পাবনার কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকায় দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে দু’জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। আজ বুধবার সকালে বাস টার্মিনালের হালিম হোটেলের সামনে এ ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন, পাবনা শহরের পূর্ব শালগাড়িয়ার মুজাহিদ ক্লাবের বাংলা বিড়ির গলির আরমান শেখের ছেলে মিলন হোসেন মধু (৪৫) ও পূর্ব রাঘবপুর এলাকার নুর আলীর ছেলে মঞ্জু প্রামাণিক (৪৪)।
নিহতদের স্বজন ও স্থানীয়রা জানান, সকালে বাস টার্মিনালের ভেতর স্থানীয় মাদক ব্যবসায়ীর সঙ্গে নিহত ব্যক্তিদের কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায় তাদের ছুরিকাঘাত করলে সামনের একটি খাবার হোটেলে এসে তারা পড়ে যায়। এ সময় আশপাশের লোকজন তাদের গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।
জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাসুদ আলম জানান, দুটি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের জন্য পাবনা জেনারেল হাসপাতালের মর্গে আপাতত রাখা হয়েছে। তাদের একজন শ্রমিক অপরজন পরিবহনের চাঁদা তুলতেন।
তিনি আরও বলেন, ঠিক কি কারণে এ ঘটনা ঘটছে আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি তারপরে বিস্তারিত বলা যাবে।
ঘনকুয়াশার কারণে ঢাকা-টাঙ্গাইল-যমুনা সেতু মহাসড়কে হেড লাইট জ্বালিয়ে চলছে যানবাহন। সরেজমিনে বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) ভোর থেকে বেলা সাড়ে ১১ টা পর্যন্ত মহাসড়কের যমুনা সেতু পূর্ব ইব্রাহীবাদ রেলস্টেশন, এলেঙ্গা বাসস্ট্যান্ড ও রাবনা বাইপাস এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়।
নাদের পরিবহনের চালক সুমন মিয়া বলেন- ঢাকা থেকে দিনাজপুরের উদ্দেশে যাত্রা করছেন। ভোর থেকে স্বাভাবিকের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি কুয়াশা পড়েছে। যার কারণে গাড়ি চালাতে ব্যাপক সমস্যা হচ্ছে। অতিরিক্ত ঘনকুয়াশার কারণে সামনে কী আছে তা সহজে বোঝাও যাচ্ছে না।
সিলেট থাকা আসা পাবনাগামী ট্রাক চালক আব্দুল মোমেন বলেন- ঘনকুয়াশার কারণে কিছু বোঝা যায় না। কম গতিতে গাড়ি চালানো হচ্ছে। এছাড়া এলেঙ্গা থেকে যমুনা সেতু পূর্ব পর্যন্ত সড়কের কাজ শেষ না হওয়ায় কুয়াশার কারণে দুর্ঘটনার শঙ্কাটা বেশি থাকে। এর কারণে হেডলাইট জ্বালিয়ে গাড়ি চালাচ্ছি।
যমুনা সেতু পূর্ব থানার ওসি খন্দকার ফুয়াদ রুহানি বলেন- অতিরিক্ত ঘনকুয়াশা থাকলেও স্বাভাবিক মতোই যানবাহন চলাচল করছে। এছাড়া মহাসড়কে দুর্ঘটনারোধে সার্বক্ষণিক পুলিশ কাজ করছে।
এদিকে, সারাদেশের ন্যায় টাঙ্গাইলেও গত কয়েকদিন ধরে অতিরিক্ত ঘনকুয়াশা পড়েছে। টাঙ্গাইল আবহাওয়া অধিদপ্তরের উচ্চ পর্যবেক্ষক জামাল উদ্দিন বলেন, বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) টাঙ্গাইলে সর্বনিম্ন ১৩ দশমিক শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপামাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।
কেশবপুর উপজেলা কৃষি অফিসের প্রযুক্তিগত সার্বিক সহযোগিতায় উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় চাষি জমিতে তুলা চাষে নতুন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। লাভজনক এই ফসল চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে উপজেলা তুলা উন্নয়ন বোর্ড ও কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের কর্মকর্তারা দফায় দফায় মাঠপর্যায়ে প্রান্তিক কৃষকদের সঙ্গে মতবিনিময় ও উঠান-বৈঠক করছেন।
গত কয়েক বছর ধরে কৃষি অফিসের নিরবচ্ছিন্ন প্রচেষ্টায় উপজেলার কৃষকদের মধ্যে তুলা চাষের আগ্রহ বাড়ছে। কম খরচে অধিক ফলন ও লাভের সম্ভাবনায় দিনে দিনে তুলার দিকে ঝুঁকছেন প্রান্তিক চাষিরা।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, প্রাথমিকভাবে তুলা চাষের জন্য উপজেলার তিনটি ইউনিয়ন নির্বাচন করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ৬নং কেশবপুর সদর, ১নং ত্রিমোহিনী ও ১০নং সাতবাড়িয়া ইউনিয়ন। এসব এলাকায় হাইব্রিড ওয়াড গোল্ড-১/২, এইচএস-৪ ও সিবি হাইব্রিড-১ জাতের তুলা চাষ করা হচ্ছে। বিশেষ করে সাতবাড়িয়া ও ত্রিমোহিনী ইউনিয়নে তুলার আবাদ সবচেয়ে বেশি হয়েছে। এর বাইরে অন্যান্য ইউনিয়নেও ছড়িয়ে ছিটিয়ে তুলা চাষ শুরু হয়েছে।
চাষিরা জানান, ৪২ শতক বা ১ বিঘা জমিতে তুলা চাষ করতে খরচ হয় প্রায় ১৫ থেকে ১৬ হাজার টাকা। বিপরীতে প্রতি বিঘা জমিতে গড়ে ১৮ থেকে ২৪ মণ পর্যন্ত তুলা পাওয়া যায়। বর্তমানে প্রতি মণ তুলার বাজারমূল্য ৩ হাজার ৮০০ থেকে ৪ হাজার টাকা। ফলে এক বিঘা জমিতে খরচ বাদ দিয়ে কৃষকরা প্রায় ৫০ থেকে ৫৫ হাজার টাকা পর্যন্ত লাভবান হচ্ছেন।
উপজেলা কৃষি অফিসার আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, কেশবপুরে তুলার আবাদ সম্প্রসারণে আমরা নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছি। তুলা একটি লাভজনক ফসল হওয়ায় চাষিদের বেশি বেশি তুলা আবাদে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। আমরা আশানুরূপ ফলাফলও পাচ্ছি। গত বছর যেখানে ২২ হেক্টর জমিতে তুলার আবাদ হয়েছিল, চলতি মৌসুমে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৮ হেক্টরে। এবার আমাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২২ হেক্টর, যা ইতোমধ্যে অতিক্রম করেছে।
কৃষি কর্মকর্তাদের মতে, এই ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই কেশবপুর উপজেলায় তুলা একটি সম্ভাবনাময় অর্থকরী ফসল হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান তৈরি করবে। এতে একদিকে কৃষকদের আয় বাড়বে, অন্যদিকে স্থানীয় পর্যায়ে তুলার উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়ে দেশের অর্থনীতিতেও ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।
প্রাকৃতিক জলাশয়ের স্বাভাবিক প্রবাহ ব্যাহত হওয়ায় এবং নির্বিচারে মাছ নিধনের ফলে ক্রমেই সংকটাপন্ন হয়ে উঠছে দেশি মাছ। এই দেশি মাছের প্রভাব বেশি পড়েছে পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার ঐতিহ্যবাহী শুঁটকি চাতাল শিল্পে। অতীতে এক সময় বর্ষা শেষে যে শুঁটকি চাতালগুলো কর্ম চাঞ্চল্যে মুখর থাকত, সেইখানে এখন নীরবতা। দেশি মাছের আকালে বন্ধ হয়ে গেছে অধিকাংশ শুঁটকি চাতাল।
স্থানীয়দের মতে, নদী, খাল-বিল ও ঝিলের স্বাভাবিক চলন নষ্ট হওয়ায় জলাশয়ে পানি ধারণক্ষমতা অনেক কমে গেছে। মানুষের পরিকল্পনায় অপরিকল্পিত বাঁধ, সড়ক ও বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণের ফলে নদী, খাল ও বিলগুলো বর্ষা মৌসুমেও পুরোপুরি বন্যার পানিতে ভরে উঠে না। এরপর প্রকৃত পরিবেশ নষ্ট করা চায়না দুয়ারি, বাদাই ও কারেন্ট জাল সহ নিষিদ্ধ বিভিন্ন জাল দিয়ে নির্বিচারে মাছ শিকার। এতে মা মাছের পাশাপাশি রেণু ও পোনা মাছও ধ্বংস হচ্ছে, ফলে প্রাকৃতিকভাবে মাছের বংশ বিস্তাার মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
মৎস্য সংশ্লিষ্টরা জানান, ভাঙ্গুড়ার মুক্ত জলাশয় ও চলনবিল এলাকায় এক সময় মাগুর, চাপিলা, শিং, পাবদা, টাকি, চিতল, রিটা, গুজি, আইড়, কৈ, বোয়াল, খৈলসা, দেশি সরপুঁটি, শোল, গজার, বাইম, টাটকিনি, তিতপুঁটি, বাঘাইড়, গুলশা, কাজলি, গাং চেলা, টেংরা, মলা, কালো বাউশ সহ অন্তত ৪০-৪৫ প্রজাতির দেশি মাছ পাওয়া যেতো। বর্তমানে এসব মাছ বিলুপ্তির পথে।দেশের বিভিন্ন হাট- বাজার ঘুরে চাষের মাছ ছাড়া দেশি মাছ প্রায় বিলুপ্তির পথে।
নদী ও বিল পাড়ের বাসিন্দা ইমরান, সোহেল হোসেন,বিখ্যাত চলনবিলের মধ্যে অবস্থিত মাগুড়া গ্রামের আমরুল ইসলাম ও ফরিদুল ইসলাম সরদারসহ অনেক এর সাথে কথা হয়। তারা জানান, একসময় বর্ষা মৌসুমে বিখ্যাত চলনবিল সহ ভাঙ্গুড়ার ছোট-বড় সব বিল পানিতে থৈ থৈ করতো। তখন উঁচু জমিতে ফসল আবাদ হত এবং নদী ও খাল-বিলে চলত মাছ শিকার। সেই মাছ দিয়েই সচল থাকত দেশিও শুঁটকি চাতালগুলো। ভাঙ্গুড়া উপজেলার শুঁটকি এক সময় দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশের অন্তত ২০-২২টি দেশে রপ্তানি হতো। কিন্তু জলাশয়ে পানি কমে যাওয়া এবং দেশি মাছ কমে যাওয়ায় এখন সেই রপ্তানি কার্যক্রমেও ভাটা পড়েছে।
সম্প্রতি সরেজমিনে ভাঙ্গুড়া উপজেলা ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ শুঁটকি চাতাল বন্ধ। একটি খোলা আছে, সেটাতেও উৎপাদন খুবই সীমিত। ফলে চাতালগুলো হারাচ্ছে তাদের পুরনো আমেজ। শুঁটকি উৎপাদন কমে যাওয়ায় আয় হারাচ্ছেন শ্রমিক ও ব্যবসায়ীরা।
শুঁটকি চাতালেন শ্রমিক মর্জিনা খাতুন বলেন, ‘আগে চাতালে কাজের অভাব ছিল না। প্রতিদিন ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা আয় হত। এখন মাছ না থাকায় অধিকাংশ দিন কাজই থাকে না। সংসার চালানো কষ্ট হয়ে গেছে।’
শুঁটকি ব্যবসায়ী আনছার আলী জানান, আগে নিয়মিতভাবে মাছ পাওয়া গেলেও এ মৌসুমে অনেকেই টানা দুই সপ্তাহেও মাছ পাননি। অনেক ব্যবসায়ী বাধ্য হয়ে চাতাল পুরোপুরি বন্ধ রেখেছেন। তাদের অভিযোগ,বিখ্যাত চলনবিল এলাকায় অপরিকল্পিত পুকুর খনন, অবৈধ জাল স্থাপন এবং অবাধ মাছ শিকার পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।
ভাঙ্গুড়া উপজেলার কলকতির শুঁটকি চাতালের মালিক মো. দুলাল হোসেন বলেন, দিলপাশার, মাগুড়া, চক লক্ষীকোল, পুইবিল, আদাবাড়িয়া, বাশবাড়িয়া ও দত্তখারুয়া বিলে একসময় প্রচুর দেশি মাছ পাওয়া যেত। এখন চায়না দুয়ারি জাল দিয়ে মা মাছ সহ সব ধ্বংস করা হচ্ছে। এতে দেশি মাছের উৎপাদন ও প্রজনন মারাত্মকভাবে কমে গেছে। শুঁটকি উৎপাদন ধরে রাখা অনেক কঠিন হয়ে পড়েছে।’
এ বিষয়ে ভাঙ্গুড়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আলী আজম বলেন, ‘চায়না দুয়ারিসহ বিভিন্ন নিষিদ্ধ জালে নির্বিচারে মাছ নিধন এবং বৃষ্টি কম হওয়ায় জলাশয়ে পানি ও মাছ দুটোই কমেছে। অন্যান্য বছর যেখানে তিনটি শুঁটকি চাতাল ছিল, সেখানে এবার রয়েছে মাত্র একটি। গত বছর ১৩ টন শুঁটকি উৎপাদন হলেও এ বছর ৫ থেকে ৭ টন উৎপাদন করাও কঠিন।
তিনি আরও বলেন, দেশি ও বিদেশি বাজারে শুঁটকির চাহিদা থাকলেও জলাশয়ে পর্যাপ্ত মাছ না থাকলে এই শিল্প টিকিয়ে রাখা প্রায় অসম্ভব। এজন্য নিষিদ্ধ জাল ব্যবহার বন্ধ, জলাশয়ের স্বাভাবিক প্রবাহ ফিরিয়ে আনা এবং মৎস্যজীবীদের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে নিয়মিত অভিযান ও আইন প্রয়োগ কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
২০২৫ সাল বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের ইতিহাসে এক গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। পরিবেশবান্ধব ও টেকসই উৎপাদনের পথে অগ্রযাত্রায় এ বছর শিল্পটি একটি ঐতিহাসিক মাইলফলক স্পর্শ করেছে—একই বছরে রেকর্ডসংখ্যক ৩৮টি নতুন LEED-প্রত্যয়িত (Leadership in Energy and Environmental Design) সবুজ কারখানা যুক্ত হয়ে। এর আগে কখনোই বাংলাদেশের কোনো শিল্পখাত, বিশেষ করে তৈরি পোশাক শিল্প, এক বছরে এত বিপুল সংখ্যক আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন সবুজ স্বীকৃতি অর্জন করতে পারেনি।
শিল্প সংশ্লিষ্টদের মতে, এই সাফল্য কেবল একটি পরিসংখ্যানগত অর্জন নয়; বরং এটি বৈশ্বিক পোশাক সরবরাহ শৃঙ্খলে পরিবেশগত দায়িত্ব, জ্বালানি দক্ষতা এবং টেকসই উৎপাদনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবিসংবাদিত নেতৃত্বের প্রতিফলন। ধারাবাহিক এই অগ্রগতির ফলে ২০২৫ সালের শেষে এসে বাংলাদেশে মোট সবুজ কারখানার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৭০-এ—যা বিশ্বের যেকোনো দেশের তুলনায় সর্বোচ্চ।
এই প্রতিবেদনটি বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পে সবুজ রূপান্তরের এই ব্যতিক্রমী যাত্রা, এর প্রভাব ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা বিশ্লেষণ করে তুলে ধরছে।
বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) পোশাক কারখানার মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
ইউএস গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিলের (ইউএসজিবিসি) এনার্জি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট ডিজাইন (লিড) গ্রিন ফ্যাক্টরি বা সবুজ কারখানার সার্টিফিকেশন দিয়ে থাকে। ইউএস গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিলের (ইউএসজিবিসি) তথ্যমতে, দেশে এখন সবুজ কারখানা ২৭০টি। এর মধ্যে গোল্ড ক্যাটাগরির ১৩৭, প্লাটিনাম ১১৪, সিলভার ১৫ ও সার্টিফাইড ক্যাটাগরির ৪ টি। এছাড়া, ৫৫০টির বেশি কারখানা গ্রিন ফ্যাক্টরি হতে রেজিস্ট্রেশন বা পাইপলাইনে রয়েছে।
তথ্যে বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২০২৫ সালে সবুজ কারখানার তালিকায় অন্তর্ভূক্ত হয়েছে দেশের সর্বোচ্চ সংখ্যক ৩৮টি কারখানা। এর আগে ২০২৪ সালে ২৬টি, ২০২৩ সালে ২৪টি, ২০২২ সালে ৩০টি, ২০২১ সালে ২৪টি, ২০২০ সালে ২৩টি ও ২০১৯ সালে ২৮টি ফ্যাক্টরি সবুজ কারখানার তালিকায় অন্তর্ভূক্ত হয়েছে।
এদিকে, শীর্ষ ১০০টি পোশাক কারখানার মধ্যে বাংলাদেশেই রয়েছে ৬৮টি। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পাকিস্তানে রয়েছে ৭টি ও তৃতীয় অবস্থানে থাকা ইন্দোনেশিয়ায় রয়েছে ৬টি।
জানা গেছে, গত বছর ২০০ সবুজ কারখানার মাইলফলক অর্জন করে বাংলাদেশ। এর মধ্য দিয়ে দেশের পোশাক খাতও নতুন মাইলফলক স্পর্শ করে। ফের বাংলাদেশ এ খাতে নতুন মাইলফলক স্পর্শ করলো। এর মধ্যে দিয়ে পরিবেশবান্ধব পোশাক উৎপাদনে বিশ্ব নেতৃত্ব আরও সুদৃঢ় করেছে বাংলাদেশ।
বিজিএমইএ’র সাবেক পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, সবুজ কারখানায় বাংলাদেশ বরাবরই ওপরে রয়েছে। পোশাক মালিকদের দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ, বিজিএমইএ’র কৌশলগত নেতৃত্ব ও শিল্পখাতের সম্মিলিত উদ্যোগেই এই অর্জন সম্ভব হয়েছে।
তিনি বলেন, বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে পরিবেশবান্ধব উৎপাদনের চাহিদা বাড়ছে। ক্রেতা ও ভোক্তারা কম কার্বন নিঃসরণ, পানি সাশ্রয় ও জ্বালানি দক্ষতার ওপর জোর দিচ্ছেন। বিষয়টি মাথায় রেখে বাংলাদেশের পোশাক কারখানাগুলো কার্বন দক্ষতা, পানি ব্যবস্থাপনা ও জলবায়ু সহনশীল অবকাঠামোতে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে। লিড সার্টিফিকেশন এখন শুধু পরিবেশ সুরক্ষার বিষয় নয়, বরং বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশল।
তিনি আরও বলেন,এই অর্জন প্রমাণ করে যে বাংলাদেশের পোশাক খাত ভবিষ্যতে ইউরোপীয় ইউনিয়েনের পরিবেশ আইন, কার্বন মূল্য নির্ধারণ ও ডিজিটাল স্বচ্ছতা ব্যবস্থার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। ২০২৫ সালের এই রেকর্ড বিশ্বকে স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে—বাংলাদেশ শুধু পোশাক রপ্তানিতে শীর্ষে নয়, বরং সবুজ ও ভবিষ্যৎমুখী শিল্পায়নেও নেতৃত্ব দিচ্ছে।
শীতে উত্তরবঙ্গের অন্যান্য জেলার মতো লালমনিরহাটেও কৃষিকাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। কৃষিপ্রধান জেলার পাঁচটি উপজেলায় শীতকালীন সবজি ও আগাম আলুর মোটামুটি ভালো ফলন হয়েছে। অনুকূল আবহাওয়ায় ইতোমধ্যে হাট-বাজারে নতুন আলু উঠতে শুরু করলেও তুলনামূলক কম দামে বিক্রি হওয়ায় কৃষকরা প্রত্যাশিত লাভ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
সরেজমিনে জেলার বিভিন্ন কাঁচা শাক-সবজির আড়ত ঘুরে দেখা গেছে, আগাম নতুন ক্যারেজ জাতের আলু পাইকারি বাজারে পাঁচ কেজির পালা ৮৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা কেজিপ্রতি ১৭ টাকা। হাগড়াই (বগুড়াই) জাতের আলু পাঁচ কেজির পালা ১৩০ টাকায়, অর্থাৎ কেজিপ্রতি ২৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে, গত মৌসুমের পুরোনো লাল আলু আড়তে বস্তাপ্রতি ২৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতিটি বস্তায় প্রায় ৬০ কেজি থাকায় কেজিপ্রতি দাম দাঁড়াচ্ছে প্রায় ৫ টাকা।
খুচরা বাজারে শহরের গোশালা বাজার, পুরোনো বাসস্ট্যান্ড এলাকা, হাড়িভাঙ্গা, সদর উপজেলার বড়বাড়ী, মহেন্দ্রনগর ও বুড়ির বাজারে আগাম ক্যারেজ জাতের আলু কেজিপ্রতি ২০ থেকে ২২ টাকা এবং হাগড়াই (বগুড়াই) জাতের আলু ৩০ থেকে ৩২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি, গত মৌসুমের পুরোনো লাল আলু কেজিপ্রতি ৮ থেকে ১০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে।
জেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে আগাম নতুন আলুর দাম কমে যাওয়ায় কৃষকদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। আদিতমারীর উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের কৃষক ইব্রাহিম হোসেন বাসসকে জানান, গত বছরের তুলনায় চলতি মৌসুমে নতুন আলুর পাইকারি দাম কেজিপ্রতি ৪৫ থেকে ৫০ টাকা থেকে নেমে ১৭ থেকে ২৬ টাকায় দাঁড়িয়েছে।
কালীগঞ্জ উপজেলার তুষভান্ডার ইউনিয়নের কৃষক রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ন্যায্য দাম না পেলে কৃষকদের জীবনযাপন মারাত্মকভাবে সংকটে পড়বে।’
আলুর দাম কমে যাওয়ার কারণ সম্পর্কে জেলা সদরের বড়বাড়ী কাঁচামাল আড়তের পাইকার মজিদুল মিয়া বাসসকে বলেন, ‘বাজারে পুরোনো আলুর সরবরাহ বেশি থাকায় নতুন আলুর চাহিদা কমে গেছে।’
একই আড়তের আরেক পাইকার হক সাহেব জানান, কৃষক ও পাইকারদের মধ্যে কার্যকর বাজার সংযোগ ও তথ্যের ঘাটতিও দামের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, লালমনিরহাটে আগাম নতুন আলু চাষ হয়েছে প্রায় ৬৫ হেক্টর জমিতে। চলতি মৌসুমে জেলায় আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬ হাজার ৫০০ হেক্টর জমি এবং উৎপাদন লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৬৩ হাজার ১৫০ মেট্রিক টন।
কৃষি বিভাগের তথ্যানুযায়ী, ২২ ডিসেম্বর পর্যন্ত আগাম আলু বাদে ৬ হাজার ৮১০ হেক্টর জমিতে আলু চাষ সম্পন্ন হয়েছে, যা নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩১০ হেক্টর বেশি। আগামী কয়েকদিনে আরও কিছু জমিতে আলুর চাষ বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
উপজেলাভিত্তিক হিসাবে জেলা সদর উপজেলায় ৪ হাজার ১০ হেক্টর, আদিতমারীতে ৮৮০ হেক্টর, কালীগঞ্জে ৯৯০ হেক্টর, হাতীবান্ধায় ৬৮০ হেক্টর এবং পাটগ্রামে ২৫০ হেক্টর জমিতে আলু চাষ সম্পন্ন হয়েছে।
আদিতমারী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. ওমর ফারুক বাসসকে বলেন, ‘অনুকূল আবহাওয়া থাকলে চলতি মৌসুমে আলুর উৎপাদন প্রত্যাশার চেয়েও বেশি হতে পারে।’
জেলা সদরের উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা খন্দকার সোহায়েল আহমেদ জানান, হিমাগারে সংরক্ষিত পুরোনো আলু বাজারে থাকায় নতুন আলুর দাম চাপের মুখে রয়েছে।
এদিকে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. মো. সাইখুল আরিফিন আশা প্রকাশ করে বলেন, ‘আবহাওয়া সহায়ক থাকলে ভালো ফলনের পাশাপাশি কৃষকরা ন্যায্য দামে আলু বিক্রি করতে পারবেন।’
সূত্র : বাসস
বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর কল্যাণমূলক উদ্যোগ ‘সঞ্জীবন প্রকল্প’ বিষয়ক দিনব্যাপী কর্মশালা বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) অনুষ্ঠিত হয়েছে। বাংলাদেশ আনসার ও ভিডিপি একাডেমির বীর বিক্রম শহীদ এলাহী অডিটোরিয়ামে আয়োজিত এ কর্মশালাটি বাংলাদেশ আনসার ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের আওতায় পরিচালিত হয়। কর্মশালার উদ্বোধনী পর্বে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন আনসার ও ভিডিপি’র মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবদুল মোতালেব সাজ্জাদ মাহমুদ। তিনি ‘সঞ্জীবন প্রকল্প’-এর উদ্দেশ্য, বাস্তবায়ন কাঠামো এবং এর মাধ্যমে সদস্যদের আর্থসামাজিক উন্নয়নের সম্ভাবনা তুলে ধরেন।
মহাপরিচালক তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘সঞ্জীবন প্রকল্প আনসার ও ভিডিপি সদস্যদের মধ্য থেকে দক্ষ, কর্মঠ ও উদ্যোক্তা হতে আগ্রহী ব্যক্তিদের নির্বাচন করে টেকসই কর্মসংস্থান সৃষ্টির একটি সময়োপযোগী প্রয়াস। সুবিধাবঞ্চিত সদস্যদের স্বাবলম্বী করে তুলতেই এই প্রকল্পের পাইলটিং কার্যক্রম দেশের ১২টি জেলার ১২টি উপজেলায় বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’ তিনি প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সকলকে কাজের পরিধি, লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও অর্জনের সূচক সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
মহাপরিচালক উল্লেখ করেন, ‘সঞ্জীবন প্রকল্প’-এর অগ্রযাত্রায় পরিকল্পনা প্রণয়ন থেকে শুরু করে উপকারভোগী নির্বাচন পর্যন্ত প্রতিটি বিষয় সুসংগঠিত ও সুনির্দিষ্ট। সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত করে তা মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় কৌশল ও সমাধান কাঠামো ইতোমধ্যে নির্ধারণ করা হয়েছে, যা প্রকল্পটির দীর্ঘমেয়াদি সাফল্য নিশ্চিত করবে বলে তিনি আশাবাদ প্রকাশ করেন।
কর্মশালায় প্রকল্পভিত্তিক পৃথক সেশন পরিচালনা করেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। সঞ্জীবন প্রকল্পের প্রস্তাবনা দাখিল প্রক্রিয়া, সদস্য নির্বাচন কৌশল বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ সেশন পরিচালনা করেন উপমহাপরিচালক ( প্রশিক্ষণ) জনাব মোঃ রফিকুল ইসলাম। প্রকল্পের নন-এগ্রোবেজড কার্যক্রম নিয়ে বিস্তারিত বক্তব্য রাখেন ২৭ আনসার ব্যাটালিয়নের পরিচালক রুবেল উকিল। তিনি নন-এগ্রোবেজড উদ্যোগের সম্ভাবনা, বাস্তবায়ন পদ্ধতি এবং সদস্যদের দক্ষতা অনুযায়ী প্রকল্প নির্বাচন বিষয়ে দিকনির্দেশনা প্রদান করেন।
কর্মশালার একটি গুরুত্বপূর্ণ মোটিভেশনাল সেশন পরিচালনা করেন বাংলাদেশের অন্যতম উদ্যোক্তা এবং ‘নিজের বলার মতো একটি গল্প ফাউন্ডেশন’-এর প্রতিষ্ঠাতা জনাব ইকবাল বাহার জাহিদ। তাঁর অনুপ্রেরণামূলক বক্তব্য অংশগ্রহণকারীদের উদ্যোক্তা মনোভাব গড়ে তুলতে সহায়ক ভূমিকা রাখে এবং বাস্তব অভিজ্ঞতার আলোকে সফল উদ্যোগ পরিচালনার পথনির্দেশনা প্রদান করে।
প্রায় ১৭ বছরের দীর্ঘ প্রবাসজীবন শেষে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকে ঘিরে কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে বইছে আবেগের জোয়ার। এ ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী হতে উপজেলা থেকে অন্তত দুই হাজার নেতাকর্মী ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়েছেন।
দৌলতপুর উপজেলা বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের উদ্যোগে অর্ধশত বাস, মাইক্রোবাস, হাইস ও প্রাইভেট কারে নেতাকর্মীরা রাজধানীর পথে যাত্রা করেন।
মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকেই ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা শুরু হয়। আজ বুধবার সকালেও একাধিক বহর রওনা হয়েছে, আবার কেউ কেউ সন্ধ্যায় যাত্রা করবেন। অনেকে ট্রেন ও নিজস্ব ব্যবস্থায় ঢাকায় যাচ্ছেন। দীর্ঘদিনের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে প্রিয় নেতার দেশে ফেরাকে কেন্দ্র করে নেতাকর্মীদের চোখেমুখে উচ্ছ্বাস ও আবেগ স্পষ্ট। অনেকেই একে আন্দোলন-সংগ্রামের নতুন অধ্যায়ের সূচনা হিসেবে দেখছেন।
উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মাসুদুজ্জামান রুবেল বলেন,
“১৭ বছর পর আমাদের নেতা দেশে ফিরছেন—এই অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। দৌলতপুর থেকে পাঁচটি বাস ও অন্তত ৩০টি যানবাহনে নেতাকর্মীরা ঢাকায় যাচ্ছেন। সবার ভেতরেই এক অন্যরকম আবেগ কাজ করছে।”
দৌলতপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি, সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপির মনোনীত প্রার্থী রেজা আহমেদ বাচ্চু বলেন,
“তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন বিএনপি নেতাকর্মীদের জন্য শুধু রাজনৈতিক নয়, আবেগেরও একটি বিষয়। এটি গণতন্ত্রকামী মানুষের জন্য আশার বার্তা।”
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকার সাধারণ মানুষের জন্য বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা ও প্রয়োজনীয় ওষুধ বিতরণ করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।
বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) কমলগঞ্জ উপজেলার ধলাই বাজার এলাকায় শ্রীমঙ্গল ব্যাটালিয়ন (৪৬ বিজিবি)-এর উদ্যোগে একটি ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প অনুষ্ঠিত হয়। সীমান্ত অঞ্চলের জনগণের আর্থ-সামাজিক জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে আয়োজিত এ মেডিকেল ক্যাম্পের উদ্বোধন করেন ৪৬ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এস এম জাকারিয়া।
মেডিকেল ক্যাম্পে মোট ৫১০ জন রোগীকে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়। একই সঙ্গে রোগীদের প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহ করা হয়। এ সময় দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসকরা বিভিন্ন জটিল রোগ সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করেন এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা ও সুস্থ জীবনধারা বজায় রাখার বিষয়ে পরামর্শ দেন।
শ্রীমঙ্গল ব্যাটালিয়ন (৪৬ বিজিবি) কর্তৃপক্ষ জানায়, সীমান্ত এলাকার মানুষের কল্যাণে এ ধরনের মানবিক ও জনসেবামূলক কার্যক্রম নিয়মিতভাবে পরিচালিত হচ্ছে এবং ভবিষ্যতেও তা অব্যাহত থাকবে।
ঠাকুরগাঁওয়ে শরীফ ওসমান হাদী হত্যায় জড়িতদের গ্রেফতার ও বিচার এবং সংবাদমাধ্যম ও সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের উপর সন্ত্রাসী হামলা ভাঙচুর ও অগ্নীসংযোগের প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) বিকাল তিনটার দিকে শহর চৌরাস্তায় ঠাকুরগাঁও নাগরিক বৃন্দের ব্যানারে এ বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে, রাজনীতিক ছাত্র-শ্রমিক, জনতা, কৃষক মজুর, শিক্ষক, সাংস্কৃতিক ও মানবাধিকার কর্মী সহ সকল শ্রেণিপেশার মানুষ অংশগ্রহণ করেন।
ঘন্টাব্যাপী বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, তেল গ্যাস খণিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির ঠাকুরগাঁও শাখার সদস্য সচিব মাহাবুব আলম রুবেল, সংবাদকর্মী, মজিবর রহমান খাঁন, শিক্ষক ফজলে ইমাম বুলবুল, সাংস্কৃতিক কর্মী এস এম জসিমউদ্দীন, সাংবাদিক তানভীর হাসান তানু, মানবাধিকার কর্মী নূর আফতাব রুপম, তরুণ সাংবাদিক সোহেল রানা, জয় মোহন্ত অলক, ছাত্র ফারহান সাদাত জাহেদি প্রমুখ।
এ সময় বক্তারা ওসমান হাদী হত্যায় জড়িতদের গ্রেফতার ও বিচার দাবি করেন এবং সারা দেশে যারা নৈরাজ্য ও ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর চেষ্টা করছে, যারা দিপু দাসদের আগুনে পুড়িয়ে মারছে, পিটিয়ে মারছে তাদের প্রতি নিন্দা জানিয়ে অপরাধীদের বিচারের মুখোমুখি করার দাবি করেন। সেই সাথে উগ্রবাদ যেন বাংলাদেশে কায়েম না হয় সে জন্য বাংলাদেশী সকল মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিবাদ জানানোর আহ্বান আসে মানববন্ধন থেকে। বক্তারা আরও বলেন, যারা বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবিদের টার্গেট করে হত্যা করতে চাইবে এবং বাংলাদেশকে পিছিয়ে দিতে মব সৃষ্টি করবে তাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
নড়াইলের নবগঙ্গা নদীর ওপর সেতুর নির্মাণ ব্যয় ছিল মাত্র ৬৫ কোটি টাকা। নকশা জটিলতার কারণে নির্দ্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ না হওয়ায় ব্যয় বেড়ে দাড়িয়েছে ১৩৬ কোটি টাকায়। দেড় বছরে সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা। সেই কাজ ৮ বছরেও শেষ হয়নি। এতে জন দুর্ভোগের কারণে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন পথচারীসহ নদী পাড়ের মানুষ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নড়াইল জেলা শহরের সঙ্গে কালিয়া উপজেলাসহ পাশের ৩ টি জেলার সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজতর করতে কালিয়া উপজেলার নবগঙ্গা নদীর ওপর বারইপাড়া সেতু নির্মাণ কাজ ২০১৮ সালে শুরু হয়। ৬৫১ দশমিক ৮৩ মিটার দীর্ঘ ও ১০ দশমিক ২৫ মিটার প্রস্থ্যের সেতু নির্মাণে প্রাক্কলিত মূল্য ধরা হয় ৬৫ কোটি টাকা। মেসার্স জামিল ইকবাল অ্যান্ড মঈনুদ্দীনবাসি কনস্ট্রাকশন ফার্ম সেতু নির্মাণে চুক্তিবদ্ধ হয়।
নির্মাণ কাজ ধীর গতির পাশাপাশি বাল্কহেডের ধাক্কায় সেতুর ৯ নাম্বার পিলারটি ২ বার ভেঙে নদীতে বিলীণ হয়। এক পর্যায়ে সেতুর মুল অংশের ৪টি পায়ার ও তিনটি স্প্যান বসানোর কাজ অসম্পূর্ণ রেখে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে নির্মাণ কাজের ব্যয় হিসেবে ৬১ কোটি টাকা প্রদান করে চুক্তি শেষ করে। দফায় দফায় কাজের মেয়াদ বৃদ্ধি আর সেতুর নকশা জটিলতার কোপানলে পড়ে নির্মাণ ব্যয় বেড়ে দাড়ায় ১৩৫ কোটি ৯২ লাখ ৪৬ হাজার টাকায়।
দ্বিতীয় মেয়াদে কংক্রিট অ্যান্ড স্টিল টেকনোলজিস্ট লিমিটেড ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সেতুর বাকি অংশ নির্মাণে চুক্তিবদ্ধ হয়।
নদী পাড়ের বাসিন্দা হেনরী বলেন, বছরের পর বছর চলছে সেতুর নির্মাণ কাজ। শেষ কবে হবে জানা নেই। তিনি বলেন, আগে এক ঠিকাদার কাজ করে গেছে। এখন দেখছি আরেক ঠিকাদারকে। কাজের কাজ কিছু না, এখানে চলছে শুধু ঠিকাদার বদলের কাজ। তিনি বলেন, শুনছি এখন এই সেতু নির্মাণ করতে প্রায় ৩ গুন টাকা বেশি লাগছে। মনে হয় অফিসের লোকজন আর ঠিকদারের কারসাজিতে এমনটি হচ্ছে।
কালিয়া বাজারের ব্যবসায়ী শমসের আলী বলেন, জেলা শহর থেকে মালামাল এনে ব্যবসা করতাম। এখন সেই কায়দা নেই। দূর পথে এখন যেতে হচ্ছে খুলনা শহরে। এতে টাকা খরচ হচ্ছে বেশি। জানিনা কবে শেষ হবে নির্মাণ কাজ।
বর্তমান ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা আব্দুল ওয়াদুদ খান লিটন বলেন, নদীর দুপাড়ের সংযোগ সড়কসহ ১১টি পায়ার, ১১টি স্প্যান এবং নদীর মধ্যবর্তী অংশে তিনটি পিলার ও ৩টি স্টিল স্প্যান বসানোর কাজ বাকি। তিনি বলেন, চলতি মাসে দুইটি স্প্যান বসানোর কাজ শেষ হবে। নির্দ্দিষ্ট মেয়াদের আগেই নদীর মধ্যবর্তী আর্চ্চস্প্যানটি বসাতে পারবো বলে আশা করছি।
জানতে চাইলে নড়াইল সওজ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো.নজরুল ইসলাম বলেন, নকশার ত্রুটি সংশোধনের মাধ্যমে নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। তিনি দাবি করেন আগামী বছর জুনের মধ্যেই সেতু নির্মাণ কাজ শেষ করে সেতু ব্যবহারকারীদের জন্য উন্মুক্ত করা হবে।
ঘন কুয়াশার কবলে পড়ে ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের মুন্সীগঞ্জ অংশে তিনটি যাত্রীবাহী বাস ও একটি কাভার্ডভ্যানের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। আজ বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ৭টার দিকে সিরাজদিখান উপজেলার কুচিয়ামোড়া কলেজ গেট এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে। এতে বেশ কয়েকজন যাত্রী আহত হলেও হাইওয়ে পুলিশ নিশ্চিত করেছে যে কারও আঘাতই গুরুতর নয়। দুর্ঘটনার পরপরই এক্সপ্রেসওয়েতে যান চলাচল সাময়িকভাবে বিঘ্নিত হয় এবং প্রায় আধঘণ্টা পর্যন্ত তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।
হাঁসাড়া হাইওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এটিএম মাহমুদুল হক জানান, খবর পাওয়ার পরপরই পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধারকাজ শুরু করে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে দুর্ঘটনাকবলিত যানবাহনগুলো রাস্তা থেকে সরিয়ে নেওয়ায় বর্তমানে মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। পুলিশ কর্মকর্তাদের মতে, কুয়াশার কারণে দৃষ্টিসীমা কমে এলেও চালকদের বেপরোয়া গতি এবং কাঙ্ক্ষিত সতর্কতার অভাবেই এই চারমুখী সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়েছে। শীতকালীন এই সময়ে সড়ক দুর্ঘটনা এড়াতে হাইওয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে সকল চালককে অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন এবং নিরাপদ গতিতে গাড়ি চালানোর বিশেষ পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
কিশোরগঞ্জের ভৈরবে র্যাবের তাড়া খেয়ে গাড়িভর্তি বিপুল পরিমাণ ভারতীয় মদ ফেলে পালিয়ে যায় মাদক পাচারকারীর দল ।
এসময় একটি গাড়ি থেকে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ১ হাজার ৬৪৮ বোতল মদ উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধারকৃত মদের আনুমানিক বাজারমূল্য প্রায় ৫৪ লাখ টাকা বলে জানিয়েছে র্যাব।
মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) রাতে ভৈরব উপজেলার ভৈরবপুর উত্তরপাড়া এলাকায় এঘটনা ঘটে।
র্যাব সূত্রে জানা যায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানা যায় একটি বড় মদের চালান ঢাকার দিকে পাচার করা হবে। এমন তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব ঢাকা–সিলেট মহাসড়কের নাটাল মোড়ে একটি চেকপোস্ট স্থাপন করে তল্লাশি কার্যক্রম শুরু করে। এসময় সন্দেহভাজন একটি গাড়ি দ্রুতগতিতে চেকপোস্টে আসে। গাড়িটিকে থামার সংকেত দেওয়া হলেও চালক তা অমান্য করে পালানোর চেষ্টা করে। র্যাব সদস্যরা গাড়িটিকে ধাওয়া করলে একপর্যায়ে চালকসহ দুজন ব্যক্তি গাড়িটি একটি গ্রামের ভেতরে ফেলে রেখে পালিয়ে যায়।
এবিষয়ে ভৈরব র্যাব ক্যাম্পের কমান্ডার সিনিয়র সহকারী এএসপি তপন সরকার জানান, অভিযানে পরিত্যক্ত গাড়িটি র্যাব ক্যাম্পে এনে তল্লাশি চালিয়ে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ১ হাজার ৬৪৮ বোতল ভারতীয় মদ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলে তিনি জানান।
নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার জাগলার চরে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের সময় গুলিতে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন ৮-১০জন। তাৎক্ষণিক পুলিশ নিহত একজনের নাম ঠিকানা জানাতে পারলেও অপর ৪ জনের নাম ঠিকানা জানাতে পারেনি। মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) সকাল ১০টার দিকে উপজেলার সুখচর ইউনিয়নের ৭ ও ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সীমান্তবর্তী জাগলার চর গ্রামে এ গোলাগুলির ঘটনা ঘটে।
নিহতদের মধ্যে, আলাউদ্দিন (৪০) উপজেলার সুখচর ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের চর আমান উল্যাহ গ্রামের ছেরাং বাড়ির মহিউদ্দিনের ছেলে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার জাগলার চরের জমি সরকার এখন পর্যন্ত কাউকে বন্দোবস্ত দেয়নি। এ সুযোগে ৫ আগস্টের পর জাহাজমারা ইউনিয়নের কোপা সামছু বাহিনী জাগলার চরের বেশ কিছু জমি বিক্রি করে। এরপর সুখচর ইউনিয়নের আলাউদ্দিন বাহিনী জাগলার চরের জমির দখল নিতে মরিয়া হয়ে উঠে। একপর্যায়ে আলাউদ্দিন বাহিনী আরও বেশি দামে কিছু জমি বিক্রি করে। এরপর দুটি গ্রুপ আলাদা আলাদাভাবে চরের জমি বিক্রির চেষ্টা চালায়। অভিযোগ রয়েছে, চর দখলে যুক্ত ডাকাত আলাউদ্দিন সুখচর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি বেলায়েত হোসেন সেলিম, আওয়ামী লীগ নেতা নিজাম মেম্বার, বিএনপি নেতা নবীর ঘনিষ্ঠ।
তারা কোপা সামছু বাহিনীকে চর থেকে বিতাড়িত করে চরের জমি দখলে নিতে ডাকাত আলাউদ্দিনের বাহিনীর সঙ্গে আঁতাত করে। এ নিয়ে দুটি গ্রুপ একাধিকবার বিরোধে জড়ায়। মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) সকাল ১০টার দিকে চরের জমি দখলকে কেন্দ্র করে কোপা সামছু ও আলাউদ্দিন গ্রুপের মধ্যে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে উভয় পক্ষ মুখোমুখি অবস্থান নিয়ে বন্দুক যুদ্ধে লিপ্ত হয়। এতে অপর পক্ষের ছোড়া গুলিতে আলাউদ্দিনসহ ৪ জন গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হন। পরে তাকে উদ্ধার করে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করে। ৪ জনের মরদেহ ঘটনাস্থলে পড়ে ছিল। ধারণা করা হচ্ছে, নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তেও পারে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে সুখচর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি বেলায়েত হোসেন সেলিমের মুঠোফোনে একাধিক কল করা হলেও ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
হাতিয়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সাইফুল আলম বলেন, একটি মরদেহ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে রয়েছে। চারটি মরদেহ ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। দুর্গম চরাঞ্চল হওয়ায় বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে। ময়না তদন্ত শেষে মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে।