতে হয়েছে। এতে বিঘায় ৫০০ টাকার কীটনাশক-স্প্রে করতে হয়েছে। ধানে পোকার উপদ্রব হওয়ায় ফলনের পরিমাণ কম হবে।’

মান্দা উপজেলার মৈনম গ্রামের কৃষক আফসার আলী বলেন, ‘এক বিঘা জমিতে স্বর্ণা-৫ ধানের আবাদ করেছিলাম। বৃষ্টিতে পাকা ধান মাটিতে শুয়ে পড়ে। এদিকে শ্রমিক সংকট হওয়ায় মজুরিও বাড়তি। তাই নিজেই ধান কাটতে হয়েছে। ধান মাটিতে পড়ে যাওয়ায় কাটতে সময় বেশি লেগেছে এবং ফলন পেয়েছি ১৬ মণ। ধান খাড়া থাকলে ফলন আরও বেশি হতো।’

নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক হোমায়রা মণ্ডল বলেন, ‘বৃষ্টিতে ধানের কিছুটা ক্ষতি হলেও পোকার উপদ্রব কমেছে। এ বছর ৯ লাখ ৮৫ হাজার টনের বেশি ধান উৎপাদন হবে। ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হলেও লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে প্রভাব পড়বে না।’


রাজবাড়ী আ. লীগের সাধারণ সম্পাদকসহ পরিবারের সম্পত্তি ক্রোকের আদেশ

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
রাজবাড়ী প্রতিনিধি

রাজবাড়ী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী ইরাদত আলী এবং স্ত্রী, পুত্র, কন্যা ও জামাতাসহ পরিবারের ৫ সদস্যের অবৈধভাবে অর্জিত ৬৫ কোটি ৬৫ লাখ ৫৫ হাজার ৮৬৩ টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি ক্রোকের আদেশ দিয়েছে রাজবাড়ীর বিশেষ জজ আদালত।

সোমবার দুপুরে রাজবাড়ী জজ আদালত প্রাঙ্গণে এক প্রেসব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান দুদক পিপি বিজন কুমার বোস।

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ফরিদপুর জেলা কার্যালয়ের পক্ষে পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) বিজন কুমার বোসের পক্ষে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে রাজবাড়ীর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মো. আনিসুর রহমান এ আদেশ দেন। এর আগে দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়, ফরিদপুরের সহকারী পরিচালক মোস্তাফিজ মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে কাজী ইরাদত আলীসহ তার পরিবারের সদস্যদের অনুসন্ধান শুরু করে। প্রাথমিক অনুসন্ধানে কাজী ইরাদত আলী, স্ত্রী রাবেয়া পারভীন, পুত্র কাজী রাকিবুল ইসলাম শান্তনু, কন্যা কাজী সিরাজুম মনিরা ও জামাতা মো. নুরুল ইসলামের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে ৬৫ কোটি ৬৫ লাখ ৫৫ হাজার ৮৬৩ টাকার সম্পদ অর্জনের তথ্য পায় দুদক। অবৈধভাবে অর্জিত সম্পদের মধ্যে রাজবাড়ী গোল্ডেশিয়া জুট মিল, পেট্রোল পাম্প, রাজধানী ঢাকার বসুন্ধরা এলাকায় বহুতল ভবনসহ বিভিন্ন সম্পদ রয়েছে বলে জানা গেছে।

দুদকের অনুসন্ধান কর্মকর্তার প্রাথমিক অনুসন্ধানে কাজী ইরাদত আলী সহপরিবারের সদস্যদের নামে অবৈধ সম্পদ হস্তান্তর করে অপরাধলব্ধ আয়ের অবৈধ প্রকৃতি, উৎস, অবস্থান, মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণ গোপনের উদ্দেশ্যে স্থানান্তর বা রূপান্তর বা হস্তান্তর করে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন,২০১২-এর শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন মর্মে প্রতীয়মান হয়। আরও উল্লেখ করা হয়েছে দুদকের অনুসন্ধান শুরুর পর থেকে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা তাদের নামে উপায়ে অর্জিত ব্যাংক হিসাবগুলো নগদায়ন করার চেষ্টা করছেন ও স্থাবর সম্পদ হস্তান্তরের চেষ্টা করছেন মর্মে বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেছে, কাজী ইরাদত আলীর নিজ নামে ঢাকা ও রাজবাড়ীর ১০টি হিসাবে ১ কোটি ৬৫ লাখ ৮৭ হাজার ৮২২ টাকা, স্ত্রী রাবেয়া পারভীনের ৭টি ব্যাংক হিসাবে ১ কোটি ২৮ লাখ ৪২ হাজার ৪৯৪ টাকা, পুত্র জেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক কাজী রাকিবুল ইসলাম শান্তনুর ১৩টি ব্যাংক হিসাবে ৪৬ লাখ ৬৫ হাজার ২১৮ টাকা, পুত্রবধূ আফসানা নওমী তাকিনার ৮টি হিসাবে ১১ আখ ১১ হাজার ১১১ টাকা, কন্যা কাজী সিরাজুম মুনিরার ১১টি ব্যাংক হিসাবে ২ কোটি ৩ লাখ ৮১ হাজার ২১২ টাকা এবং জামাতা নুরুল ইসলামের ১০টি ব্যাংক হিসাবে ১ কোটি ৯০ লাখ ৩৩ হাজার ৫৭৫ টাকা গচ্ছিত রয়েছে।

এছাড়া কাজী ইরাদত আলীর পারিবারিক ডেভেলপার কোম্পানি মিডল্যান্ড লিমিটেডের নামে ৬টি ব্যাংকে ২ কোটি ৮ লাখ ৯১ হাজার ৬৭৫ টাকা, ব্যবসায়িক হিসাবে ১০ লাক ৩৭ হাজার ১৩৯ টাকা, পরিবারের সদস্যদের নামে বিভিন্ন মেয়াদে ১ কোটি ৪৭ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র, পরিবারের সদস্যদের নামে ২ কোটি ২০ লাখ ৭৮ হাজার টাকা মূল্যের ৭টি গাড়ি রয়েছে।

দুদকের অনুসন্ধানে কাজী ইরাদত আলী ও তার স্বার্থসংশ্লিষ্টদের নামে স্থাবর সম্পদের মধ্যে ভূমি, দালান, ফিলিং স্টেশনসহ ৫২ কোটি ৩৩ লাখ ২৭ হাজার ৫৫৭ টাকার সম্পদের উল্লেখ করা হয়েছে।


ওয়াহিদা বেগমের হাত ধরে এগিয়ে যাচ্ছে রাকাব

*অসততা, দুর্নীতির প্রতি জিরো টলারেন্স *গেল জুলাই থেকে ২০ নভেম্বর পর্যন্ত ১,৬২৩ কোটি ঋণ বিতরণ *আগামী জুন পর্যন্ত আরও ৩,০০০ কোটি টাকা বিতরণের লক্ষ্য
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
আমিনুল ইসলাম বনি, রাজশাহী

রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকে এগিয়ে নিতে কাজ করছেন রাকাবের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ওয়াহিদা বেগম। তার হাত ধরে পুরোনো কালিমা মুছে নতুন উদ্যোমে চলছে প্রকৃত প্রান্তিক কৃষকের মধ্যে ঋণ বিতরণের কার্যক্রম। ইতোমধ্যে চলতি বছরের জুলাই থেকে গত ২০ নভেম্বর পর্যন্ত ১,৬২৩ কোটি টাকা কৃষি ও পল্লী ঋণ, সিএমএসএমই এবং অন্য খাতে ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া আগামী বছরের জুন পর্যন্ত এ খাতে আরও ৩,০০০ কোটি টাকা বিতরণের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

ওয়াহিদা বেগম যোগদানের পর থেকে অসততা, দুর্নীতির প্রতি জিরো টলারেন্স নীতি নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। ইতোমধ্যে ব্যাংকের কাজে গতি আনয়ন, প্রত্যেক কর্মকর্তাকে দক্ষ করে গড়ে তোলা এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনার আলোকে তিন বছর এবং তদূর্ধ্ব সময়ে একই স্থানে কর্মরত কর্মকর্তাকে অন্য কর্মস্থলে বদলি করেছেন।

পুরোনো অনৈতিক সুবিধা না পেয়ে সেই স্বার্থান্বেষী মহল রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের (রাকাব) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ওয়াহিদা বেগমের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র ও অপপ্রচারের চালাচ্ছে। তার পূর্বের কর্মস্থল ও রাজনৈতিক ট্যাগ ব্যবহার করে একটি মহল তাকে হয়রানি করার চেষ্টা করছে বলে দাবি করেছেন ব্যাংকের একাধিক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা। এ ঘটনায় রাকাবের সাধারণ কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মাঝে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

স্থানীয় ও ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, ওয়াহিদা বেগমের পূর্বের কর্মস্থল অগ্রণী ব্যাংক পিএলসিকে কেন্দ্র করে একটি মহল ‘ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করছে’।

সূত্র জানায়, অগ্রণী ব্যাংকে তিনি দায়িত্বে না থাকার পরেও ব্যাংকের সূত্র ধরে পূর্বে তার নামে একটি মামলা দায়ের হয়। ওই মামলায় আদালত তাকে তিন মাসের সাজা প্রদান করলেও পরবর্তীতে রাষ্ট্রপক্ষ বিষয়টি পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণের জন্য মামলার স্থগিতাদেশ দেন।

বর্তমানে মামলাটি শুনানির জন্য উচ্চ আদালতের আদেশের অপেক্ষায় রয়েছে। এ আবস্থায়, আইনি প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার আগেই একটি পক্ষ ভুল তথ্য দিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও বিভিন্ন পরিসরে অপপ্রচার চালাচ্ছে। রাকাবের একাধিক কর্মকর্তার দাবি, একটি স্বার্থান্বেষী মহল অনৈতিক সুবিধা না পেয়ে এই নোংরা খেলায় মেতে উঠেছে।

ব্যাংকের একাধিক ক্লিন ইমেজের কর্মকর্তা জানান, এমডি হিসেবে যোগদানের পর থেকে তিনি সুনামের সঙ্গে কাজ করছেন। তাকে সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন করতেই এমন গুজব ছড়ানো হচ্ছে।

এদিকে রাকাব এমডি হিসেবে ওয়াহিদা বেগমের নিয়োগ চ্যালেঞ্জ করে গত ১৮ নভেম্বর উচ্চ আদালতে একটি রিট পিটিশন করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগের (বিআরপিডি) ২০২৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারির সার্কুলার অনুযায়ী তার নিয়োগ কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন আদালত। একইসঙ্গে তিন সপ্তাহের মধ্যে এর জবাব দিতে বলা হয়েছে।

এর আগে, গত ২২ অক্টোবর রাকাবের সহকারী মহাব্যবস্থাপক আব্দুল মালেক এমডির বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ এনে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ও অর্থ সচিব বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন।

আব্দুল মালেকের অভিযোগের বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিবের ঘনিষ্ঠ এক সূত্র জানান, এমন অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই। সরকার ব্যক্তিগত আক্রমণ বা ভিত্তিহীন অভিযোগ নিয়ে সময় নষ্ট করে না।

অন্যদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘রাকাবের এমডিকে সাজাপ্রাপ্ত আসামি এবং স্বৈরাচারের দোসর হিসেবে উল্লেখ করে যে ভাষায় অভিযোগ করা হয়েছে, তা সত্যিই দুঃখজনক। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি পদোন্নতি পেয়ে রাকাবে যোগদানের পর তার বিরুদ্ধে কোনো আর্থিক কেলেঙ্কারি বা অনিয়মের অভিযোগ আমাদের কাছে আসেনি।

অগ্রণী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের একজন ডিজিএম জানান, সেখানে উপব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পালনকালে ওয়াহিদা বেগম অত্যন্ত সুনামের সঙ্গে কাজ করেছেন।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের (রাকাব) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওয়াহিদা বেগম বলেন, আমরা সর্বদা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। একটি পক্ষ আদালতে মামলা করেছে এবং আদালত একটি নির্দেশনা দিয়েছেন। আমিও আইনি প্রক্রিয়া গ্রহণ করেছি। বিশ্বাস করি, খুব শিগগিরই এর একটি সমাধান মিলবে।


বেগম খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় দোয়া, আলোচনা

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
ভৈরব (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি

বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় দোয়া ও আলোচনা সভা হয়েছে। সোমবার দুপুরে ভৈরব প্রেসক্লাবের আয়োজনে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল হয়েছে।

আলোচনা সভার প্রধান অতিথি ছিলেন, উপজেলা বিএনপির সভাপতি মো. রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, বিগত সরকার ১৭ বছর শাসনামলে আপসহীন দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অনেক ষড়যন্ত্র করেছে তাকে রাজনীতি থেকে সরাতে। শুধু তাই নয় তার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে জেলে নিয়ে স্লো-পয়জন দিয়ে তাকে মেরে ফেলার চেষ্টা করেছে। স্লো- পয়জন শরীরে ঢুকে তার শরীরে বিভিন্ন রোগ বাসা বেঁধেছে। আজ তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাই তার সুস্থতার জন্য তিনি দেশবাসী সবার কাছে দোয়া প্রার্থনা করেছেন। আলোচনা সভা শেষে খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় দোয়া ও মিলাদ মাহফিল হয়েছে।

আলোচনা সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন, প্রেসক্লাব সদস্য সচিব মো. সোহেলুর রহমান। অনুষ্ঠানে প্রেসক্লাব সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান আমিনের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন, উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি মারুকী শাহীন, সাংগঠনিক সম্পাদক ভিপি সাইফুল ইসলাম, পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ভিপি মুজিবুর রহমান, যুবদল সভাপতি আল মামুন, ভৈরব চেম্বার অব কমার্স সভাপতি জাহিদুল হক জাবেদ, পৌর যুবদল সভাপতি হানিফ মাহমুদ, উপজলা শ্রমিক দল সভাপতি মো. আদিলুজ্জামান প্রমুখ।


বাংলাদেশ অর্থোপেডিক সোসাইটির ৩৮তম বার্ষিক বৈজ্ঞানিক সম্মেলন ২০২৫ অনুষ্ঠিত

স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে কল্যাণমুখী রূপান্তরে কাজ করছে সরকার: অধ্যাপক ডা. মোঃ সায়েদুর রহমান
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশ অর্থোপেডিক সোসাইটির ২ দিনব্যাপী ৩৮তম বার্ষিক বৈজ্ঞানিক সম্মেলন (এ্যানুয়াল সাইন্টিফিক কংগ্রেস) ২০২৫ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ৩০ নভেম্বর ২০২৫ইং তারিখ সন্ধ্যায় রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নিযুক্ত মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (প্রতিমন্ত্রী পদ মর্যাদা) অধ্যাপক ডা. মোঃ সায়েদুর রহমান।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক ডা. মোঃ সায়েদুর রহমান বলেন, দেশের ১৮ কোটি মানুষ চিকিৎসাসেবা প্রাপ্তির জন্য দেশের চিকিৎসকদের প্রতি তাকিয়ে থাকেন। দেশের জনগণ ও রোগীদের প্রত্যাশা পূরণের লক্ষ্যে সরকার সমগ্র স্বাস্থ্যবস্থাকে কল্যাণমুখী রূপান্তরে কাজ করছে। যার লক্ষ্য দেশের সকল মানুষ যেনো তার প্রয়োজন অনুযায়ী চিকিৎসাসেবা পান। বর্তমান স্বাস্থ্যব্যবস্থা দেশের সকল জনগণ ও রোগীর ন্যায্যতা নিশ্চিত করছে না। তাই সেদিকে সরকার যেমন নজর দিয়েছে, চিকিৎসকদেরও এ বিষয়ে চিন্তা-ভাবনার দায় রয়েছে। কি করলে স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থায় রোগীদের চাহিদা পূরণ হবে সেটা তো আর সাধারণ মানুষ, রোগীরা করতে পারবেন না। নীতিনির্ধারকদের উপর প্রভাব ফেলাসহ এই বিষয়ে করণীয় নির্ধারণে অবদান রাখতে পারবেন বিজ্ঞজনেরা, সম্মিলিতভাবে চিকিৎসকরা। একটি আইসিইউ প্রাপ্তির জন্য, রেডিওথেরাপি সেবা প্রাপ্তির জন্য, সঠিক চিকিৎসাসেবা প্রাপ্তির জন্য, প্রয়োজনীয় ওষুধের জন্য রোগীদের কত অপেক্ষা, কত হাহাকার সেটা চিকিৎসকদেরই অনুধাবন করতে হবে। সাধারণ রোগীদের জন্য, দরিদ্র মানুষের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিতকরণে কি কি করা যায় সে বিষয়ে আমাদের সকলেরই বিশেষ করে চিকিৎসকদের দায় রয়েছে। যা আমি একজন চিকিৎসক হিসেবে অনুধাবন করি। তিনি তার বক্তব্যে স্বাস্থ্যসেবা যেনো বাণিজ্যের কাছে আত্মসমর্পণ না করে সেদিকেও দৃষ্টি দেয়ার আহ্বান জানান। এছাড়া তিনি তার বক্তব্যে জুলাই আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসায় অবদান রাখার জন্য দেশের অর্থোপেডিক সার্জনবৃন্দ ও চক্ষু রোগ চিকিৎসকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ অর্থোপেডিক সোসাইটির মেম্বার সেক্রেটারি (সদস্য সচিব) ডা. এরফানুল সিদ্দিকী বলেন, বাংলাদেশ অর্থোপেডিক সোসাইটি কনফারেন্স ২০২৫-এ ফ্যাকাল্টি, সিনিয়র ও তরুণ সার্জনবৃন্দ, ১৪ জন বিদেশি বিশেষজ্ঞসহ মোট ১ হাজার ৫ শত ৭৫ জন অংশগ্রহণ করেছেন। সম্মেলনে ২০২টি বৈজ্ঞানিক পেপার উপস্থাপন করা হয়, ৩০টি উচ্চমানের বৈজ্ঞানিক সেশন অনুষ্ঠিত হয়। এই সম্মেলনটি দেশের অর্থোপেডিক অঙ্গনে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হয়ে উঠেছে। গুরুত্বপূর্ণ এই কনফারেন্সের মূল লক্ষ্য হলো এমন একটি জ্ঞান বিনিময়ের প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা, যেখানে উদ্ভাবন ও অভিজ্ঞতার মিলন ঘটবে, আন্তর্জাতিক অগ্রগতি বাংলাদেশের স্থানীয় প্রেক্ষাপটের সঙ্গে সংযুক্ত হবে এবং যেখানে নতুন ধারণা বাস্তব চর্চায় রূপ নেবে। অস্থি-সংক্রান্ত চিকিৎসা বিজ্ঞানে প্রতিনিয়ত অগ্রগতি হচ্ছে- ট্রমা কেয়ার, আর্থ্রোপ্লাস্টি, স্পাইন সার্জারি, অঙ্কোলজি, স্পোর্টস মেডিসিন, পেডিয়াট্রিক অর্থোপেডিকস এবং রিহ্যাবিলিটেশনের উন্নতি প্রতিদিনের চিকিৎসা পদ্ধতিকে বদলে দিচ্ছে। তাই বাংলাদেশকে এই বৈশ্বিক অগ্রগতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার সক্ষমতা আরও শক্তিশালী করতে হবে। সে ক্ষেত্রে এই সম্মেলন অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ডা. এরফানুল সিদ্দিকী বলেন, বাংলাদেশের অর্থোপেডিক সার্জনদের জন্য এই সম্মেলন অসাধারণ শিক্ষামূলক সুযোগ এনে দিয়েছে। আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের অভিজ্ঞতা, গবেষণা উপস্থাপন, আধুনিক সার্জিকাল কৌশল এবং আন্তঃক্রিয়ামূলক আলোচনার মাধ্যমে অংশগ্রহণকারীরা তাদের ক্লিনিক্যাল জ্ঞান, সার্জিকাল দক্ষতা এবং ডিসিশন মেকিং আরও উন্নত করতে পারবেন। একই সঙ্গে সহযোগিতা, পরামর্শ এবং দীর্ঘমেয়াদি একাডেমিক সম্পর্ক গড়ে তোলার সুযোগও তৈরি হবে। একই সাথে এই সম্মেলনের প্রকৃত উপকারভোগী হবেন বাংলাদেশের রোগীরা। উন্নত সার্জিক্যাল পদ্ধতি, উন্নত পেরি-অপারেটিভ কেয়ার এবং চিকিৎসা পরবর্তী পুনর্বাসন সমস্যার গভীরতর বোঝাপড়া রোগীদের আরও নিরাপদ, কার্যকর এবং মানবিক সেবা নিশ্চিত করবে। রোগীর দ্রুত আরোগ্য, কম জটিলতা এবং উন্নত ফাংশনাল আউটকামই এই সম্মেলনের চূড়ান্ত লক্ষ্য। তাই এই কনফারেন্স শুধু একটি একাডেমিক অনুষ্ঠান নয় বরং এটি উৎকর্ষের প্রতি একটি প্রতিশ্রুতি, অগ্রগতির উদযাপন এবং একটি সুস্থ বাংলাদেশের পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
কনফারেন্সে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সম্মানিত সচিব মোঃ সাইদুর রহমান, স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাজমুল হোসেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার, ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) এর সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন আল রশিদ, ন্যাশনাল ডক্টরস ফোরাম (এনডিএফ) এর প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ডা. মোঃ নজরুল ইসলাম, ড্যাব এর মহাসচিব ডা. মো. জহিরুল ইসলাম শাকিল। সভাপতিত্ব করেন নিটোর এর পরিচালক ও বাংলাদেশ অর্থোপেডিক সোসাইটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ডা. মোঃ আবুল কেনান। স্বাগত বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক ডা. ওয়াকিল আহমেদ, ডা. এরফানুল সিদ্দিকী, ডা. শাহ মোহাম্মদ আমান উল্লাহ। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন ডা. মিজানুর রহমান। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় বিএমইউ এর প্রক্টর অর্থোপেডিশিয়ান ডা. শেখ ফরহাদ প্রমুখসহ দেড় হাজারেরও বেশি অর্থোপেডিক সার্জনবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
কনফারেন্সে বিশেষ অতিথিগণ বলেন, বাংলাদেশে বিষয়ভিত্তিক যে কয়টি বিষয় চিকিৎসা বিজ্ঞানে অগ্রগতি লাভ করেছে তার মধ্যে অন্যতম হলো অর্থোপেডিক। দেশের মুক্তিযুদ্ধকালীন ও স্বাধীনতা পরবর্তী অনেক যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের সেবা দিয়েছেন দেশের অর্থোপেডিক সার্জনবৃন্দ। বর্তমান সময়েও অর্থোপেডিক চিকিৎসকগণ রোগীদের সেবায় অসামান্য অবদান রেখে চলছেন। বর্তমান ও আগামী দিনে দেশের রোগীদের প্রয়োজনেই অর্থোপেডিক বিষয়ের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধ নিশ্চিত করার মাধ্যমে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে হবে।


হশাআবিতে ০৪ জন ডমেস্টিক/অভ্যন্তরীণ যাত্রীর কাছ থেকে ফোন আটক

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স (BG-148) দুবাই-চট্টগ্রাম-ঢাকা ফ্লাইটে চট্টগ্রাম হয়ে ঢাকায় অবতরণ করলে বিমানবন্দর গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যের ভিত্তিতে বিমানবন্দর কাস্টমস এবং এ্যাভসেক এর বিমান বাহিনীর সদস্যগণ যৌথভাবে উক্ত ফ্লাইটের অভ্যন্তরের সকল যাত্রীদের বিশেষ নজরদারিতে রাখেন। গ্রীন চ্যানেল অতিক্রম করার সময় তল্লাশী করে ০৪ জন মহিলা যাত্রী, সামিয়া সুলতানা, শামিমা আক্তার, জয়নব বেগম এবং নুসরাত তাদের শরীরে বিশেষ কায়দায় লুকায়িত ভাবে রাখা ৩৫ টি আইফোন ১৭ প্র ম্যাক্স, ৫৫ টি আইফোন ফিফটিন এবং ১২ টি গুগল পিক্সেল ফোন সর্বমোট ১০২ টি মোবাইল ফোন পাওয়া যায়।

পরবর্তীতে উক্ত যাত্রীগণ ফোন সম্পর্কে কোন তথ্য না দিতে পারায় বিমানবন্দর কাস্টমস ৯৮ টি মোবাইল ফোন ডিএম করেন। যার আনুমানিক বাজার মূল্য সর্বমোট =১,৭৬,৪০,০০০/= (এক কোটি ছিয়াত্তর লক্ষ চল্লিশ হাজার টাকা)।

উল্লেখ্য যে, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে প্রতিনিয়ত চোরাকারবারিরা বিভিন্ন সময় স্বর্ণ, মোবাইল, সিগারেট পাচার করে থাকেন। যেসব বিমান দুবাই শারজাহ থেকে ঢাকায় আগমন করেন সেসব বিমানেই বেশী হয়ে থাকে। বিভিন্ন সময় বিমানবন্দরের কাষ্টমস ও অন্য সংস্থা কর্তৃক এদেরকে চেক দেওয়া হলে চোরাকারবারি তাদের কৌশল পরিবর্তন করেছে। দুবাই, শারজাহর যে সব বিমান চট্রগাম হয়ে আসে সেসব বিমানে চোরাকারবারিরা চট্রগাম থেকে তাদের নিজস্ব কিছু লোক ঢাকা আসার জন্য ওঠে এবং বিমানের মধ্যেই কৌশলে স্বর্ণ, মোবইল হস্তান্তর করেন।


শাহ মখদুম বিমানবন্দরে এয়ারপোর্ট সিকিউরিটি এক্সারসাইজ ২০২৫ অনুষ্ঠিত

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

শাহ মখদুম বিমানবন্দর, রাজশাহীতে এয়ারপোর্ট সিকিউরিটি এক্সারসাইজ ২০২৫ শীর্ষক একটি পূর্ণাঙ্গ নিরাপত্তা মহড়া অনুষ্ঠিত হয়।

ICAO Standards and Recommended Practices (SARPs) এবং National Civil Aviation Security Programme (NCASP) এর নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতিটি বিমানবন্দরে প্রতি দুই (০২) বছরের মধ্যে একবার Airport Security Exercise আয়োজন করা আবশ্যক। তারই ধারাবাহিকতায় হাইজ্যাক, বোমা হামলাসহ নানাবিধ ঝুঁকি মোকাবেলার সক্ষমতা যাচাই এবং অংশীজনদের প্রস্তুতি বৃদ্ধির লক্ষ্যেই এই মহড়ার আয়োজন করা হয়।

মহড়ার দৃশ্যপটে দেখা যায়, যশোর বিমানবন্দর থেকে একটি চার্টার্ড ফ্লাইট গলফ ফক্সট্রট আলফা ওয়ান টু থ্রি দুই জন যাত্রী নিয়ে শাহ মখদুম বিমানবন্দরের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছে। শাহ মখদুম বিমানবন্দরের কন্ট্রোল টাওয়ারে একটি অপরিচিত নাম্বার থেকে কল আসে এবং জানায় যে যশোর বিমানবন্দর থেকে ছেড়ে আসা চার্টার্ড ফ্লাইটটিতে একটি বোমা রাখা আছে এবং যেকোনো সময়ে এটি বিস্ফোরিত হতে পারে। কন্ট্রোল টাওয়ার তাৎক্ষণিকভাবে বিষয়টি বিমানবন্দর ব্যবস্থাপক ও সিকিউরিটি অফিসারকে জানালে বিমানবন্দর ব্যবস্থাপক রিস্ক এডভাইজরি গ্রুপ (RAG) কমিটির সাথে আলোচনা করে ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার Emergency Operations Center অ্যাক্টিভ করার নির্দেশ দেন। পরে সংশ্লিষ্ট সব সংস্থার মধ্যে সমন্বয়ের মাধ্যমে Emergency Responding Activities পরিচালনা করেন।

এ মহড়ায় অংশগ্রহণ করেন বেবিচক, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, র‍্যাব, রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ, এপিবিএন, আনসার, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ, ইসলামী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সসহ সংশ্লিষ্ট একাধিক সংস্থা।

বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) এর চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মোঃ মোস্তফা মাহমুদ সিদ্দিক, বিএসপি, জিইউপি, এনডিসি, এএফডব্লিউসি, এসিএসসি, পিএসসি (Air Vice Marshal Md Mostafa Mahmood Siddiq, BSP, GUP, ndc, afwc, acsc, psc) প্রধান অতিথি হিসেবে অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে কার্যক্রম প্রত্যক্ষ করেন। এছাড়া অনুষ্ঠানের চিফ কো-অর্ডিনেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন বেবিচকের সদস্য (নিরাপত্তা) এয়ার কমডোর মোঃ আসিফ ইকবাল, বিইউপি, এনডিসি, এএফডব্লিউসি, পিএসসি, জিডি(পি) (Air Commodore Md Asif Iqbal, BUP, ndc, afwc, psc, GD(P))। উক্ত অনুষ্ঠানের অনসীন কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন শাহ মখদুম বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক মোসাঃ দিলারা পারভীন (Mst. Dilara Pervin)।

শাহ মখদুম বিমানবন্দরে আয়োজিত “এয়ারপোর্ট সিকিউরিটি এক্সারসাইজ–২০২৫”-এ প্রধান অতিথি তাঁর বক্তব্যের শুরুতেই সকল অংশীজনকে মহড়ায় অংশগ্রহণের জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, এ ধরনের মহড়া শুধু দুর্বলতা শনাক্তের সুযোগই সৃষ্টি করে না, বরং বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে কার্যকর সমন্বয় বৃদ্ধি করে যাত্রীসেবায় আন্তর্জাতিক মান নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মহড়ার সফলতা সম্মিলিত প্রচেষ্টা ও দায়িত্বশীলতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত উল্লেখ করে প্রধান অতিথি বলেন এর মাধ্যমে যেকোনো অনভিপ্রেত পরিস্থিতি দ্রুত ও দক্ষতার সঙ্গে মোকাবিলা করা সম্ভব হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

মহড়ায় অংশগ্রহণকারী সকল সংস্থার প্রস্তুতি ও দক্ষতা প্রত্যক্ষ করে তিনি সন্তোষ প্রকাশ করেন এবং বলেন, প্রতিটি সংস্থা প্রশংসনীয় পারফরম্যান্স প্রদর্শন করেছে। সমাপনী বক্তব্যে প্রধান অতিথি জাতীয় স্বার্থে আরও আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করার আহ্বান জানান।

মহড়ায় উপস্থিত ছিলেন বেবিচকের সদস্য (প্রশাসন) এস এম লাবলুর রহমান (S M Lablur Rahman) ও সদস্য (অর্থ) মোহাম্মাদ নাজমুল হক (Mohammad Nazmul Haque)। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বেবিচকের কর্মকর্তাবৃন্দ, অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন সংস্থার ঊর্ধ্বতন প্রতিনিধিবৃন্দ এবং গণমাধ্যমের ব্যক্তিবর্গ।


বিনামূল্যের সার ও বীজ পেলেন ২৫০০ কৃষক

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
ঝিনাইদহ প্রতিনিধি

ঝিনাইদহ সদর উপজেলায় রবি মৌসুমকে সামনে রেখে ২৫০০ কৃষকের মাঝে বিনামূল্যে ধানের বীজ ও সার বিতরণ করা হয়েছে। ২০২৫-২৬ অর্থবছরে রবি মৌসুমে প্রণোদনা কর্মসূচীর আওতায় বোরো উফশী ও বোরো হাইব্রিড ধান এর আবাদ ও উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে এসব সার বীজ বিতরণ করা হয়। সোমবার সকাল ১০টায় ঝিনাইদহ সদর উপজেলা কৃষি অফিস চত্বরে এসব সার ও বীজ বিতরণ করা হয়। সার ও বীজ বিতরণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হোসনেআরা, সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. নূর এ নবী, অতিরিক্ত কৃষি কর্মকর্তা (সদর) জুনায়েদ হাবীব, সদর কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার মীর রাকিবুল ইসলাম।

কৃষি অফিস জানিয়েছে, আসন্ন রবি মৌসুমে উচ্চ ফলনশীল (উফশী) ও হাইব্রিড ধানের আবাদ ও উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে সদর উপজেলার মোট ২৫০০ কৃষককে বিনামূল্যে সার ও বীজ দেয়া হচ্ছে। এর মধ্যে দুই হাজার কৃষকের মাঝে জনপ্রতি ৫ কেজি বোরো (উফশী) ধানের বীজ ও ৫০০ কৃষকের মাঝে জনপ্রতি ২ কেজি হাইব্রিড ধানের বীজ বিতরণ করা হয়েছে।

এছাড়া উপকারভোগী প্রত্যেক কৃষককে ১০ কেজি এমওপি ও ১০ কেজি ডিএপি সার দেওয়া হয়েছে। সবমিলিয়ে মোট ১১ মেট্রিক টন ধানের বীজ ও ৪০ মেট্রিক টন সার বিনামূল্যে কৃষকদের মাঝে বিতরণ করা হয়।


banner close