টাঙ্গাইলের প্রমত্তা যমুনা নদীর ওপর নির্মিত যমুনা সেতু থেকে ৩০০ মিটার অদূরে দেশের দীর্ঘতম নির্মাণাধীন রেলসেতু এখন পুরোটাই দৃশ্যমান। নির্মাণাধীন এই সেতুটিতে বসানো হয়েছে সব কটি স্প্যান। ইতোমধ্যে সেতুটির ৯৪ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে বলে জানা গেছে। বাকি রয়েছে মাত্র ৬ শতাংশ কাজ। এ কাজ শেষ হলেই ডিসেম্বরে হবে উদ্বোধন। এতে বিরতিহীনভাবে ৮৮টি ট্রেন দ্রুতগতিতে পারাপার হতে পারবে।
খবর নিয়ে জানা গেছে, টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরের সেতুর পূর্ব প্রান্তে কাজ পুরোপুরি সম্পন্ন হয়েছে এবং সিরাজগঞ্জের পশ্চিম প্রান্তেও পুরোপুরি কাজ শেষের দিকে বলে জানা যায়। এ ছাড়া সেতুর পূর্ব ও পশ্চিম স্টেশন আধুনিকায়নের কাজও শেষ পর্যায়ে।
প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিডি) আল ফাত্তাহ মো. মাসুদুর রহমান দৈনিক বাংলাকে জানান, ‘নির্মাণাধীন রেলসেতুর কাজ ইতোমধ্যে ৯৪ শতাংশ শেষ হয়েছে। এ ছাড়া নির্মাণ ব্যয়ও বাড়ছে না। চলছে ঘষামাজা ও রঙের কাজ। আশা করছি, চলতি বছরের ডিসেম্বর মাসে উদ্ধোধন করা যাবে। সেই লক্ষ্য নিয়ে দ্রুত গতিতে রাতদিন কাজ করা হচ্ছে।’
প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, নির্মাণাধীন সেতু দিয়ে সাধারণ ট্রেন ছাড়াও দ্রুতগতির (হাইস্পিড) ট্রেনও চলাচলের উপযুক্ত করে নির্মাণ করা হচ্ছে। ফলে সেতুতে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২৫০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চালানো যাবে। তবে শুরুতে (উদ্বোধনের ১ বছর) সাধারণত ঘণ্টায় ১০০ থেকে ১২০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলাচল করবে।
এই প্রকল্পে খবর নিয়ে জানা গেছে, ২০২১ সালে মার্চ মাসে সেতুটির ৩০০ মিটার উজানে পাইলিংয়ের মাধ্যমে রেলসেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয়। জাপান ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ অর্থায়নে নির্মাণকাজের ব্যয় প্রথমে ধরা হয় ৯ হাজার ৭৩৪ কোটি টাকা। পরবর্তীতে এ প্রকল্পের মেয়াদ দুই বছর বাড়ানো হয়। এতে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি ৯৫ লাখ ৬৩ হাজার টাকা। এর মধ্যে দেশীয় অর্থায়ন ২৭ দশমিক ৬০ শতাংশ। অবশিষ্ট ৭২ দশমিক ৪০ শতাংশ ঋণ দিয়েছে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)।
ডব্লিউডি-১ ও ডব্লিউডি-২ নামে দুটি প্যাকেজে জাপানি ৫টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। নির্মাণাধীন এ সেতুটির সবকটি স্প্যান এরই মধ্যে বসানো হয়েছে। যমুনা নদীর পূর্ব টাঙ্গাইলের অংশের পুরোপুরি কাজ সম্পন্ন হয়েছে। অপরদিকে পশ্চিম প্রান্ত সিরাজগঞ্জে পুরোপুরি কাজ শেষের দিকে রয়েছে। এ ছাড়া সেতুর পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্তের স্টেশন আধুনিকায়নের কাজও প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে।
এর আগে ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে নেওয়া প্রকল্পে চূড়ান্ত নকশা প্রণয়নসহ রেল সেতুর নির্মাণ ব্যয় প্রথমে ৯ হাজার ৭৩৪ কোটি ৭ লাখ টাকা ধরা হয়েছিল। জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা) দেশের বৃহত্তর এ রেলসেতু নির্মাণে ৭ হাজার ৭২৪ কোটি ৩৩ লাখ টাকা ঋণ দেওয়ার কথা ছিল। প্রথম দফা ডিপিপি সংশোধনের পর সেতুর নির্মাণ ব্যয় ৭ হাজার ৪৭ কোটি টাকা বেড়ে ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি ৯৬ লাখ টাকায় দাঁড়ায়।
এই রেল সেতুর সমান্তরাল ডুয়েলগেজ ও ডাবল ট্র্যাকসহ প্রায় ৪ দশমিক ৮০ কিলোমিটার রেলসেতুর দুই পাশে ০.০৫ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট, ৭ দশমিক ৬৬৭ কিলোমিটার রেলওয়ে অ্যাপ্রোচ এমব্যাংকমেন্ট এবং লুপ ও সাইডিংসহ রেললাইন নির্মাণ করা হবে। প্রকল্পে রেলপথের পাশাপাশি সেতুর গ্যাস সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করা হয়েছে।
১৯৯৮ সালে বঙ্গবন্ধু সেতু চালু হওয়ার পরই ঢাকার সঙ্গে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রেল যোগাযোগ স্থাপিত হয়। তবে ২০০৮ সালে সেতুটিতে ফাটল দেখা দেওয়ায় কমিয়ে দেওয়া হয় ট্রেনের গতিসীমা। বর্তমানে প্রতিদিন প্রায় ৩৮টি ট্রেন ঘণ্টায় ২০ কিলোমিটার গতিতে সেতু পারাপার হচ্ছে। এসব সমস্যা সমাধানে সরকার যমুনা নদীর ওপর আলাদা রেলসেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। ২০২০ সালের ২৯ নভেম্বর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালি সেতুটি নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন করেন। এরপর ২০২১ সালের মার্চে রেল সেতুর পিলার নির্মাণে পাইলিংয়ের কাজ শুরু হয়।
বর্ষার শেষে দেশে আবারও বন্যা দেখা দিয়েছে। আশ্বিন মাসের শুরু থেকেই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ভারী বৃষ্টিপাত লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এ মাসে থেমে থেমেই ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। বিশেষ করে গত কয়েক দিন ধরেই সারা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ভারী বর্ষণ হচ্ছে। চলতি মৌসুমে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বন্যার পর এবার উত্তর-পূর্বাঞ্চলের কয়েকটি জেলায় বন্যা দেখা দিয়েছে।
অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট, ধোবাউড়া ও ফুলপুরসহ কয়েকটি উপজেলায় গত কয়েকদিন ধরেই বন্যার দেখা দিয়েছে। আজ পর্যন্ত সেসব এলাকায় বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে বলে জানা যায়। নতুন করে প্লাবিত হয়েছে সেখানকার আরও অন্তত ৫০টি গ্রাম। এতে তিন উপজেলার ২৩ ইউনিয়নের দেড় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
সোমবার দুপুরে এসব তথ্য জানিয়ে জেলা ত্রাণ ও দুর্যোগ পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. সানোয়ার হোসেন জানান, তিন উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে এখন নারী শিশুসহ দুই হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছে।
তিনি বলেন, ‘এসব উপজেলায় ৬৩ মেট্রিক টন চাল ও নগদ সাত লাখ টাকা সহায়তা দেওয়া হয়েছে। দুর্গতদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম চলছে। এ ছাড়া রান্না করা খাবারও দেওয়া হচ্ছে বন্যা দুর্গতদের।’ ধোবাউড়া উপজেলা প্রকৌশলী আবু বকর ছিদ্দিক বলেন, ‘টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে ১২৭ কিলোমিটার রাস্তা পানির নিচে নিমজ্জিত হয়েছে। এর মধ্যে ৫০ কিলোমিটার রাস্তা চলাচলের একেবারে অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। পানি কমলে পুরো ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা নির্ণয় করে মেরামতে উদ্যোগ নেওয়া হবে।’
ধোবাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইইএনও) নিশাত শারমিন বলেন, সোমবার নতুন করে উপজেলার দুটি ইউনিয়নের ২৬টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। তবে উজানের পানি কিছুটা কমছে। আশা করা যাচ্ছে, দুই-একদিনের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে। এদিকে বন্যায় শেরপুরে গত চারদিনে বন্যার পানিতে নালিতাবাড়ী, ঝিনাইগাতী ও নকলা উপজেলায় মোট ৯ জন মারা গেছেন বলে জানা গেছে।
অন্যদিকে ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলার ছনধরা, রামভদ্রপুর, সিংহেশ্বরও, ফুলপুর ইউনিয়নের অধিকাংশ ও অন্যান্য ইউনিয়নের ২৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এ সব এলাকার আমন ফসল ও সবজি ক্ষেত তলিয়ে গেছে; ভেসে গেছে মাছের খামার।
খবর নিয়ে জানা গেছে, হালুয়াঘাটের প্রায় ১২টি ইউনিয়ন শুক্রবার থেকে প্লাবিত হয়েছিল। ওইসব এলাকা থেকে পানি নামতে শুরু করেছে। তবে নতুন করে আরও ১০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। তলিয়ে গেছে কয়েক হাজার হেক্টর জমির ধান, সবজি ক্ষেত। সঙ্গে পুকুরের মাছও। পানিবন্দি হয়ে আছে হাজার হাজার মানুষ। ঘরের মধ্যে পানি ঢোকার কারণে রান্নার কাজও ব্যাহত হচ্ছে। অনাহারে-অর্ধাহারে দিনাতিপাত করছে মানুষ।
হালুয়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এরশাদুল আহমেদ বলেন, উজানে প্লাবিত হওয়া গ্রামের পানি নামতে শুরু করেছে। উপজেলার নড়াইল, কৈচাপুর, ধুরাইল এবং আমতৈল ইউনিয়ন দিয়ে পানি ফুলপুর হয়ে ব্রহ্মপুত্র নদে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে নতুন কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হলেও সার্বিক পরিস্থিতি ভালো।
শেরপুরে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি
দৈনিক বাংলার শেরপুর প্রতিনিধির পাঠানো খবর থেকে জানা যায়, টানা ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে শেরপুরে সৃষ্ট বন্যার সার্বিক পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। সোমবার দুপুরের পর থেকে বৃষ্টি না হওয়ায় এ উন্নতি হয়েছে। জেলার চারটি পাহাড়ি নদীর পানি আরও কমেছে। এসব নদীর পানি এখন বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে ব্রহ্মপুত্র, দশানী ও মৃগী নদীতে। পানি বৃদ্ধি পেলেও এসব নদীর পানি বিপৎসীমার অনেক নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। বন্যায় গত চারদিনে বন্যার পানিতে নালিতাবাড়ী, ঝিনাইগাতী ও নকলা উপজেলায় মোট ৯ জন মারা গেছেন।
সোমবার সকাল ৯টায় শেরপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, জেলার ভোগাই নদীর পানি ১৩৮ সেন্টিমিটার, চেল্লাখালী নদীর পানি ৭৭ সেন্টিমিটার ও ব্রহ্মপুত্র নদীর পানি বিপৎসীমার ৫৪০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ ছাড়াও অপর দুটি পাহাড়ি নদী মহারশি ও সোমেশ্বরীর পানি বিপৎসীমার নিচে রয়েছে।
তবে জেলার বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও কমেনি দুর্ভোগ। এখনও প্রতিটি এলাকায় খাদ্য সংকট রয়েছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ত্রাণ কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। বিএনপি, জামায়াতসহ রাজনৈতিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের পক্ষ থেকে ত্রাণ বিতরণ করলেও প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। অনেক দুর্গম এলাকায় এখন পর্যন্ত ত্রাণ পৌঁছেনি। আর বিশুদ্ধ পানির সংকট, শৌচাগারের সমস্যায় ভোগছেন।
কৃষি বিভাগ ও মৎস্য বিভাগের তথ্যমতে, জেলায় ৪৭ হাজার হেক্টর আবাদি জমির আমন ধান ঢলের পানিতে তলিয়ে গেছে। এ ছাড়া ১ হাজার হেক্টর জমির সবজি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর মাছের ঘের তলিয়ে গেছে ৬ হাজারেরও বেশি। এতে মাথায় হাত পড়েছে আমন ও মৎস্যচাষীদের। সব হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন জেলার কৃষক ও মৎস্যচাষিরা। এ বন্যায় অনেক প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাধ্যমিক, মাদরাসা, কারিগরি, কলেজ বন্ধ রয়েছে।
জেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৭৪১টি। এর মধ্যে বন্যাকবলিত হয়েছে ৩০১টি বিদ্যালয়। এর মধ্যে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে ২৪২টি প্রাথমিক বিদ্যালয়। আর আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে ৫৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
জেলা প্রশাসক তরফদার মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘আমরা সব জায়গায় ত্রাণ কার্যক্রম চালানোর চেষ্টা করছি। আমাদের এ কাজে সেনাবাহিনী সার্বিক সহযোগিতা করছে। পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস, বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, ব্যবসায়ীসহ সবাই এগিয়ে এসেছেন। সবাই মিলে আমরা এ দুর্ভোগ মোকাবিলা করতে সক্ষম হব।’ শেরপুর জেলা প্রশাসক তরফদার মাহমুদুর রহমান জানান, ইতোমধ্যে ১০ হাজারের মতো ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে বন্যা দুর্গত এলাকায়। আরও ২৫ হাজারের চাহিদা পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে ৫ হাজার পাওয়া গেছে তা বিতরণ করা হবে।
এদিকে শেরপুরে বন্যাকবলিত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে সেনবাহিনী। জেলার পাঁচটি উপজেলাতেই সেনাপ্রধানের নির্দেশে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে উদ্ধার অভিযান এবং খাদ্যসামগ্রী বিতরণ কার্যক্রম চলছে। বন্যাকবলিতদের উদ্ধার করে আশ্রয়কেন্দ্রে রাখা হচ্ছে। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে শেরপুরে এখন পর্যন্ত চার হাজার পরিবারের কাছে ত্রাণসামগ্রী পোঁছে দেওয়া হয়েছে। যাদের বাসায় রান্না করার ব্যবস্থা নেই, তাদেরকে রান্না করা খাবার দেওয়া হচ্ছে।
সোমবার ঝিনাইগাতী উপজেলার সদর ইউনিয়নে ও নকলা উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে রান্না করা খাবার এবং ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করেন সেনাসদস্যরা। ঝিনাইগাতী উপজেলার সদর ইউনিয়নের সারিকালিনগর, দড়িকালিনগর ও হাতিবান্ধা ইউনিয়নের মিরপাড়া এলাকায় ২ শতাধিক দুর্গতের মধ্যে ময়মনসিংহ সেনানিবাসের ১৩ বাংলাদেশ ইনফ্যান্ট্রি রেজিমেন্টের লেফটেন্যান্ট জোহায়ের খাবার বিতরণ কার্যক্রমের তত্ত্বাবধান করেন।
নেত্রকোনার বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি, দেখা দিয়েছে বিভিন্ন দুর্ভোগ
দৈনিক বাংলার নেত্রকোনা প্রতিনিধি জানায়, জেলায় কমতে শুরু করেছে বন্যার পানি। এতে স্বস্তি ফিরছে বানভাসিদের। তবে সংকট দেখা দিয়ে সুপেয় পানির। ভেসে উঠছে ভেঙে যাওয়া রাস্তার খানাখন্দ। এতে দুর্ভোগ বেড়েছে কয়েক হাজার পরিবারের। এর আগে গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টি ও ঢলের পানিতে জেলার দুর্গাপুর, কলমাকান্দা ও পূর্বধলা উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছিল। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়ে প্রায় ৩০ হাজার মানুষ। শতাধিক বিদ্যালয়ে পাঠদান সমায়িক বন্ধ রাখা হয়। ১৭ হাজার ৫৩৫ হেক্টর জমির রোপা আমন ধান তলিয়ে যায়। তবে গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় বৃষ্টিপাত না হওয়ায় পরিস্থিতি উন্নতি হয়েছে। কমতে শুরু করেছে পানি।
এদিকে পূর্বধলার নাটেরকোনা এলাকায় একটি ফসলরক্ষা বাঁধ রোববার (৬ অক্টোবর) বিকেলে ভেঙে গিয়ে ৭-৮টি গ্রামের নিম্নাঞ্চল নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। তবে গতকাল সোমবার সেসব স্থান থেকেও পানি নামতে শুরু করেছে।
সোমবার পানিবন্দী এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, জেলার সবগুলো নদ-নদীতে পানি কমতে শুরু করেছে। ডুবন্ত রাস্তাগুলো ভেসে উঠছে। দৃশ্যমান হচ্ছে রাস্তার ভাঙা অংশ ও বড় বড় গর্ত। বন্যার্তদের জেলা প্রশাসন ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো ত্রাণ সহায়তা করছে।
জেলার শিক্ষা ও কৃষি দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলায় ১৭ হাজার ৫৩৫ হেক্টর জমির রোপা আমন ধান বন্যায় তলিয়ে গেছে। ২-৩ দিনের মধ্যে পানি কমে গেলে ধানের ক্ষতি অনেকটা কমে যাবে। এ ছাড়া পানি ওঠায় জেলায় ১৮৬টি বিদ্যালয়ে পাঠদান সাময়িক বন্ধ রাখা হয়েছে।
সপ্তাহজুড়ে থাকবে বৃষ্টি
রাজশাহী ছাড়া দেশের সব বিভাগেই সপ্তাহজুড়ে কম-বেশি বৃষ্টির আভাস দিয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, এরপর গরম কিছুটা বাড়বে। আর বৃষ্টি-গরমের এই পর্ব শেষে নভেম্বরের মাঝামাঝি সময় থেকে শীতের দেখা মিলতে পারে দেশে।
আজ সোমবার আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক গণমাধ্যমকে বলেন, ‘রাজশাহীতে একটু কম বৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া সব বিভাগেই আগামী ১১ অক্টোবর পর্যন্ত প্রতিদিনই এক পশলা-দুই পশলা করে বৃষ্টিপাত হবে। এরপর কিছুটা গরম পড়বে। তবে, বৃষ্টির পরপরই শীত পড়ার আভাস নেই। নভেম্বরের মাঝামাঝি সময় থেকে দেশে শীত নামতে শুরু করবে।’
সোমবার আবহাওয়ার নিয়মিত বুলেটিনে বলা হয়, মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর মোটামুটি সক্রিয়। এর অক্ষের বর্ধিতাংশ ভারতের বিহার, পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চল হয়ে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। বঙ্গোপসাগরে এটি মাঝারি অবস্থায় আছে। এর প্রভাবে ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় এবং রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের কিছু জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।
কক্সবাজারে সাগরে গোসলে নেমে মোহাম্মদ আসমাইন (১৩) নামে এক শিক্ষার্থী নিখোঁজ হওয়ার সাড়ে চার ঘণ্টা পর তার মরদেহ খুঁজে পাওয়া গেছে।
সৈকতের শৈবাল পয়েন্টে আজ সোমবার সকাল ৯টার দিকে গোসলে নেমে নিখোঁজ হন তিনি। এরপর আজ বেলা দেড়টার দিকে তার মরদেহ কক্সবাজারের সমিতিপাড়া সৈকত পয়েন্ট থেকে উদ্ধার করা হয়।
কক্সবাজারের দক্ষিণ রুমালিয়ারছড়ার করিমুল হকের ছেলে আসমাইন কক্সবাজার ভোকেশনাল ইন্সটিটিউটের ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্র।
ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার অঞ্চলের পুলিশ সুপার মো. মাসুদুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘সোমবার সকালে কক্সবাজার সৈকতের শৈবাল পয়েন্টে মোহাম্মদ আসমাইনসহ ছয় বন্ধু মিলে সাগরে গোসলে নামে। এক পর্যায়ে স্রোতের টানে তিনজন ভেসে যায়। এসময় সেখানে উপস্থিত অন্য বন্ধুদের চিৎকারে স্থানীয় লাইফগার্ড কর্মীরা তাদের উদ্ধারে নামেন।
‘এতে দুইজনকে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করতে সক্ষম হলেও অপর একজন ভেসে যায়। পরে সাগরের বিভিন্ন পয়েন্টে খোঁজ নিয়েও তার সন্ধান পাওয়া যায়নি।’
তিনি আরও বলেন, ‘নিখোঁজ স্কুলছাত্রের সন্ধানে সাগরের বিভিন্ন পয়েন্টে বিচ কর্মী ও লাইফগার্ড কর্মীদের পাশাপাশি ট্যুরিস্ট পুলিশ সদস্যরাও উদ্ধার তৎপরতা চালায়।’ স্কুলছাত্রের মৃতদেহটি নিজের বাড়িতে রয়েছে বলেও জানান তিনি।
শেরপুরের চারটি পাহাড়ি নদীর উজানের পানি কিছুটা কমতে শুরু করেছে। তবে জেলার ভাটি এলাকায় নতুন করে আরও সাতটি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। এর মাধ্যে রয়েছে শেরপুর সদর ও নকলা উপজেলা। এ নিয়ে জেলার পাঁচটি উপজেলায় মোট ৩০টি ইউনিয়ন প্লাবিত হলো। জানা গেছে, গতকাল শনিবার রাত থেকেই প্লাবিত হতে শুরু করে নতুন এলাকাগুলো। জেলার গাজীরখামার, ধলা, পাকুরিয়া ও নকলা পৌর পুরো নকলা উপজেলাই বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে।
আজ রোববার সকালে শেরপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, জেলার ভোগাই নদীর পানি বিপদসীমার ৫৩ সেন্টিমিটার নীচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে এবং চেল্লাখালী নদীর পানিও ৫৩ সেন্টিমিটার নীচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ ছাড়া অপর দুটি পাহাড়ি নদী- মহারশি ও সোমেশ্বরী নদীর পানি বিপদসীমার নিচে রয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড আরও জানিয়েছে, বন্যার কারনে শেরপুর নাকুগাঁও স্থলবন্দর পরো স্থবির হয়ে পড়েছে। পানিতে তলিয়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। বিধ্বস্ত হয়েছে অসংখ্য গ্রামীণ পাকা-কাঁচা রাস্তা। তলিয়ে গেছে কৃষকের উঠতি আমনের খেত। ভেসে গেছে কাঁচা ঘর-বাড়ি।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নাকিবুজ্জামান খান বলেন, আগামীকাল সোমবারের ভেতর কমবে সব নদীর পানি, উন্নতি হবে বন্যা পরিস্থিতির। জেলা কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এ পর্যন্ত জেলার সাড়ে ৩৫ হাজার হেক্টর জমির আমন ধানের আবাদ পানিতে তলিয়ে গেছে। সাড়ে ৯শ হেক্টর জমির সবজির আবাদ পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে।
এদিকে, শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে বন্যার পানির স্রোতে নিখোঁজ হওয়া দুই ভাইয়ের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এ নিয়ে এই জেলায় বন্যায় সাত জনের মৃত্যু হলো। গতকাল শনিবার উপজেলার নন্নী ইউনিয়নের নিশ্চিন্তপুর কুতুবাকুড়া গ্রামের ফসলের মাঠ থেকে দুই ভাইয়ের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। নালিতাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ছানোয়ার হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
নিহতরা হলেন- হাতেম আলী (৩০) ও তার ভাই আলমগীর হোসেন (১৮)। তারা অভয়পুর গ্রামের মৃত বাছির উদ্দিনের ছেলে। এর আগে নালিতাবাড়ী ও ঝিনাইগাতীতে বন্যার পানিতে ডুবে মারা গেছে ইদ্রিস আলী, খলিলুর রহমান ও বাঘবেড় বালুরচর গ্রামের ওমিজা বেগমসহ ৫ জন।
নিহতের স্বজনরা জানান, গত শুক্রবার চেল্লাখালী নদীর পাহাড়ি ঢলের স্রোতের তোড়ে নিখোঁজ হন সহোদর দুই ভাই। এরপর থেকে তাদের সন্ধান পাওয়া যাচ্ছিল না। কুতুবাকুড়া গ্রামের দুইজন কৃষক গতকাল শনিবার বিকেলে ধানক্ষেতে তাদের মরদেহ পড়ে থাকতে দেখেন। পরে স্বজনরা গিয়ে মরদেহ শনাক্ত করেন।
জেলায় বন্যায় উদ্ধার কাজ অব্যাহত রয়েছে। জানা গেছে, সেনাবাহিনী, পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস, বিএনপি, জামায়াত ও স্বেচ্ছাসেবি সংগঠনের উদ্যোগে বন্যায় আটকে পড়াদের উদ্ধারে অভিযান চললেও পানির প্রবল স্রোত আর পর্যাপ্ত নৌযানের অভাবে ব্যাহত হচ্ছে উদ্ধার কাজ।
কেরাণীগঞ্জের রোহিতপুর বোর্ডিং মার্কেট এলাকায় রাস্তার পাশে রাখা চুলার আগুনে পুড়ে ৩ জন নিহত এবং ৫ জন আহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রোহিতপুর বোর্ডিং মার্কেটের ঘরোয়া রেস্টুরেন্ট থেকে এ আগুনের সূত্রপাত ঘটে। পরে একে একে আগুন ছড়িয়ে পড়ে দুটি বিরিয়ানির দোকান, একটি হার্ডওয়্যার ও একটি মুদি দোকানে।
এসময় ঘরোয়া রেস্টুরেন্টে আটকটা পড়ে তিনজন নিহত এবং ৫ জন আহত হয়েছে। খবর পেয়ে কেরানীগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের একটি দল আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। আহতদের উদ্ধার করে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী শাহ আলম জানান, দোকানের পাশে থাকা একটি ভ্যানগাড়িকে একটি ট্রাক ধাক্কা দিলে ভ্যানগাড়িটি পাশা থাকা গ্যাসে চুলা ও সিলিন্ডারে আঘাত করে। পরে এ আগুন দোকানের মুখ বন্ধ করে চারদিক ছড়িয়ে পড়ে। এসময় কিছু লোক শরীরে আগুন নিয়ে দৌড়ে বেড় হতে পারলেও ৩ জন আটকা পড়ে পুড়ে মারা যায়।
কেরানীগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন অফিসার মো. কাজল ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিশ্চিত করেছেন।
কেরানীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ হতে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন কেরানীগঞ্জ মডেল থানার সহকারী কমিশন (ভূমি) মোহাম্মদ রইছ আল রেজুয়ান। এসময় তিনি ক্ষতিগ্রস্তদের তাৎক্ষণিক সাহায্যের ঘোষণা দেন।
মৌসুমি বায়ু সক্রিয় থাকার ফলে দেশের সব বিভাগেই চার দিন ধরে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। বৃষ্টির ফলে ময়মনসিংহ, জামালপুর ও নেত্রকোনা জেলায় বন্যার আশঙ্কার কথা জানিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, আরও দুই দিন বৃষ্টিপাত চলবে। আগামীকাল রোববার থেকে বৃষ্টির প্রবণতা একটু কমতে পারে।
এদিকে অতি ভারি বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে আসা ঢলে শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ী উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। তবে আজ শনিবার দুপুরের পর আবার নদ-নদীর পানি কমে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে বলে জানিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টায় ভোগাই নদী শেরপুর জেলার নাকুগাঁও পয়েন্টে বিপৎসীমার ২০৫ সেন্টিমিটার এবং জিঞ্জিরাম নদীর পানি জামালপুরের গোয়ালকান্দা পয়েন্টে ২৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্র বলছে, ময়মনসিংহ বিভাগের ভোগাই-কংস, সোমেশ্বরী ও জিঞ্জিরাম নদীর পানি বাড়ছে, যা আজ (শনিবার) সকাল পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। এতে শেরপুরের ভোগাই নদীর ভাটিতে নেত্রকোনার কংস নদী ও জামালপুরের জিঞ্জিরাম নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে। ফলে ভোগাই-কংস নদী সংলগ্ন শেরপুর, ময়মনসিংহ ও নেত্রকোনা এবং জিঞ্জিরাম নদী সংলগ্ন জামালপুর জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে পারে।
পাউবোর বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘বৃহস্পতিবার রাতেই শেরপুর জেলার ভোগাই-কংস নদীর পানি দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পেয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় (শুক্রবার সকাল ৯টা পর্যন্ত) প্রায় সাড়ে ৬ মিটার পানি বেড়েছে এখানে। এর মূল কারণ শেরপুর জেলা ও সংলগ্ন সীমান্তবর্তী স্থানে এবং ভারতের মেঘালয় অঞ্চলে আকস্মিক ভারি বৃষ্টিপাত। শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ী উপজেলার নাকুগাঁও পয়েন্টে ২৬১ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।
শেরপুরের এই পানির প্রবাহের ফলে ভাটিতে ময়মনসিংহ ও নেত্রকোনা জেলাতেও ভোগাই-কংস নদীর পানিও বাড়ছে।’ বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্র বলছে, রংপুর বিভাগের তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদের পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ঢাকা জেলা এবং এর চারপাশের প্রধান নদীগুলো- বুড়িগঙ্গা, টঙ্গী খাল, তুরাগ ও বালু নদীর পানি সমতল স্থিতিশীল রয়েছে। আবহাওয়া সংস্থাসমূহের তথ্যানুযায়ী, আগামী ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত ঢাকা বিভাগে ভারী বৃষ্টিপাতের (২৪ ঘণ্টায় ৪৪ থেকে ৮৮ মিলিমিটার) প্রবণতা রয়েছে। আগামী পাঁচ দিন পর্যন্ত ঢাকা জেলা এবং এর চারপাশের নদীগুলোর পানি সমতলে ধীর গতিতে বৃদ্ধিসহ বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে।
অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও যথাযথ মর্যাদায় বিশ্ব শিক্ষক দিবস পালিত হয়েছে। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য বিষয়, ‘শিক্ষকের কণ্ঠস্বর: শিক্ষায় নতুন সামাজিক অঙ্গীকার’। এই প্রতিপাদ্য নিয়ে পিরোজপুরে পালিত হয় ‘বিশ্ব শিক্ষক দিবস, ২০২৪’। বিশ্ব শিক্ষক দিবস উপলক্ষে পিরোজপুরে র্যালী ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সার্কিট হাউস থেকে র্যালি শুরু হয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে গিয়ে শেষ হয়।
পরে দিবসটি পালন উপলক্ষে শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে শহীদ আব্দুর রাজ্জাক -সাইফ মিজান স্মৃতি সভা কক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
উক্ত আলোচনা সভায় পিরোজপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মো. আসাদুজ্জামান এর সভাপতিত্বে, প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন প্রশাসক মোহাম্মদ আশরাফুল আলম খান। এতে আরও বক্তব্য রাখেন, পিরোজপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার কুমারেশ চন্দ্র গাছি, জেলা শিক্ষা অফিসার মো. ইদ্রিস আলী আযিযী, সিনিয়র সাংবাদিক বীর মুক্তিযোদ্ধা ফিরোজ রব্বানী, মেডিকেল অফিসার ডা. মো. আরিফ হাসান, সরকারি সোহরাওয়ার্দী কলেজের ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক মো. হাবিবুল্লাহ হাওলাদার, সরকারি মহিলা কলেজের রসায়ন বিভাগের প্রভাষক রাশেদুল ইসলাম, পিরোজপুর ফাজিল মাদ্রাসার সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ ইলিয়াসুর রহমান প্রমূখ।
জামালপুরে ট্রাকের চাপায় ব্যাটারিচালিত ইজিবাইকের চালকসহ তিনজন নিহত হয়েছেন। আজ শুক্রবার সকালে শহরের টিউবওয়েলপাড় মোড় এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন- মেলান্দহ উপজেলার ঝাউগড়া ইউনিয়নের কাপাশহাটিয়া গ্রামের জয়নাল হোসেনের ছেলে ইজিবাইক চালক রোকন মাহমুদ (৪৫), ইজিবাইকের যাত্রী একই ইউনিয়নের শেখসাদী গ্রামের আব্দুস সোবাহানের ছেলে আব্দুল মালেক (৫৩) এবং জামালপুর সদর উপজেলার মেষ্টা ইউনিয়নের নয়াপাড়া গ্রামের মৃত আব্দুস সোবাহানের ছেলে মোস্তাফিজুর রহমান (৫৫)।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, জামালপুর সদর উপজেলার কেন্দুয়া কালিবাড়ী এলাকা থেকে একটি ইজিবাইকে করে তিন যাত্রী জামালপুর শহরের দিকে যাচ্ছিলেন। ইজিবাইকটি শহেরর টিউবয়েলপাড় মোড় এলাকায় পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি ট্রাকের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই ইজিবাইকের চালক রোকন মাহমুদ নিহত হন।
দুর্ঘটনার খবর পেয়ে আহত তিন যাত্রীকে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা উদ্ধার করে জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে আব্দুল মালেক নামে একজনকে মৃত ঘোষণা করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক। এ দিকে আহত মোস্তাফিজুর রহমান ও নাদের মিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক মোস্তাফিজুর রহমানকে মৃত ঘোষণা করেন এবং অপর যাত্রী নাদের মিয়ার অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জাানান।
জামালপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু ফয়সাল মো. আতিক বলেন, সড়ক দুর্ঘটনায় তিনজন নিহত হয়েছে। একজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে বাকি দুজন হাসপাতালে মারা গেছে, তাদের মরদেহ আনার জন্য কাজ চলছে। ঘাতক ট্রাকটি পালিয়ে যাওয়ায় আটক করা যায়নি। এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে বাস-ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে চারজন নিহত হয়েছেন। এছাড়া এ ঘটনায় আরও অন্তত আটজন আহত হয়েছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার (০৩ অক্টোবর) দিনগত রাত ১টার দিকে টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ সড়কের এলেঙ্গার কালিহাতী লিংক রোডে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
হতাহতদের পরিচয় এখনো পাওয়া যায়নি। এ দিকে এই দুর্ঘটনার পর যমুনা সেতুর সংযোগ সড়কে আজ সকাল পর্যন্ত তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।
এলেঙ্গা হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ নান্নু খান জানান, বৃহস্পতিবার দিনগত রাতে মহাসড়কের কালিহাতী লিংক রোডে একটি বাসের সঙ্গে ট্রাকের সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই বাসের চার যাত্রী নিহত হন। এ ঘটনায় আরও অন্তত আটজন আহত হয়েছেন। আহতদের উদ্ধার করে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তাদের মধ্যে তিনজনের অবস্থা গুরুতর।
তিনি আরও বলেন, আইনি প্রক্রিয়া শেষে মরদেহ তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে। এ ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন।
নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ায় বজ্রপাতে এক জেলের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে উপজেলার জাহাজমারা ইউনিয়নের আমতলী গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত পাকলু মাঝি (৩৬) উপজেলার জাহাজমারা ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের আমতলী গ্রামের এনায়েত হোসেনের ছেলে। তিনি ২ সন্তানের জনক ছিলেন।
স্থানীয়রা জানায়, সন্ধ্যার দিকে বাড়ি থেকে পাকলুসহ তিন জেলে মেঘনা নদীতে মাছ ধরার উদ্দেশ্যে রওনা দেন। যাত্রাপথে তারা উপজেলার আমতলী গ্রামে পৌঁছলে বজ্রপাতের শিকার হন। এতে পাকলু ঘটনাস্থলেই মারা যান। ওই সময় তার সাথে থাকা অপর দুই জেলে সামান্য আহত হন।
হাতিয়া থানার ওসির দায়িত্বে থাকা পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মনিরুজ্জামান বলেন, বিষয়টি কেউ থানাকে অবহিত করেনি। তবে এ বিষয়ে খোঁজ-খবর নেওয়া হবে।
মৌসুমি বায়ুর সক্রিয় থাকার কারণে চাঁদপুরে বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। অতি বৃষ্টিতে এখানকার জনজীবন প্রায় স্থবির হয়ে পড়েছে। গতকাল বুধবার সকাল ৯টা থেকে আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত চাঁদপুরে ৮৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
বৃষ্টির কারণে শহরের বিভিন্ন সড়কে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে খেটে খাওয়া দিনমজুর ও নিম্ন আয়ের লোকজনকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বেশি। বৃষ্টিতে ভিজেই স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসায় গেছে শিক্ষার্থীরা।
এ দিকে, বৃষ্টির কারনে সড়কে যানবাহন ও লোকজনের চলাফেরা ছিল কম। এ ছাড়া জেলার আগাম সবজি চাষে ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ। বৈরী আবহাওয়া থাকলেও ঢাকা-চাঁদপুর ও নারায়ণগঞ্জ রুটে ছোট-বড় সব ধরনের লঞ্চ চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।
চাঁদপুর আবহাওয়া অফিসের উচ্চ পর্যবেক্ষক শাহ্ মো. শোয়েবুল ইসলাম জানান, বুধবার সকাল ৯টা থেকে আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ১২ টা পর্যন্ত জেলায় ৮৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত বৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বাংলাদেশ ও তৎসংলগ্ন উত্তর বঙ্গোপসাগর এলাকায় একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে। সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা (২-৪) ডিগ্রি সেলসিয়াস হ্রাস পেতে পারে।
ধর্ষণের অভিযোগে এনে খাগড়াছড়িতে শিক্ষককে পিটিয়ে হত্যা এবং পরবর্তীতে তৈরি হওয়া সহিংসতার তদন্ত করেতে চার সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে।
আজ বুধবার খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক মো. সহিদুজ্জামান এই তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, খাগড়াছড়ির অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট তদন্ত কমিটির নেতৃত্ব দেবেন।
খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার (এসপি) মো. আরেফিন জুয়েল জানিয়েছেন, খাগড়াছড়ি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সপ্তম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীকে ধর্ষণ এবং সরকারি কাজে বাধা দেওয়া ও মারধরের অভিযোগে সদর থানায় দুটি মামলা দায়ের হয়েছে।
এদিন সকালে প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল ও খাগড়াছড়ি বাজার পরিদর্শন করেছেন। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত খাগড়াছড়ি থেকে ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার করা হয়েছে। আজ বিকেল ৩টার দিকে এ ঘোষণা দেন জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. শহীদুজ্জামান।
খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুজন চন্দ্র রায় গণমাধ্যমকে বলেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসায় ১৪৪ ধারা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিকেল ৩টা থেকে এ আদেশ কার্যকর করা হয়েছে।
এর আগে পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়িতে শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের অভিযোগে এক শিক্ষককে পিটিয়ে হত্যার পর পাহাড়ি ও বাঙালিদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে জেলা সদর এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করে জেলা প্রশাসন।
হত্যা মামলায় সিরাজগঞ্জ-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) জান্নাত আরা হেনরী ও তার স্বামী জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান শামীম তালুকদার লাবুকে সাত দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দিয়েছেন আদালত। সিরাজগঞ্জ চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রাসেল তালুকদার আজ বুধবার বিকেলে এ আদেশ দেন।
সিরাজগঞ্জে থানায় হওয়া যুবদল নেতা সোহানুর রহমান রঞ্জু হত্যা মামলায় জান্নাত আরা হেনরী ও শামীম তালুকদার লাবুকে আদালতে হাজির করে ১০ দিন রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করে পুলিশ। অপর দিকে আসামিপক্ষ থেকে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন বাতিল চেয়ে জামিনের আবেদন করা হয়। উভয় পক্ষের শুনানি নিয়ে আদালত তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এর আগে গত সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) মৌলভীবাজার জেলার বর্ষিজোড়া এলাকা থেকে সিরাজগঞ্জ-২ (সদর-কামারখন্দ) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য জান্নাত আরা হেনরী ও তার স্বামী শামীম তালুকদার লাবুকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে রয়েছে তিনটি হত্যা ও একটি অস্ত্র মামলা।
জানা যায়, সিরাজগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে গত ৪ আগস্ট সিরাজগঞ্জ শহরে বিএনপি ও যুবদলের তিন নেতা-কর্মী নিহত হন। এ ঘটনায় এমপি জান্নাত আরা হেনরী ও তার স্বামী জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান শামীম তালুকদার লাবুসহ আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের ৯ শতাধিক নেতা-কর্মীকে আসামি করে তিনটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। এ ঘটনায় নিহত জেলা যুবদলের সহ-সভাপতি সোহানুর রহমান রঞ্জু শেখের স্ত্রী মৌসুমি খাতুন, সিরাজগঞ্জ পৌর এলাকার গয়লা বিএনপি কর্মী নিহত আব্দুল লতিফের বোন সালেহা বেগম ও একই মহল্লার নিহত সুমন শেখের বাবা গঞ্জের আলী শেখ বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন।
অপরদিকে লাইসেন্স করা অস্ত্র ও গুলি সরকারি নির্দেশ মোতাবেক নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে জমা না দিয়ে নিজ দখলে রেখে লুকানোর চেষ্টা করায় ৮ সেপ্টেম্বর জান্নাত আরা হেনরী ও স্বামী শামীম তালুকদারের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে মামলা দায়ের করে পুলিশ। সিরাজগঞ্জ সদর থানার এসআই (নিরস্ত্র) কমল চন্দ্র বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। মোট চারটি মামলায় জান্নাত আরা হেনরী ও স্বামী শামীম তালুকদার এজাহারভুক্ত আসামি।
এর আগে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আদালতে আবেদন করেন। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জান্নাত আরা হেনরী, তার স্বামী শামীম তালুকদার ও মেয়ে মুনতাহা রিদায়ী লামের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারির আদেশ দেন আদালত।
নরসিংদীতে এক যুবককে কুপিয়ে গুরুতর আহত করার পর গলাকেটে তার মৃত্যু নিশ্চিত করেছে সন্ত্রাসীরা। নিহতের নাম হানিফ মিয়া। আজ দুপুর আড়াইটার দিকে নরসিংদী পৌর শহরের কাউরিয়াপাড়া ঈদগাহ মাঠের পাশে প্রকাশ্যে এ লোমহর্ষক ঘটনাটি ঘটে।
স্থানীয়রা জানান, হানিফকে ধাওয়া করে সেখানে নিয়ে গিয়ে হত্যাকারীরা এ ঘটনা ঘটায়। হত্যাকারীরা হানিফের পূর্ব পরিচিত ও নিকটাত্মীয় বলে ধারণা করা হচ্ছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হানিফকে ধারাল অস্ত্র দিয়ে কোপানোর সময় হত্যাকারীরা ‘তাদের বাবাকে হত্যার প্রতিশোধ’ নেওয়ার কথা বলছিল।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন ও বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, গত ১৯ আগস্ট নরসিংদী শহরের চৌয়ালা এলাকার বাসিন্দা মো. হাবিবুল্লাহ নামে এক ব্যক্তিকে সম্পত্তি নিয়ে বিরোধে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। ওই ঘটনায় অভিযুক্ত ছিলেন আজ নিহত হানিফ মিয়া। নানার বাড়ি থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া মায়ের সম্পত্তির বণ্টন নিয়ে দ্বন্দ্বে হাবিবুল্লাহকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ ছিল হানিফের বিরুদ্ধে। সম্পর্কে হাবিবুল্লাহ ছিলেন তার আপন মামা।
স্থানীয়রা জানান, হাবিবুল্লাহকে হত্যার ঘটনায় ভীষণ ক্ষুব্ধ হন তার দুই ছেলে নাইম ও নইম। তারাও খালাতো ভাই হানিফকে হত্যা করার ঘোষণা দেন। হাবিবুল্লাহকে হত্যার ৪৩ দিনের মাথায় অভিযুক্ত ‘ভাগ্নে’ হানিফকে আজ পূর্বপরিকল্পিতভাবে ঈদগাহ এলাকায় ধারাল অস্ত্র হাতে ধাওয়া করে কুপিয়ে হত্যা করে প্রতিশোধ নেয় হাবিবুল্লাহর ছেলেরা।
জনসম্মুখে অভিযোগ উঠেছে, মামাকে হত্যা করার প্রতিশোধে এই হত্যাকাণ্ড হয়েছে ‘হত্যার বদলে হত্যা’। অর্থাৎ হাবিবুল্লাহর ছেলে নাইম-নইম ধারাল অস্ত্র দিয়ে জনসম্মুখে প্রথমে কুপিয়ে আহত করে এবং পরে গলা কেটে হানিফের মৃত্যু নিশ্চিত করে চলে যায়।
এই ঘটনায় পুরো এলাকাজুড়ে ব্যাপক চাঞ্চল্যকর অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ ময়নাতদন্তের জন্য নরসিংদী সদর হাসপাতালে প্রেরণ করেছে।
নরসিংদী সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মো. এমদাদুল হক আজ সন্ধ্যায় জানান, স্থানীয়দের কাছে জানতে পেরেছি পূর্ব শত্রুতার জের ধরে এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। এখন পর্যন্ত কোনো অভিযোগ আসেনি। অভিযোগ এলে এ বিষয়ে মামলা নেওয়া হবে।