শনিবার, ২২ নভেম্বর ২০২৫
৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

দেশজুড়ে ব্যাপক সহিংসতা

রোববার বগুড়া শহরের সাতমাথায় আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। ছবি: দৈনিক বাংলা
আপডেটেড
৫ আগস্ট, ২০২৪ ০০:১৩
দৈনিক বাংলা ডেস্ক
প্রকাশিত
দৈনিক বাংলা ডেস্ক
প্রকাশিত : ৪ আগস্ট, ২০২৪ ২২:১৫

শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগ দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীদের অসহযোগ কর্মসূচি ঘিরে রোববার ঝিনাইদহ, নাটোর, নওগাঁ, নড়াইলসহ সারা দেশে ব্যাপক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এতে ঝিনাইদহে ৩০, নড়াইলে ২০, ঢাকার কেরানীগঞ্জ ৫০ জন আহত হয়েছেন। এ সময় থানায় হামলা, পুলিশ বক্স ভাঙচুর, পোস্ট অফিস, পৌরসভাসহ বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা ও বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুর করা হয়েছে।

বিস্তারিত প্রতিনিধিদের পাঠানো প্রতিবেদন

নাটোর: নাটোরে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সরকারদলীয় নেতা-কর্মীদের ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। রোববার দুপুর সোয়া ১২টার দিকে শহরের ভবানীগঞ্জ মোড় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। আন্দোলনকারীদের পূর্বঘোষণা অনুযায়ী দুপুর ১২টায় শহরের মাদ্রাসা মোড় এলাকায় বিক্ষোভ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেয় তারা। সকাল থেকে অল্প অল্প করে আন্দোলনকারীরা জড়ো হতে শুরু করে। দুপুর সোয়া ১২টার দিকে প্রায় দুই শতাধিক আন্দোলনকারী জমায়েত হয়। এ সময় আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগের নেতা-কর্মীরা তাদের প্রতিহত করতে ধাওয়া দেয়। এ সময় আন্দোলনকারীরাও তাদের ধাওয়া দিলে এবং ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে উভয়পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় বেশ কয়েকজন আন্দোলনকারীকে মারধর করে সরকারদলীয় নেতা-কর্মীরা। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ঘটনাস্থলে পৌঁছালে বিক্ষোভকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়।

অন্যদিকে নাটোরের বাগাতিপাড়ায় বিক্ষোভ মিছিল করেছে বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা। সকাল ১০টার দিকে দয়ারামপুর বাজার এলাকায় শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও সাধারণ জনতা সড়কে জমায়েত হয়ে বিক্ষোভ করে সরকারের পদত্যাগ দাবি করে বিভিন্ন স্লোগান দেয়।

নওগাঁ: নওগাঁয় বিক্ষোভ মিছিল ও সড়ক অবরোধ করেছে আন্দোলনকারীরা। রোববার সকাল ১০টা থেকে শহরের কাজীর মোড়ে জড়ো হতে শুরু করেন বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা। তাদের সঙ্গে অংশ নেন আরও অনেকে। পরে আন্দোলনকারীরা প্রধান সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। এ সময় এক দফা দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দিতে শোনা যায় তাদের। এতে বন্ধ হয়ে যায় প্রধান সড়ক দিয়ে যানচলাচল।

অন্যদিকে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা শহরের সরিষাহাটির মোড়ে আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে অবস্থান নেন। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয় পথচারীদের। বিশেষ করে অটোরিকশা চালকদের। অনেক পথচারীকে হেঁটে বিকল্প রাস্তা দিয়ে যেতে দেখা যায়। মোটকথা পুরো শহরে আতঙ্কের পরিবেশের সৃষ্টি হয়। দোকানপাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। বন্ধ রয়েছে যাত্রীদের চলাচলের জন্য ভারী যানবাহন।

এদিকে সাধারণ পথচারীদের সতর্ক করতে দোকান বন্ধ করে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করছিল দোকানদার আকাশসহ অনেক ব্যবসায়ী। তারা জানান, পথচারীরা যেন কোনো বিপদের সম্মুখীন না হয়, তাই তাদের সতর্ক করে বিকল্প পথে যেতে বলছি।

দুপুরের দিকে পার্টি অফিস থেকে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা মিছিল নিয়ে আন্দোলনকারীদের দিকে আসতে চাইলে কিছু সময়ের জন্য উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। পরে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ সেনাবাহিনীর সদস্যদের সতর্ক অবস্থানের কারণে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যায়।

নওগাঁর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) গাজিউর রহমান বলেন, আন্দোলন ও বিক্ষোভের শুরু থেকেই পুলিশ তাদের সুষ্ঠু ও সুশৃঙ্খলভাবে আন্দোলন করার জন্য বলেছে। তাদের প্রতি পুলিশ সহনশীল আচরণ করছে। শিক্ষার্থীদের যাতে কোনো ক্ষতি না হয় সে জন্য তাদের নিরাপত্তা দিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। মোটকথা শহরে যেকোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা এড়াতে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।

ঝিনাইদহ: ঝিনাইদহে কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়ার সময় পুলিশসহ ৩০ জন আহত হয়েছেন। আন্দোলনকারীরা রোববার বেলা ১১টা থেকে বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত সারা শহরে তাণ্ডব চালায়। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা যোগ দেয়।

শিক্ষার্থীরা সকালে শহরের মুজিব চত্বর থেকে এবং বিএনপি হাটের রাস্তা থেকে মিছিল বের করেন। তারা পায়রা চত্বরে এসে একসঙ্গে মিলিত হয়। মিছিল থেকে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুর, থানায় হামলা, পুলিশ বক্স ভাঙচুর, পৌরসভা, ছবি তোলার সময় সাংবাদিক কাজী আলী আহমেদ লিকুর ওপর হামলা চালায়। এ ছাড়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সফিকুল ইসলাম অপুর বাড়িসহ বিভিন্ন স্থাপনায় ইটপাটকেল ছুড়ে হামলা চালায়। পুলিশ বাঁধা দিলে শুরু হয় ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়া। সে সময় পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড, কাঁদানি গ্যাস ও শর্টগানের গুলি ছোড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। একপর্যায়ে সারা শহর রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এতে পুলিশসহ অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন। ইটের আঘাতে পুলিশের এসআই শরিফুজ্জামানের মাথা ফেটে গেছে। আহতদের মধ্যে ২৪ জনকে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাকিরা বিভিন্ন ক্লিনিকে ভর্তি হয়েছেন। সকাল থেকে যানবাহন চলাচল করেনি। দোকানপাট খোলেনি। পুলিশি নিরাপত্তায় অফিস-আদালত চলেছে এবং উত্তপ্ত পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

নড়াইল: বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের অসহযোগ আন্দোলনের ডাকে রোববার বেলা ১১টায় নড়াইল সদর উপজেলার আউড়িয়া ইউনিয়নের মাদ্রাসা বাজার এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে। মিছিলে বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের কয়েক হাজার নেতা-কর্মী যোগ দেয়। মিছিলটি শহরে প্রবেশের চেষ্টা করলে চিত্রা নদীর শেখ রাসেল সেতুর ওপর উঠলে পুলিশ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা বাধা দেয়। এতে উভয়পক্ষের মধ্যে ইটপাটকেল নিক্ষেপসহ পুলিশ কয়েক রাউন্ড টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে। এতে ২০ জনের মতো আহত হন। এ সময় ঢাকা-বেনাপোল ভায়া নড়াইল মহাসড়কে যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

সংঘর্ষে পুলিশের টিয়ারসেল নিক্ষেপের পাশাপাশি কয়েক রাউন্ড গুলি চালায়। এত আল নাহিয়ান প্রিন্স নামে এক যুবলীগ কর্মী গুলিবিদ্ধ হয়ে সদর হাসপাতালে ভর্তি হন। প্রিন্স নড়াইল পৌরসভার আলাদাতপুর গ্রামের শেখ আবু বক্করের ছেলে।

সীমাখালী গ্রামের প্রত্যক্ষদর্শী মিজান মোল্লা, মিলি খানম, শিমুল হাসান জানান, সেতুর দক্ষিণ পাশেই আমার বাড়ি। অনেক বিএনপি, জামায়াত-শিবিরের ছেলেরা রাস্তার ওপর ইট ভেঙে পুলিশের দিকে ছুড়ে মারছিল। এদের হাতে হ্যান্ড মাইকও ছিল। পানি খেতে চাইলে আমরা তাদের পানি পানের ব্যবস্থা করেছি। ওরা পানি পানের সময় বসে পান করছিল। ওদের কাউকে চিনি না।

প্রিন্স জানান, ‘চিত্রা নদীর উত্তর প্রান্তে পুলিশ এবং ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতা-কর্মীরা অবস্থান নেয়। আর সেতুর দক্ষিণ প্রান্তে বিএনপি-জামায়াত শিবিরের নেতা-কর্মী অবস্থান নেয়। ইটপাটকেল নিক্ষেপের একপর্যায়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে। এ সময় অন্য প্রান্ত থেকে কয়েক রাউন্ড গুলি করা হয়। একটি বুলেট আমার পেটে লেগে বের হয়ে যায়। সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আকাশ ঘোষ রাহুলসহ উভয়পক্ষের ২০ জন আহত হন।

এদিকে ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দুজন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন এমন খবর ভেসে বেড়ালেও এর কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি।

কেরানীগঞ্জ (ঢাকা): ঢাকার কেরানীগঞ্জে আন্দোলনকারী ছাত্রদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের দফায় দফায় সংঘর্ষে মডেল থানার ঘাটারচর এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। এ সময় আন্দোলনকারীরা বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ, আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের বাড়ি, ব্যক্তিগত অফিস ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ এবং কেরানীগঞ্জ মডেল থানা আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে নেতাদের অবরুদ্ধ করে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। এ সময় আওয়ামী লীগের ডজনখানেক নেতা-কর্মী গুরুতর এবং বেশ কিছু আন্দোলনকারী সামান্য আহত হয়। এর আগে (রোববার) সকালে কেরানীগঞ্জ মডেল থানাধীন ঘাটারচর এলাকায় গত ২১ জুলাই কোটা আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত ইস্পাহানি ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থী রিয়াজ নিহত হওয়ার প্রতিবাদে ও অসহযোগ আন্দোলনের সমর্থনে পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে কেরানীগঞ্জের সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা আটি ভাওয়াল উচ্চবিদ্যালয়ের সামনে থেকে মিছিল বের করার চেষ্টা করলে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা তাতে বাধা দেয়। বাধা উপেক্ষা করে সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা মিছিল নিয়ে সামনে অগ্রসর হলে বড় মনোহরিয়া চৌরাস্তা এলাকায় ছাত্রদের মিছিলের ওপর পেছন থেকে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও গুলিবর্ষণ করে। এতে মুহূর্তেই সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা ছাত্রভঙ্গ হয়ে যায়। পরে তারা সংগঠিত হয়ে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ধাওয়া দিলে নেতা-কর্মীরা দিগ্বিদিক ছোটাছুটি করে বিভিন্ন দোকানপাটের ভেতরে আশ্রয় নেয়। এ সময় মডেল থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আবু সিদ্দিক ও তারানগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন ফারুক অবরুদ্ধ হন। পরবর্তী সময়ে স্থানীয়দের সহায়তায় তাদের উদ্ধার করা হয়। পরে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ছয়টি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ ও পাঁচটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে। এ ছাড়া স্থানীয় চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ফারুক এবং আওয়ামী লীগ নেতা আবু সিদ্দিকের বাড়িতে ব্যাপক ভাঙচুর চালিয়ে তাদের ব্যবহৃত গাড়ি পুড়িয়ে দেয়।

এর কিছুক্ষণ পরে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা পুনরায় সংগঠিত হয়ে আবারও ছাত্রদের ধাওয়া দিয়ে ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও গুলিবর্ষণ শুরু করে। এ সময় বিক্ষুব্ধ আন্দোলনকারীরা আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের ধাওয়া দিলে তারা ঘাটারচর এলাকায় কেরানীগঞ্জ মডেল থানা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের ভেতরে আশ্রয় নেয়। পরে বিক্ষুব্ধ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা আওয়ামী লীগের কার্যালয় ঘেরাও করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে এবং প্রধান ফটকে আগুন লাগিয়ে দেয়। অবস্থা বেগতিক দেখে বেশ কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতা ভবনের দ্বিতীয় তলার ছাদের ওপর গিয়ে আশ্রয় নিলে উত্তেজিত শিক্ষার্থীরা ছাদের গেট ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে তাদের গণধোলাই দেয়। এ সময় হুড়োহুড়ি করে ভবনের ভেতর ঢুকতে গিয়ে ও ভবনের ওপর থেকে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের ছোড়া ইটের আঘাতে অন্তত ২০ জন শিক্ষার্থী আহত হয়। পরে ভবনে আটকে থাকা অন্তত ১০-১৫ জন আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী আন্দোলনকারীদের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।

খুলনা: খুলনায় আওয়ামী লীগের অফিসে আগুন দিয়েছে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। রোববার বেলা ১২টার দিকে খুলনার শঙ্খ মার্কেটের জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে তারা আগুন ধরিয়ে দেয়। এ সময় শিক্ষার্থীরা শেখ হাসিনা সরকারের পতন ও জাতীয় সরকার গঠনের লক্ষ্যে নানা রকম স্লোগান দিতে থাকেন। এর আগে সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দলে দলে শিক্ষার্থীরা নগরীর শিববাড়ি মোড়ে জড়ো হতে থাকেন। বর্তমানে ওই মোড়ে প্রায় ৫/৭ হাজারের কাছাকাছি শিক্ষার্থী উপস্থিত রয়েছেন। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে একদল শিক্ষার্থী শিব বাড়ি থেকে মিছিল সহকারে খুলনার আওয়ামী লীগ অফিসের দিকে রওনা হয়ে এ অগ্নিকাণ্ড ঘটায়।

সিলেট: সিলেটের বন্দরবাজারের কোর্ট পয়েন্ট এলাকায় পুলিশের সাথে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ চলছে। বেলা ১২টার দিকে এ সংঘর্ষ শুরু হয়। পুলিশ আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে ব্যাপক টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেণেড ছুঁড়ছে। জানা যায়, অসহযোগ চলাকালে পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী বেলা ১১টার দিকে নগরের কোর্ট পয়েন্ট এলাকায় জড়ো হয় আন্দোলনকারীরা। এতে শিক্ষার্থীদের সাথে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষও যোগ দেন। এই এলাকায়ই জেলা প্রশাসক কার্যালয়, পুলিশ সুপার কার্যালয়, সিটি করপোরেশনসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সরকারি অফিস রয়েছে। আন্দোলনকারীরা অবস্থান নেওয়ার আগে থেকেই এ এলাকায় বিপুল সংখ্যক পুলিশ সাজোয়া যান নিয়ে অবস্থান নেয়। বেলা ১২টার দিকে পুলিশের সাথে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ শুরু হয়। আন্দোলনকারীদের থামাতে পুলিশ টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেণেড ছুঁড়ছে। এক পর্যায়ে পুলিশের বাধা পেয়ে মূল সড়ক ছেড়ে আশপাশের গলিতে অবস্থান নেয় আন্দোলনকারীরা।

মোংলা (বাগেরহাট): মোংলা-খুলনা মহাসড়কের ফয়লা এলাকায় (বাগেরহাটের রামপাল) আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও পুলিশের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়েছে। চলমান ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার মধ্যে একটি পুলিশ ভ্যানে আগুন দেয় আন্দোলনকারীরা। এ সময় সংবাদ সংগ্রহে গিয়ে আহত হয়েছেন বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার সাংবাদিক সবুর রানা ও সুজন মজুমদার।

এদিকে অসহযোগ আন্দোলনের অংশ নিয়ে মোংলা-খুলনা মহাসড়কের ভাগা এলাকায় সকালে বিক্ষোভ মিছিল করে শিক্ষার্থীরা। রবিবার বেলা সাড়ে ১১টায় বের হওয়া মিছিল শেষে মহাসড়কে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা। দুপুর ১২টা পর্যন্ত চলে শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন। পরে পুলিশ ও আন্দোলনকারীরা ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া জড়িয়ে পড়েন।

দিনাজপুর: জাতীয় সংসদের হুইপ ও দিনাজপুর সদর-৩ আসনের সংসদ সদস্য ইকবালুর রহিম এমপি ও বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের বাসা ভাংচুর ও আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে বিক্ষুব্ধরা। এ সময় পুলিশের দুটি পিকআপ ভ্যানে আগুন জ্বালিয়ে দেয় তারা। রাবার বুলেট ও কাঁদলে গ্যাস ছুটছে পুলিশ। সদর হাসপাতাল, জোড়া ব্রীজ, ফুলবাড়ি বাসস্ট্যান্ড, লিলির মোড়, বাহাদুর বাজার, স্টেশন রোড, কাচারী রোড, মডার্ণ মোড়, বুটিবাবুর মোড়, মুন্সীপাড়াসহ সারা শহরে আন্দোলনকারীদের সাথে পুলিশের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া চলে। শত শত রাউন্ড রাবার বুলেট ও টিয়ার শেল ছুড়েছে পুলিশ। এসব ঘটনায় ১০ জন গুলিবিদ্ধসহ আহত হয়েছে অর্ধশত ব্যক্তি।

সকাল ১০টায় দিনাজপুর ফুলবাড়ী বাসস্ট্যান্ডে আন্দোলনকারী জমায়েত হতে শুরু করে। তারা মিছিল নিয়ে শহরের হাসপাতাল মোড়স্থ হুইপ ইকবালুর রহিম এমপি ও বিচারপতি ইনায়েতুর রহিমের বাড়ির দিকে অগ্রসর হতে শুরু করলে পুলিশের সাথে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। দিনাজপুরের পুলিশ সুপার শাহ ইফতেখার আহমেদের নেতৃত্বে পুলিশ আন্দোলনকারীদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করে। দীর্ঘসময় পুলিশের সাথে সংঘর্ষের এক পর্যায়ে আন্দোলনকারীরা হুইপ ও বিচারপতির বাড়ীতে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। তারা বাড়ীতে থাকা কয়েকটি মোটরসাইকেল বের করে বাসার গেটে এনে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। জানা গেছে, ধাওয়া পাল্টা দেওয়ার সময় এবং রাবার বুলেট ও টিয়ার সেল নিক্ষেপ করে। ১০ জনের গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। সারা শহরজুড়ে থেমে থেমে আন্দোলনকারীদের সাথে পুলিশের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে। শহরের মোড়ে মোড়ে এখন আগুন জ্বলছে। এসব ঘটনা চলাকালে শহরের কোথাও সেনা সদস্য বা বিজিবির উপস্থিতি দেখা যায়নি। এর আগে শহরের পলিটেকনিক মোড়ে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ ও গ্রাফিতি অঙ্কন করে শিক্ষার্থীরা। পরে মিছিল নিয়ে শহরের দিকে অগ্রসর হলে এ সংঘর্ষে সুত্রপাত হয়।

নেত্রকোনা: নেত্রকোনায় রোববার সকাল ১০টা থেকে সরকার বিরোধী আন্দোলনকারী ও সরকারের পক্ষের সমর্থক সহ নেতাকর্মীদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়েছে। শহরের সাতপাই, নাগড়া সহ বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। জেলার শ্যামগঞ্জ বাজারের একাধিক বাসিন্দা জানান, নেত্রকোণা-ময়মনসিংহ সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে আন্দোলনকারীরা। এসময় পুলিশের একটি গাড়ি ভাঙচুর করে আন্দোলনকারীরা।

নোয়াখালী: নোয়াখালীতে রোববার সকাল থেকেই জেলা শহর মাইজদীর প্রধান সড়কে অবস্থান নেয় বিক্ষোভকারীরা। এসময় তাদের বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে রাস্তায় আগুন দিতে দেখা যায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টায় এখন কোথাও পুলিশি তৎপরতা দেখা যায়নি। সকাল ১০ টার দিকে নোয়াখালী-৪(সদর-সুবর্ণচর) আসনের সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরী তার অনুসারী নেতা-কর্মীদের নিয়ে পুড়ে যাওয়া জেলা আওয়ামী লীগ অফিস দেখতে আসেন। এসময় বিক্ষোভকারীদের সাথে তাদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এসময় কয়েক রাউন্ড গুলির শব্দ শুনা যায়। একপর্যায়ে এমপি একরাম সহ তার অনুসারীরা ব্যর্থ হয়ে জেলা শহর থেকে চলে যান। শহরেরর সব কটি সড়কে আগুন জ্বালিয়ে অবস্থান করে বিক্ষোভকারীরা।

বেলা সাড়ে ১১টার সময় সেনাবাহিনীর গাড়ী টহল দেওয়ার সময় আন্দোলনকারীরা ‘এ মুহূর্তে দরকার সেনাবাহিনীর সরকার’- স্লোগান দেয়।

কালিয়াকৈর (গাজীপুর): গাজীপুরের কালিয়াকৈরে গতকাল রোববার দিনব্যাপী সড়ক-মহাসড়ক অবরোধ করে বিভিন্ন স্লোগানে বিক্ষোভ মিছিল করেছে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনকারীরা ৩টি পুলিশ বক্স, আওয়ামী লীগের অফিস, থানার সামনে রাখা গাড়িসহ বেশকিছু যানবাহনে অগ্নিসংযোগ করে। এক পর্যায় পুলিশ ও আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মাঝে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। শিক্ষার্থীদের হামলায় ওসিসহ কয়েকজন পুলিশ সদস্য ও পুলিশের গুলিতে শিশুসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হন। থমথমে বিরাজ করছে কালিয়াকৈর।

চুয়াডাঙ্গা: চুয়াডাঙ্গা জেলাজুড়ে কর্মসূচি পালন করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা। এসময় জেলার বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নেয় শিক্ষার্থীরা। কোথাও কোথাও বিক্ষোভ প্রদর্শন করতে গেলে বাধার মুখে পড়েন তারা। ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা তাদের ওপর হামলা চালায় বলে অভিযোগ তোলেন। রোববার সকাল থেকে জেলাজুড়ে এমন পরিস্থিতি বিরাজ করছিল। সকাল থেকে চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুর সড়কের ভালাইপুর বাজারে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন আন্দোলনকারীরা। এসময় তারা একদফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে যান চলাচল বন্ধ করে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। সড়কের দু’পাশে সৃষ্টি হয় যানজট।

একই সাথে শহরের কোর্টমোড় এলাকাতেও বিক্ষোভ করতে গেলে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের বাধার মুখে পড়েন আন্দোলনকারীরা। এসময় তাদের ব্যানার ছিড়ে ফেলা হয়। শহরের হাসপাতাল সড়কে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালানো হয়। দর্শনা শহরে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে আন্দোলনকারীরা বাসস্ট্যান্ডে জড়ো হলে তাদের ওপরেও হামলা চালানো হয় বলে অভিযোগ ওঠে। এছাড়া জেলার বদরগঞ্জ, জীবননগর ও আলমডাঙ্গাতেও সড়কে নামে আন্দোলনকারীরা। এমন পরিস্থিতিতে জেলাজুড়ে আতঙ্ক ও থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।

ভৈরব (কিশোরগঞ্জ): কিশোরগঞ্জের ভৈরবে আন্দোলনকারীদের সাথে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষ চলাকালে পুলিশ প্রায় শতাধিক রাউন্ড রাবার বুলেট ও টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ করে। এসময় কমপক্ষে অর্ধশত আহত হয়। রোববার দুপুর ১২টা থেকে বিকেল সাড়ে ৩ টা পর্যন্ত ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ও স্থানীয় বাসস্ট্যান্ড, জগনাথপুর এবং কালিকাপ্রসাদ এলাকায় এ সংঘর্ষ চলে। এসময় আন্দোলনকারীরা কয়েকটি বাড়ীঘর দোকানপাট ভাংচুর করে। তবে বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে দেখা যায়নি। স্থানীয় বিএনপির কিশোর যুবকদের আন্দোলনে অংশ নিতে দেখা যায়। তারা দুপুর দেড়টার দিকে ভৈরব থানা আক্রমণ করতে চেষ্টা করলে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা মিলে আন্দোলনকারীদের সরিয়ে দেয়। এ সময় পুলিশ কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়ে।


শীতের সবজিতে ভরা বাজার, তবু দাম চড়া

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

শীতের আমেজ এলেও সবজির বাজারে নেই স্বস্তি; বরং বেশিরভাগ পণ্যের দাম আগের তুলনায় ১৫ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। আলুর বস্তা প্রতি ৪০০ টাকা বাড়ায় খুচরায় আলু এখন ৩০ টাকা কেজি। পেঁয়াজের বাজারে অস্বস্তির মধ্যেই ঢেঁড়স, শিম, টমেটো, চায়না গাজর ৮০ থেকে ১৫০ টাকার কমে মিলছে না। ক্রেতাদের অভিযোগ, শীতেও বাজারে স্বস্তি নেই, বিক্রেতাদের দাবি সরবরাহে ঘাটতি থাকায় দাম কমতে সময় লাগবে। গতকাল শুক্রবার সকালে রাজধানীর ধানমন্ডি রায়ের বাজার, মোহাম্মদপুর টাউন হল মার্কেট ঘুরে এমন তথ্য মিলেছে।

দেখা গেছে, সবজির বাজারে স্বস্তি এখনও অধরা। আগের তুলনায় ১৫ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। ঢেঁড়স, শিম, টমেটো, চায়না গাজর, করলা.এসব এখন ৮০ থেকে ১৫০ টাকার ঘরে বিক্রি হচ্ছে। বেগুনেও ২০ থেকে ৩০ টাকার বৃদ্ধি দেখা গেছে। গোল বেগুন ১৩০ থেকে ১৪০ আর লম্বা ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ফুলকপি-বাঁধাকপিও পিস প্রতি ৫০ টাকার নিচে নামেনি।

ক্রেতাদের অভিযোগ, শীত এলেও সবজির দাম কমছে না, উল্টো বাজার করতে কষ্ট বাড়ছে। আর বিক্রেতাদের দাবি, নতুন মৌসুমের সবজি পুরোপুরি না ওঠা ও পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধির কারণে এ দাম বাড়তি।

বাজারে মানভেদে ফুলকপি প্রতিপিচ ৫০ থেকে ৬০ টাকা, বাঁধাকপি ৪০ থেকে ৫০ টাকা, প্রতি কেজি বেগুন ৭০ থেকে ৮০ টাকা, করলা ৮০ থেকে ৯০ টাকা, ঢ্যাঁড়শ ৬০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকা, মুলা ৫০ টাকা, লতি ৮০ টাকা, ধুন্দুল ৫০ থেকে ৬০ টাকা ও পটোল ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে আর প্রতি কেজি পেঁপে ২০ টাকা থেকে ৩০ টাকা, গাজর ৮০ টাকা, কচুরমুখী ৬০ টাকা, শিম ১০০ থেকে ১২০ টাকা, শালগম ৭০ টাকা থেকে ৮০ টাকা ও শসা বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়। একই সঙ্গে প্রতি কেজি কাঁচামরিচের দাম ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা গুণতে হচ্ছে ক্রেতাদের।

লালশাকের আঁটি ১০ টাকা, পুঁইশাক ২০-৩০ টাকা, মুলাশাক ১০ টাকা, ডাঁটাশাক ১০, কলমি শাক ১০ টাকা ও পালংশাক বিক্রি হচ্ছে ১০ টাকায়। এ ছাড়া প্রতিপিচ লাউ ৫০ থেকে ৬০ টাকা, লেবু ৬০ টাকা ডজন, আলু ২০ থোকে ২৫ টাকা কেজি, ধনে পাতা ১০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।

সবজি বিক্রেতা আনিসুল হক বলেন, সবজীর দাম কিছুটা কমেছে। এখনো ১০০ টাকার নিচে কম সবজি পাওয়া যায়। কেজি ৮০ থেকে ১০০ টাকা প্রতিটি সবজির দাম। ফুলকপি, বাঁধাকপি বাজারে আসার কারণে কিছুটা সবজির দাম কমেছে। বিভিন্ন শাকের দামও কম আছে। আগে ২০ থেকে ৩০ টাকা প্রতি আঁটি বিক্রি হলেও, এখন ১০ থেকে ১৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

প্রতিটি বাজারে পেঁয়াজ ১১০ থেকে ১২০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। ৯০ থেকে ১০০ টাকা পাইকারি দামে পেঁয়াজ কিনতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা। তারা বলছেন, বাজারে পর্যাপ্ত পেঁয়াজ থাকার পরও পাইকারি দাম কমছে না। আমাদের বেশি দামে কিনতে হয়, তাই বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।

প্রোটিন বাজারেও পরিবর্তন এসেছে। ব্রয়লার মুরগির দাম গত সপ্তাহের ১৯০ টাকা থেকে ৩০ টাকা কমে এখন ১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সোনালি মুরগি ২৭০ থেকে ২৮০ টাকার ঘরে, ডিমের ডজনও ১০ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায়। তবে মাছের দাম গড়ে ৩০ থেকে ৪০ টাকা বেড়েছে। রুই, কাতলা, পাঙ্গাস বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৬০০ টাকায়। মাছের রাজা ইলিশের দাম এখনও হাঁকানো হচ্ছে দুই হাজার ৪০০ থেকে দুই হাজার ৬০০ টাকা।

বিক্রেতা একজন বলেন, ‘টাটকা মাছ খুব কম পাওয়া যায়। যা পাইছি এগুলো ফ্রিজিং মাছ।’


এটি ‘বড় ভূমিকম্পের আগাম বার্তা’: গবেষক আনসারী

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

গতকাল শুক্রবার ঢাকাসহ সারাদেশে অনুভূত ভূমিকম্পটি ‘বড় ভূমিম্পের আগাম বার্তা’ বলে মনে করেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পূরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ও ভূমিকম্প গবেষক মেহেদি আহমেদ আনসারী। বিবিসি বাংলার সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ অভিমত দেন।

মেহেদি আহমেদ আনসারী বলেন, সাধারণত একশ থেকে দেড়শ বছর পরপর একটি অঞ্চলে বড় মাত্রার ভূমিকম্প হওয়ার শঙ্কা থাকে। বাংলাদেশ ও এর আশপাশের কাছাকাছি এলাকায় গত দেড়শ বছরে একটি বড় ও প্রায় পাঁচটি মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছে।

বাংলাদেশের আশপাশে সবশেষ বড় ভূমিকম্প সংগঠিত হয়েছিল প্রায় একশ বছর আগে। তাই আরেকটি বড় ভূমিকম্প কাছাকাছি সময়ে হতে পারে এমন শঙ্কা রয়েছে বলে মন্তব্য এই গবেষকের।

বুয়েটের এই অধ্যাপক বলেন, বিল্ডিং কোড না মেনে ভবন তৈরি করলে ক্ষয়ক্ষতি বেশি হবে এটিই স্বাভাবিক। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।

তিনি আশঙ্কার কথা জানিয়ে বলেন, ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বড় শহরগুলোতে অপরিকল্পিতভাবে যে ভবনগুলো গড়ে তোলা হচ্ছে তাতে ক্ষয়ক্ষতির শঙ্কা বেড়েই চলেছে।

গতকাল শুক্রবার সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ভূমিকম্প অনুভূত হয়। আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ ও গবেষণা কেন্দ্রের রেডিও মেকানিক ইকবাল আহমেদ জানান, ঢাকার আগারগাঁওয়ের আবহাওয়া অফিস থেকে ১৩ কিলোমিটার পূর্বে নরসিংদীর মাধবদীতে ভূকম্পনটির উৎপত্তি। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৫ দশমিক ৭।

ভূমিকম্পে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদীতে ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে দুইজন শিশু। আহত হয়েছেন দেড় শতাধিক। নিহতদের মধ্যে পুরান ঢাকার আরমানিটোলায় তিনজন, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে একজন এবং নরসিংদী সদরে দুজন মারা গেছেন।


ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে থাকবে বিএনপি: মির্জা ফখরুল

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

ভূমিকম্পে হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতির ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সেই সঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে থাকবে বিএনপি।

গতকাল শুক্রবার এক শোক বিবৃতিতে তিনি এ কথা বলেন। এতে স্বাক্ষর করেন বিএনপির সহ-দপ্তর সম্পাদক মুহম্মদ মুনির হোসেন।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘প্রাকৃতিক দুর্যোগের এক ভয়াবহ রূপ হলো ভূমিকম্প। আজ সকালে বাংলাদেশে সংঘটিত বিধ্বংসী ভূমিকম্পে কমপক্ষে ছয়জনের প্রাণহানি ও দুই শতাধিক মানুষ আহত এবং ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতিতে দেশবাসীর মতো আমিও গভীরভাবে শোকার্ত। এই ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগে জীবনহানিসহ জানমালের মারাত্মক ক্ষতি হয়।’

মির্জা ফখরুল ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর প্রতি শোক ও সহমর্মিতা জানান। এ বিপদের সময় তারা যেন ধৈর্যের সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে পারেন সেজন্য তিনি মহান আল্লাহর কাছে মোনাজাত করেন। পাশাপাশি এ দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে বিএনপি থাকবে বলেও জানান তিনি।

শোক বিবৃতিতে মির্জা ফখরুল নিহতদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত এবং তাদের শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা ও আহতদের আশু সুস্থতা কামনা করেন।

গতকাল শুক্রবার সকাল ১০.৩৮ মিনিটে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আঘাত হানা শক্তিশালী ভূমিকম্পে অন্তত ১০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন কয়েকশ মানুষ। রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পটির মাত্রা ছিল ৫.৭।


শনির আখড়ায় ৩৬ কেজি গাঁজাসহ দুই মাদক কারবারি গ্রেপ্তার 

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর শনির আখড়া এলাকা থেকে ১০ লাখ ৮০ হাজার টাকা মূল্যের ৩৬ কেজি গাঁজাসহ দুই মাদক কারবারিকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব-১০, সিপিসি-১ যাত্রাবাড়ী ক্যাম্প। গ্রেপ্তারকৃত আসামিরা হলেন–মো. মাসুদ ও মো. রবিউল আলম।

শনিবার বেলা সাড়ে ১১টায় অভিযানটি পরিচালনা করা হয় বলে জানিয়েছেন র‍্যাব-১০, সিপিসি-১, যাত্রাবাড়ী ক্যাম্পের ভারপ্রাপ্ত কোম্পানি কমান্ডার এসএম হাসান সিদ্দিকী সুমন।

তিনি জানান, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে এদিন যাত্রাবাড়ী থানাধীন শনির আখড়া এলাকায় অভিযান পরিচালনা করা হয়। এতে আনুমানিক ৩৬ কেজি গাঁজাসহ ২ জন মাদক কারবারিকে গ্রেপ্তার করা হয়।

র‍্যাব জানায়, গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিদ্বয় পেশাদার মাদক কারবারি। তারা বেশ কিছুদিন যাবৎ দেশের সীমান্তবর্তী এলাকা হতে অবৈধভাবে গাঁজাসহ অন্যান্য মাদকদ্রব্য সংগ্রহ করে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করে আসছিল।

উদ্ধারকৃত মাদকসহ গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে যাত্রাবাড়ী থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা রুজুর করতে থানায় হস্তান্তর কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।


কালেক্টরেট স্কুলে অস্থিরতা চরমে: আলিউল করিমকে ঘিরে ৫৩ শিক্ষকের অভূতপূর্ব অভিযোগপত্র

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
এম এন রাব্বী, রংপুর

রংপুরের কালেক্টরেট স্কুল অ্যান্ড কলেজের বহুল আলোচিত শিক্ষক আলিউল করিম প্রামানিকের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও অসদাচরণের কারণে প্রতিষ্ঠানজুড়ে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।

প্রথমবারের মতো প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন পদমর্যাদার ৫৩ শিক্ষক একযোগে তার বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করেছেন। যা রংপুরের শিক্ষা অঙ্গনে নজিরবিহীন ঘটনা।

অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, ক্ষমতার অপব্যবহার, নারী শিক্ষকদের সঙ্গে অশোভন আচরণ, বোরকা পরা শিক্ষিকাকে সালীনতাবিরোধী মন্তব্য, কর্মীদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির অপচেষ্টা, সহকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ, প্রশাসনিক কাজে বাধা এবং প্রতিষ্ঠানে ভুয়া বিল-ভাউচার তৈরি করে অর্থ আত্মসাৎসহ একাধিক গুরুতর দুর্নীতির অভিযোগ।

অভিযোগ রয়েছে, হাইকোর্টের রায়ে পরাজিত এক বরখাস্ত শিক্ষককে অবৈধভাবে পুনর্বহাল করতেও সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন তিনি।

নিজের ছেলে সেনাবাহিনীর উচ্চপদে কর্মরত থাকার সুবাদে সহকর্মীদের ওপর ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছে বলেও অভিযোগে উল্লেখ করেছেন শিক্ষকরা।

তারা বলেন, যে অপরাধে শাস্তি হওয়ার কথা, সেখানে উল্টো তিনি হঠাৎ ছুটিতে গিয়ে দায় এড়ানোর চেষ্টা করছেন।

একাধিকবার তাকে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে বলেও অভিযোগ তুলেছেন।

এছাড়াও বরখাস্ত শিক্ষক আলতাপ হোসেন, যিনি শিক্ষাগত ঘাটতি ও জালিয়াতির অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও প্রশাসনের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় পুনরায় কলেজে ফিরে এসেছেন। হাইকোর্টের রায়ের তোয়াক্কা না করে ৩৬ লাখ ৭৩ হাজার টাকা বকেয়া দেখিয়ে সে অর্থ ভাগবাটোয়ারার অভিযোগটিও নিয়ে নানান প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।

এদিকে আটজন সিনিয়র শিক্ষককে অতিক্রম করে নাসিরুল হক মিলনকে সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার বিষয়টি ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি করেছে। আর মিলন দাবি করেছেন সিনিয়রদের সম্মতি নিয়েই তিনি দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন।

৫৩ শিক্ষক জানান, দীর্ঘ দুই বছর ধরে চলা এ অনিয়ম ও ক্ষমতার অপব্যবহার প্রতিষ্ঠানটির শান্ত পরিবেশকে ক্ষত-বিক্ষত করেছে।

শিক্ষকদের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি, ভয় ও চাপের পরিবেশ, রেষারেষি এবং প্রশাসনিক বিশৃঙ্খলা-সব মিলিয়ে প্রতিষ্ঠানটি এখন ১০০ বছরের ঐতিহ্যের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ এক দুরবস্থায় পৌঁছেছে।

আলিউল করিমের ২০০৯ সালে সাময়িক বরখাস্ত হওয়া, ২০১০ সালে কঠোর শর্তে বরখাস্ত প্রত্যাহারের কথাও অভিযোগে বলা হয়।

গত বছরের আগস্ট মাসে অধ্যক্ষের ওপর চাপ সৃষ্টি করে জোরপূর্বক পদত্যাগপত্র আদায়, এরপর নিজেই অধ্যক্ষের ক্ষমতা দখল ও জেলা প্রশাসনের সহায়তায় প্রশাসনিক কো-অর্ডিনেটর ও পরিচালনা পর্ষদ সদস্য পদ দখল করার ঘটনাগুলোও ছিল আলোচিত।

এদিকে, শিক্ষকরা পাঁচ দফা দাবি তুলে ধরেছেন। দাবিগুলো হচ্ছে; ১। আলিউল করিমকে অবিলম্বে সব প্রশাসনিক ও আর্থিক দায়িত্ব থেকে অপসারণ, ২। তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে নিরপেক্ষ তদন্ত, ৩। অভিযোগ সত্য হলে কঠোর শাস্তি, ৪। প্রতিষ্ঠানে স্বাভাবিক পরিবেশ পুনরুদ্ধার, এবং ৫। ভবিষ্যতে অনিয়মকারী যেন আর কোনোভাবে দায়িত্বে আসতে না পারে।

স্থানীয় সুধীমহলের মতে, পূর্ববর্তী জেলা প্রশাসকসহ প্রশাসনের কিছু কর্মকর্তার প্রশ্রয়ে এক সময়ের সুনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি দুর্নীতি ও বিশৃঙ্খলার কবলে পড়েছে।

প্রতিষ্ঠানটিকে দুর্নীতিমুক্ত ও সুশাসনভিত্তিক পরিবেশে ফিরিয়ে আনতে দ্রুত কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন সচেতন মহল।


মৌলভীবাজারে ধান কাটা ও মাড়াই উৎসবে মেতেছেন চাষিরা

জেলায় রোপা আমন আবাদ হয়েছে ৯৮ হাজার ২০ হেক্টর জমিতে
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
মৌলভীবাজার সংবাদদাতা

চলছে অগ্রহায়ণ মাস, আমন ধান ঘরে তুলার সঠিক সময়। প্রতি বছর যখন এই মাসটি আসে তখন সারাদেশের ন্যায় মৌলভীবাজারে রোপা-আমন ধান কাটার ধুম পড়ে যায়। এবার তার ব্যতিক্রম হয়নি। জেলার বিস্তীর্ণ এলাকার আমন মাঠ এখন সোনালী রঙ ধারণ করেছে। তাইতো কৃষকেরা ধান কাটা ও মাড়াইয়ের মহোৎসব করছেন। কৃষিতে আধুনিক যন্ত্র ব্যবহারের ফলে কৃষকেরা মাঠেই ধান মাড়াইয়ের কাজ সারছেন। আবার গ্রামাঞ্চলের জমি থেকে পাকা ও আধা পাকা ধান চুরি হয়ে যাওয়ায় কৃষকরা রাত জেগে ধানক্ষেত পাহারা দিচ্ছেন। শুক্রবার সকালে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার আমন ফসলের মাঠ ঘুরে দেখা যায়, দিগন্ত বিস্তৃত ফসলের মাঠে সোনালী ধানের সমারোহ। বাতাসে দোল খাচ্ছে কৃষকের স্বপ্ন। চারিদিকে সোনালী রঙের নতুন আমন ধানের মৌ মৌ ঘ্রাণ। মাঠে মাঠে চলছে ধান কাটা ও মাড়াইয়ের ধুম। নবান্নের আনন্দে আমন ধান কাটা-মাড়াইয়ের ধুম চলছে জেলা জুড়ে। এখন মাঠের সোনালী ধান ঘরে তুলতে ব্যস্ত কৃষকরা। কয়েকমাস আগে যে স্বপ্ন বুনেছিল ধান ঘরে আসার সাথে সাথে সে স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। নানা ব্যস্ততায় বাড়ির উঠান ও কৃষি জমিতে ধান রেখে চলছে ধান মাড়াইয়ের মহোৎসব।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সুত্রে জানা যায়, জেলার সাত উপজেলায় ৯৮ হাজার ২০ হেক্টর জমিতে রোপা আমন আবাদ হয়েছে। সার্বিকভাবে বলা যায়, মৌলভীবাজারের আমন মৌসুম এবার কৃষকদের মাঝে নতুন আশা ও সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে বলে জানান জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরিচালক মো. জালাল উদ্দিন।

কৃষকরা জানান, ইরি মৌসুমে জমি থেকে ফসল কেটে সরাসরি বাড়ি নিয়ে এলেও আমন ধান কেটে সরাসরি বাড়ি নিয়ে আসেন না তারা। শুকানোর জন্য কাটা আমন ধান চার-পাঁচ দিন জমিতেই রেখে দেন। তারপর বাড়িতে নিয়ে আসেন। এ সুযোগে কৃষকদের জমিতে কেটে রাখা ধান এমনকি আধা পাকা ধানও কেটে নিয়ে যাচ্ছে চোরেরা।

ভূজবল এলাকার কৃষক কাইয়ুম আবেদীন জানান, ৯ বছর ধরে তিনি নিয়মিত খেত করছেন। এবার প্রায় ৪৫ কিয়ার জমিতে আমনের চাষ করেছেন। তিনি বলেন, প্রতি কিয়ারে ১৭ থেকে ১৮ মণ ধান আশা করছি। পোকা কিছুটা ছিল, ওষুধ দিয়েছি। তবে এবার ইঁদুরের উপদ্রব বেশি। তবে ঘূর্ণিঝড়ের কারণে কিছুটা ক্ষতি হয়েছে।

অন্যদিকে, সদর উপজেলার গয়ঘর গ্রামের আকরম মিয়া জানান, এ বছর তিনি শহরের নিখস্ত কাঞ্জা হাওরে ৫ কিয়ার জমি বর্গা নিয়েছিলেন। আকস্মিক ঘূর্ণিঝড়ে তার ৩ কিয়ারের ধান নষ্ট হয়ে গেছে। বাকি জমিতেও আশানুরূপ ফলন হয়নি। ঋণ করে চাষ করেছিলাম, এখন সেই টাকা ফেরত নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি, বলেন তিনি।

কমলগঞ্জের কৃষক সোলাইমান হোসেন বলেন, ‘প্রায় দুই একর জমিতে আমন ধান চাষ করেছি। ১৫০ মনের মতো ধান পেয়েছি। সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গেই ধানক্ষেত পাহারায় চলে যেতে হচ্ছে। পাঁচ-ছয় দিন ধরে জমিতে পাহারা দিচ্ছি। তিনি বলেন, এখানে ধান মাড়াইর পর খলা তৈরি করে ধান সিদ্ধ করে শুকাই। শুকানোর পর সেই ধানগুলো বাড়িতে নিয়ে যাই।’

মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরিচালক মো. জালাল উদ্দিন জানান, চলতি মৌসুমে ব্রি হাইব্রিড-৪, ব্রি হাইব্রিড-৬, তেজ গোল্ড, বিআর ১১, বিআর ২২, বিআর ২৩সহ বিভিন্ন উফশী জাতের ধান প্রত্যাশার চেয়েও বেশি ফলন দিয়েছে। জেলার সাত উপজেলায় মোট ৯৮ হাজার ২০ হেক্টর জমিতে রোপা আমন আবাদ হয়েছে।

১৫ হেক্টর জমিতে আমন চাষ হয়নি। চলতি মৌসুমে পরিমিত বৃষ্টি হওয়ায় ধানি জমিতে পানি থাকায় ধানের খাদ্যে ঘাটতি দেখা দেয়নি। এতে ফলন ভালো হয়েছে। ধানে চিটা হবে না। ফলন ভালো হওয়ায় ধান উৎপাদনের মাত্রা ঠিক থাকবে।

সার্বিকভাবে বলা যায়, মৌলভীবাজারের আমন মৌসুম এবার কৃষকদের মাঝে নতুন আশা ও সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে।। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে সব ধান কাটা শেষ হয়ে যাবে।’

কৃষি বিভাগ আশা করছে, এই উৎপাদন জেলার ধান সংরক্ষণ ও বাজারে সরবরাহে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।


নান্দাইলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও থানার পাশে পৌরসভার গার্বেজ পয়েন্ট স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে জনমনে ক্ষোভ

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
মোঃ তারিকুল আলম, নান্দাইল (উপজেলা) প্রতিনিধি

নান্দাইল মডেল থানা সংলগ্ন এলাকায় পৌরসভার উদ্যোগে নতুন করে একটি গার্বেজ ফেলার স্থান (Garbage Dumping Zone) নির্মাণ কাজ চলছে। কিন্তু এই স্থানের মাত্র ১০০ মিটার পূর্ব দিকে চন্ডীপাশা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় এবং ১০০ মিটার পশ্চিম দিকে নান্দাইল পাইলট উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় অবস্থিত হওয়ায় শিক্ষার্থী, অভিভাবকসহ স্থানীয়দের মধ্যে চরম উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া উল্লেখিত স্থানের ঠিক ১০ মিটার দক্ষিণ পাশে নান্দাইল মডেল থানা এবং উত্তর পাশেই রয়েছে ময়মনসিংহ–কিশোরগঞ্জ মহাসড়ক, যেখানে প্রতিদিন হাজারো পথচারী চলাচল করেন।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান— একদিকে দুইটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, অন্যদিকে ব্যস্ত মহাসড়ক। এমন সংবেদনশীল স্থানে গার্বেজ পয়েন্ট তৈরি হলে দূষণ, দুর্গন্ধ, ছড়ানো বর্জ্য, ধোঁয়া, পোকামাকড়সহ নানান স্বাস্থ্যঝুঁকির সৃষ্টি হবে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে শিক্ষার্থীরা।

একজন অভিভাবকের ভাষায়—
“শিশুদের প্রতিদিন এই সড়ক দিয়ে যাতায়াত করতে হয়। বর্জ্য ফেললে বাতাসে রোগজীবাণু ছড়াবে। এ সিদ্ধান্ত আগেই পুনর্বিবেচনা করা উচিত ছিল।”


“বিদ্যালয়ের খুব কাছে এমন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কেন্দ্র কোনোভাবেই শিক্ষার পরিবেশের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন দুর্গন্ধের মধ্যে ক্লাস করবে—এটা গ্রহণযোগ্য নয়।”

নান্দাইল পাইলট উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক বলেন—
“নারী শিক্ষার্থীরা প্রতিদিনই স্বাস্থ্যের ঝুঁকিতে পড়বে। এখানে বিকল্প জায়গা থাকা সত্ত্বেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশে বর্জ্য ফেলাকে আমরা অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত মনে করি।”

স্থানীয় স্বাস্থ্যসেবা কর্মীরা জানান—
গার্বেজ পয়েন্ট বিদ্যালয়ে ও থানার নিকটে হলে মশা, মাছি, জীবাণু ও দুর্গন্ধের কারণে ডেঙ্গু, শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়া, চর্মরোগসহ নানা অসুস্থতার ঝুঁকি থাকে। দীর্ঘমেয়াদে শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপরও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

পথচারী ও ব্যবসায়ীদের উদ্বেগ- কিশোরগঞ্জ, ময়মনসিংহ মহাসড়কের এই এলাকায় প্রতিদিন প্রচুর যাত্রী ও ব্যবসায়ী চলাচল করেন। একজন ব্যবসায়ী জানান— মহাসড়কের লাগুয়া এলাকায় বর্জ্যের স্তূপ থাকলে দুর্গন্ধ এবং নোংরা পরিবেশ তৈরি হবে। এতে ব্যবসায়ীক পরিবেশও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

বিশেষ ভাবে উল্লেখ্য যে, গত ১৮ সেপ্টেম্বর সদ্য বিদায়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার সারমিনা ছাত্তার উক্ত স্থানে আধুনিক পৌর পার্ক নির্মাণের জন্য আনুষ্ঠানিক ভাবে ভিত্তি প্রস্তুর স্থাপন করেন। কিন্তু কিছু দিনের ব্যাবধানে সেখানে তৈরি হচ্ছে ময়লার ভাগাড়, সংগত কারণেই জনমনে দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ব্যস্ত সড়ক ও ঘনবসতিপূর্ণ এলাকার পাশে গার্বেজ ফেলার স্থান নির্মাণ জনস্বাস্থ্য ও শিক্ষার পরিবেশের জন্য গুরুতর ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। তাই পৌর প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তকে পূনঃ বিবেচনার জন্য মতামত দিচ্ছেন স্থানীয়রা। সেইসাথে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ না হলে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সচেতন মহল।


নরসিংদীতে ভূমিকম্পে নিহত ৪, শতাধিক আহত

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

সকাল ১০:৩৮ মিনিটে নরসিংদী সদর ও পলাশ উপজেলার মধ্যবর্তী অঞ্চলে ভূমিকম্প অনুভূত হয়। এতে জেলার বিভিন্ন স্থানে আতঙ্কিত হয়ে দৌড়াদৌড়ির সময় বহু মানুষ আহত হন এবং সর্বশেষ তথ্যানুসারে ৪ জন নিহত হয়েছেন। আহতের সংখ্যা শতাধিক। রিপোর্ট সময়: সন্ধ্যা ৬:১৫ মিনিট।

নিহত ও আহতদের বিস্তারিত:

১. সদর উপজেলার চিনিশপুর ইউনিয়ন (গাবতলি এলাকা)

নির্মাণাধীন ভবনের মালামাল নিচে পড়ে ৪ জন আহত হন। মাথায় মারাত্মকভাবে আহত ২ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানকার চিকিৎসক হাফেজ ওমর (০৮) নামে এক শিশুকে মৃত ঘোষণা করেন। তার বাবা দেলোয়ার হোসেন উজ্জ্বল আশঙ্কাজনক অবস্থায় চিকিৎসাধীন।

২. পলাশ উপজেলার চরসিন্দুর ইউনিয়ন (মালিতা পশ্চিমপাড়া)

কাজেম আলী ভূইয়া (৭৫) মাটির ঘরের নিচে চাপা পড়ে আহত হন। জেলা হাসপাতালে নেওয়ার পথে তিনি মারা যান।

৩. পলাশ উপজেলার ডাংগা ইউনিয়ন (ইসলামপাড়া, নয়াপাড়া গ্রাম)

নাসিরউদ্দিন (৬০) ভূমিকম্পের সময় মাঠ থেকে দৌড়ে আসার পথে রাস্তা থেকে নিচে লাফ দিয়ে পড়ে মারা যান বলে স্থানীয়রা জানান। তিনি ঘটনাস্থলেই মারা যান। নিকটাত্মীয়রা লাশ হাসপাতালে নেননি।

৪. শিবপুর উপজেলার জয়নগর ইউনিয়ন (গাজকিতলা, পূর্বপাড়া)

ফোরকান (৪০) ভূমিকম্পের কম্পনে গাছ থেকে পড়ে গুরুতর আহত হন। নরসিংদী জেলা হাসপাতালে নেওয়ার পর তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। ঢাকায় নেওয়ার পথে তিনি মারা যান।

ক্ষয়ক্ষতি:

১) ঘোড়াশাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র:

সাবস্টেশনে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়; ফায়ার সার্ভিস দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনে।

ভূমিকম্পের কারণে বিপুল পরিমাণ প্রোডাকশন ট্রান্সফরমার (PT) ভেঙে পড়ে।

২) ঘোড়াশাল পলাশ ফার্টিলাইজার কারখানা:

ভূমিকম্পের কারণে ইউরিয়া উৎপাদন সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যায়।

যন্ত্রপাতি অতিরিক্ত ভাইব্রেশনের কারণে বন্ধ হয়ে গেছে; বর্তমানে মেশিনারিজ চেকিং অপারেশন চলছে।

৩) সরকারি ভবনের ক্ষতি:

জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, সার্কিট হাউসসহ জেলার শতাধিক ভবনে ফাটল দেখা দিয়েছে।

জেলা প্রশাসনের উদ্যোগ:

ভূমিকম্পজনিত ক্ষয়ক্ষতি ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার তথ্য সংগ্রহের জন্য জেলা প্রশাসন কন্ট্রোল রুম চালু করেছে এবং সার্বিক পরিস্থিতি নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করছে।


বাউল সম্রাট আবুল সরকার গ্রেপ্তার

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
সাটুরিয়া (মানিকগঞ্জ) প্রতিনিধি

ইসলাম ও আল্লাহকে নিয়ে কটূক্তির অভিযোগে মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ার তিল্লি ইউনিয়নের বাউল সম্রাট মহারাজ আবুল সরকারকে গ্রেপ্তার করেছে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। বৃহস্পতিবার ভোররাতে মাদারীপুরে এক গানের অনুষ্ঠান চলাকালে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

জানা যায়, গত ৪ অক্টোবর মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলায় আয়োজিত এক গানের আসরে আবুল সরকার ইসলামধর্ম এবং আল্লাহর সৃষ্টিকে উদ্দেশ্য করে আপত্তিকর মন্তব্য করেন। তার গানের মাধ্যমে তিনি ভক্তদের উদ্দেশে বলেন যে, আল্লাহর সৃষ্টি নিয়ে কোনো আগা-মাথা নেই এবং আল্লাহ চারবার সৃষ্টির কথা বলেছেন। তিনি একটি আয়াতের ভুল ব্যাখ্যা করে বাংলায় অনুবাদ করে ভক্তদের কাছে দাবি করেন, আল্লাহর কথার কোনো গোঁহা মাথা পাই না। এক মুখে কয় কথা কয়। তার এই মন্তব্যে ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।

আবুল সরকারের গ্রেপ্তারের খবর ছড়িয়ে পড়লে সকাল থেকেই তার বিচারের দাবিতে মানিকগঞ্জ আদালত চত্বরে বিভিন্ন সংগঠন মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করে।

বিষয়টি নজরে আসার পর বৃহস্পতিবার ভোররাতে তাকে মাদারীপুর থেকে গ্রেপ্তার করে মানিকগঞ্জ ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে আসে।

মানিকগঞ্জ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ইসলাম অবমাননার অভিযোগে ঘিওর থানায় একটি মামলা হয়েছে। বিজ্ঞ আদালত তাকে জামিন নামঞ্জুর করে জেলহাজতে প্রেরণ করেছে।


তেঁতুলিয়ায় ৩৭ বছরের শিক্ষকতা করা প্রধান শিক্ষককে রাজকীয় সংবর্ধনা

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
তেঁতুলিয়া (পঞ্চগড়) প্রতিনিধি

পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ার ভজনপুর দেবনগর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের অবসর গ্রহণ উপলক্ষে বিদ্যলয়ের সাবেক শিক্ষার্থী, সহকর্মী ও এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে গত বৃহস্পতিবার বিকালে রাজকীয় বিদায় সংবর্ধনা প্রদান করা হয়েছে। শিক্ষকের প্রতি ভালোবাসা এবং শ্রদ্ধার বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন সাবেক শিক্ষার্থীরা। প্রিয় শিক্ষকের বিদায় বেলায় সাবেক, বর্তমান শিক্ষার্থী ও সহকর্মীদের ভালোবাসায় সিক্ত হয়েছেন তেঁতুলিয়া উপজেলার ৭নং ভজনপুর দেবনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আসলাম হোসেন।

সাবেক ছাত্ররা প্রিয় শিক্ষককে গাড়িতে উঠিয়ে ফুল দিয়ে বরণ করে স্কুলে নিয়ে আসেন। তারপর মঞ্চে উঠিয়ে সংবর্ধনা প্রদান করেন। এ সময় শিক্ষাগুরুর ভালোবাসার স্মৃতিচারণ করেন সাকের শিক্ষার্থীরা।

মো. আসলাম স্যারের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোছা. ফাতিমা নাজরীন বলেন, স্যারের শূন্যতা কখনই পূরণ হওয়ার নয়। স্যার অনেক ভালো শিক্ষক ছিলেন।

শিক্ষক আসলাম হোসেনের কর্মজীবন শুরু হয় হারাদিঘী উচ্চবিদ্যালয় দিয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে ১৯৮৮ সালে। এরপর বদলি হয়ে ১৯৯৫ সালে তেঁতুলিয়া, কামাতপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চলে আসেন সহকারী শিক্ষক হিসেবে। এর পর তিনি পদোন্নতি পেয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে তেঁতুলিয়া মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগদান করেন ১৯৯৮ সালে। ২০০৮ সালে জাতীয় পর্য্যায়ে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হয়েছেন। ২০১১ সালে ভজনপুর দেবনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আদ্যবদি প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন। প্রায় দীর্ঘ ৩৭ বছর শিক্ষকতা করে আজ (বৃহস্পতিবার) অবসরে যান এই প্রধান শিক্ষক মো. আসলাম।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন, বাংলা চণ্ডী স্কুলের প্রধান শিক্ষক আবু ছায়েদ, ঝালিংগিগছ স্কুলের প্রধান শিক্ষক শাহা আজিজুর রহমান, দোলনচাঁপা স্কুলের প্রধান শিক্ষক মোছা. নাজমা খানম, তেঁতুলিয়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার জাহাঙ্গির আলম, উপজেলার প্রাথমিক সহকারী শিক্ষা অফিসার সীমান্ত কুমার বসাক, উপজেলা প্রাথমিক সহকারী শিক্ষা অফিসার মিনহাজুল ইসলাম ও বোদা উপজেলার প্রাথমিক সহকারী শিক্ষা অফিসার ইউনুছ আলী প্রমুখ।


নেত্রকোনায় গণমাধ্যমকর্মীদের সাথে জেলা প্রশাসকের মতবিনিময়

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
এ বি চৌধুরী নাদিম, নেত্রকোনা

নেত্রকোনায় নবাগত জেলা প্রশাসক ও বিজ্ঞ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. সাইফুর রহমান জেলার প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় করেছেন।

গত বৃহস্পতিবার জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জেলা প্রশাসকের সভাপতিত্বে এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। শুরুতে জেলায় কর্মরত সাংবাদিকরা স্ব-স্ব পরিচিতি প্রদান করেন। পরে জেলা প্রশাসক নিজেও পরিচিতি দিয়ে মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন। সাংবাদিকরা জেলার বিভিন্ন অসংগতি ও প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরেন। জেলা প্রশাসক মো. সাইফুর রহমান জেলার সকল সাংবাদিকদের কাছে সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেন।

এ সময় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) রাফিকুজ্জামান, স্থানীয় সরকারের উপপরিচালক আরিফুল ইসলাম সরদার, লেখক সাংবাদিক বীর মুক্তিযোদ্ধা হায়দার জাহান চৌধুরী, জেলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক কিবরিয়া চৌধুরী হেলিম, জতীয় দৈনিকের সাংবাদিক বাবু শাামলেন্দু পাল, জেলা প্রেসক্লাবের সহসভাপতি জাহিদ হাসান, জাতীয়তাবাদী সাংবাদিক ফোরামের সহসভাপতি দেলোয়ার হোসেন মাসুদ, জেলা প্রেসক্লাবের প্রচার প্রকাশনা সম্পাদক হাফিজ উল্লাহ চৌধুরী আলিম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাজমুস শাহাদাত নাজুসহ বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠনের নেতারা ও গণমাধ্যমকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।


নওগাঁয় ‘অপারেশন ফার্স্ট লাইট’ অভিযানে ২৩ জন গ্রেপ্তার

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নওগাঁ প্রতিনিধি

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে অপরাধ দমন ও নিরাপত্তা জোরদারের অংশ হিসেবে রাজশাহী রেঞ্জ পুলিশের বিশেষ নির্দেশনায় নওগাঁয় পরিচালিত হলো ‘অপারেশন ফার্স্ট লাইট’।

গত বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত জেলার তিনটি উপজেলায় একযোগে এই অভিযান পরিচালনা করা হয়।

জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী রেঞ্জের একজন অতিরিক্ত ডিআইজির নেতৃত্বে দুটি বিশেষ দল গঠন করা হয়। শতাধিক পুলিশ সদস্য রাতভর নওগাঁর পোরশা, নিয়ামতপুর ও সদর এলাকায় অভিযানে অংশ নেন। চোর-ডাকাত, অস্ত্র ব্যবসায়ী ও মাদক কারবারিদের পাশাপাশি বিভিন্ন মামলার পলাতক আসামিদের ধরতে বাড়ি-বাড়ি তল্লাশি, সড়কপথে চেকপোস্ট স্থাপন এবং অপরাধপ্রবণ এলাকায় বিশেষ নজরদারি বাড়ানো হয়। এ সময় অভিযানে পোরশা থানায় ১৪ জন, নিয়ামতপুর থানায় ৯ জন এবং নওগাঁ সদর থানা এলাকায় ২ জনসহ মোট ২৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারদের মধ্যে রয়েছে ৮ জন চিহ্নিত ডাকাত ও কয়েকজন মাদক ব্যবসায়ী। এ সময় দেশীয় অস্ত্র ও উল্লেখযোগ্য পরিমাণ মাদকদ্রব্যও উদ্ধার করা হয়।

পোরশা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘পোরশা এলাকায় সম্প্রতি বেশ কয়েকটি চুরি-ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। এসব মামলার আসামি ছাড়াও মাদক ব্যবসায়ীদের ধরতে আমরা বিশেষ নজরদারি চালাচ্ছি। অপারেশন ফার্স্ট লাইট এখনো চলছে; গ্রেপ্তারের সংখ্যা বাড়তে পারে।’

নিয়ামতপুর থানার ওসি মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান বলেন, ‘রাতভর ও ভোরে একাধিক স্থানে অভিযান হয়েছে। বেশ কয়েকজন পলাতক আসামি ও মাদক ব্যবসায়ীকে ধরা হয়েছে। জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমরা সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে আছি।’

নওগাঁর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শফিউল সারোয়ার বলেন, ‘পোরশা-নিয়ামতপুর এলাকায় সাম্প্রতিক চুরি-ডাকাতির ঘটনা এবং জাতীয় নির্বাচনের আগে সার্বিক আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রাখতে আমরা এই বিশেষ অভিযান পরিচালনা করছি। অপরাধী যেই হোক, তাকে আইনের আওতায় আনা হবে। পুরো জেলার নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত অভিযান চলবে।’


অত্যাচারের সাক্ষী হয়ে আজো দাঁড়িয়ে আছে মাদারীপুরের নীলকুঠির

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
ফায়েজুল কবীর, মাদারীপুর

মাদারীপুরের সদর উপজেলার শিলারচর ইউনিয়েনের আউলিয়াপুরে ব্রিটিশ নীলকরদের জুলুমের নিদর্শন নীলকুঠি বাড়ী ধ্বংসাবশেষ নিয়ে ২৬৫ বছর যাবৎ আজো দাঁড়িয়ে আছে কালের স্বাক্ষী হয়ে। ১৭৫৭ ইং সালে পলাশীর যুদ্ধে নবাব সিরাজুদ্দৌলার পরাজয় ও বৃটিশদের কাছে ভারতবর্ষের পতনের কিছুদিন পরেই ব্রিটিশ শাসকদের অন্যতম সহযোগী স্বৈরশাসক নীলকর ডানলপ তার সৈন্যবাহিনী নিয়ে তদানিন্তন ফরিদপুর জেলা ও বর্তমান মাদারীপুর জেলার শিলারচর ইউনিয়নের আউলিয়াপুরে ৮ একর জায়গার উপরে ১২ কক্ষ বিশিষ্ট ইট-সুরকী-পোড়ামাটি দিয়ে একটি নীলকুঠি বাড়ীসহ পাশেই ধোঁয়া নির্গমনের জন্য ৪০ ফুট উঁচু একটি চিমনী স্থাপনের কাজ শুরু করেন।

এসময় নীলকররা প্রথমে আশে-পাশের কৃষকদের মুজুরি দেওয়ার কথা বলে তাদের সামান্য কিছু মুজুরি দিয়ে উক্ত কাজ কিছুদিনের মধ্যে সম্পন্ন করে ফেলেন। এরপর আশেপাশের জমি-জমা দখল করে কৃষকদের বাধ্য করেন নীলচাষে। কৃষকদের মধ্যে কেউ নীলকর ডানলপ বাহিনীর কথা না শুনলে তাদের উপর চালানো হতো অমানুষিক শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। এমনকি তাদের আটকেও রাখা হতো ঐ নীলকুঠি বাড়ীর এলাকায়। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিলো সেখানকার কৃষকদের ধান ও পাটসহ অন্যান্য শস্য উৎপাদন।

ব্রিটিশ নীলকররা অল্প সময়ে বেশি অর্থ উপার্জনের জন্য তখন ফসল ফলানো বন্ধ করে দিয়ে শুধু ঐ এলাকায় একমাত্র নীল চাষেই বাধ্য করেছিল। এভাবে বছরের পর বছর ধরে ডানলপ ও তার বাহিনী কৃষকদের উপর অমানবিক মারধর, জুলুম, হত্যা ও নির্যাতন চালিয়ে যেতে থাকে। এমকি ঐ এলাকার যুবতী মেয়েদেরও তারা অপহরণ ও ধর্ষণ করত।

এ খবর চারিদিকে ছড়িয়ে পড়লে ব্রিটিশবিরোধী ফরায়েজী আন্দোলনের নেতা মাদারীপুর শিবচর থানার বাহাদুরপুরের বাসিন্দা হাজী মো. শরীয়তুল্লাহ ঐ নীলকরদের বিরুদ্ধে তার লাঠিয়াল বাহিনী নিয়ে আন্দোলন গড়ে তোলেন এবং দীর্ঘদিন তিনি ব্রিটিশ ও নীলকর বিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন। তার মৃত্যুর পরে তার পুত্র ও শিবচর বাহাদুরপুর মাদ্রসার প্রতিষ্ঠাতা পীর হাজী মো. মহসিনউদ্দিন দুদু মিয়া সেই আন্দোলন চালিয়ে যেতে থাকেন। একপর্যায়ে তিনি বিশাল লাঠিয়াল বাহিনী নিয়ে ঐ নীলকুঠি বাড়ীর পাশ্ববর্তী শিবপুর (বর্তমান নাম- রণখোলা বা যুদ্ধক্ষেত্র) এলাকার লাঠিয়াল সর্দার বংশের এলাকয় ঘাটি গেড়ে নীলকর ডানলপ ও তার বাহিনীর বিরুদ্ধে আন্দোলন চলমান রাখেন। বৃটিশ নীলকর ডানলপ তা টের পেয়ে তার বাহিনী নিয়ে সেখানে হাজী দুদু মিয়ার লাঠিয়াল বাহিনীকে ঘেরাও করলে উভয়পক্ষের মধ্যে যুদ্ধ বেঁধে যায়। সে যুদ্ধে হাজী দুদু মিয়ার লাঠিয়াল বাহিনী ও উক্ত রণখোলা সর্দার বংশের লাঠিয়াল বাহিনীর কাছে ডাললপ বাহিনী পরাজিত ও বহু হতাহত হয়ে ঐ এলাকা চিরতরে ত্যাগ করেন। ২৬৫ বছর ধরে কালের স্বাক্ষী হয়ে ধ্বংসাবশেষ নিয়ে আজো দাঁড়িয়ে আছে মাদারীপুর আউলিয়াপুরের নীলকুঠি বাড়ী। এক সাক্ষাতকারে উক্ত এলাকার ৭০ উর্ধ্বো বিল্লাল ঢালী, খোকন ঢালী ও নীলকুঠি বাজারের ব্যবসায়ী সহ স্থানীয় লোকজন ঐতিহাসিক ঐ নিদর্শন সংরক্ষণের জন্য সরকারের কাছে আহবান জানিয়েছেন।


banner close