শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগ দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীদের অসহযোগ কর্মসূচি ঘিরে রোববার ঝিনাইদহ, নাটোর, নওগাঁ, নড়াইলসহ সারা দেশে ব্যাপক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এতে ঝিনাইদহে ৩০, নড়াইলে ২০, ঢাকার কেরানীগঞ্জ ৫০ জন আহত হয়েছেন। এ সময় থানায় হামলা, পুলিশ বক্স ভাঙচুর, পোস্ট অফিস, পৌরসভাসহ বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা ও বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুর করা হয়েছে।
বিস্তারিত প্রতিনিধিদের পাঠানো প্রতিবেদন
নাটোর: নাটোরে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সরকারদলীয় নেতা-কর্মীদের ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। রোববার দুপুর সোয়া ১২টার দিকে শহরের ভবানীগঞ্জ মোড় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। আন্দোলনকারীদের পূর্বঘোষণা অনুযায়ী দুপুর ১২টায় শহরের মাদ্রাসা মোড় এলাকায় বিক্ষোভ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেয় তারা। সকাল থেকে অল্প অল্প করে আন্দোলনকারীরা জড়ো হতে শুরু করে। দুপুর সোয়া ১২টার দিকে প্রায় দুই শতাধিক আন্দোলনকারী জমায়েত হয়। এ সময় আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগের নেতা-কর্মীরা তাদের প্রতিহত করতে ধাওয়া দেয়। এ সময় আন্দোলনকারীরাও তাদের ধাওয়া দিলে এবং ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে উভয়পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় বেশ কয়েকজন আন্দোলনকারীকে মারধর করে সরকারদলীয় নেতা-কর্মীরা। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ঘটনাস্থলে পৌঁছালে বিক্ষোভকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়।
অন্যদিকে নাটোরের বাগাতিপাড়ায় বিক্ষোভ মিছিল করেছে বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা। সকাল ১০টার দিকে দয়ারামপুর বাজার এলাকায় শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও সাধারণ জনতা সড়কে জমায়েত হয়ে বিক্ষোভ করে সরকারের পদত্যাগ দাবি করে বিভিন্ন স্লোগান দেয়।
নওগাঁ: নওগাঁয় বিক্ষোভ মিছিল ও সড়ক অবরোধ করেছে আন্দোলনকারীরা। রোববার সকাল ১০টা থেকে শহরের কাজীর মোড়ে জড়ো হতে শুরু করেন বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা। তাদের সঙ্গে অংশ নেন আরও অনেকে। পরে আন্দোলনকারীরা প্রধান সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। এ সময় এক দফা দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দিতে শোনা যায় তাদের। এতে বন্ধ হয়ে যায় প্রধান সড়ক দিয়ে যানচলাচল।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা শহরের সরিষাহাটির মোড়ে আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে অবস্থান নেন। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয় পথচারীদের। বিশেষ করে অটোরিকশা চালকদের। অনেক পথচারীকে হেঁটে বিকল্প রাস্তা দিয়ে যেতে দেখা যায়। মোটকথা পুরো শহরে আতঙ্কের পরিবেশের সৃষ্টি হয়। দোকানপাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। বন্ধ রয়েছে যাত্রীদের চলাচলের জন্য ভারী যানবাহন।
এদিকে সাধারণ পথচারীদের সতর্ক করতে দোকান বন্ধ করে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করছিল দোকানদার আকাশসহ অনেক ব্যবসায়ী। তারা জানান, পথচারীরা যেন কোনো বিপদের সম্মুখীন না হয়, তাই তাদের সতর্ক করে বিকল্প পথে যেতে বলছি।
দুপুরের দিকে পার্টি অফিস থেকে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা মিছিল নিয়ে আন্দোলনকারীদের দিকে আসতে চাইলে কিছু সময়ের জন্য উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। পরে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ সেনাবাহিনীর সদস্যদের সতর্ক অবস্থানের কারণে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যায়।
নওগাঁর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) গাজিউর রহমান বলেন, আন্দোলন ও বিক্ষোভের শুরু থেকেই পুলিশ তাদের সুষ্ঠু ও সুশৃঙ্খলভাবে আন্দোলন করার জন্য বলেছে। তাদের প্রতি পুলিশ সহনশীল আচরণ করছে। শিক্ষার্থীদের যাতে কোনো ক্ষতি না হয় সে জন্য তাদের নিরাপত্তা দিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। মোটকথা শহরে যেকোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা এড়াতে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।
ঝিনাইদহ: ঝিনাইদহে কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়ার সময় পুলিশসহ ৩০ জন আহত হয়েছেন। আন্দোলনকারীরা রোববার বেলা ১১টা থেকে বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত সারা শহরে তাণ্ডব চালায়। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা যোগ দেয়।
শিক্ষার্থীরা সকালে শহরের মুজিব চত্বর থেকে এবং বিএনপি হাটের রাস্তা থেকে মিছিল বের করেন। তারা পায়রা চত্বরে এসে একসঙ্গে মিলিত হয়। মিছিল থেকে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুর, থানায় হামলা, পুলিশ বক্স ভাঙচুর, পৌরসভা, ছবি তোলার সময় সাংবাদিক কাজী আলী আহমেদ লিকুর ওপর হামলা চালায়। এ ছাড়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সফিকুল ইসলাম অপুর বাড়িসহ বিভিন্ন স্থাপনায় ইটপাটকেল ছুড়ে হামলা চালায়। পুলিশ বাঁধা দিলে শুরু হয় ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়া। সে সময় পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড, কাঁদানি গ্যাস ও শর্টগানের গুলি ছোড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। একপর্যায়ে সারা শহর রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এতে পুলিশসহ অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন। ইটের আঘাতে পুলিশের এসআই শরিফুজ্জামানের মাথা ফেটে গেছে। আহতদের মধ্যে ২৪ জনকে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাকিরা বিভিন্ন ক্লিনিকে ভর্তি হয়েছেন। সকাল থেকে যানবাহন চলাচল করেনি। দোকানপাট খোলেনি। পুলিশি নিরাপত্তায় অফিস-আদালত চলেছে এবং উত্তপ্ত পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
নড়াইল: বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের অসহযোগ আন্দোলনের ডাকে রোববার বেলা ১১টায় নড়াইল সদর উপজেলার আউড়িয়া ইউনিয়নের মাদ্রাসা বাজার এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে। মিছিলে বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের কয়েক হাজার নেতা-কর্মী যোগ দেয়। মিছিলটি শহরে প্রবেশের চেষ্টা করলে চিত্রা নদীর শেখ রাসেল সেতুর ওপর উঠলে পুলিশ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা বাধা দেয়। এতে উভয়পক্ষের মধ্যে ইটপাটকেল নিক্ষেপসহ পুলিশ কয়েক রাউন্ড টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে। এতে ২০ জনের মতো আহত হন। এ সময় ঢাকা-বেনাপোল ভায়া নড়াইল মহাসড়কে যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
সংঘর্ষে পুলিশের টিয়ারসেল নিক্ষেপের পাশাপাশি কয়েক রাউন্ড গুলি চালায়। এত আল নাহিয়ান প্রিন্স নামে এক যুবলীগ কর্মী গুলিবিদ্ধ হয়ে সদর হাসপাতালে ভর্তি হন। প্রিন্স নড়াইল পৌরসভার আলাদাতপুর গ্রামের শেখ আবু বক্করের ছেলে।
সীমাখালী গ্রামের প্রত্যক্ষদর্শী মিজান মোল্লা, মিলি খানম, শিমুল হাসান জানান, সেতুর দক্ষিণ পাশেই আমার বাড়ি। অনেক বিএনপি, জামায়াত-শিবিরের ছেলেরা রাস্তার ওপর ইট ভেঙে পুলিশের দিকে ছুড়ে মারছিল। এদের হাতে হ্যান্ড মাইকও ছিল। পানি খেতে চাইলে আমরা তাদের পানি পানের ব্যবস্থা করেছি। ওরা পানি পানের সময় বসে পান করছিল। ওদের কাউকে চিনি না।
প্রিন্স জানান, ‘চিত্রা নদীর উত্তর প্রান্তে পুলিশ এবং ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতা-কর্মীরা অবস্থান নেয়। আর সেতুর দক্ষিণ প্রান্তে বিএনপি-জামায়াত শিবিরের নেতা-কর্মী অবস্থান নেয়। ইটপাটকেল নিক্ষেপের একপর্যায়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে। এ সময় অন্য প্রান্ত থেকে কয়েক রাউন্ড গুলি করা হয়। একটি বুলেট আমার পেটে লেগে বের হয়ে যায়। সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আকাশ ঘোষ রাহুলসহ উভয়পক্ষের ২০ জন আহত হন।
এদিকে ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দুজন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন এমন খবর ভেসে বেড়ালেও এর কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি।
কেরানীগঞ্জ (ঢাকা): ঢাকার কেরানীগঞ্জে আন্দোলনকারী ছাত্রদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের দফায় দফায় সংঘর্ষে মডেল থানার ঘাটারচর এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। এ সময় আন্দোলনকারীরা বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ, আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের বাড়ি, ব্যক্তিগত অফিস ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ এবং কেরানীগঞ্জ মডেল থানা আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে নেতাদের অবরুদ্ধ করে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। এ সময় আওয়ামী লীগের ডজনখানেক নেতা-কর্মী গুরুতর এবং বেশ কিছু আন্দোলনকারী সামান্য আহত হয়। এর আগে (রোববার) সকালে কেরানীগঞ্জ মডেল থানাধীন ঘাটারচর এলাকায় গত ২১ জুলাই কোটা আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত ইস্পাহানি ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থী রিয়াজ নিহত হওয়ার প্রতিবাদে ও অসহযোগ আন্দোলনের সমর্থনে পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে কেরানীগঞ্জের সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা আটি ভাওয়াল উচ্চবিদ্যালয়ের সামনে থেকে মিছিল বের করার চেষ্টা করলে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা তাতে বাধা দেয়। বাধা উপেক্ষা করে সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা মিছিল নিয়ে সামনে অগ্রসর হলে বড় মনোহরিয়া চৌরাস্তা এলাকায় ছাত্রদের মিছিলের ওপর পেছন থেকে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও গুলিবর্ষণ করে। এতে মুহূর্তেই সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা ছাত্রভঙ্গ হয়ে যায়। পরে তারা সংগঠিত হয়ে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ধাওয়া দিলে নেতা-কর্মীরা দিগ্বিদিক ছোটাছুটি করে বিভিন্ন দোকানপাটের ভেতরে আশ্রয় নেয়। এ সময় মডেল থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আবু সিদ্দিক ও তারানগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন ফারুক অবরুদ্ধ হন। পরবর্তী সময়ে স্থানীয়দের সহায়তায় তাদের উদ্ধার করা হয়। পরে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ছয়টি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ ও পাঁচটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে। এ ছাড়া স্থানীয় চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ফারুক এবং আওয়ামী লীগ নেতা আবু সিদ্দিকের বাড়িতে ব্যাপক ভাঙচুর চালিয়ে তাদের ব্যবহৃত গাড়ি পুড়িয়ে দেয়।
এর কিছুক্ষণ পরে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা পুনরায় সংগঠিত হয়ে আবারও ছাত্রদের ধাওয়া দিয়ে ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও গুলিবর্ষণ শুরু করে। এ সময় বিক্ষুব্ধ আন্দোলনকারীরা আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের ধাওয়া দিলে তারা ঘাটারচর এলাকায় কেরানীগঞ্জ মডেল থানা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের ভেতরে আশ্রয় নেয়। পরে বিক্ষুব্ধ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা আওয়ামী লীগের কার্যালয় ঘেরাও করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে এবং প্রধান ফটকে আগুন লাগিয়ে দেয়। অবস্থা বেগতিক দেখে বেশ কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতা ভবনের দ্বিতীয় তলার ছাদের ওপর গিয়ে আশ্রয় নিলে উত্তেজিত শিক্ষার্থীরা ছাদের গেট ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে তাদের গণধোলাই দেয়। এ সময় হুড়োহুড়ি করে ভবনের ভেতর ঢুকতে গিয়ে ও ভবনের ওপর থেকে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের ছোড়া ইটের আঘাতে অন্তত ২০ জন শিক্ষার্থী আহত হয়। পরে ভবনে আটকে থাকা অন্তত ১০-১৫ জন আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী আন্দোলনকারীদের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।
খুলনা: খুলনায় আওয়ামী লীগের অফিসে আগুন দিয়েছে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। রোববার বেলা ১২টার দিকে খুলনার শঙ্খ মার্কেটের জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে তারা আগুন ধরিয়ে দেয়। এ সময় শিক্ষার্থীরা শেখ হাসিনা সরকারের পতন ও জাতীয় সরকার গঠনের লক্ষ্যে নানা রকম স্লোগান দিতে থাকেন। এর আগে সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দলে দলে শিক্ষার্থীরা নগরীর শিববাড়ি মোড়ে জড়ো হতে থাকেন। বর্তমানে ওই মোড়ে প্রায় ৫/৭ হাজারের কাছাকাছি শিক্ষার্থী উপস্থিত রয়েছেন। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে একদল শিক্ষার্থী শিব বাড়ি থেকে মিছিল সহকারে খুলনার আওয়ামী লীগ অফিসের দিকে রওনা হয়ে এ অগ্নিকাণ্ড ঘটায়।
সিলেট: সিলেটের বন্দরবাজারের কোর্ট পয়েন্ট এলাকায় পুলিশের সাথে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ চলছে। বেলা ১২টার দিকে এ সংঘর্ষ শুরু হয়। পুলিশ আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে ব্যাপক টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেণেড ছুঁড়ছে। জানা যায়, অসহযোগ চলাকালে পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী বেলা ১১টার দিকে নগরের কোর্ট পয়েন্ট এলাকায় জড়ো হয় আন্দোলনকারীরা। এতে শিক্ষার্থীদের সাথে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষও যোগ দেন। এই এলাকায়ই জেলা প্রশাসক কার্যালয়, পুলিশ সুপার কার্যালয়, সিটি করপোরেশনসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সরকারি অফিস রয়েছে। আন্দোলনকারীরা অবস্থান নেওয়ার আগে থেকেই এ এলাকায় বিপুল সংখ্যক পুলিশ সাজোয়া যান নিয়ে অবস্থান নেয়। বেলা ১২টার দিকে পুলিশের সাথে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ শুরু হয়। আন্দোলনকারীদের থামাতে পুলিশ টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেণেড ছুঁড়ছে। এক পর্যায়ে পুলিশের বাধা পেয়ে মূল সড়ক ছেড়ে আশপাশের গলিতে অবস্থান নেয় আন্দোলনকারীরা।
মোংলা (বাগেরহাট): মোংলা-খুলনা মহাসড়কের ফয়লা এলাকায় (বাগেরহাটের রামপাল) আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও পুলিশের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়েছে। চলমান ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার মধ্যে একটি পুলিশ ভ্যানে আগুন দেয় আন্দোলনকারীরা। এ সময় সংবাদ সংগ্রহে গিয়ে আহত হয়েছেন বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার সাংবাদিক সবুর রানা ও সুজন মজুমদার।
এদিকে অসহযোগ আন্দোলনের অংশ নিয়ে মোংলা-খুলনা মহাসড়কের ভাগা এলাকায় সকালে বিক্ষোভ মিছিল করে শিক্ষার্থীরা। রবিবার বেলা সাড়ে ১১টায় বের হওয়া মিছিল শেষে মহাসড়কে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা। দুপুর ১২টা পর্যন্ত চলে শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন। পরে পুলিশ ও আন্দোলনকারীরা ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া জড়িয়ে পড়েন।
দিনাজপুর: জাতীয় সংসদের হুইপ ও দিনাজপুর সদর-৩ আসনের সংসদ সদস্য ইকবালুর রহিম এমপি ও বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের বাসা ভাংচুর ও আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে বিক্ষুব্ধরা। এ সময় পুলিশের দুটি পিকআপ ভ্যানে আগুন জ্বালিয়ে দেয় তারা। রাবার বুলেট ও কাঁদলে গ্যাস ছুটছে পুলিশ। সদর হাসপাতাল, জোড়া ব্রীজ, ফুলবাড়ি বাসস্ট্যান্ড, লিলির মোড়, বাহাদুর বাজার, স্টেশন রোড, কাচারী রোড, মডার্ণ মোড়, বুটিবাবুর মোড়, মুন্সীপাড়াসহ সারা শহরে আন্দোলনকারীদের সাথে পুলিশের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া চলে। শত শত রাউন্ড রাবার বুলেট ও টিয়ার শেল ছুড়েছে পুলিশ। এসব ঘটনায় ১০ জন গুলিবিদ্ধসহ আহত হয়েছে অর্ধশত ব্যক্তি।
সকাল ১০টায় দিনাজপুর ফুলবাড়ী বাসস্ট্যান্ডে আন্দোলনকারী জমায়েত হতে শুরু করে। তারা মিছিল নিয়ে শহরের হাসপাতাল মোড়স্থ হুইপ ইকবালুর রহিম এমপি ও বিচারপতি ইনায়েতুর রহিমের বাড়ির দিকে অগ্রসর হতে শুরু করলে পুলিশের সাথে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। দিনাজপুরের পুলিশ সুপার শাহ ইফতেখার আহমেদের নেতৃত্বে পুলিশ আন্দোলনকারীদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করে। দীর্ঘসময় পুলিশের সাথে সংঘর্ষের এক পর্যায়ে আন্দোলনকারীরা হুইপ ও বিচারপতির বাড়ীতে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। তারা বাড়ীতে থাকা কয়েকটি মোটরসাইকেল বের করে বাসার গেটে এনে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। জানা গেছে, ধাওয়া পাল্টা দেওয়ার সময় এবং রাবার বুলেট ও টিয়ার সেল নিক্ষেপ করে। ১০ জনের গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। সারা শহরজুড়ে থেমে থেমে আন্দোলনকারীদের সাথে পুলিশের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে। শহরের মোড়ে মোড়ে এখন আগুন জ্বলছে। এসব ঘটনা চলাকালে শহরের কোথাও সেনা সদস্য বা বিজিবির উপস্থিতি দেখা যায়নি। এর আগে শহরের পলিটেকনিক মোড়ে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ ও গ্রাফিতি অঙ্কন করে শিক্ষার্থীরা। পরে মিছিল নিয়ে শহরের দিকে অগ্রসর হলে এ সংঘর্ষে সুত্রপাত হয়।
নেত্রকোনা: নেত্রকোনায় রোববার সকাল ১০টা থেকে সরকার বিরোধী আন্দোলনকারী ও সরকারের পক্ষের সমর্থক সহ নেতাকর্মীদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়েছে। শহরের সাতপাই, নাগড়া সহ বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। জেলার শ্যামগঞ্জ বাজারের একাধিক বাসিন্দা জানান, নেত্রকোণা-ময়মনসিংহ সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে আন্দোলনকারীরা। এসময় পুলিশের একটি গাড়ি ভাঙচুর করে আন্দোলনকারীরা।
নোয়াখালী: নোয়াখালীতে রোববার সকাল থেকেই জেলা শহর মাইজদীর প্রধান সড়কে অবস্থান নেয় বিক্ষোভকারীরা। এসময় তাদের বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে রাস্তায় আগুন দিতে দেখা যায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টায় এখন কোথাও পুলিশি তৎপরতা দেখা যায়নি। সকাল ১০ টার দিকে নোয়াখালী-৪(সদর-সুবর্ণচর) আসনের সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরী তার অনুসারী নেতা-কর্মীদের নিয়ে পুড়ে যাওয়া জেলা আওয়ামী লীগ অফিস দেখতে আসেন। এসময় বিক্ষোভকারীদের সাথে তাদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এসময় কয়েক রাউন্ড গুলির শব্দ শুনা যায়। একপর্যায়ে এমপি একরাম সহ তার অনুসারীরা ব্যর্থ হয়ে জেলা শহর থেকে চলে যান। শহরেরর সব কটি সড়কে আগুন জ্বালিয়ে অবস্থান করে বিক্ষোভকারীরা।
বেলা সাড়ে ১১টার সময় সেনাবাহিনীর গাড়ী টহল দেওয়ার সময় আন্দোলনকারীরা ‘এ মুহূর্তে দরকার সেনাবাহিনীর সরকার’- স্লোগান দেয়।
কালিয়াকৈর (গাজীপুর): গাজীপুরের কালিয়াকৈরে গতকাল রোববার দিনব্যাপী সড়ক-মহাসড়ক অবরোধ করে বিভিন্ন স্লোগানে বিক্ষোভ মিছিল করেছে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনকারীরা ৩টি পুলিশ বক্স, আওয়ামী লীগের অফিস, থানার সামনে রাখা গাড়িসহ বেশকিছু যানবাহনে অগ্নিসংযোগ করে। এক পর্যায় পুলিশ ও আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মাঝে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। শিক্ষার্থীদের হামলায় ওসিসহ কয়েকজন পুলিশ সদস্য ও পুলিশের গুলিতে শিশুসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হন। থমথমে বিরাজ করছে কালিয়াকৈর।
চুয়াডাঙ্গা: চুয়াডাঙ্গা জেলাজুড়ে কর্মসূচি পালন করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা। এসময় জেলার বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নেয় শিক্ষার্থীরা। কোথাও কোথাও বিক্ষোভ প্রদর্শন করতে গেলে বাধার মুখে পড়েন তারা। ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা তাদের ওপর হামলা চালায় বলে অভিযোগ তোলেন। রোববার সকাল থেকে জেলাজুড়ে এমন পরিস্থিতি বিরাজ করছিল। সকাল থেকে চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুর সড়কের ভালাইপুর বাজারে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন আন্দোলনকারীরা। এসময় তারা একদফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে যান চলাচল বন্ধ করে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। সড়কের দু’পাশে সৃষ্টি হয় যানজট।
একই সাথে শহরের কোর্টমোড় এলাকাতেও বিক্ষোভ করতে গেলে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের বাধার মুখে পড়েন আন্দোলনকারীরা। এসময় তাদের ব্যানার ছিড়ে ফেলা হয়। শহরের হাসপাতাল সড়কে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালানো হয়। দর্শনা শহরে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে আন্দোলনকারীরা বাসস্ট্যান্ডে জড়ো হলে তাদের ওপরেও হামলা চালানো হয় বলে অভিযোগ ওঠে। এছাড়া জেলার বদরগঞ্জ, জীবননগর ও আলমডাঙ্গাতেও সড়কে নামে আন্দোলনকারীরা। এমন পরিস্থিতিতে জেলাজুড়ে আতঙ্ক ও থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।
ভৈরব (কিশোরগঞ্জ): কিশোরগঞ্জের ভৈরবে আন্দোলনকারীদের সাথে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষ চলাকালে পুলিশ প্রায় শতাধিক রাউন্ড রাবার বুলেট ও টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ করে। এসময় কমপক্ষে অর্ধশত আহত হয়। রোববার দুপুর ১২টা থেকে বিকেল সাড়ে ৩ টা পর্যন্ত ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ও স্থানীয় বাসস্ট্যান্ড, জগনাথপুর এবং কালিকাপ্রসাদ এলাকায় এ সংঘর্ষ চলে। এসময় আন্দোলনকারীরা কয়েকটি বাড়ীঘর দোকানপাট ভাংচুর করে। তবে বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে দেখা যায়নি। স্থানীয় বিএনপির কিশোর যুবকদের আন্দোলনে অংশ নিতে দেখা যায়। তারা দুপুর দেড়টার দিকে ভৈরব থানা আক্রমণ করতে চেষ্টা করলে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা মিলে আন্দোলনকারীদের সরিয়ে দেয়। এ সময় পুলিশ কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়ে।
চট্টগ্রাম নগরে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানির হার দিন দিন উদ্বেগজনক হয়ে উঠছে। ২০১৭ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত আট বছরে নগরে সড়ক দুর্ঘটনায় অন্তত ৬৬২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে পথচারীরাই সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে ছিলেন। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) যৌথ উদ্যোগে প্রকাশিত ‘চট্টগ্রাম সিটি রোড সেফটি রিপোর্ট–২০২৫’— এ এসব তথ্য উঠে এসেছে।
বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) নগরের দামপাড়া পুলিশ লাইনের সম্মেলন কক্ষে প্রতিবেদনটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। এটি চট্টগ্রামে পুলিশি তথ্যের ভিত্তিতে প্রকাশিত তৃতীয় সড়ক নিরাপত্তা প্রতিবেদন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম ও অপারেশন) মো. হুমায়ুন কবির। বিশেষ অতিথি ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) ওয়াহিদুল হক চৌধুরী এবং চসিকের প্রধান প্রকৌশলী মো. আনিসুর রহমান সোহেল।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৭ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে চট্টগ্রাম নগরে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর হার বেড়েছে ২৯ শতাংশ। বিশেষ করে ২০১৯ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে প্রাণহানির সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়। ২০২১ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত এই হার প্রায় অপরিবর্তিত থাকলেও তা নগরের সড়ক নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতাকেই স্পষ্ট করে।
৮ বছরে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতদের মধ্যে পথচারীর সংখ্যা ৩৬৩ জন, যা মোট মৃত্যুর অর্ধেকেরও বেশি। একই সময়ে পথচারী মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েছে ৪৩ শতাংশ। পথচারীদের পর সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে ছিলেন দুই ও তিন চাকার যানবাহনের চালক ও আরোহীরা; এ শ্রেণিতে নিহত হয়েছেন ১৯৫ জন।
প্রতিবেদনটিতে নগরের ২০টি উচ্চঝুঁকিপূর্ণ স্থান চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বড়পোল মোড়, অলংকার মোড়, সিইপিজেড গেট, সিটি গেট, নিউমার্কেট বাসস্টপ, কালামিয়া বাজার বাসস্টপ ও সাগরিকা গোলচত্বর। এসব এলাকায় দ্রুত বিজ্ঞানভিত্তিক যাচাই-বাছাই করে সড়ক নকশার ত্রুটি চিহ্নিত ও পুনর্নির্মাণের সুপারিশ করা হয়েছে।
পথচারী নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ফুটপাত প্রশস্ত করা, উঁচু জেব্রা ক্রসিং নির্মাণ, নিরবচ্ছিন্ন ফুটপাত, স্পিড হাম্প ও পথচারী দ্বীপ স্থাপনের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি মোটরযান গতিসীমা নির্দেশিকা ২০২৪ বাস্তবায়নের গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে মো. হুমায়ুন কবির বলেন, সড়ক নিরাপত্তা শুধু আইন প্রয়োগের বিষয় নয়, এটি নগর পরিকল্পনা ও সড়ক নকশার সঙ্গেও ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। সিএমপি ইতোমধ্যে রোড সেফটি সেল গঠন করেছে এবং দুর্ঘটনার তথ্য সংগ্রহে একটি মানসম্মত পদ্ধতি চালু করেছে।
অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার ওয়াহিদুল হক চৌধুরী বলেন, রোড সেফটি সেলের মাধ্যমে দুর্ঘটনার তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ এখন প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেয়েছে। ভবিষ্যতে এই সেলই নিয়মিত সড়ক নিরাপত্তা প্রতিবেদন প্রস্তুত করবে, যা নীতিনির্ধারক ও নগর পরিকল্পনাবিদদের জন্য দিকনির্দেশক হবে।
গত ১৫ বছরে ৬টি সৌর প্রকল্পে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকার অনিয়ম হয়েছে।
বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) রাজধানীর ধানমন্ডিতে নিজ কার্যালয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) এ তথ্য জানিয়েছে।
‘বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন: সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন টিআইবির কর্মকর্তা নেওয়াজুল মওলা ও আশনা ইসলাম। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান।
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) অনিয়ম তুলে ধরে প্রতিবেদনে বলা হয়, সৌর প্রকল্প (সরকারি), সৌর প্রকল্প (আইপিপি) সংশ্লিষ্ট ৬টি খাতে অতিরিক্ত প্রকল্প ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে।
পিডিবির হিসাব অনুযায়ী, সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্পে প্রতি মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে গড়ে ৮ কোটি টাকা প্রয়োজন হলেও গবেষণার আওতাভুক্ত ৬টি প্রকল্পে প্রতি মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে গড়ে ১৩ কোটি ৮ লাখ টাকা বেশি ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে; যা গড়ে দেড় গুণেরও বেশি। এই প্রকল্পগুলোতে প্রয়োজনের চেয়ে ২ হাজার ৯২৬ কোটি ৮৮ লাখ টাকা অতিরিক্ত ব্যয় করা হয়েছে।
হিসাব কষে দেখা গেছে, ৬টি প্রকল্পে ৪ হাজার ৪৩ কোটি ২০ লাখ টাকা প্রয়োজন হলেও ব্যয় করা হয়েছে ৬ হাজার ৯৭০ কোটি ৮ লাখ টাকা।
টিআইবির গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ক্ষেত্রবিশেষে, সরকারি প্রকল্প সরকারি জমিতে স্থাপিত হলেও (ভূমি অধিগ্রহণ ও ইজারার বিষয় না থাকা স্বত্ত্বেও) প্রতি মেগাওয়াট ইউনিট স্থাপনে ব্যয় ১৪ কোটি ৮ লাখ টাকা দেখানো হয়েছে, যা দেশের অন্যান্য সৌর প্রকল্পের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে ব্যয়বহুল।
টিআইবি গবেষণার আওতাভুক্ত বিদ্যুৎখাতের ৫টি প্রকল্পে শুধু ভূমি ক্রয় এবং ক্ষতিপূরণ প্রদানে ২৪৯ কোটি ১৫ লাখ ৫৯ হাজার টাকার দুর্নীতি হয়েছে।
বিদ্যুৎ খাতে বিদেশি বিনিয়োগের মাত্র ৩ দশমিক ৩ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে ব্যবহার করা হয়েছে। প্রক্রিয়াগত অস্পষ্টতা রেখে বিদেশি বিনিয়োগের নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রকল্পের লেটার অব ইনটেন্ট (এলওআই) বাতিল করা হয়েছে। জীবাশ্ম জ্বালানির তুলনায় নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে কর প্রণোদনা, শুল্ক ছাড়, ভ্যাট ছাড়, বিমায় প্রণোদনা যথেষ্ট কম বলে এই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রকল্পে বিনিয়োগ ঘাটতির কথা উল্লেখ করা হয় টিআইবির গবেষণা প্রতিবেদনে।
গবেষকরা জানান, অন্তর্বর্তী সরকার বিলিয়ন ডলার বিদেশি বিনিয়োগের ৩ হাজার ২৮৭ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ৩১টি আনসলিসিটেড নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রকল্পের ‘লেটার অব ইন্টেন্ট (এলওআই)’ বাতিল করেছে। এসব প্রকল্পের মধ্যে ইতোমধ্যেই ১৫টি প্রকল্পের জমি কেনা ও কর প্রদানসহ অফেরতযোগ্য বিনিয়োগ রয়েছে।
৪টি প্রকল্পে বিদেশি কোম্পানির সরাসরি বিনিয়োগ আছে, যার ২টিতে শতভাগ মালিকানা বিদেশি কোম্পানির হাতে রয়েছে। তাই বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থার সংকট সৃষ্টি রয়েছে। নতুন করে ৫৫টি প্যাকেজে নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রকল্পের দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। এর মধ্যে ২২টি প্যাকেজে শুধু একটি করে দরপত্র পাওয়া গেছে এবং ১৩টি প্যাকেজে কোনো দরপত্র পাওয়া যায়নি। তাই নতুন দরপত্রে ‘রাষ্ট্রীয় গ্যারান্টি’ না থাকায় বিদেশি বিনিয়োগকারীদের উপস্থিতি সীমিত হয়ে গেছে।
টিআইবি বলছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘গ্রিন ফাইন্যান্সিং’ এর আওতায় নবায়নযোগ্য খাতের জন্য আলাদা একটি স্কিম থাকলেও দীর্ঘ ও জটিল আবেদন প্রক্রিয়াসহ নানাবিধ কারণে ব্যস্তবিক ব্যবহার খুবই সীমিত।
গবেষণায় বলা হয়, দেশের একমাত্র জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের অবকাঠামো (বিস্তৃত এলাকা) ব্যবহার করে প্রায় ৫০০ মেগাওয়াট ভাসমান সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপনের সুযোগ থাকলেও আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও বিনিয়োগের ঘাটতি থাকায় তা বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না।
আন্তর্জাতিক অর্থায়নকারী সংস্থা যেমন এডিবি ও বিশ্বব্যাংক সরকারি খাতের চেয়ে বেসরকারি খাতের নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রকল্পে বিনিয়োগে বেশি আগ্রহী হয়েছে। এতে সরকারি খাতের ভূমিকা সীমিত হয়ে গেছে। তাই নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রকল্প বাস্তবায়ন পরিকল্পনা বেসরকারি খাত, বিশেষ করে আইপিপিভিত্তিক উদ্যোগকে কেন্দ্র করে তৈরি হলেও এ খাতে তাদের বিনিয়োগে আকৃষ্ট করতে আকর্ষণীয় প্রণোদনা প্যাকেজ তৈরি করেনি সরকার।
নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতি-২০২৫ এ নির্ধারিত লক্ষ্য অর্জনের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ সংগ্রহের রূপরেখা তৈরি না করার কথা বলে টিআইবি।
টিআইবি বলছে, ২০৩০ সাল পর্যন্ত প্রতিবছর সর্বোচ্চ ৯৮০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (১১ হাজার ৫৬৪ কোটি টাকা) প্রয়োজন হবে। ২০৩০ সালের পর থেকে ২০৪১ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর সর্বোচ্চ ১ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (১৭ হাজার ২৮০ কোটি টাকা) প্রয়োজন হবে। কিন্তু অর্থায়নের কোনো সুনির্দিষ্ট ও সময়াবদ্ধ পরিকল্পনা নেই সরকারের।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাতের মহাপরিকল্পনায় নীতি সংক্রান্ত অসঙ্গতি ও দুর্নীতি দৃশ্যমান। নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতকে প্রাধান্য না দেওয়া, জীবাশ্ম জ্বালানিতে অতিরিক্ত নির্ভরতা এবং প্রকল্প বাস্তবায়নে স্বচ্ছতার অভাব দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়নের পথে বড় চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করছে। এ অবস্থা বজায় থাকলে ২০৫০ সালের নবায়নযোগ্য জ্বালানি লক্ষ্য পূরণ করা কঠিন হয়ে যাবে।
ইফতেখারুজ্জামান বলেন, দেশে বর্তমানে জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরতা প্রায় ৯৫ শতাংশ, বিপরীতে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ওপর নির্ভরতা ৪ শতাংশের বেশি নয়। অর্থাৎ নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাত সব সময় অবহেলিত হয়েছে।
আগামী সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণের সুযোগ নেই বলে সরকারের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন আওয়ামী লীগের দলীয় নিবন্ধন বাতিল করেছে। সেজন্য দলটি এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবে না। এ বিষয়ে সরকারের অবস্থান স্পষ্ট।
বুধবার (২৪ সিডেম্বর) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমির মিলনায়তনে এক ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
শফিকুল আলম বলেন, দীপু চন্দ্র দাস হত্যার ঘটনায় আমরা তীব্র নিন্দা জানিয়েছি এবং যারা জড়িত ছিলেন, ভিডিও এবং ভিজ্যুয়াল দেখে অন্তত ১২ জনকে গ্রেপ্তার করেছি। এ বিষয়ে আইন উপদেষ্টা জানিয়েছেন, এই মামলার বিচার হবে দ্রুত বিচার আইনে।
তিনি আরও বলেন, সংখ্যালঘুদের সুরক্ষার জন্য আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি। আপনারা দেখেছেন দুর্গাপূজার সময় এবং অন্যান্য বড় ধর্মীয় উৎসবে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ছিল।
তারেক রহমান প্রসঙ্গে প্রেস সচিব বলেন, আমরা তার বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তনকে স্বাগত জানাই। তার প্রয়োজনীয় যে নিরাপত্তা (সিকিউরিটি) দরকার, সে বিষয়ে আমাদের সঙ্গে তার দলের আলাপ হচ্ছে। তারা যতটুকু চাচ্ছেন, বিএনপির সঙ্গে কথা বলে সেগুলো তদারকি করা হচ্ছে। সরকারের কাছে যা যা সহযোগিতা তারা চাচ্ছেন, আমরা সেই সহযোগিতা করছি।
আওয়ামী লীগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ দলটির বিষয়ে সরকারের অবস্থান স্পষ্ট। নির্বাচন কমিশন আওয়ামী লীগের দলীয় নিবন্ধন (রেজিস্ট্রেশন) বাতিল করেছে। সেজন্য আওয়ামী লীগ এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবে না।
তিনি আরও বলেন, ডেইলি স্টার এবং প্রথম আলোর ঘটনায় ৩১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। প্রত্যেককে ভিডিও এবং ভিজ্যুয়াল দেখে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অনেকের কাছে আলামতও পাওয়া গেছে।
ফরিদপুর জিলা স্কুল গৌরবময় ১৮৫ বর্ষ উদযাপন ও পুনর্মিলনী উপলক্ষে দুই দিনের উৎসব শুরু হচ্ছে আজ বৃহস্পতিবার থেকে।
বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) সকাল ১০টার দিকে জাতীয় এবং উদযাপন পতাকা উত্তোলন, সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন, শপথবাক্য পাঠ, ব্যানার, ফেস্টুন, ঘোড়াগাড়িসহ সুসজ্জিত আনন্দ শোভাযাত্রা নিয়ে শহর প্রদক্ষিণের মধ্যে দিয়ে শুরু হবে দুদিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালা।
আগামীকাল শুক্রবার (১৬ ডিসেম্বর) রাতে র্যাফেল ড্র, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও নির্ধারিত ব্যান্ড-সংগীতশিল্পী জেমসের পরিবেশনার মধ্যে দিয়ে শেষ হবে বর্ণাঢ্য এ আয়োজন।
ব্রিটিশ ভারতে সরকারি উদ্যোগে হাতে গোনা যে কয়টি বিদ্যালয় স্থাপন করা হয়েছে তার একটি ফরিদপুর জিলা স্কুল। আজ বৃহস্পতিবার থেকে ১৮৫ বছর আগে ১৮৪০ সালে যাত্রা শুরু করে এ বিদ্যালয়টি। শুরু থেকেই এ অঞ্চলের শিক্ষা, সংস্কৃতি, কৃষ্টি, আন্দোলন ও সংগ্রামে এ স্কুলটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। কালের পরিক্রমায় মযাদা ও গৌরবে আজও এ বিদ্যালয়টি এ অঞ্চলের একটি সেরা বিদ্যালয় হিসেবে তার স্বকীয় ভাবমূর্তি বজায় রেখেছে।
এ অনুষ্ঠানকে সার্থক করতে গঠন করা হয়েছে গৌরবময় ১৮৫ বর্ষ উদযাপন ও পুনর্মিলনী উদযাপন কমিটি। ২১ সদস্যবিশিষ্ট এ উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক ফরিদপুরের বিশিষ্ট চিকিৎসক মোস্তাফিজুর রহমান শামীম ও সদস্য সচিব ওয়াহিদ মিয়া কুটি।
এর পাশাপাশি কাজের সুবিধার জন্য বিভিন্ন কাজের জন্য গঠন করা হয়েছে ১৮টি উপকমিটি।
উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক মোস্তাফিজুর রহমান শামীম বলেন, ‘এ উৎসবের উদ্দেশ্য হচ্ছে আমাদের প্রাণের স্কুলের সমৃদ্ধ অতীত ও ঐতিহ্য সবার সামনে তুলে ধরা, পাশাপাশি নতুন প্রজন্মকে তাদের অতীত ও ঐতিহ্যর সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়া।’
সদস্য সচিব ওয়াহিদ মিয়া কুটি বলেন, ‘আমরা আমাদের অনুষ্ঠানকে নিজেদের মতো করে সাজিয়েছি। এ আয়োজনে আমরা কোনো প্রধান বা বিশেষ অতিথি রাখিনি। এ বিদ্যালয়ের বাইরে কাউকে আমরা এ আয়োজনে আমন্ত্রণ জানাইনি কিংবা যুক্ত কিরিনি। আমরা জিলা স্কুলের সাবেক ও বর্তমান সকল শিক্ষার্থীই প্রধান এবং বিশেষ অতিথি।
দুদিনের অনুষ্ঠানসূচি:
২৫ ডিসেম্বর (বৃহস্পতিবার) সকাল ৮টায় উপস্থিতি ও শুভেচ্ছা বিনিময়। সকাল ৯টা উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। সকাল ১০টা বর্ণিল আনন্দ র্যালি। বেলা ১১টা স্কুল উন্নয়ন ও পরিকল্পনাবিষয়ক আলোচনা। বেলা সাড়ে ১১টায় স্মৃতিচারণ ও বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান। দুপুর ১টা মধ্যাহ্ন বিরতি। বিকেল ৩টা স্মৃতিচারণ ও বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান। সন্ধ্যা সাড়ে ৫টা আতশবাশি উৎসব। সন্ধ্যা ৬টা স্কুলের ইতিহাস ও ঐহিত্য নিয়ে তথ্যচিত্র প্রদর্শন এবং সাড়ে ৬টা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
দ্বিতীয় দিন (শুক্রবার) সকাল ৮টা মিনি ম্যারাথন। সকাল ৯টা স্কুলের বর্তমান শিক্ষার্থীদের মধ্যে চিত্রাঙ্কন ও বিতর্ক প্রতিযোগিতা। সকাল ১০টায় পিঠা উৎসব ও সংগীতানুষ্ঠান। বেলা ১১টা স্মৃতিচারণ ও বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান। বিকেল ৩টা স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠান। সন্ধ্যা সাড়ে ৫টা স্মৃতিচারণমূলক অনুষ্ঠান। ৬টা সংক্ষিপ্ত আলোচনা অনুষ্ঠান। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা র্যাফেল ড্র। রাত সাড়ে ৭টা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা।
জয়পুরহাট ব্যাটালিয়নের (২০ বিজিবি) অধীনস্থ পাঁচবিবি বিশেষ ক্যাম্পের অভিযানে বিপুল পরিমাণ যৌন উত্তেজক সিরাপসহ একজনকে আটক করেছে বিজিবি। উদ্ধারকৃত মালামালের আনুমানিক বাজার মূল্য ৪৩ লাখ ১,৭২০ টাকা।
আটক ব্যক্তি হলেন, জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার পূর্ব কড়িয়া গ্রামের বাবু হোসেনের ছেলে মাহফুজার রহমান (২৬)।
জয়পুরহাট ব্যাটালিয়নের (২০ বিজিবি) অধীনস্থ পাঁচবিবি বিশেষ ক্যাম্পের সীমান্ত এলাকায় মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযানের অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার রাতে চোরাচালান ও মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হয়।
বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) জয়পুরহাট বিজিবির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পাঁচবিবি অস্থায়ী চেকপোষ্টের টহলদল কর্তৃক ওৎ পেতে থাকে। পরবর্তী গোপন সংবাদের বিষয়টি সত্যতা প্রামাণিত হলে তাৎক্ষনিকভাবে ব্যাটালিয়ন সদরকে অবহিত করলে লে. কর্নেল মোহাম্মদ লতিফুল বারী, পিবিজিএমএস, পদাতিক, পরিচালক, অধিনায়ক জয়পুরহাট ব্যাটালিয়ন (২০ বিজিবি) সাথে সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ ইমরান হোসেন, পিবিজিএমএস, ভারপ্রাপ্ত কোয়ার্টার মাস্টার, জয়পুরহাট ব্যাটালিয়ন (২০ বিজিবি) এবং ব্যাটালিয়ন সদর হতে ২টি বিশেষ টহলদল কর্তৃক লাঙ্গলহাটি তিন রাস্তার মোড় হতে আনুমানিক ১০০ গজ পাঁচবিবি ধানসিঁড়িঁ আবাসিক এলাকায় গোডাউন তল্লাশী করা হয়। ওই গোডাউন তল্লাশীকালে বিপুল পরিমাণে অবৈধ যৌন উত্তেজক সিরাপসহ মাহফুজার রহমানকে আটক করা হয়। এ সময় তার গোডাউন থেকে অবৈধ বাংলাদেশি যৌন উত্তেজক সিরাপসহ বিভিন্ন ওষুধ উদ্ধার করা হয়।
জয়পুরহাট ২০ বিজিবি সূত্রে জানা যায়, মাদক ও চোরাচালান প্রতিরোধে সরকারের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এ ধরনের অভিযান ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে। পাশাপাশি সীমান্ত এলাকায় চোরাচালান, মাদকদ্রব্য, মানব পাচার এবং অবৈধ অনুপ্রবেশ রোধে স্থানীয় জনগণের সহযোগিতা কামনা করেছে বিজিবি। সীমান্তের নিরাপত্তা ও অবৈধ অনুপ্রবেশ এবং সামাজিক শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতে যেকোনো তথ্য দিয়ে বিজিবিকে সহায়তা করার জন্য সকলকে অনুরোধ করা হলো।
গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানে এবং পরিবেশিত সংবাদে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ও লিঙ্গবৈচিত্র্য সম্পন্ন মানুষের সমান অধিকার, অংশগ্রহণ ও নায্যতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নেত্রকোনায় একটি বিশেষ সক্ষমতা উন্নয়ন কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘ভয়েস’ (VOICE) ইউনেস্কোর সহায়তায় ‘লিঙ্গ ও প্রতিবন্ধিতা অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে গণমাধ্যমে বৈচিত্র্য’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। কর্মশালার মূল আলোচনা ও উদ্দেশ্য বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) নেত্রকোনার স্বাবলম্বী উন্নয়ন সংস্থায় আয়োজিত এই কর্মশালায় গণমাধ্যমে লিঙ্গসমতা ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে একটি বাস্তবভিত্তিক নীতিমালা বা নির্দেশিকা প্রণয়নের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। বক্তারা বলেন, সঠিক নীতিমালা থাকলে সংবাদ উপস্থাপনা, নিয়োগ এবং সিদ্ধান্তগ্রহণ প্রক্রিয়ায় বৈচিত্র্য যথাযথভাবে প্রতিফলিত হবে। ভয়েসের নির্বাহী পরিচালক আহমেদ স্বপন মাহমুদ বলেন, ‘সদিচ্ছা থাকলেও অনেক সময় সুস্পষ্ট নির্দেশিকার অভাবে প্রতিবন্ধী ও লিঙ্গবৈচিত্র্য সম্পন্ন মানুষেরা সুযোগ পান না। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থীদেরও এখন থেকে এই সচেতনতামূলক প্রক্রিয়ায় যুক্ত করা প্রয়োজন’। স্বাবলম্বী উন্নয়ন সমিতির নির্বাহী পরিচালক স্বপন কুমার পাল নারী কর্মীদের জন্য কর্মক্ষেত্রে যাতায়াত সুবিধা, মাতৃত্বকালীন ছুটি ও ব্রেস্টফিডিং কর্নারের মতো সংবেদনশীল বিষয়গুলো নীতিমালায় অন্তর্ভুক্ত করার আহ্বান জানান। এছাড়া ভয়েসের প্রোগ্রাম অফিসার প্রিয়তা ত্রিপুরা সমাজে প্রচলিত নেতিবাচক ধারণা দূর করতে গণমাধ্যমকর্মীদের দক্ষতা উন্নয়নের ওপর জোর দেন। কর্মশালায় অংশগ্রহণকারীরা এই কর্মশালায় নেত্রকোনায় কর্মরত বিভিন্ন জাতীয় ও স্থানীয় গণমাধ্যমের সম্পাদক, প্রতিবেদক এবং বার্তা কক্ষের কর্মীরা অংশগ্রহণ করেন।
মাগুরা জেলায় খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব বড়দিন (ক্রিসমাস) শান্তিপূর্ণ ও আনন্দঘন পরিবেশে উদযাপনের লক্ষ্যে একটি প্রস্তুতিমূলক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) বেলা ১২ টার সময় মাগুরা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন মাগুরা জেলা প্রশাসক মো. আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ।
সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন নিশাত আল নাহিয়ান, সহকারী পুলিশ সুপার (শালিখা সার্কেল), মাগুরা। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আব্দুল কাদের, উপজেলা নির্বাহী অফিসার মেহেরুন্নাহার সহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তা, খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্টরা।
সভায় জানানো হয়, এ বছর মাগুরা জেলার ৪টি উপজেলায় মোট ১৮টি চার্চে বড়দিন উপলক্ষে ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে। এসব অনুষ্ঠান নির্বিঘ্ন ও নিরাপদভাবে সম্পন্ন করতে সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, উপাসনালয়সমূহের নিরাপত্তা জোরদার, যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রাখা, বিদ্যুৎ সরবরাহ ও স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণসহ বিভিন্ন বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়।
সভায় জেলা প্রশাসক বলেন, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল নাগরিক যেন নিজ নিজ ধর্মীয় উৎসব নিরাপদ ও শান্তিপূর্ণভাবে পালন করতে পারেন, সে বিষয়ে জেলা প্রশাসন সর্বোচ্চ সতর্ক রয়েছে।
তিনি এ লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তরকে সমন্বিতভাবে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেন।
সভা শেষে বড়দিন উদযাপনকে কেন্দ্র করে সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণের আশ্বাস প্রদান করা হয়।
মৌসুম শুরু হওয়ার এক মাস পার হয়ে গেছে। কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) খাল খনন কর্মসূচি ধীরগতি হওয়ায় পানি সংকটে কক্সবাজার সদর উপজেলার চৌফলদন্ডী ইউনিয়নের হাজার হাজার একর লবণ চাষের জমি এখনো পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। আদৌ কখন পানির ব্যবস্থা হবে তার নিশ্চিয়তা নেই। ফলে চৌচির হয়ে পড়ে থাকা লবণ মাঠ, পতিত অবস্থায় পড়ে আছে। এতে প্রান্তিক চাষিরা চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছেন।
স্থানীয়রা জানান, কক্সবাজার জেলা লবণ চাষের অন্যতম স্থান সদরের এই চৌফলদন্ডী। প্রতি মৌসুমে এখানকার লবণ জমিতে বিপুল পরিমাণ লবণ উৎপাদিত হয়, যা জাতীয় চাহিদার একটি বড় অংশ পূরণে ভূমিকা রাখে। কিন্তু চলতি মৌসুমে সঠিক সময়ে খাল খননে উদ্যোগ নেয়নি পানি উন্নয়ন বোর্ড। অনেক দেরিতে শুরু করে খননের কাজ, এতে এক মাস পেরিয়ে গেছে। এখনো খনন কাজ শেষ হয়নি এবং কবে শেষ তাও বলা যাচ্ছে না।
চৌফদন্ডীর মধ্যম পাড়ার লবন চাষি মেহের আলী জানান, প্রতি বছর বাংলা সালের কার্তিক মাসের শেষ ১০ দিন থেকে লবণ চাষ শুরু হয়। কিন্তু এবার সে সময়ে এসে খাল খনন কাজ শুরু করে, পানি উন্নয়ন বোর্ড। এতে এক মাসের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও এখনো নালায় (খালে) পানি আনা যায়নি। পানির অভাবে লবণ চাষ শুরু করা যায়নি। মৌসুমে মাঠজুড়ে পানি না থাকায় মাটি ফেটে চৌচির হয়ে গেছে।
চাষিরা প্রশ্ন তুলেন, লবণ মৌসুম চলাকালেই কেন পাউবোর খাল খনন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে? তাদের অভিযোগ, পরিকল্পনাহীন খাল খননের কারণে লবণের মাঠে স্বাভাবিক পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে।
স্থানীয় বর্গাচাষি রহমত উল্লাহ বলেন, ‘লবণাক্ত পানি না পাওয়ায় এখনো মাঠ প্রস্তুতের কাজ শুরু করতে পারিনি। মাঠে কাজ শুরু করতে না পারায় সঠিক সময়ে লবণ উৎপাদন করা যাবে না। লবণ চাষের মৌসুম নির্দিষ্ট মেয়াদি। তাই এক মাসের এই ঘাটতি পরে পোষানো যাবে না। এতে সব চাষিরা লোকসানে পড়বে।’
স্থানীয় বর্গাচাষি মো. হামিদ বলেন, ‘আমরা এখনো লবণাক্ত পানি পাচ্ছি না। আর লবণাক্ত পানি না পাওয়ায় এখনো মাঠ প্রস্তুতের কাজ শুরু করতে পারিনি। এই লবণ মৌসুমটা হচ্ছে নির্দিষ্ট সময়ের। এক মাসের ঘাটতি পরে আর পোষানো যাবে না। এতে আমরা সবাই বড় লোকসানের মুখে পড়ব।’
আরেক চাষি আবদুল কাদের বলেন, ‘লবণ চাষের এই সময়ে মাঠ প্রস্তুত, বাঁধ সংস্কার ও পানি নিয়ন্ত্রণে সামান্য দেরি হলেই পুরো মৌসুমটাই ঝুঁকির মুখে পড়ে। মৌসুমের শুরুতেই যদি উৎপাদন ব্যাহত হয়, তাহলে শেষ পর্যন্ত উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হয় না।’ পানি উন্নয়ন বোর্ডের এই খামখেয়ালিপনায় ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে চাষিরা। তারই অংশ হিসেবে গত রোববার আন্দোলনের ডাক দেয়। মাঠেই মানববন্ধন করে পাউবোর এই অবহেলার প্রতিবাদ জানান এবং দায়ীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।
এ ব্যাপারে লবণ চাষি কল্যাণ সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট সাহাব উদ্দিন বলেন, ‘আমরা উন্নয়নের বিপক্ষে নই। কিন্তু লবণ উৎপাদন ব্যাহত করে কোনো উন্নয়ন আমরা চাই না। খাল খনন চলুক, কিন্তু এমনভাবে করতে হবে যেন লবণ উৎপাদনও একসঙ্গে চলতে পারে। শিগগিরই সমাধান না হলে চাষিরা ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়বে।’
চাষিদের ক্ষোভ ও দুরবস্থার খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প করপোরেশন (বিসিক) কক্সবাজারের উপব্যবস্থাপক জাফর আলম ভূঁইয়া। তিনি চাষিদের কথা শোনেন এবং দ্রুত সমস্যা সমাধানে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সঙ্গে সমন্বয়ের আশ্বাস দেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সরকারি প্রাক্কলন সময় মেনে কাজ করতে গিয়ে এই সমস্যা হয়েছে। এতে লবণ চাষ ব্যাহত হচ্ছে। যত দ্রুত সম্ভব খাল খনন কাজ শেষ করার চেষ্টা চলছে।’
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘স্থানীয় লবণশিল্প আজ বড় চ্যালেঞ্জের মুখে। একদিকে লবণাক্ত পানির অভাবে লবণ চাষ ব্যাহত হচ্ছে। অন্যদিকে, বিদেশি সোডিয়াম সালফেটের চাপ ও বাজারে অস্থিরতার কারণে চাষি থেকে মিল মালিক, সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। চাষিরা ন্যায্য মূল্য পাক এবং স্থানীয় শিল্প সুরক্ষিত থাকুক।
ঘনকুয়াশার কারণে ঢাকা-টাঙ্গাইল-যমুনা সেতু মহাসড়কে হেড লাইট জ্বালিয়ে চলছে যানবাহন। সরেজমিনে বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) ভোর থেকে বেলা সাড়ে ১১ টা পর্যন্ত মহাসড়কের যমুনা সেতু পূর্ব ইব্রাহীবাদ রেলস্টেশন, এলেঙ্গা বাসস্ট্যান্ড ও রাবনা বাইপাস এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়।
নাদের পরিবহনের চালক সুমন মিয়া বলেন- ঢাকা থেকে দিনাজপুরের উদ্দেশে যাত্রা করছেন। ভোর থেকে স্বাভাবিকের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি কুয়াশা পড়েছে। যার কারণে গাড়ি চালাতে ব্যাপক সমস্যা হচ্ছে। অতিরিক্ত ঘনকুয়াশার কারণে সামনে কী আছে তা সহজে বোঝাও যাচ্ছে না।
সিলেট থাকা আসা পাবনাগামী ট্রাক চালক আব্দুল মোমেন বলেন- ঘনকুয়াশার কারণে কিছু বোঝা যায় না। কম গতিতে গাড়ি চালানো হচ্ছে। এছাড়া এলেঙ্গা থেকে যমুনা সেতু পূর্ব পর্যন্ত সড়কের কাজ শেষ না হওয়ায় কুয়াশার কারণে দুর্ঘটনার শঙ্কাটা বেশি থাকে। এর কারণে হেডলাইট জ্বালিয়ে গাড়ি চালাচ্ছি।
যমুনা সেতু পূর্ব থানার ওসি খন্দকার ফুয়াদ রুহানি বলেন- অতিরিক্ত ঘনকুয়াশা থাকলেও স্বাভাবিক মতোই যানবাহন চলাচল করছে। এছাড়া মহাসড়কে দুর্ঘটনারোধে সার্বক্ষণিক পুলিশ কাজ করছে।
এদিকে, সারাদেশের ন্যায় টাঙ্গাইলেও গত কয়েকদিন ধরে অতিরিক্ত ঘনকুয়াশা পড়েছে। টাঙ্গাইল আবহাওয়া অধিদপ্তরের উচ্চ পর্যবেক্ষক জামাল উদ্দিন বলেন, বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) টাঙ্গাইলে সর্বনিম্ন ১৩ দশমিক শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপামাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।
কেশবপুর উপজেলা কৃষি অফিসের প্রযুক্তিগত সার্বিক সহযোগিতায় উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় চাষি জমিতে তুলা চাষে নতুন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। লাভজনক এই ফসল চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে উপজেলা তুলা উন্নয়ন বোর্ড ও কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের কর্মকর্তারা দফায় দফায় মাঠপর্যায়ে প্রান্তিক কৃষকদের সঙ্গে মতবিনিময় ও উঠান-বৈঠক করছেন।
গত কয়েক বছর ধরে কৃষি অফিসের নিরবচ্ছিন্ন প্রচেষ্টায় উপজেলার কৃষকদের মধ্যে তুলা চাষের আগ্রহ বাড়ছে। কম খরচে অধিক ফলন ও লাভের সম্ভাবনায় দিনে দিনে তুলার দিকে ঝুঁকছেন প্রান্তিক চাষিরা।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, প্রাথমিকভাবে তুলা চাষের জন্য উপজেলার তিনটি ইউনিয়ন নির্বাচন করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ৬নং কেশবপুর সদর, ১নং ত্রিমোহিনী ও ১০নং সাতবাড়িয়া ইউনিয়ন। এসব এলাকায় হাইব্রিড ওয়াড গোল্ড-১/২, এইচএস-৪ ও সিবি হাইব্রিড-১ জাতের তুলা চাষ করা হচ্ছে। বিশেষ করে সাতবাড়িয়া ও ত্রিমোহিনী ইউনিয়নে তুলার আবাদ সবচেয়ে বেশি হয়েছে। এর বাইরে অন্যান্য ইউনিয়নেও ছড়িয়ে ছিটিয়ে তুলা চাষ শুরু হয়েছে।
চাষিরা জানান, ৪২ শতক বা ১ বিঘা জমিতে তুলা চাষ করতে খরচ হয় প্রায় ১৫ থেকে ১৬ হাজার টাকা। বিপরীতে প্রতি বিঘা জমিতে গড়ে ১৮ থেকে ২৪ মণ পর্যন্ত তুলা পাওয়া যায়। বর্তমানে প্রতি মণ তুলার বাজারমূল্য ৩ হাজার ৮০০ থেকে ৪ হাজার টাকা। ফলে এক বিঘা জমিতে খরচ বাদ দিয়ে কৃষকরা প্রায় ৫০ থেকে ৫৫ হাজার টাকা পর্যন্ত লাভবান হচ্ছেন।
উপজেলা কৃষি অফিসার আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, কেশবপুরে তুলার আবাদ সম্প্রসারণে আমরা নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছি। তুলা একটি লাভজনক ফসল হওয়ায় চাষিদের বেশি বেশি তুলা আবাদে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। আমরা আশানুরূপ ফলাফলও পাচ্ছি। গত বছর যেখানে ২২ হেক্টর জমিতে তুলার আবাদ হয়েছিল, চলতি মৌসুমে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৮ হেক্টরে। এবার আমাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২২ হেক্টর, যা ইতোমধ্যে অতিক্রম করেছে।
কৃষি কর্মকর্তাদের মতে, এই ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই কেশবপুর উপজেলায় তুলা একটি সম্ভাবনাময় অর্থকরী ফসল হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান তৈরি করবে। এতে একদিকে কৃষকদের আয় বাড়বে, অন্যদিকে স্থানীয় পর্যায়ে তুলার উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়ে দেশের অর্থনীতিতেও ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।
প্রাকৃতিক জলাশয়ের স্বাভাবিক প্রবাহ ব্যাহত হওয়ায় এবং নির্বিচারে মাছ নিধনের ফলে ক্রমেই সংকটাপন্ন হয়ে উঠছে দেশি মাছ। এই দেশি মাছের প্রভাব বেশি পড়েছে পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার ঐতিহ্যবাহী শুঁটকি চাতাল শিল্পে। অতীতে এক সময় বর্ষা শেষে যে শুঁটকি চাতালগুলো কর্ম চাঞ্চল্যে মুখর থাকত, সেইখানে এখন নীরবতা। দেশি মাছের আকালে বন্ধ হয়ে গেছে অধিকাংশ শুঁটকি চাতাল।
স্থানীয়দের মতে, নদী, খাল-বিল ও ঝিলের স্বাভাবিক চলন নষ্ট হওয়ায় জলাশয়ে পানি ধারণক্ষমতা অনেক কমে গেছে। মানুষের পরিকল্পনায় অপরিকল্পিত বাঁধ, সড়ক ও বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণের ফলে নদী, খাল ও বিলগুলো বর্ষা মৌসুমেও পুরোপুরি বন্যার পানিতে ভরে উঠে না। এরপর প্রকৃত পরিবেশ নষ্ট করা চায়না দুয়ারি, বাদাই ও কারেন্ট জাল সহ নিষিদ্ধ বিভিন্ন জাল দিয়ে নির্বিচারে মাছ শিকার। এতে মা মাছের পাশাপাশি রেণু ও পোনা মাছও ধ্বংস হচ্ছে, ফলে প্রাকৃতিকভাবে মাছের বংশ বিস্তাার মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
মৎস্য সংশ্লিষ্টরা জানান, ভাঙ্গুড়ার মুক্ত জলাশয় ও চলনবিল এলাকায় এক সময় মাগুর, চাপিলা, শিং, পাবদা, টাকি, চিতল, রিটা, গুজি, আইড়, কৈ, বোয়াল, খৈলসা, দেশি সরপুঁটি, শোল, গজার, বাইম, টাটকিনি, তিতপুঁটি, বাঘাইড়, গুলশা, কাজলি, গাং চেলা, টেংরা, মলা, কালো বাউশ সহ অন্তত ৪০-৪৫ প্রজাতির দেশি মাছ পাওয়া যেতো। বর্তমানে এসব মাছ বিলুপ্তির পথে।দেশের বিভিন্ন হাট- বাজার ঘুরে চাষের মাছ ছাড়া দেশি মাছ প্রায় বিলুপ্তির পথে।
নদী ও বিল পাড়ের বাসিন্দা ইমরান, সোহেল হোসেন,বিখ্যাত চলনবিলের মধ্যে অবস্থিত মাগুড়া গ্রামের আমরুল ইসলাম ও ফরিদুল ইসলাম সরদারসহ অনেক এর সাথে কথা হয়। তারা জানান, একসময় বর্ষা মৌসুমে বিখ্যাত চলনবিল সহ ভাঙ্গুড়ার ছোট-বড় সব বিল পানিতে থৈ থৈ করতো। তখন উঁচু জমিতে ফসল আবাদ হত এবং নদী ও খাল-বিলে চলত মাছ শিকার। সেই মাছ দিয়েই সচল থাকত দেশিও শুঁটকি চাতালগুলো। ভাঙ্গুড়া উপজেলার শুঁটকি এক সময় দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশের অন্তত ২০-২২টি দেশে রপ্তানি হতো। কিন্তু জলাশয়ে পানি কমে যাওয়া এবং দেশি মাছ কমে যাওয়ায় এখন সেই রপ্তানি কার্যক্রমেও ভাটা পড়েছে।
সম্প্রতি সরেজমিনে ভাঙ্গুড়া উপজেলা ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ শুঁটকি চাতাল বন্ধ। একটি খোলা আছে, সেটাতেও উৎপাদন খুবই সীমিত। ফলে চাতালগুলো হারাচ্ছে তাদের পুরনো আমেজ। শুঁটকি উৎপাদন কমে যাওয়ায় আয় হারাচ্ছেন শ্রমিক ও ব্যবসায়ীরা।
শুঁটকি চাতালেন শ্রমিক মর্জিনা খাতুন বলেন, ‘আগে চাতালে কাজের অভাব ছিল না। প্রতিদিন ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা আয় হত। এখন মাছ না থাকায় অধিকাংশ দিন কাজই থাকে না। সংসার চালানো কষ্ট হয়ে গেছে।’
শুঁটকি ব্যবসায়ী আনছার আলী জানান, আগে নিয়মিতভাবে মাছ পাওয়া গেলেও এ মৌসুমে অনেকেই টানা দুই সপ্তাহেও মাছ পাননি। অনেক ব্যবসায়ী বাধ্য হয়ে চাতাল পুরোপুরি বন্ধ রেখেছেন। তাদের অভিযোগ,বিখ্যাত চলনবিল এলাকায় অপরিকল্পিত পুকুর খনন, অবৈধ জাল স্থাপন এবং অবাধ মাছ শিকার পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।
ভাঙ্গুড়া উপজেলার কলকতির শুঁটকি চাতালের মালিক মো. দুলাল হোসেন বলেন, দিলপাশার, মাগুড়া, চক লক্ষীকোল, পুইবিল, আদাবাড়িয়া, বাশবাড়িয়া ও দত্তখারুয়া বিলে একসময় প্রচুর দেশি মাছ পাওয়া যেত। এখন চায়না দুয়ারি জাল দিয়ে মা মাছ সহ সব ধ্বংস করা হচ্ছে। এতে দেশি মাছের উৎপাদন ও প্রজনন মারাত্মকভাবে কমে গেছে। শুঁটকি উৎপাদন ধরে রাখা অনেক কঠিন হয়ে পড়েছে।’
এ বিষয়ে ভাঙ্গুড়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আলী আজম বলেন, ‘চায়না দুয়ারিসহ বিভিন্ন নিষিদ্ধ জালে নির্বিচারে মাছ নিধন এবং বৃষ্টি কম হওয়ায় জলাশয়ে পানি ও মাছ দুটোই কমেছে। অন্যান্য বছর যেখানে তিনটি শুঁটকি চাতাল ছিল, সেখানে এবার রয়েছে মাত্র একটি। গত বছর ১৩ টন শুঁটকি উৎপাদন হলেও এ বছর ৫ থেকে ৭ টন উৎপাদন করাও কঠিন।
তিনি আরও বলেন, দেশি ও বিদেশি বাজারে শুঁটকির চাহিদা থাকলেও জলাশয়ে পর্যাপ্ত মাছ না থাকলে এই শিল্প টিকিয়ে রাখা প্রায় অসম্ভব। এজন্য নিষিদ্ধ জাল ব্যবহার বন্ধ, জলাশয়ের স্বাভাবিক প্রবাহ ফিরিয়ে আনা এবং মৎস্যজীবীদের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে নিয়মিত অভিযান ও আইন প্রয়োগ কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
২০২৫ সাল বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের ইতিহাসে এক গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। পরিবেশবান্ধব ও টেকসই উৎপাদনের পথে অগ্রযাত্রায় এ বছর শিল্পটি একটি ঐতিহাসিক মাইলফলক স্পর্শ করেছে—একই বছরে রেকর্ডসংখ্যক ৩৮টি নতুন LEED-প্রত্যয়িত (Leadership in Energy and Environmental Design) সবুজ কারখানা যুক্ত হয়ে। এর আগে কখনোই বাংলাদেশের কোনো শিল্পখাত, বিশেষ করে তৈরি পোশাক শিল্প, এক বছরে এত বিপুল সংখ্যক আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন সবুজ স্বীকৃতি অর্জন করতে পারেনি।
শিল্প সংশ্লিষ্টদের মতে, এই সাফল্য কেবল একটি পরিসংখ্যানগত অর্জন নয়; বরং এটি বৈশ্বিক পোশাক সরবরাহ শৃঙ্খলে পরিবেশগত দায়িত্ব, জ্বালানি দক্ষতা এবং টেকসই উৎপাদনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবিসংবাদিত নেতৃত্বের প্রতিফলন। ধারাবাহিক এই অগ্রগতির ফলে ২০২৫ সালের শেষে এসে বাংলাদেশে মোট সবুজ কারখানার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৭০-এ—যা বিশ্বের যেকোনো দেশের তুলনায় সর্বোচ্চ।
এই প্রতিবেদনটি বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পে সবুজ রূপান্তরের এই ব্যতিক্রমী যাত্রা, এর প্রভাব ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা বিশ্লেষণ করে তুলে ধরছে।
বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) পোশাক কারখানার মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
ইউএস গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিলের (ইউএসজিবিসি) এনার্জি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট ডিজাইন (লিড) গ্রিন ফ্যাক্টরি বা সবুজ কারখানার সার্টিফিকেশন দিয়ে থাকে। ইউএস গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিলের (ইউএসজিবিসি) তথ্যমতে, দেশে এখন সবুজ কারখানা ২৭০টি। এর মধ্যে গোল্ড ক্যাটাগরির ১৩৭, প্লাটিনাম ১১৪, সিলভার ১৫ ও সার্টিফাইড ক্যাটাগরির ৪ টি। এছাড়া, ৫৫০টির বেশি কারখানা গ্রিন ফ্যাক্টরি হতে রেজিস্ট্রেশন বা পাইপলাইনে রয়েছে।
তথ্যে বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২০২৫ সালে সবুজ কারখানার তালিকায় অন্তর্ভূক্ত হয়েছে দেশের সর্বোচ্চ সংখ্যক ৩৮টি কারখানা। এর আগে ২০২৪ সালে ২৬টি, ২০২৩ সালে ২৪টি, ২০২২ সালে ৩০টি, ২০২১ সালে ২৪টি, ২০২০ সালে ২৩টি ও ২০১৯ সালে ২৮টি ফ্যাক্টরি সবুজ কারখানার তালিকায় অন্তর্ভূক্ত হয়েছে।
এদিকে, শীর্ষ ১০০টি পোশাক কারখানার মধ্যে বাংলাদেশেই রয়েছে ৬৮টি। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পাকিস্তানে রয়েছে ৭টি ও তৃতীয় অবস্থানে থাকা ইন্দোনেশিয়ায় রয়েছে ৬টি।
জানা গেছে, গত বছর ২০০ সবুজ কারখানার মাইলফলক অর্জন করে বাংলাদেশ। এর মধ্য দিয়ে দেশের পোশাক খাতও নতুন মাইলফলক স্পর্শ করে। ফের বাংলাদেশ এ খাতে নতুন মাইলফলক স্পর্শ করলো। এর মধ্যে দিয়ে পরিবেশবান্ধব পোশাক উৎপাদনে বিশ্ব নেতৃত্ব আরও সুদৃঢ় করেছে বাংলাদেশ।
বিজিএমইএ’র সাবেক পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, সবুজ কারখানায় বাংলাদেশ বরাবরই ওপরে রয়েছে। পোশাক মালিকদের দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ, বিজিএমইএ’র কৌশলগত নেতৃত্ব ও শিল্পখাতের সম্মিলিত উদ্যোগেই এই অর্জন সম্ভব হয়েছে।
তিনি বলেন, বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে পরিবেশবান্ধব উৎপাদনের চাহিদা বাড়ছে। ক্রেতা ও ভোক্তারা কম কার্বন নিঃসরণ, পানি সাশ্রয় ও জ্বালানি দক্ষতার ওপর জোর দিচ্ছেন। বিষয়টি মাথায় রেখে বাংলাদেশের পোশাক কারখানাগুলো কার্বন দক্ষতা, পানি ব্যবস্থাপনা ও জলবায়ু সহনশীল অবকাঠামোতে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে। লিড সার্টিফিকেশন এখন শুধু পরিবেশ সুরক্ষার বিষয় নয়, বরং বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশল।
তিনি আরও বলেন,এই অর্জন প্রমাণ করে যে বাংলাদেশের পোশাক খাত ভবিষ্যতে ইউরোপীয় ইউনিয়েনের পরিবেশ আইন, কার্বন মূল্য নির্ধারণ ও ডিজিটাল স্বচ্ছতা ব্যবস্থার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। ২০২৫ সালের এই রেকর্ড বিশ্বকে স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে—বাংলাদেশ শুধু পোশাক রপ্তানিতে শীর্ষে নয়, বরং সবুজ ও ভবিষ্যৎমুখী শিল্পায়নেও নেতৃত্ব দিচ্ছে।
শীতে উত্তরবঙ্গের অন্যান্য জেলার মতো লালমনিরহাটেও কৃষিকাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। কৃষিপ্রধান জেলার পাঁচটি উপজেলায় শীতকালীন সবজি ও আগাম আলুর মোটামুটি ভালো ফলন হয়েছে। অনুকূল আবহাওয়ায় ইতোমধ্যে হাট-বাজারে নতুন আলু উঠতে শুরু করলেও তুলনামূলক কম দামে বিক্রি হওয়ায় কৃষকরা প্রত্যাশিত লাভ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
সরেজমিনে জেলার বিভিন্ন কাঁচা শাক-সবজির আড়ত ঘুরে দেখা গেছে, আগাম নতুন ক্যারেজ জাতের আলু পাইকারি বাজারে পাঁচ কেজির পালা ৮৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা কেজিপ্রতি ১৭ টাকা। হাগড়াই (বগুড়াই) জাতের আলু পাঁচ কেজির পালা ১৩০ টাকায়, অর্থাৎ কেজিপ্রতি ২৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে, গত মৌসুমের পুরোনো লাল আলু আড়তে বস্তাপ্রতি ২৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতিটি বস্তায় প্রায় ৬০ কেজি থাকায় কেজিপ্রতি দাম দাঁড়াচ্ছে প্রায় ৫ টাকা।
খুচরা বাজারে শহরের গোশালা বাজার, পুরোনো বাসস্ট্যান্ড এলাকা, হাড়িভাঙ্গা, সদর উপজেলার বড়বাড়ী, মহেন্দ্রনগর ও বুড়ির বাজারে আগাম ক্যারেজ জাতের আলু কেজিপ্রতি ২০ থেকে ২২ টাকা এবং হাগড়াই (বগুড়াই) জাতের আলু ৩০ থেকে ৩২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি, গত মৌসুমের পুরোনো লাল আলু কেজিপ্রতি ৮ থেকে ১০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে।
জেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে আগাম নতুন আলুর দাম কমে যাওয়ায় কৃষকদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। আদিতমারীর উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের কৃষক ইব্রাহিম হোসেন বাসসকে জানান, গত বছরের তুলনায় চলতি মৌসুমে নতুন আলুর পাইকারি দাম কেজিপ্রতি ৪৫ থেকে ৫০ টাকা থেকে নেমে ১৭ থেকে ২৬ টাকায় দাঁড়িয়েছে।
কালীগঞ্জ উপজেলার তুষভান্ডার ইউনিয়নের কৃষক রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ন্যায্য দাম না পেলে কৃষকদের জীবনযাপন মারাত্মকভাবে সংকটে পড়বে।’
আলুর দাম কমে যাওয়ার কারণ সম্পর্কে জেলা সদরের বড়বাড়ী কাঁচামাল আড়তের পাইকার মজিদুল মিয়া বাসসকে বলেন, ‘বাজারে পুরোনো আলুর সরবরাহ বেশি থাকায় নতুন আলুর চাহিদা কমে গেছে।’
একই আড়তের আরেক পাইকার হক সাহেব জানান, কৃষক ও পাইকারদের মধ্যে কার্যকর বাজার সংযোগ ও তথ্যের ঘাটতিও দামের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, লালমনিরহাটে আগাম নতুন আলু চাষ হয়েছে প্রায় ৬৫ হেক্টর জমিতে। চলতি মৌসুমে জেলায় আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬ হাজার ৫০০ হেক্টর জমি এবং উৎপাদন লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৬৩ হাজার ১৫০ মেট্রিক টন।
কৃষি বিভাগের তথ্যানুযায়ী, ২২ ডিসেম্বর পর্যন্ত আগাম আলু বাদে ৬ হাজার ৮১০ হেক্টর জমিতে আলু চাষ সম্পন্ন হয়েছে, যা নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩১০ হেক্টর বেশি। আগামী কয়েকদিনে আরও কিছু জমিতে আলুর চাষ বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
উপজেলাভিত্তিক হিসাবে জেলা সদর উপজেলায় ৪ হাজার ১০ হেক্টর, আদিতমারীতে ৮৮০ হেক্টর, কালীগঞ্জে ৯৯০ হেক্টর, হাতীবান্ধায় ৬৮০ হেক্টর এবং পাটগ্রামে ২৫০ হেক্টর জমিতে আলু চাষ সম্পন্ন হয়েছে।
আদিতমারী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. ওমর ফারুক বাসসকে বলেন, ‘অনুকূল আবহাওয়া থাকলে চলতি মৌসুমে আলুর উৎপাদন প্রত্যাশার চেয়েও বেশি হতে পারে।’
জেলা সদরের উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা খন্দকার সোহায়েল আহমেদ জানান, হিমাগারে সংরক্ষিত পুরোনো আলু বাজারে থাকায় নতুন আলুর দাম চাপের মুখে রয়েছে।
এদিকে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. মো. সাইখুল আরিফিন আশা প্রকাশ করে বলেন, ‘আবহাওয়া সহায়ক থাকলে ভালো ফলনের পাশাপাশি কৃষকরা ন্যায্য দামে আলু বিক্রি করতে পারবেন।’
সূত্র : বাসস