শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগ দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীদের অসহযোগ কর্মসূচি ঘিরে রোববার ঝিনাইদহ, নাটোর, নওগাঁ, নড়াইলসহ সারা দেশে ব্যাপক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এতে ঝিনাইদহে ৩০, নড়াইলে ২০, ঢাকার কেরানীগঞ্জ ৫০ জন আহত হয়েছেন। এ সময় থানায় হামলা, পুলিশ বক্স ভাঙচুর, পোস্ট অফিস, পৌরসভাসহ বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা ও বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুর করা হয়েছে।
বিস্তারিত প্রতিনিধিদের পাঠানো প্রতিবেদন
নাটোর: নাটোরে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সরকারদলীয় নেতা-কর্মীদের ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। রোববার দুপুর সোয়া ১২টার দিকে শহরের ভবানীগঞ্জ মোড় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। আন্দোলনকারীদের পূর্বঘোষণা অনুযায়ী দুপুর ১২টায় শহরের মাদ্রাসা মোড় এলাকায় বিক্ষোভ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেয় তারা। সকাল থেকে অল্প অল্প করে আন্দোলনকারীরা জড়ো হতে শুরু করে। দুপুর সোয়া ১২টার দিকে প্রায় দুই শতাধিক আন্দোলনকারী জমায়েত হয়। এ সময় আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগের নেতা-কর্মীরা তাদের প্রতিহত করতে ধাওয়া দেয়। এ সময় আন্দোলনকারীরাও তাদের ধাওয়া দিলে এবং ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে উভয়পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় বেশ কয়েকজন আন্দোলনকারীকে মারধর করে সরকারদলীয় নেতা-কর্মীরা। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ঘটনাস্থলে পৌঁছালে বিক্ষোভকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়।
অন্যদিকে নাটোরের বাগাতিপাড়ায় বিক্ষোভ মিছিল করেছে বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা। সকাল ১০টার দিকে দয়ারামপুর বাজার এলাকায় শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও সাধারণ জনতা সড়কে জমায়েত হয়ে বিক্ষোভ করে সরকারের পদত্যাগ দাবি করে বিভিন্ন স্লোগান দেয়।
নওগাঁ: নওগাঁয় বিক্ষোভ মিছিল ও সড়ক অবরোধ করেছে আন্দোলনকারীরা। রোববার সকাল ১০টা থেকে শহরের কাজীর মোড়ে জড়ো হতে শুরু করেন বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা। তাদের সঙ্গে অংশ নেন আরও অনেকে। পরে আন্দোলনকারীরা প্রধান সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। এ সময় এক দফা দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দিতে শোনা যায় তাদের। এতে বন্ধ হয়ে যায় প্রধান সড়ক দিয়ে যানচলাচল।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা শহরের সরিষাহাটির মোড়ে আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে অবস্থান নেন। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয় পথচারীদের। বিশেষ করে অটোরিকশা চালকদের। অনেক পথচারীকে হেঁটে বিকল্প রাস্তা দিয়ে যেতে দেখা যায়। মোটকথা পুরো শহরে আতঙ্কের পরিবেশের সৃষ্টি হয়। দোকানপাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। বন্ধ রয়েছে যাত্রীদের চলাচলের জন্য ভারী যানবাহন।
এদিকে সাধারণ পথচারীদের সতর্ক করতে দোকান বন্ধ করে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করছিল দোকানদার আকাশসহ অনেক ব্যবসায়ী। তারা জানান, পথচারীরা যেন কোনো বিপদের সম্মুখীন না হয়, তাই তাদের সতর্ক করে বিকল্প পথে যেতে বলছি।
দুপুরের দিকে পার্টি অফিস থেকে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা মিছিল নিয়ে আন্দোলনকারীদের দিকে আসতে চাইলে কিছু সময়ের জন্য উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। পরে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ সেনাবাহিনীর সদস্যদের সতর্ক অবস্থানের কারণে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যায়।
নওগাঁর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) গাজিউর রহমান বলেন, আন্দোলন ও বিক্ষোভের শুরু থেকেই পুলিশ তাদের সুষ্ঠু ও সুশৃঙ্খলভাবে আন্দোলন করার জন্য বলেছে। তাদের প্রতি পুলিশ সহনশীল আচরণ করছে। শিক্ষার্থীদের যাতে কোনো ক্ষতি না হয় সে জন্য তাদের নিরাপত্তা দিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। মোটকথা শহরে যেকোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা এড়াতে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।
ঝিনাইদহ: ঝিনাইদহে কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়ার সময় পুলিশসহ ৩০ জন আহত হয়েছেন। আন্দোলনকারীরা রোববার বেলা ১১টা থেকে বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত সারা শহরে তাণ্ডব চালায়। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা যোগ দেয়।
শিক্ষার্থীরা সকালে শহরের মুজিব চত্বর থেকে এবং বিএনপি হাটের রাস্তা থেকে মিছিল বের করেন। তারা পায়রা চত্বরে এসে একসঙ্গে মিলিত হয়। মিছিল থেকে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুর, থানায় হামলা, পুলিশ বক্স ভাঙচুর, পৌরসভা, ছবি তোলার সময় সাংবাদিক কাজী আলী আহমেদ লিকুর ওপর হামলা চালায়। এ ছাড়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সফিকুল ইসলাম অপুর বাড়িসহ বিভিন্ন স্থাপনায় ইটপাটকেল ছুড়ে হামলা চালায়। পুলিশ বাঁধা দিলে শুরু হয় ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়া। সে সময় পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড, কাঁদানি গ্যাস ও শর্টগানের গুলি ছোড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। একপর্যায়ে সারা শহর রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এতে পুলিশসহ অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন। ইটের আঘাতে পুলিশের এসআই শরিফুজ্জামানের মাথা ফেটে গেছে। আহতদের মধ্যে ২৪ জনকে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাকিরা বিভিন্ন ক্লিনিকে ভর্তি হয়েছেন। সকাল থেকে যানবাহন চলাচল করেনি। দোকানপাট খোলেনি। পুলিশি নিরাপত্তায় অফিস-আদালত চলেছে এবং উত্তপ্ত পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
নড়াইল: বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের অসহযোগ আন্দোলনের ডাকে রোববার বেলা ১১টায় নড়াইল সদর উপজেলার আউড়িয়া ইউনিয়নের মাদ্রাসা বাজার এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে। মিছিলে বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের কয়েক হাজার নেতা-কর্মী যোগ দেয়। মিছিলটি শহরে প্রবেশের চেষ্টা করলে চিত্রা নদীর শেখ রাসেল সেতুর ওপর উঠলে পুলিশ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা বাধা দেয়। এতে উভয়পক্ষের মধ্যে ইটপাটকেল নিক্ষেপসহ পুলিশ কয়েক রাউন্ড টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে। এতে ২০ জনের মতো আহত হন। এ সময় ঢাকা-বেনাপোল ভায়া নড়াইল মহাসড়কে যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
সংঘর্ষে পুলিশের টিয়ারসেল নিক্ষেপের পাশাপাশি কয়েক রাউন্ড গুলি চালায়। এত আল নাহিয়ান প্রিন্স নামে এক যুবলীগ কর্মী গুলিবিদ্ধ হয়ে সদর হাসপাতালে ভর্তি হন। প্রিন্স নড়াইল পৌরসভার আলাদাতপুর গ্রামের শেখ আবু বক্করের ছেলে।
সীমাখালী গ্রামের প্রত্যক্ষদর্শী মিজান মোল্লা, মিলি খানম, শিমুল হাসান জানান, সেতুর দক্ষিণ পাশেই আমার বাড়ি। অনেক বিএনপি, জামায়াত-শিবিরের ছেলেরা রাস্তার ওপর ইট ভেঙে পুলিশের দিকে ছুড়ে মারছিল। এদের হাতে হ্যান্ড মাইকও ছিল। পানি খেতে চাইলে আমরা তাদের পানি পানের ব্যবস্থা করেছি। ওরা পানি পানের সময় বসে পান করছিল। ওদের কাউকে চিনি না।
প্রিন্স জানান, ‘চিত্রা নদীর উত্তর প্রান্তে পুলিশ এবং ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতা-কর্মীরা অবস্থান নেয়। আর সেতুর দক্ষিণ প্রান্তে বিএনপি-জামায়াত শিবিরের নেতা-কর্মী অবস্থান নেয়। ইটপাটকেল নিক্ষেপের একপর্যায়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে। এ সময় অন্য প্রান্ত থেকে কয়েক রাউন্ড গুলি করা হয়। একটি বুলেট আমার পেটে লেগে বের হয়ে যায়। সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আকাশ ঘোষ রাহুলসহ উভয়পক্ষের ২০ জন আহত হন।
এদিকে ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দুজন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন এমন খবর ভেসে বেড়ালেও এর কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি।
কেরানীগঞ্জ (ঢাকা): ঢাকার কেরানীগঞ্জে আন্দোলনকারী ছাত্রদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের দফায় দফায় সংঘর্ষে মডেল থানার ঘাটারচর এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। এ সময় আন্দোলনকারীরা বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ, আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের বাড়ি, ব্যক্তিগত অফিস ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ এবং কেরানীগঞ্জ মডেল থানা আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে নেতাদের অবরুদ্ধ করে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। এ সময় আওয়ামী লীগের ডজনখানেক নেতা-কর্মী গুরুতর এবং বেশ কিছু আন্দোলনকারী সামান্য আহত হয়। এর আগে (রোববার) সকালে কেরানীগঞ্জ মডেল থানাধীন ঘাটারচর এলাকায় গত ২১ জুলাই কোটা আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত ইস্পাহানি ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থী রিয়াজ নিহত হওয়ার প্রতিবাদে ও অসহযোগ আন্দোলনের সমর্থনে পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে কেরানীগঞ্জের সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা আটি ভাওয়াল উচ্চবিদ্যালয়ের সামনে থেকে মিছিল বের করার চেষ্টা করলে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা তাতে বাধা দেয়। বাধা উপেক্ষা করে সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা মিছিল নিয়ে সামনে অগ্রসর হলে বড় মনোহরিয়া চৌরাস্তা এলাকায় ছাত্রদের মিছিলের ওপর পেছন থেকে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও গুলিবর্ষণ করে। এতে মুহূর্তেই সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা ছাত্রভঙ্গ হয়ে যায়। পরে তারা সংগঠিত হয়ে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ধাওয়া দিলে নেতা-কর্মীরা দিগ্বিদিক ছোটাছুটি করে বিভিন্ন দোকানপাটের ভেতরে আশ্রয় নেয়। এ সময় মডেল থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আবু সিদ্দিক ও তারানগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন ফারুক অবরুদ্ধ হন। পরবর্তী সময়ে স্থানীয়দের সহায়তায় তাদের উদ্ধার করা হয়। পরে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ছয়টি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ ও পাঁচটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে। এ ছাড়া স্থানীয় চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ফারুক এবং আওয়ামী লীগ নেতা আবু সিদ্দিকের বাড়িতে ব্যাপক ভাঙচুর চালিয়ে তাদের ব্যবহৃত গাড়ি পুড়িয়ে দেয়।
এর কিছুক্ষণ পরে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা পুনরায় সংগঠিত হয়ে আবারও ছাত্রদের ধাওয়া দিয়ে ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও গুলিবর্ষণ শুরু করে। এ সময় বিক্ষুব্ধ আন্দোলনকারীরা আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের ধাওয়া দিলে তারা ঘাটারচর এলাকায় কেরানীগঞ্জ মডেল থানা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের ভেতরে আশ্রয় নেয়। পরে বিক্ষুব্ধ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা আওয়ামী লীগের কার্যালয় ঘেরাও করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে এবং প্রধান ফটকে আগুন লাগিয়ে দেয়। অবস্থা বেগতিক দেখে বেশ কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতা ভবনের দ্বিতীয় তলার ছাদের ওপর গিয়ে আশ্রয় নিলে উত্তেজিত শিক্ষার্থীরা ছাদের গেট ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে তাদের গণধোলাই দেয়। এ সময় হুড়োহুড়ি করে ভবনের ভেতর ঢুকতে গিয়ে ও ভবনের ওপর থেকে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের ছোড়া ইটের আঘাতে অন্তত ২০ জন শিক্ষার্থী আহত হয়। পরে ভবনে আটকে থাকা অন্তত ১০-১৫ জন আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী আন্দোলনকারীদের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।
খুলনা: খুলনায় আওয়ামী লীগের অফিসে আগুন দিয়েছে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। রোববার বেলা ১২টার দিকে খুলনার শঙ্খ মার্কেটের জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে তারা আগুন ধরিয়ে দেয়। এ সময় শিক্ষার্থীরা শেখ হাসিনা সরকারের পতন ও জাতীয় সরকার গঠনের লক্ষ্যে নানা রকম স্লোগান দিতে থাকেন। এর আগে সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দলে দলে শিক্ষার্থীরা নগরীর শিববাড়ি মোড়ে জড়ো হতে থাকেন। বর্তমানে ওই মোড়ে প্রায় ৫/৭ হাজারের কাছাকাছি শিক্ষার্থী উপস্থিত রয়েছেন। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে একদল শিক্ষার্থী শিব বাড়ি থেকে মিছিল সহকারে খুলনার আওয়ামী লীগ অফিসের দিকে রওনা হয়ে এ অগ্নিকাণ্ড ঘটায়।
সিলেট: সিলেটের বন্দরবাজারের কোর্ট পয়েন্ট এলাকায় পুলিশের সাথে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ চলছে। বেলা ১২টার দিকে এ সংঘর্ষ শুরু হয়। পুলিশ আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে ব্যাপক টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেণেড ছুঁড়ছে। জানা যায়, অসহযোগ চলাকালে পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী বেলা ১১টার দিকে নগরের কোর্ট পয়েন্ট এলাকায় জড়ো হয় আন্দোলনকারীরা। এতে শিক্ষার্থীদের সাথে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষও যোগ দেন। এই এলাকায়ই জেলা প্রশাসক কার্যালয়, পুলিশ সুপার কার্যালয়, সিটি করপোরেশনসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সরকারি অফিস রয়েছে। আন্দোলনকারীরা অবস্থান নেওয়ার আগে থেকেই এ এলাকায় বিপুল সংখ্যক পুলিশ সাজোয়া যান নিয়ে অবস্থান নেয়। বেলা ১২টার দিকে পুলিশের সাথে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ শুরু হয়। আন্দোলনকারীদের থামাতে পুলিশ টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেণেড ছুঁড়ছে। এক পর্যায়ে পুলিশের বাধা পেয়ে মূল সড়ক ছেড়ে আশপাশের গলিতে অবস্থান নেয় আন্দোলনকারীরা।
মোংলা (বাগেরহাট): মোংলা-খুলনা মহাসড়কের ফয়লা এলাকায় (বাগেরহাটের রামপাল) আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও পুলিশের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়েছে। চলমান ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার মধ্যে একটি পুলিশ ভ্যানে আগুন দেয় আন্দোলনকারীরা। এ সময় সংবাদ সংগ্রহে গিয়ে আহত হয়েছেন বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার সাংবাদিক সবুর রানা ও সুজন মজুমদার।
এদিকে অসহযোগ আন্দোলনের অংশ নিয়ে মোংলা-খুলনা মহাসড়কের ভাগা এলাকায় সকালে বিক্ষোভ মিছিল করে শিক্ষার্থীরা। রবিবার বেলা সাড়ে ১১টায় বের হওয়া মিছিল শেষে মহাসড়কে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা। দুপুর ১২টা পর্যন্ত চলে শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন। পরে পুলিশ ও আন্দোলনকারীরা ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া জড়িয়ে পড়েন।
দিনাজপুর: জাতীয় সংসদের হুইপ ও দিনাজপুর সদর-৩ আসনের সংসদ সদস্য ইকবালুর রহিম এমপি ও বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের বাসা ভাংচুর ও আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে বিক্ষুব্ধরা। এ সময় পুলিশের দুটি পিকআপ ভ্যানে আগুন জ্বালিয়ে দেয় তারা। রাবার বুলেট ও কাঁদলে গ্যাস ছুটছে পুলিশ। সদর হাসপাতাল, জোড়া ব্রীজ, ফুলবাড়ি বাসস্ট্যান্ড, লিলির মোড়, বাহাদুর বাজার, স্টেশন রোড, কাচারী রোড, মডার্ণ মোড়, বুটিবাবুর মোড়, মুন্সীপাড়াসহ সারা শহরে আন্দোলনকারীদের সাথে পুলিশের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া চলে। শত শত রাউন্ড রাবার বুলেট ও টিয়ার শেল ছুড়েছে পুলিশ। এসব ঘটনায় ১০ জন গুলিবিদ্ধসহ আহত হয়েছে অর্ধশত ব্যক্তি।
সকাল ১০টায় দিনাজপুর ফুলবাড়ী বাসস্ট্যান্ডে আন্দোলনকারী জমায়েত হতে শুরু করে। তারা মিছিল নিয়ে শহরের হাসপাতাল মোড়স্থ হুইপ ইকবালুর রহিম এমপি ও বিচারপতি ইনায়েতুর রহিমের বাড়ির দিকে অগ্রসর হতে শুরু করলে পুলিশের সাথে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। দিনাজপুরের পুলিশ সুপার শাহ ইফতেখার আহমেদের নেতৃত্বে পুলিশ আন্দোলনকারীদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করে। দীর্ঘসময় পুলিশের সাথে সংঘর্ষের এক পর্যায়ে আন্দোলনকারীরা হুইপ ও বিচারপতির বাড়ীতে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। তারা বাড়ীতে থাকা কয়েকটি মোটরসাইকেল বের করে বাসার গেটে এনে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। জানা গেছে, ধাওয়া পাল্টা দেওয়ার সময় এবং রাবার বুলেট ও টিয়ার সেল নিক্ষেপ করে। ১০ জনের গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। সারা শহরজুড়ে থেমে থেমে আন্দোলনকারীদের সাথে পুলিশের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে। শহরের মোড়ে মোড়ে এখন আগুন জ্বলছে। এসব ঘটনা চলাকালে শহরের কোথাও সেনা সদস্য বা বিজিবির উপস্থিতি দেখা যায়নি। এর আগে শহরের পলিটেকনিক মোড়ে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ ও গ্রাফিতি অঙ্কন করে শিক্ষার্থীরা। পরে মিছিল নিয়ে শহরের দিকে অগ্রসর হলে এ সংঘর্ষে সুত্রপাত হয়।
নেত্রকোনা: নেত্রকোনায় রোববার সকাল ১০টা থেকে সরকার বিরোধী আন্দোলনকারী ও সরকারের পক্ষের সমর্থক সহ নেতাকর্মীদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়েছে। শহরের সাতপাই, নাগড়া সহ বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। জেলার শ্যামগঞ্জ বাজারের একাধিক বাসিন্দা জানান, নেত্রকোণা-ময়মনসিংহ সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে আন্দোলনকারীরা। এসময় পুলিশের একটি গাড়ি ভাঙচুর করে আন্দোলনকারীরা।
নোয়াখালী: নোয়াখালীতে রোববার সকাল থেকেই জেলা শহর মাইজদীর প্রধান সড়কে অবস্থান নেয় বিক্ষোভকারীরা। এসময় তাদের বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে রাস্তায় আগুন দিতে দেখা যায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টায় এখন কোথাও পুলিশি তৎপরতা দেখা যায়নি। সকাল ১০ টার দিকে নোয়াখালী-৪(সদর-সুবর্ণচর) আসনের সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরী তার অনুসারী নেতা-কর্মীদের নিয়ে পুড়ে যাওয়া জেলা আওয়ামী লীগ অফিস দেখতে আসেন। এসময় বিক্ষোভকারীদের সাথে তাদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এসময় কয়েক রাউন্ড গুলির শব্দ শুনা যায়। একপর্যায়ে এমপি একরাম সহ তার অনুসারীরা ব্যর্থ হয়ে জেলা শহর থেকে চলে যান। শহরেরর সব কটি সড়কে আগুন জ্বালিয়ে অবস্থান করে বিক্ষোভকারীরা।
বেলা সাড়ে ১১টার সময় সেনাবাহিনীর গাড়ী টহল দেওয়ার সময় আন্দোলনকারীরা ‘এ মুহূর্তে দরকার সেনাবাহিনীর সরকার’- স্লোগান দেয়।
কালিয়াকৈর (গাজীপুর): গাজীপুরের কালিয়াকৈরে গতকাল রোববার দিনব্যাপী সড়ক-মহাসড়ক অবরোধ করে বিভিন্ন স্লোগানে বিক্ষোভ মিছিল করেছে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনকারীরা ৩টি পুলিশ বক্স, আওয়ামী লীগের অফিস, থানার সামনে রাখা গাড়িসহ বেশকিছু যানবাহনে অগ্নিসংযোগ করে। এক পর্যায় পুলিশ ও আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মাঝে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। শিক্ষার্থীদের হামলায় ওসিসহ কয়েকজন পুলিশ সদস্য ও পুলিশের গুলিতে শিশুসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হন। থমথমে বিরাজ করছে কালিয়াকৈর।
চুয়াডাঙ্গা: চুয়াডাঙ্গা জেলাজুড়ে কর্মসূচি পালন করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা। এসময় জেলার বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নেয় শিক্ষার্থীরা। কোথাও কোথাও বিক্ষোভ প্রদর্শন করতে গেলে বাধার মুখে পড়েন তারা। ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা তাদের ওপর হামলা চালায় বলে অভিযোগ তোলেন। রোববার সকাল থেকে জেলাজুড়ে এমন পরিস্থিতি বিরাজ করছিল। সকাল থেকে চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুর সড়কের ভালাইপুর বাজারে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন আন্দোলনকারীরা। এসময় তারা একদফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে যান চলাচল বন্ধ করে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। সড়কের দু’পাশে সৃষ্টি হয় যানজট।
একই সাথে শহরের কোর্টমোড় এলাকাতেও বিক্ষোভ করতে গেলে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের বাধার মুখে পড়েন আন্দোলনকারীরা। এসময় তাদের ব্যানার ছিড়ে ফেলা হয়। শহরের হাসপাতাল সড়কে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালানো হয়। দর্শনা শহরে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে আন্দোলনকারীরা বাসস্ট্যান্ডে জড়ো হলে তাদের ওপরেও হামলা চালানো হয় বলে অভিযোগ ওঠে। এছাড়া জেলার বদরগঞ্জ, জীবননগর ও আলমডাঙ্গাতেও সড়কে নামে আন্দোলনকারীরা। এমন পরিস্থিতিতে জেলাজুড়ে আতঙ্ক ও থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।
ভৈরব (কিশোরগঞ্জ): কিশোরগঞ্জের ভৈরবে আন্দোলনকারীদের সাথে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষ চলাকালে পুলিশ প্রায় শতাধিক রাউন্ড রাবার বুলেট ও টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ করে। এসময় কমপক্ষে অর্ধশত আহত হয়। রোববার দুপুর ১২টা থেকে বিকেল সাড়ে ৩ টা পর্যন্ত ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ও স্থানীয় বাসস্ট্যান্ড, জগনাথপুর এবং কালিকাপ্রসাদ এলাকায় এ সংঘর্ষ চলে। এসময় আন্দোলনকারীরা কয়েকটি বাড়ীঘর দোকানপাট ভাংচুর করে। তবে বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে দেখা যায়নি। স্থানীয় বিএনপির কিশোর যুবকদের আন্দোলনে অংশ নিতে দেখা যায়। তারা দুপুর দেড়টার দিকে ভৈরব থানা আক্রমণ করতে চেষ্টা করলে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা মিলে আন্দোলনকারীদের সরিয়ে দেয়। এ সময় পুলিশ কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়ে।
বাংলাদেশ অর্থোপেডিক সোসাইটির ২ দিনব্যাপী ৩৮তম বার্ষিক বৈজ্ঞানিক সম্মেলন (এ্যানুয়াল সাইন্টিফিক কংগ্রেস) ২০২৫ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ৩০ নভেম্বর ২০২৫ইং তারিখ সন্ধ্যায় রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নিযুক্ত মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (প্রতিমন্ত্রী পদ মর্যাদা) অধ্যাপক ডা. মোঃ সায়েদুর রহমান।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক ডা. মোঃ সায়েদুর রহমান বলেন, দেশের ১৮ কোটি মানুষ চিকিৎসাসেবা প্রাপ্তির জন্য দেশের চিকিৎসকদের প্রতি তাকিয়ে থাকেন। দেশের জনগণ ও রোগীদের প্রত্যাশা পূরণের লক্ষ্যে সরকার সমগ্র স্বাস্থ্যবস্থাকে কল্যাণমুখী রূপান্তরে কাজ করছে। যার লক্ষ্য দেশের সকল মানুষ যেনো তার প্রয়োজন অনুযায়ী চিকিৎসাসেবা পান। বর্তমান স্বাস্থ্যব্যবস্থা দেশের সকল জনগণ ও রোগীর ন্যায্যতা নিশ্চিত করছে না। তাই সেদিকে সরকার যেমন নজর দিয়েছে, চিকিৎসকদেরও এ বিষয়ে চিন্তা-ভাবনার দায় রয়েছে। কি করলে স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থায় রোগীদের চাহিদা পূরণ হবে সেটা তো আর সাধারণ মানুষ, রোগীরা করতে পারবেন না। নীতিনির্ধারকদের উপর প্রভাব ফেলাসহ এই বিষয়ে করণীয় নির্ধারণে অবদান রাখতে পারবেন বিজ্ঞজনেরা, সম্মিলিতভাবে চিকিৎসকরা। একটি আইসিইউ প্রাপ্তির জন্য, রেডিওথেরাপি সেবা প্রাপ্তির জন্য, সঠিক চিকিৎসাসেবা প্রাপ্তির জন্য, প্রয়োজনীয় ওষুধের জন্য রোগীদের কত অপেক্ষা, কত হাহাকার সেটা চিকিৎসকদেরই অনুধাবন করতে হবে। সাধারণ রোগীদের জন্য, দরিদ্র মানুষের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিতকরণে কি কি করা যায় সে বিষয়ে আমাদের সকলেরই বিশেষ করে চিকিৎসকদের দায় রয়েছে। যা আমি একজন চিকিৎসক হিসেবে অনুধাবন করি। তিনি তার বক্তব্যে স্বাস্থ্যসেবা যেনো বাণিজ্যের কাছে আত্মসমর্পণ না করে সেদিকেও দৃষ্টি দেয়ার আহ্বান জানান। এছাড়া তিনি তার বক্তব্যে জুলাই আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসায় অবদান রাখার জন্য দেশের অর্থোপেডিক সার্জনবৃন্দ ও চক্ষু রোগ চিকিৎসকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ অর্থোপেডিক সোসাইটির মেম্বার সেক্রেটারি (সদস্য সচিব) ডা. এরফানুল সিদ্দিকী বলেন, বাংলাদেশ অর্থোপেডিক সোসাইটি কনফারেন্স ২০২৫-এ ফ্যাকাল্টি, সিনিয়র ও তরুণ সার্জনবৃন্দ, ১৪ জন বিদেশি বিশেষজ্ঞসহ মোট ১ হাজার ৫ শত ৭৫ জন অংশগ্রহণ করেছেন। সম্মেলনে ২০২টি বৈজ্ঞানিক পেপার উপস্থাপন করা হয়, ৩০টি উচ্চমানের বৈজ্ঞানিক সেশন অনুষ্ঠিত হয়। এই সম্মেলনটি দেশের অর্থোপেডিক অঙ্গনে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হয়ে উঠেছে। গুরুত্বপূর্ণ এই কনফারেন্সের মূল লক্ষ্য হলো এমন একটি জ্ঞান বিনিময়ের প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা, যেখানে উদ্ভাবন ও অভিজ্ঞতার মিলন ঘটবে, আন্তর্জাতিক অগ্রগতি বাংলাদেশের স্থানীয় প্রেক্ষাপটের সঙ্গে সংযুক্ত হবে এবং যেখানে নতুন ধারণা বাস্তব চর্চায় রূপ নেবে। অস্থি-সংক্রান্ত চিকিৎসা বিজ্ঞানে প্রতিনিয়ত অগ্রগতি হচ্ছে- ট্রমা কেয়ার, আর্থ্রোপ্লাস্টি, স্পাইন সার্জারি, অঙ্কোলজি, স্পোর্টস মেডিসিন, পেডিয়াট্রিক অর্থোপেডিকস এবং রিহ্যাবিলিটেশনের উন্নতি প্রতিদিনের চিকিৎসা পদ্ধতিকে বদলে দিচ্ছে। তাই বাংলাদেশকে এই বৈশ্বিক অগ্রগতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার সক্ষমতা আরও শক্তিশালী করতে হবে। সে ক্ষেত্রে এই সম্মেলন অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ডা. এরফানুল সিদ্দিকী বলেন, বাংলাদেশের অর্থোপেডিক সার্জনদের জন্য এই সম্মেলন অসাধারণ শিক্ষামূলক সুযোগ এনে দিয়েছে। আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের অভিজ্ঞতা, গবেষণা উপস্থাপন, আধুনিক সার্জিকাল কৌশল এবং আন্তঃক্রিয়ামূলক আলোচনার মাধ্যমে অংশগ্রহণকারীরা তাদের ক্লিনিক্যাল জ্ঞান, সার্জিকাল দক্ষতা এবং ডিসিশন মেকিং আরও উন্নত করতে পারবেন। একই সঙ্গে সহযোগিতা, পরামর্শ এবং দীর্ঘমেয়াদি একাডেমিক সম্পর্ক গড়ে তোলার সুযোগও তৈরি হবে। একই সাথে এই সম্মেলনের প্রকৃত উপকারভোগী হবেন বাংলাদেশের রোগীরা। উন্নত সার্জিক্যাল পদ্ধতি, উন্নত পেরি-অপারেটিভ কেয়ার এবং চিকিৎসা পরবর্তী পুনর্বাসন সমস্যার গভীরতর বোঝাপড়া রোগীদের আরও নিরাপদ, কার্যকর এবং মানবিক সেবা নিশ্চিত করবে। রোগীর দ্রুত আরোগ্য, কম জটিলতা এবং উন্নত ফাংশনাল আউটকামই এই সম্মেলনের চূড়ান্ত লক্ষ্য। তাই এই কনফারেন্স শুধু একটি একাডেমিক অনুষ্ঠান নয় বরং এটি উৎকর্ষের প্রতি একটি প্রতিশ্রুতি, অগ্রগতির উদযাপন এবং একটি সুস্থ বাংলাদেশের পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
কনফারেন্সে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সম্মানিত সচিব মোঃ সাইদুর রহমান, স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাজমুল হোসেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার, ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) এর সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন আল রশিদ, ন্যাশনাল ডক্টরস ফোরাম (এনডিএফ) এর প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ডা. মোঃ নজরুল ইসলাম, ড্যাব এর মহাসচিব ডা. মো. জহিরুল ইসলাম শাকিল। সভাপতিত্ব করেন নিটোর এর পরিচালক ও বাংলাদেশ অর্থোপেডিক সোসাইটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ডা. মোঃ আবুল কেনান। স্বাগত বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক ডা. ওয়াকিল আহমেদ, ডা. এরফানুল সিদ্দিকী, ডা. শাহ মোহাম্মদ আমান উল্লাহ। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন ডা. মিজানুর রহমান। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় বিএমইউ এর প্রক্টর অর্থোপেডিশিয়ান ডা. শেখ ফরহাদ প্রমুখসহ দেড় হাজারেরও বেশি অর্থোপেডিক সার্জনবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
কনফারেন্সে বিশেষ অতিথিগণ বলেন, বাংলাদেশে বিষয়ভিত্তিক যে কয়টি বিষয় চিকিৎসা বিজ্ঞানে অগ্রগতি লাভ করেছে তার মধ্যে অন্যতম হলো অর্থোপেডিক। দেশের মুক্তিযুদ্ধকালীন ও স্বাধীনতা পরবর্তী অনেক যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের সেবা দিয়েছেন দেশের অর্থোপেডিক সার্জনবৃন্দ। বর্তমান সময়েও অর্থোপেডিক চিকিৎসকগণ রোগীদের সেবায় অসামান্য অবদান রেখে চলছেন। বর্তমান ও আগামী দিনে দেশের রোগীদের প্রয়োজনেই অর্থোপেডিক বিষয়ের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধ নিশ্চিত করার মাধ্যমে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে হবে।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স (BG-148) দুবাই-চট্টগ্রাম-ঢাকা ফ্লাইটে চট্টগ্রাম হয়ে ঢাকায় অবতরণ করলে বিমানবন্দর গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যের ভিত্তিতে বিমানবন্দর কাস্টমস এবং এ্যাভসেক এর বিমান বাহিনীর সদস্যগণ যৌথভাবে উক্ত ফ্লাইটের অভ্যন্তরের সকল যাত্রীদের বিশেষ নজরদারিতে রাখেন। গ্রীন চ্যানেল অতিক্রম করার সময় তল্লাশী করে ০৪ জন মহিলা যাত্রী, সামিয়া সুলতানা, শামিমা আক্তার, জয়নব বেগম এবং নুসরাত তাদের শরীরে বিশেষ কায়দায় লুকায়িত ভাবে রাখা ৩৫ টি আইফোন ১৭ প্র ম্যাক্স, ৫৫ টি আইফোন ফিফটিন এবং ১২ টি গুগল পিক্সেল ফোন সর্বমোট ১০২ টি মোবাইল ফোন পাওয়া যায়।
পরবর্তীতে উক্ত যাত্রীগণ ফোন সম্পর্কে কোন তথ্য না দিতে পারায় বিমানবন্দর কাস্টমস ৯৮ টি মোবাইল ফোন ডিএম করেন। যার আনুমানিক বাজার মূল্য সর্বমোট =১,৭৬,৪০,০০০/= (এক কোটি ছিয়াত্তর লক্ষ চল্লিশ হাজার টাকা)।
উল্লেখ্য যে, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে প্রতিনিয়ত চোরাকারবারিরা বিভিন্ন সময় স্বর্ণ, মোবাইল, সিগারেট পাচার করে থাকেন। যেসব বিমান দুবাই শারজাহ থেকে ঢাকায় আগমন করেন সেসব বিমানেই বেশী হয়ে থাকে। বিভিন্ন সময় বিমানবন্দরের কাষ্টমস ও অন্য সংস্থা কর্তৃক এদেরকে চেক দেওয়া হলে চোরাকারবারি তাদের কৌশল পরিবর্তন করেছে। দুবাই, শারজাহর যে সব বিমান চট্রগাম হয়ে আসে সেসব বিমানে চোরাকারবারিরা চট্রগাম থেকে তাদের নিজস্ব কিছু লোক ঢাকা আসার জন্য ওঠে এবং বিমানের মধ্যেই কৌশলে স্বর্ণ, মোবইল হস্তান্তর করেন।
শাহ মখদুম বিমানবন্দর, রাজশাহীতে এয়ারপোর্ট সিকিউরিটি এক্সারসাইজ ২০২৫ শীর্ষক একটি পূর্ণাঙ্গ নিরাপত্তা মহড়া অনুষ্ঠিত হয়।
ICAO Standards and Recommended Practices (SARPs) এবং National Civil Aviation Security Programme (NCASP) এর নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতিটি বিমানবন্দরে প্রতি দুই (০২) বছরের মধ্যে একবার Airport Security Exercise আয়োজন করা আবশ্যক। তারই ধারাবাহিকতায় হাইজ্যাক, বোমা হামলাসহ নানাবিধ ঝুঁকি মোকাবেলার সক্ষমতা যাচাই এবং অংশীজনদের প্রস্তুতি বৃদ্ধির লক্ষ্যেই এই মহড়ার আয়োজন করা হয়।
মহড়ার দৃশ্যপটে দেখা যায়, যশোর বিমানবন্দর থেকে একটি চার্টার্ড ফ্লাইট গলফ ফক্সট্রট আলফা ওয়ান টু থ্রি দুই জন যাত্রী নিয়ে শাহ মখদুম বিমানবন্দরের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছে। শাহ মখদুম বিমানবন্দরের কন্ট্রোল টাওয়ারে একটি অপরিচিত নাম্বার থেকে কল আসে এবং জানায় যে যশোর বিমানবন্দর থেকে ছেড়ে আসা চার্টার্ড ফ্লাইটটিতে একটি বোমা রাখা আছে এবং যেকোনো সময়ে এটি বিস্ফোরিত হতে পারে। কন্ট্রোল টাওয়ার তাৎক্ষণিকভাবে বিষয়টি বিমানবন্দর ব্যবস্থাপক ও সিকিউরিটি অফিসারকে জানালে বিমানবন্দর ব্যবস্থাপক রিস্ক এডভাইজরি গ্রুপ (RAG) কমিটির সাথে আলোচনা করে ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার Emergency Operations Center অ্যাক্টিভ করার নির্দেশ দেন। পরে সংশ্লিষ্ট সব সংস্থার মধ্যে সমন্বয়ের মাধ্যমে Emergency Responding Activities পরিচালনা করেন।
এ মহড়ায় অংশগ্রহণ করেন বেবিচক, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, র্যাব, রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ, এপিবিএন, আনসার, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ, ইসলামী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সসহ সংশ্লিষ্ট একাধিক সংস্থা।
বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) এর চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মোঃ মোস্তফা মাহমুদ সিদ্দিক, বিএসপি, জিইউপি, এনডিসি, এএফডব্লিউসি, এসিএসসি, পিএসসি (Air Vice Marshal Md Mostafa Mahmood Siddiq, BSP, GUP, ndc, afwc, acsc, psc) প্রধান অতিথি হিসেবে অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে কার্যক্রম প্রত্যক্ষ করেন। এছাড়া অনুষ্ঠানের চিফ কো-অর্ডিনেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন বেবিচকের সদস্য (নিরাপত্তা) এয়ার কমডোর মোঃ আসিফ ইকবাল, বিইউপি, এনডিসি, এএফডব্লিউসি, পিএসসি, জিডি(পি) (Air Commodore Md Asif Iqbal, BUP, ndc, afwc, psc, GD(P))। উক্ত অনুষ্ঠানের অনসীন কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন শাহ মখদুম বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক মোসাঃ দিলারা পারভীন (Mst. Dilara Pervin)।
শাহ মখদুম বিমানবন্দরে আয়োজিত “এয়ারপোর্ট সিকিউরিটি এক্সারসাইজ–২০২৫”-এ প্রধান অতিথি তাঁর বক্তব্যের শুরুতেই সকল অংশীজনকে মহড়ায় অংশগ্রহণের জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, এ ধরনের মহড়া শুধু দুর্বলতা শনাক্তের সুযোগই সৃষ্টি করে না, বরং বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে কার্যকর সমন্বয় বৃদ্ধি করে যাত্রীসেবায় আন্তর্জাতিক মান নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মহড়ার সফলতা সম্মিলিত প্রচেষ্টা ও দায়িত্বশীলতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত উল্লেখ করে প্রধান অতিথি বলেন এর মাধ্যমে যেকোনো অনভিপ্রেত পরিস্থিতি দ্রুত ও দক্ষতার সঙ্গে মোকাবিলা করা সম্ভব হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
মহড়ায় অংশগ্রহণকারী সকল সংস্থার প্রস্তুতি ও দক্ষতা প্রত্যক্ষ করে তিনি সন্তোষ প্রকাশ করেন এবং বলেন, প্রতিটি সংস্থা প্রশংসনীয় পারফরম্যান্স প্রদর্শন করেছে। সমাপনী বক্তব্যে প্রধান অতিথি জাতীয় স্বার্থে আরও আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করার আহ্বান জানান।
মহড়ায় উপস্থিত ছিলেন বেবিচকের সদস্য (প্রশাসন) এস এম লাবলুর রহমান (S M Lablur Rahman) ও সদস্য (অর্থ) মোহাম্মাদ নাজমুল হক (Mohammad Nazmul Haque)। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বেবিচকের কর্মকর্তাবৃন্দ, অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন সংস্থার ঊর্ধ্বতন প্রতিনিধিবৃন্দ এবং গণমাধ্যমের ব্যক্তিবর্গ।
ঝিনাইদহ সদর উপজেলায় রবি মৌসুমকে সামনে রেখে ২৫০০ কৃষকের মাঝে বিনামূল্যে ধানের বীজ ও সার বিতরণ করা হয়েছে। ২০২৫-২৬ অর্থবছরে রবি মৌসুমে প্রণোদনা কর্মসূচীর আওতায় বোরো উফশী ও বোরো হাইব্রিড ধান এর আবাদ ও উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে এসব সার বীজ বিতরণ করা হয়। সোমবার সকাল ১০টায় ঝিনাইদহ সদর উপজেলা কৃষি অফিস চত্বরে এসব সার ও বীজ বিতরণ করা হয়। সার ও বীজ বিতরণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হোসনেআরা, সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. নূর এ নবী, অতিরিক্ত কৃষি কর্মকর্তা (সদর) জুনায়েদ হাবীব, সদর কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার মীর রাকিবুল ইসলাম।
কৃষি অফিস জানিয়েছে, আসন্ন রবি মৌসুমে উচ্চ ফলনশীল (উফশী) ও হাইব্রিড ধানের আবাদ ও উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে সদর উপজেলার মোট ২৫০০ কৃষককে বিনামূল্যে সার ও বীজ দেয়া হচ্ছে। এর মধ্যে দুই হাজার কৃষকের মাঝে জনপ্রতি ৫ কেজি বোরো (উফশী) ধানের বীজ ও ৫০০ কৃষকের মাঝে জনপ্রতি ২ কেজি হাইব্রিড ধানের বীজ বিতরণ করা হয়েছে।
এছাড়া উপকারভোগী প্রত্যেক কৃষককে ১০ কেজি এমওপি ও ১০ কেজি ডিএপি সার দেওয়া হয়েছে। সবমিলিয়ে মোট ১১ মেট্রিক টন ধানের বীজ ও ৪০ মেট্রিক টন সার বিনামূল্যে কৃষকদের মাঝে বিতরণ করা হয়।
পাবনার সাঁথিয়ায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে দুটি বসতঘর পুড়ে গেছে। গত রোববার রাত ৩টার দিকে সাঁথিয়া পৌরসভাধীন কালাইচাড়া গ্রামের আবু ইউসুফ মোল্লার ছেলে সমির উদ্দিন মোল্লার বসতঘরে অগ্নিকাণ্ডের এ ঘটনা ঘটে। এতে তার প্রায় ১০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে বাড়ির মালিক কৃষক সমির উদ্দিন মোল্লা দাবি করেন। বাড়ির মালিক সমির উদ্দিন মোল্লা জানান, রাতে খাওয়া শেষে ঘুমানোর পর রাত ৩টার দিকে হঠাৎ বিকট শব্দ শুনতে পাই। ঘুম থেকে উঠে দেখি ঘরে আগুন ধরে গেছে। সাঁথিয়া ফায়ার সার্ভিসকে খবর দিলে ফায়ার সার্ভিস ও এলাকাবাসীর প্রাণপণ চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসলেও ততক্ষণে আগুনের লেলিহান শিখায় বসতঘরসহ দুটি ঘর এবং ঘরে রক্ষিত ধান, পাট, চাল, পেঁয়াজ, গম, হাঁস মুরগি, ছাগল, নগদ টাকা ও আসবাবপত্র পুরে সব ভস্মিভূত হয়ে প্রায় ১০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
বাড়ির মালিক সমির উদ্দিন মোল্লা বলেন, আগুনে আমার দুটি টিনের ঘর ও মালামালসহ সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। সব হারিয়ে আমি নিঃশ্ব হয়ে গেলাম। বিত্তবান ও সরকারি সহযোগিতা কামনা করছি। সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতা পেলে পরিবার নিয়ে বাঁচতাম ও মাথা গোজার ঠাঁই হতো।
সাঁথিয়া ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) দাসুদেব সরকার জানান, আগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়ে আমরা রাত ৩ টার দিকে ঘটনাস্থলে গিয়ে এলাকাবাসীর সহযোগিতায় আগুন নিয়ন্ত্রণ আনা হয়। বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
সাঁথিয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও পৌর প্রশাসক আসিফ রায়হান বলেন, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে পৌরসভার পক্ষ থেকে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে যে কোন ধরণের দুর্ঘটনায় পৌরসভা সবসময় সবার পাশে থাকবে।
সাঁথিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার রিজু তামান্না বলেন, ‘উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আগুনে বাড়ি পুড়ে যাওয়া ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে। উপজেলা প্রশাসন সবসময় অসহায় মানুষের পাশে আছে এবং থাকবে।’
শীতের আগমনকে কেন্দ্র করে জমে উঠেছে ভালুকা বাসস্ট্যান্ড এলাকার ভ্রাম্যমাণ শীতের পোশাকের বাজার। প্রতিদিন বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত বাসস্ট্যান্ড পৌর ফল মার্কেট সংলগ্ন ফুটপাতজুড়ে অস্থায়ী দোকানগুলোতে চলছে জমজমাট বেচাকেনা। ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়ে পুরো এলাকা এখন শীতের বাজারে মুখর।
বাজার ঘুরে দেখা যায়, শিশুদের সোয়েটার, জ্যাকেট, হুডি, কম্বল, মাফলার, টুপি থেকে শুরু করে বয়স্কদের শাল, সুয়েটার ও জ্যাকেট বিক্রি হচ্ছে দেদারসে। তুলনামূলক কম দামে এসব পোশাক পাওয়া যাওয়ায় মধ্যবিত্ত ও নিম্নআয়ের মানুষেরাই এখানকার প্রধান ক্রেতা।
ক্রেতা শরিফুল ইসলাম জানান, বড় বড় শপিং মলে গিয়ে সাশ্রয়ী দামে শীতের কাপড় পাওয়া কঠিন। সেখানে যে দামে পাওয়া যায়, ফুটপাতে তার অর্ধেক দামেই ভালো মানের পোশাক মিলছে। তাই পরিবারের সবার জন্য প্রয়োজনীয় শীতের কাপড় এখান থেকেই কিনেছেন তিনি।
স্থানীয় গার্মেন্টস কর্মী আছিয়া বলেন, ‘আমার বেতন কম, সংসারের খরচ বেশি। বড় শপিং মল থেকে কেনাকাটা করা সম্ভব নয়। তাই বাচ্চাদের জন্য ফুটপাত থেকেই শীতের কাপড় কিনছি। আমরা বড়রা শীত সহ্য করতে পারি, কিন্তু বাচ্চারা পারে না। তাই আগেভাগেই প্রস্তুতি নিচ্ছি।’
ফুটপাতের বিক্রেতা মেবারক মিয়া জানান, শীত পড়তেই বেচাকেনা অনেক বেড়ে গেছে। প্রতিদিন বিকাল থেকে রাত পর্যন্ত ক্রেতারা আসছেন। তিনি বলেন, ‘বাচ্চাদের কাপড়ের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। অনেকেই একসঙ্গে দুই-তিনটি করে সোয়েটার, টুপি ও মোজা কিনে নিচ্ছেন।’
এদিকে রাস্তার পাশে দোকান বসানোর কারণে কিছুটা যানজটের সৃষ্টি হলেও ক্রেতা-বিক্রেতাদের উপস্থিতিতে পুরো এলাকা এখন উৎসবমুখর। শীত আরও বাড়লে বেচাকেনাও আরও বাড়বে বলে আশা করছেন বিক্রেতারা।
গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার ইতিহাসে ১ ডিসেম্বর দিনটি শুধু একটি তারিখ নয়- এটি এক বেদনাঘন অতীত, এক রক্তঝরা স্মৃতি, এক গভীর শোকের দিন। স্বাধীনতা যুদ্ধের শেষ প্রহরে ১৯৭১ সালের এই দিনে বাহাদুরসাদী ইউনিয়নের খলাপাড়া গ্রামের ন্যাশনাল জুট মিলে সংঘটিত হয়েছিল দেশের অন্যতম নৃশংস গণহত্যা। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর পৈশাচিক ব্রাশ ফায়ারে মুহূর্তের মধ্যে প্রাণ হারান ১৩৬ জন নিরীহ শ্রমিক, কর্মকর্তা ও মুক্তিযোদ্ধার সহযোগী। বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে সংঘটিত এই হত্যাযজ্ঞ আজও প্রজন্মকে নাড়া দিয়ে যায়।
সোমবার শীতের কুয়াশায় মোড়া সকাল যেন আরও বিষণ্ণ হয়ে ওঠে শহীদদের স্মরণে। উপজেলা প্রশাসন, স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধা, বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তা এবং সর্বস্তরের মানুষ শহীদ গণকবরস্থানে পৌঁছে একে একে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। মুহূর্তেই পুরো এলাকায় নেমে আসে নিস্তব্ধতায়। শহীদদের নামে শ্রদ্ধা জানাতে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের চোখে ছিল অশ্রুসিক্ত শোক, হৃদয়ে বেদনার ঢেউ।
শ্রদ্ধা নিবেদনের পর হয় দোয়া ও মিলাদ মাহফিল। শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে মোনাজাত করেন স্থানীয় আলেমরা।
বিভিন্ন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও প্রবীণরা জানান, ১৯৭১ সালের ১ ডিসেম্বর সকালে শ্রমিকরা যখন নাস্তার বিরতিতে ছিলেন, ঠিক তখনই শীতলক্ষ্যা নদীর ওপার ঘোড়াশাল ক্যাম্প থেকে পাকিস্তানি সেনারা নদী পেরিয়ে হঠাৎ আক্রমণ চালায়।
মিলের ভেতরে ঢুকে মুক্তিযোদ্ধাদের নাম করে একে একে শ্রমিক, কর্মকর্তা ও সাধারণ কর্মচারীদের ধরে ফেলে। এরপর মিলের পশ্চিম পাশে লাইনে দাঁড় করিয়ে বর্বর ব্রাশ ফায়ার চালানো হয়। সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি চলতে থাকা এই বর্বরতায় প্রাণ হারান ১৩৬ জন বাঙালি।
ভয়াবহতার চিহ্ন- ৩ দিন লাশ পড়ে থাকে মিল প্রাঙ্গণে হত্যাকাণ্ড শেষে পাকিস্তানি বাহিনী মিলের দক্ষিণ দিকের দেওয়াল ভেঙে পালিয়ে যায়। আতঙ্কে কেউ মিলের ভেতরে প্রবেশ করতে সাহস করেননি টানা ৩-৪ দিন। স্বাধীনতার পর এলাকাবাসী মিলের ভেতরে ঢুকে দেখতে পান- অগণিত বিকৃত লাশ, গলিত দেহাবশেষ এবং শনাক্তকরণ অসম্ভব হয়ে পড়া বহু শহীদের অবশিষ্টাংশ। পরে মিলের দক্ষিণ পাশে বড় একটি গর্ত করে সবাইকে গণকবরে দাফন করা হয়। স্মৃতিস্তম্ভ ও মসজিদ- যে স্থাপনা ধরে রেখেছে বেদনার ইতিহাস। শহীদদের স্মৃতি ধরে রাখতে মিল কর্তৃপক্ষ গণকবরস্থলে নির্মাণ করেছে ‘শহীদের স্মরণে ১৯৭১’ শিরোনামের একটি স্মৃতিস্তম্ভ।
এছাড়া শহীদদের রুহের মাগফিরাতের জন্য সেখানে একটি পাকা মসজিদও নির্মাণ করা হয়েছে। এসব স্থাপনা আজও মনে করিয়ে দে- এই মাটিতে ১৩৬ জন বীরের রক্তের দাগ লেগে আছে। এই গণহত্যা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে এক রক্তাক্ত, বেদনাবিধুর অধ্যায় হিসেবে চিরদিন অম্লান হয়ে থাকবে।
ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে প্রকৃতিরও রূপ বদলায়। আর সেই সূত্র ধরেই চলনবিল কখনো থৈ থৈ পানিতে টইটম্বুর- মাছের ভাণ্ডার, কখনো মাঠজুড়ে ফসলে ভরা সবুজের সমারোহ, কখনো মাঠজুড়ে হলুদের সমারোহ আবার কখনো পাখির কলরবে মুখর পরিবেশ।
অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত চলনবিল এখন নানা অতিথি পাখির কলরবে মুখরিত। প্রতি বছরের মতো এবারও খাবারের সন্ধানে ঝাঁকে ঝাঁকে ছুটে আসছে নানা রূপ বৈচিত্র্যের পাখি। হাজার হাজার মাইল পথ পাড়ি দিয়ে মিঠা পানির মাছের সন্ধানে এসব অতিথি পাখির সমাগম হয়েছে বিলটিতে। শীত মৌসুমে অতিথি পাখির গুঞ্জনে মুখরিত হয়ে উঠেছে দেশের সর্ববৃহৎ বিল চলনবিল। বিলে পাখিদের কোলাহল, কলরব, ডানা মেলে অবাধ বিচরণ সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করছে। অতিথি পাখিদের আগমনে পুরো চলনবিল এলাকাই এখন দৃষ্টিনন্দন।
‘চলনবিলের ইতিকথা এবং জেলা পাবনার ইতিহাস’ গ্রন্থ সূত্রে জানা যায়, রাজশাহী বিভাগের ৬ জেলার ১ হাজার ৮৮ বর্গকিলোমিটার এলাকা নিয়ে ছিল চলনবিল। বর্তমানে সিরাজগঞ্জ, পাবনা ও নাটোরের তিন জেলার ১০টি উপজেলার ৬২টি ইউনিয়নের ১ হাজার ৬০০ গ্রাম নিয়ে বৃহত্তর চলনবিল। বিলে রয়েছে ২১টি নদ-নদী, ৭১টি নালা-খাল ৯৩টি ছোট বিল। ১৮২৭ সালে জনবসতি এলাকা বাদ দিলে চলনবিলের জলমগ্ন অংশের আয়তন ছিল ৫০০ বর্গমাইলের বেশি। ১৯০৯ সালে চলনবিল জরিপের এক প্রতিবেদনে চলনবিলের আয়তন দেখানো হয় ১৪২ বর্গমাইল। এর মধ্যে ৩৩ বর্গমাইল এলাকায় সারা বছর পানি জমে থাকে। যদিও অনেকগুলোর অস্তিত্ব এখন আর নেই।
সাধারণত অক্টোবর-নভেম্বরে চলনবিল থেকে পানি নামতে শুরু করে। এ সময় খাবার সংগ্রহের জন্য চলনবিলে ঝাঁকে ঝাঁকে বক, কানা বক, ইটালি, শর্লি, পিয়াজ খেকো, ত্রিশুল, বাটুইলা, নারুলিয়া, লালস্বর, কাঁদোখোচা, ফেফি, ডাহুক, বালিহাঁস, পানকৌড়ি, শামকৈলসহ বিভিন্ন প্রজাতির অতিথি পাখির ঝাঁকে ঝাঁকে আগমন করছে। ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত এই সকল পাখি চলনবিলের বিভিন্ন মাঠে ও গাছে অবস্থান করে। তবে কিছু দেশি প্রজাতির পাখি সবসময় থাকে এই বিলে। সাইবেরিয়াসহ বিভিন্ন দেশ থেকেও অতিথি পাখি আসে এই চলনবিলে।
স্থানীয়রা জানান, ‘বর্তমানে পাখিপ্রেমীরাও হরেক রকম পাখি দেখতে আসছেন এ বিলে। চলনবিলে সাধারণত হারগিলা, ভাঁড়ই, ছোট সারস, শালিক, চড়ুই, বড় সারস, কাঁদোখোঁচা, নলকাক, ডাহুক, হুটটিটি, চখাচখি, বুনোহাঁস, রাতচোরা, বালিহাঁস, বকসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি দেখা যায়। তবে এ বছর বালিহাঁস, বক ও রাতচোরা প্রজাতির পাখি বেশি দেখা মিলছে। কিন্তু এক শ্রেণির অসাধু পাখি শিকারি এ সুযোগে জাল, বিষটোপ, কারেন্ট জাল, বিভিন্ন ধরনের ফাঁদে প্রাণ দিচ্ছে বিভিন্ন জাতের পরিযায়ী পাখি ও খাঁচার মাধ্যমে অতিথি পাখি শিকার করছে। এতে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে।
প্রত্যন্ত বিলাঞ্চল থেকে শিকার করা এ সকল পাখি বারুহাঁস, বস্তুল, দিঘরীয়া, গুল্টা, রানীরহাট, বিনসাড়া, ভাদাস, নাদোসৈয়দপুর, গুরুদাসপুর, কাছিকাটাসহ বেশ কয়েকটি বাজারে বিক্রি করা হয়। প্রতিটি বক ১০০ থেকে ১৫০ টাকা, রাতচোরা ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকা জোড়া, বালিহাঁস ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা দরে বিক্রি করছে। তবে ১৯৭৪ সালে বন্যপ্রাণী রক্ষা আইন ও ২০১২ সালে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইনে দণ্ডের বিধান থাকলেও তার কোনো প্রয়োগ নেই।
পরিবেশবিদরা জানান, পাখিরা শুধু প্রকৃতির শোভা বাড়ায় না, পরিবেশের ভারসাম্যও রক্ষা করে। পোকামাকড় খেয়ে এরা কৃষকের উপকার করে। কিন্তু কিছু অসাধু চক্র আইন অমান্য করে পরিযায়ী পাখি শিকারে তৎপর হয়ে উঠেছে। এমনটা চলতে থাকলে পরিবেশের ভারসাম্য টিকিয়ে রাখা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়বে।
পরিবেশ অধিদপ্তর নাটোরের সহকারী পরিচালক রফিকুল ইসলাম বলেন, এগুলো আমাদের কাজ নয়। বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ অধিদপ্তর আছে, আপনারা তাদের সাথে যোগাযোগ করুন।
পাবনা জেলা প্রশাসক শাহেদ মোস্তফা দৈনিক বাংলাকে বলেন, পাখি শিকার দণ্ডনীয় অপরাধ। পরিযায়ী পাখি সংরক্ষণ ও পাখি শিকারের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে অতি দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করব ইনশাআল্লাহ।
এ বিষয়ে বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ রাজশাহীর বন্যপ্রাণী পরিদর্শক জাহাঙ্গীর কবির দৈনিক বাংলাকে বলেন, আপনারা জানেন চলনবিল একটা দুর্গম এলাকা, সেখানকার বিচ্ছিন্ন চলাচল ব্যবস্থা আমাদের প্রতিবন্ধকতা। তারপরও আমরা নিয়মিত জনসচেতনতা সৃষ্টিতে কাজ করে যাচ্ছি। এছাড়া বন্যপ্রাণী ও পরিযায়ী পাখি রক্ষায় নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনার মাধ্যমে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। জনস্বার্থে এই অভিযান অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন তিনি।
জামালপুরে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সাথে দীর্ঘদিন ধরে চলমান বৈষম্যের প্রতিবাদে ও ৪ দফা দাবী বাস্তবায়নের লক্ষে পূর্ন কর্মবিরতি পালন করছেন শিক্ষকরা।
সোমবার (১ ডিসেম্বর) সকাল থেকেই জেলার সবগুলো সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ নিজ নিজ বিদ্যালয়ে উপস্থিত থেকে কর্মবিরতি পালন করছেন। এতে করে চলমান বার্ষিক পরীক্ষা স্থগিত রয়েছে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতি পালন করবেন তারা। শিক্ষার্থীদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে বন্ধের দিনগুলোতে পরীক্ষা কার্যক্রম চালানোর কথা জানান শিক্ষকরা।
চার দফা দাবী গুলো: পৃথক অধিদপ্তরে শিক্ষকদের এন্ট্রি পদ নবম গ্রেড ধরে ৪ স্তর বিশিষ্ট পদ সোপান। বকেয়া টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড প্রদান। দীর্ঘদিন প্রমোশন বঞ্চিত শিক্ষকদের দ্রুত প্রমোশনের ব্যবস্থা করা ও অতিরিক্ত শিক্ষাগত যোগ্যতার জন্য অ্যাডভান্স ইনক্রিমেন্ট আগের মত বহাল রাখার দাবি জানান।
কক্সবাজারের টেকনাফ সেন্টমার্টিন নৌ–রুটে নাফ নদীর মোহনায় স্পিডবোট ডুবির ঘটনায় মা–মেয়ের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। সোমবার দুপুরে সেন্টমার্টিন থেকে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপমুখী স্পিডবোট নাইক্ষ্যংদিয়া এলাকায় প্রবল ঢেউয়ের আঘাতে উল্টে গেলে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন-সেন্টমার্টিন পূর্বপাড়ার বাসিন্দা মরিয়াম খাতুন (৩৫) ও তাঁর ৫ বছর বয়সী মেয়ে মাহিমা।
সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফয়েজুল ইসলাম বলেন,“সেন্টমার্টিন থেকে ছেড়ে আসা একটি যাত্রীবাহী স্পিডবোট নাইক্ষ্যংদিয়া এলাকায় পৌঁছালে প্রবল ঢেউয়ের আঘাতে উল্টে যায়। তাৎক্ষণিকভাবে কাছাকাছি থাকা একটি স্পিডবোট গিয়ে যাত্রীদের উদ্ধার করে। এতে মা–মেয়ে দুজন প্রাণ হারান।”
নিহত মরিয়ামের ভাই বশির আহমেদ জানান,“বোন আর ভাগনিটিকে নিয়ে টেকনাফে ফিরছিলাম। হঠাৎ ঢেউ এসে স্পিডবোট উল্টে দেয়। পরে তাদের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। বোনের ঢাকায় যাওয়ার কথা ছিল—সেই পথেই এই দুর্ঘটনা ঘটে।”
টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. আসিফ আলভী বলেন,“হাসপাতালে আনার আগেই মা–মেয়ে দুজনের মৃত্যু হয়। একই ঘটনায় আহত আরও দুজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।”
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) রাকিব হাসান চৌধুরী বলেন,“দুর্ঘটনায় দুজন মারা গেছেন। কীভাবে স্পিডবোটটি উল্টে গেল, তা তদন্ত করা হচ্ছে।”
রবিবার (৩০ নভেম্বর) দুপুর ২টায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে যশোরের কেশবপুর উপজেলায় ভেজাল সারবিরোধী বিশেষ মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়। অভিযানে নেতৃত্ব দেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ শরীফ নেওয়াজ। প্রসিকিউশনে ছিলেন উপজেলা কৃষি অফিসার আব্দুল্লাহ আল মামুন।
অভিযান চলাকালে ভেজাল সার বিক্রির দায়ে সাগর দত্ত কাটি গ্রামের নলিনী কান্ত বৈরাগীর পুত্র সুশান্ত বৈরাগী (৫৪)–কে ভোক্তা অধিকার ও সংশ্লিষ্ট আইনের আওতায় ৩০,০০০ (ত্রিশ হাজার) টাকা জরিমানা করা হয় এবং তাৎক্ষণিকভাবে আদায় করা হয়। পাশাপাশি জব্দ করা ভেজাল সার ঘটনাস্থলেই বিনষ্ট করা হয়।
জনস্বার্থে ভেজালবিরোধী এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছে উপজেলা প্রশাসন।
খুলনায় আদালতের সামনে প্রকাশ্যে দুইজনকে গুলি করে ও কুপিয়ে হত্যা করে পালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। গতকাল রোববার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে খুলনা মহানগর দায়রা জজ আদালতের সামনে এ ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মহানগর দায়রা জজ আদালতে একটি অস্ত্র মামলায় হাজিরা দিতে আসেন রূপসার বাগমারা এলাকার রাজন ও হাসিব।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানা, জামিনে থাকা ওই দুই আসামি আদালতে হাজিরা দিয়ে আদালত ফটকের সামনে মোটরসাইকেল রেখে চা পান করতে দাঁড়িয়েছিলেন। এ সময় চার থেকে পাঁচজন দুর্বৃত্ত হেঁটে এসে তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে।
গুলিবিদ্ধ হয়ে তারা দুজন মাটিতে পড়ে গেলে দুর্বৃত্তরা চাপাতি দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করে তাদের। দুর্বৃত্তরা দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। আশঙ্কাজনক অবস্থায় আহত দুজনকে উদ্ধার করে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়।
হাসপাতালে পৌঁছানোর পর কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাদের মৃত বলে ঘোষণা করেন।
জানা গেছে, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন পুলিশসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা।
এদিকে, এ ঘটনার কারণে পুরো আদালত চত্বরে ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক। প্রকাশ্যে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন আদালতের আইনজীবীরা।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে খুলনা সদর থানার ওসি শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘জামিনে থাকা দুই আসামি হাজিরা শেষে আদালত ফটকের সামনে মোটরসাইকেল রেখে দাঁড়িয়েছিলেন। এ সময় চার থেকে পাঁচজন হামলাকারী হেঁটে এসে তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে।’
কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) ভেলা-বরিশাল সেতুর দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে ইবি শিক্ষার্থীরা। রোববার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে এ কর্মসূচি পালন করেন তারা।
মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা বলেন, বরিশাল জেলাকে ভোলা জেলার সাথে যুক্ত করা ২২ লাখ ভোলাবাসীর দীর্ঘদিনের প্রাণের দাবি। ভোলা জেলা বাংলাদেশের একটি ব-দ্বীপ এলাকা যেখানে ৫৬ লাখ কোটি টাকার গ্যাস মজুত রয়েছে। এখান থেকে রাষ্ট্র নিচ্ছে কিন্তু আমাদের সহযোগিতা করছে না। আমরা চিকিৎসা ক্ষেত্রে পিছিয়ে আছি। একটি রোগী যদি ভোলা থেকে রেফার করা হয় বরিশালে কিন্তু নদীতে ঝড়-তুফানের কারণে ওই স্থানে তাকে মৃত্যুর শয্যায় শয্যায়িত হয়ে হয়। একজন শিক্ষার্থীকে চাকরি পরিক্ষার জন্য রাজধানীতে সঠিক সময় উপস্থিত হতে পারছে না কারণ রাতে লঞ্চ পারাপার বন্ধ থাকে।
তারা আরও বলেন, ভোলা ও বরিশাল জেলায় সেতু এখন সময়ের দাবি। ইন্টিরিম সরকারকে দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছি। এদিকে সেতু উপদেষ্টা ভোলা জেলায় গিয়ে প্রতিশ্রুতি দিয়ে এসেছিল যে ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে কার্যক্রম শুরু করবেন। কিন্তু তারা প্রতিশ্রুতি বজায় রাখতে পারেন নাই। তারা অজুহাত দিচ্ছেন পরিবেশের নাকি সমস্যা হবে। আগে মানুষকে বাঁচাতে হবে। ভোলা জেলা থেকে আপনারা সম্পদ আহরণ করছেন; কিন্তু বিনিময় কী দিচ্ছেন? ১৭ হাজার কোটি টাকার সেতু স্থাপন করে সহযোগিতা করতে পারছেন না। ইন্টিরিমের প্রতি আমাদের আস্থা আছে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কাঠামো আরও সমৃদ্ধ করতে ভোলা জেলায় সেতু স্থাপন করে আশার আলো দেখাবে বলে প্রত্যাশা করি।