বগুড়ায় হিন্দু ধর্মালম্বীদের রথযাত্রার উৎসবে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। এতে আহত হয়েছেন অন্তত ৪০ জন। তাদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। প্রাণহানির সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
আজ রোববার বিকাল সোয়া ৫টার দিকে ইসকন মন্দির থেকে রথযাত্রা বের হওয়ার পর ১০০ গজ দূরে বগুড়া শহরের সেউজগাড়ি আমতলা মোড় এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান হাসপাতালে যান এবং সবার চিকিৎসার ব্যাপারে খোঁজ নেন।
নিহতরা হলেন শাজাহানপুর উপজেলার গোহাইল গ্রামের রঞ্জিতা (৬০), আদমদিঘী উপজেলার কুন্ডু গ্রামের নরেশ মহন্ত (৬০), সদর উপজেলার তিনমাথা রেলগেটের লঙ্কেশ্বরের স্ত্রী আতসী রানী (৪০) ও শিবগঞ্জ উপজেলার কুলুপাড়া গ্রামের অলক কুমার (৪২)। তবে এক নারীর (৪০) নাম-পরিচয় জানা যায়নি।
আহতরা হলেন, রীপা (৫০), তুর্ণ (২), কৃষ্ণা (৪৬), প্রীতিলতা (১৮), চুমকী (৪৪), পুজা (২৯), ডলি (৩০), শিউলি (৫৫), নীপা (৩২), রীমা (২৩), রত্না (৫৫), পুতুল (৫০), শান্তি (৪০). স্বরস্বতি (৩), মোহনা (১২), ঝর্ণা (১২), চুমকী (৪০), গীতা (৪৫), ফুলকীসহ (৮) ৪০ জন। আহতরা বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
যেভাবে ঘটে দুর্ঘটনা
বগুড়া মেডিকেল পুলিশ ফাঁড়ির এসআই আনিসুর রহমান জানান, বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে সেউজগাড়ি ইসকন মন্দির থেকে রথযাত্রা বের হয়। পরে ১০০ গজ আসতেই রাস্তার পাশে ১১ হাজার ভোল্টেজ বিদ্যুতের তারের সঙ্গে রথযাত্রার গম্বুজের ধাক্কা লাগে। এ সময় লোহার তৈরি পুরো রথ বিদ্যুতায়িত হলে ঘটনাস্থলে দুইজন পরে আরও তিনজনের মৃত্যু হয়। আহত হন অন্তত ৪০ জন। বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মো. স্নিগ্ধ আখতারও এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
উল্লেখ্য, হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় অনুষ্ঠান শ্রীশ্রী জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা উৎসব শুরু হয়েছে আজ। হিন্দু রীতি অনুযায়ী, প্রতি বছর চন্দ্র আষাঢ়ের শুক্লপক্ষের দ্বিতীয়া তিথিতে শুরু হয় জগন্নাথদেবের রথযাত্রা। বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রাসহ নানা ধর্মীয় অনুষ্ঠানমালার মাধ্যমে আনন্দমুখর পরিবেশে ৯ দিনব্যাপী শ্রী শ্রী জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা মহোৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। আগামী ১৫ জুলাই বিকেল ৩টায় উল্টো রথের বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে এ উৎসব শেষ হবে।
যশোরের কেশবপুর উপজেলা সদরের সাথে কেশবপুর-ভায়া রামচন্দ্রপুর বাইপাস সড়কের হরিহর নদীর ওপর ব্রিজ নির্মাণ করলেও নদী দুপাড়ের সংযোগ সড়কটি বন্যার পানির পানিতে ভেসে যাওয়ায় ১০টি গ্রামের শত শত পরিবারের দুর্ভোগ চরমে উঠেছে। গত ২০২৩ সালে ৩ কোটি ৭৮ লাখ টাকা ব্যয়ে ওই বাইপাস সড়কের হরিহর নদীর ওপর ব্রিজটি নির্মাণ করা হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বিগত কয়েক বছরের বন্যায় কেশবপুর উপজেলা সদর ৬নং ইউনিয়নের কেশবপুর ভায়া রামচন্দ্রপুর সড়কটি পানির তোড়ে ভেসে যায়। এতে গত ১০ বছর ধরে সড়কটি পানিতে তলিয়ে থাকায় ১০টি গ্রামের মানুষ ও যান চলাচলে দুর্ভোগ বেড়েছে। সড়কটি পানিতে তলিয়ে থাকায় এসব এলাকার মানুষের কেশবপুর ও মনিরামপুর উপজেলা সদরে যেতে তাদের প্রায় ৫ কিলোমিটার ঘুরে শহরে যেতে হয়। যশোর-সাতক্ষীরা সড়কের যানজট নিরসনের লক্ষ্যে কেশবপুর-রামচন্দ্রপুর বাইপাস সড়কসহ ব্রিজ নির্মাণ করা হয়। যার সুফল ভোগ করছিল কেশবপুর পৌরসভার মধ্যকুল, হাবাসপোল, বালিয়াডাঙ্গা, ব্রহ্মকাটি এবং সদর ইউনিয়নের রামচন্দ্রপুর, বেলকাটি, ব্যাসডাঙ্গাসহ মনিরামপুর উপজেলার নাগরঘোপ, মুজগুন্নী ও বাডবিলাসহ ১০টি গ্রামের মানুষ।
এরই মধ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ডের অপরিকল্পিতভাবে খাল ও নদী খননসহ ঘের নির্মাণ করার ফলে গত ১৫ বছর ধরে কেশবপুর পৌরসভাসহ উপজেলার প্রায় শতাধিক গ্রাম বন্যার পানিতে তলিয়ে যায়। এরমধ্যে কেশবপুর পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৩টি ওয়ার্ড ৬ মাস জলাবদ্ধ হয়ে থাকে। এতে এলাকার রাস্তাঘাট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে আসছে। বর্তমানে কেশবপুর ভায়া রামচন্দপুর সড়কটির সিংহভাগ অংশ পানিতে তলিয়ে আছে। এতে সড়কের ওপর মাছ ও হাঁস চাষ করছে এলাকার লোকজন। এলাকাবাসী দ্রুত সময়ের মধ্যে সড়কটি উঁচু করে নির্মাণ করার জন্য সংশ্লিষ্ট। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। পৌর সভার ৭নং ওয়ার্ডের মধ্যকুল গ্রামের শাহীন দফাদার ও আব্দুস সোবাহান ড্রাইভার বলেন, বিগত বন্যায় কেশবপুর-রামচন্দ্রপুর সড়কটি ভেসে গিয়ে গত ১০ বছর যাবত মানুষ চলাচলের অন-উপযোগী হয়ে পড়েছে। সড়কটি সংস্কারসহ উঁচু করে নির্মাণ করার জন্য তারা দাবি জানান।
উপজেলা ইঞ্জিনিয়ার মো. নাযিমুল হক বলেন, ‘কেশবপুরের যানজট নিরসনের লক্ষ্যে কেশবপুর ভায়া রামচন্দ্রপুর সড়কটি নির্মাণ করা হয়। এ লক্ষ্যে হরিহর নদীর ওপর ২০২৩ সালে ৩ কোটি ৭৮ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে সড়কটি পানিতে তলিয়ে থাকায় এলাকার মানুষ এর সুফল থেকে বঞ্চিত। এছাড়া সড়কটি উঁচু করে নির্মাণ করার জন্য যশোর উন্নয়ন প্রকল্প ডিপিপি ভুক্ত তালিকায় রাখা হয়েছে। যার অনুমোদন এখনো পাওয়া যায়নি।
কুড়িগ্রামের কচাকাটা থানাকে প্রশাসনিক উপজেলা ঘোষণা ও বাস্তবায়নের দাবিতে গণস্বাক্ষর কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার সকালে কচাকাটা উপজেলা বাস্তবায়ন সংগ্রাম পরিষদের আয়োজনে কচাকাটা উচ্চবিদ্যালয় মাঠে এ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। কর্মসূচিতে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ, কৃষক, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশাজীবী মানুষ গণস্বাক্ষরে অংশ নেন।
উল্লেখ্য, দীর্ঘ এক যুগেরও বেশি সময় ধরে কচাকাটা থানাকে উপজেলা করার দাবিতে আন্দোলন করছে স্থানীয়রা।
গণস্বাক্ষর কর্মসূচির আলোচনা সভায় সাবেক চেয়ারম্যান সৈয়দ আহম্মেদ বাচ্চু ব্যাপারীর সভাপত্বিতে বক্তব্য দেন কেদার ইউনিয়ন পরিষদ চেয়াম্যান আ.খ.ম ওয়াজিদুল কবীর রাশেদ, কচাকাটা ইউপি চেয়ারম্যান শাহাদৎ হোসেন, সমাজকর্মী আনিসুর রহমান তোলা ব্যাপারী প্রমুখ।
এ সময় বক্তারা জানান, কুড়িগ্রাম জেলা সদর থেকে কচাকাটা থানাকে ৪টি নদ-নদী দ্বারা বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে। ব্রহ্মপুত্র নদ, শংকোশ, দুধকুমার, গঙ্গাধর নদী পাড়ি দিয়ে অথবা সড়ক পথে নাগেশ্বরী ও ভূরুঙ্গামারী উপজেলা দিয়ে কয়েক ঘণ্টা পথ অতিক্রম জেলা সদরের সাথে যোগাযোগ করতে হয়।
কচাকাটা ইউনিয়নের আয়তন ২৬.৪০ বর্গকিলোমিটার, বল্লভেরখাস ইউনিয়ন-৩৩.৩৯ বর্গকিলোমিটার, নারায়ণপুর ইউনিয়ন ০৭.৮৪ বর্গকিলোমিটার, কেদার ইউনিয়ন-২৪.৪৭ বর্গকিলোমিটার, বলদিয়া ইউনিয়ন ৩৫.৯৯ বর্গকিলোমিটার এবং বামনডাঙ্গা, কালীগঞ্জ ইউনিয়ন অংশ নিয়ে কচাকাটা থানা ২০০৩ সালে গঠিত হয়। এই থানার অধীনে প্রায় ৩ লক্ষাধিক মানুষের বসবাস।
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে আয়েশা বেগম ও আব্দুল দাইয়ান দম্পত্তির জীবন চলছিল স্বচ্ছলতার মধ্যে দিয়েই। অসুস্থতায় এখন এলোমেলো পুরো সংসার। দীর্ঘদিন ঢাকার দক্ষিণ শাহজাহানপুর এলাকায় বসবাস করতেন এ দম্পত্তির। ২০২২ সালে সোনারগাঁয়ের বৈদ্যেরবাজার ইউনিয়নের আনন্দবাজার এলাকায় গ্রামের বাড়ি চলে আসেন তারা। গ্রামে আসার তিন মাস যাওয়ার পরই তাদের দেহের ক্যান্সার ধরা পড়ে। একজনের ফুসফুসে ক্যান্সার আরেকজনের জরায়ু ক্যান্সার। বর্তমানে অটোরিকশা চালক ছেলে শহিদুল ইসলামের সামান্য আয়ে খেয়ে পড়ে কোনো রকম বেঁচে আছেন তারা।
জানা যায়, ঢাকায় থাকাবস্থায় আয়েশা বেগম কাজ করতেন ঢাকার একটি রেস্তোরাঁয়। তার স্বামী আব্দুল দাইয়ান রিকশাচালক থেকে হয়ে ওঠেন রিকশার গ্যারেজের মালিক। তাদের দুজনের আয়ে তাদের সংসার খুবই স্বাচ্ছান্দ্যে চলছিল। ক্যান্সারের আক্রান্ত হওয়ায় পর সুখের দিন শেষ হয়। প্রথমে আব্দুল দাইয়ানের ফুসফুসে ক্যান্সার ধরা পরে। স্বামীর কিছুটা সেরে উঠার পর জরায়ু ক্যান্সার বাসা বাঁধে আয়েশা বেগমের। চাকরি ব্যবসা সব হারিয়ে এখন সহায় সম্বলহীন হয়ে পড়েছেন তারা। বিত্তবানদের দিকে তাকিয়ে আছেন একটু সহযোগীতার আশায়। কিন্তু অর্থের অভাবে বন্ধ আছে তাদের চিকিৎসা।
আয়েশা বেগম জানান, তার স্বামী আব্দুল দাইয়ান ১০ বছর আগে ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়। এরপর তার চিকিৎসা শুরু হলে চার বছরের মাথায় ব্রেইন স্টোক করেন। সর্বস্ব বিক্রি করে চিকিৎসায় যখন কিছুটা ভালোর পথে, তখন নিজে অসুস্থ হয়ে পড়েন। দেড় বছর অসুস্থ থাকার পর চিকিৎসকরা জরায়ু ক্যান্সার সনাক্ত করেন। শুধু তাই নয়, দীর্ঘদিন ভুল ওষুধ সেবনের কারনে বাম কিডনি বিকল হয়ে যায়। দ্বিতীয় স্টেজে থাকা ক্যান্সার চিকিৎসায় প্রয়োজন ৩৫টি কেমোথেরাপি। একটি থেরাপি দেয়ার পর আর্থিক সক্ষমতা না থাকায় বন্ধ হয়ে যায় চিকিৎসা।
তিনি আরো বলেন, চিকিৎসার জন্য অন্তত ১০ লাখ টাকা প্রয়োজন। চিকিৎসক জানিয়েছেন, ঠিকমতো চিকিৎসা করাতে পারলেই সুস্থ হয়ে উঠবেন তিনি। কর্মহীন স্বামী আর নিজের অসুস্থ শরীরের কারণে আয়ের পথ বন্ধ হয়ে গেছে। ছেলে অটোরিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করলেও তা পর্যাপ্ত নয়। আত্মীয় স্বজনের সহযোগীতা নিয়ে কোনমতে বেঁচে আছেন। সমাজের বিত্তবানদের কাছে তিনি সহযোগিতা কামনা করেছেন।
অসুস্থ স্বামী আব্দুল দাইয়ান বলেন, নিজের অসুস্থতার পর স্ত্রীর অসুস্থতা তাদের পরিবারকে আর্থিকভাবে পঙ্গু করে দিয়েছে। টাকার অভাবে চিকিবৎসা দূরের কথা, এখন না খেয়ে থাকার অবস্থা হয়েছে। বিত্তবানদের সহযোগিতার হাত বাড়াবেন এমনটাই প্রত্যাশা করেছেন। তাদের সহযোগিতা পাঠানোর জন্য বিকাশ ও নগদ নাম্বার- ০১৯১২০২৪৬৯৩। এছাড়াও আয়েশা বেগমের সোনালী ব্যাংক সোনারগাঁ শাখায় সঞ্চয়ী হিসাব রয়েছে। যাহার নং-৩৬১৮৬০১০২১০৪৫।
সোনারগাঁ উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. ইকবাল হোসাইন বলেন, ইতোমধ্যে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। তাদের চিকিৎসার কাগজপত্র আমাদের কাজে জমা দেওয়ার জন্য বলেছি। জেলা কার্যালয়ের সকল প্রক্রিয়া শেষ করে তাদের সহযোগিতা করা হবে।
কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার পূর্ব ধৈইর পশ্চিম ইউনিয়নের কোরবানপুর ও খোষঘর এলাকায় অবৈধ ড্রেজার মেশিন দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চলছে মাটি উত্তোলন। এতে ধ্বংস হচ্ছে উর্বর তিন ফসলি জমি, সরে যাচ্ছে মাটির স্তর, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আশপাশের জমি এবং হুমকির মুখে পড়ছে স্থানীয় কৃষকদের জীবিকা। অভিযোগ উঠেছে—প্রশাসনের অভিযানের পর কিছুদিন বন্ধ থাকলেও আবারো একই সিন্ডিকেট আরও বেশি শক্তিশালী হয়ে মাঠে নেমে পড়ে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে উপজেলার কোরবানপুরে ৪টি, পেন্নাই গ্রামে ২টি, রোয়াচলা গ্রামে ২টি, ছালিয়াকান্দি ইউনিয়নে ৫টি, দারোরা ইউনিয়নে ৩টি, ধামঘর ইউনিয়নে ২টি এছাড়াও মুকলিশপুর, সীমানার পাড়, জুগিরখিলসহ আরও বেশ কয়েকটি জায়গায় নিয়মিত ড্রেজারের মহোৎসব চলছে।
অভিযোগ রয়েছে—বছরের পর বছর ধরে এই ড্রেজার সিন্ডিকেট প্রশাসনের অভিযানকে সাময়িকভাবে এড়িয়ে আবারো আগের মতো চালু হয়ে যায়। এতে সাধারণ মানুষের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রশাসন দীর্ঘমেয়াদি কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়ায় ড্রেজার ব্যবসায়ীরা হয়ে উঠেছে বেপরোয়া।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কৃষক বলেন, ‘প্রতিদিন জমির বুক ফেটে বালু তুলে নেওয়া হচ্ছে। একসময় যে জমিতে ধান, গম, ডাল সব কিছু হতো, এখন সেখানে পানি জমে থাকে। চাষাবাদ তো দূরের কথা, জমি আর জমি নেই।’
আরেকজন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক বলেন, ‘আমরা বারবার ইউপি সদস্য, চেয়ারম্যান থেকে শুরু করে প্রশাসনের কাছে বলেছি। কিন্তু কিছুক্ষণের জন্য বন্ধ হলেও পরে আগের মতোই ড্রেজার চলে। সবাই দেখেও না দেখার ভান করে।’
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সারোয়ার এবং আজাদ নামে দুই ব্যক্তি দীর্ঘদিন ধরেই ওই এলাকায় একাধিক ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন করে আসছে। কোরবানপুর জিএম উচ্চ বিদ্যালয়ের দক্ষিণ পাশের পুকুর থেকে শুরু করে কোরবানপুর নতুন কবরস্থানের পাশ পর্যন্ত মোট ৩-৪ স্থানে ড্রেজার মেশিন নিয়মিত চলছে।
ড্রেজার ব্যবসায়ী সারোয়ার অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ড্রেজার শুধু আমার একার চলছে না। পাশেই তো আজাদ ও মামুনের ড্রেজার চলছে। আগে ওটা বন্ধ করুন, পরে আমারটা করব।
অন্য ড্রেজার ব্যবসায়ী আজাদের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ও কৃষিবিদ পাভেল খান পাপ্পু বলেন, ‘অবৈধ ড্রেজিংয়ের কারণে প্রতি বছর আবাদি জমির প্রায় ১ থেকে ২ শতাংশ জমি কমে যাচ্ছে। গত বছর থেকে এ বছর প্রায় ৬০ থেকে ৭০ হেক্টর জমি আবাদ অনুপযোগী হয়ে গেছে। এর সরাসরি প্রভাব পড়ছে ফসল উৎপাদনে।’
এ বিষয়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাকিব হাসান খান বলেন, ‘আমি দায়িত্ব গ্রহণের পর কোরবানপুর এলাকায় ইতোমধ্যে ২০-২৫ বার অভিযান পরিচালনা করেছি। অভিযোগ পেলেই আমরা অভিযানে যাই। তবে অভিযান শেষে তারা আবার নতুন পাইপ ও ড্রেজার বসিয়ে মাটি উত্তোলন শুরু করে। ড্রেজারগুলো বিলের মাঝখানে থাকায় অপরাধীদের পাওয়া কঠিন হয়, তাই আমরা ড্রেজার অপসারণ করি। স্থায়ীভাবে বন্ধ করতে জমির মালিকদের নিয়মিত মামলা করার পরামর্শ দিয়ে থাকি।’
একসময় সচ্ছল জীবন ছিল শুভর পরিবারের। নোয়াখালী সোনাইমুড়ী বজরা গ্রামে কিছু জমিও কিনেছেন। পিতা দুই ভাই প্রবাসে থাকায় পরিবার ভালোই চলছিল। প্রবাসে থেকে পরিবারের ভরণপোষণ চালিয়ে ৫ লক্ষ টাকা সঞ্চয় করেন। এখন এ টাকা সবই হারিয়েছেন।সব টাকাই অনলাইন জুয়া খুইয়েছেন।সোনাইমুড়ী থানার দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা ইতিপূর্বে এ থানায় যোগদান করেন। মোবাইল অ্যাপসের মাধ্যমে লোভে পড়ে অনলাইন জুয়ায় আসক্ত হন। তার একাউন্টে থাকা প্রায় ৮ লক্ষ টাকা হারিয়ে এখন নিঃস্ব। উপজেলার চাঁদপুর গ্রামের হৃদয় স্থানীয় চৌমুহনী বাজারে মোবাইল দোকান দেন। তার পিতা দীর্ঘ বছর থেকে আমেরিকায় বসবাস করেন। বিদেশ থেকে উপার্জিত অর্থ তার একাউন্টে বেশি পাঠান। সে ব্যবহার করেন দামি মোবাইল। একপর্যায়ে মোবাইল জুয়ায় আসক্ত হয়ে প্রায় ২৫ লক্ষ টাকা হারিয়েছেন।
জানা যায়, নোয়াখালীর সোনাইমুড়ীতে প্রবাসী অধ্যুষিত এলাকা।এ এখানকার বাসিন্দারা ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যে বেশি পাড়ি জমান। এলাকার লোকজন বেশিরভাগ বিত্তশালী। তাই এখানে মুঠোফোন অ্যাপসের মাধ্যমে অনলাইন জুয়া ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। লোভে পড়ে বিভিন্ন বয়সের মানুষ, বিশেষ করে শিক্ষার্থী ও তরুণেরা এই জুয়ায় বেশি আসক্ত হচ্ছেন। জুয়ার নেশায় বুঁদ হয়ে সর্বস্ব হারাতে বসেছেন তাদের অনেকে। এ কারণে বাড়ছে পারিবারিক অশান্তি ও দাম্পত্য কলহ।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, সহজে প্রচুর টাকা উপার্জনের লোভে পড়ে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন বয়সের অসংখ্য মানুষ এই জুয়ায় জড়িয়ে পড়ছে। তরুণদের অনেকেই কৌতূহলবশত এই খেলা শুরুর পরেই নেশায় পড়ে যাচ্ছে। প্রথমে লাভবান হয়ে পরবর্তী সময় খোয়াচ্ছে টাকা। বিভিন্ন নামের প্রায় ১০ থেকে ১২টির মতো অ্যাপসে সবচেয়ে বেশী জুয়া খেলা হয়। এসব অ্যাপসে ১০ টাকা থেকে শুরু করে যেকোন অঙ্কের টাকা দিয়ে শুরু করা যায়।
এসব অ্যাপসের অধিকাংশই পরিচালনা করা হচ্ছে রাশিয়া, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া থেকে। বাংলাদেশে এগুলোর এজেন্ট রয়েছে। তারা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে জুয়ায় অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিদের কাছ থেকে টাকা গ্রহণ বা প্রদান করে থাকে। এজেন্টরা বিদেশী অ্যাপস পরিচালনাকারীদের কাছ থেকে হাজারে কমপক্ষে ৪০ টাকা কমিশন পায়।
সোনাইমুড়ী উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, তরুণ, যুবক, পুলিশ সদস্য, দিনমজুর এবং কলেজপড়ুয়া শিক্ষার্থীরাও অনলাইন জুয়ার ফাঁদে জড়িয়ে পড়ছে।
সোনামুড়ী ডিগ্রী কলেজের এক কলেজ শিক্ষার্থী নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জানালেন, তিনি এবং তার বন্ধুরা ৫০০ টাকা জমা দিয়ে খেলা শুরু করেছিলেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই সেই টাকা হারিয়ে গেছে। পরবর্তীতে ১৫-২০ হাজার টাকা পর্যন্ত ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। পৌর শহরের এক চাকরিজীবী বাড়তি আয়ের আশায় অনলাইন জুয়ার ফাঁদে পড়ে কয়েক লাখ টাকা হারিয়ে এখন ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে আত্মগোপনে রয়েছেন। এসব অ্যাপের অধিকাংশই বিদেশ থেকে পরিচালিত হলেও বাংলাদেশে এদের স্থানীয় প্রতিনিধি বা দালাল রয়েছে, যারা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা আদান-প্রদান করেন। প্রতি হাজার টাকায় এজেন্টরা অন্তত ৪০ টাকা কমিশন পায়। এর ফলে প্রতিদিন কোটি কোটি টাকা বিদেশে পাচার হচ্ছে।
সোনাইমুড়ী ডিগ্রী কলেজের শিক্ষক আবু বকর সিদ্দিক নোমান বলেন, এ উপজেলার সাধারণ মানুষ বেশি মোবাইল জুয়ায় আসক্ত হচ্ছেন। কি খবর প্রতিনিয়ত শোনা যাচ্ছে। আবার পরে প্রচারিত হচ্ছে। এটা এখন সামাজিক ব্যাধি।
সোনাইমুড়ী থানার ওসি মোরশেদ আলম বলেন, এ উপজেলা বাসী প্রবাসী অধ্যুষিত এলাকা হওয়ায় ইউরোপের লোক বেশি বসবাস করে। বহু লোক অনলাইন জুয়ায় আসক্ত হয়ে লাখ লাখ টাকা খুইয়েছেন। প্রতিদিনই থানায় এইসব ভুক্তভোগীরা আসে আইনগত সহযোগিতা পেতে। জুয়া খেলা আইনত দ-নীয় অপরাধ। আমরা অনলাইন জুয়ার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।শুধু স্কুল কলেজ পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রী নয়, এদের খপ্পরের পুলিশের উদ্বোধন কর্মকর্তা,সাধারণ জনগণ ও ব্যবসায়ীরা পড়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছেন।
নোয়াখালীর সোনাইমুড়ীতে ঘুমের মধ্যে এক মাদরাসা ছাত্রকে বিভৎসভাবে জবাই করে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় তাৎক্ষণিক অভিযুক্ত ছাত্রকে আটক করা হয়েছে।
সোমবার (২৭ সেপ্টেম্বর) সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেন সোনাইমুড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মোরশেদ আলম। এর আগে, রোববার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে উপজেলার সোনাইমুড়ী পৌরসভার ৬নম্বর ওয়ার্ডের বাটরা আল মাদরাসাতুল ইসলামিয়া মাখফুনুল উলুম মাদরাসায় এ ঘটনা ঘটে।
নিহত মো.নাজিম উদ্দিন (১৩) উপজেলার চাষীরহাট ইউনিয়নের জাহানাবাদ গ্রামের ওবায়েদ উল্ল্যার ছেলে। অপরদিকে, আটক আবু ছায়েদ (১৬) ময়মনসিংহ জেলার টেঙ্গাপাড়া গ্রামের রুস্তম আলীর ছেলে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার বাটরা আল মাদরাসাতুল ইসলামিয়া মাখফুনুল উলুম মাদরাসার আবাসিক বিভাগে থেকে নাজিম ২২ পারা ও ছায়েদ ২৩ পারা পবিত্র কোরআন হেফজ সম্পন্ন করে। গত ১০-১৫ দিন আগে টুপি পরা নিয়ে নাজিম ও আবু ছায়েদের মধ্যে ঝগড়া হয়। পরে মাদরাসার এক শিক্ষক বিষয়টি জানতে পেরে তাদের মধ্যে মিটমাট করে দেয়। কিন্ত এ ঘটনার জের ধরে নাজিমের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে সোনাইমুড়ী বাজার থেকে ৩শত টাকা দিয়ে একটি ধারালো ছুরি কিনে নিয়ে আসে ছায়েদ। প্রতিদিনের ন্যায় রোববার রাতে মাদরাসার আবাসিক কক্ষে ঘুমিয়ে যায় ১৪জন ছাত্র ও একজন শিক্ষক। রাত আড়াইটার দিকে অন্য ছাত্রদের অগোচরে ছায়েদ ঘুম থেকে উঠে ঘুমের মধ্যে নাজিমকে জবাই করে দেয়। ওই সময় নাজিমের গলার গোঙরানির আওয়াজ শুনে একই কক্ষে থাকা ছাত্র-শিক্ষক ঘুম থেকে জেগে উঠে এ ঘটনা দেখতে পায়।
সোনাইমুড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ খোরশেদ আলম বলেন, খবর পেয়ে ভোররাতেই পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। অভিযুক্ত ছাত্রকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে এবং হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত ছুরি জব্দ করা হয়। টুপি পরা নিয়ে দুই ছাত্রের মধ্যে বিরোধের সূত্র ধরে এ হত্যাকান্ড ঘটে। লাশের সুরতহাল শেষে মরদেহ উদ্ধার করে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হবে।
কুড়িগ্রাম জেলার বড় অংশজুড়ে রয়েছে চর এলাকা। চরাঞ্চল অধ্যুষিত এ জেলার স্বাস্থ্যসেবা পেতে পোহাতে হয় চরম ভোগান্তি। ঘণ্টার পর ঘণ্টা নদী পার হয়ে চরবাসীদের যেতে হয় হাসপাতালে।
দেশের মূল ভূখণ্ড থেকে অনেকটা বিচ্ছিন্ন এসব চরের অধিকাংশ মানুষই দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করছে। দরিদ্র এ জনগোষ্ঠীকে প্রতিনিয়তই টিকে থাকতে হয় প্রকৃতির ভাঙা-গড়ার খেলায়। বন্যা ও নদীভাঙনের ফলে প্রতি বছরই এসব চরের অনেক পরিবার হয় গৃহহীন। বিনষ্ট হয় তাদের আরাধ্য ফসল। আবার ভূমি হারিয়ে অনেকেই হয় নিঃস্ব।
বন্যা-খরার সঙ্গে বাড়তি দুর্ভোগ যোগ করে অসুস্থতা। অথচ অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল এসব মানুষের ন্যূনতম প্রাথমিক চিকিৎসাসেবা নেওয়ারও ব্যবস্থা নেই বেশির ভাগ চরাঞ্চলে। হাতে গোনা কয়েকটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র থাকলেও সেখানে মিলছে না প্রত্যাশিত সেবা। শিশু কিংবা বৃদ্ধরা অসুস্থ হলেও ভরসা করতে হয় গ্রাম্য কবিরাজের ওপর। বিচ্ছিন্ন এসব চরের বাসিন্দারা বলছেন, চরাঞ্চলগুলোতে ফার্মেসি না থাকায় পাওয়া যায় না সাধারণ রোগের কোনো ওষুধ। মৃত্যুর ঝুঁকি থাকলেও গর্ভবতী নারীদের নির্ভর করতে হয় স্থানীয় ধাত্রীদের ওপর। সড়ক বা যানবাহনের ব্যবস্থা না থাকায় গুরুতর রোগীদের হাসপাতালে নিতে পড়তে হয় নানা ভোগান্তিতে।
২২৪৫ বর্গকিলোমিটার আয়তন ও ২৩ লাখ ২৯ হাজার জনসংখ্যার কুড়িগ্রামের ওপর দিয়ে প্রবাহিত ১৬টি নদ-নদীর অববাহিকা ও বুকজুড়ে জেগে রয়েছে ছোট-বড় ৪৬৯টি চর। তবে ২৬৯টি চরে মানুষের বসবাস। প্রায় সাড়ে ৮০০ বর্গকিলোমিটার এসব চরে বসবাস করছেন প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ মানুষ। কয়েক বছর আগে চার শতাধিক চরাঞ্চলের মধ্যে মাত্র ৫০টি চরে কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করেছে সরকার। এসব ক্লিনিক থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা পাওয়া গেলেও বাকি চরগুলোতে সে সুযোগটুকুও মিলছে না। যেকোনো রোগের চিকিৎসা করাতে নদীপথ পাড়ি দিয়ে আসতে হয় উপজেলা বা জেলা শহরের হাসপাতালে।
সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের ব্রহ্মপুত্রের অববাহিকার কালির আলগা চরের বাসিন্দা হোসেন আলী তিনি ওই ইউনিয়নের ইউপি সদস্য। তিনি জানান, ওই চরে প্রায় ৭০০ জন বসবাস করে। চরে স্বাস্থ্যসেবার জন্য একটি কমিউনিটি ক্লিনিক ছিল নদীভাঙ্গনে সেটিও নেই। চরটি ভারতের সীমান্তঘেঁষা। চরের সঙ্গে জেলা শহরের যোগাযোগের জন্য প্রথমে পাড়ি দিতে হয় নৌপথ। প্রায় ২ ঘণ্টার নদীপথ পাড়ি দিলে যাত্রাপুর ঘাট। সেখান থেকে কিছুদূর হেঁটে গেলে পাওয়া যায় অটোরিকশা। এরপর আরও ৮ কিলোমিটার সড়কপথ পাড়ি দিলে জেলা শহর। পার্শ্ববর্তী অনেক চরেই কমিউনিটি ক্লিনিকও নেই।’
জেলার রাজারহাট উপজেলার বিদ্যিনন্দ ইউনিয়নের তিস্তা নদীর অববাহিকার চর বিদ্যানন্দ বাস করেন আব্দুল আজিজ। কয়েকদিন আগে তার স্ত্রী অসুস্থ হয়ে পড়েন। চরে অন্তত ৫০০টি পরিবার বাস করলেও স্বাস্থ্যসেবা নেই বললেই চলে। পরে তার স্ত্রীকে বাঁশ দিয়ে তৈরি ভাড়ে করে প্রথমে নৌকা ঘাটে নিয়ে আসেন। সেখান থেকে নদী পার হয়ে তারপর অটোরিকশায় করে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান। একই অবস্থা উলিপুর, রৌমারী, রাজিবপুর, চিলমারী, ফুলবাড়ী ও নাগেশ্বরী ভূরুঙ্গামারী উপজেলার দুর্গম চরাঞ্চলগুলোর।
সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের পোড়ার চরের বাসিন্দা খোদেজা বেগম বলেন, ‘সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়তে হয় গর্ভবতী নারীদের। প্রসব ব্যথা উঠলে স্থানীয় ধাত্রীরাই একমাত্র ভরসা। তাতেও সন্তান প্রসব না হলে এক থেকে দেড় ঘণ্টা নৌপথ পারি দিয়ে যেতে হয় শহরের হাসপাতালে।’
যাত্রাপুর ইউনিয়নের ঝুনকার চরে স্থাপিত কমিউনিটি ক্লিনিকের কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার মো. মিজানুর রহমান জানান, ঝুনকার চরে কমিউনিটি ক্লিনিক থাকলেও পার্শ্ববর্তী চরগুলোতে নেই। কমিউনিটি ক্লিনিকে একজন স্বাস্থ্য সহকারী, পরিবার কল্যাণ সহকারী ও একজন কমিউনিটি হেলথ প্রোভাইডারের পদ রয়েছে। গর্ভবতী নারীদের প্রাথমিক কিছু চিকিৎসা দেওয়া হলেও প্রসবের ব্যবস্থা নেই।
স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য বলছে, নয়টি উপজেলায় ২৯৫টি কমিউনিটি ক্লিনিকের মধ্যে চরাঞ্চলে রয়েছে মাত্র ৫০টি। এর মধ্যে নদীভাঙনে বিলীন হয়েছে ছয়টি ক্লিনিক। তবে জেলা সিভিল সার্জন ডা. স্বপন কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘চরাঞ্চলের মানুষ যাতে চিকিৎসাসেবা পায়, সে জন্য কাজ করছি আমরা।’
বৃষ্টি হলে বা নদীতে পানি এলেই খাল-বিল, নদী-নালায় শুরু হয় মাছ ধরার উৎসব। আধুনিকতার ছোঁয়া ও অবৈধ কারেন্ট জালের দৌরাত্ম বাড়ার কারণে তেমন চলছে না গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী বাঁশ-বেতের তৈরি ডারকি, চাঁই, পলো ও আনতার মতো দেশীয় মাছ ধরার ফাঁদ। মানবেতর জীবনযাপন করছে এই শিল্পের সাথে জড়িত মানুষরা। গ্রামগঞ্জের বিভিন্ন হাট-বাজারে বিক্রি করা হয় বাঁশ ও বেতের তৈরি এসব পণ্য। গ্রামগুলোতে বর্ষা ও বন্যার পানির সঙ্গে আজও ঘনিষ্ঠভাবে জড়িয়ে আছে এই মাছ ধরার সরঞ্জামগুলো। তবে অবৈধ চায়না জাল ব্যবহার বন্ধের জন্য সরকারের সহযোগীতা চান বাঁশ ও বেত শিল্পের কারিগররা।
উপজেলার পৌর এলাকার কোনাবাড়ী গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিটি বাড়িতেই ছোট-বড় ভাবে প্রতিবছরই বর্ষাকালে ও বন্যার শুরুতে এ পল্লীতে শুরু হয় বাঁশ-বেত দিয়ে তৈরি মাছ ধরার ফাঁদ চাঁই, পলো ও আনতা তৈরির কাজ। আগে এই সময়টুকুতে খাওয়ার সময় পেতেন না বাঁশ-বেতের কারিগররা। স্থানীয় হাটবাজারে প্রতি হাটের দিনগুলোতে নানা ডিজাইন, নানা রঙের ও বিভিন্ন আকারের চাঁই, পলো ও আনতা বিক্রি করা হতো। তবে একসময় গ্রামে গ্রামে এসব ফাঁদের ব্যবহার বেশি থাকলেও এখন বাঁশ ও বেতের দাম বৃদ্ধির কারণে ও অবৈধ বিভিন্ন চায়না জাল বাজারে নামার কারণে একবারেই বিক্রি নেই বললেই চলে এসব চাঁই, পলো ও আনতার। আবার গভীর রাতে বিভিন্ন মাধ্যমে ব্যাটারি দিয়ে নদীর পানিতে কারেন্টের শক দিয়েও অবৈধ উপায়ে ধরা হচ্ছে মাছ। এসব জেনে দেখেও না দেখার ভান করে থাকে উপজেলা মৎস্য অফিস।
চাঁই ও পলো কারিগর বৃদ্ধ আফসার আলী, মোবারক হোসেন রোকসানা বেগম বলেন, এসব চাঁই, পলো, ডারকি সাধারণত খাল-বিল কিংবা ডুবে যাওয়া ক্ষেতে ফেলা হয়। এটাতে শোল, শিং, কৈ, খইলসা, পুঁটি চিংড়িসহ দেশীয় সকল মাছ সহজেই ধরা পড়ে। বর্তমানে বিভিন্ন ধরনের বড় আকারের চাঁই তৈরি হচ্ছে, এ গুলোতে রুই-কাতলও ধরা সম্ভব। দেশীয় এসব ফাঁদ শুধু মাছ শিকারিদের জীবিকা নয়, বরং আমাদের গ্রামীণ সংস্কৃতির অংশ।
স্থানীয় গ্রামীণ সরঞ্জাম তৈরির কারিগর ছানোয়ার হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এটা আমাদের বাপ-দাদাদের ব্যবসা ছিল। তাদের মৃত্যুর পর আমি প্রায় ৪৫ বছর ধরে আমি বাঁশ ও বেত দিয়ে মাছ ধরার চাঁই, পলো ও আনতা তৈরি করছি। আগে প্রতি মৌসুমে ৫ হাজার থেকে ৭/৮ হাজার ডারকি, পলো, আনতা ও চাঁই বিক্রি হতো। ২০/২৫ জন শ্রমিক কাজ কারত।
সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা দেবযানী ভৌমিক বলেন, চায়না জালগুলো খুবই মারাত্মক একটি জাল। এটাতে ছোট বড় মাছ ও রেনু পর্যন্ত ধরা পড়ে। আমরা যথেষ্ট চেষ্টা করছি এই চায়না জাল বন্ধ করতে। ইতোমধ্যে আমরা একাধিক স্থানে ও জালের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অভিযান ও মোবাইল কোর্টও পরিচালনা করেছি। অনেক জাল পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
নওগাঁয় সরকারি মৎস্য বীজ উৎপাদন খামার থেকে উন্নত মানের রেনু সরবরাহ করায় মাছ চাষিদের কাছে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তবে চাহিদা থাকলেও পর্যাপ্ত পরিমাণ রেনু উৎপাদন হচ্ছে না। চাষিদের বাড়তি দামে বেসরকারি খামার থেকে কিনতে হচ্ছে। উপকরণ ও জনবল বাড়ানো গেলে রাজস্ব আয়ের পাশাপাশি জেলায় মাছ চাষিরা চাহিদা মতো রেনু পেয়ে উপকৃত এবং লাভবান হবেন।
কৃষিতে সমৃদ্ধ উত্তরের জেলা নওগাঁ। পাশাপাশি মৎস্য খাতেও এগিয়ে এ জেলা। সরকারি মৎস্য বীজ উৎপাদন খামার থেকে উন্নত মানের রেনু সরবরাহ করায় সুবিধা পাচ্ছে মাছ চাষিরা। তবে উন্নত মানের রেনু সরবরাহ নিশ্চিত করার মাধ্যমে, এটি দেশের সামগ্রিক মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধিতে সাহায্য করবে। পাশাপাশি প্রোটিনের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস হিসেবে কাজ করবে এমন প্রত্যাশা সংশ্লিষ্টদের।
জানা যায়, ২০২৫-২৬ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২০০ কেজি রেনু। যা থেকে রাজস্ব আয় হবে ৭ লাখ ৮০ হাজার টাকা। এছাড়া বিগত অর্থবছরগুলোতে আয় হয়েছে সন্তোষজনক। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ১৩৭ কেজি রেনু থেকে রাজস্ব আয় ৭ লাখ ৯ হাজার টাকা। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ১২২ কেজি রেনু থেকে রাজস্ব আয় ৬ লাখ ৮৫ হাজার ৫০০ টাকা। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১২০ কেজি রেনু থেকে রাজস্ব আয় ৬ লাখ ৫২ হাজার ৫০০ টাকা। এবং ২০২১-২২ অর্থবছরে ৭৭ কেজি রেনু থেকে রাজস্ব আয় ৩ লাখ ২৫ হাজার টাকা।
নওগাঁ শহরের আরজি-নওগাঁয় অবস্থিত সরকারি মৎস্য বীজ উৎপাদন খামারের আয়তন প্রায় ১১ একর। যেখানে সাড়ে ৪ একর জায়গায় রয়েছে ১০টি পুকুর। এসব পুকুরে কার্প জাতীয় মা-মাছ- রুই, মৃগেল, কাতলা, কালবাউস ও পাঙাশসহ অন্য মাছ চাষ করা হয়। যা থেকে উন্নত মানের রেনু উৎপাদন করে চাষিদের কাছে সরবরাহ করা হয়। এ খামার থেকে বছরে ৫ মাস রেনু উৎপাদন হলেও চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। সরকারি খামারে রেনু উৎপাদন কম হওয়ায় বেসরকারি খামারের রেনু দিয়ে চাহিদা পুরণ করে মাছ চাষিরা। জেলায় ৩১টি বেসরকারি মৎস্য বীজ (হ্যাচারি) উৎপাদন খামার রয়েছে। যা থেকে বছরে প্রায় ১৩ মেট্রিক টন কার্প জাতীয় রেনু উৎপাদন হয়। জেলার চাহিদা মিটিয়ে পাশের জেলায় সরবরাহ করা হয়।
মৎস্য বীজ উৎপাদন খামারগুলো মৎস্য চাষ, সরবরাহ এবং জনসাধারণের জন্য অনেকভাবে উপকারী। এই খাবারগুলোর উন্নত মানের পোনা সরবরাহ করে মৎস্য চাষিদের উপকৃত করে, যা মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
মাছ চাষিরা জানান, সরকারি খামারে তুলনামূলক রেনুর দাম কম ও মানে ভালো। তবে এ খামার থেকে চাহিদা মতো রেনু না পাওয়ায় মাছ চাষিদের ভরসা বেসরকারি খামার। প্রতি কেজিতে অন্তত ৫০০-৯০০ টাকা বেশি দামে বেসরকারি খামার থেকে কার্প জাতীয় রেনু কিনতে হয়। তবে সরকারি খামারের রেনু থেকে গুণগত মানসম্পন্ন মাছ উৎপাদন হওয়ায় লাভবান চাষিরা।
সদর উপজেলার চকআবরশ গ্রামের মাছচাষি মীর বকস বলেন, ‘সরকারি খামারের রেনু উন্নত মানের। এ রেনু থেকে মাছ চাষ করলে মাছের স্বাস্থ্য ও বৃদ্ধি বেশি হয়। এতে দাম ভালো পাওয়া যায় এবং লাভবান হওয়া যায়।’
হ্যাচারি টেকনিশিয়ান ইমরান হোসেন বলেন, ‘এ খামারে খামার ব্যবস্থাপকসহ পদসংখ্যা রয়েছে ৫ জন। জনবল কম থাকায় উৎপাদন ব্যহত হচ্ছে। জনবল ও উপকরণ বাড়ানো গেলে আরও বেশি পরিমাণ রেনু উৎপাদন হবে এবং রাজস্ব বেশি আয় হতো।’
মৎস্য বীজ উৎপাদন খামার ব্যবস্থাপক কৃষিবিদ আব্দুল মান্নান বলেন, ‘আমাদের প্রধান উদ্যেশ্য গুণগত মানসম্পন্ন রেনু ও পোনা উৎপাদন করা। পাশাপাশি চাষিদের উদ্বৃদ্ধ করা এবং ভালো মানের পোনা সরবরাহ করা। এছাড়া চাষিদের প্রশিক্ষণ প্রদানসহ চাষকৃত পুকুর পরিদর্শন করা হয়। তবে খামারে গবেষণা করে নতুন জাত সরবরাহ করা হলে চাষিরা আরও উপকৃত হবে।’
তিনি বলেন, ‘জেলায় বেশকিছু বেসরকারি মাছের খামার (হ্যাচারি) গড়ে উঠেছে। যা আমাদের বিভাগ থেকে তদারকি করা হয়। সরকারি এবং বেসরকারি হ্যাচারি মিলে মৎস্য সম্পদ উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারছি বলে মনে করা হচ্ছে।’
নওগাঁ জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. ফেরদৌস আলী বলেন, ‘মা-বাবা মাছ যদি ভালো হয় তা থেকে উৎপাদিত রেনু ভালো হবে। পদ্মা ও যমুনাসহ বিভিন্ন উৎস থেকে ভালো মানের মা-মাছ সংগ্রহ করে রেনু উৎপাদন করা হয়। সরকারি খামার থেকে মাছ চাষিদের রেনু কেনার জন্য উদবুদ্ধ করা হয়। এতে ভালো রেনু পেয়ে চাষিরা লাভবান ও উপকৃত হবেন।’
পাবনায় বাঁশ বোঝাই ট্রাক উল্টে দুই শিশু শিক্ষার্থীসহ তিনজন নিহত হয়েছ। পাবনা সদর উপজেলার গয়েশপুর ইউনিয়নের বাঙ্গাবাড়িয়া নামক স্থানে এ দুর্ঘটনা ঘটে। রোববার সকাল ৭টার দিকে একটি স্কুলগামী ভ্যানের উপড় বেড়া থেকে ছেড়ে আসা একটি বাঁশ বোঝাই ট্রাক অপর একটি গাড়িকে বাঁচাতে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে স্কুল ভ্যানের উপড় পড়লে ভ্যানে থাকা দুই শিক্ষার্থীসহ ভ্যানচালক ঘটনাস্থলেই নিহত হয়।
এ ঘটনায় আহত সদর উপজেলার মধুপুর গ্রামের আব্দুর রশিদের ছেলে সাদ হোসেনকে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। নিহতদের মাঝে গয়েশপুর ইউনিয়নের পঞ্চমপুর গ্রামের বাসিন্দা আহম্মদ আলী শেখের ছেলে ৫ম শ্রেণির ছাত্র নূর মোহাম্মদ তোহা (১৩), জাফরাবাজ গ্রামের শামসুল মোল্লার মেয়ে চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী তাসমিয়া (১৩) ও গঙ্গারাম পুর ইউনিয়ন এর ধর্মগ্রামের মৃত আব্বাস হোসেনের ছেলে ভ্যানচালক আকরাম আলী (৫৬)। দুই শিক্ষার্থী পাবনার জালালপুরের পাবনা ক্যাডেট কলেজিয়েট স্কুলের শিক্ষার্থী।
প্রত্যক্ষদর্শী জানায়, স্থানীয় জনতা এগিয়ে এসে বাঁশের স্তূপ সরিয়ে মরদেহগুলো উদ্ধার করেন। এবং সড়কজুড়ে বাঁশ পড়ে, যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ফলে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স এসে সড়ক থেকে গাড়ি উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যাওয়ার পর যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
স্থানীয়রা জানান, গত কয়েক মাসে এই স্থানে কয়েকজনের প্রাণহানি ঘটেছে, সড়কে স্পিড ব্রেকার না থাকায় এমন দুর্ঘটনা ঘটে থাকে তারা একটি স্পিড ব্রেকার স্থাপনের জোর দাবি জানায়।
মাধপুর হাইওয়ে থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান জানান, বেড়া থেকে বাঁশ বোঝাই ট্রাক পাবনা আসার পথে দুর্ঘটনা ঘটে এবং ট্রাকের হেলপার চালিয়ে আসছিল। ভ্যান ড্রাইভারসহ তিনজন নিহত ও একজন আহত হয়েছ তাকে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে এবং নিহতদের মরদেহ উদ্ধার করে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। দুর্ঘটনাকবলিত ট্রাকটি জব্দ করতে পারলেও তাৎক্ষণিকভাবে ট্রাকচালককে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলা অঞ্চলে করলা চাষে বাম্পার ফলন হওয়ায় সত্যিই কৃষকদের জন্য আনন্দের বিষয়। বিগত বছরগুলোর চেয়ে করলা (বিটার গার্ড) ও মাচা পদ্ধতিতে এ বছর করলা চাষ করে কৃষকরা ভালো ফলন পেয়েছে। ফলে অন্যান্য বছরের চেয়ে এবারে লাভ পাচ্ছেন বেশি।
বুড়িচং উপজেলার কৃষি অফিসার মিসেস আফরিন আক্তার বলেন, ‘বিশেষ করে আধুনিক কৃষিপ্রযুক্তি, মানসম্মত বীজ ও সঠিক পরিচর্যার কারণে উৎপাদন বেড়েছে।’
কৃষিবিদ আফরিন আক্তার ও সহকারী কৃষিবিদ নাছরিন সুলতানা বলেন, ‘করলা চাষে মাচা পদ্ধতি ও বিটার গার্ড পদ্ধতি অনুসরণ করলেই করলা চাষে বাম্পার ফলন সম্ভব।’
জানা যায়, কুমিল্লার উর্বর দোআঁশ মাটি ও অনুকূল জলবায়ু করলা চাষের জন্য উপযুক্ত। নিয়মিত সেচ, আগাছা দমন ও রোগ-বালাই নিয়ন্ত্রণ করায় ফলন বেড়েছে। মৌসুমের শুরুতে করলার দাম ভালো থাকায় কৃষকরা ভালো লাভ পাচ্ছেন বলে অনেকে জানিয়েছেন।
বুড়িচং উপজেলার বাকশিমুল ইউনিয়নে হরিপুর, কালিকাপুর এলাকায় সরেজমিন ঘুরে কৃষক কবির হোসেন, মিজানুর রহমান, ফারুক জানান, অন্যান্য সবজির তুলনায় করলা চাষে কম খরচে বেশি লাভ করা যায়। তারা বলেন, প্রতি একর জমিতে উৎপাদনে খরচ হয় ৬০-৭০ হাজার টাকা। আর ফসল বাজারে বিক্রি প্রায় দু থেকে তিন গুণ লাভ হচ্ছে।
কৃষক কবির বলেন, ‘আমি সামন্য কিছু জমিতে করলা বীজ রোপণ করে সময় মতো পরিচর্যা করে অল্প খরচে দ্বিগুণ লাভ করেছি। এ মৌসুমেই মাচা পদ্ধতিতে করলা চাষ করে ভালো ফলন হওয়ায় মোটামুটি লাভবান হয়েছি। তবে, সরকারি সহযোগিতা কিংবা প্রণোদনা হিসেবে সার বীজ, কিটনাশক পেলে ফসল উৎপাদনে কৃষকের আগ্রহ আরও বাড়বে।’
কৃষক কবির আরও বলেন, ‘মৌসুমি সবজি করলা, বেগুন, লাউ, পেঁপে, চিচিঙ্গা, টমেটো, সিম, ফুলকফি, বাধাকপি, লালশাক, আলু, চাষে উৎসাহ জোগাতে কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শ দিয়ে পাশে থাকার আহ্বান জানান।’
নওগাঁ জেলার আত্রাই উপজেলার মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি আহসানগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশনে ঢাকাগামী সকল আন্তঃনগর ট্রেনের স্টপেজ পুনরায় চালু ও স্টেশনটির সংস্কারের দাবিতে রোববার সকাল ৯টায় আহসানগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশনে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আত্রাই উপজেলাবাসীর উদ্যোগে আয়োজিত এ মানববন্ধনে অংশ নেন আত্রাইয়ের বিভিন্ন ইউনিয়নসহ পার্শ্ববর্তী রাণীনগর, বাগমারা ও সিংড়া উপজেলার হাজারও সাধারণ মানুষ।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, আহসানগঞ্জ স্টেশন এ অঞ্চলের মানুষের যাতায়াত, ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের প্রাণকেন্দ্র। সকল আন্তঃনগর ট্রেনের স্টপেজ না থাকায় চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন যাত্রীরা।
মানববন্ধনে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী মনোনীত এমপি প্রার্থী ও আত্রাই উপজেলার ৪নং পাঁচুপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খবিরুল ইসলাম এবং আত্রাই নতুন বাজার বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবু শাহীন।
তারা বলেন, ‘আহসানগঞ্জ স্টেশন শুধু আত্রাই নয়, আশপাশের কয়েকটি উপজেলার মানুষের জীবন ও জীবিকার সঙ্গে জড়িয়ে আছে। তাই ঢাকাগামী সকল আন্তঃনগর ট্রেনের এখানে স্টপেজ দেওয়া ও স্টেশনটির সংস্কার এখন সময়ের দাবি।’
এ সময় মানববন্ধনে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, ব্যবসায়ী, শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
বক্তারা অবিলম্বে আহসানগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশনে সকল আন্তঃনগর ট্রেনের নিয়মিত স্টপেজ চালু ও স্টেশনটির অবকাঠামোগত সংস্কার দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য রেল মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি জোর দাবি জানান।
শরৎ বিদায় নিচ্ছে, হেমন্তের পরশে প্রকৃতি যখন শীতের আগমনের প্রস্তুতি নিচ্ছে- ঠিক তখনই টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৮ কিলোমিটার দূরে ধলাপাড়া ইউনিয়নের শহরগোপিনপুর এলাকার খালপাড়ে দেখা মিলছে অতিথি পরিযায়ী পাখির ঝাঁক।
প্রতি বছরের মতো এবারও তারা এসেছে হাজার মাইল দূরের শীতপ্রধান সাইবেরিয়া ও উত্তরাঞ্চলীয় দেশগুলো থেকে। এখানে তারা ডিম ফোটানো, বাচ্চা বড় করা ও কিছু সময় কাটানোর জন্য অবস্থান নেয়।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, উপজেলার পূর্বাঞ্চলীয় পাহাড়ি জনপদ শহরগোপিনপুরে ভোর থেকে বিকেল পর্যন্ত খাল ও বিলজুড়ে নানা রঙের অতিথি পাখির আনাগোনা চোখে পড়ে। সকালবেলায় ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি খাবারের সন্ধানে বিলে নেমে আসে, আবার বিকেলে দলবেঁধে ফিরে যায়। পাখিদের এমন অবাধ বিচরণ ও কলকাকলি দেখে বিমোহিত হচ্ছেন এলাকাবাসী ও পথচারীরা।
তবে আনন্দের এই দৃশ্যের মাঝেও রয়েছে দুঃসংবাদ- শিকারিদের সক্রিয়তা। স্থানীয়দের অভিযোগ, কিছু শিকারি ছদ্মবেশে খাল-বিলে ঘোরাফেরা করে বিষটোপ ও জাল পেতে পাখি ধরে নিয়ে যাচ্ছে। এতে ধীরে ধীরে এই প্রাকৃতিক সৌন্দর্য হুমকির মুখে পড়ছে।
ইতোমধ্যে নেদার বিল ও চাপড়া বিলে এসেছে নানা প্রজাতির অতিথি পাখি। স্থানীয়দের মতে, এখানে বেশি দেখা যাচ্ছে বড় পানকৌড়ি, পাতি-কুট, গিরিয়া হাঁস ও তিলা হাঁস। পাশাপাশি বছরজুড়ে কিছু দেশীয় বিরল প্রজাতির পাখিও এখানে আশ্রয় নেয়। ফলে এসব বিল এখন পাখিদের জন্য নিরাপদ আবাসস্থল হিসেবে পরিচিতি পাচ্ছে।
গোপিনপুর গ্রামের শাহাদত হোসেন জানান, সাধারণত নভেম্বর মাসের শেষ দিকে পাখি আসা শুরু হয়। কিন্তু এবার অক্টোবরের শেষ দিক থেকেই ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি আসতে শুরু করেছে। প্রতিদিন ভোরে বিলে নেমে তাদের কলকাকলিতে মুখরিত হয়ে ওঠে চারপাশ।
ধলাপাড়ার আষাঢ়িয়াচালা এলাকার হাবিবুর রহমান বলেন, ‘বালি হাঁস, পাতি সরালি, বেগুনি কালিমসহ নানা প্রজাতির হাঁস আসছে। তারা খাল ও বিলের চারপাশে কচুরিপানার ভেতর অবস্থান করছে। এখন পুরো এলাকা যেন পাখির রাজ্য।
অন্যদিকে স্থানীয় রফিকুল ইসলাম জানান, ‘দিনে গরু-মহিষ চড়ানোর অজুহাতে কিছু লোক হাওরে ঘোরাফেরা করে। সুযোগ বুঝে তারা বিষটোপ বা জাল ফেলে পাখি ধরে। রাতেরবেলাতেই তাদের আসল শিকার শুরু হয়।’
পাখি গবেষক ও আলোকচিত্রী মোহাম্মদ কামাল হোসেন বলেন, ‘ঘাটাইলের বিস্তীর্ণ বনভূমি, খাল-বিল ও নদী এলাকায় পানকৌড়ি, ডাহুক, জলপিপি, সরালি, বালি হাঁসসহ অসংখ্য প্রজাতির পাখির সমাগম ঘটে। এসব দৃশ্য ধারণ করতে অনেক ফটোগ্রাফার ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেন। তবে এসব পাখির টিকে থাকার জন্য নিরাপদ আবাস গড়া ও শিকার বন্ধে প্রশাসনিক পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।’
ঘাটাইল ব্রাহ্মণশাসন সরকারি কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সাবেক শিক্ষক জুলফিকার-ই-হায়দার বলেন, ‘উত্তরের সাইবেরিয়া অঞ্চলে তীব্র তুষারপাতের কারণে এই পাখিরা উষ্ণতার খোঁজে আমাদের দেশে আসে। তারা প্রতি বছর একই পথে উড়ে আসে এবং এই অভ্যাস থেকে সরে আসে না। এ কারণে তাদের ‘পরিযায়ী পাখ’ বলা হয়।’
শীতের আগমনে ঘাটাইলের খাল-বিল এখন পরিণত হয়েছে অতিথি পাখির অভয়ারণ্যে। প্রকৃতিপ্রেমীরা যেমন উপভোগ করছেন তাদের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য, তেমনি স্থানীয়রা চান- এই অতিথিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রশাসন ও সচেতন মহল একসঙ্গে এগিয়ে আসুক।