শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগ দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীদের অসহযোগ কর্মসূচি ঘিরে রোববার ঝিনাইদহ, নাটোর, নওগাঁ, নড়াইলসহ সারা দেশে ব্যাপক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এতে ঝিনাইদহে ৩০, নড়াইলে ২০, ঢাকার কেরানীগঞ্জ ৫০ জন আহত হয়েছেন। এ সময় থানায় হামলা, পুলিশ বক্স ভাঙচুর, পোস্ট অফিস, পৌরসভাসহ বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা ও বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুর করা হয়েছে।
বিস্তারিত প্রতিনিধিদের পাঠানো প্রতিবেদন
নাটোর: নাটোরে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সরকারদলীয় নেতা-কর্মীদের ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। রোববার দুপুর সোয়া ১২টার দিকে শহরের ভবানীগঞ্জ মোড় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। আন্দোলনকারীদের পূর্বঘোষণা অনুযায়ী দুপুর ১২টায় শহরের মাদ্রাসা মোড় এলাকায় বিক্ষোভ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেয় তারা। সকাল থেকে অল্প অল্প করে আন্দোলনকারীরা জড়ো হতে শুরু করে। দুপুর সোয়া ১২টার দিকে প্রায় দুই শতাধিক আন্দোলনকারী জমায়েত হয়। এ সময় আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগের নেতা-কর্মীরা তাদের প্রতিহত করতে ধাওয়া দেয়। এ সময় আন্দোলনকারীরাও তাদের ধাওয়া দিলে এবং ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে উভয়পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় বেশ কয়েকজন আন্দোলনকারীকে মারধর করে সরকারদলীয় নেতা-কর্মীরা। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ঘটনাস্থলে পৌঁছালে বিক্ষোভকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়।
অন্যদিকে নাটোরের বাগাতিপাড়ায় বিক্ষোভ মিছিল করেছে বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা। সকাল ১০টার দিকে দয়ারামপুর বাজার এলাকায় শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও সাধারণ জনতা সড়কে জমায়েত হয়ে বিক্ষোভ করে সরকারের পদত্যাগ দাবি করে বিভিন্ন স্লোগান দেয়।
নওগাঁ: নওগাঁয় বিক্ষোভ মিছিল ও সড়ক অবরোধ করেছে আন্দোলনকারীরা। রোববার সকাল ১০টা থেকে শহরের কাজীর মোড়ে জড়ো হতে শুরু করেন বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা। তাদের সঙ্গে অংশ নেন আরও অনেকে। পরে আন্দোলনকারীরা প্রধান সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। এ সময় এক দফা দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দিতে শোনা যায় তাদের। এতে বন্ধ হয়ে যায় প্রধান সড়ক দিয়ে যানচলাচল।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা শহরের সরিষাহাটির মোড়ে আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে অবস্থান নেন। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয় পথচারীদের। বিশেষ করে অটোরিকশা চালকদের। অনেক পথচারীকে হেঁটে বিকল্প রাস্তা দিয়ে যেতে দেখা যায়। মোটকথা পুরো শহরে আতঙ্কের পরিবেশের সৃষ্টি হয়। দোকানপাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। বন্ধ রয়েছে যাত্রীদের চলাচলের জন্য ভারী যানবাহন।
এদিকে সাধারণ পথচারীদের সতর্ক করতে দোকান বন্ধ করে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করছিল দোকানদার আকাশসহ অনেক ব্যবসায়ী। তারা জানান, পথচারীরা যেন কোনো বিপদের সম্মুখীন না হয়, তাই তাদের সতর্ক করে বিকল্প পথে যেতে বলছি।
দুপুরের দিকে পার্টি অফিস থেকে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা মিছিল নিয়ে আন্দোলনকারীদের দিকে আসতে চাইলে কিছু সময়ের জন্য উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। পরে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ সেনাবাহিনীর সদস্যদের সতর্ক অবস্থানের কারণে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যায়।
নওগাঁর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) গাজিউর রহমান বলেন, আন্দোলন ও বিক্ষোভের শুরু থেকেই পুলিশ তাদের সুষ্ঠু ও সুশৃঙ্খলভাবে আন্দোলন করার জন্য বলেছে। তাদের প্রতি পুলিশ সহনশীল আচরণ করছে। শিক্ষার্থীদের যাতে কোনো ক্ষতি না হয় সে জন্য তাদের নিরাপত্তা দিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। মোটকথা শহরে যেকোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা এড়াতে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।
ঝিনাইদহ: ঝিনাইদহে কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়ার সময় পুলিশসহ ৩০ জন আহত হয়েছেন। আন্দোলনকারীরা রোববার বেলা ১১টা থেকে বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত সারা শহরে তাণ্ডব চালায়। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা যোগ দেয়।
শিক্ষার্থীরা সকালে শহরের মুজিব চত্বর থেকে এবং বিএনপি হাটের রাস্তা থেকে মিছিল বের করেন। তারা পায়রা চত্বরে এসে একসঙ্গে মিলিত হয়। মিছিল থেকে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুর, থানায় হামলা, পুলিশ বক্স ভাঙচুর, পৌরসভা, ছবি তোলার সময় সাংবাদিক কাজী আলী আহমেদ লিকুর ওপর হামলা চালায়। এ ছাড়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সফিকুল ইসলাম অপুর বাড়িসহ বিভিন্ন স্থাপনায় ইটপাটকেল ছুড়ে হামলা চালায়। পুলিশ বাঁধা দিলে শুরু হয় ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়া। সে সময় পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড, কাঁদানি গ্যাস ও শর্টগানের গুলি ছোড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। একপর্যায়ে সারা শহর রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এতে পুলিশসহ অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন। ইটের আঘাতে পুলিশের এসআই শরিফুজ্জামানের মাথা ফেটে গেছে। আহতদের মধ্যে ২৪ জনকে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাকিরা বিভিন্ন ক্লিনিকে ভর্তি হয়েছেন। সকাল থেকে যানবাহন চলাচল করেনি। দোকানপাট খোলেনি। পুলিশি নিরাপত্তায় অফিস-আদালত চলেছে এবং উত্তপ্ত পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
নড়াইল: বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের অসহযোগ আন্দোলনের ডাকে রোববার বেলা ১১টায় নড়াইল সদর উপজেলার আউড়িয়া ইউনিয়নের মাদ্রাসা বাজার এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে। মিছিলে বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের কয়েক হাজার নেতা-কর্মী যোগ দেয়। মিছিলটি শহরে প্রবেশের চেষ্টা করলে চিত্রা নদীর শেখ রাসেল সেতুর ওপর উঠলে পুলিশ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা বাধা দেয়। এতে উভয়পক্ষের মধ্যে ইটপাটকেল নিক্ষেপসহ পুলিশ কয়েক রাউন্ড টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে। এতে ২০ জনের মতো আহত হন। এ সময় ঢাকা-বেনাপোল ভায়া নড়াইল মহাসড়কে যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
সংঘর্ষে পুলিশের টিয়ারসেল নিক্ষেপের পাশাপাশি কয়েক রাউন্ড গুলি চালায়। এত আল নাহিয়ান প্রিন্স নামে এক যুবলীগ কর্মী গুলিবিদ্ধ হয়ে সদর হাসপাতালে ভর্তি হন। প্রিন্স নড়াইল পৌরসভার আলাদাতপুর গ্রামের শেখ আবু বক্করের ছেলে।
সীমাখালী গ্রামের প্রত্যক্ষদর্শী মিজান মোল্লা, মিলি খানম, শিমুল হাসান জানান, সেতুর দক্ষিণ পাশেই আমার বাড়ি। অনেক বিএনপি, জামায়াত-শিবিরের ছেলেরা রাস্তার ওপর ইট ভেঙে পুলিশের দিকে ছুড়ে মারছিল। এদের হাতে হ্যান্ড মাইকও ছিল। পানি খেতে চাইলে আমরা তাদের পানি পানের ব্যবস্থা করেছি। ওরা পানি পানের সময় বসে পান করছিল। ওদের কাউকে চিনি না।
প্রিন্স জানান, ‘চিত্রা নদীর উত্তর প্রান্তে পুলিশ এবং ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতা-কর্মীরা অবস্থান নেয়। আর সেতুর দক্ষিণ প্রান্তে বিএনপি-জামায়াত শিবিরের নেতা-কর্মী অবস্থান নেয়। ইটপাটকেল নিক্ষেপের একপর্যায়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে। এ সময় অন্য প্রান্ত থেকে কয়েক রাউন্ড গুলি করা হয়। একটি বুলেট আমার পেটে লেগে বের হয়ে যায়। সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আকাশ ঘোষ রাহুলসহ উভয়পক্ষের ২০ জন আহত হন।
এদিকে ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দুজন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন এমন খবর ভেসে বেড়ালেও এর কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি।
কেরানীগঞ্জ (ঢাকা): ঢাকার কেরানীগঞ্জে আন্দোলনকারী ছাত্রদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের দফায় দফায় সংঘর্ষে মডেল থানার ঘাটারচর এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। এ সময় আন্দোলনকারীরা বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ, আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের বাড়ি, ব্যক্তিগত অফিস ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ এবং কেরানীগঞ্জ মডেল থানা আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে নেতাদের অবরুদ্ধ করে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। এ সময় আওয়ামী লীগের ডজনখানেক নেতা-কর্মী গুরুতর এবং বেশ কিছু আন্দোলনকারী সামান্য আহত হয়। এর আগে (রোববার) সকালে কেরানীগঞ্জ মডেল থানাধীন ঘাটারচর এলাকায় গত ২১ জুলাই কোটা আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত ইস্পাহানি ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থী রিয়াজ নিহত হওয়ার প্রতিবাদে ও অসহযোগ আন্দোলনের সমর্থনে পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে কেরানীগঞ্জের সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা আটি ভাওয়াল উচ্চবিদ্যালয়ের সামনে থেকে মিছিল বের করার চেষ্টা করলে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা তাতে বাধা দেয়। বাধা উপেক্ষা করে সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা মিছিল নিয়ে সামনে অগ্রসর হলে বড় মনোহরিয়া চৌরাস্তা এলাকায় ছাত্রদের মিছিলের ওপর পেছন থেকে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও গুলিবর্ষণ করে। এতে মুহূর্তেই সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা ছাত্রভঙ্গ হয়ে যায়। পরে তারা সংগঠিত হয়ে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ধাওয়া দিলে নেতা-কর্মীরা দিগ্বিদিক ছোটাছুটি করে বিভিন্ন দোকানপাটের ভেতরে আশ্রয় নেয়। এ সময় মডেল থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আবু সিদ্দিক ও তারানগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন ফারুক অবরুদ্ধ হন। পরবর্তী সময়ে স্থানীয়দের সহায়তায় তাদের উদ্ধার করা হয়। পরে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ছয়টি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ ও পাঁচটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে। এ ছাড়া স্থানীয় চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ফারুক এবং আওয়ামী লীগ নেতা আবু সিদ্দিকের বাড়িতে ব্যাপক ভাঙচুর চালিয়ে তাদের ব্যবহৃত গাড়ি পুড়িয়ে দেয়।
এর কিছুক্ষণ পরে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা পুনরায় সংগঠিত হয়ে আবারও ছাত্রদের ধাওয়া দিয়ে ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও গুলিবর্ষণ শুরু করে। এ সময় বিক্ষুব্ধ আন্দোলনকারীরা আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের ধাওয়া দিলে তারা ঘাটারচর এলাকায় কেরানীগঞ্জ মডেল থানা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের ভেতরে আশ্রয় নেয়। পরে বিক্ষুব্ধ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা আওয়ামী লীগের কার্যালয় ঘেরাও করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে এবং প্রধান ফটকে আগুন লাগিয়ে দেয়। অবস্থা বেগতিক দেখে বেশ কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতা ভবনের দ্বিতীয় তলার ছাদের ওপর গিয়ে আশ্রয় নিলে উত্তেজিত শিক্ষার্থীরা ছাদের গেট ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে তাদের গণধোলাই দেয়। এ সময় হুড়োহুড়ি করে ভবনের ভেতর ঢুকতে গিয়ে ও ভবনের ওপর থেকে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের ছোড়া ইটের আঘাতে অন্তত ২০ জন শিক্ষার্থী আহত হয়। পরে ভবনে আটকে থাকা অন্তত ১০-১৫ জন আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী আন্দোলনকারীদের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।
খুলনা: খুলনায় আওয়ামী লীগের অফিসে আগুন দিয়েছে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। রোববার বেলা ১২টার দিকে খুলনার শঙ্খ মার্কেটের জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে তারা আগুন ধরিয়ে দেয়। এ সময় শিক্ষার্থীরা শেখ হাসিনা সরকারের পতন ও জাতীয় সরকার গঠনের লক্ষ্যে নানা রকম স্লোগান দিতে থাকেন। এর আগে সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দলে দলে শিক্ষার্থীরা নগরীর শিববাড়ি মোড়ে জড়ো হতে থাকেন। বর্তমানে ওই মোড়ে প্রায় ৫/৭ হাজারের কাছাকাছি শিক্ষার্থী উপস্থিত রয়েছেন। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে একদল শিক্ষার্থী শিব বাড়ি থেকে মিছিল সহকারে খুলনার আওয়ামী লীগ অফিসের দিকে রওনা হয়ে এ অগ্নিকাণ্ড ঘটায়।
সিলেট: সিলেটের বন্দরবাজারের কোর্ট পয়েন্ট এলাকায় পুলিশের সাথে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ চলছে। বেলা ১২টার দিকে এ সংঘর্ষ শুরু হয়। পুলিশ আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে ব্যাপক টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেণেড ছুঁড়ছে। জানা যায়, অসহযোগ চলাকালে পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী বেলা ১১টার দিকে নগরের কোর্ট পয়েন্ট এলাকায় জড়ো হয় আন্দোলনকারীরা। এতে শিক্ষার্থীদের সাথে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষও যোগ দেন। এই এলাকায়ই জেলা প্রশাসক কার্যালয়, পুলিশ সুপার কার্যালয়, সিটি করপোরেশনসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সরকারি অফিস রয়েছে। আন্দোলনকারীরা অবস্থান নেওয়ার আগে থেকেই এ এলাকায় বিপুল সংখ্যক পুলিশ সাজোয়া যান নিয়ে অবস্থান নেয়। বেলা ১২টার দিকে পুলিশের সাথে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ শুরু হয়। আন্দোলনকারীদের থামাতে পুলিশ টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেণেড ছুঁড়ছে। এক পর্যায়ে পুলিশের বাধা পেয়ে মূল সড়ক ছেড়ে আশপাশের গলিতে অবস্থান নেয় আন্দোলনকারীরা।
মোংলা (বাগেরহাট): মোংলা-খুলনা মহাসড়কের ফয়লা এলাকায় (বাগেরহাটের রামপাল) আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও পুলিশের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়েছে। চলমান ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার মধ্যে একটি পুলিশ ভ্যানে আগুন দেয় আন্দোলনকারীরা। এ সময় সংবাদ সংগ্রহে গিয়ে আহত হয়েছেন বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার সাংবাদিক সবুর রানা ও সুজন মজুমদার।
এদিকে অসহযোগ আন্দোলনের অংশ নিয়ে মোংলা-খুলনা মহাসড়কের ভাগা এলাকায় সকালে বিক্ষোভ মিছিল করে শিক্ষার্থীরা। রবিবার বেলা সাড়ে ১১টায় বের হওয়া মিছিল শেষে মহাসড়কে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা। দুপুর ১২টা পর্যন্ত চলে শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন। পরে পুলিশ ও আন্দোলনকারীরা ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া জড়িয়ে পড়েন।
দিনাজপুর: জাতীয় সংসদের হুইপ ও দিনাজপুর সদর-৩ আসনের সংসদ সদস্য ইকবালুর রহিম এমপি ও বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের বাসা ভাংচুর ও আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে বিক্ষুব্ধরা। এ সময় পুলিশের দুটি পিকআপ ভ্যানে আগুন জ্বালিয়ে দেয় তারা। রাবার বুলেট ও কাঁদলে গ্যাস ছুটছে পুলিশ। সদর হাসপাতাল, জোড়া ব্রীজ, ফুলবাড়ি বাসস্ট্যান্ড, লিলির মোড়, বাহাদুর বাজার, স্টেশন রোড, কাচারী রোড, মডার্ণ মোড়, বুটিবাবুর মোড়, মুন্সীপাড়াসহ সারা শহরে আন্দোলনকারীদের সাথে পুলিশের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া চলে। শত শত রাউন্ড রাবার বুলেট ও টিয়ার শেল ছুড়েছে পুলিশ। এসব ঘটনায় ১০ জন গুলিবিদ্ধসহ আহত হয়েছে অর্ধশত ব্যক্তি।
সকাল ১০টায় দিনাজপুর ফুলবাড়ী বাসস্ট্যান্ডে আন্দোলনকারী জমায়েত হতে শুরু করে। তারা মিছিল নিয়ে শহরের হাসপাতাল মোড়স্থ হুইপ ইকবালুর রহিম এমপি ও বিচারপতি ইনায়েতুর রহিমের বাড়ির দিকে অগ্রসর হতে শুরু করলে পুলিশের সাথে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। দিনাজপুরের পুলিশ সুপার শাহ ইফতেখার আহমেদের নেতৃত্বে পুলিশ আন্দোলনকারীদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করে। দীর্ঘসময় পুলিশের সাথে সংঘর্ষের এক পর্যায়ে আন্দোলনকারীরা হুইপ ও বিচারপতির বাড়ীতে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। তারা বাড়ীতে থাকা কয়েকটি মোটরসাইকেল বের করে বাসার গেটে এনে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। জানা গেছে, ধাওয়া পাল্টা দেওয়ার সময় এবং রাবার বুলেট ও টিয়ার সেল নিক্ষেপ করে। ১০ জনের গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। সারা শহরজুড়ে থেমে থেমে আন্দোলনকারীদের সাথে পুলিশের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে। শহরের মোড়ে মোড়ে এখন আগুন জ্বলছে। এসব ঘটনা চলাকালে শহরের কোথাও সেনা সদস্য বা বিজিবির উপস্থিতি দেখা যায়নি। এর আগে শহরের পলিটেকনিক মোড়ে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ ও গ্রাফিতি অঙ্কন করে শিক্ষার্থীরা। পরে মিছিল নিয়ে শহরের দিকে অগ্রসর হলে এ সংঘর্ষে সুত্রপাত হয়।
নেত্রকোনা: নেত্রকোনায় রোববার সকাল ১০টা থেকে সরকার বিরোধী আন্দোলনকারী ও সরকারের পক্ষের সমর্থক সহ নেতাকর্মীদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়েছে। শহরের সাতপাই, নাগড়া সহ বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। জেলার শ্যামগঞ্জ বাজারের একাধিক বাসিন্দা জানান, নেত্রকোণা-ময়মনসিংহ সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে আন্দোলনকারীরা। এসময় পুলিশের একটি গাড়ি ভাঙচুর করে আন্দোলনকারীরা।
নোয়াখালী: নোয়াখালীতে রোববার সকাল থেকেই জেলা শহর মাইজদীর প্রধান সড়কে অবস্থান নেয় বিক্ষোভকারীরা। এসময় তাদের বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে রাস্তায় আগুন দিতে দেখা যায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টায় এখন কোথাও পুলিশি তৎপরতা দেখা যায়নি। সকাল ১০ টার দিকে নোয়াখালী-৪(সদর-সুবর্ণচর) আসনের সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরী তার অনুসারী নেতা-কর্মীদের নিয়ে পুড়ে যাওয়া জেলা আওয়ামী লীগ অফিস দেখতে আসেন। এসময় বিক্ষোভকারীদের সাথে তাদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এসময় কয়েক রাউন্ড গুলির শব্দ শুনা যায়। একপর্যায়ে এমপি একরাম সহ তার অনুসারীরা ব্যর্থ হয়ে জেলা শহর থেকে চলে যান। শহরেরর সব কটি সড়কে আগুন জ্বালিয়ে অবস্থান করে বিক্ষোভকারীরা।
বেলা সাড়ে ১১টার সময় সেনাবাহিনীর গাড়ী টহল দেওয়ার সময় আন্দোলনকারীরা ‘এ মুহূর্তে দরকার সেনাবাহিনীর সরকার’- স্লোগান দেয়।
কালিয়াকৈর (গাজীপুর): গাজীপুরের কালিয়াকৈরে গতকাল রোববার দিনব্যাপী সড়ক-মহাসড়ক অবরোধ করে বিভিন্ন স্লোগানে বিক্ষোভ মিছিল করেছে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনকারীরা ৩টি পুলিশ বক্স, আওয়ামী লীগের অফিস, থানার সামনে রাখা গাড়িসহ বেশকিছু যানবাহনে অগ্নিসংযোগ করে। এক পর্যায় পুলিশ ও আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মাঝে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। শিক্ষার্থীদের হামলায় ওসিসহ কয়েকজন পুলিশ সদস্য ও পুলিশের গুলিতে শিশুসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হন। থমথমে বিরাজ করছে কালিয়াকৈর।
চুয়াডাঙ্গা: চুয়াডাঙ্গা জেলাজুড়ে কর্মসূচি পালন করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা। এসময় জেলার বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নেয় শিক্ষার্থীরা। কোথাও কোথাও বিক্ষোভ প্রদর্শন করতে গেলে বাধার মুখে পড়েন তারা। ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা তাদের ওপর হামলা চালায় বলে অভিযোগ তোলেন। রোববার সকাল থেকে জেলাজুড়ে এমন পরিস্থিতি বিরাজ করছিল। সকাল থেকে চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুর সড়কের ভালাইপুর বাজারে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন আন্দোলনকারীরা। এসময় তারা একদফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে যান চলাচল বন্ধ করে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। সড়কের দু’পাশে সৃষ্টি হয় যানজট।
একই সাথে শহরের কোর্টমোড় এলাকাতেও বিক্ষোভ করতে গেলে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের বাধার মুখে পড়েন আন্দোলনকারীরা। এসময় তাদের ব্যানার ছিড়ে ফেলা হয়। শহরের হাসপাতাল সড়কে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালানো হয়। দর্শনা শহরে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে আন্দোলনকারীরা বাসস্ট্যান্ডে জড়ো হলে তাদের ওপরেও হামলা চালানো হয় বলে অভিযোগ ওঠে। এছাড়া জেলার বদরগঞ্জ, জীবননগর ও আলমডাঙ্গাতেও সড়কে নামে আন্দোলনকারীরা। এমন পরিস্থিতিতে জেলাজুড়ে আতঙ্ক ও থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।
ভৈরব (কিশোরগঞ্জ): কিশোরগঞ্জের ভৈরবে আন্দোলনকারীদের সাথে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষ চলাকালে পুলিশ প্রায় শতাধিক রাউন্ড রাবার বুলেট ও টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ করে। এসময় কমপক্ষে অর্ধশত আহত হয়। রোববার দুপুর ১২টা থেকে বিকেল সাড়ে ৩ টা পর্যন্ত ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ও স্থানীয় বাসস্ট্যান্ড, জগনাথপুর এবং কালিকাপ্রসাদ এলাকায় এ সংঘর্ষ চলে। এসময় আন্দোলনকারীরা কয়েকটি বাড়ীঘর দোকানপাট ভাংচুর করে। তবে বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে দেখা যায়নি। স্থানীয় বিএনপির কিশোর যুবকদের আন্দোলনে অংশ নিতে দেখা যায়। তারা দুপুর দেড়টার দিকে ভৈরব থানা আক্রমণ করতে চেষ্টা করলে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা মিলে আন্দোলনকারীদের সরিয়ে দেয়। এ সময় পুলিশ কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়ে।
বাংলাদেশ পুলিশের নতুন পোশাক বাহিনীর সদস্যদের গায়ে উঠেছে। ঢাকা মহানগর পুলিশসহ (ডিএমপি) দেশের সব মহানগর পুলিশ ও বিশেষায়িত ইউনিটে নতুন পোশাক পরেছে পুলিশ। তবে জেলা পুলিশ এখনো তা পায়নি। পর্যায়ক্রমে তারাও নতুন পোশাক পাবে বলে পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। গতকাল শনিবার থেকে বাংলাদেশ পুলিশের পরিবর্তিত নতুন পোশাক চালু হয়েছে।
তবে এখনই সর্বস্তরে বা সবার কাছে নয়, সদস্যদের মধ্যে সীমিত পরিসরে এ পোশাক সরবরাহ করা হচ্ছে। নীল ও সবুজ রঙের পরিবর্তে নতুন একটি রঙের পোশাক পরবেন রেঞ্জ ও মহানগর পুলিশ সদস্যরা।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন বিভাগের উপকমিশনার তালেবুর রহমান বলেন, গতকাল শনিবার থেকে চালু হলো পুলিশের নতুন পোশাক। এটা ধাপে ধাপে সব সদস্যকে দেওয়া হবে।
পুলিশ সদর দপ্তরের গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) এ এইচ এম শাহাদাত হোসাইন বলেন, জেলা ও রেঞ্জ পুলিশ পর্যায়ক্রমে নতুন এই পোশাক পরবেন। তবে পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিট আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) ও স্পেশাল প্রটেকশন ব্যাটালিয়নের (এসপিবিএন) আগের পোশাক থাকবে।
এর আগে, মঙ্গলবার পোশাকের সঙ্গে সঙ্গে সবারই মন-মানসিকতা পরিবর্তন করতে হবে মন্তব্য করে, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছিলেন, পোশাক পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে। পুলিশের জন্য, র্যাবের জন্য এবং আনসারের জন্য। তিনটা সিলেক্ট করা হয়েছে। এটা ইমপ্লিমেন্ট হবে আস্তে আস্তে।
জানা যায়, তিন বাহিনীর সদস্যদের নতুন পোশাকের জন্য ব্যয় হবে ৬ থেকে ৭ কোটি টাকা।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে দমন-পীড়নের অভিযোগ ওঠার পর থেকে সমালোচনার মুখে থাকা পুলিশ বাহিনীর সংস্কার ও পোশাক পরিবর্তনের দাবি উঠলে অন্তর্বর্তী সরকার নতুন পোশাক অনুমোদন করে। এরই অংশ হিসেবে মহানগর পুলিশে লৌহ রঙের নতুন পোশাক দেওয়া হয়েছে। পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিট পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই), ট্যুরিস্ট পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ, নৌ এই পোশাক পরবে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় পুলিশ বাহিনীর কর্মকাণ্ডে ক্ষুব্ধ ছিল গোটা দেশের মানুষ। পুলিশ সদস্যদের পোশাকও অনেকের কাছে আতঙ্ক হয়ে দাঁড়ায় সেসময়। আবার পুলিশ সদস্যরা পোশাক পরে বের হতেও সংকোচবোধ করতেন। অনেক পুলিশ সদস্য ট্রমায় ভুগেছেন দীর্ঘদিন। সরকার পতনের পর থেকে আলোচনায় থাকলেও অবশেষে চূড়ান্ত হয়েছে পুলিশ বাহিনীর নতুন পোশাক।
তবে ২০২০ সাল থেকেই বাংলাদেশ পুলিশের পোশাক পরিবর্তন নিয়ে আলোচনা চলছিল। ২০২১ সালের শুরুর দিকে পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের জন্য বেশ কয়েকটি পোশাকের ট্রায়ালও হয়। তারপরও নানা কারণে নতুন পোশাক পাননি বাংলাদেশ পুলিশের সদস্যরা।
পুলিশ, র্যাব ও আনসার বাহিনীর পোশাক পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, পুলিশের নতুন পোশাক হচ্ছে ‘আয়রন’ রঙের, র্যাবের ‘অলিভ’ আর আনসার বাহিনীর জন্য ‘গোল্ডেন হুইট’।
লক্ষ্মীপুরের রামগতিতে ইটভাটা বন্ধের প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ করে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন কয়েক হাজার শ্রমিক। আজ রোববার (১৫ নভেম্বর) সকাল ১০ টা থেকে শুরু হওয়া মানববন্ধন চলে দুপুর ১ টা পর্যন্ত। এসময় লক্ষ্মীপুর-রামগতি আঞ্চলিক সড়কের রামগতি উপজেলা পরিষদের সামনে তিনঘণ্টা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। দীর্ঘ তিনঘণ্টা ধরে চলা মানববন্ধনে শ্রমিকরা জানান, রামগতিতে ৪৪টি ইটভাটা থাকলেও ইতোমধ্যে বিভিন্ন কারণে ৭ টি ইটভাটা বন্ধ হয়ে গেছে। এসব ভাটায় শ্রমিক হিসেবে কাজ করছে প্রায় ৫০ হাজার লোক। আর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে এ শিল্পে জড়িত রয়েছে আরও ৪০ হাজার লোক। সব মিলিয়ে প্রতি বছর লক্ষাধিক মানুষের আয় রোজগারের একমাত্র মাধ্যম ইটভাটাগুলো। ইটভাটার যেমন ক্ষতিকর দিক রয়েছে, তেমনি উপকারের দিক বিবেচনায় করে এ শিল্পকে সরকারের নীতিমালার আওতায় এনে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর আর্থসামাজিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখার দাবি জানান তারা।
বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা বলেন, এ অঞ্চলে বর্তমানে কোন কাজকর্ম নেই। ভাটাগুলো বন্ধ হলে হাজার হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে পড়বে। এঅবস্থায় সরকার ও প্রশাসনের মানবিক দৃষ্টি কামনা করেন তারা। অন্যথায় তাদের জীবিকা নির্বাহের এই মাধ্যমটি কোন ভাবেই বন্ধ করতে দিবেনা শ্রমিকরা। এসময় কাফনের কাপড় পরিধান করে রাস্তায় বসে পড়েন তারা।
ভাটার মালিকরা বলেন, হঠাৎ করে দেশীয় ইটভাটা বন্ধের সিদ্ধান্তে চরম বেকারত্বের ঝুঁকিতে পড়বে ইটভাটার সাথে জড়িত এ অঞ্চলের প্রায় লক্ষাধিক শ্রমিক। তারা ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে কোটি কোটি টাকা ব্যায় করে ফেলেছেন। ভাটাগুলো বন্ধ হলে তাদের আত্মহত্যা করা ছাড়া কোন উপায় নেই। সে দিক বিবেচনা করে ইটকে শিল্প হিসেবে নিয়ে নীতিমালার আওতায় আনা জরুরি বলে মনে করছেন তারাও।
মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন-ইটভাটা মালিক, হাজী খলিল, রাসেল, আল আমিন ও বাবুল সহ ইটভাটার ১০ জন মালিক।
ময়মনসিংহে কিশোরগঞ্জ মহাসড়কের নান্দাইলের চামটা এলাকায় যাত্রীবেশে অটোরিকশা ছিনতাইয়ের চেষ্টার সময় দুই ছিনতাইকারীকে হাতেনাতে ধরেছে জনতা। আজ রবিবার (১৬ নভেম্বর) সকাল ১০টার দিকে এ ঘটনাটি ঘটে।
ছিনতাইকারী দুজন হচ্ছেন তরিকুল ও ইমন। তাদের বাড়ি নান্দাইল উপজেলার চন্ডীপাশা এলাকায়।
খবর পেয়ে পুলিশ এসে ওই দুজনকে জনতার হাত থেকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়।
প্রত্যক্ষদর্শী ও অটোরিকশাচালক ফাইজুল জানান, নান্দাইল চৌরাস্তা এলাকা থেকে যাত্রী নিয়ে কানারামপুর আসছিলেন চালক ফাইজুল ইসলাম। নান্দাইল ফেরার পথে দুই যাত্রী তরিকুল ও ইমন অটোরিকশায় ওঠেন। এ সময় ২০০ টাকা ভাড়া ধার্য করেন।
কিছুদূর আসতেই ময়মনসিংহ কিশোরগঞ্জ মহাসড়কের নান্দাইলের চামটা এলাকায় পৌঁছতেই এক যাত্রী সিগারেট কেনার কথা বলে চালককে থামতে বলেন।
এ সময় তরিকুল ও ইমন চালককে জোর জবরদস্তি করে চাবি ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। ওই সময় চালকের চিৎকারে আশেপাশের লোকজন ছুটে এসে তরিকুল ও ইমনকে ধরে ফেলে পরে উত্তম মধ্যম দিয়ে বেঁধে রাখে।
নান্দাইল থানার এসআই আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে দুজন অটোরিকশা ছিনতাইয়ের চেষ্টার কথা স্বীকার করেন।
এই দুজন অটোরিকশা ছিনতাই চক্রের সদস্য।
খুচরা সার বিক্রেতাদের বহাল রাখা ও টিও লাইসেন্সের দাবিতে ঝিনাইদহে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচী পালিত হয়েছে।
রোববার সকালে হরিণাকুন্ডু উপজেলা মোড়ে এ কর্মসূচীর আয়োজন করে খুচরা সার বিক্রেতা এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ। এতে ব্যানার ফেস্টুন নিয়ে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার খুচরা সার বিক্রেতারা অংশ নেয়। কর্মসূচীতে সংগঠনটির সদস্য শামীম আহম্মেদ চাঁদ, নয়ন হোসেন, মনির হোসেনসহ অন্যান্যরা বক্তব্য রাখেন।
সেসময় বক্তারা বলেন, খুচরা সার বিক্রেতাদের বাতিল করতে প্রজ্ঞাপন জারি হয়েছে। এটা বাস্তবায়ন হলে দেশের ৪৪ হাজার ব্যবসায়ী ও তাদের পরিবারসহ ৫ কোটি কৃষক সরাসরি ক্ষতিগ্রস্থ হবে। তাই এ সিন্ধান্ত বাস্তবায়ন না করার আহ্বান জানানো হয় কর্মসূচী থেকে। পরে সেখান থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি বিভিন্ন সড়ক ঘুরে উপজেলা কৃষি অফিসের সামনে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার মাধ্যমে কৃষি সচিব বরাবর স্মারকলিপি পেশ করেন ব্যবসায়ীরা।
মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার হাড়াভাঙ্গা এইচ বি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রাজু আহমেদের সঙ্গে দশম শ্রেণীর এক শিক্ষার্থীর ভিডিও কলে ঘনিষ্ঠ মুহূর্তের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়াই ওই শিক্ষকের স্থায়ী পদত্যাগের দাবিতে মানব বন্ধন করেছে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।
বিদ্যালয়ের দায়িত্বশীল পদে থাকা একজন শিক্ষা কর্মকর্তার এ ধরনের আচরণের ভিডিও ছড়িয়ে পড়তেই জেলাজুড়ে সৃষ্টি হয়েছে তীব্র প্রতিক্রিয়া,নিন্দা ও ক্ষোভের ঝড়।
গত শুক্রবার (১৪ নভেম্বর) বিকেল থেকে অশ্লীল কথাবার্তার ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। আজ সোমবার ১৬ নভেম্বর সকাল দশটার দিকে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা বিদ্যালয়টির সামনে মানব বন্ধন করে।
ভিডিওটি কয়েকটি ফেসবুক অ্যাকাউন্টে আপলোড হওয়ার পর দ্রুত ভাইরাল হয়ে যায়।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, বলা হয়ে থাকে শিক্ষা জাতীর মেরুদণ্ড আর সেখানে শিক্ষকের চরিত্র যদি এমণ হয়। তাহলে জাতির মেরুদণ্ড কেমন হবে আপনারই বলুন?
একজন প্রধান শিক্ষক কর্তৃক শিক্ষার্থীর সঙ্গে এমন অনৈতিক আচরণ শুধু নিন্দনীয়ই নয়, তা গোটা শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য লজ্জাজনক।
অভিভাবকরা বলছেন,আমাদের সন্তানদের শিক্ষাদানের জন্য স্কুলে পাঠাই,আর শিক্ষকরা হচ্ছে শিক্ষার্থীদের পিতার মত। আর সেই শিক্ষককের এমন আচরণ মেনে নেয়া যায় না। তাই তাকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার চাই।
দশম শ্রেনী পড়ুয়া শিক্ষার্থী জীবন বলেন,রাজু স্যার আমাদের বন্ধুর বাবা। আর আমাদের বান্ধবীর সাথে প্রেম করা,আবার তার সাথে অনৈতিক কাজ করা মানে নিজের মেয়ের সাথে এমনটি করার সমান।
আরেক শিক্ষার্থী বলেন, রাজু স্যারের সাথে আমাদের বান্ধবির বিয়ে দিতে হবে,আর কাবিন করে দিতে হবে এক কোটি টাকা। যাতে করে দুদিন বাদে মেয়েটিকে তালাক দিতে না পারে।
শিক্ষার্থীর অভিভাবক স্থানীয় বাসিন্দা মজিবুল বলেন,আমাদের এইচ বি স্কুলের রাজু স্যার বেশ কয়েক বছর আগে এক এনজিও কর্মির স্ত্রীর সাথে অনৈতিক কাজে লিপ্ত থাকাকালীন স্থানীয়দের হাতে ধরা পড়ে। আবার এলাকায় আদম ব্যাবসা করে অনেককেই নিঃশ্ব করেছে। এবার শুরু করেছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি নষ্ট করতে। এই শিক্ষককের আজীবন নিষিদ্ধের দাবি জানাচ্ছি।
রাজু আহমেদের সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি। তার হোয়াটসঅ্যাপে পাঠানো বার্তা ও কলও গ্রহণ হয়নি।
কাজিপুর ইউপি চেয়ারম্যান আলম হুসাইন বলেন, শিক্ষক রাজু আহমেদের অনেক অভিযোগ শুনছি। এমন শিক্ষক যে প্রতিষ্ঠানে থাকবে সেখানে শিক্ষার্থীরা নিরাপদ নই। তাই আমরা এই বিষয়ে সব্বোর্চ দপ্তর পযর্ন্ত জানাবো। এবং তার স্থায়ী বহিষ্কারের জন্য আবেদন জানাচ্ছি। শিক্ষক রাজু স্কুলের অফিসে বসে মোবাইল এই ধরনের কর্মকান্ড চালিয়ে যেতো।
গাংনী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মনিরুল ইসলাম বলেন, ঘটনার বিষয়টি শুনেছি। বিষয়টি অভিযোগ পেলে অবশ্যই তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার আনোয়ার হোসেন জানান,বিষয়টি আমরা শুনেছি ভুক্তভোগী ছাত্রীর পরিবারের পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ দিলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তারা চাইলে আদালতেও যেতে পারবেন।
বাগেরহাটের মোংলা সুন্দরবনের মরা পশুর এলাকায় বিষ দিয়ে মাছ ধরার সময় পাঁচ দুষ্কৃতকারীকে আটক করেছে বন বিভাগ।
শনিবার (১৫ নভেম্বর) দুপুরে চাঁদপাই স্মার্ট প্যাট্রল টিমের সদস্যরা নিয়মিত টহল দেয়ার সময় বনের ভিতরে ঠাকুর খালে কীটনাশক দিয়ে মাছ ধরার সময় ওই পাঁচ দুষ্কৃতকারীকে আটক করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে দুটি কীটনাশকের বোতল ও সাত কেজি চিংড়ি মাছ এবং একটি ডিঙ্গি নৌকা জব্দ করা হয়। আটক ব্যক্তিরা হলেন মো. জামাল শেখ (৪৫), মো. ইমদাদুল সরদার শেখ (৪০), মো. রাসেল শেখ (২৮), মো. রমজান সরদার (২৭), মো. রাজু সরদার (২২)। আটককৃত সকলে বাগেরহাট জেলার মোংলা উপজেলার বাসিন্দা।
সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগ চাঁদপাই রেঞ্জ কর্মকর্তা (এসিএফ) দীপন চন্দ্র দাস এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, আটক আসামিদের বিরুদ্ধে বন আইনে মামলা দায়ের শেষে বাগেরহাট আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।
রাজধানীর মিরপুরে এবং হাতিরঝিলে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। হাতিরঝিলে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় একটি মোটরসাইকেলে আগুন ধরে যায়। গতকাল শনিবার বিকাল সাড়ে পাঁচটা থেকে সাড়ে ৭টার মধ্যে মিরপুরের বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) এলাকায়, মিরপুর-১২ মেট্রো স্টেশনের নিচে এবং হাতিরঝিলের মধুবাগ ব্রিজের নিচে পৃথক ৪টি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। তবে এসব ঘটনায় কেউ হতাহত হয়নি বলে জানিয়েছে পুলিশ। এছাড়া গতকাল শনিবার সাত সকালে গাজীপুরের হারিকেন এলাকায় যাত্রীবাহী একটি বাস এবং রাত আটটার দিকে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে একটি মিনিবাসে আগুনে পুড়ে গেছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের মিরপুর বিভাগের সহকারী কমিশনার (এসি) মো. মিজানুর রহমান জানান, বিকাল সাড়ে পাঁচটার দিকে বিআরটিএ এলাকায় একটি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। তবে কে বা কারা এই বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে, তা জানা যায়নি।
এদিকে সন্ধ্যা সোয়া ছয়টার দিকে হাতিরঝিলের মধুবাগ ব্রিজের নিচে আরেকটি ককটেল বিস্ফোরণ করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে হাতিরঝিল থানা পুলিশ। এ ঘটনায় ঘটনাস্থলে থাকা একটি মোটরসাইকেলে আগুন ধরে যায়।
হাতিরঝিল থানার ডিউটি অফিসার উপপরিদর্শক (এসআই) ফুয়াদ আহমেদ বলেন বলেন, বিস্ফোরণে কেউ হতাহত হয়নি। ঘটনাস্থলে পুলিশ কাজ করছে।
এদিকে পল্লবী থানা পুলিশ বলছে, সন্ধ্যা ৭টা ২০ মিনিটে মিরপুর-১২ মেট্রো স্টেশনের নিচে আচমকা ২টি ককটেল বিস্ফোরণ করে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়। হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। ঘটনাস্থলে পল্লবী থানা পুলিশ উপস্থিত রয়েছে।
সিদ্ধিরগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের শিমরাইল এলাকায় সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয়ের সামনে একটি মিনিবাসে আগুন দেওয়া হয়।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি শাহীনূর আলম ওসি বলেন, আগের দিন (শুক্রবার রাত ১০টার দিকে মহাসড়কের ওপর নাফ পরিবহনের মিনিবাসটি থামিয়ে রেখে চালক চলে যান। রাতে বাসটি সেখানেই ছিল। শনিবার সকাল ছয়টার দিকে বাসটিতে আগুন জ্বলতে দেখতে পান স্থানীয়রা।
পরে খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুন নেভান। ততক্ষণে বাসের সিটগুলো পুড়ে যায়। তবে আগুনের ঘটনা পরিকল্পিত নাকি যান্ত্রিক ত্রুটি, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
গাজীপুর প্রতিনিধি জানান, গাজীপুরের হারিকেন এলাকায় গতকাল রাত ৮টার দিকে যাত্রীবাহী একটি বাসে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।
জয়দেবপুর চৌরাস্তা ফায়ার সার্ভিসের ডিউটি অফিসার তাজউদ্দীন আহমদ বলেন, বাসটির পেছন দিকে হঠাৎ আগুন লেগে যায়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বাসটি ঢাকার দিকে যাত্রী নিয়ে যাচ্ছিল। হঠাৎ আগুন লেগে গেলে যাত্রীরা লাফিয়ে বাস থেকে নেমে প্রাণ বাঁচান।
গাছা থানার ডিউটি অফিসার পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) শরীয়ত উল্লাহ বলেন, হতাহতের কোনো ঘটনা ঘটেনি। তদন্ত শেষে অগ্নিকাণ্ডের কারণ সম্পর্কে জানা যাবে।
ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিটের সদ্য বহিষ্কৃত হওয়া ১৯ জন ছাত্রদল নেতার বহিষ্করাদেশ প্রত্যাহারের দাবিতে ক্রিকেটারের ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে রিভিউ আবেদন করেছেন। শনিবার দুপুরে গৌরীপুর উপজেলা সদরের পাট বাজারে বিএনপির অস্থায়ী কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের এমন আবেদন জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে এ দাবি জানানো হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে বহিষ্কৃত হওয়া ১৯ জনের মধ্যে ১৬ জন নেতা উপস্থিত ছিলেন।
গৌরীপুর পৌর ছাত্রদলে সদ্য বহিষ্কৃত যুগ্ম আহ্বায়ক কামরুল ইসলাম পিয়াস সংবাদ সম্মেলনে বলেন, জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে মনোনয়ন বঞ্চিত আহাম্মদ তায়েবুর রহমান হিরণের নিদের্শনায় গত ৯ নভেম্বর গৌরীপুর উপজেলা ও পৌর বিএনপির উদ্যোগে নারী সমাবেশের আয়োজন করা হয়। একই দিন ওই নারী সমাবেশ থেকে ১ কিলোমিটার দূরে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার এম ইকবাল হোসেইনের সমর্থনে সভার আয়োজন করা হয়। ইঞ্জিনিয়ার এম ইকবাল হোসেইন সভাস্থলে যাওয়ার পথে তাদের গাড়িবহর থেকে স্থানীয় ও বহিরাগত সন্ত্রাসীরা অস্ত্র নিয়ে অতর্কিত হামলা চালিয়ে নারী সমাবেশে মঞ্চ, চেয়ার, মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে। এতে সভাস্থলে উপস্থিত মা ও শিশুসহ ৫০ জনের বেশি আহত হয়। এরপর ছাত্রদলের কর্মী তানজিন আহমেদ আবিদের স্ট্রোক করে মারা যাওয়ার ঘটনাকে হত্যার গুজব ছড়িয়ে দেয়া হয়।
পিয়াস আরো বলেন, ১০ নভেম্বর ময়মনসিংহ উত্তর জেলা ছাত্রদলের দপ্তর সম্পাদক মো. সাদ্দাম হোসেন তালুকদার সাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে আমাদের ১৯ জনকে কোন কারণ দর্শানো ছাড়াই বহিষ্কার করা হয়। বিগত ৩ দিনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা যায় ময়মনসিংহ উত্তর জেলা ছাত্রদলের সভাপতি নুরুজ্জামান সোহেলের নেতৃত্বে স্থানীয় ও বহিরাগত সন্ত্রাসীরা সভাস্থলে হামলা করে। সোহেল নিজের কৃতকর্ম আড়াল করার জন্য আমাদের বহিষ্কার করে ঘটনার মোড় অন্যদিকে ঘুরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে। কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের কাছে দাবি জানাচ্ছি ঘটনাটি নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে পুনর্বিবেচনা করা হোক।
ময়মনসিংহ উত্তর জেলা ছাত্রদলের সভাপতি নুরুজ্জামান সোহেল জানান, যারা বহিষ্কৃত হয়েছেন তারা যদি দলের সিদ্ধান্ত মেনে দলের পক্ষে কাজ করে এবং বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের জন্য লিখিত আবেদন করে। তাহলে আমরা বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন নেতৃবৃন্দকে জানাবো।
সন্তান জন্মের দীর্ঘ নয় বছর পর মানত পূরণ করতে আয়োজন করা হয়েছে সত্য পীরের গান। স্থানীয়ভাবে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানকে ঘিরে এলাকাবাসীর মধ্যে উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। তিন রাত তিনদিন ব্যাপী এই গানের আয়োজন করে গাইবান্ধার সদর উপজেলার বোয়ালী ইউনিয়নের রাধাকৃষ্ণপুর গ্রামের একটি মুসলিম পরিবার।
সরেজমিনে শুক্রবার রাতে ওই গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, আয়োজক পরিবারের বাড়ির উঠানে ছামিয়ানা টাঙিয়ে সাজানো হয়েছে গানের আসর। ছামিয়ানার নিচে রোপন করা হয়েছে কম বয়সী চারটি কলাগাছ। তার নিচে জালানো হয়েছে প্রদীপ।
ছামিয়ানার নিচে সত্য পীরের গান, কিচ্চা, খনার বচনসহ বিভিন্ন আধ্যাত্মিক ও লোকজ পরিবেশনায় অংশ নিচ্ছেন তিন নারী ও দুই পুরুষ। বাদ্যযন্ত্রে তাল দিচ্ছেন আরও চারজন শিল্পী। গানের আসরকে ঘিরে চারপাশে ভিড় করেছেন আশপাশ এলাকার নারী-পুরুষ, শিশু-বৃদ্ধ, তরুণ-যুবকসহ নানা বয়সি দর্শক।
আয়োজক পরিবার জানায়, মোস্তাফিজুর রহমান ও এজমা দম্পতির বিয়ের এক যুগ পরও সন্তান না হওয়ায় মানত করা হয়—সন্তান হলে সত্য পীরের গান আয়োজন করা হবে। পরবর্তীতে তাদের ঘরে সন্তান জন্ম নেয়। নয় বছর পর সেই মানত পূরণে আয়োজন করছেন এই গানের অনুষ্ঠান।
আয়োজক এজমা বেগম বলেন, ‘বিয়ের পর ১২ বছর সন্তান হয়নি। তখন বাবা মানত করেছিলেন সত্য পীরের গান করার। পরে আমার সন্তান হয়, এখন তার বয়স ৯ বছর। মানত পূরণে তিন রাত তিনদিনের আয়োজন করেছি।
গানের দলনেতা ফতু বলেন, ‘এটা আধ্যাত্মিক বিষয়। যুগ যুগ ধরে মানুষের বিশ্বাস-আস্থায় চলে আসছে। মানুষ যে কোনো আকাঙ্ক্ষা পূরণের আশায় মানত করে। চাওয়া পূরণ হলে আমরা গান করতে যাই।
তিনি আরও জানান, ‘আমরা কাউকে জোর করি না। কেউ পরামর্শ চাইলে দিই। এই গ্রামে প্রায় ২০–২১ বছর পর এক দম্পতির সন্তান হওয়ায় তাদের বাড়িতেও গান করতে এসেছি।’
ফেনী পৌরসভায় সাড়ে ৮ কোটি টাকা ব্যায়ে নির্মিত ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টটি (পানি শোধনাগার) নির্মাণের দুই বছর পার হলেও এখনো চালু করা হচ্ছেনা। এতে করে এক দিকে শহরের মানুষ সুপেয় ও বিশুদ্ধ পানি পান থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, অন্যদিকে প্রকল্পের বিভিন্ন সরঞ্চামাদি নষ্ট হয়ে বিকল হয়ে যাচ্ছে।
বর্তমানে ফেনী পৌরসভায় চলমান পানি সরবরাহ প্রকল্পের পানির গুণাগুণ ভালো না থাকায় এখানে বসবাসরত দুই সহস্রাধিক সেবাগ্রহিতার মাঝে ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে। তবে পৌরসভা কর্তৃপক্ষ বলছে, নতুন প্রকল্পটি দ্রুত চালুর বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
জানা যায়, ৩৬ জেলা শহরে ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট স্থাপন প্রকল্পের আওতায় ফেনী পৌরসভার জেলা সদর হাসপাতাল মোড়সংলগ্ন বিরিঞ্চি এলাকায় স্থাপন করা হয় বিশুদ্ধ ও সুপেয় পানি সরবরাহ প্রকল্প। দরপত্র আহবানের পর ২০১৯ সালে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের এ কাজটি দুই বছর মেয়াদে বাস্তবায়নের দায়িত্ব পায় শামীম ট্রেডার্স নামের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। সাড়ে ৮ কোটি টাকা ব্যয়ে আড়াই লাখ ঘনমিটার পানি ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন এ প্রকল্পে ৯টি গভীর নলকূপ ও ৪০ কিলোমিটার সরবরাহ লাইন স্থাপন করেন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। করোনাকালীন সময়ে কাজের গতি কমে যাওয়ায় ঠিকাদার এমন অজুহাত দেখিয়ে কালক্ষেপণ করে ২০২৩ সালে প্রকল্পটি নির্মাণ কাজ শেষ করে। পরে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর তা ফেনী পৌরসভার নিকট হস্তান্তর করে। সেই থেকে এখন পর্যন্ত অযত্মে অবহেলায় সাড়ে ৮ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত প্রকল্পটি পড়ে আছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সীমানা প্রাচীর ঘেরা প্রকল্প এলাকার প্রধান ফটকে তালা ঝুলানো রয়েছে। প্রকল্পটি নির্মাণকাজ ২০২৩ সালে শেষ হলেও ২০২০ সালে এটি উদ্বোধন হয়েছে মর্মে স্থাপন করা একটি ফলক দেখা গেছে। ভেতরের বিভিন্ন লোহার সরঞ্জামাদী জং ধরে নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়ে পড়েছে। নষ্ট হয়ে গেছে ইলেক্ট্রিকের বিভিন্ন যন্ত্রপাতি। অথচ এ প্রকল্পটি কেন বা কি কারণে স্থাপন করা হয়েছে; বিষয়টি জানেন না স্থানীয়রা।
ফেনী পৌরসভার একাধিক সূত্র জানায়, প্রকল্পটিতে ৪০ কিলোমিটার পানি সরবরাহ লাইন স্থাপন করা হয়েছে। পরে ফেনী পৌরসভার উদ্যোগে আরও ৪০ কিলোমিটার পানি সরবরাহ লাইন স্থাপনের কাজ শেষ হলে এটি আনুষ্ঠানিকভাবে চালুর পরিকল্পনা নেয়া হয়। পরিকল্পনা মোতাবেক অতিরিক্ত ৪০ কিলোমিটার পাইপলাইন স্থাপন করতে ৮০ লাখ টাকা ব্যয়ে ফেনী পৌরসভা থেকে আরিফ নামের এক ঠিকাদারকে কার্যাদেশ দেয়া হয়। কিন্তুু গণঅভ্যুত্থানের পর ওই ঠিকাদার পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে কাজ বন্ধ হয়ে যায়।
পরে ফেনী পৌরসভার কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় প্রকল্পটি থমকে দাড়ায়। পানি শোধনাগারের প্রকল্পটি চালু না হওয়ায় নিয়োগপ্রাপ্ত পাম্প অপারেটর সৌরভকে পৌরসভার অন্য বিভাগে নিয়োজিত রাখা হয়েছে।
ফেনী পৌরসভার বাসিন্দারা জানান, বর্তমানে ফেনী পৌর এলাকায় তিনটি পানির ট্যাংকের মাধ্যমে নাগরিকদের পানি সরবরাহ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। পুরাতন ওই প্রকল্পের আওতায় দুই হাজার ৬শ গ্রাহক প্রতি গ্যালন পানি (১০০০ লিটার) আবাসিকে ৯ টাকা ও বাণিজ্যিকে ২২ টাকা হারে বিল পরিশোধ করে থাকেন। কিন্তুু এ প্রকল্পের পানির মাঝে ময়লা- আবর্জনা থাকায় দিন দিন গ্রাহকরা পৌরসভা থেকে পানির সুবিধা নেয়া বন্ধ করতে শুরু করেছে। পৌরসভা থেকে চাহিদামত সুপেয় ও বিশুদ্ধ পানি না পেয়ে আইনভঙ্গ করে বাড়ির মালিকরা বাধ্য হয়ে পৌর এলাকায় গভীর নলকুপ বসিয়ে পানির সংকট পূরণ করছেন।
ফেনী পৌর এলাকার ট্রাঙ্ক রোডসংলগ্ন মো. রহিম উল্লাহ নামের এক বাসিন্দা জানান, ফেনী পৌরসভায় পুরাতন পানির ট্রাংকিগুলো রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে নষ্ট হয়ে পড়েছে। এসব ট্রাংকি থেকে সরবরাহকৃত পানির গুণগত মান ভালো না থাকায় বাধ্য হয়ে মানুষ শহরে গভীর নলকূপ বসিয়ে পানি তুলছে। নতুনভাবে স্থাপিত প্রকল্পটি চালু করা গেলে এ শহরের অন্তত দুই লাখ মানুষ বিশুদ্ধ ও সুপেয় পানি ব্যবহারের সুযোগ পেতো। এতে করে একদিকে মানুষের উপকার হতো অন্যদিকে পৌরসভার রাজস্ব আয় বাড়তো।
ফেনী পৌরসভার প্রশাসক (উপসচিব) গোলাম মো. বাতেন বলেন, ২০২৪ এর বন্যার সময়ে পানি শোধনাগারটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পরবর্তীতে আমরা এটি দ্রঙত চালু করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। আশা করি প্রয়োজনীয় মেরামত ও লাইন স্থাপন কাজ শেষে আমরা শিগগিরই ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টটি চালু করতে পারব।
জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার আয়মাপুর গ্রামে অনুষ্ঠিত হয়েছে একদিনব্যাপী ঐতিহ্যবাহী পাখি তলার মেলা, যা স্থানীয়দের কাছে জামাই মেলা নামেও সুপরিচিত। বহু প্রাচীন এই মেলাকে ঘিরে শনিবার সকাল থেকেই গ্রামজুড়ে সৃষ্টি হয়েছে উৎসবমুখর পরিবেশ। দূরদূরান্ত থেকে পরিবার-পরিজন নিয়ে মানুষজন ভিড় করছেন মেলাপ্রাঙ্গণে।
মেলায় শিশু-কিশোরদের বিনোদনের জন্য উঠেছে রঙিন নাগরদোলা, চড়কি ও বিভিন্ন খেলার রাইড। তাদের উচ্ছ্বাসে মেলার চারদিক আরও প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে। পাশাপাশি বসেছে হস্তশিল্পের পসরা কাঠ, বাঁশ, মাটির তৈরি খেলনা, ঘর সাজানোর সামগ্রী, বাঁশের তৈরি নানান ব্যবহার্য জিনিসপত্র। রঙিন মিঠাই, জিলাপি, ছানামিঠাইসহ ঘরোয়া মিষ্টির গন্ধে মেলার চারপাশ সরব।
মেলার অন্যতম আকর্ষণ ছিল গ্রামের ঐতিহ্যবাহী লাঠিখেলা। স্থানীয় লাঠিয়াল দলের মনোমুগ্ধকর প্রদর্শনী দেখতে ভিড় জমিয়েছে উৎসুক জনতা। প্রবীণদের মতে, এ ধরনের আয়োজন গ্রামবাংলার হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
আইমাপুর গ্রামের দেলোয়ার হোসেন বলেন, আমার বাপ-দাদারা এই মেলা করে গিয়েছেন, পর্যায়ক্রমে আমরাও করছি। আগামীতে আমাদের সন্তানরা করবে। ১০০ বছরেরও অধিক সময় ধরে এ মেলা হয়ে আসছে। মেলার প্রধান আকর্ষণ গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যের লাঠি খেলা। মেলার দিনে এ গ্রামের সকলেই জামাইদের আমন্ত্রণ করেন। এ কারণে এই মেলাটি জামাই মেলা নামেও পরিচিত।
দিনব্যাপী আয়োজিত এই মেলায় সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত হবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। গান, নাচ আর নানা পরিবেশনায় মুখর হয়ে উঠবে সমগ্র মেলাপ্রাঙ্গণ। উৎসব-উদ্দীপনা, পারিবারিক মিলন মেলা আয়মাপুরের পাখি তলার মেলা যেন গ্রামবাংলার সংস্কৃতির এক জীবন্ত প্রতিচ্ছবি।
প্রযুক্তির বহুমাত্রিক ব্যবহারের মাধ্যমে জনতার সামগ্রীক মুক্তি অর্জনে, ‘দক্ষতা জনশক্তি-দেশ গঠনের মূল ভিত্তি’ বাস্তবায়নের আহ্বানে ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ (আইডিইবি) দিনাজপুর জেলা শাখার আয়োজনে শনিবার ‘গণ প্রকৌশল দিবস -২০২৫ ও আইডিইবির ৫৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী’ উপলক্ষে আলোচনা সভা ও বর্ণাঢ্য র্যালি অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সকাল সাড়ে দশটায় দিনাজপুর ইনস্টিটিউট প্রাঙ্গনে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার দিনাজপুর এর উপপরিচালক ও দিনাজপুর পৌরসভার প্রশাসক মো. রিয়াজ উদ্দিন।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দিনাজপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট এর অধ্যক্ষ প্রকৌশলী মো. আব্দুল ওয়াদুদ মন্ডল, আইডিইবির যুগ্ম আহ্বায়ক (রংপুর অঞ্চল) মো. আব্দুছ ছাত্তার শাহ। সম্মানিত অতিথি ছিলেন দিনাজপুর জেলা বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি মো. মোকাররম হোসেন।
ওই আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন আইডিইবি দিনাজপুর জেলা শাখার সহসভাপতি (নির্বাহী প্রকৌশলী-দিনাজপুর পৌরসভা) প্রকৌশলী মো. মিনারুল ইসলাম খান। স্বাগত বক্তব্য রাখেন আইডিইবি দিনাজপুর জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মো. সাজিউল ইসলাম সাজু।
আইডিইবির চাকরিবিষয়ক সম্পাদক (সহকারী প্রকৌশলী-দিনাজপুর সড়ক বিভাগ) প্রকৌশলী মো. শাহানুর রহমান এর সঞ্চালনায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সাবেক সেক্রেটারি প্রকৌশলী মো. আব্দুল আউয়াল, ডিইএব জেলা শাখার সভাপতি মো. মনজুর মোরশেদ সুমন।
ওই র্যালিতে আইডিইবি দিনাজপুর জেলা শাখার বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা, প্রকৌশলী, শিক্ষার্থীছাড়াও দিনাজপুরের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেন।
দেশের অসংখ্য দেওয়ানি ও ফৌজদারি মামলার প্রধান উৎস-ভূমিসংক্রান্ত জটিলতা। এই সমস্যা নিরসনে আইনি কাঠামোর পাশাপাশি প্রয়োজন একটি সচেতন প্রজন্ম। এই ভাবনা থেকেই মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রশাসন এক ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছে: স্কুলের পাঠ্যক্রমে নয়, বরং একটি নিজস্ব পুস্তিকা ‘ভূমিকথা’-র মাধ্যমে ভবিষ্যতের নাগরিকদের ভূমিসচেতন করে তোলার কাজ শুরু করেছে তারা।
সম্প্রতি এই কর্মসূচি ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে এবং দেশের অন্যান্য প্রান্তের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের কাছে মডেল কার্যক্রম হিসাবে অনুসরণীয় হয়ে উঠেছে। ভূমি বিষয়ক মৌলিক জ্ঞান, আইন ও সেবা সম্পর্কে নাগরিকদের সচেতনতা বৃদ্ধির উপর জোর দেওয়া পুস্তিকাটি সাধারণ নাগরিক, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের কাছে অত্যন্ত সহজ ও প্রাঞ্জল ভাষায় ভূমি বিষয়ক মৌলিক ধারণাগুলো তুলে ধরেছে।
জানা যায়, মুন্সীগঞ্জের জেলা প্রশাসক ফাতেমা তুল জান্নাতের ঐকান্তিক ইচ্ছা, পরিকল্পনা ও সঠিক দিক-নির্দেশনায় এই প্রকল্পটি আলোর মুখ দেখেছে। ভূমি ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও নাগরিক অংশগ্রহণ নিশ্চিত করাই ছিল এই বই প্রকাশের মূল লক্ষ্য। বর্তমানে ভূমি বিষয়ক সেবা গ্রহণ পদ্ধতির ডিজিটাল পদ্ধতি চালু থাকলেও সে সম্পর্কে ব্যাপক অজ্ঞতা রয়েছে। অনেকে জানেন না কোন সেবা কোথায় পাওয়া যায়, কীভাবে দলিল তৈরি করতে হয় বা নামজারি করতে হয়। এই অজ্ঞতার কারণে সাধারণ মানুষ প্রতিনিয়ত হয়রানির শিকার হন এবং প্রতারিত হন। এই প্রেক্ষাপটে ‘ভূমিকথা’ সাধারণ নাগরিককে ভূমি বিষয়ক মৌলিক ধারণা, প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস এবং আধুনিক ডিজিটাল সেবাসমূহ সম্পর্কে সচেতন করতে সহায়ক হবে। এটি ভূমি সম্পর্কিত ভুল ধারণা দূর করে ভোগান্তি কমাতে সাহায্য করবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
‘ভূমিকথা’ নামক ৯৪ পৃষ্ঠার পুস্তিকাটি ভূমি সংক্রান্ত মৌলিক জ্ঞান ও সেবা সম্পর্কিত তথ্যসমৃদ্ধ একটি সহায়িকা হিসেবে কাজ করছে।
এটি ভূমি সংক্রান্ত বিদ্যমান ও প্রচলিত সরকারি আইন/বিধিমালা/নীতিমালা/পরিপত্র অনুসরণ করে প্রণীত। পুস্তিকাটিতে ভূমি কেনার আগে কী কী যাচাই করতে হয়, ভূমি রেজিস্ট্রেশনের সময় কী কী কাগজপত্র লাগে, নামজারি কীভাবে করতে হয়, ভূমি উন্নয়ন কর কীভাবে ও কেন পরিশোধ করতে হয়, ভূমি সেবা সংক্রান্ত অফিসসমূহ ও প্রদেয় সেবাসমূহ, ভূমি বিরোধ/মামলা কীভাবে ও কোথায় নিষ্পত্তি হয়, ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন, ২০২০ এবং অনলাইন/ডিজিটাল ভূমি সেবাসমূহ এর মতো গুরুত্বপূর্ণ ও বহুল জিজ্ঞাসিত বিষয়গুলো সহজ ও বাস্তবধর্মী ভাষায় উপস্থাপন করা হয়েছে।
‘ভূমিকথা’র সম্পাদক অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) শরীফ উল্যাহ জানান, উত্তরাধিকার আইন, হিন্দু উত্তরাধিকার আইনের সারসংক্ষেপসহ ভূমি সংক্রান্ত ব্যবহারিক শব্দাবলির (ইংরেজি থেকে বাংলা) পরিচিতিও এই বইয়ে তুলে ধরা হয়েছে। ভূমিবিষয়ক এই জ্ঞান নিয়ে কেউ পেশা গড়তে চাইলে তার জন্যও এটি একটি মূল্যবান পুস্তিকা। জেলা প্রশাসনের পরিকল্পনা অনুযায়ী, প্রাথমিকভাবে জেলার সকল স্কুল-কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মাঝে এটি বিতরণ করা হচ্ছে এবং এটি নিয়ে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সেমিনার ও কুইজ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে। উদ্যোক্তারা আশা করছেন, পর্যায়ক্রমে এই পুস্তিকাটি বাংলাদেশের সকল নাগরিক, শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের হাতে পৌঁছাতে পারলে ভূমি বিষয়ক কার্যক্রম আরও বেশি ফলপ্রসূ হবে।
এদিকে, শনিবার জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে জমকালো আয়োজনে এই কর্মসূচির চূড়ান্ত কুইজ প্রতিযোগিতা ও সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। সকাল ১১টায় লিখিত কুইজ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে চূড়ান্ত পর্ব শুরু হয়। পরে দুপুর ১২টায় দলগত কুইজ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। একক কুইজে সর্বোচ্চ ৪৭ নম্বর পেয়ে প্রথম হওয়া জুবাইদা খাতুন অর্পাকে ২৫ হাজার টাকার প্রাইজবন্ড ও ক্রেস্ট প্রদান করা হয়। আর দ্বিতীয় স্থান অর্জনকারী তৌছিফ আহমেদকে ১৫ হাজার টাকা এবং তৃতীয় স্থান অধিকারী হাবিবা আক্তারকে দেওয়া হয় ১০ হাজার টাকার প্রাইজবন্ড। এছাড়া, চতুর্থ থেকে দশম স্থান অর্জনকারী প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে ৫ হাজার টাকা করে প্রাইজবন্ড দেওয়া হয়।
দলগত চ্যাম্পিয়নকে ১৫ হাজার টাকার প্রাইজবন্ড ও ক্রেস্ট দেওয়া হয়। দ্বিতীয় স্থান অধিকার পেয়েছে ১০ হাজার টাকা এবং তৃতীয় স্থান অধিকারী স্কুল পায় ৫ হাজার টাকার প্রাইজবন্ড ও ক্রেস্ট।
জানা যায়, মুন্সীগঞ্জের জেলা প্রশাসক ফাতেমা তুল জান্নাত চলতি বছরের মে মাসে ‘ভূমিকথা’ নামক ছোট এই পুস্তিকাটি প্রকাশের পরিকল্পনা করেন। ভূমি বিষয়ক মৌলিক জ্ঞান ও ভূমি সেবার গুরুত্বপূর্ণ তথ্যসমৃদ্ধ এই বইটি প্রকাশের পর মুন্সীগঞ্জের ছয়টি উপজেলার প্রায় ১০ হাজার নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীর মধ্যে বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়।