নোয়াখালীতে বন্যার পানিতে ডুবে দুই বছর বয়সী এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। আজ রোববার (২৫ আগস্ট) সকালে সেনবাগ উপজেলার কেশারপাড় ইউনিয়নের বীরকোট পশ্চিমপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে।
মৃত শিশুটি মো. আব্দুর রহমান কেশারপাড় ইউনিয়নের বীরকোট পশ্চিমপাড়ার মো. গিয়াস উদ্দিনের ছেলে। কেশারপাড় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. আব্দুল হক বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
স্থানীয়দের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, ‘বন্যা দুর্গত ৮/১০টি পরিবার গিয়াস উদ্দিনের বাড়িতে আশ্রয় নেয়। সকালে আশ্রিতদের জন্য খাবার আনতে গিয়াস উদ্দিন বাড়ি থেকে বের হওয়ার কিছুক্ষণ পর তার ছেলে আবদুর রহমান ঘর থেকে বের হয়ে যায়। এসময় তার মা তাহমিনা ঘরের কাজে ব্যস্ত ছিলেন। একপর্যায়ে ছেলেকে দেখতে না পেয়ে খোঁজাখুঁজি শুরু করে বাড়ির লোকজন। প্রায় দুই ঘণ্টা পর বাড়ির পাশে আবদুর রহমানের মরদেহ বন্যার পানিতে ভাসমান অবস্থায় উদ্ধার করে স্থানীয়রা। গিয়াস উদ্দিন পরোপকারী মানুষ। তার সন্তানের মৃত্যুতে পরিবার ও এলাকাবাসী শোকাহত।’
আজ, ১৮ অক্টোবর ২০২৫, আনুমানিক দুপুর ২:১৫ মিনিটের সময় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো এলাকায় আকস্মিকভাবে আগুনের ঘটনা ঘটে।
ঘটনার পরপরই বিমানবন্দর ফায়ার সেকশন, বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর ফায়ার ইউনিট এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট সংস্থা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে সম্মিলিতভাবে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার কার্যক্রম শুরু করে।
বিমানবন্দরের সকল ফ্লাইট অপারেশন বর্তমানে স্বাভাবিক রয়েছে।
সকলকে নিরাপদ এবং সচেতন থাকার জন্য অনুরোধ জানানো হচ্ছে। কার্যক্রম শেষে বিস্তারিত রিপোর্ট প্রদান করা হবে।
চট্টগ্রামের আনোয়ারায় জুঁইদন্ডী ইউনিয়নে রাতে 'জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু' স্লোগান দেওয়ার ঘটনায় সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ ও সাবেক অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান সহ ৬৮ জনকে আসামি করে মামলা করেছে পুলিশ।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) রাত পৌনে ৯টার দিকে উপজেলার জুঁইদণ্ডী ইউনিয়নের চৌমুহনী বাজারে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের কিছু নেতাকর্মীসহ আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মীরা হাতে লাঠি, ইটপাটকেল, রড, দা, কিরিচ নিয়ে সরকারবিরোধী স্লোগান দেন। তারা বাজার এবং আশেপাশের এলাকা প্রদক্ষিণ করছিলেন।
পুলিশ খবর পেয়ে রাত ৯টা ৫ মিনিটে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে মিছিলে অংশগ্রহণকারীরা পালিয়ে যায়। পুলিশ আব্দুল কাদের, আব্দুল খালেক ও মো. আরিফ নামে তিনজনকে আটক করে। পাশাপাশি ২০টি কাঠের লাঠি, ১০টি আফলা ইটের খোয়া, ২টি দেশীয় তৈরি লোহার দা এবং ৮টি লোহার টুকরা জব্দ করা হয়।
এঘটনায় সন্ত্রাসীবিরোধী আইনে সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, সাবেক অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান, সাবেক ভূমিমন্ত্রীর ছোট ভাই আনিসুজ্জামান চৌধুরী রনি, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান কাজী মোজাম্মেল হক, সাবেক ভূমিমন্ত্রীর একান্ত সহকারী সচিব রিদুওয়ানুল করিম চৌধুরী সায়েম সহ ৬৮ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত ৬০/৭০ জনের নামে মামলা করেছে থানা পুলিশ।
বিষয়টি নিশ্চিত করে আনোয়ারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনির হোসেন বলেন, জুঁইদন্ডীতে 'জয় বাংলা' স্লোগান দিয়ে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্য ৬৮ জনের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা হয়েছে। গ্রেফতার ৩ জনকে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। অন্যান্যদের আটকের জন্য পুলিশের অভিযান অব্যাহত থাকবে।
জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলা পরিষদ চত্বরে গড়ে উঠেছে ‘পাখি কলোনি’। উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে পাখিদের জন্য গাছে গাছে বাঁধা হচ্ছে মাটির হাঁড়ি, আর শান বাঁধানো পুকুরে বসানো হয়েছে আড়ানী। উদ্দেশ্যে প্রকৃতির পরম সহচর এসব পাখির জন্য নিরাপদ আশ্রয় ও খাদ্যের নিশ্চয়তা তৈরি করা।
উপজেলা চত্বরে পাখির কলরবে দীর্ঘদিন পর যেন ফিরে পেয়েছে প্রকৃতির নিজস্ব ছন্দ, প্রাণ ফিরে পেয়েছে পরিবেশের হৃদস্পন্দন। এখন মাটির হাঁড়িতে বাসা বাঁধবে শালিক, দোয়েল, বাবুই, টুনটুনিসহ নানা প্রজাতির দেশীয় পাখি। পুকুরের নিস্তরঙ্গ জলে ভাসছে আড়ানী, ঝিকমিক করছে রোদে মাছের খেলা।
উপজেলা পরিষদে পাখি কলোনি দেখতে এসেছেন শাহিনুর ইসলাম। তিনি বলেন, পাখির কূজনে এখানের পরিবেশটাই যেন পাল্টে গেছে। পাখি কলোনি দেখে খুব ভালো লাগছে।
স্থানীয় পরিবেশ কর্মী এম রাসেল আহমেদ বলেন, যেখানে মানুষ পাখি তাড়ায়, সেখানে তাদের জন্য ঘর বানানো হচ্ছে। এটি শুধু পরিবেশ প্রকল্প নয়, এটি সহানুভূতির প্রতীক। পাখি বাঁচলে প্রকৃতি বাঁচবে, আর প্রকৃতি বাঁচলেই মানুষ টিকে থাকবে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. জাহিদুর রহমান বলেন, পাখি কৃষির নীরব সহযোগী। তারা মাঠের ক্ষতিকর পোকার শত্রু। এই উদ্যোগ কেবল পরিবেশ নয়, কৃষি ও জীববৈচিত্র্যের ভারসাম্য রক্ষাতেও ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।
ক্ষেতলাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আসিফ আল জিনাত বলেন, পাখি প্রকৃতির প্রাণ। আমরা এমন একটি পরিবেশ গড়ে তুলতে চাই যেখানে গাছ, মানুষ ও পাখি একসঙ্গে টিকে থাকবে। উপজেলা পরিষদ চত্বরে এই উদ্যোগ শুধু পাখিদের আশ্রয় নয়, এটি প্রকৃতি ও পরিবেশের প্রতি আমাদের নৈতিক দায়বদ্ধতা। মূলত পাখি কলোনির উদ্দেশ্য একটি মানবিক, প্রাণবন্ত ও সবুজ পৃথিবীর প্রত্যাশায় পাখির কূজনের মধ্যেই আমরা প্রকৃতির হাসি শুনতে চাই।
মৌলভীবাজারে জনগণের দোরগোড়ায় পুলিশি সেবা পৌঁছে দিতে অভিনব উদ্যোগ নিয়েছেন জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) এমকেএইচ জাহাঙ্গীর হোসেন। ‘আপনার এসপি’ নামে নতুন এই সেবায় জেলার ৭টি থানায় বসেই নাগরিকরা সরাসরি এসপির সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বলতে পারছেন। অভিযোগ জানাতে, পরামর্শ নিতে বা ন্যায়বিচার চাওয়ার জন্য এখন আর জেলা সদরে গিয়ে হয়রানির শিকার হতে হবে না সেবা গ্রহীতাদের।
জানা গেছে, প্রতিটি থানায় ‘আপনার এসপি’ নামে একটি করে ডেস্ক স্থাপন করা হয়েছে। সেখানে এসপির মনোনীত কনস্টেবল পদমর্যাদার একজন অপারেটর দায়িত্ব পালন করছেন। অফিস সময়ের মধ্যে এই ডেস্কে এসে যে কেউ সরাসরি ভিডিও কলে এসপির সঙ্গে কথা বলতে পারেন। প্রতিদিন জেলার বিভিন্ন থানায় গিয়ে প্রায় অর্ধশতাধিক মানুষ এই সেবা গ্রহণ করেছেন।
রুবিনা আক্তার নামে এক গৃহবধূ বলেন, আগে মনে হতো এসপির সঙ্গে দেখা করা মানে অনেক ঝামেলা। এখন থানায় গিয়ে সহজে কথা বলা যায়। আমি আমার পারিবারিক সমস্যার কথা জানিয়েছি, স্যার খুব সহানুভূতির সঙ্গে শুনেছেন।
কুলাউড়া প্রেসক্লাবের সভাপতি এম শাকিল রশীদ চৌধুরী বলেন, এসপি জাহাঙ্গীর হোসেনের এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। সাধারণ মানুষ সরাসরি পুলিশ সুপারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছে- এতে জবাবদিহিতা যেমন বাড়ছে, তেমনি পুলিশের ভাবমূর্তিও ইতিবাচক হচ্ছে।
মৌলভীবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট ড. মো. আব্দুল মতিন চৌধুরী বলেন, জনগণ যাতে ভয় ছাড়াই নিজের সমস্যা বলতে পারে- ‘আপনার এসপি’ ডেস্ক ঠিক সেই সুযোগ তৈরি করেছে। এতে বিচারপ্রাপ্তির পথ আরও সহজ হচ্ছে।
এসপি এমকেএইচ জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, মানুষের দুর্ভোগ লাঘব ও দ্রুত সেবা পৌঁছে দিতেই এই উদ্যোগ। এখন গ্রামের সাধারণ মানুষও থানায় বসেই এসপির সঙ্গে কথা বলতে পারছেন- এটা পুলিশের প্রতি মানুষের আস্থা আরও বাড়াবে বলে আমি বিশ্বাস করি। সারাদেশের মধ্যে মৌলভীবাজারেই এটি প্রথম ধরনের উদ্যোগ।
কুমিল্লা শহরের রেসকোর্স এলাকার নিজ বাসা থেকে মিলন আক্তার (৫৪) নামে এক নারীর রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) সন্ধ্যায় ফ্ল্যাটের খাটের নিচ থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
নিহত মিলন আক্তারের বাড়ি বুড়িচং উপজেলার নিমসার (শিকারপুর) গ্রামে। তিনি রেসকোর্স মজুমদার ভিলায় বসবাস করতেন।
জানা গেছে, প্রায় ১৫ বছর আগে মিলন আক্তারের বিবাহবিচ্ছেদ হয়। এরপর থেকে মায়ের সঙ্গে বাসায় থাকতেন তিনি। চার-পাঁচ দিন আগে তার মা নোয়াখালীতে চিকিৎসার জন্য যান। এই সময় তিনি একাই বাসায় ছিলেন। এদিকে মিলনের তিন মেয়ের একজন থাকেন ইউরোপে স্বামীর সঙ্গে, একজন বিবাহসূত্রে থাকেন নোয়াখালী। আর তানজিনা আক্তার নামের আরেক মেয়ে থাকেন রেসকোর্স এলাকার একটি ভাড়াবাসায়৷ বৃহস্পতিবার থেকে তানজিনা আক্তার কল দিয়ে তার মাকে না পাওয়ায় শুক্রবার সন্ধ্যায় তিনি এসে দরজা খুলে দেখেন মা নেই। পরে খাটের নিচে রক্ত দেখে তাকিয়ে দেখেন মায়ের মরদেহ। পরে খবর পেয়ে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে।
নিহতের ভাতিজা মো. মাসুদ বলেন, ‘গতকাল সকালে সাড়ে ৯টায় আমার সঙ্গে ফুফুর কথা হয়েছিল। আজ শুনি ফুফু মারা গেছে। খাটের নিচে ফুফুর মরদেহ কীভাবে গেলো? এটি নিশ্চয়ই হত্যাকাণ্ড। তা ছাড়া সেখানে একটি ছুরিও পাওয়া গেছে।’
কোতয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহিনুল ইসলাম জানান, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করেছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, এটি একটি হত্যাকাণ্ড। বিষয়টি তদন্ত করে বিস্তারিত বলা যাবে।
তিনি আরও জানান, মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
আমাগো কষ্ট দেহনের কেউ নাই। জীবনডা কষ্ট করেই পার করলাম। বেশ আক্ষেপ ও চাপা কষ্ট নিয়ে প্রায় বছর দুয়েক আগে কথাগুলো বলেছিলেন মাঝি সুজন শেখসহ মজলিশপুর চরাঞ্চলের মানুষ।
রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলার উজানচর ইউনিয়নের শেষ সীমনা ৯ নং ওয়ার্ডের প্রত্যন্ত দূর্গম চরাঞ্চল মজলিশপুর ও চরমহিদাপুর যাত্রী পারাপারে পদ্মার মাঝি সুজন শেখ, স্থানীয় বাসিন্দা শাজাহান শেখ, জহিরুল শেখসহ অনেকেই খুব কষ্ট নিয়ে কথাগুলো বলেছিলেন।
তারা বলেন, বছরের প্রায় ছয়মাস পানিতে ভরে থাকে মজলিশপুর ও চরমহিদাপুর গ্রামটি। সেখানকার বেশিরভাগ মানুষ কৃষি কাজের উপর নির্ভরশীল। তবে অনেকেই আবার নানান পেশার সাথে জড়িত। কেউ পদ্মার বুকে মাছ ধরে সংসার চালান। শহরের সাথে তেমন ভালো যোগাযোগের ব্যবস্থা নেই গ্রামটির। রাস্তা-ঘাটের বেহাল দশা। এ অঞ্চলের কৃষিপণ্য আনা-নেয়ার একমাত্র মাধ্যম ছিল ঘোড়ার গাড়ি। উপজেলা শহর থেকে প্রায় ৫-৭ কিলোমিটার চিপা রাস্তা দিয়েই যাতায়াত করতে হয় এলাকার প্রায় ৮-১০ হাজার মানুষের। শুকনা মৌসুমে ওই রাস্তায় কম-বেশি ভ্যান-রিক্সা চলাচল করলেও বর্ষা মৌসুমে চলাচল তো দূরের কথা ঘোড়ার গাড়ী চলাচলেও বড় মুশকিল হয়ে পরতো। সবচেয়ে বড় অসুবিধায় পরতে হয় বর্ষা মৌসুমে। তখন ওই চিপা রাস্তা দিয়ে খালি পায়ে হাঁটায় মুশকিল। শহরের সাথে একমাত্র যোগাযোগের জন্য যে রাস্তাটা রয়েছে সেখানে একটা জায়গায় প্রায় হাফ কিলোমিটার রাস্তা নিচু থাকায় বর্ষা মৌসুমে ওই রাস্তা দিয়ে পারাপারের একমাত্র মাধ্যম ছিল নৌকা। তবে এবার ব্রিজ নির্মাণ হওয়ায় কষ্ট লাঘব হয়েছে চরবাসীর।
এলাকার বেশ কয়েকজন লোকের সাথে কথা হলে তাদের মুখে তৃপ্তির হাসি নিয়ে বলেন, বছর দুয়েক আগেও বর্ষা মৌসুমে আমাদের অনেক কষ্ট করে নদী পার হওয়া লাগতো। প্রায় দেড় কিলোমিটার রাস্তা বছরের প্রায় অর্ধেক মাস পানিতে ভরে থাকে। ফসল আনা-নেওয়া করতে নৌকা ছাড়া কোন উপায় ছিলো না। এই হাফ কিলোমিটার জায়গায় চলাচলের জন্য সুন্দর একটি ব্রিজ নির্মাণ করেছে সরকার। আমরা এখন খুব খুশি।
সরেজমিনে দেখা যায়, মজলিশপুর ও চরমহিদাপুর গ্রামে প্রবেশ করতে হাফ কিলোমিটার রাস্তায় চওড়া একটা ব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে। ব্রিজ হওয়ায় এখন আর আগের মতো ভোগান্তি পোহাতে হয় না।
স্থানীয় চর দৌলতদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক জহিরুল ইসলাম বলেন, ফসল উৎপাদনের সম্ভাবনাময় চর এটি। এ চরে মৌসুমীভিত্তিক সব ধরনের ফসল খুব ভালোই উৎপাদন হয় কিন্তু যাতায়াতের ব্যবস্থা ভালো না থাকায় এখানকার কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ফসলের সঠিক দাম পেত না। এর আগে ব্রিজের জন্য বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হওয়ার পরে ব্রিজটি নির্মাণ করেন সরকার। এখন কোনো রকম ভোগান্তি ছাড়াই খুব সহজে এলাকার মানুষ চলাচল করতে পারছে।
উজানচর ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ড সদস্য শেখ রাসেল আহম্মেদ জানান, এ অঞ্চলের মানুষের নদীর সাথে যুদ্ধ করেই চলতে হয়। এখন চরাঞ্চলের মানুষ রিকশা, ভ্যান, অটো এমনকি বড় বড় যানবাহনে তাদের কৃষি পন্য খুব সহজেই আনা নেয়া করতে পারেন। তিনি আরও বলেন, ব্রিজটি নির্মাণ হওয়াতে স্বস্তির নিঃশ্বাস পেয়েছে চরবাসী।
মধুপুর গড়ের শাল বনের লাল মাটিতে ছিল হরেক জাতের বন আলু বুনো খাদ্যের বিশাল ভাণ্ডার। এ খাদ্যই ছিল এ জনপদের গারো সম্প্রদায়ের প্রিয় খাদ্যের অন্যতম উৎস। জীবন-জীবিকার অনন্য উপাদান। স্বাদ-পুষ্টিগুণের এ আলু তোলা তেমন আনন্দের তেমনি স্থানীয়দের কাছে ঐতিহ্যের একটা অংশ হিসেবেও মনে করে তারা। তবে সেই ঐতিহ্যে ভরা স্বাদ গুণেমানের এ আলুর আর সেদিন নেই। নানাভাবে নান কারণে প্রাকৃতিক বন ধ্বংস হওয়ায় বিলীন হচ্ছে অফুরন্ত এ খাদ্য ভাণ্ডার। অবশিষ্ট যে বন টিকে আছে, তাতেও আগের মতো নেই হরেক জাতের বন আলু। এমনটাই জানা গেছে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে।
জানা গেছে, ইতিহাস ঐতিহ্য খ্যাত মধুপুর শাল বন ছিল গভীর অরণ্যে ঘেরা। বনের চারপাশে ছিল গারো মান্দিদের বসবাস। গারো সম্প্রদায়ের খামালরা বনের নানা গাছগাছরা দিয়ে তাদের চিকিৎসা করত। স্থানীয় বসতিরাও ভেষজ চিকিৎসা নিত। অরণ্যচারী গারো সম্প্রদায়ের লোকের ভক্ষণ করত বাহারি বুনো খাবার। বনের বিশাল খাদ্য ভাণ্ডারে হতো তাদের বাড়তি অন্নের জোগান। খারি গপ্পার নানা উপকরণ আহরণ হতো বন থেকেই। পুষ্টিগুণে ভরা বন আলু ছিল তাদের খাদ্যের মধ্যে অন্যতম। গারোরা তাদের ভাষায় বন আলুকে ‘থামান্দি বা থাজং’ বলে থাকে। থামান্দি আচিক শব্দ। এর অর্থ বন আলু।
মধুপুরের গায়ড়া, পীরগাছা, ধরাটি, মমিনপুর, জলছত্র, গাছাবাড়ি, ভুটিয়া ও চুনিয়াসহ বিভিন্ন গারোপল্লীতে গিয়ে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, আবিমা অঞ্চলের গারোরা বন আলুকে তাদের গারো বা আচিক ভাষায় ‘থামান্দি বা থাজং’ বলে থাকে। তাদের মতে, গারো সম্প্রদায়ের লোকেরাই মধুপুর শালবনে প্রথম বন আলুর সন্ধান পান বলে জানা গেছে। প্রাকৃতিক শালবনের মধুপুর, ঘাটাইল, শেরপুর, নেত্রকোনা, হালুয়াঘাটে এ আলু পাওয়া যেত। লালমাটির শালবনে প্রাকৃতিকভাবে এসব আলু জন্মায়। এ আলু ছাড়াও বনের অভ্যন্তরে পাওয়া যেত বাহারি রকমের নাম জানা-অজানা অনেক ধরনের আলু। অরণ্যচারী গারোরা বনের চারপাশে বাস করার কারণে তারা এর সন্ধান পান। এক সময় জুম চাষের কারণে এসব আলুর সন্ধান পেতে সহজ হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। ওই সময় ছনের ছোট ঘর বা মাচাং তুলে তারা থাকার জায়গা করতেন। ছাউনিতে বনের ছন আর বনের তারাই বাঁশ কিংবা ছোট ছোট সরু আকারের ছোট গাছ দিয়ে সুন্দরভাবে বানাতেন ঘর। আগের দিনে খাবার সংকট হলেই ছুটে যেতেন বনে। আধাবেলা আলু সংগ্রহ করলেই পরিবারের অন্নের জোগান হতো কয়েক দিনের এমনটাই জানান তারা।
বন আলু সংগ্রহ যেন সংস্কৃতির একটা অংশ। মনের আনন্দে বা স্বাচ্ছন্দ্যে তারা তাদের দ্বিতীয় প্রধান বনোখাদ্য আলু সংগ্রহ করত। এসব আলু সিদ্ধ করে খেত। সুস্বাদু ও পুষ্টিগুণে ছিল ভরপুর। তাদের অন্যতম উৎসব ওয়ানগালায় সালজং দেবতা বা শস্য দেবতাকে উৎসর্গ করে থাকে বন আলু। কৃষ্টি-কালচার-ঐতিহ্যে বন আলুর জুড়ি ছিল না। অতিথি কিংবা আত্মীয়-স্বজন এলে আপ্যায়নের জন্য দেওয়া হতো বন আলু। এখনো বনে বিভিন্ন জাতের যত বন আলু সামান্য পাওয়া যায়।
বন এলাকার আদিবাসী গারোদের সঙ্গে কথা বলে আরও জানা যায়, এক সময় মধুপুরের এই বনে গাতি আলু, গারো আলু, পান আলু, গইজা আলু, দুধ আলু, শিমুল আলু, কাসাবা, ধারমচআলুসহ বিভিন্ন ধরনের বন আলু পাওয়া যেত। এসব আলু তাদের ঐতিহ্য সংস্কৃতি ও প্রিয় খাবারের তালিকায় অন্যতম।
অর্চনা নকরেক (৫০) বলেন, অনেকেই আবার স্থানীয়ভাবে বিক্রি করে অর্থ উপার্জন করত। এই আলু দূরের আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতেও পাঠানো হতো। বন আলুর বংশবিস্তারের জন্য আলু সংগ্রহের পর গাছগুলো আবার মাটিতে পুঁতে দিতেন আদিবাসীরা। আবার গাছ বেড়ে উঠত। শাল-গজারিসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছের সঙ্গে লতার মতো জড়িয়ে থাকত। এ আলু ফাল্গুন-চৈত্রমাসে সবচেয়ে বেশি সংগ্রহ করা হতো। রোদে শুকিয়ে ঘরে তুলে রাখা হতো। প্রাকৃতিক বন কমে যাওয়ায় এখন আর আগের মতো আলু পাওয়া যায় না।
বৃহত্তর ময়মনসিহ ডেভেলপমেন্ট কালচারাল ফোরামের সভাপতি অজয় এ মৃ বলেন, প্রাকৃতিক বন উজাড়ের ফলে বন আলু কমে গেছে। সামজিক বনায়ন ও অন্যান্য প্রকল্পের ফলে বন ও বনের ঝোঁপঝার উজাড় হওয়ায় বন আলু জীব বৈচিত্র্য পশুপাখিও কমে যাচ্ছে। আদিবাসী ছাড়া অন্য যারা আলু তোলে বিক্রি করে তারা আলু তোলার পর গাছ লাগিয়ে দেয় না। ফলে কমছে বন আলু। তিনি বলেন সামাজিক বনায়ন বন্ধ করে প্রাকৃতিক বন বাড়াতে হবে, আলু তোলার পর আবার গাছ লাগিয়ে দিতে হবে জনসচেতনতা বাড়ানোর কথা বলেন তিনি।
মানবিক ইউএনও মাখন চন্দ্র সূত্রধর। কখনও সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়নে মানুষকে সচেতন করছেন, কখনও ছুটে যাচ্ছেন হতদরিদ্র সাধারণ মানুষের কাছে। সকাল থেকে মধ্যরাত অবধি চার চারটি দপ্তরের কাজ করে যাচ্ছেন। তার প্রথম পরিচয় তিনি জনবান্ধব ও মানবিক। তিনি জনপ্রতিনিধি নন, তবে জনপ্রতিনিধির মতোই জনপ্রিয়। উপজেলা প্রশাসনের দায়িত্বের পাশাপাশি একাধারে উপজেলা পরিষদ ও পৌরসভার প্রশাসক এবং উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। কাজ পাগল মানুষ বলতে যা বোঝায় এ যেন ঠিক তাই! সকাল নয়টা থেকে শুরু করে কখনো রাত বারোটা পর্যন্ত দাপ্তরিক কাজ করা এটা যেন তার প্রতিদিনের রুটিন। দাপ্তরিক কাজের স্বার্থে কোনো কোনো দিন রাত বারোটার পরেও অফিস করতে দেখা যায়।
তিন দপ্তরের কাজের পাশাপাশিও তিনি উপজেলার বিভিন্ন হতদরিদ্র, প্রতিবন্ধী, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা, গরিব মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীর পাশে সহযোগিতার হাত বাড়ানো প্রতিদিনের রুটিনের একটা অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মাখন চন্দ্র সূত্রধর। ২০২৫ সালে দেশের পটপরিবর্তনের পর ৮ জানুয়ারি তিনি কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্বগ্রহণ করেন। সেসময়ে কমলগঞ্জ প্রশাসনিক ব্যবস্থাকে নিজ হাতে স্থিতিশীল অবস্থায় ফেরান। এতে অল্পদিনেই তিনি সফল হন। দলমত নির্বিশেষে সবার কাছে হয়ে ওঠেন জনপ্রিয় ও মানবিক একজন ব্যক্তি হিসেবে।
দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে কর্মদক্ষতা, মানবিকতা ও জনবান্ধব কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে তিনি সাধারণ মানুষের কাছের মানুষ ও একজন জনপ্রিয় প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই তিনি উন্নয়ন ও জনসেবাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে কাজ শুরু করেন। গত এক বছরে উপজেলা ও পৌরসভাজুড়ে কয়েক কোটির টাকার উন্নয়নমূলক কাজ সম্পাদন করেছেন।
জানা গেছে, মাখন চন্দ্র সূত্রধর এ উপজেলায় যোগদানের পর থেকে উপজেলায় অবৈধভাবে বালু মজুত রাখা, অবৈধভাবে বালু উত্তোলন, ইভটিজিং, মাদক, খাবার হোটেল, নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল, নিষিদ্ধ চায়না দুয়ার, অবৈধ বালু ব্যবসা বন্ধ করার জন্য তার রয়েছে বিশেষ নজরদারি। রাস্তাঘাট নির্মাণ, সরকার কর্তৃক বরাদ্দ দ্রুতাতার সাথে সেবাপ্রার্থীদের কাছে পৌঁছে দেওয়ায় উপজেলার জনগণের মনে ইউএনও মাখন চন্দ্র সূত্রদর এর প্রতি একটা আস্তা জমেছে।
স্থানীয়রা জানান, জলাবদ্ধতা দূরীকরণ, উপজেলার রাস্তাঘাট সংস্কার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো উন্নয়ন, মসজিদ, মন্দির ও মাদরাসায় সরকারি সহায়তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে তার ভূমিকা প্রশংসিত হয়েছে। পাশাপাশি বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে তিনি স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতাকে প্রাধান্য দিচ্ছেন। উপজেলা অফিসে সেবা নিতে আসা সাধারণ মানুষের অভিযোগ, পরামর্শ বা প্রয়োজনীয় দাবি দ্রুত সময়ে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। এতে একদিকে যেমন মানুষের ভোগান্তি কমেছে, অন্যদিকে বেড়েছে প্রশাসনের প্রতি আস্থা।
ইউএনও মাখন চন্দ্র সুত্রধর, জুলাই আগস্ট মাসের ভূমি ব্যবস্থাপনা পারফরম্যান্স এর উপরে জেলার শ্রেষ্ঠ এসিল্যান্ড। যোগদানের পর থেকে এখন পর্যন্ত ১৮টি মোবাইল কোর্টে প্রায় ১২ লক্ষ টাকার উপরে জরিমানা করা হয়েছে। যা সরকারের কোষাগারে জমা হয়।
ইউএনও মাখন চন্দ্র সূত্রধর বলেন, বর্তমান সরকারের উন্নয়নমূলক সেবা প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছে পৌঁছে দেওয়ায়ই আমার কাজ। আর এই চেষ্টা অব্যাহত আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে।
কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলার শেষাংশে মিরপুর উপজেলার বহলবাড়ীয়া ইউনিয়নের নওদা বহলবাড়ীয়ার বিলপাড়া গ্রামে ভিয়েতনামের খাটো জাতের নারিকেল চাষ করছেন মহিউদ্দিন বিশ্বাস। প্রায় ৫ বছর পূর্বে মহিউদ্দিন ভিয়েতনামের খাটো জাতের নারিকেল গাছের চারা রোপন করেছিলেন। বর্তমানে গাছগুলোতে ফল আসতে শুরু করেছে। নিজ জমিতে নিজ আবাদকৃত ফসলের কুড়িতে মহিউদ্দিনের চোখে মুখে খুশির ঝিলিক আর আনন্দের বন্যা দেখতে পাওয়া যায়। প্রায় সোয়া বিঘা জমির উপর আবাদকৃত মহিউদ্দিনের নারিকেল বাগানে ৮২টি ভিয়েতনামী নারিকেল গাছ সগৌরবে ফুল ফল আর শোভাবর্ধনের খোরাক হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। যা অত্যন্ত দৃষ্টিনন্দন। নিজ এলাকায় বিদেশি জাতের নারিকেল গাছ দখার অভিপ্রায়ে প্রতিদিনই দর্শনার্থীদের ভীড় বাড়ছে। তার এই বাগান দেখতে প্রতিদিন ভিড় করছেন দর্শনার্থীরা। সরেজমিনে গিয়ে ও তা প্রত্যক্ষ করা গেছে।
বাগান মালিক মহিউদ্দিন জানান, গাছ লাগানোর পরে তিনি খুব দুশ্চিন্তা ও হতাশাগ্রস্ত ছিলেন। কেননা ৫ বছরে সময় অতিক্রান্ত হলেও নারিকেল গাছে ফল ধরছে না তাছাড়া ও নানাজনে নানা কটু কথা বলতে থাকে। অবশেষে চলতি বছরের চলতি অক্টোবরের শুরুতে ৭টি গাছে নারিকেলের কুঁড়ি চোখে পড়ে। এখন তার মনে সাহস জন্মেছে। এখন তিনি বেজায় খুশি। যেখানে সারাদেশ থেকে অভিযোগ রয়েছে ভিয়েতনামী নারিকেল গাছ লাগিয়ে অনেক কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। কিন্তু কুষ্টিয়ার মহিউদ্দিন প্রমাণ করেছেন যথাযথ পরিচর্যা ও প্রয়োজনীয় উপাদানগুলো সঠিকভাবে প্রয়োগ করলে অবশ্যই সুফল পাওয়া যায়।
২০২০ সালের মাঝামাঝি সময়ে মহিউদ্দিন টেলিভিশনে প্রতিবেদন দেখে কুষ্টিয়া বিএডিসি নার্সারী থেকে ৬২০ টাকা দরে ভিয়েতনামের খাটো জাতের ৪৭টি চারা সংগ্রহ করে তার নিজ গ্রাম নওদা বহলবাড়ীয়ার বিলপাড়াতে ২ ভাইয়ের মোট সোয়া বিঘা জমিতে গড়ে তোলেন এই নারিকেল বাগান। এখন এই জমিতে নারিকেল গাছের সংখ্যা সর্বমোট ৮২টি। এর মধ্যে কিছু দেশি জাতের নারিকেল গাছও রয়েছে। এ বছরই প্রথম ৭টি ভিয়েতনামী জাতের নারিকেল গাছে নারিকেল ধরেছে, এরমধ্যে একটি গাছে সবচেয়ে বেশি ১৮টি নারিকেল ধরেছে। বাগানে অন্যান্য ফলজ গাছের চারাও রোপন করা হয়েছে। নারিকেল বাগানে নারিকেল গাছ ছাড়াও ৩টা মাল্টা, ১টা চায়না কমলা, ১টা মিষ্টি আমড়া, ১টা মিষ্টি কামরাঙ্গা, ১টি ত্বীন ফলের গাছ, ১১০টা লেবু গাছ সহ, কচু, পেঁপে, বেগুনসহ ২০০টা সুপারি গাছও রয়েছে।
মিরপুরের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা ময়নুল ইসলাম রাজীব জানান, আমাদের এই অঞ্চলের মধ্যে প্রথম ভিয়েতনামের খাটো জাতের নারিকেলের গাছ রোপণ করেছে মহিউদ্দিন ও মতিয়ার বিশ্বাস। ইতোমধ্যে গাছে নারিকেল ধরতে শুরু করেছে। আশা করি আর অল্প কিছুদিনের মধ্যে এগুলো বিক্রির উপযোগী হবে। এই বাগান দেখে অনেকে নতুন করে বাগান করতে শুরু করেছে।
বাগান মালিক হাজী মহিউদ্দিন বলেন, আমার বাগানে এই প্রথম দীর্ঘ ৫ বছর পরে নারিকেল ধরেছে। এই বাগানটিকে মাতৃবাগান হিসেবে স্বীকৃতি দিলে কম মূল্যে নারিকেল বীজ সরবরাহ করা সম্ভব হবে। এতে এই অঞ্চলের চাষিরা উপকৃত হবে। উচ্চ ফলনশীল এ জাতীয় নারিকেলের আবাদ বাড়ানোর মাধ্যমে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি করা সম্ভব হবে।
মিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ২০১৩ সালে ভিয়েতনাম থেকে খাটো জাতের নারিকেলের চারা দেশে আনা হয়। তিন বছরের মধ্যে ফল আসার কথা বলা হয়। কিন্তু গাছ লাগিয়ে বহু কৃষকের সর্বস্বান্ত হওয়ার গল্প উঠে আসে গণমাধ্যমে। ছয় বছরেও ফল না আসায় দেশের বিভিন্ন এলাকায় এ জাতের নারিকেল চাষ করে ক্ষতিগ্রস্ত হন অনেক কৃষক। তবে আমাদের মিরপুর উপজেলার বহলবাড়ীয়া ইউনিয়নের দুই চাষি মহিউদ্দিন ও মতিয়ার এ নারিকেল চাষ করে সফলতার মুখ দেখছেন। ৫ বছর পরে এই প্রথম তাদের বাগানের ৭টি গাছে নারিকেল ধরা শুরু করেছে।
উপজেলা কৃষি বিভাগ এ বাগানটিকে মাতৃবাগান হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার ব্যাপারে জন্য সার্বিক সহযোগিতা করা হবে বলে জানিয়েছেন।
ইতিহাস ঐতিহ্যে ঘেরা প্রাচীন জেলা পাবনা, এ জেলায় জন্ম নিয়েছেন বহুগণীজন, ব্রিটিশ শাসিত থেকে শুরু করে এ জেলায় রয়েছে শিক্ষাব্যবস্থার পাশাপাশি নানা জেলার নামকরা সব প্রতিষ্ঠান প্রায় দুই শতাব্দীর ইতিহাস বয়ে চলা পাবনা জেলা তার ১৯৭তম জন্মদিন উদযাপন করেছে।
১৮২৮ খ্রিষ্টাব্দে ১৬ অক্টোবর সরকারের ৩১২৪ স্মারকে জেলা হিসেবে পাবনা গঠিত হয়। কিছু ইতিহাসবিদের মতে, পাবনা নামটি পদুম্বা থেকে এসেছে। কালক্রমে পদুম্বা শব্দটির স্বরসঙ্গতি হয়ে পাবনা হয়েছে। পাবনা নামকরণ নিয়ে কারও মতে, পবন বা পাবনা নামে একজন দস্যুর আড্ডাস্থল থেকেই একসময় পাবনা নামের উদ্ভব হয়।
২৩৭১.৫০ বর্গকিমি আয়তন বিশিষ্ট পাবনা জেলায় ৯টি উপজেলা ও ৭৩টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। পাবনায় আদমশুমারি অনুযায়ী মোট জনসংখ্যা ২৯,০৯,৬২৪ জন। ইতিহাস ঐতিহ্য সংস্কৃতিতে পাবনা জেলার রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ অবদান। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন ভাষা সংগ্রাম আর সুমহান স্বাধীনতা সংগ্রামে এই জেলার মানুষদের বীরত্বপূর্ণ অবদান ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা আছে। বিশ্ব বরেণ্য কবি-সাহিত্যিক, রাজনীতিক সাংবাদিক, শিল্পোদ্যোক্তা, বরেণ্য ব্যক্তিত্ব, বিজ্ঞানী, অভিনেতা-অভিনেত্রী পাবনা তথা গোটা দেশকে বিশ্ব দরবারে স্বগৌরবে তুলে ধরেছে। ব্রিটিশ স্থাপত্যের টেকসই নিদর্শন দেশের একমাত্র বৃহত্তর হার্ডিঞ্জ ব্রিজ রেল সেতু, লালন শাহ সেতু ও দেশের একমাত্র পারমাণবিক প্লান্ট পাবনায় অবস্থিত। পাবনায় রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ সব দর্শনীয় স্থান। পাবনার হেমায়েতপুরে রয়েছে বাংলাদেশের একমাত্র মানসিক হাসপাতাল, সনাতন ধর্মালম্বীদের তীর্থস্থান শ্রী শ্রী অনুকূল ঠাকুরের জন্মভুমি। গত বৃহস্পতিবার পাবনা প্রেসক্লাব, পাবনার আয়োজনে প্রেসক্লাব মিলনায়তনের অডিটরিয়ামে অনুষ্ঠিত এ আয়োজনকে কেন্দ্র করে উপস্থিত ছিলেন জেলার বিশিষ্টজন, সাংবাদিক, সুধী সমাজ ও জনপ্রতিনিধিরা। সভাপতিত্ব করেন পাবনা প্রেসক্লাবের সভাপতি আখতারুজ্জামান আখতার। অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এবি ট্রাস্টের চেয়ারম্যান ও বিশিষ্ট শ্রমিক নেতা অ্যাড. শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস। এছাড়া অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক মো. মফিজুল ইসলাম, পুলিশ সুপার মো. গোলাম মর্তুজা, প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি প্রফেসর শিবজিৎ নাগ, এবিএম ফজলুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক জহুরুল ইসলামসহ প্রেসক্লাবের সকল সদস্য, স্থানীয় রাজনীতিবিদ, স্বেচ্ছাসেবী ও সুধিজনরা যোগ দেন।
বক্তারা তাদের আলোচনায় তুলে ধরেন পাবনা শহরের কাঠামোগত দুর্দশা, অবকাঠামোগত ঘাটতি ও নাগরিক সমস্যার নানা চিত্র। কীভাবে এই ঐতিহ্যবাহী শহরকে আধুনিকতার ছোঁয়ায় গড়ে তোলা যায়- সেই বিষয়ে করণীয় নিয়ে প্রাণবন্ত আলোচনা হয়। তারা আশা প্রকাশ করেন, জেলার ২০০তম জন্মদিনে একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ পাবনা উপহার দিতে পারলে সেটি হবে ইতিহাসের মাইলফলক।
অনুষ্ঠানের শেষে কেক কেটে ও মিষ্টি মুখের মাধ্যমে এক আনন্দঘন পরিবেশে জেলা প্রতিষ্ঠা দিবসের এই বিশেষ আয়োজন সম্পন্ন হয়।
আসন্ন ১৩তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে মত বিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার বিকেলে বাগেরহাট পুলিশ লাইন্সের ড্রিল শেডে বাগেরহাট জেলা পুলিশের আয়োজনে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত আইজিপি মো. আলী হোসেন ফকির। বাগেরহাট পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামানের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন খুলনা রেঞ্জ ডিআইজি মো. রেজাউল হক পিপিএম।
বাগেরহাট সিভিল সার্জন ডা. আ,স,ম মাহবুবুল আলম। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. মমিনুর রহমান। বাগেরহাট প্রেসক্লাব সভাপতি মো. কামরুজ্জামান ও সাধারণ সম্পাদক তরফদার রবিউল ইসলাম। বাস মালিক সমিতির নেতারাসহ বিভিন্ন দপ্তরের দপ্তর প্রধান ও পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের কর্মকর্তারা ও প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার প্রতিনিধিরা। সমাজের বিভিন্ন স্তরের সুধীজন, ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে অতিরিক্ত আইজিপি মো. আলী হোসেন ফকির আসন্ন ১৩তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, সাংবাদিকসহ সবাইকে একাত্ম হয়ে কাজ করার আহ্বান জানান।
বৃহত্তর ফরিদপুরের পাঁচটি জেলা নিয়ে অবিলম্বে ফরিদপুরকে বিভাগ বাস্তবায়নের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে ফরিদপুরে সর্বস্তরের মানুষ। সমাবেশে অনেককেই দাবি সংবলিত ফেস্টুন হাতে নিয়ে সমাবেশে যোগ দিতে দেখা যায়। এ সময় ‘দাবি মোদের একটাই-ফরিদপুর বিভাগ চাইসহ’ বিভিন্ন মুহুর্মুহু শ্লোগানে ঘটনাস্থল প্রকম্পিত হয়ে ওঠে সমাবেশস্থল। গত বৃহস্পতিবার ‘দ্রুততম সময়ের মধ্যে ফরিদপুর বিভাগের বাস্তবায়ন চাই’ দাবিতে ফরিদপুর প্রেসক্লাব চত্বর থেকে বিক্ষোভ সমাবেশ শুরু হয়ে মুজিব সড়ক ধরে শহরের জনতা ব্যাংকের মোড়, আলীপুরের মোড় হয়ে হাসিবুল হাসান লাবলু সড়ক, কবি জসীমউদ্দিন সড়ক দিয়ে সুপার মার্কেটের মোড় হয়ে পুনরায় ফরিদপুর প্রেসক্লাব চত্বরে ফিরে এক সমাবেশে বিভিন্ন দলের রাজনৈতিক নেতারা ও সুশীল সমাজের নেতারা বক্তব্য রাখেন।
এ সময় কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদের লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক জুলফিকার হোসেন। এছাড়া কেন্দ্রীয় মহিলা দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী নায়াব ইউসুফের লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান ফরিদপুর মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব গোলাম মোস্তফা।
বিক্ষোভ সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন, জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির ইমতিয়াজ উদ্দিন আহম্মেদ, বিএনপির সদস্য সচিব এ কে কিবরিয়া, জেলা খেলাফত মজলিশের সভাপতি আবু নাসের, জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর হোসেন, ইসলামী আন্দোলন ফরিদপুর জেলার সাবেক সভাপতি মো. ওয়াহিদুজ্জামান, জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক তানজিমুল হাসান, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি মোজাম্মল হক, নগরকান্দা উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান প্রমুখ।
এর আগে সকাল ১০টা থেকে শুরু হওয়া সর্বদলীয় বৈঠকে বক্তব্য দেন, ফরিদপুর সাহিত্য পরিষদের সভাপতি আলতাফ হোসেন। এ সময় তিনি বলেন, ফরিদপুর বিভাগ আমাদের ন্যায্য দাবি। আমাদের দিতেই হবে। তরুণ সমাজ জেগেছে, তারা এ দাবি আদায় করে ছাড়বে।
মৌলভীবাজারে জনগণের দোরগোড়ায় পুলিশি সেবা পৌঁছে দিতে অভিনব উদ্যোগ নিয়েছেন জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) এমকেএইচ জাহাঙ্গীর হোসেন। ‘আপনার এসপি’ নামে নতুন এই সেবায় জেলার ৭টি থানায় বসেই নাগরিকরা সরাসরি এসপির সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বলতে পারছেন। অভিযোগ জানাতে, পরামর্শ নিতে বা ন্যায়বিচার চাওয়ার জন্য এখন আর জেলা সদরে গিয়ে হয়রানির শিকার হতে হবে না সেবাগ্রহীতাদের।
জানা গেছে, প্রতিটি থানায় ‘আপনার এসপি’ নামে একটি করে ডেস্ক স্থাপন করা হয়েছে। সেখানে এসপির মনোনীত কনস্টেবল পদমর্যাদার একজন অপারেটর দায়িত্ব পালন করছেন। অফিস সময়ের মধ্যে এই ডেস্কে এসে যে কেউ সরাসরি ভিডিও কলে এসপির সঙ্গে কথা বলতে পারেন। প্রতিদিন জেলার বিভিন্ন থানায় গিয়ে প্রায় অর্ধশতাধিক মানুষ এই সেবা গ্রহণ করেছেন।
রুবিনা আক্তার নামে এক গৃহবধূ বলেন, আগে মনে হতো এসপির সঙ্গে দেখা করা মানে অনেক ঝামেলা। এখন থানায় গিয়ে সহজে কথা বলা যায়। আমি আমার পারিবারিক সমস্যার কথা জানিয়েছি, স্যার খুব সহানুভূতির সঙ্গে শুনেছেন।
এসপি এমকেএইচ জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, মানুষের দুর্ভোগ লাঘব ও দ্রুত সেবা পৌঁছে দিতেই এই উদ্যোগ। এখন গ্রামের সাধারণ মানুষও থানায় বসেই এসপির সঙ্গে কথা বলতে পারছেন- এটা পুলিশের প্রতি মানুষের আস্থা আরও বাড়াবে বলে আমি বিশ্বাস করি। সারাদেশের মধ্যে মৌলভীবাজারেই এটি প্রথম ধরনের উদ্যোগ।