শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগ দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীদের অসহযোগ কর্মসূচি ঘিরে রোববার ঝিনাইদহ, নাটোর, নওগাঁ, নড়াইলসহ সারা দেশে ব্যাপক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এতে ঝিনাইদহে ৩০, নড়াইলে ২০, ঢাকার কেরানীগঞ্জ ৫০ জন আহত হয়েছেন। এ সময় থানায় হামলা, পুলিশ বক্স ভাঙচুর, পোস্ট অফিস, পৌরসভাসহ বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা ও বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুর করা হয়েছে।
বিস্তারিত প্রতিনিধিদের পাঠানো প্রতিবেদন
নাটোর: নাটোরে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সরকারদলীয় নেতা-কর্মীদের ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। রোববার দুপুর সোয়া ১২টার দিকে শহরের ভবানীগঞ্জ মোড় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। আন্দোলনকারীদের পূর্বঘোষণা অনুযায়ী দুপুর ১২টায় শহরের মাদ্রাসা মোড় এলাকায় বিক্ষোভ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেয় তারা। সকাল থেকে অল্প অল্প করে আন্দোলনকারীরা জড়ো হতে শুরু করে। দুপুর সোয়া ১২টার দিকে প্রায় দুই শতাধিক আন্দোলনকারী জমায়েত হয়। এ সময় আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগের নেতা-কর্মীরা তাদের প্রতিহত করতে ধাওয়া দেয়। এ সময় আন্দোলনকারীরাও তাদের ধাওয়া দিলে এবং ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে উভয়পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় বেশ কয়েকজন আন্দোলনকারীকে মারধর করে সরকারদলীয় নেতা-কর্মীরা। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ঘটনাস্থলে পৌঁছালে বিক্ষোভকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়।
অন্যদিকে নাটোরের বাগাতিপাড়ায় বিক্ষোভ মিছিল করেছে বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা। সকাল ১০টার দিকে দয়ারামপুর বাজার এলাকায় শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও সাধারণ জনতা সড়কে জমায়েত হয়ে বিক্ষোভ করে সরকারের পদত্যাগ দাবি করে বিভিন্ন স্লোগান দেয়।
নওগাঁ: নওগাঁয় বিক্ষোভ মিছিল ও সড়ক অবরোধ করেছে আন্দোলনকারীরা। রোববার সকাল ১০টা থেকে শহরের কাজীর মোড়ে জড়ো হতে শুরু করেন বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা। তাদের সঙ্গে অংশ নেন আরও অনেকে। পরে আন্দোলনকারীরা প্রধান সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। এ সময় এক দফা দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দিতে শোনা যায় তাদের। এতে বন্ধ হয়ে যায় প্রধান সড়ক দিয়ে যানচলাচল।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা শহরের সরিষাহাটির মোড়ে আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে অবস্থান নেন। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয় পথচারীদের। বিশেষ করে অটোরিকশা চালকদের। অনেক পথচারীকে হেঁটে বিকল্প রাস্তা দিয়ে যেতে দেখা যায়। মোটকথা পুরো শহরে আতঙ্কের পরিবেশের সৃষ্টি হয়। দোকানপাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। বন্ধ রয়েছে যাত্রীদের চলাচলের জন্য ভারী যানবাহন।
এদিকে সাধারণ পথচারীদের সতর্ক করতে দোকান বন্ধ করে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করছিল দোকানদার আকাশসহ অনেক ব্যবসায়ী। তারা জানান, পথচারীরা যেন কোনো বিপদের সম্মুখীন না হয়, তাই তাদের সতর্ক করে বিকল্প পথে যেতে বলছি।
দুপুরের দিকে পার্টি অফিস থেকে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা মিছিল নিয়ে আন্দোলনকারীদের দিকে আসতে চাইলে কিছু সময়ের জন্য উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। পরে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ সেনাবাহিনীর সদস্যদের সতর্ক অবস্থানের কারণে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যায়।
নওগাঁর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) গাজিউর রহমান বলেন, আন্দোলন ও বিক্ষোভের শুরু থেকেই পুলিশ তাদের সুষ্ঠু ও সুশৃঙ্খলভাবে আন্দোলন করার জন্য বলেছে। তাদের প্রতি পুলিশ সহনশীল আচরণ করছে। শিক্ষার্থীদের যাতে কোনো ক্ষতি না হয় সে জন্য তাদের নিরাপত্তা দিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। মোটকথা শহরে যেকোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা এড়াতে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।
ঝিনাইদহ: ঝিনাইদহে কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়ার সময় পুলিশসহ ৩০ জন আহত হয়েছেন। আন্দোলনকারীরা রোববার বেলা ১১টা থেকে বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত সারা শহরে তাণ্ডব চালায়। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা যোগ দেয়।
শিক্ষার্থীরা সকালে শহরের মুজিব চত্বর থেকে এবং বিএনপি হাটের রাস্তা থেকে মিছিল বের করেন। তারা পায়রা চত্বরে এসে একসঙ্গে মিলিত হয়। মিছিল থেকে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুর, থানায় হামলা, পুলিশ বক্স ভাঙচুর, পৌরসভা, ছবি তোলার সময় সাংবাদিক কাজী আলী আহমেদ লিকুর ওপর হামলা চালায়। এ ছাড়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সফিকুল ইসলাম অপুর বাড়িসহ বিভিন্ন স্থাপনায় ইটপাটকেল ছুড়ে হামলা চালায়। পুলিশ বাঁধা দিলে শুরু হয় ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়া। সে সময় পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড, কাঁদানি গ্যাস ও শর্টগানের গুলি ছোড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। একপর্যায়ে সারা শহর রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এতে পুলিশসহ অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন। ইটের আঘাতে পুলিশের এসআই শরিফুজ্জামানের মাথা ফেটে গেছে। আহতদের মধ্যে ২৪ জনকে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাকিরা বিভিন্ন ক্লিনিকে ভর্তি হয়েছেন। সকাল থেকে যানবাহন চলাচল করেনি। দোকানপাট খোলেনি। পুলিশি নিরাপত্তায় অফিস-আদালত চলেছে এবং উত্তপ্ত পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
নড়াইল: বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের অসহযোগ আন্দোলনের ডাকে রোববার বেলা ১১টায় নড়াইল সদর উপজেলার আউড়িয়া ইউনিয়নের মাদ্রাসা বাজার এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে। মিছিলে বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের কয়েক হাজার নেতা-কর্মী যোগ দেয়। মিছিলটি শহরে প্রবেশের চেষ্টা করলে চিত্রা নদীর শেখ রাসেল সেতুর ওপর উঠলে পুলিশ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা বাধা দেয়। এতে উভয়পক্ষের মধ্যে ইটপাটকেল নিক্ষেপসহ পুলিশ কয়েক রাউন্ড টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে। এতে ২০ জনের মতো আহত হন। এ সময় ঢাকা-বেনাপোল ভায়া নড়াইল মহাসড়কে যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
সংঘর্ষে পুলিশের টিয়ারসেল নিক্ষেপের পাশাপাশি কয়েক রাউন্ড গুলি চালায়। এত আল নাহিয়ান প্রিন্স নামে এক যুবলীগ কর্মী গুলিবিদ্ধ হয়ে সদর হাসপাতালে ভর্তি হন। প্রিন্স নড়াইল পৌরসভার আলাদাতপুর গ্রামের শেখ আবু বক্করের ছেলে।
সীমাখালী গ্রামের প্রত্যক্ষদর্শী মিজান মোল্লা, মিলি খানম, শিমুল হাসান জানান, সেতুর দক্ষিণ পাশেই আমার বাড়ি। অনেক বিএনপি, জামায়াত-শিবিরের ছেলেরা রাস্তার ওপর ইট ভেঙে পুলিশের দিকে ছুড়ে মারছিল। এদের হাতে হ্যান্ড মাইকও ছিল। পানি খেতে চাইলে আমরা তাদের পানি পানের ব্যবস্থা করেছি। ওরা পানি পানের সময় বসে পান করছিল। ওদের কাউকে চিনি না।
প্রিন্স জানান, ‘চিত্রা নদীর উত্তর প্রান্তে পুলিশ এবং ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতা-কর্মীরা অবস্থান নেয়। আর সেতুর দক্ষিণ প্রান্তে বিএনপি-জামায়াত শিবিরের নেতা-কর্মী অবস্থান নেয়। ইটপাটকেল নিক্ষেপের একপর্যায়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে। এ সময় অন্য প্রান্ত থেকে কয়েক রাউন্ড গুলি করা হয়। একটি বুলেট আমার পেটে লেগে বের হয়ে যায়। সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আকাশ ঘোষ রাহুলসহ উভয়পক্ষের ২০ জন আহত হন।
এদিকে ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দুজন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন এমন খবর ভেসে বেড়ালেও এর কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি।
কেরানীগঞ্জ (ঢাকা): ঢাকার কেরানীগঞ্জে আন্দোলনকারী ছাত্রদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের দফায় দফায় সংঘর্ষে মডেল থানার ঘাটারচর এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। এ সময় আন্দোলনকারীরা বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ, আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের বাড়ি, ব্যক্তিগত অফিস ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ এবং কেরানীগঞ্জ মডেল থানা আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে নেতাদের অবরুদ্ধ করে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। এ সময় আওয়ামী লীগের ডজনখানেক নেতা-কর্মী গুরুতর এবং বেশ কিছু আন্দোলনকারী সামান্য আহত হয়। এর আগে (রোববার) সকালে কেরানীগঞ্জ মডেল থানাধীন ঘাটারচর এলাকায় গত ২১ জুলাই কোটা আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত ইস্পাহানি ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থী রিয়াজ নিহত হওয়ার প্রতিবাদে ও অসহযোগ আন্দোলনের সমর্থনে পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে কেরানীগঞ্জের সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা আটি ভাওয়াল উচ্চবিদ্যালয়ের সামনে থেকে মিছিল বের করার চেষ্টা করলে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা তাতে বাধা দেয়। বাধা উপেক্ষা করে সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা মিছিল নিয়ে সামনে অগ্রসর হলে বড় মনোহরিয়া চৌরাস্তা এলাকায় ছাত্রদের মিছিলের ওপর পেছন থেকে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও গুলিবর্ষণ করে। এতে মুহূর্তেই সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা ছাত্রভঙ্গ হয়ে যায়। পরে তারা সংগঠিত হয়ে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ধাওয়া দিলে নেতা-কর্মীরা দিগ্বিদিক ছোটাছুটি করে বিভিন্ন দোকানপাটের ভেতরে আশ্রয় নেয়। এ সময় মডেল থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আবু সিদ্দিক ও তারানগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন ফারুক অবরুদ্ধ হন। পরবর্তী সময়ে স্থানীয়দের সহায়তায় তাদের উদ্ধার করা হয়। পরে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ছয়টি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ ও পাঁচটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে। এ ছাড়া স্থানীয় চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ফারুক এবং আওয়ামী লীগ নেতা আবু সিদ্দিকের বাড়িতে ব্যাপক ভাঙচুর চালিয়ে তাদের ব্যবহৃত গাড়ি পুড়িয়ে দেয়।
এর কিছুক্ষণ পরে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা পুনরায় সংগঠিত হয়ে আবারও ছাত্রদের ধাওয়া দিয়ে ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও গুলিবর্ষণ শুরু করে। এ সময় বিক্ষুব্ধ আন্দোলনকারীরা আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের ধাওয়া দিলে তারা ঘাটারচর এলাকায় কেরানীগঞ্জ মডেল থানা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের ভেতরে আশ্রয় নেয়। পরে বিক্ষুব্ধ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা আওয়ামী লীগের কার্যালয় ঘেরাও করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে এবং প্রধান ফটকে আগুন লাগিয়ে দেয়। অবস্থা বেগতিক দেখে বেশ কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতা ভবনের দ্বিতীয় তলার ছাদের ওপর গিয়ে আশ্রয় নিলে উত্তেজিত শিক্ষার্থীরা ছাদের গেট ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে তাদের গণধোলাই দেয়। এ সময় হুড়োহুড়ি করে ভবনের ভেতর ঢুকতে গিয়ে ও ভবনের ওপর থেকে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের ছোড়া ইটের আঘাতে অন্তত ২০ জন শিক্ষার্থী আহত হয়। পরে ভবনে আটকে থাকা অন্তত ১০-১৫ জন আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী আন্দোলনকারীদের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।
খুলনা: খুলনায় আওয়ামী লীগের অফিসে আগুন দিয়েছে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। রোববার বেলা ১২টার দিকে খুলনার শঙ্খ মার্কেটের জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে তারা আগুন ধরিয়ে দেয়। এ সময় শিক্ষার্থীরা শেখ হাসিনা সরকারের পতন ও জাতীয় সরকার গঠনের লক্ষ্যে নানা রকম স্লোগান দিতে থাকেন। এর আগে সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দলে দলে শিক্ষার্থীরা নগরীর শিববাড়ি মোড়ে জড়ো হতে থাকেন। বর্তমানে ওই মোড়ে প্রায় ৫/৭ হাজারের কাছাকাছি শিক্ষার্থী উপস্থিত রয়েছেন। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে একদল শিক্ষার্থী শিব বাড়ি থেকে মিছিল সহকারে খুলনার আওয়ামী লীগ অফিসের দিকে রওনা হয়ে এ অগ্নিকাণ্ড ঘটায়।
সিলেট: সিলেটের বন্দরবাজারের কোর্ট পয়েন্ট এলাকায় পুলিশের সাথে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ চলছে। বেলা ১২টার দিকে এ সংঘর্ষ শুরু হয়। পুলিশ আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে ব্যাপক টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেণেড ছুঁড়ছে। জানা যায়, অসহযোগ চলাকালে পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী বেলা ১১টার দিকে নগরের কোর্ট পয়েন্ট এলাকায় জড়ো হয় আন্দোলনকারীরা। এতে শিক্ষার্থীদের সাথে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষও যোগ দেন। এই এলাকায়ই জেলা প্রশাসক কার্যালয়, পুলিশ সুপার কার্যালয়, সিটি করপোরেশনসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সরকারি অফিস রয়েছে। আন্দোলনকারীরা অবস্থান নেওয়ার আগে থেকেই এ এলাকায় বিপুল সংখ্যক পুলিশ সাজোয়া যান নিয়ে অবস্থান নেয়। বেলা ১২টার দিকে পুলিশের সাথে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ শুরু হয়। আন্দোলনকারীদের থামাতে পুলিশ টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেণেড ছুঁড়ছে। এক পর্যায়ে পুলিশের বাধা পেয়ে মূল সড়ক ছেড়ে আশপাশের গলিতে অবস্থান নেয় আন্দোলনকারীরা।
মোংলা (বাগেরহাট): মোংলা-খুলনা মহাসড়কের ফয়লা এলাকায় (বাগেরহাটের রামপাল) আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও পুলিশের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়েছে। চলমান ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার মধ্যে একটি পুলিশ ভ্যানে আগুন দেয় আন্দোলনকারীরা। এ সময় সংবাদ সংগ্রহে গিয়ে আহত হয়েছেন বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার সাংবাদিক সবুর রানা ও সুজন মজুমদার।
এদিকে অসহযোগ আন্দোলনের অংশ নিয়ে মোংলা-খুলনা মহাসড়কের ভাগা এলাকায় সকালে বিক্ষোভ মিছিল করে শিক্ষার্থীরা। রবিবার বেলা সাড়ে ১১টায় বের হওয়া মিছিল শেষে মহাসড়কে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা। দুপুর ১২টা পর্যন্ত চলে শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন। পরে পুলিশ ও আন্দোলনকারীরা ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া জড়িয়ে পড়েন।
দিনাজপুর: জাতীয় সংসদের হুইপ ও দিনাজপুর সদর-৩ আসনের সংসদ সদস্য ইকবালুর রহিম এমপি ও বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের বাসা ভাংচুর ও আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে বিক্ষুব্ধরা। এ সময় পুলিশের দুটি পিকআপ ভ্যানে আগুন জ্বালিয়ে দেয় তারা। রাবার বুলেট ও কাঁদলে গ্যাস ছুটছে পুলিশ। সদর হাসপাতাল, জোড়া ব্রীজ, ফুলবাড়ি বাসস্ট্যান্ড, লিলির মোড়, বাহাদুর বাজার, স্টেশন রোড, কাচারী রোড, মডার্ণ মোড়, বুটিবাবুর মোড়, মুন্সীপাড়াসহ সারা শহরে আন্দোলনকারীদের সাথে পুলিশের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া চলে। শত শত রাউন্ড রাবার বুলেট ও টিয়ার শেল ছুড়েছে পুলিশ। এসব ঘটনায় ১০ জন গুলিবিদ্ধসহ আহত হয়েছে অর্ধশত ব্যক্তি।
সকাল ১০টায় দিনাজপুর ফুলবাড়ী বাসস্ট্যান্ডে আন্দোলনকারী জমায়েত হতে শুরু করে। তারা মিছিল নিয়ে শহরের হাসপাতাল মোড়স্থ হুইপ ইকবালুর রহিম এমপি ও বিচারপতি ইনায়েতুর রহিমের বাড়ির দিকে অগ্রসর হতে শুরু করলে পুলিশের সাথে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। দিনাজপুরের পুলিশ সুপার শাহ ইফতেখার আহমেদের নেতৃত্বে পুলিশ আন্দোলনকারীদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করে। দীর্ঘসময় পুলিশের সাথে সংঘর্ষের এক পর্যায়ে আন্দোলনকারীরা হুইপ ও বিচারপতির বাড়ীতে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। তারা বাড়ীতে থাকা কয়েকটি মোটরসাইকেল বের করে বাসার গেটে এনে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। জানা গেছে, ধাওয়া পাল্টা দেওয়ার সময় এবং রাবার বুলেট ও টিয়ার সেল নিক্ষেপ করে। ১০ জনের গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। সারা শহরজুড়ে থেমে থেমে আন্দোলনকারীদের সাথে পুলিশের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে। শহরের মোড়ে মোড়ে এখন আগুন জ্বলছে। এসব ঘটনা চলাকালে শহরের কোথাও সেনা সদস্য বা বিজিবির উপস্থিতি দেখা যায়নি। এর আগে শহরের পলিটেকনিক মোড়ে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ ও গ্রাফিতি অঙ্কন করে শিক্ষার্থীরা। পরে মিছিল নিয়ে শহরের দিকে অগ্রসর হলে এ সংঘর্ষে সুত্রপাত হয়।
নেত্রকোনা: নেত্রকোনায় রোববার সকাল ১০টা থেকে সরকার বিরোধী আন্দোলনকারী ও সরকারের পক্ষের সমর্থক সহ নেতাকর্মীদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়েছে। শহরের সাতপাই, নাগড়া সহ বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। জেলার শ্যামগঞ্জ বাজারের একাধিক বাসিন্দা জানান, নেত্রকোণা-ময়মনসিংহ সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে আন্দোলনকারীরা। এসময় পুলিশের একটি গাড়ি ভাঙচুর করে আন্দোলনকারীরা।
নোয়াখালী: নোয়াখালীতে রোববার সকাল থেকেই জেলা শহর মাইজদীর প্রধান সড়কে অবস্থান নেয় বিক্ষোভকারীরা। এসময় তাদের বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে রাস্তায় আগুন দিতে দেখা যায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টায় এখন কোথাও পুলিশি তৎপরতা দেখা যায়নি। সকাল ১০ টার দিকে নোয়াখালী-৪(সদর-সুবর্ণচর) আসনের সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরী তার অনুসারী নেতা-কর্মীদের নিয়ে পুড়ে যাওয়া জেলা আওয়ামী লীগ অফিস দেখতে আসেন। এসময় বিক্ষোভকারীদের সাথে তাদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এসময় কয়েক রাউন্ড গুলির শব্দ শুনা যায়। একপর্যায়ে এমপি একরাম সহ তার অনুসারীরা ব্যর্থ হয়ে জেলা শহর থেকে চলে যান। শহরেরর সব কটি সড়কে আগুন জ্বালিয়ে অবস্থান করে বিক্ষোভকারীরা।
বেলা সাড়ে ১১টার সময় সেনাবাহিনীর গাড়ী টহল দেওয়ার সময় আন্দোলনকারীরা ‘এ মুহূর্তে দরকার সেনাবাহিনীর সরকার’- স্লোগান দেয়।
কালিয়াকৈর (গাজীপুর): গাজীপুরের কালিয়াকৈরে গতকাল রোববার দিনব্যাপী সড়ক-মহাসড়ক অবরোধ করে বিভিন্ন স্লোগানে বিক্ষোভ মিছিল করেছে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনকারীরা ৩টি পুলিশ বক্স, আওয়ামী লীগের অফিস, থানার সামনে রাখা গাড়িসহ বেশকিছু যানবাহনে অগ্নিসংযোগ করে। এক পর্যায় পুলিশ ও আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মাঝে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। শিক্ষার্থীদের হামলায় ওসিসহ কয়েকজন পুলিশ সদস্য ও পুলিশের গুলিতে শিশুসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হন। থমথমে বিরাজ করছে কালিয়াকৈর।
চুয়াডাঙ্গা: চুয়াডাঙ্গা জেলাজুড়ে কর্মসূচি পালন করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা। এসময় জেলার বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নেয় শিক্ষার্থীরা। কোথাও কোথাও বিক্ষোভ প্রদর্শন করতে গেলে বাধার মুখে পড়েন তারা। ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা তাদের ওপর হামলা চালায় বলে অভিযোগ তোলেন। রোববার সকাল থেকে জেলাজুড়ে এমন পরিস্থিতি বিরাজ করছিল। সকাল থেকে চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুর সড়কের ভালাইপুর বাজারে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন আন্দোলনকারীরা। এসময় তারা একদফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে যান চলাচল বন্ধ করে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। সড়কের দু’পাশে সৃষ্টি হয় যানজট।
একই সাথে শহরের কোর্টমোড় এলাকাতেও বিক্ষোভ করতে গেলে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের বাধার মুখে পড়েন আন্দোলনকারীরা। এসময় তাদের ব্যানার ছিড়ে ফেলা হয়। শহরের হাসপাতাল সড়কে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালানো হয়। দর্শনা শহরে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে আন্দোলনকারীরা বাসস্ট্যান্ডে জড়ো হলে তাদের ওপরেও হামলা চালানো হয় বলে অভিযোগ ওঠে। এছাড়া জেলার বদরগঞ্জ, জীবননগর ও আলমডাঙ্গাতেও সড়কে নামে আন্দোলনকারীরা। এমন পরিস্থিতিতে জেলাজুড়ে আতঙ্ক ও থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।
ভৈরব (কিশোরগঞ্জ): কিশোরগঞ্জের ভৈরবে আন্দোলনকারীদের সাথে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষ চলাকালে পুলিশ প্রায় শতাধিক রাউন্ড রাবার বুলেট ও টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ করে। এসময় কমপক্ষে অর্ধশত আহত হয়। রোববার দুপুর ১২টা থেকে বিকেল সাড়ে ৩ টা পর্যন্ত ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ও স্থানীয় বাসস্ট্যান্ড, জগনাথপুর এবং কালিকাপ্রসাদ এলাকায় এ সংঘর্ষ চলে। এসময় আন্দোলনকারীরা কয়েকটি বাড়ীঘর দোকানপাট ভাংচুর করে। তবে বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে দেখা যায়নি। স্থানীয় বিএনপির কিশোর যুবকদের আন্দোলনে অংশ নিতে দেখা যায়। তারা দুপুর দেড়টার দিকে ভৈরব থানা আক্রমণ করতে চেষ্টা করলে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা মিলে আন্দোলনকারীদের সরিয়ে দেয়। এ সময় পুলিশ কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়ে।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার গায়েবানা জানাজা আজ বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) বগুড়ায় যথাযোগ্য মর্যাদা ও গভীর শ্রদ্ধার সাথে পালিত হয়েছে। বিকেলে ঢাকার মানিক মিয়া এভিনিউতে মূল জানাজা সম্পন্ন হওয়ার পরপরই বগুড়া শহরের ঐতিহাসিক আলতাফুন্নেছা খেলার মাঠে এই গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
কোনো পূর্ব আনুষ্ঠানিক প্রচারণা ছাড়াই প্রিয় নেত্রীর শেষ বিদায়ে শামিল হতে বগুড়ার সর্বস্তরের মানুষ আলতাফুন্নেছা মাঠে ভিড় জমান। জানাজায় উপস্থিত হাজারো মানুষ গগনবিদারী স্লোগান আর কান্নায় ভেঙে পড়েন। মাঠ সংলগ্ন বাইতুল হাফিজ জামে মসজিদের ইমাম হাফেজ মাওলানা মো. আব্দুল আজিজ এই জানাজায় ইমামতি করেন, যেখানে হাজার হাজার মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে।
রাষ্ট্রীয় শোকের প্রতি সংহতি জানিয়ে এবং প্রিয় নেত্রীর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) সকাল থেকেই বগুড়া শহর ছিল কার্যত অচল। শহরের প্রাণকেন্দ্র সাতমাথা থেকে শুরু করে বড়গোলা, নিউ মার্কেট ও রানার প্লাজা হকার্স মার্কেট এলাকা ঘুরে দেখা গেছে সম্পূর্ণ জনশূন্য চিত্র। ছোট-বড় দোকানপাট থেকে শুরু করে জেলা শহরের সমস্ত শপিং মল ও বিপণী বিতানগুলো ব্যবসায়ীরা নিজ উদ্যোগে বন্ধ রেখেছেন।
জানাজা শেষে বগুড়া জেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দ ও সাধারণ মানুষ বেগম খালেদা জিয়ার আত্মার মাগফেরাত কামনা করে মোনাজাত করেন। প্রিয় নেত্রীকে হারানোর শোক এখন বগুড়ার প্রতিটি ঘরে ঘরে বিরাজমান।
বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে শোকাহত গোটা দেশ। সেই শোকের ছায়া পড়েছে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরগুলোতেও। বিশেষ করে ২০১৭ সালের ভয়াবহ রোহিঙ্গা সংকটের সময় তার মানবিক ভূমিকা ও ক্যাম্প সফরের স্মৃতি নতুন করে আবেগে ভাসাচ্ছে হাজারো আশ্রিত রোহিঙ্গাকে। বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মসজিদে জোহরের নামাজের পর বেগম খালেদা জিয়ার রুহের মাগফিরাত কামনায় বিশেষ দোয়া অনুষ্ঠিত হয়। একাধিক ক্যাম্পে রোহিঙ্গা নেতাদের উদ্যোগে পৃথক দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়।
রোহিঙ্গা নেতারা জানান, চরম দুর্দিনে যখন বিশ্ব বিবেক অনেকটাই নীরব ছিল, তখন একজন প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেত্রী হিসেবে বেগম খালেদা জিয়া নিজে ক্যাম্পে এসে তাদের দুঃখ-কষ্টের কথা শুনেছিলেন। সেই মানবিক সফর আজও রোহিঙ্গাদের হৃদয়ে অমলিন হয়ে আছে।
উখিয়ার বালুখালী ক্যাম্পের রোহিঙ্গা নেতা নূর মোহাম্মদ বলেন, ‘আমরা তখন জীবন বাঁচিয়ে পালিয়ে এসেছিলাম, কোন আশার আলো ছিল না। সেই সময় বেগম খালেদা জিয়া নিজে আমাদের দেখতে এসেছিলেন। একজন বড় নেত্রী হয়েও আমাদের কষ্টকে নিজের কষ্ট মনে করেছিলেন- এটা আমরা কখনো ভুলব না।’
টেকনাফের লেদা ক্যাম্পের রোহিঙ্গা নেতা ছৈয়দ আলম বলেন, ‘তিনি শুধু ত্রাণ দেননি, তিনি আমাদের মর্যাদা দিয়েছেন। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে আমাদের ন্যায্য অধিকারের কথা তুলে ধরেছিলেন। আজ তার মৃত্যুতে আমরা একজন মানবিক অভিভাবককে হারালাম।’
রোহিঙ্গা নারী নেত্রী আব্বাসী স্মৃতিচারণ করে বলেন, ‘বালুখালী ক্যাম্পে ত্রাণ বিতরণের সময় তিনি মোবারক নামের একটি শিশুকে কোলে নিয়েছিলেন। সেই দৃশ্য আজও আমাদের চোখে ভাসে। একজন মা যেমন সন্তানের কষ্ট বোঝেন, তিনিও তেমনভাবেই আমাদের কষ্ট বুঝেছিলেন।’
রোহিঙ্গা নেতারা স্মরণ করেন, ২০১৭ সালের ৩০ অক্টোবর বেগম খালেদা জিয়া উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেন। সে সময় তিনি রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্মম নির্যাতনের তীব্র নিন্দা জানান এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কার্যকর হস্তক্ষেপের আহ্বান জানান। একই সঙ্গে নিরাপত্তা ও মর্যাদার সঙ্গে রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে প্রত্যাবাসনের দাবি তোলেন।
ওই সফরে রোহিঙ্গাদের জন্য মোট ৪৫ ট্রাক ত্রাণ নিয়ে আসা হয়। এর মধ্যে ছিল ১১০ টন চাল এবং ৫ হাজার শিশু ও ৫ হাজার সন্তানসম্ভবা নারীর জন্য বিশেষ খাবার। খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপির প্রতিনিধি দল সরাসরি ৯ ট্রাক ত্রাণ বিতরণ করে।
রোহিঙ্গা নেতা হাবিবুল্লাহ বলেন, ‘অনেক নেতা আমাদের নিয়ে কথা বলেন, কিন্তু হাতেগোনা কয়েকজন সত্যিই আমাদের পাশে দাঁড়ান। বেগম খালেদা জিয়া ছিলেন তেমনই একজন। আমরা কৃতজ্ঞ হৃদয়ে তার জন্য দোয়া করছি।’
রোহিঙ্গাদের ভাষায়, বেগম খালেদা জিয়ার মানবিক সফর ও সাহসী অবস্থান শুধু একটি রাজনৈতিক ঘটনা নয়- এটি তাদের জীবনের এক অবিস্মরণীয় মানবিক স্মৃতি। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে তারা এই স্মৃতি বহন করবে। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর পক্ষ থেকে তার রুহের মাগফিরাত কামনা করে দোয়া করা হয় এবং বলা হয়-আল্লাহ তায়ালা তাকে জান্নাতুল ফেরদৌস নসিব করুন।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে কাঁচপুর সেতু থেকে মেঘনা সেতুর টোল পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়েছে। মহাসড়কের মদনপুর এলাকায় একটি মালবাহী লরি বিকল হওয়ায় চট্টগ্রামগামী লেনে এ যানজটের সৃষ্টি হয়। গভীর রাতের বিকল হওয়া লরির যানজট বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) বিকেল ৩টা পর্যন্ত সড়কে যানজটের প্রভাব পড়ে। পরবর্তীতে মহাসড়কের চট্টগ্রামমুখী লেনে যানবাহনের ধীরগতি লক্ষ্য করা যায়। যানজট নিরসনে কাঁচপুর ও শিমরাইল হাইওয়ে পুলিশের চেষ্টা চালায়। যানজটের আটকা পড়ে চট্টগ্রামগামী লেনে চলাচলরত বিভিন্ন যানবাহনের যাত্রীরা চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন।
জানা যায়, মহাসড়কের মদনপুর এলাকায় গত মঙ্গলবার দিবাগত রাতে মালবাহী একটি লরি বিকল হয়। ওই সময়ে একটি লেনে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বিকল হওয়া লরিটি বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) বেলা ১১টার দিকে সরিয়ে নেওয়া হলে যান চলাচল শুরু হয়। যান চলাচল শুরু হলেও গতি ছিল ধীর। ফলে এ যানজট বিকেল ৩টা পর্যন্ত গড়ায়।
আসাদুল ইসলাম নামের এক যাত্রী জানান, সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল থেকে বেলা সাড়ে ১১টায় কুমিল্লার উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে দুপুর ২টার দিকে মদনপুর পর্যন্ত আসতে পেরেছেন। দুই ঘণ্টায় গন্তব্য পৌঁছানোর কথা থাকলেও ৫ ঘণ্টাও মনে হয় পারবেন না।
বাউশিয়া এলাকার কাপড় ব্যবসায়ী আব্দুল আহাদ জানান, ঢাকা থেকে রওনা হয়ে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কাঁচপুর সেতুর ঢালুতে ছিলেন। দুপুর পর্যন্ত তিনি মদনপুর পৌঁছাতে পারেননি। তা ছাড়া মহাসড়কের রাস্তায় গাড়ির চাপ বেশি ছিল। যানজটে আটকা পড়ে তিনি বিরক্তিকর পরিস্থিতিতে পড়েছেন বলে জানিয়েছেন।
সায়দাবাদ থেকে ছেড়ে আসা হিমালয় পরিবহনের বাস চালক নুরুজ্জামান জানান, গভীর রাতে মহাসড়কে গাড়ি বিকল হওয়ায় যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। পুলিশ বিকল হওয়া গাড়িটি সরিয়ে নিতে সময় নেওয়ার কারণে যানজট দীর্ঘ হয়।
কাভার্ড ভ্যানচালক মো. ইয়াসিন মিয়া জানান, রূপগঞ্জের রূপসী থেকে চট্টগ্রাম যাওয়ার উদ্দেশ্যে ছেড়ে এসে দীর্ঘ সময় যানজটে বসে থাকতে হয়েছে। যানজটে আটকে থাকায় নির্দিষ্ট সময়ে গন্তব্যে পৌঁছানো সম্ভব হবে না।
কাঁচপুর হাইওয়ে থানার ওসি আব্দুল কাদির জিলানী জানান, মদনপুর এলাকায় একটি লরি বিকল হয়ে যাওয়ার কারণে এ যানজট সৃষ্টি হয়। মহাসড়ক থেকে লরিটি দীর্ঘ সময়ের পর সরানোর কারণে দীর্ঘ হয় যানজট। লরি বিকলের কারণে অন্যান্য যানবাহন পারাপারের ধীরগতি হচ্ছিল। বেলা ১১টার দিকে লরি সরিয়ে নেওয়ার পর থেকে যান চলাচলে ধীরগতি হয়।
জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার উপর দিয়ে বহমান যমুনা, ঝিনাই ও সুবর্ণখালী নদীতে অবাদে চলছে বৈদ্যুতিক শক দিয়ে মাছ নিধন। পেশাদার, অপেশাদার জেলে ও নদীর তীরবর্তী বাস করা সাধারণ মানুষরাও সহজে বেশি মাছ শিকারের আশায় এই পদ্ধতি ব্যবহার করে মাছ শিকার করছেন। এতে করে দেশীয় মাছের উৎপাদন কমে যাওয়ার পাশাপাশি হুমকির মুখে পড়েছে নদীর জীববৈচিত্র্য।
একাধিক স্থানের স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রতিদিন এই তিন নদীতে রাতের আঁধারে বৈদ্যুতিক শক দিয়ে মাছ ধরতে আগ্রহী জেলের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। রাত ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত এ পদ্ধতিতে জেলেরা নৌকায় ইজিবাইকে ব্যবহৃত বড় ব্যাটারি নিয়ে নেমে পড়েন নদীতে। নৌকায় থাকা ব্যাটারির সাথে একটি ইনভার্টার (ব্যাটারির বৈদ্যুতিক শক্তি কমবেশি করার যন্ত্র) যুক্ত করা হয়। সেই ইনভার্টার থেকে দুটি তার বের করে একটি পানিতে ফেলে দেওয়া হয় এবং অপর তারটি একটি লোহার রডের সাথে যুক্ত করা হয়। রডের মাথায় রাখা হয় মাছ ধরার জন্য বিশেষভাবে বানানো জালি।
বিদ্যুতায়িত ওই রড ও জালি যখন নদীর পানিতে ফেলা হয় তখন জালির ৫-৭ ফুট দূরত্বের মধ্যে থাকা মাছগুলো কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে ইলেক্ট্রিক শকের কারণে পানির উপরে ভেসে ওঠে। এ সময় ভেসে ওঠা মাছগুলো জালি দিয়ে নৌকায় তোলা হয়।
সাধারণ জেলেদের অভিযোগ, কিছু জেলে বৈদ্যুতিক শক দিয়ে মাছ ধরার কারণে উপজেলার যমুনা, সুবর্ণখালী ও ঝিনাই নদীতে জাল ফেলে আগের মতো মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে বাধ্য হয়েই অনেক জেলে এই পেশা ছেড়ে দিচ্ছে। আবার কেও কেও ইলেক্ট্রিক শক দিয়ে মাছ ধরছে। তবে বৈদ্যুতিক শকসহ অবৈধ পদ্ধতিতে মাছ শিকারিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ারও দাবি জানান তারা।
উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা দেবজানী ভৌমিক বলেন, ‘আমরা উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযান চালিয়েছি। চায়না জাল ও ইলেক্ট্রিক শক দিয়ে মাছ ধরার সরঞ্জাম পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নওগাঁ জেলা শাখার ২০৬ সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে। ৬ মাসের জন্য অনুমোদিত কমিটিতে আরমান হোসেনকে আহ্বায়ক ও রাফি রেজওয়ানকে সদস্য সচিব করা হয়েছে। এ ছাড়া সাদনান সাকিবকে মুখ্য সংগঠক ও মেহেদী হাসানকে মুখপাত্র করা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সদ্য মুখ্য সংগঠকের পদ পাওয়া সাদনান সাকিব।
সন্ধ্যায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সভাপতি রিফাত রশিদ, মুখ্য সমন্বয়ক হাসিব আল ইসলাম ও সাংগঠনিক সম্পাদক মুঈনুল ইসলামের যৌথ স্বাক্ষরিত নোটিশে নওগাঁ জেলা শাখার ২০৬ সদস্য বিশিষ্ট এই আহ্বায়ক কমিটির অনুমোদন দেন।
এদিকে আলোচিত মুখ ফজলে রাব্বিকে কমিটির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়কের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আর যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয়েছে ৯ জনকে। সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব ১ জন ও যুগ্ম সদস্য সচিব ১৬ জন, সিনিয়র সংগঠক ১ জন ও সংগঠক ২৩ জন, সিনিয়র সহমুখপাত্র ১ জন ও সহকারী মুখপাত্র ১২ জনকে এবং সদস্যপদে ১৩৮ জনকে রাখা হয়েছে।
প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে মুখ্য সংগঠক সাদনান সাকিব ও আহ্বায়ক আরমান হোসেন বলেন, ‘আমরা খুবই আনন্দিত। কারণ গণঅভ্যুত্থানের পর এই প্রথম নওগাঁ জেলা শাখায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কমিটি দিয়েছে। আর আমরা যারা ছাত্র আন্দোলনে নেতৃত্বে ছিলাম তাদেরসহ অন্যান্য সহযোদ্ধা ভাইদের সাথে আলোচনা করে এই কমিটি গঠন করা হয়েছে। আমরা মনে করি এতে কারও দ্বিমত নেই।’
তারা আরও বলেন, ‘আমাদের এই সংগঠন সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক একটা প্ল্যাটফর্ম। আমরা আগে যেমন অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলেছি, আগামীতেও অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলব। কোনো রাজনৈতিক দলের অন্যায়ের কাছ মাথা নত করব না। সবসময় প্রতিবাদ অব্যাহত থাকবে।’
সাদনান সাকিব ও আরমান হোসেন বলেন, ‘আমাদের মূল উদ্দেশ্য হবে সাধারণ জনগণের হয়ে কথা বলা। অন্যায় ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলা। সর্বোপরি একটা সুন্দর নওগাঁ গড়ে তোলা।’
নেত্রকোনায় শহীদ ক্যাডেট একাডেমির পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষা বৃত্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ কৃতি মেধাবী শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা ও শুভেচ্ছা ক্লাস অনুষ্ঠিত হয়েছে। শহরের জেলা প্রেসক্লাব অডিটোরিয়ামে নেত্রকোনা শহীদ ক্যাডেট একাডেমির উদ্যোগে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে বৃত্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী মোট ১২২ জন শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন। এর মধ্যে সর্বোচ্চ নম্বর অর্জন করে প্রথম স্থান অধিকার করে শিক্ষার্থী সূর্য দত্ত। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- নেত্রকোনা জেলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল কিবরিয়া চৌধুরী হেলিম।
তিনি তার বক্তব্যে বলেন, শুধু মেধাবী হলেই চলবে না, শৃঙ্খলা ও নৈতিকতার চর্চার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মানবিক ও দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে হবে।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন- নেত্রকোনা শহীদ ক্যাডেট একাডেমির শিক্ষকরা আহসান উল্লাহ, শফিউল আলম খান, জহিরুল ইসলাম, মামুন সিরাজি ও মুক্তাদির, মান্নান। বক্তারা শিক্ষার্থীদের এই সাফল্যে অভিনন্দন জানিয়ে নিয়মিত অধ্যয়ন, শৃঙ্খলা ও নৈতিক শিক্ষার গুরুত্ব তুলে ধরেন। অনুষ্ঠানের শেষপর্বে কৃতি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা প্রদান করা হয় এবং তাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কামনা করা হয়।
শারীরিক প্রতিবন্ধিত্ব নিয়ে সমাজের কেউ কেউ ভিক্ষাবৃত্তি কিংবা অনুরূপ পন্থা অবলম্বন করে জীবিকা নির্বাহ করে। তবে অদম্য ইচ্ছা শক্তি দিয়ে শুধু নিজেকে নয়, পরিবারের হাল ধরে স্বচ্ছলভাবে জীবিকা নির্বাহ করছেন শারীরিক প্রতিবন্ধী জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার মো. আব্দুর রহিম।
একটি দুর্ঘটনার কারণে তার দুই পা সম্পূর্ণ অচল। নেই কোন নিজেদের সম্পত্তি কিন্তু শারীরিক সীমাবদ্ধতা তাকে জীবনের লক্ষ্য থেকে এক মুহূর্তের জন্যও পিছিয়ে দিতে পারেনি। বরং প্রতিদিনের সংগ্রামই তাকে আরও শক্তিশালী করে তুললেও এখন তিনি কিডনি সমস্যায় আক্রান্ত।
উপজেলার সামনে হোচিমিন পাইলট প্রিন্টিং হাউজে বসেই তিনি করে থাকেন ব্যানার, পোস্টার, লোগো, বিজনেস কার্ডসহ বিভিন্ন ডিজাইনের কাজ। আধুনিক সফটওয়্যারে দক্ষতা, সৃজনশীল চিন্তা ও নির্ভুল কাজে তিনি স্থানীয়ভাবে ইতোমধ্যেই পরিচিত একজন গ্রাফিক্স ডিজাইনার। গ্রাহকদের সঙ্গে তার আচরণ, সময়মতো কাজ সরবরাহ এবং কাজের মান সবকিছুর সমন্বয়ে তিনি হয়ে উঠেছেন সবার আস্থার জায়গা।
শরীরের দুই পা নিস্তেজ হলেও মনোবল তার অদম্য। প্রতিদিন ভোরে ঘুম থেকে উঠে শুরু করেন কর্মদিবসের প্রস্তুতি। হুইলচেয়ারের সাহায্যে তিনি চলাফেরা করেন। কর্মস্থলে আসেন সময় মতো কিন্তু বর্তমানে কিডনি সমস্যার থাকার কারণে ঠিকমত কর্মস্থলে আসতে পারছেন না।
প্রতিবেশী ও স্থানীয়রা জানান, আব্দুর রহিমের বাবার কোন সম্পত্তি নেই, দুর্ঘটনায় দুই পা হারিয়েছেন, এখন তার কিডনিতে সমস্যা। সহায়তা পেলে তিনি সুস্থ হয়ে বড় পরিসরে কাজ করতে পারবেন ও অন্যান্য প্রতিবন্ধীদের কর্মসংস্থানেও ভূমিকা রাখতে পারবেন।
জানা যায়, রহিমের বাবা মৃত ঘুতু মন্ডল ২০১২ সালে মারা যাওয়ার পর থেকেই সে সংসারের দায়িত্বভার কাঁধে নেন। নিজের কোন পৈত্রিক সম্পত্তিও নেই। নোটারির মাধ্যমে পাওয়া অন্যের চার শতক জায়গার উপরে তার মা, স্ত্রী, দুই মেয়ে ও এক ছেলে নিয়ে রহিমের বসবাস।
গত ২০০৫-২০১৫ সাল পর্যন্ত উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে কম্পিউটার অপারেটর অস্থায়ীভাবে চাকরি করতেন আব্দুর রহিম। দুই পা অচল হওয়ায় গ্রাফিক্স ডিজাইনের কাজ করলেও বর্তমানে আবার অসুস্থ হয়ে পড়ায় সংসারের চিন্তা নিয়ে তিনি দিন পার করছেন। তার পেছনে প্রতিমাসে ঔষধ ছাড়া ডাক্তার ভিজিট ও রিপোর্ট বাবদ গুনতে হয় ৬ হাজার টাকা।
প্রতিবন্ধী আব্দুর রহিম বলেন, দুই পা অচল হয়ে জীবনযুদ্ধে লড়াই করা আমার জন্য সহজ ছিল না। আমার কর্মস্থলে হোচিমিন ভাই ও পাইলট ভাইয়ের মতো মানুষ আছে। তারা শুধু হামাক বেতনই দেন না বরং নানা সময় নানাভাবে আর্থিক সহায়তা ও মানসিক সমর্থন দিয়ে পাশে দাঁড়িয়েছেন।
দোকানের স্বত্বাধিকারী পাইলট হোসেন বলেন, রহিম শুধু আমার কর্মী নয়, পরিবারের একজন সদস্য। অসুস্থতার মধ্যেও সে দায়িত্ব পালনে চেষ্টা করে। এটা আমাদের সত্যিই মন ছুঁয়ে যায়। আমরা সব সময় তাকে সম্মান করি ও পাশে থাকার চেষ্টা করি। সমাজের বিত্তবান মানুষরা যদি একটু সহযোগিতা করে, রহিমের মতো হাজারো রহিম আরও সাবলীল ভাবে এগিয়ে যেতে পারবে।
আক্কেলপুর উপজেলার সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. সাজেদুর রহমান বলেন, দুই পা অচল হওয়ার পরেও আব্দুর রহিমের জীবন সংগ্রাম সত্যিই প্রশংসনীয়। মানুষ ইচ্ছা ও চেষ্টা করলে কি না করতে পারে তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত আব্দুর রহিম। বর্তমানে তিনি প্রতিবন্ধী ভাতা পাচ্ছেন।
আজ বুধবারের (৩১ ডিসেম্বর) সূর্যটি পশ্চিমাকাশে ‘ডুবে’ যাওয়ার মধ্য দিয়ে বিদায় হবে ২০২৫ সালের। শুরু হবে নতুন বছরের সূর্যোদয়ের প্রতীক্ষার পালা। ৩১ ডিসেম্বর রাতে ২০২৬ সালকে স্বাগত জানিয়ে পালন করা হবে থার্টিফার্স্ট নাইট।
তবে, বিগত বছর ছয়েকের মতো এবারও থার্টিফার্স্ট নাইট উদযাপন নিয়ে সৈকতের বেলাভূমি বা উন্মুক্ত কোনো স্থানে আয়োজন থাকছে না কক্সবাজারে। কিন্তু পর্যটনের স্বার্থে নিয়ম রক্ষায় তারকা হোটেল ওশান প্যারাডাইজ, বেস্ট ওয়েস্টার্ন হেরিটেজ, গ্রিন নেচার, সায়মন বিচ রিসোর্ট ও কক্স-টু-ডেসহ বেশ কিছু হোটেল নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ইনডোর প্রোগ্রাম আয়োজন করছে। তবে নিয়মরক্ষায় হোটেলের অতিথি, বিদেশি পর্যটক এবং বিশেষ মেহমান বাদে এসব অনুষ্ঠানে অন্যদের শরিক হওয়ার কোনো উপায় থাকছে না।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোকের কারণে অনেকে অনুষ্ঠান সীমিত করার পরিকল্পনা নিয়েছে।
পর্যটন সংশ্লিষ্টদের মতে, প্রতি বছর থার্টিফার্স্ট নাইট উদযাপন উপলক্ষে পর্যটন নগরী কক্সবাজার লোকে লোকারণ্য হয়ে ওঠে। বিগত দেড় দশক এমন চিত্রই দিয়েছে সৈকতের বেলাভূমি। এবারও থার্টিফার্স্ট এবং বছরের শেষ সূর্যাস্ত দেখতে কক্সবাজার সৈকত ও আশপাশের পর্যটন এলাকায় অতিথি ও স্থানীয় মিলিয়ে কয়েক লাখ পর্যটক-দর্শনার্থীর সমাগমের আশা পর্যটন সংশ্লিষ্টদের। তবে, কোনো আয়োজন না থাকায় এবারের থার্টিফার্স্ট নাইট বা নতুন বর্ষ বরণকেও ‘প্রাণহীন’ বলে উল্লেখ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
জেলা প্রশাসনের পর্যটন সেলের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আজিম খান জানান, বেশ কয়েকটি হোটেল নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ইনডোর প্রোগ্রাম করার অনুমতি নিয়েছে।
ট্যুর অপারেটর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব কক্সবাজার (টুয়াক) এবং কক্সবাজার ট্যুরিস্ট ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মুহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার কারণে থার্টিফার্স্ট নাইট উৎসবের আগেই বিজয় দিবস, বড়দিন ও শীতকালীন ছুটিকে উপলক্ষ করে কক্সবাজার পর্যটকে ভরে গেছে। পর্যটকরা সমানতালে প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন, টেকনাফ, শাহপরীর দ্বীপ, ইনানী, হিমছড়ি, চকরিয়ার ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক, মহেশখালীর আদিনাথসহ পুরো জেলার পর্যটন স্পটে ভিড় জমাচ্ছেন। পর্যটক আকৃষ্ট করতে সাজানো রয়েছে সব স্থান। ইংরেজি নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে কয়েক লাখ পর্যটকের মিলন ঘটতে পারে। সৈকত তীরের প্রায় ৫০০ হোটেল-মোটেল-গেস্ট হাউসে আগাম বুকিং আছে। এ ধারাবাহিকতা জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত থাকতে পারে বলে ধারণা সংশ্লিষ্টদের।
তারকা হোটেল ওশ্যান প্যারাডাইসের পরিচালক আবদুল কাদের মিশু বলেন, ‘কক্সবাজারে বিশ্বমানের পর্যটন বিকাশে আমরা শুরু থেকেই বাংলা নববর্ষ, থার্টিফার্স্ট নাইটসহ নানা দিবসকে পর্যটকদের কাছে উপভোগ্য করে তুলি। পর্যটক চাহিদার কারণে এবারও বলরুমে ইনহাউস গেস্টদের জন্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও ডিজে পার্টির আয়োজন থাকছে। নিরাপত্তার কারণে বহিরাগত প্রবেশ নিষিদ্ধ থাকবে। সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে আয়োজন সীমিত করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।’
বেস্ট ওয়েস্টার্ন হেরিটেজের বিপণন ও রিজারভেশন প্রধান শামীম হাসান রনি জানান, অতীতের মতো নিয়ম রক্ষায় তারকা শিল্পীদের নিয়ে অভ্যন্তরীণ অতিথিদের জন্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান থাকছে।
সেন্টমার্টিনের তরুণ ব্যবসায়ী আবদুল মালেক বলেন, ‘থার্টিফার্স্ট নাইট উদযাপনে অতীতে ৭-৮ হাজার পর্যটক দ্বীপে অবস্থান করতেন। তখন নতুন বছরকে বরণ ভালোই জমত। কিন্তু গত দুই বছরের মতো ধরাবাঁধা দুই হাজার পর্যটক আগমন করতে পারে। ফলে, নতুন বছর আমাদের জন্য বাড়তি কোনো বিনোদন আনছে না।’
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এএনএম সাজেদুর রহমান জানান, থার্টিফার্স্ট নাইট ও বর্ষবরণকে কেন্দ্র করে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে কয়েক স্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ১০টি স্পটে তল্লাশি পোস্ট, সাতটি বিশেষ টিম, একাধিক মোবাইল ফোর্স নিয়ে বিশেষ নিরাপত্তা কার্যক্রম শুরু হয়েছে। নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিতে ১ জানুয়ারি পর্যন্ত এ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।
জেলা পুলিশের ফোকাল পয়েন্ট অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অলক বিশ্বাস বলেন, ‘রাষ্ট্রীয় নির্দেশনা অনুযায়ী থার্টিফার্স্ট নাইট উদযাপনে কোনো আতশবাজি, পটকা ফোটানো বা কোনো উন্মুক্ত স্থানে অনুষ্ঠানও করা যাবে না। পাশাপাশি রাত ১২টার পর উচ্চস্বরে মাইক কিংবা সাউন্ড বাজানো নিষেধ। এটা নিশ্চিত করতে পুলিশ তৎপর রয়েছে।’
ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার রিজিয়ন প্রধান অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ বলেন, ‘পর্যটক নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই আমাদের প্রধান কর্তব্য। অতীত সময়ের মতো বছরের শেষ সময় এবং থার্টিফার্স্ট নাইট উপলক্ষে বিপুল পর্যটক উপস্থিতি মাথায় রেখে বাড়তি নিরাপত্তা বলয়ের ছক এঁকে আমরা মাঠে রয়েছি।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মো. আ. মান্নান বলেন, ‘নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে পর্যটকরা চাইলে গভীর রাত পর্যন্ত বিচে অবস্থান করতে পারবেন। এ সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালতের বেশ কয়েকটি টিম মাঠে থাকবে। বেশ কয়েকটি তারকা হোটেল নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় অভ্যন্তরীণ অতিথিদের জন্য অনুষ্ঠান করতে অনুমতি নিয়েছে।’
ঠাকুরগাঁওয়ের ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে অতিরিক্ত রোগী চিকিৎসাসেবা নিয়ে থাকে। শীতকালে এর সংখ্যা এখন আরও কয়েকগুণে বেড়েছে। এমন বাস্তবতায় চিকিৎসাসেবার মান উন্নয়নে ও দুর্ভোগ কমাতে সরকারি এই হাসপাতালে পেশেন্ট বেড প্রদান করেছে ঠাকুরগাঁও পৌরসভা। মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) দুপুরে জেলা প্রশাসক ইশরাত ফারজানা আনুষ্ঠানিকভাবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে শিশু ওয়ার্ডের জন্য এসব পেশেন্ট বেড হস্তান্তর করেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন ঠাকুরগাঁও পৌরসভার প্রশাসক সরদার মোস্তফা শাহিন, হাসপাতালের উপ-তত্ত্বাবধায়ক ডা. জয়ন্ত কুমার, পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রাকিবুজ্জামানসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।
পৌর কর্তৃপক্ষ জানায়, শিশু ওয়ার্ডের কয়েকটি বেড নষ্ট হয়ে যাওয়ায় শিশু রোগী ও তাদের স্বজনদের চিকিৎসা নিতে ভোগান্তির মুখে পড়তে হচ্ছিল। বিষয়টি নজরে আসার পর পৌরসভার উদ্যোগে শিশু রোগীদের জন্য মোট দশটি নতুন পেশেন্ট বেড সরবরাহ করা হয়।
এ প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসক ইশরাত ফারজানা বলেন, ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে চাহিদার তুলনায় অনেক বেশি রোগী সেবা নিতে আসে। বিশেষ করে শীতকালে শিশু রোগীর সংখ্যা বেড়ে যায়। শিশুদের জন্য বেডের ব্যবস্থা করায় পৌর কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানাই।
নতুন পেশেন্ট বেড যুক্ত হওয়ায় শিশু ওয়ার্ডে চিকিৎসাসেবা আরও স্বাচ্ছন্দ্য হবে বলে আশা প্রকাশ করেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
বাগেরহাট ও রামপাল উপজেলায় তীব্র পানিসংকট, লবণাক্ততা বৃদ্ধি এবং সরকারি খাল ও খাস পুকুর দখলের ফলে কৃষি, পরিবেশ ও জনজীবন মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে অবিলম্বে সরকারি খাল ও খাস পুকুর অবমুক্ত করার দাবিতে বাগেরহাট প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) এক্টিভিস্টা বাগেরহাট ও রামপালের আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বাগেরহাট জেলা একটি প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী জনপদ। প্রায় ১৪০০ শতকে হজরত খানজাহান আলী (র.) এই অঞ্চলে কৃষি ও জনজীবনের উন্নয়নে অসংখ্য খাল, দীঘি ও জলাধার খনন করেছিলেন। এসব জলব্যবস্থা একসময় কৃষি উৎপাদন ও সুপেয় পানির প্রধান উৎস ছিল। তবে বর্তমানে দখল, দূষণ ও অপরিকল্পিত ব্যবস্থাপনার কারণে অধিকাংশ খাল ও পুকুর অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে।
বাগেরহাট উপকূলীয় জেলা হওয়ায় বাগেরহাট ও রামপালে লবণাক্ততার মাত্রা দিন দিন বাড়ছে। সরকারি খাল ও পুকুর দখলের ফলে নদী ও ভূগর্ভস্থ পানিতে লবণাক্ততা বৃদ্ধি পাচ্ছে, সৃষ্টি হচ্ছে পানির তীব্র সংকট। এর ফলে বিস্তীর্ণ কৃষিজমি অনাবাদী হয়ে পড়ছে। শুধু রামপাল উপজেলাতেই প্রায় ২৭ হাজার ৬৪৪ হেক্টর জমি বর্তমানে অনাবাদী।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থাপিত পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বাগেরহাট জেলায় মোট আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ ১ লাখ ২২ হাজার ২৩১ হেক্টর। এর মধ্যে আবাদ হচ্ছে ১ লাখ ৪ হাজার ৪৭৩ হেক্টর জমিতে। পতিত জমির পরিমাণ ৮ হাজার ৭০৭ হেক্টর এবং সারাবছর পানির নিচে থাকে প্রায় ১৫ হাজার ৫৯২ হেক্টর জমি।
বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক গোলাম মো. বাতেন বলেন, সরকারি পুকুর ও খাস পুকুর রাষ্ট্রের সম্পদ। এই সম্পদ রক্ষা করা আমাদের প্রধান দায়িত্ব। আমি ইতোমধ্যে জানতে পেরেছি কিছু অসাধু ব্যাক্তিরা এই খাল ও পুকুর দখল করে মাছ চাষ করছে। আমি এগুলো খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে দখলমুক্ত করব আর খাস পুকুগেুলো দখলমুক্ত করে নতুন প্রকল্প নিয়ে সংস্কার করে সুপেয় পানি নিশ্চিত করব।
কথা ছিল দেশে এসে বিয়ে করবে। কিন্তু সেই স্বপ্ন আর পূরণ হলো না। বিয়ের অনুষ্ঠানের মেহমান ঠিকই এসেছেন, তবে নেই শুধু বিয়ের বর–কনে। যে ছেলেটি দুলাভাতির সাজে, দুহাতে লাগেজ নিয়ে আনন্দঘন পরিবেশে বাড়ি ফেরার কথা ছিল- সে ফিরেছে নিথর দেহ হয়ে।
বন্ধুদের নিয়ে কত স্বপ্নের কথা বলেছিল- দেশে এসে বিয়ে করবে, সবাইকে নিয়ে আনন্দ করবে। কিন্তু সবকিছু থেমে গেল এক করুণ বাস্তবতায়। মরদেহবাহী গাড়ি যখন বাড়ির আঙিনায় ঢুকে পড়ল, তখন কান্নার ঢেউ ছড়িয়ে পড়ল চারদিকে। ছোট-বড় সবার চোখে নেমে এলো অশ্রুধারা।
ঘরের বড় ছেলে হিসেবে পরিবারের হাল ধরতেই তিনি প্রবাস জীবনে পাড়ি জমিয়েছিলেন। ভাই–বোন, মা ও পরিবারকে নিয়ে ছিল অনেক স্বপ্ন, ছিল ভবিষ্যতের পরিকল্পনা। কিন্তু নিয়তির নির্মম ছোঁয়ায় সেই সব স্বপ্ন এক মুহূর্তেই মিলিয়ে গেল- ভেঙে গেল একটি পরিবারের আশা-ভরসা।
মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) সকালে চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌছায় রিপনের মরদেহ। কফিন নামানোর সাথে সাথে স্বজনদের বুকফাটা কান্নায় ভারী হয়ে ওঠে পরিবেশ। ঘরের বড় ছেলে, পরিবারের ভরসা- হঠাৎই অনন্ত যাত্রায় পাড়ি জমালেন।
রিপন চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার পোপাদিয়া ইউনিয়নের আকুবদণ্ডী গ্রামের শরীফপাড়ার সন্তান। জীবিকার তাগিদে প্রায় ১ বছর ৯ মাস আগে কাতারে গিয়েছিলেন। সেখানে একটি ক্লিনার কোম্পানিতে কাজ করতেন। দুই ভাই এক বোনের মধ্যে তিনিই ছিলেন বড়- তাই পরিবারের হাল ধরার দায়িত্বও ছিল তার কাঁধে।
গত ২৩ ডিসেম্বর কাতারের আল খোর এলাকায় রাস্তা পার হওয়ার সময় গাড়ির ধাক্কায় প্রাণ হারান তিনি। দুর্ঘটনার পর মরদেহ রাখা ছিল স্থানীয় হাসপাতালের মর্গে। নানা আইনি প্রক্রিয়া শেষে অবশেষে দেশে ফিরল তার নিথর দেহ।
রিপনের মৃত্যুতে গ্রামের প্রতিটি ঘরে নেমেছে শোকের ছায়া। ছেলে হারিয়ে বাকরুদ্ধ তার মা- পাশাপাশি প্রতিবেশীরাও শোকাহত।
এ গল্পটুকু যেন এক করুণ পুনরাবৃত্তি। কারণ রিপনের বাবা আবদুল গফুরও ২০০২ সালের ডিসেম্বর মাসে প্রবাসে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছিলেন। বাবার মৃত্যুর পর থেকেই বড় ছেলে হিসেবে পরিবারের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন রিপন। এবার সেই রিপনকেও হারাল পরিবার। জানাজার পর পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয় তাকে।
খালকে বেহাল না করার প্রতিজ্ঞা করলে পুনরুদ্ধার করে প্রকল্পের মাধ্যমে পরিকল্পনা করে উন্নয়ন সম্ভব বলে জানিয়েছেন সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া। মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) সার্কিট হাউজ মিলনায়তনে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) আয়োজনে কামারখাল সহ সুনামগঞ্জ পৌরসভার খালসমূহ পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়নে করণীয় শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এই কথা বলেন। এ সময় আলোচনা সভায় উপস্থিত সকলেই খাল উদ্ধারে প্রশাসনকে সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
বেলার সিলেট বিভাগীয় সমন্বয়ক শাহ সাহেদার সঞ্চালনায় সংশ্লিষ্টদের পাশাপাশি আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন শিক্ষক, সাংবাদিক, এনজিও প্রতিনিধি, নারী প্রতিনিধি, বিশিষ্টজন সহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। আলোচনা শেষে খাল উদ্ধার ও সংরক্ষণে বক্তারা তাদের সুপারিশ তুলে ধরেন। উল্লেখযোগ্য সুপারিশগুলো হলো, ‘শুধু হুটহাট উচ্ছেদ নয়, উচ্ছেদের পর করণীয় ও বাস্তবায়নের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা গ্রহণ। সকল দখলদারদের শাস্তির আওতায় এনে নজির স্থাপন করা। সবকয়টি খালের সীমানা চিহ্নিত করা। পান্ডারখাল বন্ধ করার কারণে সুরমা নদীর পানির চাপ শহরের খালগুলোর ওপর দিয়ে যেত। তাই খালগুলোর উৎসমুখ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। সেগুলো খুলে দেওয়া। দখলকৃত জায়গায় নিম্নবিত্ত পরিবারগুলোকে খাস জমিতে স্থানান্তর করে পুনর্বাসন করা। পৌরসভা কর্তৃক স্থাপনা নির্মাণ অনুমতি দেওয়ার সময় আরও ভালোভাবে যাছাই করা কোথাও খালের জায়গায় কিছু করা হচ্ছে কি না, গুরুত্ব দিয়ে যাচাই করা। উচ্ছেদ করে দুপাশে ব্লক দিয়ে তীর সংরক্ষণ করে ওয়াকওয়ে নির্মাণের মাধ্যমে সৌন্দর্য্যবর্ধন করা সহ নানা সুপারিশ তুলে ধরা হয়।
সুজন সভাপতি নুরুল হক আফিন্দীর সভাপতিত্বে সভায় উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন, পৌর প্রশাসক ও ডিডিএলজি অসীম কুমার বণিক, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সৃজন সরকার, পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মোহাইমিনুল হক সহ অন্যান্যরা।
আলোচনা সভায় বেলার পক্ষ থেকে ৯টি দাবি উত্থাপিত হয়।
দাবিগুলো হলো, উত্তরা আরপিননগর থেকে জাওয়ার হওয়ার পর্যন্ত কামারখাল সীমানা পুননির্ধারণ ও পুনরুদ্ধার করা। অবৈধ দখলদারদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা করে অবিলম্বে উচ্ছেদ করা। খালের দুই তীর সংরক্ষণের জন্য ব্যবস্থা করা। জলাশয় সম্মুখে সংরক্ষণ ও দূষণমুক্ত রাখতে নির্দিষ্ট স্থানে ময়লা আবর্জনা ফেলার ব্যবস্থা করা। খালের ওপর থেকে গণ-শৌচাগার অপসারণ করা। পৌরসভার অভ্যন্তরে ধোপাখালি খাল, বলাইখালি খাল, তেঘরিয়া খাল, বড়পাড়া খাল ও পুকুর সহ অন্যান্য জলাশয় সংস্কার-সংরক্ষণ ও পুনরুদ্ধার করা। আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়ন করে পৌরসভার জন্য একটি মাস্টার প্ল্যান তৈরি করা।
জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া আরো বলেন, ৩ দিন বৃষ্টি হলে ডিসির বাড়িসহ পানি ওঠে। এই সমস্যা সবার সমস্যা তাই এই সমস্যা সমাধানে সবার উদ্যোগী হতে হবে। মাননীয় পরিবেশ উপদেষ্টাও সুনামগঞ্জে এসে ফসল রক্ষা বাঁধের পর সবচেয়ে গুরুত্ব দিয়েছেন ৫টি খালের ওপর। আমরা পৌর প্রশাসককে নিয়ে দ্রুতই একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করব এবং যেখানে যেখানে যাওয়া প্রয়োজন আমরা যাব।
বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক ও দোয়ার আয়োজন করেছেন দলের নেতাকর্মীরা। বিভিন্ন জেলা থেকে পাঠানো শোকবার্তায় তারা গভীর উদ্বেগ ও শোক প্রকাশ করেছেন। সেই সাথে দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করেন তারা। বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে পাঠানো তথ্য অনুযায়ী;
ফেনী প্রতিনিধি জানান : বিএনপি চেয়ারপার্সন ও তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে শোকে স্তব্ধ তার পৈতৃক ভিটা ফেনীর জনপদ। মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) সকাল ৬টায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। দলীয় নেতাকর্মীরা বলেন, ফেনীর সঙ্গে বেগম খালেদা জিয়ার আত্মার সম্পর্ক ছিল। দলীয় যেকোনো কর্মসূচিতে ফেনীতে এলেই তিনি ফুলগাজী সদর ইউনিয়নের দক্ষিণ শ্রীপুরের মজুমদার বাড়ির পৈতৃক বাড়িতে যেতেন। অভিভাবক হারানোর বেদনায় শোকে কাঁদছে সর্বস্তরের মানুষ।
স্থানীয় বিএনপি নেতা বেলাল আহমদ বলেন, বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে আমরা ফেনীবাসী সবসময় গর্ব করতাম। এ জেলায় ‘ফেনীর মেয়ে খালেদা, গর্ব মোদের আলাদা’ স্লোগানটি রাজনৈতিক অঙ্গনে এক অনন্য মাত্রায় ছিল। তাঁর মৃত্যুতে সবকিছু আজ অবসান ঘটেছে।
ফেনী জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আলাল উদ্দিন আলাল বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে এ পর্যায়ে আর কেউ পৌঁছাতে পারেনি। ফেনীর ট্রাংক রোডে বেগম খালেদা জিয়ার প্রথম কর্মসূচিতে আসার দিনে আমাদের বাড়িতে অবস্থান করেছিল। পরবর্তী একাধিকবার আমাদের বাড়িতে যান তিনি। এ শোক ভাষায় প্রকাশ করার মতো না। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে সকলে ঐক্যবদ্ধ থেকে আমরা যেন দেশনেত্রীর অসমাপ্ত কাজগুলো শেষ করতে পারি সেই প্রত্যাশা থাকবে।
এদিকে সকাল থেকেই ফুলগাজীতে তার পৈতৃক বাড়িতে আসতে শুরু করেন স্বজন ও স্থানীয় মানুষ। সেখানে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার আত্মার মাগফেরাত কামনায় কোরআন খতমের আয়োজন করা হয়েছে।
খালেদা জিয়ার চাচাতো ভাই শামীম মজুমদার বলেন, এ বাড়ির সঙ্গে তার অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে। তার মৃত্যুর খবরে সকলে ভেঙে পড়েছে। আমাদের আশা ছিল এবারও তিনি সুস্থ হয়ে আবারও এই বাড়ির আঙিনায় পা রাখবেন। কিন্তু সকালের একটি সংবাদে সবকিছু চিরদিনের জন্য ম্লান হয়ে গেছে।
প্রসঙ্গত, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ফেনী-১ আসন থেকে পাঁচবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিল। সর্বশেষ ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও এ আসনের প্রার্থী হিসেবে মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) তার পক্ষে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেন নেতাকর্মী।
নোয়াখালী প্রতিনিধি জানান : বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইসমাইল।
এক বার্তায় নোবিপ্রবি উপাচার্য বলেন, 'আপোষহীন দেশনেত্রী, বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে আমরা গভীরভাবে শোকাহত। আমি মরহুমের রুহের মাগফিরাত কামনা এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করছি। অন্যায়ের বিরুদ্ধে তার সাহসী ও আপোষহীন ভূমিকা এ দেশের মানুষ চিরকাল মনে রাখবে। তাঁর মৃত্যুতে দেশ একজন অকুতোভয় আপোষহীন নেত্রীকে হারালো। দেশের এ ক্রান্তিলগ্নে তার রাজনৈতিক দূরদর্শিতা ও সঠিক দিক নির্দেশনা জাতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিলো। মহান আল্লাহ তাকে জান্নাতের সর্বোচ্চ মর্যাদা দান করুন।’
মাগুরা প্রতিনিধি জানান : সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে মাগুরা জেলা বিএনপির পক্ষ থেকে দোয়া মাহফিল এবং দরিদ্রদের মধ্যে খাবার বিতরণ করেছে।
দুপুরে মাগুরা ভায়না মোড়ে বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে কালো পতাকা উত্তোলন ও কালো ব্যাজ ধারণ, মহাসড়কের পাশে দাঁড়িয়ে দোয়া এবং দরিদ্রদের মাঝে খাবার বিতরণ করা হয়েছে।
এসব কর্মসূচিতে অংশ নেন মাগুরা জেলা বিএনপির সদস্য সচিব ও মাগুরা এক আসনের বিএনপি মনোনীত এমপি পদপ্রার্থী আলহাজ মনোয়ার হোসেন খান।
এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন মাগুরা জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহব্বায়ক আকতার হোসেন, যুগ্ম আহব্বায়ক আলমগীর হোসেন, মাগুরা পৌর বিএনপির সভাপতি মাসুদ হাসান খান কিজিল, মাগুরা সদর উপজেলা বিএনপির সাবেক আহব্বায়ক কুতুবউদ্দিনসহ বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মী।
ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি জানান: সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে ঠাকুরগাঁওয়ে স্থানে স্থানে দোয়ার আয়োজন করেছে জেলাবাসী। দল-মত নির্বিশেষে রাজনৈতিক নেতা-কর্মী থেকে শুরু করে সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে দেখা গেছে শোক ও আবেগঘন পরিবেশ। মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) ভোর থেকে বেগম জিয়ার মৃত্যু সংবাদ ছড়িয়ে পড়ার পরপরই ঠাকুরগাঁও শহরের বিভিন্ন রাজনৈতিক কার্যালয়ে নেমে আসে নীরবতা। বিএনপির জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের কার্যালয়গুলোতে কালো ব্যানার টানানো হয় এবং নেতাকর্মীরা কালো ব্যাজ ধারণ করে শোক প্রকাশ করেন।
নেতাকর্মীরা বলছেন, বেগম খালেদা জিয়া ছিলেন আপসহীন নেতৃত্বের প্রতীক। গণতন্ত্র, ভোটাধিকার ও মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে তিনি আজীবন অটল ছিলেন। তার মৃত্যু জাতির জন্য অপূরণীয় ক্ষতি।
শুধু রাজনৈতিক অঙ্গনেই নয়, সাধারণ মানুষের মাঝেও দেখা গেছে গভীর শোক। অনেকেই তাকে স্মরণ করছেন একজন সাহসী, দৃঢ়চেতা ও দেশপ্রেমিক নেত্রী হিসেবে।
শহরেরবিভিন্ন এলাকায় সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে বেগম খালেদা জিয়ার অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।
ঠাকুরগাঁওয়ের সিনিয়র আইনজীবী মো. বদিউজ্জামান বাদল চৌধুরী বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালে বেগম খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়নি। পর্যাপ্ত চিকিৎসা না পাওয়ায় তিনি আজ চিরবিদায় নিয়েছেন। এতে আমরা গভীরভাবে মর্মাহত ও শোকাহত। মহান আল্লাহর কাছে তার রুহের মাগফিরাত কামনা করছি এবং তাকে জান্নাত নসিব করার পাশাপাশি শোকাহত পরিবারকে ধৈর্য ধারণের শক্তি দান করুক।
এদিকে বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে দলীয়ভাবে ৭ দিনের শোক কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। এ সময় দলের সকল কার্যালয়ে কালো পতাকা উত্তোলন, দোয়া মাহফিল এবং বিভিন্ন কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. পয়গাম আলী বলেন, বেগম খালেদা জিয়া ছিলেন গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার পুনরুদ্ধারের প্রতীক। তার মৃত্যুতে আজ বাংলাদেশ একজন অভিভাবককে হারিয়েছে। এতে আমরা গভীরভাবে মর্মাহত ও শোকাহত। মহান আল্লাহর কাছে তার রুহের মাগফিরাত কামনা করছি এবং জান্নাতের উচ্চ মাকাম দান করার জন্য দোয়া করছি।
নড়াইল প্রতিনিধি জানান : বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী, জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে নড়াইল জেলা বিএনপি ও সহযোগি সংগঠনের নেতাকর্মীরা গভীর খোকাহত। দলের নড়াইল জেলা কার্যালয়ে মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) কোরআন খানি, দোয়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। অনুরূপ লোহাগড়া ও কালিয়া উপজেলায় দলীয় কার্যালয়ে কোরআনখানি, দোয়ার অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
জেলা বিএনপির সভাপতি ও নড়াইল-১ আসনের বিএনপির মনোনীত প্রার্থী বিশ্বাস জাহাঙ্গীর আলম, দলের সাধারণ সম্পাদক ও নড়াইল-২ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী মো.মনিরুল ইসলাম,এই আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী ড.ফরিদুজ্জামান ফরহাদসহ সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
বাকৃবি প্রতিনিধি জানান : বাংলাদেশের তিন বারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ইন্তেকালে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কে ফজলুল হক ভূঁইয়া। মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) দুপুরে বাকৃবির জনসংযোগ ও প্রকাশনা দফতর প্রকাশিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ওই শোকবার্তা জানানো হয়েছে। এসময় তিনি মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
শোক বার্তায় উপাচার্য বলেন, আজ আমরা একজন সৎ, দৃঢ়চেতা ও দেশের প্রতি নিবেদিতপ্রাণ আপোষহীন নেত্রীকে হারালাম। বেগম খালেদা জিয়া দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তিনি দেশের রাজনীতি ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ইতিহাসে একজন আপসহীন নেতা হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে গেছেন, যা জাতি চিরদিন শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে। মহান আল্লাহ তাআলা তার অশেষ রহমতে মরহুমার সকল ভুলত্রুটি ও বিচ্যুতি ক্ষমা করে দিয়ে তাকে জান্নাতুল ফেরদৌসের অনন্ত শান্তির আশ্রয় দান করুন-আমীন।
ইবি প্রতিনিধি জানান : আপসহীন নেত্রী, বাংলাদেশের তিনবারের প্রধানমন্ত্রী, বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। পরবর্তীতে দুপুরে কেন্দ্রীয় মসজিদে তার রুহের মাগফিরাত কামনায় দোয়া মাহফিল করা হয়। মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ, উপউপাচার্য অধ্যাপক ড. এম. এয়াকুব আলী, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম এবং রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ড. মো. মনজুরুল হক যৌথ বিবৃতিতে এ শোক জ্ঞাপন জানান। প্রশাসনের পক্ষ থেকে শোকবার্তায় মরহুমার রূহের মাগফিরাত কামনা করে এবং শোকসন্তপ্ত পরিবার ও শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানিয়ে তারা বলেন, মহান আল্লাহ তাআলা বেগম জিয়াকে তার অশেষ রহমাতে ঢেকে দিন, সকল নেক আমল কবুল করে তাকে জান্নাতুল ফেরদৌসের অনন্ত শান্তির আশ্রয় দান করুন। আল্লাহ তাকে তার প্রিয় বান্দাদের কাতারে স্থান দিন এবং চিরস্থায়ী মর্যাদা দান করুন।
তারা বলেন, আজ আমরা হারালাম স্বৈরতন্ত্র ও ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের ঐক্যের প্রতীক, গণতন্ত্র রক্ষা এবং সাধারণ মানুষের অধিকার আদায়ে আপসহীন, দৃঢ়চেতা ও দেশের প্রতি নিবেদিতপ্রাণ নেত্রীকে। তাঁর মৃত্যুতে বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসের এক বিশাল অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটল। বারবার কারাবরণ আর নানা প্রতিকূলতার মাঝেও এই মহিয়সী নারী যেভাবে নিজের আদর্শে অবিচল ছিলেন, তা এক বিরল দৃষ্টান্ত। বাংলাদেশের ইতিহাসে এবং দেশপ্রেমিক প্রতিটি মানুষের হৃদয়ে তিনি চিরকাল বেঁচে থাকবেন।
বাসাইল(টাঙ্গাইল)প্রতিনিধি জানান : বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপার্সন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যতে টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলায় গভীর শোক ও সমবেদনা জানিয়েছে উপজেলা বিএনপি এবং এর অঙ্গ সহযোগী সংগঠনসমূহ। মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) বিকেলে উপজেলা বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে মরহুমার আত্মার মাগফিরাত কামনায় এক বিশেষ দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।
মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) ভোর ৬টায় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে বাসাইল উপজেলাজুড়ে শোকের ছায়া নেমে আসে। সংবাদ শোনার পর থেকেই দলীয় নেতাকর্মীরা কালো ব্যাজ ধারণ করেন।
দোয়া মাহফিলে উপস্থিত বক্তারা বেগম খালেদা জিয়া'র বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবন ও দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে তার আপসহীন সংগ্রামের কথা স্মরণ করেন। তারা বলেন, ‘দেশনেত্রীর মৃত্যুতে জাতি আজ এক মহান অভিভাবককে হারালো। তার এই শূন্যতা পূরণ হবার নয়।’
মাহফিলে বাসাইল উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মামুন আল জাহাঙ্গীর, সাবেক সভাপতি এনামুল করিম অটল, সাধারণ সম্পাদক নূরনবী আবু হায়াত খান নবু, পৌর বিএনপির সভাপতি আক্তারুজ্জামান তুহিন, সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ পিন্টু সহ উপজেলা বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল, সেচ্ছাসেবক দল এবং স্থানীয় বিভিন্ন ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও মাহফিলে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এবং সাধারণ ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা অংশ নেন।
মিলাদ মাহফিল শেষে বেগম খালেদা জিয়া'র রুহের মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত পরিচালনা করা হয়। মোনাজাতে মহান আল্লাহর দরবারে তাঁর জান্নাতুল ফেরদৌস নসিবের জন্য প্রার্থনা করা হয়। একই সঙ্গে তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানানো হয়।
মাধবপুর (হবিগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান: বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) চেয়ারপার্সন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও দেশবরেণ্য রাজনীতিবিদ বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন হবিগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এবং হবিগঞ্জ-৪ (মাধবপুর-চুনারুঘাট) আসনের বিএনপি মনোনীত সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী সৈয়দ মোঃ ফয়সল।
এক শোকবার্তায় সৈয়দ মোঃ ফয়সল বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে জাতি এক মহীয়সী নারী নেত্রীকে হারাল। তিনি ছিলেন বাংলাদেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আপসহীন সংগ্রামী নেত্রী। তার রাজনৈতিক জীবন, ত্যাগ ও নেতৃত্ব জাতির ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়া শুধু বিএনপির চেয়ারপার্সন নন, তিনি ছিলেন দেশের স্বাধীনতা-উত্তর রাজনৈতিক ইতিহাসের এক অবিচ্ছেদ্য অধ্যায়। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন, সংসদীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠায় তার অবদান অবিস্মরণীয়। তার সাহসী নেতৃত্ব ও দৃঢ় অবস্থান ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য অনুকরণীয় হয়ে থাকবে।’
শোকবার্তায় সৈয়দ মো. ফয়সল বলেন, ‘একজন সফল রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে তিনি তিনবার দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তার শাসনামলে দেশের অবকাঠামো উন্নয়ন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও নারীর ক্ষমতায়নে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। বিশেষ করে গ্রামীণ অর্থনীতি ও সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে তার অবদান আজও মানুষ স্মরণ করে।’
তিনি আরও উল্লেখ করেন, দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে বেগম খালেদা জিয়া বহু প্রতিকূলতা ও ষড়যন্ত্রের মুখোমুখি হয়েছেন। তবুও তিনি কখনো আপস করেননি। জনগণের অধিকার আদায়ের প্রশ্নে তিনি ছিলেন দৃঢ় ও অবিচল। তার এই আপসহীন নেতৃত্বই তাকে দেশের কোটি মানুষের হৃদয়ে স্থান করে দিয়েছে।’
সৈয়দ মো. ফয়সল জানান, বিএনপি চেয়ারপার্সনের জানাজায় অংশগ্রহণের জন্য তার নির্বাচনী এলাকা হবিগঞ্জ-৪ (মাধবপুর-চুনারুঘাট) থেকে প্রায় দেড় হাজার নেতাকর্মী ঢাকায় যাবেন। তিনি বলেন, ‘আমরা সবাই সম্মিলিতভাবে আমাদের প্রিয় নেত্রীকে শেষ বিদায় জানাতে ঢাকায় জানাজায় অংশ নেব। এটি শুধু শোক নয়, এটি তার আদর্শের প্রতি আমাদের অঙ্গীকার।’
বগুড়া প্রতিনিধি জানান: সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে বগুড়ার গাবতলী উপজেলার বাগবাড়িতে স্বামী শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের বাড়িতে দোয়ার আয়োজন চলছে। কোরান খতম দেওয়া হচ্ছে। বগুড়ার বউ খালেদা জিয়ার তার মৃত্যুতে শোকে স্তব্ধ হয়ে গেছেন সেখানকার মানুষ৷ শুধু বাগবাড়ি এলাকা নয়, পুরো জেলাজুড়ে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। তিনবারের সাবেক সফল প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার জন্য ওই অঞ্চলের মানুষের আবেগ ও অনুভূতি একান্তই ঘরোয়া৷ তাদের ভোটে নির্বাচিত খালেদা জিয়া দেশে তিনবার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন।
নিজেদের গর্বের ‘ব্যাটার বউ’য়ের মৃত্যুতে স্বজন হারানোর মতোই সমব্যথী বগুড়ার সাধারণ মানুষ।
১৯৬০ সালে দিনাজপুরের মেয়ে খালেদা খানম পুতুল বউ হয়ে আসেন বগুড়ার গাবতলী উপজেলার বাগবাড়ি গ্রামে। স্বামী জিয়াউর রহমান তখন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন। মহান মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলোতে জিয়াউর রহমান যখন যুদ্ধের ময়দানে কিংবা পরে তিনি যখন দেশের প্রেসিডেন্ট হন, তখন খালেদা জিয়া সব সময়ই থেকেছেন এমন বাঙালি বাড়ির ঘর-সংসার আর সন্তানদের সামলানো গৃহবধূ হিসেবেই।
স্বামী যখন দেশ আর দেশের মানুষ নিয়ে ব্যস্ততায়, তার ব্যস্ততার কেন্দ্রবিন্দু তখন কেবলই দুই ছেলে আর তাদের সংসার।
১৯৮১ সালে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের শিকার হলে গৃহবধূ খালেদা জিয়াকে দেশ ও দলের ক্রান্তিলগ্নে হাল ধরতে হয় বিএনপির। দলীয় প্রধানের মৃত্যুর পর এক হাতে দলকে সামলে, আরেক হাতে স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী আন্দোলন সংগঠিত করে আশি ও নব্বই দশকের সন্ধিক্ষণে আস্থাশীল জাতীয় নেতায় রূপ নেন খালেদা জিয়া।
১৯৯১ সালে বগুড়া থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর দেশের প্রথম এবং মুসলিম বিশ্বের দ্বিতীয় নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন খালেদা জিয়া।
পরে আরও দুই মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন বগুড়ার পুত্রবধূ খালেদা জিয়া। ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে প্রথমবারের মতো বগুড়ার দুটি সংসদীয় আসন থেকে প্রার্থী হন খালেদা জিয়া। ওই নির্বাচন থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত তিনি বগুড়া থেকে যতগুলো নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন, প্রতিবারই পুত্রবধূ খালেদা জিয়াকে আঞ্চলিক ভাষায় ‘ব্যাটার বউ’ ভোটে দাঁড়িয়েছে, তাকে জেতাতে হবে- এমন প্রত্যয় নিয়ে বাক্সভর্তি ভোট দিয়েছেন বগুড়ার মানুষ।
এদিকে খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে বগুড়া শহরের নবাববাড়ি সড়কে জেলা বিএনপির কার্যালয়ে নেতাকর্মীদের জরুরিভাবে আসার আহ্বান জানিয়েছে বিএনপি৷
৪৩ বছর ধরে দল, দেশ এবং দেশের মানুষের স্বার্থে অবিচল-আপসহীন থাকা নেত্রীর ওপর বিগত দেড় দশক ধরে চলা অবর্ণনীয় নিপীড়নের কথা বলতে গিয়ে অশ্রুসজল হয়ে পড়েছেন স্থানীয় বিএনপি নেতারা।
বগুড়া জেলা বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিম বাদশাহ জানান, নেতাকর্মীরা আসার পর পরবর্তী কর্মসূচির সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
খুলনা সংবাদদাতা জানান: সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন খুলনার মহানগর ও জেলা বিএনপির নেতারা। মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) সকাল থেকেই নগর ও জেলা বিএনপি কার্যালয়ে কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়েছে। কালো ব্যাচ ধারন করেছেন দলীয় নেতা-কর্মীরা। এছাড়াও বিএনপি কার্যালয়ে কোরআন তেলাওয়াত, দোয়া ও শোক সভার আয়োজন করা হয়। মহানগর বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট শফিকুল আলম মনা বলেন, আজ জাতি এক অভিভাবক হারিয়েছে। জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে বেগম খালেদা জিয়াকে প্রয়োজন ছিলো। বিগত সরকার তাকে নির্যাতন করে জেলে দিয়েছিলো। সেখানে বিষ দিয়ে তাকে ধিরে ধিরে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে।
খুলনা-২ আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ও সাবেক সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, ৪৩ বছর আগে শহীদ জিয়ার শাহাদাত বরণের পর একজন বিধবা নারী বেগম খালেদা জিয়া দুই সন্তানের হাত ধরে ঘর থেকে বের হয়েছিলেন। বিএনপির হাল ধরে ছিলেন। তিনবারের সরকার পরিচালনায় তার দক্ষতা তাকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে। তার মৃত্যুতে দেশের অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেল।
এদিকে, কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে ৭ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে খুলনা নগর ও জেলা বিএনপি। এ কর্মসূচি উপলক্ষে ৭ দিন জেলা সংঠনের সকল নেতাকর্মীরা কালোব্যাজ ধারন করবেন। দলীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে। এছাড়াও কালো পতাকা উত্তোলন করা হবে।
গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার আন্দোলনের আপসহীন নেত্রীর মৃত্যুতে গভীর শোক, শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা ও মরহুমার রুহের মাগফেরাত কামনা করেছেন খুলনা-২ আসনের বিএনপি মনোনীত প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু।
এছাড়াও শোক জানিয়েছেন খুলনা মহানগর বিএনপির সাবেক সাধারন সম্পাদক ও সাবেক মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা মনিরুজ্জামান মনি, মীর কায়সেদ আলী, শেখ মোশাররফ হোসেন, জাফরউল্লাহ খান সাচ্চু, জলিল খান কালাম, অ্যাডভোকেট ফজলে হালিম লিটন, অধ্যক্ষ তারিকুল ইসলাম, অধ্যাপক আরিফুজ্জামান অপু, মাহবুব কায়সার, নজরুল ইসলাম বাবু, আসাদুজ্জামান মুরাদ, ইকবাল হোসেন খোকন প্রমুখ। সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন খুলনা প্রেসক্লাব ও মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়ন খুলনার নেতৃবৃন্দ।
দিনাজপুর প্রতিনিধি জানান : দিনাজপুরের কন্যা, দিনাজপুরেই বেড়ে ওঠা। এই জেলার মানুষের প্রতি ছিল অপরিসীম ভালোবাসা। সেই প্রিয় নেত্রীকে হারিয়ে শোকে কাতর জেলার মানুষ। এই জনপদে কেটেছে বিএনপি চেয়ারপারসন ও তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার শৈশব-কৈশোর। পড়াশোনাও এই জেলাতে। উত্তরের জেলা দিনাজপুরের মানুষ ‘খালেদা জিয়া’ হিসেবে নয়, তাকে ‘খালেদা খানম পুতুল’ নামেই বেশি চেনেন। সেই পুতুলকে হারিয়ে শোকে কাতর দিনাজপুরবাসী স্মৃতিচারণ করে চোখের জল মুছছে বারবার। শোকে কাতর হয়ে পড়েছেন দিনাজপুরের সব শ্রেণির মানুষ ও দলীয় নেতাকর্মীরা। তারা বলছেন, খালেদা জিয়ার মহাপ্রয়াণে দেশের তো বটেই, দিনাজপুরেরও অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেল।
মৃত্যুর পরপরই সকাল থেকেই দলীয় কার্যালয়ে কোরআন তিলাওয়াতের আয়োজন করা হয়। তার বিদেহি আত্মার মাগফিরাত কামনা করে, নেতারা তার যে স্বপ্ন তা পূরণ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। খালেদা জিয়া দিনাজপুর-৩ আসন থেকে এবার প্রার্থী হয়েছিলেন। এ নিয়ে ছিল নেতাকর্মীদের মধ্যে ছিল উচ্ছ্বাস। তবে তার মৃত্যুর সংবাদে তা নিমিষেই ম্লান হয়ে গেছে।
জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট মোফাজ্জল হোসেন দুলাল বলেন, ‘খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে দিনাজপুরের তথা বাংলাদেশের যে ক্ষতি হলো তা কখনোই পূরণ হওয়ার নয়। তিনি এই আসন থেকে নির্বাচন করবেন এবং ব্যাপক উন্নয়ন করবেন এমন আশা ছিল আমাদের। কিন্তু তার মৃত্যুতে আমাদের শোকের অন্ত নেই। আল্লাহ তাকে জান্নাতবাসী করুন।’
নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্রগ্রাম : খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ও মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন। এক শোকবার্তায় চসিক মেয়র বলেন, বেগম খালেদা জিয়া ছিলেন গণতান্ত্রিক রাজনীতির এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। তিনি আজীবন দেশের মানুষের ভোটের অধিকার, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের জন্য আপসহীন সংগ্রাম করে গেছেন। দীর্ঘদিন দেশ ও জাতির জন্য নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং গণতন্ত্র, সার্বভৌমত্ব ও জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। শুধু বিএনপির নেত্রীই ছিলেন না, ছিলেন ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। তার মৃত্যুতে দেশ একজন মহান অভিভাবক ও অভিজ্ঞ রাষ্ট্রনায়ককে হারালো। আমি গভীরভাবে শোকাহত ও মর্মাহত।
চাঁদপুর প্রতিনিধি জানান : খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন চাঁদপুরের সব পর্যায়ের বিএনপি নেতাকর্মী ও সমর্থকরা। জেলা বিএনপি কার্যালয়সহ জেলার বিভিন্ন স্থানে কোরআন তিলাওয়াত, দোয়া-মাহফিল ও শোক বইয়ে স্বাক্ষরসহ অন্যান্য কর্মসূচি পালন করা হয়।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপির সভাপতি ও চাঁদপুর-৩ আসনের বিএনপি প্রার্থী শেখ ফরিদ আহমেদ মানিকসহ জেলা বিএনপি ও অঙ্গ, সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। তারা বলেন, আপসহীন নেত্রী খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে দেশ একজন অভিভাবককে হারিয়েছে। দেশের এই সংকটময় মুহূর্তে খালেদা জিয়ার প্রয়োজন ছিল অত্যন্ত বেশি।
শেখ ফরিদ আহমেদ মানিক বলেন, ‘আপসহীন, নির্ভীক রাজনীতিক ও দেশপ্রেমিক নেতা ছিলেন তিনি। দেশ একজন অভিভাবককে হারিয়েছে। এই শূন্যতা সহজে পূরণ হবে না।’
সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি জানান : খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে শোক জানিয়েছে সিরাজগঞ্জ প্রেসক্লাবের কার্যনির্বাহী কমিটি। সকালে প্রেসক্লাবের দফতর সম্পাদক এনামুল হক স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে শোক জানানো হয়।
সিরাজগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি হারুন আর রশিদ খান হাসান ও সাধারণ সম্পাদক শরীফুল ইসলাম ইন্না জানান, খালেদা জিয়ার মতো নেত্রী এই দেশে আর আসবে না। তিনি দেশ ও দেশের মানুষের কথা চিন্তা করে কাজ করে গেছেন। বাংলাদেশ যতদিন থাকবে মানুষ খালেদা জিয়াকে মনে রাখবে। আজ একজন নক্ষত্রের বিদায় হলো। তার মৃত্যুতে আমরা গভীর শোক প্রকাশ করছি। মহান আল্লাহ যেন তাকে জান্নাতুল ফেরদৌস দান করেন এই দোয়া করি।
রাঙামাটি প্রতিনিধি জানান : খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে শোকে স্তব্ধ রাঙামাটি বিএনপি পরিবার। সকালে মৃত্যুর খরব ছড়িয়ে পড়তেই শত শত নেতাকর্মী ভিড় করেন কাঠালতলীর দলীয় কার্যালয়ে। দলীয় কার্যালয়ে উত্তোলন করা হয়েছে কালো পতাকা। নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষকেও কালো ব্যাচ ধারণ করতে দেখা গেছে। সাত দিনের কেন্দ্রীয় কর্মসূচির পাশাপাশি জেলা বিএনপির পক্ষ থেকে সব মসজিদে বাদ আসর দোয়া ও অন্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মামুনুর রশিদ।
জেলা বিএনপির সহসভাপতি ও সাবেক মেয়র সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘দলের প্রয়োজনে রাজনীতি শুরু করেছিলেন খালেদা জিয়া। হয়ে উঠেছে দেশের নেত্রী। বিভিন্ন সময়ে গণতন্ত্রের জন্য লড়ে গেছেন। রাজনীতিতে যে শূন্যতা তৈরি হয়েছে তার কখনও পূরণ হবে না।’
বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির ধর্ম বিষয়ক সহ-সম্পাদক ও রাঙামাটি আসেনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী দীপেন দেওয়ান বলেন, ‘আমি তার হাত ধরে বিএনপির রাজনীতি প্রবেশ করি। রাজনীতির কঠিন সময়ে দেশ ও দলের দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। গণতন্ত্রের আন্দোলনের জন্য জীবনের কঠিন সময় পার করেছিলেন। কিন্তু ভালো সময় দেখে যেতে পারলেন না।’
ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি জানান: খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপির উদ্যাগে আলোচনা সভা, কোরআন খতম ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। বেলা ১১টায় শহরের পুনিয়াউট এলাকায় জেলা বিএনপির সভাপতির কার্যালয়ে এ কর্মসূচি পালিত হয়।
বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির অর্থনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক ও জেলা বিএনপির সভাপতি খালেদ হোসেন মাহবুব শ্যামল বলেন, ‘বেগম জিয়া গণতন্ত্রের সংকটকালে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। সংগ্রামী নেত্রীর চলে যাওয়া দেশের রাজনৈতিক অধ্যায়ের এক অপূরণীয় ক্ষতি।’
যশোর প্রতিনিধি জানান : মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টা। যশোর শহরের লালদিঘীর পাড় জেলা বিএনপির কার্যালয় এলাকাজুড়ে শত শত মানুষ। তবে আর দশটা দিনের মতো এদিন স্লোগানে স্লোগানে উত্তাল কিংবা মঞ্চে কেউ বক্তৃতায় রাজনীতিক উত্তাপ ছড়াচ্ছিলেন না। দাঁড়িয়ে থাকা মানুষদের চোখেমুখে ছিল গভীর শোকের ছায়া। কেউ চুপচাপ দাঁড়িয়ে, কেউ চোখ মুছছিলেন। এই শোক, এই চুপচাপ খালেদা জিয়ার মৃত্যুর খবরে। যশোরের বিএনপির পার্টি অফিসে নেতাকর্মী, সবাই মিলিয়ে জায়গাটি পরিণত হয় শোক, নীরবতা ও আবেগের এক প্রাঙ্গণে।
দলের ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক নার্গিস বেগমসহ দলীয় নেতাকর্মীরা কালো ব্যাচ ধারণ করেন। এর আগে জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাড. সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু এবং সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন খোকন দলীয় এবং কালো পতাকা উত্তোলন করেন। সেখানে শোক বই রাখা হয়েছে। অধ্যাপক নার্গিস বেগম নিজে শোক বইয়ে স্বাক্ষর করেন। এছাড়া জেলা বিএনপি অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ শোক বইয়ে স্বাক্ষর করেন।
জেলা শহরের পাশাপাশি উপজেলার বিভিন্ন পাড়া-মহল্লা ও গ্রামে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের উদ্যোগে দোয়া ও বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হয়েছে। মসজিদে মিলাদ মাহফিল ও দোয়া অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে নেতাকর্মীরা প্রয়াত নেত্রীর রুহের মাগফিরাত কামনা করেন। তার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন বিএনপির খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত।
জেলা বিএনপির সভাপতি সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু বলেন, ‘আজ আমরা আমাদের রাজনৈতিক অভিভাবককে হারিয়েছি। তিনি কখনও অন্যায়ের কাছে মাথা নত করেননি। তার শূন্যতা কোনোভাবেই পূরণ হওয়ার নয়। এটি দলের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি। এই নেত্রীকে যারা দীর্ঘদিন কষ্ট দিয়েছে, রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার করা হয়েছে তাদের বিচার আল্লাহ করবেন। ইতিহাস তাদের কখনোই ক্ষমা করবে না।’
জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন খোকন বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়া শুধু বিএনপির নেত্রী নন, ছিলেন গণতন্ত্রের প্রতীক। আজ আমরা গভীরভাবে শোকাহত।’
জামালপুর প্রতিনিধি জানান : খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে জামালপুরে দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিকালে শহরের স্টেশন রোডে জেলা বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে এ দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়।
জামালপুর-৫ আসনের সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শাহ মো. ওয়ারেছ আলী মামুন বলেন, ‘খালেদা জিয়া কখনও আপস করেননি। তার মৃত্যু বাংলাদেশ ও রাজনীতির জন্য অপূরণীয় ক্ষতি। আজ দলীয় নেতাকর্মীসহ দেশের সাধারণ মানুষ গভীরভাবে শোকাহত।’