শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগ দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীদের অসহযোগ কর্মসূচি ঘিরে রোববার ঝিনাইদহ, নাটোর, নওগাঁ, নড়াইলসহ সারা দেশে ব্যাপক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এতে ঝিনাইদহে ৩০, নড়াইলে ২০, ঢাকার কেরানীগঞ্জ ৫০ জন আহত হয়েছেন। এ সময় থানায় হামলা, পুলিশ বক্স ভাঙচুর, পোস্ট অফিস, পৌরসভাসহ বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা ও বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুর করা হয়েছে।
বিস্তারিত প্রতিনিধিদের পাঠানো প্রতিবেদন
নাটোর: নাটোরে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সরকারদলীয় নেতা-কর্মীদের ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। রোববার দুপুর সোয়া ১২টার দিকে শহরের ভবানীগঞ্জ মোড় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। আন্দোলনকারীদের পূর্বঘোষণা অনুযায়ী দুপুর ১২টায় শহরের মাদ্রাসা মোড় এলাকায় বিক্ষোভ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেয় তারা। সকাল থেকে অল্প অল্প করে আন্দোলনকারীরা জড়ো হতে শুরু করে। দুপুর সোয়া ১২টার দিকে প্রায় দুই শতাধিক আন্দোলনকারী জমায়েত হয়। এ সময় আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগের নেতা-কর্মীরা তাদের প্রতিহত করতে ধাওয়া দেয়। এ সময় আন্দোলনকারীরাও তাদের ধাওয়া দিলে এবং ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে উভয়পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় বেশ কয়েকজন আন্দোলনকারীকে মারধর করে সরকারদলীয় নেতা-কর্মীরা। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ঘটনাস্থলে পৌঁছালে বিক্ষোভকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়।
অন্যদিকে নাটোরের বাগাতিপাড়ায় বিক্ষোভ মিছিল করেছে বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা। সকাল ১০টার দিকে দয়ারামপুর বাজার এলাকায় শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও সাধারণ জনতা সড়কে জমায়েত হয়ে বিক্ষোভ করে সরকারের পদত্যাগ দাবি করে বিভিন্ন স্লোগান দেয়।
নওগাঁ: নওগাঁয় বিক্ষোভ মিছিল ও সড়ক অবরোধ করেছে আন্দোলনকারীরা। রোববার সকাল ১০টা থেকে শহরের কাজীর মোড়ে জড়ো হতে শুরু করেন বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা। তাদের সঙ্গে অংশ নেন আরও অনেকে। পরে আন্দোলনকারীরা প্রধান সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। এ সময় এক দফা দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দিতে শোনা যায় তাদের। এতে বন্ধ হয়ে যায় প্রধান সড়ক দিয়ে যানচলাচল।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা শহরের সরিষাহাটির মোড়ে আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে অবস্থান নেন। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয় পথচারীদের। বিশেষ করে অটোরিকশা চালকদের। অনেক পথচারীকে হেঁটে বিকল্প রাস্তা দিয়ে যেতে দেখা যায়। মোটকথা পুরো শহরে আতঙ্কের পরিবেশের সৃষ্টি হয়। দোকানপাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। বন্ধ রয়েছে যাত্রীদের চলাচলের জন্য ভারী যানবাহন।
এদিকে সাধারণ পথচারীদের সতর্ক করতে দোকান বন্ধ করে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করছিল দোকানদার আকাশসহ অনেক ব্যবসায়ী। তারা জানান, পথচারীরা যেন কোনো বিপদের সম্মুখীন না হয়, তাই তাদের সতর্ক করে বিকল্প পথে যেতে বলছি।
দুপুরের দিকে পার্টি অফিস থেকে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা মিছিল নিয়ে আন্দোলনকারীদের দিকে আসতে চাইলে কিছু সময়ের জন্য উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। পরে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ সেনাবাহিনীর সদস্যদের সতর্ক অবস্থানের কারণে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যায়।
নওগাঁর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) গাজিউর রহমান বলেন, আন্দোলন ও বিক্ষোভের শুরু থেকেই পুলিশ তাদের সুষ্ঠু ও সুশৃঙ্খলভাবে আন্দোলন করার জন্য বলেছে। তাদের প্রতি পুলিশ সহনশীল আচরণ করছে। শিক্ষার্থীদের যাতে কোনো ক্ষতি না হয় সে জন্য তাদের নিরাপত্তা দিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। মোটকথা শহরে যেকোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা এড়াতে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।
ঝিনাইদহ: ঝিনাইদহে কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়ার সময় পুলিশসহ ৩০ জন আহত হয়েছেন। আন্দোলনকারীরা রোববার বেলা ১১টা থেকে বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত সারা শহরে তাণ্ডব চালায়। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা যোগ দেয়।
শিক্ষার্থীরা সকালে শহরের মুজিব চত্বর থেকে এবং বিএনপি হাটের রাস্তা থেকে মিছিল বের করেন। তারা পায়রা চত্বরে এসে একসঙ্গে মিলিত হয়। মিছিল থেকে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুর, থানায় হামলা, পুলিশ বক্স ভাঙচুর, পৌরসভা, ছবি তোলার সময় সাংবাদিক কাজী আলী আহমেদ লিকুর ওপর হামলা চালায়। এ ছাড়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সফিকুল ইসলাম অপুর বাড়িসহ বিভিন্ন স্থাপনায় ইটপাটকেল ছুড়ে হামলা চালায়। পুলিশ বাঁধা দিলে শুরু হয় ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়া। সে সময় পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড, কাঁদানি গ্যাস ও শর্টগানের গুলি ছোড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। একপর্যায়ে সারা শহর রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এতে পুলিশসহ অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন। ইটের আঘাতে পুলিশের এসআই শরিফুজ্জামানের মাথা ফেটে গেছে। আহতদের মধ্যে ২৪ জনকে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাকিরা বিভিন্ন ক্লিনিকে ভর্তি হয়েছেন। সকাল থেকে যানবাহন চলাচল করেনি। দোকানপাট খোলেনি। পুলিশি নিরাপত্তায় অফিস-আদালত চলেছে এবং উত্তপ্ত পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
নড়াইল: বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের অসহযোগ আন্দোলনের ডাকে রোববার বেলা ১১টায় নড়াইল সদর উপজেলার আউড়িয়া ইউনিয়নের মাদ্রাসা বাজার এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে। মিছিলে বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের কয়েক হাজার নেতা-কর্মী যোগ দেয়। মিছিলটি শহরে প্রবেশের চেষ্টা করলে চিত্রা নদীর শেখ রাসেল সেতুর ওপর উঠলে পুলিশ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা বাধা দেয়। এতে উভয়পক্ষের মধ্যে ইটপাটকেল নিক্ষেপসহ পুলিশ কয়েক রাউন্ড টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে। এতে ২০ জনের মতো আহত হন। এ সময় ঢাকা-বেনাপোল ভায়া নড়াইল মহাসড়কে যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
সংঘর্ষে পুলিশের টিয়ারসেল নিক্ষেপের পাশাপাশি কয়েক রাউন্ড গুলি চালায়। এত আল নাহিয়ান প্রিন্স নামে এক যুবলীগ কর্মী গুলিবিদ্ধ হয়ে সদর হাসপাতালে ভর্তি হন। প্রিন্স নড়াইল পৌরসভার আলাদাতপুর গ্রামের শেখ আবু বক্করের ছেলে।
সীমাখালী গ্রামের প্রত্যক্ষদর্শী মিজান মোল্লা, মিলি খানম, শিমুল হাসান জানান, সেতুর দক্ষিণ পাশেই আমার বাড়ি। অনেক বিএনপি, জামায়াত-শিবিরের ছেলেরা রাস্তার ওপর ইট ভেঙে পুলিশের দিকে ছুড়ে মারছিল। এদের হাতে হ্যান্ড মাইকও ছিল। পানি খেতে চাইলে আমরা তাদের পানি পানের ব্যবস্থা করেছি। ওরা পানি পানের সময় বসে পান করছিল। ওদের কাউকে চিনি না।
প্রিন্স জানান, ‘চিত্রা নদীর উত্তর প্রান্তে পুলিশ এবং ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতা-কর্মীরা অবস্থান নেয়। আর সেতুর দক্ষিণ প্রান্তে বিএনপি-জামায়াত শিবিরের নেতা-কর্মী অবস্থান নেয়। ইটপাটকেল নিক্ষেপের একপর্যায়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে। এ সময় অন্য প্রান্ত থেকে কয়েক রাউন্ড গুলি করা হয়। একটি বুলেট আমার পেটে লেগে বের হয়ে যায়। সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আকাশ ঘোষ রাহুলসহ উভয়পক্ষের ২০ জন আহত হন।
এদিকে ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দুজন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন এমন খবর ভেসে বেড়ালেও এর কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি।
কেরানীগঞ্জ (ঢাকা): ঢাকার কেরানীগঞ্জে আন্দোলনকারী ছাত্রদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের দফায় দফায় সংঘর্ষে মডেল থানার ঘাটারচর এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। এ সময় আন্দোলনকারীরা বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ, আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের বাড়ি, ব্যক্তিগত অফিস ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ এবং কেরানীগঞ্জ মডেল থানা আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে নেতাদের অবরুদ্ধ করে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। এ সময় আওয়ামী লীগের ডজনখানেক নেতা-কর্মী গুরুতর এবং বেশ কিছু আন্দোলনকারী সামান্য আহত হয়। এর আগে (রোববার) সকালে কেরানীগঞ্জ মডেল থানাধীন ঘাটারচর এলাকায় গত ২১ জুলাই কোটা আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত ইস্পাহানি ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থী রিয়াজ নিহত হওয়ার প্রতিবাদে ও অসহযোগ আন্দোলনের সমর্থনে পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে কেরানীগঞ্জের সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা আটি ভাওয়াল উচ্চবিদ্যালয়ের সামনে থেকে মিছিল বের করার চেষ্টা করলে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা তাতে বাধা দেয়। বাধা উপেক্ষা করে সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা মিছিল নিয়ে সামনে অগ্রসর হলে বড় মনোহরিয়া চৌরাস্তা এলাকায় ছাত্রদের মিছিলের ওপর পেছন থেকে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও গুলিবর্ষণ করে। এতে মুহূর্তেই সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা ছাত্রভঙ্গ হয়ে যায়। পরে তারা সংগঠিত হয়ে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ধাওয়া দিলে নেতা-কর্মীরা দিগ্বিদিক ছোটাছুটি করে বিভিন্ন দোকানপাটের ভেতরে আশ্রয় নেয়। এ সময় মডেল থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আবু সিদ্দিক ও তারানগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন ফারুক অবরুদ্ধ হন। পরবর্তী সময়ে স্থানীয়দের সহায়তায় তাদের উদ্ধার করা হয়। পরে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ছয়টি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ ও পাঁচটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে। এ ছাড়া স্থানীয় চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ফারুক এবং আওয়ামী লীগ নেতা আবু সিদ্দিকের বাড়িতে ব্যাপক ভাঙচুর চালিয়ে তাদের ব্যবহৃত গাড়ি পুড়িয়ে দেয়।
এর কিছুক্ষণ পরে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা পুনরায় সংগঠিত হয়ে আবারও ছাত্রদের ধাওয়া দিয়ে ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও গুলিবর্ষণ শুরু করে। এ সময় বিক্ষুব্ধ আন্দোলনকারীরা আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের ধাওয়া দিলে তারা ঘাটারচর এলাকায় কেরানীগঞ্জ মডেল থানা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের ভেতরে আশ্রয় নেয়। পরে বিক্ষুব্ধ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা আওয়ামী লীগের কার্যালয় ঘেরাও করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে এবং প্রধান ফটকে আগুন লাগিয়ে দেয়। অবস্থা বেগতিক দেখে বেশ কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতা ভবনের দ্বিতীয় তলার ছাদের ওপর গিয়ে আশ্রয় নিলে উত্তেজিত শিক্ষার্থীরা ছাদের গেট ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে তাদের গণধোলাই দেয়। এ সময় হুড়োহুড়ি করে ভবনের ভেতর ঢুকতে গিয়ে ও ভবনের ওপর থেকে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের ছোড়া ইটের আঘাতে অন্তত ২০ জন শিক্ষার্থী আহত হয়। পরে ভবনে আটকে থাকা অন্তত ১০-১৫ জন আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী আন্দোলনকারীদের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।
খুলনা: খুলনায় আওয়ামী লীগের অফিসে আগুন দিয়েছে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। রোববার বেলা ১২টার দিকে খুলনার শঙ্খ মার্কেটের জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে তারা আগুন ধরিয়ে দেয়। এ সময় শিক্ষার্থীরা শেখ হাসিনা সরকারের পতন ও জাতীয় সরকার গঠনের লক্ষ্যে নানা রকম স্লোগান দিতে থাকেন। এর আগে সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দলে দলে শিক্ষার্থীরা নগরীর শিববাড়ি মোড়ে জড়ো হতে থাকেন। বর্তমানে ওই মোড়ে প্রায় ৫/৭ হাজারের কাছাকাছি শিক্ষার্থী উপস্থিত রয়েছেন। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে একদল শিক্ষার্থী শিব বাড়ি থেকে মিছিল সহকারে খুলনার আওয়ামী লীগ অফিসের দিকে রওনা হয়ে এ অগ্নিকাণ্ড ঘটায়।
সিলেট: সিলেটের বন্দরবাজারের কোর্ট পয়েন্ট এলাকায় পুলিশের সাথে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ চলছে। বেলা ১২টার দিকে এ সংঘর্ষ শুরু হয়। পুলিশ আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে ব্যাপক টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেণেড ছুঁড়ছে। জানা যায়, অসহযোগ চলাকালে পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী বেলা ১১টার দিকে নগরের কোর্ট পয়েন্ট এলাকায় জড়ো হয় আন্দোলনকারীরা। এতে শিক্ষার্থীদের সাথে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষও যোগ দেন। এই এলাকায়ই জেলা প্রশাসক কার্যালয়, পুলিশ সুপার কার্যালয়, সিটি করপোরেশনসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সরকারি অফিস রয়েছে। আন্দোলনকারীরা অবস্থান নেওয়ার আগে থেকেই এ এলাকায় বিপুল সংখ্যক পুলিশ সাজোয়া যান নিয়ে অবস্থান নেয়। বেলা ১২টার দিকে পুলিশের সাথে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ শুরু হয়। আন্দোলনকারীদের থামাতে পুলিশ টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেণেড ছুঁড়ছে। এক পর্যায়ে পুলিশের বাধা পেয়ে মূল সড়ক ছেড়ে আশপাশের গলিতে অবস্থান নেয় আন্দোলনকারীরা।
মোংলা (বাগেরহাট): মোংলা-খুলনা মহাসড়কের ফয়লা এলাকায় (বাগেরহাটের রামপাল) আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও পুলিশের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়েছে। চলমান ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার মধ্যে একটি পুলিশ ভ্যানে আগুন দেয় আন্দোলনকারীরা। এ সময় সংবাদ সংগ্রহে গিয়ে আহত হয়েছেন বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার সাংবাদিক সবুর রানা ও সুজন মজুমদার।
এদিকে অসহযোগ আন্দোলনের অংশ নিয়ে মোংলা-খুলনা মহাসড়কের ভাগা এলাকায় সকালে বিক্ষোভ মিছিল করে শিক্ষার্থীরা। রবিবার বেলা সাড়ে ১১টায় বের হওয়া মিছিল শেষে মহাসড়কে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা। দুপুর ১২টা পর্যন্ত চলে শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন। পরে পুলিশ ও আন্দোলনকারীরা ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া জড়িয়ে পড়েন।
দিনাজপুর: জাতীয় সংসদের হুইপ ও দিনাজপুর সদর-৩ আসনের সংসদ সদস্য ইকবালুর রহিম এমপি ও বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের বাসা ভাংচুর ও আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে বিক্ষুব্ধরা। এ সময় পুলিশের দুটি পিকআপ ভ্যানে আগুন জ্বালিয়ে দেয় তারা। রাবার বুলেট ও কাঁদলে গ্যাস ছুটছে পুলিশ। সদর হাসপাতাল, জোড়া ব্রীজ, ফুলবাড়ি বাসস্ট্যান্ড, লিলির মোড়, বাহাদুর বাজার, স্টেশন রোড, কাচারী রোড, মডার্ণ মোড়, বুটিবাবুর মোড়, মুন্সীপাড়াসহ সারা শহরে আন্দোলনকারীদের সাথে পুলিশের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া চলে। শত শত রাউন্ড রাবার বুলেট ও টিয়ার শেল ছুড়েছে পুলিশ। এসব ঘটনায় ১০ জন গুলিবিদ্ধসহ আহত হয়েছে অর্ধশত ব্যক্তি।
সকাল ১০টায় দিনাজপুর ফুলবাড়ী বাসস্ট্যান্ডে আন্দোলনকারী জমায়েত হতে শুরু করে। তারা মিছিল নিয়ে শহরের হাসপাতাল মোড়স্থ হুইপ ইকবালুর রহিম এমপি ও বিচারপতি ইনায়েতুর রহিমের বাড়ির দিকে অগ্রসর হতে শুরু করলে পুলিশের সাথে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। দিনাজপুরের পুলিশ সুপার শাহ ইফতেখার আহমেদের নেতৃত্বে পুলিশ আন্দোলনকারীদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করে। দীর্ঘসময় পুলিশের সাথে সংঘর্ষের এক পর্যায়ে আন্দোলনকারীরা হুইপ ও বিচারপতির বাড়ীতে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। তারা বাড়ীতে থাকা কয়েকটি মোটরসাইকেল বের করে বাসার গেটে এনে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। জানা গেছে, ধাওয়া পাল্টা দেওয়ার সময় এবং রাবার বুলেট ও টিয়ার সেল নিক্ষেপ করে। ১০ জনের গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। সারা শহরজুড়ে থেমে থেমে আন্দোলনকারীদের সাথে পুলিশের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে। শহরের মোড়ে মোড়ে এখন আগুন জ্বলছে। এসব ঘটনা চলাকালে শহরের কোথাও সেনা সদস্য বা বিজিবির উপস্থিতি দেখা যায়নি। এর আগে শহরের পলিটেকনিক মোড়ে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ ও গ্রাফিতি অঙ্কন করে শিক্ষার্থীরা। পরে মিছিল নিয়ে শহরের দিকে অগ্রসর হলে এ সংঘর্ষে সুত্রপাত হয়।
নেত্রকোনা: নেত্রকোনায় রোববার সকাল ১০টা থেকে সরকার বিরোধী আন্দোলনকারী ও সরকারের পক্ষের সমর্থক সহ নেতাকর্মীদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়েছে। শহরের সাতপাই, নাগড়া সহ বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। জেলার শ্যামগঞ্জ বাজারের একাধিক বাসিন্দা জানান, নেত্রকোণা-ময়মনসিংহ সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে আন্দোলনকারীরা। এসময় পুলিশের একটি গাড়ি ভাঙচুর করে আন্দোলনকারীরা।
নোয়াখালী: নোয়াখালীতে রোববার সকাল থেকেই জেলা শহর মাইজদীর প্রধান সড়কে অবস্থান নেয় বিক্ষোভকারীরা। এসময় তাদের বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে রাস্তায় আগুন দিতে দেখা যায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টায় এখন কোথাও পুলিশি তৎপরতা দেখা যায়নি। সকাল ১০ টার দিকে নোয়াখালী-৪(সদর-সুবর্ণচর) আসনের সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরী তার অনুসারী নেতা-কর্মীদের নিয়ে পুড়ে যাওয়া জেলা আওয়ামী লীগ অফিস দেখতে আসেন। এসময় বিক্ষোভকারীদের সাথে তাদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এসময় কয়েক রাউন্ড গুলির শব্দ শুনা যায়। একপর্যায়ে এমপি একরাম সহ তার অনুসারীরা ব্যর্থ হয়ে জেলা শহর থেকে চলে যান। শহরেরর সব কটি সড়কে আগুন জ্বালিয়ে অবস্থান করে বিক্ষোভকারীরা।
বেলা সাড়ে ১১টার সময় সেনাবাহিনীর গাড়ী টহল দেওয়ার সময় আন্দোলনকারীরা ‘এ মুহূর্তে দরকার সেনাবাহিনীর সরকার’- স্লোগান দেয়।
কালিয়াকৈর (গাজীপুর): গাজীপুরের কালিয়াকৈরে গতকাল রোববার দিনব্যাপী সড়ক-মহাসড়ক অবরোধ করে বিভিন্ন স্লোগানে বিক্ষোভ মিছিল করেছে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনকারীরা ৩টি পুলিশ বক্স, আওয়ামী লীগের অফিস, থানার সামনে রাখা গাড়িসহ বেশকিছু যানবাহনে অগ্নিসংযোগ করে। এক পর্যায় পুলিশ ও আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মাঝে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। শিক্ষার্থীদের হামলায় ওসিসহ কয়েকজন পুলিশ সদস্য ও পুলিশের গুলিতে শিশুসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হন। থমথমে বিরাজ করছে কালিয়াকৈর।
চুয়াডাঙ্গা: চুয়াডাঙ্গা জেলাজুড়ে কর্মসূচি পালন করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা। এসময় জেলার বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নেয় শিক্ষার্থীরা। কোথাও কোথাও বিক্ষোভ প্রদর্শন করতে গেলে বাধার মুখে পড়েন তারা। ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা তাদের ওপর হামলা চালায় বলে অভিযোগ তোলেন। রোববার সকাল থেকে জেলাজুড়ে এমন পরিস্থিতি বিরাজ করছিল। সকাল থেকে চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুর সড়কের ভালাইপুর বাজারে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন আন্দোলনকারীরা। এসময় তারা একদফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে যান চলাচল বন্ধ করে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। সড়কের দু’পাশে সৃষ্টি হয় যানজট।
একই সাথে শহরের কোর্টমোড় এলাকাতেও বিক্ষোভ করতে গেলে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের বাধার মুখে পড়েন আন্দোলনকারীরা। এসময় তাদের ব্যানার ছিড়ে ফেলা হয়। শহরের হাসপাতাল সড়কে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালানো হয়। দর্শনা শহরে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে আন্দোলনকারীরা বাসস্ট্যান্ডে জড়ো হলে তাদের ওপরেও হামলা চালানো হয় বলে অভিযোগ ওঠে। এছাড়া জেলার বদরগঞ্জ, জীবননগর ও আলমডাঙ্গাতেও সড়কে নামে আন্দোলনকারীরা। এমন পরিস্থিতিতে জেলাজুড়ে আতঙ্ক ও থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।
ভৈরব (কিশোরগঞ্জ): কিশোরগঞ্জের ভৈরবে আন্দোলনকারীদের সাথে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষ চলাকালে পুলিশ প্রায় শতাধিক রাউন্ড রাবার বুলেট ও টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ করে। এসময় কমপক্ষে অর্ধশত আহত হয়। রোববার দুপুর ১২টা থেকে বিকেল সাড়ে ৩ টা পর্যন্ত ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ও স্থানীয় বাসস্ট্যান্ড, জগনাথপুর এবং কালিকাপ্রসাদ এলাকায় এ সংঘর্ষ চলে। এসময় আন্দোলনকারীরা কয়েকটি বাড়ীঘর দোকানপাট ভাংচুর করে। তবে বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে দেখা যায়নি। স্থানীয় বিএনপির কিশোর যুবকদের আন্দোলনে অংশ নিতে দেখা যায়। তারা দুপুর দেড়টার দিকে ভৈরব থানা আক্রমণ করতে চেষ্টা করলে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা মিলে আন্দোলনকারীদের সরিয়ে দেয়। এ সময় পুলিশ কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়ে।
প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা প্রতিহত করার ব্যর্থতার পুরো দায়দায়িত্ব সরকারের বলে মন্তব্য করেছেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। তিনি বলেছেন, ‘যা ঘটে গেল, এটার অনেক অজুহাত হয়তো দেওয়া যাবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এর পুরো দায়দায়িত্ব সরকারেরই।’
সোমবার (২২ ডিসেম্বর) রাজধানীর কারওয়ান বাজারে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগে পুড়ে যাওয়া প্রথম আলোর কার্যালয় পরিদর্শন করে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ এসব কথা বলেন।
পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, ‘যা হয়ে গেছে, তা তো আর শোধরানো যাবে না। কিন্তু আমরা চাচ্ছি যে যারা এগুলো ঘটিয়েছে, তাদের শনাক্ত করা এবং তাদের বিচারের অধীনে আনা, এই চেষ্টা চলছে। এবং এর ফলাফলটা আপনারা দেখবেন।’
বাংলাদেশের ইতিহাসে এমন কালো রাত সংবাদপত্রে আসেনি উল্লেখ করে এই উপদেষ্টা বলেন, দেশের শীর্ষস্থানীয় দুটি সংবাদপত্র প্রথম আলো এবং ডেইলি স্টারে অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর করা হয়েছে এবং এতে কিছু সংবাদকর্মীর মৃত্যুর আশঙ্কাও ছিল। এটা দেশের সংবাদপত্র মাধ্যমের জন্য একটা কালো রাত ছিল।’
উচ্ছৃঙ্খলতা এবং নৈরাজ্য সৃষ্টি করা গণতন্ত্রের ভাষা নয়, উল্লেখ করে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘দেশ একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের দিকে যেতে চায়। সেখানে সবাইকে শৃঙ্খলায় ফিরে আসতে হবে। যার যে মতবাদই থাকুক না কেন, সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য চর্চা এবং সংবাদপত্রের মুক্ত বাকস্বাধীনতা রক্ষা করাই গণতন্ত্রের আদর্শ। এই আদর্শ থেকে বিচ্যুত হলে যেই গণতন্ত্রের উত্তরণ চাচ্ছে দেশের মানুষ, সেটি সম্ভব হবে না।’
দ্য ডেইলি স্টার ও প্রথম আলো কার্যালয়ে হামলা এবং ছায়ানটে ভাঙচুরের ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে দেশি ও আন্তর্জাতিক ছয়টি মানবাধিকার ও আইনি সহায়তা সংগঠন। সংগঠনগুলো বলেছে, জাতীয় নির্বাচনের আগে গণমাধ্যম ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের ওপর এসব হামলা আইনের শাসন এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতার জন্য অশনিসংকেত।
সোমবার (২২ ডিসেম্বর) এক যৌথ বিবৃতিতে সংগঠনগুলো এসব কথা বলে। তারা গণমাধ্যম ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং এসব হামলায় জড়িতদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনার দাবি জানায়।
বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারী সংগঠনগুলো হলো—হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ), এক্সেস নাও, বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট), ইন্টারন্যাশনাল ট্রুথ অ্যান্ড জাস্টিস প্রজেক্ট (আইটিজেপি), জার্নালিস্ট ফর ডেমোক্রেসি ইন শ্রীলঙ্কা (জেডিএস) ও টেক গ্লোবাল ইনস্টিটিউট।
বিবৃতিতে বলা হয়, ১৮ ডিসেম্বর দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম পুরোনো ও স্বনামধন্য দুটি গণমাধ্যম—প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টারের কার্যালয়ে হামলা এবং ছায়ানটে ভাঙচুর চালানো হয়েছে। এগুলো কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং স্বাধীন গণমাধ্যম, সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের ওপর পরিকল্পিত আঘাত। একই রাতে ময়মনসিংহে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে দীপু চন্দ্র দাসকে পিটিয়ে ও পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায়ও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সংগঠনগুলো।
বিবৃতিতে জুলাই অভ্যুত্থানের অন্যতম মুখ শরীফ ওসমান হাদীকে হত্যার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে সংগঠনগুলো বলছে, নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক সংবেদনশীল সময়ে এমন আক্রমণ গণতান্ত্রিক অংশগ্রহণের পথ সংকুচিত করবে।
হামলার সময় প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারের সাংবাদিক ও কর্মীদের প্রাণ সংকটে থাকার কথা উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, আগুনের মধ্যে সংবাদকর্মীরা আটকা পড়েছিলেন। তাদের জীবন চরম ঝুঁকিতে ছিল। রাষ্ট্রনাগরিকদের জীবন রক্ষার মৌলিক দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে তা গুরুতর উদ্বেগের বিষয়।
সাময়িকভাবে পত্রিকা দুটির প্রকাশনা বন্ধ থাকাকে নজিরবিহীন ঘটনা হিসেবে উল্লেখ করা হয় বিবৃতিতে।
বিবৃতিতে অন্তর্বর্তী সরকারের ভূমিকা নিয়েও কঠোর সমালোচনা করা হয়। এতে বলা হয়, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে তৎকালীন সরকার যেমন জাতীয় নিরাপত্তার দোহাই দিয়ে অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ ও দমন-পীড়ন চালিয়েছিল, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ঠিক বিপরীতভাবে সহিংসতা ও হুমকি মোকাবিলায় সিদ্ধান্তহীন বা অক্ষম বলে মনে হচ্ছে।
মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, সরকারের এই নিষ্ক্রিয়তা দায়মুক্তির সংস্কৃতিকে উসকে দিচ্ছে। রাষ্ট্র বা কোনো গোষ্ঠী—কারও মাধ্যমেই মানবাধিকার লঙ্ঘিত হলে রাষ্ট্রকে তা প্রতিকার করতে হবে। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে সরকার কার্যকর ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হচ্ছে।
হামলাগুলোর পেছনে অনলাইনভিত্তিক অপপ্রচার ও বিদ্বেষমূলক বক্তব্যের (হেট স্পিচ) ভূমিকা রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয় বিবৃতিতে। বলা হয়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বড় সংখ্যক অনুসারী (ফলোয়ার) থাকা কিছু ব্যক্তি সহিংসতায় উসকানি দিচ্ছেন। প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের মানবাধিকার নীতিমালা অনুযায়ী এসব নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছে। সরকার সাইবার আইন সংস্কারের কথা বললেও অনলাইনে সহিংসতা রোধে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না।
৬ দফা দাবি: বিবৃতিতে সংগঠনগুলো অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে ছয়টি সুনির্দিষ্ট দাবি জানিয়েছে। দাবিগুলো হলো: সারাদেশে সাংবাদিক, সংবাদমাধ্যম ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের ওপর হুমকি থাকলে অবিলম্বে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। প্রথম আলো, দ্য ডেইলি স্টার, ছায়ানট এবং অন্যান্য সাংবাদিক ও শিল্পীদের ওপর হামলার দ্রুত, স্বাধীন ও স্বচ্ছ তদন্ত করে দোষী ও পরিকল্পনাকারীদের বিচারের আওতায় আনা। প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে অনলাইনে বিদ্বেষমূলক বক্তব্য ও উসকানি রোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া এবং নির্বাচনের সময় ব্যবহারকারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের ওপর সহিংসতার বিরুদ্ধে সরকারকে প্রকাশ্যে ও দ্ব্যর্থহীনভাবে নিন্দা জানানো। ২০২৬ সালের নির্বাচনের আগে সাংবাদিকতা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের জন্য অনলাইন ও অফলাইনে নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করা। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও গণমাধ্যমের সুরক্ষা নিশ্চিতে জাতীয় আইন ও নীতিমালার সঙ্গে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের সামঞ্জস্য বিধান করা।
সংগঠনগুলো বিবৃতিতে বলেছে, তারা বাংলাদেশের সাংবাদিক, শিল্পী ও বিভিন্ন সম্প্রদায়ের পাশে আছে এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও নিরাপত্তার অধিকার রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার তার বৈধতা অনেক ক্ষেত্রেই হ্রাস করে ফেলেছে বলে মন্তব্য করেছেন নাগরিক প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশের আহ্বায়ক ও সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।
প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারের কার্যালয়ে হামলা ও আগুন দেওয়া এবং সম্পাদক পরিষদের সভাপতি নিউ এজ সম্পাদক নূরুল কবীরকে হেনস্তা করার প্রতিবাদে সোমবার (২২ ডিসেম্বর) আয়োজিত এক প্রতিবাদ সভায় সংহতি জানাতে এসে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য এ মন্তব্য করেন।
গত বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) রাতে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও সংগঠিত সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয় দেশের শীর্ষ সংবাদমাধ্যম প্রথম আলো। প্রথম আলো কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। এতে প্রথম আলোর কার্যালয় ভস্মীভূত হয়ে যায়। একই রাতে ডেইলি স্টার কার্যালয়েও ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট করা হয়। ওই রাতে সংহতি জানাতে ডেইলি স্টার কার্যালয়ে গেলে সম্পাদক পরিষদের সভাপতি নূরুল কবীরকে হেনস্তা করা হয়। এ ঘটনাকে ‘গণমাধ্যমের জন্য কালো দিন’ আখ্যায়িত করে প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাচ্ছেন অনেকেই। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই হামলার ঘটনা স্বাধীন গণমাধ্যমের ওপর হামলার শামিল।
তারই ধারাবাহিকতায় প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে ‘মব ভায়োলেন্সে আক্রান্ত বাংলাদেশ’ শীর্ষক এই যৌথ প্রতিবাদ সভার আয়োজন করে সংবাদপত্রের সম্পাদকদের সংগঠন সম্পাদক পরিষদ ও মালিকদের সংগঠন নিউজ পেপার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন (নোয়াব)। এই প্রতিবাদ সভায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, পেশাজীবী সংগঠন, ব্যবসায়ী সংগঠন, সাংবাদিক সংগঠন ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, আইনজীবীসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ সংহতি জানাতে আসেন। প্রতিবাদ সভা শেষে প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁওয়ের পাশের রাস্তায় দাঁড়িয়ে মানববন্ধন করেন তারা।
সভায় বক্তব্যে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘এই সরকারের মনে রাখা উচিত তারা কোনো নির্বাচিত সরকার নয়, বৈধ সরকার হয়তো। একটি অনির্বাচিত সরকারের শাসন করার যোগ্যতা-ক্ষমতা থাকে ততক্ষণ, যতক্ষণ তার নৈতিক বৈধতা থাকে। এই ঘটনার ভেতর দিয়ে বর্তমান সরকারের বৈধতা অনেক ক্ষেত্রেই হ্রাস করে ফেলেছে। এটা যদি তারা পুনঃস্থাপন করতে না পারে তাহলে আগামী দিনে এই যে উত্তরণের প্রক্রিয়া, অভ্যুত্থানের আদর্শ তারা রক্ষা করতে পারবে কি না, সে ক্ষেত্রে সন্দেহ আছে।’
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘এ রকম একটি সভার প্রয়োজন পড়বে, এটা আমরা কেউ কল্পনাও করিনি। আমি গত দেড় মাসে বাংলাদেশের বিভিন্ন শহরে গিয়েছি। সেখানে তারা (জনগণ) একটি কথাই বড়ভাবে বলেছে, নিরাপত্তার অভাব, এই নিরাপত্তার অভাবকেও তারা বহুভাবে ব্যাখ্যা করেছেন। এটি নারীদের ক্ষেত্রে সত্য, ধর্মীয় সংখ্যালঘু, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী, দলিত, ভিন্ন মতাবলম্বীদের ক্ষেত্রে সত্য। একই রকমভাবে রাজনীতিবিদদের জন্যও সত্য, যারা নির্বাচন করতে চান। এটি শরিফ ওসমান হাদি শহীদ (ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র) হওয়ার আগের ঘটনা।’
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, সেখানে দ্বিতীয় কথায় যেটা এসেছে, সেটা হলো তারা (জনগণ) পরিষ্কারভাবে বর্তমান সরকারের ওপর আস্থার অভাবের কথা বলেছেন। বর্তমান সরকার, তার প্রশাসন, তার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দিয়ে নিরাপত্তা দিতে পারবে, এটাতে তাদের আস্থার অভাব। এগুলো যখন বলেছেন, তখনো কিন্তু এই ঘটনাগুলো ঘটেনি। সুতরাং এই ধরনের ঘটনা যে ঘটতে পারে, তার জন্য গণমানুষের পক্ষ থেকে কিন্তু ইঙ্গিত, সংকেত বিভিন্ন সময়ে দেওয়া হয়েছে।’
নৌপরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, কর সমন্বয়ের পর ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের (বিএসসি) নিট মুনাফা হয়েছে ৩০৬ কোটি ৫৬ লাখ টাকা, যা সংস্থাটির ৫৪ বছরের ইতিহাসে এক অর্থবছরে সর্বোচ্চ।
তিনি বলেন, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বিএসসির মোট আয় ছিল ৫৯৬ কোটি ১৮ লাখ টাকা এবং ব্যয় ছিল ৩১১ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। ওই অর্থবছরে কর পরবর্তী নিট মুনাফা ছিল ২৪৯ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। এক বছরের ব্যবধানে বিএসসির নিট আয় বেড়েছে প্রায় ৫৬ কোটি ৮৭ লাখ টাকা।
সোমবার (২২ ডিসেম্বর) চট্টগ্রাম বোট ক্লাবে আয়োজিত বিএসসি-এর ৪৮তম বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপদেষ্টা এ তথ্য প্রকাশ করেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিএসসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কমডোর মাহমুদুল মালেক। বিএসসি সচিব আবু সাফায়াৎ মুহাম্মদ শাহেদুল ইসলামের সঞ্চালনায় সাধারণ সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. নূরুন্নাহার চৌধুরী। এছাড়াও বিএসসি পরিচালনা পর্ষদের সদস্য ও শেয়ারহোল্ডাররা সভায় অংশগ্রহণ করেন।
নৌপরিবহন উপদেষ্টা ও বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন (বিএসসি) পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বিএসসির পরিচালন আয় ছিল ৫৯০ কোটি ৯৮ লাখ টাকা এবং অন্যান্য খাত থেকে আয় হয়েছে ২০৭ কোটি ৩০ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে মোট আয় দাঁড়িয়েছে ৭৯৮ কোটি ২৮ লাখ টাকা। অন্যদিকে, পরিচালন ব্যয় ছিল ২৮৯ কোটি ৯২ লাখ টাকা এবং প্রশাসনিক ও আর্থিক খাতে ব্যয় হয়েছে ১২৬ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। ফলে মোট ব্যয় দাঁড়ায় ৪১৬ কোটি ২৭ লাখ টাকা।
চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে নৌপরিবহন উপদেষ্টা বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের আশেপাশে মাফিয়াচক্র আছে। ৪০ বছর বন্দর একই প্রতিষ্ঠানের হাতে ছিল। নতুন কাউকে আসতে দেয়নি। দীর্ঘদিন ধরে একটি গোষ্ঠী বন্দরকেন্দ্রিক কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করে রেখেছিল, যার ফলে সংশ্লিষ্টখাতে কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন ও লাভ সম্ভব হয়নি।
এই মাফিয়াচক্রের কারণেই বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন অতীতে লাভবান হতে পারেনি বলে মন্তব্য করে উপদেষ্টা বলেন, এবার ৫৪ বছরের ইতিহাসে সর্বোচ্চ আয় করেছে শিপিং করপোরেশন। চট্টগ্রাম বন্দরের উন্নয়নে সরকার প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার বিদেশি বিনিয়োগের ব্যবস্থা করেছে। পাশাপাশি বড় বড় আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে বিনিয়োগে আগ্রহী হচ্ছে। এসব উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে চট্টগ্রামসহ পুরো দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়বে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে গার্ডার ব্রিজ নির্মাণের ৬ মাসের মাথায় ধসে পড়েছে দুপাশের সংযোগ সড়ক। এতে করে প্রতিনিয়ত ঘটছে নানা দুর্ঘটনা। সোমবার (২২ ডিসেম্বর) সকালে এমন চিত্র দেখা যায় উপজেলার সাতপোয়া ইউনিয়নের চর সরিষাবাড়ী ঘোড়ামারা বাজার-সংলগ্ন এলাকায় নবনির্মিত ব্রিজটিতে।
এলাকাবাসীর দাবি, ক্ষতিগ্রস্ত ব্রিজের দুপাশের সংযোগ সড়কটি সংস্কার করে ঝুঁকিমুক্ত করা হোক।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার সাতপোয়া ইউনিয়নের ঘোড়ামারা বাজার-সংলগ্ন ঝিনাই শাখা নদীর ওপর ৬ মাস আগে নির্মাণ করা হয় ১৪০ মিটার গার্ডার ব্রিজ ও দুপাশে ৩৫০ মিটার সংযোগ সড়ক।
যার কাজ পান জামালপুরের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চৌধুরী এন্টারপ্রাইজ। ব্রিজটি নির্মাণ করতে খরচ হয় ১১ কোটি ৩৫ লাখ ২২ হাজার ১৩৬ টাকা। এই ব্রিজ দিয়ে উপজেলার আদ্রা, চর রৌহা ও পার্শ্ববর্তী মাদারগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের মানুষ ও যানবাহন চলাচল করে। কিন্তু নির্মাণের ৬ মাসের মাথায় ব্রিজটির দুপাশের সংযোগ সড়ক ধসে পড়ে। এতে করে ব্রিজের দুপাশে তৈরি হয় বিশাল গর্ত। সংযোগ সড়কের এ অবস্থার কারণে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হয় যানবাহন ও স্থানীয়দের। প্রায় প্রতিদিনই ঘটছে নানা যানবাহনের দুর্ঘটনা। তবে ঠিকাদারের নিম্নমানের কাজের কারণে এমনটি হয়েছে বলে দাবি করেন এলাকাবাসী।
স্থানীয় আলতাফ হোসেন, নাসিম আহাম্মেদ, বৃদ্ধা সমিরন বেওয়া ও শিক্ষার্থী সাকিবসহ অনেকেই অভিযোগ করে বলেন, নিম্নমানের কাজ করার কারণে যখন ব্রিজটি কাজ করা হয় তখনই এলাকাবাসী বাধা দিয়ে ছিল। তবুও আ. লীগের ঠিকাদার ফারুক চৌধুরীর লোক ক্ষমতার প্রভাব খাঁটিয়ে কাজটি করে যায়। এখন আমরা কাজের বাস্তব প্রতিফলন দেখতে পাচ্ছি। ৬ মাস পার না হতেই এখনই সংযোগ সড়ক ধসে গেছে। ঠিকদার খুবই নিম্নমানের কাজ করছেন। এলাকাবাসী খুব ভয়ের মধ্যেই ঝুঁকি নিয়ে এই ব্রিজ দিয়ে চলাচল করে। গর্তের ভেতরে অনেক মানুষ পড়ে গিয়ে আহতও হয়েছে। শুকনো মৌসুমে এমন অবস্থা হলে বন্যার সময় আসলে এই ব্রিজের অবস্থা খুব ভয়াবহ হবে। দ্রুত ব্রিজের সংযোগ সড়ক মেরামত করে মানুষের চলাচলের সু-ব্যবস্থা করা হোক।
এ বিষয়ে জানতে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান চৌধুরী এন্টারপ্রাইজের সাথে যোগাযোগ করা হলে তার ব্যবহৃত মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়।
সরিষাবাড়ী উপজেলা এলজিইডি কর্মকর্তা গোলাম কিবরিয়া তমাল বলেন, ‘আমি নতুন এসেছি। আমি এসে ব্রিজটির কাজ সম্পূর্ণ পেয়েছি। ব্রিজটি ২০২৩ সাল থেকে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত কাজ করে চৌধুরী এন্টারপ্রাইজ। সংযোগ সড়কের ধসে যাওয়ার খবর পেয়ে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান চৌধুরী এন্টারপ্রাইজের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তাদেরকে একাধিকবার চিঠিও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তারা পলাতক থাকায় তাদের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। বিষয়টি আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে জানানো হয়েছে। আশা করি অতি দ্রুত সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
সমাজের নানা অনিয়ম বন্ধের অঙ্গীকার নিয়ে সুনামগঞ্জে দিনব্যাপী হাইকিং ও জনসচেতনতামূলক কর্মসূচি হাতে নিয়েছে জেলা স্কাউটস। সচেতন নাগরিকদের প্ল্যাটফর্ম সুনামগঞ্জ জনউদ্যোগ ও জেলা স্কাউটসের যৌথ আয়োজনে শহরজুড়ে এই ব্যতিক্রমী প্রচারণা চালানো হয়। এতে জেলার ৮টি উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের স্কাউট সদস্যরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নেন।
সকাল থেকেই স্কাউট সদস্যরা নির্দিষ্ট পোশাকে সুশৃঙ্খলভাবে বিভিন্ন সেশনে অংশগ্রহণ করেন। কর্মসূচিকে কার্যকর করতে অংশগ্রহণকারীদের পাঁচটি পৃথক দলে বিভক্ত করা হয়। প্রতিটি দল শহরের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট এবং জনবহুল এলাকাগুলোতে প্রচার অভিযান চালায়। নারী নির্যাতন, যৌন নিপীড়ন ও ইভ টিজিং প্রতিরোধ, বাল্যবিবাহ বন্ধ এবং শিশুশ্রম নিরসনে জনমত গঠন, শিশু অধিকার সুরক্ষা ও
প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অধিকার নিশ্চিতকরণ, নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করা এবং খাদ্য ও স্বাস্থ্য অধিকার সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির বিষয় শহরের বিভিন্ন মোড়ে নির্ধারিত বিষয়ের ওপর সংক্ষিপ্ত পথসভা অনুষ্ঠিত হয়। স্কাউট সদস্যদের এই প্রচারণা সাধারণ মানুষের মাঝে ব্যাপক কৌতূহল ও প্রশংসার সৃষ্টি করে।
কর্মসূচিতে উপস্থিত থেকে দিকনির্দেশনা প্রদান করেন জেলা স্কাউটসের
নেতারা ও জনউদ্যোগের সদস্যরা। বক্তারা বলেন, স্কাউটিং শুধু শখের বিষয় নয়, এটি সমাজ পরিবর্তনের একটি হাতিয়ার। তরুণেরা যদি সচেতন হয়, তবে সমাজ থেকে নারী নির্যাতন, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অধিকার নিশ্চিতকরণ ও নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত, ইভ টিজিং প্রতিরোধ ও যৌন নিপীড়নের মতো ব্যাধি দূর করা সম্ভব।
সুনামগঞ্জ জনউদ্যোগের সদস্য জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আমরা চাই একটি বৈষম্যহীন ও নিরাপদ সুনামগঞ্জ। স্কাউট সদস্যরা তাদের হাইকিংয়ের মাধ্যমে আজ যে বার্তা মানুষের দ্বারে দ্বারে পৌঁছে দিয়েছেন, তা ভবিষ্যতে সুন্দর সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখবে।’
জেলা স্কাউটসের কমিশনার কানন বন্ধু রায় বলেন, ‘জনউদ্যোগ ও জেলা স্কাউটসের যৌথ আয়োজনে হাইকিং কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়েছে। কম্পাস ধরে স্কাউটস সদস্যরা শহরে সচেতনতামূলক প্রচারণা করেছেন। ভবিষ্যতে এ রকম কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।’
অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে কর্মসূচিকে প্রাণবন্ত করে তোলেন সুনামগঞ্জ
জনউদ্যোগের সদস্য বুরহান উদ্দিন, জেলা স্কাউটসের সাধারণ সম্পাদক শেখ নজরুল ইসলাম, কোষাধ্যক্ষ মো. আব্দুস সাত্তার আজাদ, কোর্স লিডার মৃদুল চন্দ্র তালুকদার, প্রশিক্ষক বিপ্লব কেতন চ্যাটার্জি, মো. এমরান আলী, দীলিপ চন্দ্র মজুমদার ও আবুল কাসেম আজাদ, জামালগঞ্জ উপজেলা স্কাউটসের সাধারণ সম্পাদক মো. আক্তার হোসেন এবং সরকারি জুবিলী উচ্চবিদ্যালয়ের ইউনিট লিডার লিটন রঞ্জন তালুকদার প্রমুখ।
ফসলের নিবিড়তা বৃদ্ধি কল্পে নেত্রকোনায় ৩ দিনব্যাপী কৃষি মেলা শুরু হয়েছে। সোমবার (২২ ডিসেম্বর) প্রধান অতিথি হিসেবে ফিতা কেটে আনুষ্ঠানিকভাবে কৃষি মেলার শুভ উদ্বোধন করেন নেত্রকোনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. আমিরুল ইসলাম।
নেত্রকোনা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আসমা বিনতে রফিকের সভাপতিত্বে সদর উপজেলার অতিরিক্ত কৃষি কর্মকর্তা রাখী পোদ্দারের সঞ্চালনায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ রেহনুমা নওরীন। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক (উদ্ভিদ সংরক্ষণ) মো. মোকসেদুল হক, সদর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আশরাফুল্লাহ, জেলা প্রেসক্লাবের সম্পাদক মাহবুবুল কিবরিয়া চৌধুরী হেলিম প্রমুখ।
৩ দিনব্যাপী এই কৃষি মেলায় ১০টি প্রদর্শনী স্টলে বিভিন্ন প্রজাতির ফল, গাছের চারা ও কৃষি উপকরণ প্রদর্শন করা হয়েছে।
যশোরের মনিরামপুরে বাদুরের মাংস খাওয়ার পর একই পরিবারের ৬ জন অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। গত শনিবার (২০ ডিসেম্বর) রাতে খাবার গ্রহণের পর থেকেই তারা অসুস্থ বোধ করতে শুরু করেন। পরদিন সকালে তাদের অচেতন অবস্থায় ঘরের ভেতরে পড়ে থাকতে দেখে প্রতিবেশীরা উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান।
ঘটনাটি ঘটে মনিরামপুর উপজেলার বাহাদুরপুর গ্রামে। অসুস্থ ৬ জন হলেন সুভাষ দাস (৪০), তার স্ত্রী সখি দাস (৩৫), তাদের দুই ছেলে ইন্দ্রজিত দাস (২০) ও হৃদয় দাস (১৫), তারাপদ দাসের ছেলে রবিন দাস (৬০) এবং দিলীপ দাসের ছেলে অজয় দাস (২০)। গত রোববার (২১ ডিসেম্বর) দুপুর ৩টা ২২ মিনিটে তাদের যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
হাসপাতালে ভর্তি অসুস্থদের বরাত দিয়ে জানা যায়, গত শনিবার (২০ ডিসেম্বর) রাতে তারা একসঙ্গে বাদুরের মাংস দিয়ে ভাত খান। রাতের মধ্যেই শরীর খারাপ হতে থাকে এবং একে একে সবাই অসুস্থ হয়ে পড়েন। গত রোববার সকালে তাদের প্রথমে মনিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর অবস্থার অবনতি হলে চিকিৎসকরা তাদের যশোর জেনারেল হাসপাতালে রেফার্ড করেন।
তবে অসুস্থ পরিবারের সদস্যদের দাবি, তারা বাদুরের মাংস খেয়ে অসুস্থ হননি। তাদের অভিযোগ, খাবারের সঙ্গে কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে ক্ষতিকর কোন দ্রব্য মিশিয়ে থাকতে পারে। পাশাপাশি তারা আরও অভিযোগ করেন, অসুস্থ অবস্থায় বাড়িতে না থাকার সুযোগে অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা নগদ টাকা-পয়সাসহ মূল্যবান সামগ্রী লুট করে নিয়ে গেছে।
যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ইনচার্জ ডা. বিচিত্র মল্লিক জানান, বাদুরের মাংস খাওয়ার পর নারীসহ ৬ জন অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। বর্তমানে তারা মেডিসিন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রয়েছেন এবং তাদের অবস্থা পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
আমদানি বাড়ায় সাতক্ষীরা শ্যামনগর বাজারগুলোতে শীতের সবজির দাম কমতে শুরু করেছে। নকিপুর, বংশিপুর, নওয়াবেকী কাঁচাবাজার ঘুরে এ তথ্য জানা গেছে।
শীতের সবজির মধ্যে সবচেয়ে বেশি দাম কমেছে ফুলকপি, বাঁধাকপি, সিম, পেঁয়াজকলি, কাঁচামরিচ ও আলুর। তবে মাছ ও মাংসের দাম এখনো চড়া রয়েছে।
বাজারের ব্যবসায়ীদের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, প্রতি কেজি বেগুন ৫০–৬০ টাকা, ফুলকপি ২৫–৩০ টাকা, বাঁধাকপি ২৫–৩০ টাকা, সিম প্রকারভেদে ৩০–৫০ টাকা, পেঁপে ৩০–৩৫ টাকা, মুলা ৩০–৪০ টাকা, ধুন্দুল ৩০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৩৫–৪০ টাকা, করলা ১০০ টাকা, কাঁচামরিচ ৭০–৮০ টাকা, আলু ২০–৩০ টাকা, পেঁয়াজ ৮০–৯০ টাকা এবং রসুন ৮০–১০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
ডিম, মাছ ও মাংসের দামে তেমন কোন পরিবর্তন নেই। সাদা ডিম প্রতি হালি ৩৬–৪০ টাকা এবং লাল ডিম প্রতি হালি ৪০–৪২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
মাছের বাজারে ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি ইলিশ মাছ আকারভেদে ৮৫০–১৪০০ টাকা, হরিণা, চাকা ও চালি চিংড়ি ৫৫০–৬৫০ টাকা, বাগদা চিংড়ি ৮০০–১২০০ টাকা, গলদা চিংড়ি ৯০০–১২০০ টাকা, দেশি কই মাছ ১০০০–১২০০ টাকা, শিং মাছ ৯০০–১২০০ টাকা, ভেটকি ৫৫০–৭০০ টাকা, রুই ২৫০–৩৫০ টাকা, কাতলা ৩০০–৩৫০ টাকা, তেলাপিয়া ১৮০–২০০ টাকা এবং পাঙাশ ২০০–২২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
এ ছাড়া ব্রয়লার মুরগি ১৪০–১৫০ টাকা, কক ও সোনালি মুরগি ২৩০ টাকা, গরুর মাংস ৭০০–৭৫০ টাকা এবং খাসির মাংস ১০০০–১২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
বাজার করতে আসা মাদ্রাসা শিক্ষক মো. ইসমাইল হুসাইন বলেন, শীতের মৌসুমি সবজির দাম কমেছে। কিছুদিন আগেও এসব সবজির দাম অনেক বেশি ছিল। দুই থেকে তিনশ টাকার বাজারে তেমন কিছু পাওয়া যেত না। এখন একই টাকায় ব্যাগ ভরে যায়।
নকিপুর বাজারের সবজি বিক্রেতা মনির বলেন, পাইকারি বাজারে সবজির সরবরাহ বেড়েছে। উৎপাদনও ভালো হয়েছে। সামনে দাম আরও কমতে পারে।
বাজার করতে আসা নারী উদ্যোক্তা পারভীন. সাবিনা বলেন, অনেক সবজির দাম অর্ধেকে নেমে এসেছে। সারাবছর এমন দাম থাকলে সাধারণ মানুষের জন্য খুবই স্বস্তির হতো।
ব্যাংক কর্মকর্তা মোসলেম উদ্দিন বলেন, আগে মাছ-মাংসের মতো সবজি কিনতেও হিসেব করে বাজার করতে হতো। এখন সবজির দাম কমায় সে চাপ নেই। তবে মাছ-মাংসের দাম এখনো সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। দাম কমলে পুষ্টিকর খাবার আরও নিয়মিত খাওয়া সম্ভব হতো।
নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার আদিয়াবাদ ইউনিয়নের সিরাজনগর নয়াচর উত্তরপাড়া গ্রামে এক ভাই তার দুই বোনের চলাচলের পথ বন্ধ করে দিয়েছেন ১০ ফুট দেওয়াল তুলে। এতে নিজ ঘরে অনাহারে অর্ধাহারে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন বাবা-মা হারা দুই বোন। এক বছর ধরে চলছে দুই বোনের বন্দিজীবন।
জানা গেছে, ওই গ্রামের কেরামত আলীর ছেলে কামরুজ্জামান কামাল তার স্ত্রীর কুপরামর্শে তারই সহোদর ছোট বোন প্রতিবন্ধী কামরুন্নাহার ও তাছলিমা বেগমের বাড়ির পাশে দেওয়াল তুলে চলাচলের পথ বন্ধ করে দিয়েছে। এতে বন্ধ হয়ে গেছে তাদের আয় রোজগারের পথও।
এদিকে, প্রতিবন্ধী কামরুন্নাহারকে চলাফেরা করতে হয় হামাগুরি দিয়ে। কারণ কামরুন্নাহারের জন্মের এক বছর পর পোলিও রোগে আক্রান্ত হয়ে তার দুটি পা বিকল হয়ে যায়।
কামরুন্নাহার জানান, তার বাবার মৃত্যুর আগে তার এবং তার বড় বোন তাছলিমা বেগমের নামে দেড় শতাংশ জমি লিখে দিয়ে যায়। এই দেড় শতাংশ জমিই কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে কামরুন্নাহার ও তার বোন তাছলিমা বেগমের জীবনে। কামরুন্নাহার প্রতিবন্ধী হওয়ায় কেউ তাকে বিয়ে করতেও আসেনি। তাই একমাত্র জীবন রক্ষার তাগিদে বেছে নেয় সেলাইয়ের কাজ। মানুষের কাপড় সেলাই করে যা কিছু আয় হতো তা দিয়ে দুই বোন কোনোরকমে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করত। কিন্তু ছোট ভাই কামাল বাবার দেওয়া দেড় শতাংশ জমি লিখে না দেওয়ায় কামরুন্নাহারের বসত-ঘরের পাশে দেওয়াল দিয়ে যাতায়াতের পথ বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে এলাকার কেউ তার কাছে কাপড় সেলাই করতে আসে না। এতে রোজগারের পথও বন্ধ।
এদিকে ভাইয়ের এই নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে কামরুন্নাহার রায়পুরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং রায়পুরা থানা পুলিশকে বিষয়টি লিখিতভাবে অবহিত করার পরও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। তবে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের মাধ্যমে বেশ কয়েকবার সালিশ বৈঠক বসলেও কামরুজ্জামান কামাল তা মেনে নেয়নি। এক বছরের মধ্যে কেউ খুলে দিতে পারেনি তাদের যাতায়াতের পথ। তাই নিজ ঘরেই এক বছর বন্দি তাছলিমা বেগম ও কামরুন্নাহার।
তাছলিমা বেগম জানান, তারা এক ভাই পাঁচ বোন, বোনদের মধ্যে কামরুন্নাহার তৃতীয়। তার বাবা মারা যাওয়ার পর সংসারে এ পরিবারের মধ্যে উপার্জনশীল ব্যক্তি কেউ ছিল না। তাছলিমা তার পরিবারের দিকে চিন্তা করে বিয়ে করেননি। সংসারের বোঝা তাকে একাই টানতে হয়েছে। পরে সংসারের উন্নতির লক্ষ্যে তাদের সম্পত্তি বিক্রি করে ভাই কামালকে বিদেশে পাঠান। কিন্তু সেখানে গিয়ে সে বোনদের কথা ভুলে যায়। ১৪ বছর কামাল বিদেশে অবস্থান করলেও বাড়িতে একটি কানাকড়িও দেয়নি। সে অপরের স্ত্রীর পাল্লায় পরে তাকে সবকিছু দিয়ে দেয়। পরে কামাল বাড়িতে এসে ওই মহিলাকে বিয়ে করে। এরপর থেকেই শুরু হয় সংসারে অশান্তি। সে বাবার দেওয়া দেড় শতাংশ জমি তার নামে লিখে দেওয়ার জন্য আমাকে এবং আমার বোনকে প্রস্তাব দেয়। আমরা এতে অপারগতা প্রকাশ করলে সে আমাদের ওপর শারীরিক এবং মানষিকভাবে নির্যাতন করতে থাকে।
তাছলিমা বেগম আরও বলেন, ‘মা-বাবা মারা যাওয়ার পর থেকেই ভাই আমাদের সম্পত্তির দিকে নজর দেয়। সম্পত্তি লিখে না দেওয়ার কারণে প্রায় এক বছর আগে চলাচলের রাস্তা বন্ধ করে দেয়। এরপর থেকেই ঘরে বন্দিজীবন কাটাচ্ছি। মই বেয়ে বাইরে যাই, কিন্তু ছোট বোন একেবারেই ঘর থেকে বের হতে পারছে না। মানুষের কাছে সাহায্য চেয়েও সমাধান পাইনি।’
ঘটনাটি অত্যন্ত অমানবিক বলে উল্লেখ করে স্থানীয় ইউপি সদস্য গাজী মাজহারুল ইসলাম পলাশ বলেন, ‘চেয়ারম্যানসহ আমরা কয়েকবার মীমাংসার চেষ্টা করেছি, কিন্তু ব্যর্থ হয়েছি। তাদের বাড়িতে যাওয়ার কোনো রাস্তা নেই। ১০ ফুট উঁচুতে মই ব্যবহার করে তারা যাতায়াত করে। কামাল কাউকে মানে না। একমাত্র প্রশাসনের মাধ্যমেই এ সমস্যা সমাধান সম্ভব।’
তবে বোন তাসলিমার বিরুদ্ধে উল্টো অভিযোগ করেছেন তার ভাই কামরুজ্জামান কামাল। তিনি বলেন, ‘সে আমার জায়গায় বাড়ি নির্মাণ করেছে। তার জায়গা খালি রয়েছে। সে আমার কথা রাখেনি। এছাড়া বিচারকদের রায় না মেনে সে আমার বিরুদ্ধে উল্টো আদালতে মামলা করেছে। প্রতিবন্ধী বোনকে আমি আমার সঙ্গে থাকার প্রস্তাব দিয়েছি। সে বোনের সঙ্গেই থাকবে বলে আমাকে বলেছে। তাহলে আমার কী করার আছে।’
রায়পুরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাসুদ রানা বলেন, ‘কারও রাস্তা বন্ধ করে দেওয়ার এখতিয়ার কারও নেই। কিন্তু জমি-সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে তাদের মধ্যে আদালতে মামলা চলমান। তাই আদালতকে উপেক্ষা করে এই বিষয়ে সিদ্বান্ত দেওয়ার এখতিয়ার আমার নেই। তবে এই বিষয়ে তাদের সমাধানের প্রস্তাব দিয়েছি। তারা কেউই তা মানে না।’
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে আগুনে ১৫টি দোকান পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। সোমবার (২২ ডিসেম্বর) বিকেলে উপজেলার মোগরাপাড়া চৌরাস্তা হাবিবপুর ঈদগাহ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে সৃষ্ট আগুনে ১৫টি দোকানের আসবাবপত্রসহ প্রায় কোটি টাকার ক্ষতি সাধন হয়েছে বলে জানিয়েছেন দোকান মালিকরা। সোনারগাঁও ফায়ার সার্ভিসের দুটি দল প্রায় ঘণ্টাব্যাপী চেষ্টার পর আগুন নিয়ন্ত্রনে আনে।
জানা যায়, উপজেলার মোগরাপাড়া চৌরাস্তা ঈদগাহ এলাকা মুজিবুর রহমানের ভাঙারি দোকান থেকে সোমবার (২২ ডিসেম্বর) বিকেল পৌঁনে চারটার দিকে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। একে একে ফার্নিচার দোকান, মোবাইল সার্ভিসিংয়ের দোকান, খেলনার দোকান, স্টিলের আলমারির দোকানসহ ১৫টি দোকানে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে সোনারগাঁও ফায়ার সার্ভিসের দুটি দল ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রায় ঘণ্টাব্যাপী চেষ্টার পর আগুন নিয়ন্ত্রনে আসে।
দোকান মালিকদের দাবি, আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে কিছু মালপত্র বের করতে পারলেও সব কিছু বের করা সম্ভব হয়নি। ফলে অনেক মালপত্র পুড়ে যায়। আগুনে তাদের ১৫টি দোকানের প্রায় কোটি টাকার ক্ষতি সাধন হয়েছে। ব্যবসায়ীরা ব্যাংক ও এনজিও প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ গ্রহন করে তাদের ব্যবসা পরিচালনা করছেন। আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণে তারা অর্থনৈতিকভাবে বড় ধরনের ধাক্কায় পড়েছেন।
মোবাইল সার্ভিসিংয়ের মালিক রিয়াদ হোসেন জানান, আগুনের কারণে তার দোকানের সকল মালপত্র পুড়ে যায়। এতে করে তার প্রায় ৫ লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি হয়েছে।
সোনারগাঁও ফায়ার সার্ভিসের সাব স্টেশন অফিসার ওসমান গণি জানান, একটি ভাঙারি দোকান থেকে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে। তাদের দুটি ইউনিট প্রায় ১ ঘণ্টার চেষ্টার পর আগুন নিয়ন্ত্রনে নিয়েছেন।
সোনারগাঁও থানার ওসি মোহাম্মদ মহিবুল্লাহ জানান, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে ফায়ার সার্ভিসের সঙ্গে পুলিশ সদস্যরা আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করেছেন। ঘণ্টাব্যাপী আগুনে প্রায় ১৫টি দোকান পুড়েছে।
কেশবপুরে ইরি বোরো রোপণের জন্য জমি প্রস্তুতিতে ব্যস্ত সময় পার করছে কৃষকরা। পুরুষের পাশাপাশি নারীরা একাজে সহযোগিতা করছে। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে এবার কেশবপুর উপজেলায় ৬৫৭ হেক্টর জমিতে বোরো বীজতলা তৈরির পর পুরোপুরি ইরি বোরো রোপণ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে কৃষকরা।
কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ বছর বোরো আবাদের জন্য সরকারের দেওয়া বীজ বিনামূল্যে সরবরাহ করা হয় ৩ হাজার কৃষককে উন্নত মানের এই বীজ সরবরাহ করেন কৃষি অফিস।
এবার কেশবপুর উপজেলায় ১৩ হাজার হেক্টর জমিতে ইরি বোরো আবাদের লক্ষ্য মাত্রা ধরা হয়। এবার অনাবাদি কত হেক্টর জমি থাকতে পারে এখন কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়নি।
সোমবার (২২ ডিসেম্বর) উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে কৃষকরা খেতে গরুর বদলে মই টানছে মানুষ। আবার কেউ কেউ ইরি বোরো রোপণ ও রোপণের জন্য জমিতে পরিচর্যার কাজ করছে। জানা গেছে এক সময় এ এলাকার কৃষকদের ঘরে ঘরে গরু, জোয়াল এবং লাঙলসহ কৃষি যন্ত্রপাতি ছিল। কৃষকের জমি চাষের সঙ্গে গরু ও মহিষের সম্পর্ক সেই আদিকাল থেকে। সাধারণত কৃষিজমিতে গরু দিয়ে টানা লাঙলে জমি চাষ ও মই দিয়ে চাষের জমি সমান করে ফসল লাগানো হয়ে থাকে। আধুনিক যুগে এসে যোগ হয়েছে ইঞ্জিনচালিত পাওয়ার টিলার ও ট্রাক্টর। গ্রামাঞ্চলে কৃষকের বড় পরিচয় ছিল যার বাড়িতে গরু, লাঙল ও মই আছে।
কথা হয় বোরো খেতে গরুর বদলে মই টানতে থাকা উপজেলার প্রতাপপুর গ্রামের কৃষক জিয়াউর রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘জমি চাষাবাদ করে ছয়-আট সদস্য পরিবারের সংসারের সারা বছরের জোগান দিতে হয়। কিন্তু আমাদের এলাকায় ইরি বোরো চাষ ছাড়া অন্য ফসল তেমন না হওয়ায় হালের গরু পালন করা হয় না। আগে আমারও হালের বলদ ছিল। সারা বছর গরু পালন করতে যে টাকা খরচ হয় তা দিয়ে আমাদের মতো কৃষকের গরু পোষা সম্ভব না। এখন বিচালীসহ গো খাদ্যের অনেক দাম। গরু দিয়েই খেতে মই দিতে হয়। বর্তমানে আমার হালের বলদ না থাকাই সকাল থেকে নিজেরায় খেতে মই টানছি।’
কৃষক হাবিবুর রহমান হবির ছেলে আবদুল মাজিদ বলেন, ‘বাগদহা বিলে ৬ বিঘা জমিতে আমরা চলতি বোরো মৌসুমে ধান চাষ করব। সকল জমিতেই গরুর বদলে নিজেদেরই মই টানতে হবে।’ মই টানতে সহযোগিতা করতে আসা কৃষক আবদুল জলিল বলেন, ‘গরুর বদলে মই টানতে তিনজন মানুষের প্রয়োজন। একজন দিয়ে মই টানা অসম্ভব। তাই প্রতিবেশী হিসেবে আরেক কৃষককে সহায়তার জন্য মই টানার কাজে আমি তাদের সাহায্য করতে এসেছি।’ বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের কৃষক আবুল হোসেন বলেন, তিনি ওই গ্রামের একজন ভালো কৃষক। দীর্ঘদিন ধরে তিনি ইরি-বোরো আবাদ করে আসছেন। এবারও তিনি ৩ বিঘা জমিতে ধান চাষ করবেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় এলাকায় হালের বলদ না পাওয়ায় নিজেরা খেতের মই দিতে হচ্ছে। ফতেপুর গ্রামের কৃষক হাবিবুল্লাহ বলেন, ‘আগে হাল চাষের জন্য প্রত্যেক কৃষকের ঘরে গরু, লাঙল ও মই থাকত। সময়ের সাথে আধুনিকতার ছোঁয়া এখন গ্রামাঞ্চলে পৌঁছে গেছে। এখন ফসল ফলানোর ক্ষেত্রে অন্যান্য প্রযুক্তির পাশাপাশি জমি দ্রুত তৈরিতে গরু টানা লাঙল ও মইয়ের পরিবর্তে ট্রাক্টর, পাওয়ার টিলার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। আধুনিক যন্ত্রের ব্যবহারে গরু টানা লাঙল ও মই এখন কেশবপুরে তেমন একটা চোখে পড়ে না।’ কেশবপুর থেকে হালের বলদ প্রায় বিলুপ্তির পথে। সে কারণে তিনি নিজে ও ভাইদের সহযোগিতায় চলতি বোরো মৌসুমে ট্রাক্টর বা পাওয়ার টিলার দিয়ে চাষ করা ৭ বিঘা জমির উঁচু-নিচু অংশসহ চাকার দাগ সমান করতে গরুর পরিবর্তে মই টানছেন। কিন্তু গ্রামবাংলার কৃষকের গরু দিয়ে টানা হাল, মইয়ে জমি তৈরিতে সময় লাগত। সময়ের সাথে আধুনিকতার ছোঁয়া এখন গ্রামাঞ্চলে পৌঁছে গেছে। এখন ফসল ফলানোর ক্ষেত্রে অন্যান্য প্রযুক্তির পাশাপাশি জমি দ্রুত তৈরিতে গরু টানা লাঙল ও মইয়ের পরিবর্তে ট্রাক্টর, পাওয়ার টিলার খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। আধুনিক যন্ত্রের ব্যবহারে গরুর টানা লাঙল, মই এখন কেশবপুরে তেমন একটা চোখে না পড়লেও ট্রাক্টর বা পাওয়ার টিলার দিয়ে চাষ করা জমির উঁচু-নিচু অংশ বা চাকার দাগ সমান করতে গরুর পরিবর্তে মই টানছে মানুষ। মইয়ে হালকা কিছু ওজন দিয়ে তা দুজন কিংবা একজন টেনে জমির প্রয়োজনীয় অংশ দ্রুত সমান করে ফেলছে। এলাকার কৃষকরা জানান, পাওয়ার টিলার দিয়ে চাষ করা জমিতে চাকার দাগ থাকায় তা সমান করতে নিজেরা মই টেনে সমান করেছেন। ওই এলাকার আবুল হোসেন বলেন, ‘তার ৩ বিঘা জমিতে বোরো ধান চারা রোপণের পাওয়ার টিলার দিয়ে চাষ করে নেওয়ার পর নিজেরাই মই টেনে জমি সমান করে চারা রোপণ করছেন।’ ব্রহ্মকাটি গ্রামের কৃষক জামাল সরদার, হামিদ সরদার, আনিছুর সরদার, রামচন্দ্রপুর গ্রামের ময়েজউদ্দিন, আব্দুল সরদার, সুজাপুর গ্রামের আতিয়ার রহমান, বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের সুজনসহ আরও অনেক কৃষকরা এ প্রতিনিধিকে জানান, আধুনিক যন্ত্র দিয়ে দ্রুত জমি চাষ হওয়ায় এখন গরুর লাঙল, মই হারিয়ে যাচ্ছে। গরুর বদলে বিকল্প হিসেবে মানুষই মই টেনে জমি সমান করে নিচ্ছে। এমন দৃশ্য উপজেলার প্রায় সব জায়গায়। তারা আরও বলেন, এই উপজেলাজুড়ে কৃষকরা ইরি বোরো রোপণে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। আমরা আশা করছি আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ও প্রাকৃতিক কোনো দুর্যোগ না হলে ভালো ফলন পাওয়া যাবে। এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি অফিসার আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘এবার কেশবপুর উপজেলায় ৬৫৭ হেক্টর জমিতে বোরো বীজতলা তৈরির পর পুরোদমে ইরি বোরো রোপণ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে কৃষকরা। গত বছর উপজেলায় ১৩ হাজার ১ শত হেক্টর জমিতে ইরি বোরো আবাদ হয়। এবার ১৩ হাজর হেক্টর লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়।’
শোভাযাত্রা, আলোচনা সভা ও কেক কাটার মধ্য দিয়ে কুড়িগ্রামের রৌমারীতে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংঠন মুক্তাঞ্চলের ২১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত হয়েছে। সোমবার (২২ ডিসেম্বর) সকালে নানা উৎসাহ উদ্দীপনায় সংগঠনের সব সদস্য ও আমন্ত্রিত অতিথিদের উপস্থিতিতে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
শোভাযাত্রাটি উপজেলা চত্বর থেকে রৌমারী শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে উপজেলা চত্বরে এসে শেষ হয়। সংগঠনের পরিচালক প্রভাষক আখতারুজ্জামানের নেতৃত্বে শোভা যাত্রায় উপস্থিত ছিলেন, জনাব শহীদ রেজাউল কবির সাবেক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ রৌমারী সরকারি কলেজ, আব্দুর রাজ্জাক উপজেলা বিএনপি আহ্বায়ক ও রৌমারী সদর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান, মজিবর রহমান বিএসসি (অব.) শিক্ষক, প্রভাষক আবদুল হাই, প্রভাষক আনজুমানারা, রেজাউল ইসলাম রিজু, শিক্ষার্থী, শিল্পী ও সাংবাদিক প্রমুখ।