গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ২০৯ জন বন্দির পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। পালিয়ে যাওয়ার সময় নিরাপত্তাকর্মীদের গুলিতে ছয়জন বন্দি নিহত হয়েছেন। আজ বুধবার (৭ আগস্ট) বিকেলে কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার সুব্রত কুমার বালা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) বিকেলে কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারের ভেতরে থাকা বন্দিরা বিদ্রোহ করে। বিদ্রোহের সময় বন্দিরা কারাগার ভেঙে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। কারারক্ষীরা তাদের নিভৃত করার চেষ্টা করলে বন্দিরা কারারক্ষীদের ওপর চড়াও হয়। বন্দিদের কেউ দেয়াল ভেঙে, কেউ দেয়াল টপকে, আবার কেউ দেয়ালের সঙ্গে বিদ্যুতের পাইপ লাগিয়ে কারারক্ষীদের মারধর করে পালিয়ে যেতে চান। একপর্যায়ে সেনাবাহিনীকে খবর দিলে তারা কমান্ডো অভিযান চালিয়ে বিদ্রোহ দমন করেন। বন্দিদের মধ্যে ২০৯ জন দেয়াল টপকে পালিয়ে গেছে। এ সময় নিরাপত্তাকর্মীদের গুলিতে ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। নিহতদের ময়নাতদন্তের জন্য গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
কাশিমপুর কারাগারে মারা যাওয়া আসামিরা হলেন- মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসলাম হোসেন (২৭) ও আফজাল হোসেন (২৭)। এ ছাড়া স্বপন শেখ কালু (৪৫), রাধেশ্যাম (৬৭), ইমতিয়াজ পাভেল (২৭) ও জাকির হোসেন (২৯)।
এ বিষয়ে জানতে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. হাসনিন জাহানের মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি রিসিভ করেননি।
পঞ্চগড় সীমান্তে শূন্যরেখা অতিক্রমের বুলু (৩৫) নামে এক গরু চোরাকারবারীকে আটক করেছে ৫৬ বিজিবি। শনিবার রাত ৩টার দিকে সদর উপজেলার আবালুপাড়া এলাকায় ভেতর গড় বিওপির একটি আভিযানিক দল এ অভিযান পরিচালনা করে। আটককৃত বুলু পঞ্চগড়ের পকলাভিটা গ্রামের সিরাজুল ইসলামের ছেলে।
৫৬ বিজিবি জানায়, পঞ্চগড়ের ভিতরগড় এলাকায় একটি সংঘবদ্ধ চক্র দীর্ঘদিন ধরে গরু চোরাচালানের উদ্দেশে ভারতে প্রবেশ করে। তারই অংশ হিসেবে ৮ জন চোরাকারবারী অজ্ঞাত স্থান দিয়ে ভারতে গিয়ে বিএসএফের তাড়া খেয়ে ফেরার পথে সীমান্ত পিলার ৭৪৪/৮-আর এলাকা দিয়ে শূন্যরেখা অতিক্রম করে। এ সময় বিজিবির অভিযানে একজনকে আটক করা সম্ভব হয়, বাকিরা পালিয়ে যায়।
আটক ব্যক্তির ভাষ্য মতে, সে ও তার সঙ্গে থাকা পঞ্চগড় সদরের আবালুপাড়ার জসিম (৪০), মইদল (৩৫), সংগ্রাম (২৯), সাদেক (৩২), আবু খায়ের (২৮), আশরাফুল এবং সোখদেবপাড়ার বাপ্পি (১৫) গরু চোরাচালানের উদ্দেশে ভারতে প্রবেশ করেছিল।
আটক ব্যক্তির বিরুদ্ধে অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে পঞ্চগড় সদর থানায় মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। ধৃত ব্যক্তিকে আইনি প্রক্রিয়া শেষে থানায় হস্তান্তরের প্রস্তুতি চলছে।
‘বাংলাদেশ সোসাইটি ফর দ্য চেঞ্জ অ্যান্ড অ্যাডভোকেসি নেক্সাস (বি-স্ক্যান) রাইজিং উইথ রাইটস ভোটার এডুকেশন ফর পারসনস উইথ ডিজঅ্যাবিলিটিজ (ভিইপিডি)’ প্রকল্পের আওতায় ফরিদপুরে প্রতিবন্ধী ব্যাক্তিদের নিয়ে দিনব্যাপী ভোটার শিক্ষা প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার স্থানীয় প্রতিবন্ধী ব্যক্তি সংগঠন (ওপিডি) গ্রাম উন্নয়ন সংস্থা (ভিডিও) এর সহযোগিতায় ফরিদপুরের এনজিও ফোরাম ফর পাবলিক হেলথ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশন ফর ইলেকটোরাল সিস্টেমস (আইএফইএস)-এর সহযোগিতায় এই ক্যাসকেড প্রশিক্ষণটি অনুষ্ঠিত হয়।
২০২৫ সালের অক্টোবর মাস থেকে শুরু হওয়া এই উদ্যোগের মূল লক্ষ্য হলো বাংলাদেশের প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা এবং তাদের রাজনৈতিক অংশগ্রহণ বৃদ্ধি করা।
প্রকল্পটি ঢাকা, ফরিদপুর ও দিনাজপুর জেলায় বাস্তবায়িত হচ্ছে, যেখানে প্রায় ৬০০০ প্রতিবন্ধী মানুষকে বিভিন্নভাবে এই ভোটার হিসেবে করণীয় সম্পর্কে নানাভাবে সচেতন করা হবে।
ওই প্রশিক্ষণে বি-স্ক্যানর নির্বাহী পরিচালক সালমা মাহবুব, পরিচালক ইফতেখার মাহমুদ, গ্রাম উন্নয়ন সংস্থা থেকে নির্বাহী পরিচালক বিপ্লব কুমার মালো, আইএফইএস এর মনিটরিং অ্যান্ড ইভালুয়েশন অফিসার নাসিরুল ইসলাম, সিনিয়র প্রোগ্রাম অফিসার শাওনি ইমাম উপস্থিত ছিলেন।
প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণকারীদের ভোট প্রদান প্রক্রিয়া, নির্বাচনী ব্যবস্থায় প্রবেশগম্যতা, নেতৃত্ব ও জনওকালতির বিষয়ে দক্ষতা উন্নয়নের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। এই প্রশিক্ষণে মোট ২০ জন প্রতিবন্ধী ব্যক্তি অংশগ্রহণ করেছেন।
প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, বি-স্ক্যান ও আইএফইএস বিশ্বাস করে, এই প্রকল্পের মাধ্যমে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা তাদের সংবিধান প্রদত্ত ভোটাধিকার স্বাধীনভাবে, আত্মবিশ্বাস এবং মর্যাদার সঙ্গে প্রয়োগ করতে সক্ষম হবেন।
নাচে-গানে আদিবাসী খাসিয়া সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী ১২৬তম বর্ষ বিদায় ও বর্ষবরণ অনুষ্ঠান উদযাপন করা হয়েছে। খাসিয়া সম্প্রদায়ের পাশাপাশি এই বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বাঙালি ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষসহ দেশি-বিদেশি পর্যটকরা অংশগ্রহণ করেন। বর্ষপুঞ্জি অনুযায়ী ১২৬তম বর্ষকে বিদায় ও ১২৭তম বর্ষকে বরণ করে নিলেন খাসিয়া জনগোষ্ঠী।
ব্রিটিশ শাসন আমল থেকে ভারতের মেঘালয় রাজ্যে ২৩ নভেম্বর খাসি বর্ষ বিদায় ‘খাসি সেঙ কুটস্যাম’ পালন করা হয়। তবে বিভিন্ন সমস্যার কারণে শনিবার দিনব্যাপী মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের মাগুরছড়া খাসিয়া পুঞ্জিতে খাসিয়া সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী এ বর্ষবিদায় ও বর্ষবরণ অনুষ্ঠান খাসিয়া ভাষায় ‘খাসি সেং কুটস্নেম’ (Khasi Seng Kutsnem) অনুষ্ঠিত হয়।
খাসিয়া সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী এ উৎসবে সিলেট অঞ্চলের প্রায় অর্ধশত খাসিয়া পুঞ্জির প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন। আয়োজক কমিটির পক্ষ থেকে সকল পুঞ্জি প্রধানকে পাগড়ি পড়িয়ে সম্মাননা জানানো হয় এবং আমনত্রীত অতিথিদের উত্তরীয় পরিয়ে দেয়া হয়।
জানা যায়, সেং কুটস্নেম বা বর্ষ বিদায় খাসিয়াদের একটি সার্বজনীন উৎসব। প্রাচীন খাসিয়া সমাজে দেবতার প্রতি সন্তুষ্টি প্রকাশের মধ্য দিয়েই এ উৎসব পালিত হতো। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও কমলগঞ্জ উপজেলার মাগুরছড়া পুঞ্জির খেলার মাঠে নানা সমাহারে এ উৎসবের আয়োজন করা হয়।
মাগুরছড়া ফুটবল মাঠের একপ্রান্তে বাঁশের খুঁটির ওপর প্রাকৃতিক পরিবেশে নারিকেল গাছের পাতার দিয়ে ছাউনী দিয়ে আলোচনা সভার মঞ্চ তৈরি করা হয়। এ মঞ্চে বৃহত্তর সিলেট আদিবাসী ফোরামের কো-চেয়ারম্যান ও মাগুরছড়া খাসিয়া পুঞ্জি প্রধান জিডিসন প্রধান সুচিয়াংয়ের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাখন চন্দ্র সূত্রধর, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য, মৌলভীবাজার-৪ শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ আসনের ধানের শীষের প্রার্থী আলহাজ মো. মুজিবুর রহমান চৌধুরী হাজী মুজিব, এনসিপি (যুগ্ম সদস্য সচিব) শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ আসনের প্রার্থী প্রীতম দাশ প্রমুখ।
নরসিংদীতে বিচার বিভাগ কর্তৃক ‘Civil Rulers and Orders ও Criminal Rules and Orders (Pratice and Procedure of Subordiants Courts)-2009’ এর 480 অনুযায়ী বিচার বিভাগীয় সন্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার সকালে জেলা জজ আদালত ভবনে এ সন্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সিনিয়র বিচারক শেখ হুমায়ূন কবীর।
এ সময় নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইবুনালের বিচারক মুহাম্মাদ আলী আহসান, চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ লুৎফর মজিদ নয়ন, পুলিশ সুপার মো. মেনহাজুল আলম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. কলিমুল্লাহ, পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাড. আব্দুল বাছেদ ভূঁইয়া, সিভিল সার্জন ডা. সৈয়দ আমিরুল হক শামীম, জেল সুপার মো. তারেক কামাল, আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাড. আ.মান্নান ভূঁইয়া, জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধিসহ স্থানীয় বিচার বিভাগের উধ্র্বতন কর্মকর্তার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় আগত অতিথিরা দেওয়ানি ও ফৌজদারি মামলার বিচার নিষ্পত্তি ও বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি করণ, পারিবারিক মামলায় লেভি ওয়ারেন্ট, সাজা পরোয়ানা তামিল, ফৌজদারি মামলার তদন্ত প্রতিবেদন, গ্রেপ্তারি ও ক্রোক পরোয়ানা তামিল, ফৌজদারি মামলায় সাক্ষী হাজিরা নিশ্চিত করণ, জারি মোকদ্দমার নিষ্পত্তি ত্বরান্বিতকরণ, জব্দকৃত আলামত সংরক্ষণ ও নিষ্পত্তিকরণ, ময়না তদন্তের প্রতিবেদন ও জখমি সনদপত্র, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দেওয়ানি ও ফৌজদারির পুরাতন মামলাসমূহ নিষ্পত্তির উপায় উদঘাটনসহ আদালতে নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ সমূহ নিয়ে বক্তব্য রাখেন।
ঢাকাসহ সারাদেশে গত শুক্রবার ৫.৭ মাত্রার হয়ে যাওয়া ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল রূপগঞ্জের খুব কাছেই মাধদীতে। এ কারণে ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে আছে রূপগঞ্জ। গত ২০২৩ সালের ২৫ এপ্রিল একটি ভূমিকম্প হয় যার উৎপত্তিস্থল ছিল রূপগঞ্জের তারাব। রিখটার স্কেলে এটি ছিল ৪ মাত্রার। একই বছরের ১৭ এপ্রিল ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল রূপগঞ্জের ডহরগাঁও। সেই ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৪ দশমিক ৩ মাত্রা।
রূপগঞ্জে বড় ধরনের ভূমিকম্প হলে ৮৫ শতাংশ ভবন ধসে পড়তে পারে এবং প্রাণহানি লাখ ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞরা। ১৭৬.০৮ বর্গ কিলোমিটার আয়তন বিশিষ্ট রূপগঞ্জের ৭টি ইউনিয়ন ও ২টি পৌর সভায় মোট ৭ লাখ ৪ হাজার ৭২ জন লোকের বসবাস। গত চার বছরে দেশের ভেতরে ৩৭টি ভূকম্পন ঘটলেও বড় ধরনের ক্ষতি হয়নি। তবে শুক্রবারের ৫ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্প বাস্তব ঝুঁকি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছে।
শুক্রবার ঢাকাসহ দেশের অধিকাংশ অঞ্চলে শক্তিশালী ভূমিকম্প অনুভূত হয়। নজিরবিহীন এই ঝাঁকুনিতে ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। অনেক ভবন ফেটে গেছে। একজন শিশু নিহত হয়েছে। তার মা ও প্রতিবেশি আশঙ্কাজন অবস্থায় রয়েছে। গার্মেন্টস কারখানার শ্রমিকরা হুরুহুরি করে নামতে গিয়ে আহত অনেকেই প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়িতে রয়েছেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, চারদিকে অবস্থানরত সক্রিয় টেকটনিক প্লেটগুলো অস্বাভাবিক গতিশীল অনুমোদনহীন ও ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের সংখ্যা বেড়েছে কয়েক হাজার।
সরকারী মুড়াপাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর নুরুজ্জামান বলেন, ‘অনেক ভবন পুরানো হয়ে গেছে। তারাব চনপাড়া ঘনবসতিপূর্ন এলাকা। এগুলোর প্রায় ৮৫ শতাংশই ঝুঁকিপূর্ণ। নতুন অনেক ভবনও ভূমিকম্প প্রতিরোধী নকশা ছাড়া নির্মাণ করা হচ্ছে। বড় ধরনের ভূমিকম্প হলে এক থেকে দেড় লাখ মানুষের মৃত্যুর আশঙ্কা রয়েছে।
ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘অপরিকল্পিত ভবন নির্মাণ, নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রীর ব্যবহার এবং সাগরের নিকটে হওয়ায় নির্মাণসামগ্রীর কিউরিং প্রক্রিয়া ব্যাহত হওয়ায় ভবনগুলো আরও দুর্বল হয়ে পড়ে।
প্রকৌশলী আক্তার হোসেন বলেন, ‘যেসব ভবন রেট্রোফিটিং করে ঝুঁকিমুক্ত করা সম্ভব, সেগুলো করতে হবে। আর যেগুলো টেকনিক্যালি ঝুঁকিমুক্ত করা সম্ভব নয়, সেগুলো ভেঙে ফেলতে হবে। উদ্ধারকারী বাহিনীর গাড়ি চলাচল নিশ্চিত করতে সংকীর্ণ সড়কগুলো প্রশস্ত করতে হবে। পাশাপাশি ফায়ার সার্ভিসসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর উচিত নিয়মিত মানুষকে সতর্ক করা।’
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, বড় ধরনের ভূমিকম্প যে কোনো সময় ঘটতে পারে এবং যথাযথ প্রস্তুতি না থাকলে তার পরিণতি হতে পারে ভয়াবহ।
পৌরসভার নগর পরিকল্পনাবিদ নিগার সুলতানা বলেন, আমাদের ক্ষমতা সীমিত। ম্যাজিষ্ট্রেসি পাওয়ার নেই। অবৈধ ভবন কত আছে এমন পরিসংখ্যান নেই। তবে অবৈধ ভবন চোখে পড়লে নোটিশ করি। ব্যবস্থা নেই। আমাদের লোকবল কম। রূপগঞ্জ বড় ভূমিকম্প হলে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটতে পারে।
উপজেলা দুর্যোগ ও ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা আইমিন সুলতানা বলেন, আসলে উপজেলা পর্যায়ে কোন প্রশিক্ষণ নেই। তবে দুর্যোগ প্রশমন দিবসে ভূমিকম্পসংক্রান্ত মহড়া অনুষ্ঠিত হয়।
রাজউকের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট লিটন সরকার বলেন, নকশা ও অনুমোদনবিহীন ভবন তৈরির সাথে নির্দিষ্ট মাপের জায়গা না রেখেই অনেকে ভবন নির্মাণ করেছেন। ইমারত নির্মাণ আইন লঙ্ঘনসহ নানা অনিয়মের অভিযোগে নির্মাণাধীন ভবনগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। এই অভিযান চলমান থাকবে।
মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার তেরশ্রী গণহত্যা দিবস নানা কর্মসূচির মাধ্যমে পালন করা হয়েছে। গতকাল শনিবার ভোরবেলা তেরশ্রী এলাকায় মুক্তিযোদ্ধা, জেলা প্রশাসন ও রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা শহীদদের স্মরণে দিনটি পালন করেন। পরে শহীদদের স্মরণে নির্মিত স্মৃতিস্তম্ভে মুক্তিযোদ্ধা, জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা, রাজনৈতিক নেতাকর্মী, স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ সর্বস্তরের মানুষ ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। ঘিওর উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাশিতা তুল ইসলামের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে এ সময় উপস্থিত ছিলেন মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসক নাজমুন আরা সুলতানা।
এসময় উপস্থিত ছিলেন ঘিওর উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি মো. তানভীর ইসলাম, ঘিওর থানা অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ কোহিনূর মিয়া, উপজেলা প্রকৌশলী মো. শাহিনুজ্জামান, উপজেলা বিএনপির সভাপতি মীর মানিকুজ্জান মানিক, সাধারন৷ সম্পাদক কাজী ওয়াজেদ আলী মিস্টার, পয়লা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মো. শাররফ হোসেন মানিক, বীর মুক্তিযোদ্ধাগণসহ বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ।
গতকাল ২২ নভেম্বর ছিল মানিকগঞ্জের ঘিওরের তেরশ্রী গণহত্যা দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী তেরশ্রীর তৎকালীন জমিদার সিদ্ধেশ্বর রায় প্রসাদ চৌধুরী, তেরশ্রী কলেজের অধ্যক্ষ আতিয়ার রহমানসহ ৪৩ জন স্বাধীনতাকামী মানুষকে আগুনে পুড়িয়ে ও গুলি করে হত্যা করে। ওই সময় পুরো গ্রামের ঘরবাড়ি আগুনে জ্বালিয়ে দেয় পাক সেনারা। সেই ভয়াল দিনের কথা মনে পড়লে আজও আঁতকে ওঠেন এলাকাবাসী। জানা গেছে, ঘিওরের পয়লা ইউনিয়নের তেরশ্রী গ্রামের মানুষগুলো ছিল সাংস্কৃতিক মনা। বাম রাজনীতির কেন্দ্র বিন্দু ছিল তেরশ্রী গ্রাম। মুক্তিযোদ্ধাদের আনাগোনা ছিল জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি। ১৯৭১ সালে পাক হানাদার বাহিনীর দোসররা টার্গেট করে এই গ্রামটিকে। গোপনে শিক্ষানুরাগী, মুক্তিযোদ্ধা, ভাষাসৈনিক, রাজনীতিবিদ ও সমাজসেবিদের তালিকা করে দালালেরা। নীল নকশা করে এই গ্রামটিকে ধ্বংস করার। ১৯৭১ সালের ২২ নভেম্বর ভোর কেটে সূর্য ওঠার মুহূর্তেই পাকিস্তান হানাদার বাহিনী ও দেশীয় রাজাকার ঘিরে ফেলে তেরশ্রী গ্রামের সেন পাড়ার কালি মন্দিরটি। ২১ নভেম্বর গভীর রাতে এদেশীয় দালালদের নিয়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী গোপনে একটি মিটিং করে তেরশ্রী গ্রামে সেনপাড়া কালিবাড়ী মাঠ প্রাঙ্গনে। তারা পরিকল্পনা করে ২২ নভেম্বর হত্যাযঞ্জের। ঘিওর থেকে সিধুঁনগর গ্রামের মধ্য দিয়ে শতাধিক পাকিস্তানি সেনা এদেশীয় ঘাতকদের সহযোগিতায় ভারি অস্ত্র নিয়ে তেরশ্রী গ্রামে পৌঁছে। কনকনে শীতের সকালে অনেকেই তখন ঘুম থেকে উঠেনি। ঠিক সেই মূহুর্তে পাকিস্তানি সেনারা অতর্কিত হামলা চালায় গ্রামটিতে। ঘরে ঘরে দেয় আগুন। ঘর থেকে বের হবার সুযোগ দেয়নি গ্রামবাসিকে। বৃষ্টিরমত গুলি ছুড়তে থাকে নিরীহ গ্রামবাসীর উপর। তাদের চিৎকারে পুরো এলাকা প্রকম্পিত হয়ে উঠে। অপারেশনের সময় এদেশীয় দালালরা মুখোশ পরে নেয় যাতে তাদের কেউ চিনতে না পারে। ৬ ঘন্টার অপারেশনে ঘাতকরা একের পর এক বেওনেট চার্জ করে এবং গুলি করে ৪৩ জন গ্রামবাসীকে হত্যা করে। বেলা ১২টার মধ্যে হত্যাযজ্ঞ শেষ করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীরা চলে যায় ঘিওর সদরে। এই সময় পুরো এলাকা রক্তে ভেসে য়ায। লাশগুলো কোন রকম দাফন করা হয়। স্বাধীনতার ৫৪টি বছর অতিবাহিত হবার পরেও সেন পাড়া গ্রামের মানুষগুলো এই হত্যাকাণ্ডের বিচার পায়নি।
২০১১ সালের ২২ নভেম্বর স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর-এর অধীনে শহীদদের স্মৃতি ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা রক্ষার্থে শহিদ স্মৃতিস্তম্ভটি নির্মিত হয়েছে ২৪ লক্ষ টাকা ব্যয়ে। ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন মুক্তিযুদ্ধকালীন এম,সি,এ ও কমান্ডার ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী মোসলেম উদ্দিন খান হাবু মিয়া, মানিকগঞ্জ-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এ বি এম আনোয়ারুল হক। ২০১২ সালের ১৩ নভেম্বর শুভ উদ্বোধন করেন মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী ক্যাপ্টেন (অব.) এ বি তাজুল ইসলাম। সেই সাথে উন্মোচিত হয়েছে তেরশ্রীবাসীর দীর্ঘদিনের স্বপ্ন।
মানিকগঞ্জ জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মান্নান বলেন, ভাষা আন্দোলন, মহান মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে দেশের প্রতিটি আন্দোলনে তেরশ্রী গ্রামের কৃতিত্ব রয়েছে। তেরশ্রীতে ৪৩ জন শহীদদের স্মরনে দৃষ্টিনন্দন স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়েছে। প্রতিদিন অসংখ্য লোকজন স্মৃতিস্তম্ভ দেখার জন্য আসে। প্রতিদিন যাত্রা পথে বিভিন্ন জেলা এবং উপজেলারসহ গ্রামীন জনপদের মানুষ ঐতিহ্যবাহী তেরশ্রীতে এমন একটি নান্দনিক স্থাপনা দেখে মুগ্ধ হচ্ছে।
পয়লা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মো. মোশাররফ হোসেন মানিক বলেন, ২২ নভেম্বর ভোর রাতে পাকহানাদার বাহিনীর সঙ্গে এদেশীয় রাজাকার আলবদররা মিলে তেরশ্রী গ্রামসহ আশপাশের চারটি গ্রাম জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে দেয়। হত্যা করা হয় নিরীহ ৪৩ জন মানুষকে। তেরশ্রী কালি নারায়ণ উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন রাস্তার পাশে নির্মিত স্মৃতিস্তম্ভ করা হয়।
সিরাজগঞ্জ চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের আয়োজনে মাসিক পুলিশ-ম্যাজিস্ট্রেসি কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার সকাল ১০ টায় সিরাজগঞ্জ চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবনের সম্মেলন কক্ষে এ কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠিত কনফারেন্সে সভাপতিত্ব করেন, সিরাজগঞ্জ চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জনাব মো. আব্দুল মতিন।
কনফারেন্সে বক্তারা বলেন- পুলিশসহ অংশীদারী সব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ম্যাজিস্ট্রেটগণের সেতুবন্ধন সৃষ্টি করে পুলিশ-ম্যাজিস্ট্রেসি কনফারেন্স। অংশগ্রহণকারী সংশ্লিষ্ট সকলে পারস্পরিক আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে প্রতিবন্ধকতা দূর করতে হবে। বিচার বিভাগের সকল অংশীদারদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে মানুষের বিচার পাওয়ার অধিকার নিশ্চিত করা সহজ হবে।
উক্ত কনফারেন্সে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- অতিরিক্ত চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জনাব বুলবুল আহমেদ। সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জনাব ইখলাস উদ্দীন। সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৩ জনাব কে এম শাহরিয়ার শহীদ বাপ্পী। ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. মো. রিয়াজুল ইসলাম। সিরাজগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতে পাবলিক প্রোসিকিউটর (পি.পি) রফিক সরকার, অতিরিক্ত চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর (পি.পি) মো. হুমায়ুন কবির। জেলার সকল আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, সকল থানার অফিসার ইনচার্জগণসহ বিচার কাজে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের প্রতিনিধিগণ।
কনফারেন্সের সভাপতি চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. আব্দুল মতিন ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থার বিভিন্ন বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা প্রদান করে ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থাকে গতিশীল ও জনবান্ধব করার লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট সকলকে পেশাদারিত্বের সাথে নিজ-নিজ দায়িত্ব পালন করার জন্য নির্দেশনা প্রদান করে কনফারেন্সের সমাপ্তি ঘোষণা করেন।
শ্রেষ্ঠত্বের উল্লাস, গর্বের পথনেতৃত্ব জরুরী প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে গাজীপুর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (গাকৃবি) নানা আয়োজনে আনন্দঘন ও উৎসবমুখর পরিবেশে উদযাপিত হলো বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৮তম বিশ্ববিদ্যালয় দিবস ২০২৫।
১৯৯৮ সালের এ দিনে ইনস্টিটিউট অব পোস্টগ্র্যাজুয়েট স্টাডিজ ইন এগ্রিকালচার (ইপসা) থেকে দেশের ১৩তম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করে গাকৃবি। যার দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় গাকৃবি টাইমস হায়ার এডুকেশন (টিএইচই) র্যাঙ্কিং ২০২৫ এবং ২৬ এর বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে দেশসেরা বিশ্ববিদ্যালয়সহ আন্তর্জাতিক পর্যায়েও রাখে গৌরবময় অবস্থান। আবার উরি র্যাঙ্কিং ২০২৫ এ জাতীয়ভাবে প্রথম হয়ে ‘ডেভেলপমেন্ট এন্ড অ্যাপ্লিকেশন’ ক্যাটাগরিতে বিশ্বের শীর্ষ ১০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে গাকৃবির অবস্থান ৭৭তম। সাম্প্রতিক কিউএস র্যাঙ্কিয়েও দেশসেরা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের খেতাব অর্জন করেছে ২৮ বছরে পদার্পণকারী এ সেন্টার অব এক্সিলেন্স খ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়টি। টানা তিনবছর ধরে ইউজিসির এপিএ মূল্যায়নেও হয়েছে প্রথম। অন্যদিকে গাকৃবির বিজ্ঞানীগণ এ যাবৎ ৯৩টি ফসলের উন্নত জাত এবং ২০টির বেশি কার্যকরী প্রযুক্তি উদ্ভাবন করে এ বিশ্ববিদ্যালয়কে করেছেন অধিক সমৃদ্ধ। এতসব অর্জনের মহাসড়কে দাঁড়িয়ে বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের দিনব্যাপী কর্মসূচির শুরু শনিবার ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. জিকেএম মোস্তাফিজুর রহমান এর নেতৃত্বে জাতীয় সংগীত পরিবেশন ও জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে। সকাল ৯টা ৪৫ মিনিটে বেলুন উড়িয়ে দেশের শান্তি ও সমৃদ্ধির কামনায় প্রতীকী বার্তা প্রেরণ করে দিবসের শুভ উদ্বোধন করেন উপাচার্য। পরে সকাল ১০টায় প্রশাসনিক ভবন সংলগ্ন ৩৬ জুলাই চত্বর থেকে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও মাঠ কর্মীদের সমবেত অংশগ্রহণে এক বর্ণাঢ্য আনন্দ র্যালি বের হয়। র্যালিটি পুরো ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে পুনরায় ৩৬ জুলাই চত্বরে এসে শেষ হয়। পরে সেখানে দিবসের উপর এক সংক্ষিপ্ত আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনাসভা পরিচালনা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালক (ছাত্রকল্যাণ) প্রফেসর ড. মোহাম্মদ শরীফ রায়হান। এতে বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. জিকেএম মোস্তাফিজুর রহমান, প্রো-ভিসি প্রফেসর ড. এম. ময়নুল হক, ট্রেজারার প্রফেসর ড. মো. সফিউল ইসলাম আফ্রাদ এবং রেজিস্ট্রার মো. আবদুল্লাহ্ মৃধা।
চট্টগ্রামে ৭ থেকে ৮ মাত্রার বড় ধরনের ভূমিকম্প হলে ২ লাখ ৬৭ হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। এছাড়া বহু মানুষের হতাহতের আশঙ্কা রয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, চট্টগ্রামে ৫০ থেকে ১০০ বছরের পুরোনো ভবন। যার প্রায় ৭৫ শতাংশই ঝুঁকিপূর্ণ। নতুন অনেক ভবনও ভূমিকম্প প্রতিরোধী নকশা ছাড়া নির্মাণ করা হচ্ছে। এছাড়া ইমারত বিধিমালা না মেনে ভবন নির্মাণ ও গুণগত মানসম্পন্ন নির্মাণ উপকরণসামগ্রী ব্যবহার না করায় এ ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। পাশাপশি চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) তদারকি নেই।
অন্যদিকে বাংলাদেশের তিনটি প্রধান টেকটনিক প্লেট বার্মিজ-ইন্ডিয়ান, বাংলাদেশ-ইন্ডিয়ান এবং বাংলাদেশ-মিয়ানমার (ইউরেশিয়ান) প্লেটের অত্যন্ত নিকটবর্তী হওয়ায় এ অঞ্চলটি দীর্ঘদিন ধরেই ভূমিকম্প-ঝুঁকিপূর্ণ। ফলে মাত্র ৬০ বর্গমাইলের পুরো নগরীই এখন ভূকম্পনের উচ্চ ঝুঁকি রয়েছে। ফলে বড়ধরণের ভূমিকম্প হলে চট্টগ্রামে প্রচুর মানুষ হতাহত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।
চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘চট্টগ্রামের বহু ভবনের বয়স ৫০ থেকে ১০০ বছরের মধ্যে। এগুলোর প্রায় ৭৫ শতাংশই ঝুঁকিপূর্ণ। নতুন অনেক ভবনও ভূমিকম্প প্রতিরোধী নকশা ছাড়া নির্মাণ করা হচ্ছে। বড় ধরনের ভূমিকম্প হলে আড়াই থেকে তিন লাখ মানুষের মৃত্যুর আশঙ্কা রয়েছে।
চুয়েটের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, চট্টগ্রামের বহু ভবনের বয়স ৫০ থেকে ১০০ বছরের মধ্যে। এগুলোর প্রায় ৭৫ শতাংশই ঝুঁকিপূর্ণ। নতুন অনেক ভবনও ভূমিকম্প প্রতিরোধী নকশা ছাড়া নির্মাণ করা হচ্ছে। বড় ধরনের ভূমিকম্প হলে আড়াই থেকে তিন লাখ মানুষের মৃত্যুর আশঙ্কা রয়েছে বলে জানান তিনি।
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) জানায়, নগরীতে বর্তমানে ৩ লাখ ৮২ হাজার ১১১টি ভবন রয়েছে। এর মধ্যে একতলা ভবন রয়েছে ২ লাখ ৭৮ হাজার ৫টি। ২ থেকে ৫ তলাবিশিষ্ট ভবন রয়েছে ৯০ হাজার ৪৪৪টি। ২ থেকে ৫ তলাবিশিষ্ট ভবন রয়েছে ৯০ হাজার ৪৪৪টি। ৬ থেকে ১০ তলা পর্যন্ত ভবনের সংখ্যা ১৩ হাজার ১৩৫। ১০ তলার ওপরে ভবন রয়েছে ৫২৭টি। নগরে এখন ২০ তলার বেশি ভবন রয়েছে ১০টি। এই বিপুলসংখ্যক ভবন নির্মাণ করা হলেও এগুলোর অধিকাংশই ইমারত বিধিমালা মানেনি বলে অভিযোগ রয়েছে।
চট্টগ্রাম নগরীতে ৭ মাত্রার বেশি ভূমিকম্প হলে ৫০ ভাগের বেশি ভবন ধসে পড়ার আশঙ্কা করেছেন খোদ সিডিএর ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস।
তিনি দৈনিক বাংলাকে বলেন, প্রতিবার চট্টগ্রামে ভূকম্পন হওয়ার পর ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের একটি তালিকা আমরা তৈরি করি। সেই তালিকা চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনকে দেওয়া হয়। কিন্তু এসব ভবন ভাঙা বা সরিয়ে ফেলার দায়িত্ব করপোরেশনের।
তিনি আরো বলেন, নগরে ইমারত বিধিমালা না মেনে অনেক ভবন নির্মাণ করা হয়েছে, এ কথা সত্য। ফলে ৭ থেকে ৮ মাত্রার ভূমিকম্পে নগরের ৭০ শতাংশ ভবন সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। অর্থাৎ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে ২ লাখ ৬৭ হাজার ভবন। তবে বর্তমানে নকশা অনুমোদনের ক্ষেত্রে অনেক কিছু যাচাই করা হয়। তাই এখন অনেক ভবন বা অবকাঠামো হচ্ছে নিয়ম মেনে বলেন তিনি।
এদিকে গত শুক্রবারের ভয়াবহ ভূমিকম্পে সারাদেশের মতো কেঁপে ওঠে চট্টগ্রামও। যদিও ৫ দশমিক ৭ ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল চট্টগ্রাম থেকে প্রায় আড়াই’শ কিলোমিটার দূরের নরসিংদীর মাধবদী। ভূমিকম্পে নগরের মনসুরাবাদ এলাকার ‘স্টার ভবন’ নামের একটি ছয়তলা ভবন হেলে পড়ে। সরজমিনে দেখা যায়, ভবনের ছাদ পাশের আরেক ভবনের দিকে কিছুটা হেলে পড়েছে। যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে মমনে করেন স্থানীয়রা।
তবে ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, শুক্রবারের ভূমিকম্পে চট্টগ্রামে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। অবশ্য সাম্প্রতিক সময়ে ভূমিকম্পে চট্টগ্রামে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটেনি।
এদিকে চট্টগ্রাম ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মনজারে খোরশেদ আলম বলেন, যেসব ভবন ঝুঁকিমুক্ত করা সম্ভব, সেগুলো করতে হবে। আর যেগুলো টেকনিক্যালি ঝুঁকিমুক্ত করা সম্ভব নয়, সেগুলো ভেঙে ফেলতে হবে। পাশাপাশি ফায়ার সার্ভিসসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর উচিত নিয়মিত মানুষকে সতর্ক করা।
আইনবিধির তোয়াক্কা না করে, নকশা অনুমোদনের পরের ধাপগুলো না মেনে চট্টগ্রামে গড়েছে উঠেছে বহুতল ভবনগুলো। ভবনগুলোতে মানহীন উপকরণ ব্যবহার করা হয়েছে। তাই বড় মাত্রার ভূমিকম্প হলে নগরের ৭৫ শতাংশ ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এছাড়া ভূমিকম্প হলে উদ্ধার তৎপরতা চালানো ও পরিস্থিতি মোকাবিলায় সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর যথাযথ প্রস্তুতি ও সুযোগ-সুবিধাও নেই। পাশাপাশি বড় ধরনের ভূমিকম্প মোকাবিলায় যথাযথ প্রস্তুতি না থাকলে ভয়াবহ পরিণতি হতে পারে বলে সতর্ক করছেন বিশেষজ্ঞরা।
ভারতীয় সীমান্ত রক্ষি বাহিনী বিএসএফ সদস্যরা ২ শিশুসহ ১০ বাংলাদেশীকে সীমান্ত এলাকা দিয়ে বাংলাদেশে পুশইন করেছে। শনিবার রাত ৩টার দিকে তাদেরকে বেনাপোল সীমান্ত এলাকা দিয়ে বাংলাদেশে পুশইন করে বলে জানা গেছে। পুশইন হয়ে বাংলাদেশে আসা ইসমাইল হোসেন জানান, গত পাঁচ থেকে সাত বছর আগে তারা পরিবার নিয়ে ভারতে যায় ভালো কাজের আশায়। কলকাতা রাজারহাট নিউটাউন এলাকায় তারা বসবাস করত। তারা জানতে পারে যে সমস্ত বাংলাদেশীরা ভারতে বসবাস করছে তারা আগামী চার মাসের ভিতরে বাংলাদেশ যেতে চাইলে তাদেরকে পাঠিয়ে দেয়া হবে অন্যথায় আটক করে জেলখানায় ভরে দিবে। এ ঘটনায় তারা নিজেরাই সীমন্ত এলাকায় এসে বাংলাদেশে আসার জন্য বিএসএফের কাছে কাগজপত্র জমা দেয় গত সাত দিন আগে। গত রাত আড়াইটা থেকে তিনটার দিকে বিএসএফ সদস্যরা আমাদের ১০ জনকে সীমান্ত এলাকায় এনে আমাদেরকে বলে সামনে বাংলাদেশের বেনাপোল চলে যাও। সেভাবেই আমরা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছি। তবে আমরা যখন প্রবেশ করেছি তখন সীমান্ত এলাকায় কাউকে দেখতে পাইনি এবং সিমান্তের নাম কি সেটাও আমরা জানিনা। ফিরে আসা হলো ইসমাইল হোসেন, আব্দুল হালিম গাজী, রহিমা খাতুন, হাসিনা বেগম, নাজিম উদ্দিন, শিশু নাইমা ও নাজিমসহ আরো তিন জনের বাড়ি খুলনার কয়রা এলাকায়।
সীমান্তে বসবাসরতরা জানান, আমাদের পাশে রয়েছে রঘুনাথপুর এবং সীমান্ত। ফিরে আসারা সম্ভবত কিবা সীমান্ত দিয়েই বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এ ব্যাপারে যশোর ৪৯ বিজিবি ব্যাটেলিয়ানের কমান্ডার লে: করনেল সাইফুল্লাহ সিদ্দিকীর কাছে পুশইনের বিষয়ে মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বেনাপোলে কোন সীমান্ত এলাকা দিয়ে পুশইন হয়েছে এটা আমার জানা নাই বা সে ধরনের কোন তথ্য আমাকে কেউ দেয়নি। খোঁজ নিয়ে জানাতে হবে।
টাঙ্গাইলের ধনবাড়ীতে তরুণ প্রজন্মকে মাদকসহ অপরাধ কর্মকাণ্ড থেকে দূরে রাখতে অনুষ্ঠিত হলো ১৫ কিলোমিটার হাফ ম্যারাথন প্রতিযোগিতা। এতে অংশ নিয়েছে দেশের বিভিন্ন জেলার সাড়ে তিন শতাধিক প্রতিযোগী। শনিবার সকালে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন স্পোর্টস লাভারস অ্যাসোসিয়েশনের তৃতীয় প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত ম্যারাথনের উদ্বোধন করেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ফকির মাহবুব আনাম স্বপন। ধনবাড়ী নওয়াব এস্টেটের মোতাওয়াল্লী আফিফ উদ্দিন আহমাদ স্মারক উন্মোচন করেন। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল এডভোকেট মাহফুজ বিন ইউসুফ সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
অংশগ্রহণকারীরা বলছে, প্রতিটি মানুষের শরীর সুস্থ রাখতে অধ্যাবসায়ের বিকল্প নেই। তরুণ প্রজন্মকে মুঠোফোন, অবাধ ইন্টারনেট ব্যবহার, মাদকসহ অপরাধ কর্মকাণ্ড থেকে দূরে রাখতে এমন আয়োজন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
প্রতিযোগিতায় প্রথম হওয়া আশরাফুল আলম কাশেম বলেন, প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে সিলেট এসেছি। প্রথম হয়ে খুব ভালো লাগছে। নিজেকে সুস্থ রাখতে সুশৃঙ্খল সমাজ গড়তে ম্যারাথনসহ খেলাধূলার বিকল্প নেই।
প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় হওয়া পাবনার ইমরান হোসেন বলেন, বর্তমানে সমাজে মাদক, সন্ত্রাস ও অপরাধ বেড়েই চলেছে। মাদক ও সন্ত্রাসমুক্ত সমাজ গড়তে ও সুস্বাস্থ্যের জন্য ম্যারাথনে অংশ নেই। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে রানারদের যে পরিমাণ প্রাইজমানি দেয়া হয়, তা যতেষ্ঠ নয়। এটি আরো বাড়ানো প্রয়োজন।
স্পোর্টস লাভারস অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা সোলায়মান হোসেন বলেন, সমাজ থেকে মাদক সন্ত্রাস দূর করতে প্রতি বছরই এ সব অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে শিশুদের খেলাধুলা, কাবাডি, রশি টানাটানিসহ নানা খেলার আয়োজন হয়। এছাড়াও সন্ধ্যায় মনোঙ্গ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
আগামী বুধবার চট্টগ্রাম বন্দরের সব প্রবেশমুখে অবরোধের ডাক দিয়েছে শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ (স্কপ)। চট্টগ্রাম বন্দরের বিভিন্ন স্থাপনা বিদেশিদের ইজারা দেওয়ার সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে এ কর্মসূচির ডাক দেন স্কপ নেতারা।
সরকারের বন্দর নিয়ে কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কর্মসূচির ধারাবাহিকতায় শনিবার দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের ‘জুলাই বিপ্লব স্মৃতি হলে’ আয়োজিত দিনব্যাপী কনভেনশনের আয়োজন করা হয়। এছাড়া কনভেনশন থেকে বন্দর রক্ষা ও শ্রমিক অধিকার আদায়ে স্কপের ৯ দফা বাস্তবায়নের দাবিতে থেকে জেলায় জেলায় বিক্ষোভের কর্মসূচি ঘোষণা করেন স্কপ নেতারা। কনভেশনে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের জাতীয় ও স্থানীয় নেতারা বক্তব্য রাখেন।
কনভেনশনে বিভাগীয় শ্রমিকদলের সাধারণ সম্পাদক ও বন্দর সিবিএর সাবেক সাধারণ সম্পাদক কাজী শেখ নুরুল্লাহ বাহার বলেন, ‘হাইকোর্টের মাননীয় বিচারপতিরা স্পষ্ট বলে দিয়েছেন, নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনালের (এনসিটি) বিষয় নিয়ে আর অগ্রসর হওয়া যাবে না। তারা (সরকার) কিন্তু হাইকোর্টের কথাও মানছে না। আমরা শুনেছি, আগামী ২৫, ২৬, ২৭ নভেম্বর ঢাকায় বৈঠক ডাকা হয়েছে নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল নিয়ে ডিপি ওয়ার্ল্ডের সঙ্গে চুক্তি করার জন্য। ২৬ তারিখ ভেটিং করবে, ২৭ তারিখ চুক্তি করবে- এরকম কথা শোনা যাচ্ছে।
তিনি বলেন, আমরা চট্টগ্রামের নেতারা বসেছিলাম। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আগামী বুধবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত চট্টগ্রাম বন্দরের এন্ট্রি পয়েন্ট যেগুলো আছে- আগ্রাবাদ, বড়পোল এবং মাইলের মাথা, এ তিনটি জায়গায় সর্বাত্মক অবরোধ হবে। আমি সমস্ত শ্রমিক-কর্মচারী ভাইদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাজপথে নেমে সর্বাত্মক অবরোধ কর্মসূচি পালন করে বন্দর বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়ার এ চক্রান্ত প্রতিহত করার আহ্বান জানাচ্ছি।
কনভেনশনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শ্রম সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহাম্মদ বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ে এই আন্দোলনে ব্যবসায়ীদেরও এগিয়ে আসতে হবে। বন্দর রক্ষা করার দায়িত্ব ব্যবসায়ীদেরও আছে। যখন রাস্তায় আন্দোলনের প্রশ্ন আসে তখন শ্রমিকদের দায়িত্ব আর যখন আন্দোলন শেষ হয়ে যাবে তখন ব্যবসা করা ব্যবসায়ীদের দায়িত্ব- এটা হতে পারে না।
তিনি আরও বলেন, ‘আমি আহ্বান জানাই, ২৬ তারিখের অবরোধ কমর্সূচির পর আসেন আমরা একবার সবাই মিলে ঢাকায় বসি। স্কপ যে উদ্যোগটা নিয়েছে আমি সাধুবাদ জানাই। শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের সকল ইস্যুতে সবাইকে একমত থাকতে হবে এবং দীর্ঘমেয়াদী লড়াই চালিয়ে যেতে হবে।’
চট্টগ্রাম বিভাগীয় শ্রমিকদলের সাধারণ সম্পাদক ও বন্দর সিবিএ’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক কাজী শেখ নুরুল্লাহ বাহারের সভাপতিত্বে কনভেনশনে আরও বক্তব্য রাখেন স্কপের যুগ্ম সমন্বয়ক ও বাংলাদেশের জাতীয় শ্রমিক জোটের সভাপতি আব্দুল কাদের হাওলাদার, জাতীয় শ্রমিক জোটের সাধারণ সম্পাদক মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ, জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসেন, জাতীয় শ্রমিক জোট-বাংলাদেশের সভাপতি সাইফুজ্জামান বাদশা, শ্রম সংস্কার কমিশনের সদস্য ও বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রর সহসভাপতি তপন দত্ত, স্কপের যুগ্ম সমন্বয়ক ও সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবিব বুলবুল প্রমুখ।
উল্লেখ্য, গত ১৭ নভেম্বর চট্টগ্রাম বন্দরের লালদিয়া চরে টার্মিনাল নির্মাণ ও পরিচালনার জন্য ডেনমার্কের এপিএম টার্মিনালস নামে একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ৩৩ বছরের চুক্তি করেছে সরকার। এই মেয়াদ আরও ১৫ বছর বাড়ানোর সুযোগ আছে চুক্তিতে।
চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলায় স্কুলের মাঠ ভরাট করার নাম দিয়ে কাটা হচ্ছে পাহাড়। শীতকাল শুরু হতে না হতেই উপজেলার নয়টি ইউনিয়নের মধ্যে কম বেশি সব ইউনিয়নেই চলছে জমির টপসয়েল এবং পাহাড় কাটার হিড়িক।
প্রায় আট একর এলাকাজুড়ে অবস্থান পাহাড়টির। উচ্চতা ৩০ ফুটের মতো। ‘বাক্করগিয়া কাটা’ নামের এ পাহাড়ের অবস্থান চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার চরম্বা ইউনিয়নের কালুয়ার পাড়া এলাকায়।
সরেজমিনে দেখা যায়, পাহাড়ের দক্ষিণ পাশে খননযন্ত্র দিয়ে মাটি কাটার ছাপ স্পষ্ট। পাহাড়ের কিছু মাটি কেটে স্তূপ করে রাখা হয়েছে একটি স্থানে। কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা হয়। তারা জানান, পাহাড়টি ব্যক্তিমালিকানাধীন। এর মালিকানা সাতজনের। পাঁচ বছর আগে পাহাড়টি কেটে বসতঘর নির্মাণ শুরু হয়। এরপর একটি একটি করে বসতঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। গত পাঁচ বছরের মধ্যে পাহাড়ের পূর্ব অংশে আটটি বসতঘর নির্মাণ করা হয়েছে। পাহাড়টির দক্ষিণ অংশে প্রায় ১৫ শতক এরই মধ্যে কেটে ফেলা হয়েছে বসতঘর নির্মাণের জন্য।
পাহাড়ে রোপণকৃত গাছগাছালি কাটায় প্রাকৃতিক পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতির পাশাপাশি ধ্বংস হচ্ছে জীববৈচিত্র্য। এতে পাহাড়ের স্বাভাবিক গঠন নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি বেড়ে যাচ্ছে ভূমিধ্বসের ঝুঁকি।
স্থানীয়রা জানান, বিগত এক সপ্তাহ ধরে রাতের আঁধারে পাহাড় কেটে এসব মাটি পার্শ্ববর্তী চরম্বা উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠ ভরাটসহ বিভিন্ন এলাকায় পাচার করা হয়েছে।
বর্তমানে পাহাড়টির দক্ষিণের যে অংশ কাটা হচ্ছে, সেটির মালিকানা মো. শফি নামের স্থানীয় এক বাসিন্দার। পাহাড় কেটে তিনি একটি পাকা বাড়ি নির্মাণের কাজ শুরু করেছেন এক বছর আগে। সেটির নির্মাণকাজ এখনো সম্পন্ন হয়নি। মো. শফির তিন ছেলের মধ্যে দুজন প্রবাসী। তাদের জন্য আরও দুটি পাকা বাড়ি নির্মাণ করতে চান তিনি। ছয় দিন ধরে নতুন করে পাহাড় কাটা চলছে।
সরেজমিনে মো. শফির সঙ্গে কথা বললে তিনি বসতঘর নির্মাণের জন্য পাহাড় কাটার বিষয়টি স্বীকার করেন। শফি বলেন, ‘পাহাড় কাটলে প্রশাসন সমস্যা করে, সেটি জানি তবে চ্যায়ারম্যান বলেছেন স্কুলের মাঠের জন্য মাটি কাটলে কোনো সমস্যা হবে না। তাই চেয়ারম্যানের কথায় মাটি কাটতে দিয়েছি। ইতোমধ্যে বেশ কিছু মাটি স্কুলের মাঠ ভরাটের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তারা বলেছে, আরও ১০০ ট্রাক মাটি লাগবে।
জানতে চাইলে চরম্বা ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান সৈয়দ হোসেন বলেন, আমি পাহাড় কাটার কথা কাউকে বলিনি। মো. শফি নামে কাউকে চিনিও না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় এক ব্যক্তি জানান, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান (ছৈয়দ মেম্বার) বিগত সরকারের আমলেও দীর্ঘদিন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসহাব উদ্দিনের সাথে সিন্ডিকেট করে মাটি বালু কাটার সাথে জড়িত ছিল। জুলাই আন্দোলনের সময় ছাত্র জনতার মিছিলে সরাসরি বাঁধা প্রদান ও বিরোধীতা করায় ৫ আগস্টের পরে তার বিরুদ্ধে থানায় একাধিক বিস্ফোরক আইনে মামলাও হয়েছে। সেই মামলায় তিনি বর্তমানে ওয়ারেন্টভুক্ত আসামী। তারপরও তিনি প্রশাসনের নাকের ডগায় কিভাবে (ভারপ্রাপ্ত) চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করতেছে এমন প্রশ্ন স্থানীয় ছাত্র জনতার। এছাড়াও তিনি (ভারপ্রাপ্ত) চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পাওয়ার পর বালু মাটি সিন্ডিকেট করে বেপরোয়া হয়ে গেছে বলেও জানান স্থানীয়রা।
প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ হোছাইন বলেন, স্কুলের মাঠ ভরাটের জন্য মাটি গুলো ছৈয়দ চ্যায়ারম্যান দিয়েছেন, স্কুল উন্নয়নের জন্য দিয়েছেন উনি তবে এটার জন্য কোনো টাকা দেওয়া হয়নি।
ইউপি মেম্বার মোহাম্মদ মিয়া বলেন, ছৈয়দ চ্যায়ারম্যানের নেতৃত্বে পাহাড় কাটা হচ্ছে জানতে পেরেছি। তবে এ বিষয়ে উপজেলা বা পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে কোনো অনুমতি নেওয়া হয়নি।
পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫-এর ৬(খ) ধারা অনুযায়ী, পাহাড় ও টিলা কাটা যায় না। তবে জাতীয় স্বার্থের প্রয়োজনে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নিয়ে পাহাড় বা টিলা কাটা যেতে পারে।
লোহাগাড়া উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মং এছেন বলেন, কোনোভাবেই পাহাড় কাটা যাবে না। আমরা দ্রুত অভিযান চালিয়ে এ কাজে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেব।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বলেন, পাহাড় কাটা সম্পূর্ণ নিষেধ। কোনভাবেই পাহাড় অথবা টপসয়েল কাটা যাবেনা । এ ব্যাপারে সরজমিন পরিদর্শন করে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।