শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগ দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীদের অসহযোগ কর্মসূচি ঘিরে রোববার ঝিনাইদহ, নাটোর, নওগাঁ, নড়াইলসহ সারা দেশে ব্যাপক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এতে ঝিনাইদহে ৩০, নড়াইলে ২০, ঢাকার কেরানীগঞ্জ ৫০ জন আহত হয়েছেন। এ সময় থানায় হামলা, পুলিশ বক্স ভাঙচুর, পোস্ট অফিস, পৌরসভাসহ বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা ও বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুর করা হয়েছে।
বিস্তারিত প্রতিনিধিদের পাঠানো প্রতিবেদন
নাটোর: নাটোরে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সরকারদলীয় নেতা-কর্মীদের ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। রোববার দুপুর সোয়া ১২টার দিকে শহরের ভবানীগঞ্জ মোড় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। আন্দোলনকারীদের পূর্বঘোষণা অনুযায়ী দুপুর ১২টায় শহরের মাদ্রাসা মোড় এলাকায় বিক্ষোভ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেয় তারা। সকাল থেকে অল্প অল্প করে আন্দোলনকারীরা জড়ো হতে শুরু করে। দুপুর সোয়া ১২টার দিকে প্রায় দুই শতাধিক আন্দোলনকারী জমায়েত হয়। এ সময় আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগের নেতা-কর্মীরা তাদের প্রতিহত করতে ধাওয়া দেয়। এ সময় আন্দোলনকারীরাও তাদের ধাওয়া দিলে এবং ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে উভয়পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় বেশ কয়েকজন আন্দোলনকারীকে মারধর করে সরকারদলীয় নেতা-কর্মীরা। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ঘটনাস্থলে পৌঁছালে বিক্ষোভকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়।
অন্যদিকে নাটোরের বাগাতিপাড়ায় বিক্ষোভ মিছিল করেছে বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা। সকাল ১০টার দিকে দয়ারামপুর বাজার এলাকায় শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও সাধারণ জনতা সড়কে জমায়েত হয়ে বিক্ষোভ করে সরকারের পদত্যাগ দাবি করে বিভিন্ন স্লোগান দেয়।
নওগাঁ: নওগাঁয় বিক্ষোভ মিছিল ও সড়ক অবরোধ করেছে আন্দোলনকারীরা। রোববার সকাল ১০টা থেকে শহরের কাজীর মোড়ে জড়ো হতে শুরু করেন বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা। তাদের সঙ্গে অংশ নেন আরও অনেকে। পরে আন্দোলনকারীরা প্রধান সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। এ সময় এক দফা দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দিতে শোনা যায় তাদের। এতে বন্ধ হয়ে যায় প্রধান সড়ক দিয়ে যানচলাচল।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা শহরের সরিষাহাটির মোড়ে আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে অবস্থান নেন। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয় পথচারীদের। বিশেষ করে অটোরিকশা চালকদের। অনেক পথচারীকে হেঁটে বিকল্প রাস্তা দিয়ে যেতে দেখা যায়। মোটকথা পুরো শহরে আতঙ্কের পরিবেশের সৃষ্টি হয়। দোকানপাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। বন্ধ রয়েছে যাত্রীদের চলাচলের জন্য ভারী যানবাহন।
এদিকে সাধারণ পথচারীদের সতর্ক করতে দোকান বন্ধ করে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করছিল দোকানদার আকাশসহ অনেক ব্যবসায়ী। তারা জানান, পথচারীরা যেন কোনো বিপদের সম্মুখীন না হয়, তাই তাদের সতর্ক করে বিকল্প পথে যেতে বলছি।
দুপুরের দিকে পার্টি অফিস থেকে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা মিছিল নিয়ে আন্দোলনকারীদের দিকে আসতে চাইলে কিছু সময়ের জন্য উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। পরে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ সেনাবাহিনীর সদস্যদের সতর্ক অবস্থানের কারণে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যায়।
নওগাঁর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) গাজিউর রহমান বলেন, আন্দোলন ও বিক্ষোভের শুরু থেকেই পুলিশ তাদের সুষ্ঠু ও সুশৃঙ্খলভাবে আন্দোলন করার জন্য বলেছে। তাদের প্রতি পুলিশ সহনশীল আচরণ করছে। শিক্ষার্থীদের যাতে কোনো ক্ষতি না হয় সে জন্য তাদের নিরাপত্তা দিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। মোটকথা শহরে যেকোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা এড়াতে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।
ঝিনাইদহ: ঝিনাইদহে কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়ার সময় পুলিশসহ ৩০ জন আহত হয়েছেন। আন্দোলনকারীরা রোববার বেলা ১১টা থেকে বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত সারা শহরে তাণ্ডব চালায়। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা যোগ দেয়।
শিক্ষার্থীরা সকালে শহরের মুজিব চত্বর থেকে এবং বিএনপি হাটের রাস্তা থেকে মিছিল বের করেন। তারা পায়রা চত্বরে এসে একসঙ্গে মিলিত হয়। মিছিল থেকে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুর, থানায় হামলা, পুলিশ বক্স ভাঙচুর, পৌরসভা, ছবি তোলার সময় সাংবাদিক কাজী আলী আহমেদ লিকুর ওপর হামলা চালায়। এ ছাড়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সফিকুল ইসলাম অপুর বাড়িসহ বিভিন্ন স্থাপনায় ইটপাটকেল ছুড়ে হামলা চালায়। পুলিশ বাঁধা দিলে শুরু হয় ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়া। সে সময় পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড, কাঁদানি গ্যাস ও শর্টগানের গুলি ছোড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। একপর্যায়ে সারা শহর রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এতে পুলিশসহ অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন। ইটের আঘাতে পুলিশের এসআই শরিফুজ্জামানের মাথা ফেটে গেছে। আহতদের মধ্যে ২৪ জনকে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাকিরা বিভিন্ন ক্লিনিকে ভর্তি হয়েছেন। সকাল থেকে যানবাহন চলাচল করেনি। দোকানপাট খোলেনি। পুলিশি নিরাপত্তায় অফিস-আদালত চলেছে এবং উত্তপ্ত পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
নড়াইল: বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের অসহযোগ আন্দোলনের ডাকে রোববার বেলা ১১টায় নড়াইল সদর উপজেলার আউড়িয়া ইউনিয়নের মাদ্রাসা বাজার এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে। মিছিলে বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের কয়েক হাজার নেতা-কর্মী যোগ দেয়। মিছিলটি শহরে প্রবেশের চেষ্টা করলে চিত্রা নদীর শেখ রাসেল সেতুর ওপর উঠলে পুলিশ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা বাধা দেয়। এতে উভয়পক্ষের মধ্যে ইটপাটকেল নিক্ষেপসহ পুলিশ কয়েক রাউন্ড টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে। এতে ২০ জনের মতো আহত হন। এ সময় ঢাকা-বেনাপোল ভায়া নড়াইল মহাসড়কে যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
সংঘর্ষে পুলিশের টিয়ারসেল নিক্ষেপের পাশাপাশি কয়েক রাউন্ড গুলি চালায়। এত আল নাহিয়ান প্রিন্স নামে এক যুবলীগ কর্মী গুলিবিদ্ধ হয়ে সদর হাসপাতালে ভর্তি হন। প্রিন্স নড়াইল পৌরসভার আলাদাতপুর গ্রামের শেখ আবু বক্করের ছেলে।
সীমাখালী গ্রামের প্রত্যক্ষদর্শী মিজান মোল্লা, মিলি খানম, শিমুল হাসান জানান, সেতুর দক্ষিণ পাশেই আমার বাড়ি। অনেক বিএনপি, জামায়াত-শিবিরের ছেলেরা রাস্তার ওপর ইট ভেঙে পুলিশের দিকে ছুড়ে মারছিল। এদের হাতে হ্যান্ড মাইকও ছিল। পানি খেতে চাইলে আমরা তাদের পানি পানের ব্যবস্থা করেছি। ওরা পানি পানের সময় বসে পান করছিল। ওদের কাউকে চিনি না।
প্রিন্স জানান, ‘চিত্রা নদীর উত্তর প্রান্তে পুলিশ এবং ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতা-কর্মীরা অবস্থান নেয়। আর সেতুর দক্ষিণ প্রান্তে বিএনপি-জামায়াত শিবিরের নেতা-কর্মী অবস্থান নেয়। ইটপাটকেল নিক্ষেপের একপর্যায়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে। এ সময় অন্য প্রান্ত থেকে কয়েক রাউন্ড গুলি করা হয়। একটি বুলেট আমার পেটে লেগে বের হয়ে যায়। সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আকাশ ঘোষ রাহুলসহ উভয়পক্ষের ২০ জন আহত হন।
এদিকে ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দুজন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন এমন খবর ভেসে বেড়ালেও এর কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি।
কেরানীগঞ্জ (ঢাকা): ঢাকার কেরানীগঞ্জে আন্দোলনকারী ছাত্রদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের দফায় দফায় সংঘর্ষে মডেল থানার ঘাটারচর এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। এ সময় আন্দোলনকারীরা বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ, আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের বাড়ি, ব্যক্তিগত অফিস ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ এবং কেরানীগঞ্জ মডেল থানা আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে নেতাদের অবরুদ্ধ করে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। এ সময় আওয়ামী লীগের ডজনখানেক নেতা-কর্মী গুরুতর এবং বেশ কিছু আন্দোলনকারী সামান্য আহত হয়। এর আগে (রোববার) সকালে কেরানীগঞ্জ মডেল থানাধীন ঘাটারচর এলাকায় গত ২১ জুলাই কোটা আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত ইস্পাহানি ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থী রিয়াজ নিহত হওয়ার প্রতিবাদে ও অসহযোগ আন্দোলনের সমর্থনে পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে কেরানীগঞ্জের সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা আটি ভাওয়াল উচ্চবিদ্যালয়ের সামনে থেকে মিছিল বের করার চেষ্টা করলে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা তাতে বাধা দেয়। বাধা উপেক্ষা করে সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা মিছিল নিয়ে সামনে অগ্রসর হলে বড় মনোহরিয়া চৌরাস্তা এলাকায় ছাত্রদের মিছিলের ওপর পেছন থেকে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও গুলিবর্ষণ করে। এতে মুহূর্তেই সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা ছাত্রভঙ্গ হয়ে যায়। পরে তারা সংগঠিত হয়ে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ধাওয়া দিলে নেতা-কর্মীরা দিগ্বিদিক ছোটাছুটি করে বিভিন্ন দোকানপাটের ভেতরে আশ্রয় নেয়। এ সময় মডেল থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আবু সিদ্দিক ও তারানগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন ফারুক অবরুদ্ধ হন। পরবর্তী সময়ে স্থানীয়দের সহায়তায় তাদের উদ্ধার করা হয়। পরে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ছয়টি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ ও পাঁচটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে। এ ছাড়া স্থানীয় চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ফারুক এবং আওয়ামী লীগ নেতা আবু সিদ্দিকের বাড়িতে ব্যাপক ভাঙচুর চালিয়ে তাদের ব্যবহৃত গাড়ি পুড়িয়ে দেয়।
এর কিছুক্ষণ পরে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা পুনরায় সংগঠিত হয়ে আবারও ছাত্রদের ধাওয়া দিয়ে ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও গুলিবর্ষণ শুরু করে। এ সময় বিক্ষুব্ধ আন্দোলনকারীরা আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের ধাওয়া দিলে তারা ঘাটারচর এলাকায় কেরানীগঞ্জ মডেল থানা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের ভেতরে আশ্রয় নেয়। পরে বিক্ষুব্ধ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা আওয়ামী লীগের কার্যালয় ঘেরাও করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে এবং প্রধান ফটকে আগুন লাগিয়ে দেয়। অবস্থা বেগতিক দেখে বেশ কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতা ভবনের দ্বিতীয় তলার ছাদের ওপর গিয়ে আশ্রয় নিলে উত্তেজিত শিক্ষার্থীরা ছাদের গেট ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে তাদের গণধোলাই দেয়। এ সময় হুড়োহুড়ি করে ভবনের ভেতর ঢুকতে গিয়ে ও ভবনের ওপর থেকে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের ছোড়া ইটের আঘাতে অন্তত ২০ জন শিক্ষার্থী আহত হয়। পরে ভবনে আটকে থাকা অন্তত ১০-১৫ জন আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী আন্দোলনকারীদের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।
খুলনা: খুলনায় আওয়ামী লীগের অফিসে আগুন দিয়েছে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। রোববার বেলা ১২টার দিকে খুলনার শঙ্খ মার্কেটের জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে তারা আগুন ধরিয়ে দেয়। এ সময় শিক্ষার্থীরা শেখ হাসিনা সরকারের পতন ও জাতীয় সরকার গঠনের লক্ষ্যে নানা রকম স্লোগান দিতে থাকেন। এর আগে সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দলে দলে শিক্ষার্থীরা নগরীর শিববাড়ি মোড়ে জড়ো হতে থাকেন। বর্তমানে ওই মোড়ে প্রায় ৫/৭ হাজারের কাছাকাছি শিক্ষার্থী উপস্থিত রয়েছেন। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে একদল শিক্ষার্থী শিব বাড়ি থেকে মিছিল সহকারে খুলনার আওয়ামী লীগ অফিসের দিকে রওনা হয়ে এ অগ্নিকাণ্ড ঘটায়।
সিলেট: সিলেটের বন্দরবাজারের কোর্ট পয়েন্ট এলাকায় পুলিশের সাথে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ চলছে। বেলা ১২টার দিকে এ সংঘর্ষ শুরু হয়। পুলিশ আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে ব্যাপক টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেণেড ছুঁড়ছে। জানা যায়, অসহযোগ চলাকালে পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী বেলা ১১টার দিকে নগরের কোর্ট পয়েন্ট এলাকায় জড়ো হয় আন্দোলনকারীরা। এতে শিক্ষার্থীদের সাথে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষও যোগ দেন। এই এলাকায়ই জেলা প্রশাসক কার্যালয়, পুলিশ সুপার কার্যালয়, সিটি করপোরেশনসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সরকারি অফিস রয়েছে। আন্দোলনকারীরা অবস্থান নেওয়ার আগে থেকেই এ এলাকায় বিপুল সংখ্যক পুলিশ সাজোয়া যান নিয়ে অবস্থান নেয়। বেলা ১২টার দিকে পুলিশের সাথে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ শুরু হয়। আন্দোলনকারীদের থামাতে পুলিশ টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেণেড ছুঁড়ছে। এক পর্যায়ে পুলিশের বাধা পেয়ে মূল সড়ক ছেড়ে আশপাশের গলিতে অবস্থান নেয় আন্দোলনকারীরা।
মোংলা (বাগেরহাট): মোংলা-খুলনা মহাসড়কের ফয়লা এলাকায় (বাগেরহাটের রামপাল) আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও পুলিশের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়েছে। চলমান ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার মধ্যে একটি পুলিশ ভ্যানে আগুন দেয় আন্দোলনকারীরা। এ সময় সংবাদ সংগ্রহে গিয়ে আহত হয়েছেন বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার সাংবাদিক সবুর রানা ও সুজন মজুমদার।
এদিকে অসহযোগ আন্দোলনের অংশ নিয়ে মোংলা-খুলনা মহাসড়কের ভাগা এলাকায় সকালে বিক্ষোভ মিছিল করে শিক্ষার্থীরা। রবিবার বেলা সাড়ে ১১টায় বের হওয়া মিছিল শেষে মহাসড়কে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা। দুপুর ১২টা পর্যন্ত চলে শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন। পরে পুলিশ ও আন্দোলনকারীরা ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া জড়িয়ে পড়েন।
দিনাজপুর: জাতীয় সংসদের হুইপ ও দিনাজপুর সদর-৩ আসনের সংসদ সদস্য ইকবালুর রহিম এমপি ও বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের বাসা ভাংচুর ও আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে বিক্ষুব্ধরা। এ সময় পুলিশের দুটি পিকআপ ভ্যানে আগুন জ্বালিয়ে দেয় তারা। রাবার বুলেট ও কাঁদলে গ্যাস ছুটছে পুলিশ। সদর হাসপাতাল, জোড়া ব্রীজ, ফুলবাড়ি বাসস্ট্যান্ড, লিলির মোড়, বাহাদুর বাজার, স্টেশন রোড, কাচারী রোড, মডার্ণ মোড়, বুটিবাবুর মোড়, মুন্সীপাড়াসহ সারা শহরে আন্দোলনকারীদের সাথে পুলিশের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া চলে। শত শত রাউন্ড রাবার বুলেট ও টিয়ার শেল ছুড়েছে পুলিশ। এসব ঘটনায় ১০ জন গুলিবিদ্ধসহ আহত হয়েছে অর্ধশত ব্যক্তি।
সকাল ১০টায় দিনাজপুর ফুলবাড়ী বাসস্ট্যান্ডে আন্দোলনকারী জমায়েত হতে শুরু করে। তারা মিছিল নিয়ে শহরের হাসপাতাল মোড়স্থ হুইপ ইকবালুর রহিম এমপি ও বিচারপতি ইনায়েতুর রহিমের বাড়ির দিকে অগ্রসর হতে শুরু করলে পুলিশের সাথে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। দিনাজপুরের পুলিশ সুপার শাহ ইফতেখার আহমেদের নেতৃত্বে পুলিশ আন্দোলনকারীদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করে। দীর্ঘসময় পুলিশের সাথে সংঘর্ষের এক পর্যায়ে আন্দোলনকারীরা হুইপ ও বিচারপতির বাড়ীতে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। তারা বাড়ীতে থাকা কয়েকটি মোটরসাইকেল বের করে বাসার গেটে এনে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। জানা গেছে, ধাওয়া পাল্টা দেওয়ার সময় এবং রাবার বুলেট ও টিয়ার সেল নিক্ষেপ করে। ১০ জনের গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। সারা শহরজুড়ে থেমে থেমে আন্দোলনকারীদের সাথে পুলিশের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে। শহরের মোড়ে মোড়ে এখন আগুন জ্বলছে। এসব ঘটনা চলাকালে শহরের কোথাও সেনা সদস্য বা বিজিবির উপস্থিতি দেখা যায়নি। এর আগে শহরের পলিটেকনিক মোড়ে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ ও গ্রাফিতি অঙ্কন করে শিক্ষার্থীরা। পরে মিছিল নিয়ে শহরের দিকে অগ্রসর হলে এ সংঘর্ষে সুত্রপাত হয়।
নেত্রকোনা: নেত্রকোনায় রোববার সকাল ১০টা থেকে সরকার বিরোধী আন্দোলনকারী ও সরকারের পক্ষের সমর্থক সহ নেতাকর্মীদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়েছে। শহরের সাতপাই, নাগড়া সহ বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। জেলার শ্যামগঞ্জ বাজারের একাধিক বাসিন্দা জানান, নেত্রকোণা-ময়মনসিংহ সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে আন্দোলনকারীরা। এসময় পুলিশের একটি গাড়ি ভাঙচুর করে আন্দোলনকারীরা।
নোয়াখালী: নোয়াখালীতে রোববার সকাল থেকেই জেলা শহর মাইজদীর প্রধান সড়কে অবস্থান নেয় বিক্ষোভকারীরা। এসময় তাদের বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে রাস্তায় আগুন দিতে দেখা যায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টায় এখন কোথাও পুলিশি তৎপরতা দেখা যায়নি। সকাল ১০ টার দিকে নোয়াখালী-৪(সদর-সুবর্ণচর) আসনের সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরী তার অনুসারী নেতা-কর্মীদের নিয়ে পুড়ে যাওয়া জেলা আওয়ামী লীগ অফিস দেখতে আসেন। এসময় বিক্ষোভকারীদের সাথে তাদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এসময় কয়েক রাউন্ড গুলির শব্দ শুনা যায়। একপর্যায়ে এমপি একরাম সহ তার অনুসারীরা ব্যর্থ হয়ে জেলা শহর থেকে চলে যান। শহরেরর সব কটি সড়কে আগুন জ্বালিয়ে অবস্থান করে বিক্ষোভকারীরা।
বেলা সাড়ে ১১টার সময় সেনাবাহিনীর গাড়ী টহল দেওয়ার সময় আন্দোলনকারীরা ‘এ মুহূর্তে দরকার সেনাবাহিনীর সরকার’- স্লোগান দেয়।
কালিয়াকৈর (গাজীপুর): গাজীপুরের কালিয়াকৈরে গতকাল রোববার দিনব্যাপী সড়ক-মহাসড়ক অবরোধ করে বিভিন্ন স্লোগানে বিক্ষোভ মিছিল করেছে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনকারীরা ৩টি পুলিশ বক্স, আওয়ামী লীগের অফিস, থানার সামনে রাখা গাড়িসহ বেশকিছু যানবাহনে অগ্নিসংযোগ করে। এক পর্যায় পুলিশ ও আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মাঝে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। শিক্ষার্থীদের হামলায় ওসিসহ কয়েকজন পুলিশ সদস্য ও পুলিশের গুলিতে শিশুসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হন। থমথমে বিরাজ করছে কালিয়াকৈর।
চুয়াডাঙ্গা: চুয়াডাঙ্গা জেলাজুড়ে কর্মসূচি পালন করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা। এসময় জেলার বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নেয় শিক্ষার্থীরা। কোথাও কোথাও বিক্ষোভ প্রদর্শন করতে গেলে বাধার মুখে পড়েন তারা। ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা তাদের ওপর হামলা চালায় বলে অভিযোগ তোলেন। রোববার সকাল থেকে জেলাজুড়ে এমন পরিস্থিতি বিরাজ করছিল। সকাল থেকে চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুর সড়কের ভালাইপুর বাজারে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন আন্দোলনকারীরা। এসময় তারা একদফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে যান চলাচল বন্ধ করে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। সড়কের দু’পাশে সৃষ্টি হয় যানজট।
একই সাথে শহরের কোর্টমোড় এলাকাতেও বিক্ষোভ করতে গেলে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের বাধার মুখে পড়েন আন্দোলনকারীরা। এসময় তাদের ব্যানার ছিড়ে ফেলা হয়। শহরের হাসপাতাল সড়কে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালানো হয়। দর্শনা শহরে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে আন্দোলনকারীরা বাসস্ট্যান্ডে জড়ো হলে তাদের ওপরেও হামলা চালানো হয় বলে অভিযোগ ওঠে। এছাড়া জেলার বদরগঞ্জ, জীবননগর ও আলমডাঙ্গাতেও সড়কে নামে আন্দোলনকারীরা। এমন পরিস্থিতিতে জেলাজুড়ে আতঙ্ক ও থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।
ভৈরব (কিশোরগঞ্জ): কিশোরগঞ্জের ভৈরবে আন্দোলনকারীদের সাথে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষ চলাকালে পুলিশ প্রায় শতাধিক রাউন্ড রাবার বুলেট ও টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ করে। এসময় কমপক্ষে অর্ধশত আহত হয়। রোববার দুপুর ১২টা থেকে বিকেল সাড়ে ৩ টা পর্যন্ত ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ও স্থানীয় বাসস্ট্যান্ড, জগনাথপুর এবং কালিকাপ্রসাদ এলাকায় এ সংঘর্ষ চলে। এসময় আন্দোলনকারীরা কয়েকটি বাড়ীঘর দোকানপাট ভাংচুর করে। তবে বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে দেখা যায়নি। স্থানীয় বিএনপির কিশোর যুবকদের আন্দোলনে অংশ নিতে দেখা যায়। তারা দুপুর দেড়টার দিকে ভৈরব থানা আক্রমণ করতে চেষ্টা করলে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা মিলে আন্দোলনকারীদের সরিয়ে দেয়। এ সময় পুলিশ কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়ে।
গাজীপুরের কালিয়াকৈরে দুই দিনে একটি কারখানার প্রায় তিন শতাধিক শ্রমিক অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তারা ঢাকা মহাখালী কলেরা হাসপাতালসহ স্থানীয় বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। গত সোমবার থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত উপজেলার পূর্ব চান্দরা কাঠালতলী এলাকার ওই কারখানায় এ ঘটনা ঘটে।
এলাকাবাসী ও কারখানার শ্রমিক সূত্রে জানা গেছে, কালিয়াকৈর উপজেলার পূর্ব চান্দরা কাঠালতলী এলাকায় ময়েজ উদ্দিন টেক্সটাইল নামক একটি পোশাক তৈরি কারখানা রয়েছে। প্রতিদিনের মতো গত সোমবার সকালে ওই কারখানায় কাজে যোগদান করেন শ্রমিকরা। কিন্তু ওইদিন সন্ধ্যার পরেই ওই কারখানার কয়েকজন শ্রমিক হঠাৎ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হন এবং গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। অসুস্থ শ্রমিকদের উদ্ধার করে স্থানীয় সফিপুর তানহা হেল্থ কেয়ার নামে একটি হাসপাতালে ভর্তি করে তাদের সহকর্মীরা। তবুও কারখানা ছুটি দেয়নি কারখানা কর্তৃপক্ষ। প্রতিদিনের মতো পরের দিন মঙ্গলবার সকালে কাজে যোগ দেন ওই কারখানার শ্রমিকরা। ওইদিনও আরও বেশ কিছু শ্রমিকরা অসুস্থ হয়ে পড়েন। অসুস্থ শ্রমিকদের উদ্ধার করে বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠিয়েছেন কারখানা কর্তৃপক্ষ। এদিকে গত দুই দিনে ওই কারখানার প্রায় তিন শতাধিক শ্রমিক অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। এদের মধ্যে অনেকেই ঢাকা মহাখালী কলেরা হাসপাতালসহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং স্থানীয় বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে। এতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লে ওই কারখানা ছুটি ঘোষণা করেছেন কর্তৃপক্ষ। তবে তাৎক্ষণিকভাবে অসুস্থ হওয়ার কারণ জানাতে পারেনি কারখানা কর্তৃপক্ষ।
ওই কারখানার ডেপুটি ম্যানেজার মমিনুল ইসলাম জানান, ‘আমাদের শ্রমিকরা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাদের উদ্ধার করে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তারা এখন সুস্থ আছেন। তবে এ ঘটনায় শ্রমিকরা আতঙ্কিত হয়ে পড়লে ইতোমধ্যেই কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।’
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এইচ এম ফখরুল ইসলাম জানান, ‘এখানে আমি নতুন যোগদান করেছি। এ জন্য বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে বিষয়টি খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার বিকেলে ফরিদপুরের অম্বিকা ময়দানে ওই সমাবেশে জেলা জামায়াত ইসলামীর আমির মাওলানা মোহাম্মদ বদরুদ্দীনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির এটিএম আজহারুল ইসলাম, বক্তব্য রাখেন ,কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও অঞ্চল সহকারী আবু হারিস মোল্লা, ফরিদপুর অঞ্চল টিম সদস্য শামসুল ইসলাম আল বরাটি, জামায়াত ইসলাম মনোনীত ফরিদপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী কেন্দ্রীয় সূরা সদস্য অধ্যাপক আবদুত তাওয়াব ফরিদপুর-১ আসনের জামায়াত ইসলাম মনোনীত সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী ডাক্তার মো. ইলিয়াস মোল্লা ফরিদপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী, মাওলানা সোহরাব হোসেন, ফরিদপুর-৪ আসনের সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী মওলানা মোহাম্মদ সরোয়ার হোসেন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের ফরিদপুর জেলা শাখার সভাপতি আমজাদ হোসেন, সাধারণ সম্পাদক মুফতি আবু নাসির মুফতি মোস্তফা কামাল, সভাপতি বাংলাদেশ ইসলামী আন্দোলন, মাওলানা মো. মিজানুর রহমান আমির খেলাফত আন্দোলন, আবু হারেস মোল্লা নায়েবে আমির বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। সভায় বক্তারা বিগত দিনের ফ্যাসিবাদী সরকারের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করে বলেন, বিগত সরকার আমাদের অসংখ্য নেতা-কর্মীদের উপর জুলুম নির্যাতন করেছে। ফরিদপুরের দুজন শীর্ষস্থানীয় নেতাকে ফাঁসি দিয়েছেন। অসংখ্য নেতাকে মিথ্যা মামলায় কারাগারে পাঠিয়েছিলেন। তারা ভেবেছিলেন জামায়াতের নেতা কমিটির ফাঁসি দিয়ে ইসলামের কণ্ঠ রোধ করা যাবে। আসলে তারা বোকার স্বর্গে বাস করছে।
বাংলাদেশে ইসলামিক ঝান্ডা উঠবে। ইসলামিক সমাজ কায়েম হবে। আমরা মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন চাই। আমরা চাঁদাবাজ মুক্ত বাংলাদেশ দেখতে চাই। আমরা আল্লাহর আইন প্রতিষ্ঠা করব। আমার দেশকে কোনো অশুভ শক্তির হাতে তুলে দেব না, কোনো আধিপত্য শক্তির হাতে মাথা নত করব না। আমরা ইসলামিক দলগুলো নিয়ে আন্দোলন করছি। ভোটকেন্দ্রে সমস্ত ভোটার উপস্থিতি মাধ্যমে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য দাবি করছি। জুলাই সনদ বাস্তবায়নের জন্য আমরা স্বাক্ষর করেছি। নির্বাচনের পূর্বে গণভোটের আয়োজন করতে হবে।
দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামের মাধ্যমে পাহাড়ি জনগণ যেভাবে পার্বত্য চুক্তি সম্পাদন করেছে ঠিক তেমন করে এই চুক্তি বাস্তবায়ন করে ছাড়ব বলে মন্তব্য করেছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির শীর্ষ নেতা ও রাঙামাটি সাবেক সংসদ সদস্য উষাতন তালুকদার। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২৮তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে তিনি মঙ্গলবার রাঙামাটি জিমনেসিয়াম মাঠে আয়োজিত বিশাল গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন। পার্বত্য চুক্তির ২৮ বছরপূর্তি উপলক্ষে রাঙামাটি জেলা পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি এই গণ-সমাবেশের আয়োজন করে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির পূর্ণবাস্তবায়নের দাবিতে রাঙামাটির বিভিন্ন স্থান থেকে পাহাড়ি নারী-পুরুষ মিছিল সমাবেশ করে সমাবেশ স্থলে যোগ দেয়।
গণ-সমাবেশে উষাতন তালুকদার বলেন, আগামী ২ সপ্তাহের মধ্যে দেশে সাধারণ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার কথা রয়েছে। যদি আগামী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় তাহলে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি এ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে বলে তিনি ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, নির্বাচনে অংশ নিয়ে পাহাড়ে জনগণের নিজের অধিকার নিজেদের ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টা নিতে হবে।
উষাতন তালুকদার পার্বত্য জেলা পরিষদগুলো শক্তিশালী করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, পাহাড়ের স্থায়ী বাসিন্দাদের নিয়ে ভোটার তালিকার মাধ্যমে জেলা পরিষদগুলোর নির্বাচন দিন। পরিষদগুলোকে শক্তিশালী করতে পাহাড়ের মানুষ জেলা পরিষদগুলোর নির্বাচন চাই। নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের প্রতিনিধি নির্বাচিত হলেই জেলা পরিষদগুলো শক্তিশালী হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
রাঙামাটি শহরের কুমার সুমিত রায় জিমনেসিয়াম মাঠে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি রাঙামাটি জেলা শাখার সভাপতি ডা. গঙ্গা মানিক চাকমার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত গণ-সমাবেশে বিশেষ অতিথি ছিলেন, এমএন লারমা মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশনের সভাপতি বিজয় কেতন চাকমা, শিক্ষাবিদ শিশির চাকমা, সিএইচটি হেডম্যান নেটওয়ার্কের সহসভাপতি ভবতোষ দেওয়ান, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি রুমেন চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি রাঙামাটি জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক নগেন্দ্র চাকমা বক্তব্য রাখেন।
প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্প (এলডিডিপি) এর আওতায় ভেড়ামারা উপজেলার ভেড়ামারা সাতবাড়ীয়া মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্কুল মিল্ক ফিডিং কার্যক্রমের শুভ উদ্বোধন। এই ফিডিং কর্মসূচির ভেতরে ছিল বাচ্চাদের পুষ্টি বৃদ্ধির জন্য বাচ্চাদের মধ্যে দুধ খাওয়ানো। এই ফিডিং কর্মসূচিতে স্কুলের প্রত্যেক বাচ্চাদের ১ প্যাকেট করে দুধ খাওয়ানো হয়। এ সময় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) গাজী আশিক বাহার, অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. কানিস ফারজানা,
এসব উপস্থিত ছিলেন উপজেলা প্রাণিসম্প্রসারণ কর্মকর্তা ডা. এনামুল হক, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার জালাল উদ্দিন, অত্র স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. আরিফুল ইসলাম, সহকারী শিক্ষক, স্কুলের বিভিন্ন শ্রেণির শিক্ষার্থী, অভিভাবক, সরকারি কর্মকর্তা ও গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন। এ সময় দুধের পুষ্টিগুণ ও খাদ্য নিরাপত্তা সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের অবহিত করেন। দুধ পেয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে উৎসাহ ও আনন্দের ছাপ দেখা যায়। সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে তারা দুধ গ্রহণ করে এবং এ ধরণের উদ্যোগ নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করে।
সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলার বেহেলী ইউনিয়নের কদমতলী গ্রাম। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে চলে আসা পাটি বুনন শিল্পকে পেশা নয়, নিজের ঐতিহ্য হিসেবে লালন করে আসছেন তারা। পরিবারের প্রবীণ নারীদের কাছ থেকে শেখা এই দক্ষতা আজও সমান গুরুত্ব নিয়ে টিকে আছে তাদের হাতের কারুকার্যে। আধুনিক যন্ত্রপাতি, বাজারজাত প্লাস্টিকের মাদুর কিংবা দেশি-বিদেশি ব্র্যান্ডের ঘর সাজানোর পণ্যের সহজলভ্যতার ভিড়েও এই গ্রামের নারীরা এখনো ধরে রেখেছেন এক প্রাচীন ঐতিহ্য পাটি বুনন।
কদমতলী গ্রামের অনেক নারী জানিয়েছেন, পাটি বিক্রি করে তারা সংসারের বিভিন্ন প্রয়োজনীয় খরচে সহায়তা করতে পারেন। যদিও বাজারে প্রতিযোগিতা বেড়েছে, তবুও স্থানীয়ভাবে এ পণ্যের চাহিদা এখনো রয়েছে। বিশেষ করে উৎসব, বিয়ে বা নতুন বাসায় ওঠার সময় অনেকের পছন্দের তালিকায় আছে হাতে তৈরি বেতের পাটি।
এই গ্রামের অধিকাংশ নারীই এখনো পাটি বুননকে নিজেদের জীবনের অংশ হিসেবে ধরে রেখেছেন। ভোরে ঘরের কাজ সেরে তারা বসে পড়েন পাটি তৈরির কাজে। বেতসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম আর নিপুণ হাতের স্পর্শে তৈরি হয় নানা ধরনের পাটি। গ্রামের পরিবেশে হাঁটলে দেখা যায় অনেক বাড়ির বারান্দায় বা উঠানে নারীরা মনোযোগ দিয়ে এই কাজ করছেন।
একেকটি পাটি তৈরি করতে সময় লাগে নকশা অনুযায়ী ৭ থেকে ১৫ দিন পর্যন্ত জানান গ্রামের নারীরা। পরিশ্রমসাধ্য হলেও তারা এই কাজ ছাড়তে চান না। তবে শিল্পটি টিকে থাকলেও রয়েছে নানা বাধা। প্রয়োজনীয় কাঁচামালের দাম বেড়েছে। বাজারজাত করার মতো সঠিক প্ল্যাটফর্ম না থাকায় ন্যায্য দাম পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। যদি তাদের প্রশিক্ষণ, আর্থিক সহায়তা বা বাজার সম্প্রসারণে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এগিয়ে আসে, তাহলে এই পেশা আরও অনেক নারীকে স্বাবলম্বী করতে পারবে। একই সঙ্গে ঐতিহ্যবাহী এই শিল্পও আরও বড় পরিসরে ছড়িয়ে পড়বে।
স্থানীয় প্রবীণদের মতে, যথাযথ উদ্যোগ থাকলে কদমতলী গ্রাম জেলার জন্য একটি মডেল হতে পারে। কারণ এখানে শুধু পাটি নয়, নারীদের আত্মনির্ভরশীলতারও শক্তিশালী গল্প লুকিয়ে আছে। প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন, প্রদর্শনী আয়োজন, অনলাইনে বিক্রির সুযোগ এবং সরকারি দিকনির্দেশনা পেলে এই শিল্প নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করবে।
একটি শীতলপাটি তৈরি করতে প্রায় ১,২০০ টাকার মুরতা বেত ও ১০০ টাকার রং লাগে। বেত সিদ্ধ করা থেকে বোনা পর্যন্ত একজন নারীকে অন্তত ১৫ দিন শ্রম দিতে হয়। সব মিলিয়ে একটি শীতলপাটি তারা প্রায় ১,৫০০ টাকায় বিক্রি করলেও শ্রমের যথাযথ মূল্য মেলে না।
জামদানি পাটি তৈরিতে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকার মুরতা বেত, রং এবং ৮ থেকে ৯ দিনের পরিশ্রম প্রয়োজন হয়। প্রস্তুত হলে এটি প্রায় ১ হাজার টাকায় বিক্রি করা যায়। সাধারণ পাটি এক সপ্তাহ সময় ও মাত্র ৩০০ টাকার মুরতা বেত লাগে বানাতে। তবে বাজারে এর দাম মাত্র ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা। সব মিলিয়ে পাটি বুনন গ্রামের নারীদের একটি গুরুত্বপূর্ণ আয়ের উৎস হলেও শ্রমের তুলনায় লাভ খুবই সামান্য।
সুশিলা রানী কর বলেন, ‘মুরতা গাছের বেত এখন আগের মতো পাওয়া যায় না। মোহনগঞ্জ সিলেট থেকে কিনতে হয়। যাদের জায়গা আছে তারা মুরতা গাছ লাগায়। তাদের আর কিনতে হয় না। বাড়িতে থেকে কিছু না করার চেয়ে পাটি বানালে কিছু টাকা রোজগার করা যায়। সেই নেশা থেকেই পাটি তৈরি করি।’
কদমতলী গ্রামের আরেক বাসিন্দা নারায়ন নন্দী বলেন, ‘আমার বাবা-মা এই পাটি বানাতেন। তাদের কাছ থেকেই শিখেছি। এখন আমি কৃষি কাজ করি। রাতে এসে মুরতা গাছ থেকে বেত তৈরি করে দেই। পরে মহিলারা এটি শুকিয়ে, সিদ্ধ করে পাটি তৈরি করে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আগের মতো খেতে এখন মুরতা গাছ চাষ করি না। পাটি বানানোর পরিমাণ আস্তে আস্তে কমিয়েছি। কারণ কোনো বাজার না থাকায় তেমন লাভ নেই। এতে পাইকারের কাছে বিক্রি করতে হয়। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এই শিল্পটা আবারও ঘুরে দাড়াবে।’
পার্শ্ববর্তী রতনপুর গ্রামের বাসিন্দা শ্রী রতন কুমার ঘুস্বামী বলেন, ‘এই শিল্পটি প্রায় দেড়শ’ বছরের পুরোনো। মুরতা গাছের দাম ও পরিশ্রমের সঙ্গে বিক্রয় মূল্য ঠিক নেই। এ জন্য এখন পাটি বানিয়ে পুষে না। আমাদের শ্রমের মূল্য না দিয়েই বিক্রি করতে হয়।
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প করপোরেশ (বিসিক)-এর সুনামগঞ্জ শিল্পনগরী কর্মকর্তা মো. আবুল কাশেম বলেন, ‘কদমতলীতে আমাদের কোনো কাজ নেই। জামালগঞ্জে কাজ করার সময় আমি জানতাম। কিন্তু তারা আমাদের কাছে কখনো আসেনি, আমরাও এ বিষয়ে কিছু জানি না। এই বিষয়ে কোনো তথ্যও আমার জানা নেই।
গাজীপুরের টঙ্গীর তুরাগ তীরে তাবলীগ জামাত বাংলাদেশ শুরায়ী নেজামের উদ্যোগে আয়োজিত পাঁচ দিনব্যাপী ‘পুরানাদের জোড় ইজতেমা’ আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে। মঙ্গলবার সকালে ঢাকা, গাজীপুরসহ আশপাশের জেলার ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের ঢল নামে ইজতেমা ময়দানে। দোয়ায় অংশ নেন প্রায় আড়াই লক্ষাধিক মুসল্লি।
মঙ্গলবার সকাল ৮টা ৫১ মিনিটে দোয়া শুরু হয়ে ৯টা ১৩ মিনিটে শেষ হয়। ‘আমিন… আমিন…’ ধ্বনিতে কম্পিত হতে থাকে সমগ্র টঙ্গী ময়দান। দোয়ার মুহূর্তে মাঠজুড়ে কান্নার রোল পড়ে যায়। দোয়া পরিচালনা করেন পাকিস্তানের মাওলানা আহমেদ বাটলা। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তাবলীগ জামাত বাংলাদেশ শুরায়ী নেজামের মিডিয়া সমন্বয়ক হাবিবুল্লাহ রায়হান।
তিনি আরও জানান, এবারের জোড়ে ২৭টি দেশ থেকে ৭৩২ জন বিদেশি মেহমান অংশগ্রহণ করেছেন। অংশগ্রহণকারী দেশসমূহ হলো- পাকিস্তান, ভারত, সৌদি আরব, ইয়েমেন, কানাডা, থাইল্যান্ড, মিয়ানমার, তিউনিসিয়া, যুক্তরাজ্য, ইতালি, নাইজার, আফগানিস্তান, জার্মানি, জাপান, চাঁদ, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত, দক্ষিণ আফ্রিকা, ফিলিপাইন, মালয়েশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, চীন, মিশর, দক্ষিণ কোরিয়া ও অস্ট্রেলিয়া।
হাবিবুল্লাহ রায়হান আরও জানান, জোড় চলাকালে মোট ৬ জন মুসল্লির মৃত্যু হয়েছে।
দোয়া শেষে কয়েক হাজার চিল্লার জামাত ও ৩ চিল্লার জামাত আগামী ০২, ০৩ ও ৪ জানুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য খুরুযের জোড়ের প্রস্তুতির জন্য আল্লাহর রাস্তায় বের হয়ে যান। বাকি মুসল্লিরা মোকামি কাজ ও আনেওয়ালা জোড়ের মেহনত নিয়ে নিজ নিজ মহল্লায় ফিরে যান।
এদিকে সরকারি সিদ্ধান্ত মোতাবেক, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের পর টঙ্গী বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
নরসিংদীর পলাশে যুবলীগ নেতা দেলোয়ার হোসেন দেলুর প্রায় সাত কোটি টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ ক্রোক করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গত সোমবার দুপুরে দুদকের সম্মিলিত জেলা কার্যালয় গাজীপুরের সহকারী পরিচালক এনামুল হকের নেতৃত্বে উপজেলার ডাঙ্গা ইউনিয়নের কাজিরচরে আদালতের নির্দেশনায় দেলুর অবৈধসম্পদ ক্রোক করা হয়। এ সময় পলাশ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আবুবক্কর সিদ্দিকীকে রিসিভার হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়। দেলোয়ার হোসেন দেলু পলাশ উপজেলার কাজিরচর গ্রামের মো. সুরুজ আলীর ছেলে। তিনি ডাঙ্গা ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি।
দুদক জানায়, যুবলীগ নেতা দেলোয়ার হোসেন দেলু আয় বহির্ভূত ৮ কোটি ৯৫ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ দখলে রাখার অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) গাজীপুরের সহকারী পরিচালক মো. এনামুল হক মামলা দায়ের করেন। মামলায় তদন্তকালে কর্মকর্তারা জানতে পারে দেলোয়ারের অবৈধ সম্পদের ৬ কোটি ৮১ লাখ টাকার সম্পদ হস্তান্তর ও বিক্রির চেষ্টা করছেন। পরে দুদক সম্পদ বেহাত হয়ে যাবে আশায় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আদালতে আবেদন করেন। পরে নরসিংদীর সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ শেখ হুমায়ুন কবীর সম্পদগুলো ক্রোক ও রিসিভার নিয়োগের আদেশ দেন। ক্রোককৃত সম্পদ হলো, পলাশের কাজিরচর গ্রামে ২৭ শতাংশ জমির ওপর নির্মিত ২ হাজার ৩০৪ বর্গফুটের তিনতলা ডুপ্লেক্স বাড়ি। যার মূল্য ৩ কোটি ১৩ লাখ ২৭ হাজার ৪৪ টাকা। আর একই গ্রামে ৬ শতাংশ জমির ওপর নির্মিত তিন হাজার ৬৫০ বর্গফুটের পাঁচতলা ভবন। যার মূল্য ৩ কোটি ৬৮ লাখ ৮ হাজার ২৫৭ টাকা। দেলুর মোট ৬ কোটি ৮১ লাখ ৩৫ হাজার ৩০১ টাকার সম্পদ ক্রোক করা হয়েছে।
অভিযানে দুদকের সম্মিলিত জেলা কার্যালয় গাজীপুরের সহকারী পরিচালক সহকারী পরিচালক মো. মশিউর রহমান, পলাশ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আবুবক্কর সিদ্দিকী, নরসিংদী জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সিনিয়র সদস্য হলধর দাসসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।
পলাশ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আবুবক্কর সিদ্দিকী বলেন, আদালতের নির্দেশনায় দুইটি ভবন আমরা ক্রোক করেছি ও রিসিভার হিসেবে আমি দায়িত্ব নিয়েছি। মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত এই সম্পদ যেন বেহাত ও বিক্রি না হয় সেজন্য আমরা ক্রোক করেছি।
ফেনীতে নবাগত পুলিশ সুপার মো. শফিকুল ইসলাম বলেছেন, আমার কাছে এসে ফুল দিয়ে ছবি তুলে বিশেষ সংখ্যতা পাবেন না। যে কয়দিন থাকব ফেনীবাসীর নিরাপত্তা নিশ্চিত ও ভালো রাখতে কাজ করব। মহান আল্লাহ যেন আমাকে সেই পথে রাখেন ও হেফাজত করেন, সেজন্য সকলের সহযোগিতা চাই।
তিনি আরও বলেন, জাতীয় নির্বাচনে ভোটার অত্যন্ত নিরাপদে কেন্দ্রে যাওয়া থেকে বাড়ি পৌঁছানো পর্যন্ত নিরাপত্তা নিশ্চিতে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। বিগত সময়ে নির্বাচনগুলোতে যেভাবে প্রভাবিত করা হয়েছিল সেখান থেকে বের হয়ে এবার নির্বাচনে পুলিশ সক্ষমতা প্রমাণ করতে চায়। পুলিশের সম্পর্ক হবে নির্বাচনী নিরাপত্তার সঙ্গে, নির্বাচন প্রক্রিয়ার সঙ্গে নয়-এটিও আমরা এবার প্রমাণ করতে চাই। গত সোমবার বিকেলে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আয়োজিত মতবিনিয় সভায় এসব কথা বলেন পুলিশ সুপার।
পুলিশ ক্লিয়ারেন্সে টাকা আদায়ের অভিযোগ দুঃখজনক উল্লেখ করে মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, আমাদের দেশের অর্থনীতি যারা সচল রাখেন সেই প্রবাসীদের পুলিশ ক্লিয়ারেন্সে টাকা আদায়ের অভিযোগ অত্যন্ত দুঃখজনক । প্রথমদিনে এমন কিছু শুনব আশা করিনি। এ বিষয়ে আমি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলব। এছাড়া টাকা দিয়ে কেউ নেগেটিভ রিপোর্টকে পজিটিভ করার সুযোগ নেই। যদি কখনো কোন থানা থেকে আর্থিক লেনদেনের বিষয়ে কথা বলা হয় সেই বিষয়ে আমাকে জানালে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। অনলাইনের মাধ্যমে যেসব আবেদন করা হয় সেগুলোও যথাযথ প্রক্রিয়ায় হচ্ছে কি না তা যাচাই করা হবে।
পুলিশ সুপার বলেন, থানায় গিয়ে সেবা পেতে ঘুষ বা এ ধরনের সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে আসতে চাই। ঘুষ না দিলে সেবা না পাওয়ার এমন ঘটনা ঘটলে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। মানুষের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত ও জেলা পুলিশের আওতাধীন সকল কার্যক্রম অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করা হবে। সবমিলিয়ে ফেনীবাসীর নিরাপত্তা নিশ্চিতে সকলের সহযোগিতা নিয়ে কাজ করব।
এ সময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মো. সাইদুর রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) নিশাত তাবাসসুমসহ জেলা পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও ফেনীতে কর্মরত গণমাধ্যমকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
পুলিশ সুপার মো. শফিকুল ইসলাম ২৭ তম বিসিএসে উত্তীর্ণ হয়ে ২০০৮ সালে প্রথম গোপালগঞ্জ জেলায় সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে যোগদান করেন।
চট্টগ্রামের যোগাযোগ ব্যবস্থা ও নগর বিন্যাসে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে সক্ষম একটি মহাপরিকল্পনা তিন বছর ধরে অন্ধকারে পড়ে আছে। ২০২২ সালে চারটি চীনা রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি নিজেদের অর্থায়নে চট্টগ্রামে মেট্রোরেল নির্মাণের পাশাপাশি মিরসরাই উপকূলে সাগর ভরাট করে একটি অত্যাধুনিক ‘স্মার্ট সিটি’ গড়ে তোলার প্রস্তাব দেয় চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ)-এর কাছে। সিডিএ প্রস্তাবটি মন্ত্রণালয়ে পাঠালেও রহস্যজনক কারণে আর কোনো অগ্রগতি হয়নি। দেশি-বিদেশি নানা চক্রান্তে প্রকল্পটি আটকে গেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের ১৩ মাস পরও প্রকল্পটি একইভাবে ফাইলবন্দি পড়ে আছে।
সিডিএ সূত্র জানায়, প্রস্তাবিত প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে চট্টগ্রামের নগরায়ণ এবং যোগাযোগ ব্যবস্থায় নতুন যুগের সূচনা হতো। পাশাপাশি সাগরতীরে নতুন একটি আধুনিক শহর গড়ে উঠত, যেখানে হাজার হাজার মানুষের জন্য মনোমুগ্ধকর আবাসন ব্যবস্থা তৈরি করা যেত। বে-টার্মিনালের নির্ধারিত স্থান থেকে মিরসরাই পর্যন্ত সাগরের ভেতরে দীর্ঘ এলাকাজুড়ে যে চরসদৃশ অংশ রয়েছে, সেটি রিক্লেইম করে বিশাল টাউনশিপ নির্মাণের ইচ্ছা প্রকাশ করে কোম্পানিগুলো। বিনিময়ে তারা মেট্রোরেল প্রকল্পে সম্পূর্ণ অর্থায়ন করবে- বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে এ কাজে কোনো ব্যয় লাগবে না বলেও জানায় তারা।
চীনের প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়, উদ্ধার করা সাগরের জমিতে পূর্ণাঙ্গ স্মার্ট সিটি গড়ে তোলার পরিকল্পনা তাদের দায়িত্বেই থাকবে। সেখানে সৃষ্টি হওয়া প্লট বিক্রির আয় সরকার ও চীনা কোম্পানিগুলোর মধ্যে ভাগ হবে। বে-টার্মিনাল থেকে মিরসরাই ইকোনমিক জোন পর্যন্ত বিস্তীর্ণ এলাকায় ভূমি উদ্ধার করা হবে; তবে জাহাজভাঙা শিল্পসহ মাঝখানের কিছু প্রতিষ্ঠান এই প্রকল্পের বাইরে রাখা হবে। চীনা কোম্পানিগুলোর দাবি, এটি সাগরের ‘ডেড অ্যান্ড’ হওয়ায় ভূমি উদ্ধার প্রক্রিয়ায় পরিবেশের কোনো ক্ষতি হবে না। তারা জানায়, সাগরের পানিকে স্বচ্ছ রাখার বিশেষ প্রযুক্তিও তাদের রয়েছে। সিঙ্গাপুর, দুবাইসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সাগরভূমি উদ্ধার করে যেভাবে টাউনশিপ গড়ে তোলা হয়েছে, তাদেরও সে অভিজ্ঞতা রয়েছে।
এদিকে বিগত সময়ে যখন কোরিয়ার একটি প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম মেট্রোরেল প্রকল্পের ফিজিবিলিটি স্টাডির জন্য প্রায় ৭০ কোটি টাকার প্রস্তাব দেয়, তখনই চীনা কোম্পানি সিসিসি পুরো সমীক্ষা বিনা খরচে করার প্রস্তাব দেয়। শুধু সমীক্ষাই নয়-৮০ হাজার কোটি থেকে এক লাখ কোটি টাকার পুরো মেট্রোরেল প্রকল্প তাদের নিজেদের অর্থায়নে বাস্তবায়নের আগ্রহও জানায়। মিরসরাই ইকোনমিক জোন থেকে বিমানবন্দরসহ চট্টগ্রামের গুরুত্বপূর্ণ গ্রোথ সেন্টারগুলো সংযুক্ত করে মেট্রোরেল রুট নির্ধারণ ও প্রয়োজনীয় সমীক্ষাও সম্পূর্ণ নিজেদের অর্থে করার আশ্বাস দেয় তারা। এই মেট্রোরেল প্রকল্পের বিনিময়ে চীনা প্রতিষ্ঠানগুলো পতেঙ্গার বে-টার্মিনালের পাশ থেকে মিরসরাই ইকোনমিক জোন পর্যন্ত সন্দ্বীপ চ্যানেলের অংশবিশেষ ভরাট করে দুবাই ও সিঙ্গাপুরের আদলে একটি স্মার্ট সিটি গড়ে তুলতে চায়। তারা অন্তত ৫০ হাজার একর নতুন ভূমি উদ্ধারের পরিকল্পনা দিয়েছে। সাগরের এই অংশ ভরাট করলে পরিবেশগত ক্ষতির ঝুঁকি নেই বলে চীনা কোম্পানিগুলো দাবি করে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সাগরভূমি উদ্ধার করে যেমন বিমানবন্দর, বন্দর, স্মার্ট সিটি তৈরি হয়েছে- সেই মডেলেই সীতাকুণ্ড উপকূলে নতুন উপশহর তৈরি করার প্রস্তাব দেয় তারা। নতুন শহর থেকে আয় সরকার ও কোম্পানি যৌথভাবে ভাগাভাগি করবে বলেও জানানো হয়।
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী প্রকৌশলী (নির্মাণ বিভাগ-২) মো. শামিম বলেন, ‘চীনের প্রস্তাবনাটা আমরা ২০২২-২৩ সালে পেয়েছিলাম। প্রস্তাবটি যথারীতি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। প্রকল্পটি ভালো ছিল। বাস্তবায়িত হলে চট্টগ্রামের যোগাযোগ ব্যবস্থা থেকে শুরু করে আবাসনে ব্যাপক পরিবর্তন আসত। তবে কেন প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলো না, সেটি মন্ত্রণালয় বলতে পারবে।
মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রায় কাঁপছে উত্তরের জনপদ তেঁতুলিয়া। এক দিনের ব্যবধানে ১.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা কমে গেছে। গত কয়েক দিন তাপমাত্রা ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস ঘর থেকে ১৩ ডিগ্রির ঘরে নেমে গেছে। ফলে বাড়ছে শীতের প্রকোপ। মঙ্গলবার সকাল ৯টায় তেঁতুলিয়ায় ১১.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে। এর ৩ ঘণ্টা আগে, সকাল ৬টায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। উত্তরের হিমেল বাতাসের প্রভাবে জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে তাপমাত্রা ওঠানামা করার ফলে বেড়েছে মানুষের ভোগান্তি। এক কথায় হিমালয়ের কন্যা খ্যাত পঞ্চগড়ে শীতের তীব্রতা দিন দিন বাড়ছে। স্থানীয়রা জানান, হিমালয় পাদদেশে অবস্থানের কারণে প্রতি বছরই এ জেলায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয়।
এদিকে উত্তরের হিমেল বাতাসের সঙ্গে রাত থেকে সকাল পর্যন্ত কুয়াশায় ঢেকে থাকে পুরো এলাকা। সকালের দিকে সূর্যের দেখা মিললেও বিকেল ৪টা বাজতে না বাজতেই ফের হারিয়ে যায়। পঞ্চগড়ের আশপাশের জেলায় কয়েকদিন থেকে হিমালয়ের হিমেল বাতাসে ঠাণ্ডা অব্যাহত রয়েছে। সকাল সকাল রোদের ঝলমলে রোদের দেখা মিললেও তেমন উত্তাপ নেই। রাতে ও সকালে ঠাণ্ডার কারণে গ্রাম-গঞ্জের মানুষ শীতের গরম কাপড় পরিধান করছে। তবে গত কয়েকদিন থেকেই শীতের তীব্রতা হঠাৎ বেড়ে যাওয়ার কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন নিম্ন আয়ের মানুষগুলো। এছাড়া দিনের বেলা রোদের দেখা মিললেও কমেনি শীতের তীব্রতা। সারাদিন ঠাণ্ডা আবহাওয়া আর শেষ বিকালে শীতের তীব্রতা আরও বৃদ্ধি পায়।
এছাড়া শীতের তীব্রতা বাড়ায় হাসপাতালগুলোর বহির্বিভাগে প্রতিদিন শীতজনিত রোগীর ভিড় থাকছেই। হাসপাতালে প্রতিদিন রোগীরা চিকিৎসা নিচ্ছেন। এদের বেশির ভাগই শিশু ও বৃদ্ধ। যারা বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ছেন তারাই কেবল হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। ফলে শীতে দরিদ্র ও খেটে খাওয়া মানুষের ভোগান্তি বেড়ে যায়। বিশেষ করে পাথর শ্রমিক, ভ্যানচালকসহ শ্রমজীবী মানুষরা ঠাণ্ডার কারণে সময়মতো কাজে যেতে পারছেন না এবং কাজেও অসুবিধা হয়। হাসপাতালে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে প্রতিদিনই।
মহনন্দা নদীতে পাথর উত্তোলনকারী শ্রমিক মহসিন ইসলাম জানান, ‘কয়েকদিন ধরে শীত বাড়ছে। ঠাণ্ডা পানিতে কাজ করতে কষ্ট হয়।’
ভ্যানচালক জব্বার বলেন, ‘সকাল-সন্ধ্যায় কুয়াশা ও ঠাণ্ডার দাপট বেশি। তিনি জানান, শীতবস্ত্র সহায়তা পেলে গরিব মানুষদের কষ্ট কিছুটা লাঘব হবে।’
তেঁতুলীয়া এলাকার আরেক রিকশাচালক বলেন, ‘ভোরে রাস্তায় নামলেই হাত-পা ঠাণ্ডায় অবশ হয়ে আসে। কুয়াশায় কিছুই দেখা যায় না, হেডলাইট জ্বালিয়ে খুব ধীরে চালাতে হয়। শীতের কারণে আগের মতো যাত্রীও পাওয়া যাচ্ছে না, আয় কমে গেছে।’
তেঁতুলিয়ার প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জিতেন্দ্র নাথ বলেন, ‘মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১১.৭ ডিগ্রির ঘরে নেমে গেছে। উত্তর হিমালয়ের কাছাকাছি হওয়ায় উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল থেকে বয়ে আসা হিমেল হাওয়ার কারণে তীব্র ঠাণ্ডা অনুভূত হচ্ছে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায়।’
এর আগের দিন সোমবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছিল ১৩ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তার আগের কয়েকদিন তেঁতুলিয়ায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৩ দশমিক ২ থেকে ১৩ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠানামা করেছে। যদিও দিনে রোদ থাকে; কিন্তু ভোর ও সকালের ঠাণ্ডা বাতাস শীতের অনুভূতিকে আরও তীব্র করে তুলছে।
এদিকে পঞ্চগড়ের আশপাশের জেলায় কয়েকদিন থেকে হিমালয়ের হিমেল বাতাসে ঠাণ্ডা অব্যাহত রয়েছে। সকাল সকাল ঝলমলে রোদের দেখা মিললেও তেমন উত্তাপ নেই। রাতে ও সকালে ঠাণ্ডার কারণে গ্রাম-গঞ্জের মানুষ শীতের গরম কাপড় পরিধান করছে। তবে গত কয়েকদিন থেকেই শীতের তীব্রতা হঠাৎ বেড়ে যাওয়ার কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন নিম্নআয়ের মানুষগুলো। এছাড়াও দিনের বেলা রোদের দেখা মিললেও কমেনি শীতের তীব্রতা। সারাদিন ঠাণ্ডা আবহাওয়া থাকলেও শেষ বিকেলে শীতের তীব্রতা আরও বৃদ্ধি পায়।
এদিকে শীতের তীব্রতা বাড়ায় হাসপাতালগুলোর বহির্বিভাগে প্রতিদিন শীতজনিত রোগীর ভিড় থাকছেই। হাসপাতালে প্রতিদিন নতুন নতুন রোগীরা চিকিৎসা নিচ্ছেন। এদের বেশির ভাগই শিশু ও বৃদ্ধ। যারা বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ছেন তারাই কেবল হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন।
রাজবাড়ী জেলার পাংশা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন মো. রিফাতুল হক। মঙ্গলবার (০২ ডিসেম্বর) সকালে আনুষ্ঠানিকভাবে তিনি নতুন দায়িত্বে যোগদান করেন।
তিনি ৩৭তম বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারের একজন কর্মকর্তা। ঢাকা জেলার রমনা থানার বড় মগবাজার এলাকার বাসিন্দা মো. রিফাতুল হক পূর্বে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিবের একান্ত সচিব হিসেবে সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন। এর আগে তিনি পাবনা জেলার সাঁথিয়া উপজেলায় সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
তিনি সকালে পাংশা উপজেলা পরিষদে পৌঁছালে উপজেলার সকল দপ্তরের কর্মকর্তাগণ তাঁকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেন।
ইউএনও মো. রিফাতুল হক নতুন কর্মস্থলে দায়িত্ব পালনে পাংশা উপজেলার জনপ্রতিনিধি, সাধারণ মানুষ ও সাংবাদিকদের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেছেন।
সরকার ঘোষিত চাল আমদানির সময়সীমা শেষ হয়ে গেছে গত ৩০ নভেম্বর। ভারতের পেট্রাপোল বন্দর হয়ে চার মাসের মধ্যে ৫৫ কার্যদিবসে বেনাপোল বন্দরে এসেছে ১৮ হাজার ১১ মেট্রিক টন চাল। গত ২১ আগস্ট ৯টি ট্রাকে ৩১৫ মেট্রিক টন চালের প্রথম চালান বেনাপোল বন্দরে প্রবেশ করে। ২১ আগস্ট থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত ৫৫ দিনে প্রায় ১৫৫টি চালানের বিপরীতে ৫৮০টি ট্রাকে করে ১৮ হাজার ১১ মেট্রিক টন মোটা চাল বেনাপোল বন্দরে প্রবেশ করে।
দেশে চালের অস্থিতিশীল বাজার নিয়ন্ত্রণে আনতে বাংলাদেশ সরকার দেশের সব বন্দর দিয়ে চাল আমদানির অনুমতি দেয়। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২১ আগস্ট বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে চাল আমদানি শুরু হয়। অর্থাৎ আগস্ট মাসে ১,২৬০ মেট্রিক টন, সেপ্টেম্বর মাসে ৫ হাজার ৪৩৫ মেট্রিক টন, অক্টোবর মাসে ৫ হাজার ১৮৮ মেট্রিক টন এবং নভেম্বরে ৬ হাজার ১২৮ মেট্রিক টন চাল ভারত থেকে আমদানি হয়েছে।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাজেদুর রহমান বলেন, ‘চলতি বছরের ১৫ এপ্রিল সর্বশেষ চাল আমদানি হয়েছিল। পুনরায় খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতি পাওয়ার পর অনেক প্রতিষ্ঠান এলসি খুলে গত ২১ আগস্ট থেকে আবার চাল আমদানি শুরু করে। অর্থাৎ ২১ আগস্ট থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত চার মাসের মধ্যে মধ্যে ৫৫ দিনে বেনাপোল বন্দর দিয়ে ১৮ হাজার ১১ মেট্রিক টন চাল আমদানি হয়েছে। ইতোমধ্যে কৃষকরা আমন ধান কাটতে শুরু করেছে। এ ধান বাজারে এলে চালের দাম কমে আসবে এবং দেশে চালের ঘাটতি পূরণ হবে।
বেনাপোল উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের উপসহকারী কর্মকর্তা শ্যামল কুমার নাথ জানান, চার মাসে ভারত থেকে ১৫৫টি চালানে প্রায় ৫৮০টি ট্রাকে করে ১৮ হাজার ১১ মেট্রিক টন চাল বেনাপোল বন্দরে আমদানি হয়েছে। গত ৩০ নভেম্বর সরকার ঘোষিত শেষদিনে ৬ হাজার ১২৮ মেট্রিক টন চাল আমদানি হয়েছে।
বিকেল তখন গড়িয়ে গেছে। জয়পুরহাট সদর উপজেলার ভাদসা ইউনিয়নের বড় মাঝিপাড়া গ্রামের বাড়িতে নেমে এসেছে নিস্তব্ধতা। স্বজনদের চাপা কান্নায় ভারী হয়ে আছে পরিবেশ। উঠানে পাশাপাশি রাখা দুটি খাটিয়ার একটিতে নিথর হয়ে শুয়ে আছেন মা সালেহা বেগম (৬২), আর ঠিক হাতছোঁয়া দূরত্বে অন্য খাটিয়ায় শুয়ে আছেন তার মেয়ে বিলকিস বেগম (৪০)।
এই মৃত্যুর দৃশ্য দেখে স্তব্ধ হয়ে গেছেন বিলকিসের স্বামী ছানোয়ার হোসেন। প্রিয়তমা স্ত্রী ও শাশুড়ির মরদেহের পাশে বসে তিনি বাকরুদ্ধ। পাশে চলছে কবর খোঁড়ার কাজ, যেখানে চিরনিদ্রায় শায়িত হবেন মা ও মেয়ে। এর আগে গত রোববার রাতে সালেহা বেগমের নাতি তুহিন হোসাইন (২৬) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। মাত্র সাড়ে ১৭ ঘণ্টার ব্যবধানে একই পরিবারের তিনজনের মৃত্যুতে এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া।
সালেহা বেগম বড়মাঝিপাড়া গ্রামের মৃত খাজামদ্দিনের স্ত্রী। বিলকিস বেগম জর্ডান প্রবাসী ছিলেন এবং তিন বছর আগে দেশে ফিরেন। আর জয়পুরহাট সরকারি কলেজের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র তুহিন দীর্ঘদিন ধরে ক্যান্সারে ভুগছিলেন।
গ্রামবাসী ও স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত শনিবার বিলকিসের শাশুড়ি শেফালী বেগম ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে জয়পুরহাট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হন। বিলকিস তাকে দেখাশোনা করতে গিয়ে নিজেও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হন এবং গত রোববার সকালে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ওইদিনই বিলকিসের মা সালেহা বেগমও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে একই ওয়ার্ডে ভর্তি হন। তবে কর্তব্যরত চিকিৎসকের দাবি তারা ডায়রিয়ায় নয় শ্বাসকষ্টে মারা গেছেন।
এদিকে সালেহা বেগমের নাতি তুহিন হোসাইন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। গত রোববার রাত ৮টার দিকে তিনি মারা যান এবং সোমবার সকালে তাকে দাফন করা হয়। এরপর সোমবার দুপুর পৌনে ১টায় সালেহা বেগম হাসপাতালে মারা যান। মায়ের মৃত্যুর মাত্র ৩৫ মিনিট পর বিলকিস বেগমও মৃত্যুবরণ করেন। বিকেলে মা-মেয়ের মরদেহ বাড়িতে আনা হয়।
প্রতিবেশী রুবেল হোসেন বলেন, মাত্র ১৭ ঘণ্টার ব্যবধানে একই পরিবারের তিনজন মারা গেছেন। এর মধ্যে দুজন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত ছিলেন। এমন হৃদয়বিদারক ঘটনায় পুরো এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
নিহত বিলকিসের স্বামী ছানোয়ার হোসেন বলেন, আমার মা, স্ত্রী ও শাশুড়ি তিনজনই ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। আমার মা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। কিন্তু আজ আমার শাশুড়ি ও স্ত্রী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৩৫ মিনিটের ব্যবধানে মারা গেলেন। এর আগে রোববার রাতে হাসপাতালে আমার স্ত্রীর বড় ভাইয়ের ছেলে তুহিন মারা গেছেন।
জয়পুরহাট জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সরদার রাশেদ মোবারক বলেন, ‘হাসপাতালে যে দুজন মারা গেছেন, তারা মা ও মেয়ে। তারা ডায়রিয়ায় নয়, শ্বাসকষ্টে মারা গেছেন। তারা ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ভর্তি ছিলেন না।’