কুমিল্লায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ মিছিল ও গণমিছিল কর্মসূচিতে হামলার ঘটনা ঘটেছে। অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা-কর্মীরা এই হামলা ও গুলি চালিয়েছে। এ ঘটনায় ১২ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন এবং শিশুসহ ৫ জন গুলিবিদ্ধের ঘটনা ঘটেছে। আজ শনিবার জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ঘুরে এ খবর পাওয়া গেছে।
শনিবার শিক্ষার্থীরা জিলা স্কুল থেকে কান্দিরপাড়ের পূবালী চত্বরে এসে বিক্ষোভ কর্মসূচি ও গণমিছিল করতে গেলে সাউন্ড গ্রেনেড তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ। এরপর কুমিল্লা মহানগর ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ আওয়ামীপন্থি রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্তরা শিক্ষার্থীদের মিছিল লক্ষ্য করে গুলি চালায়। এ সময় শিক্ষার্থীদের বেধড়ক মারধর করা হয়।
সরেজিমনে দেখা যায়, কুমিল্লা জিলা স্কুল থেকে সকাল ১০টায় প্রতীকী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করে ১১টায় বিক্ষোভ কর্মসূচি ও গণমিছিল করার জন্য শিক্ষার্থীরা জড়ো হতে থাকেন। এ সময় শিক্ষার্থীদের প্রথমে নানা হুমকি-ধমকি দিয়ে বাসায় ফেরত পাঠানোর চেষ্টা করা হয়। তারপরও শিক্ষার্থীরা জড়ো হওয়ার চেষ্টা করলে তাদের ছত্রভঙ্গ করার জন্য পুলিশ প্রথমে সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। পরবর্তীতে শিক্ষার্থীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়লে কুমিল্লা মহানগর ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ আওয়ামীপন্থি রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্তরা শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। এ সময় হামলাকারীদের হাতে রামদা ও অন্যান্য দেশীয় অস্ত্র দেখা যায়।
শিক্ষার্থীরা পূবালী চত্বর থেকে ছত্রভঙ্গ হয়ে পুলিশ লাইন্সের দিকে জড়ো হয়ে শাসনগাছার দিকে মিছিল নিয়ে এগোতে থাকলে সেখানে আরেক দফা তাদের ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা-কর্মীরা।
এই হামলার সময় সাংবাদিকদেরও পেশাগত দায়িত্ব পালনে বাধা দেওয়া হয়। স্থানীয় দৈনিক কুমিল্লার কাগজের এক সাংবাদিককে মারধর ও তার মোবাইল ফোন ভেঙে ফেলা হয়।
কুমিল্লা সদর হাসপাতালের রেসিডেন্সিয়াল মেডিকেল অফিসার (আরএমও) আবদুল করিম জানান, সেখানে ছয়জন শিক্ষার্থী চিকিৎসা নিয়েছেন। তাদের মধ্যে দুজন রাবার বুলেটে আহত হয়েছেন। কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ড. ফজলে হাসান রাব্বি জানান, হাসপাতালে মোট ছয়জন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছেন। তাদের চিকিৎসা করা হয়েছে।
এ ছাড়া কুমিল্লার দুই হাসপাতাল মিলিয়ে মোট পাঁচজন শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। কুমিল্লা শহরের বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে আরও বেশকিছুসংখ্যক আহত শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছেন। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের সাইফুল ইসলাম সোহান নামে এক শিক্ষার্থী হামলায় গুরুতর আহত হয়েছেন।
মিয়ানমারের সীমান্ত থেকে ছোড়া গুলি এসে পড়ছে টেকনাফ স্থলবন্দরে। তাই স্থলবন্দরের সব কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে। আজ বুধবার বিষয়টি গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আদনান চৌধুরী।
টেকনাফ স্থলবন্দরের ব্যবস্থাপক জসিম উদ্দিন জানান, ১৮ সেপ্টেম্বর বুধবার দুপুর দেড়টার দিকে মিয়ানমার সীমান্ত এলাকা থেকে টেকনাফ স্থলবন্দরে পর পর ৩টি গুলি এসে পড়ে। একটি গুলি স্থলবন্দরের অফিসে এসে পড়লে অফিসের কাঁচ ভেঙে যায়। দ্বিতীয় গুলি এসে পড়ে স্থলবন্দরের মালামাল বহনকারী ট্রাকে। অপরটি নারিকেল গাছে এসে লাগে।
তিনি বলেন, স্থলবন্দরে কর্মরত সবার মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ভয়ে সবাই স্থলবন্দর থেকে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যায়। আপাতত স্থলবন্দরের সব কার্যক্রম বন্ধ করা হয়েছে।
মিয়ানমারের ওপারে তোতারদিয়া দ্বীপে দুই পক্ষের ব্যাপক সংঘর্ষের কারণে গত কয়েকদিন ধরে টেকনাফ স্থলবন্দরসহ সীমান্ত এলাকায় গুলি এসে পড়ছে বলে জানান স্থানীয়রা।
বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপ পরবর্তী সৃষ্ট নিম্নচাপের কারণে আজ সোমবার তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেতের আওতায় উপকুলীয় জেলা ঝালকাঠি। বৈরী আবহাওয়া বিরাজ করায় জেলার লোকজনের স্বাভাবিক কাজ-কর্ম বিঘ্নিত হচ্ছে। শহরে দোকাটপাট খুলেছে কম। তবে এতে বেশি বিপাকে পড়েছেন খেটে খাওয়া দিনমজুরেরা।
নিম্নচাপের ফলে জোয়ারের পানিবৃদ্ধিসহ টানা তিন দিনের ভারি বর্ষনে তলিয়ে গেছে ঝালকাঠির নিম্মাঞ্চল। দুশ্চিন্তায় নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে মাছের ঘের মালিকরা। ভারী বৃষ্টিতে শহরাঞ্চলের বাসিন্দাদেরও দুর্ভোগের কমতি নেই। জোয়ারের পানি শহরে না ঢুকলেও শুক্রবার থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাত হওয়ায় শহরের কোথাও কোথাও হাঁটু সমান পানি জমেছে। অফিস-আদালত, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং অনেক বসত ঘরেও পানি ডুকেছে। এতে চরম ভোগান্তিতে পরেছে শহরবাসি।
গত ৪ দিনের বৈরী আবহাওয়ায় নিম্ম আয়ের মানুষরা অনেকটাই বেকার দিন কাটাচ্ছেন। বৃষ্টিতে সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে ইমারত নির্মান শ্রমিকদের কাজ। গত দু'দিন ঝালকাঠি থেকে রাজধানী ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়নি কোনো যাত্রীবাহি লঞ্চ। ঘাটে পণ্য ওঠা নামা ও পরিবহণ কাজের শ্রমিকরাও পাড় করছেন অলস সময়।
স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে নদী তীরবর্তী শহর ও গ্রামের অধিকাংশ এলাকা। জেলা শহরের সুগন্ধা নদী পাড়ের পৌরসভা খেয়াঘাট, কাঠপট্টি, কলাবাগান, সুতালড়ি এলাকার নিচু অংশ পুরোটাই ডুবে গেছে।
বিষখালী নদীর তীরবর্তী কাঁঠালিয়া উপজেলার অনেক বাড়িঘর ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেরর আঙিনা তলিয়ে গেছে। রাজাপুর উপজেলার চরাঞ্চলের বাসিন্দাদের একই অবস্থা। নলছিটির সরই এবং ফেরীঘাট এলাকার সুগন্ধার তীরের আবাসনের বাসিন্দারা অনেকটাই পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে।
এদিকে গত ২৪ঘন্টায় ঝালকাঠিতে ১৩৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অফিস। মাঝে মাঝে বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘন্টায় ৪৫ কিলোমিটার। সোমবার বরিশালের আবহাওয়া অফিসের উচ্চ পর্যবেক্ষক প্রণব কুমার রয় এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ড ঝালকাঠির নির্বাহী প্রকৌশলী একেএম নিলয় পাশা সোমবার দুপুরে জানিয়েছেন, 'সুগন্ধা, বিষখালী এবং হলতা ঝালকাঠির এই প্রধান তিনটি নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে এখনো পানির উচ্চতা বিপৎসীমা অতিক্রম করেনি।'
কক্সবাজার উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা) ও রোহিঙ্গা স্যলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও) সন্ত্রাসীদের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। এতে দুইজন নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
আজ সোমবার ভোরে উখিয়ার জামতলী ও কুতুপালং লাল পাহাড়ে এ ঘটনা ঘটে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি শামীম হোসেন।
নিহতদের একজন হলেন উখিয়ার ১৫ নম্বর জামতলী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের এ-৮ ব্লকের বাসিন্দা নুরুল বশর (৫৫)। তাৎক্ষণিকভাবে অপরজনের নাম ও ঠিকানা জানা যায়নি।
ওসি শামীম হোসেন জানান, সোমবার ভোরে উখিয়ার জামতলী লাল পাহাড় ক্যাম্পে আরসা ও আরএসওর দুইটি গ্রুপের মধ্যে গোলাগুলি শুরু হয়৷ পাল্টা-পাল্টি গোলাগুলি চলে। বেশ কিছুক্ষণ পরে প্রশাসনের উপস্থিতি টের পেয়ে পালিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা। ঘটনাস্থল তল্লাসীর সময় মিলে দুইজনের মরদেহ।
তিনি আরও জানান, মরদেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। আইনি ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলেও জানান তিনি।
গত তিনদিনের টানা বৃষ্টিতে নাকাল হয়ে পড়েছে চুয়াডাঙ্গার জনজীবন। একই সঙ্গে দমকা বাতাস বৃষ্টিস্নাত আবহাওয়াকে আরও শীতল করে তুলেছে। আজ সোমবারও সকাল থেকে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। চুয়াডাঙ্গা শহরের শহীদ হাসান চত্বরসহ গুরুত্বপূর্ণ জনবহুল এলাকা প্রায় ফাঁকা দেখা গেছে। টানা বৃষ্টিতে ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে খেটে খাওয়া ছিন্নমূল মানুষগুলো। বৃষ্টিতে সময় মতো কাজে যেতে পারছেন না তারা। খুব প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছেন না কেউ।
চুয়াডাঙ্গা শহরের শহীদ হাসান চত্বরের ভ্যানচালক করিম আলী বলেন, ‘তিনদিন থেকে একটানা বৃষ্টি হচ্ছে, সঙ্গে দমকা বাতাসও। বৃষ্টির কারণে মানুষ বাইরে বের হচ্ছে না। সকাল থেকে কোনো ভাড়া হচ্ছে না। ভাড়া না হলে খাবো কী?’
চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, গত ২৪ ঘন্টায় চুয়াডাঙ্গায় ১০৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এসময় বাতাসের গড় গতিবেগ ছিল ঘন্টায় ৩০-৩৫ কিলোমিটার। তবে, আজ আবহাওয়ার কিছুটা উন্নতি হতে পারে বলেও আবহাওয়া বার্তায় বলা হয়।
এদিকে, গত তিনদিনের টানা বৃষ্টি ও দমকা বাতাসে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ফসলের। লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে ফসলের মাঠ। পানিতে তলিয়ে গেছে ধান, কলা, শিমসহ উঠতি ফসল। ধান, শিম, কলা, পেঁপেসহ অন্যান্য মৌসুমি ফসলের বেশি ক্ষতি হয়েছে। ফলে ব্যাপক লোকসানের মুখে পড়বেন বলে আশঙ্কা করছেন কৃষকরা। তবে, ক্ষতির সঠিক পরিমাণ নিরুপণ করতে পারেনি কৃষি বিভাগ।
দামুড়হুদা উপজেলার নতিপোতা গ্রামের কৃষক আবুল হাশেম বলেন, ‘বৃষ্টি আর দমকা বাতাসে আমার সব ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। আমার ধান ও কলার ক্ষেত ডুবে গেছে। যা খরচ করেছিলাম তা আর উঠবে না।’
এ বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মাসুদুর রহমান সরকার বলেন, ‘গত তিন দিনের প্রতিকূল আবহাওয়ায় ধান, পেঁপে, কলা, পান ও মৌসুমী সবজিসহ ৮টি ফসলের ৫ শতাংশ আক্রান্ত হয়েছে। তবে কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা এখনও বলা যাচ্ছে না। ক্ষয়ক্ষতি পরিমাণের কাজ চলছে।’
বৈরী আবহাওয়ার কারণে প্রায় ৪৬ ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে লঞ্চ ও ফেরি চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে। আজ সোমবার সকাল ৯টা থেকে এই নৌরুটে চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে বলে জানা যায়।
বিআইডব্লিউটিএ দৌলতদিয়া ঘাট সূত্রে জানা গেছে, বৈরী আবহাওয়ার কারণে গত শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১টা থেকে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে দূর্ঘটনা এড়াতে লঞ্চ চলাচল বন্ধ রাখে কর্তৃপক্ষ।
বিআইডব্লিউটিএ দৌলতদিয়া লঞ্চ ঘাটের ট্রাফিক সুপারভাইজার মো. শিমুল বলেন, বৈরী আবহাওয়ার কারণে নদী উত্তাল থাকায় শনিবার বেলা ১১ টা থেকে লঞ্চ চলাচল বন্ধ রাখা হয়। আজ সোমবার আবহাওয়া ভালো থাকায় সকাল ৯টা থেকে পুনরায় লঞ্চ চলাচল শুরু হয়েছে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন (বিআইডব্লিউটিসি) দৌলতদিয়া কার্যালয়ের সহকারী উপমহাব্যবস্থাপক সালাহ উদ্দিন বলেন, বৈরী আবহাওয়া ও ঝড়ো বাতাসের কারণে গত শনিবার ভোর চারটার পর থেকে সকাল সাড়ে আটটা পর্যন্ত সাড়ে চার ঘণ্টা ফেরি চলাচল বন্ধ ছিল। এরপর থেকে সতর্কতার সঙ্গে ফেরি চলছে।তবে ঘাটে তেমন কোন যানবাহন ও যাত্রী নেই।ফেরিগুলো ঘাটে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে কিছু যানবাহন ও যাত্রী নিয়ে পাটুরিয়া ঘাটে যাচ্ছে।
বর্তমানে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে ছোট-বড় ৮টি ফেরি চলাচল করছে এবং দৌলতদিয়া প্রান্তে ৩, ৪ ও ৭ নম্বর ঘাট দিয়ে ফেরিতে যানবাহন পারাপার হচ্ছে। বর্তমানে ফেরি চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।
আড়ম্বরপূর্ণ আয়োজনের মাধ্যমে দিনাজপুরে জিএমডি (রেজিঃ নং-বি-২০৯৫) শ্রমিক-কর্মচারিদের কর্মী সম্মেলন ও সদস্য পরিচিতি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল শনিবার দিনাজপুরের দশমাইলের পূর্ব সাদীপুর পাওয়ার গ্রিডে এই অনুষ্ঠান হয়েছে।
এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পিজিসিবি শ্রমিক কর্মচারি ইউনিয়নের (কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি) সভাপতি মো. বাবর আলী। প্রধান আলোচক হিসেবে ছিলেন সংগঠনটির যুগ্ম সম্পাদক মো. এমদাদুল হক। এছাড়া অনুষ্ঠানে সংগঠনের অন্যান্য নেতৃবৃন্দ উপস্থিত থেকে বক্তব্য দিয়েছেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে মো. বাবর আলী বলেন, ‘আজকের অনুষ্ঠানে ঢাকা থেকে আগত নেতৃবৃন্দসহ স্থানীয় আমার প্রাণ প্রিয় সকল কর্মকর্তা-কর্মচারিদের শুভেচ্ছা জানাই। আজ আমরা একটি ঐতিহাসিক বিজয় অর্জনের পর প্রাণ-মন খুলে একত্রিত হয়েছি। আজকে আমরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে শ্রমিক ঐক্যকে সঙ্গে নিয়ে নিজেদের মনের ভাব প্রকাশ করতে পারছি। যা কদিন আগেও সম্ভব ছিলো না। আমরা এখন মনের ভাব প্রকাশের একটা সুযোগ পেয়েছি। এজন্য আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া।’
তিনি আরও বলেন, ‘এ দেশের সকল শ্রমিক ভাই-বোনেরা একটা সময় দুর্বিসহ যন্ত্রণা ও আঘাতগ্রস্ত সময় পার করেছেন। আমরা কঠিন এক নির্যাতনের সময় পার করেছি। আল্লাহপাকের উছিলায় এবং তাঁর লীলায় শেখ হাসিনার পতন হয়েছে। সে পলায়ন করেছে। সে পালানোর আগে এদেশে শিশু-কিশোর, ছাত্র-জনতাসহ মা-বোনদের উপর গুলি চালিয়ে একটা অস্থিতিশীল করতে চেয়েছিল। ছাত্র-জনতার তাজা রক্তের বিনিময়ে এবং আল্লাহর অশেষ রহমতে এদেশ রক্ষা পেয়েছে। আমরা মনের কথা বলার সুযোগ পেয়েছি।’
অনুষ্ঠান পরিচালনা এবং সঞ্চলনার দায়িত্বে ছিলেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সাবেক উপদেষ্টা গোলাম মোস্তফা চঞ্চল। মোকসেদ আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন মেনটেনেন্স অফিসার রিয়াজ উদ্দিন, ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল মতিন, পিজিসিবি ডিপ্রকৌস দিনাজপুরের সভাপতি মো. জায়েদুল ইসলাম (উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী, জিএমডি, দিনাজপুর), রংপুর- দিনাজপুরের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মোশাররফ হোসেন, সহ- সভাপতি জসিম উদ্দিন বাদশা, জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল দিনাজপুরের নেতা এবং জাতীয়তাবাদী নেসকো বিদ্যুৎ শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের নেতা কামরুল হায়দার ও মো. দেলোয়ার হোসেনসহ স্থানীয় বিএনপি নেতা মতিউর রহমান মতি প্রমুখ।
বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল এবং তৎসংলগ্ন উত্তর-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সুস্পষ্ট লঘুচাপটি ঘনীভূত হয়ে নিম্নচাপ থেকে গভীর স্থল নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। এটি গতকাল যশোর এলাকায় অবস্থানের পর আরও উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এ সময় মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর সক্রিয় থাকায় উত্তর বঙ্গোপসাগরে তা প্রবল অবস্থায় রয়েছে। ফলে সাগরবর্তী কক্সবাজার, চট্টগ্রাম-নোয়াখালীসহ আশপাশের এলাকাগুলোতে প্রবণ বর্ষণে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। কক্সবাজারে গত শুক্রবার সৃষ্ট বন্যা পরিস্থিতির কারণে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। কক্সবাজার শহর এলাকায় দেখা দেওয়া জলাবদ্ধতা গতকাল খানিকটা কমে গেলেও জেলা সদরসহ ৬ উপজেলার অন্তত ২ শতাধিক গ্রাম পানিবন্দি রয়েছে। এদিকে প্রবল ঝড়ের কারণে সাগর উত্তাল থাকায় কক্সবাজার ও নোয়াখালীর হাতিয়ায় অন্তত ২০টি মাছ ধরার ট্রলারডুবির ঘটনা ঘটেছে। এসব ট্রলারে থাকা শতাধিক জেলে এখনো নিখোঁজ। গতকাল তাদের মধ্যে ৫ জনের মরদেহ সৈকতে ভেসে আসার পর সেগুলো উদ্ধার করা হয়েছে। সাগর উত্তাল থাকায় বন্ধ হয়ে গেছে ভোলা-বরিশাল-লক্ষ্মীপুর জেলায় লঞ্চ চলাচল। আজ ঢাকাসহ ৫ বিভাগের কোথাও কোথাও অতি ভারী বর্ষণের সম্ভাবনার কথাও জানিয়েছে আবহাওয়া বিভাগ।
কক্সবাজার প্রতিনিধি জানান, কক্সবাজারে গত শুক্রবারের তুলনায় গতকাল শনিবার বৃষ্টি কিছুটা কমেছে। এ পরিস্থিতিতে কক্সবাজার শহরে জলাবদ্ধ এলাকা থেকে পানি নেমে গেলেও বেড়েছে প্লাবিত এলাকার সংখ্যা। জানা গেছে, জেলা সদরসহ ৬ উপজেলার অন্তত ২ শতাধিক গ্রাম পানিবন্দি রয়েছেন।
এদিকে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় সাগরে মাছ ধরতে যাওয়া ৮টি ফিশিং ট্রলারসহ অন্তত ৭০ জেলে নিখোঁজের তথ্য জানিয়েছেন মালিকরা। এর মধ্যে ৫ জনের মরদেহ সাগরের উপকূলে ভেসে এসেছে বলে জানা যায়।
কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ আব্দুল হান্নান জানান, শুক্রবার দুপুর ১২টা থেকে শনিবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় মোট বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ২১০ মিলিমিটার। বৃষ্টি কিছুটা কমলেও ভারী বৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে। এর আগে গত বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা থেকে শুক্রবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ৫০১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। যা কক্সবাজারের ইতিহাসের সর্বোচ্চ বৃষ্টি। এর আগে ২০১৫ সালের আগস্ট মাসে ৪৩৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছিল।
এদিকে টানা তিন দিনের ভারী বর্ষণে জেলার চকরিয়ায় বিভিন্ন নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে নদীভাঙনের কবলে পড়েছে শতাধিক ঘরবাড়ি। পৌর শহরের বাঁশঘাট এলাকায় মাতামুহুরি নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করে ১৫টি ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়।
অন্যদিকে, বৃষ্টি কমে যাওয়ায় কক্সবাজার শহরের পরিস্থিতি কিছুটা উন্নত হয়েছে। পর্যটন জোন কলাতলীর হোটেল মোটেল এলাকার সকল সড়ক, সৈকত-সংলগ্ন এলাকা, মাকের্ট এলাকা থেকে নেমে গেছে পানি। শহরের প্রধান সড়কের বাজারঘাটা, বড়বাজার, মাছবাজার, এন্ডারসন সড়ক, টেকপাড়া, পেশকারপাড়া, বার্মিজ মার্কেট এলাকা, বৌদ্ধমন্দির সড়ক, গোলদিঘিরপাড়, তারাবনিয়াছড়া, রুমালিয়ারছড়া, বাাঁচা মিয়ার ঘোনা, পাহাড়তলী এলাকা থেকেও পানি নেমে গেছে বলে জানা যায়।
তবে শহরের সমিতিপাড়া, কুতুবদিয়াপাড়া, ফদনারডেইল, নুনিয়াছড়াসহ ৮টি নিম্নাঞ্চল এখনও পানিবন্দি রয়েছে।
কক্সবাজার হোটেল মোটেল গেস্টহাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার বলেন, বৃষ্টি কমে যাওয়ায় হোটেল মোটেল জোনে এখন পানি নেমে গেছে। তবে বৃষ্টি হলেই এখন আতংক তৈরি হচ্ছে। মুহুর্তের মধ্যেই জলাবদ্ধতা হচ্ছে। নালা উন্নত করা না হলে এ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে না।
উখিয়া উপজেলা ৪০টির বেশি গ্রামের ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি থাকার তথ্য জানিয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। উখিয়ার সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে হলদিয়াপালং ও জালিয়া পালং ইউনিয়নে।
এই দুই ইউনিয়নের ৩০টি গ্রামের ৩৫ হাজারের বেশি মানুষ গত দুই দিন ধরে পানির নিচে বসবাস করছে। ঘরে পানি ঢুকে পড়ায় রান্না হচ্ছে না অধিকাংশ ঘরে।
জালিয়া পালং ইউনিয়নের লম্বরীপাড়া, ঘাটঘর পাড়া পাইন্যাশিয়া, সোনাইছড়ি, সোনারপাড়া ডেইপাড়া মনখালি, হলদিয়া পালং ইউনিয়নের চৌধুরী পাড়া, মনির মার্কেট, রুমখা পালং, বড়বিল, পাতাবাড়ি, নলবুনিয়া, খেওয়া ছড়ি, বৌ বাজার, কুলাল পাড়া, পাগলির বিল, রাজা পালং ইউনিয়নের কুতুপালং, মাছকারিয়া, লম্বাশিয়া তুতুরবিল, পিনজির কুল, রত্নাপালং ইউনিয়নের সাদৃ কাটা, পশ্চিম রত্না, খোন্দকার পাড়া, গয়াল মারা ও পালংখালী ইউনিয়নে থাইংখালী, রহমতের বিল, বালুখালী তৈল খোলা, আঞ্জুমান পাড়া ফারিবিল সহ অন্তত ৪০টি গ্রামে পানি তলিয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
উখিয়া উপজেলা পরিষদের সদ্য সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান চেয়ারম্যান রাসেল চৌধুরী জানান, বন্যায় জালিয়া পালং ও হলদিয়াপালং ইউনিয়ন এর মানুষ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
উখিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার তানভির হোসেন জানান, বন্যায় কবলিত এলাকার মানুষের জন্য জেলা থেকে বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। বিভিন্ন এনজিওর মাধ্যমেও সহযোগিতার চেষ্টা করা হচ্ছে।
এদিকে বৃষ্টিতে চকরিয়া-পেকুয়ার বিভিন্ন নিন্মাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। মাতামুহুরী নদীর পানি বিপদ সীমার কাছাকাছি অবস্থান করছে বলে জানা যায়। বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে বন্যার আশঙ্খা রয়েছে।
চকরিয়া উপজেলার সুরাজপুর-মানিকপুর, কাকারা, লক্ষ্যারচর, কৈয়ারবিল, বরইতলী, বিএমচর, কোনাখালী ও বদরখালী ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। অন্তত ২০ হাজার লোক পানি বন্দি রয়েছে। এছাড়া আমন ধানের ক্ষেত ও শীতকালিন বিভিন্ন সবজির চারা বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে যায়।
পেকুয়ার শিলখালী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান কামাল হোসেন বলেন, তিনদিনের টানা বৃষ্টির কারনে ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে। ইতিমধ্যে ১০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। কিছু বসতঘর ও দোকান-পাটে পানি ঢুকেছে।
এদিকে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কবলে সাগরে মাছ ধরতে যাওয়া ৮টি ফিশিং ট্রলার নিখোঁজ থাকার তথ্য জানিয়েছেন কক্সবাজার জেলা ফিশিং বোট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন।
তিনি জানান, বঙ্গোপসাগরে নিখোঁজ থাকা এসব ট্রলার ডুবে গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে কিছু জেলে সাঁতার কেটে উপকুলে ফিরেছে। উদ্ধার হয়েছে ৫ জনের মরদেহও। ফলে এসব ট্রলারের আরও অন্তত ৬৮ জেলে নিখোঁজ রয়েছে।
শনিবার সকালে কক্সবাজার সৈকতের নাজিরারটেক, পেঁচারদ্বীপ, ইনানী ও কলাতলী উপকুলে ৫ জনের মরদেহ উদ্ধার হয়েছে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তা। এর মধ্যে দুই জনের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে। এরা হলেন, বাঁশখালী উপজেলার শেখেরকিল এলাকার নুরুল আমিন (৪০), লোহাগাড়া উপজেলার চরমবা এলাকার মোহাম্মদ জালাল (৩৭) ও আব্দুল করিম (৩৫) চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের বাসিন্দা। অপর দুই জনের পরিচয় পাওয়া যায়নি। মরদেহ ৫টি কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে রয়েছে বলে জানা গেছে।
প্রবল বর্ষণে নদীভাঙন, চকরিয়ায় শতাধিক পরিবার ঘরছাড়া
দৈনিক বাংলার চকরিয়া- পেকুয়া প্রতিনিধি জানায়, টানা তিনদিনের বারিবর্ষণে কক্সবাজার চকরিয়ায় বিভিন্ন নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে নদী ভাঙ্গনের কবলে পড়ে শতাধিক ঘরবাড়ি। পৌর শহরের বাঁশঘাট এলাকায় মাতামুহুরি নদীর পানি বিপদ সীমা অতিক্রম করে ১৫ টি ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এতে আতঙ্কে ঘরছাড়া হয় শতাধিক পরিবার।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের বদরখালী পওর শাখার উপ-সহকারি প্রকৌশলী মো. জামাল মুর্শিদ জানান, শনিবার বেলা বারোটায় মাতামুহুরি নদীর পানি ৫ দশমিক ৬৩ সেন্টিমিটার অর্থাৎ বিপৎসীমার ৫৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। মাতামুহুরি নদীর বিপৎসীমা ধরা হয় ৫ দশমিক ৭ সেন্টিমিটার।
জানা গেছে, তিনদিনের ভারী বৃষ্টিপাতে চকরিয়া উপজেলার সুরাজপুর-মানিকপুর, কাকারা, লক্ষ্যারচর, কৈয়ারবিল, বরইতলী, বিএমচর, কোনাখালী ও বদরখালী ইউনিয়নের নিন্মাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। অন্তত ২০ হাজার লোক পানি বন্দি রয়েছে। এছাড়া আমন ধানের ক্ষেত ও শীতকালিন বিভিন্ন সবজির চারা বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে যায়।
হাতিয়ার মেঘনায় ১০ ট্রলারডুবি, ৮ মাঝিসহ ৫ ট্রলার নিখোঁজ
বৈরী আবহাওয়ার কারণে ঝড়ের কবলে পড়ে নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার মেঘনা নদীতে দশটি মাছ ধরার ট্রলারডুবির ঘটনা ঘটেছে। এ সময় ১৮ জন জেলেকে জীবিত উদ্ধার করা হলেও ৫টি ট্রলারসহ ৮ মাঝি এখনো নিখোঁজ রয়েছে বলে জানিয়ে পুলিশ।
গত শুক্রবার বিকেল থেকে সন্ধ্যার মধ্যে মেঘনা নদীর কয়েকটি এলাকায় এ ট্রলারডুবির ঘটনা ঘটে।
ডুবে যাওয়া ট্রলারগুলোর মালিকরা হলেন বাবর মাঝি, জান মিয়া, দেলোয়ার মাঝি, হেলাল উদ্দিন, শহীদ মাঝি, মেহরাজ মাঝি ও ইউনুছ মাঝি।
হাতিয়ার ট্রলার মালিক সমিতির সদস্য লুৎফুল্লাহিল নিশান দাবি করেন, ঝোড়ো বাতাস ও প্রচণ্ড ঢেউয়ের কবলে পড়ে হাতিয়ার মোট ১৯টি ট্রলার ডুবে গেছে। অনেকে ট্রলারডুবির সময় পার্শ্ববর্তী ট্রলারগুলোর সহযোগিতায় কূলে উঠেছেন। এখনো অনেকে নিখোঁজ আছেন।
নিঝুম দ্বীপ ইউনিয়নের বাসিন্দা মো. সোহেল বলেন, আমাদের নামার বাজার এলাকার চারটি ট্রলার ডুবে গেছে। কেউ কেউ পাড়ে উঠে আসতে পারলেও অনেকেই এখনও উঠতে পারেননি। কে এসেছেন বা কে আসেননি তার হিসাব নেওয়া কঠিন।
কোস্টগার্ড হাতিয়ার স্টেশন অফিসার সার্জেন্ট হেলাল উদ্দিন বলেন, যারা খবর দিতে পেরেছেন আমরা তাদের উদ্ধারের চেষ্টা করছি। পাশাপাশি স্থানীয় কিছু ট্রলার গিয়ে উদ্ধারকাজ করছে। এখনো অনেক ট্রলারের খবর পাওয়া যাচ্ছে না। সেসব ট্রলারগুলোর বিষয়ে আমরা খবর নিচ্ছি।
ভোলা-বরিশাল-লক্ষ্মীপুর লঞ্চ চলাচল বন্ধ
ভোলা প্রতিনিধি জানান, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া নিম্নচাপের প্রভাবে বৈরী আবহাওয়ার কারণে ভোলা-বরিশাল-লক্ষ্মীপুরসহ স্থানীয় সব নৌপথে লঞ্চ চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। একই সঙ্গে লক্ষ্মীপুর-ভোলা নৌপথের ফেরি চলাচলও বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ।
গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় বিআইডব্লিউটিএ ভোলার সহকারী পরিচালক শহিদুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি আরও জানান, সমুদ্র এলাকাভুক্ত হওয়ায় চরফ্যাশনের বেতুয়া টু ঢাকা নৌপথে লঞ্চ চলাচলও পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। তবে ভোলা-ঢাকা নৌপথে লঞ্চ চলাচল করবে।
এদিকে, শনিবার বিকালে লক্ষ্মীপুরের মজুচৌধুরীর হাট লঞ্চঘাটের দায়িত্বপ্রাপ্ত ট্রাফিক সুপারভাইজার শরীফুল ইসলাম ও ফেরিঘাটের সহ-ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) জাহেদুল হক গণমাধ্যমকে জানান, পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত লক্ষ্মীপুর-ভোলা নৌপথের ফেরি চলাচল বন্ধ থাকবে। এই নৌপথে চলাচলের জন্য ফেরি কুসুমকলি, কাবেরী, কলমিলতা, কিষানি ও কনকচাঁপা রয়েছে। আবহাওয়া ভালো হলেই সেগুলো চলাচল শুরু হবে।
ঢাকাসহ ৫ বিভাগে অতি ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা
এদিকে, আবহাওয়ার সর্বশেষ বুলেটিনে বলা হয়েছে, রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের কোথাও কোথাও ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে।
অতি ভারী বর্ষণের কারণে চট্টগ্রাম বিভাগের পাহাড়ি এলাকার কোথাও কোথাও ভূমিধস হতে পারে বলে সতর্ক করা হয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিশেষ বুলেটিনে।
আবহাওয়ার পূর্বাভাসে আরো বলা হয়েছে, রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সাথে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের কমিটি গঠন উপলক্ষে মতবিনিময় ও কর্মীসভা হয়েছে। আজ শনিবার বিকেলে সৈয়দপুর পৌর কমিউনিটি সেন্টারে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন শ্রমিকদলের রংপুর বিভাগীয় যুগ্ম আহ্বায়ক কাজী আমিরুল ইসলাম ফকু।
জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি শফিকুল ইসলাম জনির সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, বিএনপির রংপুর বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল খালেক। বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য বিলকিস ইসলাম, জেলা বিএনপির সভাপতি অধ্যক্ষ আবদুল গফুর সরকার, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শাহীন আকতার শাহীন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সামছুল আলম, জেলা সাংগঠনিক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন প্রমানিক, এম এ পারভেজ লিটন, মানোয়ার হোসেন মন্টু, কিশোরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল্লাহ আল মামুন, শওকত চৌধুরী, শওকত হায়াত শাহ, পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. শেখ বাবলু, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি হোসাইন মোহাম্মদ আরমান, সাধারণ সম্পাদক মমিনুল ইসলাম রাব্বী।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, মেধা ও দক্ষতার ভিত্তিতে প্রত্যেকটি উপজেলা পৌরসভা, ইউনিয়ন পর্যায়ে শ্রমিক দলের কমিটি গঠন করা হবে। পরে বেগম খালেদা জিয়ার রোগ মুক্তি ও মহান স্বাধীনতা সংগ্রামে যারা শহীদ হয়েছেন তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনায় বিশেষ দোয়া-মোনাজাত হয়।
রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে পাকিস্তানের জাতির জনক মুহাম্মদ আলী জিন্নাহর মৃত্যুবার্ষিকী পালনের প্রতিবাদে খুলনায় মশাল মিছিল করেছেন কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজের শিক্ষার্থীরা। একই সঙ্গে এ ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন তারা।
শুক্রবার রাতে খুলনার সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে নগরীতে এ মশাল মিছিল বের করা হয়। মিছিলে অংশ নিয়েছেন খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট), নর্থ ওয়েস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়, নর্দান ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলোজি এবং সরকারি ব্রজলাল কলেজের শিক্ষার্থীরা।
মশাল মিছিল শেষে শিববাড়ী মোড়ে শিক্ষার্থীরা সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন। সমাবেশে শিক্ষার্থীরা বলেন, পাকিস্তানের জাতির পিতা মুহাম্মদ আলী জিন্নাহর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে গত বুধবার ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবে শোকসভার আয়োজন করা হয়, যা সাধারণ শিক্ষার্থীদের মনে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। আজ আমরা সবার উদ্দেশে একটা কথা পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, ৫২ এবং ৭১-এর চেতনাকে ধ্বংস করার জন্য আমরা ২৪-এর গণ-অভ্যুত্থান করিনি। আমরা ছাত্র-জনতা ২৪-এর গণ-অভ্যুত্থান করেছি, রাষ্ট্র থেকে সমস্ত বৈষম্যকে উৎপাটনের জন্য। তবে কোনও অবস্থাতেই ৫২ এবং ৭১-এর চেতনাকে জলাঞ্জলি দেওয়া যাবে না। স্বাধীন দেশে জিন্নাহর মৃত্যুবার্ষিকী পালন মানে, আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ওপর আঘাত। অবিলম্বে এসব বন্ধ করতে হবে।
গত বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবে মুহাম্মদ আলী জিন্নাহর ৭৬তম মৃত্যুবার্ষিকী পালন করা হয়। সেই অনুষ্ঠান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এরই মধ্যে সেই অনুষ্ঠানের ব্যাপারে মন্তব্য চেয়েছে আওয়ামী লীগ। দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক পোস্টের মাধ্যমে মন্তব্য চাওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার ফেসুবক পোস্টে দলটি লিখেছে, বাংলাদেশে মুহাম্মদ আলী জিন্নাহর ৭৬তম মৃত্যুবার্ষিকী পালন, তাও জাতীয় প্রেসক্লাবে! আপনার মন্তব্য কি? সেখানে অনেকে এর প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়েছেন।
কক্সবাজারে গতকাল শুক্রবারের তুলনায় আজ শনিবার বৃষ্টি কিছুটা কমেছে। এ পরিস্থিতিতে কক্সবাজার শহরে জলাবদ্ধ এলাকা থেকে পানি নেমে গেলেও বেড়েছে প্লাবিত এলাকার সংখ্যা। এখনও জেলা সদরসহ ৬ উপজেলার অন্তত ২ শতাধিক গ্রাম পানিবন্দি থাকার খবর পাওয়া গেছে।
এদিকে দূর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় সাগরে মাছ ধরতে যাওয়া ৮টি ফিশিং ট্রলারসহ অন্তত ৭০ জেলে নিখোঁজের তথ্য জানিয়েছেন মালিকরা। এর মধ্যে ৫ জনের মরদেহ সাগরের উপকূলে ভেসে এসেছে।
কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের সহকারি আবহাওয়াবিদ আব্দুল হান্নান জানান, শুক্রবার বেলা ১২টা থেকে শনিবার বেলা ১২টা পর্যন্ত ২৪ ঘন্টায় মোট বৃষ্টিপাতের পরিমান ২১০ মিলিমিটার। বৃষ্টি কিছুটা কমলেও ভারি বৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে। এর আগে গত বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) বেলা ১২টা থেকে শুক্রবার বেলা ১২টা পর্যন্ত ২৪ ঘন্টায় ৫০১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। যা কক্সবাজারের ইতিহাসের সর্বোচ্চ বৃষ্টি। এর আগে ২০১৫ সালের আগস্ট মাসে ৪৩৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছিল।
বৃষ্টি কমে যাওয়ায় কক্সবাজার শহরের পরিস্থিতি কিছুটা উন্নত হয়েছে। পর্যটন জোন কলাতলীর হোটেল মোটেল এলাকার সকল সড়ক, সৈকত সংলগ্ন এলাকা, মাকের্ট এলাকা থেকে নেমে গেছে পানি। শহরের প্রধান সড়কের বাজারঘাটা, বড়বাজার, মাছবাজার, এন্ডারসন সড়ক, টেকপাড়া, পেশকারপাড়া, বার্মিজ মার্কেট এলাকা, বৌদ্ধমন্দির সড়ক, গোলদিঘিরপাড়, তারাবনিয়াছড়া, রুমালিয়ারছড়া, বাাঁচা মিয়ার ঘোনা, পাহাড়তলী এলাকা থেকেও পানি নেমে গেছে বলে জানা যায়।
তবে শহরের সমিতিপাড়া, কুতুবদিয়াপাড়া, ফদনারডেইল, নুনিয়াছড়াসহ ৮টি নিম্নাঞ্চল এখনও পানিবন্দি রয়েছে।
কক্সবাজার হোটেল মোটেল গেস্টহাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার বলেন, বৃষ্টি কমে যাওয়ায় হোটেল মোটেল জোনে এখন পানি নেমে গেছে। তবে বৃষ্টি হলেই এখন আতংক তৈরি হচ্ছে। মুহুর্তের মধ্যেই জলাবদ্ধতা হচ্ছে। নালা উন্নত করা না হলে এ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে না।
উখিয়া উপজেলা ৪০টির বেশি গ্রামের ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি থাকার তথ্য জানিয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। উখিয়ার সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে হলদিয়াপালং ও জালিয়া পালং ইউনিয়নে।
এই দুই ইউনিয়নের ৩০টি গ্রামের ৩৫ হাজারের বেশি মানুষ গত দুই দিন ধরে পানির নিচে বসবাস করছে। ঘরে পানি ঢুকে পড়ায় রান্না হচ্ছে না অধিকাংশ ঘরে।
জালিয়া পালং ইউনিয়নের লম্বরীপাড়া, ঘাটঘর পাড়া পাইন্যাশিয়া, সোনাইছড়ি, সোনারপাড়া ডেইপাড়া মনখালি, হলদিয়া পালং ইউনিয়নের চৌধুরী পাড়া, মনির মার্কেট, রুমখা পালং, বড়বিল, পাতাবাড়ি, নলবুনিয়া, খেওয়া ছড়ি, বৌ বাজার, কুলাল পাড়া, পাগলির বিল, রাজা পালং ইউনিয়নের কুতুপালং, মাছকারিয়া, লম্বাশিয়া তুতুরবিল, পিনজির কুল, রত্নাপালং ইউনিয়নের সাদৃ কাটা, পশ্চিম রত্না, খোন্দকার পাড়া, গয়াল মারা ও পালংখালী ইউনিয়নে থাইংখালী, রহমতের বিল, বালুখালী তৈল খোলা, আঞ্জুমান পাড়া ফারিবিল সহ অন্তত ৪০টি গ্রামে পানি তলিয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
উখিয়া উপজেলা পরিষদের সদ্য সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান চেয়ারম্যান রাসেল চৌধুরী জানান, বন্যায় উপজের ৫ ইউনিয়নে অনেক এলাকার মানুষ বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে। জালিয়া পালং ও হলদিয়াপালং ইউনিয়ন এর মানুষ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
হলদিয়াপালং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইমরুল কায়েস চৌধুরী জানান, দুই মাসের ব্যবধানে ৪ দফা বন্যায় তার ইউনিয়নের ২০টির বেশি গ্রামের মানুষ অসহায় হয়ে পড়েছে।
উখিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার তানভির হোসেন জানান, বন্যায় কবলিত এলাকার মানুষের জন্য জেলা থেকে বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। বিভিন্ন এনজিওর মাধ্যমেও সহযোগিতার চেষ্টা করা হচ্ছে।
এদিকে বৃষ্টিতে চকরিয়া-পেকুয়ার বিভিন্ন নিন্মাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। মাতামুহুরী নদীর পানি বিপদ সীমার কাছাকাছি অবস্থান করছে বলে জানা যায়। বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে বন্যার আশঙ্খা রয়েছে।
চকরিয়া উপজেলার সুরাজপুর-মানিকপুর, কাকারা, লক্ষ্যারচর, কৈয়ারবিল, বরইতলী, বিএমচর, কোনাখালী ও বদরখালী ইউনিয়নের নিন্মাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। অন্তত ২০ হাজার লোক পানি বন্দি রয়েছে। এছাড়া আমন ধানের ক্ষেত ও শীতকালিন বিভিন্ন সবজির চারা বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে যায়।
মানকিপুর-সুরাজপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আজিমুল হক বলেন, মানিকপুর এলাকায় বৃষ্টিতে নিচু এলাকার অন্তত ২শতাধিক ঘরবাড়ি বৃষ্টির পানিতে প্লাবিত হয়েছে। পাহাড়ী এলাকার বাসিন্দাদের সরিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
বরইতলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ছালেকুজ্জামান বলেন, আমার ইউনিয়নের পহরচাঁদা, গোবিন্দপুর ও ডেইঙ্গাকাটা এলাকায় অধিকাংশ ঘরবাড়ি পানির নিচে তলিয়ে গেছে। তাদের নিরাপত্তা ও শুস্ক খাবার বিতরণের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
পেকুয়ার ৭ ইউনিয়নের মধ্যে পেকুয়া সদর ইউনিয়নের মেহেরনামা, রাজাখালী, উজানটিয়া ও মগনামা ইউনিয়নের ১০টি এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ফখরুল ইসলাম জানান, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের এলাকার খোঁজখবর রাখতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পাহাড়ের পাদদেশে ও নদীর তীরবর্তী অবস্থানরত লোকজন নিরাপদে সরিয়ে যেতে উপজেলার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। দুর্যোগ মোকাবিলায় উপজেলা প্রশাসন সহায়তা করতে সবসময় প্রস্তুত রয়েছে বলেও তিনি জানান।
পেকুয়ার শিলখালী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান কামাল হোসেন বলেন, তিনদিনের টানা বৃষ্টির কারনে ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে। ইতিমধ্যে ১০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। কিছু বসতঘর ও দোকান-পাটে পানি ঢুকেছে।
এদিকে দূর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কবলে সাগরে মাছ ধরতে যাওয়া ৮টি ফিশিং ট্রলার নিখোঁজ থাকার তথ্য জানিয়েছেন কক্সবাজার জেলা ফিশিং বোট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন।
তিনি জানান, বঙ্গোপসাগরে নিখোঁজ থাকা এসব ট্রলার ডুবে গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে কিছু জেলে সাঁতার কেটে উপকুলে ফিরেছে। উদ্ধার হয়েছে ৫ জনের মরদেহও। ফলে এসব ট্রলারের আরও অন্তত ৬৮ জেলে নিখোঁজ রয়েছে।
শনিবার সকালে কক্সবাজার সৈকতের নাজিরারটেক, পেঁচারদ্বীপ, ইনানী ও কলাতলী উপকুলে ৫ জনের মরদেহ উদ্ধার হয়েছে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তা।
এর মধ্যে দুই জনের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে। এরা হলেন, বাঁশখালী উপজেলার শেখেরকিল এলাকার নুরুল আমিন (৪০), লোহাগাড়া উপজেলার চরমবা এলাকার মোহাম্মদ জালাল (৩৭) ও আব্দুল করিম (৩৫) চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের বাসিন্দা। অপর দুই জনের পরিচয় পাওয়া যায়নি। মরদেহ ৫টি কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে রয়েছে বলে জানা গেছে।
ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জে বন্ধুকে ছুরিকাঘাতে খুনের ঘটনা ঘটেছে। আজ শনিবার সকালে পীরগঞ্জ উপজেলার থুমনিয়া শালবনের পাশে একটি ধানক্ষেত থেকে নিহতের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
নিহত রাসেল ইসলাম সদর উপজেলার কাকডোব গ্রামের আনিছুর রহমানের ছেলে। এ ঘটনায় হত্যাকারি সাজেদকে জনগণ আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেছে। পীরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খায়রুল আনাম ডন এসব তথ্য নিশ্চিত করেন ।
স্থানীয়দের বরাতে ওসি বলেন, বন্ধু খুন করে রক্তাক্ত দেহ নিয়ে ঘুরছিল সাহেদ। পরে স্থানীয়রা আটক করে গায়ে রক্তের কারন জানতে চালে সে খুনের কথা স্বীকার করে। পরে স্থানীয়রা আটক করে পুলিশে দেয়।
আটক সাহেদের বরাত দিয়ে থানা পুলিশ জানায়, শুক্রবার সন্ধ্যার পর থুমনিয়া শাল বাগানে তারা দুজন নেশা করতে যায়। নেশা করা অবস্থায় তুচ্ছ বিষয় নিয়ে দুজনের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে সাহেদ তার বন্ধু রাসেলকে ছুরি দিয়ে পেটে ও গলায় আঘাত করলে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।
পুলিশ রাতেই সাহেদকে সঙ্গে নিয়ে মরদেহের সন্ধানে শালবনে যায়। অনেক খোঁজাখুজির পরও মরদেহ না পেয়ে ফিরে আসে পুলিশ।
আজ শনিবার সকালে এক কৃষক শালবনের পাশে ধান ক্ষেত পরিচর্যার জন্য গিয়ে লাশের সন্ধান পায়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ধান ক্ষেত থেকে রাসেলের মরদেহ উদ্ধার করে।