দেশে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় কৃষি সেক্টরে মারাত্মক রকমের নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে, যা কৃষি উৎপাদনসহ খাদ্য নিরাপত্তায় বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। জমিতে লাগানো আমন ধান পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে। নষ্ট হয়ে গেছে বীজতলাও। আবার নতুন করে বীজতলা তৈরি করে চারা গজিয়ে চাষাবাদ করা আদৌ সম্ভব হবে কি না তা নিয়েও সংশয় দেখা দিয়েছে।
কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, বৃহত্তর চট্টগ্রামের কৃষি অঞ্চলে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, ফেনী, নোয়াখালীসহ ৫টি জেলা, ৪২টি উপজেলা ও ৩টি মেট্রোথানার সমন্বয়ে গঠিত। ১৪ হাজার ৪২৩ দশমিক ২২ বর্গকিলোমিটার আয়তনের বিস্তৃত এই অঞ্চলে প্রায় দুই কোটি মানুষের বসবাস। এ অঞ্চলের প্রধান ফসল ধান। এ ছাড়া চা, ভুট্টা, গোলআলু, বাদাম, তরমুজসহ বিভিন্ন ফলমূল ও শাকসবজি উৎপাদিত হয়। ফেনী ও কক্সবাজার জেলা মূলত ধান উৎপাদন এলাকা। চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড, মীরসরাই, ফটিকছড়ি অঞ্চলেও প্রচুর ধানচাষ হয়ে থাকে। চট্টগ্রাম খাদ্য ঘাটতির একটি অঞ্চল। এখানে প্রচুর বাইরের লোকের বসবাস হওয়ায় এই অঞ্চলটিতে খাদ্য ঘাটতি রয়েছে। যা দেশের অন্যান্য অঞ্চল থেকে এনে জোগান দিতে হয়।
চট্টগ্রামে ধানচাষের একটি বড় অংশ দখল করে থাকে আমন। প্রচুর ফলন আসে এই মৌসুমের চাষ থেকে। কৃষকেরা তাদের জমিতে একটু আগেভাগে আমন লাগিয়ে দ্রুত ফসল ঘরে তুলতে চান। এবারও প্রচুর জমিতে আমনের চাষ হয়েছিল চট্টগ্রাম কৃষি অঞ্চলের এলাকাগুলোতে। চট্টগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা জানান, হাজার হাজার একর আমন চাষ সম্পন্ন করে কৃষকেরা উৎসবমুখরভাবে ঘরে ফিরলেন, তখনই ভয়াল বন্যা সব তছনছ করে দিল।
শুধু চট্টগ্রামেই প্রায় ৫শ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে উল্লেখ করে ওই কর্মকর্তা বলেন, আসলে টাকার অংকে এই ক্ষতি নিরূপণ করা যাবে না। ফসলপ্রাপ্তি নিয়ে যে অনিশ্চয়তা তৈরি হল তা সামাল দেওয়া কঠিন হবে। তিনি বলেন, একজন কৃষক তার সর্বস্ব খরচ করে চাষাবাদ করলেন। তা ধ্বংস হয়ে গেল। এখন নতুন করে আবার চাষ করার মতো অবস্থা ওই কৃষকের নেই। হয়তো দেখা যাবে জমিটি খালি পড়ে রয়েছে। কোন ফসলই ওই জমি থেকে এই মৌসুমে আর পাওয়া যাবে না। এই ক্ষতির প্রভাব ব্যাপক বলেও তিনি মন্তব্য করেন। কৃষি বিভাগ থেকে বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম কৃষি অঞ্চলে এবারকার বন্যায় সর্বমোট ১ লাখ ৫৩ হাজার ১০৩ হেক্টর জমির ফসলের ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে অনেক জমিই খালি পড়ে থাকবে বলেও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উল্লেখ করেন।
কৃষি বিভাগের কাছ থেকে প্রাপ্ত হিসেব মতে, সীতাকুণ্ড, মীরসরাই, ফটিকছড়ি, লোহাগাড়া, সাতকানিয়া, চন্দনাইশ ও বাঁশখালী উপজেলার ধানি জমিতে বন্যা মারাত্মকভাবে প্রভাব ফেলেছে। ওই সাত উপজেলায় বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে ১ হাজার ৯২২ হেক্টর সবজি বাগান। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আউশ ও আমন খেত। আমন ধানের উৎপাদনে লক্ষ্যমাত্রায় অর্জিত না হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
কৃষি অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা চট্টগ্রামের বিভিন্ন অঞ্চলে আমনের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বলে উল্লেখ করে বলেছেন, টাকার অংকে চট্টগ্রামে আমনের ক্ষতি ২৫২ কোটি টাকা উল্লেখ করে সরকারের কাছে রিপোর্ট দেয়া হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে এই ক্ষতি অপূরণীয় বলেও তারা মন্তব্য করেছেন।
মাঠ কর্মকর্তারা জানান, আমনের ক্ষয়ক্ষতি এত ব্যাপক হয়েছে যে বহু কৃষকই নিঃস্ব হয়ে গেছেন। চট্টগ্রাম জেলায় এবার ১ লাখ ২ হাজার হেক্টর জমিতে আমন চাষ করা হয়। এর মধ্যে বন্যায় তলিয়ে গেছে ৪৩ হাজার ৫শ হেক্টর জমির ফসল। তলিয়ে যাওয়া আমন ক্ষেতের মধ্যে ১৩ হাজার ৮৩১ হাজার হেক্টর জমির ধান সম্পূর্ণরূপে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। চট্টগ্রামে এই বন্যায় মোট ১ লাখ ৬১ হাজার ৩৭১ জন কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যাদের অনেকেরই আর চাষাবাদ করার মতো সামথ্য নেই।
আবার চলতি মাসেই আউশ ধান ঘরে তোলার কথা ছিল কৃষকদের; কিন্তু বন্যায় তাও নষ্ট করে দিয়েছে। চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলায় ৩৩ হাজার ১ হেক্টর জমিতে আউশের চাষ হয়েছিল। এরমধ্যে ৮ হাজার ৩৮৩ হেক্টর জমির ফসল পানিতে তলিয়ে নষ্ট হয়ে গেছে। এতে কোটি কোটি টাকার ফসলহানি হয়েছে বলেও কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। চট্টগ্রামে আমন এবং আউশ ধানের যে ক্ষতি হয়েছে তা খাদ্য ঘাটতির এই জেলাটিতে মারাত্মক রকমের প্রভাব ফেলবে বলে মন্তব্য করে বলা হয়েছে, এই ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে কৃষকদের বেশ বেগ পেতে হবে। চট্টগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবদুচ ছোবহান বলেন, ক্ষয়ক্ষতি ব্যাপক। তবে আমরা কিছুটা আশাবাদী যে, চট্টগ্রামে আমন ধান কিছুটা দেরিতে লাগানো হয়। আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আমন লাগানো যাবে। তবে চারার যেই সংকট তা কাটিয়ে উঠা গেলে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা কিছুটা হলেও ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
জামালপুরে ট্রাকের চাপায় ব্যাটারিচালিত ইজিবাইকের চালকসহ তিনজন নিহত হয়েছেন। আজ শুক্রবার সকালে শহরের টিউবওয়েলপাড় মোড় এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন- মেলান্দহ উপজেলার ঝাউগড়া ইউনিয়নের কাপাশহাটিয়া গ্রামের জয়নাল হোসেনের ছেলে ইজিবাইক চালক রোকন মাহমুদ (৪৫), ইজিবাইকের যাত্রী একই ইউনিয়নের শেখসাদী গ্রামের আব্দুস সোবাহানের ছেলে আব্দুল মালেক (৫৩) এবং জামালপুর সদর উপজেলার মেষ্টা ইউনিয়নের নয়াপাড়া গ্রামের মৃত আব্দুস সোবাহানের ছেলে মোস্তাফিজুর রহমান (৫৫)।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, জামালপুর সদর উপজেলার কেন্দুয়া কালিবাড়ী এলাকা থেকে একটি ইজিবাইকে করে তিন যাত্রী জামালপুর শহরের দিকে যাচ্ছিলেন। ইজিবাইকটি শহেরর টিউবয়েলপাড় মোড় এলাকায় পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি ট্রাকের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই ইজিবাইকের চালক রোকন মাহমুদ নিহত হন।
দুর্ঘটনার খবর পেয়ে আহত তিন যাত্রীকে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা উদ্ধার করে জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে আব্দুল মালেক নামে একজনকে মৃত ঘোষণা করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক। এ দিকে আহত মোস্তাফিজুর রহমান ও নাদের মিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক মোস্তাফিজুর রহমানকে মৃত ঘোষণা করেন এবং অপর যাত্রী নাদের মিয়ার অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জাানান।
জামালপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু ফয়সাল মো. আতিক বলেন, সড়ক দুর্ঘটনায় তিনজন নিহত হয়েছে। একজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে বাকি দুজন হাসপাতালে মারা গেছে, তাদের মরদেহ আনার জন্য কাজ চলছে। ঘাতক ট্রাকটি পালিয়ে যাওয়ায় আটক করা যায়নি। এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে বাস-ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে চারজন নিহত হয়েছেন। এছাড়া এ ঘটনায় আরও অন্তত আটজন আহত হয়েছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার (০৩ অক্টোবর) দিনগত রাত ১টার দিকে টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ সড়কের এলেঙ্গার কালিহাতী লিংক রোডে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
হতাহতদের পরিচয় এখনো পাওয়া যায়নি। এ দিকে এই দুর্ঘটনার পর যমুনা সেতুর সংযোগ সড়কে আজ সকাল পর্যন্ত তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।
এলেঙ্গা হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ নান্নু খান জানান, বৃহস্পতিবার দিনগত রাতে মহাসড়কের কালিহাতী লিংক রোডে একটি বাসের সঙ্গে ট্রাকের সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই বাসের চার যাত্রী নিহত হন। এ ঘটনায় আরও অন্তত আটজন আহত হয়েছেন। আহতদের উদ্ধার করে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তাদের মধ্যে তিনজনের অবস্থা গুরুতর।
তিনি আরও বলেন, আইনি প্রক্রিয়া শেষে মরদেহ তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে। এ ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন।
নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ায় বজ্রপাতে এক জেলের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে উপজেলার জাহাজমারা ইউনিয়নের আমতলী গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত পাকলু মাঝি (৩৬) উপজেলার জাহাজমারা ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের আমতলী গ্রামের এনায়েত হোসেনের ছেলে। তিনি ২ সন্তানের জনক ছিলেন।
স্থানীয়রা জানায়, সন্ধ্যার দিকে বাড়ি থেকে পাকলুসহ তিন জেলে মেঘনা নদীতে মাছ ধরার উদ্দেশ্যে রওনা দেন। যাত্রাপথে তারা উপজেলার আমতলী গ্রামে পৌঁছলে বজ্রপাতের শিকার হন। এতে পাকলু ঘটনাস্থলেই মারা যান। ওই সময় তার সাথে থাকা অপর দুই জেলে সামান্য আহত হন।
হাতিয়া থানার ওসির দায়িত্বে থাকা পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মনিরুজ্জামান বলেন, বিষয়টি কেউ থানাকে অবহিত করেনি। তবে এ বিষয়ে খোঁজ-খবর নেওয়া হবে।
মৌসুমি বায়ুর সক্রিয় থাকার কারণে চাঁদপুরে বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। অতি বৃষ্টিতে এখানকার জনজীবন প্রায় স্থবির হয়ে পড়েছে। গতকাল বুধবার সকাল ৯টা থেকে আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত চাঁদপুরে ৮৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
বৃষ্টির কারণে শহরের বিভিন্ন সড়কে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে খেটে খাওয়া দিনমজুর ও নিম্ন আয়ের লোকজনকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বেশি। বৃষ্টিতে ভিজেই স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসায় গেছে শিক্ষার্থীরা।
এ দিকে, বৃষ্টির কারনে সড়কে যানবাহন ও লোকজনের চলাফেরা ছিল কম। এ ছাড়া জেলার আগাম সবজি চাষে ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ। বৈরী আবহাওয়া থাকলেও ঢাকা-চাঁদপুর ও নারায়ণগঞ্জ রুটে ছোট-বড় সব ধরনের লঞ্চ চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।
চাঁদপুর আবহাওয়া অফিসের উচ্চ পর্যবেক্ষক শাহ্ মো. শোয়েবুল ইসলাম জানান, বুধবার সকাল ৯টা থেকে আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ১২ টা পর্যন্ত জেলায় ৮৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত বৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বাংলাদেশ ও তৎসংলগ্ন উত্তর বঙ্গোপসাগর এলাকায় একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে। সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা (২-৪) ডিগ্রি সেলসিয়াস হ্রাস পেতে পারে।
ধর্ষণের অভিযোগে এনে খাগড়াছড়িতে শিক্ষককে পিটিয়ে হত্যা এবং পরবর্তীতে তৈরি হওয়া সহিংসতার তদন্ত করেতে চার সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে।
আজ বুধবার খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক মো. সহিদুজ্জামান এই তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, খাগড়াছড়ির অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট তদন্ত কমিটির নেতৃত্ব দেবেন।
খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার (এসপি) মো. আরেফিন জুয়েল জানিয়েছেন, খাগড়াছড়ি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সপ্তম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীকে ধর্ষণ এবং সরকারি কাজে বাধা দেওয়া ও মারধরের অভিযোগে সদর থানায় দুটি মামলা দায়ের হয়েছে।
এদিন সকালে প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল ও খাগড়াছড়ি বাজার পরিদর্শন করেছেন। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত খাগড়াছড়ি থেকে ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার করা হয়েছে। আজ বিকেল ৩টার দিকে এ ঘোষণা দেন জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. শহীদুজ্জামান।
খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুজন চন্দ্র রায় গণমাধ্যমকে বলেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসায় ১৪৪ ধারা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিকেল ৩টা থেকে এ আদেশ কার্যকর করা হয়েছে।
এর আগে পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়িতে শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের অভিযোগে এক শিক্ষককে পিটিয়ে হত্যার পর পাহাড়ি ও বাঙালিদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে জেলা সদর এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করে জেলা প্রশাসন।
হত্যা মামলায় সিরাজগঞ্জ-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) জান্নাত আরা হেনরী ও তার স্বামী জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান শামীম তালুকদার লাবুকে সাত দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দিয়েছেন আদালত। সিরাজগঞ্জ চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রাসেল তালুকদার আজ বুধবার বিকেলে এ আদেশ দেন।
সিরাজগঞ্জে থানায় হওয়া যুবদল নেতা সোহানুর রহমান রঞ্জু হত্যা মামলায় জান্নাত আরা হেনরী ও শামীম তালুকদার লাবুকে আদালতে হাজির করে ১০ দিন রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করে পুলিশ। অপর দিকে আসামিপক্ষ থেকে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন বাতিল চেয়ে জামিনের আবেদন করা হয়। উভয় পক্ষের শুনানি নিয়ে আদালত তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এর আগে গত সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) মৌলভীবাজার জেলার বর্ষিজোড়া এলাকা থেকে সিরাজগঞ্জ-২ (সদর-কামারখন্দ) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য জান্নাত আরা হেনরী ও তার স্বামী শামীম তালুকদার লাবুকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে রয়েছে তিনটি হত্যা ও একটি অস্ত্র মামলা।
জানা যায়, সিরাজগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে গত ৪ আগস্ট সিরাজগঞ্জ শহরে বিএনপি ও যুবদলের তিন নেতা-কর্মী নিহত হন। এ ঘটনায় এমপি জান্নাত আরা হেনরী ও তার স্বামী জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান শামীম তালুকদার লাবুসহ আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের ৯ শতাধিক নেতা-কর্মীকে আসামি করে তিনটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। এ ঘটনায় নিহত জেলা যুবদলের সহ-সভাপতি সোহানুর রহমান রঞ্জু শেখের স্ত্রী মৌসুমি খাতুন, সিরাজগঞ্জ পৌর এলাকার গয়লা বিএনপি কর্মী নিহত আব্দুল লতিফের বোন সালেহা বেগম ও একই মহল্লার নিহত সুমন শেখের বাবা গঞ্জের আলী শেখ বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন।
অপরদিকে লাইসেন্স করা অস্ত্র ও গুলি সরকারি নির্দেশ মোতাবেক নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে জমা না দিয়ে নিজ দখলে রেখে লুকানোর চেষ্টা করায় ৮ সেপ্টেম্বর জান্নাত আরা হেনরী ও স্বামী শামীম তালুকদারের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে মামলা দায়ের করে পুলিশ। সিরাজগঞ্জ সদর থানার এসআই (নিরস্ত্র) কমল চন্দ্র বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। মোট চারটি মামলায় জান্নাত আরা হেনরী ও স্বামী শামীম তালুকদার এজাহারভুক্ত আসামি।
এর আগে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আদালতে আবেদন করেন। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জান্নাত আরা হেনরী, তার স্বামী শামীম তালুকদার ও মেয়ে মুনতাহা রিদায়ী লামের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারির আদেশ দেন আদালত।
নরসিংদীতে এক যুবককে কুপিয়ে গুরুতর আহত করার পর গলাকেটে তার মৃত্যু নিশ্চিত করেছে সন্ত্রাসীরা। নিহতের নাম হানিফ মিয়া। আজ দুপুর আড়াইটার দিকে নরসিংদী পৌর শহরের কাউরিয়াপাড়া ঈদগাহ মাঠের পাশে প্রকাশ্যে এ লোমহর্ষক ঘটনাটি ঘটে।
স্থানীয়রা জানান, হানিফকে ধাওয়া করে সেখানে নিয়ে গিয়ে হত্যাকারীরা এ ঘটনা ঘটায়। হত্যাকারীরা হানিফের পূর্ব পরিচিত ও নিকটাত্মীয় বলে ধারণা করা হচ্ছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হানিফকে ধারাল অস্ত্র দিয়ে কোপানোর সময় হত্যাকারীরা ‘তাদের বাবাকে হত্যার প্রতিশোধ’ নেওয়ার কথা বলছিল।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন ও বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, গত ১৯ আগস্ট নরসিংদী শহরের চৌয়ালা এলাকার বাসিন্দা মো. হাবিবুল্লাহ নামে এক ব্যক্তিকে সম্পত্তি নিয়ে বিরোধে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। ওই ঘটনায় অভিযুক্ত ছিলেন আজ নিহত হানিফ মিয়া। নানার বাড়ি থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া মায়ের সম্পত্তির বণ্টন নিয়ে দ্বন্দ্বে হাবিবুল্লাহকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ ছিল হানিফের বিরুদ্ধে। সম্পর্কে হাবিবুল্লাহ ছিলেন তার আপন মামা।
স্থানীয়রা জানান, হাবিবুল্লাহকে হত্যার ঘটনায় ভীষণ ক্ষুব্ধ হন তার দুই ছেলে নাইম ও নইম। তারাও খালাতো ভাই হানিফকে হত্যা করার ঘোষণা দেন। হাবিবুল্লাহকে হত্যার ৪৩ দিনের মাথায় অভিযুক্ত ‘ভাগ্নে’ হানিফকে আজ পূর্বপরিকল্পিতভাবে ঈদগাহ এলাকায় ধারাল অস্ত্র হাতে ধাওয়া করে কুপিয়ে হত্যা করে প্রতিশোধ নেয় হাবিবুল্লাহর ছেলেরা।
জনসম্মুখে অভিযোগ উঠেছে, মামাকে হত্যা করার প্রতিশোধে এই হত্যাকাণ্ড হয়েছে ‘হত্যার বদলে হত্যা’। অর্থাৎ হাবিবুল্লাহর ছেলে নাইম-নইম ধারাল অস্ত্র দিয়ে জনসম্মুখে প্রথমে কুপিয়ে আহত করে এবং পরে গলা কেটে হানিফের মৃত্যু নিশ্চিত করে চলে যায়।
এই ঘটনায় পুরো এলাকাজুড়ে ব্যাপক চাঞ্চল্যকর অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ ময়নাতদন্তের জন্য নরসিংদী সদর হাসপাতালে প্রেরণ করেছে।
নরসিংদী সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মো. এমদাদুল হক আজ সন্ধ্যায় জানান, স্থানীয়দের কাছে জানতে পেরেছি পূর্ব শত্রুতার জের ধরে এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। এখন পর্যন্ত কোনো অভিযোগ আসেনি। অভিযোগ এলে এ বিষয়ে মামলা নেওয়া হবে।
৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর নারায়ণগঞ্জের দুটি ব্যবসায়ী সংগঠনের কর্মকর্তাদের ভয়ভীতি দেখিয়ে নেওয়া ৯ লাখ টাকা ফেরত দিয়েছে চাঁদাবাজরা।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জের বিকেএমইএর প্রধান কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি মাসুদুজ্জামান ও বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম এ কথা জানান।
চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি মাসুদুজ্জামান জানান, নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ থেকে তিন লাখ টাকা এবং রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিকেএমইএর কাছ থেকে ৫ লাখ টাকাসহ মোট ৯ লাখ টাকা চাঁদা নিয়েছিল রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থাকা দুর্বৃত্তরা। পরে পরিস্থিতি স্থিতিশীল হওয়ার পর বিষয়টি গণমাধ্যমের নজরে আনা হয়। এরপর ব্যবসায়ীদের ঐক্যের কারণে চাঁদাবাজরা সে টাকা ফেরত দিয়ে গেছে।
তবে চাঁদাবাজদের নাম জানাতে অস্বীকৃতি প্রকাশ করেন ব্যবসায়ী নেতারা। তারা জানান, চাঁদা ফেরত দিয়েছে- এটাই যথেষ্ট। এর মাধ্যমে আর কেউ সাহস পাবে না। কারণ চাঁদার টাকা ফেরত দেওয়াটা সামান্য কোনো বিষয় না।
বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, নারায়ণগঞ্জের ব্যবসায়ীরা এক থাকাতে এখানে বড় ধরনের কোনো সমস্যা হয়নি। আগামীতেও হবে না আশা করছি। গার্মেন্টস সেক্টর এখানে শান্ত রয়েছে। আশুলিয়ার সমস্যা সমাধানে সরকারের সঙ্গে সমন্বয় করার চেষ্টা চলছে।
পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়িতে শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের অভিযোগে এক শিক্ষককে পিটিয়ে হত্যার পর পাহাড়ি ও বাঙালিদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে জেলা সদর এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করেছে প্রশাসন।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে খাগড়াছড়ি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের আবুল হাসনাত মুহাম্মদ সোহেল রানা নামের ওই শিক্ষককে পিটিয়ে হত্যা করে একদল দুর্বৃত্ত। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনী ও পুলিশের টহল জোরদার করা হয়েছে।
নিহত সোহেল রানা ওই প্রতিষ্ঠানের সিভিল কন্সট্রাকশন অ্যান্ড সেফটি বিভাগের ইন্সট্রাকটর ছিলেন। প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, একই প্রতিষ্ঠানের ৭ম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের অভিযোগ এনে দুপুরে স্কুলের মধ্যেই একটি কক্ষে তাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তার মরদেহ খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়।
জেলা সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. রিপল বাপ্পি চাকমা জানান, ‘হাসপাতালে আনার আগেই ওই ব্যক্তি মারা গেছেন। ময়না তদন্ত শেষে বিস্তারিত জানা যাবে।’
এ ঘটনার পর জেলা শহরে পাহাড়ি ও বাঙালি সম্প্রদায়ের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। শহরের চেঙ্গী স্কয়ার, মহাজনপাড়ায় দুইপক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়।
পরিস্থিতি আরও অবনতির আশঙ্কায় জেলা প্রশাসন খাগড়াছড়ি জেলা সদর এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করেছে। বেলা ৩টা থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এই ঘোষণা বলবৎ থাকবে।
পুলিশ সুপার মো. আরেফিন জুয়েল জানান, ঘটনায় যারা জড়িত তাদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হবে।
উল্লেখ্য, গত ১৮ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ি সদরে মো. মামুন নামে এক যুবককে মোটরসাইকেল চুরির অভিযোগে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। পরে মামুনের স্ত্রী হত্যা মামলা করেন পলাতক তিন আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে। তবে মামুনের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে পাহাড়ি-বাঙালি সংঘাত ছড়িয়ে পড়ে। ১৯ সেপ্টেম্বর দীঘিনালার লারমা স্কয়ারে আগুন দেওয়া হয় দোকানপাটে। সংঘাতে দীঘিনালায় ধনঞ্জয় চাকমা নামের এক ব্যক্তি মারা যান। ১৯ সেপ্টেম্বর রাতে খাগড়াছড়ি সদরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলিতে রুবেল ত্রিপুরা ও জুনান চাকমা নামের দুজন মারা যান। ২০ সেপ্টেম্বর এ ঘটনার জের ধরে রাঙামাটিতে সংঘর্ষ হয়। সেখানে দোকানপাট ও বাড়িঘরে আগুন দেওয়া হয়। অনিক কুমার চাকমা নামের একজন মারা যান। ২০ সেপ্টেম্বর রাঙামাটি ও খাগড়াছড়িতে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছিল। পরে তা তুলে নেওয়া হয়। এসব ঘটনায় দুই জেলায় পাঁচটি মামলা হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে রাজমিস্ত্রি রাকিব হত্যার ঘটনায় সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) শামীম ওসমান ও সাবেক মেয়র ডা. সেলিনা হায়াত আইভীসহ ১০১ জনের নাম উল্লেখ করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ ঘটনায় অজ্ঞাত আরও ৩০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার নিহত রাকিবের চাচাতো ভাই আব্দুর রহমান বাদী হয়ে প্রথমে আদালতে মামলাটির আবেদন করেন। পরে আদালতের নির্দেশে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় মামলাটি দায়ের করা হয়।
তিনি জানান, গত ৫ আগস্ট আন্দোলন চলাকালীন পেশায় রাজমিস্ত্রি রাকিব কাজে যাওয়ার উদ্দেশে বের হলে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে অভিযুক্ত সন্ত্রাসীদের গুলিতে আহত হয়ে রাস্তায় লুটিয়ে পড়েন। পরে স্থানীয়রা তাকে দ্রুত উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের একটি ঘরে আগুন লাগার খবর পাওয়া গেছে। গতকাল সোমবার দিবাগত রাতে উপজেলার জয়শ্রী ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের সীমেরখাল গ্রামে ঘটনাটি ঘটে। এতে চার শিশুসহ একই পরিবারের ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জয়শ্রী ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের মেম্বার মো. রাসেল মিয়া। নিহতরা হলেন, এমারুল (৫০), তার স্ত্রী পলি আক্তার (৪৫) ও তাদের চার সন্তান পলাশ (৯), ফরহাদ (৭), ফাতেমা বেগম (৫) ও ওমর ফারুক (৪)।
জয়শ্রী ইউপি চেয়ারম্যান সঞ্জয় চৌধুরী বলেন, গতকাল সোমবার দিবাগত রাত ১২টার পরে হঠাৎ করে একটি ঘরে আগুন লাগার খবর পেয়েছি। আগুন লাগার পর আশপাশের মানুষ এসে যে যেভাবে পেরেছে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেছে। আগুন লাগার সময় ঘরের ভেতর থেকে দরজা আটকানো থাকায় কেউ বের হতে পারেননি। অগ্নিদগ্ধ হয়ে পুরো পরিবারের ৬ জন সদস্যই মারা যান। উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
ধর্মপাশা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দীন ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. এনামুল হক জানান, আগুন লেগে এক পরিবারের ৬ জন সদস্যের মৃত্যু হয়েছে। তবে বসতঘরে কোনো গ্যাস সিলিন্ডার পাওয়া যায়নি। ধারণা করা হচ্ছে কেউ ঘরটিতে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। আমরা উপজেলা প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও পুলিশ প্রশাসন মিলে তাদের দাফন সম্পন্ন করাসহ ঘটনার রহস্য উদঘাটনের চেষ্টা করছি।
চুয়াডাঙ্গা শহরের কোর্টপাড়া থেকে শামসুর রহমান (৭০) নামে এক বৃদ্ধের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। আজ সোমবার সকালে শহরের কোর্টপাড়ার নিহতের ভাতিজার বাড়ি থেকে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়।
মৃত শামসুর রহমান আলমডাঙ্গা তিয়রবিলা গ্রামের বাসিন্দা। নিহতের স্বজনরা জানান, রোববার বিকেলে চুয়াডাঙ্গা শহরের কোর্টপাড়ায় ভাতিজা কামাল হোসেনের বাড়িতে আসেন শামসুর রহমান। রাতে যেকোনো সময় তিনি ঘরের সিলিং ফ্যানের সঙ্গে গামছা পেচিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন। সকালে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পেয়ে পুলিশকে জানানো হয়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সদর হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করে।
স্বজনরা আরও জানায়, শামসুর রহমান ঋণগ্রস্ত ছিলেন। তিনি বিভিন্ন সমিতি থেকে টাকা তুলেছিলেন। তার ট্রাক্টরের ব্যবসা ছিল। চাষের পর ট্রাক্টর মালিকের অজান্তেই টাকা তুলে খরচ করে ফেলতেন তিনি। সব মিলিয়ে মোটা অংকের টাকা ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েন। এতে পাওনাদাররা চাপ দিতে থাকেন। রোববারও একজন টাকা নিতে এসেছিলেন। ধারণা করা হচ্ছে চাপের কারণে তিনি আত্মহত্যা করেছেন।
চুয়াডাঙ্গা সদর থানা পুলিশের পরিদর্শক (ওসি) শেখ সেকেন্দার আলী বলেন, এক বৃদ্ধ গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন বলে প্রাথমিক ধারণা করা হচ্ছে। ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার ফিলিপনগর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান নইম উদ্দীন সেন্টুকে (৬০) গুলি করে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা।
আজ সোমবার বেলা ১১টার দিকে ইউনিয়ন পরিষদ ভবনের নিজ অফিস কক্ষে গুলি করে হত্যা করা হয়।
নিহত নইম উদ্দীন সেন্টু ফিলিপনগর বাজারপাড়ার মৃত মুতালিব সরকারের ছেলে। জানা গেছ, তিনি আগে বিএনপির রাজনীতি করলেও পরে আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুক্ত হন।
দৌলতপুর থানার পুলিশের এসআই খসরু আলম গণমাধ্যমকে হত্যার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এসআই খসরু আলম বলেন, সোমবার বেলা ১১টার দিকে ফিলিপনগর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে যাই। তবে কে বা কারা গুলি করে হত্যা করেছে বিষয়টি এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
ওই ইউনিয়ন পরিষদের সচিব রাশিদুল ইসলাম বলেন, চেয়ারম্যান ইউনিয়ন পরিষদের অফিস কক্ষে বসে কাজ করছিলেন। আনুমানিক বেলা সাড়ে ১১টার দিকে প্রথমে জানালা দিয়ে চেয়ারম্যানকে পেছন থেকে গুলি করা হয়। এরপর কক্ষে ঢুকে আবারও গুলি করে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা।
ওই ইউনিয়নের এক সদস্য নাম না প্রকাশের শর্তে বলেছেন, পূর্ব শত্রুতা ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনা তদন্ত করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হোক।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, প্রতিদিনের মতো সকালে ইউনিয়ন পরিষদের কার্যালয়ের নিজ কক্ষে বসে পরিষদের কাজ করছিলেন চেয়ারম্যান নঈম উদ্দীন সেন্টু চেয়ারের পেছনে থাকা জানালা দিয়ে দুর্বৃত্তরা তাকে কয়েক রাউন্ড গুলি করে। গুলির শব্দে আশপাশের লোকজন ছুটে এলে তাদের লক্ষ্য করেও গুলি চালায় দুর্বৃত্তরা। পরে স্থানীয়রা চেয়ারম্যানের কক্ষে তালা দিয়ে রাখে। এ ঘটনার পর এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। খবর পেয়ে চেয়ারম্যানের লোকজন ইউনিয়ন পরিষদে এলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশকে ঘটনাস্থলে যেতে বেগ পেতে হয়। সাংবাদিকরা ছবি নিতে গেলে তাদের ওপর চড়াও হয় একটি পক্ষ।