গত তিনদিনের টানা বৃষ্টিতে নাকাল হয়ে পড়েছে চুয়াডাঙ্গার জনজীবন। একই সঙ্গে দমকা বাতাস বৃষ্টিস্নাত আবহাওয়াকে আরও শীতল করে তুলেছে। আজ সোমবারও সকাল থেকে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। চুয়াডাঙ্গা শহরের শহীদ হাসান চত্বরসহ গুরুত্বপূর্ণ জনবহুল এলাকা প্রায় ফাঁকা দেখা গেছে। টানা বৃষ্টিতে ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে খেটে খাওয়া ছিন্নমূল মানুষগুলো। বৃষ্টিতে সময় মতো কাজে যেতে পারছেন না তারা। খুব প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছেন না কেউ।
চুয়াডাঙ্গা শহরের শহীদ হাসান চত্বরের ভ্যানচালক করিম আলী বলেন, ‘তিনদিন থেকে একটানা বৃষ্টি হচ্ছে, সঙ্গে দমকা বাতাসও। বৃষ্টির কারণে মানুষ বাইরে বের হচ্ছে না। সকাল থেকে কোনো ভাড়া হচ্ছে না। ভাড়া না হলে খাবো কী?’
চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, গত ২৪ ঘন্টায় চুয়াডাঙ্গায় ১০৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এসময় বাতাসের গড় গতিবেগ ছিল ঘন্টায় ৩০-৩৫ কিলোমিটার। তবে, আজ আবহাওয়ার কিছুটা উন্নতি হতে পারে বলেও আবহাওয়া বার্তায় বলা হয়।
এদিকে, গত তিনদিনের টানা বৃষ্টি ও দমকা বাতাসে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ফসলের। লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে ফসলের মাঠ। পানিতে তলিয়ে গেছে ধান, কলা, শিমসহ উঠতি ফসল। ধান, শিম, কলা, পেঁপেসহ অন্যান্য মৌসুমি ফসলের বেশি ক্ষতি হয়েছে। ফলে ব্যাপক লোকসানের মুখে পড়বেন বলে আশঙ্কা করছেন কৃষকরা। তবে, ক্ষতির সঠিক পরিমাণ নিরুপণ করতে পারেনি কৃষি বিভাগ।
দামুড়হুদা উপজেলার নতিপোতা গ্রামের কৃষক আবুল হাশেম বলেন, ‘বৃষ্টি আর দমকা বাতাসে আমার সব ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। আমার ধান ও কলার ক্ষেত ডুবে গেছে। যা খরচ করেছিলাম তা আর উঠবে না।’
এ বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মাসুদুর রহমান সরকার বলেন, ‘গত তিন দিনের প্রতিকূল আবহাওয়ায় ধান, পেঁপে, কলা, পান ও মৌসুমী সবজিসহ ৮টি ফসলের ৫ শতাংশ আক্রান্ত হয়েছে। তবে কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা এখনও বলা যাচ্ছে না। ক্ষয়ক্ষতি পরিমাণের কাজ চলছে।’
আজ বিকেলে খাগড়াছড়ি জেলার কমলছড়ি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে ছাত্রাবাস নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপদেষ্টা জনাব সুপ্রদীপ চাকমা।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের ছেলে-মেয়েরা খেলাধুলায় উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করছে। বিশেষ করে পাহাড়ি কন্যারা তাদের দক্ষতা ও প্রতিভা দিয়ে দেশ-বিদেশে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখছে, যা আমাদের জন্য অত্যন্ত গর্বের বিষয়। উপদেষ্টা আরও বলেন, দুর্গম পাহাড়ি এলাকাগুলোর রাস্তাঘাটের উন্নয়নের ফলে এখন মানুষ নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারছে এবং উৎপাদিত পণ্য সহজে পরিবহণ করা সম্ভব হচ্ছে।
উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা কমলছড়ি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের সংলগ্ন জীর্ণশীর্ণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনটি দ্রুত মেরামত ও পুনঃনির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন। শিক্ষার পরিবেশ উন্নয়নে ছাত্রাবাস নির্মাণের পাশাপাশি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর অবকাঠামোগত উন্নয়নের ওপরও গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
অনুষ্ঠান শেষে উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা পার্বত্য বৌদ্ধ মিশন (পিবিএম) কমপ্লেক্স পরিদর্শন করেন। তিনি সেখানে পার্বত্য বৌদ্ধ মিশন পালি কলেজ প্রাঙ্গণ, ম্যাপল হাউস গার্লস হোস্টেল এবং অনাথালয় ভবন ঘুরে দেখেন। বর্তমানে এসব প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। উপদেষ্টা এসব প্রতিষ্ঠান পুনরায় চালু করার লক্ষ্যে অনাথালয় পরিচালনা কমিটি গঠনসহ প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের জন্য খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, সদস্যবৃন্দ এবং স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।
উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা বলেন, সকল কাজের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি পার্বত্য অঞ্চলে আধুনিক ডিজিটাল শিক্ষা ব্যবস্থা চালু এবং স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোকে ইংলিশ ভার্সনে রূপান্তরের পরামর্শ দেন তিনি।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শেফালিকা ত্রিপুরা, উপদেষ্টার একান্ত সচিব (উপসচিব) খন্দকার মুশফিকুর রহমান, জেলা পরিষদের সদস্য এডভোকেট মঞ্জিলা, সদস্য কংজপ্রু মারমা, সদস্য প্রফেসর আবদুল লতিফ, সদস্য অনিময় চাকমা, সদস্য শহীদুল ইসলাম সুমন, সদস্য প্রশান্ত কুমার ত্রিপুরা, সদস্য বঙ্গমিত্র চাকমা এবং স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।
জাতীয়তাবাদী কৃষকদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম খান বাবুলের সাজা বাতিল ও নি:শর্ত মুক্তির দাবিতে ফরিদপুর জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান যুবদল নেতা বেনজির আহমেদ তাবরিজ এর নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার রাতে ফরিদপুর প্রেসক্লাব চত্বর থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়ে জনতা ব্যাংকের মোড়ে গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সেসময় ফরিদপুর জেলা ছাত্রদলের আরেক সাবেক সভাপতি ও ফরিদপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মো.সেলিম মিয়া সেলিম, মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মো. কাউয়ুম মিয়া, জেলা জাসাসের সাধারণ সম্পাদক আরিফুজ্জামান বকু, যুগ্ম সম্পাদক শহিদুল ইসলাম লিটন, বিএনপি নেতা শাহিন হক, জরিুলহক ঝন্টু, তামজিদ মোল্যা, বাচ্চু মোল্যা, মহানগর ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাব্বির হোসেন সাদ্দাম সহ অন্যান্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
সমাবেশে বক্তারা স্বৈরাচারী ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকারের আমলে দায়ের করা মিথ্যা মামলায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী কৃষকদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম খাঁন বাবুলকে কারাগারে পাঠানোর তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়ে বলেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে শহীদুল ইসলাম বাবুলকে মুক্তি দেওয়া না হলে বৃহত্তর ফরিদপুরে গণআন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
ফটিকছড়ি উপজেলার কাঞ্চননগর ইউনিয়নে চুরির আপবাদে মাহিন (১৪) নামে সপ্তম শ্রেণী পড়ুয়া এক স্কুল শিক্ষার্থীকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। শুক্রবার ভোর ৫ টার দিকে ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডের চেঙ্গুয়া ব্রিজ এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে।
মানিক ও রাহাত নামে দুই কিশোরকে বেড়ধক পেটানো হলে, তারা গুরুতর আহত হয়। পরে স্থানীয়রা এগিয়ে এসে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলেও মাহিন ঘটনাস্থলে প্রাণ হারায়।
নিহত মাহিন স্থানীয় কাঞ্চন নগর উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণীর ছাত্র এবং একই এলাকার সাগর আলী তালুকদার বাড়ির জনৈক লোকমানের ছেলে। স্থানীয়রা জানান, শুক্রবার ভোরে মাহিনসহ তিন কিশোর চেঙ্গার ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছিল। সেসময় কয়েকজন কিশোর দৌড়ে এসে তাদের ধাওয়া করে। প্রাণ ভয়ে তিনজন পাশ্ববর্তী একটি নির্মাণাধীন ভবনের ছাদে আশ্রয় নেয়। হামলাকারীরা ছাদে উঠে জোরপূর্বক তাদের নিচে নামিয়ে এনে ব্রিজের উপর বেধড়ক মারধর করে সটকে পড়ে। এতে ঘটনাস্থলে মাহিনের মৃত্যু ঘটে। গুরুতর আহত দুজনকে স্থানীয়রা উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন।
আহতদের পরিবারের অভিযোগ, মানিক ও রাহাত আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিল। চোর সন্দেহে তাদের উপর এমন নৃশংস হামলা চালানো হয়েছে। আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক বিচার দাবি করছি। ফটিকছড়ি থানার ওসি নুর আহমদ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ইতোমধ্যে পুলিশ ওই এলাকায় অভিযান চালিয়ে সন্দেহজনকভাবে নোমান ও আজাদ নামে দুইজনকে আটক করেছে। কেন, কী কারণে এ ঘটনা ঘটেছে তা গভীরভাবে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে পুলিশের পৃথক দুটি মাদকবিরোধী অভিযানে বিপুল পরিমাণ গাঁজা ও ইয়াবাসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত বুধবার রাতে উপজেলার সলিমগঞ্জ ও মিরপুর এলাকায় এ অভিযান দুটি পরিচালিত হয়।
পুলিশ জানায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে নবীনগর থানার এএসআই শরিফুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি দল সলিমগঞ্জ বাজার সংলগ্ন মেঘনা নদী-সংলগ্ন খাল এলাকায় অভিযান চালিয়ে এক পুরুষ ও চার নারীকে আটক করে। সেসময় তাদের সঙ্গে থাকা ব্যাগ তল্লাশি করে ১২ কেজি গাঁজা উদ্ধার করা হয়। আটককৃতরা হলেন মো. আরিফুল ইসলাম (৪২) ও তার স্ত্রী বিলকিস বেগম (৩৭), বাড়ি: গৌরীপুর, ময়মনসিংহ নাজমা (২৬), বাড়ি: পঞ্চগড় মাইমুনা (২২), বাড়ি: আশুলিয়া, ঢাকাআমেনা (২৭), বাড়ি: বগুড়া । একই রাতে নবীনগর থানার এসআই শাহ আলমের নেতৃত্বে আরেকটি দল মিরপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে স্থানীয় মাদক ব্যবসায়ী আব্দুল জব্বার মোল্লা (৪৮) কে আটক করে। তার দেহ তল্লাশি করে ২৬০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট এবং মাদক বিক্রির নগদ ৩,৫০০ টাকা উদ্ধার করা হয়।
এ বিষয়ে নবীনগর থানার ওসি শাহিনুর ইসলাম বলেন, ‘দুটি পৃথক অভিযানে মোট ১২ কেজি গাঁজা, ২৬০ পিস ইয়াবা ও নগদ অর্থ উদ্ধার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে দুটি পৃথক মামলা রুজু করা হয়েছে।’
গ্রেপ্তারকৃতদের গত বৃহস্পতিবার বিকেলে আদালতের মাধ্যমে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা কারাগারে পাঠানো হয়।
নেত্রকোনার হৃদয়ে একসময় মানুষের স্বপ্ন, ভরসা আর যাতায়াতের অন্যতম মাধ্যম ছিল লঞ্চ। নেত্রকোনা পৌর এলাকার মালনী রোড সংলগ্ন মগড়া নদীর তীরে গড়ে ওঠা সেই পুরানো লঞ্চঘাট এখন শুধুই স্মৃতিচিহ্ন বহন করে যাচ্ছে। এই লঞ্চঘাট ঘিরে একসময় গড়ে উঠেছিল পাটপট্রি এলাকায় অসংখ্য পাট গুদাম ও ধানের বড় বড় গুদাম ঘর। বিভিন্ন এলাকা থেকে বড়-ছোট নৌকা আর লঞ্চ আসত এই ঘাটে। অপরিকল্পিত নৌযোগাযোগের কারণে আজ বিলীন হয়েছে এই লঞ্চ ঘাটটি। মগড়া নদী বয়ে গেছে সদর দেওপুর, লক্ষীগঞ্জ, আটপাড়া কোনাপাড়া, ব্রোজের বাজার, নাজিরগঞ্জ বাজার হয়ে মদন দেওয়ান বাজার ও মদন বাজার পর্যন্ত। আর এই রুটেই লঞ্চ দিয়ে যাত্রী ও মালামাল পৌঁছাত নির্বিঘ্নে। তখনকার দিনগুলোতে সড়ক যোগাযোগের অবস্থা ছিলো খুবই দুর্বল, তাই মানুষ স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতো লঞ্চ ভ্রমণ করতে। লঞ্চঘাটে ভিড় জমতো সকাল-বিকেলে। এখানে যাত্রী ওঠা-নামার ভিড়, নদীর ঢেউ আর হুইসেলের শব্দে সরগরম হয়ে উঠত পুরো এলাকা। ছোট্ট ছোট্ট শিশুরা নদীর পাড়ে দৌড়ে এসে লঞ্চ দেখত, আনন্দে হাত নেড়ে যাত্রীদের বিদায় জানাত ছোট-ছোট শিশুরা। সেইসব মুহূর্ত আজ কেবলই স্মৃতি হয়ে রয়েছে। কালের আবর্তে সেই লঞ্চ সেবা হারিয়ে গেছে এলাকা থেকে। নদী নিয়মিত খনন না হওয়া, আর এর উপর অপরিকল্পিতভাবে নিচু ব্রিজ নির্মাণ করায় এখন নৌকা বা ট্রলারও চলাচল করতে পারছে না। ফলে একসময়কার নদীপথের প্রাণচাঞ্চল্য নিভে গেছে। এলাকার মানুষের এখন সড়কপথই প্রধান ভরসা। কিন্তু সড়ক দুর্ঘটনা বেড়েছে, অর্থনৈতিক ক্ষতিও হচ্ছে সমষ্টিগতভাবে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, যদি নদী পথটিকে পুনরুজ্জীবিত করা যায়, তবে যাত্রী ও পণ্য পরিবহনে যেমন বিকল্প সুবিধা মিলবে, তেমনি সড়কের চাপও কমবে। নেত্রকোনার লঞ্চঘাট তাই এখন কেবলই মানুষের স্মৃতিতে বেঁচে আছে। পুরোনো দিনের সেসব কোলাহল, শিশুদের হাসি আর যাত্রীদের ভরসা সবকিছুই সময়ের স্রোতে হারিয়ে গেছে।
৫০ শয্যা থেকে ১০০ শয্যা, পরবর্তীতে ১০০ শয্যা থেকে ২৫০ শয্যায় উন্নিতকরণ হওয়ায় চিকিসাসেবায় আশার আলো দেখেছিল নড়াইলের আমজনতা। কিন্তু সুচিকিৎসার একমাত্র ভরসাস্থল এখন নকশা জটিলতার গ্যাড়াকলে। ১০০ শয্যা থেকে ২৫০ শয্যায় উন্নিতকরণ প্রকল্পের কাজ দেড় বছর মেয়াদের ভবনের কাজ ৭ বছরেও শেষ হয়নি। ফলে জেলার ৮ লাখ মানুষের উন্নত চিকিৎসাসেবার একমাত্র ভরসাস্থল নির্মাণাধীন হাসপাতাল ভবনটি এখন রোগীদের কাতারে। তবে থেমে নেই ১০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম।
সরেজমিন দেখা গেছে, নড়াইল জেলা শহরের ১০০ শয্যার হাসপাতালে প্রতিদিনই প্রায় ৪শ থেকে সাড়ে ৪শ রোগী সেবা নিতে আসে। আর হাসপাতালের শয্যা সংকটে রোগীরা চিকিৎসা নিচ্ছেন বারান্দা, সিড়িঘর, করিডোরে। এসব রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসক ও নার্সরা।
আবার কোনো কোনো বেডে একাধিক রোগীকে রাত যাপন করতে দেখা গেছে। নিয়মনীতির যেন, কোনো বালাই নেই। যদি হয় সুজন-তেতুল পাতায় নয়জন এমন প্রবাদ বাক্যটি এখন হাসপাতালের রোগীদের বিছানার জন্য খুবই উপযোগী।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত ২০১৮ সালের জুন মাসে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের ৮ তলা পর্যন্ত ভবনের নির্মাণকাজ শুরু হয়। যার প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয় ৪০ কেটি টাকা। তিন দফা মেয়াদ বাড়িয়েও নির্মাণকাজ শেষ করতে পারেনি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানটি। এদিকে, নকশা পরিবর্তন আর সংশ্লিষ্ট বিভাগের অসহযোগিতাকে দায়ী করছেন ঠিকাদার। ৯ তলার কাজ মাত্র শুরু করেছেন আরেক ঠিকাদার ।
গণপূর্ত বিভাগ জানায়, একটি মাত্র লিফ্ট দিয়ে শুরু হয় ৭ তলা ভবনের নির্মাণকাজ। নকশা পরিবর্তনের পর প্রথমে ৮ম তলা ভবন নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ম্যাকানিক্যাল ইকুয়েপমেন্ট ও চিকিৎসকদের চেম্বারের জন্য ৬ তলা ভবন নির্ধারণ করা হয়। আর ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রিভাইস ওসি পাশ হয়। নতুন করে বসানো হয় আরো তিনটি লিপ্ট। নবম তলায় হওয়ার কথা ১০ শয্যার আইসিইউ।
অভিযোগ করা হচ্ছে, ভবনের কাজ সম্পন্ন হলেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে নির্মাণাধীন নতুন ভবন হস্তান্তর করছে না গণপূর্ত বিভাগ। গণপূর্ত বিভাগের টালবাহনা করার কারণে হতাশ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে গত ২০২৪ সালের ২৭ এপ্রিল বিকেলে নড়াইলের ১০০ শয্যার হাসপাতালকে ২৫০ শয্যায় উন্নিতকরণ কাজের উদ্বোধন করেন তৎকালীণ স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন। উদ্বোধনের এই কর্মকান্ডটি জনমনে নানা প্রশ্নের জন্ম দেয়। তারা বুঝতেই পারছেন না এই অনুষ্ঠান আযোজনের উদ্দেশ্য কি? তাদের অভিমত হাসপাতালের নতুন ভবন উদ্বোধন, না নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করার জন্য অনুষ্ঠান টা ছিল এটি!।
ওই দিন মন্ত্রী মহোদয় ফলক উন্মেচনের পর ফিতা কেটে ২৫০ শয্যা হাসপাতাল ভবনের উদ্বোধন করেন। মন্ত্রীর সঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডাঃ আবুল বাশার মো. খুরশীদ আলম, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাসচিব অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেরিনা ফ্লোরা, নড়াইল-২ আসনের সাবেক সাংসদ মাশরাফি বিন মোর্ত্তজাসহ ফ্যাসিষ্ট আওয়ামী সরকারের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
ওইদিন নেতাকর্মীদের ভিড়ে উদ্বোধনের ছবিই তোলা দুষ্কর হয়ে পড়ে সাংবাদিকদের। হাসপাতাল চত্বরে এখন আর নেতাকর্মীদের সেই ঠেলাঠেলি নেই। তবে রোগীদের ঠেলা-ঠেলিতে হাসপাতাল নিজেই এখন অসুস্থ ।
নড়াইল জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মো. তারিকুজ্জামান লিটু বলেন, ফ্যাসিষ্ট আওয়ামী সরকারের প্রতিটি সেক্টরে ছিল দূর্ণীতিতে ঠাসা। তাদের আমলে যেখানে যে কাজ হয়েছে, তা কল্যাণকর ছিল না। অক্টোপাসের মত সব গিলে খেয়েছে ফ্যাসিষ্ট আওয়ামী সরকারের নেতা-কর্মীরা। তারিকুজ্জামান লিটু আশাবাদী এই বাংলার মাটিতেই আওয়ামী সরকারের বিচার হবে। অপরাধীরা কেউই রেহাই পাবে না।
নড়াইলের সিভিল সার্জন ডা. আব্দুর রশীদ বলেন, গোড়া থেকেই গলদ রয়েছে ভবন নকশার। যে কারণে ভবন নির্মাণ কাজের শেষ মুহূর্তে বিষয়টি নজরে আসে। নকশা সংযোজন কিংবা পরিবর্তন করে খুব তাড়াতাড়ি আমাদের কাছে হস্তান্তর করবে এমনটাই আশা প্রকাশ করেন তিনি।
কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার শ্রীকাইল ইউনিয়ন স্বাস্থ্য উপকেন্দ্রে একজনও নেই জনবল। সৃষ্ট ৬টি পদ থাকলেও সবকয়টি পদই শূন্য। জনবলের অভাবে স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত ইউনিয়নের প্রায় ৩৫ হাজার মানুষ। স্বাস্থ্যকেন্দ্রের এই ভঙ্গুর দশা নিয়ে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। তাদের দাবি জনবল নিয়োগ দিয়ে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা হউক। সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, শ্রীকাইল ইউনিয়ন স্বাস্থ্য উপকেন্দ্রটি বন্ধ। নেই কোনো চিকিৎসক।
রোগী এসে ফেরত চলে যাচ্ছেন।
স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সামনেই মলমূত্র ত্যাগ করছেন মানুষ। প্রস্রাব ও আবর্জনার তীব্র গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে চারপাশে। রেগীরা সুস্থ হতে এসে আরো বেশি অসুস্থ হওয়ার আশঙ্কায় ভুগছেন।
শ্রীকাইল ইউনিয়নের ভূতাইল গ্রামের সুজন মুন্সি (২৮) বলেন, প্রতিদিন শত শত রোগী এসে চিকিৎসা সেবা না পেয়ে ফেরত যায়। এদের মধ্যে বেশিরভাগ রোগী খুবই দরিদ্র।
স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ডাক্তার নাই। বাউন্ডারি নাই। দুটি ভবন পুরোপুরি পরিত্যাক্ত। চারদিকে খোলা মেলা ও ঝোপঝাড় থাকায় এটি এখন জনসাধারণের নিরাপদ প্রস্রাব কেন্দ্র। তৃণমূলের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে হাসপাতলটি চালু করা খুবই জরুরি।
স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পাশের বাড়ীর তাজুল ইসলাম (৬০) জানান, যেকোনো রোগের প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য শ্রীকাইল স্বাস্থ্য উপকেন্দ্রই একমাত্র ভরসা। শ্রীকাইল থেকে মুরাদনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দূরত্ব প্রায় ১৫ কিলোমিটার। জেলার দূরত্ব ৫০ কিলোমিটার। হঠাৎ কেউ অসুস্থ হলে তাকে উপজেলা কিংবা জেলায় পৌঁছানোর আগে মৃত্যুর কোলে ঢলে যায়।
সোনাকান্দা বহুমুখী কামিল মাদ্রাসার অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মফিজুল ইসলাম জানান, ১ নং শ্রীকাইল ইউনিয়নে প্রায় ৪০ হাজার মানুষের বসবাস। ইউনিয়নবাসীর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে স্বাধীনতার পূর্বে শ্রীকাইলে দাতব্য প্রতিষ্ঠান হিসেবে এটি চালু করা হয়। সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে নামেরও পরিবর্তন হয়েছে। বর্তমান নাম ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র। চিকিৎসক না থাকায় কেন্দ্রটি প্রায়ই বন্ধ থাকে। এ কারণে হাজার হাজার রোগী চিকিৎসাসেবা বঞ্চিত থেকে হচ্ছে।
এদিকে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের তিনটি ভবনই পরিত্যক্ত। জরাজীর্ণ একটি কক্ষে সপ্তাহে দুদিন বসে রোগী দেখেন অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার মাজহারুল ইসলাম। তিনার কর্মস্থল রামচন্দ্রপুর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য উপকেন্দ্র।
অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা মাজহারুল ইসলাম জানান, রোগীর চাহিদা আছে। প্রতি সোম ও বৃহস্পতিবার সকাল ১০ টা থেকে ১ টা পর্যন্ত রোগী দেখেন। গড়ে প্রতিদিন ১’শ রোগী দেখা হয়। জনবলের অভাবে রোগীরা এসে ফিরে যায়। সরকার নতুন করে সৃষ্ট পদসমূহে জনবল বাড়িয়ে দিলে স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব। এছাড়াও অবকাঠামো উন্নয়ন প্রয়োজন।
স্থানীয়রা জানান, মুরাদনগরের বিভিন্ন ইউনিয়নে এমন চিত্র আরো আছে, আন্দিকোট, আকুবপুরসহ অন্যান্য ইউনিয়নগুলোতে স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত সাধারণ মানুষ।
মুরাদনগর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সিরাজুল ইসলাম মানিক বলেন, স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি জনবল শূণ্য হওয়ায় চিকিৎসাসেবা ব্যবহত হচ্ছে। আমরা চাহিদা দিয়ে রাখছি। নিয়োগ হলেই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ইতিহাসে কিছু আয়োজন সময়কে ছাপিয়ে যায়। ‘নতুন কুঁড়ি’ তেমনই একটি নাম, একটি অনুভূতি, একটি আন্দোলন। একটি সময় ছিল, যখন শুক্রবার মানেই শিশু-কিশোরদের প্রাণের অনুষ্ঠান ‘নতুন কুঁড়ি’। টেলিভিশনের পর্দায় সেই চেনা গান ‘আমরা নতুন, আমরা কুঁড়ি’- এই গানটি শোনা মানেই নতুন প্রতিভা খোঁজার সূচনা। বাংলার ঘরে ঘরে এটি শুধু একটি শিশু-কিশোর প্রতিযোগিতা ছিল না, বরং হয়ে উঠেছিল এক সাংস্কৃতিক আন্দোলন।
দীর্ঘ প্রায় ২০ বছর বন্ধ থাকার পর সেই অনুষ্ঠান আবারও ফিরছে বাংলাদেশ টেলিভিশনের পর্দায়। এর ফলে দেশের সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে নতুন করে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে। নতুন কুঁড়ি হচ্ছে শিশু শিল্পীদের জন্য বাংলাদেশি রিয়েলিটি টেলিভিশন প্রতিযোগিতা।
নতুন কুঁড়ি বাংলাদেশ টেলিভিশনে শুরু হওয়ার প্রথম বছর থেকেই দেশজুড়ে ব্যাপক সাড়া ফেলে দিয়েছিল। শিশুদের কণ্ঠে আবৃত্তি, শুদ্ধ উচ্চারণে গান, মনোমুগ্ধকর অভিনয় আর হৃদয়ছোঁয়া নৃত্য- এসব যেন দর্শকদের নতুন আশায় ভরিয়ে তুলেছিল। এটি শুধু একটি প্রতিযোগিতা ছিল না, ছিল শিশুদের শিল্পী হয়ে ওঠার প্রথম পাঠশালা।
এই অনুষ্ঠানের মঞ্চ থেকে উঠে এসেছেন অসংখ্য গুণী শিল্পী। আজ যারা বাংলাদেশের নাটক, সংগীত, নৃত্যসহ সংস্কৃতির প্রতিটি ক্ষেত্রে উজ্জ্বল নক্ষত্র, তাদের অনেকেরই যাত্রা শুরু ‘নতুন কুঁড়ি’ থেকে।
নুসরাত ইমরোজ তিশা, রুমানা রশিদ ঈষিতা, মেহের আফরোজ শাওন, কনকচাঁপা, শামীমা ইয়াসমিন দিবা, রাহাত আজিম, আজাদ রহমান শাকিল, আজমিরী সুলতানা হলী, সিহান মনিরুল হাসান, শাহনাজ চৌধুরী লুনা, রুদাবা আদনীন কুমকুম, গায়ক সামিনা চৌধুরী, হেমন্তী রক্ষিত দাস, নৃত্যশিল্পী চাঁদনী- এমন অসংখ্য পরিচিত মুখ এই প্রতিযোগিতার পথ ধরে উঠে এসেছেন। কেউ সংগীতে, কেউ অভিনয়ে, কেউ আবার নৃত্যে নিজের দক্ষতা প্রমাণ করেছেন। তাদের অনেকে আজ জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক পরিচয় বহন করছেন।
দীর্ঘ প্রায় ২০ বছর বন্ধ থাকার পর ফের শুরু হতে যাওয়া নতুন কুঁড়ি অনুষ্ঠানে আনা হয়েছে আধুনিক কাঠামোগত পরিবর্তন। এক্ষেত্রে পুরো দেশকে ভাগ করা হয়েছে ১৯টি অঞ্চলে। প্রতিটি অঞ্চলে অনুষ্ঠিত হবে আঞ্চলিক বাছাইপর্ব। এরপর নির্বাচিত প্রতিযোগীরা ঢাকায় এসে অংশ নেবেন চূড়ান্ত পর্বে। অংশগ্রহণকারীদের বয়সভিত্তিক দুটি শাখায় ভাগ করা হয়েছে-‘ক’ (৬-১১ বছর) এবং ‘খ’ (১১-১৫ বছর)। প্রতিযোগিতা করা যাবে সর্বোচ্চ তিনটি বিষয়ে।
প্রতিযোগিতার বিভাগগুলোকে আরও বিস্তৃত করা হয়েছে। এবারের বিভাগগুলো হল- দেশাত্মবোধক গান, আধুনিক গান, রবীন্দ্রসংগীত, নজরুলসংগীত, লোকসংগীত, হামদ-নাত, অভিনয়, আবৃত্তি, গল্প বলা, কৌতুক, সাধারণ নৃত্য ও উচ্চাঙ্গ নৃত্য। প্রতিটি বিভাগে থাকবে অভিজ্ঞ ও স্বনামধন্য বিচারক প্যানেল। এছাড়া অনুষ্ঠানটি আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে সম্প্রচার করা হবে, যাতে দেশের প্রতিটি প্রান্ত থেকে মানুষ অংশগ্রহণকারীদের সৃজনশীলতা দেখতে পান।
শিল্প-সাহিত্য একটি জাতির আত্মাকে গড়ে তোলে। ‘নতুন কুঁড়ি’ সেই আত্মগঠনের অন্যতম মাধ্যম। এটি শিশুদের মধ্যে শুধু প্রতিভা বিকাশই করে না, পাশাপাশি শৃঙ্খলা, আত্মবিশ্বাস ও জাতীয়তাবোধও গড়ে তোলে। শিশুরা শেখে দলবদ্ধভাবে কাজ করা, অন্যের প্রতিভাকে সম্মান করা এবং নিজস্ব সংস্কৃতিকে ভালোবাসা।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, দীর্ঘদিন ধরে এ ধরনের প্ল্যাটফর্মের অভাবের কারণে শিশুরা বিকল্প বিনোদন ও অনলাইন নির্ভরতায় ঝুঁকছে। ‘নতুন কুঁড়ি’র পুনর্জাগরণ তাই শুধু বিনোদনের ক্ষেত্রেই নয়, বরং প্রজন্মকে সঠিক সাংস্কৃতিক চর্চায় ফিরিয়ে আনারও এক মহৎ উদ্যোগ।
১৯৭৬ সালে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এবং সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব মোস্তফা মনোয়ারের উদ্যোগে ‘নতুন কুঁড়ি’র যাত্রা শুরু হয়। অনুষ্ঠানটির নামকরণ করা হয় কবি গোলাম মোস্তফার ‘কিশোর নামক’ কবিতার অনুপ্রেরণায়। উদ্দেশ্য ছিল- দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে প্রতিভাবান শিশুদের খুঁজে বের করে জাতীয় পর্যায়ের একটি মঞ্চে তুলে আনা, যেন তারা নিজস্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের আলোয় আলোকিত হয়ে উঠতে পারে।
তবে ২০০৬ সালে হঠাৎ করেই বন্ধ হয়ে যায় এই অনুষ্ঠান। দীর্ঘ প্রায় ২০ বছর ধরে এমন আয়োজনের অনুপস্থিতি শুধু সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলেই নয়, শিশুদের মানসিক বিকাশেও একটি বড় শূন্যতা তৈরি করে। দীর্ঘ এই সময়ে জাতীয় পর্যায়ের তেমন কোনো শিশু-কিশোর সাংস্কৃতিক প্ল্যাটফর্ম গড়ে ওঠেনি, যার ফলে অনেক সম্ভাবনাময় প্রতিভা হারিয়ে গিয়েছিল নীরবে।
অবশেষে সেই প্রতীক্ষার অবসান ঘটে ২০২৫ সালের ১৭ আগস্ট। নতুন রূপে, আধুনিক কাঠামোয় এবং বিস্তৃত পরিকল্পনায় ‘নতুন কুঁড়ি ২০২৫’-এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. মাহফুজ আলম। উদ্বোধনী বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক বিভাজনের ঊর্ধ্বে গিয়ে আমাদের শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতির এই আয়োজন আগামী প্রজন্মকে সৃজনশীল করে গড়ে তুলবে। এটি একটি নতুন যুগের সূচনা।’
প্রথম থেকেই এই আয়োজন জনগণের ব্যাপক সাড়া পেয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফিরে এসেছে নস্টালজিয়ার ঢেউ। প্রাক্তন প্রতিযোগীরা স্মৃতিচারণ করে লিখছেন- ‘শৈশবের শুক্রবারগুলো যেন নতুন কুঁড়িকে ঘিরেই ছিল।’ কেউ আবার বলছেন, ‘আমার জীবনের প্রথম মঞ্চে ওঠা, সাহস পাওয়ার জায়গা ছিল এই নতুন কুঁড়ি অনুষ্ঠান।’
বাংলাদেশের জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী কনকচাঁপা এই অনুষ্ঠানকে ঘিরে নিজের শৈশব স্মৃতির কথা বলেন, ‘১৯৭৮ সালে আমি মাত্র সাত বছর বয়সে নতুন কুঁড়িতে অংশ নিই এবং দেশাত্মবোধক গানে প্রথম স্থান অর্জন করি। সেই আনন্দ আজও আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ স্মৃতিগুলোর একটি।’ তিনি বলেন, ‘নতুন কুঁড়ি আগের মতোই শিশুদের স্বপ্ন গড়ার প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করবে। শুধু পুরস্কারের আশায় নয়, স্বীকৃতির জন্য এই প্রতিযোগিতার প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।’
১৯৭৭ সালে ‘ক’ গ্রুপে একক অভিনয়ে প্রথম এবং ১৯৭৮ সালে ছড়াগানে প্রথম হয়ে ‘নতুন কুঁড়ি’র মঞ্চে জায়গা করে নিয়েছিলেন আজাদ রহমান শাকিল। সেই মধুর স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি বাসস’কে বলেন 'দীর্ঘ প্রায় ২০ বছর পর আবারও ‘নতুন কুঁড়ি’ শুরু হচ্ছে এটা আমার জন্য এক অশেষ আনন্দের বিষয়। এই অনুষ্ঠান শুধু একটি প্রতিযোগিতা নয়, বরং প্রতিটি শিশুর ভেতরে লুকিয়ে থাকা প্রতিভা আবিষ্কারের এক মহামঞ্চ। আমি নিজেও এই মঞ্চ থেকে উঠে আসার সৌভাগ্য অর্জন করেছি। তাই খুব ভালোভাবেই জানি, একটি শিশুর জীবন ও ভবিষ্যৎ গঠনে ‘নতুন কুঁড়ি’ কতটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
তিনি বলেন, আজকের শিশু, তারাই আগামী দিনের আলোকবর্তিকা। এই শিশুদের হাত ধরেই গড়ে উঠবে আমাদের সোনালী ভবিষ্যৎ। তাদের চোখের স্বপ্ন, তাদের কণ্ঠের গান, তাদের অভিনয় আমাদের জাতির সম্ভাবনার প্রতীক। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, নতুন কুঁড়ির এ নবযাত্রা আবারো জাতিকে দেবে অসাধারণ সব শিল্পী, যারা আগামী প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।
বিটিভির মহাপরিচালক মো. মাহবুবুল আলম নতুন কুঁড়ির এই প্রত্যাবর্তনকে একটি ‘সাংস্কৃতিক জোয়ার’ হিসেবে অভিহিত করে বাসস’কে বলেন, ‘নতুন কুঁড়ি কেবল একটি প্ল্যাটফর্ম নয়, এটি একটি জাতীয় সাংস্কৃতিক আন্দোলন। এটি সারাদেশের শিশু-কিশোরদের শিল্প-সংস্কৃতির চর্চায় যুক্ত করবে, প্রযুক্তির আসক্তি থেকে ফিরিয়ে আনবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান নতুন কুঁড়িকে জাতীয় পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিলেন। পরবর্তীতে বিভিন্ন রাজনৈতিক জটিলতায় অনুষ্ঠানটি বন্ধ হয়ে যায়, যা ছিল খুবই দুঃখজনক। তবে এখন আমরা নতুন করে পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছি, যাতে এই অনুষ্ঠান নিয়মিতভাবে হয় এবং আগামীর প্রতিভাবান প্রজন্ম সামনে চলে আসে।’
এছাড়া নতুন কুঁড়ি অনুষ্ঠানের বিচারিক প্যানেলের বিচারপ্রক্রিয়া যেন স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ হয়, সেদিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এক্ষেত্রে বিচারক নির্বাচনেও কঠোর মানদণ্ড বজায় রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। কনকচাঁপা বলেন, ‘শিল্পচর্চা বাণিজ্যিক হলে তার মাধুর্য নষ্ট হয়। তাই নতুন কুঁড়িতে যোগ্যতাই হবে একমাত্র মাপকাঠি।
স্বজনপ্রীতির কোনো সুযোগ যেন না থাকে, সেদিকে সতর্ক থাকতে হবে।’
অনুষ্ঠানটির উদ্দেশ্য কেবল জাতীয় পর্যায়ে শিল্পী তৈরি করা নয়, বরং দেশব্যাপী সংস্কৃতিমনা মানুষ তৈরির মাধ্যমে জাতির সাংস্কৃতিক ভিত্তিকে মজবুত করা। ‘নতুন কুঁড়ি’র প্রথম আয়োজনেই দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ৯ হাজারের বেশি খুদে শিল্পী অংশ নিয়েছিল। তাদের অনেকেই পরে স্থানীয় সাংস্কৃতিক সংগঠন ও প্রশিক্ষণকেন্দ্রে সক্রিয় থেকেছেন।
নতুন কুঁড়ির মূল সাফল্য শুধু একটি প্রতিযোগিতা আয়োজনে নয়, বরং সারাদেশে সাংস্কৃতিক চর্চার একটি বিস্তৃত ধারার সূচনা করা। এটি এক ধরনের সাংস্কৃতিক প্রক্রিয়া, যা জাতীয় জীবনে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলে। শিশুরা যখন মঞ্চে উঠে, তখন শুধু গান বা আবৃত্তিই করে না- তারা আত্মবিশ্বাস, নেতৃত্ব, জাতীয়তাবোধ ও দলবদ্ধ কাজের শিক্ষা গ্রহণ করে।
অভিভাবকরাও এ নিয়ে উচ্ছ্বসিত। এক অভিভাবক বলেন, ‘আমার সন্তান ছোট শহরে বড় হচ্ছে। জাতীয় মঞ্চে ওঠার এমন সুযোগ ওর জীবনে বড় পরিবর্তন আনবে।’
প্রায় ২০ বছর পর ফিরে আসা ‘নতুন কুঁড়ি’ কেবল একটি অনুষ্ঠানের পুনরারম্ভ নয়, বরং একটি ঐতিহ্যের পুনর্জন্ম। সব মিলিয়ে বলা যায়, ‘নতুন কুঁড়ি ২০২৫’ শুধু একটি অনুষ্ঠান নয়, এটি হারিয়ে যাওয়া এক ঐতিহ্যের পুনরুদ্ধার। এটি হচ্ছে আগামী প্রজন্মের স্বপ্ন ছুঁয়ে দেখার মঞ্চ, যেখানে প্রতিটি প্রতিভা নিজেকে তুলে ধরতে পারবে
জাতীয়ভাবে। এই আয়োজন আবারও প্রমাণ করেছে, যে বীজ একদিন রোপণ করা হয়েছিল, তা এখনো শুকায়নি। বরং নতুন প্রজন্মের হাতে সেই বীজ আবারও অঙ্কুরিত হয়েছে, নতুন আলোয় ফুটবে বহু ফুল।
আশাবাদ ব্যক্ত করে বিটিভির মহাপরিচালক বলেন, ‘আমরা চাই নতুন কুঁড়ি আগামী শত বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে হোক। প্রতিভা যেন হারিয়ে না যায়, বরং উৎসাহ পায়। এই অনুষ্ঠান আমাদের সংস্কৃতির স্রোতধারাকে প্রবাহিত রাখবে।’
‘নতুন কুঁড়ি’ আজ শুধু একটি অনুষ্ঠান নয়, বরং একটি জাতীয় আত্মপরিচয়ের প্রতীক। শিশুদের কণ্ঠে আবারও বাজছে সেই গান- ‘আমরা নতুন, আমরা কুঁড়ি।’ এই আয়োজন আগামী দিনের কনকচাঁপা, তিশা, ঈষিতাদের জন্ম দেবে। আর আমাদের সাংস্কৃতিক ভুবনকে আলোকিত করবে নতুন নতুন তারায়।
ফৌজদারী অপরাধে দণ্ডিত অপরাধী এবং গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত পলাতক আসামী ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য প্রচার নিয়ে কঠোর অবস্থানের কথা জানিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। সরকার এক বিবৃতিতে বলেছে, এ ধরনের প্রচার শুধু আইনের লঙ্ঘন নয়, বরং দেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণের পথে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির হুমকি তৈরি করে।
শুক্রবার প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো ওই বিবৃতিতে বলা হয়, বৃহস্পতিবার কিছু গণমাধ্যম আইন অমান্য করে শেখ হাসিনার একটি বক্তব্য সম্প্রচার করেছে, যেখানে তিনি মিথ্যা ও উসকানিমূলক বক্তব্য দেন। ভবিষ্যতে এমন ঘটনা ঘটলে সংশ্লিষ্ট গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে সতর্ক করা হয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো ওই বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশের টেলিভিশন, সংবাদপত্র এবং অনলাইন আউটলেটগুলোতে ফৌজদারী অপরাধে দণ্ডিত অপরাধী এবং গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত পলাতক আসামী শেখ হাসিনার অডিও সম্প্রচার এবং প্রচার ২০০৯ সালের সন্ত্রাসবিরোধী আইনের গুরুতর লঙ্ঘন। তা ছাড়া, গত বছরের ডিসেম্বরে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ঘৃণা ছড়ায় প্রাক্তন স্বৈরশাসকের এমন বক্তব্য সম্প্রচার নিষিদ্ধ করে।
আমরা দুঃখের সাথে লক্ষ্য করেছি যে, কিছু গণমাধ্যম বৃহস্পতিবার আইন ও আদালতের নির্দেশ উপেক্ষা করে ক্ষমতাচ্যুত স্বৈরশাসকের একটি ভাষণ প্রচার করেছে যেখানে তিনি মিথ্যা ও উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়েছেন। আমরা এধরনের অপরাধমূলক প্রচারকর্মে জড়িত গণমাধ্যমের কর্মকর্তাদের সতর্ক করে দিচ্ছি এবং দৃঢ়ভাবে জানাচ্ছি যে, শেখ হাসিনার বক্তব্য কেউ ভবিষ্যতে প্রকাশ করলে তাৎক্ষণিক আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, আমাদের জাতির ইতিহাসের এই গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে আমরা অপ্রয়োজনীয় বিভ্রান্তি তৈরির ঝুঁকি নিতে পারি না। এটি মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে শেখ হাসিনা জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় শত শত শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীর গণহত্যার নির্দেশ দেওয়ার মতো গুরুতর অভিযোগের পরে বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে গিয়েছেন। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তাকে দোষী সাব্যস্ত করেছে এবং বর্তমানে তিনি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে বিচারাধীন রয়েছে। তদুপরি, বাংলাদেশের আইন অনুসারে, আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং একই সন্ত্রাস বিরোধী আইন ২০০৯ অনুসারে, যে কোনও ব্যক্তি বা সংগঠন যারা তাদের নেতাদের কার্যকলাপ বা বক্তৃতা প্রচার, প্রকাশ বা সম্প্রচার করে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান রয়েছে।
একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রস্তুতির কথা উল্লেখ করে সরকার বিবৃতিতে বলছে, ‘প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ন্যায়বিচার, জবাবদিহিতা এবং গণতান্ত্রিক নীতির উপর ভিত্তি করে বাংলাদেশকে ভবিষ্যতের দিকে পরিচালিত করার জন্য কাজ করছে। বাংলাদেশের জনগণ, প্রজন্মের পর প্রজন্ম প্রথমবারের মতো সত্যিকার অর্থে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।’
শেখ হাসিনার বক্তব্য প্রচারে আরও সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলা হয়, ‘আমরা, এমন একটি সময়ে, সংবাদ মাধ্যমগুলোকে শেখ হাসিনার অডিও এবং তার বক্তৃতাগুলো, যা বাংলাদেশে অস্থিতিশীলতা তৈরি এবং সহিংসতা উসকে দেওয়ার উদ্দেশ্যে তৈরি, এগুলো প্রচার করার ক্ষেত্রে সতর্কতা এবং দায়িত্বশীলতা অবলম্বন করার আহ্বান জানাই। তার মন্তব্য, বক্তৃতা এবং তার যেকোনো উসকানিমূলক বক্তব্য প্রচার, পুনঃপ্রচার বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণের পথে স্থিতিশীলতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করার ঝুঁকি তৈরি করে। এটি কেবল জনসাধারণকে বিভ্রান্ত করার জন্য কাজ করে। এ ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ অমান্যকারী যেকোনো সংবাদমাধ্যম বাংলাদেশের আইনের অধীনে আইনি জবাবদিহিতার আওতায় পড়বে।’
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার পদুয়ার বাজারে সিমেন্টবাহী লরির নিচে চাপা পড়ে প্রাইভেট লকারের চার যাত্রী নিহত হয়েছে।
শুক্রবার দুপুর সাড়ে বারোটার দিকে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার পদুয়ার বাজার বিশ্বরোডে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সামনে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন কুমিল্লা বরুড়া উপজেলার হোসেনপুর গ্রামের মোহাম্মদ ওমর আলী(৮০), তার স্ত্রী নুরজাহান বেগম(৬৫), তার বড় ছেলে আবুল হাশেম (৫০)ও ছোট ছেলে আবুল কাশেম(৪৫)।
প্রাইভেটকারটি চালাচ্ছিলেন আবুল হাশেম। তিনি একটি বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা ছিলেন।
ময়নামতি ক্রসিং হাইওয়ে থানার উপপরিদর্শক আনিসুর রহমান এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।
উদ্ধারকারী পুলিশের সদস্য কনস্টেবল সাইফুল ইসলাম জানান, দুপুর সাড়ে বারোটার সময় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার পদুয়ার বাজার ইউটার্নে ঢাকা মুখি লেনে একটি যাত্রীবাহী বাস উল্টো পথে এসে রাস্তা পার হওয়ার চেষ্টা করে।
এই সময় বিপরীত দিক থেকে আসা সিমেন্ট বোঝাই লরিটি বাসটিকে পাশ কাটাতে গিয়ে উল্টে যায়। এ সময় বাসের পিছনে থাকা একটি প্রাইভেট কার ও একটি সিএনজিকে চাপা দেয় লরিটি।
এতে ঘটনাস্থলেই প্রাইভেট কারের চালকসহ চার যাত্রী নিহত হয়। এছাড়া সিএনজিতে থাকা আরও তিনজন গুরুতর আহত হয়। তাদেরকে উদ্ধার করে হাসাপাতালে পাঠানো হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের ইউটাহভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ডেসারাট নিউজে নিবন্ধ লিখেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এতে গত বছর বাংলাদেশের গণঅভ্যুত্থান, অন্তর্বর্তী সরকার প্রধানের দায়িত্ব গ্রহণ, সংস্কারসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিস্তারিত বলেছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার নিবন্ধটি প্রকাশ করেছে সংবাদমাধ্যমটি। এতে প্রফেসর ইউনূস জানিয়েছেন, আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে। আর নির্বাচন শেষেই তিনি রাষ্ট্রের সব দায়িত্ব ছেড়ে দেবেন। নির্বাচনে যে সরকার গঠিত হবে সেটির কোনো পদেই থাকবেন না বলে স্পষ্ট করেছেন তিনি।
ড. ইউনূস লিখেছেন, ‘আমি স্পষ্ট করেছি : জাতীয় নির্বাচন আগামী ফেব্রুয়ারিতে হবে। এরপর যে সরকার আসবে সেখানে নির্বাচিত বা নিযুক্ত করা কোনো পদে আমি থাকব না।’
তিনি বলেছেন, ‘আমার সরকারের মূল লক্ষ্য হলো একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন আয়োজন করা। যেখানে রাজনৈতিক দলগুলো ভোটারদের সঙ্গে তাদের পরিকল্পনাগুলো বলতে পারবে। আমাদের মিশন হলো, সব বৈধ ভোটার যেন তাদের ভোট দিতে পারে, যারা প্রবাসে আছেন তারাও। এটি একটি বড় কাজ। কিন্তু আমরা কাজটি সম্পন্ন করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
প্রফেসর ইউনূসের নিবন্ধটি হুবহু তুলে ধরা হলো:
এক বছর আগে, এই মাসেই বাংলাদেশের হাজার হাজার সাহসী ও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ শিক্ষার্থী, যাদের পেছনে ছিল সমাজের সব স্তরের অগণিত মানুষের সমর্থন, আমাদের জাতির ইতিহাসে একটি অন্ধকার অধ্যায়ের অবসান ঘটিয়েছিল। শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ, যা শেষ পর্যন্ত নিষ্ঠুরভাবে দমন করা হয়েছিল, তার মাধ্যমেই তারা একজন স্বৈরাচারকে ৫ আগস্ট দেশ ছাড়তে বাধ্য করে।
এরপর যে ক্ষমতার শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছিল, তাতে ছাত্রনেতারা আমাকে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নেতৃত্ব দিতে অনুরোধ জানায়। এই সরকারের দায়িত্ব ছিল দেশকে স্থিতিশীল করা এবং গণতন্ত্রের নতুন পথ তৈরি করা। শুরুতে আমি রাজি হইনি। কিন্তু যখন তারা জোর করল, তখন আমি তরুণদের জীবন উৎস্বর্গের কথা ভাবলাম, আমি তাদের ফিরিয়ে দিতে পারলাম না। ২০২৪ সালের ৮ আগস্ট, সুশীল সমাজের নেতাদের নিয়ে গঠিত একটি উপদেষ্টা পরিষেদের সঙ্গে আমি প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শপথ গ্রহণ করি।
এই গণআন্দোলন শুরু হয়েছিল সরকারি চাকরিতে ন্যায্যতা নিশ্চিত করা থেকে। এর মাধ্যমে বিশ্বের প্রথম ‘জেনারেশন জেড’ বিপ্লবের সূত্রপাত হয়েছিল। এই বিপ্লব তরুণদের জন্য একটি আদর্শ হয়ে উঠেছে, যা দেখায় কীভাবে তারা মানবজাতির সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জগুলো—যুদ্ধ, জলবায়ু পরিবর্তন, দারিদ্র্য, বেকারত্ব এবং বৈষম্য—মোকাবিলার জন্য এগিয়ে আসতে পারে।
আমরা ভাগ্যবান যে তারা ‘তাদের পালা আসার জন্য’ অপেক্ষা করেনি। যখন সভ্যতা অনেক দিক থেকে ভুল পথে চালিত হচ্ছে, তখন তারা বুঝতে পেরেছিল যে এখনই পদক্ষেপ নেওয়ার সময়।
স্বৈরাচার থেকে গণতন্ত্রে আমাদের উত্তরণের একটি স্পষ্ট প্রমাণ ছিল যখন দ্য ইকোনমিস্ট সাময়িকী বাংলাদেশকে তাদের ‘২০২৪ সালের সেরা দেশ’ হিসেবে ঘোষণা করে। আমরা তখন অর্থনীতি পুনর্গঠন, নির্বাচনের প্রস্তুতি এবং চুরি যাওয়া বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের সম্পদ উদ্ধারে এতটাই ব্যস্ত ছিলাম যে, আমরা তখনো বুঝতে পারিনি বিশ্ব আমাদের এই অগ্রগতিকে কতটা গুরুত্বের সঙ্গে লক্ষ্য করছে। ডেসারেট নিউজ আমাদের এই যাত্রার চমৎকার কাভারেজ দিয়েছে, যা আমরা গভীরভাবে উপলব্ধি করি।
আমাদের অন্যতম প্রধান অগ্রাধিকার ছিল গণঅভ্যুত্থানে যারা নির্মমভাবে নিহত হয়েছিল এবং যারা গুরুতর আহত হয়েছিল—সেই হাজার হাজার পরিবারের জন্য ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করা। এরসঙ্গে আমরা বিগত সরকার ও তার সহযোগীদের লুট করা অর্থ উদ্ধারেও উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছি।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের তথ্য অনুযায়ী, গত ১৫ বছরে সাবেক স্বৈরাচারী সরকার বছরে ১০ থেকে ১৫ বিলিয়ন ডলার আত্মসাৎ করেছে। এই অর্থ পুনরুদ্ধার করার জন্য যুদ্ধ করাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
যখন আমি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করি, তখন অব্যবস্থার মাত্রা দেখে আমি হতবাক হয়ে যাই। পুলিশ তাদের দায়িত্ব পালন করছিল না। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাচ্ছিল। অর্থনীতি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছিল। গণতন্ত্র ভেঙে পড়েছিল।
সরকারি কর্মচারীরা, যারা ক্ষমতাসীন দলের প্রতি যথেষ্ট আনুগত্য না দেখানোর কারণে পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত হয়েছিলেন, তারা ন্যায়বিচার চেয়েছিলেন।
ধীরে ধীরে আমরা পুনর্গঠন শুরু করেছি। যেসব রাজনৈতিক দল স্বৈরাচারের প্রতিরোধ করেছিল, তাদের পাশাপাশি নতুন গঠিত দলগুলোও নতুন ধারণা, শক্তি এবং কর্মপ্রচেষ্টা নিয়ে এগিয়ে এসেছে। সশস্ত্র বাহিনী, যারা ৫ আগস্ট বিক্ষোভকারীদের ওপর গণহত্যা চালাতে দেয়নি, তারা তাদের পেশাদারিত্ব বজায় রেখেছে এবং আইন-শৃঙ্খলা পুনরুদ্ধারে সহায়তা করেছে।
আমি এটি স্পষ্ট করে দিয়েছি: আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আমি এরপরের সরকারের কোনো নির্বাচিত বা নিযুক্ত পদে থাকব না।
আমাদের প্রশাসনের মূল লক্ষ্য হলো একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন সম্পন্ন করা, যেখানে রাজনৈতিক দলগুলো ভোটারদের কাছে তাদের বক্তব্য তুলে ধরতে পারবে। বিদেশে বসবাসকারী নাগরিকসহ সব যোগ্য নাগরিককে ভোট দেওয়ার সুযোগ করে দেওয়া একটি বিশাল কাজ। কিন্তু আমরা এটি সম্পন্ন করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
আমরা আমাদের পররাষ্ট্রনীতিতেও পরিবর্তন এনেছি। যেন আমাদের প্রতিবেশী এবং বৈশ্বিক অংশীদারদের সঙ্গে ইতিবাচক সম্পর্ক জোরদার করা যায়।
বিশ্বের অষ্টম বৃহত্তম জনসংখ্যার দেশ হিসেবে, বাংলাদেশ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধির একটি মূল কেন্দ্র হতে পারে এবং হওয়া উচিতও। আমরা বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর সহায়তার জন্য কৃতজ্ঞ।
রুবিওরে সঙ্গে সম্প্রতি আমার একটি ফলপ্রসূ এবং বন্ধুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়েছে, যা আমাদের উভয় দেশের বাণিজ্যের জন্য ইতিবাচক ছিল।
যুক্তরাজ্য, জাপান, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, বিশ্বব্যাংক গোষ্ঠী এবং জাতিসংঘও আমাদের সহায়তা করার জন্য এগিয়ে এসেছে। আমরা এই পথে একা নই।
নির্বাচনের প্রস্তুতির পাশাপাশি বিশেষজ্ঞ, রাজনৈতিক দল এবং নাগরিকদের নিয়ে একটি ব্যাপক সংস্কার প্রস্তাব তৈরি করেছি। সম্ভবত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো একটি সাংবিধানিক সংশোধনী আনা। যা এমন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করবে যাতে বাংলাদেশ আর কখনো স্বৈরাচারী শাসনে ফিরে না যায়।
বাংলাদেশ যদি শেষ পর্যন্ত এমন একটি দেশে পরিণত হয় যেখানে দেশের সব মানুষ নিরাপত্তা ও মর্যাদার সঙ্গে বসবাস করতে পারবে। তবে তা হবে লাখ লাখ বাংলাদেশির দৃঢ়তা, কল্পনা এবং সাহসের ফল।
এই গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে আমাদের সঙ্গে যারা আছেন তাদের সকলের দায়িত্ব রয়েছে। তারাই আমাদের সর্বোত্তম আশা—এবং সম্ভবত আমাদের শেষ আশা।
দেশে ‘একাত্তরকে ভুলিয়ে দেয়ার ষড়যন্ত্র চলছে’ বলে সকলকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বৃহস্পতিবার রাজধানীর রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বিএনপির উদ্যোগে জন্মাষ্টমী উপলক্ষে হিন্দু সম্প্রদায়ের সদস্যদের সম্মানে মতবিনিময় অনুষ্ঠান এই আহ্বান জানান।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজকে ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদদের কথা বারবার স্মরণ করতে চাই। এজন্য চাই যে, ১৯৭১ সাল আমাকে একটা স্বাধীন দেশ দিয়েছিল, ভূ-খণ্ড দিয়েছিল, আমাকে একটা স্বাধীন সত্ত্বা দিয়েছিল এবং সেজন্য আজকে আমার অস্তিত্ব আছে, আমি টিকে আছি। আমি স্মরণ করতে চাই, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের শহীদদের। কারণ তারা আমাদের একটা গণতন্ত্রের স্বপ্ন দেখার সুযোগ করে দিয়েছে। এই দুইটা জিনিসই আমাদের মাথায় রাখতে হবে। আজকে একটা প্রচ্ছন্ন প্রচেষ্টা আছে, একাত্তরকে ভুলিয়ে দেওয়ার। এটার বিরুদ্ধে দেশের নাগরিকদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। ২৪’এর জুলাই-আগস্ট যেভাবে সত্য, ঠিক একইভাবে সত্য কিন্তু একাত্তরের নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধ। সেই মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা দিয়েছেন কে? শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান আমাদের দলের প্রতিষ্ঠাতা।’
তিনি বলেন, ‘আজকে নতুন করে একটা কথা উঠছে, ষড়যন্ত্র চলছে যে, আপনার বাংলাদেশে এখানে এক ধরনের উগ্রবাদ মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে। এই উগ্রবাদকে মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে দেওয়া যাবে না। তাহলে আমাদের বাংলাদেশের যে আত্মা সেই অস্তিত্ব আমাদের রক্ষা পাবে না। এই কথাটা আমাদের সবাইকে মনে রাখতে হবে। আমি কথাটা আজকে এজন্য আরও বেশি করে বলছি যে, এইখানে বিভক্তি বিভাজনের রাজনীতি কেউ করবেন না, অতীতে যা হয়েছে হয়েছে। এখন বাংলাদেশের অস্তিত্বের জন্য, বাংলাদেশকে টিকিয়ে রাখার জন্য, বাংলাদেশকে সামনে নেওয়ার জন্য, বাংলাদেশকে আরও উন্নত করার জন্য আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘বিগত ১৫ বছর যারা আমাদের ভুল বুঝিয়ে আমাদের ভোট নিয়ে দেশ শাসন করেছে তারা ১৫ বছর আমাদের বন্ধু হিসেবে মনে করেননি। তারা মনে করেছেন প্রজা হিসেবে। আমাদের ওপর অত্যাচার করেছেন, নির্যাতন করেছেন, আমাদের দেশের সমস্ত সম্পদ লুণ্ঠন করে বিদেশে পাঠিয়ে দিয়েছেন।’
তিনি বলেন, ‘আমি কয়েকদিন আগে চিকিৎসার জন্য ব্যাংককে গিয়েছিলাম। ব্যাংককে গিয়ে আমি আমার বন্ধুদের কাছে শুনলাম যে, এখন ব্যাংককে সবচাইতে যেগুলো অভিজাত এলাকা সেই এলাকাগুলোতে বাড়ি ভাড়ার ধুম পড়ে গেছে। সেই বাড়িগুলো ভাড়া করছেন আওয়ামী লীগের বিতাড়িত নেতারা। তারা যে গাড়ি কিনছেন সেই গাড়িগুলো কোনটাই ২ কোটি, ৩ কোটি টাকার কম নয়। এসব টাকা কোত্থেকে গেল? এই দেশের সম্পদকে তারা পাচার করেছেন।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আপনারা সবাই জানেন, নতুন করে কিছু বলতে চাই না। শুধু এইটুকু বলতে চাই যে, আওয়ামী লীগ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের সমস্ত গণতান্ত্রিক যে কাঠামো সে কাঠামো ভেঙে ধ্বংস করে দিয়েছে। আওয়ামী লীগ এ দেশের সম্পদকে লুণ্ঠন করে বিদেশে পাচার করে দিয়েছে। প্রায় ৮৮ লাখ কোটি টাকা তারা বিদেশে পাচার করেছে। আমাদের সম্পদ বলতে আর কিছু নেই, সব পাচার হয়ে গেছে। আমাকে একজন অর্থনীতিবিদ জিজ্ঞেস করছিলেন, দেখে শুনে তো মনে হচ্ছে যে, এর পর তোমরাই রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে আসবে। জনগণ তোমাদের ওপরে আস্থা রাখবে। তো তোমরা দেশ চালাবে কোত্থেকে? কারণ টাকা তো সব পাচার হয়ে গেছে অর্থাৎ আমাদের দেশের অর্থনীতির অবস্থা কী করুণ করেছে সেই জিনিসটাই শুধু আমি আপনাদের বললাম।’
বাংলাদেশের বর্তমান আর্থসামাজিক, ভৌগোলিক, রাজনৈতিক পরিস্থিতি পিআর (সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধি) পদ্ধতিতে নির্বাচনের জন্য উপযোগী নয় বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বৃহস্পতিবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতাদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় ও আলোচনা সভায় তারেক রহমান এ কথাগুলো বলেন। জন্মাষ্টমী উপলক্ষে আয়োজিত এই সভায় যুক্তরাজ্যের লন্ডন থেকে ভার্চ্যুয়ালি যোগ দেন তিনি।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে পিআর পদ্ধতির সমালোচনা করে তারেক রহমান বলেন, ‘কাকে কিংবা কোন ব্যক্তিকে ভোট দিয়ে নিজেদের প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত করে সংসদে পাঠানো হচ্ছে, অবশ্যই সেটি জনগণের জানার অধিকার রয়েছে। কিন্তু প্রস্তাবিত যে পিআর পদ্ধতি, এই পিআর পদ্ধতিতে কোন ব্যক্তিকে নির্বাচিত করা হচ্ছে, জনগণের সেটি জানার পরিষ্কার কোনো সুযোগ নেই। যে কারণে কোনো রাজনৈতিক দল কিংবা ব্যক্তি জাতীয় সংসদে বা সরকারে প্রতিনিধিত্ব করতে চাইলে অবশ্যই তাদের জনগণের মুখোমুখি হয়ে জনগণের আস্থা-বিশ্বাস অর্জনের মাধ্যমে জনগণের রায় অর্জন করা জরুরি।’
পিআর পদ্ধতি এবং আরও দুয়েকটি বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে ভিন্নমত রয়েছে, প্রতিটি বিষয়ই সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সুন্দরভাবে সমাধান হয়ে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তারেক রহমান। তিনি বলেন, ‘যারা আসন্ন নির্বাচন সামনে রেখে পরিস্থিতি ঘোলাটে করার অপচেষ্টা করছেন, এর মাধ্যমে আপনারা হয়তো নিজেদের অজান্তেই গণতন্ত্রের উত্তরণের পথকে বাধাগ্রস্ত করে তুলছেন। একই সঙ্গে পতিত পরাজিত পলাতক ফ্যাসিস্ট সরকারের পুনর্বাসনের পথও হয়তো সুগম হচ্ছে।’
আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের বিষয়ে কোনো কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর বক্তব্য বা নিত্যনতুন শর্ত জনগণের মাঝে বিভ্রান্তি তৈরি করছে বলে উল্লেখ করেন তারেক রহমান। তিনি বলেন, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনে ভোট দেওয়ার সুযোগ পেলে মানুষ বিএনপিকে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব দিতে পারে, এই ভয়ে পলাতক স্বৈরাচার ‘বিএনপির বিজয় ঠেকাও’– এর মতো অপরাজনীতি চালু করেছিল। স্বৈরাচারমুক্ত বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের রাজপথের সহযোদ্ধা কিছু ব্যক্তি এবং গোষ্ঠীর আচরণেও সেই প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
যারা বিএনপির বিজয় ঠেকানোর জন্য নানা অপকৌশল বা শর্তের বেড়াজালের আশ্রয় নিচ্ছে, তাদের উদ্দেশে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘রাজনীতিকে রাজনীতি দিয়েই মোকাবিলা করুন। জনগণের শক্তির ওপর আস্থা রাখুন। বিএনপির বিজয় যদি জনগণ দিয়েই থাকে, সেই বিজয় ঠেকাতে গিয়ে জনগণের রায় প্রদানের পথ রুদ্ধ করবেন না।’
তারেক রহমান বলেন, প্রতিটি বিষয়ে সব রাজনৈতিক দলের ঐকমত্য হতে হবে, এমন নয়। তবে ফ্যাসিবাদ ঠেকানো বা দেশকে তাবেদারমুক্ত রাখার জন্য স্বাধীনতা–সার্বভৌমত্ব এবং জাতীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোতে অবশ্যই ঐকমত্য ও ঐক্যবদ্ধ থাকা অত্যন্ত জরুরি।
হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের উদ্দেশে তারেক রহমান বলেন, ‘বর্তমান ও ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের জন্য একটি নিরাপদ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য আসন্ন জাতীয় নির্বাচন আমাদের সামনে একটি বিশাল বড় সুযোগ। সারা দেশে হিন্দু ধর্মাবলম্বী ভাই ও বোনদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই, আগামী নির্বাচনে বিএনপি আপনাদের সমর্থন এবং আপনাদের সক্রিয় সহযোগিতা চায়।’
হিন্দু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা প্রসঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, অতীতে বিভিন্ন সময়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এসব হামলার পেছনে ছিল অসৎ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য বা অবৈধ লোভ। ধর্মীয় কারণে এসব হামলা হয়নি। তিনি বলেন, ‘কোনো কারণেই যেন কারও ওপর হামলা বা অবিচার না হয়, তা নিশ্চিত করা রাষ্ট্র ও সরকারের দায়িত্ব।’
বিএনপির আয়োজনে এই সভায় সভাপতিত্ব করেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সারাদেশ থেকে আসা হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতাকর্মীরা এতে অংশ নেন।
সভায় শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, এ জেড এম জাহিদ হোসেন, ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী, ধর্মবিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম, গণফোরামের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সুব্রত চৌধুরী, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিজন কান্তি সরকার, ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নিপুন রায় চৌধুরী প্রমুখ।