শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগ দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীদের অসহযোগ কর্মসূচি ঘিরে রোববার ঝিনাইদহ, নাটোর, নওগাঁ, নড়াইলসহ সারা দেশে ব্যাপক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এতে ঝিনাইদহে ৩০, নড়াইলে ২০, ঢাকার কেরানীগঞ্জ ৫০ জন আহত হয়েছেন। এ সময় থানায় হামলা, পুলিশ বক্স ভাঙচুর, পোস্ট অফিস, পৌরসভাসহ বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা ও বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুর করা হয়েছে।
বিস্তারিত প্রতিনিধিদের পাঠানো প্রতিবেদন
নাটোর: নাটোরে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সরকারদলীয় নেতা-কর্মীদের ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। রোববার দুপুর সোয়া ১২টার দিকে শহরের ভবানীগঞ্জ মোড় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। আন্দোলনকারীদের পূর্বঘোষণা অনুযায়ী দুপুর ১২টায় শহরের মাদ্রাসা মোড় এলাকায় বিক্ষোভ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেয় তারা। সকাল থেকে অল্প অল্প করে আন্দোলনকারীরা জড়ো হতে শুরু করে। দুপুর সোয়া ১২টার দিকে প্রায় দুই শতাধিক আন্দোলনকারী জমায়েত হয়। এ সময় আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগের নেতা-কর্মীরা তাদের প্রতিহত করতে ধাওয়া দেয়। এ সময় আন্দোলনকারীরাও তাদের ধাওয়া দিলে এবং ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে উভয়পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় বেশ কয়েকজন আন্দোলনকারীকে মারধর করে সরকারদলীয় নেতা-কর্মীরা। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ঘটনাস্থলে পৌঁছালে বিক্ষোভকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়।
অন্যদিকে নাটোরের বাগাতিপাড়ায় বিক্ষোভ মিছিল করেছে বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা। সকাল ১০টার দিকে দয়ারামপুর বাজার এলাকায় শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও সাধারণ জনতা সড়কে জমায়েত হয়ে বিক্ষোভ করে সরকারের পদত্যাগ দাবি করে বিভিন্ন স্লোগান দেয়।
নওগাঁ: নওগাঁয় বিক্ষোভ মিছিল ও সড়ক অবরোধ করেছে আন্দোলনকারীরা। রোববার সকাল ১০টা থেকে শহরের কাজীর মোড়ে জড়ো হতে শুরু করেন বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা। তাদের সঙ্গে অংশ নেন আরও অনেকে। পরে আন্দোলনকারীরা প্রধান সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। এ সময় এক দফা দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দিতে শোনা যায় তাদের। এতে বন্ধ হয়ে যায় প্রধান সড়ক দিয়ে যানচলাচল।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা শহরের সরিষাহাটির মোড়ে আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে অবস্থান নেন। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয় পথচারীদের। বিশেষ করে অটোরিকশা চালকদের। অনেক পথচারীকে হেঁটে বিকল্প রাস্তা দিয়ে যেতে দেখা যায়। মোটকথা পুরো শহরে আতঙ্কের পরিবেশের সৃষ্টি হয়। দোকানপাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। বন্ধ রয়েছে যাত্রীদের চলাচলের জন্য ভারী যানবাহন।
এদিকে সাধারণ পথচারীদের সতর্ক করতে দোকান বন্ধ করে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করছিল দোকানদার আকাশসহ অনেক ব্যবসায়ী। তারা জানান, পথচারীরা যেন কোনো বিপদের সম্মুখীন না হয়, তাই তাদের সতর্ক করে বিকল্প পথে যেতে বলছি।
দুপুরের দিকে পার্টি অফিস থেকে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা মিছিল নিয়ে আন্দোলনকারীদের দিকে আসতে চাইলে কিছু সময়ের জন্য উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। পরে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ সেনাবাহিনীর সদস্যদের সতর্ক অবস্থানের কারণে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যায়।
নওগাঁর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) গাজিউর রহমান বলেন, আন্দোলন ও বিক্ষোভের শুরু থেকেই পুলিশ তাদের সুষ্ঠু ও সুশৃঙ্খলভাবে আন্দোলন করার জন্য বলেছে। তাদের প্রতি পুলিশ সহনশীল আচরণ করছে। শিক্ষার্থীদের যাতে কোনো ক্ষতি না হয় সে জন্য তাদের নিরাপত্তা দিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। মোটকথা শহরে যেকোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা এড়াতে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।
ঝিনাইদহ: ঝিনাইদহে কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়ার সময় পুলিশসহ ৩০ জন আহত হয়েছেন। আন্দোলনকারীরা রোববার বেলা ১১টা থেকে বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত সারা শহরে তাণ্ডব চালায়। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা যোগ দেয়।
শিক্ষার্থীরা সকালে শহরের মুজিব চত্বর থেকে এবং বিএনপি হাটের রাস্তা থেকে মিছিল বের করেন। তারা পায়রা চত্বরে এসে একসঙ্গে মিলিত হয়। মিছিল থেকে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুর, থানায় হামলা, পুলিশ বক্স ভাঙচুর, পৌরসভা, ছবি তোলার সময় সাংবাদিক কাজী আলী আহমেদ লিকুর ওপর হামলা চালায়। এ ছাড়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সফিকুল ইসলাম অপুর বাড়িসহ বিভিন্ন স্থাপনায় ইটপাটকেল ছুড়ে হামলা চালায়। পুলিশ বাঁধা দিলে শুরু হয় ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়া। সে সময় পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড, কাঁদানি গ্যাস ও শর্টগানের গুলি ছোড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। একপর্যায়ে সারা শহর রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এতে পুলিশসহ অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন। ইটের আঘাতে পুলিশের এসআই শরিফুজ্জামানের মাথা ফেটে গেছে। আহতদের মধ্যে ২৪ জনকে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাকিরা বিভিন্ন ক্লিনিকে ভর্তি হয়েছেন। সকাল থেকে যানবাহন চলাচল করেনি। দোকানপাট খোলেনি। পুলিশি নিরাপত্তায় অফিস-আদালত চলেছে এবং উত্তপ্ত পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
নড়াইল: বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের অসহযোগ আন্দোলনের ডাকে রোববার বেলা ১১টায় নড়াইল সদর উপজেলার আউড়িয়া ইউনিয়নের মাদ্রাসা বাজার এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে। মিছিলে বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের কয়েক হাজার নেতা-কর্মী যোগ দেয়। মিছিলটি শহরে প্রবেশের চেষ্টা করলে চিত্রা নদীর শেখ রাসেল সেতুর ওপর উঠলে পুলিশ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা বাধা দেয়। এতে উভয়পক্ষের মধ্যে ইটপাটকেল নিক্ষেপসহ পুলিশ কয়েক রাউন্ড টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে। এতে ২০ জনের মতো আহত হন। এ সময় ঢাকা-বেনাপোল ভায়া নড়াইল মহাসড়কে যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
সংঘর্ষে পুলিশের টিয়ারসেল নিক্ষেপের পাশাপাশি কয়েক রাউন্ড গুলি চালায়। এত আল নাহিয়ান প্রিন্স নামে এক যুবলীগ কর্মী গুলিবিদ্ধ হয়ে সদর হাসপাতালে ভর্তি হন। প্রিন্স নড়াইল পৌরসভার আলাদাতপুর গ্রামের শেখ আবু বক্করের ছেলে।
সীমাখালী গ্রামের প্রত্যক্ষদর্শী মিজান মোল্লা, মিলি খানম, শিমুল হাসান জানান, সেতুর দক্ষিণ পাশেই আমার বাড়ি। অনেক বিএনপি, জামায়াত-শিবিরের ছেলেরা রাস্তার ওপর ইট ভেঙে পুলিশের দিকে ছুড়ে মারছিল। এদের হাতে হ্যান্ড মাইকও ছিল। পানি খেতে চাইলে আমরা তাদের পানি পানের ব্যবস্থা করেছি। ওরা পানি পানের সময় বসে পান করছিল। ওদের কাউকে চিনি না।
প্রিন্স জানান, ‘চিত্রা নদীর উত্তর প্রান্তে পুলিশ এবং ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতা-কর্মীরা অবস্থান নেয়। আর সেতুর দক্ষিণ প্রান্তে বিএনপি-জামায়াত শিবিরের নেতা-কর্মী অবস্থান নেয়। ইটপাটকেল নিক্ষেপের একপর্যায়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে। এ সময় অন্য প্রান্ত থেকে কয়েক রাউন্ড গুলি করা হয়। একটি বুলেট আমার পেটে লেগে বের হয়ে যায়। সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আকাশ ঘোষ রাহুলসহ উভয়পক্ষের ২০ জন আহত হন।
এদিকে ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দুজন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন এমন খবর ভেসে বেড়ালেও এর কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি।
কেরানীগঞ্জ (ঢাকা): ঢাকার কেরানীগঞ্জে আন্দোলনকারী ছাত্রদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের দফায় দফায় সংঘর্ষে মডেল থানার ঘাটারচর এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। এ সময় আন্দোলনকারীরা বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ, আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের বাড়ি, ব্যক্তিগত অফিস ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ এবং কেরানীগঞ্জ মডেল থানা আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে নেতাদের অবরুদ্ধ করে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। এ সময় আওয়ামী লীগের ডজনখানেক নেতা-কর্মী গুরুতর এবং বেশ কিছু আন্দোলনকারী সামান্য আহত হয়। এর আগে (রোববার) সকালে কেরানীগঞ্জ মডেল থানাধীন ঘাটারচর এলাকায় গত ২১ জুলাই কোটা আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত ইস্পাহানি ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থী রিয়াজ নিহত হওয়ার প্রতিবাদে ও অসহযোগ আন্দোলনের সমর্থনে পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে কেরানীগঞ্জের সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা আটি ভাওয়াল উচ্চবিদ্যালয়ের সামনে থেকে মিছিল বের করার চেষ্টা করলে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা তাতে বাধা দেয়। বাধা উপেক্ষা করে সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা মিছিল নিয়ে সামনে অগ্রসর হলে বড় মনোহরিয়া চৌরাস্তা এলাকায় ছাত্রদের মিছিলের ওপর পেছন থেকে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও গুলিবর্ষণ করে। এতে মুহূর্তেই সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা ছাত্রভঙ্গ হয়ে যায়। পরে তারা সংগঠিত হয়ে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ধাওয়া দিলে নেতা-কর্মীরা দিগ্বিদিক ছোটাছুটি করে বিভিন্ন দোকানপাটের ভেতরে আশ্রয় নেয়। এ সময় মডেল থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আবু সিদ্দিক ও তারানগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন ফারুক অবরুদ্ধ হন। পরবর্তী সময়ে স্থানীয়দের সহায়তায় তাদের উদ্ধার করা হয়। পরে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ছয়টি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ ও পাঁচটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে। এ ছাড়া স্থানীয় চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ফারুক এবং আওয়ামী লীগ নেতা আবু সিদ্দিকের বাড়িতে ব্যাপক ভাঙচুর চালিয়ে তাদের ব্যবহৃত গাড়ি পুড়িয়ে দেয়।
এর কিছুক্ষণ পরে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা পুনরায় সংগঠিত হয়ে আবারও ছাত্রদের ধাওয়া দিয়ে ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও গুলিবর্ষণ শুরু করে। এ সময় বিক্ষুব্ধ আন্দোলনকারীরা আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের ধাওয়া দিলে তারা ঘাটারচর এলাকায় কেরানীগঞ্জ মডেল থানা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের ভেতরে আশ্রয় নেয়। পরে বিক্ষুব্ধ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা আওয়ামী লীগের কার্যালয় ঘেরাও করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে এবং প্রধান ফটকে আগুন লাগিয়ে দেয়। অবস্থা বেগতিক দেখে বেশ কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতা ভবনের দ্বিতীয় তলার ছাদের ওপর গিয়ে আশ্রয় নিলে উত্তেজিত শিক্ষার্থীরা ছাদের গেট ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে তাদের গণধোলাই দেয়। এ সময় হুড়োহুড়ি করে ভবনের ভেতর ঢুকতে গিয়ে ও ভবনের ওপর থেকে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের ছোড়া ইটের আঘাতে অন্তত ২০ জন শিক্ষার্থী আহত হয়। পরে ভবনে আটকে থাকা অন্তত ১০-১৫ জন আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী আন্দোলনকারীদের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।
খুলনা: খুলনায় আওয়ামী লীগের অফিসে আগুন দিয়েছে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। রোববার বেলা ১২টার দিকে খুলনার শঙ্খ মার্কেটের জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে তারা আগুন ধরিয়ে দেয়। এ সময় শিক্ষার্থীরা শেখ হাসিনা সরকারের পতন ও জাতীয় সরকার গঠনের লক্ষ্যে নানা রকম স্লোগান দিতে থাকেন। এর আগে সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দলে দলে শিক্ষার্থীরা নগরীর শিববাড়ি মোড়ে জড়ো হতে থাকেন। বর্তমানে ওই মোড়ে প্রায় ৫/৭ হাজারের কাছাকাছি শিক্ষার্থী উপস্থিত রয়েছেন। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে একদল শিক্ষার্থী শিব বাড়ি থেকে মিছিল সহকারে খুলনার আওয়ামী লীগ অফিসের দিকে রওনা হয়ে এ অগ্নিকাণ্ড ঘটায়।
সিলেট: সিলেটের বন্দরবাজারের কোর্ট পয়েন্ট এলাকায় পুলিশের সাথে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ চলছে। বেলা ১২টার দিকে এ সংঘর্ষ শুরু হয়। পুলিশ আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে ব্যাপক টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেণেড ছুঁড়ছে। জানা যায়, অসহযোগ চলাকালে পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী বেলা ১১টার দিকে নগরের কোর্ট পয়েন্ট এলাকায় জড়ো হয় আন্দোলনকারীরা। এতে শিক্ষার্থীদের সাথে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষও যোগ দেন। এই এলাকায়ই জেলা প্রশাসক কার্যালয়, পুলিশ সুপার কার্যালয়, সিটি করপোরেশনসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সরকারি অফিস রয়েছে। আন্দোলনকারীরা অবস্থান নেওয়ার আগে থেকেই এ এলাকায় বিপুল সংখ্যক পুলিশ সাজোয়া যান নিয়ে অবস্থান নেয়। বেলা ১২টার দিকে পুলিশের সাথে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ শুরু হয়। আন্দোলনকারীদের থামাতে পুলিশ টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেণেড ছুঁড়ছে। এক পর্যায়ে পুলিশের বাধা পেয়ে মূল সড়ক ছেড়ে আশপাশের গলিতে অবস্থান নেয় আন্দোলনকারীরা।
মোংলা (বাগেরহাট): মোংলা-খুলনা মহাসড়কের ফয়লা এলাকায় (বাগেরহাটের রামপাল) আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও পুলিশের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়েছে। চলমান ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার মধ্যে একটি পুলিশ ভ্যানে আগুন দেয় আন্দোলনকারীরা। এ সময় সংবাদ সংগ্রহে গিয়ে আহত হয়েছেন বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার সাংবাদিক সবুর রানা ও সুজন মজুমদার।
এদিকে অসহযোগ আন্দোলনের অংশ নিয়ে মোংলা-খুলনা মহাসড়কের ভাগা এলাকায় সকালে বিক্ষোভ মিছিল করে শিক্ষার্থীরা। রবিবার বেলা সাড়ে ১১টায় বের হওয়া মিছিল শেষে মহাসড়কে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা। দুপুর ১২টা পর্যন্ত চলে শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন। পরে পুলিশ ও আন্দোলনকারীরা ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া জড়িয়ে পড়েন।
দিনাজপুর: জাতীয় সংসদের হুইপ ও দিনাজপুর সদর-৩ আসনের সংসদ সদস্য ইকবালুর রহিম এমপি ও বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের বাসা ভাংচুর ও আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে বিক্ষুব্ধরা। এ সময় পুলিশের দুটি পিকআপ ভ্যানে আগুন জ্বালিয়ে দেয় তারা। রাবার বুলেট ও কাঁদলে গ্যাস ছুটছে পুলিশ। সদর হাসপাতাল, জোড়া ব্রীজ, ফুলবাড়ি বাসস্ট্যান্ড, লিলির মোড়, বাহাদুর বাজার, স্টেশন রোড, কাচারী রোড, মডার্ণ মোড়, বুটিবাবুর মোড়, মুন্সীপাড়াসহ সারা শহরে আন্দোলনকারীদের সাথে পুলিশের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া চলে। শত শত রাউন্ড রাবার বুলেট ও টিয়ার শেল ছুড়েছে পুলিশ। এসব ঘটনায় ১০ জন গুলিবিদ্ধসহ আহত হয়েছে অর্ধশত ব্যক্তি।
সকাল ১০টায় দিনাজপুর ফুলবাড়ী বাসস্ট্যান্ডে আন্দোলনকারী জমায়েত হতে শুরু করে। তারা মিছিল নিয়ে শহরের হাসপাতাল মোড়স্থ হুইপ ইকবালুর রহিম এমপি ও বিচারপতি ইনায়েতুর রহিমের বাড়ির দিকে অগ্রসর হতে শুরু করলে পুলিশের সাথে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। দিনাজপুরের পুলিশ সুপার শাহ ইফতেখার আহমেদের নেতৃত্বে পুলিশ আন্দোলনকারীদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করে। দীর্ঘসময় পুলিশের সাথে সংঘর্ষের এক পর্যায়ে আন্দোলনকারীরা হুইপ ও বিচারপতির বাড়ীতে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। তারা বাড়ীতে থাকা কয়েকটি মোটরসাইকেল বের করে বাসার গেটে এনে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। জানা গেছে, ধাওয়া পাল্টা দেওয়ার সময় এবং রাবার বুলেট ও টিয়ার সেল নিক্ষেপ করে। ১০ জনের গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। সারা শহরজুড়ে থেমে থেমে আন্দোলনকারীদের সাথে পুলিশের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে। শহরের মোড়ে মোড়ে এখন আগুন জ্বলছে। এসব ঘটনা চলাকালে শহরের কোথাও সেনা সদস্য বা বিজিবির উপস্থিতি দেখা যায়নি। এর আগে শহরের পলিটেকনিক মোড়ে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ ও গ্রাফিতি অঙ্কন করে শিক্ষার্থীরা। পরে মিছিল নিয়ে শহরের দিকে অগ্রসর হলে এ সংঘর্ষে সুত্রপাত হয়।
নেত্রকোনা: নেত্রকোনায় রোববার সকাল ১০টা থেকে সরকার বিরোধী আন্দোলনকারী ও সরকারের পক্ষের সমর্থক সহ নেতাকর্মীদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়েছে। শহরের সাতপাই, নাগড়া সহ বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। জেলার শ্যামগঞ্জ বাজারের একাধিক বাসিন্দা জানান, নেত্রকোণা-ময়মনসিংহ সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে আন্দোলনকারীরা। এসময় পুলিশের একটি গাড়ি ভাঙচুর করে আন্দোলনকারীরা।
নোয়াখালী: নোয়াখালীতে রোববার সকাল থেকেই জেলা শহর মাইজদীর প্রধান সড়কে অবস্থান নেয় বিক্ষোভকারীরা। এসময় তাদের বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে রাস্তায় আগুন দিতে দেখা যায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টায় এখন কোথাও পুলিশি তৎপরতা দেখা যায়নি। সকাল ১০ টার দিকে নোয়াখালী-৪(সদর-সুবর্ণচর) আসনের সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরী তার অনুসারী নেতা-কর্মীদের নিয়ে পুড়ে যাওয়া জেলা আওয়ামী লীগ অফিস দেখতে আসেন। এসময় বিক্ষোভকারীদের সাথে তাদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এসময় কয়েক রাউন্ড গুলির শব্দ শুনা যায়। একপর্যায়ে এমপি একরাম সহ তার অনুসারীরা ব্যর্থ হয়ে জেলা শহর থেকে চলে যান। শহরেরর সব কটি সড়কে আগুন জ্বালিয়ে অবস্থান করে বিক্ষোভকারীরা।
বেলা সাড়ে ১১টার সময় সেনাবাহিনীর গাড়ী টহল দেওয়ার সময় আন্দোলনকারীরা ‘এ মুহূর্তে দরকার সেনাবাহিনীর সরকার’- স্লোগান দেয়।
কালিয়াকৈর (গাজীপুর): গাজীপুরের কালিয়াকৈরে গতকাল রোববার দিনব্যাপী সড়ক-মহাসড়ক অবরোধ করে বিভিন্ন স্লোগানে বিক্ষোভ মিছিল করেছে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনকারীরা ৩টি পুলিশ বক্স, আওয়ামী লীগের অফিস, থানার সামনে রাখা গাড়িসহ বেশকিছু যানবাহনে অগ্নিসংযোগ করে। এক পর্যায় পুলিশ ও আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মাঝে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। শিক্ষার্থীদের হামলায় ওসিসহ কয়েকজন পুলিশ সদস্য ও পুলিশের গুলিতে শিশুসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হন। থমথমে বিরাজ করছে কালিয়াকৈর।
চুয়াডাঙ্গা: চুয়াডাঙ্গা জেলাজুড়ে কর্মসূচি পালন করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা। এসময় জেলার বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নেয় শিক্ষার্থীরা। কোথাও কোথাও বিক্ষোভ প্রদর্শন করতে গেলে বাধার মুখে পড়েন তারা। ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা তাদের ওপর হামলা চালায় বলে অভিযোগ তোলেন। রোববার সকাল থেকে জেলাজুড়ে এমন পরিস্থিতি বিরাজ করছিল। সকাল থেকে চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুর সড়কের ভালাইপুর বাজারে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন আন্দোলনকারীরা। এসময় তারা একদফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে যান চলাচল বন্ধ করে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। সড়কের দু’পাশে সৃষ্টি হয় যানজট।
একই সাথে শহরের কোর্টমোড় এলাকাতেও বিক্ষোভ করতে গেলে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের বাধার মুখে পড়েন আন্দোলনকারীরা। এসময় তাদের ব্যানার ছিড়ে ফেলা হয়। শহরের হাসপাতাল সড়কে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালানো হয়। দর্শনা শহরে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে আন্দোলনকারীরা বাসস্ট্যান্ডে জড়ো হলে তাদের ওপরেও হামলা চালানো হয় বলে অভিযোগ ওঠে। এছাড়া জেলার বদরগঞ্জ, জীবননগর ও আলমডাঙ্গাতেও সড়কে নামে আন্দোলনকারীরা। এমন পরিস্থিতিতে জেলাজুড়ে আতঙ্ক ও থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।
ভৈরব (কিশোরগঞ্জ): কিশোরগঞ্জের ভৈরবে আন্দোলনকারীদের সাথে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষ চলাকালে পুলিশ প্রায় শতাধিক রাউন্ড রাবার বুলেট ও টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ করে। এসময় কমপক্ষে অর্ধশত আহত হয়। রোববার দুপুর ১২টা থেকে বিকেল সাড়ে ৩ টা পর্যন্ত ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ও স্থানীয় বাসস্ট্যান্ড, জগনাথপুর এবং কালিকাপ্রসাদ এলাকায় এ সংঘর্ষ চলে। এসময় আন্দোলনকারীরা কয়েকটি বাড়ীঘর দোকানপাট ভাংচুর করে। তবে বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে দেখা যায়নি। স্থানীয় বিএনপির কিশোর যুবকদের আন্দোলনে অংশ নিতে দেখা যায়। তারা দুপুর দেড়টার দিকে ভৈরব থানা আক্রমণ করতে চেষ্টা করলে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা মিলে আন্দোলনকারীদের সরিয়ে দেয়। এ সময় পুলিশ কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়ে।
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষ্যে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের সাথে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সংলাপ চলছে।
বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) সকালে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনের সম্মেলন কক্ষে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিনের সভাপতিত্বে নিবন্ধিত ১২টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে প্রথম দফায় ছয়টির সাথে এই সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত কমিশন যে ছয়টি দলের সাথে মতবিনিময় করেছে সেসব দল হল- লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপি, বাংলাদেশ কংগ্রেস, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ।
একই দিনে বেলা ২টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট-বিএনএফ ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন-বিএনএম এর সাথে মতবিনিময় করবে ইসি।
এতে চারজন নির্বাচন কমিশনার ও ইসি সচিবলায়ের সিনিয়র সচিব উপস্থিত থাকছেন।
ইসি সচিবলায়ের পরিচালক (জনসংযোগ) ও তথ্য প্রদানকারী কর্মকর্তা মো. রুহুল আমিন মল্লিক জানান, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মত বিশাল কর্মযজ্ঞ যথাযথভাবে সম্পাদনে রাজনৈতিক দল, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, বুদ্ধিজীবী, নাগরিক সমাজ, সাংবাদিক, নির্বাচন বিশেষজ্ঞ, পর্যবেক্ষক, নারীনেত্রীসহ সংশ্লিষ্ট সকলের মতামত, পরামর্শ ও সহযোগিতা প্রয়োজন। এ প্রেক্ষাপটে, নির্বাচন কমিশন সংশ্লিষ্ট সকলের সাথে সংলাপ অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিবৃন্দের সুচিন্তিত মতামত ও পরামর্শ বিষয়ক এই মতবিনিময় অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
রাজনৈতিক দলের সাথে সংলাপের বিষয়ে সম্প্রতি ইসি সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও), রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণবিধিতে আনা পরিবর্তন এবং একটি সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের জন্য তাদের সহযোগিতা বিষয়ে আলোচনা করাই এই সংলাপের মূল উদ্দেশ্য।’
নির্বাচন কমিশন ইতোমধ্যে গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব, নির্বাচন বিশেষজ্ঞ, নারী নেত্রী, শিক্ষাবিদ ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে ধারাবাহিক মতবিনিময় করেছে। এসব মতবিনিময় থেকে পাওয়া পরামর্শ ও প্রস্তাব আচরণবিধি চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে বলে কমিশন সূত্রে জানা গেছে।
রাজনৈতিক অস্থিরতার আশঙ্কায় ঢাকার উপকণ্ঠ নারায়ণগঞ্জ জেলাজুড়ে নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করেছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের ‘ঢাকা লকডাউন’ কর্মসূচিকে ঘিরে জেলার সড়ক-মহাসড়কজুড়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
নাশকতা প্রস্তুতির অভিযোগে গত ৩৬ ঘণ্টায় বিশেষ অভিযানে ২৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
জেলা পুলিশ সূত্র জানায়, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে নারায়ণগঞ্জের গুরুত্বপূর্ণ ২৬টি স্থানে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে।
জেলা শহর থেকে শুরু করে ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট ও আঞ্চলিক সড়কগুলোয় চলছে কড়া তল্লাশি। একই সঙ্গে পোশাকি পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারি ও টহল কার্যক্রমও বাড়ানো হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) তারেক আল মেহেদী বলেন, ‘এটা যেহেতু পূর্বঘোষিত কর্মসূচি, তাই আমরা ১০ তারিখ থেকেই বিশেষ অভিযান শুরু করেছি। নিরাপত্তা জোরদারে রিজার্ভ ফোর্স থেকেও ৫০ জন সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
২৬টি চেকপোস্টের পাশাপাশি মোবাইল টিম ও যৌথ বাহিনীর টহল অব্যাহত থাকবে।’
পুলিশ সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, ১০ নভেম্বর থেকে জেলাজুড়ে ধারাবাহিক অভিযান ও ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় আরো ১৩ জনকে আটক করা হয়েছে। কয়েকটি স্থানে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের নাশকতার চেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়েছে পুলিশ।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে হতাহতের ঘটনায় দায়ের করা মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার রায় ঘোষণার তারিখ ১৩ নভেম্বর নির্ধারণ করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। রায় ঘিরে ‘ঢাকা লকডাউন’ কর্মসূচির ডাক দেয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ।
রাজবাড়ী জেলার কালুখালীতে রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়কে দাঁড়িয়ে থাকা একটি বাস আরেক বাসের ধাক্কায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে যায়। এতে উভয় বাসের অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। আহতদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতাল ভর্তি করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) সকাল ১০টার দিকে রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়কের বোয়ালিয়া ইউনিয়নের ভবানিপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
জানা গেছে, নিউ রাজন নামের একটি লোকাল বাস রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়কের বোয়ালিয়া ইউনিয়নের ভবানিপুর এলাকায় দাঁড়িয়ে যাত্রী তুলছিল। এমন সময় কুষ্টিয়া থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী এসবি পরিবহনের বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা রাজন পরিবহন নামের লোকাল বাসকে পেছন দিক থেকে ধাক্কা দেয়। এতে লোকাল বাসটি রাস্তার পাশের খাদে পড়ে যায়। এ ঘটনায় অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। আহতদের স্থানীয় কালুখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
পাংশা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নেহাল উদ্দিন বলেন, দুর্ঘটনায় আহত ১১ জনের মধ্যে ৮ জন প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন, আর ৩ জন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। বর্তমানে সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।
দেশ বিরোধী ষড়যন্ত্রে ও দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করার উদ্দেশ্য লিপ্ত গণহত্যাকারীদের ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে কিশোরগঞ্জের ভৈরবে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে সর্বস্তরের জনগণ।
আজ বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১ টায় ভৈরব পৌর শহীদ মিনার চত্বরে ভৈরবের সর্বস্তরের জনগণের ব্যানারে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয় ।
সমাবেশে বক্তরা তাদের বক্তব্যে বলেন, দেশের শান্তি বিনষ্ট ও নির্বাচনকে ভাংচাল করতেই ফ্যাসিস্ট দল অনলাইন মাধ্যমে নাশকতা সৃষ্টির করছে। নিরীহ জনগণের সম্পত্তি আগুনে পুড়ে ধ্বংস করছে।
দেশ বিরোধী ষড়যন্ত্র এবং দেশকে অস্থিতিশীল করতে চাইলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। পলাতক আওয়ামী দোষরদের লকডাউন কর্মসূচি প্রতিহত করতে আমরা ভৈরবের জনগণ মাঠে আছি কোন ষড়যন্ত্রকারী দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করতে দেয়া হবে না।
সমাবেশে বক্তব্যে রাখেন, আজহারুল ইসলাম রিদম, মাওলানা সাইফুল ইসলাম শাহরিয়ার, জাহিদুল হক , মহিউদ্দিন, শেখ মহিউদ্দিন চিশতী প্রমূখ।
কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের ‘লকডাউন’ কর্মসূচি ও জুলাই গণহত্যায় অভিযুক্ত ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায়ের দিন ঘোষণাকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে সতর্ক রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সব ইইনিট। সম্ভাব্য নাশকতা প্রতিরোধে শুরু হয়েছে সাঁড়াশি অভিযান, বাড়ানো হয়েছে গোয়েন্দা নজরদারি ও টহল। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি), র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটলিয়ন (র্যাব), বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও সেনাবাহিনীকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায়।
এদিকে গত কয়েকদিন ধরে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় ককটেল বিস্ফোরণ, পেট্রোল বোমা হামলা ও যানবাহনে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটছে। এসব ঘটনায় জনমনে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে। যার ফলে গতকাল বুধবার রাজধানী ঢাকায় যানবাহনের উপস্থিতি ছিল কম। বুধবার সন্ধ্যার দিকে রাজধানীর ধোলাইপাড়ে একটি বাসে আগুন লাগার খবর পাওয়া যায়। এর আগে এদিন দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রাজধানীর মিরপুরে সনি সিনেমা হলের সামনে একটি বাসে আগুন লাগার খবর পাওয়া যায়। অন্যদিকে গত মঙ্গলবার দিবাগত রাতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগরে গ্রামীণ ব্যাংকে পেট্রল ঢেলে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তথ্যমতে, ১ থেকে ১১ নভেম্বর পর্যন্ত ঢাকায় ১৭টি ককটেল বিস্ফোরণ ও ৯টি যানবাহনে অগ্নিসংযোগ ঘটেছে। এসব ঘটনায় ১৭টি মামলা দায়ের ও ৫০ জন গ্রেপ্তারের তথ্য জানায় ডিএমপি।
অন্যদিকে ফায়ার সার্ভিস সূত্র জানায়, গত সোমবার দিবাগত রাত থেকে গত মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত অন্তত ১২টি যানবাহনে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ময়মনসিংহের ফুলবাড়ি এলাকায় আলম পরিবহন নামে একটি বাসে আগুনের ঘটনায় ঘুমন্ত অবস্থায় এক হেলপারের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।
রাজধানীর রায়েরবাগ, যাত্রাবাড়ী ও সোনারগাঁও জনপদ, ধানমন্ডি সায়েন্সল্যাব, মিরপুর, বাড্ডা ও বসুন্ধরার ১০০ ফিট এলাকায় যানবাহনে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। যদিও ঢাকার এসব ঘটনায় কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
এর আগে বাংলামোটরে এনসিপি কার্যালয়ের সামনে ককটেল বিস্ফোরণে তিনজন আহত হন। মিরপুরে গ্রামীণ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের সামনে একইভাবে ককটেল ছুড়ে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। একইদিন ভোরে মোহাম্মদপুরে সরকারের একজন উপদেষ্টার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ককটেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এছাড়া গত মঙ্গলবার মধ্যরাতে মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরি স্কুলের গেটে দুটি পেট্রোলবোমা নিক্ষেপ করেছে দুর্বৃত্তরা।
গত মঙ্গলবার ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী সাংবাদিকদের বলেন, ‘কার্যক্রম নিষিদ্ধ একটি রাজনৈতিক দল ও তাদের সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা আত্মগোপনে থেকে চোরাগুপ্তা মিছিল ও নাশকতার অপচেষ্টা করছে। অক্টোবর থেকে ১১ নভেম্বর পর্যন্ত রাজধানীতে ১৪টি ঝটিকা মিছিল হয়েছে এবং ৫৫২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’
কমিশনার বলেন, ‘এদের বেশিরভাগই ঢাকার বাইরে থেকে এসেছে। টাকার বিনিময়ে তারা মিছিলে অংশ নেয়, তারপর ঢাকার বাইরে চলে যায়।’
রায় ঘোষণার দিন ঘিরে বাড়তি সতর্কতা: আজ বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ শেখ হাসিনার মামলার রায় ঘোষণার দিন নির্ধারণ করা হতে পারে। পুলিশ বলছে, ওই দিন আদালতের কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত করতে নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ সকাল-সন্ধ্যা লকডাউন কর্মসূচি দিয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় রাজধানীতে একাধিক ককটেল বিস্ফোরণ ও বাসে আগুনের ঘটনা ঘটছে। নাশকতা ঠেকাতে হোটেল, মেস ও গেস্টহাউসে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে এবং কোনো অপরিচিত ব্যক্তিকে আশ্রয় দেওয়ার আগে পরিচয় যাচাইয়ের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ডিএমপির সদর দপ্তর জানিয়েছে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। যেকোনো ধরনের উসকানিমূলক কর্মকাণ্ড ঠেকাতে সর্বোচ্চ সতর্কতায় রয়েছে পুলিশ।
পুলিশ সদরদপ্তর সব থানাকে নির্দেশ দিয়েছে যেন বিভিন্ন জেলা থেকে রাজধানীতে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা ঢোকতে না পারে। এ জন্য গণপরিবহন, রেল ও নৌপথেও নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান শফিকুল ইসলাম বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি গোষ্ঠী নাশকতার হুমকি দিচ্ছে। আমরা বিষয়টি আমলে নিয়ে মাঠে আছি। কেউ যদি নাশকতার চেষ্টা করে, কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক উইং কমান্ডার এমজেডএম ইন্তেখাব চৌধুরী বলেন, ১৩ নভেম্বর কেন্দ্র করে আমরা সাইবার মনিটরিং, টহল এবং গোয়েন্দা তৎপরতা জোরদার করেছি। এটি গুজব হোক বা বাস্তব পরিকল্পনা- আমরা প্রতিটি তথ্য যাচাই-বাছাই করছি। দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা রক্ষায় আমরা সতর্ক আছি।
পুলিশ সদরদপ্তরের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) এএইচএম শাহাদাত হোসেন বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে আগাম তথ্যের ভিত্তিতে গোয়েন্দা তৎপরতা চলছে। কেউ অবৈধ কর্মকাণ্ড, নাশকতা বা সংঘর্ষের চেষ্টা করলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
র্যাব ও পুলিশ উভয় সূত্রই মনে করছে, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের এখন বড় ধরনের সংঘাত সৃষ্টির সক্ষমতা নেই, তবে তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভ্রান্তি ও উসকানিমূলক প্রচারণা চালাচ্ছে।
তবে গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দলটির বিদেশে পালিয়ে থাকা কয়েকজন নেতা অনলাইনে ‘লকডাউন’ ঘিরে নাশকতা উসকে দেওয়ার চেষ্টা করছে। দেশের ভেতরে তাদের সাংগঠনিক নেটওয়ার্ক দুর্বল হলেও, বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণার মাধ্যমে আতঙ্ক সৃষ্টির চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
এদিকে আজ বৃহস্পতিবার ঢাকাসহ সারাদেশে সব দোকান, বাণিজ্য এবং শপিংমল খোলা থাকবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ দোকান ব্যবসায়ী মালিক সমিতি। বুধবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সমিতির যৌথ সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দেশের সব বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান নিয়মিত কার্যক্রম চালাবে। তবে একই দিনে কার্যক্রম নিষিদ্ধ একটি রাজনৈতিক দল সারাদেশে লকডাউন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। এ কারণে বিভিন্ন স্থানে বাস ও গাড়িতে অগ্নিসংযোগ এবং ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আওয়ামী লীগের ঘোষিত ‘লকডাউন’ কর্মসূচি মূলত রাজনৈতিক প্রতীকী প্রতিবাদ হলেও এর আড়ালে থাকতে পারে বিভ্রান্তি সৃষ্টির কৌশল। তাদের মতে, আওয়ামী লীগের লকডাউন কোনো বাস্তব আন্দোলন নয়, বরং এটা তথ্যযুদ্ধের অংশ। সরকার ও নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর মনোযোগ সরিয়ে দেওয়ার জন্য এমন প্রচারণা চালানো হচ্ছে। দেশের অভ্যন্তরে এখন তাদের সংগঠিত কোনো শক্তি নেই।
তবে, গুজব বা অনলাইন প্রচারণা সমাজে অস্থিরতা তৈরি করতে পারে। তাই গোয়েন্দা নজরদারি ও জনসচেতনতা দুটোই এখন সমান জরুরি বলে মত তাদের।
ফ্যাসিবাদীদের গণপ্রতিরোধের ডাক; কথিত ‘লকডাউন’ ঘিরে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের এ ধরনের নাশকতা ও উসকানিমূলক কর্মকাণ্ড প্রতিরোধে ফ্যাসিবাদবিরোধী বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন নানা কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।
এরই মধ্যে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা ১৩ নভেম্বর রাজপথে থাকার কথা জানিয়েছেন। ঢাকায় জাতীয়তাবাদী যুবদল আওয়ামী লীগের নাশকতার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিলও করেছে।
এছাড়া ‘জুলাই ঐক্য’ ১৩ নভেম্বর দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অবস্থান কর্মসূচি পালন করবে। আগের দিন ১২ নভেম্বর ‘শেখ হাসিনার ফাঁসি ও জুলাই সনদ বাস্তবায়নের দাবিতে’ ঢাকা, চট্টগ্রাম, বরিশাল ও সিলেটে বিক্ষোভ মিছিল করবে তারা।
সহিংসতা ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবিলার পরামর্শ: অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাসে আগুন ও ধর্মীয় স্থাপনাসহ কয়েকটি স্থানে বিস্ফোরণের ঘটনা সাধারণ মানুষের মধ্যে ভয় ও আতঙ্ক তৈরি করছে। যারা অতীতে অগ্নিসন্ত্রাসের বিরুদ্ধে বক্তব্য-বিবৃতিবাজি করেছে, তারাই এখন সে ধরনের নাশকতায় জড়িত হওয়ায় জনমনে তাদের অতীতের অবস্থান নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষক ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ ড. তৌহিদুল হক বলেন, রাজধানীতে কয়েকটি বাসে আগুন এবং ধর্মীয় স্থাপনাসহ কয়েকটি স্থানে ককটেল বিস্ফোরণ সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে। হাজিরা দিতে এসে দিনে-দুপুরে সবার সামনে একজন ব্যক্তি সন্ত্রাসীদের গুলিতে খুন হলেন, যা সাধারণ মানুষকে আতঙ্কিত করে। অতীতে সন্ত্রাসীরা নানা ধরনের সহিংসতা সৃষ্টি করে মানুষকে আতঙ্কিত করে এবং রাষ্ট্রীয় কাঠামোকে জিম্মি করে দাবি আদায়ের সহিংস পন্থা বেছে নিয়েছে বলে উদাহরণ আছে, যা অত্যন্ত মর্মান্তিক ও বর্বরোচিত।
এই পরিস্থিতি যত বেশি সৃষ্টি হবে সাধারণ মানুষ তত বেশি আতঙ্কিত থাকবে উল্লেখ করে তৌহিদুল হক বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। অভিযুক্ত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনতে রাজনৈতিক পরিচয়সহ কোনো ধরনের বিবেচনা গণ্য না করা।
নির্বাচন ও নির্বাচনকালীন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার প্রশ্নে সমন্বিতভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন জানিয়ে ড. তৌহিদুল হক বলেন, সাধারণ মানুষকে নিজের নিরাপত্তার প্রশ্নে সতর্ক থাকা এবং কোনো ধরনের সংঘাত-সহিংসতার উপস্থিতি লক্ষ্য করলে একত্র হয়ে মোকাবিলা করার জন্য উদ্বুদ্ধ করা প্রয়োজন। জনসম্পৃক্ত রাজনৈতিক দায়িত্বশীল ভূমিকা সব প্রকার সংঘাত-সহিংসতা থেকে পরিত্রাণের ও প্রতিরোধের শক্তিশালী উপায়।
ঢাকা ও আশপাশের জেলায় ১৪ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন
এদিকে রাজধানী ঢাকা ও আশপাশের জেলার সার্বিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে ১৪ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ১৩ নভেম্বর (বৃহস্পতিবার) ঢাকায় লকডাউন কর্মসূচি ঘোষণার পর থেকে রাজধানী ও এর আশপাশ এলাকায় ককটেল বিস্ফোরণ এবং যানবাহনে অগ্নিসংযোগের ঘটনার মতো অপতৎপরতা রোধে ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে এই বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। বুধবার বিজিবি সদর দপ্তরের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরীফুল ইসলাম জানান, রাজধানী ঢাকা ও আশপাশের জেলার সার্বিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।
এর মধ্যে রাজধানীসহ ঢাকায় ১২ প্লাটুন ও আশপাশের জেলায় দুই প্লাটুনসহ মোট ১৪ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশনার আগ পর্যন্ত বিজিবি মোতায়েন থাকবে বলে জানা গেছে।
গত বছরের জুলাইয়ে গণ-অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির রায়ের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে আগামী ১৩ নভেম্বর। এই রায়কে ঘিরে রাজধানী ঢাকায় ‘লকডাউন’ কর্মসূচি দিয়েছে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ।
ঢাকায় পুলিশের গাড়িতে আগুন নিছক দুর্ঘটনা: ডিএমপি
এদিকে রাজধানীর কাকরাইল মোড়-সংলগ্ন রমনা থানার সামনে পুলিশের গাড়িতে আগুন নিছক দুর্ঘটনা বলে জানিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া ও পাবলিক রিলেশনস বিভাগের উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বুধবার এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়, রাজধানীর কাকরাইল মোড়-সংলগ্ন রমনা থানার সামনে পুলিশের একটি সিঙ্গেল কেবিন পিকআপ যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বিকল হলে তা মেরামতের জন্য মেকানিক আনা হয়। পরবর্তীতে গাড়িটি সারানোর জন্য বারবার চেষ্টা করেও চলাচল উপযোগী করা সম্ভব হয়নি। এক পর্যায়ে গাড়ির ইঞ্জিন গরম হয়ে গাড়িটিতে আগুন ধরে গেলে মেকানিক সামান্য আহত হন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিষয়টি অনেকে ভিন্নভাবে প্রচার করছেন, যা আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, প্রকৃতপক্ষে এটা নিছক একটি দুর্ঘটনা।
চরাঞ্চলে এগ্রোইকোলজিক্যাল ফামিং পদ্ধতিতে মিশ্র ও আন্তঃফসল চাষের মাধ্যামে নিরাপদ সবজি উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ শীর্ষক ভ্যালুচেইন উপপ্রকল্পের আওতায় ফরিদপুরে কৃষকের মাঝে উন্নত মানের সোলার প্যানেল ও সেচ মেশিন বিতরণ করেছে একেকে।
বুধবার ফরিদপুর শহরের টেপাখোলা আমরা কাজ করি- একেকের প্রধান কার্যালয়ে চরাঞ্চলের নিরাপদ সবজি উৎপাদনকারী কৃষকের মাঝে ২০টি সেচ মেশিন ও ৫টি সোলার প্যানেল বিতরণ করা হয়েছে।
একেকে নির্বাহী পরিচালক এম এ জলিলের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে সেচ মেশিন ও সোলার প্যানেল বিতরণ করেন ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. শাহিদুজ্জামান। এ সময় ফরিদপুর বিএসটিআই উপপরিচালক মো. কামাল হোসেন, একেকের প্রোগ্রাম কো-অডিনেটর এম এ কুদ্দুস মিয়াসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।
নেত্রকোনায় জেলা প্রেসক্লাব মিলনায়তনে গণপ্রকৌশল দিবস ২০২৫ ও ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশ (আইডিইবি)-এর ৫৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে নেত্রকোনায় বর্ণাঢ্য র্যালি ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার দুপুরে ‘দক্ষ জনশক্তি, দেশ গঠনের মূল ভিত্ত’ প্রতিপাদ্য নিয়ে এই আয়োজন করে আইডিইবি নেত্রকোনা জেলা শাখা। আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ জামান। আইডিইবি জেলা শাখার সভাপতি এস এম মুসার সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক আবু সাদেক খান এবং ইঞ্জিনিয়ার এ বি মোহাম্মদ আলীর সঞ্চালনায় এ সময় বক্তব্য দেন অবসরপ্রাপ্ত প্রকৌশলী মো. রেহান মিয়া রায়হান, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মনিরুল কবীর, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নায়েব আলী খান, পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হুমায়ুন কবীর, নেত্রকোনা টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ রতন কুমার পণ্ডিত, টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টারের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ প্রকৌশলী মো. গিয়াস উদ্দিন এবং রুজেল শিক্ষা পল্লী টেকনিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ মো. নুরুল আলম হাদী। সভায় প্রধান অতিথি জেলা প্রশাসক বলেন, একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কারিগরি শিক্ষাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। এর আগে শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ থেকে একটি বর্ণাঢ্য র্যালি বের হয়ে শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে প্রেসক্লাব মিলনায়তনে গিয়ে আলোচনা সভায় মিলিত হয়।
জালিয়াতির মাধ্যমে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) প্রস্তুক করে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পাইয়ে দেওয়ার ঘটনায় চট্টগ্রামের সাবেক এক নির্বাচন কর্মকর্তাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বুধবার দুদকের প্রধান কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক অংটি চৌধুরী চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়ে মামলাটি দায়ের করেন।
মামলার আসামিরা হলেন, চট্টগ্রামের বন্দর থানার সাবেক নির্বাচন কর্মকর্তা মুহাম্মদ আশরাফুল আলম, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ৮ নম্বর শুলকবহর ওয়ার্ডের সাবেক জন্ম নিবন্ধন সহকারী পিন্টু কুমার দে এবং জালিয়াতির মাধ্যমে নাগরিকত্ব পাওয়া আবদুল জলিল। আশরাফুল আলম বর্তমানে ফেনীর অতিরিক্ত জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত আছেন। দুদক, সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম-১-এর উপপরিচালক সুবেল আহমেদ এই প্রতিবেদককে মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। মামলার এজাহারে আসামি আবদুল জলিল (৫০) বর্তমান ঠিকানা কক্সবাজার পৌরসভার তারাবনিয়া ছড়া মসজিদ কলোনি এবং স্থায়ী ঠিকানা চট্টগ্রাম নগরীর দক্ষিণ হালিশহর অলি মাঝিরপাড়া উল্লেখ করা হয়েছে।
মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, আবদুল জলিল ২০১১ সালের ২২ জুলাই চট্টগ্রাম নগরীর ৮ নম্বর শুলকবহর ওয়ার্ডে জন্ম নিবন্ধন করেন। পরবর্তীতে ২০১৭ সালের ১৪ মে একই ব্যক্তি আবারও একই ওয়ার্ড থেকে জন্ম নিবন্ধন করেন। সেই জন্ম নিবন্ধনের ভিত্তিতে তিনি পরবর্তীতে চট্টগ্রাম নগরীর বন্দর থানা নির্বাচন কর্মকর্তা কার্যালয়ে আবেদন করে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) পান।
দুদকের অনুসন্ধানে ওঠে এসেছে, আবদুল জলিল নির্বাচন কমিশনে জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধনের আবেদনে স্থায়ী ঠিকানা উল্লেখ করেছেন- চট্টগ্রামের পটিয়া পৌরসভা। কিন্তু নির্বাচন কমিশনে তিনি যে জন্ম নিবন্ধন জমা দিয়েছে সেখানে স্থায়ী ঠিকানা উল্লেখ আছে- কক্সবাজার জেলার চৌফলদণ্ডী এবং বর্তমান ঠিকানা হিসেবে চট্টগ্রাম নগরীর শুলকবহর আব্দুল লতিফ রোড উল্লেখ আছে। তবে জন্মনিবন্ধনের তথ্যানুযায়ী স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানায় আবদুল জলিল ও তার পরিবারের সদস্যদের বসবাসের কোনো তথ্য পায়নি দুদক। এছাড়া নির্বাচন কমিশনে আবেদন ফরমের ৪৬টি ঘরে তথ্য দেওয়ার ক্ষেত্রেও অনেক অসঙ্গতি পেয়েছে দুদক। ফরমে মোবাইল নম্বর, ধর্ম, ভোটার তালিকায় বাদ পড়ার কারণ, শনাক্তকারীর জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর, তথ্য-সংগ্রহকারীর জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর, সুপারভাইজারের জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর, যাচাইকারীর জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর ও ডাটা এন্ট্রি অপারেটরের জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বরের সংশ্লিষ্ট ঘরে কোনো তথ্য উল্লেখ না করে ঘরগুলো খালি রাখা হয়।
এছাড়া জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন ফরমের সঙ্গে আবদুল জলিল জমির কাগজ, জাতীয়তা সনদ, শিক্ষা সনদ, বিদ্যুৎ বিলের কপি, প্রত্যয়নপত্র জমা দেননি। শুধু একটি জন্ম নিবন্ধন জমা দিয়ে কোনো জাতীয়তা সনদ ছাড়াই তিনি জাতীয় পরিচয়পত্র পেয়েছেন। তিনি নির্বাচন কমিশনে যে জন্মসনদ জমা দিয়েছেন, সেটার যাচাইকারীর স্বাক্ষর ও নিবন্ধকের স্বাক্ষর দুদকের ফরেনসিক প্রতিবেদনে সঠিক পাওয়া যায়নি।
দুদকের অনুসন্ধানে আরও ওঠে এসেছে, আবদুল জলিল ও তার পূর্বপুরুষদের বাংলাদেশি নাগরিত্বের কোনো বৈধ রেকর্ডপত্র নেই। তার কোনো জাতীয়তা সনদ নেই। তিনি কক্সবাজারের চৌফলদণ্ডতে জন্মগ্রহণ করেছেন দাবি করলেও এর সপক্ষে কোনো রেকর্ডপত্র নেই। তার বাবা-মায়ের নামে কোনো ভূমির রেকর্ডপত্র নেই। আবার ভূমিহীন সনদও নেই। আবদুল জলিলের দাবি তার বাবা-মা ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ে মারা গেছেন। কিন্তু তার কাছে তাদের কোনো মৃত্যুসনদ নেই।
মামলার আরও অভিযোগ করা হয়েছে, আবদুল জলিল ২০১১ সালে বৈধ কোনো নথিপত্র জমা না দিয়ে চট্টগ্রাম নগরীর ৮ নম্বর শুলকবহর ওয়ার্ডের তৎকালীন জন্ম নিবন্ধন সহকারী পিন্টু কুমারের সাথে যোগসাজশ করে জন্ম নিবন্ধন করেন। পরবর্তীতে ২০১৭ সালে একই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও জন্মনিবন্ধন সহকারীর স্বাক্ষর জাল করে জন্ম নিবন্ধন করেন। পরবর্তীতে নির্বাচন কর্মকর্তা আশরাফুল আলম নির্বাচন কমিশনে কোনো রেকর্ডপত্র জমা না দিয়ে কার্যালয়ের নিজের ব্যবহৃত ল্যাপটপ ব্যবহার করে জাল জন্ম নিবন্ধন সনদ দিয়ে আবদুল জলিলের জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করে দেন। দণ্ডবিধির ৪২০, ৪৬৭, ৪৬৮, ৪৭১ ও ১০৯ এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫ (২) ধারায় মামলাটি করা হয়েছে।
সিরাজগঞ্জের সদরে এক প্রবাসীর স্ত্রীকে হাত পা বেঁধে স্বর্ণালঙ্কার লুটপাটের ঘটনায় মামলা তুলে নেওয়ার হুমকি, মুল আসামী গ্রেফতার না হওয়ায় ও মামলাটি ভিন্নখাতে নেওয়ার প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করেছে ভুক্তভোগী পলি খাতুন।
ভুক্তভোগী পলি খাতুন সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার কালিয়া হরিপুর ইউনিয়নের চর হরিপুর গ্রামের মালয়েশিয়া প্রবাসী ইসমাইল হোসেনের স্ত্রী। বুধবার সদর উপজেলার এস এস রোডস্থ নিউজ হোম অফিসে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগী পলি খাতুন অভিযোগ করে বলেন,গত ২০ সেপ্টেম্বর গভীর রাতে ঘরের ভেতরে আমি একা ছিলাম। সেই সুযোগে একই গ্রামের জাহিদ, খোকন, নাজমুলসহ অজ্ঞাতনামা আরও কয়েকজন দুর্বৃত্ত বাড়ির গেটের তালা ভেঙে ঘরের ভেতরে প্রবেশ করে। এরপর তারা আমাকে ধারালো ছুরি দেখিয়ে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে আমার হাত-পা বেঁধে ফেলে। এরপর তারা ঘরে থাকা ৬ ভরি স্বর্ণালঙ্কার, নগদ ৮০ হাজার টাকা, মোবাইলসহ আনুমানিক ১১ লাখ টাকার সম্পদ লুট করে নিয়ে যায়। ঘটনাস্থল থেকে যাওয়ার আগে দুর্বৃত্তরা হুমকি ধামকি দিয়ে যায়। পরে ২৫ সেপ্টেম্বর সিরাজগঞ্জ সদর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করলে পুলিশ অভিযান চালিয়ে ঘটনার সঙ্গে জড়িত জাহিদ ও নাজমুলকে গ্রেফতার করেন। কিন্তু মামলার মুল আসামীরা এখনো ধরা ছোঁয়ার বাইরে রয়েছে।
পলি খাতুন আরো বলেন, আসামীরা এখনো গ্রেফতার না হওয়াতে তারা প্রতিনিয়ত মামলা তুলে নেওয়ার হুমকি ও ধামকি দিচ্ছে। এ ব্যাপারে পুলিশ কোন সহযোগিতা করছে না।ফলে চরম আতঙ্কের মধ্যে দিন পার করছি। এ বিষয়ে পুলিশের সহযোগিতা কামনা করছি।
এ নিয়ে সদর থানার ওসি মোখলেছূর রহমান বলেন, “ঘটনার পরপরই অভিযান চালিয়ে দুইজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকি আসামিদেরও শনাক্ত করা গেছে। খুব দ্রুত সময়ের মধ্যেই তাদেরও গ্রেফতার করা হবে।”
একটি ছবিকে বুকে চেপে দীর্ঘ ১৫ বছর কাটিয়ে দিয়েছেন বৃদ্ধা মা শামসুন নাহার। প্রতিদিনই মনে পড়ে ছেলের শেষ মুহূর্তের কথা—ঢাকায় যাওয়ার আগে মায়ের হাত থেকে এক গ্লাস পানি আর এক খিলি পান খেয়ে বেরিয়ে গিয়েছিলেন নজরুল ইসলাম বাচা। এরপর থেকে আর ফেরেননি তিনি।
২০১০ সালের ৮ নভেম্বর সন্ধ্যায় ঢাকার গাজীপুর চৌরাস্তা এলাকায় সাদা পোশাকধারীরা প্রশাসনের লোক পরিচয়ে গাড়ি থামিয়ে তাকে তুলে নিয়ে যায়। তারপর থেকে নিখোঁজ এই বিএনপি নেতা—বোয়ালখালী উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও করলডেঙ্গা ইউনিয়নের একাধিকবার নির্বাচিত জনপ্রিয় চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম বাচার আর কোনো খোঁজ মেলেনি।
মা শামসুন নাহার কান্নাভেজা কণ্ঠে বলেন, “ছেলে আসবে, বুকের ভেতর ঠান্ডা হবে—এই আশাতেই দিন কাটাই। আমার মনে হয়, আমার ছেলে এখনো বেঁচে আছে।
স্ত্রী শামীম আরা সিদ্দিকিও এখনও আশায় বুক বাঁধেন। তিনি বলেন, “আমার স্বামী বেঁচে আছেন না মারা গেছেন—আজও জানি না। বর্তমান সরকার যদি সত্যিই মানবিক হয়, ড. ইউনুস স্যার যেন অন্তত আমাদের জানিয়ে দেন।”
পরিবার জানায়, দলীয় কাজে ঢাকা যাওয়ার সময় গাজীপুর চৌরাস্তায় তাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। উল্টো বাচার খোঁজ দেওয়ার কথা বলে এক নারী পরিবারের কাছ থেকে ২০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন বলে অভিযোগ।
গত বছরের ২৬ সেপ্টেম্বর বাচার পরিবার ‘গুম সংক্রান্ত কমিশন অফ ইনকোয়ারি’-তে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দায়ের করেছে। এর আগে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইজিপি—সব জায়গায় আবেদন জানানো হলেও কোনো প্রতিকার মেলেনি।
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ‘আয়নাঘর’ থেকে গুম হওয়া কিছু নেতাকর্মী ফিরে আসার খবর ছড়িয়ে পড়লে বাচার ছোট ভাই হামিদুল হক মন্নান আশায় বুক বাঁধেন। কিন্তু ভাই এখনও ফেরেননি।
গাজীপুর-৬ সংসদীয় আসন বহাল রাখার দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর নেতাসহ এলাকাবাসী। বুধবার সকাল দশটা থেকে বেলা সাড়ে এগারোটা পর্যন্ত ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়কের স্টেশন রোড এলাকায় ‘সর্বদলীয় নেতাকর্মীরা টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে এ বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন।
একই সময়ে টঙ্গী কলেজগেট, এশিয়া পাম্প, গাজীপুরা এলাকায় মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে অবরোধ তৈরি করা হয়। ফলে ভোগান্তিতে পড়েন মহাসড়কে চলাচলকারি যাত্রীরা।’
বিক্ষোভকারীরা জানান, সাম্প্রতিক নির্বাচন কমিশনের আসন পুনর্বিন্যাস প্রস্তাবে গাজীপুর-৬ আসন বিলুপ্তির উদ্যোগে তারা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাদের দাবি, দীর্ঘদিনের ঐতিহ্যবাহী এই আসনটি বাদ দিলে গাজীপুর অঞ্চলের রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্ব ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ড মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
প্ল্যাকার্ড, ব্যানার ও ফেস্টুন হাতে বিক্ষোভকারীরা “গাজীপুর-৬ আসন চাই, এলাকার মর্যাদা রক্ষা চাই”—এই শ্লোগান দিতে থাকেন। তাঁরা বলেন, “গাজীপুর-৬ আসন শুধু রাজনৈতিক নয়, এটি আমাদের এলাকার সম্মান ও উন্নয়নের প্রতীক। এই আসনটি বাদ দিলে আমাদের কণ্ঠ স্তব্ধ হয়ে যাবে।
টঙ্গীর স্টেশন রোড এলাকায় কয়েকশ নেতাকর্মী নিয়ে বিক্ষোভ ও টায়ারে আগুন দেন টঙ্গী পূর্ব থানা বিএনপির সভাপতি ও গাজীপুর ৬ আসন থেকে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী সরকার জাবেদ আহমেদ সুমন।
অপরদিকে কলেজগেট এলাকায় বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটি সদস্য ও বীর মুক্তিযোদ্ধা হাসান উদ্দিন সরকার, জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের কার্যকরী সভাপতি সালাহ উদ্দিন সরকার, জামায়াতে ইসলামী মনোনীত এমপি প্রার্থী ড. হাফিজুল রহমান, গাজীপুর মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্মআহ্বায়ক রাকিবুল উদ্দিন সরকার পাপ্পু , আরিফ হোসেন হাওলাদার, টঙ্গী পশ্চিম থানা বিএনপির আহবায়ক বশির আহমেদ, বিএনপি নেতা জসিম উদ্দিন বাট, টঙ্গী পূর্ব থানা জামায়াতের আমীর নজরুল ইসলামসহ বিএনপি ও জামায়াতের বিভিন্নস্তরের নেতৃবৃন্দ।
কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার মথুরাপুর ইউনিয়নের হোসেনাবাদ ছমিলপাড়া এলাকায় প্রখ্যাত বাউল শিল্পী ফকির শফি মণ্ডলের ৩য় খেলাফত দিবস উপলক্ষ্যে অনুষ্ঠিত হয়েছে একদিনব্যাপী সাধুসঙ্গ ও গ্রামীণ মেলা।
সন্ধ্যায় ‘ভক্তি সংগীত ও প্রার্থনার মধ্য দিয়ে ২৪ ঘণ্টাব্যাপী এই সাধুসঙ্গের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়। সারারাত চলবে বাউল সাধক লালন সাঁইয়ের গান, বাণী ও দর্শনের আসর। বুধবার সকালে বাল্যসেবা এবং দুপুরে পূর্ণসেবার মধ্য দিয়ে সমাপ্ত হয় একদিনের এ আয়োজন।
খেলাফত দিবসকে ঘিরে হোসেনাবাদ হিসনা নদীর তীরে অবস্থিত ফকির শফি মণ্ডলের ‘সুধাসিন্ধু ভাব আশ্রম’ প্রাঙ্গণে বসেছে গ্রামীণ মেলা। মেলায় স্থানীয় কৃষিপণ্য, হস্তশিল্প, গ্রামীণ খেলনা ও নানা লোকজ পণ্যের পাশাপাশি নানা ধরনের খাবারের দোকানের পসরা সাজিয়ে বসেছে দোকানিরা। সাধুসঙ্গে যোগ দিতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আগত অসংখ্য বাউল, ফকির ও ভক্তরা আশ্রমে সমবেত হন। অনুষ্ঠানস্থলজুড়ে সৃষ্টি হয় এক আধ্যাত্মিক ও উৎসবমুখর পরিবেশ।
মেলা প্রাঙ্গণে কথা হয় ঢাকা থেকে আগত ভক্ত সাব্বির হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘গুরুর প্রতিটি খেলাফত দিবসে আমি আসি। মূলত এখানে গুরু শিষ্যের ভাব বিনিময়ের একটি আসর বসে। সবার সাথে দেখা হয়, ভালো লাগে।
বাইরে মেলার দোকানিরা বলেন, দুদিন আগেই দোকান বসিয়েছি। প্রতি বছর এই আয়োজনকে কেন্দ্র করে প্রায় ২০ হাজার মানুষের সমাগম হয়। ব্যবসায়ীরাও জানান, বেচাকেনা ভালো হচ্ছে এবং উৎসবের আমেজে তারা আনন্দিত।
এ বিষয়ে সাধুসঙ্গের আয়োজক কমিটির সদস্য ও ফকির শফি মণ্ডলের জামাতা মুকুল হোসেন বলেন, ‘২৪ ঘণ্টাব্যাপী এই সাধুসঙ্গে দূর-দূরান্ত থেকে ভক্তরা এসেছেন। অনেকে রাতেই পৌঁছাবেন। সন্ধ্যার ভক্তির মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়েছে, আর বুধবার দুপুরে পূর্ণসেবার মধ্য দিয়ে এর সমাপ্তি হয়।
এদিকে, সাধুসঙ্গ ও ‘সুধাসিন্ধু ভাব আশ্রম’ প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত গ্রামীণ মেলার নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে দৌলতপুর থানা পুলিশ।
দৌলতপুর থানার ওসি সোলাইমান শেখ বলেন, “মেলা এলাকা ও আশেপাশে আমাদের পুলিশ সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন। এখানে দূর-দূরান্ত থেকে বহু মানুষ আসছেন, তাই যেন কোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি না হয়— সে বিষয়ে পুলিশ সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।”
উল্লেখ্য, শফি মণ্ডল বাংলাদেশের খ্যাতনামা বাউল ও সুফি সংগীতশিল্পী। তিনি ১৯৫২ সালের ১৩ ডিসেম্বর কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার ফিলিপনগর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা আহাদ আলী মণ্ডল ছিলেন ইমাম। ছোটবেলা থেকেই সংগীতে আগ্রহী শফি মণ্ডল ১৯৭৯ সালে ভারতের সাধন মুখার্জির কাছে উচ্চাঙ্গ সংগীতে তালিম নেন এবং পরে ফকির সুলতান শাহের দীক্ষায় লালন সাঁইয়ের পথ অনুসরণ করেন।
১৯৯৫ সালে তার প্রথম অ্যালবাম প্রকাশিত হয় এবং ১৯৯৮ সালে “লালনের দেশে” তাকে ব্যাপক পরিচিতি এনে দেয়। বর্তমানে তিনি তরুণদের বাউল সংগীত শিক্ষা দিচ্ছেন এবং লালন দর্শন প্রচারে নিবেদিত। ২০২২ সালের ১১ নভেম্বর তিনি খিলাফত গ্রহণ করেন।
হঠাৎ খড়ের দাম বেড়ে যাওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার গরু খামারিরা। মাত্র এক মাস আগেও যেখানে প্রতি কেজি খড় বিক্রি হতো ৮ থেকে ১০ টাকায়, এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৫ থেকে ৩০ টাকায়। বিশেষ করে নদী তীরবর্তী ও চরাঞ্চল এলাকার কৃষকরা বেশি বিপাকে পড়েছেন, কারণ সম্প্রতি বন্যা ও নদীর ভাঙ্গনের কারণে ঘাসের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে খামারি ও কৃষকরা সম্পূর্ণভাবে খড় ও অন্যান্য পশুখাদ্যের ওপর নির্ভর হতে বাধ্য হচ্ছেন। এতে বিপাকে পড়েছেন ছোট-বড় খামারি ও গরু পালন করা সাধারণ মানুষ। ফলে খড়ের চাহিদা বাড়ায় ধানের থেকেও বেশি দামে বিক্রি করা হচ্ছে খড়।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাক্তার হাবিবুর রহমান জানান, সর্বশেষ জরিপে সরিষাবাড়ী উপজেলার ৮টি ইউনিয়ন ও পৌরসভা মিলে প্রায় ৯৯ হাজার ৮০০-এর মতো গরু রয়েছে। বর্তমানে আগের থেকে বেশি গরু পালন করা হচ্ছে। এর মধ্যে ৫০ থেকে ৬০ হাজারের মতো গরু বিভিন্ন চরাঞ্চলে লালন-পালন করা হয়।
গরু পালনকারী ও খামরিরা জানান, প্রতিটি গরুর জন্য প্রতিদিন চার থেকে পাঁচ কেজি খড়ের প্রয়োজন হয়। খড়ই হলো- সবচেয়ে সাশ্রয়ী ও অপরিহার্য খাদ্য, বিশেষত দুগ্ধ গাভীর জন্য, কারণ এটি দুধ উৎপাদনে সরাসরি প্রভাব ফেলে। বর্তমানে প্রতি কেজি খড় গড়ে ২৫ থেকে ৩০ টাকা কেজি দরে বাজারে বিক্রি হচ্ছে। এক মন (খড়ের বোঝার আকার অনুযায়ী) ভালো মানের খড় কিনতে গেলে ১,১০০-১,২০০ টাকা লাগে। যা বর্তমান বাজারে এক মণ ধানের দামের সমান। আবার প্রতিটি খড়ের আটি ৮ থেকে ১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে বাজারে। যেগুলো আগে ছিল ২-৩ টাকা। নতুন খড় বাজারে না আসা পর্যন্ত হয়তো দাম এমনি থাকবে। খড়ের পাশাপাশি খৈল ও ভুষির দামও বেড়েছে, যা আমাদের সীমিত আয়ের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করছে। এ অবস্থায় গরু বিক্রি করে খড় কিনতে হচ্ছে আমাদের। অনেকে আবার খাদ্যের দাম বাড়ার কারণে গরু বিক্রি করে দিচ্ছে। এছাড়া কোনো উপায় নেই আমাদের।
পোগলদিঘা ইউনিয়নের চরগাছ বয়ড়া গ্রামের গরু পালনকারী শাহ জালাল পরান বলেন, ‘আমার ৫টি গরু আছে। প্রতিটি গরুর জন্য প্রতিদিন গড়ে ৩ থেকে ৪ কেজি খড়ের প্রয়োজন হয়। এছাড়া খড়ের পাশাপাশি ভুশি, চালের খুদ, খৈলসহ অন্য গো খাদ্য দিতে হয়। ঘাস চাষ করতেও জায়াগার প্রয়োজন হয়। এখন খড় ও সব পশুখাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় গরুর খাবার জোগাড় করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে’
গরু খামারি নাসির উদ্দিন নাজমুল বলেন, ‘আমার ১০টি গরু ছিল, গরুর খাদ্য ও খড়ের দাম বাড়ার কারণে এবং খড়ের সংকটের কারণে গত সপ্তাহে একটা গরু বিক্রি করে দিয়েছি। গরু বিক্রির টাকা দিয়ে বাজার থেকে অন্য গরুর জন্য খড় কিনেছি। এখনো খামারে ৯টা গরু আছে। নতুন ধান কাটার পর নতুন খড় পাওয়া গেলে তখন দাম হয়তো অনেকটাই কমে যাবে। বর্তমানে গরু পালন ও খাবার নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছি। আশপাশের জমিতে ঘাসও নেই। বাধ্য হয়েই বেশি দামে খড় কিনতে হচ্ছে।’
উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ অনুপ সিংহ বলেন, ‘খড় এখন কৃষকের কাছে ধানের মতোই মূল্যবান হয়ে উঠেছে। আগামী দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে পুরো দমে ধান কাটার কাজ শুরু হলে খড়ের দামও কমে আসবে।’