শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগ দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীদের অসহযোগ কর্মসূচি ঘিরে রোববার ঝিনাইদহ, নাটোর, নওগাঁ, নড়াইলসহ সারা দেশে ব্যাপক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এতে ঝিনাইদহে ৩০, নড়াইলে ২০, ঢাকার কেরানীগঞ্জ ৫০ জন আহত হয়েছেন। এ সময় থানায় হামলা, পুলিশ বক্স ভাঙচুর, পোস্ট অফিস, পৌরসভাসহ বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা ও বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুর করা হয়েছে।
বিস্তারিত প্রতিনিধিদের পাঠানো প্রতিবেদন
নাটোর: নাটোরে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সরকারদলীয় নেতা-কর্মীদের ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। রোববার দুপুর সোয়া ১২টার দিকে শহরের ভবানীগঞ্জ মোড় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। আন্দোলনকারীদের পূর্বঘোষণা অনুযায়ী দুপুর ১২টায় শহরের মাদ্রাসা মোড় এলাকায় বিক্ষোভ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেয় তারা। সকাল থেকে অল্প অল্প করে আন্দোলনকারীরা জড়ো হতে শুরু করে। দুপুর সোয়া ১২টার দিকে প্রায় দুই শতাধিক আন্দোলনকারী জমায়েত হয়। এ সময় আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগের নেতা-কর্মীরা তাদের প্রতিহত করতে ধাওয়া দেয়। এ সময় আন্দোলনকারীরাও তাদের ধাওয়া দিলে এবং ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে উভয়পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় বেশ কয়েকজন আন্দোলনকারীকে মারধর করে সরকারদলীয় নেতা-কর্মীরা। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ঘটনাস্থলে পৌঁছালে বিক্ষোভকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়।
অন্যদিকে নাটোরের বাগাতিপাড়ায় বিক্ষোভ মিছিল করেছে বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা। সকাল ১০টার দিকে দয়ারামপুর বাজার এলাকায় শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও সাধারণ জনতা সড়কে জমায়েত হয়ে বিক্ষোভ করে সরকারের পদত্যাগ দাবি করে বিভিন্ন স্লোগান দেয়।
নওগাঁ: নওগাঁয় বিক্ষোভ মিছিল ও সড়ক অবরোধ করেছে আন্দোলনকারীরা। রোববার সকাল ১০টা থেকে শহরের কাজীর মোড়ে জড়ো হতে শুরু করেন বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা। তাদের সঙ্গে অংশ নেন আরও অনেকে। পরে আন্দোলনকারীরা প্রধান সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। এ সময় এক দফা দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দিতে শোনা যায় তাদের। এতে বন্ধ হয়ে যায় প্রধান সড়ক দিয়ে যানচলাচল।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা শহরের সরিষাহাটির মোড়ে আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে অবস্থান নেন। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয় পথচারীদের। বিশেষ করে অটোরিকশা চালকদের। অনেক পথচারীকে হেঁটে বিকল্প রাস্তা দিয়ে যেতে দেখা যায়। মোটকথা পুরো শহরে আতঙ্কের পরিবেশের সৃষ্টি হয়। দোকানপাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। বন্ধ রয়েছে যাত্রীদের চলাচলের জন্য ভারী যানবাহন।
এদিকে সাধারণ পথচারীদের সতর্ক করতে দোকান বন্ধ করে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করছিল দোকানদার আকাশসহ অনেক ব্যবসায়ী। তারা জানান, পথচারীরা যেন কোনো বিপদের সম্মুখীন না হয়, তাই তাদের সতর্ক করে বিকল্প পথে যেতে বলছি।
দুপুরের দিকে পার্টি অফিস থেকে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা মিছিল নিয়ে আন্দোলনকারীদের দিকে আসতে চাইলে কিছু সময়ের জন্য উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। পরে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ সেনাবাহিনীর সদস্যদের সতর্ক অবস্থানের কারণে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যায়।
নওগাঁর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) গাজিউর রহমান বলেন, আন্দোলন ও বিক্ষোভের শুরু থেকেই পুলিশ তাদের সুষ্ঠু ও সুশৃঙ্খলভাবে আন্দোলন করার জন্য বলেছে। তাদের প্রতি পুলিশ সহনশীল আচরণ করছে। শিক্ষার্থীদের যাতে কোনো ক্ষতি না হয় সে জন্য তাদের নিরাপত্তা দিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। মোটকথা শহরে যেকোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা এড়াতে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।
ঝিনাইদহ: ঝিনাইদহে কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়ার সময় পুলিশসহ ৩০ জন আহত হয়েছেন। আন্দোলনকারীরা রোববার বেলা ১১টা থেকে বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত সারা শহরে তাণ্ডব চালায়। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা যোগ দেয়।
শিক্ষার্থীরা সকালে শহরের মুজিব চত্বর থেকে এবং বিএনপি হাটের রাস্তা থেকে মিছিল বের করেন। তারা পায়রা চত্বরে এসে একসঙ্গে মিলিত হয়। মিছিল থেকে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুর, থানায় হামলা, পুলিশ বক্স ভাঙচুর, পৌরসভা, ছবি তোলার সময় সাংবাদিক কাজী আলী আহমেদ লিকুর ওপর হামলা চালায়। এ ছাড়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সফিকুল ইসলাম অপুর বাড়িসহ বিভিন্ন স্থাপনায় ইটপাটকেল ছুড়ে হামলা চালায়। পুলিশ বাঁধা দিলে শুরু হয় ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়া। সে সময় পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড, কাঁদানি গ্যাস ও শর্টগানের গুলি ছোড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। একপর্যায়ে সারা শহর রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এতে পুলিশসহ অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন। ইটের আঘাতে পুলিশের এসআই শরিফুজ্জামানের মাথা ফেটে গেছে। আহতদের মধ্যে ২৪ জনকে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাকিরা বিভিন্ন ক্লিনিকে ভর্তি হয়েছেন। সকাল থেকে যানবাহন চলাচল করেনি। দোকানপাট খোলেনি। পুলিশি নিরাপত্তায় অফিস-আদালত চলেছে এবং উত্তপ্ত পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
নড়াইল: বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের অসহযোগ আন্দোলনের ডাকে রোববার বেলা ১১টায় নড়াইল সদর উপজেলার আউড়িয়া ইউনিয়নের মাদ্রাসা বাজার এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে। মিছিলে বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের কয়েক হাজার নেতা-কর্মী যোগ দেয়। মিছিলটি শহরে প্রবেশের চেষ্টা করলে চিত্রা নদীর শেখ রাসেল সেতুর ওপর উঠলে পুলিশ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা বাধা দেয়। এতে উভয়পক্ষের মধ্যে ইটপাটকেল নিক্ষেপসহ পুলিশ কয়েক রাউন্ড টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে। এতে ২০ জনের মতো আহত হন। এ সময় ঢাকা-বেনাপোল ভায়া নড়াইল মহাসড়কে যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
সংঘর্ষে পুলিশের টিয়ারসেল নিক্ষেপের পাশাপাশি কয়েক রাউন্ড গুলি চালায়। এত আল নাহিয়ান প্রিন্স নামে এক যুবলীগ কর্মী গুলিবিদ্ধ হয়ে সদর হাসপাতালে ভর্তি হন। প্রিন্স নড়াইল পৌরসভার আলাদাতপুর গ্রামের শেখ আবু বক্করের ছেলে।
সীমাখালী গ্রামের প্রত্যক্ষদর্শী মিজান মোল্লা, মিলি খানম, শিমুল হাসান জানান, সেতুর দক্ষিণ পাশেই আমার বাড়ি। অনেক বিএনপি, জামায়াত-শিবিরের ছেলেরা রাস্তার ওপর ইট ভেঙে পুলিশের দিকে ছুড়ে মারছিল। এদের হাতে হ্যান্ড মাইকও ছিল। পানি খেতে চাইলে আমরা তাদের পানি পানের ব্যবস্থা করেছি। ওরা পানি পানের সময় বসে পান করছিল। ওদের কাউকে চিনি না।
প্রিন্স জানান, ‘চিত্রা নদীর উত্তর প্রান্তে পুলিশ এবং ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতা-কর্মীরা অবস্থান নেয়। আর সেতুর দক্ষিণ প্রান্তে বিএনপি-জামায়াত শিবিরের নেতা-কর্মী অবস্থান নেয়। ইটপাটকেল নিক্ষেপের একপর্যায়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে। এ সময় অন্য প্রান্ত থেকে কয়েক রাউন্ড গুলি করা হয়। একটি বুলেট আমার পেটে লেগে বের হয়ে যায়। সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আকাশ ঘোষ রাহুলসহ উভয়পক্ষের ২০ জন আহত হন।
এদিকে ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দুজন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন এমন খবর ভেসে বেড়ালেও এর কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি।
কেরানীগঞ্জ (ঢাকা): ঢাকার কেরানীগঞ্জে আন্দোলনকারী ছাত্রদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের দফায় দফায় সংঘর্ষে মডেল থানার ঘাটারচর এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। এ সময় আন্দোলনকারীরা বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ, আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের বাড়ি, ব্যক্তিগত অফিস ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ এবং কেরানীগঞ্জ মডেল থানা আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে নেতাদের অবরুদ্ধ করে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। এ সময় আওয়ামী লীগের ডজনখানেক নেতা-কর্মী গুরুতর এবং বেশ কিছু আন্দোলনকারী সামান্য আহত হয়। এর আগে (রোববার) সকালে কেরানীগঞ্জ মডেল থানাধীন ঘাটারচর এলাকায় গত ২১ জুলাই কোটা আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত ইস্পাহানি ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থী রিয়াজ নিহত হওয়ার প্রতিবাদে ও অসহযোগ আন্দোলনের সমর্থনে পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে কেরানীগঞ্জের সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা আটি ভাওয়াল উচ্চবিদ্যালয়ের সামনে থেকে মিছিল বের করার চেষ্টা করলে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা তাতে বাধা দেয়। বাধা উপেক্ষা করে সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা মিছিল নিয়ে সামনে অগ্রসর হলে বড় মনোহরিয়া চৌরাস্তা এলাকায় ছাত্রদের মিছিলের ওপর পেছন থেকে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও গুলিবর্ষণ করে। এতে মুহূর্তেই সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা ছাত্রভঙ্গ হয়ে যায়। পরে তারা সংগঠিত হয়ে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ধাওয়া দিলে নেতা-কর্মীরা দিগ্বিদিক ছোটাছুটি করে বিভিন্ন দোকানপাটের ভেতরে আশ্রয় নেয়। এ সময় মডেল থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আবু সিদ্দিক ও তারানগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন ফারুক অবরুদ্ধ হন। পরবর্তী সময়ে স্থানীয়দের সহায়তায় তাদের উদ্ধার করা হয়। পরে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ছয়টি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ ও পাঁচটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে। এ ছাড়া স্থানীয় চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ফারুক এবং আওয়ামী লীগ নেতা আবু সিদ্দিকের বাড়িতে ব্যাপক ভাঙচুর চালিয়ে তাদের ব্যবহৃত গাড়ি পুড়িয়ে দেয়।
এর কিছুক্ষণ পরে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা পুনরায় সংগঠিত হয়ে আবারও ছাত্রদের ধাওয়া দিয়ে ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও গুলিবর্ষণ শুরু করে। এ সময় বিক্ষুব্ধ আন্দোলনকারীরা আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের ধাওয়া দিলে তারা ঘাটারচর এলাকায় কেরানীগঞ্জ মডেল থানা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের ভেতরে আশ্রয় নেয়। পরে বিক্ষুব্ধ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা আওয়ামী লীগের কার্যালয় ঘেরাও করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে এবং প্রধান ফটকে আগুন লাগিয়ে দেয়। অবস্থা বেগতিক দেখে বেশ কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতা ভবনের দ্বিতীয় তলার ছাদের ওপর গিয়ে আশ্রয় নিলে উত্তেজিত শিক্ষার্থীরা ছাদের গেট ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে তাদের গণধোলাই দেয়। এ সময় হুড়োহুড়ি করে ভবনের ভেতর ঢুকতে গিয়ে ও ভবনের ওপর থেকে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের ছোড়া ইটের আঘাতে অন্তত ২০ জন শিক্ষার্থী আহত হয়। পরে ভবনে আটকে থাকা অন্তত ১০-১৫ জন আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী আন্দোলনকারীদের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।
খুলনা: খুলনায় আওয়ামী লীগের অফিসে আগুন দিয়েছে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। রোববার বেলা ১২টার দিকে খুলনার শঙ্খ মার্কেটের জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে তারা আগুন ধরিয়ে দেয়। এ সময় শিক্ষার্থীরা শেখ হাসিনা সরকারের পতন ও জাতীয় সরকার গঠনের লক্ষ্যে নানা রকম স্লোগান দিতে থাকেন। এর আগে সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দলে দলে শিক্ষার্থীরা নগরীর শিববাড়ি মোড়ে জড়ো হতে থাকেন। বর্তমানে ওই মোড়ে প্রায় ৫/৭ হাজারের কাছাকাছি শিক্ষার্থী উপস্থিত রয়েছেন। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে একদল শিক্ষার্থী শিব বাড়ি থেকে মিছিল সহকারে খুলনার আওয়ামী লীগ অফিসের দিকে রওনা হয়ে এ অগ্নিকাণ্ড ঘটায়।
সিলেট: সিলেটের বন্দরবাজারের কোর্ট পয়েন্ট এলাকায় পুলিশের সাথে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ চলছে। বেলা ১২টার দিকে এ সংঘর্ষ শুরু হয়। পুলিশ আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে ব্যাপক টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেণেড ছুঁড়ছে। জানা যায়, অসহযোগ চলাকালে পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী বেলা ১১টার দিকে নগরের কোর্ট পয়েন্ট এলাকায় জড়ো হয় আন্দোলনকারীরা। এতে শিক্ষার্থীদের সাথে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষও যোগ দেন। এই এলাকায়ই জেলা প্রশাসক কার্যালয়, পুলিশ সুপার কার্যালয়, সিটি করপোরেশনসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সরকারি অফিস রয়েছে। আন্দোলনকারীরা অবস্থান নেওয়ার আগে থেকেই এ এলাকায় বিপুল সংখ্যক পুলিশ সাজোয়া যান নিয়ে অবস্থান নেয়। বেলা ১২টার দিকে পুলিশের সাথে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ শুরু হয়। আন্দোলনকারীদের থামাতে পুলিশ টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেণেড ছুঁড়ছে। এক পর্যায়ে পুলিশের বাধা পেয়ে মূল সড়ক ছেড়ে আশপাশের গলিতে অবস্থান নেয় আন্দোলনকারীরা।
মোংলা (বাগেরহাট): মোংলা-খুলনা মহাসড়কের ফয়লা এলাকায় (বাগেরহাটের রামপাল) আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও পুলিশের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়েছে। চলমান ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার মধ্যে একটি পুলিশ ভ্যানে আগুন দেয় আন্দোলনকারীরা। এ সময় সংবাদ সংগ্রহে গিয়ে আহত হয়েছেন বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার সাংবাদিক সবুর রানা ও সুজন মজুমদার।
এদিকে অসহযোগ আন্দোলনের অংশ নিয়ে মোংলা-খুলনা মহাসড়কের ভাগা এলাকায় সকালে বিক্ষোভ মিছিল করে শিক্ষার্থীরা। রবিবার বেলা সাড়ে ১১টায় বের হওয়া মিছিল শেষে মহাসড়কে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা। দুপুর ১২টা পর্যন্ত চলে শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন। পরে পুলিশ ও আন্দোলনকারীরা ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া জড়িয়ে পড়েন।
দিনাজপুর: জাতীয় সংসদের হুইপ ও দিনাজপুর সদর-৩ আসনের সংসদ সদস্য ইকবালুর রহিম এমপি ও বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের বাসা ভাংচুর ও আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে বিক্ষুব্ধরা। এ সময় পুলিশের দুটি পিকআপ ভ্যানে আগুন জ্বালিয়ে দেয় তারা। রাবার বুলেট ও কাঁদলে গ্যাস ছুটছে পুলিশ। সদর হাসপাতাল, জোড়া ব্রীজ, ফুলবাড়ি বাসস্ট্যান্ড, লিলির মোড়, বাহাদুর বাজার, স্টেশন রোড, কাচারী রোড, মডার্ণ মোড়, বুটিবাবুর মোড়, মুন্সীপাড়াসহ সারা শহরে আন্দোলনকারীদের সাথে পুলিশের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া চলে। শত শত রাউন্ড রাবার বুলেট ও টিয়ার শেল ছুড়েছে পুলিশ। এসব ঘটনায় ১০ জন গুলিবিদ্ধসহ আহত হয়েছে অর্ধশত ব্যক্তি।
সকাল ১০টায় দিনাজপুর ফুলবাড়ী বাসস্ট্যান্ডে আন্দোলনকারী জমায়েত হতে শুরু করে। তারা মিছিল নিয়ে শহরের হাসপাতাল মোড়স্থ হুইপ ইকবালুর রহিম এমপি ও বিচারপতি ইনায়েতুর রহিমের বাড়ির দিকে অগ্রসর হতে শুরু করলে পুলিশের সাথে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। দিনাজপুরের পুলিশ সুপার শাহ ইফতেখার আহমেদের নেতৃত্বে পুলিশ আন্দোলনকারীদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করে। দীর্ঘসময় পুলিশের সাথে সংঘর্ষের এক পর্যায়ে আন্দোলনকারীরা হুইপ ও বিচারপতির বাড়ীতে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। তারা বাড়ীতে থাকা কয়েকটি মোটরসাইকেল বের করে বাসার গেটে এনে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। জানা গেছে, ধাওয়া পাল্টা দেওয়ার সময় এবং রাবার বুলেট ও টিয়ার সেল নিক্ষেপ করে। ১০ জনের গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। সারা শহরজুড়ে থেমে থেমে আন্দোলনকারীদের সাথে পুলিশের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে। শহরের মোড়ে মোড়ে এখন আগুন জ্বলছে। এসব ঘটনা চলাকালে শহরের কোথাও সেনা সদস্য বা বিজিবির উপস্থিতি দেখা যায়নি। এর আগে শহরের পলিটেকনিক মোড়ে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ ও গ্রাফিতি অঙ্কন করে শিক্ষার্থীরা। পরে মিছিল নিয়ে শহরের দিকে অগ্রসর হলে এ সংঘর্ষে সুত্রপাত হয়।
নেত্রকোনা: নেত্রকোনায় রোববার সকাল ১০টা থেকে সরকার বিরোধী আন্দোলনকারী ও সরকারের পক্ষের সমর্থক সহ নেতাকর্মীদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়েছে। শহরের সাতপাই, নাগড়া সহ বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। জেলার শ্যামগঞ্জ বাজারের একাধিক বাসিন্দা জানান, নেত্রকোণা-ময়মনসিংহ সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে আন্দোলনকারীরা। এসময় পুলিশের একটি গাড়ি ভাঙচুর করে আন্দোলনকারীরা।
নোয়াখালী: নোয়াখালীতে রোববার সকাল থেকেই জেলা শহর মাইজদীর প্রধান সড়কে অবস্থান নেয় বিক্ষোভকারীরা। এসময় তাদের বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে রাস্তায় আগুন দিতে দেখা যায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টায় এখন কোথাও পুলিশি তৎপরতা দেখা যায়নি। সকাল ১০ টার দিকে নোয়াখালী-৪(সদর-সুবর্ণচর) আসনের সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরী তার অনুসারী নেতা-কর্মীদের নিয়ে পুড়ে যাওয়া জেলা আওয়ামী লীগ অফিস দেখতে আসেন। এসময় বিক্ষোভকারীদের সাথে তাদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এসময় কয়েক রাউন্ড গুলির শব্দ শুনা যায়। একপর্যায়ে এমপি একরাম সহ তার অনুসারীরা ব্যর্থ হয়ে জেলা শহর থেকে চলে যান। শহরেরর সব কটি সড়কে আগুন জ্বালিয়ে অবস্থান করে বিক্ষোভকারীরা।
বেলা সাড়ে ১১টার সময় সেনাবাহিনীর গাড়ী টহল দেওয়ার সময় আন্দোলনকারীরা ‘এ মুহূর্তে দরকার সেনাবাহিনীর সরকার’- স্লোগান দেয়।
কালিয়াকৈর (গাজীপুর): গাজীপুরের কালিয়াকৈরে গতকাল রোববার দিনব্যাপী সড়ক-মহাসড়ক অবরোধ করে বিভিন্ন স্লোগানে বিক্ষোভ মিছিল করেছে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনকারীরা ৩টি পুলিশ বক্স, আওয়ামী লীগের অফিস, থানার সামনে রাখা গাড়িসহ বেশকিছু যানবাহনে অগ্নিসংযোগ করে। এক পর্যায় পুলিশ ও আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মাঝে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। শিক্ষার্থীদের হামলায় ওসিসহ কয়েকজন পুলিশ সদস্য ও পুলিশের গুলিতে শিশুসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হন। থমথমে বিরাজ করছে কালিয়াকৈর।
চুয়াডাঙ্গা: চুয়াডাঙ্গা জেলাজুড়ে কর্মসূচি পালন করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা। এসময় জেলার বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নেয় শিক্ষার্থীরা। কোথাও কোথাও বিক্ষোভ প্রদর্শন করতে গেলে বাধার মুখে পড়েন তারা। ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা তাদের ওপর হামলা চালায় বলে অভিযোগ তোলেন। রোববার সকাল থেকে জেলাজুড়ে এমন পরিস্থিতি বিরাজ করছিল। সকাল থেকে চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুর সড়কের ভালাইপুর বাজারে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন আন্দোলনকারীরা। এসময় তারা একদফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে যান চলাচল বন্ধ করে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। সড়কের দু’পাশে সৃষ্টি হয় যানজট।
একই সাথে শহরের কোর্টমোড় এলাকাতেও বিক্ষোভ করতে গেলে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের বাধার মুখে পড়েন আন্দোলনকারীরা। এসময় তাদের ব্যানার ছিড়ে ফেলা হয়। শহরের হাসপাতাল সড়কে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালানো হয়। দর্শনা শহরে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে আন্দোলনকারীরা বাসস্ট্যান্ডে জড়ো হলে তাদের ওপরেও হামলা চালানো হয় বলে অভিযোগ ওঠে। এছাড়া জেলার বদরগঞ্জ, জীবননগর ও আলমডাঙ্গাতেও সড়কে নামে আন্দোলনকারীরা। এমন পরিস্থিতিতে জেলাজুড়ে আতঙ্ক ও থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।
ভৈরব (কিশোরগঞ্জ): কিশোরগঞ্জের ভৈরবে আন্দোলনকারীদের সাথে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষ চলাকালে পুলিশ প্রায় শতাধিক রাউন্ড রাবার বুলেট ও টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ করে। এসময় কমপক্ষে অর্ধশত আহত হয়। রোববার দুপুর ১২টা থেকে বিকেল সাড়ে ৩ টা পর্যন্ত ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ও স্থানীয় বাসস্ট্যান্ড, জগনাথপুর এবং কালিকাপ্রসাদ এলাকায় এ সংঘর্ষ চলে। এসময় আন্দোলনকারীরা কয়েকটি বাড়ীঘর দোকানপাট ভাংচুর করে। তবে বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে দেখা যায়নি। স্থানীয় বিএনপির কিশোর যুবকদের আন্দোলনে অংশ নিতে দেখা যায়। তারা দুপুর দেড়টার দিকে ভৈরব থানা আক্রমণ করতে চেষ্টা করলে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা মিলে আন্দোলনকারীদের সরিয়ে দেয়। এ সময় পুলিশ কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়ে।
বান্দরবানের থানচি উপজেলায় নাফাখুম ঝরনায় পা পিছলে পড়ে নিখোঁজের ৪৮ ঘণ্টা পর পর্যটকের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। রোববার বেলা ৩টা ৫৫ মিনিটের দিকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়।
নিহত মো. ইকবাল হোসেন (২৫) বাড়ি ঢাকা ডেমরা থানার, সারুলিয়া রসুলনগর গোপ দক্ষিণ গ্রামে।
থানচি ফায়ার সার্ভিস সিভিল ডিফেন্স স্টেশন অফিসার অহিদুর রহমান পর্যটকের লাশ উদ্ধারের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, রোববার বেলা ৩টা ৫৫মিনিটের দিকে পর্যটকের লাশ উদ্ধারের পর উপজেলা সদরে রাত আটটার দিকে নিয়ে আসা হয়। পরবর্তীতে থানচি থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
উল্লেখ্য: উপজেলার দুর্গম নাফাখুম ঝরনায় ভ্রমণে যান ঢাকা ডেমরা এলাকা থেকে আসা ১৭ জনের একটি দল। শুক্রবার বিকেল আনুমানিক ৫টার দিকে সফরসঙ্গীদের সঙ্গে নাফাখুমে যান। সেখানে পা পিছলে পড়ে গেলে পানিতে ডুবে যায়। তখন থেকে আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বলে স্থানীয় যুবক লুমেন খুমী জানিয়েছেন।
তিনি আরো জানান, পর্যটকদের সাথে উপজেলার স্থানীয় গাইড নিয়ে যায়নি।
নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে বিজিবি, পুলিশ ফায়ার সার্ভিস ও ডুবুরি দল উদ্ধার তৎপরতা শুরু করে।
জানা যায়, পর্যটক ভ্রমণের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে নাফাখুম। স্থানীয় গাইড ছাড়াই পর্যটকদের ১৭ সদস্যদের টিমটি নাফাখুম জলপ্রপাত ভ্রমণে যায়।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে থানচি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নাছির উদ্দীন মজুমদার। তিনি বলেন, আইনি প্রক্রিয়া শেষে পর্যটকের লাশ আত্মীয়-স্বজনের নিকট তুলে দেওয়া হবে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও জোবরা গ্রামবাসী সংঘর্ষের মামলা, এলাকায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, অস্ত্রধারণ, চাঁদাবাজিসহ ১৬ মামলার আসামি যুবলীগ নেতা মো. হানিফ (৪০) কে গ্রেফতার করেছে হাটহাজারী মডেল থানা পুলিশ।
রোববার (১৬ নভেম্বর) বিকালে ফতেপুর ইউনিয়নের তার নিজ বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে হাটহাজারী মডেল থানা পুলিশ। হানিফ ফতেপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি ও উপজেলা যুবলীগের সদস্য। সে ৩নং ওয়ার্ডের সাহায্যাপাড়ার লাতু শিকদার বাড়ির নূর মোহাম্মদের ছেলে।
পুলিশ জানায়, হাটহাজারী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কাজী মো. তারেক আজিজের নেতৃত্বে ওসির নেতৃত্বাধীন একটি বিশেষ দল অভিযান চালিয়ে হানিফকে গ্রেফতার করে। অভিযানে এসআই রূপন নাথ, এসআই ফখরুল ইসলাম, এসআই আলী আকবর, এএসআই সজিবসহ সঙ্গীয় ফোর্স অংশ নেয়। ২০১৪ থেকে ২০২৫ পর্যন্ত হাটহাজারী ও রাউজান থানায় হানিফের বিরুদ্ধে হত্যা, মাদক ব্যবসা, অবৈধ দখল, চবি শিক্ষার্থী–গ্রামবাসী সংঘর্ষ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মামলা, সরকারি গাছ বিক্রিসহ মোট ১৬টি মামলা রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
এএসপি কাজী মো. তারেক আজিজ বলেন, “তার বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত ১৬টি মামলা পাওয়া গেছে। আরও মামলা আছে কি না তা যাচাই করা হচ্ছে।”
পঞ্চগড় পৌরসভার ট্রাক টার্মিনালের দুই পাশে জমে থাকা বালি ও ধুলা সরাতে অভিযান চালিয়েছে সড়ক জনপথ (RHD) বিভাগ। রোববার সকাল থেকে সড়ক জনপথের পরিছন্নতাকর্মীরা ট্রাক টার্মিনালের সামনের রাস্তার দুই পাশের বালু অপসারণে কাজ করেন।
সড়কে দীর্ঘদিন ধরে ট্রাক–ট্রাক্টর পার্কিং, পাথর-বালুবাহী গাড়ির চলাচল এবং ভারী মাল পরিবহনের কারণে রাস্তায় বালির স্তর পড়ে থাকে।
এতে মোটরসাইকেলসহ দুই চাকার যানবাহনগুলো প্রায়ই দুর্ঘটনার শিকার হয়। এছাড়া ধুলো-বালির কারণে পথচারী ও যাত্রীদের অসুবিধার পাশাপাশি দৃষ্টিসীমা কমে গিয়ে দুর্ঘটনার ঝুঁকিও বেড়ে যায়।
পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমে অংশ নেওয়া কর্মীরা জানান, নিয়মিতই এখানে বালি জমে থাকে। টার্মিনালের সামনে দিনরাত মালবাহী ট্রাকের ভিড় থাকায় সড়কের ওপর প্রচুর ধুলো ও পাথরের গুড়া ছড়িয়ে পড়ে। এসব অপসারণে সড়ক জনপথ বিভাগ সময়েমতো উদ্যোগ না নিলে দুর্ঘটনার আশঙ্কা আরও বাড়বে।
স্থানীয়রা বলেন, ট্রাক টার্মিনালে পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় সড়কের ওপরই ট্রাক দাঁড়িয়ে থাকে। এতে জ্যাম–দুর্ঘটনার পাশাপাশি রাস্তায় বালির স্তর দ্রুত জমে যায়। পরিষ্কার না করলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতো। সড়ক জনপথ বিভাগের এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন তারা।
সড়ক জনপথ বিভাগের কর্মকর্তারা তন্ময় চক্রবর্তী উপসহকারী প্রকৌশলী সওজ সড়ক উপবিভাগ পঞ্চগড় তিনি জানান, রাস্তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নিয়মিত পরিষ্কার–পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। ট্রাক টার্মিনাল এলাকায় অতিরিক্ত বালি ও ধুলাবালি জমে থাকা একটি বড় সমস্যা- এটি সমাধানে তারা আরও নিয়মিত নজরদারি বাড়াবেন। মো. মোতাহার আলী, উপবিভাগীয় প্রকৌশলী জানান, গত শুক্রবার হতে রাস্তার পাশে জমে থাকা বালি অপসারণ কার্যক্রম চলমান আছে
‘আবর্জনার মতো লাগে’ বলে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার বেলতলী এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বিভাজকে লাগানো অর্ধশত বকুলগাছ কেটে ফেলার ঘটনায় আজমির হোসেন (৩৭) নামে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ থানায় মামলা করেছে।
কুমিল্লা সদর দক্ষিণ মডেল থানার ওসি মোহাম্মদ সেলিম বলেন, গত শনিবার রাতে বেলতলী এলাকায় অভিযান চালিয়ে আজমির হোসেনকে গ্রেপ্তারের পর রোববার কুমিল্লার আদালতে পাঠানো হয়েছে। আজমিরের বাড়ি কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার সাওড়াতলী গ্রামে। তবে তিনি বেলতলী এলাকায় উদ্বোধনের অপেক্ষায় থাকা ১০০ শয্যাবিশিষ্ট শিশু হাসপাতালের ফটকের পাশে থাকেন। সেখানে চা-বিস্কুট বিক্রি করেন।
গাছকাটার বিষয়টি বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়। পরে গত শনিবার রাতেই কুমিল্লা সদর দক্ষিণ মডেল থানার পুলিশ এ ঘটনায় মামলা নিয়ে আজমির হোসেনকে গ্রেপ্তার করে।
কেটে ফেলা বকুলগাছগুলো মহাসড়কের সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য লাগানো হয়েছিল সওজের উদ্যোগে। প্রতিটি গাছের বয়স ছিল ৯ বছরের বেশি।
কুমিল্লা সওজের সড়ক ও জনপথ বিভাগের কার্যসহকারী রুহুল আমিন বাদী হয়ে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ থানায় মামলাটি করেন। তিনি বলেন, বেলতলীতে হাসপাতালের সামনেই একসঙ্গে ১৭টি বকুলগাছ কাটা হয়েছে। অন্য গাছগুলোও আশপাশে কাটা হয়েছে।
মহাসড়কটি ২০১৬ সালে চার লেনে রূপান্তর করার পর সৌন্দর্য বর্ধনের পাশাপাশি এক লেনের গাড়ির হেডলাইটের আলো যাতে অন্য লেনের গাড়ির ওপর না পড়ে, সে জন্য বিভাজকের ওপর রোপণ করা হয়েছিল বিভিন্ন প্রজাতির গাছ। কুমিল্লার দাউদকান্দি থেকে চট্টগ্রাম সিটি গেট পর্যন্ত প্রায় ১৯২ কিলোমিটার এলাকায় মধ্যে মহাসড়কের প্রায় ১৪৩ কিলোমিটার এলাকায় বিভিন্ন প্রজাতির গাছ লাগানো হয়েছে। কুমিল্লার বেলতলী এলাকাটি বকুলগাছে সাজানো ছিল।
কিশোরগঞ্জের ভৈরবে ১ ঘণ্টার অগ্নিকাণ্ডে ৬ পাদুকা কারখানার ২০ লাখ টাকার পাদুকা ও সরঞ্জাম পুড়ে ছাঁই হয়েছে। রোববার বেলা আড়াইটার দিকে ভৈরব শহরের কমলপুর মধ্যপাড়া এলাকায় এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাটি ঘটেছে।
ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা যায়, ভৈরব শহরের কমলপুর মধ্যপাড়ার শেরআলীর বাড়ি এলাকায় একটি টিনসেট হাফ বিল্ডিংয়ে পাদুকা তৈরির কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। পরে ফায়ার সার্ভিসের ৩টি ইউনিট ঘণ্টাব্যাপী চেষ্টার পর অগ্নিকাণ্ড নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। এ সময় সিরাজুল ইসলামের মালিকানাধীন হাতে তৈরি ৪টি পাদুকা কারখানা, বিপ্লব মিয়ার পাদুকা কারখানা, মমুনুজ মিয়ার পাদুকা কারখানায় তৈরিকৃত জুতাসহ, সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতি আগুনে পুড়ে ছাই হয়েছে। অগ্নিকাণ্ডে ৬টি কারখানায় আনুমানিক প্রায় ২০-২৫ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানান, পাদুকা কারখানার মালিকরা।
ভুক্তভোগী পাদুকা কারখানা মালিক শরীফ মিয়া বলেন, দুপুরের দিকে কারখানায় ভেতরে বসে কাজ করছিলাম। হঠাৎ একটা শব্দ হয়ে কারখানায় মুহূর্তের মধ্য আগুন পুগো কারখানায় ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় আমরা দ্রুত কারখানা থেকে নিজের জীবন বাঁচাতে বের হয়ে আসি। বাড়িটির ভেতরে আমাদের ৪টি কারখানাসহ অন্য ২টি মিলে মোট ৬টি পাদুকা ছিল। অগ্নিকাণ্ডে ৬টি কারখানায় তৈরি করা পাদুকা, সরঞ্জাম, যন্ত্রপাতিসহ প্রায় ২০-২৫ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আমার ৪টি কারখানার সব মালামাল পুড়ে ছাই। আগুন আমার সব শেষ করে দিয়েছে।
এ বিষয়ে ভৈরব বাজার নদী ফায়ার স্টেশনের ফায়ার অফিসার মো.আল আমিন জানান, অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে গিয়ে ফায়ার স্টেশনের ৩টি ইউনিট ১ ঘণ্টা চেষ্টার পর পাদুকা কারখানার আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। তবে ৬টি কারখানায় কী পরিমাণ মালামাল ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা তদন্তসাপেক্ষে জানাযাবে বলে তিনি জানান।
কুমিল্লা সদরের কালিরবাজার ইউনিয়নের রায়চোসহ আশপাশের এলাকায় ধানি জমিতে ধান চাষ বাদ দিয়ে এবার শিম চাষে ঝুঁকছেন কৃষকরা। কৃষি অফিসার ও কৃষিবিদদের পরামর্শে স্বল্প খরচে ধানের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি লাভ পাওয়া যাচ্ছে বলে কৃষকের মধ্যে নতুন আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে।
রোববার দিগলগাঁও, হাতিগড়া, রায়চো ও কালিরবাজার কলেজ রোড এলাকায় সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়- ধানি জমিতে কাঠি–কেওড়া পদ্ধতিতে রূপবাণ জাতের শিম চাষ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ফলন আসতে শুরু করেছে।
স্থানীয় কৃষক মাসুম বিল্লাহ ও কামাল হোসেন জানান, ধান চাষে ব্যয় বেশি হলেও লাভ কম। ৩০ শতকের জমিতে ধান চাষে খরচ হয় ২৭–২৮ হাজার টাকা, উৎপাদনের মূল্য দাঁড়ায় সর্বোচ্চ ৩০–৩৩ হাজার টাকা। এ কারণে তারা এবার ধানের বদলে শিম চাষে ঝুঁকেছেন।
তাদের দাবি, পরিবেশ অনুকূল থাকলে খরচ বাদে তিনগুণ লাভ সম্ভব। ইতোমধ্যে আগাম শিম তোলা শুরু হয়েছে। জমিতেই প্রতি কেজি ১২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে, আর শহরে বিক্রি হচ্ছে ১৫০–২০০ টাকা কেজি দরে।
মহানগরীর কোটবাড়ি পাহাড়ি এলাকায় চোখ রাখলেই দেখা যাচ্ছে থোকা থোকা রূপবান শিমের ফুল। কোথাও ঝুলছে বেগুনি রঙের শিম, কোথাও আবার বাজারজাতের প্রস্তুতি চলছে। পাইকারি বাজারে কেজি ১২০–১৮০ টাকা এবং খুচরা বাজারে ১৫০–২০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। দাম বেশি পাওয়ায় কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। কৃষকের কেউ কেউ জানান, টানা বৃষ্টিতে কিছু ফুল ঝরে না গেলে, লাভ আরও বেশি হতো।
জেলায় বাড়ছে শীতকালীন সবজি রুপবান শিমের চাষ কুমিল্লার সদর উপজেলার কালিরবাজার ইউনিয়ন, বুড়িচংয়ের মোকাম, ময়নামতি, ভারেল্লা দক্ষিণ; বরুড়ার আগানগর; চান্দিনার বরকইট এবং দেবিদ্বারের কয়েকটি চর ও অনাবাদি জমিতে এবার রূপবান শিমের চাষ ব্যাপকভাবে বেড়েছে।
কৃষি বিভাগ সূত্র অনুযায়ী জেলায় দুই বছর আগে মাত্র ৬ হেক্টর জমিতে রূপবান শিম চাষ হতো। ধারাবাহিক সাফল্যের কারণে গত বছর তা বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ৯ হেক্টরে এ বছরও একই পরিমাণ জমিতে চাষ করে কৃষকরা লাভবান হয়েছেন।
উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা জানান, কোটবাড়ি পাহাড়ি এলাকায় শিম চাষে অনেক কৃষকই সফলতা পেয়েছেন। ভবিষ্যতে এর চাষ আরও বাড়বে।
কৃষিবিদ হোসেন বলেন, ধান চাষের তুলনায় সবজি উৎপাদনে সরকারের মনোযোগ বেশি এবং সুবিধাও বেশি। রূপবান জাতের শিম শীতকালীন অন্যান্য জাতের চেয়ে তিনগুণ বেশি লাভজনক। কৃষক মাসুম বিল্লাহ বলেন, ৭০–৮০ হাজার টাকা খরচ করলে অনুকূল পরিবেশে প্রায় ২ লাখ টাকা আয় সম্ভব।
পাবনার শুঁটকির ব্যাপক চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে চলনবিল ও গাজনার বিলের পানি শোকানোর পূর্বেই শুঁটকির উৎপাদন শুরু করেছে সুজানগরের মসজিদপাড়া বালুর চর শুঁটকি পল্লীর খামারিরা।
প্রতিদিন এখানে কয়েক টন মাছ রোদে শুকিয়ে তৈরি হয় শুঁটকি। এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত বেড়া-সাঁথিয়া-সুজানগর ও চাটমোহর উপজেলার চলনবিল এলাকার প্রায় তিন হাজার শ্রমিক। কেউ মাছ পরিষ্কার করেন, কেউ শুকানোর জায়গা সাজান, আবার কেউ প্যাকেট জাত করেন। এই শুঁটকি শুধু স্থানীয়দের জীবিকার ভরসা নয়, বৈদেশিক মুদ্রা আয়েরও সম্ভাবনাময় খাত। সুস্বাদু হওয়ায় পাবনার শুঁটকি দেশের চাহিদা মিটিয়ে পার্শ্ববর্তী দেশ যুক্তরাষ্ট্র, বাহরাইন, কুয়েত, ভারত, কাতার, মালয়েশিয়া, ওমান, দুবাই, ইরাক, ইন্দোনেশিয়াসহ অন্তত ২০ দেশে রপ্তানি হচ্ছে এখানকার শুঁটকি। বিভিন্ন নদী-নালা, খাল-বিল থেকে খলশে, পুঁটি, টেংরা, কই, মাগুর, শিং, নলা, টাঁকি, শোল , চাঁন্দা মাছসহ বিভিন্ন প্রজাতির দেশি মাছ কিনে এনে ওই সকল চাতালে শুকানো হয়। তবে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা, শুঁটকি খামারিদের প্রণোদনার মাধ্যমে রপ্তানিমুখী এই শিল্প খাতকে আরও এগিয়ে নেওয়া সম্ভব বলে মনে করেন অনেকেই। অন্যদিকে জেলা মৎস্য অফিসের তথ্যানুযায়ী এ বছর জেলায় শুঁটকি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত হয়েছে ১৫০ টন। তবে চায়না দুয়ারি ও কারেন্ট জালের মাধ্যমে খাল-বিল থেকে দেশীয় মাছ শিকারের কারণে মাছের অভাবে শুঁটকি উৎপাদনের লক্ষমাত্রা পূরণই এখন বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
চাটমোহর উপজেলার চলনবিল এলাকার বোয়াইলমারী ব্রিজ-সংলগ্ন চাতাল, সুজানগরের মসজিদপাড়া বালুরচর শুঁটকি খামার, গাজনাবিল পাড়ে চরদুলাই, সাঁথিয়ার সাতানীর চর, আরাজী গোপিনাথপুর, হুইখালী, কলাগাছী ও রঘুনাথপুর, বেড়া উপজেলার কৈটলার শুঁটকি ব্যবসায়ীরা অস্থায়ী চাতাল নির্মাণ করে শুঁটকি উৎপাদন করে থাকে। জেলা মৎস্য বিভাগের তথ্যানুযায়ী, চলনবিল ও গাজনাবিল পাড়ে গড়ে উঠেছে দুই শতাধিক অস্থায়ী শুঁটকির চাতাল।
জানা যায়, সুস্বাদু হওয়ায় পাবনার শুঁটকির বেশ চাহিদা রয়েছে দেশ-বিদেশে। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে পাবনার শুঁটকি দেশের সবচেয়ে বড় শুঁটকি বাজার নীলফামারী জেলার সৈয়দপুরে ও ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গাসহ বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হয়ে থাকে।
স্থানীয়রা জানান, দেশের বৃহত্তম দুটি বিল এই অঞ্চল দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় এখানে ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে মৎস্যজীবী সম্প্রদায়। তারা সারা বছর এলাকার খাল-বিল ও পুকুর থেকে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করেন। যে কারণে এ অঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠেছে শুঁটকি তৈরির চাতাল।
জানা যায়, বিলের পানি কমতে থাকলে চলনবিল ও গাজনাবিলের বিভিন্ন স্থানে জেলেদের জালে ধরা পড়ে পুঁটি, খলসে, চেলা, ট্যাংরা, কৈ, মাগুর, শিং, বাতাসি, চিংড়ি, নলা, টাঁকি, গুচিবাইম, বোয়াল, ফলি, কাতলা, নওলা, শোল, গজারসহ নানা জাতের মাছ। এসব মাছ কিনে চাতালে শুকিয়ে উৎপাদন করা হয় শুঁটকি। পরে এ শুঁটকি পাঠানো হয় পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ও দেশের অভ্যান্তরে বিভিন্ন স্থানে। দেশের বড় বড় ব্যবসায়ীরা সরাসরি চাতাল থেকে পছন্দের শুঁটকি কিনে নেন। এসব শুঁটকি মানভেদে ‘এ’, ‘বি’ ও ‘সি’ গ্রেডে বাছাই করা হয়। ‘এ’ গ্রেডের (ভালোমানের) শুঁটকি যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, মালয়েশিয়া, সৌদি আরব, কাতার, ওমান, বাহরাইন, দুবাই, ইরাক, কুয়েত, লিবিয়া, ইন্দোনেশিয়ায় রপ্তানি হয়।
এসব দেশে বসবাসরত প্রবাসী বাঙালিদের কাছে চলনবিল ও গাজনার বিলের শুঁটকির কদর রয়েছে। এছাড়া ‘বি’ ও ‘সি’ গ্রেডের শুঁটকি দেশের ভেতরে দিনাজপুর, সৈয়দপুর, রংপুর, রাজশাহী, খুলনা, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রামে উচ্চমূল্যে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া এসব শুঁটকির চাতালে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে জেলার প্রায় ৩ হাজার শ্রমিক। একেকটি চাতালে গড়ে ১০ জন নারী-পুরুষ কাজ করেন। পুরুষ শ্রমিকরা শুঁটকির চাতালে ও নারী শ্রমিকরা মাছ বাছাইয়ের করেন দিন হাজিরায়।
সুজানগর মসজিদপাড়ার শুঁটকি ব্যবসায়ী আজাদ কমিশনার বলেন, গাজনার বিলের প্রচুর প্রকৃতিক মাছ পাওয়া যায়, স্বল্প মুল্যে সেই মাছ প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে শুঁটকি তৈরি করে সৈয়দপুর, ভাঙ্গাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হয়। তবে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো প্রণোদনা না পাওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেন এ শুঁটকি উদ্যোক্তারা।
সুজানগর উপজেলার মৎস্য কর্মকর্তা মো সাইফুল ইসলাম (অতিরিক্ত দায়িত্ব), জানান সুজানগরের পাশ দিয়েই বৃহত্তর পদ্মা নদী বয়ে চলছে, সুজানগরেই গাজনার বিল নামক একটি অনেক বড় বিল রয়েছে, ছোট-বড় ১৬টি বিলের সমন্বয়ে এই গাজনার বিলে প্রচুর প্রকৃতিক মাছ পাওয়া যায়, এখন থেকে উৎপাদিত মাছ পাবনার চাহিদা মিটিয়েও দেশের বাইরে বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হয়।
পাবনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা দীপক কুমার পাল বলেন, ইতোমধ্যেই ৩০ জন শুঁটকি ব্যবসায়ীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে, এ বছর জেলায় শুঁটকি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ১৫০ টন।
কৃষকের সার কালোবাজারে বিক্রি ও পাচারের প্রতিবাদে এবং জড়িত ডিলারের বিএডিসি লাইসেন্স বাতিল ও বিচারের দাবিতে হাতে কোদাল ও বাউকা হাতে নিয়ে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন কৃষকরা। রোববার সকালে দিনাজপুর প্রেসক্লাবের সামনে সদর উপজেলার ৪নং শেখপুরা ইউনিয়নের কৃষকরা এই কর্মসূচী পালন করেন। পরে তারা দিনাজপুর জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে কৃষি উপদেষ্টার নিকট একটি স্মারকলিপি প্রদান করেন।
স্মারকলিপিতে বলা হয়, ৪নং শেখপুরা ইউনিয়নের অর্ন্তগত মাস্তান বাজার এলাকার বিএডিসি সার ডিলার মেসার্স আমেনা ট্রেডার্সের সত্বাধিকারী আবেদুল ইসলাম দীর্ঘদিন ধরেই কৃষকদের সার না দিয়ে কালোবাজারে বিক্রি করে আসছেন। তিনি এই এলাকার জন্য বরাদ্দকৃত সার বিভিন্ন স্থানে পাচার করেন এবং বিক্রি করেন। তার কাছে যাওয়া হলে সার দিতে গরিমসি করেন এবং সার নাই বলে জানিয়ে দেন। ডিলারের এমন কার্যকলাপের কারণে প্রকৃত কৃষকরা সার পাচ্ছেন না এবং তাদের সমস্যা হচ্ছে ও উৎপাদন খরচ বাড়ছে।
গত ১০ নভেম্বর ২০২৫ তারিখে আবেদুল ইসলামের প্রতিষ্ঠান মেসার্স আমেনা ট্রেডার্সের জন্য বরাদ্দকৃত সার ট্রাক্টরযোগে বীরগঞ্জে পাঠানো হচ্ছিল। এ সময় মহারাজা মোড়ে সারভর্তি ট্রাক্টর আটক করে। পরে পুলিশ সার, ট্রাক্টর ও চালকসহ ৪ জনকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। পরে চালক সারগুলো আবেদুল ইসলামের বলে স্বীকার করে। ওই ঘটনায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত জড়িত বিএডিসি সার ডিলার কিংবা তার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।
কৃষকদের সাথে প্রতারণা, বরাদ্দকৃত সার কালোবাজারী ও পাচার করার জন্য বিএডিসির সার ডিলার মেসার্স আমেনা ট্রেডার্সের নামে লাইসেন্স বাতিল এবং জড়িত সত্বাধিকারী আবেদুল ইসলামের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করে বিচার করার দাবি জানান তারা।
কর্মসূচীতে কৃষক সামিদুল ইসলাম, হুসেন আলী, ফজলু রহমান, আবুল হামিদ, শহিদুল ইসলাম, সাঈদ ইসলাম, ওমর ফারুক তালুকদার, আজগার আলী, গোলাব রব্বানীসহ শতাধিক কৃষক অংশগ্রহণ করেন।
এ ব্যাপারে জানতে বারবার মেসার্স আমেনা ট্রেডার্সের সত্বাধিকারী আবেদুল ইসলামকে ফোন দেয়া হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের যোগ্য সব প্রভাষকের সহকারী অধ্যাপক পদে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতির দাবিতে ফরিদপুর সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ চত্বরে কর্মবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন কলেজ শিক্ষকরা। রোববার সকাল থেকে ফরিদপুর সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ চত্বরে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার প্রভাষক পরিষদ সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ ইউনিট, ফরিদপুর সরকারি সারদা সুন্দরী মহিলা কলেজ, ফরিদপুর সরকারি ইয়াসিন কলেজ ইউনিটের আয়োজনে এ কর্মসূচি পালন করেন তারা।
এ সময় বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার প্রভাষক পরিষদ ফরিদপুর জেলা ইউনিটের আহ্বায়ক হাসিব মৃধার সভাপতিত্বে এবং সদস্য সচিব মো. ওসমান মোল্লার সঞ্চালনায় বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার প্রভাষক পরিষদ সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ ইউনিটের আহ্বায়ক মিজানুর রহমান, সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ ইউনিটের সদস্য সচিব মো. এরশাদ শেখ, ফরিদপুর জেলা ইউনিটের প্রচার সম্পাদক বাবুল তালুকদার, সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ ইউনিটের সদস্য শফিকুল ইসলাম সহ ফরিদপুর জেলার সকল সরকারি কলেজের প্রভাষকরা বক্তব্য রাখেন।
এ সময় শিক্ষকরা বলেন, সারাদেশে ৩২ থেকে ৩৭তম ব্যাচের প্রায় আড়াই হাজার প্রভাষক দীর্ঘদিন ধরে পদোন্নতির অপেক্ষায় রয়েছেন। প্রাপ্য পদোন্নতি না পাওয়ায় তাদের মধ্যে গভীর হতাশা দেখা দিয়েছে। প্রশাসনিক জটিলতা ও ফাইলে বিলম্বের কারণে তাদের পদোন্নতির গেজেট ঝুলে আছে। ন্যায্য পদোন্নতির আদেশ জারি না হওয়া পর্যন্ত কর্মবিরতি চলবে বলেও জানান তারা।
তারা বলেন, আমরা দেখে আসছি বিভিন্ন ক্যাডারে পদোন্নতির যোগ্য না হলেও তাদের যোগ্য বানিয়ে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। অনেক অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের ডেকে এনে তাদের পদোন্নতি করানো হচ্ছে। আমাদের শিক্ষা ক্যাডারের আমাদের যৌক্তিক পদোন্নতি সেটা আমাদের দেওয়া হয়নি। আমরা শ্রেণি শিক্ষক, আমরা পাঠদানে ফিরে দিতে চাই। আমরা কর্ম বিরতিতে থাকতে চাই না। তাই আমাদের দাবি একটাই আমরা যেদিন থেকে পদোন্নতি যোগ্য হয়েছি আমাদের ভূতাপেক্ষী পদোন্নতি দিতে হবে।
কক্সবাজারে অবস্থান করছে ১৩ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা শরনার্থী। দীর্ঘ ৮ বছর ধরে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ভারে ভারাক্রান্ত বাংলাদেশে। রোহিঙ্গাদের টেকসই এবং মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাশনের বিকল্প নেই। রোহিঙ্গা সংকট এখন বৈশ্বিক সমস্যা।
কক্সবাজারে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে শরনার্থী কমিশন ও ব্র্যাকের সহায়তায় রোববার কমনওয়েলথ জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন (সিজিএ) আয়োজিত কনফারেন্সে এসব অভিমত প্রকাশ করেন বক্তারা।
কনফারেন্সে বক্তারা বলেন রোহিঙ্গা সংকট কেবল মানবিক নয়- এটি ন্যায়বিচার ও বৈশ্বিক জবাবদিহিতার প্রশ্ন। মিয়ানমারের দায়বদ্ধতা নিশ্চিত ও রোহিঙ্গাদের মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি জোর আহ্বান জানানো হয় এতে।
সিজিএ বাংলাদেশ চাপ্টারের প্রেসিডেন্ট ফরিদা পারভীন চৌধুরীর সভাপতিত্বে আয়োজিত এই কনফারেন্সে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মোস্তাফিজুর রহমান। এতে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাশন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের রোহিঙ্গা সেলের প্রধান মোহাম্মদ কামরুজ্জামান, বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ প্রমুখ।
তিন পর্বে আয়োজিত দিনব্যাপী এই কনফারেন্সে রোহিঙ্গা সংকটের দীর্ঘমেয়াদি সমাধান আর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও চ্যালেঞ্জসহ বিভিন্ন বিষয়ের আলোচনা করেন সিনিয়র সাংবাদিক ও অ্যাসোসিয়েট প্রেসের প্রতিনিধি জুলহাস আলম, প্রফেসর ড. রহমান নাসির উদ্দীন, ড. জাকিয়া সুলতানা, ড. আমেনা মহসিন, আসিফ মুনির সিজিএ বাংলাদেশ চাপ্টারের সেক্রেটারি ওসমান গনি মনসুর, কক্সবাজার জেলা বিএনপির সভাপতি শাহজাহান চৌধুরী, কক্সবাজার জেলা জামায়াত ইসলামের আমীর নুর আহমেদ আনোয়ারী, এনসিপির যুগ্ম সদস্য সচিব সুজা উদ্দীন সুজা প্রমুখ।
রোহিঙ্গা সংকটে দীর্ঘমেয়াদি সমাধান ও সমন্বিত উদ্যোগ গড়ে তোলাসহ রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তা, দক্ষতা উন্নয়ন, সংকট মোকাবেলার বাস্তব অভিজ্ঞতা এবং টেকসই ভবিষ্যতের কৌশল প্রনয়নের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয় এই সম্মেলনে।
সম্মেলনে অংশনেন সাংবাদিক, শিক্ষাবিদ, রাজনৈতিক নেতারা, সরকারি-বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধি, রোহিঙ্গা কমিউনিটি লিডার, আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থার কর্মকর্তা এবং রোহিঙ্গা ইস্যুর সাথে জড়িত বিভিন্ন স্টেকহোল্ডাররা।
চট্টগ্রামের লোহাগাড়ায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে সাকিবুল হাসান (২৪) নামক এক বাইকারের মৃত্য হয়েছে। এ ঘটনায় বাইকে থাকা সোহাগ নামে আরও এক আরোহী গুরুতর আহত হয়েছেন। রোববার দুপুরের দিকে লোহাগাড়া উপজেলার চুনতি ইউনিয়নে চট্টগ্রাম- কক্সবাজার মহাসড়কের জাঙ্গালিয়া এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত বাইকার সাকিবুল হাসান নাটোর জেলার সিংড়া উপজেলার পারসাথলী শেখপাড়ার বাসিন্দা মো. আতাউর রহমানের পুত্র।
সফরসঙ্গী মেঘলা জানান, তারা জনপ্রিয় কনটেন্ট ক্রিয়েটর ফারজানা বিথীসহ ১৫ জন নারী-পুরুষ মিলে ৩ দিন আগে রাজশাহী থেকে কক্সবাজার গিয়েছিলেন, আজ (রোববার) সকালে কক্সবাজার থেকে ফেরার পথে চট্টগ্রামের লোহাগাড়ার চুনতি ইউনিয়নের জাঙ্গালিয়া নামক স্থানে মহাসড়কের উপর বসানো গতিরোধকে গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে বাইকে থাকা দুজন সড়কের পাশে থাকে সেতুর নিচে পড়ে যায়। স্থানীয়দের সহায়তায় আমরা তাদের উদ্ধার করে লোহাগাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক সাকিবকে মৃত ঘোষণা করেন।
লোহাগাড়া ট্রমা সেন্টারের জরুরি বিভাগে থাকা চিকিৎসক ডা. ইজাজ আহমেদ শামীম বলেন, সড়ক দুর্ঘটনায় দুজন বাইকারকে এখানে আনা হয়েছে তাদের মধ্যে সাকিবুল হাসান নামে একজনকে হাসপাতালে আনার আগেই মৃত্যু হয়েছে। গুরুতর আহত সোহাগ নামের একজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
দোহাজারী হাইওয়ে থানার এস আই আব্দুস সাত্তার বলেন, সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত বাইকারের লাশ লোহাগাড়া ট্রমা সেন্টারে রাখা হয়েছে, আইনি প্রক্রিয়া শেষে লাশ পরিবারের নিকট হস্তান্তর করা হবে।
শীতের আগমন শুরু হলেই শ্যামনগর শুরু হয় খেজুর গাছ পরিচর্যা। শীত মৌসুমে খেজুর গাছের রস সংগ্রহ করে তা থেকে তৈরি হয় গুড়। ইতোমধ্যেই রস সংগ্রহের জন্য খেজুর গাছ কাটায় (পরিচর্যা) ব্যস্ত সময় পার করছেন শ্যামনগরের গাছিরা। গাছ কাটার ১০-১২ দিন পর থেকেই শুরু হবে রস সংগ্রহ।
শ্যামনগর বেশির ভাগ গ্রামের পথ দিয়ে হেঁটে গেলে চোখে পড়ে খেজুর গাছ। জমির প্রতিটি আইলে খেজুর গাছ লাগিয়েছেন গ্রামের কৃষকরা। বিশেষ করে উপজেলা সদরের নকিপুর, ভুরুলিয়া, কাশিমাড়ী, আটুলিয়া, নুরনগর, বংশিপুর গ্রামে খেজুরের গাছ বেশি চোখে পড়ে। শীত মৌসুমে এসব গ্রামে খেজুরের রস বিক্রি ও গুড় তৈরির কাজ চলে পুরো দমে।
এখন চলছে তারই প্রস্তুতি। নওয়াবেকী গ্রামের শাহিন আলমের খেজুর গাছ আছে ১২০টি। একই গ্রামের রমজান আলীর রয়েছে ৮০টি। রস সংগ্রহের জন্য তারা এখন খেজুর গাছের আগা ঝোড়া, চাঁচ দেওয়া ও নলি মারায় ব্যস্ত।
তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শীত মৌসুমের পুরো চার মাস তারা বাড়িতে খেজুরের গুড় ও পাটালি তৈরি করে। ওই সময় তাদের প্রতিদিন আয় হয় ১ থেকে ২ হাজার টাকা। তাদের মতে, কোন কৃষকের যদি ২০০ খেজুর গাছ থাকে তাহলে পুরো বছরের সংসার ভালোভাবে চলে যাবে। শ্যামনগর সদরের নকিপুর ও নওয়াবেকী গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, গ্রামের প্রায় সব জমিতেই আছে একটি-দুটি এমনকি ১০-১২টি পর্যন্ত খেজুর গাছ। কোন কোন জমির চারপাশ খেজুর গাছ দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে।
জমিতে চাষাবাদ আর খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ- এভাবেই চলছে অনেক কৃষকের সংসার। খেজুর গাছ অনেকের সচ্ছলতাও এনে দিয়েছে। কৃষকরা জানান, খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহের জন্য বিশেষ পদ্ধতিতে গাছের আগা কাটা হয়। আগা কাটা শ্রমিকও পাওয়া যায় গ্রামে। নির্ধারিত মজুরি নিয়ে তারা গাছ কাটেন সকাল ৮টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত। শীত মৌসুমে গ্রামের কৃষকদের খেজুর গাছ কেটে সচ্ছলভাবে তাদের সংসার চলে।
আটুলিয়া গ্রামের রমজান আলী জানান, ‘শীত মৌসুমে ঢাকাসহ সারাদেশের ব্যাপারীরা শ্যামনগর কালিগঞ্জ বালিয়াডাঙ্গা গুড়ের হাটে আসেন। তারা এসব হাট থেকে খেজুরের গুড় ও পাটালি কিনে সারাদেশে সরবরাহ করেন। অনেকেই বালিয়াডাঙ্গা বাজারের খেজুরের গুড় ও পাটালি দেশের বাইরেও পাঠান।’
সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক এস এম এনামুল হক জানান, সাতক্ষীরা জেলায় প্রায় ২ লাখ খেজুর গাছ আছে। এ জেলার খেজুরের গুড়ের সুনাম দেশজোড়া। শীত মৌসুমে খেজুরের গুড় ও পাটালি বিক্রি করে বাড়তি আয় করেন জেলার চাষিরা।
রাত তখন পৌনে বারোটা। ময়মনসিংহ নগরীর কাশর এলাকায় রিকশা চালিয়ে যাচ্ছিলেন এক চালক। চারপাশে তখন নীরবতা। ওই সময় শুনতে পান অস্ফুষ্ট স্বরে আর্তনাদ। প্রথমে কিছুটা ভয় পান। ঠিক তখনি আরও একজন চালক খালি রিকশা নিয়ে এ পথ দিয়ে যেতে থাকেন। আর্তনাদ শুনে তিনিও থামেন। পরে দুইজন আর্তনাদের উৎস খুঁজে বের করেন। দেখা যায় একটি ঢাকনা দেওয়া ম্যানহোলের ভেরত থেকে আসছে এ আওয়াজ। দুইজন মিলে একটি শক্ত বাঁশ সংগ্রহ করে ম্যানহোলের ঢাকা খুলে বুঝতে পারেন এটা একটা নারীর আর্তনাদ। কিছুক্ষণের মধ্যে আরও লোক চলে আসে। পরে ঢাকনা সরিয়ে ওই নারীকে জীবিত উদ্ধার করা হয়।
গত শনিবার রাত পৌনে বারোটায় ঘটে এ ঘটনা। এ ঘটনায় নগরীর কাশর, গলগণ্ডা ও জেলাখানা রোড এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। উদ্ধার হওয়া নারী (৩৮) মানসিক ভারসাম্যহীন। তিনি ময়মনসিংহ নগরের গল্ডা এলাকার বাসিন্দা। গত বুধবার সকাল তিনি বাড়ি থেকে বের হন। পরে রাতে আর ফিরেননি। ফলে নারীর বাবা বিভিন্ন এলাকায় ও আত্মীয়দের কাছে খোঁজ নেন। কোথায় খোঁজ না পেয়ে গত বৃহস্পতিবার ময়মনসিংহ কতোয়ালি মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।
রোববার সকালে কাশর এলাকায় গিয়ে কথা হয়, স্থানীয় বাসিন্দা ও উদ্ধারকারী দুইজন রিকশা চালকের একজন মো. রোমান মিয়ার সঙ্গে। এলাকার বাসিন্দারা জানান, ঢাকনা দেওয়া যে ম্যানহোলের নিচ থেকে ওই নারীকে উদ্ধার করা হয়েছে তা থেকে আনুমাকি ৫০ ফুট দূরের অপর একটি ম্যানহোলের ঢাকা ছিল না অনেক দিন ধরেই। ধারণা করা হচ্ছে ওই নারী ঢাকনা না থাকা ম্যানহোনে পরে যান দুই দিন কি তিন আগে। পরে ড্রেনের নিচ দিয়ে কোন ভাবে ঢাকনা দেওয়া ম্যানহোলের নিচে চলে যান।
উদ্ধার হওয়া নারী হয়তো পড়ে যাওয়ার পর থেকেই বাঁচার জন্য আকুতি জানাতে থাকেন। কিন্তু এলাকাটি ময়মনসিংহ-টঙ্গাইল মহাসড়কের খুব কাছে হওয়ায় সারাক্ষণই গাড়ির শব্দ থাকে।
এছাড়া ম্যানহোলের কাছে দোকান-পাট ও একটি ওয়ার্কশপ থাকায় শব্দের কারণে নারীর বাঁচার আকুতি শোনা যায়নি। রাত পৌনে বারোটার সময় এলাকা নীবর হওয়ায় তখন তার বাঁচার জন্য আকুতি কানে আসে।
কাশর এলাকাটি ময়মনসিংহ নগরের ২ নাম্বার ওয়ার্ডের অন্তর্ভুক্ত। বিভিন্ন সময়ই ম্যানহোলের ঢাকা চুরি হয়ে যায়। মাদকাসক্তরা এ চুরির সঙ্গে জড়িত থাকে। একবার ঢাকনা চুরি হলে সিটি করপোরেশন কতৃপক্ষ দীর্ঘ দিন আর নতুন ঢাকনা স্থাপন করে না। যে কারনে প্রায় সময়ই এলাকার বাসিন্দারা ম্যানহোলে পরে যাওয়ার শঙ্কায় ভুগেন।
স্থানীয় বাসিন্দারা আরও জানান, রাতে ওই নারীকে উদ্ধারের পর প্রথমে পরিচয় জানা যায়নি। নারী কোন কথা বলতে পারেননি। তার সারা শরীর ফ্যাকাশে ছিল। পরে স্থানীয় বাসিন্দা মোহাম্মদ মাসুদ ও তার স্ত্রী নারীকে তাদের বাসায় নিয়ে যায়। মোহাম্মদ মাসুদ পেশায় ব্যবসায়ী। তিনি দৈনিক বাংলাকে জানান, বাসায় নেওয়ার পর আমার স্ত্রী তাকে প্রথমে গরম পানি দিয়ে গোসল করিয়ে গরম পোশাক পরান। তারপর তাকে কিছু খেতে বলা হলেও তিনি খাননি। তিনি মানসিক ভাবে ভারসাম্যহীন হওয়ায় নিজের পরিচয়ও বলতে পারেননি। কিছুক্ষণ পর অপর একজন তাকে চিনতে পারেন। এরপর ওই নারীকে ময়মনসিংহ নগরীর জেলখানা রোডে তার বাবার কাছে নিয়ে যাওয়ায় হয়।
দুপুরে জেলাখানা রোডে ওই বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, উদ্ধার হওয়া নারী লেপ গায়ে দিয়ে শুয়ে আছেন। তার সঙ্গে কথা বলতে চাইলেও তিনি কথা বলার মতো অবস্থায় ছিলেন না। নারীর বাবা জানান, তার মেয়ে উচ্চশিক্ষিত। তবে ২০১৩ সালে একটা দুর্ঘটনার পর থেকে মানসিকভাবে কিছুটা ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন। এরপর থেকে প্রায় সারা দিনের জন্য বাইরে চলে যান। তবে রাতে ঠিকই বাড়িতে ফিরে আসেন। গত বুধবার রাতে না ফেরায় বৃহস্পতিবার থানায় জিডি করেন। তিনি অসুস্থ থাকায় কবে কিভাবে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে সে ব্যাপারে এখনো কিছু জানা যায়নি।
এ নিয়ে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের ২ নাম্বার ওয়ার্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত কাউন্সিলর পরিবেশ অধিদপ্তরের ময়মনসিংহ জেলা কার্যালয়ের অতিরিক্ত পরিচালক নাজিয়া উদ্দিন দৈনিক বাংলাকে বলেন, ওই এলাকার ম্যানহোলের ঢাকনা না থাকার বিষয়টি কেউ আমাকে জানায়নি। এ দুর্ঘটনার খবরটি কেউ জানায়নি। আমি খোঁজ নিয়ে জানব।