সোমবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৫
৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

দেশজুড়ে ব্যাপক সহিংসতা

রোববার বগুড়া শহরের সাতমাথায় আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। ছবি: দৈনিক বাংলা
আপডেটেড
৫ আগস্ট, ২০২৪ ০০:১৩
দৈনিক বাংলা ডেস্ক
প্রকাশিত
দৈনিক বাংলা ডেস্ক
প্রকাশিত : ৪ আগস্ট, ২০২৪ ২২:১৫

শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগ দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীদের অসহযোগ কর্মসূচি ঘিরে রোববার ঝিনাইদহ, নাটোর, নওগাঁ, নড়াইলসহ সারা দেশে ব্যাপক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এতে ঝিনাইদহে ৩০, নড়াইলে ২০, ঢাকার কেরানীগঞ্জ ৫০ জন আহত হয়েছেন। এ সময় থানায় হামলা, পুলিশ বক্স ভাঙচুর, পোস্ট অফিস, পৌরসভাসহ বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা ও বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুর করা হয়েছে।

বিস্তারিত প্রতিনিধিদের পাঠানো প্রতিবেদন

নাটোর: নাটোরে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সরকারদলীয় নেতা-কর্মীদের ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। রোববার দুপুর সোয়া ১২টার দিকে শহরের ভবানীগঞ্জ মোড় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। আন্দোলনকারীদের পূর্বঘোষণা অনুযায়ী দুপুর ১২টায় শহরের মাদ্রাসা মোড় এলাকায় বিক্ষোভ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেয় তারা। সকাল থেকে অল্প অল্প করে আন্দোলনকারীরা জড়ো হতে শুরু করে। দুপুর সোয়া ১২টার দিকে প্রায় দুই শতাধিক আন্দোলনকারী জমায়েত হয়। এ সময় আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগের নেতা-কর্মীরা তাদের প্রতিহত করতে ধাওয়া দেয়। এ সময় আন্দোলনকারীরাও তাদের ধাওয়া দিলে এবং ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে উভয়পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় বেশ কয়েকজন আন্দোলনকারীকে মারধর করে সরকারদলীয় নেতা-কর্মীরা। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ঘটনাস্থলে পৌঁছালে বিক্ষোভকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়।

অন্যদিকে নাটোরের বাগাতিপাড়ায় বিক্ষোভ মিছিল করেছে বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা। সকাল ১০টার দিকে দয়ারামপুর বাজার এলাকায় শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও সাধারণ জনতা সড়কে জমায়েত হয়ে বিক্ষোভ করে সরকারের পদত্যাগ দাবি করে বিভিন্ন স্লোগান দেয়।

নওগাঁ: নওগাঁয় বিক্ষোভ মিছিল ও সড়ক অবরোধ করেছে আন্দোলনকারীরা। রোববার সকাল ১০টা থেকে শহরের কাজীর মোড়ে জড়ো হতে শুরু করেন বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা। তাদের সঙ্গে অংশ নেন আরও অনেকে। পরে আন্দোলনকারীরা প্রধান সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। এ সময় এক দফা দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দিতে শোনা যায় তাদের। এতে বন্ধ হয়ে যায় প্রধান সড়ক দিয়ে যানচলাচল।

অন্যদিকে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা শহরের সরিষাহাটির মোড়ে আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে অবস্থান নেন। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয় পথচারীদের। বিশেষ করে অটোরিকশা চালকদের। অনেক পথচারীকে হেঁটে বিকল্প রাস্তা দিয়ে যেতে দেখা যায়। মোটকথা পুরো শহরে আতঙ্কের পরিবেশের সৃষ্টি হয়। দোকানপাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। বন্ধ রয়েছে যাত্রীদের চলাচলের জন্য ভারী যানবাহন।

এদিকে সাধারণ পথচারীদের সতর্ক করতে দোকান বন্ধ করে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করছিল দোকানদার আকাশসহ অনেক ব্যবসায়ী। তারা জানান, পথচারীরা যেন কোনো বিপদের সম্মুখীন না হয়, তাই তাদের সতর্ক করে বিকল্প পথে যেতে বলছি।

দুপুরের দিকে পার্টি অফিস থেকে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা মিছিল নিয়ে আন্দোলনকারীদের দিকে আসতে চাইলে কিছু সময়ের জন্য উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। পরে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ সেনাবাহিনীর সদস্যদের সতর্ক অবস্থানের কারণে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যায়।

নওগাঁর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) গাজিউর রহমান বলেন, আন্দোলন ও বিক্ষোভের শুরু থেকেই পুলিশ তাদের সুষ্ঠু ও সুশৃঙ্খলভাবে আন্দোলন করার জন্য বলেছে। তাদের প্রতি পুলিশ সহনশীল আচরণ করছে। শিক্ষার্থীদের যাতে কোনো ক্ষতি না হয় সে জন্য তাদের নিরাপত্তা দিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। মোটকথা শহরে যেকোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা এড়াতে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।

ঝিনাইদহ: ঝিনাইদহে কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়ার সময় পুলিশসহ ৩০ জন আহত হয়েছেন। আন্দোলনকারীরা রোববার বেলা ১১টা থেকে বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত সারা শহরে তাণ্ডব চালায়। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা যোগ দেয়।

শিক্ষার্থীরা সকালে শহরের মুজিব চত্বর থেকে এবং বিএনপি হাটের রাস্তা থেকে মিছিল বের করেন। তারা পায়রা চত্বরে এসে একসঙ্গে মিলিত হয়। মিছিল থেকে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুর, থানায় হামলা, পুলিশ বক্স ভাঙচুর, পৌরসভা, ছবি তোলার সময় সাংবাদিক কাজী আলী আহমেদ লিকুর ওপর হামলা চালায়। এ ছাড়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সফিকুল ইসলাম অপুর বাড়িসহ বিভিন্ন স্থাপনায় ইটপাটকেল ছুড়ে হামলা চালায়। পুলিশ বাঁধা দিলে শুরু হয় ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়া। সে সময় পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড, কাঁদানি গ্যাস ও শর্টগানের গুলি ছোড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। একপর্যায়ে সারা শহর রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এতে পুলিশসহ অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন। ইটের আঘাতে পুলিশের এসআই শরিফুজ্জামানের মাথা ফেটে গেছে। আহতদের মধ্যে ২৪ জনকে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাকিরা বিভিন্ন ক্লিনিকে ভর্তি হয়েছেন। সকাল থেকে যানবাহন চলাচল করেনি। দোকানপাট খোলেনি। পুলিশি নিরাপত্তায় অফিস-আদালত চলেছে এবং উত্তপ্ত পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

নড়াইল: বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের অসহযোগ আন্দোলনের ডাকে রোববার বেলা ১১টায় নড়াইল সদর উপজেলার আউড়িয়া ইউনিয়নের মাদ্রাসা বাজার এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে। মিছিলে বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের কয়েক হাজার নেতা-কর্মী যোগ দেয়। মিছিলটি শহরে প্রবেশের চেষ্টা করলে চিত্রা নদীর শেখ রাসেল সেতুর ওপর উঠলে পুলিশ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা বাধা দেয়। এতে উভয়পক্ষের মধ্যে ইটপাটকেল নিক্ষেপসহ পুলিশ কয়েক রাউন্ড টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে। এতে ২০ জনের মতো আহত হন। এ সময় ঢাকা-বেনাপোল ভায়া নড়াইল মহাসড়কে যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

সংঘর্ষে পুলিশের টিয়ারসেল নিক্ষেপের পাশাপাশি কয়েক রাউন্ড গুলি চালায়। এত আল নাহিয়ান প্রিন্স নামে এক যুবলীগ কর্মী গুলিবিদ্ধ হয়ে সদর হাসপাতালে ভর্তি হন। প্রিন্স নড়াইল পৌরসভার আলাদাতপুর গ্রামের শেখ আবু বক্করের ছেলে।

সীমাখালী গ্রামের প্রত্যক্ষদর্শী মিজান মোল্লা, মিলি খানম, শিমুল হাসান জানান, সেতুর দক্ষিণ পাশেই আমার বাড়ি। অনেক বিএনপি, জামায়াত-শিবিরের ছেলেরা রাস্তার ওপর ইট ভেঙে পুলিশের দিকে ছুড়ে মারছিল। এদের হাতে হ্যান্ড মাইকও ছিল। পানি খেতে চাইলে আমরা তাদের পানি পানের ব্যবস্থা করেছি। ওরা পানি পানের সময় বসে পান করছিল। ওদের কাউকে চিনি না।

প্রিন্স জানান, ‘চিত্রা নদীর উত্তর প্রান্তে পুলিশ এবং ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতা-কর্মীরা অবস্থান নেয়। আর সেতুর দক্ষিণ প্রান্তে বিএনপি-জামায়াত শিবিরের নেতা-কর্মী অবস্থান নেয়। ইটপাটকেল নিক্ষেপের একপর্যায়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে। এ সময় অন্য প্রান্ত থেকে কয়েক রাউন্ড গুলি করা হয়। একটি বুলেট আমার পেটে লেগে বের হয়ে যায়। সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আকাশ ঘোষ রাহুলসহ উভয়পক্ষের ২০ জন আহত হন।

এদিকে ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দুজন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন এমন খবর ভেসে বেড়ালেও এর কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি।

কেরানীগঞ্জ (ঢাকা): ঢাকার কেরানীগঞ্জে আন্দোলনকারী ছাত্রদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের দফায় দফায় সংঘর্ষে মডেল থানার ঘাটারচর এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। এ সময় আন্দোলনকারীরা বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ, আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের বাড়ি, ব্যক্তিগত অফিস ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ এবং কেরানীগঞ্জ মডেল থানা আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে নেতাদের অবরুদ্ধ করে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। এ সময় আওয়ামী লীগের ডজনখানেক নেতা-কর্মী গুরুতর এবং বেশ কিছু আন্দোলনকারী সামান্য আহত হয়। এর আগে (রোববার) সকালে কেরানীগঞ্জ মডেল থানাধীন ঘাটারচর এলাকায় গত ২১ জুলাই কোটা আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত ইস্পাহানি ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থী রিয়াজ নিহত হওয়ার প্রতিবাদে ও অসহযোগ আন্দোলনের সমর্থনে পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে কেরানীগঞ্জের সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা আটি ভাওয়াল উচ্চবিদ্যালয়ের সামনে থেকে মিছিল বের করার চেষ্টা করলে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা তাতে বাধা দেয়। বাধা উপেক্ষা করে সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা মিছিল নিয়ে সামনে অগ্রসর হলে বড় মনোহরিয়া চৌরাস্তা এলাকায় ছাত্রদের মিছিলের ওপর পেছন থেকে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও গুলিবর্ষণ করে। এতে মুহূর্তেই সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা ছাত্রভঙ্গ হয়ে যায়। পরে তারা সংগঠিত হয়ে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ধাওয়া দিলে নেতা-কর্মীরা দিগ্বিদিক ছোটাছুটি করে বিভিন্ন দোকানপাটের ভেতরে আশ্রয় নেয়। এ সময় মডেল থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আবু সিদ্দিক ও তারানগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন ফারুক অবরুদ্ধ হন। পরবর্তী সময়ে স্থানীয়দের সহায়তায় তাদের উদ্ধার করা হয়। পরে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ছয়টি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ ও পাঁচটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে। এ ছাড়া স্থানীয় চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ফারুক এবং আওয়ামী লীগ নেতা আবু সিদ্দিকের বাড়িতে ব্যাপক ভাঙচুর চালিয়ে তাদের ব্যবহৃত গাড়ি পুড়িয়ে দেয়।

এর কিছুক্ষণ পরে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা পুনরায় সংগঠিত হয়ে আবারও ছাত্রদের ধাওয়া দিয়ে ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও গুলিবর্ষণ শুরু করে। এ সময় বিক্ষুব্ধ আন্দোলনকারীরা আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের ধাওয়া দিলে তারা ঘাটারচর এলাকায় কেরানীগঞ্জ মডেল থানা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের ভেতরে আশ্রয় নেয়। পরে বিক্ষুব্ধ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা আওয়ামী লীগের কার্যালয় ঘেরাও করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে এবং প্রধান ফটকে আগুন লাগিয়ে দেয়। অবস্থা বেগতিক দেখে বেশ কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতা ভবনের দ্বিতীয় তলার ছাদের ওপর গিয়ে আশ্রয় নিলে উত্তেজিত শিক্ষার্থীরা ছাদের গেট ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে তাদের গণধোলাই দেয়। এ সময় হুড়োহুড়ি করে ভবনের ভেতর ঢুকতে গিয়ে ও ভবনের ওপর থেকে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের ছোড়া ইটের আঘাতে অন্তত ২০ জন শিক্ষার্থী আহত হয়। পরে ভবনে আটকে থাকা অন্তত ১০-১৫ জন আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী আন্দোলনকারীদের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।

খুলনা: খুলনায় আওয়ামী লীগের অফিসে আগুন দিয়েছে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। রোববার বেলা ১২টার দিকে খুলনার শঙ্খ মার্কেটের জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে তারা আগুন ধরিয়ে দেয়। এ সময় শিক্ষার্থীরা শেখ হাসিনা সরকারের পতন ও জাতীয় সরকার গঠনের লক্ষ্যে নানা রকম স্লোগান দিতে থাকেন। এর আগে সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দলে দলে শিক্ষার্থীরা নগরীর শিববাড়ি মোড়ে জড়ো হতে থাকেন। বর্তমানে ওই মোড়ে প্রায় ৫/৭ হাজারের কাছাকাছি শিক্ষার্থী উপস্থিত রয়েছেন। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে একদল শিক্ষার্থী শিব বাড়ি থেকে মিছিল সহকারে খুলনার আওয়ামী লীগ অফিসের দিকে রওনা হয়ে এ অগ্নিকাণ্ড ঘটায়।

সিলেট: সিলেটের বন্দরবাজারের কোর্ট পয়েন্ট এলাকায় পুলিশের সাথে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ চলছে। বেলা ১২টার দিকে এ সংঘর্ষ শুরু হয়। পুলিশ আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে ব্যাপক টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেণেড ছুঁড়ছে। জানা যায়, অসহযোগ চলাকালে পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী বেলা ১১টার দিকে নগরের কোর্ট পয়েন্ট এলাকায় জড়ো হয় আন্দোলনকারীরা। এতে শিক্ষার্থীদের সাথে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষও যোগ দেন। এই এলাকায়ই জেলা প্রশাসক কার্যালয়, পুলিশ সুপার কার্যালয়, সিটি করপোরেশনসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সরকারি অফিস রয়েছে। আন্দোলনকারীরা অবস্থান নেওয়ার আগে থেকেই এ এলাকায় বিপুল সংখ্যক পুলিশ সাজোয়া যান নিয়ে অবস্থান নেয়। বেলা ১২টার দিকে পুলিশের সাথে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ শুরু হয়। আন্দোলনকারীদের থামাতে পুলিশ টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেণেড ছুঁড়ছে। এক পর্যায়ে পুলিশের বাধা পেয়ে মূল সড়ক ছেড়ে আশপাশের গলিতে অবস্থান নেয় আন্দোলনকারীরা।

মোংলা (বাগেরহাট): মোংলা-খুলনা মহাসড়কের ফয়লা এলাকায় (বাগেরহাটের রামপাল) আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও পুলিশের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়েছে। চলমান ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার মধ্যে একটি পুলিশ ভ্যানে আগুন দেয় আন্দোলনকারীরা। এ সময় সংবাদ সংগ্রহে গিয়ে আহত হয়েছেন বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার সাংবাদিক সবুর রানা ও সুজন মজুমদার।

এদিকে অসহযোগ আন্দোলনের অংশ নিয়ে মোংলা-খুলনা মহাসড়কের ভাগা এলাকায় সকালে বিক্ষোভ মিছিল করে শিক্ষার্থীরা। রবিবার বেলা সাড়ে ১১টায় বের হওয়া মিছিল শেষে মহাসড়কে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা। দুপুর ১২টা পর্যন্ত চলে শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন। পরে পুলিশ ও আন্দোলনকারীরা ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া জড়িয়ে পড়েন।

দিনাজপুর: জাতীয় সংসদের হুইপ ও দিনাজপুর সদর-৩ আসনের সংসদ সদস্য ইকবালুর রহিম এমপি ও বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের বাসা ভাংচুর ও আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে বিক্ষুব্ধরা। এ সময় পুলিশের দুটি পিকআপ ভ্যানে আগুন জ্বালিয়ে দেয় তারা। রাবার বুলেট ও কাঁদলে গ্যাস ছুটছে পুলিশ। সদর হাসপাতাল, জোড়া ব্রীজ, ফুলবাড়ি বাসস্ট্যান্ড, লিলির মোড়, বাহাদুর বাজার, স্টেশন রোড, কাচারী রোড, মডার্ণ মোড়, বুটিবাবুর মোড়, মুন্সীপাড়াসহ সারা শহরে আন্দোলনকারীদের সাথে পুলিশের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া চলে। শত শত রাউন্ড রাবার বুলেট ও টিয়ার শেল ছুড়েছে পুলিশ। এসব ঘটনায় ১০ জন গুলিবিদ্ধসহ আহত হয়েছে অর্ধশত ব্যক্তি।

সকাল ১০টায় দিনাজপুর ফুলবাড়ী বাসস্ট্যান্ডে আন্দোলনকারী জমায়েত হতে শুরু করে। তারা মিছিল নিয়ে শহরের হাসপাতাল মোড়স্থ হুইপ ইকবালুর রহিম এমপি ও বিচারপতি ইনায়েতুর রহিমের বাড়ির দিকে অগ্রসর হতে শুরু করলে পুলিশের সাথে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। দিনাজপুরের পুলিশ সুপার শাহ ইফতেখার আহমেদের নেতৃত্বে পুলিশ আন্দোলনকারীদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করে। দীর্ঘসময় পুলিশের সাথে সংঘর্ষের এক পর্যায়ে আন্দোলনকারীরা হুইপ ও বিচারপতির বাড়ীতে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। তারা বাড়ীতে থাকা কয়েকটি মোটরসাইকেল বের করে বাসার গেটে এনে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। জানা গেছে, ধাওয়া পাল্টা দেওয়ার সময় এবং রাবার বুলেট ও টিয়ার সেল নিক্ষেপ করে। ১০ জনের গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। সারা শহরজুড়ে থেমে থেমে আন্দোলনকারীদের সাথে পুলিশের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে। শহরের মোড়ে মোড়ে এখন আগুন জ্বলছে। এসব ঘটনা চলাকালে শহরের কোথাও সেনা সদস্য বা বিজিবির উপস্থিতি দেখা যায়নি। এর আগে শহরের পলিটেকনিক মোড়ে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ ও গ্রাফিতি অঙ্কন করে শিক্ষার্থীরা। পরে মিছিল নিয়ে শহরের দিকে অগ্রসর হলে এ সংঘর্ষে সুত্রপাত হয়।

নেত্রকোনা: নেত্রকোনায় রোববার সকাল ১০টা থেকে সরকার বিরোধী আন্দোলনকারী ও সরকারের পক্ষের সমর্থক সহ নেতাকর্মীদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়েছে। শহরের সাতপাই, নাগড়া সহ বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। জেলার শ্যামগঞ্জ বাজারের একাধিক বাসিন্দা জানান, নেত্রকোণা-ময়মনসিংহ সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে আন্দোলনকারীরা। এসময় পুলিশের একটি গাড়ি ভাঙচুর করে আন্দোলনকারীরা।

নোয়াখালী: নোয়াখালীতে রোববার সকাল থেকেই জেলা শহর মাইজদীর প্রধান সড়কে অবস্থান নেয় বিক্ষোভকারীরা। এসময় তাদের বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে রাস্তায় আগুন দিতে দেখা যায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টায় এখন কোথাও পুলিশি তৎপরতা দেখা যায়নি। সকাল ১০ টার দিকে নোয়াখালী-৪(সদর-সুবর্ণচর) আসনের সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরী তার অনুসারী নেতা-কর্মীদের নিয়ে পুড়ে যাওয়া জেলা আওয়ামী লীগ অফিস দেখতে আসেন। এসময় বিক্ষোভকারীদের সাথে তাদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এসময় কয়েক রাউন্ড গুলির শব্দ শুনা যায়। একপর্যায়ে এমপি একরাম সহ তার অনুসারীরা ব্যর্থ হয়ে জেলা শহর থেকে চলে যান। শহরেরর সব কটি সড়কে আগুন জ্বালিয়ে অবস্থান করে বিক্ষোভকারীরা।

বেলা সাড়ে ১১টার সময় সেনাবাহিনীর গাড়ী টহল দেওয়ার সময় আন্দোলনকারীরা ‘এ মুহূর্তে দরকার সেনাবাহিনীর সরকার’- স্লোগান দেয়।

কালিয়াকৈর (গাজীপুর): গাজীপুরের কালিয়াকৈরে গতকাল রোববার দিনব্যাপী সড়ক-মহাসড়ক অবরোধ করে বিভিন্ন স্লোগানে বিক্ষোভ মিছিল করেছে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনকারীরা ৩টি পুলিশ বক্স, আওয়ামী লীগের অফিস, থানার সামনে রাখা গাড়িসহ বেশকিছু যানবাহনে অগ্নিসংযোগ করে। এক পর্যায় পুলিশ ও আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মাঝে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। শিক্ষার্থীদের হামলায় ওসিসহ কয়েকজন পুলিশ সদস্য ও পুলিশের গুলিতে শিশুসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হন। থমথমে বিরাজ করছে কালিয়াকৈর।

চুয়াডাঙ্গা: চুয়াডাঙ্গা জেলাজুড়ে কর্মসূচি পালন করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা। এসময় জেলার বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নেয় শিক্ষার্থীরা। কোথাও কোথাও বিক্ষোভ প্রদর্শন করতে গেলে বাধার মুখে পড়েন তারা। ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা তাদের ওপর হামলা চালায় বলে অভিযোগ তোলেন। রোববার সকাল থেকে জেলাজুড়ে এমন পরিস্থিতি বিরাজ করছিল। সকাল থেকে চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুর সড়কের ভালাইপুর বাজারে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন আন্দোলনকারীরা। এসময় তারা একদফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে যান চলাচল বন্ধ করে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। সড়কের দু’পাশে সৃষ্টি হয় যানজট।

একই সাথে শহরের কোর্টমোড় এলাকাতেও বিক্ষোভ করতে গেলে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের বাধার মুখে পড়েন আন্দোলনকারীরা। এসময় তাদের ব্যানার ছিড়ে ফেলা হয়। শহরের হাসপাতাল সড়কে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালানো হয়। দর্শনা শহরে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে আন্দোলনকারীরা বাসস্ট্যান্ডে জড়ো হলে তাদের ওপরেও হামলা চালানো হয় বলে অভিযোগ ওঠে। এছাড়া জেলার বদরগঞ্জ, জীবননগর ও আলমডাঙ্গাতেও সড়কে নামে আন্দোলনকারীরা। এমন পরিস্থিতিতে জেলাজুড়ে আতঙ্ক ও থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।

ভৈরব (কিশোরগঞ্জ): কিশোরগঞ্জের ভৈরবে আন্দোলনকারীদের সাথে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষ চলাকালে পুলিশ প্রায় শতাধিক রাউন্ড রাবার বুলেট ও টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ করে। এসময় কমপক্ষে অর্ধশত আহত হয়। রোববার দুপুর ১২টা থেকে বিকেল সাড়ে ৩ টা পর্যন্ত ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ও স্থানীয় বাসস্ট্যান্ড, জগনাথপুর এবং কালিকাপ্রসাদ এলাকায় এ সংঘর্ষ চলে। এসময় আন্দোলনকারীরা কয়েকটি বাড়ীঘর দোকানপাট ভাংচুর করে। তবে বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে দেখা যায়নি। স্থানীয় বিএনপির কিশোর যুবকদের আন্দোলনে অংশ নিতে দেখা যায়। তারা দুপুর দেড়টার দিকে ভৈরব থানা আক্রমণ করতে চেষ্টা করলে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা মিলে আন্দোলনকারীদের সরিয়ে দেয়। এ সময় পুলিশ কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়ে।


গজারিয়ায় আবাসিক হোটেলের আড়ালে দেহ ব্যবসা

৩ নারী যৌনকর্মীসহ আটক ৫
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
গজারিয়া (মুন্সীগঞ্জ) প্রতিনিধি

মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার ভাটেরচর নতুন রাস্তা এলাকায় একটি আবাসিক হোটেল থেকে অসামাজিক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থাকার অভিযোগে ৩ নারী যৌনকর্মীসহ ৫ জনকে আটক করেছে পুলিশ। রোববার (ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক সংলগ্ন ভাটেরচর নতুন রাস্তা এলাকার 'ফ্রেশ ভাটেরচর গেস্ট হাউস এন্ড রেস্টুরেন্টে' অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়।

আটককৃতরা হলো, নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার তমা আক্তার (২৮), জামালপুরের সাথী আক্তার (২০), পটুয়াখালীর শামীমা আক্তার (২২), গজারিয়ার বর্ষা (১৮) ও সুমন মিয়া (২৫)।

স্থানীয়রা জানায়, এই বাড়িটির মালিক স্থানীয় রাসেল মিয়া। তবে বেশ কয়েক মাস আগে নারায়ণগঞ্জের দেলোয়ার হোসেন নামে এক ব্যক্তি বাড়িটি ভাড়া নিয়ে আবাসিক হোটেলের ব্যবসা শুরু করেন। হোটেলটিতে নিয়মিত সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের যাতায়াত করতে দেখা যেত। বিশেষ করে রাতের বেলায় ছেলে-মেয়েদের অবাধ বিচরণ লক্ষ্য করা যেত এই হোটেলে। আবাসিক হোটেলের আড়ালে এখানে দেহ ব্যবসা হয় এটা নিশ্চিত হয়ে স্থানীয় কয়েকজন গণমাধ্যমকর্মী এবং পুলিশকে বিষয়টি জানান। পরে রোববার দুপুরে কয়েকজন গণমাধ্যমকর্মী সেখানে প্রবেশ করলে হাতেনাতে ৩ নারী যৌনকর্মী ও এক প্রেমিক-প্রেমিকা যুগলকে ধরে ফেলেন। এদিকে গণমাধ্যমকর্মীদের উপস্থিতি টের পেয়ে হোটেল পরিচালনাকারীরা ভবনটির প্রধান ফটকে তালা দিয়ে পালিয়ে যায়। পরে পুলিশ গিয়ে তালা ভেঙে তাদের উদ্ধার করে। পরে ৩ নারী যৌনকর্মীসহ ৫ জনকে আটক করে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।

স্থানীয় বাসিন্দা কবির হোসেন বলেন, ‘দিনের বেলা এই হোটেলটিতে তেমন কারো আনাগোনা আমরা দেখতাম না। আমরা ভাবতাম লোকজন না আসলে হোটেল কিভাবে চলে? কিন্তু পরে বুঝতে পারলাম এখানে যৌনকর্মী এনে দেহ ব্যবসা করা হয়। এই ঘটনার সাথে যারা জড়িত আমরা তাদের বিচার চাই।’

স্থানীয় বাসিন্দা মাওলানা আল আমিন বলেন, ‘গজারিয়ার মাটিতে এই অপকর্মের বীজ যারা রোপন করেছে তাদের বিরুদ্ধে আলেম-ওলামা একজোট হয়ে ব্যবস্থা নিবে। এই ধরনের অপকর্ম গজারিয়ার মাটিতে আমরা মেনে নিব না।’

এ বিষয়ে অভিযুক্ত বাড়ি মালিক রাসেল মিয়ার বক্তব্য জানতে তার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার মোবাইল নাম্বারটি বন্ধ পাওয়া যায়।

বিষয়টি সম্পর্কে গজারিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আনোয়ার আলম আজাদ বলেন, ‘স্থানীয়দের তথ্যের ভিত্তিতে আমরা ওই হোটেলটিতে অভিযান পরিচালনা করি। এ সময় অসামাজিক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অপরাধে পাঁচজনকে আটক করা করা হয়েছে। এদের মধ্যে তিনজন পেশাদার যৌনকর্মী আর বাকি দুজন প্রেমিক-প্রেমিকা। দণ্ডবিধির ২৯০ ধারায় আটক দেখিয়ে তাদের জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে’।


তৌহিদী জনতা ও বাউল ভক্তদের মধ্যে সংঘর্ষ, আহত ১০

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি

মানিকগঞ্জে ইসলাম ধর্ম ও আল্লাহকে নিয়ে কটূক্তির মামলায় গ্রেপ্তারকৃত- বাউল শিল্পী আবুল সরকারের মুক্তি ও ফাঁসির দাবিকে কেন্দ্র করে তৌহিদী জনতা ও বাউল ভক্তদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয় পক্ষের কমপক্ষে ১০ জন আহত হয়েছে। রোববার বেলা মানিকগঞ্জ শহরের মানিকগঞ্জ সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয়ের খেলার মাঠের পাশে এই ঘটনা ঘটে।

এ ঘটনার পর মানিকগঞ্জ শহরের বিভিন্ন এলাকায় থমথমে ও জনমনে আতঙ্ক বিরাজ করছে। যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ও অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

পুলিশ জানান, রোববার সকাল ৯টার দিকে পালাগানে ইসলাম ধর্ম ও আল্লাহকে নিয়ে কটূক্তির প্রতিবাদে ও বাউল শিল্পী আবুল সরকারের ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভের কর্মসূচি ডাকেন। অপর দিকে বেলা ১১টার দিকে বাউল শিল্পী আবুল সরকারের মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশের ডাক দেন বাউল শিল্পী ও ভক্তরা। এরপর সকাল ৯টার দিকে ইসলাম ধর্ম ও আল্লাহকে নিয়ে কটূক্তির প্রতিবাদে ও বাউল শিল্পী আবুল সরকারের ফাঁসির দাবিতে বিক্ষোভ শেষে মানববন্ধন নিয়ে মানিকগঞ্জ সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয়ের খেলার মাঠে আসলে, পাশের দক্ষিণ পাশে মানববন্ধন ও সমাবেশের জন্য অপেক্ষায় ছিলেন বাউল শিল্পী ও ভক্তরা। এ সময় বাউল শিল্পী ও ভক্তরা ক্ষিপ্ত হয়ে তৌহিদী জনতার উপরে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে এবং একপর্যায়ে মাঠের পাশে পড়ে থাকা বাঁশ-লাঠি দিয়ে বেশ কয়েকজন তৌহিদী জনতাকে আঘাত করে। এরপর তৌহিদী জনতা ও বাউল শিল্পীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা হয় এবং তাদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে পুলিশ স্থানীয়দের সহযোগিতায় আহতের উদ্ধার করে মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন।

বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস জেলা শাখার সভাপতি আব্দুল্লাহ আল ফিরোজ বলেন, বাউল শিল্পী ও ভক্তরা ইচ্ছা করে তৌহিদী জনতার উপর আক্রমণ করে। তাদের হামলায় আমাদের ৫ জন আহত হয়েছে। আহতরা সদর হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে।

এ বিষয়ে মানিকগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, এ ঘটনায় অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এছাড়া যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ও অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।


নীলফামারীর উত্তরা ইপিজেডের কারখানা চালুর দাবিতে শ্রমিকদের মানববন্ধন

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নীলফামারী প্রতিনিধি

নীলফামারীর উত্তরা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে (ইপিজেড) অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকা সনিক বাংলাদেশ লিমিটেড কারখানা দ্রুত চালুর দাবিতে মানববন্ধন করেছেন শ্রমিকরা। রোববার বেলা ১১টার দিকে ইপিজেডের প্রধান ফটকের সামনে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। পরে তারা উত্তরা ইপিজেডের নির্বাহী পরিচালকের বরাবর স্মারকলিপি জমা দেন।

মানববন্ধনে বক্তব্য দেন শ্রমিক নাজমুল হোসেন, শরিফুল মণ্ডল, রাবেয়া বেগম, আসমা বেগম, ইয়াসমিন, রুবেল রানা, আব্দুর রহমান ও সুজন ইসলামসহ অনেকে। ‘আন্দোলন হটাও, ইপিজেড বাঁচা’- এ স্লোগানে কর্মসূচিতে অংশ নেন শ্রমিকরা।

শ্রমিকরা জানায়, ‘কারখানাটি শুধু কর্মস্থল নয়- এটি আমাদের জীবিকা, আমাদের পরিবারের ভবিষ্যতের ভরসা। শান্ত ও স্থিতিশীল কর্মপরিবেশ বজায় রাখা সবার দায়িত্ব। কিন্তু কিছু ব্যক্তি ব্যক্তিগত স্বার্থে বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করছে। নিজেদের ও পরিবারের স্বার্থে উসকানিতে পা না দেওয়ার আহ্বান জানান তারা।’

তারা আরও বলেন, ‘আমরা আর কোনো বিশৃঙ্খলা চাই না, কোনো আন্দোলন চাই না। আমরা শুধু আমাদের কর্মস্থল ফেরত চাই। ইপিজেড চললে শ্রমিক বাঁচবে, শ্রমিক বাঁচলে পরিবার বাঁচবে।’

প্রসঙ্গত, ২৬ দফা দাবি নিয়ে গত ১৬ নভেম্বর সনিক ফ্যাক্টরির শ্রমিকরা আন্দোলন শুরু করেন। ১৭ নভেম্বর মালিকপক্ষ দাবি মেনে নিলেও কিছু শ্রমিক এতে অসন্তুষ্ট হন। এরপর ১৮ নভেম্বর শতাধিক শ্রমিক জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে কর্মবিরতি পালন করেন। কাজে ফিরতে অস্বীকৃতি ও উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় একই দিন কারখানা কর্তৃপক্ষ অনির্দিষ্টকালের জন্য প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে।


মাগুরা প্রেসক্লাবের কার্যনির্বাহী পরিষদের বর্ষপূর্তি উদযাপন

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
মাগুরা প্রতিনিধি

গণতান্ত্রিক ধারায়, উন্নয়নের অগ্রযাত্রার স্লোগানে মাগুরা প্রেসক্লাবের ত্রি-বার্ষিক কার্যনির্বাহী পরিষদের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে আলোচনা সভা, কেক কাটা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত শনিবার সন্ধ্যায় মাগুরা প্রেসক্লাব মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় প্রেসক্লাবের সভাপতি সাইদুর রহমান সভাপতিত্ব করেন। সভায় বক্তব্য রাখেন অত্র ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম শফিক, শ্রীপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি ড. মুসাফির নজরুল, শালিখা প্রেসক্লাবের সভাপতি মো. আব্দুর রব, মহম্মদপুর প্রেক্লাবের সভাপতি আজিজুর রহমান টুটুল, মাগুরা প্রেসক্লাবের শরিফ তেহরান আলম টুটুল, শাহিন আলম তুহিন, শরিফ স্বাধীন, শরিফ আনোয়ারুল হাসান রবিন, খায়রুজ্জামান সবুজ, নাঈমুর রহমান প্রমুখ। বক্তারা বলেন, ঐতিহ্যবাহী মাগুরা প্রেসক্লাবের বর্তমান কমিটি এক বছরে ক্লাবের সার্বিক উন্নয়ন এবং সাংবাদিকতার মান উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য কর্মকাণ্ড বাস্তবায়ন করেছেন যা প্রশংসার দাবি রাখে।

অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন মাগুরা প্রেসক্লাবের সহ সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. মাসুম বিল্লাহ কলিন্স।

আলোচনা শেষে বর্ষপূর্তির কেক কেটে সকলে মিষ্টি মুখ করেন। পরে সাংবাদিকদের অংশগ্রহণে এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।

অনুষ্ঠানের শতাধিক সাংবাদিক অংশগ্রহণ করেন।


বিসিএসের সময় পরিবর্তনের দাবিতে শিক্ষার্থীদের রেললাইন অবরোধ

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
বাকৃবি প্রতিনিধি

৪৭তম বিসিএস লিখিত পরীক্ষায় সময় পেছানোর দাবিতে আন্দোলনরত বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) শিক্ষার্থীরা দ্বিতীয় দিনের মতো রেলপথ অবরোধ করেছেন। এতে ঢাকা-ময়মনসিংহ রুটে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বাকৃবির জব্বার মোড়ে অবস্থিত রেলপথ অবরোধ করলে এই রুটে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সকালে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের জব্বারের মোড় এলাকায় দেওয়ানগঞ্জগামী তিস্তা এক্সপ্রেস ট্রেন আটকে দিয়ে রেলপথ অবরোধ করে, পাশপাশি মহুয়া কমিউটার ও বলাকা কমিউটার ট্রেনও আটকে পড়ে।

এ সময় ৪৭ তম বিসিএস লিখিত পরীক্ষার সময়সূচিকে ‘অবাস্তব ও বৈষম্যমূলক’ উল্লেখ করে শিক্ষার্থীরা স্লোগান দিতে থাকেন।

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে সম্মতি জানিয়ে এই রেল অবরোধ কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। পিএসসি যদি দাবি না মানে, তাহলে আমরা আরও কঠোর আন্দোলনে অগ্রসর হবো।’

এর আগে গত শনিবার রাত আটটার দিকে রেল অবরোধ করে ৪৭ তম বিসিএস পরীক্ষার প্রবেশপত্র পুড়িয়ে প্রতিবাদ জানান অবরোধে অংশ নেওয়া পরীক্ষার্থীরা। তার আগে বিকেল ৫টায় একই দাবিতে একই এলাকায় রেলপথ অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। এতে ঢাকা-ময়মনসিংহ রুটে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে রাত ৮টার দিকে বিসিএস পরীক্ষার প্রবেশপত্র পুড়িয়ে প্রতীকী প্রতিবাদ জানিয়ে অবরোধ তুলে নেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। এতে ঢাকা-ময়মনসিংহ রুটে ট্রেন চলাচল শুরু হয়। এরপর রাত ১১টার দিকে আবারও জব্বারের মোড়ে রেললাইনে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা জামালপুরের তারাকান্দিগামী যাত্রীবাহী যমুনা এক্সপ্রেস ট্রেনটি আটকে দেওয়া হয়। এতে ঢাকা-ময়মনসিংহ রুটের রেল চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এমতাবস্থায় জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হওয়ার বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় প্রশাসন শিক্ষার্থীদের বোঝানোর একপর্যায়ে এক ঘণ্টা পর রাত ১২টার দিকে বাকৃবির জব্বার মোড়ে অবস্থিত রেললাইন থেকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা সরে যায়। পরে ওই রুটে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়।


নরসিংদী জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নরসিংদী প্রতিনিধি

নরসিংদী জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আনোয়ার হোসাইন বলেছেন, ৩ দিন পরও ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল নরসিংদীতে ক্ষয়ক্ষতির সঠিক পরিমাণ নির্ধারণ করা যায়নি। আনুমানিক শতাধিক সরকারি-বেসরকারি স্থাপনার কমবেশি ক্ষয়ক্ষতি, ৫ জন নিহত ও শতাধিক মানুষ আহত হয়েছে। আগামী বুধবার ঢাকা থেকে বুয়েটের একটি বিশেষজ্ঞ প্রতিনিধি দল নরসিংদীতে ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনগুলো পরিদর্শন করার পর ক্ষয়ক্ষতির সঠিক পরিমাণ জানা যাবে বলে জানান তিনি। আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সকল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ সকল দপ্তর প্রধানকে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের তালিকা ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করার নির্দেশ দেন জেলা প্রশাসক।

ভূমিকম্প ও অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ এর বিষয়ে নরসিংদী জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির এক সভা শেষে রোববার দুপুরে এসব তথ্য জানান- জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আনোয়ার হোসাইন।

জেলা প্রশাসক বলেন, নরসিংদীতে ক্ষতিগ্রস্ত বহুতল ভবনগুলো বিল্ডিং কোড মেনে নির্মাণ হয়েছে কি না- সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। এছাড়া ভবিষ্যতে সবাই যেন বিল্ডিং নিয়ম কানুন মেনে ভবন তৈরি করেন সে বিষয়ে সবাই সচেতন থাকার অনুরোধ করেন। ভূমিকম্পের যেহেতু কোন পূর্বাভাস হয় না, সেহেতু কাউকে আতংঙ্কিত না হওয়ার জন্য অনুরোধ করেন তিনি।

এর আগে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় জেলা সিভিল সার্জন, জেলার ৬ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা ও পৌরসভার প্রশাসকরাসহ সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তারা অংশগ্রহণ করেন।

গত শুক্রবার সকালে প্রথম দফার পর শনিবার সকাল ও সন্ধ্যায় আরও দুদফা ভূমিকম্প অনুভূত হয়। এসব ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল নরসিংদী।

প্রথম দফার ভূ-কম্পনে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় (পুরাতন), পলাশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ৪টি আবাসিক ভবন, সার্কিট হাউজ, তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র, বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি ভবন ও প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ সময় শতাধিক মানুষ আহত ও ৫ জন নিহত হয়েছেন।


নারায়ণগঞ্জে সিমেন্ট কারখানায় বিস্ফোরণে ৬ জন দগ্ধ

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি

নারায়ণগঞ্জের বন্দরে বসুন্ধরা সিমেন্ট কারখানায় বয়লার বিস্ফোরণে ৬ জন দগ্ধ হয়েছেন। তাদেরকে উদ্ধার করে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট ভর্তি করা হয়েছে। গত শনিবার রাতের দিকে বন্দর থানা এলাকার মদনগঞ্জে ওই কারখানায় এ ঘটনা ঘটে।

দগ্ধরা হলেন- ফেনীর নাহিদ হাসান (২২), পাবনার কামাল হোসেন (৪৫), নোয়াখালীর তাইজুল ইসলাম (৩৫), জামালপুরের ফেরদৌস (৩৫), কুষ্টিয়ার তোরাব আলী (৫৫) ও নারায়ণগঞ্জের আতিকুর রহমান (৪২)।

দগ্ধদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া মো. রহিম জানান, রাত ৭ টার দিকে কারখানায় বয়লার থেকে বিস্ফোরণ হলে তারা ৬ জন দগ্ধ হন। সঙ্গে সঙ্গে তাদেরকে উদ্ধার করে হাসপাতালে আনা হয়েছে।

জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালে নেওয়া ৬ জনের শরীররই মারাত্মকভাবে দগ্ধ হয়েছে। তাদের শ্বাসনালী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে নাহিদ হাসান ৪০ শতাংশ, কামাল হোসেন ২৬ শতাংশ, তাইজুল ১২ শতাংশ, ফেরদৌস ১০ শতাংশ, তোরাব ১৬ শতাংশ এবং আতিকুর ২৭ শতাংশ শরীর দগ্ধ হয়েছেন।

এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের উপসহকারী পরিচালক আব্দুল্লাহ আল আরেফিন বলেন, সিমেন্ট কারখানার বয়লার রুমে চুল্লিতে কয়লা দেওয়ার সময় উত্তপ্ত কয়লা ছিটকে কয়েকজন শ্রমিকের গায়ে পড়ে। এতে ছয়জন শ্রমিক দগ্ধ হয়েছেন।

বিষয়টি নিশ্চিত করে বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) লিয়াকত আলী বলেন, কয়লার আগুনে ছয় জন দগ্ধ হয়েছেন। তাদের উদ্ধার করে বার্ন ইনস্টিটিউটে পাঠানো হয়েছে।


বাউল শিল্পী আবুল সরকারের ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
‎‎হরিরামপুর (মানিকগঞ্জ) প্রতিনিধি

‎মানিকগঞ্জের হরিরামপুরে বিতর্কিত বাউল শিল্পী আবুল সরকারের ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। রোববার বেলা ১১টার দিকে উপজেলা চত্বরের সামনে তাওহিদী জনতার আয়োজনে এ মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।

‎‎অনুষ্ঠানে উপজেলার দরিকান্দি সারওয়ার হোসেন হাফিজিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানার প্রধান শিক্ষক মাওলানা মুফতি রমজান আলী রাফিকীর সভাপতিত্বে ‎বক্তব্য রাখেন, লেছড়াগঞ্জ বাজার জামে মসজিদের পেশ ইমাম মসজ আলহাজ হাফেজ মাওলানা আলী আজম, উপজেলা তাবলিগ জামায়াতের আমীর মাওলানা নিজাম উদ্দিন, সাটি নওদা তালিমূল কোরআন মাদ্রাসার পরিচালক মাওলানা মুফতি নাসির উদ্দীন, পাটগ্রাম মসজিদের ইমাম হাফেজ আব্দুল আউয়াল প্রমুখ।

তাওহিদী জনতার সমন্বয়ক শামীম হোসেন টিটু সঞ্চালনায় বক্তৃতারা বলেন, মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহপাক রব্বুল আলামীনের নামে অশিক্ষিত গানের বয়াতি যে কটূক্তি করে কথা বলেছে এ জন্য তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত। আমরা এই আবুল সরকসরের ফাঁসির দাবি করছি। তিনি দীর্ঘদিন ধরেই দেশের বিভিন্ন স্থানে বরাবরই গানের মঞ্চে হাদিস কোরআনের অপব্যাখ্যা দিয়ে মানুষকে ভুলভাল বুঝিয়ে আসছে এবং ইসলামের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে। দেশের তাওহিদী জনগণ আর এসবকে প্রশ্রয় দেবে না। ইসলামকে অক্ষুণ্ণ রাখতে এদের দাঁতভাঙা জবাব দেওয়া হবে।

‎বক্তরা আরও বলেন, ‎আমরা প্রধান উপদেষ্টার কাছে দাবি করছি, এই ভণ্ড আবুল সরকার যেন আইনের ফাঁক-ফোকর দিয়ে বের হতে না পরে। আমরা তার ফাঁসির দাবি জানাচ্ছি।

‎‎মানববন্ধন শেষে উপজেলা চত্বরে একটি মিছিল বের করা হয়। তাওহিদী জনতাসহ অন্যান্য শ্রেণি-পেশার জনগণও উপস্থিত ছিলেন।


সীমান্তে চোরাচালান রোধে বিজিবির নতুন উদ্যোগে

জালিয়ার দ্বীপ ‘নাফ ট্যুরিজম পার্কে’ নতুন পোস্ট
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
টেকনাফ (কক্সবাজার) প্রতিনিধি

কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্তে মাদক, মানব পাচার ও বিভিন্ন ধরণের চোরাচালান প্রতিরোধে নতুন করে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) নাফ ট্যুরিজম পার্কে একটি ‘অস্থায়ী পর্যবেক্ষণ পোস্ট’ স্থাপন করেছে। স্থাপিত (Temporary Observation Post) এই নতুন পোস্ট সীমান্ত নিরাপত্তা জোরদারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এর অংশ হিসেবে গত শনিবার ভোরে টেকনাফের কেরুনতরী সংলগ্ন নাফ নদীর মাঝসীমা ও জালিয়ারদ্বীপ ঘিরে টানা ১৬ ঘণ্টার রুদ্ধশ্বাস বিশেষ অভিযানে ৯৪ হাজার পিস ইয়াবাসহ ৩ জন মাদক পাচারকারীকে আটক করেছে বিজিবি। পরে বিকেলে টেকনাফ ব্যাটালিয়নে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন বিজিবি-২ ব্যাটালিয়ানের অধিনায়ক লে. কর্নেল আশিকুর রহমান। এ সময় মেজর মো. শাহাদাত হোসেন শুভ, অপারেশন লে. কমান্ডার মো. সাদিক রাফি উপস্থিত ছিলেন।

অধিনায়ক লে. কর্নেল আশিকুর রহমান বলেন, ‘গত ২১ নভেম্বর ভোরে অত্যাধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর নজরদারিতে মিয়ানমার দিক থেকে নদী পেরিয়ে আসা দুই পাচারকারীকে শনাক্ত করা হয়। নৌপেট্রোল টিম দ্রুত অভিযানে গিয়ে জালিয়ারদ্বীপ সংলগ্ন নাফ নদী থেকে ৪৪ হাজার ইয়াবাসহ মিয়ানমারের নাগরিক মো. ইব্রাহিমকে আটক করে। তবে আরেকজন কেওড়া জঙ্গলে পালিয়ে গেলে দ্বীপজুড়ে ফের চিরুনি অভিযান শুরু হয়। দীর্ঘ তল্লাশির পর একই দিন বেলা ও সন্ধ্যায় আরও দুই পাচারকারী (মিয়ানমারের নাগরিক) মো. জুনায়েদ এবং টেকনাফের আব্দুর রাজ্জাককে আটক করা হয়। পরে তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে কেওড়া বাগানের গর্ত থেকে লুকিয়ে রাখা আরও ৫০ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করে বিজিবি। এছাড়া মেরিন ড্রাইভের হাবিরছড়ায় মোটরসাইকেলে লুকানো ১২০ পিস ইয়াবাসহ মো. আরিফ নামে আরও একজনকে আটক করে বিজিবি।

বিজিবির এক কর্মকর্তা জানান, ‘টেকনাফের নাফ নদীসংলগ্ন এলাকাটি দীর্ঘদিন ধরে ইয়াবা পাচার, মানব পাচার, স্বর্ণ চোরাচালান ও অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের জন্য স্পর্শকাতর এলাকা হিসেবে পরিচিত। ফলে আপততে বিজিবি নাফে বুকে ‘নাফ ট্যুরিজম পার্ক’ নামে এলাকায় একটি অহস্থায়ী পর্যবেক্ষণ স্থপনা করেছে। এর মাধ্যমে সীমান্তজুড়ে ২৪ ঘণ্টা নজরদারি, নিয়মিত টহল, আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার এবং অনুপ্রবেশ রোধে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হবে। ইতোমধ্য আমরা সফলতাও পেয়েছি। নতুন পোস্ট স্থাপনের ফলে সীমান্তে নজরদারি আরও বাড়বে, টহল কার্যক্রম জোরদার হবে এবং অপরাধী চক্রের গতিবিধি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আসবে। স্থানীয় বাসিন্দারা এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন। তারা মনে করছেন, এই স্থাপনের ফলে এ অঞ্চলে দীর্ঘদিন ধরে চলমান অপরাধপ্রবণতা কমে আসবে।

বিজিবি জানিয়েছে, চলতি বছর জানুয়ারি থেকে ২২ নভেম্বর পর্যন্ত ১২৩ জন আসামি। এছাড়া রোহিঙ্গাসহ ২৮৫ জন মানব পাচারের শিকার ভুক্তভোগীকে উদ্ধার, ১৫ টি আগ্নেয়াস্ত্র, ৬৯টি হাক বোমা, ২.৯৪৬ কেজি ক্রিস্টাল মেথ আইস, ১৭৪ কোটি টাকার মাদক ও মালামাল জব্দ করা হয়েছে। এর মধ্য সাড়ে ৫১ লাখ পিস ইয়াবা ছিল।

এদিকে ২০২০ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারিতে অর্থনৈতিক অঞ্চল হিসেবে ‘নাফ ট্যুরিজম পার্কের’ মহাপরিকল্পনা অনুমোদন দেয় সরকার। সেখানে পর্যটকদের থাকার জন্য হোটেল ও ইকো কটেজ, যাওয়ার জন্য কেব্ল কার, ঝুলন্ত সেতু ও ভাসমান জেটি নির্মাণের কথা। দ্বীপটিতে শিশুপার্ক, পানির নিচের রেস্তোরাঁ, ভাসমান রেস্তোরাঁসহ বিভিন্ন পর্যটন স্থাপনা করার পরিকল্পনাও ছিল বেজার। কিন্তু ২০২৩ সালে জুনের দিকে এসে এটি নিয়ে মিয়ানমারের পক্ষ থেকে আপত্তি জানানোয় ভাটি ভরাট কাজ বন্ধ হয়। তখন সেটি পরিত্যক্ত ছিল। এ সুযোগে অস্ত্রধারীদের সেখানে আনাগোনা শুরু করে। এরপর বিজিবি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে সেখানে বর্তমানে একটি ‘অস্থায়ী পর্যবেক্ষণ পোস্ট’ নির্মাণ করে।


একজন শিক্ষার্থীকে পাঠদানে কর্মরত ১ জন শিক্ষক!

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
রাউজান (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি

গহিরা মহাকবি নবীন সেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। শিশু থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদান হয় এ বিদ্যালয়ে। কিন্তু শিক্ষার্থীর সংখ্যা মাত্র ৩৮ জন। বিদ্যালয়টি পরিদর্শনে দেখা যায়, তৃতীয় শ্রেণির ক্লাসে একজন মাত্র শিক্ষার্থী উপস্থিত। তাকে একজন শিক্ষিকা টেবিলের সামনে দাঁড় করিয়ে পাঠ্যপাঠ করছেন। অন্য শ্রেণিকক্ষগুলো নিস্তব্ধ- শিক্ষার্থী নেই, তাই পাঠদানও বন্ধ। বিদ্যালয়ের অফিস কক্ষে আরও দুজন শিক্ষককে দেখা যায়। তারা জানান, পঞ্চম শ্রেণিতে শিক্ষার্থী মাত্র দুজন, আজকে দুজনই অনুপস্থিত। শিশু শ্রেণিতে ১০ জনের মধ্যে উপস্থিত ৬ জন, প্রথম শ্রেণিতে ১১ জনের মধ্যে ৫ জন, দ্বিতীয় শ্রেণিতে ২ জন, তৃতীয় শ্রেণিতে ৭ জনের মধ্যে উপস্থিত ১ জন এবং চতুর্থ শ্রেণিতে ৮ জনের মধ্যে ৫ জন উপস্থিত ছিলেন। ৬ জন শিক্ষকের পদ থাকলেও বর্তমানে রয়েছেন মাত্র ৩ জন সহকারী শিক্ষক।

ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বিবি জয়নাম বলেন, ‘শিক্ষার্থী সংকটে বিদ্যালয়টি বন্ধের প্রস্তাব উপজেলা শিক্ষা অফিসে পাঠানো হয়েছে।’ শিক্ষক, শ্রেণিকক্ষ ও প্রশাসনিক জনবল সংকটে বিপর্যস্ত রাউজান উপজেলার সরকারি প্রাথমিক শিক্ষা। ১৮১ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৮১টিতে প্রধান শিক্ষক নেই। সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য অর্ধশতাধিক। ফলে প্রায় অর্ধেক বিদ্যালয় ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের ওপর নির্ভর করে চলছে। এসব কারণে বিদ্যালয়ে দিন দিন কমছে শিক্ষার্থীর সংখ্যা। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, এখানে শিক্ষকের পাশাপাশি কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংকটও মারাত্মক। ৮টি সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার (এটিও) পদে রয়েছেন মাত্র ৩জন। ৫জন অফিস সহকারীর মধ্যে কর্মরত আছেন ২জন।

গত বছর আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর স্থানীয় রাজনৈতিক কারণে আটটি বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তনের প্রক্রিয়া শুরু হয়। এদের মধ্যে সাতটি বিদ্যালয় সাবেক সংসদ সদস্য ফজলে করিম চৌধুরী ও তার মা-বাবার নামে নামকরণ করা হয়েছিল। বাকি একটি বিদ্যালয়ের নাম স্থানীয় জনদাবির পরিপ্রেক্ষিতে পরিবর্তনের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ নরুন্নবী বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমোদন পেলে নাম পরিবর্তন কার্যকর হবে।’

বিদ্যালয়গুলো পরিদর্শনে শিক্ষার্থীরা বেঞ্চে গাদাগাদি করে বসে পাঠ নিচ্ছে এমন অন্তত ৩০টি বিদ্যালয়ে শ্রেণিকক্ষ সংকটের তীব্রতা পেয়েছে। অনেক বিদ্যালয়ে নতুন ভবনের নির্মাণকাজ অর্ধসমাপ্ত অবস্থায় বছরের পর বছর পড়ে আছে। এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক বিশ্বজিৎ চৌধুরী বলেন, ‘আমি ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছি। ৯০ জন শিক্ষার্থীর জন্য শিক্ষক রয়েছেন মাত্র চারজন।’ হলদিয়া সাজেদা করিব চৌধুরী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জানে আলম শরীফ জানান, বিদ্যালয়ে ৮০ শিক্ষার্থীর বিপরীতে শিক্ষক আছেন তিনজন। দুটি পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য। শিক্ষক সংকট: রাউজানে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অধিকাংশই নারী। তাদের প্রায় ৮০ শতাংশ বসবাস করেন চট্টগ্রাম নগরীতে। সকালে সংসারের কাজ গুছিয়ে বের হতে বিলম্ব হয়, আবার যানজটে পড়ে বিদ্যালয়ে পৌঁছাতে সময় লাগে। ফলে অনেক বিদ্যালয়ে শিক্ষক উপস্থিতি হয় সকাল ১০টার পর।


রসুন আবাদে ঝুঁকেছে চাটমোহরের কৃষকরা

*দুই দশক ধরে বিনাহালে রসুন রোপণ করছেন নারীরা *গত বছরে উৎপাদন হয়েছিল ৩৭,১৫০ মে. টন *এ বছর উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৪৭,৯১৫ মে. টন
চাটমোহরের ডিবিগ্রাম ইউনিয়নের রসুন রোপণ করছেন নারী শ্রমিকরা।
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
চাটমোহর (পাবনা) সংবাদদাতা

বিনাহালে সাদা সোনা খ্যাত রসুন আবাদে ঝুঁকেছে পাবনার চাটমোহর উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন এর কৃষকেরা। গত বছর আবাদকৃত রসুনের দাম তুলনামূলক কম পাওয়ার পরও কৃষকরা রসুন আবাদ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়নি। কৃষকের কথা দাম কম হলেও চাষাবাদ খরচ ও ঝামেলা কম হওয়ায়, অন্যান্য ফসলের চেয়ে লাভ অনেক বেশি বিনাহালে রসুন আবাদে। উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন বিনাহালে রসুন আবাদ হয়।

চলনবিলের রসুনের আবাদ এ অঞ্চলের কৃষকের অন্যতম অর্থকরী ফসলে পরিণত হয়েছে। প্রায় দুই দশকের অধিক সময় ধরে বিনাহালে রসুনের আবাদ হচ্ছে এ উপজেলাতে। রসুন রোপনে মুখ্য ভূমিকা পালন করেন নারীরা। বীজ বাছাই ও রোপণে কাজ করেন তারা। একজন মহিলা কৃষিশ্রমিক প্রতিদিন ৩ শত থেকে ৪ শত টাকা মজুরী পান আর পুরুষ কৃষিশ্রমিকেরা ৫ শত টাকা থেকে ৬ শত টাকা মজুরি পান।

কয়েকজন কৃষি শ্রমিকদের সাথে কথা বললে তারা বলেন আমনের আবাদ ঘরে তোলার পর আমাদের তেমন কোনো কাজ থাকে না এসময় আমাদের একটু অভাবের মাঝেই দিন অতিবাহিত হলেও, বিনাহালে রসুন চাষ পদ্ধতি চালু হওয়ায় গত কয়েক বছর আমাদের বসে থাকতে হয়না সেজন্য পারিবারিক চাহিদা মিটিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যে দিন কাটাতে পারি। আবার এ রসুন ঘরে তোলার সময়ও আমরা কাজ করি সব মিলিয়ে আমাদের এখন সবসময় কাজ থাকে।

নারী কৃষি শ্রমিকরা বলেন, আমরা গ্রামে থাকার কারনে এখানে তেমন কোন কর্মসংস্থান নেই যে আমরা বাড়ির কাজ করে কিছু টাকা উপার্জন করব, অনেক সময় পরিবারের সমস্যা বা কারো চিকিৎসা করাতেও হিমশম খেতে হত। কারন পরিবারের একজন এর আয় দিয়ে প্রয়োজন মেটানো কঠিন হয়। এখন আমরা এই সময়ের অপেক্ষায় থাকি কারণ বিনাহালে রসুন বপন করে আমরা প্রতিদিন ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা পাই তাতে করে বেশ কিছুদিন কাজ করলে বাড়তি আয় হয়। আবার রসুন জমি থেকে তোলার পর আমাদেরই বাছাই এর জন্য কাজ দেওয়া হয়। সেক্ষেত্রে এমন চাষ পদ্ধতি আমাদের ভালো একটা আয়ের উৎস।

চাটমোহর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৩,৮৫০ হেক্টর জমিতে আবাদ করে ৩৭,১৫০ মেট্রিক টন উৎপাদন হয়েছিল, গড় ফলন ছিল ৯.৬৫ মেট্রিক টন। আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরে ৪,৫৫০ হেক্টর আবাদ ও ৪৭,৯১৫ মেট্রিক টন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

পাবনা জেলার মধ্যে চাটমোহর উপজেলাতেই কেবল এই পদ্ধতিতে (বিনাহালে) রসুনের আবাদ হয়। পাশের জেলা নাটোরের

গুরুদাসপুর, সিংড়া, তাড়াশ উপজেলাতে এই পদ্ধতি চাষ হয় রসুনের।

উপজেলার ডিবিগ্রাম ইউনিয়নের বালুদিয়ার গ্রামের কৃষক আশরাফ শেখ জানান, ৫ বিঘা জমিতে তিনি বিনাহালে রসুন আবাদ করেছেন। আমন ধান কাটার পর জমি থেকে আগাছা পরিস্কার করে জমি ভেজা বা কাঁদা মাটি থাকতেই প্রতি এক বিঘা জমিতে ৩০ কেজি টিএসপি,২৫ কেটি পটাশ এবং ১৫ কেচি জীপসাম সার ছিটিয়ে পরের দিনই সারিবদ্ধভাবে বীজ রোপন রসুন করতে হয়। এক বিঘা জমিতে ২ মণ বীজ লাগে। বীজ রোপন করার পরই খড় বা বিচালি দিয়ে পুরো জমি ঢেকে দিতে হয়। এক মাস পর পানি সেচ দিয়ে ১০ কেজি ইউরিয়া সার দিতে হয় বিঘাপ্রতি। এক পদ্ধতিতে রোগ বালাই নেই বললেই চলে। একশত দিনের মধ্যে ফসল ঘরে ওঠে।বিঘাপ্রতি উৎপাদন ২৫ থেকে ৩০ মণ পর্যন্ত হয়।

উপজেলার বিলচলন ইউনিয়ন বোঁথর গ্রামের কৃষক রফিকুল ইসলাম জানান, এ বছর ৭ বিঘা জমিতে তিনি বিনাহালে রসুন আবাদ করেছেন। এক বিঘা জমিতে সব মিলিয়ে খরচ হয় ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা। তবে কৃষি শ্রমিকের মজুরি বেড়ে যাওয়ায় খরচও বেড়েছে। তারপরও দাম কম হলেও ৬০ হাজার টাকার রসুন বিক্রি করা হয়। দাম বেশি হলে লক্ষাধিক টাকার বেশি পাওয়া যায়।

পক্ষান্তরে আমনের আবাদ শেষে বেশ কিছুদিন মাটি কর্দমাক্ত থাকার কারনে কাঙ্ক্ষিত রবিশস্য চাষ করা সম্ভব হয়না। যার ফলে জমি পতিত পরে থাকে সেই সময়টাকেই কাজে লাগিয়ে আবাদ করা হচ্ছে তাতে করে এ চাষে বাড়তি আয়ের সম্ভাবনাও দেখছে কৃষক। এবং দেশের অর্থনীতিতে ব্যপক ভূমিকা রাখতে অগ্রণী ভূমিকা পালনে অংশীদার হচ্ছে।

চাটমোহর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ কুন্তলা ঘোষ জানান, বিনাহালে রসুন আবাদ সঠিক ব্যবস্থাপনা ও কৃষকদের সহযোগিতা পেলে এ লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হবে বলে জানান এ কর্মকর্তা।


সেন্ট মার্টিনে ১ ডিসেম্বর থেকে যাবে জাহাজ

থাকছে রাতে থাকার সুযোগও
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর আগামী ১ ডিসেম্বর থেকে প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিনে জাহাজ চলাচল শুরু হতে যাচ্ছে। থাকছে রাতে থাকার সুযোগও। তবে দৈনিক দুই হাজারের বেশি পর্যটক সেন্ট মার্টিনে যেতে পারবেন না।

কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়া জেটিঘাট থেকে সকাল সাতটায় জাহাজ ছেড়ে যাবে। পরের দিন বিকাল তিনটায় সেন্ট মার্টিন থেকে সেই জাহাজ কক্সবাজারে ফিরে আসবে। আগামী ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত টানা দুই মাস পর্যটকদের ভ্রমণের জন্য সাতটি জাহাজ প্রস্তুত করা হয়েছে।

এদিকে সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী, ১ নভেম্বর থেকে পর্যটকদের ভ্রমণের জন্য সেন্ট মার্টিন উন্মুক্ত করা হয়। তবে রাতে থাকার ব্যবস্থা না থাকায় এখন পর্যন্ত একজন পর্যটকও দ্বীপ ভ্রমণে যাননি। জাহাজ চলাচল বন্ধ থাকায় আগামী আট দিনেও কোনো পর্যটকের দ্বীপ ভ্রমণের সুযোগ নেই।

পর্যটকবাহী জাহাজ মালিকদের সংগঠন ‘সি ক্রুজ অপারেটর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের’ সাধারণ সম্পাদক হোসাইন ইসলাম বলেন, রাতে থাকার সুযোগ না থাকায় নভেম্বর মাসে কোনো পর্যটক সেন্ট মার্টিন ভ্রমণে যেতে আগ্রহ দেখাননি। এ কারণে জাহাজ চলাচলও বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে ১ ডিসেম্বর থেকে টানা দুই মাস রাত্রিযাপনের ব্যবস্থা আছে। পর্যটকেরাও দ্বীপ ভ্রমণে যেতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন।

কক্সবাজার শহর থেকে সেন্ট মার্টিনের দূরত্ব ১২০ কিলোমিটার। যেতে সময় লাগে ৬ থেকে ৭ ঘণ্টা। জাহাজগুলো হলো—এমভি কর্ণফুলী এক্সপ্রেস, এমভি বারো আউলিয়া, এমভি বে ক্রুজ, এমভি কাজল, কেয়ারী সিন্দাবাদ, কেয়ারী ক্রুজ অ্যান্ড ডাইন ও আটলান্টিক ক্রুজ।

সেন্ট মার্টিন ভ্রমণের সরকারি প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়া সেন্ট মার্টিনে কোনো নৌযান চলাচল করতে পারবে না। পর্যটকদের অবশ্যই বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের স্বীকৃত ওয়েব পোর্টালের মাধ্যমে অনলাইনে টিকিট কিনতে হবে। প্রতিটি টিকিটে ট্রাভেল পাস ও কিউআর কোড সংযুক্ত থাকবে। কিউআর কোড ছাড়া টিকিট নকল হিসেবে গণ্য হবে।

পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের উপপরিচালক খন্দকার মাহবুব পাশা গণমাধ্যমকে বলেন, পর্যটক পারাপারের সময় জাহাজগুলোকে কঠোর নজরদারিতে রাখা হবে। দুই হাজারের বেশি পর্যটক যেতে দেওয়া হবে না। এ জন্য নুনিয়ারছড়ার বিআইডব্লিউটিএ জেটিঘাট ও সেন্ট মার্টিন জেটিঘাটে পৃথক তল্লাশির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।


ভূমিকম্পের সময় কী করবেন, কী করবেন না

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

দেশে গত সাড়ে ৩১ ঘণ্টায় চারবার ভূমিকম্প হয়েছে। এর মধ্যে গতকাল শনিবার সকালে একবার ও সন্ধ্যায় পরপর দুবার ভূকম্পন অনুভূত হয়। এর আগে শুক্রবার সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে রাজধানীসহ আশপাশের এলাকা।

শুক্রবারের ভূমিকম্প সারা দেশেই অনুভূত হয়। ভূমিকম্পের সময় অনেকেই আতঙ্কে ঘরের বাইরে বেরিয়ে আসেন। আতঙ্কে অনেকেই ভবন থেকে লাফিয়েও পড়েন। এতে শিশুসহ ১০ জন নিহত ও ছয় শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন।

ভূমিকম্পের সময় কিছু করণীয় আছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় ভূমিকম্পের সময় করণীয় নিয়ে একগুচ্ছ পরামর্শ দিয়েছে। দেখে নেওয়া যাক পরামর্শগুলো কি কি।

কী করবেন, কী করবেন না

ভূকম্পন অনুভূত হলে আতঙ্কিত হবেন না। ভূকম্পনের সময় বিছানায় থাকলে বালিশ দিয়ে মাথা ঢেকে টেবিল, ডেস্ক বা শক্ত কোনো আসবাবের নিচে আশ্রয় নিন।

রান্নাঘরে থাকলে গ্যাসের চুলা বন্ধ করে দ্রুত বেরিয়ে আসুন। বিম, কলাম ও পিলার ঘেঁষে আশ্রয় নিন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অবস্থানকালে স্কুলব্যাগ মাথায় দিয়ে শক্ত বেঞ্চ অথবা শক্ত টেবিলের নিচে আশ্রয় নিন। ঘরের বাইরে থাকলে গাছ, উঁচু বাড়ি, বৈদ্যুতিক খুঁটি থেকে দূরে খোলাস্থানে আশ্রয় নিন।

গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি, হাসপাতাল, মার্কেট ও সিনেমা হলে থাকলে বের হওয়ার জন্য দরজার সামনে ভিড় কিংবা ধাক্কাধাক্কি না করে দুহাতে মাথা ঢেকে বসে পড়ুন।

ভাঙা দেয়ালের নিচে চাপা পড়লে বেশি নড়াচড়ার চেষ্টা করবেন না। কাপড় দিয়ে মুখ ঢেকে রাখুন, যাতে ধুলাবালু শ্বাসনালিতে না ঢোকে।

একবার কম্পন হওয়ার পর আবারও কম্পন হতে পারে। তাই সুযোগ বুঝে বের হয়ে খালি জায়গায় আশ্রয় নিন।

ওপর তলায় থাকলে কম্পন বা ঝাঁকুনি না থামা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে; তাড়াহুড়ো করে লাফ দিয়ে বা লিফট ব্যবহার করে নামা থেকে বিরত থাকুন।

কম্পন বা ঝাঁকুনি থামলে সিঁড়ি দিয়ে দ্রুত বেরিয়ে পড়ুন এবং খোলা আকাশের নিচে অবস্থান নিন।

গাড়িতে থাকলে পদচারী–সেতু, উড়ালসড়ক, গাছ ও বৈদ্যুতিক খুঁটি থেকে দূরে গাড়ি থামান। ভূকম্পন না থামা পর্যন্ত গাড়ির ভেতরে থাকুন। ব্যাটারিচালিত রেডিও, টর্চলাইট, পানি এবং প্রাথমিক চিকিৎসার সরঞ্জাম বাড়িতে রাখুন।


banner close