পবিত্র ঈদুল আজহার ছুটিতে সারাদেশে যখন আনন্দমুখর পরিবেশ তখন বিপরীত চিত্র সিলেট বিভাগের চার জেলায়। এখানে ঈদে কোরবানি পালন হয়েছে ঠিকই কিন্তু, ঈদের দুই তিন দিন থেকে পাহাড়ি ঢল আর অতিবর্ষণে নদ-নদীর পানি বাড়তে থাকায় প্লাবিত হয়ে পড়ে নিম্নাঞ্চল। সেই পানি বাড়তে বাড়তে এখন টইটম্বুর হয়ে বিপৎসীমার ওপরে চলে গেছে শহরের সবচেয়ে বড় প্রতিবেশী সুরমা নদী। পুরো জেলায় শুকনো মাঠ খুঁজে পাওয়া এখন দায়। নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার পর ঈদের দিন থেকেই সিলেট শহরে ঢুকে গেছে বন্যার পানি। গত ২০ দিনের মধ্যে সিলেটে এটি দ্বিতীয় দফায় প্লাবিত হওয়ার ঘটনা।
সিলেট ব্যুরো প্রধান দেবাশীষ দেবু জানান, এদিকে সৃষ্ট বন্যায় ঝুঁকিতে পড়েছে সিলেটের দক্ষিণ সুরমার বরইকান্দি এলাকার বিদ্যুতের সাবস্টেশন। সুরমা নদী ছাপিয়ে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রে পানি প্রবেশ করতে শুরু করেছে। এটি প্লাবিত হলে দক্ষিণ সুরমার প্রায় ৫০ হাজার গ্রাহক বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়তে পারেন।
গত মঙ্গলবার বিকেল থেকে এই বিদ্যুৎকেন্দ্র রক্ষায় কাজ শুরু করেছে সেনাবাহিনী। তাদের সহায়তা করছে সিলেট সিটি করপোরেশন ও বিদ্যুৎ বিভাগ। নদীর পাড়ে বালির বস্তা ফেলে পানি আটকানোর চেষ্টা করছে তারা।
এদিকে, পানি বেড়ে যাওয়ায় সিলেটের প্রায় সব পর্যটন কেন্দ্র বন্ধ ঘোষণা করেছে জেলা প্রশাসন। এসব পর্যটন কেন্দ্রে পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত পর্যটকদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
ওইদিন বিকেলে সেনাবাহিনীর এক টিম নিয়ে সাব-স্টেশনটি পরিদর্শন করেছেন সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। এ সময় তিনি বলেন- এই সাব-স্টেশনে কোনো সমস্যা হলে চালু রাখতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালানো হবে। এ ছাড়া যাতে পানি না উঠে সে জন্যও কাজ করা হচ্ছে।
জানা গেছে, দক্ষিণ সুরমার বরইকান্দি উপ-কেন্দ্রটি সিলেটে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিউবো) বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ সিলেট-৩ এর অধীনস্থ। এই উপ-কেন্দ্রের মাধ্যমে সিলেট রেলওয়ে স্টেশন, বরইকান্দি, কামালবাজার, মাসুকগঞ্জ, বিসিক, লালাবাজার, শিববাড়ী ও কদমতলীর কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালসহ সংলগ্ন এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়।
বিউবো বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ সিলেট-৩ নির্বাহী প্রকৌশলী শ্যামল চন্দ্র সরকার বলেন, উপকেন্দ্রটি ঝুঁকিতে রয়েছে। পানি উঠার আশঙ্কা রয়েছে। তবে এখনো উঠেনি। আমাদের সার্বিক প্রস্তুতি রয়েছে। সেনাবাহিনীও সাহায্য করছে।
এর আগে ২০২২ সালের বন্যায়ও তলিয়ে গিয়েছিলো এ বিদ্যুৎকেন্দ্র।
উল্লেখ্য, ২০ দিনের মাথায় দ্বিতীয় দফা পানিতে ভাসছে সিলেট। সোমবার ঈদের দিন সকাল থেকে সিলেটের অধিকাংশ এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি দেখা দেয়।
সব পর্যটন কেন্দ্র বন্ধ
সিলেটের বেশির ভাগ পর্যটন কেন্দ্রের অবস্থান গোয়াইনঘাট উপজেলায়। এ উপজেলায় উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতি অবনতি ঘটায় জননিরাপত্তা বিবেচনায় জাফলং, জলারবন রাতারগুল, বিছনাকান্দি ও পান্থুমাই পর্যটন স্পট অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। পরবর্তী ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত এসব স্পটে পর্যটকরা আসতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন উপজেলা পর্যটন উন্নয়ন কমিটির আহবায়ক ও গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. তৌহিদুল ইসলাম।
এছাড়া কোম্পানীগঞ্জের সাদাপাথর পর্যটন কেন্দ্রেও পর্যটকদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
সিসিকের ছুটি বাতিল
বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় সিটি কর্পোরেশনের (সিসিক) সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি বাতিল করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সিসিকের জনসংযোগ কর্মকর্তা সাজলু লস্কর।
তিনি জানান, গত মঙ্গলবার দুপুর ১টায় দক্ষিণ সুরমায় সিটি করপোরেশনের ২৮ ও ২৯ নং ওয়ার্ডের আশ্রয়কেন্দ্রে যান সিসিক মেয়র। এ সময় তিনি বন্যা দুর্গতদের জন্য সিসিকের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
এরপর দক্ষিণ সুরমায় সিসিকের ২৬নং ওয়ার্ডের টেকনিক্যাল কলেজ রোডসহ কয়েকটি বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেন মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী।
সিলেট জেলায় আক্রান্ত প্রায় চার লাখ
সিলেটের জেলা প্রশাসন থেকে প্রেরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত জেলায় প্রায় ৩ লাখ ৭১ হাজার মানুষ বন্যায় আক্রান্ত হয়েছেন। ইতোমধ্যে জেলার কোম্পানীগঞ্জ, কানাইঘাট, গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর ও জকিগঞ্জ উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা তলিয়ে গেছে। বন্যার্তদের জন্য জেলায় ৬১৯টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তত রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান।
মৌলভীবাজারে ডুবল ৩৩২ গ্রাম, দুই লাখ মানুষ পানিবন্দি:
মৌলভীবাজার প্রতিনিধি জানান, গত কয়েকদিনে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ও ভারী বৃষ্টিপাতে সৃষ্ট বন্যায় মৌলভীবাজারের ছয় উপজেলার ৩৭ ইউনিয়নের ৩৩২টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে এক লাখ ৯৩ হাজার ৯৯০ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। ইতোমধ্যে বড়লেখা উপজেলার প্রশাসনের পক্ষ থেকে তালিমপুর ইউনিয়নের টেকাহালী উচ্চ বিদ্যালয় ও হাকালুকি উচ্চ বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা কয়েকটি পরিবারের মাঝে শুকনো খাবার ও স্যালাইন বিতরণ করা হয়েছে।
বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত উপজেলাগুলোর মধ্যে বড়লেখার ১০টি, জুড়ীর ছয়টি, কুলাউড়ার ছয়টি, সদরের চারটি ও রাজনগর উপজেলার ছয়টি ইউনিয়ন, শ্রীমঙ্গল পাঁচটি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়।
মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক উর্মি বিনতে সালাম বুধবার (১৯ জুন) সকালে জানিয়েছেন, জেলার ৬টি উপজেলায় মোট ৯৮টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এর মধ্যে ৫৭১টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছেন। ৫৬টি মেডিক্যাল টিম প্রস্তুত রয়েছে।
গত ২৪ ঘণ্টায় পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় পানিবন্দি লোকদের উদ্ধারের লক্ষ্যে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ হতে প্রয়োজনীয় তৎপরতা চালানো হচ্ছে। বন্যার সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য জেলা প্রশাসকের কার্যালয় এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয়গুলোতে কন্ট্রোলরুম স্থাপন করা হয়েছে। প্রতিটি ইউনিয়নে ট্যাগ কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছে। বন্যার্তদের স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের জন্য ইউনিয়নভিত্তিক মেডিক্যাল টিম গঠন করা হয়েছে।
সরকারি ও বেসরকারিভাবে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। বন্যার্তদের সার্বিক সহযোগিতা প্রদান ও উদ্ধার কার্যক্রম চালানোর লক্ষ্যে স্বেচ্ছাসেবক টিম (স্কাউট, রোভার স্কাউট, রেড ক্রিসেন্ট, যুব রেড ক্রিসেন্ট, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স) প্রস্তুত রাখা হয়েছে। পুরো জেলায় বন্যা পরিস্থিতির ওপর সতর্ক দৃষ্টি রাখা হচ্ছে।
মৌলভীবাজার পওর বিভাগ, বাপাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী জাবেদ ইকবাল জানান, বুধবার সকাল ৯টায় ধলাই নদী (রেলওয়ে ব্রিজ) এলাকায় পানি বিপদসীমার ২৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আর মনু নদী (চাঁদনীঘাট) এলাকায় পানি বিপৎসীমার আট সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে ও জুড়ী নদীর পানি বিপদসীমার ১৯৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কুশিয়ারা নদীর (শেরপুর) পানি বিপৎসীমার ১২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
কুলাউড়া প্রতিনিধি জানান, টানা বৃষ্টি ও উজানের ঢলে মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি রয়েছেন। গতকাল বুধবার দুপুরে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
ঈদের দিন ভোররাত থেকে শুরু হওয়া ভারি বর্ষণ এখন পর্যন্ত অব্যাহত আছে। পাহাড়ি ঢল ও তিন দিনের টানা বৃষ্টিতে উপজেলার ১টি পৌরসভাসহ ৬টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়ে লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি রয়েছেন। অনেক রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় যান চলাচলও বন্ধ রয়েছে। তিন দিনের টানা বৃষ্টিতে উপজেলা পরিষদ এলাকা, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, পৌর শহরের মাগুরা, সাদেকপুর, বিহালা, সোনাপুর, কাদিপুর ইউনিয়নের ছকাপন, মৈন্তাম, ভাগমতপুর, গুপ্তগ্রাম, তিলকপুর, ভূকশিমইল ইউনিয়নের সাদিপুর, কোরবানপুর, মুক্তাজিপুর, জাবদা, কালেশার, কাইরচক, চিলারকান্দি, কানেহাত, জয়চণ্ডী ইউনিয়নের ঘাগটিয়া, মিরবক্সপুর, কামারকান্দি, কুটাগাঁও, কুলাউড়া সদর ইউনিয়নের দেখিয়ারপুর, কুলাউড়া গ্রাম, বনগাঁও, গাজীপুর আংশিকসহ অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও প্লাবিত হয়েছে।
প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যালয় জানিয়েছে, বুধবার পর্যন্ত কুলাউড়ার ৬০টি গ্রাম ও এলাকা প্লাবিত। এসব গ্রাম ও এলাকার লক্ষাধিক মানুষ বন্যা আক্রান্ত। এ ছাড়া ২২টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এতে ১৯৭টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। বন্যার্তদের স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের জন্য ১৪টি মেডিকেল টিম গঠন করে কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।
এদিকে মঙ্গলবার দিনব্যাপী বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে খাবার বিতরণ করেন মৌলভীবাজার-২ আসনের সংসদ সদস্য শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, কুলাউড়া পৌরসভার মেয়র অধ্যক্ষ সিপার উদ্দিন আহমদ ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অর্থ ও পরিকল্পনাবিষয়ক উপকমিটির সদস্য, স্কোয়াড্রন লিডার (অব.) সাদরুল আহমেদ খান।
মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জাবেদ ইকবাল বলেন, জেলার সবগুলো নদীর পানি বিপৎসীমার উপরে প্রবাহিত হচ্ছে। বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হবে।
সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, সুনামগঞ্জ শহরে আশ্রয়কেন্দ্রে এসে খাবারের কষ্টে পড়েছেন সুনামগঞ্জের বন্যার্তরা। শিশুদের নিয়ে মায়েরাও রয়েছেন কষ্টে। ক্ষিদে সহ্য করতে না পেরে কান্নাকাটি করছে শিশুরা। বুধবার বেলা আড়াইটায় শহরের এইচএমপি উচ্চ বিদ্যালয়ের আশ্রয় কেন্দ্রে গিয়ে এই চিত্র দেখা গেছে।
সুনামগঞ্জ শহরের ময়নার পয়েন্টে ভাড়া বাসায় থাকেন আরিফুলন্নেছা। তিনি জানালেন, ঘরে কোমর সমান পানি। গত কয়েকদিন বন্যার জন্য তার গাড়ী চালক স্বামীর কোন রোজগার হয়নি। দুই দিন আগে এখানে এলেও তারা কোন সহায়তা পান নি। রান্না-বান্না করার সুযোগও নেই। কোন রকম দিন কাটছে তাদের। তিনি জানান, আজ সকালে একজন এসে পাউরুটি ও কলা দিয়েছে।
আরিফুলন্নেছার কথার সমর্থন জানালের পাশে থাকা তাসলিমা। এ সময় খাবারের জন্য ছোট্ট শিশু কান্না করায় শাসন করতে দেখা যায় তাসলিমাকে।
আশ্রয় কেন্দ্রে আসা মিনা লাল, রিতা লাল, সাম, রাবেয়া, সাজন বললেন, মঙ্গলবার থেকে আশ্রয় কেন্দ্রে আছি। কেউ আমাদের এখনও সাহায্য করেনি। হাতে টাকাও নেই, তাই কিছু কিনতেও পারছি না। বললেন, আপনারা দয়া করে কিছু করুন।
শান্তিবাগের বাসিন্দা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক (একজন নাইট ডিউটি করেন ও অন্যজন দিনমজুর) বললেন, ঘরে কোমর পানি। ঘরের জিনিসপত্র কিছু আসার সময় নিয়ে এসেছি, কিছু পাশের আরেক বাসায় রেখেছি। অন্যান্য সব কিছু পানির নীচে। বললেন, এখানে বাথরুম ও খাবার পানির সুবিধা থাকলেও খাবার কষ্টে আছি আমরা। সরকারি কোন ধরনের সহযোগিতা পাইনি। মঙ্গলবার রাতে আমরা আশ্রয় কেন্দ্রে এসেছি। আজ (বুধবার) সকালে এক বোতল পানি ও নাটি বিস্কুট দিয়ে গেছে একজন।
এদিকে তেঘরিয়ার বাসিন্দা পত্রিকা বিপণন কর্মী নুর হোসেন বললেন, তেঘরিয়া মসজিদে আশ্রয় নিয়েছি। আমাদের পাড়ার ২০ ঘর এখানে আশ্রয় নিয়েছে। এখন পর্যন্ত কেউ সহায়তা করেনি। তিনি বলেন, বন্যার পানির সঙ্গে ড্রেনের ময়লা-আবর্জনা ঘর-বাড়িতে গিয়ে ঢুকছে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী বললেন, ৫৪১ টি আশ্রয়কেন্দ্রে ওঠেছেন ১৮ হাজার ৪২৯ জন বন্যার্ত মানুষ। যারা আশ্রয় কন্দ্রে এসেছেন সকলেই খাবার নিয়ে উঠেছেন। যারা খাবার নিয়ে উঠেননি তারা চাইলেই শুকনো খাবারসহ খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।
চলছে অগ্রহায়ণ মাস, আমন ধান ঘরে তুলার সঠিক সময়। প্রতি বছর যখন এই মাসটি আসে তখন সারাদেশের ন্যায় মৌলভীবাজারে রোপা-আমন ধান কাটার ধুম পড়ে যায়। এবার তার ব্যতিক্রম হয়নি। জেলার বিস্তীর্ণ এলাকার আমন মাঠ এখন সোনালী রঙ ধারণ করেছে। তাইতো কৃষকেরা ধান কাটা ও মাড়াইয়ের মহোৎসব করছেন। কৃষিতে আধুনিক যন্ত্র ব্যবহারের ফলে কৃষকেরা মাঠেই ধান মাড়াইয়ের কাজ সারছেন। আবার গ্রামাঞ্চলের জমি থেকে পাকা ও আধা পাকা ধান চুরি হয়ে যাওয়ায় কৃষকরা রাত জেগে ধানক্ষেত পাহারা দিচ্ছেন। শুক্রবার সকালে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার আমন ফসলের মাঠ ঘুরে দেখা যায়, দিগন্ত বিস্তৃত ফসলের মাঠে সোনালী ধানের সমারোহ। বাতাসে দোল খাচ্ছে কৃষকের স্বপ্ন। চারিদিকে সোনালী রঙের নতুন আমন ধানের মৌ মৌ ঘ্রাণ। মাঠে মাঠে চলছে ধান কাটা ও মাড়াইয়ের ধুম। নবান্নের আনন্দে আমন ধান কাটা-মাড়াইয়ের ধুম চলছে জেলা জুড়ে। এখন মাঠের সোনালী ধান ঘরে তুলতে ব্যস্ত কৃষকরা। কয়েকমাস আগে যে স্বপ্ন বুনেছিল ধান ঘরে আসার সাথে সাথে সে স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। নানা ব্যস্ততায় বাড়ির উঠান ও কৃষি জমিতে ধান রেখে চলছে ধান মাড়াইয়ের মহোৎসব।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সুত্রে জানা যায়, জেলার সাত উপজেলায় ৯৮ হাজার ২০ হেক্টর জমিতে রোপা আমন আবাদ হয়েছে। সার্বিকভাবে বলা যায়, মৌলভীবাজারের আমন মৌসুম এবার কৃষকদের মাঝে নতুন আশা ও সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে বলে জানান জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরিচালক মো. জালাল উদ্দিন।
কৃষকরা জানান, ইরি মৌসুমে জমি থেকে ফসল কেটে সরাসরি বাড়ি নিয়ে এলেও আমন ধান কেটে সরাসরি বাড়ি নিয়ে আসেন না তারা। শুকানোর জন্য কাটা আমন ধান চার-পাঁচ দিন জমিতেই রেখে দেন। তারপর বাড়িতে নিয়ে আসেন। এ সুযোগে কৃষকদের জমিতে কেটে রাখা ধান এমনকি আধা পাকা ধানও কেটে নিয়ে যাচ্ছে চোরেরা।
ভূজবল এলাকার কৃষক কাইয়ুম আবেদীন জানান, ৯ বছর ধরে তিনি নিয়মিত খেত করছেন। এবার প্রায় ৪৫ কিয়ার জমিতে আমনের চাষ করেছেন। তিনি বলেন, প্রতি কিয়ারে ১৭ থেকে ১৮ মণ ধান আশা করছি। পোকা কিছুটা ছিল, ওষুধ দিয়েছি। তবে এবার ইঁদুরের উপদ্রব বেশি। তবে ঘূর্ণিঝড়ের কারণে কিছুটা ক্ষতি হয়েছে।
অন্যদিকে, সদর উপজেলার গয়ঘর গ্রামের আকরম মিয়া জানান, এ বছর তিনি শহরের নিখস্ত কাঞ্জা হাওরে ৫ কিয়ার জমি বর্গা নিয়েছিলেন। আকস্মিক ঘূর্ণিঝড়ে তার ৩ কিয়ারের ধান নষ্ট হয়ে গেছে। বাকি জমিতেও আশানুরূপ ফলন হয়নি। ঋণ করে চাষ করেছিলাম, এখন সেই টাকা ফেরত নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি, বলেন তিনি।
কমলগঞ্জের কৃষক সোলাইমান হোসেন বলেন, ‘প্রায় দুই একর জমিতে আমন ধান চাষ করেছি। ১৫০ মনের মতো ধান পেয়েছি। সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গেই ধানক্ষেত পাহারায় চলে যেতে হচ্ছে। পাঁচ-ছয় দিন ধরে জমিতে পাহারা দিচ্ছি। তিনি বলেন, এখানে ধান মাড়াইর পর খলা তৈরি করে ধান সিদ্ধ করে শুকাই। শুকানোর পর সেই ধানগুলো বাড়িতে নিয়ে যাই।’
মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরিচালক মো. জালাল উদ্দিন জানান, চলতি মৌসুমে ব্রি হাইব্রিড-৪, ব্রি হাইব্রিড-৬, তেজ গোল্ড, বিআর ১১, বিআর ২২, বিআর ২৩সহ বিভিন্ন উফশী জাতের ধান প্রত্যাশার চেয়েও বেশি ফলন দিয়েছে। জেলার সাত উপজেলায় মোট ৯৮ হাজার ২০ হেক্টর জমিতে রোপা আমন আবাদ হয়েছে।
১৫ হেক্টর জমিতে আমন চাষ হয়নি। চলতি মৌসুমে পরিমিত বৃষ্টি হওয়ায় ধানি জমিতে পানি থাকায় ধানের খাদ্যে ঘাটতি দেখা দেয়নি। এতে ফলন ভালো হয়েছে। ধানে চিটা হবে না। ফলন ভালো হওয়ায় ধান উৎপাদনের মাত্রা ঠিক থাকবে।
সার্বিকভাবে বলা যায়, মৌলভীবাজারের আমন মৌসুম এবার কৃষকদের মাঝে নতুন আশা ও সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে।। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে সব ধান কাটা শেষ হয়ে যাবে।’
কৃষি বিভাগ আশা করছে, এই উৎপাদন জেলার ধান সংরক্ষণ ও বাজারে সরবরাহে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
নান্দাইল মডেল থানা সংলগ্ন এলাকায় পৌরসভার উদ্যোগে নতুন করে একটি গার্বেজ ফেলার স্থান (Garbage Dumping Zone) নির্মাণ কাজ চলছে। কিন্তু এই স্থানের মাত্র ১০০ মিটার পূর্ব দিকে চন্ডীপাশা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় এবং ১০০ মিটার পশ্চিম দিকে নান্দাইল পাইলট উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় অবস্থিত হওয়ায় শিক্ষার্থী, অভিভাবকসহ স্থানীয়দের মধ্যে চরম উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া উল্লেখিত স্থানের ঠিক ১০ মিটার দক্ষিণ পাশে নান্দাইল মডেল থানা এবং উত্তর পাশেই রয়েছে ময়মনসিংহ–কিশোরগঞ্জ মহাসড়ক, যেখানে প্রতিদিন হাজারো পথচারী চলাচল করেন।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান— একদিকে দুইটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, অন্যদিকে ব্যস্ত মহাসড়ক। এমন সংবেদনশীল স্থানে গার্বেজ পয়েন্ট তৈরি হলে দূষণ, দুর্গন্ধ, ছড়ানো বর্জ্য, ধোঁয়া, পোকামাকড়সহ নানান স্বাস্থ্যঝুঁকির সৃষ্টি হবে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে শিক্ষার্থীরা।
একজন অভিভাবকের ভাষায়—
“শিশুদের প্রতিদিন এই সড়ক দিয়ে যাতায়াত করতে হয়। বর্জ্য ফেললে বাতাসে রোগজীবাণু ছড়াবে। এ সিদ্ধান্ত আগেই পুনর্বিবেচনা করা উচিত ছিল।”
“বিদ্যালয়ের খুব কাছে এমন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কেন্দ্র কোনোভাবেই শিক্ষার পরিবেশের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন দুর্গন্ধের মধ্যে ক্লাস করবে—এটা গ্রহণযোগ্য নয়।”
নান্দাইল পাইলট উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক বলেন—
“নারী শিক্ষার্থীরা প্রতিদিনই স্বাস্থ্যের ঝুঁকিতে পড়বে। এখানে বিকল্প জায়গা থাকা সত্ত্বেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশে বর্জ্য ফেলাকে আমরা অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত মনে করি।”
স্থানীয় স্বাস্থ্যসেবা কর্মীরা জানান—
গার্বেজ পয়েন্ট বিদ্যালয়ে ও থানার নিকটে হলে মশা, মাছি, জীবাণু ও দুর্গন্ধের কারণে ডেঙ্গু, শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়া, চর্মরোগসহ নানা অসুস্থতার ঝুঁকি থাকে। দীর্ঘমেয়াদে শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপরও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
পথচারী ও ব্যবসায়ীদের উদ্বেগ- কিশোরগঞ্জ, ময়মনসিংহ মহাসড়কের এই এলাকায় প্রতিদিন প্রচুর যাত্রী ও ব্যবসায়ী চলাচল করেন। একজন ব্যবসায়ী জানান— মহাসড়কের লাগুয়া এলাকায় বর্জ্যের স্তূপ থাকলে দুর্গন্ধ এবং নোংরা পরিবেশ তৈরি হবে। এতে ব্যবসায়ীক পরিবেশও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
বিশেষ ভাবে উল্লেখ্য যে, গত ১৮ সেপ্টেম্বর সদ্য বিদায়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার সারমিনা ছাত্তার উক্ত স্থানে আধুনিক পৌর পার্ক নির্মাণের জন্য আনুষ্ঠানিক ভাবে ভিত্তি প্রস্তুর স্থাপন করেন। কিন্তু কিছু দিনের ব্যাবধানে সেখানে তৈরি হচ্ছে ময়লার ভাগাড়, সংগত কারণেই জনমনে দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ব্যস্ত সড়ক ও ঘনবসতিপূর্ণ এলাকার পাশে গার্বেজ ফেলার স্থান নির্মাণ জনস্বাস্থ্য ও শিক্ষার পরিবেশের জন্য গুরুতর ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। তাই পৌর প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তকে পূনঃ বিবেচনার জন্য মতামত দিচ্ছেন স্থানীয়রা। সেইসাথে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ না হলে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সচেতন মহল।
সকাল ১০:৩৮ মিনিটে নরসিংদী সদর ও পলাশ উপজেলার মধ্যবর্তী অঞ্চলে ভূমিকম্প অনুভূত হয়। এতে জেলার বিভিন্ন স্থানে আতঙ্কিত হয়ে দৌড়াদৌড়ির সময় বহু মানুষ আহত হন এবং সর্বশেষ তথ্যানুসারে ৪ জন নিহত হয়েছেন। আহতের সংখ্যা শতাধিক। রিপোর্ট সময়: সন্ধ্যা ৬:১৫ মিনিট।
নিহত ও আহতদের বিস্তারিত:
১. সদর উপজেলার চিনিশপুর ইউনিয়ন (গাবতলি এলাকা)
নির্মাণাধীন ভবনের মালামাল নিচে পড়ে ৪ জন আহত হন। মাথায় মারাত্মকভাবে আহত ২ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানকার চিকিৎসক হাফেজ ওমর (০৮) নামে এক শিশুকে মৃত ঘোষণা করেন। তার বাবা দেলোয়ার হোসেন উজ্জ্বল আশঙ্কাজনক অবস্থায় চিকিৎসাধীন।
২. পলাশ উপজেলার চরসিন্দুর ইউনিয়ন (মালিতা পশ্চিমপাড়া)
কাজেম আলী ভূইয়া (৭৫) মাটির ঘরের নিচে চাপা পড়ে আহত হন। জেলা হাসপাতালে নেওয়ার পথে তিনি মারা যান।
৩. পলাশ উপজেলার ডাংগা ইউনিয়ন (ইসলামপাড়া, নয়াপাড়া গ্রাম)
নাসিরউদ্দিন (৬০) ভূমিকম্পের সময় মাঠ থেকে দৌড়ে আসার পথে রাস্তা থেকে নিচে লাফ দিয়ে পড়ে মারা যান বলে স্থানীয়রা জানান। তিনি ঘটনাস্থলেই মারা যান। নিকটাত্মীয়রা লাশ হাসপাতালে নেননি।
৪. শিবপুর উপজেলার জয়নগর ইউনিয়ন (গাজকিতলা, পূর্বপাড়া)
ফোরকান (৪০) ভূমিকম্পের কম্পনে গাছ থেকে পড়ে গুরুতর আহত হন। নরসিংদী জেলা হাসপাতালে নেওয়ার পর তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। ঢাকায় নেওয়ার পথে তিনি মারা যান।
ক্ষয়ক্ষতি:
১) ঘোড়াশাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র:
সাবস্টেশনে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়; ফায়ার সার্ভিস দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনে।
ভূমিকম্পের কারণে বিপুল পরিমাণ প্রোডাকশন ট্রান্সফরমার (PT) ভেঙে পড়ে।
২) ঘোড়াশাল পলাশ ফার্টিলাইজার কারখানা:
ভূমিকম্পের কারণে ইউরিয়া উৎপাদন সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যায়।
যন্ত্রপাতি অতিরিক্ত ভাইব্রেশনের কারণে বন্ধ হয়ে গেছে; বর্তমানে মেশিনারিজ চেকিং অপারেশন চলছে।
৩) সরকারি ভবনের ক্ষতি:
জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, সার্কিট হাউসসহ জেলার শতাধিক ভবনে ফাটল দেখা দিয়েছে।
জেলা প্রশাসনের উদ্যোগ:
ভূমিকম্পজনিত ক্ষয়ক্ষতি ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার তথ্য সংগ্রহের জন্য জেলা প্রশাসন কন্ট্রোল রুম চালু করেছে এবং সার্বিক পরিস্থিতি নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করছে।
ইসলাম ও আল্লাহকে নিয়ে কটূক্তির অভিযোগে মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ার তিল্লি ইউনিয়নের বাউল সম্রাট মহারাজ আবুল সরকারকে গ্রেপ্তার করেছে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। বৃহস্পতিবার ভোররাতে মাদারীপুরে এক গানের অনুষ্ঠান চলাকালে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
জানা যায়, গত ৪ অক্টোবর মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলায় আয়োজিত এক গানের আসরে আবুল সরকার ইসলামধর্ম এবং আল্লাহর সৃষ্টিকে উদ্দেশ্য করে আপত্তিকর মন্তব্য করেন। তার গানের মাধ্যমে তিনি ভক্তদের উদ্দেশে বলেন যে, আল্লাহর সৃষ্টি নিয়ে কোনো আগা-মাথা নেই এবং আল্লাহ চারবার সৃষ্টির কথা বলেছেন। তিনি একটি আয়াতের ভুল ব্যাখ্যা করে বাংলায় অনুবাদ করে ভক্তদের কাছে দাবি করেন, আল্লাহর কথার কোনো গোঁহা মাথা পাই না। এক মুখে কয় কথা কয়। তার এই মন্তব্যে ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
আবুল সরকারের গ্রেপ্তারের খবর ছড়িয়ে পড়লে সকাল থেকেই তার বিচারের দাবিতে মানিকগঞ্জ আদালত চত্বরে বিভিন্ন সংগঠন মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করে।
বিষয়টি নজরে আসার পর বৃহস্পতিবার ভোররাতে তাকে মাদারীপুর থেকে গ্রেপ্তার করে মানিকগঞ্জ ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে আসে।
মানিকগঞ্জ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ইসলাম অবমাননার অভিযোগে ঘিওর থানায় একটি মামলা হয়েছে। বিজ্ঞ আদালত তাকে জামিন নামঞ্জুর করে জেলহাজতে প্রেরণ করেছে।
পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ার ভজনপুর দেবনগর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের অবসর গ্রহণ উপলক্ষে বিদ্যলয়ের সাবেক শিক্ষার্থী, সহকর্মী ও এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে গত বৃহস্পতিবার বিকালে রাজকীয় বিদায় সংবর্ধনা প্রদান করা হয়েছে। শিক্ষকের প্রতি ভালোবাসা এবং শ্রদ্ধার বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন সাবেক শিক্ষার্থীরা। প্রিয় শিক্ষকের বিদায় বেলায় সাবেক, বর্তমান শিক্ষার্থী ও সহকর্মীদের ভালোবাসায় সিক্ত হয়েছেন তেঁতুলিয়া উপজেলার ৭নং ভজনপুর দেবনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আসলাম হোসেন।
সাবেক ছাত্ররা প্রিয় শিক্ষককে গাড়িতে উঠিয়ে ফুল দিয়ে বরণ করে স্কুলে নিয়ে আসেন। তারপর মঞ্চে উঠিয়ে সংবর্ধনা প্রদান করেন। এ সময় শিক্ষাগুরুর ভালোবাসার স্মৃতিচারণ করেন সাকের শিক্ষার্থীরা।
মো. আসলাম স্যারের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোছা. ফাতিমা নাজরীন বলেন, স্যারের শূন্যতা কখনই পূরণ হওয়ার নয়। স্যার অনেক ভালো শিক্ষক ছিলেন।
শিক্ষক আসলাম হোসেনের কর্মজীবন শুরু হয় হারাদিঘী উচ্চবিদ্যালয় দিয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে ১৯৮৮ সালে। এরপর বদলি হয়ে ১৯৯৫ সালে তেঁতুলিয়া, কামাতপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চলে আসেন সহকারী শিক্ষক হিসেবে। এর পর তিনি পদোন্নতি পেয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে তেঁতুলিয়া মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগদান করেন ১৯৯৮ সালে। ২০০৮ সালে জাতীয় পর্য্যায়ে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হয়েছেন। ২০১১ সালে ভজনপুর দেবনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আদ্যবদি প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন। প্রায় দীর্ঘ ৩৭ বছর শিক্ষকতা করে আজ (বৃহস্পতিবার) অবসরে যান এই প্রধান শিক্ষক মো. আসলাম।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন, বাংলা চণ্ডী স্কুলের প্রধান শিক্ষক আবু ছায়েদ, ঝালিংগিগছ স্কুলের প্রধান শিক্ষক শাহা আজিজুর রহমান, দোলনচাঁপা স্কুলের প্রধান শিক্ষক মোছা. নাজমা খানম, তেঁতুলিয়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার জাহাঙ্গির আলম, উপজেলার প্রাথমিক সহকারী শিক্ষা অফিসার সীমান্ত কুমার বসাক, উপজেলা প্রাথমিক সহকারী শিক্ষা অফিসার মিনহাজুল ইসলাম ও বোদা উপজেলার প্রাথমিক সহকারী শিক্ষা অফিসার ইউনুছ আলী প্রমুখ।
নেত্রকোনায় নবাগত জেলা প্রশাসক ও বিজ্ঞ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. সাইফুর রহমান জেলার প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় করেছেন।
গত বৃহস্পতিবার জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জেলা প্রশাসকের সভাপতিত্বে এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। শুরুতে জেলায় কর্মরত সাংবাদিকরা স্ব-স্ব পরিচিতি প্রদান করেন। পরে জেলা প্রশাসক নিজেও পরিচিতি দিয়ে মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন। সাংবাদিকরা জেলার বিভিন্ন অসংগতি ও প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরেন। জেলা প্রশাসক মো. সাইফুর রহমান জেলার সকল সাংবাদিকদের কাছে সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেন।
এ সময় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) রাফিকুজ্জামান, স্থানীয় সরকারের উপপরিচালক আরিফুল ইসলাম সরদার, লেখক সাংবাদিক বীর মুক্তিযোদ্ধা হায়দার জাহান চৌধুরী, জেলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক কিবরিয়া চৌধুরী হেলিম, জতীয় দৈনিকের সাংবাদিক বাবু শাামলেন্দু পাল, জেলা প্রেসক্লাবের সহসভাপতি জাহিদ হাসান, জাতীয়তাবাদী সাংবাদিক ফোরামের সহসভাপতি দেলোয়ার হোসেন মাসুদ, জেলা প্রেসক্লাবের প্রচার প্রকাশনা সম্পাদক হাফিজ উল্লাহ চৌধুরী আলিম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাজমুস শাহাদাত নাজুসহ বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠনের নেতারা ও গণমাধ্যমকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে অপরাধ দমন ও নিরাপত্তা জোরদারের অংশ হিসেবে রাজশাহী রেঞ্জ পুলিশের বিশেষ নির্দেশনায় নওগাঁয় পরিচালিত হলো ‘অপারেশন ফার্স্ট লাইট’।
গত বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত জেলার তিনটি উপজেলায় একযোগে এই অভিযান পরিচালনা করা হয়।
জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী রেঞ্জের একজন অতিরিক্ত ডিআইজির নেতৃত্বে দুটি বিশেষ দল গঠন করা হয়। শতাধিক পুলিশ সদস্য রাতভর নওগাঁর পোরশা, নিয়ামতপুর ও সদর এলাকায় অভিযানে অংশ নেন। চোর-ডাকাত, অস্ত্র ব্যবসায়ী ও মাদক কারবারিদের পাশাপাশি বিভিন্ন মামলার পলাতক আসামিদের ধরতে বাড়ি-বাড়ি তল্লাশি, সড়কপথে চেকপোস্ট স্থাপন এবং অপরাধপ্রবণ এলাকায় বিশেষ নজরদারি বাড়ানো হয়। এ সময় অভিযানে পোরশা থানায় ১৪ জন, নিয়ামতপুর থানায় ৯ জন এবং নওগাঁ সদর থানা এলাকায় ২ জনসহ মোট ২৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারদের মধ্যে রয়েছে ৮ জন চিহ্নিত ডাকাত ও কয়েকজন মাদক ব্যবসায়ী। এ সময় দেশীয় অস্ত্র ও উল্লেখযোগ্য পরিমাণ মাদকদ্রব্যও উদ্ধার করা হয়।
পোরশা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘পোরশা এলাকায় সম্প্রতি বেশ কয়েকটি চুরি-ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। এসব মামলার আসামি ছাড়াও মাদক ব্যবসায়ীদের ধরতে আমরা বিশেষ নজরদারি চালাচ্ছি। অপারেশন ফার্স্ট লাইট এখনো চলছে; গ্রেপ্তারের সংখ্যা বাড়তে পারে।’
নিয়ামতপুর থানার ওসি মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান বলেন, ‘রাতভর ও ভোরে একাধিক স্থানে অভিযান হয়েছে। বেশ কয়েকজন পলাতক আসামি ও মাদক ব্যবসায়ীকে ধরা হয়েছে। জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমরা সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে আছি।’
নওগাঁর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শফিউল সারোয়ার বলেন, ‘পোরশা-নিয়ামতপুর এলাকায় সাম্প্রতিক চুরি-ডাকাতির ঘটনা এবং জাতীয় নির্বাচনের আগে সার্বিক আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রাখতে আমরা এই বিশেষ অভিযান পরিচালনা করছি। অপরাধী যেই হোক, তাকে আইনের আওতায় আনা হবে। পুরো জেলার নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত অভিযান চলবে।’
মাদারীপুরের সদর উপজেলার শিলারচর ইউনিয়েনের আউলিয়াপুরে ব্রিটিশ নীলকরদের জুলুমের নিদর্শন নীলকুঠি বাড়ী ধ্বংসাবশেষ নিয়ে ২৬৫ বছর যাবৎ আজো দাঁড়িয়ে আছে কালের স্বাক্ষী হয়ে। ১৭৫৭ ইং সালে পলাশীর যুদ্ধে নবাব সিরাজুদ্দৌলার পরাজয় ও বৃটিশদের কাছে ভারতবর্ষের পতনের কিছুদিন পরেই ব্রিটিশ শাসকদের অন্যতম সহযোগী স্বৈরশাসক নীলকর ডানলপ তার সৈন্যবাহিনী নিয়ে তদানিন্তন ফরিদপুর জেলা ও বর্তমান মাদারীপুর জেলার শিলারচর ইউনিয়নের আউলিয়াপুরে ৮ একর জায়গার উপরে ১২ কক্ষ বিশিষ্ট ইট-সুরকী-পোড়ামাটি দিয়ে একটি নীলকুঠি বাড়ীসহ পাশেই ধোঁয়া নির্গমনের জন্য ৪০ ফুট উঁচু একটি চিমনী স্থাপনের কাজ শুরু করেন।
এসময় নীলকররা প্রথমে আশে-পাশের কৃষকদের মুজুরি দেওয়ার কথা বলে তাদের সামান্য কিছু মুজুরি দিয়ে উক্ত কাজ কিছুদিনের মধ্যে সম্পন্ন করে ফেলেন। এরপর আশেপাশের জমি-জমা দখল করে কৃষকদের বাধ্য করেন নীলচাষে। কৃষকদের মধ্যে কেউ নীলকর ডানলপ বাহিনীর কথা না শুনলে তাদের উপর চালানো হতো অমানুষিক শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। এমনকি তাদের আটকেও রাখা হতো ঐ নীলকুঠি বাড়ীর এলাকায়। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিলো সেখানকার কৃষকদের ধান ও পাটসহ অন্যান্য শস্য উৎপাদন।
ব্রিটিশ নীলকররা অল্প সময়ে বেশি অর্থ উপার্জনের জন্য তখন ফসল ফলানো বন্ধ করে দিয়ে শুধু ঐ এলাকায় একমাত্র নীল চাষেই বাধ্য করেছিল। এভাবে বছরের পর বছর ধরে ডানলপ ও তার বাহিনী কৃষকদের উপর অমানবিক মারধর, জুলুম, হত্যা ও নির্যাতন চালিয়ে যেতে থাকে। এমকি ঐ এলাকার যুবতী মেয়েদেরও তারা অপহরণ ও ধর্ষণ করত।
এ খবর চারিদিকে ছড়িয়ে পড়লে ব্রিটিশবিরোধী ফরায়েজী আন্দোলনের নেতা মাদারীপুর শিবচর থানার বাহাদুরপুরের বাসিন্দা হাজী মো. শরীয়তুল্লাহ ঐ নীলকরদের বিরুদ্ধে তার লাঠিয়াল বাহিনী নিয়ে আন্দোলন গড়ে তোলেন এবং দীর্ঘদিন তিনি ব্রিটিশ ও নীলকর বিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন। তার মৃত্যুর পরে তার পুত্র ও শিবচর বাহাদুরপুর মাদ্রসার প্রতিষ্ঠাতা পীর হাজী মো. মহসিনউদ্দিন দুদু মিয়া সেই আন্দোলন চালিয়ে যেতে থাকেন। একপর্যায়ে তিনি বিশাল লাঠিয়াল বাহিনী নিয়ে ঐ নীলকুঠি বাড়ীর পাশ্ববর্তী শিবপুর (বর্তমান নাম- রণখোলা বা যুদ্ধক্ষেত্র) এলাকার লাঠিয়াল সর্দার বংশের এলাকয় ঘাটি গেড়ে নীলকর ডানলপ ও তার বাহিনীর বিরুদ্ধে আন্দোলন চলমান রাখেন। বৃটিশ নীলকর ডানলপ তা টের পেয়ে তার বাহিনী নিয়ে সেখানে হাজী দুদু মিয়ার লাঠিয়াল বাহিনীকে ঘেরাও করলে উভয়পক্ষের মধ্যে যুদ্ধ বেঁধে যায়। সে যুদ্ধে হাজী দুদু মিয়ার লাঠিয়াল বাহিনী ও উক্ত রণখোলা সর্দার বংশের লাঠিয়াল বাহিনীর কাছে ডাললপ বাহিনী পরাজিত ও বহু হতাহত হয়ে ঐ এলাকা চিরতরে ত্যাগ করেন। ২৬৫ বছর ধরে কালের স্বাক্ষী হয়ে ধ্বংসাবশেষ নিয়ে আজো দাঁড়িয়ে আছে মাদারীপুর আউলিয়াপুরের নীলকুঠি বাড়ী। এক সাক্ষাতকারে উক্ত এলাকার ৭০ উর্ধ্বো বিল্লাল ঢালী, খোকন ঢালী ও নীলকুঠি বাজারের ব্যবসায়ী সহ স্থানীয় লোকজন ঐতিহাসিক ঐ নিদর্শন সংরক্ষণের জন্য সরকারের কাছে আহবান জানিয়েছেন।
দেশি মাছের আবাসস্থল পাবনার বিভিন্ন অঞ্চলে কয়েক বছরে আশঙ্কা জনক হারে কমে গেছে মিঠা পানির দেশীয় প্রজাতির মাছ।
জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে চাহিদা বাড়লেও ক্রমেই কমে আসছে মাছের যোগান। ফলে বাজারে মাছের দাম চলে যাচ্ছে ক্রেতা সাধারনের নাগালের বাইরে। ফলে ‘মাছে ভাতে বাঙালি’ বহুল প্রচলিত প্রবাদটি কেবল জায়গা করে নিচ্ছে বইয়ের পাতায়।
অন্যদিকে, এ অঞ্চলে বংশ পরস্পরায় মাছ শিকারের উপর নির্ভরশীল অনেক মৎস্যজীবীরা। তারা প্রয়োজনীয় মাছ আহরণ করতে না পারায় বাধ্য হচ্ছে মানবতর জীবন যাপনে ।
তবে স্থানীয় মৎস্য বিভাগের মতে, জলাশয় অর্থাৎ নদী নালা, খাল বিলের মৎস্য সম্পদ কমে এলেও বৃদ্ধি পাচ্ছে বদ্ধ জলাশয়ে মাছের আবাদ। জিহবার স্বাদ কমে এলেও পুষ্টির কোনো ঘাটতি হবে না এখানকার অধিবাসীদের।
পাবনা জেলার বিভিন্ন জলাশয়,খাল বিল একসময়ে মাছের ভান্ডার বলে পরিচিত ছিল এলাকায়। এক সময় এ জেলার বিভিন্ন নদ নদী, নালা, খাল বিলে বাঈম, কালবাউস, চিতল, পাবদা, রিটা, টাকি, ভেদা, রুই, কাতলা, মৃগেল, সিং, মাগুর, কই, চান্দা, ট্যাংরা, পুঠি, বাইল্লা, বাতাসি, সরপুটিসহ প্রায় ২০০ প্রজাতির মিঠাপানির মাছের সহজলভ্যতা ও প্রাচুর্যতা ছিল। খেতে খুব স্বাদ হওয়ায় এখানকার মাছের কদর ছিল পুরো দেশব্যাপী। কিন্তু যতই সময় পার হচ্ছে ততই মাছের ভান্ডারের শূন্যতা দেখা দিচ্ছে। এরই মধ্যে অনেক প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত হয়ে গেছে। অনেকগুলো প্রজাতির মাছ আবার প্রায় বিলুপ্তির পথে।
স্থানীয় মৎস্যজীবীরা জানান, বর্তমানে আগের তুলনায় চার ভাগের এক ভাগ মাছও নেই নদী-নালা আর খাল বিলে। তাই তারা সারাদিন মৎস্য শিকার করেও ৩০০ টাকার বেশি মাছ শিকার করতে পারে না। আর মাছ না থাকায় বাড়ির ঘাটে সারাদিন অলস বাধা থাকে তাদের মাছ শিকারের নৌকাগুলো। এছাড়া দ্রব্যমূল্যের এ অসহনীয় বাজারদরে তারা পরিবার-পরিজন নিয়ে কষ্টে দিন কাটাচ্ছে। অন্য কোন উপায় না থাকায় এ পেশায় লেগে আছে বলে জানায় জেলেরা।
সাধারণ জেলেরা জানায়, নদীতে সময় মত পানি না আসা, এক শ্রেণির লোভী ও অসাধু মাছ ব্যবসায়ী ও জেলেরা পোনা মাছ নিধন করা, অবৈধ দুয়ারী জাল দিয়ে সকল প্রকার মাছ শিকার করা।
এছাড়া বিভিন্ন প্রকার জলাশয় ভরাট হয়ে যাওয়া, কৃষি জমিতে মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশকের ব্যবহার, জলবায়ু পরিবর্তন, কলকারখানার বর্জ্য, মাছের আবাসস্থল বিনষ্ট হয়ে যাওয়া, বিভিন্ন জলাশয় সেচ দিয়ে মাছ ধরা সহ অসংখ্যা প্রাকৃতিক কারণও রয়েছে।
পাবনার ফরিদপুরের মৎস্যজীবী পলান হালদার, বিকাশ হালদার, আলামিন প্রতিক মিয়া, রমজান মিয়া সহ অনেকে জানান, এক সময় তারা জাল ও বরশি ছাড়াও ডুব দিয়ে বিল থেকে মাছ ধরতেন। দেখা যেত মাছ বাজারে যে মাছ একটু বেশি আমদানি হত, সেই মাছ ব্যবসায়ীরা আর ক্রয় করত না। তাই সেগুলো তারা নদীতে ফেলে দিত। তবে ওই সময় মাছের দাম কম থাকায় আর মাছ বেশি আমদানি থাকায় সবার ঘরে ঘরে মাছ থাকতো। কিন্তু এখন আর সেই দিন নেই, মাছ তো দূরের কথা মাছের গন্ধও পাওয়া যায় না অতি সহজে।
সাথিয়া উপজেলার মৎস্যজীবী শাহাদত, জালাল উদ্দিন, ছাদের মিয়া জানান, তারা তাদের শৈশবে দেখেছেন পানির উপর দিয়ে ঝাঁকে ঝাঁকে মাছ ভেসে বেড়াতে। এখন সেই দৃশ্য কল্পনাও করা যায় না। সারাদিন কঠোর পরিশ্রম করেও সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়।
তারা আরো জানান, আজ থেকে ১৫-২০ বছর আগে ১ ঘন্টা জাল টেনে এক থেকে দেড় মণ মাছ উঠত জালে। এখন দিনরাত পরিশ্রম করেও এর সিকি ভাগ মাছ হয় না। ফলে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের।
মাছ ব্যবসায়ীরা বলছেন, তারা একেক জন ৪০-৪৫ বছর যাবত মাছের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। মাছের এমন আকাল এ অঞ্চলে তাদের চোখে আর পড়েনি। দিন যতই যাচ্ছে দেশীয় মাছের সংকট আরো তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। পানিতে মাছ নেই। বাজারে মাছের আমদানি কম। আগের তুলনায় চার ভাগের এক ভাগ দেশি মাছও এখন আমদানি হয় না। ব্যবসা নেই। তবে চাষ করা মাছের আমদানি থাকায় এলাকার মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তরা কিছুটা মাছ খেতে পারেন।
পাবনা জেলা মৎস্য অফিস জানায়, খাল বিল নদ নদী বিধৌত পাবনা জেলা দেশীয় মাছের একটি বড় উৎস। তবে সাম্প্রতিক সময়ে এই এলাকার খাল বিল, নদী নালায় দেশি মাছের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। এক্ষেত্রে সরকারিভাবে আমরা মৎস্য অধিদপ্তরের মাধ্যমে সমৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করেছি। যা চলমান আছে। ফলে ভবিষ্যতে দেশীয় মাছের ঘাটতি অনেকাংশেই কমে যাবে বলে আশা করা যায়।
সমগ্র বাংলাদেশে শুক্রবার, ২১ নভেম্বর ২০২৫ইং তারিখ সকালে সংঘঠিত ভূমিকম্পে আহতদের চিকিৎসার জন্য জরুরি প্রস্তুতি নিয়েছে বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএমইউ) কর্তৃপক্ষ। এরই অংশ হিসেবে বিএমইউ এর সাধারণ জরুরি বিভাগে চারটি বেড (শয্যা) আহতদের জরুরি চিকিৎসার জন্য সংরক্ষিত হিসেবে রাখা হয়েছে। আহতদের চিকিৎসা কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে করার লক্ষ্যে ইতোমধ্যে বিএমইউর নিউরোসার্জারি বিভাগ, অর্থোপেডিক সার্জারি বিভাগ এবং এ্যানেসথেশিয়া, এনালজেশিয়া এন্ড ইনটেসসিভ কেয়ার মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যানগণকে (বিভাগীয় প্রধান) প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বিএমইউ এর মাননীয় ভাইস-চ্যান্সেলর অধ্যাপক ডা. মোঃ শাহিনুল আলম এর জরুরি নির্দেশে এই প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। এ তথ্য জানিয়েছেন বিএমইউ এর নবনিযুক্ত পরিচালক (হাসপাতাল) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইরতেকা রহমান। তিনি আরো জানান, সাধারণ জরুরি বিভাগে ইভিনিং শিফটে দায়িত্বে থাকবেন ডা. অমিত এবং ডা. নুসরাত শারমিন ।
ভূমিকম্পজনিত দুর্ঘটনায় হতাহতের বিষয়ে ফায়ার সার্ভিসকে দেওয়া সর্বশেষ তথ্যে জানা গেছে, মিটফোর্ড হাসপাতালে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে এবং অন্তত ১০ জন আহত হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। বিষয়টি ফায়ার সার্ভিসকে নিশ্চিত করেছেন মিটফোর্ড হাসপাতালের এএসআই জাকারিয়া হোসেন নয়ন।
ফায়ার সার্ভিস জানায়, রাজধানীর আরমানিটোলা কসাইটুলি এলাকার একটি আটতলা ভবনের পাশের দেয়াল ও কার্নিশ থেকে ইট ও পালস্তারা খসে নিচে পড়ে। ভবনের নিচতলায় একটি গরুর মাংস বিক্রির দোকান ছিল। ওই সময়ে দোকানে থাকা ক্রেতা ও আশপাশ দিয়ে চলাচলকারী পথচারীরা এ ঘটনায় আহত হন।
ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর আগেই স্থানীয় লোকজন আহতদের উদ্ধার করে মিটফোর্ড হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসকেরা তিনজনকে মৃত ঘোষণা করেন।
চট্টগ্রাম নগরের বন্দর থানা এলাকায় শহীদ ওয়াসিম আকরাম উড়াল সড়কের (চট্টগ্রাম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে) রেলিং ভেঙে টয়োটা হ্যারিয়ার ব্র্যান্ডের একটি গাড়ি নিচের সড়কে পড়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় শফিক (৫৪) নামে এক পথচারী নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
বৃহস্পতিবার থানার নিমতলা মোড়ে এ ঘটনা ঘটে। একই ঘটনায় আহত আরও তিনজনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। আহতদের বিস্তারিত পরিচয় জানা যায়নি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, প্রাইভেটকারটি বেপরোয়া গতিতে এক্সপ্রেসওয়ে অতিক্রম করছিল। নিমতলা মোড়ে পৌঁছার পর এক্সপ্রেসওয়ের সীমানা দেওয়ালের অংশ ভেঙে সেটি নিচে পড়ে যায়।
পুলিশ জানায়, এ দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত পাঁচজনের মধ্যে পথচারী মো. শফিককে (৫৫) নগরীর আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এছাড়া আহত এক তরুণীসহ চারজনকে বারিক বিল্ডিং মোড়ের একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাদের চিকিৎসা চলমান।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স বিভাগের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে জানানো হয়, প্রাইভেটকারটি বিমানবন্দরের দিক থেকে শহীদ ওয়াসিম আকরাম উড়াল সড়কের (চট্টগ্রাম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে) ওপর দিয়ে আগ্রাবাদের দিকে যাচ্ছিল। নিমতলা মোড় অতিক্রম করার সময় সেটি এক্সপ্রেসওয়ের রেলিং ভেঙে নিচে পড়ে যায়।
আহত অবস্থায় তিনজনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে বলে ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে জানানো হয়।
নগর পুলিশের বন্দর জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) মাহমুদুর রহমান বলেন, এক্সপ্রেসওয়ে থেকে একটি গাড়ি নিচে রাস্তায় পড়ে যায়। এ ঘটনায় প্রচুর লোকজন জমা হওয়ায় সড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়। আমরা লোকজন সরিয়ে সড়কে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক করি।
২৫ জন দুস্থ অসহায় নারীদের দর্জিবিজ্ঞানের ওপর ১২ দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ দিয়েছে নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলা সমবায় অফিস। জেলা সমবায় কার্যালয় এ কর্মসূচি বাস্তবায়নে সার্বিক সহযোগিতা করে। প্রশিক্ষণ শেষে তাদের স্বাবলম্বী করে তুলতে প্রত্যেককে সনদসহ বিনামূল্যে সেলাইমেশিন প্রদান করা হয়েছে। দর্জিবিজ্ঞানে প্রশিক্ষণ ও বিনামূল্যে সেলাইমেশিন পেয়ে তারা বেজায় খুশি।
বৃহস্পতিবার লোহাগড়া উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে প্রশিক্ষণার্থীদের মধ্যে সনদসহ সেলাইমেশিন বিতরণ করেন খুলনা বিভাগীয় সমবায় কার্যালয়ের যুগ্ম নিবন্ধক মো. নূরন্নবী।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন লোহাগড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবু রিয়াদ। স্বাগত বক্তব্য দেন, লোহাগাড়া উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা মো. আব্দুর রহমান। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন, মানবপাচার প্রতিরোধ সংস্থার সভাপতি সৈয়দ খায়রুল আলম, লোহাগাড়া প্রশাসনিক কর্মকর্তা মুহম্মদ আমানত হোসেন। প্রশিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন জেলা সমবায় অফিসের প্রশিক্ষক মো. হারুন আর রশিদ।
এ সময় লোহাগাড়া উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা মোসম্মাৎ শিরিনা খাতুন, সাংবাদিক মারুফ সামদানি, সাংবাদিক জহুরুল হক মিলু, মাস্টার ট্রেইনার এস, এম সাইদুর রহমান, সহকারি ট্রেইনার ফাতেমাতুজ জোহরা অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
লোহাগাড়া উপজেলা সমবায় কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়ন থেকে দুজন করে নারী উদ্যোক্তা বাছাই করে ১২ দিনব্যাপী দর্জিবিজ্ঞানের ওপর সেলাই প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। প্রশিক্ষণ শেষে তাদের স্বাবলম্বী করে তুলতে সনদসহ বিনামূল্যে সেলাইমেশিন বিতরণ করা হয়।
প্রশিক্ষণসহ বিনামূল্যে একটি সেলাইমেশিন পেয়ে বেজায় খুশি প্রশিক্ষণার্থী তাছলিমা বেগম। তাছলিমার বাড়ি ইতনা ইউনিয়নের ইতনা গ্রামে। তার পরিবারে স্বামীসহ চারজন মানুষ। দুই বছর আগে নারকেল গাছ থেকে পড়ে গিয়ে স্বামী দীর্ঘদিন ধরে পঙ্গু।
স্নিগ্ধা বিশ্বাসের বাড়ি লোহাগাড়া উপজেলার লাহুড়িয়া ইউনিয়নের সরশুনা গ্রামে। বাড়ি থেকে লাহুড়িয়া বাজারের দূরত্ব ৩ কিলোমিটার। সে জানায় প্রতিদিন সকাল সাড়ে ৮টায় বাড়ি থেকে বের হয়। পায়ে হেটে বাজারের দোকানে পৌঁছাতে সময় লাগে ৪০ থেকে ৫০ মিনিট।