চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে কয়েদিরা বিদ্রোহ করেছেন। আজ শুক্রবার (৯ আগস্ট) দুপুর পৌনে ২টার দিকে কারাগারের ভেতর শুরু হওয়া সংঘর্ষ প্রায় ঘণ্টাব্যাপী স্থায়ী হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কারারক্ষীরা রাবার বুলেটে ও ফাঁকা গুলি ছোঁড়েন। এতে কয়েকজন কয়েদি আহত হন বলে জানা গেছে। উত্তেজনা কমাতে বর্তমানে সেখানে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।
কারাগারের গেটের দায়িত্বরত এক কর্মকর্তা জানান, দুপুরে নামাজের পর হঠাৎ কারাগারের একাধিক ভবনে কয়েদিরা বিদ্রোহ শুরু করেন। আমাদের পক্ষ থেকে ফাঁকা গুলি করা হয়েছে। কয়েকজন আহত হয়েছেন বলে শুনেছি। আমাদের অনেক কারারক্ষীও আহত হয়েছেন।
লালদিঘীর পার এলাকার বাসিন্দা ও প্রত্যক্ষদর্শীর জানান, দুপুর থেকে কারাগারে ভেতর থেকে ব্যাপক গুলির শব্দ শোনা যায়। বাইরে থেকেও কিছু মানুষ কারাগারের প্রধান ফটক ভাঙার চেষ্টা করেন। নামাজের পর হঠাৎ কারাগারের ভেতর থেকে বিকট আওয়াজ আসে। এ সময় লালদীঘির চারপাশে রাস্তা-ঘাটে গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
কারারক্ষী বলছেন, নামাজের পর হঠাৎ কারাগারের একাধিক ভবনের কয়েদিরা বিদ্রোহ শুরু করেন। ভেতরে কারারক্ষীদের সঙ্গে এখনো যোগাযোগ করতে পারিনি। বিদ্রোহ দমনে সেনাবাহিনীর সহযোগিতা চাওয়া হলে তারা ঘটনাস্থলে অবস্থান নেয়। এখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
চট্টগ্রাম জেল সুপার মঞ্জুর হোসেন বলেন, বিদ্রোহ শুরু হলে কারাগারে পাগলা ঘণ্টা বাজানো হয়। এখন পরিস্থিতি আমাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। কতজন আহত হয়েছেন তা এখনো বলা যাচ্ছে না। কারাগারের ভেতরে সেনাবাহিনী রয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সবসময় কারাগারে সেনাবাহিনী রাখার অনুরোধ জানাচ্ছি।
চট্টগ্রাম কারাগারের ডেপুটি জেলার মো. ইব্রাহিম বলেন, বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। কারাগারে সেনাবাহিনী ও বিজিবি পৌঁছেছে। একজন বন্দিও পালাতে পারেনি। এ ঘটনা কেন ঘটেছে সেটি আমরা যাচাই-বাছাই করে দেখছি।
এর আগে গত ৫ আগস্ট বিকেলে কেন্দ্রীয় কারাগারে হামলার চেষ্টা করা হয়। পুলিশ ও কারারক্ষীরা হামলা প্রতিরোধ করেন। বর্তমানে কারাগারে প্রায় ৪ হাজারের বেশি বন্দী রয়েছে। কারাবন্দিদের রাখার জন্য পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা ভবনের প্রতিটিতে বন্দি রাখার ধারণক্ষমতা ৩০০ জন। সাংগু, কর্ণফুলী ও হালদা ভবনের প্রতিটিতে বন্দি রাখার ধারণক্ষমতা ২৪০ জন।
আমাগো কষ্ট দেহনের কেউ নাই। জীবনডা কষ্ট করেই পার করলাম। বেশ আক্ষেপ ও চাপা কষ্ট নিয়ে প্রায় বছর দুয়েক আগে কথাগুলো বলেছিলেন মাঝি সুজন শেখসহ মজলিশপুর চরাঞ্চলের মানুষ।
রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলার উজানচর ইউনিয়নের শেষ সীমনা ৯ নং ওয়ার্ডের প্রত্যন্ত দূর্গম চরাঞ্চল মজলিশপুর ও চরমহিদাপুর যাত্রী পারাপারে পদ্মার মাঝি সুজন শেখ, স্থানীয় বাসিন্দা শাজাহান শেখ, জহিরুল শেখসহ অনেকেই খুব কষ্ট নিয়ে কথাগুলো বলেছিলেন।
তারা বলেন, বছরের প্রায় ছয়মাস পানিতে ভরে থাকে মজলিশপুর ও চরমহিদাপুর গ্রামটি। সেখানকার বেশিরভাগ মানুষ কৃষি কাজের উপর নির্ভরশীল। তবে অনেকেই আবার নানান পেশার সাথে জড়িত। কেউ পদ্মার বুকে মাছ ধরে সংসার চালান। শহরের সাথে তেমন ভালো যোগাযোগের ব্যবস্থা নেই গ্রামটির। রাস্তা-ঘাটের বেহাল দশা। এ অঞ্চলের কৃষিপণ্য আনা-নেয়ার একমাত্র মাধ্যম ছিল ঘোড়ার গাড়ি। উপজেলা শহর থেকে প্রায় ৫-৭ কিলোমিটার চিপা রাস্তা দিয়েই যাতায়াত করতে হয় এলাকার প্রায় ৮-১০ হাজার মানুষের। শুকনা মৌসুমে ওই রাস্তায় কম-বেশি ভ্যান-রিক্সা চলাচল করলেও বর্ষা মৌসুমে চলাচল তো দূরের কথা ঘোড়ার গাড়ী চলাচলেও বড় মুশকিল হয়ে পরতো। সবচেয়ে বড় অসুবিধায় পরতে হয় বর্ষা মৌসুমে। তখন ওই চিপা রাস্তা দিয়ে খালি পায়ে হাঁটায় মুশকিল। শহরের সাথে একমাত্র যোগাযোগের জন্য যে রাস্তাটা রয়েছে সেখানে একটা জায়গায় প্রায় হাফ কিলোমিটার রাস্তা নিচু থাকায় বর্ষা মৌসুমে ওই রাস্তা দিয়ে পারাপারের একমাত্র মাধ্যম ছিল নৌকা। তবে এবার ব্রিজ নির্মাণ হওয়ায় কষ্ট লাঘব হয়েছে চরবাসীর।
এলাকার বেশ কয়েকজন লোকের সাথে কথা হলে তাদের মুখে তৃপ্তির হাসি নিয়ে বলেন, বছর দুয়েক আগেও বর্ষা মৌসুমে আমাদের অনেক কষ্ট করে নদী পার হওয়া লাগতো। প্রায় দেড় কিলোমিটার রাস্তা বছরের প্রায় অর্ধেক মাস পানিতে ভরে থাকে। ফসল আনা-নেওয়া করতে নৌকা ছাড়া কোন উপায় ছিলো না। এই হাফ কিলোমিটার জায়গায় চলাচলের জন্য সুন্দর একটি ব্রিজ নির্মাণ করেছে সরকার। আমরা এখন খুব খুশি।
সরেজমিনে দেখা যায়, মজলিশপুর ও চরমহিদাপুর গ্রামে প্রবেশ করতে হাফ কিলোমিটার রাস্তায় চওড়া একটা ব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে। ব্রিজ হওয়ায় এখন আর আগের মতো ভোগান্তি পোহাতে হয় না।
স্থানীয় চর দৌলতদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক জহিরুল ইসলাম বলেন, ফসল উৎপাদনের সম্ভাবনাময় চর এটি। এ চরে মৌসুমীভিত্তিক সব ধরনের ফসল খুব ভালোই উৎপাদন হয় কিন্তু যাতায়াতের ব্যবস্থা ভালো না থাকায় এখানকার কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ফসলের সঠিক দাম পেত না। এর আগে ব্রিজের জন্য বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হওয়ার পরে ব্রিজটি নির্মাণ করেন সরকার। এখন কোনো রকম ভোগান্তি ছাড়াই খুব সহজে এলাকার মানুষ চলাচল করতে পারছে।
উজানচর ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ড সদস্য শেখ রাসেল আহম্মেদ জানান, এ অঞ্চলের মানুষের নদীর সাথে যুদ্ধ করেই চলতে হয়। এখন চরাঞ্চলের মানুষ রিকশা, ভ্যান, অটো এমনকি বড় বড় যানবাহনে তাদের কৃষি পন্য খুব সহজেই আনা নেয়া করতে পারেন। তিনি আরও বলেন, ব্রিজটি নির্মাণ হওয়াতে স্বস্তির নিঃশ্বাস পেয়েছে চরবাসী।
মধুপুর গড়ের শাল বনের লাল মাটিতে ছিল হরেক জাতের বন আলু বুনো খাদ্যের বিশাল ভাণ্ডার। এ খাদ্যই ছিল এ জনপদের গারো সম্প্রদায়ের প্রিয় খাদ্যের অন্যতম উৎস। জীবন-জীবিকার অনন্য উপাদান। স্বাদ-পুষ্টিগুণের এ আলু তোলা তেমন আনন্দের তেমনি স্থানীয়দের কাছে ঐতিহ্যের একটা অংশ হিসেবেও মনে করে তারা। তবে সেই ঐতিহ্যে ভরা স্বাদ গুণেমানের এ আলুর আর সেদিন নেই। নানাভাবে নান কারণে প্রাকৃতিক বন ধ্বংস হওয়ায় বিলীন হচ্ছে অফুরন্ত এ খাদ্য ভাণ্ডার। অবশিষ্ট যে বন টিকে আছে, তাতেও আগের মতো নেই হরেক জাতের বন আলু। এমনটাই জানা গেছে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে।
জানা গেছে, ইতিহাস ঐতিহ্য খ্যাত মধুপুর শাল বন ছিল গভীর অরণ্যে ঘেরা। বনের চারপাশে ছিল গারো মান্দিদের বসবাস। গারো সম্প্রদায়ের খামালরা বনের নানা গাছগাছরা দিয়ে তাদের চিকিৎসা করত। স্থানীয় বসতিরাও ভেষজ চিকিৎসা নিত। অরণ্যচারী গারো সম্প্রদায়ের লোকের ভক্ষণ করত বাহারি বুনো খাবার। বনের বিশাল খাদ্য ভাণ্ডারে হতো তাদের বাড়তি অন্নের জোগান। খারি গপ্পার নানা উপকরণ আহরণ হতো বন থেকেই। পুষ্টিগুণে ভরা বন আলু ছিল তাদের খাদ্যের মধ্যে অন্যতম। গারোরা তাদের ভাষায় বন আলুকে ‘থামান্দি বা থাজং’ বলে থাকে। থামান্দি আচিক শব্দ। এর অর্থ বন আলু।
মধুপুরের গায়ড়া, পীরগাছা, ধরাটি, মমিনপুর, জলছত্র, গাছাবাড়ি, ভুটিয়া ও চুনিয়াসহ বিভিন্ন গারোপল্লীতে গিয়ে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, আবিমা অঞ্চলের গারোরা বন আলুকে তাদের গারো বা আচিক ভাষায় ‘থামান্দি বা থাজং’ বলে থাকে। তাদের মতে, গারো সম্প্রদায়ের লোকেরাই মধুপুর শালবনে প্রথম বন আলুর সন্ধান পান বলে জানা গেছে। প্রাকৃতিক শালবনের মধুপুর, ঘাটাইল, শেরপুর, নেত্রকোনা, হালুয়াঘাটে এ আলু পাওয়া যেত। লালমাটির শালবনে প্রাকৃতিকভাবে এসব আলু জন্মায়। এ আলু ছাড়াও বনের অভ্যন্তরে পাওয়া যেত বাহারি রকমের নাম জানা-অজানা অনেক ধরনের আলু। অরণ্যচারী গারোরা বনের চারপাশে বাস করার কারণে তারা এর সন্ধান পান। এক সময় জুম চাষের কারণে এসব আলুর সন্ধান পেতে সহজ হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। ওই সময় ছনের ছোট ঘর বা মাচাং তুলে তারা থাকার জায়গা করতেন। ছাউনিতে বনের ছন আর বনের তারাই বাঁশ কিংবা ছোট ছোট সরু আকারের ছোট গাছ দিয়ে সুন্দরভাবে বানাতেন ঘর। আগের দিনে খাবার সংকট হলেই ছুটে যেতেন বনে। আধাবেলা আলু সংগ্রহ করলেই পরিবারের অন্নের জোগান হতো কয়েক দিনের এমনটাই জানান তারা।
বন আলু সংগ্রহ যেন সংস্কৃতির একটা অংশ। মনের আনন্দে বা স্বাচ্ছন্দ্যে তারা তাদের দ্বিতীয় প্রধান বনোখাদ্য আলু সংগ্রহ করত। এসব আলু সিদ্ধ করে খেত। সুস্বাদু ও পুষ্টিগুণে ছিল ভরপুর। তাদের অন্যতম উৎসব ওয়ানগালায় সালজং দেবতা বা শস্য দেবতাকে উৎসর্গ করে থাকে বন আলু। কৃষ্টি-কালচার-ঐতিহ্যে বন আলুর জুড়ি ছিল না। অতিথি কিংবা আত্মীয়-স্বজন এলে আপ্যায়নের জন্য দেওয়া হতো বন আলু। এখনো বনে বিভিন্ন জাতের যত বন আলু সামান্য পাওয়া যায়।
বন এলাকার আদিবাসী গারোদের সঙ্গে কথা বলে আরও জানা যায়, এক সময় মধুপুরের এই বনে গাতি আলু, গারো আলু, পান আলু, গইজা আলু, দুধ আলু, শিমুল আলু, কাসাবা, ধারমচআলুসহ বিভিন্ন ধরনের বন আলু পাওয়া যেত। এসব আলু তাদের ঐতিহ্য সংস্কৃতি ও প্রিয় খাবারের তালিকায় অন্যতম।
অর্চনা নকরেক (৫০) বলেন, অনেকেই আবার স্থানীয়ভাবে বিক্রি করে অর্থ উপার্জন করত। এই আলু দূরের আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতেও পাঠানো হতো। বন আলুর বংশবিস্তারের জন্য আলু সংগ্রহের পর গাছগুলো আবার মাটিতে পুঁতে দিতেন আদিবাসীরা। আবার গাছ বেড়ে উঠত। শাল-গজারিসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছের সঙ্গে লতার মতো জড়িয়ে থাকত। এ আলু ফাল্গুন-চৈত্রমাসে সবচেয়ে বেশি সংগ্রহ করা হতো। রোদে শুকিয়ে ঘরে তুলে রাখা হতো। প্রাকৃতিক বন কমে যাওয়ায় এখন আর আগের মতো আলু পাওয়া যায় না।
বৃহত্তর ময়মনসিহ ডেভেলপমেন্ট কালচারাল ফোরামের সভাপতি অজয় এ মৃ বলেন, প্রাকৃতিক বন উজাড়ের ফলে বন আলু কমে গেছে। সামজিক বনায়ন ও অন্যান্য প্রকল্পের ফলে বন ও বনের ঝোঁপঝার উজাড় হওয়ায় বন আলু জীব বৈচিত্র্য পশুপাখিও কমে যাচ্ছে। আদিবাসী ছাড়া অন্য যারা আলু তোলে বিক্রি করে তারা আলু তোলার পর গাছ লাগিয়ে দেয় না। ফলে কমছে বন আলু। তিনি বলেন সামাজিক বনায়ন বন্ধ করে প্রাকৃতিক বন বাড়াতে হবে, আলু তোলার পর আবার গাছ লাগিয়ে দিতে হবে জনসচেতনতা বাড়ানোর কথা বলেন তিনি।
মানবিক ইউএনও মাখন চন্দ্র সূত্রধর। কখনও সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়নে মানুষকে সচেতন করছেন, কখনও ছুটে যাচ্ছেন হতদরিদ্র সাধারণ মানুষের কাছে। সকাল থেকে মধ্যরাত অবধি চার চারটি দপ্তরের কাজ করে যাচ্ছেন। তার প্রথম পরিচয় তিনি জনবান্ধব ও মানবিক। তিনি জনপ্রতিনিধি নন, তবে জনপ্রতিনিধির মতোই জনপ্রিয়। উপজেলা প্রশাসনের দায়িত্বের পাশাপাশি একাধারে উপজেলা পরিষদ ও পৌরসভার প্রশাসক এবং উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। কাজ পাগল মানুষ বলতে যা বোঝায় এ যেন ঠিক তাই! সকাল নয়টা থেকে শুরু করে কখনো রাত বারোটা পর্যন্ত দাপ্তরিক কাজ করা এটা যেন তার প্রতিদিনের রুটিন। দাপ্তরিক কাজের স্বার্থে কোনো কোনো দিন রাত বারোটার পরেও অফিস করতে দেখা যায়।
তিন দপ্তরের কাজের পাশাপাশিও তিনি উপজেলার বিভিন্ন হতদরিদ্র, প্রতিবন্ধী, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা, গরিব মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীর পাশে সহযোগিতার হাত বাড়ানো প্রতিদিনের রুটিনের একটা অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মাখন চন্দ্র সূত্রধর। ২০২৫ সালে দেশের পটপরিবর্তনের পর ৮ জানুয়ারি তিনি কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্বগ্রহণ করেন। সেসময়ে কমলগঞ্জ প্রশাসনিক ব্যবস্থাকে নিজ হাতে স্থিতিশীল অবস্থায় ফেরান। এতে অল্পদিনেই তিনি সফল হন। দলমত নির্বিশেষে সবার কাছে হয়ে ওঠেন জনপ্রিয় ও মানবিক একজন ব্যক্তি হিসেবে।
দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে কর্মদক্ষতা, মানবিকতা ও জনবান্ধব কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে তিনি সাধারণ মানুষের কাছের মানুষ ও একজন জনপ্রিয় প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই তিনি উন্নয়ন ও জনসেবাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে কাজ শুরু করেন। গত এক বছরে উপজেলা ও পৌরসভাজুড়ে কয়েক কোটির টাকার উন্নয়নমূলক কাজ সম্পাদন করেছেন।
জানা গেছে, মাখন চন্দ্র সূত্রধর এ উপজেলায় যোগদানের পর থেকে উপজেলায় অবৈধভাবে বালু মজুত রাখা, অবৈধভাবে বালু উত্তোলন, ইভটিজিং, মাদক, খাবার হোটেল, নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল, নিষিদ্ধ চায়না দুয়ার, অবৈধ বালু ব্যবসা বন্ধ করার জন্য তার রয়েছে বিশেষ নজরদারি। রাস্তাঘাট নির্মাণ, সরকার কর্তৃক বরাদ্দ দ্রুতাতার সাথে সেবাপ্রার্থীদের কাছে পৌঁছে দেওয়ায় উপজেলার জনগণের মনে ইউএনও মাখন চন্দ্র সূত্রদর এর প্রতি একটা আস্তা জমেছে।
স্থানীয়রা জানান, জলাবদ্ধতা দূরীকরণ, উপজেলার রাস্তাঘাট সংস্কার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো উন্নয়ন, মসজিদ, মন্দির ও মাদরাসায় সরকারি সহায়তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে তার ভূমিকা প্রশংসিত হয়েছে। পাশাপাশি বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে তিনি স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতাকে প্রাধান্য দিচ্ছেন। উপজেলা অফিসে সেবা নিতে আসা সাধারণ মানুষের অভিযোগ, পরামর্শ বা প্রয়োজনীয় দাবি দ্রুত সময়ে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। এতে একদিকে যেমন মানুষের ভোগান্তি কমেছে, অন্যদিকে বেড়েছে প্রশাসনের প্রতি আস্থা।
ইউএনও মাখন চন্দ্র সুত্রধর, জুলাই আগস্ট মাসের ভূমি ব্যবস্থাপনা পারফরম্যান্স এর উপরে জেলার শ্রেষ্ঠ এসিল্যান্ড। যোগদানের পর থেকে এখন পর্যন্ত ১৮টি মোবাইল কোর্টে প্রায় ১২ লক্ষ টাকার উপরে জরিমানা করা হয়েছে। যা সরকারের কোষাগারে জমা হয়।
ইউএনও মাখন চন্দ্র সূত্রধর বলেন, বর্তমান সরকারের উন্নয়নমূলক সেবা প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছে পৌঁছে দেওয়ায়ই আমার কাজ। আর এই চেষ্টা অব্যাহত আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে।
কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলার শেষাংশে মিরপুর উপজেলার বহলবাড়ীয়া ইউনিয়নের নওদা বহলবাড়ীয়ার বিলপাড়া গ্রামে ভিয়েতনামের খাটো জাতের নারিকেল চাষ করছেন মহিউদ্দিন বিশ্বাস। প্রায় ৫ বছর পূর্বে মহিউদ্দিন ভিয়েতনামের খাটো জাতের নারিকেল গাছের চারা রোপন করেছিলেন। বর্তমানে গাছগুলোতে ফল আসতে শুরু করেছে। নিজ জমিতে নিজ আবাদকৃত ফসলের কুড়িতে মহিউদ্দিনের চোখে মুখে খুশির ঝিলিক আর আনন্দের বন্যা দেখতে পাওয়া যায়। প্রায় সোয়া বিঘা জমির উপর আবাদকৃত মহিউদ্দিনের নারিকেল বাগানে ৮২টি ভিয়েতনামী নারিকেল গাছ সগৌরবে ফুল ফল আর শোভাবর্ধনের খোরাক হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। যা অত্যন্ত দৃষ্টিনন্দন। নিজ এলাকায় বিদেশি জাতের নারিকেল গাছ দখার অভিপ্রায়ে প্রতিদিনই দর্শনার্থীদের ভীড় বাড়ছে। তার এই বাগান দেখতে প্রতিদিন ভিড় করছেন দর্শনার্থীরা। সরেজমিনে গিয়ে ও তা প্রত্যক্ষ করা গেছে।
বাগান মালিক মহিউদ্দিন জানান, গাছ লাগানোর পরে তিনি খুব দুশ্চিন্তা ও হতাশাগ্রস্ত ছিলেন। কেননা ৫ বছরে সময় অতিক্রান্ত হলেও নারিকেল গাছে ফল ধরছে না তাছাড়া ও নানাজনে নানা কটু কথা বলতে থাকে। অবশেষে চলতি বছরের চলতি অক্টোবরের শুরুতে ৭টি গাছে নারিকেলের কুঁড়ি চোখে পড়ে। এখন তার মনে সাহস জন্মেছে। এখন তিনি বেজায় খুশি। যেখানে সারাদেশ থেকে অভিযোগ রয়েছে ভিয়েতনামী নারিকেল গাছ লাগিয়ে অনেক কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। কিন্তু কুষ্টিয়ার মহিউদ্দিন প্রমাণ করেছেন যথাযথ পরিচর্যা ও প্রয়োজনীয় উপাদানগুলো সঠিকভাবে প্রয়োগ করলে অবশ্যই সুফল পাওয়া যায়।
২০২০ সালের মাঝামাঝি সময়ে মহিউদ্দিন টেলিভিশনে প্রতিবেদন দেখে কুষ্টিয়া বিএডিসি নার্সারী থেকে ৬২০ টাকা দরে ভিয়েতনামের খাটো জাতের ৪৭টি চারা সংগ্রহ করে তার নিজ গ্রাম নওদা বহলবাড়ীয়ার বিলপাড়াতে ২ ভাইয়ের মোট সোয়া বিঘা জমিতে গড়ে তোলেন এই নারিকেল বাগান। এখন এই জমিতে নারিকেল গাছের সংখ্যা সর্বমোট ৮২টি। এর মধ্যে কিছু দেশি জাতের নারিকেল গাছও রয়েছে। এ বছরই প্রথম ৭টি ভিয়েতনামী জাতের নারিকেল গাছে নারিকেল ধরেছে, এরমধ্যে একটি গাছে সবচেয়ে বেশি ১৮টি নারিকেল ধরেছে। বাগানে অন্যান্য ফলজ গাছের চারাও রোপন করা হয়েছে। নারিকেল বাগানে নারিকেল গাছ ছাড়াও ৩টা মাল্টা, ১টা চায়না কমলা, ১টা মিষ্টি আমড়া, ১টা মিষ্টি কামরাঙ্গা, ১টি ত্বীন ফলের গাছ, ১১০টা লেবু গাছ সহ, কচু, পেঁপে, বেগুনসহ ২০০টা সুপারি গাছও রয়েছে।
মিরপুরের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা ময়নুল ইসলাম রাজীব জানান, আমাদের এই অঞ্চলের মধ্যে প্রথম ভিয়েতনামের খাটো জাতের নারিকেলের গাছ রোপণ করেছে মহিউদ্দিন ও মতিয়ার বিশ্বাস। ইতোমধ্যে গাছে নারিকেল ধরতে শুরু করেছে। আশা করি আর অল্প কিছুদিনের মধ্যে এগুলো বিক্রির উপযোগী হবে। এই বাগান দেখে অনেকে নতুন করে বাগান করতে শুরু করেছে।
বাগান মালিক হাজী মহিউদ্দিন বলেন, আমার বাগানে এই প্রথম দীর্ঘ ৫ বছর পরে নারিকেল ধরেছে। এই বাগানটিকে মাতৃবাগান হিসেবে স্বীকৃতি দিলে কম মূল্যে নারিকেল বীজ সরবরাহ করা সম্ভব হবে। এতে এই অঞ্চলের চাষিরা উপকৃত হবে। উচ্চ ফলনশীল এ জাতীয় নারিকেলের আবাদ বাড়ানোর মাধ্যমে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি করা সম্ভব হবে।
মিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ২০১৩ সালে ভিয়েতনাম থেকে খাটো জাতের নারিকেলের চারা দেশে আনা হয়। তিন বছরের মধ্যে ফল আসার কথা বলা হয়। কিন্তু গাছ লাগিয়ে বহু কৃষকের সর্বস্বান্ত হওয়ার গল্প উঠে আসে গণমাধ্যমে। ছয় বছরেও ফল না আসায় দেশের বিভিন্ন এলাকায় এ জাতের নারিকেল চাষ করে ক্ষতিগ্রস্ত হন অনেক কৃষক। তবে আমাদের মিরপুর উপজেলার বহলবাড়ীয়া ইউনিয়নের দুই চাষি মহিউদ্দিন ও মতিয়ার এ নারিকেল চাষ করে সফলতার মুখ দেখছেন। ৫ বছর পরে এই প্রথম তাদের বাগানের ৭টি গাছে নারিকেল ধরা শুরু করেছে।
উপজেলা কৃষি বিভাগ এ বাগানটিকে মাতৃবাগান হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার ব্যাপারে জন্য সার্বিক সহযোগিতা করা হবে বলে জানিয়েছেন।
ইতিহাস ঐতিহ্যে ঘেরা প্রাচীন জেলা পাবনা, এ জেলায় জন্ম নিয়েছেন বহুগণীজন, ব্রিটিশ শাসিত থেকে শুরু করে এ জেলায় রয়েছে শিক্ষাব্যবস্থার পাশাপাশি নানা জেলার নামকরা সব প্রতিষ্ঠান প্রায় দুই শতাব্দীর ইতিহাস বয়ে চলা পাবনা জেলা তার ১৯৭তম জন্মদিন উদযাপন করেছে।
১৮২৮ খ্রিষ্টাব্দে ১৬ অক্টোবর সরকারের ৩১২৪ স্মারকে জেলা হিসেবে পাবনা গঠিত হয়। কিছু ইতিহাসবিদের মতে, পাবনা নামটি পদুম্বা থেকে এসেছে। কালক্রমে পদুম্বা শব্দটির স্বরসঙ্গতি হয়ে পাবনা হয়েছে। পাবনা নামকরণ নিয়ে কারও মতে, পবন বা পাবনা নামে একজন দস্যুর আড্ডাস্থল থেকেই একসময় পাবনা নামের উদ্ভব হয়।
২৩৭১.৫০ বর্গকিমি আয়তন বিশিষ্ট পাবনা জেলায় ৯টি উপজেলা ও ৭৩টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। পাবনায় আদমশুমারি অনুযায়ী মোট জনসংখ্যা ২৯,০৯,৬২৪ জন। ইতিহাস ঐতিহ্য সংস্কৃতিতে পাবনা জেলার রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ অবদান। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন ভাষা সংগ্রাম আর সুমহান স্বাধীনতা সংগ্রামে এই জেলার মানুষদের বীরত্বপূর্ণ অবদান ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা আছে। বিশ্ব বরেণ্য কবি-সাহিত্যিক, রাজনীতিক সাংবাদিক, শিল্পোদ্যোক্তা, বরেণ্য ব্যক্তিত্ব, বিজ্ঞানী, অভিনেতা-অভিনেত্রী পাবনা তথা গোটা দেশকে বিশ্ব দরবারে স্বগৌরবে তুলে ধরেছে। ব্রিটিশ স্থাপত্যের টেকসই নিদর্শন দেশের একমাত্র বৃহত্তর হার্ডিঞ্জ ব্রিজ রেল সেতু, লালন শাহ সেতু ও দেশের একমাত্র পারমাণবিক প্লান্ট পাবনায় অবস্থিত। পাবনায় রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ সব দর্শনীয় স্থান। পাবনার হেমায়েতপুরে রয়েছে বাংলাদেশের একমাত্র মানসিক হাসপাতাল, সনাতন ধর্মালম্বীদের তীর্থস্থান শ্রী শ্রী অনুকূল ঠাকুরের জন্মভুমি। গত বৃহস্পতিবার পাবনা প্রেসক্লাব, পাবনার আয়োজনে প্রেসক্লাব মিলনায়তনের অডিটরিয়ামে অনুষ্ঠিত এ আয়োজনকে কেন্দ্র করে উপস্থিত ছিলেন জেলার বিশিষ্টজন, সাংবাদিক, সুধী সমাজ ও জনপ্রতিনিধিরা। সভাপতিত্ব করেন পাবনা প্রেসক্লাবের সভাপতি আখতারুজ্জামান আখতার। অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এবি ট্রাস্টের চেয়ারম্যান ও বিশিষ্ট শ্রমিক নেতা অ্যাড. শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস। এছাড়া অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক মো. মফিজুল ইসলাম, পুলিশ সুপার মো. গোলাম মর্তুজা, প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি প্রফেসর শিবজিৎ নাগ, এবিএম ফজলুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক জহুরুল ইসলামসহ প্রেসক্লাবের সকল সদস্য, স্থানীয় রাজনীতিবিদ, স্বেচ্ছাসেবী ও সুধিজনরা যোগ দেন।
বক্তারা তাদের আলোচনায় তুলে ধরেন পাবনা শহরের কাঠামোগত দুর্দশা, অবকাঠামোগত ঘাটতি ও নাগরিক সমস্যার নানা চিত্র। কীভাবে এই ঐতিহ্যবাহী শহরকে আধুনিকতার ছোঁয়ায় গড়ে তোলা যায়- সেই বিষয়ে করণীয় নিয়ে প্রাণবন্ত আলোচনা হয়। তারা আশা প্রকাশ করেন, জেলার ২০০তম জন্মদিনে একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ পাবনা উপহার দিতে পারলে সেটি হবে ইতিহাসের মাইলফলক।
অনুষ্ঠানের শেষে কেক কেটে ও মিষ্টি মুখের মাধ্যমে এক আনন্দঘন পরিবেশে জেলা প্রতিষ্ঠা দিবসের এই বিশেষ আয়োজন সম্পন্ন হয়।
আসন্ন ১৩তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে মত বিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার বিকেলে বাগেরহাট পুলিশ লাইন্সের ড্রিল শেডে বাগেরহাট জেলা পুলিশের আয়োজনে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত আইজিপি মো. আলী হোসেন ফকির। বাগেরহাট পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামানের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন খুলনা রেঞ্জ ডিআইজি মো. রেজাউল হক পিপিএম।
বাগেরহাট সিভিল সার্জন ডা. আ,স,ম মাহবুবুল আলম। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. মমিনুর রহমান। বাগেরহাট প্রেসক্লাব সভাপতি মো. কামরুজ্জামান ও সাধারণ সম্পাদক তরফদার রবিউল ইসলাম। বাস মালিক সমিতির নেতারাসহ বিভিন্ন দপ্তরের দপ্তর প্রধান ও পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের কর্মকর্তারা ও প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার প্রতিনিধিরা। সমাজের বিভিন্ন স্তরের সুধীজন, ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে অতিরিক্ত আইজিপি মো. আলী হোসেন ফকির আসন্ন ১৩তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, সাংবাদিকসহ সবাইকে একাত্ম হয়ে কাজ করার আহ্বান জানান।
বৃহত্তর ফরিদপুরের পাঁচটি জেলা নিয়ে অবিলম্বে ফরিদপুরকে বিভাগ বাস্তবায়নের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে ফরিদপুরে সর্বস্তরের মানুষ। সমাবেশে অনেককেই দাবি সংবলিত ফেস্টুন হাতে নিয়ে সমাবেশে যোগ দিতে দেখা যায়। এ সময় ‘দাবি মোদের একটাই-ফরিদপুর বিভাগ চাইসহ’ বিভিন্ন মুহুর্মুহু শ্লোগানে ঘটনাস্থল প্রকম্পিত হয়ে ওঠে সমাবেশস্থল। গত বৃহস্পতিবার ‘দ্রুততম সময়ের মধ্যে ফরিদপুর বিভাগের বাস্তবায়ন চাই’ দাবিতে ফরিদপুর প্রেসক্লাব চত্বর থেকে বিক্ষোভ সমাবেশ শুরু হয়ে মুজিব সড়ক ধরে শহরের জনতা ব্যাংকের মোড়, আলীপুরের মোড় হয়ে হাসিবুল হাসান লাবলু সড়ক, কবি জসীমউদ্দিন সড়ক দিয়ে সুপার মার্কেটের মোড় হয়ে পুনরায় ফরিদপুর প্রেসক্লাব চত্বরে ফিরে এক সমাবেশে বিভিন্ন দলের রাজনৈতিক নেতারা ও সুশীল সমাজের নেতারা বক্তব্য রাখেন।
এ সময় কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদের লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক জুলফিকার হোসেন। এছাড়া কেন্দ্রীয় মহিলা দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী নায়াব ইউসুফের লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান ফরিদপুর মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব গোলাম মোস্তফা।
বিক্ষোভ সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন, জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির ইমতিয়াজ উদ্দিন আহম্মেদ, বিএনপির সদস্য সচিব এ কে কিবরিয়া, জেলা খেলাফত মজলিশের সভাপতি আবু নাসের, জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর হোসেন, ইসলামী আন্দোলন ফরিদপুর জেলার সাবেক সভাপতি মো. ওয়াহিদুজ্জামান, জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক তানজিমুল হাসান, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি মোজাম্মল হক, নগরকান্দা উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান প্রমুখ।
এর আগে সকাল ১০টা থেকে শুরু হওয়া সর্বদলীয় বৈঠকে বক্তব্য দেন, ফরিদপুর সাহিত্য পরিষদের সভাপতি আলতাফ হোসেন। এ সময় তিনি বলেন, ফরিদপুর বিভাগ আমাদের ন্যায্য দাবি। আমাদের দিতেই হবে। তরুণ সমাজ জেগেছে, তারা এ দাবি আদায় করে ছাড়বে।
মৌলভীবাজারে জনগণের দোরগোড়ায় পুলিশি সেবা পৌঁছে দিতে অভিনব উদ্যোগ নিয়েছেন জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) এমকেএইচ জাহাঙ্গীর হোসেন। ‘আপনার এসপি’ নামে নতুন এই সেবায় জেলার ৭টি থানায় বসেই নাগরিকরা সরাসরি এসপির সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বলতে পারছেন। অভিযোগ জানাতে, পরামর্শ নিতে বা ন্যায়বিচার চাওয়ার জন্য এখন আর জেলা সদরে গিয়ে হয়রানির শিকার হতে হবে না সেবাগ্রহীতাদের।
জানা গেছে, প্রতিটি থানায় ‘আপনার এসপি’ নামে একটি করে ডেস্ক স্থাপন করা হয়েছে। সেখানে এসপির মনোনীত কনস্টেবল পদমর্যাদার একজন অপারেটর দায়িত্ব পালন করছেন। অফিস সময়ের মধ্যে এই ডেস্কে এসে যে কেউ সরাসরি ভিডিও কলে এসপির সঙ্গে কথা বলতে পারেন। প্রতিদিন জেলার বিভিন্ন থানায় গিয়ে প্রায় অর্ধশতাধিক মানুষ এই সেবা গ্রহণ করেছেন।
রুবিনা আক্তার নামে এক গৃহবধূ বলেন, আগে মনে হতো এসপির সঙ্গে দেখা করা মানে অনেক ঝামেলা। এখন থানায় গিয়ে সহজে কথা বলা যায়। আমি আমার পারিবারিক সমস্যার কথা জানিয়েছি, স্যার খুব সহানুভূতির সঙ্গে শুনেছেন।
এসপি এমকেএইচ জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, মানুষের দুর্ভোগ লাঘব ও দ্রুত সেবা পৌঁছে দিতেই এই উদ্যোগ। এখন গ্রামের সাধারণ মানুষও থানায় বসেই এসপির সঙ্গে কথা বলতে পারছেন- এটা পুলিশের প্রতি মানুষের আস্থা আরও বাড়াবে বলে আমি বিশ্বাস করি। সারাদেশের মধ্যে মৌলভীবাজারেই এটি প্রথম ধরনের উদ্যোগ।
ফেনীর ফাজিলপুরে উদ্বোধন হয়েছে আবুল বাশার চৌধুরী আশ্রয় কেন্দ্র। এলাকায় আশ্রয় কেন্দ্রটি উদ্বোধনের মাধ্যমে ঝড়, জলোচ্ছ্বাস বন্যায় মানুষের আশ্রয়ের সুব্যবস্থা হবে।
বৃহস্পতিবার রাতে ফেনী সদর উপজেলার ফাজিলপুরে জানবক্স ভূঁঞা বাড়ির সামনে প্রতিষ্ঠিত নুরুন নাহার-মনি দাতব্য ও চক্ষু হাসপাতাল সংলগ্ন ৩০০ শয্যাবিশিষ্ট এই আশ্রয় কেন্দ্রটি উদ্বোধন করেন ফেনী জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন আশ্রয় কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. এ বি এম হারুন ও ফেনীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (উন্নয়ন) রোমেন শর্মা, ফেনী প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি মুহাম্মদ আবু তাহের ভূঁইয়া। এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।
দেশের বিশিষ্ট চিকিৎসক, শমরিতা হাসপাতাল লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফেনীর সন্তান ডা. এ বি এম হারুন ২০০৬ সালে নিজ এলাকা ফাজিলপুরে প্রতিষ্ঠা করেন আবুল বাশার চৌধুরী জামে মসজিদ কমপ্লেক্সে। এই কমপ্লেক্সের আওতায় অনেক সেবামূলক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এরমধ্যে নুরুন নাহার-মনি দাতব্য ও চক্ষু হাসপাতাল। এখানে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দিয়ে প্রতি মাসে নিয়মিত বিনামূল্যে চোখের অস্ত্রোপচার, ওষুধপত্র ও ব্যবস্থাপত্র দেওয়া হয়।
এ হাসপাতালের পাশে চালু হয়েছে আবুল বাশার চৌধুরী হেফজখানা ও এতিমখানা। এ মাদ্রাসায় এলাকার ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের সন্তানরা কোরআনে হাফেজসহ দ্বীনি শিক্ষায় শিক্ষিত হচ্ছেন। এছাড়া তার পৃষ্ঠপোষকতায় এখানে গড়ে উঠেছে মসজিদ ও পাঠাগার।
ডা. এ বি এম হারুন ভবিষ্যতে নিজ গ্রামে বেকারত্ব দূরীকরণে ভোকেশনাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউট, নার্সিং ইনস্টিটিউট, কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রসহ বেশ কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা আলমগীর কবির জানান, বন্যা জলোচ্ছ্বাস বা বিভিন্ন সমস্যায় এলাকাবাসী এখন আর দূরে কোথাও যেতে হবে না। এখানে আশ্রয় গ্রহণ করতে পারবেন।
ব্যবসায়ী ও শিল্প উদ্যোক্তা এম মহিউদ্দিন বলেন, এলাকায় অনেক বিত্তবান ও ধর্ণাঢ্য মানুষ আছেন।
প্রত্যেকে যদি মানবতার সেবায় এগিয়ে আসেন তাহলে এলাকায় কোনো গরিব দুঃখী মানুষ থাকবে না। ডা. এ বি এম হারুন এর উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই এবং এটি একটি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত।
আবুল বাশার চৌধুরী আশ্রয় কেন্দ্র এর প্রতিষ্ঠাতা ডা. এ বি এম হারুন বলেন, ২০০০ সাল থেকে আমরা এখানে মানবিক ও দরিদ্র সহায়তা বহু কার্যক্রম চালু করেছি। এর মধ্যে নুরুন্নাহার মনি দাতব্য চিকিৎসালয় ও চক্ষু হাসপাতাল, আবুল বাশার চৌধুরী হাফিজিয়া মাদ্রাসা। আজ আমরা তিনশত শয্যা বিশিষ্ট আশ্রয় কেন্দ্র উদ্বোধন করেছি। ভবিষ্যতে আমরা এই আশ্রয় কেন্দ্রকে আরও সম্প্রসারণ করব। আমি এলাকায় আরও নতুন নতুন মানবিক প্রতিষ্ঠান চালু করব।
ফেনী জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম বলেন, ২০২৪ সালের বন্যা ফেনীর মানুষকে নতুন বার্তা দিয়েছে । ভয়াবহ এই বন্যা মোকাবিলায় ফেনীর সর্বস্তরের মানুষ এগিয়ে এসেছেন এবং দৃঢ়ভাবে বন্যা মোকাবেলা করেছেন। ফেনীর মানুষ সাহসী ও বিত্তবান। সবাই এগিয়ে আসলে ফেনীর মানুষ ভালো থাকবেন । অতীতের অভিজ্ঞতার আলোকে এবং ২০২৪ এর বন্যাকে বিবেচনায় রেখে তা মোকাবিলায় ১১টি আশ্রয় কেন্দ্র বাস্তবায়নের জন্য মন্ত্রণালয় প্রকল্প বাস্তব পাঠিয়েছি। সরকারের পাশাপাশি যদি ফেনীর বিত্তবানগণ এগিয়ে আসেন, তাহলে ফেনীবাসীর অনেক কল্যাণ সাধিত হবে।
চট্টগ্রাম রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ (সিইপিজেড) এলাকায় আগুন লাগা ‘অ্যাডামস ক্যাপ অ্যান্ড টেক্সটাইল লিমিটেড’ নামের পোশাক কারখানার ভবনটির অগ্নিনিরাপত্তা সনদ ছিল না। ভবনের আশপাশে যে ন্যূনতম খালি জায়গা রাখতে হয় তাও রাখা হয়নি। যে কারণে ভবনটির দুই পাশ দিয়ে আগুন নেভানোর সুযোগ ছিল না। এ কারণে আগুন নেভাতে বেগ পেতে হয়েছে ফায়ার সার্ভিসকে। শুক্রবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেনেন্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘অগ্নিনিরাপত্তা সনদ পেতে প্রতিষ্ঠানটি আবেদন করেছে কেবল। তবে নিয়ম অনুযায়ী এখনো পরিদর্শন করা হয়নি। তার আগেই দুর্ঘটনা ঘটেছে।’
এদিকে, ওই কারখানায় আগুন নিয়ন্ত্রণে এলেও বিকাল ৫টা পর্যন্ত পুরোপুরি আগুন নেভেনি। তখন পর্যন্ত কারখানার ভবনটির বিভিন্ন ফ্লোরে ধ্বংসস্তূপের ভেতর আগুন জ্বলছিল। সেখানে বের হতে দেখা গেছে কালো ধোঁয়া। ফায়ার সার্ভিসের ৬টি ইউনিট আগুন পুরোপুরি নির্বাপণে কাজ করে যাচ্ছে বলে জানান সিইপিজেডে ফায়ার সার্ভিসের দায়িত্বরত কর্মকর্তা মো. জাকির। আগ্রাবাদ বিভাগীয় ফায়ার সার্ভিস নিয়ন্ত্রণ কক্ষ সূত্র জানিয়েছে, দীর্ঘ সাড়ে ১৭ ঘণ্টা পর কারখানায় লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে। ফায়ার সার্ভিসের ২৫টি ইউনিটের চেষ্টায় শুক্রবার সকাল ৭টা ২৫ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। এর আগেরদিন গত বৃহস্পতিবার দুপুর ২টা ১০ মিনিটে কারখানাটিতে আগুন লাগে। তবে আগুন নিয়ন্ত্রণে এলেও এখনো পুরোপুরি নেভেনি। কয়েকটি ফ্লোরে ধ্বংসস্তূপের ভেতর এখনো আগুন জ্বলছে। বের হচ্ছে কালো ধোঁয়া। আগুন যাতে বাড়তে না পারে এজন্য পানি ছিটানো হচ্ছে। এ রিপোর্ট বিকালে লেখা পর্যন্ত ফায়ার সার্ভিসের ৬টি ইউনিট আগুন নির্বাপনের কাজ করছিল।
ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তা জাকির বলেন, ‘শুক্রবার সকাল ৭টা ২৫ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে কিছুটা। তবে পুরোপুরি নির্বাপণ করা যায়নি এখনো। তাৎক্ষণিকভাবে আগুন লাগার কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ সম্পর্কে বলা যাচ্ছে না। তদন্ত সাপেক্ষে জানা যাবে।’
তিনি বলেন, ‘ফায়ার সার্ভিসের ২৫টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করেছে। ফায়ার সার্ভিসকে সহায়তা করেছে সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনী, বিজিবি ও পুলিশ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে আগুন লাগা ভবনটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। এখনো ভবনটির ভেতর কিছু ফ্লোরে আগুন জ্বলছে। অথচ আগেরদিনও ওই ভবনে এক হাজারের বেশি লোক একসঙ্গে কাজ করেছে।
সিইপিজেড কর্তৃপক্ষের অতিরিক্ত নির্বাহী পরিচালক আশেক মুহাম্মদ শাহাদাৎ হোসেন বলেন, ‘অ্যাডামস ক্যাপ অ্যান্ড টেক্সটাইল লিমিটেড’ কারখানায় ১ হাজার ৫০ জন শ্রমিক নিয়োজিত ছিলেন। আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে ফায়ার অ্যালার্ম বেজে ওঠে এবং শ্রমিকরা ভবনটি থেকে নেমে যান। আগুন প্রথমে ওপরের তলায় লাগার কারণে শ্রমিকরা দ্রুত এবং নিরাপদে বের হতে পেরেছে। এতে কোনও হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, সিইপিজেডের ওই কারখানাটির সাত তলায় আগুন লাগে। আগুন পর্যায়ক্রমে নয় তলা ভবনের নিচতলা পর্যন্ত পুরোটাই ছড়িয়ে পড়ে। আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের ২৫টি ইউনিট কাজ করেছে। পাশাপাশি আগুন নেভাতে যুক্ত হয় নৌবাহিনী ও বিমান বাহিনীর ফায়ার ইউনিট। কাজ করেছে সেনাবাহিনী, বিজিবি ও পুলিশ।
গত বৃহস্পতিবার দুপুর ২টা ১০ মিনিটে সিইপিজেডের ১ নম্বর সেক্টরের ৫ নম্বর সড়কের ‘অ্যাডামস ক্যাপ অ্যান্ড টেক্সটাইল লিমিটেড’ নামে ওই কারখানায় এই আগুন লাগে।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক জসিম উদ্দিন বলেন, ‘আগুন লাগা প্রতিষ্ঠানটিতে তোয়ালেসহ হাসপাতালে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি তৈরি করা হয়। আগুন লাগার কারণ ও ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে বিস্তারিত পরে জানানো হবে। তবে এ ঘটনায় কেউ হতাহত হয়নি।’
ফায়ার সার্ভিসের বিভাগীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ সূত্র জানিয়েছে, আগুন নেভাতে কাজ করছে ফায়ার সার্ভিসের বন্দর, আগ্রাবাদ, ইপিজেড, কালুরঘাট ও চন্দনপুরা স্টেশনের ২৫ ইউনিট।
মা-ইলিশ রক্ষায় সরকার ঘোষিত নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার পদ্মা নদীতে যৌথবাহিনীর অভিযান পরিচালনা করে ২৫ লাখ বর্গমিটার অবৈধ নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল ও ১১ জেলেকে আটক এবং ৫ কেজি মা-ইলিশ জব্দ করেছে প্রশাসন।
বৃহস্পতিবার সকালে পদ্মা নদীর কলাবাগান ও অন্তার মোড় এলাকায় নৌপুলিশ ফরিদপুর অঞ্চলের পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ আল মামুনের নেতৃত্বে উপজেলা মৎস্য বিভাগ, দৌলতদিয়া নৌপুলিশ, কোস্ট গার্ডের যৌথ অভিযানে
২৫ লাখ বর্গমিটার কারেন্ট জাল, ১১ জন জেলে আটক ও ৫ কেজি মা-ইলিশ জব্দ করা হয়। পরে আটককৃত ১১ জন জেলেকে মৎস্য সুরক্ষা আইন ১৯৫০ খ্রি. সালের ৫ (২) (খ) ধারা মতে মিয়মিত মামলায় জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে এবং কারেন্ট জালগুলো আগুনে পুড়িয়ে ধ্বংস ও মাছগুলো এতিমখানা ও স্থানীয় অসহায়দের মাঝে বিতরণ করা হয়।
দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে নৌপুলিশ সুপার সাংবাদিকদের বলেন, সরকারের নির্দেশনা মতে গত ৪ অক্টোবর থেকে অভিযান শুরু হয়েছে আগামী ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত চলবে, মা-ইলিশ প্রজনন এই মৌসুমে সচেতনামূলক প্রোগ্রাম করা হয়েছে, যেন কোনো জেলেরা নদীতে মা-ইলিশ না ধরে, যেন মা-ইলিশ নদীতে ডিম ছাড়তে পারে, আমাদের নৌপুলিশের অভিযান নদীতে অব্যাহত রয়েছে। এখানে জেলা মৎস্য অফিসের সাথে আমাদের নৌপুলিশ, কোস্ট গার্ড, ম্যাজিস্ট্রেট যৌথভাবে অভিযান পরিচালনা করছে। ইতোমধ্যে দৌলতদিয়া নৌপুলিশ ফাঁড়ি থেকে চারটি মামলা রুজু হয়েছে, মোবাইল কোর্ট করা হয়েছে, ৬০ জনের মতো আসামিকে বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে, ২ কোটি ১০ লাখ বর্গমিটারের উপরে অবৈধ কারেন্ট জাল জব্দ করে আগুনে পুড়িয়ে ধ্বংস করা হয়েছে, ২৬০ কেজি ইলিশ মাছ জব্দ করে গরিব ও এতিমখানায় বিতরণ করা হয়েছে। শেষ সময় পর্যন্ত আমাদের এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।
অভিযানে উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা আনোয়ারুল ইসলাম পাইলট, দৌলতদিয়া নৌপুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ত্রিনাথ সাহা, এসআই মেহেদী হাসান অপূর্বসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।
স্বাস্থ্য, পরিবেশ ও ফসল রক্ষায় বরগুনার আমতলী উপজেলার কুকুয়া ইউনিয়নের রায়বালা গ্রামের বিবিসি ইটভাটা বন্ধের দাবিতে এলাকাবাসী মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছেন। বৃহস্পতিবার বিকেলে আঁকবাড়িয়া দাখিল মাদ্রাসাসংলগ্ন সড়কে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এতে এলাকার প্রায় পাঁচ শতাধিক মানুষ অংশগ্রহণ করেন।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, বিবিসি (বিসমিল্লাহ ব্রিকস) ইটভাটার কারণে এলাকার অন্তত পাঁচশত একর তিন ফসলি জমি, গাছপালা, জীববৈচিত্র্য, প্রাণিসম্পদ ও গ্রামীণ সড়ক মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ফলে প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ স্বাস্থ্যঝুঁকির মুখে পড়েছেন।
স্থানীয়রা জানান, ২০১৭ সালে আব্দুল হান্নান মৃধা ফসলি জমির ওপর বিবিসি ইটভাটি স্থাপন করেন। কৃষকরা অভিযোগ করেন, ইটভাটা নির্মাণের পর থেকে জমির উর্বরতা নষ্ট হয়ে গেছে, ফলে আগের মতো ফসল উৎপাদন হচ্ছে না। ওই ইটভাটার ৩০০ গজের মধ্যে রায়বালা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, এতিমখানা ও ইবতেদায়ী মাদ্রাসা রয়েছে। আইন অনুযায়ী, আবাসিক এলাকা, কৃষি জমি বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে এক কিলোমিটারের মধ্যে কোনো ইটভাটা স্থাপন করা যাবে না। কিন্তু আইন লঙ্ঘন করে সেখানে ইটভাটা চালু রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
স্থানীয় জাহাঙ্গির আলমের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন নাশির উদ্দিন, কবির গাজী, শাহীন প্যাদা ও খোকন হাওলাদার প্রমুখ। বক্তারা বলেন, ইটভাটার কারণে জমিতে আগের মতো ফলন হচ্ছে না, গাছে ফল ধরছে না এবং শিশুদের মধ্যে শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগ দেখা দিচ্ছে। তারা বরগুনা জেলা প্রশাসক, পরিবেশ অধিদপ্তর বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের কাছে দ্রুত ইটভাটা বন্ধের দাবি জানান। বৃহস্পতিবার সরেজমিনে দেখা যায়, তিন দিক ঘেরা ধান খেতের মধ্যে বিবিসি ইটভাটার কার্যক্রম চালু রয়েছে।
রায়বালা গ্রামের কৃষক কবির গাজী বলেন, ‘ইটভাটার কারণে আমাদের ফসলি জমি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আগের মতো ফসল ফলছে না। পরিবেশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
ফরিদপুর জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আফজাল হোসেন খান পলাশের আয়োজনে এক মতবিনিময় সভায় বক্তারা বলেছেন, আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফরিদপুর-৩ (সদর) আসনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে যিনি ধানের শীষ প্রতীক পাবেন, ঐক্যবদ্ধভাবে আমরা তাকেই জিতিয়ে নেওয়ার জন্য জানপ্রাণ দিয়ে কাজ করব। এই নির্বাচনে ফরিদপুর সদর আসনে এবার ধানের শীষ প্রতীক হেরে গেলে আমরা শুধু হারবই না, চিরতরে হারিয়ে যাব। তাই আমাদের অস্তিত্ব রক্ষার স্বার্থেই ধানের শীষকে সর্বশক্তি দিয়ে বিজয়ী করে আনতে হবে।
গত বুধবার রাতে শহরের হাবেলি গোপালপুরে আফজাল হোসেন খান পলাশের বাসভবন প্রাঙ্গণে রাষ্ট্র কাঠামো মেরামত ও সংস্কারের ৩১ দফা বাস্তবায়ন ও আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়।
সভায় রাজপথের অকুতোভয় দুঃসাহসী নেতা হিসেবে জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আফজাল হোসেন খান পলাশকে জেলা বিএনপির পরবর্তী সভাপতি দেখতে চান বলেও নেতা-কর্মীরা জোরালো বক্তব্য দেন। তারা বলেন, বিগত ফ্যাসিস্ট হাসিনাবিরোধী আন্দোলনের প্রতিটি কর্মসূচিতে আফজাল হোসেন খান পলাশের দৃঢ় ভূমিকা রেখেছেন।
সভায় সভাপতির বক্তব্যে জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আফজাল হোসেন খান পলাশ বলেন, আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আমাদের করণীয় কী হবে, আমরা কী করব সেই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে এই সভার আয়োজন। যারা আমার আহ্বানে সাড়া দিয়ে এখানে এসেছেন, সকলের প্রতিই কৃতজ্ঞ। তিনি বলেন, গত ১৭ বছর ফরিদপুরের রাজপথে কোনো আন্দোলন হয়েছে আর আমি আফজাল হোসেন খান পলাশ ছিলাম না তা কখনোই হয়নি। আমার বিরুদ্ধে ২৫টি মামলা দিয়েছে। তিনি বলেন, ওয়ান ইলেভেনের সময় জাতীয় পর্যায়ে মাইনাস টু ফর্মুলা বাস্তবায়ন চলছিল, তেমনি ফরিদপুরেও একটা চক্রান্ত হয়েছিল। ঐক্যবদ্ধভাবে সকল চক্রান্ত প্রতিহত করে বিএনপির ধানের শীষকে বিজয়ী করব।
ফরিদপুর জেলা যুবদলের সাবেক সহসভাপতি শামীম হোসেনের সঞ্চালনায় সভায় অন্যান্যের মধ্যে ফরিদপুর মহানগর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক এবি সিদ্দিকী মিতুল, যুগ্ম আহ্বায়ক সামসুল আরেফিন সাগর, জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার এমএ সালাম লাল, ফরিদপুর সুগার মিলের সাবেক চেয়ারম্যান সিদ্দিকুর রহমান, জেলা যুবদলের সাবেক দপ্তর সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুদ্দীন বিশ্বাস, জেলা শ্রমিক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সাত্তার জোয়ার্দার, জেলা যুবদলের সহসভাপতি কেএম জাফর, মোহসিনুল কবির রুবেল, টিটু খাঁন, শ্যামসুন্দরপুর নুরানী হাফিজিয়া মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা মুতাওয়াল্লী আলহাজ ফরিদ শেখ, বিএনপির প্রবীণ নেতা আলমগীর মাস্টার, মো. রেজাউল ইসলাম, আব্দুস সাত্তার খান, শাহীন হক, যুবদল নেতা জাহাঙ্গীর কবির, আলতাফ হোসেন, হাফিজুর রহমান রাজা, জিন্না মেম্বার, হায়দার হোসেনসহ অনুষ্ঠানে ৪৫ জন বক্তা বক্তব্য রাখেন।